মানবতা মুছে ফেলো টিস্যুতে!

By: Aman Abduhu

‘একাত্তর ইস্যুতে/ মানবতা মুছে ফেলো টয়লেট টিস্যুতে’ স্লোগানটা বহু বছর আগে ব্লগে প্রথম দেখেছিলাম। চমকে উঠেছিলাম। আজ এতো বছর পরও মনে পড়ে, প্রথমবার দেখে সেদিন কেমন থমকে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছিলো এর জের বহুদূর টানতে হবে বাংলাদেশকে। একটা গোষ্ঠীর চিন্তার প্রকাশ যদি এমন হয়, এবং তা সমাজের শিক্ষিত অংশের মাঝে সমাদৃতও হয়, তবে তার পরিণতি কারো জন্য ভালো হওয়ার কথা না। হয়ওনি। এরপরের বছরগুলোতে শাহবাগিদের প্রিয় সে স্লোগানটা বিভিন্ন উপলক্ষে বারবার, অসংখ্যবার মনে পড়েছে। আজ আবার মনে পড়লো বিহারী পল্লীর হত্যাকান্ডের ঘটনায়।

ঢাকার বিহারী পল্লীতে যুবলীগ নেতাদের নেতৃত্বে উম্মত্ত জনতা আগুনে পুড়িয়ে আর পুলিশ গুলি করে এগারো জন মানুষকে মেরেছে। বেশিরভাগ শিশু আর নারী। শবে বরাতের রাতে আতশবাজি জ্বালানোর মতো তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে। এবং তারপর বীর বাঙালী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উল্লাসে ফেটে পড়ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলায় জিতে আবার মুক্তিযুদ্ধ জয়ের মতো অর্বাচীন সে উল্লাস। সবার সে কি আনন্দ। নিজের অপরাধবোধ আর পশুবৃত্তিকে ঢেকে রাখার কি নিদারুণ চেষ্টা। বিহারী মারলে অসুবিধা নেই। বরং ভালো হয়েছে। এরা স্বাধীনতার শত্রুদের বংশ। এগুলোকে এভাবেই মারা দরকার!!

বাঙালীর এ আনন্দ-উল্লাস দেখে মনে পড়ে বইয়ে পড়া গহীন অরণ্যের আদিম নরখাদক জংলী গোষ্ঠীর উল্লাসের কথা। আগুনে পোড়ানো হচ্ছে কিছু নারী আর শিশুকে। তাদের চামড়া পুড়িয়ে আগুন আরো ভেতরে যাচ্ছে, জ্বালাচ্ছে। চুল পুড়ছে, হাত পুড়ছে, পা পুড়ছে। শ্মশানের পাশে যেমন গন্ধ পাওয়া যায়, সেই মাংসপোড়া গন্ধ ভাসে বাতাসে। আর তাদের চারপাশ ঘিরে ফেসবুকের জঙ্গলে উল্লাসে হৈ হৈ করে নাচছে, লাফাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আপ্লুত বাঙালীর দল। আদিম সেই উল্লাস, খাদ্য জুটছে তাদের প্রতিহিংসাপরায়ণ অন্ধ মনের।

একাত্তরের চেয়ে মানবতা অনেক বড় একটা বিষয়। আর কয়েক জেনারেশন পর একাত্তর স্রেফ অতীতের একটা ঘটনা হয়ে যাবে। কয়েকশ বছর পরে থাকবে বই এর পাতায়। কিন্তু পৃথিবীর শেষ মানুষটা বেঁচে থাকা পর্যন্ত মানবতা একটা দরকারী বিষয়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী একাত্তরে মানবতার তোয়াক্কা করেনি বলেই তারা এতো ঘৃণিত।

বিহারী পল্লীর এ ঘটনায় একাত্তর কোনভাবে প্রাসঙ্গিকই না। তারপরও তা টেনে এনে নাচানাচি করা বিকৃত মানসিকতা। যে বিকৃতি আজ বাংলাদেশে মহামারীর মতো। আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বুদ্ধিজীবি আর শাহবাগির দল সে বিকৃতিকে পুরো দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের বড় একটা অংশের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। হেডোনিস্টিক ভোগবাদি জীবন যাপনের পাশাপাশি এইধরণের খেলা বা খুনের ঘটনায় এরা দেশপ্রেমের দায়িত্ব পালনের তৃপ্তি পায়।

তাই গত কয়েকবছর ধরে যে অবিচার আর অমানবিকতা চলে আসছে, তাতে মানুষের আর বিকার হয় না। পুলিশ যাকে ইচ্ছা তাকে ধরে নির্বিকার খুন করে ফেলতে পারে, ছাদ থেকে ফেলে দিতে পারে, গুম করতে পারে, কোন বিচার নাই। ছাত্রলীগ যুবলীগও যা ইচ্ছা খুন ধর্ষন চালিয়ে যেতে পারে, কোন সমস্যা নাই। বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে কুপিয়ে মারা ছাত্রলীগ নেতা সবার সামনে উঁচু গলায় তার পরিবারকে জানিয়ে দেয়, সমস্যা হবে না কোন। গ্রেফতার টেফতার এগুলো ফরমালিটিজ। নারী শিশুদেরকে পুড়িয়ে মারার পর সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হাসিমুখে বলতে পারে, এটা নিছক দুর্ঘটনা। একই দিনে শেখ হাসিনার কথা বলার বিষয় হলো খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিষোদগার। বিহারী পল্লীতে না হয়ে এতজন মানুষ ক্যান্টনমেন্টে মারা গেলে হাসিনা দৌড়ে যেতো, তাদের পরিবারের ভরণপোষনের দায়িত্ব নেয়ার রেডিমেইড নাটকও মঞ্চস্থ হয়ে যেতো এতোক্ষণে।

সমসাময়িক বাংলাদেশে মানবতার এ দুর্দশা শুরু হয়েছিলো আঠাশে অক্টোবরে পল্টনে লগি-বৈঠার সেই ঘটনায়। যেদিন হাসিনার নির্দেশের ফলে মানুষকে আর মানুষের সম্মান দেয়া হয়নি। পশুর মতো পিটিয়ে মারা হয়েছে, প্রকাশ্য দিবালোকে। এবং তার কোন বিচার হয়নি। সে ঘটনার মানসিক প্রভাব ছিলো সুদূরপ্রসারী। আওয়ামী মাফিয়া লীগের লোকজন জেনে গেছে, তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। প্রফেশনাল দুবৃত্ত, চোর-ডাকাত, খুনী-ছিনতাইকারীরা বুঝে নিয়েছে, আওয়ামী লীগের সাথে থাকলে তাদের প্রফেশনাল কাজকর্মের কোন সমস্যা নাই। মীরপুরের ঘটনা এলাকার যুবকদের মারামারি হলেও, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছে যুবলীগ নেতা রানা, সেন্টু, শরিফুল। বাংলাদেশে এখন কোন ঘটনাই রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছাড়া ঘটে না।

কোন একজন মানুষও কি মনে করেন, এ ঘটনার কোন বিচার হবে? এভাবে নারী আর শিশুদেরকে পুড়িয়ে মারলো যারা, তারা শাস্তি পাবে?

বরং আঠাশে অক্টোবরের সে ঘটনা থেকে শুরু করে বড় বড় ঘটনাগুলোর ন্যায়বিচার না হলে, আজকের বিহারী পল্লীতে ঘটে যাওয়া এই ধরণের গণউন্মাদনার মতো পশুবৃত্তি কখনোই বন্ধ হবে না। কাল বিহারী পল্লীতে এগারোজন মরলো। কয়েকবছর আগে শবে বরাতে আমিনবাজারে ছয় ছাত্র মারা গিয়েছিলো। কয়েক বছর পরে অবশ্যই আমি আপনি মারা যাবো। আগুনে পুড়তে পুড়তে, অথবা মব হিস্টিরিয়ার গণপিটুনিতে দুমড়ে মুচড়ে হোক, কিংবা আওয়ামী দুবৃত্তদের উদ্ভাবিত নতুন কোন উপায়ে। আর গণভবনে বসে রক্তপিপাসু ডাইনী হাসিনা এসব মৃত্যুর খবর পেয়ে সবার সামনে চোখের পানি দেখানোর আগে জিন্দেগী জিন্দেগী গানের তালে একটু নেচে নেবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা!! হাহ!

ফুটনোটঃ একাত্তর নিয়ে আমরা যেই সরল গল্প-কাহিনী জানি, তার বাইরেও কিছু অলটারনেটিভ কথা আছে। আজকের বাঙালীদের এ উল্লাস দেখে মনে হয়, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েনের লেখা ‘একাত্তরের স্মৃতি’ বইয়ে যুদ্ধের আগে বিহারীদের উপর গণহত্যা চালানোর যে ঘটনাগুলো আছে, তা সত্যও হতে পারে। আমাদের বাবা-দাদারাই তো ছিলেন।

বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র: জিয়াউর রহমান থেকে তারেক রহমান

এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান

Zia-01

স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ চার দশক পার হয়ে আরো দুই বছর অতিক্রম করেছে। কর্মঠ জনশক্তি আর উর্বর মাটিসহ অফুরান প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে এই সময়ে আমাদের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া বা মালয়েশিয়ার মতো একটি মধ্যম উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত হতে পারত। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বকে সুগভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংস করে বা সরিয়ে দিয়ে বারবার বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের উৎস দেশের বাইরে হলেও কুশীলবরা দেশের ভেতরেরই মানুষ। তারা জানে, একটি দেশের অগ্রগতিকে থামাতে হলে তাকে নেতৃত্বশূন্য করতে হয়। সে কারণে বারবারই তারা দেশপ্রেমিক ও জনপ্রিয় গতিশীল নেতৃত্বকে সরাতে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভেদ তৈরি করেছে, নেতাদের চরিত্রে কালিমা লেপন করেছে, তারপর নেতাদের হয় হত্যা, নয় পঙ্গু করে নির্বাসনে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করেছে।

বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতি খুব খারাপ সময় অতিক্রম করছে। সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে বাদ দেবার পর দশেরে ৮০% জনগনের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে গত ৫ জানুয়ারী একটি প্রহসনের জাতীয় নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ অবধৈভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। আর সেই ক্ষমতা নিরংকুশ করতে একের পর এক বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম-খুন করে বাংলাদেশকে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করানো হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর দমন নির্যাতনের মাত্রা এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো পর্যন্ত বাংলাদেশেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রেখেছে। প্রশাসন হতে শুরু করে শিক্ষা, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে পরীক্ষিত সরকারি দলের লোক না হলে তাকে নিষ্কৃয় করে রাখা হয়েছে। একটি দেশের অর্ধেকের ও বেশি মানুষকে নিষ্কৃয় করে রেখে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব হয় না।

এই বিশৃঙ্খলার সুযোগে দুর্নীতিবাজ আমলা, রক্তচোষা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অসাধু ব্যবসায়ী আর দাগী অপরাধীরা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। শেয়ারবাজারে  গিয়ে  সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকির হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ, এমএলএম ব্যবসার ফাঁদে পড়ে পথের ফকির হয়েছেন আরো কয়েক লক্ষ বিনিয়োগকারী। সামান্য মুদী দোকানদারও ব্যাংক জালিয়াতী করে লুট করেছে জনগণের চার হাজার কোটি টাকা। কুইক রেন্টালের নামে জনগণের সম্পদ লুট করার কারণে বিদ্যুতের মূল্য ছয়গুণ বৃদ্ধি করে মানুষের জীবনযাত্রাকে করে তোলা হয়েছে কঠিন থেকে কঠিনতর। তেল-গ্যাসের দাম বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে গেছে বাসভাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। দেশের মূল্যবান জ্বালানী সম্পদ লুণ্ঠনের ওপর প্রতিবেদন তৈরী করতে গিয়ে খুন হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী আর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গুম হয়েছেন জননেতা ইলিয়াস আলী। এমন গুম আর খুনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে; নদী-খাল-বিলে এখন পঁচা লাশের মিছিল।

এইসব সমস্যা নিরসনে দেশে একজন গতিশীল জাতিয়তাবাদী নেতার প্রয়োজন। যুগে যুগে কোন দেশের রাজনৈতিক সংকট হতে উত্তরণের জন্য গতিশীল জাতীয়তাবাদী নেতারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। এমন উদাহরণ বাংলাদেশেও রয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক নেতাদের অনুপস্থিতিতে তৎকালীন মেজর জিয়া থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলো, সেই স্বপ্নকে ভেংগে ধুলিষ্যাৎ করে দেয় বাংলাদেশের প্রথম সরকার। তারা স্বাধীন দেশে আবারো নিপীড়ন নিষ্পেষনের স্টিম রোলার চালাতে শুরু করে। মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে হত্যা এবং গনতন্ত্রকে হত্যা করে এক দলীয় শাসন কায়েম করে দেশের মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে তোলে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতাসীন দলের উপদলীয় কোন্দলে সেনাবাহিনীর মধ্যমসারীর কর্মকর্তাদের অভুত্থানে শেখ মুজিব নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন তৎকালিন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ।

পরবর্তী তিন মাসে একাধিক অভুত্থান ও পাল্টা অভুত্থানের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সেনাবাহিনী হতে জোর করে অবসরে পাঠানো মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সিপাহী-জনতার সম্মিলিত শক্তি দেশ বাঁচানোর জন্য নেতা হিসেবে মনোনীত করেন। তিনি চাইলে তখনই প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে থাকেন। রাষ্ট্রপতি সায়েম বার্ধক্যজনিত কারণে অবসরে গেলে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জেড-ফোর্স ও এক নম্বর সেক্টরের বীর নেতা আবারো নিজ দেশের নেতৃত্ব দিলেন এক দুর্দান্ত ও চৌকষ গতিতে। রাষ্ট্রপতি হবার পর জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের মানুষের জন্য সর্ব প্রথমে একটি অভিন্ন জাতীয়তা নির্ধারণের প্রয়োজন অনুভব করেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের মতের ও ধর্মের নানা জাতিগোষ্ঠি বাস করে। তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার ধরণ একে অপরের থেকে ভিন্ন। তাই শহীদ জিয়া মনে করতেন যে, ভাষা বা সংস্কৃতির ভিত্তিতে নয়, বরং ভূখণ্ডের ভিত্তিতেই জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করা উচিত। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সকল জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের ঐক্য ও সংহতির পথ তৈরী করেন। এই পদক্ষেপই ছিল দেশের সকল মানুষকে একসাথে ঐক্যবদ্ধ করার প্রথম পদক্ষেপ।

শহীদ জিয়া বাংলাদেশে পুনরায় বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করেন এবং দেশের গুণীজনদের সম্মাননা প্রদানের জন্য ‘একুশে পদক’ প্রবর্তন করেন। অত্যন্ত্র দ্রুত গতিতে তিনি সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন এবং পুলিশ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসেন। মানুষের মত প্রকাশের সুবিধার্থে ফিরিয়ে দিতে তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন।

মাত্র চার বছরের ক্ষমতাকালে তিনি দেশে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন নিয়ে আসেন; পূর্বে আলোচিত পদক্ষেপের বাইরে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান; জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি; বিচার বিভাগের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া; দেশে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব; সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুন:খনন; গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লক্ষ মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দান; প্রায় ৩ হাজার মাইল রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার করা; ২৭ হাজার ৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার প্রভূত উন্নতির পাশাপাশি জন্ম নিয়ন্ত্রণে অবিশ্বাস্য সাফল্য অর্জন; নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ এবং সরকারি কল-কারখানায় তিনটি শিফট চালু করে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি করা; সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে খাদ্য রপ্তানীর পর্যায়ে উন্নীতকরণ; যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়  সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুব ও নারী সমাজকে সম্পৃক্তকরণ; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্জিত সাফল্যের মধ্যে রয়েছে- জাপানের মত শক্তিশালী দেশকে নির্বাচনে পরাজিত করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্যপদ লাভ; তিন সদস্যবিশিষ্ট আল-কুদস কমিটিতে সদস্যপদ লাভ; দক্ষিণ এশিয়ায় একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা হিসেবে সার্ক প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক উন্নতির মাধ্যমে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানীর পথ উন্মুক্ত করা। অনবদ্য ভাষায় নিজের দেশের স্বার্থকে যৌক্তিকভাবে বিদেশে উপস্থাপনের উদাহরণ হিসেবে সৌদি বাদশাহ খালিদ বিন আব্দুল আজিজ এর সাথে তার প্রথম সাক্ষাতের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে।
বাদশাহর সাথে কুশল বিনিময়ের পরপরই জিয়াউর রহমান বললেন,
–    তোমার দেশে যা নেই, আমার দেশে তা আছে, আবার আমার দেশে যা নেই, তা তোমার দেশে আছে।
সউদি বাদশাহ থতমত খেলেন। গরীব একটা দেশের এই কালো নাতিদীর্ঘ প্রেসিডেন্ট বলে কি!
জিয়াউর রহমান আবারো বললেন,
–    আমার দেশে অনেক পরিশ্রমী মানুষ আছে, তারা অনেক কাজ করতে পারে। আর তোমার দেশে যেমন কাজ আছে, তেমনি টাকাও আছে।

একইভাবে আর্জি নিয়ে গেলেন মরুভূমির প্রায় সবগুলো দেশে। বাংলাদেশের মূল্যবান জনশক্তি প্রথমবারের মত রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদেশে রপ্তানী শুরু হলো। বিদেশে প্রশিক্ষিত শ্রমিকের বেতন বেশি হওয়ার কারণে তিনি দেশ্যব্যাপী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে বাংলাদেশের বেকার যুবকদের দ্রুত  প্রশিক্ষিত করার ব্যবস্থা করলেন। প্রায় শূন্য থেকে শুরু করে আজ সউদি আরবে তিরিশ লাখ বাংলাদেশী, সংযুক্ত আরব-আমিরাতে এগারো লাখ, কুয়েতে আড়াই লাখ, ওমানে সোয়া দুই লাখ, কাতারে প্রায় পৌনে দুই লাখ আর বাহরাইনে প্রায় এক লাখ মানুষ বাংলাদেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জন করছেন। আজ সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমিকদের যে শ্রম বাজার তৈরী হয়েছে তার একক কৃতিত্ব শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের।

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে সরকারি হিসেবে ছাব্বিশ হাজার এবং বেসরকারি হিসেবে দশ লক্ষ মানুষের জীবনহানী হয়েছিলো যখন দেশের জনসংখ্যা ছিলো মাত্র সাড়ে সাত কোটি। সেই সময় কেউ কি ভেবেছিলেন যে, এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মধ্যেই ষোল কোটি মানুষ খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারবেন? শহীদ জিয়ার সবুজ বিপ্লবের কারণেই আজ বাংলাদেশের মানুষ কোনরূপ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি না হয়ে বেঁচে আছেন।

বলা বাহুল্য, যে গতিতে তিনি বাংলাদেশে উন্নয়নের জোয়ার এনেছিলেন তা বাংলাদেশের শত্রুদের পছন্দ হয়নি। সাবেক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা অশোক রায়নার লেখা ‘ইনসাইড র’ বই এবং কোলকাতা হতে প্রকাশিত ‘উইকলি সানডে’ পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ‘র’ প্রধান কাও এর নেতৃত্বে জেনারেল জিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোরারাজি দেশাই এই পরিকল্পনা স্থগিত করার আদেশ দেন, যদিও ততদিনে পরিকল্পনা অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় আসলে ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা করা হয়।

শহীদ জিয়ার সেই সকল কর্মসূচী এবং জাতীয় ঐক্য এর পরের সরকারগুলো মোটামুটি রক্ষা করে চললেও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সর্ব প্রথম বিরোধী দল ও বিরোধী দলের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী বা বিরোধীদলের সমর্থক সন্দেহে দেশের একটি বিশাল জনশক্তিকে দেশ গঠনের কাজ থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে জাতি বিভক্তিকরণ প্রক্রিয়ায় দেশ শাসনের সূত্রপাত করে। বলা বাহুল্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ/বিপক্ষ হিসেবে এই বিভাজন করা হলেও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চিহ্নিত যুদ্ধপরাধী ফায়জুল হককে তারা মন্ত্রী করে। সুতরাং একথা নিশ্চিত যে, এই বিভাজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে/বিপক্ষে করার অযুহাত দেয়া হলেও মূলত: এই বিভেদ তৈরী করা হয়েছিলো আওয়ামী লীগ ও তার বিরোধীদের মধ্যে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর এই বিভেদ এখন চরম আকার ধারণ করেছে।

একটি দেশের নাগরিকরা এভাবে রাজনৈতিক বিভক্তির শিকার হলে কখনোই সেই দেশে উন্নয়ন আসতে পারে না বরং দেশি-বিদেশি অপশক্তি এই সুযোগে দেশের ক্ষতি করার কাজে লিপ্ত হয়। বিগত দুই যুগের রাজনৈতিক চর্চা এবং জাতীয় নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহনের ধরণ দেখে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে বাংলাদেশের জনগণ এখনো প্রধান দুই দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই থাকতে আগ্রহী। রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে এই দুই দলের বাইরে নতুন বিকল্প শক্তি হিসেবে জনগণের মন জয় করার মত কোন ক্যারিশমেটিক নেতাও নেই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের একটি বিরাট অংশের সমর্থন থাকলেও অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক সত্যি হচ্ছে, এই দলের নেতার নেতৃত্বে গতিশীলতা এবং প্রাজ্ঞতার কোনটাই নেই। রাজনৈতিক পরিবেশে উনার অরাজনৈতিক বক্তব্য এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে যেমন নষ্ট করেছে ঠিক তেমনি কুটনৈতিক পর্যায়ে অকুটনৈতিক আচরণের কারণে বাংলাদেশের সাথে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। প্রশাসনিক অদক্ষতা এবং দুর্নীতি দমনে ব্যর্থতার কারণে দেশের জনগণ যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তেমনি বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের মূল্যবান শ্রমবাজার হাতছাড়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে অপ্রীতিকর বাক্য ও পত্র বিনিময় তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

আওয়ামী লীগের মধ্যে পরবর্তী নেতৃত্বেও তেমন কোন প্রাজ্ঞ ও গতিশীল নেতা দেখা যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন এবং কোন কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংযুক্ত ছিলেন। দলের কোন পর্যায়ে সদস্যপদ না থাকা অবস্থায় উনার এই কর্মকাণ্ড খোদ দলের নেতাদের মধ্যেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর পূত্র জনাব সজিব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের সদস্য নন। তবে তাঁদেরকে বিভিন্ন বিদেশী অতিথির আগমনে এবং বিদেশে সরকারি সফরের সময় রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে অবস্থান করতে দেখা যায়। এমনকি ২০১২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাম্প্রতিক অধিবেশনে এই দুই ভাই-বোনকে প্রধানমন্ত্রী ও কুটনীতিকদের আসনে বসে থাকতে দেখা যায়, যা সমগ্র বিশ্বে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। উল্লেখ্য যে এই তিন সম্ভাব্য নেতার কেউই বাংলাদেশে অবস্থান করেন না এবং বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের সাথে তাঁদের কোন যোগাযোগও নেই।

অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র জনাব তারেক রহমান উত্তরাধিসূত্রে নয় বরং পরিবারে বিদ্যমান রাজনীতির পরিবেশের কারণেই নিজের ব্রত হিসেবে রাজনীতিকে বেছে নিয়েছেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি বগুড়া জেলায় বিএনপির নির্বাচন প্রচারনা অভিযানে সংযুক্তির মাধ্যমে দলীয় রাজনীতিতে সরাসরি সংযুক্ত হন। এরপর তিনি বগুড়া বিএনপির সদস্যপদ গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বগুড়া জেলায় সংগঠনের ভিত্তি দৃঢ় করেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০২ সালে জনাব তারেক রহমানকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। দলের উর্দ্ধতন পর্যায়ে নিয়োগ লাভের পর পরই তিনি দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সাথে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। মূল সংগঠনসহ সহযোগী সংগঠন যেমন জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কর্তৃক আয়োজিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে জনাব তারেক রহমান কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন এবং মাঠপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ও মতামত গ্রহণ করেন।

এই সভাগুলোতে তিনি মূলত দলের গঠনতন্ত্র, উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে দীর্ঘ মতবিনিময় করতেন। বিস্তারিত মতবিনিময়ের বিষয়বস্তুর মাঝে আরও থাকতো দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে দলের করণীয় ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন- অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে সরকারী দল হিসেবে বিএনপির করণীয় প্রসঙ্গে আলোচনা। পরবর্তীতে দেখা গেছে যে এই জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মনোবল অসামান্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এই কারণেই জনাব তারেক রহমান শুধুমাত্র দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিতি থেকে মুক্ত হয়ে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বাবা-মার পরিচয়ে পরিচিত না হয়ে নিজের স্বতন্ত্র ইমেজ তৈরীর জন্য ২০০২ সালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক জনসভায় তিনি ঘোষণা করেন, “আমি তারেক জিয়া হিসেবে পরিচিত হতে চাই না। আমি তারেক রহমান হিসেবে পরিচিত হতে চাই।”

Zia griculture

কৃষি প্রধান অর্থনীতি এবং গ্রামপ্রধান দেশে যে কোন বিপ্লবের সূচনা করতে হয় গ্রাম থেকে। ১৯৪১ সালে চেয়ারম্যান মাও সেতুং চীনে এভাবেই বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন যা বিশাল লংমার্চ এ রূপ নিয়ে শেষ হয়েছিলো ১৯৪৯ সালে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানও গ্রাম থেকেই তাঁর রাজনীতি শুরু করেছিলেন। খাল খনন ও সবুজ বিপ্লবের কাজে তিনি প্রায় প্রতিদিনই ঘুরে বেড়িয়েছেন গ্রামেগঞ্জে। তারই সুযোগ্য সন্তান হিসেবে তারেক রহমানও একই পথ বেছে নিয়েছিলেন। নব্বই এর গণ অভ্যুত্থানের পর থেকে একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিলো যে সরকার রক্ষা করতে হলে ঢাকা দখল করতে হবে। তাই তখন বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকা- ঢাকাকেন্দ্রীক ছিল।

তারেক রহমান যেন হঠাৎ করেই বাঁধ ভেঙে দিয়ে জোয়ারের সৃষ্টি করলেন। ‘গ্রাম মার্চ’ কর্মসূচীর মাধ্যমে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগঠনের কাজ করতে শুরু করলেন। দরিদ্র কৃষকের জন্য বিনামূল্যে ‘কমল বীজ’ আর দরীদ্র নারীদের জন্য হাঁস-মুরগী বিতরণ করে গ্রামের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে অবস্থান তৈরী করলেন। মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এর পক্ষ হতে মেধাবৃত্তি এবং কম্পিউটার ও ল্যাপটপ প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। শীতের তীব্রতায় কষ্ট পাওয়া গরীব মানুষের পশে তিনি প্রতিবছর শীতবস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেই সময় থেকেই বিএনপির অসংখ্য কর্মী তারেক রহমানের মধ্যে দেখেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবি।

