ওরা মুক্তিযোদ্ধা নয়, ট্রেইটর!

মাহবুব মিঠু।।

মতিউর রহমান সম্পাদিত প্রথম আলো এবং গোলাম সারওয়ারের সমকাল পত্রিকায় মোদির রাজনৈতিক উত্থান বর্ণনা প্রসঙ্গে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছে। মাঝখানে দুইটা দিন অতিবাহিত হলেও এখনো পত্রিকা অফিস থেকে কোন ব্যাখ্যা না পাওয়াতে আমরা ধরে নিতে পারি এটা কোন অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসকে অমর্যাদার জন্যই তাদের এই অপচেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না আসাতে ধরে নেয়া যায় সরকারের অবস্থানও একই। কিছুদিন আগে ভারতের একটা ছবিতেও ইতিহাস বিকৃতির এই অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে তারা ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়। এতোকিছুর পরেও প্রথম আলো এবং সমকালের এই ইতিহাস বিকৃতি নিছক ভুল বলা হলে নিজের বিবেচনা এবং বিচার শক্তিকে অবজ্ঞা করা হবে।

 

ইতিহাস বিকৃতির পিছনে তাদের উদ্দেশ্য কি সেটা একদিন প্রকাশিত হবেই। তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ আখ্যা দিয়ে একাধারে ত্রিশ লক্ষ শহীদদের আত্নাকে আহত করেছে। ৭১ সালের যুদ্ধ যদি ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হয়, তবে বাঙলাদেশী যারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল তাদের অবস্থান কোন পক্ষে ছিল? যেহেতু তারা পাক সেনাদের বিরুদ্ধে লড়েছে, তাই অবশ্যই তাদের অবস্থান ভারতের পক্ষে। অর্থাৎ আমরা যাদের মুক্তিযোদ্ধা বলি তারা প্রথম আলো এবং সমকালের ভাষায় মুক্তিযোদ্ধা নয়, বরং ভারতের সহযোগী শক্তি হিসেবে নিজ দেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিল। তখন বাঙলাদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত থাকায় যেহেতু তারা ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতের পক্ষে অস্ত্র ধরেছিল, তাই তারা মুক্তিযোদ্ধা নয়, বরং ট্রেইটর ছিল।

এই স্পর্ধা কোথায় পেল প্রথম আলো এবং সমকাল পত্রিকা?

 

তাদের ইতিহাস বিকৃতির আরেকটি ব্যাখ্যা করা যায়। আমাদের কাছে যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরম শ্রদ্ধার ব্যাক্তি, তারা মূলতঃ তখনকার নিজ দেশের সৈনিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল শত্রুরাষ্ট্র (পাকিস্তানের শত্রু রাষ্ট্র যেহেতু ভারত ছিল)ভারতের পক্ষ হয়ে| তারই বাই প্রোডাক্ট আমাদের আজকের স্বাধীন বাঙলাদেশ। যেহেতু এটা আমাদের লড়াইয়ের ফসল নয়, বরং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের বাই প্রডাক্ট, তাই আমরা স্বাধীন হয়েও ভারতের কাছে এতোটা ঋণী যে, পুরো দেশটা তাদের হাতে এক প্রকার তুলে দিয়েও সে ঋণ শোধ হবার নয়।

 

প্রথম আলো এবং সমকালের এই ঔদ্ধত্যের কি কোন বিচারই হবে না?



কিছুটা বাড়তি যোগঃ

লেখাটা আমার ফেইসবুকে দেবার পরে এক বন্ধু নয়া দিগন্ত পত্রিকার একটা লিঙ্ক দিল। যেখানে প্রথম আলোর মতো একই রিপোর্ট হুবহু দেখান হয়েছে। অর্থাৎ ইতিহাস বিকৃতিতে প্রথম আলো এবং সমকালের সাথে নয়া দিগন্ত পত্রিকাও একই কাতারে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়া দিগন্ত পত্রিকা প্রথম আলো এবং সমকালের বিপরীত অবস্থানে। নয়া দিগন্ত জামাতপন্থী পত্রিকা হিসেবেই বেশী পরিচিত।

নয়া দিগন্ত তাদের রাজনৈতিক আদর্শ থেকে ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে গন্ডগোল কিম্বা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ বলে স্বাচ্ছন্দবোধ করার কথা। কারণ তখন জামাতের অবস্থান ছিল মুসলীম লীগের মতো পাকিস্তানের পক্ষে। কাজেই তারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হিসেবে তুলে ধরতে পারলে যাদেরকে আমরা রাজাকার কিম্বা যুদ্ধপরাধী বলি তারা মূলতঃ হয়ে যাবে দেশপ্রেমিক।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s