পদ্মা সেতুর ভিজিবিলিটির স্বপ্ন এবং দুর্নীতির ধারনা সূচকের বিস্তৃতি

1

 

ফয়েজ তৈয়্যব
১। চায়না মেজর ব্রিজের আর্থিক প্রস্তাব মেনে নিয়োগ দিলে (পড়ুন দেয়া হয়েছে) মূল সেতুতে তিন হাজার ৭৭২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে। ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য যে সংশোধিত প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদন করা হয়, তাতে মূল সেতুর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল আট হাজার ৩৬১ কোটি টাকা। ফলে এখন কেবল মূল সেতু নির্মাণের ব্যয়ই দাঁড়াচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা৷ তবে সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, নদী শাসন ও পরামর্শক নিয়োগ হলে মোট ব্যয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা আরও বেড়ে যাবে।
২। যদিও RDPP তে নদী শাসনের ব্যয় ধরা হয়েছিল চার হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এ কাজে ঠিকাদারদের আর্থিক প্রস্তাব জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ২৯ মে পর্যন্ত। দরপ্রস্তাব জমা পড়লেই জানা যাবে, এই খাতে ব্যয় কী পরিমাণ বাড়ছে। দুটি সংযোগ সড়কের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ২৭০ কোটি টাকা। আবদুল মোনেম লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এক হাজার ২৯০ কোটি টাকায়। একইভাবে সেতুর কাজ তদারকিতে পরামর্শক নিয়োগের জন্য ৩৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরামর্শসংক্রান্ত কাজ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীকে একাংশের পরামর্শক, নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু কাজে ২০৫ কোটি টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মূল সেতু ও নদী শাসনের জন্য আলাদা পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলছে। এ ছাড়া নদীর দুই পাড়ে ভাঙন রোধে প্রায় ২৫০ কোটি টাকায় ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
৩। একটামাত্র প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রস্তাবের ওপর ঠিকাদার নিয়োগ ঝুঁকি।
৪। শুরু হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে, এখন সেটি ঠেকছে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি৷
৫। ব্যয়ের পরিকল্পনা এখানেই শেষ নয়৷ সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেতু বিভাগ এখন একটি প্রকল্প কয়বার সংশোধন করা যাবে, সেই নীতিমালাটিও মানতে চাইছে না৷ পদ্মা সেতুকে তারা এই নীতিমালার বাইরে রাখতে চায়৷ অর্থাৎ আবারও বাড়বে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয়৷
পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, আরডিপিপি অনুমোদনের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত নির্মাণ সামগ্রী ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক পণ্যের দাম বাড়ার কারণে সেতু নির্মাণের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।“২০১০ সালে যখন প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল, তার পর থেকে সময়ের সাথে সাথে সব নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে, ডলারের দাম বেড়েছে। ফলে খরচ বাড়ছে।”
মানে হোল কাজ না পেতেই উচ্ছিষ্ট ভোগীদের দালালী শুরু হয়ে গেসে। তাই খরচ/ব্যয় বৃদ্ধির পক্ষে আমাদের প্রকল্প পরিচালকই অতি উৎসাহী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
৬।চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি পাকশীতে লালন সেতু নির্মাণ করেছিল। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীন ওই সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার। ওই প্রকল্পে চায়না মেজর ব্রিজের সহযোগী ছিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল। ৯০৭ কোটি টাকার ঐ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান এখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং মূল সেতুর দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়েছে। জনাব আবুল না থেকেও আছেন!
৭। এই মেজর ব্রিজ ই ঢাকা চট্রগ্রাম চার লেইন এর কাজ করছে ৭ গত বছর ধরে, যার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে অনেক ধাপে, তার পরেও যা রয়েছে অসম্পূর্ণ। যারা ঢাকা চট্রগ্রাম সড়ক পথে যাতায়াত করেন তারা এই দুর্নীতিবাজ কোম্পানীর অতি নিন্ম মানের আর অব্যবস্থাপনা পূর্ণ কাজের মান সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পেয়েছেন।
একই কাজ পদ্মা সেতুর বেলায়ও হতে যাচ্ছে? তাহলে স্বপ্নের পদ্মা সেতু কবে শেষ হবে?
চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সম্পর্কেঃ
চারটি চীনা প্রকৌশলভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ও একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে ২০০৪ সালে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড গঠন করে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- চায়না জঙ্গতি মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, ইউয়ান আয়রন এন্ড স্টিল গ্র“প কর্পোরেশন, চায়না রেলওয়ে টানেল গ্র“প কোম্পানি, চায়না রেলওয়ে সাঙহাইজেন ব্রিজ গ্র“প কোম্পানি লিমিটেড।কোম্পানিগুলোর প্রতিটির বিরুদ্ধেই রয়েছে দুর্নীতি সম্পৃক্ততা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতার ভয়ঙ্কর সকল অভিযোগ।এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চায়না জঙ্গতি মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। চীনের সংবাদ মাধ্যমগুলোর সূত্র মতে, দুর্নীতির অভিযোগ থেকেই রক্ষা পেতে এই কোম্পানিটির মাতৃপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক বাই জংগ্রেন চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একটি বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন।গত বছর চীনের রেলওয়ে খাতে ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে দেশটির সরকার। তদন্তের অংশ হিসেবে চীনের সাবেক রেলওয়ে মন্ত্রীর দুর্নীতি প্রকাশ পায়। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের ভয়, শ্রমিকদের বেতন বাড়ানর চাপ ও অর্থসঙ্কটের কারণে বাই জংগ্রেন আত্মহত্যা করেছিলেন। গেল কয়েক বছরে, বাই জংগ্রেনের মতো আরও কয়েক নেতাই দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে আত্মহত্যা করেছেন।পদ্মাসেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাওয়া মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হচ্ছে ইউয়ান আয়রন এন্ড স্টিল গ্র“প কর্পোরেশন। ২০১২ সালে কানাডায় চেক জালিয়াতি করে অর্থসংগ্রহের অভিযোগ উঠে ইউয়ান আয়রন এন্ড স্টিল গ্র“প কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে।পদ্মাসেতু নির্মাণে ভূমিকা পালন করবে এমন আরেকটি কোম্পানি হচ্ছে চায়না রেলওয়ে টানেল গ্র“প কোম্পানি। এই কোম্পানিটি আরেকটি চীনা কোম্পানির সাথে সম্মিলিতভাবে পোল্যান্ড-জার্মানি সংযোগ সড়ক নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল ২০০৯ সালে। তারপর পোল্যান্ডের সরকার, চীনা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন করতে না পারা ও প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ফেলার অভিযোগ তোলে। এবং পোল্যান্ডের সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
যেখানে একটি সেতুই একটি দেশের জিডিপি কে নুন্যতম ২% বাড়াবে বলে ধারনা করা হচ্ছে, সেখানেও দুর্নীতির সাথেই আমাদের সেতুবন্ধন! এ এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন, যা দুর্নীতি ব্যাপ্তির  বৈশ্বিক ধারনা সূচকের পরিবর্তন ঘটাতে পারে !
সংকলিত।

 

