বাঙলা ভাষার দুর্বলতা ?

By Shibly Azad

এক,

বাংলা ভাষা দুর্বল, তার চিন্তাশক্তি নেই, তার শব্দসম্ভার কম, তার ফ্ল্যেক্সিবিলিটি নেই, বাংলাতে লিখতে গেলে টেকনিক্যাল বা পরিভাষা পাওয়া যায়না, এমনতর অভিযোগ বহু পুরনো, এবং ক্ষেত্র বিশেষে, এ ধরণের আক্ষেপ সঠিক ও বাস্তব হলেও সামগ্রিক বিচারে এসব অভিযোগ ঠুনকো অজুহাত মাত্র। এসকল অভিযোগ বা বক্তব্যের অর্থ এই নয় যে, বাংলা ভাষাটাই দায়ী; এর অর্থ হল, বর্তমান সময়ে বরং এই ভাষা ব্যাবহারকারীদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও ভাষার প্রায়োগিক বিষয়গুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কিছু সমস্যা রয়েছে, ভাষার নয়, যে সমস্যা আবার জনগোষ্ঠী হিশেব তাদের সাম্প্রতিক ম্যাটেরিয়াল জীবনের দৈন্য নির্দেশ করে। বাংলা ভাষা নিজে কোন সমস্যা নয়, যদি এমন হত যে বাংলাভাষীরা খুবই প্রতিভাবান, ফুটন্ত মেধার কারণে ছটফট করছে, কিন্ত দুর্বল বাংলা ভাষার জন্য তারা ভাব প্রকাশ করতে পারছে না, সেক্ষেত্রে বাংলাভাষীরা অন্তত ইংরেজিতে লেখে দুনিয়া কাঁপাতে পারতো, যেহেতু, শিক্ষিত সকল বাংলাভাষী কমবেশী ইংরেজি জানেন। কিন্ত, সেটাওতো হচ্ছে না। এ কথা সতঃসিদ্ধ যে, উন্নত জনগোষ্ঠীর ভাষা উন্নত হতে বাধ্য, মানব ইতিহাসের কোন কালপর্বে এমন ঘটনা ঘটেনি যে, ভীষণ উন্নত একটি জাতির ভাষা অনুন্নত ছিল, বা আছে। ইতিহাসের সকল কালপর্বে, বিশ্বকে নেতৃত্বদানকারী সকল জাতির ভাষা ছিল তার সময়ের সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধতম ভাষা; যে জাতি যখন যত উন্নত, তার ভাষাও তখন তত উন্নত। এর কোন ব্যাত্যয় নেই।

দুই,

মনে রাখতে হবে, ভাষা আপনা আপনি তৈরি হয় না, উন্নত ভাব প্রকাশের বাহন হয় না; একটি ভাষা উন্নত হয় ঐ ভাষা ব্যাবহারকারীদের জন্যে। ইংরেজি বা অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষা আজ উন্নত (যেমন অতীতে ছিল গ্রীক, ল্যাটিন, সংস্কৃত, ম্যান্ডারিন, বা নিকট অতীতে আরবী, ফার্সি, কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে উর্দু), যেহেতু হাজার বছর ধরে এই ভাষাগুলোর ব্যাবহারকারীরা, এবং এসব জনগোষ্ঠীর শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবানেরা এসকল ভাষাকে তাদের ভাব প্রকাশের বাহন হিশেবে ব্যাবহার করেছেন এবং এখনো করছেন। ফলে, বিচিত্র লঘুগুরু ভাব প্রকাশের জন্য এসকল ভাষা যথার্থভাবে বিকশিত হয়েছে। নিজস্ব সামাজিক বিকাশের দুর্বলতার জন্য, বাংলার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী শুরু থেকেই ইংরেজি নির্ভর; সবচে বড় কথা, অন্যান্য জাতির মত নিজ জনগোষ্ঠীর এই দুর্বলতাকে ওভরকাম করার কোন সচেতন প্রয়াসও তারমধ্যে নেই; এই প্রচেষ্টাহীনতা, আমার মতে, এই জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য; যা হবার হবে, যেভাবে চলছে চলুক, আমার কী আসে যায়, এমনতর মানসিকতার জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীর মত আর দুটি নেই এই দুনিয়াতে।

তিন,

বাংলা দুর্বল ভাষা, এ ধারণা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে বোধশক্তিহীন অর্বাচীনের বক্তব্য; সমস্য হল, গত পঞ্চাশ বছর ধরে বাঙলাভাষী এলিটরা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বকে ভাষার দোষ বলে বিশ্বাস করা শুরু করেছে। যদি বাঙলা গদ্যের খবর নেই, বিশেষ করে এর বুদ্ধিবৃত্তিক ও তাত্ত্বিক লেখাজোখার, তবে মনে রাখতে হবে, এই ভাষায়, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধোত্তরকালে, গত কয়েক দশকে সুকুমারী ভট্টাচার্য, অশীন দাশগুপ্ত, রণজিৎ গুহ, সুমিত সরকার, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ভদ্র, দীপেশ চক্রবর্তী, আদিত্য মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম চক্রবর্তী, পল্লব দাশগুপ্ত, অমল বন্দোপাধ্যায়, অমিয় বাগচী, কৌশিক বসু, প্রমুখ গভীর তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন এবং করছেন; এরা সকলেই বিশ্ববিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, সেসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন, কিংবা এখনো পড়ান; এবং ইংরেজিতে লিখেই তাত্ত্বিক হিশবেই প্রথমে তারা জগতবিখ্যাত হয়েছেন।

একই কথা বলা চলে এঁদের পূর্বসূরিদের সম্পর্কে; অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্য যে, উনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেও বাংলায় প্রবন্ধ ও গবেষণাপত্র লিখেছেন এমন অনেক প্রতিভা ছিলেন বিশ্বমাপের। অনেক অনেক নামের ভিড়ের মধ্যে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, ব্রজেন শীল, বিনয়কুমার সরকার, ক্ষিতিমোহন সেন, হরিদাস ভট্টাচার্য, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন সরকার, শঙ্করী প্রসাদ বসু, হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, হুমায়ন কবির, বিমল কৃষ্ণমতিলালের মত আরও কয়েক ডজন নাম নেয়া যায়, যারা সবাই তাদের তীক্ষ্ণ মেধার জন্যে এবং নিজ নিজ বিষয়ে মৌলিক গবেষণামুলক অবদান রাখার জন্যে আন্তরজাতিক ভাবে খ্যাত। অর্থাৎ, ভাষার সমস্যা নেই, বাঙলাতে যেকোনো জটিল তাত্ত্বিক আলোচনা সম্ভব। এখন শুধু প্রয়োজন নির্মোহ ও নৈর্ব্যক্তিক ডিসক্যার্সিভ বাংলা গদ্য লেখার ধারাক্রম তৈরি করা ও সেই ধারাকে বলবান করার জন্য বাংলায় বিষয়ভিত্তিক প্রফেশনাল জার্নাল বের করা, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা লিখবেন নিজেদের তাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের জন্য। যত বেশি বেশি লেখা হবে, ভাষা তত বেশি বিকশিত হবে।

চার,

পরিভাষার সমস্য? প্রশ্ন হল, পরিভাষা তৈরির প্রয়োজনীয়তা কী ? আর সেটা করবেই বা কে? তার সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতা দেবে কে ? ফ্রান্সের একাদেমি ঐতিহাসিক ভাবে একাজ করে এসেছে, ফরাসি ভাষার জন্য; ফরাসি ইতিহাসের জগতবিখ্যাত ব্যাক্তিরা এই কাজে ব্যাপৃত ছিলেন বলে ওই অ্যাকাদেমির গ্র্যাহ্যতা ছিল এবং ফরাসি ভাষা রেগুলেট করতে তারা সফল হয়েছিল। অর্থাৎ, যোগ্যতা ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ের কারনে ওই আকাদেমি সফল হলেও, বাংলায় তা ব্যর্থ হয়েছে ঠিক এই দুই গুনের অনুপস্থিথির কারনে। অপদার্থ আর মূর্খের আস্তানা বাংলাদেশের বাংলা একাদেমি। পশ্চিম বঙ্গের বাংলা একাদেমি বিখ্যাত তার রাবীন্দ্রিক গদাইলস্করী চালের জন্য; আর বাংলাদেশেরটা তাদের আকাশচারী গণ্ডমূর্খতার জন্য। এতএব, এদের কাজের কোন সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতা আগে যেমন ছিলনা, আজও তেমনি নেই, এবং ভবিষ্যতেও যে থাকবে না, তা হলফ করে বলা যায়; কেননা, সুশিক্ষিত লোকেরা এসকল সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে আসবে না, আসতে পারবে না, বা সহজ করে বললে, তাদের আসতে দেয়া হবে না। সেটাই ভাল, এতে বাংলা ভাষা রেগুলেশনের জঞ্জাল আর আপদ মুক্ত থাকলো।

তো কী করবে বাংলা ভাষা? উত্তর খুবই সোজা—সে চলবে তার আপন স্বভাবে। ইংরেজি ভাষার বৈশিস্ট্য হোল অন্য ভাষার শব্দ দ্রুত আত্তীকরন করা, বাংলা ভাষাও তা করে থাকে, তবে ইংরেজির মত অতো দ্রুত নয়; বেচারার হজম শক্তি একটু দুর্বল, তাই একটু সময় নেয়, তবে সবই হজম করে ফেলে, সর্বভুক এই ভাষা। কে আজ খবর রাখে যে, স্বয়ং “খবর” শব্দের উৎপত্তি আরবী, বা “কলম” কিংবা “বই” আদতে আরবী শব্দ? “দাদা-নানা” তুর্কী ? গরমের দিনে ফালুদা খান? আর শীতে গরম গরম ফিরনী ? তবে জেনে রাখুন, “ফালুদা” ফার্সি আর “ফিরনী” তুর্কী শব্দ; খানাপিনার (কী সুন্দর উর্দু–ফার্সির যুগলবন্দী) কথাই যখন এলো, তখন যেনে নেয়া ভাল যে, আজকাল অনেকই প্রগতির আশায় কিংবা নিরেট আমোদ করার জন্যে ইংরেজির আশ্রয় নিয়ে একটু-আধটু “ড্রিঙ্ক” করে থাকেন, হোক সে দেশী ধেন্যু কিংবা বিলাতী হুইস্কী। আবার দেখুন, ছোট ভাইয়ের সাথে মারামারীতে পারছেন না, আব্বাকে ডাকবেন ? আরে বাবা, “আব্বা” শব্দটাতো হিব্রু!

বলাবাহুল্য, বাংলা ভাষার দশ শতাংশ শব্দ এভাবেই বিদেশী ভাষা থেকে এসেছে, তো আরো আসতে অসুবিধা কী? আসলে সমস্যাটা আমাদের, যে সমস্যাটা আসলে কৃত্তিমঃ দৈনন্দিন জীবনে মুখের কথায় আমরা প্রচুর সমসাময়িক ইংরেজি শব্দ ব্যাবহার করলেও, লেখার সময় থাকি কুণ্ঠিত; যদিও, অনেক পুরনো আত্তীকৃত শব্দ না জেনে ব্যবহারে আমাদের কোনই আপত্তি নেই। ভাষার ছুঁচিবায়ুগ্রস্ততা মুলত গণ্ডমূর্খতা, এটা কুপমন্ডুকতার আরেক নাম। যা করণীয়, তা হোল কাণ্ডজ্ঞান বজায় রাখা, এবং যে শব্দই প্রয়োজন, তা চোখ-কান বুঝে বাংলাতে ব্যাবহার করা, হোক সে যেকোনো ভাষার শব্দ। উচ্চশিক্ষায় এক্ষেত্রে ইংরেজি টেকনিক্যাল টার্ম বা শব্দগুলো যথা সম্ভব আত্তীকরণ করে বাংলা হরফে লিখে নিলেই চলবে; বহুল ব্যবহারে, ধীরে ধীরে সেসকল শব্দের পরিচিতি লাভ ঘটবে; একটু সময় লাগবে, কিন্তু, হবে। আরেকটা কথা, উচ্চশিক্ষার টেকনিক্যাল শব্দ শুধু ঐ বিষয়ের ছাত্রশিক্ষক আর পেশাজীবীদের প্রয়োজন, আমজনতার সেসব শব্দ বোঝার প্রয়োজন নেই (যদি না সে সে বিষয় শিখতে চায়) বলে উচ্চশিক্ষার টেকনিক্যাল শব্দের অতিসরলীকরণ অপ্রয়োজনীয়।

পাচ,

বাঙালীর বাংলা ভাষা ব্যবহার করার প্রবণতার তুলানায় মার্কিনীদের ইংরেজি ভাষার ভাংচুর করার প্রবণতা তফাত করতে গিয়ে বিবেকানন্দ বলেছিলেন যে, জ্যান্ত মানুষের ভাষা হয় জ্যান্ত; বিবেকানন্দের মতে, মার্কিনীরা জ্যান্ত, বাঙালীরা মরা। বিবেকানন্দকে ধার করে আমিও বলি, আজকের দিনে অনেকের আধুনিক গদ্যের বাংলা মৃতবৎ এ জন্য যে, বাংলাভাষী অধিকাংশই আসলে মনের জগতে এক একজন মৃত সত্ত্বা; মড়ার ভাষা তো আড়ষ্ট হবেই।

ছয়,

বাংলা ভাষায় চিন্তাচর্চার বাধ তখনই ভাঙ্গবে যখন ইংরেজি, ফরাসি, বা জার্মানের মত এই ভাষায় চিন্তাচর্চার বানিজ্যিকরন হবে। ঘাবড়াবেন না। চিন্তার বানিজ্যিকরন মানে নোটবইয়ের বন্যা বা কোচিং সেন্টারের প্রাদুর্ভাব না, এর মানে লেখাপড়ায় প্রফেশনালিসমের বিকাশ—ব্যাপক পড়াশোনা, গবেষণা, চিন্তাভাবনা, জর্নলে গবেষণা প্রবন্ধ ছাপানো, আর বই লেখা, যার ইনকাম দিয়ে একজন লেখক জীবন ধারন করে থাকে এবং পাঠক সে লেখা পড়ে জানে, বুঝে, শিখে। ভাবুক, কবি, বা লেখক না খেয়ে কষ্ট করবে, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে, তার সংসার উচ্ছনে যাবে, তার স্ত্রী-সন্তানরা পথে বসবে, আর আমরা উহু আহা করব, আর আলু-ফালুরা সমাজ চালাবে, এই চিন্তাটা অস্বাভাবিক, অপ্রাকৃতিক, ও মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ। সব উন্নত দেশেই ভাল লেখকরা বই লিখে প্রচুর ইনকাম করেন; প্রকাশক আগাম টাকা দেন, ছয়-সাত ডিজিটে, যা সারা জীবনের জন্য জীবন ধারণের পক্ষে যথেষ্ট; এজন্য, এরা কয়েক বছর ধরে গবেষণা করে তারপর লেখেন এবং এজন্য এদের প্রতিটা লেখাই অসাধারণ । বছরে ১৪/১৫ টি বই লিখতে হলে, আর যাই হোক, মান রক্ষা হয় না, বরং দাউদকান্দীর মলমের মত একটা কিছু হয়, সাময়িক তৃপ্তি হলেও তাতে চূড়ান্ত তৃষ্ণা মেটে না, বা কাজও উদ্ধার হয় না। তেমনি, সকল, বিশেষ করে, বেশী সফল অধ্যাপকেরাও, বই লিখে বিপুল উপার্জন করতে সক্ষম বলেই নিবিষ্টমনে গভীর ও ব্যাপক গবেষণায় তারা জীবন পার করতে পারেন।

এ ব্যাপারে একটু ব্যাক্তিগত প্রসঙ্গের অবতারণা করছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সকল শিক্ষকই ইউনিভারসিটির বেতন ছাড়াও যে টাকা রয়্যালটি থেকে পেতেন, তার পরিমাণ শুনলে আক্ষরিক অর্থেই চোখ গাছে উঠবে। আমার সরাসরি দুই শিক্ষক নোবেল প্রাইজ পাবার আগেই বছরে ৫/৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশী করে কামাতেন; এদের একজন, জোসেফ স্টিগল্টীযকে ২০০১ সালে বিশ্বখ্যাত পাবলিশার নর্টন কয়েক মিলিয়ন ডলার আগাম দেয়, গ্লোবালাইজেশন নিয়ে তিন খণ্ডে বই লেখার জন্য। তার তিন খণ্ডের সেই বই (Globalization and Its Discontent, The Roaring Nineties, and Making Globalization Work) আজ ক্ল্যাসিক বলে গন্য। টাকা যেখানে আছে, সেখানে ধীরে হলেও, কোয়ালিটি আসতে বাধ্য; পয়সা দিয়ে কেউ বাজে জিনিষ নেয় না; আর বারবারতো ভুষিমাল দিয়ে সবাইকে বোকা বানানো সম্ভব না। অর্থাৎ, লেখাটাও হতে হবে পুজির নিয়ম মেনে, পুঁজিবাদের নিয়মই হোল প্রতিযোগিতা, শ্রেষ্ঠত্বের সাধনা, কেননা শ্রেষ্ঠরাই টিকে থাকে বাজারে; অতএব, সেটাই কাম্য বাঙলার ক্ষেত্রেও। বাঙলীরা মানবরীতির বাইরে নয়, বাংলাভাষাকেন্দ্রিক সাহিত্য, ফিকশন কী নন-ফিকশন, লঘু কী গুরু, তাই পুজির বাইরে থাকতে পারে না।

সাত,

আবারও বিবেকানন্দঃ জ্যান্ত মানুষের ভাষা হয় জ্যান্ত; বাঙলাভাষী, তুমি কী জ্যান্ত ?

প্যালেষ্টাইনী রক্ত আমার আপনার হাতে!

1

By Watchdog BD

আরব রাজা বাদশাহদের কথা না হয় বুঝা গেল। সিংহাসন টিকিয়ে রাখতে এমনটা করা ছাড়া তাদের কোন বিকল্প ছিলনা। কারণ প্যালেষ্টাইনিদের সমর্থন করা হবে গণতন্ত্রকে সমর্থন করা। দুঃখজনক হলেও সত্য গোটা মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইসরাইল এবং প্যালেস্টাইন ছাড়া বাকি সব দেশে রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র সহ অলৌকিক সব তন্ত্র বিদ্যমান। ক্ষমতার সমীকরণ মেলাতে গিয়ে কোন আরব রাষ্ট্রই ইসরাইলি পশুত্বের বিরুদ্ধে টু শব্দটুকু করেনি। এমনকি আল্লাহর ঘরের কথিত রক্ষকরাও না। তাদের ভূমিকা পাশে রেখে আমরা যদি বাকি বিশ্বের দিকে চোখ ফেরাই সেখানেও সুনসান নীরবতা। অথচ নিকট অতীতে আফ্রিকান খরা, হাইতির ভূমিকম্প, রুয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে বিশেষ করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিখ্যাত ব্যক্তিরা সচেতনা সৃষ্টির পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আর্থিক তথা মানবিক সাহায্যের হাত বাড়াতে কার্পণ্য করেন নি। কি এমন ঘটল যার ফলে শত শত প্যালেষ্টাইনি শিশুর ছিন্নভিন্ন মৃতদেহও তাদের বিবেককে নাড়া দিচ্ছেনা? ঘটনার গভীরে যাওয়ার প্রায় তিন বছর আগে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার দিকে পাঠকদের নিয়ে যেতে চাই। হলিউড সুপার স্টার মেল গিবসনের বিরুদ্ধে শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ আনেন তার রুশ বান্ধবী অকসানা গ্রিগেরয়েভনা। অনেকদিন ধরেই তাদের ভেতর সমস্যা চলছিল। সূক্ষ্ম হিসাবে পারদর্শী অকসানা কায়দা করে মাতাল অবস্থায় গিবসনের কিছু মন্তব্য প্রকাশ করে দেয়। আর তাতেই টলে উঠে হলিউড। ভিডিওতে দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ান সুপারস্টার মাতাল অবস্থায় গোটা বিশ্বের দুরবস্থার জন্য ইহুদিদের দায়ী করছেন এবং এর প্রতিকার ও প্রতিশোধের আহ্বান জানাচ্ছেন। হলিউড মানে ইহুদি বিনিয়োগ। এদের সমালোচনা মানে সুশৃঙ্খল একটা ইনিস্টিটিউশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। গিবসন তাই করলেন এবং এর জবাব পেলেন খুব দ্রুত। প্রযোজকরা রাতারাতি মুখ ফিরিয়ে নিলেন গিবসন অভিনীত ছবি হতে। হুমকি দিলেন আজীবনের জন্য কালো তালিকভক্ত করতে। গিবসনকে ভাতে ও পানিতে মারার আয়োজন সম্পূর্ণ করতে জোটবদ্ধ হলেন বিনিয়োগকারীরা। ব্যাপারটা সুরাহা করতে এই হলিউড তারকা কতটা নীচে নেমে ছিলনে তার কোন প্রমাণ কারও হাতে নেই। কিন্তু এরপর গিবসনের মুখ হতে ইহুদিদের নিয়ে কোন মন্তব্য কেউ শুনেছে বলে দাবি করতে পারবেনা।

ইসরায়েলি বর্বরতার শুরুতে গায়িকা রিহানা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিবাদ জানিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন। ইহুদি নিয়ন্ত্রিত মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি কঠিন ম্যাসেজ পৌঁছে দেয় গায়িকার দুয়ারে। পৌঁছে দেয় ফলাফলের আগাম বার্তা। আবারও ভাতে মারার হুশিয়ারি। প্রতিবাদ শিকেয় তুলে নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পরেন এই গায়িকা। ফলশ্রুতিতে সোশ্যাল মিডিয়া হতে রাতারাতি উঠিয়ে নেন নিজের মন্তব্য। বিশ্ব বিবেককে ওরা এভাবেই জিম্মি করে রেখেছে নিজেদের ধন-সম্পদের কাছে। চলচ্চিত্র, মিউজিক, পারফর্মি আর্ট, স্পোর্টস হতে শুরু করে এমন কোন ব্যবসা-বাণিজ্য নেই যার চালকের আসনে ইহুদিরা বসে নেই। খালি চোখে ওদের উপস্থিতি বুঝা যায়না। কারণ অভিনয়ের জন্য ওরা শুটিং’এ যায়না অথবা খেলার জন্য মাঠে নামেনা। এসবে অনেক পরিশ্রম। কিন্তু যে টাকায় একটা সফল চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, যাদের অর্থে ফুটবল অথবা বেসবল টিম মাঠে সচল থাকে তার অনেকটাই আসে তাদের পকেট হতে। সে বিনিয়োগ লাভ হয়ে চক্রবৃদ্ধি হারে ফিরে যায় তাদের পকেটে। এবং সে পকেট সদা-সর্বদা উন্মুক্ত থাকে মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েলে জন্য। আমরা যারা হলিউডের ব্লকবাষ্টার দেখার জন্য সিনেমাহলে উপচে পরি তাদের অনুরোধ করবো ছবি শেষে প্রদর্শিত নাম গুলো ধৈর্য ধরে পড়ে নেয়ার জন্য। বার্গ, ষ্টেইন, হফফ আর ভিচ দিয়ে যাদের নাম শেষ হয় ওরাই তারা। মেল গিবসন, রিয়ানা আর ইউ-টু’র বনো তাদেরই খেলোয়াড়। আমরা যারা গাঁটের পয়সা খরচ করে তাদের তৈরি ছায়াছবি, স্পনসরড্‌ সংগীত অথবা মালিকানাধীন দলের খেলা দেখতে হলে অথবা মাঠে যাই এক অর্থে সহযোগিতা করি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে। এক বোতলে কোক কিনলে তার একটা অংশ চলে যায় কথিত প্রমিজ ল্যান্ডে। এবং সে অংশ বিন্দু হতে সিন্ধু হয়ে আঘাত হানে প্যালেষ্টাইনি শিশুদের। আমরা যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে ইসরায়েলি বর্বরতা নিয়ে চীৎকার করছি তারাও ইসিরায়েলি অপরাধের সহযোগী।

