বুয়েট ভ্যানটেইজ পয়েন্টঃ তিন

1

By: Aman Abduhu
মিশকাত আজ বেশ উত্তেজিত, এইমাত্র জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি হয়ে গেছে। ফেইসবুকে উত্তেজনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তার পূর্বসূরী বাংলা ব্লগাররা দশ বছর আগে যে কথা কল্পনা করতে শুরু করেছিলো, আজ বাংলাদেশে তাই ঘটছে। অসম্ভবকে সম্ভব করেছে সরকারী শক্তি, নিজেদের ট্রাইবুনাল আর পুলিশ। বিভিন্ন গ্রুপে প্রচুর মেসেজ আসছে, আপডেট আসছে।

সে ভাবলো এখন ল্যাপটপটা শাটডাউন করে একটু বেড়িয়ে পড়া ভালো হবে। রাস্তায় ঘুরে বন্ধুদের সাথে সেলিব্রেট করার সময় এখন। শাহবাগ নিশ্চয় জমজমাট হয়ে উঠেছে। যাওয়া দরকার। এমন সময় হঠাৎ সে দেখলো তাদের বুয়েটিয়ান গ্রুপে এক স্যার মন্তব্য করেছে। মন্তব্যটা কামারুজ্জামানের ফাঁসির বিপক্ষে।

এই স্যারটাকে তারা চেনে, ইনি বেশ কট্টর জামায়াতের লোক। শাহবাগিদের তো প্রশ্রয় দেয়ই না, উল্টা নিয়মিত নামাজ কালাম পড়ে। স্যারের বউটা বোরকা পড়ে, নন্দিতা নিউমার্কেটে দেখেছিলো স্যারের সাথে। সিনিয়র ভাইরা বলেছেন, ইনি স্টুডেন্ট লাইফেও শিবির করতেন। সুতরাং এটাই সবচেয়ে সেরা সুযোগ। মিশকাত বাকি সব ভুলে গেলো আপাতত।

একই সাথে ঠিক একই মিথস্ক্রিয়া ঘটে গেলো বিভিন্ন হলের রুম থেকে ফেইসবুকে একটিভ থাকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কিছু ছাত্রের মাথায়। আরো ঘটলো কিছু প্রাক্তণ ছাত্র, যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছে, তাদের মাথায়। উপর্যুপরি আক্রমণ শুরু হয়ে গেলো মন্তব্যে। আর নতুন নতুন পোস্টে। গ্রুপের বাইরেও পাবলিক পোস্ট আসা শুরু হলো। অন্য বেশিরভাগ বুয়েটিয়ান চুপ করে দেখে গেলো। নীরব থাকা ছাড়া উপায় নেই, কিছু বলার অর্থই হলো বিপদে পড়া। ট্রাইবুনালের সাথে, যুদ্ধাপরাধ কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের এ আওয়ামী কাজের সম্পর্কে দ্বিমত করার অর্থ হলো নিজেকে স্বাধীনতাবিরোধী বানিয়ে ফেলা। কেউ কেউ ভাবতে থাকলো, কোন দরকার ছাড়া জাহাঙ্গীর স্যার এখন এসব মন্তব্য করে কেন বিপদে পড়তে গেলেন? কি দরকার ছিলো, চুপ করে থাকলেই তো হতো।

মিশকাত দ্রুত অন্য এডমিনদের সাথে মেসেজ থ্রেডে আলাপ সেরে নিলো। আমেরিকা কানাডা থেকে বড়ভাইরা গ্রিন সিগনাল দিলো। সবাই একমত। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বুয়েট শিক্ষক প্রফেসর জাহাঙ্গীরকে ছাগু গালি দিয়ে বুয়েটিয়ানদের গ্রুপ থেকে ব্যান করে দেয়া হলো।

অনেক উত্তেজনা হলো সব মিলে। এড্রেনালিন রাশ থাকতে থাকতেই গভীর রাতে বন্ধুরা সবাই সেলিব্রেট করতে বের হয়েছে। সবাই অনেক ফুর্তিতে আছে। লাবিব একটা স্টিক বানিয়েছে খুব জবরদস্ত করে। এক টান দিতেই পিনিক এসে গেছে। রুবেল গলা খুলে গান ধরেছে, মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান। বাকিরাও গলা মেলাচ্ছে, ওদের অনেক আবেগ এসে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের একটা অনুভূতি সবার মাথায়।

নীরব নির্জন চানখারপুলের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই ওদের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগার আরিফ বললো, দোস্ত সবাই একটা জিনিস ভেবে দেখ, এইসব রাজাকারদের ফাঁসি দিয়ে আসলে লাভ নেই। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির শেকড় তুলে ফেলতে হবে। এখনো এই রাজাকারি মানসিকতার লোকজন আমাদের ক্লাশমেট আছে, টিচার আছে। সমাজের সব স্তরে এরা অনেক শক্তিশালী। এদের শিক্ষা দিতে হবে। বুঝিয়ে দিতে হবে, বাংলাদেশে এদের জায়গা নেই।

তখন দীপক বললো, এক কাজ করা যায়। ছাত্রলীগের পোলাপানকে লাগিয়ে দিতে হবে। এরা জাহাঙ্গীর স্যারকে গিয়ে সামনাসামনি থ্রেট দিলে তা ক্যাম্পাসে বিশাল ইমপ্যাক্ট করবে কিন্তু। সবাই একমত হওয়ার পর আর দেরী করার অর্থ হয়না। দীপক ওখান থেকেই কল করলো শুভ্রজ্যোতি দাদার নাম্বারে। দাদা তখন সেলিব্রেশনে, তবু মন দিয়ে শুনলেন সব। বললেন ব্যাবস্থা নেবেন। এরপর দীপক ফোন করে জানিয়ে রাখলো ছাত্রলীগের সেক্রেটারী কনককেও। কনক ভাই বললেন তিনি ফেইসবুকে সব দেখছেন। সব কিছু তিনি জানেন। চিন্তা করার কিছু নেই।

এরপরের ঘটনা ইতিহাস। পরদিন দুপুরে ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় দাড়িয়ে মিশকাত-দীপকরা দেখলো, শুভ্রজ্যোতি আর কনকের নেতৃত্বে লীগের ছেলেরা জাহাঙ্গীর স্যারের কলার ধরে টেনে তাকে অফিস থেকে বের করে আনছে। লাথি আর চড় দিতে দিতে পাঁচতলা থেকে নামানো, পঁচা ডিম আর মিষ্টি মাখিয়ে তাকে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরানো, শেষে পিটিয়ে ভিসি অফিসের সামনে রেখে যাওয়া। সবকিছু দেখলো পুরো ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীরা, শিক্ষকরা।

বাংলাদেশের নামকরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হলো প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের মার খাওয়ার মাধ্যমে। অপরাধ রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা। সুতরাং জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে গায়ের জোরে আগে বাড়লো বুয়েট, মগজের জোর পরাজিত হলো উচ্চশিক্ষার আঙিনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর ডাকাতদের গ্রাম হিসেবে দ্বিতীয় স্থান দখলে বুয়েট স্বার্থক ও সফল।

বুয়েট ভ্যানটেইজ পয়েন্টঃ দুই

By: Aman Abduhu
আজকে শুভ্রর মনটা বেশ ফুরফুরে। ফুর্তিতে তার আকাশে উড়তে ইচ্ছা করছে। সন্ধ্যার সময় ফোনে মন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে পেরেছিলো ফাঁসির কথা। তারপর থেকে ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি আড্ডা, টিএসসি শাহবাগে মেয়েদের দেখে চোখের ব্যায়াম সেরে নতুন গাড়িতে চড়ে স্টার কাবাব। বুয়েট ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে সে এ ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়িটা ব্যবহার করছে। ঠিক সাড়ে দশটার সময়, যখন ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে, তখন সে দলবল নিয়ে কাচ্চি খাচ্ছিলো। পরের কয়েক ঘন্টা সে কাটালো হোটেল শেরাটনের বারে, দলের সহকর্মী বন্ধুদের সাথে। ফুর্তি আর ফুর্তি। দুনিয়াটাকে পায়ের নিচের কার্পেট মনে হয়। বিচার বিভাগ পুলিশ আর্মি সরকারী অফিস আদালত সব এখন শুভ্রজ্যোতিদের কথায় উঠে আর বসে। সে মাঝে মাঝে কল্পনা করে এভাবে দশ পনেরো বছর যেতে পারলে সেও একদিন পলক ভায়ের মতো তরুণ মন্ত্রী হয়ে যাবে। এখন গাড়িতে পতাকা নেই। তখন পতাকা থাকবে, পুলিশের এসকর্ট থাকবে।

শেষ রাতে হলে ফেরার পথে ফোনটা আসলো। তার এক চ্যালা জানালো, ফেইসবুকের বুয়েটের গ্রুপে জাহাঙ্গীর স্যার একটা মন্তব্য করেছে। ব্লগার পোলাপান তাকে ওখানে চেপে ধরেছে। ছাত্র ইউনিয়নের পোলাপান আবার লেখালেখিতে ভালো। তারা ফেইসবুকে লিখে স্যারকে চেপে ধরেছে। শেষ পর্যন্ত স্যারকে তারা ঐ গ্রুপ থেকে ব্যানই করে দিয়েছে। তারা যা করার করেছে, বাকিটা ছাত্রলীগের হাতে। বিস্তারিত শুনে সে বললো, এই সুযোগে জামাতি টিচারটাকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। কাল তোরা ক্যাম্পাসে দেখা করিস। প্রথম কাজ হবে এইটা।

বারোটার দিকে তার শুভ্রর ভেঙেছে কনকের ফোন পেয়ে। তার সেক্রেটারী। খুব জোশিলা ছেলে, সবসময় তার হাত পা চলে, মুখ ততটা চলে না। নাজমুল ভাই ওবায়দুল কাদের ভাইদের সাথে সবসময় যোগাযোগ মেইনটেইন করে। শুভ্র জানে, কনকও মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তবে সে কনককে হুমকি মনে করেনা। শুভ্র হিন্দু, তার কিছু বাড়তি সুযোগ আছে। এখন সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেই হলো। কিন্তু প্রতিযোগিতাও অনেক, প্রতিযোগী অনেক।

কাঁচা ঘুম ভেঙে এলকোহলের হ্যাংওভারে মাথাটা ব্যাথা করছে অনেক। কিন্তু ঐদিকে কনক চিৎকার করে যাচ্ছে সমানে। ফেইসবুকের ঐ জাহাঙ্গির স্যারের মন্তব্য নিয়ে না কি অনেক কিছু হয়ে গেছে। এই সুযোগে সবার সামনে একটা উদাহরণ রাখা দরকার। জামাতি হলে কারো মাফ নাই, এমনকি টিচার হলেও। পোলাপান সবাই কেন্টিনে আছে। কনফার্ম খবর আছে, জাহাঙ্গীর স্যার অফিসে এসেছে সাড়ে বারোটার দিকে। তারা সবাই এখন নেতার জন্য অপেক্ষা করছে। টায়ার্ড লাগলেও সে আর দেরি করলো না। হাতমুখ ধুয়ে বেরিয়ে পড়লো।

পরের ঘটনাগুলো সব দ্রুত ঘটে গেলো। স্যার প্রথমে একটু অবাক হয়ে তাকিয়েছিলেন। উথালপাথাল লাথি আর ঘুষি আর থাপ্পড় শুরু হওয়ার পর অবশ্য আর তাকানোর অথবা কোন কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। পরে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলেন। ততক্ষণে তারা স্যারকে মারতে মারতে পাঁচতলা থেকে নামিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার সামনের রাস্তাটা হয়ে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর সামনে নিয়ে এসেছে। পচা ডিম আর মিষ্টিতে মাখামাখি হয়ে জাহাঙ্গীর স্যারের অবস্থা করুণ। শেষপর্যন্ত অবশ্য শুভ্রর একটু খারাপই লাগলো। তাছাড়া সিনিয়র স্যাররাও বের হয়ে আসছেন। ভিসি এসে পড়বেন যে কোন সময়। সে অন্যদের বললো, যথেষ্ট হইছে। এবার সবাই চল।

