প্রিয় মার্ক

By Elora Zaman

বাংলাদেশ নামের একটি ক্ষুদ্র দেশের অখ্যাত এক গ্রাম থেকে লেখা একটি চিঠি। ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে সে দেশেরই একটি মেয়ে। মেয়েটি ফেইসবুকের মাধ্যমে পৃথিবীর বাকি মানুষদের সাথে কানেক্টেড থাকতো আর জানতে পারতো চমৎকার এই গ্রহের অপর প্রান্তের মানুষদের চিন্তা ভাবনা, জীবনাচারন।

নীচের ই-মেইলটি সেন্ড করলাম। যারা বাংলা পড়তে আরাম বোধ করেন তাদের জন্য নীচে বাংলায় ও লিখেছি। সবাই যদি এরকম টুকটাক লিখে পাঠান তবে অন্তত বিনাযুদ্ধে সুচাগ্র মেদিনী দেইনি বলতে পারবো।

প্রিয় মার্ক,
অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আপনার কাছে লিখতে বাধ্য হয়েছি। বিগতদিনে আমরা দেখেছি আপনি বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। একজন মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে আপনি বাংলাদেশীদের অন্তরে আছেন। সেই ভরসায় আজ কিছু বলতে চাই। জানিনা আমার এই চিঠি আপনি পাবেন কিনা। তবুও একান্ত অসহায় হয়ে লিখতে বসেছি।

আপনি হয়ত অবগত আছেন আমাদের সরকার এইদেশে ফেইসবুক বন্ধ করে দিয়েছে বেশ কিছুদিন হল। প্রায় চার কোটি ফেইসবুক ইউজারদের ইচ্ছে অনিচ্ছাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে তারা আমাদের বাক স্বাধীনতা হরণের কার্যক্রম বহাল রেখেছে। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা জোর করে মাত্র ৫% ভোটে ক্ষমতায় অবস্থান করছে। জনমানুষের জন্য তাদের চিন্তা নেই। জনগণের কথাকে তারা পাত্তা দেয়না। কেউ প্রতিবাদ করলেই হত্যা, গুম এবং বিভিন্ন ধরণের ভয় ভীতি দেখানো হয়। এদেশের প্রায় বেশিরভাগ জনগণ এখন প্রচন্ড অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছে। সরকারের বিপক্ষে যদি যৌক্তিক কোনো সংবাদ প্রচার করা হয় তবে সেই সংবাদ মাধ্যমকে বন্ধ করে দেয়া হয়। জনপ্রিয় কিছু সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইতিমধ্যে এবং তাদের মালিকেরা এখন কারাগারে।

সরকারের ইচ্ছে কেউ তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছুই যেন না বলতে সাহস পায়। কিন্তু তারা হয়ত ভুলে গিয়েছে জোর করে দেশের সব মানুষকে ভয় দেখিয়ে নিজেদের দলে ভেড়াতে পারা যায়না। হিউম্যান ন্যাচার হল তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। এদেশের মানুষেরা তাদের সেই প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছিলো আপনার অবদান তাদের প্রিয় ফেইসবুকে। যে ছেলেটি রাজনীতিকে ঘৃণা করে সেই ছেলেটিও ভয়ংকর এই সরকারের স্বৈরনীতির বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠ হতে বাধ্য হয়েছিলো প্রিয় মাতৃভূমিকে ভালোবেসে। নিজের দেশকে ধ্বংসের মুখে ফেলতে দিতে চায়নি সে। অথচ আজ তা দূরে থাক, সে তার প্রিয় বন্ধুটির খবর ও নিতে পারছেনা ফেইসবুক বন্ধ থাকায়। ফেইসবুক ব্যাবহার যেহেতু তুলনামূলকভাবে সস্তা সেহেতু কোটি কোটি মানুষ একে আপন করে নিয়েছে, বেছে নিয়েছে দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে। এতই প্রিয় এই ফেইসবুক আমাদের কাছে যে একদিন এতে প্রবেশ না করতে পারলে যেন সময়কে অপূর্ণ মনে হয়।

অথচ দুঃখজনক হল, সরকার চাইছে আপনি আপনার এতসব ইউজারদের প্রাইভেসীকে উপেক্ষা করে তাদের সকল ইনফরমেশন সরকারের কাছে দিয়ে দেন। যেনো তারা ইউজারদের ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে রাখতে পারে, হয়রানী করতে পারে কিংবা ভীতি প্রদর্শন করে তাদের বিরুদ্ধে না লিখতে বাধ্য করতে পারে। এই সরকারের দ্বারা বিগতদিনে ১৭ বছরের বালক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন শুধুমাত্র ফেইসবুকে দুইলাইন লিখবার কারণে।

আশাকরি আপনি বুঝতে পারছেন আমরা কি ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে আছি। অন্যায় যে করে সে সর্বক্ষন ভয়ে থাকে, সবকিছুতেই ভয়ে থাকে যে এই বুঝি কেউ প্রতিবাদ করে ফেললো। আর তাই তারা প্রতিবাদী মানুষদের দমন করে কঠোর হাতে। সরকার ঘোষনা দিয়েছে আপনার সাথে চুক্তি করে ফেইসবুক ইউজারদের গোপন তথ্য জেনে নিয়ে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তারা এতই ভীত তাদের অপকর্ম নিয়ে। এবং ক্ষমতায় জোর করে থাকবার জন্য মরিয়া যেনো বিশ্ববাসী তাদের অন্যায় সমূহ সম্পর্কে জানতে না পারে আর তারা রুল করতে পারে অস্ত্রের জোরে, দমননীতি গ্রহণ করে।

এমতাবস্থায় আপনি যদি আমাদের আশ্বস্ত করেন যে আপনি এই কোটি কোটি জনগণের পাশে থাকবেন, কোনো স্বৈরাচারী সরকারের পাশে নয়, এই সরকারের গুটিকয়েক মানুষের ইচ্ছায় আপনি আমাদের প্রাইভেসী ব্রিচ করবেন না কিংবা আমাদের কোনো ব্যাক্তিগত ইনফরমেশন তাদের হাতে তুলে দেবেন না, তবে আমরা স্বস্তি পাই। এইজন্যই আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করা। নিজ দেশের সরকারের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে আমি বারবার কেঁদেছি। নিজেকে ধীক্কার দিয়েছি। তবে সরকার যখন মানুষের বিপরীতে অবস্থান নেয় শত্রুর মত, তখন একান্ত নিরুপায় হয়ে আপনাকে লিখতে বাধ্য হবার এই প্রয়াস ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। ভালো থাকবেন।
.
.

A young girl with her ever lush mind rediscovered herself in the contemporary world of networking and socialisation with free and fast paced information flow, as she wandered in the online virtual getaways from a physical location of a tiny village of a small country named Bangladesh. As the little world and yet so big that she lived in seemed to be on the verge of being shattered, she wrote a letter to Mark Zuckerberg. Facebook was not just more than a face and a book to her; it was her universe to her inquisitive amicable mind seeking to remain connected and informed of the lives and laughter of the people from the other side of the planet. She wrote:

Dear Mark,
I am compelled to write you this letter with a heavy heart. In the past, we have seen you have stood firmly beside the helpless people affected in various natural and humanitarian crises of the world. I can reaffirm that as a person with great sense of moral responsibility and principles, you have had always occupied an important place in the hearts of the Bangladeshis. It is this confidence that encourages me to say a few things through this letter, although I am unsure whether this letter will really reach you. However, I am writing it as I am totally helpless and do not see another option.

You may be aware that the government of Bangladesh has shut down access to facebook in Bangladesh for sometime now. By showing absolute disregard to the rights and preferences of some 40 million facebook users of Bangladesh, the government has kept on snatching our right of freedom of speech and expressions.

This government, as you may know, is not elected by people’s vote through a proper democratic process. They are just holding on to the power by force with a meagre 5% support of the total population. They possess no concerns for the people of the country whatsoever. They turn a blind eye to the opinion of the people. Anyone trying to protest against their evil intent and illegitimacies has to deal with their threats of murders, abduction or other forms of tortures and harassments. An overwhelming majority of the population is living helpless lives now a day. Any media broadcasting any news of utmost veracity but going against the government, is forcefully brought under complete closure. Already a number of popular newspapers and television channels have been oppressively closed down by the government, with their owners jailed in sheer isolations.

The Bangladesh government wants to create an environment so that no one can dare to exercise their right of freedom of expression, no matter how basic that could be, to say anything against them. However it looks like they have forgotten that it is not possible to keep all the people of the country intimidated and forced to be on their side. Inherent in human nature is to protest and remonstrance against all evils and injustices. With all options virtually ceasing to exist, the people of Bangladesh kept on their voices of protest heard so far through your unprecedented contribution: Facebook. Even the innocent young men who never affiliated themselves in politics, were bound to raise their voices out of their love for the motherland, to protest against the autocracies of the government using the facebook as their only platform. They didn’t want to let their country be pushed to the brink of collapse.

However, with the current shut down of facebook in the country, they are not even capable of connecting to their dear friends, let alone using facebook to pursue broader benefits and better causes. Because facebook is a complementary site for the account holders, millions of people of Bangladesh have embraced facebook as integral parts of their daily lives. We love facebook so much that any single day without accessing facebook seems rather unfulfilled.

However, it is very unfortunate that the government of Bangladesh wants you to provide the information of all the facebook users to them completely neglecting the privacy of these users. The government’s filthy intent is to arrest the users and keep them in custody, harass them or coerce them not to write anything against the government. In the past, many people, from a 17- year old lad to university professor have been arrested by the government only for writing something in facebook against the government.

I hope you understand what dire straits we are living in at the moment in this country. It is well known that the perpetrators and wrongdoers are always afraid of confronting protests against their evil deeds. Hence they tend to gruellingly repress the ones who protest and oppose, which is especially easy when they are the authorities themselves. The government of Bangladesh has announced that they will get into an agreement with you to access confidential information of the facebook users, to prosecute and bring them to judicial trial. The government is so frightened because they are fully aware of their misdemeanours and sins. They want to hold to the power by any means, by ensuring that the outside world remains ignorant of their mischiefs and they can continue their autocratic regime using guns and power to threaten and repress people.

Under the circumstances, it would be our ultimate relief to know that you will be beside the millions of us, and not with only a handful of people of the current autocratic oppressive government of Bangladesh, and you will not breach our privacy or provide any of our personal information to the government. This is what I wanted to draw your attention upon. Writing against the government of my own country has not been easy and I couldn’t resist shedding tears. I resented myself time and again. However, please forgive this endeavour of mine to be in touch with you and I hope you will understand how undone we are with the government taking a belligerent stance against its own people, which leaves us with no option other than to write to you to get our rights of freedom of speech and expression preserved through the facebook.

May Allah bless you! Stay safe.

Missed Calling: No Exit: November.

Missed Calling: No Exit: November.

 

                                                                                                                                    Seema Amin

The month of November, with its scheduled nascent coolness, has been the unofficial portent of a three month winter season of staged ‘culture’ for years; the capacious capital boasts its social capital (the synergies of its urban, global, and now, ‘trans-rural’ agglomerations) in established platforms like Hay (Dhaka International Literary Festival) and Bengal’s Classical Indian Music fest as well as the more recent ‘blockbusters’of Samdani Art Summit and BPL/ICC.  This year, rehearsed loudly in the habitual corporate brochures, event catalogues and free/ VIP registration circuits, a new entree has entered the menu of the spectacle.

The Dhaka International ‘folk’ festival, a rather pink fountain for variously colored thirsts—popular Lalon and Sufi exponents branded or re-branded ‘folk’ in the well-protected precincts of the Army stadium—had its debut, as highbrow, lowbrow and middlebrow sat in classified and declassified zones during the hallowed trinity– three nights of ‘Bliss’ not to ‘miss’ — together in concert as they almost never are, except possibly…. in queue on voting day. Ai! The month is a harbinger, too, of not only Jibananda’s once punctually rapturous rural winter and the hemanta harvesting of amon rice but the municipality polls, 2015. The barely audible static surrounding these polls, in contrast to the April 28 mayor polls, hardly interfered with our recreational sublime.  One would have to be exceptionally and easily bored to notice the odd man out in the rose-colored screen that dropped over the writer/publisher serial murders and the posthumously advertised petrol bombs of January: blue prison vans here and there, uploading busloads of new arrivals in the already overloaded Dhaka Central Jail. If one cared to, however, one might notice the bars of music synchronized to the bars of the prison vans, inside which only the hands of anonymous prisoners are visible…Outside Jahingar gate that opens to the cantonment where urban vintage and musical ‘enlightenment’ is tasted… zig-zagging traffic through Shahbag… No Prussian or electric blue, no warm or fluffy blue: the prison blue of the prison van.

On a sudden, if a staccato rhythm suddenly jerks our gaze and we see thirteen brown hands shaking the small bars that open to the outside world inside the moving penitentiary…our imagination might take us somewhere…quite far, as far as a Passage to India..or rather haphazardly…as mine did, to Grameenphone. I imagined, for I am particularly and peculiarly imaginative, that these thirteen hands, shaking the van for what it’s worth, picked up from god knows where, were missed calling the Dhaka Folk festival, the one that almost tempted me with its constellation of stars and the understated smell of dried roses.

Such an understatement: prison.  The headlines from September do not overstate the bodies it contains: 17,000 workers/activists of the (unofficial, major) opposition. The subheading on the front page of the Daily Star from November 21: Party Claims 500 of its prospective candidates detained this month. Elsewhere:  “Every day, three hundred of our workers are picked up…”  Forget the cases against 22,000 of its leaders and activists. Just count the number detained each day…hell, if there were three consecutive storms in the south not as many rickshawallahs could show up in the capital.

We live in insecure times, alias, very secured times. From bleeding Paris to burning Dhaka, a blanket of security, a grid of surveillance and its alter ego– mass arrest and mass detention, is thrown over us.  Before we had time to swallow the enormity of the ‘insecurity’ posed by five bloggers and a publisher killed in the last eight months, we were covered up in a ‘blanket of security’.   Before we could register the one-party municipal election we are about to enjoy, two eagerly awaited hangings were announced.  Thus, and so:

“Nirapothar chadore dheke rakha hoyechhe Dhaka Central Jail.”  Good, in fact thank you, but has the blanket been lifted since? Will this coldness, this fear, ever thaw? And did the blanket really come down that fateful night when history was served or was it already keeping us warm in an ever warmer earth?

Precedents are perhaps all we are about… “Amader first hote hobbe, tai na…” An IUB faculty and friend was sarcastically referring to biometric SIM registration and how we were proudly stepping into unchartered territory, with the exception of one or two African states.  Terrorism calls for terrific measures. But if the opposition, and its hundreds of thousands of supporters, is not a banned terrorist outfit—in spite of endless rhetoric that would have it even more illegitimate than Jamaat, not even just by association anymore—this form of ‘delegitimizing’ a political party would normally have the effect of delegitimizing the state that has declared an unofficial war against almost forty percentage of its population.

While the imprisonment of leaders before the nonetheless performed spectacle of petrol bombs during January’s post electoral blockade can be post facto argued as “pre emptive,” the pre-emptive ‘strike’ of November has no deductive or inductive logic behind it. It is simply justified—if it is justified at all, no one feels the need in a climate of generalized ‘terror’– by the suspicion of potential sabotage (albeit sabotage of ‘normalcy’ as much as anything else). One man’s sabotage is another man’s subterfuge:  will potential provocateurs and saboteurs, disciplined, remanded, be released in time for elections?  Discipline and Punish: just don’t make this spectacle so damn obvious.  News from yesterday: We are looking forward to Awami-Awami violence, in case we miss the normal bipartisan blood spilled.  Thousands languish in Bangladeshi prisons since time immemorial (that’s colonial Greenwich standard time); but the hundreds of thousands in prison now herald the zeitgeist of a new political age (If we are to look for precedents in our own history, the parallels could get tricky, from the Pakistani period to BAKSAL)

The question occurs, under what climate, in what world, through which discourse, can a society accept this form of ‘open’-literally, for many are in a permanent ‘makeshift’ prison in tents–incarceration of tens of thousands of its people? The grassroots workers in jail, those who ‘do’ the BNP (just as their counterparts who ‘do’ the Awami League), are not separate form this society.  Their party has not been declared ‘illegal’ or even ‘illicit’ as Jamaat’s has—even– rhetorically;  yet, by all means, if there is any path towards such a historic moment, then the mass detention of the (unofficial) opposition’s workers certainly entail that inexorable destiny. In world and national history it is one-party or one-man/woman dictatorships that have been synonymous with such mass detention (apart from episodes of ethnic cleansing, etc).

Not a few fingers point to a state that has one, inviolable source of legitimacy: the war crimes tribunal (i.e. a historic burden of Chetona).  In itself, it is no mean source, with genuine support if not national consensus, much more powerful than the regime’s growth rhetoric.  Yet, apparently it is not sufficient to ensure the sound sleep of our rulers, underneath that blanket of security: complete acquiescence seems necessary, the slightest divergence/dissent somehow points at the threat of a critical mass, ‘democracy’ seems as much a threat as ‘terror.’ Critical mass (the threshold on which the status quo one day dissipates) where the foundations cannot hold. Thought is almost as ‘unfree’ as action.

Again, let me repeat, not to say that AL does not have support, the highest members of the ‘culture literati’ paid homage to the PM for her ‘environmental achievements’ even as UNESCO finally expressed alarm at Rampal power plant in the Sundarbans.

But these same supporters, who ‘cover’ with a shroud of protective love, fierce rhetoric and sometimes, sometimes, genuine feeling, never even feel they have to answer why thousands of BNP’s workers are being rounded up before the polls, rather than—just for comparison’s sake– thousands of Jamaat’s workers before the verdict of a war criminal. The threat of the BNP organizing its grassroots workers (leaders in September declared they had begun work in 74 units) seems sufficient condition for such blatantly totalitarian actions by the regime.

But I have a proposition: remember how ‘we’ were comparing the BNP to the Naxals? Absurd to some, perfectly logical to others, but hey, for rationality’s sake/if not realpolitik: why don’t we just follow through and do what India did with them? Why don’t we declare them illegal? At least then that section of Bangladesh considering opposition politics as a legitimate form of protest will know that somehow their actions have crossed a boundary that never existed when their counterparts were in their place ( history begins and ends with the victors and why should this be different?)— know that they have been so ‘burnt’ in the eyes of the public, in poetic banners and graffiti all over town, that they are not allowed to function legally?

Look into the legal question.  Lock the terror away—no, confiscate, quarantine, suffocate, squelch, corner, liquidate… No…they will only throw blockbuster shows, while the prison vans carry them away…

Alas, the question is not legal.  In a country of one hundred sixty million people, if the forty percent of the population that constitutes BNP’s core vote is incarcerated and ‘incarcerable’, the prison-bail-remand industry becomes a lucrative source of profit.  And more importantly, virtually endless. Prison, after all, is not just perianal amusement, mind you, but often referred to as an industrial complex, with a vibrant economy.  In America, the ‘military-industrial’ complex has its own GDP, if you will.

One of the biggest (baddest, baby) ‘throwers’ of parties in Bangladesh is the military: so are the US Marines stationed here in Dhaka.  The military has always been a key player in Bangladeshi politics, but its cultural import should not be considered insignificant; for reasons both profound and ironic, it still inspires respect, awe and submission. The army stadium, just one platform for civic ‘togetherness’ is just a token ‘cultural refreshment’, only a mocktail after all, not a Molotov…

Now, this article is not another brick in the wall of the well-established discourse of a militarized, police state. Or an obituary for the opposition; or even, the slightest death threat to the ruling regime.  It is, if anything, a missed call to the uncritical ‘mass/class’ here and there orbiting November, December, January… To pretend everything is normal as long as the wheels of growth do not grind to a halt is the great virtue of the capitalist mode of production and, if you will, mode of ‘life’ and death. And, if anything, the ‘culture’ precedes the politics.

‘Art’ replaced God in the west a long time ago as the ‘opium’ of the m/asses, as a professor of literature in the University of Geneva once declared to me…The tourists may come to the biggest show in town in February, the Samdani Art Summit, through different borders than the dealers in arms, but the circuits of pleasure and pain somewhere do meet, perhaps in the no man’s land of spectacle. Oishi will have a noose on her neck, but the security forces and godfathers who deal in yaba will not.  War criminals who facilitated or participated in the torture of so many will hang but those who keep well-identified torture cells today will not. The age of the spectacle does not let us mourn the horrors of a terror attack or the loss of our freedoms long, sublimating everything into fear and/or joy,  lest we recognize other crimes, other criminals, repeating history piecemeal,  like the bullet-perforated path of a third world war. And the prison vans pass us by, on our way to the ‘theatre’. Yesterday’s news of ISIS, tomorrow’s news of Ansarullah Bahini, and a promise of more of the same.  Nothing, nothing between pleasure and pain, the keyboard set to this scale. No third taste, no minor chord.  Once in the theatre, that old Arabic root word next to the Latin: No exit.

A tale of two mockingbirds: Public reaction in Pahela Boishkah and echoing namelessness.

1

By Seema Amin

“The ‘they,’ as it were, can constantly have ‘them’ invoking it…”—   Heidegger

Easy does it. ‘They’ did it.      

In ‘To kill a mockingbird,’ Harper Lee described the subjectivism of human experience:  People generally see what they look for, and hear what they listen for. Justice, in this worldview, tends to ‘black out’, losing consciousness to a kind of societal tunnel vision. Atticus Finch, protagonist in that American classic, saw mockingbirds as epitomes of harmlessness, innocent songbirds that should not be prey to the predator.  But in the natural world, mockingbirds are characterized by quite another ‘gift’. Mockingbirds mimic other birds. The song of the mockingbird is a song of the average, a kind of adjusted polyglot’s mean of birdsong…

The culture of ‘public reaction’ in Bangladesh today is an echo chamber of mockingbirds, not too distant from the cultures of resistance/s. The same coterie, friends, networks, who ‘resisted’ together for forty years resist on. They sign together, dine together, sing and fight together.  Yet around them the ‘culture’ of corruption—the three muskateers of political, social, sexual corruption–has not changed terrifically, much as the colors of our national holidays remain heroically the same, strutting ‘freedom’, tradition, and ‘progressive liberal values’ all at once, singing the song of the average.

Heidegger’s treatment of the ‘They’ in Adorno’s The Jargon of Authenticity, plumbs the concept of ‘averageness’ in a culture of exchange:  ‘Being-with-another’ concerns itself with averageness…Thus the ‘they’ maintains itself factically in the averageness of that which belongs to it, of that which it regards as valid and that which it does not, and of that to which it grants success and that to which it denies it… This care of averageness reveals in turn an essential tendency of Dasein which we call the ‘leveling down’…of all possibilities of being.” Complex as it sounds, Adorno makes this concept concrete when he describes a world born of phrases, chatter, giving birth to a   ‘reality that arose in the name of culture.’

A few days after the coordinated public ‘humiliation’/molestation/ dare I say—rape– of more than twenty women in Dhaka University’s TSC, Information Minister Inu described the style of the ‘attack’ as ‘Talibaneque.’ It would take the Taliban of course, or Isis, or, at the very least, Ansarullah Bahini, to get away with—ehm–this crime of ‘no name’ that Rahnuma Ahmed, in 2010, named in an article entitled, “Chatra League and sexual violence, A wide spread state of denial,” after incidents of sexual harassment in the same Raju Chottor area in Pahela Boishakh. In 2015, of course, it would take the Taliban. And this, though the security is beefed up more each year, audibly to stem any miniscule threat of ‘militancy’, cultural harassment, etc. We heard the same stories of extraordinary security measures, special RAB and police booths as in Ekushey and Boi Mela, when blogger Abhijeet Rai was silenced forever.  And yet, in spite of everything, the same exact venue remained ‘outside of the jurisdiction’ of security. No surprise. They—the Taliban– control Shahbagh after all. They won the spoils of that war in 2008. They mark their territory, we circle in their piss. They came from underground terrorist tunnels behind TSC, they were handed over by Nandi to the police, who, in turn, were so enamored with the most wanted terrorists of Bangladesh that they released them, did not even take a second glance at the now famous ‘bearded man’ seen repeatedly near the scene on the cameras…Beards get alarming only in the aftermath.  But of course! The terrorists control Shahbagh.

In spite of detailed reports in the print media immediately after the incident, recounting sexual harassment in Jagannath by Chatra League on the same day as the spectacle at TSC, the TV media mediated an Islamic threat soon after, reporting what could well be a clue, or a red herring, that the state’s mouthpieces were only to eager to echo. Meanwhile, the weight of the ‘evidence’ veered towards the song of the average. Women’s rights activists, university professors, writers, even students, seemed caught between explaining the endemic environment of sexual harassment and ringing the alarm bell over a threat to the national (secular) culture of Pahela Boishakh. Exceptions to note: some referred back to the pages of history, the 1998 protests over serial rape by Chatra League cadres in Jahingnagar University; some hinted at the political patronage that creates impunity. But the echo chamber, where the mockingbirds flocked quickly, swiftly sang the song of the Rooster of the morning after, who announced with alarm the usual, and yet, unusual suspects. Chatter flits between half truth and an incomplete lie.

In a thorough report in the Dhaka Courier (24 April) the culture of impunity in rape and sexual harassment prevalent even in ’73 is mentioned, alongside the historical marker of ’71 regarding rape. Afsan Chowdury’s purported claim that the destigmatization of rape was ‘the most significant’ legacy of Pakistan, that the ’71 breakdown of norms regarding public rape allowed impunity regarding rape  to become the norm, is intriguing; Bangladesh, however, did not merely continue impunity for Pakistani and razakar rapists, they gave impunity for rapists from our own freedom fighters. War has always involved rape and the notion that it takes such a violent ‘breakdown’ for the patriarchal norms in peacetime to change should raise some questions. In any case, today if we continue to thank Pakistan for the ‘destigmatiziaton’ of pubic rape we may as well blame patriarchy and its normalization of sexual violence on Pakistan in independent Bangladesh. Afsan Chowdhury himself is quoted elsewhere saying that power and privilege provides impunity to rapists; and has that power not changed hands? Only from man to man, state to state, old patronage, new patronage. Merely.

The report’s own description of Chatra League’s shame provides some clue: “DMP Joint Commissioner Munirul said they were working on releasing the suspects’ photos taken from screenshots of the footage. But in a related development, popular website Moja Loss had to wrap up their social awareness work done through the site after using the CCTV footage to identify some of the perpetrators and providing links to their Facebook pages. Many of the identified louts were found to be members of the Bangladesh Chhatra League, the student wing of the ruling party.”

The same report mentioned Chatra Union Dhaka University unit’s president Liton Nandi’s witness of men who were saying “record this Record this! We will never get such a view again.”  Ironically, the ‘view from camera 16”, the one camera from which footage has not  been released but which was placed in the area where the more ‘nameless’ acts occurred, may well also never be the same again. It is easy to doctor footage once so much time has passed. And given the way the security forces and state has reacted so far, a state so willing to ‘set the record straight’….one can, I suppose, only believe our authorities ‘innocent until proven guilty.’  Alas, still, the footage needs to be released, if only for us to know the full extent of what Rahnuma called a ‘nameless crime.’ The New York times live website recently did an article on “Sunitha Krishnan, the woman  who made the bold and controversial move of posting real footage of men raping women on the Internet” and how it led to the identification of rapists following the 2012 New Delhi rape, among other cases.

Rahnuma Ahmed, in the 2010 article, ventured that the widespread ‘state of denial’ regarding Chatra League’s involvement in rape was slowing shaking. Did it? Has it? Does the crime have a name? In spite of commendably large, widespread and energetic protests following this year’s event, the chatter in the echo chamber seems to fall squarely in the center of the cesspool of events of the last few years where impunity has prevailed, and where,  on the occasion someone is indicted the public largely remains skeptical that the actual criminals were found.

For so many reasons, my suspicions are with the most likely suspects, not the usual suspects, given the weight of history, the precedents of 2010, the particular style and nature of the assaults and the simultaneous assaults in Jagannth University on the same day, and the reining in of Chatra League’s women by the party following their desire to protest the incidents; and, and, and. But I maintain reasonable doubt. I ask myself, if an Islamic militant wanted to make a point with this coordinated lechery, what is the point ‘they’ would make? I know the mockingbirds’ answer: To intimidate those who practice ‘Bengali culture.’ But I get lost in irony.  Point: Today, like every day, women are subject to public and private abuse simply because of the fragrance they carry of ‘womanhood.’ That fragnance is ‘apparent weakness.’ The same fragrance for which the police were emasculated by our valiant Chatra Union protestors when they came with bangles and sarees to Shahbagh thana. What point, then, was Chatra League making in Jagannath? What point were they making in hundreds of cases of assault that they have been implicated in over the years?  Which Islamic force incited them, were they trying to suppress our ‘national culture’? What point were they making when their own female members wanted to protest? And were they making similar points when they extorted Jatra’s Anusheh over a concert, and failing to convince her, incited the conservatives of a village in Sundarban to rise against improperly covered women? But the media barely mentioned the connection.  Some media, in fact, were found to be involved in the extortion. And how am I to separate the point they were making from the chatter: our famous actresses and activists vociferously muddling the waters so the dogs of Shahbagh can maintain jurisdiction– the one the police can quite honestly claim was not theirs— forever.

Friends, sisters, aunties, mockingbirds.  The boy who cried wolf will one day face a real wolf. And that day, the wolf won’t spare any of us, not women, not minorities, no one. Just like we didn’t spare them. Though they hid in the jungle, as harmless as Lee’s innocent birds, the day our tigers roamed free, preying without fear, with the help of our mockingbirds. The dogs of Shahbag mark their territory and we circle in their piss. We sing songs of awakening. But no one wakes up in an echo chamber. Like the vuvuezla that deadens ours sense of sound, the sound of a ten year old screaming, being bitten, thrown, the obfuscations of the mockingbirds make obfuscation of the state unnecessary. And the show goes on.

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে স্বৈরাচারের সাফাই

by Ariful Hossain Tuhin

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে একটা মতামত বিশ্লেষণ ছাপা হয়েছে (link at the bottom of article) বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কথাবার্তার ফাকে একটি অনুচ্ছেদ বেশ চোখে পরার মত —

“But the battle between the BNP and Ms. Hasina’s Awami League—marked by pitched street battles and paralyzing strikes—isn’t between two equally bad parties. Ms. Hasina stands for a country whose Muslim majority lives in harmony with both its own distinctive Bengali cultural traditions and with other faiths. The BNP, by allying with Jamaat-e-Islami and condoning violence to force fresh elections, mostly offers strife and intolerance.”

প্রথম আলো অথবা ডেইলী স্টারেও আসলে এই ভাষায় বর্তমান পরিস্থিতিতে অপ-এড ছাপা হয় না। ২০০৯ সালের দিকে আনিসুল হকরা লিখতেন “ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড বাদ দিলে সরকারটা আওয়ামী লীগ খারাপ চালায় না”। আনিসুল হকের ঐ বক্তব্যের কনটেক্সট ছিল কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কিছু “কৃষিবান্ধব” পলিসি। ২০১৫ সালে আনিসুল হক এইভাবে লেখার সাহস করেন না। আসলে আবদুল গাফফার চৌধুরী ছাড়া কেউই বোধহয় ২০১৫ সালে এইভাবে লিখতে পারবেন না।

ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল রুপার্ট মারডকের মিডিয়া এম্পায়ারের অংশ। তাদের এডিটরিয়াল স্ট্যান্স প্রধানত নিও-লিবারাল পলিসির কট্টর এবং আন কম্প্রোমাইজিং সমর্থন দ্বারা পূর্ণ।

এই কারনেই এই অনুচ্ছেদের সাথে কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রের মিশর পলিসির সাথে মিল খুজে পান, তাহলে তাকে দোষ দেয়া যায় না।

আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রএর মধ্য আমেরিকায় বিভিন্ন অন্যায্য কাজকর্ম যেমন সরকার উতখাত, গনহত্যাকারীদের সহায়তা দেয়া থেকে শুরু করে মাদক চোরাচালানীদের সাহায্য করা, কোনকিছুই বাদ পরেনি। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল রিগান এডমিনিস্ট্রেশনের ইরান-ইরাক যুদ্ধের “সাস্টেইন” করানোর নীতি। ইরান-কন্ট্রা স্ক্যাণ্ডালের সময় দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের দুই পক্ষকেই অস্ত্র বিক্রি করছে।

গনতন্ত্রের নামে এক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অন্য স্বৈরাচারের পক্ষে দাড়ানোর স্ববিরোধিতাটুকু কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা সমাধান করত? এই স্ববিরোধিতাটুকু সম্পর্কে নীতিনির্ধারকদের অস্বস্তি ছিল। কিন্তু তারা একটি যুক্তি দাড়া করিয়েছিল।

যুক্তিটি কিম্ভুত।

যুক্তিটি হচ্ছে “অথোরেটারিয়ান” আর “টোটালিটারিয়ান” সিস্টেমের মধ্যে পার্থক্য করা।

১৯৭৯ সালে Jeane Kirkpatrick কমেন্টারী ম্যাগাজিনে এই বিখ্যাত ধারনাটির সুত্রপাত করেন। তিনি অবশ্য হানাহ আর্ডান্টের একটি ধারনাকে ঘুরিয়ে পেছিয়ে এই আর্টিকেলে উপস্থাপন করেন। তার বক্তব্য থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেয়া প্রয়োজন —

“There is a damning, contrast between the number of refugees created by Marxist regimes and those created by other autocracies: more than a million Cubans have left their homeland since Castro’s rise (one refugee for every nine inhabitants) as compared to about 35,000 each from Argentina, Brazil, and Chile. In Africa more than five times as many refugees have fled Guinea and Guinea Bissau as have left Zimbabwe Rhodesia, suggesting that civil war and racial discrimination are easier for most people to bear than Marxist-style liberation.”

তার মতে বর্ণবাদ-গৃহযুদ্ধ থেকেও মার্কিস্ট একনায়করা খারাপ!

বুঝলাম মার্কিস্ট একনায়করা খারাপ। ভালো কথা। কিন্তু মার্কিস্ট না হওয়া ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রিয় ডিক্টেটরদের “ভালো গুনগুলো” কি? মানে এল সালভেদর কিংবা নিকারাগুয়া কিংবা এপার্থিড দক্ষিণ আফ্রিকা কেন বেশ ভালো এইটা বুঝতে তার প্রবন্ধটি আরেকটু পড়তে হবে —

“Since many traditional autocracies permit limited contestation and participation, it is not impossible that U.S. policy could effectively encourage this process of liberalization and democratization, provided that the effort is not made at a time when the incumbent government is fighting for its life against violent adversaries, and that proposed reforms are aimed at producing gradual change rather than perfect democracy overnight.”

হুম বুঝলাম। যেহেতু অন্য একনায়করা তাদের জনগনকে পার্টিসিপেইট করতে দেয় না, সেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের পলিসির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকা ঐসব সরকারের পক্ষে সহজ হবে। সুতরাং দেশের জনগন এখানে গুরুত্বপূর্ণ না। এমনকি গনতন্ত্র তখনই গুরুত্বপূর্ণ যদি সেই গণতন্ত্র থেকে এমন কোন পন্থা না বেড়িয়ে আসে যা যুক্তরাষ্ট্রের হেজেমনিকে আক্রমণ করতে পারবে।

তাহলে আসল গনতন্ত্রীর সংজ্ঞা কি?

এই সংজ্ঞাও লেখিকা দিয়েছেন —

“If, moreover, revolutionary leaders describe the United States as the scourge of the 20th century, the enemy of freedom-loving people, the perpetrator of imperialism, racism, colonialism, genocide, war, then they are not authentic democrats”

মানে যারা যুক্তরাষ্ট্রের পাপের খতিয়ান রাখে তারা “আদি এবং আসল” গনতন্ত্রী নয়। বেশ সোজাসাপ্টা হিসেব আসলে। গনতান্ত্রিক হতে গেলে নিজের দেশের জনগনের অংশগ্রহন নিশ্চিত করনের কোন দরকার নাই। গুরুত্বপূর্ণ পলিসি ইস্যুতে যদি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সঠিক সুরে কথা বলতে পারেন, তাহলে আপনিও হয়ে যেতে পারেন “আসল গনতন্ত্রী”।

কিছুদিন আগে ইয়েমেনে সৌদি বোমা হামলার সমর্থন এর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ওবামা এডমিনিস্ট্রেশনের একজন মন্তব্য করেছিলেন,

“The measure of the US policy should not be graded against the success or stability of the Yemeni government, that’s a separate enterprise. The goal of US policy toward Yemen has never been to try to build a Jeffersonian democracy there. The goal of US policy in Yemen is to make sure that Yemen cannot be a safe haven that extremists can use to attack the West and to attack the United States.”

