পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থন দেয়া আসলেই কি অযৌতিক বা অনুচিত?

শেহজাদ আমান 

(১)

গত কিছুদিন আগে দেশে ক্রিকেট উৎসবের মহোৎসব বসেছিল এশিয়া কাপ আরটি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সৌজন্যে।তার পাশাপাশি কিছু মানুষ দাবি তুলেছিল যেবাংলাদেশ ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের অন্য কোন দলকে সমর্থন করা চলবেনা। এরপাশাপাশি স্টেডিয়ামে অন্য দেশের পতাকা বহন করার এবং তা প্রদর্শন করা তোযাবেনা-ই।

এই ব্যাপারে তারা ব্লগে এবং মিডিয়ায় অনেক লেখালেখি করেছে। প্রথম আলোতেফারুক ওয়াসিফ এই ব্যাপারে একটা পুরো প্রন্ধই রচনা করে দিয়েছেন, “খেলায়পাকিস্তানকে সমর্থন কেন?”
( http://www.prothom-alo.com/opinion/article/166350 )

আমার বক্তব্য হল, ঢালাওভাবে বিষয়টা না দেখে আরও র্যাlশনালী বা লিবারেলভাবেবিষয়টা দেখা যেতে পারে। আমাদের দেশে স্পষ্টতই আইন আছে দেশের মাটিতেঅন্যদেশের পতাকা না উড়ানোর ব্যাপারেঃ

“Except as stated in the above Rules, the flag of a Foreign State shall not be flown on any car or building in Bangladesh without the specific permission of the Government of the People’s Republic of Bangladesh.”
(People’s Republic of Bangladesh Flag Rules, article 9.IV)
(http://www.cadetcollegeblog.com/adjutant/43624)

তো, এইখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মাটিতে অন্য দেশের পতাকা উড়ানো আসলেইএকটা বেআইনি কাজ। বাংলাশের অধিবাসী হয়ে অন্য দেশের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামেঢোকা উচিত নয়। সেইক্ষেত্রে সংশয় বা অস্পষ্টতার কিছু নেই।

কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে, কিছু মানুষ অন্য দেশকে সমর্থন দেয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভআর রাগ প্রকাশ করে ফেসবুক আর ব্লগে বিভিন্ন মতামত দিয়ে গেছেন। বিশেষ করে , বাংলাদেশের বলতে গেলে ৫০-৬০% লোক যে বাংলাদেশের পর পাকিস্তান ক্রিকেট দলকেসমর্থন করে, সেই ব্যাপারটা নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ। পাকিস্তানকে যে কোনমতেইসমর্থন করা যায়না, সেই ব্যাপারে তারা অনেকেই অনেক অনেক যুক্তির অবতারণাকরেছেন, এমনকি পাকিস্তানকে যারা সমর্থন করে, তাদের রাজাকার, নব্য রাজাকার, রাজাকারের দোসর, ছাগু, পাকি জারজ ইত্যাদি নানান ধরণের তকমা দিয়ে ভরিয়েফেলছিলেন।

কয়েক বছর আগে রাহিন রায়হান নামের এক ব্লগার (সম্পর্কে আমার বিশ্ব সাহিত্যকেন্দের ছোট ভাই) প্রথম আলো ব্লগে লিখেছিলেন, “একালের নব্য যুদ্ধাপরাধীআবার কারা?আমি আসলে আমাদের তরুণ সমাজের সেই অংশটার কথা বলছি যারা নিজ দেশেরইতিহাস-ঐতিহ্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে উদাসীন।দেশের তরুণসমাজের বড় একটা অংশ কিন্তু এদের অন্তর্ভুক্ত।পাকিস্তানের খেলা হলে তাদেরগ্যালারীতে দেখা যায় পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে।তাদের গালে আঁকাথাকে পাকিস্তানের পতাকা।এবং হয়ত বুকেও। এমনকি বাংলাদেশের সাথে খেলা হলেওএরা অনেকেই প্রকাশ্যে এবং অনেকেই মনে মনে পাকিস্তানের শুভকামনা করেথাকে।বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে হারলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় “yahooooo Pakistan jitse.shabash Pakistan!!!!!!!!”. তখন বাকরুদ্ধ হয়ে যাই।অবাকহয়ে ভাবি এরা কি আসলে বাংলাদেশি?এদের যুক্তি পাকিস্তানের প্লেয়াররাতো আর১৯৭১ এর জেনোসাইডে অংশ নেয়নি।তো তাদের সমর্থন করলে দোষ কোথায়?
না । এই যুক্তি আমি খন্ডাবো না।সত্যি বলতে আমার রুচি হয়না।এই নব্য রাজাকারদের আমার বোঝানোর কিছু নেই”।
(http://prothom-aloblog.com/posts/7/145671)

