‘বাঙলাদেশ’ এবং বাঙালী ও বাঙলাদেশী জাতীয়তাবাদ

BD Map

মাহবুব মিঠু।।

এথনিক বা সাংস্কৃতিক পরিচয়ে জাতীয়তাবাদ এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদের মধ্যকার বিভ্রান্তি অনেক সময় সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়। কিম্বা সেটা হতে পারে স্বাধীনতা বা স্বার্বভৌমত্বের জন্য হুমকীস্বরূপ। অনেক ক্ষেত্রে এই বিভ্রান্তি কিছু মানুষের ইচ্ছাকৃত সৃষ্টি। সেই ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে হোক আর যে কারণেই হোক, দেশ বিভাগের পর থেকে বঙ্গ অঞ্চলে সংস্কৃতির পরিচয়ে ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদের’ বন্ধন ক্রমশঃ ভিন্ন মাত্রায় চলে যায়। ধর্মের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ববঙ্গ) অনেক হিন্দু যেমন পশ্চিম বঙ্গে চলে যায়, তেমনি তার উল্টোটাও ঘটে। অর্থাৎ পশ্চিম বাঙলা থেকে অনেক বাঙালী মুসলিমও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসে। ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হওয়া এই সীমানা, বিচ্ছিন্ন দুই বাঙলার মানুষের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে। এর ফলে দুই বাঙলায় দুই ধরনের বাঙালী সংস্কৃতি বিকাশ ঘটে।

কোন সংস্কৃতি কখনোই অনড় কিম্বা অপরিবর্তনশীল নয়। ৪৭ সালে দেশ বিভাগের ফলে যে রাজনৈতিক স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে ওঠে তাতে উভয় পাড়েই ‘বাঙালী’ পরিচয় ছাপিয়ে রাজনৈতিক পরিচয় অর্থাৎ ভারতীয় (বাঙালী) এবং পাকিস্তানী (বাঙালী) পরিচয়টাই মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাঙলাদেশ নামক ভূখন্ডের বাঙালী, ওপাড়ের বাঙালীদের চেয়ে স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করে। এই স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভের ফলে বাঙালী সাংস্কৃতিক বন্ধনের চেয়ে রাজনৈতিক বন্ধনটাই তখন মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। নতুন পরিস্থিতিতে ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের মধ্যে বসবাসকারীদের একই ছাতার নীচে, একই পরিচয়ে নিয়ে আসার জন্য সৃষ্টি হয় বাঙলাদেশী নামক রাজনৈতিক পরিচয়ে নতুন জাতীয়তাবাদ। এই বাঙলাদেশী পরিচয় বাঙলাদেশ নামের ভূখন্ডে বসবাসকারী নানা এথনিক গোষ্ঠীকে, নানা ভাষাভাষীকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করে। নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারতের বাঙালীদের চেয়ে আমাদের কাছে পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য জাতিসত্ত্বার অধিবাসীরা বেশী আপন হয়ে পড়ে। ঠিক এই রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে ‘বাঙলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রেক্ষিতে’ ’বাঙালী জাতীয়তাবাদ’ কেবল ক্ষুদ্রতাই তুলে ধরে না, বরং এটা একাধারে সাম্প্রদায়িকতা এবং বর্ণবাদের দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। এই ধারার লোকেদের তিনটি দুষ্ট উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

প্রথমতঃ এরা কি উভয় পাড়ের বাঙালীদের নিয়ে নতুন কোন স্বাধীন ভূখন্ডের আশা মনে মনে পোষন করে? তাহলেও সেখানে ত্রুটি আছে। দুই বাঙলার একত্রীকরণের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাকী জাতিস্বত্ত্বার অধিবাসীদের জাতীয়তা কি হবে? তাদেরকে কি বিতাড়িত করা হবে? নাকি বলা হবে ’তোমরা বাঙালী হয়ে যাও’।

 

দ্বিতীয়তঃ আমরা কি ওপাড় বাঙলার রাজনৈতিক পরিচয়কে অর্থাৎ বৃহত্তর ভারতের সঙ্গে একীভূত হতে চাই? এই মানসিকতাকে স্পর্ধা বললেও কম বলা হবে। এ ধরনের উদ্দেশ্য যদি কারো মনে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা যেতে পারে।

তৃতীয়তঃ বাঙালীদের খন্ডিত প্রতিনিধিত্ব করা স্বাধীন বাঙলাদেশের বাঙালীদের জাত্যাভিমান, যেটা ৭১ সালের পূর্বে পাকিদের মধ্যে ছিল। মূলতঃ পাকিদের এই জাত্যাভিমানই আমাদের স্বাধীনতার দাবীকে যৌক্তিকতা দেয়। এই যদি হয় উদ্দেশ্য, তাহলে সেটা পাহাড়ীদের বিচ্ছিন্নতার দাবীকেই গ্রহণযোগ্যতা দেবে।

 

এর বাইরে অন্য কোন কারণ থাকলে সেটা নিছক গোয়ার্তুমি কিম্বা মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।

 

অতি আবেগী অনেকে কথায় কথায় ‘হাজার বছরের বাঙালী জাতীয়তাবোধ’ বলে রাজনৈতিক পরিচয়ের সাথে সম্পর্কিত উৎসবে গলা ফুলিয়ে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দেয়। আমাদের ভাষা আন্দোলন একান্তভাবেই বাঙালী জাতীয়তাবোধ থেকে আসে। কিন্তু স্বাধীনতার আন্দোলনের পিছনে কেবলমাত্র বাঙালী জাতীয়তাবোধ কাজ করেনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাহাড়ের জনগণও অংশ নিয়েছিল। অতএব, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসের মতো বাঙলাদেশীদের স্বার্বজনীন উৎসবগুলোতে যখন কেউ গলা ফুলিয়ে, ঘাড় কাঁত করে বাঙালী জাতীয়তাবোধের তুবড়ি ফুটান, জেনে নিবেন, তারা আর কেউ নয়। নিতান্ত সাম্প্রদায়িক কিম্বা বর্ণবাদী মানসিকতার মানুষ।

 

এবার আসি বাঙালী জাতীয়তাবাদের সাথে ধর্মের সম্পর্ক। অস্বিকার করা যাবে না, এই অঞ্চলে ইসলামের আগে সনাতনী ধর্মের আবির্ভাব ঘটে। একটা সময়ে ইসলাম প্রচারকদের আগমনে এই সনাতন ধর্মের অনেকেই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। সেই সাথে পাল্টে যায় তাদের অনেক সাংস্কৃতিক আচার আচরণ। ধীরে ধীরে ইসলামের অনেক আচার আচরণ বাঙালী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়ে। সংস্কৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক অংগাঅংগীভাবে জড়িত। মানুষ বাদে মানুষের সংস্কৃতি কিভাবে সম্ভব? এ অঞ্চলে ইসলামের আগমনের সঙ্গে বাঙালী মুসলিম সংস্কৃতিরও উদ্ভব ঘটে। তেমনি হিন্দু ধর্মের সাথে সম্পর্কিত কিছু সংস্কৃতি থেকে যায় বাঙালী হিন্দু সংস্কৃতি হিসেবে। দেখবেন বাঙালী হিন্দুদের ধর্মীয় অনেক আচার আচরনের সাথে ভারতের অন্যান্য হিন্দুদের আচার আচারণের পার্থক্য আছে। তেমনি বাঙালী মুসলমানদের সংস্কৃতির সাথেও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের সংস্কৃতিতেও একটু হলেও পার্থক্য আছে। অর্থাৎ হিন্দু কিম্বা মুসলমানি এই দুই ধর্মীয় পরিচয়ের সাথে তার এথনিক বাঙালী পরিচয়কে কেন্দ্র করে একটা স্বতন্ত্র সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটেছে। এই দুই ভিন্ন ধারার বাঙালী সংস্কৃতিকে ছাপিয়ে আবার স্বার্বজনীন বাঙালী সংস্কৃতিও আছে যেখানে বাঙালী হিন্দু কিম্বা মুসলমানের কোন পার্থক্য নেই। নবান্ন উৎসব কিম্বা এ রকম আরো অনেক উৎসবে বাঙালী হিন্দু মুসলমান সবাই সমানভাবে অংশ নেয়।

তাই বাঙালী সংস্কৃতির নামে যারা ইসলামিক জীবনবোধকে দূরে ঠেলে দিতে চায় প্রকারান্তরে এই গোষ্ঠী অঞ্চলের মুসলমানদের এলিয়েন গোত্রে হিসেবে বিবেচনা করে। কিম্বা হতে পারে এটাও এক ধরনের সূক্ষ্ন সাম্প্রদায়িকতা

মানতেই হবে, বঙ্গ অঞ্চলে ইসলামের আবির্ভাবের ফলে এ অঞ্চলের একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রাত্যহিক জীবনে, তাদের আচার আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এটাও ক্রমে ক্রমে বাঙালী সংস্কৃতির অংশ হয়ে পড়ে। আগেই বলেছি, সকল সংস্কৃতিই পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনটা ঘটে সময়ের সাথে যে চাহিদা সৃষ্টি হয় সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে। পরিবর্তনটা ঘটে সন্তর্পনে, অভিযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এতো কিছুর পরেও যারা ‘হাজার বছরের পুরাতন বাঙালী সংস্কৃতির’ জিকির তুলে মূলতঃ বাঙালী সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রভাবকে অস্বিকার করে এটাকে (বাঙলা সংস্কৃতিকে) একটা জড়খন্ড বানিয়ে রাখতে চায় তাদের প্রকৃত ভাবনা আসলে কি? এরা কি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত সবাইকে বলতে চায়, ’যাও ফিরে যাও পুরাতন বিশ্বাসে’? এই আহবানে কি বাঙালী মুসলমান সাড়া দেবে? অবশ্য শেখ মুজিব একদা পাহাড়ীদের বলেছিলেন, ‘তোমরা সবাই বাঙালী হয়ে যাও?’ ভাবনায় এই বৈপরীত্য নিয়ে কিভাবে সম্ভব কোন ব্যাক্তির কিম্বা রাজনৈতিক দলের অধীনে অসাম্প্রদায়িক বাঙলাদেশের সূচনা করা?

 

ওরা মুক্তিযোদ্ধা নয়, ট্রেইটর!

মাহবুব মিঠু।।

মতিউর রহমান সম্পাদিত প্রথম আলো এবং গোলাম সারওয়ারের সমকাল পত্রিকায় মোদির রাজনৈতিক উত্থান বর্ণনা প্রসঙ্গে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছে। মাঝখানে দুইটা দিন অতিবাহিত হলেও এখনো পত্রিকা অফিস থেকে কোন ব্যাখ্যা না পাওয়াতে আমরা ধরে নিতে পারি এটা কোন অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসকে অমর্যাদার জন্যই তাদের এই অপচেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না আসাতে ধরে নেয়া যায় সরকারের অবস্থানও একই। কিছুদিন আগে ভারতের একটা ছবিতেও ইতিহাস বিকৃতির এই অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে তারা ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়। এতোকিছুর পরেও প্রথম আলো এবং সমকালের এই ইতিহাস বিকৃতি নিছক ভুল বলা হলে নিজের বিবেচনা এবং বিচার শক্তিকে অবজ্ঞা করা হবে।

 

ইতিহাস বিকৃতির পিছনে তাদের উদ্দেশ্য কি সেটা একদিন প্রকাশিত হবেই। তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ আখ্যা দিয়ে একাধারে ত্রিশ লক্ষ শহীদদের আত্নাকে আহত করেছে। ৭১ সালের যুদ্ধ যদি ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হয়, তবে বাঙলাদেশী যারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল তাদের অবস্থান কোন পক্ষে ছিল? যেহেতু তারা পাক সেনাদের বিরুদ্ধে লড়েছে, তাই অবশ্যই তাদের অবস্থান ভারতের পক্ষে। অর্থাৎ আমরা যাদের মুক্তিযোদ্ধা বলি তারা প্রথম আলো এবং সমকালের ভাষায় মুক্তিযোদ্ধা নয়, বরং ভারতের সহযোগী শক্তি হিসেবে নিজ দেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিল। তখন বাঙলাদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত থাকায় যেহেতু তারা ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতের পক্ষে অস্ত্র ধরেছিল, তাই তারা মুক্তিযোদ্ধা নয়, বরং ট্রেইটর ছিল।

এই স্পর্ধা কোথায় পেল প্রথম আলো এবং সমকাল পত্রিকা?

 

তাদের ইতিহাস বিকৃতির আরেকটি ব্যাখ্যা করা যায়। আমাদের কাছে যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরম শ্রদ্ধার ব্যাক্তি, তারা মূলতঃ তখনকার নিজ দেশের সৈনিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল শত্রুরাষ্ট্র (পাকিস্তানের শত্রু রাষ্ট্র যেহেতু ভারত ছিল)ভারতের পক্ষ হয়ে| তারই বাই প্রোডাক্ট আমাদের আজকের স্বাধীন বাঙলাদেশ। যেহেতু এটা আমাদের লড়াইয়ের ফসল নয়, বরং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের বাই প্রডাক্ট, তাই আমরা স্বাধীন হয়েও ভারতের কাছে এতোটা ঋণী যে, পুরো দেশটা তাদের হাতে এক প্রকার তুলে দিয়েও সে ঋণ শোধ হবার নয়।

 

প্রথম আলো এবং সমকালের এই ঔদ্ধত্যের কি কোন বিচারই হবে না?



