কেউ কি স্যারকে ধরবেন?

1

শাফকাত রাব্বী অনীকঃ একের পর এক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাস হওয়া নিয়ে স্যার জাফর তার স্বভাব সুলভ ও আপাত দৃষ্টিতে শিশুতোষ একটি লেখা লিখেছেন। লেখার টাইটেলে স্যারের নির্দোষ প্রশ্ন “কেউ কি আমাকে বলবেন?” টাইটেলটা অনেকটা সাদাসিদা ভাবে “কেউ আমারে ধর” টাইপের শুনালেও, আসলে কিন্তু চালাকিতে ভরা।

ক্যাজুয়াল রিডারদের বোকা বানানোর জন্যে স্যার জাফরের লেখার স্টাইল খুবই এফেক্টিভ । পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ক্যাজুয়াল রিডার, আমি নিজেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই। তবে স্যার জাফরের লেখা গুলো এন্টেনা খাড়া করে, বেশ ক্রিটিকাল ভাবে পড়ি। কেননা স্যার জাফর উপরে-উপরে সাদাসিদা ভাব ধরলেও, তার প্রতিটি লেখা দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। এন্টেনা উচা করে না পড়লে সেই দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ধরা পরে না।

যেমন ধরুন নিজে সিভিল সমাজের একজন লোক হয়েও স্যার জাফর মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের কর্ণধার আদিলুর রহমান শুভ্রর জেলে যাওয়ার সাফাই গেয়ে সাদাসিদে প্রতারণা মূলক নিবন্ধ লিখেছিলেন। প্রতারনামূলক কেন বললাম তা জানতে সে সময় আমার লেখা আরটিকেলটি (http://www.priyo.com/shafquatrabbee/2013/08/16/27087.html) পড়ে দেখতে পারেন। আমার জানা নেই পৃথিবীর অন্য কোন দেশে লিডিং কোন প্রফেসর পাওয়া যাবে কিনা যিনি তার দেশের আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত মানবাধিকার কর্মির জেলে যাওয়াকে সাফাই গেয়ে লেখা দিতে রাজী হবেন। এমন পিকিউলিয়ার ইন্টেলেকচুয়াল পৃথিবীতে বিরল। এমনকি দালাল ও কোম্প্রমাইজিং ক্যারেক্টারে ভরা বাংলাদেশেও।

৫ই জানুয়ারী নির্বাচন থামাতে সিভিল সোসাইটির বড় বড় হর্তাকর্তারা একত্রিত হয়ে সরকারকে একতরফা নির্বাচন রহিত করতে বলেছিলেন নির্বাচনের ঠিক আগে একটি জরুরী সভায়। ডেইলি ষ্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রমুখ সহ উচ্চ বর্নের আওয়ামী ঘরনার সেকুলার সুশিলদের উপস্থিতি এই হাই-ভোল্টেজ মিটিংএ ছিল উল্লেখ করার মতো। সেই হাই ভোল্টেজ মিটিং এর ড্যামেজ কন্ট্রল করতে, তরিঘরি করে সেকন্ড গ্রেডের সেকুলার সুশিলদের নিয়ে একটি পাল্টা-পাল্টি সভা ডাকা হয়েছিল। স্যার জাফর ছিলেন সেই সভার মূল আকর্ষন। এই সভাতেই স্যার জাফর তার বিখ্যাত ফিল্টার থিওরি উপস্থাপন করেছিলেন। দেশের বাকি সুশীলদের শাসিয়ে দিয়ে, ইনিয়ে বিনিয়ে, সাদাসিদে, শিশুসুলভ, ও আবেগী গল্প ফেঁদে স্যার জাফর ফিল্টার থিউরীর প্রয়োগ করে বোঝাতে চেয়েছিলেন কেন, কিভাবে তখন একটি একতরফা নির্বাচন দেশের জন্যে খারাপ হতো না।

সেই স্যার জাফরই এখন কিনা নির্দোষ প্রশ্ন করছেন, “কেউ কি আমাকে বলবে, সদ্য নবায়নকৃত সরকারের অধীনে একের পর এক প্রশ্ন পত্র লিক হওয়া নিয়ে আমার কোমলমতি ছাত্রীকে আমি কি উত্তর দিবো?” নিজে একজন শিক্ষক হিসেবে স্যার জাফরের খুব ভালো ভাবে জানা থাকার কথা প্রশ্ন কিভাবে আউট হয়, কেন আউট হয়, এবং এর প্রতিকারই বা কি? তাই একজন স্যার হিসেবে নিজে প্রশ্ন না করে, তার তো উচিত সমস্যার উত্তর বা সলিউশন খুজে দেয়া! সেই সলিউশন কর্তৃপক্ষ না শুনলে প্রতিবাদে ফেঁটে পড়া!

সাধারণ মানুষেরই বরং উচিত স্যার জাফরের কাছে গিয়ে জিগ্গেস করা, স্যারের দেয়া চেতনার বাস্তবায়নকারী সরকারের আমলে কেন একের পর এক প্রশ্নপত্র লিক হচ্ছে? এই সরকার যেহুতু স্যার জাফরের ফিল্টার পাশ, তাহলে সেই মহান ফিল্টারে কেন আউট হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্রগুলো আটকে যাচ্ছে না?

স্যার জাফররা ঘৃনা আর বিভাজনের চাষবাস করে একটা পারফেক্ট জঙ্গল সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। তাদের স্বপ্নের সেই জংগল হবে এমনই পারফেক্ট জঙ্গল যেখানে জংলি আইন- কানুন, অধিকারহীনতা, লাঞ্চনা, বঞ্চনা, ভোটাধিকারহীনতা — সব কিছু শুধু স্যার জাফরদের প্রতিপক্ষকেই সইতে হবে। আর তাদের পক্ষের মানুষজন পারফেক্ট জঙ্গলের পারফেকশন উপভোগ করে সুখে শান্তিতে, চেতনাময় দিন কাটাবে।

সরি স্যার জাফর, জঙ্গলকে নিজেদের জন্যে যতই পারফেক্ট বানানোর চেষ্ঠা করুন, দেয়ার ইজ নো পারফেক্ট জঙ্গল। তাই দায়িত্ব এড়ানোর জন্যে নিজে থেকে প্রশ্ন না ছুড়ে, আপনার কোমলমতি ছাত্রীদের বরং বোঝান এই জঙ্গল সৃষ্টিতে আপনার কোন ভূমিকা ছিল কিনা।

One thought on “কেউ কি স্যারকে ধরবেন?

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s