মোঘল সাম্রাজ্যে স্বাগতম

By Jahid Islam

আমার প্রায়ই মনে হয় বাংলাদেশে আমরা মোঘল আমলে বাস করি, অন্তত চিন্তা চেতনায়। এখন খালি সম্রাটের বদলে সম্রাজ্ঞীরা দেশ চালায়। মোঘল বাদশাহরা যেমন একজনের পর একজন ক্ষমতায় আসতেন আমাদের দেশেও এই মত সরকারের বদল হয়। ব্যাপারটা বিস্তারিত ব্যাখার দাবি রাখে। যেমন- মোঘল সম্রাটরা ছিলেন শিল্প সাহিত্যের সমঝদার। তাদের রাজ দরবার আলোকিত করে থাকতেন কবি সাহিত্যিকেরা । সেসব শিল্পী,কবি-সাহিত্যিকদের নাচ, গান, কবিতা, আবৃত্তিতে মুগ্ধ হয়ে মোঘল বাদশাহরা নজরানা দিতেন, উপযুক্ত পদে বসাতেন। এদের মধ্যে আমরা সম্রাট আকবরের নবরত্নের কথা বিশেষভাবে জানি।
আমি অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করলাম আমাদের রাষ্ট্র প্রধানরাও তো এ পথে হেঁটেছেন, হাঁটছেন।

hdr-mughal-art-415

যেমন ধরুন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ছিলেন কবিতার বিশেষ সমঝদার। তিনি নিজে কাব্য প্রেমিক ছিলেন,সাধ্যমত লিখতেও চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন অভিনয়ের সমঝদার। আমি দেখিনি তবে শুনেছি, তিনি নাকি ‘নতুন কুঁড়ি’ তে শিল্পী ঈশিতার অভিনয় দেখে কেঁদেছিলেন। একবার শুনেছিলাম তিনি নাকি নিজেও ভাল অভিনেতা। যখন সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তিনি নাকি এমন অভিনয় করতেন যেন কিছুই জানেন না। এ কারণেই তাকে কেউ কখনো নিজের জন্য ঝুঁকি মনে করেনি। অথচ তিনি কি কৌশলে এক সময় ক্ষমতা দখল করে নিলেন। ঠিক যেন কোন মোঘল সম্রাটের শত্রু রাজাকে ধোঁকা দিয়ে রাজ্য জয়ের মত। এবারের সাম্প্রতিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে তার ভূমিকা দেখেও অনেক সমঝদার দর্শক তার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। তাকে অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।

আমাদের প্রধানমন্ত্রীও শিল্প-সাহিত্য, সঙ্গীতের সমঝদারিতায় যেন একজন যোগ্য মোঘল উত্তরসুরি । তিনি অনেক শিল্পী,কবি-সাহিত্যিকদের পারফরম্যন্সে মুগ্ধ হয়ে ইতিমধ্যে তাদেরকে উপযুক্ত নজরানা দিয়েছেন। যেমন- আসাদুজ্জামান নূর, তারানা হালিম, গায়িকা মমতাজ প্রমুখ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়ভাজন লেখকও আছেন কয়েকজন। যেমন-শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন,আবদুল গাফফার চৌধুরী। এরা ত আসলে হাসিনার রাজসভার এক এক জন আবুল ফজল। অনেক মোঘল সম্রাট নিজেরাই ছিলেন বড় লেখক, যেমন -আওরঙ্গজেব। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও তো নিজেই অনেকগুলো বই লিখেছেন। তার সুললিত কণ্ঠে গাওয়া ‘ধনধান্যে পুস্পে ভরা’  গানটি দর্শক শ্রোতাকে আবেগ আপ্লুত করেছে।

মোঘল সম্রাটরা নিয়মিত শিকারে অংশ গ্রহণ করতেন। তীরন্দাজি, ঘোড়দৌড় এর মত ক্রীড়া কৌতুকে তাদের ছিল অনেক আগ্রহ। আমাদের এরশাদও তার রাজত্বের শুরু থেকেই এসব বিষয়ে মোঘল সম্রাটদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। একবার বিপিএল এ এক সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সগৌরবে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি নাকি এ দেশে ক্রিকেটের প্রচলন করেছেন। গলফ খেলার উদ্দেশ্যে তিনি ত নির্বাচনের ব্যস্ত কর্মসূচীতে থেকেও সময় বের করে নিয়েছেন আমাদের চোখের সামনেই।আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও প্রায়ই ক্রিকেট খেলা দেখতে মাঠে আসেন। সম্প্রতি ফেসবুকে তিনি এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাডমিন্টন খেলার ছবি ত আসলে মোঘল সাম্রাজ্যের সোনালি অতীতের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

অনেকে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বহুগামিতার সমালোচনা করেন। অথচ এটাও মুঘল আমলেরই ঐতিহ্য। মুঘল আমলে রাজা বাদশাহদের নিজেদেরই হেরেমখানা ছিল।

কিছুদিন আগে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুকে একটা ছবি দেখেছিলাম হাতে বিয়ারের বোতল সহ। অনেকে এর সমালোচনা করেছেন। আমার মনে হয়েছে যারা এ সমালোচনা করেছেন তারা ইতিহাস সচেতন না। কেননা, মোঘল শাহজাদারাও একটু আধটু মদ্য পান করেতেন। রাজা শাহজাদারা একটু আধটু সেবন করলে এটা তেমন দোষের কিছু না।

মোঘল সুবাদার শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও ত সেটা মাথায় রেখেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি দশ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াতে চান। মোঘলদের খাবারের ‘মোঘলাই রুচির’ কথা খুব বিখ্যাত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে বিরিয়ানি রান্নার যে ছবি আপলোড করেছেন সেটা থেকেই তার মোঘলাই রুচির কথা বোঝা যায়। মোঘল সম্রাট হুমায়ুনের ছিল ছবি আকার শখ। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর হল ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার শখ।
ক্লাস এইটে, সম্ভবত কালিদাস রায়ের লেখা (লেখকের নাম ভুল হতে পারে) একটা কবিতা পড়েছিলাম ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ নামে। সেখানে বর্ণনা ছিল একজন সম্রাট হয়েও তিনি কি করে একটি শিশুকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন খ্যাপাটে উদ্ধত হাতির সামনে থেকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে একটি শিশুকে কোলে নিয়ে বক্তৃতা দিলেন এটি ত আসলে সম্রাট বাবুরের সে ঘটনারই পুনরাবৃত্তি।

মোঘল আমলে কেউ যদি কোন উজিরের সাথে এমন কোন আচরণ করত যেটিকে উজির অশোভনীয় মনে করেছে তাহলে শাস্তি হত- জীবনদণ্ড । রেফারেন্স সহ এরকম ঘটনার উল্লেখ করেছেন লেখক হুমায়ুন আহমেদ তার ‘বাদশাহ নামদার’ বইয়ে। হাসিনার উজির আসাদুজ্জমান নুর কিংবা শামীম ওসমানের সাথে যারা অসদাচরণ করেছে তারা ইতিমধ্যেই দণ্ডিত হয়েছেন প্রাণদণ্ডে।

