সেনা অভ্যুত্থানঃ মুসলিম জাতিরাষ্ট্র প্রেক্ষাপট

আজ ১৯ আগস্ট । রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট অগাস্টাস (যার নামে ইংরেজী অগাস্ট মাসের নামকরণ করা হয়েছে) এর ২০০০তম মৃত্যুবার্ষিকী । তিনি জুলিয়াস সিজার পরবর্তী বিশৃঙ্খল অবস্থায় প্রথমবার পাক্স রোমানা (শান্তিপূর্ণ রোম) প্রতিষ্ঠা করেন এবং সম্রাট নামে নিজেকে ঘোষণা না দিয়ে প্রিন্সেপস্ সিভিতাতিস (রাষ্ট্রের প্রথম নাগরিক) হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন । ধারণা করা হয় নিজ স্ত্রী লিভিয়ার প্রয়োগ করা বিষপানে তিনি ১৪ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান । তবে অগাস্টাসের মৃত্যুবার্ষিকী স্বরণ করা আমার লেখার উদ্দেশ্য নয় । আজকের দিন আরো একটি ঐতিহাসিক এবং শিক্ষণীয় ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে । ১৯৫৩ সালে ঠিক এই দিনে (১৯ আগস্ট) ইরানের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেগ সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন । তার এই পতনে সরাসরি জড়িত ছিলো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ (অপারেশন অ্যাজাক্স) এবং বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্স (অপারেশন বুট) । ব্রিটেনের একটি কোম্পানী দীর্ঘদিন ইরানের তেল সম্পদ কুক্ষিগত করে নিজেদের পকেট ভরেছে । কিন্তু মোহাম্মদ মোসাদ্দেগ যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে তাদের কর্মকান্ডের হিসাব চাইলেন তারা সহায়তা করতে অস্বীকার করলো । এরপর মোসাদ্দেগ সরকার ইরানের সকল প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্রিয় মালিকানায় নিয়ে যাবার পর ব্রিটেন এবং আমেরিকা তাকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় । এই অভ্যুত্থান নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে দেখা যায় কিভাবে দেশের প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি এবং পেশাজীবিরা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে রাতারাতি বিদেশী শক্তিকে দেশের ভার তুলে দেয় । সেই সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় একটি সেনাবাহিনী কিভাবে ক্ষমতা কাড়াকাড়ি করার অভ্যুত্থানে হঠাৎ বীরত্ব দেখাতে থাকে এটাও পরিষ্কার হবে । এই লেখায় মুসলিম বিশ্বের সেনা অভ্যত্থান গুলো নিয়ে কিছুটা আলোচনা থাকবে ।

ইদানীংকালে মিশরের সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়টি বেশ আলোচনায় এসেছে । পাকিস্তান, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া প্রভৃতি দেশগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছে শুধুমাত্র পর্যায়ক্রমিক সেনাশাসনের কারনে । এখন তিউনিসিয়া অথবা তুরস্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও মুসলিম বিশ্বে- বিশেষ করে ইসলামপন্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎকন্ঠা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । মিশরের ২০১৩ সেনা অভ্যুত্থান না হলে হয়তো ফিলিস্তিনে ২০১৪ গণহত্যা এড়ানো যেতো । আবার তুরস্কের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগানের বিরুদ্ধে যেভাবে সকল শক্তি একজোট হয়েছে, তিনি কতোদিন সেনা অভ্যুত্থানের হুমকি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারবেন সেটাও ক্যালকুলেশন করা দরকার আছে । এসব বিষয় বিবেচনা করেই সেনা অভ্যুত্থান পর্ব অধ্যয়ন করা প্রয়োজন মনে করেছি ।

প্রথমেই বলে নেয়া যাক সেনা অভ্যুত্থানের সংজ্ঞা কি । ফরাসি coup d’état শব্দটির অর্থ হচ্ছে কোন রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত সরকার বা শুধুমাত্র সরকার প্রধানের পদচ্যুতি ঘটানোর চেষ্টা । একটি মিলিটারী ক্যু তখনই সফল বলে ধরে নেয়া যাবে যখন সাবেক সরকারপ্রধান পদত্যাগের বাধ্য হবেন বা নিহত হবেন । তবে মিলিটারীর পাশাপাশি অভিজাত সম্প্রদায় বা সুশীল সমাজেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে । পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক বড় বড় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পেছনে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা রয়েছে । জুলিয়াস সিজার থেকে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট পর্যন্ত অনেক প্রভাবশালী শাসক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহন করেছিলেন । তবে অধিকাংশ সময়েই সেনা অভ্যুত্থান রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়েছে । যাইহোক, আমাদের আলোচনা মুসলিম বিশ্বে সীমিত থাকবে ।

