By: Aman Abduhu
বুয়েট শিক্ষক পেটানোর ঘটনায় বিশাল তিন পর্বের ফিকশন লিখে ফেললাম। কেন লিখলাম জানিনা। সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা হওয়াতে। বিশ্ববিদ্যালয় শুনলেই মনে হয়, পড়ালেখা আর কো-কারিকুলারে ব্যস্ত ইয়ং ছেলেমেয়ে। বিভিন্নরকম ক্রিয়েটিভ কাজ আর প্রতিযোগিতা। টিচারদের সাথে বিভিন্ন সুযোগে বিতর্ক, সেমিনার। এখানে ওখানে নোটিশ আর এনাউন্সমেন্ট, বিভিন্ন রকম বৈচিত্র্যময় কাজ পড়ালেখা আর এসাইনমেন্টে দিন সপ্তাহ মাস বছরগুলো চোখের পলকে চলে যাওয়া। জীবনের সবচেয়ে সেরা সময়। বিশাল বিশাল ভবন, দীর্ঘ করিডোর, নিরব লাইব্রেরী আর পুরনো বইএর গন্ধ। সাথে নতুন নতুন সব প্রযুক্তির সুযোগ সুবিধা। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে যখনই বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেখি, সাথে সাথে বুকের মাঝে একটু কষ্ট হয়, যদি আমাদের দেশে এমন থাকতো।
সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা হয়, বিষয়টা কল্পনা করে অবাক লাগে। আমি বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করি। সাথে সাথে পার্টটাইম টিউটর হিসেবে পড়াই। ঐসব ছাত্রছাত্রীরা আমাকে, অথবা কোন ফুল ফ্লেজেড টিচারকে পেটাচ্ছে, ভাবা যায় না। তাই হয়তো নাড়া খেয়েছি। যাইহোক, শেষকথাগুলো হলোঃ
১. ফিকশনে বাস্তবতার শতভাগ প্রতিচ্ছবি আশা করা বোকামী। ইতিহাস আর গল্প একসাথে লেখা একটি শাহবাগি কাজ। আমি গল্প লিখেছি, ইতিহাস না। বিস্তারিত ফুটনোটে*১ এ প্রসঙ্গে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা থেকে নেয়া কিছু কথা আছে। একই সাথে বাস্তবতার সাথে বিরোধী বা অসততা যেন না হয়, তা খুব দরকারী বিষয়। যেমন শুভ্রজ্যোতি শেরাটনের বারে গিয়ে এলকোহল টেনে সেলিব্রেশন করছিলো, এটা ফিকশন। কিন্তু ধর্ষক চাঁদাবাজ খুনী ছাত্রলীগের নেতাদের জন্য এটা স্বাভাবিক। কিংবা রাগিব হাসান সরাসরি কোথাও বলেনি এই শিক্ষককে জামায়াত করার অপরাধে বের করে দেয়া হোক, কারণ সে বুদ্ধিমান এবং তার কথার কনসিকোয়েন্স সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু এই কথা, চিন্তা ও কাজগুলোকে সে সবসময় মোটিভেট ও প্রমোট করেছে।
২. এই জঘন্য ঘটনার কারণ হলো ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালেখার জায়গা। পিরিয়ড। টিচাররা কেউ আওয়ামী লীগ করবে, কেউ জামায়াত করবে, কেউ বিএনপি করবে, ভিসি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক নিয়োগ হবে দলীয় বিবেচনায়, ঐ শিক্ষাঙ্গনে খুন ধর্ষণ আর মারামারি করাটাই স্বাভাবিক। এই হলো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়।
৩. সবসময় বলি, আওয়ামী-শাহবাগি এটা একটা দুষ্টচক্র। সব আওয়ামী শাহবাগি, কিন্তু সব শাহবাগি আওয়ামী না। জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রাতে অনলাইনে জামায়াত সমর্থক শিক্ষককে তার জামায়াত সমর্থক মন্তব্যের কারণে গালমন্দ করা হয়েছে, ব্যান করা হয়েছে, তাচ্ছিল্যের সুরে তাকে ট্রিট করা হয়েছে। সেই থেকে অন্যরা শিখেছে যে শাহবাগী মতের ভিন্ন মতের শিক্ষককে বেয়াদবীর সুরে কথা বলা যায়, ধমক দেওয়া যায়, গালি দেওয়া যায়। পরের দিন ছাত্রলীগ যে বেয়াদবী করেছে তার শিক্ষা তারা ঐ গ্রুপের এডমিন এবং বেয়াদব কিছু ছাত্রদের থেকে পেয়েছে। আমি যতদূর জানি, এর আগে ছাত্রলীগ বুয়েটের কোন শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার সাহস করেনি। কিন্তু শাহবাগীরা সেই সাহস তাদের যোগান দিয়েছে। সুতরাং প্রমাণ হয়ে যায়, শাহবাগিরা পলিসি মেকার, আর ছাত্রলীগের গুন্ডারা হলো তাদের মাসলম্যান।
