ডোনাল্ড ট্রাম্পের র‍্যালি থেকে ফিরে (ছবি ও ভিডিও সহ)

1

শাফকাত রাব্বীঃ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের র‍্যালি দেখার খুব শখ ছিল। দেখতে গিয়েছিলাম যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিন ডালাস শহরের একটা নাইট ক্লাবে। আমার টিকেট ছিল না, একারনে নাইট ক্লাবের ভিতরে ঢুকতে পারা যায় নাই। ক্লাবের বাইরে দাঁড়িয়ে শত শত সাপোর্টার আর প্রতিবাদকারীদের চিৎকার চেঁচামেচি, নাচা নাচি, গালাগালি, আর স্লোগান উপভোগ করে বাড়ি ফিরেছি।

13453014_10153505275905653_1716457272_o

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইলেকশনের অবস্থা ভালো না। আর মাত্র ৪ মাস পরে ইলেকশন। ডালাস-ফোর্টোয়ার্থ এলাকা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ৪র্থ বৃহত্তম জনবহুল এলাকা। এত গুরুত্বপূর্ন একটা এলাকায় ইলেকশনের মাত্র ক’মাস আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে র‍্যালি করতে দিতে  বড় কোন ভেন্যু নাকি রাজী হয়নি। এই কারনে ডালাসের দক্ষিন দিকের বাজে একটা এলাকার নাইট ক্লাবে ট্রাম্পকে তাঁর র‍্যালি করতে হয়েছে।

র‍্যালির এলাকায় গিয়ে দেখি এলাহী কারবার। শত শত পুলিশ। আকাশে ৫ টা হেলিকপ্টার উড়ছে, দুটা হেলিকপ্টার পুলিশের আর তিনটা মিডিয়ার। ঘোড়ার গাড়ি, বাই সাইকেল, মোটর সাইকেল, মোপেড, গাড়ী আর পায়ে হেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন সাজ সোজ্জার পুলিশ। উঁচা বিল্ডিং গুলোতে স্নাইপার রাইফেল নিয়ে সিক্রেট সার্ভিসের লোকজন। আমি এর আগে ডেমক্রাট পার্টির বার্নি স্যান্ডারস এবং রিপাব্লিকান পার্টির মার্কো রুবিও এর র‍্যালিতে গিয়েছি। কারো র‍্যালিতে এতো সিকিউরিটি এবং পুলিশি বাড়াবাড়ি লক্ষ্য করিনি।

13441854_10153505279685653_1651228186_o

র‍্যালি এলাকার মধ্যখানে পুলিশ কাধে কাধ দিয়ে হিউম্যান ব্যারিকেড দিয়েছে।  এক পাশে ট্রাম্প সাপোর্টার আর অন্য পাশে প্রতিবাদকারীর দল। কেউ কারো দিকে বেশী এগিয়ে গেলেই পুলিশ বাঁধা দিয়ে দূরে সড়িয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে থেকেই কোন কোন প্রতিবাদকারী হাটতে হাটতে অন্য সাইডে চলে যাচ্ছে, উত্তেজক দু চারটা কথা বলে ফিরে আসছে। ধরতে পারলে পুলিশ ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিচ্ছে। তখন আবার প্রতিপক্ষ খুশিতে স্লোগান দিচ্ছে।

র‍্যালির ঢুকার মুখেই দেখলাম একদল টেক্সাস মিলিশিয়া  দাঁড়িয়ে আছে। টেক্সাসে যে কোন সাধারন মানুষ তাঁর বন্দুক নিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় ঘুরাফিরা করতে পারে, মিলিশিয়া গঠন করতে পারে। এটা তাঁদের নাগরিক অধিকার। এটাকে বলে “ওপেন ক্যারি”।  র‍্যালির শুরুতেই ৭-৮ জন মিলিশিয়া বিশাল বিশাল বন্দুক, আর্মির মতো পোশাক, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, সান গ্লাস পড়ে এই অধিকার ফলাচ্ছেন। এদেরকে পাহাড়া দিচ্ছে ১০-১২ জন পুলিশ যারা কিনা মিলিশিয়ার থেকে হাল্কা অস্ত্র শস্ত্র বহন করছে।

13410729_10153505281075653_912270260_o

একজন পিস লাভিং পাগলাটে লোক এই মিলিশিয়াদের মরে যাওয়া গাঁদা ফুল টাইপের একটা ফুল দিবার অনুমতি চাইল। মিলিশিয়ারা গম্ভীরমুখে অনুমতি দিল। পাগলাটে লোকটা বন্দুকের নলে গাঁদা ফুল পড়িয়ে দিল। আমরা সবাই ছবি তুললাম।

13446317_10153505279360653_1135201895_o

প্রতিবাদকারীদের এলাকার মধ্য খানে বিশাল একটা মেক্সিকোর পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে ছিল একজন মেক্সিকান আমেরিকান। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল বাদবাকী প্রতিবাদকারীরা নানা ধরনের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে। প্রতিবাদ কারীদের হাতে  অনেকগুলো মেক্সিকান পতাকা এবং সমকামীদের রেইনবো পতাকা দেখলাম। বড় সাইজের কোন আমেরিকান পতাকা চোখে পড়েনি। হয়তো আমি যখন ছিলাম তখন বড় পতাকা ওয়ালা প্রতিবাদকারী কেউ এসে পৌছায়নি।

13461317_10153505280130653_859908887_o

ট্রাম্পের সাপোর্টারদের মধ্যে  সাদা, খুবই আটো সাটো পোশাকের কয়েকজন তরুনী ছিল। দেখতে ভালো, এবং খুবই এগ্রেসিভ। বুঝাই যায় যে ট্রাম্প মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার মালিক।  নানা ধরনের শরীরি কসরতের মাধ্যমে এই  ট্রাম্প গার্লরা স্লোগান দিচ্ছিল। একজন পরীর মতো উড়ে বেড়ানোর একটা ভঙ্গিমা করছিল। এই পরী ইচ্ছা করে প্রতিবাদকারীদের মধ্যে ঢুকে পড়ছিল বারবার।

আমি পরীর সাথে কথা বললাম। জিজ্ঞেস করলাম ট্র্যাম্পের মহিলা বিষয়ক নানাবিধ মন্তব্য তাকে বদার করে কিনা। পরী উত্তরে বলল, ” আই ডোণ্ট গিভ আ শিট”। আমি বললাম ট্রাম্পের কোন জিনিসটা তোমার সবচাইতে ভালো লাগে? পরী জানালো, “বাকি সব ক্যান্ডিডেট হলো একদল পুসি”। প্রতিবাদকারীদের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল, “এই যে এদের মতো। আর ট্রাম্প-ই  হলো একমাত্র আসল পুরুষ।”

13453188_10153505281520653_862247741_o

আমার কথা বলার মুহুর্তে একজন কালো একটা ছেলে এসে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো সে ঠিক ঠাক আছে কিনা। অর্থাৎ আমি পরীকে ডিস্টার্ব করছি কিনা। মেয়েটা বললো না। আমি মানে মানে সটকে পড়লাম।

এমন সময় দেখা হলো “ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটারস” নামে কালোদের সিভিল রাইট আন্দোলনের এক কর্মীর সাথে। আমি হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড শেইক করলাম।  ছেলেটা পুরা র‍্যালিতে একমাত্র কালো মানুষ যে বন্দুক নিয়ে ওপেন ক্যারি করছে। অর্থাৎ সাদা মিলিশিয়াদের সাথে শেয়ানে শেয়ান পাল্লা দিয়ে এই কালো ছেলেটাও একটা বিশাল বড় বন্দুক নিয়ে এসেছে, ওপেন ক্যারি করার জন্যে। আমি তাঁর সাথে কিছু আলাপ সেড়ে তাঁর একটা ছবি তুললাম। খুব খুশী মনে ছবি তোলার পোজ দিল।

black lives

এখানে উল্লেখ্য, মাত্র ক’দিন আগে এধরনের একটা বিশাল বন্দুক দিয়েই  ৫০ জন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে ফ্লোরিডাতে।

13453305_10153505281060653_1680943089_o

এর পরে এক খুবই ইমশনাল ঘটনা ঘটলো। আমি খেয়াল করে দেখলাম একজন ৫০-৬০ বছরের মহিলা ফুটপাতে বসে কাঁদছেন। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম সে ঠিক আছে কিনা। মহিলা জানালেন সে ঠিক আছেন, কিন্তু তাঁর ছাত্রের কথা মনে পড়ছে। যার জন্যে সে প্রতিবাদ করতে এসেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম ছাত্রের কি হয়েছে। জানালো পুলিশ মেরে ফেলেছে। ছাত্রটি কালো ছিল। তাঁর ভাষায় অসম্ভব মায়াবী একটা ছেলে ছিল,  পৃথিবীর সব চাইতে বড় হৃদয়বান, আর  ভালো ছেলে। বলতে বলতে মহিলা কান্নার মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন। আমি আর জিজ্ঞেস করলাম না পুলিশ মেরেছে কেন। মহিলার নাম সুজান।

সুজান জানালেন সে ডালাসের কালো আর হিস্প্যানিক অধ্যুষিত একটা এলাকায় হাই স্কুলের টিচার। তাঁর বাবা মা দু’জন ডাক্তার। পরিবারের সবাই রিপাব্লিকান। সুজান ইচ্ছা করে মাত্র ৫০ হাজার ডলার বেতনের চাকরী নিয়েছেন, ডালাসের সব চাইতে খারাপ একটা এলাকায়।

সুজান জানালেন তিনি কাদছেন মানুষে মানুষের মধ্যে ঘৃনা দেখে। এতো ঘৃনা সে আগে কখনও দেখে নাই। সুজান বললেন পুলিশের দোষ নাই। পুলিশদের মধ্যে এতো ঘৃনা জোগাড় করে দেয় ট্রাম্পের মতো পলিটিশিয়ানরা। আরো অনেক কথা হলো সুজানের সাথে। আমি সুজানকে জানালাম তাঁর মতো মানুষ আছে বলেই আমেরিকান মাইনরিটিরা এখনও আশা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।

এমন সময় পুলিশদের সাপোর্ট করা পোস্টার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল একজন। সুজান আমাকে বললেন, সরি, তুমি আমার থেকে এখন একটু নিরাপদে দূরে গিয়ে দাড়াও। আমি এই পুলিশের সাপোর্টারের সাথে এখন ঝগড়া করবো। আমি সড়ে দাড়ালাম। মহিলা দেখলাম আস্তে আস্তে ঝগড়া শুরু করলেন। ঝগড়া শেষে আমাকে জানালেন সিচুয়েশন কোন কারনে খারাপ হলে তাকে জানাতে, তাঁর বাসা কাছেই একটা আপার্ট্মেন্টে, শেল্টার নিতে পারবো। আমি হাসি মুখে বললাম, “ওকে জানাবো তোমাকে”।

পুরো র‍্যালির ট্রাম্প সাপোর্টারদের সবাই সাদা। কিছু ভাড়া করা গুন্ডা টাইপের কালো ছেলেও ছিল। তাদের একজন প্রকাশ্যে চিৎকার করে সবাইকে জানাচ্ছিল যে কোন ট্রাম্প গার্ল-এর গায়ে কেউ যদি হাত দেয়, তাহলে তারা ফিস্ট ফাইটের জন্যে প্রস্তুত। এই কালো গুন্ডা গুলোর একজনই আমার সাথে কথা বলার সময় সেই পরীকে জিজ্ঞেস করেছিল সে ঠিক ঠাক আছে কিনা।

13446215_10153505279840653_523999363_o

প্রতিবাদকারীদের মধ্যে বেশি ভাগই দেখলাম হিস্প্যানিক আমেরিকান। তাদের সাথে প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছিল ইংরেজি সিনেমার গিক কিংবা ইন্টেলেকচুয়ালদের মতো দেখতে অনেকগুলো সাদা ছেলেমেয়ে। এদের সাথে ছিল ওয়ার্কিং ক্লাসের অনেক কালো মানুষ। এই প্রতিবাদকারীদের যেই বর্ননাটা দিলাম, এটাই হলো লিবারেল আমেরিকান কোয়ালিশন। সারা আমেরিকার যেকোন সিটিতে ইস্লামোফোবিয়া, এলজিবিটি, মেক্সিকান, ইমিগ্রেশন ইস্যু এই সব কিছুতে এই কোয়ালিশনটাকেই একশনে দেখা যায়।

ট্র্যাম্প সাপোর্টারদের স্লোগান ছিল বেশ বোরিং। স্লোগানের ভাষা কথা একটাই — “ইউ এস এ, ইউ এস এ”।  প্রতিবাদকারীদের ভাষার কারুকাজ অনেক আকর্ষনীয়, তবে মূল বক্তব্য  একটাই। সেটা হচ্ছে,  নো মোর হেইট , বা আর ঘৃনা নয়।

আমি র‍্যালিতে থাকার বেশির ভাগ সময়ই  ট্রাম্প সাপোর্টারদের সাইডেই ছিলাম। এটা করেছি প্রতিবাদকারীদের ছবি সামনে থেকে ভালো  ভাবে তোলার তাগিদ থেকে।  ছবি তোলার ফাকে,  অনেক ট্রাম্প সাপোর্টারের সাথে কথা হলো। একে বারে মুর্খদের মতো দেখতে যারা তাদের থেকে শুরু করে ভদ্র টাইপের অনেকের সাথেই। সবাই বেশ ফ্রেন্ডলি ব্যাবহারই  করলো।

এক ফাকে বন্দুক ধারী মিলিশিয়াদের কাছেও গেলাম। দু চারটি কথা বলে সরে গেলাম, এতো বড় বড় বন্দুক ওয়ালা সিভিলিয়ান দেখতে কেমন জানি আন কম্ফোর্টেবল লাগলো।

13467638_10153507611695653_325156753_o

আরো অনেক কিছুই বলার ছিল, কিন্তু লেখাটা  বিশাল হয়ে যাচ্ছে। র‍্যালিতে অংশগ্রহণকারীদের  দেখে যা বুঝলাম, “নো মোর হেইট” এই মেসেজটা খুবই পাওয়ারফুল একটা মেসেজ।  এই মেসেজকে হারাতে ট্রাম্পের অনেক সমস্যা হবে।  কেননা আমেরিকার সাধারন মানুষগুলো খুবই সাদামাটা এবং ফেয়ার।

13461296_10153505279975653_2140286623_o

 

13441985_10153505280245653_2065440672_o

13446305_10153505280285653_594990252_o

বুয়েট ভ্যানটেইজ পয়েন্টঃ তিন

1

By: Aman Abduhu
মিশকাত আজ বেশ উত্তেজিত, এইমাত্র জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি হয়ে গেছে। ফেইসবুকে উত্তেজনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তার পূর্বসূরী বাংলা ব্লগাররা দশ বছর আগে যে কথা কল্পনা করতে শুরু করেছিলো, আজ বাংলাদেশে তাই ঘটছে। অসম্ভবকে সম্ভব করেছে সরকারী শক্তি, নিজেদের ট্রাইবুনাল আর পুলিশ। বিভিন্ন গ্রুপে প্রচুর মেসেজ আসছে, আপডেট আসছে।

সে ভাবলো এখন ল্যাপটপটা শাটডাউন করে একটু বেড়িয়ে পড়া ভালো হবে। রাস্তায় ঘুরে বন্ধুদের সাথে সেলিব্রেট করার সময় এখন। শাহবাগ নিশ্চয় জমজমাট হয়ে উঠেছে। যাওয়া দরকার। এমন সময় হঠাৎ সে দেখলো তাদের বুয়েটিয়ান গ্রুপে এক স্যার মন্তব্য করেছে। মন্তব্যটা কামারুজ্জামানের ফাঁসির বিপক্ষে।

এই স্যারটাকে তারা চেনে, ইনি বেশ কট্টর জামায়াতের লোক। শাহবাগিদের তো প্রশ্রয় দেয়ই না, উল্টা নিয়মিত নামাজ কালাম পড়ে। স্যারের বউটা বোরকা পড়ে, নন্দিতা নিউমার্কেটে দেখেছিলো স্যারের সাথে। সিনিয়র ভাইরা বলেছেন, ইনি স্টুডেন্ট লাইফেও শিবির করতেন। সুতরাং এটাই সবচেয়ে সেরা সুযোগ। মিশকাত বাকি সব ভুলে গেলো আপাতত।

একই সাথে ঠিক একই মিথস্ক্রিয়া ঘটে গেলো বিভিন্ন হলের রুম থেকে ফেইসবুকে একটিভ থাকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কিছু ছাত্রের মাথায়। আরো ঘটলো কিছু প্রাক্তণ ছাত্র, যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছে, তাদের মাথায়। উপর্যুপরি আক্রমণ শুরু হয়ে গেলো মন্তব্যে। আর নতুন নতুন পোস্টে। গ্রুপের বাইরেও পাবলিক পোস্ট আসা শুরু হলো। অন্য বেশিরভাগ বুয়েটিয়ান চুপ করে দেখে গেলো। নীরব থাকা ছাড়া উপায় নেই, কিছু বলার অর্থই হলো বিপদে পড়া। ট্রাইবুনালের সাথে, যুদ্ধাপরাধ কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের এ আওয়ামী কাজের সম্পর্কে দ্বিমত করার অর্থ হলো নিজেকে স্বাধীনতাবিরোধী বানিয়ে ফেলা। কেউ কেউ ভাবতে থাকলো, কোন দরকার ছাড়া জাহাঙ্গীর স্যার এখন এসব মন্তব্য করে কেন বিপদে পড়তে গেলেন? কি দরকার ছিলো, চুপ করে থাকলেই তো হতো।

মিশকাত দ্রুত অন্য এডমিনদের সাথে মেসেজ থ্রেডে আলাপ সেরে নিলো। আমেরিকা কানাডা থেকে বড়ভাইরা গ্রিন সিগনাল দিলো। সবাই একমত। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বুয়েট শিক্ষক প্রফেসর জাহাঙ্গীরকে ছাগু গালি দিয়ে বুয়েটিয়ানদের গ্রুপ থেকে ব্যান করে দেয়া হলো।

অনেক উত্তেজনা হলো সব মিলে। এড্রেনালিন রাশ থাকতে থাকতেই গভীর রাতে বন্ধুরা সবাই সেলিব্রেট করতে বের হয়েছে। সবাই অনেক ফুর্তিতে আছে। লাবিব একটা স্টিক বানিয়েছে খুব জবরদস্ত করে। এক টান দিতেই পিনিক এসে গেছে। রুবেল গলা খুলে গান ধরেছে, মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান। বাকিরাও গলা মেলাচ্ছে, ওদের অনেক আবেগ এসে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের একটা অনুভূতি সবার মাথায়।

নীরব নির্জন চানখারপুলের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই ওদের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগার আরিফ বললো, দোস্ত সবাই একটা জিনিস ভেবে দেখ, এইসব রাজাকারদের ফাঁসি দিয়ে আসলে লাভ নেই। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির শেকড় তুলে ফেলতে হবে। এখনো এই রাজাকারি মানসিকতার লোকজন আমাদের ক্লাশমেট আছে, টিচার আছে। সমাজের সব স্তরে এরা অনেক শক্তিশালী। এদের শিক্ষা দিতে হবে। বুঝিয়ে দিতে হবে, বাংলাদেশে এদের জায়গা নেই।

তখন দীপক বললো, এক কাজ করা যায়। ছাত্রলীগের পোলাপানকে লাগিয়ে দিতে হবে। এরা জাহাঙ্গীর স্যারকে গিয়ে সামনাসামনি থ্রেট দিলে তা ক্যাম্পাসে বিশাল ইমপ্যাক্ট করবে কিন্তু। সবাই একমত হওয়ার পর আর দেরী করার অর্থ হয়না। দীপক ওখান থেকেই কল করলো শুভ্রজ্যোতি দাদার নাম্বারে। দাদা তখন সেলিব্রেশনে, তবু মন দিয়ে শুনলেন সব। বললেন ব্যাবস্থা নেবেন। এরপর দীপক ফোন করে জানিয়ে রাখলো ছাত্রলীগের সেক্রেটারী কনককেও। কনক ভাই বললেন তিনি ফেইসবুকে সব দেখছেন। সব কিছু তিনি জানেন। চিন্তা করার কিছু নেই।

এরপরের ঘটনা ইতিহাস। পরদিন দুপুরে ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় দাড়িয়ে মিশকাত-দীপকরা দেখলো, শুভ্রজ্যোতি আর কনকের নেতৃত্বে লীগের ছেলেরা জাহাঙ্গীর স্যারের কলার ধরে টেনে তাকে অফিস থেকে বের করে আনছে। লাথি আর চড় দিতে দিতে পাঁচতলা থেকে নামানো, পঁচা ডিম আর মিষ্টি মাখিয়ে তাকে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরানো, শেষে পিটিয়ে ভিসি অফিসের সামনে রেখে যাওয়া। সবকিছু দেখলো পুরো ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীরা, শিক্ষকরা।

বাংলাদেশের নামকরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হলো প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের মার খাওয়ার মাধ্যমে। অপরাধ রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা। সুতরাং জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে গায়ের জোরে আগে বাড়লো বুয়েট, মগজের জোর পরাজিত হলো উচ্চশিক্ষার আঙিনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর ডাকাতদের গ্রাম হিসেবে দ্বিতীয় স্থান দখলে বুয়েট স্বার্থক ও সফল।

বুয়েট ভ্যানটেইজ পয়েন্টঃ এক

By: Aman Abduhu
জাহাঙ্গীর আলম সাহেবের মনটা বেশ বিষণ্ণ। বাংলাদেশে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মারা যায়। মানুষের মৃত্যুতে এতো বিষণ্ণ হওয়ার কিছু নেই। তবে কয়েক মিনিট আগে ফাঁসিতে নিহত কামারুজ্জামান সাহেবের জন্য একটু বেশিই খারাপ লাগছে। মানুষটাকে তিনি দেখেননি। কিছু ঘনিষ্ঠ পরিচিতদের কাছ থেকে শুনেছেন তার কথা। যেসব অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে এসবের মিথ্যা হওয়া নিয়ে, ট্রাইবুনালের অন্যায় ও অবিচার নিয়ে তার যথেষ্ট অনুযোগ আছে। কিন্তু কিছু করার নেই। একটা রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের মেকানিজম আর বেশিরভাগ মানুষ মিলে এমন অন্যায় করতে পারে, এসব ভেবে তার ভালো লাগছে না। অসহায় লাগছে খুব। আগামীকাল সকালে ক্লাশ নেই, তাই মন খারাপ কাটাতে রাতের বেলাতেও ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছেন বুয়েটের শিক্ষক প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলম। কিছু করতে পারছেন না। বারবার নিউজ সাইটগুলোতে খবরের আপডেট আর ফেইসবুকে বিভিন্ন লেখা আর মন্তব্য পড়ে যাচ্ছেন।

বন্ধু জামিলের কথা মনে পড়ছে। দুজন একসাথে পিএইচডি করেছিলেন জাপানে। পিএইচডি শেষে জামিল ওখানে থেকে যায়। হোন্ডা রোবোটিকস এ চাকরী নিয়ে। তার নিজের রেজাল্ট বরং জামিলের চেয়ে বেশি ভালো ছিলো। চাকরীর সুযোগ তার বেশি ছিলো। জামিলও অনেক বুঝিয়েছিলো। ভেবে দেখ দোস্ত, গাড়ি বাড়ি নিরাপত্তা শান্তি। আমরা গরীব দেশের মানুষ। আর কি চাই? এখানে নতুন অনেক কিছু শেখার সুযোগ আছে, কাজের সুযোগ আছে। মানসিক শান্তি পাবি। বাংলাদেশে গিয়ে কি করবি? ঐ দেশের মানুষ আর মানুষ নাই। আল্লাহ এখানে সুযোগ দিয়েছেন, থেকে যা দোস্ত।

জাহাঙ্গীর তখন মুচকি হেসেছিলেন। তার শুধু মায়ের কথা মনে পড়ে। প্রিয় বুয়েট ক্যাম্পাসের কথা মনে পড়ে। গ্রামের কথা মনে পড়ে। এমনকি হাতিরপুল বাজারের ডাস্টবিনের ময়লাগুলোকেও তার কাছে টোকিওর সাজানো গুছানো পার্কের চেয়ে সুন্দর মনে হয়। পরীক্ষার আগের রাতে রিভিশন শেষ করে ক্লান্ত হয়ে পলাশীর মোড়ে গিয়ে এক কাপ চা খেতে ইচ্ছা হয়। তার মনে হয়, পাবলিক ভার্সিটিতে জনগণের টাকায় পড়ালেখার দায় পুরোটা শোধ না হলেও কিছু অন্তত শোধ করা যাবে ওখানে পড়িয়ে। ওখানে চাকরী করে। ক্লাসরুমে বসে উম্মুখ তাকিয়ে থাকা, শিখতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদেরকে শেখাতে আর নতুন নতুন বিষয় জানাতে তার ভালো লাগে। সে এদেশে ফিরে এসেছিলো।

এলোমেলো এইসব ভাবনার সাথে জাহাঙ্গীর আলম সাহেব ফেইসবুকে বিভিন্নজনের বিভিন্ন লেখাও পড়ছিলেন। বুয়েটিয়ানদের একটা গ্রুপ আছে, নাম ‘বুয়েটে আড়িপেতে শোনা’। হঠাৎ গ্রুপের একটা পোস্ট ভেসে আসলো টাইমলাইনে। দীপু সরকার নামে এক ছাত্র কামারুজ্জামানের ফাঁসির খবর শেয়ার করেছে। তার নিচে চন্দ্রনাথ নামে আরেকজন উল্লাসের সাথে লিখেছে, জয় বাংলা। আধাঘন্টাও হয়নি ফাঁসি দেয়া হয়েছে। একজন ইসলামিক নেতার মৃত্যুতে হিন্দুদের এইসব লাফালাফি দেখে তার ভালো লাগছে না। তিনি জানেন এখন চুপ করে থাকাই ভালো। কিন্তু পারলেন না, ওখানে মন্তব্যে করে বসলেন ‘জয় মা কালী, জয় ইনডিয়া”।

ব্যাস, তান্ডব শুরু হয়ে গেলো। বুয়েটের অনেক ছাত্র-শিক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়লো ঐ পোষ্টে। শাহবাগ সমর্থক এবং শাহবাগি নিয়ে একটিভ ছাত্রদের ওখানে মারাত্বক সব মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে। সবাই জাহাঙ্গীর আলম সাহেবের ঐ মন্তব্য নিয়ে ব্যস্ত। তুমুল প্রতিক্রিয়া। মন্তব্য প্রতিমন্তব্য গালাগালি। তাকে স্বাধীনতার শত্রু, সাম্প্রদায়িক, বাংলাদেশে থাকা পাকি জারজ বানানো হলো। অন্যান্য শাহবাগিরাও প্রচন্ড চিৎকারে ফেটে পড়ছে। একজন শত্রু পাওয়া গেছে। একে ধ্বংস করার আনন্দে শাহবাগিরা দলবেধে উৎফুল্ল ভয়ংকর এখন। তারা অনেক দেশপ্রেমিক।

এক ঘন্টা ধরে জাহাঙ্গীর সাহেব এসব দেখলেন। ক্লান্ত লাগছে। অসহয়ায় লাগছে। তিনি মন্তব্য এডিট করে লিখলেন ‘জয় ইনডিয়া, জয় মাসল পাওয়ার, জয় নেসটি পলিটিক্স, জয় ইনজাস্টিস’। একটু পরেই হঠাৎ দেখলেন গ্রুপে মিশকাত আল-আলভী নামে এক শাহবাগি প্রগতিশীল ছাত্র, যে গ্রুপের একজন এডমিনও, সে পোস্ট দিয়েছে ‘কেপি টেস্টে সাফল্যের সাথে পাশ করার জন্য বুয়েট শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রুপ থেকে ব্যান করা হলো। ধন্যবাদ। ছাগুসব করে রব ফাঁসি হইলো।’

কিছুক্ষণ পর থেকে তিনি আর গ্রুপে ঢুকতে পারলেন না। বুঝতে পারলেন তাকে বুয়েটিয়ানদের ঐ গ্রুপে ব্যান করা হয়েছে। একজন প্রফেসর হয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে, সহকর্মী শিক্ষকদের কাছ থেকে এ ধরণের আচরণ পেয়ে তার বেশ মন খারাপ হলো।

পরদিন দুপুর দেড়টা। জাহাঙ্গীর আলম সাহেব ডিপার্টমেন্টে তার অফিসে বসে একটা জার্নালে চোখ বুলাচ্ছেন। দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো কয়েকজন ছাত্র। একটু চমকে উঠলেন তিনি। আবু সাইদ কনককে তিনি চেনেন। বুয়েট ছাত্রলীগের সেক্রেটারী। আর শুভ জ্যোতি টিকাদারকে তো সবাই চেনে। বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি। সাথে আরো সাত আটজন। কয়েকজন তার পরিচিত, বাকীরা অপরিচিত। তবে বুঝা যায় সবাই এখানকার ছাত্র। তিনি বললেন, কি ব্যাপার?

