এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান
স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ চার দশক পার হয়ে আরো দুই বছর অতিক্রম করেছে। কর্মঠ জনশক্তি আর উর্বর মাটিসহ অফুরান প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে এই সময়ে আমাদের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া বা মালয়েশিয়ার মতো একটি মধ্যম উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত হতে পারত। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বকে সুগভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংস করে বা সরিয়ে দিয়ে বারবার বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের উৎস দেশের বাইরে হলেও কুশীলবরা দেশের ভেতরেরই মানুষ। তারা জানে, একটি দেশের অগ্রগতিকে থামাতে হলে তাকে নেতৃত্বশূন্য করতে হয়। সে কারণে বারবারই তারা দেশপ্রেমিক ও জনপ্রিয় গতিশীল নেতৃত্বকে সরাতে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভেদ তৈরি করেছে, নেতাদের চরিত্রে কালিমা লেপন করেছে, তারপর নেতাদের হয় হত্যা, নয় পঙ্গু করে নির্বাসনে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করেছে।
বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতি খুব খারাপ সময় অতিক্রম করছে। সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে বাদ দেবার পর দশেরে ৮০% জনগনের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে গত ৫ জানুয়ারী একটি প্রহসনের জাতীয় নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ অবধৈভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। আর সেই ক্ষমতা নিরংকুশ করতে একের পর এক বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম-খুন করে বাংলাদেশকে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করানো হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর দমন নির্যাতনের মাত্রা এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো পর্যন্ত বাংলাদেশেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রেখেছে। প্রশাসন হতে শুরু করে শিক্ষা, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে পরীক্ষিত সরকারি দলের লোক না হলে তাকে নিষ্কৃয় করে রাখা হয়েছে। একটি দেশের অর্ধেকের ও বেশি মানুষকে নিষ্কৃয় করে রেখে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব হয় না।
এই বিশৃঙ্খলার সুযোগে দুর্নীতিবাজ আমলা, রক্তচোষা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অসাধু ব্যবসায়ী আর দাগী অপরাধীরা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। শেয়ারবাজারে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকির হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ, এমএলএম ব্যবসার ফাঁদে পড়ে পথের ফকির হয়েছেন আরো কয়েক লক্ষ বিনিয়োগকারী। সামান্য মুদী দোকানদারও ব্যাংক জালিয়াতী করে লুট করেছে জনগণের চার হাজার কোটি টাকা। কুইক রেন্টালের নামে জনগণের সম্পদ লুট করার কারণে বিদ্যুতের মূল্য ছয়গুণ বৃদ্ধি করে মানুষের জীবনযাত্রাকে করে তোলা হয়েছে কঠিন থেকে কঠিনতর। তেল-গ্যাসের দাম বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে গেছে বাসভাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। দেশের মূল্যবান জ্বালানী সম্পদ লুণ্ঠনের ওপর প্রতিবেদন তৈরী করতে গিয়ে খুন হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী আর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গুম হয়েছেন জননেতা ইলিয়াস আলী। এমন গুম আর খুনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে; নদী-খাল-বিলে এখন পঁচা লাশের মিছিল।
এইসব সমস্যা নিরসনে দেশে একজন গতিশীল জাতিয়তাবাদী নেতার প্রয়োজন। যুগে যুগে কোন দেশের রাজনৈতিক সংকট হতে উত্তরণের জন্য গতিশীল জাতীয়তাবাদী নেতারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। এমন উদাহরণ বাংলাদেশেও রয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক নেতাদের অনুপস্থিতিতে তৎকালীন মেজর জিয়া থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলো, সেই স্বপ্নকে ভেংগে ধুলিষ্যাৎ করে দেয় বাংলাদেশের প্রথম সরকার। তারা স্বাধীন দেশে আবারো নিপীড়ন নিষ্পেষনের স্টিম রোলার চালাতে শুরু করে। মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে হত্যা এবং গনতন্ত্রকে হত্যা করে এক দলীয় শাসন কায়েম করে দেশের মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে তোলে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতাসীন দলের উপদলীয় কোন্দলে সেনাবাহিনীর মধ্যমসারীর কর্মকর্তাদের অভুত্থানে শেখ মুজিব নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন তৎকালিন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ।
