ফাঁস হয়ে পড়া পরিকল্পনায় সংঘঠিত খুন এবং সাধারনের নিরাপত্তা

Vy Faiz Tayieb

ক্ষমতাসীন দলের একজন নির্বাচিত সিটি কমিশনার রাষ্ট্র কর্তৃক সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়া নিজের বিনা বিচার হত্যা সম্পর্কে জেনে গিয়েছিলেন। অত্যন্ত ট্র্যাজিক ব্যাপার এই যে, আগেই রাষ্ট্রীয় হত্যার পরিকল্পনা যেনে ফেলার পরও এবং ক্ষমতা বলয়ের লোক হবার পরেও এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি হবার পরেও তিনি ক্ষমতাবলয় কে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে প্রভাবিত করতে পারেননি। সম্ভভত রক্তক্ষয়ী ক্ষমতার যুদ্ধ এমনই। এর নিয়তি একমুখী। হয় তুমি স্বার্থের ধারক, নতুবা তুমি শত্রু, তোমার মৃত্যু অবধারিত।

তিনি মৃত্যুর ২ সপ্তাহ পূর্বেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে গিয়ে স্বয়ং সাক্ষাতে পরিকল্পিত খুনীদের নাম প্রকাশ করে তার জীবনের আকুতি জানিয়েছেন অর্থাৎ ব্যক্তি নজরুল রাষ্ট্রের কাছে ফাঁস হয়ে পড়া রাষ্ট্রীয় হত্যার বিপরীতে আত্মসমর্পণ করে অপ্রাঠিস্থানিক ভাবে প্রান ভিক্ষা করেছেন।

“স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের জ্ঞাতসারেই চার সহযোগীসহ খুন হয়ে গেলেন নারায়ণগঞ্জের সিটি কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম। খুন হওয়ার আগে তিনি অপহূত হয়েছেন। তারও দুই সপ্তাহ আগে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তাঁকে বলেছিলেন, তাঁকে হত্যা করা হবে। যারা তাঁকে হত্যা করতে চায়, তাদের নামও তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বলেছিলেন।

 

তার সপ্তাহ দুই পর চার সহযোগীসহ সত্যিই অপহূত হলেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম। এবার তাঁর স্বজনেরা কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে হাজির হলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাসায়। নজরুলের বৃদ্ধ মা মন্ত্রীর কাছে আকুতি জানালেন, ‘বাবা, যে করেই হোক, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেন।’ কিন্তু নজরুল জীবিত ফিরে এলেন না। অপহূত আরও ছয়জনের সঙ্গে তিনিও লাশ হয়ে ভাসলেন শীতলক্ষ্যা নদীতে।

সুত্রঃ প্রথম আলো

কোন সাড়া না পেয়ে তিনি তার গডফাদার শামীম ওসমান এর কাছে গিয়ে  আবারো অপ্রাঠিস্থানিক ভাবে প্রান ভিক্ষা করেছেন। যে তাকে খুনের পরোক্ষ ইঙ্গিত অথবা সতর্কতা দিয়ে সাবধান করেছেন।

“শামীম বলেন, মৃত্যুর আগের দিন নজরুল আমার কাছে এসেছিল। জানিয়েছিল আমার জামিনের প্রয়োজন। আমি বারের এক্স প্রেসিডেন্টকে বললাম ওর জামিনের প্রয়োজন। একটু করিয়ে দিয়েন। নজরুলকে বলেছি যাবা যখন বি কেয়ারফুল। সাবধানে যাবা। একসঙ্গে চার পাঁচজন যাবা। আমার একটা কমন সেন্স ছিল চার পাঁচজন হলে কেউ কিছু করবে না। করলেও জানা যাবে কারা করেছে। কেন করেছে। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা যে বাংলাদেশে ঘটতে পারে।

 

সুত্রঃ মানবজমিন” আরো লক্ষণীয় যে গডফাদার বলছেন তিনি রাষ্ট্রের নির্বাহী কে ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই জানিয়েছেন।

 

“শনিবার বেসরকারি ইন্ডিপেডেন্ট টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ঘটনা ঘটার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছেন।

সুত্রঃ ইন্ডিপেডেন্ট টেলিভিশন , মানবজমিন”

লক্ষণীয় ভাবে তার এই অপ্রথিস্থানিক প্রান ভিক্ষায় আদালত জড়িত নয়, অর্থাৎ তিনি যেনে বুঝে আদালতে না গিয়ে ক্ষমতা বলয়ের চেইন কে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে প্রানপন চেষ্টা চালিয়েছেন। এটা সময়ের বিবেচনায় যুক্তিযুক্ত, সাম্ভাভ্য হত্যার মুখে পতিত (সন্ত্রাসের অভিযুক্ত) ব্যক্তিও এই ক্রুয়েল আর অমানবিক রাস্ট্রের চরিত্র বুঝে আদলতের শরণাপন্ন হন নি।