শ্রমিক দিবসের চেতনা এবং প্রাসঙ্গিক দৃষ্টিকোন- মুজতাহিদ বাপ্পী

1
আমাদের প্রজন্মের একটি দোষ হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর কোন প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকেই আমরা সরলভাবে বিশ্বাস করতে পারিনা । মাঝে মাঝে মনে হয় একবিংশ শতাব্দী সম্পূর্ণরুপে একটা এন্টি-ট্রাস্ট ফেইজ । আমরা এমন কোন সামাজিক বা রাজনৈতিক ব্যবস্থার অধীনে গড়ে উঠতে পারিনি যেই ব্যবস্থা বাহ্যিক উৎকর্ষের সাথে সাথে শতভাগ আত্মার প্রশান্তি এনে দেবে । এজন্যেই বিশ্বাসের ভিত্তি যেমন দুর্বল হয়েছে, মনের খুঁতখুতে স্বভাবও বেড়েছে । জেনারেশন এক্স-ওয়াই-জেড পার হয়ে আমরা এখন কোন টাইম-স্পেস ফ্রেইমে অবস্থান করছি সেটাও সুনির্দিষ্ট নয় ।যাইহোক, এরকম সন্দিহান মন নিয়ে এবারের মহান মে দিবসে কি করণীয় হতে পারে তাই ভাবছিলাম । আমাদের দেশেও দেখলাম অনেক মহল ঘটা করেই মে দিবস পালনের চেষ্টায় ব্রতী হয়েছেন । উইকিপিডিয়াতে জানতে চাইলাম মে দিবস কিভাবে পালন করতে হবে ! ওখানে বলা আছে এটা হলো উত্তর গোলার্ধের বসন্ত উৎসব । এইদিন প্যাগানদের উপাসনার জন্য বিখ্যাত । ছোটশিশুরা হোমওয়ার্ক বাদ দিয়ে সারাদিন মে-পোল নামক একটা সার্কাসের চারিদিকে ঘুরতে থাকবে, তরুণীরা কুমারী মেরী সেজে একটা ঝুড়িতে ফুল-ফল নিয়ে প্রতিবেশীদেরকে বিতরণ করতে থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা সমুদ্রসৈকতে মাইলটেস্ট দিতে থাকবে, কিছু অনুষ্ঠানসর্বস্ব সুবিধাভোগীর দল মরিস ড্যান্সিং নামে রাস্তায় রাস্তায় একটা প্যাগান রিচুয়েল পালন করতে থাকবে । মে দিবসের এহেন কর্মকান্ড দেখে আমি অবাক হয়ে এনসাইক্লোপিডিয়া খুলে বসলাম ।
হায় হায়, এরাও বলতেসে মে দিবস মোটামুটি চৌদ্দ-পনেরটা উৎসবের সম্মিলিত দিন ! এ কি অবস্থা ! আমরা সারাজীবন মুখস্ত করে এলাম এটা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, শ্রমিকেরা আন্তর্জাতিক কর্মঘন্টার স্বীকৃতি আদায়ে রক্ত দিয়েছে, ঘর্ম দিয়েছে, চর্ম দিয়েছে, আরো কতো কি ! সেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনেই মে দিবসের এমন ভিন্ন রুপ ! পরে বৃহত্তর কিউরিওসিটি নিয়া গুগলিং করে করে যা বুঝলাম তা হইলো পুরা মে দিবস জিনিসটা অন্যান্য আন্তর্জাতিক দিবসের মতোই নিছক একটা দাবার চাল ছাড়া আর কিছুই নয় । এই দিনে কোন শ্রমিক নিহত হয়নি । এই দিনে কোন মালিক উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মালিকানা হারায়নি । এই দিনে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান দুর্ঘটনায় ধ্বসে পড়তেও দেখা যায়নি । শুধুই একটা অন্ধ প্রচলনের কক্ষপথে পুরা পৃথিবী যেনো আবর্তন করে যাচ্ছে ।মে দিবসের নামে যে ঘটনাটি প্রচার করা হয় তার সাথে ভ্যালেন্টাইন দিবসের কাহিনীর মিল আছে । কারণ দুইটির একটিও কোন নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত নয় । আবার শিকাগো শহরের হে-মার্কেট রায়ট নামে যে ঘটনার বর্ণনা আমাদের কাস্তে-কোদাল চিণ্হিত লালমহলে জোরেশোরে আলোচিত হয় সেটিও ঘটেছিলো ১৮৮৬ সালের ৪ মে, পহেলা মে-তে নয় । শ্রমিকদের একটি র‌্যালি থেকে নিক্ষিপ্ত বোমা বিস্ফোরিত হয়ে সাতজন পুলিশ সদস্য নিহত হয় । তারপর পুলিশের গুলিতে চারজন শ্রমিক নিহত হয় । তাতে একটি সাময়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে বিচারের মাধ্যমে বেশ কয়েকজনকে ফাঁসিতে মৃত্যদন্ড দেওয়া হয় । ব্যস্ এই হলো ঘটনা । যেটা আমাদের দেশে ছাড়াও পৃথিবীর বহু দেশে এখন নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র । কিন্তু সেই ঘটনাকে টেনে নিয়ে ঘুটি চালাচালি শুরু করলো রাজনৈতিক তৃতীয় পক্ষ । ১৮৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের শতবর্ষ পালন উপলক্ষ্যে “সোশালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল” নামে একটি বামপন্থী রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম শুরু হয় প্যারিসে । রুশ বিপ্লবের নায়ক লেনিন ছিলেন এই সংগঠনের কর্মী । অল্প সময়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়ার উপায় হিসেবে তারা শিকাগোর ঘটনা এবং পূর্বের শতাব্দিতে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লবকে সামনে নিয়ে আসে । এইভাবে তারা ঘোষণা দেয় মে মাসের এক তারিখ হবে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, যদিও তারা নিজেরা এমন ঘোষণা দেয়ার কতটুকু সক্ষমতা বা গ্রহণযোগ্যতা রাখে সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ । তারাই আবার ১৯১০ সালে ঘোষণা দেয় মার্চ মাসের ৮ তারিখ হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ! নিছক রাজনীতি ছাড়া একটির পর একটি দিবস ঘোষণা করা কোন দলের কাজ নয় এটা বোঝার ক্ষমতা আধুনিক বিশ্বে মোটামুটি সবাই রাখেন ! আর সত্যিই যদি শ্রমিকদের কোন স্বার্থে এই দিবস ঘোষণা করা হতো, তবে একই সংগঠন প্রলেতারিয়েত রাজনীতিতে অংশ নেবে কেন ? যাইহোক দিবসনির্ভর রাজনীতি চালিয়ে বেশিদূর যেতে পারলোনা দলটি । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা খেয়ে তারা নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো ১৯১৬ সালের মধ্যে । কিন্তু তাদের ফেলে যাওয়া দিবস দুখানি (মে দিবস এবং নারী দিবস) এখনো পৃথিবীর আনাচে কানাচে অসহায় মানুষের জন্য মিথ্যে আশা কুহকিনী হয়েই বেঁচে রইলো যেনো ।কারণ যতোটুকু শ্রমিকদের স্বার্থে ব্যবহার হবার কথা ছিলো, মে দিবস তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি ব্যবহৃত হয়েছে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া তৃতীয় সুবিধাবাদী গোষ্ঠির দাবার চাল হিসেবে ।এবার দেখে নেয়া যাক রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে মে দিবসের ভূমিকা কেমন ছিলো । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মে দিবস পালনের নামে নৈরাজ্যবাদী গোষ্ঠি সবসময় রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টায় সক্রিয় ছিলো । বিশেষ করে ১৯৩০ সালের দিকে গ্রেট ডিপ্রেশনকে কাজে লাগিয়ে তারা দিবসটি পালন করতো এবং নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, সিয়াটল প্রভৃতি স্থানে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করতো । অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকার মে দিবসের বদলে শ্রমিক দিবস অন্য দিনে নির্ধারণ করায় এই প্রচেষ্টা কখনো সফলতা পায়নি । যুক্তরাষ্ট্রে এখনো শ্রমিক দিবস পালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার । এমনকি কানাডাতেও শ্রমিক দিবস সেপ্টেম্বরে পালিত হয় । এছাড়া অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট জাতীয় আন্দোলনগুলো সবসময় মে দিবসের সংবেদনশীলতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে । জার্মানীতে মে দিবসকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা বাঁধানোর ইতিহাস প্রায় পঁচিশ বছরের । এমনকি ২০১০ সালেও বামপন্থী শিবিরের প্ররোচনায় বার্লিনে দাঙ্গা হয়েছে মে দিবসে । রাশিয়াতে মে দিবস মানেই বলশেভিক বনাম মেনশেভিক দ্বন্দ্ব । ২০১৪ সালের মে দিবসে সম্ভবত পুতিনের বিরুদ্ধে নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্যে রেড স্কোয়ারে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়ান ফেডারেল ট্রেড ইউনিয়ন । মুসলিম বিশ্বের মধ্যে তুরস্কে ১৯৭৭ সালে তাকসিম স্কয়ারে কম্যুনিস্টরা মে দিবস পালনের নামে যে দাঙ্গা শুরু করে তা শেষ পর্যন্ত ১৯৮০ সালের সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেষ হয় । বর্তমানে এরদোগান সরকার তাকসিম স্কয়ারে সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করার পূর্ব পর্যন্ত নৈরাজ্যবাদী গোষ্ঠি মে দিবসের প্রতি মানুষের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে বারবার সরকার পতনের চেষ্টা চালিয়েছে দিনটিকে উপলক্ষ্য বানিয়ে ।

 

সম্ভবত এসব দাঙ্গা-নৈরাজ্যের কথা মাথায় রেখেই ইরান, জাপান, কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি রাষ্ট্র মে দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করেছে । দোষ কিন্তু মে দিবসের নয় । বরং সুবিধাভোগী বিশেষ বিশেষ গং দের ট্রেড ইউনিয়নের আড়ালে দেশের শিল্প-বাণিজ্যকে রাজনৈতিক কূটচালের উপকরন হিসেবে ব্যবহার করাই মূল সমস্যা । যদি কোন সত্যিকার দেশপ্রেমিক সরকার ক্ষমতায় আসে, তবে চক্রান্তকারীদের প্রথম আক্রমণের জায়গা হয় দেশের অর্থনীতি । আর এসময় শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার নাম করে কতিপয় ট্রেড ইউনিয়ন নামের মুখোশধারী দাঙ্গাবাজ পলিটিক্যাল থাগ দের খেলা শুরু হয় । অতএব দেশরক্ষার ভবিষ্যৎ ক্যালকুলেশনে শুধু সামাজিক ইস্যু ভ্যালেন্টাইন ডে-পহেলা বৈশাখের অশ্লীলতা নিয়ে ভাবলেই চলবেনা, রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে শ্রমিক দিবসের নামে শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা এবং রাজনৈতিক স্বার্থে শ্রমিকদের ব্যবহার নিয়েও বোধহয় নতুন করে ভাবা দরকার ।

 

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন হিসেবে শ্রমিক সংঘের নাম আছে । অথচ শ্রমিকদের সত্যিকার বেতন-ভাতা নির্ধারণ, কাজের সুন্দর পরিবেশ তৈরি, সামাজিক সম্মান বা কোন দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষতি হলে সঠিক ক্ষতিপূরণের জন্যে কেউই তেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বলে জানা নেই । নির্যাতনকারী মালিকপক্ষকে ভাসা ভাসা তিরস্কার, বুঝেও না বোঝার ভান, মৃদু ভৎসর্নার নীতি গ্রহণ, অর্থনীতির সঞ্চারপথে খুব একটা সুখকর ভবিষ্যৎ বয়ে আনেনা ।

 

অতএব- কেবল দিবসে দিবসে চেতনার বুদবুদ গ্রহণের পূর্বে একটু সতর্ক হবার সময় এসেছে বলেই মনে করি । আমরা চাই বছরের প্রতিটি দিন যেনো শ্রমিকেরা তাদের প্রাপ্য মর্যাদা এবং আর্থিক স্বচ্ছলতা নিয়ে কাটাতে পারেন সেই পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হোক । শ্রমিকদের জন্য দুর্ঘটনা-ভাতার ব্যবস্থা করা হোক । তাদের সন্তানদেরকে যেনো লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়ে শিশুশ্রমিক হিসেবে অল্পবয়সে জীবিকার সন্ধানে বের হতে না হয় সেই রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তা বিধান করা হোক । হয়তো তাহলেই সত্যিকার শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত হবে । নিছক দিবসের আড়ালে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বন্ধ হবে । শ্রমিক দিবস তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে । সেদিন হয়তো “দুনিয়ার কুলি-মজুর এক হও লড়াই করো” শ্লোগানের বিপরীতে নতুন শ্লোগান হবে “মোরা সভ্যতার কারিগর- স্বদেশ করবো স্বনির্ভর” ।

 

সোনার বাংলা

by  কালের সিপাহি

কয়েকদিন আগেই কুয়ালালামপুর থেকে দেশে ফিরছিলাম। সঙ্গী হিসেবে আমার স্ত্রী। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে আরাম করে কিন্তু ভয়ে ভয়ে বসেছি মাত্র। পাশে চোখ গেল। দু’জন খুবই সাদাসিদা রকমের মানুষ। তাঁদের একজন অনেক বয়ষ্ক, পাজামা-পাঞ্চাবী পরা। মনে হচ্ছে, ঠিক মত নিজের পাজামাও বাঁধতে পারেনা। আরেকজনের বয়স ৪৫-এর আশেপাশে হবে। দু’জন অতি পরিচিতের মত কথা বলছেন। কিছুক্ষন পরে দেখলাম, বৃদ্ধ মানুষটির কোলে ছোট ছোট অনেক স্বর্নের গহনা! এত গহনা স্বর্নের দোকান ছাড়া আমি আর কোথাও দেখিনি। এত স্বর্ন দেখে আমি-আমার স্ত্রী দু’জনই তাজ্জব বনে গেলাম।

দুইজনই খুব আরামসে গহনা খুলে দেখে দেখে আমার প্যাকেটে নিয়ে জায়গামত রাখছেন। কম বয়ষ্কজন রাখছেন না, বরং কেমন ধরনের একটা প্যাকেটে করে বৃদ্ধ মানুষটার পাজামার ভিতরে নিরাপদে রাখলেন। বুঝলাম, বৃদ্ধ মানুষটাকে হয়তো আনাই হয়েছে এই কাজ করানোর জন্য। ঘটনাটা হয়তো অনেকের কাছেই খুব ছোট্ট মনে হবে, কিন্তু সেই মুহুর্তে সেই দুইজন মানুষ পোশাকআশাক এবং স্বর্নের পরিমান দেখে আমি এবং আমার স্ত্রী একদম বোকা বনে গিয়েছিলাম।

গত কয়েকমাস ধরেই সংবাদে দেখছি, এখানে সেখানে স্বর্ন চোরাচালানী ধরা হচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, গত ৩-৪ মাসে কম পক্ষে ৭০০-৮০০ কেজি স্বর্ন ধরা পড়ার নিউজ পড়েছি। বিশেষ করে, ঢাকা বিমানবন্দরে। তারপর দেখি, এখন রাস্তাঘাটেও স্বর্ন চোরাচালান ধরা খাচ্ছে। বিশেষ করে, যখন থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেশি রকমের বেড়ে গিয়েছিল, তখন থেকে এটা শুরু হয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, দেশের স্বর্ন ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে টুকটাক স্বর্ন চোরাচালানী করছে। কিন্তু দিনদিন এর পরিমান বাড়তেই থাকাতে অন্য কারন নিয়ে চিন্তা না করে পারা যায়নি। যে আইন-শৃংখলা বাহিনী এই চোরাচালানী রোধ করবে, এখন তারাই কিনা স্বর্ন নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করেছে।

প্রশ্ন হল, হঠাৎ করে দেশে এই স্বর্ন বর্ষনের কারন কি?

