প্রভু, ফোনে না বলে প্রকাশ্যেই বলুন

amit shah

by zainuddin sani

দুজনেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন, বিশ্ব ইজতেমা শেষ হলে, তারপর শুরু করব। এই কথার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, আমাদের সাধারণ মানুষকে আপাততঃ ১৯ তারিখ পর্যন্ত এই জেদাজেদি সহ্য করতে হচ্ছে। কেউই পিছিয়ে আসবে না। সরকারও ম্যাডামকে মুক্ত করবে না আর বিরোধী দলও অবরোধ তুলবে না। বিএনপিরও ক্ষমতা নেই তাঁদের নেত্রীকে মুক্ত করার আর ওদিকে সরকারেরও ক্ষমতা নেই অবরোধ বন্ধ করার। দেশবাসীর এই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা নিয়ে দুই দলের কেউই বিচলিত না। দুইজনেরই চাই বিজয়।

যুদ্ধটা কারো পক্ষেই হারা সম্ভব না। বিএনপি পিছিয়ে আসা মানে তাঁদের সমুহ পতন। আগামী চার বছর তাকিয়ে তাকিয়ে এই সরকারের দেশ পরিচালনা দেখতে হবে আর হাত কামড়াতে হবে। অন্যদিকে আওয়ামীরা হারলে এই ছয় বছরের অত্যাচারের প্রতিশোধ কড়ায় গণ্ডায় উসুল করবে বিএনপি জামাত জোট। দুই দলেরই থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বসে গেছে, পরবর্তী করনীয় নিয়ে অংক কসতে। বিএনপি হিসাব কষেছে, এভাবে আরও কিছুদিন চালাতে পারলে, সরকারের পতন হবেই। আওয়ামীরা অংক কষছে, হার্ড লাইনে গিয়ে, বিএনপির মেরুদণ্ড একবার ভেঙ্গে ফেলতে পারলে, আর সমস্যা হবে না।

পাল্লা কোন দিকে ভারী, এনিয়ে কথা বলার বেশ বড়সড় বিপদ আছে। অবস্থা এমন, ‘উইথ মি ওর এগেন্সট মি’। আওয়ামীরা সঠিক পথে আছে—এমন কিছু বলেছেন মানেই আপনি অবধারিতভাবে ওদের দলে। বিএনপি ঠিক করছে বললেও বিপত্তি আছে—আপনি বিএনপি করেন। দুজনেরই দোষ, এমনটা বললে, আপনাকে কেউ ডাকবেও না, আপনার কথা কেউই শুনবেও না, বলবে ধান্ধাবাজ, এখন দুই দিকেই তাল দিচ্ছে, যে টিকবে তাঁর দিকে হেলবে। কিংবা তখন হিসেব করবে, আগে আপনি কোন দিকে ঘেঁষে ছিলেন, কবে কি লিখেছিলেন বা বলেছিলেন। কিংবা পালটি মারবার ধান্ধায় আছেন কিনা। টক শো এখন হয়ে গেছে বুদ্ধিজীবীদের দলবাজি করার মোক্ষম জায়গা। আগে পত্রিকায় কলাম লিখে বোঝাতেন, ‘আপনিই আমার হুজুর’ আর এখন দুই দলের হয়ে ঝগড়া করে বোঝাচ্ছেন, ‘আমি আপনারই পা চাটি’।

সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সাধারণ মানুষের। তাঁরা কার দিকে তাকাবে? কার কাছে প্রত্যাশা করবে? কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। দুই দলের কেউই তাঁদের কথা ভাবে না, এই তথ্য তাঁরা জানে। এও জানে, ভোট এদের দুজনের একজনকেই দিতে হবে। তথ্যটা এই দুই দলও জানে। তাঁদের তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবীরা ইদানীং এই সুরেই কথা বলা শুরু করেছেন। ‘দেখুন দুই দলই চোর। টাকা উপার্জনের জন্যই এই পেশায় আসা। ফলে যাকেই বসান আপনার বা দেশের কোন উন্নতি হবে না। এরা দুর্নীতি করবেই, টেন্ডারবাজী করবেই। এখন বেছে নিন, কাকে চান।‘ এরপরে দুই দল দুই কথা বলছে। একদল বলছে, গনতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে আর অন্য দল বলছে দেশে গনতন্ত্র দিলে দেশবাসী এমন এক দলকে বেছে নেবে যার সঙ্গে রাজাকার ফ্রি, তাই গনতন্ত্র হত্যা জরুরী।

ফলে ঘুরে ফিরে বিতর্ক মজার এক যায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে, এদেশের লোক এখনও গনতন্ত্র বুঝতে শেখেনি। তাঁরা ভালো আর মন্দের পার্থক্য বুঝতে শেখেনি, ভোটের মুল্য বুঝতে শেখেনি। এখানে এখনও ‘হামগের ছাওয়াল’ শুধু এই কারণে একটি দলকে ভোট দেয়া হয়, নেতার জন্মস্থানের কারণে একজন একটি এলাকার ভোট পান, কেউ বা ভোট চান এলাকার পুত্রবধু হিসেবে। তাই আপাততঃ এদেশের লোকের জন্য গনতন্ত্র না। ব্রিটিশদের কাছে স্বাধীনতা চাওয়ার সময় কমবেশি এরকমই একটি কথা তাঁরা বলেছিল, ‘ইউ কান্ট রুল দাইসেলফ’। নিজেদের শাসন করার যোগ্যতা তোমাদের এখনও হয়নি। তাই তোমাদের শাসন করার ভার আমাদের হাতেই থাক।

সরাসরি না হলেও আমরা পর্দার আড়ালে এই কথাটি মেনে নিই। বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে গিয়ে নিজেদের ইন্টারভিউ দিই। বলি, ‘আমি ওর চেয়ে ভাল, এবার আমাকে দয়া করে ক্ষমতায় বসান। আপনি যা চাইবেন, সব পাবেন। একবার সুযোগ দিয়ে দেখেন। আগেরবার কিছু ভুল করেছিলাম, তবে এবার আর হবে না‘ অন্য দল বলে, ‘একদম বিশ্বাস করবেন না ওর কথা। আর আমাকে পালটাবার দরকার কি। ও যা দিবে বলছে, আমিও তো তা দিচ্ছি। শুধু শুধু ঝুঁকি নেয়ার দরকার কি?’

বিদেশীরাও উপদেশ দেন, সার্টিফিকেট দেন আর অবশেষে চিন্তা ভাবনা করে একজনকে ক্ষমতায় বসিয়ে সবার উদ্দেশ্য বাণী দেয়, ‘এ হচ্ছে দেশবাসীর পছন্দ’। সত্যি বলতে, আমাদের এই ফর্মুলায়ও তেমন কোন আপত্তি নেই। হেসে খেলে এই বক্তব্য আমরা হজম করি। আমাদের নেতা নেত্রীরাও বেশ গর্ব করে বলেন, অমুক দেশ আমাদের সরকারকে অভিনন্দন করেছে। অন্য দল আবার জানান দেয়, মিথ্যা বলছে, আমাদের আসল প্রভু আমেরিকা এখনও অভিনন্দন দেয়নি।

সম্প্রতি প্রতিবেশি দেশের বেশ কদর বেড়েছে। শীতল যুদ্ধ শুরুর কারণেই হোক আর দক্ষিন এশিয়ায় শক্ত অবস্থান তৈরির উদ্দেশ্যেই হোক, প্রতিবেশি দেশটির স্নেহ না পেলে এদেশের ক্ষমতায় আরোহণ সম্ভব না। ফলে শুরু হয়েছে কেবলা পরিবর্তন। কে কার চেয়ে বেশি পা চাটতে পারেন, তার প্রতিযোগিতা। সম্প্রতি হওয়া ফোনালাপ, কিংবা বলা উচিৎ, ফোনালাপের গুজব নিয়ে দুই দলের কর্মী, নেতা এবং তাঁদের বশংবদ বুদ্ধিজীবীরা যেমন কাদা ছোঁড়াছুড়ি করলেন, তা দেখতে বেশ মজাই লাগল।

ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ফোনালাপের কথা ঘটা করে বলবার কি আছে? সবাইকে বোঝানো, আমার দিকে প্রভুর সুনজর আছে? আর অন্য দলের চামচা বাহিনীর উল্লাস ছিল দেখবার মত। ফেসবুক, ব্লগ, পত্রিকা, টক শোতে ছিল উল্লাসের ছড়াছড়ি। গর্বিত কণ্ঠে বেশ উল্লাস করে বলছে, ‘আরে দূর, ভয় পাওয়ার কিছু নাই, ফোন করেই নি।‘ আচ্ছা, এই উল্লাসের কারণ কি? ‘প্রভু এখনও মত পাল্টান নি?’

যদি তাইই হয়, তবে আমাদের ভোট দেয়ার দরকার কি? আপনারা ঠিক করুন, কে কে আমাদের প্রভু। বরং তাঁদের ভেতর একটি ভোট করুন। অবস্থা যদি এমনই হয়, যে আমাদের প্রভু কথিত সেই ব্যক্তি, তাঁর সিদ্ধান্তেই যে সব কিছু ঘটছে। আর সেটাও যখন ‘ওপেন সিক্রেট’ তবে আর লুকোছাপা কেন? তাঁর ভোট দানকে প্রকাশ্য করে দিতে সমস্যা কোথায়? ফোনে না বলে সর্ব সম্মুখেই তাকে সিদ্ধান্ত নিতে বলুন, তাঁর ভোট দানকেও প্রকাশ্য করে দিন। সবার জন্য নির্দেশনা জারী করুন, যে দলের জন্য তিনি ভোট দিবেন, সে গদিতে বসবে।

এতে দল দুটিও বাঁচে, জনগণও বাঁচে। তাঁরা তখন শুধু শুধু জনগণের কাছে বিভিন্ন উন্নয়নের মিথ্যা ওয়াদা না করে সেই প্রভুর কাছে নিজেদের সত্যি ওয়াদা পেশ করবে। যিনি বেশি মুখরোচক ওয়াদা করে প্রভুর মন জয় করতে পারবেন, তার জন্য বরাদ্দ হবে গদি। আমরাও পাব আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকার। আর প্রভুরাও পাবে একজন আজ্ঞাবাহী ভৃত্য।

বিএনপির ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইন, বিএনপি নিজেই

bnp-final1

by zainuddin sani

হচ্ছি হচ্ছি করেও বিএনপির কিছু হচ্ছে না। আন্দোলনকে অংকুরে বিনাশের যে স্ট্র্যাটেজি আওয়ামীরা নিয়েছে, তাতে ভালোই কাজ দিচ্ছে। সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব আওয়ামীদের দেয়া ঠিক হবে না। কিছুটা কৃতিত্ব অবশ্য বিএনপিরও। নিজেদের অন্তর্কলহ থেকে শুরু করে নেতৃত্বের থাকা দুই জেনারেশানের একে অপরকে অবিশ্বাস, আওয়ামীদের কাজ আরও সহজ করে দিয়েছে। যেমনটা সাধারণতঃ হয়, অতি আত্মবিশ্বাস পতন ডেকে আনে, তেমনটা সম্ভবতঃ হতে যাচ্ছে, আওয়ামীদের। তাঁরা ভেবে বসে আছে, বিএনপি মাঠে নেই এই তথ্য যত প্রচারিত হবে, বিএনপির জন্য তা ততো ক্ষতিকর হবে। তবে ঘটনা সম্ভবতঃ তেমনটা ঘটছে না।

সহানুভূতি ব্যাপারটা বোধহয় কিছু নিয়ম মেনে চলে। তার একটা হচ্ছে অত্যাচারিতের দিকে ধাবিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। এই মুহূর্তে বিএনপির জন্য সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপারটা কাজ করছে, তা হচ্ছে ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে যে তথ্য জনগণ পাচ্ছে, তা এমন একটি ছবি প্রকাশ করছে যে বিএনপি ভয়ানক অত্যাচারের শিকার। তাঁদের নেত্রী একটি সমাবেশ করতে চাইছে, তাঁকে সেটা করতে দেয়া হচ্ছে না। অফিস থেকে বেরোতে চাইছে, তাও দেয়া হচ্ছে না। কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে বালু আর খোয়ার ট্রাক এর আগমন সবকিছু মিলিয়ে সহানুভূতি এই মুহূর্তে পুরো মাত্রায় চলে যাচ্ছে বিএনপির ঝুলিতে।

আওয়ামীদের বদান্যতায় কিংবা নির্বুদ্ধিতায় পাওয়া এই সুবিধাগুলো পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছে না বিএনপি। প্রথম সারির নেতারা বেশ স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, গ্রেফতার হতে তাঁরা রাজী না। হুমকি ধামকি দিতে বলেন, আমি আছি কিন্তু রাস্তায় মিছিল বের করতে পারব না। কোন সমাবেশে ভাষণ দিতে পারবো না। হরতালের দিনে রাস্তায় থাকতে পারবো না। তাই বলে আমাকে বা আমার চামচাদের কোন কমিটিতে রাখবেন না, তাও করতে দেব না। নতুন কোন নেতাদের আমদানী করবেন, সেটাও বরদাশত করব না। ফলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিএনপির রাজনীতি পুরোপুরি নেত্রী নির্ভর হয়ে বসে আছে।

প্রথম সারির নেতাদের এই স্বার্থপরতা দৃষ্টিকটু দেখালেও, তাঁদের এই অবস্থানের একটি নিজস্ব যুক্তি তাঁদের কাছে আছে। তাঁরা বেশ ভালো করেই জানেন, বিএনপি এই আন্দোলনে জিতলে, তাঁদের পায়ের তলায় আর কোন মাটি থাকবে না। বিএনপির ক্ষমতায় আরোহণ মানেই লন্ডন প্রবাসী নেতার প্রত্যাবর্তন। আর তিনি ফিরে দলের দ্বায়িত্ব নিলেই যাত্রা শুরু হবে তার নতুন ‘টীমে’র। আর সেই টীমে, পুরনোদের জায়গা হবে না। উপদেষ্টা জাতের কিছু আলংকরিক পদ দেয়া হতে পারে, তবে কর্তৃত্ব বলে কিছু থাকবে না। তাঁদের চোখের সামনেই তাঁদের এলাকায় নতুন আরেকজন নেতার উদয় হবে। দেখতে দেখতে তাঁদের চোখের সামনেই তাঁদের রাজনৈতিক মৃত্যু হবে। ফলে পুরনো নেতাদের এক বিশাল অংশ চাইছেন না, সেকেন্ড ইন কমান্ড দেশে ফিরুক।

এই মুহূর্তে বিএনপি দ্বিতীয় যে সমস্যায় আছে তা হচ্ছে, বিশ্ব ইজতেমা। সেকারণে অবরোধে ছাড় না দিলেও সমস্যা আবার দিলেও সমস্যা। ছাড় না দিলে, বিশাল এক জনতা অভিমান করবে। ভাববে, আমাদের কষ্টের কথা একবারও ভাবল না? আর অবরোধের কারণে যদি তাঁরা যোগ দিতে না পারে, তবে সেই অভিমান নতুন মাত্রা পাবে। দেশের অবস্থা ভেবে অনেকে মেনে নিলেও, সংখ্যায় তাঁরা হবেন বেশ কম। ওদিকে অবরোধে একবার ছাড় দিলে, আন্দোলনে আবার গতি আনা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। হয়তো অসম্ভবও। আর তেমনটা হলে, এই বছরের মত আন্দোলনের ইতি। এরপরের বছর আবার কিছু করবার চেষ্টা করলে, এই বছরের ব্যর্থতা তাঁদের পিছু ছাড়বে না।

এতোসব সমস্যার মধ্যে যুক্ত হয়েছে বিএনপির সমর্থক বুদ্ধিজীবী আর তার্কিকের আকাল। তাঁদের পক্ষ হয়ে লেখার জন্য নেই তেমন কোন কলামিস্ট, টক শো তে গিয়ে তাঁদের হয়ে ঝগড়া করবার জন্য নেই তেমন কোন তার্কিক। সঙ্গে যোগ হয়েছে, বিএনপি পন্থী চ্যানেল আর পত্রিকার অভাব। যাও দুএকটা ছিল, আপাততঃ বন্ধ আর নয়তো কেউই সেসব দেখে না বা পড়ে না। ফলে মিডিয়া ফ্রন্টে তাঁরা তাঁদের কথা, বলতেও পারছে না। আর যাদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে, তাঁদের পারফর্মেন্স বেজায় ভয়ংকর। সঙ্গে যোগ হয়েছে তারেক রহমানের বাণী। দলের কার্যক্রমকে যদিওবা কোন ভাবে ‘ডিফেন্ড’ করছে, ‘রাজাকার’ ইস্যু একেবারেই তাঁদের নাকাল করে ছেড়েছে। পুরনো নেতারা এখন আত্মগোপনে, নতুন নেতারা এখনও ভালো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেননি।

এমন একটা ফাঁকা মাঠ আওয়ামীদের জন্য মজার এক সমস্যা তৈরি করে দিয়েছে। নিশ্চিত জয় দেখতে পেয়ে তাঁরা এই মুহূর্তে খেলার বদলে উল্লাসের দিকেই মনোযোগী হয়ে উঠেছে বেশি। সারাক্ষণ শ্লেষাত্মক কথা, বিএনপি নেত্রীকে অপমান করা, বাকি নেতাদের ‘নেড়িকুত্তা’র মত পিটুনি দিতে চাওয়া, এসবের ভেতরে তাঁরা তাঁদের জয় দেখতে পাচ্ছেন। গায়ের জোরে পাওয়া বিজয়কেই তাঁরা রাজনৈতিক বিজয় ভাবছেন। ভুলে যাচ্ছেন, রাজনীতির খেলায় সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে জনগণের বিবেচনা। তাঁরা কি ভাবছে, সেই ব্যাপারটা মাথায় রাখা। আর বিরোধী দলের প্রতি সহানুভূতি তৈরি হতে না দেয়া। ক্ষমতার দম্ভ দেখাতে গিয়ে, তাঁরা বিরোধী দলকে অত্যাচারিত একটি দল হিসেবে জনগণের কাছে উপস্থাপন করে ফেলছে।

এতো কিছুর পরও হয়তো কিছু নাও হতে পারে। বিএনপির যে দৈন্য দশা, হয়তো তাঁরা আন্দোলনে বিফলও হতে পারে। বলা যায়, এদেশের সব আন্দোলনই বিফল। এক ৯৬ ছাড়া বাকী সব আন্দোলনই একটি কাজ করেছিল, আর তা হচ্ছে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এই আন্দোলনগুলোর কোনটিই হয়তো সফল হত না, যদি না সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলে আগ্রহী হত। তবে ১/১১এর পরে নিজেদের যেভাবে তাঁদের গুটিয়ে নিতে হয়েছে তাতে এই মুহূর্তে তাঁরা তেমনটা আর করবেন বলে মনে হচ্ছে না।

ঘুরে ফিরে বিএনপির এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় বন্ধু হচ্ছে আওয়ামীরা এবং তাঁদের অতি আত্মবিশ্বাস। বিএনপির দৈন্য দশা, বিএনপির ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা তাঁদের ইনফর্মাররা, যেভাবে প্রতিনিয়ত বিএনপির আন্দোলনকে ‘স্যাবোটাজ’ করছে আর তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে অচিরেই তাঁরা বিএনপির সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুতে পরিণত হতে যাচ্ছেন। আর শত্রু কিংবা বলা যায় ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইন হচ্ছে, বিএনপি নিজে। এই নতুন শত্রুর সঙ্গে কিভাবে মোকাবেলা করবে, কিভাবে আন্দোলন এগিয়ে নেবে, সেটাই এখন দেখার ব্যাপার।

দ্যা গ্রেট বিএনপি ফ্লপ শো

bnp-final1

by zainuddin sani

শো টা যে ফ্লপ করবে, কিছুই যে করতে পারবে না, তা কমবেশি সবাই জানতো। তারপরও দলীয় নেতা কর্মীরা টিভি সেটের সামনে বসেছিল। সারকারী অঘোষিত হরতাল না হলেও, মনে হয় না তাঁরা ঢাকায় যেতেন। সাধারণ জনতার যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। অলৌকিকভাবে ‘নুর হোসেন’ জীবিত হলে, সেও নিশ্চিত যেত না। শুধু বিএনপির আন্দোলন না, ‘গনতন্ত্র উদ্ধার’ মার্কা কোন আন্দোলনেই যেত না। নব্বইয়ে একবার উদ্ধার করে শখ মিটে গেছে। তবে রাজনীতি প্রিয় বাঙালির, রাজনীতি নিয়ে কথা বলা হয়তো থামাবে না। রাস্তায় নামবার ভুল এখন আর কেউ করে না। দলবাজি এখন সবাই করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে।

সমর্থক যে নেই, তা কিন্তু না। তবে তাঁরা সব কিছু দেখে, খেলা দেখার মেজাজ নিয়ে। টিভি সেটের সামনে বসে, নিজ নিজ দলের হয়ে উল্লাস করার জন্য। আর সাধারণ জনগণ বসেছিল গত বছরের স্মৃতি রোমন্থন আর ‘যে কোন মুল্যে’র মানে কি তা বোঝার জন্য। মানেটা গাজীপুরের দিনও বুঝেছিল, তবে ভেবেছিল, সেখানকার দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে, একটি লোকাল কারণে, শো ফ্লপ হয়েছিল। এবার ঘটনা ঢাকায়, নেতা কর্মীরাও আছে, বড় বড় হুশিয়ারি আসছে, অতএব এবার কিছু একটা হবে।

বিনোদন দেয়ার আওয়ামীদের ক্ষমতা নিয়ে কারোরই তেমন কোন সন্দেহ ছিল না। শ্লেষ মেশানো কথা বলায় কেউই কম যায় না। তবে বর্তমানে এবিষয়ে আওয়ামীরা একধাপ এগিয়ে আছে। সেসব শোনার পরের দৃশ্য ছিল রাজপথ। পুলিশ আর ছাত্রলীগের ‘ডেডলি কম্বিনেশান’ গাজিপুরের মত এখানেও খেল দেখাবে, তা সবারই জানা ছিল। একেবারে ‘কপি ক্যাট’ হলে দর্শক কমে যাবে দেখে মনোরঞ্জনের নতুন কিছু রসদও রাখা হয়েছিল। মায়া সাহেবের লুঙ্গি কিংবা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ এর সংযোজন হল। সবাই না হলেও অনেকেই এই নিয়ে আশাবাদী ছিল— কিছু নতুন মনোরঞ্জন আসছে।

সেই আশার গুড়ে অচিরেই বালি পড়ল। আওয়ামী নেত্রীর সেই পুরনো ঘ্যানঘ্যান আবার শোনালেন। সঙ্গে নতুন যা ছিল, তা হচ্ছে বিএনপি নেত্রীর নাটকের পাণ্ডুলিপি পড়ে শোনালেন। এছাড়া আওয়ামীদের তরফ থেকে বড় ধরনের তেমন কোন নতুনত্বের দেখা পাওয়া যায়নি। হয়তোবা তাঁরা দেখাতে চায়ও নি। এক বালুর বস্তা দিয়েই যদি কুপোকাত করা যায়, তবে আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাবার দরকার কি? তারপরও, কিছুটা ছিল।

আগেরবার ছিল বালুর বস্তা, এবার আর বস্তায় বালু ঢোকাবার প্রয়োজন বোধ করেনি। বালুর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছিল খোয়া, মাটি এসবের ট্রাক আর তাদের ড্রাইভারের মুখে মজার সব গল্প। দরজার তালাটিকেও নতুন সংযোজন বলা যেতে পারে। এবারের সত্যিকারের নতুনত্ব ছিল ‘স্পাই থ্রিলার’। আওয়ামীদের প্ল্যান আগে থেকে জেনে যাচ্ছিল বিএনপি আর বিএনপির প্ল্যান তৈরির সাথে সাথে চলে যাচ্ছিল আওয়ামী নেত্রীর কানে। এই প্লট আর কাউন্টার প্লটের খেলাটা এবার সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হয়েছে।

বিএনপির তরফ থেকে নতুনত্বের অভাব থাকলেও সময়টা খারাপ কাটেনি। পিকাপ ভ্যানে করে কয়টা কম্বল, কয়টা ম্যাট্রেস আসল, কোন ঘরকে ম্যাডামের বেডরুম বানানো হল, এসব খবর একেবারেই আনকোরা। আসলে সবাই গতবছরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ র সঙ্গে ঘটনা মেলাচ্ছিলেন। ‘ডায়ালগ বাই ডায়ালগ’, ‘সিন বাই সিন’। ম্যাডাম এবার একেবারে হুবহু নকল করেননি। সেবারের তুলনায় এবার একটু মুডে ছিলেন। রাগে গড়গড় করতে করতে সেই ‘গোপালি’ আর ‘তুই তোকারি’ ছেড়ে এবার ‘ক্যান রে ভাই’ এ এসেছেন। কিছুটা হলেও নতুনত্ব।

খেলায় কে জিতল তা নিয়ে আপাতত কিছুদিন ‘টক শো জীবীরা’ গলা ফাটাবেন। দলের নেতারা আসলে দুই ম্যাডামের গুণগানে কিছুদিন কান পাতা দায় হবে। একে অপরকে গালিগালাজও হয়তো করবেন। ‘গনতন্ত্র হত্যা’ ‘রাজাকারদের দোসর’ ‘ট্রেন মিস’ ‘২০১৯’ ‘সংবিধান রক্ষার নির্বাচন’— মোটামুটি এই থাকবে আগামী কিছুদিনের আলোচনার বিষয়। সাংবাদিকরা আসলে সবাই লক্ষ্য রাখবে, কে কোন দিকে ঘেঁসে কথা বলছেন। যদিও সাংবাদিকরাও দল বেছে ফেলেছেন এবং কি কি বলবেন, তাও সবাই জানে। তারপরও হয়তো দেখবেন। দুই দলকেই গালি দিলে আমরাই হয়তো বলব, ‘এই ব্যাটা কিন্তু ধান্ধাবাজ, দুই দিকেই তাল দিচ্ছে’। এরপর হয়তো চ্যানেল পাল্টাবো আর নয়তো ‘জলসা’ না দিলে স্বামীকে খুন করব।

খেলা আরও চলতো কি না, সত্যিকার অর্থে বোঝার উপায় নেই। মিছিলের নাম পাল্টে বিক্ষোভ মিছিল করলেও সেই মিছিল করবার জন্য কেউ আসবে না, তা সবাই জানে। নেতারা টাকা খেয়ে যেভাবে প্ল্যান উগড়ে দিচ্ছেন তাতে মনে হয় না ঢাকা শহরে আর কোন সমাবেশ করতে দিবে। বাকী থাকে হরতাল আর অবরোধ। ভোঁতা এই দুই অস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া তাদের আর তেমন কিছু করারও নেই। সেটাও হয়তো আর দুইদিন ডাকতে পারবে কারণ বিশ্ব ইজতেমার জন্য সেটাও স্থগিত করতে হবে। আর দিন দশেকের গ্যাপ পড়লে, নতুন করে আন্দোলন (এটাকে আন্দোলন না বলতে চাইলে, আমি আপত্তি করবো না) চাঙ্গাও করতে পারবে না। দলের নেতাদেরও সুবিধা। সম্ভবতঃ তাঁরা এটাই চাইছেন। শুধু শুধু আত্মগোপন করতে হবে না, এই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

এই শীতের আন্দোলন সম্ভবতঃ শেষ। কিছু খুচরা চেষ্টা হয়তো হবে। যদি কিছু লাশ পড়ে, তবে হয়তো কিছু মিছিল হবে। বিশ্ব ইজতেমা শেষ হওয়ার পরে হয়তো আবার কিছু অবরোধ আসবে। এবং যথারীতি মার্চের পরে সব কিছু ইতি। বিএনপির নেতারাও হয়তো অপেক্ষায় আছেন, কবে আসবে এপ্রিল। তাদের আর আত্মগোপনে থাকতে হবে না, মাঠে নামতে হবে না। তবে আওয়ামীদের কাছ থেকে পাওয়া মাসোহারায় হয়তো টান পড়তে পারে। আন্দোলনের প্ল্যান জানিয়ে যে আয় তাঁরা করছিলেন, সেই আয় হয়তো আপাততঃ বন্ধ হয়ে যাবে।

‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

by zainuddin sani

দেশের রাজনীতিতে কি হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সবাই বেশ বিভ্রান্ত। বিএনপির হুমকি ধামকি দেয়া, আর আওয়ামীদের সেসবে কর্ণপাত না করা, ব্যাপারটা অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। সকালের পত্রিকার দুটি অবধারিত শিরোনাম থাকতো দুই দলের কোন না কোন নেতার শ্লেষাত্মক বক্তব্য। কেন যেন ব্যাপারগুলোকে অনেক বেশী রীতি মাফিক মনে হচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছিল কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে— ‘আওয়ামীরা ২০১৯ পর্যন্ত চাইলে নির্বিঘ্নে থাকতে পারবে’। সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণার পরে, সত্যিকারের প্রত্যাশা কারোরই তেমন ছিল না। কমবেশি সবারই ধারণা হয়েছিল, ৫ই জানুয়ারিকে ঘিরে কোন কর্মসূচি এবং সেই কর্মসূচিতে বাঁধা দিলে কি হবে, তার হুমকি সম্বলিত একটি বক্তব্য আসছে। তার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামীরা কি বলবে, তাও সবাই আন্দাজ করে নিয়েছিলেন। পুরোপুরি তেমনটা হল না, সেদিনের ঘটনা, এদেশের রাজনীতির টিপিক্যাল ফর্মুলার ব্যত্যয় ঘটাল।

আপাত দৃষ্টিতে বিএনপি নেত্রীর ৭ দফা তেমন নতুন কিছু না। এতোগুলো দফার ভেতর মুল দফা একটিই। বাকী দফাগুলোর বেশ অনেকগুলোই সাধারনতঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকারই করে থাকে। আর কিছু খুচরা দফা দেয়া হয়েছে, সম্ভবতঃ নেগসিয়েশানের সময় বাদ দিতে রাজী হবার জন্য, সবাইকে বলা যাবে, ‘সমঝোতার খাতিরে আমরা তিনটি দাবী ছেড়ে দিলাম।’ তবে প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি হচ্ছে অন্য কারণে, এই সময়ে এসে, এমন নরম অবস্থান কেন? যে দাবী গত ছয় বছরে আওয়ামীরা মানেনি, তাদেরকে আবার নতুন করে সেই দাবীর কথা জানানো কেন?