তারা হৈ হৈ করে আনন্দ করতে করতে হলের দিকে ফিরে যাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা সবাই ভয় আর সমীহমাখানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে। সবার সামনে হিন্দি সিনেমার নায়কের মতো শুভ্রজ্যেতি। পুরনো সেই অনুভুতিটা তার আবারও হচ্ছে। দুনিয়াটাকে ইদানিং তার পায়ের তলায় বিছানো কার্পেটের মতো মনে হয়।

বুয়েট ভ্যানটেইজ পয়েন্টঃ এক

By: Aman Abduhu
জাহাঙ্গীর আলম সাহেবের মনটা বেশ বিষণ্ণ। বাংলাদেশে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মারা যায়। মানুষের মৃত্যুতে এতো বিষণ্ণ হওয়ার কিছু নেই। তবে কয়েক মিনিট আগে ফাঁসিতে নিহত কামারুজ্জামান সাহেবের জন্য একটু বেশিই খারাপ লাগছে। মানুষটাকে তিনি দেখেননি। কিছু ঘনিষ্ঠ পরিচিতদের কাছ থেকে শুনেছেন তার কথা। যেসব অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে এসবের মিথ্যা হওয়া নিয়ে, ট্রাইবুনালের অন্যায় ও অবিচার নিয়ে তার যথেষ্ট অনুযোগ আছে। কিন্তু কিছু করার নেই। একটা রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের মেকানিজম আর বেশিরভাগ মানুষ মিলে এমন অন্যায় করতে পারে, এসব ভেবে তার ভালো লাগছে না। অসহায় লাগছে খুব। আগামীকাল সকালে ক্লাশ নেই, তাই মন খারাপ কাটাতে রাতের বেলাতেও ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছেন বুয়েটের শিক্ষক প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলম। কিছু করতে পারছেন না। বারবার নিউজ সাইটগুলোতে খবরের আপডেট আর ফেইসবুকে বিভিন্ন লেখা আর মন্তব্য পড়ে যাচ্ছেন।

বন্ধু জামিলের কথা মনে পড়ছে। দুজন একসাথে পিএইচডি করেছিলেন জাপানে। পিএইচডি শেষে জামিল ওখানে থেকে যায়। হোন্ডা রোবোটিকস এ চাকরী নিয়ে। তার নিজের রেজাল্ট বরং জামিলের চেয়ে বেশি ভালো ছিলো। চাকরীর সুযোগ তার বেশি ছিলো। জামিলও অনেক বুঝিয়েছিলো। ভেবে দেখ দোস্ত, গাড়ি বাড়ি নিরাপত্তা শান্তি। আমরা গরীব দেশের মানুষ। আর কি চাই? এখানে নতুন অনেক কিছু শেখার সুযোগ আছে, কাজের সুযোগ আছে। মানসিক শান্তি পাবি। বাংলাদেশে গিয়ে কি করবি? ঐ দেশের মানুষ আর মানুষ নাই। আল্লাহ এখানে সুযোগ দিয়েছেন, থেকে যা দোস্ত।

জাহাঙ্গীর তখন মুচকি হেসেছিলেন। তার শুধু মায়ের কথা মনে পড়ে। প্রিয় বুয়েট ক্যাম্পাসের কথা মনে পড়ে। গ্রামের কথা মনে পড়ে। এমনকি হাতিরপুল বাজারের ডাস্টবিনের ময়লাগুলোকেও তার কাছে টোকিওর সাজানো গুছানো পার্কের চেয়ে সুন্দর মনে হয়। পরীক্ষার আগের রাতে রিভিশন শেষ করে ক্লান্ত হয়ে পলাশীর মোড়ে গিয়ে এক কাপ চা খেতে ইচ্ছা হয়। তার মনে হয়, পাবলিক ভার্সিটিতে জনগণের টাকায় পড়ালেখার দায় পুরোটা শোধ না হলেও কিছু অন্তত শোধ করা যাবে ওখানে পড়িয়ে। ওখানে চাকরী করে। ক্লাসরুমে বসে উম্মুখ তাকিয়ে থাকা, শিখতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদেরকে শেখাতে আর নতুন নতুন বিষয় জানাতে তার ভালো লাগে। সে এদেশে ফিরে এসেছিলো।

এলোমেলো এইসব ভাবনার সাথে জাহাঙ্গীর আলম সাহেব ফেইসবুকে বিভিন্নজনের বিভিন্ন লেখাও পড়ছিলেন। বুয়েটিয়ানদের একটা গ্রুপ আছে, নাম ‘বুয়েটে আড়িপেতে শোনা’। হঠাৎ গ্রুপের একটা পোস্ট ভেসে আসলো টাইমলাইনে। দীপু সরকার নামে এক ছাত্র কামারুজ্জামানের ফাঁসির খবর শেয়ার করেছে। তার নিচে চন্দ্রনাথ নামে আরেকজন উল্লাসের সাথে লিখেছে, জয় বাংলা। আধাঘন্টাও হয়নি ফাঁসি দেয়া হয়েছে। একজন ইসলামিক নেতার মৃত্যুতে হিন্দুদের এইসব লাফালাফি দেখে তার ভালো লাগছে না। তিনি জানেন এখন চুপ করে থাকাই ভালো। কিন্তু পারলেন না, ওখানে মন্তব্যে করে বসলেন ‘জয় মা কালী, জয় ইনডিয়া”।

ব্যাস, তান্ডব শুরু হয়ে গেলো। বুয়েটের অনেক ছাত্র-শিক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়লো ঐ পোষ্টে। শাহবাগ সমর্থক এবং শাহবাগি নিয়ে একটিভ ছাত্রদের ওখানে মারাত্বক সব মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে। সবাই জাহাঙ্গীর আলম সাহেবের ঐ মন্তব্য নিয়ে ব্যস্ত। তুমুল প্রতিক্রিয়া। মন্তব্য প্রতিমন্তব্য গালাগালি। তাকে স্বাধীনতার শত্রু, সাম্প্রদায়িক, বাংলাদেশে থাকা পাকি জারজ বানানো হলো। অন্যান্য শাহবাগিরাও প্রচন্ড চিৎকারে ফেটে পড়ছে। একজন শত্রু পাওয়া গেছে। একে ধ্বংস করার আনন্দে শাহবাগিরা দলবেধে উৎফুল্ল ভয়ংকর এখন। তারা অনেক দেশপ্রেমিক।

এক ঘন্টা ধরে জাহাঙ্গীর সাহেব এসব দেখলেন। ক্লান্ত লাগছে। অসহয়ায় লাগছে। তিনি মন্তব্য এডিট করে লিখলেন ‘জয় ইনডিয়া, জয় মাসল পাওয়ার, জয় নেসটি পলিটিক্স, জয় ইনজাস্টিস’। একটু পরেই হঠাৎ দেখলেন গ্রুপে মিশকাত আল-আলভী নামে এক শাহবাগি প্রগতিশীল ছাত্র, যে গ্রুপের একজন এডমিনও, সে পোস্ট দিয়েছে ‘কেপি টেস্টে সাফল্যের সাথে পাশ করার জন্য বুয়েট শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রুপ থেকে ব্যান করা হলো। ধন্যবাদ। ছাগুসব করে রব ফাঁসি হইলো।’

কিছুক্ষণ পর থেকে তিনি আর গ্রুপে ঢুকতে পারলেন না। বুঝতে পারলেন তাকে বুয়েটিয়ানদের ঐ গ্রুপে ব্যান করা হয়েছে। একজন প্রফেসর হয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে, সহকর্মী শিক্ষকদের কাছ থেকে এ ধরণের আচরণ পেয়ে তার বেশ মন খারাপ হলো।

পরদিন দুপুর দেড়টা। জাহাঙ্গীর আলম সাহেব ডিপার্টমেন্টে তার অফিসে বসে একটা জার্নালে চোখ বুলাচ্ছেন। দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো কয়েকজন ছাত্র। একটু চমকে উঠলেন তিনি। আবু সাইদ কনককে তিনি চেনেন। বুয়েট ছাত্রলীগের সেক্রেটারী। আর শুভ জ্যোতি টিকাদারকে তো সবাই চেনে। বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি। সাথে আরো সাত আটজন। কয়েকজন তার পরিচিত, বাকীরা অপরিচিত। তবে বুঝা যায় সবাই এখানকার ছাত্র। তিনি বললেন, কি ব্যাপার?

ছাত্রদের একজন চিৎকার করে বললো, শুয়েরের বাচ্চা, রাজাকারের বাচ্চা। কি ব্যাপার জিগাস? তিনি অবাক হয়ে গেলেন। কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।

এর মাঝেই শুভজ্যোতি এগিয়ে এসে তার কলার ধরে টেনে তাকে দাঁড় করিয়ে দিলো। গালে এসে পড়লো কনকের জোরালো থাপ্পর। বাকিরাও এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করলো। কাপড় ছিড়ে চুল এলোমেলো হয়ে বিশৃংখল অবস্থা। জাহাঙ্গীর সাহেব হঠাৎ এসবের মুখে পড়ে শকড হয়ে গেলেন। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। এর মাঝেই তাকে এই ছাত্রের দল মারতে মারতে আর ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে নিয়ে আসে। ডিপার্টমেন্টের আশেপাশের অফিস থেকে অন্য শিক্ষকরা আর ক্লাসরুম গুলো থেকে শত শত ছাত্রছাত্রী বের হয়ে এসেছে। সবাই চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কারো কিছু বলার সাহস নেই।

লজ্জায় অপমানে প্রফেসর জাহাঙ্গীর সাহেবের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তিনি বুঝতে পারছেন না ঠিক কি হচ্ছে। মার খেতে খেতে তিনি বুঝতে পারলেন শুভজ্যোতি তার মাথায় একটা ডিম ভেঙ্গে লেপটে দিচ্ছে। বাকিরাও প্রচন্ড উৎসাহিত হয়ে পড়লো। তারাও ডিম নিয়ে তার মুখে ভেঙ্গে লেপটে দিতে লাগলো। ডিমের কুসুম আর আঠালো রসে তার মুখ চুল নোংরা হয়ে একাকার একাকার। কনক একটা প্যাকেট থেকে আঠালো মিস্টি নিয়ে তার নাকে মুখে ঢুকিয়ে দিলো। আর হাসতে হাসতে বললো, এইটা তোর বাপ রাজাকারের ফাসির মিষ্টি। খা শুয়োরের বাচ্চা। রাশেদ নামের তারই আরেক ছাত্র কয়েকটা মিষ্টি তার পিঠে ডলে দিলো।

আনন্দ করতে করতে, তাকে লাথি আর থাপ্পড় দিতে দিতে সবাই মিলে তাকে পাঁচতলা থেকে নামাতে থাকলো। সিড়িতে ছাত্রছাত্রীরা এসব দেখে আঁতকে সরে দাড়াচ্ছে। অনেক শিক্ষক চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। পরবর্তী দশ পনেরো মিনিট যাবত তাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এ গ্রুপটা কুকুরের মতো মারতে মারতে ক্যাফেটেরিয়ার সামনের রাস্তায় নিয়ে গেলো। ওখানে দেখানো শেষ হলে রেজিষ্ট্রার বিল্ডিং এর সামনেও নিয়ে যাওয়া হলো।

শেষপর্যন্ত তাদের মনের সব আনন্দ মিটে গেলে, শুভজ্যোতি চিৎকার করে বললো, শুয়োরের বাচ্চা আর কোনদিন পারলে মা কালী অথবা ইনডিয়ার নাম নিস। তখন তোর জিহবা টেনে ছিড়ে ফেলবো। আজকে ছেড়ে দিলাম। এই চল। বাকী সবাইকে সে আদেশ দেয়ার পর সবাই উল্লাসে জয় বাংলা স্লোগান দিতে দিতে একাডেমিক বিল্ডিং এর দিকে চলে গেলো। আজ অনেক উত্তেজনা হয়েছে। এখন বোতল খুলে সেলিব্রেট করতে হবে। তার আগে হাত ধুতে হবে। ডিম মিস্টি রক্ত সব লেগে আছে হাতে। অবশ্য রাশেদ জিনসের প্যান্টে হাতটা মুছে নিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়েছে।

ছেড়া শার্ট আর বাকি সব ময়লাতে মাখামাখি হয়ে প্রফেসর জাহাঙ্গীর রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর রাস্তায় পড়ে আছেন। প্রচন্ড মার খেয়েও তিনি তেমন একটা ব্যাথা অনুভব করছেন না অবশ্য। শিক্ষক মানুষ, অপমানবোধ একটু বেশি প্রখর। অপমানের যন্ত্রণায় তার শরীরের ব্যাথা ঢেকে গেছে। এটা একটা ভালো দিক।

Correction: This Article previously said that  রাগিব হাসান নামের পুরনো শাহবাগি নেতাও বেশ আবেগঘন বয়ান দিয়ে যাচ্ছে। তার আর বুয়েটের শিক্ষক থাকার অধিকার নেই। তাকে বুয়েট থেকে বের করে দেয়া হোক। Mr Ragib Hasan protested that although he condemned the comments of Mr Zahangir, he never said he cannot be a BUET teacher anymore and he also vehemently protested the attack on Mr Zahangir. We apologize for the mis-attribution in the article.