তাহলে কি দেশে কোন কারনে স্বর্নের চাহিদা বেড়ে গেছে? মানুষের আয় কি খুব বেড়ে গেছে, যে কারনে মানুষ স্বর্ন মজুদের দিকে ঝুঁকছে? তাতো হওয়ার কথা না। অর্থনীতির অবস্থাতো অনেক দিন ধরেই তথৈবচ।

তাহলে কি মানুষ ব্যাংক ব্যবস্থার বাজে হাল দেখে সঞ্চয় কিংবা বিনিয়োগের আর কোন নিরাপদ মাধ্যম না পেয়ে স্বর্ন জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে? তা কি করে হয়? দেশে যে হারে ডাকাতি-রাহাজানি হচ্ছে, নিরাপদে স্বর্ন রক্ষিত করা যাবে, তার তো কোন নিশ্চয়তা নাই।

তাহলে কি ভবিষ্যতে স্বর্ন দাম বাড়তে পারে, এমন কোন খবর আছে, যে কারনে মানুষ এখন স্বর্ন কিনে রাখছে? না, দেশে বা বিদেশের গনমাধ্যমে সেরকম তো কোন খবর নেই।

কে যেন কিছুদিন আগে একটা নিউজ জানালো। ভারতের সরকার নাকি স্বর্নের উপর ট্যারিফ বাড়িয়েছে। আমি নিজেও পরে খোঁজ নিলাম। খোঁজ নিয়ে যা জানা গেল, তা অনেকটা এরকমঃ পেট্রোলিয়ামের পর স্বর্ন হচ্ছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানী পন্য। অর্থাৎ স্বর্ন আমদানীর জন্য ভারতকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডলার খরচ করতে হয়। আমরা অনেকেই হয়তো জানি, কিছুদিন থেকেই ভারতকে চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার কারনে বেশ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। তাই চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে ভারত সরকার স্বর্ন আমদানী নিরুৎসাহিত করতে স্বর্ন আমদানীর উপর ট্যারিফ বসাচ্ছে। দয়া করে নিচের লিঙ্কগুলো পড়বেন, তাহলে পরিষ্কার হওয়া যাবে।
(http://timesofindia.indiatimes.com/business/india-business/Govt-raises-golds-import-tariff-value/articleshow/32130381.cms)
(http://online.wsj.com/news/articles/SB10001424127887324665604579080961422779936)
(http://www.bloomberg.com/news/2014-03-27/gold-shipments-into-india-seen-rebounding-by-billionaire-jeweler.html)

প্রশ্ন হলঃ ভারতের স্বর্ন আমদানীর উপর ট্যারিফ বাড়ানোর সঙ্গে আমাদের স্বর্ন চোরাচালানীর কি সম্পর্ক?

বৈশ্বিক স্বর্নের অন্যতম প্রধান বাজারগুলোর মধ্যে দুবাই, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক এবং কুয়ালালামপুর। আবার, ভারত হচ্ছে স্বর্ন সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ভারতে সরকার যেমন স্বর্ন ক্রয় করে, তেমনি বেসরকারী পর্যায়েও অন্য যেকোন দেশের তুলনায় বেশী হারে স্বর্ন ক্রয় হয়ে থাকে।

ঢাকা ট্রিবিউনের নিচের লেখা থেকে এটা পরিষ্কার যে, দেশে জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৩ তে যে পরিমান চোরাচালানীর চালান ধরা হয়েছে, তার ৮৬% ছিল স্বর্নের। মূল্যের হিসেবে গননা করলে পরিস্থিতি আরো খারাপ। দেখা যায়, একই সময়ে যে পরিমান চোরাচালানী পন্য ধরা হয়েছে, তার ৯৫% হচ্ছে স্বর্ন চোরাচালানী। হিসেবে দেখা যায়, ২০১৩ সালে শেষের ছয় মাসে সে পরিমান স্বর্ন ধরা হয়েছে, তার মূল্য ২৫১ কোটি টাকার মত। ঢাকা ট্রিবিউনের লেখা থেকে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খবর যেটা পাওয়া যায়, তা হলঃ যে পরিমান স্বর্ন চোরাচালান হয়, তার মাত্র ১-২% ধরা যায়, বাকিরা যেকোন ভাবেই পার পেয়ে যায়! এই হিসেব থেকে বলা যায়, ২০১৩ সালে শেষের ছয় মাসে প্রায় ১২,৫০০ কোটি থেকে ২৫,০০০ কোটি টাকার স্বর্ন চোরাচালান হয়েছে! আপনি কি একটু ভাবতে পারেন?
http://www.dhakatribune.com/crime/2014/apr/02/smuggled-gold-accounts-86-all-contraband

কিছু মৌলিক প্রশ্ন এখান থেকে করা যায়। এক, ভারতের স্বর্নকারবারীরা বাংলাদেশকে কতটা নিরাপদ মনে করলে এই বিশাল পরিমান স্বর্ন চোরাচালান করার জন্য বাংলাদেশকে সবচেয়ে নিরাপদ রূট মনে করে। আমরা কি মনে করব, এরা কোন ধরনের সরকারী আশ্বাস ছাড়াই এত বড় একটা ঝুঁকি নিচ্ছে? এটাতো কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না।

দুই, কি ধরনের শিথিল ইমিগ্রেশন নিয়ম থাকলে আন্তর্জাতিক চোরাচালানীরা এই ধরনের কাজে উৎসাহী হতে পারে? এই বিশাল পরিমানের চোরাচালান বাংলাদেশের বিমানবন্দর দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে আসে, তেমনি দেশের ভূমি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হয়। তার মানে কত বিশাল পরিমান এবং শক্তিশালী চক্র এর সঙ্গে জড়িত থাকলে এমন একটা কাজ করা সম্ভব। আমরা কি মনে করব, কোন রকম সরকারী সাহায্য ছাড়াই এরা নির্বিঘ্নে এমন একটা কাজ করতে পারছে?

ভারতের স্বর্ন ব্যবসায়ী এবং চোরাচালানীদের কাছে আমার একটা সরল প্রশ্নঃ কেন ভাই নিজেদের ঝামেলা আমাদের ঘাড়ে এসে ফেলেন? ভারতের জন্য বাংলাদেশের মানুষ আর কত ত্যাগ স্বীকার করবে? ভারতকে বৈধ পন্যের যাতায়াতের জন্য আমরা আমাদের ভুমি উন্মুক্ত করে দিয়েছি, এখন আবার অবৈধ পন্যের জন্যও তাই করতে হচ্ছে? বাংলাদেশ যেখানে একটা শক্তিশালী অর্থনীতির দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেখানে দেশকে চোরাচালানীর এক স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলছি? কারা এটা করছে, এবং কাদের স্বার্থে এসব হচ্ছে? 

বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়দের (বা অন্য বিদেশীদের) ওয়ার্ক পারমিট, আয়কর ও শুল্ক ফাঁকি, আয়কর ফাঁকি রোধের কিছু উপায়।

2

by Faiz Taiyeb

প্রতিবেশী দেশ এর সাথে বাণিজ্য করে শক্তিশালী দেশ একটু বেশি সুবিধা পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে এই সম্পর্ক এতটা একপেশে হবে কেনো? আপনি জানেন কি কত জন বাংলাদেশী ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন থেকে ওয়ার্ক পারমিট পাচ্ছেন? ঢাকা থেকে তারা ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করে কি আদৌ?

 

আমরা ২ বন্ধু ২০০৯ এর শেষ দিকে (টেলিকম এর বিশ্ব মন্দায়) এরিকসন ভারতে 3G কন্সাল্ট্যান্ট হিসেবে কন্ট্রাক্ট জব পাই। আমার বন্ধুটি কে মাস ২ ঘুরিয়ে বলে দিয়েছে ঢাকা থেকে তারা ওয়ার্ক পারমিট দেয় না। অন্য একটা দেশে জব পেয়ে যাওয়ায় পরে আমাকে আর ভিসা অ্যাপ্লাই করতে হয়নি। গুগল ইন্ডিয়া তে জব পেয়ে আরেক বন্ধু প্রতিম আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বাংলাদেশী প্রোগ্রামার কেও এভাবে হেরাসড হতে হয়েছে।

 

কন্সাল্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে হলেও ওয়ার্ক পারমিট থাকা চাই। আমরা নিজেরা ওয়ার্ক পারমিট নিয়েই বিভিন্ন দেশে সুনামের সাথে কাজ করছি। বাংলাদেশ থেকে ভারতের অভ্যন্তরে শুধুমাত্র বৈধ ভাবে রেমিটেন্ন্স পাঠানো ৫ লক্ষ সেমি টেকনিসিয়ান শ্রমিক এর কত জনের বাংলাদেশী ওয়ার্ক পারমিট আছে? গার্মেন্টস, এপোলো হসপিট্যাল, এরিক্সন বাংলাদেশ, ইউনিলিভার, রেকিট, এয়ারটেল, আরিভা, কোকাকোলা সহ শত শত কম্পানী তে এরা যে ওয়ার্কপারমিট ছাড়াই কাজ করে। একদিকে তারা ওয়ার্ক পারমিট না নিয়ে চুরি করে কাজ করে, অন্যদিকে শুল্ক না দিয়েই আবাধে বিভিন্ন পন্য নিয়ে আসছে। (আমাদের ইমিগ্রেশন ও শুল্ক আধিদপ্তর তাদের মহান সেবায় নিয়োজিত)।

 

আমরা চাই সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয় গুলোতে একটু মনযোগী হোক, ভারতীয়রা এই দেশে কাজ করলে আইনগত বা কাঠামোগত কনো সমস্যা নাই। যদিও এটা লজ্জার যে মেধায় তারা এগিয়ে না থাকলেও তাদের কে আমাদের পদ ছেড়ে দিতে হচ্ছে, এখানে এসে তারা রকেট সাইঞ্চ ডেভেলপ করছে না, বরং নিন্ম মানের ভারতীয় টেকনো শ্রমিকরাই এখানে আসছে, উল্টো এরা আমাদের গার্মেন্টস উৎকর্ষ চুরি করছে আর নিজ দেশে ইপিজেড প্রসেস গুলো করে কপি করে আমাদের আর এম জি কাস্টোমার ও অর্ডার সরিয়ে নিচ্ছে। আমরা চাই এই ভারতীয় সেমি টেকনিশিয়ান রা বৈধভাবে কাজ করুক, বাংলাদেশকে প্রাপ্য আয়কর দিক। এভাবে দেশ কোটি কোটি টাকার আয়কর ও শুল্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

আপরদিকে ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন বাংলাদেশীদের ওয়ার্ক পারমিট দিচ্ছে না সেটা নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আল্টিমেটাম ভিত্তিক আলোচনা হওয়া দরকার। ভারত যদি আমাদের ওয়ার্ক ভিসা দেয়া শুরু করে তাহলে ভালো, যদি না দেয় অবৈধ ভারতীয়দের সোজা বের করে না দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আয়কর ও শুল্ক ফাঁকি সম্পর্কিত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এটাই সঠিক সময়, তারা আমেরিকার সাথে একই ইস্যু নিয়ে বিবাদে আছে। তাদের মুখোশ টাও উন্মোচন করা দরকার আইনগত দিক থেকে, কৈশলী হয়ে। যতই মোড়লগিরি করুক না কেন আয়কর ও শুল্ক বিষয়ক ব্যাপার নিয়ে বেশি দূর আগাতে পারবে না, আয়কর ও শুল্ক ফাঁকি দেবার বিষয় গুলো আন্তর্জাতিক মহলে অত্যন্ত নিচু মানের, যার পর নাই গর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চরম অসৎ দিক।