পরবর্তী তিন মাসে একাধিক অভুত্থান ও পাল্টা অভুত্থানের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সেনাবাহিনী হতে জোর করে অবসরে পাঠানো মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সিপাহী-জনতার সম্মিলিত শক্তি দেশ বাঁচানোর জন্য নেতা হিসেবে মনোনীত করেন। তিনি চাইলে তখনই প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে থাকেন। রাষ্ট্রপতি সায়েম বার্ধক্যজনিত কারণে অবসরে গেলে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জেড-ফোর্স ও এক নম্বর সেক্টরের বীর নেতা আবারো নিজ দেশের নেতৃত্ব দিলেন এক দুর্দান্ত ও চৌকষ গতিতে। রাষ্ট্রপতি হবার পর জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের মানুষের জন্য সর্ব প্রথমে একটি অভিন্ন জাতীয়তা নির্ধারণের প্রয়োজন অনুভব করেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের মতের ও ধর্মের নানা জাতিগোষ্ঠি বাস করে। তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার ধরণ একে অপরের থেকে ভিন্ন। তাই শহীদ জিয়া মনে করতেন যে, ভাষা বা সংস্কৃতির ভিত্তিতে নয়, বরং ভূখণ্ডের ভিত্তিতেই জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করা উচিত। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সকল জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের ঐক্য ও সংহতির পথ তৈরী করেন। এই পদক্ষেপই ছিল দেশের সকল মানুষকে একসাথে ঐক্যবদ্ধ করার প্রথম পদক্ষেপ।
শহীদ জিয়া বাংলাদেশে পুনরায় বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করেন এবং দেশের গুণীজনদের সম্মাননা প্রদানের জন্য ‘একুশে পদক’ প্রবর্তন করেন। অত্যন্ত্র দ্রুত গতিতে তিনি সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন এবং পুলিশ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসেন। মানুষের মত প্রকাশের সুবিধার্থে ফিরিয়ে দিতে তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন।
মাত্র চার বছরের ক্ষমতাকালে তিনি দেশে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন নিয়ে আসেন; পূর্বে আলোচিত পদক্ষেপের বাইরে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান; জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি; বিচার বিভাগের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া; দেশে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব; সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুন:খনন; গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লক্ষ মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দান; প্রায় ৩ হাজার মাইল রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার করা; ২৭ হাজার ৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার প্রভূত উন্নতির পাশাপাশি জন্ম নিয়ন্ত্রণে অবিশ্বাস্য সাফল্য অর্জন; নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ এবং সরকারি কল-কারখানায় তিনটি শিফট চালু করে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি করা; সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে খাদ্য রপ্তানীর পর্যায়ে উন্নীতকরণ; যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুব ও নারী সমাজকে সম্পৃক্তকরণ; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্জিত সাফল্যের মধ্যে রয়েছে- জাপানের মত শক্তিশালী দেশকে নির্বাচনে পরাজিত করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্যপদ লাভ; তিন সদস্যবিশিষ্ট আল-কুদস কমিটিতে সদস্যপদ লাভ; দক্ষিণ এশিয়ায় একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা হিসেবে সার্ক প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক উন্নতির মাধ্যমে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানীর পথ উন্মুক্ত করা। অনবদ্য ভাষায় নিজের দেশের স্বার্থকে যৌক্তিকভাবে বিদেশে উপস্থাপনের উদাহরণ হিসেবে সৌদি বাদশাহ খালিদ বিন আব্দুল আজিজ এর সাথে তার প্রথম সাক্ষাতের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে।
বাদশাহর সাথে কুশল বিনিময়ের পরপরই জিয়াউর রহমান বললেন,
– তোমার দেশে যা নেই, আমার দেশে তা আছে, আবার আমার দেশে যা নেই, তা তোমার দেশে আছে।
সউদি বাদশাহ থতমত খেলেন। গরীব একটা দেশের এই কালো নাতিদীর্ঘ প্রেসিডেন্ট বলে কি!
