উইলিয়াম ওয়ালেস ও আয়েমন আকবর; মুক্তিযোদ্ধার ব্রেইভ হার্ট বনাম সাজেদা চৌধুরির লম্বা হাত!

by Watchdog BD

চুরির রূপকথা…
পাঠক, আপনাদের কি হলিউড মুভি ‘ব্রেইভ হার্ট’ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল? না হয়ে থাকলে অনুরোধ করব ছবিটা দেখে নেয়ার জন্যে। হলিউড ফ্যাক্টরী হতে এ পর্যন্ত যতগুলো ভাল ছবি বের হয়েছে ’ব্রেইভ হার্ট’ তার মধ্যে অন্যতম। স্বীকৃতি হিসাবে ৬৮তম একাডেমি এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে এ ছবির অভিনেতা ও নির্মান কৌসুলিদের ভাগ্যে জুটেছিল একাধিক পুরস্কার। মুক্তিকামী মানুষের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা আর আত্মত্যাগের মর্মস্পর্শী কাহিনী নিপুণ ভাবে ফুটে উঠেছে বিশাল ক্যানভাসের এ ছবিতে। প্রেক্ষাপট ১২৮০ খ্রীষ্টাব্দ। ইংরেজ রাজা প্রথম এডওয়ার্ডের দখলদার বাহিনীর অত্যাচারে জর্জরিত স্কটিশ জনগণ। প্রকৃতির লীলাভূমির দেশ স্কটল্যান্ডের নয়নাভিরাম পাহাড় পর্বতকে ঘিরে আবর্তিত হওয়া ইংরেজ তাড়ানোর লড়াই নিয়ে ছবির কাহিনী। নায়ক উইলিয়াম ওয়ালেসের প্রেম, ভালবাসা, বিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এমন এক কালজয়ী ছবি আঁকা হয়েছে যা যুগ যুগ ধরে মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা হয়ে বেঁচে থাকবে।

হতে পারত তা নতুন কোন কালজয়ী ছায়াছবির পারফেক্ট প্রেক্ষাপট। স্কটল্যান্ড হতে ফরিদপুর। হোক তা যোজন যোজন দূরত্বের দুটি দেশের কাহিনী। কিন্তু খুঁজলে কোথাও না কোথাও মিল পাওয়া যেত হয়ত। অন্তত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করার কৌশল সমকালের ফরিদপুরবাসী আর খ্রীষ্টাব্দ ১২৮০ সালের স্কটিশদের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য হত বলে মনে হয়না। অন্তত উপরের ছবিটা তাই বলে। ঘটনা ঘটতে গিয়েও ঘটেনি উপর হতে হস্তক্ষেপের কারণে। কাজে কর্মে তিনি কোন দেশের বাদশাহ নন।।।

অপকর্মের বাদশাহ বললে হয়ত বাড়িয়ে বলা হবেনা। ’মাটির টানে’ ফিরে যাচ্ছিলেন আপন শহর ফরিদপুরে। তিনি আর কেউ নন, সংসদ উপনেতা জনাবা সাজেদা চৌধুরীর পুত্র জনাব আকবর আয়েমন। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় দেশের রাজনৈতিক পরিবারগুলোর জীবন কতটা চমকপ্রদ হয় এই আকবর বাদশাহ তার পৌরাণিক উদাহরণ। বনখেকো ওসমান গনির কথা আশাকরি পাঠকদের স্মৃতি হতে মুছে যায়নি। সেই ওসমান গনি যিনি লোটা কম্বল ছাড়াও অন্তর্বাসের ভেতর পর্যন্ত লুটের টাকা লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হতেন। মনে আছে আপনাদের? বনের গাছ আর মন্ত্রনালয়ের মানুষকে বদলির নামে এদিক সেদিক করে কম করে হলেও ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত কামিয়েছিলেন। মন্ত্রনালয়ের সামান্য একজন কর্মকর্তার পক্ষে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে এত ধন-সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব এমনটা বোধহয় দেশের হদ্দ পাগলও বিশ্বাস করবে না। আসুন সে দিকটায় একটু চোখ ফেরাই। সাজেদা চৌধুরী তখন বন মন্ত্রনালয়ের ভগবান। ’বন-ভগবানের’ সৃস্টি পেয়ারের আদম আকবর বাদশাহর হাতে ধরেই উত্থান বনখেকো ওসমান গনির। এমনটাই তিনি বলেছিলেন যৌথবাহিনীর ইন্টারোগেশন সেলে। সরকারী কোষাগার লুটপাটের ’গৌরবোজ্জ্বল’ উপাখ্যানের সাথে সাজেদা চৌধুরী নাম উচ্চারিত হয়না, কারণ তিনি এখন বিশাল এক বোয়াল মাছ, যা ধরতে গেলে বাংলাদেশের সমস্ত ছাই এক করলেও যথেষ্ট হবেনা। কিন্তু ধরা পরেছিল অন্য জন, যদিও তা ছিল কাগজে কলমে। আয়েমন বাদশাহ। যৌথবাহিনীর ডান্ডা ও ডিম্ব থেরাপি হতে বাচার জন্যে বাদশাহ চলে গিয়েছিলেন বনবাসে। রাক্ষস-খোক্কসদের রাজত্ব শেষে নতুন করে বুঝে নিয়েছিলেন আপন রাজত্ব। রাজা-বাদশার দল প্রজাদের দেখতে গ্রামে-গঞ্জে যায়, এটা নতুন কোন কাহিনী নয়। একই উদ্দেশ্যে আয়েমন বাদশাহও হয়ত রওয়ানা দিয়েছিলেন ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে। বিধি বাম! ওখানে যে অন্য রাজার রাজত্ব! এঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন! ফরিদপুরের এই উইলিয়াম ওয়ালেস এবং তার সহযোগীরা আগ বাড়িয়ে ঘোষনা দিয়েছিল, পীর আউলিয়ার শহর ফরিদপুরের মাটিতে চৌধুরী পরিবার অবাঞ্চিত। চৌধুরীদের আগমন ঠেকাতে ওয়ালেস বাহিনী মাঠে নামিয়ে দেয় হোম মেড অস্ত্র সহ ভুখানাংগা শহরবাসীকে। অমোঘ পরিণতি হতে শহরবাসীকে রক্ষা করেন সব ভগবানের আসল ভগবান জনাবা শেখ হাসিনা।

ছাত্রজীবনে নগুয়েন ঢিক থি ছিল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। জাতিতে ভিয়েতনামি। উত্তর-দক্ষিনে তখন যুদ্ধের দামামা। মার্কিন সৈন্য আর তাদের ন্যাপাম বোমায় জ্বলছে ভিয়েতনামের জনপদ। ভিয়েতনামের মাটি হতে মার্কিনীদের বিদায়ের পর অনেকে মনে করেছিল দুই তত্ত্বে বেড়ে উঠা দুই ভিয়েতনামের মধ্যে শুরু হবে গৃহযুদ্ধ। আজকের ভিয়েতনাম কি তাই বলে? যুদ্ধোত্তর ইউনাইটেড ভিয়েতনামে উত্তরের নগুয়েনদের অবাঞ্চিত করতে শোনা যায়নি দক্ষিণের নগুয়েনদের। ওরা আজ এক এবং দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে আবির্ভুত হতে চলছে। মার্কিন বাজারে ভিয়েতনামি পণ্যের প্রবেশ নিয়ে কেউ এখন হা হুতাশ করেনা, কারণ এমনটাই বর্তমান বিশ্বের চাহিদা। স্বাধীনতা এমনই একটা প্রাপ্তি যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে এক করে তাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লড়াইয়ের জন্যে। ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আমাদেরও এক করেছিল কমন উদ্দেশ্যে। স্বাধীনতার ৪২ বছরে আজ আমরা আওয়ামী-বিএনপি, মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার, আবাহনী-মোহামাডান, সাজেদা-মোশারফ, এ ধরণের হাজারো ধারায় ভক্ত বিভক্ত। শুধু ফরিদপুর কেন, আমরা একজন অন্যজনকে অবাঞ্চিত করছি লন্ডন, প্যারিস আর নিউ ইয়র্কের মত পরদেশের পর শহরে। আমাদের আভ্যন্তরীণ লড়াইকে আমরা বিক্রি করছি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে, ছড়িয়ে দিচ্ছি পৃথিবীর দেশে দেশে। সাজেদা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই মোশারফ হোসেনকে রাজাকার পরিবারের সদস্য বলায় মন্ত্রী বেজার। বাংলাদেশে বেজারের আরও একটা ভাষা আছে যার নাম শক্তি। শক্তি দিয়ে ব্যাক্তিগত সমীকরণ সমাধা করার যে সাংস্কৃতি আমাদের দেশে চালু হয়েছে তার প্রভাব কতটা সুদূর প্রসারী হবে তার কিছুটা হলেও নমুনা আমরা পেতে শুরু করেছি।

অনেকে বলবেন রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। দ্বিমত নেই। কিন্তু ফরিদপুরের ঘটনায় মত পার্থক্যটা কোথায় তাই বুঝা গেলনা। এখানে কে উইলিয়াম ওয়ালেস আর কে লংস্যাঙ্ক কিং এডয়ার্ড তা আলাদা করার পরিস্কার কোন উপায় নেই। রাজাকার পরিবারের বেয়াই আর চোরাই পরিবারের রাজা-রানীদের লুটপাটের কাহিনীকে যদি দেশ শাসনের অংশ হিসাবে জাতিকে হজম করতে বলা হয় এবং আমরা তা যুগ যুগ ধরে হজম করতে থাকি আমি বলব জাতি হিসাবে আমাদের রক্তে পতনের পূজ প্রবাহিত হচ্ছে।

মনে আছে ব্রেইভ হার্টের শেষ এপিসোডের প্রেক্ষাপট? গিলোটিনে শুয়ে আছে উইলিয়াম ওয়ালেস। আকাশে উড়ছে খন্ড খন্ড মেঘ। জনতার ভিড়ে ওয়ালেস দেখতে পায় তার মৃত স্ত্রীকে… জানতে ইচ্ছে করে আমাদের নেতা-নেত্রী সেবকদের যখন ক্রসফায়ারের বধ্যভূমিতে নেয়া হয় কার ছবি তাদের সামনে আসে, স্ত্রী? পুত্র-কন্যা? পিতা-মাতা? না-কি নেতা নেত্রীদের?? সে যাই হোক , মেল গিবসনের তৈরী অবিস্মরণীয় ঐ ছবিটা দেখার জন্যে অনুরোধ রইল। কে জানে হয়ত ঐ ছবিতে লুকানো আছে আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর।

একধাপ এগিয়ে এ দলঃ বি দলের করনীয় কি?

132017991_101n

By Shikin Aman      পূর্ববর্তী সূত্রঃ http://shikinaman.wordpress.com/2013/11/03/strategy2/

সরকারী দল হওয়ার সুবাদে এ দলের কিছু ইনহেরেন্ট সুবিধা থাকারই কথা, এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে দলটি তার এই সুবিধাকে ম্যাক্সিমাইজ করতে সক্ষম হয়েছে। পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, মিডিয়া ও বিচার বিভাগের উপর প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রন এর বহিঃপ্রকাশ। তাছাড়া ধারণা করা যায় যে জেলা প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের উপর তাদের যথেষ্ট আস্থা আছে, যা তাদেরকে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের সময় সাহায্য করবে। তারা নিজেদের দুর্বলতাগুলোকে জনগণের দৃষ্টি ও বিরোধীদের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য একটি সমন্বিত ষ্ট্র্যটেজি নিয়েছে যা ইতিমধ্যে তাদেরকে একটি নিরাপত্তাবোধ দিয়েছে। অপরদিকে বি দলকে তারা চতুর্মখী আক্রমনের মাধ্যমে বিপর্যস্ত করে রেখেছে (লিস্ট) যার ফলে বি দল অবিরাম হরতাল ছাড়া আর কিছু করণীয় খুজে পাচ্ছেনা। এ দল পরিকল্পনায় একধাপ এগিয়ে থাকায় হরতালেও তারা বি দলকে ব্যাকফুটে নেয়ার একটি কার্যকর কৌশল বের করে ফেলেছে। তার সাথে তারা পরবর্তী একটি ধাপের জন্য জাল পেতে চলেছে, যেটার লক্ষ্য হতে পারে বি দলের একটি অংশকে পাতানো নির্বাচনে অংশ নেয়ানো। আজকের লেখাতে এই দুইটি বিষয়ে আলোচনা করবো।