৯/১১ এর পরে যুক্তরাষ্ট্রের পলিসির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বের অধিকারী বিষয়গুলোর মধ্যে উঠে এসেছে মিলিট্যান্ট ইসলামকে প্রতিরোধ করা। এখন কোনটা আসলে “মিলিট্যান্ট ইসলাম” সেটা অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারন সাদা চোখে অগনতান্ত্রিক, নিয়ন্ত্রনবাদী ইসলামিক রাজনীতিকেই যদি আমরা মিলিট্যান্ট ইসলামের প্রধান উপাদান ধরি তাহলে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্রই “মিলিট্যান্ট ইসলাম” নামের ছাতার তলে এসে জমা হয়। অন্যদিকে যারা “নিয়ন্ত্রনবাদী-অগনতান্ত্রিক” নয়, তারাও যদি যুক্তরাষ্ট্রের হেজেমনিকে অস্বীকার করে, যেমন ইয়েমেনের “হুতি”রা, তাহলে তারাও সন্ত্রাসবাদের তকমা পাবে।

এইসব ক্যাটাগোরাইজেশন করার সময় অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ পলিসিমেকার গাঁজা খেয়ে থাকেন বলে আমি বিশ্বাস করি। কারন একজন শিশুর কাছেও প্রতীয়মান হওয়ার কথা যে ইয়েমেনে বোমা হামলা এবং ততপরবর্তী নৈরাজ্যে সবচেয়ে লাভবান হবে AQAP( Al qaida in Arabian Peninsula)

এই “ব্রেইন ডেড” ডক্ট্রিনের উপর ভিত্তি করেই ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের এই প্রবন্ধটির গোড়াপত্তন। এই মুহুর্তে আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্রের পলিসির কাছাকাছি ন্যারেটিভে চলছে। সুতরাং এই মুহুর্তে বাঙ্গালদেশের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোন কথা হবে না। শুধু সরকার বিরোধীদের সন্ত্রাসই এখন সেই পলিসির চশমায় চোখে পরবে। এর সাথে দেশের মানুষের ইচ্ছা-আশা-আকাঙ্খার কোণ সম্পর্ক নেই।

আর এই কারনেই বিএনপিও বিভিন্ন চ্যানেলে বার বার সকলকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে, যে তারা কোনভাবেই যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের হেজেমনিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবে না। তারাও সুবোধ বালকের মতই এই হেজেমনির আধিপত্যের ছায়ার তলে থেকে নিজেদের আখের গোছাবে।

এই খেলায় জনগন এবং তার ইচ্ছার কোন গুরুত্ব শেষ পর্যন্ত নেই। ৪৪ বছর ধরে চলা ব্যর্থ এক্সপেরিমেন্টকে ধাক্কা দেয়ার জন্যে যেমন ইনোভেটিভ চিন্তাভাবনার দরকার ছিল তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। সেখানে শুধু প্রভুর প্রশাস্তি এবং প্রভুর আশীর্বাদে উদরপূর্তি একমাত্র লক্ষ্য।

http://www.wsj.com/articles/bangladeshs-good-fight-against-islamism-1429718057

জনাবা শেখ হাসিনা,

by Watchdog BD

জনাবা শেখ হাসিনা,

মাননীয়া সম্বোধন করে আপনাকে সন্মান দেখাতে পারছিনা বলে দুঃখিত। প্রথমত, বিশ্ব হতে উপনিবেশবাদ অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। ব্রিটিশ প্রভুদের কায়দায় কথায় কথায় মাননীয়া জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে নিজকে দুইশত বছর আগের দাস যুগে ফিরিয়ে নিতে চাইনা। খোদ ব্রিটিশরাও এখন আর এ জাতীয় শব্দ ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়। বারাক ওবামা আমার দত্তক নেয়া দেশের প্রেসিডেন্ট। পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিধর প্রেসিডেন্টকে আমি জনাব প্রেসিডেন্ট বলতেই অভ্যস্ত। এ নিয়ে খোদ ওবামা যেমন অভিযোগ করেননি, তেমনি তার দল ডেমোক্রেটরাও আমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করেনি। আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি হাজার ব্যস্ততার মাঝেও প্রেসিডেন্ট ওবামা আমার মত একজন সাধারণ সমর্থক ও নির্বাচনী কর্মীর সাথে নির্বাচন উত্তর যোগাযোগ রাখতে ভুল করেন না। দ্বিতীয়ত, আপনি বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার প্রধান নন। আপনি দলীয় প্রশাসন ও বন্দুকের নলের মুখে অনির্বাচিত সরকারের প্রধান। তাই আমাদের সংস্কৃতিতে স্বীকৃত ও প্রাপ্য সন্মান দেখাতে পারছিনা বলেও দুঃখিত। আইনগত ভাবে আপনি কোনটারই দাবিদার হতে পারেন না। আপনি জারজ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। চাইলে দলীয় চামচা ও প্রশাসনের ভাড়াটিয়া বাহিনী পাঠিয়ে আমাকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি আমি যা বলতে যাচ্ছি তার সবটুকু বলা সম্ভব না হলেও কেউ না কেউ একদিন এসব কথা মুখ ফুটে বলতে শুরু করবে। বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের সবাইকে ভয়, সন্ত্রাস ও পেশী শক্তির কাছে জিম্মি রেখে, গায়ের জোরে ক্ষমতার সিংহাসন আলোকিত করার নিশ্চয়তা কেউ আপনাকে দিতে পারবেনা। সময় আসবে এবং আপনার প্রতি সেকেন্ড কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতার দাবি উঠবে। এবং তা হবে সভ্যতার দাবি। সময়ের চাহিদা।

জনাবা হাসিনা,

ঘটনা হাজার রজনীর আরব্য উপন্যাস হতে নেয়া নয়। ৬০-৭০’এর দশক এখনো ইতিহাসের পাতায় সমাহিত হয়নি। আমরা যারা বেঁচে আছি তারা ভুলে যাইনি কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে এ দেশের মানুষ সংযুক্ত পাকিস্তানকে লা-কুম দিনু-কুম জানিয়েছিল। স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা ও তাদের পোষ্য ২২ পরিবারের শোষণ, পিষণ ও সন্ত্রাসের নাগপাশ হতে মুক্তি পাওয়ার ভ্রূণেই জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ নামক দেশের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন অঙ্কুরিত হয়ে পল্লবিত হয়েছিল ৭০’এর দশকে। ফলশ্রুতিতে মানুষ অস্ত্র হাতে নিয়েছিল এবং ইতিহাসের অমেঘো পরিণতিতে সংযুক্ত পাকিস্তান ঠাঁই নিয়েছিল আস্তা-কুঁড়ে। আজ আমরা নিজেদের স্বাধীন এবং সার্বভৌম বলে দাবি করি। আসলেই কি তাই? আপনার অভিধানে স্বাধীনতার সংজ্ঞা কি আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের অভিধানে এ সংজ্ঞা কেবল আপনার বাবাকে দেবতার আসনে বসিয়ে পূজা অর্চনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। স্বাধীনতা ২২ পরিবারের খপ্পর হতে বেরিয়ে ১ পরিবারের রাজতন্ত্র কায়েম করাও নয়। স্বাধীনতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ভৌগলিক দিয়ে শুরু হলেও এর শেষ ঠিকানা অর্থনৈতিক মুক্তি তথা সামাজিক নিরাপত্তায়। জাতিকে আপনি অথবা আপনারা কি দিয়েছেন ভেবে দেখেছেন কি? গোটা দেশ পরিণত হয়েছে মাফিয়া স্বর্গরাজ্যে। লুটপাট-তন্ত্র রাজত্ব করছে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র। খুন, লাশ, গুম পরিণত হয়েছে দৈনিক ডাল ভাতে। মানুষ মরছে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে, শয়নকক্ষে। লাশ হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবায়। আতংকের কালো ছায়া গ্রাস করে নিয়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন। বলতে বাধ্য হচ্ছি জনাবা, সবকিছু হচ্ছে আপনার নেতৃত্বে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আপনাদের পারিবারিক সম্পত্তি। এর অঙ্গ সংগঠন সমূহ আপনার পেশিশক্তি। এদের যৌথ প্রযোজনায় যে পশুশক্তি জন্ম নিয়েছে তার কাছে অসহায় হয়ে পরেছে গোটা জাতি। গোটা দেশের মালিকানা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার লালসায় দেশের সবকটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে আপনি তচনচ করেছেন। কেড়ে নিয়েছেন নাগরিকদের ভোট দেয়ার অধিকার। দুমড়ে মুচড়ে তক্তা বানিয়েছেন কথা বলার স্বাধীনতা।

জনাবা হাসিনা,

মুক্তিযুদ্ধ আপনার বাবা অথবা পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি নয় যা দিয়ে আজীবন ব্যবসা করে যাবেন। যুদ্ধের কোন ফ্রন্টেই আপনাদের কারও কোন অবদান ছিলনা। আপনারা কেউ যুদ্ধে যাননি। দখলদার বাহিনীর নিরাপদ আশ্রয়ে নিজেদের চামড়া বাঁচিয়েছিলেন কেবল। চাপাবাজি আর পেশি শক্তির উপর ভর করে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতাকে বানিয়েছেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লাভজনক পণ্য, প্রতিপক্ষ নির্মূল করার ধারালো হাতিয়ার। শেখ পরিবারে আজীবন দাসত্ব করার জন্য বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। এ দেশের জন্ম হয়েছিল বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার জন্য, স্বাধীনভাবে কথা বলার জন্য, অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা সহ মৌলিক অধিকার সমূহের নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্য। আজ কোথায় এসব? স্বাধীনতাকে আপনি কবর দিয়েছেন শীতলক্ষ্যার পানিতে। বর্গা দিয়েছেন র‌্যাব, পুলিশ ও ছাত্রলীগের পদতলে। ওরা জাতির গলা চিপে শ্বাস বের করে আনছে এবং পৈশাচিক উল্লাসে আনন্দ করছে। আপনি গণভবনের চার দেয়ালে বসে মুচকি হাসছেন এবং মিথ্যাচারের গর্ভে জন্ম দিচ্ছেন নতুন এক দশ। অচল ও বিকলাঙ্গ বাংলাদেশ।

জনাবা হাসিনা,

ক্ষমতার স্বাদ খুবই সুস্বাদু। সহজে কেউ ভুলতে পারেনা। আপনি পারবেন না। কিন্তু সময় আসবে এবং আপনার স্বপ্নের তখত তাউসে আগুন লাগবে। সে আগুনে আর কেউ জ্বলবে না,জ্বলবেন আপনি এবং আপনার পরিবার। অযোগ্যতাই হবে আপনার পতনের মুল কারণ। বাংলাদেশের মত জটিল আর্থ-সামাজিক দেশ পরিচালনা করার ন্যূনতম যোগ্যতা নেই আপনার। তাই জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিন। ইতিহাসকে আপন গতিতে চলতে দিন। এ দেশের মানুষ গোলাম হয়ে জন্ম নিয়ে গোলাম হয়ে মরতে অভ্যস্ত নয়। তারা ঘুরে দাঁড়াতে জানে।

শান্তি‬ ‪ও একচক্ষু‬ ‪‎হরিন‬

by Imtiaz Mirza

১৯৭১ এর সেপ্টেম্বর মাস । একটি তরুনের বাবাকে পাকিবাহিনী হত্যা করেছে , মুক্তিকামী জনতাকে সরকারী অস্ত্রশস্ত্র বিলিয়ে দেয়ার জন্য ।
তরুনটি চিন্তা করে যুদ্ধে যাবে , পাকিবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিবে , দেশকে মুক্ত করবে অচলাবস্থা থেকে । কল্পনায় সে রাইফেল চালায় , পাকিদের মেরে খতম করে , রাজাকারদের ফুটো করে দেয় ।
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সে গুলির শব্দ শুনতে পায়, সচকিত হয়ে সে খেয়াল করে গুলির শব্দ কাছাকাছি কোথাও থেকেই আসছে ।
পাশের ঝোপের মধ্যে সে পালিয়ে যায় , কিছুক্ষন পর টের পায় , উষ্ণ জলধারা তার প্যান্ট ভিজিয়ে দিয়েছে ।
ভিজে ভিজে গরম অনুভূতি নিয়ে সে অস্ফুটে বলে , যুদ্ধ নয় শান্তি চাই , একটুখানি শান্তি চাই , শান্তি মতো জলত্যাগের অধিকার চাই।
_____
১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাস , ভারতীয় বাহিনী যুদ্ধ শুরু করেছে , প্যান্ট ভেজানো তরুন যুদ্ধে যায়নি বরং রাজাকার পীরের মুরীদ হয়ে , টুপি লাগিয়ে প্রানে বেচেছে ।
ভারতীয় বাহিনীর যুদ্ধটিকেই তরুনটি আসল যুদ্ধ মনে করে , সে মনে মনে ঠিক করে সে আসল যুদ্ধে যাবে , গেরিলা যুদ্ধের মতো ছিচকে যুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের মতো গ্ল্যামারহীন যোদ্ধা হয়ে তার পোষাবে না । এর মাঝে সে সবাইকে বলে বেরিয়েছে , যুদ্ধ নয় শান্তি চাই , শ্রমিকরা ঘরে ফিরবে তাদের আপন জনের কাছে , তারা যুদ্ধ জানে না , তারা শান্তি চায় ।
মুক্তিযোদ্ধাদের শান্তির কথা বলবা মাত্র তাকে মেরে হাকিয়ে দিয়েছে তাকে , এই উত্তুঙ্গ সময়ে কেউ শান্তির কথা শুনতে চায় না ।

সে মনে মনে শান্তির জন্য যুদ্ধের পরিকল্পনা করতে শুরু করলে , “মাত্র তের দিনের যুদ্ধে ” পাকবাহিনী আত্মসমর্পন করে ।

______

প্যান্ট ভেজানো তরুন , ধীরে ধীরে একচক্ষু হরিনে পরিনত হয়েছে । সে সবাইকে গণতন্ত্রহীনতার কথা শিখাতে চেষ্টা করে । সে খুব সুন্দর করে বোঝাবার চেষ্টা করে , যে জগতে মাত্র পাচটা মানুষের পিএইচডি আছে , আর বাকী সবার ক্লাস ফাইভ ফেল করার অভিজ্ঞতা আছে , যেহেতু
ক্লাস ফাইভেই ফেল করেছে , তাই কারো পিএইচডি করতে চাওয়া উচিত না ।

অর্থ্যাৎ বিশ্বের পাচটা দেশে মৌলিক গণতন্ত্র আছে বিধায় , অন্যান্য দেশ গুলোতে নূন্যতম নির্বাচনও থাকা উচিত না ।

কারন আমরা কখনো পিএইচডি করতে পারবো না , কেন আমরা ক্লাস ফাইভের পরীক্ষা আবার দিবো ? আমরা দেশকে উন্নত করতে পারবো না কখনোই এইকারনে আমাদের দেশে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা নেই ।

সে সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করে গণতন্ত্র নয় , শান্তিই সবার প্রয়োজন ।
_______

১৯৭১ এ শান্তির দরকার ছিলো , ৬৯ এও ছিলো , ৫২ তে ছিলো , ৯০ তে ছিলো ,
শান্তি দরকার উন্নত জাতি হতে হলে । শান্তির প্রয়োজনীয়তাটা কখনো কম ছিলো না ।

কিন্তু প্যান্ট ভেজানো একচক্ষু হরিনের বক্তব্য মেনে নিলে , লাখ লাখ মানুষ মারার পরো ১৯৭১ এ শান্তির দায়ে , পাকিবাহিনীর ঘেটুপুত্র হয়ে বসে থাকা উচিত ছিলো । আইয়ুব খানের সীমিত গণতন্ত্র অর্থ্যাৎ এলিটদের গণতন্ত্র মেনে চুপ করে বসে থাকা দরকার ছিলো । রাষ্ট্রভাষা উর্দুর মেনে শান্তি মতো বাংলা চর্চার দরকার ছিলো । লম্পট স্বৈরাচারকে দেশ ভর্তি দুর্নীতি করতে দিয়ে
শান্তিকামী জনতার রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা দরকার ছিলো ।

প্রকৃতপক্ষে , যারা প্যান্টভেজানো একচক্ষু , যারা একটা দলকে নিজের ধর্মবিশ্বাসের চেয়ে পবিত্র মনে করে , দলের নেতাকে ধর্মাবতার জ্ঞান করে , তারা কখনো শান্তি আর অশান্তির পার্থক্য বুঝতে চায়নি । তাদের কাছে নিজের দল যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় মানেই শান্তি।

প্রকৃতপক্ষে , হরতাল , অবরোধ , জ্বালাও-পোড়াও , গুলি , ক্রসফায়ার , বালুর ট্রাক , বিরোধী দলের মানুষ হত্যার পূর্বেও দেশে শান্তি ছিলো না , থাকতে পারে না । অশান্তি, ঘুনপোকার মতো দেশকে কাটছিলো , মানুষের হৃদয়মগজ খুড়ছিলো। অশান্তি মানুষের স্বাভাবিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিলো , মানুষের নায্য পাওনা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করছিলো । অশান্তি , অবৈধ সরকার হয়ে
মানুষের টাকা লুটপাট করে উলটো মানুষকে চোখ রাঙ্গানি দিচ্ছিলো । অশান্তি , নূন্যতম নাগরিক অধিকার , মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলো । অশান্তি, বন্দুকে গুলি হয়ে শত শত বিরোধীদলের কর্মীকে হত্যা করেছিলো।
অশান্তি , মানুষকে তার অবেগে দিয়ে ব্লাকমেইল করিয়ে তার যাবতীয় অপকর্মকে শুদ্ধ করে নিচ্ছিলো ।

_______

শান্তি প্রয়োজন , শ্রমিকের , কৃষকের , নাগরিকের , পথশিশুর, অফিস যাত্রীর, গৃহিনীর ।
শান্তি আসবে দূর্নীতির ঘুণপোকা অশান্তি বিদায় নিলে, শান্তি আসবে অবৈধ স্বৈরাচারীর বুলেট স্তব্ধ হলে।

শান্তি আসবে তখনই যখন একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে , যেখানে সবার সমান সুযোগ থাকবে, কেউ নিজের পছন্দ মতো গদি আকড়ে থাকবে না ।

শান্তি আসবে শুধু মাত্র তখনই, যখন প্রতিটা নাগরিক ব্যালট বাক্স দিয়ে তাদের উপর অন্যায়-অত্যাচারের জবাব দিতে পারবে ।

https://www.facebook.com/sunno.aronnok

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বৈরাচারবিরোধী জনমত তৈরির জন্য সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারের উপায়

যারাই ব্লগে ফেসবুকে আছেন অনেক দিন থেকে তারা জানেন সোস্যাল মিডিয়ার শক্তি অনেক খানি। পৃথিবীর যেকোন খবর এখন সবার আগে টুইটারে প্রকাশ পায় । গুরুত্বপূর্ন এমন কোন নিউজ সার্ভিস নাই যাদের টুইটার একাউন্ট নাই ।

হ্যাশট্যাগকের কাজটা হলো , একই ট্যাগ দেয়া বা একই টপিকে সব খবর গুলো একত্র করা ।
এটা ব্যাবহার করা সহজ । আর একই সাথে সার্চিং সর্টিং কাউন্টিং করতে সুবিধা।

অনেকেই ভাবেন যে লেখালেখি করে কি হয় , আসল কাজ না করে । তারা আসলে ভুল ধারনা করেন । যেকোন পপুলার মুভমেন্টে মানুষের ইনভল্ভমেন্ট লাগে । ১০জন লোকে মিছিল আর ১ লাখ লোকের মিছিল সমান কথা না ।
১ লাখ লোকের মিছিল হতো না যদি সবাই ভাবতো যে আমি তো মিছিলের একটা মুখ।
ঠিক একই ভাবে আপনার একটা সাপোর্ট একটা লেখাও মিছিলের একটা মুখের মতো বড়ো জনমত তৈরি করতে সাহায্য করবে ।

হ্যা আপনার হ্যাশট্যাগের কারনে এখনি কারো পতন হবে , কোন যুদ্ধ থেমে যাবে না সাথেসাথেই ।
কিন্তু মানুষের সচেতনতা তৈরি করতে সহায়তা করবে । এবং সেটাই পজেটিভ ইফেক্ট নিয়ে আসবে । যারা আসল কাজ করতে সক্ষম তারা এতো সাপোর্ট দেখে , নড়েচড়ে বসবে।

যেকোন সামাজিক আন্দোলনে হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুরু করতে পারুন । এটা শুধু স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন না  । দেশের যেকোন ইস্যুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে ব্যবহৃত হবে ।

যেহেতু বাংলাদেশীরা ফেসবুক ব্যবহার করে অভ্যস্ত , তাই তাদের পক্ষে টুইটারে লেখা একটু কষ্টকর।
কিন্তু টুইটার ফেসবুকের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন করার বেলায় শক্তিশালী , বাইরের দেশের মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট হয় । হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড মানুষের চোখে পড়ে ।

তাই উপায় হলো ফেসবুকের পোষ্ট গুলোকেই টুইটারে পাবলিশ করা ।

খুব সহজেই সেই কাজটা করতে পারবেন ।

১। টুইটার একাউন্ট খুলুন। http://www.twitter.com

২। একাউন্ট থাকলে একই ব্রাউজারের অন্য ট্যাবে লগইন করুন টুইটারে ।

৩। https://www.facebook.com/twitter/ ফেসবুকে লগইন থাকা অবস্থায় এই লিংকে জান ।

৪। সেভ করুন ।

একটা গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার মনে রাখতে হবে । টুইটারে 140 অক্ষরের চেয়ে বেশী এ্যালাও করে না । তাই হ্যাশট্যাগগুলো
পোষ্টের প্রথমে দেয়ার চেষ্টা করুন । ইংরেজিতে লিখলে মানুষ বেশি পড়তে পারবে।
তাই গুরুত্বপূর্ন মেসেজ বা সামারী হ্যাশট্যাগের পরপর ইংরেজিতে লিখুন ।

আপনার বাকি পোষ্ট অর্থাৎ 140 অক্ষরের বেশী হলেও কোন সমস্যা নাই টুইটার একটা লিংক বানিয়ে দিবে খুব সহজেই
সেই লিংক ক্লিক করলে পড়তে পারবে মানুষ ।

এছাড়াও ফেসবুকও জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগকে ট্র্যান্ডিং হিসাবে দেখায় । তাই একই স্ট্যাটাস ব্যবহার করে ফেসবুকেও জনমত সৃষ্টি করা যাবে ।

#DemocracyNow #Bangladesh #BDFairElection
Rampant killing by Govt. lenient officials, UN human rights office alarmed at ‘deepening’ political violence

http://www.un.org/apps/news/story.asp?NewsID=49813#.VLlVPyvF9kk
হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় করার উপায় হচ্ছে,  সবাই একই ধরনের হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা ।   যেমন
#DemocracyNow   #BDFairElection #StepDownBakshal #PeaceForBangladesh #Bangladesh #PoliceViolence #FreeSpeech

হ্যাশট্যাগের সাথে  , ইংরেজিতে  অল্প কিছু কথা জুড়ে দিতে হবে , যেমন টুইটার হতে পারে একটি

#DemocracyNow    #PeaceForBangladesh #Bangladesh #PoliceViolence
BD Govt. killed  more than 15 people in 10 days for protesting against them for #BDFairElection

আরেকটা টুইটার হতে পারে ,

#DemocracyNow    #PeaceForBangladesh #Bangladesh
154 MP’s elected without a single vote cast,  we want #BDFairElection

আরেকটা টুইটার হতে পারে ,

#DemocracyNow    #PeaceForBangladesh #Bangladesh
Corrupt Govt. taken power with 5% vote cast   #BDFairElection

আরেকটা টুইটার হতে পারে ,

#DemocracyNow    #PeaceForBangladesh #Bangladesh
Corrupt Govt. making election a mockery , rampant fake vote cast  #BDFairElection

অবৈধ স্বৈরাচারি সরকারের বিরুদ্ধে ইমেজে ইংরেজিতে লিখুন তাদের কারসাজি , তারপর সেসব ছড়িয়ে দিন ।
হ্যাশট্যাগ দিয়ে  রিলেটেড ইংরেজি নিউজ পেপার , বাইরের নিউজ গুলো টুইট করতে থাকুন । তবে লক্ষ্যনীয় ব্যাপার সর্বজন গ্রাহ্য কোন নিউজ না হলে , সত্য নিউজ না হলে
ভেরিফাইড নিউজ না হলে সেসব খবর শেয়ার করা যাবে না ।  একটা মিথ্যাই স্বৈরাচারীদের অস্ত্র হয়ে দাড়াতে পারে ।

একে অপরের টুইটকে রিটুইট করতে হবে , তাতে হ্যাশট্যাগটা জনপ্রিয় হবে । কার্টুনও শেয়ার করা যাবে হ্যাশট্যাগ দিয়ে ।

মানুষকে কোন ব্যাপারে জানাতে হলে টুইটারে জুরি নাই তাই ফেসবুক ব্যবহার করার সাথে সাথে টুইটার ব্যবহার করা শিখুন ।

2015: What is Left of the Political Field and What is at stake.

By Seema Amin

 

BLOODSTAINS ON THE FLAG,
FLAGSTAINS ON THE SKY,
SKYSTAINS ON THE EYE LATER ON
YOU’LL HAVE TO DREDGE WITH THE CORNER OF YOUR HANDKERCHIEF.

  • Roque Dalton, Tavern

The degradation of Bangladesh is at its zenith. A perverse, almost psycho-sexual arousal at the humiliation and degradation of one’s chosen victim-slash-enemy and the callous force-feeding of a ‘Law’ that is standing on its head (the upside down world of 2015 post January Fifth that surpasses the combined absurdities and doublethink of both 1984 and Animal Farm), makes me look beyond the genre of satire à la Orwell or Tagore’s oft-cited Hirok Rajar deshe, to the experimental science fiction of J. G. Ballard.  In J.G. Ballard’s The Atrocity Exhibition montage newsreels of Presidents and Generals were substituted for actual newsreels of torture of the Viet Cong; sexual arousal of viewers was measured so that an optimum sexual arousal sequence could be created, i.e. repeated violation of an eight year old Vietnamese girl, specifically of her perennial wounds, elicited the most thrills.  Ballard’s condensed novel has been said to exemplify the pervasive, irrational violence of the present world, connecting psycho-sexuality with the gratifications of ‘perverse’ politics.  But the psychology of the violent orgy, if we are to see the connections with our new year, does not exist in a social or economic vacuum; it was German psychologist Reich (Dialectical Materialism, 1970) who wrote on the   ‘psycho sexual’ gratification of a particular class’s particular fantasies/repressions/needs.  Reich suspected the ideological realization of the petit bourgeoisie in the organized mobs of fascist Nazi Germany as being located in this psycho-social lack.

Fast-forward to a particularly Bangladeshi kind of fascism.  Joy Bangla! chanted with sticks and arms in one’s hands; I can hardly distinguish this slogan from Allahuwakbar before murdering Kafirs in ’71, or Hail Hitler. Hysterical Bangladesh. Thirteen trucks, not enough. Pepper spray.  Not enough. Call a freedom fighter a razakar: Joy Bangla!  Jouissance! Everyone breathes easier when the cartoons merely signify reality. Throw some Light on the Lion’s Face, Tim Van Dyke:

“the absolute need to be believed, to disperse all other belief
in an hysterical combination of passion and assimilation —
The hysteric has no intimacy, emotion, no secrecy—
The lion’s face succeeds in making its own body a barrier
a seductress paralyzed
who seeks to petrify others in turn—“

Udvot o Odvot. Unmadonna. Let’s turn the man on his head again.

January Fifth came and went.  Democracy ‘was victorious.’ It was Democracy Victory Day; the sacred Constitution decreed, the men with sticks and guns ensured. Maya, whose son led RAB-11 in the 7 Narayanganj murders, true to his word, sat smugly, in a pure white lungi, ready to ‘Give them some’ if they dared hold a rally, in the morning. By night, a few more trucks had been sent to ‘dig a grave’  in the opposite side of town at the (actual) opposition’s Gulshan office; a case was filed against Mirza Fakrul Islam Alamgir that night, just in case such a thing is even needed when those pretending to be Projonmo are Ready! Set! Go! In the morrow, the dogs of ‘courage’, Goliath’s ‘petua bahini’( the ones that had forced him to leave the public auditorium for the Club itself the evening before), zoomed in on an unarmed and alone David in Press Club. Bangladesh’s Second Most Wanted Man. Bon Courage, Bangladesh!

There is something too spectacular about soap (Shaban) entering the press club, purportedly trying to clean up the messiness of partisanship, while the very dirt  came like a fascist flood over the gates. Perhaps he was trying to clean up a murder, ‘democracy dead’, that one; it gets messy, murder. And so the premises was cordoned, for all but those with gloves and the right slogan.  My question is, though, who is that class nursing bludgeons inside the velvet gloves of power, today? We call them latial, goonda, the ones who will create ‘ganopitani.’  Who scream Action! Action! Dressed up with a banner that was never questioned (Muktijoddher Projonmo League, which projonomo?), they were never arrested for coming armed into the Press Club.

‘Chele khela holleo hoto, kintu aita vidguthe’—we are suffocating, cries an artist, for whom perhaps it would be easier to throw the awful burden of feelings into a manhole. The Chetona Nazis are here to stay. But it isn’t enough or even sufficient to throw light on this lion’s face. For the Bangladesh that the Nazis hope to call ‘theirs’ manipulates a psycho-moral landscape invested with the aura of an original sin more akin to Israel than to Germany after WWI and before WWII. It is the sin of an original injustice, an eternal victimhood that prevents all other suffering from making any claims of immediate and equally necessary redress.  Israel has constructed entire museums of suffering, embracing a past truth, but erected on effacing the present.

The liberation war museum houses history; but the platform in front of it performs history. For the performers of the platform that remains of what was Shahbag once, justice more and more is not a principle but a decree: it has no application beyond the one hysterical sign- the signified is not all great injustice, it is only one particular injustice, instrumentalized, and thus degraded of the dignity of calling for justice.  The moral ramifications of the war beyond the war, the continuation of injustice, state terror and chauvinism in the present political field is (now) completely terrorized into silence and non- existence. Even the political signification of the struggle for democratic self-determination is a backdrop where the hysterical sign cries Terror as it terrorizes (should sound very familiar, global village et al.).The state and religious repression that enabled such crimes to take place, its deeply chauvinistic nature, is not understood as a context of immorality and degradation that could repeat itself in principle if not in exact moral equivalences. Justice simply has no referent but one injustice.  But the Chetona Nazis are not just the League, Sarkar and Co., or puppets thereof and the student opportunists or even the well meaning among them– the easy come easy go pinkish reds, civil society partisans, etc.; they are drawn from a “goonda constituency/class” that can be rounded up at any moment to perform the ‘Action! Action!’ of preventing dissent, or, any change in the status quo well outside the parameters of their ‘moral territory.’ Their self-righteous (since it is not moral in its new perversions, it is merely fascist) frontier now encompasses the whole country, but not because justice can be applied to new contexts, no, but so that no other injustice can ever threaten the aura of those who claim to be the sole redeemers of our original sin; in other words, so that the status quo, the state itself, remains intact. These Chetona Nazis are colonizers of civil space—Shahbag, Press Club, etcetera; they want a permanent seat in all the Houses of liberty.  Effect: Joy Bangla sung with such triumphal fatality on a no-rally day that the ‘Bir’ Left taking refuge in their offices to avoid the confrontation meant for the key players. And these Chetona Nazis degrade nothing else as much, as those they seek to redeem.  There is a notion in Islam that ‘spiritual pride’ is a cardinal sin; similarly, the self-righteousness of those who perform ‘justice’ but never apply it in context, those who merely hysterically ‘signify’ that might is right because right is their property….theirs is not the world of dignity that liberation insisted on, theirs is a world with such little shame it can even claim to represent ‘MuktiJudhhor Projonmo’ and call itself ‘proud.’

There are other groups who are well endowed to perform our history, i.e. non-fascist artists (a minority sometimes), the (Left of) left, even a civil society that may well be in the offing, so many others; but they were very deliberately sidelined from this platform, in Shahbag, and beyond, for the very fact that in their world of dignity and justice, any true meaning of the Joy Bangla that was shouted with dignity during the war but almost never soon after it, one would have to apply moral law. One would have to swallow the very simple but sad (look at Israel in Palestine) truth that the victims of history do become the perpetrators of crime, that chauvinism can take charge again, that chauvinism will not only manfiest itself as the military or Jamaat or anyone who comes in connection to their contagious blood, but may do so again, as the state and as the mob, the Pretenders.  Thence: to whom and to what shall we look for the protection of the ‘blood’ of the martyrs of Ekattor. Well, one tends to look to that intellectualizing, ‘glorious left’ that can read justice as applicable, not as a dead sign of a sign.  None of what is happening should shock them; after all, they’ve lost heroically to the Chetona Nazis once before, and fatally.

But what is at stake, this time? If tomorrow, what is left of the political field is not dignified, if the left and what is left of the rest of us who empathize, criticize or harness new energies in its orbit, continues to be a walking shadow for a performance that never happens, then we can all forever hold our peace. But what is it that the left is shrinking from, for it surely can’t be Terror. Today, the field is theirs. The whites are bloodied, the blue is a raging maniac, hysterical, and it is time the rest risk the danger of communion, rather than fixate on the bogey of Jamaat. It is solidarity, coalition, lasting connection, with the unorganized and manifold potential.  And what is at stake? Well, just one thing. Not national pride, not the flag, but dignity.  Like ‘artists masturbating in a gallery that is nothing more than a cage’ (a simile I have taken from a poet who will remain anonymous), no one who is disturbed if not outraged, including the press, the left, everyone else, can claim to be trying to change anything at this moment, if they do not get out of this gallery, this cage, The Atrocity Exhibition, and reach out in the language of solidarity outside one’s known alliances. Else, we are doomed to the interminable posturing and posing of sign, mere words used to silence meaning…endless aura in an aura-tic universe.

 

Seema Amin is author of two books of verse and Senior Feature Writer at Depart Art Magazine

 

বাংলাদেশী মধ্যবিত্ত শ্রেনী ও বিএনপি’র আন্দোলন-একটি বিতর্ক

ফাহাম আবদুস সালাম 

5th January

একটা প্রশ্ন অনেকেই করেন জিয়া হাসানও করছেন যে বিএনপির আন্দোলন সফল না হওয়ার মূল কারণ হোলো তারা নাকি বাংলাদেশের মানুষকে কনভিন্সড করতে পারে নাই। আমি এই মত পোষণ করি না।

দেশে যে গণতন্ত্র নাই এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয় হইছে যে দুইটা কারণে (স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র) সেই দুইটা জিনিসই যে বাংলাদেশে অনুপস্থিত সেইটা আবার কনভিন্স করার কী আছে? আপনি যদি এইটা না বুইঝা থাকেন তাহলে আপনে হয় আওয়ামী লীগ করেন নাইলে ভালোমন্দ খাইছেন কিছু। সমস্যা কনভিন্স করা না করার মইধ্যে না। সমস্যা হইলো কনভিন্স হওয়ার ঠিক পরের স্টেজটা নিয়া।

বাংলাদেশ সম্বন্ধে মিডল ক্লাসের “যেকোনো” – আবার বলতেছি “যেকোনো” বয়ান সন্দেহের চোখে দেখতে হইবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু কইরা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মোড় বদলে দেয়া আন্দোলনে আরবান মিডল ক্লাস পার্টিসিপেট করে নি। কিন্তু এই ইভেন্টগুলোর সব থেকে বড় বেনেফিসিয়ারী তারাই। খেয়াল কইরা দেখবেন বাসায় রাখা আপনার মামা চাচা যিনি ৭১ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আছিলেন তাগো বেশীরভাগেরই অস্ত্র হাতে ব্ল্যাক এন্ড ওয়াইট ছবি আছে এবং সেই ছবিতে তিনি প্রায় সুটেড-বুটেড হয়ে আছেন। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি তোলার সময় ছিলো না।

কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবার আগে ভালো অবস্থায় যাইতে পারছে এই আরবান মিডল ক্লাস।

এই ব্যাপারটা তারা খুব ভালো করে বোঝেন বলে তাদের মাঝে একটা গিলটি কমপ্লেক্স কাজ করে। এই গিলটি কমপ্লেক্স থেকে উদগত সব থিকা উল্লেখযোগ্য প্রডাক্ট হোলো গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে, বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে মধ্যবিত্ত যে মহাবয়ান তৈরী করেছে তার প্রতিটি বাক্য লেখা হইছে অপরাধ বোধের কালি দিয়ে। তাই যে যুদ্ধ করছে তার চেতনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শামিল হয় নি, কিন্তু যে নয় মাস পলায়া বেড়াইছে তার চেতনাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

মুক্তিযুদ্ধে যে পার্টিসিপেট করছে তার এতো সফিস্টিকেটেড আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছিলো না। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য দেশের প্রতি তীব্র ভালোবাসা আর ইনসটিংটই যথেষ্ট ছিলো, মুক্তিযুদ্ধে না যাওয়ার জন্য, পলায়া বেড়ানোর জন্য আর ইসলাম রক্ষার নামে রাজাকারী করার জন্য চেতনার প্রয়োজন ছিলো।

মধ্যবিত্ত তাগো নিজেদের ক্লীবতা ঢাকার জন্য আজগুবি, অবিশ্বাস্য সব গল্প ফাঁদছে যেই গল্পের পরতে পরতে আছে শুধু সিম্বলিজম আর লাল-সবুজ।

একইভাবে আজো মধ্যবিত্ত স্বপ্ন দেখে গণতন্ত্রের কিন্তু এই গণতন্ত্র আনার জন্য সে রাস্তায় নামবে না – কাজটা কইরা দেবে বিএনপি। কিন্তু যেদিন আওয়ামী লীগ প্রেক্ষাপট থেকে বিতাড়িত হবে, দেখবেন সবচেয়ে ফেনায় ফেনায় গণতন্ত্র বিষয়ে শুদ্ধ বাংলায় সবক দেবে মধ্যবিত্ত। “এই সে মহান মাটি যার পুষ্টি গণতন্ত্রে” “এসো মোরা অবগাহন করি গণতন্ত্রের বজ্রকপট শপথে”, “এই সোনার মাটির বন্ধন তো শুধু গণতন্ত্রের সাথেই” – এই লাইনের ল্যাটকামি।

মধ্যবিত্ত ন্যায্যতার স্বপ্ন দেখে না, দেখে চাকরির স্বপ্ন কিন্তু এই কথা মাইনষে শুনলে বলবে ছোটলোক। তাই সে গল্প ফান্দে গণতন্ত্রের। এই গণতন্ত্র রক্ষার জইন্যে সে ভুলেও রাস্তায় নামবো না কিন্তু যে নামবে তারে বলবে তুই তো নামসোস ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার জন্য। এইটা তার অপরাধবোধ। সে চায় গ্লোরী কিন্তু কসরৎ করবার জন্য রাজী না। টিভিতে বিপ্লব দেখলে তার গরমে অর্গাজম হইয়া যায় কিন্তু রাস্তায় নামতে তার গরম লাগে সূর্যের।

এই অপরাধবোধ থিকা সে বিএনপির গুষ্টি উদ্ধার করে। বিএনপি হেন পারে না তেন পারে না। কথা সত্য। বিএনপি অনেক কিছুই পারে না কিন্তু তুমি তো অনেক কিছু পারো – তুমি কী করছিলা? তুমি কি গণতন্ত্রের জন্য রাস্তায় নামছিলা? বিএনপির কথা বাদ দেও। তারা তো ক্ষমতায় যাওয়ার জইন্যে রাস্তায় নামছে মাইনা নিলাম কিন্তু তোমারে তো চল্লিশ বছরে কখনোই নামতে দেখলাম না।