মালয়েশিয়ান ফ্লাইট ১৭ এবং কতিপয় স্বৈরশাসকের ইতিবৃত্ত…

By Watchdog BD

সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ। ইউরোপের এ দিকটায় গ্রীষ্মের শেষ এবং শরতের শুরু। আমাদেরও শিক্ষা বর্ষেরও শুরু কেবল। এদিন ক্লাসে হাজির থাকা অনেকটা বাধ্যতামূলক। অন্যথা হলে মাসিক স্কলারশিপ সহ অনেক কিছুতে কর্তৃপক্ষের কুনজর পরার সম্ভাবনা থাকে। তাই টর্কি ও পেয়িংটনের দুমাসের শৃংখলবিহীন জীবনকে বিদায় জানিয়ে ফিরে আসতে হল।ইংল্যান্ডের সাউদ ভেভনের এ অংশের সাথে প্রেম সেই ৭০ দশক হতে। গ্রীষ্মকালীন ছুটির একটা বড় অংশ ইংলিশ রিভিয়েরায় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এ যাত্রায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বলাটা সহজ হলেও পূর্ব ইউরোপ হতে ট্রেনে চড়ে পশ্চিম ইউরোপের এ দিকটায় পা রাখা তত সহজ ছিলনা। এ পথে মুল বাধা ছিল বার্লিন দেয়াল। পূর্ব জার্মানির বার্লিন শহরকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র বাহিনী কেন দুভাগ করেছিল এ নিয়ে অনেক তর্ক আছে। কিন্তু ঠাণ্ডা যুদ্ধের ফ্রন্টের শুরুটা যে বার্লিন দেয়াল দিয়ে তা নিয়ে কোন তর্ক ছিলনা। পায়ে হেঁটে যারা বার্লিন দেয়াল অতিক্রম করেনি তাদের বুঝানো মুস্কিল হবে ঠাণ্ডা যুদ্ধের কঠিন শীতল চেহারা। সেমিস্টারের প্রথম দিনটা যেভাবে কাটার কথা সেভাবেই কাটল। কোর্স পরিচিতি, ক্লাস রুটিন এবং ক্লাসমেটদের সাথে ভেকেশন অভিজ্ঞতা শেয়ার করা। শরতের শুরু হলেও শীত ঝাঁকিয়ে বসতে সময় নেয়নি। বিশেষ করে রাতের বেলা। পৃথবীর এ দিকটায় তাই হয়, গরমকালটা চোখের পলকে বিদায় নেয়। লম্বা, বিরক্তিকর এবং ভয়াবহ শীতের প্রস্তুতি নিতে হয় পেপ্টেম্বরের শুরু হতে। অক্টোবরের শুরুতে তাপমাত্রা হিমাংকের নীচে নামতে শুরু করে এবং মধ্য শীতে তা -৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। আমাদের জীবনও থেমে যায়। মানিয়ে নিতে হয় প্রকৃতির এই নির্মমতার সাথে। ক্লাস শেষে রুমে ফিরে শুনলাম খবরটা।

 

সর্বহারাদের একনায়কতন্ত্র শেখা ছিল আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। এর তাত্ত্বিক সংজ্ঞা ক্লাসে ঘটা করে শেখানো হলেও তার বাস্তব গোলাপি চিত্রের সম্যক ধারণা পেতে এ রকম একটা সমাজে বাস করাই ছিল যথেষ্ট। খবর শোনা এবং তা বিশ্বাস করার একমাত্র সোর্স ছিল সরকারী মাধ্যম। এর বাইরে সবকিছু ছিল বুর্জুয়া প্রচারণা ও ষড়যন্ত্র। সোভিয়েত সমাজে বাস করে বুর্জুয়া প্রোপাগান্ডা যারা বিশ্বাস করতো তারা ছিল সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হত কথিত এসব শত্রুদের বিরুদ্ধে। খবরটার কোন প্রধান্য ছিলনা। পশ্চিমা মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজের মত কোন নিউজ মিডিয়াতে ঠাঁই পেতনা যদিনা তাতে ক্ষমতাসীন কম্যুনিস্ট পার্টি ও তার সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য জড়িত না থাকতো। খুব অনিশ্চিত সময় পাড় করছিল সোভিয়েত শাসকরা। লৌহমানব লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভের সময় শেষ হয়েছে কেবল। চেরনেনকো আন্দ্রোপভদের মত কট্টর নেতাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে ক্ষমতার পাদদেশে। দেশটার মানুষ এসব নিয়ে খুব একটা চিন্তিত ছিল তাও নয়। আসলে একদল-একজনের (সাধারণ সম্পাদক) দাসত্ব করতে গিয়ে গোটা জাতি পরিণত হয়েছিল যান্ত্রিক পুতুলে। যার চাবি ছিল শতকরা ৪০ ভাগ এলকোহলের ভদকায়। ৩ রুবেল ৭৫ কোপেকের পৌনে এক লিটার ভদকার বোতলকে ঘিরে আবর্তিত হোত সোভিয়েত জীবন। হোক তা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী অথবা শ্রমজীবীর দল। তবে এর মাঝে ব্যতিক্রম ছিল রুশ ইহুদিরা। অভূতপূর্ব মেধার অধিকারী এসব নাগরিকদের প্রায় সবাই ব্যস্ত থাকত পশ্চিম ইউরোপে মাইগ্রেট করার মিশনে। দেশ অথবা সমাজের ভালমন্দ নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা ছিলনা। তাদের শয়নে স্বপনে থাকত পশ্চিম ইউরোপ হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা দুরের দেশ ইসরাইলে পাড়ি দেয়ার লালিত ইচ্ছা। কেবল তাদের সাথে আলাপ করলে বুঝা যেত পার্থক্য গুলো। সান্ধ্য খবরে জানা গেল ঘটনাটা। সাখালিনের উপর একটি মার্কিন গোয়েন্দা বিমানকে গুলি করে নামিয়ে ফেলেছে সোভিয়েত বিমান বাহিনীর একটি ফাইটার জেট। আমার মত খবর সন্ধানী তৃতীয় বিশ্বের আদমদের জন্য এ ছিল সেনসেশনাল নিউজ। কিন্তু সোভিয়েত সমাজের কোন স্তরেই এর কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলনা।

 

গোয়েন্দা বিমান যে আসলে কোরিয়ার এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী বিমান ছিল খবরটা প্রথম এক বছর জনগণকে জানতে দেয়া হয়নি। পশ্চিমা চাপে তারা বলতে বাধ্য হয়েছিল গোয়েন্দা বিমানে বেশ কজন মার্কিন ও কোরিয়ান গোয়েন্দা ছিল। রোববারের টিভিতে যুদ্ধ বিষয়ক এনালিস্টদের মুখ হতে শোনা গেল মার্কিন ’অপরাধের’ ম্যাগনিটিউড। তাদের অনেকের মতে কোরিয়ান বিমানের মাধ্যমে রুশ আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে মার্কিনীরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত করতে চেয়েছিল। গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল চাঁদের অন্য-পীঠে কি আছে তা জানার জন্য। মাধ্যম রেডিও। কিন্তু হায়, হতাশ হতে হল। ভয়েস অব আমেরিকা, বিবিসি, ডয়েচে বেল্লা সহ পশ্চিমা সবগুলো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে জ্যাম করে দেয়া হয়েছে। ইংরেজি অথবা রুশ ভাষা সহ কোন ভাষাকেই রেহাই দেয়া হয়নি। গোটা রুশ জাতিকে মিথ্যার সাগরে ভাসানো হল। কিন্তু খবর লিক হতে সময় লাগল না। গোয়েন্দা বিমান নয়, বরং কোরিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমানকে মিসাইল মেরে ঘায়েল করেছে সোভিয়েত বিমান বাহিনী। নিউ ইয়র্ক হতে আলাস্কার এংকোরেজ হয়ে বিমানটির শেষ গন্তব্য ছিল সিউল। পাইলট ও কো-পাইলট অটো-পাইলট মুডে দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। বুঝে উঠার আগে ফ্লাইট সোভিয়েত নিষিদ্ধ ফ্লাইং জোনের ১২ কিলোমিটারের মধ্য ঢুকে পরে। সেকেন্ডের মধ্যে সোভিয়েত বিমান বাহিনীর একটি জেট আকাশে উঠে যায় এবং মিসাইল নিক্ষেপের মাধ্যমে ভূপাতিত করে ফেলে কোরিয়ান বিমান। ২৬৯ জন যাত্রী ও ক্রুদের সবার সলিল সমাধি হয় জাপান সাগরে। যাত্রীদের একজন ছিল জর্জিয়া হতে নির্বাচিত মার্কিন কংগ্রেসম্যান লরেনস ম্যাকডোনাল্ড। সিআইএ’র রিপোর্ট হতে জানা যায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের থাকার কথা ছিল একই ফ্লাইটে। কোরিয়ান যুদ্ধে অংশ নেয়া মার্কিন সৈন্যদের একটা গেট-টুগেদারে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান এবং আরও অনেকে। সাগর হতে উদ্বার করা ব্ল্যাক বক্স পর্যন্ত গায়েব করে দেয় সর্বহারাদের একনায়করা। তবে সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের ঊষালগ্নে প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়লৎসিন জাতিসংঘের কাছে হস্তান্তর করেন গুম করা ব্ল্যাক বক্স। এবং কেবল তখনই উন্মোচিত হয় ৩ রুবেল ৭৫ কোপেক মূল্যের ভদকা সভ্যতায় বেড়ে উঠা সোভিয়েত শাসকদের কালো ইতিহাস।

 

এ যাত্রায় কোরিয়ান নয়, নামানো হয়েছে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী বিমান। তবে সাগরে নয়, নামানো হয়েছে পূর্ব ইউক্রেনের দনেস্ক শহরের বিতর্কিত একটি অঞ্চলে। এলাকা নিয়ে বিতর্কটাও খুব অদ্ভুত। সোভিয়েত সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শক্তিশালী প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের অনেক অঞ্চলে রুশ জাতির প্রাধান্য বাস্তব সত্য। ঐতিহাসিক ভাবে এ বাস্তবতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সোভিয়েত দেশের ১৫টি প্রজাতন্ত্রে। ঢাল-তলোয়ার বিহীন রুশ সাম্রাজ্যের অধিপতি ভ্লাদিমির পুতিন অস্ত্র দিয়ে এসব অঞ্চলের জনগণকে বলছেন তোমরা বিদ্রোহ কর এবং বলতে শুরু কর ইউক্রেনে নয়, আমরা রুশ দেশে থাকতে আগ্রহী। পুতিনকে পাশ কাটিয়ে পশ্চিম ইউরোপের সাথে সম্পর্ক করার কারণে ইউক্রেনকে শাস্তি দিতেই এ নাটক। ইতিমধ্যে রক্তের নদী বয়ে গেছে দেশটার পূর্বাঞ্চলে। এ ক্ষেত্রে পুতিন বাহিনী ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের পর রেড আর্মি কর্তৃক মধ্য এশিয়া দখলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে। পশুত্ব রুশদের শিরা উপশিরায়। অন্তত ইতিহাস তাই বলে। সমসাময়িক চেচেন ম্যাসাকার এবং তার দখল তারই ধারাবাহিকতার ফসল। মালয়েশিয়ান বিমান ভূপাতিত করার দায়িত্ব নিয়ে রুশ এবং ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দায়ী করছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ওরা একই বাক্সের দুই জিন। পশুত্ব ও নির্মমতায় একজন অন্যজনকে ছাড়িয়ে যেতে সামান্যতম সময় নেয়না।

 

৩০শে জুন ন্যাটোর ইউরোপীয় কমান্ডার জেনারেল এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন তাদের কাছে প্রমাণ আছে রুশ সৈন্যরা পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের সার্ফেস-টু-এয়ার মিসাইল লঞ্চ করার ট্রেনিং দিচ্ছে। খবরের সমীকরণ মেলাতে গেলে সহজেই বের করা যাবে কাদের হাতে ভূপাতিত হয়েছে মালয়েশিয়ান ফ্লাইট ১৭ এবং প্রাণ হারিয়েছে ১৫জন ক্রু সহ ২৮৩ জন যাত্রী। কথিত বিদ্রোহীদের হাতে শুরু হতে shoulder-to-air রকেট ছিল, যার উড্ডয়ন ক্ষমতা ১০,০০০ ফুটের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু ট্রাক হতে ছোড়া যায় এমন সার্ফেস-টু-এয়ার মিসাইলের রেঞ্জ ৩০ হাজার ফুটের অনেক উপরে। নিশ্চিত ভাবে বলা যায় এমন একটা মিসাইল দিয়েই ধরাশায়ী করা হয়েছে মালয়েশিয়ান বিমানকে। এ পশুত্বের আসল আর্কিটেক্ট রুশ সেনাবাহিনী যার পেছনে শক্ত অবস্থায় দাড়িয়ে আছে পুতিনের একনায়কতান্ত্রিক অসুস্থ রাজনীতি।

 

কথায় বলে ভ্রমরে ভ্রমর চেনে। সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্র সদাই করতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী (অ-অবৈধ) গিয়েছিলেন রাশিয়ায়। দেখা করেছেন স্বৈরশাসক পুতিনের সাথে। চুক্তি করেছেন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের উপর। এসব খবর শুনতে খুব ভাল শোনায়। মনে হয় উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতে যাচ্ছে আমাদের দেশ। কিন্তু রুশ চরিত্রের উপর যাদের সামান্যতম জ্ঞান আছে তাদের ধারণা করতে কষ্ট হয়না লিখিত চুক্তির পেছনে নিশ্চয় রয়ে গেছে অলখিত চুক্তি। এ চুক্তি দুই অবৈধ ও অসৎ স্বৈরশাসকের বুঝাপড়ার চুক্তি। চারিত্রিক দিক বিবেচনায় এই দুই নেতার উদ্দেশ্য ও বিধেয় এক ও অভিন্ন, যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী (অ) এখন বন্ধুহীন। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যার উপর ভরসা করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে পারবেন। সরকার পরিবর্তনের পর প্রতিবেশী ভারতের উপরও বিশ্বাসে রাখতে পারছেন না। এ বিবেচনায় পুতিনের ব্যাপার সম্পূর্ণ আলাদা। ক্ষমতায় বসে অর্থ-সম্পদ ভাগ-বটোয়ারা করার অনন্য নায়ক এই রুশ একনায়ক।

 

ল অব সাবষ্ট্রাকশনের ম্যাগনিফাইয়িং গ্লাসে সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গুলোকে শোয়ালে কতগুলো অদ্ভুত সাদৃশ্য চোখে পরতে বাধ্য। এই যেমন, দুই ব্যবস্থায়ই একজন স্বৈরশাসকের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। দুই সমাজ ব্যবস্থার ভীত প্রতিষ্ঠিত একই ফিলসফির উপর। সমাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের সমালোচক অথবা বিরোধীদের আখ্যায়িত করা হয় বুর্জুয়ায় হিসাবে এবং তাদের বিনাশের মাধ্যমে উড়ানো হয় ভবিষ্যৎ সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার ঝাণ্ডা। পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক কট্টর রাষ্ট্র গুলোর সমালোচকদের সবাইকে বলা হয় কাফের। কাফেরদের হত্যার জন্য নাকি পুরস্কারেরও ব্যবস্থা আছে পরজন্মে। এসব অসুস্থ এবং তামাদি সূত্রের উপর টিকে আছে আজকের সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মভিত্তিক সমাজ গুলো। যার একমাত্র কাজ একজন স্বৈরশাসক ও তার পারিবারিক ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করায় দাসত্ব করা। আজকের পুতিন ও সৌদি বাদশাহদের সাথে সাদৃশ্য এখানেই। অবশ্য এ পথের নতুন পথিক হয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী (অ)… নাকে গণতন্ত্রের মুলা ঝুলিয়ে জাতিকে গাধা বানিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন গন্তব্য পথে। এ যাত্রায় কৌশল হিসাবে ব্যবহার করছেন জাতির মুক্তিযুদ্ধ। বুর্জুয়া এবং কাফের তত্ত্বের মত ব্যবহার করছেন জাতির এই মহান অর্জনকে। ফতোয়া দিচ্ছেন যারা শেখ পরিবারের আজীবন শাসনে বিশ্বাস করেনা তারা দেশদ্রোহী, রাজাকার এবং এ দেশের তাদের বাস করার অধিকার নেই। অত্যন্ত চৌকস কায়দায় প্রতিপক্ষকে নির্মূল করছেন। গোটা জাতিকে অসততার দৌড়ে নামিয়ে সপরিবারে মজা লুটছেন। এবং ধরে নিয়েছেন হাজার বছর ধরে চালিয়ে যাবেন পারিবারিক শাসন। এ মুহূর্তে এমন একটা শাসন অসম্ভব কিছু মনে হচ্ছেনা। কারণ অসৎ দৌড়ে বিরতি নেয়ার মত অবস্থানেই নেই জাতি। বিরতি মানেই ধ্বংস, বিপর্যয়। যা হতে উঠে দাঁড়ানোর মত শক্ত মেরুদন্ড নেই জাতির পীঠে।

 

খরার তাপ-দাহে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। কোন এক পড়ন্ত বিকেলে ঈশান কোনে জমা হয় একখণ্ড মেঘ। এক সময় তা রূপ নেয় সর্বগ্রাসী কালবৈশাখীতে। তারপর ধেয়ে আসে। লন্ডভন্ড করে দেয় জনপদ। উড়িয়ে আছড়ে ফেলে পুরাতন অনেক কিছু। জাতির ঘাড়ে চেপে বসা শেখ নামের ভুত উপড়ে ফেলতেও আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে আকাশের দিকে। এক সময় না এক সময় মেঘ জমবে। এবং সে মেঘ প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে রূপান্তরিত হয়ে উড়িয়ে নেবে শাসক নামক এসব দানবদের। সভ্যতা বিবর্তনের এ অমেঘো ধারা হতে স্বৈরশাসক পুতিন, মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশা আর শেখ হাসিনার মত বেহায়া শাসকরা রক্ষা পাবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
http://www.amibangladeshi.org/blog/07-20-2014/1468.html

মধ্যপ্রাচ্য, যুদ্ধ ও শান্তি…

by WatchdogBD

জানুয়ারি ৩, ২০০১ সাল। হোয়াইট হাউস হতে ঘোষণা এলো মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনায় দুই পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা সমাধান পাওয়া গেছে। ঘোষণার সমর্থনে ইসরায়েলই কর্তৃপক্ষও ঘোষণা দিল সতর্ক আশাবাদের। অন্য ক্যাম্প হতেও স্বীকার করা হল ত্রি-পক্ষীয় বুঝাপড়ার। এর আগে ২৩ সে ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন চারদিনের সময় দিয়ে দরকষাকষি করা যাবেনা এমন একটা প্রস্তাব উত্থাপন করেন শান্তি আলোচনায়। প্রস্তাবের সারমর্ম ছিলঃ প্যালেষ্টাইনিরা পশ্চিম তীরের শতকার ৯৬ ভাগের দখল পাবে, বাকি চার ভাগ যাবে ইসরায়েলদের দখলে। পূর্ব জেরুজালেমে বসতি-স্থাপনকারী ইহুদিদের শতকরা ৮০ ভাগ এলাকা পাবে ইসরাইল, বাকিটার দখল পাবে প্যালেস্টাইনই কর্তৃপক্ষ। জর্ডান ভ্যালিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপস্থিতিতে অস্থায়ী ভাবে অবস্থান করবে ইসিরায়েলি বাহিনী এবং প্যালেস্টাইনই গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য তিনটা আর্লি ওয়ার্নিং ক্যাম্প গড়ার অধিকার থাকবে ইসরাইলের। বিনিময়ে প্যালেষ্টাইনিদের হাতে পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে তাদের আকাশ সীমার। উদ্বাস্তুরা ইসরাইলে ফিরে যাওয়ার অধিকার হারাবে। তবে প্যালেস্টাইনে ফিরতে তাদের কোন বাধা দেয়া হবেনা। প্রস্তাবে গাজা উপত্যকার ভাগ্য নিয়ে কোন কিছু উল্লেখ না থাকায় প্যালেষ্টাইনিরা তা প্রত্যাখ্যান করে। জানুয়ারির ৭ তারিখ ক্লিনটন অফিস হতে ঘোষণা দেয়া হয় গাজা হবে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাউন্টার প্রস্তাবে ইসরাইল গাজা ভ্যালিতে তার অবস্থান স্থায়ী করার প্রস্তাব করে। স্বাক্ষর করার জন্য কলম হাতে নিয়েও পিছিয়ে যান পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত। অজুহাত হিসাবে প্যালেস্টাইনই জনগণকে সামনে আনেন এবং দাবি করেন এ ধরনের প্রস্তাব মেনে নিলে তার নিজের জনগণই তাকে হত্যা করবে। পিছিয়ে যান ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ইয়াহুদ বারাক। কারণ এক মাস পরেই ছিল দেশটার সাধারণ নির্বাচন এবং সব ইঙ্গিত বলছিল ব্যাপক ব্যবধানে পরাজিত হবে ক্ষমতাসীন দল। ফলে যা হবার তাই হল, ভেস্তে গেল শান্তি আলোচনা। এক মাস পর ইসরাইলে ক্ষমতাসীন হল কট্টর রক্ষণশীল দল লিকুদ পার্টি। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আবির্ভূত হন বৈরুত ম্যাসাকারের অন্যতম জল্লাদ আরিয়েল শ্যারন। ওদিকে গাজায় শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে জঙ্গি হামাস ও ইসলামিক জিহাদ।

এর আগে ২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তার গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ভবন ক্যাম্প ডেভিডে আমন্ত্রণ জানান মধ্যপ্রাচ্যের বৈরী দুই পক্ষকে। ঐ আলোচনায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ইয়াহুদ বারাক পশ্চিম তীরের ৫-১০% দাবি করে অবৈধ সেটেলারদের শতকরা ৮৫ ভাগ নিজেদের দখলে রাখার প্রস্তাব করেন। সমস্যা দেখা দেয় পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে। শহরের ঘন ইহুদি বসতি সম্পন্ন এলাকা ইসরাইলের এবং আরব বসতি এলাকা প্যালেস্টাইনদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রস্তাব করেন। উদ্বাস্তুদের ইসরাইল ফিরে যাওয়ার অধিকার স্থায়ীভাবে বাতিল করার পরিবর্তে ইয়াহুদ বারাক ক্ষতিপূরণ হিসাবে বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু আবারও থেমে যান ইয়াসির আরাফাত। পালটা কোন প্রস্তবা দিতে ব্যর্থ হন। ভেস্তে যায় ক্যাম্প ডেভিড আলোচনা। অনেকের ধারণা ইয়াসির আরাফাতের নিষ্ক্রিয়তার মূলে ছিল গাজায় হামাসের সশস্ত্র শক্তি মহড়া। পৃথিবীর মানচিত্র হতে ইসরাইলকে মুছে ফেলার অলৌকিক ও জেহাদি দাবি নিয়ে গাজা-বাসীকে নিজেদের ছায়াতলে সমবেত করতে সক্ষম হয় হামাস। এ ধরনের বায়বীয় প্রস্তাবে গোপন সমর্থন যোগায় মোল্লাদের ইরান ও লেবাননের তাদের সমর্থক হিজবুল্লাহ।

