‘বিশ্বকাপ এবং বিরোধীদলের আন্দোলন’— শিরোনামে থাকবার লড়াই

world cup1

by zainuddin sani

বিএনপির জন্য সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে। না, সরকারী কঠোর মনোভাব কিংবা জ্বালানো পোড়ানো নিয়ে তৈরি নেতিবাচক প্রচারণাকে সমস্যা বলছি না। সমস্যা তৈরি করবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এতোদিন পর্যন্ত যেভাবেই হোক, বিরোধী দলের আন্দোলন ব্যাপারটা সংবাদের শিরোনামে ছিল। নেত্রীর গৃহবন্দী অবস্থা কিংবা পুত্রের মৃত্যু, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করা— কোন না কোনভাবে টিভি চ্যানেল আর পত্রিকার লীড নিউজে তাদেরকে রেখেছিল। টেলিফোন আলাপ থেকে শুরু করে সরকারী বক্তব্য কিংবা পাতি নেতাদের হুঙ্কার, সব কিছুই সাহায্য করছিল তাঁদের প্রচারণায়। শিরোনামে রাখছিল বর্তমান পরিস্থিতিকে। বোঝা যাচ্ছিল, দেশে এখন স্বাভাবিক অবস্থা চলছে না। হরতালে রাস্তায় প্রচুর বাস কিংবা প্রাইভেট গাড়ী দেখা গেলেও, শিরোনামে থাকতো ৭২ ঘণ্টা হরতাল।

খুব দ্রুত পরিস্থিতি না পাল্টালে, সেখানে অচিরেই ছেদ পড়বে। এবং বেশ ভালভাবেই পড়বে। শিরনাম হতে তখন টক্কর দিতে হবে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সঙ্গে। ক্রিকেট পাগল এই জাতির জন্য তখন, বিরোধী দলের একঘেয়ে আন্দোলনের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় বিষয় হবে, ক্রিকেট। সঙ্গে যদি যোগ হয় বাংলাদেশের জয়, তবে তো কথাই নেই। বাঙালির উন্মাদনা তখন হবে দেখার মত। আফগানিস্তানের সঙ্গে হারলেও, শিরোনাম চলে যাবে ক্রিকেটের দখলে। তখন বাঙালির গালিগালাজও হবে আকাশচুম্বী। ভারত পাকিস্তান খেলা নিয়েও যে বাজার গরম হয়ে উঠবে, তা নিয়েও সন্দেহ নেই। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, এই উন্মাদনা চলবে পুরো দেড় মাস, মার্চের শেষ নাগাদ।

যেভাবে একটা দুটা ঝলসানোর খবরে আমরা অভ্যস্ত হতে শুরু করেছি, মনে হয় না, খুব মর্মান্তিক কিছু না ঘটলে, তা তখন শিরোনামে আসবে। শুনতে খারাপ লাগলেও, এটিই অমানবিক সত্য— এই জ্বালাও পোড়াও আর বার্ন ইউনিটের দগ্ধ মানুষগুলোকে দেখতে দেখতে আমরা ধীরে ধীরে অভ্যস্থ হতে শুরু করেছি। এখন অনেক সহজেই আমরা পাতা উল্টিয়ে পরের খবরে চলে যাই। আর তেমনটা হতে শুরু করলে, সম্পাদক সাহেবরাও আর সেগুলোকে শিরোনামে রাখবেন না। নেতিবাচক হোক আর ইতিবাচক হোক, বিরোধী দলের আন্দোলনের প্রচারণায় তখন ছেদ পড়বে।

শিরোনাম করতে আমরা কতোটা মরিয়া তাঁর জলজ্যান্ত প্রমাণ এসব ঝলসানো নিয়ে শুটিং, কিংবা খাওয়া থেকে উঠিয়ে ছবির জন্য পোজ দেয়ানো। অসভ্য আচরণ মনে হলেও, খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা এটি। যতই তিরস্কার করি, বিশ্বজিতের কোপানোর দৃশ্য যে সাংবাদিক বা ভিডিওম্যান খুব ভালভাবে ধারণ করতে পেরেছে, সে কিন্তু সেদিন তাঁর সম্পাদকের বাহাবা পেয়েছে। চ্যানেলগুলোর ভেতর সেদিন ছিল, সেই দৃশ্য দেখানোর প্রতিযোগিতা। আগুনে পোড়ানো নিয়েও আমার মনে হয় না ব্যতিক্রম হচ্ছে। পোড়ানো নিয়ে একদিকে যেমন বিরোধীদলকে সমানে ধিক্কার জানিয়ে একরাশ খবর ছাপা হচ্ছে, ঠিকই আবার সেই খবরগুলোকে শিরোনাম করা হচ্ছে। সেসব আক্রান্তদের নিয়ে হৃদয় বিদারক রিপোর্টিং যেমন হচ্ছে, আক্রমণকারীদের চোদ্দ গুষ্টি যেমন উদ্ধার হচ্ছে, তেমনি এটাও সত্য, সেই রিপোর্ট ছাপানোর সময় নৃশংস একটি ছবির খোঁজও হচ্ছে। আর যেসব ফটোগ্রাফার সেসবের ছবি যারা জোগাড় করছেন, ‘গ্রেট জব’ বলে একটা পিঠ চাপরানি কিন্তু তারাই পাচ্ছেন।

যা বলছিলাম, এই মুহূর্তে আন্দোলনের সাফল্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে, শিরোনামে থাকা। যেভাবেই হোক, যত নৃশংস কাজ করেই হোক, শিরোনামে থাকা চাই। প্রথম খবরটাই যেন হয়, বিরোধী দলের আন্দোলন সংক্রান্ত। দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় লিড হওয়া মানেই, পিছিয়ে পড়া। আর একবার পেছনের পাতায় চলে গেলে, আন্দোলন শেষ। ফলে এখন ২৪ ঘণ্টার হরতাল আর ডাকা হচ্ছে না। কারণ এতো ছোট হরতাল আর এখন শিরোনাম না। ৭২ ঘণ্টার হরতালকেও শিরোনাম পেতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। বরং শিরোনাম হয়, কিংবা মনে প্রশ্ন জাগে, সপ্তাহের বাকী দিন বাদ দিল কেন? হরতালের ডাক শিরোনামে ফিরে আসে, যখন হরতাল প্রলম্বিত করে ৬ দিন করা হয়।

শান্তিপূর্ণ হরতাল, নিঃসন্দেহে বিরোধী দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিবে। প্রচুর গাড়ী চলছে এমন কোন হরতালের ছবি পরের দিন পত্রিকায় ছাপা হওয়া বিরোধী দলের জন্য একটি অশনি সংকেত। কোন হরতালে ভাঙচুর না হলে, ‘এটা কোন হরতালই হয়নি’— ক্যাডাররা রাস্তায় নেই, জনসমর্থন নেই, বিরোধী দল আন্দোলন তৈরিতে ব্যর্থ। অবরোধ, হরতালে দেশের কি অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, তা নিয়ে কেউই কিছু বলছেন না। অবরোধের কারণে চাষীরা কি মর্মান্তিক অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে, কিভাবে সস্তায় তাদেরকে পণ্য বিক্রি করে দিতে হচ্ছে, তা নিয়ে কেউ কথা বলছেন না। কিংবা বললেও, শিরোনাম করছেন না। কারণ, সেখানে নৃশংসতা নেই বা পাবলিক খাবে না।

বিএনপির গেমপ্ল্যান ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আপাততঃ লাগাতার হরতাল আর সপ্তাহ জুড়ে হরতাল দিয়েই কাজ চালাচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এসএসসি পরীক্ষা পেছানো, এবং সেই ব্যাপারটা শিরোনাম হওয়া, আপাততঃ এটাই তাঁদের টার্গেট। পরীক্ষা হতে না পারলে, সরকারকে সবাই যত অথর্ব মনে করবে, পরীক্ষা হতে পারলে বিরোধী দলকে ততোটাই অকর্মণ্য ভাববে। সরকারী দল চাইছে, জনগণ ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে বিরোধী দলের ওপর ক্ষেপে উঠুক আর বিরোধী দল চাইছে, সরকারী দলকে কিংবা রাষ্ট্রকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে। আর এই জেদাজেদিতে কে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা নিয়ে কারোরই মাথা ব্যাথা নেই। এদেশের সরকার এবং বিরোধী দুই দলেরই যেহেতু দূরদৃষ্টি বলে কিছু নেই, তাই ধরে নেয়া যায়, এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে কেউই এগিয়ে আসবে না।

সরকার যেভাবে শুক্রবারে পরীক্ষা নিয়ে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে, মনে হচ্ছে শিরোনামে থাকবার জন্য অচিরেই হয়তো শুক্রবারেও হরতাল আসবে। জ্বালাও পোড়াও যদিও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তারপরও শিরোনামে টিকে থাকবার লোভে, সেই কাজেও বিরাম আসবে না। হয়তো নিজের নেতা কর্মীকে দিয়ে না করিয়ে, ভাড়াটে সেনার আমদানী হবে। দরদ দেখানো বুদ্ধিজীবীদের নড়াচড়া শুরু হয়ে গেছে। তাঁদের বক্তব্য নিজেদের পক্ষে না গেলে, মনে হয় না তাঁদের সঙ্গে কোন দল সহযোগিতা করবে।

এই মুহূর্তে যে ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ গেম চলছে, সেখানে বিরোধী দলের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে আসবে, ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আর সে কারণে শিরোনামে থাকবার সুযোগ হাতছাড়া হলে, হয়তো তখন আলোচনায় যোগ দিতে রাজী হবে বিরোধী দল। সরকারী দলও সুযোগটা নেবে বলেই ধারণা। আলোচনা আলোচনা খেলা খেলে যদি কিছু সময় পার করা যায়, তবে আন্দোলনে ভাটা পড়বে। আর একবার আন্দোলনে ভাটা পড়লে, বিরোধী দলের পক্ষে আর উঠে দাঁড়ান সম্ভব হবে না। সামনে কিছুদিনের ভেতরই বিরোধী দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আন্দোলন কিভাবে আর কতদিন চালাবে। সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নের সমাধান করতে হবে তা হচ্ছে, বিশ্বকাপের সময় কিভাবে বিরোধীদল শিরোনামে থাকবে।

কবে প্রভুরা ঠিক করবেন, ‘কে হবে আমাদের প্রভু।‘

download (2)

by zainuddin sani

প্রায় মাস খানেক হতে চলল, দুই পক্ষের জেদাজেদির কারণে দেশ স্থবির হয়ে আছে। একে অপরকে হারাতে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু সাধন নিয়ে আসছে। এই সিরিজে অংশ হিসেবে, বাজারে নতুন এসেছে এক পক্ষের নেত্রীর ফোনালাপের অডিও। সেখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে বেশ কর্কশ ভাষায় নির্দেশ দেয়া আর রাস্তায় থাকবার তাগিদ দেয়া। বিতর্ক দেখা দিয়েছে, ‘রাস্তায় থাকা’ মানে কি—তা নিয়ে। কারো মতে এটাই নাশকতার নির্দেশ, কারো মতে এটি আন্দোলন করার নির্দেশ। আর হুকুম দেয়াটার সাথে মেলানোর চেষ্টা হচ্ছে ‘জেনারেলের স্ত্রী’ ব্যাপারটাকে। ফোনালাপগুলো কিভাবে ইউটিউবে আসল, তা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হচ্ছে না। ধরেই নেয়া হচ্ছে, কোন না কোন ভাবে সরকার এর সঙ্গে জড়িত।

কোকোর মৃত্যুর পরে, কোকোর স্ত্রী এবং দুই কন্যা বাংলাদেশে এসেছিলেন। কিছুদিনে আগে, এক পক্ষের নেত্রীকে একা রেখে তাঁরা ফিরে গেছেন। কোকো কন্যা এবং তাঁর স্ত্রীর মালয়েশিয়া ফেরত যাওয়া নিয়েও বেশ কটাক্ষ চলছে। কটাক্ষের কারণ, তাঁদের পরীক্ষার কারণে তাঁরা গিয়েছে। আর এদেশের এসএসসি পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে। আর তা হয়েছে একপক্ষের নেত্রী বা তাঁদের দাদীর ডাকা হরতাল আর অবরোধের কারণে। ব্লগ, ফেসবুক আর মিডিয়ায় চলছে ব্যাপারটাকে কতোটা মশলা মাখিয়ে উপস্থাপন করা যায়। ‘নিজের নাতনীদের পরীক্ষা দেয়ার জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন আর দেশের লাখ লাখ পরীক্ষার্থী যে পরীক্ষা দিতে পারছে না, সেদিকে খেয়াল নেই।‘

খেলা কে জিতছে, তা এখনও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, খেলা ধীরে ধীরে ক্লাইমেক্সের দিকে এগোচ্ছে। একজন বলছে আর এক সপ্তাহ। অন্যদিকের বক্তব্য হচ্ছে ১৩ই ফেব্রুয়ারী। ফেসবুক, ব্লগ আর পত্রিকার কলামে এখন রীতিমত চামচাগিরির প্রতিযোগিতা চলছে। আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের আপাততঃ মনোযোগ ‘পেট্রোল বোমা’ আর অন্যদিকের মনোযোগ নেত্রীর ওপর চালানো নির্যাতন। একদিকের ইউএসপি হচ্ছে ‘পোড়া লাশ’ আর অন্যদিকে ‘নেত্রীর বিদ্যুৎ সংযোগ’। কোনদিকে জনসমর্থন বেশি, তা নিয়েও বুদ্ধিজীবী মহল নিজ দলের গুণ গাইছেন। এককথায় পরিস্থিতি এখন, ‘ক্লোজ টু ফিনিশ’ পর্যায়ে রয়েছে।

একটা ব্যাপারে অবশ্য সবাই একমত, সমাধান এদেশ থেকে আসবে না। আসবে ওপর থেকে। এতদিন এদেশের প্রভুত্বের দ্বায়িত্বে ছিল একটি দেশ। সম্প্রতি সেই দেশটি অপর একটি দেশের সান্নিধ্য লাভের জন্য বেশ উৎসুক। আর এই সান্নিধ্য পেতে যদি তাঁদের হাতে বাংলাদেশকে তুলেও দিতে হয়, দেশটি ‘না’ বলবে না। এমনই যখন অবস্থা, সেই সময় ঘটল মজার এক ঘটনা। ঘটনাটা খুব সাধারণ হলেও, মজার বলছি কারণ, এই নিয়ে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের লম্ফঝম্ফ ছিল দেখার মত। মানসিকভাবে আমরা যে কত অনায়াসে এই দেশগুলোর প্রভুত্ব মেনে নিয়েছি, তা এতো স্পষ্টভাবে বুদ্ধিজীবীরা আগে বলেননি।

প্রভু হিসেবে পরিচিত, আমাদের পাশের দেশের পররাষ্ট্র সচিবের বরখাস্তের পরে মনে হয়েছিল, এক পক্ষের জয় এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। মনে হয়েছিল, তাঁর চাকরী যাবার একমাত্র কারণই হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর নগ্ন হস্তক্ষেপ কিংবা অপর পক্ষকে জয় পাইয়ে দেয়া। আমেরিকার বিরুদ্ধে গিয়ে এদেশের ৫ই জানুয়ারীকে সমর্থন করার খেসারত দিতে হয়েছে তাঁকে। তাঁরা ধারণা করছেন সম্প্রতি ওবামা এসে সেই প্রভু দেশকে ধমক দেয়ার কারণেই সচিব মহাশয়কে অফিস খালি করতে হয়েছে। এখন ধমক খাওয়ার পালা এদেশের প্রধানমন্ত্রীর। নরেন্দ্র মোদীর বিজয়ের পরে এই সম্ভাবনাই দেখেছিল এক পক্ষ। আর তা এখন সত্যি হতে চলেছে। অতএব, সেই পক্ষের জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বুদ্ধিজীবীদেরও সময় হয়ে গেছে, দল পাল্টাবার কিংবা বুঝে শুনে কথা বলবার।

ভারতীয় কিছু টিভি চ্যানেল আর ভারতীয় ব্লগেও এই বরখাস্ত নিয়ে আলাপ চলছে। তবে সেখানে ঘটনার ব্যাখ্যা বেশ অন্যরকম। মাত্র দুদিনের জন্য তিনি এই চাকরি হারিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীর কাজ করার যে স্টাইল, সেই অনুসারে তিনি চান সব এলাকায় নিজের বিশ্বস্ত লোক। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য তাঁর নির্বাচিত এই বিশ্বস্ত লোকটি হচ্ছেন সুব্রমনিয়াম জয়শঙ্কর। এই ভদ্রলোককে, মোদীর পূর্বসূরি, মনমোহন সিংও পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে চেয়েছিলেন। কিন্তু সোনিয়া গান্ধীর ইচ্ছার কারণে তা হয়নি। তাঁকে নিয়োগ দিতে হয় সুজাতা সিংকে। আর সেখানকার নিয়ম অনুসারে, পররাষ্ট্রসচিবের কার্যকাল হচ্ছে ২ বৎসর। এই বছর, জুলাই মাসে তাঁর সেই মেয়াদ শেষ হত। হয়তো তিনি সেই সময় পর্যন্তই থাকতেন। তবে সমস্যা হয়ে দাঁড়াল জয়শঙ্করের বয়স। আর মাত্র দুইদিন পরেই তাঁর সরকারী চাকুরীর বয়সসীমা শেষ হয়ে যাবে। তাই এই মুহূর্তে তাঁকে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগটি না দিলে, তা আর দেয়া সম্ভব হত না। তাই ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মত কোন পররাষ্ট্রসচিবকে বরখাস্তের ঘটনা ঘটল।

কিছু আভ্যন্তরীণ রাজনীতিও কাজ করেছে। ভারতীয় জনতা পার্টিতে চলা দলীয় কোন্দলের এক অংশে রয়েছে নরেন্দ্র মোদী আর অন্য অংশে রয়েছে লাল কৃষ্ণ আদভানী। আদভানী লবি এই মুহূর্তে রয়েছে বেশ কোণঠাসা অবস্থায়। সেই লবী থেকে মন্ত্রীসভায় সুযোগ পাওয়া নেত্রী হচ্ছেন, সুষমা স্বরাজ। আর তাঁর দায়িত্বে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মোদী সাহেব, অনানুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন। সাম্প্রতিক হয়ে যাওয়া সকল বিদেশ সফরে, সুষমা স্বরাজের চেয়ে বেশি দেখা গেছে নরেন্দ্র মোদীকে। অনেকেই বলা শুরু করেছেন, সুষমা হচ্ছেন, ডামী। এবার মোদী আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বসাতে চাইছেন, নিজের বিশ্বস্ত লোক। যেন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সব সিদ্ধান্তের খবরই তিনি পান। কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্র্যাক্টিক্যালি তাঁর নির্দেশেই চলে।

ভারতীয় রাজনীতিতে ভবিষ্যতে কি হবে, তা এই মুহূর্তে বোঝার উপায় নেই। তবে আপাততঃ বিজেপি এবং ভারত সরকার পুরোটাই মোদীর ইচ্ছেমত চলছে। দলীয় নীতি কিংবা সিদ্ধান্ত বলে কিছু নেই। তাঁর কথাই, শেষ কথা। আর তাঁর ইচ্ছায়ই সুজাতা সিংয়ের চাকরি ‘নট’ হয়েছে। বাংলাদেশ কিংবা ওবামা খুব বড় কোন ইস্যু এখানে ছিল না। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশ প্রশ্নে কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না—এমন কথাও কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। সব চোখ এখন তাই নতুন পররাষ্ট্রসচিবের দিকে। তিনি কি বক্তব্য দেন বাংলাদেশকে নিয়ে।

ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, আমাদের ভবিষ্যৎকে আমরা অনেক আগেই অন্য প্রভুর হাতে সঁপে দিয়েছি। এখন আর তা হয়তো আমাদের হাতে নেই। আমরা নামে গণতন্ত্র হলেও, এখানে কে ক্ষমতায় বসবেন, কে যাবেন, সেই সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই। আমাদের কাজ শুধু আগুনে পোড়া, সরকারের ‘এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে’ শোনা, বুদ্ধিজীবীদের দলীয় ব্যাখ্যা শোনা আর দিন গোনা, কবে প্রভুরা ঠিক করবেন, ‘কে হবে আমাদের প্রভু।‘

‘আচ্ছা বলো, কোন অ্যানিম্যাল সবাইকে উঠাতে পারে?’

download (2)

by zainuddin sani

প্রসঙ্গটা নিয়ে লিখবো না ভেবেছিলাম। এমনই একটি ব্যাপার, দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর তেমন কিছু বলার নাই। তবে এদেশের রাজনীতিবিদদের যা মেধা এবং যে মনোবৃত্তি, তাতে ব্যাপারটা নিয়ে যে রাজনীতি হবে, তা ভেবেছিলাম। কতোটা হবে আর কতদিন ধরে হবে, সেটা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চিত ছিলাম। এই ব্যাপারটা নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করতে কবে নাগাদ আমাদের রুচিতে বাঁধবে, তা নিয়েই ছিল আমার সবচেয়ে বেশি শঙ্কা। আমার শঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে এখনও দুই দল এবং তাদের চামচা বাহিনী যথারীতি কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করে যাচ্ছেন।

আমাদের যে মন মানসিকতা এবং দলকানা স্বভাব, তাতে ব্যাপারটা এতো সহজে থামবে বলে মনে হচ্ছে না। অন্ততঃ যতদিন পত্রিকা খবরগুলোকে ঝাল মশলা সহযোগে পরিবেষণ করছে, ততদিন তো অবশ্যই না। মনে হচ্ছে, খবরটি এখন জনপ্রিয়তার দিক থেকে ‘যে পাঁচটি কথা স্ত্রীকে কখনই বলবেন না’ জাতীয় খবরের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। শুধু প্রত্যাশা করেছিলাম, দুই দলে অন্ততঃ কিছু বুদ্ধিমান লোক আছেন, হয়তো তাঁরা ব্যাপারটা আরও নোংরা হওয়ার হাত থেকে বাঁচাবেন। দেখতেই পাচ্ছেন, আমার আশার গুড়ে এই মুহূর্তে বালি কিচকিচ করছে। প্রায় প্রতিদিনই দুই দলের দলকানা সমর্থক আর নেতা কর্মীদের অতি উৎসাহী বক্তব্যে এই মুহূর্তে ব্লগ, ফেসবুক আর পত্রিকা ভাসছে।

ভাবছি, এই ঝগড়ার ভেতর প্রবেশ না করে, বরং আজকে বাড়িতে কি রান্না হয়েছে কিংবা পুত্রকে হোম ওয়ার্ক করাতে গিয়ে কি কি সমস্যায় পরেছি তা নিয়ে একটা কলাম লিখি। কিংবা আজকে বুয়ার সঙ্গে সহধর্মিণীর যে বচসা হয়েছে তার বিবরণ। কিছুদিন আগেও গিন্নির ধারাবাহিক নালিশ পর্ব চলছিল। বিষয় ছিল সন্তানদের স্কুল শেষে, বছর শেষে পাওয়া ছুটিতে এবার কারা কারা কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছে তাঁদের লিস্টি। সঙ্গে আরও যোগ হচ্ছিল সেই আনন্দ ভ্রমণের সময় তাঁরা কি কি আনন্দ করেছে তার বিবরণ। সেই অনুযোগ এখন থেমেছে। এখন পরিস্থিতি বেশ উল্টো। এখন আমার বুদ্ধিমত্তার জয় জয়াকার চলছে। কারণ ইদানীং তিনি যেসব গল্প শুনছেন সেখানে আনন্দ ভ্রমণের চেয়ে ভোগান্তির গল্পই বেশি। বেশ কয়েকজন অবরোধের কারণে সেখানে আটকেছে। এখন অবশ্য তার কণ্ঠে আনন্দের বন্যা, ‘ঠিক হয়েছে।‘ সঙ্গে যোগ হচ্ছে, ‘আমাদেরও যাওয়ার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু দেশের অবস্থা দেখে যাইনি। এখন দেখছি ভালোই করেছি।‘ টপিক হিসেবে এটাও মন্দ না।

পত্র পত্রিকা দেখে মনে হচ্ছে, এদেশে সত্যিকার অর্থেই ‘স্টোরি’র আকাল চলছে। একটা কোন কাহিনী পেলে তা নিয়ে টানা হেঁচড়া করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। সেই কবে থেকে যে শুরু হয়েছে ‘যে পাঁচটি কথা কখনও প্রেমিকাকে বলবেন না’ জাতীয় লেখা— বোধহয় পত্রিকাগুলো নিজেও বলতে পারবে না। থামাথামির নাম তো নেইই, বরং প্রতিদিন এই জাতীয় লেখা এখন অত্যাবশ্যকীয় হয় দাঁড়িয়েছে। অবিরাম এই ধরনের খবরের ‘সাপ্লাই’ দেখে মনে হচ্ছে এসব খবর পাবলিক বেশ ভালোই খাচ্ছে। তাই এসব তথ্যের সম্প্রচার বেশ বিরামহীন ভাবেই চলছে।

প্রায় প্রতিটি অনলাইন পত্রিকা খুললে, এজাতীয় কিছু লেখা পাওয়া পাওয়া যাবেই। লেখাগুলো যে নিজেদের রিসার্চ প্রোডাক্ট, তা কিন্তু না। অনলাইনে প্রচুর ওয়েব সাইট আছে, যেখানে এধরনের প্রচুর তথ্য গিজগিজ করছে। সেসব থেকে বেছে বেছে কিছু তথ্য অনুবাদ করে এনে হাজির করা হচ্ছে। নর নারীর প্রেম কিংবা সম্পর্ক সম্বন্ধীয় কথাবার্তা গুলোই বেশি অনুদিত হচ্ছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত কিছুটা যৌন নির্দেশক তথ্য আসছিল। ইদানীং সেখানে যৌনতার মিশাল বাড়ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে, আমরা আসলে এগুলোই চাই। গুগলে পর্ণ সার্চে আমরা এখনও পাকিস্তান থেকে পিছিয়ে আছি। বোধহয়, খুব বেশি দেরী হবে না, ওদেরকে পিছে ফেলতে।

আসলে খবর হিসেবে আমরা প্রত্যাশা করে থাকি দুটো ব্যাপার। হয় ঝগড়াঝাটি, মারামারি, কাটাকাটি এসব আর নয়তো যৌনতা। কোকোর মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে যেভাবে দুই দলের সাঙ্গপাঙ্গরা মেতে উঠল, তা দেখে মনে হচ্ছে, সবাই বেশ খুশি। ঝগড়ার বিষয় পাওয়া গেছে। এই দল ঐ দলকে গালি দিচ্ছে। ঐ দল অন্য দলকে অভদ্র বলছে। বুদ্ধিজীবীরা সারাংশ আবিস্কার করছে। ‘কার দোষ বেশি’। কোথায় যেন একধরনের আনন্দ বিরাজ করছে সবার মনে। ‘লাগুক ঝগড়া, মজা দেখা যাবে’। অচিরেই হয়তো আরেকটা লেখা বাজারে আসবে, ‘যে পাঁচটি কারণে একজন মানুষ ঝগড়া দেখে আনন্দ পায়।‘

আরও একটি খবর আসা উচিৎ। ‘যে পাঁচটি কারণে বাসায় পুরনো খাবার খেতে হয়।‘ তার একটি বলে দিতে পারি। মাইক্রোওয়েভ। আজকে আমার তেমনই একটি দিন গেল। খাবার টেবিলে একমাত্র উৎসাহিত ব্যক্তি আমার পুত্র। সে আজকে নতুন একটি ধাঁধা শিখেছে। ‘আচ্ছা আব্বু, বল দেখি, একজন অ্যাস্ট্রোনট রকেটে করে সূর্যে গেল কিন্তু পুড়ল না, কিভাবে হতে পারে।‘ যদিও ধাঁধাটার উত্তর আমি জানি না, তারপরও এধরনের পরিস্থিতিতে আমার আপাততঃ কাজ একটাই, ইচ্ছে করে হেরে যাওয়া। কিছুক্ষণ চিন্তার ভান করে বললাম, জানি না। আমার পরাজয় দেখে পুত্র যারপরনাই আনন্দিত। ‘প্রিন্সিপ্যাল স্যারকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম, পারেনি।‘ আমার বোকামি কিছুটা জাতে উঠল। এবার আমার কাজ, উত্তরটা শুনে অবাক হওয়া কিংবা পুত্রর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশংসাসূচক কিছু বলা।

‘কারণ অ্যাস্ট্রোনট রাতের বেলা গিয়েছিল।‘ উত্তর আসবার পরে একবার ভাবলাম আহ্নিক গতি ব্যাপারটা বোঝাই। রাত হওয়া মানে এই না যে সূর্যের তাপ কমে গেছে। তারপরে ভাবলাম, দরকার কি। শুধু শুধু ওর আনন্দ মাটি করে। পরাজয় মেনে নিলাম। বিজয়ী পুত্র সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় প্রশ্ন শোনাল। ‘আচ্ছা বল, কোন অ্যানিম্যাল সবাইকে উঠাতে পারে?’ এবারও আমার কাজ, ইচ্ছে করে পরাজিত হওয়া। উত্তরটা এবারও আমার অজানা। কিছুক্ষণ চেস্টার ভান করলাম। ধাঁধাটায় মূল সমস্যা সম্ভবতঃ ‘ডাবল মিনিং’ কোন একটি শব্দ কিংবা বাক্যের অন্য কোন অর্থ দাঁড়ায়। আর সেখানেই লুকিয়ে আছে চালাকী। কিছুক্ষণ সত্যিই চেষ্টা করলাম। ‘উঠাতে পারা’ মানে কি? শক্তিশালীতম প্রাণী? তিমি বা তেমন কিছু?

কিছুক্ষণ চিন্তা করে পরাজয় মেনে নিলাম। আবার সেই বিজয়ীর হাসি। ‘উত্তর হচ্ছে মোরগ। মোরগই তো সবাইকে ঘুম থেকে উঠায়।‘ কাহিনী বোধহয় এখানেই থামবে না। এই প্রশ্নগুলো হয়তো সে আবার কাউকে করবে। তাঁর বিবেচনায় যে মানুষগুলো বুদ্ধিমান, তাঁদের সবাইকেই সম্ভবতঃ সে একে একে প্রশ্নটা করবে আর লিস্টি শোনাবে, পৃথিবীর কোন কোন বুদ্ধিমান প্রাণী তার এই সহজ প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারেনি।

আমাদের সবার ভেতরই সম্ভবতঃ এই শিশুটি বেঁচে আছে। আরেকজনকে হারাবার মধ্য দিয়েই নিজের জয় খোঁজা শিশু। কখনও এরা সত্যিই জেতে কখনও সামনের মানুষের ইচ্ছাকৃত পরাজয়ে যেতে। কিন্তু শিশুটির হাসিটিতে যে দুজনেরই জয় হয়, এই তথ্য হয়তো শিশুটি বোঝে না। এই শিশুটি যখন বাবা হবে, হয়তো সেও এমনটিই করবে। ইচ্ছে করে হারবে। আরেকটি শিশুর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। আর বাবা হিসেবে হয়তো একটি কথা বলতে গিয়েও থেমে যাবে। হয়তো বলবে না, মোরগ সবাইকেই ঘুম থেকে ওঠাতে পারে না। জেগে জেগে ঘুমানো দলকানা নেতা আর সমর্থকদের ঘুম থেকে ওঠানোর সাধ্য কারো নাই। আর পরাজয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা জয় দেখবার চোখ ও এসব দলবাজদের নেই। আর তাই আমাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কেউই হাসিমুখে পরাজয় মেনে নেবে না।

