দ্যা গ্রেট বিএনপি ফ্লপ শো

bnp-final1

by zainuddin sani

শো টা যে ফ্লপ করবে, কিছুই যে করতে পারবে না, তা কমবেশি সবাই জানতো। তারপরও দলীয় নেতা কর্মীরা টিভি সেটের সামনে বসেছিল। সারকারী অঘোষিত হরতাল না হলেও, মনে হয় না তাঁরা ঢাকায় যেতেন। সাধারণ জনতার যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। অলৌকিকভাবে ‘নুর হোসেন’ জীবিত হলে, সেও নিশ্চিত যেত না। শুধু বিএনপির আন্দোলন না, ‘গনতন্ত্র উদ্ধার’ মার্কা কোন আন্দোলনেই যেত না। নব্বইয়ে একবার উদ্ধার করে শখ মিটে গেছে। তবে রাজনীতি প্রিয় বাঙালির, রাজনীতি নিয়ে কথা বলা হয়তো থামাবে না। রাস্তায় নামবার ভুল এখন আর কেউ করে না। দলবাজি এখন সবাই করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে।

সমর্থক যে নেই, তা কিন্তু না। তবে তাঁরা সব কিছু দেখে, খেলা দেখার মেজাজ নিয়ে। টিভি সেটের সামনে বসে, নিজ নিজ দলের হয়ে উল্লাস করার জন্য। আর সাধারণ জনগণ বসেছিল গত বছরের স্মৃতি রোমন্থন আর ‘যে কোন মুল্যে’র মানে কি তা বোঝার জন্য। মানেটা গাজীপুরের দিনও বুঝেছিল, তবে ভেবেছিল, সেখানকার দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে, একটি লোকাল কারণে, শো ফ্লপ হয়েছিল। এবার ঘটনা ঢাকায়, নেতা কর্মীরাও আছে, বড় বড় হুশিয়ারি আসছে, অতএব এবার কিছু একটা হবে।

বিনোদন দেয়ার আওয়ামীদের ক্ষমতা নিয়ে কারোরই তেমন কোন সন্দেহ ছিল না। শ্লেষ মেশানো কথা বলায় কেউই কম যায় না। তবে বর্তমানে এবিষয়ে আওয়ামীরা একধাপ এগিয়ে আছে। সেসব শোনার পরের দৃশ্য ছিল রাজপথ। পুলিশ আর ছাত্রলীগের ‘ডেডলি কম্বিনেশান’ গাজিপুরের মত এখানেও খেল দেখাবে, তা সবারই জানা ছিল। একেবারে ‘কপি ক্যাট’ হলে দর্শক কমে যাবে দেখে মনোরঞ্জনের নতুন কিছু রসদও রাখা হয়েছিল। মায়া সাহেবের লুঙ্গি কিংবা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ এর সংযোজন হল। সবাই না হলেও অনেকেই এই নিয়ে আশাবাদী ছিল— কিছু নতুন মনোরঞ্জন আসছে।

সেই আশার গুড়ে অচিরেই বালি পড়ল। আওয়ামী নেত্রীর সেই পুরনো ঘ্যানঘ্যান আবার শোনালেন। সঙ্গে নতুন যা ছিল, তা হচ্ছে বিএনপি নেত্রীর নাটকের পাণ্ডুলিপি পড়ে শোনালেন। এছাড়া আওয়ামীদের তরফ থেকে বড় ধরনের তেমন কোন নতুনত্বের দেখা পাওয়া যায়নি। হয়তোবা তাঁরা দেখাতে চায়ও নি। এক বালুর বস্তা দিয়েই যদি কুপোকাত করা যায়, তবে আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাবার দরকার কি? তারপরও, কিছুটা ছিল।

আগেরবার ছিল বালুর বস্তা, এবার আর বস্তায় বালু ঢোকাবার প্রয়োজন বোধ করেনি। বালুর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছিল খোয়া, মাটি এসবের ট্রাক আর তাদের ড্রাইভারের মুখে মজার সব গল্প। দরজার তালাটিকেও নতুন সংযোজন বলা যেতে পারে। এবারের সত্যিকারের নতুনত্ব ছিল ‘স্পাই থ্রিলার’। আওয়ামীদের প্ল্যান আগে থেকে জেনে যাচ্ছিল বিএনপি আর বিএনপির প্ল্যান তৈরির সাথে সাথে চলে যাচ্ছিল আওয়ামী নেত্রীর কানে। এই প্লট আর কাউন্টার প্লটের খেলাটা এবার সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হয়েছে।