জিয়া হায়দার ও জাফর ইকবাল

1

রেজাউল করিম রনি

জাফর ইকবালের আবেগী ফটকাবাজি ও জিয়া হায়দার রহমানের সূত্রধরে আামদের বুদ্ধিজিবিতা নিয়ে কুইক মন্তব্য:

“within any given system, there are claims, which are true but which cannot be proven to be true…
–Zia Haider Rahman, `In the light of what we know’.

“ওর কান্ডজ্ঞান আমারে মুগদ্ধ করছে। প্লেবয় সশী থারোরে জিয়া যখন ধুয়ে দিল তখনই অামি বুজেছি এই চিজ অন্য কিসিমের। রাবীন্দ্রিক বলয় ভেঙ্গে ফেলতে ওর প্যাটার্নটা কাজে লাগবে। যদিও ও একটু হট মেঝাজের পুলা।”– রেজাউল করিম রনি ( ওর সাথে দেখা করার পরে,২৩ নভেম্বর ২০১৪ তে প্রথম স্টেটাস এ কথা কইছিলাম)
বাংলাদেশের মিডিয়া বিশেষ করে প্রথম আলো যখন জিয়াকে ব্যাপক কাভারেজ দিতে শুরু করছে,তখন একটু অবাক হইছিলাম। এটা তো করার কথা না। কারণ জিয়া তো পাকিস্তানকে ঘৃণা করে না। জিয়া সেক্যুিলারিটিকে ধুয়ে ফেলছে। জিয়া পশ্চিমা আধুনিকতার তলায় হেমার দিয়া এমন এক বারি মারছে যে এর তলাটা ফুটা হয় হয় করতাছে। পশ্চিমে উপন্যাসের বাজার তৈরিতে যেসব ম্যাকানিজম কাজ করে তা সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নাই। গার্ডিয়ান জিয়াকে লাইম লাইটে আনছে ( এতে মূল ভূমিকা নিছে এজেন্টরা)। প্রথম আলো ও অন্য কাগজগুলা গার্ডিয়ানকে ফলো করছে কানার মতো। যা হোক অামি জিয়ার একটা ইন্টারভিউ করেছি ঢাকাতে। তার পরে দ্রুত বইটা পড়ে একটা খসড়া লেখা লিখেছি(নিচে লেখার লিঙ্কটা দিছি), দেখলাম যারা জিয়াকে নিয়ে কথা বলছে এদের বেশির ভাগই জিয়ার বইটা পড়ে নাই। আর সবচেয়ে অবাক হইলাম এরা কেউ বলতে পারছে না জিয়া কেন জরুরী। মিডিয়া হুজুগের বাইরে জিয়া আসলে কেন গুরুত্বপূর্ণ তার কোন রিডিং আমি দেখি নাই। জিয়ার বইটা হজম করার জন্য যে ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে সুবিধা হয় তা বাংলাদেশের পাঠকদের সবার নাই্। পাঠকরা দেখলাম আহাম্মকের মতো জিয়াকে প্রশ্ন করতেছে, ‘আপনার বইয়ের চরিত্র ( যে ঘনটা বর্ণনা করছে) হেতে পাকিস্তানী কেন?
জিয়া পাঠকদের প্রশ্ন শুনে বেশ বিরক্ত হইছে। কিছু ভাল প্রশ্ন ছিল অবশ্য। বাংলাদেশের হাকাও জাতীয়তাবাদ একটা ঘৃণার সংস্কৃতির উপর প্রতিষ্ঠিত এটা জিয়া চক করে ধরে ফেলেছেন। ফলে সে বাংলাদেশের চতনাধারি লোকদের একরকম ইগনোরই করছে। বাংলাদেশ নিয়া সে যে প্রগতীশীলদের মতো গদগদ না এটা বইটার রিভিউ পড়েই টের পাইছিলাম। পরে হাতে নাতে প্রমাণ পাইলাম। যাক মূল আলাপে ফিরি।

আবুল মকসুদ একজন পেশাদার বুদ্ধিজিবি। তাঁর বুদ্ধির চেয়ে কাফনের কাপড় জড়াই হাটাচলা উনারে বেশি পরিচিতি দিছে এটা অনেকে মনে করেন। এটা হতেই পারে। প্রতিকের একটা গুরুত্ব আছে। সহজে চেনার জন্য এটা ভাল। আপনি যদি সব জায়গায় কাফনের কাপড় পড়েন, ফাইভ স্টার হোরেঠে লুঙ্গি পড়ে যান আপনাকে দ্রুত চোখে পড়বে। এটা ভাল টেকনিক। উনার কোন লেখা না পড়লে বাংলাদেশের কোন বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষতি হবে না। মানে চিন্তার ব্যাসিক কোন কনট্রিবউশন নাই। বাট, কিছু কোদালি কাজ করছেন তিনি। বেশ কিছূ গবেষণা বই আছে। যারা এসব বিষয়ে কাজ করবেন পরে এদের জন্য এগুলা ইউজফুল হবে। যাক তিনি জিয়ার একটা কথা ধরে প্রথম আলোতে একটা চিকনা কলাম লেখছেন। কলাম লিখে তিনি জিয়ার কথার সাথে গভীর অসন্তোষে সহমত পোষন করেছেন। কথাটা হলো, ‘বাংলাদেশ মৃত আইডিয়ার দেশ’

পরে গত শুত্রবার বাংলার বুদ্ধিজিবিতার জিবন্ত ‘কৌতুক’ জাফর ইকবাল একটা লেখা লিখেছেন। জাফর ইকবালের লেখা-লেখি বাংলা সিনেমার থিউরি ফলো করে আগায়। আপনি যদি ‘আবগে না কান্দেন’ -তাইলে মূল্য ফেরত টাইপের লেখক তিনি। তিনি মেইনট্রিম মানে আওয়ামী স্টিমারের যাত্রী। প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানপ্রচারক( আধুনিক কালের যাজক বরতে পারে) তিনি ড্রোন বিশেষজ্ঞ। আলোর ঠিকাদার। উনি বুদ্ধিজিবিতা বলতে বুঝেন, ‘চেতনা’ ‘কলোনিয়াল দেশ প্রেম’ ‘৭১’ তিরিশ লাখ’ মা-বোনের ইজ্জত’ তিনি বিভিন্ন এনজিও টাইপের উদ্যোগকে বিপ্লব মনে করেন এবং এগুলার খাস সৈনিক তিনি। ফলে শহরের ফার্মের মুরগি টাইপের কিছু পুলাপান জাফর ষ্যার বলতে অজ্ঞান। এইসব মিলে তিনি একজন মিষ্টি মানুষ। দুনিয়া সম্পর্কে কোন খোঁজ খবর রাখার দক্ষতা তার আছে এটার কোন প্রমাণ আমি পাই নাই। মনে হয় সব কিছুতে একটা সমাধান হইল আবেগঘন একটা লেখা লিখে ফেলা-এটাই ইকবালীয় স্টাইল। কাঁদো কাঁদো আবেগে ফেটে পড়তেই উনার পাঠক রেডি থকে। তার কোন রকম ইনটেলেক বা ইনন্টারভেনশনাল রোল এই যাবৎ দেখা যায় নাই (শাহবাগে তিনি জাতীয় পতাকার দায়িত্ প্রজন্মে হাতে দিছিলেন, পরে প্রজন্ম গানজার কলকি হাতে নিছে এই দায়িত্ব ফালায়া)।
অন্য অনেকের মতো আবেগের জাহজে উঠায়া তিনি কিছু মিসকনফিডেন্ট শো করেন এটা বাংলাদেশের অক্ষম রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্রের সাথে একাকার ( মনে রাখুন রানা প্লাজা শ্রমিক উদ্ভার নিয়ে সরকারের মিথ্যা বাচালতা)। বাংলাদেশের বুদ্ধিজিবিতার মতো অসুস্থ্য কোন খাত আছে কি না খুজে দেখতে হবে। এখানে এখনও কাল্টফিগার বানানোর প্রতিযোগিতা চলে। ব্যাপক অযোগ্যতা নিয়া শিক্ষার অহংকারে ফেটে পড়ে আমাদের প্রগতী-অন্ধরা। যাক জাফর ইকবাল কি লিখল? লেখাটা মধ্যে ২ টা পয়েন্ট আছে। তিনি নিজেকে জিয়া হায়দার ও আবুল মকসুদের চেয়ে বিশ প্রগতীশীল বলে দাবি করলেন। ২. তিনিও ১৮ বছর বিদেশে ছিলেন এবং বিদেশে থেকে দেশ নিয়ে কথা বলা অনুচিত তাই তিনি দেশে এসে দেশ নিয়ে কথা বলছেন। এর বাইরে আর কোন পয়েন্ট আমি পাই নাই। এটা আমার মূর্খতা হলেও হতে পারে।

১. জিয়া ও মকসুদ সাহেব দুজনেই বলেছেন, ২ মহিলা দেশকে মৃতদের লাশের উপর ভর করে শাসন করছে(রিপোর্টসূত্রে)। এরা দু জন যে ‘প্রধানমন্ত্রি’ এটা না বলে ‘মহিলা’ বলাটা পশ্চাৎপদতা। জাফর ইকবাল এখানে নারীবাদি পজিশন নিয়ে নিজেকে এই দুজনের চেয়ে বেশি প্রগতীশীল প্রমাণ করলেন। আশা করি আপনারা একমত হবেন, এটা নিয়ে কথা বলার কোন মানে হয় না। এই ২ জন নারী-পুরুষ বা বনমানুষ যাই হোক না কেন তাতে জিয়ার কথার মেরিট নষ্ট হয় না। আর ক্ষমতার কোন জেন্ডার নাই। ফলে নারীকে নারী নামে ডাকার মধ্যে কোন সমস্যা নাই। জাফর ইকবাল এখনও গ্রাম্যতা ত্যাগ করে পুরাপুরি আধুনিক হওয়ার লড়াইয়ে আছেন ফলে এটা তাঁর কাছে একটা কঠিন চিন্তার বিষয় হইছে।

২. বাংলাদেশের যারা বিদেশে পড়ে দেশে ফিরে এরা কিছু টার্ম মুখস্ত করে নিজেরে পন্ডিত ভাবতে শুরু করে। এটা আমারে কইছিল আজফার ভাই। আমার কাছে এদের অবস্থা হলো, এমন একটা গরুর মতো যে তার গোয়াল চিনতে পারতেছে না। গোয়াল ঘর না চিনতে পেরে আবুল তাবুল ছুটাছুটি করতে করতে গোবরের নালায় এসে উস্টা খায়, এবং তখন শুরু করে সাগরের গপ্প।

