আগামী দিনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কয়েকটি মূলনীতি প্রসঙ্গে

by মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত

একতরফা প্রহসনের নির্বাচনোত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিনির্মাণে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন পুনর্গঠন ও সংহত করা এখন সময়ের দাবী। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গ্রহণযোগ্য একটি ব্যবস্থা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে না ওঠায় বাংলাদেশে “নির্বাচিত স্বৈরতান্ত্রিক গণতন্ত্র” আরো চেপে বসেছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রধান রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তিগুলো পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত থেকে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটিয়েছে। রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের সঙ্গে লড়াই করে প্রতিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম আপাততঃ ক্লান্ত ও অবসন্ন। তাই আন্দোলন সংগ্রামে দেখা দিয়েছে বিরতি।

সেই সঙ্গে আন্দোলন সংগ্রামের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও সমীক্ষা। উদ্দেশ্য আন্দোলন সংগ্রামের শক্তি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করে যথাশীঘ্র এর পুনর্যাত্রা। ইতোমধ্যে আমরা পর্যালোচনা করতে পারি বাঙালি মুসলমানের কোন কোন মৌলিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভাবাদর্শ একটি শক্তিমান ও দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ আন্দোলনের ভিত্তি ও অনুপ্রেরণা হতে পারে।

 ইসলাম

প্রথম যে মৌলিক ভাবাদর্শটি নিয়ে এই ডিসকোর্সের সূচনা করা যেতে পারে সেটি হল ইসলাম। বাঙালি মুসলমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূলধারার মৌলিক উপাদান হিসেবে ইসলাম কেন অপরিহার্য? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে খুঁজতে হবে।

বর্তমানে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী প্রান্তিক ও ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি। প্রান্তিক  ও ক্ষয়িষ্ণু বলছি এই কারণে যে এই ভাবাদর্শগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমান মনেপ্রাণে গ্রহণ করেনি। কারণ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ভিত্তিক এই জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ইসলামী আত্মপরিচয়কে গৌণ করে তোলে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি বাঙালি মুসলমানের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে ইসলামের ভূমিকাকে সীমিত করে রাখতে চায়। ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন ধর্মাচার পালন ও কেবলমাত্র অল্পকিছু  ধর্মীয় সামাজিক পার্বণ পালনের মধ্যেই এই ইসলাম সাধারণত সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমান ইসলামের এই খণ্ডিত ভূমিকা ও চর্চাকে সমর্থন করে না।

তাই বাঙালি মুসলমানের মূলধারা বা মধ্যধারার (Centrist and Normatic) রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে যারা ধারণ ও লালন করতে চাইবেন, তাঁদেরকে বাংলাদেশে ইসলামের অধিকতর রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে  তুলতে হবে। এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী চিন্তা, শিল্প-সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ও প্রচার-প্রচারণার বিপরীতে বাঙালি মুসলমানের প্রবল মধ্যধারার বাংলাদেশী এবং/অথবা ইসলামী সৃজনশীলতার চর্চা ও প্রচারযজ্ঞ বিনির্মাণ ও লালন করতে হবে।

মনে রাখতে হবে এই আন্দোলন একটি দীর্ঘমেয়াদী ভাবাদর্শিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন। যা শুধুমাত্র ইস্যুভিত্তিক বা এডহক নয় । এটা যেন শুধুমাত্র রিএকটিভ বা প্রতিক্রিয়ামূলক লড়াই না হয়ে যায়। একে হতে হবে প্রোএকটিভ বা স্বতো:প্রণোদিত, ইতিবাচক এবং সৃজনশীল।

বাঙালি মুসলমানের মূলধারার রাজনীতি ও সংস্কৃতি বিনির্মাণে কেন ইসলামকে একটি বড় অবস্থান দিতে হবে? এর উত্তর হল — বঙ্গীয় ইসলামের সমন্বয়বাদী প্রবণতা এবং আধুনিক ও প্রগতিবাদী ইউরোপীয় এবং কলকাতা কেন্দ্রিক রাবীন্দ্রিক ডিসকোর্সের প্রভাবে গড়ে ওঠা বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা ক্রমশঃ প্রান্তিক ও অবক্ষয়ী হয়ে উঠছে। এর কারণ হল — একদিকে প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশে উত্তর-উপনিবেশিক ইসলামী সর্বাত্মকবাদী (Totalitarian) আন্দোলনের প্রভাব; এবং অন্যদিকে পাশ্চাত্যের সাম্প্রতিক উত্তর-আধুনিক ডিসকোর্সের আঘাতে ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্ট ও এর বঙ্গীয় সংস্করণ রাবীন্দ্রিক ডিসকোর্স দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে এর উপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বাঙালি জাতীয়তাবাদ ক্রমাগত ক্ষয় ও অবশেষে লয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এখন আমরা দেখব কেন ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে বিপরীত স্রোতের প্রভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা ক্রমশঃ তার শক্তিমান অবস্থান হারাচ্ছে। আর কিভাবে সেই শূন্যস্থান পূরণে সর্বাত্মকবাদী ইসলামী সংস্কৃতি ক্রমশঃ অগ্রসর হচ্ছে।