৭দফাকে বেশ নির্বিষ মনে হলেও, কেন যেন সবাই তেমনটা ভাবছে না। সবাই বেশি করে ভাবছেন, এতো মোলায়েম স্বরে কেন কথা বলছেন বিএনপি নেত্রী? তারচেয়েও বড় কথা, আল্টিমেটাম নেই কেন? দফা না মানলে কি হবে, সে সম্পর্কেও নেই কোন ভবিষ্যৎবাণী। বড় জাতের আরও কিছু প্রশ্ন আছে। যেমন বিএনপির গেম প্ল্যান তাহলে কি? সবাই ভাবছেন এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে। আর সেই উদ্দেশ্য কি, তা নিয়ে বোদ্ধা মহলে চলছে কানাঘুষা। কেউ ভাবছেন, ‘নিশ্চয়ই বিএনপি কোন সিগন্যাল পেয়েছে’।

বোদ্ধা মহলকেও খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। তাঁদের এসব কথা ভাববার যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। আসলে এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে পদক্ষেপগুলোকে বেশ পরাজয় বলে ভাবা হয়, তার একটি হচ্ছে দাবী জানানো। বিশেষ করে সেই দাবীর সংখ্যা যদি থাকে একাধিক। আর সেই দাবী পূরণ না হলে, সরকারের কি অবস্থা হবে, সে সম্পর্কে যদি কোন হুশিয়ারি না থাকে, তবে তো অবধারিতভাবে ধরে নেয়া হয়, এই দাবীসমূহের প্রস্তাবকারী হয় সিরিয়াস না কিংবা তাদের তেমন কোন শক্তি নেই।

অন্যদিকে সাহসী পদক্ষেপ ভাবা হয় আন্দোলন কিংবা হুমকিকে। ‘এক দফা এক দাবী’র ও আলাদা একটা দাম আছে। তবে তেমন কিছু একবার বলে ফেললে কিছু একটা করে দেখানো জরুরী। নইলে আবার শুরু হয়ে যাবে অন্য হিসাব। যেমনটা হয়েছিল আওয়ামীদের ‘স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও আটকাতে পারবে না’ হুমকির পরে। আর ইদানীং কালে, বিএনপি সম্পর্কে।

আন্দোলন করে কোন দাবী আদায়ের রেকর্ড বিএনপির খুব একটা নেই। তবে দাবীতে অনড় থাকবার একটা রেকর্ড ছিল। ফলে আগে যখন হুমকি ধামকি দিলেও সেগুলোকে কিছুটা সিরিয়াসলি নেয়া হত। ভাবা হত, সফল না হলেও, কিছু একটা অন্তত করবে। নিজেদের তৈরি করা ‘গুড উইল’এ সম্প্রতি তাঁরা ফাটল ধরিয়েছে। হুমকির অধিক ব্যবহার এবং কিছু করতে না পারা, তাঁদের দেয়া হুমকি সম্পর্কিত এই ধারণায় কিছু পরিবর্তন এনেছে।

এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ফর্মুলা অনুযায়ী ৭ দফাকে নিশ্চিতভাবেই পরাজয় কিংবা পিছু হটা ভাবা যায়। বিশেষ করে গাজীপুরে যেভাবে পিছিয়ে আসলো, তারপরে। ৫ই জানুয়ারীর মত ‘সিম্বোলিক’ দিনে সবাই যেমনটা ভেবেছিলেন, তাঁরা তেমন কিছু করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। এটাও ঠিক, তাঁদের যা সাংগঠনিক অবস্থা, তাঁদের কাছ থেকে ততোটা কেউই প্রত্যাশা করছেন না। আবার এতো নরম কর্মসূচী দিবে, এটাকেও কেউ স্বাভাবিক ঘটনা ভাবতে চাইছেন না। সবার মনে তাই একটি সন্দেহ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, ‘পর্দার আড়ালে কিছু ঘটছে কি না।’

বিএনপি যেভাবে একের পর বিভিন্ন জাতের হুমকি দিয়েও কিছু না করার একটা ট্র্যাডিশান তৈরি করে ফেলেছিল, তাতে কমবেশি সবাই ভাবতে শুরু করেছিল, এই সরকারকে হটাবার ক্ষমতা বিএনপির নেই। আর ইতিহাস বলে, সরকারকে বাধ্য করতে না পারলে, বিরোধী দলের দাবী মেনে নেয়ার মত ঘটনা ঘটে না। আর নরম স্বরে বললে তো নিশ্চিতভাবেই ঘটবে না। এই দাবীর তাই একটি স্বাভাবিক মানে হচ্ছে, হুমকি দিয়ে কিছু না করে নিজেদের ইমেজের যে বারটা বাজিয়েছি, তা আর কন্টিনিউ করতে চাই না। এবার স্বীকার করে নিতে চাই, আমরা অথর্ব। দল হিসেবে, সংগঠন হিসেবে আমরা বেজায় অগোছালো। আন্দোলন করে দাবী আদায়ের ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই এই অনুরোধ ফর্মুলা।

এই স্বাভাবিক ব্যাখ্যার বদলে সবাই কেন যেন অন্য কিছু ভাবছেন। হয়তো ১/১১এর উদাহরণ এর জন্য দায়ী। এদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিদেশ নির্ভরতা এর জন্য দায়ী। হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া বাকী কারো কাছ থেকে সমর্থন আদায়ে এই সরকারের ব্যর্থতা এর জন্য দায়ী। আবার হতে পারে পর্দার আড়ালে এমন কিছু ঘটবার আভাস তাঁরা পেয়েছেন, যা থেকে মনে হয়েছে, এদেশ একটি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। আর তাই, কঠোর আন্দোলনের পথ ছেড়ে, নরম আর সমঝোতা ধাঁচের পথে হাঁটতে রাজী হয়েছেন, বিএনপি নেত্রী।

ধাঁধা আরও আছে। বিএনপির বেশ কিছু বড় নেতার বক্তব্য থেকে বোঝা গেছে, ৭ দফার এই সিদ্ধান্ত নেত্রীর একক সিদ্ধান্ত। সব দলের সাথে আলাপও করেননি। এমনকি নিজ দলের অনেককেও অন্ধকারে রেখেছিলেন। ঘাড়ের ওপর মামলা, বিভিন্ন আন্দোলনে দলীয় বড় নেতাদের পালিয়ে বেড়ানোর মানসিকতা এমন অনেক ব্যাপারকেও এর কারণ ভাবা যেতে পারে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বড় কারণ হিসেবে সবাই ভাবতে শুরু করেছেন, বিদেশী প্রভুদের ইচ্ছেকে।

৭দফা নিয়ে বোদ্ধা মহলের এই প্রতিক্রিয়া দেখে এই প্রশ্নই সবার মনে জাগছে, কি এমন ঘটল যে ম্যাডাম এরকম ‘সফট’ কর্মসূচী দিলেন। কোন আশ্বাস কি পেয়েছেন? আওয়ামীরা নরম হবে কিংবা এভাবে দাবী জানালে মেনে নেবে— এমন কোন আভাস? ১/১১ এর মত কোন ঘটনার আভাস? আওয়ামীদের ওপর থেকে বিদেশী প্রভুদের আশীর্বাদের হাত তুলে ফেলার আভাস? কিংবা প্রতিবেশী দেশের ওপর অন্য কোন বৃহৎ দেশের চাপ প্রয়োগের আভাস? সম্ভবতঃ আর কিছুদিনের ভেতরেই সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে। তখন স্পষ্ট হবে, ‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

বিএনপি কি বোঝে না, সেটাই বোঝে না

bnp-final1

by zainuddin sani  বেশ একটা যুগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বিএনপি। তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই নড়বড়ে দল নিয়ে ভাঙাচোরা একটা আন্দোলন চালাবে? না জনগণকে সম্পৃক্ত করার নতুন কোন প্রচেষ্টা নেবে। জনগণ আশার আলো দেখতে পায়, এমন কিছু করবে। এখন পর্যন্ত তাঁরা যা করেছে, তা ছিল গতবছরের সেই হরতাল আর অবরোধ দিয়ে শীতকাল পার করবার চেষ্টার একটি ব্যর্থ ফটোকপি। সবার মনে তাই প্রশ্ন, এভাবেই চালাবে? না মাথায় নতুন কোন প্ল্যানিং আছে? প্রশ্ন অবশ্য আরও একটা আছে, নতুন কিছু করবার মতো মেধা কিংবা ক্ষমতা তাঁদের আদৌ আছে কি না? ছাত্র সংগঠন কিংবা দ্বিতীয় সারির নেতৃত্ব বলে তাঁদের কিছু আছে কি না? কিছু উত্তর দেশবাসী পেয়ে গেছে, বাকীটা সম্ভবতঃ আগামী কিছুদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।

বিগত কিছুদিনের কার্যক্রমে আন্দোলনে কিছুটা গতি এসেছিল। আর সেকারণে, অনেকেই গাজীপুরের দিকে তাকিয়েছিল। তবে ২৭শে কি হবে, এই নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য উৎসাহ জাগানো ছাড়া আর তেমন কিছুই করতে পারেনি বিএনপি। এভাবে পিছু হটবে, সম্ভবতঃ বিএনপির অনেক নেতাকর্মীও ভাবেনি। ফখরুল সাহেবের হুমকি যে সিরিয়াসলি নেয়াড় মত কোন জিনিস না, তা দেশবাসী বুঝে গেছে। যতটুকু যা আস্থা ছিল, তা ছিল বিএনপি নেত্রীর প্রতি। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি তাঁর সেই পুরনো মূর্তিতে ফিরে আসছেন। যেভাবে তিনি মাঠে নেমেছিলেন, একের পড় এক সমাবেশ করছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল, এবার আর বালির বস্তা দিয়ে আটকানো যাবে না।

ভুল ভাঙতে সময় লাগল না। আন্দোলন থামাতে এবার বালির বস্তাও লাগলো না। বাহ্যিকভাবে যদিও মনে হচ্ছে ১৪৪ ধারা আর ছাত্রলীগের ‘নেড়ি কুত্তা’ হুমকিই খেল দেখাল। তবে ভেতরের খবর আরও করুণ। গাজীপুরের নেতাদের ‘অসম সাহস(?)’ আর দলীয় কোন্দল এবার আওয়ামীদের কাজ সহজ করে দিয়েছে। বালির বস্তা আনবার খরচ বাঁচিয়ে দিয়েছে। সঙ্গে বক্সী বাজারের ‘নেড়ি কুত্তা’র ইফেক্টও কাজে দিয়েছে। দল হিসেবে বিএনপির তেমন কোন সম্মানজনক অবস্থান না থাকলেও, বিএনপি নেত্রীর ছিল। সেই দৃঢ় ইমেজে এবার বেশ বড়সড় ধাক্কা লাগলো।

দল হিসেবে বিএনপির এই অসম্মানজনক অবস্থান একদিনে তৈরি হয়নি। পুরো আওয়ামী আমলটাতেই, সরকার বিরোধী আন্দোলনে, বিএনপির ‘পারফর্মেন্স’ ছিল বেজায় হতাশাজনক। প্রথম আওয়ামী আমলে তেমন কোন আন্দোলন কিংবা সাফল্য না থাকলেও তাঁদের সমস্যা এতো প্রকট হয়ে দেখা দেয়নি। সেই অসফল আন্দোলন তেমনভাবে কারো চোখেও পড়েনি আর তাতে তেমন কোন সমস্যাও হয়নি, কারণ পরবর্তী নির্বাচনে জয় এসেছিল। সেই যাত্রা পার পেয়ে গেলেও দুর্বলতাটা থেকেই গিয়েছিল। এবারের আন্দোলনেও তাঁরা তেমন কোন নতুনত্ব আনতে পারেনি। যা করেছে, তা হচ্ছে আওয়ামীদের আন্দোলনের ফটোকপি। সেই হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর আর জ্বালাও পোড়াও। হরতালের বাজারদর কমে যাওয়া আর ভাংচুর এবং পেট্রোল বোমায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু, এবার সমস্যায় ফেলেছে বিএনপিকে।

হরতালের বদলে দেয়ার মত হাতে তেমন নতুন কোন কর্মসূচিও নেই। মানব বন্ধন কিছু দিয়েছিল, তবে সেখানে তেমন কোন গ্ল্যামার নেই, ওটা অনেকটা সুশীল সমাজ সুশীল সমাজ ভাব এনে দেয়। খুব ভালো কাভারেজও জোটে না, ফলে সেই লাইনে এগিয়েও খুব বেশি সাফল্য আসেনি। সমাবেশের নাম পাল্টে, বিক্ষোভ সমাবেশ করেও তেমন কোন লাভ হয়েছি কিনা সন্দেহ। ফলে ঘুরে ফিরে সেই হরতাল আর মিছিল। আর অতি ব্যবহারে এই মহার্ঘ অস্ত্রের প্রতি জনগণ আর দলীয় কর্মীদের মধ্যে এসেছে এক বেশ দায়সারা ভাব। হরতালের এই কর্মক্ষমতা হারানো আর বিকল্প কিছু না পাওয়া, সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে বিএনপিকে।

চিন্তার দৈন্যতার চরম প্রকাশ করলেন বিএনপির জনৈক নেতা। আওয়ামীদের ‘লগি-বৈঠা’ নকল করে ‘দা-কাস্তে’ বলে বেশ বড়সড় ঝামেলা বাঁধালেন। এরপরে বেশ কিছুদিন তিনি লাপাত্তা হয়ে থাকলেন। বিএনপির নেতারা, ‘নিজস্ব মতামত’ বলে দূরত্ব তৈরি করলেন। ঢাকা মহানগরে আগে থেকেই দলীয় কোন্দল ছিল, সেখানে কিছু হাওয়া লাগলো। খোকা সাহেবকে কোণঠাসা করবার এই সুযোগ, অন্য পক্ষ হাতছাড়া করল না। পুরো ঘটনার সারাংশ যা দাঁড়াল, তা হচ্ছে, দলীয় কোন্দলের সাথে সাথে বিএনপির চিন্তার দৈন্যতা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠল।

এদেশে আন্দোলন করবার সময় হচ্ছে এই শুষ্ক মৌসুমটা। হাতে আছে আর বড়জোর তিনমাস। এই সময়ের ভিতর বিএনপি কিছু করতেন না পারলে পিছিয়ে যাবে এক বছর। কারো কারো মতে পুরো চার বছর। যত সময় যাচ্ছে, ততোই প্রশ্ন জাগছে, এই শীতকালে কিছু করতে বিএনপি কি পারবে? কিছুদিন আগের ‘কতোটা সফল হবে’ থেকে আলাপ আলোচনা সেই প্রথম ধাপেই ফিরে এসেছে ‘বিএনপি আদৌ কিছু করতে পারবে কি না?’ ২৭ তারিখের পরে, এই উত্তর কমবেশি এখন সবাই জানে। টক শো আর বিভিন্ন আলাপ আলোচনায় বেশ অনেক বুদ্ধিজীবীই এখন ভবিষ্যৎ করনীয় নিয়ে উপদেশ দেয়া শুরু করেছেন। আসলে বিভিন্ন ভাবে বলার চেষ্টা করেছেন, এভাবে হবে না। হয়তো বিএনপি নিজেও জানে, তাঁদের কিছু করার ক্ষমতা নাই। তবে যেটা জানে না, তা হচ্ছে, এর কারণ।

একথা ঠিক যে আওয়ামীদের এমন কোন জনপ্রিয়তা এখন নেই। ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনকে প্রথমে বেশ কিছুদিন সফল নির্বাচন বলে চালানোর চেষ্টা করলেও সম্প্রতি তাঁরা সুর পাল্টেছে। এখন তাঁরা সেই গণতন্ত্র হত্যাকে সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতা বলে চালানোর চেষ্টা শুরু করছেন। ভাষার এই পরিবর্তন থেকে হয়তো কিছুদিন আগেও বিএনপির মনে আশা জেগেছিল, হয়তো ভাবছিল, আন্দোলন ভালমত করতে পারলে, কপালে শীকে ছিঁড়তে পারে। এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না আর বোদ্ধা মহলও বলছেন, বিএনপির যে সাংগঠনিক অবস্থা আর দলীয় কোন্দল, তাঁদের দিয়ে তেমন কোন আন্দোলন সংগঠিত হওয়া সম্ভব না।

এর আগের বিভিন্ন সরকার বিরোধী আন্দোলনে, সাধারণ জনতা, হয় নিজেই মাঠে নেমেছিল আর নয়তো মৌন সম্মতি দিয়েছিল। এবার দুটোর কোনটাই ঘটছে না। পুরো আন্দোলনকে তাঁরা দেখছে, দুই দলের ক্ষমতায় যাওয়ার কামড়াকামড়ি হিসেবে। চর দখলের এই প্রতিযোগিতায় কেউই অংশ নিতে রাজী না। আন্দোলন করে, আওয়ামীদের গদি থেকে নামাবার পরে কি? কি পাবে তাঁরা? এই উত্তরে জনগণ দেখতে পাচ্ছে সেই একই হতাশা। আরেকটি স্বৈরাচারী সরকার, শুধু নেত্রীর নাম পরিবর্তন।

জনগণকে যদি পাশে পেতে চায়, বিএনপিকে প্রথমে বুঝতে হবে, জনগণ কি চায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁদের নেতার অবস্থান মুখস্থ করানো নিয়ে জনগণ বেজায় বীতশ্রদ্ধ। প্রয়াত নেতাদের পূজা করা এবং জনগণকে সেই পূজা করতে বাধ্য করার এই প্রবণতার একটি ইতি টানবার চেষ্টা তাঁরা দেখতে চায়। ছাত্র সংগঠনের উদ্দাম অস্ত্র নৃত্য কিংবা দুর্নীতির কড়াল গ্রাস থেকে মুক্তি চায়। ক্ষমতায় গেলে করব, এই ফর্মুলা থেকে বেড়িয়ে এসে, এখনই কিছু করার প্রচেষ্টা দেখতে চায়। ‘ওদের আমলে কি হয়েছে?’ এই যুক্তিতে নিজেদের অন্যায় চালিয়ে যাওয়ার এই প্রবণতার অবসান দেখতে চায়।

অলৌকিক কিছু না ঘটলে, এই সাংগঠনিক অবস্থানিয়ে বিএনপির পক্ষে সফল কোন আন্দোলন করা সম্ভব না। এই তথ্যটা বিএনপি বুঝে গেছে। তবে যেটা বোঝেনি, তা হচ্ছে, কেন তাঁদের এই অবস্থা। জনগণের আকাঙ্ক্ষা বোঝার যে অক্ষমতা আওয়ামীদের ভেতর এখন কাজ করছে, তা তাঁদের ভেতরেও কাজ করছে। গদি থেকে আওয়ামীদের সরিয়ে বিএনপিকে বসাতে কেউই আগ্রহী না। স্বৈরতান্ত্রিক ফরম্যাটের সরকারের শুধু নেত্রী পরিবর্তনের জন্য কোন জনগণই মাঠে নামবে না। বিএনপির কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তাঁরা জনগণের এই সরল প্রত্যাশাটা এখনও বোঝেনি। বিএনপির এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, তাঁরা কি বোঝেনা, সেটাই বোঝেনা।

বাঙলা ভাষার দুর্বলতা ?

By Shibly Azad

এক,

বাংলা ভাষা দুর্বল, তার চিন্তাশক্তি নেই, তার শব্দসম্ভার কম, তার ফ্ল্যেক্সিবিলিটি নেই, বাংলাতে লিখতে গেলে টেকনিক্যাল বা পরিভাষা পাওয়া যায়না, এমনতর অভিযোগ বহু পুরনো, এবং ক্ষেত্র বিশেষে, এ ধরণের আক্ষেপ সঠিক ও বাস্তব হলেও সামগ্রিক বিচারে এসব অভিযোগ ঠুনকো অজুহাত মাত্র। এসকল অভিযোগ বা বক্তব্যের অর্থ এই নয় যে, বাংলা ভাষাটাই দায়ী; এর অর্থ হল, বর্তমান সময়ে বরং এই ভাষা ব্যাবহারকারীদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও ভাষার প্রায়োগিক বিষয়গুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কিছু সমস্যা রয়েছে, ভাষার নয়, যে সমস্যা আবার জনগোষ্ঠী হিশেব তাদের সাম্প্রতিক ম্যাটেরিয়াল জীবনের দৈন্য নির্দেশ করে। বাংলা ভাষা নিজে কোন সমস্যা নয়, যদি এমন হত যে বাংলাভাষীরা খুবই প্রতিভাবান, ফুটন্ত মেধার কারণে ছটফট করছে, কিন্ত দুর্বল বাংলা ভাষার জন্য তারা ভাব প্রকাশ করতে পারছে না, সেক্ষেত্রে বাংলাভাষীরা অন্তত ইংরেজিতে লেখে দুনিয়া কাঁপাতে পারতো, যেহেতু, শিক্ষিত সকল বাংলাভাষী কমবেশী ইংরেজি জানেন। কিন্ত, সেটাওতো হচ্ছে না। এ কথা সতঃসিদ্ধ যে, উন্নত জনগোষ্ঠীর ভাষা উন্নত হতে বাধ্য, মানব ইতিহাসের কোন কালপর্বে এমন ঘটনা ঘটেনি যে, ভীষণ উন্নত একটি জাতির ভাষা অনুন্নত ছিল, বা আছে। ইতিহাসের সকল কালপর্বে, বিশ্বকে নেতৃত্বদানকারী সকল জাতির ভাষা ছিল তার সময়ের সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধতম ভাষা; যে জাতি যখন যত উন্নত, তার ভাষাও তখন তত উন্নত। এর কোন ব্যাত্যয় নেই।

দুই,

মনে রাখতে হবে, ভাষা আপনা আপনি তৈরি হয় না, উন্নত ভাব প্রকাশের বাহন হয় না; একটি ভাষা উন্নত হয় ঐ ভাষা ব্যাবহারকারীদের জন্যে। ইংরেজি বা অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষা আজ উন্নত (যেমন অতীতে ছিল গ্রীক, ল্যাটিন, সংস্কৃত, ম্যান্ডারিন, বা নিকট অতীতে আরবী, ফার্সি, কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে উর্দু), যেহেতু হাজার বছর ধরে এই ভাষাগুলোর ব্যাবহারকারীরা, এবং এসব জনগোষ্ঠীর শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবানেরা এসকল ভাষাকে তাদের ভাব প্রকাশের বাহন হিশেবে ব্যাবহার করেছেন এবং এখনো করছেন। ফলে, বিচিত্র লঘুগুরু ভাব প্রকাশের জন্য এসকল ভাষা যথার্থভাবে বিকশিত হয়েছে। নিজস্ব সামাজিক বিকাশের দুর্বলতার জন্য, বাংলার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী শুরু থেকেই ইংরেজি নির্ভর; সবচে বড় কথা, অন্যান্য জাতির মত নিজ জনগোষ্ঠীর এই দুর্বলতাকে ওভরকাম করার কোন সচেতন প্রয়াসও তারমধ্যে নেই; এই প্রচেষ্টাহীনতা, আমার মতে, এই জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য; যা হবার হবে, যেভাবে চলছে চলুক, আমার কী আসে যায়, এমনতর মানসিকতার জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীর মত আর দুটি নেই এই দুনিয়াতে।

তিন,

বাংলা দুর্বল ভাষা, এ ধারণা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে বোধশক্তিহীন অর্বাচীনের বক্তব্য; সমস্য হল, গত পঞ্চাশ বছর ধরে বাঙলাভাষী এলিটরা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বকে ভাষার দোষ বলে বিশ্বাস করা শুরু করেছে। যদি বাঙলা গদ্যের খবর নেই, বিশেষ করে এর বুদ্ধিবৃত্তিক ও তাত্ত্বিক লেখাজোখার, তবে মনে রাখতে হবে, এই ভাষায়, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধোত্তরকালে, গত কয়েক দশকে সুকুমারী ভট্টাচার্য, অশীন দাশগুপ্ত, রণজিৎ গুহ, সুমিত সরকার, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ভদ্র, দীপেশ চক্রবর্তী, আদিত্য মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম চক্রবর্তী, পল্লব দাশগুপ্ত, অমল বন্দোপাধ্যায়, অমিয় বাগচী, কৌশিক বসু, প্রমুখ গভীর তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন এবং করছেন; এরা সকলেই বিশ্ববিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, সেসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন, কিংবা এখনো পড়ান; এবং ইংরেজিতে লিখেই তাত্ত্বিক হিশবেই প্রথমে তারা জগতবিখ্যাত হয়েছেন।

একই কথা বলা চলে এঁদের পূর্বসূরিদের সম্পর্কে; অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্য যে, উনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেও বাংলায় প্রবন্ধ ও গবেষণাপত্র লিখেছেন এমন অনেক প্রতিভা ছিলেন বিশ্বমাপের। অনেক অনেক নামের ভিড়ের মধ্যে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, ব্রজেন শীল, বিনয়কুমার সরকার, ক্ষিতিমোহন সেন, হরিদাস ভট্টাচার্য, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন সরকার, শঙ্করী প্রসাদ বসু, হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, হুমায়ন কবির, বিমল কৃষ্ণমতিলালের মত আরও কয়েক ডজন নাম নেয়া যায়, যারা সবাই তাদের তীক্ষ্ণ মেধার জন্যে এবং নিজ নিজ বিষয়ে মৌলিক গবেষণামুলক অবদান রাখার জন্যে আন্তরজাতিক ভাবে খ্যাত। অর্থাৎ, ভাষার সমস্যা নেই, বাঙলাতে যেকোনো জটিল তাত্ত্বিক আলোচনা সম্ভব। এখন শুধু প্রয়োজন নির্মোহ ও নৈর্ব্যক্তিক ডিসক্যার্সিভ বাংলা গদ্য লেখার ধারাক্রম তৈরি করা ও সেই ধারাকে বলবান করার জন্য বাংলায় বিষয়ভিত্তিক প্রফেশনাল জার্নাল বের করা, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা লিখবেন নিজেদের তাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের জন্য। যত বেশি বেশি লেখা হবে, ভাষা তত বেশি বিকশিত হবে।

চার,

পরিভাষার সমস্য? প্রশ্ন হল, পরিভাষা তৈরির প্রয়োজনীয়তা কী ? আর সেটা করবেই বা কে? তার সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতা দেবে কে ? ফ্রান্সের একাদেমি ঐতিহাসিক ভাবে একাজ করে এসেছে, ফরাসি ভাষার জন্য; ফরাসি ইতিহাসের জগতবিখ্যাত ব্যাক্তিরা এই কাজে ব্যাপৃত ছিলেন বলে ওই অ্যাকাদেমির গ্র্যাহ্যতা ছিল এবং ফরাসি ভাষা রেগুলেট করতে তারা সফল হয়েছিল। অর্থাৎ, যোগ্যতা ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ের কারনে ওই আকাদেমি সফল হলেও, বাংলায় তা ব্যর্থ হয়েছে ঠিক এই দুই গুনের অনুপস্থিথির কারনে। অপদার্থ আর মূর্খের আস্তানা বাংলাদেশের বাংলা একাদেমি। পশ্চিম বঙ্গের বাংলা একাদেমি বিখ্যাত তার রাবীন্দ্রিক গদাইলস্করী চালের জন্য; আর বাংলাদেশেরটা তাদের আকাশচারী গণ্ডমূর্খতার জন্য। এতএব, এদের কাজের কোন সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতা আগে যেমন ছিলনা, আজও তেমনি নেই, এবং ভবিষ্যতেও যে থাকবে না, তা হলফ করে বলা যায়; কেননা, সুশিক্ষিত লোকেরা এসকল সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে আসবে না, আসতে পারবে না, বা সহজ করে বললে, তাদের আসতে দেয়া হবে না। সেটাই ভাল, এতে বাংলা ভাষা রেগুলেশনের জঞ্জাল আর আপদ মুক্ত থাকলো।

তো কী করবে বাংলা ভাষা? উত্তর খুবই সোজা—সে চলবে তার আপন স্বভাবে। ইংরেজি ভাষার বৈশিস্ট্য হোল অন্য ভাষার শব্দ দ্রুত আত্তীকরন করা, বাংলা ভাষাও তা করে থাকে, তবে ইংরেজির মত অতো দ্রুত নয়; বেচারার হজম শক্তি একটু দুর্বল, তাই একটু সময় নেয়, তবে সবই হজম করে ফেলে, সর্বভুক এই ভাষা। কে আজ খবর রাখে যে, স্বয়ং “খবর” শব্দের উৎপত্তি আরবী, বা “কলম” কিংবা “বই” আদতে আরবী শব্দ? “দাদা-নানা” তুর্কী ? গরমের দিনে ফালুদা খান? আর শীতে গরম গরম ফিরনী ? তবে জেনে রাখুন, “ফালুদা” ফার্সি আর “ফিরনী” তুর্কী শব্দ; খানাপিনার (কী সুন্দর উর্দু–ফার্সির যুগলবন্দী) কথাই যখন এলো, তখন যেনে নেয়া ভাল যে, আজকাল অনেকই প্রগতির আশায় কিংবা নিরেট আমোদ করার জন্যে ইংরেজির আশ্রয় নিয়ে একটু-আধটু “ড্রিঙ্ক” করে থাকেন, হোক সে দেশী ধেন্যু কিংবা বিলাতী হুইস্কী। আবার দেখুন, ছোট ভাইয়ের সাথে মারামারীতে পারছেন না, আব্বাকে ডাকবেন ? আরে বাবা, “আব্বা” শব্দটাতো হিব্রু!