এভাবে যুগের পর যুগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে প্যালেস্টাইন সমস্যা। নিজদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মাঝে মধ্যে অকার্যকর রকেট ছুড়তে বাধ্য হয় হামাস। ১২ হতে বিশ বছরের তরুণ তরুণীদের বুকে বোমা বেধে পাঠিয়ে দেয় ইসরাইলের অভ্যন্তরে। ঘন লোকালয় অথবা যানবাহনে নিজদের উড়িয়ে দেয়। সাথে নিয়ে কিছু সাধারণ ইসরাইলিদের জীবন। জেগে উঠে ইসরাইলী দানব। স্থল ও আকাশ পথে শুরু হয় তাদের নির্মম ও পৈশাচিক আনাগোনা। শিশু, কিশোর ও মহিলা নির্বিশেষে পশুর মত হত্যা করতে শুরু করে প্যালেষ্টাইনিদের। এসব হামলার পেছনে নীরব সমর্থন থাকে প্রতিবেশী দেশ মিশর ও জর্ডানের। কারণ প্যালেস্টাইনী উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে গিয়ে তারা নিজেরাও ক্ষতবিক্ষত। ইসলামের ধ্বজাধারী মধ্যপ্রাচ্যের রাজা বাদশার দল পৃথিবীর দেশে দেশে ইহুদিদের সাথে বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে সূরা ও সাকির তৃষ্ণা মেটাতে প্রকারান্তে সহযোগিতা করে থাকেন ইহুদি রাষ্ট্রের অর্থনীতির ভীতকে। যার ফলাফল দেখা যায় ইসরাইলীদের সমরশক্তিতে।

হিটলারের পাপের ফসল আজকের ইসরাইল। ইউরোপের এই ক্যান্সার মধ্যপ্রাচ্যে রফতানির মাধ্যমে নিজদের ‘রোগমুক্ত’ করার কাজে মূল অবদান ছিল ব্রিটিশদের। অস্ত্র হিসাবে তারা ব্যবহার করেছে জাতিসংঘকে। ইসরাইলী নারকীয় তাণ্ডবের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়রা বরাবরই সোচ্চার ছিল। কিন্তু আল কায়েদার নিউ ইয়র্ক, লন্ডন ও মাদ্রিদ হামলার পর বদলে যায় নন-মুসলিম বিশ্বের মন-মানসিকতা। আজকের দুনিয়ায় মুসলমানদের অন্যতম পরিচয় তারা জঙ্গি, দাঙ্গাবাজ এবং আলোচনার টেবিলে সমস্যা সমাধানে অনিচ্ছুক একটা ধর্ম। বলাই বাহুল্য দেশে দেশে আল-কায়েদার মত জঙ্গি সংগঠনের অপ-তৎপরতার আসল ফসল ঘরে তুলছে ইসরাইল। টেবিল হতে আর্কাইভে স্থান পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা। ২০০০ সালে প্যালেস্টাইনই নেতা ইয়াসির আরাফাতকে যে মানচিত্র অফার করা হয়েছিল তার চার ভাগের একভাগও অফার করতে রাজী নয় আজকের ইসরাইল। পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় ক্ষমতাসীন রয়েছে ইসরাইলকে পৃথিবী হতে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার মিশনে ব্যস্ত হামাস।

ইহুদি তাণ্ডবের দায়-দায়িত্বের একটা বিরাট অংশ নিতে হবে প্যালেস্টাইনই নেত্রীবৃন্দকে। সুযোগ পেয়েও তারা শান্তিকে প্রধান্য দেয়নি। বরং সমস্যা জিয়িয়ে রেখে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার ব্যবস্থা করে গেছেন মাত্র। খোদ ইয়াসির আরাফাতও এ হতে মুক্ত ছিলেন না। মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর ধন-সম্পদ তাই প্রমাণ করে। প্যালেস্টাইনি শিশু কিশোরদের বিকৃত ও বিভীৎস মৃতদেহ গণমাধ্যমে প্রকাশের মাধ্যমে আমরা হয়ত নিজেদের রাগ, ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করতে কার্পণ্য করছিনা। কিন্তু তাতে প্যালেস্টাইনই সমস্যার প্রতি কতটা আন্তরিকতা প্রকাশ করা হচ্ছে এ নিয়ে তর্ক হতে পারে। ইসরাইলের অস্তিত্ব অস্বীকার করে এ অঞ্চলে শান্তির কথা বলা একান্তই বাচালতা। ইহুদি মেধা ও সম্পদের কাছে গোটা বিশ্ব এখন পদানত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে শিক্ষা নিয়ে ওরা নিজেদের তৈরি করেছে কি করে বৈরী পৃথিবীতে বাস করা যায়। একবিংশ শতাব্দীর জটিল আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে টিকে থাকতে চাইলে প্যালেষ্টাইনীদেরও খুঁজে বের করতে হবে সহাবস্থানের নতুন ফর্মুলা।

শামীম, নিজাম ও ইলিয়াস…একই জরায়ুতে জন্ম

By Watchdog BD

পরিচিত একজনের স্ট্যাটাসে তথ্যটা পড়ে যার পর নাই অবাক হলাম। নিজকে ধিক্কার দিলাম জন-গুরুত্বপূর্ণ এমন একটা তথ্য জানা নেই বলে। বিহারী ক্যাম্পে পুড়িয়ে মারা দশজনের সবাই নাকি গোলাম আজমের বংশধর এবং তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ভেতর অন্যায় কিছু নেই। ইনিয়ে বিনিয়ে তিনি যা বলতে চেয়েছেন তা হল এ হত্যা ৭১’এর হত্যারই প্রতিশোধ। প্রথমে ভেবেছিলাম নিহত দশজনের সবাই ছিল রাজাকার এবং ৭১’এর গণহত্যার সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। রক্তের বদলা রক্ত, এ নতুন কোন ঘটনা নয়। সভ্যতা বিবর্তনের অলিগলি ঘাঁটলে ভুরি ভুরি উদাহরণ পাওয়া যাবে এ ধরনের প্রতিশোধের। কৌতূহলী হয়ে নিহতদের বিস্তারিত জানার চেষ্টা করলাম। এবং খুঁজে পেলাম উপরের ছবিটা। অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন না হলে এ শিশুর রাজাকার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অবশ্য গোলাম আজমের বংশধর বলতে কেবল রাজাকার বুঝানো হয়েছে তাও নয় নিশ্চয়। হতে পারে বৃদ্ধ গোলাম আজমের সাথে শিশুটির মার অবৈধ সম্পর্ক ছিল অথবা হতে পারে জনাব আজমের ধর্ষণের ফসল এই শিশু। অথবা তার মা-বাবা গোলাম আজমকে দীক্ষা গুরু হিসাবে মানতেন এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নস্যাতের কাজে শিশুটিকে ব্যবহার করতেন। এসব তত্ত্বের পক্ষে এ পর্যন্ত কেউ সাক্ষী প্রমাণ নিয়ে জাহির হননি। স্বভাবতই ধরে নেব শিশুটি যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত রাজাকার নয়, এবং কোন বিবেচনায়ই গোলাম আজমের বংশধর না। এতদিন জানতাম শিশু কেবল শিশুই, নিরপরাধ, ইনোসেন্ট এবং সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে। চেতনার ভায়াগ্রা খেয়ে যারা জাতির পশ্চাৎ-দেশে নুর হোসেন আর আরিফ-তারিক নামক পতিতাদের ঢুকাতে ব্যস্ত, তাদের জন্য একবিংশ শতাব্দীর শিশু বিংশ শতাব্দীর রাজাকার হবে, খুব একটা অবাক হইনা।

ইলিয়াস মোল্লা। অবৈধ নির্বাচনের আরও এক জারজ ফসল। ৫ই জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন এলাকায় জন্ম নেয়া তিনশ জারজ সন্তানদের একজন। অবশ্য নিজকে দাবি করেন মিরপুর এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে। নারায়ণগঞ্জের শামীম, ফেনীর নিজাম, কক্সবাজারের বদির মত এই জারজ সন্তানের জন্মও একই মায়ের জরায়ুতে। ভৌগলিক সীমা ও কাপড়ের পতাকাই যদি একটা দেশ ঘোষণার উপকরণ হয়ে থাকে বাংলাদেশ নিশ্চয় একটা দেশ। তবে মনুষ্যত্বের আরও কিছু চাহিদা ও দাবি থাকে যা পূরণে অক্ষম একটা জাতিকে জাতি বলা যায়না। আজকের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তেমনি একটা দেশ। অক্ষম জাতির টিকে থাকার আবাসভূমি। ইলিয়াস মোল্লার জন্ম, উত্থান এবং আজকের অবস্থান নারায়ণগঞ্জের নুর হোসেনেরই কার্বন কপি। মাথায় ভাসানী টুপি, ক্লিন শেভ মুখ এবং ঠোঁটে দেলোয়ার হোসেন সায়েদী কায়দায় মুক্তিযুদ্ধের প্রলাপের আড়ালে লুকিয়ে আছে খুন, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী, দখল, উৎখাত সহ শত শত অপরাধের লৌমহর্ষক কাহিনী। একদল ক্ষুধার্ত খুনিদের নিয়ে চলাফেরা করেন। তাদের ভরন পোষণ করেন প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য। মিরপুরের প্রতিবেশী দুটি বস্তি। একটা কালসী। প্রতিবেশী বস্তিতে বিদ্যুৎ নেই। অসুবিধা কি, আছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ। অবৈধ সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা তার ক্যাডারদের অতিরিক্ত আয়-রোজগারের ব্যবস্থা হিসাবে কালসী বস্তি হতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেন প্রতিবেশী বস্তিতে। কিন্তু তাতে বাধ সাধে কালসী বস্তির বৈধ গ্রাহকরা। কারণ সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ এক বস্তির জন্যই যথেষ্ট ছিলনা। স্বভাবতই লোড সেডিং বাড়তে শুরু করে ঐ বস্তিতে। ইলিয়াস মোল্লার সশস্ত্র ক্যাডারদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায় বস্তিবাসী। দুয়েক জনকে ধোলাই দিতেও পিছপা হয়নি তারা। রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হন খোদ গডফাদার ইলিয়াস মোল্লা। আদেশ দেন অবৈধ সরকারের জারজ এমপি যা বলবে তাই এ দেশের আইন। তাতেও দমে যায়নি প্রতিবাদকারীরা। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে হেনস্তা করে প্রফেশনাল মার্ডারর এই অবৈধ সাংসদকে। ঘটনাস্থল ত্যাগ করার আগে হুমকি দিয়ে যান দুদিনের ভেতর দেখে নেয়ার।

এবং কথা রাখেন ইলিয়াস মোল্লা। দুদিনের ভেতর বস্তিতে হাজির হয় সোহেল রানা। মন্ত্রীর ডান হাত। স্থানীয় যুবলীগের নেতা এবং প্রফেশনাল খুনি। এক পরিবারের সবাইকে জীবন্ত পুড়িয়ে বীর-দর্পে ফিরে যান রক্ষকের ডেরায়। তা ছাড়া রক্ষক ইলিয়াস মোল্লার অনেকদিনের চোখ বস্তির দিকে। জায়গাটা তার চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জরায়ুতে বলি দিতে চান বস্তির মাটি। তাইতো হত্যার অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে জারজ সাংসদ জানালেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্যই নাকি এসব অভিযোগ।

কালসী অথবা মিরপুরের বাকি বস্তির বাসিন্দাদের পরিচয়ে কোন রাখঢাক নেই। ওরা আটকে পড়া পাকিস্তানি। জাতিসংঘের শরণার্থী আইনে বাস করছে এ দেশে। নিজদের পরিচয়ের সাথে পাকিস্তানী গন্ধ মিশে আছে দিবালোকের মত। কিন্তু এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর মিশন নিয়ে এ বস্তিতে গেরিলা গ্রুপ জন্ম নিয়েছে এমন সাক্ষী কেউ দিতে পারবেনা। ওরা খেটে খায়। কেউ আমাদের চুল কাটে, কেউবা জুতা সেলায়। দিনান্তে আর দশটা বাংলাদেশির মতই ঘরে ফিরে যায়। তবে সে ঘর আমার আপনার মত সাধারণ ঘর নয়, বস্তি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এসব বস্তিতে। ’৭১ এ দেশের স্বাধীনতায় যে সব বিহারী পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল তাদের প্রায় সবাইকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয়েছিল স্বাধীনতার পর পর। আমরা স্বীকার করতে না চাইলেও এর পক্ষে বাজারে অনেক প্রমাণ বিক্রি হচ্ছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর একই অভিযোগে শিশুদের জ্ব্যান্ত পুড়িয়ে মেরে উল্লাস করার ভেতর সততা নেই, আছে পশুত্ব, আছে অসুস্থতার লক্ষণ।

কালসী বস্তির এ শিশুটির অপরাধ সে আটকে পরা পাকিস্তানী। তার আসল দেশ তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে। কেবল মাত্র এই অপরাধে শিশুটির পৈশাচিক খুনের বৈধতা দেয়াও অপরাধ। আমাদের বর্তমান জারজ প্রধানমন্ত্রীও জীবনের অনেকটা সময় নিজ দেশে অবাঞ্ছিত ছিলেন। আশ্রয়ের সন্ধানে পৃথিবীর দেশে দেশে ঘুরে বেরিয়েছেন। বৈধ আয়ের বদলে আশ্রয়দাতার দয়ার উপর বেচে ছিলেন। ইলিয়াস মোল্লাদের এসব ইতিহাস জানা থাকার কথা। না জানলে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে জানানো উচিৎ।

http://www.amibangladeshi.org/blog/06-16-2014/1464.html

 

অবহেলিত জনপদের দগ্ধ ওরা বিহারী? না কি মানুষ?

by Elora Zaman

একদিন গিয়েছিলাম বেনারসী পল্লীতে শাড়ি কিনতে। ঝলমলে দোকান পাট! রঙীন সব শাড়ি। কত নারী তার বাসর সাজিয়েছে ঐসব লাখ টাকা দামী শাড়ি দিয়ে। জীবন শুরু করেছে ওখান থেকে। বিত্তশালী সব নারীরা, সুনীলের চৌধুরীদের সূবর্ণ কঙ্কন পড়া রমণীদের মতো। দোকানী বললো, আপা! কারিগর শাড়ি দিতে দেরী করতেছে। দেইখ্যা আসি, কি অবস্থা।

আমার অতিউৎসাহী মন দোকানীর সাথে যেতে চাইলো। বললাম, আমায় নিয়ে চলেন। পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে দোকানী হেসে বললো, যাইবেন? আচ্ছা চলেন। কিন্তু সহ্য করতে পারবেন তো? আমিও একগাল মিষ্টি হেসে বললাম, সহ্য করতে পারবো। আমি গরীবের মেয়ে, সব সহ্য করতে পারি। অসুবিধা নাই। চলেন।

কিছুদূর হেঁটেই দেখলাম ঝুপড়ির মতো ছোট ছোট ঘর। সোজা হয়ে হাঁটা যাচ্ছিলো না, নিচু হয়ে পাশ কেটে হাঁটতে হচ্ছিলো। এতোসব চিপা গলি, নোংরা, দুর্গন্ধ। কারিগরের রুমে ঢুকে খেলাম এক বিশাল ধাক্কা। দেখলাম ঘামে ভেজা কিছু উদোম শরীর। দরদর করে ঘাম পড়ছে সেইসব বারো-তেরো বছরের বিহারী কিশোর ছেলেদের শরীর থেকে। ওরা কাজ করে যাচ্ছে। সুতো টেনে টেনে, খটখট। অগ্নিকুন্ডের মত অবস্থা, তেল চিটচিটে লুঙ্গি গামছা! আমি বাহানা করে বেরিয়ে এলাম, সহ্য করতে পারছিলাম না। বাইরে এসে ভাবলাম, এরাও কি মানুষ?

পৃথিবীর সবচাইতে অবহেলিত একটি জনপদকে দেখে কষ্ট লেগেছিলো। কিন্তু ভুলে গেলাম অতি দ্রুত তার পাশেই ঝলমলে ডাউনটাউন দেখে। আজকে আবার মনে পড়লো সেই বিহারী পল্লীর কথা।

মীরপুরে এগারোজন মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে আর গুলি করে মেরে ফেলার খবর পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। তারচেয়ে বেশি হতবাক হয়েছি এ ঘটনার পর বাংলাদেশের মানুষদের বিশাল একটা অংশের প্রতিক্রিয়ায়। আমরা কি সভ্য মানুষ? অথবা ‘মানুষ’ শব্দটা দিয়ে পরিচিত হওয়ার যোগ্য? এটা কি দুইহাজার চৌদ্দ সাল?

আজকের সময়ে এমন নৃশংস একটা ঘটনায় কেউ জংলী ক্যানিবাল ট্রাইবের মতো আনন্দ প্রকাশ করে কিভাবে? যারা এমন করছে, এরা তো আমাদেরই আশেপাশের মানুষ, ভাই-বোন-বন্ধু-আত্মীয়। আমরা কি ধরণের মানুষদের সাথে বসবাস করছি! পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে নিরব সমর্থন দিয়েছে। কেন দেবেনা? যুবলীগ ছাত্রলীগের ছেলেদের কাজে বাঁধা দেবে, এমন সাহস আর ক্ষমতা কি পুলিশের আছে না কি?

কতটা অসহিষ্ণু এবং উন্মাদ হয়ে গিয়েছি আমরা? শিশু সহ যে মানুষগুলো পুড়ে মারা গেলো, তাদের জায়গায় আমরা নিজেরা অথবা আমাদের কোন আত্মীয়-স্বজন থাকলে তখন কেমন লাগতো? বাচ্চাগুলো আর বড় হওয়ার সুযোগ পেলোনা। নিরপরাধ নারীরা অভাব-অনটনের সংসারের ভেতরেও বেঁচে থাকার অধিকারটুকু পেলো না।

দেশে যেহেতু কোন অন্যায়ের বিচার নেই, সরকারী দলের লোক হলে তাদের যা ইচ্ছা তাই করার ক্ষমতা আছে, তারা তাদের এলাকার স্থানীয় মারামারিতে ক্ষমতার প্রকাশ দেখালো। সেই ক্ষমতায় দেয়া আগুনে কার্বন মনোঅক্সাইড বিষে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে, একটু একটু করে শরীর পুড়ে গিয়ে, বিকৃত হয়ে মারা গেলো দশজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ।

এরপর শুরু হলো এরচেয়ে বড় উন্মাদনা, পাশবিক উন্মত্ততা। শিক্ষিত ও রুচিশীল মানুষেরা এ ঘটনাকে সমর্থন করা শুরু করেছে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নাম দিয়ে যে পাগলামি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সারা দেশে, এর শেষ কোথায়? সত্যিই কি এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

আসলেই কি একটা জাতির মুক্তির সংগ্রাম এরকম ঘৃণা আর অমানবিকতার ভিত্তিতে ঘটতে পারে? বিশ্বাস করিনা। বরং এ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো আওয়ামী-শাহবাগিদের চাষাবাদ করা ঘৃণার জমিন। এ ঘৃণা আর বিভেদের আগুন বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যতকে পুরোপুরি নষ্ট করে দিচ্ছে।

সব ছাড়িয়ে বারবার মনে হচ্ছে, নিরপরাধ মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে পারিনা কেন আমরা? কেন পারিনা ঘৃণিত সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠতে? আমাদের চেয়ে বেশি রেইসিষ্ট জাতি কি আর কোনটা আছে? ধিক আমাদের! বাংলাদেশী পরিচয় দিতে লজ্জা হয় আজ!

জনাব তারেক রহমান কে খোলা চিঠি! 

1

 

by
ফয়েজ তৈয়্যব
জনাব রহমান,
সাম্প্রতিক সময়ে লন্ডনে বসে কিছু কিংবা অনেক কথা বলছেন। আজ মানুষ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের (!) মুখে শুধুমাত্র এমন কিছু শুনতে চায় যা তাঁদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত। তা না করে পুরানো ইতিহাস নিয়ে এইসব কি বলছেন আপনি? কেন বলছেন? জিয়া কে পচাতে শেখ হাসিনার নেয়া অনুরূপ পথে হেঁটে মুজিব কে পচিয়ে আপনি কি পাবেন?
জীবন যেখানে দায়ের ভারে নূজ্য সেখানে অতীতের কাসুন্দি ঘাটা আজ বড়ই বেমানান, বড়ই হতাশার, বড়ই গ্লানির। বুঝে নিন, এই সব সত্য বা মিথ্যা সেটা নিয়ে জীবন যন্ত্রনায় পিষ্ট মানুষ ভাবিত নয়। এইসব কাদা ছোঁড়াছুড়ি দেখতে আর শুনতে নাগরিক ত্যাক্ত বিরক্ত, কারন তাঁর জীবন আজ সামাজিক সম্মান, দারিদ্র আর নিরাপত্তার কাছে বড়ই অরক্ষিত।
৪২ টি বছর পার হবার পর মানুষ আস্তে আস্তে বুঝতে শিখতে শুরু করেছে তাঁদের সাবেক ও বর্তমান সকল নেতাই তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তন না করে নিজের ভাগ্যই পরিবর্তন করেছে। নাগরিক তাঁর নেতাদের প্রতারক, চোর, লূন্ঠন কারী, উদ্ধত আর অসভ্য ভাবতে শুরু করেছে। এই বোধ আপনাদের মধ্যে যত দ্রুত আসে ততই সার্বিক মঙ্গল। ব্যক্তি আপনার, আপনার দলের এবং এই অভাগা দেশের। সুতরাং এইসব অর্থহীন আলোচনা (সত্য বা মিথ্যা) আজ প্রাসঙ্গিক।
বরং এইসব বাদ দিয়ে নাগরিক স্বার্থের কথা বলুন, নাগরিক আশা করে তা বুঝার বয়স আপনার হয়েছে। সেই সাথে নাগরিক এটাও কামনা করে নাগরিক স্বার্থ ভিত্তিক রাজনীতি করার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আপনার মধ্যে এখনই আসা উচিত।
দেশের তরুন প্রজন্ম আপনার প্যারালাল প্রশাসন, নিয়মতান্ত্রিকতার উপর অনিয়মের দায় দেখেছে। সেইসব কলঙ্ক থেকে কিভাবে বের হবেন তা নিয়ে নিজে ভাবুন, আপনার ফোলয়ার দের ভাবতে দিন, নাগরিকের কাছে সৎ কমিটমেন্ট দিন, সেই কমিটমেন্ট যে সৎ সেটার প্রমান রাখুন।
ক্ষমতায় আসলে ভঙ্গুর এই সমাজ ব্যবস্থায় কিভাবে নাগরিক এর নিরাপত্তা দিবেন, সামাজিক নিরাপত্তা দিবেন, আর্থিক নিরাপত্তা দিবেন তা নিয়ে ভাবেন, আমাদের কে সেটা জানান।
মানুষের জীবন মান উন্নয়নে আপনার প্ল্যান আছে কি? থাকলে সেসব কি? সেসবের চ্যালেঞ্জ কি? সেই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার উপায় কি সেই ভাবনা নাগরিককে জানান।
চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি রোধ করে কিভাবে অভ্যন্তরীণ ইনভেস্টর দের উৎসাহিত করবেন সেসব নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। নিজেরা, দল কিভাবে এই ভন্ডামী আর অনাচার থেকে বের হয়ে নাগরিক কে আর্থিক নিরাপত্তা দিবে সেটা নিয়ে ভাবেন, সেইসব নাগরিক কে জানান।
হাজার হাজার তরুন চাঁদাবাজির ভয়ে, ঘুষ আর হয়রানির ভয়ে কোম্পানী খুলতে পারছেন না, আইডিয়াকে প্রোডাকশনে নিয়ে যেতে পারছেন না, সেসব নিয়ে ভাবেন না বোধ করি, দয়া করে ভাবুন। আপনারা যে ভাবছেন, অন্তত সেটা নাগরিককে জানান।
পরিবর্তিত জলবায়ু/আবহাওয়ার এই সময়ে কৃষি আর কৃষকের ফলনের নিরাপত্তার বিধান কিভাবে ঘটবে, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা কিভাবে আসবে, কৃষি অবকাঠমোর বিকাশ কিভাবে হবে তা নিয়ে ভাবুন দল, দেশ আর দেশের গন্ডির বাইরে। নাগরিক এইসব জানতে চায় কান পেতে।
আগামীর বাংলাদেশে অবকাঠমো উন্নয়ন কিভাবে হবে তার সততা ভিত্তিক রোডম্যাপ বানান। সড়ক রেল নৌ বিমান ব্যবস্থা, পন্য পরিবহন ব্যবস্থা, নগর পরিবহন ব্যবস্থা, জ্বালানী উতপাদন এবং ব্যবস্থা কি ভাবে জনকল্যাণ এর প্রযুক্তি নির্ভর হয় সেইসব মহৎ কাজ নিয়ে রাইট এক্সপার্ট দের সাথে বসেন। সেইসব ভাবনা নাগরিককে জানান। একটা অসৎ এবং দায়সারা নির্বাচনী ইশতেহার এর গল্প ভুলে মানুষকে সত্যিকারের পরিকল্পনার সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দিন।
দুর্নীতির অভিযোগ মুক্ত হয়ে কিভাবে বিদেশী বিনিয়োগ আর সহজ শর্তে অবকাঠামো ফান্ডিং (ঋন) আনবেন সেটা নিয়ে এক্সপার্ট দের সাথে যুক্তি পরামর্শ করুন। রোডম্যাপ বানান। নাগরিককে কিভাবে বৈদেশিক ঋন এর বোঝা থেকে মুক্তি দিবেন সেতা নিয়ে ভাবেন। নাগরিককে তা জানান।
প্রতিবেশীর সাথে আর্থিক লাভের ভিত্তিতে কিভাবে কৌশলগত সম্পর্ক করবেন তা নিয়ে দেশী বিদেশী এক্সপার্ট দের সাথে কাজ করুন। নাগরিককে তা সৎ ভাবে জানান।
দুর্বিনীত দলীয় ক্ষমতার একচ্ছত্র প্রভাবে রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠান গুলোতে ঘুষ, অনিয়ম আর দুর্নীতি কে নিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার যে কলঙ্কের দায়, তা একটা উল্লেখযোগ্য সময় দেশ শাসনকারী হিসেবে আপনার দলের রয়েছে সেটা মেনে নিন, সেখান থেকে বেরিয়ে কিভাবে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে নিবেদিত একটি সরকার কাঠামো বানানো যায় সেসব নিয়ে ভাবেন, সেই ভাবনা ছড়িয়ে দিন দেশের আনাচে কানাচে এমন কায়দায় যাতে মানুষ বিশ্বাস করতে পারে।
মানুষ বুঝতে শিখেছে, দেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ও বাণিজ্যিকীকরণ ই নিয়ম। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শিষ্টাচার এবং নিয়মতন্ত্রের চর্চা নেই। দলের কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই। রাজনীতি মানেই চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বলপ্রয়োগ, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ ক্ষমতার প্রয়োগ।
মানুষ বুঝতে শুরু করেছে সকল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী দফতরে কেন্দ্রীভূত। সংসদ, নির্বাহী বিভাগ এর স্তর সমুহ্‌, আদালত এবং স্থানীয় প্রশাসনের ভুমিকা নিতান্তই সাংবিধানিক, কার্যত আজ্ঞাবাহী। নাগরিক বুঝতে শুরু করেছে রাজনৈতিক ব্যবস্থা দুর্বৃত্তায়ন এবং বাণিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে গেছে। সেই রাজনৈতিক বাণিজ্যিকীকরণের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে চূরমার হয়ে গেসে তাঁর স্বপ্ন এবং সম্ভাবনা।
নাগরিক চায় আপনি আপনারা এইসব স্বীকার করুন, এইসবের দায় নিন। এইসব অসভ্যতা থেকে দেশকে বের করে আনার শপথ নিন, পরিকল্পনা করুন এবং তা নাগরিক কে জানান ওয়াদা করে।
নাগরিক অনেক কিছু জানতে চায়, শুনতে চায়। নাগরিক যা শুনতে চায়, তা ই শুধু বলেন, নাগরিক এর ব্যক্ত অব্যক্ত ভাব বুঝে নিন।অপ্রয়োজনীয় যা, তা বর্জন করুন। পিতার পরিচয় থেকে বেরিয়ে এসে নিজের পরিচয় তৈরি করুন।
যদি না পারেন, দয়া করে যোগ্যকে পথ করে দিয়ে আপনি/আপনারা বাংলাদেশকে মুক্তি দিন।
নিবেদনে,
বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক।