মোঘল সম্রাটরা বিভিন্ন নাম ধারন করতেন। মানুষও তাদের সে নামে ডাকত। আমাদের দেশেও এই চল আছে। পল্লিবন্ধু, দেশনেত্রী, জননেত্রী এসব উপাধি ত আসলে মোঘলদের আদলেই এসেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অনেকগুলো বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রীতে ভূষিত করেছে ঠিক যেভাবে অন্য রাজ্যের কোন রাজা মোঘল সম্রাটদেরকে উপাধি দিতেন। মোঘল সম্রাট-সুবেদাররা তাদের প্রিয়জনের স্মৃতিতে স্তম্ভ নির্মাণ করেছেন। যেমন-তাজমহল, পরিবিবির মাজার। আমাদের দেশেও রাজনীতিবিদেরা তাদের প্রয়াত প্রিয়জনদের মাজার নির্মাণ করেন।

মোঘল সাম্রাজ্যে কোন অবাধ্য প্রজার স্থান ছিল না। সে সাম্রাজ্যে সম্রাটের আদেশই ছিল আইন। সেখানে সম্রাট চাইলেই দণ্ডিতের শাস্তি মাফ করতে পারতেন, আবার যে কাউকে যে কোন অপরাধে নিজের ইচ্ছামত যে কোন দণ্ড দিতে পারতেন,দণ্ড পরিবর্তন করে দিতে পারেন। আমাদের দেশেও রাষ্ট্রপতিও অনেক দণ্ড মাফ করে মোঘল সম্রাটদের দেখানো পথে হেঁটেছেন। আবার কাদের মোল্লার দণ্ড পরিবর্তন হওয়ায় মোঘলদের রেখে যাওয়া ধারাবাহিকতার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। অবাধ্য দুষ্ট লেখক মাহমুদুর রহমান যথার্থই কারাবরণ করেছেন।

মোঘল সাম্রাজ্যে কোন বাদশাহ নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীদের মধ্য থেকে একজন সিংহাসন অলংকৃত করতেন। আশা করি আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে এটি ব্যাখা করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই।

সবশেষে, নিন্দুকেরা যাই বলুক, আমি কিন্ত একজন বাধ্য প্রজা। আমি কেবল বলি- ” মহামান্য সম্রাজ্ঞীর জয় হোক “।

আগামী দিনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কয়েকটি মূলনীতি প্রসঙ্গে

by মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত

একতরফা প্রহসনের নির্বাচনোত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিনির্মাণে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন পুনর্গঠন ও সংহত করা এখন সময়ের দাবী। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গ্রহণযোগ্য একটি ব্যবস্থা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে না ওঠায় বাংলাদেশে “নির্বাচিত স্বৈরতান্ত্রিক গণতন্ত্র” আরো চেপে বসেছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রধান রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তিগুলো পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত থেকে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটিয়েছে। রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের সঙ্গে লড়াই করে প্রতিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম আপাততঃ ক্লান্ত ও অবসন্ন। তাই আন্দোলন সংগ্রামে দেখা দিয়েছে বিরতি।

সেই সঙ্গে আন্দোলন সংগ্রামের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও সমীক্ষা। উদ্দেশ্য আন্দোলন সংগ্রামের শক্তি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করে যথাশীঘ্র এর পুনর্যাত্রা। ইতোমধ্যে আমরা পর্যালোচনা করতে পারি বাঙালি মুসলমানের কোন কোন মৌলিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভাবাদর্শ একটি শক্তিমান ও দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ আন্দোলনের ভিত্তি ও অনুপ্রেরণা হতে পারে।

 ইসলাম

প্রথম যে মৌলিক ভাবাদর্শটি নিয়ে এই ডিসকোর্সের সূচনা করা যেতে পারে সেটি হল ইসলাম। বাঙালি মুসলমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূলধারার মৌলিক উপাদান হিসেবে ইসলাম কেন অপরিহার্য? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে খুঁজতে হবে।

বর্তমানে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী প্রান্তিক ও ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি। প্রান্তিক  ও ক্ষয়িষ্ণু বলছি এই কারণে যে এই ভাবাদর্শগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমান মনেপ্রাণে গ্রহণ করেনি। কারণ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ভিত্তিক এই জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ইসলামী আত্মপরিচয়কে গৌণ করে তোলে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি বাঙালি মুসলমানের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে ইসলামের ভূমিকাকে সীমিত করে রাখতে চায়। ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন ধর্মাচার পালন ও কেবলমাত্র অল্পকিছু  ধর্মীয় সামাজিক পার্বণ পালনের মধ্যেই এই ইসলাম সাধারণত সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমান ইসলামের এই খণ্ডিত ভূমিকা ও চর্চাকে সমর্থন করে না।

তাই বাঙালি মুসলমানের মূলধারা বা মধ্যধারার (Centrist and Normatic) রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে যারা ধারণ ও লালন করতে চাইবেন, তাঁদেরকে বাংলাদেশে ইসলামের অধিকতর রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে  তুলতে হবে। এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী চিন্তা, শিল্প-সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ও প্রচার-প্রচারণার বিপরীতে বাঙালি মুসলমানের প্রবল মধ্যধারার বাংলাদেশী এবং/অথবা ইসলামী সৃজনশীলতার চর্চা ও প্রচারযজ্ঞ বিনির্মাণ ও লালন করতে হবে।

মনে রাখতে হবে এই আন্দোলন একটি দীর্ঘমেয়াদী ভাবাদর্শিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন। যা শুধুমাত্র ইস্যুভিত্তিক বা এডহক নয় । এটা যেন শুধুমাত্র রিএকটিভ বা প্রতিক্রিয়ামূলক লড়াই না হয়ে যায়। একে হতে হবে প্রোএকটিভ বা স্বতো:প্রণোদিত, ইতিবাচক এবং সৃজনশীল।

বাঙালি মুসলমানের মূলধারার রাজনীতি ও সংস্কৃতি বিনির্মাণে কেন ইসলামকে একটি বড় অবস্থান দিতে হবে? এর উত্তর হল — বঙ্গীয় ইসলামের সমন্বয়বাদী প্রবণতা এবং আধুনিক ও প্রগতিবাদী ইউরোপীয় এবং কলকাতা কেন্দ্রিক রাবীন্দ্রিক ডিসকোর্সের প্রভাবে গড়ে ওঠা বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা ক্রমশঃ প্রান্তিক ও অবক্ষয়ী হয়ে উঠছে। এর কারণ হল — একদিকে প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশে উত্তর-উপনিবেশিক ইসলামী সর্বাত্মকবাদী (Totalitarian) আন্দোলনের প্রভাব; এবং অন্যদিকে পাশ্চাত্যের সাম্প্রতিক উত্তর-আধুনিক ডিসকোর্সের আঘাতে ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্ট ও এর বঙ্গীয় সংস্করণ রাবীন্দ্রিক ডিসকোর্স দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে এর উপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বাঙালি জাতীয়তাবাদ ক্রমাগত ক্ষয় ও অবশেষে লয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এখন আমরা দেখব কেন ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে বিপরীত স্রোতের প্রভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা ক্রমশঃ তার শক্তিমান অবস্থান হারাচ্ছে। আর কিভাবে সেই শূন্যস্থান পূরণে সর্বাত্মকবাদী ইসলামী সংস্কৃতি ক্রমশঃ অগ্রসর হচ্ছে।