ছাত্রদের একজন চিৎকার করে বললো, শুয়েরের বাচ্চা, রাজাকারের বাচ্চা। কি ব্যাপার জিগাস? তিনি অবাক হয়ে গেলেন। কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।

এর মাঝেই শুভজ্যোতি এগিয়ে এসে তার কলার ধরে টেনে তাকে দাঁড় করিয়ে দিলো। গালে এসে পড়লো কনকের জোরালো থাপ্পর। বাকিরাও এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করলো। কাপড় ছিড়ে চুল এলোমেলো হয়ে বিশৃংখল অবস্থা। জাহাঙ্গীর সাহেব হঠাৎ এসবের মুখে পড়ে শকড হয়ে গেলেন। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। এর মাঝেই তাকে এই ছাত্রের দল মারতে মারতে আর ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে নিয়ে আসে। ডিপার্টমেন্টের আশেপাশের অফিস থেকে অন্য শিক্ষকরা আর ক্লাসরুম গুলো থেকে শত শত ছাত্রছাত্রী বের হয়ে এসেছে। সবাই চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কারো কিছু বলার সাহস নেই।

লজ্জায় অপমানে প্রফেসর জাহাঙ্গীর সাহেবের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তিনি বুঝতে পারছেন না ঠিক কি হচ্ছে। মার খেতে খেতে তিনি বুঝতে পারলেন শুভজ্যোতি তার মাথায় একটা ডিম ভেঙ্গে লেপটে দিচ্ছে। বাকিরাও প্রচন্ড উৎসাহিত হয়ে পড়লো। তারাও ডিম নিয়ে তার মুখে ভেঙ্গে লেপটে দিতে লাগলো। ডিমের কুসুম আর আঠালো রসে তার মুখ চুল নোংরা হয়ে একাকার একাকার। কনক একটা প্যাকেট থেকে আঠালো মিস্টি নিয়ে তার নাকে মুখে ঢুকিয়ে দিলো। আর হাসতে হাসতে বললো, এইটা তোর বাপ রাজাকারের ফাসির মিষ্টি। খা শুয়োরের বাচ্চা। রাশেদ নামের তারই আরেক ছাত্র কয়েকটা মিষ্টি তার পিঠে ডলে দিলো।

আনন্দ করতে করতে, তাকে লাথি আর থাপ্পড় দিতে দিতে সবাই মিলে তাকে পাঁচতলা থেকে নামাতে থাকলো। সিড়িতে ছাত্রছাত্রীরা এসব দেখে আঁতকে সরে দাড়াচ্ছে। অনেক শিক্ষক চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। পরবর্তী দশ পনেরো মিনিট যাবত তাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এ গ্রুপটা কুকুরের মতো মারতে মারতে ক্যাফেটেরিয়ার সামনের রাস্তায় নিয়ে গেলো। ওখানে দেখানো শেষ হলে রেজিষ্ট্রার বিল্ডিং এর সামনেও নিয়ে যাওয়া হলো।

শেষপর্যন্ত তাদের মনের সব আনন্দ মিটে গেলে, শুভজ্যোতি চিৎকার করে বললো, শুয়োরের বাচ্চা আর কোনদিন পারলে মা কালী অথবা ইনডিয়ার নাম নিস। তখন তোর জিহবা টেনে ছিড়ে ফেলবো। আজকে ছেড়ে দিলাম। এই চল। বাকী সবাইকে সে আদেশ দেয়ার পর সবাই উল্লাসে জয় বাংলা স্লোগান দিতে দিতে একাডেমিক বিল্ডিং এর দিকে চলে গেলো। আজ অনেক উত্তেজনা হয়েছে। এখন বোতল খুলে সেলিব্রেট করতে হবে। তার আগে হাত ধুতে হবে। ডিম মিস্টি রক্ত সব লেগে আছে হাতে। অবশ্য রাশেদ জিনসের প্যান্টে হাতটা মুছে নিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়েছে।

ছেড়া শার্ট আর বাকি সব ময়লাতে মাখামাখি হয়ে প্রফেসর জাহাঙ্গীর রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর রাস্তায় পড়ে আছেন। প্রচন্ড মার খেয়েও তিনি তেমন একটা ব্যাথা অনুভব করছেন না অবশ্য। শিক্ষক মানুষ, অপমানবোধ একটু বেশি প্রখর। অপমানের যন্ত্রণায় তার শরীরের ব্যাথা ঢেকে গেছে। এটা একটা ভালো দিক।

Correction: This Article previously said that  রাগিব হাসান নামের পুরনো শাহবাগি নেতাও বেশ আবেগঘন বয়ান দিয়ে যাচ্ছে। তার আর বুয়েটের শিক্ষক থাকার অধিকার নেই। তাকে বুয়েট থেকে বের করে দেয়া হোক। Mr Ragib Hasan protested that although he condemned the comments of Mr Zahangir, he never said he cannot be a BUET teacher anymore and he also vehemently protested the attack on Mr Zahangir. We apologize for the mis-attribution in the article.

Real Face of Danger: Harassing University Teacher in Bangladesh

By: Elora Zaman

Bangladesh, a tiny country, is going through a lot these days; so many things are happening there everyday that one can easily loose tracks. However, a particular event needs attention in my opinion. Harassing and beating a university teacher is not an insignificant thing, especially when it takes place in the context of current emotion-based political issues. Such a phenomenon would drive us to the dark age of ignorance and injustice. Such a task, if it will be left unattended and untreated, would only make a rotten society of us.

Ahmad Safa, a renowned Bangladeshi intellectual, once said, the nation is halted for one year if the university is closed for one day. Teachers are the architects of the society. So the question is, why they are prohibited from thinking freely, and expressing their opinion honestly and openly in current Bangladesh in the hands of the so-called freethinkers and liberals?

Good governance is strongly associated with good and proper education. Good educators are essential in the society for manufacturing good citizens and honest human beings, who will be capable of establishing and maintaining good governance. In our society, these educators are being harassed and beaten by political thugs, and those thugs get their shelter from the government. This is a greatest irony.

Last week, some students beat Jahangir Alam, a professor of the Civil Engineering Department in Bangladesh University of Engineering and Technology, BUET, in the campus, even inside a classroom. They were not content by verbally and virtually abusing him, they started beating him on the following day of his alleged crime. His crime was to express his opinion in a facebook group regarding the ongoing Tribunal of Crime against Humanity in Bangladesh, especially one of its verdicts that hanged a political leader on that night.

The students in our society are known for respecting their teachers, traditionally, and treating them with more honour than their own parents. This respect is considered as one of the major elements in our socio-psychological construct. Unlike Western culture, our eastern culture conventionally sees that the teachers have rights even to beat their pupils occasionally in order to teach them. That’s why it is extra-ordinarily shocking to see that one of those respected teachers are now being verbally and physically abused by the hand of their own students. Which is more shocking is to see that thousands of teachers in Bangladesh are silent today; they don’t protest and seek justice in this regard. All these are taking place only with the support of current oppressive regime of Awami League, led by the hardliner Prime Minister Sheikh Hasina. Now it has become a commonplace to see that our teachers are forced to act like obedient pets in front of the political leaders.

We can see that many oppressive rulers and monarchs treated the teachers with honour. Many kings are ill-reputed in the history for their deeds, but even they were usually respectful towards the teachers and the scholars. What is happening in current Bangladesh in the name of 1971 war-industry doesn’t know any bound in this regard. Now, every conscious soul is mistreated if they dare to express their opinion freely. Naturally, the educators have become a primary victim in that closed and fascist structure. Do those political thugs and leaders know the place of the educator class in a human society? Or they forget everything due to their physical power and dare to destroy the power of intellectual beings? I urge to everyone concerned about Bangladesh to be aware of the significance of this event and to protest against this with all means possible.

বাংলাদেশের গ্রেট ডিভাইডঃ ইতিহাসের প্রেক্ষিতে

by: Aman Abduhu
রোমান সম্রাজ্যে যখন গ্ল্যাডিয়েটরদেরকে বাঘ-সিংহের মুখে ছেড়ে দেয়া হতো, অথবা নিজেদের মধ্যে মৃত্যু পর্যন্ত মারামারি করতে হতো, তখন কলোসিয়াম বা স্টেডিয়ামে জড়ো হওয়া হাজার হাজার দর্শক সেইসব বন্য মারামারি দেখে চরম আনন্দে ফেটে পড়তো। এরা অন্যায়ভাবে মারা যাচ্ছে, না কি সম্পদ বা খ্যাতির জন্য এ কাজ করছে, না কি অত্যাচারী সম্রাটের ইচ্ছার সামনে অসহায় হয়ে এরেনাতে গিয়ে দাঁড়ানো ছাড়া তার আর কোন গত্যন্তর নেই, এসব কোন ধর্তব্য বিষয় ছিলো না মানুষের কাছে। মানুষ বিভৎস মারামারি দেখতে ভালোবাসতো। একজন আরেকজনকে খুঁচিয়ে মেরে ফেলছে, অথবা কোন পশু এসে একটা মানুষকে কামড়ে কামড়ে ছিড়ে নিচ্ছে এসব দেখতে তারা ভালোবাসতো। বাস্তবতার যাতাকলে পিষ্ট মানুষজনের কাছে এগুলো ছিলো বিনোদন, কিছুটা বাঁচার আনন্দ। যত বেশি নিষ্ঠুরতা তত বেশি আনন্দ। এসব দেখতে দেখতে তারা সোৎসাহে মহাউল্লাসের চিৎকারে ফেটে পড়তো। চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার মানুষের গর্জনে আকাশ বাতাস ভরে যেতো। আর প্রধানমন্ত্রী কিংবা সম্রাটের সিংহাসনে বসে ক্যালিগুলা, নিরো অথবা টাইবেরিয়াসের মতো অত্যাচারী বিলাসপ্রবণ সম্রাটের দল মুচকি মুচকি হেসে আনন্দ নিতো। সবশেষে বুড়ো আঙ্গুল নিচু করে হত্যার ইশারা করতো, অনুমতি দিতো। তখন স্পার্টাকাস, ক্রিক্সাস অথবা ভেরাসের মতো গ্ল্যাডিয়েটররা হয় মারতো, অথবা মরে যেতো। সম্রাট হয়তো মহাউত্তেজনা শেষে হেলান দিয়ে বসে সুরাপাত্রে একটা চুমুক দিতেন। ক্ষমতার স্বাদ বড় মধুর।

সেই প্রাচীন রোমের সাথে আজকের তথাকথিত আধুনিক যুগের বাংলাদেশের তেমন বেশি একটা তফাৎ নেই। তখনও বেশ প্রতিষ্ঠিত বিচারব্যাবস্থা ছিলো, আনুষ্ঠানিক রায় দেয়া হতো। এখনও ট্রাইবুনালের নামে মোটামোটি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। স্বাক্ষী মিথ্যাবাদী অথবা স্বাক্ষী নেই কিংবা জাল দলিলপত্র অথবা বাস্তবে বিবাদী ছিলো অন্য কোথাও, এসব বিবেচ্য বিষয় না। বিষয় হলো মানুষের দাবী পুরণ। মানুষ বাস্তবে দেখে বাংলাদেশ একটি ব্যার্থ অথর্ব রাষ্ট্র, দুর্নীতি সন্ত্রাস শ্রেণীবৈষম্য অনায্যবন্টন নিরাপত্তাহীনতা সব মিলে দেশটা দিন দিন পাতালে যাচ্ছে। সুতরাং মানুষের একটু রিলিফ দরকার। দেশ নিয়ে গর্বের জায়গাতে মলমের প্রলেপ দেয়ার জন্য ফাঁসি দরকার। এভাবে তথাকথিত কলংকমুক্তির সান্তনা দরকার।

দুইহাজার বছর পরে এসে এখন রোমান সাম্রাজ্য নিয়ে অনেক বই অনেক মুভি হয়। ওখানে কোন গ্ল্যাডিয়েটর অত্যাচারের শিকার হলে দেখানো হয়। সম্রাট নিরো অথবা কমোডাস এর মতো রাজাদের অত্যাচারের কাহিনী দেখানো হয়। তাতে অবশ্য সেইসব গ্ল্যাডিয়েটর অথবা রাজাদের কি আসে যায় আমি বুঝি না। তারা যারা মারার মেরেছে, যারা মরার মরেছে, যারা অত্যাচার শোষণ করার করে গেছে। এখনও যার ফাঁসি হয় সে তার জীবনে যা করার করে গেছে। যে ফাঁসি দেয় সেও গরীব দেশের গরীব মানুষকে ভুখা রেখে রাজকীয় বিলাস করে যায়। আর আমরা গরীবের দল সেই ফাঁসি কখন দেয়া হবে, কিভাবে দেয়া হবে, এখনো দেয়া হচ্ছে না কেন, লাশ নিয়ে কি হবে, কে ভি চিহ্ন দেখিয়ে আঙ্গুল দিয়ে চেতনাকে সমস্যাগ্রস্থ করে দিলো, কে সাহসী হয়ে আদর্শের জন্য ত্যাগ স্বীকার করলো আর কে কলংকমুক্তিজনিত পুলক পেলো এইসব নিয়ে মেইনস্ট্রিম আর অল্টারনেটিভ মিডিয়াতে সেই দুইহাজার বছর আগের প্রাচীন রোমের উন্মাদ জনগণের মতো হিস্টিরিয়াগ্রস্থ চিৎকার করে যাই।

‘রাম যদি হেরে যেতো রামায়ণ লেখা হতো/ রাবণ দেবতা হতো সেখানে’।

আসল কথা একটাই। সময় একটা চলমান প্রক্রিয়া দুনিয়ার বাকী সব থেমে গেলেও যেইটা কখনো থামেনা। সুতরাং একজন মানুষের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত অথবা একটা প্রসেসের সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে ব্যর্থ অথবা সফল বলার পুরোপুরি সুযোগ আসে না। এবং সে মূল্যায়নে যে চলে গেছে তার কিছু আসে যায় না। কেউ টাইবেরিয়াসের মতো আটাত্তর বছর বয়সে গিয়ে মরে, একজন অত্যাচারী রাজার পক্ষে যা করা সম্ভব তা করে। অথবা কেউ নিরোর মতো মাত্র তের চৌদ্দ বছর রাজত্ব করার সুযোগ পায় আত্বহত্যার আগে, তবে এই অল্প সময়ে যা করে তাতেই অত্যাচার অনাচারের ইতিহাসে অমর হয়ে যায়। কোন গ্ল্যাডিয়েটর দীর্ঘদিন এমফিথিয়েটারে রাজত্ব করে। কেউ যোগ্যতা অথবা ভাগ্যের মারপ্যাচে পড়ে অল্পদিন পরে শেষ হয়ে যায়। ইতিহাস তাকে কিভাবে বিচার করলো বা না করলো তাতে ঐ মানুষটার কিছু আসে যায় না। সে নিজের কাছে নিজেকে কিভাবে বুঝে নিলো, উপভোগ করলো না কি হতাশ হলো, ততটুকুই তার প্রাপ্তি। আর আমরা আমজনতা থেকে যাই বিভিন্ন ব্যাখ্যা আর অর্থহীন লম্ফঝম্ফ নিয়ে ব্যস্ত।

মানুষের সমাজে জনগণ কেবলমাত্র তখনই মূল্যবান হয়ে উঠে যখন বিপ্লব সংঘটিত হয়। যখন মানুষ তার অমিত শক্তি নিয়ে জেগে উঠে সব সাজানো এমফিথিয়েটার তছনছ করে দিতে পারে। আর বাকী সব কিছু উপলক্ষ এবং পার্শ্বপ্রসঙ্গ।

‘বিশ্বকাপ এবং বিরোধীদলের আন্দোলন’— শিরোনামে থাকবার লড়াই

world cup1

by zainuddin sani

বিএনপির জন্য সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে। না, সরকারী কঠোর মনোভাব কিংবা জ্বালানো পোড়ানো নিয়ে তৈরি নেতিবাচক প্রচারণাকে সমস্যা বলছি না। সমস্যা তৈরি করবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এতোদিন পর্যন্ত যেভাবেই হোক, বিরোধী দলের আন্দোলন ব্যাপারটা সংবাদের শিরোনামে ছিল। নেত্রীর গৃহবন্দী অবস্থা কিংবা পুত্রের মৃত্যু, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করা— কোন না কোনভাবে টিভি চ্যানেল আর পত্রিকার লীড নিউজে তাদেরকে রেখেছিল। টেলিফোন আলাপ থেকে শুরু করে সরকারী বক্তব্য কিংবা পাতি নেতাদের হুঙ্কার, সব কিছুই সাহায্য করছিল তাঁদের প্রচারণায়। শিরোনামে রাখছিল বর্তমান পরিস্থিতিকে। বোঝা যাচ্ছিল, দেশে এখন স্বাভাবিক অবস্থা চলছে না। হরতালে রাস্তায় প্রচুর বাস কিংবা প্রাইভেট গাড়ী দেখা গেলেও, শিরোনামে থাকতো ৭২ ঘণ্টা হরতাল।

খুব দ্রুত পরিস্থিতি না পাল্টালে, সেখানে অচিরেই ছেদ পড়বে। এবং বেশ ভালভাবেই পড়বে। শিরনাম হতে তখন টক্কর দিতে হবে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সঙ্গে। ক্রিকেট পাগল এই জাতির জন্য তখন, বিরোধী দলের একঘেয়ে আন্দোলনের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় বিষয় হবে, ক্রিকেট। সঙ্গে যদি যোগ হয় বাংলাদেশের জয়, তবে তো কথাই নেই। বাঙালির উন্মাদনা তখন হবে দেখার মত। আফগানিস্তানের সঙ্গে হারলেও, শিরোনাম চলে যাবে ক্রিকেটের দখলে। তখন বাঙালির গালিগালাজও হবে আকাশচুম্বী। ভারত পাকিস্তান খেলা নিয়েও যে বাজার গরম হয়ে উঠবে, তা নিয়েও সন্দেহ নেই। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, এই উন্মাদনা চলবে পুরো দেড় মাস, মার্চের শেষ নাগাদ।

যেভাবে একটা দুটা ঝলসানোর খবরে আমরা অভ্যস্ত হতে শুরু করেছি, মনে হয় না, খুব মর্মান্তিক কিছু না ঘটলে, তা তখন শিরোনামে আসবে। শুনতে খারাপ লাগলেও, এটিই অমানবিক সত্য— এই জ্বালাও পোড়াও আর বার্ন ইউনিটের দগ্ধ মানুষগুলোকে দেখতে দেখতে আমরা ধীরে ধীরে অভ্যস্থ হতে শুরু করেছি। এখন অনেক সহজেই আমরা পাতা উল্টিয়ে পরের খবরে চলে যাই। আর তেমনটা হতে শুরু করলে, সম্পাদক সাহেবরাও আর সেগুলোকে শিরোনামে রাখবেন না। নেতিবাচক হোক আর ইতিবাচক হোক, বিরোধী দলের আন্দোলনের প্রচারণায় তখন ছেদ পড়বে।

শিরোনাম করতে আমরা কতোটা মরিয়া তাঁর জলজ্যান্ত প্রমাণ এসব ঝলসানো নিয়ে শুটিং, কিংবা খাওয়া থেকে উঠিয়ে ছবির জন্য পোজ দেয়ানো। অসভ্য আচরণ মনে হলেও, খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা এটি। যতই তিরস্কার করি, বিশ্বজিতের কোপানোর দৃশ্য যে সাংবাদিক বা ভিডিওম্যান খুব ভালভাবে ধারণ করতে পেরেছে, সে কিন্তু সেদিন তাঁর সম্পাদকের বাহাবা পেয়েছে। চ্যানেলগুলোর ভেতর সেদিন ছিল, সেই দৃশ্য দেখানোর প্রতিযোগিতা। আগুনে পোড়ানো নিয়েও আমার মনে হয় না ব্যতিক্রম হচ্ছে। পোড়ানো নিয়ে একদিকে যেমন বিরোধীদলকে সমানে ধিক্কার জানিয়ে একরাশ খবর ছাপা হচ্ছে, ঠিকই আবার সেই খবরগুলোকে শিরোনাম করা হচ্ছে। সেসব আক্রান্তদের নিয়ে হৃদয় বিদারক রিপোর্টিং যেমন হচ্ছে, আক্রমণকারীদের চোদ্দ গুষ্টি যেমন উদ্ধার হচ্ছে, তেমনি এটাও সত্য, সেই রিপোর্ট ছাপানোর সময় নৃশংস একটি ছবির খোঁজও হচ্ছে। আর যেসব ফটোগ্রাফার সেসবের ছবি যারা জোগাড় করছেন, ‘গ্রেট জব’ বলে একটা পিঠ চাপরানি কিন্তু তারাই পাচ্ছেন।

যা বলছিলাম, এই মুহূর্তে আন্দোলনের সাফল্যের মূলমন্ত্র হচ্ছে, শিরোনামে থাকা। যেভাবেই হোক, যত নৃশংস কাজ করেই হোক, শিরোনামে থাকা চাই। প্রথম খবরটাই যেন হয়, বিরোধী দলের আন্দোলন সংক্রান্ত। দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় লিড হওয়া মানেই, পিছিয়ে পড়া। আর একবার পেছনের পাতায় চলে গেলে, আন্দোলন শেষ। ফলে এখন ২৪ ঘণ্টার হরতাল আর ডাকা হচ্ছে না। কারণ এতো ছোট হরতাল আর এখন শিরোনাম না। ৭২ ঘণ্টার হরতালকেও শিরোনাম পেতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। বরং শিরোনাম হয়, কিংবা মনে প্রশ্ন জাগে, সপ্তাহের বাকী দিন বাদ দিল কেন? হরতালের ডাক শিরোনামে ফিরে আসে, যখন হরতাল প্রলম্বিত করে ৬ দিন করা হয়।

শান্তিপূর্ণ হরতাল, নিঃসন্দেহে বিরোধী দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিবে। প্রচুর গাড়ী চলছে এমন কোন হরতালের ছবি পরের দিন পত্রিকায় ছাপা হওয়া বিরোধী দলের জন্য একটি অশনি সংকেত। কোন হরতালে ভাঙচুর না হলে, ‘এটা কোন হরতালই হয়নি’— ক্যাডাররা রাস্তায় নেই, জনসমর্থন নেই, বিরোধী দল আন্দোলন তৈরিতে ব্যর্থ। অবরোধ, হরতালে দেশের কি অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, তা নিয়ে কেউই কিছু বলছেন না। অবরোধের কারণে চাষীরা কি মর্মান্তিক অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে, কিভাবে সস্তায় তাদেরকে পণ্য বিক্রি করে দিতে হচ্ছে, তা নিয়ে কেউ কথা বলছেন না। কিংবা বললেও, শিরোনাম করছেন না। কারণ, সেখানে নৃশংসতা নেই বা পাবলিক খাবে না।