Zia-02

বর্তমান সরকারি দল আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের সমূদ্রসীমা নির্ধারণের রায়কে ‘সমূদ্র বিজয়’ বর্ণনা করে নিজেদের কৃতিত্ব দাবী করছে। অথচ এই সমূদ্র সীমা হতে দেশের জনগণের উপকারের জন্য এখনো পর্যন্ত তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ২০০৩ সালেই এক টিভি সাক্ষাৎকারে জনাব তারেক রহমান বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বাঁধ দিয়ে পলি সংগ্রহ করে দেশের আয়তন বৃদ্ধির চিন্তা করেছেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের বনানীস্থ কার্যালয় থেকে ২০০৪ সালের শুরুর দিকে জনাব তারেক রহমান দলীয় যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ইন্টারনেট এবং ফোনের মাধ্যমে প্রায় ২ ঘণ্টা যাবৎ তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। যদিও সে সময় বাংলাদেশে তথাকথিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামে কোনো শ্লোগান ছিল না; তবে তথ্য-প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করে একটি আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কার্যকর পদক্ষেপ ছিল সেটাই প্রথম; সেটাই ছিল বাংলাদেশকে ই-গভর্নেন্সের আওতায় আনার বাস্তবমুখী উদ্যোগ। তিনি রাজনৈতিক উদারতার অকপট উদাহরণ তৈরী করেছেন টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে গিয়ে এবং সজিব ওয়াজেদ জয়কে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে।

জনাব তারেক রহমান বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়কে দলের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপির নির্বাচনী কর্মকাণ্ড, কৌশল নির্ধারণ, প্রচার-প্রচারণা সব কিছুই এই কার্যালয়ে বসে করা হয়েছে। দলীয় রাজনীতিতে স্বচ্ছতা আনতে এই কার্যালয়ে গড়ে তোলা হয়েছিলো দেশের প্রথম কোন রাজনৈতিক দলের কম্পিউটারাইজড ডাটাবেজ। দলীয় নেতা-কর্মীদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা এবং দেশব্যাপী দলের কার্যক্রমের বিস্তারিত এ্যাকশন প্ল্যান করা হতো এই কার্যালয় থেকেই।

এসব কারণে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিরোধী শক্তিগুলো উদীয়মান গতিশীল নেতা তারেক রহমান এবং তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক কার্যালয়কে জনসমক্ষে হেয় করার জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তারা এটা বুঝতে পেরেছিলো যে, তারেক রহমান অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিএনপির ভবিষ্যত নেতা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন অথচ তাঁর বিপরীতে দাঁড় করানোর মত কোন বিকল্প নেতা নেই। এই কারণেই জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তারা পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মিথ্যা বিষেদগার করে গেছে। কক্সবাজারে তিনি যে হোটেলে কর্মী সম্মেলন করেছেন, সেই হোটেলকে তাঁর হোটেল বলে প্রচার করা হয়েছে, অন্যের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তার মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে ২০০৮ সালে দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক নাইমুল ইসলাম লিখেছিলেন, “হাওয়া ভবনকে দুর্নীতির কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা এবং সেটা প্রতিষ্ঠিত করার একটি চেষ্টা ২০০১ সালের নির্বাচনের কিছুকাল পর থেকেই লক্ষ্য করা গেছে। হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্টদের ২০০১ সালের নির্বাচনে ভূমিকা এবং বিপুল সফলতা হাওয়া ভবনকে টার্গেট হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।”

২০০৭ সালের অবৈধ মঈন-ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানো হয় এবং পরিকল্পিত উপায়ে তাঁর উপর নির্যাতন করে তাঁকে পঙ্গু করে দেয়া হয়। কোন মামলাতেই তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির প্রমাণ না পাওয়ায় তিনি সবগুলো মামলায় জামিন লাভ করে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মূক্ত হন। জরুরী অবস্থা চলাকালীন সময়েও তাঁর মুক্তির দিনটিতে ঢাকা শহর কার্যত অচল হয়ে যায়। ঢাকা শহরের সকল মানুষের গন্তব্য সেদিন বিকেলে এক হয়ে গিয়েছিলো শাহবাগের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে; যেখানে তিনি তখন চিকিৎসাধীন ছিলেন। দীর্ঘ অপপ্রচার, নির্যাতন এবং মামলার পরও তাঁর জনপ্রিয়তা সামান্যতম হ্রাস না পাওয়ায়, আতঙ্কিত স্বৈরাচারীরা তাঁকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য এমনিতেও তার বিদেশে যাবার প্রয়োজন ছিলো। বাংলাদেশের রাজনীতি সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত এই নেতার অপেক্ষায় আছে।

যে, দেশে গুণীজনের কদর নেই, সে দেশে গুণীজন জন্মায় না। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর এই বাণীকে অবহেলা করে আমরা বারবার আমাদের দেশপ্রেমিক নেতাদের হত্যা করতে দিয়েছি, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে তাঁদের মরনোত্তর চরিত্রহানি করেছি এমন কি পাঠ্য পুস্তকে মিথ্যা ইতিহাস পর্যন্ত সংযোজন করেছি। আমরা আমাদের জাতীয় বীরদের অপমান করে নিজেরাই পশ্চাৎপদ ও পরমুখাপেক্ষী হয়ে আছি। মুক্তিকামী চেচেনদের নেতা যোখার দুদায়েভ এর মৃত্যুর পর চেচনিয়ার স্বাধীনতা অধরাই রয়ে গেছে। একজন ভাল নেতার অভাবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা তাঁদের ওপর চলা অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞকে বিশ্বের কাছে পৌছে দিতে পারছে না। আমরা সৌভাগ্যবান যে জিয়াউর রহমানের মত নেতা আমাদের দেশকে অগ্রগতির পথে নিয়ে এসেছিলেন এবং তারেক রহমানের মত নেতা আমাদের দেশকে ‘ইমার্জিং টাইগার’ পরিচিতি দিয়ে উন্নয়নের রানওয়েতে নিয়ে এসেছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে আমাদের উন্নয়নের বিমান উড্ডীন হয়নি। এখন আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এইসব ষড়যন্ত্র ও ষড়যন্ত্রের হোতাদের মোকাবেলা করে দেশে ও দশের উন্নয়নের জন্য তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণাকারীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।

Major Zia’s war

A few years ago, I noted how the typical discourse on Ziaur Rahman is full of lies. An (Awami League supporting) old friend asked me to write a positive account of Zia’s politics: instead of rebutting X, write about Y, he told me. This (painfully slowly progressing) series is an attempt at that. Meanwhile, a regular reader asked me to write about Zia’s role during the war — not to refute the preposterous propaganda about him being a Pakistani spy, but about what Zia actually did after the radio declarations of March.

Interestingly, not much is readily available on the matter. While it is well known that Major Abu Taher or Major Khaled Mosharraf were injured in the battles of Kamalpur and Kasba respectively, even the typical BNP supporter wouldn’t be able to name a battle Zia was associated with. According to Muyeedul Hassan’s Muldhara ’71 (among other sources), Zia wanted Osmani to establish a war council. I have also heard from a number of freedom fighters that Zia worked hard to build a regular army. But these weren’t exactly the stuff of ‘battlefield valor’.

This well-researched post by the nationalist blogger দাসত্ব shows that Zia was actually quite intricately involved with a number of battles in 1971. I highlight some key points from the post over the fold. All the photos are from his post as well.

Continue Reading

ওরা মুক্তিযোদ্ধা নয়, ট্রেইটর!

মাহবুব মিঠু।।

মতিউর রহমান সম্পাদিত প্রথম আলো এবং গোলাম সারওয়ারের সমকাল পত্রিকায় মোদির রাজনৈতিক উত্থান বর্ণনা প্রসঙ্গে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছে। মাঝখানে দুইটা দিন অতিবাহিত হলেও এখনো পত্রিকা অফিস থেকে কোন ব্যাখ্যা না পাওয়াতে আমরা ধরে নিতে পারি এটা কোন অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসকে অমর্যাদার জন্যই তাদের এই অপচেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না আসাতে ধরে নেয়া যায় সরকারের অবস্থানও একই। কিছুদিন আগে ভারতের একটা ছবিতেও ইতিহাস বিকৃতির এই অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে তারা ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়। এতোকিছুর পরেও প্রথম আলো এবং সমকালের এই ইতিহাস বিকৃতি নিছক ভুল বলা হলে নিজের বিবেচনা এবং বিচার শক্তিকে অবজ্ঞা করা হবে।

 

ইতিহাস বিকৃতির পিছনে তাদের উদ্দেশ্য কি সেটা একদিন প্রকাশিত হবেই। তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ আখ্যা দিয়ে একাধারে ত্রিশ লক্ষ শহীদদের আত্নাকে আহত করেছে। ৭১ সালের যুদ্ধ যদি ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হয়, তবে বাঙলাদেশী যারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল তাদের অবস্থান কোন পক্ষে ছিল? যেহেতু তারা পাক সেনাদের বিরুদ্ধে লড়েছে, তাই অবশ্যই তাদের অবস্থান ভারতের পক্ষে। অর্থাৎ আমরা যাদের মুক্তিযোদ্ধা বলি তারা প্রথম আলো এবং সমকালের ভাষায় মুক্তিযোদ্ধা নয়, বরং ভারতের সহযোগী শক্তি হিসেবে নিজ দেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিল। তখন বাঙলাদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত থাকায় যেহেতু তারা ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতের পক্ষে অস্ত্র ধরেছিল, তাই তারা মুক্তিযোদ্ধা নয়, বরং ট্রেইটর ছিল।

এই স্পর্ধা কোথায় পেল প্রথম আলো এবং সমকাল পত্রিকা?

 

তাদের ইতিহাস বিকৃতির আরেকটি ব্যাখ্যা করা যায়। আমাদের কাছে যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরম শ্রদ্ধার ব্যাক্তি, তারা মূলতঃ তখনকার নিজ দেশের সৈনিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল শত্রুরাষ্ট্র (পাকিস্তানের শত্রু রাষ্ট্র যেহেতু ভারত ছিল)ভারতের পক্ষ হয়ে| তারই বাই প্রোডাক্ট আমাদের আজকের স্বাধীন বাঙলাদেশ। যেহেতু এটা আমাদের লড়াইয়ের ফসল নয়, বরং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের বাই প্রডাক্ট, তাই আমরা স্বাধীন হয়েও ভারতের কাছে এতোটা ঋণী যে, পুরো দেশটা তাদের হাতে এক প্রকার তুলে দিয়েও সে ঋণ শোধ হবার নয়।

 

প্রথম আলো এবং সমকালের এই ঔদ্ধত্যের কি কোন বিচারই হবে না?



কিছুটা বাড়তি যোগঃ

লেখাটা আমার ফেইসবুকে দেবার পরে এক বন্ধু নয়া দিগন্ত পত্রিকার একটা লিঙ্ক দিল। যেখানে প্রথম আলোর মতো একই রিপোর্ট হুবহু দেখান হয়েছে। অর্থাৎ ইতিহাস বিকৃতিতে প্রথম আলো এবং সমকালের সাথে নয়া দিগন্ত পত্রিকাও একই কাতারে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়া দিগন্ত পত্রিকা প্রথম আলো এবং সমকালের বিপরীত অবস্থানে। নয়া দিগন্ত জামাতপন্থী পত্রিকা হিসেবেই বেশী পরিচিত।

নয়া দিগন্ত তাদের রাজনৈতিক আদর্শ থেকে ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে গন্ডগোল কিম্বা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ বলে স্বাচ্ছন্দবোধ করার কথা। কারণ তখন জামাতের অবস্থান ছিল মুসলীম লীগের মতো পাকিস্তানের পক্ষে। কাজেই তারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হিসেবে তুলে ধরতে পারলে যাদেরকে আমরা রাজাকার কিম্বা যুদ্ধপরাধী বলি তারা মূলতঃ হয়ে যাবে দেশপ্রেমিক।

Reflections on Islamist politics in the Bangladesh context

5

by Anon

Let us define the Islamist voter as someone who would blindly vote any party or candidate basing their platform on Islam.  Vast majority of such voters in Bangladesh do not have more than few years of formal schooling.  And the small minority that is educated are not capable of leading the rest because these two groups of Islamist voters have quite different visions of Islam.

 

And this difference in how Islam is to be envisaged goes many years back to the 11th century, when a schism emerged among the Muslims on education and knowledge.  Specifically, Imam Gazali called for madrassah education to focus only on religious study, ignoring science, statecraft, philosophy and mathematics.

 

When Muslims conquered Syria they came across hundreds of books by Greek philosophers and mathematicians. During the Abbasid Caliphate starting from 750 AD, Muslims actively searched, translated and disseminated such books of knowledge under royal patron ship. Although many of the ideas in those books contradicted Muslim cultural and religious beliefs at that time, they still went ahead with studying and distributing them in the interest of acquiring knowledge. Meanwhile Europe was in the dark ages where all scholarship was confined into monastery based theological studies.

 

But things turned upside down from the effects of Crusade and then Mongol invasion. From the interactions of European Christians and Arab Muslims, the Europeans acquired the secular study of knowledge in the Arab lands and the Muslims took up the Church-based education of Europe. The hope continuing the tradition of Ibne Rushd, Ibne Sina, Al-Beruni, Al-Khwarizmi, Al-Farabi, Al-Kindi, Jabir Al-Haiyan etc, withered into nothing.

 

Imam Gazali was chiefly responsible for this. He forbid all heretical ideas and thoughts to preserve Islam. He fiercely attacked Ibne Sina in his book Tahafut Al Falasifa. Because of the vehemence of his attacks, even bold thinkers like Omar Khayyam withdrew from broadcasting their ideas vigorously. Because of Gazali, madrassah education, which was the only mass education system for youth apart from the universities for higher education, confined itself only on religious studies. But there were oppositions to this restriction in mass education in different parts of the Muslim world.

 

Eventually, this schism led to three regional schools: a science oriented one based on Egypt’s Al Azhar; a syncretistic one in Turkey; and a religion-focused one based in Samarkent.

 

Bangladesh’s madrassahs are the heir to the Islamic discourse written in Farsi a millennium ago in Samarkent.  The Samarkent school was abolished by the Soviets, but its literature survived in the madrassahs of Afghanistan, Pakistan, India (Deoband) and Bangladesh’s qaumi madrassahs.

 

The textbooks used in Bangladeshi madrassahs are all based on the Samarkent school literature, and are written in Farsi or archaic Urdu.  Indeed, there are instances of Hadiths of questionable authenticity taught in our madrassahs based on this literature.  For example, only recently such a dubious Hadith was circulated in social media, claiming that the Prophet (pbuh) ordered us to attack India.  Being the heir of the Samarkent school, madrassah students of Bangladesh tend to read archaic Urdu and Farsi more than modern Arabic-Farsi-Urdu.

 

After 9/11/2001, modernisation of Bangladesh’s madrassahs became a priority.  The then BNP government, with the assistance of Jamaat and large foreign funding, attempted a modernisation drive.  This led to an intense conflict between qaumi madrassahs and aliya madrassahs and those trained from Medina University — with the latter denounced as Jew-trained-heretic by some eminent leaders of the qaumi madrassahs.

 

The Imams of nine out of ten mosques in Bangladesh are from these qaumi madrassahs.  They are the role models of Bangladeshi Islamists.  Scholars from different schools are viewed with suspicion by those trained in the Samarkent tradition. To expect modernising Islamists like Fetullah Gulen or Tariq Ramadan is thus unrealistic in the Bangladeshi context.

 

And how big is the Islamist vote in Bangladesh anyway?  Let’s think about it through attendance at mosques.  The same mosque that can’t fit the jamaat on a Friday, causing a traffic jam outside, can’t find a single line of Muslims for the Fajr prayer.  That is the blunt reality of Islamism in Bangladesh.

 

The apparent rise of Islamism in today’s Bangladesh is a socio-cultural reaction against Awami misrule and Shahbagi cultural hubris.  It is similar to the socio-cultural reaction against the upper caste Hindu chauvinism a century ago.  Just like the Muslim League politics ended after partition, sympathy for the Islamists will also wane once the political scene changes.

 

Before an Islamic revolution is even plausible in Bangladesh, Islam has to be actually practiced along side science and technology.  Vast majority of us practice neither.  Those who practice both however don’t represent the Samarkent traditionalists, who are the actual Islamists.

 

And that’s why Islamist politics is a non-starter in Bangladesh.

(Picture Bayt al-Hikma was a librarytranslation institute and school established in Abbasid-era BaghdadIraq)

ঘৃণা আর কদমবুচি

by Hafiz M Ullah

 

আমাদের অভিধানে এবং সংস্কৃতিতে একদিকে “ঘৃণা” আর তার পাশেই “কদমবুচি” করার চল এতোটাই গেড়ে বসেছে যে, কয়েকটা জেনেরেশন পার হতে হবে এই পঙ্কিলতা থেকে পরিত্রান পেতে। এভাবেই আমাদের মন-মানসিকতা গড়া হয়েছে যে জীবনের অন্তিমকালে এসে সেগুলি unlearn and relearn এর সুযোগ নেই। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

আমরা সাধারন নাগরিক আমাদের পাশের দেশের তুলনায় পিছিয়েই থাকব। কারন তারা চায় না প্রতিবেশী আবার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। সেজন্য তারা আমাদের দুই দেশের মাঝের বিদ্যমান সমস্যাগুলি সমাধান না করে যুগ যুগ ধরে ঝুলিয়ে রাখছে। তাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার জন্য অনুদানের বা সুবিধা দেয়ার তুলনায় তাদের উতপাদিত পণ্য ও মেডিক্যালসেবা আমাদের কাছে বিক্রির চেস্টা নানান কৌশলে করে থাকে।

আমি ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় একজন শিক্ষক এর সাথে দেখা করতে গেলে উনি দুইটা ইংরেজী শব্দ ব্যাবহার করেছিলেন তার প্রফেসি (prophecy) হিসাবে যে, “আজ থেকে কয়েকযুগ পরে আমাদের দেশে intellectual bankruptcy দেখা দিবে” (Intellectual means involving a person’s ability to think and to understand ideas and information। Bankruptcy: A person who is totally lacking in a specified resource or quality)। আজ আমি সেটার নজির রাস্ট্রের সর্বোচ্চ লেভেল থেকে সাধারান জনগনের মাঝে প্রকট আকারে দেখছি। আমরা যুক্তিতর্ক প্রয়োগ না করে ধমকের সাথে বা গায়ের জোরে প্রতিপক্ষকে কাবু করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সেই বিখ্যাত ছবির গরুর গাড়ীর চাকার মত বাংলাদেশকেও যেন আজও কাদামাটি থেকে ধাক্কা দিয়ে তোলা যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ সাহেব তার এক ভাষনে বলেছিলেন যে, বিএনপি যদি কখনো উত্তর দিকে দৌড় দেয় তবে আওয়ামী লীগ চোখ বন্ধ করে দক্ষিন দিকে দৌড়াবে এবং vice versa (with the order reversed; the other way around) এর মানে, তুমি যেটা বিশ্বাস করবে বা করতে চাইবে আমি তার উল্টোটা করব। নইলে আমি তোমার ফলোয়ার হয়ে গেলাম। যেটা আমার নিজের আর দলের জন্য অবমাননাকর ব্যাপার। তাই, সব কিছুতে বিরোধীতা করা চাই।

এই বাজে vicious cycle (one trouble leads to another that aggravates the first) থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে দলমত নির্বিশেষে একজন গ্রহনযোগ্য নেতার প্রয়োজন। যিনি হয়ত নিজ থেকে উড়ে এসে জুড়েও বসতে পারেন। কিন্তু দেশটাকে একছন্দে আর তালে এগিয়ে নেয়ার স্পৃহা জনগনের মাঝে প্রথিত করে যেতে পারেন তেমন নেতার প্রয়োজন ছিল। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের জানুয়ারীর ১০ তারিখে পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্য (লন্ডন) হয়ে পথে কলকাতায় থেমে পরে ঢাকায় আমাদের মাঝে এসেছিলেন। তখন তিনিই আমাদের সেই স্বপ্নের নেতা হিসাবে সদ্যস্বাধীন দেশের মাঝে অনেক আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন। সেই সময়ে আমরা সমগ্র ৭৫ মিলিয়ন বাংগালী (বাংলাদেশী) ওনার মুখের দিকে অনেক আশা নিয়ে চেয়েছিলাম। এমন কোন কাজ ছিল না যেটা উনি দেশবাসীকে বলতেন বা আমাদের কাছ থেকে চাইতেন আর সেটা তখন মানা হত না বা আমরা করতাম না। কিন্তু যে কোন কারনেই হউক উনি নিজেকে জনগনের সম্মুখ থেকে গুটিয়ে নিয়ে রাস্ট্রের রুটিন কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। যার ফলে তখন আমরা আমাদের তখনকার দিনের প্রিয় নেতাকে ৭৩ সাল থেকেই হারাতে শুরু করেছিলাম আর ৭৫ সালে সম্পুর্ণ ভাবে হারিয়েছিলাম। সেই ৭২-৭৫ সালে আমারা বাংলাদেশের ম্যানেজার হিসাবে শেখ মুজিবকে পেয়েছিলাম। কিন্তু তখন আমাদের একজন স্টেটসম্যান দরকার ছিল। যেটাতে উনি পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছিলেন। বাদ বাকিটা তো ইতিহাস হয়ে আছে।

বাই দ্যা ওয়ে, Four Qualities of a True Statesman (1) A Bedrock of Principles (2) A Moral Compass (3) A Vision and (4) The Ability to Build a Consensus to Achieve that Vision

http://www.naturalawakeningsmag.com/Natural-Awakenings/October-2012/The-Four-Qualities-of-a-True-Statesman/

কাকু,আব্বু, আমি ও বাকি ত্রিশ লাখ…

by Watchdog BD

খবরে প্রকাশ নতুন করে আদমশুমারী করতে যাচ্ছে সরকার। শীঘ্রই এ ব্যাপারে লোকবল ও অর্থ বিনিয়োগ সংক্রান্ত ঘোষনা দেয়া হবে। যে কোন উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে সঠিক পরিসংখ্যান। হোক তা উন্নত বিশ্বে অথবা বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে। আমাদের পরিসংখ্যান খাত বাকি দশটা খাতের মতই দুর্নীতির মহামারিতে আক্রান্ত। বিনিয়োগকৃত অর্থ পকেটস্থ করার উদ্দেশ্যে অনেক পরিসংখ্যানই জন্ম নেয় টেবিলে। গরু ঘাস খায়, গাধা ঘাস খায়, সুতরাং গরু = গাধা, এ ধরনের উদ্ভট ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিং কায়দায় সমাধান করা হয় পরিসংখ্যান বিষয়ক সমীকরণ। যার দরুন দেশের মোট জনসংখ্যা নিয়ে রয়েছে বহুমুখি সন্দেহ। লিমিট মডেলিংয়ে সংখ্যাটার উপরের ভ্যালু পনের হলে নীচেরটা হবে সতের। অর্থাৎ পনের কোটি হতে সতের কোটির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে দেশের মোট জনসংখ্যা। আমদানী নির্ভর একটা দেশের অর্থনীতির জন্য এ ধরণের উঠানামা খুবই ভয়ংকর যা বিশ্ব অর্থনীতির সমসাময়িক বাস্তবতায় খাদ্য ও জ্বালানী নিরাপত্তায় ডেকে আনতে পারে নজিরবিহীন বিপর্যয়। এসব নিয়ে ক্ষমতাসীনদের আদৌ কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয়না। বাস্তবতা হল, এখানে রাজনীতিকে অর্থনীতি ডমিনেট করেনা, বরং তার উল্টোটাই বাংলাদেশের বেলায় প্রযোজ্য। তারও আছে বহুবিধ কারণ। যেমন, ক্ষমতা ধরে রাখা অথবা ফিরে পাওয়ায় এ দেশে অর্থনীতির কোন ভূমিকা নেই। সকাল-সন্ধ্যা বিরামহীন ব্যক্তি বন্দনাই মসৃণ করে ক্ষমতার সিঁড়িঁ । আদমশুমারী সংক্রান্ত সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের পেছনেও হয়ত রয়ে গেছে ব্যক্তি বিশেষের নতুন ইচ্ছা অথবা অভিপ্রায় বাস্তবায়নের নীলনকশা। এটাই আমাদের রাজনীতি, এটাই আমাদের অর্থনীতি। এবং এমনটাই আমাদের নিয়তি। আদমশুমারী নামক গৌরি সেনের টাকায় নতুন শ্রাদ্ধের সাথে চাইলে নতুন একটা ইস্যু যোগ করা যায়। এর জন্য নতুন কোন বাজেটের যেমন দরকার হবেনা, তেমনি দরকার হবেনা অতিরিক্ত কোন লোকবল অথবা বাহুবলের। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে নিহত ত্রিশ লাখ শহীদ ও তিন লাখ ধর্ষিতা বীরাঙ্গনার একটা তালিকা। সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আসুন পরিসংখ্যান নিয়ে আরও কিছুটা সময় ব্যায় করি।

10314583_10203911655491247_6497602888689130159_n

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ হতে ১৬ই ডিসেম্বর। মাসের হিসাবে ৮ মাস ২৩ দিন। দিনের হিসাবে ২৬৭দিন। ঘন্টার হিসাবে ৬৬৭৫ ঘন্টা, মিনিটের হিসাবে ৪,০০০,৫০০ মিনিট এবং সেকেন্ডের হিসাবে মোট ২,৪০,৩০,০০০ সেকে¨। বলা হয় ২৬৭ দিনের যুদ্ধে পাকিস্তানিরা মোট ৩০,০০,০০০ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছিল। এবার আসুন যোগ বিয়োগ, পুরন ভাগ দিয়ে সংখ্যাটার একটা ফ্রিকোয়েন্সি দাঁড় করানোর চেষ্টা করি। যা বেরিয়ে আসবে তাতে দেখা যায় পাকিস্তানিরা প্রতিদিন মোট ১১,২৩৬ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছিল। ঘন্টার হিসাবে তা হবে ঘন্টায় ৪৫০জন, মিনিটে ৭।৫ জন এবং সেকেন্ডের হিসাবে ০।১২ জন। এবার আসুন এই ত্রিশ লাখ শহীদের লাশের একটা বিহিত করার চেষ্টা করি। বলা হয় প্রতিটা মুসলমানকে দাফন করতে মোট সাড়ে তিন হাত মাটির প্রয়োজন হয়। এ হিসবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ১,০৫,০০০,০০ হাত জায়গার প্রয়োজন হয়েছিল ত্রিশ লাখ দাফনের জন্য। আমরা যদি গজের হিসাবে দুই হাত সমান এক গজ ধরি তা দাঁড়াবে ৫২,৫০,০০০ গজে। যদি ভুল না হয় ৫,২৮০ গজ সমান এক মাইল। এ হিসাবে মোট গজকে মাইলে নিয়ে গেলে তা হবে ৯৯৪ মাইল। এবং কিলোমিটারের হিসাবে ১৫৯০ কিলোমিটার। ৫৪ হাজার বর্গমাইল আয়তনের একটা দেশে ত্রিশ লাখ লাশ দাফন করতে কত বর্গমাইল জায়গার দরকার তা বের করার দায়িত্বটা পাঠকদের উপরই ছেড়ে দিলাম। অনেকে বলবেন ত্রিশ লাখের সবাইকে দাফনের ব্যবস্থা করা গেছে এমনটা নয়। অনেকে আবার প্রশ্ন তুলবেন শহীদদের অনেকেই ছিল অমুসলিম এবং স্বভাবতই তাদের দাফন করার প্রশ্ন আসেনি। খুবই যুক্তিপূর্ণ প্রশ্ন। এটাও সত্য ত্রিশ লাখ শহীদদের কাউকেই বাংলাদেশের বাইরে হত্যা করা হয়নি। দাফন না করা গেলে তাদের মৃতদেহ কোথাও না কোথাও ঠাঁই পেয়েছিল। যদি স্বতন্ত্রভাবে সবাই দাফন করা সম্ভব না হয়ে থাকে প্রশ্ন উঠবে শত শত গণকবরের। হিন্দুদের ব্যাপারটা খুব সোজা। ৭১সালে বাংলাদেশের কোথাও কোন চিতায় আগুন জ্বলেনি। পাকিস্তানিরা জ্বলতে দেয়নি। তাদের লাশও কংকাল হয়ে বাংলাদেশের মাটিতে কোথাও না কোথাও ঠাঁই পেয়েছে। পরিসংখ্যান গুলো একত্র করলে একটা প্রশ্ন জন্ম নিতে বাধ্য, আট মাস তেইশ দিনে আসলেই কি সম্ভব ছিল ত্রিশ লাখ হত্যা করার? নিশ্চয় অসম্ভব কিছু নয়। আমরা যদি সমসাময়িক সময়ে আফ্রিকার রুয়া¨ায় ঘটে যাওয়া গণহত্যার দিকে চোখ ফেরাই তাহলে একবাক্যে স্বীকার করবো বাংলাদেশেও সম্ভব ছিল। ১০০ দিনের গৃহযুদ্ধে ১০ লাখ রুয়া¨ান প্রাণ হারিয়েছিল, যা ছিল দেশটার মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগ। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড গোটা পৃথিবীর সামনে ঘটেছে। লাশের মিছিল ট্রাকে করে ময়লা আবর্জনার মত গণকবর দেয়া হয়েছে। যুদ্ধ শেষে সে সব গণকবরের সন্ধান করে দেশটার সরকার তথা গোটা বিশ্ব নিহতদের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করেছে।