কিছুটা বাড়তি যোগঃ

লেখাটা আমার ফেইসবুকে দেবার পরে এক বন্ধু নয়া দিগন্ত পত্রিকার একটা লিঙ্ক দিল। যেখানে প্রথম আলোর মতো একই রিপোর্ট হুবহু দেখান হয়েছে। অর্থাৎ ইতিহাস বিকৃতিতে প্রথম আলো এবং সমকালের সাথে নয়া দিগন্ত পত্রিকাও একই কাতারে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়া দিগন্ত পত্রিকা প্রথম আলো এবং সমকালের বিপরীত অবস্থানে। নয়া দিগন্ত জামাতপন্থী পত্রিকা হিসেবেই বেশী পরিচিত।

নয়া দিগন্ত তাদের রাজনৈতিক আদর্শ থেকে ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে গন্ডগোল কিম্বা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ বলে স্বাচ্ছন্দবোধ করার কথা। কারণ তখন জামাতের অবস্থান ছিল মুসলীম লীগের মতো পাকিস্তানের পক্ষে। কাজেই তারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হিসেবে তুলে ধরতে পারলে যাদেরকে আমরা রাজাকার কিম্বা যুদ্ধপরাধী বলি তারা মূলতঃ হয়ে যাবে দেশপ্রেমিক।

খালেদ জিয়ার ভাষন এবং আরো কিছু আলোচনা।

মাহবুব মিঠু।

এক।।

সরকারের তোপের মুখে পড়ার ভয়ে কিম্বা সরকারের কাছ থেকে মন্ডা মিঠাই খাওয়ার লোভে দেশের অধিকাংশ মূল ধারার মিডিয়া কেন জানি বিএনপির প্রতি বিমাতাসুলভ। বিএনপি যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে তখন এই শ্রেণীটা বলে, দলটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এভাবে কি সরকারের পতন সম্ভব?

ওনারা মূলতঃ ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের কথা দাঁতের মাঝে আটকে রেখে বুঝাতে চান। ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি, কোন স্বৈরাচারী সরকার কিম্বা ফ্যাসিবাদী সরকারকে হঠাতে একমাত্র উপায় কঠোর আন্দোলন। সেটা সহিংস আন্দোলনেও রূপ নিতে পারে সরকারী পেটোয়া বাহিনীর কাজের উপর নির্ভর করে। যেমন ধরুন, সিরিয়ার আসাদ কিম্বা লিবিয়ার সাবেক এক নায়ক গাদ্দাফীর মতো শাসকদের  হঠানো কি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সম্ভব?

যে প্রসঙ্গে আলাপ করছিলাম, যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকেও আওয়ামিলীগ সরকার পুলিশ এবং দলীয় গুন্ডাদের লেলিয়ে দিয়ে পন্ড করে যাচ্ছিল, তার প্রতিক্রিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলন এক সময়ে সহিংস রূপ নেয়। এটাই হয়তো চাচ্ছিল উল্লেখিত চিহ্নিত মিডিয়াগোষ্ঠী। সবাইকে অবাক করে দিয়ে এবার তারা বলতে থাকে, সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে বিরোধীজোট জাতির স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

কি তাজ্জব কথা! এই সেদিনও তারা বিরোধীজোটের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এখন তাদের মুখে ভিন্ন সুর। আসলে এটা একটা অপকৌশল, যার মাধ্যমে বিরোধীজোটের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করে দিয়ে সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করা। নব্বইর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও হরতাল, ভাঙচুর, মারামারি ছিল তৎকালীন জাতীয় পার্টি এবং তার অঙ্গ সংগঠনদের সাথে। ওটাও কি ‘সহিংস’ আন্দোলন ছিল? শান্তিবাদী আন্দোলনে এরশাদকে হঠানো সম্ভব হোত? বর্তমান এবং তখনকার পরিস্থিতির মধ্যে পার্থক্য কতোটুকু? বরঞ্চ মিডিয়াগুলো যদি সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার উন্মাদনার প্রতিবাদ করতো, তাহলে সরকারের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে খুব সহজেই তারা একটা নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হোত। এর ফলে দেশের অর্থনীতি হরতালের কবল থেকে যেমন মুক্তি পেত, ঠিক তেমনি দেশের মানুষের জীবনও বিপন্ন হোত কম। সরকারের এই একগুঁয়েমি মনোভাব সৃষ্টিতে এই শ্রেণীর মিডিয়ার একটা প্রবল ভূমিকা রয়েছে।

 

দুই।।

৫ই জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনের পরে তৎকালীন ১৮দলীয় জোটের (বর্তমান ১৯দলীয় জোট) আন্দোলন জোরালো হবার পরিবর্তে মুখ থুবড়ে পড়ে। এটা নিয়েও একই মহল বিরোধীদলীয় জোটকে বিভ্রান্ত করতে ছাড়েনি। আন্দোলন দুর্বল হবার কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করে, বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়াকে। এটাও একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে দল বা জোটের ভিতরে নির্বাচন বিষয়ে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করা। খালেদা জিয়া গত ৪ঠা ফ্রেব্রুয়ারীর ভাষনে এই অভিযোগকে সরাসরি উড়িয়ে দেন।

বিতর্কিত নিবাঁচনের পরে আন্দোলন থিতিয়ে যাবার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনের পরপর এক ভাষনে খালেদা জিয়া রাজপথের তীব্র আন্দোলন থেকে সরে এসে যে গতানুগতিক আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষনা করেন, এতে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, ১৮দলীয় জোট কি তবে পরোক্ষভাবে এই বিতর্কিত নির্বাচনকে মেনে নিল? এই বিষয়টা তখন পরিস্কার না হলেও একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে, বিরোধীজোট আপাততঃ সরকারের কৌশলের কাছে পরাস্ত।

কেন এমনটি হোল? বিরোধীজোট জমে ওঠা আন্দোলনকে টেনে নিতে পারল না কেন?

অনেকেই মনে করেন, বিরোধীজোটের অতিমাত্রায় কূটনীতিক নির্ভর রাজনীতিই তাদের জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। এই মূল্যায়নটা মিথ্যে নয়। তবে এটা আসল কারণ নয়। এটা দ্বিতীয় স্তরের কারণ; অর্থাৎ এই কারণ সৃষ্টিতে আরো অনেকগুলো কারণ কাজ করেছে। সম্ভবতঃ খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিলেন কূটনৈতিক নির্ভর হতে। বাঙলাদেশের বর্তমান রাজনীতি এতোটা গভীরভাবে অতীতে আর কখনো বহিঃশক্তির দ্বারা নিয়ন্রিত হতে সম্ভবতঃ দেখা যায়নি। ভারত নিজেদের স্বার্থে বাঙলাদেশের রাজনীতিতে আপত্তিকরভাবে যু্ক্ত হয়ে পড়ে। প্রতিবেশী শক্তিশালী দেশের পরোক্ষ এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামি সরকার অনেকটা দুর্দমনীয় হয়ে পড়ে। সে কারণেই বিরোধীজোটকে বাইরে বিকল্প শক্তিকে মটিভেট করা প্রয়োজন ছিল।

সেটা করতে গিয়ে এতোটা কূটনীতিক নির্ভর না হলেও চলতো। কিন্তু অন্য কারণে সেটা হয়তো সম্ভব হয়নি। কথিত অভিযোগ মোতাবেক, বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা হামলা মামলার ভয়ে সরকারের সাথে আঁতাত করে। এরাই আন্দোলনকে পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করে। দলের স্বিদ্ধান্ত খুব সহজেই প্রতিপক্ষের কাছে চলে যেত। কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণ না থাকলেও ঢাকা বাদে সারাদেশে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। সরকারীদলের কোন নেতা এলাকায় পর্যন্ত যেতে সাহস করতো না। ঢাকায় বিরোধীজোটের  করুণ পরিণতির জন্য দায়ী কিছু কেন্দ্রীয় নেতাদের কাপুরুষতা এবং আপষকামীতা। অন্যদিকে, সাদেক হোসেন খোকার সাথে মির্জা আব্বাসের ব্যাক্তিগত দ্বন্দ্বও বড় ভূমিকা রাখে। সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপিদলীয় কমিশনার আলমকে হত্যা এবং গুম করে যে গুমের রাজনীতি শুরু হয়, ইলিয়াস আলীকে কথিত হত্যা এবং গুমের মাধ্যমে তার ষোলকালা পূর্ণ হয়। বিরোধীজোটের নেতাদের মনে গুমের আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিয়ে সরকার তাদের ঘরে বসিয়ে রাখে। সরকারের অনমনীয়তা এবং এর কারণে সহিংসতা বৃদ্ধি পেলে আবারো অনির্বাচিত সরকার জাতির কাঁধে চেপে বসতে পারে, এই আশঙ্কায় বিরোধীজোট অনেকটা ধীরে চলো এবং কূটনীতিকদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ জোটের মধ্যে বিশেষ করে বিএনপি এবং জামাতের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। এটা হয়েছে মূলতঃ জামাতের দলীয় স্বার্থে জোটের কমসূচীকে ব্যবহার করার জন্য। সরকার বিরোধী আন্দোলন এবং জামাতের যুদ্ধপরাধী নেতাদের বিচারের রায় একটা পর্যায়ে সমান্তরালে চলতে থাকে। একের পর এক জামাতের কেন্দ্রীয় নেতাদের ফাঁসীর রায় তাদেরকে বেপরোয়া করে তোলে। জোটের অন্যতম শরীক দল হিসেবে এর কিছুটা দায়ভার বিএনপির কাঁধেও চাপে। জামাত দলগতভাবে সহিংসতার পাশাপাশি জোটের কর্মসূচীতেও কৌশলে তাদের দলীয় অর্থাৎ যুদ্ধপরাধী ইস্যুকে ঢুকিয়ে দেয়। জোটের যে কোন কর্মসূচীতে আগেভাগে মঞ্চের কাছাকাছি অবস্থান নিয়ে তারা চিহ্নিত কিছু যুদ্ধপরাধীদের ছবি সম্বলিত পোষ্টার ব্যানার নিয়ে প্রচারণার সাথে সাথে মুক্তির দাবীতে শ্লোগান তুলে। এভাবেই জোটের কর্মসূচীতে মূল দাবী আড়াল হয়ে পড়ে যুদ্ধপরাধীদের মুক্তির ইস্যুটা জামাতশিবিরের কারণে মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। সরকারীদল এই সুবর্ণ সুযোগটার অপেক্ষায় ছিল। সমর্থিত মিডিয়ার মাধ্যমে তারা প্রচারণায় সফল হয় যে, ১৮দলীয় জোটের সমস্ত কর্মসূচী মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে জামাতের যুদ্ধপরাধী নেতাদের বাঁচানোর চেষ্টা। সকলকে একটা বিষয় বুঝতে হবে, যুদ্ধপরাধী ইস্যুকে সরকার বিরোধীদলকে দমানোর জন্য ব্যবহার করার কারণে এবং প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাইবুনালের জন্য অনেকে বিচার প্রক্রিয়াকে মেনে না নিলেও দেশের সিংহভাগ মানুষ যুদ্ধপরাধীদের বিচার চায়। নিজামী, গোলাম আযমদের মতো বিতর্কিত ব্যাক্তিদের পক্ষে প্রচারণা তাই জোটের বড় দল বিএনপির অনেক কর্মী সমার্থকরাও ভাল চোখে দেখেনি।

 তিন।।

৫ই জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনের পরবর্তী খালেদা জিয়ার প্রথম ভাষন শুনে যারা আন্দোলনের গতি প্রকৃতি নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, ওনাদের গত ৪ঠা ফ্রেব্রুয়ারীর ভাষনের পর সেই হতাশা অনেকটা কেটে যাবার কথা।  এই ভাষনটি নানাভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। এখানে খালেদা জিয়া বেশ কিছু ইঙ্গিত দেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিরোধীজোটের বর্তমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়। দাবী মানার জন্য সরকারকে আরেকটু সময় দেয়া। একগুঁয়েমি পরিত্যাগ না করলে খুব তাড়াতাড়ি আবারো কঠোর কর্মসূচীতে ফিরে যাবে। এই ফাকে তারা দল এবং জোটকে গোছানোর কাজগুলো হয়তো সেরে নেবে। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিএনপি স্থানীয় পর্যায়ে দলকে পুণরুজ্জীবিত এবং চাঙ্গা করার কাজ হাতে নিয়েছে। এই নির্বাচনে বিরোধীজোট যদি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মতো ফলাফল দেখাতে পারে, তাহলে একদিকে যেমন জোটের নেতাকর্মীরা মনোবল ফিরে পাবে এবং তার উল্টোটা ঘটবে প্রতিপক্ষের শিবিরে।

আরো কিছু কাজ তিনি দলের পক্ষ থেকে হাতে নিয়েছেন এবং তার ফলাফলও ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছেন। মামলায় আক্রান্ত নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করে আটকে পড়া নেতাকর্মীদের আন্দোলনে ফিরিয়ে আনছেন। তিনি দলীয় কর্মীদের উপর হামলা মামলা নির্যাতন এবং হত্যা ও গুমের যে ডাটাবেজ করেছেন, সেটা আন্তর্জাতিক মহলকে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সাহায্য করবে।  ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার কয়েকটি মামলা হয়েছে। এই ডাটাবেজ ভবিশ্যতে এই মামলার রায়কে তথ্য উপত্য দিয়ে সাহার্য করবে। তাছাড়া কর্মীদেরকে আশ্বস্ত করবে তাদের আত্নত্যাগ বৃথা যাবে না। দল কিম্বা জোট ক্ষমতায় এলে এর বিচার তারা পাবে। দলে তাদের ত্যাগ স্বিকারের যথাযথ মূল্যায়ন হবে।

 

৪ তারিখের ভাষনের শেষ পর্যায়ে জনৈক সাংবাদিকের জামাত বিষয়ক প্রশ্নের জবাব খালেদা জিয়া যেভাবে দিয়েছেন, তাতে মনে হচ্ছে জামাত বিরোধীজোটে শেষ পর্যন্ত থেকে যাচ্ছে। তবে কিছুদিন আগে জামাত প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থানের সাথে সর্বশেষ অবস্থান মূল্যায়ন করলে বুঝা যায়, কিছু বিষয়ে জামাতের সাথে বিএনপির একটা বোঝাপড়া হয়েছে। ইতিপূর্বে জামাত যেভাবে জোটের কর্মসূচীতে তাদের যুদ্ধপরাধী নেতাদের মুক্তির ব্যাপারটা সামনে নিয়ে আসত, সেটা থেকে তারা হয়তো বিরত থাকবে। জোটে থেকে জোটের বাইরে দলীয় কর্মসূচীতেও এই ইস্যুতে তারা আগের মতো সহিংসতায় যাবে না। ভিন্ন একটা মামলায় নিজামীর বিরুদ্ধে ফাঁসীর রায়ের পরবর্তীতে জামাতের তৎপরতা দেখে সে কথার প্রমাণ মেলে।

সরকারীদলের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে বিএনপিকে জামাতের সঙ্গ ছাড়তে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই উপদেশ দেবার নৈতিক কোন অধিকার তাদের আছে কি? ইতিপূর্বে ১৯৮৬ সালে এরশাদের অধীনে আওয়ামিলীগ জামাতকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে গিয়েছিল। ৯৬ সালে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছে তারা। বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা নিজে বলেছিলেন, তিনি জাতীয় পার্টি এবং জামাতেরও নেতা। অতীত এই জামাত সম্পৃক্ততার জন্য আওয়ামিলীগ কিম্বা শেখ হাসিনা কি ক্ষমা চেয়েছেন?

