আওয়ামীদের হাড়ে কি আবার কাঁপন লেগেছে?

lig2-300x200

by zainudin sani

বাজারে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আওয়ামীরা হঠাৎ ঘাবড়ে গেল কেন? গত একবছর তো বেশ সাহসের সাথেই চালাল। হঠাৎ এতো আগ্রাসী হয়ে ওঠার দরকার কি? কি হত একটা সমাবেশ করতে দিলে। গাজীপুরেরটাই বা আটকানোর দরকার কি ছিল। ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’এর সাথে ছন্দ মিলিয়ে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ পয়দা করার দরকারই বা কি ছিল। নিজেদের ম্যোরাল বিজয় দেখানো? মুখে যত বড়বড় কথাই বলুক, আওয়ামীরা বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁরা বেশ বিচলিত। মনে মনে প্রত্যাশা করছে, ভালোয় ভালোয় এই শীতকাল যেন পার হয়ে যায়।

২০০৮এ নির্বাচিত হওয়ার পর যেভাবে আওয়ামীরা দেশ চালিয়েছিল, তাতে দুটো ব্যাপার বেশ পরিষ্কার ছিল। যে যাই বলুক, আমরা নিজেদের মত চলব, প্রয়োজনে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে। স্বৈরতান্ত্রিক তাঁরা আগেও ছিল, তবে এবার তিন চতুর্থাংশ পেয়ে সম্ভবতঃ তাঁদের মাথা আরও বেশি বিগড়াল। বিএনপির ৩২ দেখে ভাবল, ওদের আর কোন আশা নেই। দ্বিতীয়টি যে ব্যাপারটি স্পষ্ট ছিল তা হচ্ছে রাজাকার ইস্যু থেকে যতটা ফায়দা তোলা যায়, সেটা তোলা। দ্বিতীয় প্ল্যানটা খারাপ না হলেও প্রথম দিকে খুব কাজে দিচ্ছিল না। ব্যাপারটাকে অনেকটা বিএনপি জামায়াত বিভেদ তৈরির প্ল্যান হিসেবে দেখছিল সবাই। ভেতরে কি ঘটছিল তা নিয়ে মতামত দেয়া সম্ভব না, কারণ বিচারালয় নিয়ে প্রশ্ন করা সম্ভব না। তবে সবার মনেই সন্দেহ ছিল, জামায়াতের সাথে ভেতরে ভেতরে কোন আঁতাত হচ্ছে। তারপর ঘটনাটা ঘটল।

কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন আর তার বিজয় সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখানো, বিস্ফোরণ ঘটাল। এমন যে ঘটবে বা ঘটতে পারে, তা আওয়ামীরা স্বপ্নেও ভাবেনি। গণজাগরণকে প্রথমে পাত্তা না দিলেও, অচিরেই তাঁদেরকে পাত্তা দিতে বাধ্য হল। রাজাকারদের বিচার চলাকালীন রাস্তায় বিচার বিরোধী অবস্থানই দৃশ্যমান ছিল। বিচারের সমর্থনে তেমন কিছুর দেখা মিলছিল না। তাই একটি রায়ের বিরুদ্ধে এতো বড় সমাবেশ হবে, সরকার নিজেও বোঝেনি। কোন মিছিল মিটিং হরতাল ছাড়া, কেবল অবস্থান দিয়ে যে সরকারের হাড়ে কাঁপন ধরান সম্ভব, ব্যাপারটা প্রথম অনুধাবন করল আওয়ামীরা।

ব্যাপারটা বেগতিক হতে পরে দেখে তা ধ্বংসের প্ল্যান করতে হল। এমনও একটা কিছু যে আবার এই ধরনের অবস্থান তৈরি না হতে পারে। যদিও অবস্থানটি ছিল সরকারের আঁতাতের বিরুদ্ধে, তারপরও আওয়ামীরা অচিরেই বুঝে গেল, এই আন্দোলন পকেটে ঢোকান সম্ভব। আর এই সোজা কাজটা ছাত্রলীগ করে দিল। প্রথমে মঞ্চ ক্যাপচার, এরপরে সাধারণ জনতার মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং অবশেষে, হালুয়ারুটির ভাগাভাগি নিয়ে দ্বিখণ্ডিত করন। পুরো ঘটনার যে সারাংশ দাঁড়াল, ‘এই ধরনের আন্দোলন তৈরিই হয় বিক্রি হওয়ার জন্য’ আন্দোলনটির এমন একটি ছবি চিত্রায়িত হল। দুটো সুবিধা হল, রাজাকার প্রশ্নে, আওয়ামীরা তাঁদের নিজ ফর্মুলায় ফিরে যেতে পারল আর এটাও নিশ্চিত করতে পারল যেন এরপরে যুব সমাজ আর কখনই এই ধরনের কোন ডাকে সাড়া না দেয়।

সরকারের হাড়ে দ্বিতীয় কাঁপনটি জাগিয়েছিল, হেফাজত। ফর্মুলা একই। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান। বেশিদিন চালাতে পারলে, সরকারের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা শুরু হয়ে যেত। এদের সামলানোর জন্য একই ফর্মুলা চলবে না, সেটা আওয়ামীরা বুঝেছিল। ধর্ম ব্যাপারটার সঙ্গে আওয়ামীদের সখ্য খুব বেশি না। ফলে ছাত্রলীগ দিয়ে এই আন্দোলন কব্জা করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে মুল সুবিধা ছিল অন্য জায়গায়। এই আন্দোলনে আসা জনতার অনভিজ্ঞতা। তাঁদের মনে হয়েছিল, জ্বালাও পোড়াও মানেই বিজয়। যে শিশুদের নিয়ে এই অবস্থান আন্দোলন তৈরি হয়েছিল তাঁদের সাহস ব্যাপারটাও ছিল একটি ইস্যু। আর সেই রাতের অতর্কিত আক্রমণও ছিল অপ্রত্যাশিত, বা হয়তো তাঁদের নেতাদের কাছে প্রত্যাশিত এবং প্রকাশিত। যাই হোক অপারেশান সাকসেসফুল।

এই দুই ঘটনার পর থেকে, সরকারের অবচেতনে একটি ব্যাপারই তাড়া করছিল, আর তা ছিল অবস্থান আন্দোলন। ঢাকার প্রবেশ মুখে একবার যদি বিরোধী দল অবস্থান শুরু করতে পারে, তবে কাহিনী পাল্টাতে সময় লাগবে না। আর সেই অবস্থানে যদি ম্যাডাম স্বয়ং থাকেন, তবে তো পরিণতি আরও ভয়ানক হয়ে যাবে। অন্তর্কলহ আর একরাশ মামলা দিয়ে যত সহজে বিএনপি নেতাদের কাবু করা গেছে, একবার অবস্থান আন্দোলন শুরু হয়ে গেলে, তাঁরাও পকেট থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করবে। বিএনপি নেত্রীকে মামলা দিয়ে থামানো যাবে না, জানতো। ফলে নতুন কোন প্ল্যানিং জরুরী ছিল। তবে গনতান্ত্রিকভাবে তা করা সম্ভব না, এটাও জানত। রাস্তা একটাই ছিল, তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দেয়া। কিংবা একাকী করে দেয়া।

সত্যিকারের নির্বাচন হলে যে হারবে, আওয়ামীরা সেটা জানতো। আবার এও জানতো, আন্দোলন করে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী তাঁরা মানাতে পারবে না। হোলও তাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার জবাই করবার পর থেকে বিএনপি কোন আন্দোলনই দানা বাঁধাতে পারেনি। হরতাল আর অবরোধ, সেই অর্থে আর রাজনৈতিক হাতিয়ার নেই। আর দুইএকদিনের এমন কর্মসূচীতে আজকাল আর সরকার কর্ণপাতও করেনা। আর তাই গতবছরের ৫ই জানুয়ারির পর থেকে সরকার বেশ আরামেই ছিল। আওয়ামীদের জন্য ভয়ের সময় বলতে এই শীতকাল। এটা পার হলেই, পরিস্থিতি আবার নিয়ন্ত্রণে। আর বিএনপির জন্যও আশার সময় এই শীতকাল। যা করার এই সময়েই করতে হবে। মামলা আর অন্তুর্কলহের কারণে বিএনপি এখন পর্যুদস্ত। টিমটিম করে আশার যে বাতিটি জ্বলছে, তা জ্বালিয়ে রেখেছেন বিএনপি নেত্রী।

আওয়ামীরা ঠিক করল, নেত্রীর ওপরও আঘাত হানবে। মামলার দিন পড়তে লাগল। মামলায় কাজ হবে না, আওয়ামীরা জানে। তবে কিসে কাজ হবে, সেটা জানে না। এদিকে হরতালও যে কাজে দেবে না, সেকথা বিএনপিও জানে। কিসে কাজ হবে, সেব্যাপারেও তাঁরা বেশ অনিশ্চিত। সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে, আওয়ামী সরকারের হাড়ে কাঁপন ধরাতে পেরেছিল কেবল অবস্থান আন্দোলন। আর সেটা যদি হয়, ঢাকার প্রবেশ মুখে। আওয়ামীদের ভেতর সেই জুজুর ভয় ছিলই। তাই সম্ভবতঃ তাঁরা ঠিক করে রেখেছিল, ঢাকার প্রবেশ মুখে সমাবেশের কোন সুযোগ দেয়া হবে না। প্রয়োজনে ‘নেড়িকুত্তা’ ইফেক্ট দিতেও তাঁরা রাজী ছিল। নেত্রীকে ঢাকার বাইরে সমাবেশ করতে দিলেও, ঢাকার প্রবেশ মুখের আশে পাশে করতে দেয়ার ঝুঁকি নিতে রাজী ছিল না আওয়ামীরা। সেই ফর্মুলার প্রথম প্রকাশ দেখা গেল গাজীপুরে।

সমাবেশের পরবর্তী প্ল্যান বিএনপি করেছিল ৫ই জানুয়ারী। সেটা আটকাবার ফর্মুলা হিসেবে তাঁরা ব্যবহার করল, ‘মার্চ ফর ডেমক্রেসি’র পুরনো ফর্মুলা। ম্যাডামকে অন্তরীন রাখা। আর সেটা করবার জন্য সেই বালুর বস্তা। হয়তো প্রত্যাশা ছিল, আবার রেগে গিয়ে ‘গোপালি’ বলবেন। টুই তোকারি করবেন। তবে এবার তিনি শান্ত ছিলেন। তবে বরাবরের মত সমালোচনা হল, বিএনপির অন্য নেতাদের মেরুদণ্ডহীনতার। মামলার ভোয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার। প্রথম দিকে সরকারকে বিজয়ী মনে হলেও, পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করেছে মনে হচ্ছে।

আসলে ৫ই জানুয়ারী নিয়ে আওয়ামীদের প্ল্যানিং বেশ অগোছাল মনে হয়েছে। বালি, খোয়ার ট্রাকের মত হাস্যকর ফর্মুলা, ইচ্ছে করে নেয়া, না ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ আটকাবার ফর্মুলার রিপিট টেলিকাস্ট, বোঝা যাচ্ছে না। কারণ যেটাই হোক, আগেরবার ফর্মুলাটা কাজে দিয়েছিল। তবে এবার কাজটা যেভাবে বিদেশী মিডিয়ায় এসেছে, আর তালার যে দৃষ্টিকটু ব্যবহার হয়েছে, তা সরকারের জন্য খুব সুখকর হয়নি। এই মুহূর্তে ব্যাপারটা বেশ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। না পারছে তালা খুলে দিতে, না পারছে তালা লাগিয়ে রাখতে। তারচেয়েও বড় সমস্যা, খুব যুক্তিযুক্ত কোন ব্যাখ্যাও দিতে পারছে না এই ‘তালা’র। সবার সামনে স্বীকার করতে পারছে না, ম্যাডামকে ছাড়লে, আর তিনি একটি সমাবেশকে অবস্থান আন্দোলনে পরিণত করতে পারলে, আমাদের গদি নড়ে উঠবে। গণজাগরণ আর হেফাজতের পরে সম্ভবতঃ প্রথমবারের মত আবার আওয়ামীদের হাড়ে কাঁপন লেগেছে। দেখা যাক এবার কি হয়।

দ্যা গ্রেট বিএনপি ফ্লপ শো

bnp-final1

by zainuddin sani

শো টা যে ফ্লপ করবে, কিছুই যে করতে পারবে না, তা কমবেশি সবাই জানতো। তারপরও দলীয় নেতা কর্মীরা টিভি সেটের সামনে বসেছিল। সারকারী অঘোষিত হরতাল না হলেও, মনে হয় না তাঁরা ঢাকায় যেতেন। সাধারণ জনতার যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। অলৌকিকভাবে ‘নুর হোসেন’ জীবিত হলে, সেও নিশ্চিত যেত না। শুধু বিএনপির আন্দোলন না, ‘গনতন্ত্র উদ্ধার’ মার্কা কোন আন্দোলনেই যেত না। নব্বইয়ে একবার উদ্ধার করে শখ মিটে গেছে। তবে রাজনীতি প্রিয় বাঙালির, রাজনীতি নিয়ে কথা বলা হয়তো থামাবে না। রাস্তায় নামবার ভুল এখন আর কেউ করে না। দলবাজি এখন সবাই করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে।

সমর্থক যে নেই, তা কিন্তু না। তবে তাঁরা সব কিছু দেখে, খেলা দেখার মেজাজ নিয়ে। টিভি সেটের সামনে বসে, নিজ নিজ দলের হয়ে উল্লাস করার জন্য। আর সাধারণ জনগণ বসেছিল গত বছরের স্মৃতি রোমন্থন আর ‘যে কোন মুল্যে’র মানে কি তা বোঝার জন্য। মানেটা গাজীপুরের দিনও বুঝেছিল, তবে ভেবেছিল, সেখানকার দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে, একটি লোকাল কারণে, শো ফ্লপ হয়েছিল। এবার ঘটনা ঢাকায়, নেতা কর্মীরাও আছে, বড় বড় হুশিয়ারি আসছে, অতএব এবার কিছু একটা হবে।

বিনোদন দেয়ার আওয়ামীদের ক্ষমতা নিয়ে কারোরই তেমন কোন সন্দেহ ছিল না। শ্লেষ মেশানো কথা বলায় কেউই কম যায় না। তবে বর্তমানে এবিষয়ে আওয়ামীরা একধাপ এগিয়ে আছে। সেসব শোনার পরের দৃশ্য ছিল রাজপথ। পুলিশ আর ছাত্রলীগের ‘ডেডলি কম্বিনেশান’ গাজিপুরের মত এখানেও খেল দেখাবে, তা সবারই জানা ছিল। একেবারে ‘কপি ক্যাট’ হলে দর্শক কমে যাবে দেখে মনোরঞ্জনের নতুন কিছু রসদও রাখা হয়েছিল। মায়া সাহেবের লুঙ্গি কিংবা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ এর সংযোজন হল। সবাই না হলেও অনেকেই এই নিয়ে আশাবাদী ছিল— কিছু নতুন মনোরঞ্জন আসছে।

সেই আশার গুড়ে অচিরেই বালি পড়ল। আওয়ামী নেত্রীর সেই পুরনো ঘ্যানঘ্যান আবার শোনালেন। সঙ্গে নতুন যা ছিল, তা হচ্ছে বিএনপি নেত্রীর নাটকের পাণ্ডুলিপি পড়ে শোনালেন। এছাড়া আওয়ামীদের তরফ থেকে বড় ধরনের তেমন কোন নতুনত্বের দেখা পাওয়া যায়নি। হয়তোবা তাঁরা দেখাতে চায়ও নি। এক বালুর বস্তা দিয়েই যদি কুপোকাত করা যায়, তবে আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাবার দরকার কি? তারপরও, কিছুটা ছিল।

আগেরবার ছিল বালুর বস্তা, এবার আর বস্তায় বালু ঢোকাবার প্রয়োজন বোধ করেনি। বালুর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছিল খোয়া, মাটি এসবের ট্রাক আর তাদের ড্রাইভারের মুখে মজার সব গল্প। দরজার তালাটিকেও নতুন সংযোজন বলা যেতে পারে। এবারের সত্যিকারের নতুনত্ব ছিল ‘স্পাই থ্রিলার’। আওয়ামীদের প্ল্যান আগে থেকে জেনে যাচ্ছিল বিএনপি আর বিএনপির প্ল্যান তৈরির সাথে সাথে চলে যাচ্ছিল আওয়ামী নেত্রীর কানে। এই প্লট আর কাউন্টার প্লটের খেলাটা এবার সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হয়েছে।

বিএনপির তরফ থেকে নতুনত্বের অভাব থাকলেও সময়টা খারাপ কাটেনি। পিকাপ ভ্যানে করে কয়টা কম্বল, কয়টা ম্যাট্রেস আসল, কোন ঘরকে ম্যাডামের বেডরুম বানানো হল, এসব খবর একেবারেই আনকোরা। আসলে সবাই গতবছরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ র সঙ্গে ঘটনা মেলাচ্ছিলেন। ‘ডায়ালগ বাই ডায়ালগ’, ‘সিন বাই সিন’। ম্যাডাম এবার একেবারে হুবহু নকল করেননি। সেবারের তুলনায় এবার একটু মুডে ছিলেন। রাগে গড়গড় করতে করতে সেই ‘গোপালি’ আর ‘তুই তোকারি’ ছেড়ে এবার ‘ক্যান রে ভাই’ এ এসেছেন। কিছুটা হলেও নতুনত্ব।

খেলায় কে জিতল তা নিয়ে আপাতত কিছুদিন ‘টক শো জীবীরা’ গলা ফাটাবেন। দলের নেতারা আসলে দুই ম্যাডামের গুণগানে কিছুদিন কান পাতা দায় হবে। একে অপরকে গালিগালাজও হয়তো করবেন। ‘গনতন্ত্র হত্যা’ ‘রাজাকারদের দোসর’ ‘ট্রেন মিস’ ‘২০১৯’ ‘সংবিধান রক্ষার নির্বাচন’— মোটামুটি এই থাকবে আগামী কিছুদিনের আলোচনার বিষয়। সাংবাদিকরা আসলে সবাই লক্ষ্য রাখবে, কে কোন দিকে ঘেঁসে কথা বলছেন। যদিও সাংবাদিকরাও দল বেছে ফেলেছেন এবং কি কি বলবেন, তাও সবাই জানে। তারপরও হয়তো দেখবেন। দুই দলকেই গালি দিলে আমরাই হয়তো বলব, ‘এই ব্যাটা কিন্তু ধান্ধাবাজ, দুই দিকেই তাল দিচ্ছে’। এরপর হয়তো চ্যানেল পাল্টাবো আর নয়তো ‘জলসা’ না দিলে স্বামীকে খুন করব।

খেলা আরও চলতো কি না, সত্যিকার অর্থে বোঝার উপায় নেই। মিছিলের নাম পাল্টে বিক্ষোভ মিছিল করলেও সেই মিছিল করবার জন্য কেউ আসবে না, তা সবাই জানে। নেতারা টাকা খেয়ে যেভাবে প্ল্যান উগড়ে দিচ্ছেন তাতে মনে হয় না ঢাকা শহরে আর কোন সমাবেশ করতে দিবে। বাকী থাকে হরতাল আর অবরোধ। ভোঁতা এই দুই অস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া তাদের আর তেমন কিছু করারও নেই। সেটাও হয়তো আর দুইদিন ডাকতে পারবে কারণ বিশ্ব ইজতেমার জন্য সেটাও স্থগিত করতে হবে। আর দিন দশেকের গ্যাপ পড়লে, নতুন করে আন্দোলন (এটাকে আন্দোলন না বলতে চাইলে, আমি আপত্তি করবো না) চাঙ্গাও করতে পারবে না। দলের নেতাদেরও সুবিধা। সম্ভবতঃ তাঁরা এটাই চাইছেন। শুধু শুধু আত্মগোপন করতে হবে না, এই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

এই শীতের আন্দোলন সম্ভবতঃ শেষ। কিছু খুচরা চেষ্টা হয়তো হবে। যদি কিছু লাশ পড়ে, তবে হয়তো কিছু মিছিল হবে। বিশ্ব ইজতেমা শেষ হওয়ার পরে হয়তো আবার কিছু অবরোধ আসবে। এবং যথারীতি মার্চের পরে সব কিছু ইতি। বিএনপির নেতারাও হয়তো অপেক্ষায় আছেন, কবে আসবে এপ্রিল। তাদের আর আত্মগোপনে থাকতে হবে না, মাঠে নামতে হবে না। তবে আওয়ামীদের কাছ থেকে পাওয়া মাসোহারায় হয়তো টান পড়তে পারে। আন্দোলনের প্ল্যান জানিয়ে যে আয় তাঁরা করছিলেন, সেই আয় হয়তো আপাততঃ বন্ধ হয়ে যাবে।

‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

by zainuddin sani

দেশের রাজনীতিতে কি হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সবাই বেশ বিভ্রান্ত। বিএনপির হুমকি ধামকি দেয়া, আর আওয়ামীদের সেসবে কর্ণপাত না করা, ব্যাপারটা অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। সকালের পত্রিকার দুটি অবধারিত শিরোনাম থাকতো দুই দলের কোন না কোন নেতার শ্লেষাত্মক বক্তব্য। কেন যেন ব্যাপারগুলোকে অনেক বেশী রীতি মাফিক মনে হচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছিল কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে— ‘আওয়ামীরা ২০১৯ পর্যন্ত চাইলে নির্বিঘ্নে থাকতে পারবে’। সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণার পরে, সত্যিকারের প্রত্যাশা কারোরই তেমন ছিল না। কমবেশি সবারই ধারণা হয়েছিল, ৫ই জানুয়ারিকে ঘিরে কোন কর্মসূচি এবং সেই কর্মসূচিতে বাঁধা দিলে কি হবে, তার হুমকি সম্বলিত একটি বক্তব্য আসছে। তার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামীরা কি বলবে, তাও সবাই আন্দাজ করে নিয়েছিলেন। পুরোপুরি তেমনটা হল না, সেদিনের ঘটনা, এদেশের রাজনীতির টিপিক্যাল ফর্মুলার ব্যত্যয় ঘটাল।

আপাত দৃষ্টিতে বিএনপি নেত্রীর ৭ দফা তেমন নতুন কিছু না। এতোগুলো দফার ভেতর মুল দফা একটিই। বাকী দফাগুলোর বেশ অনেকগুলোই সাধারনতঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকারই করে থাকে। আর কিছু খুচরা দফা দেয়া হয়েছে, সম্ভবতঃ নেগসিয়েশানের সময় বাদ দিতে রাজী হবার জন্য, সবাইকে বলা যাবে, ‘সমঝোতার খাতিরে আমরা তিনটি দাবী ছেড়ে দিলাম।’ তবে প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি হচ্ছে অন্য কারণে, এই সময়ে এসে, এমন নরম অবস্থান কেন? যে দাবী গত ছয় বছরে আওয়ামীরা মানেনি, তাদেরকে আবার নতুন করে সেই দাবীর কথা জানানো কেন?