এই হলো বিদেশ ফেরত বুদ্ধিজিবির হালত।

এরা কেউ অরগানিক হইতে পারে না হীনমন্যতার কারনে। পশ্চিম নিয়ে একটা অবসেশন থেকে যায়। এরা নিজেরে ব্রক্ষণ মনে করে। বাট কেউ এদের পুছে না। কারণ এরা যে চিন্তায় আটকা পড়ে আছে তা পশ্চিমে ২০০ বছর আগেই বাদ হয়ে গেছে। এটাই দেশে এসে অণুবাদ করতে যায়া তালগোল পাকায় ফেলে। গ্লোবাল এপরোচটা ধরতে পারে না। খালি সুযোগ দিতে চায়। বাংলাদেশের দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বুদ্ধিজিবিরা আামদের দেশে যাতা আমদানি করেছে এতোদিন। এখন এই অবস্থাটার অবসান হতে চলেছে। কারণ গ্লোব ইজ এভরি হয়ার। ফলে জাফর ইকবাল যখন বলেন, আমিও ১৮ বছর বিদেশে থেকেছি। পড়েছি। তিনি উম্মাদের মতো জিয়াকে পশ্চিমা দলের লোক বলে নিজে জাতীয়তাবাদি বীর সাজতে চান। অথচ বাস্তবতা হলো জিয়া পশ্চিমকে যে থাপ্পরটা দিয়েছেন, এটা কল্পনা করলেই জাফরদের দম শুকায়া যাবে। তার লেখা পড়ে বুঝা যায় জিয়ার এই সফলতা তারে প্যারা/পিড়া দিতেছে। ১৮ বছর কেন ১৮ হাজার বছর বিদেশ থাকলেও যার কান্ডজ্ঞানই থাকে না তার ডেলিভারি জাফরইকবাল টাইপেরই হবে। বিদেশে পড়াটা বা যাওয়াটা যারা জাতীয় ঘটনা মনে করে এরা যাস্ট কুশিক্ষার প্রোডাক্ট। জিয়া আইডিয়া ও চিন্তাশীলতার যে জায়গায় গিয়ে পশ্চিমকে ধোলাই দিছে এটা করতে হলে যে পরিশ্রম ও অভিনিবেশ লাগে তা কোন ভাড় বুদ্ধিজিবিতা দিয়ে এচিভ করা যাবে না। জিয়ার বইটা নিয়ে জাফরের কোন কথা চোখে পড়েনি, তার কি কথা নিয়ে মিডিয়া রিপোর্ট করেছে এতে বাংলাদেশের ইজ্জত গেছে –তাই নিয়ে উনি চিন্তিত। জাফর ইকবাল টাইপের লোকজন যতদিন তথাকথিত মূল ধারা থাকবে ততদিন বাংলাদেশের কোন ইনটেলেকচুয়াল ইজ্জত তৈরি হবে না আমি বাজি ধরে বলতে পারি এটা। বাংলাদেশের লোকজন (শিক্ষিতরা) কি পরিমান ফাটকা তা জিয়াকে নিয়ে মিডিয়াবাজি ও জাফর ইকবালের অক্ষম আউটবাস্ট দেখে বুঝা গেল। বাংলাদেশে চিন্তাশীলতার নামে কিছু লোক জাতীয়তাবাদি জিকির তুলছে, কিছু লোক তাত্বিক কেলেঙ্কারি করছে… আর কিছু লোক নিজের অশিক্ষা-কুশিক্ষাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়ে জ্ঞান বলে চালিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের অরগানিক ইনটেলেকচুয়াল কই? আর একটা দল আছে এরা অরগানিক ধান্ধাবাজ। কোন ইনডেপ্থ ক্যাপাসিটি নাই খালি রেটরিক্যাল কথা বলে বাজার গরম করতে মরিয়া হয়। ইস্যু দেকলে আলোর পতঙ্গের মতো ঝাপাই পরে। এদের নষ্টামিকে আমি থিওরিটিক্যাল স্কেন্ডাল বলি, এরা সবচেয়ে বেশি বিভ্রন্ত করতে সক্ষম। এর বাইরে কিছু পার্টিজান লোক আছে বুদ্ধিজিবি নামে। আর ব্যাপক ভাবে আছে নিজেকে কাল্ট ফিগার বানানোর প্রতিযোগিতা। আমি থিওরিটিক্যাল ভায়োলেন্স করে এই সব কাল্টফিগার ও মিসকনফিডেন্ট কেরেকটার ভেঙ্গে দিতে আপনাদের দাওয়াত দিতে চাইতাছি আপদত।

জিয়াকে নিয়ে আমার লেখা থেকে কয়েক প্যারা…
“সাম্প্রতিক এক আলাপে বলেছেন, বাংলাদেশ মৃত্য আইডিয়ার উপত্যকা। কী অর্থে, এখানে আইডিয়া দ্বারা আলোড়িত হওয়ার চেয়ে মৃতদের ছায়ার দ্বারা আমরা বেশি আলোড়িত। তিনি মনে করেন, এখানকার ক্ষমতাসীনরা মৃতদের ছায়ার ওপর দাঁড়িয়ে একটা পারিবারিক শাসন কাঠানো তৈরি করেছে।
তিনি বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন টেরিটরির বা ভাষার অর্থে বোঝেন না। তিনি বোঝেন বিশ্ব বা গ্লোবের মধ্যে অন্য সব বিষয় আশয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করে। বাংলাদেশের হূদয় হতে এ যেন একটা প্রকৃত বিশ্ব আওয়াজ। কথাটা ঠিক হল না সিলেটি হূদয় হতে বিশ্ব আওয়াজ। বাংলাদেশে বা এ ধরনের সাংস্কৃতিক-কলোনিয়াল এলাকার জন্য জিয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ লেখক এজন্য না যে তিনি গ্রামে বা রুরালের জন্ম নিয়ে বিশ্ব ফেনোমেনা হয়েছেন।
তিনি গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, তিনি মানবসত্তার লড়াইটা ধরতে পারেন। তিনি বোঝেন আইডিয়া বা চিন্তার লড়াই দিয়ে কেন্দ্র-প্রান্ত একাকার করে দেওয়া যায়। তিনি পশ্চিমকে ডিসেন্টারিং যেমন করতে চেয়েছেন তেমনি প্রান্তের টেনশনকে লোকাল সংস্কার থেকে মুক্তি দিয়েছেন। বিদ্রোহের এমন ধারালো, ক্ষ্যাপাটে ধরন পৃথিবীর জন্য অতি জরুরি ছিল। ২১ শতক যেন জিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। জিয়ার আওয়াজ শুনছে বিশ্ব।”

(জিয়া হায়দার রহমান: এক বিস্ময়কর বিশ্ব-আওয়াজ–রেজাউল করিম রনি, দৈনিক সকালের খবরে প্রথম প্রকাশিত)

“জিয়া হায়দার রহমান এখন একটা ফেনোমেনা/ঘটনা। আর বাংলাদেশের মিডিয়াতে জিয়াকে নিয়ে যা চলছে তা ফ্যাশনের পর্যায়ে চলে গেছে। শুরু থেকে জিয়া হায়দার রহমানকে যে কারণে বাংলাদেশে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা হল, তিনি ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত’ বলে। মজার ব্যাপার হল, আপনি যদি জিয়ার লেখা পড়েন বা জিয়ার প্রকৃত কাজের জায়গাটা ধরতে পারেন দেখবেন তাঁকে বাংলাদেশের ব্যাপারে খুব আবেগাপ্লুত দেখা যাবে না।
জিয়ার কথাতেও আপনি হতাশ হতে পারেন। ফলে মিডিয়া যে অতিরিক্ত দরদ তৈরি করছে তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এবং এই দরদি কাভারেজ জিয়ার কাজের গুরুত্ব বুঝতে ও ‘পাঠ’ তৈরিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। সেদিকে মনোযোগ রেখে আমরা সংক্ষেপে জিয়ার কাজের জায়গাটা বুঝতে চেষ্টা করব।
বিশ্বসাহিত্য ও জিয়া : জিয়া যেই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে লেখালেখিকে এগিয়ে নিয়ে যান এর জন্য তাঁকে কোনো রকম কেন্দ্র-প্রান্ত ধারণার আশ্রয় নিতে হয় না। তারপরেও বাস্তবতা থাকে, তিনি প্রান্তদেশীয় লোক হিসেবে কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক করতে গিয়ে যে ধরনের মুশকিলের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তা জিয়াকে কিছুটা ক্ষ্যাপা করে তুলেছে।
এটাকে বলতে পারেন, সাংস্কৃতিক শ্রেণি সংগ্রাম। জিয়া বারবার শ্রেণির কথা বলে। এই সংগ্রামটা জিয়াকে করতে হয়েছে। এটা করতে করতে তিনি নিজেকে ব্যাপকভাবে ভেঙেছেন। কেন্দ্র-প্রান্তের টেনশন কাটিয়ে নিজের কাজের পদ্ধতিটা ধরতে পেরেছেন। এটা খুব নতুন প্রবণতা, এমনটা বলা যাবে না।
২০০৫ সালে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক একটা বই লিখেছেন, ‘ডেথ অব অ্যা ডিসিপ্লিন’। তিনি এর মধ্য দিয়ে তিনি তুলনামূলক সাহিত্যের মৃত্যু ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, তুলনামূলক সাহিত্য বলে কোনো সাহিত্য নেই এই কালে, যা রচিত হচ্ছে তা ‘সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া সাহিত্য’, যা প্রকৃত অর্থে বিশ্বসাহিত্য।
এটা যেখানে বসেই রচিত হোক না, এটা এখন বিশ্বসাহিত্য হয়ে উঠতে পারে। এই ধারণাটা পরিষ্কার করতে গায়ত্রী ‘প্ল্যানেটরি’ শব্দটি ব্যবহার করেন। জিয়াও সীমানা ছড়িয়ে গেলেন। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া তরুণ এই লেখক কীভাবে সীমানা ছাড়িয়ে গেলেন? ইংরেজিতে তো অনেকেই লিখে। কিন্তু জিয়া কেন এত গুরুত্ব পাবেন?
প্রথম কথা হল, পশ্চিমে বা ইংরেজি ভাষাভাষি লেখালেখির জগতে বিশেষ করে উপন্যাসের বাজার তৈরিতে এজেন্টদের ভূমিকা লেখকদের চেয়ে বেশি। লেখক লিখেন। বাকি কাজটা খুব ঝমকালোভাবে করা হয়। নানা লেখককে নিয়ে বাজার গরম করার জন্য পেশাদার এজেন্ট খুব শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন। এরা মিডিয়াতে গিমিক তৈরি করতে বেশ পারদর্শী।
এর ফলে অনেক সময় মিডিয়ার হুজুগ দেখে কোনো লেখককে পাঠ করতে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন ঘন ঘন। তেমনি জিয়াকে নিয়ে বিশ্বমিডিয়ার কাভারেজেও এই হাইপ বা ওভারটোনটা ছিল। কিন্তু এই হাইপ কাটিয়ে জিয়া ধীরে ধীরে আপন গুরুত্বে ফিরতে শুরু করেছেন।
জিয়ার কাজের গুরুত্ব আঁচ করে সবচেয়ে কার্যকর ২০০১৪ সালের ১৯ মে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড এজ উই নো ইট’ নামে নিউইয়র্কারে লিখেন জেমস উড। উডের লেখাটা জিয়ার গুরুত্বকে বুঝতে প্রাধমিকভাবে বেশ সাহায্য করে। জিয়া ইংরেজি ভাষা লিখে সীমানা অতিক্রম করেননি। বিশ্বের লেখকে পরিণত হননি। তিনি সীমানা অতিক্রম করেছেন ‘আইডিয়া’ ডিল করে। তাঁর উপন্যাসের ভূগোলও ব্যাপক।”

Tahmima Anam and the New York Times: Where fiction and reality collide

8

By Surma:

Meet Tahmima Anam, budding novelist and daughter of the Daily Star editor Mahfuz Anam. Self described anthropologist and writer. Ms Anam has left the world of literary fiction to comment on current affairs in Bangladesh, writing for the Guardian  of London and the New York Times. She recently seen at an event hosted by the Mayor of Hackney, a north London Borough, together with Tulip Siddiq, the Labour Party candidate for Hampstead and Kilburn, the daughter of  Sheikh Rehana and niece of Sheikh Hasina, the Prime Minister of Bangladesh via a controversial election.

Meet Joe Carroll, fictional character in the Fox TV series, ‘The Following’. A former professor of English literature at Winslow University. Carroll’s teaching emphasizes the romantic period. He initially began to make “art” by disemboweling his female students. He ultimately killed fourteen of them before he was caught. While serving out his sentence at prison, Carroll gathers a cult-like collection of followers, who are willing to murder, kidnap, and even sacrifice themselves in order to execute his plan of revenge. Carroll’s only published novel, The Gothic Sea, was inspired by Poe’s The Light-House, but was a commercial and critical failure.

Once upon a time from New York….

Both Tahmima Anam and Joe Carroll collided into my reality the other evening. After a long day at the office I decided to wind down by watching the latest episode of the ‘The Following’. As I was watching Joe Carroll confess to a priest (his next victim) about how he was suffering from self pity as a failed author, husband and father, I received an alert on a posting of Anam’s latest article in the New York Times.