দেশের মূলধারার মিডিয়াগুলো রাজাকার এবং যুদ্ধপরাধী বিষয়ক সরকারীদলের সম্পৃক্ত থাকার কথা চেপে গেলেও নানান সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সেটা কিন্তু চাপা থাকেনি। বিএনপির সাথে জামাতের সম্পর্কচ্ছেদ নিয়ে আওয়ামিলীগের অতি মাত্রায় আগ্রহকে তাই অনেকেই ভিন্ন নজরে দেখছেন। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক এবং যুদ্ধপরাধী দু’টো ভিন্ন বিষয়। এটা কোন শর্ত সাপেক্ষ বিষয় নয়। জামাতের সাথে রাজনৈতিক জোট করে বিএনপি রাজাকার যুদ্ধপরাধী ইস্যুতে যে অন্যায় কাজটি করেছে, আওয়ামিলীগ তারচেয়েও বেশী অন্যায় কাজ অতীতে যেমন করেছে, ঠিক এখনো সেগুলো করে যাচ্ছে। প্রথমতঃ শেখ হাসিনার মেয়ের শ্বশুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের জোরাল অভিযোগ আছে। সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচার পাওয়া একটা ছবিতে দেখা যায়, উনি তার বেয়াইকে চেয়ারের পিছনে দাঁড়িয়ে যত্ন আত্নি করে খাওয়াচ্ছেন। ওনার নিজ দলে বর্তমানেও অনেক নেতা আছেন যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ছিলেন এবং সেই সাথে অনেকের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের অভিযোগও আছে। ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে এখনো ওনার গাঁটছাড়া সম্পর্ক।

 

সব মিলিয়ে বিএনপির আপাততঃ আন্দোলন থেকে সরে আসা পরাজয় নয়, বরং বাস্তবতার নিরীখে এটা সাময়িক পশ্চাদপসরন। খালেদা জিয়ার সর্বশেষ ভাষন, নেতাকর্মীদের অনেক আশংকা কাটিয়ে দেবে। হতে পারে এটা সরকারী হামলা মামলায় বিপর্যস্ত নেতাকর্মীদের জন্য মৃতসঞ্জীবনী।

ক্ষমার বন্যায়, স্বাগতম অন্যায়

মাহবুব মিঠু।।

অবৈধ সরকারের অবৈধ সমাজ কল্যাণ (অকল্যাণ না হলেই চলবে) মন্ত্রী, জনাব সৈয়দ মহসীন আলী শিশুদের সামনে মঞ্চে বসে বিড়িতে সুখটান দিয়ে ফেইসবুকে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। অতঃপর তিনি ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে আবারো ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। বিষয়টা এখানেই মিটে যাবার কথা। কিন্তু আদতে কি সেটা ভাল হোত? উনি তো অন্যায় করেননি শুধু। অপরাধও করেছেন। সাজা না পেয়ে বা আদালত কর্তৃক ক্ষমা না পেয়ে ফেইসবুকে ক্ষমা চাইলেই কি সব মিটে গেলো?

ওনার ফেইসবুক পেজে দেখলাম জাতির কিছু অতি সজ্জন এবং ক্ষমাশীল ব্যাক্তিবর্গ তাকে সাধুবাদ জানিয়ে ভরে ফেলেছেন। অবশ্য এই ক্ষমাশীলদের কেউ ওনাকে জিজ্ঞেস করেনি, দু’দিন আগে যে উনি প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রেখেছিলেন, তার জন্য ক্ষমা চাইবে কবে? অবৈধ নির্বাচনে জিতে নিয়ে (জিতে এসে নয়) প্রথম সাংবাদিকদের সামনে তিনি মুখ খুলে বলেছিলেন, ‘হু ইজ বিএনপি?’/ তখন এই ইজ্জত দেনেওয়ালেদের অনেকেরই মুখে কথা ফুটেনি। তার কয়দিন বাদেই আইন ভঙ্গ করে তীব্র নিন্দার শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে ক্ষমা চাইলেন, আর বিদ্যুতের বেগে তিনি মহান ব্যাক্তি বনে গেলেন? তিনি যদি প্রশংসারযোগ্য এবং সজ্জন ব্যাক্তি হয়ে থাকেন তবে সব ভুল এবং সব অন্যায়ের জন্যই ক্ষমা চাইতেন।

সাবাশ জনগন!

আমাদের অবৈধ মন্ত্রী বাহাদুর গরু মারিয়া জুতাদান প্রবচনের দারুন একখান উদাহরণ সৃষ্টি করিলেন! আপনারা সাধুবাদ জানাইয়া এই উদাহরণ সৃষ্টির ঘটনায় ইতিহাস হইয়া রহিলেন।

গলা ফাটাইয়া বলিতে ইচ্ছা করে, ওহে আবুল! আমার বাছাধন। তোমার কি ফেইসবুকে এ্যাকাউন্ট ছিল না?

ওহে কালা বিলাই! তুমি বলিলেই তো তোমাকে একখানা আস্ত এ্যাকাউন্ট ফ্রীতে খুলিয়া দিতাম!

সেই এ্যাকাউন্টে তুমি ক্ষমা চাহিতে! জনগণ তোমাকে মহান বলিয়া ক্ষমা করিয়া দিতো!

প্রশ্ন আসতে পারে, চুরি করা আর প্রকাশ্যে বিড়ি ফুঁকা কি এক হোল?

কিছুটা এক তো বটেই, আবার অনেক পার্থক্যও আছে। উভয়েই আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। পার্থক্য হচ্ছে অপরাধের গুরুত্বের ক্ষেত্রে।  উভয়েই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।  তবে শাস্তির পরিমাণ অপরাধ ভেদে ভিন্ন। কোনটাতে গুরু শাস্তি, কোনটাতে লঘু শাস্তি।

যাইহোক, যারা মন্ত্রীকে বাহবা দিয়ে সিক্ত করেছেন, তাদের কেউ অবৈধ মন্ত্রীকে দু’টো প্রশ্ন করেনি।

প্রশ্ন- একঃ জরিমানার টাকা শোধ করেছেন তো?

প্রশ্ন- দুইঃ  অবৈধ মন্ত্রী বাহাদুর! বলুন তো কোন কোন অপরাধ করে ফেইসবুকে ক্ষমা চেয়ে শাস্তি এড়িয়ে মহান হওয়া যায়? চট জলদি বলে ফেলুন। আমারও মনে খায়েশ জেগেছে অপরাধ করে ক্ষমা চেয়ে মহান হোতে।

বাঙলাদেশের এই সব ভদ্দরলোকেদের অনেকেই পেটের দায়ে দুই টাকার জিনিস চুরি করা চোরকে ধরে আচ্ছামতো প্যাঁদানি দিতে ভুল করে না। পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চেয়েও দুর্বল চোরের অপরাধের ক্ষমা নেই। কিন্তু ভদ্দর লোকেরা আইনভঙ্গ করে ফেইসবুকে ‘সরি’ ষ্ট্যাটাস মারলেই খেইল খতম! চারিদেকে জয় জয়াকার।

মন্ত্রী বলে কথা! হোক না সে অবৈধ মন্ত্রী। তারপরেও মন্ত্রী তো!

আমাদের ক্ষমাশীল ব্যাক্তিরা ভুলে গেছেন, অন্যায় আর অপরাধ দু’টো ভিন্ন জিনিস। আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হয়ে থাকলে আপনি, আমি কে তাকে ক্ষমা করার? ক্ষমা করতে হলে সেটা করবে আদালত। আগে জানতাম পৃথিবীর তাবৎ বাঙালীদের সবার দু’টো কমন পেশা আছে। উকিল এবং ডাক্তার। বিপদে পড়ে কারো কাছে গেলে কেউ  আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না। আইন যে বানান করে লিখতে পারে না, সে ও দু’একটা ধারা বলে দেবে। আর অসুখে পড়েছেন? রাস্তার যে কোন আগন্তুককে বললেই সে হড়হড় করে ডায়াগনোসিসসহ পথ্য বাতলে দেবে। আজকে জানলাম, আমরা সবাই যোগ্য বিচারকও বটে!

ক্ষমাশীলদের মন্তব্যের সুর দেখে মনে হয়েছে, মন্ত্রী হয়ে উনি অপরাধ করে ক্ষমা চেয়েছেন, এটাই তো বিরাট ব্যাপার!  আবার শাস্তি কিসের? জরিমানা কিসের? অথচ ঘটনা হবার কথা ছিল ভিন্ন। একজন সাধারণ মানুষ আইন ভঙ্গ করে সাজা বা জরিমানা দিলেই হয়ে গেল। কিন্তু মন্ত্রীদের মতো বড়সড় লোকদের শুধু সাজা পেলেই চলবে না। এরপরে ব্যাক্তিগতভাবে ক্ষমা চাইতেও হবে। পৃথিবীর সর্বত্র সেটাই ঘটে। আমাদের দেশে উল্টো। এটা আমাদের সামন্তবাদী মনোভাবে প্রতিফলন।

যারা বিনা শর্তে অবৈধ মন্ত্রী বাহাদুরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তারা কয়েকটি বড় দাগের ভুল করেছেন।

প্রথমতঃ সে জরিমানার টাকা  দিয়েছে কিনা সে প্রশ্ন করা হয়নি। অপরাধের শাস্তি কি শুধু শক্তিহীনরা পাবে? আপনাদের মন্তব্যে সেই ইঙ্গিতই করে। এটা পুণরায় ক্ষমতাবানদের অপরাধ করতে উৎসাহিত করবে।

দ্বিতীয়তঃ তাকে মন্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে মূলতঃ এই সকল ক্ষমাশীলরা অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে আসা একটা অবৈধ, ফ্যাসিবাদী সরকারকেই মেনে নিয়ে গণতন্ত্র হত্যায় নিজেকেও শরীক করল।

বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক Moinul Ahsan Saber ভাইয়ের আজকের ষ্ট্যাটাসটা দিয়ে লেখা শেষ করব। তিনি লিখেছেন

”মাঝেমধ্যে দুএকটি অন্যরকম ঘটনা দেখতে ইচ্ছা করে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী স্কুল পড়ুয়াদের অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসে সিগারেট টানছেন। হঠাৎ পুলিশ চলে এলো, স্যার, আপনি প্রকাশ্যে ধুমপান করতে পারেন না।

: বলে কী! আমি না মন্ত্রী!

:আপনি যেই হন, এটা পারেন না। এটা দন্ডনীয় অপরাধ। আপনাকে ফাইন দিতে হবে।

: কোত্থেকে দেব। মাত্র মন্ত্রী হয়েছি …/ মাছের চাষাবাদ কিছুই শুরু করিনি।

: দিতে হবে স্যার। এই যে স্লিপ।আর দেখুন সবাই আপনার দিকে কীভাবে তাকিয়ে আছে।

মন্ত্রী ছাত্র আর অভিভাবকদের দিকে তাকাবে। পদের সঙ্গে মানানসই না হলেও একটু লজ্জাও পাবে। চামচা কেউ এগিয়ে আসতে নিলে তাকে থামিয়ে ফাইন পরিশোধ করবে। তারপর বাচ্চা বাচ্চা ছাত্রদের দিকে ফিরে গলা নামিয়ে বলবে, তোমরা রেজাল্ট ভালো করেছ। আরো নিশ্চয় ভালো করবে। অনেক উন্নতি করো জীবনে। বড় কিছু হও। আর, যদি মন্ত্রী হও কখনো, শুধু মন্ত্রীই হোয়ো। একইসঙ্গে বেয়াক্কেলও হোয়ো না।”

https://www.facebook.com/moinul.saber/posts/10203095776985715?stream_ref=10

হ্যাঁ, এটা করলেই শুধু তিনি ধন্যবাদ পাবার যোগ্য হতেন একটা শর্ত সাপেক্ষে। শর্তটা হোল, একটা অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে অবৈধ মন্ত্রী হয়ে যে অন্যায় করেছেন, তারজন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কবে?

পদত্যাগ করে সবার কাছে একটা সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন কবে?

সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে হামলা এবং একটা ঝুঁকিপূর্ণ আলোচনা।

1

কিস্তী- এক।।

মাহবুব মিঠু।।

বিষয়টা খুব স্পর্শকাতর! বার্তাটা ঠিক মতো দিতে না পারলে সমস্যা। আবার না বললেও সত্যটা আড়ালে থেকে যাবে। বিস্তারিত আলোচনা করতে গিয়ে লেখাটা বড় হয়ে যাওয়াতে কয়েকটি কিস্তিতে দেব।

নির্বাচনের পরপর দেশের কিছু কিছু জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে। সেই সাথে সরকারী পক্ষ যেমন বিরোদলীয় জোটের নেতাকর্মীর বাড়ীতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে। ঠিক তার বিপরীতটাও ঘটেছে। অর্থাৎ সরকারীদলের নেতাকর্মীরাও কমবেশী বিরোধীজোটের হামলার শিকার হয়েছে। মোটাদাগে এই হচ্ছে বাঙলাদেশে বর্তমান হানাহানির চরিত্র।

এবার একটা প্রশ্ন করা যাক।

এই হামলার মূল উৎস বা কারণ কি? তার আগে কিছু টুকরো টুকরো বাস্তব ঘটনা ছদ্ননাম ব্যবহার করে বিশ্লেষন করে দেখা যাক।

উদাহরণ- এক, আওয়ামিলীগের জব্বার বিএনপির মোবারকের বাড়ীতে হামলা করেছে, এটা কি সাম্প্রদায়িক নাকি রাজনৈতিক?