আসুন, আমরা বুঝতে চেষ্টা করি, এই ধরণের তকমা দেয়া আসলেই কতটা যুক্তিযুক্ত , সেই ব্যাপারটা। আর বুঝে দেখি আসলে এইসব ফ্যাসিস্ট জাতীয়তাবাদির দাবিগুলোআসলে কতটা বাস্তবসম্মত।

(২)

একসময় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল টেস্ট বা ওয়ানডে কিছুই খেলতো না। বাংলাদেশ১৯৯৭ সালে ওয়ানডে স্ট্যাস্টাস পায়, আর ২০০০ সালে পায় টেস্ট স্ট্যাটাস। তারআগ পযন্ত দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই অন্য ক্রিকেট নেশনকেসমর্থন করতে হয়েছে।

পাকিস্তান একটি মুসলিম দেশ বলে বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবেইপাকিস্তানকে সমর্থন করে এসেছে। তবে এটি পাকিস্তানকে সমর্থন করার একমাত্রকারণ নয়। পাকিস্তান বিশ্ব ক্রিকেতের পরাশক্তিগুলোর অন্যতম অনেকদিন ধরেই।তারা ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং ২০০৯ সালে টি-তোয়েন্টি বিশ্বকাপক্রিকটের শিরোপা জেতে। এর আগে ও পরে তারা অসংখ্য টুর্নামেন্ট এবংদ্বি-পাক্ষিয় সিরিজ জয়লাভ করেছে বিশ্বের সব ক্রিকেট শক্তির বিরুদ্ধে। তবে, শুধু সাফল্য দিয়ে পাকিস্তানের ক্রিকেত-উতকরষতা বিচার করা যাবেনা। ক্রিকেটঅনিশ্চয়তার খেলা যাকে বলা হয়, “The Game of Gloriuos Uncertainty”. আরক্রিকেট যদি অনিশ্চয়তার খেলা হয়, তবে এর সবচেয়ে সক্ষম ও বাস্তব উদাহরণ হলপাকিস্তান ক্রিকেট দল। তারা এমন একটা দল যারা একটা হারা ম্যাচ, যেখানে জয়অসম্ভব মনে হয়, সেখান থেকেও ম্যাচ জিতে আসে। তাদের খেলায় তাই আছেঅনিশ্চয়তা, রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা।

তবে, মানুষ যেহেতু জিততে জিততে হেরে যাওয়া ম্যাচের চেয়ে, হারতে হারতে জিতেযাওয়া ম্যাচের কথাই বেশি মনে রাখে, তাই পাকিস্তানের নৈপুণ্য ভাস্বর আসাধারণসব জয়কেই মানুষ বেশি মনে রাখে। যেমনঃ ১৯৮৪৫ সালে শারজায় জাভেদ মিয়াদাদেরশেষ বলে মারা ছক্কায় অথবা ২০১৪ সালে আফ্রিদির পরপর দুই বলে ছক্কা মেরে দলকেজেতানোর স্মৃতিই মানুষের চোখে বেশি ভাসে।

আমি যে কথা এখানে স্পস্ট করে বলতে চাচ্ছি, সেটা হল বাংলাদেশের মানুষ বাসকরে ঘোরতর অনিশ্চয়তার মধ্যে। তাদের নিজেদের জীবনেও অনেক রকম অনিশ্চয়তারমধ্যে থাকতে হয়। হরতাল, রাজনৈতিক সংঘরষের কারণে মানুষ জানেনা যে, সে আজবাসা থেকে বের হলে সুস্থমত ঘরে ফিরে আসতে পারবে কিনা? মধ্যবিত্ত বাঙালিজানেনা সামনের মাসের বাড়িভাড়া সে ঠিকমত দিতে পারবে কিনা, যদি বাড়িওয়ালাবছরের পর বছর ভাড়া বাড়িয়েই চলেন।