 

অবৈধ ভাবে কাজ করা বিদেশীদের বিরুধে কিভাবে আইনগত ব্যবস্থার প্রস্তুতি নেয়া যায় সেই দিকে একটু আলোকপাত করব ।

 

১ প্রথমেই পর্যাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। এটা অনেক ধৈর্য ইন্টারফেস তৈরি এবং সময়ের ব্যপার। ভিআইপি ও ভিভিআইপি কর্পোরেট কোম্পানী গুলোর মধ্যে যারা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া উচ্চ বা মধ্য মানেজমেন্ট লেভেল এ রিসোর্স আনে তাদের আগে আইডেন্টিফাই করতে হবে। এই ধরনের অরগানাইজেশন এর শর্ট টার্ম (এক্সপার্ট, কন্সাল্ট্যান্ট) এই ধরনের ফ্লটিং এক্সপার্ট দের আগে ধরতে হবে।

 

২ এই কোম্পানী গুলোর এইচ আর কে অতন্ত্য মডেস্ট ভাবে চিঠি দিয়ে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া লোক না আনতে বারন করতে হবে। এতসম্পরকিত দেশের আইন গুলো সংক্ষেপে উল্লেখ পূর্বক দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার অনুরোধ করতে হবে। আয়কর আর শুল্ক ফাঁকির ব্যপার গুলোতে স্থানীয় আইন মানার এবং সততার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করার আহবান জানাতে হবে। আগেই বলে রাখছি যে কোম্পানীকে চিঠি দেয়া হবে তার পুরবেই সেই কোম্পানীর পর্যাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। তারা কোন কোন উপায়ে হিউম্যান রিসোর্স নিয়ে আসে, তার পুরো ট্রেন্ড এনালাইসিস শেষ করেই চিঠি দেয়ার কাজ করতে হবে। এই কাজে ইন্টেলিজেঞ্চ ইঊনিট দের কে সতর্ক ভাবে ব্যবহার করতে হবে।

 

৩ যে কোন শর্ট টার্ম কিংবা লং টার্ম রিসোর্স কে লোকাল পেমেন্ট এর আওতায় আনা বাধ্যতা মুলক করতে হবে।

 

৪ ব্যাংক গুলোকে (দেশে অপারেট করা বিদেশী ব্যাংক সহ) এই ধরনের কোম্পানীর শর্ট টার্ম কিংবা লং টার্ম রিসোর্স দের (এক্সপার্ট, কন্সাল্ট্যান্ট) হেসেল ফ্রি (ওয়ান স্টপ) সেবা দেবার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে। এই ধরনের ব্যাংক একাউন্ট খোলার পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ করতে হবে। ব্যাংক কোনো ভাবেই যাতে পুলিশি বা ইমিগ্রশন পারপাস সারভ করার মোটিভ না দেখায় সেটা তাদের কাজ কর্মে নিশ্চিত করতে হবে, অর্থাৎ কোলেটারল ডকুমেন্ট যত সম্ভভ কম চাইতে হবে। (একগাদা কাগজ পত্র চাবার ব্যাপারে আমাদের বাংক গুলোর ব্যাপক সুনাম আছে, সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক এর নির্দেশনায় তাদের করতে হয়, তারপর ও আয়কর ফাঁকি বাজ দের নিরধারন করা যায় না) এই ধরনের ব্যাপার গুলো বাদ দিতে হবে।

 

৫ যাবতীয় পেমেন্ট অবশ্যই লোকাল কারেন্সি বা টাকায় হতে হবে।

 

৬ উৎস মূলে আয়কর কাটতে হবে। অর্থাৎ মাসিক বেতন-ভাতা বাংক হিসেবে শুধু মাত্র আয়কর দেয়ার পরেই রিফ্লেক্টেড হবে।

 

৭ বিদেশী থার্ড পার্টি এম্পয়ার এর মাধ্যমে লোক এনে বাইরে থেকে ফরেন কারেঞ্চি তে পে করার যাবতীয় পথ বন্ধ করতে হবে। এটাই সবচেয়ে কমন পথ। লোকাল থার্ড পার্টি “এইচ আর” ফার্ম প্রমোট করতে হবে, তাদের সাথে আয়কর বিভাগ কে লঙ্ক করতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংক এ সবাই কে সাদর সংবর্ধনা দেয়া হবে, যে কনো ধরনের একাঊন্ট খোলা বা বাঙ্কিং ট্রানজেকশন করার অনুমুতি দিয়ে একটা পরোক্ষ ইন্টারফেইস গড়ে তুলতে হবে। যার একদিকে থাকবে ব্যাংক <-> থার্ড পার্টি “এইচ আর” ফার্ম অন্যদিকে থাকবে থার্ড পার্টি “এইচ আর” ফার্ম <> আয়কর বিভাগ।

 

এখানে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন, সাধারণত স্থায়ী বা লং টার্ম রিসোর্স কম্পানীর পে রোল এ আসে, তারা আয়কর দেয়। এই ধরনের এমপ্লয়ি মাল্টি নেশন কোম্পানী তে কম হয়, কারন এদের বেতন, বিভিন্ন অবকাশ ভাতা, হেলথ, বাচ্ছার স্কুল, লোকাল এক্সপেঞ্চ, লিগ্যাল প্রটেক্ট, কষ্ট অফ ওয়ারকিং ইন লো প্রফাইল কান্ট্রি ইত্যাদি ইত্যাদি দিতে অনেক অনেক খরছ। সুতরাং এই ধরনের এমপ্ল্যিদের পিছনে সময় ব্যয় করা যাবে না। বরং শর্ট টার্ম রিসোর্স বা রিসোর্স অন ফরেন আসাইন্মেন্ট এর লোকদের ধরতে হবে।

 

৮ এই পর্যায়ে এসে আবারো অবজারভ করতে হবে, রেপুটেড কোম্পানী গুলো অনেকটা লাইনে চলে আসবে। কেউ না আসলে তাদের জন্য একটা বম্ব রেডি করতে হবে। তাদেরকে দ্বিতীয় দফা চিঠি দিয়ে জানাতে হবে, এই ধরনের অপরাধের পর্যাপ্ত তথ্য প্রমান আয়কর বিভাগ এর হেফাজতে আছে।

 

৯ চূড়ান্ত পর্যায়ে এদের কে জানাতে হবে যে, আয়কর বিভাগ ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াতে কোম্পানীর আয়কর ফাঁকির ব্যাপার ফ্ল্যাশ করে, আর্থিক জরিমানা করবে। বিশেষ ভাবে ওই কম্পানী যে যে স্টক এ এনলিস্টেড সেখানে নিউজ পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হচ্ছে, এই মর্মে হুঁশিয়ারি দিতে হবে। এটা ক্লিয়ার করে দিতে হবে যে সরকার তাদের অবৈধ কার্যক্রমের লাগাম টেনে ধরবে তার শেয়ার রেপুটেশন কে নস্ট করার মাধ্যমে।

 

১০ কোন ভাবেই এই সময়ের মধ্যে ফরেন এম্পয়ারদে অযথা হয়রানি করতে দেয়া যাবে না। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিটাকে জেন্টেল ম্যান শো হিসেবে পরিচালনা করতে হবে। উপরোক্ত ধাপ গুলোতে মাল্টি নেশন গুলোতে অবৈধ রিসোর্স কমে আসবে। এতেই আসল কাজ হয়ে যাবে, মানে এরাই কিছুটা উচ্চ বেতন এ লোক আনে, এই বেতনের ১৫-২০% আয়কর হিসেবে দেশের রাজস্ব ভান্ডারে জমা হলেই প্রধান টার্গেট অরজন হবে।

 

মনে রাখতে হবে, এখানে ইনভেস্ট করতে হবে, প্রয়োজন হলে দেশী বিদেশী অডিট এক্সপার্ট ও কাজে লাগাতে হবে। প্রায় ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকার ১৫% বা ২০% যখন প্রাপ্য আয়কর চুরি হচ্ছে তখন এটা অনেক সিন্সিয়ারলি নিতে হবে।

 

১১ কিন্তু মধ্য পর্যায়ের অনেক কোম্পানী যারা ছ্যাছড়া টাইপের তাদের বেলায় এইসব কাজে আসবে কম, কারন তাদের অনেকেই রেপুটেশন নিয়ে ভাবে না। মিড্যাতে নিউজ আসলে তাদের শেয়ার প্রাইস ফল করার কিছু নাই। এই সমস্ত কম্পানীর বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট একশন এ যেতে হবে, মানে বাংলাদেশী এইচ আর ম্যানেজার, সি ই ও , পরিচালক এদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে হবে। এখানে খেয়াল রাখতে হবে, কোন ভাবেই কোম্পানী বন্ধ বা অফিস সিল গালা, বিদেশীদের ধরা, হয়রানি করা এইসব করা যাবে না, এতে বৈদেশিক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

 

১২ আয়কর কে যেমন উৎস মূলে আদায় করতে হবে (দেশী বিদেশী সবার জন্য), রিটার্ন জমাদান কে ঝামেলা মুক্ত করতে হবে, সহজে অনলাইনে সেবা দানের মানসিকতা আনতে হবে। অপ্রয়োজনীয় পেপার ওয়ার্ক কে কোন ভাবেই এঙ্কারেজ করা যাবে না।

 

১৩ সর্বোপরি আয়কর দাতার অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে, তাকে সঠিক সময়ে তথ্য জানার অধিকার দিতে হবে। অধিক হারে কর্তিত অর্থ সহজে ফেরত দিতে হবে। তাকে সমান্নিত করতে এই দেশের ও তার নিজ দেশের সামাজিক উৎসব গুলোতে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে হবে।

 

১৪ হুন্ডি চক্র গুলোকে নিয়ন্ত্রনে স্থলবন্দর গুলোতে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর ভিতরের ক্রিমিনাল দের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নিতে হবে।

 

১৫ সবশেষে আসবে আমাদের পররাষ্ট্র মিশন গুলোতে বার্তা পাঠানো। অতন্ত্য ভদ্রতার সাথে এটা সম্পাদন করতে হবে। পর পর আপ্লাই করা  ভিজিট ভিসা কে কঠিন না করে সহজ করতে হবে কিন্তু ফি ব্যাপক বাড়াতে হবে, এই লোক গুলোকে নজরদারিতে আনার জন্য দূতাবাস গুলো আয়কর বিভাগ কে সরাসরি জানাবে। এটা প্রথম ভিজিটর দের বেলায় করা যাবে না।

 

১৬ ওয়ার্ক পারমিট অতি দীর্ঘ মেয়াদে দেয়া যাবে না। এটাও করতে হবে আর্থিক হিসেব সামনে নিয়ে, সল্প সময়ের ভিসা পারমিট দিয়ে বেশি ফি (আবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের বাইরে নায়) আদায় করতে হবে।

 

সামগ্রিক পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে রাষ্ট্রের আর্থিক  ক্ষতি কে পুষিয়ে তোলার নিমিত্তে, এখানে রাজনীতি, মেঠো ভারতবিরোধী ব্যাপার স্যাপার কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। যাবতীয় কাজকর্ম ভদ্রতার লেবাসে, সেবা সুলভ ভঙ্গিতে সম্পাদন করতে হবে।

 