আমরা ইদানীং দেখছি যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী রাজনীতি ও সংস্কৃতি প্রায়শঃই বাঙালি মুসলমানের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূলধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ায় তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে। যেমন কথিত “আবহমান” বাঙালি সংস্কৃতির আচার অনুষ্ঠানে যখন এমন কিছু জীবনাচার ও চর্চাকে উপস্থাপিত করা হয়, যার ভেতরে বি’দাত ও শিরকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ লক্ষণ ফুটে ওঠে, তখন বাঙালি মুসলমান তাকে আর আগের মত সহজভাবে গ্রহণ করতে পারছে না । উদাহরণ হিসেবে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আলোকমালা ও অগ্নিশিখার প্রতি সমর্পণের বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উপাচার, অবনত ভঙ্গিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, মানব আকৃতি সদৃশ ভাস্কর্যে অবনত ভঙ্গিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন, ইত্যাদি। আধুনিক, নাগরিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি মুসলমান দেশীয় সংস্কৃতির এইসব আচার আচরণকে “আবহমান” কাল থেকে প্রচলিত বলে যথেষ্ট বিচার বিবেচনা ছাড়াই অতি উৎসাহের সঙ্গে ধারণ ও লালন করে চলেছে। অথচ বৃহত্তর বাঙালি মুসলমান এইসব আচার আচরণকে বিচ্যুতি বলে মনে করছে। ফলে বৃহত্তর বাঙালি মুসলমানের বিবর্তনশীল মূল বা মধ্যধারার সংস্কৃতির সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত বিরোধ ও সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নাগরিক শ্রেণী ও গরিষ্ঠ লোকায়ত এবং তৌহিদী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা দিচ্ছে বিভক্তি ও মেরুকরণ। রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে দেখা দিচ্ছে ব্যাপক সংঘাত, সংঘর্ষ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা। এই বয়ানের সমর্থনে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে ২০১৩ সালে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ও তার বিপরীতে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান।

কেন এমনটি ঘটছে? বিগত শতকের ষাট ও সত্তর দশক পর্যন্তও তো আমরা দেখেছি “আবহমান” সমন্বয়বাদী বাঙালি সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী রাজনীতির জয় জয়কার। তাহলে ইতিহাসের বিবর্তনের ধারায় কি এমন পরিবর্তন ঘটল যে আমরা একটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পালাবদলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি?

এর উত্তর খুঁজে পাবার জন্য আসুন আমরা বঙ্গের মধ্যযুগের ইতিহাসের একটি পর্বকে পাঠ ও বয়ান করি।

মধ্যযুগের সূচনায় বখতিয়ার খিলজির মত বীর ও সূর্যসৈনিক এই জনপদে ইসলামী রাজনৈতিক ও সামরিক সংস্কৃতির বীজ বপন করেছিলেন। শাহ জালালের মত সূফি সাধক এই সংস্কৃতির আধ্যাত্মিক অনুসঙ্গের আবাদ করেছেন এই অঞ্চলের উত্তর পূর্বে বসবাসকারী মানব মনের গহীন প্রান্তরে। খান জাহানের মত সূফি সাধক ও বিষ্ময়কর জনপদ-নির্মাতা সেই একই আধ্যাত্মিক সংস্কৃতিকে দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলবর্তী বঙ্গীয় বদ্বীপের গহীন অরণ্যে বসবাসকারী সভ্যতা-বঞ্চিত প্রান্তিক মানব মনে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এই সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি যার ভাবাদর্শিক ও সাহিত্যিক রূপায়নে ষোড়শ শতকের শেষার্ধে দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গের কবি সৈয়দ সুলতান রচনা করেছিলেন “মুসলিম জাতীয় মহাকাব্য” স্বরূপ নবী বংশ । এই মহাকাব্য রচনার মাধ্যমে তিনি স্থানীয় বৈদিক, বৈষ্ণব, শৈব এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদি-খ্রিষ্টান ধর্মতত্ত্বের সঙ্গে তুলনামূলক ডিসকোর্সের অবতারণা করে ইসলামী ভাবাদর্শ ও সংস্কৃতিকে বাঙালি মুসলমানের জীবনে গ্রথিত করে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।

পরবর্তীকালে উনিশ শতকের প্রথমার্ধে শহীদ তিতুমীর এই ইসলামী রাজনৈতিক ও সামরিক সংস্কৃতির সুরক্ষায় স্থানীয় প্রকৃতিজাত উপাদান দিয়ে বাঁশেরকেল্লা গঠন করে জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি এই রাজনীতি ও সংস্কৃতির আলোকে বাঙালি মুসলমান কৃষিজীবীদের ইংরেজ ও জমিদার বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হাজী শরীয়তউল্লাহ এবং কারামত আলী এই সংস্কৃতিকেই অবক্ষয় ও বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করার জন্য লৌকিক সংস্কার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গের এই দক্ষিণ পূর্ব গাঙ্গেয় বদ্বীপে। এই অঞ্চলের বাঙালি মুসলমানের লৌকিক জীবন, জীবিকা, জীবনাচার ও জীবনদর্শনে এভাবে গভীরভাবে গ্রথিত হয়ে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে নিজস্ব (Owned), ভূমিজ (Organic), মর্মধারিত (Internalized), আত্মীকৃত (Assimilated) ও অকৃত্রিম।