হরতাল প্রসংগঃ

শান্তিপূর্ণ হরতাল বলে কোন হরতাল কালচার বাংলাদেশে নেইঃ এটা নিয়ে কোন দ্বিমত করার অবকাশ নাই। এখনকার পরিস্থিতিতে পিকেটিং মানেই পুলিশের বা এ দলীয় ক্যাডারদের সাথে মারামারি অবধারিত। পুলিশ আসলে নিজ দ্বায়িত্ব পালন করছে মাত্র। এ দলীয় ক্যাডাররা করছে মাঠ দখলের চেষ্টা। এক্ষেত্রে পুলিস যে কাজটি আইনসঙ্গতভাবে করছেনা সেটা হচ্ছে, এ দলের সমর্থকরা অস্ত্রধারী হয়েও পুলিশের কাছ থেকে কোন বাধা পাচ্ছেনা। দ্বিতিয়ত কোথাও কোথাও পুলিশ অপ্রয়োজনে গুলি করছে। খালী হাতে থাকা জনতার উপর গুলিবর্ষণ পুলিস কোন আইন দিয়ে বৈধ করতে পারবেনা। উপরস্থ কর্মকর্তার আদেশে হলেও এটা বৈধ আদেশ হিসেবে মেনে নেওয়া ঠিক না। কিন্তু  বেআইনি কাজটাকে এ দল এক ঢিলে দুই পাখি মারতে ব্যবহার করছে। একদিকে এটা দ্বারা বি দলের আন্দোলনকে শক্ত বাধার মুখে ফেলে দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটা বাকশালী ড্রাগ দেয়া হচ্ছে। ড্রাগ বললাম কারণ সুস্থমাথায় নিজের দেশের লোকের উপর নির্বিচারে গুলি চালানো সম্ভব না (দলীয় ক্যাডার থেকে পুলিস হওয়া ব্যতীত), অন্যদিকে একবার খুন করার পরে একটা বোধ কাজ করে যে এই কাজের জন্য আবার বিচার হবেনা তো? তখনই না চাইলেও বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখার একটা প্রবণতা চলে আসবে। বুদ্ধিমান এ দলের তো লাভই লাভ।

দ্বিতীয় ইস্যু হচ্ছে পুড়িয়ে বা বোমা মেরে সাধারণ মানুষকে হত্যা। এইটাও সাধারণ সুস্থমস্তিষ্কের লোকের কাজ হতে পারেনা। সাধারণ মানুষের সম্পত্তির ক্ষতিও মেনে নেওয়া যায়না।এটা চললে বি দলের জনমতে ক্ষয় ধরবে। বিশ্বজিত হত্যার পরে ছাত্রলিগের ইমেজের একটা বড় ক্ষতি হয়েছিল। লক্ষ্য করে থাকবেন, মনির হত্যার পর কিছু এ দলের নুন খাওয়া ও অন্ধভক্ত কেন এটাকে বিশ্বজিত হত্যার সাথে তুলনা করা হচ্ছেনা এই নিয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছে। এই দুইটা সাধারণের চোখে সমান হয়নি কারণ প্রথম হত্যাকান্ডটি চিনহিত এ দলীয় ক্যাডার বাহিনী দ্বারা টিভি ক্যামেরার সামনে করা খুন। আর দ্বিতিয়টি হরতালে গাড়িতে আগুন দেয়ার সময় সঙ্ঘটিত  হত্যাকান্ড (ইচ্ছাকৃত হত্যা কিনা নিশ্চিত না)।

এ হত্যাকান্ডের হোতারা কোন দলের চিনহিত নেতা নয়। সুতরং ঢালাওভাবে এর দায় কারো উপরে দেয়া সম্ভব না। কিন্তু এ দল ইতোমধ্যে দলীয় মিডিয়া ও অনলাইন প্রপাগান্ডার মাধ্যমে একে সম্ভব হলে ম্যাডামের প্রত্যক্ষ আদেশে সংঘটিত হত্যা প্রমাণ করতে চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষের বিপদ এখানেই শেষ না। সাধারণের লাশের রাজনীতির ধারা বলে, এখন বি দলকে কেন্দ্রীয় নির্দেশ দিয়েও এই ধরণের হত্যা রুখতে বেগ পেতে হবে। এখন প্রয়োজনে এ দলের লোক (নিজেরা মেরে হলেও) এই ধারা বজায় রাখবে, কারণ এতে বি দলের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ জনগণ এখানে শুধুই খেলার পুতুল।

সুতরাং বি দলের এই অবস্থায় করণীয় কি?

প্রথমেই কেন্ত্রীয়ভাবে এই ধরণের হত্যাকান্ডের প্রতি দলের অসমর্থন ও নিন্দা জ্ঞাপন করে নিজ দলের সমর্থকদের এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ দিতে হবে। দলের মধ্যে যারা আদেশ পাওয়ার পরও এ কাজে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করবে, তাদেরকে হাতে নাতে ধরে প্রয়োজনে পুলিশে সমর্পন করতে হবে, কারণ তারা আসলে দলের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে (হয়ত এ দলের টাকার বিনিময়ে)।

হরতাল চলাকালীন পয়েন্টে পয়েন্টে নিজস্ব ক্যামেরাম্যান রাখতে হবে। যদি অন্য কোন দলের লোক এই ধরনের কাজ করে, তাদের ছবি তুলে রাখতে হবে। পুলিসের মাত্রাতিরিক্ত শক্তিপ্রয়গের প্রমাণ ও কেন্ত্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে একে সূক্ষভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে যাতে এ দলের এক ঢিলে দুই পাখী মারার (উপরে বর্ণিত) নীতি কার্যকর না হয়। সাধারণ মানুষের সম্পত্তি ধংস যথাসম্ভব এড়াতে হবে। টায়ার পোড়ানো বা অবস্থান দখলের মাধ্যমে হরতাল কার্যকর করার চেস্টা করা যেতে পারে। ভাংচুর এর মাধ্যমে নয়। এ দলের ক্যাডারদের রাজপথ থেকে দূরে রাখতে পরলে এম্নিতেই হরতাল সফল ও কার্যকর হবে। বি দল তার সমস্ত শরিকদের নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা করলেই এটা সম্ভব। এ দল গ্রেফতার ও নির্যাতনের শংকা তৈরি করে বি দলের নেতাদের রাজপথে থাকতে দিবেনা, আর পাশাপাশি পোষা মিডিয়াতে সর্বশক্তিতে প্রচার চালাবে যে বি দলের নেতারা মাঠে থাকেনা। আজকের দিনে রেগুলার, অনলাইন সব পোষা লেখকদের লেখা ও ষ্ট্যাটাস এ এর প্রমাণ পাবেন। এতে বি দলের কর্মীদের নেতাদের উপর আস্থা হারালে চলবে না। বরং নেতাদের ছিনিয়ে নিতে আসা যে কাউকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করেই এর জবাব দেয়া সম্ভব। এর ফলে সারা দেশের কর্মীদের কাছে পসিটিভ মেসেজ পৌছে যাবে।

নির্বাচন প্রসংগঃ

নির্বাচনে বি দলকে না নিতে পারলে সে নির্বাচন আন্তর্জাতিক সিকৃতি পাবেনা, এটা সবাই বূঝে। সুতরাং এ দল এখন যেসব কাজ করছে তার অন্যতম লক্ষ্য থাকবে বি দলকে নির্বাচনে নেয়া। সম্ভব না হলে বি দলের বর্তমান বা পুরাতন কিছু নেতাকে দল ভাঙ্গিয়ে বি দল হিসেবে নির্বাচনে নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। যেহেতু সংসদ চলবে, এক্ষেত্রে কোন নির্বাচনী আইন বা সংবিধান (!)  সংশোধণ প্রয়োজন হলে সেটাও করা হবে! অবাক হওয়ার আসলে আর কোন স্কোপ নাই। প্রয়োজনে কোর্ট আদেশ দিবে দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে বি দলের আগ্রহী অংশকে নির্বাচনে অংশ নিতে। এই মগের মুল্লকে কিছুই অসম্ভব না।

ব্যাপারটা বি দলের মনোবল ভাঙ্গার কৌশল ও হতে পারে। যাতে চাপে পরে বি দল সাজানো নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে বি দল ইতোমধ্যে তাদের তিন ধাপের কৌশল নির্ধারণ করেছে। তফশীলের আগে, তফশীলের পরে আর নির্বাচনের দিন ও তার পরেঃ এই তার তিন ধাপ। আমি আশা করব বি দল এর বাইরেও কিছু কন্টিনজেন্সি ষ্ট্র্যটেজি নির্ধারণ করেছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে নির্বাচন প্রতিহত করার কৌশল কি হবে,  কোন নেতা দলত্যাগের চেষ্টা করলে তার জন্য করণীয় কি, নির্বাচনের জন্য গ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি কি ইত্যাদি নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি কুটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। ডাঃ ইউনুসের প্রভাবকে যতটা সম্ভব দেশের স্বার্থে পসিটিভলি ব্যবহার করা যেতে পারে।

শেষকথাঃ

বি দলের জন্য এই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় শক্তি জনগণের সমর্থন।  দল এতে ভাঙ্গন ধরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। বি দলকে যেকোন পদক্ষেপ নেয়ার আগে এদিকে লক্ষ রাখতে হবে। JSC  পরীক্ষা, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি এগুলো ভুলে গেলে চলবে না। মানুষের কাছে নিজেদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা (ইস্তেহার) তুলে ধরতে হবে। প্রিন্ট, ভিজুয়াল ও অনলাইন মিডিয়াতে সমন্বিতভাবে নিজেদের সুস্থ মনোভাব ও দেশের জন্য সুন্দর পরিকল্পনা তুলে ধরতে হবে। প্রয়োজনে থানায় থানায় প্রিন্টিং প্রেস বা বিকল্প প্রিন্টিং ব্যবস্থার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের মনোভাবকে পৌছে হবে। মানূষ পরিবর্তন চায়। তাদেরকে সেই স্বপ্নের পথ দেখাতে হবে। এ ব্যাপারে পরে আবার লিখার আশা রইলো।

পিছু হটার এখনই সময়…

by WatchDog originally published http://www.amibangladeshi.org/blog/11-10-2013/1414.html

রাজনৈতিক সংকট ও সংঘাত যতই ঘনিভূত হচ্ছে ততই বাড়ছে জাতি হিসাবে আমাদের অস্থিত্বের আশংকা। এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে। দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিবিদদের বিরামহীন তৎপরতা, পাশাপাশি দেশী বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের খবর বিশ্বাস করলে আমরা ধরে নিতে পারি রাজনীতির ভাগ্য এখন আমাদের হাতে নেই, বরং তা নির্ধারিত হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত হতে। স্বার্থ-বান্ধব আওয়ামী সরকার ভারত সরকারের একমাত্র পছন্দ, এমন একটা উপসংহারে আসতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয়না। বুলেট খরচ না করেই অনুপচাটিয়া গংদের হাতের মুঠোয় পাওয়া, নিজ দেশের নদী ভরাট করে প্রতিবেশী দেশের ট্রানজিটের ব্যবস্থা করা, এমন ঐশ্বরিক সম্প্রদানের নজির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাসে খুজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ হয়। ভারত আমাদের তিন দিকের প্রতিবেশি। আয়তন, লোকসংখ্যা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সহ অনেক কিছুতেই ওরা এগিয়ে। কিন্তু একটা জায়গায় ওদের নিকৃষ্টতা পৃথিবীর বাকি সব নিকৃষ্টতাকে হার মানাতে বাধ্য, প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক।

পাকিস্তানের কথা বাদই দিলাম, নেপাল, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ সহ কোন প্রতিবেশীকেই কেন জানি ক্ষমতাধর ভারতীয় সরকার সার্বভৌম দেশ হিসাবে মানতে রাজি নয়। ভয়াবহ বানিজ্য ঘাটতি ও চোরাচালানি বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক আয়তনে ছোট একটা দেশকে গলাধঃকরণ করেই ক্ষান্ত থাকেনি, বরং একতরফা মিডিয়া আগ্রাসনের মাধ্যমে দেশের আন্তসামাজিক ও আন্তপারিবারিক সমীকরণে ধরিয়ে দিয়েছে ভয়াবহ ফাটল। পরিকল্পিত ভাবে সীমান্ত উন্মুক্ত করে এ দেশে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ফেন্সিডিল, ইয়াবার মত নেশার বস্তু, সাথে আসছে অস্ত্র। যুবসমাজ নেশায় ধুকছে, হাতে অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্য দিবা লোকে ঘুরে বেড়াচ্ছে হায়েনার মত। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে বিদেশি সংস্কৃতির নোংরা থাবা। ক্ষুদ্র ও ভারী শিল্প বলতে বাংলাদেশে যা ছিল তার সবই এখন জাদুঘরে। স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিবেশী হিসাবে আমাদের ক্রিকেট দলকেও তাদের দেশের মাঠে নিতে অনীহা। এমনটাই আমাদের প্রতিবেশী। এমন একটা প্রতিবেশীর পছন্দের সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার। এ যেন দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে যাওয়ার সমীকরণের মত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এক দেশের সরকার ও অন্যদেশের রাজনৈতিক দল একে অপরের পরিপূরক।