বিএনপির গেমপ্ল্যান ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আপাততঃ লাগাতার হরতাল আর সপ্তাহ জুড়ে হরতাল দিয়েই কাজ চালাচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এসএসসি পরীক্ষা পেছানো, এবং সেই ব্যাপারটা শিরোনাম হওয়া, আপাততঃ এটাই তাঁদের টার্গেট। পরীক্ষা হতে না পারলে, সরকারকে সবাই যত অথর্ব মনে করবে, পরীক্ষা হতে পারলে বিরোধী দলকে ততোটাই অকর্মণ্য ভাববে। সরকারী দল চাইছে, জনগণ ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে বিরোধী দলের ওপর ক্ষেপে উঠুক আর বিরোধী দল চাইছে, সরকারী দলকে কিংবা রাষ্ট্রকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে। আর এই জেদাজেদিতে কে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা নিয়ে কারোরই মাথা ব্যাথা নেই। এদেশের সরকার এবং বিরোধী দুই দলেরই যেহেতু দূরদৃষ্টি বলে কিছু নেই, তাই ধরে নেয়া যায়, এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে কেউই এগিয়ে আসবে না।

সরকার যেভাবে শুক্রবারে পরীক্ষা নিয়ে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে, মনে হচ্ছে শিরোনামে থাকবার জন্য অচিরেই হয়তো শুক্রবারেও হরতাল আসবে। জ্বালাও পোড়াও যদিও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তারপরও শিরোনামে টিকে থাকবার লোভে, সেই কাজেও বিরাম আসবে না। হয়তো নিজের নেতা কর্মীকে দিয়ে না করিয়ে, ভাড়াটে সেনার আমদানী হবে। দরদ দেখানো বুদ্ধিজীবীদের নড়াচড়া শুরু হয়ে গেছে। তাঁদের বক্তব্য নিজেদের পক্ষে না গেলে, মনে হয় না তাঁদের সঙ্গে কোন দল সহযোগিতা করবে।

এই মুহূর্তে যে ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ গেম চলছে, সেখানে বিরোধী দলের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে আসবে, ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আর সে কারণে শিরোনামে থাকবার সুযোগ হাতছাড়া হলে, হয়তো তখন আলোচনায় যোগ দিতে রাজী হবে বিরোধী দল। সরকারী দলও সুযোগটা নেবে বলেই ধারণা। আলোচনা আলোচনা খেলা খেলে যদি কিছু সময় পার করা যায়, তবে আন্দোলনে ভাটা পড়বে। আর একবার আন্দোলনে ভাটা পড়লে, বিরোধী দলের পক্ষে আর উঠে দাঁড়ান সম্ভব হবে না। সামনে কিছুদিনের ভেতরই বিরোধী দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আন্দোলন কিভাবে আর কতদিন চালাবে। সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নের সমাধান করতে হবে তা হচ্ছে, বিশ্বকাপের সময় কিভাবে বিরোধীদল শিরোনামে থাকবে।

কবে প্রভুরা ঠিক করবেন, ‘কে হবে আমাদের প্রভু।‘

download (2)

by zainuddin sani

প্রায় মাস খানেক হতে চলল, দুই পক্ষের জেদাজেদির কারণে দেশ স্থবির হয়ে আছে। একে অপরকে হারাতে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু সাধন নিয়ে আসছে। এই সিরিজে অংশ হিসেবে, বাজারে নতুন এসেছে এক পক্ষের নেত্রীর ফোনালাপের অডিও। সেখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে বেশ কর্কশ ভাষায় নির্দেশ দেয়া আর রাস্তায় থাকবার তাগিদ দেয়া। বিতর্ক দেখা দিয়েছে, ‘রাস্তায় থাকা’ মানে কি—তা নিয়ে। কারো মতে এটাই নাশকতার নির্দেশ, কারো মতে এটি আন্দোলন করার নির্দেশ। আর হুকুম দেয়াটার সাথে মেলানোর চেষ্টা হচ্ছে ‘জেনারেলের স্ত্রী’ ব্যাপারটাকে। ফোনালাপগুলো কিভাবে ইউটিউবে আসল, তা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হচ্ছে না। ধরেই নেয়া হচ্ছে, কোন না কোন ভাবে সরকার এর সঙ্গে জড়িত।

কোকোর মৃত্যুর পরে, কোকোর স্ত্রী এবং দুই কন্যা বাংলাদেশে এসেছিলেন। কিছুদিনে আগে, এক পক্ষের নেত্রীকে একা রেখে তাঁরা ফিরে গেছেন। কোকো কন্যা এবং তাঁর স্ত্রীর মালয়েশিয়া ফেরত যাওয়া নিয়েও বেশ কটাক্ষ চলছে। কটাক্ষের কারণ, তাঁদের পরীক্ষার কারণে তাঁরা গিয়েছে। আর এদেশের এসএসসি পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে। আর তা হয়েছে একপক্ষের নেত্রী বা তাঁদের দাদীর ডাকা হরতাল আর অবরোধের কারণে। ব্লগ, ফেসবুক আর মিডিয়ায় চলছে ব্যাপারটাকে কতোটা মশলা মাখিয়ে উপস্থাপন করা যায়। ‘নিজের নাতনীদের পরীক্ষা দেয়ার জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন আর দেশের লাখ লাখ পরীক্ষার্থী যে পরীক্ষা দিতে পারছে না, সেদিকে খেয়াল নেই।‘

খেলা কে জিতছে, তা এখনও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, খেলা ধীরে ধীরে ক্লাইমেক্সের দিকে এগোচ্ছে। একজন বলছে আর এক সপ্তাহ। অন্যদিকের বক্তব্য হচ্ছে ১৩ই ফেব্রুয়ারী। ফেসবুক, ব্লগ আর পত্রিকার কলামে এখন রীতিমত চামচাগিরির প্রতিযোগিতা চলছে। আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের আপাততঃ মনোযোগ ‘পেট্রোল বোমা’ আর অন্যদিকের মনোযোগ নেত্রীর ওপর চালানো নির্যাতন। একদিকের ইউএসপি হচ্ছে ‘পোড়া লাশ’ আর অন্যদিকে ‘নেত্রীর বিদ্যুৎ সংযোগ’। কোনদিকে জনসমর্থন বেশি, তা নিয়েও বুদ্ধিজীবী মহল নিজ দলের গুণ গাইছেন। এককথায় পরিস্থিতি এখন, ‘ক্লোজ টু ফিনিশ’ পর্যায়ে রয়েছে।

একটা ব্যাপারে অবশ্য সবাই একমত, সমাধান এদেশ থেকে আসবে না। আসবে ওপর থেকে। এতদিন এদেশের প্রভুত্বের দ্বায়িত্বে ছিল একটি দেশ। সম্প্রতি সেই দেশটি অপর একটি দেশের সান্নিধ্য লাভের জন্য বেশ উৎসুক। আর এই সান্নিধ্য পেতে যদি তাঁদের হাতে বাংলাদেশকে তুলেও দিতে হয়, দেশটি ‘না’ বলবে না। এমনই যখন অবস্থা, সেই সময় ঘটল মজার এক ঘটনা। ঘটনাটা খুব সাধারণ হলেও, মজার বলছি কারণ, এই নিয়ে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের লম্ফঝম্ফ ছিল দেখার মত। মানসিকভাবে আমরা যে কত অনায়াসে এই দেশগুলোর প্রভুত্ব মেনে নিয়েছি, তা এতো স্পষ্টভাবে বুদ্ধিজীবীরা আগে বলেননি।

প্রভু হিসেবে পরিচিত, আমাদের পাশের দেশের পররাষ্ট্র সচিবের বরখাস্তের পরে মনে হয়েছিল, এক পক্ষের জয় এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। মনে হয়েছিল, তাঁর চাকরী যাবার একমাত্র কারণই হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর নগ্ন হস্তক্ষেপ কিংবা অপর পক্ষকে জয় পাইয়ে দেয়া। আমেরিকার বিরুদ্ধে গিয়ে এদেশের ৫ই জানুয়ারীকে সমর্থন করার খেসারত দিতে হয়েছে তাঁকে। তাঁরা ধারণা করছেন সম্প্রতি ওবামা এসে সেই প্রভু দেশকে ধমক দেয়ার কারণেই সচিব মহাশয়কে অফিস খালি করতে হয়েছে। এখন ধমক খাওয়ার পালা এদেশের প্রধানমন্ত্রীর। নরেন্দ্র মোদীর বিজয়ের পরে এই সম্ভাবনাই দেখেছিল এক পক্ষ। আর তা এখন সত্যি হতে চলেছে। অতএব, সেই পক্ষের জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বুদ্ধিজীবীদেরও সময় হয়ে গেছে, দল পাল্টাবার কিংবা বুঝে শুনে কথা বলবার।

ভারতীয় কিছু টিভি চ্যানেল আর ভারতীয় ব্লগেও এই বরখাস্ত নিয়ে আলাপ চলছে। তবে সেখানে ঘটনার ব্যাখ্যা বেশ অন্যরকম। মাত্র দুদিনের জন্য তিনি এই চাকরি হারিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীর কাজ করার যে স্টাইল, সেই অনুসারে তিনি চান সব এলাকায় নিজের বিশ্বস্ত লোক। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য তাঁর নির্বাচিত এই বিশ্বস্ত লোকটি হচ্ছেন সুব্রমনিয়াম জয়শঙ্কর। এই ভদ্রলোককে, মোদীর পূর্বসূরি, মনমোহন সিংও পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে চেয়েছিলেন। কিন্তু সোনিয়া গান্ধীর ইচ্ছার কারণে তা হয়নি। তাঁকে নিয়োগ দিতে হয় সুজাতা সিংকে। আর সেখানকার নিয়ম অনুসারে, পররাষ্ট্রসচিবের কার্যকাল হচ্ছে ২ বৎসর। এই বছর, জুলাই মাসে তাঁর সেই মেয়াদ শেষ হত। হয়তো তিনি সেই সময় পর্যন্তই থাকতেন। তবে সমস্যা হয়ে দাঁড়াল জয়শঙ্করের বয়স। আর মাত্র দুইদিন পরেই তাঁর সরকারী চাকুরীর বয়সসীমা শেষ হয়ে যাবে। তাই এই মুহূর্তে তাঁকে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগটি না দিলে, তা আর দেয়া সম্ভব হত না। তাই ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মত কোন পররাষ্ট্রসচিবকে বরখাস্তের ঘটনা ঘটল।

কিছু আভ্যন্তরীণ রাজনীতিও কাজ করেছে। ভারতীয় জনতা পার্টিতে চলা দলীয় কোন্দলের এক অংশে রয়েছে নরেন্দ্র মোদী আর অন্য অংশে রয়েছে লাল কৃষ্ণ আদভানী। আদভানী লবি এই মুহূর্তে রয়েছে বেশ কোণঠাসা অবস্থায়। সেই লবী থেকে মন্ত্রীসভায় সুযোগ পাওয়া নেত্রী হচ্ছেন, সুষমা স্বরাজ। আর তাঁর দায়িত্বে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মোদী সাহেব, অনানুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন। সাম্প্রতিক হয়ে যাওয়া সকল বিদেশ সফরে, সুষমা স্বরাজের চেয়ে বেশি দেখা গেছে নরেন্দ্র মোদীকে। অনেকেই বলা শুরু করেছেন, সুষমা হচ্ছেন, ডামী। এবার মোদী আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বসাতে চাইছেন, নিজের বিশ্বস্ত লোক। যেন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সব সিদ্ধান্তের খবরই তিনি পান। কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্র্যাক্টিক্যালি তাঁর নির্দেশেই চলে।

ভারতীয় রাজনীতিতে ভবিষ্যতে কি হবে, তা এই মুহূর্তে বোঝার উপায় নেই। তবে আপাততঃ বিজেপি এবং ভারত সরকার পুরোটাই মোদীর ইচ্ছেমত চলছে। দলীয় নীতি কিংবা সিদ্ধান্ত বলে কিছু নেই। তাঁর কথাই, শেষ কথা। আর তাঁর ইচ্ছায়ই সুজাতা সিংয়ের চাকরি ‘নট’ হয়েছে। বাংলাদেশ কিংবা ওবামা খুব বড় কোন ইস্যু এখানে ছিল না। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশ প্রশ্নে কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না—এমন কথাও কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। সব চোখ এখন তাই নতুন পররাষ্ট্রসচিবের দিকে। তিনি কি বক্তব্য দেন বাংলাদেশকে নিয়ে।

ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, আমাদের ভবিষ্যৎকে আমরা অনেক আগেই অন্য প্রভুর হাতে সঁপে দিয়েছি। এখন আর তা হয়তো আমাদের হাতে নেই। আমরা নামে গণতন্ত্র হলেও, এখানে কে ক্ষমতায় বসবেন, কে যাবেন, সেই সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই। আমাদের কাজ শুধু আগুনে পোড়া, সরকারের ‘এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে’ শোনা, বুদ্ধিজীবীদের দলীয় ব্যাখ্যা শোনা আর দিন গোনা, কবে প্রভুরা ঠিক করবেন, ‘কে হবে আমাদের প্রভু।‘

‘আচ্ছা বলো, কোন অ্যানিম্যাল সবাইকে উঠাতে পারে?’

download (2)

by zainuddin sani

প্রসঙ্গটা নিয়ে লিখবো না ভেবেছিলাম। এমনই একটি ব্যাপার, দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর তেমন কিছু বলার নাই। তবে এদেশের রাজনীতিবিদদের যা মেধা এবং যে মনোবৃত্তি, তাতে ব্যাপারটা নিয়ে যে রাজনীতি হবে, তা ভেবেছিলাম। কতোটা হবে আর কতদিন ধরে হবে, সেটা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চিত ছিলাম। এই ব্যাপারটা নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করতে কবে নাগাদ আমাদের রুচিতে বাঁধবে, তা নিয়েই ছিল আমার সবচেয়ে বেশি শঙ্কা। আমার শঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে এখনও দুই দল এবং তাদের চামচা বাহিনী যথারীতি কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করে যাচ্ছেন।

আমাদের যে মন মানসিকতা এবং দলকানা স্বভাব, তাতে ব্যাপারটা এতো সহজে থামবে বলে মনে হচ্ছে না। অন্ততঃ যতদিন পত্রিকা খবরগুলোকে ঝাল মশলা সহযোগে পরিবেষণ করছে, ততদিন তো অবশ্যই না। মনে হচ্ছে, খবরটি এখন জনপ্রিয়তার দিক থেকে ‘যে পাঁচটি কথা স্ত্রীকে কখনই বলবেন না’ জাতীয় খবরের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। শুধু প্রত্যাশা করেছিলাম, দুই দলে অন্ততঃ কিছু বুদ্ধিমান লোক আছেন, হয়তো তাঁরা ব্যাপারটা আরও নোংরা হওয়ার হাত থেকে বাঁচাবেন। দেখতেই পাচ্ছেন, আমার আশার গুড়ে এই মুহূর্তে বালি কিচকিচ করছে। প্রায় প্রতিদিনই দুই দলের দলকানা সমর্থক আর নেতা কর্মীদের অতি উৎসাহী বক্তব্যে এই মুহূর্তে ব্লগ, ফেসবুক আর পত্রিকা ভাসছে।

ভাবছি, এই ঝগড়ার ভেতর প্রবেশ না করে, বরং আজকে বাড়িতে কি রান্না হয়েছে কিংবা পুত্রকে হোম ওয়ার্ক করাতে গিয়ে কি কি সমস্যায় পরেছি তা নিয়ে একটা কলাম লিখি। কিংবা আজকে বুয়ার সঙ্গে সহধর্মিণীর যে বচসা হয়েছে তার বিবরণ। কিছুদিন আগেও গিন্নির ধারাবাহিক নালিশ পর্ব চলছিল। বিষয় ছিল সন্তানদের স্কুল শেষে, বছর শেষে পাওয়া ছুটিতে এবার কারা কারা কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছে তাঁদের লিস্টি। সঙ্গে আরও যোগ হচ্ছিল সেই আনন্দ ভ্রমণের সময় তাঁরা কি কি আনন্দ করেছে তার বিবরণ। সেই অনুযোগ এখন থেমেছে। এখন পরিস্থিতি বেশ উল্টো। এখন আমার বুদ্ধিমত্তার জয় জয়াকার চলছে। কারণ ইদানীং তিনি যেসব গল্প শুনছেন সেখানে আনন্দ ভ্রমণের চেয়ে ভোগান্তির গল্পই বেশি। বেশ কয়েকজন অবরোধের কারণে সেখানে আটকেছে। এখন অবশ্য তার কণ্ঠে আনন্দের বন্যা, ‘ঠিক হয়েছে।‘ সঙ্গে যোগ হচ্ছে, ‘আমাদেরও যাওয়ার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু দেশের অবস্থা দেখে যাইনি। এখন দেখছি ভালোই করেছি।‘ টপিক হিসেবে এটাও মন্দ না।

পত্র পত্রিকা দেখে মনে হচ্ছে, এদেশে সত্যিকার অর্থেই ‘স্টোরি’র আকাল চলছে। একটা কোন কাহিনী পেলে তা নিয়ে টানা হেঁচড়া করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। সেই কবে থেকে যে শুরু হয়েছে ‘যে পাঁচটি কথা কখনও প্রেমিকাকে বলবেন না’ জাতীয় লেখা— বোধহয় পত্রিকাগুলো নিজেও বলতে পারবে না। থামাথামির নাম তো নেইই, বরং প্রতিদিন এই জাতীয় লেখা এখন অত্যাবশ্যকীয় হয় দাঁড়িয়েছে। অবিরাম এই ধরনের খবরের ‘সাপ্লাই’ দেখে মনে হচ্ছে এসব খবর পাবলিক বেশ ভালোই খাচ্ছে। তাই এসব তথ্যের সম্প্রচার বেশ বিরামহীন ভাবেই চলছে।

প্রায় প্রতিটি অনলাইন পত্রিকা খুললে, এজাতীয় কিছু লেখা পাওয়া পাওয়া যাবেই। লেখাগুলো যে নিজেদের রিসার্চ প্রোডাক্ট, তা কিন্তু না। অনলাইনে প্রচুর ওয়েব সাইট আছে, যেখানে এধরনের প্রচুর তথ্য গিজগিজ করছে। সেসব থেকে বেছে বেছে কিছু তথ্য অনুবাদ করে এনে হাজির করা হচ্ছে। নর নারীর প্রেম কিংবা সম্পর্ক সম্বন্ধীয় কথাবার্তা গুলোই বেশি অনুদিত হচ্ছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত কিছুটা যৌন নির্দেশক তথ্য আসছিল। ইদানীং সেখানে যৌনতার মিশাল বাড়ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে, আমরা আসলে এগুলোই চাই। গুগলে পর্ণ সার্চে আমরা এখনও পাকিস্তান থেকে পিছিয়ে আছি। বোধহয়, খুব বেশি দেরী হবে না, ওদেরকে পিছে ফেলতে।

আসলে খবর হিসেবে আমরা প্রত্যাশা করে থাকি দুটো ব্যাপার। হয় ঝগড়াঝাটি, মারামারি, কাটাকাটি এসব আর নয়তো যৌনতা। কোকোর মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে যেভাবে দুই দলের সাঙ্গপাঙ্গরা মেতে উঠল, তা দেখে মনে হচ্ছে, সবাই বেশ খুশি। ঝগড়ার বিষয় পাওয়া গেছে। এই দল ঐ দলকে গালি দিচ্ছে। ঐ দল অন্য দলকে অভদ্র বলছে। বুদ্ধিজীবীরা সারাংশ আবিস্কার করছে। ‘কার দোষ বেশি’। কোথায় যেন একধরনের আনন্দ বিরাজ করছে সবার মনে। ‘লাগুক ঝগড়া, মজা দেখা যাবে’। অচিরেই হয়তো আরেকটা লেখা বাজারে আসবে, ‘যে পাঁচটি কারণে একজন মানুষ ঝগড়া দেখে আনন্দ পায়।‘

আরও একটি খবর আসা উচিৎ। ‘যে পাঁচটি কারণে বাসায় পুরনো খাবার খেতে হয়।‘ তার একটি বলে দিতে পারি। মাইক্রোওয়েভ। আজকে আমার তেমনই একটি দিন গেল। খাবার টেবিলে একমাত্র উৎসাহিত ব্যক্তি আমার পুত্র। সে আজকে নতুন একটি ধাঁধা শিখেছে। ‘আচ্ছা আব্বু, বল দেখি, একজন অ্যাস্ট্রোনট রকেটে করে সূর্যে গেল কিন্তু পুড়ল না, কিভাবে হতে পারে।‘ যদিও ধাঁধাটার উত্তর আমি জানি না, তারপরও এধরনের পরিস্থিতিতে আমার আপাততঃ কাজ একটাই, ইচ্ছে করে হেরে যাওয়া। কিছুক্ষণ চিন্তার ভান করে বললাম, জানি না। আমার পরাজয় দেখে পুত্র যারপরনাই আনন্দিত। ‘প্রিন্সিপ্যাল স্যারকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম, পারেনি।‘ আমার বোকামি কিছুটা জাতে উঠল। এবার আমার কাজ, উত্তরটা শুনে অবাক হওয়া কিংবা পুত্রর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশংসাসূচক কিছু বলা।

‘কারণ অ্যাস্ট্রোনট রাতের বেলা গিয়েছিল।‘ উত্তর আসবার পরে একবার ভাবলাম আহ্নিক গতি ব্যাপারটা বোঝাই। রাত হওয়া মানে এই না যে সূর্যের তাপ কমে গেছে। তারপরে ভাবলাম, দরকার কি। শুধু শুধু ওর আনন্দ মাটি করে। পরাজয় মেনে নিলাম। বিজয়ী পুত্র সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় প্রশ্ন শোনাল। ‘আচ্ছা বল, কোন অ্যানিম্যাল সবাইকে উঠাতে পারে?’ এবারও আমার কাজ, ইচ্ছে করে পরাজিত হওয়া। উত্তরটা এবারও আমার অজানা। কিছুক্ষণ চেস্টার ভান করলাম। ধাঁধাটায় মূল সমস্যা সম্ভবতঃ ‘ডাবল মিনিং’ কোন একটি শব্দ কিংবা বাক্যের অন্য কোন অর্থ দাঁড়ায়। আর সেখানেই লুকিয়ে আছে চালাকী। কিছুক্ষণ সত্যিই চেষ্টা করলাম। ‘উঠাতে পারা’ মানে কি? শক্তিশালীতম প্রাণী? তিমি বা তেমন কিছু?