বিএনপির তরফ থেকে নতুনত্বের অভাব থাকলেও সময়টা খারাপ কাটেনি। পিকাপ ভ্যানে করে কয়টা কম্বল, কয়টা ম্যাট্রেস আসল, কোন ঘরকে ম্যাডামের বেডরুম বানানো হল, এসব খবর একেবারেই আনকোরা। আসলে সবাই গতবছরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ র সঙ্গে ঘটনা মেলাচ্ছিলেন। ‘ডায়ালগ বাই ডায়ালগ’, ‘সিন বাই সিন’। ম্যাডাম এবার একেবারে হুবহু নকল করেননি। সেবারের তুলনায় এবার একটু মুডে ছিলেন। রাগে গড়গড় করতে করতে সেই ‘গোপালি’ আর ‘তুই তোকারি’ ছেড়ে এবার ‘ক্যান রে ভাই’ এ এসেছেন। কিছুটা হলেও নতুনত্ব।

খেলায় কে জিতল তা নিয়ে আপাতত কিছুদিন ‘টক শো জীবীরা’ গলা ফাটাবেন। দলের নেতারা আসলে দুই ম্যাডামের গুণগানে কিছুদিন কান পাতা দায় হবে। একে অপরকে গালিগালাজও হয়তো করবেন। ‘গনতন্ত্র হত্যা’ ‘রাজাকারদের দোসর’ ‘ট্রেন মিস’ ‘২০১৯’ ‘সংবিধান রক্ষার নির্বাচন’— মোটামুটি এই থাকবে আগামী কিছুদিনের আলোচনার বিষয়। সাংবাদিকরা আসলে সবাই লক্ষ্য রাখবে, কে কোন দিকে ঘেঁসে কথা বলছেন। যদিও সাংবাদিকরাও দল বেছে ফেলেছেন এবং কি কি বলবেন, তাও সবাই জানে। তারপরও হয়তো দেখবেন। দুই দলকেই গালি দিলে আমরাই হয়তো বলব, ‘এই ব্যাটা কিন্তু ধান্ধাবাজ, দুই দিকেই তাল দিচ্ছে’। এরপর হয়তো চ্যানেল পাল্টাবো আর নয়তো ‘জলসা’ না দিলে স্বামীকে খুন করব।

খেলা আরও চলতো কি না, সত্যিকার অর্থে বোঝার উপায় নেই। মিছিলের নাম পাল্টে বিক্ষোভ মিছিল করলেও সেই মিছিল করবার জন্য কেউ আসবে না, তা সবাই জানে। নেতারা টাকা খেয়ে যেভাবে প্ল্যান উগড়ে দিচ্ছেন তাতে মনে হয় না ঢাকা শহরে আর কোন সমাবেশ করতে দিবে। বাকী থাকে হরতাল আর অবরোধ। ভোঁতা এই দুই অস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া তাদের আর তেমন কিছু করারও নেই। সেটাও হয়তো আর দুইদিন ডাকতে পারবে কারণ বিশ্ব ইজতেমার জন্য সেটাও স্থগিত করতে হবে। আর দিন দশেকের গ্যাপ পড়লে, নতুন করে আন্দোলন (এটাকে আন্দোলন না বলতে চাইলে, আমি আপত্তি করবো না) চাঙ্গাও করতে পারবে না। দলের নেতাদেরও সুবিধা। সম্ভবতঃ তাঁরা এটাই চাইছেন। শুধু শুধু আত্মগোপন করতে হবে না, এই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

এই শীতের আন্দোলন সম্ভবতঃ শেষ। কিছু খুচরা চেষ্টা হয়তো হবে। যদি কিছু লাশ পড়ে, তবে হয়তো কিছু মিছিল হবে। বিশ্ব ইজতেমা শেষ হওয়ার পরে হয়তো আবার কিছু অবরোধ আসবে। এবং যথারীতি মার্চের পরে সব কিছু ইতি। বিএনপির নেতারাও হয়তো অপেক্ষায় আছেন, কবে আসবে এপ্রিল। তাদের আর আত্মগোপনে থাকতে হবে না, মাঠে নামতে হবে না। তবে আওয়ামীদের কাছ থেকে পাওয়া মাসোহারায় হয়তো টান পড়তে পারে। আন্দোলনের প্ল্যান জানিয়ে যে আয় তাঁরা করছিলেন, সেই আয় হয়তো আপাততঃ বন্ধ হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s