ভারতকে ফিরিয়ে দেয়ার মত কৃতজ্ঞতার তালিকা এত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাওয়ার নয় শেখ হাসিনার জন্য। সবাইকে হারিয়ে শেখ পরিবারের দুই সন্তানকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল প্রতিবেশী দেশে। সন্তানদের ভরন পোষন সহ সব খরচ বহন করেছিল দেশটার সরকার। স্বভাবতই দুই পক্ষের বর্তমান আচরণে লেনদেনের অলিখিত প্রভাব খুজে পাওয়া যায়। ব্যক্তি হাসিনার অনেক কিছু দেয়ার আছে রাষ্ট্র ভারতকে এবং ভারতেরও অনেক কিছু পাওয়া আছে শেখ হাসিনার কাছে। সমস্যা হচ্ছে, শেখ হাসিনাই গোটা বাংলাদেশ নয়, শেখ পরিবারও এ দেশের ইজারা নেয়নি। যে দেশের সরকার গরু চোরাচালানির জন্য তার প্রতিবেশী দেশের গরীব সাধারণ মানুষকে পশু পাখির মত গুলি করে মারে, তাদেরই মালামাল পারাপারের জন্য আমরা নদী ভরাট করে দেই সামন্যতম চিন্তা না করে, এখানেই আসে আন্তদেশীয় সম্পর্কের চাইতে ব্যক্তি সম্পর্কের লেনাদেনার প্রশ্ন। দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও ভারত ও শেখ পরিবারের জন্য লেনাদেনা, দায় শোধ ও কৃতজ্ঞতার বিনিময়ের মত। ধীরে ধীরে পরিস্কার হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে ব্যক্তি হাসিনার অধীনে নির্বাচন আয়োজনের করার আসল কারিগরের চেহারা। এ কারিগর ভারত। স্বার্থ-বান্ধব সরকারের পূত গন্ধময় শাসনের ফলাফল আগ বাড়িয়ে বুঝতে পেরেছিল এসব নিরামিষ খোর ধূর্ত শয়তানের দল। দেশের মানুষ বুঝে উঠার আগেই তাদের গলায় ঝুলিয়ে দেয় মৃত্যুদণ্ড। দেশের বিচার ব্যবস্থার ঘাড়ে বন্দুক রেখে তিতাস নদী ভরাটের মতই ভরাট করে রেখেছিল দেশের নির্বাচন নদী। ভেবেছিল এ নদীতে সাতার কেটে জনম জনম ধরে শোসন করতে থাকবে তিন দিক হতে বন্দী কোটি কোটি মানুষের একটা দেশকে। আসলে বাংলাদেশ প্রতিবেশী বেনিয়াদের বিবেচনায় কোন দেশ নয়, বরং ব্যবসা-বানিজের হাট। অনেকটা বাবুর হাটের মত।

বয়স ছোট হলেও স্পষ্ট মনে আছে ঘটনা গুলো। ৬৯’এর গন-আন্দোলন হতেই বোধহয় শুরু। আইয়ুব খান মোনায়েম খান গং পাইকারি হারে গ্রেফতার করছে বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে এবং এই গংদের দেশীয় দোসরা উল্লাস করছে আইনশৃংখলার দোহাই দিয়ে, আস্ফালন করছে পেশি শক্তির মহড়া প্রদর্শনের মাধ্যমে। ৭১’এ মুক্তিযুদ্ধে চলাকালীন একজন মুক্তিযোদ্ধা অথবা তাদের পরিবারের কাউকে গ্রেফতার অথবা লাশ ফেললে একই কায়দায় উল্লাসে মেতে উঠত পাকিস্তানি দোসরের দল । বিজয় মিছিল, হুমকি, হাজার বছরে লড়কেলেঙ্গা পাকিস্তানের পক্ষে স্তুতি আর পাক সেনাদের বীরত্বের মহাভারত লেখায় মেতে উঠত এসব ভাড়াটিয়া সেবাদাসের দল। আজ একবিংশ শতাব্দির প্রথমাংশে এসে আবারও দেখতে হচ্ছে এসব কুলাঙ্গারদের প্রেতাত্মা। ওরা আইয়ুব, ইয়াহিয়া আর মোনায়েম খাঁ’দের মতই আস্ফালন করছে এবং ভয় দেখাচ্ছে শক্তি দিয়ে দমিয়ে দেবে দেশের অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছা।

১৭৩ দিন হরতাল, শত শত মানুষ খুন এবং নিজেদের জরায়ুতে তত্ত্বাবধায়ক নামক সরকারের জন্ম দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার স্বাদ নিয়েছিলেন। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে ঠেলে দিয়ে উদ্বার করেছিলেন প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ। পাচ বছর ধরে রাষ্ট্রকে নিবিড় লুটপাটের পর দেশের মানুষ উনাদের জন্য এখন মোহম্মদী বেগের মত। তাই বাঁচার জন্য আবারও দ্বারস্থ হয়েছে ভারতীয় গনিকাদের দুয়ারে। এবং তাদের ঔরস হতেই জন্ম নিয়েছে গণতন্ত্র রক্ষার নতুন হযরতে আলা, শেখ হাসিনা। এসব ভন্ডামি, নষ্টামির সাথে এ দেশের মানুষ অনেকটাই এখন পরিচিত। আগের বার বেগম জিয়া যেমন পারেন নি, এ যাত্রায় শেখ হাসিনাও পারবেন না। এ ইতিহাসের অমেঘো পরিণতি, এ হতে ইয়াহিয়া আইয়ুব, হিটলার মুসোলিনি, শেখ মুজিব জেনারেল জিয়া, এরশাদ বেগম জিয়া যেমন রেহাই পাননি, শেখা হাসিনাও রক্ষা পাবেন না। যুদ্ধের মাঠে বুদ্ধিমানরাই পিছু হটে। শেখ হাসিনা বুদ্ধিমান হয়ে থাকলে পিছু হটার এখনই সময়। অন্তত প্রাণে বাচতে পারবেন।

সাধু সাবধান -Mir H Azam

 

মনটা ভালো নাই। কি হচ্ছে আমার প্রিয় মাতৃভূমিতে? গতকাল জানলাম প্রধান মন্ত্রী আর তার পরিবারকে  কটাক্ষ করার অপরাধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত শিক্ষক জনাব ওহিদুজ্জামানকে জেলে ভরা হয়েছে। জনাব ওহিদুজ্জামানের নামে তৈরী করা ভুয়া একাউন্ট থেকে  প্রধান মন্ত্রী আর তার পরিবারকে নিয়ে পোস্টিংটা করা হয়েছিল। পোস্টিংটা সত্যি সত্যিই জনাব ওহিদুজ্জামান সাহেব করেছিলেন কিনা তা প্রমান করার জন্য তথ্য বিজ্ঞানীর দরকার পরে না। সে সব প্রমানের মধ্যে না গিয়ে মহামান্য জজ সাহেব জনাব ওহিদুজ্জামান সাহেব কে জেলে পাঠিয়ে দিলেন ।

এতো সেই বাকশালী পেতাত্তার ফিরে আশা। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা বন্ধ করা। গত পাচ বছর দেশের প্রধান মন্ত্রী আর তার চ্যালা চামুন্ডারা যে ভাবে বিরোধী দলীয় নেত্রী আর তার পরিবারের নাম কুত্সা রটিয়েছে, সেখান হাসি লাগে যখন জনাব ওয়াহিদুজ্জামান এর মত একজন সম্মানিত শিক্ষককে জেলে যেতে হয় সেই একই কারণে। কোথায় নিয়ে গেছে এরা এ দেশের বিচার ব্যবস্থাকে।

আজ যারা জনাব ওয়াহিদুজ্জামানের জেলে যাওয়ার খবরে বগল বাজ্জাচ্ছেন, তাদের অবগতির জন্য বলছি, খুব বেশি খুশি হওয়ার কারণ নাই। মনে রাখবেন বি এন পি ফেরেস্তাদের দল নয়। ক্ষমতার পালাবদলে, মোমের মত নরম মেরুদন্ড বিশিষ্ট এই জজ সাহেবদের ভোল পাল্টে যেতে এক মুহর্ত ও লাগবেনা। অতএব সাধু সাবধান।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও একটি দলের ষ্ট্র্যাটেজিক এনালাইসিস (পর্ব-২ এ দলের ষ্ট্র্যাটেজি ) by bdmylove

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও একটি দলের ষ্ট্র্যাটেজিক এনালাইসিস (পর্ব-২ঃ এ দলের ষ্ট্র্যাটেজি )

ভূমিকা

ষ্ট্র্যাটেজি এনালাইসিস সম্পর্কে আগের পর্বে (পর্ব-১) যে ধারণা আমরা পেয়েছি, এই পর্বে তাকে আমরা এ দলের ষ্ট্র্যাটেজি বোঝার কাজে ব্যাবহার করবো। এ দল সরকারী দল হওয়াতে সে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজের সুবিধামত ব্যাবহারের সুযোগ পেয়েছে। তাই তাদের ষ্ট্র্যাটেজি ব্যাপকভাবে অফেন্সিভ এবং বহুমুখী। তারা রাষ্ট্রের সকল নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য পাওয়ার কারণে তাদের কাছে সম্ভাব্য সকল তথ্য ও রিসোর্স আছে যার মাধ্যমে তারা ষ্ট্র্যাটেজি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সহযে করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের এই বহুমূখী রিসোর্স থাকার কারণে তারা কিছু কার্যক্রম লোকচক্ষুর আড়ালে করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আশা করা যায় সঠিক এনালাইসিস করা হলে আমরা সেগুলো সনাক্ত করতে পারবো।

মূলমন্ত্র

অফেন্সিভ ষ্ট্র্যাটেজির মূলমন্ত্র হচ্ছে নিজের CG (Centre of Gravity) কে প্রতিপক্ষের আক্রমন থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষের CG কে ধ্বংস করা। CG কে ধ্বংস করার মাধ্যম হচ্ছে প্রতিপক্ষের CC (Critical Capability) গুলোকে আক্রমন করা। কিন্তু যেহেতু প্রতিপক্ষও তার CG কে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর থাকবে তাই খুজে বের করতে হবে প্রতিপক্ষের CV (Critical Vulnerabilities), যেগুলো তার CC গুলোর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দুর্বলতা কিংবা যেগুলোকে বিভিন্ন কারণে রক্ষা করা প্রতিপক্ষের সাধ্যের বাইরে। এরপর সব ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে সেগুলোকে ধ্বংস, নিস্তেজ বা দুর্বল করতে হবে।

chess

এ ও বি দলের CG এনালাইসিস

          CG এনালাইসিস একটা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও জটিল প্রক্রিয়া যা সাধারণত একটা অভিজ্ঞ এনালাইসিস টিমের মাধ্যমে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সম্পন্ন হয়। আমাদের জন্য সুখবর হচ্ছে আমরা ইতিমধ্যে এই দুই দলের কার্যক্রম থেকে তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছি। অন্যথায় প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম থেকে আমরা কনফিউজড হতাম নিশ্চিত। উপস্থাপনার সুবিধার্থে এই এনালাইসিসগুলো ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। প্রথমেই দেখা যাক এই দুই দলের কাঙ্খিত এন্ডস্টেট (Desired End State) ও CG কি হতে পারেঃ

দল

এন্ডস্টেট

CG

পুনরায় নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠণ জনগণের ম্যান্ডেট/ নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন
বি নির্বাচনে সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া জনগনের মতামত/সাপোর্ট/ম্যান্ডেট

এখানে আমরা যতটা নিশ্চিতভাবে এই CG নির্ধারণ করতে পারছি তা আজকে থেকে চার বছর আগে সম্ভব হতোনা। এইটা আসলে একটা পোস্ট এনালাইসিস। লক্ষ্যণীয় যে এ দলের প্রাথমিক CG ও সভবত ছিল জনগণের ম্যান্ডেট, যা এক পর্যায়ে তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপের কারনে অর্জন করা অসম্ভব হয়ে পরায় (জরিপের ফলাফলে)তারা CG বদল করতে বাধ্য হয়। এখন আসুন দেখা যাক এই CG গুলোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রধাণ CC (Critical Capability) গুলো কি কিঃ

এ দল (CG- নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন)

বি দল (CG-জনগনের ম্যান্ডেট)

নেত্রীর অধীনে সর্বদলীয় সরকার দলের ইমেজ
প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রন বি-জা জোট
পুলিশের আনুগত্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার
অনুগত ও দুর্বল নির্বাচন কমিশন দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা
মিডিয়ার উপর নিয়ন্ত্রন প্রচার ক্ষমতা/ মিডিয়া সমর্থন
ভবিষ্যত নেতৃত্বের বিকাশ (**) যুব নেতৃত্ব (তারেক)
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান JSbr এর পেশীশক্তি
কূটনৈতিক মহলের সমর্থন কূটনৈতিক মহলের সমর্থন
ভারতের সমর্থন অর্থনৈতিক সাপোর্ট
চেতনা ব্যাবসা প্রশাসনে সুপ্ত সিম্পেথাইজার
সামরিক বাহিনীর সমর্থন/নীরবতা শেষ পর্যায়ে সরকারী বাহিনীগুলোর সমর্থন

উপরের তালিকাটি একান্তই আমার চিন্তাপ্রসূত এবং আমার ধারণা আপনাদের অনেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু CC লিস্ট করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু তা আমাদের এই সিস্টেমেটিক বিশ্লেষণকে ব্যাহত করবে না।