এখানে অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট ভাবে ক্ষমতাবলয়ের চেইন অফ কমান্ড প্রকাশিতঃ

 

রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় >> সন্ত্রাসের ডাকসাইটে গডফাদার >> রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী।

গডফাদার এই পর্যায়ে এসে নিজ দলের রাষ্ট্রের নির্বাহী বা রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কে অভিযুক্ত না করে, অভিযোগের অঙ্গুলি দেখালেন কিছু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের প্রতি, যা তার পূর্বের স্বীকারোক্তির সাথে পুরপুরি অসামাঞ্জস্য পূর্ণ এবং  ঘটনা আড়ালের পরিষ্কার পরিকল্পনা।

“”

 

আপনি কি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি ইঙ্গিত করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম বলেন, সর্ষের মধ্যে ভূত আছে। কিছু না কিছু সহযোগীতা আছে। বিষয়টা রাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে। ইউদিন টেন মিনিটস। প্রতিবেদক প্রশ্ন করেন, মানে আপনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন? জবাবে শামীম বলেন, সমস্ত কিছু জানিয়েছি।

সুত্রঃ ইন্ডিপেডেন্ট টেলিভিশন , মানবজমিন

ঘটনা প্রবাহে এখানে অনিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে ঘটনা আড়ালের এই  পরিষ্কার পরিকল্পনা রাস্ট্রের যা গডফাদার সাংসদ এর মাধ্যমে প্রকাশিত।

র‍্যাবের বিরুদ্ধে তদন্ত কমটি ঘঠিত হবার পর বের হওয়া সংবাদ বলছে রাষ্ট্র এবং ভিক্টিম দুয়ের অভিযোগ ভিন্ন দিকে, যা রাষ্ট্রের ভন্ডামী কে আরো প্রকট করে তুলছে।

 

“”স্বামী অপহরণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শামীম ওসমানের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম। গতকাল সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঘটনার পরপরই শামীম ওসমানের কাছে ছুটে যাই। আমি তাঁকে বলি, নূর হোসেন আমার স্বামীকে অপহরণ করেছে। আপনি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। তিনি আমাকে বলেন, “নূর হোসেন এই কাজ করতে পারেন না।” ২৭ এপ্রিল নজরুল অপহরণের পর সাংবাদিকেরা খোঁজ করে জানতে পারেন, নূর হোসেন ও শামীম ওসমান একসঙ্গে রাইফেল ক্লাবে আছেন। সেখানে গেলে শামীম ওসমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘নূর হোসেন কখনোই নজরুলকে হত্যা করতে পারেন না।’এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম ওসমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নজরুল ও নূর হোসেন দুজনেই আমার কর্মী ছিল। আমি কখনোই ভাবিনি, নূর হোসেন এভাবে অপহরণ করে হত্যা করতে পারে। নজরুল কিছুদিন আগে আমার কাছে এসে জানিয়েছিল, তাকে মেরে ফেলা হবে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সবাইকে বলে দিয়েছিলাম। সর্বশেষ মামলার হাজিরা দিতে কোর্টে আসার আগে আমার সঙ্গে নজরুল দেখা করতে এসেছিল। আমি তখন তার জামিন করিয়ে দেওয়ার জন্য আইনজীবী আনিসুর রহমানকে বলে দিই। আমি তাকে বলেছিলাম, একা চলাফেরা কোরো না। পাঁচ-ছয়জন লোক নিয়ে থেকো। আমি ভেবেছিলাম, বেশি লোকজন থাকলে কেউ তার কিছু করতে পারবে না। কিন্তু তার পরও তাকে মেরে ফেলা হলো।’

 

ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবার নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও আপনি নূর হোসেনের পক্ষ নিয়েছিলেন। জবাবে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, নূর হোসেন সর্বোচ্চ হাতাহাতি করতে পারে। কিন্তু সে যে এভাবে নজরুলকে মেরে ফেলবে, সেটা আমি বুঝতে পারিনি।’

সুত্রঃ প্রথম আলো “”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কার্যকলাপ হতে এটা বুঝা যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই  হত্যা সম্পর্কে সরাসরি অবহিত, ঘটনার ৬/৭ দিন পর হত্যা কারীর বাসায় তল্লাশি, একজন সন্ত্রাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে কতিপয় বাহিনীর সদস্যকে অভিযুক্ত করন এবং তদন্ত কমিটি ঘটন, এই অবিচারী এবং হিংস্র রাষ্ট্রের সাধারন চরিত্র। এখানে একটি নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠনই রাষ্ট্রের দায় দায়িত্ত্বের শেষ।

এটাই কি উত্থান আর পতনের ধারিবাহিকতা , এটা কি চলবে?