যারাই কয় যে বিএনপির কৌশল ঠিক না তারা সমালোচনায় ঠিক আছেন কিন্তু খাইসলতে দর্শক। কিন্তু বিএনপির কৌশল ঠিক হইলেও এই চ্যাটারিং ক্লাস আন্দোলনে পার্টিসিপেট করতো না কারণ সে বাংলাদেশরে ঔন করে না – সে ঔন করে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটা আইডিয়ারে এবং সেই আইডিয়ায় সব সময়ই কসরৎ না করার যথেষ্ট অজুহাত মজুদ আছে।

বিএনপির সব থিকা বড় সমস্যা হইলো তাগো সাপোর্ট বেইজ হইলো এই দর্শক শ্রেণী।

 

জিয়া হাসান

6th January

ফাহাম ভাই,আমি আপনার স্ট্যাটাসের প্রশ্ন গুলো এই খানে জবাব দিচ্ছি, আমার বন্ধুদেরকেও আলোচনায় আনার সুবিধার জন্যে। এইটা আপনার ওইখানেও কমেন্ট দিবো। এই ইন্ডিসেন্সিরটার জন্যে ক্ষমা করবেন।

আমি আপনার স্ট্যাটাসের প্রথম এজাম্পশনের সাথে ১০০% সহমত। বাংলাদেশে যে, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র নাই, এই নিয়ে কনভিন্সড না হওয়ার কিছু নাই। এবং সমস্যা হইলো, কনভিন্সড হওয়ার পরের স্টেজ নিয়ে।

এই কনভিন্স হওয়ার পরে আপনার যেই লজিক এবং আরগুমেন্ট দিলেন সেইটা ফান্ডামেন্টালি ভুল। সেইটা হইলো, বাংলাদেশের মোড় বদলে দেয়া আন্দোলনে আরবান মিডল ক্লাস পারটিসিপেট করেনি। আপনি একাত্তুরের রেফারেন্স দিছেন। আমি একাত্তুরের রেফারেন্স দেইনা, কারন আমি একাত্তুর দেখি নাই।

কিন্তু, বাংলাদেশে একাত্তুরের পরে সব চেয়ে বড় যে গন আন্দোলনে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, যেই সময়ে আমি মোটামুটি বালেগ ছিলাম তখন আমি স্বচক্ষে দেখেছি, সেই আন্দোলন আরবান মিডল ক্লাস, লিড করছে, পারটিসিপেট করছে। এবং শুধু মাত্র ৯০ সালে না, আশির দশকের সম্পূর্ণ সময়টাতে আরবান মিডল ক্লাস এই আন্দোলনের সাথে এলাইন্ড ছিল। রাস্তায় নামছে। এইটা আমার স্বচক্ষে দেখা। এই ভুল এজাম্পশনে দাড়ায় আপনি যা বলছেন, সেই গুলোকেও আমি একটু আমার অবস্থান থেকে ব্যাখা করি।

আপনি বলেছেন, মধ্যবিত্ত যেহেতু এই সব মুভমেন্ট করে নাই, বা মুক্তিযুদ্ধে পারটিসিপেট করে নাই, এই জন্যে তার মধ্যে একটা গিল্ট কমপ্লেক্স কাজ করে। এবং এই গিল্ট থেকে উদ্যত প্রডাকট হইলো, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।কারন সে যুদ্ধ করে নাই। যুদ্ধ করছে, আপনার হিসেবে, নিম্নবিত্তের এবং সাধারন খেটে খাওয়া জনগণ।

ইন্টেরেস্টিংলি। মধ্যবিত্ত যুদ্ধ করে নাই, নিম্নবিত্ত যুদ্ধ করছে এবং নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের স্টেক আলাদা- এই ভাবনা গুলো আমার বিগত পাঁচ বছরের প্রডাক্ট মনে হইছে। এই গুলো সাধারণত বিএনপির লোকজনের কাছ থেকে আসে, কেন মিডল ক্লাস রাস্তায় নামে নাই, সেইটার একটা বয়ান তৈরি করার উদ্দেশ্যে।

রাষ্ট্রের কাছে জনগণের যেই দাবী, একটা দুর্নীতিমুক্ত শাসন,অর্থনৈতিক মুক্তি, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায় বিচার- যা দিতে পোস্ট নব্বইয়ের দলগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল কিন্তু ব্যর্থ হইছে – এই গুলোর প্রতি চাওয়া এবং এই গুলোর স্টেক নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত উভয়ের সেম। উভয়েই, এই গুলোর অভাবে খতিগ্রসত এবং উভয়েই এই অবস্থার পরিবর্তন চায়।

আপনারে একটা ক্লাসিক প্রশ্ন করি। মধ্যবিত্ত না হয়, তার যুদ্ধ না করার গিল্ট কন্সাস নিয়ে, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার চেতনার এই সব হাইপারবোল সৃষ্টি করছে।এবং সেই গিল্ট নিয়া তারা বিএনপির মিছিলে নামে নাই কিন্তু তাইলে বিএনপির মিছিলে, নিম্ন বিত্তরা কই ?
আওয়ামী লীগের ৫ বছরে, আমি বিএনপির সেই সব মিছিল দেখছি, যেই খানে , বিএনপির প্রাক্তন নেতাদেরকে ৭ থেকে ১০ জনের মিছিল নিয়ে হেঁটে যেতে দেখেছি, হরতালের সময়ে। এবং ওরা সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে, আমার রিক্সাওয়ালা ভাই একটা ক্লাসিক চিটাগনিয়ান গালি দিছে তাদের দিকে তাকিয়ে , যেই গালিটা এই খানে উল্লেখ করা যাবেনা, কিন্তু সজ্জনেরা বুঝে নিবেন। tongue emoticon

আমি নিজের দিকে তাকায় জানি। আমার বন্ধু, কলিগ, পরিচিত সবার চেহারা দেখে জানি, আমাদের মধ্যবিত্তের কোন গিল্ট নাই।এই নিয়া তার কোন মাথা ব্যথাও নাই। তার আছে, একজিস্টেনস ক্রাইসিস। তার আয় সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। ব্যবসায়, চাকরিতে তার সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। তার দিস্পজেব্ল ইঙ্কাম মাই। সে কোর্টে গিয়া ন্যায় বিচার পায়না, পুলিশে গিয়া সে হয়রানি হয়-তাকে ধরতে হয় রাজনৈতিক কানেকশানের কে আছে। তার পরিবারের নতুন গ্রাজুয়েটদের কাজের সুযোগ সীমিত। মামা চাচা না থাকলে, চাকরির সুযোগ নাই। ব্যবসার সুযোগ গুলোতেও এখন রাজনৈতিক লোকজন ঢুকে পরতাছে। সে দেখতাছে, তার ঢাকা থেকে চিটাগন যাওয়ার রাস্তা ৫ বছরেও তৈরি হয় নাই। সে এখন দুর্নীতিরেও মাইনা নিছে। সে জাস্ট একটু সুযোগ চায় যেন, সরকারী চাকরিতে কেউ কোটা খাইয়া না ফেলে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন সহনশীল থাকে যেন ব্যবসা বানিজ্যে গতি আসে। এই খানে কোন গিল্ট ফিল্ট নাই। এইটা তার একজিস্টেন্সিয়াল ক্রাইসিস। তার একজিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিসের যে সমাধান দিতে পারবে, সে তার পক্ষে থাকবে।

আমি আপনার প্রশ্ন গুলোতে অবাক হই, যখন আমি দেখি, এই ক্রাইসিস গুলো সমাধানের চিন্তা করতে বিএনপির ব্যর্থতাকে হাইলাইট করার বদলে আপনি মধ্যবিত্তরে গাইল দিতাছেন, তার ক্ষুধা লাগতাছে সে কান্তাছে ক্যান, সেই এটিচুড নিয়া। যেই এর থেকে বুঝা যায়, এই দেশের মানুষের জীবন যাপনের ক্রাইসিসের সাথে বিএনপির মানসিক দূরত্ব কত দূরে।

শুধু বিগত এক বছরে না, ২০১৩ সালের পূর্বে, পাঁচ বছরে সাধারন মানুষ বেশ কিছু ইস্যুতে যেই পরিমাণ মাইর খাইছে সরকারের কাছে, বিশেষত শেয়ার বাজার ইস্যুতে বিএনপির উদাসীনতা ছিল “ক্রিমিনাল”। বিএনপির আগের আমলে বিএনপিকে নিয়ে যে দুর্নীতি অভিযোগ সেইটা নিয়েও বিএনপি কখনো ক্ষমা চায় নাই। জাস্ট একটা একজাম্পল দেই। ঢাকা শহরে যখন সিএনজি নামাইলো, তখন প্রতিটা সিনএজিতে কত টাকা নেয়া হইছে, এবং সেই এই দুর্নীতির কারনে, ঢাকা শহরের পাবলিক কি ভোগান্তিতে আছে সেইটা মনে করেও, বিএনপির প্রতিদিন মধ্যবিত্তরে সালাম দেয়া উচিত এখনো সে তাকে আওয়ামী লীগের অল্টারনেটিভ মনে করে বলে।

অবাক হই যখন দেখি, আপনেরা সেই সব কারনে, বিএনপিরে ধরেন না কিন্তু মধ্যবিত্তরে, তার পেটের খুধার কান্দনের জন্যে, ইজ্জত লুকিয়ে পাছার কাপড় আঁকড়ে ধরে রাখার জন্যে গালি দেন।

পাবলিকে লেয়ার বাই লেয়ার, দিনের পর দিন, বিএনপির সিন্সিয়ারিটির অভাবটা দেখছে, পাঁচ বছর + ১ বছর। বিগত নির্বাচনের আগে, কে কোন পদ নিবে, সেইটা নিয়া মারামারি শুরু হইয়া গ্যাছিল বিএনপির লোকদের মধ্যে। মানুষ এদের চেহারা বডি ল্যঙ্গুয়েজ দেখে বুঝে, এরা তাদের ব্যাংক একাউন্টে শান দিচ্ছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে।এই জন্যে মানুষ বিএনপির ইন্টেন্টকে ডাউট করে। মধ্যবিত্তও করে, নিম্নবিত্তও করে।

বিএনপি যে গণতন্ত্র চায় বলে সেইটা যে ভুল এইটা নিয়ে, আরও একটা বড় নোট লেখা যাবে। অই দিকে যাইতাছিনা। বটম লাইন হইলো, বাংলাদেশের মানুষের এস্পিরেসান আর আগাইতাছেনা এখন কোন মতে, লেসার অফ দা টু ইভিল হইলেও পাব্ললিকের চলবে, এইটা ভুল।

অথচ স্যাডলি এই মধ্যবিত্তের বড় অংশ উপায় না দেখে, বিশেষত আদর্শিক চেতনা দিয়ে দেশের সকল দুর্নীতি এবং লুটপাটকে লুকিয়ে রাখার আওয়ামী স্ট্রেটেজিতে বিরক্ত হয়ে, হয়তো কিছু হবে, এই ভাবনা থেকে বিএনপিকে ভোট দিতে রেডি ছিল।ভোটের সুযোগ পাইলে, বিএনপিরে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে এনে, আরও একটা বড় বাম্বু খাইতে নিজেরে রেডি করছিল। কিন্তু, তারপরেও বিএনপি মধ্যবিত্তরে গাইল দেয়, রাস্তায় নেমে তাকে বাংলার সিংহাসনে বসিয়ে না আনার জন্যে। বিএনপির এই সেন্স অফ এন্টাইটেল্মেন্ট, এই উত্তরাধিকারের ধারনা বিএনপিরে কোথাও নিয়ে যাইতে পারবেনা। আওয়ামী লীগ যেই স্বৈরতন্ত্র এবং কাঠামো তৈরি করছে তাকে ২০৪২ পর্যন্ত টেনে নেয়ার মানি, মাসল, বুলেট, ইন্টেলিজেন্স, পোষা ইন্টেলিজনসিয়া, আইডিয়ালস এবং প্রশাসন ইনফিল্ট্রেসান করা হইছে। এইটাকে ভাংতে হইলে, বিএনপিকে মধ্যবিত্তকে তার শত্রুপক্ষ হিসেবে নিলে হবেনা। তাকে কনভিন্সড করতে হবে। করতে হইলে, বিএনপিরে অনেক ফান্ডামেন্টাল চেঞ্জ করতে হবে। তার ইন্টেন্ট এবং কাঠামো এবং প্ল্যানে, তাকে দেখাইতে হবে, বাংলাদেশের ভুখা শুখা মানুষ নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত সকলকে এগিয়ে নেয়ার মত পরিকল্পনা এবং সিন্সিয়ারিটি তার আছে। নইলে আওয়ামী ল্যাংয়ে উস্টা খাইতে খাইতে বিএনপি ২০১৬ ৫ জানুয়ারি হইতে, ২০৪৩ এর ৫ জানুয়ারি পার করবে, অথবা বিশ্ব ইজতেমার কাছাকাছি ডেট ফালাইতে হবে, কিছু একটা মিরাকলের আশায়।

এই মধ্যবিত্ত নির্বিরোধী শেয়ারে মাইর খাইয়া যখন তার সেভিংস মাইর গেলো, তখনও সে রাস্তায় নামে নাই?মতিঝিলে জরো হইয়া, কিছু মিছিল করার চেষ্টা যারা করছিল, তারা দুইটা লাঠির বাড়ী খাইয়াই, পলাই গ্যাছে।

এইটা তার পলায়নপরতা- এইটা তার ইজ্জতের ক্রাইসিস, এইটা তার নিঃস্পৃহতা। এই জন্যে, তারে আমিও গালি দেই। কিন্তু, অন্তত বিএনপির তাকে গালি দেয়ার কোন অধিকার নাই।

 

আরিফুল হোসেন তুহীন

6th January

জিয়া হাসান সাহেব বিএনপির ডাকে লোকজন আসে না কেন এইটা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন বিএনপি জনগনের পাশে দাঁড়ায় না, এর জন্যে জনগন কনভিন্সড না তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে।

ফাহাম আবদুস সালাম সাহেব এর বিরোধিতা করে লিখেছেন যে, এইসব সমালোচনা যারা করে তারা হচ্ছে আরবান মিডল ক্লাসের সুবিধাবাদী পার্টি। তারা এইবার কেন, কোনদিনও রাস্তায় নামে নাই। তারা এইসব বলতেছে তাদের গিল্ট কমপ্লেক্স থেকে।

এইখানে আমি দুইটা কথা যোগ করি।

এই দেশের অধিকাংশ নিম্নবর্গের মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে তারা দুই পার্টি নিয়েই নাক কুচকাবে। এর কারন হচ্ছে স্বাধীনতার পরে এই দুই পার্টির কোনদিন কোন ইতিহাস নাই সাধারন মানুষের পক্ষে লড়াই করার। সাধারন মানুষের জন্যে প্রয়োজনীয় পলিসি তৈরী করার ইতিহাস তাদের কোনদিনও ছিল না। তাদের সাফল্য হিসেবে যেসকল জিনিস দেখানো হয়, সেগুলো নিওলিবারেল ইকোনমিক পলিসিগুলোর আধাখেচড়া বাস্তবায়নের চেষ্টা। এর বাইরে এই দলগুলোর পারফর্ম্যান্স কার্যত শুন্য। এই নিওলিবারেল ইকোনমিক পলিসির কে কত ভালো প্রয়োগ করতে পেরেছে তা নিয়ে দুইবেলা কাইজ্জা করে এই দুই দল। এখন কথা হচ্ছে নিও লিবারেল  ইকোনমিক পলিসি বাঙ্গালদেশের কি কি ধরনের সুফল নিয়ে এসেছে। জিডিপি গ্রোথ অবশ্যই বেড়েছে। অমর্ত্য সেন আমাদের শিখিয়েছেন, জিডিপি দিয়ে উন্নয়ন না মাপতে। উন্নয়ন মাপা উচিত নাগরিকদের ইফেক্টিভ সক্ষমতা কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে সেটি দিয়ে মাপতে। তাহলে বাংলাদেশ বিশেষ এগোয়নি। এবং জিডিপি বৃদ্ধির ফ্রেইম ওয়ার্কের বাইরে এই দুইদলের কোণ চিন্তাভাবনার কোন নিশানাও পাওয়া যায় নি। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়েও এই দুইদলের কোন ধরনের পার্থক্য নেই। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পঙ্গু করে দিয়ে প্রাইভেটাইজেশনের যৌক্তিকতা প্রমাণের প্রক্রীয়ায় এই দুই দলই একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে। অবশ্য বিএনপি প্রাইভেটাইজেশনের ব্যাপারে বেশী আগ্রহী। সামনে বিএনপি আসলে ইলেক্ট্রিসিটি/পোস্টাল সার্ভিস ইত্যাদিও প্রাইভেটাইজড হওয়া সময়ের ব্যাপার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেও ফ্রী চিকিতসার দিন শেষ হতে সময় নিবে না। আওয়ামী লীগের ইকোনমিক কর্মকাণ্ড এর থেকে দূরে নয়।

ইকোনমিক চিন্তাভাবনা যদি বাদ দেই, তাহলে আসবে তাদের শাসন সম্পর্কিত দর্শন। দুই দলই সংবিধানের অগনতান্ত্রিক অংশগুলোর প্রতি একমত। দুই দলের কেউই দলের অভ্যন্তরে গনতন্ত্রের চর্চা করে না। দুই দলের কেউই এক্সেকিউটিভ এবং লেজিসলেটিভ ব্রাঞ্ছের ভিন্ন প্রধান চায় না। দুই দলের কেউই আর্টিকেল ৭0 এর বিলোপ চায় না। দুই দলই পুলিশী প্রশাসনে বিশ্বাসী।

১০০ জন রিকশাওয়ালাকে যদি জিজ্ঞাসা করি কোন দলের প্রতি তার আত্নিক টান, কেউই কোন রাজনৈতিক দলের নাম বলবে না। তারা ডেসপারেট জীবন যাপন করে, তাদের পাশে এসে কেউই দাঁড়ায় নি কোনদিন, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবে বলে মনে হয় না।

এখন প্রশ্ন দাঁড়াতে পারে ভোটাভুটি নিয়া হাঙ্গামা করা জরুরী কিনা সাধারন মানুষের জন্যে। অবশ্যই প্রয়োজনীয়। ভোটাভুটি কিছুটা হলেও লাগাম দিতে পারে এই দুই লুটপাটতান্ত্রিক দলগুলোকে। অন্তত প্রত্যেকটি দলই পালাক্রমে ক্ষমতার বাইরে থাকার স্বাদ পায় এবং কিছুটা শক্তির ভারসাম্য আসে।

কিন্তু আমাদের পাবলিক ডিসকোর্স শুধুমাত্র ভোটাভুটি কেন্দ্রীক হবে কেন?

এলিট এবং সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেনীর সবসময়ের একটি প্রবণতা হচ্ছে, সাধারন জনগনকে বেকুব ভাবা। তারা সবসময়েই ভাবেন, তারা সবাত্তে বেশী বুঝেন, শুধু বেকুব অশিক্ষিতরাই বুঝলো না। ফাহাম সাহেব বুঝেন ভোটাভুটির জন্যে রাস্তায় নামনই এখন একমাত্র দায়িত্ব। কিন্তু অশিক্ষিত মেরুদণ্ডহীন সাধারন জনতা সেইটা না করে বিএনপিকে দুষাইতেছে।

এইধরনের চিন্তাভাবনার মূল উতস হচ্ছে সাধারন জনগনকে “এজেন্সিশুন্য” ভাবা। তাদেরকে প্যাসিভ ভাবা, তাদের এক্ট করার ক্ষমতা নাই সেইটা ভাবা। আপনি তাদের জন্যে ন্যারেটিভ তৈরী করে দিবেন। তারপর তারা যদি সেই ন্যারেটিভ না গিলে, তাইলে সেইটা তাদের দোষ। কারন আপনি সবাত্তে বেশী বুঝেন।

দুঃখিত ভাইজান। জনগনকে এজেন্সিশুন্য ভাববেন না। তাদের এক্ট করার ক্ষমতা এবং ইচ্ছা দুইই আছে। তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের মত এক্ট করে থাকে। নিজের ন্যারেটিভ বানিয়ে নিতে পারে। এলিটগো সাহায্য তার লাগে না। তার জীবনযাপনে এলিটরা কোন কাজে আসে না, এলিটগো কামড়া কামড়িতে তারা কেন যাবে? বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের মোট কর্মী সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ হবে কিনা সন্দেহ। সুতরাং এই কামড়াকামড়িতে বাকি ৯৯ শতাংস যথেষ্ট ইন্সেটিভ ছাড়া আসবে না। এইটাই হচ্ছে বটমলাইন।

জনগন বিএনপির হয়ে মরণপন লড়াই করতেছে না, সেই লড়াই তারা আম্লীগের জন্যেও করবে না কারন তাদের লড়াই করনের কোন ইন্সেটিভ নাই। তাদের বাস্তব সমস্যা সমাধানের আশা তারা ছেড়ে দিছে অনেক আগেই।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ সমাপ্ত হবার পরপরই নিয় ইয়র্ক টাইমস এর এডিটোরিয়ালে এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে বলা হয়। কিন্তু তাদের সমালোচনা ছিল অনেকটা ট্যাক্টিকাল। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সমালোচনা করেছে। কিন্তু একবার উচ্চারনই করেনি যে যুদ্ধটা আদতে লেজিটিমেইট ছিল কিনা? চমস্কি এর প্রতিক্রীয়ায় বলেছিলেন কিভাবে শক্তির কেন্দ্রগুলো পাবলিক ডিসকোর্সকে সংকুচিত করে। একটি বিশাল সামাজিক সমস্যার বয়ানকে ছোট করে একটি কিংবা দুইটি সহজপাচ্য প্রশ্নে এসে স্থির করে।

একই ঘটনা ঘটেছে এইদেশের রাজনীতিতেও। এলিটরা সবসময় পাবলিক ডিসকর্স ছোট করে নিয়ে আসতে চায়। কারন তারা চায় “টপ ডাউন ম্যানেজমেন্ট”। গত ৫০ বছরে সবকিছুকে বিজনেস এডমিনের দৃষ্টি থেকে দেখার একটি প্রবণতা শুরু হয়েছে। যার ফলে তারা মনে করেন সবকিছুর মূলে হচ্ছে কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস। একারনে দক্ষ লোকের সঠিক ম্যানেজমেন্টেই সকল সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে। কন্টেক্সট অথবা সেন্সিটিভিটি বুঝনের দরকার নাই। তারা কখনই বুঝেন না রাষ্ট্র একটি কোম্পানীর মত না। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান ১৯৯৩ সালে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পেপার লিখেছিলেন, যেখানে তিনি প্রমান করেছেন, কেন রাষ্ট্র একটি কোম্পানী নয় এবং কেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক একজন সফল সিইও থেকে মূলগতভাবে আলাদা।

ফাহাম সাহেব জিয়াউর রহমানের ভক্ত। তার এই ভক্তির অন্যতম কারন হচ্ছে জিয়াউর রহমান “মেরিটোক্রেসি” কে গুরুত্ব দিতেন। ফাহাম সাহেব মেরিটোরিয়াস মানুষ, পিএচডিধারী জ্ঞানী মানুষ, সুতরাং তার এই চিন্তা আসতেই পারে, দেশের সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায় হচ্ছে মেধাবীদের নিয়ে আসা, সম্ভবহলে সকল যায়গায় পিএইচডিদের ইন্সটল করা। তিনি অনেক সময় আওয়ামী লীগের “গ্রাম্যতা” এবং “লাড্ডাগাড্ডা” প্রবণতার সমালোচনা করে। এই সমালোচনা যতটা না আওয়ামী লীগের তারচেয়ে বেশী “গ্রাম্যতার” সমালোচনা। তার উচ্চরুচি এইসব গ্রাম্যতা দ্বারা আহত হয়। এইসব “গ্রাম্যতা” বিষয়ক ডিসকোর্স পুরোপুরিই সামাজিক সেগ্রেগেশনের জন্যে উদ্ভাবিত তত্ব। বড় বড় দুর্নীতিবাজের পাশে বসে খেতে আমাদের জাত যায় না, রিকশাওয়ালার পাশে খেতে আমাদের জাত যায়। সুতরাং তিনি যে মেরিটোক্র্যাসি অথবা পিএচডিপন্থার প্রতি আস্থা রাখছেন, সেটি কতটুকু মেরিটের জন্যে আর কতটুকু সমাজের উচ্চবর্গের অহমিকা থেকে উতসারিত সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।

এই দেশের প্রধান সমস্যা এইটা নয় যে এই দেশ যারা চালায় তাদের সবার পিএইচডি নেই। এই দেশের প্রধান সমস্যা এইটাও নয়, যে গ্রামের রিকশাওয়ালা গড়গড় করে কীটস কিংবা নীতশে আওড়ায় না। অনেক পিএইচডি ধারী দুই দলের ধামা নিয়ে ঘুরছেন। সুতরাং মেরিট অটোম্যাটিক্যালি সমাধান নিয়ে আসবে এইটা সম্পূর্ণ ভূল এবং বিভ্রান্ত ধারনা। এই ধারনার উতসও হচ্ছে নিম্নবর্গের সাধারন মানুষকে “এজেন্সিশূণ্য” ভাবা। তাদের ভালোমন্দ ভাবার ক্ষমতা তাদের নেই সেটি ভাবা। তাদের ভালোমন্দ শুধু বুঝবে এলিটরা। পিএইচডীওয়ালারা।

বারট্রাণ্ড রাসেল বারবার শিক্ষিত এবং নিম্নবর্গের সাথে বিচ্ছিন্ন বুরোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে বলেছেন। এর অন্যতম কারন, এরা যে পলিসি তৈরী করে, সেই পলিসি যে সমাজ বাস্তবতায় প্রয়োগকৃত হবে, সেই বাস্তবতায় ঐ আমলারা বসবাস করেনা। সুতরাং সকল প্রকার মেরিটোক্র্যাসির নামে প্লুটোক্র্যাসি আদপে সমাজের অর্ডার ও স্ট্যাটাস কো বজায় রাখনের হাতিয়ার।

নিম্নবর্গের সাধারন মানুষের জন্যে যেটি প্রয়োজন সেটি পিএইচডিদের খবরদারী নয়। তাদের দরকার তথ্য। পিএইচডিরা যদি আদপেই রেসিস্ট চিন্তাভাবনা থিকা মুক্ত হত, তাহলে নিম্নবর্গের মানুষকে তথ্য সরবরাহ করত। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক খবরদারী থেকে দূরে থাকত। সমস্যা হচ্ছে এলিটরা সেইটা কখনই করে না। তারা তথ্য নিজের কাছে রাখে। নিম্নবর্গের সাথে কমিউনিকেট করে না। এবং হঠাত করে নিম্নবর্গের মানুষের উপর নেমে আসে পিএইচডিধারীদের তৈরী পলিসি। যেই পলিসি তৈরীর সময় তার সাথে কথা বলার কোন প্রয়োজন এলিটরা বোধ করে না। কারন, তারা যথারীতি সবাত্তে বেশী বুঝে।

শাহবাগ আন্দোলনের সময় বিএনপিওয়ালার নাখোশ হচ্ছিলেন কারন শাহবাগওয়ালার কেন রাষ্ট্রের অন্যান্য সমস্যা নিয়ে কিছু বলছে না এই জন্যে। আজকে ফাহাম সাহেব নাখোশ হচ্ছেন, কেন বিএনপিকে ভোটের বাইরে অন্যকোন পরিবর্তনের কথা বলতে হবে? এই মুহুর্তে তো ভোটই নাই, অন্যকিছু বলে তাই লাভ নাই।

সুতরাং ফাহাম সাহেবের এই বক্তব্যে বৃত্তটি সম্পূর্ণ হল। এককালে তিনি বিরোধীপক্ষকে পাবলিক ডিসকোর্স সংকুচিত করার দায়ে দোষারোপ করছিলেন। আজকে তিনি নিজে বিএনপির সংকুচিত ডিসকোর্সকে প্রাণপনে ডিফেণ্ড করছেন।

যতদিন আমদের রাজনৈতিক দলগুলো ভাববে গনতন্ত্রে নির্বাচনের চেয়ে জরুরী কিছু নেই, আর নির্বাচনের বাইরে রাজনৈতিক কোন স্পেইস নেই, ততদিন তাদের কামড়াকামড়ি জমিদারদের কামড়াকামড়ি হয়েই থাকবে। এর কোন মূল্য সাধারন মানুষের কাছে তৈরী হবে না। সাধারন মানুষ এই ফানুশের পেছনে দৌড়াবেও না। গুণ্ডাপাণ্ডারা একে অপরের মাথায় লাঠির বাড়ি মেরে শক্তির লড়াই খেলবে। বিএনপির কর্মসূচীতে মানুষ না থাকাই উলটা মানুষকে দোষারোপ করার এই আকুতি প্রমাণ করে আসলে তাদের কোথায় লাগছে। আওয়ামী লীগের গুণ্ডাপাণ্ডাদের সাথে তাদের গুণ্ডাপাণ্ডারা পেরে উঠছে এইখানেই তাদের ক্ষোভ। মাইরপিট এবং লুটপাট যেই রাজনৈতিক দলগুলোর বৈশিষ্ট্য এবং যারা শক্তিপরীক্ষায় কখনই পিছিয়ে যেতে চায় না, তারা আজকে মার খেয়ে যদি বলে “আমি ভদ্র, মারামারি করি না” সেইটা হাস্যকর কথা হয়ে যায়।

এখন পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলনে প্রমাণ হয়েছে তাদের গুণ্ডামি করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের চেয়ে কম। এইটা এফিশিয়েন্সির ব্যাপার। নীতির নয়। আজকে যদি বিএনপি আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশী গুণ্ডামীর সুযোগ পেত, তারা তাদের “আমরা ভদ্রের দল” ইত্যাদি বলে পাশ না কাটিয়ে সেই গুণ্ডামীর সর্বোচ্চ সুযোগ গ্রহন করত।

ফাহাম সাহেবের একটি কথা দিয়ে শেষ করি। তিনি বলেছেন সাধারন মুক্তিযুদ্ধাদের চিন্তাভাবনা এত সফিস্টিকেটেড ছিল না। এইখানেও তিনি ভেবেছেন বাংলার সাধারণ যে কৃষকটি যুদ্ধে গিয়েছে তার কোন এজেন্সি নেই। আসলে যেটি নেই সেটি হচ্ছে তার আশা আকাঙ্খাকে এলিটদের উপযোগী ভাষায় প্রকাশের ক্ষমতা। কিন্তু যুদ্ধের ন্যায্যতা তার কাছে ঠিকভাবেই প্রতিভাত হয়েছে। জনযুদ্ধের জন্যে যা কিছু প্রয়োজনীয় সবই তার ছিল। ছিলনা শুধু এলিটদের সাথে কমিউনিকেট করার ক্ষমতা। জনযুদ্ধের জন্যে এই গুনের কোন দরকার নেই। এই গুনের দরকার পরে যুদ্ধের পরে, যখন এলিটরা লুটপাট শুরু করে, সেই এলিটদের কাছে আবেদন জানানোর জন্যে।

এই লুটপাটতান্ত্রিক এবং গুণ্ডাপাণ্ডানির্ভর সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি অনাস্থা জানাইলাম। আমি অনেক দেরীতে জানাইছি। সাধারন জনগন বহু আগেই অনাস্থা জানাইছে।

আরিফুল হোসেন তুহীন-2

6th January

আমার আগের নোটটির [১] প্রতিক্রীয়া হিসবে Shafiqur Rahman নীচের মন্তব্যটি করেছেন।

“What is the use of this kind of speculations without the support of any empirical social science research? Before constructing castles of social hypotheses, one should at least try to build a foundation of information. I think it is very irresponsible to ascribe motives upon general masses without knowing what they really think. The common people ofcourse spent more time worrying about bread and butter issues but they are human beings too and 20th century social science have taught us one thing repeatedly, higher order purpose and dignity is important for human beings of all classes”

আমার নোটে প্রধানত দুইটি ব্যাপার ছিল।

প্রথমত সাধারন মানুষের এজেন্সি। দ্বিতীয়ত সাধারন মানুষের রাজনৈতিক আইডিন্টেটি রক্ষার জন্যে ইন্সেটিভ স্ট্রাকচারটি আসলে কি? এই দুইটি ধারনা কি এম্পিরিক্যালি এস্টাবলিশ করা যায়?

প্রথমেই এজেন্সির প্রসঙ্গে আসি।

এজেন্সির যে আলোচনা বিংশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে হয়েছে সেটি কিন্তু কোণ “তথ্য” অথবা “টেক্সট” কে অস্বীকার করে না। বরং “তথ্য” বা “টেক্সট” কে ভিন্নভাবে পড়ার কিছু উপায়ের কথা বলে। তাদের দাবীটি হচ্ছে, একই তথ্য বা টেক্সটকে আগে যেভাবে পড়া হত এবং ইন্টারপ্রেট করা হত, সেই পড়ার পেছনে পাঠকের কিছু বায়াস কাজ করেছে। সুতরাং টেক্সটগুলো নতুন করে পড়তে হবে।

একটি সাধারন উদাহরন দেই।

ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা এই অঞ্চলে ত্রয়োদশ শতক থেকে শুরু হওয়া তুর্কি/আফগানী শাসনকে “ইসলামী” শাসন এবং সেই শাসনকে ধর্মের মাধ্যমে চিহ্নিত করা শুরু করেন। তাদের সামনে প্রধানত যে তথ্য প্রমাণ ছিল, সেগুলো হচ্ছে, প্রত্যেকটি সুলতানের দরবারে তার কাজকর্ম ক্রনিকেল লেখার জন্যে কয়েকজন নিযুক্ত থাকত। এরা প্রধানত সুলতান কতটুকু ইসলামভক্ত এবং ইসলামের প্রচার প্রসারে কতটুকু কাজ করত সেগুলো ডালাপালা দিয়ে বর্ণিত থাকত। এছাড়াও প্রতিটি সুলতান বিভিন্ন পীর দরবেশের আশীর্বাদ লাভের চেষ্টা করতেন সেটিরও বর্ণনা থাকত। বলা বাহুল্য এইসব অতিরঞ্জিত বয়ানে বাস্তবতা সামান্যই থাকত। পরবর্তীতে একই টাইম ফ্রেইমের বিভিন্ন সংক্সৃত লিটারেচার ঘেটে দেখাগেল উচ্চবর্ণের হিন্দুরা এই আক্রমণকারী শাসকদের “মুসলিম” হিসেবে আইডেন্টিফাই করতেছেন না। আইডেন্টিফাই করতেছেন “টার্ক” বা “আফগানী” হিসেবে। যার ফলে উনিশ শতকের ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের “ইন্টারপ্রেটেশন” বিপদের মুখে পরে। নতুন ইন্টারপ্রেটেশন কিন্তু আগের তথ্যকে অস্বীকার করেনি। কিন্তু নতুন ইন্টারপ্রেটেশন যেটি করেছে, সেটি হচ্ছে আগের তথ্যের সাথে তথ্য উতপত্তির কনটেক্সট যোগ করেছে। ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা কনটেক্সট বোঝেননি। রাজদরবারে লেখা সুলতানের প্রশস্তিমূলক ক্রনিকেলকে তারা নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের উতস মনে করেছেন। কোণ পরিস্থিতিতে ক্রনিকেলগুলো লেখা হয়েছে সেই কনটেক্সটি এখানে যোগ করার গুরুত্ব অনেক পরের ঐতিহাসিকরা বুঝতে পেরেছেন।

এখন নিম্নবর্গের মানুষ সম্পর্কে সাধারন যে চিন্তা আছে সেটিকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ আছে।

যেমন বাংলাদেশে একটি সাধারন ধারনা প্রচলিত আছে, যে দেশের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষিত নয় তাই দেশের লোকে কিছু বুঝতেছেনা, এবং বারবার লুটেরা রাজনীতির কাছেই আত্নসমর্পন করতেছে। যদিও এইটা মোটামুটি প্রমাণিত, উচ্চশিক্ষা সবসময় মানুষকে নৈতিকতা, সাম্য ইত্যাদির শিক্ষা দেয় না। শিক্ষিত মানুষরা দুই নাম্বারি করতে কখনই পিছিয়ে থাকে না। সুতরাং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রায়োগিক গুরুত্বের বাইরে তাকে “সঠিক নাগরিক” হওনের মাপকাঠি চিন্তা করার মাঝে ঘাপলা আছে। শিক্ষা মানুষের চিন্তাভাবনা সংগঠনের কিছু টুলস প্রোভাইড করে। কিন্তু এই টুলসগুলো দিয়ে আমি কি করব সেইটি পুরোপুরি আমি এবং আমার সমাজ বাস্তবতায় ঠিক হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কোন মানুষের ইন্ট্রিন্সিক গুন নয়। এইটা নির্ভর করে সুযোগ এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের উপর। যাদের এই প্রিভিলেজ থাকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পায়। তাদের কাছে তথ্যের পরিমাণ বেশী থাকে।

আধুনিক সমাজের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে আমরা মনে করি জ্ঞান = ক্ষমতা। অর্তাত আপনি যদি বেশী তথ্যের অধিকারী হন, কম তথ্যের অধিকারীদের উপর আপনার খবরদারী করনের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। অথচ, বিষয়টা হওয়া উচিত ছিল ভিন্ন। যেহেতু আমরা এই ব্যাপারে একমত হতে পারি, যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের কোন জন্মগত গুন নয়, সেহেতু যার কাছে তথ্য বেশী, তার উচিত ছিল যার কাছে তথ্য কম তাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করা। তার উপর খবরদারী করা নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা মনে করি যাদের “প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা” নাই, তাদের “এজেন্সিও” নাই। সুতরাং তাদের নিজেদের ভালোমন্দ বুঝারও ক্ষমতা নাই। তাই বেশী তথ্যওয়ালারা কমতথ্যোয়ালাদের উপরে খবরদারী করবে। কারন বেশী তথ্যোয়ালারা বেশী বুঝে। এই প্যারাডাইমের সমস্যা হচ্ছে, আমরা ভুলে যাই কনটেক্সট এর কথা। উড়িরচরের আইজুদ্দীনের সমস্যা সচিবালয়ের আইজুদ্দীন সমাধান করতে পারবে না। যেটা হওয়া উচিত, উড়িরচরের আইজুদ্দীনকে জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য সরবরাহ করবে। এবং উড়িরচরের আইজুদ্দীন যেইটা ঠিক মনে করবে সেইটা করবে। বিশ্বব্যাপি পাবলিক হেলথ প্রজেক্টগুলো মোটামুটি সফল হয়েছে, কারন তারা এই কনটেক্সটের ব্যাপারটা মাথায় রেখেছে। তারা শুধু মায়া বড়ি আর পোলিও টিকা নিয়া গ্রামে যায় নাই, তারা এর কনজাম্পশনের জন্যে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেছে। এবং শেষপর্যন্ত সিস্টেমটাকে ভলান্টারি রেখেছে। যাতে মানুষ স্বত”স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করে।

কিন্তু সামাজিক অর্থনৈতিক প্রজেক্টগুলো , এই প্রোজেক্টের সাবজেক্ট পপুলেশনের মতামত বা সেই পপুলেশনকে কনভিন্স করার প্রয়োজন খুব একটা মনে করে না। এর কারন যথারীতি সাধারন জনগনকে “এজেন্সিশুন্য” ভাবা। তাদেরকে প্যাসিভ ভাবা, তাদের এক্ট করার ক্ষমতা নাই, এইটা ভাবা।

এখন জনগনের এজেন্সি আছে কি নাই, সেইটা কি স্পেকুলেটিভ না এম্পিরিক্যাল?