কিছুক্ষণ চিন্তা করে পরাজয় মেনে নিলাম। আবার সেই বিজয়ীর হাসি। ‘উত্তর হচ্ছে মোরগ। মোরগই তো সবাইকে ঘুম থেকে উঠায়।‘ কাহিনী বোধহয় এখানেই থামবে না। এই প্রশ্নগুলো হয়তো সে আবার কাউকে করবে। তাঁর বিবেচনায় যে মানুষগুলো বুদ্ধিমান, তাঁদের সবাইকেই সম্ভবতঃ সে একে একে প্রশ্নটা করবে আর লিস্টি শোনাবে, পৃথিবীর কোন কোন বুদ্ধিমান প্রাণী তার এই সহজ প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারেনি।

আমাদের সবার ভেতরই সম্ভবতঃ এই শিশুটি বেঁচে আছে। আরেকজনকে হারাবার মধ্য দিয়েই নিজের জয় খোঁজা শিশু। কখনও এরা সত্যিই জেতে কখনও সামনের মানুষের ইচ্ছাকৃত পরাজয়ে যেতে। কিন্তু শিশুটির হাসিটিতে যে দুজনেরই জয় হয়, এই তথ্য হয়তো শিশুটি বোঝে না। এই শিশুটি যখন বাবা হবে, হয়তো সেও এমনটিই করবে। ইচ্ছে করে হারবে। আরেকটি শিশুর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। আর বাবা হিসেবে হয়তো একটি কথা বলতে গিয়েও থেমে যাবে। হয়তো বলবে না, মোরগ সবাইকেই ঘুম থেকে ওঠাতে পারে না। জেগে জেগে ঘুমানো দলকানা নেতা আর সমর্থকদের ঘুম থেকে ওঠানোর সাধ্য কারো নাই। আর পরাজয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা জয় দেখবার চোখ ও এসব দলবাজদের নেই। আর তাই আমাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কেউই হাসিমুখে পরাজয় মেনে নেবে না।

শুধু জানান, আমাদের এই জিম্মি অবস্থার অবসান কবে

download (2)

by zainuddin sani

দেশের অবস্থাকে ঠিক কিসের সঙ্গে তুলনা করা যায়? দাবা খেলার ‘স্টেলমেট’ না টেস্ট ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার ‘ড্র’। খেলার সঙ্গে তুলনা করার একটি সমস্যা আছে। কিছু খেলায় সময় নির্ধারিত আছে, এখানে নেই। কেউই জানে না কবে নাগাদ একটা ফয়সালা হবে। সেদিক দিয়ে ভাবলে দাবার সঙ্গে তুলনা করা যায়। কারণ এখানে খেলায় সময় নির্ধারিত নেই, তবে সেখানে খেলার অবস্থা বুঝে ‘ড্র’ মেনে নেয়ার মত সুযোগ আছে। তবে দেশের বর্তমান অবস্থায় ‘ড্র’য়ের কোন সুযোগ নেই। প্রাচীন রোমের ‘গ্ল্যাডিয়েটর’দের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার মত অবস্থা বলা যায়। বিশাল এক দর্শক শ্রেণীও যেমন আছে, একজনের পরাজয়ের ভেতর দিয়ে খেলা শেষ হওয়ার নিয়মও তেমনি আছে। সময়ের কোন সীমানা নেই। তবে সেখানে তৃতীয় একজনের জেতার সম্ভাবনা নেই। রাজনীতির এই খেলায় এই ব্যাপারটা আবার আছে।
খুব সাধারণ কিসিমের একজন জনতাকে জিজ্ঞেস করলাম, কিছু হচ্ছে না কেন? উনি উত্তর দিলেন, টেস্ট ক্রিকেট চলছে, এখানে তো টি টুয়েন্টির মত দ্রুত রেজাল্ট এক্সপেক্ট করতে পার না। তুলনাটা খারাপ লাগলো না। তারপরও, পুরোপুরি মেনে নিতে পারছি না। যদিও টেস্ট ক্রিকেট, ক্রিকেটের ‘লঙ্গার ভার্সান’ তারপরও এর একটি লিমিট আছে। খেলাটা তো আর অনির্দিষ্ট কালের জন্য খেলা হয় না। বর্তমান অবস্থার মেয়াদ তো বোঝাই যাচ্ছে না। কখনও মনে হচ্ছে, আজকেই শেষ হয়য়ে যাবে, আবার মনে মনে হচ্ছে, থামবেই না।
খেলাটায় যদিও লাশ পড়ছে, মানুষ পুড়ছে, তারপরও বলা যায়, দুই দলের সমর্থকরা গোঁয়ারের মত বসে আছে, ‘চলুক খেলা, দেখি কে জেতে’। দোষ কার তা নিয়ে দুই দলের সমর্থকরা কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করছে আর এই বিশ্বাস নিয়ে এখনও ফেসবুক আর ব্লগে আশাবাদ জানিয়ে যাচ্ছে ‘জয় আমাদের হবেই’। শুধু কি তাঁরা, দেশবাসীও কিছুদিন আগে পর্যন্ত চাইছিল, চলুক খেলা। হয়য়ে যাক একটা হেস্তনেস্ত। যদিও এই মুহূর্তে বোঝার কোন উপায়ও নেই কে জিতছে, যদিও বোঝার উপায় নেই কোন এক পক্ষের জয় নিয়ে দেশবাসীর খুব বেশি মাথাব্যাথা আছে কি না, তবে একটি ব্যাপার নিশ্চিত, আর তা হচ্ছে দেশবাসীর খেলা দেখার শখ মিটে গেছে। প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়য়ে ওঠা দেশবাসীর এখন একটাই প্রত্যাশা, যে ই জিতুক, একজন কেউ জিতুক।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ঘটনা আটকে আছে তো আছেই। কোন পরিণাম নেই, ফলাফল নেই। কেউই জিতছেও না, হারছেও না। অবস্থা এমন হয়েছে যে, তা দেখে ভবিষ্যৎবাণী করবার উপায়ও নেই, কে জিতবে বা কে হারবে?
কে জিতবে তা নিয়েও চলছে সাসপেন্স। জয় ব্যাপারটা পেন্ডুলামের দোলকের মত দুলছে আর বেশ ভালভাবেই দুলছে। একসময় আওয়ামীদের দিকে তো অন্যদিন বিএনপির দিকে। একবার মনে হচ্ছে, আওয়ামীদের পেছানো ছাড়া উপায় নেই, পর মুহূর্তেই মনে হচ্ছে বিএনপির আর কোন আশা নেই। আবার কেমন করে যেন দুই দলই প্রতিযোগিতায় ফিরে আসছে। এখন পর্যন্ত, ‘কেহ নাহি কম যায় সমানে সমান’ চলছে। মনোবল দুই দলের নেতাকর্মীরই চাঙ্গা। জনতা, যারা দুরু দুরু বক্ষে অপেক্ষায় ছিল খেলাটির একটি ‘নেইল বাইটিং’ ফিনিশ দেখবার জন্য, তাঁদের এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। তাঁদের এখন একটি ব্যাপার নিয়েই মাথা ব্যাথা, আর তা হচ্ছে, কতদিন ধরে চলবে এই খেলা। কিংবা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে একটি ‘ডিসাইসিভ’ ফলাফল।
সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন, খেলা কি এই গতিতেই চলবে? উত্তরটা হয়তো সামনের কিছু দিনের ভেতরেই বোঝা যাবে। সরকার হার্ডলাইনে যাবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। কিছু ক্রস ফায়ার হয়েছে, প্রায় সাত হাজার গ্রেফতার। হার্ড লাইনের ভেতর আর কি পড়ে বোঝা যাচ্ছে না। সম্ভবতঃ বিএনপির যেকয়জন নেতা বাইরে আছে, তাঁদের একটা গতি করা। আর সেই মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন, ম্যাডামকে গ্রেফতার করা হবে কি না। কার্যালয়ে অন্তরীন রাখার সিদ্ধান্তের যেভাবে হঠাৎ করে ইতি ঘটল, তাতে মনে হচ্ছে না সরকার সেদিকে পা বাড়াবে।
অন্যদিকেও বেশ বড়সড় একটা প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ঝুলছে। বিএনপি এভাবে কতদিন চালাবে? যত দিন যাচ্ছে, জ্বালাও পোড়াও ব্যাপারটা ব্যাকফায়ার করছে। যদিও তাঁরা বলছে, পেট্রোল বোমা আর ককটেল তাঁরা ছুঁড়ছে না, তবে পুরোটা বিশ্বাস মনে হয় না করাতে পারছে। আওয়ামী স্যাবোটাজ হয়তো কিছু হচ্ছে, তবে বিএনপি একটাও কক্টেল ছুঁড়েনি, তা বোধহয় পাবলিককে গেলানো যাবে না। ফলে তাঁদেরও এই চিন্তা তাড়িয়ে নিচ্ছে, আর কি করা যায়।
দুই বড় দলের মানসিকতা এমন হয়েছে যে একদল জিতলে, অন্যদল সংসদে যাবে না, একদল যা চাইবে, অন্যদল ঠিক তাঁর উল্টোটা চাইবে, একজন ক্ষমতায় থাকা কালীন নির্বাচন দিলে অন্যদল নির্বাচনে যাবে না। জনগণ এ ও জানে, দুই দলের নেত্রীর এই দা কুমড়া সম্পর্ক নিয়েই দেশবাসীকে চলতে হবে। ক্ষমতায় থাকা কালীন পাঁচ বছর, বিরোধীদল শীতকাল আসলেই কিছু আন্দোলন করবে আর সারা বছর মোটামুটি খুচরা কিছু হরতাল আর অবরোধ দিবে, আর আমাদের এসব মেনে নিয়েই চলতে হবে।
দুই নেত্রীর প্রতিই আমাদের প্রত্যাশা এখন এতোটাই কমেছে যে এই মুহূর্তে শুধু একটাই প্রত্যাশা, শুধু আমাদের জানান যে এই জিম্মি অবস্থা থেকে আপনারা কবে নাগাদ আমাদের মুক্তি দিবেন।

এঞ্জয় দ্যা গ্ল্যাডিয়েটরিয়াল ফাইট

roman-gladiators-5

by zainuddin sani

‘সো? হু ইজ উইনিং?’ এই মুহূর্তে সবার মনে কেবল এই একটাই প্রশ্ন। নেতা নেত্রীদের কথার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সবাই এই একটা প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। সমঝোতার কথা কে বেশি বলছে? তার মানে সে হারু পার্টি। পাতি নেতাদের কাজই হচ্ছে জ্বালাময়ী কথা বলা। বিএনপির পাতি নেতারা ‘দাঁত ভাঙ্গা জবারে’র কথা বলে বলে নিজেদেরই দাঁত ক্ষয় করে ফেলেছেন আর আওয়ামী পাতি নেতারা সারাক্ষণ হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ‘তাঁরা চাইলে বিএনপির কি দুর্গতি করতে পারেন’। এবং যথারীতি কোন পক্ষই কিছু করতে পারছে না। ফলাফল হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কেউই আর এইসব পাতিনেতাদের কথা পাত্তা দিচ্ছেন না।

সব চোখ এখন বড় দুই নেত্রীর দিকে। হার্ডলাইনে যাওয়া থেকে সরে আসবার কোন কথা কি নেত্রী বলছেন? কিংবা আন্দোলন আরও বেগবান না করে আলোচনা করার কথা কি নেত্রী বলছেন? বাক্যের শব্দগুলো কত কর্কশ কিংবা কত মোলায়েম তা দেখে সবাই ঠিক করে নিচ্ছেন, বল এখন কার কোর্টে। বাকি যত দর্শক আছেন, সুশীল থেকে কুশিল, দেশি হোক আর বিদেশী, সবার মুখে এখন একই নামতা, ‘আলোচনা কর’। এদের পাত্তা দেয়ার তেমন কিছু নেই। এরা সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এই কথা বলে আসছেন, আর আমাদের নেতারা তাঁর তোয়াক্কা না করেই নিজেদের গোঁয়ার্তুমি যথারীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। মূল যে প্রভু, তিনি যতক্ষণ কোন একটি দলের সঙ্গে আছেন, অন্য কেউ তাঁর কিচ্ছু করতে পারবে না। তাঁরা অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু বলেন না, নেতা নেত্রীদের মুখের ভাষা শুনে বুঝে নিতে হবে, বাতাস ঘুরে গেছে কি না।

আওয়ামীরা যে লাইনে ফাইট দিচ্ছে তা হচ্ছে হরতাল অবরোধে হওয়া মৃত্যুগুলোকে হাইলাইট করার চেষ্টা করে যতটা ফায়দা লোটা যায়। ভয়াবহতম মৃত্যুগুলোকে নিয়েই সবেচেয়ে সেন্টিমেন্টাল ফায়দা হাসিল করা যায়। পত্রিকায়, টিভিতে কিংবা টক শোর আলোচনায় যত বেশিবার এই টপিক আসবে, ততো বেশি সুবিধা আওয়ামীদের। নিজেদের পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলে তাই বারবার এই বিষয়গুলো আনবার চেষ্টা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির এই মুহূর্তের প্রধান চিন্তা, আন্দোলনে যেন ছেদ না পড়ে। লাশগুলো কিছুটা ব্যাকফায়ার করছে, তবে অবরোধ আর হরতাল তাঁর ইমপ্যাক্টও ফেলছে। সরকারকে যে বিচলিত করে ফেলেছে তা আওয়ামী পাতি নেতাদের লম্ফঝম্ফ দেখে আন্দাজ করে নেয়া যাচ্ছে।

তবে দুই দলেরই মূল সমস্যা হচ্ছে ‘দীর্ঘসুত্রিতা’। আন্দোলন দীর্ঘ হলে আওয়ামী বিএনপি দুদলেরই সমস্যা। আওয়ামীদের সমস্যা হচ্ছে, প্রমাণ হয়ে যাবে তাঁরা অথর্ব, এই আন্দোলন দমানোর ক্ষমতা তাঁদের নেই। অন্যদিকে অবরোধ আরও কিছুদিন চললে বিএনপিও ঝামেলায় পড়বে। দেশের অর্থনীতির ওপর শুরু হওয়া চাপ এবং সেকারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া জনগণ কিছুটা হলেও তাদেরকে দায়ী করবে। আর মানুষের দেয়ালে পিঠ থেকে গেলে, তাঁরা ঠিক কি করবে, বোঝা ভার। দেশের হওয়া অর্থনৈতিক ক্ষতি সম্পর্কে দুই দলই সচেতন, তবে এটাও জানে, ছাড় দিলেই অবধারিত মৃত্যু।

আওয়ামীদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র এবং বড় দুর্বলতার নাম আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। অবরোধে হওয়া জন দুর্ভোগ কিংবা জ্বালাও পোড়াও থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে আপাতত তাঁরা ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা ঘোচাতে যা তাঁরা করতে পারে, তা হচ্ছে, ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানো। তেমন করবার ইচ্ছে জানাতে গিয়ে পুলিশ, বিজিবি আর র‍্যাব প্রধান বেশ ঝামেলায় পড়ে যান। অতি দ্বায়িত্বশীলতা দেখাতে গিয়ে এমন কিছু কথা বলে ফেলেন, যে পরের দিন তাঁদের আবার ব্যাখ্যা দিয়ে জানান দিতে হয় যে তাঁরা রাজনীতি করেন না। সারাংশ হচ্ছে, যদি তাঁরা অ্যাকশানে যান এবং বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের লাশ পড়ে, তখন পরিস্থিতি কি হবে, তাঁরা নিজেরাও তা আঁচ করতে পারছেন না, আর সেকারণেই চাইছেন, ব্যাপারটা যেন সে পর্যন্ত না গড়ায়। হুমকি ধামকিতে কাজ হলে সবকুলই রক্ষা পায়।

এমন ‘স্টেলমেট’ অবস্থায় সরকারী বাহিনী তাই আপাতত গ্রেফতার পর্যন্তই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন। হুঙ্কার, হুমকি চলছেই, তবে সত্যিই তেমন হার্ডলাইনে তাঁরা যাবে কি না, তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ করছেন। অন্যপক্ষও খুব আরামে নেই। বিরোধী দলের প্রায় সব বড় নেতাই চোদ্দ শিকের পেছনে। আত্মগোপনে থাকা কিছু কিংবা সরকারের সঙ্গে মৃদু লিয়াজো করে চলা কিছু নেতা এখনও বাইরে আছেন। ওপর মহল থেকে প্রতি মুহূর্তের নির্দেশনা না আসায়, কর্মীরা বুঝে উঠতে পারছেন না কি করবেন। অতি উৎসাহে জ্বালাও পোড়াও করবেন? লুকিয়ে থাকবেন? না গ্রেফতার হয়ে নিজেদের অকুতোভয় প্রমাণ করবেন? ফলে দেখা যাচ্ছে, সরকারী দলের ওপর মহলের মত বিরোধী দলের তৃণমূলও এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

একে অপরের ওপর করা গুপ্তচরবৃত্তিতে, মনে হচ্ছে এখন একটি স্থিতি অবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপির কি হতে যাচ্ছে পরবর্তী সিদ্ধান্ত, তা ম্যাডাম আর তারেক সাহেব ছাড়া আর কেউ জানে না। অন্যদিকে আওয়ামীদের সিদ্ধান্ত বা গেম প্ল্যান প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ জানে না। বিভিন্ন পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেল, ‘জানা যায়’ কিংবা ‘বিশ্বস্ত সূত্রের খবর’ বলে যা প্রচার করছে, এই মুহূর্তেই সেটারই কদর সবচেয়ে বেশি। কাকে বেশি চিন্তিত দেখাচ্ছে, কে বেশি হাসিখুশি, কে সাংবাদিকদের সঙ্গে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে কথা বলছেন, এসবই হচ্ছে এখন ‘ব্রেকিং নিউজ’।

বালুর ট্রাক সরানো কিংবা পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলা কিসের ইঙ্গিত, তা নিয়ে সবাই এনালাইসিস শুরু করে দিয়েছেন। ভাইবার, ট্যাঙ্গো, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদির ওপর নিষেধাজ্ঞায় জনগণের ভোগান্তির চেয়ে বেশি আলোচ্য হয়ে উঠছে, কেন সরকার এমনটা করল। ব্রিটেনে পাঠানো চিঠি কিংবা ‘সেনাবাহিনী নামানোর সময় এখনও হয়নি’ এসব ব্যাপার সরকারের আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করছে না ‘নার্ভাসনেস’, তা সময়ই বলে দেবে। বিএনপিরও যে হরতাল আর অবরোধের বাইরে আর কিছু করার কোন ক্ষমতা নেই, তা আবার প্রমাণ করেছে। জনগণকে সাথে যুক্ত করবার তেমন কোন প্রচেস্টাই তাঁদের নেই। তাকিয়ে আছে জামায়াতের দিকে।

পাল্লা কোন একদিকে হেলে পড়ছে, তা বলবার সময় বোধহয় এখনও আসেনি। এই ‘স্টেলমেট; অবস্থা আর কতদিন চলবে, আর কত লাশ পড়বে, দেশের অর্থনীতির কত ক্ষতি হবে, তা সময়ই বলে দেবে। রোমের সেই গ্ল্যাডিয়েটর ফাইটের মত হয়েছে এদেশের দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থা। কোন একজনের জয় ছাড়া এই যুদ্ধ থামবে না। যতক্ষণ যুদ্ধ শেষ না হয়, ততক্ষণ যেমন রোমের অধিবাসীরা উত্তেজিত হয়ে সেই ফাইট দেখত, এদেশের সাধারণ মানুষের এই মুহূর্তে একটাই কাজ, আমাদের দুই রাজনৈতিক নেত্রীর এই ‘গ্ল্যাডিয়েটরিয়াল ফাইট’ দেখা আর সম্ভব হলে ‘উপভোগ করা’।

আলোচনা? কাদের মধ্য? দুই দলের না দুই প্রভুর?

obamamodi

by zainuddin sani

সুশীল সমাজ যদিও তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, তারপরও এই ধরনের অবস্থায় তাঁরা ঘ্যান ঘ্যান করতে এগিয়ে আসে। সাম্প্রতিক কিছু লেখা পড়ে মনে হচ্ছে তাঁরা আবার হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে আসছেন। বক্তব্য তেমন নতুন কিছু না, সেই পুরনো আবদার। ‘আলোচনা করুন’। তাঁদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বুদ্ধি এই দলগুলোর নেই, তাই উপদেশটা দিতে হচ্ছে। ব্যাপারটা কি তাই? এদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায়, আলোচনা করতে চাওয়া মানে, আমার আন্দোলন করার ক্ষমতা নাই কিংবা আমার ক্ষমতা নাই, এই আন্দোলন দমাবার। আর তাই এদেশে কোন দলই সেধে আলোচনার প্রস্তাব দেয় না, বিশেষ করে অপর পক্ষ যখন দুর্বল অবস্থায় থাকে। এরপরও সুশীল সমাজের বুদ্ধিতে পূর্বে কিছু আলোচনা, চিঠি চালাচালি, আলোচনার জন্য বসাবসি, সবই হয়েছিল, এবং যথারীতি সেসবে কোন ফল আসেনি।

বাস্তবতা হচ্ছে, আন্দোলন করে দাবী আদায়ের ক্ষমতা না থাকলে, এদেশের কোন সরকারী দলই বিরোধী দলের দাবী মেনে নেয় না। আর আন্দোলন দমাবার ক্ষমতা থাকলে, সরকারী পক্ষ সেই আন্দোলনকে দমাবার কোন চেষ্টাই বাদ রাখেন না। তাই আন্দোলন করে দাবী আদায় করতে পারবে কি না, তা নির্ভর করছে, আন্দোলন কত জোড়ালো হচ্ছে আর অন্য পক্ষ কতোটা শক্তহাতে তা দমন করতে পারছে এই দুইয়ের ভারসাম্যের ওপর। বহুকাল হল, এদেশের কোন আন্দোলনে, সাধারণ জনতা অংশ নেয় না। ফলে এই মল্লযুদ্ধ মুলতঃ চলে সরকারী বাহিনী আর পিকেটারদের ভেতরে।

গত ছয়বছর, এই পিকেটারের সাপ্লাইয়ে বেশ ঘাটতি ছিল। আর তাই, কোন আন্দোলনেই বিরোধী দল জুত করতে পারছিল না। যা তাঁরা করছিল কিংবা আন্দোলন চালাবার জন্য যা জরুরী হয়ে পড়েছিল, তা ছিল জনগণকে আন্দোলনের কর্মসূচীতে যোগ দিতে বাধ্য করার। এমন কোন কার্যক্রম, যেখানে জনগণ অংশ নিতে বাধ্য। হরতাল আর অবরোধ করতে আপনি বাধ্য। গাড়ী না চললে আপনি উঠবেন কোন বাহনে। আপনার গাড়ী ভাঙবে জানবার পরও আপনি নিশ্চয়ই গাড়ী বের করবেন না। ব্যাস হয়ে গেল, হরতাল সফল।

বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক কার অনুকুলে, এখনও বোঝা যাচ্ছে না। দেশ গোল্লায় গেলেও, এই দুই দলের কারোরই কিছু যায় আসে না। তাঁদের একটাই চাওয়া, আর তা হচ্ছে, নিজের জয় বা অপর পক্ষের পরাজয়। এই যুদ্ধ এর আগেও বেশ কয়েকবার হয়েছে, এখন আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। তবে যে অংশকে নিয়ে বেশি টেনশানে থাকি, যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়ংকর যে অবস্থা, তা হচ্ছে ‘স্টেল মেট’। দাবা খেলার সেই অবস্থা, যেখান থেকে কারোরই বিজয় অর্জন সম্ভব না। টেস্ট ক্রিকেট কিংবা দাবায় যেমন ‘ড্র’ বলে একটা ব্যাপার আছে, রাজনীতিতে তেমনটা নেই। এখানে একজনের জয় কিংবা অন্যের পরাজয়, কোন একটা হতেই হবে। আর সেটা না আসা পর্যন্ত, অর্থাৎ এই ‘স্টেলমেট’ অবস্থা আমাদের সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই। যারা আবদার করছেন, আলোচনার, তাঁরা ভালো করেই জানেন, কিছুই হবে না।

তারপরও এই আবদারগুলো জানানো হয়, এবং সাধারণতঃ তা জানানো হয় বেশ কিছু লাশ পড়ার পরে। আগেও বলা হয়, তবে দায়সারা ভাবে, এবং যথারীতি সেই আবদারে কেউ কর্ণপাত করেন না, মিডিয়ায় আসে না, পত্রিকায় কেউ কলাম লেখেন না। লাশ পড়া মানেই, অবস্থা গুরুতর। দুই পক্ষই বেশ শক্তিশালী। একদল সহিংস আন্দোলন করার ক্ষমতা অর্জন করেছে আর অন্যদল সেই আন্দোলন দমাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহারের প্রয়োজন বোধ করছে। তবে বর্তমান আন্দোলন অতিসম্প্রতি যেসব লাশ সরবরাহ করেছে, তাঁর পুরোটাই নিরুপায় জনতার লাশ। বিরোধীদলের আন্দোলনের আদেশ অমান্য করার কারণে লাশ। এই লাশ উৎপাদনের কৃতিত্ব এখনও কেউ নিচ্ছেন না, একে অন্যকে দায়ী করছেন। তবে এই লাশগুলো দেখে দুই দলের কারোরই এমন কোন বিবেক জাগছে না।

এসব আন্দোলনের জন্য খুব জরুরী হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের লাশের যোগান। সেটাও আবার বড়সড় কোন নেতার। সেটা এখনও হয়নি, এবং ধারণা করা যায় আপাততঃ যোগান হবেও না। বড় সব নেতা আত্মগোপনে কিংবা চোদ্দ শিকের পেছনে। ওদিকে রাষ্ট্রীয় শক্তি, মাঠে নামব, নামব করছে। হুমকি, হুংকার দিচ্ছে, তবে এখনও অ্যাকশানে নামেনি। সেটা নামলে, আর তখন আরও কিছু লাশের যোগান হলে, সম্ভবতঃ খেলা জমে উঠবে। ‘স্টেল মেট’ অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

খেলা অন্যদিকেও হচ্ছে। কূটনৈতিক পাড়ায় দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গেছে। নিজ নিজ প্রভুর কাছে গিয়ে আর্জি পেশ করা হয়েছে, ‘আমাকে বাঁচান’। তাঁরাও ধরি মাছ না ছুঁই পানি টাইপ বক্তব্য দিচ্ছেন। সুশীল সমাজ মুলত এই ধরনের অবস্থার জন্যই অপেক্ষা করে। কারণ এই ধরনের অবস্থায়ই তাঁদের কথা মিডিয়ায় একটু পাত্তা পায়। যে কয়জন সুশীলের গায়ে এখনও দলীয় তকমা লাগেনি, এই সময় তাঁদের কিছুটা কদর হয়। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় কলাম লিখে তাঁরা জানান দেন, অবস্থা এখন গুরুতর, দেশের বেশ ক্ষতি হচ্ছে, অতএব এবার আলোচনা করা যেতে পারে। আগে বলিনি কারণ তখন আমার কথা কেউ পাত্তা দিত না।

আলোচনা আদৌ হবে কি না, আর হলে সেখান থেকে কোন ফল আসবে কি না, তা নিয়ে সব দলই নিজ নিজ বক্তব্য দিচ্ছেন। সেই বক্তব্য অবশ্য আসল বক্তব্য না। সেটা ‘মেন্টাল গেম’। হুমকি দিয়ে অপর পক্ষকে ঘায়েল করা। আগামী কিছুদিনের ভেতর সম্ভবতঃ বড় নেতারা পরিষ্কার করবেন, আলোচনার নাটক করতে তাঁরা রাজী কি না। আরও কিছু ব্যাপার এখনও পরিষ্কার হয়নি। প্রভুরা কি সিদ্ধান্ত নেবেন, কোন প্রভু এবার নিজের দাবীতে অনড় থাকবেন কিংবা দুই প্রভুর কোনজন এবার বাংলাদেশকে অন্যজনের ঝুলিতে দেবেন, তা এখনও তাঁরা পরিস্কার করছেন না। প্রভু দুইজন ২৬শে জানুয়ারী ভারতে মিলিত হবেন। সেখানে যদি দয়া করে তাঁরা কোন সিদ্ধান্ত নেন, তবে রক্ষা, আর নয়তো কপালে আরও ভোগান্তি আছে।

দুই পক্ষই হুমকি দিয়ে রেখেছেন, খেলা আরও জোরদার হবে ২০ তারিখের পরে। অর্থাৎ দুই পক্ষই কোমর বাঁধবেন। আর এটাও ঠিক, তার আগে পর্যন্ত এই ভোগান্তি চলবে। ফেব্রুয়ারিতে অসহযোগের ডাক দেয়া হয়েছে। ওদিকে সেই সময়ে রয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। আগেকার আন্দোলন গুলোতে সাধারণতঃ শুক্র শনিকে রেহাই দেয়া হত, এখন সেটাও দেয়া হচ্ছে না। বিশ্ব ইজতেমার জন্যও তেমন কোন ছাড় দেয়া হয়নি। বেশ অনেক জেলায় জ্বালানী সংকট শুরু হয়েছে। অন্যদিকে বিজিবি দিয়ে পণ্য আর যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করানোর চেষ্টা চলছে। কতদিন চালানো সম্ভব, সময়ই বলে দেবে। জনগণকে জিম্মি করা এই নেতাকর্মী বিহীন আন্দোলন কতদিন টানা যাবে, সেটাও যেমন দেখবার বিষয় তেমনি সবাই অপেক্ষা করছে, সরকারী বাহিনী গুলি ছুঁড়লে আর লাশ পড়লে, খেলার দিক পরিবর্তন হয় কি না।

আপাততঃ আন্দোলনের ‘স্টেলমেট’ অবস্থার যে পরিবর্তন হবে না, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। আলোচনাও যে সমাধান এনে দেবে না, সেটাও সবাই জানে। আমাদের প্রভুরা, এবং তাঁদের নিয়োগ দেয়া কূটনীতিকরা কি করবে কিংবা অন্য কোন সমাধান আসবে কি না, তাঁর দিকেই সবাই তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তের মিলিয়ন ডলার যে প্রশ্ন তা হচ্ছে, ‘সমাধান কোন পথে?’ এই দুই দলের আলোচনায় না দুই প্রভুর আলোচনায়?