৭দফাকে বেশ নির্বিষ মনে হলেও, কেন যেন সবাই তেমনটা ভাবছে না। সবাই বেশি করে ভাবছেন, এতো মোলায়েম স্বরে কেন কথা বলছেন বিএনপি নেত্রী? তারচেয়েও বড় কথা, আল্টিমেটাম নেই কেন? দফা না মানলে কি হবে, সে সম্পর্কেও নেই কোন ভবিষ্যৎবাণী। বড় জাতের আরও কিছু প্রশ্ন আছে। যেমন বিএনপির গেম প্ল্যান তাহলে কি? সবাই ভাবছেন এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে। আর সেই উদ্দেশ্য কি, তা নিয়ে বোদ্ধা মহলে চলছে কানাঘুষা। কেউ ভাবছেন, ‘নিশ্চয়ই বিএনপি কোন সিগন্যাল পেয়েছে’।

বোদ্ধা মহলকেও খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। তাঁদের এসব কথা ভাববার যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। আসলে এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে পদক্ষেপগুলোকে বেশ পরাজয় বলে ভাবা হয়, তার একটি হচ্ছে দাবী জানানো। বিশেষ করে সেই দাবীর সংখ্যা যদি থাকে একাধিক। আর সেই দাবী পূরণ না হলে, সরকারের কি অবস্থা হবে, সে সম্পর্কে যদি কোন হুশিয়ারি না থাকে, তবে তো অবধারিতভাবে ধরে নেয়া হয়, এই দাবীসমূহের প্রস্তাবকারী হয় সিরিয়াস না কিংবা তাদের তেমন কোন শক্তি নেই।

অন্যদিকে সাহসী পদক্ষেপ ভাবা হয় আন্দোলন কিংবা হুমকিকে। ‘এক দফা এক দাবী’র ও আলাদা একটা দাম আছে। তবে তেমন কিছু একবার বলে ফেললে কিছু একটা করে দেখানো জরুরী। নইলে আবার শুরু হয়ে যাবে অন্য হিসাব। যেমনটা হয়েছিল আওয়ামীদের ‘স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও আটকাতে পারবে না’ হুমকির পরে। আর ইদানীং কালে, বিএনপি সম্পর্কে।

আন্দোলন করে কোন দাবী আদায়ের রেকর্ড বিএনপির খুব একটা নেই। তবে দাবীতে অনড় থাকবার একটা রেকর্ড ছিল। ফলে আগে যখন হুমকি ধামকি দিলেও সেগুলোকে কিছুটা সিরিয়াসলি নেয়া হত। ভাবা হত, সফল না হলেও, কিছু একটা অন্তত করবে। নিজেদের তৈরি করা ‘গুড উইল’এ সম্প্রতি তাঁরা ফাটল ধরিয়েছে। হুমকির অধিক ব্যবহার এবং কিছু করতে না পারা, তাঁদের দেয়া হুমকি সম্পর্কিত এই ধারণায় কিছু পরিবর্তন এনেছে।

এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ফর্মুলা অনুযায়ী ৭ দফাকে নিশ্চিতভাবেই পরাজয় কিংবা পিছু হটা ভাবা যায়। বিশেষ করে গাজীপুরে যেভাবে পিছিয়ে আসলো, তারপরে। ৫ই জানুয়ারীর মত ‘সিম্বোলিক’ দিনে সবাই যেমনটা ভেবেছিলেন, তাঁরা তেমন কিছু করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। এটাও ঠিক, তাঁদের যা সাংগঠনিক অবস্থা, তাঁদের কাছ থেকে ততোটা কেউই প্রত্যাশা করছেন না। আবার এতো নরম কর্মসূচী দিবে, এটাকেও কেউ স্বাভাবিক ঘটনা ভাবতে চাইছেন না। সবার মনে তাই একটি সন্দেহ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, ‘পর্দার আড়ালে কিছু ঘটছে কি না।’

বিএনপি যেভাবে একের পর বিভিন্ন জাতের হুমকি দিয়েও কিছু না করার একটা ট্র্যাডিশান তৈরি করে ফেলেছিল, তাতে কমবেশি সবাই ভাবতে শুরু করেছিল, এই সরকারকে হটাবার ক্ষমতা বিএনপির নেই। আর ইতিহাস বলে, সরকারকে বাধ্য করতে না পারলে, বিরোধী দলের দাবী মেনে নেয়ার মত ঘটনা ঘটে না। আর নরম স্বরে বললে তো নিশ্চিতভাবেই ঘটবে না। এই দাবীর তাই একটি স্বাভাবিক মানে হচ্ছে, হুমকি দিয়ে কিছু না করে নিজেদের ইমেজের যে বারটা বাজিয়েছি, তা আর কন্টিনিউ করতে চাই না। এবার স্বীকার করে নিতে চাই, আমরা অথর্ব। দল হিসেবে, সংগঠন হিসেবে আমরা বেজায় অগোছালো। আন্দোলন করে দাবী আদায়ের ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই এই অনুরোধ ফর্মুলা।

এই স্বাভাবিক ব্যাখ্যার বদলে সবাই কেন যেন অন্য কিছু ভাবছেন। হয়তো ১/১১এর উদাহরণ এর জন্য দায়ী। এদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিদেশ নির্ভরতা এর জন্য দায়ী। হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া বাকী কারো কাছ থেকে সমর্থন আদায়ে এই সরকারের ব্যর্থতা এর জন্য দায়ী। আবার হতে পারে পর্দার আড়ালে এমন কিছু ঘটবার আভাস তাঁরা পেয়েছেন, যা থেকে মনে হয়েছে, এদেশ একটি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। আর তাই, কঠোর আন্দোলনের পথ ছেড়ে, নরম আর সমঝোতা ধাঁচের পথে হাঁটতে রাজী হয়েছেন, বিএনপি নেত্রী।

ধাঁধা আরও আছে। বিএনপির বেশ কিছু বড় নেতার বক্তব্য থেকে বোঝা গেছে, ৭ দফার এই সিদ্ধান্ত নেত্রীর একক সিদ্ধান্ত। সব দলের সাথে আলাপও করেননি। এমনকি নিজ দলের অনেককেও অন্ধকারে রেখেছিলেন। ঘাড়ের ওপর মামলা, বিভিন্ন আন্দোলনে দলীয় বড় নেতাদের পালিয়ে বেড়ানোর মানসিকতা এমন অনেক ব্যাপারকেও এর কারণ ভাবা যেতে পারে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বড় কারণ হিসেবে সবাই ভাবতে শুরু করেছেন, বিদেশী প্রভুদের ইচ্ছেকে।

৭দফা নিয়ে বোদ্ধা মহলের এই প্রতিক্রিয়া দেখে এই প্রশ্নই সবার মনে জাগছে, কি এমন ঘটল যে ম্যাডাম এরকম ‘সফট’ কর্মসূচী দিলেন। কোন আশ্বাস কি পেয়েছেন? আওয়ামীরা নরম হবে কিংবা এভাবে দাবী জানালে মেনে নেবে— এমন কোন আভাস? ১/১১ এর মত কোন ঘটনার আভাস? আওয়ামীদের ওপর থেকে বিদেশী প্রভুদের আশীর্বাদের হাত তুলে ফেলার আভাস? কিংবা প্রতিবেশী দেশের ওপর অন্য কোন বৃহৎ দেশের চাপ প্রয়োগের আভাস? সম্ভবতঃ আর কিছুদিনের ভেতরেই সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে। তখন স্পষ্ট হবে, ‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

‘বিএনপি – জিয়া পরিবারের প্রতিনিধি = ???’

by zainuddin sani

এদেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল মুখে যতই গণতন্ত্রের জন্য নাকি কান্না কাঁদুক, একটা ব্যাপারে দুই দলই একমত, রাজতন্ত্র ছাড়া দল টেকানো সম্ভব না। সমস্যাটায় প্রথম পড়েছিল আওয়ামীরা। যে মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু সহ তাঁদের শীর্ষ চার নেতার নিধন হল, তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় শীর্ষ পদ দখলের কামড়াকামড়ি। প্রায় চার টুকরা হওয়ার পথে রওয়ানা দেয় দলটি। নৌকার হাল ধরতে অবশেষে আসতে হয় শেখ বংশের জীবিত দুই বংশধরের একজনকে।

এর কিছুদিন পরেই একই সমস্যায় পড়ে, দেশের অপর বৃহৎ দলটি। তাদেরও কমবেশি একই অবস্থা হয়েছিল। ম্যাডাম এসে কাস্তে হাতে তুলে না নিলে দলটি টুকরো হতো না ‘ভ্যানিস’ হতো তা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। তবে সেযাত্রা বেঁচে যায় এবং এরপর থেকে ঝড় ঝাপটা এলেও দলটি টিকে ছিল।

এরশাদ সাহেবের বদান্যতায় প্রায় নয় বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দল দুটির অনুগামীর সংখ্যায় যেমন কমতি হয়নি তেমনই নেতৃত্ব নিয়েও তেমন কোন ঝামেলা হয়নি। যদিও বিভিন্ন পদে কে অধিষ্ঠিত হবেন তা দল দুটির শীর্ষ নেত্রী কর্তৃক নাজিল হত কিংবা কাউন্সিল হলেও কোন কর্মীই সাহস করে জানাতেন না, তিনি নেতা হতে চান। ফলে দল দুটির দ্বিতীয় শীর্ষ পদ বলে তেমন কিছু ছিল না।

দল পরিচালনার জন্য যে একনায়কতন্ত্রকে সমাধান হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন দুই নেত্রী, সেই সমাধানই সমস্যা হয়ে আবির্ভূত হল, ১/১১তে। দুই শীর্ষ নেত্রী বন্দী হলেন। একটি দলে তখন হবু উত্তরাধিকারী চলে এসেছিল, তিনিও বন্দী হলেন। শীর্ষ পদ ফাঁকা হওয়ায় নেতা হতে আগ্রহী সেইসব নেতাদের হঠাৎ করে বিবেক জাগল। মনে পড়ল, ‘আরে তাইতো, দলে তো গণতন্ত্র নেই! কিছু একটা করা দরকার।’

সমাধান হিসেবে যা আসলো, তা ছিল দল দুটির ওপর আসা পুরনো সমস্যার নতুন এডিশান। সেই দুই পারিবারিরক প্রতিনিধিদ্বয় আসবার পূর্বে যে সমস্যা হয়েছিল, তা আবার ঘটবার সম্ভাবনা দেখা দিল। কাহিনী একটু বেশি আঘাত হানলো বিএনপিকে। হয়তো এখানে উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতার সংখ্যা বেশি ছিল কিংবা তাঁদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিমাণ বেশি ছিল। ঘটনা বেশ অনেকদূর গড়াল। তবে শেষরক্ষা হল রাজতন্ত্র দিয়ে। ম্যাডাম ফেরত এসে দলকে আবার ‘একটি দল’ বানালেন।

আওয়ামীদের অবস্থাও খুব ভালো কিছু ছিল না। বেশ বড় বড় নেতার ভেতরেই বিবেক জেগেছিল। আওয়ামীদের দুঃসময়ে যারা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কামড়াকামড়ি করেছিলেন, সম্ভবতঃ নিজেদের ভেতর ভাগ বাটোয়ারা নির্ধারণ করে, তাঁরাও নেমে পড়েছিলেন শূন্য হওয়া শীর্ষ পদ দখল করতে। পরেননি, এবং তাঁদের এই অসম সাহস তাঁদের পরবর্তী জীবনও বেশ দুর্বিষহ করে দেয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, দুই বড় দলই সেই ‘এপিসোড’ থেকে শিক্ষা নেননি। কেউই দলে কোন সেকেন্ড ম্যান গণতান্ত্রিক ভাবে নির্ধারণের ঝুঁকি কিংবা প্রচেষ্টা নেননি। তবে তাঁর ফলাফল এখনও আওয়ামীরা ভোগ করেননি। কারণ তাঁদের ওপর সেই অর্থে বড় কোন দুর্যোগ আসেনি। উপনেতা কিংবা সাধারণ সম্পাদকও দলীয় নেত্রীর ইচ্ছামাফিক হয়েছে। কাউন্সিল হলেও কেউ আর এখন মুখ খোলে না। কেউই জানান না, তিনি কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। নেত্রীকে অধিকার দিয়ে দেন, কোন পদে কে বসবেন, সেই হুকুম নাজিল করার। এবং যথারীতি ‘লিস্টি’ আসে শীর্ষ নেত্রীর মুখ থেকে।

১/১১ পরবর্তী সময়ে হওয়া নির্বাচনে আওয়ামীরা ক্ষমতায় আসায়, তাঁদের সেই অর্থে বড়সড় কোন সমস্যা হয়নি। ‘বিবেক জাগা’ সেইসব নেতাদের দলে রাখলেও বেশ অপ্রয়োজনীয় করে রেখেছেন। তবে নেত্রী, মূল সমস্যার কোন সমাধান করেননি। দলে গণতন্ত্র তো আনেনই নি, বরং সবাইকেই জানিয়ে দিয়েছেন, দলটি ‘বিক্রি হওয়া কিছু মানুষ দিয়ে তৈরি’। তাই কাউকে ‘সেকেন্ড ম্যান করা সম্ভব না। যদি কেউ হয়, সে হবে ‘আমেরিকা প্রবাসী পরিবারের মানুষটি’।

১/১১ সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেয় বিএনপিকে। একে তো নির্বাচনে পরাজয় হয়, তারওপর দলে দেখা দেয় অন্তর্কলহ। ঢাকা দখল নিয়ে দুই গ্রুপে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। পুরনো নেতা আর নতুন নেতাদের মধ্যে লড়াই। ফলে মহাসচিব পদে আবার আনা হয়, ম্যাডাম কর্তৃক ‘নির্বাচিত’ ব্যক্তি। পছন্দের লোক বসানোর বসানোর অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসবার কোন ইচ্ছে নেত্রী দেখালেন না। সেই মহাসচিবের মৃত্যুর পরও যাকে ভারপ্রাপ্ত করা হল, তিনিও সেই একই ফর্মুলায় নাজিল হলেন। ফলাফল হল ভয়ঙ্কর। ম্যাডামের অবর্তমানে কে হবেন দলের কান্ডারী, তা কেউ জানে না।

‘জিয়া অরফ্যানেজ’ আর ‘জিয়া চ্যারিটেবল’ এই দুই মামলা ট্রাম্প কার্ড হিসেবে রেখে দিয়েছিলেন, আওয়ামী নেত্রী। ব্যাপারটা ব্যবহার করবেন কি না তা নিয়ে সম্ভবতঃ বিএনপি কিছুটা দ্বিধায় ছিল। হয়তো ভেবেছিল, এতোটুকু ভদ্রতা অন্ততঃ আওয়ামীরা দেখাবে। হয়তো ভেবেছিল, শীর্ষ নেত্রীকে গ্রেফতারের মত সিদ্ধান্ত নিবে না। হয়তো ভেবেছিল, ‘কখন পরস্থিতি পাল্টে যায়, এই ভেবে’ হয়তো আওয়ামীরা শীর্ষ নেতৃত্বকে ছেড়ে কথা বলবে।

মঙ্গলবারে যখন তড়িঘড়ি আয়োজন করা সাংবাদিক সম্মেলনের খবর আসলো, তখন মনে হয় না সাংবাদিকদের বুঝতে বাকী ছিল, সেই আশার গুড়ে বালি পড়তে যাচ্ছে। সম্ভবতঃ আওয়ামীদের ভেতরে থাকা তাঁদের গুপ্তচররা জানিয়েছে, আওয়ামীরা তাঁদের সেই ‘ট্রাম্প কার্ড’ দেখিয়ে ‘ব্ল্যাকমেইল’ না করে সরাসরি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি যেভাবে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে, তাতে ম্যাডামকে বাইরে রাখা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ভাবছে।

মূল যে সমস্যা দল দুটির ভেতরে আগেও ছিল এবং এখনও আছে, তা হচ্ছে, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, দ্বিতীয় আর কোন নেতা নেই। দলে গণতন্ত্র না থাকায়, কোন নেতা কতোটা জনপ্রিয় তা কেউই জানেও না। কোন কাজ করার সুযোগ না থাকায়, কেউই জানেন না, ‘স্ট্রেটেজি’ তৈরিতে কে কতোটা দক্ষ। ফলে সেই পুরনো সমস্যা নতুন করে বেশ বড়সড় বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।

‘ট্রাম্প কার্ড’ সম্ভবতঃ অচিরেই ব্যবহার হবে। তবে সেই পরিস্থিতিতে কি করবে, কিভাবে তাঁরা দল চালাবেন, কিভাবে আন্দোলন করবেন, তা যে তাঁরা জানেন না তা যেভাবে ‘শুকনো মুখ’ নিয়ে বিএনপির দ্বিতীয় সারির নেতারা হাজির হলেন, তা দেখে বেশ স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। তাই যখন তাঁরা আওয়ামী প্ল্যান জানালেন, তখন একটি ব্যাপার বেশ স্পষ্টভাবে তাঁদের চেহারায় জ্বলজ্বল করছিল, তাঁদের অসহায় মুখ বলছিল, ‘ম্যাডাম গ্রেফতার হলে বিএনপির কি হবে?’

সময় হয়তো হাতে খুব বেশি নেই। ৫ই জানুয়ারী আসছে। সেই সময়ে কিছু করতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও মনে হচ্ছে, আওয়ামীরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তাই শীতকালটা কোন ঝামেলা ছাড়াই পার করতে যেকোন দিন আসতে পারে আওয়ামী আঘাত। এবং সেই আঘাত কিভাবে মোকাবেলা করবে, কে নেতৃত্ব দিবে, তা এখনও খুব একটা স্পষ্ট না। সেকেন্ড ইন কম্যান্ডও দেশে নেই এবং তাঁর মাথায়ও ঝুলছে মামলা, তাই তিনিও মনে হয়না ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরবেন। ফলে জিয়া পরিবারের প্রতিনিধির অবর্তমানে নেতৃত্বের কি হবে ব্যাপারটা বিএনপি স্পষ্ট করবে, না সাসপেন্স থ্রিলার গল্পের মতো দেশবাসীর মনে জাগিয়ে রাখবে সেই জটিল প্রশ্ন, ‘বিএনপি – জিয়া পরিবারের প্রতিনিধি = ???’

নির্বাচনমুখী আন্দোলন বনাম লতিফ কার্ড!

|| এ.কে.এম ওয়াহিদুজ্জামান ||

১৭ বছর আগে নিজে হাজ্জ্ব পালন করার পরও গত সেপ্টেম্বরে আমেরিকা সফরের সময় হাজ্জ্ব নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। বিএনপিসহ এবং ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো তখন তাকে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ এবং বিচার করার দাবী জানিয়েছিলো। সরকার সেটা মেনেও নিয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাকে মন্ত্রীসভা এবং আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেই গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথা নিয়ে দেশে ফেরা এবং গ্রেফতার এড়িয়ে এয়ারপোর্ট ত্যাগ করার পর হেফাজতে ইসলামীর হরতাল এবং ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচী বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে সেই সময়ে, যখন বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক দলগুলো নির্বাচনমূখী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিএনপি’র সামনে এখন দুইটা পথ; লতিফ ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করা অথবা লতিফ ইস্যুকে উল্টো সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়ে নির্বাচনমূখী আন্দোলনটাই গড়ে তোলার চেষ্টা করা। ৯০ দশকে কম্যুনিজম বিরোধী স্বস্তা সেন্টিমেন্টের মৃত্যুর পর ইসলামী জঙ্গী বিরোধী স্বস্তা সেন্টিমেন্টের বাজার দর এখন চড়া। বিএনপি যদি এখন হেফাজতে ইসলামী এবং জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে আন্দোলন শুরু করে, তাহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক বাজারকে কেবল আরেকবার দেখিয়ে দেবে যে, বিএনপি গণতন্ত্র নয় বরং জঙ্গীবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রয়োজনে ৬মে ২০১৩’র মত আরেকটা ঘটনা ঘটিয়ে প্রমানও করে দেবে যে, বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ঠেকাতে কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই উপযুক্ত দল।

দ্বিতীয় পথ অনুসরণ করে বিএনপি যদি লতিফ ইস্যুকে উল্টো সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়ে বলে যে- সরকার তার বিচার করবে বলেছিলো এখন বিচার করুক, যদি বিচার না করে তাহলে সেটা সরকারের ব্যার্থতা। তাহলে বলটা সরকারের কোর্টে যাবে। সরকারকে তখন হয় লতিফ সিদ্দিকীর বিচার করতে হবে কিম্বা তাকে দিয়ে ভুল স্বীকার করিয়ে ক্ষমা প্রার্থনাশেষে তওবা করানোর ব্যবস্থা নিতে হবে, অথবা তাকে বিচারের আওয়তায় না এনে ইসলামিস্টদের আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে।

প্রথম ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলামীর দাবী মেনে নিয়ে সরকার লতিফ সিদ্দিকীর বিচার করে, বা লতিফ সিদ্দিকী নিজেই হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় গিয়ে তওবা করে পুনরায় কলেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে একটা চমক সৃষ্টি করতে পারেন। যদিও এটা খুবই দুর্বল একটা সম্ভাবনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ লতিফ সিদ্দিকী অনেক কাঠ-খড়-কেরোসিন পুড়িয়ে নিজের যাবতীয় দুর্নীতি ও অপকর্মের আলোচনা ধামাচাপা দিয়ে এখন সুশিল সমাজের মাধ্যমে দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরীনের পাশে স্থান করে নিয়েছেন। এই স্থান থেকে সরে এসে নিজের দুর্নীতি ও অপকর্মের মামলাগুলোকে নিশ্চই তিনি প্রাধান্য দিয়ে আলোচনায় আনতে চাইবেন না।

Untitled-1

এমতাবস্থায় দ্বিতীয় বিকল্প অনুযায়ী, হেফাজতে ইসলামীর দাবী না মেনে নিয়ে সরকার তাদেরকে আন্দোলন করার সুযোগ করে দিতে পারে। যার নমূনা আজ ২৪ নভেম্বর দেখা গেছে। বিএনপির কোন সংগঠন পুলিশের গ্রেফতার-পিটুনীর কারণে রাস্তায় মিছিল করতে না পারলেও হেফাজতে ইসলামী মিছিল করতে পারছে। মানে সরকার তাদেরকে মিছিল করার সুযোগ দিচ্ছে। এটাকে তারা সাফল্য ভেবে চুড়ান্তভাবে ঢাকা অবরোধের ডাক দিলেও সম্ভবত সরকার সেটা করতে দেবে। এতে দ্বিমুখী লাভ। প্রথমত: এতে করে সরকার বিরোধী আন্দোলন করার মত শক্তিকে দ্বিখণ্ডিত করা যাবে, যাতে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয়ত: জঙ্গীবাদ তত্ত্ব প্রচার ও প্রমান এবং দমনের দক্ষতা প্রমাণের মোক্ষম সুযোগ। সরকার আগের মতই বিনাবাঁধায় হেফাজতে ইসলামী ও অন্য ইসলামিস্ট দলগুলোকে মিছিল, সমাবেশ এবং ভাংচুর করতে দিয়ে সেই দৃশ্য টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করে প্রথমে বর্হিবিশ্বকে জঙ্গীবাদের উত্থান দেখাবে, তারপর তা কঠোর হাতে দমন করে নিজেদের সক্ষমতা দেখাবে।

কিছুদিনের মধ্যেই নেপালে নরেন্দ্র মোদীর সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হবে। তারপর দেশে আসবেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। সেই সময় মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রসঙ্গে আলোচনা এড়ানোর জন্য জঙ্গী ইস্যুর চেয়ে গরম ইস্যু আর কোনটা হতে পারে? মোদি সরকার আওয়ামী লীগের সাথে সাধারণ বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষা করলেও ভারতের পলিসিমেকার সাউথ ব্লক এখনো আওয়ামী লীগেরই কট্টোর সমর্থক। লতিফ সিদ্দিকী সেই ভারত হয়েই বাংলাদেশে ফিরেছেন। কাজেই তিনি আগুনে ঝাঁপ দিতে নয়, বরং আগুন নিয়ে খেলা করতে এসেছেন। এখন তার লেজে আগুন দিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধানো দেখার অপেক্ষা।

দিয়েন বিয়েন ফু হতে বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও একদল হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রুগী..