শুধু জানান, আমাদের এই জিম্মি অবস্থার অবসান কবে

download (2)

by zainuddin sani

দেশের অবস্থাকে ঠিক কিসের সঙ্গে তুলনা করা যায়? দাবা খেলার ‘স্টেলমেট’ না টেস্ট ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার ‘ড্র’। খেলার সঙ্গে তুলনা করার একটি সমস্যা আছে। কিছু খেলায় সময় নির্ধারিত আছে, এখানে নেই। কেউই জানে না কবে নাগাদ একটা ফয়সালা হবে। সেদিক দিয়ে ভাবলে দাবার সঙ্গে তুলনা করা যায়। কারণ এখানে খেলায় সময় নির্ধারিত নেই, তবে সেখানে খেলার অবস্থা বুঝে ‘ড্র’ মেনে নেয়ার মত সুযোগ আছে। তবে দেশের বর্তমান অবস্থায় ‘ড্র’য়ের কোন সুযোগ নেই। প্রাচীন রোমের ‘গ্ল্যাডিয়েটর’দের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার মত অবস্থা বলা যায়। বিশাল এক দর্শক শ্রেণীও যেমন আছে, একজনের পরাজয়ের ভেতর দিয়ে খেলা শেষ হওয়ার নিয়মও তেমনি আছে। সময়ের কোন সীমানা নেই। তবে সেখানে তৃতীয় একজনের জেতার সম্ভাবনা নেই। রাজনীতির এই খেলায় এই ব্যাপারটা আবার আছে।
খুব সাধারণ কিসিমের একজন জনতাকে জিজ্ঞেস করলাম, কিছু হচ্ছে না কেন? উনি উত্তর দিলেন, টেস্ট ক্রিকেট চলছে, এখানে তো টি টুয়েন্টির মত দ্রুত রেজাল্ট এক্সপেক্ট করতে পার না। তুলনাটা খারাপ লাগলো না। তারপরও, পুরোপুরি মেনে নিতে পারছি না। যদিও টেস্ট ক্রিকেট, ক্রিকেটের ‘লঙ্গার ভার্সান’ তারপরও এর একটি লিমিট আছে। খেলাটা তো আর অনির্দিষ্ট কালের জন্য খেলা হয় না। বর্তমান অবস্থার মেয়াদ তো বোঝাই যাচ্ছে না। কখনও মনে হচ্ছে, আজকেই শেষ হয়য়ে যাবে, আবার মনে মনে হচ্ছে, থামবেই না।
খেলাটায় যদিও লাশ পড়ছে, মানুষ পুড়ছে, তারপরও বলা যায়, দুই দলের সমর্থকরা গোঁয়ারের মত বসে আছে, ‘চলুক খেলা, দেখি কে জেতে’। দোষ কার তা নিয়ে দুই দলের সমর্থকরা কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করছে আর এই বিশ্বাস নিয়ে এখনও ফেসবুক আর ব্লগে আশাবাদ জানিয়ে যাচ্ছে ‘জয় আমাদের হবেই’। শুধু কি তাঁরা, দেশবাসীও কিছুদিন আগে পর্যন্ত চাইছিল, চলুক খেলা। হয়য়ে যাক একটা হেস্তনেস্ত। যদিও এই মুহূর্তে বোঝার কোন উপায়ও নেই কে জিতছে, যদিও বোঝার উপায় নেই কোন এক পক্ষের জয় নিয়ে দেশবাসীর খুব বেশি মাথাব্যাথা আছে কি না, তবে একটি ব্যাপার নিশ্চিত, আর তা হচ্ছে দেশবাসীর খেলা দেখার শখ মিটে গেছে। প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়য়ে ওঠা দেশবাসীর এখন একটাই প্রত্যাশা, যে ই জিতুক, একজন কেউ জিতুক।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ঘটনা আটকে আছে তো আছেই। কোন পরিণাম নেই, ফলাফল নেই। কেউই জিতছেও না, হারছেও না। অবস্থা এমন হয়েছে যে, তা দেখে ভবিষ্যৎবাণী করবার উপায়ও নেই, কে জিতবে বা কে হারবে?
কে জিতবে তা নিয়েও চলছে সাসপেন্স। জয় ব্যাপারটা পেন্ডুলামের দোলকের মত দুলছে আর বেশ ভালভাবেই দুলছে। একসময় আওয়ামীদের দিকে তো অন্যদিন বিএনপির দিকে। একবার মনে হচ্ছে, আওয়ামীদের পেছানো ছাড়া উপায় নেই, পর মুহূর্তেই মনে হচ্ছে বিএনপির আর কোন আশা নেই। আবার কেমন করে যেন দুই দলই প্রতিযোগিতায় ফিরে আসছে। এখন পর্যন্ত, ‘কেহ নাহি কম যায় সমানে সমান’ চলছে। মনোবল দুই দলের নেতাকর্মীরই চাঙ্গা। জনতা, যারা দুরু দুরু বক্ষে অপেক্ষায় ছিল খেলাটির একটি ‘নেইল বাইটিং’ ফিনিশ দেখবার জন্য, তাঁদের এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। তাঁদের এখন একটি ব্যাপার নিয়েই মাথা ব্যাথা, আর তা হচ্ছে, কতদিন ধরে চলবে এই খেলা। কিংবা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে একটি ‘ডিসাইসিভ’ ফলাফল।
সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন, খেলা কি এই গতিতেই চলবে? উত্তরটা হয়তো সামনের কিছু দিনের ভেতরেই বোঝা যাবে। সরকার হার্ডলাইনে যাবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। কিছু ক্রস ফায়ার হয়েছে, প্রায় সাত হাজার গ্রেফতার। হার্ড লাইনের ভেতর আর কি পড়ে বোঝা যাচ্ছে না। সম্ভবতঃ বিএনপির যেকয়জন নেতা বাইরে আছে, তাঁদের একটা গতি করা। আর সেই মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন, ম্যাডামকে গ্রেফতার করা হবে কি না। কার্যালয়ে অন্তরীন রাখার সিদ্ধান্তের যেভাবে হঠাৎ করে ইতি ঘটল, তাতে মনে হচ্ছে না সরকার সেদিকে পা বাড়াবে।
অন্যদিকেও বেশ বড়সড় একটা প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ঝুলছে। বিএনপি এভাবে কতদিন চালাবে? যত দিন যাচ্ছে, জ্বালাও পোড়াও ব্যাপারটা ব্যাকফায়ার করছে। যদিও তাঁরা বলছে, পেট্রোল বোমা আর ককটেল তাঁরা ছুঁড়ছে না, তবে পুরোটা বিশ্বাস মনে হয় না করাতে পারছে। আওয়ামী স্যাবোটাজ হয়তো কিছু হচ্ছে, তবে বিএনপি একটাও কক্টেল ছুঁড়েনি, তা বোধহয় পাবলিককে গেলানো যাবে না। ফলে তাঁদেরও এই চিন্তা তাড়িয়ে নিচ্ছে, আর কি করা যায়।
দুই বড় দলের মানসিকতা এমন হয়েছে যে একদল জিতলে, অন্যদল সংসদে যাবে না, একদল যা চাইবে, অন্যদল ঠিক তাঁর উল্টোটা চাইবে, একজন ক্ষমতায় থাকা কালীন নির্বাচন দিলে অন্যদল নির্বাচনে যাবে না। জনগণ এ ও জানে, দুই দলের নেত্রীর এই দা কুমড়া সম্পর্ক নিয়েই দেশবাসীকে চলতে হবে। ক্ষমতায় থাকা কালীন পাঁচ বছর, বিরোধীদল শীতকাল আসলেই কিছু আন্দোলন করবে আর সারা বছর মোটামুটি খুচরা কিছু হরতাল আর অবরোধ দিবে, আর আমাদের এসব মেনে নিয়েই চলতে হবে।
দুই নেত্রীর প্রতিই আমাদের প্রত্যাশা এখন এতোটাই কমেছে যে এই মুহূর্তে শুধু একটাই প্রত্যাশা, শুধু আমাদের জানান যে এই জিম্মি অবস্থা থেকে আপনারা কবে নাগাদ আমাদের মুক্তি দিবেন।

এঞ্জয় দ্যা গ্ল্যাডিয়েটরিয়াল ফাইট

roman-gladiators-5

by zainuddin sani

‘সো? হু ইজ উইনিং?’ এই মুহূর্তে সবার মনে কেবল এই একটাই প্রশ্ন। নেতা নেত্রীদের কথার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সবাই এই একটা প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। সমঝোতার কথা কে বেশি বলছে? তার মানে সে হারু পার্টি। পাতি নেতাদের কাজই হচ্ছে জ্বালাময়ী কথা বলা। বিএনপির পাতি নেতারা ‘দাঁত ভাঙ্গা জবারে’র কথা বলে বলে নিজেদেরই দাঁত ক্ষয় করে ফেলেছেন আর আওয়ামী পাতি নেতারা সারাক্ষণ হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ‘তাঁরা চাইলে বিএনপির কি দুর্গতি করতে পারেন’। এবং যথারীতি কোন পক্ষই কিছু করতে পারছে না। ফলাফল হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কেউই আর এইসব পাতিনেতাদের কথা পাত্তা দিচ্ছেন না।

সব চোখ এখন বড় দুই নেত্রীর দিকে। হার্ডলাইনে যাওয়া থেকে সরে আসবার কোন কথা কি নেত্রী বলছেন? কিংবা আন্দোলন আরও বেগবান না করে আলোচনা করার কথা কি নেত্রী বলছেন? বাক্যের শব্দগুলো কত কর্কশ কিংবা কত মোলায়েম তা দেখে সবাই ঠিক করে নিচ্ছেন, বল এখন কার কোর্টে। বাকি যত দর্শক আছেন, সুশীল থেকে কুশিল, দেশি হোক আর বিদেশী, সবার মুখে এখন একই নামতা, ‘আলোচনা কর’। এদের পাত্তা দেয়ার তেমন কিছু নেই। এরা সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এই কথা বলে আসছেন, আর আমাদের নেতারা তাঁর তোয়াক্কা না করেই নিজেদের গোঁয়ার্তুমি যথারীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। মূল যে প্রভু, তিনি যতক্ষণ কোন একটি দলের সঙ্গে আছেন, অন্য কেউ তাঁর কিচ্ছু করতে পারবে না। তাঁরা অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু বলেন না, নেতা নেত্রীদের মুখের ভাষা শুনে বুঝে নিতে হবে, বাতাস ঘুরে গেছে কি না।

আওয়ামীরা যে লাইনে ফাইট দিচ্ছে তা হচ্ছে হরতাল অবরোধে হওয়া মৃত্যুগুলোকে হাইলাইট করার চেষ্টা করে যতটা ফায়দা লোটা যায়। ভয়াবহতম মৃত্যুগুলোকে নিয়েই সবেচেয়ে সেন্টিমেন্টাল ফায়দা হাসিল করা যায়। পত্রিকায়, টিভিতে কিংবা টক শোর আলোচনায় যত বেশিবার এই টপিক আসবে, ততো বেশি সুবিধা আওয়ামীদের। নিজেদের পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলে তাই বারবার এই বিষয়গুলো আনবার চেষ্টা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির এই মুহূর্তের প্রধান চিন্তা, আন্দোলনে যেন ছেদ না পড়ে। লাশগুলো কিছুটা ব্যাকফায়ার করছে, তবে অবরোধ আর হরতাল তাঁর ইমপ্যাক্টও ফেলছে। সরকারকে যে বিচলিত করে ফেলেছে তা আওয়ামী পাতি নেতাদের লম্ফঝম্ফ দেখে আন্দাজ করে নেয়া যাচ্ছে।

তবে দুই দলেরই মূল সমস্যা হচ্ছে ‘দীর্ঘসুত্রিতা’। আন্দোলন দীর্ঘ হলে আওয়ামী বিএনপি দুদলেরই সমস্যা। আওয়ামীদের সমস্যা হচ্ছে, প্রমাণ হয়ে যাবে তাঁরা অথর্ব, এই আন্দোলন দমানোর ক্ষমতা তাঁদের নেই। অন্যদিকে অবরোধ আরও কিছুদিন চললে বিএনপিও ঝামেলায় পড়বে। দেশের অর্থনীতির ওপর শুরু হওয়া চাপ এবং সেকারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া জনগণ কিছুটা হলেও তাদেরকে দায়ী করবে। আর মানুষের দেয়ালে পিঠ থেকে গেলে, তাঁরা ঠিক কি করবে, বোঝা ভার। দেশের হওয়া অর্থনৈতিক ক্ষতি সম্পর্কে দুই দলই সচেতন, তবে এটাও জানে, ছাড় দিলেই অবধারিত মৃত্যু।

আওয়ামীদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র এবং বড় দুর্বলতার নাম আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। অবরোধে হওয়া জন দুর্ভোগ কিংবা জ্বালাও পোড়াও থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে আপাতত তাঁরা ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা ঘোচাতে যা তাঁরা করতে পারে, তা হচ্ছে, ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানো। তেমন করবার ইচ্ছে জানাতে গিয়ে পুলিশ, বিজিবি আর র‍্যাব প্রধান বেশ ঝামেলায় পড়ে যান। অতি দ্বায়িত্বশীলতা দেখাতে গিয়ে এমন কিছু কথা বলে ফেলেন, যে পরের দিন তাঁদের আবার ব্যাখ্যা দিয়ে জানান দিতে হয় যে তাঁরা রাজনীতি করেন না। সারাংশ হচ্ছে, যদি তাঁরা অ্যাকশানে যান এবং বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের লাশ পড়ে, তখন পরিস্থিতি কি হবে, তাঁরা নিজেরাও তা আঁচ করতে পারছেন না, আর সেকারণেই চাইছেন, ব্যাপারটা যেন সে পর্যন্ত না গড়ায়। হুমকি ধামকিতে কাজ হলে সবকুলই রক্ষা পায়।

এমন ‘স্টেলমেট’ অবস্থায় সরকারী বাহিনী তাই আপাতত গ্রেফতার পর্যন্তই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন। হুঙ্কার, হুমকি চলছেই, তবে সত্যিই তেমন হার্ডলাইনে তাঁরা যাবে কি না, তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ করছেন। অন্যপক্ষও খুব আরামে নেই। বিরোধী দলের প্রায় সব বড় নেতাই চোদ্দ শিকের পেছনে। আত্মগোপনে থাকা কিছু কিংবা সরকারের সঙ্গে মৃদু লিয়াজো করে চলা কিছু নেতা এখনও বাইরে আছেন। ওপর মহল থেকে প্রতি মুহূর্তের নির্দেশনা না আসায়, কর্মীরা বুঝে উঠতে পারছেন না কি করবেন। অতি উৎসাহে জ্বালাও পোড়াও করবেন? লুকিয়ে থাকবেন? না গ্রেফতার হয়ে নিজেদের অকুতোভয় প্রমাণ করবেন? ফলে দেখা যাচ্ছে, সরকারী দলের ওপর মহলের মত বিরোধী দলের তৃণমূলও এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

একে অপরের ওপর করা গুপ্তচরবৃত্তিতে, মনে হচ্ছে এখন একটি স্থিতি অবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপির কি হতে যাচ্ছে পরবর্তী সিদ্ধান্ত, তা ম্যাডাম আর তারেক সাহেব ছাড়া আর কেউ জানে না। অন্যদিকে আওয়ামীদের সিদ্ধান্ত বা গেম প্ল্যান প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ জানে না। বিভিন্ন পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেল, ‘জানা যায়’ কিংবা ‘বিশ্বস্ত সূত্রের খবর’ বলে যা প্রচার করছে, এই মুহূর্তেই সেটারই কদর সবচেয়ে বেশি। কাকে বেশি চিন্তিত দেখাচ্ছে, কে বেশি হাসিখুশি, কে সাংবাদিকদের সঙ্গে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে কথা বলছেন, এসবই হচ্ছে এখন ‘ব্রেকিং নিউজ’।

বালুর ট্রাক সরানো কিংবা পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলা কিসের ইঙ্গিত, তা নিয়ে সবাই এনালাইসিস শুরু করে দিয়েছেন। ভাইবার, ট্যাঙ্গো, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদির ওপর নিষেধাজ্ঞায় জনগণের ভোগান্তির চেয়ে বেশি আলোচ্য হয়ে উঠছে, কেন সরকার এমনটা করল। ব্রিটেনে পাঠানো চিঠি কিংবা ‘সেনাবাহিনী নামানোর সময় এখনও হয়নি’ এসব ব্যাপার সরকারের আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করছে না ‘নার্ভাসনেস’, তা সময়ই বলে দেবে। বিএনপিরও যে হরতাল আর অবরোধের বাইরে আর কিছু করার কোন ক্ষমতা নেই, তা আবার প্রমাণ করেছে। জনগণকে সাথে যুক্ত করবার তেমন কোন প্রচেস্টাই তাঁদের নেই। তাকিয়ে আছে জামায়াতের দিকে।

পাল্লা কোন একদিকে হেলে পড়ছে, তা বলবার সময় বোধহয় এখনও আসেনি। এই ‘স্টেলমেট; অবস্থা আর কতদিন চলবে, আর কত লাশ পড়বে, দেশের অর্থনীতির কত ক্ষতি হবে, তা সময়ই বলে দেবে। রোমের সেই গ্ল্যাডিয়েটর ফাইটের মত হয়েছে এদেশের দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থা। কোন একজনের জয় ছাড়া এই যুদ্ধ থামবে না। যতক্ষণ যুদ্ধ শেষ না হয়, ততক্ষণ যেমন রোমের অধিবাসীরা উত্তেজিত হয়ে সেই ফাইট দেখত, এদেশের সাধারণ মানুষের এই মুহূর্তে একটাই কাজ, আমাদের দুই রাজনৈতিক নেত্রীর এই ‘গ্ল্যাডিয়েটরিয়াল ফাইট’ দেখা আর সম্ভব হলে ‘উপভোগ করা’।

আলোচনা? কাদের মধ্য? দুই দলের না দুই প্রভুর?

obamamodi

by zainuddin sani

সুশীল সমাজ যদিও তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, তারপরও এই ধরনের অবস্থায় তাঁরা ঘ্যান ঘ্যান করতে এগিয়ে আসে। সাম্প্রতিক কিছু লেখা পড়ে মনে হচ্ছে তাঁরা আবার হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে আসছেন। বক্তব্য তেমন নতুন কিছু না, সেই পুরনো আবদার। ‘আলোচনা করুন’। তাঁদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বুদ্ধি এই দলগুলোর নেই, তাই উপদেশটা দিতে হচ্ছে। ব্যাপারটা কি তাই? এদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায়, আলোচনা করতে চাওয়া মানে, আমার আন্দোলন করার ক্ষমতা নাই কিংবা আমার ক্ষমতা নাই, এই আন্দোলন দমাবার। আর তাই এদেশে কোন দলই সেধে আলোচনার প্রস্তাব দেয় না, বিশেষ করে অপর পক্ষ যখন দুর্বল অবস্থায় থাকে। এরপরও সুশীল সমাজের বুদ্ধিতে পূর্বে কিছু আলোচনা, চিঠি চালাচালি, আলোচনার জন্য বসাবসি, সবই হয়েছিল, এবং যথারীতি সেসবে কোন ফল আসেনি।

বাস্তবতা হচ্ছে, আন্দোলন করে দাবী আদায়ের ক্ষমতা না থাকলে, এদেশের কোন সরকারী দলই বিরোধী দলের দাবী মেনে নেয় না। আর আন্দোলন দমাবার ক্ষমতা থাকলে, সরকারী পক্ষ সেই আন্দোলনকে দমাবার কোন চেষ্টাই বাদ রাখেন না। তাই আন্দোলন করে দাবী আদায় করতে পারবে কি না, তা নির্ভর করছে, আন্দোলন কত জোড়ালো হচ্ছে আর অন্য পক্ষ কতোটা শক্তহাতে তা দমন করতে পারছে এই দুইয়ের ভারসাম্যের ওপর। বহুকাল হল, এদেশের কোন আন্দোলনে, সাধারণ জনতা অংশ নেয় না। ফলে এই মল্লযুদ্ধ মুলতঃ চলে সরকারী বাহিনী আর পিকেটারদের ভেতরে।

গত ছয়বছর, এই পিকেটারের সাপ্লাইয়ে বেশ ঘাটতি ছিল। আর তাই, কোন আন্দোলনেই বিরোধী দল জুত করতে পারছিল না। যা তাঁরা করছিল কিংবা আন্দোলন চালাবার জন্য যা জরুরী হয়ে পড়েছিল, তা ছিল জনগণকে আন্দোলনের কর্মসূচীতে যোগ দিতে বাধ্য করার। এমন কোন কার্যক্রম, যেখানে জনগণ অংশ নিতে বাধ্য। হরতাল আর অবরোধ করতে আপনি বাধ্য। গাড়ী না চললে আপনি উঠবেন কোন বাহনে। আপনার গাড়ী ভাঙবে জানবার পরও আপনি নিশ্চয়ই গাড়ী বের করবেন না। ব্যাস হয়ে গেল, হরতাল সফল।

বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক কার অনুকুলে, এখনও বোঝা যাচ্ছে না। দেশ গোল্লায় গেলেও, এই দুই দলের কারোরই কিছু যায় আসে না। তাঁদের একটাই চাওয়া, আর তা হচ্ছে, নিজের জয় বা অপর পক্ষের পরাজয়। এই যুদ্ধ এর আগেও বেশ কয়েকবার হয়েছে, এখন আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। তবে যে অংশকে নিয়ে বেশি টেনশানে থাকি, যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়ংকর যে অবস্থা, তা হচ্ছে ‘স্টেল মেট’। দাবা খেলার সেই অবস্থা, যেখান থেকে কারোরই বিজয় অর্জন সম্ভব না। টেস্ট ক্রিকেট কিংবা দাবায় যেমন ‘ড্র’ বলে একটা ব্যাপার আছে, রাজনীতিতে তেমনটা নেই। এখানে একজনের জয় কিংবা অন্যের পরাজয়, কোন একটা হতেই হবে। আর সেটা না আসা পর্যন্ত, অর্থাৎ এই ‘স্টেলমেট’ অবস্থা আমাদের সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই। যারা আবদার করছেন, আলোচনার, তাঁরা ভালো করেই জানেন, কিছুই হবে না।

তারপরও এই আবদারগুলো জানানো হয়, এবং সাধারণতঃ তা জানানো হয় বেশ কিছু লাশ পড়ার পরে। আগেও বলা হয়, তবে দায়সারা ভাবে, এবং যথারীতি সেই আবদারে কেউ কর্ণপাত করেন না, মিডিয়ায় আসে না, পত্রিকায় কেউ কলাম লেখেন না। লাশ পড়া মানেই, অবস্থা গুরুতর। দুই পক্ষই বেশ শক্তিশালী। একদল সহিংস আন্দোলন করার ক্ষমতা অর্জন করেছে আর অন্যদল সেই আন্দোলন দমাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহারের প্রয়োজন বোধ করছে। তবে বর্তমান আন্দোলন অতিসম্প্রতি যেসব লাশ সরবরাহ করেছে, তাঁর পুরোটাই নিরুপায় জনতার লাশ। বিরোধীদলের আন্দোলনের আদেশ অমান্য করার কারণে লাশ। এই লাশ উৎপাদনের কৃতিত্ব এখনও কেউ নিচ্ছেন না, একে অন্যকে দায়ী করছেন। তবে এই লাশগুলো দেখে দুই দলের কারোরই এমন কোন বিবেক জাগছে না।

এসব আন্দোলনের জন্য খুব জরুরী হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের লাশের যোগান। সেটাও আবার বড়সড় কোন নেতার। সেটা এখনও হয়নি, এবং ধারণা করা যায় আপাততঃ যোগান হবেও না। বড় সব নেতা আত্মগোপনে কিংবা চোদ্দ শিকের পেছনে। ওদিকে রাষ্ট্রীয় শক্তি, মাঠে নামব, নামব করছে। হুমকি, হুংকার দিচ্ছে, তবে এখনও অ্যাকশানে নামেনি। সেটা নামলে, আর তখন আরও কিছু লাশের যোগান হলে, সম্ভবতঃ খেলা জমে উঠবে। ‘স্টেল মেট’ অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

খেলা অন্যদিকেও হচ্ছে। কূটনৈতিক পাড়ায় দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গেছে। নিজ নিজ প্রভুর কাছে গিয়ে আর্জি পেশ করা হয়েছে, ‘আমাকে বাঁচান’। তাঁরাও ধরি মাছ না ছুঁই পানি টাইপ বক্তব্য দিচ্ছেন। সুশীল সমাজ মুলত এই ধরনের অবস্থার জন্যই অপেক্ষা করে। কারণ এই ধরনের অবস্থায়ই তাঁদের কথা মিডিয়ায় একটু পাত্তা পায়। যে কয়জন সুশীলের গায়ে এখনও দলীয় তকমা লাগেনি, এই সময় তাঁদের কিছুটা কদর হয়। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় কলাম লিখে তাঁরা জানান দেন, অবস্থা এখন গুরুতর, দেশের বেশ ক্ষতি হচ্ছে, অতএব এবার আলোচনা করা যেতে পারে। আগে বলিনি কারণ তখন আমার কথা কেউ পাত্তা দিত না।

আলোচনা আদৌ হবে কি না, আর হলে সেখান থেকে কোন ফল আসবে কি না, তা নিয়ে সব দলই নিজ নিজ বক্তব্য দিচ্ছেন। সেই বক্তব্য অবশ্য আসল বক্তব্য না। সেটা ‘মেন্টাল গেম’। হুমকি দিয়ে অপর পক্ষকে ঘায়েল করা। আগামী কিছুদিনের ভেতর সম্ভবতঃ বড় নেতারা পরিষ্কার করবেন, আলোচনার নাটক করতে তাঁরা রাজী কি না। আরও কিছু ব্যাপার এখনও পরিষ্কার হয়নি। প্রভুরা কি সিদ্ধান্ত নেবেন, কোন প্রভু এবার নিজের দাবীতে অনড় থাকবেন কিংবা দুই প্রভুর কোনজন এবার বাংলাদেশকে অন্যজনের ঝুলিতে দেবেন, তা এখনও তাঁরা পরিস্কার করছেন না। প্রভু দুইজন ২৬শে জানুয়ারী ভারতে মিলিত হবেন। সেখানে যদি দয়া করে তাঁরা কোন সিদ্ধান্ত নেন, তবে রক্ষা, আর নয়তো কপালে আরও ভোগান্তি আছে।

দুই পক্ষই হুমকি দিয়ে রেখেছেন, খেলা আরও জোরদার হবে ২০ তারিখের পরে। অর্থাৎ দুই পক্ষই কোমর বাঁধবেন। আর এটাও ঠিক, তার আগে পর্যন্ত এই ভোগান্তি চলবে। ফেব্রুয়ারিতে অসহযোগের ডাক দেয়া হয়েছে। ওদিকে সেই সময়ে রয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। আগেকার আন্দোলন গুলোতে সাধারণতঃ শুক্র শনিকে রেহাই দেয়া হত, এখন সেটাও দেয়া হচ্ছে না। বিশ্ব ইজতেমার জন্যও তেমন কোন ছাড় দেয়া হয়নি। বেশ অনেক জেলায় জ্বালানী সংকট শুরু হয়েছে। অন্যদিকে বিজিবি দিয়ে পণ্য আর যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করানোর চেষ্টা চলছে। কতদিন চালানো সম্ভব, সময়ই বলে দেবে। জনগণকে জিম্মি করা এই নেতাকর্মী বিহীন আন্দোলন কতদিন টানা যাবে, সেটাও যেমন দেখবার বিষয় তেমনি সবাই অপেক্ষা করছে, সরকারী বাহিনী গুলি ছুঁড়লে আর লাশ পড়লে, খেলার দিক পরিবর্তন হয় কি না।

আপাততঃ আন্দোলনের ‘স্টেলমেট’ অবস্থার যে পরিবর্তন হবে না, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। আলোচনাও যে সমাধান এনে দেবে না, সেটাও সবাই জানে। আমাদের প্রভুরা, এবং তাঁদের নিয়োগ দেয়া কূটনীতিকরা কি করবে কিংবা অন্য কোন সমাধান আসবে কি না, তাঁর দিকেই সবাই তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তের মিলিয়ন ডলার যে প্রশ্ন তা হচ্ছে, ‘সমাধান কোন পথে?’ এই দুই দলের আলোচনায় না দুই প্রভুর আলোচনায়?

আমাদের জন্য এই মানুষগুলো লাশ হয়েছে

hartal

by zainuddin sani

লাশ আসতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই একটি দুটি করে আসছে। প্রায় পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে। তবে সেই ম্যাজিক লাশের দেখা এখনও কেউ পায়নি। ডাঃ মিলন কিংবা নুর হোসেন অথবা সেই লগি বৈঠার আঘাত বা বিশ্বজিৎ। কিছু লাশ সরকারের পক্ষে যায় কিছু যায় সরকারের বিপক্ষে। কিছু লাশ বিরোধী দলের আন্দোলনকে চাঙ্গা করে দেয় কিছু লাশ বিরোধী দলকে কোণঠাসা করে দেয়। আজকের কিংবা কালকের লাশটি কার পক্ষে যাবে কেউই জানি না। তবে এ ব্যাপারটি নিশ্চিত, সুযোগ পেলে সেই লাশ নিয়ে রাজনীতি করতে কেউই পিছপা হবে না।

পেট্রোল বোমার এখন ফ্যাশান চলছে। কক্টেলে এখন আর সেই বিভীষিকাময় ইফেক্ট দেয় না। এখানে সেখানে ঝলসে যায় কিছুটা, হয়তো মাংসে গেঁথে থাকে কিছু স্প্লিন্টার। তবে আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়া বীভৎস লাস পেতে হলে চাই পেট্রোল বোমা আর নয়তো গান পাউডার। শিশুর লাশের ইমপ্যাক্ট সবচেয়ে ভালো। মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যাওয়া শিরশিরে অনুভুতি, ইস, আহা, উহু— সবমিলিয়ে বাজারদর এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে এসব আগুনে পোড়া শিশুদের। এরপরে সম্ভবতঃ শিশুকে বাঁচাতে যেয়ে মায়ের মৃত্যু কিংবা অশীতিপর বৃদ্ধা নারী। পুরুষ মানুষের বাজারদর একটু কম। সঙ্গে কিছু রোমহর্ষক কিংবা করুণ গল্প থাকলেও, বাজারদর খারাপ হয়না। বরং শুরু হয় পত্রিকাগুলোর শিরোনামের খেলা।

লাশ যেমনই হোক, তা থেকে ফায়দা লুটতে দুই দলই নেমে পরে। সরকার নামে আবেগের ঝোলা নিয়ে। ‘দেখো দেখো, কি বীভৎসভাবে খুন করছে বিরোধী দল।‘ যত বীভৎস ততো প্রচারণা। টেলিভিশনে বার বার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো। স্বজনদের আহাজারি। ‘কি দোষ ছিল এই শিশুটির?’ কিংবা ‘এই বাবা এখন কি নিয়ে বাঁচবে?’ জ্বলন্ত গাড়ী কিংবা পথচারীদের মতামত। যা কিছু সরকারের পক্ষে যাবে বলে মনে করে, কাজে লাগাবেই সরকার। ব্লগ, ফেসবুক এবং সেখানে তাঁদের পেটোয়া বাহিনীতো আছেই। আলোচনাকে যতটা সম্ভব মুখরোচক করে তোলা হবে।

এই ধরনের লাশ নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যও বেশ গৎবাঁধা। ‘সরকারী দলের ষড়যন্ত্র’ কিংবা ‘এর পূর্বে যখন আপনারা বিরোধী দলে ছিলেন তখন কি করেছিলেন, তা কি ভুলে গেছেন?’ তবে তাঁদের মুখপাত্র যে ব্যাখ্যা সাংবাদিকদের সামনে পড়ে শোনাবেন সেখানে তিনি লাশের চেয়ে বেশি আগ্রহী হবেন, কেন এই হরতাল কিংবা অবরোধ ডাকতে হল, তাঁর ব্যাখ্যায়। রাজ্যের আবেগ ঢেলে দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করবেন, দেয়ালে তাঁদের পিঠ থেকে গিয়েছিল। হরতাল দেয়া ছাড়া আর তাঁদের কোন উপায় ছিল না। এরপরে আসবে সেই চিরাচরিত গণতান্ত্রিক অধিকারের গল্প, ‘হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার।‘

এই লাশগুলো বিরোধী দলের একেবারেই কাজে আসে না, এমন কিন্তু না। সাহায্য করে, তবে উল্টো পথে। লাশগুলো চিৎকার করে দেশবাসীকে বলে, বিরোধীদলের আন্দোলন, আদেশ, হুমকির পরোয়া করিনি বলে আমাদের এই দশা। তোমরা এই ভুল কর না। লাশের এই ইফেক্টটা বিরোধীদলের সত্যিকারের প্রত্যাশা, তবে তাঁরা সেকথা মুখ ফুটে বলে না। তাঁরা আবার এটাও বলে না, হে আমার দলের সমর্থকরা, তোমরা পিকেটিং কর না। আসলে এই লাশগুলো, বাহ্যিকভাবে বিরোধীদলের কিছুটা অপকার করে, ভেতরে ভেতরে উপকারই করে বেশি। আর সেকারণেই, বীভৎস এই লাশগুলোকে বাহ্যিকভাবে অপছন্দ করলেও, প্রতিটি বিরোধী দলই চায়, লাশ পড়ুক।

যে লাশগুলো বিরোধীদলকে সবচেয়ে বেশি প্রমোদ দেয়, তা হচ্ছে নুর হোসেন বা ডাঃ মিলন টাইপের লাশ। সরকারী পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে ঝড়ে পড়া কোন লাশ। আর সেটাও যদি আসে, সরকার বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে, তবে তো আর কথাই নেই। সেই লাশ নিয়ে গল্প, কবিতা, কলাম সব কিছুই হবে। আঁকিয়েরা ছবি আঁকবে, কার্টুনিস্টরা ব্যঙ্গ করবে। বিরোধীদল সেই লাশ দেখিয়ে দেখিয়ে বলবে, ‘দেখো কি করছে সরকার’। আর সরকার বলবে, দেশের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে, এই কাজটা জরুরী ছিল।‘

লাশের এই রাজনীতি কি আদৌ বন্ধ হবে? কিংবা হরতাল, অবরোধের রাজনীতি? সৎ উত্তর হচ্ছে ‘না’। এই লাশ যতদিন রাজনৈতিক দলগুলোকে মুনাফার যোগান দিবে, ততোদিনতো অবশ্যই না। রাজনৈতিক দলগুলোকে একতরফা দোষও দিতে চাই না। একটি মিছিল কিংবা কিছু আহত, এমন রিপোর্ট আমরা নিজেরাই পড়ি না। লাশ না পড়লে আমরা নিজেরাও ভাবি না, বিরোধী দল সিরিয়াস। হরতালে কোন গাড়ী না পুড়লে, ভাংচুর না হলে, আমরা ধরেই নি, বিরোধী দল কোণঠাসা। আন্দোলনের ক্ষমতা নেই। টক শোতে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনাদের পিকেটিং করার লোক কৈ?’

সমস্যা সরকারী দলেরও। যদি তাঁরা বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে দেয়, আর সেখানে বিশাল লোকের সমাগম হয়, তখন প্রশ্ন শুনতে হবে, ‘সরকারের প্রতি আস্থা কি কমে গেছে?’ কিংবা ‘বিরোধীদল কি বেশি জনপ্রিয়?’ ফলে শুরু হয়, হালুয়া রুটির বিনিময়ে লোক এনে সমাবেশ ভর্তি করা। একদিন সরকারী দল সিঙ্গারা খাওয়ায় তো আরেকদিন বিরোধী দল মিষ্টি খাওয়ায়। আজ সরকারী দল গালি দেয় তো কাল বিরোধী দল গালি দেয়। আমরাও বসে থাকি, বেশি ভালো গালি দিতে পারে, তা দেখবার জন্য। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, আমরাই বাধ্য করছি এই দুই দলকে, ‘শুরু কর মুষ্টিযুদ্ধ’ ‘দখল কর এই দেশ’।

এই মুহূর্তে কোন দলের পক্ষেই পেছানো সম্ভব না। বা সম্মান নিয়ে পেছানো সম্ভব না। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, যে পেছাবে, তারই পরিনতি হবে ভয়াবহ। আমরা জনগণ, তাকেই গালি দিব, ‘ব্যাটা পারিস না তো লাগতে যাস কেন?’ নতুন কোন লাশ যেন আর তৈরি না হয়, যেন শান্তি ফিরে আসে, এই উদ্দেশ্যে যে কেউ এক পা এগোবে, আমরা ধরে নেব, সেই দলই হারল। সরকারের তত্ত্বাবধায়কের দাবী মানা, মানেই সরকার হারল। কখনই ভাবব না, এই সিদ্ধান্ত কত উপকার করল। কখনই ভাবব না, এই সিদ্ধান্তের কারণে, কত মানুষ লাশ হওয়া থেকে বেঁচে গেল। উল্টোটাও ঠিক। বর্তমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচনে রাজী হলে, ‘বিরোধী দলের মুরোদ নাই আন্দোলন করার’।

এই লাশের মিছিল চলবেই। আমাদের জন্যই চলবে। আমাদের এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা দেখার অভ্যাসের জন্যই চলবে। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়, বুঝে কিংবা না বুঝে, আমরাই নিরন্তর উসকে দিচ্ছি এই লাশের উৎপাদন। পত্রিকায় কিংবা টেলিভিশানে দেখে আঁতকে ওঠার আগে আমাদের একবার ভেবে দেখা উচিৎ, এই লাশের পেছনে আমাদের নিজেদের দায় কতোটুকু।

2015: What is Left of the Political Field and What is at stake.

By Seema Amin

 

BLOODSTAINS ON THE FLAG,
FLAGSTAINS ON THE SKY,
SKYSTAINS ON THE EYE LATER ON
YOU’LL HAVE TO DREDGE WITH THE CORNER OF YOUR HANDKERCHIEF.

  • Roque Dalton, Tavern

The degradation of Bangladesh is at its zenith. A perverse, almost psycho-sexual arousal at the humiliation and degradation of one’s chosen victim-slash-enemy and the callous force-feeding of a ‘Law’ that is standing on its head (the upside down world of 2015 post January Fifth that surpasses the combined absurdities and doublethink of both 1984 and Animal Farm), makes me look beyond the genre of satire à la Orwell or Tagore’s oft-cited Hirok Rajar deshe, to the experimental science fiction of J. G. Ballard.  In J.G. Ballard’s The Atrocity Exhibition montage newsreels of Presidents and Generals were substituted for actual newsreels of torture of the Viet Cong; sexual arousal of viewers was measured so that an optimum sexual arousal sequence could be created, i.e. repeated violation of an eight year old Vietnamese girl, specifically of her perennial wounds, elicited the most thrills.  Ballard’s condensed novel has been said to exemplify the pervasive, irrational violence of the present world, connecting psycho-sexuality with the gratifications of ‘perverse’ politics.  But the psychology of the violent orgy, if we are to see the connections with our new year, does not exist in a social or economic vacuum; it was German psychologist Reich (Dialectical Materialism, 1970) who wrote on the   ‘psycho sexual’ gratification of a particular class’s particular fantasies/repressions/needs.  Reich suspected the ideological realization of the petit bourgeoisie in the organized mobs of fascist Nazi Germany as being located in this psycho-social lack.