আমাদের জন্য এই মানুষগুলো লাশ হয়েছে

hartal

by zainuddin sani

লাশ আসতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই একটি দুটি করে আসছে। প্রায় পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে। তবে সেই ম্যাজিক লাশের দেখা এখনও কেউ পায়নি। ডাঃ মিলন কিংবা নুর হোসেন অথবা সেই লগি বৈঠার আঘাত বা বিশ্বজিৎ। কিছু লাশ সরকারের পক্ষে যায় কিছু যায় সরকারের বিপক্ষে। কিছু লাশ বিরোধী দলের আন্দোলনকে চাঙ্গা করে দেয় কিছু লাশ বিরোধী দলকে কোণঠাসা করে দেয়। আজকের কিংবা কালকের লাশটি কার পক্ষে যাবে কেউই জানি না। তবে এ ব্যাপারটি নিশ্চিত, সুযোগ পেলে সেই লাশ নিয়ে রাজনীতি করতে কেউই পিছপা হবে না।

পেট্রোল বোমার এখন ফ্যাশান চলছে। কক্টেলে এখন আর সেই বিভীষিকাময় ইফেক্ট দেয় না। এখানে সেখানে ঝলসে যায় কিছুটা, হয়তো মাংসে গেঁথে থাকে কিছু স্প্লিন্টার। তবে আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়া বীভৎস লাস পেতে হলে চাই পেট্রোল বোমা আর নয়তো গান পাউডার। শিশুর লাশের ইমপ্যাক্ট সবচেয়ে ভালো। মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যাওয়া শিরশিরে অনুভুতি, ইস, আহা, উহু— সবমিলিয়ে বাজারদর এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে এসব আগুনে পোড়া শিশুদের। এরপরে সম্ভবতঃ শিশুকে বাঁচাতে যেয়ে মায়ের মৃত্যু কিংবা অশীতিপর বৃদ্ধা নারী। পুরুষ মানুষের বাজারদর একটু কম। সঙ্গে কিছু রোমহর্ষক কিংবা করুণ গল্প থাকলেও, বাজারদর খারাপ হয়না। বরং শুরু হয় পত্রিকাগুলোর শিরোনামের খেলা।

লাশ যেমনই হোক, তা থেকে ফায়দা লুটতে দুই দলই নেমে পরে। সরকার নামে আবেগের ঝোলা নিয়ে। ‘দেখো দেখো, কি বীভৎসভাবে খুন করছে বিরোধী দল।‘ যত বীভৎস ততো প্রচারণা। টেলিভিশনে বার বার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো। স্বজনদের আহাজারি। ‘কি দোষ ছিল এই শিশুটির?’ কিংবা ‘এই বাবা এখন কি নিয়ে বাঁচবে?’ জ্বলন্ত গাড়ী কিংবা পথচারীদের মতামত। যা কিছু সরকারের পক্ষে যাবে বলে মনে করে, কাজে লাগাবেই সরকার। ব্লগ, ফেসবুক এবং সেখানে তাঁদের পেটোয়া বাহিনীতো আছেই। আলোচনাকে যতটা সম্ভব মুখরোচক করে তোলা হবে।

এই ধরনের লাশ নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যও বেশ গৎবাঁধা। ‘সরকারী দলের ষড়যন্ত্র’ কিংবা ‘এর পূর্বে যখন আপনারা বিরোধী দলে ছিলেন তখন কি করেছিলেন, তা কি ভুলে গেছেন?’ তবে তাঁদের মুখপাত্র যে ব্যাখ্যা সাংবাদিকদের সামনে পড়ে শোনাবেন সেখানে তিনি লাশের চেয়ে বেশি আগ্রহী হবেন, কেন এই হরতাল কিংবা অবরোধ ডাকতে হল, তাঁর ব্যাখ্যায়। রাজ্যের আবেগ ঢেলে দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করবেন, দেয়ালে তাঁদের পিঠ থেকে গিয়েছিল। হরতাল দেয়া ছাড়া আর তাঁদের কোন উপায় ছিল না। এরপরে আসবে সেই চিরাচরিত গণতান্ত্রিক অধিকারের গল্প, ‘হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার।‘

এই লাশগুলো বিরোধী দলের একেবারেই কাজে আসে না, এমন কিন্তু না। সাহায্য করে, তবে উল্টো পথে। লাশগুলো চিৎকার করে দেশবাসীকে বলে, বিরোধীদলের আন্দোলন, আদেশ, হুমকির পরোয়া করিনি বলে আমাদের এই দশা। তোমরা এই ভুল কর না। লাশের এই ইফেক্টটা বিরোধীদলের সত্যিকারের প্রত্যাশা, তবে তাঁরা সেকথা মুখ ফুটে বলে না। তাঁরা আবার এটাও বলে না, হে আমার দলের সমর্থকরা, তোমরা পিকেটিং কর না। আসলে এই লাশগুলো, বাহ্যিকভাবে বিরোধীদলের কিছুটা অপকার করে, ভেতরে ভেতরে উপকারই করে বেশি। আর সেকারণেই, বীভৎস এই লাশগুলোকে বাহ্যিকভাবে অপছন্দ করলেও, প্রতিটি বিরোধী দলই চায়, লাশ পড়ুক।

যে লাশগুলো বিরোধীদলকে সবচেয়ে বেশি প্রমোদ দেয়, তা হচ্ছে নুর হোসেন বা ডাঃ মিলন টাইপের লাশ। সরকারী পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে ঝড়ে পড়া কোন লাশ। আর সেটাও যদি আসে, সরকার বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে, তবে তো আর কথাই নেই। সেই লাশ নিয়ে গল্প, কবিতা, কলাম সব কিছুই হবে। আঁকিয়েরা ছবি আঁকবে, কার্টুনিস্টরা ব্যঙ্গ করবে। বিরোধীদল সেই লাশ দেখিয়ে দেখিয়ে বলবে, ‘দেখো কি করছে সরকার’। আর সরকার বলবে, দেশের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে, এই কাজটা জরুরী ছিল।‘

লাশের এই রাজনীতি কি আদৌ বন্ধ হবে? কিংবা হরতাল, অবরোধের রাজনীতি? সৎ উত্তর হচ্ছে ‘না’। এই লাশ যতদিন রাজনৈতিক দলগুলোকে মুনাফার যোগান দিবে, ততোদিনতো অবশ্যই না। রাজনৈতিক দলগুলোকে একতরফা দোষও দিতে চাই না। একটি মিছিল কিংবা কিছু আহত, এমন রিপোর্ট আমরা নিজেরাই পড়ি না। লাশ না পড়লে আমরা নিজেরাও ভাবি না, বিরোধী দল সিরিয়াস। হরতালে কোন গাড়ী না পুড়লে, ভাংচুর না হলে, আমরা ধরেই নি, বিরোধী দল কোণঠাসা। আন্দোলনের ক্ষমতা নেই। টক শোতে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনাদের পিকেটিং করার লোক কৈ?’

সমস্যা সরকারী দলেরও। যদি তাঁরা বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে দেয়, আর সেখানে বিশাল লোকের সমাগম হয়, তখন প্রশ্ন শুনতে হবে, ‘সরকারের প্রতি আস্থা কি কমে গেছে?’ কিংবা ‘বিরোধীদল কি বেশি জনপ্রিয়?’ ফলে শুরু হয়, হালুয়া রুটির বিনিময়ে লোক এনে সমাবেশ ভর্তি করা। একদিন সরকারী দল সিঙ্গারা খাওয়ায় তো আরেকদিন বিরোধী দল মিষ্টি খাওয়ায়। আজ সরকারী দল গালি দেয় তো কাল বিরোধী দল গালি দেয়। আমরাও বসে থাকি, বেশি ভালো গালি দিতে পারে, তা দেখবার জন্য। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, আমরাই বাধ্য করছি এই দুই দলকে, ‘শুরু কর মুষ্টিযুদ্ধ’ ‘দখল কর এই দেশ’।

এই মুহূর্তে কোন দলের পক্ষেই পেছানো সম্ভব না। বা সম্মান নিয়ে পেছানো সম্ভব না। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, যে পেছাবে, তারই পরিনতি হবে ভয়াবহ। আমরা জনগণ, তাকেই গালি দিব, ‘ব্যাটা পারিস না তো লাগতে যাস কেন?’ নতুন কোন লাশ যেন আর তৈরি না হয়, যেন শান্তি ফিরে আসে, এই উদ্দেশ্যে যে কেউ এক পা এগোবে, আমরা ধরে নেব, সেই দলই হারল। সরকারের তত্ত্বাবধায়কের দাবী মানা, মানেই সরকার হারল। কখনই ভাবব না, এই সিদ্ধান্ত কত উপকার করল। কখনই ভাবব না, এই সিদ্ধান্তের কারণে, কত মানুষ লাশ হওয়া থেকে বেঁচে গেল। উল্টোটাও ঠিক। বর্তমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচনে রাজী হলে, ‘বিরোধী দলের মুরোদ নাই আন্দোলন করার’।

এই লাশের মিছিল চলবেই। আমাদের জন্যই চলবে। আমাদের এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা দেখার অভ্যাসের জন্যই চলবে। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়, বুঝে কিংবা না বুঝে, আমরাই নিরন্তর উসকে দিচ্ছি এই লাশের উৎপাদন। পত্রিকায় কিংবা টেলিভিশানে দেখে আঁতকে ওঠার আগে আমাদের একবার ভেবে দেখা উচিৎ, এই লাশের পেছনে আমাদের নিজেদের দায় কতোটুকু।

প্রভু, ফোনে না বলে প্রকাশ্যেই বলুন

amit shah

by zainuddin sani

দুজনেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন, বিশ্ব ইজতেমা শেষ হলে, তারপর শুরু করব। এই কথার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, আমাদের সাধারণ মানুষকে আপাততঃ ১৯ তারিখ পর্যন্ত এই জেদাজেদি সহ্য করতে হচ্ছে। কেউই পিছিয়ে আসবে না। সরকারও ম্যাডামকে মুক্ত করবে না আর বিরোধী দলও অবরোধ তুলবে না। বিএনপিরও ক্ষমতা নেই তাঁদের নেত্রীকে মুক্ত করার আর ওদিকে সরকারেরও ক্ষমতা নেই অবরোধ বন্ধ করার। দেশবাসীর এই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা নিয়ে দুই দলের কেউই বিচলিত না। দুইজনেরই চাই বিজয়।

যুদ্ধটা কারো পক্ষেই হারা সম্ভব না। বিএনপি পিছিয়ে আসা মানে তাঁদের সমুহ পতন। আগামী চার বছর তাকিয়ে তাকিয়ে এই সরকারের দেশ পরিচালনা দেখতে হবে আর হাত কামড়াতে হবে। অন্যদিকে আওয়ামীরা হারলে এই ছয় বছরের অত্যাচারের প্রতিশোধ কড়ায় গণ্ডায় উসুল করবে বিএনপি জামাত জোট। দুই দলেরই থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বসে গেছে, পরবর্তী করনীয় নিয়ে অংক কসতে। বিএনপি হিসাব কষেছে, এভাবে আরও কিছুদিন চালাতে পারলে, সরকারের পতন হবেই। আওয়ামীরা অংক কষছে, হার্ড লাইনে গিয়ে, বিএনপির মেরুদণ্ড একবার ভেঙ্গে ফেলতে পারলে, আর সমস্যা হবে না।

পাল্লা কোন দিকে ভারী, এনিয়ে কথা বলার বেশ বড়সড় বিপদ আছে। অবস্থা এমন, ‘উইথ মি ওর এগেন্সট মি’। আওয়ামীরা সঠিক পথে আছে—এমন কিছু বলেছেন মানেই আপনি অবধারিতভাবে ওদের দলে। বিএনপি ঠিক করছে বললেও বিপত্তি আছে—আপনি বিএনপি করেন। দুজনেরই দোষ, এমনটা বললে, আপনাকে কেউ ডাকবেও না, আপনার কথা কেউই শুনবেও না, বলবে ধান্ধাবাজ, এখন দুই দিকেই তাল দিচ্ছে, যে টিকবে তাঁর দিকে হেলবে। কিংবা তখন হিসেব করবে, আগে আপনি কোন দিকে ঘেঁষে ছিলেন, কবে কি লিখেছিলেন বা বলেছিলেন। কিংবা পালটি মারবার ধান্ধায় আছেন কিনা। টক শো এখন হয়ে গেছে বুদ্ধিজীবীদের দলবাজি করার মোক্ষম জায়গা। আগে পত্রিকায় কলাম লিখে বোঝাতেন, ‘আপনিই আমার হুজুর’ আর এখন দুই দলের হয়ে ঝগড়া করে বোঝাচ্ছেন, ‘আমি আপনারই পা চাটি’।

সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সাধারণ মানুষের। তাঁরা কার দিকে তাকাবে? কার কাছে প্রত্যাশা করবে? কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। দুই দলের কেউই তাঁদের কথা ভাবে না, এই তথ্য তাঁরা জানে। এও জানে, ভোট এদের দুজনের একজনকেই দিতে হবে। তথ্যটা এই দুই দলও জানে। তাঁদের তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবীরা ইদানীং এই সুরেই কথা বলা শুরু করেছেন। ‘দেখুন দুই দলই চোর। টাকা উপার্জনের জন্যই এই পেশায় আসা। ফলে যাকেই বসান আপনার বা দেশের কোন উন্নতি হবে না। এরা দুর্নীতি করবেই, টেন্ডারবাজী করবেই। এখন বেছে নিন, কাকে চান।‘ এরপরে দুই দল দুই কথা বলছে। একদল বলছে, গনতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে আর অন্য দল বলছে দেশে গনতন্ত্র দিলে দেশবাসী এমন এক দলকে বেছে নেবে যার সঙ্গে রাজাকার ফ্রি, তাই গনতন্ত্র হত্যা জরুরী।

ফলে ঘুরে ফিরে বিতর্ক মজার এক যায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে, এদেশের লোক এখনও গনতন্ত্র বুঝতে শেখেনি। তাঁরা ভালো আর মন্দের পার্থক্য বুঝতে শেখেনি, ভোটের মুল্য বুঝতে শেখেনি। এখানে এখনও ‘হামগের ছাওয়াল’ শুধু এই কারণে একটি দলকে ভোট দেয়া হয়, নেতার জন্মস্থানের কারণে একজন একটি এলাকার ভোট পান, কেউ বা ভোট চান এলাকার পুত্রবধু হিসেবে। তাই আপাততঃ এদেশের লোকের জন্য গনতন্ত্র না। ব্রিটিশদের কাছে স্বাধীনতা চাওয়ার সময় কমবেশি এরকমই একটি কথা তাঁরা বলেছিল, ‘ইউ কান্ট রুল দাইসেলফ’। নিজেদের শাসন করার যোগ্যতা তোমাদের এখনও হয়নি। তাই তোমাদের শাসন করার ভার আমাদের হাতেই থাক।

সরাসরি না হলেও আমরা পর্দার আড়ালে এই কথাটি মেনে নিই। বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে গিয়ে নিজেদের ইন্টারভিউ দিই। বলি, ‘আমি ওর চেয়ে ভাল, এবার আমাকে দয়া করে ক্ষমতায় বসান। আপনি যা চাইবেন, সব পাবেন। একবার সুযোগ দিয়ে দেখেন। আগেরবার কিছু ভুল করেছিলাম, তবে এবার আর হবে না‘ অন্য দল বলে, ‘একদম বিশ্বাস করবেন না ওর কথা। আর আমাকে পালটাবার দরকার কি। ও যা দিবে বলছে, আমিও তো তা দিচ্ছি। শুধু শুধু ঝুঁকি নেয়ার দরকার কি?’

বিদেশীরাও উপদেশ দেন, সার্টিফিকেট দেন আর অবশেষে চিন্তা ভাবনা করে একজনকে ক্ষমতায় বসিয়ে সবার উদ্দেশ্য বাণী দেয়, ‘এ হচ্ছে দেশবাসীর পছন্দ’। সত্যি বলতে, আমাদের এই ফর্মুলায়ও তেমন কোন আপত্তি নেই। হেসে খেলে এই বক্তব্য আমরা হজম করি। আমাদের নেতা নেত্রীরাও বেশ গর্ব করে বলেন, অমুক দেশ আমাদের সরকারকে অভিনন্দন করেছে। অন্য দল আবার জানান দেয়, মিথ্যা বলছে, আমাদের আসল প্রভু আমেরিকা এখনও অভিনন্দন দেয়নি।

সম্প্রতি প্রতিবেশি দেশের বেশ কদর বেড়েছে। শীতল যুদ্ধ শুরুর কারণেই হোক আর দক্ষিন এশিয়ায় শক্ত অবস্থান তৈরির উদ্দেশ্যেই হোক, প্রতিবেশি দেশটির স্নেহ না পেলে এদেশের ক্ষমতায় আরোহণ সম্ভব না। ফলে শুরু হয়েছে কেবলা পরিবর্তন। কে কার চেয়ে বেশি পা চাটতে পারেন, তার প্রতিযোগিতা। সম্প্রতি হওয়া ফোনালাপ, কিংবা বলা উচিৎ, ফোনালাপের গুজব নিয়ে দুই দলের কর্মী, নেতা এবং তাঁদের বশংবদ বুদ্ধিজীবীরা যেমন কাদা ছোঁড়াছুড়ি করলেন, তা দেখতে বেশ মজাই লাগল।

ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ফোনালাপের কথা ঘটা করে বলবার কি আছে? সবাইকে বোঝানো, আমার দিকে প্রভুর সুনজর আছে? আর অন্য দলের চামচা বাহিনীর উল্লাস ছিল দেখবার মত। ফেসবুক, ব্লগ, পত্রিকা, টক শোতে ছিল উল্লাসের ছড়াছড়ি। গর্বিত কণ্ঠে বেশ উল্লাস করে বলছে, ‘আরে দূর, ভয় পাওয়ার কিছু নাই, ফোন করেই নি।‘ আচ্ছা, এই উল্লাসের কারণ কি? ‘প্রভু এখনও মত পাল্টান নি?’

যদি তাইই হয়, তবে আমাদের ভোট দেয়ার দরকার কি? আপনারা ঠিক করুন, কে কে আমাদের প্রভু। বরং তাঁদের ভেতর একটি ভোট করুন। অবস্থা যদি এমনই হয়, যে আমাদের প্রভু কথিত সেই ব্যক্তি, তাঁর সিদ্ধান্তেই যে সব কিছু ঘটছে। আর সেটাও যখন ‘ওপেন সিক্রেট’ তবে আর লুকোছাপা কেন? তাঁর ভোট দানকে প্রকাশ্য করে দিতে সমস্যা কোথায়? ফোনে না বলে সর্ব সম্মুখেই তাকে সিদ্ধান্ত নিতে বলুন, তাঁর ভোট দানকেও প্রকাশ্য করে দিন। সবার জন্য নির্দেশনা জারী করুন, যে দলের জন্য তিনি ভোট দিবেন, সে গদিতে বসবে।

এতে দল দুটিও বাঁচে, জনগণও বাঁচে। তাঁরা তখন শুধু শুধু জনগণের কাছে বিভিন্ন উন্নয়নের মিথ্যা ওয়াদা না করে সেই প্রভুর কাছে নিজেদের সত্যি ওয়াদা পেশ করবে। যিনি বেশি মুখরোচক ওয়াদা করে প্রভুর মন জয় করতে পারবেন, তার জন্য বরাদ্দ হবে গদি। আমরাও পাব আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকার। আর প্রভুরাও পাবে একজন আজ্ঞাবাহী ভৃত্য।

আওয়ামীদের হাড়ে কি আবার কাঁপন লেগেছে?

lig2-300x200

by zainudin sani

বাজারে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আওয়ামীরা হঠাৎ ঘাবড়ে গেল কেন? গত একবছর তো বেশ সাহসের সাথেই চালাল। হঠাৎ এতো আগ্রাসী হয়ে ওঠার দরকার কি? কি হত একটা সমাবেশ করতে দিলে। গাজীপুরেরটাই বা আটকানোর দরকার কি ছিল। ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’এর সাথে ছন্দ মিলিয়ে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ পয়দা করার দরকারই বা কি ছিল। নিজেদের ম্যোরাল বিজয় দেখানো? মুখে যত বড়বড় কথাই বলুক, আওয়ামীরা বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁরা বেশ বিচলিত। মনে মনে প্রত্যাশা করছে, ভালোয় ভালোয় এই শীতকাল যেন পার হয়ে যায়।

২০০৮এ নির্বাচিত হওয়ার পর যেভাবে আওয়ামীরা দেশ চালিয়েছিল, তাতে দুটো ব্যাপার বেশ পরিষ্কার ছিল। যে যাই বলুক, আমরা নিজেদের মত চলব, প্রয়োজনে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে। স্বৈরতান্ত্রিক তাঁরা আগেও ছিল, তবে এবার তিন চতুর্থাংশ পেয়ে সম্ভবতঃ তাঁদের মাথা আরও বেশি বিগড়াল। বিএনপির ৩২ দেখে ভাবল, ওদের আর কোন আশা নেই। দ্বিতীয়টি যে ব্যাপারটি স্পষ্ট ছিল তা হচ্ছে রাজাকার ইস্যু থেকে যতটা ফায়দা তোলা যায়, সেটা তোলা। দ্বিতীয় প্ল্যানটা খারাপ না হলেও প্রথম দিকে খুব কাজে দিচ্ছিল না। ব্যাপারটাকে অনেকটা বিএনপি জামায়াত বিভেদ তৈরির প্ল্যান হিসেবে দেখছিল সবাই। ভেতরে কি ঘটছিল তা নিয়ে মতামত দেয়া সম্ভব না, কারণ বিচারালয় নিয়ে প্রশ্ন করা সম্ভব না। তবে সবার মনেই সন্দেহ ছিল, জামায়াতের সাথে ভেতরে ভেতরে কোন আঁতাত হচ্ছে। তারপর ঘটনাটা ঘটল।

কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন আর তার বিজয় সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখানো, বিস্ফোরণ ঘটাল। এমন যে ঘটবে বা ঘটতে পারে, তা আওয়ামীরা স্বপ্নেও ভাবেনি। গণজাগরণকে প্রথমে পাত্তা না দিলেও, অচিরেই তাঁদেরকে পাত্তা দিতে বাধ্য হল। রাজাকারদের বিচার চলাকালীন রাস্তায় বিচার বিরোধী অবস্থানই দৃশ্যমান ছিল। বিচারের সমর্থনে তেমন কিছুর দেখা মিলছিল না। তাই একটি রায়ের বিরুদ্ধে এতো বড় সমাবেশ হবে, সরকার নিজেও বোঝেনি। কোন মিছিল মিটিং হরতাল ছাড়া, কেবল অবস্থান দিয়ে যে সরকারের হাড়ে কাঁপন ধরান সম্ভব, ব্যাপারটা প্রথম অনুধাবন করল আওয়ামীরা।

ব্যাপারটা বেগতিক হতে পরে দেখে তা ধ্বংসের প্ল্যান করতে হল। এমনও একটা কিছু যে আবার এই ধরনের অবস্থান তৈরি না হতে পারে। যদিও অবস্থানটি ছিল সরকারের আঁতাতের বিরুদ্ধে, তারপরও আওয়ামীরা অচিরেই বুঝে গেল, এই আন্দোলন পকেটে ঢোকান সম্ভব। আর এই সোজা কাজটা ছাত্রলীগ করে দিল। প্রথমে মঞ্চ ক্যাপচার, এরপরে সাধারণ জনতার মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং অবশেষে, হালুয়ারুটির ভাগাভাগি নিয়ে দ্বিখণ্ডিত করন। পুরো ঘটনার যে সারাংশ দাঁড়াল, ‘এই ধরনের আন্দোলন তৈরিই হয় বিক্রি হওয়ার জন্য’ আন্দোলনটির এমন একটি ছবি চিত্রায়িত হল। দুটো সুবিধা হল, রাজাকার প্রশ্নে, আওয়ামীরা তাঁদের নিজ ফর্মুলায় ফিরে যেতে পারল আর এটাও নিশ্চিত করতে পারল যেন এরপরে যুব সমাজ আর কখনই এই ধরনের কোন ডাকে সাড়া না দেয়।

