by zainuddin sani
প্রায় মাস খানেক হতে চলল, দুই পক্ষের জেদাজেদির কারণে দেশ স্থবির হয়ে আছে। একে অপরকে হারাতে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু সাধন নিয়ে আসছে। এই সিরিজে অংশ হিসেবে, বাজারে নতুন এসেছে এক পক্ষের নেত্রীর ফোনালাপের অডিও। সেখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে বেশ কর্কশ ভাষায় নির্দেশ দেয়া আর রাস্তায় থাকবার তাগিদ দেয়া। বিতর্ক দেখা দিয়েছে, ‘রাস্তায় থাকা’ মানে কি—তা নিয়ে। কারো মতে এটাই নাশকতার নির্দেশ, কারো মতে এটি আন্দোলন করার নির্দেশ। আর হুকুম দেয়াটার সাথে মেলানোর চেষ্টা হচ্ছে ‘জেনারেলের স্ত্রী’ ব্যাপারটাকে। ফোনালাপগুলো কিভাবে ইউটিউবে আসল, তা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হচ্ছে না। ধরেই নেয়া হচ্ছে, কোন না কোন ভাবে সরকার এর সঙ্গে জড়িত।
কোকোর মৃত্যুর পরে, কোকোর স্ত্রী এবং দুই কন্যা বাংলাদেশে এসেছিলেন। কিছুদিনে আগে, এক পক্ষের নেত্রীকে একা রেখে তাঁরা ফিরে গেছেন। কোকো কন্যা এবং তাঁর স্ত্রীর মালয়েশিয়া ফেরত যাওয়া নিয়েও বেশ কটাক্ষ চলছে। কটাক্ষের কারণ, তাঁদের পরীক্ষার কারণে তাঁরা গিয়েছে। আর এদেশের এসএসসি পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে। আর তা হয়েছে একপক্ষের নেত্রী বা তাঁদের দাদীর ডাকা হরতাল আর অবরোধের কারণে। ব্লগ, ফেসবুক আর মিডিয়ায় চলছে ব্যাপারটাকে কতোটা মশলা মাখিয়ে উপস্থাপন করা যায়। ‘নিজের নাতনীদের পরীক্ষা দেয়ার জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন আর দেশের লাখ লাখ পরীক্ষার্থী যে পরীক্ষা দিতে পারছে না, সেদিকে খেয়াল নেই।‘
খেলা কে জিতছে, তা এখনও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, খেলা ধীরে ধীরে ক্লাইমেক্সের দিকে এগোচ্ছে। একজন বলছে আর এক সপ্তাহ। অন্যদিকের বক্তব্য হচ্ছে ১৩ই ফেব্রুয়ারী। ফেসবুক, ব্লগ আর পত্রিকার কলামে এখন রীতিমত চামচাগিরির প্রতিযোগিতা চলছে। আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের আপাততঃ মনোযোগ ‘পেট্রোল বোমা’ আর অন্যদিকের মনোযোগ নেত্রীর ওপর চালানো নির্যাতন। একদিকের ইউএসপি হচ্ছে ‘পোড়া লাশ’ আর অন্যদিকে ‘নেত্রীর বিদ্যুৎ সংযোগ’। কোনদিকে জনসমর্থন বেশি, তা নিয়েও বুদ্ধিজীবী মহল নিজ দলের গুণ গাইছেন। এককথায় পরিস্থিতি এখন, ‘ক্লোজ টু ফিনিশ’ পর্যায়ে রয়েছে।
একটা ব্যাপারে অবশ্য সবাই একমত, সমাধান এদেশ থেকে আসবে না। আসবে ওপর থেকে। এতদিন এদেশের প্রভুত্বের দ্বায়িত্বে ছিল একটি দেশ। সম্প্রতি সেই দেশটি অপর একটি দেশের সান্নিধ্য লাভের জন্য বেশ উৎসুক। আর এই সান্নিধ্য পেতে যদি তাঁদের হাতে বাংলাদেশকে তুলেও দিতে হয়, দেশটি ‘না’ বলবে না। এমনই যখন অবস্থা, সেই সময় ঘটল মজার এক ঘটনা। ঘটনাটা খুব সাধারণ হলেও, মজার বলছি কারণ, এই নিয়ে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের লম্ফঝম্ফ ছিল দেখার মত। মানসিকভাবে আমরা যে কত অনায়াসে এই দেশগুলোর প্রভুত্ব মেনে নিয়েছি, তা এতো স্পষ্টভাবে বুদ্ধিজীবীরা আগে বলেননি।