By Watchdog BD

সোভিয়েত কম্যুনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও দেশটার প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ যেদিন মারা যান সেদিন আমি সোভিয়েত দেশে। সময়টা বোধহয় ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসের কোন একদিন হবে। ১৯৬৪ সালে সেই যে ক্ষমতায় বসেছিলেন নড়াচড়ার নামগন্ধ কোনদিন উচ্চারিত হয়নি। জনগণ প্রায় ভুলেই গিয়েছিল মহাপরাক্রমশালী সোভিয়েত দেশের প্রধানও কোনদিন মরতে পারেন।

তাই এই নেতার মৃত্যু বড় একটা ধাক্কা হয়ে আঘাত হেনেছিল সোভিয়েত সমাজে। একজন বিদেশী হিসাবে দেশটার ক্ষমতায় কে বসবে আর কে বিদায় নেবে তা একান্তই সে দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসাবে গন্য করেছি। তাই এ নিয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখানোর প্রয়োজন বোধ করিনি। তবে সেমিস্টারের মাঝপথে এ ধরণের রাষ্ট্রীয় মৃত্যু দু’একদিনের জন্য হলেও যে আমাদের জন্য ছুটি নিয়ে আসবে এ ব্যাপারে আশার অন্ত ছিলনা। সময়টা ভয়াবহ শীতের সময়। তাপমাত্রা হিমাংকের নীচে চল্লিশ ডিগ্রির আশপাশে উঠানামা করছে। অতিষ্ঠ ছাত্রজীবনে অতিরিক্ত ছুটি অপ্রত্যাশিত বিশ্রাম ও স্বস্তি নিয়ে আসবে এমন একটা প্রত্যাশায় উন্মুখ থাকতাম ঘোষনার। কিন্তু হায়, দিন গড়িয়ে যায় ঘোষনা আর আসে না। ক্রেমলিনের সামনে রেড স্কয়ারে লাখো মানুষের লাইন, বিদেশ হতে শোক বার্তার মিছিল, পাশাপাশি স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক মিডিয়া তোলপাড় কোনকিছুই আমাদের আন্দোলিত করতে পারেনি। আমরা শুধু প্রহর গুনতাম ছুটি নামক মহেন্দ্র ক্ষণের। শেষপর্যন্ত কাঙ্খিত ছুটির দেখা পেলাম, তবে তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র দু মিনিট। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করতে সপ্তাহ খানেক চলে যায়। তারপর শুরু হয় শেষ বিদায়। যে মুহূর্তে লাশ কবরে নামানো হয় থেমে যায় গোটা দেশ। দু মিনিটের জন্য যে যেখানে ছিল দাঁড়িয়ে যায়। থেমে যায় গাড়ি, ট্রেন, বিমান সহ সব ধরণের যানবাহনের চাকা। কারখানা গুলো হতে দু মিনিটের জন্য বিরামহীন ভাবে বাজাতে থাকে সাইরেন। এভাবেই বিদায় নেন সোভিয়েত লৌহমানব লেনিন, স্তালিন ও ক্রুশেভের উত্তরাধিকারী লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ। ক্ষমতার মঞ্চে আবির্ভুত হন নতুন নায়ক কনসটানটিন উস্তিনভিচ চেরনেন্‌কো।

ছুটি বিহীন এ ধরণের মৃত্যু কিছুটা হলেও হতাশ ও অবাক করেছিল আমাদের। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে আমাদের বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদ বিষয়ের শিক্ষক ছোটখাট একটা লেকচার দিয়ে জানালেন জাতিকে ছুটিতে পাঠিয়ে মৃতকে সন্মান দেখানোর রেওয়াজ দেশটায় চালু নেই। বরং অতিরিক্ত উৎপাদনই হতে পারে নেতার প্রতি যথাযোগ্য সন্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন। তর্ক বিতর্কের দেশ ছিলনা সোভিয়েত সাম্রাজ্য, তাই এ নিয়ে ত্যনা পেঁচানোর সুযোগ ছিল সীমিত। সপ্তাহ না ঘুরতে ব্রেজনেভ পর্ব পিছনে ফেলে জাতি এগিয়ে গেল নতুন উদ্যমে। ১৮ বছর যে মানুষটার মুখের কথায় সাইবেরিয়া হতে ভ্লাদিভস্তক পর্যন্ত উঠাবসা করত, ১৮ দিনের মাথায় সে মানুষ ঠাঁই নিল ইতিহাসে। আমরাও ভুলে গেলাম ছুটি না পাওয়ার কষ্ট। তবে এ নিয়ে আমার শিক্ষকের করা মন্তব্যটা কেন জানি মগজে গেথে রইল, এবং সারা জীবনের জন্য। ছুটি, সভা, সেমিনার, বোমা ফাটানো কলম ঝড়, মুখ ফাটানো স্তুতি বন্দনা বাইরে গিয়েও মানুষকে সন্মান, শ্রদ্ধা জানানো যায়, সোভিয়েত দেশে ব্রেজনেভের বিদায় ক্ষণ হয়ত তারই মাইলস্টোন।

প্রতিটা জাতির কিছুনা কিছু ঘটনা থাকে যাকে ঘিরে আবর্তিত হয় তার বর্তমান ও ভবিষৎ। বাংলাদেশের জন্য ১৯৭১ সাল ছিল তেমনি একটা বছর। স্বাধীনতার জন্য পৃথিবীর দেশে দেশে সংগ্রাম হয়েছে, আন্দোলন হয়েছে, যুদ্ধ হয়েছে। দখলদার শত্রুকে পরাজিত করে বিজয়ী জাতি মাথা উঁচু করে পৃথিবীর বুকে পা ফেলেছে, ঝাঁপিয়ে পড়ে উন্নতির দৌঁড়ে সামিল হয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, মাথার উপর ছাদ এবং স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর লড়াই করতে গিয়ে শত্রু-মিত্রের সমীকরণ নতুন করে কষতে হয়েছে। সভ্যতা এভাবেই এগিয়ে গেছে এবং সামনে হয়ত এভাবেই এগুতে থাকবে হাজার বছর ধরে। আমার বন্ধু নগুয়েন চি থানকে দিয়েন বিয়েন ফু হতে শুরু হওয়া যুদ্ধের দাবানল হতে সরাসরি পাঠানো হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। তাদের জানা ছিল যুদ্ধ চিরস্থায়ী নয় এবং স্বাধীনতার আসল ফসল ভোগ করতে প্রয়োজন হয়ে যোগ্য মানুষের। কেবল গোটা পরিবারই নয়, নগুয়েনের নিজের শরীরের অনেকাংশ পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল মার্কিন নাপাম বোমার আঘাতে। এতগুলো বছর পর সে নগুয়েনের নাতিকে আসতে হচ্ছে মার্কিন মুলুকে। পোষাক শিল্পের বাজারের সন্ধানে ঘুরতে হচ্ছে ম্যানহাটনের ৫নং স্ট্রীটে। জানিনা নগুয়েনের শরীর হতে নাপাম বোমার ক্ষত গুলো ইতিমধ্যে শুকিয়ে গেছে কিনা। হয়ত ক্ষত নিয়েই ওদের ঘুরতে হচ্ছে, এবং এমন একটা দেশে যে দেশের বি-৫২ বোমারু বিমানের কার্পেটিং বোমায় জ্বলে, পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল ভিয়েতনামের জনপদ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ৭১ সালে শেষ হয়নি। যুদ্ধ চলছে এবং চলতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। আমরা যারা যুদ্ধকে কাছ হতে দেখেছি, যুদ্ধের ভাল-মন্দের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হয়েছি তাদের কথা ও কাজে যতটা না যুদ্ধের প্রভাব তার চাইতে হাজার গুন প্রভাবে টইটম্বুর জাতির নতুন প্রজন্ম। অনেকটা হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রোগীর মত মুক্তিযুদ্ধ ও তার চেতনার বায়বীয় বেলুনে ভেসে বেড়াচ্ছে এ প্রজন্ম। নতুন এ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ মানেই পাকি ও রাজাকার ’পুন্দানী’, যুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি নিয়ে রাজনীতির মাঠ তথা সোস্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ কর্মঘণ্টা ব্যায়। অথচ চেতনার অপর পীঠে এ দেশে রাজত্ব করছে ভয়াবহ দুর্নীতি, হত্যা, গুম সহ লুটের সুনামী। স্ববিরোধী এসব দেশপ্রেম জাতির অসুস্থতারই বহিঃপ্রকাশ।

স্বাধীনতা তথা দেশপ্রেম কেবল জামাত, পাকিস্তান, রাজাকার অধ্যায় নিয়ে তোলপাড় আর যুদ্ধাপরাধী বিচার দাবির মধ্যেই সীমিত থাকার কথা নয়, এর বাইরেও জাতির কিছু চাওয়া পাওয়া আছে। এসব চাওয়া পাওয়া চেতনার বেলুন হতে মাটির ধরণীতে নামিয়ে আনার জন্যই আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। চাপাবাজি ও ফাঁকা স্টেটাসের বাইরে গিয়েও মুক্তিযুদ্ধকে সন্মান করা যায়। একটা সুস্থ, সবল, ঐক্যবদ্ধ জাতি ও স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তার সমাজ হতে পারে এর মাইলস্টোন।

চির উন্নত মম শিরঃ আগষ্ট বিপ্লব প্রসঙ্গ

এমন একটি সেনাবাহিনী কল্পনা করুন, যারা সদ্য একটি যুদ্ধ শেষ করে ব্যারাকে ফিরেছে । তাদের ফায়ার আর্মস বা মিলিটারী টেকনোলজি বেশ প্রাচীন আমলের । কিন্তু সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করার মতো জ্ঞান, সাহস এবং দৃঢ়তা তাদের আছে । আবার কল্পনা করুন এমন একটি সেনাবাহিনী যারা জীবনে কখনো যুদ্ধই দেখেনি । প্রতিসপ্তাহে কমপক্ষে তিনটা করে পার্টিতে অ্যাটেন্ড করে, আনুষ্ঠানিকতায় দেশের মধ্যে শীর্ষে তাদের অবস্থান, সবার কাছে স্যার-স্যার শুনতে থাকে প্রতিনিয়ত । অবশ্য তাদের প্রশিক্ষণ আছে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার বিষয়ে । আপনাকে যদি বলা হয় দুটি সেনাবাহিনীর মধ্যে দায়িত্বশীলতার তুলনা করতে, আপনি অবশ্যই প্রথম দলকে এগিয়ে রাখবেন যদি সত্যিকার অর্থে সেনাবাহিনীর মূল্যায়ন করার মতো শিক্ষা আপনার থাকে ।

১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নিহত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে কারো অজানা নয় । এ বিষয়ে যথেষ্ট ইতিহাস লেখালেখি হয়েছে, কলাম পড়া হয়েছে, ডকুমেন্টারি দেখা হয়েছে, ফেসবুকে নোট/স্ট্যাটাস পড়া হয়েছে । আমিও এটা নিয়ে লিখতে যাচ্ছি না । এতোবড় ঘটনার নিখুঁত বিশ্লেষণ করার মতো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা যেমন আমার নেই, তেমনি সস্তা মকারি করে রম্য লেখারও উদ্দেশ্য নেই । বরং আমি এখনো আগস্ট বিপ্লবের প্রকৃত তাৎপর্য এবং সাফল্যের শিক্ষণীয় দিকটি বুঝতে চেষ্টা করি । যতোবার আগস্টের গল্প শুনি বা আগস্ট মাসে শোক প্রকাশের কালো পতাকা দেখি, আমার মনে একটা অদ্ভুত রকমের ডিলেমা তৈরি হয় । সেটা শেয়ার করাই আমার লেখার মূল প্রেরণা ।

বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একধরণের অচলাবস্থা চলছে এটা সত্য । সম্ভবত ৭৫ সালেও প্রায় একই অচলাবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছিলো । যেহেতু বাংলাদেশের কোন নিরপেক্ষ ইতিহাস এখনো লেখা হয়নি, আমরা কোন এক বা একাধিক লেখকের বই পড়ে বা কয়েকটা মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখে অথবা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়ে ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সত্যিকার তাৎপর্য অনুধাবন করতে সক্ষম হবো- এটা ভাবাই বাতুলতা । তাহলে আমরা যারা এই প্রজন্মে বড় হয়েছি, তাদের সামনে একটিমাত্র পথ খোলা থাকে । সেটা হলো নিজেদের স্বশিক্ষিত বিচারবোধ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের প্রিম্যাচিউর বার্থ থেকে শুরু করে ৭৫ সালের দিনগুলো পর্যন্ত বুঝে বুঝে ১৫ আগস্টের মূল্যায়ন করা । আপাতত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সময় নষ্ট না করে প্রথমেই দেখে নেয়া যাক আগস্ট বিপ্লবের চারটি লক্ষ্য মূলত কি ছিলোঃ

১। রুশ-ভারতের নাগপাশ থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করা ।

২। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা ।

৩। ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ নামে বাকশাল ও মুজিব সরকারের প্রতারণামূলক কার্যক্রমের প্রকৃত উদ্দেশ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা ।

৪। কৌশলগত কারণে স্বল্প সময়ের জন্য সংসদকে বলবৎ রেখে সাংবিধানিকভাবে একটি দেশপ্রেমিক (সর্বদলীয়/র্নিদলীয়) অস্থায়ী সরকার গঠন করা ।

চলুন দেখে নিই অস্থায়ী সরকারের কাজগুলো কেমন হবার কথা ছিলোঃ

১। বাকশাল প্রণোদিত শাসনতন্ত্রের ৪র্থ সংশোধনী, সংবাদপত্র ও প্রকাশনা আইন, রক্ষীবাহিনী আইন, আর্ন্তজাতিক শ্রমিক আইনের পরিপন্থী শ্রমিক আইন ও অন্যান্য কালা-কানুন বাতিল করা ।

২। রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিয়ে দেশে অবিলম্বে প্রকাশ্য রাজনীতি ও গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা ।

৩। সকল রাজবন্দীদের বিনাশর্তে মুক্তি দেয়া ।

৪। সাধারণ নির্বাচনের দিন ধার্য করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা ।

৫। জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি যে কোন হুমকি মোকাবেলা করার জন্য ‘জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ’ গঠন করা এবং জরুরী ভিত্তিতে প্রাপ্তবয়স্ক সক্ষম ছেলে-মেয়েদের সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অবকাঠামো গড়ে তোলা ।

৬। সমাজতন্ত্রের নামে বিদেশী নিয়ন্ত্রণ, স্বেচ্ছাচারী একনায়কত্ব ও সরকারি সহযোগিতায় জাতীয় সম্পদ লুন্ঠন, কালোবাজারী, মুনাফাখোরী, চোরাচালান ও অবাধ দুর্নীতির ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে যে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাপ্তি ঘটিয়ে বিপর্যস্ত দেউলিয়া অর্থনীতির পূর্ণবিন্যাসের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ।

৭। জাতীয় জীবনে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বিচার বিভাগের পুর্ণ স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে দেশে আইনের শাসন প্রবর্তন করা ।

৮। প্রশাসন কাঠামোকে দুর্নীতিমুক্ত করা ।

৯। রাষ্ট্রীয় নীতিসমূহে বাংলাদেশী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জীবনাদর্শের প্রতিফলন নিশ্চিত করার সাথে সাথে সংখ্যালঘু নাগরিকদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা ।

১০। ভারতের সাথে পঁচিশ বছরের মৈত্রী চুক্তি বাতিল করা ।

আরেকবার এক থেকে দশ পর্যন্ত পড়ে দেখুন । বর্তমানকালের সাথে প্রায় চল্লিশ বছর আগেকার এই নির্দেশিকায় কি খুব একটা পার্থক্য ধরা পড়ছে ? বর্তমান আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে যেসকল শক্তি আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে, তারা কি ঠিক একই অভিযোগ এবং অভিপ্রায় প্রদর্শন করছে না ? তাহলে দীর্ঘ চল্লিশ বছর পার করে আগষ্ট বিপ্লবের ফায়দা কি দাঁড়ালো ! তখনকার আওয়ামী গডফাদার গাজী গোলাম মোস্তফা যেভাবে লেডিস ক্লাব থেকে মেজর ডালিম এবং তার স্ত্রী নিম্মীকে বন্দুকের মুখে অপহরণ করতে পারতো, এখনকার জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমানরা কি এমন দুঃসাহস দেখাচ্ছেনা ? ১৯৭৩ সালে যেভাবে শেখ কামাল পুলিশের গুলি খেয়েছিলো ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে, এখনকার ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করার জন্য কি একই গ্রুপ কাজ করছেনা ? তাহলে বিপ্লব কিভাবে বলি ১৫ আগস্ট কে ! এটাই আমার কাছে প্যারাডক্স ।

শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমরা প্রথমেই যে ভুলটা করি তা হলো- এটাকে নিছক একটা রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হিসেবে চিন্তা করি । যা সম্পূর্ণরুপে একটা সিভিলিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি । অথচ সম্পূর্ণ সামরিক সিদ্ধান্তে, সেনাকর্মকর্তাদের দ্বারা এই ফেইট আকমপ্লি সংঘটিত হয়েছে । আমরা আওয়ামী বিরোধী মহল কথায় কথায় শেখ মুজিবকে ফেরাউনের সাথে তুলনা করি- যেনো হত্যাকান্ডের পক্ষে একটা ধর্মীয় আবহ তৈরী হয় । তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যারা মুজিব হত্যার পর রাতারাতি চেহারা পাল্টে জানরক্ষায় নিয়োজিত হয়েছিলো- তাদের কর্মকান্ডকে বার্ডেন অব প্রুফ ধরে আমরা ১৫ আগস্টের আলোচনা করি । একারণে বিষয়টির গভীরে আমরা যেতে পারিনা এবং প্রতিবছর শোক দিবসের একপেশে বিরোধিতা করতে থাকি ।

আরেকটি সমস্যা হলো দেশের অধিকাংশ জনগণ কর্তৃক রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীকে দেবজ্ঞান করে এড়িয়ে চলা । একারণে টকশোতে যেমন বুদ্ধিজীবিরা সেনাসদর/আইএসপিআর নিয়ে কোন সমালোচনা করতে বিব্রতবোধ করেন, আমজনতাও সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডকে স্বর্গীয় নজরে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে । ফলস্বরুপ সেনাবাহিনী একটা পুতুল নাচের মঞ্চ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । তারা রাজনীতির মাঠে নিষ্কৃয়তার প্রমাণ দিতে গিয়ে বিদেশী আগ্রাসনের মুখেও মুখ খুলতে পারেনা । ভারতের সেনাপ্রধান দলবীর সিং যতোটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে পাকিস্তানী সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ কে হুমকি দিতে পারেন, ইরানী কমান্ডো চীফ কাসেম সোলায়মানি যেভাবে প্রকাশ্যে গাজা হত্যাকান্ডের জন্য ইসরাঈলের নিন্দা জানাতে পারেন, বাংলাদেশী সেনাপ্রধান ততোটা  জোর গলায় নিজদেশের পাহাড়ি জঙ্গিগোষ্ঠি জেএসএস বা ইউপিডিএফ কেও ধমক পর্যন্ত দিতে পারেন না । বিজিপি বা বিএসএফের বিরুদ্ধে মুখ খোলা তো অলীক কল্পনা !

অথচ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিলো অনেক বেশি স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ । মানুষের হৃদয়ে সেনাবাহিনীর প্রতি একটা গভীর সহানুভূতি কাজ করতো । তাদের সাহসিকতা এবং প্রতিশোধ পরায়নতার ওপর মানুষ এতোটাই আস্থা রাখতো যে, রক্ষীবাহিনীর সমস্ত অপরাধের খবারখবর সাধারণ মানুষ নিজ থেকেই সেনাবাহিনীকে অবহিত করতো । কোন সেনাকর্মকর্তার সাথে বা সেনা পরিবারের সাথে সংঘটিত অপরাধের জন্য স্বয়ং রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে ক্ষমা চাইতে হতো । আর এযুগে পিলখানা হত্যাকান্ড নিয়েও প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন বলে কখনো শুনিনি । আমাদের যুগে এমনও ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের কথা শোনা যায় যিনি তার মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন । শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজের লম্পট শিক্ষক যখন ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে বসে ছাত্রীদের পর্ণো ভিডিও বের করে তখনো পুলিশের আশায় বসে থাকা ছাড়া সেনাবাহিনীর করার কিছু থাকেনা । অপরদিকে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভাড়াটে খুনী হওয়ার বিষয়টি না হয় এড়িয়েই গেলাম । অথচ যে সেনাবাহিনী আগস্ট বিপ্লবের সিদ্ধান্ত নেবার মতো দৃঢ়তা এবং সাহস দেখিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে তাদের এমন অসহায়ত্ব শুধুুমাত্র শোক দিবসকে তাচ্ছিল্য করেই বোঝা সম্ভব নয় ।

আমাদের দেশে যখনই সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বা সম্পৃক্তি নিয়ে কথা হয়, বড় বড় দলগুলো সবসময় এটিকে টালবাহানা করে এড়িয়ে যায় । ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, রাজনৈতিক নেতারা যতোবার ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন, ততোই শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ছাত্ররাজনীতি জেঁকে বসেছে । দেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য যতোবার ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠান গুলোকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার বুলি সম্প্রচার হয়েছে, ততোই যেনো ব্যাবসা-বাণিজ্যে রাজনৈতিক মেরুকরন তীব্রতর হয়েছে । তেমনিভাবে সেনাবাহিনীর ব্যাপারে যতোই মধুর বাণী বর্ষন করা হোক না কেনো, বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক কাঠামোর উত্থান-পতনে (একাত্তর থেকে এক-এগারো পর্যন্ত) সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা । এমনকি পিলখানা হত্যাকান্ডের পর যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাকুঞ্জে গেলেন স্বান্তনা সভায়, তখনো সেনাবাহিনীতে রাজনৈতিক মেরুকরণের ভয়াবহতা উঠে এসেছে । অথচ সম্পূর্ণ বিষয়টিকে স্পর্শকাতরতার চাদর পড়িয়ে বদহজম বাড়ানোর নীতি কোন পক্ষই ছাড়তে পারেনি ।