যেহেতু, এই পর্বে আমরা এ দলের সম্ভাব্য  ষ্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা করছি, তাই আমরা এই পর্যায়ে বি দলের CC গুলোকে বিশ্লেষণ করে এর দুর্বলতাগুলো (CV) চিনহিত করবো। বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার জন্য এখানে একটা ধাপ এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা হলো এই CC গুলোর CR (Critical Requirements) বিশ্লেষণ। নিচে বি দলের CV এনালাইসিস ও  সম্ভাব্য ষ্ট্র্যাটেজি দেয়া হলো। এই তালিকার সাথেও অনেকে একমত না হতেই পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার মতামত জানাবেন। (এই ধাপে আপনাকে এ দলের সমর্থকের/নীতিনির্ধারকের মত করে চিন্তা করতে হবে, তবেই আপনি সেই দলের কর্মকান্ড ব্যাখ্যা করতে পারবেন। কিছু কিছু CV কল্পনাপ্রসূত হতে হবে, যা গোয়েবলসের প্রপাগান্ডা নীতি অনুসারে জনগণের মনে ঢুকাতে হবে)ঃ

 

বি দলের CV এনালাইসিস ও এ দলের সম্ভাব্য ষ্ট্র্যাটেজি

CC (Critical Capabilities)

CV (Critical Vulnerabilities)

এ দলের  সম্ভাব্য ষ্ট্র্যাটেজি

দলের ইমেজ নেত্রীর ইমেজ

  • পুথিগত বিদ্যার কমতি
  • ৭১ এ অবস্থান
  • সৌন্দর্য সচেতনতা

যুবদল/তারেকের ইমেজ

  • বিগত আমলের দুর্নীতি
  • বিভিন্ন মামলা
  • উচ্ছৃংখল জীবন
  • বিতর্কিত ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক

অন্যান্য টপ নেতাদের ইমেজ

  • বিগত আমলের দুর্নীতি
  • মাঠপর্যায়ের আন্দোলনে অনুপুস্থিতি
  • দল বদলের ইতিহাস
  • ৭১ এ ভূমিকা
  • প্রথাগত মিডিয়ায় অপপ্রচার
  • অপ্রথাগত/ সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার/ প্রপাগান্ডা
  • পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসকে নিজস্ব সুবিধা মতো বদল
  • তরুণ প্রজন্মকে চেতনা ব্যাবসায় উদ্বুদ্ধ করা
  • শেষ মুহুর্তে তারেকের মামলার রায় ঘোষণার মাধ্যমে বিতর্কিত করা
  • রাজপথে পুলিশ দ্বারা অসম্মান করে (*ফারুক)নেতাদের ইমেজ নষ্ট করা
  • নেতাদের মাঠে উপস্থিত হতে না দেয়া
  • নেতাদের দল বদলে/দলের বিরুদ্ধে বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ/পুরষ্কৃত করা
  • শাহবাগ টাইপ আন্দোলন করে যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করা
বি-জা জোট জমায়েত দলের ইমেজ

  • ৭১ এ ভূমিকা
  • নেতাদের যুদ্ধাপরাধ
  • শিবিরের তান্ডব/ রগকাটা রাজনীতি
  • বোমাবাজি সংশ্লিষ্টতা

বি দলের অবস্থান

  • জমায়েতের আনুগত্য
  • ৭১ সম্পর্কিত (যুদ্ধাপরাধ) অবস্থান
  • তথাকথিত চেতনার অভাব
  • যুদ্ধাপরাধ মামলার পদ্ধতি ও রায় নিয়ন্ত্রন করতে জনমত তৈরি করা
  • প্রথাগত এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচার/অপপ্রচার/ প্রপাগান্ডা
  • নেতাদের বোমাবাজি মামলায় জড়ানো
  • নির্বাচনে জমায়েতের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা
  • শেষ মুহুর্তে সকল জমায়েত নেতাদের নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা
  • নির্বাচনী সংলাপের সময় ভিজুয়াল মিডিয়াতে বি দলকে জমায়েতের সমর্থন নিয়ে বিব্রত করা
নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার
  • নিরপেক্ষ লোকের অভাব
  • অনির্বাচিত সরকারের কালো(!) অধ্যায় (মঈন-ফখরুল)
  • তত্তাবধায়ক সরকার আমলে রাজনীতিবিদদের দুর্ভোগ
  • সংবিধানের সীমাবদ্ধতা
  • ডাঃ ইউনুসকে বিতর্কিত করা
  • সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা
  • উন্নত দেশের নির্বাচনের উদাহরণ
  • রাজনীতিবিদদের সম্ভাব্য দুর্ভোগ নিয়ে সচেতন করা
  • তৃতীয় শক্তির জুজু
  • (আগ্রহ প্রকাশকারী)সম্মানিত ব্যক্তিদের বিতর্কিত করা
দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা
  • তৃণমূল সংগঠনের সদস্যদের নিরাপত্তা
  • তৃণমূল নেতাদের মামলা সংশ্লিষ্টতা
  • তৃণমূল নেতাদের স্থাবর সম্পদের নিরাপত্তা
  • প্রধাণ নেতাদের এলাকায় অনুপস্থিতি
  • তারেকের অনুপস্থিতি
  • নেতৃত্তের উপর অনাস্থা
  • পুলিশ/মামলার মাধ্যমে হয়রানী
  • মামলার রায় ঘোষণা করে ফেরারী করা
  • নেতাদের স্থাবর সম্পত্তি জবর দখল করে তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা
  • প্রধাণ নেতাদের এলাকায় গমনকে অনিরাপদ করা
  • নেতাদের নামে ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিতির অপপ্রচার/ প্রপাগান্ডা
  • তারেকের সাথে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রন
  • শেষ সময়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নিরাপত্তা/ টেন্ডার ভাগাভাগির আশ্বাস দিয়ে নিস্ক্রীয় করা
প্রচার ক্ষমতা/ মিডিয়া সমর্থন
  • পৃষ্ঠপোষকতার অভাব
  • সরকারী বিজ্ঞাপন
  • মামলা সংশ্লিষ্টতা
  • বিতর্কিত মিডিয়া আইন পাশ
  • বিরোধী মিডিয়া নিষিদ্ধ করা
  • মিডিয়া মালিকদের জেল/জরিমানা/ হয়রানী
  • সকল বিরোধী মিডিয়াকে হয়রানী
  • সামাজিক মাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রন
যুব নেতৃত্ব (তারেক)
  • মামলা সংশ্লিষ্টতা
  • দেশে বিদেশে ইমেজ
  • নির্বাচনের আগে অনুপস্থিতি
  • তারেকের মামলার রায়
  • বিদেশী সংস্থা কতৃক তারেককে হয়রানীর চেষ্টা
  • তারককে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত দেশে অবাঞ্চিত করা
JSbr এর পেশীশক্তি
  • মামলা সংশ্লিষ্টতা
  • JSbr এর ইমেজ
  • জংগী সংশ্লিষ্টতা
  • মামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে হয়রানী
  • রগকাটা ইমেজ প্রচার/ প্রপাগান্ডা
  • JSbr কে বোমাবাজি সংশ্লিষ্ট প্রমাণ করা
  • JSbr কে নিষিদ্ধ সংগঠণ ঘোষণা করা
কূটনৈতিক মহলের সমর্থন
  • বি দলের ইসলামপন্থী ইমেজ
  • ভারত বিরোধী ইমেজ
  • জংগী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
  • কুটনৈতিকদের নিরাপত্তা
  • পশ্চিমাবিরোধীতার জুজু
  • তালেবান রাষ্ট্র সৃষ্টির জুজু
  • ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য লাভের চেষ্টা
  • নেতাদের সাথে আন্তর্জাতিক জংগীদের যোগাযোগ প্রমণের চেষ্টা
  • কূটনৈতিকদের উপর আক্রমন করে দায়ভার বিরোধীদের উপর চাপানো
অর্থনৈতিক সাপোর্ট
  • বি দল সমর্থক ব্যাবসায়ীদের নিরাপত্তা
  • দেশী/ বিদেশি একাউন্ট
  • মধ্যপ্রাচ্য থেকে গোপন সাহায্য সম্ভাবনা
  • বি দল সমর্থক ব্যাবসায়ীদের প্রকাশ্যে ও গোপনে পুলিশী হয়রানী
  • সহায়তাকারীদের একাউন্ট জব্দ
  • বিদেশী সাহায্য মনিটর ও সম্ভব হলে জংগী সংশ্লিষ্ট প্রমান
প্রশাসনে সুপ্ত সিম্পেথাইজার
  • চাকুরী নিরাপত্তা
  • গুরূত্বপূর্ণ পদে অবস্থান
  • প্রশাসনে বি দলের সমর্থনকারীদের সনাক্ত করে সাইডলাইন করা
  • সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে নিজস্ব লোক বসানো
  • বিরোধী মতকে দৃষ্টান্তমূলকভাবে দমন
শেষ পর্যায়ে সরকারী বাহিনীগুলোর সমর্থন
  • গুরুত্বপূর্ণ পদ
  • আর্থিক চাহিদা
  • পরবর্তী আমলে সুবিধাপ্রাপ্তি
  • আইনগত জটিলতা
  • সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজস্ব লোক বসানো
  • প্রমোশন এর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ফেভার না করে, পরবর্তী মেয়াদে্র স্বপ্ন/ মূলা দেখানো
  • পুলিশ/ প্রশাসনকে বেআইনী কাজের ফাদে ফেলে তাদের নামে মামলার হুমকী সৃষ্টি করা, যাতে তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এ দলের পুনঃর্নিবাচন সমর্থন করতে বাধ্য হয়

উপরের ছকটিতে এ দলের সম্ভাব্য ষ্ট্র্যাটেজিগুলো সিস্টেমেটিক পদ্ধতিতে নির্ধারনের একটা একাডেমিক প্রয়াস নেয়া হয়েছে। আগেই বলেছি এই ধরণের কাজের জন্য অভিজ্ঞ নীতিনির্ধারকদের একটি দল দীর্ঘসময় নিয়ে কাজ করে এবং পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে তাকে আপডেট করে।  বোল্ড লেখা দিয়ে সম্ভাব্য ভবিষ্যত ষ্ট্র্যাটেজি বোঝানো হয়েছে। এগুলো ছাড়াও দলটি তাদের নিজস্ব CC (Critical Capability) কে রক্ষার প্রয়োজনে কিছু পদক্ষেপ নিবে, যা আলোচনা সংক্ষিপ্ত করার জন্য এড়িয়ে যাওয়া হলো।

পরিশিষ্ট

এ দল রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে বি দলের প্রায় সকল দুর্বলতায়  ইতিমদ্ধে আঘাত এনেছে। এ কারণেই ব্যাপক জনমত থাকা সত্ত্বেও বি দলকে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রন পেতে অসম্ভব বেগ পেতে হচ্ছে। বি দলের নীতিনির্ধারকদের সম্ভবত বিভিন্ন মামলা, কার্যালয়ে যেতে বাধা ও হয়রানীর মাধ্যমে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিতে প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে । ষ্ট্র্যাটেজির ভাষায় একে বলে প্রতিপক্ষের ডিশিসন সাইকেল ভেঙ্গে দেওয়া। এ দল এক্ষেত্রে অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। তবে বি দলের সবচেয়ে বড় শক্তি জনগনের কাছে তাদের ত্তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর গ্রহণযোগ্যতা। তাই তারা ষ্ট্র্যাটেজির দৌড়ে একটু পিছিয়ে থাকলেও এখনও ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ আছে বৈকি!

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও একটি দলের ষ্ট্র্যাটেজিক এনালাইসিস (পর্ব-১: ষ্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং প্রসেস ) by bdmylove

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও একটি দলের ষ্ট্র্যাটেজিক এনালাইসিস (পর্ব-১: ষ্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং প্রসেস )

ভূমিকা

           দেশের সমাজ ও রাজনীতি একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গত দুই দশকে নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকবার সরকার আর বিরোধীদলের মধ্যে অলঙ্ঘনীয় দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ইউনিক। বিগত কয়েক বছরে সরকারের কর্মকান্ড থেকে প্রতীয়মান হয় যে এবারের পরিস্থিতি মোটেই হঠাত করে উদ্ভুত ক্রাইসিস না।  বরং এই পরিস্থিতি বড় দলগুলোর পরিকল্পিত ষ্ট্র্যাটেজির প্রতিফলন। বর্তমান পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে ষ্ট্র্যাটেজি এনালাইসিস সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারনা প্রয়োজন। তার পরে প্রয়োজন হবে প্রধাণ দলগুলির (lets call them এ দল ও বি দল) ষ্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে ধারণা। এর পরে আমরা সহজে বুঝতে পারবো দলগুলি কি করছে আর কেন করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি জানা যাবে তা হচ্ছে, তারা ভবিষ্যতে কি করতে পারে। (নিশ্চিতভাবে আমাদের দুই দল একে অপরের সম্পর্কে এনালাইসিস করে কর্মপন্থা ঠিক করেছে, কিন্তু স্বভাবতই তারা সাধারণ জনগণকে তা অবহিত করবেনা।) সুতরাং আমরা নিজেরাই চলুন কষ্ট করে ‘দুধ কা দুধ, পানি কা পানি’ বানাই।

এই লেখাটা দুটি পর্বে বিভক্ত হবে :

১।   ষ্ট্র্যাটেজি এনালাইসিস কিভাবে করে?

