আমাদের অভিধানে এবং সংস্কৃতিতে একদিকে “ঘৃণা” আর তার পাশেই “কদমবুচি” করার চল এতোটাই গেড়ে বসেছে যে, কয়েকটা জেনেরেশন পার হতে হবে এই পঙ্কিলতা থেকে পরিত্রান পেতে। এভাবেই আমাদের মন-মানসিকতা গড়া হয়েছে যে জীবনের অন্তিমকালে এসে সেগুলি unlearn and relearn এর সুযোগ নেই। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
আমরা সাধারন নাগরিক আমাদের পাশের দেশের তুলনায় পিছিয়েই থাকব। কারন তারা চায় না প্রতিবেশী আবার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। সেজন্য তারা আমাদের দুই দেশের মাঝের বিদ্যমান সমস্যাগুলি সমাধান না করে যুগ যুগ ধরে ঝুলিয়ে রাখছে। তাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার জন্য অনুদানের বা সুবিধা দেয়ার তুলনায় তাদের উতপাদিত পণ্য ও মেডিক্যালসেবা আমাদের কাছে বিক্রির চেস্টা নানান কৌশলে করে থাকে।
আমি ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় একজন শিক্ষক এর সাথে দেখা করতে গেলে উনি দুইটা ইংরেজী শব্দ ব্যাবহার করেছিলেন তার প্রফেসি (prophecy) হিসাবে যে, “আজ থেকে কয়েকযুগ পরে আমাদের দেশে intellectual bankruptcy দেখা দিবে” (Intellectual means involving a person’s ability to think and to understand ideas and information। Bankruptcy: A person who is totally lacking in a specified resource or quality)। আজ আমি সেটার নজির রাস্ট্রের সর্বোচ্চ লেভেল থেকে সাধারান জনগনের মাঝে প্রকট আকারে দেখছি। আমরা যুক্তিতর্ক প্রয়োগ না করে ধমকের সাথে বা গায়ের জোরে প্রতিপক্ষকে কাবু করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সেই বিখ্যাত ছবির গরুর গাড়ীর চাকার মত বাংলাদেশকেও যেন আজও কাদামাটি থেকে ধাক্কা দিয়ে তোলা যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ সাহেব তার এক ভাষনে বলেছিলেন যে, বিএনপি যদি কখনো উত্তর দিকে দৌড় দেয় তবে আওয়ামী লীগ চোখ বন্ধ করে দক্ষিন দিকে দৌড়াবে এবং vice versa (with the order reversed; the other way around) এর মানে, তুমি যেটা বিশ্বাস করবে বা করতে চাইবে আমি তার উল্টোটা করব। নইলে আমি তোমার ফলোয়ার হয়ে গেলাম। যেটা আমার নিজের আর দলের জন্য অবমাননাকর ব্যাপার। তাই, সব কিছুতে বিরোধীতা করা চাই।
এই বাজে vicious cycle (one trouble leads to another that aggravates the first) থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে দলমত নির্বিশেষে একজন গ্রহনযোগ্য নেতার প্রয়োজন। যিনি হয়ত নিজ থেকে উড়ে এসে জুড়েও বসতে পারেন। কিন্তু দেশটাকে একছন্দে আর তালে এগিয়ে নেয়ার স্পৃহা জনগনের মাঝে প্রথিত করে যেতে পারেন তেমন নেতার প্রয়োজন ছিল। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের জানুয়ারীর ১০ তারিখে পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্য (লন্ডন) হয়ে পথে কলকাতায় থেমে পরে ঢাকায় আমাদের মাঝে এসেছিলেন। তখন তিনিই আমাদের সেই স্বপ্নের নেতা হিসাবে সদ্যস্বাধীন দেশের মাঝে অনেক আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন। সেই সময়ে আমরা সমগ্র ৭৫ মিলিয়ন বাংগালী (বাংলাদেশী) ওনার মুখের দিকে অনেক আশা নিয়ে চেয়েছিলাম। এমন কোন কাজ ছিল না যেটা উনি দেশবাসীকে বলতেন বা আমাদের কাছ থেকে চাইতেন আর সেটা তখন মানা হত না বা আমরা করতাম না। কিন্তু যে কোন কারনেই হউক উনি নিজেকে জনগনের সম্মুখ থেকে গুটিয়ে নিয়ে রাস্ট্রের রুটিন কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। যার ফলে তখন আমরা আমাদের তখনকার দিনের প্রিয় নেতাকে ৭৩ সাল থেকেই হারাতে শুরু করেছিলাম আর ৭৫ সালে সম্পুর্ণ ভাবে হারিয়েছিলাম। সেই ৭২-৭৫ সালে আমারা বাংলাদেশের ম্যানেজার হিসাবে শেখ মুজিবকে পেয়েছিলাম। কিন্তু তখন আমাদের একজন স্টেটসম্যান দরকার ছিল। যেটাতে উনি পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছিলেন। বাদ বাকিটা তো ইতিহাস হয়ে আছে।
বাই দ্যা ওয়ে, Four Qualities of a True Statesman (1) A Bedrock of Principles (2) A Moral Compass (3) A Vision and (4) The Ability to Build a Consensus to Achieve that Vision