বলাবাহুল্য, বাংলা ভাষার দশ শতাংশ শব্দ এভাবেই বিদেশী ভাষা থেকে এসেছে, তো আরো আসতে অসুবিধা কী? আসলে সমস্যাটা আমাদের, যে সমস্যাটা আসলে কৃত্তিমঃ দৈনন্দিন জীবনে মুখের কথায় আমরা প্রচুর সমসাময়িক ইংরেজি শব্দ ব্যাবহার করলেও, লেখার সময় থাকি কুণ্ঠিত; যদিও, অনেক পুরনো আত্তীকৃত শব্দ না জেনে ব্যবহারে আমাদের কোনই আপত্তি নেই। ভাষার ছুঁচিবায়ুগ্রস্ততা মুলত গণ্ডমূর্খতা, এটা কুপমন্ডুকতার আরেক নাম। যা করণীয়, তা হোল কাণ্ডজ্ঞান বজায় রাখা, এবং যে শব্দই প্রয়োজন, তা চোখ-কান বুঝে বাংলাতে ব্যাবহার করা, হোক সে যেকোনো ভাষার শব্দ। উচ্চশিক্ষায় এক্ষেত্রে ইংরেজি টেকনিক্যাল টার্ম বা শব্দগুলো যথা সম্ভব আত্তীকরণ করে বাংলা হরফে লিখে নিলেই চলবে; বহুল ব্যবহারে, ধীরে ধীরে সেসকল শব্দের পরিচিতি লাভ ঘটবে; একটু সময় লাগবে, কিন্তু, হবে। আরেকটা কথা, উচ্চশিক্ষার টেকনিক্যাল শব্দ শুধু ঐ বিষয়ের ছাত্রশিক্ষক আর পেশাজীবীদের প্রয়োজন, আমজনতার সেসব শব্দ বোঝার প্রয়োজন নেই (যদি না সে সে বিষয় শিখতে চায়) বলে উচ্চশিক্ষার টেকনিক্যাল শব্দের অতিসরলীকরণ অপ্রয়োজনীয়।

পাচ,

বাঙালীর বাংলা ভাষা ব্যবহার করার প্রবণতার তুলানায় মার্কিনীদের ইংরেজি ভাষার ভাংচুর করার প্রবণতা তফাত করতে গিয়ে বিবেকানন্দ বলেছিলেন যে, জ্যান্ত মানুষের ভাষা হয় জ্যান্ত; বিবেকানন্দের মতে, মার্কিনীরা জ্যান্ত, বাঙালীরা মরা। বিবেকানন্দকে ধার করে আমিও বলি, আজকের দিনে অনেকের আধুনিক গদ্যের বাংলা মৃতবৎ এ জন্য যে, বাংলাভাষী অধিকাংশই আসলে মনের জগতে এক একজন মৃত সত্ত্বা; মড়ার ভাষা তো আড়ষ্ট হবেই।

ছয়,

বাংলা ভাষায় চিন্তাচর্চার বাধ তখনই ভাঙ্গবে যখন ইংরেজি, ফরাসি, বা জার্মানের মত এই ভাষায় চিন্তাচর্চার বানিজ্যিকরন হবে। ঘাবড়াবেন না। চিন্তার বানিজ্যিকরন মানে নোটবইয়ের বন্যা বা কোচিং সেন্টারের প্রাদুর্ভাব না, এর মানে লেখাপড়ায় প্রফেশনালিসমের বিকাশ—ব্যাপক পড়াশোনা, গবেষণা, চিন্তাভাবনা, জর্নলে গবেষণা প্রবন্ধ ছাপানো, আর বই লেখা, যার ইনকাম দিয়ে একজন লেখক জীবন ধারন করে থাকে এবং পাঠক সে লেখা পড়ে জানে, বুঝে, শিখে। ভাবুক, কবি, বা লেখক না খেয়ে কষ্ট করবে, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে, তার সংসার উচ্ছনে যাবে, তার স্ত্রী-সন্তানরা পথে বসবে, আর আমরা উহু আহা করব, আর আলু-ফালুরা সমাজ চালাবে, এই চিন্তাটা অস্বাভাবিক, অপ্রাকৃতিক, ও মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ। সব উন্নত দেশেই ভাল লেখকরা বই লিখে প্রচুর ইনকাম করেন; প্রকাশক আগাম টাকা দেন, ছয়-সাত ডিজিটে, যা সারা জীবনের জন্য জীবন ধারণের পক্ষে যথেষ্ট; এজন্য, এরা কয়েক বছর ধরে গবেষণা করে তারপর লেখেন এবং এজন্য এদের প্রতিটা লেখাই অসাধারণ । বছরে ১৪/১৫ টি বই লিখতে হলে, আর যাই হোক, মান রক্ষা হয় না, বরং দাউদকান্দীর মলমের মত একটা কিছু হয়, সাময়িক তৃপ্তি হলেও তাতে চূড়ান্ত তৃষ্ণা মেটে না, বা কাজও উদ্ধার হয় না। তেমনি, সকল, বিশেষ করে, বেশী সফল অধ্যাপকেরাও, বই লিখে বিপুল উপার্জন করতে সক্ষম বলেই নিবিষ্টমনে গভীর ও ব্যাপক গবেষণায় তারা জীবন পার করতে পারেন।

এ ব্যাপারে একটু ব্যাক্তিগত প্রসঙ্গের অবতারণা করছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সকল শিক্ষকই ইউনিভারসিটির বেতন ছাড়াও যে টাকা রয়্যালটি থেকে পেতেন, তার পরিমাণ শুনলে আক্ষরিক অর্থেই চোখ গাছে উঠবে। আমার সরাসরি দুই শিক্ষক নোবেল প্রাইজ পাবার আগেই বছরে ৫/৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশী করে কামাতেন; এদের একজন, জোসেফ স্টিগল্টীযকে ২০০১ সালে বিশ্বখ্যাত পাবলিশার নর্টন কয়েক মিলিয়ন ডলার আগাম দেয়, গ্লোবালাইজেশন নিয়ে তিন খণ্ডে বই লেখার জন্য। তার তিন খণ্ডের সেই বই (Globalization and Its Discontent, The Roaring Nineties, and Making Globalization Work) আজ ক্ল্যাসিক বলে গন্য। টাকা যেখানে আছে, সেখানে ধীরে হলেও, কোয়ালিটি আসতে বাধ্য; পয়সা দিয়ে কেউ বাজে জিনিষ নেয় না; আর বারবারতো ভুষিমাল দিয়ে সবাইকে বোকা বানানো সম্ভব না। অর্থাৎ, লেখাটাও হতে হবে পুজির নিয়ম মেনে, পুঁজিবাদের নিয়মই হোল প্রতিযোগিতা, শ্রেষ্ঠত্বের সাধনা, কেননা শ্রেষ্ঠরাই টিকে থাকে বাজারে; অতএব, সেটাই কাম্য বাঙলার ক্ষেত্রেও। বাঙলীরা মানবরীতির বাইরে নয়, বাংলাভাষাকেন্দ্রিক সাহিত্য, ফিকশন কী নন-ফিকশন, লঘু কী গুরু, তাই পুজির বাইরে থাকতে পারে না।

সাত,

আবারও বিবেকানন্দঃ জ্যান্ত মানুষের ভাষা হয় জ্যান্ত; বাঙলাভাষী, তুমি কী জ্যান্ত ?

সেনা অভ্যুত্থানঃ মুসলিম জাতিরাষ্ট্র প্রেক্ষাপট

আজ ১৯ আগস্ট । রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট অগাস্টাস (যার নামে ইংরেজী অগাস্ট মাসের নামকরণ করা হয়েছে) এর ২০০০তম মৃত্যুবার্ষিকী । তিনি জুলিয়াস সিজার পরবর্তী বিশৃঙ্খল অবস্থায় প্রথমবার পাক্স রোমানা (শান্তিপূর্ণ রোম) প্রতিষ্ঠা করেন এবং সম্রাট নামে নিজেকে ঘোষণা না দিয়ে প্রিন্সেপস্ সিভিতাতিস (রাষ্ট্রের প্রথম নাগরিক) হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন । ধারণা করা হয় নিজ স্ত্রী লিভিয়ার প্রয়োগ করা বিষপানে তিনি ১৪ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান । তবে অগাস্টাসের মৃত্যুবার্ষিকী স্বরণ করা আমার লেখার উদ্দেশ্য নয় । আজকের দিন আরো একটি ঐতিহাসিক এবং শিক্ষণীয় ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে । ১৯৫৩ সালে ঠিক এই দিনে (১৯ আগস্ট) ইরানের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেগ সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন । তার এই পতনে সরাসরি জড়িত ছিলো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ (অপারেশন অ্যাজাক্স) এবং বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্স (অপারেশন বুট) । ব্রিটেনের একটি কোম্পানী দীর্ঘদিন ইরানের তেল সম্পদ কুক্ষিগত করে নিজেদের পকেট ভরেছে । কিন্তু মোহাম্মদ মোসাদ্দেগ যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে তাদের কর্মকান্ডের হিসাব চাইলেন তারা সহায়তা করতে অস্বীকার করলো । এরপর মোসাদ্দেগ সরকার ইরানের সকল প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্রিয় মালিকানায় নিয়ে যাবার পর ব্রিটেন এবং আমেরিকা তাকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় । এই অভ্যুত্থান নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে দেখা যায় কিভাবে দেশের প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি এবং পেশাজীবিরা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে রাতারাতি বিদেশী শক্তিকে দেশের ভার তুলে দেয় । সেই সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় একটি সেনাবাহিনী কিভাবে ক্ষমতা কাড়াকাড়ি করার অভ্যুত্থানে হঠাৎ বীরত্ব দেখাতে থাকে এটাও পরিষ্কার হবে । এই লেখায় মুসলিম বিশ্বের সেনা অভ্যত্থান গুলো নিয়ে কিছুটা আলোচনা থাকবে ।

ইদানীংকালে মিশরের সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়টি বেশ আলোচনায় এসেছে । পাকিস্তান, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া প্রভৃতি দেশগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছে শুধুমাত্র পর্যায়ক্রমিক সেনাশাসনের কারনে । এখন তিউনিসিয়া অথবা তুরস্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও মুসলিম বিশ্বে- বিশেষ করে ইসলামপন্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎকন্ঠা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । মিশরের ২০১৩ সেনা অভ্যুত্থান না হলে হয়তো ফিলিস্তিনে ২০১৪ গণহত্যা এড়ানো যেতো । আবার তুরস্কের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগানের বিরুদ্ধে যেভাবে সকল শক্তি একজোট হয়েছে, তিনি কতোদিন সেনা অভ্যুত্থানের হুমকি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারবেন সেটাও ক্যালকুলেশন করা দরকার আছে । এসব বিষয় বিবেচনা করেই সেনা অভ্যুত্থান পর্ব অধ্যয়ন করা প্রয়োজন মনে করেছি ।

প্রথমেই বলে নেয়া যাক সেনা অভ্যুত্থানের সংজ্ঞা কি । ফরাসি coup d’état শব্দটির অর্থ হচ্ছে কোন রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত সরকার বা শুধুমাত্র সরকার প্রধানের পদচ্যুতি ঘটানোর চেষ্টা । একটি মিলিটারী ক্যু তখনই সফল বলে ধরে নেয়া যাবে যখন সাবেক সরকারপ্রধান পদত্যাগের বাধ্য হবেন বা নিহত হবেন । তবে মিলিটারীর পাশাপাশি অভিজাত সম্প্রদায় বা সুশীল সমাজেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে । পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক বড় বড় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পেছনে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা রয়েছে । জুলিয়াস সিজার থেকে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট পর্যন্ত অনেক প্রভাবশালী শাসক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহন করেছিলেন । তবে অধিকাংশ সময়েই সেনা অভ্যুত্থান রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়েছে । যাইহোক, আমাদের আলোচনা মুসলিম বিশ্বে সীমিত থাকবে ।

মুসলিম বিশ্বে প্রথম সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় ১৯০৮ সালে অটোমান সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সময় । তিনি ছিলেন শেষ অটোমান সুলতান এবং ইসলামী খিলাফতের ৯৯তম শাসক । ইয়ং তুর্কি মুভমেন্ট নামে একটি অভ্যুত্থানে তিনি ১৯০৯ সালে পদত্যাগে বাধ্য হন । এরপর আরো কিছুদিন কয়েকজন নামমাত্র সুলতানের অধীনে থেকে ১৯২৪ সালে খিলাফত সমাপ্ত হয় । এরমধ্যে আতার্তুক কামাল পাশা আধুনিক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হয়ে বসেন ১৯২৩ সালে । অন্যদিকে পারস্য সাম্রাজ্যে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রেজা খান পাহলভী ক্ষমতায় আসেন ১৯২১ সালে । এই দুইজনের অধীনে শিয়া এবং সুন্নী অধ্যুষিত অঞ্চল সমূহে সেনা অভ্যুত্থানের সূচনা হয় । এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৬ সালের অক্টোবরে ইরাকে জেনারেল বকর সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি সেনা অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী ইয়াসিন আল হাশিমী পদচ্যুত হন । তিনি সিরিয়ায় পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন । পরবর্তীতে ১৯৪১ সালে চারজন কর্ণেলের নেতৃত্বে গোল্ডেন স্কয়ার নামে ইরাকি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের একটি দল ইরাকে অভ্যুত্থান করে । এতে নাৎসি জার্মানীর অনুসারী রশিদ আলী গিলানী ক্ষমতায় আসেন এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যের অনুগত শাহানশাহ জর্ডানে পালিয়ে যান । রাজতন্ত্র বিলুপ্তির জন্য ১৯৪৮ সালে ইয়েমেনে একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় ।

পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থান হয় সিরিয়ায় ১৯৪৯ সালে । ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাঈল যুদ্ধে পরাজিত হয়ে জেনারেল হোসনী আল জাইম সিরিয়ায় প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক শাসন কায়েম করেন । এই অভ্যুত্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুস্পষ্ট মদদ পরিলক্ষিত হয় । ক্ষমতায় এসে জেনারেল হোসনী আল জাইম মহিলাদের বোরখা নিষিদ্ধ করেন । ইসরাঈলের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেন । ইসরাঈলের সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় ফিলিস্তিনি উদ্ধাস্তুদের জন্য সিরিয়ায় বসতি করে দেন । মাত্র সাড়ে চারমাস পর এই সেক্যুলার জেনারেল তারই সহকর্মী সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত এবং বন্দি হন । একমাসের মধ্যেই তাকে হত্যা করা হয় । পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থানের ইতিহাস আমাদের ভারতবর্ষে । ভারত পাকিস্তান পৃথক হবার পরপর কাশ্মীরে ১৯৪৭ সালে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে যুদ্ধ হয় । এখানে পাকিস্তানি সৈন্যরা যুদ্ধ করে পুরো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছিল । যুদ্ধের মাঝামাঝি অবস্থায় ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের সরকার ভারতের সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষনা করে । এটি অনেক সেনা কর্মকর্তা মেনে নিতে পারেননি । তারা ১৯৫১ সালে জেনারেল আকবর খানের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন । কিন্তু জেনারেল আইয়ুব খান এই পরিকল্পনা সরকারকে অবহিত করেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন । এই অভ্যুত্থান চেষ্টা ‘রাওয়ালপিন্ডি চক্রান্ত’ নামে পরিচিত । অভিযুক্ত জেনারেলদের পক্ষে আদালতে লড়াই করেন প্রখ্যাত বাঙালী আইনজীবি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি । অনেকের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয় । পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তাদের সাজা মওকুফ করেন ।

মিশরে প্রথম সেনা অভ্যুত্থান হয় ১৯৫২ সালে । রাজা ফারুককে সরিয়ে দিতে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে চক্রান্ত করেন জেনারেল মোহাম্মদ নাগীব । তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হবার একবছরের মাথায় ১৯৫৩ সালে আরেক জেনারেল জামাল আব্দেল নাসের তাকে গৃহবন্দী করেন এবং নিজে প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করেন । ১৯৫৪ সালে একটি হত্যাপ্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রেসিডেন্ট জামাল নাসেরের চক্ষুশূল হয় এবং ব্রাদারহুডের উপর নেমে আসে চরম নির্যাতনের কালো অধ্যায় । পূর্বেই বলেছি ইরানে প্রথমবার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ১৯৫৩ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন । তিনি ইরানের তেল বৃটিশ আধিপত্যে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন বিধায় সিআইএ এবং এমআইসিক্স যৌথ উদ্যোগে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় । এতে নেতৃত্ব দেন সাবেক সম্রাট রেজা খান পাহলভীর ছেলে রেজা শাহ পাহলভী । ক্ষমতায় এসে রেজা শাহ পাহলভী ইরানকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র বানাতে ব্যপক উদ্যোগ নেন । যার ফলশ্রুতিতে ধর্মপ্রাণ মানুষ ইসলামী বিপ্লবের পথে এগিয়ে যায় । ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন । একই বছরে ইরাকে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাদশাহ ফয়সল গদিচ্যুত হন এবং ইরাক রিপাবলিকের আত্মপ্রকাশ ঘটে ।

১৯৬০ সালে সেনা অভ্যুত্থানে তুরস্কের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দারিস ক্ষমতাচ্যুত হন । তুরস্কের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যাকে ফাঁসি দেয়া হয় । তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি পররাষ্ট্রনীতিতে পাশ্চাত্যকে বাদ দিয়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছিলেন । যে সকল সেনা কর্মকর্তা মেন্দারিসকে হত্যা করে, তারা ন্যাটোর প্রতি তাঁদের আনুগত্য প্রকাশ করে রেডিওতে বিবৃতি দিয়েছিলো । ১৯৬২ সালে ইয়েমেনে সেনা অভ্যুত্থান হয় যা প্রায় আটবছর গৃহযুদ্ধে রুপ নেয় । এখানে রাজকীয় বাহিনীকে সৌদি আরব, জর্ডান, বৃটেন সমর্থন দেয় । বিপ্লবীদেরকে সমর্থন দেয় মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল নাসের এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন । ১৯৬৩ সালে ইরাকে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে কমিউনিজম বিরোধী বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে । সাবেক সেনাশাসক আব্দুল করিম কাসিম (যে নিজেও ছিলো অভ্যুত্থানে ক্ষমতাপ্রাপ্ত) ব্রাশফায়ারে নিহত হয় । একই বছর সিরিয়ায় মিলিটারী ক্যু ঘটিয়ে বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে । এর পর থেকে প্রায় প্রতি বছর কোন না কোন মুসলিম দেশে সেনা অভ্যুত্থান হতেই থাকে । একের পর এক সাদ্দাম- গাদ্দাফী- মোবারক- আসাদ- ইয়াহিয়া- এরশাদ- মোশাররফ দের আগমন রোধ করা কোন মুসলিম দেশেই সম্ভব হয়নি । তবে মজার ব্যপার হচ্ছে- গণতন্ত্রের প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্র এবং রাজতন্ত্রের স্বর্গ যু্ক্তরাজ্য প্রতিটি মুসলিম দেশের সেনা অভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলো । বিশেষ করে ইসরাঈল প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলিম দেশগুলোতে সেনা অভ্যুত্থান পরিচালনা করে অস্থিতিশীল রাখাই যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি বলে মনে হয় । এক্ষেত্রে গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার, আধুনিকতা ইত্যাদি বুলি শুধু মুখোশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । এই সেনা অভ্যুত্থান নামক বিষবাষ্পের সর্বশেষ সংস্করণ আজকের মিশর । জেনারেল সিসি সেখানে ইসরাঈলের জাতীয় বীর উপাধী নিয়ে নব্য ফেরাউন হয়ে বসেছে । সম্ভবত এই তালিকায় ভবিষ্যতে নাম আসতে পারে পাকিস্তানের । কারণ সেখানে নির্বাচনের মাত্র এক বছরের মাথায় নওয়াজ শরীফ সরকারের বিরুদ্ধে ইমরান খান এবং তাহিরুল কাদরী যেভাবে বিক্ষোভ শুরু করেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এতো বড় সুযোগ মিস করবে বলে মনে হয়না । অথবা আইএসআই এটা মিস করলেও সিআইএ কিছুতেই মিস করবেনা । তবে আমার আশংকা হলো তুরস্কের বিষয়ে । কারণ এরদোগান প্রায় একযুগের সাধনায় পলিটিক্যাল ইসলামের যে প্রাসাদ দাঁড় করিয়েছেন, যদি আরেকটি অভ্যুত্থানে এই প্রাসাদ ভেঙ্গে পড়ে তবে মুসলিম উম্মাহর জন্য হতাশার সীমা থাকবেনা ।

সেনা অভ্যুত্থানে প্রথমেই নিজদেশের মানুষের সাথে সেনাবাহিনীর একটি অপূরনীয় দূরত্ব তৈরি হয় । এছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষতি, দুর্নীতি, সমাজের নৈতিক অধঃপতন তো থাকেই । তারপর গণহত্যা থেকে গৃহযুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায় । মিশরে এখন পর্যন্ত প্রায় তিনহাজার মানুষ নিহত এবং বিশহাজার আহত হয়েছে । সিরিয়াতে সামরিক শাসক আসাদ দেশটিকে শেষ করে ছেড়েছে । আরো হতাহতের ঘটনা আগামী দিনেও অপেক্ষা করছে । আমরা দেখেছি, মিডিয়া কিভাবে একটি দেশের জনগোষ্ঠীকে প্রতারিত করে । আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনীতে ভুল সমরনীতি কিভাবে নিজ দেশে গণহত্যার পরিবেশ তৈরি করে । অথচ মুসলিম বিশ্বের ইসলামপন্থী কোন শক্তি একটি সুদক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে পারেনি । এল বারাদী দের বিদেশী ডক্টরেট আর গোল্ড মেডেল যেভাবে তাদেরকে নির্লজ্জ সেক্যুলার এবং ভোগবাদী হিসেবে তৈরি করছে, একমেলেদ্দীনরা যেভাবে বহির্বিশ্বকে বন্ধু ভেবে নিজদেশের দেশপ্রেমিকদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তেমনি মুসলিম দেশগুলোর সেনা কর্মকর্তাদের প্রতিনিয়ত বিদেশী অনুশীলন আর মিশন তাদেরকে কতটুকু দেশপ্রেম শেখায় বা জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তা মিলিটারী ক্যু এর ইতিহাস ঘাটলেই চোখে পড়বে । এছাড়া সুষ্ঠু পররাষ্ট্রনীতির অভাবে শুধু সরকারই নতজানু হয় তাই নয়, বরঞ্চ পুরো সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি নতজানু এবং পরাশ্রয়ী হয়ে উঠে । অতএব মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ যদি সত্যিকার অর্থে বিদেশী আধিপত্য নামক বিষপান করতে না চান, তাদের প্রধান দায়িত্ব হবে বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে সম্পূর্ণরুপে জনগণের ইচ্ছাকে বিবেচনায় নেয়া । দূতাবাসে ব্রেকফাস্ট করতে নেতাদের হুড়োহুড়ি দেখার মতো । অথচ তারা একবারও ভাবে না – দূতাবাসে রাতের আঁধারে অন্য কেউ ডিনার করছে কিনা ।

পরিশেষে বলতে চাই- বাংলাদেশ, সিরিয়া, মিশর, ইরাক, লিবিয়া, সৌদি, আমিরাত, ইয়েমেন প্রভৃতি মুসলিম দেশে গণতন্ত্র মুক্তি পাক । অবৈধ-অগণতান্ত্রিক শক্তির হাত থেকে দেশ বাঁচুক, মানুষ বাঁচুক । নয়তো এই মুসলিম দেশগুলো মানচিত্রে নামমাত্র টিকে থাকলেও এখানে মনুষ্য সভ্যতার অস্তিত্ব বিলীন হতে বেশিদিন লাগবে না । পাহলভীদের ভূত মুসলিম জাতির ঘাড় থেকে চিরতরে বিদায় হোক, আজকের দিনে এটাই প্রত্যাশা ।

চির উন্নত মম শিরঃ আগষ্ট বিপ্লব প্রসঙ্গ

এমন একটি সেনাবাহিনী কল্পনা করুন, যারা সদ্য একটি যুদ্ধ শেষ করে ব্যারাকে ফিরেছে । তাদের ফায়ার আর্মস বা মিলিটারী টেকনোলজি বেশ প্রাচীন আমলের । কিন্তু সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করার মতো জ্ঞান, সাহস এবং দৃঢ়তা তাদের আছে । আবার কল্পনা করুন এমন একটি সেনাবাহিনী যারা জীবনে কখনো যুদ্ধই দেখেনি । প্রতিসপ্তাহে কমপক্ষে তিনটা করে পার্টিতে অ্যাটেন্ড করে, আনুষ্ঠানিকতায় দেশের মধ্যে শীর্ষে তাদের অবস্থান, সবার কাছে স্যার-স্যার শুনতে থাকে প্রতিনিয়ত । অবশ্য তাদের প্রশিক্ষণ আছে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার বিষয়ে । আপনাকে যদি বলা হয় দুটি সেনাবাহিনীর মধ্যে দায়িত্বশীলতার তুলনা করতে, আপনি অবশ্যই প্রথম দলকে এগিয়ে রাখবেন যদি সত্যিকার অর্থে সেনাবাহিনীর মূল্যায়ন করার মতো শিক্ষা আপনার থাকে ।

১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নিহত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে কারো অজানা নয় । এ বিষয়ে যথেষ্ট ইতিহাস লেখালেখি হয়েছে, কলাম পড়া হয়েছে, ডকুমেন্টারি দেখা হয়েছে, ফেসবুকে নোট/স্ট্যাটাস পড়া হয়েছে । আমিও এটা নিয়ে লিখতে যাচ্ছি না । এতোবড় ঘটনার নিখুঁত বিশ্লেষণ করার মতো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা যেমন আমার নেই, তেমনি সস্তা মকারি করে রম্য লেখারও উদ্দেশ্য নেই । বরং আমি এখনো আগস্ট বিপ্লবের প্রকৃত তাৎপর্য এবং সাফল্যের শিক্ষণীয় দিকটি বুঝতে চেষ্টা করি । যতোবার আগস্টের গল্প শুনি বা আগস্ট মাসে শোক প্রকাশের কালো পতাকা দেখি, আমার মনে একটা অদ্ভুত রকমের ডিলেমা তৈরি হয় । সেটা শেয়ার করাই আমার লেখার মূল প্রেরণা ।

বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একধরণের অচলাবস্থা চলছে এটা সত্য । সম্ভবত ৭৫ সালেও প্রায় একই অচলাবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছিলো । যেহেতু বাংলাদেশের কোন নিরপেক্ষ ইতিহাস এখনো লেখা হয়নি, আমরা কোন এক বা একাধিক লেখকের বই পড়ে বা কয়েকটা মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখে অথবা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়ে ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সত্যিকার তাৎপর্য অনুধাবন করতে সক্ষম হবো- এটা ভাবাই বাতুলতা । তাহলে আমরা যারা এই প্রজন্মে বড় হয়েছি, তাদের সামনে একটিমাত্র পথ খোলা থাকে । সেটা হলো নিজেদের স্বশিক্ষিত বিচারবোধ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের প্রিম্যাচিউর বার্থ থেকে শুরু করে ৭৫ সালের দিনগুলো পর্যন্ত বুঝে বুঝে ১৫ আগস্টের মূল্যায়ন করা । আপাতত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সময় নষ্ট না করে প্রথমেই দেখে নেয়া যাক আগস্ট বিপ্লবের চারটি লক্ষ্য মূলত কি ছিলোঃ

১। রুশ-ভারতের নাগপাশ থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করা ।

২। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা ।

৩। ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ নামে বাকশাল ও মুজিব সরকারের প্রতারণামূলক কার্যক্রমের প্রকৃত উদ্দেশ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা ।

৪। কৌশলগত কারণে স্বল্প সময়ের জন্য সংসদকে বলবৎ রেখে সাংবিধানিকভাবে একটি দেশপ্রেমিক (সর্বদলীয়/র্নিদলীয়) অস্থায়ী সরকার গঠন করা ।

চলুন দেখে নিই অস্থায়ী সরকারের কাজগুলো কেমন হবার কথা ছিলোঃ

১। বাকশাল প্রণোদিত শাসনতন্ত্রের ৪র্থ সংশোধনী, সংবাদপত্র ও প্রকাশনা আইন, রক্ষীবাহিনী আইন, আর্ন্তজাতিক শ্রমিক আইনের পরিপন্থী শ্রমিক আইন ও অন্যান্য কালা-কানুন বাতিল করা ।

২। রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিয়ে দেশে অবিলম্বে প্রকাশ্য রাজনীতি ও গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা ।

৩। সকল রাজবন্দীদের বিনাশর্তে মুক্তি দেয়া ।

৪। সাধারণ নির্বাচনের দিন ধার্য করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা ।

৫। জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি যে কোন হুমকি মোকাবেলা করার জন্য ‘জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ’ গঠন করা এবং জরুরী ভিত্তিতে প্রাপ্তবয়স্ক সক্ষম ছেলে-মেয়েদের সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অবকাঠামো গড়ে তোলা ।

৬। সমাজতন্ত্রের নামে বিদেশী নিয়ন্ত্রণ, স্বেচ্ছাচারী একনায়কত্ব ও সরকারি সহযোগিতায় জাতীয় সম্পদ লুন্ঠন, কালোবাজারী, মুনাফাখোরী, চোরাচালান ও অবাধ দুর্নীতির ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে যে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাপ্তি ঘটিয়ে বিপর্যস্ত দেউলিয়া অর্থনীতির পূর্ণবিন্যাসের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ।

৭। জাতীয় জীবনে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বিচার বিভাগের পুর্ণ স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে দেশে আইনের শাসন প্রবর্তন করা ।

৮। প্রশাসন কাঠামোকে দুর্নীতিমুক্ত করা ।

৯। রাষ্ট্রীয় নীতিসমূহে বাংলাদেশী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জীবনাদর্শের প্রতিফলন নিশ্চিত করার সাথে সাথে সংখ্যালঘু নাগরিকদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা ।

১০। ভারতের সাথে পঁচিশ বছরের মৈত্রী চুক্তি বাতিল করা ।

আরেকবার এক থেকে দশ পর্যন্ত পড়ে দেখুন । বর্তমানকালের সাথে প্রায় চল্লিশ বছর আগেকার এই নির্দেশিকায় কি খুব একটা পার্থক্য ধরা পড়ছে ? বর্তমান আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে যেসকল শক্তি আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে, তারা কি ঠিক একই অভিযোগ এবং অভিপ্রায় প্রদর্শন করছে না ? তাহলে দীর্ঘ চল্লিশ বছর পার করে আগষ্ট বিপ্লবের ফায়দা কি দাঁড়ালো ! তখনকার আওয়ামী গডফাদার গাজী গোলাম মোস্তফা যেভাবে লেডিস ক্লাব থেকে মেজর ডালিম এবং তার স্ত্রী নিম্মীকে বন্দুকের মুখে অপহরণ করতে পারতো, এখনকার জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমানরা কি এমন দুঃসাহস দেখাচ্ছেনা ? ১৯৭৩ সালে যেভাবে শেখ কামাল পুলিশের গুলি খেয়েছিলো ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে, এখনকার ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করার জন্য কি একই গ্রুপ কাজ করছেনা ? তাহলে বিপ্লব কিভাবে বলি ১৫ আগস্ট কে ! এটাই আমার কাছে প্যারাডক্স ।

শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমরা প্রথমেই যে ভুলটা করি তা হলো- এটাকে নিছক একটা রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হিসেবে চিন্তা করি । যা সম্পূর্ণরুপে একটা সিভিলিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি । অথচ সম্পূর্ণ সামরিক সিদ্ধান্তে, সেনাকর্মকর্তাদের দ্বারা এই ফেইট আকমপ্লি সংঘটিত হয়েছে । আমরা আওয়ামী বিরোধী মহল কথায় কথায় শেখ মুজিবকে ফেরাউনের সাথে তুলনা করি- যেনো হত্যাকান্ডের পক্ষে একটা ধর্মীয় আবহ তৈরী হয় । তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যারা মুজিব হত্যার পর রাতারাতি চেহারা পাল্টে জানরক্ষায় নিয়োজিত হয়েছিলো- তাদের কর্মকান্ডকে বার্ডেন অব প্রুফ ধরে আমরা ১৫ আগস্টের আলোচনা করি । একারণে বিষয়টির গভীরে আমরা যেতে পারিনা এবং প্রতিবছর শোক দিবসের একপেশে বিরোধিতা করতে থাকি ।

আরেকটি সমস্যা হলো দেশের অধিকাংশ জনগণ কর্তৃক রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীকে দেবজ্ঞান করে এড়িয়ে চলা । একারণে টকশোতে যেমন বুদ্ধিজীবিরা সেনাসদর/আইএসপিআর নিয়ে কোন সমালোচনা করতে বিব্রতবোধ করেন, আমজনতাও সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডকে স্বর্গীয় নজরে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে । ফলস্বরুপ সেনাবাহিনী একটা পুতুল নাচের মঞ্চ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । তারা রাজনীতির মাঠে নিষ্কৃয়তার প্রমাণ দিতে গিয়ে বিদেশী আগ্রাসনের মুখেও মুখ খুলতে পারেনা । ভারতের সেনাপ্রধান দলবীর সিং যতোটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে পাকিস্তানী সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ কে হুমকি দিতে পারেন, ইরানী কমান্ডো চীফ কাসেম সোলায়মানি যেভাবে প্রকাশ্যে গাজা হত্যাকান্ডের জন্য ইসরাঈলের নিন্দা জানাতে পারেন, বাংলাদেশী সেনাপ্রধান ততোটা  জোর গলায় নিজদেশের পাহাড়ি জঙ্গিগোষ্ঠি জেএসএস বা ইউপিডিএফ কেও ধমক পর্যন্ত দিতে পারেন না । বিজিপি বা বিএসএফের বিরুদ্ধে মুখ খোলা তো অলীক কল্পনা !

অথচ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিলো অনেক বেশি স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ । মানুষের হৃদয়ে সেনাবাহিনীর প্রতি একটা গভীর সহানুভূতি কাজ করতো । তাদের সাহসিকতা এবং প্রতিশোধ পরায়নতার ওপর মানুষ এতোটাই আস্থা রাখতো যে, রক্ষীবাহিনীর সমস্ত অপরাধের খবারখবর সাধারণ মানুষ নিজ থেকেই সেনাবাহিনীকে অবহিত করতো । কোন সেনাকর্মকর্তার সাথে বা সেনা পরিবারের সাথে সংঘটিত অপরাধের জন্য স্বয়ং রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে ক্ষমা চাইতে হতো । আর এযুগে পিলখানা হত্যাকান্ড নিয়েও প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন বলে কখনো শুনিনি । আমাদের যুগে এমনও ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের কথা শোনা যায় যিনি তার মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন । শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজের লম্পট শিক্ষক যখন ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে বসে ছাত্রীদের পর্ণো ভিডিও বের করে তখনো পুলিশের আশায় বসে থাকা ছাড়া সেনাবাহিনীর করার কিছু থাকেনা । অপরদিকে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভাড়াটে খুনী হওয়ার বিষয়টি না হয় এড়িয়েই গেলাম । অথচ যে সেনাবাহিনী আগস্ট বিপ্লবের সিদ্ধান্ত নেবার মতো দৃঢ়তা এবং সাহস দেখিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে তাদের এমন অসহায়ত্ব শুধুুমাত্র শোক দিবসকে তাচ্ছিল্য করেই বোঝা সম্ভব নয় ।

আমাদের দেশে যখনই সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বা সম্পৃক্তি নিয়ে কথা হয়, বড় বড় দলগুলো সবসময় এটিকে টালবাহানা করে এড়িয়ে যায় । ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, রাজনৈতিক নেতারা যতোবার ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন, ততোই শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ছাত্ররাজনীতি জেঁকে বসেছে । দেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য যতোবার ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠান গুলোকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার বুলি সম্প্রচার হয়েছে, ততোই যেনো ব্যাবসা-বাণিজ্যে রাজনৈতিক মেরুকরন তীব্রতর হয়েছে । তেমনিভাবে সেনাবাহিনীর ব্যাপারে যতোই মধুর বাণী বর্ষন করা হোক না কেনো, বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক কাঠামোর উত্থান-পতনে (একাত্তর থেকে এক-এগারো পর্যন্ত) সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা । এমনকি পিলখানা হত্যাকান্ডের পর যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাকুঞ্জে গেলেন স্বান্তনা সভায়, তখনো সেনাবাহিনীতে রাজনৈতিক মেরুকরণের ভয়াবহতা উঠে এসেছে । অথচ সম্পূর্ণ বিষয়টিকে স্পর্শকাতরতার চাদর পড়িয়ে বদহজম বাড়ানোর নীতি কোন পক্ষই ছাড়তে পারেনি ।

মোটাদাগে যদি আগষ্ট বিপ্লবের দুটি পক্ষ ধরা হয়, একটি হবে আওয়ামী লীগ- যারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দ্বারা সর্বদা নিয়ন্ত্রিত, আরেকটি হবে সেনাবাহিনী- যাদের প্রতি মানুষ বরাবরই বিশ্বাস রাখতে পছন্দ করে । বর্তমানে দুটি পক্ষের কার্যক্রম তুলনা করলেই বিগত চল্লিশ বছরে আগষ্ট বিপ্লবের সাফল্য/ব্যর্থতা বোঝা সহজ হয়ে যায় । এক মুজিবের লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে তৈরি না হলেও প্রতিটি পাড়ায়/মহল্লায় অন্তত একটি করে মুজিবের অনুসারী গডফাদার তৈরি হয়ে গিয়েছে এতোদিনে । মানুষজন বিপদে পড়লে যেমন তাদের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয়, ইফতার মাহফিলে যেমন তাদেরকে প্রধান অতিথি রাখতে হয়, মসজিদ কমিটিতে পর্যন্ত তাদের আইনে মানুষ চলে । শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বলেই দায় এড়াবেন কিভাবে ! দেশের রাষ্ট্রপতি কে বিদায় করেও আগষ্ট বিপ্লবের নায়কেরা দেশের একনায়কতান্ত্রিক অনাচার এবং ভারতমাতার দাসত্ব রুখতে পারেনি । এদিক থেকে দেখলে সহজেই বোঝা যায়- রাষ্ট্রপতি মুজিব শেষপর্যন্ত মরণোত্তর বিজয়ী হয়েছেন । আমরা যতোই ভাঁড়ামো/চটুলতার আশ্রয় নিই, বাস্তবতা এড়াতে পারবোনা । অপরদিকে সেনাবাহিনীর অবস্থা দেখুন । জেনারেল জিয়ার মতো এমন সেনাপ্রধান আর পায়নি বাংলাদেশ । আ ল ম ফজলুর রহমানের মতো বিডিআর প্রধানও পায়নি । সেনাবাহিনীর মান নিয়েও তৈরি হয়েছে যথেষ্ট প্রশ্ন । রেশমা নাটকের হোতা সারওয়ার্দিরা উঠে যায় আকাশে । আব্দুল্লাহ আযমীদের বরখাস্ত হতে হয় অযথা । গুলজারদের মৃত্যু হয় প্রতিশোধবিহীন । একটা উদাহরণ দেই- দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে যদি সার্ভে করা হয়, ক্লোজ আপ ওয়ান তারকা এবং লাক্স সুপার স্টারদের মাস কিভাবে চলে, দেখা যাবে প্রতিদিন ক্যান্টনমেন্টগুলোতে কোন না কোন উপলক্ষে গানের কনসার্ট চলছেই, দেশের প্রায় সবগুলো এলিট ক্লাবে সেনাকর্মকর্তা দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা চালানো হয়, ইসরাঈলী আইডিএফ কেও এতোটা আনন্দঘন পরিবেশে রাখা হয় কিনা জানিনা । শেখ হাসিনার দলীয় অনুষ্ঠানেও অনেক সময় বাহিনী প্রধানদের হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় । কারা আমাদের সেনাবাহিনীর বন্ধু, কারা তাদের শত্রু, এটা নির্ণয় করা যেনো গোলকধাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । অথচ পৃথিবীর অন্য কোন সেনাবাহিনীর সমরনীতি এতোটা অস্পষ্ট এবং ঘোলাটে থাকে বলে মনে হয়না ।  ডিওএইচএস এর মালিকানা নিয়ে দরদাম চলছেই, বৈষয়িক হিসাব নিকাশে ভীষণ অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে ডিফেন্স ফোর্স । তাহলে সেভেনটি ফাইভ এর সেনাবাহিনী আজকের যুগে কিভাবে আশা করেন ! ‘তৃতীয় শক্তি’ নামের কাগুজে বাঘ হিসেবে শুধু পত্রিকার কলাম আর টিভি টকশোতেই সেনাবাহিনীর ক্ষমতার আভাস দেয়া হয় । একজন সামান্য প্রতিমন্ত্রী পর্যন্ত সেনাবাহিনীর কোন চাপ অনুভব করেন বলে মনে হয়না । ‘চির উন্নত মম শির’ চেতনার পরিস্ফুটন ইদানিংকালের সেনাবাহিনী খুব একটা দেখাতে পেরেছে বলেও প্রমাণ নেই । অর্থাৎ আগস্ট বিপ্লবের দ্বিতীয় পক্ষ, অথবা বিজয়ী পক্ষ বলেও যাদেরকে ধরা হয়- তাদের নৈতিক অস্তিত্ব আজ ভীষণ সংকটে ।

আমি বলছিনা যে, সেনাবাহিনীতে ভোটাভুটি চালু করাই এ সংকটের সমাধান । সেনাবাহিনীকে দলীয় ভাগাভাগির ব্যালেন্স অব পাওয়ার বানানোর কথাও বলছিনা আমি । বরং গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত সামরিক বাহিনীর সমরনৈতিক অবস্থানটি সুস্পষ্ট এবং প্রকাশিত রাখার পক্ষেই আমি অভিমত দিচ্ছি । আপনারা কি বলতে পারেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিলেবাসে এখন কি কি বিষয় পড়ানো হয় ? যে সেনাবাহিনী আফ্রিকার মাটিতে ভয়ংকর অপরাধীদের সাথেও শান্তিরক্ষীর আচরণ করতে পারে, তারা দেশীয় জনগণকে ‘ব্লাডি সিভিলিয়ান’ হিসেবে পরিত্যাজ্য মনে করার সাইকোলজি কেনো ধারণ করে এটা নিয়ে কি কোন গবেষণা হয়েছে ? বিএমএ কমিশন্ড অফিসার হিসেবে আগামী লং কোর্স থেকে দুই বছরের স্থলে চার বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ চালু হচ্ছে এই কথা কি সবাই জানতেন ? এখন থেকে সেকেন্ড ল্যাফটেন্যান্ট নয়, সরাসরি ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ দেয়ার নিয়ম হচ্ছে, এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে সেটা নিয়ে কি আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করেছে কেউ ? এমনিতেই সেনাবাহিনী অনেকটা যুদ্ধবিমুখ হয়ে পড়েছে, তার উপরে যদি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতোই তাদেরকে বই-পুস্তক গিলিয়ে বিদ্যাবাগীশ করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়, তবে সেটা আমাদের ভূরাজনৈতিক প্রক্ষাপটকে কিভাবে প্রভাবিত করবে তার রিপোর্ট কি দেশের নেতানেত্রীদের কাছে আছে ? গত দশ বছরের মধ্যে লেঃ কর্ণেল বা মেজর পদবি ধারণ করেই বিপুল সংখ্যক প্রতিভাবান সেনাকর্মকর্তা স্বেচ্ছা অবসরে চলে গিয়েছে কেনো, তা নিয়ে কোন গবেষণাপত্র কি জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে ? হাসান সারোয়ার্দিরাই কেনো জেনারেল হয় সেটা বুঝতে হলে কি এ ব্যাপারে আরো তীক্ষ্ন নজর রাখার প্রয়োজন ছিলো না ? আমাদের ছেলেমেয়েরা অষ্টম শ্রেণির বইয়ে “নিজেকে জানো” শিরোনামে মূলত কি শিখছে সেটা জানা এবং লক্ষ্য রাখার অধিকার যেমন জনগণের আছে, তেমনি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ভাইবোনেরা সমরনীতি চর্চায় কোন কোন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধান পাচ্ছে সেটা লক্ষ্য রাখার অধিকার কি জনগণের নেই ? আমার মনে হয় ১৫ আগস্টকে বোঝার জন্য সেনাবাহিনীর তখনকার অবস্থান এবং এখনকার অবস্থানের তুলনাটাই মুখ্য বিষয় । তাহলেই আমরা বুঝতে পারবো- একনায়ক শেখ মুজিব নিহত হওয়াতে যতটুকু বিজয় আমরা অনুভব করেছি, তলে তলে আরো বেশি হেরে গিয়েছি ।

অনেকে ধারণা করতে পারেন- আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারলেই এ সংকটের সমাধান হয়ে যাবে । সততার সাথে একবার ভেবে দেখুনতো- বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল গুলো কি জন্মদিন পালন করা ছাড়া ১৫ আগষ্টের আর কোন মূল্যায়ন করেছে কখনো ? যদি আবারো বিশ দলীয় ঐক্যজোট ক্ষমতায় আসে তবে হয়তো দিবসটিকে তাচ্ছিল্য করার জন্যে হিসাব করে ১৫ আগষ্টের দিন এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করতে পারে যেনো সেদিনের শিরোনামটি উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা দখল করে নেয় । কিন্তু এর বেশি কিছুই তারা করতে পারবেনা । কারণ ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের চাইতে- ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ যে আরো ক্ষতিকর এবং ভয়ংকর এটা সেনাবাহিনী যেমন জানে, বিরোধী দলগুলোও জানে । অতএব আগস্ট বিপ্লব নিয়ে অতো আয়োজন করে বিভ্রান্ত হবার প্রয়োজন নেই ।

তাহলে করণীয় কি হতে পারে ! হ্যাঁ, করণীয় অত্যন্ত স্পষ্ট । প্রথমেই আমাদেরকে স্বীকার করে নিতে হবে ১৫ আগস্ট ছিলো বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের পক্ষে একটি যথার্থ বিপ্লব । ঝড়ে বক মরবে আর রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করবো আমরা, এমন মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে । সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য আমাদের পক্ষে সুবিধা করে দেবে আর আমরা সবটুকু সুখভোগের পর তাদেরকে বিপথগামী নাগরিক খেতাব দিয়ে নিজেদের খোলসে আবার হারিয়ে যাবো, এমন লুকোচুরি বন্ধ করতে হবে । নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢেকে ঢেকে সামরিক অভ্যুত্থানের আশায় ঈদের পর ঈদ গুনতে থাকার প্রবৃত্তিও বাদ দিতে হবে । আগস্ট বিপ্লবের যথাযথ স্বীকার্য প্রদানের পর দেখতে হবে আগস্ট বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজগুলো কি কি ! বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি যে কোন হুমকি মোকাবেলা করার জন্য ‘জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ’ গঠন করা এবং জরুরী ভিত্তিতে প্রাপ্তবয়স্ক সক্ষম ছেলে-মেয়েদের সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অবকাঠামো গড়ে তোলার যে অঙ্গীকার ছিলো তা পূরণ করার ব্যবস্থা করতে হবে । এক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে ব্যাপক ক্যাম্পেইন চালানো যেতে পারে । রাজনৈতিক বিরোধিতার খাতিরে “র‌্যাব বিলুপ্তির আহবান”, “উপজেলা ভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি”, “নাগরিক অধিকার আদায় কমিটি”, “সম্প্রচার নীতিমালা স্থগিত করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার কমিটি”, “একতরফা নির্বাচন প্রতিরোধ কমিটি” এসব হাজারটা শিশুসুলভ আন্দোলন-আন্দোলন খেলা বাদ দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ‘জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ’ গঠনই সময়ের দাবি । সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদের ‘দেয়াল’ এমন একটি নিরাপত্তা সূচক দেয়ালের অভাব অনুভব করেই লেখা । সম্ভবত কারারুদ্ধ মাহমুদুর রহমান এটা চিন্তা করেই ‘আমার দেশ’ অফিসে পাঠচক্রের আয়োজন করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন । যদি এতোদিনে একটি সত্যিকার নিরাপত্তা পরিষদ আমাদের থাকতো- হয়তো ফেলানীদেরকে মরতে হতোনা, পিলখানা ট্রাজেডী এড়ানো যেতো, একতরফা নির্বাচন কেন্দ্রিক কোটি কোটি টাকার লুটপাট থেকে জাতি রক্ষা পেতো । রানা প্লাজা ধ্বস, পিনাক লঞ্চডুবি, ডেসটিনির অর্থচুরির বিষয়ে অভিযোগ করার মতো মানুষের আরো একটি আশার জায়গা থাকতো ।

অনেক কথা বলা হলো । তবু কিছুই হবেনা এটা প্রায় নিশ্চিত । তারপরেও দিন বদলায়- মানুষ বদলায় । আশা ধরে রাখতেই হয় । শাপলা চত্বর থেকে শাহবাগ চত্বর পর্যন্ত দেখার অভিজ্ঞতা এ প্রজন্মের তরুণদের হয়েছে । সাগর-রুনি হত্যাকান্ড দেখার অভিজ্ঞতা এ প্রজন্মের সাংবাদিকদের হয়েছে । আমিনুল হত্যা থেকে দেলোয়ার খালাস পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ দেখা হয়েছে এ প্রজন্মের শ্রমিক ভাইবোনদের । আমাদের প্রজন্মের মাঝে এতোদিনে ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য উদঘাটনের একটা দৃঢ় প্রত্যয় এসেছে বলেও মনে হয় । হপ-স্টেপ নেবার পর এখন শুধুই জাম্প দেবার অপেক্ষা । যদি সে দীর্ঘ অপেক্ষার পালা নিকট ভবিষ্যতে সমাপ্ত হয়, তবেই আগষ্ট বিপ্লবের সাফল্য তার চূড়ান্ত বিন্দুতে পৌঁছাবে বলে বিশ্বাস করি ।

‘বাঙলাদেশ’ এবং বাঙালী ও বাঙলাদেশী জাতীয়তাবাদ

BD Map

মাহবুব মিঠু।।

এথনিক বা সাংস্কৃতিক পরিচয়ে জাতীয়তাবাদ এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদের মধ্যকার বিভ্রান্তি অনেক সময় সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়। কিম্বা সেটা হতে পারে স্বাধীনতা বা স্বার্বভৌমত্বের জন্য হুমকীস্বরূপ। অনেক ক্ষেত্রে এই বিভ্রান্তি কিছু মানুষের ইচ্ছাকৃত সৃষ্টি। সেই ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে হোক আর যে কারণেই হোক, দেশ বিভাগের পর থেকে বঙ্গ অঞ্চলে সংস্কৃতির পরিচয়ে ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদের’ বন্ধন ক্রমশঃ ভিন্ন মাত্রায় চলে যায়। ধর্মের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ববঙ্গ) অনেক হিন্দু যেমন পশ্চিম বঙ্গে চলে যায়, তেমনি তার উল্টোটাও ঘটে। অর্থাৎ পশ্চিম বাঙলা থেকে অনেক বাঙালী মুসলিমও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসে। ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হওয়া এই সীমানা, বিচ্ছিন্ন দুই বাঙলার মানুষের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে। এর ফলে দুই বাঙলায় দুই ধরনের বাঙালী সংস্কৃতি বিকাশ ঘটে।

কোন সংস্কৃতি কখনোই অনড় কিম্বা অপরিবর্তনশীল নয়। ৪৭ সালে দেশ বিভাগের ফলে যে রাজনৈতিক স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে ওঠে তাতে উভয় পাড়েই ‘বাঙালী’ পরিচয় ছাপিয়ে রাজনৈতিক পরিচয় অর্থাৎ ভারতীয় (বাঙালী) এবং পাকিস্তানী (বাঙালী) পরিচয়টাই মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাঙলাদেশ নামক ভূখন্ডের বাঙালী, ওপাড়ের বাঙালীদের চেয়ে স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করে। এই স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভের ফলে বাঙালী সাংস্কৃতিক বন্ধনের চেয়ে রাজনৈতিক বন্ধনটাই তখন মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। নতুন পরিস্থিতিতে ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের মধ্যে বসবাসকারীদের একই ছাতার নীচে, একই পরিচয়ে নিয়ে আসার জন্য সৃষ্টি হয় বাঙলাদেশী নামক রাজনৈতিক পরিচয়ে নতুন জাতীয়তাবাদ। এই বাঙলাদেশী পরিচয় বাঙলাদেশ নামের ভূখন্ডে বসবাসকারী নানা এথনিক গোষ্ঠীকে, নানা ভাষাভাষীকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করে। নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারতের বাঙালীদের চেয়ে আমাদের কাছে পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য জাতিসত্ত্বার অধিবাসীরা বেশী আপন হয়ে পড়ে। ঠিক এই রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে ‘বাঙলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রেক্ষিতে’ ’বাঙালী জাতীয়তাবাদ’ কেবল ক্ষুদ্রতাই তুলে ধরে না, বরং এটা একাধারে সাম্প্রদায়িকতা এবং বর্ণবাদের দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। এই ধারার লোকেদের তিনটি দুষ্ট উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

প্রথমতঃ এরা কি উভয় পাড়ের বাঙালীদের নিয়ে নতুন কোন স্বাধীন ভূখন্ডের আশা মনে মনে পোষন করে? তাহলেও সেখানে ত্রুটি আছে। দুই বাঙলার একত্রীকরণের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাকী জাতিস্বত্ত্বার অধিবাসীদের জাতীয়তা কি হবে? তাদেরকে কি বিতাড়িত করা হবে? নাকি বলা হবে ’তোমরা বাঙালী হয়ে যাও’।

 

দ্বিতীয়তঃ আমরা কি ওপাড় বাঙলার রাজনৈতিক পরিচয়কে অর্থাৎ বৃহত্তর ভারতের সঙ্গে একীভূত হতে চাই? এই মানসিকতাকে স্পর্ধা বললেও কম বলা হবে। এ ধরনের উদ্দেশ্য যদি কারো মনে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা যেতে পারে।

তৃতীয়তঃ বাঙালীদের খন্ডিত প্রতিনিধিত্ব করা স্বাধীন বাঙলাদেশের বাঙালীদের জাত্যাভিমান, যেটা ৭১ সালের পূর্বে পাকিদের মধ্যে ছিল। মূলতঃ পাকিদের এই জাত্যাভিমানই আমাদের স্বাধীনতার দাবীকে যৌক্তিকতা দেয়। এই যদি হয় উদ্দেশ্য, তাহলে সেটা পাহাড়ীদের বিচ্ছিন্নতার দাবীকেই গ্রহণযোগ্যতা দেবে।

 

এর বাইরে অন্য কোন কারণ থাকলে সেটা নিছক গোয়ার্তুমি কিম্বা মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।

 

অতি আবেগী অনেকে কথায় কথায় ‘হাজার বছরের বাঙালী জাতীয়তাবোধ’ বলে রাজনৈতিক পরিচয়ের সাথে সম্পর্কিত উৎসবে গলা ফুলিয়ে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় দেয়। আমাদের ভাষা আন্দোলন একান্তভাবেই বাঙালী জাতীয়তাবোধ থেকে আসে। কিন্তু স্বাধীনতার আন্দোলনের পিছনে কেবলমাত্র বাঙালী জাতীয়তাবোধ কাজ করেনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাহাড়ের জনগণও অংশ নিয়েছিল। অতএব, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসের মতো বাঙলাদেশীদের স্বার্বজনীন উৎসবগুলোতে যখন কেউ গলা ফুলিয়ে, ঘাড় কাঁত করে বাঙালী জাতীয়তাবোধের তুবড়ি ফুটান, জেনে নিবেন, তারা আর কেউ নয়। নিতান্ত সাম্প্রদায়িক কিম্বা বর্ণবাদী মানসিকতার মানুষ।