২।   এ দলের ষ্ট্র্যাটেজি এনালাইসিস।

একই পদ্ধতি ব্যাবহার করে বি দলের ষ্ট্র্যাটেজি এনালাইসিস করা সম্ভব, যা এই লেখার আলোকে আপ্নারা নিজেরাই করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

ষ্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং প্রসেস

          ২৪০০ বছর আগে বিখ্যাত চীনা সামরিক চিন্তাবিদ সানযু(SunTzu) ষ্ট্র্যাটেজি নিয়ে প্রথম উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা আর্ট অব ওয়ার রচনা করেন। আধুনিক যুগের উল্লেখযোগ্য ষ্ট্র্যাটেজিষ্টদের মধ্যে আছেন ক্লসউইটস(১৯ শতক), লিডেল হার্ট (২০ শতক) প্রমূখ।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৭০ এর দশকে বিজনেস ম্যানাজমেন্ট এ ষ্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং এর প্রচলন হয়।

               আধুনিক ষ্ট্র্যাটেজিক এনালাইসিস ও প্ল্যানিং এর একটি বহুল প্রচলিত প্রসেস হচ্ছে SWOT এনালাইসিস। এ পদ্ধতিটি বিজনেস ম্যানাজমেন্ট এ বেশ জনপ্রিয় এবং ইফেক্টিভ। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোও এই পদ্ধতি ব্যাবহার করে।এর মাধ্যমে নিজস্ব অর্গানাইজেশনের strength, weakness, opportunity and threat ক্রস এনালাইজ করে ষ্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত  নেয়া হয়।এ পদ্ধতিটি ডিফেন্সিভ ষ্ট্র্যাটেজি প্ল্যানের জন্য ভালো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতির পরিস্থিতি বিবেচনা করলে স্পষ্টতই বোঝা যায়, আমাদের দলগুলো অফেন্সিভ ষ্ট্র্যাটেজি প্ল্যান করছে। তারা একে অপরকে সম্ভব হলে পুরোপুরি নিশ্চিনহ করে দিতে আগ্রহী। এজন্যেই তাদের কাজকর্ম আমরা সাধারন ছকে ফেলে মিলাতে পারিনা। আর এখানেই এই লেখার প্রধাণ গুরুত্ব।

            অফেন্সিভ ষ্ট্র্যাটেজি প্ল্যানিং মূলত বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে, যার আধুনিক যুগের গুরু হচ্ছেন Clausewitz. তিনি এক্ষেত্রে যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বটি দেন তা হচ্ছে সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি (http://www.clausewitz.com/readings/Bassford/StrategyDraft/#CoG)। এই তত্ত্বটি মূলত প্রতিপক্ষের শক্তির উতস খুজে বের করে সেটাকে ধ্বংস করার প্রয়োজনীতা ব্যাখ্যা করে।  এ তত্ত্বটিকে বিজনেস এনালাইসিস এর জন্য উপযোগী একটি মডেলে রূপ দেন Dr. Joe Strange (http://www.vsente.com/comprct11.html)। পরবর্তীতে এই মডেলটি সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার সাথে ব্যাবহার হয়।

                 আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ষ্ট্র্যাটেজি বোঝার জন্য Dr. Joe Strange এর CG-CC-CR-CV মডেল ব্যবহার করবো।

              প্রতিটি ষ্ট্র্যাটেজিক প্লানের একটা আল্টিমেট উদ্দেশ্য থাকে, ষ্ট্র্যাটেজির ভাষায় যাকে বলে এন্ডস্টেট (End State)। এর অর্থ হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে আমরা আসলে কি অর্জন করতে চাচ্ছি। এই এন্ডস্টেট অর্জনের জন্য প্রয়োজন হয় কিছু Means(বিভিন্ন কার্যকরি মাধ্যম, যেমন সাংগঠনিক ক্ষমতা, এলায়েন্স, ছাত্র সংস্থা, তৃণমূল সংগঠন, কুটনৈতিক সংযোগ ইত্যাদি) এবং Ways(পন্থা, অর্থাৎ কি পথে তা অর্জন করা হবে)।

                এই পন্থা নির্ধারনের জন্য প্রয়োজন প্রতিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা। ডাঃ স্ট্রেঞ্জ এর মডেল আমাদের এটা করতে সাহায্য করবে।আসুন বোঝার চেষ্টা করি এই CG-CC-CR-CV বলতে কি বোঝায়!

  • CG (Centre of Gravity).       এটা হচ্ছে প্রতিপক্ষের শক্তির মূল কেন্দ্র যা তাকে তার তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় বাহ্যিক/শারীরিক ও আভ্যন্তরীন/সাইকোলজিকাল ক্ষমতা প্রদান করে। এর উপরেই সবকিছু নির্ভর করে এবং একে নিস্ক্রীয় করার জন্য  সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হয়।
  • CC (Critical Capability).     সেইসব মাধ্যম/যোগ্যতা যেগুলো প্রতিপক্ষের  CG কে কার্যকর রাখতে মূখ্য ভূমিকা পালন করে এবং তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেগুলো তাকে কার্যকর রাখতে হবে। এইসব CC প্রতিপক্ষের CG কে রক্ষা করে।
  • CR (Critical Requirements).            প্রতিপক্ষের প্রতিটি CC এর কয়েকটি “critical requirements” থাকে —এগুলো হচ্ছে সেইসব অবস্থা, মাধ্যম ও সম্পদ যেগুলো প্রতিটা CC কে সম্পূর্ণ কার্যকর রাখার জন্য আবশ্যক।
  • CV (Critical Vulnerabilities).          Critical vulnerabilities হচ্ছে প্রতিপক্ষের CC এর সেইসব দূর্বলতা যেগুলোকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে  আক্রমণ করে সহজেই তার CC কে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করা যায়। এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে যে CV কে অবশ্যই এমন বিষয় হতে হবে যা CG এর উপরে সূদুরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে সক্ষম।     

Critical vulnerabilities কে আরো গভীরভাবে বুঝার জন্য আমরা একটা গ্রীক ঊপকথার এনালগির সাহায্য নিবঃ

          Thetis the goddess took her son Achilles and dipped him in the River Styx, to make him immortal. The current was so fast she was forced to hold him by the heel, which remained untouched by the magic waters. So by the heel alone could Achilles be wounded by ordinary mortals.                                                                                                                                                                                                                 ( Ancient Greek Legend)

ট্রোজান যুদ্ধের গ্রীক লিজেন্ড একিলিস এর বীরত্বকাহিনী সবারই জানা। সে অসাধারন যোদ্ধা ছিল এবং সম্মুখ মল্লযুদ্ধে তাকে পরাজিত করার মত কোন যোদ্ধা ছিলনা, কারন সে দেবী থেটিস এর সন্তান ছিল। থেটিস তাকে অজেয় করার জন্য বরদান করেছিল, শুধু একটা দুর্বলতা বাদেঃ তার পায়ের গোড়ালী ছিল তার একমাত্র দুর্বলতা।

ট্রোজান যুদ্ধের একটা পর্যায়ে একিলিস হয়ে দাঁড়ায় গ্রীক CG (Centre of Gravity)। তাকে প্রতিরোধ করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করার জন্য ট্রোজানরা চেষ্টা করে। একিলিসের গোড়ালী ছিল তার একান্ত আভ্যন্তরীন দুর্বলতা (নিঃসন্দেহে একটা  Critical Vulnerability) , কিন্তু তার নাগাল পাওয়া সহজ ছিলনা। তাই প্রয়োজন ছিল আরও কিছু Critical vulnerabilities যেমন যদি তাকে যুদ্ধে যোগদান থেকে বিরত রাখা যেত, তাকে বহন করা জাহাজকে ধংস বা বিলম্বিত করা যেত, কিংবা ট্রয় শহরের প্রবেশদ্বারকে সুরক্ষিত রাখা যেত তাহলেও একিলিসকে তার উদ্দেশ্য (ট্রয় বাহিনীর ধংস) সাধন থেকে বিরত রাখা সম্ভব ছিল। এগুলোও তাই একিলিসের পরোক্ষ Critical vulnerabilities এই এনালগি থেকে আমরা পাই যে CG কে নিস্ক্রীয় করার প্রধাণত তিনটা মাধ্যম আছেঃ

ক।   CG কে আপ্রাসংগিক করে দেওয়া (একিলিস এর জাহাজ ট্রয় এ আসা প্রতিরোধ করা)।

খ।   CG কে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা (একিলিস যদি ট্রয় এ পৌছে, তবে তাকে শহরে ঢুকতে যারা সাহায্য করবে, অর্থাৎ প্রবেশদ্বার ভাংতে সাহায্য করবে, সেইসব সৈন্য ও উপকরণ ধংস করা)।

গ।   CG কে তার একান্ত আভ্যন্তরীন দুর্বলতায় আঘাত করে ধংস করা (অর্থাত শেষ পর্যন্ত যদি একিলিস এর সাথে যুদ্ধ করতেই হয়, তবে তার গোড়ালীতে আঘাত করে ধ্বংস করা)।

এই তিনটা পদ্ধতি স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো আমাদের প্রতিপক্ষের Critical Capabilities নির্ধারণে সাহায্য করবে, যা ষ্ট্যাটেজি নির্ধারনের একটা গুরূত্বপূর্ণ নিয়ামক। নিচে একটা চিত্রের মাধ্যমে CG-CC-CR-CV এর মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হলোঃ

                                      CG CV 2

 লাল রঙের বৃত্তগুলো দিয়ে বোঝানো হচ্ছে যে একটি CV কে ধ্বংস করলে চেইন রিএকশনে তা গিয়ে CC ও  CG কে প্রভাবিত করে ।এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে যে কিছু CV একাধিক CC কে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে, তাই সেগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

 পরিশিষ্ট

এই পর্বে আমরা অফেন্সিভ ষ্ট্র্যাটেজি এনালাইসিস এর প্রাথমিক ধাপ সম্পর্কে একটা ধারণা প্রদানের চেষ্টা করলাম। আশা করি এই ধারণাগুলো পরবর্তী দুই পর্বে আপনাদের দুই প্রধাণ দলের ষ্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা বুঝতে সহায়ক হবে। আসলে এটা বেশ জটিল একটা পদ্ধতি। আমি পদ্ধতিটির একটি অংশ সাধারণ ভাষায় লিখার চেষ্টা করলাম। পরবর্তী পর্বগুলোতে প্রাকটিকাল উদাহরণ দিলে আপ্নারা আরো পরিষ্কার ধারণা পাবেন। যারা আরো গভীরভাবে বুঝতে আগ্রহী তারা নিচের লিঙ্কগুলোর সহায়তা নিতে পারেনঃ

http://www.clausewitz.com/readings/Bassford/StrategyDraft/#CoG

http://www.vsente.com/comprct11.html

http://twoscenarios.typepad.com/maneuver_marketing_commun/files/dr_strange_article_part_2.pdf

http://www.campaignstrategy.org/articles/12basicguidelines.pdf

আমাদের মতি মিয়া ও এক আজাইর‍্যা মন্ত্রির গল্প – By Almaruf

আমাদের মতি মিয়া ও এক আজাইর‍্যা মন্ত্রির গল্প
By – Almaruf

(১)
সুনামগন্জ জেলা সদর থেকে তাহিরপুর সড়ক ধরে ঘন্টাখানেক চললে হাতের ডানপাশে বিলের বুক চিরে কাচা রাস্তা – সেই রাস্তা ধরে আরো ঘন্টা দুয়েক চলার পর পড়বে বিখ্যাত এক গ্রাম – চোরের গ্রাম । সেই গ্রামের অধিকাংশ লোক বংশানুক্রমে চৌর্যবৃত্তির সাথে জড়িত – কাজটাকে তারা পবিত্র এক শিল্পকর্মের পর্যায়ে নিয়ে গেছে । অধিকাংশ লোক পৈত্রিক এই পেশা নিয়ে রিতিমতো গর্বিত। আর হবেইনাবা কেন- এই পেশায় তাদের মতো সুনাম এই জেলায় কেউ দেখাতে পেরেছে ?