মধ্যযুগে বা প্রাক-উপনিবেশিক যুগে বঙ্গে সূচিত বাঙালি মুসলমানের ধর্ম ও সংস্কৃতির এই মিথষ্ক্রিয়া ও রূপান্তর নিয়ে মেলফোর্ড স্পাইরো (Melford Spiro), জে ডি ওয়াই পীল (J D Y Peel), ইগর কপিটফ (Igor Kopitoff) প্রমুখ নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণার ওপরে ভিত্তি করে পূর্ব বঙ্গের গহীন গাঙ্গেয় বদ্বীপে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ইসলামীকরণ সম্পর্কে মার্কিন ইতিহাস গবেষক রিচার্ড ঈটন (Richard M Eaton) একটি যুগান্তকারী ও ইতিহাসের গতি নির্ণায়ক তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। এই তত্ত্বের মাধ্যমে ধর্মান্তরের প্রচলিত ধ্রুপদী ডিসকোর্সকে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি বঙ্গের ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া সম্পর্কে একটি তিন-পর্ব বিশিষ্ট প্রক্রিয়া, যা সুদীর্ঘ কাল ধরে ক্রিয়াশীল ও চলিষ্ণু থাকে, সেটি প্রতিপাদন করেছেন তাঁর একটি বিখ্যাত গ্রন্থে। আসুন আমরা এবারে দেখি যে এই তত্ত্বটি আমাদেরকে কিভাবে বুঝতে সাহায্য করে যে বাঙালি সংস্কৃতিতে ইসলাম বিবর্তিত হয়ে ক্রমাগত একটি পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই পরিণতির ফল হল সমন্বয়ী প্রবণতা ধীরে ধীরে গৌণ হয়ে শুদ্ধতাবাদী ও সর্বাত্মকবাদী প্রবণতা ক্রমাগত মুখ্য হয়ে উঠছে।

ইসলামীকরণ প্রক্রিয়ার প্রথম পর্বকে রিচার্ড ঈটন বলেছেন ইনক্লুশন (Inclusion) — যখন স্থানীয় ও বহিরাগত  ধর্ম ও ভাবাদর্শ  পাশাপাশি অবস্থান করে নিজেদের অবিকল অস্তিত্ব বজায় রাখে। এই পর্বে দেশী ও বিদেশী অনুসঙ্গগুলো পরস্পর কোনোরূপ বিনিময়ে অংশ নেয় না। দ্বিতীয় পর্বটিকে তিনি আখ্যা দিয়েছেন আইডেন্টিফিকেশন (Identification) — যখন স্থানীয় ও বহিরাগত ধর্ম ও ভাবাদর্শ পারস্পরিক বিনিময়ে অংশ নিয়ে একে অপরের ভেতরে সদৃশ অনুসঙ্গগুলোকে চিহ্নিত করে। আর তৃতীয় পর্বটিকে তিনি আখ্যায়িত করেছেন ডিসপ্লেসমেন্ট (Displacement) — যখন বহিরাগত ধর্ম ও ভাবাদর্শ স্থানীয় ধর্ম ও ভাবাদর্শের অবশেষগুলোকে ক্রমাগত অপসারণ করতে থাকে। এই তত্ত্বটি স্পষ্ট করার জন্য রিচার্ড ঈটনের লেখা গ্রন্থ থেকে এই উদ্ধৃতি ও ডায়াগ্রামটি এখানে উপস্থাপন করছিঃ

The term conversion is perhaps misleading when applied to this process, since it ordinarily connotes a sudden and total transformation in which a prior religious identity is wholly rejected and replaced by a new one. In reality, in Bengal, … … …, the process of Islamization as a social phenomenon proceeded so gradually as to be nearly imperceptible.

… … …, one may discern three analytically distinct aspects to the process, each referring to a different relationship between Islamic and Indian superhuman agencies. One of these I’m calling inclusion; a second, identification; and a third, displacement. By inclusion is meant the process by which Islamic superhuman agencies became accepted in local Bengali cosmologies alongside local divinities already embedded therein. By identification is meant the process by which Islamic superhuman agencies ceased merely to coexist alongside Bengali agencies, but actually merged with them, as when the Arabic name Allah was used interchangeably with the Sanskrit Niranjan. And finally, by displacement is meant the process by which the names of Islamic superhuman agencies replaced those of other divinities in local cosmologies. The three terms inclusion, identification, and displacement are of course only heuristic categories, proposed in an attempt to organize and grasp intellectually what was on the ground a very complex and fluid process. (Richard M Eaton, The Rise of Islam and the Bengal Frontier 1204 – 1760, University of California, Berkeley, 1993)

মধ্যযুগ থেকে সূচিত হয়ে ইসলামের এই বিবর্তন প্রক্রিয়া আজ অবধি ক্রিয়াশীল ও চলমান। ইতিহাসের কয়েক শতাব্দী ব্যাপী চলমান এই মিথষ্ক্রিয়া বর্তমান সময়ে এর তৃতীয় পর্যায় অতিক্রম করছে।এই পর্যায়ে এসে উনিশ ও বিশ শতকের ইসলামী সংস্কারবাদী (Reformist), পুনরুজ্জীবনবাদী (Revivalist) ও পবিত্রকরণবাদী (Puritanical) বিভিন্ন আন্দোলনের প্রভাবে বাংলাদেশে এযাবৎ  প্রবল সমন্বয়বাদী (Syncretistic) বাঙালি মুসলমানের রাজনীতি ও সংস্কৃতি ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে শুদ্ধতাবাদী (Orthodox) ও কিতাবসম্মত (Scriptural) বা টেক্সটসম্মত (Textual) রূপ পরিগ্রহ করছে। একুশ শতকের সূচনাকে আমরা এই বিবর্তনের একটি টিপিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করতে পারি।