In her article Ms Anam seems to have extended her historical fiction writing to the present day. She carries on with the make believe story of bearded and skull cap wearing men burning the homes of Hindus, with all the perpetrators being members of Jamaat. This conveniently ignores the facts that members of the ruling Awami League have been involved in such attacks around the recent ‘elections’, as well as during the tenure of the Awami League government

Ms Anam rounds off her recent piece with a fairy tale ending of happily ever after, stating:

There has been no major public outcry yet over this lopsided election. Children are going back to school. The roads in the capital are reassuringly clogged with traffic again. Butter has returned to the supermarket shelves.

She shamefully neglects the massive crackdown of state security forces on political opposition, and the dead bodies of political activists turning up all over the country. While Anam is free to express her opinions in the foreign press, journalists in Bangladesh have been imprisoned for publishing stories critical of the government.

Do as I say not as I do: Life and Death Matters

The similarities between Anam and Carroll extend beyond their confluence that evening to their largely self-centred notions of humanity. Carroll’s victim appealed to him to reciprocate the humanity they had shown to him, yet Carroll ignored such pleading and proceeded by stabbing the priest in the heart. The scene reminded me of a promotional interview given by Anam where she relates the inspiration for her book with an anecdote of how an appeal to humanity can cut across political ideologies and fraught circumstances. It was August 1971 and her grandmother’s home, a known safe house for (then) rebel fighters was visited and searched by the Pakistan’s Army, the day after her uncle blew up a power plant. At the end of this encounter, the army officer left her grandmother along with her children. As Anam puts it,

“I suppose it’s one of those things that happens between two humans…. and maybe he ..um… just took pity on her… or she became real to him… she wasn’t just the enemy”

Like Carroll, Anam is happy to benefit from the humanity of her opponents, but is unwilling to reciprocate it towards people who politically differ from her. This is evident from the sugar-coating of the current political crisis in the New York Times, to making libellous, and baseless accusations in the London based Guardian newspaper earlier last year. In her article in the Guardian, Anam culturally ‘translated’ the case for a retrospective death sentence of Abdul Quader Mollah. Thus Anam became a chief spokesperson for a growing, intolerant hypernationalism unknown in Bangladesh, since its creation in 1971.

Mollah was executed in December on the basis of the hearsay of a single testimony (inadmissible as evidence in a normal court of law), during controversial and highly politicised war crimes trials which have garnered international and national criticism. Anam supported the government sponsored crowds in the street, marketed as The Shahbag Movement, demanding the enactment of retrospective legislation to raise his life sentence to death. Just this December, Mollah’s hanging was hurried through without applying the jail code procedures, but in time for the national Victory Day, thus providing the ruling Awami League with a pyrrhic victory and a blood sacrifice, before the one sided elections on the 5th of January.

In order to explain and justify the bloodlust at Shahbag square to her western liberal audience in the Guardian, Anam has once again collapsed the boundary between fact and fiction. She regurgitated the unproven accusations that Mollah was the ‘Butcher of Mirpur’, and had personally slit the throat of a poet.

Fortunately for Anam, the dead cannot sue for libel in the English courts.

Resurrection of the Ubermensch

And yet Tahmima Anam and Joe Carroll have another thing in common, their self-image. Both authors provide a priest-like legitimacy, and intellectual fig leaves for the cult-like violence of their respective followers. Just like the law enforcement agencies held Joe Carroll responsible for the actions of his fellow ideological bedfellows, so should Anam and her fellow ‘Shahbag Stormtroopers’ be held to account for covering up and giving succour to an oppressive regime in Bangladesh.

While Joe Carroll followers stabbed and killed commuters in the New York subway, shouting, ‘Resurrection! Resurrection! Joe Carroll lives!’ Anam’s fellow travellers, the Joy Bangla Brigade of the Awami League, are attacking and murdering those who politically differ from them, inviting their audiences, and investors, to a retro 1975 themed one party state.

Resurrection! Resurrection! BAKSAL lives!!

জিয়াউলের সুখী জীবনঃ সরকারী ধর্ষণ ট্রিলজি পার্ট টু

 

–          আমান আবদুহু

 

ঘুম ভেঙ্গে গেছে কর্ণেল জিয়াউলের, চোখ দুটো অবশ্য এখনো বন্ধ। নাসিমার কথা শোনা যাচ্ছে, সম্ভবত ফোনে কথা বলছে কারো সাথে। মেজাজটা খিচড়ে গেলো। দুপুরের কথা মনে পড়ে গেছে, তখনও মেজাজ চরম খারাপ ছিলো। শরীরটা ভেঙ্গে আসছিলো, ইউনিফর্ম না খুলেই বেহুশের মতো ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে।

 

রাতে সাতক্ষীরায় অপারেশন ছিলো। এরপর ঢাকা পৌছতে পৌছতে বিকেল। র‍্যাবের পাজেরো গাড়ি গুলো অনেক কমফোর্টেবল, তবু জিয়াউলের অনেক ক্লান্তি লাগছিলো। গাড়ি বা ট্রেনে তার ঘুম আসে না। এমনকি বিমানভ্রমণের সময়ও সে ঘুমাতে পারেনা। সারা রাতের দৌড়াদৌড়ি আর দীর্ঘ দশ বারো ঘন্টার জার্নি শেষে বিকেলে বাসায় ঢুকে যদি দেখে জাফর সোফায় বসে আছে, তখন কেমন লাগে?

 

ছেলে আর মেয়ে দুটাই তখন কলেজ ভার্সিটিতে থাকে। বাসায় আর কেউ নেই। জাফরকে দেখে মেজাজ সামলে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছিলো তার জন্য। একবার ভেবেছিলো সার্ভিস রিভলবারটা দিয়ে গুলি করে দিলে কেমন হয়! কিন্তু গুলি করা হয়নি। জাফরের সাথে কোন কথাও বলেনি। তার মুখটা হাসি হাসি হয়ে উঠছিলো, সম্ভবত কুশল বিনিময় করতে যাচ্ছিলো। কিন্তু জিয়াউল তাকে ঐ সুযোগ দেয়নি। বেডরুমে এসে সোজা শুয়ে পড়েছিলো।

 

এখন ঘুম ভেঙ্গেছে। নাসিমার গলার স্বর আবারও আবছা শোনা যাচ্ছে। কতক্ষণ হলো? এক চোখ খানিকটা খুলে হাতটা টেনে চোখের সামনে আনলো। বিএনপির এক নেতা রিষ্টওয়াচটা এনেছে সুইজারল্যান্ড থেকে। প্রায় নয়টা বাজে। উত্তরা হেডকোয়ার্টারে বারোটার ভেতরে যাওয়া দরকার।

 

হাতটা বাড়িয়ে জিয়াউল দু’পায়ের মাঝে পুরুষাঙ্গটা ধরলো, শক্ত হয়ে আছে। গোসল করতে হবে। গতকাল রাতের ঘটনা মনে পড়াতে মেজাজ খারাপ ভাবটা একটু দূর হয়েছে। মেয়েটার শরীর খুবই ফ্লেক্সিবল ছিলো, বহুদিন এতো বেশি উপভোগ করেনি জিয়াউল। এজন্যই বোধহয় শরীরটা একদম ক্লান্তিতে ছেড়ে দিয়েছিলো।

 

জিয়াউলের বন্ধ চোখের ভেতর মেয়েটা চলে এসেছে। সাতক্ষীরা শহরের বাইরে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে এমন সারপ্রাইজ থাকবে জিয়াউল স্বপ্নেও ভাবেনি। এমনকি গতকাল ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার পর রাস্তায় সে একবার চিন্তা করছিলো, ফিরে এসে ধানমন্ডিতে মিথিলার বাসায় যেতে হবে।

 

রাত দুইটার দিকে সে ছিলো শহরের এক বাড়িতে। অপারেশন তখনও শেষ হয়নি, তবে তার বিরক্ত লাগছিলো কিছু না পেয়ে। তেমন কোন টাকাপয়সা বা স্বর্ণ নেই, সোর্স ভুল ইনফর্মেশন দিয়েছে। বাড়ীর লোকগুলো তো নেইই। সে বাইরে এসে জীপে বসে ছিলো। প্লাটুনের কয়েকজন বাড়ির ভেতরে থেকে গিয়েছিলো, কিন্তু জিয়াউলের নজর উঁচু। সবজায়গায় সে নিজে সরাসরি ইনভলভ হয়না।

 

একটু পরে স্থানীয় লীগের লোকজন সহ গ্রুপের সবাই বেরিয়ে এসেছিলো। বুলডোজার মাত্রই বাড়ির সামনের দেয়াল ভাংতে শুরু করেছে। জিয়াউল একটা সিগারেট ধরিয়ে অলস চোখে তাকিয়ে আছে। ছাত্রলীগ সভাপতি ছেলেটা গাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করছে, হয়তো কিছু বলতে চায়। অথবা এমনিই হয়তো খাতির জমাতে চায়। এমন সময় রাশেদের ফোনটা আসলো।

 

কর্ণেল রাশেদ তার দীর্ঘদিনের বন্ধু, সত্যিকার একটা বন্ধু। একসাথে ক্যাডেট কলেজে পড়া থেকে শুরু। এখনও দুজনে একসাথে র‍্যাবে আছে। জিয়াউল ভালো কিছু পেলে সাথে সাথে রাশেদকে জানায়। রাশেদও সবসময় বন্ধুর কথা মনে রাখে। রাশেদ জানালো রাজাপুর নামে একটা গ্রামে আছে সে। বাড়ির মালিক আমেরিকান সিটিজেন। অনেক স্বর্ণ আছে, জিয়াউল যদি আসতে পারে তাহলে তা ওয়ার্থ করে।

 

সাথে একজন কনষ্টেবলকে দিয়েছিলো ঐ থানার ওসি, রাজাপুরের রাস্তা চেনে সে। প্রায় আধাঘন্টা পর যখন জিয়াউল ঐ গ্রামে পৌছলো, বাড়িটা পেতে কোন সমস্যা হলো না। রাশেদ বলে দিয়েছিলো পাকা দু’তলা বাড়ি। পুরো গ্রামে এমন বাড়ি একটাই। ছোট বাজারটার কয়েকশ গজ দূরে, রাস্তার উপরে। তার জন্য আসল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো একটা রুমে, রাশেদ তাকে ঐ রুমে নিয়ে গেলো। আমেরিকা থেকে ক্রিসমাসের ছুটিতে বেড়াতে এসেছে পরিবারটা, বড় মেয়েটার বিয়ে দেবে। প্রচুর স্বর্ণ আর দামী দামী জিনিসপাতি। সবাইকে অন্য একটা রুমে আটকে রাখা হয়েছে। পুরো বাড়িতে র‍্যাবের সেপাইরা ঘুরাঘুরি করছে, জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখছে। মেয়েটা ঐ রুমে ছিলো। প্রথমে অনেক ঝামেলা করেছিলো, রেগুলার ইয়োগা করা দুধে মাখনে বড় হওয়া চমৎকার একটা শরীর। আর জিয়াউল ভালো করেই জানে কিভাবে এসব ঝামেলা সামলাতে হয়।

 

জিয়াউলের অনেক ভালো লেগেছে। পরে বাইরে বের হয়ে দেখলো রাশেদ দাড়িয়ে সিগারেট টানছে। গেটের ভেতর দেয়ালের পাশে তিনজন লোক হাত পা বাঁধা হয়ে পড়ে আছে। জিয়াউল হেসে বন্ধুর হাত থেকে সিগারেট নিতে নিতে বললো, তুই শালা একটা স্যাডিষ্ট। এভাবে ফেলে রেখেছিস কেন? কি করবি?