ভাটি এলাকার আর পাচটা আজপাড়াগায়ের মত চোরের গ্রামেও বর্ষায় রিতিমতো নিদানের সময় । ভাটির দেশে অভাব কাকে বলে সেটা শহুরে মানুষকে বলে বুঝানো রিতিমতো অসম্ভব ব্যপার, কিন্তু চোরের গ্রামের লোক সেই ঘোর নিদানের দিনেও নিজেদের গ্রামে কখনও চুরি করবেনা – এ এক অলিখিত নিয়ম । কেউ করলে তাকে জুতোপেটা করিয়ে গ্রাম ছাড়া করা হয় । চোরের গ্রামের লোক এই একটা ব্যপারে বড়ই কড়া – নিদারুণ অভাবের তাড়নায় যদিও প্রতিবছরই এরকম ঘটনা দুই একটা ঘটে, কিন্তু ক্ষমা তাদের কখনই মেলেনা ।

আশপাশের গ্রামের মুটোমুটি অবস্থাসম্পন্ন গেরস্তেরা বাড়ির উপরের দিকে পাকা করুক না করুক ভিটে থেকে নিচের দিকে শক্ত গাথুনির দেয়াল দেয় । তাও সবসময় যে রক্ষা মিলে তা না, চোরের গ্রামের চোরেদের সাথে স্বগ্রামের চোরদের উৎপাতে মাঝে মাঝে অনেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসতেও বাধ্য হয় । চোরের গ্রামের মেয়েদের বাইরের কোন ভদ্রলোকের সন্তান বিয়েও করেনা – তাতে নাকি জাত যায় । চোরের বংশের মেয়েরা নাইওর যাবার বেলায় বাড়ি থেকে হাড়ি-পাতিল ঘটি বাটিসহ নানান জিনিস পত্র হাওয়া করে নিয়ে যায় । এরপর আছে ছেলেমেয়ের চিন্তা – এরাও যদি মায়ের সেই দোষ পায় তাহলে সমাজে মুখ রক্ষা হবে ? তাই বলে সবাই যে সারাজীবন চুরি করে যায় তাও ঠিক না – অনেকে পড়ালেখা করে বাপ-দাদার মুখে চুনকালি মেখে দিয়ে শহরে চলে যায় । অনেকে ভাগ্যের অন্বেষনে পাড়ি জমায় বিদেশে ।

দাওয়ায় বসে বসে মতি মিয়া তাই ভাবে – তারও এক ছেলে ছিলো, জেলা সদরে এক হুজুরের বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে কিভাবে যেন ধরা পড়ে যায়। মতি বড়ই শরমিন্দা হইছিলো সেইদিন। চোর গ্রামের সেরা চোর মতি মিয়ার ছেলে কাজে গিয়া প্রথম দিনই ধরা খায়? এইটা বড়ই বেইজ্জতইর ব্যপার। আবার সেই হুজুরে আবার কিনা তার ছেলেরে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয় – সেইটা যে কেমনে ঘটলো মতি আজও বুঝতে পারেনা । এরপর ছেলেয় আর কোনদিন বুড়া বাপের দিকে ফিরেও তাকায় নাই । মতি মিয়া মনে মনে “হারামির পুলা” গালি দিতে দিতে তেল মাখায় মন দেয় । আজকে লষ্করপুরে একখান ক্ষেপ আছে। বেইল হয়া গেছে মেলা – আর দেরি করা যাইতো না ।

(২)

“কাজে” যাওয়ার সময় মতি সুবল সেনের বাড়ির সামনে থমকে দাড়ায় । চোরের গ্রামের নামিদামি চোর সুবল সেন । গেলোবার ইলেকশানে তার মেয়ের জামাই নাকি মিনিষ্টার হয়েছিলো , কিন্তু তখন কিছু শোনা যায় নাই, সুবল সেন জিনিষটা সভাব বসত চেপে যায় । নাইলে কি আর মানুষের ভিড় সামাল দেওয়া যেতো ?

গেল মাসে সুবল সেনের সেই জামাই নাকি টাকার বস্তাসহ ধরা খেয়ে যায়- সেই থেকে সুবল সেন আর তার জামাইর বড় নামডাক চোরের গ্রামে । প্রতিদিন গ্রামের অকর্ম মুরব্বিরা সুবল সেনের উঠানে বসে দিনের বেলা আড্ডা জমায় । সুবল সেনের নাতি নাত্নি তাদের চা-পান হুক্কা-তামুক এগিয়ে দেয় । সুবল ঘরের ভেতর বসে বসে বিড়ি টানে – বেশি একটা দাওয়ায় আসেনা – ইদানিং সে তার সদ্য পাওয়া ইজ্জতের ব্যাপারে খুবই সচেতন। এই জামাই যখন ছোটখাটো চুরি করতো তখন তো তারে সবাই অনেক কথা শুনাইছে । “কি সুবল তোমার জামাই হুনি টাউনে পকেট মারে, এইটা তুমি কি করলা!” এহন বুঝ শুমুন্দির পুলারা ।

জামাই গর্বে সুবলের ছাতি এখন অনেকখানি উচু। সবার কথার উত্তর দেয়না – তিন কথা জিগ্গ্যেস করলে এক কথা কয়। গ্রামের লোকেরাও মেনে নেয়। যতই হোক এই সম্মান সুবলের পাওনা, থানার কনষ্টেবল পর্যন্ত এখন বাজারে সুবলের সাথে বসে চা খায় । চোরের গ্রামের জন্য এইটাও কি কম পাওনা।

মতি মিয়া ভাবে – খইসলত যায়না ধুলে আর ইজ্জত যায়না মলে। এত্তোবড় মেনেষ্টারের শশুর হইয়াও গেলো হাপ্তায় রমেশেরে নিয়া জামতলিতে চুরি করতে গিয়া খাইলো ধরা। আচানক কারবার, পরের দিনই আবার পুলিশের হাত থেকে ছাড়াও পায়া যায়, সাথের রমেশ আইজ পর্যন্ত থানায় আটক । মতি মিয়া বুঝতে পারে এখন – জামাই মেনেষ্টার হলি কতো লাভ । কিন্তুক সুবল কি কয়া সয়া রমেশেরে ছাড়ায়া নিয়া আসতি পারতোনা ? ষাটোর্ধ মতি মিয়া বিড়বিড় কইরা কারে যানি গালি দেয়- বোঝা যায়না ।

(৩)

ইদানিং চোরের গ্রামের মেয়েদেরও বিয়ের বাজারে ভাও বাড়ছে – অনেক বড় বড় ঘরের লোকেরা চোরের গ্রামে আত্মিয়তা করতে আসতেছে । রিতিমতো ডাকে তোলে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছে চোর বংশের লোকেরা । চোরের গ্রামের ইজ্জত তরতর করে বাড়ে । মতি বুঝতে পারে – সবই সুবল সেনের জামাইয়ের কল্যাণে । হবিনা কেন, যেই চোরের গ্রামের মাইয়্যাগুলা বছরের পর বছর আবিয়াত্তা বইসা থাকতো ঘরে – তাগো মধ্যে সুবলের ঘরেই যে এরকম একটা মাইয়া ছিলো কে জানতো । সুবলের কপাল দেইখ্যা মতি মিয়ার হিংসা হয় – বিড়বিড় কইরা এবার মেনেষ্টারেরে গালি দেয় , সেইতো মেনেষ্টার হলি – দশটা বছর আগে হলি তো আমার ময়নার একখান জব্বর সম্মুন্ধ করতাম । আহারে মাইয়াটারে আমার মাইর‍্যাই ফালাইলো । ময়নার লাশটাও পর্যন্ত জামাই শাশুরি গুম কইরা দিছিলো । বয়সের ভারে কুজো মতি মিয়া সুবলের দাওয়ায় বসে ।

জামাই থাকেন ঢাকায় – তিনি তো আর তাদের মতো ছোটলোক না, গ্রাম গন্জের বাতাস তার শরিরের জন্য নাকি ভালো না। তার খবর সব পাওয়া যায় কালু শেখের কাছে । এই গ্রামে কালু শেখ একমাত্র শিক্ষিত লোক- পাচ কেলাস পাশ । বাজার দিনে কালু শেখ পোষ্টাপিশের বেন্চে বসে পেপার পড়ে । সবাই তারে খুবই মান্যগণ্য করে এই জন্য ।

কালু শেখে বলে যায় – জামাই নাকি ম্যানেজার রাখছে, বস্তা ভইরা লোকে টেকা দিয়া যায় – হিসাব রাখতি হয়না ? কালু শেখের সাথে সবাই মাথা ঝাকায়, তাতো ঠিকই, মেনেষ্টারি কি সোজা কথা নাকি? বড়ই মুশকিল কাম।

সাও পেয়ে কালুর গলা উচু হয় । হেনতেন কথা না মিয়া, জামাইর ফটো দেখছি পেপারে। পেতাকা লাগাইন্যা গাড়ি নিয়া জামাই পেরেধানমন্তির সাথে দেহা করতি যায় । কি জানি বড় একখান দাও মারছে জামাই, তাইনরে নাকি মেডেল দিছে সরকার । হেনতেন কতা না বুঝলা, হেনতেন কতা না । কালুর সাথে সাথে বাকি সবাই জামাইর কর্মতৎপরতায় অতিব সন্তুষ্ট হয়ে মাথা নাড়ে।

পেছন থাইক্যা জমির পাগলা জিগায় – পেরেধানমন্তি কি গো কালু মিয়া ? কালু খুব বিরক্ত হয়া জমিরের দিকে চায় – তুই হেইডা দিয়া কি করবিরে হারামির পুলা ? তোর কি হেই শিক্ষা আছে নি ? সবাই গোগ্রাসে কালু শেখের কথা শুনছিলো – আচানক বাধায় অত্যান্ত বিরক্ত হয় ।

কালু শেখ খুব ভাব নিয়া লুন্গির খুট থকে বিড়ি বের করে সময় নিয়া ধরায়, সে বুঝতে পারে সবাই তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। এই সভার কেন্দ্রবিন্দুটা এখন সেই – সময়টা সে খুব তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে । বিড়িতে একটা সুখ টান দিয়া আস্তে আস্তে আবার কথা শুরু করে ।

সব কামেই উস্তাদ লাগে মিয়ারা – বিদ্যা বড় ধন – উস্তাদ ছাড়া কি আর কাম শেখন যায় ? আমাগো জামাইর উস্তাদ হইলনে গিয়া এই পেরেধানমন্তি । উনি আবার জামাইরে খুবই পেয়ার করেন, কাইলকা দেখলাম উনারে নাকি উস্তাদে আজাইর‍্যা মনতিরি বানাইছে, কোন কাম না, খালি এসুর নিচে বয়া বয়া পেরেধানমন্তির হিসাব নিকাষ করার কাম, হেই এসু নাকি কারেন্টে চলে, খালি ঠান্ডা বাতাস দেয় । বড়ই আরামের কামরে মিয়ারা – বড়ই আরামের কাম ।

এসুর বাতাস খাইতে কিরম লাগবে চিন্তা করতে করতে নিঃস্ব মতি মিয়া দিবাস্বপ্ন দেখে – ছেলে তার পেরেধানমনতিরির গদ্দির উরপে বইসা বইসা পয়সা গুনে – একশ টাহার একটা বান্ডিল দেহায়া কয়, নেও বাজান, আইজকা বাজার থন গোস্ত আনবা আর মায়েরে কইয়ো টাহাগুলা যেন সামলাই রাহে । আমি নিমতলি যাই – ইলেকশনের টাইম- ইসপিশাল একখান কাম আছে । মতি মিয়া বড় খুশি হয়, ছেলে তার অনেক বড় কামলা হইছে। মেনেষ্টার মানে কি না বুঝলেও বুঝতে পারে হেই কামের লগে তার বাপ দাদার কামের মিল আছে, আশা করে তার ছেলেও মেনেষ্টার হবে । স্বপ্নে ছেলের মুখটা বড় সুন্দর লাগে, খালি চুউখ দুইটা তার বাপের লাহান। চোর বংশের নাকি চউক্কে পরিচয় ।

হটাৎ কালু শেখের জোর গলায় তার দিবাস্বপ্ন ভাংগে । আড়মোড়া ভেংগে মতি মিয়া উঠে দাড়ায় – মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করে। আমার পোলাটারে অনেক বড় মেনেষ্টার কইরা দে আল্লা, পোলায় যেন বাপ দাদার কামটার ইজ্জত রাখতি পারে।

>> পুনশ্চঃ  গল্পের পটভুমি নিতান্তই কাল্পনিক, বাস্তবের সাথে মিল পাওয়া গেলে তার দ্বায়-দ্বায়িত্ব লেখকের নয়। সুনামগন্জ বা তাহিরপুর এলাকায় এইরকম কোন গ্রামের সন্ধানও লেখকের জানা নাই।