আমাদেরকে বুঝতে হবে যে এই পরিবর্তনের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর এবং সুদূরপ্রসারী। কাগজ, স্বাক্ষরতা ও শিক্ষার ব্যাপ্তি, মুদ্রণযন্ত্রের কল্যাণে বই পত্রের ব্যাপক সহজলভ্যতা, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের আর্থিক উন্নতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে বাঙালি মুসলমান প্রবাসী সম্প্রদায়ের উদ্ভব, উচ্চ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য অথবা ভ্রমণ ও পর্যটন উদ্দেশ্যে দেশ বিদেশে গমন; রেডিও, টেলিফোন, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ইত্যাদি বাঙালি মুসলমানের গাঙ্গেয় বদ্বীপে গন্ডীবদ্ধ কৃষিনির্ভর জীবনাচারে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এই সার্বিক পরিবর্তনের ফলে বাঙালি মুসলমানের ইসলামী রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও জীবনদর্শন আজ এই একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে গতিময় ও সর্বাত্মকবাদী হয়ে একটি বৈশ্বিক মাত্রায় পৌঁছেছে। কাজেই বাঙালি মুসলমান তার বাংলা ভাষা ও ইসলাম ধর্ম দিয়ে গড়া বাংলাদেশী রাজনীতি ও সংস্কৃতি দিয়ে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে যে তুরীয় (Transcendental) উচ্চতায় স্থাপন করবে এতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

২। গণতন্ত্র

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূলধারাকে শক্তিমান করে গড়ে তোলার জন্য যে মুলনীতিটি অপরিহার্য সেটি হল গণতন্ত্র। গণতন্ত্র নিঃসন্দেহে একটি পাশ্চাত্য ধারণা। আধুনিক ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্ট ডিসকোর্সের একটি অনুসঙ্গ এই গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ও পথচলার সূচনা এই অঞ্চলে ইংরেজ উপনিবেশিক শাসনের অভিজ্ঞতার অনুসঙ্গ হিসেবে। উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হবার পর এই অঞ্চলের জনগণ গণতন্ত্রের আদর্শকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামো থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভবেও অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল গণতন্ত্রের আকাঙ্খা। কিন্তু লিবারেল গণতন্ত্র বিনির্মাণে আমরা বারবার ব্যর্থ হয়েছি।

প্রাতিষ্ঠানিক, কার্যকর ও অর্থপূর্ণ গণতন্ত্র থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে অবস্থান করছি। তবে গণতন্ত্রে বাংলাদেশের বৃহত্তর জনসমষ্টির আস্থা অটুট রয়েছে। বাঙালি মুসলমানের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মূলধারার রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে একদিকে যেমন ইসলামের প্রতিফলন দেখতে চায়, তেমনি অন্যদিকে তারা গণতন্ত্রকেও একটি শক্তিশালী অবস্থানে দেখতে চায়।

গণতন্ত্র ও ইসলামের মধ্যে কোন সাংঘর্ষিক সম্পর্ক আছে বলে তারা মনে করে না। ইসলামের যে প্রান্তিক ডিসকোর্সটি ইসলামী রাষ্ট্র বিনির্মাণে গণতন্ত্রকে অগ্রাহ্য করে, বা গৌণ করে, বা প্রতিবন্ধক বলে মনে করে, বাঙালি মুসলমানের বৃহত্তর অংশ তা সমর্থন করে বলে মনে হয় না। সুতরাং ইসলামী ও গণতান্ত্রিক — উভয় মূল্যবোধ ও ভাবাদর্শের মেলবন্ধনেই রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমানের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চেতনার চাবিকাঠি।

গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্র হয়ে নির্বাচনী গণতন্ত্রের কিছু সাধারণ নিয়ম প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। বাংলাদেশের নির্বাচনী গণতন্ত্রকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর যে অপচেষ্টা বারবার দেখা দিয়েছে তা বর্জন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। নেতৃত্ব নির্বাচনেও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও রীতি-নীতি মেনে চলতে হবে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে।

৩। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব

জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব গণতন্ত্রের মৌল ধারণার দুটি অনুসঙ্গ। অন্যকথায় গণতন্ত্রের ধারণার মধ্যেই অনিবার্যভাবে এই দুটি প্রত্যয় উপস্থিত রয়েছে। তবুও এই দুটি রাজনৈতিক প্রত্যয়কে এখানে তৃতীয় মূলনীতি হিসেবে উপস্থাপনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ রাষ্ট্র ভৌগোলিকভাবে একটি বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত দ্বারা তিনদিক থেকে বেষ্টিত, সেহেতু এই দুটি প্রত্যয় বাঙালি মুসলমানের স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও সার্বভৌম অস্তিত্বের জন্য রক্ষাকবচ। ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদকে মোকাবেলা করতে হলে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি ও সংস্কৃতির ভেতরে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের চেতনাকে সদা প্রবহমান রাখতে হবে।

বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে বিভিন্ন মাত্রার অসমতা ও বিরোধ রয়েছে। সেগুলোতে ভারসাম্য ও পারস্পরিক মর্যাদা স্থাপন করার জন্য চীন এবং মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে নানামাত্রিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি করতে হবে। পাকিস্তান, তুরস্ক, মিশর ও ইরান – মুসলিম বিশ্বের এই কয়েকটি প্রধান রাষ্ট্রের সঙ্গে শিক্ষা, জ্ঞান ও সংস্কৃতি বিনিময়ের ব্যাপক কর্মসূচি নিয়মিতভাবে আয়োজন ও পালন করতে হবে। ভারতীয় সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও প্রভাব এভাবে মোকাবেলা করে বাংলাদেশে শক্তিমান আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিল্প, সাহিত্য, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটাতে হবে।