আমরা ইদানীং দেখছি যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী রাজনীতি ও সংস্কৃতি প্রায়শঃই বাঙালি মুসলমানের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূলধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ায় তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে। যেমন কথিত “আবহমান” বাঙালি সংস্কৃতির আচার অনুষ্ঠানে যখন এমন কিছু জীবনাচার ও চর্চাকে উপস্থাপিত করা হয়, যার ভেতরে বি’দাত ও শিরকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ লক্ষণ ফুটে ওঠে, তখন বাঙালি মুসলমান তাকে আর আগের মত সহজভাবে গ্রহণ করতে পারছে না । উদাহরণ হিসেবে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আলোকমালা ও অগ্নিশিখার প্রতি সমর্পণের বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উপাচার, অবনত ভঙ্গিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, মানব আকৃতি সদৃশ ভাস্কর্যে অবনত ভঙ্গিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন, ইত্যাদি। আধুনিক, নাগরিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি মুসলমান দেশীয় সংস্কৃতির এইসব আচার আচরণকে “আবহমান” কাল থেকে প্রচলিত বলে যথেষ্ট বিচার বিবেচনা ছাড়াই অতি উৎসাহের সঙ্গে ধারণ ও লালন করে চলেছে। অথচ বৃহত্তর বাঙালি মুসলমান এইসব আচার আচরণকে বিচ্যুতি বলে মনে করছে। ফলে বৃহত্তর বাঙালি মুসলমানের বিবর্তনশীল মূল বা মধ্যধারার সংস্কৃতির সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত বিরোধ ও সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নাগরিক শ্রেণী ও গরিষ্ঠ লোকায়ত এবং তৌহিদী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা দিচ্ছে বিভক্তি ও মেরুকরণ। রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে দেখা দিচ্ছে ব্যাপক সংঘাত, সংঘর্ষ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা। এই বয়ানের সমর্থনে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে ২০১৩ সালে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ও তার বিপরীতে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান।

কেন এমনটি ঘটছে? বিগত শতকের ষাট ও সত্তর দশক পর্যন্তও তো আমরা দেখেছি “আবহমান” সমন্বয়বাদী বাঙালি সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী রাজনীতির জয় জয়কার। তাহলে ইতিহাসের বিবর্তনের ধারায় কি এমন পরিবর্তন ঘটল যে আমরা একটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পালাবদলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি?

এর উত্তর খুঁজে পাবার জন্য আসুন আমরা বঙ্গের মধ্যযুগের ইতিহাসের একটি পর্বকে পাঠ ও বয়ান করি।

মধ্যযুগের সূচনায় বখতিয়ার খিলজির মত বীর ও সূর্যসৈনিক এই জনপদে ইসলামী রাজনৈতিক ও সামরিক সংস্কৃতির বীজ বপন করেছিলেন। শাহ জালালের মত সূফি সাধক এই সংস্কৃতির আধ্যাত্মিক অনুসঙ্গের আবাদ করেছেন এই অঞ্চলের উত্তর পূর্বে বসবাসকারী মানব মনের গহীন প্রান্তরে। খান জাহানের মত সূফি সাধক ও বিষ্ময়কর জনপদ-নির্মাতা সেই একই আধ্যাত্মিক সংস্কৃতিকে দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলবর্তী বঙ্গীয় বদ্বীপের গহীন অরণ্যে বসবাসকারী সভ্যতা-বঞ্চিত প্রান্তিক মানব মনে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এই সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি যার ভাবাদর্শিক ও সাহিত্যিক রূপায়নে ষোড়শ শতকের শেষার্ধে দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গের কবি সৈয়দ সুলতান রচনা করেছিলেন “মুসলিম জাতীয় মহাকাব্য” স্বরূপ নবী বংশ । এই মহাকাব্য রচনার মাধ্যমে তিনি স্থানীয় বৈদিক, বৈষ্ণব, শৈব এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদি-খ্রিষ্টান ধর্মতত্ত্বের সঙ্গে তুলনামূলক ডিসকোর্সের অবতারণা করে ইসলামী ভাবাদর্শ ও সংস্কৃতিকে বাঙালি মুসলমানের জীবনে গ্রথিত করে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।

পরবর্তীকালে উনিশ শতকের প্রথমার্ধে শহীদ তিতুমীর এই ইসলামী রাজনৈতিক ও সামরিক সংস্কৃতির সুরক্ষায় স্থানীয় প্রকৃতিজাত উপাদান দিয়ে বাঁশেরকেল্লা গঠন করে জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি এই রাজনীতি ও সংস্কৃতির আলোকে বাঙালি মুসলমান কৃষিজীবীদের ইংরেজ ও জমিদার বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হাজী শরীয়তউল্লাহ এবং কারামত আলী এই সংস্কৃতিকেই অবক্ষয় ও বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করার জন্য লৌকিক সংস্কার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গের এই দক্ষিণ পূর্ব গাঙ্গেয় বদ্বীপে। এই অঞ্চলের বাঙালি মুসলমানের লৌকিক জীবন, জীবিকা, জীবনাচার ও জীবনদর্শনে এভাবে গভীরভাবে গ্রথিত হয়ে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে নিজস্ব (Owned), ভূমিজ (Organic), মর্মধারিত (Internalized), আত্মীকৃত (Assimilated) ও অকৃত্রিম।

মধ্যযুগে বা প্রাক-উপনিবেশিক যুগে বঙ্গে সূচিত বাঙালি মুসলমানের ধর্ম ও সংস্কৃতির এই মিথষ্ক্রিয়া ও রূপান্তর নিয়ে মেলফোর্ড স্পাইরো (Melford Spiro), জে ডি ওয়াই পীল (J D Y Peel), ইগর কপিটফ (Igor Kopitoff) প্রমুখ নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণার ওপরে ভিত্তি করে পূর্ব বঙ্গের গহীন গাঙ্গেয় বদ্বীপে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ইসলামীকরণ সম্পর্কে মার্কিন ইতিহাস গবেষক রিচার্ড ঈটন (Richard M Eaton) একটি যুগান্তকারী ও ইতিহাসের গতি নির্ণায়ক তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। এই তত্ত্বের মাধ্যমে ধর্মান্তরের প্রচলিত ধ্রুপদী ডিসকোর্সকে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি বঙ্গের ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া সম্পর্কে একটি তিন-পর্ব বিশিষ্ট প্রক্রিয়া, যা সুদীর্ঘ কাল ধরে ক্রিয়াশীল ও চলিষ্ণু থাকে, সেটি প্রতিপাদন করেছেন তাঁর একটি বিখ্যাত গ্রন্থে। আসুন আমরা এবারে দেখি যে এই তত্ত্বটি আমাদেরকে কিভাবে বুঝতে সাহায্য করে যে বাঙালি সংস্কৃতিতে ইসলাম বিবর্তিত হয়ে ক্রমাগত একটি পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই পরিণতির ফল হল সমন্বয়ী প্রবণতা ধীরে ধীরে গৌণ হয়ে শুদ্ধতাবাদী ও সর্বাত্মকবাদী প্রবণতা ক্রমাগত মুখ্য হয়ে উঠছে।