 

উত্তর হ্যাঁ।

চাঁদাবাজি, খুন, সন্ত্রাস, অন্যের সম্পদ লুটপাট ইত্যাদি কাজে সহায়তা করা চামচা দের এটাই পরিনতি। গডফাদার এবং সন্ত্রাসী দলের নির্বাচিত নির্বাহী সবাই এই চেলাদের দুরবলতা জানেন। এদের জনসংস্লিটতা নেই। এদের খারাপ কাজ এদেরই, টুকটাক ভালো কাজের সাফল্য গদফাদার দের।  নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি এবং বল প্রয়োগের মাধ্যমে এরা সাময়িক জনপ্রতিনিধি হন, তাও গডফাদার জানেন, তাই দুনিয়া থেকে তাদের সরিয়ে দেয়া ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ সৃষ্টি করে না তার জন্য। আদালত গডফাদার দের কাজের প্রমান পায় না, এই চেলাদেরই মাঝে মধ্যে ধরে। তাই তারাও আদালতে যায় না। তাই এই নিয়তি একমুখী।

এই হিংস্র গল্প ক্ষমতাবলয়ের অবাধ্য লোকের নিয়তির। এবার বলি সাধারনের কথা। ব্যাক্তি নাগরিকের হত্যার  পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে পড়ার বা ভিতর থেকে তা বের করে আনার লোক এই রাষ্ট্র কাঠামোতে নেই। তার নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক্সেস, তার নেই প্রতাপশালী গডফাদার। তার নেই রাষ্ট্রের নির্বাহীর কার্যকর চ্যানেল যার মাধ্যমে ” ইউদিন টেন মিনিটস” অপহরনের খবর পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ তার ভাগ্য নির্ধারিত। তাকে ক্ষমতার স্বার্থে কাজ করতে হবে, উপার্জিত কিংবা উত্তরাধিকারের ব্যক্তি সম্পদের ভাগ বন্টন শেয়ার করতে হবে। ভুল করে হলেও অন্যের অপকর্ম দেখে ফেলা যাবে না, আড়িপাতা তো দুরের কথা। ব্যাত্যয় হলে তার প্রান যাবে। সাধারনের নিরাপত্তা এই সমাজে ক্ষমতার কৃপা।

ব্যক্তি নাগরিকে প্রানে বেঁচে থাকতে হলে হয়-  ক্ষমতার স্বার্থে তার সব কাজ, পরিকল্পনা, সম্পদ এবং সহায় নিবেদিত করতে হবে। চাহিবা মাত্র চাঁদা দিতে হবে।

খুন, গুম, অপহরন, ঘুষ, টেন্ডার ইত্যাদিতে অংশগ্রহন করা সন্ত্রাসীর পদচিহ্ন জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতে ফলো করা যাবে না। অগত্যায় সম্পদ চলে আসলে, সন্ত্রাসের ব্যাপার যেনে ফেললে নিজের যান হাতে নিয়ে থাকতে হবে, রাষ্ট্র তার মন্ত্রী, সাংসদ কে জানানো যাবে না। ক্ষমতাবলয়ের সব, সব কাজ কর্ম সমর্থন করতে হবে।

নতুবা  জ্ঞাতে এবং অজ্ঞাতে, ইচ্ছায় এবং অনিচ্ছায় মানুষেরই অপকর্মে ডুবে যাওয়া সমাজে সাধারনের একমাত্র গন্তব্য প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ আর ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ-দেশ সংস্কার/সংশোধন এর প্রানান্ত চেষ্টা।   স্রষ্টার কাছে কৃপা চেয়ে প্রান হাতে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিপ্লব করতে হবে, সমাজকে জাগ্রত করতে হবে, মানুষ কে ঘরে ঘরে গিয়ে বুঝাতে হবে, সুশাসন, মানবাধিকার আর ন্যায়বিচার প্রঠিস্থার জন্য সংগ্রাম করতে হবে। সুশাসন আর ন্যায় বিচার এমনি এমনি আসবে না, অনেক অনেক ত্যাগ করতে হবে এর জন্য।

সমাজের প্রতি স্তরে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার নিয়মতান্ত্রিক বিপ্লব করতে হবে। নিজে দুর্নীতি মুক্ত, লোভ মুক্ত, সৎ এবং  সাধারণ জীবন যাপন করতে হবে, সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। চোর, প্রতারক, সুদখোর, ঘুষখোর নিজ দলের হলেও তাকে নসিহত এবং প্রয়োজনে প্রতিহত করতে হবে।

”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””

 

বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার নিকট,

 

মানুষের অধিপতির নিকট, মানুষের মা’বুদের নিকট।

 

সুরা আন-নাস, আয়াত:১-৩

 

আল কুরআন

‘‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি, তোমদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে। আর আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করবে।”

সূরা আলে ইমরান: আয়াত:১১০

 

আল কুরআন

”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s