তবুও তারা দিনশেষে ‘যুদ্ধজয়’ করে বাসায় ফিরে আসে। মাস শেষে সে টেনেটুনে ভাড়া ঠিকই দেয়।
অনিশ্চয়তার ঘোরাটোপে বাস করা বাংলাদেশের মানুষ, তাই পাকিস্তানেরপারফরম্যান্স বা খেলার সাথেই যেন নিজেদের জীবনের মিল খুজে পায়। পাকিস্তানতাই নিজের অজান্তেই তাদের কাছে প্রিয় ক্রিকেট দলে পরিণত হয়েছে।

(৩)

আমাদের সমাজে বেশ কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে প্রতিবাদের ভাষাই হল পাকিস্তানবিরোধিতা করা। উগ্র জাতীয়তাবাদী এই সকল লোক যে কোন ইস্যুতে পাকিস্তানেরসমালোচনা, নিন্দা আর মুন্ডুপাতকেই দেশপ্রেমের উদাহরণ হিসেবে মনে করেন, সেইস্যু বাস্তবসম্মত বা যুক্তিযুক্ত হোক বা না হোক।
যেমন সচলায়তন ব্লগে ধ্রুব আলম নামে একজন কিছুদিন আগে একটা লেখা লিখেছিলেন “পাকিস্তান ভাল খেলে, তাই সমর্থন দেই। আসলেই?” নামে। সেখানে তিনি কিছুহাস্যকর স্ট্যাটিসটিকস দিয়ে প্রমাণ চেষ্টা করেছেন যে, পাকিস্তান আসলেই অতটাভাল খেলেনাঃ
( http://www.sachalayatan.com/guest_writer/51688 )

অথচ, তার দেয়া পরিসংখ্যান থেকেই এটা বোঝা যায় যে, পাকিস্তান অসাধারণ একটাক্রিকেট দল। ধ্রুব আলম নিজেই লিখেছেন, ২০০০ সালের পর থেকে পাকিস্তান ভারতেরসাথে ৪৮ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে জয়লাভ করেছে ২৫ টিতে, হেরেছে ২৩ টিতে।

সেই লেখার শেষে এই উগ্র জাতীয়তাবাদী লিখেছেন, “ছাগলামি ছাড়ুন, সাহস নিয়ে অন্তত স্বীকার করুন যে পাকিস্তান ভাল ক্রিকেট দল নয়। “

অথচ একজন পক্ষপাতহীন মানুষ তার লেখা দেখলেই বুঝতে পারবে যে এর মাধ্যমে পাকিস্তানের ভাল ক্রিকেট দলের স্বীকৃতিটাই লুকিয়ে আছে।

কাজেই পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশী সমর্থকদের ছাগল প্রমাণ করতে গিয়ে লেখক নিজেই যে একটা ছাগল সেটাই কি প্রমাণ করলেননা?

সুষুপ্ত পাঠক নামের এক ব্লগার তার ব্লগে লিখেছেন যে, “আমরা মুসলমান থেকে বাঙালি হতে পারলাম না।“
(https://www.amarblog.com/index.php?q=susupto-pathok/posts/177806)

এখানে বলে রাখা ভাল যে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বড় কোন টুর্নামেন্টে ভালো করতেপারে না দেখেই কিন্তু মানুষ বাংলাদেশ বাদেও পাকিস্তান বা ভারতকে অনেকটাবাধ্য হয়েই সাপোর্ট করে। কারণ, তাদের শিরোপা জয়ের সামর্থ্য আছে, যেটাবাংলাদেশ দলের নেই। আর বাংলা ভাষাভাষী অন্য ধর্মের অন্য কোন দেশও তোসেমি-ফাইনাল বা ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানের সাথে সাথে খেলে না যে বাংলাদেশেরমানুষ সেই দেশকে সমর্থন করবে। তাই, এখানে মুসলমান থেকে বাঙালি হতে পারলামনা’—সেই কথা বলাটাও বোকামি। আর এখানে প্রশ্ন রাখতে হয় যে, বাঙ্গালী হলে কিএকটা মুসলিম দেশ ভাল খেললে তাকে সাপোর্ট দেয়া যাবেনা?