Fast-forward to a particularly Bangladeshi kind of fascism.  Joy Bangla! chanted with sticks and arms in one’s hands; I can hardly distinguish this slogan from Allahuwakbar before murdering Kafirs in ’71, or Hail Hitler. Hysterical Bangladesh. Thirteen trucks, not enough. Pepper spray.  Not enough. Call a freedom fighter a razakar: Joy Bangla!  Jouissance! Everyone breathes easier when the cartoons merely signify reality. Throw some Light on the Lion’s Face, Tim Van Dyke:

“the absolute need to be believed, to disperse all other belief
in an hysterical combination of passion and assimilation —
The hysteric has no intimacy, emotion, no secrecy—
The lion’s face succeeds in making its own body a barrier
a seductress paralyzed
who seeks to petrify others in turn—“

Udvot o Odvot. Unmadonna. Let’s turn the man on his head again.

January Fifth came and went.  Democracy ‘was victorious.’ It was Democracy Victory Day; the sacred Constitution decreed, the men with sticks and guns ensured. Maya, whose son led RAB-11 in the 7 Narayanganj murders, true to his word, sat smugly, in a pure white lungi, ready to ‘Give them some’ if they dared hold a rally, in the morning. By night, a few more trucks had been sent to ‘dig a grave’  in the opposite side of town at the (actual) opposition’s Gulshan office; a case was filed against Mirza Fakrul Islam Alamgir that night, just in case such a thing is even needed when those pretending to be Projonmo are Ready! Set! Go! In the morrow, the dogs of ‘courage’, Goliath’s ‘petua bahini’( the ones that had forced him to leave the public auditorium for the Club itself the evening before), zoomed in on an unarmed and alone David in Press Club. Bangladesh’s Second Most Wanted Man. Bon Courage, Bangladesh!

There is something too spectacular about soap (Shaban) entering the press club, purportedly trying to clean up the messiness of partisanship, while the very dirt  came like a fascist flood over the gates. Perhaps he was trying to clean up a murder, ‘democracy dead’, that one; it gets messy, murder. And so the premises was cordoned, for all but those with gloves and the right slogan.  My question is, though, who is that class nursing bludgeons inside the velvet gloves of power, today? We call them latial, goonda, the ones who will create ‘ganopitani.’  Who scream Action! Action! Dressed up with a banner that was never questioned (Muktijoddher Projonmo League, which projonomo?), they were never arrested for coming armed into the Press Club.

‘Chele khela holleo hoto, kintu aita vidguthe’—we are suffocating, cries an artist, for whom perhaps it would be easier to throw the awful burden of feelings into a manhole. The Chetona Nazis are here to stay. But it isn’t enough or even sufficient to throw light on this lion’s face. For the Bangladesh that the Nazis hope to call ‘theirs’ manipulates a psycho-moral landscape invested with the aura of an original sin more akin to Israel than to Germany after WWI and before WWII. It is the sin of an original injustice, an eternal victimhood that prevents all other suffering from making any claims of immediate and equally necessary redress.  Israel has constructed entire museums of suffering, embracing a past truth, but erected on effacing the present.

The liberation war museum houses history; but the platform in front of it performs history. For the performers of the platform that remains of what was Shahbag once, justice more and more is not a principle but a decree: it has no application beyond the one hysterical sign- the signified is not all great injustice, it is only one particular injustice, instrumentalized, and thus degraded of the dignity of calling for justice.  The moral ramifications of the war beyond the war, the continuation of injustice, state terror and chauvinism in the present political field is (now) completely terrorized into silence and non- existence. Even the political signification of the struggle for democratic self-determination is a backdrop where the hysterical sign cries Terror as it terrorizes (should sound very familiar, global village et al.).The state and religious repression that enabled such crimes to take place, its deeply chauvinistic nature, is not understood as a context of immorality and degradation that could repeat itself in principle if not in exact moral equivalences. Justice simply has no referent but one injustice.  But the Chetona Nazis are not just the League, Sarkar and Co., or puppets thereof and the student opportunists or even the well meaning among them– the easy come easy go pinkish reds, civil society partisans, etc.; they are drawn from a “goonda constituency/class” that can be rounded up at any moment to perform the ‘Action! Action!’ of preventing dissent, or, any change in the status quo well outside the parameters of their ‘moral territory.’ Their self-righteous (since it is not moral in its new perversions, it is merely fascist) frontier now encompasses the whole country, but not because justice can be applied to new contexts, no, but so that no other injustice can ever threaten the aura of those who claim to be the sole redeemers of our original sin; in other words, so that the status quo, the state itself, remains intact. These Chetona Nazis are colonizers of civil space—Shahbag, Press Club, etcetera; they want a permanent seat in all the Houses of liberty.  Effect: Joy Bangla sung with such triumphal fatality on a no-rally day that the ‘Bir’ Left taking refuge in their offices to avoid the confrontation meant for the key players. And these Chetona Nazis degrade nothing else as much, as those they seek to redeem.  There is a notion in Islam that ‘spiritual pride’ is a cardinal sin; similarly, the self-righteousness of those who perform ‘justice’ but never apply it in context, those who merely hysterically ‘signify’ that might is right because right is their property….theirs is not the world of dignity that liberation insisted on, theirs is a world with such little shame it can even claim to represent ‘MuktiJudhhor Projonmo’ and call itself ‘proud.’

There are other groups who are well endowed to perform our history, i.e. non-fascist artists (a minority sometimes), the (Left of) left, even a civil society that may well be in the offing, so many others; but they were very deliberately sidelined from this platform, in Shahbag, and beyond, for the very fact that in their world of dignity and justice, any true meaning of the Joy Bangla that was shouted with dignity during the war but almost never soon after it, one would have to apply moral law. One would have to swallow the very simple but sad (look at Israel in Palestine) truth that the victims of history do become the perpetrators of crime, that chauvinism can take charge again, that chauvinism will not only manfiest itself as the military or Jamaat or anyone who comes in connection to their contagious blood, but may do so again, as the state and as the mob, the Pretenders.  Thence: to whom and to what shall we look for the protection of the ‘blood’ of the martyrs of Ekattor. Well, one tends to look to that intellectualizing, ‘glorious left’ that can read justice as applicable, not as a dead sign of a sign.  None of what is happening should shock them; after all, they’ve lost heroically to the Chetona Nazis once before, and fatally.

But what is at stake, this time? If tomorrow, what is left of the political field is not dignified, if the left and what is left of the rest of us who empathize, criticize or harness new energies in its orbit, continues to be a walking shadow for a performance that never happens, then we can all forever hold our peace. But what is it that the left is shrinking from, for it surely can’t be Terror. Today, the field is theirs. The whites are bloodied, the blue is a raging maniac, hysterical, and it is time the rest risk the danger of communion, rather than fixate on the bogey of Jamaat. It is solidarity, coalition, lasting connection, with the unorganized and manifold potential.  And what is at stake? Well, just one thing. Not national pride, not the flag, but dignity.  Like ‘artists masturbating in a gallery that is nothing more than a cage’ (a simile I have taken from a poet who will remain anonymous), no one who is disturbed if not outraged, including the press, the left, everyone else, can claim to be trying to change anything at this moment, if they do not get out of this gallery, this cage, The Atrocity Exhibition, and reach out in the language of solidarity outside one’s known alliances. Else, we are doomed to the interminable posturing and posing of sign, mere words used to silence meaning…endless aura in an aura-tic universe.

 

Seema Amin is author of two books of verse and Senior Feature Writer at Depart Art Magazine

 

বাংলাদেশী মধ্যবিত্ত শ্রেনী ও বিএনপি’র আন্দোলন-একটি বিতর্ক

ফাহাম আবদুস সালাম 

5th January

একটা প্রশ্ন অনেকেই করেন জিয়া হাসানও করছেন যে বিএনপির আন্দোলন সফল না হওয়ার মূল কারণ হোলো তারা নাকি বাংলাদেশের মানুষকে কনভিন্সড করতে পারে নাই। আমি এই মত পোষণ করি না।

দেশে যে গণতন্ত্র নাই এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয় হইছে যে দুইটা কারণে (স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র) সেই দুইটা জিনিসই যে বাংলাদেশে অনুপস্থিত সেইটা আবার কনভিন্স করার কী আছে? আপনি যদি এইটা না বুইঝা থাকেন তাহলে আপনে হয় আওয়ামী লীগ করেন নাইলে ভালোমন্দ খাইছেন কিছু। সমস্যা কনভিন্স করা না করার মইধ্যে না। সমস্যা হইলো কনভিন্স হওয়ার ঠিক পরের স্টেজটা নিয়া।

বাংলাদেশ সম্বন্ধে মিডল ক্লাসের “যেকোনো” – আবার বলতেছি “যেকোনো” বয়ান সন্দেহের চোখে দেখতে হইবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু কইরা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মোড় বদলে দেয়া আন্দোলনে আরবান মিডল ক্লাস পার্টিসিপেট করে নি। কিন্তু এই ইভেন্টগুলোর সব থেকে বড় বেনেফিসিয়ারী তারাই। খেয়াল কইরা দেখবেন বাসায় রাখা আপনার মামা চাচা যিনি ৭১ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আছিলেন তাগো বেশীরভাগেরই অস্ত্র হাতে ব্ল্যাক এন্ড ওয়াইট ছবি আছে এবং সেই ছবিতে তিনি প্রায় সুটেড-বুটেড হয়ে আছেন। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি তোলার সময় ছিলো না।

কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবার আগে ভালো অবস্থায় যাইতে পারছে এই আরবান মিডল ক্লাস।

এই ব্যাপারটা তারা খুব ভালো করে বোঝেন বলে তাদের মাঝে একটা গিলটি কমপ্লেক্স কাজ করে। এই গিলটি কমপ্লেক্স থেকে উদগত সব থিকা উল্লেখযোগ্য প্রডাক্ট হোলো গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে, বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে মধ্যবিত্ত যে মহাবয়ান তৈরী করেছে তার প্রতিটি বাক্য লেখা হইছে অপরাধ বোধের কালি দিয়ে। তাই যে যুদ্ধ করছে তার চেতনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শামিল হয় নি, কিন্তু যে নয় মাস পলায়া বেড়াইছে তার চেতনাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

মুক্তিযুদ্ধে যে পার্টিসিপেট করছে তার এতো সফিস্টিকেটেড আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছিলো না। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য দেশের প্রতি তীব্র ভালোবাসা আর ইনসটিংটই যথেষ্ট ছিলো, মুক্তিযুদ্ধে না যাওয়ার জন্য, পলায়া বেড়ানোর জন্য আর ইসলাম রক্ষার নামে রাজাকারী করার জন্য চেতনার প্রয়োজন ছিলো।

মধ্যবিত্ত তাগো নিজেদের ক্লীবতা ঢাকার জন্য আজগুবি, অবিশ্বাস্য সব গল্প ফাঁদছে যেই গল্পের পরতে পরতে আছে শুধু সিম্বলিজম আর লাল-সবুজ।

একইভাবে আজো মধ্যবিত্ত স্বপ্ন দেখে গণতন্ত্রের কিন্তু এই গণতন্ত্র আনার জন্য সে রাস্তায় নামবে না – কাজটা কইরা দেবে বিএনপি। কিন্তু যেদিন আওয়ামী লীগ প্রেক্ষাপট থেকে বিতাড়িত হবে, দেখবেন সবচেয়ে ফেনায় ফেনায় গণতন্ত্র বিষয়ে শুদ্ধ বাংলায় সবক দেবে মধ্যবিত্ত। “এই সে মহান মাটি যার পুষ্টি গণতন্ত্রে” “এসো মোরা অবগাহন করি গণতন্ত্রের বজ্রকপট শপথে”, “এই সোনার মাটির বন্ধন তো শুধু গণতন্ত্রের সাথেই” – এই লাইনের ল্যাটকামি।

মধ্যবিত্ত ন্যায্যতার স্বপ্ন দেখে না, দেখে চাকরির স্বপ্ন কিন্তু এই কথা মাইনষে শুনলে বলবে ছোটলোক। তাই সে গল্প ফান্দে গণতন্ত্রের। এই গণতন্ত্র রক্ষার জইন্যে সে ভুলেও রাস্তায় নামবো না কিন্তু যে নামবে তারে বলবে তুই তো নামসোস ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার জন্য। এইটা তার অপরাধবোধ। সে চায় গ্লোরী কিন্তু কসরৎ করবার জন্য রাজী না। টিভিতে বিপ্লব দেখলে তার গরমে অর্গাজম হইয়া যায় কিন্তু রাস্তায় নামতে তার গরম লাগে সূর্যের।

এই অপরাধবোধ থিকা সে বিএনপির গুষ্টি উদ্ধার করে। বিএনপি হেন পারে না তেন পারে না। কথা সত্য। বিএনপি অনেক কিছুই পারে না কিন্তু তুমি তো অনেক কিছু পারো – তুমি কী করছিলা? তুমি কি গণতন্ত্রের জন্য রাস্তায় নামছিলা? বিএনপির কথা বাদ দেও। তারা তো ক্ষমতায় যাওয়ার জইন্যে রাস্তায় নামছে মাইনা নিলাম কিন্তু তোমারে তো চল্লিশ বছরে কখনোই নামতে দেখলাম না।

যারাই কয় যে বিএনপির কৌশল ঠিক না তারা সমালোচনায় ঠিক আছেন কিন্তু খাইসলতে দর্শক। কিন্তু বিএনপির কৌশল ঠিক হইলেও এই চ্যাটারিং ক্লাস আন্দোলনে পার্টিসিপেট করতো না কারণ সে বাংলাদেশরে ঔন করে না – সে ঔন করে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটা আইডিয়ারে এবং সেই আইডিয়ায় সব সময়ই কসরৎ না করার যথেষ্ট অজুহাত মজুদ আছে।

বিএনপির সব থিকা বড় সমস্যা হইলো তাগো সাপোর্ট বেইজ হইলো এই দর্শক শ্রেণী।

 

জিয়া হাসান

6th January

ফাহাম ভাই,আমি আপনার স্ট্যাটাসের প্রশ্ন গুলো এই খানে জবাব দিচ্ছি, আমার বন্ধুদেরকেও আলোচনায় আনার সুবিধার জন্যে। এইটা আপনার ওইখানেও কমেন্ট দিবো। এই ইন্ডিসেন্সিরটার জন্যে ক্ষমা করবেন।

আমি আপনার স্ট্যাটাসের প্রথম এজাম্পশনের সাথে ১০০% সহমত। বাংলাদেশে যে, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র নাই, এই নিয়ে কনভিন্সড না হওয়ার কিছু নাই। এবং সমস্যা হইলো, কনভিন্সড হওয়ার পরের স্টেজ নিয়ে।

এই কনভিন্স হওয়ার পরে আপনার যেই লজিক এবং আরগুমেন্ট দিলেন সেইটা ফান্ডামেন্টালি ভুল। সেইটা হইলো, বাংলাদেশের মোড় বদলে দেয়া আন্দোলনে আরবান মিডল ক্লাস পারটিসিপেট করেনি। আপনি একাত্তুরের রেফারেন্স দিছেন। আমি একাত্তুরের রেফারেন্স দেইনা, কারন আমি একাত্তুর দেখি নাই।

কিন্তু, বাংলাদেশে একাত্তুরের পরে সব চেয়ে বড় যে গন আন্দোলনে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, যেই সময়ে আমি মোটামুটি বালেগ ছিলাম তখন আমি স্বচক্ষে দেখেছি, সেই আন্দোলন আরবান মিডল ক্লাস, লিড করছে, পারটিসিপেট করছে। এবং শুধু মাত্র ৯০ সালে না, আশির দশকের সম্পূর্ণ সময়টাতে আরবান মিডল ক্লাস এই আন্দোলনের সাথে এলাইন্ড ছিল। রাস্তায় নামছে। এইটা আমার স্বচক্ষে দেখা। এই ভুল এজাম্পশনে দাড়ায় আপনি যা বলছেন, সেই গুলোকেও আমি একটু আমার অবস্থান থেকে ব্যাখা করি।

আপনি বলেছেন, মধ্যবিত্ত যেহেতু এই সব মুভমেন্ট করে নাই, বা মুক্তিযুদ্ধে পারটিসিপেট করে নাই, এই জন্যে তার মধ্যে একটা গিল্ট কমপ্লেক্স কাজ করে। এবং এই গিল্ট থেকে উদ্যত প্রডাকট হইলো, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।কারন সে যুদ্ধ করে নাই। যুদ্ধ করছে, আপনার হিসেবে, নিম্নবিত্তের এবং সাধারন খেটে খাওয়া জনগণ।

ইন্টেরেস্টিংলি। মধ্যবিত্ত যুদ্ধ করে নাই, নিম্নবিত্ত যুদ্ধ করছে এবং নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের স্টেক আলাদা- এই ভাবনা গুলো আমার বিগত পাঁচ বছরের প্রডাক্ট মনে হইছে। এই গুলো সাধারণত বিএনপির লোকজনের কাছ থেকে আসে, কেন মিডল ক্লাস রাস্তায় নামে নাই, সেইটার একটা বয়ান তৈরি করার উদ্দেশ্যে।

রাষ্ট্রের কাছে জনগণের যেই দাবী, একটা দুর্নীতিমুক্ত শাসন,অর্থনৈতিক মুক্তি, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায় বিচার- যা দিতে পোস্ট নব্বইয়ের দলগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল কিন্তু ব্যর্থ হইছে – এই গুলোর প্রতি চাওয়া এবং এই গুলোর স্টেক নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত উভয়ের সেম। উভয়েই, এই গুলোর অভাবে খতিগ্রসত এবং উভয়েই এই অবস্থার পরিবর্তন চায়।

আপনারে একটা ক্লাসিক প্রশ্ন করি। মধ্যবিত্ত না হয়, তার যুদ্ধ না করার গিল্ট কন্সাস নিয়ে, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার চেতনার এই সব হাইপারবোল সৃষ্টি করছে।এবং সেই গিল্ট নিয়া তারা বিএনপির মিছিলে নামে নাই কিন্তু তাইলে বিএনপির মিছিলে, নিম্ন বিত্তরা কই ?
আওয়ামী লীগের ৫ বছরে, আমি বিএনপির সেই সব মিছিল দেখছি, যেই খানে , বিএনপির প্রাক্তন নেতাদেরকে ৭ থেকে ১০ জনের মিছিল নিয়ে হেঁটে যেতে দেখেছি, হরতালের সময়ে। এবং ওরা সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে, আমার রিক্সাওয়ালা ভাই একটা ক্লাসিক চিটাগনিয়ান গালি দিছে তাদের দিকে তাকিয়ে , যেই গালিটা এই খানে উল্লেখ করা যাবেনা, কিন্তু সজ্জনেরা বুঝে নিবেন। tongue emoticon

আমি নিজের দিকে তাকায় জানি। আমার বন্ধু, কলিগ, পরিচিত সবার চেহারা দেখে জানি, আমাদের মধ্যবিত্তের কোন গিল্ট নাই।এই নিয়া তার কোন মাথা ব্যথাও নাই। তার আছে, একজিস্টেনস ক্রাইসিস। তার আয় সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। ব্যবসায়, চাকরিতে তার সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। তার দিস্পজেব্ল ইঙ্কাম মাই। সে কোর্টে গিয়া ন্যায় বিচার পায়না, পুলিশে গিয়া সে হয়রানি হয়-তাকে ধরতে হয় রাজনৈতিক কানেকশানের কে আছে। তার পরিবারের নতুন গ্রাজুয়েটদের কাজের সুযোগ সীমিত। মামা চাচা না থাকলে, চাকরির সুযোগ নাই। ব্যবসার সুযোগ গুলোতেও এখন রাজনৈতিক লোকজন ঢুকে পরতাছে। সে দেখতাছে, তার ঢাকা থেকে চিটাগন যাওয়ার রাস্তা ৫ বছরেও তৈরি হয় নাই। সে এখন দুর্নীতিরেও মাইনা নিছে। সে জাস্ট একটু সুযোগ চায় যেন, সরকারী চাকরিতে কেউ কোটা খাইয়া না ফেলে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন সহনশীল থাকে যেন ব্যবসা বানিজ্যে গতি আসে। এই খানে কোন গিল্ট ফিল্ট নাই। এইটা তার একজিস্টেন্সিয়াল ক্রাইসিস। তার একজিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিসের যে সমাধান দিতে পারবে, সে তার পক্ষে থাকবে।

আমি আপনার প্রশ্ন গুলোতে অবাক হই, যখন আমি দেখি, এই ক্রাইসিস গুলো সমাধানের চিন্তা করতে বিএনপির ব্যর্থতাকে হাইলাইট করার বদলে আপনি মধ্যবিত্তরে গাইল দিতাছেন, তার ক্ষুধা লাগতাছে সে কান্তাছে ক্যান, সেই এটিচুড নিয়া। যেই এর থেকে বুঝা যায়, এই দেশের মানুষের জীবন যাপনের ক্রাইসিসের সাথে বিএনপির মানসিক দূরত্ব কত দূরে।

শুধু বিগত এক বছরে না, ২০১৩ সালের পূর্বে, পাঁচ বছরে সাধারন মানুষ বেশ কিছু ইস্যুতে যেই পরিমাণ মাইর খাইছে সরকারের কাছে, বিশেষত শেয়ার বাজার ইস্যুতে বিএনপির উদাসীনতা ছিল “ক্রিমিনাল”। বিএনপির আগের আমলে বিএনপিকে নিয়ে যে দুর্নীতি অভিযোগ সেইটা নিয়েও বিএনপি কখনো ক্ষমা চায় নাই। জাস্ট একটা একজাম্পল দেই। ঢাকা শহরে যখন সিএনজি নামাইলো, তখন প্রতিটা সিনএজিতে কত টাকা নেয়া হইছে, এবং সেই এই দুর্নীতির কারনে, ঢাকা শহরের পাবলিক কি ভোগান্তিতে আছে সেইটা মনে করেও, বিএনপির প্রতিদিন মধ্যবিত্তরে সালাম দেয়া উচিত এখনো সে তাকে আওয়ামী লীগের অল্টারনেটিভ মনে করে বলে।

অবাক হই যখন দেখি, আপনেরা সেই সব কারনে, বিএনপিরে ধরেন না কিন্তু মধ্যবিত্তরে, তার পেটের খুধার কান্দনের জন্যে, ইজ্জত লুকিয়ে পাছার কাপড় আঁকড়ে ধরে রাখার জন্যে গালি দেন।

পাবলিকে লেয়ার বাই লেয়ার, দিনের পর দিন, বিএনপির সিন্সিয়ারিটির অভাবটা দেখছে, পাঁচ বছর + ১ বছর। বিগত নির্বাচনের আগে, কে কোন পদ নিবে, সেইটা নিয়া মারামারি শুরু হইয়া গ্যাছিল বিএনপির লোকদের মধ্যে। মানুষ এদের চেহারা বডি ল্যঙ্গুয়েজ দেখে বুঝে, এরা তাদের ব্যাংক একাউন্টে শান দিচ্ছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে।এই জন্যে মানুষ বিএনপির ইন্টেন্টকে ডাউট করে। মধ্যবিত্তও করে, নিম্নবিত্তও করে।

বিএনপি যে গণতন্ত্র চায় বলে সেইটা যে ভুল এইটা নিয়ে, আরও একটা বড় নোট লেখা যাবে। অই দিকে যাইতাছিনা। বটম লাইন হইলো, বাংলাদেশের মানুষের এস্পিরেসান আর আগাইতাছেনা এখন কোন মতে, লেসার অফ দা টু ইভিল হইলেও পাব্ললিকের চলবে, এইটা ভুল।

অথচ স্যাডলি এই মধ্যবিত্তের বড় অংশ উপায় না দেখে, বিশেষত আদর্শিক চেতনা দিয়ে দেশের সকল দুর্নীতি এবং লুটপাটকে লুকিয়ে রাখার আওয়ামী স্ট্রেটেজিতে বিরক্ত হয়ে, হয়তো কিছু হবে, এই ভাবনা থেকে বিএনপিকে ভোট দিতে রেডি ছিল।ভোটের সুযোগ পাইলে, বিএনপিরে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে এনে, আরও একটা বড় বাম্বু খাইতে নিজেরে রেডি করছিল। কিন্তু, তারপরেও বিএনপি মধ্যবিত্তরে গাইল দেয়, রাস্তায় নেমে তাকে বাংলার সিংহাসনে বসিয়ে না আনার জন্যে। বিএনপির এই সেন্স অফ এন্টাইটেল্মেন্ট, এই উত্তরাধিকারের ধারনা বিএনপিরে কোথাও নিয়ে যাইতে পারবেনা। আওয়ামী লীগ যেই স্বৈরতন্ত্র এবং কাঠামো তৈরি করছে তাকে ২০৪২ পর্যন্ত টেনে নেয়ার মানি, মাসল, বুলেট, ইন্টেলিজেন্স, পোষা ইন্টেলিজনসিয়া, আইডিয়ালস এবং প্রশাসন ইনফিল্ট্রেসান করা হইছে। এইটাকে ভাংতে হইলে, বিএনপিকে মধ্যবিত্তকে তার শত্রুপক্ষ হিসেবে নিলে হবেনা। তাকে কনভিন্সড করতে হবে। করতে হইলে, বিএনপিরে অনেক ফান্ডামেন্টাল চেঞ্জ করতে হবে। তার ইন্টেন্ট এবং কাঠামো এবং প্ল্যানে, তাকে দেখাইতে হবে, বাংলাদেশের ভুখা শুখা মানুষ নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত সকলকে এগিয়ে নেয়ার মত পরিকল্পনা এবং সিন্সিয়ারিটি তার আছে। নইলে আওয়ামী ল্যাংয়ে উস্টা খাইতে খাইতে বিএনপি ২০১৬ ৫ জানুয়ারি হইতে, ২০৪৩ এর ৫ জানুয়ারি পার করবে, অথবা বিশ্ব ইজতেমার কাছাকাছি ডেট ফালাইতে হবে, কিছু একটা মিরাকলের আশায়।

এই মধ্যবিত্ত নির্বিরোধী শেয়ারে মাইর খাইয়া যখন তার সেভিংস মাইর গেলো, তখনও সে রাস্তায় নামে নাই?মতিঝিলে জরো হইয়া, কিছু মিছিল করার চেষ্টা যারা করছিল, তারা দুইটা লাঠির বাড়ী খাইয়াই, পলাই গ্যাছে।

এইটা তার পলায়নপরতা- এইটা তার ইজ্জতের ক্রাইসিস, এইটা তার নিঃস্পৃহতা। এই জন্যে, তারে আমিও গালি দেই। কিন্তু, অন্তত বিএনপির তাকে গালি দেয়ার কোন অধিকার নাই।

 

আরিফুল হোসেন তুহীন

6th January

জিয়া হাসান সাহেব বিএনপির ডাকে লোকজন আসে না কেন এইটা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন বিএনপি জনগনের পাশে দাঁড়ায় না, এর জন্যে জনগন কনভিন্সড না তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে।

ফাহাম আবদুস সালাম সাহেব এর বিরোধিতা করে লিখেছেন যে, এইসব সমালোচনা যারা করে তারা হচ্ছে আরবান মিডল ক্লাসের সুবিধাবাদী পার্টি। তারা এইবার কেন, কোনদিনও রাস্তায় নামে নাই। তারা এইসব বলতেছে তাদের গিল্ট কমপ্লেক্স থেকে।

এইখানে আমি দুইটা কথা যোগ করি।

এই দেশের অধিকাংশ নিম্নবর্গের মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে তারা দুই পার্টি নিয়েই নাক কুচকাবে। এর কারন হচ্ছে স্বাধীনতার পরে এই দুই পার্টির কোনদিন কোন ইতিহাস নাই সাধারন মানুষের পক্ষে লড়াই করার। সাধারন মানুষের জন্যে প্রয়োজনীয় পলিসি তৈরী করার ইতিহাস তাদের কোনদিনও ছিল না। তাদের সাফল্য হিসেবে যেসকল জিনিস দেখানো হয়, সেগুলো নিওলিবারেল ইকোনমিক পলিসিগুলোর আধাখেচড়া বাস্তবায়নের চেষ্টা। এর বাইরে এই দলগুলোর পারফর্ম্যান্স কার্যত শুন্য। এই নিওলিবারেল ইকোনমিক পলিসির কে কত ভালো প্রয়োগ করতে পেরেছে তা নিয়ে দুইবেলা কাইজ্জা করে এই দুই দল। এখন কথা হচ্ছে নিও লিবারেল  ইকোনমিক পলিসি বাঙ্গালদেশের কি কি ধরনের সুফল নিয়ে এসেছে। জিডিপি গ্রোথ অবশ্যই বেড়েছে। অমর্ত্য সেন আমাদের শিখিয়েছেন, জিডিপি দিয়ে উন্নয়ন না মাপতে। উন্নয়ন মাপা উচিত নাগরিকদের ইফেক্টিভ সক্ষমতা কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে সেটি দিয়ে মাপতে। তাহলে বাংলাদেশ বিশেষ এগোয়নি। এবং জিডিপি বৃদ্ধির ফ্রেইম ওয়ার্কের বাইরে এই দুইদলের কোণ চিন্তাভাবনার কোন নিশানাও পাওয়া যায় নি। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়েও এই দুইদলের কোন ধরনের পার্থক্য নেই। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পঙ্গু করে দিয়ে প্রাইভেটাইজেশনের যৌক্তিকতা প্রমাণের প্রক্রীয়ায় এই দুই দলই একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে। অবশ্য বিএনপি প্রাইভেটাইজেশনের ব্যাপারে বেশী আগ্রহী। সামনে বিএনপি আসলে ইলেক্ট্রিসিটি/পোস্টাল সার্ভিস ইত্যাদিও প্রাইভেটাইজড হওয়া সময়ের ব্যাপার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেও ফ্রী চিকিতসার দিন শেষ হতে সময় নিবে না। আওয়ামী লীগের ইকোনমিক কর্মকাণ্ড এর থেকে দূরে নয়।

ইকোনমিক চিন্তাভাবনা যদি বাদ দেই, তাহলে আসবে তাদের শাসন সম্পর্কিত দর্শন। দুই দলই সংবিধানের অগনতান্ত্রিক অংশগুলোর প্রতি একমত। দুই দলের কেউই দলের অভ্যন্তরে গনতন্ত্রের চর্চা করে না। দুই দলের কেউই এক্সেকিউটিভ এবং লেজিসলেটিভ ব্রাঞ্ছের ভিন্ন প্রধান চায় না। দুই দলের কেউই আর্টিকেল ৭0 এর বিলোপ চায় না। দুই দলই পুলিশী প্রশাসনে বিশ্বাসী।

১০০ জন রিকশাওয়ালাকে যদি জিজ্ঞাসা করি কোন দলের প্রতি তার আত্নিক টান, কেউই কোন রাজনৈতিক দলের নাম বলবে না। তারা ডেসপারেট জীবন যাপন করে, তাদের পাশে এসে কেউই দাঁড়ায় নি কোনদিন, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবে বলে মনে হয় না।

এখন প্রশ্ন দাঁড়াতে পারে ভোটাভুটি নিয়া হাঙ্গামা করা জরুরী কিনা সাধারন মানুষের জন্যে। অবশ্যই প্রয়োজনীয়। ভোটাভুটি কিছুটা হলেও লাগাম দিতে পারে এই দুই লুটপাটতান্ত্রিক দলগুলোকে। অন্তত প্রত্যেকটি দলই পালাক্রমে ক্ষমতার বাইরে থাকার স্বাদ পায় এবং কিছুটা শক্তির ভারসাম্য আসে।

কিন্তু আমাদের পাবলিক ডিসকোর্স শুধুমাত্র ভোটাভুটি কেন্দ্রীক হবে কেন?