মুসলিম বিশ্বে প্রথম সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় ১৯০৮ সালে অটোমান সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সময় । তিনি ছিলেন শেষ অটোমান সুলতান এবং ইসলামী খিলাফতের ৯৯তম শাসক । ইয়ং তুর্কি মুভমেন্ট নামে একটি অভ্যুত্থানে তিনি ১৯০৯ সালে পদত্যাগে বাধ্য হন । এরপর আরো কিছুদিন কয়েকজন নামমাত্র সুলতানের অধীনে থেকে ১৯২৪ সালে খিলাফত সমাপ্ত হয় । এরমধ্যে আতার্তুক কামাল পাশা আধুনিক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হয়ে বসেন ১৯২৩ সালে । অন্যদিকে পারস্য সাম্রাজ্যে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রেজা খান পাহলভী ক্ষমতায় আসেন ১৯২১ সালে । এই দুইজনের অধীনে শিয়া এবং সুন্নী অধ্যুষিত অঞ্চল সমূহে সেনা অভ্যুত্থানের সূচনা হয় । এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৬ সালের অক্টোবরে ইরাকে জেনারেল বকর সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি সেনা অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী ইয়াসিন আল হাশিমী পদচ্যুত হন । তিনি সিরিয়ায় পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন । পরবর্তীতে ১৯৪১ সালে চারজন কর্ণেলের নেতৃত্বে গোল্ডেন স্কয়ার নামে ইরাকি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের একটি দল ইরাকে অভ্যুত্থান করে । এতে নাৎসি জার্মানীর অনুসারী রশিদ আলী গিলানী ক্ষমতায় আসেন এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যের অনুগত শাহানশাহ জর্ডানে পালিয়ে যান । রাজতন্ত্র বিলুপ্তির জন্য ১৯৪৮ সালে ইয়েমেনে একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় ।

পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থান হয় সিরিয়ায় ১৯৪৯ সালে । ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাঈল যুদ্ধে পরাজিত হয়ে জেনারেল হোসনী আল জাইম সিরিয়ায় প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক শাসন কায়েম করেন । এই অভ্যুত্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুস্পষ্ট মদদ পরিলক্ষিত হয় । ক্ষমতায় এসে জেনারেল হোসনী আল জাইম মহিলাদের বোরখা নিষিদ্ধ করেন । ইসরাঈলের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেন । ইসরাঈলের সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় ফিলিস্তিনি উদ্ধাস্তুদের জন্য সিরিয়ায় বসতি করে দেন । মাত্র সাড়ে চারমাস পর এই সেক্যুলার জেনারেল তারই সহকর্মী সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত এবং বন্দি হন । একমাসের মধ্যেই তাকে হত্যা করা হয় । পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থানের ইতিহাস আমাদের ভারতবর্ষে । ভারত পাকিস্তান পৃথক হবার পরপর কাশ্মীরে ১৯৪৭ সালে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে যুদ্ধ হয় । এখানে পাকিস্তানি সৈন্যরা যুদ্ধ করে পুরো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছিল । যুদ্ধের মাঝামাঝি অবস্থায় ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের সরকার ভারতের সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষনা করে । এটি অনেক সেনা কর্মকর্তা মেনে নিতে পারেননি । তারা ১৯৫১ সালে জেনারেল আকবর খানের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন । কিন্তু জেনারেল আইয়ুব খান এই পরিকল্পনা সরকারকে অবহিত করেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন । এই অভ্যুত্থান চেষ্টা ‘রাওয়ালপিন্ডি চক্রান্ত’ নামে পরিচিত । অভিযুক্ত জেনারেলদের পক্ষে আদালতে লড়াই করেন প্রখ্যাত বাঙালী আইনজীবি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি । অনেকের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয় । পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তাদের সাজা মওকুফ করেন ।