সরকারের হাড়ে দ্বিতীয় কাঁপনটি জাগিয়েছিল, হেফাজত। ফর্মুলা একই। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান। বেশিদিন চালাতে পারলে, সরকারের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা শুরু হয়ে যেত। এদের সামলানোর জন্য একই ফর্মুলা চলবে না, সেটা আওয়ামীরা বুঝেছিল। ধর্ম ব্যাপারটার সঙ্গে আওয়ামীদের সখ্য খুব বেশি না। ফলে ছাত্রলীগ দিয়ে এই আন্দোলন কব্জা করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে মুল সুবিধা ছিল অন্য জায়গায়। এই আন্দোলনে আসা জনতার অনভিজ্ঞতা। তাঁদের মনে হয়েছিল, জ্বালাও পোড়াও মানেই বিজয়। যে শিশুদের নিয়ে এই অবস্থান আন্দোলন তৈরি হয়েছিল তাঁদের সাহস ব্যাপারটাও ছিল একটি ইস্যু। আর সেই রাতের অতর্কিত আক্রমণও ছিল অপ্রত্যাশিত, বা হয়তো তাঁদের নেতাদের কাছে প্রত্যাশিত এবং প্রকাশিত। যাই হোক অপারেশান সাকসেসফুল।

এই দুই ঘটনার পর থেকে, সরকারের অবচেতনে একটি ব্যাপারই তাড়া করছিল, আর তা ছিল অবস্থান আন্দোলন। ঢাকার প্রবেশ মুখে একবার যদি বিরোধী দল অবস্থান শুরু করতে পারে, তবে কাহিনী পাল্টাতে সময় লাগবে না। আর সেই অবস্থানে যদি ম্যাডাম স্বয়ং থাকেন, তবে তো পরিণতি আরও ভয়ানক হয়ে যাবে। অন্তর্কলহ আর একরাশ মামলা দিয়ে যত সহজে বিএনপি নেতাদের কাবু করা গেছে, একবার অবস্থান আন্দোলন শুরু হয়ে গেলে, তাঁরাও পকেট থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করবে। বিএনপি নেত্রীকে মামলা দিয়ে থামানো যাবে না, জানতো। ফলে নতুন কোন প্ল্যানিং জরুরী ছিল। তবে গনতান্ত্রিকভাবে তা করা সম্ভব না, এটাও জানত। রাস্তা একটাই ছিল, তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দেয়া। কিংবা একাকী করে দেয়া।

সত্যিকারের নির্বাচন হলে যে হারবে, আওয়ামীরা সেটা জানতো। আবার এও জানতো, আন্দোলন করে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী তাঁরা মানাতে পারবে না। হোলও তাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার জবাই করবার পর থেকে বিএনপি কোন আন্দোলনই দানা বাঁধাতে পারেনি। হরতাল আর অবরোধ, সেই অর্থে আর রাজনৈতিক হাতিয়ার নেই। আর দুইএকদিনের এমন কর্মসূচীতে আজকাল আর সরকার কর্ণপাতও করেনা। আর তাই গতবছরের ৫ই জানুয়ারির পর থেকে সরকার বেশ আরামেই ছিল। আওয়ামীদের জন্য ভয়ের সময় বলতে এই শীতকাল। এটা পার হলেই, পরিস্থিতি আবার নিয়ন্ত্রণে। আর বিএনপির জন্যও আশার সময় এই শীতকাল। যা করার এই সময়েই করতে হবে। মামলা আর অন্তুর্কলহের কারণে বিএনপি এখন পর্যুদস্ত। টিমটিম করে আশার যে বাতিটি জ্বলছে, তা জ্বালিয়ে রেখেছেন বিএনপি নেত্রী।

আওয়ামীরা ঠিক করল, নেত্রীর ওপরও আঘাত হানবে। মামলার দিন পড়তে লাগল। মামলায় কাজ হবে না, আওয়ামীরা জানে। তবে কিসে কাজ হবে, সেটা জানে না। এদিকে হরতালও যে কাজে দেবে না, সেকথা বিএনপিও জানে। কিসে কাজ হবে, সেব্যাপারেও তাঁরা বেশ অনিশ্চিত। সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে, আওয়ামী সরকারের হাড়ে কাঁপন ধরাতে পেরেছিল কেবল অবস্থান আন্দোলন। আর সেটা যদি হয়, ঢাকার প্রবেশ মুখে। আওয়ামীদের ভেতর সেই জুজুর ভয় ছিলই। তাই সম্ভবতঃ তাঁরা ঠিক করে রেখেছিল, ঢাকার প্রবেশ মুখে সমাবেশের কোন সুযোগ দেয়া হবে না। প্রয়োজনে ‘নেড়িকুত্তা’ ইফেক্ট দিতেও তাঁরা রাজী ছিল। নেত্রীকে ঢাকার বাইরে সমাবেশ করতে দিলেও, ঢাকার প্রবেশ মুখের আশে পাশে করতে দেয়ার ঝুঁকি নিতে রাজী ছিল না আওয়ামীরা। সেই ফর্মুলার প্রথম প্রকাশ দেখা গেল গাজীপুরে।

সমাবেশের পরবর্তী প্ল্যান বিএনপি করেছিল ৫ই জানুয়ারী। সেটা আটকাবার ফর্মুলা হিসেবে তাঁরা ব্যবহার করল, ‘মার্চ ফর ডেমক্রেসি’র পুরনো ফর্মুলা। ম্যাডামকে অন্তরীন রাখা। আর সেটা করবার জন্য সেই বালুর বস্তা। হয়তো প্রত্যাশা ছিল, আবার রেগে গিয়ে ‘গোপালি’ বলবেন। টুই তোকারি করবেন। তবে এবার তিনি শান্ত ছিলেন। তবে বরাবরের মত সমালোচনা হল, বিএনপির অন্য নেতাদের মেরুদণ্ডহীনতার। মামলার ভোয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার। প্রথম দিকে সরকারকে বিজয়ী মনে হলেও, পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করেছে মনে হচ্ছে।

আসলে ৫ই জানুয়ারী নিয়ে আওয়ামীদের প্ল্যানিং বেশ অগোছাল মনে হয়েছে। বালি, খোয়ার ট্রাকের মত হাস্যকর ফর্মুলা, ইচ্ছে করে নেয়া, না ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ আটকাবার ফর্মুলার রিপিট টেলিকাস্ট, বোঝা যাচ্ছে না। কারণ যেটাই হোক, আগেরবার ফর্মুলাটা কাজে দিয়েছিল। তবে এবার কাজটা যেভাবে বিদেশী মিডিয়ায় এসেছে, আর তালার যে দৃষ্টিকটু ব্যবহার হয়েছে, তা সরকারের জন্য খুব সুখকর হয়নি। এই মুহূর্তে ব্যাপারটা বেশ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। না পারছে তালা খুলে দিতে, না পারছে তালা লাগিয়ে রাখতে। তারচেয়েও বড় সমস্যা, খুব যুক্তিযুক্ত কোন ব্যাখ্যাও দিতে পারছে না এই ‘তালা’র। সবার সামনে স্বীকার করতে পারছে না, ম্যাডামকে ছাড়লে, আর তিনি একটি সমাবেশকে অবস্থান আন্দোলনে পরিণত করতে পারলে, আমাদের গদি নড়ে উঠবে। গণজাগরণ আর হেফাজতের পরে সম্ভবতঃ প্রথমবারের মত আবার আওয়ামীদের হাড়ে কাঁপন লেগেছে। দেখা যাক এবার কি হয়।

দ্যা গ্রেট বিএনপি ফ্লপ শো

bnp-final1

by zainuddin sani

শো টা যে ফ্লপ করবে, কিছুই যে করতে পারবে না, তা কমবেশি সবাই জানতো। তারপরও দলীয় নেতা কর্মীরা টিভি সেটের সামনে বসেছিল। সারকারী অঘোষিত হরতাল না হলেও, মনে হয় না তাঁরা ঢাকায় যেতেন। সাধারণ জনতার যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। অলৌকিকভাবে ‘নুর হোসেন’ জীবিত হলে, সেও নিশ্চিত যেত না। শুধু বিএনপির আন্দোলন না, ‘গনতন্ত্র উদ্ধার’ মার্কা কোন আন্দোলনেই যেত না। নব্বইয়ে একবার উদ্ধার করে শখ মিটে গেছে। তবে রাজনীতি প্রিয় বাঙালির, রাজনীতি নিয়ে কথা বলা হয়তো থামাবে না। রাস্তায় নামবার ভুল এখন আর কেউ করে না। দলবাজি এখন সবাই করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে।

সমর্থক যে নেই, তা কিন্তু না। তবে তাঁরা সব কিছু দেখে, খেলা দেখার মেজাজ নিয়ে। টিভি সেটের সামনে বসে, নিজ নিজ দলের হয়ে উল্লাস করার জন্য। আর সাধারণ জনগণ বসেছিল গত বছরের স্মৃতি রোমন্থন আর ‘যে কোন মুল্যে’র মানে কি তা বোঝার জন্য। মানেটা গাজীপুরের দিনও বুঝেছিল, তবে ভেবেছিল, সেখানকার দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে, একটি লোকাল কারণে, শো ফ্লপ হয়েছিল। এবার ঘটনা ঢাকায়, নেতা কর্মীরাও আছে, বড় বড় হুশিয়ারি আসছে, অতএব এবার কিছু একটা হবে।

বিনোদন দেয়ার আওয়ামীদের ক্ষমতা নিয়ে কারোরই তেমন কোন সন্দেহ ছিল না। শ্লেষ মেশানো কথা বলায় কেউই কম যায় না। তবে বর্তমানে এবিষয়ে আওয়ামীরা একধাপ এগিয়ে আছে। সেসব শোনার পরের দৃশ্য ছিল রাজপথ। পুলিশ আর ছাত্রলীগের ‘ডেডলি কম্বিনেশান’ গাজিপুরের মত এখানেও খেল দেখাবে, তা সবারই জানা ছিল। একেবারে ‘কপি ক্যাট’ হলে দর্শক কমে যাবে দেখে মনোরঞ্জনের নতুন কিছু রসদও রাখা হয়েছিল। মায়া সাহেবের লুঙ্গি কিংবা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ এর সংযোজন হল। সবাই না হলেও অনেকেই এই নিয়ে আশাবাদী ছিল— কিছু নতুন মনোরঞ্জন আসছে।

সেই আশার গুড়ে অচিরেই বালি পড়ল। আওয়ামী নেত্রীর সেই পুরনো ঘ্যানঘ্যান আবার শোনালেন। সঙ্গে নতুন যা ছিল, তা হচ্ছে বিএনপি নেত্রীর নাটকের পাণ্ডুলিপি পড়ে শোনালেন। এছাড়া আওয়ামীদের তরফ থেকে বড় ধরনের তেমন কোন নতুনত্বের দেখা পাওয়া যায়নি। হয়তোবা তাঁরা দেখাতে চায়ও নি। এক বালুর বস্তা দিয়েই যদি কুপোকাত করা যায়, তবে আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাবার দরকার কি? তারপরও, কিছুটা ছিল।

আগেরবার ছিল বালুর বস্তা, এবার আর বস্তায় বালু ঢোকাবার প্রয়োজন বোধ করেনি। বালুর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছিল খোয়া, মাটি এসবের ট্রাক আর তাদের ড্রাইভারের মুখে মজার সব গল্প। দরজার তালাটিকেও নতুন সংযোজন বলা যেতে পারে। এবারের সত্যিকারের নতুনত্ব ছিল ‘স্পাই থ্রিলার’। আওয়ামীদের প্ল্যান আগে থেকে জেনে যাচ্ছিল বিএনপি আর বিএনপির প্ল্যান তৈরির সাথে সাথে চলে যাচ্ছিল আওয়ামী নেত্রীর কানে। এই প্লট আর কাউন্টার প্লটের খেলাটা এবার সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হয়েছে।

বিএনপির তরফ থেকে নতুনত্বের অভাব থাকলেও সময়টা খারাপ কাটেনি। পিকাপ ভ্যানে করে কয়টা কম্বল, কয়টা ম্যাট্রেস আসল, কোন ঘরকে ম্যাডামের বেডরুম বানানো হল, এসব খবর একেবারেই আনকোরা। আসলে সবাই গতবছরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ র সঙ্গে ঘটনা মেলাচ্ছিলেন। ‘ডায়ালগ বাই ডায়ালগ’, ‘সিন বাই সিন’। ম্যাডাম এবার একেবারে হুবহু নকল করেননি। সেবারের তুলনায় এবার একটু মুডে ছিলেন। রাগে গড়গড় করতে করতে সেই ‘গোপালি’ আর ‘তুই তোকারি’ ছেড়ে এবার ‘ক্যান রে ভাই’ এ এসেছেন। কিছুটা হলেও নতুনত্ব।

খেলায় কে জিতল তা নিয়ে আপাতত কিছুদিন ‘টক শো জীবীরা’ গলা ফাটাবেন। দলের নেতারা আসলে দুই ম্যাডামের গুণগানে কিছুদিন কান পাতা দায় হবে। একে অপরকে গালিগালাজও হয়তো করবেন। ‘গনতন্ত্র হত্যা’ ‘রাজাকারদের দোসর’ ‘ট্রেন মিস’ ‘২০১৯’ ‘সংবিধান রক্ষার নির্বাচন’— মোটামুটি এই থাকবে আগামী কিছুদিনের আলোচনার বিষয়। সাংবাদিকরা আসলে সবাই লক্ষ্য রাখবে, কে কোন দিকে ঘেঁসে কথা বলছেন। যদিও সাংবাদিকরাও দল বেছে ফেলেছেন এবং কি কি বলবেন, তাও সবাই জানে। তারপরও হয়তো দেখবেন। দুই দলকেই গালি দিলে আমরাই হয়তো বলব, ‘এই ব্যাটা কিন্তু ধান্ধাবাজ, দুই দিকেই তাল দিচ্ছে’। এরপর হয়তো চ্যানেল পাল্টাবো আর নয়তো ‘জলসা’ না দিলে স্বামীকে খুন করব।

খেলা আরও চলতো কি না, সত্যিকার অর্থে বোঝার উপায় নেই। মিছিলের নাম পাল্টে বিক্ষোভ মিছিল করলেও সেই মিছিল করবার জন্য কেউ আসবে না, তা সবাই জানে। নেতারা টাকা খেয়ে যেভাবে প্ল্যান উগড়ে দিচ্ছেন তাতে মনে হয় না ঢাকা শহরে আর কোন সমাবেশ করতে দিবে। বাকী থাকে হরতাল আর অবরোধ। ভোঁতা এই দুই অস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া তাদের আর তেমন কিছু করারও নেই। সেটাও হয়তো আর দুইদিন ডাকতে পারবে কারণ বিশ্ব ইজতেমার জন্য সেটাও স্থগিত করতে হবে। আর দিন দশেকের গ্যাপ পড়লে, নতুন করে আন্দোলন (এটাকে আন্দোলন না বলতে চাইলে, আমি আপত্তি করবো না) চাঙ্গাও করতে পারবে না। দলের নেতাদেরও সুবিধা। সম্ভবতঃ তাঁরা এটাই চাইছেন। শুধু শুধু আত্মগোপন করতে হবে না, এই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

এই শীতের আন্দোলন সম্ভবতঃ শেষ। কিছু খুচরা চেষ্টা হয়তো হবে। যদি কিছু লাশ পড়ে, তবে হয়তো কিছু মিছিল হবে। বিশ্ব ইজতেমা শেষ হওয়ার পরে হয়তো আবার কিছু অবরোধ আসবে। এবং যথারীতি মার্চের পরে সব কিছু ইতি। বিএনপির নেতারাও হয়তো অপেক্ষায় আছেন, কবে আসবে এপ্রিল। তাদের আর আত্মগোপনে থাকতে হবে না, মাঠে নামতে হবে না। তবে আওয়ামীদের কাছ থেকে পাওয়া মাসোহারায় হয়তো টান পড়তে পারে। আন্দোলনের প্ল্যান জানিয়ে যে আয় তাঁরা করছিলেন, সেই আয় হয়তো আপাততঃ বন্ধ হয়ে যাবে।

‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

by zainuddin sani

দেশের রাজনীতিতে কি হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সবাই বেশ বিভ্রান্ত। বিএনপির হুমকি ধামকি দেয়া, আর আওয়ামীদের সেসবে কর্ণপাত না করা, ব্যাপারটা অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। সকালের পত্রিকার দুটি অবধারিত শিরোনাম থাকতো দুই দলের কোন না কোন নেতার শ্লেষাত্মক বক্তব্য। কেন যেন ব্যাপারগুলোকে অনেক বেশী রীতি মাফিক মনে হচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছিল কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে— ‘আওয়ামীরা ২০১৯ পর্যন্ত চাইলে নির্বিঘ্নে থাকতে পারবে’। সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণার পরে, সত্যিকারের প্রত্যাশা কারোরই তেমন ছিল না। কমবেশি সবারই ধারণা হয়েছিল, ৫ই জানুয়ারিকে ঘিরে কোন কর্মসূচি এবং সেই কর্মসূচিতে বাঁধা দিলে কি হবে, তার হুমকি সম্বলিত একটি বক্তব্য আসছে। তার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামীরা কি বলবে, তাও সবাই আন্দাজ করে নিয়েছিলেন। পুরোপুরি তেমনটা হল না, সেদিনের ঘটনা, এদেশের রাজনীতির টিপিক্যাল ফর্মুলার ব্যত্যয় ঘটাল।

আপাত দৃষ্টিতে বিএনপি নেত্রীর ৭ দফা তেমন নতুন কিছু না। এতোগুলো দফার ভেতর মুল দফা একটিই। বাকী দফাগুলোর বেশ অনেকগুলোই সাধারনতঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকারই করে থাকে। আর কিছু খুচরা দফা দেয়া হয়েছে, সম্ভবতঃ নেগসিয়েশানের সময় বাদ দিতে রাজী হবার জন্য, সবাইকে বলা যাবে, ‘সমঝোতার খাতিরে আমরা তিনটি দাবী ছেড়ে দিলাম।’ তবে প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি হচ্ছে অন্য কারণে, এই সময়ে এসে, এমন নরম অবস্থান কেন? যে দাবী গত ছয় বছরে আওয়ামীরা মানেনি, তাদেরকে আবার নতুন করে সেই দাবীর কথা জানানো কেন?

৭দফাকে বেশ নির্বিষ মনে হলেও, কেন যেন সবাই তেমনটা ভাবছে না। সবাই বেশি করে ভাবছেন, এতো মোলায়েম স্বরে কেন কথা বলছেন বিএনপি নেত্রী? তারচেয়েও বড় কথা, আল্টিমেটাম নেই কেন? দফা না মানলে কি হবে, সে সম্পর্কেও নেই কোন ভবিষ্যৎবাণী। বড় জাতের আরও কিছু প্রশ্ন আছে। যেমন বিএনপির গেম প্ল্যান তাহলে কি? সবাই ভাবছেন এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে। আর সেই উদ্দেশ্য কি, তা নিয়ে বোদ্ধা মহলে চলছে কানাঘুষা। কেউ ভাবছেন, ‘নিশ্চয়ই বিএনপি কোন সিগন্যাল পেয়েছে’।

বোদ্ধা মহলকেও খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। তাঁদের এসব কথা ভাববার যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। আসলে এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে পদক্ষেপগুলোকে বেশ পরাজয় বলে ভাবা হয়, তার একটি হচ্ছে দাবী জানানো। বিশেষ করে সেই দাবীর সংখ্যা যদি থাকে একাধিক। আর সেই দাবী পূরণ না হলে, সরকারের কি অবস্থা হবে, সে সম্পর্কে যদি কোন হুশিয়ারি না থাকে, তবে তো অবধারিতভাবে ধরে নেয়া হয়, এই দাবীসমূহের প্রস্তাবকারী হয় সিরিয়াস না কিংবা তাদের তেমন কোন শক্তি নেই।

অন্যদিকে সাহসী পদক্ষেপ ভাবা হয় আন্দোলন কিংবা হুমকিকে। ‘এক দফা এক দাবী’র ও আলাদা একটা দাম আছে। তবে তেমন কিছু একবার বলে ফেললে কিছু একটা করে দেখানো জরুরী। নইলে আবার শুরু হয়ে যাবে অন্য হিসাব। যেমনটা হয়েছিল আওয়ামীদের ‘স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও আটকাতে পারবে না’ হুমকির পরে। আর ইদানীং কালে, বিএনপি সম্পর্কে।

আন্দোলন করে কোন দাবী আদায়ের রেকর্ড বিএনপির খুব একটা নেই। তবে দাবীতে অনড় থাকবার একটা রেকর্ড ছিল। ফলে আগে যখন হুমকি ধামকি দিলেও সেগুলোকে কিছুটা সিরিয়াসলি নেয়া হত। ভাবা হত, সফল না হলেও, কিছু একটা অন্তত করবে। নিজেদের তৈরি করা ‘গুড উইল’এ সম্প্রতি তাঁরা ফাটল ধরিয়েছে। হুমকির অধিক ব্যবহার এবং কিছু করতে না পারা, তাঁদের দেয়া হুমকি সম্পর্কিত এই ধারণায় কিছু পরিবর্তন এনেছে।

এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ফর্মুলা অনুযায়ী ৭ দফাকে নিশ্চিতভাবেই পরাজয় কিংবা পিছু হটা ভাবা যায়। বিশেষ করে গাজীপুরে যেভাবে পিছিয়ে আসলো, তারপরে। ৫ই জানুয়ারীর মত ‘সিম্বোলিক’ দিনে সবাই যেমনটা ভেবেছিলেন, তাঁরা তেমন কিছু করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। এটাও ঠিক, তাঁদের যা সাংগঠনিক অবস্থা, তাঁদের কাছ থেকে ততোটা কেউই প্রত্যাশা করছেন না। আবার এতো নরম কর্মসূচী দিবে, এটাকেও কেউ স্বাভাবিক ঘটনা ভাবতে চাইছেন না। সবার মনে তাই একটি সন্দেহ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, ‘পর্দার আড়ালে কিছু ঘটছে কি না।’

বিএনপি যেভাবে একের পর বিভিন্ন জাতের হুমকি দিয়েও কিছু না করার একটা ট্র্যাডিশান তৈরি করে ফেলেছিল, তাতে কমবেশি সবাই ভাবতে শুরু করেছিল, এই সরকারকে হটাবার ক্ষমতা বিএনপির নেই। আর ইতিহাস বলে, সরকারকে বাধ্য করতে না পারলে, বিরোধী দলের দাবী মেনে নেয়ার মত ঘটনা ঘটে না। আর নরম স্বরে বললে তো নিশ্চিতভাবেই ঘটবে না। এই দাবীর তাই একটি স্বাভাবিক মানে হচ্ছে, হুমকি দিয়ে কিছু না করে নিজেদের ইমেজের যে বারটা বাজিয়েছি, তা আর কন্টিনিউ করতে চাই না। এবার স্বীকার করে নিতে চাই, আমরা অথর্ব। দল হিসেবে, সংগঠন হিসেবে আমরা বেজায় অগোছালো। আন্দোলন করে দাবী আদায়ের ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই এই অনুরোধ ফর্মুলা।

এই স্বাভাবিক ব্যাখ্যার বদলে সবাই কেন যেন অন্য কিছু ভাবছেন। হয়তো ১/১১এর উদাহরণ এর জন্য দায়ী। এদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিদেশ নির্ভরতা এর জন্য দায়ী। হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া বাকী কারো কাছ থেকে সমর্থন আদায়ে এই সরকারের ব্যর্থতা এর জন্য দায়ী। আবার হতে পারে পর্দার আড়ালে এমন কিছু ঘটবার আভাস তাঁরা পেয়েছেন, যা থেকে মনে হয়েছে, এদেশ একটি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। আর তাই, কঠোর আন্দোলনের পথ ছেড়ে, নরম আর সমঝোতা ধাঁচের পথে হাঁটতে রাজী হয়েছেন, বিএনপি নেত্রী।

ধাঁধা আরও আছে। বিএনপির বেশ কিছু বড় নেতার বক্তব্য থেকে বোঝা গেছে, ৭ দফার এই সিদ্ধান্ত নেত্রীর একক সিদ্ধান্ত। সব দলের সাথে আলাপও করেননি। এমনকি নিজ দলের অনেককেও অন্ধকারে রেখেছিলেন। ঘাড়ের ওপর মামলা, বিভিন্ন আন্দোলনে দলীয় বড় নেতাদের পালিয়ে বেড়ানোর মানসিকতা এমন অনেক ব্যাপারকেও এর কারণ ভাবা যেতে পারে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বড় কারণ হিসেবে সবাই ভাবতে শুরু করেছেন, বিদেশী প্রভুদের ইচ্ছেকে।

৭দফা নিয়ে বোদ্ধা মহলের এই প্রতিক্রিয়া দেখে এই প্রশ্নই সবার মনে জাগছে, কি এমন ঘটল যে ম্যাডাম এরকম ‘সফট’ কর্মসূচী দিলেন। কোন আশ্বাস কি পেয়েছেন? আওয়ামীরা নরম হবে কিংবা এভাবে দাবী জানালে মেনে নেবে— এমন কোন আভাস? ১/১১ এর মত কোন ঘটনার আভাস? আওয়ামীদের ওপর থেকে বিদেশী প্রভুদের আশীর্বাদের হাত তুলে ফেলার আভাস? কিংবা প্রতিবেশী দেশের ওপর অন্য কোন বৃহৎ দেশের চাপ প্রয়োগের আভাস? সম্ভবতঃ আর কিছুদিনের ভেতরেই সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে। তখন স্পষ্ট হবে, ‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

নির্বাচনমুখী আন্দোলন বনাম লতিফ কার্ড!