এইগুলো এম্পিরিক্যাল বেসিসের উপরে বসানো যায়।

আবারো উদাহরন দেই। উনিশ শতকের আমেরিকায় যখন দাস প্রথা প্রচলিত ছিল, তখন দাসদের মধ্যে ভিন্ন একধরনের “সংস্কৃতি” চালু ছিল যা তার সাদা প্রভুদের থেকে আলাদা। এইটা একটা এম্পিরিক্যাল ফ্যাক্ট। এখন এইটাকে ইন্টারপ্রেট করার চেষ্টা করা যাক। একই টাইম স্পেইসে দুইটি জনগোষ্টী বসবাস করেও কেন তারা ভিন্ন সংস্কৃতি লালন করবে। দাস প্রত্যক্ষভাবেই তার সাদা প্রভুদের সংস্কৃতি দেখতেছিল। এখন তারা সাদাদের সংস্কৃতি কিন্তু এমুলেট করার চেষ্টা করে নাই।

উনিশ শতকের বাংলায় বাংলা ইংরেজী নাটক/সাহিত্যের হিড়িক পরেছিল। ধরেন যেই বাগানবাড়িতে এইসব নাটক হইত, সেখানকার কর্মচারীরা এইগুলো দেখত। কিন্তু সেই কর্মচারী যখন নিজের সামাজিক স্পেইসে ফেরত যাইত তখন তার সংস্কৃতি নির্দিষ্টভাবে ভিন্ন ছিল তার প্রভুদের সংস্কৃতি থিকা। তারাও প্রভুদের এমুলেট করার চেষ্টা করে নাই।

এই ঘটনাটার ইন্টারপ্রেট কিভাবে করা যায়?

একটা সহজ ইন্টারপ্রেটেশন হচ্ছে, এরা অশিক্ষিত লোকজন, তারা হ্যামলেট/শর্মিষ্ঠার মূল্য বোঝে না। ভালো যুক্তি। কিন্তু এই যুক্তির একটা বড় সমস্যা হইতেছে, এইটা প্রথমেই ধরে নেয়, “হ্যাম্লেট”, “শর্মিষ্ঠা” উন্নত সংস্কৃতি, এবং নিম্নবর্গের মানুষ সেইটা অনুসরন করতেছে না অজ্ঞতাপ্রসূত। অর্তাত এইখানে প্রশ্নটা সক্ষমতার। উচ্চবর্গের শিক্ষিত মানুষের “হ্যামলেট” বোঝনের ক্ষমতা আছে। নিম্নবর্গের মানুষেরাও এইগুলো করত যদি তাদের সেই সক্ষমতা থাকত। কিন্তু হোয়াট ইফ, নিম্নবর্গের মানুষের কাছে এইগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনেই হয় নাই? কারন যদি এমন হতো তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হইছে তারা চেষ্টা করত এগুলো এমুলেট করতে। সেই এমুলেশন হয়ত বেশী ভালো হইত না। কিন্তু এইরকম কোন আগ্রহ তারা দেখায় নাই।

এখন পৃথিবীর সকল এলাকায় নিম্নবর্গের মানুষ যে তার প্রভুদের থিকা ভিন্ন সংস্কৃতি লালন করছে। কেন করছে সেইটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। কলোনাইজার কিংবা তাদের দেশীয় সহযোগীদের কাছে এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, তারা এতই নির্বোধ যে কলোনাইজারদের সংস্কৃতি যে উন্নত সেইটা বুঝতেছে না।

এই নির্বুদ্ধিতার যুক্তি ধোপে টেকে না। অন্যকিছু বাদ দেন। শুধুমাত্র বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস্টা দেখেন। তারা কিধরনের বুদ্ধি, সাহস ইত্যাদি দেখাইছে। তারা এমন কঠিন পরিবেশে অপারেট করছে, যেই কঠিন পরিবেশের কথা আজকের বিম্পি কিংবা আম্লীগ কল্পনাও করতে পারবে না। অপ্রেশন কাকে বলে এই মেইনস্ট্রীম রাজনৈতিক দলের আসলে জানাই নাই।

সুতরাং দেখাযাচ্ছে তাদেরকে সংগঠিত হবার ক্ষমতা, আত্নত্যাগের ক্ষমতা, কোনটারই কমতি নাই। তাহলে তারা মেইনস্ট্রীম রাজনীতিতে আসে না কেন?

এইখানে আসবে ইন্সেন্টিভ এর কথা। আমার নোটের এই অংশটা আসলে সাধারন অর্থনীতি। ইন্সেন্টিভ ছাড়া কিছুই হয় না। ইন্সেন্টিভ বলতে শুধু ম্যাটেরিয়াল জিনিসপাতি বোঝায় না। ইন্সেন্টভ বলতে বোঝায় , একজন ব্যক্তি যাকিছু গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।

এখন সহজ একটি উদাহরন দেই। যেকোন মানুষের কাছে আত্নসম্মান গুরুত্বপূর্ণ। এখন একজন রিকশাওয়ালা নিয়মিত চড় খেয়ে থাকে। কাজের বুয়া খুন্তির খোচা খেয়ে থাকে। এইগুলো তাদের আত্নসম্মানে আঘাত করে। এখন এমন কোন আন্দোলন যদি হত, যা নিম্নবর্গের মানুষের এইসব অসম্মান বন্ধ করার জন্যে কাজ করছে, এই মানুষগুলোর ইন্সেন্টিভ থাকত সেই আন্দোলনে যোগ দেয়ার।

এমনি করে অসংখ্য ইন্সেন্টিভের লিস্ট করা যাবে যেগুলো অধিকাংশ মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

এই লিস্টের অনেক নীচে অবস্থান করে শাস্তি দেয়ার প্রবনতা। (কিছু এম্পিরিক্যাল স্টাডি আছে, যে মানুষ ক্ষতিপূরণ পাইলে শাস্তি দিতে আগ্রহী হয় না) এই শাস্তি দেওনের প্রবনতা থেকে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয় প্রধানত। বাংলাদেশের সকলের মনে এই ধারনাটা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে “সরকার পরিবর্তনের সাথে কোন কিছুই পরিবর্তন হবে না”। সুতরাং ভোট দেয়াটা মূলত একধরনের কনভিনিয়েন্ট প্রটেস্ট যা ছুটির দিনে ৩০ মিনিট খরচ করে করা যায়। এইখানকার খুব কম ভোটই “পরিবর্তনের আশায়” ভোট।

এখন মধ্যবিত্তের সমস্যা হচ্ছে ভিন্ন। মধ্যবিত্ত/উচ্চবিত্ত সামাজিক ভাবে নিম্নবর্গের মানুষের মত অসম্মান এবং নিগ্রহের জীবন যাপন করে না। সুতরাং তাদের কাছে সম্মান বা ডিগনিটির চিন্তাভাবনা নিম্নবর্গের মানুষের থেকে আলাদা। তারা উদারনৈতিক গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের ব্যাপারে সেন্সেটিভ। এইসব ভায়োলেট হলে তারা ক্ষেপে উঠে।

আপনার আমার দুইবেলা চড় খাওনের সমাজ বাস্তবতা নাই। সুতরাং এখন আপনি আর আমি বসে যদি বলি “মোরাল এবং লজিক্যাল” দাবীগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তখন সেইটা আমাদের সমাজ বাস্তবতায় পুরোপুরি ঠিক আছে। কিন্তু ভিন্ন সমাজ বাস্তবতার একজনের কাছে যদি এই “মোরাল এবং লজিক্যাল” দাবীগুলো “কম” গুরুত্বপূর্ণ হয়(গুরুত্বহীণ না কিন্তু) তাইলে তাদের দোষানোর কিছু নাই। এইটাই আমার বক্তব্য। আমি যদি প্রতিদিন লাথি খাইতাম, এবং জানতাম, এই লাথি খাওনের কোন শেষ অদুর ভবিষ্যতে নাই, তখন, আমি যদি সিদ্ধান্ত নিতাম আমি “লাথি না খাওনের” রাজনীতিতে মনোযোগ দিব, ইলেক্টোরাল পলিটিক্স এর চেয়ে তাইলে আমাকে দোষ দেয়া কি ঠিক? যে রাজনৈতিক শক্তি আমার লাথি খাওন আটকাতে পারবে না, এবং আমাকে লাথি দেয়া লোকজনের সাথে মৈত্রী করে চলবে, তার প্রতি যদি আমি অনাস্থা জানাই, তাইলে আমাকে দোষারোপ করা ঠিক কি না?

সমাজের কোন মানুষের সার্বজনীন দায়িত্ব কর্তব্যের বয়ান তৈরী করার মধ্যে একটা হিপোক্র্যাসি আছে।

সমাজ বাস্তবতা না বিবেচনা করে সবার কাছে একই জিনিস “মোরাল এবং লজিক্যাল” প্রতিভাত হয়না এই আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং তৈরী হওনেরও দরকার আছে।

 

ফাহাম আবদুস সালাম -2

7th January

বাংলাদেশের আরবান মিডল ক্লাসকে নিয়ে আমি এক খান লেখা লিখেছিলাম দুদিন আগে। তার প্রতিক্রিয়ায় জিয়া হাসান, আরিফুল হোসেন তুহিন ও জায়েদ উল্লাস তিনটা লেখা লিখেছেন। তার প্রতিক্রিয়ায় এই লেখা।

তিনটা লেখার অনেক ব্যাপারেই আমি একমত। বিশেষত বিএনপির রাজনীতির সমালোচনায় তারা যা লিখেছেন আমি তা মোটামুটি সমর্থন করি। কিন্তু এই তিনটা লেখার একটা মূলসুর আছে যার সাথে আমি একমত না। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন যে বাংলাদেশে দুই দলের কামড়াকামড়ি চলছে। আরবান মিডল ক্লাস ভাবছে যে এই কাজিয়ায় আমার কোনো ইনসেনটিভ নাই (আরিফুল হোসেন তুহিনের আরবান মিডল ক্লাস ও “নিম্নবর্গের” মাঝে বিপজ্জনক রকমের ওভারল্যাপ মনে হয়েছে আমার কাছে)। বিএনপিও তাদের কনভিন্স করতে পারে নাই । কাজেই আরবান মিডল ক্লাস যে বিএনপির ক্ষমতার লড়াইয়ে পার্টিসিপেট করবে না – এই ব্যাপারটাকে তারা “জাস্টিফাই” করেছেন।

এবং সে সাথে তারা আমার বক্তব্যকেই রিইনফোরস করেছেন। বুঝিয়ে বলি।

গণতন্ত্র স্ট্যাবলিশ হতে যে সময় লাগে এ ব্যাপারে কেউ আশা করি ভিন্ন মত পোষণ করবেন না। বৃটেনের দুইশ বছর আগের গণতন্ত্রের যে রূপ ছিলো সেটা এমন কি আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও হাস্যকর ঠেকতে পারে। কিন্তু তাদের উত্তরণ ঘটেছে। দেড়শ বছর আগের ব্রিটেনে মেয়েদের ভোটাধিকার নাই দেখে জন স্টুয়ার্ট মিল পড়া উচ্চ-মধ্য বিত্তের সাফ্রাজিস্ট নারীদের জন্য খুব সহজ ছিলো দর্শক হয়ে বসে থাকা – ভাবা যে সমাজের সব পুরুষ কামড়াকামড়িতে ব্যস্ত আমাদের কী দরকার এই কাজিয়ায় যাওয়ার? কিন্তু তারা আন্দোলন করে ভোটাধিকারের দাবী আদায় করে নিয়েছিলেন।

এই উত্তরণ পর্ব কিন্তু বন্ধ হয়ে যায় নি – এখনও চলছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে এখনো চলছে – কেউ এগিয়ে আছে, কেউ পিছিয়ে। বাংলাদেশে যে লুটপাটতন্ত্র চলছে সেটা বাংলাদেশের একক আবিষ্কার না। প্রায় প্রতিটি দেশেরই কোনো না কোনো পর্যায়ে কাছাকাছি মাপের লুটপাটতন্ত্র জারি ছিলো। তো এই লুটপাটের বেনিফিশিয়ারিরা আল্লাহর ভয়ে লুটপাট বন্ধ করবে – এমনটা নিশ্চই কোনো কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ আশা করবেন না। সে সব দেশে লুটপাট সীমিত হয়েছে কীভাবে? এর সরল কোনো উত্তর নেই কিন্তু একটা মৌলিক মিল আছে সব গণতান্ত্রিক দেশে। জনগণ লড়াই করে তার অধিকার স্ট্যাবলিশ করে রাজনীতিবিদদের তাদের পক্ষে পলিসি বানানোর জন্য বাধ্য করেছে। য়েস, খেয়াল করুন – জনগণ লড়াই করেছে এবং পলিসি মেকারদের বাধ্য করেছে।

লুটপাট তুরুপ বন্দোবস্ত – এটা এমনি এমনি সীমিত হয় না।

বাংলাদেশে যে এই মুহুর্তে খুবই কুৎসিত একনায়িকাতন্ত্র চলছে এটা কারো অজানা না। ভোট গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত না – মানি কিন্তু ভোটাধিকার গণতন্ত্রের সর্বপ্রথম শর্ত। সেই ভোটাধিকারও বাংলাদেশের মানুষের আজকে নেই। ২০০৬ সালে বিএনপি ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিলো কিন্তু তারা সফল হয় নি। কারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছিলো। যদিও ২০০৯ এর নির্বাচন ষড়যন্ত্রমূলক ছিলো কিন্তু আমি এই নির্বাচনকে এক্সেপ্ট করি কারণ নির্বাচনের দিনে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলো। এবং এও মানি যে নির্বাচন ষড়যন্ত্রমূলক না হলেও বিএনপি হারতো কারণ জনগণ বিএনপিকে চায় নি।

আপনি যদি গণতন্ত্রে ঈমান আনেন তাহলে তাহলে আপনাকে স্বীকার করতে হবে যে জনগণের কিছু ইনভায়োলেবল রাইটস আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন তার মধ্যে অন্যতম। প্রশ্ন হোলো এই রাইটস যখন অনুপস্থিত তখন সেটা স্ট্যাবলিশ করার দায় কার?

তিনজন লেখকই এই দায় থেকে আরবান মিডল ক্লাসকে মুক্তি দিতে চান কারণ তারা জানেন যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের যে পার্থক্য সেটা লুটপাটের মাত্রার পার্থক্য – আদর্শের পার্থক্য না। জনগণ কেন তাদের কামড়াকামড়ির দায় নেবে? মিডল ক্লাসের এই কনশাস ডিসিশন সম্পূর্ণ এক্সেপ্টেবল তাদের কাছে।

তাদের এই চিন্তাই প্রমাণ করে কেন আমরা আজো পলিটি হতে পারি নি, কেন আমরা সমাজ বুঝি কিন্তু রাষ্ট্র বুঝি না। সমাজে দুই জনের কাজিয়ায় দর্শক হওয়ার সুযোগ আছে কারণ সমাজের কাজিয়া কমপ্লেক্স না। রাষ্ট্রের কাজিয়ায় আমাদের সবার স্বার্থ জড়িয়ে আছে – এটাকে ইগনোর করার কোনো উপায় নেই। সমাজের বাইরে যাওয়ার আপনার সুযোগ আছে, ধর্মের বাইরে যাওয়ার আপনার সুযোগ আছে কিন্তু আপনার রাষ্ট্র-নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

জিয়া হাসানের ভাষায় এই কাজিয়ায় জনগণের কোনো ইনসেনটিভ নাই। ওয়েল, এই কাজিয়ায় বিএনপি জিতলে আর কিছু না হলেও জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে। এইটা যদি জনগনের ইনসেনটিভ না হয়ে থাকে তাহলে আরবান মিডল ক্লাসের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এইসব গালভরা কথা মুখে আনা উচিত না।

আমি বলছি অবশ্যই ভোটাধিকার জনগনের জন্য একটা ইনসেনটিভ। ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তারা যদি আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনে আমাদের অবশ্যই সেটা মেনে নিতে হবে।

তারা মনে করছেন খারাপ থেকে খারাপতর হয়ে ওঠাই একমাত্র গন্তব্য – তাই এই যাত্রায় দর্শক হয়ে থাকাটা উচিত না হলেও একসেপ্টেবল। আমি বলছি না। এই লুটপাটতন্ত্র থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি যদি সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে আরবান মিডল ক্লাস এই রাষ্ট্রের ওপর তাদের ঔনারশীপ এসার্ট করে।

আপনাকে বিএনপিকে কেন সাপোর্ট করতে হবে? বিএনপি লুটেরাদের দল মেনে নিলাম কিন্তু বিএনপির আন্দোলনের কজটা তো আমার আপনার সবার কজ। সাধারণ মানুষ তার ঔনারশীপ এসার্ট করে না দেখেই তো বিএনপি-লীগ লুটপাটের সুযোগ পায়। আপনি মনে করেন যে বিএনপি-আওয়ামী লীগ খারাপ। ভালো কথা। থার্ড কোনো ফোর্সকে তো তাহলে আসতে দিতে হবে। একনায়িকাতন্ত্রে তো সে উপায় নেই। ব্যাপারটা কি এমন না যে আপনার দর্শক হয়ে থাকাটাই লুটপাটতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ইন্ধন?

চেষ্টা করে দেখতে পারেন – নাক টিপে বন্ধ করে আপনি যদি কমলা (বাংলাদেশে যে ফলটাকে মালটা বলা হয়) খাওয়ার চেষ্টা করেন কোনোদিনও বুঝবেন না যে আপনি আসলে কী খাচ্ছেন। এটাই বাস্তবতা। আমাদের আরবান মিডল ক্লাস এই অসম্ভব কাজটাই করতে চান। তারা গণতন্ত্র চান কিন্তু লীগ-বিএনপির কাজিয়া চান না। তারা বুঝতে চান না যে লীগ-বিএনপির কাজিয়া থেকে আপনার বাঁচার কোনো উপায় নেই। আরবান মিডল ক্লাসই শুধু পারে দুই দলকে গণতন্ত্রে বাধ্য করতে। এই দায়িত্ব যতোদিন তারা অগ্রাহ্য করবে ততোদিন লালুভুলুদের অত্যাচার থেকে তাদের নিস্তার নাই।

 

নায়েল রহমান

7th January

 

নিউজফীড জুইড়া বিতর্কের কারণে নাক গলানোর একটা তাগিদ বোধ করলাম। নিজের মিডেল ক্লাস ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণেই কিনা পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগ্য (ম্যালাইন্ড সেন্সে) ইকনোমিক ক্লাস হিসেবে মিডেল ক্লাসরেই মনে হয়। বাংলাদেশেতো আরও বেশি। পলিটিক্যাল স্পেক্ট্রামের বাম থেকে শুরু করে (ইদানীংকালের) ডান পর্যন্ত সবাই এর উপর খাপ্পা। সবাইর ধারণা এই ক্লাসটার নিরুত্তাপ আচরণের কারণেই দেশে কিছু ‘হয়টয়’ না। মাঝেমধ্যে মনে হয় মানবসভ্যতার সকল পরিবর্তনের জন্যেও মানুষ এদেরেই দায়ী করে। বওহাত আচ্ছা। সব দোষ মিডেল ক্লাসের ধইরা নিয়াই একটু চিন্তাভাবনা করা শুরু করলাম, যার ফলাফল নিচে সন্নিবেশিত হইলঃ

মিডেল ক্লাস কী করেনাই তা নিয়া অনেকেই অনেক কিছু বলেন তাই গত দুয়েকদিন ধইরা ভাবতেছিলাম বাংলাদেশ নামের এই স্যুডো-স্টেইবল, পারশালি ফেইল্ড স্টেইটে (গায়ে লাগলে কিছু করার নাই ৪৩ বছর বয়সের একটা দেশ নিয়া আমার এক্সপেক্টেশন আপনার তুলনায় অনেক হাই) এ মিডেল ক্লাস কী কিছুই করেনা? এই নিয়া চিন্তা করতে গিয়া কিছু ঝামেলায় পড়লাম। নাগরিক হিসেবে মিডেল ক্লাসের কাছ থেইকা রাষ্ট্র কি পায় তা নিয়াই প্যাঁচটা লাগলো। এইখানে একটা জাফর ইকবালীয় সাদাসিধে ডিসক্লেইমার দিতে বাধ্য হইতেছিঃ আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বুঝিনা সুতরাং রাষ্ট্র তার নাগরিকের কাছ থেইকা কি আশা করে তার পুঁথিগত জ্ঞান আমার নাই। ঘটে যা অল্পবেশি বুদ্ধি আছে তা আমারে বলে যে রাষ্ট্র কমের মধ্যে আশা করতে পারে যে তার নাগরিক ঝুট ঝামেলা (দ্যাট ইজ বেআইনি কাজকারবার) দেখে দূরে থাইকা নিজের খায়েশ মিটাইতে অপররে ঝামেলায় ফালাবেনা, রাষ্ট্র চালানোর জন্য ট্যাকসো দিবে এবং অন্তত তার আওতায় থাকা মানুষ (দারা-পুত্র-পরিবার এটসেটরা) গুলারে নিদেনপক্ষে শিক্ষিত (হোপফুলি সুনাগরিক) কইরা তুলবে।

এই তিন ক্রাইটেরিয়ার বেইসিসে মিডেল ক্লাসরে একটু জাজ করতে গিয়া স্যারের মতন এট্টু চমকায়া গেলাম। বিস্মিত হইয়া দেখলাম যে, অপরাধের গুরুত্ব এবং সংখ্যার বিচারে এই মাচ-ম্যালাইন্ড মিডেল ক্লাসই দেখি সবচেয়ে সুবোধ বালক। মিডেল ক্লাস অন্যদের মতন (১) নিজে লাঠালাঠি করেনা, এবং (২) লাঠিয়াল ভাড়াও করতে পারেনা। [লাঠালাঠি দেইখা ভাইকেরিয়াস প্লেসার অনুভব করতেই পারে … যা এজ ইফ অন্যেরা কেউ করেনা হা হা হা] এইটারে একটু অন্যভাবে বললে দেশের সর্বনিম্ন আইনঅমান্যকারী (দ্যাট ইজ সর্বাধিক আইনমান্যকারী) শ্রেণীটাই হইলো এই হ্যাপলেস মিডেল ক্লাস। [হ্যাঁ সুযোগের অভাবে সে ভালো কিনা তা নিয়া ডিবেইট চালাইতেন পারেন তবে কোন অবস্থায় সে সুযোগ পায় তা বিশ্লেষণ করতে গেলেই ঝামেলায় পইড়া যাবেন। তবে এইখানে বইলা রাখা ভালো এই মিডেল ক্লাসের একটা চালাকচতুর অংশের ক্ষেত্রে উপরের এই কথা প্রযোজ্য না কারণ তারা বাই ডিফল্ট রুলিং ক্লাসের অংশ। সোশ্যালি কারেক্ট থাকার জন্য এর বেশি আর কিছু বললাম না এবং বলবোনা।]

আচ্ছা এরপর চিন্তা করা যাক ট্যাকসো পে করার ব্যাপারে। এইখানেও ইন্ট্রেস্টিং সেনারিও। শালার ভিতু মিডেল ক্লাস তার আয়ের অনুপাতে খুব সম্ভবত ট্যাকসো দেয় সবার চেয়ে বেশি। [আফটার অল, এই মিডেল ক্লাস চাকুরিজীবি শ্রেণীর বেতন থেইকা এট সোর্স কাইটা নেয়া হয় ট্যাক্স। দিতে না চাইলেও উপায় নাই।] কথাটা হয়তো খুব কনভিন্সিং মনে হইতেছেনা তাই একটু রিফ্রেইজ করার প্রয়োজন বোধ করতেছিঃ দেশে আয়ের অনুপাতে সবচেয়ে কম ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া অংশটাই হইলো মিডেল ক্লাস। [আশা করি এখন ক্লিয়ার হইছে।] যাহ! রাষ্ট্রের ভরণপোষণ করার দিক থেইকাও দেখি মিডেল ক্লাস খুব একটা পিছায়া নাই। ধারণা করা যাইতে পারে চাকুরিজীবি এই অংশই ব্যাংকে অল্পবিস্তর টাকাও রাখে, প্লাস নাদান হওয়ার কারণে ট্যাক্স রিবেইটের জন্যে সরকারি সেভিংস ইন্সট্রুমেন্টও এরাই সবচেয়ে বেশি কেনে।

এরপর চিন্তা করা যাক নাগরিক গইড়া তোলার ব্যাপারটা। এইখানে তুলনামুলক আলোচনা করার স্কোপ আছে। উচ্চ বা নিম্নবিত্তে অবস্থান করলে যে নামকাওয়াস্তে শিক্ষা বা অশিক্ষা নিয়ে আপনি চলতে পারবেন তা মিডেল ক্লাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। তার যেভাবেই হোক ছেলেমেয়েরে লেখাপড়া করাইতে হবে … তাও এক্কেবারে ভার্সিটি পর্যন্ত। এইটা বাঁচামরার কেইস। এই ফ্রেইমওয়ার্কে পাবলিক ইউনিভারসিটিতে কেউ চান্স পাইলে ভালো আর না পাইলে গলাকাটা (প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি)। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হইলো যে এই মিডেল ক্লাসের মেধাবী অংশটা এইখানে থাইমা থাকবেনা। তারা নিজ গরজেই বাইরে উচ্চশিক্ষা নেয়ার চেস্টা করবে। উচ্চবিত্তের সবচেয়ে মেধাবীর পক্ষে যেই ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া সম্ভব মধ্যবিত্তের সবচেয়ে মেধাবীর তাতেই যাওয়া সম্ভব। যেই পয়েন্টটা তুইলা ধরার চেস্টা করতেছি সেইটা হইলো যে মিডেল ক্লাস থেইকা যেই পরিমাণ একাডেমিক ওভারএচিভার আসছে সেইটা মনে হয় তাদের মোর প্রিভিলেজড ক্লাসের ক্ষেত্রে হয়নাই।

তা এই সীমিত ফ্রেইমওয়ার্কে মিডেল ক্লাসের অবস্থা খুব একটা খারাপ না মনে হয়? কী বলেন? ট্যাঞ্জিবল সেন্সে এদের সুনাগরিক বলতে পারবেন কি? অথবা কুনাগরিক বলা থেকে বিরত থাকতে পারবেন কি? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় সাথে থাকেন, না হইলে আইএমএইচও ইয়োর ইন ডিনায়াল। তাহইলে এতকিছুর পরেও এই শ্রেণীর উপর মানুষের এত ক্ষোভ কেন? বর্তমান কনটেক্সটে একটাই – সেইটা হইলো ফিজিক্যাল সেন্সে (?) তাদের রাজনৈতিক অসম্পৃক্ততা। এইখানে কিছু কম্পিটিং থিওরি কাজ করতেছে। অতি চিন্তায় ব্রেইন ফ্রিজ হওয়ার কারণে সেই বিষয়ে কালকে। :p

 কোমল ক্ষমতার প্রত্যাবর্তন

–রেজাউল করিম রনি

 

বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্কটের চরিত্র এক একজনের কাছে এক এক রকম। বুদ্ধিজিবিরা প্রতিবন্ধির মতো আচরণ করতে থাকে। কোন কিছুকে গোড়া থেকে বুঝবার অক্ষমতা  ডাকতে ফাও গল্পের ডালি খুলে বসে। বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা ও চাতুরী উদাম হয়ে যায় ক্ষনে ক্ষনে। আামাদের চিন্তাশীল নাগরিকের অভাব খুব জ্যান্ত হয়ে ধরা পরে তখন।

ক্ষমতা পরিবর্তনের হাওয়া বইতে থাকলে পাল্টাপাল্টি প্রতিযোগিতা ও প্রচার-প্রপাগান্ডার সময়ে এই অভাব প্রকটভাবে চোখে লাগে। বুদ্ধিজীবীরা দলীয় নীতির প্রতি অনুগত থেকে জাতীয় সমস্যা নিয়ে কথা বলার যে ঐতিহ্য এতদিন ধরে চর্চা করে আসছে -এখন তা আরও নোংরা জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের প্রায় সবাই এই দুই দলের ভারসাম্যের মধ্য থেকে চলতি সঙ্কট নিয়ে আলোচনা ও মিডিয়া প্রপাগান্ডায় অংশ নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে গত এক দশক ধরে একটা পরিবর্তন এসেছে। জামায়াতের তরফেও কিছু বুদ্ধিজীবী নতুন করে জাতীয় রাজনীতিতে হাজির হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই ছদ্ম চরিত্রের। এরা বিএনপির সঙ্গে থেকে জামায়াতের স্বার্থকে টিকিয়ে রাখতে তৎপর থাকেন। এটা একটা নতুন মাত্রা। এর ফলে চতুর্মুখী বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই বিভ্রান্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে একটা নিশ্চল পাহাড়ের মতো একই জায়গায় আটকে রাখে। ‘রাজা যায় রাজা আসে’ কিন্তু রাজনীতির কোনো গুণগত তফাত্ বা উন্নতি ঘটে না। এই দিকগুলো নজরে রেখে আজকে আমরা চলতি রাজনৈতিক হালচাল নিয়ে সংক্ষেপে কয়েকটি পয়েন্ট ধরে আলোচনা করব।

 

কৌতুকের রাজনীতি:

খালেদা নিজ অফিসে অবরুদ্ধ বা আটক আছেন। গত ৩ জানুয়ারি রাতে পুলিশ এই কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয়। পুলিশ ইচ্ছামতো তালা দেয় আর খোলে। কিন্তু ক্ষমতার চাবি পরের হাতে। একই সঙ্গে কার্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন এবং রাস্তায় ইট, বালু ও মাটিভর্তি ট্রাক দিয়ে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৫ জানুয়ারি বের হওয়ার চেষ্টা করলে পিপার স্প্রে ছোড়ে পুলিশ। এরপর থেকে খালেদা জিয়া কার্যালয়েই আছেন। এরপরে গত বৃহস্পতিবারও দিনের বেলায় ফটকের তালা খুলে দিয়ে রাতে আবার তালা দেয় পুলিশ। এই তালা দেওয়া আবার খুলে দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কৌতুক জমে ওঠে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা গণতন্ত্র রক্ষায় বালির ট্রাকের বহুমুখী ভূমিকার কথা জানান মিডিয়াকে। এইসব ট্রাক হাজির করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য, কেউ কেউ বলেন, খালেদা জিয়ার বাড়িতে মেরামতের কাজ হবে। তাদের ব্যাখ্যা সার্কাস দলের জোকসে পরিণত হয় দ্রুত। তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন আস্ফাালন ও কুরুচিপূর্ণ রসিকতা আওয়ামী লীগের ওপর জন-অসন্তোষকে আরও শক্তিশালী করে। জাতির সঙ্গে এই তামাশাপূর্ণ আচরণ লীগকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় দ্রুত। লীগের চূড়ান্ত পশ্চাদপসরণ ঘটে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার আত্মবিশ্বাসী ও সংযত ভাষণের পরে। এই ভাষণে খালেদা জিয়া যে সংযমের পরিচয় দেন তা ক্ষমতার রাজনীতিতে অতি উঁচু স্তরের বিচক্ষণতার পরিচয়।

অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া ও তার দলের মহিলা সদস্যদের ওপর পিপার স্প্রে করেছে পুলিশ। পিপার স্প্রে ব্যবহার নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। অথচ পুলিশ মিডিয়ার সামনেই আইন ভঙ্গ করছে। আর সব মিলিয়ে ২৬টি ইট-বালির ট্রাক, পুলিশের যানবাহন দিয়ে খালেদার পথরোধ করে দিয়েছে এবং ৫ জানুয়ারি ঢাকার সঙ্গে বাংলাদেশের বাইরের রেল, সড়ক, লঞ্চ সব যোগাযোগ নিজেই বন্ধ করে দিয়েছেন। আর তত্ক্ষণাত্ খালেদা জিয়া অবরোধ কর্মসূচি ডিক্লেয়ার করেন। এতে সরকারের গেম ভেস্তে যায়। সরকারের অবরোধ প্রচেষ্টা বেশ সফল হয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার তাত্ক্ষণিক অবরোধ ডাকার ফলে এই সফলতার প্রাথমিক নজরানা বিএনপির কোর্টে জমা হয়। এর মধ্যে মিডিয়ার সঙ্গে সরকারের আচরণ জনগণকে আর ক্ষিপ্ত করেছে। তথ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন, একুশে টিভি বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু চ্যানেলটির প্রধান কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, মানুষ একুশে টিভি দেখতে পাচ্ছে না। তারেক রহমানের ভাষণ প্রচারের জন্য এই খেসারত দিতে হচ্ছে বলে মনে করেন সাংবাদিকরা। যদিও মামলা হয়েছে পর্নোগ্রাফি আইনে। পরে অবশ্য রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হয়েছে। অদ্ভুত এক অবস্থা তৈরি হয়েছে।

আদালতের এখতিয়ার আর রাজনীতির পরিমণ্ডল এ দুটোকে সচেতনভাবে গুলিয়ে ফেলা বাংলাদেশের তথাকথিত ‘আইনের শাসনের’ (আসলে দলীয় শাসনের) ঐতিহাসিক নজির হয়ে গেছে।

ধরেন, তারেক রহমান অপরাধী। কিন্তু অপরাধীর ‘মানবাধিকার’ বা স্বাভাবিক অধিকার বা আইনি অধিকার হল ‘কথা বলার অধিকার’। যত ভয়ঙ্কর অপরাধীই হোক না কেন, তার অপরাধের জন্য জবান বন্ধ রাখার কোনো বিধান নেই। এটা আইনের একটা বেআইনি প্রচেষ্টা মাত্র। দুই নাম্বার পয়েন্ট হল, মিডিয়া কী প্রচার করবে তা কোনোভাবেই আদালতের রায়ে নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না। এই হাস্যকর কাজটি করে আদালতের সম্মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সরকার।

এরকম চোখে-মুখে মিথ্যা ও চাতুরি এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণাপূর্ণ আচরণের জন্য বর্তমান সরকারকে কী মূল্য দিতে হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

খালেদা জিয়া আর বিএনপি এক নয়। বিএনপির চারপাশে দুষ্টলোকদের আখড়া এই অভিযোগ অনেক দিনের। কিন্তু খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ত্যাগ ও প্রতীকী গুরুত্বকে আওয়ামী লীগ যেভাবে নস্যাত্ করার চেষ্টা করছে তাতে উল্টো ফল ফলতে শুরু করেছে। অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া গণতন্ত্রহীনতার প্রতীকে পরিণত হচ্ছেন ক্রমে ক্রমে। তার ৭-দফা ‘নরম’ দাবি লীগ যেভাবে উড়িয়ে দিয়েছে, হম্বিতম্বি করেছে, তা লীগকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দেবে দিন দিন।

সরকার অবরোধ ঠেকানোর জন্য ইজতেমার ইস্যুটিকে কাজে লাগাতে পারবে বলে ভেবেছিল। কিন্তু ইজতেমার মধ্যেও অবরোধ চলছে। সরকার ঘোষণা করেছে, রাস্তায় গাড়ির ক্ষতি হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। এতে জনমনে আরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। লাশের ক্ষতিপূরণের রাজনীতি জনগণ মেনে নেয়নি। এ ধরনের ঘোষণাও হঠকারী হয়েছে। ঢাকায় অবরোধ জোরদার হয়েছে বলা যাবে না। কিন্তু প্রতিদিন গাড়িতে আগুন জ্বলছে। জনমনে আতঙ্ক ক্রমে ঘনীভূত হচ্ছে। ৬ জানুয়ারি প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গার্ডিয়ান লিখেছে, “Hasina and Zia have between them ruled Bangladesh for most of the last three decades. They have a notoriously poisonous relationship and frequently exchange insults and barbs about each other’s families.” তাদের সম্পর্ককে গার্ডিয়ান ‘বিষাক্ত-সম্পর্ক’ বলেছে। মিথ্যাচার আর হিংসাই এখানে উত্কটভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

যেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই অবস্থার সৃষ্টি -তার রাজনৈতিক বয়ান তৈরি নিয়ে এখন সহিংসতা পরিণত হয়ে উঠছে। সরকার সাংবিধানিকভাবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি জবরদস্তিমূলক নির্বাচন করে ক্ষমতাকে নিজেদের দলীয় সম্পত্তি করে নিয়েছে। এবং এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র রক্ষা’ দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। অন্যদিকে শুরু থেকে বিএনপির ডাক ছিল ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে পালন করা হবে। কে হত্যাকারী, কে রক্ষাকরী-এ নিয়ে বিবাদের শুরু। এটাকেই আমরা বলছি কৌতুকের রাজনীতি। বলাই বাহুল্য, এই প্রতিযোগিতায় ক্ষমতার দম্ভ পরাজিত হয়েছে। বিএনপি এগিয়ে আছে। বিএনপির প্রতি গণসমর্থন তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের রসিকতা ও কুরুচিপূর্ণ নিষ্ঠুরতা খালেদা জিয়ার প্রতি গণসমর্থন তৈরিতে বেশ ভালোভাবে কাজে দিয়েছে। ক্ষমতা মানে যে গায়ের জোর বা গোন্ডামি না তা আবারও প্রমাণিত হল। খালেদার ‘সফট-পাওয়ার’ বা কোমল ক্ষমতার স্ট্র্যাটেজি এগিয়ে গেল। পরে এই প্রসঙ্গে আবার ফিরব। তার আগে আমরা দেখে নিবো টাউট বুদ্ধিজিবি কি ভাবে বিএনপিকে ‘জিন্দামরা’ দলে পরিণত করতে কূটচাল চেলে যাচ্ছে।