মিশরে প্রথম সেনা অভ্যুত্থান হয় ১৯৫২ সালে । রাজা ফারুককে সরিয়ে দিতে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে চক্রান্ত করেন জেনারেল মোহাম্মদ নাগীব । তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হবার একবছরের মাথায় ১৯৫৩ সালে আরেক জেনারেল জামাল আব্দেল নাসের তাকে গৃহবন্দী করেন এবং নিজে প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করেন । ১৯৫৪ সালে একটি হত্যাপ্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রেসিডেন্ট জামাল নাসেরের চক্ষুশূল হয় এবং ব্রাদারহুডের উপর নেমে আসে চরম নির্যাতনের কালো অধ্যায় । পূর্বেই বলেছি ইরানে প্রথমবার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ১৯৫৩ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন । তিনি ইরানের তেল বৃটিশ আধিপত্যে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন বিধায় সিআইএ এবং এমআইসিক্স যৌথ উদ্যোগে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় । এতে নেতৃত্ব দেন সাবেক সম্রাট রেজা খান পাহলভীর ছেলে রেজা শাহ পাহলভী । ক্ষমতায় এসে রেজা শাহ পাহলভী ইরানকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র বানাতে ব্যপক উদ্যোগ নেন । যার ফলশ্রুতিতে ধর্মপ্রাণ মানুষ ইসলামী বিপ্লবের পথে এগিয়ে যায় । ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন । একই বছরে ইরাকে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাদশাহ ফয়সল গদিচ্যুত হন এবং ইরাক রিপাবলিকের আত্মপ্রকাশ ঘটে ।

১৯৬০ সালে সেনা অভ্যুত্থানে তুরস্কের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দারিস ক্ষমতাচ্যুত হন । তুরস্কের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যাকে ফাঁসি দেয়া হয় । তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি পররাষ্ট্রনীতিতে পাশ্চাত্যকে বাদ দিয়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছিলেন । যে সকল সেনা কর্মকর্তা মেন্দারিসকে হত্যা করে, তারা ন্যাটোর প্রতি তাঁদের আনুগত্য প্রকাশ করে রেডিওতে বিবৃতি দিয়েছিলো । ১৯৬২ সালে ইয়েমেনে সেনা অভ্যুত্থান হয় যা প্রায় আটবছর গৃহযুদ্ধে রুপ নেয় । এখানে রাজকীয় বাহিনীকে সৌদি আরব, জর্ডান, বৃটেন সমর্থন দেয় । বিপ্লবীদেরকে সমর্থন দেয় মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল নাসের এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন । ১৯৬৩ সালে ইরাকে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে কমিউনিজম বিরোধী বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে । সাবেক সেনাশাসক আব্দুল করিম কাসিম (যে নিজেও ছিলো অভ্যুত্থানে ক্ষমতাপ্রাপ্ত) ব্রাশফায়ারে নিহত হয় । একই বছর সিরিয়ায় মিলিটারী ক্যু ঘটিয়ে বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে । এর পর থেকে প্রায় প্রতি বছর কোন না কোন মুসলিম দেশে সেনা অভ্যুত্থান হতেই থাকে । একের পর এক সাদ্দাম- গাদ্দাফী- মোবারক- আসাদ- ইয়াহিয়া- এরশাদ- মোশাররফ দের আগমন রোধ করা কোন মুসলিম দেশেই সম্ভব হয়নি । তবে মজার ব্যপার হচ্ছে- গণতন্ত্রের প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্র এবং রাজতন্ত্রের স্বর্গ যু্ক্তরাজ্য প্রতিটি মুসলিম দেশের সেনা অভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলো । বিশেষ করে ইসরাঈল প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলিম দেশগুলোতে সেনা অভ্যুত্থান পরিচালনা করে অস্থিতিশীল রাখাই যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি বলে মনে হয় । এক্ষেত্রে গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার, আধুনিকতা ইত্যাদি বুলি শুধু মুখোশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । এই সেনা অভ্যুত্থান নামক বিষবাষ্পের সর্বশেষ সংস্করণ আজকের মিশর । জেনারেল সিসি সেখানে ইসরাঈলের জাতীয় বীর উপাধী নিয়ে নব্য ফেরাউন হয়ে বসেছে । সম্ভবত এই তালিকায় ভবিষ্যতে নাম আসতে পারে পাকিস্তানের । কারণ সেখানে নির্বাচনের মাত্র এক বছরের মাথায় নওয়াজ শরীফ সরকারের বিরুদ্ধে ইমরান খান এবং তাহিরুল কাদরী যেভাবে বিক্ষোভ শুরু করেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এতো বড় সুযোগ মিস করবে বলে মনে হয়না । অথবা আইএসআই এটা মিস করলেও সিআইএ কিছুতেই মিস করবেনা । তবে আমার আশংকা হলো তুরস্কের বিষয়ে । কারণ এরদোগান প্রায় একযুগের সাধনায় পলিটিক্যাল ইসলামের যে প্রাসাদ দাঁড় করিয়েছেন, যদি আরেকটি অভ্যুত্থানে এই প্রাসাদ ভেঙ্গে পড়ে তবে মুসলিম উম্মাহর জন্য হতাশার সীমা থাকবেনা ।