৪। ইনসাফ ও মজলুমের মৈত্রী

চতুর্থ মূলনীতি হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে আরো দুটি প্রত্যয় – ইনসাফ ও মজলুমের মৈত্রী। সমাজে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যকে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা জরুরী। সমাজে শ্রেণী বৈষম্য আছে ও থাকবে। কিন্তু ইনসাফ কায়েম করতে পারলে এই শ্রেণী বৈষম্যে ভারসাম্য নিয়ে আসা সম্ভব হবে। সমাজে অন্যায় মেরুকরণ প্রশমিত হবে এবং সংঘাত ও সহিংসতা থেকে সমাজ মুক্ত থাকতে পারবে। সমাজে এই ইনসাফ কায়েম করতে হলে মজলুম শ্রেণীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য ও মৈত্রী গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশে মূলধারার রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে ব্যাপক জনসমর্থন পেতে হলে কেবলমাত্র উপরিতলের ইস্যু থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে মজলুম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করে সমাজে ও রাষ্ট্রে সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল ও নেতৃত্ব দিতে হবে।

এই লেখায় আগামী দিনের বাংলাদেশে মূলধারার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভাবাদর্শিক ভিত্তি হিসেবে কয়েকটি মূলনীতি উপস্থাপন করা হয়েছে। সবগুলো মূলনীতির বিস্তারিত আলোচনা এখানে করা হয়নি সময় ও স্থান স্বল্পতার কারণে। পাঠকের মনোযোগ ও ধৈর্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়েছে। প্রথম মূলনীতিটিকে অনুপুঙ্খ আলোচনার মাধ্যমে অনেকটা মূর্ত ও খোলাসা করা হয়েছে। প্রথম মূলনীতির শুদ্ধতাবাদী ও সর্বাত্মকবাদী পাঠ ও ভাষ্যের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের যে ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা তাই প্রকৃতপক্ষে এই রচনার মৌলিক অবদান বলে আমাদের বিশ্বাস। অন্যান্য মূলনীতিগুলোকে সংক্ষিপ্তাকারে ও বিমূর্তভাবে এখানে প্রাথমিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে মাত্র। এটি সত্য যে এই প্রচলিত প্রত্যয়গুলির এইসময় উপযোগী বয়ান অনেক প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীকালে অবশিষ্ট প্রতিটি প্রত্যয় নিয়ে আলাদাভাবে বিস্তারিত দিকনির্দেশনামূলক লেখার ইচ্ছে আছে। তবে ইতোমধ্যে এই মূর্ত ও বিমূর্ত প্রত্যয়গুলি থেকে মূর্ত ও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি প্রণয়ন করে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রাম পরিগঠন করা সম্ভব হতে পারে বলে আমাদের অকুণ্ঠ বিশ্বাস।

গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে স্বৈরতন্ত্র আপাততঃ প্রবল হয়েছে, তবে লড়াই চলবে

by মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত

বাংলাদেশে ‘নির্বাচিত’ গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র জেঁকে বসেছে। আর প্রতিরোধ আন্দোলনের বন্ধ্যাত্ব সামষ্টিক মানসে এনেছে হতাশা আর নির্বেদ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম বাঙালি মুসলমানের সামষ্টিক চেতনায় একটি উজ্জীবন সৃষ্টি করেছিল। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ও তৎকালীন সার্বিক মাৎস্যন্যায় জাতির মানসে সেই উজ্জীবনকে ক্ষণস্থায়ী করে বয়ে এনেছিল একটি দীর্ঘমেয়াদী অবসাদ ও ক্লেদ। জাতীয় মানসের সেই বিষণ্ণ নির্বেদ ও স্বপ্নভঙ্গজাত আত্মগ্লানি ও আত্মপ্রত্যয়রিক্ত দিকনির্দেশহীনতা থেকে বাংলাদেশকে পুনরায় জেগে উঠতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত।

কিন্তু ২০১৪ সালে এসে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে। প্রাণহীন খোলসসর্বস্ব গণতন্ত্র কেবল আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হয়েছে। সংবিধান একটি অন্তর্বিরোধপূর্ণ দলিলে পরিণত হয়ে জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিফলনে ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয় সংসদ অকার্যকর একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো একনায়কতান্ত্রিক হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্রের নামে দলীয় গোষ্ঠীতন্ত্র প্রবল হয়ে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নকে সর্বব্যাপী করে তুলেছে। গণতন্ত্রের যে একটি অনুসঙ্গ এতদিন জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণকে অন্তত একদিনের জন্য হলেও সম্ভবপর করেছে, সেই নির্বাচনকেও যাচ্ছেতাই রাজনৈতিক ব্যভিচারের মাধ্যমে একটি প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।