উদাহরণ- দুই,  বিএনপির সফুর মিয়া আওয়ামিলীগের গফুর মিয়াকে মেরেছে, এটা কি সাম্প্রদায়িক নাকি রাজনৈতিক?

যারা বাঙলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পকে ধারণা রাখেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে বুঝেন তারা নিশ্চয়ই জানেন, উপরের এক এবং দুই উদাহরণের ঘটনা অর্থাৎ হামলা বা পাল্টা হামলা রাজনৈতিক ডামাডোলের সময়ে অনাকাংখিত হলেও আমাদের দেশে খুবই স্বাভাবিক যেটা সাম্প্রদায়িক নয়। প্রথমতঃ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চরিত্র অনুযায়ী এটা তার মধ্যে পড়ে না। জব্বার কিম্বা মোবারক অথবা সফুর মিয়া কিম্বা গফুর মিয়া ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক হলেও একই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোক। অতএব, চরিত্র বিশ্লেষণে এটা রাজনৈতিক সংঘাত।

বিএনপি কিম্বা আওয়ামিলীগ কোন ধর্মভিত্তিক সংগঠন নয়। অতএব, এখানে যে যার ইচ্ছামতো যে কোন দলের প্রতি সমর্থন দিতে পারে। বিএনপিতে যেমন কম হলেও কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক আছে; ঠিক তেমনি কোন এক কারণে আওয়ামিলীগের প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের সমর্থনটা বরাবরই একটু বেশী। যদিও সত্যিকার সাম্প্রদায়িক হামলার ক্ষেত্রে আওয়ামিলীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠন কসাই লীগ এবং পাগল লীগ কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই।

যে বিষয়ে কথা বলছিলাম। নির্বাচন পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংঘাতের টার্গেট উভয় প্রতিপক্ষের কর্মী সমর্থকরা হয়েছে এবং সংঘাত যেহেতু এখানো চলমান, কাজেই বলা যায় সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেটা চলতেই থাকবে। যদি আক্রমণের কারণটা হয় রাজনৈতিক এবং সেই কারণে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা কর্মী যদি আক্রমণের শিকার হয়, তবে তাকে কি সংখ্যালঘু নির্যাতন বলা চলে? হ্যাঁ, যে কোন প্রকারের সংঘাতই কারো কাম্য নয়। সেটা রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক বা অন্য যে কোন কারণেই হোক না কেন! গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোল, সংঘাতের মূল কারণকে ইচ্ছাকৃতভাবে আড়ালে রেখে একে ভিন্ন রঙে রাঙানোর চেষ্টা হলে সংঘাত তো থামবেই না, বরং মূল সমস্যাটা আলোচনা থেকে হারিয়ে যাবে। আমরাও এক্ষেত্রে প্রায়শই সংখ্যালঘু নির্যাতনের পিছনের রাজনৈতিক কারণগুলোকে আমলে না নিয়ে আরেকটি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মকে টেনে এনে বিষয়টাকে গুলিয়ে ফেলি। হ্যাঁ, পুরো ঘটনার সাথে ধর্মের সংযোগ আছে বৈকি, কিন্তু সেটা রাজনীতির গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র। এবারের হামলার অন্যতম নাটের গুরু আওয়ামিলীগের নেতা ওহাব কিন্তু কোন ধর্মীয় নেতা নন। অথচ তিনি ধর্মকে এখানে কৌশলে প্রতিপক্ষ দমনে ব্যবহার করেছেন।

এবার একটা ভিন্ন উদাহরণ দেই, যেটা সত্যিকার অর্থে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে। সরকারীদলের সংখ্যালঘু প্রার্থীকে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা ভোট দেয়াতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর দ্বারা সংখ্যালঘুরা আক্রমণের শিকার। এটার চরিত্র এবং প্রকৃতি কেমন? আওয়ামিলীগের ঐ প্রার্থী কিন্তু শুধু বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে হামলা করেছে। এমনকি ভোটের আগে তাদের শাসিয়ে গেছে, সম্প্রদায় দেখে ভোট দিলে খবর আছে। আওয়ামিলীগের ঐ সংখ্যালঘু (মাফ করবেন। ঘটনা বুঝাতে আমাকে সংখ্যালঘু শব্দটি বারবার ব্যবহার করতে হচ্ছে) প্রার্থীকে কি শুধু তার সম্প্রদায়ের লোকেরাই ভোট দিয়েছিল? যদি তাই না হয়ে থাকে তবে আওয়ামিলীগের বিদ্রোহী মুসলিম প্রার্থী কেন বেছে বেছে হিন্দুদের উপরে আক্রমণ চালাল? কারণ ওরা সংখ্যায় কম, তাই দুর্বল? এখানে প্রতিশোধের সহজ প্রতিপক্ষ হিসেবে যেমন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বেছে নেয়া হয়, ঠিক তেমনি হয়তো ‘দুর্বলের অবাধ্যতার শাস্তি’ হিসেবেও হতে পারে সেটা। আরো নানা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণও থাকতে পারে। সুযোগে জমি দখল কিম্বা অন্যান্য।

এ কারণেই সংখ্যালঘুদের উপরে বর্তমানে চলা নির্যাতনের উৎস ভোটের রাজনীতি হলেও  এবং রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার সকল দলের, সকল ধর্মের লোকজন হলেও ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের’ বিষয়টা স্বতন্ত্র আলোচনার দাবী রাখে। তাছাড়া অন্য রাজনৈতিক সহিংসতার বিস্তৃতি সীমিত। অর্থাৎ গোটা জনপদ জুড়ে সাধারণত চলে না। বেছে বেছে প্রতিপক্ষের উপরে হামলা হয়। যদিও বর্তমান সরকারের আমলে কয়েকটি স্থানে বিরোধীজোটের আধিপত্য আছে এমন কিছু এলাকায় ব্যাপক ধ্বংশজজ্ঞ চালানো হয়েছে। সংখ্যালঘুদের বেলায় এর বিস্তৃতির স্বরূপ ভিন্ন। কোন দলকে সমর্থন দেয়া কারো ব্যাক্তিগত অধিকারের মধ্যে পড়ে। সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক সমর্থন সাধারণতঃ আওয়ামিলীগের প্রতি।  তাই যখন রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হয় তখন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গোটা জনপদ প্রতিপক্ষের টার্গেট হয়ে পড়ে। গোটা জনপদ টার্গেট হবার ফলে সেটা আলাদাভাবে মানুষের নজরে আসে। কিছু স্বার্থান্বেসী মহল বিভিন্ন স্বার্থ হাসিলের জন্য সুযোগের সদ্ব্যাবহার করে হামলে পড়ে সংখ্যালঘুদের  উপরে।

সংখ্যালঘুর উপরে নির্যাতনের কিছু বাড়তি বেনিফিট আছে যেগুলো অনেক সময় সরকারের পক্ষে যায়। এরশাদের আমলেও এই ঘৃণ্য কৌশল নেয়া হয়েছিল। এরশাদের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে ঠিক সেই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিয়ে এরশাদ আন্দোলনের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিল। বর্তমান আওয়ামিলীগ সরকারও সেই কৌশল বেছে নিয়েছে। যখনই সরকার বিপাকে পড়ে তখনই এক একটা ইস্যু সামনে নিয়ে আসে। হারিয়ে যায় পুরাতন আলোচনা। এই মুহুর্তে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টা চাঙ্গা করতে পারলে দেশবাসী এবং বহির্বিশ্বের দৃষ্টি ভিন্নদিকে সরিয়ে দিতে পারবে। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে পাশ্ববর্তী দেশের নাক গলানোকে বৈধতা দেবার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কোনভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সাথে ইসলামি জঙ্গীবাদের সংশ্লিষ্টতা দেখাতে পারলে বন্ধুহীন বর্তমান সরকার বহিঃবিশ্বে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। এভাবেই তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।

(পরবর্তী কিস্তিতে তথ্য প্রমাণসহ হামলার সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় দেবার চেষ্টা করব।)

জনাব জাফর ইকবাল, আমাদের কিছু প্রশ্ন ছিল।

4

 

মাহবুব মিঠু।।

একদলীয় নির্বাচনকে বৈধতা দিতে গত ৪ তারিখে (জানুয়ারী ৪, ২০১৪) জনাব জাফর ইকবাল ‘সহিংস রাজনীতি, সংকটে দেশ- ভবিশ্যত ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে যে বক্তব্য রাখলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম আওয়ামিলীগের কোন ডাকসাঁইটে নেতা হয়তো বক্তব্য রাখছেন। নিজেকে নিরপেক্ষ দাবী করলেও ওনার ইদানিংকার সবগুলো লেখার ‍ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোথাও তার ছাপ থাকে না। কেন জানি মনে হয়, সরকারকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার দায়িত্ব বোধহয় সিংহভাগ জনাব জাফর ইকবালের কাঁধে চেপেছে।

http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=2eba6ef37ac9b1344c9c466446d0072a&nttl=04012014253918

উক্ত সেমিনারে জনাব জাফর ইকবাল বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে বলেছেন।

ভাল কথা।

’জামায়াত’ বলতে উনি নিশ্চয়ই যুদ্ধপরাধী এবং রাজাকারদের সংগঠনকে বুঝিয়েছেন। জামাত কোন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সংগঠন না হলে উনি নিশ্চয়ই সঙ্গ ছাড়ার কথা বলতেন না।

সেই চেতনা থেকে একই অনুরোধ কি আপনি আওয়ামিলীগকে করতে পারবেন?

শেখ হাসিনাকে বলুন না, তার বেয়াইর সাথে আত্নীয়তা ছিন্ন করতে। তিনি তো রাজাকার এবং যুদ্ধপরাধী ছিলেন।

শেখ হাসিনাকে বলুন না, তার দলের রাজাকার, যুদ্ধপরাধী নেতাদের দল থেকে বহিস্কার করতে।

জনা্ব জাফর ইকবাল, আপনি বিএনপিকে বাইরের রাজাকার যুদ্ধপরাধীদের (জামাত শিবির) সঙ্গ ছাড়তে বলছেন। অথচ দলের ভিতরে, আত্নীয়তার সম্পর্কের ভিতরে যে রাজাকার যুদ্ধপরাধী অবস্থান করছে, সেটা নিয়ে রা নেই। আওয়ামিলীগকে সংগঠন হিসেবে রাজাকার এবং যুদ্ধপরাধী মুক্ত করতে না পারলে কিছুটা হলেও এই দলটিতেও জামাতের চরিত্র থেকে যাবে। তখন কি বলতে পারবেন জাতিকে আওয়ামিলীগেরও সঙ্গ ছাড়তে?

অবশ্য চেতনার এতো উধ্বমার্গে গমনের আগে স্যার, নিজেকে প্রশ্ন করুন, যুবক থাকা সত্ত্বেও কেন ৭১এ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি? বিষয়টা ব্যাক্তিগত হলেও আপনার বর্তমান অবস্থানের জন্য এই প্রশ্নের উত্তর জানা যে কোন নাগরিকের অধিকার আছে। নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবী করে অন্যের ভূমিকার সমালোচনা করতে হলে নিজের ভূমিকাকে সবার আগে পরিস্কার করতে হয়। ৭১সালের একজন যুবক কেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হবে?  তারতো মুক্তিযোদ্ধা হবার কথা।

একই সেমিনারে উনি বলেছেন “কয়েকদিন আগে কানাডিয়ান হাইকমিশনের একজনের সাথে দেখা হলে তিনি আমার কাছে যুদ্ধপরাধের বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, জামাতে ইসলাম বিএনপির লোকদেরই শুধু বিচার করা হচ্ছে। এখানে তো আওয়ামিলীগের লোকই নাই।”

এর উত্তরে বলেছিলেন, “৭১ সালে আওয়ামিলীগই মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল। সঙ্গতকারণে তাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে যাবার সুযোগ ছিল না”।

কথাটা অর্ধসত্য। এখানে আপনি খুবই সচেতনভাবে প্রতারণা এবং মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন।  আপনার কথায় বুঝা যায়, ৭১সালে যারা আওয়ামিলীগ করতো, এখনো শুধুমাত্র তারাই দলে আছে। নতুন কেউ এই দলে যোগ দেয়নি। তাহলে তো আওয়ামিলীগের প্রায় বিলুপ্তি হয়ে যাবার কথা ছিল।

সোজা প্রশ্ন করি। স্যার, আপনি কি বলতে চান, আওয়িামিলীগে কোন রাজাকার বা যুদ্ধপরাধী নেই? শেখ হাসিনার বেয়াই কে? মরহুমা জাহানারা ইমামের করা লিষ্টে অন্ততঃ প্রায় ৪০ জনের মতো বর্তমান আওয়ামিলীগে সক্রিয় আছে এমন রাজাকার এবং যুদ্ধপরাধীর নাম আছে। গতবারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নাম ভুলে গেলেন?

সাজেদা চৌধুরী কে ছিলেন?

