সমূদ্র স্নান বিশেষ করে সেন্ট মার্টিনে যাবার আগে জেনে নিন

3

সরকারী কলেজে চাকরী করার সময় পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবেই শিক্ষার্থীদের ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা সফরে নিয়ে যেতে হতো। মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা সব সময়ই কক্স বাজার, সেন্ট মার্টিন যেতে চাইতো। সেই সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকেই কিছু কথা বলছি। হয়তো এই কথাগুলো কেউ পড়লে এবং মেনে চললে আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মত অনাকাঙ্খিত প্রাণহানি আর ঘটবে না।

১/ আপনি সাঁতার জানেন তো? সাঁতার না জানলে সমূদ্রে আপনার নিরাপদ এলাকা হচ্ছে, ভাটার সময় গোড়ালি পর্যন্ত আর জোয়ারের সময় হাঁটু পর্যন্ত (তাও যদি আশেপাশে সাঁতার জানা লোক থাকে)

২/ সমূদ্রে নামার আগে জেনে নিন জোয়ার চলছে, না ভাটা চলছে। ভাটার সময় সমূদ্রে নামা ভয়ঙ্কর বিপদজনক! খুব বেশি নিরুপায় হলে ভাটার সময় বড়জোর পায়ের গোড়ালি ভেজাতে পারেন, এর বেশি নয়।

৩/ জোয়ারের সময় যদি সাতার কাঁটতে বা গোসল করতে পানিতে নামতে চান, তাহলে প্রথমে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জেনে নিয়ে নিশ্চিত হোন কোন জায়গাটা সাতার/গোসলের জন্য নিরাপদ। সাধারণত বেশিরভাগ মানুষ কক্সবাজারের বিশাল সৈকতে সাতারের অভিজ্ঞতা নিয়ে টেকনাফ বা সেন্ট মার্টিনের সৈকতে সাতার/গোসল করতে নেমে বিপদে পরে। এই বিষয়টা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন যে, কক্সবাজারের মত এত ধীর ঢালের এবং দীর্ঘ সৈকত পৃথিবীর খুব কম জায়গাতেই আছে। তাই হাটু পানি থেকে কোমর পানিতে যাবার আগে অবশ্যই দশবার চিন্তা করুন। ভালোভাবে নিশ্চিত হয়ে নিন ওখানে কোন বিপরীত তলদেশীয় স্রোত বা ডুবো গর্ত আছে কী না।

৪/ আপনি নিশ্চিত সাঁতার জানেন। কিন্তু এটা খেয়াল আছে কী কতদিন আগে আপনি শেষবারের মত সাঁতার কেটেছেন? এ কথা সত্যি যে সাঁতার শিখলে তা ভোলা সম্ভব না। কিন্তু সাঁতার হচ্ছে একটি কঠিন ব্যায়াম যাতে শরিরের প্রায় প্রতিটি পেশি কাজ করে। যে কারণে দীর্ঘদিন পর সাঁতার কাটতে গেলে অনেক সময় পায়ের পেশি সংকোচন সমস্যা (কাফ মাসল বা থাই মাসল পুল) দেখা দেয়। পেশি সংকোচন হলে যে যন্ত্রণা হয় তাতে সাঁতার অব্যাহত রাখা মুশকিল হয়ে পরে। এই কারণে সমূদ্রের গভীর এলাকায় সাঁতার কাটতে গিয়ে অনেকে সাতার জানা থাকার পরও ডুবে যান।

৫/ সেন্ট মার্টিনে গিয়ে কখনো জেটি থেকে নেমেই ডান দিকের (দ্বীপের পূর্ব দিক) সৈকত ধরে আগাবেন না (ম্যাপে নীল চিহ্নিত দাগ)। তা না করে বরং মূল রাস্তা ধরে দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম অংশে চলে যান। সেখানে গিয়ে সমূদ্রে নামুন। তারপরও জোয়ার-ভাটার বিষয়ের সাথে সাথে খেয়াল রাখুন সেন্ট মার্টিন একটি প্রবাল দ্বীপ। এর সৈকত খুবই সংকীর্ণ এবং এখানে হাটু-পানির চেয়ে বেশি দূরত্বে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয় (তা আপনি যত বড় সাঁতারুই হোন)।

সেন্ট মার্টিনের বিপদজনক সৈকতের মানচিত্র

৬/ জেটি থেকে নামার পর নিতান্তই যদি আপনি সৈকতে হাটার লোভ সামলাতে না পারেন, তাহলে নীল দাগ ধরে হাটতে চাইলে হাটুন। তবে সাবধান! কোন ক্রমেই পানিতে নামবেন না। একবার পানিতে নামলে আপনার আর উঠতে ইচ্ছে করবে না এবং হাটতে হাটতে আপনি সেন্টমার্টিনের মৃত্যু অন্তরীপ উত্তর-পূর্ব সৈকতে চলে যাবেন। দ্বীপের এই সৈকতে পরষ্পর বিপরীতমূখী পৃষ্ঠ ও তলদেশীয় স্রোতের কারণে অনেকগুলো ডুবো গর্ত তৈরী হয়েছে। তাছাড়া তলদেশীয় বিপরীত স্রোত (বটম কারেন্ট) আপনাকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং অবশ্যই এই লাল চিহ্নিত বিপদজনক এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।

শিক্ষার্থীদের নিয়ে সফরে যাবার বাজে অভিজ্ঞতার দিক হচ্ছে, ওখানে গেলে ওরা কেউ আর আমাদের কথা শুনতে চায় না, নিষেধ মানতে চায় না। ওরা স্বাধীনভাবে সব কিছু করতে চায়; সাহস দেখাতে চায়। অভিজ্ঞদের পরামর্শ না শুনে এবং অতিরিক্ত সাহস দেখিয়ে আর কোন জীবন যেন ঝরে না যায় সে বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে বোঝানোর প্রয়োজন অনুভব করছি।

রাষ্ট্রের প্রতি আমার কোন দাবী নেই। টানা পনেরো বছর পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তা বিধানের অনুরোধ করে উপেক্ষিত হবার পর এটা বুঝেছি যে, রাষ্ট্র শুধু আমাদের মত আম জনতার কাছ থেকে নিতেই জানে। তারা দেয় কেবলমাত্র উঁচু তলার মানুষকে। তাই আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের নিজেদেরই দেখতে হবে।

পরিশেষে ওয়ার্ল্ডভিউ-২ উপগ্রহ থেকে তোলা ছেঁড়া দ্বীপসহ সেন্ট মার্টিন দ্বীপের একটি ফলস কালার ইনফ্রারেড কম্পোজিট ইমেজ।

সেন্ট মার্টিনের উপগ্রহ চিত্র

3 thoughts on “সমূদ্র স্নান বিশেষ করে সেন্ট মার্টিনে যাবার আগে জেনে নিন

  1. কিন্তু উত্তর বিচই সবচেয়ে সুন্দর, এটা যে ভয়ঙ্কর তা জানতাম না! আমরা সারাক্ষণ উত্তর বিচই না সুধু অনেক গভীরে গেছি! thanks to Almighty….. i am alive

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s