 

ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীর নসিহত:

 

বিএনপির সাংগঠনিক দুরবস্থার কথা কারও অজানা নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপারটি হল, কিছু মতলববাজ ও ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীর খপ্পরে পড়ে বিএনপি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তথাকথিত ইসলামিস্টদের নিয়ে রাজনৈতিক গেম খেলার কুপরামর্শ বিএনপিকে ক্ষমতার দৌড়ে পিছিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির গণসম্পৃক্ততার ধরন একই রকম। এরা প্রত্যেকে মুখে জনগণের কথা বলে বটে কিন্তু কাজের কাজে জনগণ বলতে এরা বোঝে পার্টি জন। দলীয় ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে উঠে জনরাজনীতির পরিমণ্ডলে দুই দলই গরহাজির। এই অবস্থার মধ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি বা প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে কূটনৈতিক দেনদরবার। আর ঠিক এখানেই বিএনপির নজর ও ভরসা। জনগণের জন্য কোনো দাবিদাওয়া নেই এমন অভিযোগ পাশ কাটিয়ে ক্ষমতার দৌড়ে নির্বাচনবাদী ৭-দফা নিয়ে বিএনপি মাঠে হাজির হতে চাইছে। ফলে পুরনো বামপন্থী জায়গা থেকে জনগণের জন্য কোনো কর্মসূচি ছাড়াই বিএনপি ক্ষমতার জন্য নির্বাচনের দাবি নিয়ে কেন হাজির হল-এমন অভিযোগ করলে এখনকার অান্তর্জাতিক কূটনৈতিক হালচাল আমরা বুঝতে পারব না। ফরহাদ মজহার বিএনপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন। এটা বহু পুরনো অভিযোগ। ক্ষমতার পালাবদলের আগে সাধারণত বামপন্থীরা এমন অভিযোগ করে থাকেন।

 

‘৪ জানুয়ারির অবরোধ : নগদ লাভ’ শিরোনামে ফরহাদ মজহার একটি প্রপাগান্ডা কলাম লিখেছেন। শিরোনাম পড়ে মনে হবে এটা একটা গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল টাইপের রচনা। খালেদা জিয়া এখনও অবরুদ্ধ। সরকার পুলিশি অ্যাকশন বহাল রেখেছে। আর মজহার সাহেব ‘নগদ লাভ’ খুঁজছেন। হ্যাঁ লাভটা তিনি খুঁজতেই পারেন। সুযোগসন্ধানী কুযুক্তি দিয়ে তিনি আবারও চোরা ভাবে জামায়াতের লাভের অঙ্ককে কৌশলে হাজির করছেন। বলাই বাহুল্য, এতে জামায়াত বা বিএনপি কারও লাভই হবে না। মজহারের লাভ হলেও হতে পারে।

 

তিনি লিখেছেন,

“কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্না আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হওয়ার সাধনা অব্যাহত রেখেছেন। যদিও দলছুট আওয়ামীপন্থীদের মধ্য থেকে নতুন কোনো রাজনীতি পয়দা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ‘আওয়ামী লীগ, তুমি ভালো হয়ে যাও’ জাতীয় নীতিবাগীশ আওয়ামী রাজনীতিও যে বর্তমান ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রধান কারণ সে ব্যাপারে কামাল হোসেন, মাহফুজ আনাম কিংবা মাহমুদুর রহমান মান্না বেহুঁশ সেটা বলা যাবে না। তারা তা জেনেছেন কিন্তু এ ক্ষেত্রে অপরিসীম অবদানে তারা নিত্যই তৃপ্ত। কিন্তু তারা খালেদা জিয়ার এই দুর্দশায় তার প্রতি সমব্যথী হয়েছেন। খালেদা জিয়া তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে চাইছেন। বোঝা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া অনেক মিত্রকে হারালেও আওয়ামীপন্থী সুশীলদের করুণা ও সমবেদনা কিছুটা পাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির জোটবদ্ধ হওয়া তাদের কাছে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করারা ভালো একটি অজুহাত, যা তাদের স্বভাবসুলভ ইসলামোফোবিয়াকে আড়াল করে রাখতে সাহায্য করে। তাদের বাসনা খালেদা ইসলামপন্থীদের ছেড়ে সুশীল রাজনীতির কাতারে আসুক। তারা তখন হাসিনাকে থুয়ে খালেদাকে বেছে নেওয়ার একটা যুক্তি খুঁজে পাবে। প্রতারিত হওয়ার এই হাতছানি থেকে বিএনপির নেতৃত্ব মুক্ত নয়।” (চিন্তাডটকম, ৮ জানুয়ারি ২০১৪)

 

খালেদা জিয়া তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইছেন এমন কোন খবর আমরা দেখি নি। মাহমুদুর রহমান মান্না ও ড. কামাল হোসেন মজহারের এই উদ্ভট ও কাল্পনিক গল্পগাথা নিয়ে এই লেখকের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আমার পয়েন্ট এখানে না। কামাল হোসেন, মান্না বা মাহফুজ আনামদের সাংস্কৃতিক পজিশনের ক্রিটিক মজহার করছেন রাজনীতির নিরিখে। রাজনীতিও সংষ্কৃতিকে আলাদা ভাবে আলোচনার জরুরত এখনও উনি রপ্ত করে উঠতে পারেন নি। উনিও আবার কালচারাইজেশন অব পলিটিকস বলে ত্তত্ব কপচার। উনারা সেকুলার এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু মজহার নিজে কি? মজহার আরও নোংরা ভাবে সেকুলার। এটা কেমনে বুঝবেন? তাঁর জিবন যাপন চিন্তা পদ্ধতী এগুলা সবই সেকুলার। মজহারের উপদেশকে বলা যয়,‘এক কানা কয় আরেক কানারে চলো এবার ভব পারে’ । মুখে ধর্মের কথা বললেই কউ ইসলামিস্ট হয়ে যায় না। মজহারও সেকুলার মুখে যাই জপেন না কেন। এই দিক থেকে যদিও না বুঝেন তাইলে এখানেই বুঝবার মতো পয়েন্ট টা আছে। উনি জামায়াতকে ‘ইসলামিস্ট’ বলে সেকুরারদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সোজা কথা হলো জামায়াত যে ধরনের ইসলামচর্চা করে এটাকে পশ্চিম গুডমুসলিম বলবে। এর গালভরা নাম হলো, মডারেড মুসলিম। মিলিটেন্ট ইসলামের দুনিয়াব্যাপি বিস্তারের যুগে জামায়াতকে ‘ইসলামিস্ট’ শক্তি মনে করা নিন্তান্তই সেকুলার বাতিক যা শাহবাগিরা করে থাকেন। ফলে মজহার যথন জামায়তকে ‘ইসলামিস্ট’ বলে হাজির করেন আর কালচারাল সেকুলারদের ইসলামোফোবিক বলেন তখন উনার ইসলাম বুঝের হাল-হকিকত দেখে হাসি পায়। জামায়াত নিজেকে ইসলামিস্ট বলে হাজির করতে চায় না। সে বিশ্বাস অর্থে ইসলাম করে। রাজনতি অর্থে সে গণতন্ত্রের গোলাম। সে গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিই করে। আইনী লড়াইয়ে সে ব্যাপক উৎসাহে হাজির হয়। ফলে জামায়াতকে ইসলামিস্ট বলে হাজিরের রাজনীতি অতি ধান্ধাজাত। ৭১ এ জামায়াত কি করছে সেই আলোচনা এখানে প্রাসঙ্গি না। ওটা আলাদা তর্ক।

 

মজহার জামায়াতকে ইসলামিস্ট বলে হাজির করছেন, আর বিএনপিকে বলছেন সুশীলদের পরামর্শ শুনে সে যেন জামায়াতকে ত্যাগ না করে। জামায়াতের সাথে যেন আরও শক্ত ভাবে লেগে থাকে মানে আরও প্রকাশ্যে যেন জামায়াতকে সাথে নিয়ে মাঠে হাজির হয়। মাঠের সম্পর্ক আর জামায়াতের সাথে বিএনপির টেবিলের সম্পর্ক যে এক না তা বুঝতে পারেনি মজহার। জমায়াত তার নিজ গরজে ও প্রয়োজনে মাঠের একশনে আছে, থাকবে। হাসিনার জঙ্গিবাদি টার্মকাডকে চেক দিতে হলে বিএনপি এখন যে কৌশলে আছে তাকেই জুতসই বলতে হবে। জামায়াতের সাথে সম্পর্ককে মাঠে ও টেবিলে আলাদা ভাবে ভাগ করেই আগাতে হবে। এতে কূটনৈতিক মহলের সুবিধাটা পুরোপুরি পাবে বিএনপি। এটা জামায়াতও বুঝে। মজহারের মতো হঠকারি চিন্তার খপ্পরে পড়লে আবারও হেফাজত আমলের মতো পরিণতি হবে বিএনপির। তখনও এই টাউট বুদ্ধিজিবি সক্রিয় ছিল। ফলে এখনই সাবধান হতে হবে।

 

খেয়াল করলে দেখবেন, জামায়াতের প্রতি বিএনপি এক ধরনের নিস্পৃহ আচরণ দেখিয়েছে। এই আচরণের ফলে এখনকার ‘সুশীল’ রাজনৈতিক সমাজ বিএনপির উপর খুশি। এবং কূটনৈতিক দেনদরবারে বিএনপির এই অবস্থান সহায়ক হচ্ছে। মজহারের ভণ্ডামি হচ্ছে, জামায়াতকে বিএনপির সঙ্গে একজোট হয়ে থাকার পরামর্শ দিয়ে যাওয়া, আবার জামায়াতকে ইসলামিস্ট বলে হাজির করা, এর ফলে জঙ্গিবাদের ট্রাম্পকার্ড চেলে আবারও বিএনপিকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দেওয়া। এটাকেই বলে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বিমুখী গাদ্দারি। অন্যদিকে জামায়াত কোনো ইসলামিস্ট শক্তি নয়। জামায়াত কোনো জঙ্গি শক্তিও নয়। জামায়াতের সঙ্গে লীগেরও মিত্রতা হয়েছিল ক্ষমতার প্রয়োজনে। বিএনপির মিত্রতাও ক্ষমতার প্রয়োজনে। জামায়াত তার হিসাব তার মতো করেই পুষিয়ে নেয়। জামায়াতের সঙ্গে আমেরিকার ভালো সম্পর্ক সবারই জানা। আমেরিকা কোনো জঙ্গি শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে এটা ভাবাও যায় না। ফলে জামায়াতকে জঙ্গি শক্তি আকারে বা ইসলামিস্ট আকারে হাজির করা, আবার এর প্রতিবাদ করা, আবার বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে লেগে থাকার পরামর্শকে ভণ্ডামিপূর্ণ চতুরতা হিসেবে দেখতে হবে।  সম্পর্কটাকে আদর্শিক করে তুললে বিএনপি ও জামায়াত উভয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হবে আর সুবিধা পাবে হাসিনার তখাকথিত জঙ্গিবাদের ও চেতনার রাজনীতি। ফলে মজহারের কুপরার্মশ থেকে বিএনপি দূরে থেকে সঠিক সীধান্ত নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

এই অবস্থায় বিএনপি যে লাইনে আগাচ্ছে তা স্রেফ কূটনৈতিক লাইন। আর এখানে জামায়াতের অবস্থানও নির্ধারিত। আদর্শিকভাবে জামায়াতের তথাকথিত ইসলামপন্থার সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রকল্পের’ জন্য সুবিধাজনক হবে। ফলে যারা বিএনপিকে জামায়াতময় হয়ে উঠতে পরামর্শ দেয় এরা সরাসরি মার্কিন যুদ্ধ প্রকল্পের দালাল। এরা সরকারের একমুখী নীতিরও গোপন সঙ্গী। প্রকাশ্যে বিশাল বিপ্লবী। বাংলাদেশের এই চাতুরী বুদ্ধিজীবীতা রাজনৈতিকভাবে আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে।  বিএনপি কেন সঠিক লাইনে আছে তা বুঝতে হলে আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতির দিকে একটু তাকাতে হবে।

 

কোমল ক্ষমতা কূটনৈতিক পরাধীনতার রাজনীতি:

রাজনীতিতে ক্ষমতার প্রশ্নের নানার ডাইমেনশন বা বৈচিত্র্য দেখা যায়। ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসানের পরে সারা দুনিয়ায় মার্কিন ক্ষমতা বেশ পোক্ত হতে শুরু করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের বছরেই (১৯৯০ সালে) হারভার্ড তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানী জোসেফ ন্যাই-ই ফরেন পলিসিতে একটি প্রবন্ধ লেখেন সফট পাওয়ার বা কোমল ক্ষমতা নামে। তিনি তর্ক তোলেন ক্ষমতাটা সব সময় অস্ত্র বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হাসিল বা তৈরি করা যায় না। কোমল ক্ষমতা বলে একটা ব্যাপার আছে যা কূটনৈতিকভাবে আমেরিকাকে সারা দুনিয়ায় প্রভাবশালী করে তুলছে। তিনি মত দেন, শুধু বাহুবল নয়, বাহুবলের বাইরে কোমল ক্ষমতার প্রভাব অনেক বেশি সম্প্রসারিত। প্রথম প্রথম বেশ ঠাট্টা-মশকরা করা হয়েছিল তার এই তত্ত্বায়ন নিয়ে। ৯/১১-এর পরে আমেরিকা যখন অনেকগুলো যুদ্ধে পর পর জড়িয়ে গেল কিন্তু যুদ্ধের ফলে মার্কিন প্রভাব বাড়ার বদলে কমতে থাকল তখন কূটনৈতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও মতাদর্শিক কিছু উদ্যোগ আমেরিকাকে বেশ সুবিধা দেয়, তখন জোসেফ আবার আলোচনায় আসেন। তিনি মনে করেন, প্রপাগান্ডা শুধু প্রপাগান্ডা নয়, এটা দ্বারা ক্ষমতা তৈরি করা যায়। এবং দেনদরবার ও অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপ সেনা হস্তক্ষেপের চেয়ে কম কার্যকর নয়। এর ফলে মার্কিন নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসে। যুদ্ধকে পাশ কাটিয়ে কোমল ক্ষমতার বিস্তার ঘটানোই এখন মার্কিন নীতির গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

এই দিকটি মাথায় রাখলে আমরা খালেদা জিয়ার পেশিশক্তির ঘাটতিকে নতুন ক্ষমতার পটভূমি আকারে বুঝতে পারব। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে খালেদা জিয়ার আচরণ খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বারবার অহিংস আন্দোলনের কথা বলেন। তাকে অবরুদ্ধ করে তার প্রতীকী ক্ষমতাকে কোমলভাবে বিস্তার ঘটাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দুনিয়ায় কোমল ক্ষমতার কদর আগের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে খালেদার কোমল আচরণ গণতান্ত্রিক ভাবে পশ্চিমের কাছে বেশি গ্রহণ যোগ্য হবে। লীগ যতই গোন্ডামি করবে ততই পিছাবে ক্ষমতা থেকে আর এগিয়ে যাবে এক্সজিট ডোরের কাছে।

 

সঙ্গে কূটনৈতিক পরাধীনতার রাজনীতিটাও খেয়াল করা দরকার। ১০ জানুয়ারি দৈনিক সকালের খবর শিরোনাম করেছে, ‘বিবৃতি ও ফোন নিয়ে ধূম্রজাল’। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা ও তারেক রহমানের খবর প্রচারে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের বিবৃতি দেওয়ার খবর নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে এখন আলোচিত খবর হল, বিজেপির প্রধান অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করেছেন। মারুফ কামাল সোহেল স্বাক্ষরিত একটা বিবৃতির সূত্রে এটা মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এটা ভুয়া বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে। বিএনপির তরফে যারা অতিউতৎসাহী হয়ে এ ধরনের খবর মিডিয়ায় প্রচার করে সুবিধা নিতে চেয়েছেন তাদের কোনোভাবেই বিএনপির জন্য কল্যাণকর শক্তি বলা যাবে না। এরা বিএনপির মধ্যে এক একটা কালসাপ হয়ে বসে আছে। অন্যদিকে সরকার যেভাবে এটাতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তাতে মনে হচ্ছে অমিত শাহের ফোনে বাংলাদেশের ক্ষমতার হেরফের হয়ে যেতে পারে। রাজনীতিতে জনসম্পৃক্ততার কথা বলছিলাম একটু আগে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির জনসম্পৃক্ত ধারণ এই কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপের সময় বারবার উদোম হয়ে যায়। সরাকার অমিত ইসূকে এমন ভাবে হাজির করল যাতে সরকারের ভারত অবসেশন আবারও আমরা জানতে পারলাম। আর জানতে পারলাম বিএনপিকে নষ্ট করার জন্য ঘরের লোকই যথেষ্ট। এইসব খুচরা চালকি পাশ কাটিয়ে সাউথ এশিয়াতে কোমল ক্ষমতার নীতি এখন বেশি গুরুত্ব পাবে। বিজিপির ক্ষমতায় আসার আগে মার্কিন নীতির পুরোপুরি বিজেপীর জন্য অনূকূল হয়ে উঠেছিল। কেজরি ওয়ালকে দিয়ে কনগ্রেসকে বেশ ভাল দাবড়ানি দেয়া হয়েছিল। ফলে বিজেপী কনগ্রেসের মতো বাংলাদেশে আমেরিকার উপর অভারটার্ম করবে না এমনটা সহজেই অনুমান করা যায়। ফরে আমেরিকা ও পশ্চিমের কোমল নীতি আর মাঠের গ্রহণযোগ্যতা ও অচালবস্থা বিএনপিকে আরও পরিণত করবে। ধীরে ধীরে ক্ষমতার জন্য পিপল কজ তৈরি হবে। এতে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে সরকার সুবিধা করতে পারবে না। কারণ নীতির পরির্বতনের সাথে সাথে কিং মেকার কাগজগুলোর ( প্রথম আলো ও ডিইলীস্টর দেকলে বুজবেন) ভূমিকা ইতিমধ্যে পাল্টে গেছে। ফলে কোমল ক্ষমার প্রত্যবির্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি।

 

আর এই সময়ে বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক সেজে ক্ষমতাধরদের অনুকূলে জাতীয় রাজনীতিকে এমনভাবে সাজান যেন একটা নির্বাচন হলেই জাতীয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই নির্বাচনবাদী গণতন্ত্রের বয়ান আমাদের কাবু করে রাখছে। আমাদের শাসনকাঠামোতে গণশক্তির গরহাজিরা পলিটিক্যাল ও ননপলিটিক্যাল এলিট ও তাদের অনুসারী বুদ্ধিজীবী মিলে পরিস্থিতিকে ভৌতিক করে তুলছে। গণতন্ত্রের নামে, জনগণের নামে জনবিরোধী রাজনীতির খুন উত্সব দেখছি কেবল। এ ধরনের দেউলিয়া আচরণ আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, আমাদের রাজনীতি ও ক্ষমতার চাবি আমাদের দেশের জনগণ ও মানুষের হাতে নেই। বাইরের কূটনৈতিক শক্তি ও তাদের এলিট এজেন্টরা ক্ষমতার চাবিকাঠি নাড়েন। মিডিয়াও সেভাবে জনমতের সেইপ বুঝে খবর করে। আমরা নির্বাচন বা ক্ষমতা পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে থাকি। ভায়োলেন্স চলে। সহিংসতার ভাষ্য তৈরি করা হয় জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য। চলে রটনার খেলা। প্রধান আকর্ষণ থাকে দেশের নয়, বাইরের নজর ফেরাবার চেষ্টা। কূটচালের ফেরে আমরা বুঝতে পারি আমার ঘরের চাবি পরের হাতে।

 

লেখক : কবি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

আসুন ঘৃণা করতে শিখি…

by WatchDog Bd

মানুষ অমানুষ ভাগ করার দুঃখজনক একটা সুযোগ দিয়ে গেল শিশু জেহাদ। তার মৃত্যু আমাদের কষ্ট দিয়েছে সন্দেহ নেই, তারপরও এ মৃত্যুতে খুঁজলে এমন কিছু পাওয়া যাবে যা নিয়ে জাতি হিসাবে আমরা গর্ব করতে পারি। মানুষ মরণশীল। যারা সৃষ্টিকর্তাকে জন্ম-মৃত্যুর নিয়ন্ত্রক হিসাবে মানেন তাদের কাছে শিশু জেহাদের মৃত্যুর হিসাব খুব সহজ। হয়ত তার ভাগ্যলিপির আশু বাস্তবায়ন হিসাবে বিবেচনা করবেন তারা। কিন্তু আমার মত যাদের মগজে উপরওয়ালার অস্তিত্ব নিয়ে লাখো প্রশ্ন কিলবিল করে তাদের কাছে যে কোন শিশুর মৃত্যু ঠাণ্ডা মাথার খুন ছাড়া অন্যকিছু মেনে নিতে কষ্ট হয়। হোক তা আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায়, হোক তা পাকিস্তানের পেশোয়ারে তালেবানদের নৃশংসতায়, হোক তা শাজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির সরকারী মৃত্যু-কুপের কারণে। একটা শিশু জন্ম নেয় বাঁচার জন্য, চার বছর বয়সে মারা যাওয়ার জন্য নয়। প্রত্যেকটা মা-বাবা তাই করার চেষ্টা করে। মা-বাবার পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও অলঙ্ঘনীয় দায়িত্ব শিশুকে আগলে রাখা। অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, চিকিৎসা, শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া। এসব নিশ্চিত করার জন্যই একটা দেশে সরকারের প্রয়োজন হয়। দরকার হয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতির। এজন্যই নাগরিকরা ভোট দেয়। পছন্দের মানুষকে দায়িত্বে বসায়। শুধু জেহাদ কেন, দেশের মাটিতে জন্ম নেয়া প্রত্যেকটা শিশুর অভিভাবক কেবল তার পিতা-মাতা নয়, বরং সব বিবেচনায় রাষ্ট্র তার মূল অভিভাবক। দুঃখজনক সত্য হচ্ছে মৃত্যু এ দেশে এখন গলির ধারের ফুচকার মত সহজলভ্য উপাদেয় পণ্য। প্রতিদিন জেহাদের মত শত শত শিশু মরছে। কেবল দুর্ঘটনায় নয়, মরছে অনাহারে, অবহেলায়, বিনা চিকিৎসায়, মরছে রাষ্ট্র তথা সরকারের বুটের তলায়। জেহাদের মৃত্যুর পার্থক্যটা হচ্ছে রাজনীতি তথা সরকারের নামে এ দেশে যে ভয়াবহ অরাজকতা ও অযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে তার আসল চেহারা কিছুক্ষণের জন্য হলেও নেংটা করে দেখানো। আমরা দেখেছি কতটা যোগ্যতা নিয়ে সরকারী চাকরি করছেন আজকের প্রশাসন ও তার প্রফেশনাল মেকানিজম। মুক্তিযোদ্ধার কোটা, দলীয় কোটা, পারিবারিক কোটার নামে দুদিন আগের রাস্তার সন্ত্রাসী এখন চাকরিতে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে জিহাদ উদ্বার পর্বে। ২৩ ঘণ্টা চেষ্টা করে যে কাজটা তারা করতে পারেনি তা আধা ঘণ্টায় করেছে কজন সাধারণ মানুষ। এখানেই উন্মোচিত হয় জাতি হিসাবে আমাদের আসল পরিচয়। এ পরিচয় রাজনীতির নষ্ট গলিতে পথভ্রষ্ট হলেও একেবারে যে তলিয়ে যায়নি তাই প্রমাণ করেছেন কজন সাহসী যুবক। এ বাংলাদেশকেই আমরা আবহমান কাল ধরে চিনে আসছি। এ বাংলাদেশকেই আমরা বুকে লালন করে ভালবেসে গেছি। লাখো মানুষের পতাকা রেকর্ড অথবা চেতনার বেলুনে মুক্তিযুদ্ধের ঝাণ্ডা উড়ালেই যে দেশপ্রেমিক হওয়া যায়না তার প্রমাণ রেখেছে জিহাদ উদ্ধারের শ্বাসরুদ্ধর কয়েক ঘণ্টা।

একদিকে অবৈধ মন্ত্রী, আগাগোড়া পচনশীল আমলাতন্ত্রে, সরকারের পোষ্য ও নিকট অতীতে লালিত পেটোয়া বাহিনীর সমন্বয়ে ঘটিত উদ্বার বাহিনী, অন্যদিকে এ দেশের কোটি মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা এবং সাথে ফারুক, লিটু, বকর, মজিদ, সুজনদের মত নিঃস্বার্থ কজন সাধারণ মানুষ। এ বাংলাদেশ নিয়েই আমরা গর্ব করতে পারি। আর যে বাংলাদেশের পরতে পরতে দুর্নীতির কুষ্ঠ রোগ, পিতার মাজারে লালসালুর ব্যবসা আর মজিদ, সুজন ও লিটুদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে হানিফ, হাসান মাহমুদ আর সুরঞ্জিত চোরাদের জন্য গড়া হয় স্বর্গের লীলাভূমি সে বাংলাদেশ আমার, আপনার কারও নয়। আর কিছু না পারি আসুন ঘৃণা করতে শিখি এমন রাষ্ট্রকে।

Failure of Politics?

By Ariful Hossain Tuhin

I usually don’t watch television. But my father is a passionate viewer of all kind of political talk shows, especially “ajker bangladesh” from independent tv.

Last night i was temporarily paused when some remarks from a guy in “ajker bangladesh” caught my ear.

Some lawyer i guess affiliated with AL, was saying something like this,

“Why don’t BNP create a popular movement to pressure government?”. Khaled mohiuddin, who runs the show, interrupted and told,

“How can BNP create a peaceful popular movement if the government fires live rounds even if its not a violent movement”

That guy answered along these lines

“The blame goes to BNP, if there were 200 people, police disperse them with sticks, if there were 2000 people, police fires at them, if there were 200000 people, police would not have done anything”

I was kind of shell shocked.

So the “freedom of association” clause in the constitution has condition of “head count” according to this lawyer guy. I don’t know where did he got his law degree.

This is a very dangerous way of thinking. The liberal democratic values dictates that , the state has to justify its use of force. Otherwise it has no right to suppress any kind of political protest even if it dislikes it. Yes i understand there are cases when BNP and jamat resorted to violent means where police may have the justification to use force. In all circumstances, they have to held accountable. A state can not behave in an arbitrary way, otherwise the very foundation of the state become void and illegitimate.

Liberals who are still supporting AL in this issue, that is, suppressing each and every BNP protests/rallies, have to do some soul searching. Where is exactly is their “liberal conscience “? This way the gets a kind of dangerous impunity which has a lot of side effects.

Its just a matter of time, that those police will attack preemptively in other scenarios. Just like they violently attacked primary school teachers, garment workers. It will turn against the liberal themselves if they fall out of favor just like Gonojagoron moncho.

This is not a debatable issue as our constitution guarantees “freedom of association”. And if there is no evidence of “violence”, the state has no choice to abide by it.

I once read in a article criticizing our constitution, I can’t cite it, because it was published in a print journal, where it was claimed that the the fundamental rights guaranteed in our constitution can not be enforced by a court(Like it can be enforced in USA). That means, i can’t file a writ petition to ask the court to enforce my “freedom of speech” and “freedom of association”. I’m not an expert, but if that’s the case, then constitution has little practical value as the court will not be able to check the state if the state violates fundamental rights. The argument put forwarded in that article was There are certain portion of the constitution which can not be enforced by the court. This is a serious shortcoming. (If anybody interested i can give him the copy of the journal)

Another thing is that guy subconsciously stated an obvious. Its not possible to overthrow this government by normal democratic politics. As he claimed , the state’s gun will only be silent if there were 2000000 people. So only an angry mob with pitchfork can make them behave. The government doesn’t believe in rule of law. They believe in mob justice. I should thank him for this simple honesty.

সহজিয়া বাংলার লাঠিয়াল

By Ariful Hossain Tuhin

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম থিসিস সুপারভাইজরের সাথে দেখা করতে। গিয়ে দেখি লাঠি সোটা নিয়ে ছাত্রলীগের ছাত্ররা ক্যাম্পাস দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। একে ওকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম আজ কোন একটি গ্রুপকে পেটানো হচ্ছে। হয়ত অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্যদের অথবা নিজেদের রাজনৈতিক দলেরই অন্য কোন গ্রুপকে আজ পেটানো হয়েছিল।

আমার মধ্যবিত্ত চিন্তাভাবনা প্রধানত “আপনি বাচলে বাপের নাম” দ্বারা প্রভাবিত। সুতরাং আপাতত যেহেতু আজকে ছাত্রলীগ দ্বারা মার খাবার সম্ভাবনা আমার নেই তাই আমি আমার কাজে চলে গেলাম। বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি সচেতন মানুষ হিসেবে যে গভীর উদ্বেগ হবার কথা, তার কিছুই হল না। থিসিসের ক্যালকুলেশনগুলো কোনদিকে যাচ্ছে সেটাই তখনকার চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়ালো।

কাজ শেষে অফিসে আশা পর্যন্ত জনাপঞ্চাশেক ছেলের লাঠি নিয়ে দৌড়াদৌড়ির দৃশ্যটি আর মনে ছিল না। সম্ভবত কিছুদিন আগে তারেক রহমানের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এই মারামারির উদ্যোগ। “রোল রিভার্সাল” হলে এই পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে না। তখন হয়ত সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য কেন্দ্রকরে লাঠিসোটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি হবে।

নিজেদের নেতার মানসম্মান রক্ষার জন্যে এধরনের উদ্যোগ আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের এই দেশে সকল বিখ্যাত এবং কুখ্যাত লোকেরই খুবই ঠুনকো ভাবমূর্তি রয়েছে। হোক সে ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক নেতা। সকল ক্ষেত্রেই তাদের মানসম্মান রক্ষার জন্যে সেই নেতার অনুসারীদের বিপুল তোড়জোড় দেখা যায়। এত নাজুক যাদের ভাবমূর্তি তাদের প্রতি করুণার উদ্রেক হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এত বিপুল শক্তি এবং মনোযোগের সাথে তাদের ভাবমূর্তি ২৪ ঘন্টা ৭ দিন পাহাড়া দেয়ার প্রপঞ্চটিও আমার কাছে বেশ দুঃখজনক লাগে। তবে আমি দুঃখ পাই এইজন্যে নয় যে দেশ এবং জাতির অনেক “মানব ঘন্টা” তুচ্ছ কাজে নষ্ট হচ্ছে। প্রথমত যারা লাঠিসোটা নিয়ে দৌড়ে থাকেন, তাদের কাছে বিষয়টি অবশ্যই তুচ্ছ নয়। আর এই দৌড়াদৌড়ি বাদ দিলে যে মানব ঘন্টা একাজে ব্যবহার হয় তা অন্যকোন উতপাদনশীল কাজে ব্যবহার হত সেই বিশ্বাস আমার নেই। তাছাড়া সবকিছুতে অর্থনৈতিক হিসেব কষা এবং দেশ ও জাতির উন্নতির কথা অর্থনৈতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রীয়ার মাঝে একধরনের যান্ত্রিকতা যা আমার ঠিক রোচে না। কারো লাঠি নিয়ে দৌড়াতে ইচ্ছে করলে দৌড়াবে। আমার মাথায় না মারলেই হল। আমার দুঃখবোধ হয়, এই দৌড়াদৌড়ির মত কাজে জীবন ব্যয় করে বেচারাদের একধরনের একঘেয়েমি আসার কথা। বাংলাদেশের সরকারী দলগুলো ৫ বছরে দৌড়াদৌড়ি করে হাঁপিয়ে পরে। যদিও আওয়ামী লীগ এইবার কিছুটা দীর্ঘসময় ধরে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু তাদের দৌড়ের মধ্যে অবসাদের লক্ষণ স্পষ্ট। মাঝে মাঝেই তাদের দৌড়াদৌড়ির প্রধান কারন হয় প্র্যাকটিস। কিন্তু কাঁহাতক প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলা যায়?

যাই হোক, অফিসে এসে আমার আর এস এস রিডারে বিভিন্ন জিনিসের এলার্ট ঘাটছি। একটি পেপারের দিকে নজর ফিরল[১]। পেপারের বিষয় একটি পপুলেশনে কিভাবে গোত্র তৈরী হয় তার গাণিতিক মডেল।

সামাজিক পদার্থবিজ্ঞান , পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারনা সামাজিক ক্ষেত্রে প্রয়োগের চেষ্টা করে। এই পেপারটিও সেই ধারার অন্তর্ভুক্ত।

এখানে যা প্রয়োগ করা হয়েছে তা আমাদের চিরপরিচিত পারিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞানের ধারনা। পারিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞানে কোন সিস্টেমে কণাগুলোর আলাদা করে গতি হিসেব না করে তাদের গতির একটি সম্ভাবনাভিত্তিক অনুমান গ্রহন করা হয়। দেখা যায় সাধারন সেই অনুমান থেকে ম্যাক্রোস্কোপিক বিভিন্ন বৈষিষ্ট্য যেমন তামমাত্রা ইত্যাদি উদয় হয়।

যেহেতু একজন ব্যক্তিমানুষের জন্যে তার ব্যবহারের কোন সুনির্দিষ্ট তত্ব দাড়া করানো কঠিন, তাই তার ব্যবহারের কিছু সাধারন অনুমান গ্রহন করে দেখা হয় পপুলেশন লেভেলে কি ধরনের বৈশিষ্ট্য emerge করে।

এই পেপারে আলোচনা করা হয়েছে মতামতের ডাইনামিক্স। দেখার চেষ্টা করা হয়েছে কিভাবে স্বতপ্রণদিতভাবে নেতা তৈরী হয়। গবেষণার ফলাফল বেশ মজার। দেখা গেছে ধীরে ধীরে পপুলেশনে একটি “সেকেণ্ড অর্ডার ফেইজ ট্রানজিশন”(সেকেণ্ড অর্ডার ফেইজ ট্রানজিশনের সহজ উদাহরন ফেরোম্যাগনেট, যেখানে ডোমেইন তৈরী হয়) হয়। এর ফলে বেশ কিছু গোত্র তৈরী হয় তারা পরস্পরের থেকে মতামতের ব্যপারে আলাদা।

যেহেতু এই প্রবণতা জেনারালাইজড পপুলেশনের জন্যে, সেহেতু গোত্র তৈরী, এবং এক গোত্রের অন্য গোত্রের প্রতি লাঠি নিয়ে দৌড়ানো দেখে অবাক হবার কিছু নেই। আমাদের মধ্যবিত্ত মন হয়ত এইসব লাঠিসোটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি দেখে সামান্য আহত হতে পারে। কিন্তু এই আহত হওয়া অনেকটা প্রাকৃতিক বর্জ্যের মত। প্রাকৃতিক বর্জ্যের গুরুত্ব আমরা কেউই অস্বীকার করিনা। কিন্তু চোখের সামনে দেখলে আমাদের ভদ্রতা শুচিতা ইত্যাদি আহত হয়। তেমনি লাঠিসোটার ঝংকার যা ইতিহাসের শুরুথেকেই আমাদের প্রজাতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সেটিকেও অস্বীকারের কোন কারন নেই। শুধু চোখের সামনে না ঘটলেই হল।

এই অঞ্চলের লোকজন প্রকৃতিবিরুদ্ধ “মানবাধিকার”, “সম অধিকার”, “বাকস্বাধীণতা” ইত্যাদিকে গ্রহন করতে প্রস্তুত নয়। প্রধান কারন অবশ্যই এইগুলো সত্যিকার অর্থে প্রাকৃতিক নিয়ম নয়। এই যায়াগায় টমাস জেফারসনের সাথে দ্বিমত করতেই হচ্ছে। এইসব অধিকার আমরা জন্মের সাথে সাথে পেয়ে যাই না। ইদুড়ের কোন অধিকার যেমন বিড়াল স্বীকার করে না, তেমনি আমাদেরও ইনট্রিনসিক কোন প্রণোদনা নেই অন্যমতের বা অপছন্দের মানুষের অধিকার স্বীকার করার মাঝে।

লাঠালাঠিই আমাদের আসল চেহারা। সেই চেহারার পরিবর্তন চাইলে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেতে হয়। অনেক জাতি কিছুটা সেই বিরুদ্ধযাত্রার পথে যাচ্ছে। আমরা অনেক প্রকৃতির কাছে বসবাস করি। আমদের দার্শনিকরা বলেন যে আদিকালে মুসলমানরা এবং নিম্নবর্গের অচ্ছুত দলিতরা সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখত না, সে আদিকালে আমাদের সহজিয়া ভাবান্দোলন ছিল যা প্রকৃতি এবং প্রতিবেশের জন্যে একই সাথে মমতা এবং দ্রোহের প্রতীক। সুতরাং আমাদের সহজিয়া হওয়া উচিত এবং প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে এবং সহজিয়া যুগের মাঝে আমাদের আত্নপরিচয় আবিস্কারের মাধ্যমে অন্য গোত্রের মাথায় দুই বেলা লাঠির বাড়ি বসানো উচিত। নাহলে আমাদের প্রাকৃতিক উতস এবং তার সাথে সংযুক্ত দেহবাদী ভাবান্দোলনের অপমান হয়।

[১] Mosquera-Donate, G. & Boguna, M. Follow the Leader: Herding Behavior in Heterogeneous Populations. arXiv (2014)
http://arxiv.org/abs/1412.7427

জিয়া হায়দার ও জাফর ইকবাল

1

রেজাউল করিম রনি

জাফর ইকবালের আবেগী ফটকাবাজি ও জিয়া হায়দার রহমানের সূত্রধরে আামদের বুদ্ধিজিবিতা নিয়ে কুইক মন্তব্য:

“within any given system, there are claims, which are true but which cannot be proven to be true…
–Zia Haider Rahman, `In the light of what we know’.