 

এবার আসি বাঙালী জাতীয়তাবাদের সাথে ধর্মের সম্পর্ক। অস্বিকার করা যাবে না, এই অঞ্চলে ইসলামের আগে সনাতনী ধর্মের আবির্ভাব ঘটে। একটা সময়ে ইসলাম প্রচারকদের আগমনে এই সনাতন ধর্মের অনেকেই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। সেই সাথে পাল্টে যায় তাদের অনেক সাংস্কৃতিক আচার আচরণ। ধীরে ধীরে ইসলামের অনেক আচার আচরণ বাঙালী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়ে। সংস্কৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক অংগাঅংগীভাবে জড়িত। মানুষ বাদে মানুষের সংস্কৃতি কিভাবে সম্ভব? এ অঞ্চলে ইসলামের আগমনের সঙ্গে বাঙালী মুসলিম সংস্কৃতিরও উদ্ভব ঘটে। তেমনি হিন্দু ধর্মের সাথে সম্পর্কিত কিছু সংস্কৃতি থেকে যায় বাঙালী হিন্দু সংস্কৃতি হিসেবে। দেখবেন বাঙালী হিন্দুদের ধর্মীয় অনেক আচার আচরনের সাথে ভারতের অন্যান্য হিন্দুদের আচার আচারণের পার্থক্য আছে। তেমনি বাঙালী মুসলমানদের সংস্কৃতির সাথেও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের সংস্কৃতিতেও একটু হলেও পার্থক্য আছে। অর্থাৎ হিন্দু কিম্বা মুসলমানি এই দুই ধর্মীয় পরিচয়ের সাথে তার এথনিক বাঙালী পরিচয়কে কেন্দ্র করে একটা স্বতন্ত্র সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটেছে। এই দুই ভিন্ন ধারার বাঙালী সংস্কৃতিকে ছাপিয়ে আবার স্বার্বজনীন বাঙালী সংস্কৃতিও আছে যেখানে বাঙালী হিন্দু কিম্বা মুসলমানের কোন পার্থক্য নেই। নবান্ন উৎসব কিম্বা এ রকম আরো অনেক উৎসবে বাঙালী হিন্দু মুসলমান সবাই সমানভাবে অংশ নেয়।

তাই বাঙালী সংস্কৃতির নামে যারা ইসলামিক জীবনবোধকে দূরে ঠেলে দিতে চায় প্রকারান্তরে এই গোষ্ঠী অঞ্চলের মুসলমানদের এলিয়েন গোত্রে হিসেবে বিবেচনা করে। কিম্বা হতে পারে এটাও এক ধরনের সূক্ষ্ন সাম্প্রদায়িকতা

মানতেই হবে, বঙ্গ অঞ্চলে ইসলামের আবির্ভাবের ফলে এ অঞ্চলের একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রাত্যহিক জীবনে, তাদের আচার আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এটাও ক্রমে ক্রমে বাঙালী সংস্কৃতির অংশ হয়ে পড়ে। আগেই বলেছি, সকল সংস্কৃতিই পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনটা ঘটে সময়ের সাথে যে চাহিদা সৃষ্টি হয় সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে। পরিবর্তনটা ঘটে সন্তর্পনে, অভিযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এতো কিছুর পরেও যারা ‘হাজার বছরের পুরাতন বাঙালী সংস্কৃতির’ জিকির তুলে মূলতঃ বাঙালী সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রভাবকে অস্বিকার করে এটাকে (বাঙলা সংস্কৃতিকে) একটা জড়খন্ড বানিয়ে রাখতে চায় তাদের প্রকৃত ভাবনা আসলে কি? এরা কি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত সবাইকে বলতে চায়, ’যাও ফিরে যাও পুরাতন বিশ্বাসে’? এই আহবানে কি বাঙালী মুসলমান সাড়া দেবে? অবশ্য শেখ মুজিব একদা পাহাড়ীদের বলেছিলেন, ‘তোমরা সবাই বাঙালী হয়ে যাও?’ ভাবনায় এই বৈপরীত্য নিয়ে কিভাবে সম্ভব কোন ব্যাক্তির কিম্বা রাজনৈতিক দলের অধীনে অসাম্প্রদায়িক বাঙলাদেশের সূচনা করা?

 

স্বাধীন প্রক্রিয়ায় কাজ করছে কি ?

বিনু মাহ্‌বুবা

সব সময় শুনে আসছি প্রত্যাকটি সংস্থা স্বাধীনভাবে নিজ নিজ কাজ করবার সুযোগ পাচ্ছে এবং করেও যাচ্ছে ।
আবার উল্টো এমন দেখছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নজর না দিলে বা আদেশ না দিলে কিছুই হয়না …
এমন কি ট্যাক্সি ভাড়া কতো হবে তাও নির্ধারণ তাঁকেই করে দিতে হয় ।ধানমন্ডি খেলার মাঠ । সব সি টি কর্পোরেশনের আওতায় আবাসিক এলাকায় পার্ক ,মসজিদ,স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার্র, শপিংমল ইত্যাদি থাকাবেই আর তা উন্মুক্ত থাকবার কথা (যদিও ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে মন্দির গির্জা বা প্যাগোডা থাকেনা) । কেউ কি ইচ্ছে করলেই সরকারী কোনো যায়গায় নিজের নামে কিছু গড়ে তুলতে পারে ? ক্ষমতাবানরা যে কোনো যায়গা লিজ নিয়ে এমন ইচ্ছে মতো খেয়ালখুশিতে নানা কিছুই করে নিতে পারেন এতে তেমন অসুবিধা দেখিনা ।এতোদিন দেখলাম ধানমন্ডি মাঠ বনাম পরিবেশবাদীদের সাথে আবাহনী মাঠের কর্মকর্তা কিছু প্রাক্তন খেলোয়ারদের বাক যুদ্ধ ,মামলা মোকদ্দমা । এমন কি এ ও বলতে শুনেছি পরিবেশবাদীরা ধান্দাবাজ । আশ্চর্য ব্যাপার হলো দেশে যে এই কঠিন গরম আবহাওয়া তাপমাত্রা দিন দিন আগের দিনগুলো ছাড়িয়ে যাচ্ছে এদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই !
ঘরে ঘরে পানির অভাব ,নদীতে জল নেই স্রোত নেই চরে নৌকো লঞ্চ স্টিমার আটকে যায় … কিচ্ছু ভাব্বার নেই ? পরিবেশবাদীরা ধান্দাবাজ ?

যা বলছিলাম … ধানমন্ডি মাঠ সি টি কর্পোরেশনের অধীনে । এতো দিন ও তাই ছিলো ।
এতদিন তারা জানতেন না তাদের কি নিয়ম কি করতে হবে …
এখন মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী আদেশ দেবার পর মুখ খুলেছে সি টি কর্পোরেশন …”উন্মুক্ত করে দেয়া হলো জনসাধারণের জন্য মাঠ”(সি টি কর্পোরেশন) ।
আবাহনির খেলোয়ারদের এই মাঠেই খেলার অনুশীলন চালিয়ে যেতে ওই আবাসিক এলাকায় ই থাকতে হবে কেনো ? ঐ এলাকার জনসাধারণের মাঠ এটা … সেই হিসেবেই মানুষ প্লট বাড়ি বানিয়েছিলো সেখানে উল্লেখ ছিলোনা এই মাঠ ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হবে ।

এখন কথা হলো সংস্থাগুলো সত্যি কি স্বাধীন হয়ে কাজ করে এদেশে ?
যদি তাই হতো তবে এতোদিন কেনো সি টি কর্পোরেশন কিছু বল্লো না ??

 

Fruits of her labour ​​

2

– By Seema Amin

The hair strands of time, were they highlighted, would strike a striking look in 2009.

A few vermilion slashes down the back of the head (for a mutiny-cum-massacre), some gray-tinted purples (inaugural stones in buildings) and ….an almost imperceptible greenish-blue for the Indian Ocean Island of Mauritius; the Mauritian incident, that is, buried in the general darkness of that year…

The Mumbai bombs gregariously exploded in 2008; one of the recovered traces of the ‘terrorists’ was a forged passport purportedly belonging to a Mauritian. The slight of build, coral-bejeweled State of Mauritius alleged that it was the passport of a Bangladeshi migrant labourer with footprints leading to the EPZs, where migrant labour, composed largely of women from China and Bangladesh, constitutes the majority of workers. One hungry (or should we say ‘weak’) state accused another. ..

beasts-of-the-southern-wild-movie-photo-13

Ramola Ramtohul, in ‘The influence of state patriarchy and sexual politics on contract labour migration policy in Mauritius,’ (2010) notes that were it not for then Foreign Minister Dipu Moni’s pleading with the state, the latter’s decision to deport all Bangladeshi male workers from its Export Processing Zones (EPZs) would have been official policy following the 2008 Mumbai blast; she argues that the state’s patriarchal stance in deporting men, rather than women, reveals not only that such potential threats work to further weaken the power of migrant labour in the EPZs but that the unwritten codes of the new international strategy of labour demasculinizes male migrant labourers as part of the processes of feminization in global commodity chains. The attempt to establish oneself as a legitimate citizen, through marriage, and possibly having terrorist links, is termed an illegitimate attempt at ‘regaining masculinity’, where the very qualities of submissiveness, invisibility, informality and vulnerability constitute the (gendered) preference for ‘nimble hands.’ In Bangladesh, these ‘low-skilled’ young women almost never move from ‘operator’ to ‘helper’, much the less, supervisor—reserved for men.

The tale of Bangladeshi men in Mauritius has a few unlikely things to say about intersection of what can be called eroding paternalism and global feminization. The EPZs are constituted of a feminized work force where neither the state nor the suppliers or buyers provide the paternalistic values of protection, i.e. given in more traditional gender structures or in feudal paternalistic relations. Initially, a preference was given to female workers in the textile EPZs(as the industry grew through the MFA–Multi-Fibre-Agreement–and European duty-free access, much like Bangladesh earlier); a decade later, as globalization and the end of the MFA accelerated the race to the bottom, they imported higher numbers of male and female workers from China and India. Ramtohul describes the ‘demasculinization’ of the men as an effect of the high level of state and employer control over the migrant workers, including the the threat of deportation in the case of trade unionism, rendering them (as) powerless (as women are meant to be). Even as the threat of deportation is dangled over men based on ‘illegitimate’ activities, Ramtohul shows how the ‘illegal’ activities of female migrant labour, prostitution, is completely ignored: “The sex trade appears to be treated as a private issue over which officials prefer to remain quiet, as long as it does not hinder the performance of the workers at work. This suits both the employers and the state.” Thus ‘feminization’ seems to constitute a zone of infra-darkness, women accelerate the race to not just the ‘bottom’ in terms of wages; they take us into a more controlled, shrouded realm. To exercise agency becomes ‘masculine’ and thus the rules of ‘legitimacy’ are gendered.

The need for more and more vulnerable workers and the conditions of hard work where overtime is the rule rather than the exception have led to a highly feminized workforce in Bangladesh as well. The threat of deportation does not exist here, but one of the justifications for not taking away GSP or destroying the industry for its famous statistics does include the hidden threat of laid-off workers descending into the ‘blacker’ market, i.e. prostitution. Unlike the Maurituan girls who made some extra cash, the girls rarely choose another job outside the garments trade (it is, first of all, all-consuming); they live or die with it; and we all know what kind of death has merged with the atrocity of survival….

The garments industry in Bangladesh, composed of largely rural migrants, is often cited as a more empowering, if low-skilled, over-worked alternative to other ‘feminine’ alternatives, simply for the independence that free-wage labour provides. We don’t have to quote Marx on free wage labour to sense the irony in such a process of empowerment where feminization–with its corollaries of unprotesting and thus exhilaratingly cheap labour based on informal contracts with unwritten rights–and globalization are the twin processes that even allow such ‘empowerment’ to unfold.

But the atmosphere in the ‘90s was eerily hopeful. In 2001 Naila Kabeer quoted the Director of the Labour Department of Bangladesh saying, “I believe that the ‘culture of compliance’ is far ahead in the garment manufacturing sector and changes in the RMG sector are dramatic compared to other sectors.” Discussing ‘Resources, Rights and the Politics of Accountability,’ she echoes the sentiments from a national workshop: “The women workers in the Bangladesh garment industry have had more public attention to their rights than any group of workers in the entire history of the country.”

The atrocity of exhibition? 2009. One hungry (or should we say ‘weak’) state accused another. ..

Forgeries…identity.

‘Shob kichu bhua.’ Sumaya.

She is hungry, but she can’t eat. She eats, but the tumor blocking her nose, bloating and bursting through her eyes, takes a shot at grinding her down its root canal first. Dark there, unreal, like some impossible Rana Plaza.

And she tells me, ‘Waking up darkness, going to sleep darkness… everything looks the same. Kotha bolte khub iche kore…’ Yes, the ability to bear monotony– that was her ‘skill’, the monotony that now is the fruit of her labour. PG Hospital. Have a Look. It’s the Elephant Man. (And I can promise you, you would wish you were blind).

There has been no health research on how the garments industry has gradually, over time, eroded the strength and immunity of teenagers who began their gender-empowered career young, at fourteen perhaps like Sumaya, who is too thin, too weak, to support an operation to alleviate even an hour’s itch from the tumor bursting through her skin that cannot hold the stretched, dangling eye (indescribable, without morphine).

Even if the PM and all the foreign and domestic funds in the world were channeled somehow, magically, to her, she has already been so ‘feminized’, so ‘nimble,’ such an exemplary example of push-pull and supply and demand, that the process begun could never be reversed; damage done; poshai hojom, kaj kothom. But let’s get back to patriarchy, all that intangible subversion of dignity; how does it work when capital becomes the mid-wife, between the Man and the fruit.

Shob bhua. Two graves for one person. Can’t Match DNA.

It’s International Woman’s Day soon and hundreds– or should I say –billions of women’s rights’ NGOs and activists affiliated with OBR (One Billion Rising) or not will, umm…. RISE.

Sumaya will try to sleep.

Naomi Klein wrote in ‘Patriarchy gets Funky’ (2001) on how the culture industries made identity politics and diversity a mantra of global capital. She quotes cultural critic Richard Goldstein, “This revolution…turned out to be the savior of late capitalism.”

Pedagogy of the Oppressed. A handful of definitions. Sumaya, were you a student of mine, I would have asked you to teach me:

Patriarchy/Peri-ousia– Ousia in ancient Greek refers to one’s being or essence. Peri-ousia is that which surrounds one’s essential being and thus defines “who” one “is.” Patriarchy can be seen as a system of male domination in which men dominate women through the control of female sexuality or a system which developed along with the development of private property and state power. Or, it can be seen as both system and discourse.

Discourse— a regulated set of statements which combine with others in predictable ways. Foucault says: ‘We must conceive of discourse as a violence which we do to things, or in any case as a practice which we impose upon them; and it is in this practice that the events of discourse find the principle of their regularity.”

Then I would have told her, run after these words, kill them if you can. Burn them alive. In your body, the body arrested. In the body, the body bearing. In the body, the body unbearable.

She does not know how hysterical we get over Rights, she wants to eat ice cream and see again. She has decided my hands are softer than Shobuj’s; I don’t tell her no, mine are not nimble hands; don’t scold Shobuj, he loves you as though you were the last thing he would ever see with both eyes still able to shut and open.

Was it like a root canal, Rana Plaza? Well, what’s fire like anyway? Metaphors and similes were lost to Saydia when she tried to relay her experiences to me. Now that Sumaya has become an installation carved into her own skull, such literary devices seem unnecessary. Yes, the poets keep poetically describing the sky. And what exactly does your sky look like, Bangladesh? Looks like Boi Mela, February. Mela? Kothai Mela, Sumaya is almost excited, an excitement that wants to ‘see’ vicariously what else submerges us while she floats in the slow sure nausea of a malignant ‘pregnancy’ ‘without a due date.

Yeah, Boi Mela. You know, fun and games, books. Saris and panjabis. Very poetic poetry, poetically recited through reciting voices in recorded tapes, broken record invoking the beauty of our mother tongue… Well the language laboring between us in PG seems to be of another world; beyond Bangla. It’s all very otherworldly down there, in PG, cave-like; she yearns to speak but our tongues are gone.

There were men diseased who looked like lepers in New Market when I was a child. They’re not quite there anymore. I had hoped that along with ‘progressive’, ‘empowering,’ birth control and the garments industry they would have disappeared too, vodoo. Now I see that you Sumaya are the laboratory of the new leprosies. You’ve been kept in the dark, all winter they prepared for the celebrations of our liberated language, but you remained locked in ‘discourse’: ‘ultra poor,’ ‘ultra vulnerable,’ ‘slave-like conditions.’

Freed slave Sojourner Truth famously said, Ain’t I Woman? In the 1851 Womens Rights Convention in Ohio:

“And a’n’t I a woman? Look at me! Look at me! Look at my arm! I have ploughed, and planted, and gathered into barns, and no man could head me! And a’n’t I a woman? I have borne thirteen chilern, and seen ’em mos’ all sold off to slavery, and when I cried out with my mother’s grief, none but Jesus heard me! And a’n’t I a woman?”

Sojourner, how would you compensate that indomitable arm? They’ve been trying to work out some formula for the compensation of an arm or leg, head… Slavery must have easily measured up the pieces of your body, your teeth…It’s just so hyped, the hyperbole of ‘slavery=garments industry or slavery= women’s oppression.’ There is no heroism in Sojourner’s voice when she cries out ‘none but Jesus heard me!’ The echo there resounds because a deaf world is no world worthy of man or woman. Glorifying the strength of women is as equally patriarchal as denigrating their fortitude.

Given the immeasurable cause and effect of her affliction, it is difficult to conceive ‘compensation’ for Sumaya. But she seems to know everything about what Alice Walker connotes as strength when she advises: ‘Be Nobody’s Darling.’ Sumaya ain’t anyone’s darling.

Visitors to Sumaya like me whisper some recent news:

Hey you know Delwar’s in jail.

Good. His wife too…

Yes, she was culpable too, no? (Though the practice of marrying to avoid culpability is not unknown here).

Yeah. You know, ‘The Law.’ We made it bend a little towards the scales of justice. Justice, does that word have a ring, Sumaya?

Sumaya?

There is nothing I know or want in this world to beautify the horror you live,

I only want it to end.

সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে হামলা এবং একটা ঝুঁকিপূর্ণ আলোচনা।

1

কিস্তী- এক।।

মাহবুব মিঠু।।

বিষয়টা খুব স্পর্শকাতর! বার্তাটা ঠিক মতো দিতে না পারলে সমস্যা। আবার না বললেও সত্যটা আড়ালে থেকে যাবে। বিস্তারিত আলোচনা করতে গিয়ে লেখাটা বড় হয়ে যাওয়াতে কয়েকটি কিস্তিতে দেব।

নির্বাচনের পরপর দেশের কিছু কিছু জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে। সেই সাথে সরকারী পক্ষ যেমন বিরোদলীয় জোটের নেতাকর্মীর বাড়ীতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে। ঠিক তার বিপরীতটাও ঘটেছে। অর্থাৎ সরকারীদলের নেতাকর্মীরাও কমবেশী বিরোধীজোটের হামলার শিকার হয়েছে। মোটাদাগে এই হচ্ছে বাঙলাদেশে বর্তমান হানাহানির চরিত্র।

এবার একটা প্রশ্ন করা যাক।

এই হামলার মূল উৎস বা কারণ কি? তার আগে কিছু টুকরো টুকরো বাস্তব ঘটনা ছদ্ননাম ব্যবহার করে বিশ্লেষন করে দেখা যাক।

উদাহরণ- এক, আওয়ামিলীগের জব্বার বিএনপির মোবারকের বাড়ীতে হামলা করেছে, এটা কি সাম্প্রদায়িক নাকি রাজনৈতিক?

উদাহরণ- দুই,  বিএনপির সফুর মিয়া আওয়ামিলীগের গফুর মিয়াকে মেরেছে, এটা কি সাম্প্রদায়িক নাকি রাজনৈতিক?

যারা বাঙলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পকে ধারণা রাখেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে বুঝেন তারা নিশ্চয়ই জানেন, উপরের এক এবং দুই উদাহরণের ঘটনা অর্থাৎ হামলা বা পাল্টা হামলা রাজনৈতিক ডামাডোলের সময়ে অনাকাংখিত হলেও আমাদের দেশে খুবই স্বাভাবিক যেটা সাম্প্রদায়িক নয়। প্রথমতঃ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চরিত্র অনুযায়ী এটা তার মধ্যে পড়ে না। জব্বার কিম্বা মোবারক অথবা সফুর মিয়া কিম্বা গফুর মিয়া ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক হলেও একই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোক। অতএব, চরিত্র বিশ্লেষণে এটা রাজনৈতিক সংঘাত।

বিএনপি কিম্বা আওয়ামিলীগ কোন ধর্মভিত্তিক সংগঠন নয়। অতএব, এখানে যে যার ইচ্ছামতো যে কোন দলের প্রতি সমর্থন দিতে পারে। বিএনপিতে যেমন কম হলেও কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক আছে; ঠিক তেমনি কোন এক কারণে আওয়ামিলীগের প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের সমর্থনটা বরাবরই একটু বেশী। যদিও সত্যিকার সাম্প্রদায়িক হামলার ক্ষেত্রে আওয়ামিলীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠন কসাই লীগ এবং পাগল লীগ কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই।

যে বিষয়ে কথা বলছিলাম। নির্বাচন পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংঘাতের টার্গেট উভয় প্রতিপক্ষের কর্মী সমর্থকরা হয়েছে এবং সংঘাত যেহেতু এখানো চলমান, কাজেই বলা যায় সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেটা চলতেই থাকবে। যদি আক্রমণের কারণটা হয় রাজনৈতিক এবং সেই কারণে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা কর্মী যদি আক্রমণের শিকার হয়, তবে তাকে কি সংখ্যালঘু নির্যাতন বলা চলে? হ্যাঁ, যে কোন প্রকারের সংঘাতই কারো কাম্য নয়। সেটা রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক বা অন্য যে কোন কারণেই হোক না কেন! গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোল, সংঘাতের মূল কারণকে ইচ্ছাকৃতভাবে আড়ালে রেখে একে ভিন্ন রঙে রাঙানোর চেষ্টা হলে সংঘাত তো থামবেই না, বরং মূল সমস্যাটা আলোচনা থেকে হারিয়ে যাবে। আমরাও এক্ষেত্রে প্রায়শই সংখ্যালঘু নির্যাতনের পিছনের রাজনৈতিক কারণগুলোকে আমলে না নিয়ে আরেকটি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মকে টেনে এনে বিষয়টাকে গুলিয়ে ফেলি। হ্যাঁ, পুরো ঘটনার সাথে ধর্মের সংযোগ আছে বৈকি, কিন্তু সেটা রাজনীতির গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র। এবারের হামলার অন্যতম নাটের গুরু আওয়ামিলীগের নেতা ওহাব কিন্তু কোন ধর্মীয় নেতা নন। অথচ তিনি ধর্মকে এখানে কৌশলে প্রতিপক্ষ দমনে ব্যবহার করেছেন।

এবার একটা ভিন্ন উদাহরণ দেই, যেটা সত্যিকার অর্থে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে। সরকারীদলের সংখ্যালঘু প্রার্থীকে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা ভোট দেয়াতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর দ্বারা সংখ্যালঘুরা আক্রমণের শিকার। এটার চরিত্র এবং প্রকৃতি কেমন? আওয়ামিলীগের ঐ প্রার্থী কিন্তু শুধু বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে হামলা করেছে। এমনকি ভোটের আগে তাদের শাসিয়ে গেছে, সম্প্রদায় দেখে ভোট দিলে খবর আছে। আওয়ামিলীগের ঐ সংখ্যালঘু (মাফ করবেন। ঘটনা বুঝাতে আমাকে সংখ্যালঘু শব্দটি বারবার ব্যবহার করতে হচ্ছে) প্রার্থীকে কি শুধু তার সম্প্রদায়ের লোকেরাই ভোট দিয়েছিল? যদি তাই না হয়ে থাকে তবে আওয়ামিলীগের বিদ্রোহী মুসলিম প্রার্থী কেন বেছে বেছে হিন্দুদের উপরে আক্রমণ চালাল? কারণ ওরা সংখ্যায় কম, তাই দুর্বল? এখানে প্রতিশোধের সহজ প্রতিপক্ষ হিসেবে যেমন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বেছে নেয়া হয়, ঠিক তেমনি হয়তো ‘দুর্বলের অবাধ্যতার শাস্তি’ হিসেবেও হতে পারে সেটা। আরো নানা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণও থাকতে পারে। সুযোগে জমি দখল কিম্বা অন্যান্য।

এ কারণেই সংখ্যালঘুদের উপরে বর্তমানে চলা নির্যাতনের উৎস ভোটের রাজনীতি হলেও  এবং রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার সকল দলের, সকল ধর্মের লোকজন হলেও ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের’ বিষয়টা স্বতন্ত্র আলোচনার দাবী রাখে। তাছাড়া অন্য রাজনৈতিক সহিংসতার বিস্তৃতি সীমিত। অর্থাৎ গোটা জনপদ জুড়ে সাধারণত চলে না। বেছে বেছে প্রতিপক্ষের উপরে হামলা হয়। যদিও বর্তমান সরকারের আমলে কয়েকটি স্থানে বিরোধীজোটের আধিপত্য আছে এমন কিছু এলাকায় ব্যাপক ধ্বংশজজ্ঞ চালানো হয়েছে। সংখ্যালঘুদের বেলায় এর বিস্তৃতির স্বরূপ ভিন্ন। কোন দলকে সমর্থন দেয়া কারো ব্যাক্তিগত অধিকারের মধ্যে পড়ে। সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক সমর্থন সাধারণতঃ আওয়ামিলীগের প্রতি।  তাই যখন রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হয় তখন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গোটা জনপদ প্রতিপক্ষের টার্গেট হয়ে পড়ে। গোটা জনপদ টার্গেট হবার ফলে সেটা আলাদাভাবে মানুষের নজরে আসে। কিছু স্বার্থান্বেসী মহল বিভিন্ন স্বার্থ হাসিলের জন্য সুযোগের সদ্ব্যাবহার করে হামলে পড়ে সংখ্যালঘুদের  উপরে।

সংখ্যালঘুর উপরে নির্যাতনের কিছু বাড়তি বেনিফিট আছে যেগুলো অনেক সময় সরকারের পক্ষে যায়। এরশাদের আমলেও এই ঘৃণ্য কৌশল নেয়া হয়েছিল। এরশাদের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে ঠিক সেই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিয়ে এরশাদ আন্দোলনের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিল। বর্তমান আওয়ামিলীগ সরকারও সেই কৌশল বেছে নিয়েছে। যখনই সরকার বিপাকে পড়ে তখনই এক একটা ইস্যু সামনে নিয়ে আসে। হারিয়ে যায় পুরাতন আলোচনা। এই মুহুর্তে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টা চাঙ্গা করতে পারলে দেশবাসী এবং বহির্বিশ্বের দৃষ্টি ভিন্নদিকে সরিয়ে দিতে পারবে। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে পাশ্ববর্তী দেশের নাক গলানোকে বৈধতা দেবার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কোনভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সাথে ইসলামি জঙ্গীবাদের সংশ্লিষ্টতা দেখাতে পারলে বন্ধুহীন বর্তমান সরকার বহিঃবিশ্বে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। এভাবেই তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।

(পরবর্তী কিস্তিতে তথ্য প্রমাণসহ হামলার সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় দেবার চেষ্টা করব।)

জনাব জাফর ইকবাল, আমাদের কিছু প্রশ্ন ছিল।

4

 

মাহবুব মিঠু।।

একদলীয় নির্বাচনকে বৈধতা দিতে গত ৪ তারিখে (জানুয়ারী ৪, ২০১৪) জনাব জাফর ইকবাল ‘সহিংস রাজনীতি, সংকটে দেশ- ভবিশ্যত ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে যে বক্তব্য রাখলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম আওয়ামিলীগের কোন ডাকসাঁইটে নেতা হয়তো বক্তব্য রাখছেন। নিজেকে নিরপেক্ষ দাবী করলেও ওনার ইদানিংকার সবগুলো লেখার ‍ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোথাও তার ছাপ থাকে না। কেন জানি মনে হয়, সরকারকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার দায়িত্ব বোধহয় সিংহভাগ জনাব জাফর ইকবালের কাঁধে চেপেছে।

http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=2eba6ef37ac9b1344c9c466446d0072a&nttl=04012014253918

উক্ত সেমিনারে জনাব জাফর ইকবাল বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে বলেছেন।

ভাল কথা।

’জামায়াত’ বলতে উনি নিশ্চয়ই যুদ্ধপরাধী এবং রাজাকারদের সংগঠনকে বুঝিয়েছেন। জামাত কোন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সংগঠন না হলে উনি নিশ্চয়ই সঙ্গ ছাড়ার কথা বলতেন না।

সেই চেতনা থেকে একই অনুরোধ কি আপনি আওয়ামিলীগকে করতে পারবেন?