ইসলামীকরণ প্রক্রিয়ার প্রথম পর্বকে রিচার্ড ঈটন বলেছেন ইনক্লুশন (Inclusion) — যখন স্থানীয় ও বহিরাগত  ধর্ম ও ভাবাদর্শ  পাশাপাশি অবস্থান করে নিজেদের অবিকল অস্তিত্ব বজায় রাখে। এই পর্বে দেশী ও বিদেশী অনুসঙ্গগুলো পরস্পর কোনোরূপ বিনিময়ে অংশ নেয় না। দ্বিতীয় পর্বটিকে তিনি আখ্যা দিয়েছেন আইডেন্টিফিকেশন (Identification) — যখন স্থানীয় ও বহিরাগত ধর্ম ও ভাবাদর্শ পারস্পরিক বিনিময়ে অংশ নিয়ে একে অপরের ভেতরে সদৃশ অনুসঙ্গগুলোকে চিহ্নিত করে। আর তৃতীয় পর্বটিকে তিনি আখ্যায়িত করেছেন ডিসপ্লেসমেন্ট (Displacement) — যখন বহিরাগত ধর্ম ও ভাবাদর্শ স্থানীয় ধর্ম ও ভাবাদর্শের অবশেষগুলোকে ক্রমাগত অপসারণ করতে থাকে। এই তত্ত্বটি স্পষ্ট করার জন্য রিচার্ড ঈটনের লেখা গ্রন্থ থেকে এই উদ্ধৃতি ও ডায়াগ্রামটি এখানে উপস্থাপন করছিঃ

The term conversion is perhaps misleading when applied to this process, since it ordinarily connotes a sudden and total transformation in which a prior religious identity is wholly rejected and replaced by a new one. In reality, in Bengal, … … …, the process of Islamization as a social phenomenon proceeded so gradually as to be nearly imperceptible.

… … …, one may discern three analytically distinct aspects to the process, each referring to a different relationship between Islamic and Indian superhuman agencies. One of these I’m calling inclusion; a second, identification; and a third, displacement. By inclusion is meant the process by which Islamic superhuman agencies became accepted in local Bengali cosmologies alongside local divinities already embedded therein. By identification is meant the process by which Islamic superhuman agencies ceased merely to coexist alongside Bengali agencies, but actually merged with them, as when the Arabic name Allah was used interchangeably with the Sanskrit Niranjan. And finally, by displacement is meant the process by which the names of Islamic superhuman agencies replaced those of other divinities in local cosmologies. The three terms inclusion, identification, and displacement are of course only heuristic categories, proposed in an attempt to organize and grasp intellectually what was on the ground a very complex and fluid process. (Richard M Eaton, The Rise of Islam and the Bengal Frontier 1204 – 1760, University of California, Berkeley, 1993)

মধ্যযুগ থেকে সূচিত হয়ে ইসলামের এই বিবর্তন প্রক্রিয়া আজ অবধি ক্রিয়াশীল ও চলমান। ইতিহাসের কয়েক শতাব্দী ব্যাপী চলমান এই মিথষ্ক্রিয়া বর্তমান সময়ে এর তৃতীয় পর্যায় অতিক্রম করছে।এই পর্যায়ে এসে উনিশ ও বিশ শতকের ইসলামী সংস্কারবাদী (Reformist), পুনরুজ্জীবনবাদী (Revivalist) ও পবিত্রকরণবাদী (Puritanical) বিভিন্ন আন্দোলনের প্রভাবে বাংলাদেশে এযাবৎ  প্রবল সমন্বয়বাদী (Syncretistic) বাঙালি মুসলমানের রাজনীতি ও সংস্কৃতি ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে শুদ্ধতাবাদী (Orthodox) ও কিতাবসম্মত (Scriptural) বা টেক্সটসম্মত (Textual) রূপ পরিগ্রহ করছে। একুশ শতকের সূচনাকে আমরা এই বিবর্তনের একটি টিপিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করতে পারি।

আমাদেরকে বুঝতে হবে যে এই পরিবর্তনের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর এবং সুদূরপ্রসারী। কাগজ, স্বাক্ষরতা ও শিক্ষার ব্যাপ্তি, মুদ্রণযন্ত্রের কল্যাণে বই পত্রের ব্যাপক সহজলভ্যতা, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের আর্থিক উন্নতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে বাঙালি মুসলমান প্রবাসী সম্প্রদায়ের উদ্ভব, উচ্চ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য অথবা ভ্রমণ ও পর্যটন উদ্দেশ্যে দেশ বিদেশে গমন; রেডিও, টেলিফোন, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ইত্যাদি বাঙালি মুসলমানের গাঙ্গেয় বদ্বীপে গন্ডীবদ্ধ কৃষিনির্ভর জীবনাচারে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এই সার্বিক পরিবর্তনের ফলে বাঙালি মুসলমানের ইসলামী রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও জীবনদর্শন আজ এই একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে গতিময় ও সর্বাত্মকবাদী হয়ে একটি বৈশ্বিক মাত্রায় পৌঁছেছে। কাজেই বাঙালি মুসলমান তার বাংলা ভাষা ও ইসলাম ধর্ম দিয়ে গড়া বাংলাদেশী রাজনীতি ও সংস্কৃতি দিয়ে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে যে তুরীয় (Transcendental) উচ্চতায় স্থাপন করবে এতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

২। গণতন্ত্র

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূলধারাকে শক্তিমান করে গড়ে তোলার জন্য যে মুলনীতিটি অপরিহার্য সেটি হল গণতন্ত্র। গণতন্ত্র নিঃসন্দেহে একটি পাশ্চাত্য ধারণা। আধুনিক ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্ট ডিসকোর্সের একটি অনুসঙ্গ এই গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ও পথচলার সূচনা এই অঞ্চলে ইংরেজ উপনিবেশিক শাসনের অভিজ্ঞতার অনুসঙ্গ হিসেবে। উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হবার পর এই অঞ্চলের জনগণ গণতন্ত্রের আদর্শকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামো থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভবেও অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল গণতন্ত্রের আকাঙ্খা। কিন্তু লিবারেল গণতন্ত্র বিনির্মাণে আমরা বারবার ব্যর্থ হয়েছি।

প্রাতিষ্ঠানিক, কার্যকর ও অর্থপূর্ণ গণতন্ত্র থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে অবস্থান করছি। তবে গণতন্ত্রে বাংলাদেশের বৃহত্তর জনসমষ্টির আস্থা অটুট রয়েছে। বাঙালি মুসলমানের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মূলধারার রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে একদিকে যেমন ইসলামের প্রতিফলন দেখতে চায়, তেমনি অন্যদিকে তারা গণতন্ত্রকেও একটি শক্তিশালী অবস্থানে দেখতে চায়।

গণতন্ত্র ও ইসলামের মধ্যে কোন সাংঘর্ষিক সম্পর্ক আছে বলে তারা মনে করে না। ইসলামের যে প্রান্তিক ডিসকোর্সটি ইসলামী রাষ্ট্র বিনির্মাণে গণতন্ত্রকে অগ্রাহ্য করে, বা গৌণ করে, বা প্রতিবন্ধক বলে মনে করে, বাঙালি মুসলমানের বৃহত্তর অংশ তা সমর্থন করে বলে মনে হয় না। সুতরাং ইসলামী ও গণতান্ত্রিক — উভয় মূল্যবোধ ও ভাবাদর্শের মেলবন্ধনেই রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমানের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চেতনার চাবিকাঠি।

গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্র হয়ে নির্বাচনী গণতন্ত্রের কিছু সাধারণ নিয়ম প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। বাংলাদেশের নির্বাচনী গণতন্ত্রকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর যে অপচেষ্টা বারবার দেখা দিয়েছে তা বর্জন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। নেতৃত্ব নির্বাচনেও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও রীতি-নীতি মেনে চলতে হবে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে।