“ওর কান্ডজ্ঞান আমারে মুগদ্ধ করছে। প্লেবয় সশী থারোরে জিয়া যখন ধুয়ে দিল তখনই অামি বুজেছি এই চিজ অন্য কিসিমের। রাবীন্দ্রিক বলয় ভেঙ্গে ফেলতে ওর প্যাটার্নটা কাজে লাগবে। যদিও ও একটু হট মেঝাজের পুলা।”– রেজাউল করিম রনি ( ওর সাথে দেখা করার পরে,২৩ নভেম্বর ২০১৪ তে প্রথম স্টেটাস এ কথা কইছিলাম)
বাংলাদেশের মিডিয়া বিশেষ করে প্রথম আলো যখন জিয়াকে ব্যাপক কাভারেজ দিতে শুরু করছে,তখন একটু অবাক হইছিলাম। এটা তো করার কথা না। কারণ জিয়া তো পাকিস্তানকে ঘৃণা করে না। জিয়া সেক্যুিলারিটিকে ধুয়ে ফেলছে। জিয়া পশ্চিমা আধুনিকতার তলায় হেমার দিয়া এমন এক বারি মারছে যে এর তলাটা ফুটা হয় হয় করতাছে। পশ্চিমে উপন্যাসের বাজার তৈরিতে যেসব ম্যাকানিজম কাজ করে তা সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নাই। গার্ডিয়ান জিয়াকে লাইম লাইটে আনছে ( এতে মূল ভূমিকা নিছে এজেন্টরা)। প্রথম আলো ও অন্য কাগজগুলা গার্ডিয়ানকে ফলো করছে কানার মতো। যা হোক অামি জিয়ার একটা ইন্টারভিউ করেছি ঢাকাতে। তার পরে দ্রুত বইটা পড়ে একটা খসড়া লেখা লিখেছি(নিচে লেখার লিঙ্কটা দিছি), দেখলাম যারা জিয়াকে নিয়ে কথা বলছে এদের বেশির ভাগই জিয়ার বইটা পড়ে নাই। আর সবচেয়ে অবাক হইলাম এরা কেউ বলতে পারছে না জিয়া কেন জরুরী। মিডিয়া হুজুগের বাইরে জিয়া আসলে কেন গুরুত্বপূর্ণ তার কোন রিডিং আমি দেখি নাই। জিয়ার বইটা হজম করার জন্য যে ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে সুবিধা হয় তা বাংলাদেশের পাঠকদের সবার নাই্। পাঠকরা দেখলাম আহাম্মকের মতো জিয়াকে প্রশ্ন করতেছে, ‘আপনার বইয়ের চরিত্র ( যে ঘনটা বর্ণনা করছে) হেতে পাকিস্তানী কেন?
জিয়া পাঠকদের প্রশ্ন শুনে বেশ বিরক্ত হইছে। কিছু ভাল প্রশ্ন ছিল অবশ্য। বাংলাদেশের হাকাও জাতীয়তাবাদ একটা ঘৃণার সংস্কৃতির উপর প্রতিষ্ঠিত এটা জিয়া চক করে ধরে ফেলেছেন। ফলে সে বাংলাদেশের চতনাধারি লোকদের একরকম ইগনোরই করছে। বাংলাদেশ নিয়া সে যে প্রগতীশীলদের মতো গদগদ না এটা বইটার রিভিউ পড়েই টের পাইছিলাম। পরে হাতে নাতে প্রমাণ পাইলাম। যাক মূল আলাপে ফিরি।

আবুল মকসুদ একজন পেশাদার বুদ্ধিজিবি। তাঁর বুদ্ধির চেয়ে কাফনের কাপড় জড়াই হাটাচলা উনারে বেশি পরিচিতি দিছে এটা অনেকে মনে করেন। এটা হতেই পারে। প্রতিকের একটা গুরুত্ব আছে। সহজে চেনার জন্য এটা ভাল। আপনি যদি সব জায়গায় কাফনের কাপড় পড়েন, ফাইভ স্টার হোরেঠে লুঙ্গি পড়ে যান আপনাকে দ্রুত চোখে পড়বে। এটা ভাল টেকনিক। উনার কোন লেখা না পড়লে বাংলাদেশের কোন বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষতি হবে না। মানে চিন্তার ব্যাসিক কোন কনট্রিবউশন নাই। বাট, কিছু কোদালি কাজ করছেন তিনি। বেশ কিছূ গবেষণা বই আছে। যারা এসব বিষয়ে কাজ করবেন পরে এদের জন্য এগুলা ইউজফুল হবে। যাক তিনি জিয়ার একটা কথা ধরে প্রথম আলোতে একটা চিকনা কলাম লেখছেন। কলাম লিখে তিনি জিয়ার কথার সাথে গভীর অসন্তোষে সহমত পোষন করেছেন। কথাটা হলো, ‘বাংলাদেশ মৃত আইডিয়ার দেশ’

পরে গত শুত্রবার বাংলার বুদ্ধিজিবিতার জিবন্ত ‘কৌতুক’ জাফর ইকবাল একটা লেখা লিখেছেন। জাফর ইকবালের লেখা-লেখি বাংলা সিনেমার থিউরি ফলো করে আগায়। আপনি যদি ‘আবগে না কান্দেন’ -তাইলে মূল্য ফেরত টাইপের লেখক তিনি। তিনি মেইনট্রিম মানে আওয়ামী স্টিমারের যাত্রী। প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানপ্রচারক( আধুনিক কালের যাজক বরতে পারে) তিনি ড্রোন বিশেষজ্ঞ। আলোর ঠিকাদার। উনি বুদ্ধিজিবিতা বলতে বুঝেন, ‘চেতনা’ ‘কলোনিয়াল দেশ প্রেম’ ‘৭১’ তিরিশ লাখ’ মা-বোনের ইজ্জত’ তিনি বিভিন্ন এনজিও টাইপের উদ্যোগকে বিপ্লব মনে করেন এবং এগুলার খাস সৈনিক তিনি। ফলে শহরের ফার্মের মুরগি টাইপের কিছু পুলাপান জাফর ষ্যার বলতে অজ্ঞান। এইসব মিলে তিনি একজন মিষ্টি মানুষ। দুনিয়া সম্পর্কে কোন খোঁজ খবর রাখার দক্ষতা তার আছে এটার কোন প্রমাণ আমি পাই নাই। মনে হয় সব কিছুতে একটা সমাধান হইল আবেগঘন একটা লেখা লিখে ফেলা-এটাই ইকবালীয় স্টাইল। কাঁদো কাঁদো আবেগে ফেটে পড়তেই উনার পাঠক রেডি থকে। তার কোন রকম ইনটেলেক বা ইনন্টারভেনশনাল রোল এই যাবৎ দেখা যায় নাই (শাহবাগে তিনি জাতীয় পতাকার দায়িত্ প্রজন্মে হাতে দিছিলেন, পরে প্রজন্ম গানজার কলকি হাতে নিছে এই দায়িত্ব ফালায়া)।
অন্য অনেকের মতো আবেগের জাহজে উঠায়া তিনি কিছু মিসকনফিডেন্ট শো করেন এটা বাংলাদেশের অক্ষম রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্রের সাথে একাকার ( মনে রাখুন রানা প্লাজা শ্রমিক উদ্ভার নিয়ে সরকারের মিথ্যা বাচালতা)। বাংলাদেশের বুদ্ধিজিবিতার মতো অসুস্থ্য কোন খাত আছে কি না খুজে দেখতে হবে। এখানে এখনও কাল্টফিগার বানানোর প্রতিযোগিতা চলে। ব্যাপক অযোগ্যতা নিয়া শিক্ষার অহংকারে ফেটে পড়ে আমাদের প্রগতী-অন্ধরা। যাক জাফর ইকবাল কি লিখল? লেখাটা মধ্যে ২ টা পয়েন্ট আছে। তিনি নিজেকে জিয়া হায়দার ও আবুল মকসুদের চেয়ে বিশ প্রগতীশীল বলে দাবি করলেন। ২. তিনিও ১৮ বছর বিদেশে ছিলেন এবং বিদেশে থেকে দেশ নিয়ে কথা বলা অনুচিত তাই তিনি দেশে এসে দেশ নিয়ে কথা বলছেন। এর বাইরে আর কোন পয়েন্ট আমি পাই নাই। এটা আমার মূর্খতা হলেও হতে পারে।

১. জিয়া ও মকসুদ সাহেব দুজনেই বলেছেন, ২ মহিলা দেশকে মৃতদের লাশের উপর ভর করে শাসন করছে(রিপোর্টসূত্রে)। এরা দু জন যে ‘প্রধানমন্ত্রি’ এটা না বলে ‘মহিলা’ বলাটা পশ্চাৎপদতা। জাফর ইকবাল এখানে নারীবাদি পজিশন নিয়ে নিজেকে এই দুজনের চেয়ে বেশি প্রগতীশীল প্রমাণ করলেন। আশা করি আপনারা একমত হবেন, এটা নিয়ে কথা বলার কোন মানে হয় না। এই ২ জন নারী-পুরুষ বা বনমানুষ যাই হোক না কেন তাতে জিয়ার কথার মেরিট নষ্ট হয় না। আর ক্ষমতার কোন জেন্ডার নাই। ফলে নারীকে নারী নামে ডাকার মধ্যে কোন সমস্যা নাই। জাফর ইকবাল এখনও গ্রাম্যতা ত্যাগ করে পুরাপুরি আধুনিক হওয়ার লড়াইয়ে আছেন ফলে এটা তাঁর কাছে একটা কঠিন চিন্তার বিষয় হইছে।

২. বাংলাদেশের যারা বিদেশে পড়ে দেশে ফিরে এরা কিছু টার্ম মুখস্ত করে নিজেরে পন্ডিত ভাবতে শুরু করে। এটা আমারে কইছিল আজফার ভাই। আমার কাছে এদের অবস্থা হলো, এমন একটা গরুর মতো যে তার গোয়াল চিনতে পারতেছে না। গোয়াল ঘর না চিনতে পেরে আবুল তাবুল ছুটাছুটি করতে করতে গোবরের নালায় এসে উস্টা খায়, এবং তখন শুরু করে সাগরের গপ্প।

এই হলো বিদেশ ফেরত বুদ্ধিজিবির হালত।

এরা কেউ অরগানিক হইতে পারে না হীনমন্যতার কারনে। পশ্চিম নিয়ে একটা অবসেশন থেকে যায়। এরা নিজেরে ব্রক্ষণ মনে করে। বাট কেউ এদের পুছে না। কারণ এরা যে চিন্তায় আটকা পড়ে আছে তা পশ্চিমে ২০০ বছর আগেই বাদ হয়ে গেছে। এটাই দেশে এসে অণুবাদ করতে যায়া তালগোল পাকায় ফেলে। গ্লোবাল এপরোচটা ধরতে পারে না। খালি সুযোগ দিতে চায়। বাংলাদেশের দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বুদ্ধিজিবিরা আামদের দেশে যাতা আমদানি করেছে এতোদিন। এখন এই অবস্থাটার অবসান হতে চলেছে। কারণ গ্লোব ইজ এভরি হয়ার। ফলে জাফর ইকবাল যখন বলেন, আমিও ১৮ বছর বিদেশে থেকেছি। পড়েছি। তিনি উম্মাদের মতো জিয়াকে পশ্চিমা দলের লোক বলে নিজে জাতীয়তাবাদি বীর সাজতে চান। অথচ বাস্তবতা হলো জিয়া পশ্চিমকে যে থাপ্পরটা দিয়েছেন, এটা কল্পনা করলেই জাফরদের দম শুকায়া যাবে। তার লেখা পড়ে বুঝা যায় জিয়ার এই সফলতা তারে প্যারা/পিড়া দিতেছে। ১৮ বছর কেন ১৮ হাজার বছর বিদেশ থাকলেও যার কান্ডজ্ঞানই থাকে না তার ডেলিভারি জাফরইকবাল টাইপেরই হবে। বিদেশে পড়াটা বা যাওয়াটা যারা জাতীয় ঘটনা মনে করে এরা যাস্ট কুশিক্ষার প্রোডাক্ট। জিয়া আইডিয়া ও চিন্তাশীলতার যে জায়গায় গিয়ে পশ্চিমকে ধোলাই দিছে এটা করতে হলে যে পরিশ্রম ও অভিনিবেশ লাগে তা কোন ভাড় বুদ্ধিজিবিতা দিয়ে এচিভ করা যাবে না। জিয়ার বইটা নিয়ে জাফরের কোন কথা চোখে পড়েনি, তার কি কথা নিয়ে মিডিয়া রিপোর্ট করেছে এতে বাংলাদেশের ইজ্জত গেছে –তাই নিয়ে উনি চিন্তিত। জাফর ইকবাল টাইপের লোকজন যতদিন তথাকথিত মূল ধারা থাকবে ততদিন বাংলাদেশের কোন ইনটেলেকচুয়াল ইজ্জত তৈরি হবে না আমি বাজি ধরে বলতে পারি এটা। বাংলাদেশের লোকজন (শিক্ষিতরা) কি পরিমান ফাটকা তা জিয়াকে নিয়ে মিডিয়াবাজি ও জাফর ইকবালের অক্ষম আউটবাস্ট দেখে বুঝা গেল। বাংলাদেশে চিন্তাশীলতার নামে কিছু লোক জাতীয়তাবাদি জিকির তুলছে, কিছু লোক তাত্বিক কেলেঙ্কারি করছে… আর কিছু লোক নিজের অশিক্ষা-কুশিক্ষাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়ে জ্ঞান বলে চালিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের অরগানিক ইনটেলেকচুয়াল কই? আর একটা দল আছে এরা অরগানিক ধান্ধাবাজ। কোন ইনডেপ্থ ক্যাপাসিটি নাই খালি রেটরিক্যাল কথা বলে বাজার গরম করতে মরিয়া হয়। ইস্যু দেকলে আলোর পতঙ্গের মতো ঝাপাই পরে। এদের নষ্টামিকে আমি থিওরিটিক্যাল স্কেন্ডাল বলি, এরা সবচেয়ে বেশি বিভ্রন্ত করতে সক্ষম। এর বাইরে কিছু পার্টিজান লোক আছে বুদ্ধিজিবি নামে। আর ব্যাপক ভাবে আছে নিজেকে কাল্ট ফিগার বানানোর প্রতিযোগিতা। আমি থিওরিটিক্যাল ভায়োলেন্স করে এই সব কাল্টফিগার ও মিসকনফিডেন্ট কেরেকটার ভেঙ্গে দিতে আপনাদের দাওয়াত দিতে চাইতাছি আপদত।

জিয়াকে নিয়ে আমার লেখা থেকে কয়েক প্যারা…
“সাম্প্রতিক এক আলাপে বলেছেন, বাংলাদেশ মৃত্য আইডিয়ার উপত্যকা। কী অর্থে, এখানে আইডিয়া দ্বারা আলোড়িত হওয়ার চেয়ে মৃতদের ছায়ার দ্বারা আমরা বেশি আলোড়িত। তিনি মনে করেন, এখানকার ক্ষমতাসীনরা মৃতদের ছায়ার ওপর দাঁড়িয়ে একটা পারিবারিক শাসন কাঠানো তৈরি করেছে।
তিনি বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন টেরিটরির বা ভাষার অর্থে বোঝেন না। তিনি বোঝেন বিশ্ব বা গ্লোবের মধ্যে অন্য সব বিষয় আশয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করে। বাংলাদেশের হূদয় হতে এ যেন একটা প্রকৃত বিশ্ব আওয়াজ। কথাটা ঠিক হল না সিলেটি হূদয় হতে বিশ্ব আওয়াজ। বাংলাদেশে বা এ ধরনের সাংস্কৃতিক-কলোনিয়াল এলাকার জন্য জিয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ লেখক এজন্য না যে তিনি গ্রামে বা রুরালের জন্ম নিয়ে বিশ্ব ফেনোমেনা হয়েছেন।
তিনি গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, তিনি মানবসত্তার লড়াইটা ধরতে পারেন। তিনি বোঝেন আইডিয়া বা চিন্তার লড়াই দিয়ে কেন্দ্র-প্রান্ত একাকার করে দেওয়া যায়। তিনি পশ্চিমকে ডিসেন্টারিং যেমন করতে চেয়েছেন তেমনি প্রান্তের টেনশনকে লোকাল সংস্কার থেকে মুক্তি দিয়েছেন। বিদ্রোহের এমন ধারালো, ক্ষ্যাপাটে ধরন পৃথিবীর জন্য অতি জরুরি ছিল। ২১ শতক যেন জিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। জিয়ার আওয়াজ শুনছে বিশ্ব।”

(জিয়া হায়দার রহমান: এক বিস্ময়কর বিশ্ব-আওয়াজ–রেজাউল করিম রনি, দৈনিক সকালের খবরে প্রথম প্রকাশিত)

“জিয়া হায়দার রহমান এখন একটা ফেনোমেনা/ঘটনা। আর বাংলাদেশের মিডিয়াতে জিয়াকে নিয়ে যা চলছে তা ফ্যাশনের পর্যায়ে চলে গেছে। শুরু থেকে জিয়া হায়দার রহমানকে যে কারণে বাংলাদেশে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা হল, তিনি ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত’ বলে। মজার ব্যাপার হল, আপনি যদি জিয়ার লেখা পড়েন বা জিয়ার প্রকৃত কাজের জায়গাটা ধরতে পারেন দেখবেন তাঁকে বাংলাদেশের ব্যাপারে খুব আবেগাপ্লুত দেখা যাবে না।
জিয়ার কথাতেও আপনি হতাশ হতে পারেন। ফলে মিডিয়া যে অতিরিক্ত দরদ তৈরি করছে তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এবং এই দরদি কাভারেজ জিয়ার কাজের গুরুত্ব বুঝতে ও ‘পাঠ’ তৈরিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। সেদিকে মনোযোগ রেখে আমরা সংক্ষেপে জিয়ার কাজের জায়গাটা বুঝতে চেষ্টা করব।
বিশ্বসাহিত্য ও জিয়া : জিয়া যেই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে লেখালেখিকে এগিয়ে নিয়ে যান এর জন্য তাঁকে কোনো রকম কেন্দ্র-প্রান্ত ধারণার আশ্রয় নিতে হয় না। তারপরেও বাস্তবতা থাকে, তিনি প্রান্তদেশীয় লোক হিসেবে কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক করতে গিয়ে যে ধরনের মুশকিলের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তা জিয়াকে কিছুটা ক্ষ্যাপা করে তুলেছে।
এটাকে বলতে পারেন, সাংস্কৃতিক শ্রেণি সংগ্রাম। জিয়া বারবার শ্রেণির কথা বলে। এই সংগ্রামটা জিয়াকে করতে হয়েছে। এটা করতে করতে তিনি নিজেকে ব্যাপকভাবে ভেঙেছেন। কেন্দ্র-প্রান্তের টেনশন কাটিয়ে নিজের কাজের পদ্ধতিটা ধরতে পেরেছেন। এটা খুব নতুন প্রবণতা, এমনটা বলা যাবে না।
২০০৫ সালে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক একটা বই লিখেছেন, ‘ডেথ অব অ্যা ডিসিপ্লিন’। তিনি এর মধ্য দিয়ে তিনি তুলনামূলক সাহিত্যের মৃত্যু ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, তুলনামূলক সাহিত্য বলে কোনো সাহিত্য নেই এই কালে, যা রচিত হচ্ছে তা ‘সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া সাহিত্য’, যা প্রকৃত অর্থে বিশ্বসাহিত্য।
এটা যেখানে বসেই রচিত হোক না, এটা এখন বিশ্বসাহিত্য হয়ে উঠতে পারে। এই ধারণাটা পরিষ্কার করতে গায়ত্রী ‘প্ল্যানেটরি’ শব্দটি ব্যবহার করেন। জিয়াও সীমানা ছড়িয়ে গেলেন। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া তরুণ এই লেখক কীভাবে সীমানা ছাড়িয়ে গেলেন? ইংরেজিতে তো অনেকেই লিখে। কিন্তু জিয়া কেন এত গুরুত্ব পাবেন?
প্রথম কথা হল, পশ্চিমে বা ইংরেজি ভাষাভাষি লেখালেখির জগতে বিশেষ করে উপন্যাসের বাজার তৈরিতে এজেন্টদের ভূমিকা লেখকদের চেয়ে বেশি। লেখক লিখেন। বাকি কাজটা খুব ঝমকালোভাবে করা হয়। নানা লেখককে নিয়ে বাজার গরম করার জন্য পেশাদার এজেন্ট খুব শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন। এরা মিডিয়াতে গিমিক তৈরি করতে বেশ পারদর্শী।
এর ফলে অনেক সময় মিডিয়ার হুজুগ দেখে কোনো লেখককে পাঠ করতে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন ঘন ঘন। তেমনি জিয়াকে নিয়ে বিশ্বমিডিয়ার কাভারেজেও এই হাইপ বা ওভারটোনটা ছিল। কিন্তু এই হাইপ কাটিয়ে জিয়া ধীরে ধীরে আপন গুরুত্বে ফিরতে শুরু করেছেন।
জিয়ার কাজের গুরুত্ব আঁচ করে সবচেয়ে কার্যকর ২০০১৪ সালের ১৯ মে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড এজ উই নো ইট’ নামে নিউইয়র্কারে লিখেন জেমস উড। উডের লেখাটা জিয়ার গুরুত্বকে বুঝতে প্রাধমিকভাবে বেশ সাহায্য করে। জিয়া ইংরেজি ভাষা লিখে সীমানা অতিক্রম করেননি। বিশ্বের লেখকে পরিণত হননি। তিনি সীমানা অতিক্রম করেছেন ‘আইডিয়া’ ডিল করে। তাঁর উপন্যাসের ভূগোলও ব্যাপক।”

দিয়েন বিয়েন ফু হতে বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও একদল হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রুগী..

By Watchdog BD

সোভিয়েত কম্যুনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও দেশটার প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ যেদিন মারা যান সেদিন আমি সোভিয়েত দেশে। সময়টা বোধহয় ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসের কোন একদিন হবে। ১৯৬৪ সালে সেই যে ক্ষমতায় বসেছিলেন নড়াচড়ার নামগন্ধ কোনদিন উচ্চারিত হয়নি। জনগণ প্রায় ভুলেই গিয়েছিল মহাপরাক্রমশালী সোভিয়েত দেশের প্রধানও কোনদিন মরতে পারেন।

তাই এই নেতার মৃত্যু বড় একটা ধাক্কা হয়ে আঘাত হেনেছিল সোভিয়েত সমাজে। একজন বিদেশী হিসাবে দেশটার ক্ষমতায় কে বসবে আর কে বিদায় নেবে তা একান্তই সে দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসাবে গন্য করেছি। তাই এ নিয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখানোর প্রয়োজন বোধ করিনি। তবে সেমিস্টারের মাঝপথে এ ধরণের রাষ্ট্রীয় মৃত্যু দু’একদিনের জন্য হলেও যে আমাদের জন্য ছুটি নিয়ে আসবে এ ব্যাপারে আশার অন্ত ছিলনা। সময়টা ভয়াবহ শীতের সময়। তাপমাত্রা হিমাংকের নীচে চল্লিশ ডিগ্রির আশপাশে উঠানামা করছে। অতিষ্ঠ ছাত্রজীবনে অতিরিক্ত ছুটি অপ্রত্যাশিত বিশ্রাম ও স্বস্তি নিয়ে আসবে এমন একটা প্রত্যাশায় উন্মুখ থাকতাম ঘোষনার। কিন্তু হায়, দিন গড়িয়ে যায় ঘোষনা আর আসে না। ক্রেমলিনের সামনে রেড স্কয়ারে লাখো মানুষের লাইন, বিদেশ হতে শোক বার্তার মিছিল, পাশাপাশি স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক মিডিয়া তোলপাড় কোনকিছুই আমাদের আন্দোলিত করতে পারেনি। আমরা শুধু প্রহর গুনতাম ছুটি নামক মহেন্দ্র ক্ষণের। শেষপর্যন্ত কাঙ্খিত ছুটির দেখা পেলাম, তবে তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র দু মিনিট। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করতে সপ্তাহ খানেক চলে যায়। তারপর শুরু হয় শেষ বিদায়। যে মুহূর্তে লাশ কবরে নামানো হয় থেমে যায় গোটা দেশ। দু মিনিটের জন্য যে যেখানে ছিল দাঁড়িয়ে যায়। থেমে যায় গাড়ি, ট্রেন, বিমান সহ সব ধরণের যানবাহনের চাকা। কারখানা গুলো হতে দু মিনিটের জন্য বিরামহীন ভাবে বাজাতে থাকে সাইরেন। এভাবেই বিদায় নেন সোভিয়েত লৌহমানব লেনিন, স্তালিন ও ক্রুশেভের উত্তরাধিকারী লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ। ক্ষমতার মঞ্চে আবির্ভুত হন নতুন নায়ক কনসটানটিন উস্তিনভিচ চেরনেন্‌কো।

ছুটি বিহীন এ ধরণের মৃত্যু কিছুটা হলেও হতাশ ও অবাক করেছিল আমাদের। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে আমাদের বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদ বিষয়ের শিক্ষক ছোটখাট একটা লেকচার দিয়ে জানালেন জাতিকে ছুটিতে পাঠিয়ে মৃতকে সন্মান দেখানোর রেওয়াজ দেশটায় চালু নেই। বরং অতিরিক্ত উৎপাদনই হতে পারে নেতার প্রতি যথাযোগ্য সন্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন। তর্ক বিতর্কের দেশ ছিলনা সোভিয়েত সাম্রাজ্য, তাই এ নিয়ে ত্যনা পেঁচানোর সুযোগ ছিল সীমিত। সপ্তাহ না ঘুরতে ব্রেজনেভ পর্ব পিছনে ফেলে জাতি এগিয়ে গেল নতুন উদ্যমে। ১৮ বছর যে মানুষটার মুখের কথায় সাইবেরিয়া হতে ভ্লাদিভস্তক পর্যন্ত উঠাবসা করত, ১৮ দিনের মাথায় সে মানুষ ঠাঁই নিল ইতিহাসে। আমরাও ভুলে গেলাম ছুটি না পাওয়ার কষ্ট। তবে এ নিয়ে আমার শিক্ষকের করা মন্তব্যটা কেন জানি মগজে গেথে রইল, এবং সারা জীবনের জন্য। ছুটি, সভা, সেমিনার, বোমা ফাটানো কলম ঝড়, মুখ ফাটানো স্তুতি বন্দনা বাইরে গিয়েও মানুষকে সন্মান, শ্রদ্ধা জানানো যায়, সোভিয়েত দেশে ব্রেজনেভের বিদায় ক্ষণ হয়ত তারই মাইলস্টোন।

প্রতিটা জাতির কিছুনা কিছু ঘটনা থাকে যাকে ঘিরে আবর্তিত হয় তার বর্তমান ও ভবিষৎ। বাংলাদেশের জন্য ১৯৭১ সাল ছিল তেমনি একটা বছর। স্বাধীনতার জন্য পৃথিবীর দেশে দেশে সংগ্রাম হয়েছে, আন্দোলন হয়েছে, যুদ্ধ হয়েছে। দখলদার শত্রুকে পরাজিত করে বিজয়ী জাতি মাথা উঁচু করে পৃথিবীর বুকে পা ফেলেছে, ঝাঁপিয়ে পড়ে উন্নতির দৌঁড়ে সামিল হয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, মাথার উপর ছাদ এবং স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর লড়াই করতে গিয়ে শত্রু-মিত্রের সমীকরণ নতুন করে কষতে হয়েছে। সভ্যতা এভাবেই এগিয়ে গেছে এবং সামনে হয়ত এভাবেই এগুতে থাকবে হাজার বছর ধরে। আমার বন্ধু নগুয়েন চি থানকে দিয়েন বিয়েন ফু হতে শুরু হওয়া যুদ্ধের দাবানল হতে সরাসরি পাঠানো হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। তাদের জানা ছিল যুদ্ধ চিরস্থায়ী নয় এবং স্বাধীনতার আসল ফসল ভোগ করতে প্রয়োজন হয়ে যোগ্য মানুষের। কেবল গোটা পরিবারই নয়, নগুয়েনের নিজের শরীরের অনেকাংশ পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল মার্কিন নাপাম বোমার আঘাতে। এতগুলো বছর পর সে নগুয়েনের নাতিকে আসতে হচ্ছে মার্কিন মুলুকে। পোষাক শিল্পের বাজারের সন্ধানে ঘুরতে হচ্ছে ম্যানহাটনের ৫নং স্ট্রীটে। জানিনা নগুয়েনের শরীর হতে নাপাম বোমার ক্ষত গুলো ইতিমধ্যে শুকিয়ে গেছে কিনা। হয়ত ক্ষত নিয়েই ওদের ঘুরতে হচ্ছে, এবং এমন একটা দেশে যে দেশের বি-৫২ বোমারু বিমানের কার্পেটিং বোমায় জ্বলে, পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল ভিয়েতনামের জনপদ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ৭১ সালে শেষ হয়নি। যুদ্ধ চলছে এবং চলতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। আমরা যারা যুদ্ধকে কাছ হতে দেখেছি, যুদ্ধের ভাল-মন্দের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হয়েছি তাদের কথা ও কাজে যতটা না যুদ্ধের প্রভাব তার চাইতে হাজার গুন প্রভাবে টইটম্বুর জাতির নতুন প্রজন্ম। অনেকটা হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রোগীর মত মুক্তিযুদ্ধ ও তার চেতনার বায়বীয় বেলুনে ভেসে বেড়াচ্ছে এ প্রজন্ম। নতুন এ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ মানেই পাকি ও রাজাকার ’পুন্দানী’, যুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি নিয়ে রাজনীতির মাঠ তথা সোস্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ কর্মঘণ্টা ব্যায়। অথচ চেতনার অপর পীঠে এ দেশে রাজত্ব করছে ভয়াবহ দুর্নীতি, হত্যা, গুম সহ লুটের সুনামী। স্ববিরোধী এসব দেশপ্রেম জাতির অসুস্থতারই বহিঃপ্রকাশ।

স্বাধীনতা তথা দেশপ্রেম কেবল জামাত, পাকিস্তান, রাজাকার অধ্যায় নিয়ে তোলপাড় আর যুদ্ধাপরাধী বিচার দাবির মধ্যেই সীমিত থাকার কথা নয়, এর বাইরেও জাতির কিছু চাওয়া পাওয়া আছে। এসব চাওয়া পাওয়া চেতনার বেলুন হতে মাটির ধরণীতে নামিয়ে আনার জন্যই আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। চাপাবাজি ও ফাঁকা স্টেটাসের বাইরে গিয়েও মুক্তিযুদ্ধকে সন্মান করা যায়। একটা সুস্থ, সবল, ঐক্যবদ্ধ জাতি ও স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তার সমাজ হতে পারে এর মাইলস্টোন।

বিচারাধীন মামলার গনযোগাযোগ সম্পর্কিত প্যারাডক্সঃ কামারুজ্জামান প্রসঙ্গে

1

By Ariful Hossain Tuhin

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট, মামলা চলাকালীন সময়ে, কোর্টরুমে ভিডিও ক্যামেরা নিষিদ্ধ করেছে অনেকদিন আগেই। এই নিয়মের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে জাস্টিস স্কালিয়া বলেন [১]

For every ten people who sat through our proceedings, gavel to gavel, there would be 10,000 who would see nothing but a 30-second take-out from one of the proceedings

প্রতিটি মামলার বিবরণ যেহেতু সকলের জন্য উন্মুক্ত, এমনকি যেকোন নাগরিক মামলা চলাকালীন সময়ে উপস্থিত থাকতে পারেন, সেহেতু সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা, ক্যামেরা নিষিদ্ধের পেছনে যে চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে সেটি অবশ্যই গোপনীয়তা নয়। বিচারপতিরা ভাবছেন কেউ যদি আউট অফ কনটেক্সট ছোট একটি ভিডিও দেখেন তাহলে সুপ্রীম কোর্টের বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে ভুল ধারনা তৈরী হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।

যেকোন মামলা একটি জটিল এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্বোধ্য প্রক্রীয়া। মামলা বোঝার জন্যে তাই শ্রম এবং একাগ্রতা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের বিচারপতিরা তাই কোর্টরুমে কাগজ কলম ছাড়া আর কোন কিছুই এলাউ করেন না। কাগজ কলম নিয়ে মনোযোগ দিয়ে মামলা শোনা ছাড়া রিপোর্টারদের তাই আর কোন কিছু করার নেই।
সুতরাং একটি বিচারাধীন মামলা একটি জটিল প্রক্রীয়া। একে খুব সহজেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, ভুলব্যাখ্যা কিংবা আউট অফ কনটেক্সট উদ্ধৃতি দিয়ে।

যেসকল দেশে জুরি ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, সেখানে অনেক মনোযোগ দেয়া হয় যাতে জুরিরা কোর্টে উপস্থাপিত তথ্য প্রমাণাদির বাইরে কোন তথ্য দ্বারা প্রভাবিত না হন। তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয় যাতে তারা নিজেরা এই ব্যাপারে স্বতপ্রনোদিত ভাবে কোন রিসার্চ না করে, পত্রিকা বা ইন্টারনেটে মামলা সংক্রান্ত খবর না দেখে, ইত্যাদি। কিন্তু সবসময়, বাস্তব সমস্যার জন্যেই এই ব্যবস্থা কাজ করে না।
দেখা যায় জুরিরা তাদের মামলা নিয়ে ইন্টারনেটে রিসার্চ করছেন।[২] এর ফলশ্রুতিতে অনেকসময় জুরিদের উপর কোর্ট বহির্ভূত প্রভাব পরে।
গনসংযোগ ক্যাম্পেইন(পি আর ক্যাম্পেইন) সাধারনত অভিযুক্ত আইনজীবির নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। কারন জনগনের মতামতের একটি পরোক্ষ প্রভাব বিচার প্রক্রীয়ায় থেকেই যায়। অন্যদিকে সরকারী প্রসিকিউটরদের কখোনো পি আর ক্যাম্পেইন চালাতে দেখা যায় না। পৃথিবীর সকল সরকারী কর্মচারীদের একটি সাধারন প্রবণতা হচ্ছে নিজেদের কাজের কোন “মার্কেটিং” না করা।

সরকারী কর্মচারীদের যে পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়, তা “মার্কেটিং” এর জন্যে উপযোগী নয়। এছাড়াও সরকারী কর্মচারীদের আসলে “মার্কেটিং” এর কোন ইনসেন্টিভ নেই। তাদের পেশাগত সাফল্য নিজেদের কাজের মার্কেটিং এর উপর নির্ভর করে না। একারনে অনেক বিখ্যাত মামলায় দেখা যায় অভিযুক্ত পক্ষ হতে একপাক্ষিক প্রচারণা চলছে।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটি সত্য। প্রধানত অভিযুক্ত এবং তার সহমর্মীরাই একপাক্ষিকভাবে বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারী পক্ষ থেকে পালটা প্রচারণার কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সমর্থক যারা, অনেক সময়েই তারা মামলার টেকনিক্যাল ডিটেইলগুলো বেশী চিন্তিত নন। অবশ্যই এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম আছে। কিন্তু যদি অভিযুক্তদের প্রচারণার
পরিধি বিচার করা হয় তাহলে আসলেই এ পর্যন্ত পালটা প্রচারণা অথবা বিভ্রান্তির অবসান করার জন্যে তেমন কিছুই করা হয়নি।

পত্রিকায় নিয়মিত মামলার প্রসিডিংস প্রকাশিত হয়। সেগুলোতে নজর রাখলে বেশ কিছু বিষয় চোখে পরে। যেমন প্রসিকিউটরদের আশ্চর্যরকম অদক্ষতা। নিয়মিতভাবে দেখা যায় সম্মানিত বিচারকরা , প্রসিকিউটরদের ভর্তসনা করছেন তাদের বিভিন্ন “ট্রিভিয়াল” ভুলের জন্যে। এত গুরুত্বপূর্ণ মামলা অবহেলায় চলছে এমনটা বললে অতিরঞ্জিত হবে কিনা সেটি নিয়ে নিশ্চিত হবার সুযোগ কমেই ক্রমে আসছে।

সুতরাং তদন্তকারী সংস্থা/প্রসিকিউটরদের বিভিন্ন দক্ষতার অভাব এর সাথে অভিযুক্তদের বিরামহীন বিভ্রান্তিকর প্রচারণা মিলে অনেক মানুষের মনেই বিভিন্ন প্রশ্ন তৈরী হচ্ছে। এই প্রশ্নসমূহ অভিযুক্ত এবং তাদের রাজনৈতিক দল/মিত্রদের দাবীর লেজিটিমেসি তৈরী হবার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করছে।

উদাহরন হিসেবে কামারুজ্জামানের রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকার পর, দোষীর পক্ষে যেসকল প্রচারণা চালানো হয়েছে সেগুলো অনেকের মনে সন্দেহ তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। দোষীদের প্রচারনার প্রধান কৌশল ছিল বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন anecdot উল্লেখ করে মামলাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়া।

এটি অত্যন্ত পুরোনো প্রক্রীয়া। প্রথমে দেখা যাক দোষী পক্ষের কিছু অভিযোগের নমুনা। আপিল বিভাগে চুড়ান্ত রায় প্রকাশের পরপরই কামারুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে সোহাগপুর ঘটনার সাথে কামারুজ্জামানের কোন সম্পৃক্ততা নেই এই দাবী করে তার ছেলে হাসান ইকবাল বলেন[৩]

‘এই মামলার মুল সাক্ষীর তালিকায় ৪৬ জনের নাম ছিলো। তাদের মধ্যে ১০ জন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার পর নতুন করে তিনজন মহিলাকে অতিরিক্ত সাক্ষী হিসেবে প্রসিকিউশন আদালতে উপস্থাপন করেন। ওই সাক্ষীরাও তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দিতে গণহত্যার সময় আমার বাবা উপস্থিত ছিলেন এমন দাবি করেননি।’

মোটামুটি নির্দোষ দেখতে এই দাবীটির মাঝে বেশ কয়েকটি প্যাচ আছে। প্যাচগুলো একটি একটি করে আলোচনা করা যাক। প্রথমত সোহাগপুরের ঘটনার জন্যে রাষ্ট্রপক্ষ ঠিক কি ধরনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে এনেছিল তা দেখা যাক।

 

রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপির(ট্রাইবুনালের রায়) ২৯১ অনুচ্ছেদ থেকে আমরা জানি [৪]

 

Muhammad Kamaruzzaman has been charged for
participating, substantially facilitating and contributing to the commission of
offences of ‘murder as crime against humanity’ or in the alternative for
‘complicity to commit such crime’

চার্জের প্রধান গুরুত্ব ছিল “সহোযগিতার”। এই ব্যাপারটি ডিফেন্স কাউন্সিলও তাদের যুক্তিতে উল্লেখ করেছে [৫]

the accused has been
indicted for providing ‘advices’to his accomplices in launching the attack and
it does not describe that the accused accompanied the principal perpetrators

কামারুজ্জামানের সহযোগিতা প্রধানত প্রমান হয় ততকালীন সময়ের আলবদর সদস্য এবং আলবদর ক্যাম্পের গার্ড মনোয়ার মুন্সির সাক্ষ্যে [৬]

Md.
Monwar Hossain Khan @ Mohan Munshi (63), a member of Al-Badar was
attached to the camp set up at Suren Saha’s house as a guard as directed by the
accused Muhammad Kamaruzzaman and in this way he worked at the camp
for the period of 4-5 months and not exceeding 07 months. It has also been
proved that accused Muhammad Kamaruzzaman used to attend meetings on
the first floor of the Al-Badar camp and he [P.W.2] and his ‘sir’
Kamaruzzaman [accused] had fled together from the camp two days before
Sherpur was liberated. As regards the event of Sohagpur massacre P.W.2 does
not claim to have witnessed the event

গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে মনোয়ার মুন্সীর কিন্তু দাবী করেনি সোহাগপুরেরে গনহত্যা প্রতক্ষ্য করার। এখন প্রশ্ন এসে যায় কেন এই সাক্ষীর গুরুত্ব বেশী, তা বোঝার আগে এই সাক্ষীর ব্যাপারে ডিফেন্স কাউন্সিল কি বলেছে একবার দেখা যাক। [৭]

the learned defence counsel has submitted that
the event of Sohagpur massacre is not disputed. But the witnesses who have
deposed in support of the charge implicating the accused are not credible.
P.W.1 and P.W.2 are hearsay witnesses

সুতরাং ডিফেন্সের প্রধান যুক্তি ছিল, মনোয়ার মুন্সি(PW2) ঘটনা (সোহাগপুরের গনহত্যা) নিজে দেখেনি(hearsay witness). মনোয়ার মুন্সির সাক্ষ্য সম্পর্কে দুই নম্বর চার্জের ক্ষেত্রে ডিফেন্স কাউন্সিলের যুক্তি ছিল [৮]

He has submitted
that P.W.3 cannot be relied upon as he stated inconsistent date of the event.
Statement made by P.W.2 and P.W.14 on some particulars is inconsistent. Due
to such inconsistencies it is immaterial to see whether the statement made by
them could be impeached by the defence through cross-examination.
Inconsistencies between statements of two witnesses by itself renders them
unreliable and tutored.