মহিউদ্দিন খান আলমগীর সম্পর্কে স্বয়ং কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, একাত্তুরে তিনি শুধু পাকিস্তানের পক্ষেই ছিলেন না, বরং পাকি সেনাদের সহায়তা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করতে।

তারপরেও আপনি কানাডিয়ান দূতাবাসের লোকটার সঙ্গে যে কৌশলে র আশ্রয় নিয়েছেন সেটা কি অনৈতিক নয়? আপনার যুক্তিতেই যদি ফিরে যাই, তাহলে বিএনপিতে কোন রাজাকারই থাকার কথা নয়। কারণ বিএনপির জন্মই হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের বেশ কয়েক বছর পরে।

আপনি  বিএনপি জামাতের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যতোখানি স্পষ্টভাবে বলেন ঠিক ততোখানি নিরব থাকেন আওয়ামিলীগের ব্যাপারে। এই পর্যন্ত অন্ততঃ দুইটা ঘটনা পত্রিকায় এসেছে বাসে পেট্রল বোমা নিক্ষেপে আওয়ামিলীগের জড়িত থাকার বিষয়ে। এর আগে এক লেখায় বোমা মেরে বাস যাত্রীদের পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ১৮দলীয় জোটের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু যেই মাত্র প্রমাণ হোল, এই ঘটনার সাথে সরকারদলীয় লোকজন জড়িত, তারপর আশা করেছিলাম আপনি কিছু একটা লিখবেন।  সরকারীদলের গুন্ডারা হিন্দু বাড়ী মন্দিরে হামলা করল। ধরা খেয়ে তাদেরকে কসাই এবং পাগল বলে চালিয়ে দেয়া হোল।  এ বিষয়েও লেখার সময় হোল না।

জানুয়ারীর ৪ তারিখের বাঙলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার খবর ছিল, ‘নৌকায় ভোট দিলে গ্রেফতার করা হবে না’।  এই খবরে বলা হয়েছে, বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ-শরনখোলা আসনে চাইতে গিয়ে সেখানকার আওয়ামিলীগের নেতা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানার ওসি জামাত শিবিরের ক্যাডারদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তারা নৌকায় ভোট দিলে কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। ওদিকে এই সেদিনও হানিফের হাত ধরে আওয়ামিলীগে জয়েন করেছেন জনৈক জামাত নেতা। তার মানে কে রাজাকার, কে যুদ্ধপরাধী সেটা তার অতীত কর্মকান্ডের চেয়ে বর্তমানে সে কতোটুকু আওয়ামিলীগার তার উপরে নির্ভর করছে!

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/04/35977

নতুন বার্তার ২৮শে ডিসেম্বর ২০১৩, খবর ‘একটির বিনিময়ে দশটি গুলি করবে ছাত্রলীগ’। কথাটি বলেছিলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া নিত্যদিন আওয়ামিলীগের নেতা বিশেষ করে, হানিফ, কামরুল, হাছান মাহমুদ, নাসিম সাহেবরা যে সন্ত্রাসী ভাষায় কথা বলছে, তারপরেও আপনার কাছে সন্ত্রাসী কেবলমাত্র এককভাবে বিরোধীজোট!

http://www.natunbarta.com/politics/2013/12/28/61462/‘একটির+বিনিময়ে+দশটি+গুলি+করবে+ছাত্রলীগ

রাতের আঁধারে সরকারের নির্দেশে হেফাজতের কর্মীদের হত্যাকে আপনি লেখার মাধ্যমে প্রকারান্তরে সমর্থন করেছেন। অপু উকিলরা যখন আদালদের দিকে ঢিল ছুঁড়ে মারে আপনি তখন নিরব থাকেন। আওয়ামি যুবলীগের কর্মীরা যখন প্রকাশ্যে বিরোধীদলীয় মহিলা আইনজীবীকে নির্মমভাবে প্রহার করে, তার স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে হাতড়ে ফেরে, তখনো আপনার কলম থেকে এক ফোটা কালি বের হয় না। মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে আদালতের দিকে ফিরে একই দলের কর্মী যখন জিপার খুলে এ্যাডাল্ট শো করে তখনো আপনি লেখার তাড়না বোধ করেন না।

এর আগে “বিষন্ন বাঙলাদেশ” নামক লেখায় নির্বাচন নিয়ে সাদা চামড়াদের হস্তক্ষেপকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। এটা আমাদের সমস্ত বাঙলাদেশীদের মনের কথা। আরেকটা মনের কথা আছে যেটা  আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছেন। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের বাদামী চামড়ার লোকজন যে খুবই ন্যাক্করজনভাবে আমাদের নির্বাচনসহ প্রায় প্রতিটা ব্যাপারে নাক গলিয়ে যাচ্ছে, সে কথাটা বেমালুম চেপে গেছেন।

জনাব জাফর ইকবালের কাছে ছোট্ট একটা প্রশ্ন করে লেখা শেষ করব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আপনি জাতিকে কি বুঝাতে চান? এই প্রত্যয়টা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন এই কারণে যে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দিকে ঢিল ছোঁড়া লোকজন থেকে শুরু করে সেই প্যান্টের চেইন খুলে, মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে যে ছেলেটি হাইকোর্টের দিকে ফিরে তার গোপনাঙ্গ দেখাচ্ছিল, সেও এই চেতনার কথা বলে। আপনি আমিও বলি। এই বলার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে বৈকি! সেজন্যই প্রশ্নটা করছি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিয়ে এক তরফা নির্বাচনে গিয়ে দেশকে সংঘাতের মুখে ঠেলে দেয়া? অবশ্যই না। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম চেতনাই ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের বাক-স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা এবং শোষন মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়াসহ অর্থনৈতিক শোষন থেকে মুক্তি। এবার একটু চোখ বুলিয়ে দেখা যাক, আপনি যে দলকে নানাভাবে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নিরীখে সেই দলের অবস্থান কোথায়! শুরু থেকেই আওয়ামিলীগ সরকার, বিরোধীদলের উপর দমন পীড়ন চালিয়ে আসছে। তাদের অনেক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীও পুলিশ এবং দলীয়  কর্মী বাহিনী দিয়ে পন্ড করা হয়েছে। মতের অমিল হলে ডঃ ইউনুস থেকে শুরু করে অনেকেই রেহাই পায়নি প্রতিহিংসা থেকে। বিরোধীদলীয় নেত্রীকে গত কয়েকদিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। নিজেদের ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন করে পুণরায় ক্ষমতায় আসার জন্য তারা পুরো জাতিকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলেছে। দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের সার্বভৌমত্ব বলতে গেলে ভারতের জিম্মায়। আমাদের নির্বাচন কেমন হবে সেটা নির্ধারণ করে দেয় তারা। অর্থনৈতিক শোষন থেকে মুক্তির ব্যাপারে যদি বলি, তাহলে এই সরকারের আমলে যে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নিতি হয়েছে তা বিগত যে কোন সরকারের আমলে করা দূর্নিতিকে ব্যাপকভাবে ছাড়িয়ে যাবে।  ঢাকা শহরের অধিকাংশ জমি আওয়ামিলীগের কতিপয় নেতার দখলে।  এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে এই দলটি স্বাধীনতার চেতনার একমাত্র ধারক বাহক হিসেবে কেন মনে হোল আপনার কাছে?

এতো কিছু জানার পরেও যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সহজলভ্য পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে নিজেকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি মনে করে তৃপ্তি নেয় তাদের উদ্দেশ্যে বলি। টকশোতে আল আমিন নামের এক শ্রোতা জনাব শাহরিয়ার কবিরকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বঙ্গবীর কাদের সিদিকী মাঝে মাঝেই আপনাকে মুরগী সাপ্লাইয়ার হিসেবে বলে থাকে, এটা কতোটুকু সত্য?” উনি কিছুটা রাগতভাবে প্রশ্নকর্তার উত্তর সুকৌশলে এড়িয়ে যান।

http://www.youtube.com/watch?v=UYIMRg6Yc6A

অতএব, যারা শাহরিয়ার কবিরকে প্রশ্ন করতে পারে না, ৭১ সালে আপনার ভূমিকা পরিস্কার নয়। আপনি কি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার নেতৃত্ব দিতে চান?

যারা জাফর ইকবালকে প্রশ্ন করতে পারে না, স্যার, ৭১ এ আপনি ছিলেন যুবক ছেলে। কেন সেদিন যুদ্ধে না গিয়ে রাজাকারের বাড়ীতে পালিয়ে ছিলেন?

যারা শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞেস করার নৈতিক সাহস রাখে না যে, হ্যালো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভায় চিহ্নিত যুদ্ধপরাধী এবং আরো প্রায় অর্ধ ডজন রাজাকার রেখে কিভাবে প্রতিপক্ষের লোকদের ধরে শুধু বিচার করছেন?

যারা এই তিনটি প্রশ্ন করার মুরোদ রাখে না, তাদের আর যাই হোক, কোন যুদ্ধপরাধীর বিচার দাবী করার নৈতিক অধিকার নেই।

Mahalom72@msn.com

আওয়ামিলীগের প্রহসনের বিচার কাদের মোল্লাকে কিংবদন্তী বানিয়ে দিলো।

মাহবুব মিঠু।

কিছু প্রশ্নের উত্তর অমিমাংসিত রেখেই কাদের মোল্লার ফাঁসীর রায় কার্যকর হোল। অস্বিকার করার ‍উপায় নেই, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুসলিম লীগ এবং জামাতে ইসলামের ভূমিকা ছিল দেশের বিপক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের গোটা নয় মাস জুড়ে এই দুই দল সারাদেশে পাকীদের সাথে একই কাতারে দাঁড়িয়ে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অনেক সূর্য সন্তানকে হত্যা করেছিল। ১৪ই ডিসেম্বর, শুধুমাত্র একদিনে তারা খুন করেছিল অগনিত মানুষকে। তাই ৭১ এর নৃশংসতার শাস্তি জড়িতদের অবশ্যই প্রাপ্য।

এই বিষয়ে কারো প্রশ্ন থাকলে সে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি নয়। পুরো বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আজ জাতি যে দ্বিধাবিভক্ত তার উৎসমূলেও কিন্তু “যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা যাবে না” তাও নয়। বিভক্তির জায়গাটা একটা নৈতিক অবস্থান থেকে। বিচার প্রক্রিয়ার দলীয়করণ চরিত্র দেখে বিবেকবান মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, এটা কি ’বিচার নাকি প্রতিশোধ’? প্রতিশোধই যদি নিতে হবে তাহলে ট্রাইবুনাল গঠন করে, এতো এতো লোকজনের বেতন ভাতার ব্যাবস্থা করে জনগণের ট্যাক্সের টাকার শ্রাদ্ধ কেন? আওয়ামিলীগের দৃষ্টিকোণে প্রতিপক্ষের যাকে যাকে মনে হয় যুদ্ধপরাধী তাদের সোজা ধরে এনে লটকে দিলেই হয়!

মূলতঃ বিচার নাকি প্রতিশোধ, এই নৈতিক অবস্থান থেকে সরে যারা কাদের মোল্লার ফাঁসী নিয়ে মাতামাতি করছেন তাদের অপরাধের প্রকৃতিও কিছুটা সেই ৭১ এর ঘাতকদের মতোই জিঘাংসা থেকে উদ্ভুত।

স্বাধীনতার চেতনার একটা বড় অংশ ছিল সমাজে ন্যায় বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। শুরু থেকে যুদ্ধপরাধীদের বিচার নিয়ে সরকার যে প্রহসন করেছে তাতে কি মনে হয় স্বাধীনতার এই চেতনার কোন সংযোগ ছিল? সম্পূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বিচার প্রক্রিয়ার যাত্রা শুরু হয়। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হোল, বিচার কাজে সুষ্ঠুতা  দিতে সরকারের যে অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেই আইন বিভাগের প্রধান আইনমন্ত্রী, সদা বাচালতায় স্বিদ্ধহস্ত কামরুল ইসলাম এবং তার পরিবার নিয়ে যুদ্ধপরাধ সংক্রান্ত যথেষ্ট অভিযোগ আছে। বেয়াইর কথা বাদই দিলাম। লিখতে লিখতে ক্লান্ত। রাষ্ট্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের তৎকালীন প্রধান মহিউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে স্বয়ং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যুদ্ধপরাধের অভিযোগ তুলেছেন। এভাবে দেখতে গেলে বর্তমান আওয়ামিলীগ করছেন জীবিত এমন অন্ততঃ তিন ডজন রাজাকার এবং যুদ্ধপরাধী নেতা আছেন, যাদের কাউকেই বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এই লিষ্ট বিএনপির করা নয়। এটা করেছিলেন প্রয়াত জাহানারা ইমাম।  যুদ্ধপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন কাদেরের একটা উক্তি বেশ মজার! তিনি বলেছিলেন, আওয়ামিলীগ এমন একটা কল যার একদিক দিয়ে রাজাকার ঢুকালে অন্যদিক দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বের হয়। তবে আমরা দেখেছি মুখ দিয়ে খাবার ঢুকালে পাছা দিয়ে হাগু বের হয়। অর্থাৎ কোন ভাল মানুষ আওয়ামিলীগ করলে সে আবুল হোসেন হয়।

আরেকটি হাস্যকর দিক এড়িয়ে যাবার নয়। ‘স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি’ নামে পরিচিত লাভ করা সেই ঘাদানিকের প্রধান শাহরিয়ার কবির যুদ্ধের সময় পাক আর্মিদের মুরগী সাপ্লাই দিত। এরাই হোল বিচারের সংগঠক এবং ব্যবস্থাপক। বুঝুন এবার!