 

রাশেদ বললো এরা হিন্দু, গুলি করা যাবেনা। বাড়িতে আগুন দিয়ে ওখানে ফেলে দিবো। প্রথম আলোর সাংবাদিক আছে বাইরে। ঘটনা হবে এলাকা থেকে যৌথ বাহিনী চলে যাওয়ার পর অপজিশনের লোকজন এসে এদের পুড়িয়ে সরকারের উপর প্রতিশোধ নিয়েছে।

 

জিয়াউল অবাক হয়ে গেলো, বলিস কি? হিন্দু? বুঝতেও পারিনি দোস্ত। হাহাহাহাহা আল্লা বা ভগবান কিছু ডাকেনি। খালি ওহ গড ওহ বলছিলো। রাশেদও বন্ধুর সাথে অট্টহাসি দিয়ে উঠলো।

 

এতো খাটাখাটানির অপারেশন, তার উপর আবার দীর্ঘ রাস্তা ভ্রমণের পর জিয়াউল ভালোই ক্লান্ত ছিলো। কিন্তু বাসায় ঢুকেই যদি দেখে জাফর, কেমন লাগে? মনে পড়াতে মেজাজটা আবার খারাপ হলো।

 

নাসিমার এই খালাতো ভাইটা একটা চরিত্রহীন লোক। সমস্যা হলো তার পোষ্টিং এসএসএফ এ। জিয়াউল কিছু করতে পারছে না, কিন্তু তার মন বলছে কোন একটা ঘাপলা আছে। আগেও সে দুইতিনবার জাফরকে অসময়ে তার বাসায় আসতে দেখেছে। আর গত কিছুদিন থেকে নিজের অফিসের কাজ এতো বেড়ে গেছে, মাঝে মাঝে জিয়াউল একটানা কয়েকদিনও বাসায় আসতে পারেনা।

 

নাসিমার কণ্ঠ আবারও কানে আসছে। চোখ না খুলেই জিয়াউল ভাবলো, কার সাথে কথা বলছে সে? শুনতে চেষ্টা করলো কান পেতে, জিয়াউলের নামটা একবার বললো মনে হয়। নাসিমা কি ফোনে কথা বলার সময় খিলখিল করে হাসছে?

 

স্যারের ফোনকলঃ সরকারী ধর্ষণ ট্রিলজি পার্ট ওয়ান

by – আমান আবদুহু

 

সিলেটে পড়ার সময় আরিফ ছিলো ভার্সিটির পরিচিত মুখ। গণিত অলিম্পিয়াড, বিতর্ক, বই পাঠ প্রতিযোগিতা সব কিছুতে প্রথম সারির অংশগ্রহণকারী, পরে সে হয়ে গেলো আয়োজনকারীদের একজন। জাফর ইকবাল স্যারের ক্লোজ সার্কেলটার অল্প কয়েকজন ছাত্রের একজন। স্যারের এক ভক্তের সুবাদেইতো গ্রামীণফোনে মোটা বেতনের চাকরীটা হয়ে গেলো, মাষ্টার্সের থিসিস সাবমিট করার আগেই।

এখন আরিফ সারাদিন অপেক্ষা করে কখন অফিস শেষ হবে। সারাদিনই নাদিয়ার কথা ভাবে সে। রুপনগরে নতুন উঠা এপার্টমেন্টের বাসাটা তাকে সারাদিন চুম্বকের মতো টানে। অফিসের গাড়ি যখন তাকে বাসার সামনে নামিয়ে দেয় তখন লিফটের জন্য অপেক্ষা করতেও তর সয় না। অসহ্য মনে হয়। অবশ্য সপ্তাহের কোন কোন দিন তার বউ নাদিয়া দেরী করে অফিস থেকে ফেরে, ঐসব দিনে সে বাইরের কাপড় না খুলেই বসে বসে টিভি দেখে।

টিভিটা তার খুব প্রিয়। আটচল্লিশ ইঞ্চি প্লাজমা টিভিতে একাত্তর টিভি এতো পরিস্কার দেখায়, জীবন্ত হাই ডেফিনিশন! পরদিন শনিবার ছুটি, তাই অনেক রাত হয়ে গেলেও ওরা দুজনে টিভি দেখছিলা। জামাত শিবিরের তান্ডব, বাসে বিএনপির লোকজনের দেয়া আগুন।

এমন সময় দরজায় জোরে জোরে নক করার শব্দ শুনে আরিফ একটু অবাক হয়, সিকিউরিটি তো ফোন করে কিছু জানায়নি। দরজা খুলে দেখে এমদাদ সাহেব এবং তার সাথে দুইজন মোটাসোটা পুলিশ অফিসার দাড়ানো। একজনের দিকে প্রথমেই চোখ চলে যায়, জঘন্য রকমের হোতকা ও কালো। চেহারাটা ভাবলেশহীন, কিন্তু নোংরা ভাব চোখেমুখে। ভয় লাগে, ঘৃণাও লাগে।

এমদাদ সাহেব একই এপার্টমেন্টের আটতলায় থাকেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যাবসায়ী। মাঝে মাঝে লিফটে অথবা নিচের পার্কিং এ দেখা হয়। আরিফ খেয়াল করেছে লোকটা সুযোগ পেলেই নাদিয়ার শরীরে চোখ বুলিয়ে নেয়।

ভেতরে ঢুকে এমদাদ সাহেব আর একজন পুলিশ অফিসার সোফায় বসে, মোটকা অফিসারটা বুকশেলফের বইগুলো দেখতে থাকে। এমদাদ সাহেব পরিচয় করিয়ে দেন, ইনি সালাউদ্দিন সাহেব আমাদের মীরপুর থানার ওসি। আর উনি ফখরুল ভাই, সেকেন্ড অফিসার।

ভোটকা সেকেন্ড অফিসার ফখরুল ততক্ষণে বুকশেলফ থেকে কোরআন, মকসুদুল মোমেনীন আর বেহেশতি জেওর তিনচারটা বই নামিয়ে টেবিলের উপর রাখে। মোটা ভুড়ির জন্য ঝুঁকতে তার একটু কষ্ট হয়। ওসি সাহেব একবার নাদিয়া আরেকবার আরিফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন। পুরুষ্ট গোঁফে হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞাসা করেন, তো আরিফ সাহেব কতদিন থেকে জামাত করেন?

আরিফ জোর প্রতিবাদ করতে যায়, অনেক কথা বলে উঠে। এমদাদ সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, বুঝতেই পারছেন আরিফ সাহেব এইসব জিহাদী বই আপনার বাসায়, কি ডেঞ্জারাস সিচুয়েশনে পড়েছেন আপনি। এখন থানায় নিয়ে আপনাকে বিস্ফোরক আর ভাংচুর মামলায় আসামী করা হবে। রিমান্ড হবে জেল হবে, আপনার চাকরিও চলে যাবে। আপনার জন্য পুলিশ আদালত বিভিন্ন অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে ভাবীর অবস্থা কি হবে ভেবে দেখেন। আপনাদের দুজনের পুরো জীবনটা তছনছ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যদি কোঅপারেশন করেন তাহলে কোন সমস্যা হবে না। কেউ কিছু জানবেও না। ডিসিশন আপনার।

বলতে বলতে এমদাদ সাহেব আবারও নাদিয়ার উপর চোখ বুলান।

পরের ঘটনাগুলো যেন সিনেমার পর্দার মতো একেরপর এক ঘটে যায়। আরিফ সোফায় স্থবির দর্শক হয়ে বসে থাকে। কাঁপতে থাকা হাত দিয়ে সে ডাচ-বাংলার চেকে সাইন করে দেয়। এবং তারপর পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে যায়। একটা কথা বলার শক্তিও সে জোগাড় করে উঠতে পারেনা। কয়েকবার তার বুঝে আসে না এসব কি বাস্তব, না স্বপ্ন দেখছে সে। নাদিয়ার হাত ধরে ওসি সালাউদ্দিন সাহেব বেডরুমে চলে যান। নাদিয়া যেতে চায়নি, কিন্তু ওসি সাহেব গাট্টাগোট্টা শক্তপোক্ত মানুষ। একহাত নাদিয়ার পেছনে রেখে তিনি অনেকটা ঠেলেই নিয়ে যান তাকে।

পরে ওসি সাহেব বেরিয়ে এলে এমদাদ সাহেব ও সেকেন্ড অফিসার ভোটকা ফখরুলও বেডরুমে যায় আর পরে বেরিয়ে আসে। আরিফ ও অন্যরা সবাই মিলে আটচল্লিশ ইঞ্চি এলসিডি স্ক্রীণে একাত্তর টিভি দেখতে থাকে। সেকেন্ড অফিসার ফখরুল ফ্রিজ থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল এনে ওসি সাহেবের গ্লাসে পানি ঢেলে দেয়।

পরদিন অফিসে আরিফ অসহ্য রাগে দুঃখে ভেঙ্গে যেতে থাকে। এমন এক ঘটনা, কাউকে কিছু বলাও যায় না। দুপুরে সে জাফর ইকবাল স্যারকে ফোন করে। স্যার পুরো ঘটনা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বলেন, এই দেশে এটা অসম্ভব। যারা একাজ করেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের দলটার ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুযোগসন্ধানী শত্রু। আরিফ তুমি বিন্দুমাত্র চিন্তা করবে না আমি এখনই প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলছি। কালকের ভেতরে তুমি দেখবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।

স্যার আরিফকে অনেক সান্তনা দেন।

নাদিয়া সেদিন অফিসে যায়নি। পরদিন থেকে অবশ্য আবার অফিস করা শুরু করে। তবে আরিফের দিকে তাকায় না, আরিফের সাথে কথা বলে না। একসপ্তাহ চলে যায় এভাবে, আরিফ কি করবে বুঝতে পারেনা। শেষপর্যন্ত শুক্রবার রাতে আরিফ চেষ্টা করে নাদিয়া কে বুঝাতে। নাদিয়াকে সে বলে, স্যার বিষয়টা দেখছেন। দেখবে ওদের কঠিন শাস্তি হবে। স্যার বলেছেন এরা জামাত শিবিরের গুপ্তচর। এসময় দরজায় জোরে জোরে ধাক্কার শব্দ!

আরিফের হার্টবিট যেন এক মুহুর্তের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সে জাফর ইকবাল স্যারকে কল করতে থাকে। স্যারের ফোন কেউ রিসিভ করেনা। আরিফ চিন্তায় পড়ে যায়, স্যার তো রাত জেগে পড়ালেখা করেন। কি হলো, স্যার ফোন ধরছেন না কেন? এদিকে দরজায় ধাক্বা বেড়ে যায়, দেরী হলে আশেপাশের ফ্লাটের মানুষজনও জেনে যাবে। কতক্ষণ আর দরজা বন্ধ করে রাখবে!!

পিপহোল দিয়ে সে দেখে আগের তিনজনই আন্তরিক বন্ধুর মতো দাড়িয়ে আছে। দরজা খোলার পর ওসি সালাহউদ্দিন সাহেব হেসে বলেন, কি খবর আরিফ সাহেব? কোথায় কোথায় ফোন করেছিলেন বলে হাহাহাহাহাহা শব্দে একটা আমুদে অট্টহাসি দেন। এরপর এমদাদ সাহেব আর সেকেন্ড অফিসার ফখরুল আরিফের সাথে বসে টিভি দেখে।

ভোটকা ফখরুল চ্যানেল বদলে এমটিভি চালিয়ে দেয়, ঐশ্বরিয়ার নাচ দেখাচ্ছে। নাচ দেখতে দেখতে আওয়ামী লীগ নেতা এমদাদ সাহেব উরুসন্ধিতে হাত দিয়ে অন্ডকোষের নিচের দিকটা চুলকান। ভোটকা ফখরুল সোফায় হেলান দিয়ে বসে নিজের ভুড়ির উপর হাত বুলায়। আরিফ ভাবতে থাকে, জাফর ইকবাল স্যারকে ফোন করতে হবে।

ঢাকা-নরসিংদী রুটের গাড়ি আজিমপুর গেল কেমনে?