 

ডিফেন্স কাউন্সিল ঐ আলবদর ক্যাম্পে কামারুজ্জামানের উপস্থিতি ছিল না সেটি কি প্রমান করতে পেরেছে? সংবাদ সম্মেলনে বারবার হাসান ইকবাল সাহেব বিভিন্ন বই/প্রবন্ধের উল্লেখ করছিলেন যার মধ্যে কামারুজ্জামানের নাম নেই। নাম থাকা আর না থাকা সমান গুরুত্বের অধিকারী নয়। একটি গবেষণামূলক বইয়ে যদি একজনের বিরুদ্ধে কিছু তথ্য প্রমান উপস্থাপন করা হয় তাহলে তার অপরাধের “প্লজিবিলিটি” তৈরী হয়। কিন্তু কারও নাম উল্লেখিত না থাকা মানে এই না সে অপরাধ করেনি। কারন এটাও হতে পারে সে অপরাধ করেছে, কিন্তু “ডকুমেন্টেড” হয়নি। এই ক্ষেত্রে কামারুজ্জামানের পক্ষে এমন কোন শক্ত এলিবাই কি ডিফেন্স কাউন্সিল দাড়া করাতে পেরেছে যার ফলে প্রমান হয় কামারুজ্জামান ঐ টাইম ফ্রেইমে ঐ আল বদর ক্যাম্পে অবস্থান অসম্ভব ছিল? আমার মনে হয় না পেরেছে। তাদের প্রধান কৌশল ছিল প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের রিলায়েবিলিটি নষ্ট করা। যেমন একজন সাক্ষীর রিলায়েবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারন হিসেবে ডিফেন্স কাউন্সিল উল্লেখ করেছে,[৯]

The learned defence counsel next argued on charge no.2. He has submitted
that P.W.3 cannot be relied upon as he stated inconsistent date of the event

সমস্যা হচ্ছে আমার জীবনে খুব বড় ঘটনার তারিখ জিজ্ঞেস করলেও আমি ভুলভাল বলতে পারি। ডিফেন্স যেটি পারত তা হচ্ছে, ঐ সাক্ষীর, ঐ ঘটনা প্রত্যক্ষ দেখার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রমান উপস্থাপন করতে পারত। সেটি ডিফেন্স কাউন্সিল কি পেরেছে?

হাসান ইকবাল খুব জোর দিয়েছেন, সোহাগপুরে তার বাবার অনুপস্থিতিকে। যেহেতু কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গনহত্যার “সহোযোগিতা”র অভিযোগ আনা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ড সংগঠনের সময় তার উপস্থিতি কতটুকু জরুরী? যুক্তরাষ্ট্রের স্টিফেন র‍্যাপের বিবৃতিটি অনেক জোরে শোরে বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে ছাপা হয়েছে/প্রচার হয়েছে। বাশেরকেল্লায় সম্ভবত একাধিকবার শেয়ার করা হয়েছে খবরটি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্টিভেন র‍্যাপের বিবৃতিটিতে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে যায় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা রয়েছে।

ডেভিড বার্গম্যানের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, [৯]

He stated that international law required in such aiding and abetting offences, that the Jamaat leader, knew that the [Al Badr] group was committing atrocities, that he provided assistance to the group with that knowledge. It was not necessary that he attend, but that the assistance that he provided needed to be substantial and in fact something that caused the atrocities committed

সুতরাং হাসান ইকবালের প্রধান দাবীটি, কামারুজ্জামান সোহাগপুরে উপস্থিত ছিলেন না, অপ্রয়োজনীয় হয়ে পরে। যেহেতু সোহাগপুরের গনহত্যার পরিকল্পনা আল বদর ক্যাম্পে হয়, (ডিফেন্স এর কোন বিরোধীতা করেনি), সেহেতু কামারুজ্জামানের এই চার্জ থেকে বাচার জন্যে একমাত্র এস্কেইপ হচ্ছে , তিনি সেখানে কোনভাবেই উপস্থিত ছিলেন না, এই ধরনের কোন প্রমান দাখিল করা।

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বহির্বিশ্বে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। এর অন্যতম কারন অবশ্যই দোষী এবং অভিযুক্ত পক্ষের প্রচারণা। কিন্তু আমার মনে হয়না অভিযুক্ত পক্ষের প্রচারণা এককভাবে দায়ী। নিজেদের বিভিন্ন লিমিটেশন গুলোকে স্বীকার করেই বলতে হয়, অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে প্রাণদণ্ড। বর্তমান পৃথিবী প্রাণদণ্ডের ব্যাপারে অনেক সেন্সিটিভ হয়ে গিয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ, হয় প্রাণদণ্ড আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করেছে, অথবা প্রাণদণ্ডদানে বিরত আছে।[১০] এই কারনেই বহির্বিশ্বে এই বিচার নিয়ে ঋণাত্নক মনোভাব তৈরী হচ্ছে। এই সমস্যাটি নুরেমবার্গ কিংবা আইখম্যানের বিচারের সময় ছিল না।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যামামলায় অনেক দোষীকে কখনই দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে না কারন তাদের প্রাণদণ্ড দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ দেশ , প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধীদের ফেরত দেয় না। বুদ্ধিজীবি হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী চৌধুরী মাইনউদ্দিন কিংবা আশরাফুজ্জামানকেও দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না তাদের প্রাণদণ্ড হয়েছে বলেই।

 

প্রাণদণ্ডের একটি “ইমোশোনাল এপিল” আছে। ৭১ সালের গনহত্যা/ধর্ষণ ইত্যাদি আমাদের সমষ্টিক স্মৃতিতে একটি দগদগে ঘা। এই ঘায়ের মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্যে হলেও প্রলেপ দিতে পারে প্রাণদণ্ড। প্রাণদণ্ড প্রতিশোধমূলক শাস্তি। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর অনেকেই প্রতিশোধ প্রবনতাকে রাষ্ট্রের ক্ষমতার কাতারে ফেলতে চান না। রাষ্ট্রকে প্রতিশোধ প্রবণতার উর্ধে দেখতে চান। সেই কারনেই প্রাণদণ্ড ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে পৃথিবী জুড়ে।

আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, জামাত এবং অন্যান্য রাজাকার/আলবদর ইত্যাদির যেসকল অপরাধ করেছে তার প্রায় সমান গুরুত্বের দাবী রাখে এইসকল অপরাধের পেছনে যে মতাদর্শ কাজ করেছে। যেই ফ্যাসিবাদ প্রভাবিত রাজনৈতিক “থিওক্র্যাসি”তে জামাত এবং অন্যান্যরা আস্থা রাখত তা কোনক্রমেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিজের দেশের মানুষের উপর নেমে আসা এই মর্মান্তিক ধ্বংস, হত্যা, ধর্ষণের সময়ে যারা ঠাণ্ডা মাথায় পশ্চিম পাকিস্থানের পক্ষ নিতে পেরেছে, তাদের অপরাধের অংশীদারত্ব গ্রহন করেছে, তাদের সাইকোলজি অনেক ভয়ংকর এবং রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্যে ক্ষতিকারক। সুতরাং তাদের অপরাধের শাস্তির সাথে সাথে তাদেরকে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মতাদর্শিকভাবে ধ্বংস করে দেয়া আমাদের জন্যে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্যে প্রয়োজন ছিল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ঐক্যমত্য।

আবারো বলছি বিভিন্ন রাজনৈতিক কারন এবং নেগেটিভ প্রচারণার মাঝেও আমার মনে হয়, আমরা যদি প্রাণদণ্ড অপশনটি টেবিল থেকে সরিয়ে নিতাম, তাহলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ঐক্যমতে পৌছানো আমাদের জন্যে অনেক বেশী সহজ হত। কিছু বৃদ্ধ রাজাকারকে ফাসিতে ঝুলিয়ে যে তাতক্ষণিক আনন্দ পাওয়া যাবে, তার চেয়ে জাতি হিসেবে আমাদের ইতিহাসের সাথে শেষবারের মত বোঝাপড়া করা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা আন্তর্জাতিক ভাবে অনেক সমর্থন পেয়েছি। এর অন্যতম কারন ছিল, ন্যায় এবং ন্যায্যতা আমাদের পক্ষে ছিল।

ন্যায় এবং ন্যায্যতার দাবী এখন পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতিতে প্রাণদণ্ড ঢেকে ফেলছে বলেই আমার মনে হয়। এ প্রসঙ্গে অকালে চলে যাওয়া অধ্যাপক জালাল আলমগীরের বছর কয়েক আগে বলা কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করছি[১১]

 

We should recognise honestly that after decades of complexities, secret deals, and depraved politics, justice, though necessary and urgent, will be limited.
Such limited justice can be morally justified only by a long-term commitment to truth.
To prioritise truth, we must de-prioritise capital punishment. In 1941, years before the Nuremberg trials, Winston Churchill planned summary executions for fifty top Nazis at war’s end. He considered this punishment a political decision, not a legal matter. But Harry Truman, the American president, wanted a tribunal. Josef Stalin cast the deciding vote. As the human rights scholar Geoffrey Robertson explained, Stalin “loved show trials as long as everyone was shot in the end.”
And so a severely flawed tribunal was held at Nuremberg. It punished crimes against humanity by using inhuman standards: twelve Nazis were hanged first and then burnt in the ovens of Dachau, one of the German concentration camps.
Nuremberg’s moment of success was not in the verdict but in the courtroom, when the Nazis were shown reels of the horrors that they had created. Some of them wept and sat stunned, as they came to grips with the truth. The punishment from exposing openly and publicly what they had done to humanity was far more compelling than what Churchill’s planned executions might have produced. It is from this public record that the world’s aversion to genocide began and Nazism, as an ideology, received its death penalty. South African apartheid also received its capital punishment through the Truth Commissions pioneered by Nelson Mandela and Bishop Desmond Tutu

 

First Published in  http://aftnix.wordpress.com/

সুত্রঃ

[১]http://www.economist.com/blogs/democracyinamerica/2014/03/cameras-supreme-court

[২]http://news.bbc.co.uk/2/hi/8519995.stm

[৩]http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/339310.html

[৪]Article 291  of the verdict , accessed at : http://www.ict-bd.org/ict2/ICT2%20judgment/MKZ.pdf

[৫]Article 81, ibid

[৬]Article 255, ibid

[৭]Article 267, ibid

[৮]Article 80, ibid

[৯]http://newagebd.net/65600/us-calls-for-halt-to-kamaruzzaman-execution/#sthash.MRsTjDaj.AM96NvMP.dpbs

[১০]http://www.amnestyusa.org/our-work/issues/death-penalty

[১১]http://archive.thedailystar.net/forum/2010/june/truth.htm

A Sentimental (mis) Education.

By  Seema Amin

 

As the country broke out into camps protecting sentiments, religious and nationalist, the last few weeks, two words stole into my orifices like some perfumed incense, flavored femme fatale, and I followed it, to this public domain where one is still able to speak or squeak. The two words constitute a single idea.  Sentimental education— something I rather arbitrarily associate with the garden-inscribed, Manor-library sensibilities of characters in Jane Austen novels, although it originates in French literature, in Gustave Flaubert’s book of the same name. So what is a sentimental education, a mere education in literature? Ah, less than that, an education that arouses an inactive passion, one that remains suspended in that image-world of dreams. At times when I discuss the never mirthless politics of Bangladesh with my art critic colleagues, I often get a feeling they think politics is a sentimental vocation, a creature of ‘abeg.’ None of these alternative words to sentiments—passion and ‘abeg’– adequately describe the distance between a trigger-happy sentimentality, swift to offer others as lambs to the slaughter, and the wild, white terrain of dispassionate justice (think Anna Akmatova) that I associate with conscience: a kind of antithesis of the lynch mob justice of the kind that took place on October 6th, when Sundarban villagers and police beat robbers mercilessly until they could not walk in what was reported later as shootouts and gunfights…But let me describe the distance through the window of an event that has almost disappeared from collective memory.

The day the police locked the gates of the worker-occupied Tuba factory in Hossain market (August 6th), many of the female workers had been on hunger strike for a week, many were lying beside Sramik Oikya Forum leader Moshrefa Mishu while others were sitting on the table tops where clothes are made. The day they broke in, August 7th, these men in blue found the girls protecting Mishu and others in an unbreakable outer circle. One particular officer, demanding the leaders of the movement come forward, threatened to ‘Rape all of them’, and hurled other names…police literacy in such slang seems remarkably high. The girls, they refused to budge. Finally, as they pushed into the inner circle, the girls and their male co-workers were forced forward, moving in ripples, some falling down the stairs…taking beatings, but never quite giving up the protective space. Outside loitered what remained of the mixed bag of League goons, police women and dalal workers (as we called them) who had already fought skirmishes with workers, injuring solidarity activists, the day before. Not much remained in the form of a human chain outside…Buses were ready to pick up the workers and take them to receive diminished pay and benefits months late.

In my piece in New Age that came out the day before the police broke into the factory, I heralded superlative new worlds, a ‘paradigm shift.’  On hindsight, it appears to me as perfectly obtuse, but, I knew it was some kind of delirious hope that was working in the midst of things.  But I’ve never had the misgiving– even after Delwar Hossian got his way, using workers’ salaries and bonus as a bargaining chip for his bail, and we walked not blindly but rather wide-eyed into his trap—that what we or they were doing was ‘sentimental’. Everyone present at was moved by something more akin to ‘following a truth to its logical conclusion.’ They would not be blackmailed. Yes, some vanguardism, but again, hardly sentimental.

And it is this distance between venturing a notion of justice and approximating it—that journey between a principle and its actualization in struggle (admittedly a fetishized word of the left) — that distinguishes this ‘un-sentimental’ world from the world where sentiments are protected by law, the mob or by the self-proclaimed guardians of the sentiments or the ideology of the language movement and liberation war, a world where there is not a split-second between a trigger and its target.  The ‘students’ of a sentimental education did not stop to consider the pages of history books, nor offer a reason why suddenly nine others were also blacklisted from Shahid Minar without having any association whatsoever with a dangerously ubiquitous term, ‘Razakar.’   And yet, it is hard to tell off these madmen pursuing the injury to ‘sentiments.’ Not too long ago much more historically literate students and activists were running here and there, their sentiments also hurt, almost before a thought could be formulated…Thus this tendency is not limited to these few young men, to mobs in villages or to guardians of the faith. Some run to embassies, some to mosques, some, now, unfortunately, to the Minar.  I venture the liberation war was not fought over sentiments but deep structural issues and a profound sense of injustice.  The Shabagh movement certainly had more than sentiments to begin with; it had a profound sense of injustice. And the equations were not quite so arbitrary, generalized and simple, in the beginning. But the distance from there to here…warrants some introspection regarding the limitations of a sentimental education, which is all they seemed to have to rely on once the blacklisting began.

If tomorrow, the police who screamed ‘Rape to all of you’ sat on the TV screen and grinned unrepentant, I have a feeling in my gut that sentiments would not run very deep.

We would forgive him, as though he had said a faux-pas as children do.  After all, he too got his sentimental education and it taught him nothing about the dignity of women, much the less workers. One need only read the headlines in the back pages…

Our passions are like our reasons for our actions: not principled, humane or deep, but sentimental, superficial and within our comfort zone.  No white nights charting the immense, dark seas of human action with a moral compass… who cares about ethics when there are Sentiments. And when good and bad are pre-determined, in moral equations that do not even need a child’s exegesis of the assumed Word, a conscience– active, alive, non sentimental– is a luxury.

মুক্তিযুদ্ধ ও গেসু-সাদু উপাখ্যান..

by Watchdog BD

ডঃ পিয়াস করিমক নিয়ে অবৈধ সরকারের ততোধিক অবৈধ আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হক স্মৃতিচারণমূলক একটা লেখা লিখেছেন। স্বভাবতই পছন্দ হয়নি আওয়ামী প্রোপাগান্ডা মেশিনারিজের। এ আর খন্দকারের মত এই মন্ত্রীকেও রাজাকার উপাধি দেওয়া এখন সময়ে ব্যাপার। নিয়মিত গঞ্জিকা সেবক একদল তরুণ যাদের সাথে এ দেশের জন্মের কোন সম্পর্ক নেই তারা মুক্তিযুদ্ধের নবম ফ্রন্ট খুলে সার্টিফিকেট দিচ্ছে। আর এসব সার্টিফিকেট যোগান দিচ্ছে গঞ্জিকা যোগানোর খরচাপাতি। ড্রাসাসক্ত যুবা তরুণের দল আজকাল মা-বাবাকেও খুন করছে ড্রাগ মানির জন্য। নবম ফ্রন্টের এসব জেনারেলদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ খুবই শক্তিশালী একটা ড্রাগ, যার ব্যবহার শরীর, মন ও মস্তিষ্ককে নেশা ছড়িয়ে দেয় অনেকটা পাগলা ঘোড়ার কায়দায়। বিশেষত্ব হচ্ছে এই ড্রাগ কেবল নেশাখোরদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেনা বরং তার আমেজ গ্রাস করে নেয় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একদল কিশোর, তরুণ ও যুবকদের। ইবোলা কায়দায় এই ড্রাগ দেশপ্রেম নামক সিফিলিস রোগের জন্ম দেয় যার জরায়ুতে জন্ম নেয় নতুন এক ভাইরাস, আওয়ামী জারজতন্ত্র। জনাব আনিসুলে হকের লেখাটা হঠাৎ করেই আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল ৭১ সালে। স্কুল পড়ুয়া তরুণ হলেও সমাজ, সংসারের অনেক জটিল সমীকরণ বুঝে নিয়েছি ইতিমধ্যে। স্মৃতিচারণ এক ধরণের ছোঁয়াচে রোগ। এ মুহূর্তে আমিও আক্রান্ত এ রোগে। তাই পাঠকদের কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিয়ে যেতে চাই আগুন ঝরা ৭১’এর দিন গুলোতে। চলুন…

ঘটনা ১:

এপ্রিলের শুরুতে আকাশ পথে শুরু হল তাদের আনাগোনা। স্থলপথ ছিল ইপিআরদের দখলে। সকাল ১০টা হবে হয়ত। বাজার বন্দরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে কেবল। বাজ পাখির মত ছুটে এলো দুটো ফাইটার। বিকট শব্দে শুরু হল বোমা বর্ষণ। আমরা তখন ২০ মাইল দুরে দাদাবাড়ির নিরাপদ আশ্রয়ে। দুদিন আগে একদল বিহারীকে নদীর হাঁটু জলে নামিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করার পর অনেক আন্দাজ করেছিল ওরা আসবে। পেশায় চামার, মুচি ও নাপিত এসব নিরপরাধ বিহারীদের হত্যা করে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতারা কি ম্যাসেজ দিতে চেয়েছিল তা বুঝা গিয়েছিল একদিন পরে। একে এক ১০টা ব্যাংক লুট করে সীমান্তের ওপারে পালিয়ে যায় ওরা। সাথে নিয়ে যায় বস্তা ভর্তি টাকা। যুদ্ধের নয় মাস তাদের কারও মুখ দেখা যায়নি ক্ষতবিক্ষত শহর-গঞ্জের জনপদে। শোনা যায় কোলকাতার বেহালায় বাইজী সহ বাসা ভাড়া করে বাদশাহ আওরাঙ্গেজেবের জীবন কাটিয়েছে অনেকে। সপরিবারে পলাতক আমরা। এর কিছুদিন পর গোলন্দাজ বাহিনীর গোলার আঘাতে উড়ে যায় আমাদের বাড়ির কিয়দংশ। মে মাসের শুরুতে পাকি বাহিনীর পদভারে প্রকম্পিত হয়ে যায় আমাদের শহর। বাড়ি ফাঁকা হলেও বাড়ির একজনকে পলাতক বানানো যায়নি। সে আমাদের কাজের ছেলে গিয়াস উদ্দিন। ১৬ বছর বয়সী সদা চঞ্চল এই যুবক কাজের লোক হলেও পরিবারের স্থায়ী সদস্য ভাবতেই অভ্যস্ত ছিলাম আমরা। তার হাতেই গচ্ছিত ছিল বাড়ির দায়িত্ব। আগস্টের মাঝামাঝি এক সময় নদীর গা ঘেঁষে অনেকটা গেরিলা কায়দায় হাজির হই ফেলে আসা বাড়িতে। উদ্দেশ্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে ফিরে যাওয়া। বাড়িতে পা রেখে হতবাক। লুটের চিহ্ন¡ চারদিক। মূল্যবান সবকিছুই খোয়া গেছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাচ্ছে প্রায়। শুয়ে আছি প্রিয় বিছানাটায়। সদর দরজা তালা দেয়া। শুয়ে শুয়ে লক্ষ্য করলাম মূল দরজার কড়া নড়ে উঠছে। উপরে দিকে তাকাতে আত্মা শুকিয়ে গেল, রাইফেলের লম্বা বেয়নেট। পালানোর সবকটা রাস্তা ছিল বন্ধ। ধীরে ধীরে খুলে গেল ফটকের তালা। কেউ একজন ৩০৩ রাইফেল নিয়ে প্রবেশ করলো বাড়িতে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম এ আমাদের গিয়াস উদ্দিন। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আলাপ করলাম তার সাথে। জানা গেল বাড়ি লুটের সাথে সেও জড়িত। তবে মূল উদ্যোক্তা স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার ও মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল জনাব আক্কাস আলী দেওয়ান। তার প্ররোচনায়ই নাকি সে রাজাকার বাহিনীতে নাম লিখিয়েছে। আসল কাজ চুরি ডাকাতি এবং ইতিমধ্যে বেশকিছু টাকাকড়ি জমাতে সমর্থ হয়েছে সে। ইচ্ছা যুদ্ধ শেষে নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে একজোড়া হালের গরু কিনে তা ভাড়া খাটানো। দুপা ঝাপটে ধরে রইলো অনেকক্ষণ এবং অনুনয় করে জানালো গ্রামে গিয়ে কাউকে যেন না জানাই তার বর্তমান পরিচয়। সুযোগ পেলেই নাকি ফিরে যাবে লোকালয়ে এবং সাথে নিয়ে যাবে তার ৩০৩ রাইফেল ও প্রিন্সিপালের কল্লা।

১৬ই ডিসেম্বরের আগেই সে ফিরে গিয়েছিল। প্রিন্সিপালের কল্লা আর নিতে পারেনি তবে রাইফেল নিতে ভুল করেনি। কিন্তু ১৬ই ডিসেম্বরের পর ব্যাংক লুটেরা একদল আওয়ামী জেনারেল গিয়াস উদ্দিনকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে চৌরাস্তার মুখে।

ঘটনা ২:

স্থান দাদাবাড়ি। শহর হতে পালিয়ে আমাদের মত আরও অনেক পরিবার লুকিয়ে আছে। গ্রামটায় আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া লাগতে তখনো একশ বছর বাকি। বাকি দুনিয়ার সাথে রাস্তাঘাটের সম্পর্ক নেই। কাছের রাস্তা হতে হেঁটে যেতে হয় প্রায় দশ মাইল। এমন একটা গ্রামে পাকি বাহিনীর আগমনের আশংকা ছিল খুবই কম। জুন মাসের মাঝামাঝি সময় তার উদয়। হাতে সেমি অটোমেটিক রাইফেল। পায়ে জলপাই রংয়ের কেডস। গ্রামের বেকার যুবক সাইদুল হোসেন সাদু এখন মুক্তিযোদ্ধা। কবে এবং কোথায় ট্রেনিং নিয়েছে তার কোন সদুত্তর তার কাছে ছিলনা। অবশ্য এ নিয়ে প্রশ্ন করার মতও কেউ ছিলনা। যুদ্ধের শুরুতে গ্রামের মুরুব্বিদের প্রায় সবাই ছিল অখণ্ড পাকিস্তানের সমর্থক। এ নিয়ে মসজিদে মসজিদে দোয়াও করানো হত। বিশেষ করে জুমা নামাজের পর। এ ধরণের সমর্থনের কিছু ঐতিহাসিক কারণও ছিল। অবিভক্ত ভারতে এ এলাকায় হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারে জর্জরিত ছিল মুসলিম প্রজারা। জমিদার বাড়ির পাশ দিয়ে হেটে গেলে জুতা হাতে নেয়া ছিল বাধ্যতামূলক। তা করতে ব্যর্থ হলে নেমে আসতো নির্মম অত্যাচার। কৃষি ও তাঁত ব্যবসার সাথে জড়িত জনগণকে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে নিরুৎসাহিত করা হত। মুসলমানদের শিক্ষা নিয়ে জমিদার তথা স্থানীয় হিন্দু বাসিন্দাদের মাঝে ঠাট্টা তামাশার অন্ত ছিলনা। অপমান হতে মুক্তি পেতে স্থানীয় অনেকেই সক্রিয় অংশ নেয় পাকিস্তান আন্দোলনে। তবে বর্ষার শুরুতে গঞ্জের বাজারে পাকিস্তানিদের গানবোটের আগমন বদলে দেয় অবস্থা। গ্রামের জনগণ শক্ত অবস্থান নেয় পাকিদের ঘৃণ্য তৎপরতার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সাদুর সাথে যোগ দেয় আরও কজন। সবার হাতে অস্ত্র। সকাল বিকাল গ্রামের এ মাথা হতে ও মাথা মার্চ করে বেড়ায়। তবে রাত হলেই বদলে যায় তাদের চেহারা। গৃহস্থের দুয়ারে হানা দেয়। হাঁস, মুরগী, ছাগল সহ যা পায় তা ধরে নিয়ে আসে। প্রতি রাতে চলে তাদের বনভোজন। কদিন না যেতে তাদের চাহিদার আঙ্গিনা পা রাখে গ্রামের সোমত্ত মেয়েদের দিকে। পাকিস্তান সমর্থক হওয়ার কারণে মা-বাবাকে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে তাদের ভোগের পণ্য বানানো শুরু করে। যেদিন গঞ্জের বাজারে পাকিস্তানীরা হানা দেয় সেদিন সাদু ও তার দলবলকে একশ মাইলের কাছাকাছি কোথাও দেখা যায়নি।

যুদ্ধ শেষে সাদু ও তার বাহিনী জমিদার বাড়ি দখল সহ শত শত বিঘা ধানী জমি দখল করে কায়েম করেছিল অনাচার ও অবিচারের রাজত্ব। সাদু আজ বেচে নেই, কিন্তু তার কাজের ধারাবাহিকতায় আজও এলাকা চষে বেড়াচ্ছে একদল হায়েনা। ওরা খুন করছে, মা-বোনদের ঘর হতে উঠিয়ে নিচ্ছে, জমি দখল নিচ্ছে এবং গর্বভরে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক হিসাবে।

সব রাজাকারই যেমন খুনি রাজাকার ছিলনা তেমনি সব মুক্তিযোদ্ধাই স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেনি। সবাইকে এক কাতারের ফেলে দেশকে বিভক্ত করে মুক্তিযুদ্ধকে বানানো হয়েছে গঞ্জিকা সেবনের উপকরণ। মৃত পিয়াস করিম উপাখ্যানও এ অধ্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ডেভিড বার্গম্যান, আদালত অবমাননা এবং তিরিশ লাখ

লরেন্স লিফশুলজ

একজন মানুষ ও একটি বিচারের ইতিহাস: ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে মামলা

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও তার সহকর্মীরা আগামী ১৩ অক্টোবর একটি একটি অসাধারণ ঐতিহাসিক বিতর্কের উপর সিদ্ধান্ত দিতে যাচ্ছেন। ইতিহাসের এই প্রশ্নটি কেন এবং কিভাবে আদালত অবমাননার ধারায় বিচারের আওতায় আসলো সেটি এক দুর্ভাগ্যজনক কাহিনী।

 

আইসিটি-২ এর বিচারকরা আইনের সাথে লতায়-পাতায় জড়িত এমন একটি বিষয়ে ভারসাম্যমূলক সিদ্ধান্ত দিতে যাচ্ছেন অবস্থাদৃষ্টে যেটি হয়তো তারা নিজেরাও প্রশংসাযোগ্য কাজ বলে মনে করেন না।     মামলারটির বিবাদী দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশে বসবাসকারী বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। একটি বিশেষ মামলায় ট্রাইবুনালের দেয়া ঐতিহাসিক রেফারেন্স নিয়ে বার্গম্যানের অনুসন্ধানী কাজের জন্য তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে।

 

মামলাটি অবশ্য ট্রাইবুনাল স্বতপ্রনোদিতভাবে করেনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে ট্রাইবুনালের দেয়া রেফারেন্সকে অসম্মান করা হয়েছে উল্লেখ করে আবুল কালাম আজাদ নামে হাইকোর্টের একজন আইনজীবী তৃতীয় পক্ষ হিসেবে পিটিশন আকারে এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন।    আজাদ সাহেবের পিটিশন শুনানী শেষে ট্রাইবুনাল ডেভিড বার্গম্যানকে ‘কেন আদালত অবমাননাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হবে না?’ মর্মে কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করেন।

 

কিছু মানুষ আছে যারা ব্যক্তি বা গোষ্টি স্বার্থের প্রয়োজনে জাতীয়তাবাদকে কলঙ্কিত করতে দ্বিধা করে না; এই মামলার বাদী আবুল কালাম আজাদ তেমনই একজন লোক। অবশ্য স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদ একটি শাখের করাতের মত বিষয় হবার কারণে এটিকে সহজেই খারাপ কাজেও ব্যবহার করা যায়।    ঔপনিবেশিক শাসন বা বিদেশী আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাবার জন্য সংগ্রামরত একটি নিপীড়িত জাতির জন্য জাতীয়তাবাদ অবশ্যই শক্তিশালী এবং প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু ভিন্ন পরিস্থিতিতে এটা কখনো কখনো ধর্মান্ধতা ও সংকীর্ণ মতাদর্শগত অন্ধবিশ্বাসের জন্ম দেবার মত উর্বর ক্ষেত্রও হতে পারে।

 

উদাহরণ হিসেবে ১৯৯০ দশকের শুরুতে বসনিয়ায় সার্ব জাতীয়তাবাদীদের গণহত্যার কথা বলা যেতে পারে। বসনিয়ার মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর সে সময় সার্বরা যে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান চালিয়েছিলো তা সেখানকার বসনিয় মুসলিম এবং ক্রোয়াট ক্যাথলিক খ্রীষ্টানদের সাথে তাদের হাজার বছর ধরে টিকে থাকা শান্তিপূর্ণ আন্ত:সম্প্রদায়িক সহাবস্থানকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ছিলো।  কারাদজিক, ম্লাদিক, মিলোসেভিচরা ছিলো জাতীয়তাবাদ নামের শাখের করাতের উল্টো ধারের অংশ। ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার সেব্রেনিৎসায় ৮হাজারের বেশি মুসলিম পুরুষ ও বালককে হত্যার অভিযোগে এখন হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কারাদজিক ও ম্লাদিকসহ বসনীয় সার্ব নেতাদের বিচার চলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ছিলো ইউরোপের মাটিতে সংঘটিত সবচেয়ে বড় একক গণহত্যাযজ্ঞ।

 

স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের সংগ্রামের ইতিহাস প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদের এক অনন্য উদাহরণ। পাকিস্তানের সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ন ও অহিংস আন্দোলন করে গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে অনুন্নত আঞ্চলিক বৈষম্যের নাগপাশ থেকে মুক্তি পাবার জন্য এই সংগ্রাম আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও সাহসী উদাহরণ।  কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক একনায়কতন্ত্র সেই গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফলকে মেনে না নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার পথ বেছে নেয়। ফলে শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মুক্তিযুদ্ধ।

 

এই ঐতিহাসিক পটভূমির সাথে ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কী সম্পর্ক? দেখা যাচ্ছে সম্পর্ক ও তাৎপর্য রয়েছে বিপুল পরিমানেই।

 

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংঘঠিত যুদ্ধাপরাধের বিচার যেভাবে এগিয়েছে তাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্প্রদায় ‘ক্রান্তিকালীন বিচারব্যবস্থা’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘঠিত হবার কয়েক মাসের মধ্যেই একটি সমাজে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে এমনটা বোঝানোর জন্য ‘ক্রান্তিকালীন বিচারব্যবস্থা’ একটি কৃত্রিম ও অস্বাভাবিক শব্দ। কারণ এর দ্বারা এটা বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে যারা সেই সময় ভয়ানক অপরাধগুলো করেছিলো তদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য কার্যকর চেষ্টা করা হয়েছিলো।

 

কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের অভ্যুত্থান সেই প্রচেষ্টাকে বাঁধাগ্রস্থ করে। শেখ মুজিব হত্যার পরের সরকার এবং জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এরশাদের শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কুখ্যাত সহযোগীরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিরাপদে থেকেছে। কেউ কেউ সরকারী উচ্চ পদেও আসীন হয়েছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলেও এটা কোন দৈব ঘটনা ছিলো না। দেশের এই অবস্থাটি তৈরীর জন্য অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটানো হয়েছিলো।

 

১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রায় ৪০ বছর যাবৎ নিরবিচ্ছিন্যভাবে কাজ করতে হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। নি:সন্দেহে এটা একটা মহান তাত্পর্যপূর্ন পদক্ষেপ।

 

ট্রাইব্যুনালের যে সকল বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরী হয়েছে সেসব বিশদ পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের উপযুক্ত স্থান বা সময় নয় এটা নয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের লজ্জাজনক সহযোগিতায় কিভাবে পাকিস্তান জাতিসংঘের মাধ্যমে একটি ট্রাবুনাল গঠনে বাঁধার সৃষ্টি করেছিলো সেসব বিশ্লেষণের সময়ও এটা নয়। সেগুলো নিয়ে আমি পরে কখনো লিখবো।

 

এখন যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন, সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ডেভিড বার্গম্যানকে আদালত অবমাননার দায়ে বিচার করছে। সেই ডেভিড বার্গম্যান, যে কিনা অসাধারণ রিপোর্টিং এর মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন কিভাবে ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধীরা দায়মুক্তি নিয়ে ইংল্যান্ডে বসবাস করছে। ১৯৯৫ সালে ইংল্যান্ডের চ্যানেল ফোর এ প্রচারিত যে ‘দি ওয়ার ক্রাইমস ফাইল’ নামের গবেষণামূলক তথ্যচিত্রটি ৭১ এর যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি আবারো আলোচনায় এনেছিলো ডেভিড বার্গম্যান ছিলেন তার গবেষণা ও প্রযোজনা টিমের মূল সদস্য।  এই তথ্যচিত্রটির মাধ্যমে দেখানো হয়েছিলো কিভাবে জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় সদস্যরা ১৯৭১ সালে একাধিক গনহত্যা করার পরও কোনরূপ গ্রেফতারের ভয়-ভীতি ছাড়াই বৃটেনে বসবাস করছিলো। তথ্যচিত্রটিতে তুলে আনা প্রমাণগুলো ছিলো মর্মস্পর্শী।

 

বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগটি ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের সময় দেয়া আদেশের একটি বাক্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। ঐ আদেশে বলা হয়েছিলো যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ লক্ষ লোক নিহত হয়েছে।

 

বার্গম্যান তাঁর নিজস্ব ওয়েবসাইটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা গুলো সম্পর্ক বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন এবং সেগুলোর উপর নানা মন্তব্য করেছেন।

 

আদালতের কার্যক্রম, যুদ্ধপরাধের ব্যপকত্ব এবং যুদ্ধের বর্তমানকালীন তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা ও মতামত দেয়ার প্রসংগেই, ১৯৭১ সালে সত্যিকার অর্থেই কতজন মানুষ নিহত হয়েছিলেন সেই বিতর্কিত বিষয়টি তুলে আনেন বার্গম্যান। এটি অবশ্যই একটি স্পর্শকাতর অধ্যায়। তবে এই বিষয়টি কোনভাবেই সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের গুরুত্বপূর্ণ কোন অংশ নয়। সাঈদীর বিরুদ্ধে দাখিলকৃত সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়।

 

এই বিষয়টি নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণে যেতে চাইলে আমি হয়তো একদম ভিন্ন একটি প্রেক্ষাপট নির্বাচন করতাম, তবে ডেভিড বার্গম্যান সাঈদীর মামলার রায়ের পর্যালোচনার মধ্যে থেকেই বিষয়টিকে সামনে এনেছেন। ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর বার্গম্যান যুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতির ঐতিহাসিক বিতর্কটি নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করেন। লেখায় তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে তাঁর জাত চিনিয়েছেন। বার্গম্যানের দক্ষতায় তাঁর লেখায় এই পুরো বিতর্কের প্রায় সকল অংশ সম্পূর্ণরূপে ফুঁটে উঠেছে। লেখাটি নিশ্চিতভাবেই অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ এবং চিন্তার খোরাক যোগায়।

 

আবুল কালাম আজাদ, যিনি বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনেছেন, তাঁর মতে ত্রিশলক্ষ শহীদের এই পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন এখতিয়ার কারও নেই। জনাব আজাদের সংকীর্ণ ‘জাতীয়তাবাদ’ এর মাপকাঠিতে যিনি এই পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন তিনি অবশ্যই ‘জাতির শত্রু’, ‘দেশের শত্রু’ এবং ‘ট্রাইব্যুনালের শত্রু’।

 

এখানে আমরা অতি দুরূহ একটা বিষয়ের অবতারণা করছি। একটি ঐতিহাসিক বিতর্কের কোন অংশের ‘ঐতিহাসিক শুদ্ধতা’ নিরূপণ কি ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে?