এই ঘটনা উল্লেখ না করলে লেখাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।  গত ফেব্রুয়ারী মাসে এই কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে শাহবাগে যে সত্যিকারের গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কমে কেন রায় বাস্তবায়নের সময়ে শতেক খানেক লোকে এসে ঠেকল? আজকে তো কোটি জনতার উল্লাসে মুখরিত হবার কথা ছিল শাহবাগ চত্ত্বর। খুব তাড়াতাড়ি সত্যিকার স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সাধারণ মানুষ বুঝতে সক্ষম হয় তারা সরকারের পাতানো জালে আটকে যাচ্ছে। বন্যার পানি সরে যাবার মতো তাই দ্রুততার সাথে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও কমতে থাকে। মূলতঃ এই ট্রাইবুনালের রায় স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কিম্বা অপরাধের মেরিট অনুযায়ী যতোটুকু দেয়া হয়েছে তার চেয়ে বেশী প্রভাবিত হয়েছে সরকারের ইশারায়। কাদের মোল্লার রায়ে দেয়া যাবজ্জীবন ছিল পুরো খেলার একটা অংশ। সরকার দুর্নিতি, ভারতপ্রীতি, মানুষ অপহরণ, গুম নিয়ে যে ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিল সেখান থেকে উত্তোরণের জন্য এই প্রহসনের খেলা জরুরী ছিল। যদিও শেষমেষ খেলা জমাতে পারে নাই। রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনতা শাহবাগে ভীর জমাতে থাকে। শ্লোগান ওঠে, জামাতের সাথে ’সরকারের’ এই আঁতাতের রায় মানি না। দু’দিন না যেতেই শাহবাগের সেই আন্দোলনের ভিতরের কুশীলবরা আসল পরিচয় নিয়ে হাজির হয়। শুরুতে সরকার ভিলেন থাকলেও তারাই ধীরে ধীরে মঞ্চে এসে নায়কের চরিত্রে অভিনয় শুরু করে। আরো ক’দিন যেতেই মূল ইস্যু অর্থাৎ যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসীর দাবীর পরিবর্তে সামনে আসে বিএনপি বিরোধীতা।   বিএনপির এ্যানির নেতৃত্বে প্রাক্তন ছাত্রদলের অনেক নেতা ‘নব্বই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতার’ ব্যানারে শাহবাগের সেই প্রথমদিককার সত্যিকার গণজাগরণে একাত্নতা প্রকাশ করতে চেয়েছিল। আজকে আওয়ামিলীগ কর্তৃক পিতৃ সম্পত্তি হারানোর শোকে কাতর অঞ্জন রায় কার সাথে পরামর্শ করে তখন এ্যানিকে ‘না’ করেছিলেন? কেনই বা ‘না’ করেছিলেন? এই প্রশ্নগুলোর সদুত্তর পাই নাই তাকে জিজ্ঞেস করে। বাইন মাছের মতো পিছল কেটেছেন।

অঞ্জন রায়কে আরেকটি প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিলেও এই দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতেও সাহস পাননি। কয়েক সপ্তাহ আগে আমার ফেইসবুকের নিউজফিডে অঞ্জন রায়ের একটা পোষ্ট ভেসে ওঠে। মন্তব্য করতে না করতে মেসেজ আসে, পোষ্টটা ডিলিট করা হয়েছে। ওখানে অঞ্জন রায় লিখেছিলেন যা তার সারমর্ম হোল, তিনিও অনেক আশা নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের সাথে একাত্নতা দেখিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মূল চেতনার সাথে লাইনচ্যুত হওয়ায় তিনি আর পূর্বের অবস্থানে থাকতে পারেননি। উল্লেখ্য, ওনার লেখার ভাষাটা আমি দিতে পারব না। কারণ উনি মুহুর্তের মধ্যে সেটা মুছে দিয়েছেন। যেহেতু আমি একবার পড়তে সক্ষম হয়েছিলাম, তাই মূল কথাটা আমার নিজের ভাষায় লিখে দিয়েছি। অঞ্জন রায়কে প্রশ্ন করেছিলাম কিসের এবং কাদের ভয়ে পোষ্টটা মুছলেন? কি কারণে আপনার অবস্থানের এই পরিবর্তন? উনি নিরব থেকেছেন। আমার মনে হয়েছে অঞ্জন রায়ের সরকারের বিরুদ্ধে যতোটুকু অবস্থান সেটা শুধুমাত্র পিতৃসম্পত্তি হাতছাড়া হবার শোকে। বাকী আনুগত্য ঠিকই আছে। সম্পত্তি ফিরে পেলে পুরোটাই ঠিক থাকবে।

যাইহোক, গণজাগরণ মঞ্চের হঠাৎ ইউটার্ন নেয়া দেখে কারো বুঝতে বাকী থাকল না, কেন কাদের মোল্লাকে ফাঁসী নয় , যাবজ্জীবন দন্ড দেয়া হোল। কেনই বা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি হোল। তারপরেও এখনো কিছু মানুষ গণজাগরণ নিয়ে ভ্রান্তিতে আছেন। তাদের তুলনা শুধুমাত্র নেশাগ্রস্ত মানুষদের সাথে করা যায়। এ এক অদ্ভুদ বাতিকগ্রস্ততা! মনুষ্য সমাজের অনেকেই নিজের অবস্থান ঠিক করতে নিজের মাথা না খাটিয়ে চোখ খাটাতে ভালবাসেন। মাথা অর্থাৎ নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ না করে অন্যের আচরণ দেখে স্বিদ্ধান্ত নেন। মনে পড়ে ছোটবেলায় হাতাকাটা ভোজেন (নামটা ভুল হতে পারে। অনেক ছোটবেলার কাহিনী।) গেঞ্জী পড়ে ‍চুলের দুইদিকের চিপ কানের উপর বরাবর কেটে ভাব নেয়াটাই ছিল ফ্যাশন। স্কুলের অঙ্কের শিক্ষকের চুল টানা খেয়ে শুধরে নিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সিগারেট ফুঁকাও অনেকের কাছে স্মার্টনেস! এই ধরনের ’চোখে দেখে’ স্বিদ্ধান্ত নেবার মতো কিছু লোক এখনো আছে। এরা ’বিচার’ এবং ‘প্রতিশোধ” কিম্বা ‘প্রতিপক্ষকে দমনের’ সরকারী কৌশল বুঝে কিম্বা না বুঝে শুধুমাত্র ‘আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী’ এই তকমা পাবার জন্যই এতদসংক্রান্ত সরকারের সমস্ত অপকর্মে নিজেদের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতার মূল চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

এই অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রে। এই বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে অবস্থান নেবার অর্থ হোল কলঙ্কিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানানো। অর্থাৎ স্বাধীনতার চেতনা যা কিনা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।

আরো কিছু জিজ্ঞাসার কোন উত্তর পায়নি জনগণ। আওয়ামিলীগের প্রাক্তন এমপি রনির দু’টো লেখায় উঠে  এসেছে কিছুটা। এই কাদের মোল্লা কি সেই ঘৃণিত কসাই কাদের মোল্লা?

কাদের মোল্লার দাবী ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সে জেসিও মফিজুর রহমানের কাছে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ধলা মিয়ার দুই মেয়েকে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে কাদের মোল্লার দাবী মোতাবেক তিনি প্রাইভেট পড়াতেন।

কসাই কাদের খ্যাত এতো বড় একজন খুনী কি করে যুদ্ধের ঠিক এক বছর পরে ৭২-৭৩ সালে বাঙলাদেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সুযোগ পেল? কি করেই বা সে শেখ মুজিবের আমলে স্কুলে চাকরী পেল?

এর একটা প্রশ্নের উত্তরও আমাদের কাছে পরিস্কার নয়।

উপরের দাবীগুলোর সত্যতা বা মিথ্যা প্রমাণে সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিল আমরা তা জানি না। এই অস্বচ্ছতা অনেক মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলেছে। নামের কারণে যমে টানল না তো বেচারাকে? এই বিভ্রান্তি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে। উত্তর না মিললে এক সময় এটা বিশ্বাসে পরিণত হবে।

যুদ্ধপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের দিন ঢাকা আতঙ্কের নয়, বরং উৎসবের নগরী হবার কথা ছিল। যে আকাঙ্খিত রায়ের বাস্তবায়ন নিয়ে আজ সারাদেশে সম্মিলিত আনন্দ উৎসব হতে পারত, বর্তমান সরকারের ঘৃণ্য এবং একপেঁশে বিচার প্রক্রিয়ার কারণে জাতি আজ দ্বিধাবিভক্ত। আখেরে এই পুরো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জামাত শিবিরের উত্থান আরো ত্বরান্বিত হবে।

এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর অমিমাংসিত রেখে আওয়ামিলীগ কাদের মোল্লার ফাঁসী দিয়ে যুদ্ধপরাধের বিচার কতোটুকু করতে পারল জানি না। তবে তড়িঘড়ি করে রায়ের বাস্তবায়ন করে কাদের মোল্লাকে অপরাধী হিসেবে নয়, একজন ইসলামী আন্দোলনের কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিল। আগামী অন্ততঃ কয়েক যুগ কাদের মোল্লার গল্প বলে শত শত মুসলিম যুবককে তারা দলে ভিড়াবে।

এমনটিই হয়তো চেয়েছিল আওয়ামিলীগ এবং তাদের একান্ত বন্ধু আমাদের প্রতিবেশী ভারত। বাঙলাদেশকে জঙ্গীবাদের ট্যাগ লাগাতে পারলে সুবিধা বিএনপির অনুকূলে নয়, সেটা যাবে এই দুই শক্তির পক্ষে। বাঙলাদেশ আফগানিস্তান হলে লাভ বিএনপির নয়, পুরোটাই সুদসহ মূলধন এই দুই শক্তির পকেটস্থ হবে।

কিভাবে?

এই বুঝটা যে সব মনুষ্য প্রজাতির নেই তাদের আমার লেখা পড়াটাই ভুল ছিল।

Mahalom72@msn.com

নেতারা খায় পোলাও কোর্মা, কর্মীরা খায় গুলি।

বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে আওয়ামিলীগের চেয়ে বিএনপির ঢাকাকেন্দ্রিক শীর্ষ নেতারাই ক্রমশঃ দলের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার যেই মুহুর্তে একগুঁয়ে মনোভাব নিয়ে নির্দলীয় সরকারের নামে নিজেদের নিয়ন্ত্রনাধীন ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন করতে যাচ্ছে তখন দরকার ছিল একটা শক্তিশালী গণআন্দোলনের। প্রাথমিকভাবে বলা যায়, বিএনপির নেতৃত্ত্বাধীন ১৮দলীয় জোট আন্দোলন সফল করায় উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যর্থ। দায়ভার স্বভাবতই জোটের বড় দল হিসেবে বিএনপির ঘাড়েই বর্তায়। এমনকি বিএনপির শক্তি নিয়ে সরকারীদল থেকে শুরু সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ঠাট্টা করতে ছাড়ছে না। বলাবলি হচ্ছে, রাজপথে জামাত ছাড়া বিএনপি এতিম। সেই নব্বই কিম্বা ছিয়ানব্বইয়ের বিএনপির সাথে আজকের বিএনপির তুলনা শুধুই হতাশার জন্ম দেয়। এই কি সেই বিএনপি, নাকি তার খোলস?

বিষয়টা খালেদা জিয়ারও নজর এড়ায়নি। তাই সম্প্রতি ঢাকাকেন্দ্রিক শীর্ষ নেতাদের প্রতি তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদেরকে হুঁশিয়ারী করে দেন। শোনা যায়, তিনি মির্জা আব্বাস, খোকাসহ ঢাকা মহানগরীর পাঁচ প্রভাবশালী নেতাকে শোকজ করেছেন।  তিনি বলেছেন, সারাদেশ যেখানে উত্তাল সেখানে ঢাকা নিরব কেন? ভীতু ও মোনাফেকদের জায়গা বিএনপিতে নেই। পলাতক ও আপসকামী নেতাদের দলে জায়গা হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ার ‍ুউচ্চারণ করেন।  তিনি আরো বলেন, সারা দেশের লাখ লাখ কর্মী যখন পুলিশের গুলি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করছে, সেখানে কতিপয় নেতার পলায়নপরতা এবং আপষকামীতার জন্য আন্দোলন মাঠে মারা যাচ্ছে।

খালেদা জিয়ার উদ্বেগের কারণ যথার্থ। আজকে সরকার ঘোষনা দিক যে, তারা নির্দলীয় ব্যাবস্থায় নির্বাচন দেবে, কাল থেকেই বিএনপির এই সব নেতারা গোপন আস্থানা থেকে বের হয়ে বীরের বেশে (!) বড় বড় ব্যানার নিয়ে, নানা মোসাহেবী এবং বিপ্লবী শ্লোগান নিয়ে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসবেন।

বিরোধীদল আন্দোলন করছে একটা ন্যায় সঙ্গত দাবীকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এ কথা সত্য যে, কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি চিরস্থায়ী হতে পারে না। কিন্তু সেটাকে বাদ দিয়ে পুরোপুরি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন সেটা কি হয়েছে? আস্থা তো দূরের কথা পারস্পরিক সম্মানেরও ছিঁটেফোটা নেই। নেতানেত্রীরা একে অন্যকে যে ভাষায় গালিগালাজ করেন তা রীতিমতো বিস্ময়কর! সেদিনও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিপক্ষের পরচুলা নিয়ে মশকরা করলেন। তাছাড়া নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্টরা কি সরকারের প্রভাবের বাইরে গিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার সামর্থ্য রাখেন? এখনো পুলিশের পাশে সরকারদলীয় অস্ত্রধারীদের প্রকাশ্যে দেখা যায়। নির্বাচন কমিশন চলে সরকারের মর্জি মাফিক। আদালত কি সরকারের প্রভাবমুক্ত? দা কুড়ালের কথা বলে খোকা আছেন দৌঁড়ের উপর, ফেইসবুকে অন্যের আইডি থেকে দেয়া ষ্ট্যাটাসের মাশুল দিচ্ছে পরিবেশবাদী অধ্যাপক একেএম ওয়াহিদু্জ্জামান এ্যাপোলো। অন্যদিকে, হরতালকারীদের ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যার হুমকীদাতা সরকারীদলীয় নেতা লতিফ সিদ্দিকী এবং ’নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের’ হত্যা করার ইচ্ছা পোষনকারী প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়ের ব্যাপারে আদালত নিরব। এই সামগ্রিক বৈরী পরিস্থিতিতে এখনো আমাদের দেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিকল্প নাই।  সেই সাথে বর্তমান সরকারের গত পাঁচ বছরে হাতে গোণা কিছু সাফল্যের সাথে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের ব্যার্থতা রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের কাছে একের পর এক দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নানা চুক্তি মেনে নেবার নয়।