১৭ বাংলাদেশ বিবিয়োগ বোর্ড সাধারণত ওয়ার্ক পারমিট এর সিদ্ধান্ত নেয়। সমস্যা হলো এরা আবেদন গুলো নিয়ে ৬ মাস পর পর বসে। তাই কোম্পানি গুলো তাদের শর্ট টার্ম এমপ্লয়ী দের ৫ মাসের কন্ট্রাক্ট বা ৫ মাসের কাছাকাছি সময়ে নিয়োগ দিতে পারে ওয়েটিং এপ্লিকেশন রেখেই। এবং ৬ মাসের এক্সপেয়ারি তে নতুন নতুন মোড়কে পাঠা্নোর সুযোগ পায়, এর মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট চাড়াই ওদের বহু কন্ট্রাক্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশ বিবিয়োগ বোর্ড কে এই ধরনের আবেদনের সাড়া দিতে হবে প্রতি সপ্তাহে, আর অবশ্যই এর জন্য চেয়ারম্যান এর দরকার নাই।  ওয়ার্ক পারমিট অনুমোদন হয়ে গেলে আয়কর ফাঁকি দেয়া মুশকিল হয়ে পড়বে চর্য বৃত্তিতে লিপ্তদের।

 

১৮ নিয়ম মতে ছয় মাসের বেশি অবস্থান করা এক্সপার্ট বা শ্রমিক কে এক্সিট পোর্ট এর ইমিগ্রিশন এ ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট দেখাতে হয়। ঢাকা বিমানবন্দরে বা হিলি বাংলাবন্ধা বা বেনাপোল স্থল বন্দরে এইসব লোকদের কাছে ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট  চাওয়া হয় কিনা তদন্ত করতে হবে। সম্ভবত ঘুষের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এইসব কঠোর নজরদারিতে আনতে হবে। রাষ্ট্রের রাজস্ব ছুরি কে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

 

 

(এই নোটটির দ্বিতীয় অংশটি হাইপোথিসিস নয়, প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বিশ্বের দেশে কাজ করতে গেলে আমাদের ঠিক যেভাবে ট্রিট করা হয় তার ই একটি  ধারা বিবরনী মাত্র)

 

ধন্যবাদ।


With regards,

Faiz Taiyeb
RAN Technical Architect
Vodafone Netherlands

চেতনা-পরাবাস্তবতাঃ তুরস্ক বনাম বাংলাদেশ

2

by: Aman Abduhu

গত রবিবার তুরস্কে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে গেলো। সে নির্বাচনে ছদ্ম-ইসলামপন্থী প্রধানমন্ত্রী এরদোগানের দল এগিয়ে গেছে। এর প্রতিক্রিয়া এখন বাংলাদেশেও দেখছি; ইসলামপন্থীরা প্রচুর আনন্দ প্রকাশ করছেন।

এই ইসলামপন্থীদের একটা জিনিস খুব ভালোভাবে বুঝা দরকার। এটা ঠিক যে কঠিন একটা সেক্যুলার পরিবেশে এরদোগান কিছু কাজ করেছেন, যা বৈশিষ্ট্যবিচারে ইসলামী। যেমন, কোন মেয়ে হিজাব করতে চাইলে পারবে, এটা তিনি অনুমোদন করিয়েছেন শেষপর্যন্ত। পাবলিক প্লেসে এলকোহল নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু এসব বিষয় তুরস্কের নির্বাচনে কোন ডিসাইসিভ ফ্যাক্টর ছিলোনা। ঐদেশের মানুষজন এইসব সস্তা ইসলামী জযবায় উত্তেজিত হয়ে এরদোগানকে ভোট দেয়নি। বরং তুরস্কে গেলে মেয়েদের বেশভুষা এবং আরো কিছু দেখে ইসলামপন্থীদের হার্ট এটাক হয়ে যেতে পারে। এখন অলরেডি ফেসবুকে কানে তালা লেগে যায়। আর বাংলাদেশের দৃশ্যমান অবস্থা তুরস্কের মতো হলে তো ইসলাম-রক্ষক ভাইদের চিৎকারে ফেসবুকে কানের পর্দাই ফেটে যেতো।

তুরস্কের মানুষ বাংলাদেশের মানুষজনের মতো হুজুগে না। তারা আমাদের মতো অর্থহীন ইস্যু আর অতীত নিয়ে এতোটা মেতে থাকে না। বরং ইউরোপ আর এশিয়ার মাঝে থাকার অবস্থানগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে তারা দেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করে।

এরদোগান আমার প্রিয় একজন নেতা। বর্তমান মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের মাঝে তাকে অন্যতম সফল একজন নেতা মনে করি। অর্জনের দিক থেকে মাহাথিরের চেয়েও বেশি। কারণ দেশী-বিদেশী এতো বেশি ষড়যন্ত্র আর বিরোধীতার মুখোমুখি মাহাথিরকে হতে হয়নি। তুরস্কের কনটেক্সটও মালয়েশিয়ার চেয়ে ভিন্ন এবং অপেক্ষাকৃত কঠিন ছিলো। এরদোগান লোকটা সবচেয়ে বেশি প্রাগমাটিকও।

তবে ভদ্রলোক সম্প্রতি ডিকটেটরদের মতো কাজকর্ম শুরু করেছেন। সাংবাদিকদেরকে জেলে ভরা, টুুইটার ইউটিউব ব্লক করা, বিশাল বিশাল গণজমায়েতের ছবি দিয়ে পাবলিককে ইমপ্রেস করার চেষ্টা, এসব। যদি শেষপর্যন্ত এসব সামলে নিতে পারেন, হয়তো তিনি আরো বেশি উচ্চতায় পৌছে যেতে পারেন। কারণ আলটিমেটলি তিনি তার দেশের জন্য ক্ষতিকার শাসক না। শেখ হাসিনার মতো নেতিবাচক মানুষ না। কিন্তু এভাবে সামলাতে পারার সম্ভাবনা কম। তারচেয়ে বরং তাঁর অবসর নেয়া উচিত। একে পার্টির হায়ারারকিতে যোগ্য মানুষজন আরো আছে।

এইসব কাজকর্ম করার পরও কেন এরদোগানের দল বিজয় পেলো? তুরস্কের নির্বাচন কি বাংলাদেশের মতো? সোমবারের পঞ্চম দফা উপজেলা নির্বাচনে যেভাবে বাংলাদেশে আওয়ামী মাফিয়া লীগের লোকজন কেন্দ্র দখল করছে? বিরোধীদলের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিচ্ছে, সিল মেরে বাক্স ভরাচ্ছে।?

না। একে পার্টিকে এসব করে নির্বাচনে জিততে হয়নি। এবং ফাঁপা বেলুনভর্তি জযবার উপর ইসলাম মার্কাটি লাগিয়ে দিয়ে ঐদেশে জেতা যায় না, তা তো আগেই বলেছি। বরং এখনো এরদোগানের বিজয়ের কারণ দুইহাজার এগারো সালের জুনে আলজাযিরায় প্রকাশিত একটা রিপোর্টে বুঝা যায়। “ফ্রম স্ট্রিট সেলার টু গ্লোবাল স্টেটসম্যান”।

এরদোগান প্রথম জীবনে বাড়তি উপার্জনের জন্য তার এলাকা কাশিমপাশার রাস্তায় খাবার বিক্রি করতেন। এটাও একটা চিন্তা করার মতো বিষয়। ঐদেশে মৃত বাবা বা স্বামীর দড়ি ধরে মানুষজন রাজনীতিতে আসার সুযোগ তেমন একটা পায় না। নিজের যোগ্যতা দরকার হয়।

সেই রিপোর্টে এরদোগানের শাসন সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইস্তাম্বুলের টেক্সি ড্রাইভার মেরাল বলছিলেন “আমার বয়স এখন পঞ্চাশের কোঠায়। আমার জীবনে প্রথমবারের মতো আমি ইন্সুরেন্স পেয়েছি, আমাদের প্রাইম মিনিস্টারকে ধন্যবাদ এর জন্য। আমার যদি কিছু একটা হয়ে যায়, তাহলে আমার পরিবার কোন সমস্যায় পড়বে না। আমার দশ বছর বয়সী মেয়েটা মিষ্টি বেশি খেয়ে খেয়ে দাঁত নষ্ট করে ফেলেছে। আগে হলে তার চিকিৎসার জন্য আমাকে ফতুর হয়ে যেতে হতো। আর এখন আঠারো বছর বয়সের কম সবার চিকিৎসার খরচ দেয় সরকার।”

এরদোগানের ইয়ং বয়সে তাঁর চুল কেটে দিতো যে সেলুন মালিক, তিনি আলজাযিরার রিপোর্টারকে বলেছিলেন “আমি যখন আটানব্বই সালে হজ্ব করতে সউদী আরব যাই তখন এক মিলিয়ন টার্কিশ লিরার নোটও এক্সচেঞ্জ করার জন্য কেউ নিচ্ছিলো না। আর দুইহাজার দশ সালে যখন আবার গেলাম, একশ লিরার নোট দিয়ে আমি দুইশ পঞ্চাশ রিয়াল পেলাম। ঠিক তখনই আমি বুঝতে পারলাম, আমাদের জীবন বদলে গেছে। আমাদের একটা ভবিষ্যত আছে এখন।”

মানুষ এ পৃথিবীতে খুব বেশি কিছু চায় না। একটু শান্তিতে বাঁচতে চায়। এরদোগানের মতো নেতারা যখন সে প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করেন, তখন মানুষ তাদের ভালোবাসে। অথবা উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন ইনষ্টিটিউশন ও ট্রাডিশনের কারণে নেতারা এর বাইরে যেতে পারেন না। আর আমাদের মতো দেশে? রাজনীতিবিদ নেতারা ব্যস্ত আছে একজন আরেকজনের সাথে নোংরা মারামারি আর রাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করে খাওয়াতে।

আর তাছাড়া, নেতা তো উঠে আসে মানুষদের মধ্য থেকেই। ঐসব দেশের মানুষেরা ব্যস্ত থাকে কাজ করতে, অবসরে নিজের আনন্দ নিতে। ওদের ফেসবুকে গেলে দেখা যায় হয় নিজেরা বেড়াচ্ছে খাচ্ছে। দেশের বড় কোন সামষ্টিক ইস্যু যেমন নির্বাচন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা অর্থনৈতিকভাবে বড় কোন ঘটনা, এসব নিয়ে কালেভাদ্রে মাথা ঘামাচ্ছে।

আর আমাদের দেশে আমরা সবাই তালেবর। সবাই দেশপ্রেমে টুইটুম্বুর স্থবির গর্ভবতী। যেদেশে মানুষ আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে ভিক্ষা করে, চিকিৎসা পায় না, বিচার পায় না, সেদেশে এখনো আমরা পরে আছি একাত্তর নিয়ে। সম্ভব হলে বিপ্লব করতে ব্রিটিশ আমলেও চলে যাই পারলে, এমন অবস্থা। এখনো আমরা গিনেজ রেকর্ডের মতো ফালতু একটা প্রতিষ্ঠানের পেছনে পুরো দেশ মিলে দৌড়াচ্ছি। অথবা হিমালয়ে উঠার জন্য ধাক্কাধাক্কি করে যাচ্ছি।

ওদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা পত্রিকায় কলাম লেখে জমির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে, বিদেশের সাথে অর্থনৈতিক ঘাটতি নিয়ে, অন্য দেশের যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে, রিফিউজিদের সমস্যা নিয়ে। আর আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা মুজিবকে সম্মান দেয়া হয়নাই, জাতীয় সঙ্গীত সবার সেরা, মুক্তিযুদ্ধ না থাকলে দেশ আগাবে না এইসব নিয়ে আবর্জনা লেখাতে ব্যস্ত।

এমন একটা অতীতমুখী দেশের কোন বর্তমান বা ভবিষ্যত কিভাবে থাকবে? আর কিভাবেই বা এইরকম ঊন-মানুষদের মাঝে এরদোগান, মাহাথির বা জিয়ার মতো স্টেটসম্যান জন্ম নেবে?