by Monsur Rashed
একটা জিনিস ঠিক বুঝতে পারছিনা! বিআরটিসির একটা ঢাকা-নরসিংদী রুটের গাড়ি পুড়ানো হয়েছে। বলেন দেখি কোথায়? আজিমপুরে!!! জি ভাই! আজিমপুরে! ঢাকা-নরসিংদী রুটের গাড়ি আজিমপুরে কি করে? সব সম্ভবের দেশেও আজব লাগে মাঝে মাঝে!
চলুন একটা নাগরিক তদন্ত তদন্ত খেলি!
কি কি কারনে এই ডাবল ডেকার বাস আজিমপুর যেতে পারে?
এক – জ্যামের কারনে জায়গা না থাকায় গাড়ি ঘুরাইতে আজিমপুর গেলো?
দুই – গাড়ির চালকের বাড়ি আজিমপুর, তাই খাইতে অথবা ছাড়তে গেলো?
তিন – গাড়িতে একটা সুন্দরী মেয়ে ছিল ইডেনের, নামায় দিতে গেলো?
চার – গাড়ির চালকের বাড়ি আজিমপুর, ব্যাটা নতুন বিয়া করসে! 🙂
পাঁচ – চালক আজিমপুর কবরস্তানে তাঁর ওস্তাদের কবর জিয়ারত করতে গেলো?
ছয় – গণজাগরণ মঞ্চে ঘুরপথে যাওয়ার চেষ্টা করছিল!
সাত – চালক নরসিংদীর। প্রথম ঢাকায় আসছে গাড়ি চালায় এবং পথ হারাইসে!
আঁট – আজিমপুর কলোনিতে চালকের পরকিয়ার প্রেমিকা থাকেন!
নয় – বলাকা সিনেমা হলে “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা” দেখতে যাচ্ছিল!
দশ – চালক সানি লিওন না থুক্কু সানি দেওলের “মে নিকলা গাঁডডি লেকে” শুইনা ইন্সপাইরড, সো ‘জাইতাসি জাইতাসি কই জাইতাসি জানিনা’ মুডে গাড়ি চালাইতে চালাইতে আজিমপুর আইসা হাজির,
এগার – মউদুদ, এম কে আনোয়ার আর রফিকুল ইসলাম মিয়া সাথে খালেদা জিয়াকে হত্যা করার প্লান করতে নিউমার্কেট যাচ্ছিল!
বারো – কাঁটাবনে জাপানি কুত্তা কিনতে যাচ্ছিল!
তেরো – এইটা আওয়ামী লীগ ইচ্ছা করে করাইসে! বিএনপিকে দাঙ্গাবাজ প্রমান করার জন্য!
আপনাদের কি মনে হয়? কোনটা ঠিক? কোনটা বেশী লজিকাল?
সরকারতো আর এইটার তদন্ত করবে না! এইটা একটু খোঁজ খবর নেয়া দরকার! আমি তো আমার সীমিত পরিসরে অল্প একটু তদন্ত তদন্ত খেললাম! আপনারাও একটু খেলে দেখেন না। প্লীজ!
btw আল্লাহ্‌র লানত পড়ুক ওদের উপর যারা আগুনে পুরাইয়া মানুষ মারে! ১২ জন মারুক আর এক জন, কারো মাফ নাই!
সুত্রঃ নুরুল কবির, বাংলাভিশন টকশো, ১২:১০ এ এম, ১০ই নভেম্বর

ফাইনাল খেলা অ্যাট বাংলার বিবেক! by Mohammad Hasan

ফাইনাল খেলা অ্যাট বাংলার বিবেক!

পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে একটি খেলার মাঠে চলছে তুমুল ডামাডোল। জায়গার নাম বাংলার বিবেক। এই গল্পের নায়ক হচ্ছে একজন সাংবাদিক(বোকা) /তো চলুন গল্পে প্রবেশ করি।

বোকার ঘুম ভাঙ্গল এক সাংবাদিকের ফোনে।বিকেলের ঘুম ভাঙলে খুব একটা বিরক্ত লাগেনা কিন্ত তার আজকে খুবি বিরক্ত লাগছে কারন সে জানে ফোনটি ধরলেই তাকে আবার দৌড়াতে হবে কোথাও না কোথাও।

সাংবাদিকঃ হ্যালো ভাই বলুনতো কি করছেন আপনাকে কখন থেকে ফোনে করছি।

বোকাঃ সরি ভাই চোখটা লেগে এসেছিল, বলুন কি ব্যাপার।

সাংবাদিকঃ মাঠে চলে আসুন, ব্রেকিং নিউজ পেয়ে যাবেন, আমি ওখানেই যাচ্ছি ,রাখলাম।

বোকাঃও আচ্ছা,ধন্যবাদ।

বোকা দ্রুত চলে আসল মাঠে। চিতকার চেচামেচিতে বিচ্ছিরি অবস্থা। পাবলিকের কাছে বোকা যা জানতে পারল তা হল আজ মাঠে ফাইনাল খেলা হওয়ার কথা টিম এ এবং টিম বি’র মধ্যে।কিন্তু বি টিম খেলতে রাজি হচ্ছে না এবং ওয়াকওভারও দিচ্ছে না।তো বোকা গেল মাঠের মাঝখানে সেখানে দুই টিম এবং খেলার কমিটির বাক বিতণ্ডা চলছে।কিছু সাংবাদিক ছবি তুলছে এবং তাদের সামনে গিয়ে কিছু লোক পোজ দিচ্ছে আর হাত নেড়ে চিতকার করছে”এই আমি সুশীল ক্রিয়া বোদ্ধা, আমি সুশীল”/যাহোক বোকা সোজা গিয়ে বি দলের কাছে জানতে চাইল কি ব্যাপার আপনারা খেলছেন না আবার  ওয়াকওভারও দিচ্ছেন না ব্যাপার কি।

বি দলঃআর বলবেন না ভাই বলে কিনা এটা হোম ভেনু তাই ওদের দলের ক্যাপ্টেন নাকি হবে ম্যাচ রেফারী।

সাথে সাথে এ দলের প্রতিক্রিয়াঃ আরে ভাই আমাদের ক্যাপ্টেন একজন যোগ্য ব্যাক্তি তার পরিচালনাতেই খেলা হবে।

বোকা ঠিক ব্যাপারটি বুঝতে পারল না তাই সে ক্রিয়া কমিটির প্রধানের কাছে জানতে চাইল”একটি দলের ক্যাপ্টেন রেফারী হওয়াটি কি যুক্তি যুক্ত ?

ক্রিয়া কমিটির প্রধানঃ দেখুন আমাদের রুলবুকে কোথায় লেখা নেই যে দলের ক্যাপ্টেন রেফারী হতে পারবে না। আর রেফারী নির্বাচন আমাদের এখতিয়ারে নেই।তাছাড়া তিনি নিজে যখন আমাদের ক্রিয়া কমিটি গঠন করেছেন আমাকে প্রধান করেছেন তো তিনি রেফারী হলে অসুবিধা কোথায় বলুন।

বোকাঃ অ্যাঁ দলের ক্যাপ্টেন ক্রিয়া কমিটি গঠন করেছে!! (বোকার মাথা আরো ঘুরিয়ে যায়)

বলে কি লোকটা (বিড়বিড় করে)

ক্রিয়া কমিটির প্রধানঃ আমায় কিছু বললেন ? বোকা না সুচক উত্তর দিয়ে সরে আসে ওখান থেকে। বোকা এবার যায় সেই  ক্রিয়া বোদ্ধাদের সাথে কথা বলতে

বোকাঃ আচ্ছা দলের ক্যাপ্টেন রেফারী হতে চাইছেন এটা কি করে সম্ভব ?

ক্রিয়া বোদ্ধা একঃ আপনি কি গাঁজাখোর ?

বোকাঃমানে?

ক্রিয়া বোদ্ধা একঃগাঁজাখোরের মত প্রশ্ন করলেন যে বড়।আপনি কি জানেন না এ দলের ক্যাপ্টেনের পিতাকে বলা হত বাংলার বিবেক আর তার সন্তান রেফারী হতে পারবেনা এটা কি মানা যায় । আপনার মত গাজাখোরদের এই বাংলার বিবেকে ঠাই নেই ঠাই নেই।

বোকা মানে মানে কেটে পড়ল তার কাছ থেকে সামনেই আরেক বোদ্ধা তার কাছে জানতে চাইল

এ দলের ক্যাপ্টেন রেফারী হিসেবে কতটা যোগ্য?(আগের বারের কথা মনে রেখে এবার বোকার ডিপ্লোম্যাটিক প্রশ্ন)

বোদ্ধা দুইঃদেখুন এটা একটি অসাধারন প্রশ্ন।এই প্রশ্নের উত্তর দেব ভেবে আমার গর্ববোধ হচ্ছে।এ দলের ক্যাপ্টেন বৈজ্ঞানিক ভাবে তার যোগ্যতা প্রমানিত করেছেন। সুদূর মঙ্গলের ভেরিফাইড গননা বিজ্ঞানী তা প্রমান করেছেন।তাছাড়া এই বাংলার সবচে নামি যেই মেডিছিন  “মলমে চেতনা” ওই ক্যাপ্টেনের পারিবারিক ঐতিহ্য । এই লোক ছেড়ে আর কোথায় পাবেন যোগ্য রেফারী

বোকা এবার আসলেই বোকা বনে রইল । কিন্তু তাকে তো একটি স্টেটমেনট লিখতে হবে তাই এবার সে গেল ধারাভাষ্যকারের কাছে

ধারাভাষ্যকারঃ জি দেখুন সবারই ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।

বোকা এবার একটু আশস্থ হয়ে বলল কিন্তু বি দল এখানে কিই বা ছাড় দিতে পারে?

ধারাভাষ্যকারঃ আহা দেখুন রেফারী তো আর একজন হয়না সাইড লাইনে আরো দুজন দাড়ানো থাকে এদের একজন বি দলের থেকে নেয়া হবে তা হলেই তো হল।

বোকা যথারীতি আশাহত তো এবার সে গেল মাঠের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধানের কাছে?

বোকাঃখেলা যদি না হয় তবে দর্শকরা কি টাকা ফেরত পাবে?

নিরাপত্তা বিভাগের প্রধানঃ খেলা হবেই

বোকাঃতা কিভাবে বি টিম তো খেলবে না রেফারী পরিবর্তন না হলে

নিরাপত্তা বিভাগের প্রধানঃবি টিম কে তো এভাবেই ডিসকোয়ালিফাইড করা উচিত এরা খেলায় হারবে জেনে ষড়যন্ত্র করে মাঠ ধরে নাড়াচাড়া করেছে, মাঠের ক্ষতি করেছে। আমরা সর্ব সমস্যার মেডিছিন মলমে চেতনা লাগিয়ে মাঠ প্রস্তত করেছি ।খেলা এখানে হবেই।বি টিম খেলবে না তো কি হয়েছে আমাদের এ টিমের অতিরিক্ত খেলোয়ার দিয়ে দল গঠন করে খেলা হবে আর দর্শক সেই খেলা দেখবে, উপভগ করবে এবং এ টিমের প্রত্যাশিত জয়ের পর দর্শক নাচবে।বি টিম এই মাঠ কে মুরগীর খোয়ারে পরিনত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দর্শকদের নিয়ে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। ……………………………………………………………………………।

গল্পটি এখনো চলছে এই গল্পের শেষ কোথায় আমার জানা নেই কেননা এ দল আর বি দলে সবসময়ই বিভক্ত থাকব আমরা আর খেলার মর্যাদার নয় স্বীয় দলের বিজয় উল্লাস দেখতেই পছন্দ করব।  আর এরকম বোকারা ঘটনার একটি জাস্টিফাইড স্টেট দাড় করানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাবে একসময় তারাও বায়াস থটের ভিড়ে হারিয়ে যাবে।

(এই মূল্যহীন লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। লেখাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। নিজ দায়িত্তে বাস্তব চরিত্রের সাথে মিল খুজুন,মিল পেলে লেখক দায়ী নয় ….)

আমাদের মতি মিয়া ও এক আজাইর‍্যা মন্ত্রির গল্প – By Almaruf

আমাদের মতি মিয়া ও এক আজাইর‍্যা মন্ত্রির গল্প
By – Almaruf

(১)
সুনামগন্জ জেলা সদর থেকে তাহিরপুর সড়ক ধরে ঘন্টাখানেক চললে হাতের ডানপাশে বিলের বুক চিরে কাচা রাস্তা – সেই রাস্তা ধরে আরো ঘন্টা দুয়েক চলার পর পড়বে বিখ্যাত এক গ্রাম – চোরের গ্রাম । সেই গ্রামের অধিকাংশ লোক বংশানুক্রমে চৌর্যবৃত্তির সাথে জড়িত – কাজটাকে তারা পবিত্র এক শিল্পকর্মের পর্যায়ে নিয়ে গেছে । অধিকাংশ লোক পৈত্রিক এই পেশা নিয়ে রিতিমতো গর্বিত। আর হবেইনাবা কেন- এই পেশায় তাদের মতো সুনাম এই জেলায় কেউ দেখাতে পেরেছে ?