 

 

ক্লাস ফোর সিন্ড্রোম

by Jahid Islam

বাড়িতে আমাদের একজন প্রতিবেশী আছেন যার মেয়ে ২০১২ সালে ক্লাস ফোরে পড়ত। সম্পর্কে উনি আমার ভাই হন। মাঝে মাঝে তার সাথে দেখা হয়, কুশল বিনিময় এবং হালকা কথাবার্তা হয়। উনার সাথে কয়েকদিন কথা বলার পর একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলাম যে উনি আমার সাথে গল্প করার সময় পর পর তিন দিন উনার ক্লাস ফোরে পড়া মেয়ে পড়াশুনায় কত ভাল সেটা নিয়ে বিস্তারিত বললেন।

প্রথম দিন ধৈর্য ধরে শুনলাম। এরপর আবার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিন প্রায় একই কাহিনী। সাথে যুক্ত হল ক্লাস ফোরের পড়া এখন কত কঠিন এবং এরপরও তার মেয়ে কত অসীম বুদ্ধিমত্তার সাথে একের পর এক প্রতিবন্ধতকতা অতিক্রম করে ভাল করে চলেছে এই বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ। আমি নিশ্চিত এরকম অভিজ্ঞতা আরও অনেকেরই হয়েছে। এটা একটা মজার সিম্পটম। জাতি হিসেবেই আমরা সামান্য জিনিসকে অসামান্য করে দেখার এই ‘ক্লাস ফোর সিন্ড্রোম’ এ আক্রান্ত।

আপনি ইউরোপ আমেরিকায় খোজ নিলে দেখবেন যে হিমালয় বিজয় বা বাংলা চ্যানেলের মত জিনিস বিজয়ীর সংখ্যা হাজার হাজার । কিন্তু আমাদের প্রায় ১৮০ মিলিয়ন লোকের একটা দেশে এটা এতই বড় একটা খবর যে, দিনের পর দিন এ ঘটনা পত্রিকার প্রথম পাতা দখল করে রেখেছে। মুসা ইব্রাহিম তার এই অসামান্য (!) অর্জন নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কলাম লিখেছেন, স্টার হয়েছেন। এখন আবার তার বিরুদ্ধে একের পর এক জালিয়াতির অভিযোগ আসছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্য-মিথ্যা নির্ণয়ে যাব না। কারণ বাংলাদেশে যে কারও পেছনে এক দল শয়তান পিছু নিলে সহজে ব্যক্তির সম্মানহানি করতে পারে। আর আমরা যে মানি লোককে খুব মান দেই ব্যাপারটা এমনও না এবং ড. ইউনুস হতে পারেন এর আদর্শ দৃষ্টান্ত ।

তবে এই যে ইতিমধ্যে লাখ বার জয় করা হিমালয় জয় নিয়ে এত বিতর্ক কিংবা বাংলা চ্যানেলের মত একটা জিনিসের জয় নিয়ে এত মাতামাতি এবং এখন এত বিতর্ক, এটা প্রমাণ করে যে আমরা সামান্য জিনিস নিয়ে মেতে থাকতে কত পছন্দ করি ! অথচ এত বিরাট জনসংখ্যার একটা দেশে আন্তর্জাতিক কোন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আমাদের প্রায় কোনই অর্জন নেই। লাখের ঘরে জনসংখ্যা ইউরোপের এরকম অনেকে দেশের অর্জন আমাদের চেয়ে বেশী। এমনকি আফ্রিকার গরীব দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশ অলিম্পিকের মত গেমসের বিভিন্ন ইভেন্টে নিয়মিত গোল্ড জেতে। এত বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে আমাদের মত অর্জনহীন দেশ দুনিয়াতে কম আছে ।

একটা সামান্য জিনিসকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে একসাথে “ইউরেকা ইউরেকা” বলে লাফিয়ে এরপর এটাকে জাতীয় গর্বে (!) পরিণত করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

ইউরোপ আমেরিকার স্কুল বালকেরা এরকম চ্যানেল জয়ের কাজ প্রতি বছর গ্রীষ্মের ছুটিতে করে থাকে এবং সেটা তাদের যে কারও কাছে কাছে এতই স্বাভাবিক যে সে তার বন্ধুর সাথেও এটা শেয়ার করার প্রয়োজন মনে করে না। আমরা যে বড় হতে পারি না এর অন্যতম একটা কারণ আমাদের টার্গেট ছোট, চিন্তাও ছোট। সামান্য জিনিসকে বিরাট মাইলস্টোন মনে করি।

আমরা করি নাক ফোঁসফাঁস টাইপ জাতি। প্রতিদিন কম্পক্ষে তিন-চার ঘণ্টা সময় ব্যয় করে রান্না করি এবং ভাত খেয়ে দুপুরে আরাম করে ঘুমাই। প্রোডাক্টিভ কাজের দিক থেকে আমরা দুনিয়ার অন্যতম আন-প্রোডাক্টিভ জাতি (কেবল আরবরাই আমাদের চেয়ে উপরে আছে বলে আমার মনে হয়)।

গত দশ বছরে কোন ভাল সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন না থাকার পরও এ দেশের সেরা বিজ্ঞানী ড.জাফর ইকবাল ! এ দেশে ফুটবল/ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে ইয়ুনিভারসিটি বন্ধ থাকে যেটা অস্ট্রেলিয়া বা হল্যান্ডে হয় না যদিও তারা কেউ ক্রিকেটের এবং কেউ ফুটবলের পরাশক্তি। সামান্য এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস (কে প্রথম প্রেসিডেন্ট/কে স্বাধীনতার ঘোষক, কার ব্লাউজের দাম কত) নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে মজা নিতে আমরা উস্তাদ।

সামান্য জিনিসকে অসামান্য করে উপস্থাপনের এই ‘ক্লাস ফোর সিন্ড্রোম’ যত দিন থাকবে তত দিন মুসা ইব্রাহিম’রা হয়ে থাকবেন এ দেশের স্টার। তাদেরকে নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কথা হবে এবং এটা বলে মজা নেয়াই হবে আমাদের পরম প্রাপ্তি !

এলিট ফোর্স এবং দ্রুত বিচার আদালত, এই দুয়ের কার্যকর ফাংশন

1

 

by Faiz Taiyeb
সন্ত্রাস নির্মূলে এলিট ফোর্স র‍্যাব কে অপ্রাতিষ্ঠানিক দমনকারী হিসেবেই তৈরি করা হয়েছিল। বিচার বহির্ভূত হত্যা দিয়ে শুরু হলেও, সেই সময় মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা এতটাই নাজুক ছিল যে দেশের নাগরিক এবং দেশে অবস্থানরত ভিনদেশী সবাই এই এলিট ফোর্স এর কর্মকাণ্ড কে স্বাগত জানিয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে আমরা অতি উতফুল্ল ছিলাম। অন্যতম একটা উদাহরণ ছিল পিচ্ছি হান্নান কিংবা নাঃগঞ্জের যুবদল নেতা ডেভিড হত্যা। রাজপথে পড়ে থাকা ডেভিডের লাশ নগর জীবনে স্বস্তি এলে দিয়েছিল। এই অসামান্য ঘটনা আমাদের সামাজিক নিরাপত্তার অতি অতি নিচু মাত্রা নির্দেশনে ব্যাপক তাৎপর্য মন্ডিত। আজ এত বছর পরে আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বাড়েনি তো বেটেই বরং অতি শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন ঘরে ঘরে গুম, অপহরন আতংক।
কিন্তু উচত ছিল র‍্যাব প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই আমাদের আদালতের বিচারকি সক্ষমতা কে বড়িয়ে অতি দ্রুত র‍্যাবকে কে সহায়ক ফোর্স হিসবে একটি দক্ষতায় ভরা চৌকশ পুলিশ বাহিনীতে রূপান্তর করা, যারা অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে পুলিশের ব্যর্থতাকে ঢেকে দেবে। এরা পুলিশ কে চৌকশ হতে প্রশিক্ষণ দিবে। হয়তবা এই লক্ষে একই সময়ে একটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়েছিল, যাদেরকে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার বন্দোবস্তের কথা বলা হয়েছিল। এই ট্রাইবুনাল শুরু করেছিল খুবি ভাল ভাবে। দরকার ছিল র‍্যাব শুধু মাত্র এই দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল সম্পর্কিত মামলার তদন্ত, অপরাধী ধরা, চার্জশীট তৈরী ইত্যাদি কাজে দ্রুততা নিশ্চিত করবে। এটা না করে র‍্যাবকে দেয়া হোল মিছিল ঠেকানো, ময়লার গাড়ীতে ঢিল মারার আসামী ধরার, অবরোধে ঢাকার গেট, অর্থাৎ ক্ষমতা পাহারা দেয়ার রাজনৈতিক প্রকল্পে। পাল্লা দিয়ে বাড়লো বিরোধী দমনের ক্রসফায়ার। এটা এখন বিএনপি জামাত দমনের কার্যকর মেশিন। তাই তারা র‍্যাব এর বিলোপ চাচ্ছে। সেই সাথে আধুনা যুক্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন দের বিবাদমান পক্ষ প্রতিপক্ষের নির্ভুলে র‍্যাবের সহায়ক হয়ে উঠা।
এলিট ফোর্স নিয়ে আমাদের চাওয়া সরকার আর বিরোধীদের চেয়ে ভিন্ন।
কিন্তু আমরা চাচ্ছি, একটি দ্রুত বিচার আদালত থাকবে যারা নাগরিকের চাহিদামত ৯০ দিন বা এরও কম সময়ের মধ্যে সুবিচার নিশ্চিত করবে। এর তদন্ত কাজ, অপরাধী ধরা, চার্জশীট তৈরি ইত্যাদি কাজে র‍্যাব এর মত একটি চৌকশ প্যারা মিলিটারি থাকবে যারা পুলিশ কে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিবে, সময় ক্ষেপণ, দলীয় বাধা, আম্লাতান্ত্রিক জটিলতা, ক্ষমতাসীন আর পদধারী দের অনিয়ম আর ঘুষ বাণিজ্য ঠেকিয়ে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করনে ট্রাইবুনাল কে সার্বক্ষণিক সহায়তা করবে।
এছাড়া সরকার এ রয়েছে নাগরিক শান্তি স্থাপনে চাঞ্চল্যকর মামলা দ্রুত নিস্পত্তির প্রয়োজনীয়তা, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান গুলোর রয়েছে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে অযাচিত বাধা হটানোর প্রয়োজনীয়তা। সুতরাং এই সময়ে আমাদের এলিট ফোর্স দরকার। কারন আমাদের সমাজ প্রবলভাবে অপরাধ প্রবন।
এর বাইরেও রয়েছে নাগরিক কে যে কোন ধরনের সাপোর্ট দেয়ার কাজ, যেটা অপরাধ সম্পর্কিত নাও হতে পারে। এটা পুলিশের সোশাল রিস্পন্সিবিলিটি এবং সেন্স অফ সার্ভিস (সেবা) কে উন্নততর এবং মানবিক করতে ভূমিকা রাখবে।
আমরা বলছি, এলিট ফোর্স এবং দ্রুত বিচার আদালত এর এই দুয়ের কার্যকর ফাংশনে নিন্ম আদালত এবং পুলিশ চ্যালেঞ্জ এ পড়বে। অন্যভাবে বলা যায় পরিকল্পত ভাবে দুর্নীতি গ্রস্ত আদালত এবং পুলিশ এর উপর রাষ্ট্রীয় চাপ বাড়ানো হবে। এতে নিন্ম আদালত এবং পুলিশ এর সৎ এবং দক্ষ হয়ে উঠার উপর নাগরিক চাপও বাড়বে।
তবে, যত দিন সমাজে কর্মসংস্থানের হাহাকার থাকবে, যতদিন মানসম্পন্ন এবং পেট চালানোর মত নিরাপদ কাজের পরিবেশ তৈরি না হবে তত দিন সমাজের এই অপরাধ প্রবনতা অব্যহত থাকবে। কাজ না পেয়ে নিন্ম, মধ্য এবং উচ্চ বিত্ত নিজ নিজ পরিসরে রাজনৈতিক দুরব্রিত্তায়নের হাতিয়ার হয়ে নিজেদের অপরাধে সপে দিবে। মালিকের অমানুষিক নির্যাতনে বা মারধর খেয়ে প্রান্তিক পরিবারের সেইসব শিশু শ্রমিক সেই মালিকেরই হত্যাকারীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে চাইবে। তত দিন মিছিলে ভাড়া করা লোকের অভাব হবে না, হত্যায়-গুম-খুনে ভাড়াটিয়া খুনীর অভাব হবে না। অস্তিত্বের প্রয়োজনে যে পেশা মানুষ বেছে নেয়, সে পেশায় সে অতি বেশি পারঙ্গম হয়ে উঠে। তাই আজ আমাদের ছিটকে চোররা হয়ে উঠছে নিখুঁত প্রফেশনাল কিলার।
রাষ্ট্র ব্যবস্থা কি সেই দিকে তার চিন্তা নিবিষ্ট করবে? করবে চূড়ান্ত সমাধানের বন্দোবস্ত? এলিট ফোর্স, দ্রুত বিচার আদালত এইসব তো নিতান্তই সাময়িক কথা। এটা চূড়ান্ত ভাবে সমাজ কে অপরাধ প্রবনতা থেকে বাচাবে না।
অপরাধের উৎস মূলে নিরাময় চাই।

 

পদ্মা সেতুর ভিজিবিলিটির স্বপ্ন এবং দুর্নীতির ধারনা সূচকের বিস্তৃতি

1

 

ফয়েজ তৈয়্যব
১। চায়না মেজর ব্রিজের আর্থিক প্রস্তাব মেনে নিয়োগ দিলে (পড়ুন দেয়া হয়েছে) মূল সেতুতে তিন হাজার ৭৭২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে। ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য যে সংশোধিত প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদন করা হয়, তাতে মূল সেতুর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল আট হাজার ৩৬১ কোটি টাকা। ফলে এখন কেবল মূল সেতু নির্মাণের ব্যয়ই দাঁড়াচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা৷ তবে সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, নদী শাসন ও পরামর্শক নিয়োগ হলে মোট ব্যয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা আরও বেড়ে যাবে।
২। যদিও RDPP তে নদী শাসনের ব্যয় ধরা হয়েছিল চার হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এ কাজে ঠিকাদারদের আর্থিক প্রস্তাব জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ২৯ মে পর্যন্ত। দরপ্রস্তাব জমা পড়লেই জানা যাবে, এই খাতে ব্যয় কী পরিমাণ বাড়ছে। দুটি সংযোগ সড়কের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ২৭০ কোটি টাকা। আবদুল মোনেম লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এক হাজার ২৯০ কোটি টাকায়। একইভাবে সেতুর কাজ তদারকিতে পরামর্শক নিয়োগের জন্য ৩৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরামর্শসংক্রান্ত কাজ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীকে একাংশের পরামর্শক, নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু কাজে ২০৫ কোটি টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মূল সেতু ও নদী শাসনের জন্য আলাদা পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলছে। এ ছাড়া নদীর দুই পাড়ে ভাঙন রোধে প্রায় ২৫০ কোটি টাকায় ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
৩। একটামাত্র প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রস্তাবের ওপর ঠিকাদার নিয়োগ ঝুঁকি।
৪। শুরু হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে, এখন সেটি ঠেকছে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি৷
৫। ব্যয়ের পরিকল্পনা এখানেই শেষ নয়৷ সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেতু বিভাগ এখন একটি প্রকল্প কয়বার সংশোধন করা যাবে, সেই নীতিমালাটিও মানতে চাইছে না৷ পদ্মা সেতুকে তারা এই নীতিমালার বাইরে রাখতে চায়৷ অর্থাৎ আবারও বাড়বে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয়৷
পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, আরডিপিপি অনুমোদনের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত নির্মাণ সামগ্রী ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক পণ্যের দাম বাড়ার কারণে সেতু নির্মাণের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।“২০১০ সালে যখন প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল, তার পর থেকে সময়ের সাথে সাথে সব নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে, ডলারের দাম বেড়েছে। ফলে খরচ বাড়ছে।”
মানে হোল কাজ না পেতেই উচ্ছিষ্ট ভোগীদের দালালী শুরু হয়ে গেসে। তাই খরচ/ব্যয় বৃদ্ধির পক্ষে আমাদের প্রকল্প পরিচালকই অতি উৎসাহী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
৬।চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি পাকশীতে লালন সেতু নির্মাণ করেছিল। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীন ওই সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার। ওই প্রকল্পে চায়না মেজর ব্রিজের সহযোগী ছিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল। ৯০৭ কোটি টাকার ঐ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান এখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং মূল সেতুর দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়েছে। জনাব আবুল না থেকেও আছেন!
৭। এই মেজর ব্রিজ ই ঢাকা চট্রগ্রাম চার লেইন এর কাজ করছে ৭ গত বছর ধরে, যার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে অনেক ধাপে, তার পরেও যা রয়েছে অসম্পূর্ণ। যারা ঢাকা চট্রগ্রাম সড়ক পথে যাতায়াত করেন তারা এই দুর্নীতিবাজ কোম্পানীর অতি নিন্ম মানের আর অব্যবস্থাপনা পূর্ণ কাজের মান সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পেয়েছেন।
একই কাজ পদ্মা সেতুর বেলায়ও হতে যাচ্ছে? তাহলে স্বপ্নের পদ্মা সেতু কবে শেষ হবে?
চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সম্পর্কেঃ
চারটি চীনা প্রকৌশলভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ও একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে ২০০৪ সালে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড গঠন করে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- চায়না জঙ্গতি মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, ইউয়ান আয়রন এন্ড স্টিল গ্র“প কর্পোরেশন, চায়না রেলওয়ে টানেল গ্র“প কোম্পানি, চায়না রেলওয়ে সাঙহাইজেন ব্রিজ গ্র“প কোম্পানি লিমিটেড।কোম্পানিগুলোর প্রতিটির বিরুদ্ধেই রয়েছে দুর্নীতি সম্পৃক্ততা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতার ভয়ঙ্কর সকল অভিযোগ।এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চায়না জঙ্গতি মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। চীনের সংবাদ মাধ্যমগুলোর সূত্র মতে, দুর্নীতির অভিযোগ থেকেই রক্ষা পেতে এই কোম্পানিটির মাতৃপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক বাই জংগ্রেন চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একটি বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন।গত বছর চীনের রেলওয়ে খাতে ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে দেশটির সরকার। তদন্তের অংশ হিসেবে চীনের সাবেক রেলওয়ে মন্ত্রীর দুর্নীতি প্রকাশ পায়। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের ভয়, শ্রমিকদের বেতন বাড়ানর চাপ ও অর্থসঙ্কটের কারণে বাই জংগ্রেন আত্মহত্যা করেছিলেন। গেল কয়েক বছরে, বাই জংগ্রেনের মতো আরও কয়েক নেতাই দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে আত্মহত্যা করেছেন।পদ্মাসেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাওয়া মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হচ্ছে ইউয়ান আয়রন এন্ড স্টিল গ্র“প কর্পোরেশন। ২০১২ সালে কানাডায় চেক জালিয়াতি করে অর্থসংগ্রহের অভিযোগ উঠে ইউয়ান আয়রন এন্ড স্টিল গ্র“প কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে।পদ্মাসেতু নির্মাণে ভূমিকা পালন করবে এমন আরেকটি কোম্পানি হচ্ছে চায়না রেলওয়ে টানেল গ্র“প কোম্পানি। এই কোম্পানিটি আরেকটি চীনা কোম্পানির সাথে সম্মিলিতভাবে পোল্যান্ড-জার্মানি সংযোগ সড়ক নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল ২০০৯ সালে। তারপর পোল্যান্ডের সরকার, চীনা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন করতে না পারা ও প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ফেলার অভিযোগ তোলে। এবং পোল্যান্ডের সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
যেখানে একটি সেতুই একটি দেশের জিডিপি কে নুন্যতম ২% বাড়াবে বলে ধারনা করা হচ্ছে, সেখানেও দুর্নীতির সাথেই আমাদের সেতুবন্ধন! এ এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন, যা দুর্নীতি ব্যাপ্তির  বৈশ্বিক ধারনা সূচকের পরিবর্তন ঘটাতে পারে !
সংকলিত।