Accommodating the New Imperial Order: The Dhaka Tribune and the Ruling Culture of Subservience

By Surma

They plunder, they slaughter, and they steal: this they falsely name Empire (Superpower), and where they make a wasteland, they call it peace – Tacitus (56 – 117 AD)

Have you heard the one about the Bangladeshi farmer and the Indian Border Guard?

felani.jpg

Picture of 15 year old Felani killed by Indian Border Guards (BSF) on the 7 January 2011

There was once a Bangladeshi farmer who was ploughing his fields with his cattle near the Indian Border. The Indian border guards (BSF) as part of their live exercises, for the sake of target practice, crossed the border shot the farmer and took his cattle. The BSF re-brand the cattle as Indian cattle and then sell it to an Indian cattle smuggler, who in turn smuggles the cattle into Bangladesh, with the help of the BSF, and sells at a premium. All this time our helpless Bangladeshi farmer is lying in his field bleeding to death.

First the the local Awami League Chairman comes along, see’s the farmer walks over the farmer, crosses the border and has tea with the BSF guards at their station.

Second, a civil society, Sushil type, Nirmul Committee member comes along, see’s the farmer, takes pictures and then crosses the border and writes a report with the BSF guards. In the report the farmer was part of international Islamist terror network, and his cattles were being used to fund that terror network, thus both the farmer and his cattle created an existential threat to the Bangladeshi state and needed to be neutralised.

Third, a correspondent from the Dhaka Tribune arrives and takes an interview of the farmer, noting down all the facts, then writes a sympathetic piece in the paper about the problems faced of being an Indian Border Guard.

The above comical anecdote sadly reflects the state of affairs that is amongst the ruling clique, political and civil in Bangladesh. A culture of submission to an aggressive foreign power, which regularly kills citizens of the country, interferes in domestic politics and is economically exploiting the country’s resources. It is a culture of subservience which permeates the ruling Awami League, to a myopic civil society members, whose indignity is masked by spineless corporate media.  This pro india bias was recently highlighted by former ambassador Sirajul Islam, in the Weekly Holiday. The Dhaka Tribunes role of propaganda as an extension of the state was confirmed when it and its editor Zafar Sobhan received an award by the Better Bangladesh Bangladesh Foundation (BBF) for creating a better image for the country. The other awardees are (post Rana Plaza) Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association for its contribution in the garment sector, the (post internationally criticised elections) Ministry of Foreign Affairs for contribution in the field of international relations, Bangladesh Armed Forces for serving in the United Nations Peace Support Operations and International Committee of the Red Cross (ICRC) for its role during the Liberation War and Foreign Minister AH Mahmood Ali.

Policy of Appeasement – ‘Please Sir, can I have some more!’

muncih 1938.jpgoliver twist.jpg

(l) Neville Chamberlain proclaiming foolishly ‘peace in our times’, after rewarding Nazi aggression at Munich 1938. ( r) Famous scene from Oliver Twist 1968, ‘Please sir can i have some more!’

This culture of subservience reached new heights, with the recent editorial by the Dhaka Tribune by its editor Zafar Sobhan, where he beseeches the Indians to extend the cricketing Indian Premier League into Bangladesh:

“The most obvious way in which to do this would be to let Dhaka bid for a franchise in the next application process and let economics sort it out. With a catchment area that would comprise the entire country in terms of local fan base, or even simply taking Dhaka as the focal metropolis, such a franchise would be a better bet than some that are already in the IPL”

The article and its timing displayed new a new marker for the paper, in its ‘Walter Mitty’, type editorial policy, a new level of a comic detachment from the reality faced by ordinary Bangladeshis. Instead of confronting criticism of the papers Islamophobic and pro India bias, the article just confirmed those accusations and further silenced an ever decreasing number of sympathisers, The reality on the ground, which the paper ignores and is insensitive to, is that one sided elections were held with the open support of the Indian government, with a brutal security crackdown with an alleged assist from the Indian army, all held against the backdrop of an increasing number of Bangladeshi citizens being killed by the Indian security forces at the border.

The content and timing of the piece could be interpreted as a rerun of Munich 1938, where instead of aggression against the sovereignty of a neighbouring country being opposed and resisted, we have a cringe worthy acceptance of the aggression by masking it up and seeking to reward such aggression, in this case unilaterally seeking an IPL franchise.

The ignorance multiplier effect – one import size fits all

The proposal shows an incredible disregard for developing Bangladeshi cricket, which can be throttled by importation of franchise and precious resources being diverted to it. Instead of advocating investment and development of local clubs, the newspaper’s solution, like so many other solutions adopted in current Bangladesh, is to import a ready made manufactured Indian solution. This is in the foolish belief that such a solution, of a single franchise, is for the benefit of development of the game in a country of over 150 million.

A similar dynamic, rather stagmatic, can be observed in every domain of indigenous social-technological development, from water resources engineering, to urban planning and education. The systematic undernourishment of our own talents is no basis for a state with pretensions of autonomy. Realise this, even (y)our foreign development partners are laughing all the way to the bank and up their career ladders

The attitude in the paper seems to be hangover of the Mujib-era one party state of the early 70s, where dogma superseded practical technicalities. Then it was the import of ill fitting Soviet blueprints, now we have the advocacy of ill fitting, counter productive Indian ones, for our politics, culture, economics and now cricket. For too long, the Dhaka Tribune and its ilk, has gotten away with weaving a fairytale of Bangladesh. Until people start complaining – and loudly too – the corporate media agenda will be shaped by supporters of government, pro AL big business and Indian foreign policy. That does not just subvert honest journalism: it undermines our democracy.

famine 1974.jpgdefinition of journalism.jpg

(l) Scene from the famine of 1974, mainly caused by the political and economic ineptitude of the government of the day. ( r) Memo to the Dhaka Tribune and the corporate media of Bangladesh, from a real journalist, George Orwell.

The real record — inflation (continued)

For those coming in late, even though inflation has risen under the current government (Chart 1), real GDP per capita has grown by around 4½ per cent a year under successive governments over the past decade.

c1 (2)

Over the last couple of weeks, I have had a bit of correspondence about inflation. This post answers some of the questions.

Continue Reading

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প কি সোনালী আঁশের পরিণতি বরণ করতে চলেছে?

by শঙ্খচিলের ডানা

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প কি সোনালী আঁশের পরিণতি বরণ করতে চলেছে? Will we let history repeat itself?

2013-11-29T062806Z_1454074546_GM1E9BT13MP01_RTRMADP_3_BANGLADESH-GARMENTS-FIRE

“পাকিস্তানী বাহিনীর সারেন্ডারের পর ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশী সরকারের অনুরোধে বাংলাদেশে থেকে চলে যায়। বিজয়ী সেনা হিসেবে বা অন্য কোন কারণেই হোক চলে যাবার আগে তারা হাতিয়ার, অস্ত্রশস্ত্র, ভারী কামান, ট্যাঙ্ক, গোলাবারুদ, যুদ্ধের অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি এবং মিল কারখানার মেশিনপত্রও খুলে নিয়ে যায় ভারতে। তারা অধিকৃত শহর ও সেনানিবাসগুলো থেকে আসবাবপত্র, ফিটিংস ফার্নিচার, এমনকি কমোড-বেসিন পর্যন্ত খুলে নিয়ে যেতে থাকে। অনিক পত্রিকায় ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর ইস্যুতে ছাপা হয়, “ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ১০০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্রশস্ত্র, মেশিনপত্র, যুদ্ধ-সরঞ্জাম ও কাচাঁমাল ভারতে নিয়ে যায়।” স্বাধীনতার পর খুলনায় ডেপুটি কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত জনাব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ভারতের কাছে সরকারিভাবে এক প্রটেষ্ট নোটের মাধ্যমে জানান যে, তার জেলা থেকে ভারতীয় বাহিনী লক্ষ লক্ষ টাকার মালসামগ্রী অন্যায়ভাবে ভারতে নিয়ে গেছে। তিনি ভারতীয় বাহিনীর এ ধরণের লুটপাটের ঘোর বিরোধিতা করেন। ভারত ও পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে আগেও চোরাকারবার চলতো। কিন্তু বাংলাদেশ হবার পর চোরাকারবারের মাত্রা বেড়ে যায় চরমভাবে। স্বাধীনতার পর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত সীমান্ত সম্পূর্ণ খোলা রাখা হয়। মাওলানা ভাসানী দাবি করেন, “বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক নিয়ে যাওয়া অস্ত্র ও যুদ্ধসম্ভার এবং চোরাচালানের মাধ্যমে সর্বমোট ৬০০০ কোটি টাকা মুল্যের জিনিসপত্র ও কাঁচামাল ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।” ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের আগষ্ট পর্যন্ত সময়ে চোরাচালানের মাধ্যমে ২০০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্রব্য সামগ্রী ভারতে পাচার হয়েছে বলে দাবি করেন বাংলা সংবাদপত্র অনিক। বাংলাদেশ সরকার দেশে ফিরেই ভারতে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের রফতানির উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা উঠিয়ে নেয়। এর ফলে খোলা বর্ডার দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে উৎপাদিত পাট ও পাটজাত দ্রব্যের একটি বৃহৎ অংশ ভারতে চলে যাওয়ার পথ আরো সুগম হয়। ১লা জানুয়ারী ১৯৭২ সরকার বাংলাদেশী টাকার মান কমিয়ে দিয়ে ভারতীয় রুপির সমপর্যায়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। সরকার একই সাথে আরো ঘোষণা করে, ১৬ই ডিসেম্বরের আগে পাট ও পাটজাত সংক্রান্ত সমস্ত দ্রব্যের ব্যাপারে রফতানির সকল চুক্তি বাতিল বলে গন্য করা হবে। দি বাংলাদেশ অবজারভার ২/১/১৯৭২ সংখ্যায় লেখে, “ব্যবসায়ী এবং অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে উল্লেখিত সরকারি তিনটি সিদ্ধান্তই ভারতের স্বার্থে প্রণীত হয়েছে। ভারতীয় সরকারের চাপের মুখেই এ ধরণের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন।” এরপর সরকার কর্তৃক টাকার মান কমাবার পর পাটের দাম পুনঃনির্ধারণ করার ফলে সৎভাবে ব্যবসা করার চেয়ে চোরাচালান অনেক লাভজনক হয়ে দাড়ায়। ফলে বাংলাদেশের জীবন সোনালী আশের রপ্তানী হ্রাস পায়। এতে জাতীয় বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে যায় এবং জাতীয় সঞ্চয়ও কমে যায়। উৎপাদনে ভাটা পড়ে। ১৯৭৪ সালে রহস্যজনকভাবে নাশকতামূলক কার্যকলাপের ফলে অনেক জায়গায় পাটের গুদাম আগুনে পুড়ে যায়। গুদামে ভরা কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য এভাবে পুড়ে যাওয়ার ফলে পাট শিল্পের ক্ষেত্রে সরকারের প্রচন্ড ক্ষতি হয়। গুদামে আগুন লেগে পুড়ে যাওয়ার ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা করতে গিয়ে পাটমন্ত্রী ১৯৭৪ সালে সংসদে বলেন, “আগুন লেগে প্রায় ১৩৯২ মিলিয়ন টাকার শুধু পাটই পুড়ে যায়। পাটজাত দ্রব্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।” প্রচন্ড এই ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে BJMC এবং BJTC সরকারি ভুর্তুকির উপর চলতে থাকে। আজঅব্দি পাট শিল্পক্ষেত্রে সরকার কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে চলেছে। একদিনের সোনালী আশঁ আজ জাতির গলায় হয়ে পড়েছে ফাঁস।