৭১’এ পাকিস্তানিরা এ দেশে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। সংখ্যা এদিক ওদিক করে এ অপরাধ লঘু করার কোন উপায় নেই। বর্বরদের বর্বরতা ইতিহাস কোনদিন ক্ষমা করেনা, আমারাও করবো না। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, এই যে ত্রিশ লাখের কথা বলছি তার কোন তালিকা তৈরীর কেন চেষ্টা করছিনা? নাকি খুঁজতে গেলে পাওয়া যাবেনা এ সংখ্যা? পরিচিত এক আওয়ামী নেতা আমাকে বলেছিলেন মৃতদের নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে নাকি পাপ হয়। আত্মারা অভিশাপ দেয়। আপাদমস্তক একজন চোরের মুখে হঠাৎ করে পাপের কথা শুনলে শিউরে উঠতে হয়। আমি অবশ্য অবাক হয়নি, বরং চমকিত হয়েছি। লাশের সংখ্যাকে রাজনৈতিক উপাদান বানিয়ে ক্ষমতার বাজারে মুনাফা লোটা খুব সোজা। বিশেষ করে ৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের জন্য এ সংখ্যা ঈশ্বরের ওহী বাণীর মত কাজ করতে বাধ্য। যার প্রতিফলন দেখা যায় আজকের সোস্যাল মিডিয়ায়। ত্রিশ লাখ সংখ্যার প্রবর্তক আওয়ামী লীগ জেনশুনে কাজটা করে থাকলে সাধুবাদ জানাতে হয় তাদের সুদুরপ্রসারী চিন্তাভাবনার জন্য। জাতিকে একটা বিশেষ পরিবারের সেবাদাস বানাতে এর চাইতে ভাল অস্ত্র দলটা হাতে পাবে বলে মনে হয়না। একবার ভেবে দেখুন, প্রতিবেশী একটা দেশের পানি আগ্রাসনে আমাদের নদী গুলো এখন সর্বশান্ত। নদী তীরের জীবন এখন ইতিহাস। খা খা করছে ফসলের মাঠ। ওরা সীমান্ত হতে আমাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পশু পাখির মত হত্যা করছে, পাশবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। যাকেই দরকার নিজেদের গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে খোদ রাজধানী হতে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। অসম বানিজ্যিক ভারসাম্যের বোঝা কাধে চাপিয়ে জাতিকে করেছে বিকলাঙ্গ। ড্রাগ এবং অস্ত্রের পাশাপাশি উন্মুক্ত তথ্য প্রবাহের সুযোগ নিয়ে নিজেদের বিকৃত সংস্কৃতি দিয়ে লন্ড ভন্ড করে দিচ্ছে আমাদের সামাজিক ভারসাম্য। এসব নিয়ে প্রশ্ন তুললে ত্রিশ লাখ শহীদের মায়াকান্নায় সমাহিত করে দিচ্ছে আজকের বেচে থাকা। লুটেরার দল দেশ লুটছে, খুন করছে, গুম করছে, করছে ভোট ডাকাতি। এবং দিন শেষে পাপ মোচন হিসাবে ব্যবহার করছে ত্রিশ লাখ শহীদের লাশ।

বাস্তবতা হচ্ছে ৭১’এ ত্রিশ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়নি এ দেশে। কোনভাবেই সম্ভব ছিলনা এ ধরণের পাইকারি সংখ্যা। মিনিটে ৭ জনের লাশ পরেনি এ দেশে। অন্তত আমরা যারা ৭১’এ দেশে ছিলাম এমনটা দেখিনি। মাটি খুঁড়লেও পাওয়া যাবেনা এত লাশ। হাজার হাজার লাশের গণকবরও নেই আমাদের দেশে। কারও সন্দেহ থাকলে আসুন নিজের পরিবার হতে শুরু করি এর যাচাই। কজন প্রাণ হারিয়েছিল আপনার পরিবারে? গ্রামে অথবা শহরে? সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যার ত্রিশ লাখ মানে শতকরা প্রায় ৪ ভাগ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন বাংলাদেশির ৪জন করে প্রাণ হারিয়ে ছিল সে যুদ্ধে। সে হিসাবে আমাদের প্রত্যেকের হাতে থাকার কথা স্বজন হারানোর তালিকা। আছে আপনার হাতে? তাহলে প্রকাশ করুন। এ সংখ্যার ফয়সালা জরুরি পাকিদের পাপ হাল্কা করার জন্য নয়, বরং একদল ক্ষমতালোভী রাক্ষসদের লাশ বানিজ্য বন্ধ করার জন্য। সোস্যাল মিডিয়া হতে পারে এ শুরুর আসল প্ল্যাটফর্ম। আসুন ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধে নিহত প্রতিটা লাশের পরিচয় লিপিবদ্ধ করি। এ সংখ্যা যদি ত্রিশ লাখে দাঁড়ায় সেটাই হবে আমাদের আসল সংখ্যা। শ্রদ্ধাভরে সন্মান জানবো সে সংখ্যাকে। কিন্তু আমরা প্রত্যেক শহীদের নাম জানতে চাই। জানতে চাই তার যাপিত জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এ দেশের রাস্তাঘাটের নাম দেখতে চাই এ সব শহীদদের নামে। এক শেখ মুজিবের নাম গোটা বাংলাদেশের রাস্তা-ঘাট, নদী-নালা, মুতখানা, লঙ্গরখানা কভার করার জন্য যথেষ্ট নয়। চাই আরও নাম। যুদ্ধের প্রথম প্রহরে যে ব্যক্তি শত্রু ক্যাম্পের মেহমান হয়ে নিজের রাজনৈতিক চামড়া বাচাতে সচেষ্ট ছিলেন তার নামের বন্যায় গোটা দেশ ভেসে যাবে, আর বাকি ত্রিশ লাখ কেবল মায়াকান্নার উপাদান হিসাবে রয়ে যাবে তা হতে পারেনা।

এবারের আদমশুমারী হতে পারে শহীদ সংখ্যা তালিকাভুক্ত করার মোক্ষম মাধ্যম। শুমারির কাজে সরকারী লোকজন দেশের প্রত্যেকটা দুয়ারে কড়া নাড়বে। মাথা গুনবে মোট জনসংখ্যা নির্ধারণের অংশ হিসাবে। একই লোকজন পাশাপাশি আরেকটা তথ্য বের করে আনতে পারে, আর তা হল ৭১’এর শহীদদের নাম, ধাম ও পরিচয়। মনে আছে হুমায়ুন আহমেদের ’বহুব্রীহি’ নাটকের শেষ পর্বের কথা? আবুল হায়াত গরুর গাড়িতে চড়ে অজানার পথে বেরিয়ে পরছেন নতুন এক দায়িত্ব নিয়ে। সে দায়িত্ব ছিল ত্রিশ লাখ শহীদের পরিচয় উদ্বারের দায়িত্ব। কাউকে না কাউকে নিতে হবে সে দায়িত্ব।

http://www.amibangladeshi.org/blog/04-27-2014/1454.html

Remembering Maulana Bhashani: The ‘Play’ of Religion and Politics in Bangladesh

1

In this article the Brethren explore some rarely mentioned aspects of Abdul Hamid Khan Bhashani’s political practice. A close reading of his oath of allegiance, adds a new dimension to our existing understanding of his political project. It excites and liberates us from the Manichean question of secular-versus-religious politics that dominates our discourse so unproductively. It is in the greater interest to supersede this intellectual roadblock, which causes national self-harm, but is woven into a narrow account of our people’s historical experience. It is high time to question current ‘banking’ education narratives and ask whether it is not time for a new ‘Historiography of the Oppressed’.

 Down I went into the Diaspora (Piraeus)

Have you heard the one about the Maulana and the Marxist?

My first brush with the meanings of Maulana Bhashani was at one of those social gatherings that are part of London diaspora life. It was at the height of the kitsch culture madness of Shahbag in early 2013, which was reaching its Islamophobic conclusion of calling for a banning of religion from politics in Bangladesh. I sat next to a former graduate of Sylhet’s famed MC College, a lifelong JSD (National Socialists Party) member, and a Maulana, a Qawmi Madrassa graduate. Their conversation soon descended into an argument, with the JSD member scolding the Maulana, ‘Why don’t you Mullahs give up politics?’ To this the Maulana replied, ‘How does the son question the existence of his father?’ He continued, ‘Without a free India and Pakistan there would be no Bangladesh, without Bhashani there is no Mujib, where do you think free India and Maulana Bhashani came from?’

 or the one about the ‘Bismillah Capitalist’?

Related to the above topic, I remember a conversation with the late Dhaka University’s Dr Aftab Ahmed, months before his 2006 assassination and the 2007 Diplomat’s Coup. He was puzzled by a conundrum that came out of study on Islami Chhatra Shibir alumni. He found that a minority progressed into the hierarchy of Jamaat e Islami, and a small number would leave to pursue their spiritual quest, mainly ending up in the ranks of the quietist Tablighi Jamaat. The majority went into the corporate world or private business, and became good capitalists.  He noted an important limitation of the party, that it was basically a modern one with a sprinkling of Islam here and there.

Living in London, which comically pitches itself as global Islamic Finance hub, I observe a similar phenomenon. We call them ‘Bismillah Capitalists’, capitalism with a sprinkling of Islam to make it palatable for an indigenous market, and switch off our people’s critical faculties.   A thread of the conversation I am sorry not to have developed was Dr Aftab’s call for a Liberation Theology amongst Muslims, and the courage to see and study the politics between the Prophet’s (pbuh) companions. Perhaps the optic of Maulana Bhashani’s soulful politics provides some yeast for the former.

Escape from the shadow of Lagado: Preventing Violent Eurocentrism (PVE)

 To understand the significance of Bhashani, we are minded to read him within his tradition.  Thus as readers we have to leave our prejudices and let the Maulana speak for himself and be understood in his own categories and definitions.

We must avoid the mistake of many academics at the Academy of Lagado (La-puta), who use Eurocentric monocles, even when gazing in the mirror. This use of an outdated and discredited tradition is unwittingly kept alive today in the field of Bangladesh Studies (BS) by the likes of Ali Riaz and his supporters of publicists and hangers on. It is an academic practice which claims to understand Islam and Muslims, but has no training in philology or religion but a combination of journalism, political science and interests in (self) sustainability. These experts take a cue from a section of their colleagues in Middle Eastern studies, and speak in the name of foreign policy and development, creating an arid landscape ready for the neo-con mind to wrap its talons around. The consequences of such misdirection is increased ignorance and grist to the burgeoning ‘War on Terror’ industry, with ever increasing collateral damage, bordering and crossing over into Islamophobia. An ignorance multiplier effect, exposed by Farhad Mazhar about media manipulation in general and specifically by a recent article on the editorial policy of a national newspaper in Bangladesh, the Dhaka Tribune.

This approach has been critiqued in terms of its professed political objectivity by Edward Said in his Orientalism’, and methodologically by the Native American scholar Ward Churchill in his seminal ‘White Studies’. For the interested, a good starting point for a constructive and knowledge-based philological study of Islam are the works the Malaysian thinker Syed Naquib al Attas, especially his Islam and Secularism’.

The Tao of Remembrance (Mudhakara)

Bhashani’s life reflects the journey of his people, born and educated during the British Raj, he mobilised throughout the United Pakistan period (when not incarcerated) and was revered in Independent Bangladesh. Politically he began with Jamiatul Ulema-e-Hind and signed off in the left wing National Awami Party.

One document that that might help us understand the essence of this enigmatic figure is the disciple’s oath (bayah) he administered to his followers. It is reproduced and translated below.

 “I give an undertaking that in Allah the Supreme I profess firm belief. I will believe with certainty that Rasulullah is the sent messenger. I will abide by all the regulations pertaining to the permitted and disallowed, as propagated by the Messenger.  

I will not bow my head to anyone besides Allah.

I will endeavour tirelessly  to establish socialism, the only way to relieve all forms of human extortion and embezzlement.  

I will join the volunteer’s corps of the peasantry to eradicate from society all forms of imperialism, capitalism, feudalism, usury and corruption.

I will perform litanies, contemplation, meditation, prayers and fasting… according to the tariqah of Qadria,  Naqshbandiya,  Chistiyyah.

Every year on the 19/20th January 5 Magh I will attend the large seminar at Santos, Tangail and assist in the advancement and progression of the Islamic University.”

The disciple’s oath presents two features of Islamic pedagogy; action melded with belief and an anchoring to an oral tradition. Action, or orthopraxy, is seen in the obligation of adherents to engage physically from prayer, fasting, to attending annual gatherings. It is similar to the Aristotelian concept of hexis, a state of being, conditioned by habits and practice known colloquially in Bangladesh as ‘adab’.

The oral tradition is seen in reference to the Chistiyyah, Qadiriya and Naqshbandi Sufi orders and their practices. The Islamic tradition is oral before being written, even the word Qur’an means recitation. Arabs often distinguish between the Qur’an as recitation, and the written copy of it, the mus’haf. Oral primacy is maintained in Islamic pedagogy: from Qur’an memorisation; to the science of understanding where a Prophetic tradition has been narrated from; to the teaching genealogies preserved in the supplications of the Sufis. Such live oral traditions continue to breathe in Bangladesh, through the independent, non-government Qawmi (community) Madrassas, and the Sufi orders.

People with Muslim heritage can relate to this oral tradition through their formative childhood experiences, through the teaching and memorisation of short verses of the Quran, to the method of how to perform the five canonical prayers. This cycle of instruction and embodied practice is communicated from the first community in Makkah with a template established during the early Prophetic period, with the Angel Gabriel teaching the Prophet (pbuh) to recite and memorise the first verses from the Quran, and showing him how to pray.

The principles of this epistemology are laid out in a Prophetic tradition found in the Muwatta of Imam Malik ibn Anas, founder of the Maliki legal school and author of the first book of sacred law. Imam Malik knew many traditions recommending the seeking of knowledge, but felt suffice just to narrate this single hadith on the matter, one which expresses the essence of seeking knowledge, heart to heart – ‘sina ar sina’, teacher to student all the way back to the Prophet (pbuh),

 Luqman the Sage (pbuh) made his will and counselled his son, saying, “My son! Sit with the learned men and keep close to them. For Allah gives life to the hearts with the light of wisdom as Allah gives life to the dead earth with the abundant rain of the sky.”

 

Genealogy of Resistance (Mujahada)

‘Let there be among you who enjoin what is right and forbid what is wrong’.

(Qur’an 3:104)

 The Oath affirms actions and a continuous struggle against imperialism and feudalism. Our 2013 Twin Towers of industrial and state crimes deserve better than, the paparazzi politics of the Reshma Rescue, the middle class guilt of Lungi March and the Dad’s Army that is Sushil Samaj. The Oath excites a soulful politics of the human solidarity and spiritual awakening – towards the creation of Al Insan al Kamil (the Perfect and Universal Man).

The impact of the Sacred on Bhashani’s political training can be seen not just in the oath’s content and monotheistic refusal to submit to all but God, but in the relationship of his teacher’s to the growing power of colonial capital. As T S Eliot wrote in ‘Tradition and the Individual Talent’,

 No poet, no artist of any art, has complete meaning alone. His significance, his appreciation, is the appreciation of his relation to the dead poets and artists. You cannot value him alone; you must set him, for contrast and comparison, among the dead.”

 Bhashani was the disciple of the Baghdadi Pir of Lakhimpur in Assam, who advised him to journey to the Deoband seminary in Uttar Pradesh to study under Maulana Mahmudul Hassan.  Bhashani’s chain of teachers were deeply committed to anti-imperial activities against the British before, during and after the 1857 War of Liberation.

 Mahmudul Hassan accompanied his father in the war as a boy, and his own teacher Rashid Ahmed Gangohi had to flee from the British for his participation, he was later caught and imprisoned. Gangohi was the spiritual disciple of the Sufi Master Haji Imdad Ullah Makki. The pictures below of Delhi show the ferocity of British retribution on the built environment in the aftermath of 1857, and the simplicity of the graves, reflecting the humility of those who took part in the struggle.

 All three scholars (Hassan, Gangohi and Makki) were either influenced, intimately took part in, or were inheritors of the Madrassa Rahimiyyah, the intellectual centre of resistance to the British in 1857. Scholars and students from Rahimiyyah participated in the war intellectually and physically, giving it moral legitimacy and directing movements and defences. Rahimiyyah, translates as an adjective of the enduring manifestation of Divine mercy, grace and love, as a consequence of human work, sacrifices and supplications. The madrassa was established in the 17th century during the reign of the Emperor Aurangzeb by Shah Abdul Rahim, who also helped to compile the Fatawa Alamgiri, a landmark codification of the Muslim legal tradition.

When the British eventually captured Delhi, amongst other civilising barbarities, their Army decided to destroy the leading Islamic educational institute in India, ordering the Rahimiyyah closed and selling it to Hindu businessman. The poet Mirza Ghalib is quoted in William Dalrymple’s The Last Mughal,

“The madrasas were almost all closed, and their buildings were again mostly bought up-and in time demolished – by Hindu moneylenders. The most prestigious of all, the Madrasa-i-Rahimiyyah was auctioned off to one of the leading baniyas, Ramji Das, who used it as a store (p463)”.

Out of the ashes of Rahimiyyah, its alumni began a new wave of Muslim institutional innovation, with Deoband (1866), Aligarh (1875) and Nadwatul Ulema (1894) founded to establish dignity, social justice and representation for radically disempowered Muslim communities. These institutions were supported across India, cascading regional developments. Without Deoband, Aligarh and Nadwatul Ulema, there would be no Hathazari or Dhaka University. They also schooled leaderships for the Indian National Congress and the Muslim League, who led the freedom struggle for Independence. This contribution was recognised in the anniversary celebrations of the Deoband Madrassa in March 1982, by the attendance of Prime Minister Indira Gandhi, and leading members of her opposition including Raj Narain, Jagjivan Ram, and Chandra Shekar.

 

The Academy and the Maulana : Escaping the Cave

Talking about Bhashani connects with wider narratives of religion, politics and the subaltern Bangladesh. He is claimed by most factions as their own, from members of Jamiatul Ulema to Marxists who place his picture beside Marx and Lenin. He continues to suffer poor treatment from the Joy Bangla Kitsch Culture Machine.  Recovering Bhashani washes away the formaldehyde into which Bangladesh’s (mis)leadership has tried to drown and trade religion, and remove dynamic religion from both the political sphere and informed public debate. Recovering Bhashani transcends this bourgeois political cul-de-sac of the post-Liberation era.

 In the unfortunate political shorthand of our times, leftists are invariably considered atheists who battle with rightists, who invariably aren’t. Figures who cross these two immiscible currents are pathologised if not dismissed outright, for example the case of Abul Hashem, author of ‘The Revolutionary Character of the Kalima’, a formative influence on the Awami League and proponent of Islamic Socialism. His son, Marxist-Leninist historian Badruddin Umar is on the record as saying that his father was ‘a political schizophrenic’.

 Between the politics of competition and class considerations, enchantment with the Maulana is not shared by all. In a certain camp of Political Islam, Bhashani has even been takfired upon. His politics of the dispossessed disturbs the tactical movements for business as usual, but with beards. A deconstruction of the cold war politics and the personal anxieties of the individual allegedly behind this dismissal is long overdue. Looking through the eyes of the colonially colour blinded, it seems Bhashani was a flash in the pan never to be found again. Yet the same kind of personalities and struggles against oppression can be found all over the Muslim world.

 To the West, in Syria we have Abd al Rahman al Shaghouri (1914 – 2004), a scholar of sacred law, poet and sufi. Originally a weaver, then a textile mechanic and later foreman of technicians at a fabric plant, his story has more than a few lessons of how we think of our garments workers. Al Shagouri was instrumental in unionising workers in Damascus and was part of the team that led the Syrian Textile Workers Union to a successful 40 day strike for workers compensation. To the East, in Malaysia we see Nik Abdul Aziz, graduate of indigenous punduk seminaries and elected premier of Kelantan State for a period of 23 years. Last year we saw a coalition of his Islamic party, Chinese Malaysians and Anwar Ibrahim’s Kedalan forming Pakatan Ryat, The People’s Alliance, and mount the biggest challenge to the Malay ethnonationalist UMNO establishment so far.

 Nearly four decades after Bhashani, there seems to be a deliberate attempt to cover up his politics and enduring contributions. The erasure takes several forms, from the demotion of his life in textbooks, to the  festival cancellation, following his annual death memorial prayers. In Bangladesh today there is only room for the cultural hegemony of the feudal-industrial complex, which splices the dynasty of ‘The Sheikh’ to the kitsch culture of Shahbag. Judging by the quantity of faces on billboards, or media mentions, or columns in print, the legacy of Maulana has  faded away.

 The urge to forget emanates from a structural push by literary custodians of elite history to exorcise the undecidability and derailment that Bhashani brings to their ‘Little Boxes’. The false dichotomies we see bandied around today, of religious vs secular, urban vs rural etc, were delivered by ‘Biman’s’ own ‘cabin crew’. The court painters of the Republic’s history have stopped exercising their memory and have forgotten themselves. Their reliance on external marks of writing instead of their internal capacity to remember and relate, holds them hostages to their own appearances.  Seemingly knowledgeable and connected, but unfortunately quite the opposite, they are thoroughly intolerant of dissenting views. We see this attitude evident in the ‘Academy’ of Bangladesh today, like three prongs of the same thrusting trident. The  flat earth mantra of 3 million war dead, mediated by faux objective civil society speak, and somewhat more sophisticated but juvenile ersatz Jean-Luc Godard, Marxist Existentialist mirages of ‘Utopia’.

Can the subaltern remember?

Unfortunately for his detractors, the ghost of the Maulana and the legacy he represents refuses to die and continues to live in the body politics of Bangladesh. He is the tip of an iceberg of a living collective memory and continuity that permeates and ennobles the lives of ordinary people. Bhashani is more than politics, and in many ways emblematises the country’s story (mistakes included) of an uphill struggle for truth, justice and dignity. It is a narrative which also unfolds in India, as expressed by Mahmood Madani in a recent intervention with Tehelka.

 Such a narrative disrupts the orthodoxies of contemporary politics, from the traditional far left arguments of religion being an opium of the masses, to the public Islam offered by Jamaat, of an Islam in the public sphere, relegated to the Islami Bank, local shopping centres, and a few ministries in a coalition government. Tariq Ramadanechoes a similar view when he observes that the present generation of Political Islam in Egypt had strayed from his interpretation of their original raison d’etre – of Liberation Theology.  Bhashani’s anchoring in the Sacred speaks to a greater narrative of the Bangladeshi people, which we visit next.

The struggle continues: (left) Maulana Bhashani (1880 – 1976) and (right) Aminul Islam (1973 -2012) trade unionist who struggled for workers rights, and was tortured and killed by individuals linked to the security services of the current Bangladeshi government.

Uncovering the Story(ies) of Bangladesh

 Clifford Geertz’s definition of culture as ‘the stories we tell ourselves about ourselves’. 

In 1989 the British Broadcaster Channel 4, commissioned a three part documentary called the ‘The Story of Bangladesh’. It was directed Faris Kermani, and the theme was betrayal, from Plassey to the modern day. Following the tumultuous events of 2013 and our most farcical election in January it’s hard to say anything has changed. Maybe it’s time for critical introspection, into whether these are isolated events or woven into an overarching narrative of self harm.

The nation’s elite and their foreign partners tout the creation of Bangladesh in 1971 as the end of history. It is a story, of a land without progress and development for progressives and developers without a land. A story which is the exclusive property and achievement of the elites. The villain on this blank canvass is the country bumpkin, who doubles up as an Islamic militant if not a microloan borrower, in a tale faithfully retold recently in the Washington Post.

Viewing the world with this history explains the radio silence and editorial misdirection of its adherents regarding the government’s human rights violations, hamstringing of oppositional voices and state crimes in Bangladesh. The case for investigation has been submitted and is being processed by the International Criminal Court (ICC). Contrast this complicit silence with the amplitude of humane concern when that same alleged state sponsored violence spills over into the homes of minority religious communities. The secret, open to all who work in and know the sector, is in the funding streams and the agendas that frame them.

 Towards a Historiography of the Oppressed

 There are other histories, for those who listen, rarely recorded by foreign observers and their native informants, but spoken and heard locally and regionally, amongst the people. This Deshnama has its roots in the deeper history of the Bangladeshi people, the places they have been and the peoples from whom they are descended. It is where the history of a sacred land meets its residents, a memory that not only has its (re)source in the Medinan community of the Prophet Muhammad (pbuh), but connects with precedents in the edicts of Ashoka.

 It is a familiar synthesis, to the incorporation of the Ethics of Aristotle and the Republic of Plato, into Christian thought by St Augustine and St Aquinas, co-authored and harmonised in the works of medieval Muslim theologians such as Al Ghazali, Al Razi and Averroes. These authors, books and ideas are still read and heard in the mosques, madrassas, churches and temples that bejewel Bangladesh today. The country’s music and poetry is filled with the same cosmopolitan religious symbolism shared and contested by all those who live within it.

Near my abode, there is a wondrous City of Mirror,

where my Great Neighbour lives.

(The Great Neighbour’ – Lalon Shah)

 It is a chronicle prologued by Atish Dipankar, who arose amidst the general background of the Buddhist struggle in Bengal against the hegemony of the Brahmin led caste system. To invoke a few Prophetic paradigms, it is like a replay of the battle between the Prophet David (pbuh) and Goliath with the dialogue of the Prophet Moses (pbuh) with Pharaoh.

 Oppression (zulm) transforms with time from local rajas, Delhi Emperors, the inimitable British East India Company, The British Crown, Calcutta zamindars, military juntas to Indian hegemony. The same can be said for the movements and figures that champion the oppressed (mazlum) like Shahjalal, Isa Khan,Nuraldeen,Titu Mir, Dudu Mian,  and Bhashani. Post independence, we might observe Ziaur Rahman’s struggles and achievements, against internal and external opposition, in this vein, in laying the foundations of a modern democratic state amongst the ‘basket case’ ruins of despotictotalitarianism and the devastating 1974 Famine .