এতো সব সহায়ক পরিবেশ পেয়েও বিএনপি কেন কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। এর কারণ হতে পারে মোটামুটিঃ

প্রথমতঃ নেতাদের পলায়নপরতা এবং আপষকামীতা কর্মীদের হতাশ করেছে।

দ্বিতীয়তঃ শুধু আন্দোলন করলেই চলে না, আন্দোলনের তাৎপর্যটা জনগণকে বুঝাতে হয়। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারা হয়তো বুঝতে অক্ষম যে, গত পাঁচ বছরের আগের বিশ্ব এবং আজকের বিশ্বের মধ্যে বিশাল ফারাক সৃষ্টি হয়েছে। একটা সময়ে ছিল সংবাদপত্রই একমাত্র খবর সংগ্রহের মাধ্যম ছিল। এখন বাঙলাদেশে অগনিত টিভি চ্যানেল, অনলাইন পত্রিকা, ইন্টারনেট বিশেষ করে ফেইসবুক, ব্লগ ইত্যাদি নানা প্রযুক্তির বিকাশ হয়েছে। অঁজ পাড়াগায়ে থেকেও মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহুর্তেই তারা জানতে পারছে তরতাজা খবর। ফেইসবুক, ব্লগে সাধারণ মানুষ মূলধারার সংবাদপত্রের বাইরেও জানতে পারছে সাধারণের প্রতিক্রিয়া। জানাতে পারছে নিজের ভাবনার কথা। আগে সাধারণ মানুষ পত্রিকার খবর বা বিশ্লেষন পড়ে প্রভাবিত হোত। এখন তারাও অনেক ক্ষেত্রে বিকল্প গণমাধ্যমের মারফত নিজস্ব মতামত প্রকাশ করে অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে। ভুলে যান আগের কথা। নতুন করে নতুন বিশ্বকে দেখুন।

তৃতীয়তঃ ’সাধারণ মানুষ কেন আন্দোলনে শরীক হয়ে নিজেদের জীবন বিপন্ন করবে’- এই ভাবনাটা সেদিনও ছিল না, এখন হয়েছে। মানুষের মনোজগতের এই পরিবর্তনটা কি বিএনপির নেতারা উপলব্ধি করতে পারছেন? নিরব জনগণের সবাই যে সরকারের সমর্থক তা নয়। তারা শুধু আন্দোলনের ফলাফলের সাথে নিজেদের লাভালাভের হিসেবটা করছে। আন্দোলন থেকে নেতাদের পিছুটান একেবারেই ব্যাক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। কিন্তু জনগণের একটা অংশের অসম্পৃক্ততা কিম্বা নৈতিক সমর্থন না থাকার পিছনে জনগণের স্বার্থ যতোটা না ব্যাক্তিগত, তারচেয়ে বেশী সামষ্টিক। সমষ্টির মধ্যে তারা ব্যাক্তিগত স্বার্থ খুঁজছে। অর্থাৎ আজ সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ যেমন, স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব, দুর্নিতি, সন্ত্রাস, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ইত্যাকার বিষয়ে আন্দোলনরত দলগুলো ক্ষমতায় এলে কি করবে? পরিবর্তনটা যদি সেই অর্থে না আসে তবে অযথা জীবন বিপন্ন করে কার লাভ কার ক্ষতি? বলতে গেলে সেই এরশাদ আমল থেকে একই খেলা চলছে। এর মধ্যেও বিএনপির সাথে আওয়ামিলীগের গুণগত পার্থক্য কি সেই এডুকেশনটা বিএনপি জনগণকে দিতে পারেনি।

হরতালের কারণ হিসেবে বিএনপি বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনপ্রতিষ্ঠা। আপাতদৃষ্টিতে আন্দোলনকে মনে হতে পারে, নির্দলীয় ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামিলীগের বদলে বিএনপির ক্ষমতায় যাবার প্রক্রিয়া হিসেবে। আসলে যে বিষয়টা এমন সাদাকালো নয়, বরং এর সাথে জনস্বার্থ তথা দেশের স্বার্থও জড়িত সেই বিষয়গুলো বিএনপি পরিস্কার করতে পারছে না। কেন নির্দলীয় ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন করা জরুরী, সরকারীদল কেন সেটা চায় না- ইত্যাকার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জনগণের সামনে বিরোধীদল তুলে ধরতে পারেনি। শুধু হরতাল ডাকলেই হবে না। হরতাল কেন তা বুঝানোর জন্য এবং হরাতালে মানুষের সমর্থন আদায়ের জন্য যে গণসংযোগ দরকার সেটা দলের পক্ষ থেকে না করায় যৌক্তিক আন্দোলনটা কিছুটা হলেও জনণের বিরক্তের কারণ হয়ে পড়ছে।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, জীবন জীবিকার তাগিদে সাধারণ মানুষের বাইরে বের হতেই হবে। তাদের অফিসে যেতে হবে, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে। আবার গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে, একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইলে এই পরিস্থিতিতে কঠোর কর্মসূচীরও অন্য বিকল্প নাই। এই দুই প্রয়োজনীয়তা পূরণের একটা কার্যকর ভারসাম্যতা সৃষ্টি করা জরুরী।

চতুর্থঃ কোন এক অজানা কারণে অধিকাংশ সংবাদপত্র কেন জানি বিএনপির প্রতি বিমাতাসুলভ। ফলে জনগণের কাছে মূলধারার সংবাদপত্র থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যৌক্তিকতা ঠিকভাবে পৌঁছছে না।  মধ্যিখানে সহিংসতার শিকার হয়ে মারা পড়ছে সাধারণ মানুষ।

মোদ্দাকথা, আন্দোলন জোরদার করতে না পারা এবং আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারার পুরোটা দায়ভার বড় দল হিসেবে বিএনপির।  এর পিছনের কারণ হোল দলীয় পদ দখল করে রাখা কিছু সুযোগসন্ধানী নেতা। চিন্তা করুন, বিরোধীদলের নেতার বাসায় পানির লাইন, খাবার সরবরাহ কেটে দেয়া হোল। অথচ একজন নেতাকে দেখা যায়নি প্রতিবাদ করতে।

ক্ষমতায় আসলে যে সব রথী মহারথীরা মন্ত্রী এমপি হবেন দলের এই কঠিন সময়ে তাদের বাতি জ্বালিয়েও পাওয়া যায় না। এসি রুমে বসে পোলাও কোর্মা খেয়ে স্বপ্ন দেখছেন কেউকেটা হবার। ওদিকে রাজপথে কর্মীরা অকাতরে পুলিশের গুলি খাচ্ছে।  রাজপথে নেমে মামলা খেলে আপনাদের সামর্থ্য আছে তার মোকাবেলা করার। সরকার খুব বেশী নির্যাতনও করতে পারবে না। কারণ আপনারা বড় নেতা। ঝামেলা হয়ে গেলে দেশে বিদেশে সরকার নানামুখী চাপের মধ্যে পড়বে। এতোগুলো সেফটি নেট থাকা সত্ত্বেও হরতালের ডাক দিয়ে আন্দোলনের মাঠে অনুপস্থিত থেকে মীর জাফরের মতো কর্মীদের সঙ্গে বেঈমানী করছেন। নেতারা হয়তো ভেবেছিলেন, রাজপথে ওনারা আন্দোলনে নামবেন আর সরকারীদল তাদের বরনের জন্য ফুলের মালা হাতে দাঁড়িয়ে থাকবে। সেটা তো হবার নয়।

সত্যি কথা কি, মাহমুদুর রহমান, পিয়াস করিম, তুহিন মালিক, নুরুল কবির, আসিফ নজরুল, ওয়াহিদুজ্জামান এ্যাপোলো, এদের হাঁটুর গোঁড়ায় যতোটুকু সাহস আছে, বিরোধীদলের নেতাদের ততোটুকু হিম্মত থাকলেও সরকারের এতোদিন টনক নড়ে যেত।

Mahalom72@msn.com

গল্পটা শুনে ওনারা হাসতেই পারেন………

Appolo vi

প্রায় মাসখানেক আগে ফেইসবুকে দেয়া একটা পোষ্টকে কেন্দ্র করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তরুণ পরিবেশ আন্দোলনকারী এবং জনপ্রিয় অনলাইন এ্যাকটিভিষ্ট জনাব ওয়াহিদুজ্জামান এ্যাপোলো ভাইর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। হাইকোর্ট তাকে কিছুদিনের জামিন দিয়ে নিম্ন আদালতে হাজির হবার সময়সীমা বেঁধে দেয়। বেঁধে দেয়া সময়সীমার কিছু আগেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তিনি নিম্নআদালতে আত্নসমর্পন করলে তাকে নতুন করে জামিন না দিয়ে জেল হাজতে পাঠান হয়। এখনো তিনি জেলে আছেন। সরকার যেখানে আদালত চালায়  সেখানে এই মামলার ভবিশ্যত কি সেটা আইনের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয়। এই মামলার পরিণতি নিশ্চিতভাবে সরকারের ভবিশ্যত পরিণতির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এ্যাপোলো ভাইর পরিবার এবং তার শুভাকাঙ্খীদের আতঙ্কের কারণ এটাই।

এই সময়ের বাঙলাদেশের রাজনৈতিক হট্টগোলের গুরুত্বের বিবেচনায় এ্যাপোলো ভাই ব্যাক্তি হিসেবে অতোটা গুরুত্ব পাবার কথা নয়। দেশে একদিকে চলছে নির্বাচন নিয়ে সরকারের একরোখা অবস্থান এবং একে কেন্দ্র করে সারা দেশে আন্দোলনের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার নিয়ে পাশ্ববর্তী বৃহৎ প্রতিবেশী দেশের অনাকাংখিত হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলেছে। বাঙলাদেশের একান্ত নিজস্ব সমস্যা এখন আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির সাথে জড়িয়ে গেছে। ঠিক এই মুহুর্তে একজন তরুণ পরিবেশবিদের কোন কারণে জেলে যাওয়ার ঘটনা দেশের মূলধারার মিডিয়ার কাছে কোন মতেই গুরুত্বপূর্ণ খবর হতে পারে না। তবুও বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মূলতঃ দু’টি কারণে। প্রথমতঃ এ্যাপোলো ভাইর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে জেলে পুরার ঘটনা কিছু বিষয়কে উৎকটভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। বাঙলাদেশে চলছে এক তরফা রাজনৈতিক বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা। এর বিরুদ্ধে কারো অবস্থান তা যতোই যৌক্তিক হোক না কেন সরকার কর্তৃক সমর্থিত নয়। সারা দেশে এই কারণে বিভিন্ন ইস্যুতে হাজার হাজার মানুষ জেলে বন্দী হয়ে আছেন। এ্যাপোলো ভাইর ঘটনা মূলতঃ দেশের মধ্যকার সেই সত্যকে সামনে নিয়ে এসেছে। দ্বিতীয়তঃ তার গ্রেফতার করার প্রেক্ষাপটটা। এ্যাপোলো ভাইর উপরে সরকার যে অত্যন্ত বেজার তা আজকের ঘটনা নয়। অনেকেই বলে থাকেন, তাকে গ্রেফতারের মূল কারণ কথিত সেই ষ্ট্যাটাস নয়, বরং তিনি নিরবিচ্ছিন্নভাবে, অত্যন্ত বলিষ্ট যুক্তি দিয়ে এবং তথ্য প্রমাণসহ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য বিষয়ে ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এবং সেই সাথে বর্তমান সরকারের নতজানু নীতির কারণে বাঙলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবার বিষয়গুলো খুবই সহজ ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে তুলে এনেছেন।

একটু আগে বললাম, এ্যাপোলো ভাইর নামে ‘মিথ্যা মামলা’ দেয়া হয়েছে। মামলাটা মিথ্যা তার কারণ হোল, এ্যাপোলো ভাইর নাম এবং ছবি ব্যবহার করে যে পোষ্টটি দেয়া হয় সেটা তার নিজস্ব নয়। দুঃখজনক বিষয় হোল, অধিকাংশ পত্রিকায় এর আগে এবং এবারও এ্যাপোলো ভাইর ফেইসবুকে দেয়া ষ্ট্যাটাস নিয়ে অর্ধসত্য কথা ছাপা হয়েছে। যে পোষ্টটিকে তার নামে চালান হচ্ছে সেটা মূলতঃ তার কোন এক ভক্ত তার নামে পেজ খুলে সেই পেজে দিয়েছিল। বেশ কিছুদিন আগে যখন বারবার সরকারদেলীয় লোকজন গণ রিপোর্টিং করে তার আইডিটা ব্লক করে দিচ্ছিল ঠিক তখন তার কোন এক ফলোয়ার বা ফেইসবুক বন্ধু হয়তো তার নামেএই পেজ খুলে থাকবেন। এটা ভার্সুয়াল জগতে খুবই সাধারণ একটা ঘটনা। যে পোষ্টটার জন্য তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে সেটা অশালীনতা বা তথ্য বিকৃতি কোন অভিযোগের মধ্যেও পড়ে না। তারপরেও এটা তার নামে চালিয়ে দিয়ে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেয়া হোল।

এ ব্যাপারে জেলে যাবার আগে তিনি একটা লেখা লিখেন যেটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল উন্মোচনে প্রকাশিত হয়।  এখানে তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে তিনি এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলার শিকার হন।

http://www.unmochon.com/2013/11/06/55157.html#.Un3VBTYbodl

তাছাড়া তিনি তো এখন জেলে আছেন। তার পক্ষে তো কোন পোষ্ট দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যদি নিচের পেজে যান তবে দেখবেন তার জেলে যাবার পরেও অনেক পোষ্ট ছাড়া হয়েছে। এর থেকে কি প্রমাণিত হয় না যে পোষ্টটার কারণে তাকে জেলে পাঠান হয়েছে তার দায়দায়িত্ব তার নয়?