এলিট এবং সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেনীর সবসময়ের একটি প্রবণতা হচ্ছে, সাধারন জনগনকে বেকুব ভাবা। তারা সবসময়েই ভাবেন, তারা সবাত্তে বেশী বুঝেন, শুধু বেকুব অশিক্ষিতরাই বুঝলো না। ফাহাম সাহেব বুঝেন ভোটাভুটির জন্যে রাস্তায় নামনই এখন একমাত্র দায়িত্ব। কিন্তু অশিক্ষিত মেরুদণ্ডহীন সাধারন জনতা সেইটা না করে বিএনপিকে দুষাইতেছে।

এইধরনের চিন্তাভাবনার মূল উতস হচ্ছে সাধারন জনগনকে “এজেন্সিশুন্য” ভাবা। তাদেরকে প্যাসিভ ভাবা, তাদের এক্ট করার ক্ষমতা নাই সেইটা ভাবা। আপনি তাদের জন্যে ন্যারেটিভ তৈরী করে দিবেন। তারপর তারা যদি সেই ন্যারেটিভ না গিলে, তাইলে সেইটা তাদের দোষ। কারন আপনি সবাত্তে বেশী বুঝেন।

দুঃখিত ভাইজান। জনগনকে এজেন্সিশুন্য ভাববেন না। তাদের এক্ট করার ক্ষমতা এবং ইচ্ছা দুইই আছে। তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের মত এক্ট করে থাকে। নিজের ন্যারেটিভ বানিয়ে নিতে পারে। এলিটগো সাহায্য তার লাগে না। তার জীবনযাপনে এলিটরা কোন কাজে আসে না, এলিটগো কামড়া কামড়িতে তারা কেন যাবে? বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের মোট কর্মী সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ হবে কিনা সন্দেহ। সুতরাং এই কামড়াকামড়িতে বাকি ৯৯ শতাংস যথেষ্ট ইন্সেটিভ ছাড়া আসবে না। এইটাই হচ্ছে বটমলাইন।

জনগন বিএনপির হয়ে মরণপন লড়াই করতেছে না, সেই লড়াই তারা আম্লীগের জন্যেও করবে না কারন তাদের লড়াই করনের কোন ইন্সেটিভ নাই। তাদের বাস্তব সমস্যা সমাধানের আশা তারা ছেড়ে দিছে অনেক আগেই।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ সমাপ্ত হবার পরপরই নিয় ইয়র্ক টাইমস এর এডিটোরিয়ালে এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে বলা হয়। কিন্তু তাদের সমালোচনা ছিল অনেকটা ট্যাক্টিকাল। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সমালোচনা করেছে। কিন্তু একবার উচ্চারনই করেনি যে যুদ্ধটা আদতে লেজিটিমেইট ছিল কিনা? চমস্কি এর প্রতিক্রীয়ায় বলেছিলেন কিভাবে শক্তির কেন্দ্রগুলো পাবলিক ডিসকোর্সকে সংকুচিত করে। একটি বিশাল সামাজিক সমস্যার বয়ানকে ছোট করে একটি কিংবা দুইটি সহজপাচ্য প্রশ্নে এসে স্থির করে।

একই ঘটনা ঘটেছে এইদেশের রাজনীতিতেও। এলিটরা সবসময় পাবলিক ডিসকর্স ছোট করে নিয়ে আসতে চায়। কারন তারা চায় “টপ ডাউন ম্যানেজমেন্ট”। গত ৫০ বছরে সবকিছুকে বিজনেস এডমিনের দৃষ্টি থেকে দেখার একটি প্রবণতা শুরু হয়েছে। যার ফলে তারা মনে করেন সবকিছুর মূলে হচ্ছে কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস। একারনে দক্ষ লোকের সঠিক ম্যানেজমেন্টেই সকল সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে। কন্টেক্সট অথবা সেন্সিটিভিটি বুঝনের দরকার নাই। তারা কখনই বুঝেন না রাষ্ট্র একটি কোম্পানীর মত না। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান ১৯৯৩ সালে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পেপার লিখেছিলেন, যেখানে তিনি প্রমান করেছেন, কেন রাষ্ট্র একটি কোম্পানী নয় এবং কেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক একজন সফল সিইও থেকে মূলগতভাবে আলাদা।

ফাহাম সাহেব জিয়াউর রহমানের ভক্ত। তার এই ভক্তির অন্যতম কারন হচ্ছে জিয়াউর রহমান “মেরিটোক্রেসি” কে গুরুত্ব দিতেন। ফাহাম সাহেব মেরিটোরিয়াস মানুষ, পিএচডিধারী জ্ঞানী মানুষ, সুতরাং তার এই চিন্তা আসতেই পারে, দেশের সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায় হচ্ছে মেধাবীদের নিয়ে আসা, সম্ভবহলে সকল যায়গায় পিএইচডিদের ইন্সটল করা। তিনি অনেক সময় আওয়ামী লীগের “গ্রাম্যতা” এবং “লাড্ডাগাড্ডা” প্রবণতার সমালোচনা করে। এই সমালোচনা যতটা না আওয়ামী লীগের তারচেয়ে বেশী “গ্রাম্যতার” সমালোচনা। তার উচ্চরুচি এইসব গ্রাম্যতা দ্বারা আহত হয়। এইসব “গ্রাম্যতা” বিষয়ক ডিসকোর্স পুরোপুরিই সামাজিক সেগ্রেগেশনের জন্যে উদ্ভাবিত তত্ব। বড় বড় দুর্নীতিবাজের পাশে বসে খেতে আমাদের জাত যায় না, রিকশাওয়ালার পাশে খেতে আমাদের জাত যায়। সুতরাং তিনি যে মেরিটোক্র্যাসি অথবা পিএচডিপন্থার প্রতি আস্থা রাখছেন, সেটি কতটুকু মেরিটের জন্যে আর কতটুকু সমাজের উচ্চবর্গের অহমিকা থেকে উতসারিত সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।

এই দেশের প্রধান সমস্যা এইটা নয় যে এই দেশ যারা চালায় তাদের সবার পিএইচডি নেই। এই দেশের প্রধান সমস্যা এইটাও নয়, যে গ্রামের রিকশাওয়ালা গড়গড় করে কীটস কিংবা নীতশে আওড়ায় না। অনেক পিএইচডি ধারী দুই দলের ধামা নিয়ে ঘুরছেন। সুতরাং মেরিট অটোম্যাটিক্যালি সমাধান নিয়ে আসবে এইটা সম্পূর্ণ ভূল এবং বিভ্রান্ত ধারনা। এই ধারনার উতসও হচ্ছে নিম্নবর্গের সাধারন মানুষকে “এজেন্সিশূণ্য” ভাবা। তাদের ভালোমন্দ ভাবার ক্ষমতা তাদের নেই সেটি ভাবা। তাদের ভালোমন্দ শুধু বুঝবে এলিটরা। পিএইচডীওয়ালারা।

বারট্রাণ্ড রাসেল বারবার শিক্ষিত এবং নিম্নবর্গের সাথে বিচ্ছিন্ন বুরোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে বলেছেন। এর অন্যতম কারন, এরা যে পলিসি তৈরী করে, সেই পলিসি যে সমাজ বাস্তবতায় প্রয়োগকৃত হবে, সেই বাস্তবতায় ঐ আমলারা বসবাস করেনা। সুতরাং সকল প্রকার মেরিটোক্র্যাসির নামে প্লুটোক্র্যাসি আদপে সমাজের অর্ডার ও স্ট্যাটাস কো বজায় রাখনের হাতিয়ার।

নিম্নবর্গের সাধারন মানুষের জন্যে যেটি প্রয়োজন সেটি পিএইচডিদের খবরদারী নয়। তাদের দরকার তথ্য। পিএইচডিরা যদি আদপেই রেসিস্ট চিন্তাভাবনা থিকা মুক্ত হত, তাহলে নিম্নবর্গের মানুষকে তথ্য সরবরাহ করত। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক খবরদারী থেকে দূরে থাকত। সমস্যা হচ্ছে এলিটরা সেইটা কখনই করে না। তারা তথ্য নিজের কাছে রাখে। নিম্নবর্গের সাথে কমিউনিকেট করে না। এবং হঠাত করে নিম্নবর্গের মানুষের উপর নেমে আসে পিএইচডিধারীদের তৈরী পলিসি। যেই পলিসি তৈরীর সময় তার সাথে কথা বলার কোন প্রয়োজন এলিটরা বোধ করে না। কারন, তারা যথারীতি সবাত্তে বেশী বুঝে।

শাহবাগ আন্দোলনের সময় বিএনপিওয়ালার নাখোশ হচ্ছিলেন কারন শাহবাগওয়ালার কেন রাষ্ট্রের অন্যান্য সমস্যা নিয়ে কিছু বলছে না এই জন্যে। আজকে ফাহাম সাহেব নাখোশ হচ্ছেন, কেন বিএনপিকে ভোটের বাইরে অন্যকোন পরিবর্তনের কথা বলতে হবে? এই মুহুর্তে তো ভোটই নাই, অন্যকিছু বলে তাই লাভ নাই।

সুতরাং ফাহাম সাহেবের এই বক্তব্যে বৃত্তটি সম্পূর্ণ হল। এককালে তিনি বিরোধীপক্ষকে পাবলিক ডিসকোর্স সংকুচিত করার দায়ে দোষারোপ করছিলেন। আজকে তিনি নিজে বিএনপির সংকুচিত ডিসকোর্সকে প্রাণপনে ডিফেণ্ড করছেন।

যতদিন আমদের রাজনৈতিক দলগুলো ভাববে গনতন্ত্রে নির্বাচনের চেয়ে জরুরী কিছু নেই, আর নির্বাচনের বাইরে রাজনৈতিক কোন স্পেইস নেই, ততদিন তাদের কামড়াকামড়ি জমিদারদের কামড়াকামড়ি হয়েই থাকবে। এর কোন মূল্য সাধারন মানুষের কাছে তৈরী হবে না। সাধারন মানুষ এই ফানুশের পেছনে দৌড়াবেও না। গুণ্ডাপাণ্ডারা একে অপরের মাথায় লাঠির বাড়ি মেরে শক্তির লড়াই খেলবে। বিএনপির কর্মসূচীতে মানুষ না থাকাই উলটা মানুষকে দোষারোপ করার এই আকুতি প্রমাণ করে আসলে তাদের কোথায় লাগছে। আওয়ামী লীগের গুণ্ডাপাণ্ডাদের সাথে তাদের গুণ্ডাপাণ্ডারা পেরে উঠছে এইখানেই তাদের ক্ষোভ। মাইরপিট এবং লুটপাট যেই রাজনৈতিক দলগুলোর বৈশিষ্ট্য এবং যারা শক্তিপরীক্ষায় কখনই পিছিয়ে যেতে চায় না, তারা আজকে মার খেয়ে যদি বলে “আমি ভদ্র, মারামারি করি না” সেইটা হাস্যকর কথা হয়ে যায়।

এখন পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলনে প্রমাণ হয়েছে তাদের গুণ্ডামি করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের চেয়ে কম। এইটা এফিশিয়েন্সির ব্যাপার। নীতির নয়। আজকে যদি বিএনপি আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশী গুণ্ডামীর সুযোগ পেত, তারা তাদের “আমরা ভদ্রের দল” ইত্যাদি বলে পাশ না কাটিয়ে সেই গুণ্ডামীর সর্বোচ্চ সুযোগ গ্রহন করত।

ফাহাম সাহেবের একটি কথা দিয়ে শেষ করি। তিনি বলেছেন সাধারন মুক্তিযুদ্ধাদের চিন্তাভাবনা এত সফিস্টিকেটেড ছিল না। এইখানেও তিনি ভেবেছেন বাংলার সাধারণ যে কৃষকটি যুদ্ধে গিয়েছে তার কোন এজেন্সি নেই। আসলে যেটি নেই সেটি হচ্ছে তার আশা আকাঙ্খাকে এলিটদের উপযোগী ভাষায় প্রকাশের ক্ষমতা। কিন্তু যুদ্ধের ন্যায্যতা তার কাছে ঠিকভাবেই প্রতিভাত হয়েছে। জনযুদ্ধের জন্যে যা কিছু প্রয়োজনীয় সবই তার ছিল। ছিলনা শুধু এলিটদের সাথে কমিউনিকেট করার ক্ষমতা। জনযুদ্ধের জন্যে এই গুনের কোন দরকার নেই। এই গুনের দরকার পরে যুদ্ধের পরে, যখন এলিটরা লুটপাট শুরু করে, সেই এলিটদের কাছে আবেদন জানানোর জন্যে।

এই লুটপাটতান্ত্রিক এবং গুণ্ডাপাণ্ডানির্ভর সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি অনাস্থা জানাইলাম। আমি অনেক দেরীতে জানাইছি। সাধারন জনগন বহু আগেই অনাস্থা জানাইছে।

আরিফুল হোসেন তুহীন-2

6th January

আমার আগের নোটটির [১] প্রতিক্রীয়া হিসবে Shafiqur Rahman নীচের মন্তব্যটি করেছেন।

“What is the use of this kind of speculations without the support of any empirical social science research? Before constructing castles of social hypotheses, one should at least try to build a foundation of information. I think it is very irresponsible to ascribe motives upon general masses without knowing what they really think. The common people ofcourse spent more time worrying about bread and butter issues but they are human beings too and 20th century social science have taught us one thing repeatedly, higher order purpose and dignity is important for human beings of all classes”

আমার নোটে প্রধানত দুইটি ব্যাপার ছিল।

প্রথমত সাধারন মানুষের এজেন্সি। দ্বিতীয়ত সাধারন মানুষের রাজনৈতিক আইডিন্টেটি রক্ষার জন্যে ইন্সেটিভ স্ট্রাকচারটি আসলে কি? এই দুইটি ধারনা কি এম্পিরিক্যালি এস্টাবলিশ করা যায়?

প্রথমেই এজেন্সির প্রসঙ্গে আসি।

এজেন্সির যে আলোচনা বিংশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে হয়েছে সেটি কিন্তু কোণ “তথ্য” অথবা “টেক্সট” কে অস্বীকার করে না। বরং “তথ্য” বা “টেক্সট” কে ভিন্নভাবে পড়ার কিছু উপায়ের কথা বলে। তাদের দাবীটি হচ্ছে, একই তথ্য বা টেক্সটকে আগে যেভাবে পড়া হত এবং ইন্টারপ্রেট করা হত, সেই পড়ার পেছনে পাঠকের কিছু বায়াস কাজ করেছে। সুতরাং টেক্সটগুলো নতুন করে পড়তে হবে।

একটি সাধারন উদাহরন দেই।

ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা এই অঞ্চলে ত্রয়োদশ শতক থেকে শুরু হওয়া তুর্কি/আফগানী শাসনকে “ইসলামী” শাসন এবং সেই শাসনকে ধর্মের মাধ্যমে চিহ্নিত করা শুরু করেন। তাদের সামনে প্রধানত যে তথ্য প্রমাণ ছিল, সেগুলো হচ্ছে, প্রত্যেকটি সুলতানের দরবারে তার কাজকর্ম ক্রনিকেল লেখার জন্যে কয়েকজন নিযুক্ত থাকত। এরা প্রধানত সুলতান কতটুকু ইসলামভক্ত এবং ইসলামের প্রচার প্রসারে কতটুকু কাজ করত সেগুলো ডালাপালা দিয়ে বর্ণিত থাকত। এছাড়াও প্রতিটি সুলতান বিভিন্ন পীর দরবেশের আশীর্বাদ লাভের চেষ্টা করতেন সেটিরও বর্ণনা থাকত। বলা বাহুল্য এইসব অতিরঞ্জিত বয়ানে বাস্তবতা সামান্যই থাকত। পরবর্তীতে একই টাইম ফ্রেইমের বিভিন্ন সংক্সৃত লিটারেচার ঘেটে দেখাগেল উচ্চবর্ণের হিন্দুরা এই আক্রমণকারী শাসকদের “মুসলিম” হিসেবে আইডেন্টিফাই করতেছেন না। আইডেন্টিফাই করতেছেন “টার্ক” বা “আফগানী” হিসেবে। যার ফলে উনিশ শতকের ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের “ইন্টারপ্রেটেশন” বিপদের মুখে পরে। নতুন ইন্টারপ্রেটেশন কিন্তু আগের তথ্যকে অস্বীকার করেনি। কিন্তু নতুন ইন্টারপ্রেটেশন যেটি করেছে, সেটি হচ্ছে আগের তথ্যের সাথে তথ্য উতপত্তির কনটেক্সট যোগ করেছে। ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা কনটেক্সট বোঝেননি। রাজদরবারে লেখা সুলতানের প্রশস্তিমূলক ক্রনিকেলকে তারা নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের উতস মনে করেছেন। কোণ পরিস্থিতিতে ক্রনিকেলগুলো লেখা হয়েছে সেই কনটেক্সটি এখানে যোগ করার গুরুত্ব অনেক পরের ঐতিহাসিকরা বুঝতে পেরেছেন।

এখন নিম্নবর্গের মানুষ সম্পর্কে সাধারন যে চিন্তা আছে সেটিকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ আছে।

যেমন বাংলাদেশে একটি সাধারন ধারনা প্রচলিত আছে, যে দেশের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষিত নয় তাই দেশের লোকে কিছু বুঝতেছেনা, এবং বারবার লুটেরা রাজনীতির কাছেই আত্নসমর্পন করতেছে। যদিও এইটা মোটামুটি প্রমাণিত, উচ্চশিক্ষা সবসময় মানুষকে নৈতিকতা, সাম্য ইত্যাদির শিক্ষা দেয় না। শিক্ষিত মানুষরা দুই নাম্বারি করতে কখনই পিছিয়ে থাকে না। সুতরাং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রায়োগিক গুরুত্বের বাইরে তাকে “সঠিক নাগরিক” হওনের মাপকাঠি চিন্তা করার মাঝে ঘাপলা আছে। শিক্ষা মানুষের চিন্তাভাবনা সংগঠনের কিছু টুলস প্রোভাইড করে। কিন্তু এই টুলসগুলো দিয়ে আমি কি করব সেইটি পুরোপুরি আমি এবং আমার সমাজ বাস্তবতায় ঠিক হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কোন মানুষের ইন্ট্রিন্সিক গুন নয়। এইটা নির্ভর করে সুযোগ এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের উপর। যাদের এই প্রিভিলেজ থাকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পায়। তাদের কাছে তথ্যের পরিমাণ বেশী থাকে।

আধুনিক সমাজের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে আমরা মনে করি জ্ঞান = ক্ষমতা। অর্তাত আপনি যদি বেশী তথ্যের অধিকারী হন, কম তথ্যের অধিকারীদের উপর আপনার খবরদারী করনের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। অথচ, বিষয়টা হওয়া উচিত ছিল ভিন্ন। যেহেতু আমরা এই ব্যাপারে একমত হতে পারি, যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের কোন জন্মগত গুন নয়, সেহেতু যার কাছে তথ্য বেশী, তার উচিত ছিল যার কাছে তথ্য কম তাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করা। তার উপর খবরদারী করা নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা মনে করি যাদের “প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা” নাই, তাদের “এজেন্সিও” নাই। সুতরাং তাদের নিজেদের ভালোমন্দ বুঝারও ক্ষমতা নাই। তাই বেশী তথ্যওয়ালারা কমতথ্যোয়ালাদের উপরে খবরদারী করবে। কারন বেশী তথ্যোয়ালারা বেশী বুঝে। এই প্যারাডাইমের সমস্যা হচ্ছে, আমরা ভুলে যাই কনটেক্সট এর কথা। উড়িরচরের আইজুদ্দীনের সমস্যা সচিবালয়ের আইজুদ্দীন সমাধান করতে পারবে না। যেটা হওয়া উচিত, উড়িরচরের আইজুদ্দীনকে জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য সরবরাহ করবে। এবং উড়িরচরের আইজুদ্দীন যেইটা ঠিক মনে করবে সেইটা করবে। বিশ্বব্যাপি পাবলিক হেলথ প্রজেক্টগুলো মোটামুটি সফল হয়েছে, কারন তারা এই কনটেক্সটের ব্যাপারটা মাথায় রেখেছে। তারা শুধু মায়া বড়ি আর পোলিও টিকা নিয়া গ্রামে যায় নাই, তারা এর কনজাম্পশনের জন্যে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেছে। এবং শেষপর্যন্ত সিস্টেমটাকে ভলান্টারি রেখেছে। যাতে মানুষ স্বত”স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করে।

কিন্তু সামাজিক অর্থনৈতিক প্রজেক্টগুলো , এই প্রোজেক্টের সাবজেক্ট পপুলেশনের মতামত বা সেই পপুলেশনকে কনভিন্স করার প্রয়োজন খুব একটা মনে করে না। এর কারন যথারীতি সাধারন জনগনকে “এজেন্সিশুন্য” ভাবা। তাদেরকে প্যাসিভ ভাবা, তাদের এক্ট করার ক্ষমতা নাই, এইটা ভাবা।

এখন জনগনের এজেন্সি আছে কি নাই, সেইটা কি স্পেকুলেটিভ না এম্পিরিক্যাল?

এইগুলো এম্পিরিক্যাল বেসিসের উপরে বসানো যায়।

আবারো উদাহরন দেই। উনিশ শতকের আমেরিকায় যখন দাস প্রথা প্রচলিত ছিল, তখন দাসদের মধ্যে ভিন্ন একধরনের “সংস্কৃতি” চালু ছিল যা তার সাদা প্রভুদের থেকে আলাদা। এইটা একটা এম্পিরিক্যাল ফ্যাক্ট। এখন এইটাকে ইন্টারপ্রেট করার চেষ্টা করা যাক। একই টাইম স্পেইসে দুইটি জনগোষ্টী বসবাস করেও কেন তারা ভিন্ন সংস্কৃতি লালন করবে। দাস প্রত্যক্ষভাবেই তার সাদা প্রভুদের সংস্কৃতি দেখতেছিল। এখন তারা সাদাদের সংস্কৃতি কিন্তু এমুলেট করার চেষ্টা করে নাই।

উনিশ শতকের বাংলায় বাংলা ইংরেজী নাটক/সাহিত্যের হিড়িক পরেছিল। ধরেন যেই বাগানবাড়িতে এইসব নাটক হইত, সেখানকার কর্মচারীরা এইগুলো দেখত। কিন্তু সেই কর্মচারী যখন নিজের সামাজিক স্পেইসে ফেরত যাইত তখন তার সংস্কৃতি নির্দিষ্টভাবে ভিন্ন ছিল তার প্রভুদের সংস্কৃতি থিকা। তারাও প্রভুদের এমুলেট করার চেষ্টা করে নাই।

এই ঘটনাটার ইন্টারপ্রেট কিভাবে করা যায়?

একটা সহজ ইন্টারপ্রেটেশন হচ্ছে, এরা অশিক্ষিত লোকজন, তারা হ্যামলেট/শর্মিষ্ঠার মূল্য বোঝে না। ভালো যুক্তি। কিন্তু এই যুক্তির একটা বড় সমস্যা হইতেছে, এইটা প্রথমেই ধরে নেয়, “হ্যাম্লেট”, “শর্মিষ্ঠা” উন্নত সংস্কৃতি, এবং নিম্নবর্গের মানুষ সেইটা অনুসরন করতেছে না অজ্ঞতাপ্রসূত। অর্তাত এইখানে প্রশ্নটা সক্ষমতার। উচ্চবর্গের শিক্ষিত মানুষের “হ্যামলেট” বোঝনের ক্ষমতা আছে। নিম্নবর্গের মানুষেরাও এইগুলো করত যদি তাদের সেই সক্ষমতা থাকত। কিন্তু হোয়াট ইফ, নিম্নবর্গের মানুষের কাছে এইগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনেই হয় নাই? কারন যদি এমন হতো তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হইছে তারা চেষ্টা করত এগুলো এমুলেট করতে। সেই এমুলেশন হয়ত বেশী ভালো হইত না। কিন্তু এইরকম কোন আগ্রহ তারা দেখায় নাই।

এখন পৃথিবীর সকল এলাকায় নিম্নবর্গের মানুষ যে তার প্রভুদের থিকা ভিন্ন সংস্কৃতি লালন করছে। কেন করছে সেইটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। কলোনাইজার কিংবা তাদের দেশীয় সহযোগীদের কাছে এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, তারা এতই নির্বোধ যে কলোনাইজারদের সংস্কৃতি যে উন্নত সেইটা বুঝতেছে না।

এই নির্বুদ্ধিতার যুক্তি ধোপে টেকে না। অন্যকিছু বাদ দেন। শুধুমাত্র বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস্টা দেখেন। তারা কিধরনের বুদ্ধি, সাহস ইত্যাদি দেখাইছে। তারা এমন কঠিন পরিবেশে অপারেট করছে, যেই কঠিন পরিবেশের কথা আজকের বিম্পি কিংবা আম্লীগ কল্পনাও করতে পারবে না। অপ্রেশন কাকে বলে এই মেইনস্ট্রীম রাজনৈতিক দলের আসলে জানাই নাই।

সুতরাং দেখাযাচ্ছে তাদেরকে সংগঠিত হবার ক্ষমতা, আত্নত্যাগের ক্ষমতা, কোনটারই কমতি নাই। তাহলে তারা মেইনস্ট্রীম রাজনীতিতে আসে না কেন?

এইখানে আসবে ইন্সেন্টিভ এর কথা। আমার নোটের এই অংশটা আসলে সাধারন অর্থনীতি। ইন্সেন্টিভ ছাড়া কিছুই হয় না। ইন্সেন্টিভ বলতে শুধু ম্যাটেরিয়াল জিনিসপাতি বোঝায় না। ইন্সেন্টভ বলতে বোঝায় , একজন ব্যক্তি যাকিছু গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।

এখন সহজ একটি উদাহরন দেই। যেকোন মানুষের কাছে আত্নসম্মান গুরুত্বপূর্ণ। এখন একজন রিকশাওয়ালা নিয়মিত চড় খেয়ে থাকে। কাজের বুয়া খুন্তির খোচা খেয়ে থাকে। এইগুলো তাদের আত্নসম্মানে আঘাত করে। এখন এমন কোন আন্দোলন যদি হত, যা নিম্নবর্গের মানুষের এইসব অসম্মান বন্ধ করার জন্যে কাজ করছে, এই মানুষগুলোর ইন্সেন্টিভ থাকত সেই আন্দোলনে যোগ দেয়ার।

এমনি করে অসংখ্য ইন্সেন্টিভের লিস্ট করা যাবে যেগুলো অধিকাংশ মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

এই লিস্টের অনেক নীচে অবস্থান করে শাস্তি দেয়ার প্রবনতা। (কিছু এম্পিরিক্যাল স্টাডি আছে, যে মানুষ ক্ষতিপূরণ পাইলে শাস্তি দিতে আগ্রহী হয় না) এই শাস্তি দেওনের প্রবনতা থেকে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয় প্রধানত। বাংলাদেশের সকলের মনে এই ধারনাটা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে “সরকার পরিবর্তনের সাথে কোন কিছুই পরিবর্তন হবে না”। সুতরাং ভোট দেয়াটা মূলত একধরনের কনভিনিয়েন্ট প্রটেস্ট যা ছুটির দিনে ৩০ মিনিট খরচ করে করা যায়। এইখানকার খুব কম ভোটই “পরিবর্তনের আশায়” ভোট।

এখন মধ্যবিত্তের সমস্যা হচ্ছে ভিন্ন। মধ্যবিত্ত/উচ্চবিত্ত সামাজিক ভাবে নিম্নবর্গের মানুষের মত অসম্মান এবং নিগ্রহের জীবন যাপন করে না। সুতরাং তাদের কাছে সম্মান বা ডিগনিটির চিন্তাভাবনা নিম্নবর্গের মানুষের থেকে আলাদা। তারা উদারনৈতিক গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের ব্যাপারে সেন্সেটিভ। এইসব ভায়োলেট হলে তারা ক্ষেপে উঠে।

আপনার আমার দুইবেলা চড় খাওনের সমাজ বাস্তবতা নাই। সুতরাং এখন আপনি আর আমি বসে যদি বলি “মোরাল এবং লজিক্যাল” দাবীগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তখন সেইটা আমাদের সমাজ বাস্তবতায় পুরোপুরি ঠিক আছে। কিন্তু ভিন্ন সমাজ বাস্তবতার একজনের কাছে যদি এই “মোরাল এবং লজিক্যাল” দাবীগুলো “কম” গুরুত্বপূর্ণ হয়(গুরুত্বহীণ না কিন্তু) তাইলে তাদের দোষানোর কিছু নাই। এইটাই আমার বক্তব্য। আমি যদি প্রতিদিন লাথি খাইতাম, এবং জানতাম, এই লাথি খাওনের কোন শেষ অদুর ভবিষ্যতে নাই, তখন, আমি যদি সিদ্ধান্ত নিতাম আমি “লাথি না খাওনের” রাজনীতিতে মনোযোগ দিব, ইলেক্টোরাল পলিটিক্স এর চেয়ে তাইলে আমাকে দোষ দেয়া কি ঠিক? যে রাজনৈতিক শক্তি আমার লাথি খাওন আটকাতে পারবে না, এবং আমাকে লাথি দেয়া লোকজনের সাথে মৈত্রী করে চলবে, তার প্রতি যদি আমি অনাস্থা জানাই, তাইলে আমাকে দোষারোপ করা ঠিক কি না?

সমাজের কোন মানুষের সার্বজনীন দায়িত্ব কর্তব্যের বয়ান তৈরী করার মধ্যে একটা হিপোক্র্যাসি আছে।

সমাজ বাস্তবতা না বিবেচনা করে সবার কাছে একই জিনিস “মোরাল এবং লজিক্যাল” প্রতিভাত হয়না এই আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং তৈরী হওনেরও দরকার আছে।

 

ফাহাম আবদুস সালাম -2

7th January

বাংলাদেশের আরবান মিডল ক্লাসকে নিয়ে আমি এক খান লেখা লিখেছিলাম দুদিন আগে। তার প্রতিক্রিয়ায় জিয়া হাসান, আরিফুল হোসেন তুহিন ও জায়েদ উল্লাস তিনটা লেখা লিখেছেন। তার প্রতিক্রিয়ায় এই লেখা।

তিনটা লেখার অনেক ব্যাপারেই আমি একমত। বিশেষত বিএনপির রাজনীতির সমালোচনায় তারা যা লিখেছেন আমি তা মোটামুটি সমর্থন করি। কিন্তু এই তিনটা লেখার একটা মূলসুর আছে যার সাথে আমি একমত না। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন যে বাংলাদেশে দুই দলের কামড়াকামড়ি চলছে। আরবান মিডল ক্লাস ভাবছে যে এই কাজিয়ায় আমার কোনো ইনসেনটিভ নাই (আরিফুল হোসেন তুহিনের আরবান মিডল ক্লাস ও “নিম্নবর্গের” মাঝে বিপজ্জনক রকমের ওভারল্যাপ মনে হয়েছে আমার কাছে)। বিএনপিও তাদের কনভিন্স করতে পারে নাই । কাজেই আরবান মিডল ক্লাস যে বিএনপির ক্ষমতার লড়াইয়ে পার্টিসিপেট করবে না – এই ব্যাপারটাকে তারা “জাস্টিফাই” করেছেন।

এবং সে সাথে তারা আমার বক্তব্যকেই রিইনফোরস করেছেন। বুঝিয়ে বলি।

গণতন্ত্র স্ট্যাবলিশ হতে যে সময় লাগে এ ব্যাপারে কেউ আশা করি ভিন্ন মত পোষণ করবেন না। বৃটেনের দুইশ বছর আগের গণতন্ত্রের যে রূপ ছিলো সেটা এমন কি আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও হাস্যকর ঠেকতে পারে। কিন্তু তাদের উত্তরণ ঘটেছে। দেড়শ বছর আগের ব্রিটেনে মেয়েদের ভোটাধিকার নাই দেখে জন স্টুয়ার্ট মিল পড়া উচ্চ-মধ্য বিত্তের সাফ্রাজিস্ট নারীদের জন্য খুব সহজ ছিলো দর্শক হয়ে বসে থাকা – ভাবা যে সমাজের সব পুরুষ কামড়াকামড়িতে ব্যস্ত আমাদের কী দরকার এই কাজিয়ায় যাওয়ার? কিন্তু তারা আন্দোলন করে ভোটাধিকারের দাবী আদায় করে নিয়েছিলেন।

এই উত্তরণ পর্ব কিন্তু বন্ধ হয়ে যায় নি – এখনও চলছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে এখনো চলছে – কেউ এগিয়ে আছে, কেউ পিছিয়ে। বাংলাদেশে যে লুটপাটতন্ত্র চলছে সেটা বাংলাদেশের একক আবিষ্কার না। প্রায় প্রতিটি দেশেরই কোনো না কোনো পর্যায়ে কাছাকাছি মাপের লুটপাটতন্ত্র জারি ছিলো। তো এই লুটপাটের বেনিফিশিয়ারিরা আল্লাহর ভয়ে লুটপাট বন্ধ করবে – এমনটা নিশ্চই কোনো কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ আশা করবেন না। সে সব দেশে লুটপাট সীমিত হয়েছে কীভাবে? এর সরল কোনো উত্তর নেই কিন্তু একটা মৌলিক মিল আছে সব গণতান্ত্রিক দেশে। জনগণ লড়াই করে তার অধিকার স্ট্যাবলিশ করে রাজনীতিবিদদের তাদের পক্ষে পলিসি বানানোর জন্য বাধ্য করেছে। য়েস, খেয়াল করুন – জনগণ লড়াই করেছে এবং পলিসি মেকারদের বাধ্য করেছে।

লুটপাট তুরুপ বন্দোবস্ত – এটা এমনি এমনি সীমিত হয় না।

বাংলাদেশে যে এই মুহুর্তে খুবই কুৎসিত একনায়িকাতন্ত্র চলছে এটা কারো অজানা না। ভোট গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত না – মানি কিন্তু ভোটাধিকার গণতন্ত্রের সর্বপ্রথম শর্ত। সেই ভোটাধিকারও বাংলাদেশের মানুষের আজকে নেই। ২০০৬ সালে বিএনপি ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিলো কিন্তু তারা সফল হয় নি। কারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছিলো। যদিও ২০০৯ এর নির্বাচন ষড়যন্ত্রমূলক ছিলো কিন্তু আমি এই নির্বাচনকে এক্সেপ্ট করি কারণ নির্বাচনের দিনে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলো। এবং এও মানি যে নির্বাচন ষড়যন্ত্রমূলক না হলেও বিএনপি হারতো কারণ জনগণ বিএনপিকে চায় নি।

আপনি যদি গণতন্ত্রে ঈমান আনেন তাহলে তাহলে আপনাকে স্বীকার করতে হবে যে জনগণের কিছু ইনভায়োলেবল রাইটস আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন তার মধ্যে অন্যতম। প্রশ্ন হোলো এই রাইটস যখন অনুপস্থিত তখন সেটা স্ট্যাবলিশ করার দায় কার?

তিনজন লেখকই এই দায় থেকে আরবান মিডল ক্লাসকে মুক্তি দিতে চান কারণ তারা জানেন যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের যে পার্থক্য সেটা লুটপাটের মাত্রার পার্থক্য – আদর্শের পার্থক্য না। জনগণ কেন তাদের কামড়াকামড়ির দায় নেবে? মিডল ক্লাসের এই কনশাস ডিসিশন সম্পূর্ণ এক্সেপ্টেবল তাদের কাছে।

তাদের এই চিন্তাই প্রমাণ করে কেন আমরা আজো পলিটি হতে পারি নি, কেন আমরা সমাজ বুঝি কিন্তু রাষ্ট্র বুঝি না। সমাজে দুই জনের কাজিয়ায় দর্শক হওয়ার সুযোগ আছে কারণ সমাজের কাজিয়া কমপ্লেক্স না। রাষ্ট্রের কাজিয়ায় আমাদের সবার স্বার্থ জড়িয়ে আছে – এটাকে ইগনোর করার কোনো উপায় নেই। সমাজের বাইরে যাওয়ার আপনার সুযোগ আছে, ধর্মের বাইরে যাওয়ার আপনার সুযোগ আছে কিন্তু আপনার রাষ্ট্র-নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

জিয়া হাসানের ভাষায় এই কাজিয়ায় জনগণের কোনো ইনসেনটিভ নাই। ওয়েল, এই কাজিয়ায় বিএনপি জিতলে আর কিছু না হলেও জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে। এইটা যদি জনগনের ইনসেনটিভ না হয়ে থাকে তাহলে আরবান মিডল ক্লাসের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এইসব গালভরা কথা মুখে আনা উচিত না।

আমি বলছি অবশ্যই ভোটাধিকার জনগনের জন্য একটা ইনসেনটিভ। ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তারা যদি আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনে আমাদের অবশ্যই সেটা মেনে নিতে হবে।

তারা মনে করছেন খারাপ থেকে খারাপতর হয়ে ওঠাই একমাত্র গন্তব্য – তাই এই যাত্রায় দর্শক হয়ে থাকাটা উচিত না হলেও একসেপ্টেবল। আমি বলছি না। এই লুটপাটতন্ত্র থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি যদি সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে আরবান মিডল ক্লাস এই রাষ্ট্রের ওপর তাদের ঔনারশীপ এসার্ট করে।

আপনাকে বিএনপিকে কেন সাপোর্ট করতে হবে? বিএনপি লুটেরাদের দল মেনে নিলাম কিন্তু বিএনপির আন্দোলনের কজটা তো আমার আপনার সবার কজ। সাধারণ মানুষ তার ঔনারশীপ এসার্ট করে না দেখেই তো বিএনপি-লীগ লুটপাটের সুযোগ পায়। আপনি মনে করেন যে বিএনপি-আওয়ামী লীগ খারাপ। ভালো কথা। থার্ড কোনো ফোর্সকে তো তাহলে আসতে দিতে হবে। একনায়িকাতন্ত্রে তো সে উপায় নেই। ব্যাপারটা কি এমন না যে আপনার দর্শক হয়ে থাকাটাই লুটপাটতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ইন্ধন?