স্বপ্ন পুরন – Monsur Rashed

খুবই মিস করি, ফারুক মামার সাথে খেলা দেখতে যাওয়া, পুরা একটা রিলিজিয়াস প্রসেসের মতো ব্যাপার-সেপার, গুলিস্থানে গিয়ে ভোরবেলা, “বেঁকো” রেস্টুরেন্টে অসম্ভব মজার চা খাওয়া, তারপর আর একটা স্পেসিফিক “নাম ভুলে যাওয়া” রেস্টুরেন্টে গিয়ে খিচুরি খেয়ে খেলা দেখতে ঢুকা, পুরা খেলা চলাকালে যত কিছু আছে সব খাওয়া (চা, কফি, সোডা, ঘুগনী, ঝালমুড়ি, হট পেটিস, ছোলা, আইসক্রিম, শসা, আমড়া, কাঁচা আম ভর্তা, বাদাম ইত্যাদি), খেলার মাঝপথে প্রিন্স বা নবান্নর কাচ্চি বিরিয়ানি, খেলা চলাকালে এক অন্ধ ফকির আসতো, এই ফকিরটা এত্ত জনপ্রিয় ছিল যে ওর সিগনেচার টাকা চাওয়ার ডাকটা আমরা নিয়মিত দর্শকরাই ডেকে দিতাম, “আমি আইছিইইইইইই”, ঢাকাইয়া দর্শকদের লুঙ্গি ঝারা দিয়ে ‘কুফা’ ছুটানো, খেলা শেষে ঠাটারি বাজারের ‘স্টার’ অথবা জয়কালী মন্দিরের ‘সুপার’ রেস্টুরেন্টে সেরাম মামা-ভাইগ্না খাওয়া-দাওয়া করে বাসায় যাওয়া! আর অনেক এক্সসাইটেড থাকতাম খেলা দেখে আসলে, রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতাম, ইন শা আল্লাহ আমরা একদিন ‘এ’ দল না, টেস্ট প্লেয়িং দেশ গুলোর জাতীয় দলের সাথে নিয়মিত খেলব আর জিতব! আজকে সেই দিনগুলোর একটি বিশেষ দিনে ফিরে যেতে চাই। ঢাকা স্টেডিয়ামে বসে দেখা শত শত খেলার মাঝে সেরা খেলা ছিল এটাই। ২৬শে ডিসেম্বর ১৯৯৪, সার্ক ক্রিকেটের ফাইনাল, বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠল! খেলা ইন্ডিয়া ‘এ’ দলের সাথে, শেষ দুই বলে ইন্ডিয়া ‘এ’ দলের দরকার ছিল দুই রান, বাংলাদেশের দরকার ছিল একটা উইকেট, আমরা কনফিডেনট ছিলাম না, কিন্তু রফিক স্ট্যাম্পড করে দিলো ভেনকাটেঁস প্রসাদকে! আউট হওয়া মাত্র লাফানো আর চিৎকার শুরু করলাম, কি সেই অদ্ভুত অনুভূতি! সেদিন টের পেলাম জাতীয়তাবাদ কতো বড় ড্রাগ, বুঝতে পারলাম ব্রিটিশ ফুটবল ফ্যানদের স্পোর্টস ফানাটিসিসম! খেলা শেষে আমি আর ফারুক মামা বের হয়ে দিলকুশায় আসতেই দেখা হল বড় খালুর সাথে, উনি একজন বিখ্যাত জাতীয় হকি খেলোয়াড়! উনি আমাদের কাসে শুনে কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেননা ইন্ডিয়া ‘এ’ দল বাংলাদেশের কাছে হেরেছে। উনি ভাবছিলেন উনার শ্যালক ফাইযলামি করছে! উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, কতো গুলি এল বি ডব্লিউ দেয়া হইসে!!! সেই বাংলাদেশ ক্রিকেট টীম এখন হোম সিরিজে পর পর দুইবার, হেডলি আর মারটিন ক্রোর নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াস করে! কয়টা মানুষ বলতে পারবে তার ছোটবেলার একটা অসম্ভব স্বপ্ন পুরা হয়েছে! আল্লাহ এই পোলাপাইন গুলারে ভালো রাইখ! আমীন!

বিএনপি আর যা করতে পারে -Md. Mustafizur Rahman

বিএনপির – দাবি নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার আবার এখানে মাঝে মাঝে বলা হয়, আওয়ামী লীগের অধীনে কোন নির্বাচনে তারা অংশ গ্রহণ করবেন না। দরকষাকষিতে এখন যদি একজন নির্দলীয় ব্যক্তিকেই নির্বাচন কালীন সরকার হিসাবে মনে নেওয়া হয় , আর মন্ত্রীপরিষদ যদি সর্বদলীয় করে  সাজানো হয় , তাহলেই কি  নিরপেক্ষ ও ফেয়ার ইলেকশন অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে  ??
আমি, তা মনে করি না ঐ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বর্তমান দলীয় প্রশাসনকে  পূর্ণ-বিন্যাস করা সম্ভব না । এ জন্য সেই অবিশ্বাস থেকেই যাবে !!
আবার, শেখ হাসিনা এই রকম ছাড় দিতে রাজি হবেন না ।

যে বিষয়টি নিয়ে আমি সবচেয়ে কনসার্ন তা হচ্ছে এই নির্বাচন কমিশন । এটা তার নিরপেক্ষতা সম্পূর্ণ ভাবে হারিয়েছে । সরকারের ফ্রেমেই তারা চলতেছে।
অথচ, বিএনপির এ বিষয়ে কোন কনসার্ন নেই ।

আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে যতটুকু বুঝি, দলীয় সরকারের আন্ডারে যে কারণগুলোর জন্য ফ্রি ও ফেয়ার ইলেকশন সম্ভব না তা হলোঃ

১ /জনপ্রশাসন
যাদের সম্পূর্ণ দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে , এদের সবাই এই সরকার দ্বারা সুবিধা প্রাপ্ত , তাই তারা এমন কোন সরকারকে জিততে দিবে না , যারা ক্ষমতায় আসলে তাদের জন্য অসুবিধা হয় ।

২/ পুলিশ প্রশাসন
ব্যাপক দলবাজ রাষ্ট্র যন্ত্রের এই প্রতিষ্ঠান বিরোধীদলকে নিপীড়নের এ যাবৎ কালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে দিয়েছে । বৃষ্টির মত গুলি ছোঁড়ে মানুষ হত্যা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে । তাই প্রশাসনের এই অফিসারদের দ্বারা বিরোধীদল জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসা অনেক কষ্টকর । এরা কখনোই চাইবে না , তাদের সুবিধা প্রদানকারী দলের পরাজয় ।

তাই, আমি বিরোধীদলের মতই বিশ্বাস করি । একটি ফ্রি ও ফেয়ার ইলেকশনের জন্য নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন যারা , ক্ষমতাসীনদের বর্তমান প্রশাসনিক বিন্যাস ভাঙ্গতে পারে । কিন্তু আমারা জানি সরকার অন্যায়ভাবে সংবিধানকে নিজেদের ফেবারে নিয়ে কাটছাঁট করেছে আর এখন এর দোহাই দিচ্ছে , গণতন্ত্রে স্পিরিটের কথামালা শুনানো হচ্ছে “ অনির্বাচিত কেউ  দেশ চালাতে পারে না, এটা গণতন্ত্রের সাথে যায় না  ” ।

তাই, বিরোধীদলকে আমার অনুরোধ, চূড়ান্ত বর্জনের আগে,  সরকারকে দুইটি প্রস্থাব দেওয়ার জন্য ।

১/ সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সম্পূর্ণ নতুন নির্বাচন কমিশন ।
সংসদ সম্পূর্ণ রূপে ভেঙ্গে দিতে হবে ।  সেই সাথে নির্বাচনকালীন সময়ে এই কমিশনের হাতে সম্পূর্ণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দিয়ে দিতে হবে, সকল প্রকার নিয়োগ ও বদলির ক্ষমতা প্রদান করে  যাতে নির্বাচন কমিশন প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে পারে । এখানে উল্লেখ্য এই ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন ছাড়া আর কোন ডিপার্টমেন্ট এর আমলাতান্ত্রিক ঝামেলা জড়িত থাকবে না , কমিশন সরাসরি প্রজ্ঞাপন জারি করবে এবং তা প্রয়োগ হবে ।

এখন হয় সরকারকে এই প্রস্থাবে রাজি করাতে হবে , যা একটা স্থায়ী স্যলুয়েশন এবং তা আমাদের গণতন্ত্রকে নিয়ে যেতে পারে নতুন উচ্চাতায় ।

আর, যদি সরকার রাজি না হয় , তাহলে তো এটাই প্রমাণিত হয়ে যায় , সরকার ফেয়ার ও ফ্রি নির্বাচন যায় না ।

বিকল্প প্রস্থাব হচ্ছে ,  ক্লিয়ার এবং সোজা ।

২ নির্দলীয় সরকার ।

সরকার যদি দুইটার কোনটাই না মনে , তাহলে তো আর কিছু করার নাই , আন্দোলন ও বর্জন ব্যতিত ।
একটা কথা বিএনপির ভাল করে মনে রাখা প্রয়োজন “ এই নির্বাচন কমিশন এবং এই সরকারের পুলিশ ও প্রশাসনের মাধ্যমে ফ্রি ও ফেয়ার ইলেকশন সম্ভব না ” ।

তাই, যে সমঝোতায় যে পদ্ধতিতেই ইলেকশনে যান না কেন ?? সেই পদ্ধতিতে যেন এই সাজানো প্রশাসন পূর্ণ-বিন্যাস্ত হওয়ার নিশ্চয়তা থাকে ।

সোশ্যাল মিডিয়া এবং আমাদের সচেতনতা – abdullah mahmud

সোশ্যাল মিডিয়া এবং আমাদের সচেতনতা
abdullah mahmud

 

বর্তমান সময়ে সমাজ সচেতনতার অন্যতম একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। সমাজের খুঁটিনাটি বিষয় গুলো নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কারনে আমরা খুব সহজেই সমাজের নানা অসঙ্গতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হচ্ছি। কিন্তু শিক্ষিত সমাজের একটি বিশাল অংশ সমাজের এই খুঁটিনাটি অসঙ্গতি সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা করতে নারাজ। আমাদের দেশে এ বিষয়ে কোন গবেষণা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই, তবে আমার অবজারভেশন হচ্ছে অধিকাংশ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী শুধুমাত্র ফ্রেন্ডস এন্ড ফেমেলির চিত্তাকর্ষক বিষয়গুলোই শেয়ার করে থাকে; যেমন- ফ্রেন্ডস এন্ড ফেমেলির নানাবিধ অনুষ্ঠান তথা রঙ্গ তামাশার পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে। গণমাধ্যমের ডিসাবলিমেশন প্রক্রিয়ার প্রতিফলনই আমরা দেখতে পাচ্ছি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এখনকার প্রজন্ম সামাজিক অসংগতির দিকে দৃষ্টিপাত করতে অনিচ্ছুক। এই অসংগতিকে অ্যাভয়েড করাকেই তারা ভাবছে সমাজের কল্যানকামিতা। এই ভেবে তারা পরিতৃপ্তিতে ভোগে যে তাদের দ্বারা কোন অসঙ্গতি হচ্ছেনা। অথচ অসঙ্গতি অ্যাভয়েড করা মানেই তা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে ভূমিকা পালন করা। অধিকাংশের ফেইসবুক শেয়ারিং এ, আপনি দেখতে পাবেন আত্মকেন্দ্রিকতা; আনন্দ বিনোদন ও  কামপ্রবৃত্তি অনুযায়ী জীবন চর্চার প্রতিফলন। সমাজ জীবনে যত যাই ঘটুক; সে বিষয়গুলো নিব্রিঘ্নে জীবন পরিচালনায় বাধা মনে করে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতা। এই এড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতা থেকেই সামাজিক অসংগতিগুলো রুপ নিচ্ছে বিষবাস্প হিসেবে। সমাজ জীবনের ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা কত ভয়াবহ হতে পারে তার একটা উদাহরন দিচ্ছি নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম ট্রেনে করে; কমলাপুর ষ্টেশনে নেমে একটু অগ্রসর হতেই ট্রেন লাইনের উপর কিছু মানুষের ভিড় দেখে এগিয়ে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? একজন বলল ট্রেনের চাকায় একটা ছেলের পা কেটে গিয়েছে। ভিড় ভেদ করে সামনে আগালাম। দেখলাম একটা দশ-বারো বছরের ছেলে রেল লাইনের উপর পড়ে আছে; তার দুই পা কেটে গিয়েছে। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম ছেলেটা জীবিত কিন্তু সবাই হা করে দেখছে আর তার পায়ের উপরের অংশ থেকে জর জর করে রক্ত জরছে। সামনে এগিয়ে বললাম কেউ একজন আমার সাথে আসেন ছেলেটাকে হাসপাতালে নিতে হবে। পিছন থেকে একজন বলল ওকে ধরবেন না পুলিশি কেইস; ঝামেলায় পড়বেন। বললাম ছেলেটা রক্ত ক্ষরণে মারা যাবে আর আমরা দাঁড়িয়ে দেখব। পরবর্তীতে আরও কয়েকজন এগিয়ে আসল। ছেলেটাকে হাসপাতালে নেয়া হোল। চিন্তা করে দেখুন- আমাদের ব্যক্তি জীবনে ঝামেলায় জড়াতে হবে তাই আমরা অন্যের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসবনা। এই প্রজন্মের সামাজিক অসংগতির অ্যাভয়েডিং টেন্দেছি ঐ ছেলের মতই সমাজকে ভঙ্গুর করে দিচ্ছে।
 এ কথা সহজেই অনুমেয় যে ফেইসবুক শেয়ারিং এর বিষয়স্তু নির্ধারণ করে দেয় সামাজিক কাঠামো। আমরা সমাজের অসঙ্গতিগুলো এড়িয়ে চলছি; আবার স্বাধীন সার্বভৌম মননশীল সমাজ আশা করছি। সমাজ ব্যক্তির নিজস্ব উদ্যোগের গতিশীলতা দ্বারা নির্ধারিত এবং নিয়ন্ত্রিত। আমরা যে ধরনের চর্চা যোগাযোগ মাধ্যমে করব, সে ধরনের সমাজই আমরা গড়ে তুলব। দার্শনিক বাট্রানড রাসেল বলেছিলেন “আধুনিক জগতে ব্যক্তি কেন্দ্রিক মঙ্গলের ধারণার চেয়ে সামাজিক মঙ্গলের ধারনা অনেক বেশি প্রয়োজন”/ সামাজিক অসংগতিগুলো থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়ই হোল সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা। আর এ সচেতনতা তৈরির অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমই বর্তমান সময়ে সমাজ পরিগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে সমকালীন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়াকে বিকল্প সংবাদ মাধ্যম হিসেবে আমরা গড়ে উঠতে দেখেছি। এই গড়ে উঠার পিছনে কাজ করেছে এই সমাজেরই কিছু সচেতন তরুন এবং যুবকদের ভূমিকা। এই সচেতনতাবোধকে আরও সম্প্রসারনের মাধ্যমেই আমরা সামাজিক অসংগতি থেকে নিস্তার পেতে পারি।