|| এ.কে.এম ওয়াহিদুজ্জামান ||

১৭ বছর আগে নিজে হাজ্জ্ব পালন করার পরও গত সেপ্টেম্বরে আমেরিকা সফরের সময় হাজ্জ্ব নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। বিএনপিসহ এবং ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো তখন তাকে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ এবং বিচার করার দাবী জানিয়েছিলো। সরকার সেটা মেনেও নিয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাকে মন্ত্রীসভা এবং আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেই গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথা নিয়ে দেশে ফেরা এবং গ্রেফতার এড়িয়ে এয়ারপোর্ট ত্যাগ করার পর হেফাজতে ইসলামীর হরতাল এবং ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচী বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে সেই সময়ে, যখন বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক দলগুলো নির্বাচনমূখী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিএনপি’র সামনে এখন দুইটা পথ; লতিফ ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করা অথবা লতিফ ইস্যুকে উল্টো সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়ে নির্বাচনমূখী আন্দোলনটাই গড়ে তোলার চেষ্টা করা। ৯০ দশকে কম্যুনিজম বিরোধী স্বস্তা সেন্টিমেন্টের মৃত্যুর পর ইসলামী জঙ্গী বিরোধী স্বস্তা সেন্টিমেন্টের বাজার দর এখন চড়া। বিএনপি যদি এখন হেফাজতে ইসলামী এবং জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে আন্দোলন শুরু করে, তাহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক বাজারকে কেবল আরেকবার দেখিয়ে দেবে যে, বিএনপি গণতন্ত্র নয় বরং জঙ্গীবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রয়োজনে ৬মে ২০১৩’র মত আরেকটা ঘটনা ঘটিয়ে প্রমানও করে দেবে যে, বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ঠেকাতে কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই উপযুক্ত দল।

দ্বিতীয় পথ অনুসরণ করে বিএনপি যদি লতিফ ইস্যুকে উল্টো সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়ে বলে যে- সরকার তার বিচার করবে বলেছিলো এখন বিচার করুক, যদি বিচার না করে তাহলে সেটা সরকারের ব্যার্থতা। তাহলে বলটা সরকারের কোর্টে যাবে। সরকারকে তখন হয় লতিফ সিদ্দিকীর বিচার করতে হবে কিম্বা তাকে দিয়ে ভুল স্বীকার করিয়ে ক্ষমা প্রার্থনাশেষে তওবা করানোর ব্যবস্থা নিতে হবে, অথবা তাকে বিচারের আওয়তায় না এনে ইসলামিস্টদের আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে।

প্রথম ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলামীর দাবী মেনে নিয়ে সরকার লতিফ সিদ্দিকীর বিচার করে, বা লতিফ সিদ্দিকী নিজেই হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় গিয়ে তওবা করে পুনরায় কলেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে একটা চমক সৃষ্টি করতে পারেন। যদিও এটা খুবই দুর্বল একটা সম্ভাবনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ লতিফ সিদ্দিকী অনেক কাঠ-খড়-কেরোসিন পুড়িয়ে নিজের যাবতীয় দুর্নীতি ও অপকর্মের আলোচনা ধামাচাপা দিয়ে এখন সুশিল সমাজের মাধ্যমে দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরীনের পাশে স্থান করে নিয়েছেন। এই স্থান থেকে সরে এসে নিজের দুর্নীতি ও অপকর্মের মামলাগুলোকে নিশ্চই তিনি প্রাধান্য দিয়ে আলোচনায় আনতে চাইবেন না।

Untitled-1

এমতাবস্থায় দ্বিতীয় বিকল্প অনুযায়ী, হেফাজতে ইসলামীর দাবী না মেনে নিয়ে সরকার তাদেরকে আন্দোলন করার সুযোগ করে দিতে পারে। যার নমূনা আজ ২৪ নভেম্বর দেখা গেছে। বিএনপির কোন সংগঠন পুলিশের গ্রেফতার-পিটুনীর কারণে রাস্তায় মিছিল করতে না পারলেও হেফাজতে ইসলামী মিছিল করতে পারছে। মানে সরকার তাদেরকে মিছিল করার সুযোগ দিচ্ছে। এটাকে তারা সাফল্য ভেবে চুড়ান্তভাবে ঢাকা অবরোধের ডাক দিলেও সম্ভবত সরকার সেটা করতে দেবে। এতে দ্বিমুখী লাভ। প্রথমত: এতে করে সরকার বিরোধী আন্দোলন করার মত শক্তিকে দ্বিখণ্ডিত করা যাবে, যাতে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয়ত: জঙ্গীবাদ তত্ত্ব প্রচার ও প্রমান এবং দমনের দক্ষতা প্রমাণের মোক্ষম সুযোগ। সরকার আগের মতই বিনাবাঁধায় হেফাজতে ইসলামী ও অন্য ইসলামিস্ট দলগুলোকে মিছিল, সমাবেশ এবং ভাংচুর করতে দিয়ে সেই দৃশ্য টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করে প্রথমে বর্হিবিশ্বকে জঙ্গীবাদের উত্থান দেখাবে, তারপর তা কঠোর হাতে দমন করে নিজেদের সক্ষমতা দেখাবে।

কিছুদিনের মধ্যেই নেপালে নরেন্দ্র মোদীর সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হবে। তারপর দেশে আসবেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। সেই সময় মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রসঙ্গে আলোচনা এড়ানোর জন্য জঙ্গী ইস্যুর চেয়ে গরম ইস্যু আর কোনটা হতে পারে? মোদি সরকার আওয়ামী লীগের সাথে সাধারণ বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষা করলেও ভারতের পলিসিমেকার সাউথ ব্লক এখনো আওয়ামী লীগেরই কট্টোর সমর্থক। লতিফ সিদ্দিকী সেই ভারত হয়েই বাংলাদেশে ফিরেছেন। কাজেই তিনি আগুনে ঝাঁপ দিতে নয়, বরং আগুন নিয়ে খেলা করতে এসেছেন। এখন তার লেজে আগুন দিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধানো দেখার অপেক্ষা।

A MAN & HISTORY ON TRIAL The Case of David Bergman By Lawrence Lifschultz

1

A MAN & HISTORY ON TRIAL  The Case of David Bergman

 By Lawrence Lifschultz

Justice Obaidul Hasan and his colleagues at Bangladesh’s International Crimes Tribunal (# 2) are scheduled to rule on the question of an unusual historical dispute.  How and why this question of history has become the subject of a contempt proceeding is a troubling story. Their decision is expected on October 13th and it may have ramifications that even the justices of ICT-2 may not fully appreciate.

 

The case concerns the British journalist, David Bergman, who has been a long time resident of Bangladesh.  Mr. Bergman has been accused of “contempt” of Court for exploring an issue pertaining to an historical reference that one of the Tribunals made in a particular case.

 

The Tribunal itself did not bring the accusation against Bergman. The proceedings were initiated in the form of a petition by a third party, a High Court lawyer, Abul Kalam Azad. He accused David Bergman of showing disrespect to the Tribunal by raising a question about the number of casualties that occurred during Bangladesh’s War of Liberation.

 

After hearing Azad’s petition, the Tribunal issued an Order to Show Cause seeking a response from Bergman as to why he should not be held in contempt. While there were two other relatively minor charges raised by Azad in his petition, the central accusation focused on the fact that in a review of a forty-year debate David Bergman had questioned the accuracy and indisputable character of a statistic that had been cited by the War Crimes Tribunal.

 

The petitioner in this case, Abdul Kalam Azad, is the type of man who gives nationalism a bad name. Nationalism, as a singular ideology, is a two-edged sword.   In the context of an oppressed nationality seeking to overcome colonial rule or foreign occupation, nationalism can play a powerful and progressive role.  But in other circumstances it can become the breeding ground for bigotry and narrow ideological dogmatism.

 

In the case of Bosnia in the early 1990s, for example, Serb nationalism became genocidal and lead to the brutal “ethnic cleansing” of Bosniak,—largely Muslim—and Croatian—largely Catholic—populations, of a country with a long historical tradition of multi-ethnic tolerance and peaceful co-existence among its diverse communities.

 

The history of Bangladesh’s struggle for Liberation represents an example of a “progressive” nationalism. It is one of the clearest and most courageous examples in modern history of a democratic movement pursuing every non-violent option, including winning a national election, in order to overcome the trap of underdevelopment and regional inequality that were an integral part of the very structure of Pakistan’s military dictatorship. The dictatorship would not yield to the results of a democratic vote. On 25 March 1971 the Pakistan Army opted for mass murder instead and from that moment Bangladesh’s War of Liberation began.

 

What does this historical background have to do with David Bergman’s trial for contempt? As it turns out, a great deal.

 

Bangladesh has been in search of what the human rights community calls “transitional justice” since the country won its freedom in 1971.  Transitional justice is an awkward term that is meant to reflect a sense that justice and accountability has been achieved within a society in the aftermath of war crimes and crimes against humanity.  It means that an effective effort has been made to bring those who have committed these terrible crimes to justice.

 

The coup of 1975, only four years after Liberation, interrupted that journey for Bangladesh.  Instead, during the tenure of the back-to-back regimes of General Zia and General Ershad which emerged after the murder of Sheikh Mujib, notorious collaborators of the Pakistan Army found themselves under the protection of Bangladesh’s new military dictators. Several ended up in high government positions. It was a curious turn of fate but not an accidental one.  There was a great deal of careful planning and killing involved in order to create such a state of affairs.

 

It took nearly forty years for a serious effort to be undertaken to bring the war criminals of 1971 into a system of justice that would focus on putting these men on trial. Thus Bangladesh’s first International Crimes Tribunals was established in 2009 and the second, soon after.  These were steps of great significance. This is not the place nor the time to examine in detail the many controversies that have emerged related to the work of the Tribunals. Nor is it the place to examine how Pakistan, with the shameful cooperation of the United States and France, blocked the sharing of UN expertise and assistance to Bangladesh in setting up the Tribunals. I will return to these topics in another article.

 

What is of importance today is that one of Bangladesh’s War Crimes Tribunals may decide to hold in contempt David Bergman, a reporter from whose early work we learned that war criminals from the 1971 War of Liberation were living with impunity in England.  Bergman was a key member of the team that researched and produced the excellent 1995 Channel Four documentary, “The War Crimes File”. This documentary threw a spotlight on individual members of the Jamaat-e-Islam and its student wing who were allegedly involved in multiple murders in 1971 but were living openly in Britain without fear of arrest. The evidence mustered in this documentary was impressive.

 

The contempt allegation against Bergman relates to a sentence in a 3 October 2011 Tribunal order charging Delawar Hossain Sayedee.  The order made a reference to the deaths of three million people during the War of Liberation.

 

Bergman has edited a website in which he has reported and commented on the various trials taking place before the War Crimes Tribunals.  He decided to take up the controversial topic of how many people died during 1971. Obviously, this is a difficult subject. On its own it was not central to the indictment of Sayedee, as the evidence against Sayedee was based on other factors.  But in making its ruling the Tribunal had cited a statistic that is accepted by many as an indisputable fact.

 

While I might have chosen a different context to examine this issue in detail, David Bergman decided to do it within the framework of a discussion of the Tribunal’s indictment of Sayedee. Therefore, on 11 November 2011, he wrote a detailed review of the historical debate on the issue of war casualties. Here he showed his capabilities as a ‘scholar journalist’.  Bergman’s mastery of the material covering the full spectrum of the debate on this issue was impressively clear. It is a thoughtful and insightful commentary.

 

However, Abul Kalam Azad, the attorney who called for Bergman to be held in contempt, argued that no one should question the accuracy of the statistic of three million deaths during the War of Liberation.  From the vantage point of Azad’s narrow-minded ‘nationalism’ anyone who questions this statistic must be ‘an enemy of the people’,  ‘an enemy of the state’, or an enemy of the Tribunal. Here we approach the really difficult issue. Is it the role of a Tribunal to pass judgment on the ‘historical correctness’ of a particular position in a historical debate such as this one?

 

Let me complicate the picture even further. In 1974, I was the Far Eastern Economic Review’s resident correspondent in Bangladesh. In the course of my reporting I met a very interesting man who had a very intriguing story to tell about the work he had recently been doing. He was employed by the Home Ministry and was part of a team of researchers conducting a study that was trying to assess the total number of casualties that had occurred during the nine months of 1971 as war raged across the country.

 

The Home Ministry study was trying to assess how many people had died directly from the armed violence of the Pakistan Army and their local collaborators. They were also trying to estimate how many people had died on the road or once they reached refugee camps across the border in India. Many of these deaths were among children and the elderly. The study was conducted by field workers systematically asking families in villages about those who had died from their village during the war and under what circumstances.  They were slowly building up a picture across the country. At the time we met, the Home Ministry team had completed their survey in approximately a third of the districts.

 

My Home Ministry source told me that based on their projections the number of deaths from the war was estimated at 250,000 people. As I recall, this did not include the young, the ill and the elderly, who died either in the refugee camps or as they fled the Pakistan Army. A quarter of million people dying from armed violence is by any measure a terrible and tragic number.  However, according to my source, the study was abruptly shut down and discontinued. The reason was that the survey was moving toward a statistical conclusion that differed with the prevailing orthodoxy that three million people had died from armed violence and refugee migration.

 

I never published this account because I was leaving Bangladesh within a week to take up a position as South Asia Correspondent of the Far Eastern Economic Review based in New Delhi. I had always meant to return to the issue but the Emergency in India and other events conspired to make this one of the few stories I never revisited as I intended.

 

Yet, in the context of the trial of David Bergman on contempt charges, it is has assumed great relevance. It is relevant because the government’s own study in 1974 essentially questioned the accuracy of the three-million figure and yet the ICT-2 is now considering holding a journalist in contempt for raising a question about this issue.

 

There is something wrong with this picture. If Justice Hasan and his colleagues declare Bergman in contempt, are they entering a terrain where they must hold Dr. M. A. Hasan and other researchers, such as myself, in contempt because there is only one true answer and the Court will declare what it is?

 

This is not the appropriate role of a war crimes tribunal in pursuit of justice in a democratic society. Perhaps, in one of the Stalinist courts of the 1930s where men like Bukharin were compelled to confess to ideological ‘errors’, one could expect such a ruling. In the minds of men like Abul Kalam Azad, the War Crimes Tribunals should become the ideological guardian of historical ‘facts’ whether they be disputed or not.

 

The historic task of the Tribunals is to bring to justice those responsible for the appalling war crimes and crimes against humanity that were carried out in a premeditated manner by fanatical supporters of the Pakistani state. The impunity under which they have lived for decades is a stain on the conscience of this country and the world.  The Tribunals have an immense task to accomplish justice in this regard and thereby honor the memory of the hundreds of thousands of victims. My view is that no one knows the truth or has an accurate number. In my opinion the death toll from armed violence might well have exceeded the 250,000 estimated by the 1974 Home Ministry study before it was shut down.

 

In March 2011, I was invited by the special investigations unit of Bangladesh’s War Crimes Tribunal to speak to the investigators about my knowledge and experience in Bosnia. I had co-edited a book with Rabia Ali entitled “Why Bosnia? Writings on the Balkan War”. I had also traveled widely in Bosnia and sadly I had walked through the many parks and soccer fields of Sarajevo and other towns that were filled with graves where the civilian dead were hurriedly buried in the midst of the long sieges and heavy bombardment of Bosnia’s war ravaged cities. I also had friends among the contributors to our book who had worked with the war crimes tribunals that were set up following the conflict.

 

In Bosnia, all the unmarked mass graves scattered throughout the country were excavated when the conflict ended. DNA tests were done on each person whose remains were exhumed. Their remains were respectfully kept until living family members could reclaim their relatives for burial once they had been accurately identified. This happened at Srebrenica and elsewhere.

 

The cost of deploying carefully trained forensic teams was significant and was funded by the UN, the European Union and the Bosnian government. Although it took years, this work was undertaken as a moral commitment by a society coming to grips with the aftermath of genocide. By this means, the Bosnians have built up a rough estimate of those who perished. But no one knows the precise number. Such a number is always elusive.

 

When I met the Bangladesh investigations unit in 2011, I was told by the team that they had identified over two hundred mass graves across Bangladesh, and they were still counting.

 

David Bergman in his discussion of this issue cites the study of Dr. M.A. Hasan, the Convenor of the War Crimes Fact Finding Committee, who since the fall of General Ershad had a assembled a team of researchers who “travelled around the country, village-to-village, to uncover accurate information on the numbers of dead.”

 

Dr. Hasan told Bergman that he thought the figure of 3 million was an exaggerated number and that more accurate number was closer to 1.2 million. “We have identified 948 killing fields or mass graves,” Hasan told Bergman. “Our research suggests that for every one grave that we have found there are four others which have been built upon or are not accessible. That makes a total of 5,000 graves.”

 

Dr. Hasan estimated approximately a 100 bodies in each grave, which results in an estimate of 500,000, or twice that of the projection developed by the 1974 Home Ministry study.  Yet, Dr. Hasan estimates based on his discussions with local villagers that those buried in the mass graves represent about 30 percent of the total number of deaths, with the a greater number of the dead having been disposed of by being thrown into local rivers where they were washed away.

 

Thus, Dr. Hasan, who is perhaps the only person to have researched this issue in such depth, estimates that 1.2 million people died during the Liberation War. Of course, this does not include many young, ill and elderly individuals who died in the refugee camps or on the road fleeing the violence.

 

The truth is that no one knows with any precision, or even approximately, what a real number might be. Dr. Hasan’s estimate is probably the most accurate.  Whatever the number is, the unmistakable truth remains that it is a number of horrific magnitude.  It reflects the pain and grief of thousands of families whose loved ones perished in the war.

 

Into this complex, difficult and emotional terrain, the War Crimes Tribunal (ICT-2) has decided to make a judicial ruling on a matter upon which jurists have no authority or place to declare a “right answer”.

 

No one needs someone like Abul Kalam Azad telling us, or asking a Court to tell us, what to think. Indeed, the man himself has failed to demonstrate any knowledge of the disputed facts or the debate that has taken place over four decades. Can ignorance dressed up as patriotism be anyone’s guide to knowledge?

 

One can only hope the Tribunal is wise enough to understand that this historical debate is outside their jurisdiction to rule on.  The War of Liberation was a war in the name of democracy and self-determination. It was an uprising against the ignorance, the hubris and the cruel violence of a military dictatorship determined to deny the outcome of a democratic election.

 

Bangladesh’s democracy, like others before it, is struggling. What is needed is enlightenment within its most important institutions. In my view, an enlightened Court would think hard about what Voltaire, said about opinions he didn’t agree with. Voltaire was a distinguished 18th century philosopher and writer associated with the French Enlightenment.  He once commented, “I do not agree with what you have to say, but I’ll defend to the death your right to say it.”

 

×  ×  ×

 

On May 23, 2011, Serajur Rahman, the Deputy Head of the BBC’s Bengali service, wrote a letter to the British newspaper The Guardian. He was commenting on an article written by Ian Jack in which the issue of the number of deaths during the Bangladesh war was discussed. Rahman had a story to report. He wrote the following:

 

On 8 January 1972 I was the first Bangladeshi to meet independence leader Sheikh Mujibur Rahman after his release from Pakistan. He was brought from Heathrow to Claridges [in London]. . . and I arrived there almost immediately. . .He was surprised, almost shocked, when I explained to him that Bangladesh had been liberated and he was elected president in his absence. Apparently he arrived in London under the impression that East Pakistanis had been granted the full regional autonomy for which he had been campaigning.

 

During the day, I and others, gave him the full picture of the war. I explained that no accurate figure of the casualties was available but our estimate, based on information from various sources, was that up to “three lakh” (300,000) died in the conflict.  To my surprise and horror he told David Frost later that “three millions of my people” were killed by the Pakistanis. Whether he mistranslated “lakh” as “million” or his confused state of mind was responsible I don’t know, but many Bangladeshis still believe a figure of three million is unrealistic and incredible.”

 

I met Sheikh Mujib in July 1969 when I was traveling through Dhaka after working in India for a year on a Fellowship from Yale University where I was an undergraduate. We had a long talk lasting two hours, just the two of us, over lunch and tea at his residence in Dhanmondi. I met him again after independence when I returned to Bangladesh as a young journalist and lived in Dhaka for a year. After 1975 I would spend many years unraveling the circumstances of his assassination.

 

There is not a single man or woman I’ve ever met who hasn’t made a mistake in their lives. Mujib had his own share, as do we all. I believe he misspoke in the Frost interview that Serajur Rahman has written about. The error should have been corrected but it never was. Unfortunately, in some circles this number took on the quality of rigid dogmatism.

 

Indeed, Serajur Rahman’s estimate in light of Dr. Hasan’s later research was probably an underestimate, but Rahman wisely pointed out on that cold January day in London in 1972 that there was “no accurate figure of casualties”. It would take research and analysis in the years ahead to gain a clearer understanding of the magnitude of suffering the people of Bangladesh underwent to gain their independence.

 

I am “publishing” this article on a website of a small publishing house (www.pamphleteerspress.com) based in the United States with which I am affiliated. My right to publish is protected by the First Amendment of the American Constitution.

 

Unfortunately, I am unable to publish this article in Bangladesh because the Justices of the War Crimes Tribunal some months ago declared this matter sub judice within their jurisdiction, and made clear that there should be no public discussion of this matter until they have issued their decision. Therefore, my Bangladeshi colleagues are unable to publish this article in their newspapers.

 

However, I believe there is relevant information that should be in the public domain that may inform both the Court and the public about new information.  The facts of the 1974 Home Ministry study are published here for the first time.  My purpose is not to defy the Court but to inform it.

9 October 2014,

 Stony Creek, CT. ×  USA

 

Lawrence Lifschultz was South Asia Correspondent of the Far Eastern Economic Review (Hong Kong). He has written extensively on European and Asian affairs for many publications, among them The Guardian, Le Monde Diplomatique (Paris), BBC, Economic & Political Weekly (Mumbai) and The Nation (New York). He is the author of Bangladesh: The Unfinished Revolution.

 

He can be reached at: OpenDoor.Lifschultz@gmail.com

 

সেনা অভ্যুত্থানঃ মুসলিম জাতিরাষ্ট্র প্রেক্ষাপট

আজ ১৯ আগস্ট । রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট অগাস্টাস (যার নামে ইংরেজী অগাস্ট মাসের নামকরণ করা হয়েছে) এর ২০০০তম মৃত্যুবার্ষিকী । তিনি জুলিয়াস সিজার পরবর্তী বিশৃঙ্খল অবস্থায় প্রথমবার পাক্স রোমানা (শান্তিপূর্ণ রোম) প্রতিষ্ঠা করেন এবং সম্রাট নামে নিজেকে ঘোষণা না দিয়ে প্রিন্সেপস্ সিভিতাতিস (রাষ্ট্রের প্রথম নাগরিক) হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন । ধারণা করা হয় নিজ স্ত্রী লিভিয়ার প্রয়োগ করা বিষপানে তিনি ১৪ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান । তবে অগাস্টাসের মৃত্যুবার্ষিকী স্বরণ করা আমার লেখার উদ্দেশ্য নয় । আজকের দিন আরো একটি ঐতিহাসিক এবং শিক্ষণীয় ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে । ১৯৫৩ সালে ঠিক এই দিনে (১৯ আগস্ট) ইরানের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেগ সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন । তার এই পতনে সরাসরি জড়িত ছিলো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ (অপারেশন অ্যাজাক্স) এবং বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্স (অপারেশন বুট) । ব্রিটেনের একটি কোম্পানী দীর্ঘদিন ইরানের তেল সম্পদ কুক্ষিগত করে নিজেদের পকেট ভরেছে । কিন্তু মোহাম্মদ মোসাদ্দেগ যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে তাদের কর্মকান্ডের হিসাব চাইলেন তারা সহায়তা করতে অস্বীকার করলো । এরপর মোসাদ্দেগ সরকার ইরানের সকল প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্রিয় মালিকানায় নিয়ে যাবার পর ব্রিটেন এবং আমেরিকা তাকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় । এই অভ্যুত্থান নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে দেখা যায় কিভাবে দেশের প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি এবং পেশাজীবিরা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে রাতারাতি বিদেশী শক্তিকে দেশের ভার তুলে দেয় । সেই সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় একটি সেনাবাহিনী কিভাবে ক্ষমতা কাড়াকাড়ি করার অভ্যুত্থানে হঠাৎ বীরত্ব দেখাতে থাকে এটাও পরিষ্কার হবে । এই লেখায় মুসলিম বিশ্বের সেনা অভ্যত্থান গুলো নিয়ে কিছুটা আলোচনা থাকবে ।

ইদানীংকালে মিশরের সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়টি বেশ আলোচনায় এসেছে । পাকিস্তান, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া প্রভৃতি দেশগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছে শুধুমাত্র পর্যায়ক্রমিক সেনাশাসনের কারনে । এখন তিউনিসিয়া অথবা তুরস্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও মুসলিম বিশ্বে- বিশেষ করে ইসলামপন্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎকন্ঠা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । মিশরের ২০১৩ সেনা অভ্যুত্থান না হলে হয়তো ফিলিস্তিনে ২০১৪ গণহত্যা এড়ানো যেতো । আবার তুরস্কের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগানের বিরুদ্ধে যেভাবে সকল শক্তি একজোট হয়েছে, তিনি কতোদিন সেনা অভ্যুত্থানের হুমকি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারবেন সেটাও ক্যালকুলেশন করা দরকার আছে । এসব বিষয় বিবেচনা করেই সেনা অভ্যুত্থান পর্ব অধ্যয়ন করা প্রয়োজন মনে করেছি ।

প্রথমেই বলে নেয়া যাক সেনা অভ্যুত্থানের সংজ্ঞা কি । ফরাসি coup d’état শব্দটির অর্থ হচ্ছে কোন রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত সরকার বা শুধুমাত্র সরকার প্রধানের পদচ্যুতি ঘটানোর চেষ্টা । একটি মিলিটারী ক্যু তখনই সফল বলে ধরে নেয়া যাবে যখন সাবেক সরকারপ্রধান পদত্যাগের বাধ্য হবেন বা নিহত হবেন । তবে মিলিটারীর পাশাপাশি অভিজাত সম্প্রদায় বা সুশীল সমাজেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে । পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক বড় বড় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পেছনে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা রয়েছে । জুলিয়াস সিজার থেকে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট পর্যন্ত অনেক প্রভাবশালী শাসক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহন করেছিলেন । তবে অধিকাংশ সময়েই সেনা অভ্যুত্থান রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়েছে । যাইহোক, আমাদের আলোচনা মুসলিম বিশ্বে সীমিত থাকবে ।