৩। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব

জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব গণতন্ত্রের মৌল ধারণার দুটি অনুসঙ্গ। অন্যকথায় গণতন্ত্রের ধারণার মধ্যেই অনিবার্যভাবে এই দুটি প্রত্যয় উপস্থিত রয়েছে। তবুও এই দুটি রাজনৈতিক প্রত্যয়কে এখানে তৃতীয় মূলনীতি হিসেবে উপস্থাপনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ রাষ্ট্র ভৌগোলিকভাবে একটি বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত দ্বারা তিনদিক থেকে বেষ্টিত, সেহেতু এই দুটি প্রত্যয় বাঙালি মুসলমানের স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও সার্বভৌম অস্তিত্বের জন্য রক্ষাকবচ। ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদকে মোকাবেলা করতে হলে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি ও সংস্কৃতির ভেতরে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের চেতনাকে সদা প্রবহমান রাখতে হবে।

বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে বিভিন্ন মাত্রার অসমতা ও বিরোধ রয়েছে। সেগুলোতে ভারসাম্য ও পারস্পরিক মর্যাদা স্থাপন করার জন্য চীন এবং মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে নানামাত্রিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি করতে হবে। পাকিস্তান, তুরস্ক, মিশর ও ইরান – মুসলিম বিশ্বের এই কয়েকটি প্রধান রাষ্ট্রের সঙ্গে শিক্ষা, জ্ঞান ও সংস্কৃতি বিনিময়ের ব্যাপক কর্মসূচি নিয়মিতভাবে আয়োজন ও পালন করতে হবে। ভারতীয় সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও প্রভাব এভাবে মোকাবেলা করে বাংলাদেশে শক্তিমান আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিল্প, সাহিত্য, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটাতে হবে।

৪। ইনসাফ ও মজলুমের মৈত্রী

চতুর্থ মূলনীতি হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে আরো দুটি প্রত্যয় – ইনসাফ ও মজলুমের মৈত্রী। সমাজে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যকে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা জরুরী। সমাজে শ্রেণী বৈষম্য আছে ও থাকবে। কিন্তু ইনসাফ কায়েম করতে পারলে এই শ্রেণী বৈষম্যে ভারসাম্য নিয়ে আসা সম্ভব হবে। সমাজে অন্যায় মেরুকরণ প্রশমিত হবে এবং সংঘাত ও সহিংসতা থেকে সমাজ মুক্ত থাকতে পারবে। সমাজে এই ইনসাফ কায়েম করতে হলে মজলুম শ্রেণীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য ও মৈত্রী গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশে মূলধারার রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে ব্যাপক জনসমর্থন পেতে হলে কেবলমাত্র উপরিতলের ইস্যু থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে মজলুম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করে সমাজে ও রাষ্ট্রে সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল ও নেতৃত্ব দিতে হবে।

এই লেখায় আগামী দিনের বাংলাদেশে মূলধারার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভাবাদর্শিক ভিত্তি হিসেবে কয়েকটি মূলনীতি উপস্থাপন করা হয়েছে। সবগুলো মূলনীতির বিস্তারিত আলোচনা এখানে করা হয়নি সময় ও স্থান স্বল্পতার কারণে। পাঠকের মনোযোগ ও ধৈর্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়েছে। প্রথম মূলনীতিটিকে অনুপুঙ্খ আলোচনার মাধ্যমে অনেকটা মূর্ত ও খোলাসা করা হয়েছে। প্রথম মূলনীতির শুদ্ধতাবাদী ও সর্বাত্মকবাদী পাঠ ও ভাষ্যের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের যে ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা তাই প্রকৃতপক্ষে এই রচনার মৌলিক অবদান বলে আমাদের বিশ্বাস। অন্যান্য মূলনীতিগুলোকে সংক্ষিপ্তাকারে ও বিমূর্তভাবে এখানে প্রাথমিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে মাত্র। এটি সত্য যে এই প্রচলিত প্রত্যয়গুলির এইসময় উপযোগী বয়ান অনেক প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীকালে অবশিষ্ট প্রতিটি প্রত্যয় নিয়ে আলাদাভাবে বিস্তারিত দিকনির্দেশনামূলক লেখার ইচ্ছে আছে। তবে ইতোমধ্যে এই মূর্ত ও বিমূর্ত প্রত্যয়গুলি থেকে মূর্ত ও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি প্রণয়ন করে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রাম পরিগঠন করা সম্ভব হতে পারে বলে আমাদের অকুণ্ঠ বিশ্বাস।

Erasing 25th february and Transcom ( Bangladesh) Limited’s new brand : Manzur

Have you seen todays ( February 25 2014) issue of Prothom Alo? If not let’s see it here –

Prothom Alo 25 february

Do you see where BDR Massacre is in the first page? Helpful Hint: You may need a magnifying glass.

Now let’s see with Prothom Alo’s first page on 15th August.
I am not comparing 15th August with 25th February. I am just trying to see how this newspapers commemorates a national day of mourning –

Prothom Alo 15 August

Or, if 15th August is a matter of different league – lets see how this newspaper treats 14th December- another day of gruesome killings of professionals –

Prothom Alo 14 December

A picture is worth a thousand words. Let the readers make their own conclusions. Looking at this discriminatory news treatment, if a reader concludes that — Prothom-Alo, in collaboration with the Government, is actively trying to erase 25th February from our memory, no one can find any wrong in their assertion.

But this is the same outlet which is at the front line of force-feeding the nation with the memories of 1971 and justice of the killers of 1971. And when comes BDR massacre of 25th February, their double standard is unbelievable.

——————————–

You will see suddenly both these Transcom limited owned newspapers’ front pages get filled with news items trying to glorify sacked Major General Abul Manzur and cries for justice for Manzur. It is very puzzling to see that suddenly these two media are making so much effort to glorify Manzur. What is the agenda? A friends tells me, very succinctly, “…All this smokes and mirrors about trying to prove manzur’s innocence, but no mention of the fact that manzur made a radio speech where he took responsibility for the ‘revolution’ that brought down the ‘tyrant’ and ‘un-islamic’ zia.  It’s like trying to say “faruq-rashid didn’t kill mujib, it was all a conspiracy by someone else”.

And here is another double standard – while 5 year old killing of nearly 50 army officers  get 1 column inch news treatment, killing of one army officer 39 years ago gets half front page treatment for four days in a row.

And while prothom-Alo and spurned leftist polpot revolutionary Lawrence Lifschultz are so vocal about killing of Manzur and justice for Manzur, they are equally silent about the killing of another more decorated war hero, Maj general Khaled Mosharraf. Mindblowing hypocrisy of Transcom’s Media business – but why?

I want to believe

(First published in the Daily Star on 8 March 2009.  I still want to believe, though it is becoming ever-so-hard).

bdr

On that day, no soul shall be wronged; and you shall not be rewarded aught but that which you did. (The Quran, 36: 54).

Surah Yasin is usually recited in Muslim households when someone passes away. The above-quoted ayaat from the surah has been in my mind lately. I want to believe those words, not just in the promised day of reckoning, but here and now, in this People’s Republic of ours.