 

সেনাপতি মেক্সিমাস ও “ঢাকা ইজ দ্য লাইট”

 

ইনতেখাব আলম চৌধুরী
জাতীয় পত্রিকা বলে একটা ধারণা আমাদের মধ্যে চালু আছে। বস্তুত যেসব পত্রিকা ঢাকা থেকে সারা দেশে যায় সেগুলোকেই জাতীয় পত্রিকা ধরা হয়। পত্রিকাগুলোর ফিচার মোটামুটি একইরকম। সাথে থাকবে কিছু সাপ্তাহিক অংশ, যেগুলোর কাজ ফ্যাশন, পড়ালেখা, চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কে মানুষকে নিত্যদিনের জ্ঞান দেয়া। তবে জাতীয় পত্রিকা বলা হলেও এখানে পুরো জাতির খবর খুব একটা আসে না। যা আসে তা হল ঢাকার খবর। সারাদেশের মানুষ ঢাকায় কী হল না হল সেখবর গিলতে থাকে আর নিজেদের এলাকার অবস্থার কথা ভুলতে থাকে। অন্যান্য অঞ্চলেও পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সেগুলো মানুষ পড়েও। কিন্তু জাতীয় পত্রিকাগুলোর দৌরাত্মের দিনে আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোর খবর মানুষের মধ্যে তোলপাড় তুললেও তা দিন শেষে ভাটার দিকেই যায়। 

হালের টিভি চ্যানেলগুলোর অবস্থাও তাই। তবে সেক্ষেত্রে কোনো “জাতীয়” টাইপ ধারণা গড়ে উঠে নাই। তাই দেশীয় চ্যানেলের সংখ্যা প্রচুর হলেও এখন পর্যন্ত কোনো জাতীয় চ্যানেলের নাম শোনা যায় না। তবে সুবিধার জন্য সেগুলোকে জাতীয় চ্যানেল হিসেবে ধরলাম। আরেকটি বিষয় হল এখন পর্যন্ত কোনো আঞ্চলিক চ্যানেলও গড়ে উঠে নাই। চট্টগ্রামে আগে সন্ধ্যার দিকে ঘন্টাখানেক সময় বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রোগ্রাম প্রচার করা হত, এখন চালু আছে কিনা জানি না। তবে সেটাকে চ্যানেলের পর্যায়ে ধরা যায় না। 

যাই হোক, তারা ঢাকার খবরগুলোকেই প্রচার করে সেটাই আসল কথা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের খবর নিয়ে তাদের বিশেষ পাতা থাকলেও সেগুলোতে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের খবর আটানো দুঃসাধ্য কর্ম। ফলশ্রুতিতে যা হয় তাহল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চিন্তাভাবনাও ঐ একটা শহর কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। নিজেদের সমস্যা যতই বড় হোক না কেন ঐ শহরের কাছে তা পাত্তা পায় না। তাই উত্তরবঙ্গের মঙ্গার খবর কয়েকদিন যাবত হেডলাইন হয় না, দক্ষিণাঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের খবর প্রতি বছর পাওয়া গেলেও সেটা জাতীয় সমস্যা না। ফলে এগুলোর স্থায়ী সমাধান নিয়ে চিন্তার দরকার নাই – এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। তার চেয়ে বরং পুরো ঢাকাকে কিভাবে ফ্লাইওভার দিয়ে মুড়ে ফেলা যায়, ঢাকার পার্লামেন্টের ক্ষমতা কিভাবে কে দখলে রাখতে পারে – সে চিন্তাই বেশি দরকারি। 

এর একটা দীর্ঘমেয়াদি খারাপ ফল আছে। Gladiator মুভিটিতে রোমান সম্রাট মার্কা‌স অরেলিয়াস ও তার সেনাপতি মেক্সিমাসের মধ্যে সংলাপের একটি দৃশ্য ছিল। সম্রাট সেনাপতি মেক্সিমাসকে জিজ্ঞাসা করে, “What is Rome?” মেক্সিমাসের উত্তর ছিল, “I’ve seen much of the rest of the world. It is brutal and cruel and dark. Rome is the light.” এরপর সম্রাটের বক্তব্য হল এরূপ, “Yet you have never been there. You have not seen what it has become.” মানে কী? সেনাপতি মেক্সিমাস তখন পর্যন্ত রোম শহরে যায়নি। এরপরও রোম তার কাছে লাইট এবং এই লাইটের রক্ষার জন্য সেনাপতি জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছিল এবং আমৃত্যু সম্রাটের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। তৎকালীন সময়ে এমনভাবে শারীরিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে রোমের দাসত্ববরণ করতে হত। উল্লেখ করা দীর্ঘমেয়াদি খারাপ ফলটা তাই। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এমন অনেক মানুষ আছে যারা ঢাকার বাসিন্দা না হলেও জীবনের একটা অংশ ঢাকায় কাটিয়েছে আর তাতেই তাদের মধ্যে একটা এলিট শ্রেণীর মানসিকতা তৈরী হয় যার ফলে দেশের অন্যান্য অংশে গেলে সেটার প্রতি তুচ্ছভাব পোষণ করতে সেকেন্ড দেরী হয় না। যদিও তাদের আদি বাসস্থানও ঐ একইরূপ। এবং এধরনের মানুষের বর্ধমান হার দিয়ে ভবিষ্যত সুন্দর হওয়া অসম্ভব। তারা খালি ঢাকাকেন্দ্রিক চিন্তা করবে কিন্তু বাকি দেশ থেকে যাবে “brutal and cruel and dark”।

এই মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ আমরা, আমাদের সমাজের সিস্টেম নিত্যদিন তৈরী করে চলেছি। তাই ভালো থাকার জন্য ঢাকায় মানুষের স্রোত বাড়তেই থাকে, সেই মানুষগুলোকে ভালো রাখতে গেলে যেসব অবকাঠামো তৈরী করা দরকার তা বলতে গেলে শুধু ঢাকাতেই তৈরী হয়, ঢাকা হয়ে পড়ে বুদ্ধিজীবীদের ভাষায় মানুষের “প্রাণের শহর”। ঢাকা রাজধানী হওয়ার চারশত বছর নিয়ে গবেষণা সেমিনার হয়, উৎসবের আয়োজন হয়। অথচ সমুদ্রতীরবর্তী চট্টগ্রামের হাজার বছর পুরনো বাণিজ্য নিয়ে টু শব্দ হবে না, উত্তরবঙ্গের সুপ্রাচীন বাংলার ইতিহাস অপাংতেয় হয়ে পড়বে, সিলেটের নিজস্ব নাগরী লিপি হারিয়ে গেলেও “শিক্ষিতজনদের” কারো মাথাব্যথা নেই, উল্টো সিলেট, চট্টগ্রাম এসব এলাকার ভাষাকে খেত প্রমাণে সবাই ব্যস্ত। এসবের মূল কারণ এগুলো কেন্দ্র করে তারা ব্যবসা করতে পারে না। তাই শেষকালে সেনাপতি মেক্সিমাসের মত সবার মনে বাজে, “Dhaka is the light”।
 
Written By:
– ইনতেখাব আলম চৌধুরী

 

 

জনাবা হাসিনা; অনির্বাচিত ও অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দ্যেশ্যে

by Watchdog Bd

জনাবা হাসিনা,

মাননীয়া সম্বোধন করে আপনাকে সন্মান দেখাতে পারছিনা বলে দুঃখিত। প্রথমত, বিশ্ব হতে উপনিবেশবাদ অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। বৃটিশ প্রভুদের কায়দায় কথায় কথায় মাননীয়া জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে নিজকে দুইশত বছর আগের দাস যুগে ফিরিয়ে নিতে চাইনা। খোদ বৃটিশরাও এখন আর এ জাতীয় শব্দ ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়। বারাক ওবামা আমার দত্তক নেয়া দেশের প্রেসিডেন্ট। পৃথিবীর সবাচাইতে শক্তিধর প্রেসিডেন্টকে আমি জনাব প্রেসিডেন্ট বলতেই অভ্যস্ত। এ নিয়ে খোদ ওবামা যেমন অভিযোগ করেননি, তেমনি তার দল ডেমোক্রাটরাও আমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানোর চেষ্টা করেনি। আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি হাজার ব্যস্ততার মাঝেও প্রেসিডেন্ট ওবামা আমার মত একজন সাধারণ সমর্থক ও নির্বাচনী কর্মীর সাথে নির্বাচন উত্তর যোগাযোগ রাখতে ভুল করেন না। দ্বিতীয়ত, আপনি বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার প্রধান নন। আপনি দলীয় প্রশাসন ও বন্দুকের নলের মুখে অনির্বাচিত সরকারের প্রধান। তাই আমাদের সংস্কৃতিতে স্বীকৃত ও প্রাপ্য সন্মান দেখাতে পারছিনা বলেও দুঃখিত। আইনগতভাবে আপনি কোনটারই দাবিদার হতে পারেন না। আপনি জারজ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। চাইলে দলীয় চামচা ও প্রশাসনের ভাড়াটিয়া বাহিনী পাঠিয়ে আমাকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি আমি যা বলতে যাচ্ছি তার সবটুকু বলা সম্ভব না হলেও কেউ না কেউ একদিন এসব কথা মুখ ফুটে বলতে শুরু করবে। বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের সবাইকে ভয়, সন্ত্রাস ও পেশী শক্তির কাছে জিম্মি রেখে, গায়ের জোরে ক্ষমতার সিংহাসন আলোকিত করার নিশ্চয়তা কেউ আপনাকে দিতে পারবেনা। সময় আসবে এবং আপনার প্রতি সেকেন্ড কর্মকান্ডের জবাবদিহিতার দাবি উঠবে। এবং তা হবে সভ্যতার দাবি। সময়ের চাহিদা।

জনাবা হাসিনা,

ঘটনা হাজার রজনীর আরব্য উপন্যাস হতে নেয়া নয়। ৬০-৭০’এর দশক এখনো ইতিহাসের পাতায় সমাহিত হয়নি। আমরা যারা বেঁচে আছি তারা ভুলে যাইনি কেন এবং কোন প্রেক্ষপটে এ দেশের মানুষ সংযুক্ত পাকিস্তানকে লা-কুম দিনু-কুম জানিয়েছিল। স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা ও তাদের পোষ্য ২২ পরিবারের শোষন, পিষন ও সন্ত্রাসের নাগপাশ হতে মুক্তি পাওয়ার ভ্রুণেই জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ নামক দেশের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন অংকুরিত হয়ে পল্লবিত হয়েছিল ৭০’এর দশকে। ফলশ্রুতিতে মানুষ অস্ত্র হাতে নিয়েছিল এবং ইতিহাসের অমেঘো পরিনতিতে সংযুক্ত পাকিস্তান ঠাঁই নিয়েছিল আস্তাকুঁড়ে। আজ আমরা নিজেদের স্বাধীন এবং সার্বভৌম বলে দাবি করি। আসলেই কি তাই? আপনার অভিধানে স্বাধীনতার সংজ্ঞা কি আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের অভিধানে এ সংজ্ঞা কেবল আপনার বাবাকে দেবতার আসনে বসিয়ে পুজা অর্চনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। স্বাধীনতা ২২ পরিবারের খপ্পর হতে বেরিয়ে ১ পরিবারের রাজতন্ত্র কায়েম করাও নয়। স্বাধীনতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ভৌগলিক দিয়ে শুরু হলেও এর শেষ ঠিকানা অর্থনৈতিক মুক্তি তথা সামাজিক নিরাপত্তায়। জাতিকে আপনি অথবা আপনারা কি দিয়েছেন ভেবে দেখেছেন কি? গোটা দেশ পরিনত হয়েছে মাফিয়া স্বর্গরাজ্যে। লুটপাটতন্ত্র রাজত্ব করছে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র। খুন, লাশ, গুম পরিনত হয়েছে দৈনিক ডাল ভাতে। মানুষ মরছে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে, শয়ণকক্ষে। লাশ হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবায়। আতংকের কালো ছায়া গ্রাস করে নিয়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন। বলতে বাধ্য হচ্ছি জনাবা, সবকিছু হচ্ছে আপনার নেত্রীত্বে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আপনাদের পারিবারিক সম্পত্তি। এর অংগ সংগঠন সমূহ আপনার পেশিশক্তি। এদের যৌথ প্রযোজনায় যে পশুশক্তি জন্ম নিয়েছে তার কাছে অসহায় হয়ে পরেছে গোটা জাতি। গোটা দেশের মালিকানা চীরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার লালসায় দেশের সবকটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে আপনি তচনচ করেছেন। কেড়ে নিয়েছেন নাগরিকদের ভোট দেয়ার অধিকার। দুমড়ে মুচড়ে তক্তা বানিয়েছেন কথা বলার স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধ আপনার বাবা অথবা পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি নয় যা দিয়ে আজীবন ব্যবসা করে যাবেন। যুদ্ধের কোন ফ্রন্টেই আপনাদের কারও কোন অবদান ছিলনা। আপনারা কেউ যুদ্ধে যাননি। দখলদার বাহিনীর নিরাপদ আশ্রয়ে নিজেদের চামড়া বাচিয়েছিলেন কেবল। চাপাবাজি আর পেশি শক্তির উপর ভর করে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতাকে বানিয়েছেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লাভজনক পণ্য, প্রতিপক্ষ নির্মূল করার ধারালো হাতিয়ার। শেখ পরিবারে আজীবন দাসত্ব করার জন্য বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। এ দেশের জন্ম হয়েছিল বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার জন্য, স্বাধীনভাবে কথা বলার জন্য, অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা সহ মৌলিক অধিকার সমূহের নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্য। আজ কোথায় এসব? স্বাধীনতাকে আপনি কবর দিয়েছেন শীতলক্ষ্যার পানিতে। বর্গা দিয়েছেন র‌্যাব, পুলিশ ও ছাত্রলীগের পদতলে। ওরা জাতির গলা চিপে শ্বাস বের করে আনছে এবং পৈশাচিক উল্লাসে আনন্দ করছে। আপনি গণভবনের চার দেয়ালে বসে মুচকি হাসছেন এবং মিথ্যাচারের গর্ভে জন্ম দিচ্ছেন নতুন এক দশ। অচল ও বিকলাঙ্গ বাংলাদেশ।

জনাবা হাসিনা,

ক্ষমতার স্বাদ খুবই সুস্বাদু। সহজে কেউ ভুলতে পারেনা। আপনি পারবেন না। কিন্তু সময় আসবে এবং আপনার স্বপ্নের তখত তাউসে আগুন লাগবে। সে আগুনে আর কেউ জ্বলবেনা,জ্বলবেন আপনি এবং আপনার পরিবার। অযোগ্যতাই হবে আপনার পতনের মুল কারণ। বাংলাদেশের মত জটিল আর্থ-সামাজিক দেশ পরিচালনা করার নূন্যতম যোগ্যতা নেই আপনার। তাই জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিন। ইতিহাসকে আপন গতিতে চলতে দিন। এ দেশের মানুষ গোলাম হয়ে জন্ম নিয়ে গোলাম হয়ে মরতে অভ্যস্ত নয়। তারা ঘুরে দাড়াতে জানে।
http://www.amibangladeshi.org/blog/05-14-2014/1458.html

Cut the Gordian knot

by Nuraldin Zia

This year started with a rude awakening for the elite Bangladeshi law enforcement agency, Rapid Action Battalion, popularly known as RAB. In an official letter to the inspector general of Bangladesh police, the United States authorities notified that individual members and units of the Rapid Action Battalion are ineligible for any further US training and assistance because of acts of gross violation of human rights committed by the members this elite force.

This allegation against RAB is not a new one. Since its inception as an elite force in March 2004, RAB has continuously been implicated in gross violation of basic human rights. Killing people with alleged criminal backgrounds in the name of crossfire became the ‘signature’ tactic of the force. Human rights groups so far tallied more than 2000 extrajudicial killings which were attributed to RAB.

Despite all the initial allegations against the battalion members, the government of Britain and United States continued their support for years. While the battalion continued to receive military training from Britain and the United States, despite all the allegation of extra judicial killing, the sudden change in heart of the major western backers of RAB is a clear indication that something went very wrong with the way RAB is perceived in the west. The embargo on any further US sponsored training, which was put on the members of RAB is a major blow to the credibility to a force which earned its name and fame fighting Islamic terrorism.

One possible reason the west might have continued supporting RAB despite allegations of extra judicial killing was its success in annihilating the home grown Islamic terrorism that rattled parts of Bangladesh during early part of this decade. Other factors that might weigh in the west’s decision to support RAB was it widespread popularity, professional work ethics as well as its politically blind modus operandi.

However RAB’s work ethics and professionalism started to take a turn towards the worse with ascent of Awami League as ruling party. Starting as early as 2008, RAB, previously criticized for extra-judicial killings of highly vetted criminals, allegedly started getting involved in abductions of businessmen and politicians. In 2009, three RAB men were arrested[i] on charges of abducting two businessmen and robbing them of gold and money.

On June 20 2011, two RAB men were captured by a crowd as they unsuccessfully try to abduct Chowdhury Alam, a local government leader and opposition leader, from Gulshan area of the capital. Later a patrol team of Police rushed to the spot and rescued them. One of the rescued was a RAB personnel identified by the meida as ASI Md Billal Hossain (ID No 314772 and Personnel No 4016801)[ii] belonging to RAB headquarters. Five days later, another group of people allegedly identifying themselves as RAB members kidnapped Mr. Chowdhury Alam. Mr. Alam has not been seen since then.

Apart from abductions, extortions and robbery, RAB continued with extra judicial killings through incidences knows as crossfires and shoot outs. In a recent development, Ain O Salish Kendra – ASK (Legal Aid and Human Rights Organization), Bangladesh cited 49 incidents of extrajudicial killings by law enforcement agencies mostly by RAB, only in the first the two months of 2014. The organization also confirmed 179 extrajudicial deaths in the year 2013. As a result of changing tactics of RAB, ASK could directly attribute 24 such deaths to RAB, 18 to police and for another 137 incidents, an agency could not clearly be linked.

On February 11, 2014 plain clothed armed men identifying themselves as RAB picked up Mridul Kumar Chowdhury in front of his house in Hazari Lane area of Chittagong. Prior to the incident, the gold trader lodged a case against some RAB personnel as they allegedly snatched a consignment of gold he sent to Dhaka. In an interview after being released from RAB custody, Mridul Kumar Chowdhury said that while being tortured by the abductors, he was asked time and again how he ‘dared’ file the case against RAB.

However, a probe committee consisting of law enforcement agency members surprisingly quashed the allegation[iii] clearing RAB of any involvement with the abduction.

The international human rights defender, Human Rights Watch, in all its recent communiques regarding Bangladesh, has recommended disbanding RAB. According to one of its’ recent reports titled ‘Democracy in Crossfire’ HRW unambiguously attributed extrajudicial killings, enforced disappearances, arbitrary arrests and unlawful destruction of private property on RAB personnel.

Human Rights Watch also repeated its call to the government to end the reign of impunity enjoyed by members of Bangladesh’s security forces working in RAB. They also urged to try the RAB members responsible for criminal offences.

Although RAB has been involved in such crimes for the last several years, the recent murder of seven people in Narayanganj has put RAB back into intense public scrutiny. As one followed the series of events leading to the discovery of seven corpses in Shitalakhya, it seemed that the RAB had turned into a mercenary force, a ruthless group of professional killers, who instead of working against the criminal godfathers had started working for the criminal godfathers in exchange of a hefty sum of money. Under intense publicity of the incident and as a result of loud public hue and cry, three seniors officers of RAB perceived to be responsible for the Narayanganj killings have been forced to go into retirement.

Data received from the RAB Headquarters says that almost two thousand RAB men[iv] faced departmental actions for committing criminal offences since 2004. That means, on an average, 16 members of the battalion had to be disciplined every month. These numbers draw an alarming picture of the current state of RAB. First, when 2000 members of a force with total membership of approximately 11000 are convicted of criminal offense, meaning nearly 1 in 5 RAB personnel are convicted of some form of crime and secondly when totally mind-blowing and credible allegations of acting as professional killers on behalf of notorious criminals surfaces against the whole senior leadership of a battalion; it becomes a very legitimate question whether this agency should exist as a guardian of rule of law. One of the most serious allegations about RAB is that the government has lost its control over the force.

There are clear indications that the force is totally demoralized and has lost its way. It is high time to take the sternest decision regarding this rogue force and disband it if needed. The sooner, the better.

 

[i] http://bdnews24.com/bangladesh/2009/10/04/rab-men-arrested-on-abduction-mugging-charges

 

[ii] http://archive.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=163708

 

[iii] http://bdnews24.com/bangladesh/2014/03/18/rab-cleared-of-abduction-charge

 

[iv] http://bdnews24.com/bangladesh/2014/05/11/2000-rab-men-punished-in-10-years

লাটের কুকুর ও আমরা

By Al Maruf

বিলেতে যারা কিছু দিনের জন্যও বসবাস করেছেন তারা এই দেশের লোকেদের কুকুর প্রীতির সাথে পরিচিত । এদের জীবনে কুকুরের গুরুত্ব এতটাই যে, বাপ মা মারা গেলে পারলে এরা খুশি হয় , কিন্তু নিজের কুকুর মারা গেলে এরা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয় । কুকুরের জন্য আলাদা কবরস্থান পর্যন্ত আছে এদেশে । অবশ্য আমরা বাংলাদেশীরা মুজতবা আলী স্যারের কল্যাণে এদের এই দিকটার সাথে অনেক দিন আগে থেকেই পরিচিত, পন্ডিত মশায়ের পুরো পরিবার আজও এদের কুকুরের এক ট্যাং এরই সমান । এ ব্যর্থতা এদের পশু প্রেমের নয় – আমাদের মানুষ প্রেমের ঘাটতির । আমাদের দেশে মনে হয় সবচে নিচু স্তরের সরকারি কর্মচারি আজ পর্যন্ত এই পন্ডিত মশায়েরা ।

সে যাই হোক অর্থনীতি নিয়ে নাহয় আর কচকচ নাই করলাম – সে জন্য বাংলায় এক আবুল মালই যথেষ্ট । দুঃখের বিষয় হলো আমার ফেবু ফ্রেন্ডলিষ্টে যারা আছেন তাদের প্রতি আমার খুবই ভালো ধারনা ছিলো এতোদিন – কিন্তু যুবলীগ নেতা মিল্কি আর তারেক হত্যা কান্ডে কারও কারও খুশি হতে দেখে নিজেকে চিম্টি কেটেছি । আমরা যারা রাজনীতি সচেতন অথবা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কনসার্নড, তাদের মধ্যে মিল্কি অথবা তারেকের বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ঘোলাটে প্রতিক্রিয়ায় আমি যার পরনাই হতাশ । যেখানে আমরা দু-দুজন মানুষের অপঘাতে মৃত্যুতে খুশি হই – সেখানে মিজানুর রহমান অথবা পুলিশ- রেব কে দোষী করি কোন বিবেকে ? নাকি আমার দল না করলে সেই মানুষ কোন মানুষই না । হতে পারে সে অপরাধি – ২৫ টা খুনের আসামী, কিন্তু বিনা বিচারে তার হত্যাকান্ডে খুশি হলে আমরা কি এক বিন্দু কম অপরাধি হলাম ? এই যদি হয় আমাদের মানষিকতা, তাহলে সারা জীবন মানবাধিকার- মানবাধিকার বলে ম্যাৎকার করলেও আমাদের পুরো বাংলাদেশ পাচ টন লাটের কুকুরের এক ঠ্যং এরচেয়ে মুল্যবান হতে পারবেনা কোনদিনই । আমাদের সরকার যন্ত্র আর আমাদের রাজনীতিবিদেরা হচ্ছে আমাদের আয়না – আমাদের মানষিক হিনমন্যতা এদের দিকে তাকালেই পরিষ্কার চোখে পড়ে । যতদিন আমরা পরিবর্তন না হবো ততদিন এরা পরিবর্তন হবে তা কিভাবে আশা করি ?