মোটাদাগে যদি আগষ্ট বিপ্লবের দুটি পক্ষ ধরা হয়, একটি হবে আওয়ামী লীগ- যারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দ্বারা সর্বদা নিয়ন্ত্রিত, আরেকটি হবে সেনাবাহিনী- যাদের প্রতি মানুষ বরাবরই বিশ্বাস রাখতে পছন্দ করে । বর্তমানে দুটি পক্ষের কার্যক্রম তুলনা করলেই বিগত চল্লিশ বছরে আগষ্ট বিপ্লবের সাফল্য/ব্যর্থতা বোঝা সহজ হয়ে যায় । এক মুজিবের লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে তৈরি না হলেও প্রতিটি পাড়ায়/মহল্লায় অন্তত একটি করে মুজিবের অনুসারী গডফাদার তৈরি হয়ে গিয়েছে এতোদিনে । মানুষজন বিপদে পড়লে যেমন তাদের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয়, ইফতার মাহফিলে যেমন তাদেরকে প্রধান অতিথি রাখতে হয়, মসজিদ কমিটিতে পর্যন্ত তাদের আইনে মানুষ চলে । শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বলেই দায় এড়াবেন কিভাবে ! দেশের রাষ্ট্রপতি কে বিদায় করেও আগষ্ট বিপ্লবের নায়কেরা দেশের একনায়কতান্ত্রিক অনাচার এবং ভারতমাতার দাসত্ব রুখতে পারেনি । এদিক থেকে দেখলে সহজেই বোঝা যায়- রাষ্ট্রপতি মুজিব শেষপর্যন্ত মরণোত্তর বিজয়ী হয়েছেন । আমরা যতোই ভাঁড়ামো/চটুলতার আশ্রয় নিই, বাস্তবতা এড়াতে পারবোনা । অপরদিকে সেনাবাহিনীর অবস্থা দেখুন । জেনারেল জিয়ার মতো এমন সেনাপ্রধান আর পায়নি বাংলাদেশ । আ ল ম ফজলুর রহমানের মতো বিডিআর প্রধানও পায়নি । সেনাবাহিনীর মান নিয়েও তৈরি হয়েছে যথেষ্ট প্রশ্ন । রেশমা নাটকের হোতা সারওয়ার্দিরা উঠে যায় আকাশে । আব্দুল্লাহ আযমীদের বরখাস্ত হতে হয় অযথা । গুলজারদের মৃত্যু হয় প্রতিশোধবিহীন । একটা উদাহরণ দেই- দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে যদি সার্ভে করা হয়, ক্লোজ আপ ওয়ান তারকা এবং লাক্স সুপার স্টারদের মাস কিভাবে চলে, দেখা যাবে প্রতিদিন ক্যান্টনমেন্টগুলোতে কোন না কোন উপলক্ষে গানের কনসার্ট চলছেই, দেশের প্রায় সবগুলো এলিট ক্লাবে সেনাকর্মকর্তা দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা চালানো হয়, ইসরাঈলী আইডিএফ কেও এতোটা আনন্দঘন পরিবেশে রাখা হয় কিনা জানিনা । শেখ হাসিনার দলীয় অনুষ্ঠানেও অনেক সময় বাহিনী প্রধানদের হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় । কারা আমাদের সেনাবাহিনীর বন্ধু, কারা তাদের শত্রু, এটা নির্ণয় করা যেনো গোলকধাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । অথচ পৃথিবীর অন্য কোন সেনাবাহিনীর সমরনীতি এতোটা অস্পষ্ট এবং ঘোলাটে থাকে বলে মনে হয়না ।  ডিওএইচএস এর মালিকানা নিয়ে দরদাম চলছেই, বৈষয়িক হিসাব নিকাশে ভীষণ অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে ডিফেন্স ফোর্স । তাহলে সেভেনটি ফাইভ এর সেনাবাহিনী আজকের যুগে কিভাবে আশা করেন ! ‘তৃতীয় শক্তি’ নামের কাগুজে বাঘ হিসেবে শুধু পত্রিকার কলাম আর টিভি টকশোতেই সেনাবাহিনীর ক্ষমতার আভাস দেয়া হয় । একজন সামান্য প্রতিমন্ত্রী পর্যন্ত সেনাবাহিনীর কোন চাপ অনুভব করেন বলে মনে হয়না । ‘চির উন্নত মম শির’ চেতনার পরিস্ফুটন ইদানিংকালের সেনাবাহিনী খুব একটা দেখাতে পেরেছে বলেও প্রমাণ নেই । অর্থাৎ আগস্ট বিপ্লবের দ্বিতীয় পক্ষ, অথবা বিজয়ী পক্ষ বলেও যাদেরকে ধরা হয়- তাদের নৈতিক অস্তিত্ব আজ ভীষণ সংকটে ।

আমি বলছিনা যে, সেনাবাহিনীতে ভোটাভুটি চালু করাই এ সংকটের সমাধান । সেনাবাহিনীকে দলীয় ভাগাভাগির ব্যালেন্স অব পাওয়ার বানানোর কথাও বলছিনা আমি । বরং গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত সামরিক বাহিনীর সমরনৈতিক অবস্থানটি সুস্পষ্ট এবং প্রকাশিত রাখার পক্ষেই আমি অভিমত দিচ্ছি । আপনারা কি বলতে পারেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিলেবাসে এখন কি কি বিষয় পড়ানো হয় ? যে সেনাবাহিনী আফ্রিকার মাটিতে ভয়ংকর অপরাধীদের সাথেও শান্তিরক্ষীর আচরণ করতে পারে, তারা দেশীয় জনগণকে ‘ব্লাডি সিভিলিয়ান’ হিসেবে পরিত্যাজ্য মনে করার সাইকোলজি কেনো ধারণ করে এটা নিয়ে কি কোন গবেষণা হয়েছে ? বিএমএ কমিশন্ড অফিসার হিসেবে আগামী লং কোর্স থেকে দুই বছরের স্থলে চার বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ চালু হচ্ছে এই কথা কি সবাই জানতেন ? এখন থেকে সেকেন্ড ল্যাফটেন্যান্ট নয়, সরাসরি ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ দেয়ার নিয়ম হচ্ছে, এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে সেটা নিয়ে কি আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করেছে কেউ ? এমনিতেই সেনাবাহিনী অনেকটা যুদ্ধবিমুখ হয়ে পড়েছে, তার উপরে যদি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতোই তাদেরকে বই-পুস্তক গিলিয়ে বিদ্যাবাগীশ করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়, তবে সেটা আমাদের ভূরাজনৈতিক প্রক্ষাপটকে কিভাবে প্রভাবিত করবে তার রিপোর্ট কি দেশের নেতানেত্রীদের কাছে আছে ? গত দশ বছরের মধ্যে লেঃ কর্ণেল বা মেজর পদবি ধারণ করেই বিপুল সংখ্যক প্রতিভাবান সেনাকর্মকর্তা স্বেচ্ছা অবসরে চলে গিয়েছে কেনো, তা নিয়ে কোন গবেষণাপত্র কি জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে ? হাসান সারোয়ার্দিরাই কেনো জেনারেল হয় সেটা বুঝতে হলে কি এ ব্যাপারে আরো তীক্ষ্ন নজর রাখার প্রয়োজন ছিলো না ? আমাদের ছেলেমেয়েরা অষ্টম শ্রেণির বইয়ে “নিজেকে জানো” শিরোনামে মূলত কি শিখছে সেটা জানা এবং লক্ষ্য রাখার অধিকার যেমন জনগণের আছে, তেমনি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ভাইবোনেরা সমরনীতি চর্চায় কোন কোন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধান পাচ্ছে সেটা লক্ষ্য রাখার অধিকার কি জনগণের নেই ? আমার মনে হয় ১৫ আগস্টকে বোঝার জন্য সেনাবাহিনীর তখনকার অবস্থান এবং এখনকার অবস্থানের তুলনাটাই মুখ্য বিষয় । তাহলেই আমরা বুঝতে পারবো- একনায়ক শেখ মুজিব নিহত হওয়াতে যতটুকু বিজয় আমরা অনুভব করেছি, তলে তলে আরো বেশি হেরে গিয়েছি ।

অনেকে ধারণা করতে পারেন- আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারলেই এ সংকটের সমাধান হয়ে যাবে । সততার সাথে একবার ভেবে দেখুনতো- বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল গুলো কি জন্মদিন পালন করা ছাড়া ১৫ আগষ্টের আর কোন মূল্যায়ন করেছে কখনো ? যদি আবারো বিশ দলীয় ঐক্যজোট ক্ষমতায় আসে তবে হয়তো দিবসটিকে তাচ্ছিল্য করার জন্যে হিসাব করে ১৫ আগষ্টের দিন এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করতে পারে যেনো সেদিনের শিরোনামটি উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা দখল করে নেয় । কিন্তু এর বেশি কিছুই তারা করতে পারবেনা । কারণ ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের চাইতে- ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ যে আরো ক্ষতিকর এবং ভয়ংকর এটা সেনাবাহিনী যেমন জানে, বিরোধী দলগুলোও জানে । অতএব আগস্ট বিপ্লব নিয়ে অতো আয়োজন করে বিভ্রান্ত হবার প্রয়োজন নেই ।

তাহলে করণীয় কি হতে পারে ! হ্যাঁ, করণীয় অত্যন্ত স্পষ্ট । প্রথমেই আমাদেরকে স্বীকার করে নিতে হবে ১৫ আগস্ট ছিলো বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের পক্ষে একটি যথার্থ বিপ্লব । ঝড়ে বক মরবে আর রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করবো আমরা, এমন মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে । সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য আমাদের পক্ষে সুবিধা করে দেবে আর আমরা সবটুকু সুখভোগের পর তাদেরকে বিপথগামী নাগরিক খেতাব দিয়ে নিজেদের খোলসে আবার হারিয়ে যাবো, এমন লুকোচুরি বন্ধ করতে হবে । নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢেকে ঢেকে সামরিক অভ্যুত্থানের আশায় ঈদের পর ঈদ গুনতে থাকার প্রবৃত্তিও বাদ দিতে হবে । আগস্ট বিপ্লবের যথাযথ স্বীকার্য প্রদানের পর দেখতে হবে আগস্ট বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজগুলো কি কি ! বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি যে কোন হুমকি মোকাবেলা করার জন্য ‘জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ’ গঠন করা এবং জরুরী ভিত্তিতে প্রাপ্তবয়স্ক সক্ষম ছেলে-মেয়েদের সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অবকাঠামো গড়ে তোলার যে অঙ্গীকার ছিলো তা পূরণ করার ব্যবস্থা করতে হবে । এক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে ব্যাপক ক্যাম্পেইন চালানো যেতে পারে । রাজনৈতিক বিরোধিতার খাতিরে “র‌্যাব বিলুপ্তির আহবান”, “উপজেলা ভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি”, “নাগরিক অধিকার আদায় কমিটি”, “সম্প্রচার নীতিমালা স্থগিত করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার কমিটি”, “একতরফা নির্বাচন প্রতিরোধ কমিটি” এসব হাজারটা শিশুসুলভ আন্দোলন-আন্দোলন খেলা বাদ দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ‘জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ’ গঠনই সময়ের দাবি । সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদের ‘দেয়াল’ এমন একটি নিরাপত্তা সূচক দেয়ালের অভাব অনুভব করেই লেখা । সম্ভবত কারারুদ্ধ মাহমুদুর রহমান এটা চিন্তা করেই ‘আমার দেশ’ অফিসে পাঠচক্রের আয়োজন করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন । যদি এতোদিনে একটি সত্যিকার নিরাপত্তা পরিষদ আমাদের থাকতো- হয়তো ফেলানীদেরকে মরতে হতোনা, পিলখানা ট্রাজেডী এড়ানো যেতো, একতরফা নির্বাচন কেন্দ্রিক কোটি কোটি টাকার লুটপাট থেকে জাতি রক্ষা পেতো । রানা প্লাজা ধ্বস, পিনাক লঞ্চডুবি, ডেসটিনির অর্থচুরির বিষয়ে অভিযোগ করার মতো মানুষের আরো একটি আশার জায়গা থাকতো ।

অনেক কথা বলা হলো । তবু কিছুই হবেনা এটা প্রায় নিশ্চিত । তারপরেও দিন বদলায়- মানুষ বদলায় । আশা ধরে রাখতেই হয় । শাপলা চত্বর থেকে শাহবাগ চত্বর পর্যন্ত দেখার অভিজ্ঞতা এ প্রজন্মের তরুণদের হয়েছে । সাগর-রুনি হত্যাকান্ড দেখার অভিজ্ঞতা এ প্রজন্মের সাংবাদিকদের হয়েছে । আমিনুল হত্যা থেকে দেলোয়ার খালাস পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ দেখা হয়েছে এ প্রজন্মের শ্রমিক ভাইবোনদের । আমাদের প্রজন্মের মাঝে এতোদিনে ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য উদঘাটনের একটা দৃঢ় প্রত্যয় এসেছে বলেও মনে হয় । হপ-স্টেপ নেবার পর এখন শুধুই জাম্প দেবার অপেক্ষা । যদি সে দীর্ঘ অপেক্ষার পালা নিকট ভবিষ্যতে সমাপ্ত হয়, তবেই আগষ্ট বিপ্লবের সাফল্য তার চূড়ান্ত বিন্দুতে পৌঁছাবে বলে বিশ্বাস করি ।

‘দক্ষিন তালপট্টি’ এবং ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ নিয়ে সজিব ওয়াজেদ জয়ের মিথ্যা বক্তব্য

5

আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূত্র এবং তার তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গত ১১ জুলাই গুলশানের একটি হোটেলে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি ভারতে দিয়ে দেয়া এবং বাংলাদেশের দীর্ঘজীবীতা কামনাসূচক জাতীয়তাবাদী শ্লোগান ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ নিয়ে কিছু অশালীন মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেছেন, “তালপট্টি ভারতকে দিয়েছেন জিয়া” এবং “জিন্দাবাদ উর্দু, পাকিস্তানি শব্দ। যারা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেন তারা পাকিস্তানি এজেন্ট। তাদের পাকিস্তানে বসবাস করা দরকার।”

তার প্রথম মিথ্যাচারটি ১৯৮১ সালের দেশি-বিদেশী পত্রপত্রিকা এবং সার্ভে অব বাংলাদেশের তৈরী ১৯৮১ সালের টপোমানচিত্র দিয়েই প্রমান করা সম্ভব। দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটির অস্তিত্ব ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী টপোমানচিত্র থেকে শুরু করে বর্তমান গুগল আর্থ স্যাটেলাইট ইমেজেও রয়েছে। এটি একটি আংশিক দ্বীপ। জোয়ারের সময় ডুবে যায় এবং ভাটার সময় সামান্য জেগে ওঠে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনার অদূরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি জোয়ারের সময়ও জেগে থাকতে দেখা যায়। ১৯৭৪ সালের আমেরিকান স্যাটেলাইট ইমেজ অনুযায়ী এর আয়তন ছিলো আড়াই হাজার বর্গমিটার। ধীরে ধীরে দ্বীপটির আয়তন ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে এর আয়তন ১০ হাজার বর্গমিটারে দাঁড়ায়। খেয়াল করুন ১৯৭৪ সালে ক্ষমতায় ছিলেন শেখ মুজিব; কিন্তু তিনি দক্ষিণ তালপট্টি বাংলাদেশে অন্তর্ভূক্ত করা কোন ব্যবস্থা করেন নাই। সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশের ছিটমহল রেরুবাড়ী ভারতকে দিয়ে দেবার মতই এই দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটিও তিনি হয়তো ভারতের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।

১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্টের টপোমানচিত্রে দক্ষিণ তালপট্টি

১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্টের টপোমানচিত্রে দক্ষিণ তালপট্টি

গুগল আর্থ এ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

গুগল আর্থ এ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

সার্ভে অব বাংলাদেশের ১৯৮১ সালের টপোশিটে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

সার্ভে অব বাংলাদেশের ১৯৮১ সালের টপোশিটে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

১৯৮০ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে রেডক্লিফের দেশভাগ অনুযায়ী হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মধ্যস্রোত দক্ষিন তালপট্টির পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দ্বীপটির মালিকানা বাংলাদেশ দাবি করে। কিন্তু ভারত ১৯৮১ সালের মে মাসে সেখানে সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে তাদের পতাকা ওড়ায়। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ভূখণ্ড ঐ দ্বীপটি রক্ষার জন্য রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের নেতৃত্বে তিনটি নৌ জাহাজ পাঠান। দক্ষিণ তালপট্টি নিয়ে ভারতের সামরিক আগ্রাসনের মোকাবেলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপের বিষয়টি ১৯৮১ সালের ১৭ মে তৎকালিন সবগুলো বাংলা দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কাছাকাছি সময়ে বিদেশী পত্রিকাগুলোতেও এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, প্রকাশিত হয় এই আগ্রাসনের প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ মিছিলের ছবি।

১৯৮১ সালের ১৭ মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং এর প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রতিবাদ মিছিল

১৯৮১ সালের ১৭ মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং এর প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রতিবাদ মিছিল

১৯৮১ সালে ২০ মে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকা ‘A little pile of mud could start a war’ শিরোনামে লেখে, “১৯৭৪ সালে প্রায় ১২বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপটি সনাক্ত করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সেখানে গানবোট প্রেরণ করলে বাংলাদেশও গানবোট প্রেরণ করে। ফলে দু’টি দেশ যুদ্ধের মুখোমুখি।” সেই একই সংবাদে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবরও আছে এবং সেখানে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সাথে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের দ্বীপ দখল করার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয় কর্তৃক দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের অস্তিত্ব অস্বীকার করা এবং শহীদ জিয়াকে জড়িয়ে এই বিষয়ে মিথ্যাচারের কারণে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, শেখ হাসিনা কী তবে ভারতে সরকারী অশ্রয়ে দীর্ঘদিন অবস্থান করার ঋণ শোধ করতে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি তাদের উপহার দিয়েছিলেন?

শহীদ জিয়া সামরিক শক্তিতে মোকাবেলার পাশাপাশি কুটনৈতিক সমাধানের পথেও অগ্রসর হয়েছিলেন এবং ভারত কর্তৃপক্ষ একটি যৌথ জরিপের মাধ্যমে দ্বীপটির মালিকানা নিষ্পত্তিতে রাজী হয়েছিলো। এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। তবে নিহত হবার আগেই তার আমলে সার্ভে অব বংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত টপোশিটে তিনি দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি অন্তর্ভূক্ত করার ব্যবস্থা করেছিলেন, যার প্রমান তৎকালীন টপোশিটে তালপট্টির অবস্থান। কাজেই শহীদ জিয়া তালপট্টিকে মানচিত্রে অন্তর্ভূক্ত করার ব্যবস্থা করেন নাই, এটি একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার।

শহীদ জিয়ার মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালে আগস্ট মাসে যৌথ জরিপ না করেই আবারো ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তালপট্টিতে তাদের সৈন্য এবং ফ্রিগেট প্রেরণ করলে তৎকালীন নৌবাহিনী প্রধান মরহুম রিয়ার এডমিরাল এম এইচ খান আবারো সেখানে গানবোট প্রেরণ করেন। এই বিষয়ে ১৯৮১ সালের ২০ আগস্ট বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকার তাঁর উদৃতি দিয়ে “South Talpatti Island is Ours : M H Khan” শিরোনামে প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছিলো। একইভাবে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিলো বিদেশী পত্রিকাতেও। ১৯৮১ সালের ১৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াসিংটন থেকে প্রকাশিত আবজারভার-রিপোর্টার পত্রিকায় ‘India, Bangladesh Quarrel Over Island’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছিলো, “ভারতের ফ্রিগেট ও বাংলাদেশের গানবোটগুলো নিউমুর বা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের কাছে পরষ্পেরর মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে আছে। ভারত কর্তৃক যৌথ জরিপের বিষয়টি অস্বীকার করার প্রেক্ষিতে এই অবস্থার উদ্ভব হয়েছে।”

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ তালপট্টির মালিকানা বিষয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার এবং তাঁর মৃত্যুর পর তৎকালিন বিএনপি সরকার যথেষ্ট সাহসিকতার সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেছে। বরং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারতের সাথে সমূদ্রসীমা মামলা হবার পর থেকেই এই সরকার দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটির অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে চলেছে। এই মামলার শুরু থেকেই ভারত তার প্রাথমিক সমূদ্রসীমা দাবী থেকে শুরু করে প্রতিটি রিজয়েন্ডারের মানচিত্রেই বাংলাদেশের সাথে তার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ তালপট্টি (নিউমুর) দ্বীপটি উল্লেখ করেছে অথচ বাংলাদেশ তার দাবী উত্থাপন থেকে শুরু করে কোন যুক্তিতর্কেই তালপট্টি দ্বীপটির অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেনি। তার মানে মামলার আগেই তারা গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে দক্ষিণ তালপট্টিকে ভারতে হাতে তুলে দিয়েছিলো। এখন জনগণের প্রশ্নের মুখে তারা এই দায়ভার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ওপর চাপানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

সজিব ওয়াজেদ জয় তার বক্তব্যে সবচেয়ে হাস্যকর মন্তব্যটি করেছেন ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগান প্রসঙ্গে। তিনি দাবী করেছেন ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি উর্দু। প্রায় সারা জীবন বিদেশে থেকে বিদেশী ভাষায় পরাশোনা করে ও বিদেশিনী স্ত্রী বিবাহ করার কারণে তিনি বাংলা ভাষায় হয়তো দূর্বল হয়ে থাকবেন। তাই তার জানা নেই যে বাংলা ভাষায় অনেক বিদেশী শব্দ আছে। উনি যদি একটু কষ্ট করে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘বাংলা – ইংরেজী অভিধান’ (২১ তম সংস্করণ – ২০০৫) এর ২৩৩ নম্বর পৃষ্ঠার ১ম কলামের শেষ থেকে ২য় কলামের শুরু পর্যন্ত খেয়াল করেন তাহলে ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি পাবেন। অভিধানে এটিকে বাংলা শব্দ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অভিধানের প্রতি উনার অনাস্থা থাকলে ভারত থেকে প্রকাশিত সংসদ বাঙ্গালা অভিধান (শৈলেন্দ্র বিশ্বাস-সঙ্কলিত, চতুর্থ সংস্করণ – ১৯৮৪, অষ্টাদশ মুদ্রণ জুন – ১৯৯৫, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা) এর ২৬৪ নম্বর পৃষ্ঠার প্রথম কলামের মাঝামাঝি স্থানে ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি পাবেন। সেখানেও এটিকে বাংলা শব্দ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। উনার হয়তো জানা নেই যে উনার নানা শেখ মুজিব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত থাকা অবস্থায় ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ এবং পাকিস্তান হবার পর এমন কী ৭ মার্চের ভাষন পর্যন্ত ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগানটাই দিয়েছেন। এমন কী ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে মিরপুরে বিহারীদের ভোট পেতে আওয়ামী লীগ উর্দুতে লিফলেটও ছেপেছিলো।

বামে- ১৯৭০ এর নির্বাচনে কুষ্টিয়ার জনসভায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান লেখা ব্যানার টানিয়ে বক্তব্য রাখছেন শেখ মুজিব, ডানে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিহারীদের জন্য উর্দুতে লিফলেট ছেপেছে আওয়ামী লীগ।

বামে- ১৯৭০ এর নির্বাচনে কুষ্টিয়ার জনসভায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান লেখা ব্যানার টানিয়ে বক্তব্য রাখছেন শেখ মুজিব, ডানে- ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিহারীদের জন্য উর্দুতে লিফলেট ছেপেছে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্ম বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর হয়েছে। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে এই দেশে অন্য নৃগোষ্টীকে অগ্রাহ্য করার যে বিভক্তিমূলক নীতি আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন বাকশাল নিয়েছিলো সেটা থেকে মুক্ত হয়ে সমগ্র বাংলাদেশকে একটি অভিন্ন জাতিস্বত্তা হিসেবে পরিচিত করতেই ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানের উদ্ভব। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের যুদ্ধ বিজয়ের জন্য রণহুংকার হিসেবে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটি তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম প্রসিডেন্ট এবং স্বাধীনতা ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেও দিয়েছেন। কিন্তু যুদ্ধ জয়ের পর সেই শ্লোগানের পরিবর্তে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের দীর্ঘায়ু কামনাসূচক শ্লোগানই রাষ্টীয় শ্লোগান হিসেবে সবচেয়ে উপযুক্ত। সেই প্রেক্ষিতে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানটি বাংলাদেশের দীর্ঘায়ু কামনায় বাংলাদেশীদের হৃদয় নিংড়ানো শুভ কামনা। যারা নিজেকে বাংলাদেশী মনে করে না কেবলমাত্র তাদের পক্ষেই ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানকে পাকিস্তানী বলা সম্ভব।