শেখ হাসিনাকে বলুন না, তার বেয়াইর সাথে আত্নীয়তা ছিন্ন করতে। তিনি তো রাজাকার এবং যুদ্ধপরাধী ছিলেন।

শেখ হাসিনাকে বলুন না, তার দলের রাজাকার, যুদ্ধপরাধী নেতাদের দল থেকে বহিস্কার করতে।

জনা্ব জাফর ইকবাল, আপনি বিএনপিকে বাইরের রাজাকার যুদ্ধপরাধীদের (জামাত শিবির) সঙ্গ ছাড়তে বলছেন। অথচ দলের ভিতরে, আত্নীয়তার সম্পর্কের ভিতরে যে রাজাকার যুদ্ধপরাধী অবস্থান করছে, সেটা নিয়ে রা নেই। আওয়ামিলীগকে সংগঠন হিসেবে রাজাকার এবং যুদ্ধপরাধী মুক্ত করতে না পারলে কিছুটা হলেও এই দলটিতেও জামাতের চরিত্র থেকে যাবে। তখন কি বলতে পারবেন জাতিকে আওয়ামিলীগেরও সঙ্গ ছাড়তে?

অবশ্য চেতনার এতো উধ্বমার্গে গমনের আগে স্যার, নিজেকে প্রশ্ন করুন, যুবক থাকা সত্ত্বেও কেন ৭১এ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি? বিষয়টা ব্যাক্তিগত হলেও আপনার বর্তমান অবস্থানের জন্য এই প্রশ্নের উত্তর জানা যে কোন নাগরিকের অধিকার আছে। নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবী করে অন্যের ভূমিকার সমালোচনা করতে হলে নিজের ভূমিকাকে সবার আগে পরিস্কার করতে হয়। ৭১সালের একজন যুবক কেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হবে?  তারতো মুক্তিযোদ্ধা হবার কথা।

একই সেমিনারে উনি বলেছেন “কয়েকদিন আগে কানাডিয়ান হাইকমিশনের একজনের সাথে দেখা হলে তিনি আমার কাছে যুদ্ধপরাধের বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, জামাতে ইসলাম বিএনপির লোকদেরই শুধু বিচার করা হচ্ছে। এখানে তো আওয়ামিলীগের লোকই নাই।”

এর উত্তরে বলেছিলেন, “৭১ সালে আওয়ামিলীগই মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল। সঙ্গতকারণে তাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে যাবার সুযোগ ছিল না”।

কথাটা অর্ধসত্য। এখানে আপনি খুবই সচেতনভাবে প্রতারণা এবং মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন।  আপনার কথায় বুঝা যায়, ৭১সালে যারা আওয়ামিলীগ করতো, এখনো শুধুমাত্র তারাই দলে আছে। নতুন কেউ এই দলে যোগ দেয়নি। তাহলে তো আওয়ামিলীগের প্রায় বিলুপ্তি হয়ে যাবার কথা ছিল।

সোজা প্রশ্ন করি। স্যার, আপনি কি বলতে চান, আওয়িামিলীগে কোন রাজাকার বা যুদ্ধপরাধী নেই? শেখ হাসিনার বেয়াই কে? মরহুমা জাহানারা ইমামের করা লিষ্টে অন্ততঃ প্রায় ৪০ জনের মতো বর্তমান আওয়ামিলীগে সক্রিয় আছে এমন রাজাকার এবং যুদ্ধপরাধীর নাম আছে। গতবারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নাম ভুলে গেলেন?

সাজেদা চৌধুরী কে ছিলেন?

মহিউদ্দিন খান আলমগীর সম্পর্কে স্বয়ং কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, একাত্তুরে তিনি শুধু পাকিস্তানের পক্ষেই ছিলেন না, বরং পাকি সেনাদের সহায়তা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করতে।

তারপরেও আপনি কানাডিয়ান দূতাবাসের লোকটার সঙ্গে যে কৌশলে র আশ্রয় নিয়েছেন সেটা কি অনৈতিক নয়? আপনার যুক্তিতেই যদি ফিরে যাই, তাহলে বিএনপিতে কোন রাজাকারই থাকার কথা নয়। কারণ বিএনপির জন্মই হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের বেশ কয়েক বছর পরে।

আপনি  বিএনপি জামাতের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যতোখানি স্পষ্টভাবে বলেন ঠিক ততোখানি নিরব থাকেন আওয়ামিলীগের ব্যাপারে। এই পর্যন্ত অন্ততঃ দুইটা ঘটনা পত্রিকায় এসেছে বাসে পেট্রল বোমা নিক্ষেপে আওয়ামিলীগের জড়িত থাকার বিষয়ে। এর আগে এক লেখায় বোমা মেরে বাস যাত্রীদের পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ১৮দলীয় জোটের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু যেই মাত্র প্রমাণ হোল, এই ঘটনার সাথে সরকারদলীয় লোকজন জড়িত, তারপর আশা করেছিলাম আপনি কিছু একটা লিখবেন।  সরকারীদলের গুন্ডারা হিন্দু বাড়ী মন্দিরে হামলা করল। ধরা খেয়ে তাদেরকে কসাই এবং পাগল বলে চালিয়ে দেয়া হোল।  এ বিষয়েও লেখার সময় হোল না।

জানুয়ারীর ৪ তারিখের বাঙলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার খবর ছিল, ‘নৌকায় ভোট দিলে গ্রেফতার করা হবে না’।  এই খবরে বলা হয়েছে, বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ-শরনখোলা আসনে চাইতে গিয়ে সেখানকার আওয়ামিলীগের নেতা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানার ওসি জামাত শিবিরের ক্যাডারদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তারা নৌকায় ভোট দিলে কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। ওদিকে এই সেদিনও হানিফের হাত ধরে আওয়ামিলীগে জয়েন করেছেন জনৈক জামাত নেতা। তার মানে কে রাজাকার, কে যুদ্ধপরাধী সেটা তার অতীত কর্মকান্ডের চেয়ে বর্তমানে সে কতোটুকু আওয়ামিলীগার তার উপরে নির্ভর করছে!

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/04/35977

নতুন বার্তার ২৮শে ডিসেম্বর ২০১৩, খবর ‘একটির বিনিময়ে দশটি গুলি করবে ছাত্রলীগ’। কথাটি বলেছিলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া নিত্যদিন আওয়ামিলীগের নেতা বিশেষ করে, হানিফ, কামরুল, হাছান মাহমুদ, নাসিম সাহেবরা যে সন্ত্রাসী ভাষায় কথা বলছে, তারপরেও আপনার কাছে সন্ত্রাসী কেবলমাত্র এককভাবে বিরোধীজোট!

http://www.natunbarta.com/politics/2013/12/28/61462/‘একটির+বিনিময়ে+দশটি+গুলি+করবে+ছাত্রলীগ

রাতের আঁধারে সরকারের নির্দেশে হেফাজতের কর্মীদের হত্যাকে আপনি লেখার মাধ্যমে প্রকারান্তরে সমর্থন করেছেন। অপু উকিলরা যখন আদালদের দিকে ঢিল ছুঁড়ে মারে আপনি তখন নিরব থাকেন। আওয়ামি যুবলীগের কর্মীরা যখন প্রকাশ্যে বিরোধীদলীয় মহিলা আইনজীবীকে নির্মমভাবে প্রহার করে, তার স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে হাতড়ে ফেরে, তখনো আপনার কলম থেকে এক ফোটা কালি বের হয় না। মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে আদালতের দিকে ফিরে একই দলের কর্মী যখন জিপার খুলে এ্যাডাল্ট শো করে তখনো আপনি লেখার তাড়না বোধ করেন না।

এর আগে “বিষন্ন বাঙলাদেশ” নামক লেখায় নির্বাচন নিয়ে সাদা চামড়াদের হস্তক্ষেপকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। এটা আমাদের সমস্ত বাঙলাদেশীদের মনের কথা। আরেকটা মনের কথা আছে যেটা  আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছেন। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের বাদামী চামড়ার লোকজন যে খুবই ন্যাক্করজনভাবে আমাদের নির্বাচনসহ প্রায় প্রতিটা ব্যাপারে নাক গলিয়ে যাচ্ছে, সে কথাটা বেমালুম চেপে গেছেন।

জনাব জাফর ইকবালের কাছে ছোট্ট একটা প্রশ্ন করে লেখা শেষ করব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আপনি জাতিকে কি বুঝাতে চান? এই প্রত্যয়টা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন এই কারণে যে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দিকে ঢিল ছোঁড়া লোকজন থেকে শুরু করে সেই প্যান্টের চেইন খুলে, মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে যে ছেলেটি হাইকোর্টের দিকে ফিরে তার গোপনাঙ্গ দেখাচ্ছিল, সেও এই চেতনার কথা বলে। আপনি আমিও বলি। এই বলার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে বৈকি! সেজন্যই প্রশ্নটা করছি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিয়ে এক তরফা নির্বাচনে গিয়ে দেশকে সংঘাতের মুখে ঠেলে দেয়া? অবশ্যই না। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম চেতনাই ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের বাক-স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা এবং শোষন মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়াসহ অর্থনৈতিক শোষন থেকে মুক্তি। এবার একটু চোখ বুলিয়ে দেখা যাক, আপনি যে দলকে নানাভাবে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নিরীখে সেই দলের অবস্থান কোথায়! শুরু থেকেই আওয়ামিলীগ সরকার, বিরোধীদলের উপর দমন পীড়ন চালিয়ে আসছে। তাদের অনেক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীও পুলিশ এবং দলীয়  কর্মী বাহিনী দিয়ে পন্ড করা হয়েছে। মতের অমিল হলে ডঃ ইউনুস থেকে শুরু করে অনেকেই রেহাই পায়নি প্রতিহিংসা থেকে। বিরোধীদলীয় নেত্রীকে গত কয়েকদিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। নিজেদের ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন করে পুণরায় ক্ষমতায় আসার জন্য তারা পুরো জাতিকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলেছে। দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের সার্বভৌমত্ব বলতে গেলে ভারতের জিম্মায়। আমাদের নির্বাচন কেমন হবে সেটা নির্ধারণ করে দেয় তারা। অর্থনৈতিক শোষন থেকে মুক্তির ব্যাপারে যদি বলি, তাহলে এই সরকারের আমলে যে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নিতি হয়েছে তা বিগত যে কোন সরকারের আমলে করা দূর্নিতিকে ব্যাপকভাবে ছাড়িয়ে যাবে।  ঢাকা শহরের অধিকাংশ জমি আওয়ামিলীগের কতিপয় নেতার দখলে।  এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে এই দলটি স্বাধীনতার চেতনার একমাত্র ধারক বাহক হিসেবে কেন মনে হোল আপনার কাছে?

এতো কিছু জানার পরেও যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সহজলভ্য পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে নিজেকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি মনে করে তৃপ্তি নেয় তাদের উদ্দেশ্যে বলি। টকশোতে আল আমিন নামের এক শ্রোতা জনাব শাহরিয়ার কবিরকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বঙ্গবীর কাদের সিদিকী মাঝে মাঝেই আপনাকে মুরগী সাপ্লাইয়ার হিসেবে বলে থাকে, এটা কতোটুকু সত্য?” উনি কিছুটা রাগতভাবে প্রশ্নকর্তার উত্তর সুকৌশলে এড়িয়ে যান।

http://www.youtube.com/watch?v=UYIMRg6Yc6A

অতএব, যারা শাহরিয়ার কবিরকে প্রশ্ন করতে পারে না, ৭১ সালে আপনার ভূমিকা পরিস্কার নয়। আপনি কি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার নেতৃত্ব দিতে চান?

যারা জাফর ইকবালকে প্রশ্ন করতে পারে না, স্যার, ৭১ এ আপনি ছিলেন যুবক ছেলে। কেন সেদিন যুদ্ধে না গিয়ে রাজাকারের বাড়ীতে পালিয়ে ছিলেন?

যারা শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞেস করার নৈতিক সাহস রাখে না যে, হ্যালো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভায় চিহ্নিত যুদ্ধপরাধী এবং আরো প্রায় অর্ধ ডজন রাজাকার রেখে কিভাবে প্রতিপক্ষের লোকদের ধরে শুধু বিচার করছেন?

যারা এই তিনটি প্রশ্ন করার মুরোদ রাখে না, তাদের আর যাই হোক, কোন যুদ্ধপরাধীর বিচার দাবী করার নৈতিক অধিকার নেই।

Mahalom72@msn.com

Polarised Conflicts In Bangladesh And The Idea Of Bengali Culture

1

By M Ahmedullah (PhD in Epistemology and Politics)

 

The causes of polarised politics:

Many people are baffled by the intense levels of hatred that exists between different factions in Bangladesh and fail to understand the possible underlying reasons behind the current conflict. Complex factors are no doubt at play, including attachments to certain historical events of importance and their interpretations. There is also the inability of players and decision makers in the country to help break out of the confines of the seemingly sequential and deterministic process of cause and effect, and the effect becomes the cause for the next effect, strangling and suffocating Bangladesh. Rival groups have been engaged in tit-for-tat actions, reactions and counter reactions against each other for a very long time, driven by a revenge instinct and zero sum politics. A lack of respect for fairness and justice, a winner takes for all attitude and an inability to have empathy for rivals’ perspectives have lead to a continuous cycle of hate, violence, justification, outrage, more hate, more violence, more justification, more outrage and so on.

It seems that the current political conflicts in Bangladesh can be directly traced back sequentially to a very distant past, where some groups forcefully pushed forward changes without rational justification and used unethical means, muscle power or state resources, which some other groups opposed or could not oppose effectively at the time due to their relative weaknesses. The opposing groups then tried to undo, reverse or change the course taken by the previous group when their power increased by the use of similar or more unethical means.  Although chronologically this has not been a uniform process, in terms of the nature, size, issues and the ideological orientations of people involved in each stage of the conflict, along the long timeline, this kind of disputes has been a part of our political and social life for generations. The current political conflicts, accompanied by violence and polarisation within society, seems to me to sequentially go back to at least since the violent politics unleashed during the aftermath of the first Bengal partition in 1905. Some of the same issues and emotions of this partition are still alive and at play in the current conflict, although the players and their configurations are different. Individuals and groups involved in this tit-for-tat politics seems to be driven by some kind of logic, impulse or invisible power, beyond their control.

 

 

gjm1

The process of cause and effect instigated by political rivalry could have been positive and constructive if it was minus the use of unethical means, disregard for fairness and justice and the use of violent force. Unfortunately, this has not been the case in Bangladesh, and as a result, we have continually experienced, without an end or break, the domination of a dangerous and destructive political culture. One very important factor in generating and perpetuating the conflict, in my view, is the idea of ‘Bengali Culture’ – a powerful driving force behind motivations and destructive actions of many people in Bangladesh. The emotions, world views, anti-Muslim sentiments, desire for self sufficiency, pride in motherland, considering Islam and Muslim culture of Bengal to be outside the acceptable cultural and spiritual realms and heritage of mother Bengal, etc. of the movement against the 1905 Bengal partition directly links the Bangladesh Awami League’ s adoption of the idea of  Bengali Culture as one of the major underpinnings of their ideology of Bengali Nationalism.

The idea of Bengali Culture in Bangladesh, with associated emotions, intensity of feelings and hatred of the 1905-1911 and the Pakistan periods, which consider Islam and Muslim culture as foreign and originating from Muslim invasion of India, is a major factor in the country’s current divisive politics. This is really unfortunate and caused by a serious failure to understand how human dynamics, social evolution, world trade, power politics, artistic and dietary exchanges between peoples impact on the development and evolution of culture. The Bengali Nationalists have a serious misunderstanding of what constitutes human culture.

 

In Bangladesh when people talk about ‘Bengali Culture’ they are, in fact, not talking about ‘what is’ the actuality on the ground, rather, they are talking about ‘what ought to be’, which is actually an ideological aspiration, falsely dressed up as reality. This is because the cultural landscape of Bangladesh has so many components and diverse origins mixing and remixing for ever since time immemorial, a fact it shares with most other human societies. The dangerous consequences of this error, treating ‘ought’ of an ideology as the ‘is’ of our complex reality is that we have an unnecessary conflict in Bangladesh.  Many people are driven by this idea to engage in ethnic cleansing style cleansing activities against Islam and Muslim culture and their representatives in the country, wrongly feeling that this is completely justified.

 

Definition of culture

In 2009, I attempted to define culture for myself before embarking on an exhibition project called Powers of Festivals.  I visited a number of far distant places around the world  to see how minorities and native peoples use arts, culture and public celebratory events as a way of developing their confidence and survive in a world that is often hostile towards them, particularly bigger countries or communities who are either their neighbours or who dominate the country they share together.

The understanding that I arrived at is provided below.

 

Culture is about lifestyles and creativity of individuals and groups. It encompasses everyday living, special occasions and the beautiful and useful creations of poets, artists, musicians, writers, scientists, architects, businesses people, voluntary groups, etc. The social or isolated activities that people undertake are all forms of cultural expressions.

Interactions of people and their lifestyles do not happen in a vacuum. Individuals and groups do this or that because there are meanings associated with decisions and actions. Theories, myths, social values, religious rules, aesthetic feelings and tastes, etc. underpin all human activities. Over time actions and meanings mutually influence each other’s development and evolution.

Sometimes the process of change takes place predominantly through the interplay of a community’s own internal factors, if the group in question is relatively isolated. More dynamic and dramatic changes within a group are usually associated with greater levels of interactions with the outside world.

Whether internally caused or the result of external factors or a combination of both the changes in human activities and their underpinned meanings are primarily rooted within the original or earlier foundations of a community’s cultural base.

A better understanding of the dynamics and evolution of human cultures will enable people from diverse backgrounds to co-exist and benefit from increased interactions. (M Ahmedullah, 2009)

 

When I was in Bolivia in February 2013, visiting, taking video and still images of Oruro Festival and learning about I never heard anyone taking about Spanish culture or any other culture. They talked about their cultural diversity, made up of elements from Spanish, black African and various native ethnic groups and how they, over time, mixed and combined in different ways to create a Bolivian cultural repertoire. In Bangladesh its completely different where the proponents of Bengali Nationalists say that our culture is ‘Bengali culture’.

 

Superficial thinking

The strangulation faced by Bangladesh and the country’s inability to escape from years of vicious cycle politics, in my view, is partly caused by the idea of Bengali culture. People and leaders in Bangladesh lack the ability to understand how different factors are working in complex and mysterious ways to cause the country’s problems and then work through creative imagination to find solutions. This is because most Bangladeshis operate at a very superficial level and from a very poor knowledge base, including that of historical understanding.

 

As a result, not only is the country unable to find long term sustainable solutions of continuous improvements, various players are constantly blindly adding further complexities and barriers towards a better future. It also seems to me that very few Bangladeshis are interested in looking for the root causes of the country’s problems. Although it is never possible to fully get to the root causes of any complex problems and conflicts, attempts to understand root causes can help deepen one’s appreciation of the problem, and thereby, improve the chances of finding better quality solutions.

 

What is your identity: Bengali first or Muslims first?

I will briefly look at identity issues faced by Bangladesh and show, with examples and arguments, why the idea of Bengali culture is a major problem in Bangladesh. It is often asserted that many Muslims in Bengal, particularly between late 19th – mid 20th century, could not make up their minds regarding their cultural identity – whether they were Bengalis or Muslims. Further, it is also claimed that some Bengali Muslims even refused to identify themselves as Bengalis, or at least, tried to define themselves in terms of Moghul / Middle Eastern cultural forms. The Bengali language movement narratives have been combined with the above assertions and utilised to make many unfounded claims, which are found especially in public meetings, community interactions, magazine articles, etc. For example, Bengali Muslims who are very proud of their Muslim identity are often described as traitors who want to sell the motherland, Bengali culture and language to foreigners, such as to Pakistanis or Arabs, and instead adopt their cultures and customs.  Even though this is not true for the vast majority of the cases, this rather deeply entrenched view, within the minds of a sizable many, generates unnecessary misunderstanding and conflicts.

 

I have been asked many times by a wide range of people whether I was a Muslim first or a Bengali first. Naturally, I found the question strange, because I never thought of these two elements being separate and mutually contradictory as far as my life was concerned. At the beginning I used to answer without thinking properly, but still tried to be logical. The usual answer I gave was: I am a Bengali by birth and a Muslim by choice, currently living in London, and that my culture was a mixture of these three elements of my experience. I have heard other people responding to this question in different ways. Some people say that they are Bengalis first, and others say that they are Muslims first. There are some others who say that they are British Muslims, or British Bengalis, or British Bengali Muslims. There are still others who say that they are Muslims in Britain, or Bengalis in Britain, or Bengali Muslims in Britain.

 

Later, during my personal evolution and life’s journey, when I started to think more deeply about the question I came to the conclusion that this was not a simple question to answer. I also wanted to understand why people are interested in this question in the first place. I began to realise that essentially there can only be two possible meanings to the question. Depending on the perspectives and ideological orientations of individuals people adopt the meaning most appropriate for their circumstances. On the one hand, the question may be concerned about whether it was regarding ‘first’ in a chronological sense, in terms of the time dimension, either the history of one’s community or the development of one’s own consciousness. On the other hand, the question may be interested in finding out the ‘first’ in the order of importance – that is, which one is more important to a Bengali Muslim, being a Muslims or a Bengali. I thought about these two possible meanings and found that they are often related and can also be complementary, rather than necessarily separate and mutually contradictory.

In many cases when one decides on one’s own ‘firstness’ from the two possible options one relies on the other for support. For example, when some people assert that they are Bengalis ‘first’, in the order of importance, they try to show that they are also Bengalis ‘first’, chronologically. For example, according to Abdul Huq, a Bengali writer and activist during the Pakistan period, religion seems to be ‘second’ both in the order of importance and in chronological terms.

 

After the birth, a child is known only as a tiny man. Then he is known as a Bengali, a Punjabi, an Arab or an English and that according to his mother tongue and or his home land. At last he is known as a Muslim or a Christian according to his religious beliefs.

(Islam in Bangladesh, page143)

 

I wonder how Abdul Huq came to such a bizarre conclusion. Did he undertake any long periods of study involving a large number of people or did he just feel that this was the case? Second, as far as my own consciousness was concerned, I tried to identify when I thought I was a Bengali and when I thought I was a Muslim. I found it infinitely difficult to answer this except to say that my earliest recollections were a dream consisting of an aeroplane flying over our mud house in Bangladesh and a discussion I had with some boys about the day of judgement (what it was, what it meant and when it would come). Other people with different upbringings will have different recollections.

 

It is really a ridiculous claim to make that you are known as a tiny man first, then a Bengali and so on. The term ‘known’ implies a prior categorising and defining process involving history and society.  Therefore, even if Abdul Huq was right in some cases he was wrong to generalise with regard to how the natural development of the life of a child takes place over time as he or she grows up and becomes an adult. This means that there are pre-existing structures and contexts that a child is born into, linked to and partly defined by politics, society, culture and history. In addition, a tiny man, a Bengali, a Muslim seem to be mutually contradictory qualities, according to Abdul Huq. It seems that one quality cannot exist with the other quality in the same person at the same time. Therefore, a tiny man cannot be a Bengali and vice versa. However, when he says that at last he is known as a Muslim or a Christian, does it mean that when the child grows to become an adult and becomes known as a Muslim all the other earlier identities, such as Bengali or Pakistani, are no longer part of the identity or superseded by or contained as a sub identity under the Muslim identity, or just vanishes in thin air.

Based on the above view expressed Abdul Huq tried to demonstrate how chronologically a Bengali Muslim was a ‘Bengali first’ in order to show why in the order of importance a Bengali Muslims was also a ‘Bengali first’.  According to Ghulam Murshid, a Bengali academician, Abdul Huq

 can be identified as a Bengali first, then a Pakistani, and at last as a Muslim. It seems that he had no confusion whatever regarding his identity (Islam in Bangladesh, page 143).

Although Mr Huq may have thought that he was not confused, but from the above, I have no doubt that his thinking was quite muddle up. Also just because this is how he thought and felt about himself it does not mean that this was also true of other Bengali Muslims. There has been similar and too many generalisations from various sides during the history of our land.

 

Relative backwardness and identity issues faced by Bengali Muslims in late 19th and early 20th century Bengal

Regarding the question why some people who lived in Bengal during the late 19th and early 20th century, who can be classified as ethnically Bengalis, refused to identify themselves as Bengalis, according to Ghulam Murshid, Abdul Huq thought the communal attitudes of some Bengali Muslims were the determining factor in this regard. Many people who share a similar standpoint as Abdul Huq also blame Muslim communalism for encouraging Muslims to distance themselves from the Bengali linguistic and cultural identity. Although this is no doubt partly true, what they fail to consider is the period earlier and the cause that created this effect. This is an example of the superficial thinking of too many Bangladeshis. They do not seem to know and understand who first defined and categorised Bengali Muslims as Muslims and contrasted them with Hindu Bengalis, who were categorised as Bengalis. Bengali Muslims at that time were not able to respond effectively by assessing and redefining their identity generated by outsiders, due to their relative backwardness.

 

Although at the moment, the language controversy and the question whether we are Bengalis first, or Muslims first have been solved to an extent, because a large section of the people in Bangladesh or Bangladeshis abroad, if asked, will say that their Islamic and Bengali identities are one and the same and that their language is Bengali, it is still the case that a section of the people in Bangladesh derive enormous propaganda values from the controversies which took place many years ago. The Pakistan period was a golden opportunity for them to take full advantage of the relative weaknesses of arguments brought to the fore in favour of the identity of ‘Muslims first’. This is because ideas and world views developed during 19th century Bengal excluded Bengali Muslims, because of their relative poverty and the British divide and rule policies. This inability was perhaps inevitable given the context of the period.  I will not explore this issue further in this paper but will write in greater details about this the future.

 

The Bengali Muslims found themselves in a position of relative intellectual weakness and poor material base. Their social and economic position meant that they were not in a position to respond in appropriate, creative and sophisticated ways to the exclusion they suffered from and the outsiders’ attempt to categorise and define them during the late 19th and early 20th century. They responded in various ways, mostly in my views, many of which were inadequate and some were quite  silly and inconsistent. This gave fuel to those who wanted to further ridicule Bengali Muslims and their culture and way of life.

 

The Idea of Bengali Culture

The controversy with regard to Urdu as a state language policy of Pakistan triggered a backlash in East Bengal, the name of the eastern wing of Pakistan at that time. The revolt and opposition to the policy created the language movement, which most Bengali Muslims supported. The overwhelming support base of the language movement was later hijacked by a group in Bangladesh espousing Bengali nationalism. The process of language movement in Bangladesh during the 1950s and 1960s resulted in the creation of the idea of Bengali Culture in the Bangladesh context.  According to this idea, some aspects of our life and culture are seen as legitimately ours, while anything originating with Islam framed as something alien coming from the outside as a result of the Muslim invasion of India. Thus excluding 800 years of the deep Islamic cultural roots that not only Bengali Muslims but also others in Bengal developed as a result of centuries of multi dimensional links and relationships with the worldwide Muslim communities.

 

The exclusion of Islam from Bengali identity and Bengali culture is one of the main causes of our current problems. On the one hand, Bengali nationalists see Muslim culture in Bangladesh as alien, the result of Muslim invasion of India, even though it has been our adopted way of life for more than 800 years. On the other hand, how can Bengali Muslims see Bengali culture as theirs when the idea of Bengali culture represent an attempt to annihilate who they are as cultural and moral human beings with aims, values, customs, life’s goals and dreams linked to Islam. Considering Bengali Muslim culture as alien, originating from the Muslim invasion of India and therefore illegitimate, is an assumption of Bengali nationalism and underpins many of the other their beliefs or practical undertakings. This assumption drives many Bengali Nationalists, who have not thought through the implications of their views, to consider Bengali Muslims as people who do not want to be Bengalis but prefer to be like the Pakistanis or Arabs. The Bengali nationalists very often and quite offensively suggest that they leave Bangladesh for good and go to Pakistan or the Middle East.

 

Another end result is that a political party like the Bangladesh Awami League often ends up becoming unintentionally fascist.  Among the Awami Leagures some are either unaware of the fascistic implications of one of the main underpinnings of their ideology, which is Bengali nationalism, or in self denial. According to Bengali nationalism the culture of West Bengal and Bangladesh is Bengali culture, practiced by the Bengali ethnic group, derived from local history and traditions going back to thousands of years – rich traditions of arts, music, dance, folk stories, etc., including the contributions of poets like Tagore in the development of Bengali culture.  This kind of definition and representations of Bengali culture generate a deep feeling in many Bengalis of a love for their motherland and a desire to carryon, enjoy and build on that cultural tradition. This is something quite positive. However, this definition also has dark and negative implications. The problem with this idea of Bengali culture is that it does not include the experiences and traditions of 800 years of Islam in Bengal, which is treated as alien, directly and openly by more fanatical individuals, and in indirectly, by the more tolerant and liberal supporters of Bengali nationalism.