মুসলিম বিশ্বে প্রথম সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় ১৯০৮ সালে অটোমান সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের সময় । তিনি ছিলেন শেষ অটোমান সুলতান এবং ইসলামী খিলাফতের ৯৯তম শাসক । ইয়ং তুর্কি মুভমেন্ট নামে একটি অভ্যুত্থানে তিনি ১৯০৯ সালে পদত্যাগে বাধ্য হন । এরপর আরো কিছুদিন কয়েকজন নামমাত্র সুলতানের অধীনে থেকে ১৯২৪ সালে খিলাফত সমাপ্ত হয় । এরমধ্যে আতার্তুক কামাল পাশা আধুনিক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হয়ে বসেন ১৯২৩ সালে । অন্যদিকে পারস্য সাম্রাজ্যে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রেজা খান পাহলভী ক্ষমতায় আসেন ১৯২১ সালে । এই দুইজনের অধীনে শিয়া এবং সুন্নী অধ্যুষিত অঞ্চল সমূহে সেনা অভ্যুত্থানের সূচনা হয় । এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৬ সালের অক্টোবরে ইরাকে জেনারেল বকর সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি সেনা অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী ইয়াসিন আল হাশিমী পদচ্যুত হন । তিনি সিরিয়ায় পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন । পরবর্তীতে ১৯৪১ সালে চারজন কর্ণেলের নেতৃত্বে গোল্ডেন স্কয়ার নামে ইরাকি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের একটি দল ইরাকে অভ্যুত্থান করে । এতে নাৎসি জার্মানীর অনুসারী রশিদ আলী গিলানী ক্ষমতায় আসেন এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যের অনুগত শাহানশাহ জর্ডানে পালিয়ে যান । রাজতন্ত্র বিলুপ্তির জন্য ১৯৪৮ সালে ইয়েমেনে একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় ।

পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থান হয় সিরিয়ায় ১৯৪৯ সালে । ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাঈল যুদ্ধে পরাজিত হয়ে জেনারেল হোসনী আল জাইম সিরিয়ায় প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক শাসন কায়েম করেন । এই অভ্যুত্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুস্পষ্ট মদদ পরিলক্ষিত হয় । ক্ষমতায় এসে জেনারেল হোসনী আল জাইম মহিলাদের বোরখা নিষিদ্ধ করেন । ইসরাঈলের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেন । ইসরাঈলের সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় ফিলিস্তিনি উদ্ধাস্তুদের জন্য সিরিয়ায় বসতি করে দেন । মাত্র সাড়ে চারমাস পর এই সেক্যুলার জেনারেল তারই সহকর্মী সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত এবং বন্দি হন । একমাসের মধ্যেই তাকে হত্যা করা হয় । পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থানের ইতিহাস আমাদের ভারতবর্ষে । ভারত পাকিস্তান পৃথক হবার পরপর কাশ্মীরে ১৯৪৭ সালে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে যুদ্ধ হয় । এখানে পাকিস্তানি সৈন্যরা যুদ্ধ করে পুরো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছিল । যুদ্ধের মাঝামাঝি অবস্থায় ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের সরকার ভারতের সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষনা করে । এটি অনেক সেনা কর্মকর্তা মেনে নিতে পারেননি । তারা ১৯৫১ সালে জেনারেল আকবর খানের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন । কিন্তু জেনারেল আইয়ুব খান এই পরিকল্পনা সরকারকে অবহিত করেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন । এই অভ্যুত্থান চেষ্টা ‘রাওয়ালপিন্ডি চক্রান্ত’ নামে পরিচিত । অভিযুক্ত জেনারেলদের পক্ষে আদালতে লড়াই করেন প্রখ্যাত বাঙালী আইনজীবি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি । অনেকের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয় । পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তাদের সাজা মওকুফ করেন ।

মিশরে প্রথম সেনা অভ্যুত্থান হয় ১৯৫২ সালে । রাজা ফারুককে সরিয়ে দিতে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে চক্রান্ত করেন জেনারেল মোহাম্মদ নাগীব । তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হবার একবছরের মাথায় ১৯৫৩ সালে আরেক জেনারেল জামাল আব্দেল নাসের তাকে গৃহবন্দী করেন এবং নিজে প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করেন । ১৯৫৪ সালে একটি হত্যাপ্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রেসিডেন্ট জামাল নাসেরের চক্ষুশূল হয় এবং ব্রাদারহুডের উপর নেমে আসে চরম নির্যাতনের কালো অধ্যায় । পূর্বেই বলেছি ইরানে প্রথমবার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ১৯৫৩ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন । তিনি ইরানের তেল বৃটিশ আধিপত্যে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন বিধায় সিআইএ এবং এমআইসিক্স যৌথ উদ্যোগে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় । এতে নেতৃত্ব দেন সাবেক সম্রাট রেজা খান পাহলভীর ছেলে রেজা শাহ পাহলভী । ক্ষমতায় এসে রেজা শাহ পাহলভী ইরানকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র বানাতে ব্যপক উদ্যোগ নেন । যার ফলশ্রুতিতে ধর্মপ্রাণ মানুষ ইসলামী বিপ্লবের পথে এগিয়ে যায় । ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন । একই বছরে ইরাকে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাদশাহ ফয়সল গদিচ্যুত হন এবং ইরাক রিপাবলিকের আত্মপ্রকাশ ঘটে ।

১৯৬০ সালে সেনা অভ্যুত্থানে তুরস্কের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দারিস ক্ষমতাচ্যুত হন । তুরস্কের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যাকে ফাঁসি দেয়া হয় । তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি পররাষ্ট্রনীতিতে পাশ্চাত্যকে বাদ দিয়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছিলেন । যে সকল সেনা কর্মকর্তা মেন্দারিসকে হত্যা করে, তারা ন্যাটোর প্রতি তাঁদের আনুগত্য প্রকাশ করে রেডিওতে বিবৃতি দিয়েছিলো । ১৯৬২ সালে ইয়েমেনে সেনা অভ্যুত্থান হয় যা প্রায় আটবছর গৃহযুদ্ধে রুপ নেয় । এখানে রাজকীয় বাহিনীকে সৌদি আরব, জর্ডান, বৃটেন সমর্থন দেয় । বিপ্লবীদেরকে সমর্থন দেয় মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল নাসের এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন । ১৯৬৩ সালে ইরাকে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে কমিউনিজম বিরোধী বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে । সাবেক সেনাশাসক আব্দুল করিম কাসিম (যে নিজেও ছিলো অভ্যুত্থানে ক্ষমতাপ্রাপ্ত) ব্রাশফায়ারে নিহত হয় । একই বছর সিরিয়ায় মিলিটারী ক্যু ঘটিয়ে বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে । এর পর থেকে প্রায় প্রতি বছর কোন না কোন মুসলিম দেশে সেনা অভ্যুত্থান হতেই থাকে । একের পর এক সাদ্দাম- গাদ্দাফী- মোবারক- আসাদ- ইয়াহিয়া- এরশাদ- মোশাররফ দের আগমন রোধ করা কোন মুসলিম দেশেই সম্ভব হয়নি । তবে মজার ব্যপার হচ্ছে- গণতন্ত্রের প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্র এবং রাজতন্ত্রের স্বর্গ যু্ক্তরাজ্য প্রতিটি মুসলিম দেশের সেনা অভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলো । বিশেষ করে ইসরাঈল প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলিম দেশগুলোতে সেনা অভ্যুত্থান পরিচালনা করে অস্থিতিশীল রাখাই যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি বলে মনে হয় । এক্ষেত্রে গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার, আধুনিকতা ইত্যাদি বুলি শুধু মুখোশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । এই সেনা অভ্যুত্থান নামক বিষবাষ্পের সর্বশেষ সংস্করণ আজকের মিশর । জেনারেল সিসি সেখানে ইসরাঈলের জাতীয় বীর উপাধী নিয়ে নব্য ফেরাউন হয়ে বসেছে । সম্ভবত এই তালিকায় ভবিষ্যতে নাম আসতে পারে পাকিস্তানের । কারণ সেখানে নির্বাচনের মাত্র এক বছরের মাথায় নওয়াজ শরীফ সরকারের বিরুদ্ধে ইমরান খান এবং তাহিরুল কাদরী যেভাবে বিক্ষোভ শুরু করেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এতো বড় সুযোগ মিস করবে বলে মনে হয়না । অথবা আইএসআই এটা মিস করলেও সিআইএ কিছুতেই মিস করবেনা । তবে আমার আশংকা হলো তুরস্কের বিষয়ে । কারণ এরদোগান প্রায় একযুগের সাধনায় পলিটিক্যাল ইসলামের যে প্রাসাদ দাঁড় করিয়েছেন, যদি আরেকটি অভ্যুত্থানে এই প্রাসাদ ভেঙ্গে পড়ে তবে মুসলিম উম্মাহর জন্য হতাশার সীমা থাকবেনা ।

সেনা অভ্যুত্থানে প্রথমেই নিজদেশের মানুষের সাথে সেনাবাহিনীর একটি অপূরনীয় দূরত্ব তৈরি হয় । এছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষতি, দুর্নীতি, সমাজের নৈতিক অধঃপতন তো থাকেই । তারপর গণহত্যা থেকে গৃহযুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায় । মিশরে এখন পর্যন্ত প্রায় তিনহাজার মানুষ নিহত এবং বিশহাজার আহত হয়েছে । সিরিয়াতে সামরিক শাসক আসাদ দেশটিকে শেষ করে ছেড়েছে । আরো হতাহতের ঘটনা আগামী দিনেও অপেক্ষা করছে । আমরা দেখেছি, মিডিয়া কিভাবে একটি দেশের জনগোষ্ঠীকে প্রতারিত করে । আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনীতে ভুল সমরনীতি কিভাবে নিজ দেশে গণহত্যার পরিবেশ তৈরি করে । অথচ মুসলিম বিশ্বের ইসলামপন্থী কোন শক্তি একটি সুদক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে পারেনি । এল বারাদী দের বিদেশী ডক্টরেট আর গোল্ড মেডেল যেভাবে তাদেরকে নির্লজ্জ সেক্যুলার এবং ভোগবাদী হিসেবে তৈরি করছে, একমেলেদ্দীনরা যেভাবে বহির্বিশ্বকে বন্ধু ভেবে নিজদেশের দেশপ্রেমিকদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তেমনি মুসলিম দেশগুলোর সেনা কর্মকর্তাদের প্রতিনিয়ত বিদেশী অনুশীলন আর মিশন তাদেরকে কতটুকু দেশপ্রেম শেখায় বা জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তা মিলিটারী ক্যু এর ইতিহাস ঘাটলেই চোখে পড়বে । এছাড়া সুষ্ঠু পররাষ্ট্রনীতির অভাবে শুধু সরকারই নতজানু হয় তাই নয়, বরঞ্চ পুরো সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি নতজানু এবং পরাশ্রয়ী হয়ে উঠে । অতএব মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ যদি সত্যিকার অর্থে বিদেশী আধিপত্য নামক বিষপান করতে না চান, তাদের প্রধান দায়িত্ব হবে বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে সম্পূর্ণরুপে জনগণের ইচ্ছাকে বিবেচনায় নেয়া । দূতাবাসে ব্রেকফাস্ট করতে নেতাদের হুড়োহুড়ি দেখার মতো । অথচ তারা একবারও ভাবে না – দূতাবাসে রাতের আঁধারে অন্য কেউ ডিনার করছে কিনা ।

পরিশেষে বলতে চাই- বাংলাদেশ, সিরিয়া, মিশর, ইরাক, লিবিয়া, সৌদি, আমিরাত, ইয়েমেন প্রভৃতি মুসলিম দেশে গণতন্ত্র মুক্তি পাক । অবৈধ-অগণতান্ত্রিক শক্তির হাত থেকে দেশ বাঁচুক, মানুষ বাঁচুক । নয়তো এই মুসলিম দেশগুলো মানচিত্রে নামমাত্র টিকে থাকলেও এখানে মনুষ্য সভ্যতার অস্তিত্ব বিলীন হতে বেশিদিন লাগবে না । পাহলভীদের ভূত মুসলিম জাতির ঘাড় থেকে চিরতরে বিদায় হোক, আজকের দিনে এটাই প্রত্যাশা ।

‘দক্ষিন তালপট্টি’ এবং ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ নিয়ে সজিব ওয়াজেদ জয়ের মিথ্যা বক্তব্য

5

আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূত্র এবং তার তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গত ১১ জুলাই গুলশানের একটি হোটেলে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি ভারতে দিয়ে দেয়া এবং বাংলাদেশের দীর্ঘজীবীতা কামনাসূচক জাতীয়তাবাদী শ্লোগান ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ নিয়ে কিছু অশালীন মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেছেন, “তালপট্টি ভারতকে দিয়েছেন জিয়া” এবং “জিন্দাবাদ উর্দু, পাকিস্তানি শব্দ। যারা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেন তারা পাকিস্তানি এজেন্ট। তাদের পাকিস্তানে বসবাস করা দরকার।”

তার প্রথম মিথ্যাচারটি ১৯৮১ সালের দেশি-বিদেশী পত্রপত্রিকা এবং সার্ভে অব বাংলাদেশের তৈরী ১৯৮১ সালের টপোমানচিত্র দিয়েই প্রমান করা সম্ভব। দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটির অস্তিত্ব ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী টপোমানচিত্র থেকে শুরু করে বর্তমান গুগল আর্থ স্যাটেলাইট ইমেজেও রয়েছে। এটি একটি আংশিক দ্বীপ। জোয়ারের সময় ডুবে যায় এবং ভাটার সময় সামান্য জেগে ওঠে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনার অদূরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি জোয়ারের সময়ও জেগে থাকতে দেখা যায়। ১৯৭৪ সালের আমেরিকান স্যাটেলাইট ইমেজ অনুযায়ী এর আয়তন ছিলো আড়াই হাজার বর্গমিটার। ধীরে ধীরে দ্বীপটির আয়তন ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে এর আয়তন ১০ হাজার বর্গমিটারে দাঁড়ায়। খেয়াল করুন ১৯৭৪ সালে ক্ষমতায় ছিলেন শেখ মুজিব; কিন্তু তিনি দক্ষিণ তালপট্টি বাংলাদেশে অন্তর্ভূক্ত করা কোন ব্যবস্থা করেন নাই। সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশের ছিটমহল রেরুবাড়ী ভারতকে দিয়ে দেবার মতই এই দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটিও তিনি হয়তো ভারতের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।

১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্টের টপোমানচিত্রে দক্ষিণ তালপট্টি

১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্টের টপোমানচিত্রে দক্ষিণ তালপট্টি

গুগল আর্থ এ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

গুগল আর্থ এ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

সার্ভে অব বাংলাদেশের ১৯৮১ সালের টপোশিটে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

সার্ভে অব বাংলাদেশের ১৯৮১ সালের টপোশিটে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ

১৯৮০ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে রেডক্লিফের দেশভাগ অনুযায়ী হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মধ্যস্রোত দক্ষিন তালপট্টির পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দ্বীপটির মালিকানা বাংলাদেশ দাবি করে। কিন্তু ভারত ১৯৮১ সালের মে মাসে সেখানে সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে তাদের পতাকা ওড়ায়। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ভূখণ্ড ঐ দ্বীপটি রক্ষার জন্য রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের নেতৃত্বে তিনটি নৌ জাহাজ পাঠান। দক্ষিণ তালপট্টি নিয়ে ভারতের সামরিক আগ্রাসনের মোকাবেলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপের বিষয়টি ১৯৮১ সালের ১৭ মে তৎকালিন সবগুলো বাংলা দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কাছাকাছি সময়ে বিদেশী পত্রিকাগুলোতেও এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, প্রকাশিত হয় এই আগ্রাসনের প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ মিছিলের ছবি।

১৯৮১ সালের ১৭ মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং এর প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রতিবাদ মিছিল

১৯৮১ সালের ১৭ মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং এর প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রতিবাদ মিছিল

১৯৮১ সালে ২০ মে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকা ‘A little pile of mud could start a war’ শিরোনামে লেখে, “১৯৭৪ সালে প্রায় ১২বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপটি সনাক্ত করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সেখানে গানবোট প্রেরণ করলে বাংলাদেশও গানবোট প্রেরণ করে। ফলে দু’টি দেশ যুদ্ধের মুখোমুখি।” সেই একই সংবাদে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবরও আছে এবং সেখানে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সাথে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের দ্বীপ দখল করার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয় কর্তৃক দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের অস্তিত্ব অস্বীকার করা এবং শহীদ জিয়াকে জড়িয়ে এই বিষয়ে মিথ্যাচারের কারণে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, শেখ হাসিনা কী তবে ভারতে সরকারী অশ্রয়ে দীর্ঘদিন অবস্থান করার ঋণ শোধ করতে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি তাদের উপহার দিয়েছিলেন?

শহীদ জিয়া সামরিক শক্তিতে মোকাবেলার পাশাপাশি কুটনৈতিক সমাধানের পথেও অগ্রসর হয়েছিলেন এবং ভারত কর্তৃপক্ষ একটি যৌথ জরিপের মাধ্যমে দ্বীপটির মালিকানা নিষ্পত্তিতে রাজী হয়েছিলো। এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। তবে নিহত হবার আগেই তার আমলে সার্ভে অব বংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত টপোশিটে তিনি দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি অন্তর্ভূক্ত করার ব্যবস্থা করেছিলেন, যার প্রমান তৎকালীন টপোশিটে তালপট্টির অবস্থান। কাজেই শহীদ জিয়া তালপট্টিকে মানচিত্রে অন্তর্ভূক্ত করার ব্যবস্থা করেন নাই, এটি একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচার।

শহীদ জিয়ার মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালে আগস্ট মাসে যৌথ জরিপ না করেই আবারো ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তালপট্টিতে তাদের সৈন্য এবং ফ্রিগেট প্রেরণ করলে তৎকালীন নৌবাহিনী প্রধান মরহুম রিয়ার এডমিরাল এম এইচ খান আবারো সেখানে গানবোট প্রেরণ করেন। এই বিষয়ে ১৯৮১ সালের ২০ আগস্ট বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকার তাঁর উদৃতি দিয়ে “South Talpatti Island is Ours : M H Khan” শিরোনামে প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছিলো। একইভাবে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিলো বিদেশী পত্রিকাতেও। ১৯৮১ সালের ১৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াসিংটন থেকে প্রকাশিত আবজারভার-রিপোর্টার পত্রিকায় ‘India, Bangladesh Quarrel Over Island’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছিলো, “ভারতের ফ্রিগেট ও বাংলাদেশের গানবোটগুলো নিউমুর বা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের কাছে পরষ্পেরর মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে আছে। ভারত কর্তৃক যৌথ জরিপের বিষয়টি অস্বীকার করার প্রেক্ষিতে এই অবস্থার উদ্ভব হয়েছে।”

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ তালপট্টির মালিকানা বিষয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার এবং তাঁর মৃত্যুর পর তৎকালিন বিএনপি সরকার যথেষ্ট সাহসিকতার সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেছে। বরং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারতের সাথে সমূদ্রসীমা মামলা হবার পর থেকেই এই সরকার দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটির অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে চলেছে। এই মামলার শুরু থেকেই ভারত তার প্রাথমিক সমূদ্রসীমা দাবী থেকে শুরু করে প্রতিটি রিজয়েন্ডারের মানচিত্রেই বাংলাদেশের সাথে তার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ তালপট্টি (নিউমুর) দ্বীপটি উল্লেখ করেছে অথচ বাংলাদেশ তার দাবী উত্থাপন থেকে শুরু করে কোন যুক্তিতর্কেই তালপট্টি দ্বীপটির অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেনি। তার মানে মামলার আগেই তারা গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে দক্ষিণ তালপট্টিকে ভারতে হাতে তুলে দিয়েছিলো। এখন জনগণের প্রশ্নের মুখে তারা এই দায়ভার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ওপর চাপানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

সজিব ওয়াজেদ জয় তার বক্তব্যে সবচেয়ে হাস্যকর মন্তব্যটি করেছেন ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগান প্রসঙ্গে। তিনি দাবী করেছেন ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি উর্দু। প্রায় সারা জীবন বিদেশে থেকে বিদেশী ভাষায় পরাশোনা করে ও বিদেশিনী স্ত্রী বিবাহ করার কারণে তিনি বাংলা ভাষায় হয়তো দূর্বল হয়ে থাকবেন। তাই তার জানা নেই যে বাংলা ভাষায় অনেক বিদেশী শব্দ আছে। উনি যদি একটু কষ্ট করে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘বাংলা – ইংরেজী অভিধান’ (২১ তম সংস্করণ – ২০০৫) এর ২৩৩ নম্বর পৃষ্ঠার ১ম কলামের শেষ থেকে ২য় কলামের শুরু পর্যন্ত খেয়াল করেন তাহলে ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি পাবেন। অভিধানে এটিকে বাংলা শব্দ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অভিধানের প্রতি উনার অনাস্থা থাকলে ভারত থেকে প্রকাশিত সংসদ বাঙ্গালা অভিধান (শৈলেন্দ্র বিশ্বাস-সঙ্কলিত, চতুর্থ সংস্করণ – ১৯৮৪, অষ্টাদশ মুদ্রণ জুন – ১৯৯৫, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা) এর ২৬৪ নম্বর পৃষ্ঠার প্রথম কলামের মাঝামাঝি স্থানে ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি পাবেন। সেখানেও এটিকে বাংলা শব্দ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। উনার হয়তো জানা নেই যে উনার নানা শেখ মুজিব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত থাকা অবস্থায় ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ এবং পাকিস্তান হবার পর এমন কী ৭ মার্চের ভাষন পর্যন্ত ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগানটাই দিয়েছেন। এমন কী ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে মিরপুরে বিহারীদের ভোট পেতে আওয়ামী লীগ উর্দুতে লিফলেটও ছেপেছিলো।

বামে- ১৯৭০ এর নির্বাচনে কুষ্টিয়ার জনসভায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান লেখা ব্যানার টানিয়ে বক্তব্য রাখছেন শেখ মুজিব, ডানে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিহারীদের জন্য উর্দুতে লিফলেট ছেপেছে আওয়ামী লীগ।

বামে- ১৯৭০ এর নির্বাচনে কুষ্টিয়ার জনসভায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান লেখা ব্যানার টানিয়ে বক্তব্য রাখছেন শেখ মুজিব, ডানে- ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিহারীদের জন্য উর্দুতে লিফলেট ছেপেছে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্ম বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর হয়েছে। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে এই দেশে অন্য নৃগোষ্টীকে অগ্রাহ্য করার যে বিভক্তিমূলক নীতি আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন বাকশাল নিয়েছিলো সেটা থেকে মুক্ত হয়ে সমগ্র বাংলাদেশকে একটি অভিন্ন জাতিস্বত্তা হিসেবে পরিচিত করতেই ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানের উদ্ভব। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের যুদ্ধ বিজয়ের জন্য রণহুংকার হিসেবে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটি তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম প্রসিডেন্ট এবং স্বাধীনতা ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেও দিয়েছেন। কিন্তু যুদ্ধ জয়ের পর সেই শ্লোগানের পরিবর্তে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের দীর্ঘায়ু কামনাসূচক শ্লোগানই রাষ্টীয় শ্লোগান হিসেবে সবচেয়ে উপযুক্ত। সেই প্রেক্ষিতে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানটি বাংলাদেশের দীর্ঘায়ু কামনায় বাংলাদেশীদের হৃদয় নিংড়ানো শুভ কামনা। যারা নিজেকে বাংলাদেশী মনে করে না কেবলমাত্র তাদের পক্ষেই ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানকে পাকিস্তানী বলা সম্ভব।

উর্দু নিয়ে যদি জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের এতই মাথা ব্যাথা থাকে তাহলে উনাদের দলটির নাম কেন পরিবর্তন করছেন না। উনাদের দলটির নাম ‘আওয়ামী লীগ’ এর ‘আওয়ামী’ শব্দটি একটি খাটি উর্দু শব্দ, যার অর্থ জনগণ। উনি কী তাহলে উনার দলের নাম পরিবর্তনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? না কী উনার দলটিকেও পাকিস্তান পাঠিয়ে দেবেন? পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদারদের অত্যাচার এই দেশে অবস্থান করা প্রতিটি মানুষ মনে রেখেছে। তারা এটাও মনে রেখেছে যে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র দুই বছরের মাথায় জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের নানা শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান গিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার নায়ক ভুট্টোর সাথে কী ভাবে গলাগলি করেছিলেন এবং বাংলাদেশে ২৫ মার্চ রাত্রে অপারেশন সার্চ লাইটসহ লক্ষ মানুষের রক্তে রাঙ্গা টিক্কা খানের সাথে কী ভাবে হাত মিলিয়েছিলেন। অন্যদের বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ করার আগে জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের উচিত হবে নিজেদের অতীতের দিকে তাকিয়ে দেখা। নিজে কাঁচের ঘরে বাস করে অন্যের বাড়িতে ঢিল ছোঁড়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

বামে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের লাহোরে ভুট্টোর সাথে গলাগলি করছেন শেখ মুজিব, ডানে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী করাচী এয়ারপোর্টে টিক্কা খানের সাথে করমর্দন করছেন মুজিব।

বামে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের লাহোরে ভুট্টোর সাথে গলাগলি করছেন শেখ মুজিব, ডানে- ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী করাচী এয়ারপোর্টে টিক্কা খানের সাথে করমর্দন করছেন মুজিব।