চেষ্টা করে দেখতে পারেন – নাক টিপে বন্ধ করে আপনি যদি কমলা (বাংলাদেশে যে ফলটাকে মালটা বলা হয়) খাওয়ার চেষ্টা করেন কোনোদিনও বুঝবেন না যে আপনি আসলে কী খাচ্ছেন। এটাই বাস্তবতা। আমাদের আরবান মিডল ক্লাস এই অসম্ভব কাজটাই করতে চান। তারা গণতন্ত্র চান কিন্তু লীগ-বিএনপির কাজিয়া চান না। তারা বুঝতে চান না যে লীগ-বিএনপির কাজিয়া থেকে আপনার বাঁচার কোনো উপায় নেই। আরবান মিডল ক্লাসই শুধু পারে দুই দলকে গণতন্ত্রে বাধ্য করতে। এই দায়িত্ব যতোদিন তারা অগ্রাহ্য করবে ততোদিন লালুভুলুদের অত্যাচার থেকে তাদের নিস্তার নাই।

 

নায়েল রহমান

7th January

 

নিউজফীড জুইড়া বিতর্কের কারণে নাক গলানোর একটা তাগিদ বোধ করলাম। নিজের মিডেল ক্লাস ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণেই কিনা পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগ্য (ম্যালাইন্ড সেন্সে) ইকনোমিক ক্লাস হিসেবে মিডেল ক্লাসরেই মনে হয়। বাংলাদেশেতো আরও বেশি। পলিটিক্যাল স্পেক্ট্রামের বাম থেকে শুরু করে (ইদানীংকালের) ডান পর্যন্ত সবাই এর উপর খাপ্পা। সবাইর ধারণা এই ক্লাসটার নিরুত্তাপ আচরণের কারণেই দেশে কিছু ‘হয়টয়’ না। মাঝেমধ্যে মনে হয় মানবসভ্যতার সকল পরিবর্তনের জন্যেও মানুষ এদেরেই দায়ী করে। বওহাত আচ্ছা। সব দোষ মিডেল ক্লাসের ধইরা নিয়াই একটু চিন্তাভাবনা করা শুরু করলাম, যার ফলাফল নিচে সন্নিবেশিত হইলঃ

মিডেল ক্লাস কী করেনাই তা নিয়া অনেকেই অনেক কিছু বলেন তাই গত দুয়েকদিন ধইরা ভাবতেছিলাম বাংলাদেশ নামের এই স্যুডো-স্টেইবল, পারশালি ফেইল্ড স্টেইটে (গায়ে লাগলে কিছু করার নাই ৪৩ বছর বয়সের একটা দেশ নিয়া আমার এক্সপেক্টেশন আপনার তুলনায় অনেক হাই) এ মিডেল ক্লাস কী কিছুই করেনা? এই নিয়া চিন্তা করতে গিয়া কিছু ঝামেলায় পড়লাম। নাগরিক হিসেবে মিডেল ক্লাসের কাছ থেইকা রাষ্ট্র কি পায় তা নিয়াই প্যাঁচটা লাগলো। এইখানে একটা জাফর ইকবালীয় সাদাসিধে ডিসক্লেইমার দিতে বাধ্য হইতেছিঃ আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বুঝিনা সুতরাং রাষ্ট্র তার নাগরিকের কাছ থেইকা কি আশা করে তার পুঁথিগত জ্ঞান আমার নাই। ঘটে যা অল্পবেশি বুদ্ধি আছে তা আমারে বলে যে রাষ্ট্র কমের মধ্যে আশা করতে পারে যে তার নাগরিক ঝুট ঝামেলা (দ্যাট ইজ বেআইনি কাজকারবার) দেখে দূরে থাইকা নিজের খায়েশ মিটাইতে অপররে ঝামেলায় ফালাবেনা, রাষ্ট্র চালানোর জন্য ট্যাকসো দিবে এবং অন্তত তার আওতায় থাকা মানুষ (দারা-পুত্র-পরিবার এটসেটরা) গুলারে নিদেনপক্ষে শিক্ষিত (হোপফুলি সুনাগরিক) কইরা তুলবে।

এই তিন ক্রাইটেরিয়ার বেইসিসে মিডেল ক্লাসরে একটু জাজ করতে গিয়া স্যারের মতন এট্টু চমকায়া গেলাম। বিস্মিত হইয়া দেখলাম যে, অপরাধের গুরুত্ব এবং সংখ্যার বিচারে এই মাচ-ম্যালাইন্ড মিডেল ক্লাসই দেখি সবচেয়ে সুবোধ বালক। মিডেল ক্লাস অন্যদের মতন (১) নিজে লাঠালাঠি করেনা, এবং (২) লাঠিয়াল ভাড়াও করতে পারেনা। [লাঠালাঠি দেইখা ভাইকেরিয়াস প্লেসার অনুভব করতেই পারে … যা এজ ইফ অন্যেরা কেউ করেনা হা হা হা] এইটারে একটু অন্যভাবে বললে দেশের সর্বনিম্ন আইনঅমান্যকারী (দ্যাট ইজ সর্বাধিক আইনমান্যকারী) শ্রেণীটাই হইলো এই হ্যাপলেস মিডেল ক্লাস। [হ্যাঁ সুযোগের অভাবে সে ভালো কিনা তা নিয়া ডিবেইট চালাইতেন পারেন তবে কোন অবস্থায় সে সুযোগ পায় তা বিশ্লেষণ করতে গেলেই ঝামেলায় পইড়া যাবেন। তবে এইখানে বইলা রাখা ভালো এই মিডেল ক্লাসের একটা চালাকচতুর অংশের ক্ষেত্রে উপরের এই কথা প্রযোজ্য না কারণ তারা বাই ডিফল্ট রুলিং ক্লাসের অংশ। সোশ্যালি কারেক্ট থাকার জন্য এর বেশি আর কিছু বললাম না এবং বলবোনা।]

আচ্ছা এরপর চিন্তা করা যাক ট্যাকসো পে করার ব্যাপারে। এইখানেও ইন্ট্রেস্টিং সেনারিও। শালার ভিতু মিডেল ক্লাস তার আয়ের অনুপাতে খুব সম্ভবত ট্যাকসো দেয় সবার চেয়ে বেশি। [আফটার অল, এই মিডেল ক্লাস চাকুরিজীবি শ্রেণীর বেতন থেইকা এট সোর্স কাইটা নেয়া হয় ট্যাক্স। দিতে না চাইলেও উপায় নাই।] কথাটা হয়তো খুব কনভিন্সিং মনে হইতেছেনা তাই একটু রিফ্রেইজ করার প্রয়োজন বোধ করতেছিঃ দেশে আয়ের অনুপাতে সবচেয়ে কম ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া অংশটাই হইলো মিডেল ক্লাস। [আশা করি এখন ক্লিয়ার হইছে।] যাহ! রাষ্ট্রের ভরণপোষণ করার দিক থেইকাও দেখি মিডেল ক্লাস খুব একটা পিছায়া নাই। ধারণা করা যাইতে পারে চাকুরিজীবি এই অংশই ব্যাংকে অল্পবিস্তর টাকাও রাখে, প্লাস নাদান হওয়ার কারণে ট্যাক্স রিবেইটের জন্যে সরকারি সেভিংস ইন্সট্রুমেন্টও এরাই সবচেয়ে বেশি কেনে।

এরপর চিন্তা করা যাক নাগরিক গইড়া তোলার ব্যাপারটা। এইখানে তুলনামুলক আলোচনা করার স্কোপ আছে। উচ্চ বা নিম্নবিত্তে অবস্থান করলে যে নামকাওয়াস্তে শিক্ষা বা অশিক্ষা নিয়ে আপনি চলতে পারবেন তা মিডেল ক্লাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। তার যেভাবেই হোক ছেলেমেয়েরে লেখাপড়া করাইতে হবে … তাও এক্কেবারে ভার্সিটি পর্যন্ত। এইটা বাঁচামরার কেইস। এই ফ্রেইমওয়ার্কে পাবলিক ইউনিভারসিটিতে কেউ চান্স পাইলে ভালো আর না পাইলে গলাকাটা (প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি)। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হইলো যে এই মিডেল ক্লাসের মেধাবী অংশটা এইখানে থাইমা থাকবেনা। তারা নিজ গরজেই বাইরে উচ্চশিক্ষা নেয়ার চেস্টা করবে। উচ্চবিত্তের সবচেয়ে মেধাবীর পক্ষে যেই ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া সম্ভব মধ্যবিত্তের সবচেয়ে মেধাবীর তাতেই যাওয়া সম্ভব। যেই পয়েন্টটা তুইলা ধরার চেস্টা করতেছি সেইটা হইলো যে মিডেল ক্লাস থেইকা যেই পরিমাণ একাডেমিক ওভারএচিভার আসছে সেইটা মনে হয় তাদের মোর প্রিভিলেজড ক্লাসের ক্ষেত্রে হয়নাই।

তা এই সীমিত ফ্রেইমওয়ার্কে মিডেল ক্লাসের অবস্থা খুব একটা খারাপ না মনে হয়? কী বলেন? ট্যাঞ্জিবল সেন্সে এদের সুনাগরিক বলতে পারবেন কি? অথবা কুনাগরিক বলা থেকে বিরত থাকতে পারবেন কি? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় সাথে থাকেন, না হইলে আইএমএইচও ইয়োর ইন ডিনায়াল। তাহইলে এতকিছুর পরেও এই শ্রেণীর উপর মানুষের এত ক্ষোভ কেন? বর্তমান কনটেক্সটে একটাই – সেইটা হইলো ফিজিক্যাল সেন্সে (?) তাদের রাজনৈতিক অসম্পৃক্ততা। এইখানে কিছু কম্পিটিং থিওরি কাজ করতেছে। অতি চিন্তায় ব্রেইন ফ্রিজ হওয়ার কারণে সেই বিষয়ে কালকে। :p

প্রভু, ফোনে না বলে প্রকাশ্যেই বলুন

amit shah

by zainuddin sani

দুজনেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন, বিশ্ব ইজতেমা শেষ হলে, তারপর শুরু করব। এই কথার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, আমাদের সাধারণ মানুষকে আপাততঃ ১৯ তারিখ পর্যন্ত এই জেদাজেদি সহ্য করতে হচ্ছে। কেউই পিছিয়ে আসবে না। সরকারও ম্যাডামকে মুক্ত করবে না আর বিরোধী দলও অবরোধ তুলবে না। বিএনপিরও ক্ষমতা নেই তাঁদের নেত্রীকে মুক্ত করার আর ওদিকে সরকারেরও ক্ষমতা নেই অবরোধ বন্ধ করার। দেশবাসীর এই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা নিয়ে দুই দলের কেউই বিচলিত না। দুইজনেরই চাই বিজয়।

যুদ্ধটা কারো পক্ষেই হারা সম্ভব না। বিএনপি পিছিয়ে আসা মানে তাঁদের সমুহ পতন। আগামী চার বছর তাকিয়ে তাকিয়ে এই সরকারের দেশ পরিচালনা দেখতে হবে আর হাত কামড়াতে হবে। অন্যদিকে আওয়ামীরা হারলে এই ছয় বছরের অত্যাচারের প্রতিশোধ কড়ায় গণ্ডায় উসুল করবে বিএনপি জামাত জোট। দুই দলেরই থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বসে গেছে, পরবর্তী করনীয় নিয়ে অংক কসতে। বিএনপি হিসাব কষেছে, এভাবে আরও কিছুদিন চালাতে পারলে, সরকারের পতন হবেই। আওয়ামীরা অংক কষছে, হার্ড লাইনে গিয়ে, বিএনপির মেরুদণ্ড একবার ভেঙ্গে ফেলতে পারলে, আর সমস্যা হবে না।

পাল্লা কোন দিকে ভারী, এনিয়ে কথা বলার বেশ বড়সড় বিপদ আছে। অবস্থা এমন, ‘উইথ মি ওর এগেন্সট মি’। আওয়ামীরা সঠিক পথে আছে—এমন কিছু বলেছেন মানেই আপনি অবধারিতভাবে ওদের দলে। বিএনপি ঠিক করছে বললেও বিপত্তি আছে—আপনি বিএনপি করেন। দুজনেরই দোষ, এমনটা বললে, আপনাকে কেউ ডাকবেও না, আপনার কথা কেউই শুনবেও না, বলবে ধান্ধাবাজ, এখন দুই দিকেই তাল দিচ্ছে, যে টিকবে তাঁর দিকে হেলবে। কিংবা তখন হিসেব করবে, আগে আপনি কোন দিকে ঘেঁষে ছিলেন, কবে কি লিখেছিলেন বা বলেছিলেন। কিংবা পালটি মারবার ধান্ধায় আছেন কিনা। টক শো এখন হয়ে গেছে বুদ্ধিজীবীদের দলবাজি করার মোক্ষম জায়গা। আগে পত্রিকায় কলাম লিখে বোঝাতেন, ‘আপনিই আমার হুজুর’ আর এখন দুই দলের হয়ে ঝগড়া করে বোঝাচ্ছেন, ‘আমি আপনারই পা চাটি’।

সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সাধারণ মানুষের। তাঁরা কার দিকে তাকাবে? কার কাছে প্রত্যাশা করবে? কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। দুই দলের কেউই তাঁদের কথা ভাবে না, এই তথ্য তাঁরা জানে। এও জানে, ভোট এদের দুজনের একজনকেই দিতে হবে। তথ্যটা এই দুই দলও জানে। তাঁদের তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবীরা ইদানীং এই সুরেই কথা বলা শুরু করেছেন। ‘দেখুন দুই দলই চোর। টাকা উপার্জনের জন্যই এই পেশায় আসা। ফলে যাকেই বসান আপনার বা দেশের কোন উন্নতি হবে না। এরা দুর্নীতি করবেই, টেন্ডারবাজী করবেই। এখন বেছে নিন, কাকে চান।‘ এরপরে দুই দল দুই কথা বলছে। একদল বলছে, গনতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে আর অন্য দল বলছে দেশে গনতন্ত্র দিলে দেশবাসী এমন এক দলকে বেছে নেবে যার সঙ্গে রাজাকার ফ্রি, তাই গনতন্ত্র হত্যা জরুরী।

ফলে ঘুরে ফিরে বিতর্ক মজার এক যায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে, এদেশের লোক এখনও গনতন্ত্র বুঝতে শেখেনি। তাঁরা ভালো আর মন্দের পার্থক্য বুঝতে শেখেনি, ভোটের মুল্য বুঝতে শেখেনি। এখানে এখনও ‘হামগের ছাওয়াল’ শুধু এই কারণে একটি দলকে ভোট দেয়া হয়, নেতার জন্মস্থানের কারণে একজন একটি এলাকার ভোট পান, কেউ বা ভোট চান এলাকার পুত্রবধু হিসেবে। তাই আপাততঃ এদেশের লোকের জন্য গনতন্ত্র না। ব্রিটিশদের কাছে স্বাধীনতা চাওয়ার সময় কমবেশি এরকমই একটি কথা তাঁরা বলেছিল, ‘ইউ কান্ট রুল দাইসেলফ’। নিজেদের শাসন করার যোগ্যতা তোমাদের এখনও হয়নি। তাই তোমাদের শাসন করার ভার আমাদের হাতেই থাক।

সরাসরি না হলেও আমরা পর্দার আড়ালে এই কথাটি মেনে নিই। বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে গিয়ে নিজেদের ইন্টারভিউ দিই। বলি, ‘আমি ওর চেয়ে ভাল, এবার আমাকে দয়া করে ক্ষমতায় বসান। আপনি যা চাইবেন, সব পাবেন। একবার সুযোগ দিয়ে দেখেন। আগেরবার কিছু ভুল করেছিলাম, তবে এবার আর হবে না‘ অন্য দল বলে, ‘একদম বিশ্বাস করবেন না ওর কথা। আর আমাকে পালটাবার দরকার কি। ও যা দিবে বলছে, আমিও তো তা দিচ্ছি। শুধু শুধু ঝুঁকি নেয়ার দরকার কি?’

বিদেশীরাও উপদেশ দেন, সার্টিফিকেট দেন আর অবশেষে চিন্তা ভাবনা করে একজনকে ক্ষমতায় বসিয়ে সবার উদ্দেশ্য বাণী দেয়, ‘এ হচ্ছে দেশবাসীর পছন্দ’। সত্যি বলতে, আমাদের এই ফর্মুলায়ও তেমন কোন আপত্তি নেই। হেসে খেলে এই বক্তব্য আমরা হজম করি। আমাদের নেতা নেত্রীরাও বেশ গর্ব করে বলেন, অমুক দেশ আমাদের সরকারকে অভিনন্দন করেছে। অন্য দল আবার জানান দেয়, মিথ্যা বলছে, আমাদের আসল প্রভু আমেরিকা এখনও অভিনন্দন দেয়নি।

সম্প্রতি প্রতিবেশি দেশের বেশ কদর বেড়েছে। শীতল যুদ্ধ শুরুর কারণেই হোক আর দক্ষিন এশিয়ায় শক্ত অবস্থান তৈরির উদ্দেশ্যেই হোক, প্রতিবেশি দেশটির স্নেহ না পেলে এদেশের ক্ষমতায় আরোহণ সম্ভব না। ফলে শুরু হয়েছে কেবলা পরিবর্তন। কে কার চেয়ে বেশি পা চাটতে পারেন, তার প্রতিযোগিতা। সম্প্রতি হওয়া ফোনালাপ, কিংবা বলা উচিৎ, ফোনালাপের গুজব নিয়ে দুই দলের কর্মী, নেতা এবং তাঁদের বশংবদ বুদ্ধিজীবীরা যেমন কাদা ছোঁড়াছুড়ি করলেন, তা দেখতে বেশ মজাই লাগল।

ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ফোনালাপের কথা ঘটা করে বলবার কি আছে? সবাইকে বোঝানো, আমার দিকে প্রভুর সুনজর আছে? আর অন্য দলের চামচা বাহিনীর উল্লাস ছিল দেখবার মত। ফেসবুক, ব্লগ, পত্রিকা, টক শোতে ছিল উল্লাসের ছড়াছড়ি। গর্বিত কণ্ঠে বেশ উল্লাস করে বলছে, ‘আরে দূর, ভয় পাওয়ার কিছু নাই, ফোন করেই নি।‘ আচ্ছা, এই উল্লাসের কারণ কি? ‘প্রভু এখনও মত পাল্টান নি?’

যদি তাইই হয়, তবে আমাদের ভোট দেয়ার দরকার কি? আপনারা ঠিক করুন, কে কে আমাদের প্রভু। বরং তাঁদের ভেতর একটি ভোট করুন। অবস্থা যদি এমনই হয়, যে আমাদের প্রভু কথিত সেই ব্যক্তি, তাঁর সিদ্ধান্তেই যে সব কিছু ঘটছে। আর সেটাও যখন ‘ওপেন সিক্রেট’ তবে আর লুকোছাপা কেন? তাঁর ভোট দানকে প্রকাশ্য করে দিতে সমস্যা কোথায়? ফোনে না বলে সর্ব সম্মুখেই তাকে সিদ্ধান্ত নিতে বলুন, তাঁর ভোট দানকেও প্রকাশ্য করে দিন। সবার জন্য নির্দেশনা জারী করুন, যে দলের জন্য তিনি ভোট দিবেন, সে গদিতে বসবে।

এতে দল দুটিও বাঁচে, জনগণও বাঁচে। তাঁরা তখন শুধু শুধু জনগণের কাছে বিভিন্ন উন্নয়নের মিথ্যা ওয়াদা না করে সেই প্রভুর কাছে নিজেদের সত্যি ওয়াদা পেশ করবে। যিনি বেশি মুখরোচক ওয়াদা করে প্রভুর মন জয় করতে পারবেন, তার জন্য বরাদ্দ হবে গদি। আমরাও পাব আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকার। আর প্রভুরাও পাবে একজন আজ্ঞাবাহী ভৃত্য।

 কোমল ক্ষমতার প্রত্যাবর্তন

–রেজাউল করিম রনি

 

বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্কটের চরিত্র এক একজনের কাছে এক এক রকম। বুদ্ধিজিবিরা প্রতিবন্ধির মতো আচরণ করতে থাকে। কোন কিছুকে গোড়া থেকে বুঝবার অক্ষমতা  ডাকতে ফাও গল্পের ডালি খুলে বসে। বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা ও চাতুরী উদাম হয়ে যায় ক্ষনে ক্ষনে। আামাদের চিন্তাশীল নাগরিকের অভাব খুব জ্যান্ত হয়ে ধরা পরে তখন।

ক্ষমতা পরিবর্তনের হাওয়া বইতে থাকলে পাল্টাপাল্টি প্রতিযোগিতা ও প্রচার-প্রপাগান্ডার সময়ে এই অভাব প্রকটভাবে চোখে লাগে। বুদ্ধিজীবীরা দলীয় নীতির প্রতি অনুগত থেকে জাতীয় সমস্যা নিয়ে কথা বলার যে ঐতিহ্য এতদিন ধরে চর্চা করে আসছে -এখন তা আরও নোংরা জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের প্রায় সবাই এই দুই দলের ভারসাম্যের মধ্য থেকে চলতি সঙ্কট নিয়ে আলোচনা ও মিডিয়া প্রপাগান্ডায় অংশ নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে গত এক দশক ধরে একটা পরিবর্তন এসেছে। জামায়াতের তরফেও কিছু বুদ্ধিজীবী নতুন করে জাতীয় রাজনীতিতে হাজির হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই ছদ্ম চরিত্রের। এরা বিএনপির সঙ্গে থেকে জামায়াতের স্বার্থকে টিকিয়ে রাখতে তৎপর থাকেন। এটা একটা নতুন মাত্রা। এর ফলে চতুর্মুখী বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই বিভ্রান্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে একটা নিশ্চল পাহাড়ের মতো একই জায়গায় আটকে রাখে। ‘রাজা যায় রাজা আসে’ কিন্তু রাজনীতির কোনো গুণগত তফাত্ বা উন্নতি ঘটে না। এই দিকগুলো নজরে রেখে আজকে আমরা চলতি রাজনৈতিক হালচাল নিয়ে সংক্ষেপে কয়েকটি পয়েন্ট ধরে আলোচনা করব।

 

কৌতুকের রাজনীতি:

খালেদা নিজ অফিসে অবরুদ্ধ বা আটক আছেন। গত ৩ জানুয়ারি রাতে পুলিশ এই কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয়। পুলিশ ইচ্ছামতো তালা দেয় আর খোলে। কিন্তু ক্ষমতার চাবি পরের হাতে। একই সঙ্গে কার্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন এবং রাস্তায় ইট, বালু ও মাটিভর্তি ট্রাক দিয়ে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৫ জানুয়ারি বের হওয়ার চেষ্টা করলে পিপার স্প্রে ছোড়ে পুলিশ। এরপর থেকে খালেদা জিয়া কার্যালয়েই আছেন। এরপরে গত বৃহস্পতিবারও দিনের বেলায় ফটকের তালা খুলে দিয়ে রাতে আবার তালা দেয় পুলিশ। এই তালা দেওয়া আবার খুলে দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কৌতুক জমে ওঠে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা গণতন্ত্র রক্ষায় বালির ট্রাকের বহুমুখী ভূমিকার কথা জানান মিডিয়াকে। এইসব ট্রাক হাজির করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য, কেউ কেউ বলেন, খালেদা জিয়ার বাড়িতে মেরামতের কাজ হবে। তাদের ব্যাখ্যা সার্কাস দলের জোকসে পরিণত হয় দ্রুত। তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন আস্ফাালন ও কুরুচিপূর্ণ রসিকতা আওয়ামী লীগের ওপর জন-অসন্তোষকে আরও শক্তিশালী করে। জাতির সঙ্গে এই তামাশাপূর্ণ আচরণ লীগকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় দ্রুত। লীগের চূড়ান্ত পশ্চাদপসরণ ঘটে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার আত্মবিশ্বাসী ও সংযত ভাষণের পরে। এই ভাষণে খালেদা জিয়া যে সংযমের পরিচয় দেন তা ক্ষমতার রাজনীতিতে অতি উঁচু স্তরের বিচক্ষণতার পরিচয়।

অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া ও তার দলের মহিলা সদস্যদের ওপর পিপার স্প্রে করেছে পুলিশ। পিপার স্প্রে ব্যবহার নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। অথচ পুলিশ মিডিয়ার সামনেই আইন ভঙ্গ করছে। আর সব মিলিয়ে ২৬টি ইট-বালির ট্রাক, পুলিশের যানবাহন দিয়ে খালেদার পথরোধ করে দিয়েছে এবং ৫ জানুয়ারি ঢাকার সঙ্গে বাংলাদেশের বাইরের রেল, সড়ক, লঞ্চ সব যোগাযোগ নিজেই বন্ধ করে দিয়েছেন। আর তত্ক্ষণাত্ খালেদা জিয়া অবরোধ কর্মসূচি ডিক্লেয়ার করেন। এতে সরকারের গেম ভেস্তে যায়। সরকারের অবরোধ প্রচেষ্টা বেশ সফল হয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার তাত্ক্ষণিক অবরোধ ডাকার ফলে এই সফলতার প্রাথমিক নজরানা বিএনপির কোর্টে জমা হয়। এর মধ্যে মিডিয়ার সঙ্গে সরকারের আচরণ জনগণকে আর ক্ষিপ্ত করেছে। তথ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন, একুশে টিভি বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু চ্যানেলটির প্রধান কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, মানুষ একুশে টিভি দেখতে পাচ্ছে না। তারেক রহমানের ভাষণ প্রচারের জন্য এই খেসারত দিতে হচ্ছে বলে মনে করেন সাংবাদিকরা। যদিও মামলা হয়েছে পর্নোগ্রাফি আইনে। পরে অবশ্য রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হয়েছে। অদ্ভুত এক অবস্থা তৈরি হয়েছে।

আদালতের এখতিয়ার আর রাজনীতির পরিমণ্ডল এ দুটোকে সচেতনভাবে গুলিয়ে ফেলা বাংলাদেশের তথাকথিত ‘আইনের শাসনের’ (আসলে দলীয় শাসনের) ঐতিহাসিক নজির হয়ে গেছে।

ধরেন, তারেক রহমান অপরাধী। কিন্তু অপরাধীর ‘মানবাধিকার’ বা স্বাভাবিক অধিকার বা আইনি অধিকার হল ‘কথা বলার অধিকার’। যত ভয়ঙ্কর অপরাধীই হোক না কেন, তার অপরাধের জন্য জবান বন্ধ রাখার কোনো বিধান নেই। এটা আইনের একটা বেআইনি প্রচেষ্টা মাত্র। দুই নাম্বার পয়েন্ট হল, মিডিয়া কী প্রচার করবে তা কোনোভাবেই আদালতের রায়ে নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না। এই হাস্যকর কাজটি করে আদালতের সম্মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সরকার।

এরকম চোখে-মুখে মিথ্যা ও চাতুরি এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণাপূর্ণ আচরণের জন্য বর্তমান সরকারকে কী মূল্য দিতে হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

খালেদা জিয়া আর বিএনপি এক নয়। বিএনপির চারপাশে দুষ্টলোকদের আখড়া এই অভিযোগ অনেক দিনের। কিন্তু খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ত্যাগ ও প্রতীকী গুরুত্বকে আওয়ামী লীগ যেভাবে নস্যাত্ করার চেষ্টা করছে তাতে উল্টো ফল ফলতে শুরু করেছে। অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া গণতন্ত্রহীনতার প্রতীকে পরিণত হচ্ছেন ক্রমে ক্রমে। তার ৭-দফা ‘নরম’ দাবি লীগ যেভাবে উড়িয়ে দিয়েছে, হম্বিতম্বি করেছে, তা লীগকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দেবে দিন দিন।

সরকার অবরোধ ঠেকানোর জন্য ইজতেমার ইস্যুটিকে কাজে লাগাতে পারবে বলে ভেবেছিল। কিন্তু ইজতেমার মধ্যেও অবরোধ চলছে। সরকার ঘোষণা করেছে, রাস্তায় গাড়ির ক্ষতি হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। এতে জনমনে আরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। লাশের ক্ষতিপূরণের রাজনীতি জনগণ মেনে নেয়নি। এ ধরনের ঘোষণাও হঠকারী হয়েছে। ঢাকায় অবরোধ জোরদার হয়েছে বলা যাবে না। কিন্তু প্রতিদিন গাড়িতে আগুন জ্বলছে। জনমনে আতঙ্ক ক্রমে ঘনীভূত হচ্ছে। ৬ জানুয়ারি প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গার্ডিয়ান লিখেছে, “Hasina and Zia have between them ruled Bangladesh for most of the last three decades. They have a notoriously poisonous relationship and frequently exchange insults and barbs about each other’s families.” তাদের সম্পর্ককে গার্ডিয়ান ‘বিষাক্ত-সম্পর্ক’ বলেছে। মিথ্যাচার আর হিংসাই এখানে উত্কটভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

যেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই অবস্থার সৃষ্টি -তার রাজনৈতিক বয়ান তৈরি নিয়ে এখন সহিংসতা পরিণত হয়ে উঠছে। সরকার সাংবিধানিকভাবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি জবরদস্তিমূলক নির্বাচন করে ক্ষমতাকে নিজেদের দলীয় সম্পত্তি করে নিয়েছে। এবং এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র রক্ষা’ দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। অন্যদিকে শুরু থেকে বিএনপির ডাক ছিল ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে পালন করা হবে। কে হত্যাকারী, কে রক্ষাকরী-এ নিয়ে বিবাদের শুরু। এটাকেই আমরা বলছি কৌতুকের রাজনীতি। বলাই বাহুল্য, এই প্রতিযোগিতায় ক্ষমতার দম্ভ পরাজিত হয়েছে। বিএনপি এগিয়ে আছে। বিএনপির প্রতি গণসমর্থন তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের রসিকতা ও কুরুচিপূর্ণ নিষ্ঠুরতা খালেদা জিয়ার প্রতি গণসমর্থন তৈরিতে বেশ ভালোভাবে কাজে দিয়েছে। ক্ষমতা মানে যে গায়ের জোর বা গোন্ডামি না তা আবারও প্রমাণিত হল। খালেদার ‘সফট-পাওয়ার’ বা কোমল ক্ষমতার স্ট্র্যাটেজি এগিয়ে গেল। পরে এই প্রসঙ্গে আবার ফিরব। তার আগে আমরা দেখে নিবো টাউট বুদ্ধিজিবি কি ভাবে বিএনপিকে ‘জিন্দামরা’ দলে পরিণত করতে কূটচাল চেলে যাচ্ছে।

 

ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীর নসিহত:

 

বিএনপির সাংগঠনিক দুরবস্থার কথা কারও অজানা নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপারটি হল, কিছু মতলববাজ ও ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীর খপ্পরে পড়ে বিএনপি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তথাকথিত ইসলামিস্টদের নিয়ে রাজনৈতিক গেম খেলার কুপরামর্শ বিএনপিকে ক্ষমতার দৌড়ে পিছিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির গণসম্পৃক্ততার ধরন একই রকম। এরা প্রত্যেকে মুখে জনগণের কথা বলে বটে কিন্তু কাজের কাজে জনগণ বলতে এরা বোঝে পার্টি জন। দলীয় ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে উঠে জনরাজনীতির পরিমণ্ডলে দুই দলই গরহাজির। এই অবস্থার মধ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি বা প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে কূটনৈতিক দেনদরবার। আর ঠিক এখানেই বিএনপির নজর ও ভরসা। জনগণের জন্য কোনো দাবিদাওয়া নেই এমন অভিযোগ পাশ কাটিয়ে ক্ষমতার দৌড়ে নির্বাচনবাদী ৭-দফা নিয়ে বিএনপি মাঠে হাজির হতে চাইছে। ফলে পুরনো বামপন্থী জায়গা থেকে জনগণের জন্য কোনো কর্মসূচি ছাড়াই বিএনপি ক্ষমতার জন্য নির্বাচনের দাবি নিয়ে কেন হাজির হল-এমন অভিযোগ করলে এখনকার অান্তর্জাতিক কূটনৈতিক হালচাল আমরা বুঝতে পারব না। ফরহাদ মজহার বিএনপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন। এটা বহু পুরনো অভিযোগ। ক্ষমতার পালাবদলের আগে সাধারণত বামপন্থীরা এমন অভিযোগ করে থাকেন।

 

‘৪ জানুয়ারির অবরোধ : নগদ লাভ’ শিরোনামে ফরহাদ মজহার একটি প্রপাগান্ডা কলাম লিখেছেন। শিরোনাম পড়ে মনে হবে এটা একটা গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল টাইপের রচনা। খালেদা জিয়া এখনও অবরুদ্ধ। সরকার পুলিশি অ্যাকশন বহাল রেখেছে। আর মজহার সাহেব ‘নগদ লাভ’ খুঁজছেন। হ্যাঁ লাভটা তিনি খুঁজতেই পারেন। সুযোগসন্ধানী কুযুক্তি দিয়ে তিনি আবারও চোরা ভাবে জামায়াতের লাভের অঙ্ককে কৌশলে হাজির করছেন। বলাই বাহুল্য, এতে জামায়াত বা বিএনপি কারও লাভই হবে না। মজহারের লাভ হলেও হতে পারে।

 

তিনি লিখেছেন,

“কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্না আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হওয়ার সাধনা অব্যাহত রেখেছেন। যদিও দলছুট আওয়ামীপন্থীদের মধ্য থেকে নতুন কোনো রাজনীতি পয়দা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ‘আওয়ামী লীগ, তুমি ভালো হয়ে যাও’ জাতীয় নীতিবাগীশ আওয়ামী রাজনীতিও যে বর্তমান ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রধান কারণ সে ব্যাপারে কামাল হোসেন, মাহফুজ আনাম কিংবা মাহমুদুর রহমান মান্না বেহুঁশ সেটা বলা যাবে না। তারা তা জেনেছেন কিন্তু এ ক্ষেত্রে অপরিসীম অবদানে তারা নিত্যই তৃপ্ত। কিন্তু তারা খালেদা জিয়ার এই দুর্দশায় তার প্রতি সমব্যথী হয়েছেন। খালেদা জিয়া তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে চাইছেন। বোঝা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া অনেক মিত্রকে হারালেও আওয়ামীপন্থী সুশীলদের করুণা ও সমবেদনা কিছুটা পাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির জোটবদ্ধ হওয়া তাদের কাছে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করারা ভালো একটি অজুহাত, যা তাদের স্বভাবসুলভ ইসলামোফোবিয়াকে আড়াল করে রাখতে সাহায্য করে। তাদের বাসনা খালেদা ইসলামপন্থীদের ছেড়ে সুশীল রাজনীতির কাতারে আসুক। তারা তখন হাসিনাকে থুয়ে খালেদাকে বেছে নেওয়ার একটা যুক্তি খুঁজে পাবে। প্রতারিত হওয়ার এই হাতছানি থেকে বিএনপির নেতৃত্ব মুক্ত নয়।” (চিন্তাডটকম, ৮ জানুয়ারি ২০১৪)

 