 

এই বিষয়ে আরেকটু বলতে হয়। ১৯৭৪ সালে আমি ছিলাম ফার ইস্টার্ন ইকোনোমিক রিভিউ-এর বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিবেদক। বাংলাদেশে আমার সাংবাদিকতা জীবনে আমি একজন ইন্টারেস্টিং মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছিলাম।

 

যেহেতু তিনি আমার প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনের খবরের উৎস হিসেবে কাজ করেছিলেন তাই দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি তাঁর নাম উল্লেখ করতে পারছি না। আমি জানি না তাঁর সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা যায় কিংবা তিনি আদৌ বেঁচে আছেন কিনা।

 

আমার প্রতিবেদনগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সংবাদের উৎস হিসেবে কাজ করা ছাড়াও এই লোকটি আমাকে তাঁর কাজ সম্পর্কে আরও চমৎকার সব তথ্য দিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে ফিরে যাই। তিনি তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি গবেষকদলের সাথে কাজ করছিলেন যাদের উপর দায়িত্ব ছিল মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে পুরো দেশে ঘটে যাওয়া যুদ্ধের ফলে যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির একটি খতিয়ান দাঁড় করানো।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানের অন্যতম প্রচেষ্টা ছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এবং তাদের দোসরদের হাতে ঠিক কতজন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাঁরা আরও জানার চেষ্টা করছিলেন কতজন মানুষ শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার পথে কিংবা শরণার্থী শিবিরে পৌঁছানোর পর মারা গিয়েছিলেন। এদের অধিকাংশই ছিল শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠ।

 

মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দ্বারা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করেই অনুসন্ধান কাজ চালানো হয়েছিলো যেখানে গ্রামে গ্রামে গিয়ে পরিবারগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হতো যুদ্ধকালে সেই গ্রামগুলোতে ঠিক কতজন মানুষ, কিভাবে মারা গিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে তারা পুরো দেশের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দাঁড় করাচ্ছিলেন। আমার সাথে তার পরিচয়ের সময় পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জেলায় তাঁদের জরিপ কাজ সমাপ্ত করেছিলো।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আমার সেই তথ্যদাতা আমাকে জানিয়েছিলেন, তাঁদের হিসাব অনুসারে যুদ্ধকালে নিহত মানুষের মোট সংখ্যা ২,৫০,০০০। আমার যতদূর মনে পড়ে এই সংখ্যা শরণার্থী শিবির কিংবা উন্মত্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর থেকে  পালানোর সময় মৃত্যুবারণকারীদের বাদ দিয়েই হিসাব করা হয়েছিলো।

 

সশস্ত্র যুদ্ধে আড়াই লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু অবশ্যই একটি অত্যন্ত ভয়াবহ এবং মর্মান্তিক ঘটনা। যাই হোক, আমার সেই তথ্যদাতা আমাকে জানান যে এই অনুসন্ধানকাজ আকস্মিকভাবে বন্ধ ঘোষনা করা হয়। কারণ হিসেবে জানা যায় যে এই জরিপের ফলাফল নিশ্চিতভাবেই মুক্তিযুদ্ধে এবং শরণার্থী শিবিরে মৃত্যুবরণকারীদের সঠিক সংখ্যা তুলে আনতো যা মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশলক্ষ মানুষের মারা যাওয়ার প্রচলিত ধারণা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

 

এর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকা ত্যাগ করে নয়াদিল্লীতে ফার ইস্টার্ন ইকোনোমিক রিভিউ-এর দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধির পদে যোগদান করায় আমি এই সংখ্যা কোনদিন প্রকাশ করতে পারিনি। সব সময় আমার একটি ইচ্ছা ছিল এই বিষয়ে কিছু লেখার কিন্তু ভারতে জরুরী অবস্থা জারি এবং আরও কিছু ঘটনা এই বিষয়টিকে সেই অল্প কয়েকটি প্রতিবেদনের একটিতে পরিণত করে যেগুলো নিয়ে আমি লিখতে চাইলেও আর লিখতে পারিনি।

 

ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আনীত আদালত অবমাননার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমার উল্লিখিত এই ঘটনাটি প্রাসঙ্গিক। কারণ ১৯৭৪ সালে সরকারের পরিচালিত অনুসন্ধানই ত্রিশলক্ষ শহীদের এই সংখ্যার যথার্থতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই সংখ্যাটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অপরাধে একজন সাংবাদিকের বিচার করছে।

 

নিশ্চিতভাবেই এই সংখ্যা নিয়ে একটা মারাত্মক বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। যদি বিচারপতি হাসান এবং তাঁর সঙ্গীরা বার্গম্যানকে দোষী সাব্যস্ত করেন, তাহলে এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা ডঃ এম এ হাসানসহ অন্যান্য গবেষক এমন কী আমাকেও আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করতে হবে, কারণ মুক্তিযুদ্ধে কত মানুষ শহীদ হয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর একটাই, যার উত্তর এখন ট্রাইব্যুনালকেই দিতে হবে।

 

গণতান্ত্রিক সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত একটি যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রকৃত ভূমিকা অবশ্যই এমন হবার কথা নয়। সম্ভবত, এমন রুলিং এর তুলনা কেবলমাত্র উনিশ’শ ত্রিশের দশকের স্ট্যালিনীয় কোর্টগুলোর সাথেই করা যায় যেখানে বুখারিনের মত মানুষও অত্যাচারিত হয়ে আদর্শিক ত্রুটি স্বীকারে বাধ্য হয়েছিলেন। আবুল কালাম আজাদের মত মানুষদের মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ঐতিহাসিক ‘সত্যের’ রক্ষকের ভূমিকাও পালন করতে হবে, তা সেই সত্য যত বিতর্কিতই হোক না কেন।

 

ট্রাইব্যুনালের ঐতিহাসিক দায়িত্ব হচ্ছে পাকিস্তান রাষ্ট্রের যে সকল ফ্যানাটিক সমর্থকেরা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং নৃশংস যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা; যে দায়মুক্তির চাদরে তাঁরা দিনের পর দিন বাংলাদেশ ও পৃথিবীর যাবতীয় আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বেঁচে আছেন তার অবসান ঘটানো। ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সহস্রাধিক ভুক্তভোগীর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানোর এক বিশাল দায়িত্ব আজ ট্রাইব্যুনালগুলোর উপর অর্পণ করা হয়েছে।

 

আমার দৃষ্টিতে কেউই জানেন না কোনটি সত্য, কিংবা কারও কাছেই প্রকৃত সংখ্যাটি কত তার কোন কোন খতিয়ান নেই। আমার মতে, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ১৯৭৪ সালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক চালানো জরিপটি বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত পাওয়া ২,৫০,০০০ সংখ্যার চেয়ে নিশ্চিতভাবেই বেশি।

 

২০১১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্ত বিভাগের পক্ষ থেকে আমাকে আমার বসনিয়ার অভিজ্ঞতা জানানোর জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

 

আমি রাবিয়া আলীর সাথে একটি বই লেখা এবং সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলাম যার নাম ছিল “Why Bosnia? Writings on the Balkan War”। আমি বসনিয়ার পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছি আর সারায়েভোসহ অন্যান্য শহরের এমন বহু উদ্যান কিংবা খেলার মাঠের মধ্য দিয়ে হেঁটে গেছি যেগুলো মানুষের কবরে ছেয়ে গিয়েছিলো, যেখানে বেসামরিক মানুষদেরকে প্রচণ্ড বোমাবর্ষণের মধ্যে তড়িঘড়ি করে কবর দেয়া হয়েছিলো।

 

বইটির লেখকদের মধ্যে আমার বেশ কিছু বন্ধুও ছিল যারা বসনিয়ার গণহত্যার বিচারে গঠিত যুদ্ধাপরাধ আদালতের সাথে কাজ করেছিলেন। বসনিয়ায় যুদ্ধ শেষে প্রতিটি গণকবর চিহ্নিত করে পুনরায় খনন করা হয়েছিলো।

 

যাদের দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিলো তাঁদের প্রত্যেকের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়েছিলো। তারপর তাঁদের সেই দেহাবশেষ যথাযোগ্য সম্মানের সাথে ততদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়েছিলো যতদিন পর্যন্ত না তাঁদের পরিবারের কোন জীবিত সদস্য সেই মৃতদেহ শনাক্ত করে পূনরায় দাফনের ব্যবস্থা করতে পারেন। এমনটা সেব্রেনিৎসাসহ পুরো বসনিয়াতেই করা হয়েছিলো।

 

প্রশিক্ষিত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে এমন বিরাট একটি কাজ করা অনেক ব্যয়বহুল হলেও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বসনিয়া সরকার সেই খরচ বহন করেছিলো। পুরো কাজটা সম্পন্য করতে কয়েক বছর লাগলেও এটি ছিলো গণহত্যা পরবর্তী সময়ে একটি সমাজের নৈতিক দায়বদ্ধতা। এভাবে বসনিয়রা ঐ যুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা কত হতে পারে সেই সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছিলো। কিন্তু কেউই জানে না প্রকৃত সংখ্যাটা ঠিক কত। কারণ এইসব ক্ষেত্রে প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ অসম্ভব।

 

২০১১ সালে আমি যখন আমি বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্ত বিভাগের মুখোমুখি হই তখন আমাকে জানানো হয়েছিলো যে, পুরো দেশে দুই শতাধিক গণকবরের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন এবং তখনও খুঁজছেন।

 

ডেভিড বার্গম্যান এই বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তার লেখায় ‘ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্ট ফইন্ডিং কমিটি’র আহবায়ক ড. এম এ হাসানকে উদ্ধৃত করেছেন। উল্লেখ্য যে, এরশাদ সরকারের পতনের পর ড. এম এ হাসান একটি গবেষক দল গঠন করে তাদের নিয়ে শহীদের সঠিক সংখ্যা ও তথ্য নির্নয় করতে পুরো বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছেন, গ্রামে গ্রামে গিয়েছেন।

 

ড. হাসান বার্গম্যানকে বলেছেন যে, তার ধারণামতে ৩০ লক্ষ একটি অতিরঞ্জিত সংখ্যা এবং সঠিক সংখ্যাটি সম্ভবত ১২ লক্ষের কাছাকাছি হবে। তিনি বার্গ্যানকে বলেছেন, “আমরা ৯৪৮টি বধ্যভূমি বা গণকবরের সন্ধান পেয়েছি। আমাদের গবেষণা অনুসারে প্রতি একটি গণকবরের বিপরীতে আরও চারটি গণকবর রয়েছে যার উপর পরবর্তীকালে স্থাপনা নির্মিত হয়েছে কিংবা যার হদিস পাওয়া যায় না।এই হিসেবে মোট গণকবরের সংখ্যা ৫০০০ বলে ধরে নেয়া যায়”।

 

ডঃ হাসান অনুমান করেন যদি প্রতিটি কবরে ১০০টি করে লাশ থাকে তবে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫,০০,০০০ যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই ১৯৭৪ সালের অনুসন্ধানের ফলাফলেরও দ্বিগুণ। অবশ্য, ডঃ হাসানের এই অনুমান মোট মৃতের সংখ্যার ৩০ শতাংশের মত, কারণ তিনি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের সাক্ষাৎকার থেকে অনুমান করেছেন যে মোট নিহতের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষকে গণকবরে সমাহিত করা হয়েছিলো আর বাকীদের দেহ নদী-নালায় বা উন্মুক্ত স্থানে ফেলে দেয়ায় তা পচে গলে নষ্ট হয়ে গেছে।

 

এভাবে ডঃ হাসান, যিনি সম্ভবত এই বিষয়ে দীর্ঘসময় গবেষণাকারী একমাত্র বাংলাদেশী, অনুমান করেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ১২ লক্ষের মত হবে। অবশ্য, এই সংখ্যায় তাঁদের যোগ করা হয়নি যারা শরণার্থী শিবিরে কিংবা শিবিরে যাওয়ার পথেই মৃতুবরণ করেছিলেন।

 

সত্যি কথা বলতে কেউই জানেন না সঠিক সংখ্যাটা ঠিক কত হতে পারে, এমনকি অনুমানও করতে পারেন না। ডঃ হাসানের অনুমানই সম্ভবত প্রকৃত সংখ্যার সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছে। অবশ্য সংখ্যাটি যতই হোক না কেন নিশ্চিতভাবেই তা বেশ বড়। এই সংখ্যার পেছনে লুকিয়ে আছে সহস্রাধিক পরিবারের দুঃখ ও বেদনা যারা তাঁদের আপনজনকে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়েছেন।

 

এই জটিল, দুরূহ আর আবেগময় অবস্থায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি-২) এমন একটি বিষয়ে রুলিং দিতে যাচ্ছেন যেখানে তাঁদের নিজেদের কাছেই কোন সঠিক উত্তর নেই।

 

আমাদের চিন্তাধারা কেমন হবে তা বলে দেয়ার জন্যে কোন আবুল কালাম আজাদ কিংবা কোন আদালতের প্রয়োজন নেই। প্রকৃতপক্ষে, তিনি নিজেই চারদশক ধরে চলে আসা এই বিতর্কে কোন অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশপ্রেমের ছদ্মবেশে মূর্খতা কি কাউকে জ্ঞানের পথে চালিত করতে পারে?

 

এখন কেউ শুধু এতটুকুই আশা করতে পারেন যে ট্রাইব্যুনাল যথেষ্ট বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারবে যে এটি কোনভাবেই তাঁদের বিচার কার্যের আওতায় পড়ে না। মুক্তিযুদ্ধ ছিল গণতন্ত্র আর স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার এক লড়াই। মুক্তিযুদ্ধ ছিল মূর্খতা, ঔদ্ধত্য আর সামরিক শাসকদের নিষ্ঠুর নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক গণযুদ্ধ।

 

অতীতের মত এখনও বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিকূল অবস্থায় রয়েছে। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই এখন বোধোদয় জরুরী হয়ে পড়েছে।

 

আমার মতে, একটি বিজ্ঞ আদালত, অবশ্যই চিন্তা করবেন ফ্র্যাসোঁয়া-ম্যারি অ্যারোয়ে, যাকে আমরা ভলতেয়ার নামে চিনি, তিনি ভিন্নমত নিয়ে কি বলে গিয়েছিলেন। ভলতেয়ার ছিলেন ফরাসী বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ অষ্টদশ শতাব্দীর একজন দার্শনিক এবং লেখক। তিনি বলে গিয়েছেন, “তুমি যা বল তাঁর সাথে আমার দ্বিমত থাকতে পারে, তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি তোমার সেই কথাটি বলার অধিকার রক্ষায় লড়াই করে যাবো”।

 

* * *

 

২০১১ সালের ২৩ মে, বিবিসির বাংলা বিভাগের উপ-প্রধান সিরাজুর রহমান ব্রিটিশ পত্রিকা দ্যা গার্ডিয়ানে একটি চিঠি পাঠান। তিনি ইয়ান জ্যাকের লেখা একটি প্রবন্ধ যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মৃতের সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিলো, তার উপর নিজের মতামত প্রকাশ করেছিলেন। জনাব রহমান একটি ইতিহাস তুলে ধরেন সেখানে। তিনি লেখেন,

“১৯৭২ সালের জানুয়ারীর ৮ তারিখে, আমিই ছিলাম প্রথম বাংলাদেশী যিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করি। তাঁকে হিথ্রো থেকে লন্ডনের ক্ল্যারিজেসে আনা হয়… এবং আমি প্রায় সাথে সাথে সেখানে পৌঁছাই… তিনি যখন আমার কাছ থেকে জানতে পারেন যে তার অবর্তমানেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে এবং তাঁকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছে, তখন তিনি বিষ্মিত হন। দৃশ্যত তিনি লন্ডনে এসেছিলেন এই ধারণা নিয়ে যে তিনি পূর্ব-পাকিস্তানিদের যেই স্বায়ত্বশাসনের জন্যে লড়াই করছিলেন পাকিস্তানিরা তা মেনে নিয়েছে।”

 

“সেইদিন আমি এবং অন্যরা তাঁকে যুদ্ধের একটি বিবরণ দেই। আমি তাঁকে জানিয়েছিলাম যে এখন পর্যন্ত যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির কোন সঠিক হিসাব জানা যায়নি, তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে আমাদের অনুমান, কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ মারা গিয়েছেন। আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম যখন তিনি ডেভিড ফ্রস্টকে বললেন ত্রিশ লক্ষ মানুষকে পাকিস্তানিরা হত্যা করেছে। আমি জানি না কি কারণে তিনি এই সংখ্যাটি বলেছিলেন, হয়তো তিনি মিলিয়ন শব্দটির ভুল অনুবাদ করেছিলেন কিংবা তাঁর অস্থিরচিত্ত এর জন্যে দায়ী হয়ে থাকতে পারে। তবে আজও অনেক বাংলাদেশী বিশ্বাস করেন সংখ্যাটি আসলেই অতিরঞ্জিত।”

 

শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক ভালো গুণ ছিল। ১৯৬৯ সালের জুলাইয়ে ভারত থেকে ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধীনে ফেলোশিপ শেষ করার পর ঢাকা সফরকালে তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। আমরা দুইঘন্টা ধরে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে বসে কথা বলেছিলাম। তাঁর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ আমার আবারও হয়েছিল যখন আমি বাংলাদেশে কর্মসূত্রে ফিরে আসি। ১৯৭৫ সালের পর থেকে আমি বহুবছর তাঁর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে কাজ করে গেছি।

 

জীবনে কোন ভুল করেননি এমন কোন মানুষকে আমি খুঁজে পাইনি। তেমনি শেখ মুজিবও ভুল করেছিলেন। আমি বিশ্বাস করি তিনি ফ্রস্টের কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভুল বকেছিলেন। বহু আগেই বিষয়টির সুরাহা হওয়া উচিৎ ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই সংখ্যাটি কিছু অন্ধবিশ্বাসী মানুষের বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে।

 

প্রকৃতপক্ষে ডঃ হাসানের গবেষণার আলোকে দেখলে সিরাজুর রহমানের অনুমান সঠিক হয়, কিন্তু সিরাজুর রহমান বুদ্ধিমত্তার সাথে আরও বলেছিলেন যে এখনও “কোন সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি”। আগামী বছরগুলোতে আরও গবেষণা এবং বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়েই জানা যাবে স্বাধীনতার জন্যে বাংলাদেশীদের আত্মত্যাগের মাত্রার বিশালতা।

 

এই লেখাটি আমি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থার ওয়েব সাইটে প্রকাশ করছি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী এটি প্রকাশের অধিকার আমার আছে।

 

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এটি আমি বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যম থেকে প্রকাশ করতে পারছি না। কারণ কয়েকমাস আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা বিষয়টিকে ‘বিচারাধীন’ হিসেবে তাদের কর্তৃত্বাধীন বলে ঘোষনা করেছেন এবং তাদের সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত এই বিষয়ে সকল ধরণের আলাপ আলোচনা নিষিদ্ধ করেছেন। হয়তো এই কারণে আমার বাংলাদেশী সহকর্মীরা এটিকে তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করতে পারবেন না।

 

যাই হোক, আমি বিশ্বাস করি যে, এখানে প্রাসঙ্গিক তথ্য আছে এবং এগুলো গণমাধ্যমে প্রচার করে জনগণ ও আদালতকে তা জানার সুযোগ করে দেয়া উচিত। ১৯৭৪ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কর্তৃক সমীক্ষার বিষয়টি প্রথমবারের মত এখানে প্রকাশ করা হলো। আমার উদ্দেশ্য কোর্টের আদেশের প্রতি স্পর্ধা দেখানো নয়, বরং বিষয়টি জানানো।

 

৯ অক্টোবর, ২০১৪

স্টোনি ক্রিক, সিটি, ইউএসএ।

ইমেইল: OpenDoor.Lifschultz@gmail.com

Translated from Original English by A K M Wahiduzzaman

A MAN & HISTORY ON TRIAL The Case of David Bergman By Lawrence Lifschultz

1

A MAN & HISTORY ON TRIAL  The Case of David Bergman

 By Lawrence Lifschultz

Justice Obaidul Hasan and his colleagues at Bangladesh’s International Crimes Tribunal (# 2) are scheduled to rule on the question of an unusual historical dispute.  How and why this question of history has become the subject of a contempt proceeding is a troubling story. Their decision is expected on October 13th and it may have ramifications that even the justices of ICT-2 may not fully appreciate.

 

The case concerns the British journalist, David Bergman, who has been a long time resident of Bangladesh.  Mr. Bergman has been accused of “contempt” of Court for exploring an issue pertaining to an historical reference that one of the Tribunals made in a particular case.

 

The Tribunal itself did not bring the accusation against Bergman. The proceedings were initiated in the form of a petition by a third party, a High Court lawyer, Abul Kalam Azad. He accused David Bergman of showing disrespect to the Tribunal by raising a question about the number of casualties that occurred during Bangladesh’s War of Liberation.

 

After hearing Azad’s petition, the Tribunal issued an Order to Show Cause seeking a response from Bergman as to why he should not be held in contempt. While there were two other relatively minor charges raised by Azad in his petition, the central accusation focused on the fact that in a review of a forty-year debate David Bergman had questioned the accuracy and indisputable character of a statistic that had been cited by the War Crimes Tribunal.

 

The petitioner in this case, Abdul Kalam Azad, is the type of man who gives nationalism a bad name. Nationalism, as a singular ideology, is a two-edged sword.   In the context of an oppressed nationality seeking to overcome colonial rule or foreign occupation, nationalism can play a powerful and progressive role.  But in other circumstances it can become the breeding ground for bigotry and narrow ideological dogmatism.

 

In the case of Bosnia in the early 1990s, for example, Serb nationalism became genocidal and lead to the brutal “ethnic cleansing” of Bosniak,—largely Muslim—and Croatian—largely Catholic—populations, of a country with a long historical tradition of multi-ethnic tolerance and peaceful co-existence among its diverse communities.

 

The history of Bangladesh’s struggle for Liberation represents an example of a “progressive” nationalism. It is one of the clearest and most courageous examples in modern history of a democratic movement pursuing every non-violent option, including winning a national election, in order to overcome the trap of underdevelopment and regional inequality that were an integral part of the very structure of Pakistan’s military dictatorship. The dictatorship would not yield to the results of a democratic vote. On 25 March 1971 the Pakistan Army opted for mass murder instead and from that moment Bangladesh’s War of Liberation began.

 

What does this historical background have to do with David Bergman’s trial for contempt? As it turns out, a great deal.

 

Bangladesh has been in search of what the human rights community calls “transitional justice” since the country won its freedom in 1971.  Transitional justice is an awkward term that is meant to reflect a sense that justice and accountability has been achieved within a society in the aftermath of war crimes and crimes against humanity.  It means that an effective effort has been made to bring those who have committed these terrible crimes to justice.

 

The coup of 1975, only four years after Liberation, interrupted that journey for Bangladesh.  Instead, during the tenure of the back-to-back regimes of General Zia and General Ershad which emerged after the murder of Sheikh Mujib, notorious collaborators of the Pakistan Army found themselves under the protection of Bangladesh’s new military dictators. Several ended up in high government positions. It was a curious turn of fate but not an accidental one.  There was a great deal of careful planning and killing involved in order to create such a state of affairs.

 

It took nearly forty years for a serious effort to be undertaken to bring the war criminals of 1971 into a system of justice that would focus on putting these men on trial. Thus Bangladesh’s first International Crimes Tribunals was established in 2009 and the second, soon after.  These were steps of great significance. This is not the place nor the time to examine in detail the many controversies that have emerged related to the work of the Tribunals. Nor is it the place to examine how Pakistan, with the shameful cooperation of the United States and France, blocked the sharing of UN expertise and assistance to Bangladesh in setting up the Tribunals. I will return to these topics in another article.

 

What is of importance today is that one of Bangladesh’s War Crimes Tribunals may decide to hold in contempt David Bergman, a reporter from whose early work we learned that war criminals from the 1971 War of Liberation were living with impunity in England.  Bergman was a key member of the team that researched and produced the excellent 1995 Channel Four documentary, “The War Crimes File”. This documentary threw a spotlight on individual members of the Jamaat-e-Islam and its student wing who were allegedly involved in multiple murders in 1971 but were living openly in Britain without fear of arrest. The evidence mustered in this documentary was impressive.

 

The contempt allegation against Bergman relates to a sentence in a 3 October 2011 Tribunal order charging Delawar Hossain Sayedee.  The order made a reference to the deaths of three million people during the War of Liberation.

 

Bergman has edited a website in which he has reported and commented on the various trials taking place before the War Crimes Tribunals.  He decided to take up the controversial topic of how many people died during 1971. Obviously, this is a difficult subject. On its own it was not central to the indictment of Sayedee, as the evidence against Sayedee was based on other factors.  But in making its ruling the Tribunal had cited a statistic that is accepted by many as an indisputable fact.

 

While I might have chosen a different context to examine this issue in detail, David Bergman decided to do it within the framework of a discussion of the Tribunal’s indictment of Sayedee. Therefore, on 11 November 2011, he wrote a detailed review of the historical debate on the issue of war casualties. Here he showed his capabilities as a ‘scholar journalist’.  Bergman’s mastery of the material covering the full spectrum of the debate on this issue was impressively clear. It is a thoughtful and insightful commentary.

 

However, Abul Kalam Azad, the attorney who called for Bergman to be held in contempt, argued that no one should question the accuracy of the statistic of three million deaths during the War of Liberation.  From the vantage point of Azad’s narrow-minded ‘nationalism’ anyone who questions this statistic must be ‘an enemy of the people’,  ‘an enemy of the state’, or an enemy of the Tribunal. Here we approach the really difficult issue. Is it the role of a Tribunal to pass judgment on the ‘historical correctness’ of a particular position in a historical debate such as this one?

 

Let me complicate the picture even further. In 1974, I was the Far Eastern Economic Review’s resident correspondent in Bangladesh. In the course of my reporting I met a very interesting man who had a very intriguing story to tell about the work he had recently been doing. He was employed by the Home Ministry and was part of a team of researchers conducting a study that was trying to assess the total number of casualties that had occurred during the nine months of 1971 as war raged across the country.

 

The Home Ministry study was trying to assess how many people had died directly from the armed violence of the Pakistan Army and their local collaborators. They were also trying to estimate how many people had died on the road or once they reached refugee camps across the border in India. Many of these deaths were among children and the elderly. The study was conducted by field workers systematically asking families in villages about those who had died from their village during the war and under what circumstances.  They were slowly building up a picture across the country. At the time we met, the Home Ministry team had completed their survey in approximately a third of the districts.

 

My Home Ministry source told me that based on their projections the number of deaths from the war was estimated at 250,000 people. As I recall, this did not include the young, the ill and the elderly, who died either in the refugee camps or as they fled the Pakistan Army. A quarter of million people dying from armed violence is by any measure a terrible and tragic number.  However, according to my source, the study was abruptly shut down and discontinued. The reason was that the survey was moving toward a statistical conclusion that differed with the prevailing orthodoxy that three million people had died from armed violence and refugee migration.

 

I never published this account because I was leaving Bangladesh within a week to take up a position as South Asia Correspondent of the Far Eastern Economic Review based in New Delhi. I had always meant to return to the issue but the Emergency in India and other events conspired to make this one of the few stories I never revisited as I intended.

 

Yet, in the context of the trial of David Bergman on contempt charges, it is has assumed great relevance. It is relevant because the government’s own study in 1974 essentially questioned the accuracy of the three-million figure and yet the ICT-2 is now considering holding a journalist in contempt for raising a question about this issue.

 

There is something wrong with this picture. If Justice Hasan and his colleagues declare Bergman in contempt, are they entering a terrain where they must hold Dr. M. A. Hasan and other researchers, such as myself, in contempt because there is only one true answer and the Court will declare what it is?

 

This is not the appropriate role of a war crimes tribunal in pursuit of justice in a democratic society. Perhaps, in one of the Stalinist courts of the 1930s where men like Bukharin were compelled to confess to ideological ‘errors’, one could expect such a ruling. In the minds of men like Abul Kalam Azad, the War Crimes Tribunals should become the ideological guardian of historical ‘facts’ whether they be disputed or not.

 

The historic task of the Tribunals is to bring to justice those responsible for the appalling war crimes and crimes against humanity that were carried out in a premeditated manner by fanatical supporters of the Pakistani state. The impunity under which they have lived for decades is a stain on the conscience of this country and the world.  The Tribunals have an immense task to accomplish justice in this regard and thereby honor the memory of the hundreds of thousands of victims. My view is that no one knows the truth or has an accurate number. In my opinion the death toll from armed violence might well have exceeded the 250,000 estimated by the 1974 Home Ministry study before it was shut down.

 

In March 2011, I was invited by the special investigations unit of Bangladesh’s War Crimes Tribunal to speak to the investigators about my knowledge and experience in Bosnia. I had co-edited a book with Rabia Ali entitled “Why Bosnia? Writings on the Balkan War”. I had also traveled widely in Bosnia and sadly I had walked through the many parks and soccer fields of Sarajevo and other towns that were filled with graves where the civilian dead were hurriedly buried in the midst of the long sieges and heavy bombardment of Bosnia’s war ravaged cities. I also had friends among the contributors to our book who had worked with the war crimes tribunals that were set up following the conflict.

 

In Bosnia, all the unmarked mass graves scattered throughout the country were excavated when the conflict ended. DNA tests were done on each person whose remains were exhumed. Their remains were respectfully kept until living family members could reclaim their relatives for burial once they had been accurately identified. This happened at Srebrenica and elsewhere.

 

The cost of deploying carefully trained forensic teams was significant and was funded by the UN, the European Union and the Bosnian government. Although it took years, this work was undertaken as a moral commitment by a society coming to grips with the aftermath of genocide. By this means, the Bosnians have built up a rough estimate of those who perished. But no one knows the precise number. Such a number is always elusive.

 

When I met the Bangladesh investigations unit in 2011, I was told by the team that they had identified over two hundred mass graves across Bangladesh, and they were still counting.

 

David Bergman in his discussion of this issue cites the study of Dr. M.A. Hasan, the Convenor of the War Crimes Fact Finding Committee, who since the fall of General Ershad had a assembled a team of researchers who “travelled around the country, village-to-village, to uncover accurate information on the numbers of dead.”

 

Dr. Hasan told Bergman that he thought the figure of 3 million was an exaggerated number and that more accurate number was closer to 1.2 million. “We have identified 948 killing fields or mass graves,” Hasan told Bergman. “Our research suggests that for every one grave that we have found there are four others which have been built upon or are not accessible. That makes a total of 5,000 graves.”

 

Dr. Hasan estimated approximately a 100 bodies in each grave, which results in an estimate of 500,000, or twice that of the projection developed by the 1974 Home Ministry study.  Yet, Dr. Hasan estimates based on his discussions with local villagers that those buried in the mass graves represent about 30 percent of the total number of deaths, with the a greater number of the dead having been disposed of by being thrown into local rivers where they were washed away.

 

Thus, Dr. Hasan, who is perhaps the only person to have researched this issue in such depth, estimates that 1.2 million people died during the Liberation War. Of course, this does not include many young, ill and elderly individuals who died in the refugee camps or on the road fleeing the violence.

 

The truth is that no one knows with any precision, or even approximately, what a real number might be. Dr. Hasan’s estimate is probably the most accurate.  Whatever the number is, the unmistakable truth remains that it is a number of horrific magnitude.  It reflects the pain and grief of thousands of families whose loved ones perished in the war.

 

Into this complex, difficult and emotional terrain, the War Crimes Tribunal (ICT-2) has decided to make a judicial ruling on a matter upon which jurists have no authority or place to declare a “right answer”.

 

No one needs someone like Abul Kalam Azad telling us, or asking a Court to tell us, what to think. Indeed, the man himself has failed to demonstrate any knowledge of the disputed facts or the debate that has taken place over four decades. Can ignorance dressed up as patriotism be anyone’s guide to knowledge?

 

One can only hope the Tribunal is wise enough to understand that this historical debate is outside their jurisdiction to rule on.  The War of Liberation was a war in the name of democracy and self-determination. It was an uprising against the ignorance, the hubris and the cruel violence of a military dictatorship determined to deny the outcome of a democratic election.

 

Bangladesh’s democracy, like others before it, is struggling. What is needed is enlightenment within its most important institutions. In my view, an enlightened Court would think hard about what Voltaire, said about opinions he didn’t agree with. Voltaire was a distinguished 18th century philosopher and writer associated with the French Enlightenment.  He once commented, “I do not agree with what you have to say, but I’ll defend to the death your right to say it.”

 

×  ×  ×

 

On May 23, 2011, Serajur Rahman, the Deputy Head of the BBC’s Bengali service, wrote a letter to the British newspaper The Guardian. He was commenting on an article written by Ian Jack in which the issue of the number of deaths during the Bangladesh war was discussed. Rahman had a story to report. He wrote the following:

 

On 8 January 1972 I was the first Bangladeshi to meet independence leader Sheikh Mujibur Rahman after his release from Pakistan. He was brought from Heathrow to Claridges [in London]. . . and I arrived there almost immediately. . .He was surprised, almost shocked, when I explained to him that Bangladesh had been liberated and he was elected president in his absence. Apparently he arrived in London under the impression that East Pakistanis had been granted the full regional autonomy for which he had been campaigning.

 

During the day, I and others, gave him the full picture of the war. I explained that no accurate figure of the casualties was available but our estimate, based on information from various sources, was that up to “three lakh” (300,000) died in the conflict.  To my surprise and horror he told David Frost later that “three millions of my people” were killed by the Pakistanis. Whether he mistranslated “lakh” as “million” or his confused state of mind was responsible I don’t know, but many Bangladeshis still believe a figure of three million is unrealistic and incredible.”

 

I met Sheikh Mujib in July 1969 when I was traveling through Dhaka after working in India for a year on a Fellowship from Yale University where I was an undergraduate. We had a long talk lasting two hours, just the two of us, over lunch and tea at his residence in Dhanmondi. I met him again after independence when I returned to Bangladesh as a young journalist and lived in Dhaka for a year. After 1975 I would spend many years unraveling the circumstances of his assassination.

 

There is not a single man or woman I’ve ever met who hasn’t made a mistake in their lives. Mujib had his own share, as do we all. I believe he misspoke in the Frost interview that Serajur Rahman has written about. The error should have been corrected but it never was. Unfortunately, in some circles this number took on the quality of rigid dogmatism.

 

Indeed, Serajur Rahman’s estimate in light of Dr. Hasan’s later research was probably an underestimate, but Rahman wisely pointed out on that cold January day in London in 1972 that there was “no accurate figure of casualties”. It would take research and analysis in the years ahead to gain a clearer understanding of the magnitude of suffering the people of Bangladesh underwent to gain their independence.

 

I am “publishing” this article on a website of a small publishing house (www.pamphleteerspress.com) based in the United States with which I am affiliated. My right to publish is protected by the First Amendment of the American Constitution.

 

Unfortunately, I am unable to publish this article in Bangladesh because the Justices of the War Crimes Tribunal some months ago declared this matter sub judice within their jurisdiction, and made clear that there should be no public discussion of this matter until they have issued their decision. Therefore, my Bangladeshi colleagues are unable to publish this article in their newspapers.

 

However, I believe there is relevant information that should be in the public domain that may inform both the Court and the public about new information.  The facts of the 1974 Home Ministry study are published here for the first time.  My purpose is not to defy the Court but to inform it.

9 October 2014,

 Stony Creek, CT. ×  USA

 

Lawrence Lifschultz was South Asia Correspondent of the Far Eastern Economic Review (Hong Kong). He has written extensively on European and Asian affairs for many publications, among them The Guardian, Le Monde Diplomatique (Paris), BBC, Economic & Political Weekly (Mumbai) and The Nation (New York). He is the author of Bangladesh: The Unfinished Revolution.

 

He can be reached at: OpenDoor.Lifschultz@gmail.com