জিয়াউর রহমান আবারো বললেন,
– আমার দেশে অনেক পরিশ্রমী মানুষ আছে, তারা অনেক কাজ করতে পারে। আর তোমার দেশে যেমন কাজ আছে, তেমনি টাকাও আছে।
একইভাবে আর্জি নিয়ে গেলেন মরুভূমির প্রায় সবগুলো দেশে। বাংলাদেশের মূল্যবান জনশক্তি প্রথমবারের মত রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদেশে রপ্তানী শুরু হলো। বিদেশে প্রশিক্ষিত শ্রমিকের বেতন বেশি হওয়ার কারণে তিনি দেশ্যব্যাপী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে বাংলাদেশের বেকার যুবকদের দ্রুত প্রশিক্ষিত করার ব্যবস্থা করলেন। প্রায় শূন্য থেকে শুরু করে আজ সউদি আরবে তিরিশ লাখ বাংলাদেশী, সংযুক্ত আরব-আমিরাতে এগারো লাখ, কুয়েতে আড়াই লাখ, ওমানে সোয়া দুই লাখ, কাতারে প্রায় পৌনে দুই লাখ আর বাহরাইনে প্রায় এক লাখ মানুষ বাংলাদেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জন করছেন। আজ সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমিকদের যে শ্রম বাজার তৈরী হয়েছে তার একক কৃতিত্ব শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে সরকারি হিসেবে ছাব্বিশ হাজার এবং বেসরকারি হিসেবে দশ লক্ষ মানুষের জীবনহানী হয়েছিলো যখন দেশের জনসংখ্যা ছিলো মাত্র সাড়ে সাত কোটি। সেই সময় কেউ কি ভেবেছিলেন যে, এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মধ্যেই ষোল কোটি মানুষ খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারবেন? শহীদ জিয়ার সবুজ বিপ্লবের কারণেই আজ বাংলাদেশের মানুষ কোনরূপ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি না হয়ে বেঁচে আছেন।
বলা বাহুল্য, যে গতিতে তিনি বাংলাদেশে উন্নয়নের জোয়ার এনেছিলেন তা বাংলাদেশের শত্রুদের পছন্দ হয়নি। সাবেক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা অশোক রায়নার লেখা ‘ইনসাইড র’ বই এবং কোলকাতা হতে প্রকাশিত ‘উইকলি সানডে’ পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ‘র’ প্রধান কাও এর নেতৃত্বে জেনারেল জিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোরারাজি দেশাই এই পরিকল্পনা স্থগিত করার আদেশ দেন, যদিও ততদিনে পরিকল্পনা অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় আসলে ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা করা হয়।
শহীদ জিয়ার সেই সকল কর্মসূচী এবং জাতীয় ঐক্য এর পরের সরকারগুলো মোটামুটি রক্ষা করে চললেও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সর্ব প্রথম বিরোধী দল ও বিরোধী দলের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী বা বিরোধীদলের সমর্থক সন্দেহে দেশের একটি বিশাল জনশক্তিকে দেশ গঠনের কাজ থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে জাতি বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়ায় দেশ শাসনের সূত্রপাত করে। বলা বাহুল্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ/বিপক্ষ হিসেবে এই বিভাজন করা হলেও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চিহ্নিত যুদ্ধপরাধী ফায়জুল হককে তারা মন্ত্রী করে। সুতরাং একথা নিশ্চিত যে, এই বিভাজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে/বিপক্ষে করার অযুহাত দেয়া হলেও মূলত: এই বিভেদ তৈরী করা হয়েছিলো আওয়ামী লীগ ও তার বিরোধীদের মধ্যে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর এই বিভেদ এখন চরম আকার ধারণ করেছে।
একটি দেশের নাগরিকরা এভাবে রাজনৈতিক বিভক্তির শিকার হলে কখনোই সেই দেশে উন্নয়ন আসতে পারে না বরং দেশি-বিদেশি অপশক্তি এই সুযোগে দেশের ক্ষতি করার কাজে লিপ্ত হয়। বিগত দুই যুগের রাজনৈতিক চর্চা এবং জাতীয় নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহনের ধরণ দেখে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে বাংলাদেশের জনগণ এখনো প্রধান দুই দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই থাকতে আগ্রহী। রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে এই দুই দলের বাইরে নতুন বিকল্প শক্তি হিসেবে জনগণের মন জয় করার মত কোন ক্যারিশমেটিক নেতাও নেই।