এরকম আরও হাজারো ছাগল আমাদের দেশে রয়েছে, পাকিস্তান তো পাকিস্তান, পাকিস্তানের মানুষজনদের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ‘মারখোর উমুক’, ‘মারখোরতুমুক’ টাইটেল লাগিয়ে দেয়, সেই লোকটা বাংলাদেশের প্রতি যতটা সজ্জনই হোকনাকেন। দেশের প্রয়জনে, দেশের ক্রান্তিলগ্নে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করার, মাঠে নামার দরকার এরা অনুভব না করলেও মনে মনে একটা প্রশান্তি তারা লাভ করেএই ভেবে যে—“যাক, আর কিছু না হোক পাকিস্তান, পাকিস্তানী আর পাকিস্তানীক্রিকেট দলের সমর্থকদের তো অন্ততফেসবুক আর ব্লগে শোয়ায় দিছি…”

(৪)

খেলাধুলার ময়দানে মানুষ সেই সব ক্রিকেট শক্তিকেই সমর্থন দিয়ে থাকে, যারাকিনা অনেক দূর যাওয়ার, বিশেষ করে শিরোপা জয়ের ক্ষমতা রাখে। যেমন, সাফফুটবলে বাংলাদেশ শিরোপা জয়ের ক্ষমতা রাখে। তাই, সাফ ফুটবলে বাংলাদেশেরমানুষ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দলকে সমর্থনের প্রয়োজন মনে করেনা।

তাইতো, সাফ ফুটবল বাংলাদেশে আয়োজন করা হলেও পাকিস্তানের বা ভারতের ম্যাচের সময় পাক বা ভারতী পতাকা উড়াবার ঘটনা চোখে পড়েনা।

কিন্তু, ক্রিকেট খেলার ব্যাপারতা ভিন্ন। ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ কোনআন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ফেভারি্ট থাকেনা। এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপে তাদেরচ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যাতা নেই। বিশ্বের সেরা দল হিসেবে র‍্যাঙ্কিং-এর১-২-৩-এ থাকার যোগ্যতাও হয় নাই। এখানে স্বাভাবিকভাবেই তাই মানুষ চ্যাম্পিয়নহওয়ার মত দলকেই সাপোর্ট করে। তাইতো, ভারত বা পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কাকেসমর্থন দিতেই তাদের ম্যাচে বাংলাদেশের মানুষেরা ব্যানার-প্ল্যাকার্ডইত্যাদি নিয়ে আসে। এসব দলকে মানুষ সমর্থন দেয় এই জন্য যে, তারা চ্যাম্পিয়নদলের সমর্থনকারী হতে চায়। বাংলাদেশের যদি সেইসব টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নহওয়ার যোগ্যতা থাকতো, তবে সাফ ফুটবলের মত সেইসব টুর্নামেন্টে বাংলাদেশইশুধুমাত্র সমর্থন পেত। অন্য কোন দেশের সমর্থন দিতে মানুষ টিভির সামনেবসতোনা, বা স্টেডিয়ামে যেতনা।

আর এটাও মাথায় রাখতে হবে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন। বাংলাদেশটেস্ট বা ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার অনেক আগে থেকেই পাকিস্তান বা ভারত বিশ্বক্রিকেটের সফল দল এবং বাংলাদেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই তাদের সমর্থন করেএসেছে।

এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ যতদিন না পর্যন্ত ক্রিকেটীয় সাফল্যে ভারত-পাকিস্তানবা শ্রীলঙ্কার সমপর্যায়ে যেতে না পারছে, ততদিন পর্যন্ত মানুষ অন্য দলকেসাপোর্ট করবেই।

আর একটা মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তান ক্রিকেট দলকেই দেশের বেশিরভাগ মানুষসাপোর্ট করবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, ইসলাম ধর্ম জিনিসটা বাংলাদেশেরমুসলিমদের লাইফস্টাইলের মধ্যে অনেক গভীরভাবে কাজকরে। পাকিস্তানেরচিত্তাকর্ষক, রোমাঞ্চকর খেলার ধরনের কথা না হয় আবার উল্লেখ নাই করলাম।এজন্য তাদের নব্য রাজাকার বলা শুধু ভুলই নয়, আমানুষিক। এখানে আমি ‘সবুজ’ নামে আমার এক ঢাকা কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের কথা উল্লেখ করবো, যে কিনাপাকিস্তানের সমর্থন করে, তবে অবশ্যই বাংলাদেশের পর। এইবারের এশিয়া কাপ২০১৪-এ বাংলাদেশ-পাকিস্তান’ ম্যাচে বাংলাদেশের নিশ্চিত জেতা ম্যাচ আফ্রিদিযখন একের পর এক ছক্কা মেরে বের করে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন ও আমাকে বললো, “ভাই,আফ্রিদি একটা কইরাছক্কা মারে, আর আমার মনে হইতাছে কেউ আমার বুকেএকবার কইরা ছুরি মারতেছে ভাই”।