খালেদা জিয়া তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইছেন এমন কোন খবর আমরা দেখি নি। মাহমুদুর রহমান মান্না ও ড. কামাল হোসেন মজহারের এই উদ্ভট ও কাল্পনিক গল্পগাথা নিয়ে এই লেখকের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আমার পয়েন্ট এখানে না। কামাল হোসেন, মান্না বা মাহফুজ আনামদের সাংস্কৃতিক পজিশনের ক্রিটিক মজহার করছেন রাজনীতির নিরিখে। রাজনীতিও সংষ্কৃতিকে আলাদা ভাবে আলোচনার জরুরত এখনও উনি রপ্ত করে উঠতে পারেন নি। উনিও আবার কালচারাইজেশন অব পলিটিকস বলে ত্তত্ব কপচার। উনারা সেকুলার এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু মজহার নিজে কি? মজহার আরও নোংরা ভাবে সেকুলার। এটা কেমনে বুঝবেন? তাঁর জিবন যাপন চিন্তা পদ্ধতী এগুলা সবই সেকুলার। মজহারের উপদেশকে বলা যয়,‘এক কানা কয় আরেক কানারে চলো এবার ভব পারে’ । মুখে ধর্মের কথা বললেই কউ ইসলামিস্ট হয়ে যায় না। মজহারও সেকুলার মুখে যাই জপেন না কেন। এই দিক থেকে যদিও না বুঝেন তাইলে এখানেই বুঝবার মতো পয়েন্ট টা আছে। উনি জামায়াতকে ‘ইসলামিস্ট’ বলে সেকুরারদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সোজা কথা হলো জামায়াত যে ধরনের ইসলামচর্চা করে এটাকে পশ্চিম গুডমুসলিম বলবে। এর গালভরা নাম হলো, মডারেড মুসলিম। মিলিটেন্ট ইসলামের দুনিয়াব্যাপি বিস্তারের যুগে জামায়াতকে ‘ইসলামিস্ট’ শক্তি মনে করা নিন্তান্তই সেকুলার বাতিক যা শাহবাগিরা করে থাকেন। ফলে মজহার যথন জামায়তকে ‘ইসলামিস্ট’ বলে হাজির করেন আর কালচারাল সেকুলারদের ইসলামোফোবিক বলেন তখন উনার ইসলাম বুঝের হাল-হকিকত দেখে হাসি পায়। জামায়াত নিজেকে ইসলামিস্ট বলে হাজির করতে চায় না। সে বিশ্বাস অর্থে ইসলাম করে। রাজনতি অর্থে সে গণতন্ত্রের গোলাম। সে গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিই করে। আইনী লড়াইয়ে সে ব্যাপক উৎসাহে হাজির হয়। ফলে জামায়াতকে ইসলামিস্ট বলে হাজিরের রাজনীতি অতি ধান্ধাজাত। ৭১ এ জামায়াত কি করছে সেই আলোচনা এখানে প্রাসঙ্গি না। ওটা আলাদা তর্ক।

 

মজহার জামায়াতকে ইসলামিস্ট বলে হাজির করছেন, আর বিএনপিকে বলছেন সুশীলদের পরামর্শ শুনে সে যেন জামায়াতকে ত্যাগ না করে। জামায়াতের সাথে যেন আরও শক্ত ভাবে লেগে থাকে মানে আরও প্রকাশ্যে যেন জামায়াতকে সাথে নিয়ে মাঠে হাজির হয়। মাঠের সম্পর্ক আর জামায়াতের সাথে বিএনপির টেবিলের সম্পর্ক যে এক না তা বুঝতে পারেনি মজহার। জমায়াত তার নিজ গরজে ও প্রয়োজনে মাঠের একশনে আছে, থাকবে। হাসিনার জঙ্গিবাদি টার্মকাডকে চেক দিতে হলে বিএনপি এখন যে কৌশলে আছে তাকেই জুতসই বলতে হবে। জামায়াতের সাথে সম্পর্ককে মাঠে ও টেবিলে আলাদা ভাবে ভাগ করেই আগাতে হবে। এতে কূটনৈতিক মহলের সুবিধাটা পুরোপুরি পাবে বিএনপি। এটা জামায়াতও বুঝে। মজহারের মতো হঠকারি চিন্তার খপ্পরে পড়লে আবারও হেফাজত আমলের মতো পরিণতি হবে বিএনপির। তখনও এই টাউট বুদ্ধিজিবি সক্রিয় ছিল। ফলে এখনই সাবধান হতে হবে।

 

খেয়াল করলে দেখবেন, জামায়াতের প্রতি বিএনপি এক ধরনের নিস্পৃহ আচরণ দেখিয়েছে। এই আচরণের ফলে এখনকার ‘সুশীল’ রাজনৈতিক সমাজ বিএনপির উপর খুশি। এবং কূটনৈতিক দেনদরবারে বিএনপির এই অবস্থান সহায়ক হচ্ছে। মজহারের ভণ্ডামি হচ্ছে, জামায়াতকে বিএনপির সঙ্গে একজোট হয়ে থাকার পরামর্শ দিয়ে যাওয়া, আবার জামায়াতকে ইসলামিস্ট বলে হাজির করা, এর ফলে জঙ্গিবাদের ট্রাম্পকার্ড চেলে আবারও বিএনপিকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দেওয়া। এটাকেই বলে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বিমুখী গাদ্দারি। অন্যদিকে জামায়াত কোনো ইসলামিস্ট শক্তি নয়। জামায়াত কোনো জঙ্গি শক্তিও নয়। জামায়াতের সঙ্গে লীগেরও মিত্রতা হয়েছিল ক্ষমতার প্রয়োজনে। বিএনপির মিত্রতাও ক্ষমতার প্রয়োজনে। জামায়াত তার হিসাব তার মতো করেই পুষিয়ে নেয়। জামায়াতের সঙ্গে আমেরিকার ভালো সম্পর্ক সবারই জানা। আমেরিকা কোনো জঙ্গি শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে এটা ভাবাও যায় না। ফলে জামায়াতকে জঙ্গি শক্তি আকারে বা ইসলামিস্ট আকারে হাজির করা, আবার এর প্রতিবাদ করা, আবার বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে লেগে থাকার পরামর্শকে ভণ্ডামিপূর্ণ চতুরতা হিসেবে দেখতে হবে।  সম্পর্কটাকে আদর্শিক করে তুললে বিএনপি ও জামায়াত উভয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হবে আর সুবিধা পাবে হাসিনার তখাকথিত জঙ্গিবাদের ও চেতনার রাজনীতি। ফলে মজহারের কুপরার্মশ থেকে বিএনপি দূরে থেকে সঠিক সীধান্ত নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

এই অবস্থায় বিএনপি যে লাইনে আগাচ্ছে তা স্রেফ কূটনৈতিক লাইন। আর এখানে জামায়াতের অবস্থানও নির্ধারিত। আদর্শিকভাবে জামায়াতের তথাকথিত ইসলামপন্থার সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রকল্পের’ জন্য সুবিধাজনক হবে। ফলে যারা বিএনপিকে জামায়াতময় হয়ে উঠতে পরামর্শ দেয় এরা সরাসরি মার্কিন যুদ্ধ প্রকল্পের দালাল। এরা সরকারের একমুখী নীতিরও গোপন সঙ্গী। প্রকাশ্যে বিশাল বিপ্লবী। বাংলাদেশের এই চাতুরী বুদ্ধিজীবীতা রাজনৈতিকভাবে আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে।  বিএনপি কেন সঠিক লাইনে আছে তা বুঝতে হলে আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতির দিকে একটু তাকাতে হবে।

 

কোমল ক্ষমতা কূটনৈতিক পরাধীনতার রাজনীতি:

রাজনীতিতে ক্ষমতার প্রশ্নের নানার ডাইমেনশন বা বৈচিত্র্য দেখা যায়। ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসানের পরে সারা দুনিয়ায় মার্কিন ক্ষমতা বেশ পোক্ত হতে শুরু করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের বছরেই (১৯৯০ সালে) হারভার্ড তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানী জোসেফ ন্যাই-ই ফরেন পলিসিতে একটি প্রবন্ধ লেখেন সফট পাওয়ার বা কোমল ক্ষমতা নামে। তিনি তর্ক তোলেন ক্ষমতাটা সব সময় অস্ত্র বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হাসিল বা তৈরি করা যায় না। কোমল ক্ষমতা বলে একটা ব্যাপার আছে যা কূটনৈতিকভাবে আমেরিকাকে সারা দুনিয়ায় প্রভাবশালী করে তুলছে। তিনি মত দেন, শুধু বাহুবল নয়, বাহুবলের বাইরে কোমল ক্ষমতার প্রভাব অনেক বেশি সম্প্রসারিত। প্রথম প্রথম বেশ ঠাট্টা-মশকরা করা হয়েছিল তার এই তত্ত্বায়ন নিয়ে। ৯/১১-এর পরে আমেরিকা যখন অনেকগুলো যুদ্ধে পর পর জড়িয়ে গেল কিন্তু যুদ্ধের ফলে মার্কিন প্রভাব বাড়ার বদলে কমতে থাকল তখন কূটনৈতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও মতাদর্শিক কিছু উদ্যোগ আমেরিকাকে বেশ সুবিধা দেয়, তখন জোসেফ আবার আলোচনায় আসেন। তিনি মনে করেন, প্রপাগান্ডা শুধু প্রপাগান্ডা নয়, এটা দ্বারা ক্ষমতা তৈরি করা যায়। এবং দেনদরবার ও অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপ সেনা হস্তক্ষেপের চেয়ে কম কার্যকর নয়। এর ফলে মার্কিন নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসে। যুদ্ধকে পাশ কাটিয়ে কোমল ক্ষমতার বিস্তার ঘটানোই এখন মার্কিন নীতির গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

এই দিকটি মাথায় রাখলে আমরা খালেদা জিয়ার পেশিশক্তির ঘাটতিকে নতুন ক্ষমতার পটভূমি আকারে বুঝতে পারব। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে খালেদা জিয়ার আচরণ খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বারবার অহিংস আন্দোলনের কথা বলেন। তাকে অবরুদ্ধ করে তার প্রতীকী ক্ষমতাকে কোমলভাবে বিস্তার ঘটাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দুনিয়ায় কোমল ক্ষমতার কদর আগের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে খালেদার কোমল আচরণ গণতান্ত্রিক ভাবে পশ্চিমের কাছে বেশি গ্রহণ যোগ্য হবে। লীগ যতই গোন্ডামি করবে ততই পিছাবে ক্ষমতা থেকে আর এগিয়ে যাবে এক্সজিট ডোরের কাছে।

 

সঙ্গে কূটনৈতিক পরাধীনতার রাজনীতিটাও খেয়াল করা দরকার। ১০ জানুয়ারি দৈনিক সকালের খবর শিরোনাম করেছে, ‘বিবৃতি ও ফোন নিয়ে ধূম্রজাল’। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা ও তারেক রহমানের খবর প্রচারে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের বিবৃতি দেওয়ার খবর নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে এখন আলোচিত খবর হল, বিজেপির প্রধান অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করেছেন। মারুফ কামাল সোহেল স্বাক্ষরিত একটা বিবৃতির সূত্রে এটা মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এটা ভুয়া বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে। বিএনপির তরফে যারা অতিউতৎসাহী হয়ে এ ধরনের খবর মিডিয়ায় প্রচার করে সুবিধা নিতে চেয়েছেন তাদের কোনোভাবেই বিএনপির জন্য কল্যাণকর শক্তি বলা যাবে না। এরা বিএনপির মধ্যে এক একটা কালসাপ হয়ে বসে আছে। অন্যদিকে সরকার যেভাবে এটাতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তাতে মনে হচ্ছে অমিত শাহের ফোনে বাংলাদেশের ক্ষমতার হেরফের হয়ে যেতে পারে। রাজনীতিতে জনসম্পৃক্ততার কথা বলছিলাম একটু আগে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির জনসম্পৃক্ত ধারণ এই কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপের সময় বারবার উদোম হয়ে যায়। সরাকার অমিত ইসূকে এমন ভাবে হাজির করল যাতে সরকারের ভারত অবসেশন আবারও আমরা জানতে পারলাম। আর জানতে পারলাম বিএনপিকে নষ্ট করার জন্য ঘরের লোকই যথেষ্ট। এইসব খুচরা চালকি পাশ কাটিয়ে সাউথ এশিয়াতে কোমল ক্ষমতার নীতি এখন বেশি গুরুত্ব পাবে। বিজিপির ক্ষমতায় আসার আগে মার্কিন নীতির পুরোপুরি বিজেপীর জন্য অনূকূল হয়ে উঠেছিল। কেজরি ওয়ালকে দিয়ে কনগ্রেসকে বেশ ভাল দাবড়ানি দেয়া হয়েছিল। ফলে বিজেপী কনগ্রেসের মতো বাংলাদেশে আমেরিকার উপর অভারটার্ম করবে না এমনটা সহজেই অনুমান করা যায়। ফরে আমেরিকা ও পশ্চিমের কোমল নীতি আর মাঠের গ্রহণযোগ্যতা ও অচালবস্থা বিএনপিকে আরও পরিণত করবে। ধীরে ধীরে ক্ষমতার জন্য পিপল কজ তৈরি হবে। এতে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে সরকার সুবিধা করতে পারবে না। কারণ নীতির পরির্বতনের সাথে সাথে কিং মেকার কাগজগুলোর ( প্রথম আলো ও ডিইলীস্টর দেকলে বুজবেন) ভূমিকা ইতিমধ্যে পাল্টে গেছে। ফলে কোমল ক্ষমার প্রত্যবির্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি।

 

আর এই সময়ে বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক সেজে ক্ষমতাধরদের অনুকূলে জাতীয় রাজনীতিকে এমনভাবে সাজান যেন একটা নির্বাচন হলেই জাতীয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই নির্বাচনবাদী গণতন্ত্রের বয়ান আমাদের কাবু করে রাখছে। আমাদের শাসনকাঠামোতে গণশক্তির গরহাজিরা পলিটিক্যাল ও ননপলিটিক্যাল এলিট ও তাদের অনুসারী বুদ্ধিজীবী মিলে পরিস্থিতিকে ভৌতিক করে তুলছে। গণতন্ত্রের নামে, জনগণের নামে জনবিরোধী রাজনীতির খুন উত্সব দেখছি কেবল। এ ধরনের দেউলিয়া আচরণ আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, আমাদের রাজনীতি ও ক্ষমতার চাবি আমাদের দেশের জনগণ ও মানুষের হাতে নেই। বাইরের কূটনৈতিক শক্তি ও তাদের এলিট এজেন্টরা ক্ষমতার চাবিকাঠি নাড়েন। মিডিয়াও সেভাবে জনমতের সেইপ বুঝে খবর করে। আমরা নির্বাচন বা ক্ষমতা পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে থাকি। ভায়োলেন্স চলে। সহিংসতার ভাষ্য তৈরি করা হয় জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য। চলে রটনার খেলা। প্রধান আকর্ষণ থাকে দেশের নয়, বাইরের নজর ফেরাবার চেষ্টা। কূটচালের ফেরে আমরা বুঝতে পারি আমার ঘরের চাবি পরের হাতে।

 

লেখক : কবি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

আওয়ামীদের হাড়ে কি আবার কাঁপন লেগেছে?

lig2-300x200

by zainudin sani

বাজারে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আওয়ামীরা হঠাৎ ঘাবড়ে গেল কেন? গত একবছর তো বেশ সাহসের সাথেই চালাল। হঠাৎ এতো আগ্রাসী হয়ে ওঠার দরকার কি? কি হত একটা সমাবেশ করতে দিলে। গাজীপুরেরটাই বা আটকানোর দরকার কি ছিল। ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’এর সাথে ছন্দ মিলিয়ে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ পয়দা করার দরকারই বা কি ছিল। নিজেদের ম্যোরাল বিজয় দেখানো? মুখে যত বড়বড় কথাই বলুক, আওয়ামীরা বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁরা বেশ বিচলিত। মনে মনে প্রত্যাশা করছে, ভালোয় ভালোয় এই শীতকাল যেন পার হয়ে যায়।

২০০৮এ নির্বাচিত হওয়ার পর যেভাবে আওয়ামীরা দেশ চালিয়েছিল, তাতে দুটো ব্যাপার বেশ পরিষ্কার ছিল। যে যাই বলুক, আমরা নিজেদের মত চলব, প্রয়োজনে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে। স্বৈরতান্ত্রিক তাঁরা আগেও ছিল, তবে এবার তিন চতুর্থাংশ পেয়ে সম্ভবতঃ তাঁদের মাথা আরও বেশি বিগড়াল। বিএনপির ৩২ দেখে ভাবল, ওদের আর কোন আশা নেই। দ্বিতীয়টি যে ব্যাপারটি স্পষ্ট ছিল তা হচ্ছে রাজাকার ইস্যু থেকে যতটা ফায়দা তোলা যায়, সেটা তোলা। দ্বিতীয় প্ল্যানটা খারাপ না হলেও প্রথম দিকে খুব কাজে দিচ্ছিল না। ব্যাপারটাকে অনেকটা বিএনপি জামায়াত বিভেদ তৈরির প্ল্যান হিসেবে দেখছিল সবাই। ভেতরে কি ঘটছিল তা নিয়ে মতামত দেয়া সম্ভব না, কারণ বিচারালয় নিয়ে প্রশ্ন করা সম্ভব না। তবে সবার মনেই সন্দেহ ছিল, জামায়াতের সাথে ভেতরে ভেতরে কোন আঁতাত হচ্ছে। তারপর ঘটনাটা ঘটল।

কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন আর তার বিজয় সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখানো, বিস্ফোরণ ঘটাল। এমন যে ঘটবে বা ঘটতে পারে, তা আওয়ামীরা স্বপ্নেও ভাবেনি। গণজাগরণকে প্রথমে পাত্তা না দিলেও, অচিরেই তাঁদেরকে পাত্তা দিতে বাধ্য হল। রাজাকারদের বিচার চলাকালীন রাস্তায় বিচার বিরোধী অবস্থানই দৃশ্যমান ছিল। বিচারের সমর্থনে তেমন কিছুর দেখা মিলছিল না। তাই একটি রায়ের বিরুদ্ধে এতো বড় সমাবেশ হবে, সরকার নিজেও বোঝেনি। কোন মিছিল মিটিং হরতাল ছাড়া, কেবল অবস্থান দিয়ে যে সরকারের হাড়ে কাঁপন ধরান সম্ভব, ব্যাপারটা প্রথম অনুধাবন করল আওয়ামীরা।

ব্যাপারটা বেগতিক হতে পরে দেখে তা ধ্বংসের প্ল্যান করতে হল। এমনও একটা কিছু যে আবার এই ধরনের অবস্থান তৈরি না হতে পারে। যদিও অবস্থানটি ছিল সরকারের আঁতাতের বিরুদ্ধে, তারপরও আওয়ামীরা অচিরেই বুঝে গেল, এই আন্দোলন পকেটে ঢোকান সম্ভব। আর এই সোজা কাজটা ছাত্রলীগ করে দিল। প্রথমে মঞ্চ ক্যাপচার, এরপরে সাধারণ জনতার মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং অবশেষে, হালুয়ারুটির ভাগাভাগি নিয়ে দ্বিখণ্ডিত করন। পুরো ঘটনার যে সারাংশ দাঁড়াল, ‘এই ধরনের আন্দোলন তৈরিই হয় বিক্রি হওয়ার জন্য’ আন্দোলনটির এমন একটি ছবি চিত্রায়িত হল। দুটো সুবিধা হল, রাজাকার প্রশ্নে, আওয়ামীরা তাঁদের নিজ ফর্মুলায় ফিরে যেতে পারল আর এটাও নিশ্চিত করতে পারল যেন এরপরে যুব সমাজ আর কখনই এই ধরনের কোন ডাকে সাড়া না দেয়।

সরকারের হাড়ে দ্বিতীয় কাঁপনটি জাগিয়েছিল, হেফাজত। ফর্মুলা একই। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান। বেশিদিন চালাতে পারলে, সরকারের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা শুরু হয়ে যেত। এদের সামলানোর জন্য একই ফর্মুলা চলবে না, সেটা আওয়ামীরা বুঝেছিল। ধর্ম ব্যাপারটার সঙ্গে আওয়ামীদের সখ্য খুব বেশি না। ফলে ছাত্রলীগ দিয়ে এই আন্দোলন কব্জা করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে মুল সুবিধা ছিল অন্য জায়গায়। এই আন্দোলনে আসা জনতার অনভিজ্ঞতা। তাঁদের মনে হয়েছিল, জ্বালাও পোড়াও মানেই বিজয়। যে শিশুদের নিয়ে এই অবস্থান আন্দোলন তৈরি হয়েছিল তাঁদের সাহস ব্যাপারটাও ছিল একটি ইস্যু। আর সেই রাতের অতর্কিত আক্রমণও ছিল অপ্রত্যাশিত, বা হয়তো তাঁদের নেতাদের কাছে প্রত্যাশিত এবং প্রকাশিত। যাই হোক অপারেশান সাকসেসফুল।

এই দুই ঘটনার পর থেকে, সরকারের অবচেতনে একটি ব্যাপারই তাড়া করছিল, আর তা ছিল অবস্থান আন্দোলন। ঢাকার প্রবেশ মুখে একবার যদি বিরোধী দল অবস্থান শুরু করতে পারে, তবে কাহিনী পাল্টাতে সময় লাগবে না। আর সেই অবস্থানে যদি ম্যাডাম স্বয়ং থাকেন, তবে তো পরিণতি আরও ভয়ানক হয়ে যাবে। অন্তর্কলহ আর একরাশ মামলা দিয়ে যত সহজে বিএনপি নেতাদের কাবু করা গেছে, একবার অবস্থান আন্দোলন শুরু হয়ে গেলে, তাঁরাও পকেট থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করবে। বিএনপি নেত্রীকে মামলা দিয়ে থামানো যাবে না, জানতো। ফলে নতুন কোন প্ল্যানিং জরুরী ছিল। তবে গনতান্ত্রিকভাবে তা করা সম্ভব না, এটাও জানত। রাস্তা একটাই ছিল, তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দেয়া। কিংবা একাকী করে দেয়া।

সত্যিকারের নির্বাচন হলে যে হারবে, আওয়ামীরা সেটা জানতো। আবার এও জানতো, আন্দোলন করে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী তাঁরা মানাতে পারবে না। হোলও তাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার জবাই করবার পর থেকে বিএনপি কোন আন্দোলনই দানা বাঁধাতে পারেনি। হরতাল আর অবরোধ, সেই অর্থে আর রাজনৈতিক হাতিয়ার নেই। আর দুইএকদিনের এমন কর্মসূচীতে আজকাল আর সরকার কর্ণপাতও করেনা। আর তাই গতবছরের ৫ই জানুয়ারির পর থেকে সরকার বেশ আরামেই ছিল। আওয়ামীদের জন্য ভয়ের সময় বলতে এই শীতকাল। এটা পার হলেই, পরিস্থিতি আবার নিয়ন্ত্রণে। আর বিএনপির জন্যও আশার সময় এই শীতকাল। যা করার এই সময়েই করতে হবে। মামলা আর অন্তুর্কলহের কারণে বিএনপি এখন পর্যুদস্ত। টিমটিম করে আশার যে বাতিটি জ্বলছে, তা জ্বালিয়ে রেখেছেন বিএনপি নেত্রী।

আওয়ামীরা ঠিক করল, নেত্রীর ওপরও আঘাত হানবে। মামলার দিন পড়তে লাগল। মামলায় কাজ হবে না, আওয়ামীরা জানে। তবে কিসে কাজ হবে, সেটা জানে না। এদিকে হরতালও যে কাজে দেবে না, সেকথা বিএনপিও জানে। কিসে কাজ হবে, সেব্যাপারেও তাঁরা বেশ অনিশ্চিত। সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে, আওয়ামী সরকারের হাড়ে কাঁপন ধরাতে পেরেছিল কেবল অবস্থান আন্দোলন। আর সেটা যদি হয়, ঢাকার প্রবেশ মুখে। আওয়ামীদের ভেতর সেই জুজুর ভয় ছিলই। তাই সম্ভবতঃ তাঁরা ঠিক করে রেখেছিল, ঢাকার প্রবেশ মুখে সমাবেশের কোন সুযোগ দেয়া হবে না। প্রয়োজনে ‘নেড়িকুত্তা’ ইফেক্ট দিতেও তাঁরা রাজী ছিল। নেত্রীকে ঢাকার বাইরে সমাবেশ করতে দিলেও, ঢাকার প্রবেশ মুখের আশে পাশে করতে দেয়ার ঝুঁকি নিতে রাজী ছিল না আওয়ামীরা। সেই ফর্মুলার প্রথম প্রকাশ দেখা গেল গাজীপুরে।

সমাবেশের পরবর্তী প্ল্যান বিএনপি করেছিল ৫ই জানুয়ারী। সেটা আটকাবার ফর্মুলা হিসেবে তাঁরা ব্যবহার করল, ‘মার্চ ফর ডেমক্রেসি’র পুরনো ফর্মুলা। ম্যাডামকে অন্তরীন রাখা। আর সেটা করবার জন্য সেই বালুর বস্তা। হয়তো প্রত্যাশা ছিল, আবার রেগে গিয়ে ‘গোপালি’ বলবেন। টুই তোকারি করবেন। তবে এবার তিনি শান্ত ছিলেন। তবে বরাবরের মত সমালোচনা হল, বিএনপির অন্য নেতাদের মেরুদণ্ডহীনতার। মামলার ভোয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার। প্রথম দিকে সরকারকে বিজয়ী মনে হলেও, পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করেছে মনে হচ্ছে।

আসলে ৫ই জানুয়ারী নিয়ে আওয়ামীদের প্ল্যানিং বেশ অগোছাল মনে হয়েছে। বালি, খোয়ার ট্রাকের মত হাস্যকর ফর্মুলা, ইচ্ছে করে নেয়া, না ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ আটকাবার ফর্মুলার রিপিট টেলিকাস্ট, বোঝা যাচ্ছে না। কারণ যেটাই হোক, আগেরবার ফর্মুলাটা কাজে দিয়েছিল। তবে এবার কাজটা যেভাবে বিদেশী মিডিয়ায় এসেছে, আর তালার যে দৃষ্টিকটু ব্যবহার হয়েছে, তা সরকারের জন্য খুব সুখকর হয়নি। এই মুহূর্তে ব্যাপারটা বেশ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। না পারছে তালা খুলে দিতে, না পারছে তালা লাগিয়ে রাখতে। তারচেয়েও বড় সমস্যা, খুব যুক্তিযুক্ত কোন ব্যাখ্যাও দিতে পারছে না এই ‘তালা’র। সবার সামনে স্বীকার করতে পারছে না, ম্যাডামকে ছাড়লে, আর তিনি একটি সমাবেশকে অবস্থান আন্দোলনে পরিণত করতে পারলে, আমাদের গদি নড়ে উঠবে। গণজাগরণ আর হেফাজতের পরে সম্ভবতঃ প্রথমবারের মত আবার আওয়ামীদের হাড়ে কাঁপন লেগেছে। দেখা যাক এবার কি হয়।

বিএনপির ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইন, বিএনপি নিজেই

bnp-final1

by zainuddin sani

হচ্ছি হচ্ছি করেও বিএনপির কিছু হচ্ছে না। আন্দোলনকে অংকুরে বিনাশের যে স্ট্র্যাটেজি আওয়ামীরা নিয়েছে, তাতে ভালোই কাজ দিচ্ছে। সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব আওয়ামীদের দেয়া ঠিক হবে না। কিছুটা কৃতিত্ব অবশ্য বিএনপিরও। নিজেদের অন্তর্কলহ থেকে শুরু করে নেতৃত্বের থাকা দুই জেনারেশানের একে অপরকে অবিশ্বাস, আওয়ামীদের কাজ আরও সহজ করে দিয়েছে। যেমনটা সাধারণতঃ হয়, অতি আত্মবিশ্বাস পতন ডেকে আনে, তেমনটা সম্ভবতঃ হতে যাচ্ছে, আওয়ামীদের। তাঁরা ভেবে বসে আছে, বিএনপি মাঠে নেই এই তথ্য যত প্রচারিত হবে, বিএনপির জন্য তা ততো ক্ষতিকর হবে। তবে ঘটনা সম্ভবতঃ তেমনটা ঘটছে না।

সহানুভূতি ব্যাপারটা বোধহয় কিছু নিয়ম মেনে চলে। তার একটা হচ্ছে অত্যাচারিতের দিকে ধাবিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। এই মুহূর্তে বিএনপির জন্য সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপারটা কাজ করছে, তা হচ্ছে ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে যে তথ্য জনগণ পাচ্ছে, তা এমন একটি ছবি প্রকাশ করছে যে বিএনপি ভয়ানক অত্যাচারের শিকার। তাঁদের নেত্রী একটি সমাবেশ করতে চাইছে, তাঁকে সেটা করতে দেয়া হচ্ছে না। অফিস থেকে বেরোতে চাইছে, তাও দেয়া হচ্ছে না। কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে বালু আর খোয়ার ট্রাক এর আগমন সবকিছু মিলিয়ে সহানুভূতি এই মুহূর্তে পুরো মাত্রায় চলে যাচ্ছে বিএনপির ঝুলিতে।

আওয়ামীদের বদান্যতায় কিংবা নির্বুদ্ধিতায় পাওয়া এই সুবিধাগুলো পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছে না বিএনপি। প্রথম সারির নেতারা বেশ স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, গ্রেফতার হতে তাঁরা রাজী না। হুমকি ধামকি দিতে বলেন, আমি আছি কিন্তু রাস্তায় মিছিল বের করতে পারব না। কোন সমাবেশে ভাষণ দিতে পারবো না। হরতালের দিনে রাস্তায় থাকতে পারবো না। তাই বলে আমাকে বা আমার চামচাদের কোন কমিটিতে রাখবেন না, তাও করতে দেব না। নতুন কোন নেতাদের আমদানী করবেন, সেটাও বরদাশত করব না। ফলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিএনপির রাজনীতি পুরোপুরি নেত্রী নির্ভর হয়ে বসে আছে।

প্রথম সারির নেতাদের এই স্বার্থপরতা দৃষ্টিকটু দেখালেও, তাঁদের এই অবস্থানের একটি নিজস্ব যুক্তি তাঁদের কাছে আছে। তাঁরা বেশ ভালো করেই জানেন, বিএনপি এই আন্দোলনে জিতলে, তাঁদের পায়ের তলায় আর কোন মাটি থাকবে না। বিএনপির ক্ষমতায় আরোহণ মানেই লন্ডন প্রবাসী নেতার প্রত্যাবর্তন। আর তিনি ফিরে দলের দ্বায়িত্ব নিলেই যাত্রা শুরু হবে তার নতুন ‘টীমে’র। আর সেই টীমে, পুরনোদের জায়গা হবে না। উপদেষ্টা জাতের কিছু আলংকরিক পদ দেয়া হতে পারে, তবে কর্তৃত্ব বলে কিছু থাকবে না। তাঁদের চোখের সামনেই তাঁদের এলাকায় নতুন আরেকজন নেতার উদয় হবে। দেখতে দেখতে তাঁদের চোখের সামনেই তাঁদের রাজনৈতিক মৃত্যু হবে। ফলে পুরনো নেতাদের এক বিশাল অংশ চাইছেন না, সেকেন্ড ইন কমান্ড দেশে ফিরুক।

এই মুহূর্তে বিএনপি দ্বিতীয় যে সমস্যায় আছে তা হচ্ছে, বিশ্ব ইজতেমা। সেকারণে অবরোধে ছাড় না দিলেও সমস্যা আবার দিলেও সমস্যা। ছাড় না দিলে, বিশাল এক জনতা অভিমান করবে। ভাববে, আমাদের কষ্টের কথা একবারও ভাবল না? আর অবরোধের কারণে যদি তাঁরা যোগ দিতে না পারে, তবে সেই অভিমান নতুন মাত্রা পাবে। দেশের অবস্থা ভেবে অনেকে মেনে নিলেও, সংখ্যায় তাঁরা হবেন বেশ কম। ওদিকে অবরোধে একবার ছাড় দিলে, আন্দোলনে আবার গতি আনা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। হয়তো অসম্ভবও। আর তেমনটা হলে, এই বছরের মত আন্দোলনের ইতি। এরপরের বছর আবার কিছু করবার চেষ্টা করলে, এই বছরের ব্যর্থতা তাঁদের পিছু ছাড়বে না।

এতোসব সমস্যার মধ্যে যুক্ত হয়েছে বিএনপির সমর্থক বুদ্ধিজীবী আর তার্কিকের আকাল। তাঁদের পক্ষ হয়ে লেখার জন্য নেই তেমন কোন কলামিস্ট, টক শো তে গিয়ে তাঁদের হয়ে ঝগড়া করবার জন্য নেই তেমন কোন তার্কিক। সঙ্গে যোগ হয়েছে, বিএনপি পন্থী চ্যানেল আর পত্রিকার অভাব। যাও দুএকটা ছিল, আপাততঃ বন্ধ আর নয়তো কেউই সেসব দেখে না বা পড়ে না। ফলে মিডিয়া ফ্রন্টে তাঁরা তাঁদের কথা, বলতেও পারছে না। আর যাদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে, তাঁদের পারফর্মেন্স বেজায় ভয়ংকর। সঙ্গে যোগ হয়েছে তারেক রহমানের বাণী। দলের কার্যক্রমকে যদিওবা কোন ভাবে ‘ডিফেন্ড’ করছে, ‘রাজাকার’ ইস্যু একেবারেই তাঁদের নাকাল করে ছেড়েছে। পুরনো নেতারা এখন আত্মগোপনে, নতুন নেতারা এখনও ভালো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেননি।

এমন একটা ফাঁকা মাঠ আওয়ামীদের জন্য মজার এক সমস্যা তৈরি করে দিয়েছে। নিশ্চিত জয় দেখতে পেয়ে তাঁরা এই মুহূর্তে খেলার বদলে উল্লাসের দিকেই মনোযোগী হয়ে উঠেছে বেশি। সারাক্ষণ শ্লেষাত্মক কথা, বিএনপি নেত্রীকে অপমান করা, বাকি নেতাদের ‘নেড়িকুত্তা’র মত পিটুনি দিতে চাওয়া, এসবের ভেতরে তাঁরা তাঁদের জয় দেখতে পাচ্ছেন। গায়ের জোরে পাওয়া বিজয়কেই তাঁরা রাজনৈতিক বিজয় ভাবছেন। ভুলে যাচ্ছেন, রাজনীতির খেলায় সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে জনগণের বিবেচনা। তাঁরা কি ভাবছে, সেই ব্যাপারটা মাথায় রাখা। আর বিরোধী দলের প্রতি সহানুভূতি তৈরি হতে না দেয়া। ক্ষমতার দম্ভ দেখাতে গিয়ে, তাঁরা বিরোধী দলকে অত্যাচারিত একটি দল হিসেবে জনগণের কাছে উপস্থাপন করে ফেলছে।

এতো কিছুর পরও হয়তো কিছু নাও হতে পারে। বিএনপির যে দৈন্য দশা, হয়তো তাঁরা আন্দোলনে বিফলও হতে পারে। বলা যায়, এদেশের সব আন্দোলনই বিফল। এক ৯৬ ছাড়া বাকী সব আন্দোলনই একটি কাজ করেছিল, আর তা হচ্ছে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এই আন্দোলনগুলোর কোনটিই হয়তো সফল হত না, যদি না সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলে আগ্রহী হত। তবে ১/১১এর পরে নিজেদের যেভাবে তাঁদের গুটিয়ে নিতে হয়েছে তাতে এই মুহূর্তে তাঁরা তেমনটা আর করবেন বলে মনে হচ্ছে না।

ঘুরে ফিরে বিএনপির এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় বন্ধু হচ্ছে আওয়ামীরা এবং তাঁদের অতি আত্মবিশ্বাস। বিএনপির দৈন্য দশা, বিএনপির ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা তাঁদের ইনফর্মাররা, যেভাবে প্রতিনিয়ত বিএনপির আন্দোলনকে ‘স্যাবোটাজ’ করছে আর তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে অচিরেই তাঁরা বিএনপির সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুতে পরিণত হতে যাচ্ছেন। আর শত্রু কিংবা বলা যায় ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইন হচ্ছে, বিএনপি নিজে। এই নতুন শত্রুর সঙ্গে কিভাবে মোকাবেলা করবে, কিভাবে আন্দোলন এগিয়ে নেবে, সেটাই এখন দেখার ব্যাপার।