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের একটি বিরাট অংশের সমর্থন থাকলেও অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক সত্যি হচ্ছে, এই দলের নেতার নেতৃত্বে গতিশীলতা এবং প্রাজ্ঞতার কোনটাই নেই। রাজনৈতিক পরিবেশে উনার অরাজনৈতিক বক্তব্য এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে যেমন নষ্ট করেছে ঠিক তেমনি কুটনৈতিক পর্যায়ে অকুটনৈতিক আচরণের কারণে বাংলাদেশের সাথে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। প্রশাসনিক অদক্ষতা এবং দুর্নীতি দমনে ব্যর্থতার কারণে দেশের জনগণ যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তেমনি বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের মূল্যবান শ্রমবাজার হাতছাড়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে অপ্রীতিকর বাক্য ও পত্র বিনিময় তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আওয়ামী লীগের মধ্যে পরবর্তী নেতৃত্বেও তেমন কোন প্রাজ্ঞ ও গতিশীল নেতা দেখা যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন এবং কোন কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংযুক্ত ছিলেন। দলের কোন পর্যায়ে সদস্যপদ না থাকা অবস্থায় উনার এই কর্মকাণ্ড খোদ দলের নেতাদের মধ্যেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর পূত্র জনাব সজিব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের সদস্য নন। তবে তাঁদেরকে বিভিন্ন বিদেশী অতিথির আগমনে এবং বিদেশে সরকারি সফরের সময় রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে অবস্থান করতে দেখা যায়। এমনকি ২০১২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাম্প্রতিক অধিবেশনে এই দুই ভাই-বোনকে প্রধানমন্ত্রী ও কুটনীতিকদের আসনে বসে থাকতে দেখা যায়, যা সমগ্র বিশ্বে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। উল্লেখ্য যে এই তিন সম্ভাব্য নেতার কেউই বাংলাদেশে অবস্থান করেন না এবং বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের সাথে তাঁদের কোন যোগাযোগও নেই।
অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র জনাব তারেক রহমান উত্তরাধিসূত্রে নয় বরং পরিবারে বিদ্যমান রাজনীতির পরিবেশের কারণেই নিজের ব্রত হিসেবে রাজনীতিকে বেছে নিয়েছেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি বগুড়া জেলায় বিএনপির নির্বাচন প্রচারনা অভিযানে সংযুক্তির মাধ্যমে দলীয় রাজনীতিতে সরাসরি সংযুক্ত হন। এরপর তিনি বগুড়া বিএনপির সদস্যপদ গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বগুড়া জেলায় সংগঠনের ভিত্তি দৃঢ় করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০২ সালে জনাব তারেক রহমানকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। দলের উর্দ্ধতন পর্যায়ে নিয়োগ লাভের পর পরই তিনি দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সাথে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। মূল সংগঠনসহ সহযোগী সংগঠন যেমন জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কর্তৃক আয়োজিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে জনাব তারেক রহমান কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন এবং মাঠপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ও মতামত গ্রহণ করেন।
এই সভাগুলোতে তিনি মূলত দলের গঠনতন্ত্র, উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে দীর্ঘ মতবিনিময় করতেন। বিস্তারিত মতবিনিময়ের বিষয়বস্তুর মাঝে আরও থাকতো দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে দলের করণীয় ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন- অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে সরকারী দল হিসেবে বিএনপির করণীয় প্রসঙ্গে আলোচনা। পরবর্তীতে দেখা গেছে যে এই জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মনোবল অসামান্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এই কারণেই জনাব তারেক রহমান শুধুমাত্র দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিতি থেকে মুক্ত হয়ে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বাবা-মার পরিচয়ে পরিচিত না হয়ে নিজের স্বতন্ত্র ইমেজ তৈরীর জন্য ২০০২ সালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক জনসভায় তিনি ঘোষণা করেন, “আমি তারেক জিয়া হিসেবে পরিচিত হতে চাই না। আমি তারেক রহমান হিসেবে পরিচিত হতে চাই।”