প্রভু হিসেবে পরিচিত, আমাদের পাশের দেশের পররাষ্ট্র সচিবের বরখাস্তের পরে মনে হয়েছিল, এক পক্ষের জয় এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। মনে হয়েছিল, তাঁর চাকরী যাবার একমাত্র কারণই হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর নগ্ন হস্তক্ষেপ কিংবা অপর পক্ষকে জয় পাইয়ে দেয়া। আমেরিকার বিরুদ্ধে গিয়ে এদেশের ৫ই জানুয়ারীকে সমর্থন করার খেসারত দিতে হয়েছে তাঁকে। তাঁরা ধারণা করছেন সম্প্রতি ওবামা এসে সেই প্রভু দেশকে ধমক দেয়ার কারণেই সচিব মহাশয়কে অফিস খালি করতে হয়েছে। এখন ধমক খাওয়ার পালা এদেশের প্রধানমন্ত্রীর। নরেন্দ্র মোদীর বিজয়ের পরে এই সম্ভাবনাই দেখেছিল এক পক্ষ। আর তা এখন সত্যি হতে চলেছে। অতএব, সেই পক্ষের জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বুদ্ধিজীবীদেরও সময় হয়ে গেছে, দল পাল্টাবার কিংবা বুঝে শুনে কথা বলবার।
ভারতীয় কিছু টিভি চ্যানেল আর ভারতীয় ব্লগেও এই বরখাস্ত নিয়ে আলাপ চলছে। তবে সেখানে ঘটনার ব্যাখ্যা বেশ অন্যরকম। মাত্র দুদিনের জন্য তিনি এই চাকরি হারিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীর কাজ করার যে স্টাইল, সেই অনুসারে তিনি চান সব এলাকায় নিজের বিশ্বস্ত লোক। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য তাঁর নির্বাচিত এই বিশ্বস্ত লোকটি হচ্ছেন সুব্রমনিয়াম জয়শঙ্কর। এই ভদ্রলোককে, মোদীর পূর্বসূরি, মনমোহন সিংও পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে চেয়েছিলেন। কিন্তু সোনিয়া গান্ধীর ইচ্ছার কারণে তা হয়নি। তাঁকে নিয়োগ দিতে হয় সুজাতা সিংকে। আর সেখানকার নিয়ম অনুসারে, পররাষ্ট্রসচিবের কার্যকাল হচ্ছে ২ বৎসর। এই বছর, জুলাই মাসে তাঁর সেই মেয়াদ শেষ হত। হয়তো তিনি সেই সময় পর্যন্তই থাকতেন। তবে সমস্যা হয়ে দাঁড়াল জয়শঙ্করের বয়স। আর মাত্র দুইদিন পরেই তাঁর সরকারী চাকুরীর বয়সসীমা শেষ হয়ে যাবে। তাই এই মুহূর্তে তাঁকে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগটি না দিলে, তা আর দেয়া সম্ভব হত না। তাই ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মত কোন পররাষ্ট্রসচিবকে বরখাস্তের ঘটনা ঘটল।
কিছু আভ্যন্তরীণ রাজনীতিও কাজ করেছে। ভারতীয় জনতা পার্টিতে চলা দলীয় কোন্দলের এক অংশে রয়েছে নরেন্দ্র মোদী আর অন্য অংশে রয়েছে লাল কৃষ্ণ আদভানী। আদভানী লবি এই মুহূর্তে রয়েছে বেশ কোণঠাসা অবস্থায়। সেই লবী থেকে মন্ত্রীসভায় সুযোগ পাওয়া নেত্রী হচ্ছেন, সুষমা স্বরাজ। আর তাঁর দায়িত্বে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মোদী সাহেব, অনানুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন। সাম্প্রতিক হয়ে যাওয়া সকল বিদেশ সফরে, সুষমা স্বরাজের চেয়ে বেশি দেখা গেছে নরেন্দ্র মোদীকে। অনেকেই বলা শুরু করেছেন, সুষমা হচ্ছেন, ডামী। এবার মোদী আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বসাতে চাইছেন, নিজের বিশ্বস্ত লোক। যেন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সব সিদ্ধান্তের খবরই তিনি পান। কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্র্যাক্টিক্যালি তাঁর নির্দেশেই চলে।