“এভাবে কি একটা দেশ চলতে পারে ?” -শাহরিয়ার আহমেদ

অনেক কারনেই আমি গনতন্ত্রের ভক্ত না । কিত্নু কথায় কথায় গনতন্ত্র গণতন্ত্র বলে যারা ম্যাতকার করে তারা বলে থাকে, গণতন্ত্রে নাকি মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে । আপনাকে আপনার অপছন্দের মতও শুনতে হবে, মানতে হবে । কিন্তু আমাদের দেশে প্রেক্ষাপটে গনতন্ত্রের সংজ্ঞা দাঁড়ায়,” আমার(পড়ুন সরকারের) মতাদর্শ মেনে নেয়া, আমার হ্যাঁয়ের সাথে হ্যাঁ, না এর সাথে না মেলানই গনতন্ত্র। এর বাইরে দেশে আর কোন মত থাকতে পারবে না।”

একেএম ওয়াহিদুজ্জামান একজন সুপরিচিত ব্লগার এবং খুবই চমৎকার এনালিস্ট এবং রাজনৈতিকভাবে উনি বিএনপির মতাদর্শী । আমি উনার অনেক লেখা ফলো করি, যদিও উনার সকল মতের সাথে একমত না । কিত্নু জাতীয় ইস্যুগুলোতে উনার বিশ্লেষণ এক কথায় অসাধারন(রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র নিয়ে উনার বিশ্লেষণধর্মী লেখাগুলো পড়ে দেখতে পারেন)/ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কথিত কটূক্তির ভিত্তিতে উনাকে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে । জীবনে অনেক কিছুই আসলে শেখার বাকী আছে, কটূক্তি কাকে বলে সেটাও মনে হয় শিখতে হবে । কারন অনেক সুপরিচিত আওয়ামী ঘরনার ব্লগারদের অনেক লেখাই পড়েছি, সেখানে খালেদা জিয়াসহ আওয়ামী মতাদর্শের বাইরের লোকজনকে রীতিমত অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় ।

আশ্চর্যজনকভাবে আজ পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার করা তো দুরের কথা, উল্টো তাদেরকে নানাভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে । আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ওয়াহিদুজ্জামানকে কখনও একটা গালি পর্যন্ত দিতে দেখিনি । উনি যাই বলেন অত্যান্ত বলিষ্ঠ ভাষায় যুক্তি সহকারে বলেন । তাহলে মানে দাঁড়াচ্ছে, আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই জেলে যেতে হবে ? এভাবে কি একটা দেশ চলতে পারে ? তিন চতুর্থাংশ সমর্থন নিয়ে সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, বিভিন্ন জরীপে দেখা যাচ্ছে, তারা এখন মাত্র ২০-২৫% মানুষের মাঝে জনপ্রিয়। দিনে দিনে হয়ত এটি আরো কমবে। কত জনের মুখ আপনারা বন্ধ করতে পারবেন?

ইকোনমিষ্টে ছাপানো স্কাই পে কনভারসেশন আমার দেশে অনুবাদ করায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হল অথচ দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত ফোনালাপ প্রকাশ করে আলোচনার পরিবেশ নস্টকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেল । এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখতে দেখতে ঘেন্না ধরে যাচ্ছে । এসব ঘটনার প্রভাব আপাত দৃশ্যমান না হলেও দীর্ঘমেয়াদে সরকারের ইমেজের ভয়াবহ ক্ষতি করছে। মানুষ সহনশীলতা পছন্দ করে চরমপন্থা নয় ।

এসবের ইন্ধন দাতারা, প্রকাশ্য ও নীরব সমর্থনকারীরা কি ভুলে গেছেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী না। আজ হয়ত আপনার দল ক্ষমতায় আছে কাল নাও থাকতে পারে তখন যে এর উল্টো প্রয়োগ আপনাদের উপর হবে না তার গ্যারান্টি কি ?

আর প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে চামচাদের ফুসলানিতে এসে কোন পদক্ষেপ নিয়েন না, কারন আপনার সরকারের সাফল্য বা ব্যর্থতার জন্য সবাই আপনাকেই কৃতিত্ব দিবে অথবা দোষারোপ করবে,চামচাদের দিকে ফিরেও তাকাবে না। এই শেষ সময়ের ভয়ভীতি, নির্যাতন, জুলুম আপনাদের ব্র্যান্ড ইমেজের জন্য বিষধর হয়ে দেখা দিবে। কারন শেষ ভালো যার সব ভালো তার !

শাহরিয়ার আহমেদ

ঘোলা পানিতে মাছ শিকার

Emrul Mahmud

আমাদের সুশীলরা এখন বলছেন এক দিক থেকে ছাড় দিলে হবেনা; দুই দিক থেকে ছাড় দিতে হবে। আমরাও খুব খুশি বাহ! বেশ ভালোতো; সুশীলরা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে কথা বলছেন। কোন পক্ষের নিকট বুদ্ধিকে বন্ধক রেখে পরামর্শ দিচ্ছেননা। কিন্তু আমাদের মাথায় এই সহজ কথাটি আসছেনা যে যিনি সংকট সৃষ্টি করেছেন, তাকেই ছাড় দিতে হবে। আজকের এই সংকটে উভয়পক্ষ ছাড় দিয়ে সমযতায় আসলে সংকট থেকে উত্তরন হবেনা; সংকট আরও ঘনীভূত হবে। যার প্রতিফলন আমরা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। যারা সংবিধানের অর্ধশতাধিক প্রভিশনকে অপরিবর্তনীয় গণ্য করেছেন; যাদের উদ্যোগে সংবিধান থেকে মানুষের ‘রেফারেন্ডাম’কে বাতিল করা হয়েছে; তারাই সংকট সৃষ্টি করেছেন। যিনি ঘুড়ী উড়িয়েছেন তাকেই তো নাটাই টেনে ধরতে হয়। অন্য কারো নাটাই টানার সাথে তো এই ঘুড়ী নিয়ন্ত্রণের কোন সম্পর্ক নেই। মোদ্দাকথা নাটাইয়ের নিয়ন্ত্রন যিনি ঘুড়ী উড়িয়েছেন তার হাতেই এখনও বলবত আছে। তিনি নাটাই টেনে ধরলেই তো নির্বাচনের ঘুড়ী ঠিকভাবে উড্ডীয়মান হবে।

এই সহজ কাণ্ডজ্ঞান টুকু সুশীলরা বুঝতে পারছেননা বা না বোঝার ভান করছেন। মানুষ পক্ষপাত দুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও, সমাজের কিছু মানুষ থাকে বিবেকবান, যারা সবসময়ই ন্যায় কে হক আর অন্যায় কে নাহক বলতে দ্বিধা বোধ করেননা; যারা সকল দলের ন্যায়-অন্যায় কে মানুষের নিকট তুলে ধরতে দ্বিধা বোধ করেননা; যারা টাকা কিংবা অন্য কিছুর বিনিময়ে বিবেককে বন্ধক রাখেননা; এসব কারনেই এই শ্রেণীর মানুষদেরকে প্রগতিশীল বা সুশীল সমাজ বলা হয়। কিন্তু আমাদের এই সুশীলরা এতোই অন্ধ যে সরকারের কোনো দোষ দেখেন না। ক্রমিক গণহত্যায় ও উনাদের বিবেক জাগ্রত হয়না। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি উনাদের দৃষ্টির অন্তরালে থাকে। দিল্লীর লাড্ডু আর আওয়ামী লীগ সরকারের হালুয়া-রুটি খেয়ে ‘নৌকা’য় বিবেক বন্ধক রেখেছেন। এই আওয়মিপন্থি সুশীলরাই ২০০৭ সালে নিরপেক্ষতার আবরণে অবৈধ সরকার এনে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনার সকল ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেছিল, এখনও তারা বায়না খুঁজছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখার। ২০০৭ সালে আপনারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পেরেছিলেন। এবার যেহেতু পানি পরিষ্কার; তাই প্রয়োজন পানি ঘোলা করার। দুই দিক থেকে ছাড় দেওয়ার পরামর্শ – পানি ঘোলা করার অংশ হিসেবেই মানুষ ধরে নিচ্ছে।

খাদের কিনারে বাংলাদেশ

image credit-http://thisisourbangladesh.blogspot.com/

image credit-http://thisisourbangladesh.blogspot.com/

মো. আদনান আরিফ সালিম

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে টক-শোজীবি শুশীল আর আমরা আমজনতা সবার ধুকপুক করতে থাকা হৃদয় ও চঞ্চল মনে ঐ একই প্রশ্ন কী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে? ২৪ অক্টোবরের পর সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আর তিন মাস বাকি ছিলো। হিসেব অনুযায়ী নিয়ম মাফিক নির্বাচন দিতে হলে ঐ দিনই সংসদ ভেঙে দেয়াটা উচিত ছিলো। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আর ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের ঋণ অস্বীকার করে সরকার সেটি না করে পুরো দেশকে একটি অনিবার্য সংঘাত ও রাজনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নির্লজ্জতার শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে এও ঘোষণা দেয়া হয়েছে সংসদ আগামী নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হবে যা নজিরবিহীন ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য একটি কলংকস্বরূপ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী (যিনি এখনো নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করছেন) বি.এন.পি সভানেত্রীকে আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য ফোন করেছিলেন। পুরো জাতি আর কিছু না হোক অন্তত সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে একটু আশার আলোর ঝলকানি দেখতে পায়। কিন্তু ফলাফল আখেরে হয়েছে শূন্য। তিনি তার কটুবাক্য আর একগুঁয়ে অবস্থানের মাধ্যমে বি.এন.পি কে সংলাপে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে সৃষ্ট জটিলতা যে আরো বাড়বে বৈ কমবে না এই ঘটনার মধ্য দিয়েই তিনি তা সুস্পষ্ট করেছেন।Continue Reading

মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীণতা ও আমাদের ভবিষ্যত

By Shikin Aman 

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়। আড়াইশত বছর পরাধীনতার পরে আমরা একটা স্বাধীণ দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাড়াই এই মহান যুদ্ধের মাধ্যমে। এই যুদ্ধে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তারা আমাদের জাতীয় বীর।দেশের একটা ক্রান্তিলগ্নে তারা আমাদের মুক্তির পথের দিশারী ছিলেন। তাদের সেই মহান আত্মত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন কি আমরা করতে পেরেছি, নাকি আমরা তাদের অর্জনকে শুধু ক্ষুদ্রস্বার্থে ব্যাবসার কাজে লাগাচ্ছি? আমাদের দেশের উন্নতির জন্য কি এই মহান স্মৃতি পথিকৃত এর ভুমিকা রাখছে, নাকি এর অপব্যাবহারে আমাদের উন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে? দেশের উন্নতির জন্য ভবিষ্যত সরকারের কাছে আমাদের কি চাওয়া থাকতে পারে?

Continue Reading

আলোচনা, অক্টোবর ২৫

This post is for discussing the rapidly evolving political situation

Who are the communal forces in Bangladesh?

by TAJ HASHIMI for Nuraldeen

Of late, some new players have entered the arena of the so-called Communal Violence — aka “Ethnic Cleansing”, “Sectarian Conflict”, “Religious Conflict”, “Hindu-Muslim Violence” and “Muslim-Non-Muslim Conflict” — monks and clerics in Myanmar, Pakistan and elsewhere. Then again, the case of Bangladesh is quite different.

Continue Reading

আলোচনা Oct 18, 2013

Discussion Topic: Sheikh Hasina’s speech on interim govt.

Shafiq

হাসিনার বক্তৃতার পূর্ন টেক্সট কি কোথাও পাওয়া গেছে? প্রথম আলোতে বক্তৃতার শেষ অংশ উধাও দেখলাম। যাই হোক, হাসিনার বক্তৃতাটি একসাথে ইলেকশনের জন্যে ক্যানভাসিং এবং বিরোধী দলের প্রতি এক টুকরা হাড় ছুড়ে দেয়া। হাসিনার ‘গুড কপ’ রুটিন দেখলাম। আমার মনে হয় আগামী কদিন দেখবো পাতি নেতা আর উপদেষ্টাদের ‘ব্যাড কপ’ ভূমিকা।Continue Reading