Continue Reading

জর্জ সেল – এর কোরান

Thomas Jefferson

২০০৭ এর জানুয়ারিতে আমেরিকান কংগ্রেসের প্রথম নির্বাচিত মুসলিম সদস্য কীথ এলিসন (Rep. Keith Ellison, D-Minn) লাইব্রেরী অফ কংগ্রেস থেকে সংগৃহীত কুর’আনের যে কপিটির উপর হাত রেখে কংগ্রেসে শপথ নেন, তার মূল স্বত্বাধিকারী ছিলেন আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট, টমাস জেফারসন (Thomas Jefferson). জেফারসন বিবিধ কারণে ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন যা ডেনিস স্পেলবার্গ (Denise A. Spellberg) তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত বই ‘Thomas Jefferson’s Qur’an’ এ তুলে ধরেছেন। ১৭৬৫ সালে আইনের ছাত্র থাকা অবস্থায় তরুণ জেফারসন যে কুর’আনটি কেনেন, তা ছিল সরাসরি আরবি থেকে ইংরেজি ভাষায় কুর’আনের প্রথম অনুবাদ। জর্জ সেল নামক একজন তরুণ ইংরেজ ল’ইয়ারের করা এ অনুবাদটি ছিল প্রায় দুইশ বছর পর্যন্ত পাশ্চাত্যে কুর’আন বিষয়ক গবেষণা ও ধারণার অন্যতম প্রধান উৎস।

প্রেক্ষাপট: ইউরোপীয়দের ইসলাম বিষয়ক আগ্রহ

মধ্যযুগ থেকেই ইউরোপে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয় (এ বিষয়ে আমার আগের লেখাতে কিছুটা আলোচনা করেছি)। ইউরোপে যখন ‘অন্ধকার যুগ’ চলছিল, তখন এশিয়া, ইউরোপ, নর্থ আফ্রিকার বড় অংশ জুড়ে মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়। আনাতোলিয়া, আরব ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অটোমান সাম্রাজ্য, পারস্যে সাফাভিদ সাম্রাজ্য, ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের মতো সভ্যতাগুলো কেবল প্রবল পরাক্রমশালী হিসেবেই নয়, বরং তাঁদের সঙ্গীত, কবিতা, বাগান, মৃৎশিল্প, বস্ত্রশিল্প-সহ পরিশীলিত শিল্প-সংস্কৃতির কারণেও বিশ্বজুড়ে সুবিদিত ছিল। একই সাথে বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার সেই সময় আরবি ভাষায় সংরক্ষিত ছিল। শুধু বিজ্ঞান বা দর্শন বা বাণিজ্যই নয়, আরবি সাহিত্যও ইউরোপীয় অনুবাদকদের উৎসাহিত করেছে। ১৭০৪ সালে একজন ফরাসী আরবি থেকে ‘সহস্র রজনীর গল্প’ প্রথম অনুবাদ করেন যা সেই থেকে আজ পর্যন্ত ইউরোপীয়দের কাছে রোমাঞ্চকর ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত।

তবে সব কিছুর উপরে ইসলাম ধর্ম বিষয়ক অনুসন্ধান ও গবেষণা বিবিধ কারণে অনেক ইউরোপীয় পণ্ডিত ও চিন্তাবিদদের আগ্রহের কারণ হয়ে ওঠে। সপ্তম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপ থেকে আসা স্বল্প-সংখ্যক মুসলিম কি করে এত দ্রুত সময়ের মধ্যে জানা বিশ্বের এত বড় অংশ জয় করে নিয়েছিল, ইউরোপীয়দের জন্য তা একই সাথে ছিল গভীর বিস্ময়, অনেকটা অস্বস্তিরও কারণ। ফরাসী দার্শনিক ভলতেয়ার (Voltaire) এবং ইংরেজ ইতিহাসবেত্তা এডওয়ার্ড গিবন (Edward Gibbon) একে বিশ্ব-ইতিহাসের অন্যতম বড় প্রশ্ন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এছাড়াও, অনেক ইউরোপীয় দার্শনিক এবং মুক্তচিন্তার অধিকারী খ্রিস্টান ইসলামে স্রষ্টার একত্ববাদ সম্পর্কিত মূলনীতি বা মতবাদকে খ্রিস্টধর্মের জটিল ত্রিত্ববাদ (Trinity) অপেক্ষা যুক্তিপূর্ণ মনে করেছেন। এসব বিবিধ কারণে ইউরোপে ইসলাম এবং তার মূল আরবি ভাষার উপরে আগ্রহ তৈরি হয়।

ইংরেজি অনুবাদ

ইউরোপে কুর’আনের প্রথম অনুবাদটি হয় লাতিন ভাষায়। ১১৪৩ সনে ইংরেজ রবার্ট অফ কেটন (Latin: Robertus Ketenensis) কর্তৃক ধর্মীয় মোহান্ত (abbot) পিটার দ্য ভেনারেবল (Peter the Venerable) এর নির্দেশে করা Lex Mahumet pseudoprophete (‘The law of Mahomet the false prophet’) শীর্ষক অনুবাদটি ছিল অতিরঞ্জিত এবং উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে অপ্রীতিকর অর্থ বা মন্তব্য সম্বলিত, যার মূল উদ্দেশ্য এর শিরোনামেই প্রতিফলিত। খ্রিস্টান চার্চে বহুল প্রচলিত লাতিন ভাষার এ অনুবাদটি দুঃখজনকভাবে পরবর্তী কয়েকশ বছর ধরে পাশ্চাত্যে কুর’আনের অর্থ এবং সে হিসেবে ইসলামের মর্মার্থ অনুধাবনের একমাত্র উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূল আরবিতে না গিয়ে বরং লাতিন ভাষার এই কাজটিকে এর ভুল বা বিকৃতিসহ পরবর্তীতে অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ১৬৪৯ সালে রাজা প্রথম চার্লস এর চ্যাপলেইন Alexander Ross ফরাসী Sieur du Ryer এর অনুবাদ L’Alcoran de Mahomet কে প্রথম ইংরেজিতে অনুবাদ করেন, যার শিরোনাম ছিল ‘The Alcoran, Translated out of Arabic into French. By the Sieur du Ryer, Lord of Malezair, and Resident for the French King, at ALEXANDRIA. And Newly Englished, for the satisfaction of all that desire to look into the Turkish Vanities’। শিরোনামের শেষাংশটি লক্ষণীয়।

প্রায় একশ বছর পর ১৭৩৪ সালে জর্জ সেল (George Sale 1697-1736) নামক জনৈক ইংরেজ আইনজীবী ও ওরিয়েন্টালিস্ট মূল আরবি থেকে সরাসরি ইংরেজি ভাষায় কুর’আন অনুবাদ করেন। কাজটির শিরোনাম ছিল ‘Koran, commonly called the Alcoran of Mohammed, tr. into English immediately from the original Arabic; with explanatory notes, taken from the most approved commentators. To which is prefixed a preliminary discourse’. বলা হয়, সেল তাঁর অবসর সময়ে আরবি ভাষা অধ্যয়ন করেন এবং কোনও মুসলিম দেশে তিনি ভ্রমণ করেননি, যদিও অনেকে বলে থাকেন তিনি ২৫ বছর আরবে ছিলেন। সেল নিজেই তা অস্বীকার করে লিখেছেন, “I am but too sensible of the disadvantages, one who is neither a native, nor ever was in the country must lie under, in playing the critic in so difficult a language as the Arabick.” Society for the Promotion of Christian Knowledge in London এর পৃষ্ঠপোষকতায় সিরিয়ান খ্রিস্টানদের জন্য নিউ টেস্টামেন্ট-এর একটি আরবি অনুবাদ তৈরির উদ্দেশ্যে জর্জ সেল আরবি ভাষা শিখেছিলেন বলে ধারণা।

কুর’আন অনুবাদের কারণ হিসেবে জর্জ সেল লেখেন,

“If the religious and civil Institutions of foreign nations are worth our knowledge, those of Mohammed, the lawgiver of Arabians, and founder of an empire which in less than a century spread itself over a greater part of the world than the Romans were ever masters of, must need to be so.”