সে যাই হোক কুকুর প্রসংগে ফিরে আসি । এতবেশি কুকুর নিয়ে কথা বলছি বলে ভাববেন না যে এরা আমার পছন্দের প্রাণীর লিষ্টে খুব একটা উপরে, বরংচ উল্টোটাই ঠিক । কুকুরের গায়ের দূর্গন্ধটা আমার অসহ্য লাগে, তার উপর যখন এরা কুকুরের মুখে মুখে চুমু খায় সেটা দেখে ঘেন্নায় বমি আসে । কেননা কুকুরের সবচে অপরিচ্ছন্ন যায়গা এই মুখ – পারসোনাল হাইজিনের এত বড় কদরদানেরা কিভাবে যে এই কাজটা করে আল্লাহ মালুম ।

অনেকদিন পর দেখা হলে মানুষে মানুষে হ্যান্ডশেক-কুলোকোলি করে, মিডলইষ্টের ভাইয়েরা খায় মুখে চুমু, ইতালিয়ানরা খায় একদম সরাসরি ঠোটে । কিন্তু কুকুর কি করে জানেন ? দেখা হলেই এক কুকুর শুকে আরেক কুকুরের পাছা – এটা অনেকটা মানুষের হ্যান্ডশেকের মতো । আগে কখনও খেয়াল করিনি, কিন্তু ইদানিং খুব ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম – কুকুর সে যত উন্নত সংকরেরই হোক, ল্যব্রাডোর কিবা গ্রে-হাউন্ড, জেনেটিক্যালি মোডিফাইড বা ন্যাচারাল সিলেকশানে স্বভাব তাদের একই । কিন্তু এতেও যে আল্লাহতাআলা আমাদের জন্য কি শিক্ষা লুকিয়ে রেখেছেন তা বুঝতে পারলাম ইদানিং ।

আপনি যখন বিদেশ বিভুইয়ে লুংগি পরনে একজন লোক দেখেন তখন কি আপনার আমেরিকার কথা মনে পড়ে ? না । লন্ডনের রাস্তা ঘাটে পানের পিকের দাগ দেখলে এইটা যে কোন বাংগালীর কাজ সেটা বুঝতে আইনস্টাইন হওয়া লাগেনা ।

ঠিক এই ভাবে বাংলাদেশে রাজনীতিবিদ চিনে নিতে হলে আপনাকে দেখতে হবে এই লোক অন্যের কোন যায়গা থেকে শুকা শুরু করে । যখন দেখবেন কোন বাংলাদেশি অন্যের খারাপ দিক নিয়ে কথা বলে বলে তার আলোচনা শুরু করে আর অন্যের গিবত করে করেই তার কথা শেষ করে, এমনকি তা করতে পেরে বিমলানন্দ ভোগ করে আর ভাবে “মুই কি হনু রে” । আল্লাহর কসম চোখ বুঝে বলে দিতে পারেন এই লোক রাজনীতি করে অথবা না করলে করার পরামর্শ দেন – খুব উপরে যাবে ।

বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের এই পাছা শুকার ইতিহাস একদম আদিম । আমাদের মন্ত্রি-এমপি এমনকি ছাপোষা পাতি-নেতা ছাতিনেতার কথা ছেড়েই দিলাম, গনতন্ত্রের মানষকণ্যাই যখন কথা বলেন – এর অর্ধেক কাকে নিয়ে গিবত করেন তা কোন বাংলাদেশিকে দ্বিতীয়বার জিগ্গেশ করা লাগেনা । এটা করতে পেরে তিনি যেমন বিমলানন্দ পান – স্বজাতির মধ্যে হাততালিও দেবার লোকের অভাব নাই । ভেবেছিলাম নতুন প্রজন্মের রাজনিতিবিদেরা হয়ত উন্নত দেশে থেকে থেকে এই সংস্কৃতি থেকে কিছুটা বেরোবেন – আমাদের পন্ডিত মশায়েরা পুরো পরিবার সমেত লাটের কুকুরের এক ঠ্যাং থেকে ধিরে ধিরে দুই, তিন ঠ্যাং এর সমান হবেন ।

কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি দিয়ে এই নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদেরা আমাদের কান ধরে নিয়ে যাচ্ছেন পুরোনদের মতোই । মিলেমিশে আমাদেরকে পুরো জাতিকে লাটের কুকুরের চার ঠ্যাং সমান নয় বরং উল্টো চার ঠ্যাং ওয়ালা লাটের কুকুরের সমানে পরিণত করছেন – আর আমরা তা দেখে বিমলানন্দে হাততালি দিচ্ছি ।

 

মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ

 

By Faiz Taiyeb

কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না, তেমন অত্যাচারী শাসক ও ভালো কাজ করতে পারে না। স্বৈরাচারী শাসক এবং নাগরিক স্বার্থে ভালো কাজ করা, এই দুই আসলে “মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ”।
৫ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ পন্থী বুদ্ধিজীবিরা ইনিয়ে বিনিয়ে উপর্যপুরি বলার চেষ্টা করেছেন, অবৈধ কিন্তু সাংবিধানিক (!) নির্বাচনের পর হাসিনা ভালো কিছু কাজ করে মানুষের মন জয় করবেন। আমারও সেরকম অনেক আশা ছিল। কারন এই মহিলা ৩ বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তিনি দলে একনায়ক, দেশের সেনাবাহিনী কে আর্থিক প্রাচুর্যের বিহ্বলতায় চড়িয়েছেন, আদালতকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছেন, নির্বাচন কমিশন কে হুকুমের চাকর বানিয়েছেন, রাজনৈতিক চালে বিরোধীদের কুপোকাত করেছেন। মোটকথা দেশের নিরুঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী প্রধান নির্বাহী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। অধুনা একনায়করাও সম্ভভত এইধরনের একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করেন না। কিন্তু অতীতে যাই করুক না কেন, প্রান্তিক নাগরিক হিসেবে অধিকাংশই চায় এই দুর্নীতিবাজ প্রতারক নেতা গুলান ভালো হয়ে যাক। সবাই আসলে একটি নতুন ভোরের অপেক্ষায়। ভালো কাজ করতে শুরু করলেই এই বঞ্চিত নির্যাতিত লোক গুলো অতীতের সব গ্লানি ভুলে এদের মাফ করে দিবে। আমরা বড়ই ইমোশনাল এক জাতি।
সুতরাং রক্তক্ষয়ী হিংস্র ক্ষমতার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে ষাটোর্ধ একজন লেডির সেলফ সেটেস্ফিকশন আসবে এটা ভাবা খুব কঠিন ছিল না। কিন্তু বিধি বাম। তাই ওইসব বুদ্ধিজীবী আর সেইসব আশার কথা শুনাচ্ছেন না। বরং পুরা রাজনৈতিক কালচার কে দোষারোপ করছেন। ইন্টারপোল লিস্ট এ থাকা মস্তান কর্তিক একজন ফাঁসির আসামির খুন হয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার মৃদু বিবৃতি দিয়ে সমর্থনের লেজ আকড়ে ধরে উছিস্ট ভোগের সাময়িক ফন্দি ঠিক রেখছেন ।
এইদিকে, আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী রা আছেন ভিন্ন হিসেব নিয়ে, ইউএস, ই ইঊ র নীরব সমর্থন বেশি টিকবে না ভেবে সবাই আগের গোছাতে ব্যস্ত, সবাই বেসামাল বেপারয়া লুটপাটে লিপ্ত। এতই বেপরোয়া যে, দলের ভিতর বাহির যেখান থেকেই বাধা আসুক সবাইকে কচুকাটা করা হচ্ছে। সমানে ভিতর বাইরের বিরোধীদের ধরে নিয়ে গলাটিপে নদীতে বস্তাবন্দী করে ফেলা দেবার কি হিংস্র এক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সবাই। এমন উৎসাহ যে এলিট ফোর্স র‍্যাব ও বসে থাকতে পারছেনা। কিছু কন্ট্রিবিউট করছে।
তাই পদ্মা সেতুর অর্থায়নও আর শুরু হয় না, বরং এই সল্প সময়ে কিভাবে ভারত কে স্থল ট্রানজিট গছিয়ে দেয়া যায় সেটা নিয়ে কিছুটা তোড়ঝোড় দেখা যাচ্ছে। যাতে এটা বেচে আবার কিছু একটা করা যায়।
অবৈধ বেপরোয়া ক্ষমতা আর ভালো কাজ একসাথে চলে না, পৃথিবীর কোথায়ও চলে নি কোন কালে। সতরাং এইসব জনবিচ্ছিন্ন অত্যাচারী শাসকের বিদায় দরকার, অন্তত সমস্যার সাময়িক সমাধান এর নিমিত্তে। এর পর দীর্ঘ মেয়াদি সমাধান পেতে সমাজ, নাগরিক ও নাগরিক সংঘঠন সমূহকে ঠিক করতে হবে, তারা কি গণতান্ত্রিক সিস্টেমের মধ্যেই কয়েকজন চোর এর মধ্যে ছোট চোরকে বেছে নিবে, নাকি তাদের সৎ পথে আনার সাহস দেখাবে আর বাধ্য করবে, নাকি এই চোরদের চুরি প্রতিহত করার সিস্টেম দাঁড়া করাবে।
কৈফিয়ত
সবসময় চেষ্টা করি প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধি করন নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করতে। নেতাদের সমালোচনা না করতে। কারন আমরা সব পেশার লোকেরাই রাষ্ট্রকে সমানে বলাৎকার করছি নিয়ত। সমস্যা হলো সব জায়গাতেই রাজনৈতিক দুরব্রিত্ত্বায়নের ছোবল এতটা গভীর যে এই অযোগ্য অপদার্থ লোক গুলারে (জাতে মাতাল কিন্তু টাকা মারার তালে ঠিক) আলোচনায় না এনে পারা যায় না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সুশাসন, লোভ মুক্ত নেতৃত্ব, নৈতিকতার ও নিয়মতান্ত্রিকতার কিংবা দূরদর্শিতার যে বেইজ এডুকেশন এটা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেই, সব গুলো দলই ভন্ডে ভরা। সবার উদ্দেশ্যই দেশের আর দেশের মানুষের টাকা মারা, যখন পারে, যেভাবে পারে। এটা করতে গিয়ে দেশের সব কিছু তারা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভরে ফেলেছে। অথচ দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ভাল নেতৃত্ব লাগবেই লাগবে। এর দ্বিতীয় কোন বিকল্প জানা নাই।
২ বার, ৩ বার এক একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, দেশের লক্ষ কোটি শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত আর অশিক্ষিত জনতা তাদের ভয় বা সম্মান করেন (মন থেকে কিংবা বাধ্য হয়ে)। আর কি কি পেলে উনাদের আত্ব তৃপ্তি আসবে? ওনারা পৃথিবীর কত কত জনপদ দেখেন, কত কত দেশ ঘুরেন, একটি বারও কি উনাদের ইচ্ছে করে না, এই দেশটাকে ঠিক করে দেয়ার চেষ্টা করবেন। আজ রাজনৈতিক ইস্যু সমাধান বা ধামাচাপা দেয়ার জন্যে যে তোড়ঝোড়, এত এত ফোরস ডিপ্লয়ম্নেট, এত চিন্তা, এত কালক্ষেপণ, এর সামান্য যদি আমরা ঘুষ, দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যয় করি তাহলে দেশটা ঠিক হয়ে যায়। ২ টা মাত্র দল। ক্ষমতাসীন হলেই অসীম শক্তি আর প্রতিপত্তি, মানুষ কে নির্দেশনা দেয়া ও সহজ তাদের জন্য।
ব্যাপারটা তো এরকম নয় যে, দেশ উন্নত হয়ে গেলে হাসিনা বা খালেদা (মুজিব আর জিয়া পরিবার) গরীব হয়ে যাবে, তাদের সম্মান কমবে। ব্যাপারটা তো উল্টো। যে দেশ যত উন্নত তার নেতৃত্ব তত বেশি সম্মানিত, দেশে আর দেশের বাইরে।
আল্লাহ্‌ পাক আমাদের নেতৃত্ব কে বুঝ দিন। আমাদেরকেও বুঝ দিন। হতে পারে ব্যাপারটা এমন যে, ব্যক্তি জীবনমান আর সামাজিক উন্নয়ন আমাদেরকে সামাজিক আন্দোলন করেই আদায় করে নিতে হবে। অধিকার এমনি এমনি আসে না গরীব আর অভাগাদের কপালে।

 

RAB বিলুপ্তি কোন সমাধান হতে পারে কি !

 

By KMB Bappy

যখন কেউ খুন-অপহরণের সমাধান দিতে গিয়ে বলেন- “RAB বিলুপ্ত করা হোক” তখন আমার মনে পড়ে যায় পিলখানার ঘটনায় কেউ কেউ বিডিআর বিলুপ্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন । তাদের পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়েই সম্ভবত বিজিবি নামকরণ করা হয়েছিলো । লাভটা কি হয়েছিলো বা কাদের পকেটে মুনাফা গিয়েছিলো সেটা এখন সবাই নিশ্চিত । এভাবে একটি প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী বিলুপ্ত করে দেয়া যায়না বা এর পরিণতি কখনোই ভালো হয়না । কারণ-


১। তাদের অপকর্মের দায় নেবার জন্য তখন আর কেউ থাকবেনা । বিচারের পথ রুদ্ধ হয়ে যায় চিরদিনের জন্য । যে মানুষগুলো অন্যায়ের শিকার হয়েছেন তারা আজীবন চেষ্টা করলেও বিচার পাবেন না । সকল অপরাধী রক্ষীবাহিনীর মতো পার পেয়ে যাবে । তাদের জমানো কাড়ি কাড়ি টাকার হিসাব নেবারও কোন উপায় থাকবেনা । তাদের পরিবারগুলো আরো শান্তিতে থাকবে তখন । কোন সাংবাদিকের ক্যামেরা বা জনতার চোখ তাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারবেনা ।

২। র‌্যাব বিলুপ্ত করা হলে এই সদস্যরা তখন পুরাতন বাহিনীতে ফিরে যাবে । র‌্যাব এর দায় সেনা বা পুলিশ বাহিনী কখনো নেবেনা । সেনাবাহিনীতে বা পুলিশে মিলে যাবার পর একই ব্যক্তি নতুন ইউনিফর্ম নিয়ে পরিবর্তিত মানুষ হয়ে যাবে তা ভাবার কোনই কারণ নেই ।

৩। যে অপরাধে র‌্যাব বিলুপ্তির প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে, একই অপরাধে গত পাঁচ বছরের মধ্যেই পুলিশ বিলুপ্ত হয়ে যাবার কথা ছিলো । সেনাবাহিনীতেও সব ফেরেশতাদের বিচরণ ভাবা বাতুলতা হবে । অতএব বাহিনীকে দোষারুপ করার কোন যৌক্তিক কারণ আর থাকেনা ।

৪। তারপরও অনেকে হয়তো বলবেন র‌্যাব বিলুপ্ত করলে অন্তত গুম-খুন কিছুটা কমবে । অর্থাৎ আমরা কতোটা স্বার্থপর জাতি সেটা তখন প্রকাশ পেয়ে যাবে । নিজে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চাই যেভাবেই হোক । এর জন্য শেখ হাসিনা কে প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়ে তার কাছেই আবেদন জানানো হবে যেনো র‌্যাব বিলুপ্ত করা হয় । অথচ সকল বাহিনীর মূল চালিকাশক্তি হলেন শেখ হাসিনা । বিলুপ্ত করবেন কাকে ?

৫। আওয়ামী লীগের মূল টার্গেট হলো দেশের প্রতিটি এলাকায় গডফাদারভিত্তিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গোটা দেশ দখলে রাখা । নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান কিছুটা বোকা বলেই সামনে চলে আসে বেশি । কিন্তু প্রতিটি এলাকায় মানুষেরা বিপদে পড়ে যেসব আওয়ামী নেতার বাসায় সহযোগিতার আশায় ভীড় করে তারা হলো বুদ্ধিমান গডফাদার । এরা শোষণ করে কিন্তু মজলুমকে বুঝতেই দেয়না । এরা নির্বাচনে যখন ভোট কারচুপি করে একক ভাবে পাশ করে আসে তখনো কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না । এদের একটি ফোনে/আহবানে যখন কোন বিপদ কেটে যায় বা কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় তখন মানুষেরা আর চিন্তা করতে চায়না এদেরকে এতো ক্ষমতা কে দিয়েছে । এসব গডফাদারদের হাতে নির্বিঘ্নে দেশ তুলে দেয়ার জন্য র‌্যাব-পুলিশকে বিতর্কিত করে ফেলা এবং দুর্বল করে দেয়া একটা আওয়ামী কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয় ।

তারপরেও ধরে নিলাম সরকার জাতির স্বার্থে র‌্যাব বিলুপ্ত ঘোষণা করলো । তারপর কি হবে ? আপনারা যারা এটা কামনা করেছিলেন- কেউ কি ফুলের তোড়া দিতে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ? নাকি আপনারা ধরে নিবেন আওয়ামী লীগ সঠিক পথে ফিরে এসেছে ? কোনটাই করতে পারবেন না । কারণ বিলুপ্তি ঘোষণা/নিষিদ্ধ ঘোষণা কোনদিনও সমাধান হতে পারেনা । বরং ততদিনে হয়তো সমুদ্র জয়ের মতো অপরাধ দমন শীর্ষক আরেকটি নাটকের মঞ্চ বানাবে সরকার । এভাবে নিজেদের ভুলে আওয়ামী লীগের হাতে যারা আরেকটি কার্ড তুলে দিতে চাচ্ছেন তাদেরকে এখনি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ।

শেষকথা হলো- আমাদের প্রতিটি বাহিনী জনগণের টাকায় পরিচালিত । অতএব তাদের যাবতীয় কর্মকান্ডের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহীতা থাকতে হবে । খুনি-অপরাধী যেই বাহিনীতে থাকবে সেই বাহিনীর আইনে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে । রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে আত্মীয়তার সুযোগে কেউ যেনো রাজনীতির ঘুটিতে পরিণত না হয় সেই পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে । এই কাজগুলো সরকার করবেনা । যারা সত্যিকার অর্থে দেশকে ভালোবাসে তাদেরকেই করতে হবে । র‌্যাব-পুলিশ-সেনাবাহিনী কেউ যদি না থাকতো দেশের সবচেয়ে লাভবান হতো আওয়ামী লীগ- এটা আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে । যদি সত্যিকার অর্থেই বিলুপ্ত করতে হয়- আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় অভিশাপকেই বিলুপ্ত করতে হবে । সেটা উপরওয়ালা করবেন নাকি জনগণ করবে এটা সময় বলে দেবে ।

 

ফাঁস হয়ে পড়া পরিকল্পনায় সংঘঠিত খুন এবং সাধারনের নিরাপত্তা

Vy Faiz Tayieb

ক্ষমতাসীন দলের একজন নির্বাচিত সিটি কমিশনার রাষ্ট্র কর্তৃক সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়া নিজের বিনা বিচার হত্যা সম্পর্কে জেনে গিয়েছিলেন। অত্যন্ত ট্র্যাজিক ব্যাপার এই যে, আগেই রাষ্ট্রীয় হত্যার পরিকল্পনা যেনে ফেলার পরও এবং ক্ষমতা বলয়ের লোক হবার পরেও এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি হবার পরেও তিনি ক্ষমতাবলয় কে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে প্রভাবিত করতে পারেননি। সম্ভভত রক্তক্ষয়ী ক্ষমতার যুদ্ধ এমনই। এর নিয়তি একমুখী। হয় তুমি স্বার্থের ধারক, নতুবা তুমি শত্রু, তোমার মৃত্যু অবধারিত।

তিনি মৃত্যুর ২ সপ্তাহ পূর্বেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে গিয়ে স্বয়ং সাক্ষাতে পরিকল্পিত খুনীদের নাম প্রকাশ করে তার জীবনের আকুতি জানিয়েছেন অর্থাৎ ব্যক্তি নজরুল রাষ্ট্রের কাছে ফাঁস হয়ে পড়া রাষ্ট্রীয় হত্যার বিপরীতে আত্মসমর্পণ করে অপ্রাঠিস্থানিক ভাবে প্রান ভিক্ষা করেছেন।

“স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের জ্ঞাতসারেই চার সহযোগীসহ খুন হয়ে গেলেন নারায়ণগঞ্জের সিটি কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম। খুন হওয়ার আগে তিনি অপহূত হয়েছেন। তারও দুই সপ্তাহ আগে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তাঁকে বলেছিলেন, তাঁকে হত্যা করা হবে। যারা তাঁকে হত্যা করতে চায়, তাদের নামও তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বলেছিলেন।

 

তার সপ্তাহ দুই পর চার সহযোগীসহ সত্যিই অপহূত হলেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম। এবার তাঁর স্বজনেরা কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে হাজির হলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাসায়। নজরুলের বৃদ্ধ মা মন্ত্রীর কাছে আকুতি জানালেন, ‘বাবা, যে করেই হোক, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেন।’ কিন্তু নজরুল জীবিত ফিরে এলেন না। অপহূত আরও ছয়জনের সঙ্গে তিনিও লাশ হয়ে ভাসলেন শীতলক্ষ্যা নদীতে।

সুত্রঃ প্রথম আলো

কোন সাড়া না পেয়ে তিনি তার গডফাদার শামীম ওসমান এর কাছে গিয়ে  আবারো অপ্রাঠিস্থানিক ভাবে প্রান ভিক্ষা করেছেন। যে তাকে খুনের পরোক্ষ ইঙ্গিত অথবা সতর্কতা দিয়ে সাবধান করেছেন।

“শামীম বলেন, মৃত্যুর আগের দিন নজরুল আমার কাছে এসেছিল। জানিয়েছিল আমার জামিনের প্রয়োজন। আমি বারের এক্স প্রেসিডেন্টকে বললাম ওর জামিনের প্রয়োজন। একটু করিয়ে দিয়েন। নজরুলকে বলেছি যাবা যখন বি কেয়ারফুল। সাবধানে যাবা। একসঙ্গে চার পাঁচজন যাবা। আমার একটা কমন সেন্স ছিল চার পাঁচজন হলে কেউ কিছু করবে না। করলেও জানা যাবে কারা করেছে। কেন করেছে। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা যে বাংলাদেশে ঘটতে পারে।

 

সুত্রঃ মানবজমিন” আরো লক্ষণীয় যে গডফাদার বলছেন তিনি রাষ্ট্রের নির্বাহী কে ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই জানিয়েছেন।

 

“শনিবার বেসরকারি ইন্ডিপেডেন্ট টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ঘটনা ঘটার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছেন।

সুত্রঃ ইন্ডিপেডেন্ট টেলিভিশন , মানবজমিন”