সেনা অভ্যুত্থানে প্রথমেই নিজদেশের মানুষের সাথে সেনাবাহিনীর একটি অপূরনীয় দূরত্ব তৈরি হয় । এছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষতি, দুর্নীতি, সমাজের নৈতিক অধঃপতন তো থাকেই । তারপর গণহত্যা থেকে গৃহযুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায় । মিশরে এখন পর্যন্ত প্রায় তিনহাজার মানুষ নিহত এবং বিশহাজার আহত হয়েছে । সিরিয়াতে সামরিক শাসক আসাদ দেশটিকে শেষ করে ছেড়েছে । আরো হতাহতের ঘটনা আগামী দিনেও অপেক্ষা করছে । আমরা দেখেছি, মিডিয়া কিভাবে একটি দেশের জনগোষ্ঠীকে প্রতারিত করে । আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনীতে ভুল সমরনীতি কিভাবে নিজ দেশে গণহত্যার পরিবেশ তৈরি করে । অথচ মুসলিম বিশ্বের ইসলামপন্থী কোন শক্তি একটি সুদক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে পারেনি । এল বারাদী দের বিদেশী ডক্টরেট আর গোল্ড মেডেল যেভাবে তাদেরকে নির্লজ্জ সেক্যুলার এবং ভোগবাদী হিসেবে তৈরি করছে, একমেলেদ্দীনরা যেভাবে বহির্বিশ্বকে বন্ধু ভেবে নিজদেশের দেশপ্রেমিকদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তেমনি মুসলিম দেশগুলোর সেনা কর্মকর্তাদের প্রতিনিয়ত বিদেশী অনুশীলন আর মিশন তাদেরকে কতটুকু দেশপ্রেম শেখায় বা জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তা মিলিটারী ক্যু এর ইতিহাস ঘাটলেই চোখে পড়বে । এছাড়া সুষ্ঠু পররাষ্ট্রনীতির অভাবে শুধু সরকারই নতজানু হয় তাই নয়, বরঞ্চ পুরো সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি নতজানু এবং পরাশ্রয়ী হয়ে উঠে । অতএব মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ যদি সত্যিকার অর্থে বিদেশী আধিপত্য নামক বিষপান করতে না চান, তাদের প্রধান দায়িত্ব হবে বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে সম্পূর্ণরুপে জনগণের ইচ্ছাকে বিবেচনায় নেয়া । দূতাবাসে ব্রেকফাস্ট করতে নেতাদের হুড়োহুড়ি দেখার মতো । অথচ তারা একবারও ভাবে না – দূতাবাসে রাতের আঁধারে অন্য কেউ ডিনার করছে কিনা ।

পরিশেষে বলতে চাই- বাংলাদেশ, সিরিয়া, মিশর, ইরাক, লিবিয়া, সৌদি, আমিরাত, ইয়েমেন প্রভৃতি মুসলিম দেশে গণতন্ত্র মুক্তি পাক । অবৈধ-অগণতান্ত্রিক শক্তির হাত থেকে দেশ বাঁচুক, মানুষ বাঁচুক । নয়তো এই মুসলিম দেশগুলো মানচিত্রে নামমাত্র টিকে থাকলেও এখানে মনুষ্য সভ্যতার অস্তিত্ব বিলীন হতে বেশিদিন লাগবে না । পাহলভীদের ভূত মুসলিম জাতির ঘাড় থেকে চিরতরে বিদায় হোক, আজকের দিনে এটাই প্রত্যাশা ।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s