 This is a story of people with a rich culture, entangled in global and regional developments, and a history of struggling against great odds, with great losses, for justice and dignity, inspired and strengthened by the Sacred. In this narrative, 1971 is a continuation of that history and not its end.

 When an individual participates in this of sort historical experience, he or she comes to a new sense of awareness of self, has a new sense of dignity, and is stirred by a new hope. It gives the individual the tools to take on the arrogance, violence and false ending, that characterises the power discourse in Bangladesh today, or at least partially defang it.

Finally, have you heard the one about the Maulana and the Britisher Teacher?

During my research on the 2013 May Massacre in Dhaka, I was fortunate to meet a graduate of the Hathazari Madrassa. He had moved to the UK, taken up a career in business and was now married with children. In our discussions on the importance of education placed by the historian Ibn Khaldun (1332 – 1406), he narrated an anecdote.

That one day, his son came home from school and told him that he learnt from his teacher that Bangladesh was a poor and backward country, to which the UK government gives a lot of money for development. The next day, instead of dropping his son off to school, the Maulana took him on a day out, stopping first at the Tower of London. As they stood looking at the crown jewels, the Maulana pointed at the Kohi Noor stone and asked his son, ‘where do you think that came from?’ All day father and son visited various landmarks throughout London, which breathes heavily with the impacts of colonial capital, and discussed their history.

 The next day at school the furious head teacher wanted to take the Maulana to task for taking his son out of education. When pressed by the head teacher for an explanation, the Maulana indicated to his son to reply. His response and act of defiance is something worth sharing across our amnesiac nation, ‘We learnt in school that Bangladesh was a poor country but that’s a lie, because all its wealth is here in the UK along with the riches of other nations stolen by the British Empire’.

“But the Emperor has nothing at all on!” said a little child.

(Emperor’s New Clothes –

Hans Christian Anderson)

 As practitioners of the ‘Academy, Journalism and Art’ and as seasoned desh watchers, our roles should be to listen and record the stories that the people of Bangladesh tell us, not the ones that our foreign ‘development partners’ (funders & masters) pay for and want to hear. The challenge is to cultivate a dignifying and polyphonic history to humanise each other and heal the divisions that plague Bangladesh  – a new ‘Historiography of the Oppressed’.

 

O you who have attained to faith!,

Be ever steadfast in upholding equity,

bearing witness to the truth for the sake of God,

even though it be against yours own selves,

or your parents and kinsfolk.

Whether the person be rich or poor;

God’s claim takes precedence over [the claims of] either of them.

Do not then, follow your own desires,

lest you swerve from justice:

for if you distort [the truth], behold,

God is indeed aware of all that you do!

(Quran 4:135)

_________________________

We would like to dedicate this article to Mohammed Burhan Uddin who passed on a few days ago in Tangail, Bangladesh. Pictured here in his mid 80s, he was one of Bhashani’s oldest surviving disciples (mourides). He became involvedas a young man in the 1950s when he heard Maulana Bhashani pray openly  ‘don’t do anything for my kids but provide freedom for all’.

He was a cultivator who had not finished his primary education, but well informed about Syria and American Imperialism in general. He was part of a cultivator’s committee which went around checking prices of fish from market to market – just to make sure people were not getting swindled.

A few years ago on the 20th night of Ramadan,  Bhashani appeared to him in a dream instructing him to struggle, (Shongram kor) and that modern technology was insufficient, only a people’s movement would work.

 

রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডে ‘নিখোঁজ’ ঘোষিত ১৪৬ জনকে ‘নিহত’ ঘোষনা করুন প্লিজ

২৩ এপ্রিল ২০১৩ যখন রানা প্লাজায় ফাঁটল দেখা দেয় তখনই ঐ ফাটলগুলো পর্যবেক্ষণের পর বিপদজনক ঘোষনা করে একজন প্রকৌশলী একুশে টিভিতে সাক্ষাৎকার দেন। কিন্তু সন্ধায় ভবনের মালিক সোহেল রানা সাভারের তৎকালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে বৈঠক শেষে ঐ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সোহেল রানা দুই জনই একুশে টিভিতে ভবনটি সম্পূর্ন নিরাপদ ঘোষনা করেন। (উল্লেখিত দিনে একুশে টিভির সন্ধা সাতটার খবরটির ফুটেজ আর্কাইভ থেকে যোগাড় করলেই এটা পাওয়া যাবে)।

 

২৪ এপ্রিল ২০১৩ সকালে হরতাল বিরোধী মিছিল করার জন্য যুবলীগের কর্মী সমর্থকরা রানা প্লাজার নীচে সোহেল রানার অফিসে জড়ো হয়। অন্যদিকে গার্মেন্টসের শ্রমিকরা রানা প্লাজার বাইরে জড়ো হয়ে ঝুঁকিপূর্ন ভবনে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানাতে থাকে। গার্মেন্টস এর কর্মকর্তারা বিষয়টি সোহেল রানাকে জানালে সে তার দলীয় কর্মীদের দিয়ে জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে শ্রমিকদের ভবনটিতে গিয়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে।

 

শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবার কিছুক্ষণ পরেই লোড শেডিং শুরু হয় এবং ভবনটির বিভিন্ন তলায় থাকা জেনারেটরগুলো একসাথে চালু হয়। এর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই রানা প্লাজা ধ্বসে যেতে শুরু করে। ধারণা করা হয়, জেনারেটরগুলোর সম্মিলিত কম্পন ফাঁটল ধরা রানা প্লাজার দুর্বল স্তম্ভগুলো সহ্য করতে পারে নাই।

 

একটি ঝুঁকিপূর্ন ভবনকে নিরাপদ ঘোষনা কারা করেছিলো, তার প্রমান টিভি ফুটেজে রয়েছে। কারা জোর করে শ্রমিকদের ঐ ভবনে পাঠিয়েছিলো তার প্রমানও বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের সাক্ষাৎকারে পাওয়া যায়। তাহলে কী কারণে এখনো এই এক বছর পরও তদন্ত শেষ হলো না? রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঝুঁকিপূর্ন ভবনকে নিরাপদ ঘোষনা করার পর সেখানে শ্রমিকদের জোর করে কাজ করানোর কারনে এই ঘটনাকে আর ‘দুর্ঘটনা’বলার উপায় নেই; বরং এটি একটি ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’!

 

রানা প্লাজার হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক রূপ দিতে গিয়ে দেয়া দুইজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তির দেয়া নির্মম বক্তব্য আজো সবাইকে পীড়া দেয়। সেগুলো হচ্ছে-

“যারা মারা গেছে তারা মূল্যবান সামগ্রী সরাতে গিয়েছিলো”

“পিলার ধরে হরতালকারীরা নাড়া দেয়ায় ভবন ধস”

 

একজন মানুষ নিহত হলে তার পরিবার ও উত্তরাধীকারীরা তার সম্পদের বন্টন করতে পারে, তার জন্য বরাদ্দ ক্ষতিপূরণ পেয়ে ঐ কর্মক্ষম লোকটির ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলো বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু নিখোঁজ ঘোষনা করলে পরিবার ও উত্তরাধীকারীরা এই ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হবার পাশাপাশি স্বজনদের ফিরে পাবার এক দুরাশা নিয়ে দিন কাটায়। বিষয়টা যে কী পরিমান কষ্টকর তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না।

 

নিখোঁজ ঘোষিতদের স্বজনদের অপেক্ষা

নিখোঁজ ঘোষিতদের স্বজনদের অপেক্ষা

হে আমার রাষ্ট্র ও কর্তৃপক্ষ, আপনারা যদি মানবিক যুক্তি না বুঝতে চান তাহলে পাশবিক যুক্তি দিয়েই বোঝাই। ধরে নিন একটি বাক্সে ১০টি গিনিপিগ আছে। বাক্সটিকে যদি একটি ল্যান্ড রোলারের নীচে চাপা দেন তাহলে কী কয়েকটি গিনিপিগ নিখোঁজ হয়ে যাবে?

 

রাষ্ট্র ও কর্তৃপক্ষের কাছে কড়জোরে অনুরোধ করছি, রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডে ‘নিখোঁজ’ ঘোষিত ১৪৬ জনকে ‘নিহত’ ঘোষনা করুন প্লিজ।

 

এমন নির্মম অপেক্ষার ছবি আর দেখতে চাই না।

 

(ছবির উৎস:  ইন্টারনেট)

জিয়াউর রহমান সাহেবের প্রথম প্রেসিডেন্সি প্রসঙ্গে

3

শাফকাত রাব্বী অনীকঃ

অতীত ও ইতিহাস নির্ভরতা কোন জাতির এগিয়ে যাওয়ার পথে সহায়ক হতে পারেনা। ইতিহাস ও অতীত নিয়ে মারামারি দেশের একটি দল ও তার সমর্থকরা বেশি করলেও, অপর দল ও তার সমর্থকরাও মাঝে মধ্যে খামাখাই যোগ দেন। এই মুহুর্তে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সব চাইতে হট আলোচনার বিষয় হলো বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন।

বিএনপি সাইডের কথা বার্তা শুনে যা বুঝলাম, জিয়াউর রহমান সাহেবকে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ডিক্লেয়ার করার আগে নাকি বেশ কিছু সংবিধান বিশেষজ্ঞর পরামরর্শ নেয়া হয়েছিল। তারা গ্রিন সিগনাল দেবার পরেই এই ঘোষণা লন্ডন থেকে এসেছে। ঘটনা সত্য হলেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়।

প্রথম প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে এমন বিশেষজ্ঞ কতজন আছেন যারা আওয়ামী কিংবা বিএনপির সর্বোচ্চ নেতাদের মুখের উপর বস্তুনিষ্ঠ অপিনিয়ন দিতে পারেন? যেমন ধরুন, যদি শেখ হাসিনা দেশের শীর্ষ ১০ জন সংবিধান বিশেষজ্ঞকে ডেকে বলেন, “দেখুনতো আমার আব্বাকে সংবিধানের আলোকে এক্স-ওয়াই-জেড টাইটেল দেয়া যায় কিনা?” আমার ধারণা এই আবদার শোনা মাত্র বিশেষজ্ঞের দল সমস্বরে বলে উঠবেন, ” অবশ্যই যায়, আলবত যায়, যাবে না কেন? বরং আমরাতো লজ্জিত এটা ভেবে যে এই ব্যাপারটি আপনার মতো আমাদের মাথায় এতো দিন এলো না কেন!! আপনি একজন জিনিয়াস, একে বারে বাবার মতোন”।

উপরের বাস্তবতা আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে বেশী প্রযোজ্য হলেও, বিএনপির বিশেষজ্ঞরাও কতটা সঠিক পরামর্শ দিয়েছেন তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে।

এবার আসা যাক বিশেষজ্ঞ মহলের মূল যুক্তির দিকে। যতদূর বুঝেছি, বিশেষজ্ঞদের যুক্তির তিনটি মূল স্তম্ভ রয়েছে। প্রথমত, জিয়াউর রহমান সাহেব তার প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণায় বলেছিলেন যে তিনি নিজের হাতে কমান্ড তুলে নিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ১৯৭১ সালের মার্চের ২৬ তারিখ থেকে শুরু করে এপ্রিল এর মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে কিংবা প্রবাসে স্থাপিত কোন সরকার ছিল না। সুতরাং, জিয়া সাহেবের প্রথম ঘোষণা অনুযায়ী তিনিই প্রথম সরকার প্রধান। তৃতীয়ত, যেহুতু সরকার প্রধানই কেবল মাত্র যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন, সেহুতু জিয়া সাহেব উপরের প্রথম ও দ্বিতীয় যুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন সরকার প্রধান বা প্রেসিডেন্ট হিসেবেই।

উপরের যুক্তিগুলো নিয়ে যুক্তি খন্ডন করার কাজটি ভালো করতে পারবেন উভয় দলের বিশেষজ্ঞরা। আমি লে-ম্যান হিসেবে যুক্তি খন্ডনে যাবো না। জাতীয়তবাদী ভাবধারা ও দল হিসেবে বিএনপির সমর্থক হিসেবে, আমি তর্কের খাতিরে ধরেও নিতে রাজী আছি যে উপরের যুক্তিগুলো সঠিক। কিন্তু তার পরেও বেশ কিছু কথা বলা উচিত, চুপ না থেকে।

আমার মতে, উপরের প্রতিটি যুক্তিগুলোকে বলা যেতে পারে টেকনিকাল, আইনী কিংবা আমলাতান্ত্রিক। জিয়াউর রহমান সাহেবের যে ইমেজ দেশের হাজারো মানুষের মনে এখনও বেঁচে আছে, তা এই সব আমলাতান্ত্রিক কিংবা টেকনিকাল যুক্তিলব্ধ টাইটেল-ফাইটেল এর ধার ধারার কথা না।

জিয়া সাহেব দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন, নাকি প্রথম ফিল্ড মার্শাল ছিলেন, স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক ছিলেন নাকি দ্বিতীয় ঘোষক ছিলেন সেগুলোও টেকনিকাল আলোচনা। এগুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন তারা, যারা ইতিহাসকে “ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্পিং ডিসিশন” এর মতো কিছু একটা ভাবেন। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কাছে, বিশেষ করে যারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছেন, কিংবা জীবিত ছিলেন, তাদের চোখে জিয়াউর রহমান হলেন সেই ব্যাক্তি যার যুদ্ধকালীন নেতৃত্ব, রেডিওতে ভেসে আসা ঘোষণা মানুষ নিজের কানে শুনেছে, চোখে দেখেছে। থার্ড আম্পেয়ারের স্ক্রিনে দেখেনি।

২৬ এ মার্চের গণহত্যার রাতে দেশের তৎকালীন শীর্ষ রাজনৈতিক মহলের সবাই যার যার জান হাঁতে নিয়ে, যে যে দিকে পেরেছেন পালিয়েছিলেন। সেই রাত্রে যেই ইয়াং ছেলেটি পুরা দেশের মানুষের মনের কথা, নিজ দায়িত্বে, শুরুতে নিজের নামে, পরবর্তিতে একজন স্বেচ্ছায় ধরা খাওয়া শীর্ষ নেতার নামে রেডিওতে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই ইয়াং ছেলেটি ছিলেন জিয়াউর রহমান। তাকে কি নামে, কি উপাধিতে ডাকা হবে, তা নিয়ে গ্যালারির দর্শকেরা চিল্লা চিল্লি করতে পারে। তাতে জিয়ার ইমেজ বাড়া কিংবা কমার কথা না।

২৬ শে মার্চে জিয়া সাহেবের কিন্তু একটা ব্যক্তিগত স্টোরীও ছিল। তিনি কোন বিপ্লবী-বিবাগী ছিলেন না। তিনি সংসারী ছিলেন। তার ছোট্ট ছেলে ছিল, তার বউ ছিল। ২৬ সে মার্চের সেই রাতে তিনি যখন ঘোষণা দিয়েছিলেন, “উই রিভোল্ট” তখন তার নিশ্চয়ই ভয় হয়েছিল যে তার সেই সংসার, তার সেই ছোট্ট ছেলেকে আর কোনদিন না দেখার। আপনি জিয়াকে মহান না ভাবতে পারেন, তার নেতৃত্ব না মানতে পারেন, আশা করি যারা সন্তানের জনক তারা অন্তত দেশের জন্যে বাবা হিসেবে জিয়ার মৃত্যু ভয় জয় করতে পারার বিষয়টিকে সাধুবাদ দেবেন। জিয়া একজন বীরের মতো সেই ভয় জয় করেছিলেন, শত্রুর আঘাতের প্রথম রাত্রেই। তিনি ওয়েট এন্ড সি পলিসিও  নিতে পারতেন। তা না নিয়ে, প্রথম রাত্রেই প্রত্যাঘাতের কাজ শুরু করেছিলেন। একারণে বলতে হবে, জিয়া শুধু মাত্র একজন অসাধারণ সাহসী যোদ্ধা ছিলেন না, তিনি ছিলেন প্রত্যুৎপন্নমতি যোদ্ধা। এটাই ওনার সব চাইতে বড় পরিচয়। উনি কবে জেনেরাল ছিলেন, কবে মেজর ছিলেন, সেগুলো টাইটেল মাত্র।

বিএনপির যেই বিশেষজ্ঞরা তারেক রহমান বা খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দেন, তাদের জন্যে একটা ছোট্ট পরামর্শ। আপনারা যদি জিয়া সাহেবকে শেখ মুজিব সাহেবের সাথে অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতাতে নামাতেই চান, তাহলে শুধু একটা বিষয়কে হাই লাইট করুন। সেটি হলো, এই ব্যাক্তিদ্বয়ের একজন ছিলেন আঘাতের রাত্রে স্বেচ্ছায় ধরা খাওয়া, আর একজন ছিলেন  যুদ্ধ শুরু করে দেয়া মানুষ। এই ছোট্ট সিম্পল সত্যটি বেশী করে হাইলাইট করুন। এই কাজে আপনাদের কোন টেকনিকাল বা আমলাতান্ত্রিক যুক্তির প্রয়োজন হবে না। শিশু থেকে শুরু করে সংবিধান বিশেষজ্ঞও এক বাক্যে এই কম্পারিজন বুঝতে পারবেন।

জিয়ার মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, হেড কাউন্টে বাংলাদেশের সব চাইতে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ও একজন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর কমান্ডারের আর নতুন কোন টাইটেল লাগার কথা না, আইন কানুণে যাই থাকুক না কেন।

 

 

সাম্রাজ্যবাদী মুনাফালোভীদের ক্ষমতার নিচে চাপা পড়ে রাষ্ট্র আর জাতীয় সঙ্গীতের চেতনা হারানোর বয়ান

1

খন্দকার রাক্বীব

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম আর জাতীয় মুক্তির বিষয়গুলোকে ইদানিং যে হারে সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রির আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে তা প্রতিরোধ করা জরুরী। প্রথম আলো-গ্রামীণফোন গোষ্ঠী সর্বপ্রথম আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রামের ভাষা আন্দোলনকে নিজেদের ব্যবসার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এই ন্যক্কারজনক বিকৃত সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রির বাজার তৈয়ার শুরু করে। আস্তে আস্তে এর বিস্তার মহীরুহ ধারন করছে।

 

পুঁজিবাদী সমাজে সংস্কৃতির ধরণ ও গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যায় ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের তাত্ত্বিকদের দ্বারা বিনির্মিত এই সাংস্কৃতিক ইন্ডাস্ট্রির বয়ান গত শতাব্দীর তিরিশ-চল্লিশের দশকের হলেও, এতদিন এটি বাংলাদেশের পঠন-পাঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। কিন্তু এটি এখন যে উপায়ে বিকশিত হচ্ছে তা রীতিমত ভয়ানক।এটি জানা কথা যে, সংস্কৃতি হলো ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সৃজনশীলতার প্রকাশধর্মী বিষয় এবং সহজাতভাবে ইন্ডাস্ট্রিবিরোধী। অথচ সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রি প্রত্যয়ে সংস্কৃতিকে মানবিকিকরণ কিংবা মানবমুক্তির উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়না এবং একে মতাদর্শগত আধিপত্য বিস্তারের দায়িত্বপালনে নিয়োজিত করা হয় (W,adorno and Max Horkheimer, the dialectic of enlightenment, 1923)। আগে সংস্কৃতি সৃষ্টি হতো মানুষের আত্মার টান থেকে, ফলত তা ছিল অনেক উন্নত। আর এখন মুনাফা নির্ভর যে সংস্কৃতি গড়ে তার সর্বক্ষেত্রেই চলছে দেশীয় সংস্কৃতিকে হেয় অথবা বিকৃত করার ঘৃণ্য চক্রান্ত। জেমস পেত্রা তাঁর বিংশ শতাব্দীর নিমিত্তে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ(১৯৯৪) বইতে লিখেছিলেন রাজনীতির ময়দানে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ জনগণকে তাদের নিজস্ব কৃষ্টি-মূল ও সংহতির ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে মিডিয়াকৃত আকাঙ্ক্ষা, যা প্রচারের দ্বারা নিয়মিত পরিবর্তন করা হয়, তার শরিক করে ফেলতে বিশাল ভুমিকা পালন করে এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণকে শ্রেণী ও লোকসমাজের যোগসূত্রগুলো থেকে উচ্ছেদ করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ও পারস্পারিক একক নিঃসঙ্গ মানুষে পরিণত করা। সাংস্কৃতিক প্রভুত্ব বিশ্বজোড়া শোষণব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য মাত্রা, যার উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনে আধিপত্যবাদি শ্রেণীর এক সুসংবদ্ধ অনুপ্রবেশ।… শোষিত জনগণের মূল্যবোধ, আচরণ, প্রতিষ্ঠান ও অভিন্নতা সাম্রাজ্যবাদী শ্রেণীদের স্বার্থের অনুকূল করে গড়ে তোলা 

 

প্রথম-আলো গ্রামীণফোনের দ্বারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে শুরু হওয়া এই সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রি গণসংস্কৃতিরও ঊর্ধ্বে উঠে যেভাবে জাতীয় দিবস আর জাতীয় চেতনার আবেগের বিষয়গুলোকে নিজেদের মুনাফাবৃদ্ধি আর আধিপত্য তৈয়ারে ব্যবহার করছে তা ন্যক্কারজনক। প্রথম আলো- গ্রামীণফোন থেকে শুরু হতে হতে এই ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িয়ে পড়ছে সাম্রাজ্যবাদীদের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক,ফোরথোট পিআর, ডাচ বাংলা ব্যাংক আর রবি কোম্পানি। সম্প্রতি জাতীয় দিবসে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার নাম দিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিজেদেরকে এই মুনাফালোভীদের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে নিচ্ছে। আমার এক চাচা (যিনি বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চাকুরিরত) আমাকে গত পরশু বললেন, বাংলাদেশ সরকার যে মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে কম অর্থ বরাদ্দ করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিচের দিক থেকে তার দ্বিতীয় অবস্থানে। এই ‘বিতর্কিত সরকার’এর নয়া সংস্কৃতিমন্ত্রী নাকি এখন বরাদ্দ বাড়াতে কাজ করছেন। ভাল কথা, রাষ্ট্রের সংস্কৃতির উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ান জরুরী। তাই বলে এইভাবে জাতীয় সঙ্গীতকে মুনাফালোভীদের মত বাজারের পণ্যের মত করে হাজির করে অপমান করার অধিকার এই মন্ত্রণালয়ের নেই। জনাব কল্লোল মোস্তফা এই সাংস্কৃতিক ধান্ধাবাজি নিয়ে লিখেছেন “লাখো কন্ঠে সোনার বাংলার মূল উদ্যোক্তা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আর অর্থের বিনিময়ে এটি আয়োজনের দ্বায়িত্ব পেয়েছে এশিয়াটিক এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ফোরথট পিআরনামের একটা পিআর এজেন্সি।  সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়েরদ্বায়িত্বপ্রাপ্তমন্ত্রীজনাবআসাদুজ্জামাননূরআবারএইফোরথটপিআরনামেরপ্রতিষ্ঠানটিরব্যাবস্থাপনাপরিচালকবাম্যানেজিংডিরেক্টর! আসাদুজ্জামান নূর নিজেই সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে, অবশ্য তিনি বলেননি তার প্রতিষ্ঠান ফোরথট পিআর এর ভাগে ঠিক কত পড়েছে। জনাব নুর এর মাধ্যমে যে গুরুতর অপরাধ করেছেন তা হলো- সরকারি দ্বায়িত্বে থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভজনক পদে থাকা এবং দেশপ্রেমের রেকর্ডের নামে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাতে তার নিজের প্রতিষ্ঠান সরাসরি লাভবান হয়। ফলে লাখো কন্ঠে সোনার বাংলানামের আয়োজনটি কতটা দেশপ্রেম থেকে করা হয়েছে আর কতটা ব্যাবসায়িক ধান্দা থেকে করা হয়েছে সেই প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক“।

 

শুনলাম, প্রতিটা সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে, এই তথাকথিত গণসঙ্গীতে শামিল হতে। এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমাকে জানিয়েছেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়কর্তৃপক্ষ এই দিবসে অংশগ্রহণ করতে শিক্ষকদের নিয়ে দু’দুবার বৈঠক করেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের রাষ্ট্র জোরকরে মিটিংয়ে বসিয়ে তাদের যে সময় অপচয় করাচ্ছেন তা নিন্দনীয়।

 

অথচ রাষ্ট্র চাইলে বিজয়ের ৪৩ বৎসর বার্ষিকীতে বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় ৪৩হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারতো। রাষ্ট্র এখন নিজেই সাম্রাজ্যবাদী-মুনাফাখোর বাজিগরদের কবলে আক্রান্ত। রাষ্ট্রকে এই অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসা জরুরী।

 

সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রি এতদিন মুনাফালোভী ও আধিপত্যবাদী পুঁজিবাদীদের প্রকল্প থাকলেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যেভাবে নিজেদের এই প্রকল্পে জড়িয়ে নিচ্ছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে একরকম বিরল ঘটনা। জাতীয় মুক্তির ইস্যুতে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ফরজ কর্তব্য।

Raquib_bdf@yahoo.com

ফ্যাসীবাদের প্রেরণা -গুরু’র নতুন বাণী

6

আজকের বাংলাদেশে যে আওয়ামী ফ্যাসীবাদ পূর্নশক্তিতে জাকিয়ে বসেছে তার পিছনে মূল প্রেরণা হিসেবে রয়েছে কোনো বিশাল নেতা অথবা নেত্রী নয়, কোনো খ্যাতনামা রাজনীতির তাত্বিক নয়, রয়েছে একজন স্ব-আখ্যায়িত শিশুসাহিত্যিক। ফ্যাসীবাদের মূল নিয়ামক কিন্তু একজন ভয়ংকর কতৃত্ববাদী একনায়ক, একটি সর্বগ্রাসী রাজনৈতিক দল কিংবা গনদলনে সিদ্ধহস্ত পুলিশবাহিনী নয়। যেকোনো ফ্যাসীবাদের মূলে থাকে একটি কঠোর ও বিশুদ্ধ আইডিওলজী। পৃথিবীতে অনেক দেশেই নানারকম টিনপট ডিক্টেটরশীপ, একপার্টির রাজত্ব দেখা গেছে গত একশ বছরে কিন্তু প্রকৃত ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের সাথে এসব হীরক রাজার দেশগুলির মূল পার্থক্য হলো একটি ফ্যাসিস্ট আইডিওলজী। জনগনের গনতান্ত্রিক অধিকারকে সম্পূর্নভাবে নসাৎ করে এবং সেই সাথে জনগনের একটি বড়ো অংশের নি:শর্ত আনুগত্য বজায় রাখতে কেবল বিশাল পুলিশবাহিনী কিংবা বিদেশী সাহায্য যথেষ্ট নয়, এর জন্যে প্রয়োজন হয় একটি কঠোর ও জনপ্রিয় আইডিওলজীর। বাংলাদেশে ২০১৩-১৪ সালে যে নতুন ফ্যাসীবাদের সূচনা হয়েছে তার মূলের রয়েছে একটি আইডিওলজী, সেটি হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বর্তমানে এই আইডিওলজীর মূল প্রেরণা-গুরু হলো মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