 

All shades of Bengali nationalism, with the exception of a tiny minority as there must always be exceptions, see Islam and Muslim influence in Bangladesh as alien, originating from Muslim invasion of India and Bengal. This creates a variety of nationalistic feelings and responses against Muslim culture and practices in Bengal. Initially this attitude was developed, adopted and articulate by some Bengali Hindus, particularly based in Kolkata, but subsequently and especially after the creation of Pakistan many Bengalis from a Muslim background also adopted this nationalism for themselves. The end result is the creation of a culture clash where a large number of people feel a significant element of their life does not belong to them as Islam is not a part of Bengali culture.  Very strong nationalist feelings are often generated against Bengali Muslim way of life and culture. Off course the idea of Bengali culture is nonsense but it is this nonsense, which is the root causes of Bengali nationalist fascism in Bangladesh.

 

According to my definition of culture above Islam and Muslim norms, manners, values, traditions, belief systems are a very much part of the Bengali culture. If this was not the case then the logical deduction would be as follows: the majority of the people in Bangladesh do not practice Bengali culture. Therefore, in order to better understand the nature of the cultures of Bangladesh it is necessary to undertake new researches, generate fresh explanations and develop new terminologies to map and explain the cultural realm of Bangladesh..

 

Conclusion

In this short paper my purpose was to introduce a number of issues concerning what I call the sequentially deterministic cause and effect politics of Bangladesh and suggest that one of the major factors causing the problem was the false idea of ‘Bengali Culture’. Bengali culture as an aspiration or a major element of the lifestyles of a very tiny percentage of the people of Bangladesh is not false. However, with regard to the life of the 160 million people in Bangladesh there is no basis for thinking that the actual culture practiced in Bangladesh is Bengali culture as defined by the Bengali Nationalists, which excludes the vast influences of Islam and worldwide Muslim communities in our culture – way of life, values, aspirations, celebrations, dresses, social interactions, our names, greetings, prayers, get buried after death, etc.

 

There is a very poor understanding of the nature and evolution of human culture in Bangladesh and it is this misunderstanding that is responsible for many of our seemingly unsolvable problems. There is an urgent need to have a serious, civilised, ongoing and wide ranging debate and discussion about culture within Bangladesh and Bangladeshi Diaspora. A better understanding and appreciation of human culture, cultural evolution / development, cultural diversity will help us collectively to redefine the cultures of Bangladesh. This will help us better understand who we are actually, rather than be driven by an aspiration to destroy a large element of who we are, which is an impossibility to achieve.

তোমরা যারা বিএনপি বিদ্বেষী

খোমেনী ইহসান:
‘তোমরা যারা বিএনপি করো’ শিরোনামে ব্রাদার মনোয়ার রুবেল অনলাইন দৈনিক ‘বাংলানিউজ২৪ ডটকম’ এ একখান প্রচারণাপত্র লিখেছেন। মনোয়ার তার এই লেখায় অনেকখানি চক্রান্ত বিদ্যা চর্চা করেছেন। যা এই কারণেই হাস্যকর হয়েছে যে, বিএনপির লোকেরা তার কোনো কথাই গ্রহণ করবে না। মনোয়ার একবুক বিএনপি বিদ্বেষকে গোপন করে বিএনপি দরদী সাজলেও দলটির নেতাকর্মীদের আবেগানুভূতির প্রতি সামান্যতম সংহতিও দৃশ্যমান করতে পারেননি। বরং তিনি বিএনপির লোকেদের সাথে জামায়াতে ইসলামীর লোকদের রাজনৈতিক ফারাক সূচিত করতে গিয়ে অসম্মান ও বিদ্বেষই জারি রেখেছেন।

খেয়াল করে দেখি মনোয়ার কী করছেন। তিনি লিখেছেন, ‘তোমরা বিএনপি/ছাত্রদল করো তারা হয়তো একটি জিনিস নিশ্চয়ই জানো, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি দল। শহীদ জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা। জিয়াউর রহমানের বীরত্বগাথা যুদ্ধের কাহিনী স্কুলগুলোতে পড়ানো হয়।’ মনোয়ার চালাকি করে সম্মান দেখানোর নামে জিয়াউর রহমানের প্রতি তাদের বিদ্বেষকে ঠিকই জারি রেখেছেন। কারণ যারা জিয়া বিদ্বেষী তারা তাকে শুধু মুক্তিযোদ্ধা মনে করে। বিদ্বেষের মধ্যে একটু উদারতা দেখাতে গিয়ে তারা কষ্ট করে স্বীকার করে যে জিয়া মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু জিয়া শুধুই মুক্তিযোদ্ধা বা সেক্টর কমাণ্ডার নন। জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। তার ঘোষণার মাধ্যমেই মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে যান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী হানাদারদের তত্ত্বাবধানে গ্রেফতার বরণ করেন। অপারেশন সার্চ লাইটের তাণ্ডবে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রাণ্তে অগুণতি বাংলাদেশির লাশ ছড়িয়েছিটিয়ে পড়েছিল। বিপুল শোক, স্বজন হারানোর আহাজারি আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুপস্থিতি ও দিক নির্দেশনাহীনতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় মুক্তিকামী জনতা। এ অবস্থায় বাংলাদেশের আপামর জনগণকে ইতিহাসের উত্থানপর্বে উন্নীত করতে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এলেন মেজর জিয়া। প্রথমে তিনি নিজের নামেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনই যার প্রধান লক্ষ্য, তিনি কূটরাজনৈতিক বিবাদকে দানা বাধতে দিতে পারেন না। তাই পরের ঘোষণায় তিনি স্বাধীনতার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও অন্তর্ভূক্ত করে নিলেন। তার নামে নতুন করে ঘোষণা দিলেন। যার ফলাফল হলো জিয়ার প্রথম ঘোষণায় উজ্জীবিত জনগণ আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়তার জমিনে আরো বেশি সিনা টানটান করে দাড়িয়ে গেলো। ইতিহাসের দুর্দান্ত সময়ে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যে মহান কর্তব্য পালন করেছেন, যে সেনাপতিসুলভ প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন এবং স্বাধীনতাকামী জনগণকে শোক-বেদনা-হতাশা উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে শামিল হতে উদ্বুদ্ব করেছেন তার প্রতি বাংলাদেশের গণমানুষের বিপুল সমর্থন, সংহতি ও শ্রদ্ধা রয়েছে। জনগণের এই শ্রদ্ধাকে বিএনপি/ছাত্রদলের সব নেতাকর্মীই অন্তরে ধারণ করেন।

কাজেই জিয়াকে যখন শুধুই মুক্তিযোদ্ধা সম্বোধনে বিএনপি/ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপদেশ খয়রাত করা হয় তখন তারা দেখতে পান উপদেষ্টাবন্ধুর মুখোশধারী লোকটি আসলে জিয়া বিদ্বেষী। কারণ এই দেশে যারা জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক স্বীকার করেন না তারা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি কী মনোভাব পোষণ করে তা আর অজানা নয়। এই বিদ্বেষীদের অনেকেই তো সংসদে, সংবাদ সম্মেলনে, জনসভায় শহীদ জিয়াকেজ স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে অস্বীকার করেছেন। বলে বেড়িয়েছেন জিয়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। শহীদ জিয়া নাকি আইএসআইয়ের এজেন্ট হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার অভিনয় করেছেন। তারা জিয়ার মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়ে এই মিথ্যাচারই করছেন না। তারা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের ভূমিকার জন্যও জিয়াকে অপবাদ দেন। তারা বলেন জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য দায়ী। জিয়া সেই সময় সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ছিলেন। ৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধু নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন রক্ষার জন্য সাহায্য চেয়ে তাকে ফোন করেননি। বঙ্গবন্ধু ফোন করেছিলেন সেনাপ্রধান শফিউল্লাহকে।তিনি মুখের উপর বঙ্গবন্ধুর জীবন বাচাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাকে পালিয়ে যেতে বলেন। সেই শফিউল্লাহ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ক্যুদেতাদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। বিদেশে রাষ্ট্রদূতের চাকরি নিয়ে দেশ ছেড়ে গেছেন। কিন্তু শফিউল্লাহ আওয়ামী লীগের কাছে উপেক্ষিত থাকেননি।তিনি দলটির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

জিয়া বিদ্বেষীরা অভিযোগ করেন তিনি রাজাকার-আলবদরদের রাজনীতিতে পুনর্বহাল করেছেন। কিন্তু তারা বলেন না যে জিয়া একাজটি করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর নীতির ধারাবাহিকতার ভিত্তিতে। তার এই কথা ধামাচাপা দিতে গিয়েই আড়াল করে যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার-দালালদের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে। বঙ্গবন্ধু সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার না করে পাকিস্তানের সাথে সমঝোতার চুক্তি করেছিলো। মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ভুট্টোর সাথে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু গলাগলি ও কোলাকুলি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বিনা বিচারে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল কারবন্দি হাজার হাজার রাজাকার-দালালদেরকে। তারা শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়ার নজিরকে সামনে এনে শহীদ জিয়া বিরোধী যে প্রচারণা চালান তার মধ্যে কোন উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয় তাও তো কারো অজানা নয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম, সংবাদপত্র, বিচার বিভাগ ও বাক স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে জাতীয় জীবনে নৈরাজ্য ও হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরির ফলে বাংলাদেশে জাতীয় সংহতি বিনষ্ট হয়েছিল। দেশ নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল আমাদের জন্মভূমি। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মহান সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে শহীদ জিয়ার কাঁধে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্বভার অর্পিত হয়েছিল। জাতীয় সংহতির পথ উন্মোচিত করতে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদপত্র-বিচার বিভাগ-বাক স্বাধীনতা কায়েম করেছিলেন। তিনি বাকশালে বিলুপ্ত আওয়ামী লীগ ও সিপিবিসহ সব রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। জিয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও দেশে ফেরত এনে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছেন।

জিয়া বিদ্বেষীরা অভিযোগ করেন জিয়া জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলছি স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল তার প্রমাণ দেখান। তিনি ভারতের সাথে কলা ২৫ সালা গোলামীর চুক্তি মোতাবেক সংবিধানে জোর করে ধর্মনিরপেক্ষতা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে জামায়াত রাজনীতি করার সুযোগ হারিয়েছিল কিন্তু তিনি তো কখনোই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেননি। সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি বাঙ্গালীর জাতীয়তাবাদকে সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। অথচ বাংলাদেশে আরো কমপক্ষে ৫০টি জাতি সত্ত্বা রয়েছে। তারপরেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাংবিধানিকভাবে সাম্প্রদায়িকতা কায়েম করা হলে। অথচ বাঙ্গালীদের মতো বাংলাদেশে মুসলমানরাও সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের ধর্মকে উপেক্ষা করে ধর্মনিরপেক্ষতা কায়েম হতে পারে না। সত্যিকারের সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে চাইলে এটা সম্ভব নয়। এ কারণে জিয়া ইসলামপন্থী দলগুলোকেও জাতীয় ঐক্যের মধ্যে আসতে দিয়েছেন। এটা তার অপরাধ ছিল না, বরং তার সুদূরপ্রসারী ঐক্য চিন্তার সৌন্দর্য্য। জাতীয় ঐক্য ও সংহতির মতো মহান লক্ষ্যের জন্য জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে রাজনীতি করতে দেয়ায় বিএনপি ও জিয়া বিদ্বেষীরা অপরাজনীতি করে বেড়ায়। অথচ তারা তো একবারও বলেনা যে শুধু বিএনপি বিরোধী আন্দোলন করতে ও ক্ষমতায় যেতে আওয়ামী লীগ কিভাবে জামায়াতের সাথে এক টেবিলে বসে রাজনীতি করে।কিভাবে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে? কিভাবে অধ্যাপক গোলাম আযমের কাছে আওয়ামী লীগ দলীয় রাষ্ট্রপতি প্রার্থী দোয়া আনতে যায়? আওয়ামী লীগের ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করা যদি দোষের না হয় তবে জিয়ার সিদ্ধান্ত কেন মহাননুভবতা হিসেবে স্বীকৃত হবে না?

মনোয়ার রুবেল তার লেখার সমালোচনার কারণে বিএনপি ও ছাত্রদলের লোকদের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের সাথে সুর মেলানোর অভিযোগ করেছেন। তার এ অভিযোগ অপবাদই নয় শুধু বিএনপি ও জিয়া পরিবার বিরোধী চক্রান্তেরই অংশ। কারণ আমরা দেখেছি গত ৫টি বছর বিএনপি ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাতে গিয়ে প্রায় সময়েই জিয়া বিদ্বেষীরা বলেছে বিএনপি ও জামায়াত একই রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী। তারা স্বাধীনতার ঘোষক ও দেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার দলকে বলে বেড়ায় পাকিস্তানপন্থী দল। এসব অপবাদ তো শুধু অপবাদ ছিল না। এই অপবাদ ছিলো বিএনপি ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ইশতেহারের অংশ। তাইতো আমরা দেখি তারা খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে নিষ্ঠুরভাবে ঈদের আগে উচ্ছেদ করেছে। অথচ রাষ্ট্রের কাছ থেকে বরাদ্দ পেয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ঢাকায় বাড়ি করেছেন। তার বাড়ি কিন্তু বহাল আছে। সরকার মুজাহিদ পরিবারকে ওই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ দূরে থাক, এ জন্য একটি শব্দও খরচ করেননি জিয়া বিদ্বেষীরা। আমরা দেখেছি বিদ্বেষীরা কিভাবে দিনের পর দিন খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও কোকোকে অপবাদ দিয়েছে। তারেকের বিরুদ্ধে তারা আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআইয়ের লোকদের সাক্ষী হিসেবে উড়িয়ে এনে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন তিনি দুর্নীতিবাজ। কিন্তু আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে তারেক নির্দোষ। আদালতের এই ঘোষণার পর কিন্তু তারা একবারও ‘সরি’ বলেনি।

আজকে বিএনপি ও জামায়াতের সুর এক হয়ে গেছে বলে তারা অভিমান করছেন। ছাত্রদলের ছেলেরা শিবিরের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে কথা বলছে বলে গোস্বা করছেন। কিন্তু বিএনপি সব সময় জানিয়েছে তাদের আদর্শ বাংলাদেশী জাতীয়তবাদ। তারা জামায়াতের সাথে আদর্শিক ঐক্য নয়, ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের জোট করেছে। যার প্রমাণ আমরা বিএনপির কথা ও কাজে দেখেছি। কিন্তু যারা আজ বিএনপি দরদী তারা কি বিএনপি ও জামায়াতের সাথে কোনো ফারাক করেছে? তাহলে জামায়াত-শিবিরকে হত্যা-গুমের মতো করে তারা বিএনপি বা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের হত্যা-গুম করে? বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল মনে করার নমুনা কি ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, ছাত্রদল নেতা আশিককে গুম করা? মাঝরাতে মই বেয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে অনুপ্রবেশ করে রিজভী আহমেদকে তুলে নিয়ে যাওয়া? ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, এমকে আনোয়ার, ব্যরিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আসম হান্নান শাহকে গ্রেফতার করে কারাবন্দি করে রাখা? ছাত্রদল ও শিবিরের সাথে পার্থক্য করার মানে কি ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ও হাবিবুর রশীদ হাবিবকে গ্রেফতার করে কারাবন্দি করে রাখা। গত এক মাসে ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছেন। আমরা দেখিনি কেউ ছাত্রদলকে শিবিরের থেকে আলাদা ছাত্রসংগঠন মনে করে তাদের পক্ষে দুটি শব্দ উচ্চারণ করেছেন।

সত্যি কথা কি, আওয়ামী লীগ বিনা ইশতেহারে, প্রতীকে, ভোটে যখন ১৫৪টি আসনে নিজেকে বিজয়ী করে ফেলে তখন কূটনীতিকরা হতভম্ব হয়ে যান। তারা সেই সরকারের আমন্ত্রণে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে হাস্যকর সরকারের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকেন। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি/ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এর কূটনৈতিক মূল্য বুঝেন। তাই যারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষে থাকার কথা বলে ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার পক্ষে নির্লজ্জভাবে অবস্থান নেয় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে বিএনপি/ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রতিবাদী বক্তব্যকে অনুধাবন করে ফ্যাসিবাদকে সমর্থনের জন্য যখন কেউ দুঃখিত-লজ্জিত না হয়ে যখন বিএনপি/ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের জামায়াত/শিবির করার জন্য অভিযুক্ত করা হয় তখন সব কিছু পষ্ট হয়ে যায়। বিএনপি ও জিয়া পরিবার বিদ্বেষীরা আজ আস্তিনে খঞ্জর লুকিয়ে ভালো সাজতে এসেছে! কিন্তু তাদের কথা শুনে বিএনপি/ছাত্রদল নিঃস্ব হয়ে পড়লে যে খঞ্জর নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে না তার কোনো বিশ্বাসযোগ্য নজির নাই।

NINETEEN SEVENTY-FIVE (1975): A Defining Year for Bangladesh

mujib_zia

What is clear is that just as in Pakistan when Bengali Muslims were not willing to allow the destruction of their Bengali identity, in Bangladesh they were not willing to allow their Muslim identity to be undermined.  They are both Bengalis and Muslims at the same time.

By M Ahmedullah, PhD in Epistemology and Politics

BAKSAL

Nineteen seventy-five (1975) was both a momentous and traumatic year for Bangladesh.  On the one hand, the dream that inspired the Bengalis of East Pakistan to fight against the dominance of West Pakistan and the non-democratic rule of the military lay shattered with the ‘second revolution’ and the creation of BAKSAL.  It was a political system designed for one-party rule – the newly created party BAKSAL was to rule Bangladesh under the supreme leadership of Sheikh Mujib, and no other party was to be allowed to function.  All, but four, newspapers were banned.  The expectation of economic benefits arising from the ending of Pakistani rule did not materialize – in fact, in many respects, matters only became worse.  Off course, Bangladesh faced a gigantic task of rehabilitating millions of displaced people and rebuilding the shattered economy in the aftermath of the devastating war of liberation.  However, given the post-war assistance Bangladesh received from sympathetic nations around the world, corruption and incompetence of the Mujib government quickly began to be seen to be the main factors behind the lack of progress.  Added to that, the summer flood of 1974, a factor that caused the subsequent famine and the loss of a large number of innocent lives, were fresh in the minds of the people.  Again, Mujib and his government were blamed.  The sacrifices that the unarmed people made in 1971 to liberate Bangladesh in the name of ‘Jatir Pita Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman’ were beginning to be seen to have been in vain.  The people of Bangladesh trusted Mujib and thought that his democratic vision for Bangladesh was based on a clear and deep understanding of political theory and the process of democratic politics.  The BAKSAL was seen as another experiment of a confused leader that had very little knowledge or understanding of politics and economy.

The assassination of Sheikh Mujib and the Rise of General Zia

On the other hand, Bangladesh became faced with a very dangerous political crisis with the assassination of the ‘Father of the Nation’ in August 1975, which unfolded for several months before the situation began to stabilize after the 7th November soldiers uprising and the installation of General Ziaur Rahman as the ruler of Bangladesh under a military dictatorship.  The irony is that many individuals, both military personnel and politicians, who fought the war of liberation under the leadership of Mujib, including many of his close associates, joined those who killed ‘Bangabandhu’.  This included Zia, who was known for both his service during the liberation struggle and his declaration of independence from Chittagong radio on 26 March 1971 when the Pakistani military assault began.  Although Zia was not directly linked to the killing of Sheikh Mujib, his position as the military ruler and many of the changes he instituted are definitely antithetical to the ideology of both Awami League and BAKSAL. Further, as the situation in Bangladesh continued to stabilize, the reputation and acceptance of Zia increased progressively.  The question that comes to mind is, how can it be explained that individuals like Zia, who fought bravely during the liberation war under the leadership of Mujib, de facto supported his removal from power and subsequently initiated steps to dismantle the ideology of Mujibbad?  Many factors no doubt contributed to this, and people do go through conversions.  However, not only did Zia challenge the ideological dominance of the Awami League and Mujibbad, he also created an opposite ideology and called it ‘Bangladeshi Nationalism’.  This was created to particularly challenge the identity definition of Bengali Nationalism as propagated by the Awami League.  Further, how can it also be explained that even after 32 years of the assassination of Zia, the ideology of Bangladeshi Nationalism still attracts support from a very sizeable population of people in Bangladesh?

Off course, the political process since 1971 has been rather complex and therefore the precise answers to the above questions may be difficult to unearth.  Further, it may never be possible to grasp the totality of the processes, induced by diverse related and unrelated factors, that lead to the alienation of a large section of the Bangladesh from Mujib and his leadership.  However, there may be some pointers that could lead to an improved understanding.

Lessons from creation of Pakistan and Liberation of Bangladesh

A comparison with the creation of Pakistan and certain subsequent events may throw some lights in the right direction.  Nobody doubts that the vast majority of the Muslim people of Bengal supported the creation of Pakistan, including the leadership of many parties.  This does not however mean that they were all ideologically united under one single clearly defined Islamic political vision.  There seems to be two main reasons why various Muslim groups and the Muslim population supported the creation of Pakistan.  On the one hand, they wanted to escape from actual and perceived Hindu domination, partly the result of historical experiences and the fear that they developed about living in a future independent India under Hindu domination.  On the other hand, they wanted to develop their society according to Islamic principles.  After the creation of Pakistan, it became quite clear that not all the Muslim people of Bengal, who supported the creation of Pakistan, did so for the same reasons, and disputes soon arose as to what kind of Pakistan one should build.  One principle on which the vast majority of the Bengalis in East Pakistan was united under was on the question of their Bengali identity.  Although they supported the creation of Pakistan to safeguard their interest as Muslims, they were not prepared to allow the destruction of their Bengali identity.  The struggle to preserve their Bengali identity, together with their struggle against economic injustice and military dictatorship, lead to the 1971 Liberation War.  The struggle’s undisputed champion was Sheikh Mujib, who was called by the people ‘Jatir Pita Bangabandhu Sheikh Mujib’.   Just as before, when they struggled to create Pakistan under Jinnah’s undisputed leadership, the vast majority of the Muslim Bengalis supported the creation of Bangladesh under Sheikh Mujib, who was their brave champion.

What is General Zia’s Bangladeshi Nationalism?

Similarly, soon after the creation of Bangladesh disputes began to arise about what kind of Bangladesh one should build.  Zia created Bangladeshi Nationalism to reflect the Muslim and Bengali aspirations of the people of Bangladesh, and he has mass support in this regard.  What does this show?  Clearly, despite what the proponents of Bengali Nationalism say, a large section of the people of Bangladesh are very proud of their Islamic identity.  They want to see a future that incorporates the Bengali and Islamic elements of their experiences, way of life, culture and identity, and fuses them into one whole to march forward into the future.  The struggle for freedom of the Bengalis in Pakistan began because certain sections of the Muslim League and Pakistani ruling class wanted to obliterate element of their Bengali identity.  Similarly, the alienation of a large section of the Bangladeshi people from Mujib began, in the immediate aftermath of the Liberation War, because Bengali nationalism did not accept that eight hundred years of Islam in Bengal meant that the culture of the people of Bangladesh was based on deep Islamic roots.  What is clear is that just as in Pakistan when Bengali Muslims were not willing to allow the destruction of their Bengali identity, in Bangladesh they were not willing to allow their Muslim identity to be undermined.  They are both Bengalis and Muslims at the same time.

বাংলাদেশে কলকাতার আনন্দবাজারের দাদাগিরি

anandabazar_patrika-400x400বলাই
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের কার্যালয়ে বাংলাদেশের সাহিত্যের গতি-প্রকৃতির ওপর একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। হাইকমিশনের উদ্যোগেই ছিল এ আয়োজন। বাংলাদেশের সুপরিচিত লেখকদের অনেকেই সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন। সেমিনারে আলোচ্যসূচীর মধ্যে অন্যতম ছিল বাংলাদেশের উপন্যাসের ভাষা কী রকম হবে।সেমিনারে সভাপতি ছিলেন সুনীল গঙ্গেপাধ্যায়। বাংলাদেশের লেখকরা একে একে তাদের বক্তব্য পেশ করার পর আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পালা এল। তিনি ডায়াসে দাড়িয়ে কাটা কাটা কথায় বলেছিলেন, বাংলাদেশের সাহিত্যের ভাষা হবে বাংলাদেশের জনগণের মুখের ভাষার কাছাকাছি, তাতে করে যদি পশ্চিম বাংলার ভাষার চাইতে বাংলাদেশের সাহিত্যের ভাষা, বিশেষ করে উপন্যাসের ভাষা যদি সম্পূর্ণ আলাদা খাতে প্রবাহিত হয়ে যায়, সেটা সকলের স্বাভাবিক বলেই ধরে নেওয়া উচিত।

ইলিয়াসের এই বলিষ্ঠ উচ্চারণ যে পশ্চিমবাংলার সাহিত্যের মোড়লদের অনেকেরই ভালো লাগেনি সেদিন সন্ধ্যাতেই তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। কলকাতার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজার গ্রান্ড হোটেলে বাংলাদেশের লেখকদের সম্মানে একটি ডিনারের আয়োজন করেছিল। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সব লেখককে সেখানে নিমন্ত্রণ করা হলেও ইলিয়াসকে ডাকা হয়নি। আনন্দবজারের এই অভদ্র আচরণে ইলিয়াস খুব ব্যাথিত হয়েছিলেন, অপমানিত বোধ করেছিলেন। দেশে ফিরে সমসাময়কি লেখকদের কাছে সে ক্ষোভের কথা গোপন করেননি তিনি। পরে তার জবাবটাও দিয়েছিলেন খাসা। বাংলাদেশের উপন্যাসের ভাষা কিভাবে বাংলাদেশের মানুষের মুখের ভাষার অনুবর্তী হয় খোয়াবনামা লিখে তার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেখিয়েছিলেন তিনি।

হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রগঠনের গোপন বাসনা থেকে বঙ্কিম তার আনন্দমঠ উপন্যাসে যে সোশাল ডিসকোর্স তৈরি করেছিলেন ইলিয়াস তার খোয়াবনামায় সেটাকে ভেঙ্গে খান খান করে দেন। তবে ইলিয়াস আনন্দমঠের ডিসকোর্স ভাঙতে পারলেও আনন্দবাজার গোষ্ঠীর তাতে খুব সমস্যা হয়নি। কারণ এক ইলিয়াস প্রতিবাদ জানালেও বাংলাদেশের নামকরা অনেক জিনিয়াসই ততদিনে দাদাদের পকেটে ঢুকে গেছেন। আনন্দবাজার ভেতরে ভেতরে তার হিন্দুত্ববাদী আদর্শকে লালন করলেও উপরে উপরে অসাম্প্রদায়িকতার মিথ্যা বুলি আউড়ে যাচ্ছে। আসলে আনন্দবাজারের চোখে বাংলাদেশ কখনই স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা পায়নি। বরং তারা বাংলাদেশকে বরাবর ‘ছোটভাই’ হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত। প্রযোজনে একে ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ব্যবসায়িক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে তারা।

humayunsunil

হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম লেখক। তার লেখার ধরন, মান নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, কিন্তু জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন কারোরই নেই। এপার-ওপার মিলিয়ে সমসাময়িক লেখকদের তুলনায় জনপ্রিয়তায় তার অবস্থান ছিল শীর্ষে, এ নিয়ে দ্বিমত করলে বাজিতে হারতে হবে। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকাগুলো বিশেষ সংখ্যা বের করেছে। আর আনন্দবাজার হুমায়ূনের মৃত্যু সংবাদ ছেপেছে টুকরো খবরে। শিরোনাম ছিল ‘প্রয়াত কথাকার হুমায়ূন আহমেদ’। আনন্দবাজার গোষ্ঠী তাদের দেশ পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় হুমায়ূনের লেখা ছাপতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও হুমায়ূনের মৃত্যু সংবাদ তাদের মনে শোকের ভাব জাগায়নি। কারণ জীবীত হুমায়ূনকে নিয়ে ব্যবসায় সুযোগ থাকলেও মৃত হুমায়ূনে তাদের কোনো আগ্রহ ছিল না।