কৃষি প্রধান অর্থনীতি এবং গ্রামপ্রধান দেশে যে কোন বিপ্লবের সূচনা করতে হয় গ্রাম থেকে। ১৯৪১ সালে চেয়ারম্যান মাও সেতুং চীনে এভাবেই বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন যা বিশাল লংমার্চ এ রূপ নিয়ে শেষ হয়েছিলো ১৯৪৯ সালে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানও গ্রাম থেকেই তাঁর রাজনীতি শুরু করেছিলেন। খাল খনন ও সবুজ বিপ্লবের কাজে তিনি প্রায় প্রতিদিনই ঘুরে বেড়িয়েছেন গ্রামেগঞ্জে। তারই সুযোগ্য সন্তান হিসেবে তারেক রহমানও একই পথ বেছে নিয়েছিলেন। নব্বই এর গণ অভ্যুত্থানের পর থেকে একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিলো যে সরকার রক্ষা করতে হলে ঢাকা দখল করতে হবে। তাই তখন বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকা- ঢাকাকেন্দ্রীক ছিল।
তারেক রহমান যেন হঠাৎ করেই বাঁধ ভেঙে দিয়ে জোয়ারের সৃষ্টি করলেন। ‘গ্রাম মার্চ’ কর্মসূচীর মাধ্যমে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগঠনের কাজ করতে শুরু করলেন। দরিদ্র কৃষকের জন্য বিনামূল্যে ‘কমল বীজ’ আর দরীদ্র নারীদের জন্য হাঁস-মুরগী বিতরণ করে গ্রামের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে অবস্থান তৈরী করলেন। মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এর পক্ষ হতে মেধাবৃত্তি এবং কম্পিউটার ও ল্যাপটপ প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। শীতের তীব্রতায় কষ্ট পাওয়া গরীব মানুষের পশে তিনি প্রতিবছর শীতবস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেই সময় থেকেই বিএনপির অসংখ্য কর্মী তারেক রহমানের মধ্যে দেখেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবি।
বর্তমান সরকারি দল আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের সমূদ্রসীমা নির্ধারণের রায়কে ‘সমূদ্র বিজয়’ বর্ণনা করে নিজেদের কৃতিত্ব দাবী করছে। অথচ এই সমূদ্র সীমা হতে দেশের জনগণের উপকারের জন্য এখনো পর্যন্ত তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ২০০৩ সালেই এক টিভি সাক্ষাৎকারে জনাব তারেক রহমান বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বাঁধ দিয়ে পলি সংগ্রহ করে দেশের আয়তন বৃদ্ধির চিন্তা করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের বনানীস্থ কার্যালয় থেকে ২০০৪ সালের শুরুর দিকে জনাব তারেক রহমান দলীয় যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ইন্টারনেট এবং ফোনের মাধ্যমে প্রায় ২ ঘণ্টা যাবৎ তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। যদিও সে সময় বাংলাদেশে তথাকথিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামে কোনো শ্লোগান ছিল না; তবে তথ্য-প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করে একটি আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কার্যকর পদক্ষেপ ছিল সেটাই প্রথম; সেটাই ছিল বাংলাদেশকে ই-গভর্নেন্সের আওতায় আনার বাস্তবমুখী উদ্যোগ। তিনি রাজনৈতিক উদারতার অকপট উদাহরণ তৈরী করেছেন টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে গিয়ে এবং সজিব ওয়াজেদ জয়কে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে।
জনাব তারেক রহমান বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়কে দলের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপির নির্বাচনী কর্মকাণ্ড, কৌশল নির্ধারণ, প্রচার-প্রচারণা সব কিছুই এই কার্যালয়ে বসে করা হয়েছে। দলীয় রাজনীতিতে স্বচ্ছতা আনতে এই কার্যালয়ে গড়ে তোলা হয়েছিলো দেশের প্রথম কোন রাজনৈতিক দলের কম্পিউটারাইজড ডাটাবেজ। দলীয় নেতা-কর্মীদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা এবং দেশব্যাপী দলের কার্যক্রমের বিস্তারিত এ্যাকশন প্ল্যান করা হতো এই কার্যালয় থেকেই।