আর জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার এই অধোগতির ধারাকে প্রতিরোধ সংগ্রামের ভেতর দিয়ে সঠিক পথে পরিচালিত করার যে রাজনৈতিক আন্দোলন ও নেতৃত্ব আমরা বর্তমানে দেখতে পাই তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত ও দুর্বল। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক দুর্বলতা যেমন রয়েছে, তার চাইতেও বেশী রয়েছে মতাদর্শিক, রণনৈতিক ও রণকৌশলগত অপরিপক্কতা ও অদূরদর্শিতা। মেধাবী, মননশীল ও সৃজনশীল নেতৃত্ব ও কর্মসূচির অভাবে প্রতিরোধ সংগ্রাম ও আন্দোলন গতানুগতিকতার গণ্ডিতে আবদ্ধ। জনসম্পৃক্ত মতাদর্শ, নেতৃত্ব, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মপ্রয়োগের অভাবে রাজনৈতিক আন্দোলন বন্ধ্যাত্বের চোরাবালিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে। শুধুমাত্র পেশিশক্তিনির্ভর ও ফায়দালোভী রাজনৈতিক পেশাদারদের দিয়ে ব্যাপক গণভিত্তিক রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম দীর্ঘস্থায়ী করা যায় না। ‘নির্বাচিত’ স্বৈরতন্ত্র এই সুযোগে ক্রমাগত ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠে এবং দেশী-বিদেশী সমর্থক গোষ্ঠীর সহায়তায় আরও সুসংহত হতে থাকে।

জাতীয় চেতনায় মনঃস্তাত্ত্বিক শূন্যবোধের উদ্ভব ঘটেছে

বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, একটি সংঘবদ্ধ, সুসংহত, মতাদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সংগঠনের জনসম্পৃক্ত ব্যাপক প্রতিরোধ সংগ্রামের অনুপস্থিতির কারণে একটি জাতিব্যাপী রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও মনঃস্তাত্ত্বিক শূন্যবোধের উদ্ভব ঘটেছে। এই বাস্তব ও ব্যাপক নিটশীয় শূন্যবোধের প্রতিক্রিয়ায় জাতির সংবেদনশীল ও মননশীল চেতনা ও মানসে এক যন্ত্রণাকাতর, বিষণ্ণ মনোবেদনা ও ব্যর্থতাজাত অবসাদ অনুভূত হচ্ছে। ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া অথবা সাফল্য ব্যর্থতা থেকে এই সামষ্টিক বেদনা ও যন্ত্রণা পরিমাণগত ও গুণগত উভয়দিক থেকেই আলাদা। জাতি, দেশ, রাষ্ট্র প্রভৃতি নিয়ে যেসব মননশীল ও সৃজনশীল নাগরিকেরা ভাবেন ও সক্রিয় হবার চেষ্টায় ও চর্চায় ব্যাপৃত থাকেন, তাঁরা যে সামাজিক শ্রেণী ও স্তরেই অবস্থান করুন না কেন, তাঁদের চেতনায় ও মননে এই জটিল ও কুটিল সংকটজাত সংবেদনা ও সংক্ষোভ প্রতিফলিত ও প্রকাশিত হবেই। আর এই মনোবেদনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হল অসংগঠিত ও অসংবদ্ধ, বিচ্ছিন্ন ও বিযুক্ত ব্যক্তি-নাগরিকদের একান্ত অপারগতাজাত অসহায়ত্ববোধ ও তৎসংলগ্ন আত্মগ্লানি ও অপরাধবোধ।

উত্তর-ঔপনিবেশিক ও উত্তরাধুনিক জাহিলিয়া

এই বিষয়টি খোলাসা করতে মহামতি কার্ল মার্ক্সের একটি বিখ্যাত উক্তির আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন যে দার্শনিকেরা এ যাবৎ ইতিহাসের শুধু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মধ্যেই নিজেদেরকে ব্যাপৃত রেখেছেন, কিন্তু যা আরো বেশী কাম্য তা হল ইতিহাসের পরিবর্তনের জন্য কাজ করা, শুধু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নয়। বুদ্ধিবৃত্তির এই মহান দায় কাঁধে নিলে যে কোন মননশীল নাগরিক একধরণের বিদগ্ধ অপারগতার মনোযন্ত্রণায় আক্রান্ত হতে বাধ্য। জাতি-দেশ-রাষ্ট্র বিবর্তনের এমন এক বন্ধ্যা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, যখন সামাজিক শুভশক্তিগুলো নিঃসঙ্গ, বিযুক্ত, অসংঘবদ্ধ ও নেতৃত্বহীন আর সামাজিক অশুভশক্তিগুলো দেশী-বিদেশী প্রেক্ষাপটে অনেক বেশী একাট্টা ও সক্রিয়। সর্বব্যাপী আঁধি, নেতি ও অকল্যাণের এই কৃষ্ণপক্ষকেই বোধকরি উত্তর-ঔপনিবেশিক ও উত্তরাধুনিক জাহিলিয়া বলে বয়ান করা যেতে পারে। কর্পোরেট সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বায়নের মাধ্যমে যখন পৃথিবীব্যাপী একধরণের পণ্যসম্ভোগবাদী ও আগ্রাসী বিশ্বব্যাবস্থা কায়েম করেছে, তখন নিম্নবর্গ ও প্রান্তিক ব্যক্তি, শ্রেণী, সম্প্রদায় ও জাতি হিসেবে স্বাধীনভাবে আত্মপ্রকাশ ও আত্মবিকাশের সুযোগ ও সম্ভাবনাগুলো অনেকাংশেই অপসৃয়মান।