উর্দু নিয়ে যদি জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের এতই মাথা ব্যাথা থাকে তাহলে উনাদের দলটির নাম কেন পরিবর্তন করছেন না। উনাদের দলটির নাম ‘আওয়ামী লীগ’ এর ‘আওয়ামী’ শব্দটি একটি খাটি উর্দু শব্দ, যার অর্থ জনগণ। উনি কী তাহলে উনার দলের নাম পরিবর্তনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? না কী উনার দলটিকেও পাকিস্তান পাঠিয়ে দেবেন? পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদারদের অত্যাচার এই দেশে অবস্থান করা প্রতিটি মানুষ মনে রেখেছে। তারা এটাও মনে রেখেছে যে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র দুই বছরের মাথায় জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের নানা শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান গিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার নায়ক ভুট্টোর সাথে কী ভাবে গলাগলি করেছিলেন এবং বাংলাদেশে ২৫ মার্চ রাত্রে অপারেশন সার্চ লাইটসহ লক্ষ মানুষের রক্তে রাঙ্গা টিক্কা খানের সাথে কী ভাবে হাত মিলিয়েছিলেন। অন্যদের বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ করার আগে জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের উচিত হবে নিজেদের অতীতের দিকে তাকিয়ে দেখা। নিজে কাঁচের ঘরে বাস করে অন্যের বাড়িতে ঢিল ছোঁড়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

বামে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের লাহোরে ভুট্টোর সাথে গলাগলি করছেন শেখ মুজিব, ডানে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী করাচী এয়ারপোর্টে টিক্কা খানের সাথে করমর্দন করছেন মুজিব।

বামে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের লাহোরে ভুট্টোর সাথে গলাগলি করছেন শেখ মুজিব, ডানে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী করাচী এয়ারপোর্টে টিক্কা খানের সাথে করমর্দন করছেন মুজিব।

শামীম, নিজাম ও ইলিয়াস…একই জরায়ুতে জন্ম

By Watchdog BD

পরিচিত একজনের স্ট্যাটাসে তথ্যটা পড়ে যার পর নাই অবাক হলাম। নিজকে ধিক্কার দিলাম জন-গুরুত্বপূর্ণ এমন একটা তথ্য জানা নেই বলে। বিহারী ক্যাম্পে পুড়িয়ে মারা দশজনের সবাই নাকি গোলাম আজমের বংশধর এবং তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ভেতর অন্যায় কিছু নেই। ইনিয়ে বিনিয়ে তিনি যা বলতে চেয়েছেন তা হল এ হত্যা ৭১’এর হত্যারই প্রতিশোধ। প্রথমে ভেবেছিলাম নিহত দশজনের সবাই ছিল রাজাকার এবং ৭১’এর গণহত্যার সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। রক্তের বদলা রক্ত, এ নতুন কোন ঘটনা নয়। সভ্যতা বিবর্তনের অলিগলি ঘাঁটলে ভুরি ভুরি উদাহরণ পাওয়া যাবে এ ধরনের প্রতিশোধের। কৌতূহলী হয়ে নিহতদের বিস্তারিত জানার চেষ্টা করলাম। এবং খুঁজে পেলাম উপরের ছবিটা। অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন না হলে এ শিশুর রাজাকার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অবশ্য গোলাম আজমের বংশধর বলতে কেবল রাজাকার বুঝানো হয়েছে তাও নয় নিশ্চয়। হতে পারে বৃদ্ধ গোলাম আজমের সাথে শিশুটির মার অবৈধ সম্পর্ক ছিল অথবা হতে পারে জনাব আজমের ধর্ষণের ফসল এই শিশু। অথবা তার মা-বাবা গোলাম আজমকে দীক্ষা গুরু হিসাবে মানতেন এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নস্যাতের কাজে শিশুটিকে ব্যবহার করতেন। এসব তত্ত্বের পক্ষে এ পর্যন্ত কেউ সাক্ষী প্রমাণ নিয়ে জাহির হননি। স্বভাবতই ধরে নেব শিশুটি যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত রাজাকার নয়, এবং কোন বিবেচনায়ই গোলাম আজমের বংশধর না। এতদিন জানতাম শিশু কেবল শিশুই, নিরপরাধ, ইনোসেন্ট এবং সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে। চেতনার ভায়াগ্রা খেয়ে যারা জাতির পশ্চাৎ-দেশে নুর হোসেন আর আরিফ-তারিক নামক পতিতাদের ঢুকাতে ব্যস্ত, তাদের জন্য একবিংশ শতাব্দীর শিশু বিংশ শতাব্দীর রাজাকার হবে, খুব একটা অবাক হইনা।

ইলিয়াস মোল্লা। অবৈধ নির্বাচনের আরও এক জারজ ফসল। ৫ই জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন এলাকায় জন্ম নেয়া তিনশ জারজ সন্তানদের একজন। অবশ্য নিজকে দাবি করেন মিরপুর এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে। নারায়ণগঞ্জের শামীম, ফেনীর নিজাম, কক্সবাজারের বদির মত এই জারজ সন্তানের জন্মও একই মায়ের জরায়ুতে। ভৌগলিক সীমা ও কাপড়ের পতাকাই যদি একটা দেশ ঘোষণার উপকরণ হয়ে থাকে বাংলাদেশ নিশ্চয় একটা দেশ। তবে মনুষ্যত্বের আরও কিছু চাহিদা ও দাবি থাকে যা পূরণে অক্ষম একটা জাতিকে জাতি বলা যায়না। আজকের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তেমনি একটা দেশ। অক্ষম জাতির টিকে থাকার আবাসভূমি। ইলিয়াস মোল্লার জন্ম, উত্থান এবং আজকের অবস্থান নারায়ণগঞ্জের নুর হোসেনেরই কার্বন কপি। মাথায় ভাসানী টুপি, ক্লিন শেভ মুখ এবং ঠোঁটে দেলোয়ার হোসেন সায়েদী কায়দায় মুক্তিযুদ্ধের প্রলাপের আড়ালে লুকিয়ে আছে খুন, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী, দখল, উৎখাত সহ শত শত অপরাধের লৌমহর্ষক কাহিনী। একদল ক্ষুধার্ত খুনিদের নিয়ে চলাফেরা করেন। তাদের ভরন পোষণ করেন প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য। মিরপুরের প্রতিবেশী দুটি বস্তি। একটা কালসী। প্রতিবেশী বস্তিতে বিদ্যুৎ নেই। অসুবিধা কি, আছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ। অবৈধ সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা তার ক্যাডারদের অতিরিক্ত আয়-রোজগারের ব্যবস্থা হিসাবে কালসী বস্তি হতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেন প্রতিবেশী বস্তিতে। কিন্তু তাতে বাধ সাধে কালসী বস্তির বৈধ গ্রাহকরা। কারণ সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ এক বস্তির জন্যই যথেষ্ট ছিলনা। স্বভাবতই লোড সেডিং বাড়তে শুরু করে ঐ বস্তিতে। ইলিয়াস মোল্লার সশস্ত্র ক্যাডারদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায় বস্তিবাসী। দুয়েক জনকে ধোলাই দিতেও পিছপা হয়নি তারা। রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হন খোদ গডফাদার ইলিয়াস মোল্লা। আদেশ দেন অবৈধ সরকারের জারজ এমপি যা বলবে তাই এ দেশের আইন। তাতেও দমে যায়নি প্রতিবাদকারীরা। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে হেনস্তা করে প্রফেশনাল মার্ডারর এই অবৈধ সাংসদকে। ঘটনাস্থল ত্যাগ করার আগে হুমকি দিয়ে যান দুদিনের ভেতর দেখে নেয়ার।

এবং কথা রাখেন ইলিয়াস মোল্লা। দুদিনের ভেতর বস্তিতে হাজির হয় সোহেল রানা। মন্ত্রীর ডান হাত। স্থানীয় যুবলীগের নেতা এবং প্রফেশনাল খুনি। এক পরিবারের সবাইকে জীবন্ত পুড়িয়ে বীর-দর্পে ফিরে যান রক্ষকের ডেরায়। তা ছাড়া রক্ষক ইলিয়াস মোল্লার অনেকদিনের চোখ বস্তির দিকে। জায়গাটা তার চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জরায়ুতে বলি দিতে চান বস্তির মাটি। তাইতো হত্যার অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে জারজ সাংসদ জানালেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্যই নাকি এসব অভিযোগ।

কালসী অথবা মিরপুরের বাকি বস্তির বাসিন্দাদের পরিচয়ে কোন রাখঢাক নেই। ওরা আটকে পড়া পাকিস্তানি। জাতিসংঘের শরণার্থী আইনে বাস করছে এ দেশে। নিজদের পরিচয়ের সাথে পাকিস্তানী গন্ধ মিশে আছে দিবালোকের মত। কিন্তু এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর মিশন নিয়ে এ বস্তিতে গেরিলা গ্রুপ জন্ম নিয়েছে এমন সাক্ষী কেউ দিতে পারবেনা। ওরা খেটে খায়। কেউ আমাদের চুল কাটে, কেউবা জুতা সেলায়। দিনান্তে আর দশটা বাংলাদেশির মতই ঘরে ফিরে যায়। তবে সে ঘর আমার আপনার মত সাধারণ ঘর নয়, বস্তি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এসব বস্তিতে। ’৭১ এ দেশের স্বাধীনতায় যে সব বিহারী পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল তাদের প্রায় সবাইকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয়েছিল স্বাধীনতার পর পর। আমরা স্বীকার করতে না চাইলেও এর পক্ষে বাজারে অনেক প্রমাণ বিক্রি হচ্ছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর একই অভিযোগে শিশুদের জ্ব্যান্ত পুড়িয়ে মেরে উল্লাস করার ভেতর সততা নেই, আছে পশুত্ব, আছে অসুস্থতার লক্ষণ।

কালসী বস্তির এ শিশুটির অপরাধ সে আটকে পরা পাকিস্তানী। তার আসল দেশ তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে। কেবল মাত্র এই অপরাধে শিশুটির পৈশাচিক খুনের বৈধতা দেয়াও অপরাধ। আমাদের বর্তমান জারজ প্রধানমন্ত্রীও জীবনের অনেকটা সময় নিজ দেশে অবাঞ্ছিত ছিলেন। আশ্রয়ের সন্ধানে পৃথিবীর দেশে দেশে ঘুরে বেরিয়েছেন। বৈধ আয়ের বদলে আশ্রয়দাতার দয়ার উপর বেচে ছিলেন। ইলিয়াস মোল্লাদের এসব ইতিহাস জানা থাকার কথা। না জানলে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে জানানো উচিৎ।

http://www.amibangladeshi.org/blog/06-16-2014/1464.html

 

অবহেলিত জনপদের দগ্ধ ওরা বিহারী? না কি মানুষ?

by Elora Zaman

একদিন গিয়েছিলাম বেনারসী পল্লীতে শাড়ি কিনতে। ঝলমলে দোকান পাট! রঙীন সব শাড়ি। কত নারী তার বাসর সাজিয়েছে ঐসব লাখ টাকা দামী শাড়ি দিয়ে। জীবন শুরু করেছে ওখান থেকে। বিত্তশালী সব নারীরা, সুনীলের চৌধুরীদের সূবর্ণ কঙ্কন পড়া রমণীদের মতো। দোকানী বললো, আপা! কারিগর শাড়ি দিতে দেরী করতেছে। দেইখ্যা আসি, কি অবস্থা।

আমার অতিউৎসাহী মন দোকানীর সাথে যেতে চাইলো। বললাম, আমায় নিয়ে চলেন। পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে দোকানী হেসে বললো, যাইবেন? আচ্ছা চলেন। কিন্তু সহ্য করতে পারবেন তো? আমিও একগাল মিষ্টি হেসে বললাম, সহ্য করতে পারবো। আমি গরীবের মেয়ে, সব সহ্য করতে পারি। অসুবিধা নাই। চলেন।

কিছুদূর হেঁটেই দেখলাম ঝুপড়ির মতো ছোট ছোট ঘর। সোজা হয়ে হাঁটা যাচ্ছিলো না, নিচু হয়ে পাশ কেটে হাঁটতে হচ্ছিলো। এতোসব চিপা গলি, নোংরা, দুর্গন্ধ। কারিগরের রুমে ঢুকে খেলাম এক বিশাল ধাক্কা। দেখলাম ঘামে ভেজা কিছু উদোম শরীর। দরদর করে ঘাম পড়ছে সেইসব বারো-তেরো বছরের বিহারী কিশোর ছেলেদের শরীর থেকে। ওরা কাজ করে যাচ্ছে। সুতো টেনে টেনে, খটখট। অগ্নিকুন্ডের মত অবস্থা, তেল চিটচিটে লুঙ্গি গামছা! আমি বাহানা করে বেরিয়ে এলাম, সহ্য করতে পারছিলাম না। বাইরে এসে ভাবলাম, এরাও কি মানুষ?

পৃথিবীর সবচাইতে অবহেলিত একটি জনপদকে দেখে কষ্ট লেগেছিলো। কিন্তু ভুলে গেলাম অতি দ্রুত তার পাশেই ঝলমলে ডাউনটাউন দেখে। আজকে আবার মনে পড়লো সেই বিহারী পল্লীর কথা।

মীরপুরে এগারোজন মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে আর গুলি করে মেরে ফেলার খবর পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। তারচেয়ে বেশি হতবাক হয়েছি এ ঘটনার পর বাংলাদেশের মানুষদের বিশাল একটা অংশের প্রতিক্রিয়ায়। আমরা কি সভ্য মানুষ? অথবা ‘মানুষ’ শব্দটা দিয়ে পরিচিত হওয়ার যোগ্য? এটা কি দুইহাজার চৌদ্দ সাল?

আজকের সময়ে এমন নৃশংস একটা ঘটনায় কেউ জংলী ক্যানিবাল ট্রাইবের মতো আনন্দ প্রকাশ করে কিভাবে? যারা এমন করছে, এরা তো আমাদেরই আশেপাশের মানুষ, ভাই-বোন-বন্ধু-আত্মীয়। আমরা কি ধরণের মানুষদের সাথে বসবাস করছি! পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে নিরব সমর্থন দিয়েছে। কেন দেবেনা? যুবলীগ ছাত্রলীগের ছেলেদের কাজে বাঁধা দেবে, এমন সাহস আর ক্ষমতা কি পুলিশের আছে না কি?

কতটা অসহিষ্ণু এবং উন্মাদ হয়ে গিয়েছি আমরা? শিশু সহ যে মানুষগুলো পুড়ে মারা গেলো, তাদের জায়গায় আমরা নিজেরা অথবা আমাদের কোন আত্মীয়-স্বজন থাকলে তখন কেমন লাগতো? বাচ্চাগুলো আর বড় হওয়ার সুযোগ পেলোনা। নিরপরাধ নারীরা অভাব-অনটনের সংসারের ভেতরেও বেঁচে থাকার অধিকারটুকু পেলো না।

দেশে যেহেতু কোন অন্যায়ের বিচার নেই, সরকারী দলের লোক হলে তাদের যা ইচ্ছা তাই করার ক্ষমতা আছে, তারা তাদের এলাকার স্থানীয় মারামারিতে ক্ষমতার প্রকাশ দেখালো। সেই ক্ষমতায় দেয়া আগুনে কার্বন মনোঅক্সাইড বিষে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে, একটু একটু করে শরীর পুড়ে গিয়ে, বিকৃত হয়ে মারা গেলো দশজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ।

এরপর শুরু হলো এরচেয়ে বড় উন্মাদনা, পাশবিক উন্মত্ততা। শিক্ষিত ও রুচিশীল মানুষেরা এ ঘটনাকে সমর্থন করা শুরু করেছে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নাম দিয়ে যে পাগলামি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সারা দেশে, এর শেষ কোথায়? সত্যিই কি এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

আসলেই কি একটা জাতির মুক্তির সংগ্রাম এরকম ঘৃণা আর অমানবিকতার ভিত্তিতে ঘটতে পারে? বিশ্বাস করিনা। বরং এ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো আওয়ামী-শাহবাগিদের চাষাবাদ করা ঘৃণার জমিন। এ ঘৃণা আর বিভেদের আগুন বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যতকে পুরোপুরি নষ্ট করে দিচ্ছে।

সব ছাড়িয়ে বারবার মনে হচ্ছে, নিরপরাধ মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে পারিনা কেন আমরা? কেন পারিনা ঘৃণিত সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠতে? আমাদের চেয়ে বেশি রেইসিষ্ট জাতি কি আর কোনটা আছে? ধিক আমাদের! বাংলাদেশী পরিচয় দিতে লজ্জা হয় আজ!

Des(h)i progressives’ nightmare

“But see, I don’t want to vote for AL. I do not think AL should return to power. We need checks and balances. BNP should come. But how can I vote for BNP when they are in an alliance with JI.”

That’s what a friend told me in December.  I have the deepest respect for this person’s sincerity.  She is a genuine progressive.  She wants a democratic Bangladesh — of this I have no doubt.  And I understand her reasons for aversion to Jamaat — never mind 1971, Jamaat categorically rejects some liberal-progressive tenets such as equal citizenship rights.  Had she said “I will not vote for Jamaat”, I would have accepted it.

But that’s not what she said.  She implicitly rejected BNP for its electoral alliance with Jamaat.

I didn’t engage in a prolonged conversation with her.  She is hardly the only person I know who made that leap about conflating Jamaat and BNP.  Bangladesh is full of self-proclaimed progressives who choose to reject democracy,never mind the facts.  I just don’t have the mental energy to engage in fruitless debates these days.  At least my friend had the decency to not engage in that kind of sophistry.

I didn’t engage in a political discussion with her, but was reminded of her comment after the Indian election.  You see, I had heard similar stuff from my Indian progressive friends.  Way back in the early 2000s, I heard people say “don’t want to vote for Congress, don’t like the sycophancy/dynasty, and the Vajpayee government isn’t so bad, but you know, how can BJP be supported when they have someone like Modi”.

And now Modi is the prime minister.

My Indian friends could have supported Vajpayee or other moderates in BJP/NDA government.  They could have provided the left flank of a genuinely centrist alternative to Congress.  But their self-inflicted intellectual blind spot meant that they couldn’t even contemplate such a course — never mind that such an alternative would have served India well.

A lot of things contributed to Mr Modi’s rise to power.  The progressives’ blind spot is just one factor, and probably not even an important one.  But to the extent that he represents a lot of things progressives loath, they have no one but themselves to blame.

I fear whether someday my Bangladeshi progressive friend will wake up to her political nightmare.  Jamaat’s importance in Bangladesh is constantly over-rated, and BNP’s strength under-rated, by everyone.  Of course, Jamaat benefits from the inflated power projection.  And the Jamaat bogey suits the Awamis fine.  The thing is, as the centrist opposition is systematically denied any political space, and as the ruling party degenerates into an orgy of violence (google Narayanganj / Feni murders), Islamists (Jamaat or otherwise) may well emerge as the only alternative.

My friend is genuine progressive, not a closet Awami fascist.  Will people like her act to prevent their own worst nightmare?

http://jrahman.wordpress.com/

পদ্মা সেতুর ভিজিবিলিটির স্বপ্ন এবং দুর্নীতির ধারনা সূচকের বিস্তৃতি

1

 

ফয়েজ তৈয়্যব
১। চায়না মেজর ব্রিজের আর্থিক প্রস্তাব মেনে নিয়োগ দিলে (পড়ুন দেয়া হয়েছে) মূল সেতুতে তিন হাজার ৭৭২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে। ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য যে সংশোধিত প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদন করা হয়, তাতে মূল সেতুর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল আট হাজার ৩৬১ কোটি টাকা। ফলে এখন কেবল মূল সেতু নির্মাণের ব্যয়ই দাঁড়াচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা৷ তবে সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, নদী শাসন ও পরামর্শক নিয়োগ হলে মোট ব্যয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা আরও বেড়ে যাবে।
২। যদিও RDPP তে নদী শাসনের ব্যয় ধরা হয়েছিল চার হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এ কাজে ঠিকাদারদের আর্থিক প্রস্তাব জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ২৯ মে পর্যন্ত। দরপ্রস্তাব জমা পড়লেই জানা যাবে, এই খাতে ব্যয় কী পরিমাণ বাড়ছে। দুটি সংযোগ সড়কের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ২৭০ কোটি টাকা। আবদুল মোনেম লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এক হাজার ২৯০ কোটি টাকায়। একইভাবে সেতুর কাজ তদারকিতে পরামর্শক নিয়োগের জন্য ৩৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরামর্শসংক্রান্ত কাজ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীকে একাংশের পরামর্শক, নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু কাজে ২০৫ কোটি টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মূল সেতু ও নদী শাসনের জন্য আলাদা পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলছে। এ ছাড়া নদীর দুই পাড়ে ভাঙন রোধে প্রায় ২৫০ কোটি টাকায় ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
৩। একটামাত্র প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রস্তাবের ওপর ঠিকাদার নিয়োগ ঝুঁকি।
৪। শুরু হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে, এখন সেটি ঠেকছে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি৷
৫। ব্যয়ের পরিকল্পনা এখানেই শেষ নয়৷ সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেতু বিভাগ এখন একটি প্রকল্প কয়বার সংশোধন করা যাবে, সেই নীতিমালাটিও মানতে চাইছে না৷ পদ্মা সেতুকে তারা এই নীতিমালার বাইরে রাখতে চায়৷ অর্থাৎ আবারও বাড়বে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয়৷
পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, আরডিপিপি অনুমোদনের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত নির্মাণ সামগ্রী ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক পণ্যের দাম বাড়ার কারণে সেতু নির্মাণের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।“২০১০ সালে যখন প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল, তার পর থেকে সময়ের সাথে সাথে সব নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে, ডলারের দাম বেড়েছে। ফলে খরচ বাড়ছে।”
মানে হোল কাজ না পেতেই উচ্ছিষ্ট ভোগীদের দালালী শুরু হয়ে গেসে। তাই খরচ/ব্যয় বৃদ্ধির পক্ষে আমাদের প্রকল্প পরিচালকই অতি উৎসাহী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
৬।চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি পাকশীতে লালন সেতু নির্মাণ করেছিল। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীন ওই সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার। ওই প্রকল্পে চায়না মেজর ব্রিজের সহযোগী ছিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল। ৯০৭ কোটি টাকার ঐ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান এখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং মূল সেতুর দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়েছে। জনাব আবুল না থেকেও আছেন!
৭। এই মেজর ব্রিজ ই ঢাকা চট্রগ্রাম চার লেইন এর কাজ করছে ৭ গত বছর ধরে, যার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে অনেক ধাপে, তার পরেও যা রয়েছে অসম্পূর্ণ। যারা ঢাকা চট্রগ্রাম সড়ক পথে যাতায়াত করেন তারা এই দুর্নীতিবাজ কোম্পানীর অতি নিন্ম মানের আর অব্যবস্থাপনা পূর্ণ কাজের মান সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পেয়েছেন।
একই কাজ পদ্মা সেতুর বেলায়ও হতে যাচ্ছে? তাহলে স্বপ্নের পদ্মা সেতু কবে শেষ হবে?
চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সম্পর্কেঃ
চারটি চীনা প্রকৌশলভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ও একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে ২০০৪ সালে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড গঠন করে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- চায়না জঙ্গতি মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, ইউয়ান আয়রন এন্ড স্টিল গ্র“প কর্পোরেশন, চায়না রেলওয়ে টানেল গ্র“প কোম্পানি, চায়না রেলওয়ে সাঙহাইজেন ব্রিজ গ্র“প কোম্পানি লিমিটেড।কোম্পানিগুলোর প্রতিটির বিরুদ্ধেই রয়েছে দুর্নীতি সম্পৃক্ততা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতার ভয়ঙ্কর সকল অভিযোগ।এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চায়না জঙ্গতি মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। চীনের সংবাদ মাধ্যমগুলোর সূত্র মতে, দুর্নীতির অভিযোগ থেকেই রক্ষা পেতে এই কোম্পানিটির মাতৃপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক বাই জংগ্রেন চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একটি বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন।গত বছর চীনের রেলওয়ে খাতে ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে দেশটির সরকার। তদন্তের অংশ হিসেবে চীনের সাবেক রেলওয়ে মন্ত্রীর দুর্নীতি প্রকাশ পায়। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের ভয়, শ্রমিকদের বেতন বাড়ানর চাপ ও অর্থসঙ্কটের কারণে বাই জংগ্রেন আত্মহত্যা করেছিলেন। গেল কয়েক বছরে, বাই জংগ্রেনের মতো আরও কয়েক নেতাই দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে আত্মহত্যা করেছেন।পদ্মাসেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাওয়া মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হচ্ছে ইউয়ান আয়রন এন্ড স্টিল গ্র“প কর্পোরেশন। ২০১২ সালে কানাডায় চেক জালিয়াতি করে অর্থসংগ্রহের অভিযোগ উঠে ইউয়ান আয়রন এন্ড স্টিল গ্র“প কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে।পদ্মাসেতু নির্মাণে ভূমিকা পালন করবে এমন আরেকটি কোম্পানি হচ্ছে চায়না রেলওয়ে টানেল গ্র“প কোম্পানি। এই কোম্পানিটি আরেকটি চীনা কোম্পানির সাথে সম্মিলিতভাবে পোল্যান্ড-জার্মানি সংযোগ সড়ক নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল ২০০৯ সালে। তারপর পোল্যান্ডের সরকার, চীনা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন করতে না পারা ও প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ফেলার অভিযোগ তোলে। এবং পোল্যান্ডের সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
যেখানে একটি সেতুই একটি দেশের জিডিপি কে নুন্যতম ২% বাড়াবে বলে ধারনা করা হচ্ছে, সেখানেও দুর্নীতির সাথেই আমাদের সেতুবন্ধন! এ এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন, যা দুর্নীতি ব্যাপ্তির  বৈশ্বিক ধারনা সূচকের পরিবর্তন ঘটাতে পারে !
সংকলিত।