ভাটি এলাকার আর পাচটা আজপাড়াগায়ের মত চোরের গ্রামেও বর্ষায় রিতিমতো নিদানের সময় । ভাটির দেশে অভাব কাকে বলে সেটা শহুরে মানুষকে বলে বুঝানো রিতিমতো অসম্ভব ব্যপার, কিন্তু চোরের গ্রামের লোক সেই ঘোর নিদানের দিনেও নিজেদের গ্রামে কখনও চুরি করবেনা – এ এক অলিখিত নিয়ম । কেউ করলে তাকে জুতোপেটা করিয়ে গ্রাম ছাড়া করা হয় । চোরের গ্রামের লোক এই একটা ব্যপারে বড়ই কড়া – নিদারুণ অভাবের তাড়নায় যদিও প্রতিবছরই এরকম ঘটনা দুই একটা ঘটে, কিন্তু ক্ষমা তাদের কখনই মেলেনা ।

আশপাশের গ্রামের মুটোমুটি অবস্থাসম্পন্ন গেরস্তেরা বাড়ির উপরের দিকে পাকা করুক না করুক ভিটে থেকে নিচের দিকে শক্ত গাথুনির দেয়াল দেয় । তাও সবসময় যে রক্ষা মিলে তা না, চোরের গ্রামের চোরেদের সাথে স্বগ্রামের চোরদের উৎপাতে মাঝে মাঝে অনেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসতেও বাধ্য হয় । চোরের গ্রামের মেয়েদের বাইরের কোন ভদ্রলোকের সন্তান বিয়েও করেনা – তাতে নাকি জাত যায় । চোরের বংশের মেয়েরা নাইওর যাবার বেলায় বাড়ি থেকে হাড়ি-পাতিল ঘটি বাটিসহ নানান জিনিস পত্র হাওয়া করে নিয়ে যায় । এরপর আছে ছেলেমেয়ের চিন্তা – এরাও যদি মায়ের সেই দোষ পায় তাহলে সমাজে মুখ রক্ষা হবে ? তাই বলে সবাই যে সারাজীবন চুরি করে যায় তাও ঠিক না – অনেকে পড়ালেখা করে বাপ-দাদার মুখে চুনকালি মেখে দিয়ে শহরে চলে যায় । অনেকে ভাগ্যের অন্বেষনে পাড়ি জমায় বিদেশে ।

দাওয়ায় বসে বসে মতি মিয়া তাই ভাবে – তারও এক ছেলে ছিলো, জেলা সদরে এক হুজুরের বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে কিভাবে যেন ধরা পড়ে যায়। মতি বড়ই শরমিন্দা হইছিলো সেইদিন। চোর গ্রামের সেরা চোর মতি মিয়ার ছেলে কাজে গিয়া প্রথম দিনই ধরা খায়? এইটা বড়ই বেইজ্জতইর ব্যপার। আবার সেই হুজুরে আবার কিনা তার ছেলেরে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয় – সেইটা যে কেমনে ঘটলো মতি আজও বুঝতে পারেনা । এরপর ছেলেয় আর কোনদিন বুড়া বাপের দিকে ফিরেও তাকায় নাই । মতি মিয়া মনে মনে “হারামির পুলা” গালি দিতে দিতে তেল মাখায় মন দেয় । আজকে লষ্করপুরে একখান ক্ষেপ আছে। বেইল হয়া গেছে মেলা – আর দেরি করা যাইতো না ।

(২)

“কাজে” যাওয়ার সময় মতি সুবল সেনের বাড়ির সামনে থমকে দাড়ায় । চোরের গ্রামের নামিদামি চোর সুবল সেন । গেলোবার ইলেকশানে তার মেয়ের জামাই নাকি মিনিষ্টার হয়েছিলো , কিন্তু তখন কিছু শোনা যায় নাই, সুবল সেন জিনিষটা সভাব বসত চেপে যায় । নাইলে কি আর মানুষের ভিড় সামাল দেওয়া যেতো ?

গেল মাসে সুবল সেনের সেই জামাই নাকি টাকার বস্তাসহ ধরা খেয়ে যায়- সেই থেকে সুবল সেন আর তার জামাইর বড় নামডাক চোরের গ্রামে । প্রতিদিন গ্রামের অকর্ম মুরব্বিরা সুবল সেনের উঠানে বসে দিনের বেলা আড্ডা জমায় । সুবল সেনের নাতি নাত্নি তাদের চা-পান হুক্কা-তামুক এগিয়ে দেয় । সুবল ঘরের ভেতর বসে বসে বিড়ি টানে – বেশি একটা দাওয়ায় আসেনা – ইদানিং সে তার সদ্য পাওয়া ইজ্জতের ব্যাপারে খুবই সচেতন। এই জামাই যখন ছোটখাটো চুরি করতো তখন তো তারে সবাই অনেক কথা শুনাইছে । “কি সুবল তোমার জামাই হুনি টাউনে পকেট মারে, এইটা তুমি কি করলা!” এহন বুঝ শুমুন্দির পুলারা ।

জামাই গর্বে সুবলের ছাতি এখন অনেকখানি উচু। সবার কথার উত্তর দেয়না – তিন কথা জিগ্গ্যেস করলে এক কথা কয়। গ্রামের লোকেরাও মেনে নেয়। যতই হোক এই সম্মান সুবলের পাওনা, থানার কনষ্টেবল পর্যন্ত এখন বাজারে সুবলের সাথে বসে চা খায় । চোরের গ্রামের জন্য এইটাও কি কম পাওনা।

মতি মিয়া ভাবে – খইসলত যায়না ধুলে আর ইজ্জত যায়না মলে। এত্তোবড় মেনেষ্টারের শশুর হইয়াও গেলো হাপ্তায় রমেশেরে নিয়া জামতলিতে চুরি করতে গিয়া খাইলো ধরা। আচানক কারবার, পরের দিনই আবার পুলিশের হাত থেকে ছাড়াও পায়া যায়, সাথের রমেশ আইজ পর্যন্ত থানায় আটক । মতি মিয়া বুঝতে পারে এখন – জামাই মেনেষ্টার হলি কতো লাভ । কিন্তুক সুবল কি কয়া সয়া রমেশেরে ছাড়ায়া নিয়া আসতি পারতোনা ? ষাটোর্ধ মতি মিয়া বিড়বিড় কইরা কারে যানি গালি দেয়- বোঝা যায়না ।

(৩)

ইদানিং চোরের গ্রামের মেয়েদেরও বিয়ের বাজারে ভাও বাড়ছে – অনেক বড় বড় ঘরের লোকেরা চোরের গ্রামে আত্মিয়তা করতে আসতেছে । রিতিমতো ডাকে তোলে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছে চোর বংশের লোকেরা । চোরের গ্রামের ইজ্জত তরতর করে বাড়ে । মতি বুঝতে পারে – সবই সুবল সেনের জামাইয়ের কল্যাণে । হবিনা কেন, যেই চোরের গ্রামের মাইয়্যাগুলা বছরের পর বছর আবিয়াত্তা বইসা থাকতো ঘরে – তাগো মধ্যে সুবলের ঘরেই যে এরকম একটা মাইয়া ছিলো কে জানতো । সুবলের কপাল দেইখ্যা মতি মিয়ার হিংসা হয় – বিড়বিড় কইরা এবার মেনেষ্টারেরে গালি দেয় , সেইতো মেনেষ্টার হলি – দশটা বছর আগে হলি তো আমার ময়নার একখান জব্বর সম্মুন্ধ করতাম । আহারে মাইয়াটারে আমার মাইর‍্যাই ফালাইলো । ময়নার লাশটাও পর্যন্ত জামাই শাশুরি গুম কইরা দিছিলো । বয়সের ভারে কুজো মতি মিয়া সুবলের দাওয়ায় বসে ।

জামাই থাকেন ঢাকায় – তিনি তো আর তাদের মতো ছোটলোক না, গ্রাম গন্জের বাতাস তার শরিরের জন্য নাকি ভালো না। তার খবর সব পাওয়া যায় কালু শেখের কাছে । এই গ্রামে কালু শেখ একমাত্র শিক্ষিত লোক- পাচ কেলাস পাশ । বাজার দিনে কালু শেখ পোষ্টাপিশের বেন্চে বসে পেপার পড়ে । সবাই তারে খুবই মান্যগণ্য করে এই জন্য ।

কালু শেখে বলে যায় – জামাই নাকি ম্যানেজার রাখছে, বস্তা ভইরা লোকে টেকা দিয়া যায় – হিসাব রাখতি হয়না ? কালু শেখের সাথে সবাই মাথা ঝাকায়, তাতো ঠিকই, মেনেষ্টারি কি সোজা কথা নাকি? বড়ই মুশকিল কাম।

সাও পেয়ে কালুর গলা উচু হয় । হেনতেন কথা না মিয়া, জামাইর ফটো দেখছি পেপারে। পেতাকা লাগাইন্যা গাড়ি নিয়া জামাই পেরেধানমন্তির সাথে দেহা করতি যায় । কি জানি বড় একখান দাও মারছে জামাই, তাইনরে নাকি মেডেল দিছে সরকার । হেনতেন কতা না বুঝলা, হেনতেন কতা না । কালুর সাথে সাথে বাকি সবাই জামাইর কর্মতৎপরতায় অতিব সন্তুষ্ট হয়ে মাথা নাড়ে।

পেছন থাইক্যা জমির পাগলা জিগায় – পেরেধানমন্তি কি গো কালু মিয়া ? কালু খুব বিরক্ত হয়া জমিরের দিকে চায় – তুই হেইডা দিয়া কি করবিরে হারামির পুলা ? তোর কি হেই শিক্ষা আছে নি ? সবাই গোগ্রাসে কালু শেখের কথা শুনছিলো – আচানক বাধায় অত্যান্ত বিরক্ত হয় ।

কালু শেখ খুব ভাব নিয়া লুন্গির খুট থকে বিড়ি বের করে সময় নিয়া ধরায়, সে বুঝতে পারে সবাই তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। এই সভার কেন্দ্রবিন্দুটা এখন সেই – সময়টা সে খুব তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে । বিড়িতে একটা সুখ টান দিয়া আস্তে আস্তে আবার কথা শুরু করে ।

সব কামেই উস্তাদ লাগে মিয়ারা – বিদ্যা বড় ধন – উস্তাদ ছাড়া কি আর কাম শেখন যায় ? আমাগো জামাইর উস্তাদ হইলনে গিয়া এই পেরেধানমন্তি । উনি আবার জামাইরে খুবই পেয়ার করেন, কাইলকা দেখলাম উনারে নাকি উস্তাদে আজাইর‍্যা মনতিরি বানাইছে, কোন কাম না, খালি এসুর নিচে বয়া বয়া পেরেধানমন্তির হিসাব নিকাষ করার কাম, হেই এসু নাকি কারেন্টে চলে, খালি ঠান্ডা বাতাস দেয় । বড়ই আরামের কামরে মিয়ারা – বড়ই আরামের কাম ।

এসুর বাতাস খাইতে কিরম লাগবে চিন্তা করতে করতে নিঃস্ব মতি মিয়া দিবাস্বপ্ন দেখে – ছেলে তার পেরেধানমনতিরির গদ্দির উরপে বইসা বইসা পয়সা গুনে – একশ টাহার একটা বান্ডিল দেহায়া কয়, নেও বাজান, আইজকা বাজার থন গোস্ত আনবা আর মায়েরে কইয়ো টাহাগুলা যেন সামলাই রাহে । আমি নিমতলি যাই – ইলেকশনের টাইম- ইসপিশাল একখান কাম আছে । মতি মিয়া বড় খুশি হয়, ছেলে তার অনেক বড় কামলা হইছে। মেনেষ্টার মানে কি না বুঝলেও বুঝতে পারে হেই কামের লগে তার বাপ দাদার কামের মিল আছে, আশা করে তার ছেলেও মেনেষ্টার হবে । স্বপ্নে ছেলের মুখটা বড় সুন্দর লাগে, খালি চুউখ দুইটা তার বাপের লাহান। চোর বংশের নাকি চউক্কে পরিচয় ।

হটাৎ কালু শেখের জোর গলায় তার দিবাস্বপ্ন ভাংগে । আড়মোড়া ভেংগে মতি মিয়া উঠে দাড়ায় – মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করে। আমার পোলাটারে অনেক বড় মেনেষ্টার কইরা দে আল্লা, পোলায় যেন বাপ দাদার কামটার ইজ্জত রাখতি পারে।

>> পুনশ্চঃ  গল্পের পটভুমি নিতান্তই কাল্পনিক, বাস্তবের সাথে মিল পাওয়া গেলে তার দ্বায়-দ্বায়িত্ব লেখকের নয়। সুনামগন্জ বা তাহিরপুর এলাকায় এইরকম কোন গ্রামের সন্ধানও লেখকের জানা নাই।