বিশ্ব মুসলিম সভ্যতার নবজাগরণ ও বাংলাদেশ

এর সঙ্গে রয়েছে মহান এক আল্লাহর প্রতি সমর্পণকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে প্রতিষ্ঠাকামী আত্মিক শ্রেয়োবোধ ভিত্তিক বিশ্ব মুসলিম সভ্যতার নবজাগরণকে নস্যাৎ করতে সদা সতর্ক ও প্রস্তুত পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বিভিন্ন সভ্যতার একক অথবা যৌথ যুদ্ধাভিযান। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এই আন্তর্জাতিক সমীকরণের বাইরে নয়। ‘জঙ্গিবাদ’, ‘সন্ত্রাসবাদ’ ও ‘মৌলবাদ’ দমন বা নির্মূলের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্রের ন্যূনতম পূর্বশর্তগুলোকে উপেক্ষা ও বিসর্জনের বিপজ্জনক ডিসকোর্স আমরা বাংলাদেশে বেশ জোরেশোরেই শুনতে পাই। এই ডিসকোর্সের তাত্ত্বিক গুরুরা প্রকারান্তরে জুডিও-খ্রিষ্টান নব-ক্রুসেড ও ভারতীয় আধিপত্যবাদকেই প্রমোট করে চলেছেন।

চাই আত্মিক চেতনায় বলীয়ান আদর্শভিত্তিক নতুন সৃজনশীল রাজনীতি ও সংস্কৃতি

কাজেই বাংলাদেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই চলছে এর যেমন একটি দেশী প্রেক্ষিত রয়েছে, তেমনি এর রয়েছে একটি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত। তাই ব্যক্তি, শ্রেণী, সম্প্রদায় ও জাতি হিসেবে উপনিবেশ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ক্রমাগত বিকাশ ও উত্তরণের যাত্রায় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখতে হবে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ হয়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যে স্বাধীনতা ও মুক্তির অভিযাত্রা, সেখানে একটি অভিজ্ঞতা বারবার বেঠোফেনের পঞ্চম সিম্ফনির বিখ্যাত থিমের মত বেজে উঠেছে। আর সেটা হল গণতন্ত্রকে দুর্বল করে ও স্বৈরতন্ত্রকে প্রবল করে কোনও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কায়েম হতে পারেনি। অন্যদিকে বন্ধ্যা রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুনর্গঠিত হয়ে, অথবা পরিবর্তিত হয়ে অথবা নতুন জনসম্পৃক্ত ও আত্মিক চেতনায় বলীয়ান আদর্শভিত্তিক শক্তির আগমনের ভেতর দিয়ে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও প্রগতি বেগবান হয়েছে নানান পালাবদলের মধ্য দিয়ে।

সুতরাং ব্যক্তির একক ও জাতির সামষ্টিক চেতনায় যে সর্বগ্রাসী অবসাদ, হতাশা ও নির্বেদ ইতিহাসের পর্ব-পর্বান্তরে নেমে এসেছিল তা যেমন নতুন সৃজনশীল রাজনীতি ও সংস্কৃতির অভিঘাতে কেটে গিয়েছিল, আশা করা যায় যে এখনকার বন্ধ্যা প্রতিরোধ সংগ্রামও নতুন উদ্যোগে, নতুন কৌশলে, নতুন নেতৃত্বে সফল হয়ে অচিরেই সামষ্টিক মননের তমসা ও স্থবিরতার অবসান ঘটাবে।

সমকালীন বাঙালি মুসলমান তরুণ প্রজন্মের ইসলাম-বিমুখতা প্রসঙ্গে একটি বিশ্লেষণ

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত

সমকালীন বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাধারণ-শিক্ষায়-শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘প্রগতিশীলতা’ ও ‘আধুনিকতা’র নামে একধরনের ইসলাম-বিমুখতা (এমনকি বিদ্বেষ) লক্ষ করা যায়। এই শ্রেণীর তরুণেরা পাশ্চাত্য এনলাইটেনমেন্ট চিন্তার প্রভাবে ইউরোপীয় ইহজাগতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ভাবাদর্শের প্রতি সাধারণত আকৃষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তুতারা ভুলে যায় যে ইউরোপীয় ইহজাগতিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিকাশ ঘটেছিল সেখানকার ইতিহাসের একটি বিশেষ প্রেক্ষিতে। সেটা আসলে ঘটেছিল মধ্যযুগের খ্রিষ্টীয় চার্চের নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে বুর্জোয়া উত্থানের বিশেষ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে।

অথচ বাংলার ইতিহাসে ইসলামের আবির্ভাব ও ভূমিকা মধ্যযুগের খ্রিষ্টান ধর্মের মত নয়। একটি তীব্র সামাজিক নিপীড়নমূলক হিন্দু বর্ণভেদ প্রথার বিপরীতে মুক্তিদায়ী চেতনা হিসেবে মধ্যযুগের বাংলায় ইসলামের আগমন। এই জনপদের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নবর্গ কৃষিজীবী শ্রেণী যাঁরা আর্য বর্ণভেদ সমাজব্যবস্থার অধীনে কোনও যথার্থ স্থান পাননি, তাঁরা প্রথমে বৌদ্ধ ধর্মের সমতাভিত্তিক ব্যবস্থায় আশ্রয় খুঁজেছেন এবং পরবর্তী্কালে সুমহান ইসলামের আওতায় এসে সমতার মর্যাদা অর্জনে প্রয়াসী হয়েছেন।

পরবর্তীকালে ইংরেজ আমলে এই বাঙালি মুসলিম কৃষক শ্রেণীই ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ প্রথার অধীনে পুনরায় শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বর্ণ হিন্দু জমিদার শ্রেণীর দ্বারা। এই বর্ণ হিন্দু জমিদার শ্রেণীর জুলুম থেকে ও ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেতে বাংলার মুসলিম কৃষক শ্রেণী ধারাবাহিকভাবে শহীদ তিতুমীর, হাজী শরীয়তউল্লাহ ও মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে সংগ্রাম করেছেন। এক্ষেত্রেও ইসলাম একটি প্রগতিশীল ও ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিল। কাজেই মধ্যযুগের ইওরোপে খ্রিস্টান ধর্মের ভূমিকা নেতিবাচক হলেও বঙ্গদেশে ইসলামের ভূমিকা মধ্যযুগ থেকে আজ অবধি অত্যন্ত ইতিবাচক।