575468_10151728328535653_444069226_n

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেমন করে বাংলাদেশে ফ্যাসীবাদের মূল হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এটি বোঝার জন্যে প্রেরনা গুরুর সর্বশেষ লেখাটিই খুব ভালো উপকরন হতে পারে। এই লেখায় এই নতুন ফ্যাসীবাদের ভিত্তিগুলি পরিষ্কারভাবেই উঠে এসেছে যারা বুঝতে সক্ষম তাদের জন্যে। “স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর” শীর্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবালের এই লেখাটিতে (http://www.priyo.com/2014/03/28/61144.html) অনেক কথাই রয়েছে, তবে আসল বক্তব্য রয়েছে কয়েকটি লাইনেই।

” শুরুতে বলেছিলাম দেশটাকে এগিয়ে নিতে হলে মূল কিছু বিষয়ে সবার একমত হতে হবে, বঙ্গবন্ধু যে এই দেশের স্থপতি সেটি হচ্ছে এরকম একটি বিষয়। এই দেশটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ করে পাওয়া একটি দেশ। তাই মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন নিয়ে এই দেশটি শুরু করা হয়েছিল সেই স্বপ্নকে ভিত্তি করে তার ওপর পুরো দেশটি দাঁড় করানো হবে, এই সত্যটিও সেরকম একটি বিষয়। আমরা আজকাল খুব ঘন ঘন গণতন্ত্র শব্দটি শুনতে পাই, যখনই কেউ এই শব্দটি উচ্চারণ করেন তখনই কিন্তু তাকে বলতে হবে এই গণতন্ত্রটি দাঁড় করা হবে মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তির ওপরে।

আমরা মুক্তিযদ্ধের ভিত্তি সরিয়ে একটা গণতন্ত্র তৈরি করব, সেই গণতন্ত্র এই দেশটিকে একটা সাম্প্রদায়িক দেশ তৈরি করে ফেলবে, সকল ধর্মের সকল বর্ণের সকল মানুষ সেই দেশে সমান অধিকার নিয়ে থাকতে পারবে না সেটা তো হতে পারে না।

কাজেই ধর্ম ব্যবহার করে রাজনীতি করা গণতান্ত্রিক অধিকার বলে দাবি করা হলেও সেটি কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের সাথে খাপ খায় না।” (2014/03/28/)

এই পুরো লেখাটিতে অনেক কথাবার্তার ভীড়ে মূল পয়েন্ট রয়েছে তিনটি। সেই তিনটি পয়েন্ট আলাদা করে বিশ্লেষন প্রয়োজন এটি বুঝতে যে কেমন করে জাফর ইকবাল আজকে আওয়ামী ফ্যাসীবাদের প্রধান প্রেরনাগুরু হয়ে উঠেছেন।

এই লেখায় তিনি বারবার এটা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবার এই ঐক্যমত্যে আসতে হবে যে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি। একথা ঠিক যে কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে হলে সমাজের সদস্য-নেতৃত্ব সবাইকে নুন্যতম কিছু ভিত্তির উপরে কনসেনসাসে পৌছতে হয়। আগেরকার রাজতন্ত্রিক দেশগুলোতে সেই ভিত্তি ছিলো রাজার সার্বভৌম ক্ষমতা। আধুনিক যুগে বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ব্যবস্থায় নানারকম নুন্যতম ঐক্যমত দেখা গেছে। যেমন সবার সমান অধিকার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক সমতা এরকম আরো কিছু। কিন্তু এই সব কিছুর উপরে আধুনিক রাষ্ট্রে যে ঐক্যমত্যে দেশের সকল নাগরিক ও রাজনীতিবিদদের একত্রিত হতে হয় সেটি হলো আইন ও সংবিধানের শাসন। দেশের মানুষ ও রাজনীতি আইন ও সংবিধানের বিভিন্ন ধারার বিরোধিতা করতে পারে, সেটি নিয়ে রাজনীতি করতে পারে, কিন্তু যতক্ষন আইন ও সংবিধান বলবৎ রয়েছে সেটি মেনে চলবে এবং তা ভংগ করলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে, এটিই হলো আধুনিক দেশশাসনের মূলভিত্তি।

রাষ্ট্রে কোনো একজন ব্যাক্তি অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা চেষ্টা ফ্যাসীবাদ প্রতিষ্ঠারই অন্যতম পদক্ষেপ। শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্থপতি কিংবা জাতির পিতা, এটি কোনো ঐতিহাসিক সত্য নয় এটি একটি ঐতিহাসিক মত। শেখ মুজিব বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আর্কিটেকচারাল  ব্লুপ্রিন্ট প্রস্তুত করে সেটি জাতিসংঘ থেকে পাশ করিয়ে আনেন নি কিংবা নিজ ঔরস থেকে কোটি কোটি বাংলাদেশীর জন্ম দিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট নেন নি।আমাদের বুঝতে হবে যে জাতির পিতা, মহাবীর, দ্বিগ্ধীজয়ী, বিদ্যাসাগর, বিশ্বকবি এই রকম খেতাবগুলি কোন ঐতিহাসিকভাবে প্রাপ্ত সনদ নয় বরং ইতিহাসে অনেক মানুষ এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে দেয়া টাইটেল মাত্র। এই খেতাবগুলির সারবত্তা নিয়ে যেমন ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে তেমনি এগুলির বিরূদ্ধে মতপ্রচারের পূর্ন অধিকারও রয়েছে। কোন দেশের প্রতিষ্ঠায় কে সবচেয়ে বড়ো, কার অবদান ছাড়া রাষ্ট্র জন্মই নিতো না, এই ধরনের মতামতগুলি কোনো আধুনিক রাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজের মূল ঐক্যমত্যের ভিত্তি হতে পারে না। এই ধরনের ব্যাক্তিকেন্দ্রিক দাবী তোলাও আজকের দিনে হাস্যকর। আজকের পৃথিবী ব্যাক্তি বা বংশ-কেন্দ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে অনেক আগেই উত্তরিত হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস পড়লে অধিকাংশ সুস্থির মতের মানুষই এই সিদ্ধান্ত নেবেন যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে মানুষটির একক অবদান সবার চেয়ে বেশী তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। তারা এটাও বলবেন যে তার অবদানের ধারে কাছে কেউ নেই। কিন্তু এই ব্যাপক সমর্থন থাকা স্বত্তেও শেষ পর্যন্ত এটি একটি ঐতিহাসিক মত, ঐতিহাসিক সত্য নয়। অবদান, ভূমিকা, এসবই সাবজেক্টিভ ব্যাপার, অবজেক্টিভ নয়। এই ধরনের ব্যাপক প্রচলিত মত সম্পর্কে দ্বিমত করারও অবকাশ রয়েছে এবং যেকোন সভ্য রাষ্ট্রে সেই দ্বিমত করার সুযোগও অবশ্যই থাকতে হবে।

আমেরিকার রাজনীতির ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৪৪ জন প্রেসিডেন্ট এর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ এবং কার অবদান সবচেয়ে বেশী এ নিয়ে বিতর্ক, র‍্যাংকিং লিস্ট করা এসব ইতিহাসবিদ এবং জনগন সবারই একটি বহু পুরাতন এবং নিয়মিত অভ্যাস। এই বিষয় নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো লিস্ট বের হয়। এই সব লিস্টে প্রায় অবধারিতভাবেই যে তিন জনের নাম এক, দুই ও তিন এর মধ্যে থাকে তারা হলো প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন, ষোড়শতম আব্রাহাম লিংকন এবং বত্রিশতম ফ্র‍্যাংকলিন রুজেভেল্ট। এদের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশীবার শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন আব্রাহাম লিংকন। ১৯৪৮ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত করা বিশেষজ্ঞদের ১৭ টি বিভিন্ন সার্ভেতে লিংকন শ্রেষ্ঠতম বিবেচিত হয়েছেন ১০ বার, দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠতম ৫ বার এবং তৃতীয় ২ বার। উইকিপিডিয়াতে এই আর্টিকেলটি বিস্তারিত রয়েছে (http://en.wikipedia.org/wiki/Historical_rankings_of_Presidents_of_the_United_States#Scholar_survey_results)। অর্থাৎ আমেরিকার প্রায় আড়াইশত বছরের ইতিহাসে আব্রাহাম লিংকন যে শ্রেষ্ঠতম নেতা কিংবা শ্রেষ্ঠের খুবই কাছাকাছি, এ বিষয়ে ইতিহাসবিদরা মোটামুটি একমত। শুধু ইতিহাসবিদরাই নন, এমনকি আমেরিকার সাধারন ও জনপ্রিয় ইতিহাসে আব্রাহাম লিংকন মোটামুটি প্রায় অতিমানবীয় অনন্য একজন সাধু-দার্শনিক-নেতা হিসেবেই পরিচিত, তার কাছের অবস্থানেও কেউ নেই।

এই যে মহান আব্রাহাম লিংকন, সেই লিংকনকে আমেরিকার দক্ষিন অংশ-যে দক্ষিনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সিভিল ওয়ারে উত্তরের নেতৃত্বে ছিলেন লিংকন- গত দেড়শত বছর ধরে কি ভাবে দেখা হয়? সোজা ভাষায় বলা যায় যে আমেরিকার দক্ষিনের শ্বেতবর্নের রক্ষনশীলেরা -যারা এখনো দক্ষিনের সবচেয়ে বড়ো এবং প্রভাবশালী অংশ- আব্রাহাম লিংকনকে শয়তানের সাক্ষাৎ অবতার হিসেবে মনে করে। এই মতামত শুধু দক্ষিনের সাধারন নাগরিকেরা নয়, দক্ষিনের রাজনীতিবিদরাও অকপটে প্রকাশ্যে বলতে কোনো দ্বিধা করে না। আমেরিকার রক্ষনশীলেরা এবং অন্যান্য অনেকেই প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন বই-গবেষনা প্রকাশ করে যেখানে তুলে ধরা হয় যে আব্রাহাম লিংকন কিভাবে একটি অনাবশ্যক যুদ্ধের সূত্রপাত করে আমেরিকার জনগনের উপরে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ও ধ্বংসাত্মক অধ্যায়কে চাপিয়ে দিয়েছেন। এসব আমার মতামত নয় বরং অনেক আমেরিকান রক্ষনশীলের মত। তারা লিংকনকে ঘৃনা করার পেছনে যুক্তি হিসেবে কি বলে তা বোঝার জন্যে ২০১০ এ প্রকাশিত Abraham Lincoln: The Southern View (http://www.amazon.com/Abraham-Lincoln-The-Southern-View/dp/0982770006) বইটির সারসংক্ষেপের কয়েকটি লাইন তুলে ধরা যেতে পারে।

লেখক Lochlainn Seabrook এই বইটিতে দক্ষিনের চোখে যে লিংকনকে তুলে ধরেছেন সেই লিংকন একজন – “an unscrupulous demagogue and anti-Christian liberal who broke hundreds of laws; ignored and even subverted the Constitution; used money from the Yankee slave trade to fund his war; sanctioned the murder of both Southern blacks (who would not enlist in the Union army) and harmless Southern noncombatants (including women and children); had tens of thousands of innocent Northerners arrested, imprisoned, and sometimes tortured and executed without charge or trial; rigged the 1860 and 1864 elections; confiscated and destroyed private property; censored governmental debate over secession; and more. Throughout all of this, Southern historians estimate that some 3 million Americans, of all races, died in direct consequence of his actions.”

বলাই বাহুল্য লিংকনের শ্রেষ্ঠত্ব অথবা লিংকনের নিকৃষ্টতা, এই সবই ইতিহাসের ফ্যাক্ট নয় এগুলি ইতিহাসের মতামত। আর মতামত নিয়ে বিভাজন থাকতেই পারে।

এখন প্রশ্ন হলো যে আব্রাহাম লিংকন এর নেতৃত্ব ও তার উত্তরাধিকার নিয়ে আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিনের এর তীব্র বিভাজনের জন্যে কি আমেরিকার রাজনীতির ক্রমাগত বিবর্তন ও উন্নয়ন থেমে রয়েছে? কোনো ভাবেই নয়, এই বিভাজনকে নিয়েই আমেরিকার গনতন্ত্র দিনে দিনে আরো বিস্তৃত ও সংহত হয়েছে। সিভিল ওয়ারে বিজয়ের পরে বিজয়ী উত্তর দক্ষিনকে এই আদেশ করে নি যে সবাইকে লিংকনের নেতৃত্বের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌছতে হবে। প্রতিটি মানুষ ও রাজনৈতিক সংগঠনের রয়েছে নিজস্ব মত ধারন ও প্রচারের অধিকার। কিন্তু সবাইকে দেশের আইন ও সংবিধান মেনে চলতে হবে। আমেরিকার দক্ষিন যুদ্ধে পরাজয়ের পরে মৌলিক নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে প্রদেশের উপরে ফেডারেল ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করেছে, সেটি মন থেকে মেনে নিয়েছে নাকি তার বিরুদ্ধে এখনো প্রচার করছে এটি দেশের সরকারের কোনো বিবেচনার বিষয় নয়, দেশের আইন মেনে চলছে কিনা এটিই সরকারের একমাত্র বিবেচ্য।

শুধু লিংকনই নয়, আজকের আমেরিকায় যদি কেউ বলে যে আমেরিকায় রাজনীতি করতে হলে স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের শ্রেষ্ঠ ভূমিকা স্বীকার করতে হবে, তবে তাকে মানুষ পাগলের চেয়েও যুক্তিবিহীন বলে মনে করবে। আর সেই দেশে দীর্ঘদিন থেকে, সেই দেশ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ সেজে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ফতোয়া দেন যে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে ‘ বঙ্গবন্ধু এই দেশের স্থপতি ‘ এই বিষয়ে সবার একমত হতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনীতি আলোচনায় আমেরিকা-বৃটেন এর তুলনা আনলেই অনেকে হারে রে করে তেড়ে ওঠেন যে এই দেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির সাথে ঐসব দেশের যোজন যোজন পার্থক্য সুতরাং এই ধরনের তুলনার মাধ্যমে কোনো ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা অনর্থক বাতুলতা মাত্র। ঠিক আছে। তাহলে এবার এমন একটি দেশের ইতিহাস-রাজনীতিই দেখা যাক যেটি মাত্র ৬০ বছর আগেও অর্থনীতি ও রাজনীতিতে আমাদের দেশের অবস্থানের খুব কাছেই ছিলো।

পার্ক চুং হি (Park Chung-hee) একজন জেনারেল যিনি একটি ক্যু এর মাধ্যমে ১৯৬১ সালে দ: কোরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এবং এর পরে প্রায় একনায়কের মতোই ১৮ বছর দ: কোরিয়া শাসন করেন, যে শাসনের অবসান ঘটে ১৯৭৯ সালে আততায়ীর হাতে পার্ক নিহত হবার পরেই। পার্ক চুং হি তার শাসনামলেই আধুনিক কোরিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করেন এবং তাকে একারনেই বিশ্বজুড়ে Father of Korean Economic Miracle বলা হয়। টাইম ম্যাগাজিন তাদের মিলেনিয়াম প্রকাশনায় পার্ক চুং হি কে বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ দশজন এশিয়ানদের একজন হিসেবে নির্বাচন করেছিলো। আজ পর্যন্ত দ: কোরিয়ার ডানপন্থী রাজনীতির সমর্থকেরা পার্ককে তীব্র ভক্তির সাথে স্মরন করে। অনেকটা তার স্মৃতির উপরে ভর করেই পার্কের কন্যা পার্ক গুন হেই (Park Geun-hye) ২০১৩ সালে দ: কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

পার্ক চুং হি যেমন একদিকে দেশের বিপুল অংশের কাছে দেবতুল্য ভক্তির ধারক তেমনি আরেক বৃহৎ অংশের কাছে তীব্র ঘৃনার পাত্র। পার্ক তার শাসনের সময়ে বামপন্থী ও গনতান্ত্রিক রাজনীতি ও কর্মীদের উপরে চরম অত্যাচার ও নিষ্পেষন চালিয়েছেন। দেশের শ্রমিকদের অধিকারকে দলন করে বড়ো কোম্পানীগুলিকে সবরকমের সুবিধা দিয়েছেন। তার সময়ে কোরিয়ার নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার বলতে কিছু ছিলো না। কোরিয়ার জনগনের পার্কের সময় হতে শুরু করে আরো অনেক দিন পর পর্যন্ত একের পর এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করে অবশেষে সেখানে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এরকম আরো অনেক কারনেই দ: কোরিয়ার বিপুল অংশের কাছে পার্ক চুং হি একটি ঘৃন্য নাম।

দ: কোরিয়ার জনগনের মধ্যে তাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রধানতম ব্যাক্তিত্ব নিয়ে যে এই বিশাল দ্বিভাজন, তার কারনে কি তাদের উন্নতি, প্রগতি বাধাগ্রস্থ হয়েছে? ১৯৭০ সালেও যখন দ: কোরিয়া আর উত্তর কোরিয়ার মাথাপিছু আয় একই সমান ছিলো সেখানে আজকে দ: কোরিয়ার মাথাপিছু আয় বাকশালী-ঐক্যমত্যের দেশ উ: কোরিয়ার চেয়ে প্রায় বিশগুন বেশী।

বস্তুত ইতিহাস নিয়ে ঐক্যমত্য ছাড়া এগুনো যাবে না এই ধরনের কথাবার্তার কোন সারবত্তা নেই। তৃতীয় বিশ্বের উপনিবেশ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দেশগুলির ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাবে যে যেসব দেশে মুক্তি সংগ্রামের গৌরবোজ্বল ইতিহাস নেই, যারা ঔপনিবেশিক প্রভুদের সাথে হ্যান্ডশেক করার মাধ্যমে নতুন দেশ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে, তারাই অর্থনীতি ও সমাজে বেশী উন্নতি করেছে। দেশের উন্নতির জন্যে ইতিহাস বা মতবাদ নিয়ে একমত হবার জন্যে যারা বেশী সরব তাদের অন্য কোন এজেন্ডা থাকে। এই এজেন্ডা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হলো দেশে ঘৃনার চাষ করে দ্বিভাজন সৃষ্টি করা। আর আমরা বার বার দেখেছি যে এই ঘৃনার দ্বিভাজন ও কৃত্রিমভাবে মতবাদের ঐক্যমত্যের চেষ্টাই গত কয়েক দশকে একের পর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও গনহত্যার জন্ম দিয়েছে।
এই ইতিহাস নিয়ে ঐক্যমত্যের উপরেই রয়েছে জাফর ইকবালের দ্বিতীয় ও মূল পয়েন্ট, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। জাফর ইকবাল বাংলাদেশে যেই ফ্যাসীবাদ প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রাণাতিপাত করে চলেছেন সেই ফ্যাসীবাদের মূল ভিত্তিই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা (বা স্বপ্ন, যে নামেই বলুন জিনিষটি একই)। এই লেখাতে এবং এর আগেও তিনি স্পষ্ট করেছেন যে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের চেয়ে বড়ো কিছুই নেই।

“তাই যারা প্রাণ দিয়ে, রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে এই দেশটা এনে দিয়েছে তার যে স্বপ্ন দেখেছিল সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই এই দেশের রাজনীতি হোক, অর্থনীতি হোক, লেখাপড়া হোক, চাষ আবাদ হোক, গানবাজনা হোক, সুখ-দুঃখ মান-অভিমান হোক, কোনো কিছুই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাইরে হতে পারবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতির প্রথম মাপকাঠি হচ্ছে ‍মুক্তিযুদ্ধ। যারা এটিকে অস্বীকার করে তাদের এই দেশে রাজনীতি করা দূরে থাকুক, এই দেশের মাটিতে রাখার অধিকার নেই।” (০১/১৭/২০১৪)
http://www.priyo.com/2014/01/17/49312.html

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাইরে এই বাংলাদেশে একটি গাছের পাতাও নড়তে পারবে না এই বিশ্বাস হলো জাফর ইকবাল আর তার লক্ষ লক্ষ ভাবশিষ্যের ইমানের মূল স্তম্ভ।  কিন্তু এখানে শুভংকরের সবচেয়ে বড়ো ফাকি হলো যে এই যে অতীব গুরুত্বপূর্ন মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, সেই স্বপ্নটি আসলে কি তার কোনো কংক্রীট বিবরন এই সব ফ্যাসিস্ট প্রফেটদের কাছে আপনি কখোনই পাবেন না। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে এই দেশের বিভিন্ন মত, বিভিন্ন বিশ্বাসের লক্ষ কোটি যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী আর যুদ্ধ পলাতক মিলে কিভাবে একটিই বিশুদ্ধ আর মৌলিক স্বপ্ন দেখে ফেললো আর সেই স্বপ্নের খাবনামাও সেই সকলের কাছেও তর্কাতীত ছিলো, এই রহস্যের কোন ব্যাখা আপনি পাবেন না। ম্যাজিশিয়ানের ট্রিকের মতো মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নও দূর থেকে দেখা আলো আধারির স্টেজ শো, কাছে গিয়ে বিশ্লেষন করলেই সেটা আর স্বপ্ন থাকে না।

বেশী চেপে ধরলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের দিশারীরা অবলম্বন করেন ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতিকে এবং তার ভিত্তিতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তাসের ঘর নির্মানের চেষ্টা করেন তারা। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চার মৌলিক উপাদানেই তৈরী মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্নের ভিত্তির উপরেই বাংলাদেশের রাজনীতি দাড় করাতে হবে এটাই শেষ পর্যন্ত দাবী করা হয়। এই দাবীটি যখন স্পষ্টভাবে বলা হয় তখনই এর শুভংকরের ফাকিটিও সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

জাতীয়তাবাদ নিয়ে এখানে বেশী কথা বলার দরকার নেই। জাতীয়তাবাদ নিয়ে এই দেশে এত লক্ষ লক্ষ পাতা আর শতকোটি শব্দ ব্যয় করার পরও জাতীয়তাবাদ নিয়ে সবার মাঝে যে কনফিউশন রয়ে গেছে তার বিন্দুমাত্র লাঘব ঘটে নি। ভৌগলিক, রাজনৈতিক, সাংষ্কৃতিক, নৃতাত্বিক, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের এই নানারূপের গোলোকধাধায় কোন একটি coherent মতবাদ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এই দাবী অনায়াসেই করা যায় যে বাংলাদেশে এখন এমন দুইজন শিক্ষিত নাগরিক পাওয়া যাবে না যারা জাতীয়তাবাদ বলতে পুরো একই রকম একটি বিশ্বাস ধারন করেন।

এরপরেই আসে মুক্তিযু্দ্ধের স্বপ্নের সবচেয়ে স্পষ্ট Achilles Heel সমাজতন্ত্রের কথা। লক্ষ্যনীয় যে এই সমাজতন্ত্র মানে পরবর্তীতে আরোপ করা সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক মুক্তি,  সোশ্যাল ডেমোক্র‍্যাসী এই ধরনের নির্দোষ, নিরীহ শ্লোগান নয়। ১৯৭২ এর সমাজতন্ত্র মানে সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থা। সেই সংবিধানেই স্পষ্ট বলা আছে,

“১০/ মানুষের উপর মানুষের শোষন হইতে মুক্ত ন্যায়নুগ ও সাম্যবাদী সমাজ লাভ নিশিত করিবার উদ্দ্যেশ্য সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।”

এই সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আরো বিশদ বলা হয়েছে ১৩ অনুচ্ছেদে।

Somaj

সমাজতন্ত্র নিয়ে বিশদ আলোচনা করাও এই লেখার উদ্দ্যেশ্য নয়। শুধু একটি কথাই বলা যেতে পারে যে আজকের বাংলাদেশে কতোজন লোক মনে করে যে এই দেশের অর্থনীতির প্রধান ক্ষেত্র গুলি, যেমন শিল্প, গার্মেন্টস এই সবের জাতীয়করন করা প্রয়োজন? কারা মনে করে দেশের জন্যে দরকার আরো অনেক ‘দোয়েল ল্যাপটপ’ প্রজেক্ট? কয়জন মনে করে যে সমবায়ের ভিত্তিতে কৃষিকে পরিচালনা করতে হবে? কারা বিশ্বাস করে যে সারা দুনিয়ায় কালেক্টিভ অর্থনীতি ফেল মারার পরে এই বাংলাদেশেই সমাজতন্ত্র তার সমুজ্বল ভবিষৎ নির্মানের সূচনা করবে? সমাজতন্ত্র যদি মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন হয়ে থাকে তবে সেই স্বপ্ন এইদেশে অনেক আগেই টুটে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের নামে যেই মতবাদটির যাবতীয় তর্ক-বিতর্কের মূলে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা একটি আধুনিক, গনতান্ত্রিক, যুক্তিসম্মত আদর্শ। যে কোন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যাক্তিই এর বিরোধিতা করতে দ্বিধা করবে। ১৯৭২ এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বোঝানো হয়েছে,

dhormo

এখানে (ক), (খ) এবং (ঘ) অনুচ্ছেদ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই বললেই চলে। এমনকি যারা ধর্মীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন তারাও এই নীতিগুলির সরাসরি বিরোধিতা করবেন না বরং সমর্থনই করবেন। মূল বিতর্ক (গ) অনুচ্ছেদ নিয়ে। পৃথিবীর কোনো গনতান্ত্রিক দেশে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাজনীতি করার অধিকার খর্ব করা হয় নি। প্রতিটি গনতান্ত্রিক দেশে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাজনীতির অধিকার রয়েছে কারন এটি রাজনীতি করার মৌলিক অধিকার প্রশ্নেই অংগাগীভাবে জড়িত। কিন্তু এই বাংলাদেশেই, এই মূর্খ ফ্যাসীবাদীরা, এক অনন্য হবুচন্দ্র মার্কা রাজত্ব কায়েমের জন্যে এই ফ্যাসীবাদী মতকে দেশের উপরে চাপিয়ে দেবার জন্যে বদ্ধপরিকর।

ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে এই ক্ষুদ্র, এলিটিস্ট গোষ্ঠী যে ফ্যাসীবাদী মতকে দেশের উপরে চাপিয়ে দিতে চান তার সাথে বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কোন আত্মিক সংযোগ নেই। এটা ১৯৭১ এ ছিলো না, ১৯৭২ এও ছিলো না, আজকে আরো নেই। এই প্রসংগে আবুল মনসুর আহমেদ এর সেই ক্ল্যাসিক লেখা “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর” এর লেখা স্মর্তব্য,

অথচ প্রকৃত অবস্থাটা এই যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় পাকিস্তানও ভাংগে নাই “দ্বিজাতিতত্ত্ব”ও মিথ্যা হয় নাই। এক পাকিস্তানের জায়গায় লাহোর-প্রস্তাব মত দুই পাকিস্তান হইয়াছে। ভারত সরকার লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নে আমাদের সাহায্য করিয়াছেন। তারা আমাদের কৃতজ্ঞতার পাত্র। দুই রাষ্ট্রের নামই পাকিস্তান হয় নাই, তাতেও বিভ্রান্তির কারণ নাই। লাহোর প্রস্তাবে “পাকিস্তান” শব্দটার উল্লেখ নাই, শুধু ‘মুসলিম-মেজরিটি রাষ্ট্রের’ উল্লেখ আছে। তার মানে রাষ্ট্র-নাম পরে জনগণের দ্বারাই নির্ধারিত হওয়ার কথা। পশ্চিমা জনগণ তাদের রাষ্ট্র-নাম রাখিয়াছে “পাকিস্তান”। আমরা পূরবীরা রাখিয়াছি “বাংলাদেশ”। এতে বিভ্রান্তির কোনও কারণ নাই।