 

সেনাপতি মেক্সিমাস ও “ঢাকা ইজ দ্য লাইট”

 

ইনতেখাব আলম চৌধুরী
জাতীয় পত্রিকা বলে একটা ধারণা আমাদের মধ্যে চালু আছে। বস্তুত যেসব পত্রিকা ঢাকা থেকে সারা দেশে যায় সেগুলোকেই জাতীয় পত্রিকা ধরা হয়। পত্রিকাগুলোর ফিচার মোটামুটি একইরকম। সাথে থাকবে কিছু সাপ্তাহিক অংশ, যেগুলোর কাজ ফ্যাশন, পড়ালেখা, চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কে মানুষকে নিত্যদিনের জ্ঞান দেয়া। তবে জাতীয় পত্রিকা বলা হলেও এখানে পুরো জাতির খবর খুব একটা আসে না। যা আসে তা হল ঢাকার খবর। সারাদেশের মানুষ ঢাকায় কী হল না হল সেখবর গিলতে থাকে আর নিজেদের এলাকার অবস্থার কথা ভুলতে থাকে। অন্যান্য অঞ্চলেও পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সেগুলো মানুষ পড়েও। কিন্তু জাতীয় পত্রিকাগুলোর দৌরাত্মের দিনে আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোর খবর মানুষের মধ্যে তোলপাড় তুললেও তা দিন শেষে ভাটার দিকেই যায়। 

হালের টিভি চ্যানেলগুলোর অবস্থাও তাই। তবে সেক্ষেত্রে কোনো “জাতীয়” টাইপ ধারণা গড়ে উঠে নাই। তাই দেশীয় চ্যানেলের সংখ্যা প্রচুর হলেও এখন পর্যন্ত কোনো জাতীয় চ্যানেলের নাম শোনা যায় না। তবে সুবিধার জন্য সেগুলোকে জাতীয় চ্যানেল হিসেবে ধরলাম। আরেকটি বিষয় হল এখন পর্যন্ত কোনো আঞ্চলিক চ্যানেলও গড়ে উঠে নাই। চট্টগ্রামে আগে সন্ধ্যার দিকে ঘন্টাখানেক সময় বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রোগ্রাম প্রচার করা হত, এখন চালু আছে কিনা জানি না। তবে সেটাকে চ্যানেলের পর্যায়ে ধরা যায় না। 

যাই হোক, তারা ঢাকার খবরগুলোকেই প্রচার করে সেটাই আসল কথা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের খবর নিয়ে তাদের বিশেষ পাতা থাকলেও সেগুলোতে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের খবর আটানো দুঃসাধ্য কর্ম। ফলশ্রুতিতে যা হয় তাহল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চিন্তাভাবনাও ঐ একটা শহর কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। নিজেদের সমস্যা যতই বড় হোক না কেন ঐ শহরের কাছে তা পাত্তা পায় না। তাই উত্তরবঙ্গের মঙ্গার খবর কয়েকদিন যাবত হেডলাইন হয় না, দক্ষিণাঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের খবর প্রতি বছর পাওয়া গেলেও সেটা জাতীয় সমস্যা না। ফলে এগুলোর স্থায়ী সমাধান নিয়ে চিন্তার দরকার নাই – এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। তার চেয়ে বরং পুরো ঢাকাকে কিভাবে ফ্লাইওভার দিয়ে মুড়ে ফেলা যায়, ঢাকার পার্লামেন্টের ক্ষমতা কিভাবে কে দখলে রাখতে পারে – সে চিন্তাই বেশি দরকারি। 

এর একটা দীর্ঘমেয়াদি খারাপ ফল আছে। Gladiator মুভিটিতে রোমান সম্রাট মার্কা‌স অরেলিয়াস ও তার সেনাপতি মেক্সিমাসের মধ্যে সংলাপের একটি দৃশ্য ছিল। সম্রাট সেনাপতি মেক্সিমাসকে জিজ্ঞাসা করে, “What is Rome?” মেক্সিমাসের উত্তর ছিল, “I’ve seen much of the rest of the world. It is brutal and cruel and dark. Rome is the light.” এরপর সম্রাটের বক্তব্য হল এরূপ, “Yet you have never been there. You have not seen what it has become.” মানে কী? সেনাপতি মেক্সিমাস তখন পর্যন্ত রোম শহরে যায়নি। এরপরও রোম তার কাছে লাইট এবং এই লাইটের রক্ষার জন্য সেনাপতি জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছিল এবং আমৃত্যু সম্রাটের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। তৎকালীন সময়ে এমনভাবে শারীরিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে রোমের দাসত্ববরণ করতে হত। উল্লেখ করা দীর্ঘমেয়াদি খারাপ ফলটা তাই। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এমন অনেক মানুষ আছে যারা ঢাকার বাসিন্দা না হলেও জীবনের একটা অংশ ঢাকায় কাটিয়েছে আর তাতেই তাদের মধ্যে একটা এলিট শ্রেণীর মানসিকতা তৈরী হয় যার ফলে দেশের অন্যান্য অংশে গেলে সেটার প্রতি তুচ্ছভাব পোষণ করতে সেকেন্ড দেরী হয় না। যদিও তাদের আদি বাসস্থানও ঐ একইরূপ। এবং এধরনের মানুষের বর্ধমান হার দিয়ে ভবিষ্যত সুন্দর হওয়া অসম্ভব। তারা খালি ঢাকাকেন্দ্রিক চিন্তা করবে কিন্তু বাকি দেশ থেকে যাবে “brutal and cruel and dark”।

এই মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ আমরা, আমাদের সমাজের সিস্টেম নিত্যদিন তৈরী করে চলেছি। তাই ভালো থাকার জন্য ঢাকায় মানুষের স্রোত বাড়তেই থাকে, সেই মানুষগুলোকে ভালো রাখতে গেলে যেসব অবকাঠামো তৈরী করা দরকার তা বলতে গেলে শুধু ঢাকাতেই তৈরী হয়, ঢাকা হয়ে পড়ে বুদ্ধিজীবীদের ভাষায় মানুষের “প্রাণের শহর”। ঢাকা রাজধানী হওয়ার চারশত বছর নিয়ে গবেষণা সেমিনার হয়, উৎসবের আয়োজন হয়। অথচ সমুদ্রতীরবর্তী চট্টগ্রামের হাজার বছর পুরনো বাণিজ্য নিয়ে টু শব্দ হবে না, উত্তরবঙ্গের সুপ্রাচীন বাংলার ইতিহাস অপাংতেয় হয়ে পড়বে, সিলেটের নিজস্ব নাগরী লিপি হারিয়ে গেলেও “শিক্ষিতজনদের” কারো মাথাব্যথা নেই, উল্টো সিলেট, চট্টগ্রাম এসব এলাকার ভাষাকে খেত প্রমাণে সবাই ব্যস্ত। এসবের মূল কারণ এগুলো কেন্দ্র করে তারা ব্যবসা করতে পারে না। তাই শেষকালে সেনাপতি মেক্সিমাসের মত সবার মনে বাজে, “Dhaka is the light”।
 
Written By:
– ইনতেখাব আলম চৌধুরী

 

 

জনাবা হাসিনা; অনির্বাচিত ও অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দ্যেশ্যে

by Watchdog Bd

জনাবা হাসিনা,

মাননীয়া সম্বোধন করে আপনাকে সন্মান দেখাতে পারছিনা বলে দুঃখিত। প্রথমত, বিশ্ব হতে উপনিবেশবাদ অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। বৃটিশ প্রভুদের কায়দায় কথায় কথায় মাননীয়া জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে নিজকে দুইশত বছর আগের দাস যুগে ফিরিয়ে নিতে চাইনা। খোদ বৃটিশরাও এখন আর এ জাতীয় শব্দ ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়। বারাক ওবামা আমার দত্তক নেয়া দেশের প্রেসিডেন্ট। পৃথিবীর সবাচাইতে শক্তিধর প্রেসিডেন্টকে আমি জনাব প্রেসিডেন্ট বলতেই অভ্যস্ত। এ নিয়ে খোদ ওবামা যেমন অভিযোগ করেননি, তেমনি তার দল ডেমোক্রাটরাও আমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানোর চেষ্টা করেনি। আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি হাজার ব্যস্ততার মাঝেও প্রেসিডেন্ট ওবামা আমার মত একজন সাধারণ সমর্থক ও নির্বাচনী কর্মীর সাথে নির্বাচন উত্তর যোগাযোগ রাখতে ভুল করেন না। দ্বিতীয়ত, আপনি বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার প্রধান নন। আপনি দলীয় প্রশাসন ও বন্দুকের নলের মুখে অনির্বাচিত সরকারের প্রধান। তাই আমাদের সংস্কৃতিতে স্বীকৃত ও প্রাপ্য সন্মান দেখাতে পারছিনা বলেও দুঃখিত। আইনগতভাবে আপনি কোনটারই দাবিদার হতে পারেন না। আপনি জারজ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। চাইলে দলীয় চামচা ও প্রশাসনের ভাড়াটিয়া বাহিনী পাঠিয়ে আমাকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি আমি যা বলতে যাচ্ছি তার সবটুকু বলা সম্ভব না হলেও কেউ না কেউ একদিন এসব কথা মুখ ফুটে বলতে শুরু করবে। বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের সবাইকে ভয়, সন্ত্রাস ও পেশী শক্তির কাছে জিম্মি রেখে, গায়ের জোরে ক্ষমতার সিংহাসন আলোকিত করার নিশ্চয়তা কেউ আপনাকে দিতে পারবেনা। সময় আসবে এবং আপনার প্রতি সেকেন্ড কর্মকান্ডের জবাবদিহিতার দাবি উঠবে। এবং তা হবে সভ্যতার দাবি। সময়ের চাহিদা।

জনাবা হাসিনা,

ঘটনা হাজার রজনীর আরব্য উপন্যাস হতে নেয়া নয়। ৬০-৭০’এর দশক এখনো ইতিহাসের পাতায় সমাহিত হয়নি। আমরা যারা বেঁচে আছি তারা ভুলে যাইনি কেন এবং কোন প্রেক্ষপটে এ দেশের মানুষ সংযুক্ত পাকিস্তানকে লা-কুম দিনু-কুম জানিয়েছিল। স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা ও তাদের পোষ্য ২২ পরিবারের শোষন, পিষন ও সন্ত্রাসের নাগপাশ হতে মুক্তি পাওয়ার ভ্রুণেই জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ নামক দেশের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন অংকুরিত হয়ে পল্লবিত হয়েছিল ৭০’এর দশকে। ফলশ্রুতিতে মানুষ অস্ত্র হাতে নিয়েছিল এবং ইতিহাসের অমেঘো পরিনতিতে সংযুক্ত পাকিস্তান ঠাঁই নিয়েছিল আস্তাকুঁড়ে। আজ আমরা নিজেদের স্বাধীন এবং সার্বভৌম বলে দাবি করি। আসলেই কি তাই? আপনার অভিধানে স্বাধীনতার সংজ্ঞা কি আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের অভিধানে এ সংজ্ঞা কেবল আপনার বাবাকে দেবতার আসনে বসিয়ে পুজা অর্চনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। স্বাধীনতা ২২ পরিবারের খপ্পর হতে বেরিয়ে ১ পরিবারের রাজতন্ত্র কায়েম করাও নয়। স্বাধীনতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ভৌগলিক দিয়ে শুরু হলেও এর শেষ ঠিকানা অর্থনৈতিক মুক্তি তথা সামাজিক নিরাপত্তায়। জাতিকে আপনি অথবা আপনারা কি দিয়েছেন ভেবে দেখেছেন কি? গোটা দেশ পরিনত হয়েছে মাফিয়া স্বর্গরাজ্যে। লুটপাটতন্ত্র রাজত্ব করছে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র। খুন, লাশ, গুম পরিনত হয়েছে দৈনিক ডাল ভাতে। মানুষ মরছে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে, শয়ণকক্ষে। লাশ হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবায়। আতংকের কালো ছায়া গ্রাস করে নিয়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন। বলতে বাধ্য হচ্ছি জনাবা, সবকিছু হচ্ছে আপনার নেত্রীত্বে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আপনাদের পারিবারিক সম্পত্তি। এর অংগ সংগঠন সমূহ আপনার পেশিশক্তি। এদের যৌথ প্রযোজনায় যে পশুশক্তি জন্ম নিয়েছে তার কাছে অসহায় হয়ে পরেছে গোটা জাতি। গোটা দেশের মালিকানা চীরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার লালসায় দেশের সবকটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে আপনি তচনচ করেছেন। কেড়ে নিয়েছেন নাগরিকদের ভোট দেয়ার অধিকার। দুমড়ে মুচড়ে তক্তা বানিয়েছেন কথা বলার স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধ আপনার বাবা অথবা পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি নয় যা দিয়ে আজীবন ব্যবসা করে যাবেন। যুদ্ধের কোন ফ্রন্টেই আপনাদের কারও কোন অবদান ছিলনা। আপনারা কেউ যুদ্ধে যাননি। দখলদার বাহিনীর নিরাপদ আশ্রয়ে নিজেদের চামড়া বাচিয়েছিলেন কেবল। চাপাবাজি আর পেশি শক্তির উপর ভর করে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতাকে বানিয়েছেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লাভজনক পণ্য, প্রতিপক্ষ নির্মূল করার ধারালো হাতিয়ার। শেখ পরিবারে আজীবন দাসত্ব করার জন্য বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। এ দেশের জন্ম হয়েছিল বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার জন্য, স্বাধীনভাবে কথা বলার জন্য, অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা সহ মৌলিক অধিকার সমূহের নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্য। আজ কোথায় এসব? স্বাধীনতাকে আপনি কবর দিয়েছেন শীতলক্ষ্যার পানিতে। বর্গা দিয়েছেন র‌্যাব, পুলিশ ও ছাত্রলীগের পদতলে। ওরা জাতির গলা চিপে শ্বাস বের করে আনছে এবং পৈশাচিক উল্লাসে আনন্দ করছে। আপনি গণভবনের চার দেয়ালে বসে মুচকি হাসছেন এবং মিথ্যাচারের গর্ভে জন্ম দিচ্ছেন নতুন এক দশ। অচল ও বিকলাঙ্গ বাংলাদেশ।

জনাবা হাসিনা,

ক্ষমতার স্বাদ খুবই সুস্বাদু। সহজে কেউ ভুলতে পারেনা। আপনি পারবেন না। কিন্তু সময় আসবে এবং আপনার স্বপ্নের তখত তাউসে আগুন লাগবে। সে আগুনে আর কেউ জ্বলবেনা,জ্বলবেন আপনি এবং আপনার পরিবার। অযোগ্যতাই হবে আপনার পতনের মুল কারণ। বাংলাদেশের মত জটিল আর্থ-সামাজিক দেশ পরিচালনা করার নূন্যতম যোগ্যতা নেই আপনার। তাই জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিন। ইতিহাসকে আপন গতিতে চলতে দিন। এ দেশের মানুষ গোলাম হয়ে জন্ম নিয়ে গোলাম হয়ে মরতে অভ্যস্ত নয়। তারা ঘুরে দাড়াতে জানে।
http://www.amibangladeshi.org/blog/05-14-2014/1458.html

মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ

 

By Faiz Taiyeb

কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না, তেমন অত্যাচারী শাসক ও ভালো কাজ করতে পারে না। স্বৈরাচারী শাসক এবং নাগরিক স্বার্থে ভালো কাজ করা, এই দুই আসলে “মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ”।
৫ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ পন্থী বুদ্ধিজীবিরা ইনিয়ে বিনিয়ে উপর্যপুরি বলার চেষ্টা করেছেন, অবৈধ কিন্তু সাংবিধানিক (!) নির্বাচনের পর হাসিনা ভালো কিছু কাজ করে মানুষের মন জয় করবেন। আমারও সেরকম অনেক আশা ছিল। কারন এই মহিলা ৩ বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তিনি দলে একনায়ক, দেশের সেনাবাহিনী কে আর্থিক প্রাচুর্যের বিহ্বলতায় চড়িয়েছেন, আদালতকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছেন, নির্বাচন কমিশন কে হুকুমের চাকর বানিয়েছেন, রাজনৈতিক চালে বিরোধীদের কুপোকাত করেছেন। মোটকথা দেশের নিরুঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী প্রধান নির্বাহী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। অধুনা একনায়করাও সম্ভভত এইধরনের একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করেন না। কিন্তু অতীতে যাই করুক না কেন, প্রান্তিক নাগরিক হিসেবে অধিকাংশই চায় এই দুর্নীতিবাজ প্রতারক নেতা গুলান ভালো হয়ে যাক। সবাই আসলে একটি নতুন ভোরের অপেক্ষায়। ভালো কাজ করতে শুরু করলেই এই বঞ্চিত নির্যাতিত লোক গুলো অতীতের সব গ্লানি ভুলে এদের মাফ করে দিবে। আমরা বড়ই ইমোশনাল এক জাতি।
সুতরাং রক্তক্ষয়ী হিংস্র ক্ষমতার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে ষাটোর্ধ একজন লেডির সেলফ সেটেস্ফিকশন আসবে এটা ভাবা খুব কঠিন ছিল না। কিন্তু বিধি বাম। তাই ওইসব বুদ্ধিজীবী আর সেইসব আশার কথা শুনাচ্ছেন না। বরং পুরা রাজনৈতিক কালচার কে দোষারোপ করছেন। ইন্টারপোল লিস্ট এ থাকা মস্তান কর্তিক একজন ফাঁসির আসামির খুন হয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার মৃদু বিবৃতি দিয়ে সমর্থনের লেজ আকড়ে ধরে উছিস্ট ভোগের সাময়িক ফন্দি ঠিক রেখছেন ।
এইদিকে, আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী রা আছেন ভিন্ন হিসেব নিয়ে, ইউএস, ই ইঊ র নীরব সমর্থন বেশি টিকবে না ভেবে সবাই আগের গোছাতে ব্যস্ত, সবাই বেসামাল বেপারয়া লুটপাটে লিপ্ত। এতই বেপরোয়া যে, দলের ভিতর বাহির যেখান থেকেই বাধা আসুক সবাইকে কচুকাটা করা হচ্ছে। সমানে ভিতর বাইরের বিরোধীদের ধরে নিয়ে গলাটিপে নদীতে বস্তাবন্দী করে ফেলা দেবার কি হিংস্র এক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সবাই। এমন উৎসাহ যে এলিট ফোর্স র‍্যাব ও বসে থাকতে পারছেনা। কিছু কন্ট্রিবিউট করছে।
তাই পদ্মা সেতুর অর্থায়নও আর শুরু হয় না, বরং এই সল্প সময়ে কিভাবে ভারত কে স্থল ট্রানজিট গছিয়ে দেয়া যায় সেটা নিয়ে কিছুটা তোড়ঝোড় দেখা যাচ্ছে। যাতে এটা বেচে আবার কিছু একটা করা যায়।
অবৈধ বেপরোয়া ক্ষমতা আর ভালো কাজ একসাথে চলে না, পৃথিবীর কোথায়ও চলে নি কোন কালে। সতরাং এইসব জনবিচ্ছিন্ন অত্যাচারী শাসকের বিদায় দরকার, অন্তত সমস্যার সাময়িক সমাধান এর নিমিত্তে। এর পর দীর্ঘ মেয়াদি সমাধান পেতে সমাজ, নাগরিক ও নাগরিক সংঘঠন সমূহকে ঠিক করতে হবে, তারা কি গণতান্ত্রিক সিস্টেমের মধ্যেই কয়েকজন চোর এর মধ্যে ছোট চোরকে বেছে নিবে, নাকি তাদের সৎ পথে আনার সাহস দেখাবে আর বাধ্য করবে, নাকি এই চোরদের চুরি প্রতিহত করার সিস্টেম দাঁড়া করাবে।
কৈফিয়ত
সবসময় চেষ্টা করি প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধি করন নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করতে। নেতাদের সমালোচনা না করতে। কারন আমরা সব পেশার লোকেরাই রাষ্ট্রকে সমানে বলাৎকার করছি নিয়ত। সমস্যা হলো সব জায়গাতেই রাজনৈতিক দুরব্রিত্ত্বায়নের ছোবল এতটা গভীর যে এই অযোগ্য অপদার্থ লোক গুলারে (জাতে মাতাল কিন্তু টাকা মারার তালে ঠিক) আলোচনায় না এনে পারা যায় না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সুশাসন, লোভ মুক্ত নেতৃত্ব, নৈতিকতার ও নিয়মতান্ত্রিকতার কিংবা দূরদর্শিতার যে বেইজ এডুকেশন এটা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেই, সব গুলো দলই ভন্ডে ভরা। সবার উদ্দেশ্যই দেশের আর দেশের মানুষের টাকা মারা, যখন পারে, যেভাবে পারে। এটা করতে গিয়ে দেশের সব কিছু তারা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভরে ফেলেছে। অথচ দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ভাল নেতৃত্ব লাগবেই লাগবে। এর দ্বিতীয় কোন বিকল্প জানা নাই।
২ বার, ৩ বার এক একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, দেশের লক্ষ কোটি শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত আর অশিক্ষিত জনতা তাদের ভয় বা সম্মান করেন (মন থেকে কিংবা বাধ্য হয়ে)। আর কি কি পেলে উনাদের আত্ব তৃপ্তি আসবে? ওনারা পৃথিবীর কত কত জনপদ দেখেন, কত কত দেশ ঘুরেন, একটি বারও কি উনাদের ইচ্ছে করে না, এই দেশটাকে ঠিক করে দেয়ার চেষ্টা করবেন। আজ রাজনৈতিক ইস্যু সমাধান বা ধামাচাপা দেয়ার জন্যে যে তোড়ঝোড়, এত এত ফোরস ডিপ্লয়ম্নেট, এত চিন্তা, এত কালক্ষেপণ, এর সামান্য যদি আমরা ঘুষ, দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যয় করি তাহলে দেশটা ঠিক হয়ে যায়। ২ টা মাত্র দল। ক্ষমতাসীন হলেই অসীম শক্তি আর প্রতিপত্তি, মানুষ কে নির্দেশনা দেয়া ও সহজ তাদের জন্য।
ব্যাপারটা তো এরকম নয় যে, দেশ উন্নত হয়ে গেলে হাসিনা বা খালেদা (মুজিব আর জিয়া পরিবার) গরীব হয়ে যাবে, তাদের সম্মান কমবে। ব্যাপারটা তো উল্টো। যে দেশ যত উন্নত তার নেতৃত্ব তত বেশি সম্মানিত, দেশে আর দেশের বাইরে।
আল্লাহ্‌ পাক আমাদের নেতৃত্ব কে বুঝ দিন। আমাদেরকেও বুঝ দিন। হতে পারে ব্যাপারটা এমন যে, ব্যক্তি জীবনমান আর সামাজিক উন্নয়ন আমাদেরকে সামাজিক আন্দোলন করেই আদায় করে নিতে হবে। অধিকার এমনি এমনি আসে না গরীব আর অভাগাদের কপালে।

 

RAB বিলুপ্তি কোন সমাধান হতে পারে কি !