পক্ষান্তরে যে ভারত কখনোই পাট রফতানি করতে পারত না, এমন কি পাটের অপর্যাপ্ত উৎপাদনের ফলে অনেক জুট মিল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হতে হয়েছিল, সেখানে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর অবস্থা সম্পূর্ণভাবে বদলে যায়। ১৯৭৩ সালে ভারত ১ মিলিয়ন বেল পাট রফতানি করে বিদেশের মার্কেটে এবং ১৯৭৪ সালের মধ্যে শুধু যে তাদের বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোই আবার ফুল শিফটে চালু করা হয় তা নয়; তারা ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে আরো নতুন দু’টো মিল স্থাপন করে।”

– মুজিবের সময় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
http://www.majordalimbubangla.com/52.html

দূর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্লেষণ

2
বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ওয়াবসাইট থেকে দেখা যায় তাদের প্রকাশিত Corruption Perception Index-এ বাংলাদেশ প্রথম ব্যাপক আলোচিত হয় ২০০১ সালে প্রকাশিত ২০০০-২০০১ সালের CPI তালিকায়।
সেই হিসাবে এই তালিকায় বাংলাদেশ গত এক যুগ ধরে বিভিন্ন স্কোর পেয়ে বিভিন্ন অবস্থানে ছিলো।
এই তালিকায় আমাদের গত একযুগে কখন কি অবস্থা ছিলো তা নিয়ে কিছু বিশ্লেষণ প্রয়োজন, কারণ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলে বিভিন্ন ভাবে বিভ্রান্ত করা হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যে তালিকা প্রকাশ করে থাকে তা হচ্ছে মূলত জরিপের উপর জরিপ।
অন্তত তিনটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যের উপর জরিপ করে স্কোর নির্ধারণ করে এই তালিকায় তা উল্লেখ করাহয়।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ERC (Ethics Resource Center), EIU (Economics Intelligence Unit)-সহ আরও বেশ কয়েকটি সংস্থা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে যেকয়টা CPI-এর হদিস পাওয়া গেছে সেই সবকয়টা মিলিয়ে এখনপর্যন্ত সবচেয়ে কম স্কোর উঠেছে ২০০১ সালে প্রকাশিত রিপোর্টেই- ০.৪ (বর্তমানে ১০০-এর স্কেলে যা ৪)।
এই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী বাংলাদেশ।বলাই বাহুল্য নিচের দিক থেকে প্রথম অবস্থানটাও আমাদেরই ছিল।আমাদের নিকটতম দেশ ছিল নাইজেরিয়া, যাদের স্কোর ছিল আমাদের চেয়ে আড়াইগুণ বেশি (১.০)।
CPI2001

তখন মহাপরাক্রমশালী আওয়ামীলীগ সরকারের শেষ বছর চলছিলো। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মরহুম এস এম কিবরিয়া এই রিপোর্ট সরাসরি প্রত্যাখান করেছিলেন, যদিও দেশে দুর্নীতির অবস্থা আসলেই খারাপ ছিলো।

১৯৯৬সালে ক্ষমাতায় এসেই ১৯৯১ থেকে বন্ধ কালোটাকা সাদা করার বিধানকে চালু করে দেন কিবরিয়া সাহেব তাঁরপ্রথম বাজেটেই। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চর দখলের মতো দখল করে সভাপতির পদে বসে পড়েন নেতারা।শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারীর রেশ তখনও কাটেনি। এই স্কোর তাই অনুমিতই ছিলো।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার।

এই সরকারকে মানুষ অনেক আশা নিয়ে ক্ষমতায় বসালেও এদের সময়ও দুর্নীতি খুব একটা কমেনি, তবে বাড়েনি তা নিশ্চিত। প্রমাণ দেয়া হবে।

কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপের কারণে ২০০২ সালে প্রকাশিত তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের কোন পরিবর্তননা হলেও স্কোর বেড়ে দাঁড়ায় ১.২-এ (বর্তমান স্কেলে ১২)।

নিকটতম রাষ্ট্র ছিল দুর্নীতি জর্জরিত নাইজেরিয়া ১.৬ পয়েন্ট নিয়ে। বাংলাদেশের সাথে ব্যবধান ছিল ০.৪ পয়েন্টের, আগেরবছর যা ছিল ০.৬ পয়েন্ট।

২০০২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করা হলে বাংলাদেশের স্কোর ২০০৩ সালের তালিকায় সামান্য বেড়ে ১.৩-এ দাঁড়ায়(বর্তমান স্কেলে ১৩)।

এবছরও নিকটতম রাষ্ট্র ছিল নাইজেরিয়া ১.৪ পয়েন্ট নিয়ে। এবছর বাংলাদেশের সাথে নিকটতম রাষ্ট্রের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ০.১-এ।

২০০৪ সালের প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায় আমাদের স্কোর সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ১.৫-এ (বর্তমান স্কেলে ১৫)। আগের বছরের তুলনায় যা ছিল ০.২ বেশি। এবছর আমাদের সাথে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ‘গৌরবে’ ভাগ বসায় হাইতি। নিকটতম রাষ্ট্র ছিল নাইজেরিয়া, যাদের স্কোর ছিল ১.৬।

অর্থাৎ আমাদের সাথে নিকটতম রাষ্ট্রের ব্যবধান আগের বছরের মতই ০.১-এই আটকে ছিলো।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে ইফতেখারুজ্জামানের নালিশ

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে ইফতেখারুজ্জামানের নালিশ

২০০৪ সাল থেকে শুরু হয় প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল। অর্থের বিনিময়ে কাজ দেয়ার কিছু ঘটনাও বের হয়ে আসা শুরু করে। জ্বালানীমন্ত্রীকে জিপ কেলেঙ্কারী নিয়ে সরে যেতে হয়। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে আরও অনেকের বিরুদ্ধে। এর প্রভাব পড়ে ২০০৫ সালের রিপোর্টে। বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে। স্কোরের বৃদ্ধি ছিল আগের মতই। তবে আমাদের সাথে আগের বছর একই অবস্থানে থাকা হাইতি কিছুটা উন্নতি করে নিকটতম রাষ্ট্রের কাতারে চলে যায় ০.১ পয়েন্টের ব্যবধান নিয়ে। হাইতির জায়গায় আসে চাদ। ২০০৫ সাল মিলিয়ে বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়।

২০০৫-২০০৬ সাল ছিল রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল একটা বছর। অবশ্য বিরোধীদলের প্রবল আন্দোলনের কারণে এ বছর মাঠপর্যায়ে সরকারি কাজও ছিল কম, তাই দুর্নীতিও কম হয় যার ফলে ২০০৬ সালের জোট সরকারের আমলের শেষ রিপোর্টে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে শীর্ষস্থান থেকে বেরিয়ে আসে।

তবে এই বছরের টিআইবি রিপোর্টের সাথে টিআইবির কর্তাব্যক্তিদের কথায় মিল ছিল কম। অনেকের অনেক কাজ ছিল সন্দেহজনক। টিআইবির ইফতেখারুজ্জামানকে বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে রীতিমত নালিশ করতে দেখা যায়। তিনি খালেদা জিয়া এবং তাঁর দুই ছেলেকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বিভিন্ন খতিয়ান দেন যা পরবর্তীতে উইকিলিকসে প্রকাশিত হয়।

ইফতেখারুজ্জামান নিজেই পরে একে নীতিমালা বহির্ভুত কাজ হিসেবে স্বীকার করেন

কিন্তু ২০০৬ সালের টিআইবির প্রতিবেদন ছিল এর উলটো। ২০০৬ সালে প্রকাশিত তালিকায় বাংলাদেশের স্কোর বেড়ে দাঁড়ায় ২.০-তে। অবস্থানও হয় তৃতীয়। যা ইফতেখারুজ্জামানকে ভুল প্রমাণিত করে। যদিও damages were done, বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রে একটি নেতিবাচক তাঁরবার্তা পাঠানো হয়।

শুধু তাই নয়, তারেক রহমান এবং কোকোর ব্যাপারে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম কারণ ইফতেখারুজ্জামানেরা।

এই ছয় বছরের টিআই’র খতিয়ান দেখলে দেখা যায় বাংলাদেশের স্কোরে উন্নতি হয় ১.৬ (বর্তমান স্কেলে ১৬) পয়েন্ট। বাংলাদেশ দুর্নীতি কমিয়ে এনেছে, তথা বাংলাদেশে ২০০০ সালের তুলনায় ২০০৬ সালে দুর্নীতি কম হচ্ছে এমন মত প্রকাশ করে ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তত তাদের প্রতিবেদনের স্কোর এবং অবস্থান তাই নির্দেশ করে।

তবে বাংলাদেশের অতি উৎসাহী একটি শ্রেণী ঠিকভাবে রিপোর্ট না দেখেই বিভিন্ন মন্তব্য করে থাকেন যা অনভিপ্রেত। টিআই’র রিপোর্টে শুধুই একটা দেশের অবস্থান দেয়া থাকে না; একই সাথে সেই দেশের গত বছরের অবস্থান, দুর্নীতির ক্ষেত্রে দেশটির স্কোর- এগুলোও থাকে, যা অনেকেই খেয়াল করেন না। করলে অবশ্যই বুঝতেন বাংলাদেশ কিভাবে দুর্নীতি কমে এসেছিল।

এরপর দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী ক্ষমতা নেয় সেনা সমর্থিত সরকার। এই সরকার দুর্নীতি দমনের নামে বেশ কিছু অভিযান চালায়। তবে এই সকল অভিযানের একটা বড় অংশই ছিল লোকদেখানো। এই সময় দুর্নীতির তেমন কোন হেরফের ঘটেনি। বরং জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশের স্কোর বৃদ্ধির যে ধারা বজায় ছিল তাও থেমে যায়। জোট সরকারের শেষ বছরের স্কোর ২.০ থেকে এক দশমিক পয়েন্টও বাড়েনি ২০০৭ সালের টিআই’র দুর্নীতির ধারণাসূচকে। যেখানে ছিল সেখানেই থাকে।

উলটো সেনা সমর্থিত সেই সরকারের সময় ব্যবসায়ীদের ধরে এনে চাঁদাবাজির সাথেও জড়িয়ে পড়ে অনেক সেনা কর্মকর্তা। দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক কর্মযজ্ঞের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ২০০৮ সালের টিআই’র সূচকে বাংলাদেশ মাত্র ০.১ শতাংশ যোগ করতে সক্ষম হয়।

পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবী করে তখন সেনাদের একাংশ দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিল। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালের এগারোই জানুয়ারির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুবছরের শাসনামলে সশস্ত্র বাহিনীর একাংশ ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল অর্থ ও সম্পদ অর্জন করে এবং গণমাধ্যমের ওপরও তারা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।

এরপর ক্ষমতা নেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। মহাজোট মন্ত্রীসভার অধীনে প্রথম বছর যথেষ্ট ভালো কাটে বাংলাদেশের। এছাড়া ঐ বছর কিংবা তার পরের বছরও কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যায়নি। এছাড়া বড় ধরণের দুর্নীতির অভিযোগও ওঠেনি। যার প্রভাব পড়ে টিআই’র সূচকেও। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের স্কোর বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২.৪ এ (বর্তমান স্কেলে ২৪)।

পরের বছর, ২০১০ সালেও অবশ্য এই স্কোরের কোন পরিবর্তন হয়নি। যদিও তেমন কোন বড় ঘটনা ঘটেনি। কিংবা সরকারও কোন বিশেষ ব্যবস্থা নেয়নি নিজেদের দুর্নীতির মামলাগুলো প্রত্যাহার করা ছাড়া।