—         ইংরেজ আমলের আগের চারশ বছরের বাংলার মুসলমানের ইতিহাস গৌরবের ইতিহাস। সেখানেও তাদের রুপ বাংগালী রুপ। সে রুপেই তারা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সৃষ্টি করিয়াছে। সেই রুপেই বাংলার স্বাধীনতার জন্য দিল্লীর মুসলিম সম্রাটের বিরুদ্ধে লড়াই করিয়াছে। সেই রুপেই বাংলার বার ভূঁইয়া স্বাধীন বাংলা যুক্তরাষ্ট্র গঠণ করিয়াছিলেন। এই যুগ বাংলার মুসলমানদের রাষ্ট্রিক, ভাষিক, কৃষ্টিক ও সামরিক মণীষা ও বীরত্বের যুগ। সে যুগের সাধনা মুসলিম নেতৃত্বে হইলেও সেটা ছিল ছিল উদার অসাম্প্রদায়িক। হিন্দু-বৌদ্ধরাও ছিল তাতে অংশীদার। এ যুগকে পরাধীন বাংলার রুপ দিবার উদ্দেশ্যে “হাজার বছর পরে আজ বাংলা স্বাধীন হইয়াছে” বলিয়া যতই গান গাওয়া ও স্লোগান দেওয়া হউক, তাতে বাংলাদেশের জনগণকে ভুলান যাইবে না। আর্য্য জাতির ভারত দখলকে বিদেশী শাসন বলা চলিবে না, তাদের ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, রাজপুত, কায়স্থকে বিদেশী বলা যাইবে না, শুধু শেখ-সৈয়দ-মোগল-পাঠানদেরই বিদেশী বলিতে হইবে, এহেন প্রচারের দালালরা পাঞ্জাবী দালালদের চেযে বেশী সফল হইবে না। এটা আজ রাষ্ট্র-বিজ্ঞানের সর্বজন-স্বীকৃত সত্য যে, কৃষ্টিক স্বকীয়তাই রাষ্ট্রীয় জাতীয় স্বকীয়তার বুনিয়াদ। কাজেই নয়া রাষ্ট্র বাংলাদেশের কৃষ্টিক স্বকীয়তার স্বীকৃতি উপমহাদেশের তিন জাতি-রাষ্ট্রের সার্বভৌম সমতা-ভিত্তিক স্থায়ী শান্তির ভিত্তি হইবে॥”

– আবুল মনসুর আহমদ / আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর ॥ [খোশরোজ কিতাব মহল – ডিসেম্বর, ১৯৯৯ । পৃ: ৬৩২-৬৩৮]

আসলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের নামে জাফর ইকবাল এবং তার শিষ্যদের সকল আহাজারির মূলেই রয়েছে একটি জিনিষ, সেটি হলো গনতন্ত্র। তারা ভালোভাবেই জানে যে তারা যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন দেখেন সেই স্বপ্ন বাংলার জনগন ১৯৭১ এ দেখেনি আজও দেখে না। এই কারনেই গনতন্ত্রকে তাদের এতো ভয়। একারনেই নানারকম ছলছুতো, শর্ত দিয়ে গনতন্ত্রকে পর্দার আড়ালে ফেলতে তাদের এতো প্রচেষ্টা। জাফর ইকবাল যে গোষ্ঠীর প্রেরণাগুরু, মন্ত্রী-এশিয়াটিক ডিরেক্টর আসাদ্দুজ্জান নূর যেই গোষ্ঠীর যোগানদার, শামীম ওসমান-তাহের গং যে গোষ্ঠীর সিপাহসালার এবং শাহবাগীরা যেই গোষ্ঠীর ফুট সোলজার, সেই গোষ্ঠীর একটিই লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে আওয়ামী ধর্মের একছত্র রাজত্ব কায়েম করা।

এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে তারা দেশের জনগনকে সরাসরি বাধ্যতামূলক প্রেসক্রিপশনও দিয়ে রেখেছেন। প্রথমেই আপনাকে শেখ মুজিবের নবুয়ত স্বীকার করতে হবে। এরপরে আওয়ামী আদর্শগুলিতে ইমান আনতে হবে। তারপরে সকল আওয়ামী বিরোধীকে ঘৃনাভরে বর্জন করতে হবে। এই প্রেসক্রিপশন মেনে নেয়ার পরেই আপনি যত ইচ্ছা রাজনীতি করতে পারেন। এর আগে রাজনীতি-গনতন্ত্র এসব কোনকিছুই বিবেচনা করা যাবে না।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই সময়ে সবচেয়ে বড়ো বাস্তবতা যে দেশের ভাগ্য জনগনের হাতে নেই। একটি চরমপন্থী গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বার্ষিক ১৫০ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির একটি আস্ত রাষ্ট্রকে কুক্ষীগত করে ফেলেছে। এই বাস্তবতা হতে চোখ ফিরিয়ে, জনগনের অক্ষমতাকে ভুলিয়ে দিতে ফ্যাসীবাদের প্রেরনাগুরু গনতন্ত্রকে তুচ্ছ করে একের পর এক ঐশীবাণী দিয়েই যাবেন প্রতিটি মাসে একের পর এক উপলক্ষকে আশ্রয় করে। আর সেই বাণী সোৎসাহে প্রচার করতে থাকবে চেতনায় বুদ হয়ে থাকা বাংলাদেশী হিটলার ইয়ুথ (Hitlerjugend)। স্টেডিয়ামে পতাকা নিষেধাজ্ঞা, বৃহত্তম পতাকা, লক্ষকন্ঠে জাতীয় সংগীত, এইসব Fascist Mass Spectacle এই প্রোগ্রামেরই অংশ।

18w91xufbk7ayjpg

পরিশেষে পুনরায় আবার মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বা চেতনা নিয়ে অতুলনীয় আবুল মনসুর আহমেদ এর ই আরেকটি বক্তব্য।

 “… জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার মহান আদর্শই আমাদের বীর জনগণকে মুক্তি-সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল। তথ্য হিসাবে কথাটা ঠিক না। আওয়ামী লীগের ছয়-দফা বা সর্বদলীয় ছাত্র একশন কমিটির এগার-দফার দাবিতেই আমাদের মুক্তি-সংগ্রাম শুরু হয়। এইসব দফার কোনটিতেই ঐ সব আদর্শের উল্লেখ ছিল না। ঐ দুইটি ‘দফা’ ছাড়া আওয়ামী লীগের একটি মেনিফেস্টো ছিল। তাতেও ওসব আদর্শের উল্লেখ নাই।

বরঞ্চ ঐ মেনিফেস্টোতে ‘ব্যাংক-ইনশিওরেন্স, পাট ব্যবসা ও ভারি শিল্পকে’ জাতীয়করণের দাবি ছিল। ঐ ‘দফা’ মেনিফেস্টো লইয়াই আওয়ামী লীগ ৭০ সালের নির্বাচন লড়িয়াছিল এবং জিতিয়াছিল। এরপর মুক্তি সংগ্রামের আগে বা সময়ে জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের পক্ষ হইতে আর কোনও ‘দফা’ বা মেনিফেস্টো বাহির করার দরকার বা অবসর ছিল না। আমাদের সংবিধান রচয়িতারা নিজেরা ঐ মহান আদর্শকে সংবিধানযুক্ত করিযাছিলেন। তাই জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঐ ভুল তথ্য পরিবেশন করিয়াছেন।

রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের মতাদর্শকে জনগণের মত বা ইচ্ছা বলিয়া চালাইয়াছেন বহু বার বহু দেশে। সবসময়েই যে তার খারাপ হইয়াছে, তাও নয়। আবার সব সময়ে তা ভালও হয় নাই। পাকিস্তানের সংবিধানের বেলায় ‘ইসলাম’ ও বাংলাদেশের সংবিধানের বেলায় ‘সমাজতন্ত্র, জাতীয়তা ও ধর্ম-নিরপেক্ষতা’ও তেমনি অনাবশ্যকভাবে উল্লিখিত হইয়া আমাদের অনিষ্ট করিয়াছে। আমাদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বহু জটিলতার সৃষ্টি করিয়াছে। এসব জটিলতার গিরো খুলিতে আমাদের রাষ্ট্র-নায়কদের অনেক বেগ পাইতে হইবে॥”

– আবুল মনসুর আহমদ / আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর ॥ [খোশরোজ কিতাব মহল – ডিসেম্বর, ১৯৯৯ । পৃ: ৬২০-৬২১]

[আবুল মনসুর আহমেদ এর book excerpts are courtesy of FB blogger Kai Kaus   https://www.facebook.com/kay.kavus?fref=ts    ]

 

 

 

 

বাঙালীয়ানা যাচাই ফিল্টার

2

 by: Aman Abduhu

দেশপ্রেম দিয়ে গিনেজ রেকর্ড করার বালখিল্যতা নিয়ে লিখেছিলাম। আমার বক্তব্য ছিলো, কোন ব্যাতিক্রমী মানুষ বা প্রতিষ্ঠান সাধারণত এইসব রেকর্ড করে পরিচিতি বাড়ায়। কিন্তু কোন রাষ্ট্র এর পেছনে দৌড়াচ্ছে, পুরো দেশের মানুষ মিলে বানর নাচ নেচে যাচ্ছে, এমনটা অভূতপূর্ব।

ফেসবুকের সে লেখাতে একজন দেশপ্রেমিক বাঙালী এসে আলগোছে মন্তব্য করেছেন “আপনি বাংলায় স্ট্যাটাস দিয়েছেন। বাঙ্গালী বলে মনে হয়। আসলে কি তাই?”

এমনিতে মনে হয় প্রশ্নটা খুবই নীরিহ। নরম সুরে কোমলভাবে উত্থাপন করা ভয়ংকর এ প্রশ্নটা আমাকে আনন্দ দিয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন মাতৃজঠরে থেকে সম্প্রতি ভুমিষ্ঠ হওয়া বাঙালী-চেতনাধর্মের ফ্যাসিবাদী দাঁতালো চেহারা আবারও বের হয়ে এসেছে। ঐ ধর্মাবলম্বী ভদ্রলোকটি আমাকে হাতের নাগালে পাচ্ছেন না বলে অন্তর্জালে চমৎকার এ নিরীহদর্শন প্রশ্নটি করেছেন। সামনে পেলে এবং তার ক্ষমতা থাকলে প্রশ্নের ধরণ হতো অন্যরকম।

1964867_233278453532679_896769875_n

আমি নিজে সাধারণ একজন নাগরিক, এবং হাজার হাজার ফেসবুকারের একজন। কিন্তু যখন কোন উল্লেখযোগ্য মানুষ এসে সে চেতনায় আঘাত করে বসেন, এ প্রশ্নটা আর হালকা কোন প্রশ্ন হয়ে থাকেনা। তখন ফ্যাসিজম তার আসল চেহারা দেখায়। তখন গুম হয়ে যেতে হয়, গালিগালাজ ও অপমানের তোপের মুখে পড়তে হয়, অথবা মাহমুদুর রহমানের মতো জেলখানায় পঁচতে হয়। এমনকি মিনা ফারাহ’র মতো নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যায়। কারণ ফ্যাসিজম কখনো ইনক্লুসিভ হয়না। ঐ পথে হাটা এদের এ বাঙালী ধর্মও হয়নি। কেউ ভিন্নমত প্রকাশ করলে তাকে সমাজচ্যুত করা এ ধর্মের বৈশিষ্ট্য। এবং ভদ্রলোক তার সহফেসবুকার আমাকে সমাজচ্যুত করার সে তাড়না থেকেই তার নিরীহদর্শন প্রশ্নটি করে বসেছেন।

বড় কথা হলো, প্রশ্নটি দেখে আমি দু’জন মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেছি। হিটলার এবং মুসোলিনী। এ দুই ফ্যাসিষ্ট ডিক্টেটর ইতিহাসে এমন সব কাজ করে গেছেন, শেখ হাসিনার মতো নব্য ফ্যাসিষ্ট ও তার শাহবাগি অনুসারীদের কাজের বিশ্লেষণ করতে গেলে উদাহরণ খুঁজে পেতে সমস্যা হয়না। বুঝতে কষ্ট হয়না।

বাঙালীয়ানা থাকা না থাকার প্রশ্ন উত্থাপনে মনে পড়লো দুইটা আইনের কথা; দুটাই ছিলো জাতীয়তা এবং সংশ্লিষ্ট অধিকার থাকা না থাকা সংক্রান্ত। ১৯৩৫ সালে জার্মানিতে হিটলার বাস্তবায়ন করেন ন্যুরেমবার্গ রেইস ল, এবং ১৯৩৮ সালে ইটালিতে তার শিষ্য মুসোলিনি বাস্তবায়ন করেন মেনিফেস্টো অভ রেইস। এ দুই আইনের মূলকথা ছিলো, খাটি আর্য/আরিয়ান জাত ছাড়া অন্য কেউ জার্মানি এবং ইটালির পূর্ণ অধিকারপ্রাপ্ত নাগরিক না। এবং ইহুদিরা কোন নাগরিকই না।

আলেক্সান্ডার ডি গ্রান্ড তার ‘জুইশ ইন ইটালি আন্ডার ফ্যাসিস্ট এন্ড নাজি রুল’ বইয়ে ইটালির ঘটনাগুলো বিস্তারিত লিখেছেন। আমাদের জাফর ইকবালের মতো তাদেরও সেসময় তাত্ত্বিক পন্ডিতেরও অভাব ছিলো না। এইসব জ্ঞানীগুণীরা তখনও শিশুর মতো সরল মন নিয়ে সাদাসিধে ভাবে ফ্যাসিজমের সেবা করে গিয়েছেন, বিভেদ-বৃক্ষের গোড়াতে আপনমনে পানির সেচ দিয়ে গেছেন।

ড. গুইডো লন্ড্রা নামে এক এনথ্রোপলজিস্ট বিজ্ঞানী গবেষণা করে তখন এক বৈজ্ঞানিক নীতিমালা প্রণয়ন করেন। ইটালির সে চেতনা ফিল্টারের নাম ছিলো ‘মেনিফেষ্টো অভ রেইসাল সায়েন্টিস্টস’, খাঁটি আর্যরা সে ফিল্টারের ভেতরে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে নাগরিক হয়ে বের হতো। আর রক্তে সমস্যা থাকলে অথবা চেতনায় ঘাটতি থাকলে ফিল্টারে আটকে যেতো। ফ্যাসিজমের বিরোধীতা করা মানুষরা আর ইহুদিরা আটকে যেতো, তাদের খাঁটি ইটালিয়ানত্ব এবং খাঁটি জার্মানত্ব বাতিল করা হতো। তারপর তাদেরকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে, শ্রমিক বানিয়ে, নির্যাতন করে, এবং হত্যা করে চেতনার বাস্তবায়ন করা হতো।

ফ্যাসিজম এমনই। যুগে যুগে ঘুরে ফিরে আসে। এসে এসে জাতীয়তা এবং আত্মপরিচয়ে কত আনা খাদ আছে তা যাচাই করতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়ে। চেতনা ধর্মে অন্ধ এই মানুষগুলো এতো বেশি স্পর্ধা পেয়ে যায় যে, তারা দেশের সর্বোচ্চ স্থান থেকে শুরু করে বাসায় বাসায় ঢুকে যেখানে সেখানে তাদের চেতনার এসিড টেষ্ট শুরু করে দেয়। সুপ্রিম কোর্টের মতো বিশাল প্রতিষ্ঠানের সামনে দাড়িয়ে তাদের ছোট ছোট পিচকালো চেতনা প্রদর্শন করে। আবার পথ চলতে সামনে কাউকে পেলে জিজ্ঞাসা করে বসে, আপনি কি বাঙালী?

এরা বুঝতে অক্ষম, সাময়িক সময়ের জন্য শক্তির জোরে এইসব বাঙালী চেতনা ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা যায়, লাখো কণ্ঠে অর্থহীন রেকর্ড করে রাষ্ট্রকাঠামোর সম্মান ও মর্যাদাকে খেলো করা যায়, কিন্তু শেষপর্যন্ত তাদের স্থান হয় ইতিহাসের ভাগাড়ে। ঘৃণিত হতে হয়।

আমাদের সামনে দুইটা পথ আছে। এইসব ছোট ছোট পিচকালো চেতনাধারীদের সাথে তর্ক করে সময় কাটাতে পারি। কোন লাভ হবে না। এদের চ্যাতনা অন্ধত্ব কাটবে না, কিন্তু ঝগড়াঝাটি করে গালিগালাজ দিয়ে কিছুটা হয়তো দমানো হবে। অন্য আরেকটা পথ হলো হিটলার ও মুসোলিনীর মতো ফ্যাসিষ্টদের সাথে শেখ হাসিনা ও তার শাহবাগি চ্যাতনাজীবি অনুসারীদের মিল ও অমিল, এবং কখনো বরং বাড়াবাড়ির বিষয়গুলো, খুঁজে বের করে ইতিহাসের জন্য, আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারি।

আমার মনে হচ্ছে প্রথম কাজটা পুরোপুরি বাদ দেয়া না গেলেও, দ্বিতীয় কাজটা অনেক বেশি দরকারী।

গিনেজ বাংলাদেশ

by: Aman Abduhu

গিনেজ রেকর্ডের সাথে পরিচয় ছোটবেলায়, না বুঝতে শেখার বয়স থেকেই শুরু।

ইত্তেফাকের ভেতরের পাতায় এ ধরনের কাজকর্মের ছবি থাকতো। সম্ভবত গিনেজ বা রিপলিস বিলিভ ইট অর নট। মাঝে মাঝে রহস্যপত্রিকা, বিচিত্রা, রিডার্স ডাইজেষ্ট বা ঢাকা ডাইজেষ্টেও দেখতাম। অদ্ভুত সব ঘটনা আর সাথে চমৎকার হাতে আঁকা ছবি। অমুক দেশে একজন চুল দিয়ে ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে, তমুক দেশে আরেকজন পানির উপর ঘুমাচ্ছে, পিপড়ারা মিলে সাতফুট উঁচু পিপড়া-বাড়ি বানিয়েছে। এ ধরণের মজার মজার ছবিগুলো দেখে ভাবতাম পৃথিবী কতইনা আজব একটা জায়গা!

আর আজকে আমার দেশ, বাংলাদেশটাই হয়ে গিয়েছে পৃথিবীর আজবতম দেশ। যেদেশে নাগরিকরা খেতে পায় না চিকিৎসা পায় না শিক্ষা পায় না, সে দেশে আজ রেকর্ড বানানোর জন্য শতকোটি টাকা লুটোপুটি খায়। এই দেশে মানুষ স্বাভাবিক অধিকারগুলো পায় না। প্রতিদিন নারীরা ধর্ষিত হয় শুধুমাত্র বাকি জীবনটুকু ভয়ংকর আতংক নিয়ে বুকফাটা কান্না চেপে রাখার জন্য। প্রকাশ্য দিনের বেলায় সবার সামনেই মানুষ খুন হয় বিচারহীন, অথবা রাতের বেলায় গুম হয়ে যায় হারিয়ে যায় চিরদিনের জন্য। আর সেদেশের মানুষ দরদ দিয়ে গান গায়, আমার সোনার বাংলা! আশ্চর্য সব ছবির সাথে বলার মতো বাংলাদেশের গিনেজ রেকর্ড কি পতাকা বা গানে? আমার তো মনে হয় আসল গিনেজ রেকর্ড এগুলোই।

ছবি দেখার বয়স পেরিয়ে একটু বড় হয়ে যখন বুঝতে শিখলাম, তখন থেকে দেখে আসছি বিভিন্ন ধরণের ব্যাতিক্রমী মানুষেরা গিনেজ রেকর্ড করে। মাঝে মাঝে অনেক মানুষ মিলেও রেকর্ড করে। এসব ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠান, অর্গানাইজেশন বা কোম্পানী এইসব কাজকর্ম স্পন্সর করে। তাদের নামও রেকর্ডের সাথে যোগ হয়।

কিন্তু কোন দেশ?? পুরো একটা দেশ মিলে গিনেজ রেকর্ডের মতো একটা প্রতিষ্ঠানের হালকা স্বীকৃতি পাওয়ার মতো কাজের পেছনে দৌড়াতে থাকে! আমার দুর্বল স্মৃতিতে এমন ঘটনা আর মনে পড়ে না। মনে করতাম, দেশ বা রাষ্ট্র আরো অনেক উঁচু পর্যায়ের বিষয়। ধারণা ভুল ছিলো।

এখন দেখি বাংলাদেশ দৌড়াচ্ছে। বাংলাদেশের পতাকা রেকর্ড হলো। দেখে বাংলাদেশের সৎ ভাই পাকিস্তানের হিংসা হলো। তারাও দৌড়ালো। পৃথিবীতে এমন অদ্ভুত দেশ কি আর তৃতীয় কোনটা আছে? এসব দেখে বিবমিষা হয়েছিলো আমার। গাড়ির পেছনে একটা লাল সবুজ কাগজের পতাকা লাগিয়ে রেখেছিলাম। যেদিন পতাকা রেকর্ডের ছবিটা প্রথম দেখলাম, ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে কার ওয়াশে গিয়ে ঘষে ঘষে তুলে ফেলেছি। প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো, ঘৃণা লাগছিলো। তারপর বাসায় ফিরে দেখি পড়ার টেবিলের উপর টেবিল ল্যাম্পে আরেকটা পতাকা লাগানো; কাপড়ের ব্যান্ডানা। অনেক ভাবলাম এটাও নোংরা করে বিনে ফেলে দেই। কিন্তু পারিনি। লাল বৃত্তটার দিকে তাকিয়ে এখন লিখছি। এতো বদমায়েশির পরও ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মাটি আর লাল সবুজের পতাকা অনেক কষ্ট দেয়।

তবে স্বীকার করতে হয়, বাংলাদেশ আর পাকিস্তান এ দুটো দেশ হলো অনন্য। কোন তুলনা নেই। দেশের বাইরে গেলে থার্ড আই ভিউতে দেখা যায়, এ দুই দেশের মানুষেরা কেমন। আমরা বাংলাদেশীরা এভারেজে যতটা খারাপ, পাকিস্তানীরাও ইন জেনারেল ততটা বদমাইশ। সত্যিকার অর্থে ব্যর্থ দুইটা দেশ। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বানানো অতীত ছাড়া এ দুই দেশেরই গর্ব করার মত তেমন কোন অর্জন নেই। পাকিস্তানীদের নিউক্লিয়ার পাওয়ার আছে অবশ্য, কিন্তু তা আসলে জলা জমির উপর দাঁড় করিয়ে রাখা রিয়েল এষ্টেট কোম্পানীর সাইনবোর্ডগুলোর মতো। ভেতরে ফাঁপা, ঠনঠন। এই ধরণের অর্থহীন এবং ফাঁপা কাজে তাদের কাউন্টারপার্ট বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সামর্থ্য একটু কম। তাই তাদের দৌড় হলো পিলখানায় প্রতিবেশী বন্ধুদের হাতে নিজের ব্লাড ব্রাদার্সদের ব্লাডশেড ঠিক মতো সম্পন্ন হওয়া তত্ত্বাবধান করা। এবং অবৈধ সরকারের খুঁটি হিসেবে দাড়িয়ে থাকা। সুতরাং বাংলাদেশকে সেই সব গর্বের সাইনবোর্ড টাঙানোর জন্য গিনেজের দ্বারস্থ হতে হয়, যেখানে লাখো কণ্ঠে কিছু বোধবুদ্ধিহীন চিৎকার শোনা যায় শুধু “আমার সোনার বাংলা ……………..”।

আসলে, ভালোই হয়েছে। ভিনদেশে অজপাড়াগাঁয়ের কেউ যদি জানতে চায়, বাংলাদেশ টা কোথায়? গর্ব করে উত্তর দিতে পারবো, গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের পাতায়।

৫০ কোটি টাকার জাতীয় সঙ্গীতের বিশ্ব রেকর্ড এবং সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার ১.৫ লক্ষ টাকার স্কুলের ছাদ- আমি ব্যবহৃত হতে অস্বীকার করি।