এসব কারণে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিরোধী শক্তিগুলো উদীয়মান গতিশীল নেতা তারেক রহমান এবং তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক কার্যালয়কে জনসমক্ষে হেয় করার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তারা এটা বুঝতে পেরেছিলো যে, তারেক রহমান অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিএনপির ভবিষ্যত নেতা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন অথচ তাঁর বিপরীতে দাঁড় করানোর মত কোন বিকল্প নেতা নেই। এই কারণেই জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তারা পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মিথ্যা বিষেদগার করে গেছে। কক্সবাজারে তিনি যে হোটেলে কর্মী সম্মেলন করেছেন, সেই হোটেলকে তাঁর হোটেল বলে প্রচার করা হয়েছে, অন্যের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তার মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ২০০৮ সালে দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক নাইমুল ইসলাম লিখেছিলেন, “হাওয়া ভবনকে দুর্নীতির কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা এবং সেটা প্রতিষ্ঠিত করার একটি চেষ্টা ২০০১ সালের নির্বাচনের কিছুকাল পর থেকেই লক্ষ্য করা গেছে। হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্টদের ২০০১ সালের নির্বাচনে ভূমিকা এবং বিপুল সফলতা হাওয়া ভবনকে টার্গেট হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।”
২০০৭ সালের অবৈধ মঈন-ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানো হয় এবং পরিকল্পিত উপায়ে তাঁর উপর নির্যাতন করে তাঁকে পঙ্গু করে দেয়া হয়। কোন মামলাতেই তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির প্রমাণ না পাওয়ায় তিনি সবগুলো মামলায় জামিন লাভ করে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মূক্ত হন। জরুরী অবস্থা চলাকালীন সময়েও তাঁর মুক্তির দিনটিতে ঢাকা শহর কার্যত অচল হয়ে যায়। ঢাকা শহরের সকল মানুষের গন্তব্য সেদিন বিকেলে এক হয়ে গিয়েছিলো শাহবাগের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে; যেখানে তিনি তখন চিকিৎসাধীন ছিলেন। দীর্ঘ অপপ্রচার, নির্যাতন এবং মামলার পরও তাঁর জনপ্রিয়তা সামান্যতম হ্রাস না পাওয়ায়, আতঙ্কিত স্বৈরাচারীরা তাঁকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য এমনিতেও তার বিদেশে যাবার প্রয়োজন ছিলো। বাংলাদেশের রাজনীতি সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত এই নেতার অপেক্ষায় আছে।
যে, দেশে গুণীজনের কদর নেই, সে দেশে গুণীজন জন্মায় না। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর এই বাণীকে অবহেলা করে আমরা বারবার আমাদের দেশপ্রেমিক নেতাদের হত্যা করতে দিয়েছি, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে তাঁদের মরনোত্তর চরিত্রহানি করেছি এমন কি পাঠ্য পুস্তকে মিথ্যা ইতিহাস পর্যন্ত সংযোজন করেছি। আমরা আমাদের জাতীয় বীরদের অপমান করে নিজেরাই পশ্চাৎপদ ও পরমুখাপেক্ষী হয়ে আছি। মুক্তিকামী চেচেনদের নেতা যোখার দুদায়েভ এর মৃত্যুর পর চেচনিয়ার স্বাধীনতা অধরাই রয়ে গেছে। একজন ভাল নেতার অভাবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা তাঁদের ওপর চলা অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞকে বিশ্বের কাছে পৌছে দিতে পারছে না। আমরা সৌভাগ্যবান যে জিয়াউর রহমানের মত নেতা আমাদের দেশকে অগ্রগতির পথে নিয়ে এসেছিলেন এবং তারেক রহমানের মত নেতা আমাদের দেশকে ‘ইমার্জিং টাইগার’ পরিচিতি দিয়ে উন্নয়নের রানওয়েতে নিয়ে এসেছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে আমাদের উন্নয়নের বিমান উড্ডীন হয়নি। এখন আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এইসব ষড়যন্ত্র ও ষড়যন্ত্রের হোতাদের মোকাবেলা করে দেশে ও দশের উন্নয়নের জন্য তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণাকারীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।