An Ottoman Qur’an manuscript

অনুবাদ কাজে সেল ১৬৯৮ সালে কাউন্টার-রিফর্মেশন রোমে প্রকাশিত Louis Maracci এর করা লাতিন অনুবাদের সাহায্য নেন। এছাড়াও লন্ডনের ডাচ চার্চে সংরক্ষিত কুর’আনের একটি হস্তলিখিত কপিও তিনি সংগ্রহ করেন। ষোড়শ শতাব্দীতে অটোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী ইস্তাম্বুলে তৈরি এই manuscript টি ১৬৩৩ সালে একজন ডাচ বণিক লন্ডন চার্চকে দান করেন। চার্চের লাইব্রেরিতে পড়ে থাকা কুর’আনের এই হস্তলিখিত কপিটি প্রায় একশ বছর পর সেল তাঁর অনুবাদ কাজে ব্যবহার করেন। কুর’আনের হস্তলিখিত কপিটি ঠিক কি কারণে সংগ্রহ করা হয়েছিল বা লন্ডনে আনা হয়েছিল, তা জানা যায় না। তবে, ইসলামের ধর্মগ্রন্থকে সে সময়ে আরবি ভাষার একটি কালেক্টেবল হিসেবে ধরা হতো এবং পড়তে না পারলেও অনেকে তা কেবল মূল্যবান বস্তু হিসেবে সংগ্রহ করতেন। সেল সরাসরি না বললেও ধারণা করা হয় যে তিনি কুর’আনের এই বিশেষ কপিটিকেই তাঁর অনুবাদ কাজে ব্যবহার করেছিলেন। কারণ ইস্তাম্বুলের কুর’আনটিতে কিছু শব্দের যে বিশেষ রূপ এবং মেইনস্ট্রীম অটোমান সাম্রাজ্যে সুপ্রচলিত কমেন্টারি দেখা যায়, সেল এর অনুবাদ এবং নোট এ তার রেশ পাওয়া যায়।

জর্জ সেল এর পূর্বে ১৬৪৯ সালে ফরাসী থেকে ইংরেজিতে যে অনুবাদটি করা হয়, তাতে মূল অনুবাদের ভুলের বাইরেও নতুন কিছু ভুল যোগ হয় বলে সেল মন্তব্য করেন। সে তুলনায় সেল এর অনুবাদটি ছিল লক্ষণীয়ভাবে পাঠযোগ্য, পরিশীলিত, এবং তুলনামূলকভাবে শুদ্ধ। কুর’আনের ভাষার সৌন্দর্য এবং তাঁর অনুবাদের সীমাবদ্ধতা বিনম্রভাবে স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ‘it must not be supposed the translation comes up to the dignity of the original’. এর পরেও তাঁর অনুবাদ কুর’আনের যে কোনও আধুনিক অনুবাদের সাথে তুলনীয়, যেমন আয়াতুল কুরসীর প্রথমাংশের অনুবাদ –

“GOD! there is no GOD but he; the living, the self-subsisting: neither slumber nor sleep seizeth him; to him belongeth whatsoever is in heaven, and on earth.”

একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ঐশ্বর্য

George Sale

জর্জ সেল এর অনুবাদটি কেবল একটি উচ্চমানের সাহিত্য কর্মই নয়, একইসাথে তা পাশ্চাত্যে ইসলাম বিষয়ক জ্ঞানের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একটি সুদীর্ঘ ভূমিকায় তিনি ইসলামের ইতিহাস, তাত্ত্বিক, ও ধর্মীয় বহু বিষয়ের ধারণা উল্লেখ করেন। তাঁর অনুবাদ কাজটির আগে যেকোনো ইংরেজি ভাষীর কাছে ইসলাম সম্পর্কিত তথ্যের একমাত্র উৎস ছিল লাতিন ভাষায়। সেল এর অনুবাদ ইসলাম বা কুর’আন সম্পর্কে পূর্বাপর কুসংস্কার বা উদ্দেশ্যপূর্ণ মিথ্যাচারের লাগাম টেনে ধরে। যেমন, মুহাম্মদ(সা:) এর জীবনী বর্ণনায় তিনি মধ্যযুগ থেকে চলে আসা কাল্পনিক ও বিতর্কিত গালগল্পের আশ্রয় নেন নি। বরং তিনি লেখেন,

“Mohammed was richly furnished with personal endowments, beautiful in person, of a subtle wit, agreeable behaviour, shewing liberality to the poor, courtesy to everone, fortitude against his enemies, and, above all a high reverence for the name of God.”

জর্জ সেল এমন একটি সময়ে অনুবাদ কাজটি করেন যখন ইউরোপে নতুন করে আরবি শেখা এবং ইসলামকে জানার একটি চল শুরু হয়েছিল। সে হিসেবে তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের কাজ থেকে উপকৃত হয়েছেন। আবার, পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিনি এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যোগ করেছেন। তুলনামূলকভাবে সঠিক ধ্যান-ধারণা এবং একটি বিজাতীয় ধর্মকে জানার ও বোঝার আন্তরিক অভিপ্রায়ের সমন্বয়ে জর্জ সেল এর ‘Koran’ একটি সুদূরপ্রসারী এবং অসাধারণ কাজ যা বিংশ শতকের প্রায় মধ্যভাগ পর্যন্ত কুর’আনের স্ট্যান্ডার্ড ইংরেজি অনুবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়। কেবল সেল এর সমসাময়িকরাই নয়, বরং পরবর্তী প্রায় দুইশ বছর ধরে ব্রিটেন ও আমেরিকায় প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরে কুর’আন ও ইসলাম বিষয়ক ধ্যান-ধারণার উৎস হিসেবে তা পরিগণিত হয়। বিশদ নোট সম্বলিত হবার কারণে আজও ইতিহাসবেত্তারা জর্জ সেল এর ‘কোরান’ ব্যবহার করেন। ঐতিহাসিক Michael Cook এর ভাষ্যে, “an old translation which has worn very well.”