March 25, 2014 at 8:59pm


আজকে সকাল ১০টা থেকে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে(সুত্রঃ সংস্কৃতি মন্ত্রী)  , মন্ত্রী এমপিদের  সরকারের সাথে ব্যবসা করার আইন ভঙ্গ করে, প্রতিটা ব্যাঙ্ক এবং বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের  সাথে বাধ্যতামূলক চাঁদাবাজি করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের এক সাথে  জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার বিশ্ব রেকর্ড।
একটা মর্মস্পর্শী ছবি 
কে জানে, এমন একটা রেকর্ড  প্রতিদিন  আমরা ভাঙছি কিনা, স্কুল ঘর না থাকায় পৃথিবীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী প্রতিদিন খোলা মাঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার এবং পাঠ দান নেয়ার । কিন্তু, এঁর মধ্যেই  ফেসবুকে, তন্দ্রা চাকমার স্ট্যাটাস অনেকেই দেখেছেন, খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায়  সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার মহাসেনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া স্কুলের টিন-শেড ঠিক করে দেয়ার জন্যে  ১.৫ লক্ষ  টাকা জোগাড় করতে।
পেছন থেকে তোলা, একটা ভাঙ্গা স্কুল ঘরের সামনে চার লাইনে দাড়িয়ে শপথ নিতে থাকা এই অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এই  ছবিটা দেখলেই বোঝা যায়, এই রাষ্ট্র-যন্ত্র কি ভাবে তার  জনগণের বেসিক চাহিদা পূরণ করতে পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
এক বছর আগে হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের ভেঙ্গে যাওয়া স্কুলঘর ঠিক করতে যেই রাষ্ট্র ব্যর্থ , সেই রাষ্ট্রের কোন অধিকার নাই ৫০ কোটি টাকা খরচ করে, জাতীয় সঙ্গীতের বিশ্ব রেকর্ড করার।
কিন্তু, সেই গুলো করছে আওয়ামী  লিগের সরকার ।কেন  করছে ? কারণ, এই দলের জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা নাই। এই দল জানে, তারা মানুষের ভোট জিতে ক্ষমতায় আসে নাই। তারা জানে, তারা ক্ষমতায় আসছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে দেশকে দুইটি ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন রকম গুটি-বাজি করে এবং  ইন্ডিয়ার স্বার্থ রক্ষা করার মাধ্যমে। ফলে তাদের সমস্ত চিন্তা চেতনায় এই দুইটি ধারা প্রবাহিত  হয়।
এই জন্যে আমরা দেখেছি, সমালোচনার মুখেও তারা  ৫০ কোটি টাকা খরচ করে, এই অর্থহীন অনুষ্ঠানটা করে যাচ্ছে। কারো  কথায়  কান দিচ্ছেনা।   এই গুলো  ক্লাসিক  স্বৈরচারী আচরণ। বড় বড় মূর্তি বানানো, বড় বড় অনুষ্ঠান করা  ।  স্বৈরাচার নিজেই তার গড়া এই ফানুসে উড়ে বেরায়। তার ধারনা থাকে,  মানুষের জীবনে শান্তি সুখের নহর বয়ে যাচ্ছে। এই জন্যে স্বৈরাচার নিয়ম করে, আচ্ছা জনগণের যেহেতু অনেক টাকা, সেহেতু আমরা সব রাস্তায় টোল বসিয়ে দেই। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেই।
এই অনুষ্ঠান আরও অনেক গুলো সম্পূরক প্রশ্নের জন্ম দেয় ।  
তা হলো  রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই ভাবে কোন অনুষ্ঠানের জন্যে বাধ্যতামূলক চাঁদাবাজি করা আইন সম্মত কিনা? এ কোন রাষ্ট্র সৃষ্টি করলাম আমরা যার সরকার এই ধরনের ভ্যানিটি প্রজেক্টের জন্যে নিজেই চাঁদাবাজি করে?  এই টাকার একাউন্টেবিলিটি কে নিশ্চিত করছে? এই টাকাটা অডিটেবেল কিনা? সরকার যাদের কাছ থেকে এই  টাকা নিয়েছে, তারা এই অনুদানের কি পে-ব্যাক নিবে ?
এই টাকা সরকারী নিয়ম মেনে খরচ হয়েছে কিনা। এবং এই অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি-মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরের প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিকের তত্ত্বাবধানে হওয়াতে মন্ত্রী এমপিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সরকারের সাথে ব্যবসা না করার যে নিয়ম  তার প্রকাশ্য বাত্যয় হলো, দুদক তার তদন্ত করবে কিনা? এই রাষ্ট্র কি, এতো নাঙ্গা হয়ে গ্যেছে যে, এই ধরনের দুর্নীতি করতে আজ রাখ ঢাক ও করতে হয় না?
এই প্রশ্ন  গুলোকে উপেক্ষা করে 
আজকে যখন সমালোচনার  ঝড় ওঠে, ইসলামি ব্যাঙ্কের কাছ থেকে টাকা নেয়া  মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বরখেলাপ কিনা  তখন বোঝা যায়, সরকার  চাইছে  নবীনদেরকে এবং প্রতিবাদীদেরকে দেশপ্রেমের  একটা  ধোঁয়াটে অন্ধকারে বুঁদ করে রাখা যাতে, আজকের প্রজন্ম , তার চোখের সামনে লুটপাট দেখেও সঠিক প্রশ্ন করতে ব্যর্থ হয়। যাতে সে সুশাসন না চায়, প্রকাশ্য দুর্নীতি  দেখলেও বিভাজিত রাজনীতিতে নিজের অবস্থানের কারণে চুপ থাকে, প্রতিবাদী না হয়।
যাতে সে দেখতে ব্যর্থ হয়, সুরেন্দ্র কারবারি  পাড়ার বাচ্চাদের সরকারী স্কুলের ঘর মাত্র ১.৫ লক্ষ টাকার জন্যে , নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয় যে সরকার সেই সরকারের  ৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার লুটপাটের মহোচ্ছবের কোন অধিকার নাই। এই উৎসব বার বার মনে করিয়ে দেয়,  সেমুয়েল জনসনের বিখ্যাত উক্তি, patriotism is the last refuge of a scoundrel ।  বদমাইশের  শেষ আশ্রয় হচ্ছে দেশ প্রেম।
এই প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে , দেশ  কিন্তু  মা। মাকে নিয়ে ব্যবসা করতে হয়না।
 এবং যারা করে, তারা কোন একটা ধান্দার জন্যে করে।  এই প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ, সেই ধান্ধাবাজদের সৃষ্ট ধোয়ার থেকে সত্যকে দেখতে পাওয়া এবং   সঠিক প্রশ্নটা করা। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার দায়, এই চেতনা ব্যবসায়ীদের হাতে  ব্যবহৃত না হওয়া।
আজকে  আমাদেরকে তাই এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর চাইতে হবে। এই চাদাবাজি আইনসম্মত কিনা ? এর একাউন্টিবিলিটি কে দেখবে ? এবং  মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক আইন ভঙ্গ করে  কিভাবে এই  কাজ পায় ?
যাদের সামর্থ্য  আছে, তারা সুরেন্দ্র কারবারি  পাড়ার মহাসেনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া সরকারী স্কুলের পরিচালক দয়ানন্দ দাদার সাথে যোগাযোগ করবেন ০১৮২৮৮৬১৩০৩  নাম্বারে। এই স্কুলটি ঠিক করতে ১.৫ লক্ষ টাকা লাগবে। সরকার যদি না করে, আমরাই পারবো এই স্কুল ঠিক করে দিতে। এইটাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা।
আই রিফিউজ টু বি ইউজড, আমি ব্যবহৃত হতে অস্বীকার করি ।  এবং এই ৫০ কোটি টাকার প্রতিটা পয়সার হিসেব চাই। সবাইকে ২৬শে মার্চের শুভেচ্ছা।

আমি একটা সুসংবাদ দেই, আমার ফেসবুক বন্ধু জাপান প্রবাসী দিদার কচি Didar Kochiভাই জানিয়েছেন, তন্দ্রাদির স্ট্যাটাস পড়ার পরে,তিনি এবং তার বন্ধুরা ইতিমধ্যেই ৮০০ ডলার কমিট করেছেন এবং ইতি মধ্যেই Tandra Chakma তন্দ্রা দিকে জানিয়েছেন, আগামি সপ্তাহের মধ্যে দের লক্ষ টাকা সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার মহাসেনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া সরকারী স্কুলের ফান্ডে দিবেন।

ধন্যবাদ কচি ভাই এবং আপনার বন্ধুদেরকে। এক টিকেটে দুই ছবি দেখার মত চেতনা ব্যবসা আর টাকা লুটপাট করা নতুন মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ীদের যুগে , আপনারাই দেখিয়ে দিচ্ছেন, দেশপ্রেম কি জিনিষ ।

৫০ কোটি টাকার সাথে তুলনা করলে, দেড় লক্ষ টাকা হয়তো কিছুই নাই, কিন্তু , মিথ্যার মধ্যে সত্যকে বেছে নেয়ার ইচ্ছাটাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা।

 

সূত্র ঃ
তন্দ্রা চাকমার ফেসবুক স্ট্যাটাস।
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10152321709877152&set=a.310807447151.183524.719932151&type=1&stream_ref=10
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন। প্রায় তিন লাখ লোক একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে।
http://bangla.bdnews24.com/ bangladesh/article759318.bdnews

 

 

যুদ্ধ পূজারীর হাতে জিম্মি স্বাধীনতা

3

By শাফকাত রাব্বী অনীকঃ

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আজকাল আর বেইল নেই। বেইল শুধু যুদ্ধ-পুজারীদের।

যোদ্ধারা যুদ্ধ করে, গুলি চালায়, রক্ত দেয়, জীবন হারায়। মরলে হয় শহীদ, আর বাঁচলে গাজী । সেদিক থেকে যুদ্ধ-পুজারীর ঝক্কি ঝামেলা কম। পুজারীর দল যুদ্ধকালে ধরা দেয়, পালায়; তা না পারলে চুপচাপ সুশীল হয়ে বসে থাকে। কেউ কেউ শত্রুর চাকরিও কন্টিনিউ করে। তারপরে যুদ্ধ শেষে এই পুজারীর দল প্রকৃত যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ, বীরত্ব-গাঁথা আর রক্তের হিসেব নিকেশ নিয়ে সত্য-মিথ্যা গল্প ফাঁদে। যুদ্ধের পুজা বসায়। যার মন্ডপে যতো লোক, সে হয়ে যায় ততো বড় যুদ্ধ-পুজারী।

উপরের বাস্তবতায়, বন্দুক হাতে যুদ্ধ করা প্রেসিডেন্ট জিয়া আজ হয়ে গেছেন রাজাকার। কাদের সিদ্দিকী জামাতি। আর মুক্তিযোদ্ধাদের তৈরী রাজনৈতিক দল হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি।

অন্য দিকে যুদ্ধকালে পীরের বাড়িতে লুকানো ব্যাক্তি, শত্রু সেনার মুরগি সাপ্লাইকারী, শত্রুর চাকরি-পালনকারী, কিংবা যুদ্ধের পুরোটা সময় পালিয়ে বেড়ানো ব্যাক্তিদের দল হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি। এই পরিনতির পিছনে মুক্তিযোদ্ধাদের দোষ ছিল একটাই। তারা যুদ্ধটা ফাটিয়ে করতে পারলেও, যুদ্ধের পুজোটা ভালো দিতে পারেননি।

যোদ্ধা আর পুজারীর কাজের পার্থক্যও বিস্তর। যোদ্ধার কাজ হলো যুদ্ধ করা। একারণে যুদ্ধ শেষ, যোদ্ধার কাজও শেষ। আর পুজারীর কাজ শুরু হয় ঠিক সেখানে, যেখানে যোদ্ধার কাজ হয় শেষ।

যোদ্ধার চোখে যুদ্ধ বড়ই নির্মম, হিংস্র, এবং অমানবিক। যোদ্ধা যুদ্ধকে ভাবে এমন এক বাস্তবতা, যা সে চায় না তার প্রিয় কেউ কখনও দেখুক। অন্যদিকে যুদ্ধ-পুজারীর কাছে যুদ্ধ হলো রূপকথার বীরত্ব-গাঁথা। কিছুটা রসালো ফেইরি টেইলের মতো। এমন কিছু যা বেঁচে খাওয়া যায়। গল্পে বিভোর কোন ফ্রিকের কাছে যুদ্ধ হয়ে যেতে পারে মিস হয়ে যাওয়া, না দেখা এক তামাশা। তাই পূজারিদের কেউ কেউ রিওয়াইন্ড করে সেই তামাশা দেখতে চায়। মানুষকে দেখাতে চায়।

যোদ্ধার কাছে যুদ্ধের সমাপ্তি খুবই কাং্খিত, রিলিভিং। যুদ্ধের সমাপ্তি যোদ্ধার কাছে কোন ভাবেই কম গর্বের কোন বিষয় নয়। পুজারির কেইস এক্ষেত্রে ভিন্ন।পুজারিদের যেহুতু যুদ্ধ ফুদ্ধ করা লাগে না, তাদের চোখে যুদ্ধ যতোবেশী স্থায়ী হবে, পুজোর ব্যাবসা ততোটাই জমবে। গল্প ফান্দার প্লটও বাড়বে।

প্রকৃত যোদ্ধারা যুদ্ধকে এড়িয়ে চলতে চান। নিতান্ত বাধ্য না হলে যুদ্ধের ডাক দেন না। কেননা তিনি জানেন যুদ্ধ কি জিনিস। পুজারিদের কিন্তু এতোটা দায়িত্ববান হবার ঝামেলা নেই। কেননা তারা যুদ্ধ করেন না। একারনে দু’দিন পরপর নতুন নতুন যুদ্ধের হাক-ডাক দিতে পিছ পা হননা যুদ্ধ-পুজারীর দল। যে কাজ নিজে করা লাগে নাই, তার হাওয়া তুলে মানুষকে লাড়িয়ে বেড়ানোর শিশুতোষ আনন্দে তারা বিহ্বল হন।

প্রকৃত যোদ্ধাদের অনেকেই যুদ্ধের গল্প বলতে চাননা। কেননা শত্রুর হাঁতে নিজের সহ-যোদ্ধার মৃত্যু তাকে পিড়া দেয়। আবারএকই ভাবে তার স্মৃতিতে পিড়া দেয় সহযোদ্ধা হত্যার প্রতিশোধ তুলতে গিয়ে নিজের হাঁতে হত্যাকৃত শত্রু সেনার বীভৎস লাশ । একারণে যুদ্ধ ফেরত সৈনিকদের সাথে কথা বলার অভিজ্ঞতা সম্পন্নরা বলেন যে প্রকৃত যোদ্ধার চোখে যুদ্ধ হলো মানব-মনের সবচাইতে পরিত্যাজ্য, অনাকাঙ্ক্ষিত, ভয়াবহ এবং হিংস্র এক বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে প্রকৃত যোদ্ধারা কখনও তাদের ভাগ্যের পরিনতি, কিংবা কখনও দেশপ্রেম বা দায়িত্ববোধের আলোকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করেন বাকীটা জীবন।

যুদ্ধ পূজারীরা এখত্রেও অনেক লাকি। তাদের যুদ্ধ বিষয়ক এত্তসব কমপ্লেক্স ফিলিংস নিয়ে বাঁচতে হয়না। প্রকৃত যোদ্ধাদের বীরত্বগাথা কিংবা শত্রুর হিংসাত্মতার গল্প দাঁত কেলিয়ে, বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে পূজা জমানোতেই ব্যাস্ত থাকেন পূজারীর দল । শুধু মুখে মুখে যুদ্ধের গল্প, কবিতা, কাব্য আউড়িয়ে চেতনার ফেনা তুলে যুদ্ধ-পুজোর মন্ডপে লোকের সমাগম বাড়ানোই থাকে পুজারির মূল লক্ষ্য। মন্ডপে লোক জমানোর বিশ্ব রেকর্ড করতে পারলেতো কথাই নেই।

আমি জানি যুদ্ধ-পুজারীদের ভয়ানক ভিড়ে দেশে এখনও বেঁচে আছেন প্রকৃত যোদ্ধার বংশধরেরা। তাদের অনেকেই হয়তো হাসেছেন যুদ্ধ-পুজোরীর কান্ড দেখে। কেননা তারা জানেন, যদি আবার যুদ্ধ লাগে, এই যুদ্ধ-পূজারীর দল তাদের পূর্ব-সুরীর মতোই পীরের আস্তানায় পালাবে, ধরা দেবে, সুশীল থাকবে, না হয় শত্রু-প্রভুর চাকরিটাই কন্টিনিউ করবে।

আবারও যুদ্ধে যাবে তারাই, যাদের পুর্বসুরীরাও যুদ্ধে গিয়েছিল। কেননা যোদ্ধারা হলো একটা বিশেষ জাতের মানুষ। তারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে যোদ্ধাই থেকে যায়। যোদ্ধার রক্ত যার গায়ে, তাকে আবারো যোদ্ধা হতে আবৃতির আসর কিংবা কোরাস গানের মচ্ছব বসানো লাগে না।

কোনদিন সেই প্রকৃত যোদ্ধারা আবারও জেগে উঠবেন। সেই প্রত্যাশাতেই আছি। সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

 

মুক্তিযুদ্ধঃ জাতীয়তাবাদী আর সেকিউলার আধিপত্যের সাতকাহনে যেখানে ইতিহাস কারখানায় প্রান্তজনরা বিতাড়িত

খন্দকার রাক্বীব

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিনির্মাণে যে জাতীয়তাবাদী আর সেকিউলার ঢোপ গিলানো হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরী। কেননা, ইতিহাসের লক্ষণ হচ্ছে পরিপ্রেক্ষিতের বিচার। যার শুরু বর্তমান উত্থাপিত প্রশ্নের মীমাংসার সূত্র ধরেই। বর্তমান থেকে অতীতে যাওয়া তখনই, যখন অতীত সম্পর্ক অতীত পরিপ্রেক্ষিত – বর্তমান সম্পর্ক বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতকে ব্যাখ্যা করে। যা নির্মাণ করে ধারাবাহিকতা আর নির্দেশ করে ভবিষ্যতের। তাই বলা চলে, ইতিহাস হলো পরিপ্রেক্ষিতায়ন। কিন্তু পরিপ্রেক্ষিতায়নে ইতিহাসের চেতনা ক্ষমতানিরপেক্ষ বিষয় নয়। কারণ যুগে যুগে ইতিহাসের নির্মাতারা ছিল আধিপত্যবাদী। আধিপত্যবাদীদের তৈয়ার করা ইতিহাস ক্ষমতাধর এলিট শ্রেণীদের ভাবাদর্শিক বৈধতা-ই উৎপাদন করে। প্রান্তিক আর মজলুম মানুষদের অস্তিত্ব, তার চেতনা আর প্রতিরোধ সব-ই মুছে যায় বিদ্ব্যত সমাজের বয়ানে।

images

ইতিহাস চর্চায় এইভাবে আধিপত্যবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক সাব-অল্টার্নদের আড়াল করার অপচেষ্টাকে প্রথম নতুন উসুল তথা তত্ত্বের মুখোমুখি দাঁড় করান রণজিৎ গুহ। ভারতবর্ষের ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে তিনি দেখেন এখানকার ইতিহাস বিনির্মাণকালে নিম্নবর্গদের কিভাবে আড়াল করা হয়েছে। ‘on some aspects of the historiography of colonial india’ এবং ‘elemaentary aspects of peasant insurgency in colonial india’ নামক দু’টি গবেষণাকর্মে তিনি দেখান- ভারতবর্ষে আধুনিক ইতিহাসচর্চার শুরু হয় ইংরেজি শিক্ষার প্রবর্তন থেকে নয়, বরং ইংরেজ শাসন ব্যবস্থা থেকে। রনজিতের অভিমত, ইংরেজরা পাশ্চাত্য শিক্ষার আদলে আমাদের দিক্ষিত করতে ইতিহাস বিদ্যার আমদানি ঘটায়নি, ভারতবর্ষের ইতিহাস ইংরেজ শাসনের হাতিয়ার হয়েছে আরও আগে। যখন ইংরেজরা দেওয়ানি লাভ করে তখন তারা তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে এখানকার স্থানীয় ভূ-স্বামী আর রাজকর্মচারীদের নিজেদের অনুগত করে ফেলে। ১৮শতকের ব্রিটিশ সমাজের আদর্শ অনুযায়ী, ইংরেজরা বুঝেছিল এখানকার স্থানীয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, গোষ্ঠী আর ভূস্বামীদের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া হলেই রাজস্ব আদায় ও প্রশাসন সমস্যা মিটে যায়। যার ফলে স্থানীয় জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়াদের স্বার্থ ও সুবিধা একই সঙ্গে স্বীকৃতি পায় ঔপোনিবেশিক রাষ্ট্রনীতিতে ও ঔপোনিবেশিক ইতিহাসবিদ্যায়। ফলত ‘ঔপোনিবেশিক উচ্চবর্গ’ আর ‘বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী’দের হাত ধরেই রচিত হয় ভারতবর্ষের ইতিহাস। রণজিতের বক্তব্য “এই ইতিহাস বিদ্যার জন্ম ইংরেজ রাজশক্তির ঔরসে এবং ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকেই তা ঔপোনিবেশিক শাসনকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠে। যারা এই ধারায় প্রথম ইতিহাস লিখেন তারা সরকারের কর্মচারি কিংবা সরকারের মদদপুষ্ট। তারা যে ইতিহাস লিখেন, তার উদ্দেশ্য হয় সরকারি শাসন ব্যবস্থাকে সিদ্ধ করা কিংবা বেসরকারি রচনা হলেও তার সাহায্যে ব্রিটিশ প্রভুশক্তি ও প্রভু সংস্কৃতিকে আরও জোরদার করা”। আর এদেরই তৈয়ার করা ইতিহাসে এখানকার দরিদ্র কৃষক, মজলুম সিপাহি আর প্রান্তিক মুসলমানদের খুব হীনভাবে আড়াল করা হয়। তাদের আবেগ, অনুভুতি আর প্রতিরোধের ইতিহাস চাপা পড়ে আধিপত্যবাদিদের ক্ষমতার নীচে।

 

রণজিৎ গুহের এই বয়ানটি উসুল আকারে হাজির করলেই আমরা দেখব, কিভাবে জাতীয়তাবাদী আর সেকিউলার আধিপত্যের সাতকাহনে ইতিহাস কারখানায় প্রান্তজনরা বিতাড়িত হয়েছে। জাতীয়বাদী আর সেকিউলার ঢোপ গিলিয়ে মুন্তাসির মামুন আর শাহরিয়াররা এদেশের মুক্তিযুদ্ধ চর্চার এজেন্ট বনে গেছে, যাদের বয়ানে এখানকার প্রান্তিক মুসলিমরা থাকে অবহেলিত। হাজার হাজার গ্রামের কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক আর উলেমারা অংশগ্রহণ করে এই যুদ্ধে। কিন্তু জামায়াত ইসলামিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর এই প্রতিরোধ সংগ্রামকে আজ একেবারেই লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। সুফিয়া কামালের ‘একাত্তরের ডায়েরি’ কিংবা সংকলিত ‘একাত্তরের চিঠি’গুলো পড়লেই বুঝা যায়, মুক্তিযোদ্ধারা কিভাবে ইসলামের সাম্য আর জালিমের বিরুদ্ধে জেহাদের ডাকে শামিল হয়েছিল। আধিপত্যবাদি সেকিউলার গোষ্ঠী মহান মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের এই সাম্য আর ইনসাফের বয়ানকে আড়াল করে মৌলবাদি ইসলামের জুজু দেখিয়ে রাষ্ট্রকে ডি-ইসলামাইজেশন করছে।

 

অনুপস্থিত রেখেছে নারীদের লড়াকু প্রতিরোধকে। মুক্তিযোদ্ধার বদলে ‘বীরাঙ্গনা’ শব্দ দিয়ে আড়াল করা হয়েছে বাঙালি নারীদের প্রতিরোধের ইতিহাসকে। ধর্ষিত নারীদের যুদ্ধ শিশুর কথা বলার সাথে সাথেই এই রাষ্ট্রের জাতির জনক কর্তৃক বলা হল ‘এই সব দূষিত রক্তকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দাও (আমি বীরঙ্গনা বলছি, নীলিমা ইব্রাহিম)।

তথাকথিত জাতীয়তাবাদী বয়ানে রাষ্ট্রকে মাতৃভূমি বানিয়ে রাষ্ট্র আর নারীকে সমান্তরালে নিয়ে আসে। নারীর ইজ্জত মানেই রাষ্ট্রের ইজ্জত! নারী যখন ধর্ষিত হয়, রাষ্ট্রের নাকি তখন ইজ্জতে কালিমা লাগে। এই কালিমা দূর করতে রাষ্ট্র এই ধর্ষিত নারীকে আর জাতীয়তাবাদী সমাজে মেনে নিতে চায়না! বিচিত্র বয়ান আসে তখন।

 

‘মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির গৌরবময় ইতিহাস’ বয়ানের মাধ্যমে আড়াল করা হয় আদিবাসি সাঁওতাল, গারো আর পাহাড়িদের প্রতিরোধ সংগ্রামের ইতিহাস। চারু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে চাকমা আর মং রাজার নেতৃত্বে যেভাবে মারমারা যুদ্ধে নেমেছিল, তা আজ ইতিহাসে একরকম উপেক্ষিত। মাঝে মাঝে সামন্তবাদী প্রভুগোষ্ঠী ত্রিদিভ রায়দের উসুল হিসেবে ধরে রাষ্ট্র আদিবাসীদের এই সংগ্রামের বয়ান অন্যদিকে প্রবাহিত করে। সামন্তপ্রভুদের দোষে পুরো নিরীহ জাতিগোষ্ঠীদের রাষ্ট্র ঔপোনিবেশিক কায়দায় উপজাতি বানায়া রাখতে চায়। মানে তাদের কোন জাত নাই…!!

 

আমরা জানি, মুক্তিযুদ্ধের বয়ান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের প্রশ্ন নয়, ঔপোনিবেশিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক শাসনের স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙ্গে একটি স্বাধীন রিপাবলিক গঠনের সোচ্চার উচ্চারণ। রুশোর ভাষায় যেটা একটা সামাজিক চুক্তি, এবং যে সামাজিক চুক্তির ভিত্তি হচ্ছে জনগণের সাধারণ ইচ্ছা। স্বাধীন রিপাবলিক হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জনগণের এই সাধারণ ইচ্ছাটি সংজ্ঞায়িত হয় কেমন করে?   বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একেবারে গোড়ার গলদটাই হচ্ছে সাধারণের ইচ্ছা ব্যতিরেকে বিশেষের ইচ্ছায় রাজনৈতিক সংস্থা গঠন। আধিপত্যবাদী সেকুলাররাই এই রাষ্ট্রের সাধারণ ইচ্ছাকে সংজ্ঞায়িত করেছে। একটি গণবিপ্লবের পর সমাজে ক্রিয়াশীল গণ সংগঠনগুলোকে বাদ দিয়েই রচিত হয়েছে জনগণের সামাজিক চুক্তির দলিল।, বাংলাদেশের সংবিধান। গন্তন্ত্র-সমাজতন্ত্র-ধর্মনিরপেক্ষতা-জাতিয়তাবাদের লেবেলে এঁটে কেমন করে স্বৈরতন্ত্রী সংবিধান রচনা করা যায়, তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশের সংবিধান। যেখানে বাঙালি মৌলবাদীরা নিজেদের বৃহৎ নৃ-গোষ্ঠি বলেনা, কিন্তু অপরকে ঠিক-ই বলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। চেপে যেতে চায়, প্রান্তিকদের বয়ান।

raquib_bdf@yahoo.com

 

 

Quasicrystals, মুসলিম স্থাপত্য, এবং একটি নোবেল প্রাইজ

২০০৫ সালে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট পিটার ল্যু (Peter J. Lu) উজবেকিস্তান ভ্রমণে গিয়ে বুখারায় পঞ্চদশ শতকে নির্মিত একটি মাদ্রাসার সুদৃশ্য মোজাইকে Quasicrystal নামক জটিল জ্যামিতিক প্যাটার্নের সাদৃশ্য দেখতে পান। ১৯৭০ এর দশকে আধুনিক গণিতবিদরা প্রথম এই জটিল প্যাটার্নের ধারণা দেন। পরবর্তীতে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ Paul J. Steinhardt সহ Science জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে Lu দেখান যে পাশ্চাত্যে Quasicrystal এর সঠিক গাণিতিক ধারণা আবিষ্কারের অন্তত ৫০০ বছর আগে দ্বাদশ থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যে মুসলিম স্থাপত্য শিল্পে Quasicrystal প্যাটার্নের প্রায় নিখুঁত ব্যবহার ঘটে।

Quasicrystal হচ্ছে এমন একটি প্যাটার্ন যা একটি স্থানকে ভরাট করে কিন্তু True crystal এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী translational প্রতিসাম্য এতে থাকে না। দ্বিমাত্রিক ধারণায় এর অর্থ হল এই প্যাটার্নটির একটি exact copy slide করা হলে তা কখনোই exact match তৈরি করবে না, তবে প্যাটার্নটি rotate করা হলে তা exact match তৈরি করতে পারে। ১৯৭০ এর দশকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক Sir Roger Penrose তাঁর বিখ্যাত Penrose Tiles এর মাধ্যমে এর প্রথম গাণিতিক ব্যাখ্যা দেন। এরও প্রায় এক দশক পর ১৯৮৪ সনে ইসরায়েলের Technion University এর প্রফেসর Dan Schechtman একটি সংকর ধাতুর পরমাণুর অবস্থানে quasicrystalline কাঠামো আবিষ্কার করেন, যে কাজটির জন্য (‘For the Discovery of Quasicrystals’) ২০১১ সালে তিনি কেমিস্ট্রিতে নোবেল প্রাইজ পান। এরপর থেকে প্রকৃতিতে বিভিন্ন রকমের অসংখ্য quasicrystals আবিষ্কৃত হয়েছে।