এখন, উগ্র জাতীয়তাবাদী ছোট ভাই রাহিন রায়হানের বক্তব্য অনুযায়ী আমার আরেকছোট ভাই সবুজতো তাহলে একজন ‘নব্য রাজাকার’। একজন ‘নব্য রাজাকার’-এরবাংলাদেশের পরাজয়ে বুকে ছুরির আঘাত পাওয়ার মত ব্যাথা হয়! ভালো তো, ভালো না?

সবুজের মত মানুষকে নব্য রাজাকার ট্যাগ দিতে গেলে বিশেষ পরিমাণেনিচুমনমানসিকতার মানুষ হতে হবে। রাহিন রায়হানের মত মানুষদের নিজেকে প্রশ্ন করাউচিত, আসলে তার নিজের মনমানসিকতা কোন পর্যায়ের…!

আমরা শুধু পাকিস্তান পাকিস্তান বলি, অন্য দেশগুলোর কথা বলি না কেন, ভারতেরকথা বলি না কেন? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ যদি দেশকে ভালোবেসে হয়, তাহলেভালো কথা। কিন্তু ইসলাম বিরোধীতাঁর কারণে যদি হয় তাহলে সেটা দুঃখের বিষয়।

কই, ভারতকেতো দেশের ১০-১৫% লোক সাপোর্ট করে। ভারতকে সাপোর্ট করা ঠিকহবেনা, এমন কোন লেখা তো চোখে পড়ে নাই। ৭১’ সালের পর ভারত কি আমাদের সাথে কমকরেছে? গতকালই তো বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতা দাবি করলেন, “বাংলাদেশেরখুলনা থেকে সিলেট, এক তৃতীয়াংশ নাকি ইন্ডিয়ার দখলে নেয়া দরকার”।

আর এটাওতো সত্য যে, পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের প্রতি যতটা সহমরমী, অন্য কোন দেশের ক্রিকেটাররা তা কমই আছেন।

৭১’ সালে পাকিস্তানের বর্বর ভূমিকার কথা সবাই জানে। পাকিস্তান বাংলাদেশেরকাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেজন্য ক্ষমা চায়নি, এটাও সত্য। কিন্তু, বাংলাদেশেসরকার তো অনেক আগেই পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিয় সম্পর্ক বজায়রেখেছে। সেটা যদি করা যায়, তাহলে ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করাঅনৈতিক বা অনুচিত হবে কেন?

পরিশিষ্টঃ যারা পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থনের বিরোধিতা করছেন, তারা আশাকরি পাকিস্তানের সাথে সবরকম কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার বিরোধিতাও করবেন ।সার্কের সদস্য হিসেবে পাকিস্তান যদি আঞ্চলিক উন্নয়নে একটা ভাল পরামর্শদেয়, আর বাংলাদেশ তাকে সমর্থন করে, তাহলেওতো (কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদীরচোখে) একাত্তরের চেতনার অবমাননা হবে, তাই নয় কি…?

যাই হোক, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যদি ক্রিকেট-বিশ্বে সত্যিই পরাশক্তি হিসেবেআবির্ভূত হতে পারে, তবে আশা করা যায় পাকিস্তানসহ অন্য দেশগুলোকে সমর্থনদেয়ার প্রবণতা অনেক কমবে। ‘জেতা ম্যাচ হেরে যাওয়া’র বর্তমান ধারা বদলে তারা ‘নিশ্চিত হারা’ ম্যাচেও দেশকে জয় উপহার দেবে, নাটকীয় ও রোমাঞ্চকরভাবে।বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিকট ভবিষ্যতে সেই সুখের দিন আমাদের উপহার দেবে বলেবিশ্বাস রাখি।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s