https://www.facebook.com/AkmWahiduzzamanApollo

এ রকম তার নামে আরো কয়েকটি পেজ খোলা হয় তার ভক্তদের দ্বারা। এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধ মতাবলম্বী বিশেষ করে সরকারীদলের অন্ধ সমর্থকরা তার নাম এবং ছবি ব্যবহার করে ফেক  আইডি খুলে। এবং তা থেকে নানা আপত্তিকর পোষ্ট দিয়ে চরিত্রহণনের চেষ্টা চালিয়েছিল। এ্যাপোলো ভাইকে তবু কমবেশী অনেকেই চিনেন। সেই তুলনায় আমি একদম অখ্যাত। আমার নামেও একবার এ রকম ফেক আইডি খুলে বন্ধুদের করা মন্তব্যের জবাব খুব বাজে শব্দ ব্যবহার করে দেয়া হচ্ছিল।  অনলাইনের এই ভালনারাবিলিটির কথা কি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার আইটি বিশেষজ্ঞরা জানে না? অবশ্যই জানে। বরং আমার আপনার চেয়েও বেশ ভাল জানেন। তারপরেও এই ধরনের হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা প্রমাণ করে সরকারের ফ্যাসিষ্ট চরিত্রকে।

এই মামলার মাধ্যমে প্রমাণিত হোল, নতুন এই তথ্য প্রযুক্তি আইন ভবিশ্যতে কতোটা ভয়াবহভাবে ব্যবহার হতে পারে। শত্রুতাবশতঃ যে কেউ যে কারো নামে তার ছবি ব্যবহার করে এ রকম পেজ বা ভুয়া আইডি খুলে কোন আপত্তিকর পোষ্ট দিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। আর এই আইনের সাজা এতোটা মারাত্নক যে, গাড়ী চাপা দিয়ে মানুষ মারার চেয়ে ভয়াবহ। এমনকি অনেকক্ষেত্রে ডাকাতি, মানুষ জখম করার চেয়েও কঠিন সাজা।

তাছাড়া কটুক্তি আমরা কাকে বলব? রাজনীতি করে এমন ব্যাক্তির অনেক কাজই সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে তাদের কি অধিকার নেই রাজনীতিবিদদের এসব কাজের সমালোচনা করার? রাজনীতিবিদদের কাজের সমালোচনা করা কি কটুক্তির পর্যায়ে পড়বে? এ্যাপোলো ভাই তার ফেইসবুকের সমস্ত পোষ্ট জুড়ে ভারতের কাছে বাঙলাদেশ সরকারের নতজানু পররাস্ট্রনীতি এবং একপেঁশে বন্ধুতের ফলস্বরূপ দেশের স্বার্থ বলি হবার বিরুদ্ধে তথ্যমূলক এবং বিশ্লেষণধর্মী লেখা লিখেছেন। এটাই কি তার জন্য কাল হোল? আমাদের নেতানেত্রীরা প্রত্যহ যেভাবে একে অন্যকে আক্রোশমূলক ভাষায় আক্রমণ করে তাতে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। দু’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তব্যে খালেদা জিয়ার পরচুলা নিয়ে অত্যন্ত বাজেভাবে আক্রমণ করেছেন। আদালত যদি নিরপেক্ষ হোত, আইন যদি দেশের সকল নাগরিকের জন্য সমান হোত, তবে শেখ হাসিনারও কি তার বক্তব্যের জন্য জবাবদিহি করতে হোত না? নতুন তথ্য প্রযুক্তি আইনে জেলে যেতে হোত না?

সবশেষে একটা প্রচলিত কৌতুক বলে শেষ করব।

এক রাবনের রাজত্বে  তিন ব্যাক্তি বেড়াতে গেল। সেই কথা শুনে রাবনতো মহা রাগান্বিত।  বাহিনীকে হুকুম করল, তিনজনকে ধরে আনার। যথাযথভাবে তা পালিত হোল। রাবণ তাদের সামনে পেয়ে বাজখাই গলায় জানতে চাইল, কেন তারা রাবণের অনুমতি না নিয়েই এখানে ঢুকে পড়েছে।  অতএব, আইন অমান্যের জন্য তাদের মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করা হোল। তিনজনই ভয়ে কাঁচুমাচু। রাবণ বেশ মজাই পেল। অবশেষে সে হুংকার দিয়ে বলল, ঠিক আছে। তোদের ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে। এই মুহুর্তে তোরা বনে বের হয়ে পড়বি। সবাইকে এমন একটা করে ফল আনতে হবে যে, যেটা আমি জীবনে কখনোই খাইনি। যদি তা না পারিস তবে যে যেটা আনবি সেটা তার পশ্চাৎদেশ দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হবে। এটাই হবে তোদের শাস্তি। সবাই বের হয়ে পড়ল এমন অদেখা ফলের সন্ধানে। বেশ কিছু সময় পরে প্রথমজন ফিরে এলো। হাতে একটা বড় আম। রাবণ তাই দেখেতো মহা খেপা। যেই কথা সেই কাজ। আমটা পাচার করা হোল উক্ত ব্যাক্তির নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে। লোকটা ব্যাথায় কাতরাতে থাকল।

দ্বিতীয়জন ফিরে এলো হাতে একটা ছোট সাইজের বেল নিয়ে। এবারও রাবণ খেপে গিয়ে একই কাজ করল। কিন্তু একটু পড়েই রাবণতো অবাক! কি ব্যাপার! কিছুক্ষণ আগেই সামান্য আমের কষ্ট সইতে না পেরে একজনের জান যায় যায় অবস্থা। অথচ দ্বিতীয়জন গোটা বেলটা পশ্চাৎদেশে হজম করে দিয়ে দিব্যি হো হো করে হাসছে। ব্যাপারটা কি? জিজ্ঞেস করতেই দ্বিতীয় ব্যাক্তি করজোড়ে বলল, রাবণরাজ, না হেসে পারলাম না। কারণ একটু আগে দেখে  এলাম তৃতীয়জন ইয়া বড় সাইজের কাঁঠাল নিয়ে আপনার দরবারের দিকে আসছে। কাঁঠালটা কথিত পথে ঢুকালে ওর কি অবস্থা হবে সেই কস্টে আমি নিজের দুঃখ বেমালুম ভুলে গিয়ে হাসছি।

যাইহোক, বাকশালী নির্যাতনের শিকার আজকের তথ্যমন্ত্রী জনাব ইনু সবকিছু ভুলে গিয়ে বর্তমান সরকারের সাথে থেকে আবারো সেই পথে হাঁটছেন। যে ফ্যাসিবাদের শিকার হয়েছিলেন তিনি এবং তার দল, আজ এতোটা বছর পরে তিনিই সেই দলের সহযোগী হয়ে একই কাজ করলেন। আজকে যারা এই নতুন আইনের বলি হচ্ছেন, তারা কষ্ট না পেয়ে হাসতেই পারেন। কারণ বেলটা তাদের ভাগ্যে পড়লেও ক্ষমতা হারালে কাঁটাযুক্ত ইয়া সাইজের কাঁঠাল অপেক্ষা করছে ইনুদের জন্য।

Mahalom72@msn.com

আজকে আলোচিত পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচারের রায় এবং কিছু কথা।

আজকে আমাদের ইতিহাসে ৭১ এর পরে সবচেয়ে ঘৃণিত হত্যাকান্ডের বিচারের রায় দেয়া হবে। বলাবাহুল্য, ৭১ এবং পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার বর্তমান সরকারের আমলে শুরু হলেও উভয় বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। উভয় বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। পিলখানা হত্যাকান্ডে ভারতের যোগসাজশে সরকারদলীয় কিছু নেতার ষড়যন্ত্রে সংঘটিত হয় এ রকম জোর গুজব থাকা সত্ত্বেও তদন্তে সরকারদলীয় কথিত অভিযুক্তদেরকে তদন্ত কমিটির সামনে হাজির করতে দেয়া হয়নি। এর মাধ্যমে সরকারের জড়িত থাকার গুজবটা আরো বেশী বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এই হত্যাকান্ডের পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সেনা অফিসারদের যে বৈঠক হয় সেখানেও অফিসাররা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গীমায় অফিসারদের যৌক্তিক প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যান।

কেন?

সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়া একটা ভিডিও ক্লীপে জনৈক বিদ্রোহীকে দেখা যায় উত্তেজিতভাবে বক্তৃতা দিতে। সে তার বক্তব্য শেষ করে জয় বাঙলা শ্লোগান দিয়ে। উইকিলিকসেও ‘র’ এর তত্ত্বাবধানে সরকারদলীয় লোকদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই হত্যাকান্ডের সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

তারপরেও ৭১ এর মানবতা বিরোধী হত্যাকান্ডের বিচারের মতো সরকারদলীয় জড়িতদের বাদ রেখে হত্যাকান্ডের বিচার করা হচ্ছে। এই বিচার যদি দ্রুত কার্যকর করা হয় তবে জাতি কোনদিনই জানতে পারবে না মূল পরিকল্পনাকারীদের কথা এবং তাদের উদ্দেশ্যের কথা। যেমন করে মিল্কী হত্যাকারীকে ক্রসফায়ারে দিয়ে দলীয় মূল হত্যা পরিকল্পনাকারীদের রেহাই দেয়া হয়েছে।

এই মামলায় বিএনপিদলীয় নেতা পিন্টুও আসামী। সালাহউদ্দিন কাদেরের রায় নিয়ে দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া না দেখানোটা ছিল বুদ্ধিমানের কাজ। তবে আজকে বিচারের রায়ে যদি পিন্টুকে অভিযুক্ত দেখান হয় তবে বিএনপিকে চুপ থাকলে চলবে না। তারা যদি পিন্টুর জড়িত থাকার বিষয়টি সত্য মনে করেন তবে তাকে অচিরেই বহিস্কার করতে হবে। নচেৎ এই পক্ষপাতমূলক বিচারের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান ‍উচিত। এবং সেটা অবশ্যই যথেষ্ট তথ্য প্রমাণসহ বিশ্বাষযোগ্যভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

আমাদের জাতীয় বীরদের হত্যাকারীরা যে দলেরই হোক, তাদেরকে ক্ষমা নেই। এই হত্যাকান্ডের গুরুত্ব ৭১ এর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই উভয় হত্যাকান্ডই ঘটান হয় জাতি হিসেবে আমাদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেবার জন্য।

প্রেমালাপের প্রাথমিক শর্ত এবং একটি রেড (সংঘাতের) সংলাপ।

প্রেমের শুদ্ধ বা ফলপ্রসু আলাপের প্রাথমিক শর্তই হোল হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা, পারস্পরিক আস্থা এবং সম্মান থাকা। শুরুটা এর উল্টো হলে প্রেম হওয়া তো দূরের কথা, বরং সম্পর্ক চাট্টিবাট্টি গোল করে পালাবে। শেখ হাসিনা হয়তো সত্যি সত্যিই ফোন করে থাকতে পারেন। এবং সত্যি সত্যি খালেদা জিয়ার ফোন বিকল থাকার জন্য যৌক্তিক কারণে রিংটোন শোনা যায়নি। এবার দেখুন গতকাল প্রধান প্রধান খবরের কাগজগুলোতে খবর ছাপা হয়, খালেদা জিয়ার রেড ফোন ঠিক করা হয়েছে। তাহলে কি প্রমাণিত হোল? ডিজিটাল বাঙলাদেশ গঠনের নেত্রী বুঝেন না কোনটা রিং টোন আর কোনটা ফলস টোন!

ওএমজি!
Continue Reading

মাঝে মাঝেই পিছনে হাঁটতে ইচ্ছে করে….

সেই আশির দশকের কথা। খুব বেশী আগের নয়, আবার একদম কালকেরও নয়। বাস শুধু ঢাকা থেকে পাটগাতী পর্যন্ত চল। বাসগুলো ছিল মুড়ির টিনের চেয়ে কিঞ্চিত উন্নত। বাসষ্টান্ডে নেমেই বাকী ৬/৭ মাইলের চিন্তায় কষ্টে খুব কান্না পেত। বর্ষাকালে অবস্থা ছিল আরো ভয়াবহ।  ঢাকায় দিনটা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সাধারণত: রাতের গাড়ীতেই রওয়ানা দিতাম। খুব সকালে গাড়ী পৌঁছে যেত টুংগীপাড়া-পাটগাতী বাসষ্ট্যান্ডে। ফজরের আজান পড়তে অনেক দেরী। রাতের কিছুটা কোনমতে বাসে কাটাতে দিলেও সূর্যের আলো ফোটার অনেক আগেই হাঁকডাক পড়ে যেত নেমে যাবার জন্য। গাড়ী সাফ সুতরা করতে হবে।

তখনো অনেক ভোর। সূর্যের দেখা নেই। শুকনো মৌসুমে দু’একটা ভ্যান চললেও বর্ষা মৌসুমে নৌকা, লঞ্চ এবং দু’পাই একমাত্র ভরসা। লঞ্চের অপেক্ষায় বসে থাকলে সকাল আটটা। কমছে কম আরো তিন চার ঘন্টা। এরপরেও কোন নিশ্চয়তা নেই। লঞ্চ চলে বাঙলা টাইমে। একা অপেক্ষার কষ্ট, হাঁটার চেয়েও বেশী। হাঁটলে তবুও গতি থাকে। অপেক্ষা বড় নিথর, চুপচাপ। এতোটা পথ এসে বাড়ী পৌঁছনোর তাড়াও থাকে। সে যুগে কোন মোবাইল ফোনও ছিল না। থাকলে বাটন টিপে সময় পার করা যেত। বাধ্য হয়েই জোর পায়ে হাঁটা ধরতাম। বাসষ্টেশন থেকে পাটগাতী বাজার পর্যন্ত সম্ভবত: তখন ইট সুড়কির রাস্তা ছিল। পাটগাতী বাজারে পৌঁছেই বাম দিকে মোড়। এরপরেই মাটির পথ।Continue Reading