৪. ঐ শিক্ষক জয় মা কালী, জয় ইনডিয়া লিখে মন্তব্য করেছিলেন। আসলেই কি তা সাম্প্রদায়িক মন্তব্য? আমি মনে করিনা। বরং তা বাস্তব সত্যভাষণ। বাংলাদেশের ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন এবং ডিসক্রিমিনেশন করা হচ্ছে পরিস্কার। এবং এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও জঙ্গিবাদ উসকে দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দীর্ঘমেয়াদে বেনিফিশিয়ারী হতে চায়। দেশ আর সমাজ ধ্বংস হোক, ব্যাপার না। ক্ষমতায় থাকাটাই বড় কথা। হিন্দুরা এখানে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
৫. বাংলাদেশে স্বাধীনতার চেতনার নামে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। এখানে দ্বিমত পোষণ করার অর্থ, রাজনৈতিক মতভিন্নতার অর্থ হলো বাংলাদেশী থাকার সুযোগ হারানো। আপনাকে পাকিস্তান চলে যেতে হবে। ঐ শিক্ষক জামায়াত করেন, তার অর্থ যদি হয় তাকে ক্যাম্পাসে পেটানো এবং নির্মমভাবে অপমান অপদস্থ করা বৈধ, তাহলে তা পরিস্কার করে বলা উচিত।
৬. সবশেষে, এ ঘটনা কোন সুস্থ স্বাভাবিক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটলে, সাথে সাথে নিরপেক্ষ তদন্ত হতো, গুন্ডাগিরি করা ছাত্রদেরকে প্রশাসনিক শাস্তি তো দেয়া হতোই, সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের সরকারী আইন শৃংখলা কতৃপক্ষ তাদেরকে ফিজিকাল এসল্ট, এটেম্প টু মার্ডার সহ বিভিন্ন মারাত্বক অপরাধের শাস্তি হিসেবে বেশ কয়েকবছরের কারাদন্ড দিতো নিশ্চিত। পাশাপাশি ঐ ভিকটিম শিক্ষক তাকে নিরাপত্তা দেয়ার ব্যর্থতার কারণে ভার্সিটি থেকে কয়েক কোটি টাকা কমপেনসেশন বা ক্ষতিপূরণ পেতেন। বাংলাদেশে কি হবে? শুভ্রজ্যোতি আর কনকদের মতো গুন্ডারা মন্ত্রী এমপি এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দাঁত বের করে ছবি তুলে ফেইসবুকে আপলোড করবে আর দামী গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াবে।
জয় বাংলা।
*১ in my view, although I do agree with Churchwell on the paramount importance of meticulous research. But novelists are not history teachers. It’s not our job to educate people, and if we start using words like “duty” and “responsibility” about historical fiction – or any fiction – we’re in danger of leaching all the vigour out of it with a sense of worthiness. A novelist has no real duty to anything except the story he or she is creating, the characters who inhabit it and whatever view of the world he or she is offering with the novel’s ending. But if you are going to play fast and loose with historical fact for the sake of a good story, you’d better have done your research thoroughly if you want readers to take you seriously; only then will you have the authority to depart from those facts.
Recent Comments