লক্ষণীয় ভাবে তার এই অপ্রথিস্থানিক প্রান ভিক্ষায় আদালত জড়িত নয়, অর্থাৎ তিনি যেনে বুঝে আদালতে না গিয়ে ক্ষমতা বলয়ের চেইন কে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে প্রানপন চেষ্টা চালিয়েছেন। এটা সময়ের বিবেচনায় যুক্তিযুক্ত, সাম্ভাভ্য হত্যার মুখে পতিত (সন্ত্রাসের অভিযুক্ত) ব্যক্তিও এই ক্রুয়েল আর অমানবিক রাস্ট্রের চরিত্র বুঝে আদলতের শরণাপন্ন হন নি।

এখানে অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট ভাবে ক্ষমতাবলয়ের চেইন অফ কমান্ড প্রকাশিতঃ

 

রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় >> সন্ত্রাসের ডাকসাইটে গডফাদার >> রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী।

গডফাদার এই পর্যায়ে এসে নিজ দলের রাষ্ট্রের নির্বাহী বা রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কে অভিযুক্ত না করে, অভিযোগের অঙ্গুলি দেখালেন কিছু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের প্রতি, যা তার পূর্বের স্বীকারোক্তির সাথে পুরপুরি অসামাঞ্জস্য পূর্ণ এবং  ঘটনা আড়ালের পরিষ্কার পরিকল্পনা।

“”

 

আপনি কি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি ইঙ্গিত করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম বলেন, সর্ষের মধ্যে ভূত আছে। কিছু না কিছু সহযোগীতা আছে। বিষয়টা রাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে। ইউদিন টেন মিনিটস। প্রতিবেদক প্রশ্ন করেন, মানে আপনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন? জবাবে শামীম বলেন, সমস্ত কিছু জানিয়েছি।

সুত্রঃ ইন্ডিপেডেন্ট টেলিভিশন , মানবজমিন

ঘটনা প্রবাহে এখানে অনিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে ঘটনা আড়ালের এই  পরিষ্কার পরিকল্পনা রাস্ট্রের যা গডফাদার সাংসদ এর মাধ্যমে প্রকাশিত।

র‍্যাবের বিরুদ্ধে তদন্ত কমটি ঘঠিত হবার পর বের হওয়া সংবাদ বলছে রাষ্ট্র এবং ভিক্টিম দুয়ের অভিযোগ ভিন্ন দিকে, যা রাষ্ট্রের ভন্ডামী কে আরো প্রকট করে তুলছে।

 

“”স্বামী অপহরণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শামীম ওসমানের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম। গতকাল সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঘটনার পরপরই শামীম ওসমানের কাছে ছুটে যাই। আমি তাঁকে বলি, নূর হোসেন আমার স্বামীকে অপহরণ করেছে। আপনি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। তিনি আমাকে বলেন, “নূর হোসেন এই কাজ করতে পারেন না।” ২৭ এপ্রিল নজরুল অপহরণের পর সাংবাদিকেরা খোঁজ করে জানতে পারেন, নূর হোসেন ও শামীম ওসমান একসঙ্গে রাইফেল ক্লাবে আছেন। সেখানে গেলে শামীম ওসমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘নূর হোসেন কখনোই নজরুলকে হত্যা করতে পারেন না।’এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম ওসমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নজরুল ও নূর হোসেন দুজনেই আমার কর্মী ছিল। আমি কখনোই ভাবিনি, নূর হোসেন এভাবে অপহরণ করে হত্যা করতে পারে। নজরুল কিছুদিন আগে আমার কাছে এসে জানিয়েছিল, তাকে মেরে ফেলা হবে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সবাইকে বলে দিয়েছিলাম। সর্বশেষ মামলার হাজিরা দিতে কোর্টে আসার আগে আমার সঙ্গে নজরুল দেখা করতে এসেছিল। আমি তখন তার জামিন করিয়ে দেওয়ার জন্য আইনজীবী আনিসুর রহমানকে বলে দিই। আমি তাকে বলেছিলাম, একা চলাফেরা কোরো না। পাঁচ-ছয়জন লোক নিয়ে থেকো। আমি ভেবেছিলাম, বেশি লোকজন থাকলে কেউ তার কিছু করতে পারবে না। কিন্তু তার পরও তাকে মেরে ফেলা হলো।’

 

ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবার নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও আপনি নূর হোসেনের পক্ষ নিয়েছিলেন। জবাবে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, নূর হোসেন সর্বোচ্চ হাতাহাতি করতে পারে। কিন্তু সে যে এভাবে নজরুলকে মেরে ফেলবে, সেটা আমি বুঝতে পারিনি।’

সুত্রঃ প্রথম আলো “”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কার্যকলাপ হতে এটা বুঝা যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই  হত্যা সম্পর্কে সরাসরি অবহিত, ঘটনার ৬/৭ দিন পর হত্যা কারীর বাসায় তল্লাশি, একজন সন্ত্রাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে কতিপয় বাহিনীর সদস্যকে অভিযুক্ত করন এবং তদন্ত কমিটি ঘটন, এই অবিচারী এবং হিংস্র রাষ্ট্রের সাধারন চরিত্র। এখানে একটি নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠনই রাষ্ট্রের দায় দায়িত্ত্বের শেষ।

এটাই কি উত্থান আর পতনের ধারিবাহিকতা , এটা কি চলবে?

 

উত্তর হ্যাঁ।

চাঁদাবাজি, খুন, সন্ত্রাস, অন্যের সম্পদ লুটপাট ইত্যাদি কাজে সহায়তা করা চামচা দের এটাই পরিনতি। গডফাদার এবং সন্ত্রাসী দলের নির্বাচিত নির্বাহী সবাই এই চেলাদের দুরবলতা জানেন। এদের জনসংস্লিটতা নেই। এদের খারাপ কাজ এদেরই, টুকটাক ভালো কাজের সাফল্য গদফাদার দের।  নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি এবং বল প্রয়োগের মাধ্যমে এরা সাময়িক জনপ্রতিনিধি হন, তাও গডফাদার জানেন, তাই দুনিয়া থেকে তাদের সরিয়ে দেয়া ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ সৃষ্টি করে না তার জন্য। আদালত গডফাদার দের কাজের প্রমান পায় না, এই চেলাদেরই মাঝে মধ্যে ধরে। তাই তারাও আদালতে যায় না। তাই এই নিয়তি একমুখী।

এই হিংস্র গল্প ক্ষমতাবলয়ের অবাধ্য লোকের নিয়তির। এবার বলি সাধারনের কথা। ব্যাক্তি নাগরিকের হত্যার  পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে পড়ার বা ভিতর থেকে তা বের করে আনার লোক এই রাষ্ট্র কাঠামোতে নেই। তার নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক্সেস, তার নেই প্রতাপশালী গডফাদার। তার নেই রাষ্ট্রের নির্বাহীর কার্যকর চ্যানেল যার মাধ্যমে ” ইউদিন টেন মিনিটস” অপহরনের খবর পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ তার ভাগ্য নির্ধারিত। তাকে ক্ষমতার স্বার্থে কাজ করতে হবে, উপার্জিত কিংবা উত্তরাধিকারের ব্যক্তি সম্পদের ভাগ বন্টন শেয়ার করতে হবে। ভুল করে হলেও অন্যের অপকর্ম দেখে ফেলা যাবে না, আড়িপাতা তো দুরের কথা। ব্যাত্যয় হলে তার প্রান যাবে। সাধারনের নিরাপত্তা এই সমাজে ক্ষমতার কৃপা।

ব্যক্তি নাগরিকে প্রানে বেঁচে থাকতে হলে হয়-  ক্ষমতার স্বার্থে তার সব কাজ, পরিকল্পনা, সম্পদ এবং সহায় নিবেদিত করতে হবে। চাহিবা মাত্র চাঁদা দিতে হবে।

খুন, গুম, অপহরন, ঘুষ, টেন্ডার ইত্যাদিতে অংশগ্রহন করা সন্ত্রাসীর পদচিহ্ন জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতে ফলো করা যাবে না। অগত্যায় সম্পদ চলে আসলে, সন্ত্রাসের ব্যাপার যেনে ফেললে নিজের যান হাতে নিয়ে থাকতে হবে, রাষ্ট্র তার মন্ত্রী, সাংসদ কে জানানো যাবে না। ক্ষমতাবলয়ের সব, সব কাজ কর্ম সমর্থন করতে হবে।

নতুবা  জ্ঞাতে এবং অজ্ঞাতে, ইচ্ছায় এবং অনিচ্ছায় মানুষেরই অপকর্মে ডুবে যাওয়া সমাজে সাধারনের একমাত্র গন্তব্য প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ আর ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ-দেশ সংস্কার/সংশোধন এর প্রানান্ত চেষ্টা।   স্রষ্টার কাছে কৃপা চেয়ে প্রান হাতে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিপ্লব করতে হবে, সমাজকে জাগ্রত করতে হবে, মানুষ কে ঘরে ঘরে গিয়ে বুঝাতে হবে, সুশাসন, মানবাধিকার আর ন্যায়বিচার প্রঠিস্থার জন্য সংগ্রাম করতে হবে। সুশাসন আর ন্যায় বিচার এমনি এমনি আসবে না, অনেক অনেক ত্যাগ করতে হবে এর জন্য।

সমাজের প্রতি স্তরে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার নিয়মতান্ত্রিক বিপ্লব করতে হবে। নিজে দুর্নীতি মুক্ত, লোভ মুক্ত, সৎ এবং  সাধারণ জীবন যাপন করতে হবে, সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। চোর, প্রতারক, সুদখোর, ঘুষখোর নিজ দলের হলেও তাকে নসিহত এবং প্রয়োজনে প্রতিহত করতে হবে।

”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””

 

বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার নিকট,

 

মানুষের অধিপতির নিকট, মানুষের মা’বুদের নিকট।

 

সুরা আন-নাস, আয়াত:১-৩

 

আল কুরআন

‘‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি, তোমদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে। আর আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করবে।”

সূরা আলে ইমরান: আয়াত:১১০

 

আল কুরআন

”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””

Reflections on Islamist politics in the Bangladesh context

5

by Anon

Let us define the Islamist voter as someone who would blindly vote any party or candidate basing their platform on Islam.  Vast majority of such voters in Bangladesh do not have more than few years of formal schooling.  And the small minority that is educated are not capable of leading the rest because these two groups of Islamist voters have quite different visions of Islam.

 

And this difference in how Islam is to be envisaged goes many years back to the 11th century, when a schism emerged among the Muslims on education and knowledge.  Specifically, Imam Gazali called for madrassah education to focus only on religious study, ignoring science, statecraft, philosophy and mathematics.

 

When Muslims conquered Syria they came across hundreds of books by Greek philosophers and mathematicians. During the Abbasid Caliphate starting from 750 AD, Muslims actively searched, translated and disseminated such books of knowledge under royal patron ship. Although many of the ideas in those books contradicted Muslim cultural and religious beliefs at that time, they still went ahead with studying and distributing them in the interest of acquiring knowledge. Meanwhile Europe was in the dark ages where all scholarship was confined into monastery based theological studies.

 

But things turned upside down from the effects of Crusade and then Mongol invasion. From the interactions of European Christians and Arab Muslims, the Europeans acquired the secular study of knowledge in the Arab lands and the Muslims took up the Church-based education of Europe. The hope continuing the tradition of Ibne Rushd, Ibne Sina, Al-Beruni, Al-Khwarizmi, Al-Farabi, Al-Kindi, Jabir Al-Haiyan etc, withered into nothing.

 

Imam Gazali was chiefly responsible for this. He forbid all heretical ideas and thoughts to preserve Islam. He fiercely attacked Ibne Sina in his book Tahafut Al Falasifa. Because of the vehemence of his attacks, even bold thinkers like Omar Khayyam withdrew from broadcasting their ideas vigorously. Because of Gazali, madrassah education, which was the only mass education system for youth apart from the universities for higher education, confined itself only on religious studies. But there were oppositions to this restriction in mass education in different parts of the Muslim world.

 

Eventually, this schism led to three regional schools: a science oriented one based on Egypt’s Al Azhar; a syncretistic one in Turkey; and a religion-focused one based in Samarkent.

 

Bangladesh’s madrassahs are the heir to the Islamic discourse written in Farsi a millennium ago in Samarkent.  The Samarkent school was abolished by the Soviets, but its literature survived in the madrassahs of Afghanistan, Pakistan, India (Deoband) and Bangladesh’s qaumi madrassahs.

 

The textbooks used in Bangladeshi madrassahs are all based on the Samarkent school literature, and are written in Farsi or archaic Urdu.  Indeed, there are instances of Hadiths of questionable authenticity taught in our madrassahs based on this literature.  For example, only recently such a dubious Hadith was circulated in social media, claiming that the Prophet (pbuh) ordered us to attack India.  Being the heir of the Samarkent school, madrassah students of Bangladesh tend to read archaic Urdu and Farsi more than modern Arabic-Farsi-Urdu.

 

After 9/11/2001, modernisation of Bangladesh’s madrassahs became a priority.  The then BNP government, with the assistance of Jamaat and large foreign funding, attempted a modernisation drive.  This led to an intense conflict between qaumi madrassahs and aliya madrassahs and those trained from Medina University — with the latter denounced as Jew-trained-heretic by some eminent leaders of the qaumi madrassahs.

 

The Imams of nine out of ten mosques in Bangladesh are from these qaumi madrassahs.  They are the role models of Bangladeshi Islamists.  Scholars from different schools are viewed with suspicion by those trained in the Samarkent tradition. To expect modernising Islamists like Fetullah Gulen or Tariq Ramadan is thus unrealistic in the Bangladeshi context.

 

And how big is the Islamist vote in Bangladesh anyway?  Let’s think about it through attendance at mosques.  The same mosque that can’t fit the jamaat on a Friday, causing a traffic jam outside, can’t find a single line of Muslims for the Fajr prayer.  That is the blunt reality of Islamism in Bangladesh.

 

The apparent rise of Islamism in today’s Bangladesh is a socio-cultural reaction against Awami misrule and Shahbagi cultural hubris.  It is similar to the socio-cultural reaction against the upper caste Hindu chauvinism a century ago.  Just like the Muslim League politics ended after partition, sympathy for the Islamists will also wane once the political scene changes.

 

Before an Islamic revolution is even plausible in Bangladesh, Islam has to be actually practiced along side science and technology.  Vast majority of us practice neither.  Those who practice both however don’t represent the Samarkent traditionalists, who are the actual Islamists.

 

And that’s why Islamist politics is a non-starter in Bangladesh.

(Picture Bayt al-Hikma was a librarytranslation institute and school established in Abbasid-era BaghdadIraq)

প্রসঙ্গ অ্যামেরিকার ‘সোফা’ চুক্তি এবং জাতীয় মেরুদণ্ড প্রশ্নে বাংলাদেশ

 

 Banda Reza ul Kabir

খুবই জনগুরুত্বপুর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সুকৌশলে জনসাধারণের চোখের আড়ালে রেখে দেয়া একটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অনেকদিন থেকেই প্রসঙ্গটা আমার বোর্ডের টু-ডু লিস্টে স্টিক করা ছিলো। সময় সুযোগের অভাবে লেখা হয়ে উঠছিল না।

Status of Forces Agreement সংক্ষেপে SOFA হল আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতির এক গুরুত্বপূর্ন একটি অধ্যায়; যার ব্যাপারে আমেরিকা এবং চুক্তিতে আবদ্ধ দেশটির জনসাধারণকে পরিকল্পিতভাবে অন্ধকারে রাখা হয়। সাধারনত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা ছাড়া এই চুক্তির ব্যাপারে অন্য কেউ কিছু জানে না, আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে কাউকে এ ব্যাপারে জানতে দেয়া হয় না।

আমেরিকান কংগ্রেশনাল রিসার্চ সেন্টারের ভাষ্যমতে (Chuck Masson নামক একজন আমেরিকান আইন বিশেষজ্ঞ ও এটর্নী কর্তৃক লিখিত সোফা চুক্তির উপর বিস্তৃত গবেষনাপত্র) সোফা চুক্তি হলো এমন কতগুলো ধারা, যার মাধ্যমে অন্য একটি দেশের সাথে আমেরিকার সামরিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে। এই চুক্তির ধারাগুলোই নির্ধারন করে চুক্তিবদ্ধ দেশের অভ্যন্তরে একজন আমেরিকান সামরিক অফিসার বা রিপ্রেজেন্টেটিভ কী কী বিশেষ সুবিধা লাভ করবে। মূলত এই চুক্তিবলেই তারা অন্য দেশের মধ্যে দাপ্তরিক কাজকর্ম থেকে শুরু করে সামরিক অপারেশন পর্যন্ত যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারে। এসব কাজ করার সময় আমেরিকান প্রতিনিধির উপর চুক্তিবদ্ধ দেশের আইন কানুনের সাধারন প্রয়োগ হবে না। চুক্তির শর্ত ও ধারাগুলোই নির্ধারন করে দিবে যে আইনের কোন কোন অংশ আমেরিকানদের জন্যে শিথিল বা অপ্রযোজ্য হবে।

সোফা চুক্তির কোন আনুষ্ঠানিক দাপ্তরিক দলিল দস্তাবেজ থাকে না। এতে কোন সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বা আওতাধীন বিষয়বস্তর তালিকাও থাকে না। এমনকি এই চুক্তিকে কোন সুনির্দিষ্ট শিরোনামের মাঝেও ফেলা যায় না। এর পেছনে কারন হল আমেরিকার স্বার্থ রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং তা বাস্তবায়নের জন্যে চুক্তিবদ্ধ দেশের উপর সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সোফা চুক্তির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ধারাগুলোর একটা হল, আমেরিকান সামরিক কর্মকর্তাদের উপর চুক্তিবদ্ধ দেশের কোন আইনী নিয়ন্ত্রন থাকবে না। বিনা বাধায় আমেরিকান সামরিক প্রতিনিধিদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ন কার্যালয় সমূহে প্রবেশাধিকার থাকবে। এসময় তাদের উপর সামরিক ইউনিফর্ম পরিধানের জন্যে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যাবে না। তারা সকল কর ও শুল্কের আওতামুক্ত থাকবে। কোন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তারা আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও ব্যবহার করতে পারবে। বেতার তরংগ ব্যবহারের সুবিধা পাবে। লাইসেন্স ও অন্যান্য নীতিমালার ব্যপারে তাদের উপর ততটুকুই নিয়ন্ত্রন আরোপ করা যাবে যতটুকুর ব্যাপারে তারা নিজেরা সম্মতি দেবে।

উল্লেখ্য যে এখানে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা বলতে শুধুমাত্র সেনাবাহিনীতে কর্মরত লোকদেরকেই বুঝানো হয়নি; বরং স্বশস্ত্র বাহিনীগুলোর সবগুলোই এর আওতাভুক্ত। উপরন্ত প্রতিরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মকর্তা বা প্রতিরক্ষা বিভাগ কর্তৃক নিযুক্ত চুক্তিবদ্ধ বেসামরিক কন্ট্রাকটাররাও এই চুক্তির আওতায় পড়বে।

ন্যাটোর সাথে সোফা চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকা ন্যাটোভুক্ত প্রতিটি দেশের কাছ থেকেই এই কাজের জন্যে সমর্থন আদায় করে নিয়েছে। যেহেতু সামরিক দিক থেকে ন্যাটো ও মার্কিন স্বশস্ত্র বাহিনীগুলো একে অপরের সহযোগী তাই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর জন্যে সোফা চুক্তিকে আবদ্ধ না হয়ে কোনো উপায় নেই।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে সোফা চুক্তিকে কোন ধরনের সীমারেখার গন্ডিতে ফেলা যায় না। কোন ধরনের আইনের কাছে এটি মুখাপেক্ষী নয়। ক্ষেত্রবিশেষে এই চুক্তির ধারাগুলো এত সংক্ষিপ্ত হতে পারে যে এক পৃষ্ঠাতেই পুরো চুক্তিনামা লিপিবদ্ধ করা যায়। উদাহরণস্বরুপ ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার চুক্তির কথা উল্লেখ করা যায়। এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার একটি যৌথ সামরিক মহড়া করা। চুক্তিটিতে মাত্র ৫টি ধারা ছিল। তবে মূল উদ্দেশ্য একটাই ছিল, যা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বতসোয়ানার সাথে আমেরিকার চুক্তির কথাটিও উল্লেখ করা যায়, যার মাধ্যমে আমেরিকা বতসোয়ানার সরকারের দ্বারা আইনানুগ ভাবে সেদেশের মাটিতে মানবিক সাহায্যের নামে কার্যক্রম শুরু করলেও বেসামরিক দাপ্তরিক কাজকর্ম থেকে শুরু করে সামরিক মহড়া ও ট্রেনিং এর সুযোগ পায়। বস্তত এসকল ধারাগুলোর অন্তরালে আমেরিকার উদ্দেশ্য একটিই, আর তা হল একটি দেশে ঔপনিবেশিকতার সূচনা করা ও ধীরে ধীরে বিভিন্নভাবে দেশটির আভ্যন্তরীন ও প্রতিরক্ষা কাঠামোকে দূর্বল করে দেশটির উপর সার্বিক নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করা।

এ চুক্তির মাধ্যমে তারা দেশটির আইন শৃংখলা বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠাপূর্বক নিজস্ব মানদন্ডে প্রনীত “ন্যায়নীতি” ও “শান্তি-শৃংখলা” রক্ষা করতে চায়। মূলত এর পেছনে থাকে তথাকথিত সন্ত্রাস দমন, জঙ্গীবাদ নির্মূল সহ এধরনের অন্যান্য উদ্দেশ্য; যদিও অধিকাংশ থেকে এটা করা হয়ে থাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন বা মানবাধিকার নিশ্চিতকরনের মত বাহ্যয় মহৎ কার্যক্রমের ছদ্মাবরনে।

 

উল্লেখযোগ্য কিছু দেশে সোফা চুক্তিঃ

 

আফগানিস্তানঃ

সেপ্টেম্বর ১১ এর হামলার পর আল ক্বায়েদা ও তালেবানের মূলোতপাটনের লক্ষে আমেরিকা আফগানিস্তানে হামলা চালায়। এরই সূত্র ধরে ২০০২ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত আফগান পুতুল সরকারের সাথে আমেরিকা কতগুলো পত্রবিনিময়ের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আফগানিস্তানের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে নিজ কর্তৃত্ব বজায় রাখার যাবতীয় বন্দোবস্ত সেরে ফেলে। আমেরিকান ভিন্ন দেশকে সাহায্য প্রদান আইন ১৯৬১ মোতাবেক আফগানিস্তানে আর্থিক সাহায্য দেয়ার শর্তসাপেক্ষে উক্ত চুক্তি আফগানিস্তানে সামরিক প্রশিক্ষন থেকে শুরু করে অপারেশন, এমনকি ঘাটি স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। একারণে খুব সহজেই আফগানিস্তানকে তারা সামরিকভাবে কব্জা করে নিতে পারে। এই চুক্তির ধারামতে আমেরিকার সকল প্রতিনিধি আফগানিস্তানের সকল ফৌজদারী আইনের আওতার বাইরে থাকবে। অর্থাৎ আমেরিকার মনোনীত কোন ব্যক্তি যদি আফগানিস্তানে খুন বা ধর্ষণের মতো অপরাধও করে তবুও আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় আইনে তার বিচার করা যাবে না। এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ন ধারা হল যে, অন্য কোন দেশ থেকে কোন আমেরিকান নাগরিক যদি কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে আফগানিস্তানে আশ্রয় নেয় তাহলে আফগানিস্তান সরকার সেই অপরাধীকে সেই দেশের কাছে তুলে দিতে পারবে না। আফগান সরকার সরাসরি ও প্রকাশ্যে আমেরিকার এই চুক্তিকে মেনে নেয়।