বাঙালি মুসলমান কৃষক শ্রেণী পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন ইসলামের এই ধারাবাহিক মুক্তিদায়ী চেতনা ও ভূমিকার আলোকেই। পাকিস্তান আমলে যখন পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য অব্যাহত রইল এবং গণতন্ত্রের চর্চায় ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে উঠলো, তখন এই বাঙালি মুসলমানেরা ভাষা ও স্বাধীকারের সংগ্রাম থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির দিকে এগিয়ে গেলেন। বাঙালি মুসলমান পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে বটে, কিন্তু তাই বলে কি বাংলাদেশে বাঙালি মুসলমানের সামাজিক ও জাতীয় বিকাশে ইসলামের মুক্তিদায়ী ভূমিকা শেষ হয়ে গেছে? এর উত্তর হল – না, বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিনির্মাণে ও বাঙালি মুসলমানের জাতীয় বিকাশে ও অগ্রযাত্রায় ইসলামের সমষ্টিগত ভূমিকা এখনো অপরিসীম। বাঙালি মুসলমান পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য, রাজনৈতিক ও সামাজিক ইসলামের গণ্ডি থেকে খারিজ হবার জন্য নয়। হ্যাঁ, ইসলামের যে ধারাবাহিক রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তিদায়ী ভূমিকা আমরা এই অঞ্চলে দেখে আসছি, মধ্যযুগে এর আগমন কাল থেকে, তা আজও বাংলাদেশে অতীব প্রাসঙ্গিক এবং অপরিহার্য।

তাই ‘আধুনিকতা’ ও ‘প্রগতিশীলতা’র নামে ইসলামের সমষ্টিগত মুক্তিদায়ী চেতনা থেকে বাঙালি মুসলমান তরুণ প্রজন্ম বিযুক্ত থাকতে পারে না। আর ইসলাম যেহেতু একাধারে ইহজাগতিক এবং পারলৌকিক, আবার ইসলাম যেহেতু অন্তর্নিহিতভাবে অসাম্প্রদায়িক ও সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই আলাদাভাবে ইউরোপীয় আদলে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চাও এখানে অপ্রয়োজনীয়।

বাঙালি মুসলমান তরুণ প্রজন্মকে আজ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সৃষ্টিশীল ও উদ্যোগী হয়ে উঠতে হবে। এটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য খুবই দরকার। তাঁদেরকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ দৃঢ়ভাবে গড়ে তুলতে হবে। আর সেই সঙ্গে তাঁদের আত্মসম্মানবোধ, আত্মবিশ্বাস ও চারিত্র্য সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য ইসলামী সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও আদর্শের অনুশীলন ও অনুসরণ করতে হবে। পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চার সঙ্গেসঙ্গে একই মাত্রায় ইসলামী আদর্শ, জ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। মনে রাখতে হবে মধ্যযুগে ও ইংরেজ উপনিবেশ থেকে মুক্তির কালে ইসলাম যেমন বাঙালি মুসলমানের দিকনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করেছে, ঠিক তেমনি আজও বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইসলাম বাঙালি মুসলমানের জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উৎস ও পথনির্দেশিকা হতে পারে।

তাই আমাদের প্রত্যাশা এই যে, এই সময়ের বাঙালি মুসলমান তরুণ পাশ্চাত্যের জন লক্, টমাস হব্স, এডাম স্মিথ, জন স্টুয়ার্ট মিল, কার্ল মার্ক্স, জন কেইন্স, নোয়াম চমস্কি, মিশেল ফুকো, জ্যাক দেরিদ্যা, এডওয়ার্ড সায়ীদ প্রমুখের লেখা ও চিন্তা চর্চার পাশাপাশি প্রাচ্যের মওলানা রুমি, আল গাজ্জালী, ইবনে তাইমিয়া, শাহ ওয়ালীউল্লাহ, আল্লামা ইকবাল, মওলানা মওদুদী, আকবর এস আহমেদ, মুহম্মদ আবদুহু, সাইয়িদ কুতুব, এল এফফেন্দি প্রমুখের রচনা ও চিন্তার প্রতিও সমান অভিনিবেশ নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠবে। শুধুমাত্র পশ্চিমা ধ্যান ধারণায় নিমগ্ন থেকে একধরনের উন্নাসিক আত্মশ্লাঘায় না ভুগে তাঁদের উচিত হবে নিজেদের মুক্তিদায়ী ইসলামী ইতিহাস ও ঐতিহ্য থেকেও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন উৎস ও উপাদান আহরণ করে সময়োপযোগী গতিশীল শ্রেয়তর ইসলামী চেতনা ও সংস্কৃতির সৃষ্টি ও বিকাশ সাধন করা।


লেখক পরিচিতিঃ মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত। ঢাকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল স্কলাসটিকায় কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত। তাঁর ইংরেজী ভাষায় রচিত ‘ডিসকভারিং বাংলাদেশ’ নামক একটি বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয়ক গ্রন্থমালা  বিভিন্ন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পাঠ্যবই হিসেবে প্রচলিত। তিনি সমকালীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও শিল্প-সংস্কৃতির একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক।

ই-মেইলঃ  manwar.shamsi@gmail.com