 

By KMB Bappy

যখন কেউ খুন-অপহরণের সমাধান দিতে গিয়ে বলেন- “RAB বিলুপ্ত করা হোক” তখন আমার মনে পড়ে যায় পিলখানার ঘটনায় কেউ কেউ বিডিআর বিলুপ্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন । তাদের পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়েই সম্ভবত বিজিবি নামকরণ করা হয়েছিলো । লাভটা কি হয়েছিলো বা কাদের পকেটে মুনাফা গিয়েছিলো সেটা এখন সবাই নিশ্চিত । এভাবে একটি প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী বিলুপ্ত করে দেয়া যায়না বা এর পরিণতি কখনোই ভালো হয়না । কারণ-


১। তাদের অপকর্মের দায় নেবার জন্য তখন আর কেউ থাকবেনা । বিচারের পথ রুদ্ধ হয়ে যায় চিরদিনের জন্য । যে মানুষগুলো অন্যায়ের শিকার হয়েছেন তারা আজীবন চেষ্টা করলেও বিচার পাবেন না । সকল অপরাধী রক্ষীবাহিনীর মতো পার পেয়ে যাবে । তাদের জমানো কাড়ি কাড়ি টাকার হিসাব নেবারও কোন উপায় থাকবেনা । তাদের পরিবারগুলো আরো শান্তিতে থাকবে তখন । কোন সাংবাদিকের ক্যামেরা বা জনতার চোখ তাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারবেনা ।

২। র‌্যাব বিলুপ্ত করা হলে এই সদস্যরা তখন পুরাতন বাহিনীতে ফিরে যাবে । র‌্যাব এর দায় সেনা বা পুলিশ বাহিনী কখনো নেবেনা । সেনাবাহিনীতে বা পুলিশে মিলে যাবার পর একই ব্যক্তি নতুন ইউনিফর্ম নিয়ে পরিবর্তিত মানুষ হয়ে যাবে তা ভাবার কোনই কারণ নেই ।

৩। যে অপরাধে র‌্যাব বিলুপ্তির প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে, একই অপরাধে গত পাঁচ বছরের মধ্যেই পুলিশ বিলুপ্ত হয়ে যাবার কথা ছিলো । সেনাবাহিনীতেও সব ফেরেশতাদের বিচরণ ভাবা বাতুলতা হবে । অতএব বাহিনীকে দোষারুপ করার কোন যৌক্তিক কারণ আর থাকেনা ।

৪। তারপরও অনেকে হয়তো বলবেন র‌্যাব বিলুপ্ত করলে অন্তত গুম-খুন কিছুটা কমবে । অর্থাৎ আমরা কতোটা স্বার্থপর জাতি সেটা তখন প্রকাশ পেয়ে যাবে । নিজে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চাই যেভাবেই হোক । এর জন্য শেখ হাসিনা কে প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়ে তার কাছেই আবেদন জানানো হবে যেনো র‌্যাব বিলুপ্ত করা হয় । অথচ সকল বাহিনীর মূল চালিকাশক্তি হলেন শেখ হাসিনা । বিলুপ্ত করবেন কাকে ?

৫। আওয়ামী লীগের মূল টার্গেট হলো দেশের প্রতিটি এলাকায় গডফাদারভিত্তিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গোটা দেশ দখলে রাখা । নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান কিছুটা বোকা বলেই সামনে চলে আসে বেশি । কিন্তু প্রতিটি এলাকায় মানুষেরা বিপদে পড়ে যেসব আওয়ামী নেতার বাসায় সহযোগিতার আশায় ভীড় করে তারা হলো বুদ্ধিমান গডফাদার । এরা শোষণ করে কিন্তু মজলুমকে বুঝতেই দেয়না । এরা নির্বাচনে যখন ভোট কারচুপি করে একক ভাবে পাশ করে আসে তখনো কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না । এদের একটি ফোনে/আহবানে যখন কোন বিপদ কেটে যায় বা কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় তখন মানুষেরা আর চিন্তা করতে চায়না এদেরকে এতো ক্ষমতা কে দিয়েছে । এসব গডফাদারদের হাতে নির্বিঘ্নে দেশ তুলে দেয়ার জন্য র‌্যাব-পুলিশকে বিতর্কিত করে ফেলা এবং দুর্বল করে দেয়া একটা আওয়ামী কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয় ।

তারপরেও ধরে নিলাম সরকার জাতির স্বার্থে র‌্যাব বিলুপ্ত ঘোষণা করলো । তারপর কি হবে ? আপনারা যারা এটা কামনা করেছিলেন- কেউ কি ফুলের তোড়া দিতে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ? নাকি আপনারা ধরে নিবেন আওয়ামী লীগ সঠিক পথে ফিরে এসেছে ? কোনটাই করতে পারবেন না । কারণ বিলুপ্তি ঘোষণা/নিষিদ্ধ ঘোষণা কোনদিনও সমাধান হতে পারেনা । বরং ততদিনে হয়তো সমুদ্র জয়ের মতো অপরাধ দমন শীর্ষক আরেকটি নাটকের মঞ্চ বানাবে সরকার । এভাবে নিজেদের ভুলে আওয়ামী লীগের হাতে যারা আরেকটি কার্ড তুলে দিতে চাচ্ছেন তাদেরকে এখনি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ।

শেষকথা হলো- আমাদের প্রতিটি বাহিনী জনগণের টাকায় পরিচালিত । অতএব তাদের যাবতীয় কর্মকান্ডের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহীতা থাকতে হবে । খুনি-অপরাধী যেই বাহিনীতে থাকবে সেই বাহিনীর আইনে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে । রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে আত্মীয়তার সুযোগে কেউ যেনো রাজনীতির ঘুটিতে পরিণত না হয় সেই পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে । এই কাজগুলো সরকার করবেনা । যারা সত্যিকার অর্থে দেশকে ভালোবাসে তাদেরকেই করতে হবে । র‌্যাব-পুলিশ-সেনাবাহিনী কেউ যদি না থাকতো দেশের সবচেয়ে লাভবান হতো আওয়ামী লীগ- এটা আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে । যদি সত্যিকার অর্থেই বিলুপ্ত করতে হয়- আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় অভিশাপকেই বিলুপ্ত করতে হবে । সেটা উপরওয়ালা করবেন নাকি জনগণ করবে এটা সময় বলে দেবে ।

 

আমায় ভাসাইলিরে, . আমায় ডুবাইলিরে

Bu Watchdog Bd

ওরা মারে, ওরা মরে…ওরা শীতলক্ষ্যার পানিতে ভাসে!

সিদ্ধিরগঞ্জ। আর দশটা জনপদের মত বাংলাদেশের আরও একটা জনপদ। পালাবদলের সাথে এখানেও বদল হয় ভগবানদের চেহারা। সাথে বদল হয় তাদের দোসর থানা পুলিশ, এসপি, ডিসি, আইন, আদালত ও বিচারক। রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ পদে বসে অপরাধ ও অপরাধীদের লালন করার অভয়ারণ্য আমাদের জন্মভূমি। এখানে দস্যুবৃত্তির মাধ্যমে যেমন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করা যায়, তেমনি ক্ষমতার ছত্রছায়ায় প্রতিপক্ষকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে পোক্ত করা যায় লুটে পাওয়া সে ক্ষমতা। সিদ্বিরগঞ্জও এর বাইরে নয়। এখানেও ভগবান আছেন। তারা নিরাকার। খালি চোখে দেখা যায়না। কেবল ঘাড়ের কাছে তাদের নিশ্বাস অনুভব করা যায়। শিমরাইল টেক পাড়া এলাকার মৃত হাজি বদরুদ্দিনের ছেলে নুর হোসেন। কর্মজীবন শুরু করেন সিদ্ধিরগঞ্জ ইকবাল ট্রাক গ্রুপের হেল্পার হিসাবে। ১৯৮৯ সালে একই এলাকার ট্রাক চালক ও হেল্পার ইউনিয়নের নেতা বনে যান গায়ের জোর। ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাক চালক দাইমুদ্দিনকে উচ্ছেদ করে দখল নেন ইউনিয়নের এবং ক্ষমতাসীন দল জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে পোক্ত করে নেনে অবৈধ দখল। ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে নাম লেখান বিএনপির রাজনীতিতে। ক্ষমতার সিঁড়ি টপকানোর শুরুটা হয় এখানেই। এরপর তরতর করে পদানত করেন ইউপি চেয়ারম্যানের মসনদ। ’৯৬ সালে জয়ী হন দ্বিতীয় টার্মেও। বিএনপি ছেড়ে হাত মেলান শামীম ওসমানের সাথে। বনে যান আওয়ামী নেতা। ২০০২ সাল পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় শিমরাইল মোড়ে গড়ে তোলেন চাঁদাবাজীর সিন্ডিকেট। ভগবানের চরণে নিয়মিত পূজা দিয়ে আবিস্কার করতে থাকেন সম্পদ আহরণের নতুন নতুন দিগন্ত। পরবর্তী স্টপেজ নারায়ণগঞ্জ ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ। ক্ষমতার সিঁড়ি বাংলাদেশে কখনোই মসৃণ হয়না। নুর হোসেনের বেলায়ও ব্যতিক্রম হয়নি। নজরুল ইসলাম একই এলাকার বাসিন্দা এবং ক্ষমতার সিঁড়ি টপকানোতে নুর হোসেনের প্রবল প্রতিপক্ষ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে গিয়ে থামতে হয় নজরুল ইসলামকে। নুর হোসেনের সাথে নজরুল ইসলামের রেশারেশি ক্ষমতার রুটি হালুয়া নিয়ে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক সিন্ডিকেট, বেশ্যালয় সহ শত শত অবৈধ ব্যবসার মালিকানা নিয়ে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী লড়াই। ১৭ বছর একনাগাড়ে চলতে থাকে এ লড়াই।

10339700_10203944204584954_4392159966178853964_n

১৯৯৭ সালের ১৭ই জুলাই। মাগরিব নামাজের পর মিজমিজি চৌধুরী পাড়া এলাকায় নজরুলের ক্যাডারদের হাতে খুন হন সাইফুদ্দিন নামের এক ভদ্রলোক। পরে বের হয় ভুল টার্গেট ছিল এই সাইফুদ্দিন। নামের গোলমালে প্রাণ দিয়ে হয় তাকে। ২০০০ সালের ১৭ই আগষ্ট। নুর হোসেনের সমর্থক জহিরুল ইসলাম নামের এক সব্জি বিক্রেতা নির্বাচনী পোস্টার লাগানোর দায়িত্ব পালন করছিলেন। নজরুলের উপস্থিতিতে তার ক্যাডাররা খুন করে জহিরুল ইসলামকে। এর প্রতিদান ফিরিয়ে দিতে দেরি করেনি নুর হোসেন। তার ক্যাডাররা ১লা অক্টোবর স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে খুন করে নজরুলের সমর্থক যুবলীগ নেতা আবদুল মতিনকে। তারও আগে ১৯৯৬ সালে শিমরাইল মোড়ে নিহত হন আওয়ামী লীগ কর্মী আলী হোসেন। নুর হোসেনকে আসামী করা হলেও ভগবানের হাত ধরে অব্যাহতি পান মামলা হতে। নজরুলে ক্যাডার শিপন, রনি ও ফারুখ ২০০১ সালের ৩১শে মার্চ শিল্পী নামের এক তরুনীকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। তার অপরাধ, বিয়ের প্রস্তাবে অনিচ্ছা প্রকাশ। ২০০০ সালের ৩রা মার্চ ধানমন্ডির ১৫ নং সড়কের ১৬নং বাড়িতে খুন হন এডভোকেট বাবর এলাহি। তদন্তে প্রকাশ পায় নজরুল ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করায় তাকে। খুনের মূল্য ছিল ৫ লাখ টাকা। দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ২০০৪ সালে নজরুলকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করে। পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে যান এই নেতা। এবং ফিরে আসেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার বছর। হাইকমান্ডের নির্দেশে হাইকোর্টের আওয়ামী বিচারকগণের হাত ধরে খালাস পান খুনের মামলা হতে। ২০০৯ সালের ১৩ই অক্টোবর মিজমিজি পূর্বপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে খুন হন বাংলাদেশ চুন প্রস্তুতকারক সমিতির সহ-সভাপতি জনাব আবু তালেব। তদন্তে পাওয়া যায় নজরুলের সংশ্লিষ্টতা।

২০১৪ সালের ৩০শে এপ্রিল। বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকা। এলাকার বুক চিড়ে বহমান শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ভাসমান কটা লাশ দেখে উৎসুক হয়ে উঠে স্থানীয় জনগণ। খবর দেয় স্থানীয় পুলিশকে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে খবর দেয় আত্মীয়দের। লাশের মিছিলে খুঁজে পাওয়া যায় নজরুলের লাশ। সনাক্ত করেন তার স্ত্রী। অবশ্য ততদিনে নজরুলের পরিচয়ে কিছু উপাধি যুক্ত হয়ে হয়ে গেছে; যেমন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল চেয়ারম্যান। প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুলকে একা ভাসতে দেখা যায়নি শীতলক্ষ্যা নদীর ঠান্ডা পানিতে। সাথে ছিল তার তিন সহযোগী। সাথে কো-ল্যাটারাল ড্যামেজ হিসাবে প্রাণ হারায় এক এডভোকেট ও তার ড্রাইভার। তাদের অপরাধ এখনো পরিষ্কার নয়। তবে সন্দেহ করা হচ্ছে সাংবাদিক সাগর-রুনির মত তারাও স্বাক্ষী হয়েছিল ভগবানদের বড় কোন অপরাধের।

পাঠক, এবার আসুন নজরুল ও নুর হোসেনদের কাপড় খুলে উন্মোচন করি তাদের লজ্জাশীন অঙ্গ সমূহ। অনেকের মত নজরুল-নুর গংদের জন্ম ক্ষমতার ঘরজামাই, বিশ্ব বেশ্যা সমিতির আজীবন চেয়ারম্যান জনাব হোমো এরশাদের জরায়ুতে। বেশ্যা ভোগের মত বেগম জিয়ার বাহিনীও ভোগ করে গেছে তাদের সার্ভিস। লগিবৈঠা বাহিনীর প্রধান ও ক্ষমতার জারজ কন্যা শেখ হাসিনা কেবল উপভোগই করেই ক্ষান্ত হননি, বরং জাতির গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন পচনশীল মহামারী হিসাবে। দেশের উচ্চ আদালতে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডার কাম বিচারকরাও বাইরে থাকেননি এ সিন্ডিকেটের। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীকে বেকসুর খালাস দিয়ে প্রমান করেছেন তারাও ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট খোর। চেতনার যোনিপথে ফিল্টার লাগিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধের সাথে সহবাস করছেন তাদের হীমশীতল নীরবতা এসব দানবদের উত্থানে ফার্টিলাইজার হিসাবে কাজ করেছে মাত্র। যে দেশে সরকার তার নাগরিকদের রাতের অন্ধকারে খুন করে ক্ষমতার পথ মসৃণ করার জন্য, সে দেশে নুর হোসেন তথা শামীম ওসমানরা নজরুল গংদের শীতলক্ষ্যার গভীর পানিতে সমাহিত করবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের বাতাসে এখন লাশের গন্ধ। এ গন্ধ বিচ্ছিন্ন কোন গন্ধ নয়। বরং এ গন্ধের মাথা আছে, মগজ আছে, হাত-পা আছে। গন্ধের সূত্র চাইলে তা শীতলক্ষ্যার গভীর পানিতে নয়, বরং সন্ধান করতে হবে ভগবানদের দরবারে।
http://www.amibangladeshi.org/blog/05-01-2014/1455.html

কেউ কি স্যারকে ধরবেন?

1

শাফকাত রাব্বী অনীকঃ একের পর এক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাস হওয়া নিয়ে স্যার জাফর তার স্বভাব সুলভ ও আপাত দৃষ্টিতে শিশুতোষ একটি লেখা লিখেছেন। লেখার টাইটেলে স্যারের নির্দোষ প্রশ্ন “কেউ কি আমাকে বলবেন?” টাইটেলটা অনেকটা সাদাসিদা ভাবে “কেউ আমারে ধর” টাইপের শুনালেও, আসলে কিন্তু চালাকিতে ভরা।

ক্যাজুয়াল রিডারদের বোকা বানানোর জন্যে স্যার জাফরের লেখার স্টাইল খুবই এফেক্টিভ । পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ক্যাজুয়াল রিডার, আমি নিজেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই। তবে স্যার জাফরের লেখা গুলো এন্টেনা খাড়া করে, বেশ ক্রিটিকাল ভাবে পড়ি। কেননা স্যার জাফর উপরে-উপরে সাদাসিদা ভাব ধরলেও, তার প্রতিটি লেখা দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। এন্টেনা উচা করে না পড়লে সেই দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ধরা পরে না।

যেমন ধরুন নিজে সিভিল সমাজের একজন লোক হয়েও স্যার জাফর মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের কর্ণধার আদিলুর রহমান শুভ্রর জেলে যাওয়ার সাফাই গেয়ে সাদাসিদে প্রতারণা মূলক নিবন্ধ লিখেছিলেন। প্রতারনামূলক কেন বললাম তা জানতে সে সময় আমার লেখা আরটিকেলটি (http://www.priyo.com/shafquatrabbee/2013/08/16/27087.html) পড়ে দেখতে পারেন। আমার জানা নেই পৃথিবীর অন্য কোন দেশে লিডিং কোন প্রফেসর পাওয়া যাবে কিনা যিনি তার দেশের আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত মানবাধিকার কর্মির জেলে যাওয়াকে সাফাই গেয়ে লেখা দিতে রাজী হবেন। এমন পিকিউলিয়ার ইন্টেলেকচুয়াল পৃথিবীতে বিরল। এমনকি দালাল ও কোম্প্রমাইজিং ক্যারেক্টারে ভরা বাংলাদেশেও।

৫ই জানুয়ারী নির্বাচন থামাতে সিভিল সোসাইটির বড় বড় হর্তাকর্তারা একত্রিত হয়ে সরকারকে একতরফা নির্বাচন রহিত করতে বলেছিলেন নির্বাচনের ঠিক আগে একটি জরুরী সভায়। ডেইলি ষ্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রমুখ সহ উচ্চ বর্নের আওয়ামী ঘরনার সেকুলার সুশিলদের উপস্থিতি এই হাই-ভোল্টেজ মিটিংএ ছিল উল্লেখ করার মতো। সেই হাই ভোল্টেজ মিটিং এর ড্যামেজ কন্ট্রল করতে, তরিঘরি করে সেকন্ড গ্রেডের সেকুলার সুশিলদের নিয়ে একটি পাল্টা-পাল্টি সভা ডাকা হয়েছিল। স্যার জাফর ছিলেন সেই সভার মূল আকর্ষন। এই সভাতেই স্যার জাফর তার বিখ্যাত ফিল্টার থিওরি উপস্থাপন করেছিলেন। দেশের বাকি সুশীলদের শাসিয়ে দিয়ে, ইনিয়ে বিনিয়ে, সাদাসিদে, শিশুসুলভ, ও আবেগী গল্প ফেঁদে স্যার জাফর ফিল্টার থিউরীর প্রয়োগ করে বোঝাতে চেয়েছিলেন কেন, কিভাবে তখন একটি একতরফা নির্বাচন দেশের জন্যে খারাপ হতো না।

সেই স্যার জাফরই এখন কিনা নির্দোষ প্রশ্ন করছেন, “কেউ কি আমাকে বলবে, সদ্য নবায়নকৃত সরকারের অধীনে একের পর এক প্রশ্ন পত্র লিক হওয়া নিয়ে আমার কোমলমতি ছাত্রীকে আমি কি উত্তর দিবো?” নিজে একজন শিক্ষক হিসেবে স্যার জাফরের খুব ভালো ভাবে জানা থাকার কথা প্রশ্ন কিভাবে আউট হয়, কেন আউট হয়, এবং এর প্রতিকারই বা কি? তাই একজন স্যার হিসেবে নিজে প্রশ্ন না করে, তার তো উচিত সমস্যার উত্তর বা সলিউশন খুজে দেয়া! সেই সলিউশন কর্তৃপক্ষ না শুনলে প্রতিবাদে ফেঁটে পড়া!

সাধারণ মানুষেরই বরং উচিত স্যার জাফরের কাছে গিয়ে জিগ্গেস করা, স্যারের দেয়া চেতনার বাস্তবায়নকারী সরকারের আমলে কেন একের পর এক প্রশ্নপত্র লিক হচ্ছে? এই সরকার যেহুতু স্যার জাফরের ফিল্টার পাশ, তাহলে সেই মহান ফিল্টারে কেন আউট হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্রগুলো আটকে যাচ্ছে না?