২০০৫ সালের ২৩মে তে হামিদ কারজাই ও বুশের মধ্যকার একটি যৌথ ঘোষনাপত্রের মাধ্যমে আফগানিস্তান ও আমেরিকার পারস্পরিক ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়, যার মাধ্যমে আমেরিকান সেনারা আফগানিস্তানে পূর্ন নিয়ন্ত্রনাধিকার তো পাবেই উপরন্ত এই চুক্তির মাধ্যমে তারা আফগান সৈন্যদেরকেও নিজস্ব কর্মকান্ডে ব্যবহার করতে পারবে। সরকারের কাছে এরুপ প্রস্তাব করা হয় যে আফগানিস্তানের জনগনকে বুঝাতে হবে যে তারা এখনো নিজ দায়িত্ব নিতে সক্ষম হয়ে উঠেনি; তাই নিজেদের স্বার্থেই তাদের উচিত হবে আমেরিকান সৈন্যদের কাছ থেকে প্রশিক্ষন গ্রহন করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে তালেবান থেকে ‘নিরাপদ’ থাকতে পারে।

 

জার্মানিঃ

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে জার্মানির মত ক্ষমতাবান একটি দেশ আমেরিকার সাথে এমন লজ্জাস্কর একটা চুক্তিতে আবদ্ধ! জার্মানির ন্যাটোতে যোগদানের চার বছর পর আমেরিকার সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, যা ন্যাটো সোফা চুক্তি ১৯৫৩ নামে খ্যাত। এই চুক্তির আওতায় আমেরিকা-জার্মানির মধ্যে একটি সামরিক সম্পর্কের সেতু স্থাপিত হয়। চুক্তির ধারাসমূহ বেশ বিস্তৃত এবং প্রায় ২০০ পৃষ্ঠার সুবিশাল পরিসরের। এর মাধ্যমে জার্মানির অভ্যন্তরে আমেরিকা অপারেশান চালানোর সুযোগ পায়।

জাপানঃ

জাপানের সাথে আমেরিকার এই চুক্তির মাধ্যমে জাপানের অভ্যন্তরে কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আমেরিকান বিনা বাধায় পার পেয়ে যেতে পারবে। ১৯৫৭ সালে একজন আমেরিকান সেনা কর্মকর্তা একজন জাপানি নাগরিককে হত্যা করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। তবে চুক্তিতে আবদ্ধ থাকার কারনে আমেরিকা তার সৈন্যের পক্ষে জোর দাবি জানিয়ে বলতে সক্ষম হয় যে, এই হত্যাকান্ড ছিল তাদের সামরিক কার্যক্রমেরই একটা অংশমাত্র। জাপান সরকার এটিকে ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবে প্রমান করার জন্য সকল জোড়ালো প্রমান উপস্থাপনের কারণে আমেরিকা এটি মানতে বাধ্য হয় এবং তাকে জাপানের হাতে তুলে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্ত ঐ সেনা কর্মকর্তা নিজের পক্ষে আমেরিকার ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব কলম্বিয়াতে রীট করে। ঐ রীটটি খারিজ হয়ে গেলেও ঐ সামরিক কর্মকর্তার পক্ষে আমেরিকান সরকার জাপান সরকারকে বিচার কাজ না চালাবার জন্যে চাপ প্রয়োগ করে। পরবর্তীতে ঘটনাটি আমেরিকান সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।

ইরাকঃ

২০০৩ এর মার্চ থেকে শুরু করে ২০১০ এর আগস্ট মাস পর্যন্ত ইরাকের অভ্যন্তরে আমেরিকা বহু সামরিক অপারেশন পরিচালনা করে। প্রথমত এর উদ্দেশ্য ছিল সাদ্দাম হুসেনের অপসারন, যদিও পরবর্তীতে তাদের আরো অনেক উদ্দেশ্য প্রকাশ পায়। ইরাকের সাথে আমেরিকার চুক্তির কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলঃ

এই চুক্তির আওয়াতায় আমেরিকা ইরাকী সরকারকে ‘সহায়তা’ করবে; ইরাকী নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষন দিতে পারবে; তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাজ সরঞ্জাম ও আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করতে পারবে। ইরাকী সরকারকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী’ যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে যাতে তারা আল কায়েদা ও এর মত ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনের বিরুদ্ধে লড়তে পারে। পাশাপাশি পূর্বেকার অপরাধী সরকারগুলোর অবশিষ্ট কোন বাহিনীর বিরুদ্ধেও যুদ্ধ চালাতে পারে। সর্বোপরি ইরাকে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করা হবে এবং ইরাকের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা হবে।

উল্লেখ্য যে ইরাকের সাথে আমেরিকার এই চুক্তি আইনী দিক থেকে সকল বিধি-নিষেধের উর্ধ্বে এবং এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক একটি চুক্তি, যার মাধ্যমে ইরাকের নিরাপত্তা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এমনকি আইন প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলির উপরও আমেরিকা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে।

এসবের সাথে আরো যুক্ত ছিল যে, ইরাকের অভ্যন্তরে আমেরিকার যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে ইরাক সরকারকে অবশ্যই সম্মত হতে হবে এবং তার নিজ বাহিনী দ্বারা আমেরিকাকে পূর্ন সহযোগিতা করতে হবে। চুক্তির প্রতিটি ধারাই নগ্নভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও অনেক গোড়া আমেরিকান সামরিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, এটি আমেরিকার স্বার্থ আদায়ের জন্য যথেষ্ট নয়।

এছাড়াও আর যেসব দেশের সাথে আমেরিকার এই চুক্তি রয়েছে তার মধ্যে ফিলাপাইন্স ও দক্ষিন কোরিয়ার নাম প্রনিধানযোগ্য।

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সোফা চুক্তিঃ

Cold war পরবর্তী সময়ে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে আমেরিকার আগ্রহ যেন হঠাত করেই বেড়ে যায়। এই অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করতে উঠে পড়ে লাগে। এখানকার কোন দেশে পারমানবিক শক্তিকেন্দ্র স্থাপিত হবে, কোন দেশের সাথে কোন দেশের কী ধরণের ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পাদিত হবে ইত্যাদি সকল কাজেই আমেরিকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উপস্থিতি লক্ষনীয়। কৌশলগত ভৌগলিক গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশের প্রতি আমেরিকার এই আগ্রহ যেন একটু বেশিই।

প্রথমত সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের যা অবস্থা, তাতে এদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে শুরু করে শেষ শস্যদানাটুকুও যদি আমেরিকা হাইড্রলিক পাম্প লাগিয়ে নিয়ে নিতে চায় সেক্ষেত্রে চুপচাপ তাকিয়ে দেখা ছাড়া আমাদের হয়তো কিছুই করার থাকবে না।

SOFA-05

দ্বিতীয়ত, এই দেশের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারলে দক্ষিন এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের উপর প্রভাব বিস্তার করা সহজ হয়। বাংলাদেশে আমেরিকার “প্রফিট” এর সম্ভাবনা যথেষ্ঠ। এটা বুঝতে কোনো বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমেরিকার ইতিহাস থেকে এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে বৃহৎ কোন স্বার্থ ছাড়া আমেরিকা কোন দেশের পেছনে এভাবে সময় বা সম্পদ কখনোই ব্যয় করে না।

বাংলাদেশে সোফা চুক্তির সূচনা হয় ১৯৯৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের সময়; যদিও বিএনপি-জামাত সরকার পরবর্তিতে মোটেই এর বিরোধিতা করেনি; যা এ চুক্তির প্রতি তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনই প্রমাণ করে। আমেরিকান ডিপ্লোম্যাট বিল রিচার্ডসন এর সূচনা করেন এবং পরবর্তীতে ততকালীন আমেরিকান সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সফরে এসে চুক্তিটি কার্যকর পর্যায়ে নিয়ে যান।

১৯৯৮ সালে যখন প্রথম এই চুক্তিটি সূচনা করা হয় তখন এর ধারাগুলো এত সুবিস্তৃত ও গভীর ছিল না; তখন এটা শুধু আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাথে যৌথ সামরিক মহরার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে চুক্তির ধারাগুলো যখন স্পষ্ট করা হয় তখন দেখা যায় যে তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য এক সুস্পষ্ট হুমকি। চুক্তির ধারাগুলো নিম্নরুপঃ

১. ‘জরুরী প্রয়োজনে’ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আমেরিকান সামরিক বাহিনীর বিনা বাধায় প্রবেশ পারবে
২. আমেরিকান সামরিক কর্মকর্তারা এদেশের পাসপোর্ট ও ভিসা-নীতির উর্ধ্বে থাকবে
৩. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেকোন ধরনের সরঞ্জাম (যুদ্ধাস্ত্র বা সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহার্য যন্ত্রাদি) কাস্টমস ছাড়াই বিনা বাধায় প্রবেশ এবং পরিবহনের পূর্ন অধিকার থাকবে।
৪. প্রশিক্ষন ও মহড়ার জন্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আমেরিকান সৈন্যদের স্বশস্ত্র অবস্থায় প্রবেশের অধিকার থাকবে।
৫. প্রশিক্ষন ও মহড়া চলাকালীন সময়ে তাদের দ্বারা রাষ্ট্রের কোন ক্ষতি হলে তার কোনো দায়ভার তারা বহনে বাধ্য থাকবে না।
৬. বাংলাদেশে অবস্থানরত সামরিক সদস্যদেরকে দেশের আইন ব্যবস্থার ঊর্ধ্বে রাখা।
৭. অন্য কোন দেশে কোন অপরাধ সংঘটন করে আমেরিকান সামরিক বাহিনীর কেউ যদি বাংলাদেশে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় চায় তাহলে তা দিতে হবে এবং তাকে সে দেশের কাছে হস্তান্তর করা যাবে না।
৮. দেশের যে কোন স্থাপনাসমূহে আমেরিকান সামরিক কর্মকর্তাদের বিনা বাধায় প্রবেশাধিকার থাকতে হবে।
৯. এদেশের যে কোন নাগরিকের পেছনে গোয়েন্দাগিরী,  তাকে গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ, এমনকি তাকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার অধিকার থাকবে আমেরিকার সামরিক কর্মকর্তাদের।

এই চুক্তির আওতায় আমেরিকান সৈন্যরা বাংলাদেশে যখন খুশী তখন বিনা বাধায় আসতে পারবে এবং বাংলাদেশী সৈন্যরা শর্ত সাপেক্ষে প্রশিক্ষনের জন্যে আমেরিকায় যেতে পারবে, তবে কোনভাবেই বাংলাদেশী সৈন্যদের জন্যে সেসব সুবিধার কিছুই প্রযোজ্য হবে না যে সুবিধাগুলো আমেরিকা সৈন্যরা এদেশে ভোগ করতে পারবে।

এদেশের সাধারণ মানুষ এসব বিষয়ের কেবল ততটুকুই জানে যতটুকু সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে জানতে দেয়া হয়। এই কথাটি আমেরিকার জনগণের ক্ষেত্রে আরো বেশি বাস্তব। এজন্যে উভয় দেশের নাগরিকরাই নিজ সরকারের এমন হীন পদক্ষেপগুলোর ব্যপারে অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে, ফলে প্রতিবাদ তো দূরে থাকুক, এসব বিষয়ে জনমতও গড়ে উঠছে না। টিকফা বা অন্যান্য চুক্তি নিয়ে কিছু কথা-বার্তা কেউ কেউ বললেও তার চেয়ে হাজারো গুন মারাত্মক ভয়াবহ চুক্তি সোফা নিয়ে তেমন কারো মাথাব্যথাই দেখা যায় না। অন্যদিকে এমন কিছু প্রো আমেরিকান সংগঠনের অস্তিত্বও এদেশে আছে যারা এই চুক্তিকে সমর্থন জানায় এবং একে দেশের জন্য কল্যাণকর হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করে। তাদের বক্তব্যমতে আমেরিকা বাংলাদেশের বন্ধু এবং দুই দেশের পারস্পারিক সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমেই বাংলাদেশের উন্নতি সম্ভব। শাহারিয়ার কবির নামক তথাকথিত এক দেশপ্রেমিক তো বলেই দিয়েছে “জঙ্গি মৌলবাদ দমনে আমেরিকার সহায়তা প্রয়োজন।” গত ২০১৩ এর ৬ই জানুয়ারির ভয়েজ অফ আমেরিকার বাংলা অনলাইন সংস্করণে তা প্রকাশও হয়েছে। (লিঙ্কঃ http://www.voabangla.com/content/interview-with-shahriar-kabir-on-his-film-against-jihad-06-january-2013/1578761.html)

Shahariar-Kabir-VOABangla

উল্লেখ্য যে সোফা চুক্তির এই ভয়াবহ ধারাগুলো ২০০৯ পরবর্তী শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই যুক্ত হয়েছিল। ২০১২ তে আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের পর এই চুক্তি নবায়ন হয়। আওয়ামীলীগের সাথে হাজারো বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও এক্ষেত্রে বিএনপি-জামাত কিন্তু নিজেদের মুখে কুলুপ এটে রেখেছিলো।

দেশ ও জাতি তথা বিশ্বের কাছে আত্মমর্যাদাহীন ও পরাজিত ব্যর্থ সরকার হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আশঙ্কা ছাড়াও এই চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার আরও কিছু জটিলতার সম্মুখীন হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

১. বাংলাদেশে অন্য কোন দেশের সৈন্য প্রবেশের নিরঙ্কুশ অধিকার অনুমোদন করার বিষয়টি শুধু আইনী বা রাজনৈতিক দিক থেকেই অসমীচীন নয় বরং এদেশের সংবিধানেরও সুস্পষ্ট পরিপন্থী একটা ব্যাপার।

২. “সার্ক” ভুক্ত দেশ হবার কারণে বাংলাদেশ সার্ক এর কিছু নীতিমালা মেনে চলতে বাধ্য, যার মধ্যে অন্যতম হল স্থানীয় সীমারেখায় বহিরাগতদের প্রবেশাধিকারের উপর নিয়মতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রন আরোপ করা। সোফা চুক্তির আড়ালে আমেরিকাকে এই অবৈধ সুবিধা প্রদান করা মানেই সার্কের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা।

এসমস্ত ভয়াবহ পরিনতির কথা বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে এই চুক্তির বিষয়টি শুধুমাত্র নীতিনির্ধারক মহল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার আড়ালে বিষয়টি জনগনের কাছে গোপন করা হচ্ছে।

আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের সামরিক সম্পর্ক ১৯৮০ সালের পর থেকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই পেয়েছে। সেসময় ৩০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশী সামরিক কর্মকর্তা আমেরিকায় প্রশিক্ষন নিয়েছেন এবং তখন থেকেই আমেরিকা-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে অনেক অপারেশান ও মহড়া হয়ে আসছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের সাইক্লোনকে কেন্দ্র করে অপারেশন সী এঞ্জেল।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশ দুটি প্রধান আন্তর্জাতিক দ্বন্ধে আমেরিকাকে সামরিকভাবে সমর্থন দিয়েছে।

ক) ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ, যাতে বাংলাদেশ প্রায় ২৩০০ সৈন্য পাঠায়

খ) ১৯৯৪ সালের হাইতি মিশন, যাতে বাংলাদেশের কন্টিনজেন্ট প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত ছিল

আমেরিকান নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তারা সোফা চুক্তির পেছনে তাদের যেসব প্রধান উদ্দেশ্যের কথা প্রকাশ করেছেন তা নিম্নরূপ-

১. মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে কার্যক্রম জোরদার করা

২. প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে ত্রানসাহায্য সরবরাহ করা

৩. জল ও আকাশ পথে উদ্ধারকাজ চালনা ও অপারেশন পরিচালনা করা

৪. স্কুল স্থাপন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন

৫. চিকিৎসা সুবিধার ব্যবস্থা করা ও প্রশিক্ষন

প্রকাশ্যে এধরণের মানবিক সাহায্যের কথা বলে আমেরিকান কর্তৃপক্ষ বরাবর বুঝাতে চেয়েছে যে সোফা কোন সামরিক চুক্তি নয় এবং এর পেছনে আমেরিকার ও মানবিক সাহায্য প্রদান ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যই নেই। তারা কখনই সোফা চুক্তির পেছনে লুকায়িত স্বার্থের কথা প্রকাশ করে না। উপরন্ত তারা এমন প্রস্তাবও করেছে যে এধরনের “লাভজনক” একটি চুক্তি করা থেকে বিরত থাকা মানে বাংলাদেশের নিজেরই ক্ষতি করা। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দিয়েগো গার্সিয়ার পর বাংলাদেশের মত একটা সুইট স্পটে সামরিক কর্তৃত্ব স্থাপন করার ব্যাপারে তারা সত্য-মিথ্যা যেকোন কিছুরই আশ্রয় নিবে এটাই স্বাভাবিক।

Hillary Rodham Clinton with Bangladeshi Prime Minister Sheikh Hasina and Foreign Minister Dipu Moni

হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের অব্যবহিত পরেই ডেইলি স্টার পত্রিকা সোফা চুক্তির ব্যাপারে স্বল্প পরিসরে কিছুটা আলোকপাত করেছিলো। একথা স্পষ্ট যে সোফা চুক্তিতে আবদ্ধ হবার মানেই হচ্ছে আমেরিকার কাছে জাতীয় সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেওয়া। কারন এই চুক্তির ধারা মোতাবেক দেশের মধ্যেও কোন আমেরিকানের উপর দেশের আইন বলবত থাকছে না। তাছাড়া এই চুক্তির মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ন তথ্যাদির উপরও সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।

US Secretary of State Hillary Rodham Cllinton

সোফা চুক্তির ব্যাপারে আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নীরবতা সত্যিই অদ্ভূত। এমনকি হিলারি ক্লিনটনের সরাসরি টিভি সাক্ষাৎকারে প্রখ্যাত সাংবাদিকদের সোফা চুক্তির বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ নিরবতা বিস্ময়কর। আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী নীতির সাথে যারা একটু হলেও পরিচিত তারা খুব ভালভাবেই জানেন যে, কিভাবে একটি দেশকে আমেরিকা ধীরে ধীরে তার হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। অতীতে এর অসংখ্য উদাহরন রয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে। জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে রাজনৈতিক মহলের অবাক করা নীরবতা রাজনীতিবিদদের স্বার্থান্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। আমেরিকাকে সন্তষ্ট করতে নিজ দেশের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে দিনশেষে বাংলাদেশের লাভের খাতায় যে কিছুই থাকবে না, বরং যা ছিল তার সবই যাবে—এই সহজ সমীকরনটা বুঝতে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা যত দেরী করবেন দেশ ও দেশের জনগণ ততই নিরাপত্তা হারাবে।

 

 
 

Wassalam,
Banda Reza ul Kabir
…until I taste what Hamza bin Abdul Muttalib (RA) tasted

Read me @ www.bandareza.com

Subscribe my videos on www.youtube.com/bandareza313
 

 

ঘৃণা আর কদমবুচি

by Hafiz M Ullah

 

আমাদের অভিধানে এবং সংস্কৃতিতে একদিকে “ঘৃণা” আর তার পাশেই “কদমবুচি” করার চল এতোটাই গেড়ে বসেছে যে, কয়েকটা জেনেরেশন পার হতে হবে এই পঙ্কিলতা থেকে পরিত্রান পেতে। এভাবেই আমাদের মন-মানসিকতা গড়া হয়েছে যে জীবনের অন্তিমকালে এসে সেগুলি unlearn and relearn এর সুযোগ নেই। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

আমরা সাধারন নাগরিক আমাদের পাশের দেশের তুলনায় পিছিয়েই থাকব। কারন তারা চায় না প্রতিবেশী আবার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। সেজন্য তারা আমাদের দুই দেশের মাঝের বিদ্যমান সমস্যাগুলি সমাধান না করে যুগ যুগ ধরে ঝুলিয়ে রাখছে। তাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার জন্য অনুদানের বা সুবিধা দেয়ার তুলনায় তাদের উতপাদিত পণ্য ও মেডিক্যালসেবা আমাদের কাছে বিক্রির চেস্টা নানান কৌশলে করে থাকে।

আমি ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় একজন শিক্ষক এর সাথে দেখা করতে গেলে উনি দুইটা ইংরেজী শব্দ ব্যাবহার করেছিলেন তার প্রফেসি (prophecy) হিসাবে যে, “আজ থেকে কয়েকযুগ পরে আমাদের দেশে intellectual bankruptcy দেখা দিবে” (Intellectual means involving a person’s ability to think and to understand ideas and information। Bankruptcy: A person who is totally lacking in a specified resource or quality)। আজ আমি সেটার নজির রাস্ট্রের সর্বোচ্চ লেভেল থেকে সাধারান জনগনের মাঝে প্রকট আকারে দেখছি। আমরা যুক্তিতর্ক প্রয়োগ না করে ধমকের সাথে বা গায়ের জোরে প্রতিপক্ষকে কাবু করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সেই বিখ্যাত ছবির গরুর গাড়ীর চাকার মত বাংলাদেশকেও যেন আজও কাদামাটি থেকে ধাক্কা দিয়ে তোলা যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ সাহেব তার এক ভাষনে বলেছিলেন যে, বিএনপি যদি কখনো উত্তর দিকে দৌড় দেয় তবে আওয়ামী লীগ চোখ বন্ধ করে দক্ষিন দিকে দৌড়াবে এবং vice versa (with the order reversed; the other way around) এর মানে, তুমি যেটা বিশ্বাস করবে বা করতে চাইবে আমি তার উল্টোটা করব। নইলে আমি তোমার ফলোয়ার হয়ে গেলাম। যেটা আমার নিজের আর দলের জন্য অবমাননাকর ব্যাপার। তাই, সব কিছুতে বিরোধীতা করা চাই।

এই বাজে vicious cycle (one trouble leads to another that aggravates the first) থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে দলমত নির্বিশেষে একজন গ্রহনযোগ্য নেতার প্রয়োজন। যিনি হয়ত নিজ থেকে উড়ে এসে জুড়েও বসতে পারেন। কিন্তু দেশটাকে একছন্দে আর তালে এগিয়ে নেয়ার স্পৃহা জনগনের মাঝে প্রথিত করে যেতে পারেন তেমন নেতার প্রয়োজন ছিল। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের জানুয়ারীর ১০ তারিখে পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্য (লন্ডন) হয়ে পথে কলকাতায় থেমে পরে ঢাকায় আমাদের মাঝে এসেছিলেন। তখন তিনিই আমাদের সেই স্বপ্নের নেতা হিসাবে সদ্যস্বাধীন দেশের মাঝে অনেক আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন। সেই সময়ে আমরা সমগ্র ৭৫ মিলিয়ন বাংগালী (বাংলাদেশী) ওনার মুখের দিকে অনেক আশা নিয়ে চেয়েছিলাম। এমন কোন কাজ ছিল না যেটা উনি দেশবাসীকে বলতেন বা আমাদের কাছ থেকে চাইতেন আর সেটা তখন মানা হত না বা আমরা করতাম না। কিন্তু যে কোন কারনেই হউক উনি নিজেকে জনগনের সম্মুখ থেকে গুটিয়ে নিয়ে রাস্ট্রের রুটিন কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। যার ফলে তখন আমরা আমাদের তখনকার দিনের প্রিয় নেতাকে ৭৩ সাল থেকেই হারাতে শুরু করেছিলাম আর ৭৫ সালে সম্পুর্ণ ভাবে হারিয়েছিলাম। সেই ৭২-৭৫ সালে আমারা বাংলাদেশের ম্যানেজার হিসাবে শেখ মুজিবকে পেয়েছিলাম। কিন্তু তখন আমাদের একজন স্টেটসম্যান দরকার ছিল। যেটাতে উনি পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছিলেন। বাদ বাকিটা তো ইতিহাস হয়ে আছে।

বাই দ্যা ওয়ে, Four Qualities of a True Statesman (1) A Bedrock of Principles (2) A Moral Compass (3) A Vision and (4) The Ability to Build a Consensus to Achieve that Vision

http://www.naturalawakeningsmag.com/Natural-Awakenings/October-2012/The-Four-Qualities-of-a-True-Statesman/