Darb-i Imam Mosque Portal

২০০৭ সালে মার্কিন পদার্থবিদ Paul J. Steinhardt এবং Peter J. Lu তাঁদের গবেষণাপত্রে ১৪৫৩ সালে ইরানের ইস্পাহানে নির্মিত Darb-i Imam স্থাপনাটিতে Penrose টাইলস দ্বারা আচ্ছাদনের একটি ‘প্রায় নিখুঁত’ ব্যবহার তুলে ধরেন। এর আগে প্রচলিত ধারণা ছিল, মধ্যযুগীয় মুসলিম স্থাপত্যবিদরা সরাসরি straightedge রুলার এবং কম্পাসের সাহায্যে একটি zigzag লাইনবিশিষ্ট নেটওয়ার্ক অঙ্কনের মাধ্যমে মুসলিম স্থাপত্যে বহুল ব্যবহৃত জ্যামিতিক তারকা ও বহুভুজ সম্বলিত Girih (Persian: گره‎, ‘knot’) প্যাটার্ন তৈরি করতেন, যে পদ্ধতি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর। এ ধারণার বিপরীতে Lu এবং Steinhardt দেখান যে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে মুসলিম স্থাপত্যশিল্পে একটি যুগান্তকারী প্রযুক্তিগত পদ্ধতির ব্যুৎপত্তি ঘটে যার দ্বারা কতিপয় সরল-রেখাঙ্কিত সমবাহুবিশিষ্ট বহুভুজ টাইলস বা girih tiles এর tessallation (এক বা একাধিক জ্যামিতিক আকারের টাইলস দ্বারা কোনও ফাঁক ও ওভারল্যাপ ছাড়া একটি সমতলকে আচ্ছাদন করার পদ্ধতি) এর মাধ্যমে জটিল girih প্যাটার্ন তৈরির পন্থা আবিষ্কৃত হয়েছিল। পাশ্চাত্যে এর গাণিতিক ধারণা আবিষ্কারের অন্তত ৫০০ বছর আগে পঞ্চদশ শতকের ভেতরে tessallation এর সাথে self-similar transformations এর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে প্রায় নিখুঁত quasi-crystalline Penrose প্যাটার্ন তৈরির পন্থা উদ্ভাবিত হয়। Darb-i-Imam Shrine এ ব্যবহৃত ৩৭০০ টাইলের মধ্যে শুধুমাত্র ১১টি টাইলে্র অভিযোজনে Lu এবং Steinhardt সূক্ষ্ম ত্রুটি দেখতে পান, কেবল ওরিয়েন্টেশনের সামান্য পরিবর্তনেই যা নিখুঁত quasi-crystalline Penrose প্যাটার্ন তৈরি করে, যা কাকতালীয় হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নির্মানকালীন সময়ে অথবা পরবর্তীকালে মেরামতের সময় এই সামান্য সংখ্যক ভুল সংযোজিত হয় বলে Lu ধারণা করেন।

Gunbad-i Kabud

২০০৯ সালে physics world এ প্রকাশিত খবরে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের Texas Tech University এর স্থাপত্য বিশারদ Rima Ajlouni মুসলিম স্থাপত্যে quasicrystal প্যাটার্নের অন্ততঃ তিনটি নিখুঁত এবং নির্ভুল ব্যবহার খুঁজে পেয়েছেন। প্রথমটি সেলজুক স্থাপত্যে বহুল ব্যবহৃত একটি প্যাটার্ন, ইস্পাহানের Darb-i-Imam shrine এ যার সুনির্দিষ্ট ব্যবহার খুঁজে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় প্যাটার্নটি মরক্কোর ফেজ(Fez) নগরীতে ১৩২৩ সালে নির্মিত Madrasa al-‘Attarin এর ভেতরে দেয়ালে, এবং তৃতীয় নিখুঁত প্যাটার্নটি ১১৯৭ সালে ইরানের Maragha তে নির্মিত Gunbad-I Kabud টাওয়ারের বাইরের দেয়ালে খুঁজে পাওয়া যায়।


হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট মিউজিয়ামের ডিরেক্টর Tom Lentz এর ভাষ্যে,”কলা বিশারদরা বহু আগে থেকেই মুসলিম স্থাপত্যে জ্যামিতিক প্যাটার্নের পেছনে গণিতের জটিল ব্যবহার রয়েছে বলে ধারণা পোষণ করেছেন, কিন্তু এর চুলচেরা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এর আগে কখনও হয়নি।” সাম্প্রতিক সময়ে এ নিয়ে প্রচুর গবেষণা চলছে। মুসলিম স্থাপত্যে জটিল জ্যামিতিক নকশা ও প্যাটার্নের কম্পিউটার মডেলিং এর উপরেও কাজ করছেন অনেকে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে দেখুন –

1. Ancient Islamic architects created perfect quasicrystals – physicsworld.com
2. The Tiles of Infinity
3. Lu, Peter J.; Steinhardt, Paul J. (2007). Decagonal and Quasi-crystalline Tilings in Medieval Islamic Architecture. Science 315 (5815)
4. Quasicrystals in Medieval Islamic Architecture, Harvard Physics Colloquium Lecture

http://spacetimefactorbangla.wordpress.com/

Ssh! No Islam Please, We’re Bengali

This article investigates the seemingly Islamophobic editorial policy of the Dhaka Tribune, and relates it to the deeper question of why Bangladesh’s current ruling elite have such an aversion to the Islam and Muslim culture of their subjugated population. It is high time that this state of affairs was transformed.

man reading newspaper in bangladesh.jpg

‘The Matrix’ that is Bangladesh: Which pill will you take, the red pill or the blue pill, reality or rhetoric?

Two Worlds Apart

In late February 2014 two meetings were held on the rights of ‘indigenous’ people. One was held in Dhaka at the Cirdap auditorium, the other in London at King’s College. Both were talking about the rights of indigenous people, the threats they faced and depictions of Islam.

The Bangladesh conference talked in alarmist tones of the epidemic of indigenous children being converted shock horror, to Islam in Muslim majority Bangladesh. There was no mention of Christian missionary activity, but only Muslims propagating their faith. In the imaginary world of the organisers, Islam is not a universal and dynamic tradition, but a static religion established 1400 years ago, it became the second largest religious tradition, purely on the reproductive abilities of its original adherents.

This view runs against the everyday reality experienced by Muslims in their lives and throughout their histories. From the earliest community, lead by the Prophet (pbuh), down to the Sufi giants of the Indian subcontinent, calling people to God has been one of the essential foundations of the faith and community. Frustration at the double standards applied towards Muslim vis a vis Christian missionary work in the Chittagong Hill Tracts region was expressed in Hefazat e Islam’s tenth point in their first set of demands last year.

Stop anti-Islamic activities in Chittagong propagated by several NGOs and Christian missionaries under the guise of religious conversion.

The Dhaka gathering stood in stark contrast in attitude to the one held in London by Reprieve, a human rights organisation that works for fair trials and justice for the most vulnerable and powerless against the most powerful states. Reprieve’s intervention aimed to highlight the plight of large communities in the tribal areas of Pakistan who live under constant fear of extrajudicial killing from drone attacks by the United States with the complicity of sections of the Pakistani state and wider society. Theirs is risky work, their key speaker, journalist Kareem Khan, whose son and father had been extrajudicially killed in a drone strike in December 2009, had been kidnapped then released in Pakistan only days earlier. The 2012 report Living Under Drones is well worth digesting for more background. The key difference here was that neither the participants nor their western liberal audience viewed Islam as an anathema, but instead as a source of strength in the struggle for universal humanity and rule of law. From Kareem Saheb’s opening prayer with the prayer of the Prophet Moses before facing his Pharaonic stepfather, to the supplications of solidarity he extended to the victims of state crimes in Dhaka last May. Kareem Saheb, took the same message of shared humanity,  universal rights and pride in Islam to the European Parliament. The European Parliament showed their approval of the message by passing a resolution demanded European Union Member States not to “perpetrate unlawful targeted killings or facilitate such killings by other states” and called on them to “oppose and ban practices of extra judicial targeted killings.

Comparing both conferences, what I found incredulous were not the views expressed in Dhaka, Muktasree Chakma Sathi is entitled to her opinions, misunderstandings and key performance indicators. There is a  need for more genuine, faithful interfaith space in Bangladesh, and in the absence of justice for any majority, minorities are vulnerable to co-option, division and rule. I was dumbfounded at how these views could be produced and published in the Dhaka Tribune without any challenge or right to reply.

‘Crusading’ Churnalism from Dhaka to London

crusading knight.jpg

‘Crusading’ journalism at the Dhaka Tribune proving indeed that ‘the pen is  mightier than the sword’.

This is not the first time the newspaper has run a negative, irrational news story on Islam and Muslims. Over its short lifespan of a year, there is a recurring pattern of negative and irrational attitudes toward the belief of the Muslim community in Bangladesh. From cursory, non-scientific search of the stories run by the Dhaka Tribune using the adjective Islamic, between a third to half of the stories are related to violence, militancy and terrorism. This gives any reader, prone to believing what they read in print, the impression that Islam is a regressive and violent religion, with a large section of its adherents engaged in militant terrorist activities.

It is worth scratching the skin of a particularly smug example or the irrational Muslim meme. On Language Day the Dhaka Tribune published an article with the title ‘New Fatwa deems Mars Trips Haram’. It was a story that clerics in the UAE had given a legal opinion that it is prohibited for a Muslim to fly to Mars, deliberately distorting the facts by a fatwa to the Mars One mission. The actual relevance of the story to Bangladesh I am yet to figure out (answers on a postcard please), but the psychic intention is clear. The Dhaka Tribune claimed that following the fatwa, ‘Muslims banking on a holiday to Mars will have to cancel their plans on space travel.’

This particular piece came just days after the right wing anti-immigrant Daily Mail published the story in the UK. The Daily Mail is currently being investigated by the UK Press Complaints Commission after it published a racist and Islamophobic op-ed piece ‘satirising’ a private community visit to a children’s theme park. The piece, which wrote of busses, with Muslim children on, blowing themselves up, was met with right wing revelry and public revulsion. More than 25 national Muslim groups wrote a letter of complaint to the editor  with regards to the paper’s piece on Islam and Muslims, arguing that the piece has increased the risk of attack on Muslims from far right groups.

The story, printed by both the neocon Daily Mail and ‘progressive’ Dhaka Tribune for similar effect is patently untrue. A rebuttal was issued from the UAE, explaining that the answer was to a kamikaze-like, one-way trip to Mars. Given the Muslim moral abhorrence of suicide, the answer was a prohibition rather than an affirmation. The entire episode is lampooned elsewhere on the internet.

It begs the question of why the Dhaka Tribune would publish a story so clearly negative about Muslims, of no relevance to Bangladesh, echoing a right wing anti immigrant newspaper, and which was based on a cruel twisted half truth. To put the impression this gives of Dhaka Tribune’s professionalism, integrity and agenda even more clearly, the Daily Mail piece in the UK was actually much better.  They at least buried the correct context of the story in the text beneath their sensationalist Muslim-negative headline, whereas the Dhaka tribune further spun the story out of context with its own Fatwa saying it meant that flying to Mars was morally reprehensible (haraam).

The American Muslim cleric Musa Furber, argued the episode demonstrated a deliberate media distortion of facts. He stated, the type of voyage Mars One plans is not analogous to the type of voyage presented in the article. Mars One aims to establish a permanent and sustainable human colony on Mars, as is apparent from its mission goals, roadmap, and the risks and challenges involved. It is obvious that this isn’t the type of voyage addressed in article, nor is it the type deemed impermissible in UAE fatwa authorities clarification.

The Ignorance Multiplier Effect and The War on Terror Economy

Needless to say, the story underscores the ignorance, and ignorance multiplier effect of the Dhaka Tribune on Islam, as it was misleading its audience that a fatwa issued in the UAE was somehow a binding space-exploration legislation upon all Muslims over all time and space, like the equivalent of a Catholic papal bull. The exact opposite is the truth and as this is a recurring error, briefly outlined next.

A fatwa is nothing more than a personal legal opinion, optional for everyone else to follow and morally binding only upon the person who issues it. An analogy might be made to the issue of legal opinions from courts in common-law systems. Fatwās generally contain the details of the scholar’s reasoning, typically in response to a particular case, and are considered a binding precedent by those Muslims who have morally bound themselves to that scholar, including future muftis. Mere rulings can be compared to memorandum opinions. The primary difference between common-law opinions and fatwās however, is that fatwās are not universally binding. The Islamic legal traditions are not universally consistent nor are they hierarchically structured. Contrary to what some would have us know, fatwās do not carry the sort of weight that secular common-law opinions do.

A well-trodden social response to the editorial policy of the Dhaka Tribune, would be to judge that its editor, staff and proprietors are anti-Muslim. A similar accusation was raised by a staff member at the paper, arguing that the paper was promoting intellectual attacks on Islam.   Proponents of such a view might point to editor Zafar Sobhan’s facebook page where he suggests Salman Rushdie’s ‘Satanic Verses’, a book banned in Bangladesh, to be one of his favourite.

zs.jpg

Zafar Sobhan’s facebook page is a regular portal for the Dhaka flatterati to pay tribute.

Such arguments are too blunt for the challenge at hand, but have indicative value. They are dismissed, by the religiously indifferent of course, with statements like ‘but there is a prayer room in the Gencom building’, or some derivation of ‘brown people can’t be racist’, and ‘how can he have an irrational antipathy towards Islam when he was born Muslim?’ Vocal objection to this publication’s apparent approach to perhaps the majority of its reader’s, if not their parent’s din might even be met with the well worn liberal-sounding excuse of “Well if you don’t like it, nobody is asking you to read it.”

Yet it is very much in the public interest to dwell on the matter for longer.  As the War on Terror economy booms in Bangladesh, it becomes steadily more deadly and systematic as corporate media and corrupt scholarship seek more control over our intellects, bodies and relations with each other. We must penetrate deeper than observation and frustration at systematic bias, to examine the broken record that plays us for fools.

 Introducing the Three Bankruptcies of Islamophobia in Bangladesh

The irrational antipathy the paper has towards Islam and Muslims in Bangladesh, emanates from a three pronged bankruptcy: intellectual, economic and moral, which have their origins and development deep in history. It creates an anaesthetising alienation and a homebrew Southern Comfort for the powerful and the privileged.

It is a crying shame that the self proclaimed liberal elites of Bangladesh do not deem it fit to extend such values of tolerance and compassion to their less advantaged neighbours. Instead of honouring their expensive educations by partnering with fellow citizens in tough predicaments, they continue to lap up the global war on terror narrative to preserve the status quo, keeping their neighbours, and themselves, in their place.

This is in sharp contrast to the acts and works of Professor Akbar S Ahmed, who in his latest volume The Thistle and the Drone, advocates the rights of ordinary citizens on the periphery of modern states who have found themselves victimised like the Pakistani tribesman by drones, the Age of Globalisation’s most terrifying kill technology.

The Islamophobia manifesting through the Dhaka Tribune is more insidious than Bollywood, and its buzz reverberates amongst many within the current power elite and ‘polite’ circles that Mr Sobhan services. It is the result of internalisation of a racist 19th century Britisher argument which at it core says that one cannot be both a Liberal and a practicing Muslim. It is as if they are two static, mutually exclusive categories. According to such a warped development indicator, one measures progress by the distance one keeps from living Muslim traditions. It is an outdated, bankrupt ‘essentialist’ view of Islam, ignoring its diversity and dynamics, gaining inspiration from the dictum of the imperialist British poet Rudyard Kipling: ‘OH, East is East, and West is West, and never the twain shall meet…’

J S Mill.jpg

Do as I say not as I do: J S Mill was one of the founders of modern liberalism, who also worked in the British Imperial Indian Civil Service

This argument has its roots in the works of J S Mill, who made it clear in On Liberty and Representative Government that his views there could not be applied to India, because Indians were civilizationally, if not racially inferior. This powerful view continues, tacitly and explicitly, despite vivid contradictory evidence, from Reprieve’s work with Pakistanis against drones, to Hasan Suroor’s recent study with Indian Muslims.  It is an opinion that sheds more light on the insecurities of its advocates than the inadequacies of non-European civilisations.

Revis(it)ing Two Economies and The Song of Bangladesh

Indian classical festival.jpg

Indian fiddling while Dhaka burns: Bengal Classical Music Festival (BCMF) held at the Army Stadium from November 28 to December 1 2013 – during which time when opposition party members were being rounded up and killed by security services for their agitation for free and fair elections.

The Dhaka Tribune, with its combination of op-ed declamation, hypnotic kitsch history, mass choreography of facts and dramatic partisan lighting finds its model in a party street rally rather than the liberal newspaper it purports to be. A construction of a grandiose theatre rather than debate, its readership are offered images of themselves as the editorials want, with little correspondence with reality.

It would appear that Mr Sobhan is trying  to recreate a spectacle of a Bangladesh in his reader’s mind that shall forever be Calcutta, and a second-rate one at that, with a colonially capital driven and Muslim-lite metropolis extracting resources and cheap labour for global markets from a Muslim rural hinterland. A century on and  The Song Remains the Same.

In this two (cultural) economy theory, Eastern Bengal (Bangladesh) has a dependent and binary relationship with its Western half. According to the theory, the ruling elites of Bangladesh, in return for economic concessions and precious foreign exchange,  purchase kitsch manufactured cultural products, political attitudes and certainties from a Delhi directed West Bengal. This attitude is exemplified in the newspaper’s favourable attitude towards the Indian government and turning a blind eye to the increasing Indian interference in domestic politics and domination over the economy.

The paper’s metropolitan myopia barely picks up the looming environmental crisis in rural Bangladesh, amongst other factors caused by the unilateral construction of upstream dams by the Indian government. A recent classical music festival is given more coverage than barrages and rivers in a country where millions are displaced environmental refugees. Multiple environmental crises are devastating certain parts of the rural economy and society, causing rural depopulation and driving desperate throngs into the crowded slums of Dhaka, where many are compelled to accept dangerous working conditions for meager wages. It is a labour market where wages are artificially kept low by the ruthless clampdown on dissent, as witnessed by the brutal torture and murder of labour activist Aminul Islam by individuals linked to the security forces. The Rana Plaza industrial disaster and its production are not the exception to the rule, but a tip of the iceberg of the two economies of Bangladesh.

It is a familiar image, but with different technology, of the absentee landlord, his rent collector and the tenant farmer, a return to the supposed ‘cultural’ heydays of British Raj following the 1793 Permanent Settlement, where centuries-old flexible land tenures were unilaterally appropriated then handed over by the British to a select, pliant moneyed class. This fundamental, multi-generational mutilation of social and ecological relations fueled the much celebrated 19th century Bengali renaissance that rested on the back of dispossession and pauperisation in the countryside.

A reminder of the true human cost of Bengal under the British is recorded in Noam Chomsky’s, World Orders Old and New:

“A British enquiry commission in 1832 described the effect of sponsored government created through Permanent Settlement Act of British Parliament. The commission found “the settlement fashioned with great care and deliberation has to our painful knowledge subjected almost the whole of the lower classes to most grievous oppression.” In the words of Director of East India Company, “The misery hardy finds a parallel in the history of commerce. The bones of cotton weavers are bleaching the plains of India” Nevertheless Governor-General of India, Mr. Bentinck, was unmoved and observed, ” The permanent settlement, … has this great advantage, at least , of having created vast body of rich landed proprietors deeply interested in the continuance of the British Dominion and having complete command over mass of the people.”

Let them eat culture: (l) An illustration of famine victims of the Permanent Settlement Acts, and (r ) the 19th century Bengali Renaissance was result of a joint venture interaction between British Administrators and their Bengali Zamindari (feudal) colleagues.

Let them eat culture: (l) An illustration of famine victims of the Permanent Settlement Acts, and (r ) the 19th century Bengali Renaissance was result of a joint venture interaction between British Administrators and their Bengali Zamindari (feudal) colleagues.

The fear, and reality, of economic bankruptcy is an under-explored driver of human behaviour. Politically produced famines have claimed the lives and hopes of millions of our forefathers and mothers  through 1770, 1943 and most recently 1974.  In the shadow of such absence, this verse of Joan Baez’s haunting lament over our most recent military war is given new layers of meaning.

The story of Bangladesh

Is an ancient one again made fresh

By blind men who carry out commands

Which flow out of the laws upon which nations stand

Which is to sacrifice a people for a land

Morality and The ‘New’ Anandabazar School of Journalism

Intellectual, economic and moral factors intermingle in the messiness of real life, but the moral sphere is our next zone of interest. For those who can remember as far back as 2007, Mr Sobhan once reimagined the theatre of Bangladesh using the Christian Biblical story of Original Sin. Exhibiting symptoms of the Clark Kent ‘Ubermensch’ syndrome, Sobhan urged his countrymen to, ‘cleanse the poison from our bloodstream’. Since taking power in 2008 the Awami League government has obliged, we continue to see a rising number of political disappearances and deaths, not to mention mass incarceration and criminalisation of opposition activists.

This concept of Original Sin is opposed by the Qur’anic narrative and Muslim world view of Adam (ah) and his progeny – us – of original innocence, forgiveness, spiritual equality and personal responsibility. Original Sin is a fatalistic doctrine of Western Christianity, which is an anathema to and challenged by the egalitarian spirit of Islam.

A more apt Qur’anic and Judaic narrative that speaks to the reality of Bangladesh would be that of Cain and Abel.  Cain, who killed his brother Abel the herdsman, and built a city, prefigured the modern call one hears from the polite circles of Dhaka, of the necessary cost of ‘progress’. The story gives us a framework to  understand how ‘civilised’ people like Zafar Sobhan can dehumanise and applaud brutality against their fellow citizens, as we saw from the Dhaka Tribune’s production and coverup of the 6th of May Massacre.

zsliveblog.jpg

In an interview for the University of Liberal Arts Bangladesh, Dhaka Tribune Editor Zafar Sobhan extols the virtues of media ethics and modern technology, stumbling ( choking? ) over a reference to his paper’s live blogging of  “May 5th, 6th… the Hefazot in Dhaka”.

This attitude reenacts the tragic history of the bloody fields of Plassey in 1757 in modern day Bangladesh. At the heart of the tragedy lies the betrayal by Mir Jafar of Siraj Ud Daulah, a tragedy we replay time and again, one betrayal after another, of brother against brother, all in the name of  a misconceived notion of ‘progress and development’.

marchofprogress

The onward march of ‘progress’ in the history of the Bangladeshi people: (l) From the fratricide of Cain and Abel, to the (c) 1757 betrayal at Plassey and  a (r)  scene from the May Massacre in Dhaka .

Following in the footsteps of Zafar Sobhan in the use of Christian Biblical terms, the best summation of the Dhaka Tribune and its editor is:

And the LORD said unto Cain, Where is Abel thy brother? And he said, I know not: Am I my brother’s keeper?

(King James Bible, Genesis 4:9)

or as Sher e Bangla Fazlul Haq is reported to have said:

‘I worry the day when I see that the Anandabazar* has printed something positive about me, because that is the day I understand that I have done something against the interest of the Bengali Muslims’.

sher e bangla.jpg

The Lion of Bengal ‘Sher e Bangla’, A K Fazlul Haq, founder of the Krishak Praja Party (Farmer’s People’s Party) and the first elected premier of Bengal

* Anandabazar Patrika is a Kolkata based Bangla daily newspaper, founded in 1922, it was then seen as representing the interests of absentee landlords against their mainly Muslim tenant farmers.

Street failures

The party’s undisputed supremo has given an iron clad ultimatum to the all powerful government, while an unequivocal promise has been made to the party rank and file that victory is imminent.  Political temper is reaching an unprecedented level.  Violence has spread to even the remotest village, and the government repression is just as fierce.  Ultimately, with the economy on the verge of disintegration, the urban and moneyed classes prevail upon the leader to call off the protests.  The andolon has failed.

Mrs Khaleda Zia.  BNP.  Awami League.  2013-14.

MK Gandhi.  Indian National Congress.  The Raj.  1921-22.

images (14)

 

Like on most other things historical, there is no consensus on the life and work of the Mahatma, except perhaps on one thing — there is a wide agreement that he was the father of mass politics as we know it, the politics of andolon, the street politics of rallies and processions, of hartal and bandh, of  gherao and oborodh, of civil disobedience and boycotts in the subcontinent.  Before him, politics happened in the palaces and among the elites.  He brought it to the streets and masses.  And the 1921-22 non-cooperation movement was the first time our part of the world saw this mass politics.  That was the first andolon to shake the entire South Asia.

And it was a failure, if by failure we mean it failed to meet its declared goal.  Swaraj in one year — that’s what Gandhi called for.  India would not be free for another quarter century.  The andolon failed to achieve what it called for.

Not just that andolon, but most andolons of that kind — where the opposition party announces a clear set of demand and deadline and makes its case in the street — fails.  I’ll keep to the examples from our part of the world for brevity.  In August 1942, Congress under Gandhi called the Raj to Quit India.  The Raj didn’t oblige.  A quarter century later, in June 1966, the Awami League, under the leadership of Sheikh Mujibur Rahman, called an andolon to achieve maximum regional autonomy for the then East Pakistan.  Ayub Khan, the Pakistani president, threatened to use the language of weapon against Mujib and his party.  Within weeks, the streets were quiet.

The-People4-660x500

Fast forward another two decades to 1987.  Awami League, BNP, leftists, and Jamaat-e-Islami were united in demanding that HM Ershad, in power since a March 1982 coup, steps down and allows free and fair election.  The opposition parties called for a siege of Dhaka on 10 November to achieve their objective.  The opposition failed.  Ershad would be in power for another three years.

download

There is a consensus in Bangladesh that the opposition BNP’s andolon in the last winter failed.  Of course, BNP failed to prevent the 5 January election, or to unseat the government of Mrs Hasina Wajed.  But then again, andolons usually fail.

Wait a minute here, this is selective history, all the successful andolons are being left out — I hear you say.  Let’s think through these successful andolons carefully.

The two andolons most comparable with the BNP’s failed one are those AL launched against past BNP governments.  And to the extent that the BNP governments were unseated in 1996 and 2007, it would seem that AL andolons were successful.

It would seem so, but the reality was a bit more nuanced in both cases.  In 1995-96, Mrs Zia finished her term and did hold a one party election — street protests could not prevent that.  The short-lived government she formed in February 1996 amended the constitution that ushered in the caretaker system.  It is quite possible to argue that BNP left office on its own term, and was not forced out.  It’s not so straightforward that AL’s andolon succeeded.  And in 2007, BNP had rigged the caretaker system and was on course to push through a sham election much like the one held on 5 January 2014, until it was toppled by a coup.  To the extent that the AL and allies were not demanding  a coup, is it straightforward that the andolon succeeded?

moeen_speech

Arguably, the difference between 2007 and 2014 is that in the first case, AL had convinced Bangladesh’spowerbroker establishment to ditch BNP, while in the latter case AL had convinced the same group to let it ram through its agenda.  In both cases, AL was successful not out there in the streets, but behind the scene in halls of power.  Interestingly, AL did not always have such a strong grip on the bastions of power.  Even in the 2001 election, these powerbrokers refused to back AL’s designs, and openly or covertly endorsed BNP.  Obviously, since then BNP has fallen out with the establishment.

That falling out is BNP’s real political failure, not anything that has happened in the streets.

Wait, we’re still missing the seminal events in our history — what about 1952, 1969, 1990?  Let’s think through those events.  In each case, there were youth-led urban protests that quickly escalated and changed power dynamics.  These were indeed events when the street trumped the palace.  But in each of these cases, the organised political parties came let to the game.  And in each cases, the most organised of the parties (and other political players) ultimately reaped the benefit.

The kind of andolon that happened in 1952 or 1969 or 1990 cannot be predicted in advance, but after they happen, they almost inevitable — these are the proverbial black swan events.  And while some of them succeed, not all do.  Students of Dhaka University and elsewhere rose up against military regimes in 1962, 1983 and 2007 — but the regime survived in each case.  Meanwhile, there are other andolons, at local levels, that sometime succeed in achieving their aims — examples from recent past include Kansat and Arial Bil.

The andolons opposition parties launch against the government are usually thwarted because the government can see them coming, and take appropriate actions.  And surely opposition parties know that too.  Politicians from Tofail Ahmed to Mirza Fakhrul Islam Alamgir have been in the game for long enough to know that street protests and hartals don’t bring down the government.

So why do the opposition parties continue to do this?

Instead of lazily pronouncing judgment about BNP’s failed andolon, pundits should focus on answering that question.

(Cross-posted in ND).