স্যার জাফররা ঘৃনা আর বিভাজনের চাষবাস করে একটা পারফেক্ট জঙ্গল সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। তাদের স্বপ্নের সেই জংগল হবে এমনই পারফেক্ট জঙ্গল যেখানে জংলি আইন- কানুন, অধিকারহীনতা, লাঞ্চনা, বঞ্চনা, ভোটাধিকারহীনতা — সব কিছু শুধু স্যার জাফরদের প্রতিপক্ষকেই সইতে হবে। আর তাদের পক্ষের মানুষজন পারফেক্ট জঙ্গলের পারফেকশন উপভোগ করে সুখে শান্তিতে, চেতনাময় দিন কাটাবে।

সরি স্যার জাফর, জঙ্গলকে নিজেদের জন্যে যতই পারফেক্ট বানানোর চেষ্ঠা করুন, দেয়ার ইজ নো পারফেক্ট জঙ্গল। তাই দায়িত্ব এড়ানোর জন্যে নিজে থেকে প্রশ্ন না ছুড়ে, আপনার কোমলমতি ছাত্রীদের বরং বোঝান এই জঙ্গল সৃষ্টিতে আপনার কোন ভূমিকা ছিল কিনা।

দ্য আলটিমেট হেফাজত

3

by: Aman Abduhu

হেফাজতে ইসলাম প্রসঙ্গে অনেক কথা হয়েছে। আরো কিছু কথা যোগ না করলেই হচ্ছেনা। রাজনীতি এবং অরাজনীতি; দুইটা ভিন্ন জিনিস। হেফাজত নিজেকে অরাজনৈতিক সংগঠন দাবী করে। কিন্তু তাদের আন্দোলনের পদ্ধতি রাজনৈতিক, তাদের ইস্যুগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে জড়িত। শাহবাগ একটা রাজনীতিসংশ্লিষ্ট আন্দোলন ছিলো। সে আন্দোলনের উদ্যোক্তাদের বড় একটা অংশ ইসলাম-বিদ্বেষী। তাদের ঘৃণ্য কাজকর্মের প্রতিবাদ জানানোটা একজন মুসলিমের দায়িত্ব। সে দায়িত্বটা অরাজনৈতিকভাবে পালন করতে হলে সিভিল পদ্ধতিতেই দেশের সরকারের কাছে জানাতে পারতো হেফাজত।

কিন্তু তা না করে তারা রাজনৈতিক দলের মতো মহাসমাবেশ, মিছিল, বিবৃতি, বিক্ষোভের পথে গিয়েছে। আবার একই সাথে নিজেদের অরাজনৈতিকতার পরিচয়ও দাবী করে গিয়েছে। এটা ভন্ডামী। এই ভন্ডামীর কারণে কিছুটা সুফল পেয়েছে রাজনৈতিক আরেকটা পক্ষ জামায়াতে ইসলামী। সুফল কিছুটা পেয়েছে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। একই সাথে তারা স্বভাবসুলভ রাজনৈতিক আচরণ করেছে। তাদের অভিজ্ঞতা ও কৌশল বেশি। কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হেফাজত।

হেফাজত যেহেতু ইসলামকে ধারণ করে, তাদের কর্তব্য ছিলো অরাজনৈতিকতার ইসলামী পন্থার দিকে তাকানো। ইসলামী উলামাদের সামাজিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টার ঐতিহ্যের দিকে তাকানো। ইসলামের সালাফ সালেহীন স্কলাররা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট হয়েছেন। কিন্তু মূলধারায় তারা থেকেছেন পুরোপুরি অরাজনৈতিক উপায়ে। এটাই ইসলামী স্কলারদের ঐতিহ্যগত পন্থা। তারা শাসকদের কাছে গিয়েছেন। প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু জনগণকে মোবিলাইজ করেন নাই। নিজেদের কাজের জায়গাতে জ্ঞানচর্চা করে গিয়েছেন। ইসলামী জ্ঞানের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও উন্নয়ন করে গিয়েছেন। ঐটা ছিলো তাদের মৌলিক কাজ।

হেফাজতের আলেমরা অন্য নামে রাজনীতিও করেন। ইসলামী ঐক্যজোট তথা শাসনতন্ত্র, নেজামে ইসলাম ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেকগুলো দল উপদল। আওয়ামী লীগের সাথে স্বাক্ষর দিয়ে মৈত্রী চুক্তি করেন। কিন্তু এখন কেন তারা অরাজনৈতিকতার নামে এই ভন্ডামী করতে গেলেন? কারণ, এখন নিজেদের অরাজনৈতিক ঘোষণা দিয়ে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করলে তার কিছু না কিছু সুবিধা তারা নির্বাচনের সময় পাবেন। হয়তো ভেবেছিলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ে মাঠে নামলে যুদ্ধাপরাধী বিচার ট্রাইবুনাল ইস্যুতে জড়িয়ে যেতে হবে। হয়তো এসবের সাথে ভালো কোন উদ্দেশ্যও ছিলো। ইসলামের প্রতি আলেম উলামাদের ভালোবাসা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি, তা নিয়ে প্রশ্ন করাও বোকামী। কিন্তু এখানে হেফাজত স্বাভাবিক রাজনৈতিক নীতিহীনতাটা করে বসেছে। এবং সেই নীতিহীনতার বড় একটা প্রকাশ দেখা গেলো বৃদ্ধ ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম মাওলানা শফি (আল্লাহ তাকে রহম করুন) কতৃক আওয়ামী লীগকে বন্ধু ঘোষণার কথায়।

আলেম উলামারা আমাদের সমাজেরই মানুষ। তারা খেজুর গাছ বা মিনার মার্কায় ভোট পেয়ে এমপি মন্ত্রী হতে চাইতেই পারেন। তারা তুলনামূলকভাবে সৎ ও ভালো মানুষ। সুতরাং সমাজের সেবা তারা করতেই পারেন। আর মানুষ যদি ভোট দেয় তাহলে আমার আপত্তি করার কি অধিকার আছে? কিন্তু একদিকে ভোটের সময় মিনার মার্কায় দাঁড়াবেন, অন্যদিকে রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে অরাজনৈতিক আন্দোলন করবেন, বিষয়টা একটু কেমন যেন ইয়ে হয়ে গেলো না?

তারা যদি নিজেদের অবস্থানে থেকে নিখাদ ইসলামের জন্য কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে এ প্রতিবাদ করতেন, তাহলে দেশের সাধারণ মুসলমান নাগরিকদের ইসলামী জ্ঞান বৃদ্ধিতেই তাদের অবদান বেশি দেখা যেতো। নাস্তিকদের বদমায়েশি প্রসঙ্গে তারা নিজ নিজ এলাকার মানুষের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতেন। প্রশাসনের কাছে যেতেন। সরকারের কাছে যেতেন। কিন্তু তা না করে তারা প্রটেস্ট করেছেন। প্রটেস্ট করার পরও হয়তো একে সোশাল মুভমেন্ট বলা যেতো, যদি না নির্বাচনের সময় একই আন্দোলনের লোকজন, মাদ্রাসার আলেমরা বিভিন্ন মার্কা নিয়ে ভোটযুদ্ধে না নামতেন। বিভিন্ন নাম নিয়ে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সাথে জোট না করতেন।

ধর্ম আর রাজনীতিও কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির বিষয়। দুইটার মাঝে যোগাযোগ প্রচুর, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে গিয়ে পৃথক বিবেচনার প্রয়োজন হয়। ধর্মে নীতিহীনতার কোন স্থান নেই। আর রাজনীতিতে উদ্দেশ্যসাধনের কোন বিকল্প নাই। এ নিয়ে বিস্তারিত তর্ক করা যাবে, কিন্তু এখন না। এখন যেই জিনিসটা দেখা যাচ্ছে তা হলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. কে নিয়ে শাহবাগিদের শয়তানির প্রতিবাদে হেফাজত অরাজনৈতিকতা দাবী করে রাজনীতির মাঠে দৌড়াদৌড়ি করছে। আর যখন রাজনীতির নীতিহীনতা তাদেরকে স্পর্শ করছে তখন পেছন থেকে ধর্মের শিল্ডটা বের করে এনে সামনে ধরে বসছেন। তারা কর্দমাক্ত মাঠে ফুটবল খেলতে নেমেছেন, কিন্তু সাদা পাঞ্জাবীতে একটা দাগ পড়লে গোস্বা করেন।

তাদের কেউ কেউ মাওলানা শফির বক্তব্যকে ইলহাম/সুডো-ঐশীজ্ঞান ও বানিয়ে দিচ্ছে। এখন শেষপর্যন্ত আর না পেরে জামায়াতের হেকমতে ভাগ বসিয়েছেন। একদিন তারা এও দাবী করবেন যে তাদের মিনার মার্কায় ভোট না দিলে কাফের হয়ে যেতে হবে। অথবা খেজুর গাছে না দিলে আধা কাফের। কিংবা রিক্সায় না দিয়ে কোয়ার্টার। হয়তো ঈমানও চলে যাবে। এইটা হলো একটা ইগো-ইস্যু। রাজনীতি করতে আসলে অনেক কিছু সহ্য করতে হবে। কিন্তু তাদের নিয়ে স্যাটায়ার করলে উম্মত থেকে বের করে দেবেন। ওয়ারাসাতুল আনবিয়া!! হাস্যকর।

আরেকটা ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, এই ধরণের দ্বিমুখীতা দিয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতিতে এগিয়ে যেতে পারার কথা ছিলো। কিন্তু তা হেফাজত পারবে না, কারণ প্রমাণিত বাস্তবতা হলো তারা ভন্ডামীটা দক্ষভাবে করার যোগ্যতা রাখেনা। তারা তুলনামূলক ভালো মানুষ। বরং খেলার ঘুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার অন্যদিকে এইসব করতে গিয়ে তাদের নিজেদের ধর্মীয় যে পবিত্রতা তাও তারা নষ্ট করছে। উল্টা আরও বৃটিশদের বিরুদ্ধে কওমী আলেমদের এই অবদান সেই অবদান ইতিহাস টেনে টেনে নিজেদের যথার্থতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন এখন। খাঁটি বাংলাদেশী পশ্চাতপদ রাজনৈতিক অভ্যাস। চল্লিশ পঞ্চাশ বছর পেছনে পরে থাকা। আর তা নিয়ে বাগাড়ম্বর করে যাওয়া। বর্তমানে অবদান কি আছে তার কোন খবর নাই।

নিজেদের নীতি ও উদ্দেশ্য পরিস্কারভাবে না বুঝে এরকম চালাতে থাকলে এখন যেমন রাজনীতিতে অগুরুত্বপূর্ণ একটা ফেউমার্কা শক্তি, তেমনই থাকতে হবে। কোন উন্নতি হবে না। ইফেকটিভ ভাবে নিজেদের ভালো কোন দাবী আদায়ও সম্ভব হবে না। আবার বলা যায় না, যদিও ধর্মশিক্ষার ইনষ্টিটিউশনের মতো স্থায়ী একটা ভিত্তি আছে তারপরও রাজনৈতিক মাঠে হয়তো তাদেরকে একসময় আম ছালা দুটাই হারিয়ে উদ্দেশ্যহীন অগস্ত্যযাত্রায় রওনা দিতে হতে পারে। পৃথিবীতে অনেক বড় বড় আন্দোলন অর্থহীনভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

এইসব ঘটনা সাদাচোখে দেখা যায়, কিন্তু এসবের পেছনে অন্য কিছু থাকার কথা। হেফাজত এবং শাহবাগ, দুইটা আন্দোলনই বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছু গ্রেটার পারপাস সার্ভ করছে। হেফাজত তার নিজ সত্ত্বাতে স্থায়ীভাবে এমন কোন বড় রাজনৈতিক শক্তি না যে আওয়ামী লীগের তাকে খুব একটা পাত্তা দিতে হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-জামায়াত, দুই পক্ষের কাছেই হেফাজত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। এবং দড়ি টানাটানিতে সম্ভবত আবারও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে যাচ্ছে।

হেফাজত নিয়ে এই মাথাব্যাথার কারণ হলো, এসব ঘটনা ঘটার সময়কাল। মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির চুড়ান্ত রায় শীঘ্রই হতে যাচ্ছে। আওয়ামী সরকার যখন পরিস্থিতি সুবিধা মনে করবে, এক সপ্তাহ থেকে এক বা দুই মাসের ভেতর যে কোন সময় এ রায় হবে। সরকার যে রায় সুবিধা মনে করবে, ফাঁসি বা যাবজ্জীবন তাই হবে এ আপিলের রায়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্ল্যান বি, সি, এমনকি ডি ও প্রস্তুত রাখার কথা। প্ল্যানের অংশ হিসেবে এই বড় ঘটনাটার আগে আরো কিছু ইস্যু আসবে নিঃসন্দেহে। এইসব একটার পর একটা ইস্যু নিয়ে বিরোধীপক্ষ চরম ব্যস্ততায় দিন কাটাবে। তারপর যখন ঘটনাটা ঘটবে, তখন সারা বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসার ধর্মপরায়ণ জনগণের নেটওয়ার্কটা সরকারের সমর্থনে থাকা প্রয়োজনীয়। প্রথম রায়ের পর পুরো দেশে কি ঘটেছিলো, তা আওয়ামী লীগ কখনো ভুলে যায়নি।

যেহেতু মাওলানা সাঈদীর ইসলাম-সংশ্লিষ্ট পরিচয় তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে বড়, তাই এখন শাহবাগের বিদায়ের সময় হয়ে গেছে। সময় এসেছে হেফাজতের সাথে ঘর করার, যদি পর্দার আড়ালে হয় তবুও। হেফাজত যদি নেগোসিয়েশনে দক্ষ হতো, কিছু শাহবাগি নাস্তিকের ভালো একটা বিচারিক শাস্তি তারা এই সময়ে আদায় করে নিতে পারতো। এখন দেখার অপেক্ষা, কি হতে যাচ্ছে। এবং দোয়া করি, অনুমান ভুল হোক। ভালো কিছু হোক বাংলাদেশে।

শাহবাগঃ বখরা নিয়ে নখরা

by: Aman Abduhu

তথাকথিত গণজাগরণের শাহবাগিরা টাকার ভাগ নিয়ে মারামারি শুরু করছে। এবং এতে আমরা আনন্দ প্রকাশ করছি। কিন্তু, হাড্ডি নিয়ে কুকুরদের কামড়াকামড়ি দেখে আসলেই কি অ-শাহবাগি অথবা বাংলাদেশর সুস্থ মানুষদের খুব বেশি আনন্দিত হওয়ার কিছু আছে?

যে কোন আন্দোলন বা সম্মিলিত কাজ করতে গেলে টাকার দরকার হয়। এটা কোন অপরাধ না। অপরাধ হলো টাকাটা যে কাজে খরচ করার কথা, তা না করে আত্মসাৎ করা। যে কাজটা খুব স্বাভাবিকভাবে করেছে গাজামঞ্চ।

তো? তাদের এই দুর্নীতি কি খুব বেশি অপ্রত্যাশিত ছিলো? বাংলাদেশে এ কাজ কি শুধু শাহবাগিরাই করেছে?

শাহবাগিরা একটা জায়গায় গিয়ে এখনো নিজেদের পরিচয় অস্পষ্ট রেখে দিয়েছে। এটা কি কোন রাজনৈতিক দল? না কি গাঁজাখোর হতাশাগ্রস্থ সুযোগসন্ধানীদের ক্লাব, এটা তারা পরিস্কার করেনি। দু’ নৌকাতে পা দিয়ে যতদিন চালানো যায়। আরেক শাহবাগি সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিন যখন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিতে এ প্রসঙ্গে চেপে ধরেছিলো, মঞ্চের পান্ডারা এ প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছে। কথা ঘুরিয়ে দিয়েছে।

তবে বাংলাদেশে সব শ্রেণীতেই দুর্নীতি আছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি থেকে শুরু করে জাগপা, ন্যাপ, সিপিবি সব রাজনৈতিক দলেই এটা কম বেশি আছে। অথবা এফবিসিসিআই থেকে শুরু করে মহল্লার দুর্বার ক্লাব পর্যন্ত।

সর্বব্যাপী এ অসততা আর শয়তানি বন্ধ করার, নিদেনপক্ষে কিছুটা চেক দেয়ার, বড় একটা উপায় হলো জবাবদিহীতার ভিত্তিতে হিসাব রক্ষণ। পুরো পৃথিবীর মানুষ এটা মানে, শুধু বাংলাদেশের না। আর এখানে এসেও শাহবাগিরা তাদের চরম পশুসুলভ চরিত্র প্রকাশ করেছে। একজন সুস্থ মানুষ যদি কোন খারাপ কাজ করে, তাকে বুঝানো যায়। কিন্তু একটা পশু যদি কোন খারাপ কাজ করে, তাকে বুঝাতে গেলে উল্টা কামড় খেতে হয়।

শাহবাগিদের বড় একটা বৈশিষ্ট্য হলো, তারা যে কোন খারাপ কাজ করে পুরোপুরি নির্দ্বিধায়, খোলা গলায় সে খারাপ কাজটাকে ভালো ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে বলে যেতে থাকে। এটা তারা তাদের অবৈধ জন্মদাতা আওয়ামী লীগ থেকে জেনেটিকালি পেয়েছে।

শাহবাগি এক পান্ডা, ঘৃণ্য যৌনকর্ম সম্পর্কিত লেখক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবিদ তার স্ট্যাটাসে লিখেছে “একটা সময় শেখ রেহানা আপার কাছ থেকে টাকা পয়সা নেওয়া হতো আমার ব্লগের খরচপাতি দেখায়া যে অনলাইনে এইটা আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতেছে। এখন আর কে কে দেয় কে জানে। দিন বদলাইছে, এখন অনুদান দিলেও সেইটা আবার ফেরত চাওয়ার নিয়ম শুরু হইছে। লোকজন মালিকানার কাগজ দাখিল এবং অনুদানের হিসাব চাওয়া শুরু করলে খেলাটা কেমন হবে ভাবতেছি”।

10173192_10203726617785331_1435056657_n

কথা দীর্ঘ না করে, তিনটা অনুসিদ্ধান্ত।

১. শাহবাগ আন্দোলন প্রসব হওয়ার আগেই, গর্ভে থাকাকালীন সময় থেকে শেখ পরিবার সরাসরি এর পরিচর্যা করে আসছে।

২. হাসিনা রেহানা বোনদ্বয়ের এতোই টাকা আছে যে, কিছু লাফাঙ্গা কুকুরের সামনে হাড্ডি হিসেবে থোক থোক টাকা দেয়া কোন ব্যাপার না।

৩. শাহবাগিরা যেখানে সরাসরি বাংলাদেশের রাজপরিবারের সদস্য থেকে টাকা নিতে পেরেছে, সেখানে বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, অফিস আদালত, সংগঠন আর ব্যাক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করা তাদের জন্য কোন ব্যাপার না।

এ তিনটা অনুসিদ্ধান্তের পর শেষ একটা শাহবাগি মোরাল।

টাকা দিবেন, কিন্তু কোন জবাবদিহীতা আশা করলে আপনি স্বাধীনতা বিরোধী। স্বচ্ছতা ও সততা প্রত্যাশার অর্থ হলো আপনি চেতনাগুরু স্যার জাফর ইকবালের ফিল্টার পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ।

ষাঁড়ের আদর্শ আসলেই ব্যাতিক্রমী, অভূতপূর্ব। যুদ্ধ যেমন অস্ত্র দিয়ে হয়না, অমিত সাহস দিয়ে হয়। এই বাংলাদেশে চেতনার বাস্তবায়নও তেমনিভাবে সততা দিয়ে হয়না, লাল পর্দার আড়ালে পকেট ভর্তি করা দিয়ে হয়।

Omi Pial’s complete Status 4/10/2014

Omi Rahman Pial
সুশান্ত যে আমার ব্লগের মালিকানা সত্যিই বিক্রি করছে সেইটা একটু দেরিতে গিয়া বুঝতে পারছি। যদিও তার ইঙ্গিত সে অনেক আগেই দিছিলো, পোস্ট দিয়াও ঘোষণা দিছে যে সে এইটা বিক্রি করতেছে। এটিমের গ্রুপ মেইলে সে বলছিলো সে ঘটনাটা সাজাইতেছে এইটা আবঝাব ব্লা ব্লা ব্লা। কিন্তু আচমকাই আমার ব্লগের নীতিমালায় পরিবর্তন দেইখা বুঝতে পারলাম এইটা এখন তার হাতে নাই। গত চারবছর আমি আমার ব্লগে লেখছি, শুধু আমার ব্লগেই, অনেকের অনুরোধেও কোথাও স্বনামে ব্লগিং করি নাই্,বেনামে তো প্রশ্নই ওঠে না। এই একক আনুগত্যের কারণ স্রেফ একটা চুক্তিনামা: আমার ব্লগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে কোনোরকম মতবাদ কিংবা স্বাধীনতাবিরোধী কোন পোস্ট প্রমোট করবে না। হঠাৎ সেইখানে দেখি ছাগুদের রমরমা, অ্যাসঅফ আইসা পোস্ট লেখে ছদ্মনামে, ঘ্যাংয়াররা সব রাতারাতি দেখি ব্লোজবার থিকা বোলোগার হ্ইয়া গেছে। 

নীতিমালার এই পরিবর্তনটা চোখে পড়ছে শাহবাগে গণজাগরণ শুরু হওয়ার পরপর।হঠাৎ আইজু খেইপা উঠলো এই জাগরণের বিরুদ্ধে। আর রাতারাতি দেখি সুশান্তের টোন চেইঞ্জ। এইটা আরো শক্ত হইলো যখন সামু ব্লগ সরকারের তোপে, সচল নেহাতই এক সুশীল ব্লগ, ছাগুদের আশাভরসার সোনার বাংলা ব্লগ বন্ধ। ওইসময় আমার ব্লগের ট্রাফিক ভালো। ব্লগের দুই কোর ব্লগার আমি আর আরিফ জেবতিক শাহবাগে। তো যেইখানে আমার একটা পোস্টের সার্বিক হিট এদের সবার (আইজু সুশান্ত আমার ব্লগের মঞ্চবিরোধী মোর্চা এবং ঘ্যাং) মোট হিটের থেকেও বেশী থাকে আমার একটা প্রিভিলেজ তো পাওয়ারই কথা এই বিষয়ে। আইজুরে বললাম এইসব বালছাল বইলা আমাদের বিব্রত না করতে। বাহ, আমার ব্লগে দেখি আমারই এক্সেস ব্যান। তখন বুঝলাম সত্যিই মালিকানা বদলাইছে।

এখন শিয়াল পন্ডিত এবং কুমীরের সাতটি ছানার গল্পটার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে সবার? ছয়টারে খাইয়া সে একটারেই সাতবার দেখাইছিলো কুমীররে। আমি এইখানে তেমনই একটা গন্ধ পাইতেছি। কারণ আইজু বাকোয়াজ দেয় আমার ব্লগ এখন তার, শারুণ আমারে আগে বলছে আমার ব্লগে তার শেয়ার আছে, কয়দিন আগে শুনলাম মাসকাওয়াথ ভাইও আমার ব্লগ কিনছেন, কানাডার এক এ টিমারও শুনছি আমার ব্লগ কিনছে. আবার ব্লগারদের একটা জোটও নাকি আমার ব্লগের মালিক, শোনা যায় আওয়ামী লীগের দুইজন মন্ত্রী নাকি আমার ব্লগের মালিক। লন্ডনের নাস্তিক জোটও নাকি আমার ব্লগ কিনছে। হোয়াট দ্য ফাক ম্যান। আমার ব্লগ তুমি আসলে কার? তাইলে ওইখানে আমার লেখা পোস্টগুলা কার? আমার নাকি তাগো? যে যার খুশী মতো কোনো এক এএসপিরে বেইচা দিবো কোনো ডিলের বিনিময়ে!!!

পুনশ্চ: একটা সময় শেখ রেহানা আপার কাছ থেকে টাকা পয়সা নেওয়া হতো আমার ব্লগের খরচপাতি দেখায়া যে অনলাইনে এইটা আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতেছে। এখন আর কে কে দেয় কে জানে। দিন বদলাইছে, এখন অনুদান দিলেও সেইটা আবার ফেরত চাওয়ার নিয়ম শুরু হইছে। লোকজন মালিকানার কাগজ দাখিল এবং অনুদানের হিসাব চাওয়া শুরু করলে খেলাটা কেমন হবে ভাবতেছি … — feelingcurious.