দ্যা গ্রেট বিএনপি ফ্লপ শো

bnp-final1

by zainuddin sani

শো টা যে ফ্লপ করবে, কিছুই যে করতে পারবে না, তা কমবেশি সবাই জানতো। তারপরও দলীয় নেতা কর্মীরা টিভি সেটের সামনে বসেছিল। সারকারী অঘোষিত হরতাল না হলেও, মনে হয় না তাঁরা ঢাকায় যেতেন। সাধারণ জনতার যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। অলৌকিকভাবে ‘নুর হোসেন’ জীবিত হলে, সেও নিশ্চিত যেত না। শুধু বিএনপির আন্দোলন না, ‘গনতন্ত্র উদ্ধার’ মার্কা কোন আন্দোলনেই যেত না। নব্বইয়ে একবার উদ্ধার করে শখ মিটে গেছে। তবে রাজনীতি প্রিয় বাঙালির, রাজনীতি নিয়ে কথা বলা হয়তো থামাবে না। রাস্তায় নামবার ভুল এখন আর কেউ করে না। দলবাজি এখন সবাই করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে।

সমর্থক যে নেই, তা কিন্তু না। তবে তাঁরা সব কিছু দেখে, খেলা দেখার মেজাজ নিয়ে। টিভি সেটের সামনে বসে, নিজ নিজ দলের হয়ে উল্লাস করার জন্য। আর সাধারণ জনগণ বসেছিল গত বছরের স্মৃতি রোমন্থন আর ‘যে কোন মুল্যে’র মানে কি তা বোঝার জন্য। মানেটা গাজীপুরের দিনও বুঝেছিল, তবে ভেবেছিল, সেখানকার দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে, একটি লোকাল কারণে, শো ফ্লপ হয়েছিল। এবার ঘটনা ঢাকায়, নেতা কর্মীরাও আছে, বড় বড় হুশিয়ারি আসছে, অতএব এবার কিছু একটা হবে।

বিনোদন দেয়ার আওয়ামীদের ক্ষমতা নিয়ে কারোরই তেমন কোন সন্দেহ ছিল না। শ্লেষ মেশানো কথা বলায় কেউই কম যায় না। তবে বর্তমানে এবিষয়ে আওয়ামীরা একধাপ এগিয়ে আছে। সেসব শোনার পরের দৃশ্য ছিল রাজপথ। পুলিশ আর ছাত্রলীগের ‘ডেডলি কম্বিনেশান’ গাজিপুরের মত এখানেও খেল দেখাবে, তা সবারই জানা ছিল। একেবারে ‘কপি ক্যাট’ হলে দর্শক কমে যাবে দেখে মনোরঞ্জনের নতুন কিছু রসদও রাখা হয়েছিল। মায়া সাহেবের লুঙ্গি কিংবা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ এর সংযোজন হল। সবাই না হলেও অনেকেই এই নিয়ে আশাবাদী ছিল— কিছু নতুন মনোরঞ্জন আসছে।

সেই আশার গুড়ে অচিরেই বালি পড়ল। আওয়ামী নেত্রীর সেই পুরনো ঘ্যানঘ্যান আবার শোনালেন। সঙ্গে নতুন যা ছিল, তা হচ্ছে বিএনপি নেত্রীর নাটকের পাণ্ডুলিপি পড়ে শোনালেন। এছাড়া আওয়ামীদের তরফ থেকে বড় ধরনের তেমন কোন নতুনত্বের দেখা পাওয়া যায়নি। হয়তোবা তাঁরা দেখাতে চায়ও নি। এক বালুর বস্তা দিয়েই যদি কুপোকাত করা যায়, তবে আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাবার দরকার কি? তারপরও, কিছুটা ছিল।

আগেরবার ছিল বালুর বস্তা, এবার আর বস্তায় বালু ঢোকাবার প্রয়োজন বোধ করেনি। বালুর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছিল খোয়া, মাটি এসবের ট্রাক আর তাদের ড্রাইভারের মুখে মজার সব গল্প। দরজার তালাটিকেও নতুন সংযোজন বলা যেতে পারে। এবারের সত্যিকারের নতুনত্ব ছিল ‘স্পাই থ্রিলার’। আওয়ামীদের প্ল্যান আগে থেকে জেনে যাচ্ছিল বিএনপি আর বিএনপির প্ল্যান তৈরির সাথে সাথে চলে যাচ্ছিল আওয়ামী নেত্রীর কানে। এই প্লট আর কাউন্টার প্লটের খেলাটা এবার সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হয়েছে।

বিএনপির তরফ থেকে নতুনত্বের অভাব থাকলেও সময়টা খারাপ কাটেনি। পিকাপ ভ্যানে করে কয়টা কম্বল, কয়টা ম্যাট্রেস আসল, কোন ঘরকে ম্যাডামের বেডরুম বানানো হল, এসব খবর একেবারেই আনকোরা। আসলে সবাই গতবছরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ র সঙ্গে ঘটনা মেলাচ্ছিলেন। ‘ডায়ালগ বাই ডায়ালগ’, ‘সিন বাই সিন’। ম্যাডাম এবার একেবারে হুবহু নকল করেননি। সেবারের তুলনায় এবার একটু মুডে ছিলেন। রাগে গড়গড় করতে করতে সেই ‘গোপালি’ আর ‘তুই তোকারি’ ছেড়ে এবার ‘ক্যান রে ভাই’ এ এসেছেন। কিছুটা হলেও নতুনত্ব।

খেলায় কে জিতল তা নিয়ে আপাতত কিছুদিন ‘টক শো জীবীরা’ গলা ফাটাবেন। দলের নেতারা আসলে দুই ম্যাডামের গুণগানে কিছুদিন কান পাতা দায় হবে। একে অপরকে গালিগালাজও হয়তো করবেন। ‘গনতন্ত্র হত্যা’ ‘রাজাকারদের দোসর’ ‘ট্রেন মিস’ ‘২০১৯’ ‘সংবিধান রক্ষার নির্বাচন’— মোটামুটি এই থাকবে আগামী কিছুদিনের আলোচনার বিষয়। সাংবাদিকরা আসলে সবাই লক্ষ্য রাখবে, কে কোন দিকে ঘেঁসে কথা বলছেন। যদিও সাংবাদিকরাও দল বেছে ফেলেছেন এবং কি কি বলবেন, তাও সবাই জানে। তারপরও হয়তো দেখবেন। দুই দলকেই গালি দিলে আমরাই হয়তো বলব, ‘এই ব্যাটা কিন্তু ধান্ধাবাজ, দুই দিকেই তাল দিচ্ছে’। এরপর হয়তো চ্যানেল পাল্টাবো আর নয়তো ‘জলসা’ না দিলে স্বামীকে খুন করব।

খেলা আরও চলতো কি না, সত্যিকার অর্থে বোঝার উপায় নেই। মিছিলের নাম পাল্টে বিক্ষোভ মিছিল করলেও সেই মিছিল করবার জন্য কেউ আসবে না, তা সবাই জানে। নেতারা টাকা খেয়ে যেভাবে প্ল্যান উগড়ে দিচ্ছেন তাতে মনে হয় না ঢাকা শহরে আর কোন সমাবেশ করতে দিবে। বাকী থাকে হরতাল আর অবরোধ। ভোঁতা এই দুই অস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া তাদের আর তেমন কিছু করারও নেই। সেটাও হয়তো আর দুইদিন ডাকতে পারবে কারণ বিশ্ব ইজতেমার জন্য সেটাও স্থগিত করতে হবে। আর দিন দশেকের গ্যাপ পড়লে, নতুন করে আন্দোলন (এটাকে আন্দোলন না বলতে চাইলে, আমি আপত্তি করবো না) চাঙ্গাও করতে পারবে না। দলের নেতাদেরও সুবিধা। সম্ভবতঃ তাঁরা এটাই চাইছেন। শুধু শুধু আত্মগোপন করতে হবে না, এই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

এই শীতের আন্দোলন সম্ভবতঃ শেষ। কিছু খুচরা চেষ্টা হয়তো হবে। যদি কিছু লাশ পড়ে, তবে হয়তো কিছু মিছিল হবে। বিশ্ব ইজতেমা শেষ হওয়ার পরে হয়তো আবার কিছু অবরোধ আসবে। এবং যথারীতি মার্চের পরে সব কিছু ইতি। বিএনপির নেতারাও হয়তো অপেক্ষায় আছেন, কবে আসবে এপ্রিল। তাদের আর আত্মগোপনে থাকতে হবে না, মাঠে নামতে হবে না। তবে আওয়ামীদের কাছ থেকে পাওয়া মাসোহারায় হয়তো টান পড়তে পারে। আন্দোলনের প্ল্যান জানিয়ে যে আয় তাঁরা করছিলেন, সেই আয় হয়তো আপাততঃ বন্ধ হয়ে যাবে।

A Lear’s Fool to King Tarique

There is no shortage of punditry along the line of BNP-is-in-trouble, most being pretty vacuous like this.  Shuvo Kibria had a better attempt a few weeks ago:

সরকার ….. নিজের আস্থাহীনতার সঙ্কট আছে।….. জনব্যালটে তার ভরসা নেই। …..সরকার চাইবে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপিকে সমূলে উৎপাটিত করতে। বিএনপির চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।  (The government has its own crisis of confidence…. It doesn’t rely on public ballot…. The governent will want to uproot BNP as a political force.  BNP’s challenge is to re-establish itself as a political force).

I think the above is in on the whole correct.  And there may be a degree of validity in this as well:

বিএনপির প্রথম সারির নেতাকর্মীদের মাঠে নেমে প্রমাণ করতে হবে দলের স্বার্থে তারা যেকোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত।  (BNP’s front row leaders and workers will need to prove their willingness to take any risk for the party by getting into the field).

But I think even Kibria misses some key nuances.

Let’s start with a few observations.

First, on BNP’s failure in the streets.  By all accounts, BNP rank-and-file gave it a pretty good shot this time last year.  And they came short.  They could not stop the government from ramming through a one-sided election as a result of which Hasina Wajed continues to be the prime minister.  But BNP’s failure is not qualitatively different from MK Gandhi’s in the early 1920s, or Sheikh Mujibur Rahman’s in the mid-1960s.  Our history is full of failed street movements.  The historical reality is, most andolons fail, just like BNP’s did.

The past is not always an accurate guide to the future.  But I am quite skeptical of any analysis that concludes with ‘BNP must launch a vigorous andolon that will lead to a mass upsurge’.  Even if BNP could mount one, in and of itself, what would another round of street protests, blockades and hartals achieve?

Second, BNP failed to win over the bastions of power that ultimately matter Bangladesh.  Above everything else, powers-that-be want a stable Bangladesh.  And BNP failed to convince the civil-military bureaucracy, corporate sector and foreign stakeholders that it could provide stability.  Of course, in a two-horse race, one doesn’t have to be particularly good — simply being just not as bad as the other side makes one win such races.  It’s not that everyone is inspired by the Prime Minister.  It’s just that when all is said and done, sufficiently large number of key stakeholders simply didn’t respond to BNP, and accepted Mrs Wajed.

Third, from BNP leadership’s actions, we can deduce something about its self-assessment.  Recall, we can summarise BNP’s travails as one of either marketing or management or product.  By making it abundantly clear that Tarique Rahman is the party’s future, BNP is signalling that it believes the problem is not management.  Therefore, it must believe the focus should either be marketing or product or a combination.

As would be clear by the end of the piece, I do not necessarily agree with BNP’s choice (and that’s putting it mildly).  But it matters little what I think.  Leaving my views aside, let’s accept for now that BNP has got it right — Mr Rahman is the best it has got.  Fine.  So, how should he try to win over the powers-that-be?

If we assume that BNP’s middle-of-the-road, don’t-rock-the-boat pragmatic Burkean conservatism is the appropriate ‘product’ for Bangladesh — full disclosure: I personally do — then the challenge before Mr Rahman is simple: he needs to establish himself as acceptable to the establishment.  Currently, he patently is not.  Believing that the establishment will choose him over the Prime Minister is like claiming the earth is flat.  Railing against the establishment for its alleged hypocrisy on this count is futile.  Bottomline: senior state functionaries, big shot businessmen, and interested foreigners don’t think much of Mr Rahman.

They didn’t think much of him last winter.  And since then, sporadic forays in our pathetic history wars have done nothing to improve his standing.  They create media buzz, senior Awami League leaders end up looking quite stupid, and BNP rank-and-file feel fired up for a while.  But what do they do to alleviate Mr Rahman’s extremely negative image?

To ask is to answer.

Right.  So, what should Tarique Rahman do?

In the first instance, he should stop appearing in silly videos with stupid titles like Deshnayak, or never, ever, indulge in the circus of cutting supersized birthday cakes.  As it happens, it is quite rational for even a sensible and erudite person like Mirza Fakhrul Islam Alamgir to engage in these acts.  After all, in a party that is by design bereft of any strong ideological mooring but the politics of synthesis of centrist, pragmatic nationalism, if there is no internal organisational rejuvenation, how else are the party workers and leaders to signal their allegiance but to foster a personality cult?  Of course, by doubling down with Mr Rahman, organisation rejuvenation has been made just that much harder.

That is, BNP — or rather, Tarique Rahman — has created a vicious cycle. Its current senior leaders — and note the word senior, these are old men and women — have no alternative to engaging in obscene Tarique-mania, which puts off otherwise sympathetic elements of the establishment, which compounds BNP’s problems, which creates further distrust among its leaders, who must then engage in further sycophancy, and so it goes.

If Tarique Rahman ever wants to govern Bangladesh, he must end this now.  If he doesn’t get the irony of being called a deshnayak while living in bidesh, if he thinks he is the embodiment of youth at 50 — an age by which his father had been president for nearly four years, or Sheikh Mujibur Rahman was already hailed as Bangabandhu — he will never make it.

Dramatically cutting off the circus would be a good first step, and a low hanging fruit.  Mr Rahman will need to follow that up with more speeches and public appearances, and not just to the choir in East London about Sheikh Mujib’s Pakistani passport (do we really need to replace Hasina Wajed with someone who seriously thinks Mujib needed a passport in Heathrow airport in January 1972?).

This is not to say he should shy away from hitting hard on the haloed Mujib myth.   Like it or not, history wars is a key part of our politics that BNP cannot shy away from.  Apparently Tarique paid respect at Mujib’s grave several times when BNP was in power.  Why on earth did they keep that a secret?  Why not talk about it now?  And then, the respect for Mujib-the-nationalist-hero notwithstanding, draw the parallel between 1974-75 and the present day, maybe in a frank series of interviews with Zafar Sobhan — now, wouldn’t that be something?

And yet, that would not be enough.  Even if he is humanised and shown to be a normal, decent person, to the establishment there are grave doubts about his associates.  The establishment wants to feel comfortable that Tarique Rahman’s associates are their own.  On this, Mr Rahman will do well to learn from, wait-for-it, Mrs Wajed.

Yes, believe it or not, once upon a not too distant past, the establishment did not trust the Prime Minister and her party.  Even in the early 1990s, the stereotype was that those few Awami Leaguers qualified enough to govern were unreconstructed socialists, while most AL-ers were simply not fit for office.  This changed in the lead up to 1996 election, when Mrs Wajed made it clear that people like the late SAMS Kibria or AHSK Sadeq were in her inner sanctum.  This paved the way for a rapprochement between the League and the establishment.

Tarique Rahman needs to do something similar for his party.  Appointing a fresh-faced PhD in marketing, I’m afraid, simply doesn’t do that.

Therein lies the rub.  Mr Rahman needs people who are already established in their fields — business, professions, academia, at home and abroad — by his side.  But such people simply don’t like him much.  Why would they put their trust in someone whose only claim to fame is his parents (and infamy from his lifelong friends)?  Dynasty didn’t do it for a dud like Rahul Gandhi.  Why should Tarique be any different?

Mr Rahman has odds stacked against him.  Therefore, it follows that he has to shake things up.

Two acts come to mind, neither easy, and one carry high risks.

Firstly, Tarique Rahman must produce a game-changing idea.  Not nice ideas like how to improve agricultural yield as he did in an early London speech in 2013 — that kind of stuff can go well with his little chinwag with Mr Sobhan.  But that won’t shake things up.  No, he needs to do what Mujib did in 1966 by presenting Six-Points.

Back then, Ayub Khan dominated over Pakistan.  Grand old men like HS Suhrawardy were either dead or marginalised.  Younger, leftist firebrands were beginning to turn on each other, taking their cue from Beijing and Moscow.  Mujib’s peers like Ataur Rahman Khan looked tired with their calls for restoration of democracy.  Ayub could simply ignore them.  But Mujib with his Six-Points was different.  Here was a paradigm shift.  Fiscal autonomy.  Monetary autonomy.  East Pakistan’s own oreign trade missions and paramilitary.  Mujib called for an end to not just Ayub regime, but Pakistan-as-it-existed.  Ayub knew he had to use the ‘language of weapon’.  So he did.  Mujib went to jail, and came out after the regime collapsed.

It’s very important to understand that the 1968-69 uprising that led to Ayub’s fall was not a step-by-step escalation of any andolon programme by Mujib or his party.  An urban uprising started in West Pakistan from a clash between students and army jawans in the beginning of winter 1968, and by the end of the winter, both wings of erstwhile Pakistan was aflame.  At the centre of the uprising was Maolana Bhashani.  But not only was Bhashani without a party, he was also a man without any compelling ideas for the post-Ayub world, and zero support among the establishment.  When the Pakistani establishment had turned on Ayub, the emergent East Bengali establishment squarely stood with Mujib.

That’s the act Tarique has to emulate.  He has to produce a coherent vision that the current Bangladeshi establishment could rally behind when, rather than if, Mrs Wajed’s regime unravels.  And unravel the current regime will, sooner or later — let me quote myself from January:

….. she stands on the precipice of chaos, for the simple reason that Bangladesh — a super-densely populated humid swamp — is always at the edge of chaos.  Usually, mandate from a democratic election, or the prospect of the next one, keeps us from falling over the cliff.  By taking away the option of a democratic election, the Prime Minister has effectively put a ticking time bomb on herself.

Tarique has to make sure that when the time comes, he is not brushed aside like the old Maolana.  And for that, a compelling vision for a post-Hasina Bangladesh — hard as that might be to conjure — is not necessary, but not sufficient for Tarique.  He still needs to demonstrate that he as an individual has what it takes.  He must demonstrate his grit.  His sickly, elderly mother does that every time she goes out to one of those rallies.  Mrs Wajed did that in 2007 when she defied the 1/11 regime and returned home, or in 2004 as the subject of an assassination attempt, or in 1988 when police open fired on her rally.  His father demonstrated grit in the battlefields in 1965 and 1971, and every day between 3 November 1975 and 30 May 1981.  Sheikh Mujibur Rahman demonstrated grit by never compromising with the Pakistanis despite spending much of the 1950s and 1960s in jail.

That’s the standard Tarique Rahman has to live up to.  A London exile simply doesn’t cut it.  He has to return home, embrace a prison sentence, and possible threat to his life.

That’s the bottomline for him.

As things stand, with Tarique Rahman in his current avatar as BNP’s chosen future, I am afraid the future is bleak, and we might soon be discussing BNP’s past.

‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

by zainuddin sani

দেশের রাজনীতিতে কি হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সবাই বেশ বিভ্রান্ত। বিএনপির হুমকি ধামকি দেয়া, আর আওয়ামীদের সেসবে কর্ণপাত না করা, ব্যাপারটা অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। সকালের পত্রিকার দুটি অবধারিত শিরোনাম থাকতো দুই দলের কোন না কোন নেতার শ্লেষাত্মক বক্তব্য। কেন যেন ব্যাপারগুলোকে অনেক বেশী রীতি মাফিক মনে হচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছিল কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে— ‘আওয়ামীরা ২০১৯ পর্যন্ত চাইলে নির্বিঘ্নে থাকতে পারবে’। সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণার পরে, সত্যিকারের প্রত্যাশা কারোরই তেমন ছিল না। কমবেশি সবারই ধারণা হয়েছিল, ৫ই জানুয়ারিকে ঘিরে কোন কর্মসূচি এবং সেই কর্মসূচিতে বাঁধা দিলে কি হবে, তার হুমকি সম্বলিত একটি বক্তব্য আসছে। তার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামীরা কি বলবে, তাও সবাই আন্দাজ করে নিয়েছিলেন। পুরোপুরি তেমনটা হল না, সেদিনের ঘটনা, এদেশের রাজনীতির টিপিক্যাল ফর্মুলার ব্যত্যয় ঘটাল।

আপাত দৃষ্টিতে বিএনপি নেত্রীর ৭ দফা তেমন নতুন কিছু না। এতোগুলো দফার ভেতর মুল দফা একটিই। বাকী দফাগুলোর বেশ অনেকগুলোই সাধারনতঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকারই করে থাকে। আর কিছু খুচরা দফা দেয়া হয়েছে, সম্ভবতঃ নেগসিয়েশানের সময় বাদ দিতে রাজী হবার জন্য, সবাইকে বলা যাবে, ‘সমঝোতার খাতিরে আমরা তিনটি দাবী ছেড়ে দিলাম।’ তবে প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি হচ্ছে অন্য কারণে, এই সময়ে এসে, এমন নরম অবস্থান কেন? যে দাবী গত ছয় বছরে আওয়ামীরা মানেনি, তাদেরকে আবার নতুন করে সেই দাবীর কথা জানানো কেন?

৭দফাকে বেশ নির্বিষ মনে হলেও, কেন যেন সবাই তেমনটা ভাবছে না। সবাই বেশি করে ভাবছেন, এতো মোলায়েম স্বরে কেন কথা বলছেন বিএনপি নেত্রী? তারচেয়েও বড় কথা, আল্টিমেটাম নেই কেন? দফা না মানলে কি হবে, সে সম্পর্কেও নেই কোন ভবিষ্যৎবাণী। বড় জাতের আরও কিছু প্রশ্ন আছে। যেমন বিএনপির গেম প্ল্যান তাহলে কি? সবাই ভাবছেন এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে। আর সেই উদ্দেশ্য কি, তা নিয়ে বোদ্ধা মহলে চলছে কানাঘুষা। কেউ ভাবছেন, ‘নিশ্চয়ই বিএনপি কোন সিগন্যাল পেয়েছে’।

বোদ্ধা মহলকেও খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। তাঁদের এসব কথা ভাববার যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। আসলে এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে পদক্ষেপগুলোকে বেশ পরাজয় বলে ভাবা হয়, তার একটি হচ্ছে দাবী জানানো। বিশেষ করে সেই দাবীর সংখ্যা যদি থাকে একাধিক। আর সেই দাবী পূরণ না হলে, সরকারের কি অবস্থা হবে, সে সম্পর্কে যদি কোন হুশিয়ারি না থাকে, তবে তো অবধারিতভাবে ধরে নেয়া হয়, এই দাবীসমূহের প্রস্তাবকারী হয় সিরিয়াস না কিংবা তাদের তেমন কোন শক্তি নেই।

অন্যদিকে সাহসী পদক্ষেপ ভাবা হয় আন্দোলন কিংবা হুমকিকে। ‘এক দফা এক দাবী’র ও আলাদা একটা দাম আছে। তবে তেমন কিছু একবার বলে ফেললে কিছু একটা করে দেখানো জরুরী। নইলে আবার শুরু হয়ে যাবে অন্য হিসাব। যেমনটা হয়েছিল আওয়ামীদের ‘স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও আটকাতে পারবে না’ হুমকির পরে। আর ইদানীং কালে, বিএনপি সম্পর্কে।

আন্দোলন করে কোন দাবী আদায়ের রেকর্ড বিএনপির খুব একটা নেই। তবে দাবীতে অনড় থাকবার একটা রেকর্ড ছিল। ফলে আগে যখন হুমকি ধামকি দিলেও সেগুলোকে কিছুটা সিরিয়াসলি নেয়া হত। ভাবা হত, সফল না হলেও, কিছু একটা অন্তত করবে। নিজেদের তৈরি করা ‘গুড উইল’এ সম্প্রতি তাঁরা ফাটল ধরিয়েছে। হুমকির অধিক ব্যবহার এবং কিছু করতে না পারা, তাঁদের দেয়া হুমকি সম্পর্কিত এই ধারণায় কিছু পরিবর্তন এনেছে।

এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ফর্মুলা অনুযায়ী ৭ দফাকে নিশ্চিতভাবেই পরাজয় কিংবা পিছু হটা ভাবা যায়। বিশেষ করে গাজীপুরে যেভাবে পিছিয়ে আসলো, তারপরে। ৫ই জানুয়ারীর মত ‘সিম্বোলিক’ দিনে সবাই যেমনটা ভেবেছিলেন, তাঁরা তেমন কিছু করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। এটাও ঠিক, তাঁদের যা সাংগঠনিক অবস্থা, তাঁদের কাছ থেকে ততোটা কেউই প্রত্যাশা করছেন না। আবার এতো নরম কর্মসূচী দিবে, এটাকেও কেউ স্বাভাবিক ঘটনা ভাবতে চাইছেন না। সবার মনে তাই একটি সন্দেহ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, ‘পর্দার আড়ালে কিছু ঘটছে কি না।’

বিএনপি যেভাবে একের পর বিভিন্ন জাতের হুমকি দিয়েও কিছু না করার একটা ট্র্যাডিশান তৈরি করে ফেলেছিল, তাতে কমবেশি সবাই ভাবতে শুরু করেছিল, এই সরকারকে হটাবার ক্ষমতা বিএনপির নেই। আর ইতিহাস বলে, সরকারকে বাধ্য করতে না পারলে, বিরোধী দলের দাবী মেনে নেয়ার মত ঘটনা ঘটে না। আর নরম স্বরে বললে তো নিশ্চিতভাবেই ঘটবে না। এই দাবীর তাই একটি স্বাভাবিক মানে হচ্ছে, হুমকি দিয়ে কিছু না করে নিজেদের ইমেজের যে বারটা বাজিয়েছি, তা আর কন্টিনিউ করতে চাই না। এবার স্বীকার করে নিতে চাই, আমরা অথর্ব। দল হিসেবে, সংগঠন হিসেবে আমরা বেজায় অগোছালো। আন্দোলন করে দাবী আদায়ের ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই এই অনুরোধ ফর্মুলা।

এই স্বাভাবিক ব্যাখ্যার বদলে সবাই কেন যেন অন্য কিছু ভাবছেন। হয়তো ১/১১এর উদাহরণ এর জন্য দায়ী। এদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিদেশ নির্ভরতা এর জন্য দায়ী। হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া বাকী কারো কাছ থেকে সমর্থন আদায়ে এই সরকারের ব্যর্থতা এর জন্য দায়ী। আবার হতে পারে পর্দার আড়ালে এমন কিছু ঘটবার আভাস তাঁরা পেয়েছেন, যা থেকে মনে হয়েছে, এদেশ একটি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। আর তাই, কঠোর আন্দোলনের পথ ছেড়ে, নরম আর সমঝোতা ধাঁচের পথে হাঁটতে রাজী হয়েছেন, বিএনপি নেত্রী।

ধাঁধা আরও আছে। বিএনপির বেশ কিছু বড় নেতার বক্তব্য থেকে বোঝা গেছে, ৭ দফার এই সিদ্ধান্ত নেত্রীর একক সিদ্ধান্ত। সব দলের সাথে আলাপও করেননি। এমনকি নিজ দলের অনেককেও অন্ধকারে রেখেছিলেন। ঘাড়ের ওপর মামলা, বিভিন্ন আন্দোলনে দলীয় বড় নেতাদের পালিয়ে বেড়ানোর মানসিকতা এমন অনেক ব্যাপারকেও এর কারণ ভাবা যেতে পারে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বড় কারণ হিসেবে সবাই ভাবতে শুরু করেছেন, বিদেশী প্রভুদের ইচ্ছেকে।

৭দফা নিয়ে বোদ্ধা মহলের এই প্রতিক্রিয়া দেখে এই প্রশ্নই সবার মনে জাগছে, কি এমন ঘটল যে ম্যাডাম এরকম ‘সফট’ কর্মসূচী দিলেন। কোন আশ্বাস কি পেয়েছেন? আওয়ামীরা নরম হবে কিংবা এভাবে দাবী জানালে মেনে নেবে— এমন কোন আভাস? ১/১১ এর মত কোন ঘটনার আভাস? আওয়ামীদের ওপর থেকে বিদেশী প্রভুদের আশীর্বাদের হাত তুলে ফেলার আভাস? কিংবা প্রতিবেশী দেশের ওপর অন্য কোন বৃহৎ দেশের চাপ প্রয়োগের আভাস? সম্ভবতঃ আর কিছুদিনের ভেতরেই সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে। তখন স্পষ্ট হবে, ‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

বিএনপি কি বোঝে না, সেটাই বোঝে না

bnp-final1

by zainuddin sani  বেশ একটা যুগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বিএনপি। তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই নড়বড়ে দল নিয়ে ভাঙাচোরা একটা আন্দোলন চালাবে? না জনগণকে সম্পৃক্ত করার নতুন কোন প্রচেষ্টা নেবে। জনগণ আশার আলো দেখতে পায়, এমন কিছু করবে। এখন পর্যন্ত তাঁরা যা করেছে, তা ছিল গতবছরের সেই হরতাল আর অবরোধ দিয়ে শীতকাল পার করবার চেষ্টার একটি ব্যর্থ ফটোকপি। সবার মনে তাই প্রশ্ন, এভাবেই চালাবে? না মাথায় নতুন কোন প্ল্যানিং আছে? প্রশ্ন অবশ্য আরও একটা আছে, নতুন কিছু করবার মতো মেধা কিংবা ক্ষমতা তাঁদের আদৌ আছে কি না? ছাত্র সংগঠন কিংবা দ্বিতীয় সারির নেতৃত্ব বলে তাঁদের কিছু আছে কি না? কিছু উত্তর দেশবাসী পেয়ে গেছে, বাকীটা সম্ভবতঃ আগামী কিছুদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।

বিগত কিছুদিনের কার্যক্রমে আন্দোলনে কিছুটা গতি এসেছিল। আর সেকারণে, অনেকেই গাজীপুরের দিকে তাকিয়েছিল। তবে ২৭শে কি হবে, এই নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য উৎসাহ জাগানো ছাড়া আর তেমন কিছুই করতে পারেনি বিএনপি। এভাবে পিছু হটবে, সম্ভবতঃ বিএনপির অনেক নেতাকর্মীও ভাবেনি। ফখরুল সাহেবের হুমকি যে সিরিয়াসলি নেয়াড় মত কোন জিনিস না, তা দেশবাসী বুঝে গেছে। যতটুকু যা আস্থা ছিল, তা ছিল বিএনপি নেত্রীর প্রতি। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি তাঁর সেই পুরনো মূর্তিতে ফিরে আসছেন। যেভাবে তিনি মাঠে নেমেছিলেন, একের পড় এক সমাবেশ করছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল, এবার আর বালির বস্তা দিয়ে আটকানো যাবে না।

ভুল ভাঙতে সময় লাগল না। আন্দোলন থামাতে এবার বালির বস্তাও লাগলো না। বাহ্যিকভাবে যদিও মনে হচ্ছে ১৪৪ ধারা আর ছাত্রলীগের ‘নেড়ি কুত্তা’ হুমকিই খেল দেখাল। তবে ভেতরের খবর আরও করুণ। গাজীপুরের নেতাদের ‘অসম সাহস(?)’ আর দলীয় কোন্দল এবার আওয়ামীদের কাজ সহজ করে দিয়েছে। বালির বস্তা আনবার খরচ বাঁচিয়ে দিয়েছে। সঙ্গে বক্সী বাজারের ‘নেড়ি কুত্তা’র ইফেক্টও কাজে দিয়েছে। দল হিসেবে বিএনপির তেমন কোন সম্মানজনক অবস্থান না থাকলেও, বিএনপি নেত্রীর ছিল। সেই দৃঢ় ইমেজে এবার বেশ বড়সড় ধাক্কা লাগলো।

দল হিসেবে বিএনপির এই অসম্মানজনক অবস্থান একদিনে তৈরি হয়নি। পুরো আওয়ামী আমলটাতেই, সরকার বিরোধী আন্দোলনে, বিএনপির ‘পারফর্মেন্স’ ছিল বেজায় হতাশাজনক। প্রথম আওয়ামী আমলে তেমন কোন আন্দোলন কিংবা সাফল্য না থাকলেও তাঁদের সমস্যা এতো প্রকট হয়ে দেখা দেয়নি। সেই অসফল আন্দোলন তেমনভাবে কারো চোখেও পড়েনি আর তাতে তেমন কোন সমস্যাও হয়নি, কারণ পরবর্তী নির্বাচনে জয় এসেছিল। সেই যাত্রা পার পেয়ে গেলেও দুর্বলতাটা থেকেই গিয়েছিল। এবারের আন্দোলনেও তাঁরা তেমন কোন নতুনত্ব আনতে পারেনি। যা করেছে, তা হচ্ছে আওয়ামীদের আন্দোলনের ফটোকপি। সেই হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর আর জ্বালাও পোড়াও। হরতালের বাজারদর কমে যাওয়া আর ভাংচুর এবং পেট্রোল বোমায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু, এবার সমস্যায় ফেলেছে বিএনপিকে।

হরতালের বদলে দেয়ার মত হাতে তেমন নতুন কোন কর্মসূচিও নেই। মানব বন্ধন কিছু দিয়েছিল, তবে সেখানে তেমন কোন গ্ল্যামার নেই, ওটা অনেকটা সুশীল সমাজ সুশীল সমাজ ভাব এনে দেয়। খুব ভালো কাভারেজও জোটে না, ফলে সেই লাইনে এগিয়েও খুব বেশি সাফল্য আসেনি। সমাবেশের নাম পাল্টে, বিক্ষোভ সমাবেশ করেও তেমন কোন লাভ হয়েছি কিনা সন্দেহ। ফলে ঘুরে ফিরে সেই হরতাল আর মিছিল। আর অতি ব্যবহারে এই মহার্ঘ অস্ত্রের প্রতি জনগণ আর দলীয় কর্মীদের মধ্যে এসেছে এক বেশ দায়সারা ভাব। হরতালের এই কর্মক্ষমতা হারানো আর বিকল্প কিছু না পাওয়া, সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে বিএনপিকে।

চিন্তার দৈন্যতার চরম প্রকাশ করলেন বিএনপির জনৈক নেতা। আওয়ামীদের ‘লগি-বৈঠা’ নকল করে ‘দা-কাস্তে’ বলে বেশ বড়সড় ঝামেলা বাঁধালেন। এরপরে বেশ কিছুদিন তিনি লাপাত্তা হয়ে থাকলেন। বিএনপির নেতারা, ‘নিজস্ব মতামত’ বলে দূরত্ব তৈরি করলেন। ঢাকা মহানগরে আগে থেকেই দলীয় কোন্দল ছিল, সেখানে কিছু হাওয়া লাগলো। খোকা সাহেবকে কোণঠাসা করবার এই সুযোগ, অন্য পক্ষ হাতছাড়া করল না। পুরো ঘটনার সারাংশ যা দাঁড়াল, তা হচ্ছে, দলীয় কোন্দলের সাথে সাথে বিএনপির চিন্তার দৈন্যতা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠল।