ভারতীয় রাজনীতিতে ভবিষ্যতে কি হবে, তা এই মুহূর্তে বোঝার উপায় নেই। তবে আপাততঃ বিজেপি এবং ভারত সরকার পুরোটাই মোদীর ইচ্ছেমত চলছে। দলীয় নীতি কিংবা সিদ্ধান্ত বলে কিছু নেই। তাঁর কথাই, শেষ কথা। আর তাঁর ইচ্ছায়ই সুজাতা সিংয়ের চাকরি ‘নট’ হয়েছে। বাংলাদেশ কিংবা ওবামা খুব বড় কোন ইস্যু এখানে ছিল না। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশ প্রশ্নে কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না—এমন কথাও কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। সব চোখ এখন তাই নতুন পররাষ্ট্রসচিবের দিকে। তিনি কি বক্তব্য দেন বাংলাদেশকে নিয়ে।
ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, আমাদের ভবিষ্যৎকে আমরা অনেক আগেই অন্য প্রভুর হাতে সঁপে দিয়েছি। এখন আর তা হয়তো আমাদের হাতে নেই। আমরা নামে গণতন্ত্র হলেও, এখানে কে ক্ষমতায় বসবেন, কে যাবেন, সেই সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই। আমাদের কাজ শুধু আগুনে পোড়া, সরকারের ‘এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে’ শোনা, বুদ্ধিজীবীদের দলীয় ব্যাখ্যা শোনা আর দিন গোনা, কবে প্রভুরা ঠিক করবেন, ‘কে হবে আমাদের প্রভু।‘
বাংলাদেশে বাস করে, বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী কিন্তু কোন ভাবেই তারা বাংলাদেশী নয়। ১৯৭১-এ যে বাংলাদেশ নামক রাস্ট্রটির জন্ম হয়েছে, তা তারা মানতেই পারে না। মানতেই পারে না ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব ও যুদ্ধজয়ী রাজনৈতিক দলটির নাম আওয়ামী লীগ। তাই (কোন রূপ প্রমান ছাড়াই তারা বলবার চেষ্টা করে ১৯৭২ থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সময়কালটি অন্ধকার সময়)। ১৯৯৬-এর নির্বাচনের আগে এরা বলবার চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে হত্যার রক্ত লীলা হবে…
২০০০ নির্বাচনের আগে এরা মোহাম্মদপুর এলাকার সংস্কারকৃত রাস্তাকে বলতে লাগলো ভাঙ্গা রাস্তা, কাওরান বাজার পেরুতে পেরুতে বললো দেখছেন কি গন্ধ…
২০১৩ তে তারা বলবার চেস্টা করলো খন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগের লোক ছিল, কিন্তু তারা বললো না মুজিবের আত্মস্বীকৃত খুনীরা কার রাস্ট্রদূত ছিল। এমনকি ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পনের দলীলে বাংলাদেশের নাম নেই বলেও দাবী করলো…
গত কদিনের পেট্রলবোমাবাজীতে সরকার ও জনগনকে ভয় খাওয়াতে ব্যর্থ হয়ে শুরু করেছে পুরোনো গান—
১) গনতন্ত্র, গনতন্ত্র, মৌলিক গনতন্ত্র (https://www.facebook.com/notes/najib-tareque/%E0%A6%AE%E0%A7%8C%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%97%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%A5%E0%A6%AC%E0%A6%BE-%E0%A6%97%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0/10152971609968955)
২) রাজনীতিবিদরা খারাপ, একজন শক্ত পোক্ত জেনারেল প্রভু চাই…
৩) কবে (বিদেশী) প্রভুরা ঠিক করবেন, ‘কে হবে আমাদের প্রভু…
লেখাটি আজকে প্রকাশিত হয়েছে
http://www.amadershomoys.com/newsite/2015/02/04/205998.htm#.VNH_FSwpoed