অথচ একই বছরের ২৩ অক্টোবর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর আনন্দবাজার আট কলামে ব্যানার শিরোনামে সংবাদ ছেপেছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠতে পারে, একই অঙ্গনের জনপ্রিয় দুই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে পত্রিকায় কাভারেজ দেওয়ার ক্ষেত্রে এ বৈষম্য কেন? এক কথায় এর উত্তর হলো, ব্যবসায়িক স্বার্থ। সঙ্গে সাম্প্রদায়িক চেতনা। সাহিত্যের ক্ষেত্রে আনন্দবাজার এমন একটি ভাব দেখায় যেন তারা বাংলা সাহিত্যের একমাত্র ধারক ও বাহক। অভিভাবকও। তাই বাংলাদেশের সাহিত্যের বাজারটাও তাদের দখলে থাকাটাই বাংলা সাহিত্যের জন্যই মঙ্গলজনক। এ বাজারটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তারা নানারকম কূটকৌশল নিয়ে থাকে। সেগুলোর প্রকাশও নানারকম। কখনো বাংলাদেশের কোনো লেখক-লেখিকার বই ছেপে বিতর্ক সৃষ্টি করে পয়সা রোজগারের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে, কখনো এ দেশের লেখকদের একাংশকে সম্মাননা দিয়ে নিজেদের স্বার্থরক্ষার খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আনন্দবাজার গোষ্ঠী। আর কোনো ব্যক্তিকে নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থ সিদ্ধির অন্তরায় মনে করলে তাকে সমূলে ধ্বংস করতেও কখনো কুণ্ঠিত হয় না তারা। আন্দবাজারের ষড়যন্ত্রের কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি লাঞ্ছিত হয়েছে।

এখানে প্রসঙ্গক্রমেই এসে যাবে তসলিমা নাসরিনের কথাও। ভারতে মৌলবাদীরা যখন বাবরি মসজিদ ভাঙলো এবং তার জেরে ধরে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সপ্তাহখানেক সময়ের মধ্যে প্রায় এক হাজার মানুষ খুন হয়ে গেল তখন পৃথিবীজুড়ে মানুষ ভারতের দিকে সমালোচনার আঙ্গুল তুলেছিল। তারা বলেছিল ভারত একটি নিপীড়নকারী রাষ্ট্র, সেখানে সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা নেই। এ নিয়ে ভারতীয় বুদ্ধিজীবীমহল যখন চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিল, ঠিক তখনই তাদের সামনে ‘আলোর রেখা’ হয়ে হাজির হয়েছিল তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’। ‘লজ্জা’ দিয়ে নিজেদের অপরাধবোধ চাপা দেওয়ার মস্ত সুযোগ পেয়েছিলেন তারা। আনন্দবাজার তসলিমার একটি ভাবমূর্তি তৈরি করতে টানা তিন বছর ধরে ক্রমাগত চেষ্টা করে গেছে। এপার-ওপার বাংলায় তাদের পোষা বুদ্ধিজীবীরা তসলিমাকে নিয়ে অব্যাহতভাবে কলম চালিয়ে গেছেন। লজ্জাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল সেদিকে বিশ্বের নজর ঘুরিয়ে দেওয়াই ছিল তাদের মূল কাজ। যাতে ভারতের সংঘটিত দাঙ্গার ওপর থেকে বিশ্ববাসীর নজর ঘুরে যায়। বাস্তবে তা হয়েছিলও বৈকি! বাংলাদেশে বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার দাবি উঠেছিল।লক্ষণীয় বিষয় হলো প্রয়োজন শেষে আনন্দবাজার কিন্তু তসলিমাকে ঠিকই ছুড়ে ফেলেছে।

সাহিত্য ছেড়ে খেলার মাঠের দিকে এগুলেও একই চিত্র পাওয়া যাবে। ক্রিকেটে আজ বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত শক্তিই বলা যায়। আজ এ খেলায় বাংলাদেশকে বলে-কয়ে হারানোর দিন শেষ। কিন্তু ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো সাফল্যই আনন্দবাজার গোষ্ঠীর বাহবা পায় না। গত ৪ নভেম্বরে এক-দিবসী ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। পরদিন বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো এ নিয়ে প্রধান বা দ্বিতীয় শিরোনামে খবর ছাপলেও আন্দবাজারে একটি লাইনও লেখা হয়নি। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল ঢাকায়। টেলিগ্রাফ, বিবিসি, ক্রিকইনফো, সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের রিপোর্টে বলা হল, ঢাকায় দুর্দান্ত অনুষ্ঠান হয়েছে। অথচ একই অনুষ্ঠান কাভার করে আনন্দবাজারের গৌতম ভট্টচার্য্য যে লেখা লিখলেন তাতে মূল বিষয় বাদ দিয়ে সাংবাদিকদের একটু হেটে প্রেসবক্সে ঢোকার কষ্টটাকে ফুটিয়ে তোলাতেই নজর ছিল বেশি। অথচ গৌতমরা ভুলে যান, ১৯৯৬ সালে কলকাতা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ওপেনিং করতে গিয়ে লেজার শোর নামে কেলেঙ্কারি করে ফেলেছিল। সেদিন সারা পৃথিবীতে ‘ছি ছি’ পড়ে গিয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ একযুগ পার করলেও আজ পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশকে তাদের দেশে খেলার আমন্ত্রণ জানায়নি। এ নিয়ে কিন্তু আনন্দবাজারের কোনো রা নেই।

সাহিত্য, খেলা ছাপিয়ে যদি রাজনীতির কথা ওঠে তো দেখা যাবে সেখানে আরেক কাঠি এগিয়ে আছে আনন্দবাজার গোষ্ঠী। যে পত্রিকায় হুমায়ূনের মৃত্যু সংবাদ ছাপা হয় টুকরো খবরে, নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশের খবরই ছাপা হয় না, সেই একই পত্রিকায় বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে খবর ছাপা হয় হর-হামেশা। যেন বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তাদের আগ্রহ অসীম। যদিও সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে তারা বেশিরভাগ খবরেই বস্তুনিষ্ঠতার ধার ধারে না। বরং নিজেদের মতো করে একপাক্ষিকভাবে খবর প্রকাশের দিকেই মনোযোগ বেশি। সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিনই আনন্দবাজারে বাংলাদেশ নিয়ে খবর থাকছে। খালেদা, হাসিনা, এরশাদ, জামায়াত কবে কখন কী করল, কী বলল তার সবই নিজেদের মতো ছাপছে তারা।কিছুদিন আগে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই তারেক রহমানকে আইএসআইয়ের সহযোগী বানিয়ে সংবাদ ছাপিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল তারা। জামায়াত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোপনে নাশকতার চেষ্টা করছে, জঙ্গি দল গঠন করছে বলে খবর ছড়াচ্ছে তারা। অথচ আগামী লোকসভা নির্বাচন ঘিরে বিজেপির মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল যে কংগ্রেসকে চোখ রাঙাচ্ছে সেদিকে যেন চোখ নেই আনন্দবাজার গোষ্ঠীর। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে বলে আনন্দবাজারের যে উদ্বেগ সেই একই উদ্বেগ ভারতের বেলায় দেখাচ্ছে না তারা। মূল কথা হলো বাজার দখলে রাখা। সেটা সাহিত্য-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে, রাজনীতি, অর্থনীতি সবখানেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের বাজার দখলে রাখতে সুবিধা হয়, তাই বিএনপির উত্থান ঠেকাতে তারা মরিয়া।

জামাতের জঙ্গি আচরণেকে ইঙ্গিত করে আসলে তারা বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে চায়। তাই আওয়ামী লীগ আমলে ফেলানি হত্যা, তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি না হওয়া কিংবা স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে মমতার অনাগ্রহ নিয়ে তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে।তবে বাজার দখলে রাখার ক্ষেত্রে বিএনপি বেশি সুবিধা দিলে আওয়ামী লীগকে ছুড়ে ফেলতে এক মুহূর্তও ভাববে না তারা। যে বাঙালী জাতিয়তাবাদের কথা আনন্দবাজার বলে বেড়ায় সেটা আসলে সাম্প্রদায়িক চেতনায় ধারণ করা জাতীয়তাবাদ। বস্তুত আমাদের অসাম্প্রদায়িক ভাবনার সঙ্গে তাদের জাতিয়তাবাদের ধরন মেলে না। ব্রিটিশ আমলে দ্রুত ইংরেজী শিখে ইংরেজের দালালি করে কাচা পয়সা রোজগার করে যে মধ্যবিত্ত বাঙালী হিন্দু শ্রেণী বিকাশ লাভ করেছিল সেই শ্রেণীর বানানো হিন্দুত্ববাদী জাতিয়তাবাদেকই ধারণ করছে আনন্দবাজার।

এখনো মুসলমানদের পিছিয়ে পড়া আতরাফ জনগোষ্ঠীর অংশ ভাবতেই পছন্দ করে তারা। আর নিজেদের ভাবে আশরাফ। নিজের অঞ্চলে নিজেদের ভাবনা প্রতিষ্ঠা করলে সমস্যা ছিল না, সমস্যা তখনই বাধে যখন তাদের ভাবনা তারা জোর করে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে বাণিজ্য করে যায়।

Wahiduzzaman Apollo – victim of the new war to emancipate Bangladesh

If you are living in Bangladesh and if you are not in Facebook, you probably have not heard about Wahiduzzaman Apollo. He is an unashamedly nationalist activist, aligned with BNP. What is different about him is, he is the part of new generation of activist, who protects their party dogma through an exercise of intellect. He is one of those new generation who does not seek financial dividend in return of their activism.  Wahidujjaman Apollo is not a single person.

A new Bangladesh is emerging in the online space where constantly ideas are expressed, debated and challenged. For one Wahiduzzaman Apollo in support of nationalist movement and BNP there is another Doctor Aiju or Omi Pial in favor of Awami league and the Bengali nationalist movement , who’s name you may not have heard either. There are other, Baki Billah and Parvej Alam who challenges the narrative of both Awami League and BNP, it is unlikely that you have heard their name as well.

The mentioned few are all part of a new generation of online warriors who are trying to portray a new Bangladesh, that is trying to break out of the shackles of old, protected intellectual establishment, which is now settled in their comfort zone and unable to add value to the dynamic narrative of the new Bangladesh that is emerging.

This is a genuine fight of the generation. A new war to be free, definitely not comparable with the liberation war that was fought in 1971 when 3 million lives were lost to give birth to a new nation called Bangladesh but a fresh one to create a new emancipated, open and enlightened Bangladesh that earlier generation has failed to establish.

The new generation of online warriors  operate in the space of Facebook, blogs and other online medias. They have their own followers in tens and thousands, who subscribe to their views. They are constantly debating with each other with their status updates and  each of their words is tested in a space by their followers and opposition as the media allows each person to freely express their minds. So, none can get away with an outright lie as each  word is validated by a huge group of people, who enjoys an absolute freedom of speech in this new medium.
In a country, where all the traditional media has been captured by political elites and their business allies – people are fed with news and debate which eventually protects the standing of the establishment only. So, facebook, blogs and the online space where the small debates take place are the only free space left for people to express their mind. The freedom to write anything is the central tenant that fuels these debates and allows new ideas to flourish.
This freedom is now allowing a new narrative of a Bangladesh which is showing the way forward or building up a space which will show the way forward for the country.

The importance of these small debates cannot be undermined. Shahbag movement, which has fundamentally changed the country for better or worse is a result of this debates on online space. Wahiduzzaman Apollo is one of the catalyst of this new wave.
Government and the current political establishment are aware of this impact. The latest ICT law which has provisions of 7 years jail term without any bail was one of the tool that has been thought out by the political establishment to control this space and curtail the freedom that is enjoyed by these new generation activists.

AKM Wahiduzzaman Apollo, is the first victim of this law. A case were filed against him few weeks back and yesterday AKM Wahiduzzaman Apollo has been put behind bars for his opinion. Wahiduzzaman Apollo is an imperfect man, he is also guilty of selective judgment. But, he is done nothing wrong other than to speak his mind. He has neither preached religious hatred or nor did anything other than saying what is being said by most people-the corruption and the ill doings of the government and the evil nature of the leadership.
It is clear, the establishment which is now headed by Awami League wants to give a signal to the online community to curtail their thoughts and limit their speech and bully them to stop criticizing government. The case filed against Wahiduzzaman Appollo is designed to mime him and other vocal activists to silent them. There is no doubt in anyones mind that, when this establishment will change its leader and BNP will come to power, similar miming of voice will be carried out, as it was done before.
This makes AKM Wahiduzzaman one of the the first victims of the  new war to liberate Bangladesh. A war that is being fought to free Bangladesh from the old establishment which has captured all the power, asset, space and voice and established a narrative which does not state the real voices of people.
This is a fight between evil and the good, the establishment and not haves, the new and old, the real and fake. This is the second liberation war that Bangladesh awaits to free its people from the evil establishment that now controls everything.

We unequivocally condemn the arrest of Wahiduzzaman Apollo.

The old establishment is not aware that, their days are numbered. They are not aware that an arrest of one Wahiduzzaman will give rise to 160 million Wahiduzzaman and government cannot put them all behind bars. There is not enough seats in the jails of Bangladesh to arrest them all.
We demand, that Wahidzzaman Apollo should be freed immediately with an apology else these will snowball into something that the establishment will be totally unable to control.

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ও পুনরুত্থান প্রশ্ন

কানপুরের নানা সাহেব ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক বৃত্তিহারা হওয়ার পরপরই কোম্পানি কর্তৃক আরও বেশ কিছু অপমানের সম্মুখীন হলেন। কোম্পানি শাসনকালে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কোন সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হলে দেশীয় অকর্মণ্য রাজারা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্রিটেনে কোম্পানির কোর্ট অব ডিরেক্টরসদের সভায় আপিল করতেন।

কানপুরের অসন্তুষ্ট নানা সাহেবও তার প্রতি অবিচারের ফিরিস্তি তুলে ধরতে লন্ডনে একজন প্রতিনিধি পাঠালেন। এই প্রতিনিধি ছিলেন সুদর্শন সুপুরুষ আজিমুল্লাহ খান। এক সময়ের এই পরিচারক কঠোর পরিশ্রম করে ইংরেজি এবং ফারসি ভাষা রপ্ত করেন, নিজেকে সুশিক্ষিত করে একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন।

আজিমুল্লাহ খান লন্ডনে কিছুদিন অবস্থান করে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেই উপলব্ধি করতে পারলেন যে কোন আবেদনে-নিবেদনেই তার মনিবের কোন লাভ হবে না। তাই তিনি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

ঘটনাচক্রে তাঁর সফরকালীন সময়ে তিনি জানতে পারলেন মাল্টায় জারের রুশ সৈন্যদের কাছে ব্রিটিশ-ফরাসি যৌথ বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। এই সংবাদে আজিমুল্লাহ উৎসাহিত বোধ করলেন। তিনি সরাসরি ভারতের জাহাজে না চড়ে কনস্টান্টিপোল গেলেন। সেখান থেকে তিনি গেলেন বর্তমান ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায়, রুশ সৈন্যদের দেখতে। তিনি নিরাপদ দুরত্ব থেকে লক্ষ্য করতে লাগলেন রুশদের যুদ্ধ কৌশল, কিভাবে ব্যাটারিগুলো থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়।

কনস্টান্টিপোলে তার সাথে দেখা হয় এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের, নাম উইলিয়াম হাওয়ার্ড রাসেল। রাসেলের সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে আলাপচারিতা হয়। তাঁর সম্পর্কে রাসেল মন্তব্য করেন, ‘ক্রিমিয়াতে যা ঘটেছে আপন চোখে দেখার এত গভীর আগ্রহ দেখে কি অবাক না হয়ে পারা যায়? একজন ইউরোপবাসীর এরকম কৌতূহল থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু অসামরিক গোত্রের একজন এশিয়বাসীর এ কৌতূহল অস্বাভাবিক নয় কি?’

আজিমুল্লাহ ঘোর নাস্তিক ছিলেন, কোনপ্রকার ধর্মীয় উন্মাদনা থেকে ছিলেন শত ক্রোশ দূরে। তাঁর জ্বলজ্বল চোখে সেদিন যে আগ্রহ খেলা করছিল তা ছিল সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদজাত। তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে ব্রিটিশ বাহিনী অজেয় নয়, তাদের হারানো যায়। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিল ক্রিমিয়ায় ব্রিটিশ বাহিনীর সেই প্রাথমিক পরাজয়।

আজিমুল্লাহ খানের চোখে যেই আকাঙ্ক্ষা-উন্মাদনা সেদিন দেখা গিয়েছিল, প্রায় একই ধরণের উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল নাইন-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে বিশ্বে একটা বড় অংশের মুসলিমদের মধ্যে। অর্থোডক্স মুসলিমরা চিন্তা করতে শুরু করে সুরক্ষিত মার্কিন আকাশসীমার ভেতরে ঢুকে যদি এত ক্ষয়ক্ষতি করা সম্ভব হয়, তবে পৃথিবীর যেকোন দেশের যেকোন স্থানে আঘাত হানা সম্ভব। তাদের এই চিন্তাধারা প্রভাবিত করে তরুণ মুসলিমদেরকেও।

এই চিন্তাধারা যে সমগ্র পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছিল তার প্রমাণ পরবর্তীকালে লন্ডনের সেভেন সেভেন বোমা হামলা, ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের বোমা হামলা, মুম্বাইয়ের টুয়েন্টি সিক্স ইলেভেনসহ বহু জঙ্গি হামলার ঘটনা। একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশও পুরো পৃথিবীর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকেনি।

বাংলাদেশ এবং ভারতবর্ষে ইংরেজ রাজত্বের শুরুর দিকে ওহাবিরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুগের পর যুগ লড়াই করেছে। সে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের জয় হয়েছে, কিন্তু ওহাবিরা অন্তর থেকে এই পরাজয় মেনে নেয়নি। তাদের ব্রিটিশ বিরোধী জঙ্গি-চেতনা তারা ধারণ করে গেছে। প্রায় আড়াই লাখ ওহাবি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিভিন্ন সময়ে শহীদ হয়েছে বলে জানা যায়।

বাংলাদেশে এই ওহাবিদের সমর্থকদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। খেলাফত আন্দোলনের ব্যানারে এরা ঐক্যবদ্ধ। ওহাবিরা তাদের জঙ্গি চেতনা বিভিন্নভাবে সময়ে সময়ে কাজ করেছে, তবে এই জঙ্গিবাদী চেতনা ছিল মূলত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। ওহাবি তরিকার বহু মানুষ আশির দশকে শেষভাগে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যায়। সিআইএ-আইএসআইর দ্বারা প্রশিক্ষিত এই যোদ্ধারা অনেকে শহীদ হন, অনেকে যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত টিকে যায়।

প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের জঙ্গিরা মূলত আফগানিস্তানের সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ফেরত আসা ‘জিহাদি’ মুফতি হান্নানের নেতৃত্বে সংগঠিত হতে শুরু করে। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের সূচনা ২০০১ সালের নাইন ইলেভেনেরও আগে থেকে।

আফগান ফেরত এই জঙ্গির ছোট ভাই তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা মুন্সি আনিসুল ইসলামের নামে ১৯৯৭ সালের ৩০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনগরীর ৭ নম্বর প্লটে চার হাজার ৫০০ বর্গফুট জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এই জমিতেই তৈরি করা হয় সেই সাবান কারখানা যেখানে পাওয়া গিয়েছিল মুফতি হান্নানের বিশালাকৃতির বোমা তৈরির উপাদান ও সরঞ্জাম।

২০০০ সালের ২০ ও ২৩ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাস্থলে দুইদফা অভিযান চালিয়ে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার সাথে তৎকালীন আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহ এবং গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেন মুফতি হান্নান।

এছাড়া আফগান ফেরত জঙ্গিরা ১৯৯৯ সালে তিনটি ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটায়। এতে ১৮ জন নিহত হলেও আহত হন দুশতাধিক মানুষ। এই বছর সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে যশোরের টাউন হল ময়দানের বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সম্মেলনে। এ হামলায় ১০ জন নিহত হয় আহত হয় শতাধিক। এছাড়াও ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনার আহমেদিয়া মসজিদে বোমা হামলায় আট জন নিহত ও আহত হয় ৫০ জন।

আল্লাহর দল একটি সংগঠন কবি শামসুর রাহমানের বাসায় ঢুকে কবির উপর হামলা চালানোর চেষ্টাও চালায়।

২০০১ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫ পাঁচটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এসব বোমা হামলায় ৫৯ জনের প্রাণহানী ঘটে ।
এরমধ্যে ঢাকার পল্টনে কমউনিস্ট পার্টির সমাবেশে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ৭ জন, রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ১১ জন, গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরের গির্জায় ১০ জন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের অফিসে ২১ জন, বাগেরহাট জনসভায় ৯ জন, সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতা সুরঞ্জিত সেনের জনসভায় বোমা হামলায় চার জন নিহত হয়। আহত হয় কয়েক শতাধিক।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের এইসব বোমা হামলাগুলোতে অন্তত ৭৬ জন নিহত হন

১৯৯৯ সাল থেকেই মূলত ব্যাপক হারে জঙ্গি হামলা ও গ্রেনেডের ব্যাবহার শুরু হলেও ১৯৯৭ সালের ৩০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনগরীতে মুফতি হান্নানের ভাইয়ের জমির বরাদ্দ পাওয়া নির্দেশ করে যে, অন্তত ১৯৯৭ সাল থেকেই মুফতি হান্নান ও তার সাথীরা বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা চালানো এবং ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করে।

তৎকালীন সরকারের উদাসীনতার এবং আওয়ামী লীগের অনেক নেতার জড়িত থাকার স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি গোপালগঞ্জে মুফতি হান্নানের জমি বরাদ্দ পাওয়া, সেখানে নির্বিঘ্নে বোমা তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো, কোন জঙ্গিকে না ধরতে পারা এবং পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় মুফতি হান্নানের সেই স্বতঃপ্রনোদিত ‘জবানবন্দী’।

প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশে আরেকটি জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয় বাংলাদেশে- জামায়াত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেমবি)। এই সংগঠনটির সাথে আরব বিশ্বের জঙ্গিদের যোগাযোগ ও বিদেশী ফান্ড আনার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে এরা রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ ও সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে কাজ করলেও পরে টুইন টাওয়ার হামলা ও এর প্রেক্ষিতে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন তাদের বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম বিস্তারে উৎসাহিত করে। 

সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাইর সাথে এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ পায় ইংরেজী দৈনিক The Daily Star-এ ২০০৪ সালের ১৩ মে। সেখানে তিনি দাবি করেন তিনি স্কুল জীবনে ছাত্রলীগ করত, পরে কলেজে ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগ দেয়। ১৯৯৫ সালে শিবির ছাড়ে জামায়াতে ইসলামী নারী নেতৃত্ব মেনে নেয়ায়

জেএমজেবির আমির আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজমের দুলাভাই শায়খ আব্দুর রহমান ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সৌদি এম্বেসিতে কাজ করে বলে জানা যায়। এরপর সে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায়। এরপর আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসে। এসময় এই জঙ্গি নেতা ওহাবি মতাদর্শে প্রভাবিত হয়। শায়খ আব্দুর রহমান একসময় জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিল।

বাংলাদেশে এই দুই জঙ্গি নেতা জঙ্গিবাদের বিস্তারের ক্ষেত্রে মাও সে তুং-এর সেই বিখ্যাত উক্তি “The guerrilla must move amongst the people as a fish swims in the sea”-এর প্রয়োগ ঘটায়। মানুষের সাথে মিশে কাজ করতে তারা জামালপুর থেকে রাজশাহীর বাগমারায় আসে।

সীমান্তবর্তী রাজশাহী জেলায় প্রবল ভারতবিরোধী এবং ইসলামপন্থী মনোভাব তাদের এই কাজের জন্যে বেশ সুবিধাজনক ছিল। গঠন করা হয় জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) ।

জেএমজেবি প্রাথমিকভাবে দেশের পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তারা মূল লক্ষ্য হিসেবে প্রচার করে এইসব অঞ্চলের জেলাসমূহের অধিবাসীদের প্রধান শত্রু সর্বহারা বাহিনী। ফলে তারা ঐসব এলাকায় সাময়িক জনসমর্থন পায়।

রাজশাহীসহ ঐসব অঞ্চলের নেতারা, গোয়েন্দারা এবং সরকার জেএমজেবির ব্যাপারে উদাসীন থাকে, অনেকেই তাদের সমর্থন যোগায়। যার পেছনে কাজ করেছিলো পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টিসহ সকল বামপন্থী চারমপন্থীদের বিরুদ্ধে জেএমজেবিকে কাজে লাগানোর ইচ্ছা

সরকার ডিভাইড অ্যান্ড রুল খেলতে এসে জেএমজেবির ফাঁদে পা দেয়। জঙ্গিরা সারা দেশে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করে তোলে, এবং ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে পাঁচশতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা চালিয়ে প্রায় ৬৬ জনকে হত্যা করে জোট সরকার আমলে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের সিনেমা হল, ঝালকাঠির দুই আইনজীবী, ব্রিটিশ হাইকমিশনার, যাত্রাপালায় বোমা হামলা উল্লেখযোগ্য। এর আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার উপর হুজির সেই মুফতি হান্নানের নেতৃত্বে হামলা হয়।

উইকিলিকসের ফাঁস করা কেবলে দেখা যায় বিএনপি সরকারের শেষ ভাগে জেএমবির নেতাদের মৃত্যুদন্ডের পর এমনকি এর অর্থ যোগানের পথও বন্ধ করে দেয়ার পর ঢাকার ইউএস এম্বেসি মন্তব্য করে, "অবশেষে জেএমবির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া গেল"।

উইকিলিকসের ফাঁস করা কেবলে দেখা যায় বিএনপি সরকারের শেষ ভাগে জেএমবির নেতাদের মৃত্যুদন্ডের পর এমনকি এর অর্থ যোগানের পথও বন্ধ করে দেয়ার পর ঢাকার ইউএস এম্বেসি মন্তব্য করে, “অবশেষে জেএমবির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া গেল”।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের পর সরকার হুজি, জেএমজেবি ও জেএমবির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানে নামে। সারা পৃথিবীতেই সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ফলে জঙ্গিদের পৃথিবী ছোট হয়ে আসতে থাকে।

২০০৫ সালের ১ অক্টোবর মুফতি হান্নান, ২০০৫ সালের ২০ নভেম্বর শায়খ আব্দুর রহমানের মেয়ের জামাই ও জেএমজেবির মজলিশে শূরা সদস্য আব্দুল আউয়াল, ২০০৫ সালের ৭ ডিসেম্বর আতাউর রহমান সানি, ২০০৬ সালের ২ মার্চ শায়খ আব্দুর রহমানকে সিলেট থেকে এবং চারদিন পর বাংলাভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০০৬ সালের ২৬ এপ্রিলের মধ্যে সরকার জেএমজেবির সকল মজলিশে শুরা সদস্যসহ হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে ১৪১টি মামলা দায়ের করে, ২২জনকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়।

সরকার জঙ্গি অর্থায়নের দায়ে Revival of Islamic Heritage Society নামক এনজিওর স্থানীয় অফিস বন্ধ করে করে দেয়া হয়। সর্বোপরি জেএমজেবি, জেএমবি এবং হুজির মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া হয়; ২০০৬ সালের তিন মে তারিখে মার্কিন তারবার্তার ভাষায়- The JMB’s back really does look broken।

সফলভাবে জঙ্গিদের দমন করার পর টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন

সফলভাবে জঙ্গিদের দমন করার পর টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন

এখন প্রশ্ন হচ্ছে জঙ্গিদের উপর এত বড় ক্র্যাক ডাউনের পর কি তাদের পক্ষে পুনরায় বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম চালানো আদৌ সম্ভব কিনা?

উত্তরটা অনেক কিন্তু ও যদির সাথে যুক্ত। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যত জঙ্গি কার্যক্রমের বিস্তার দেখা গেছে তার মধ্যে প্রতিটিতেই রাজনৈতিক উদাসীনতা এবং রাজনৈতিক সহায়তা কম বেশি ছিল। কোন দলের কেন্দ্রীয় নেতারাই চাইবে না তাদের সরকারের সময় দেশ অস্থিতিশীল হোক, তবে স্থানীয় ইসলাম পছন্দ নেতারা নিজেদের জিহাদে শামিল করতে কিংবা কোন রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে জঙ্গিদের ব্যবহার করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

সম্প্রতি বগুড়ায় আওয়মী লীগ নেতার বাসায় জঙ্গিদের আস্তানা আর বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার, কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ নেতার প্রশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের নেতার অবাধ বিচরণ আর কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে ‘সর্বদলীয়’ হামলার ঘটনা তাই প্রমান করে।

রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করা গেলে আর সরকার কঠোর হলে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম ও এর বিস্তার বন্ধ করা অসম্ভব নয়। আর নাইন ইলেভেন পর থেকে সারা পৃথিবীতে জঙ্গিদের উপর যে ধরণের কড়া নজরদারি চলছে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেভাবে কাজ করছে তাতে জঙ্গিবাদের পুনরুত্থান প্রায় অসম্ভব।

তাই অহেতুক জঙ্গিবাদ নামক জুজুর ভয় দেখিয়ে এই মৃত ইস্যুটিকে মমি করার আওয়ামী প্রচেষ্টা অর্থহীন।

আলোচনা, অক্টোবর ২৫

This post is for discussing the rapidly evolving political situation