২০১১ সালে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ২.৭, যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। তবে ২০১১ সালে কিছু মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা বাদে দুদক তেমন কোন কাজই করেনি। তবে উল্লেখ্য যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-সাংসদের বিরুদ্ধে এই বছরে অভিযোগ উঠতে থাকে। এদের কয়েকজনকেই দুদক তলব করে।

২০১২ সাল ছিল এক বোমা ফাটার বছর। একের পর এক দুর্নীতি উন্মোচিত হতে থাকে। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় বিশ্বব্যাংক। বের হতে থাকে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর কেলেঙ্কারী। যার সামান্য প্রভাব পড়ে টিআই’র সূচকেও। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ধারণা সূচকে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায়বাংলাদেশের অবস্থান ২০১১ সালের মতো ২০১২ সালেও ১৩তম অবস্থানে থাকলেও কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশেরতালিকায় (উচ্চক্রমে) বাংলাদেশের অবস্থান ২৪ ধাপ পিছিয়েছে। স্কোর কমে দাঁড়ায় ২.৬-এ, বর্তমান স্কেলে ২৬।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং ভীতিকর বিষয় হচ্ছে গত প্রায় এক যুগের মধ্যে এই প্রথম বাংলাদেশের স্কোরে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেল। যার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ যেভাবে গত এক যুগে ধীরে ধীরে হলেও দুর্নীতি কমিয়ে আনছিল তা এই বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় এই অবস্থা আরও হতাশাজনক।

এক যুগের মধ্যে সূচকে বাংলাদেশের প্রথম পয়েন্ট খোয়ানো

এক যুগের মধ্যে সূচকে বাংলাদেশের প্রথম পয়েন্ট খোয়ানো

এ অবস্থার ব্যাখ্যা দিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন,
এই অবস্থান প্রমাণ করে, গত বছরের তুলনায় দুর্নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হয়েছে।বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতির কারণ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা লিখিত মূল্যায়নে বলা হয়, দুর্নীতি দমনে সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ক্রমবর্ধমান ঘাটতি, পদ্মা সেতু, রেলওয়ে কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার, হলমার্ক কেলেঙ্কারির মতো বহুল আলোচিত দুর্নীতির অভিযোগ, ক্ষমতাবানদের নির্বিচারে জমি ও নদীর জলাশয় দখল, ক্ষমতাশালীদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ না করা, দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা হ্রাসের উদ্যোগ, উচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতির ব্যাপারে দুদকের বিতর্কিত ভূমিকা, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাপকসংখ্যক ফৌজদারি ও দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার, বয়কট ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে জর্জরিত সংসদ, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর রাজনীতিকীকরণ, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা এবং সরকারি ক্রয় বিধিমালা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হওয়ার ঘটনা সার্বিক সূচকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এক যুগে বাংলাদেশের স্কোরের তুলনাচিত্র

এক যুগে বাংলাদেশের স্কোরের তুলনাচিত্র

সার্বিক বিবেচনায় দেখা যায় জোট সরকার যেখানে স্কোরের হিসেবে ১.৬ বা বর্তমান স্কেলে ১৬ উন্নতি করেছিল, মহাজোট সরকার করেছে মাত্র ০.৫ বা বর্তমান স্কেলে ৫ পয়েন্ট।
তাই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নের গান যারা শোনায় তাদের জন্যে একটাই কথা। আপনারা দুর্নীতি করে স্কোর কুয়ার মধ্যে ফেলে গেছিলেন। কোন কিছু কুয়াতে ফেলা যত সহজ তোলা তত সহজ না। যা এখন সম্ভবত হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। কারা আসল চ্যাম্পিয়ন তাও এখন বোঝা যাচ্ছে।
কটা কথা মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ তথা টিআই’র ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোর আওয়ামী লীগেরই কীর্তিস্তম্ভ।

The real record — inflation

In the previous post in this series comparing various governments’ economic and development records, we saw that when it comes to growth in average income, there hasn’t been much difference between the three latest governments. The increase in average income in that post is real, that is, after allowing for inflation. However, inflation is an important economic indicator in its own right.

In fact, as far as average person is concerned, real GDP per capita is an abstract construct, whereas prices of everyday commodities is, for the lack of a better word, much more real! Arguably, more than the war crimes trial or Digital Bangladesh, it was the promise in the video below that brought Awami League its 2008 landslide. And arguably, more than India or Islam factors, it’s the failure to meet this promise that’s behind AL’s sagging popularity.

Politics in Bangladesh, as the saying goes, is price of rice.

This post looks at the recent governments’ record when it comes to inflation.  However, we need to begin with a bit of wonkery because when evaluating different governments on inflation, we need to keep some basic economics in mind, some of which may be counter intuitive

Once we go beyond the wonkery, three charts will show that the current government performs poorly compared with the last BNP government as far as inflation is concerned.

First, there is a strong empirical relationship between price level and the standard of living — things are more expensive in the rich, developed countries. Of course, people in rich, developed countries are richer, and thus can afford the more expensive stuff. But if you are looking at the level of price of anything, you will likely find that it costs more in Bangalore than Barisal, and more in Beijing than Bangalore, and more in Boston than Beijing.

The reasons for this are well outside the scope of this post — the interested reader can start here. The relevance for us is that in any economy where the standard of living is rising over time, prices will rise too.  That means, you should never take a politician seriously if they promise cheap stuff —promises are cheap, stuff, not always so.  While prices of some goods —electronics for example —may fall over time, in a growing economy, overall price level usually rises over time.

Recall, our economy has been growing over time —per capita income has risen by about 4½ per cent a year(after adjusting for inflation) over the past decade, under successive governments.  Therefore, we should expect some inflation under recent governments.

No economics lesson is needed to know that inflation is undesirable to most people.  However, given that some inflation is to be expected in a growing economy, how should we judge the performance of different governments?

Or, conversely, since under all three latest governments, inflation-adjusted income has risen at around 4½ per cent a year, should we care if these governments’ inflation records are different?

We should care about inflation, and we should use two criteria to judge governments’ performance.  First, low inflation is preferable over high ones.  And second, steady inflation is preferred over variable rates of inflation.

The first criteria is self-explanatory —if prices are to rise, it’s better that they rise at a modest pace than at fast pace.  The second one takes a bit of explaining.  If inflation has been, and expected to remain, steady at, say, 5 per cent a year —that is, prices of everything is on average 5 per cent higher this year than last year, and this has been the case for a while and you expect this will be so into future—then you can plan your savings, investment and other economic activities accordingly.  But if inflation is 2 per cent one year, 10 per cent the next, and then 5 per cent the year after, it is hard to plan economic activities.  And that causes inefficiencies and frictions, which are bad for long term economic prospects.

Also, variable inflation rates mean that the government is not managing the macroeconomy very well, indicating one or a combination of chronic budget deficits, fluctuations in the exchange rate, and an incompetent central bank.  An economy can grow despite poor governance, but if inflation is high and volatile, it’s very likely the government’s fault.

Before going into the evidence, the final piece of wonkery —inflation is a macroeconomic issue, not a microeconomic one.  All the stories you heard about corrupt syndicates and so on?  Forget them.  That stuff has little, if anything to do with inflation —see here for detail.

Okay, that’s enough free economics lesson.  What does the record show?  Let’s go to the videotape, by which I mean the charts.

The first one shows growth in GDP deflator, which is a measure of prices of everything produced in an economy.  Just as GDP, BBS has new series for inflation (both GDP deflator and CPI —see below).  However, these series don’t go back far enough to make comparisons between different governments.  So, like GDP per capita, we are using data estimated on the 1995-96 basis.

In Chart 1, the columns are annual growth in GDP deflator, while the lines are annual average growth under various governments going back to the 1980s.  Pretty clearly, 1980s was more inflationary than the subsequent decades.  Also clear that both the 1990s governments maintained low and steady inflation.  Inflation started rising under the BNP government in the 2000s.  But at less than 5 per cent a year, BNP’s record was better than the nearly 7½ per cent a year seen under the two latest governments.  More worryingly, inflation has tended to become more volatile under the current and immediate past government.

c1 (1)

While GDP deflator measures prices of everything that is produced, people actually care more about prices of what they consume.  Consumer Price Index, CPI, measures this.  We also have monthly data for CPI going back to 2000.  The squiggly blue line in Chart 2 shows the yearly CPI inflation (how much CPI has grown since the same month a year earlier).  The flat lines represent annual average inflation under the three latest governments.

The pattern appears to be pretty similar to GDP deflator series above.  Under the BNP government of early 200os, CPI inflation averaged at less than 6% a year, compared with around 8½ per cent a year under the two more recent governments.  And again, worryingly, under the latest government, inflation has been quite volatile, reaching as high as 12 per cent in the year to September 2011.

Untitled

We have seen trends in inflation —that is, growth in prices —in the two charts above.  But the PM’s promise in the video above was about the level of a price of a specific commodity —that of rice.  Chart 3 shows the retail price of a kg of coarse rice in Dhaka.  The squiggly red line is the average retail price over the preceding three months.  The flat lines are the average under the past four governments.

Remarkably, the AL government of the late 1990s actually did manage to keep a lid on rice prices.  In the first half of 1996, price of a kg of coarse rice averaged around 14.50 taka, compared with 13.50 taka in the first half of 2001.  The price shot up to over 17 taka per kg in early 1999, in the aftermath of the devastating flood of 1998.  But then it came down.  By contrast, the price rose steadily under the BNP government, to average 19 taka in the second half of 2006.

Recall, prices are expected to rise over time in a growing economy.  So the mere fact that prices are higher than was the case under a previous government, by itself, is not indicative of poor performance.  Regardless, comparing the two governments, public perception in 2006-07 was rightly that AL performed better in terms of keeping rice prices low.

The recent years have put paid to that notion.  After BNP left office, under the 1/11 regime, rice prices shot up to 35 taka per kg in mid-2008.  Then, over the following year, the price came down steadily, to be around 24 taka in the late summer of 2009.  Both the spike and the fall in the price was primarily caused by global factor —but the 1/11 regime paid a political price and the AL government benefited politically from it (as noted here, AL’s popularity was very high in 2009).

Then look at what happened.  Rice price shot up again in 2010, reaching 40 taka a kg in February 2011.  And unlike in 2008, there was no global spike in prices.  This was homegrown, and it was caused by the macroeconomic mismanagement of the current government (see here for details).

rice

To sum up then, whereas the first Hasina Wajed government performed very well as far as inflation was concerned, the current government has been quite a failure.  The BNP government of the early 2000s, in contrast,  did significantly better than the  more recent governments.

The real record —real GDP per capita

C1

c2

In a previous post, I showed how the AL claim/promise of ‘doubling per capita income’ is problematic. That post foreshadowed a series comparing macroeconomic and development performances under successive governments — a more detailed and updated version of this exercise. This is the first part of that series, focussing on real GDP per capita — an oft-used proxy for economic and social welfare of a country.

Continue Reading

Harvard education, তথ্য , and the real record

Inflation and Real Growth in successive regimes since 1980's.

Inflation and Real Growth under successive governments since 1980s.

by Jyoti for Nuraldeen
Harvard Kennedy School of Government’s Executive MPA program requires one compulsory course in Economics and Quantitative Analysis.    Reading about his claim and promise about doubling per capita income, I wonder whether Mr Sajeeb Ahmed Wazed — the Prime Minister’s son and an emerging Awami League leader — paid any attention in that course.  Continue Reading