এদেশে আন্দোলন করবার সময় হচ্ছে এই শুষ্ক মৌসুমটা। হাতে আছে আর বড়জোর তিনমাস। এই সময়ের ভিতর বিএনপি কিছু করতেন না পারলে পিছিয়ে যাবে এক বছর। কারো কারো মতে পুরো চার বছর। যত সময় যাচ্ছে, ততোই প্রশ্ন জাগছে, এই শীতকালে কিছু করতে বিএনপি কি পারবে? কিছুদিন আগের ‘কতোটা সফল হবে’ থেকে আলাপ আলোচনা সেই প্রথম ধাপেই ফিরে এসেছে ‘বিএনপি আদৌ কিছু করতে পারবে কি না?’ ২৭ তারিখের পরে, এই উত্তর কমবেশি এখন সবাই জানে। টক শো আর বিভিন্ন আলাপ আলোচনায় বেশ অনেক বুদ্ধিজীবীই এখন ভবিষ্যৎ করনীয় নিয়ে উপদেশ দেয়া শুরু করেছেন। আসলে বিভিন্ন ভাবে বলার চেষ্টা করেছেন, এভাবে হবে না। হয়তো বিএনপি নিজেও জানে, তাঁদের কিছু করার ক্ষমতা নাই। তবে যেটা জানে না, তা হচ্ছে, এর কারণ।

একথা ঠিক যে আওয়ামীদের এমন কোন জনপ্রিয়তা এখন নেই। ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনকে প্রথমে বেশ কিছুদিন সফল নির্বাচন বলে চালানোর চেষ্টা করলেও সম্প্রতি তাঁরা সুর পাল্টেছে। এখন তাঁরা সেই গণতন্ত্র হত্যাকে সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতা বলে চালানোর চেষ্টা শুরু করছেন। ভাষার এই পরিবর্তন থেকে হয়তো কিছুদিন আগেও বিএনপির মনে আশা জেগেছিল, হয়তো ভাবছিল, আন্দোলন ভালমত করতে পারলে, কপালে শীকে ছিঁড়তে পারে। এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না আর বোদ্ধা মহলও বলছেন, বিএনপির যে সাংগঠনিক অবস্থা আর দলীয় কোন্দল, তাঁদের দিয়ে তেমন কোন আন্দোলন সংগঠিত হওয়া সম্ভব না।

এর আগের বিভিন্ন সরকার বিরোধী আন্দোলনে, সাধারণ জনতা, হয় নিজেই মাঠে নেমেছিল আর নয়তো মৌন সম্মতি দিয়েছিল। এবার দুটোর কোনটাই ঘটছে না। পুরো আন্দোলনকে তাঁরা দেখছে, দুই দলের ক্ষমতায় যাওয়ার কামড়াকামড়ি হিসেবে। চর দখলের এই প্রতিযোগিতায় কেউই অংশ নিতে রাজী না। আন্দোলন করে, আওয়ামীদের গদি থেকে নামাবার পরে কি? কি পাবে তাঁরা? এই উত্তরে জনগণ দেখতে পাচ্ছে সেই একই হতাশা। আরেকটি স্বৈরাচারী সরকার, শুধু নেত্রীর নাম পরিবর্তন।

জনগণকে যদি পাশে পেতে চায়, বিএনপিকে প্রথমে বুঝতে হবে, জনগণ কি চায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁদের নেতার অবস্থান মুখস্থ করানো নিয়ে জনগণ বেজায় বীতশ্রদ্ধ। প্রয়াত নেতাদের পূজা করা এবং জনগণকে সেই পূজা করতে বাধ্য করার এই প্রবণতার একটি ইতি টানবার চেষ্টা তাঁরা দেখতে চায়। ছাত্র সংগঠনের উদ্দাম অস্ত্র নৃত্য কিংবা দুর্নীতির কড়াল গ্রাস থেকে মুক্তি চায়। ক্ষমতায় গেলে করব, এই ফর্মুলা থেকে বেড়িয়ে এসে, এখনই কিছু করার প্রচেষ্টা দেখতে চায়। ‘ওদের আমলে কি হয়েছে?’ এই যুক্তিতে নিজেদের অন্যায় চালিয়ে যাওয়ার এই প্রবণতার অবসান দেখতে চায়।

অলৌকিক কিছু না ঘটলে, এই সাংগঠনিক অবস্থানিয়ে বিএনপির পক্ষে সফল কোন আন্দোলন করা সম্ভব না। এই তথ্যটা বিএনপি বুঝে গেছে। তবে যেটা বোঝেনি, তা হচ্ছে, কেন তাঁদের এই অবস্থা। জনগণের আকাঙ্ক্ষা বোঝার যে অক্ষমতা আওয়ামীদের ভেতর এখন কাজ করছে, তা তাঁদের ভেতরেও কাজ করছে। গদি থেকে আওয়ামীদের সরিয়ে বিএনপিকে বসাতে কেউই আগ্রহী না। স্বৈরতান্ত্রিক ফরম্যাটের সরকারের শুধু নেত্রী পরিবর্তনের জন্য কোন জনগণই মাঠে নামবে না। বিএনপির কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তাঁরা জনগণের এই সরল প্রত্যাশাটা এখনও বোঝেনি। বিএনপির এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, তাঁরা কি বোঝেনা, সেটাই বোঝেনা।

‘বিএনপি – জিয়া পরিবারের প্রতিনিধি = ???’

by zainuddin sani

এদেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল মুখে যতই গণতন্ত্রের জন্য নাকি কান্না কাঁদুক, একটা ব্যাপারে দুই দলই একমত, রাজতন্ত্র ছাড়া দল টেকানো সম্ভব না। সমস্যাটায় প্রথম পড়েছিল আওয়ামীরা। যে মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু সহ তাঁদের শীর্ষ চার নেতার নিধন হল, তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় শীর্ষ পদ দখলের কামড়াকামড়ি। প্রায় চার টুকরা হওয়ার পথে রওয়ানা দেয় দলটি। নৌকার হাল ধরতে অবশেষে আসতে হয় শেখ বংশের জীবিত দুই বংশধরের একজনকে।

এর কিছুদিন পরেই একই সমস্যায় পড়ে, দেশের অপর বৃহৎ দলটি। তাদেরও কমবেশি একই অবস্থা হয়েছিল। ম্যাডাম এসে কাস্তে হাতে তুলে না নিলে দলটি টুকরো হতো না ‘ভ্যানিস’ হতো তা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। তবে সেযাত্রা বেঁচে যায় এবং এরপর থেকে ঝড় ঝাপটা এলেও দলটি টিকে ছিল।

এরশাদ সাহেবের বদান্যতায় প্রায় নয় বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দল দুটির অনুগামীর সংখ্যায় যেমন কমতি হয়নি তেমনই নেতৃত্ব নিয়েও তেমন কোন ঝামেলা হয়নি। যদিও বিভিন্ন পদে কে অধিষ্ঠিত হবেন তা দল দুটির শীর্ষ নেত্রী কর্তৃক নাজিল হত কিংবা কাউন্সিল হলেও কোন কর্মীই সাহস করে জানাতেন না, তিনি নেতা হতে চান। ফলে দল দুটির দ্বিতীয় শীর্ষ পদ বলে তেমন কিছু ছিল না।

দল পরিচালনার জন্য যে একনায়কতন্ত্রকে সমাধান হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন দুই নেত্রী, সেই সমাধানই সমস্যা হয়ে আবির্ভূত হল, ১/১১তে। দুই শীর্ষ নেত্রী বন্দী হলেন। একটি দলে তখন হবু উত্তরাধিকারী চলে এসেছিল, তিনিও বন্দী হলেন। শীর্ষ পদ ফাঁকা হওয়ায় নেতা হতে আগ্রহী সেইসব নেতাদের হঠাৎ করে বিবেক জাগল। মনে পড়ল, ‘আরে তাইতো, দলে তো গণতন্ত্র নেই! কিছু একটা করা দরকার।’

সমাধান হিসেবে যা আসলো, তা ছিল দল দুটির ওপর আসা পুরনো সমস্যার নতুন এডিশান। সেই দুই পারিবারিরক প্রতিনিধিদ্বয় আসবার পূর্বে যে সমস্যা হয়েছিল, তা আবার ঘটবার সম্ভাবনা দেখা দিল। কাহিনী একটু বেশি আঘাত হানলো বিএনপিকে। হয়তো এখানে উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতার সংখ্যা বেশি ছিল কিংবা তাঁদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিমাণ বেশি ছিল। ঘটনা বেশ অনেকদূর গড়াল। তবে শেষরক্ষা হল রাজতন্ত্র দিয়ে। ম্যাডাম ফেরত এসে দলকে আবার ‘একটি দল’ বানালেন।

আওয়ামীদের অবস্থাও খুব ভালো কিছু ছিল না। বেশ বড় বড় নেতার ভেতরেই বিবেক জেগেছিল। আওয়ামীদের দুঃসময়ে যারা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কামড়াকামড়ি করেছিলেন, সম্ভবতঃ নিজেদের ভেতর ভাগ বাটোয়ারা নির্ধারণ করে, তাঁরাও নেমে পড়েছিলেন শূন্য হওয়া শীর্ষ পদ দখল করতে। পরেননি, এবং তাঁদের এই অসম সাহস তাঁদের পরবর্তী জীবনও বেশ দুর্বিষহ করে দেয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, দুই বড় দলই সেই ‘এপিসোড’ থেকে শিক্ষা নেননি। কেউই দলে কোন সেকেন্ড ম্যান গণতান্ত্রিক ভাবে নির্ধারণের ঝুঁকি কিংবা প্রচেষ্টা নেননি। তবে তাঁর ফলাফল এখনও আওয়ামীরা ভোগ করেননি। কারণ তাঁদের ওপর সেই অর্থে বড় কোন দুর্যোগ আসেনি। উপনেতা কিংবা সাধারণ সম্পাদকও দলীয় নেত্রীর ইচ্ছামাফিক হয়েছে। কাউন্সিল হলেও কেউ আর এখন মুখ খোলে না। কেউই জানান না, তিনি কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। নেত্রীকে অধিকার দিয়ে দেন, কোন পদে কে বসবেন, সেই হুকুম নাজিল করার। এবং যথারীতি ‘লিস্টি’ আসে শীর্ষ নেত্রীর মুখ থেকে।

১/১১ পরবর্তী সময়ে হওয়া নির্বাচনে আওয়ামীরা ক্ষমতায় আসায়, তাঁদের সেই অর্থে বড়সড় কোন সমস্যা হয়নি। ‘বিবেক জাগা’ সেইসব নেতাদের দলে রাখলেও বেশ অপ্রয়োজনীয় করে রেখেছেন। তবে নেত্রী, মূল সমস্যার কোন সমাধান করেননি। দলে গণতন্ত্র তো আনেনই নি, বরং সবাইকেই জানিয়ে দিয়েছেন, দলটি ‘বিক্রি হওয়া কিছু মানুষ দিয়ে তৈরি’। তাই কাউকে ‘সেকেন্ড ম্যান করা সম্ভব না। যদি কেউ হয়, সে হবে ‘আমেরিকা প্রবাসী পরিবারের মানুষটি’।

১/১১ সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেয় বিএনপিকে। একে তো নির্বাচনে পরাজয় হয়, তারওপর দলে দেখা দেয় অন্তর্কলহ। ঢাকা দখল নিয়ে দুই গ্রুপে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। পুরনো নেতা আর নতুন নেতাদের মধ্যে লড়াই। ফলে মহাসচিব পদে আবার আনা হয়, ম্যাডাম কর্তৃক ‘নির্বাচিত’ ব্যক্তি। পছন্দের লোক বসানোর বসানোর অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসবার কোন ইচ্ছে নেত্রী দেখালেন না। সেই মহাসচিবের মৃত্যুর পরও যাকে ভারপ্রাপ্ত করা হল, তিনিও সেই একই ফর্মুলায় নাজিল হলেন। ফলাফল হল ভয়ঙ্কর। ম্যাডামের অবর্তমানে কে হবেন দলের কান্ডারী, তা কেউ জানে না।

‘জিয়া অরফ্যানেজ’ আর ‘জিয়া চ্যারিটেবল’ এই দুই মামলা ট্রাম্প কার্ড হিসেবে রেখে দিয়েছিলেন, আওয়ামী নেত্রী। ব্যাপারটা ব্যবহার করবেন কি না তা নিয়ে সম্ভবতঃ বিএনপি কিছুটা দ্বিধায় ছিল। হয়তো ভেবেছিল, এতোটুকু ভদ্রতা অন্ততঃ আওয়ামীরা দেখাবে। হয়তো ভেবেছিল, শীর্ষ নেত্রীকে গ্রেফতারের মত সিদ্ধান্ত নিবে না। হয়তো ভেবেছিল, ‘কখন পরস্থিতি পাল্টে যায়, এই ভেবে’ হয়তো আওয়ামীরা শীর্ষ নেতৃত্বকে ছেড়ে কথা বলবে।

মঙ্গলবারে যখন তড়িঘড়ি আয়োজন করা সাংবাদিক সম্মেলনের খবর আসলো, তখন মনে হয় না সাংবাদিকদের বুঝতে বাকী ছিল, সেই আশার গুড়ে বালি পড়তে যাচ্ছে। সম্ভবতঃ আওয়ামীদের ভেতরে থাকা তাঁদের গুপ্তচররা জানিয়েছে, আওয়ামীরা তাঁদের সেই ‘ট্রাম্প কার্ড’ দেখিয়ে ‘ব্ল্যাকমেইল’ না করে সরাসরি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি যেভাবে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে, তাতে ম্যাডামকে বাইরে রাখা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ভাবছে।

মূল যে সমস্যা দল দুটির ভেতরে আগেও ছিল এবং এখনও আছে, তা হচ্ছে, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, দ্বিতীয় আর কোন নেতা নেই। দলে গণতন্ত্র না থাকায়, কোন নেতা কতোটা জনপ্রিয় তা কেউই জানেও না। কোন কাজ করার সুযোগ না থাকায়, কেউই জানেন না, ‘স্ট্রেটেজি’ তৈরিতে কে কতোটা দক্ষ। ফলে সেই পুরনো সমস্যা নতুন করে বেশ বড়সড় বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।

‘ট্রাম্প কার্ড’ সম্ভবতঃ অচিরেই ব্যবহার হবে। তবে সেই পরিস্থিতিতে কি করবে, কিভাবে তাঁরা দল চালাবেন, কিভাবে আন্দোলন করবেন, তা যে তাঁরা জানেন না তা যেভাবে ‘শুকনো মুখ’ নিয়ে বিএনপির দ্বিতীয় সারির নেতারা হাজির হলেন, তা দেখে বেশ স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। তাই যখন তাঁরা আওয়ামী প্ল্যান জানালেন, তখন একটি ব্যাপার বেশ স্পষ্টভাবে তাঁদের চেহারায় জ্বলজ্বল করছিল, তাঁদের অসহায় মুখ বলছিল, ‘ম্যাডাম গ্রেফতার হলে বিএনপির কি হবে?’

সময় হয়তো হাতে খুব বেশি নেই। ৫ই জানুয়ারী আসছে। সেই সময়ে কিছু করতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও মনে হচ্ছে, আওয়ামীরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তাই শীতকালটা কোন ঝামেলা ছাড়াই পার করতে যেকোন দিন আসতে পারে আওয়ামী আঘাত। এবং সেই আঘাত কিভাবে মোকাবেলা করবে, কে নেতৃত্ব দিবে, তা এখনও খুব একটা স্পষ্ট না। সেকেন্ড ইন কম্যান্ডও দেশে নেই এবং তাঁর মাথায়ও ঝুলছে মামলা, তাই তিনিও মনে হয়না ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরবেন। ফলে জিয়া পরিবারের প্রতিনিধির অবর্তমানে নেতৃত্বের কি হবে ব্যাপারটা বিএনপি স্পষ্ট করবে, না সাসপেন্স থ্রিলার গল্পের মতো দেশবাসীর মনে জাগিয়ে রাখবে সেই জটিল প্রশ্ন, ‘বিএনপি – জিয়া পরিবারের প্রতিনিধি = ???’

নির্বাচনমুখী আন্দোলন বনাম লতিফ কার্ড!

|| এ.কে.এম ওয়াহিদুজ্জামান ||

১৭ বছর আগে নিজে হাজ্জ্ব পালন করার পরও গত সেপ্টেম্বরে আমেরিকা সফরের সময় হাজ্জ্ব নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। বিএনপিসহ এবং ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো তখন তাকে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ এবং বিচার করার দাবী জানিয়েছিলো। সরকার সেটা মেনেও নিয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাকে মন্ত্রীসভা এবং আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেই গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথা নিয়ে দেশে ফেরা এবং গ্রেফতার এড়িয়ে এয়ারপোর্ট ত্যাগ করার পর হেফাজতে ইসলামীর হরতাল এবং ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচী বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে সেই সময়ে, যখন বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক দলগুলো নির্বাচনমূখী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিএনপি’র সামনে এখন দুইটা পথ; লতিফ ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করা অথবা লতিফ ইস্যুকে উল্টো সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়ে নির্বাচনমূখী আন্দোলনটাই গড়ে তোলার চেষ্টা করা। ৯০ দশকে কম্যুনিজম বিরোধী স্বস্তা সেন্টিমেন্টের মৃত্যুর পর ইসলামী জঙ্গী বিরোধী স্বস্তা সেন্টিমেন্টের বাজার দর এখন চড়া। বিএনপি যদি এখন হেফাজতে ইসলামী এবং জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে আন্দোলন শুরু করে, তাহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক বাজারকে কেবল আরেকবার দেখিয়ে দেবে যে, বিএনপি গণতন্ত্র নয় বরং জঙ্গীবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রয়োজনে ৬মে ২০১৩’র মত আরেকটা ঘটনা ঘটিয়ে প্রমানও করে দেবে যে, বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ঠেকাতে কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই উপযুক্ত দল।

দ্বিতীয় পথ অনুসরণ করে বিএনপি যদি লতিফ ইস্যুকে উল্টো সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়ে বলে যে- সরকার তার বিচার করবে বলেছিলো এখন বিচার করুক, যদি বিচার না করে তাহলে সেটা সরকারের ব্যার্থতা। তাহলে বলটা সরকারের কোর্টে যাবে। সরকারকে তখন হয় লতিফ সিদ্দিকীর বিচার করতে হবে কিম্বা তাকে দিয়ে ভুল স্বীকার করিয়ে ক্ষমা প্রার্থনাশেষে তওবা করানোর ব্যবস্থা নিতে হবে, অথবা তাকে বিচারের আওয়তায় না এনে ইসলামিস্টদের আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে।

প্রথম ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলামীর দাবী মেনে নিয়ে সরকার লতিফ সিদ্দিকীর বিচার করে, বা লতিফ সিদ্দিকী নিজেই হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় গিয়ে তওবা করে পুনরায় কলেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে একটা চমক সৃষ্টি করতে পারেন। যদিও এটা খুবই দুর্বল একটা সম্ভাবনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ লতিফ সিদ্দিকী অনেক কাঠ-খড়-কেরোসিন পুড়িয়ে নিজের যাবতীয় দুর্নীতি ও অপকর্মের আলোচনা ধামাচাপা দিয়ে এখন সুশিল সমাজের মাধ্যমে দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরীনের পাশে স্থান করে নিয়েছেন। এই স্থান থেকে সরে এসে নিজের দুর্নীতি ও অপকর্মের মামলাগুলোকে নিশ্চই তিনি প্রাধান্য দিয়ে আলোচনায় আনতে চাইবেন না।

Untitled-1

এমতাবস্থায় দ্বিতীয় বিকল্প অনুযায়ী, হেফাজতে ইসলামীর দাবী না মেনে নিয়ে সরকার তাদেরকে আন্দোলন করার সুযোগ করে দিতে পারে। যার নমূনা আজ ২৪ নভেম্বর দেখা গেছে। বিএনপির কোন সংগঠন পুলিশের গ্রেফতার-পিটুনীর কারণে রাস্তায় মিছিল করতে না পারলেও হেফাজতে ইসলামী মিছিল করতে পারছে। মানে সরকার তাদেরকে মিছিল করার সুযোগ দিচ্ছে। এটাকে তারা সাফল্য ভেবে চুড়ান্তভাবে ঢাকা অবরোধের ডাক দিলেও সম্ভবত সরকার সেটা করতে দেবে। এতে দ্বিমুখী লাভ। প্রথমত: এতে করে সরকার বিরোধী আন্দোলন করার মত শক্তিকে দ্বিখণ্ডিত করা যাবে, যাতে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয়ত: জঙ্গীবাদ তত্ত্ব প্রচার ও প্রমান এবং দমনের দক্ষতা প্রমাণের মোক্ষম সুযোগ। সরকার আগের মতই বিনাবাঁধায় হেফাজতে ইসলামী ও অন্য ইসলামিস্ট দলগুলোকে মিছিল, সমাবেশ এবং ভাংচুর করতে দিয়ে সেই দৃশ্য টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করে প্রথমে বর্হিবিশ্বকে জঙ্গীবাদের উত্থান দেখাবে, তারপর তা কঠোর হাতে দমন করে নিজেদের সক্ষমতা দেখাবে।

কিছুদিনের মধ্যেই নেপালে নরেন্দ্র মোদীর সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হবে। তারপর দেশে আসবেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। সেই সময় মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রসঙ্গে আলোচনা এড়ানোর জন্য জঙ্গী ইস্যুর চেয়ে গরম ইস্যু আর কোনটা হতে পারে? মোদি সরকার আওয়ামী লীগের সাথে সাধারণ বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষা করলেও ভারতের পলিসিমেকার সাউথ ব্লক এখনো আওয়ামী লীগেরই কট্টোর সমর্থক। লতিফ সিদ্দিকী সেই ভারত হয়েই বাংলাদেশে ফিরেছেন। কাজেই তিনি আগুনে ঝাঁপ দিতে নয়, বরং আগুন নিয়ে খেলা করতে এসেছেন। এখন তার লেজে আগুন দিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধানো দেখার অপেক্ষা।

‘দক্ষিন তালপট্টি’ এবং ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ নিয়ে সজিব ওয়াজেদ জয়ের মিথ্যা বক্তব্য

5

আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূত্র এবং তার তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গত ১১ জুলাই গুলশানের একটি হোটেলে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি ভারতে দিয়ে দেয়া এবং বাংলাদেশের দীর্ঘজীবীতা কামনাসূচক জাতীয়তাবাদী শ্লোগান ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ নিয়ে কিছু অশালীন মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেছেন, “তালপট্টি ভারতকে দিয়েছেন জিয়া” এবং “জিন্দাবাদ উর্দু, পাকিস্তানি শব্দ। যারা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেন তারা পাকিস্তানি এজেন্ট। তাদের পাকিস্তানে বসবাস করা দরকার।”

তার প্রথম মিথ্যাচারটি ১৯৮১ সালের দেশি-বিদেশী পত্রপত্রিকা এবং সার্ভে অব বাংলাদেশের তৈরী ১৯৮১ সালের টপোমানচিত্র দিয়েই প্রমান করা সম্ভব। দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটির অস্তিত্ব ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী টপোমানচিত্র থেকে শুরু করে বর্তমান গুগল আর্থ স্যাটেলাইট ইমেজেও রয়েছে। এটি একটি আংশিক দ্বীপ। জোয়ারের সময় ডুবে যায় এবং ভাটার সময় সামান্য জেগে ওঠে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনার অদূরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি জোয়ারের সময়ও জেগে থাকতে দেখা যায়। ১৯৭৪ সালের আমেরিকান স্যাটেলাইট ইমেজ অনুযায়ী এর আয়তন ছিলো আড়াই হাজার বর্গমিটার। ধীরে ধীরে দ্বীপটির আয়তন ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে এর আয়তন ১০ হাজার বর্গমিটারে দাঁড়ায়। খেয়াল করুন ১৯৭৪ সালে ক্ষমতায় ছিলেন শেখ মুজিব; কিন্তু তিনি দক্ষিণ তালপট্টি বাংলাদেশে অন্তর্ভূক্ত করা কোন ব্যবস্থা করেন নাই। সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশের ছিটমহল রেরুবাড়ী ভারতকে দিয়ে দেবার মতই এই দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটিও তিনি হয়তো ভারতের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।

১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্টের টপোমানচিত্রে দক্ষিণ তালপট্টি

১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্টের টপোমানচিত্রে দক্ষিণ তালপট্টি

গুগল আর্থ এ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

গুগল আর্থ এ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

সার্ভে অব বাংলাদেশের ১৯৮১ সালের টপোশিটে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

সার্ভে অব বাংলাদেশের ১৯৮১ সালের টপোশিটে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

১৯৮০ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে রেডক্লিফের দেশভাগ অনুযায়ী হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মধ্যস্রোত দক্ষিন তালপট্টির পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দ্বীপটির মালিকানা বাংলাদেশ দাবি করে। কিন্তু ভারত ১৯৮১ সালের মে মাসে সেখানে সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে তাদের পতাকা ওড়ায়। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ভূখণ্ড ঐ দ্বীপটি রক্ষার জন্য রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের নেতৃত্বে তিনটি নৌ জাহাজ পাঠান। দক্ষিণ তালপট্টি নিয়ে ভারতের সামরিক আগ্রাসনের মোকাবেলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপের বিষয়টি ১৯৮১ সালের ১৭ মে তৎকালিন সবগুলো বাংলা দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কাছাকাছি সময়ে বিদেশী পত্রিকাগুলোতেও এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, প্রকাশিত হয় এই আগ্রাসনের প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ মিছিলের ছবি।

১৯৮১ সালের ১৭ মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং এর প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রতিবাদ মিছিল

১৯৮১ সালের ১৭ মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং এর প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রতিবাদ মিছিল

১৯৮১ সালে ২০ মে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকা ‘A little pile of mud could start a war’ শিরোনামে লেখে, “১৯৭৪ সালে প্রায় ১২বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপটি সনাক্ত করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সেখানে গানবোট প্রেরণ করলে বাংলাদেশও গানবোট প্রেরণ করে। ফলে দু’টি দেশ যুদ্ধের মুখোমুখি।” সেই একই সংবাদে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবরও আছে এবং সেখানে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সাথে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের দ্বীপ দখল করার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয় কর্তৃক দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের অস্তিত্ব অস্বীকার করা এবং শহীদ জিয়াকে জড়িয়ে এই বিষয়ে মিথ্যাচারের কারণে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, শেখ হাসিনা কী তবে ভারতে সরকারী অশ্রয়ে দীর্ঘদিন অবস্থান করার ঋণ শোধ করতে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি তাদের উপহার দিয়েছিলেন?

শহীদ জিয়া সামরিক শক্তিতে মোকাবেলার পাশাপাশি কুটনৈতিক সমাধানের পথেও অগ্রসর হয়েছিলেন এবং ভারত কর্তৃপক্ষ একটি যৌথ জরিপের মাধ্যমে দ্বীপটির মালিকানা নিষ্পত্তিতে রাজী হয়েছিলো। এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। তবে নিহত হবার আগেই তার আমলে সার্ভে অব বংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত টপোশিটে তিনি দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি অন্তর্ভূক্ত করার ব্যবস্থা করেছিলেন, যার প্রমান তৎকালীন টপোশিটে তালপট্টির অবস্থান। কাজেই শহীদ জিয়া তালপট্টিকে মানচিত্রে অন্তর্ভূক্ত করার ব্যবস্থা করেন নাই, এটি একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার।

শহীদ জিয়ার মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালে আগস্ট মাসে যৌথ জরিপ না করেই আবারো ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তালপট্টিতে তাদের সৈন্য এবং ফ্রিগেট প্রেরণ করলে তৎকালীন নৌবাহিনী প্রধান মরহুম রিয়ার এডমিরাল এম এইচ খান আবারো সেখানে গানবোট প্রেরণ করেন। এই বিষয়ে ১৯৮১ সালের ২০ আগস্ট বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকার তাঁর উদৃতি দিয়ে “South Talpatti Island is Ours : M H Khan” শিরোনামে প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছিলো। একইভাবে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিলো বিদেশী পত্রিকাতেও। ১৯৮১ সালের ১৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াসিংটন থেকে প্রকাশিত আবজারভার-রিপোর্টার পত্রিকায় ‘India, Bangladesh Quarrel Over Island’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছিলো, “ভারতের ফ্রিগেট ও বাংলাদেশের গানবোটগুলো নিউমুর বা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের কাছে পরষ্পেরর মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে আছে। ভারত কর্তৃক যৌথ জরিপের বিষয়টি অস্বীকার করার প্রেক্ষিতে এই অবস্থার উদ্ভব হয়েছে।”

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ তালপট্টির মালিকানা বিষয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার এবং তাঁর মৃত্যুর পর তৎকালিন বিএনপি সরকার যথেষ্ট সাহসিকতার সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেছে। বরং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারতের সাথে সমূদ্রসীমা মামলা হবার পর থেকেই এই সরকার দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটির অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে চলেছে। এই মামলার শুরু থেকেই ভারত তার প্রাথমিক সমূদ্রসীমা দাবী থেকে শুরু করে প্রতিটি রিজয়েন্ডারের মানচিত্রেই বাংলাদেশের সাথে তার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ তালপট্টি (নিউমুর) দ্বীপটি উল্লেখ করেছে অথচ বাংলাদেশ তার দাবী উত্থাপন থেকে শুরু করে কোন যুক্তিতর্কেই তালপট্টি দ্বীপটির অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেনি। তার মানে মামলার আগেই তারা গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে দক্ষিণ তালপট্টিকে ভারতে হাতে তুলে দিয়েছিলো। এখন জনগণের প্রশ্নের মুখে তারা এই দায়ভার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ওপর চাপানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

সজিব ওয়াজেদ জয় তার বক্তব্যে সবচেয়ে হাস্যকর মন্তব্যটি করেছেন ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগান প্রসঙ্গে। তিনি দাবী করেছেন ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি উর্দু। প্রায় সারা জীবন বিদেশে থেকে বিদেশী ভাষায় পরাশোনা করে ও বিদেশিনী স্ত্রী বিবাহ করার কারণে তিনি বাংলা ভাষায় হয়তো দূর্বল হয়ে থাকবেন। তাই তার জানা নেই যে বাংলা ভাষায় অনেক বিদেশী শব্দ আছে। উনি যদি একটু কষ্ট করে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘বাংলা – ইংরেজী অভিধান’ (২১ তম সংস্করণ – ২০০৫) এর ২৩৩ নম্বর পৃষ্ঠার ১ম কলামের শেষ থেকে ২য় কলামের শুরু পর্যন্ত খেয়াল করেন তাহলে ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি পাবেন। অভিধানে এটিকে বাংলা শব্দ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অভিধানের প্রতি উনার অনাস্থা থাকলে ভারত থেকে প্রকাশিত সংসদ বাঙ্গালা অভিধান (শৈলেন্দ্র বিশ্বাস-সঙ্কলিত, চতুর্থ সংস্করণ – ১৯৮৪, অষ্টাদশ মুদ্রণ জুন – ১৯৯৫, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা) এর ২৬৪ নম্বর পৃষ্ঠার প্রথম কলামের মাঝামাঝি স্থানে ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি পাবেন। সেখানেও এটিকে বাংলা শব্দ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। উনার হয়তো জানা নেই যে উনার নানা শেখ মুজিব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত থাকা অবস্থায় ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ এবং পাকিস্তান হবার পর এমন কী ৭ মার্চের ভাষন পর্যন্ত ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগানটাই দিয়েছেন। এমন কী ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে মিরপুরে বিহারীদের ভোট পেতে আওয়ামী লীগ উর্দুতে লিফলেটও ছেপেছিলো।

বামে- ১৯৭০ এর নির্বাচনে কুষ্টিয়ার জনসভায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান লেখা ব্যানার টানিয়ে বক্তব্য রাখছেন শেখ মুজিব, ডানে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিহারীদের জন্য উর্দুতে লিফলেট ছেপেছে আওয়ামী লীগ।

বামে- ১৯৭০ এর নির্বাচনে কুষ্টিয়ার জনসভায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান লেখা ব্যানার টানিয়ে বক্তব্য রাখছেন শেখ মুজিব, ডানে- ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিহারীদের জন্য উর্দুতে লিফলেট ছেপেছে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্ম বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর হয়েছে। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে এই দেশে অন্য নৃগোষ্টীকে অগ্রাহ্য করার যে বিভক্তিমূলক নীতি আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন বাকশাল নিয়েছিলো সেটা থেকে মুক্ত হয়ে সমগ্র বাংলাদেশকে একটি অভিন্ন জাতিস্বত্তা হিসেবে পরিচিত করতেই ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানের উদ্ভব। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের যুদ্ধ বিজয়ের জন্য রণহুংকার হিসেবে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটি তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম প্রসিডেন্ট এবং স্বাধীনতা ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেও দিয়েছেন। কিন্তু যুদ্ধ জয়ের পর সেই শ্লোগানের পরিবর্তে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের দীর্ঘায়ু কামনাসূচক শ্লোগানই রাষ্টীয় শ্লোগান হিসেবে সবচেয়ে উপযুক্ত। সেই প্রেক্ষিতে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানটি বাংলাদেশের দীর্ঘায়ু কামনায় বাংলাদেশীদের হৃদয় নিংড়ানো শুভ কামনা। যারা নিজেকে বাংলাদেশী মনে করে না কেবলমাত্র তাদের পক্ষেই ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানকে পাকিস্তানী বলা সম্ভব।

উর্দু নিয়ে যদি জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের এতই মাথা ব্যাথা থাকে তাহলে উনাদের দলটির নাম কেন পরিবর্তন করছেন না। উনাদের দলটির নাম ‘আওয়ামী লীগ’ এর ‘আওয়ামী’ শব্দটি একটি খাটি উর্দু শব্দ, যার অর্থ জনগণ। উনি কী তাহলে উনার দলের নাম পরিবর্তনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? না কী উনার দলটিকেও পাকিস্তান পাঠিয়ে দেবেন? পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদারদের অত্যাচার এই দেশে অবস্থান করা প্রতিটি মানুষ মনে রেখেছে। তারা এটাও মনে রেখেছে যে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র দুই বছরের মাথায় জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের নানা শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান গিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার নায়ক ভুট্টোর সাথে কী ভাবে গলাগলি করেছিলেন এবং বাংলাদেশে ২৫ মার্চ রাত্রে অপারেশন সার্চ লাইটসহ লক্ষ মানুষের রক্তে রাঙ্গা টিক্কা খানের সাথে কী ভাবে হাত মিলিয়েছিলেন। অন্যদের বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ করার আগে জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের উচিত হবে নিজেদের অতীতের দিকে তাকিয়ে দেখা। নিজে কাঁচের ঘরে বাস করে অন্যের বাড়িতে ঢিল ছোঁড়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

বামে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের লাহোরে ভুট্টোর সাথে গলাগলি করছেন শেখ মুজিব, ডানে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী করাচী এয়ারপোর্টে টিক্কা খানের সাথে করমর্দন করছেন মুজিব।

বামে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের লাহোরে ভুট্টোর সাথে গলাগলি করছেন শেখ মুজিব, ডানে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী করাচী এয়ারপোর্টে টিক্কা খানের সাথে করমর্দন করছেন মুজিব।