অধুনা কুর’আনের বহু অনুবাদ হয়েছে। অষ্টাদশ শতকে ইংরেজিতে কেবল একটি, উনবিংশ শতকে দুইটি, বিংশ শতাব্দীতে এসে অন্তত ১৬টি অনুবাদ পাওয়া যায়। এর পরেও একজন গড়পড়তা পাশ্চাত্যবাসী ইসলাম সম্পর্কে খুব কমই ধারণা রাখেন, যদিও অভিবাসন, বাণিজ্য, বা পর্যটনের কারণে এখন অহরহই মুসলিম-অমুসলিমের দেখাসাক্ষাৎ হয়। এয়ার ট্র্যাভেল, স্যাটেলাইট টিভি, বা ইন্টারনেটের এই যুগেও পৃথিবীর বিভিন্ন গোত্র বা গোষ্ঠীর মানুষদের সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও সহানুভূতি গড়ে ওঠেনি।

হয়তো জর্জ সেল এবং অসংখ্য প্রতিকূলতার মাঝে করা তাঁর অনুবাদ কাজটি সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। অসংখ্য ভুল ধারণা সত্ত্বেও পাশ্চাত্য কয়েকশ বছর ধরে ইসলাম ও তার সংস্কৃতিকে বোঝার চেষ্টা করছে। ইসলামের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির অনুবাদ কাজ সামগ্রিকভাবে ইসলামের ধর্মীয়, সাহিত্যিক, এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্যের স্বাদ আস্বাদন করার প্রচেষ্টারই অংশ।

[এই লেখাটি মূলত প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরাল প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত Alexander Bevilacqua এর সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নিবন্ধের ভাবানুবাদ এবং সম্প্রসারণ। বোঝার সুবিধার্থে বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং মন্তব্য এতে যোগ করা হয়েছে। মূল লেখাটির লিঙ্ক এখানে।]

http://shankhachilerdana.wordpress.com/

সভ্যতার শিখরে মুসলিম বুদ্ধিবৃত্তিক মন ও মানসিকতা

আমরা অনেক সময়ই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তার বিকাশে মুসলিমদের অবদানের কথা শুনি। কিন্তু সচরাচর যেভাবে এ তথ্যগুলো দেয়া হয়, তাতে অনেকের কাছে মনে হতে পারে যে সব সভ্যতা বুঝি একই ভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষে অবদান রেখেছে এবং মুসলিমদের অবদান সে অর্থে তেমন কোনও ব্যতিক্রম নয়। প্রকৃত সত্য তা নয়, ধর্মভিত্তিক সভ্যতার ক্ষেত্রে তো নয়ই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ধর্মীয় চিন্তাধারা দিয়ে অনুপ্রাণিত তো নয়ই, বরং বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। মুসলিম সভ্যতার ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে এর বিপরীতটি লক্ষ্য করা যায়, যা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চাকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত এবং পৃষ্ঠপোষণ করেছে।

অনেকেই হয়তো জানেন না যে রোমান সম্রাট কন্সতান্তিন চতুর্থ শতকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার পর থেকে পৌত্তলিক গ্রীকদের উপাসনালয় এবং জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রগুলিকে খ্রিস্টধর্মের মূল বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক ধরে নিয়ে একে একে বন্ধ করে দেয়া হয়। এর জের ধরে ষষ্ঠ শতাব্দীতে রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ান (Justinian I in 529 CE) বিজ্ঞান ও গণিতশাস্ত্রসহ জ্ঞানের সাধনায় নিয়োজিত গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর প্রতিষ্ঠিত আকাদেমি চিরতরে বন্ধ করে দেয়। এই জাতীয় মন-মানসিকতার ফলস্বরূপ খ্রিষ্টান ইউরোপে মুক্তচিন্তার সাধনা একরকম বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় এক হাজার বছর ধরে প্রাচীন গ্রীক জ্ঞান-ভান্ডার গ্রীকভাষী খ্রিস্টান বাইজেন্টাইন রোমান সাম্রাজ্যের হস্তগত হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা এ জ্ঞানের ব্যাপক চর্চা, প্রসার, এবং উৎকর্ষ সাধনে ব্যর্থ হয়। রেনেসাঁর উৎপত্তির আগ পর্যন্ত এইসময়টি ইউরোপীয় সভ্যতার জন্য একারণে অন্ধকার যুগ হিসেবে পরিচিত।

ইউরোপীয় প্রেক্ষাপটে যে বিষয়টি সচরাচর আলোচিত হয় না, তা হোল সপ্তম শতাব্দীর পর থেকেই একে একে মিশর, মেসোপটেমিয়া, পারস্য, ভারতসহ অতীত সভ্যতার জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র গুলো মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ, গ্রীক বিজ্ঞানের স্থপতি হিসেবে পরিচিত ইউক্লিড, আর্কিমিডিস, টলেমী, গ্যালেনসহ অনেক মনীষী একসময় মিশরে অবস্থিত গ্রীক আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিতে জ্ঞান চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। তাঁদের কাজগুলো ঐ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত হয় যার বেঁচে যাওয়া (রোমান সিজারের অগ্নিকান্ড হতে) অংশগুলো পরবর্তীতে মুসলিমদের আয়ত্তে আসে। মুসলিমদের কাছে ধর্ম ও বিজ্ঞানের মাঝে আপাত: দ্বন্দ্ব ছিল না বিধায় তারা হারিয়ে যাওয়া গ্রীক, পারস্য, ভারতীয় সভ্যতার জ্ঞান-ভাণ্ডারকে ধারণ করে। এমনও সময় ছিল যখন বাগদাদের খলিফা অতীতের মূল্যবান পুস্তক অনুবাদের পুরষ্কারস্বরূপ বইয়ের ওজনের সমতুল্য স্বর্ণ অনুবাদককে প্রদান করতেন। বাগদাদের ‘বায়তুল হিকমাহ'(House of Wisdom) তে শুরু হওয়া আব্বাসীয় খলিফা আল-মনসুরের ‘Translation Movement’ এর সময় অসংখ্য গ্রীক ক্লাসিক আরবীতে অনুদিত হয়। ইউরোপে প্রচলিত রোমান নিউমেরাল সিস্টেমে গণিতের ব্যাপক উৎকর্ষ সম্ভব ছিল না। আরব গণিতবিদেরা প্রাচীন ভারতীয় নিউমেরাল সিস্টেমের জ্ঞান ধারণ করে এর পরিবর্ধন, উৎকর্ষ, ও ব্যাপক প্রচলন করেন। আল-খোয়ারিজমি (al-Khwārizmī) সহ মুসলিম গাণিতিকরা গ্রীক জ্যামিতির গণ্ডির বাইরে এসে অ্যালজেব্রার উদ্ভাবনসহ আধুনিক গণিতের চরম প্রসার নিশ্চিত করেন। পাশ্চাত্যের সুপরিচিত ইটালীয় গণিতবিদ ফিবোনাচ্চি (Fibonacci) মুসলিম নর্থ আফ্রিকাতে বসে হিন্দু-অ্যারাবিক নিউমেরাল সিস্টেম অধ্যয়ন করেন।

An imaginary rendition of Al Biruni on a 1973 Soviet post stamp

জ্ঞানসাধনায় মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টিভঙ্গি কতখানি উদার এবং প্রগতিশীল ছিল, তা বোঝাতে শুধু একটি উদাহরণই যথেষ্ট। অনেকেই জানেন না যে প্রখ্যাত মুসলিম মনীষী আল-বিরুনী তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যয় করেন। ১০১৭ সনে ভারতে গমনের পর একাদশ শতাব্দীর ভারতের ইতিহাস, জিওগ্রাফি, ভূতত্ত্ব, বিজ্ঞান, গণিত, জাতিভিত্তিক প্রথা ও ধর্মবিশ্বাসের উপর ‘তারিখ আল-হিন্দ’ (History of India a.k.a The Indica) নামে একটি বিশদ, নিরপেক্ষ গবেষণাধর্মী এনসাইক্লোপিডিয়া লিখেন যার জন্য তাঁকে ‘Founder of Indology’ এবং ‘First Anthropologist’ বলা হয় – কাজটির জন্য তাঁকে al-Ustadh (The Master) উপাধিতেও ভূষিত করা হয়। অন্যদিকে গ্রীক পণ্ডিত ইরাতোস্থেনিসের (Eratosthenes) প্রবর্তিত ব্যবস্থার বাইরে এসে (যে ব্যবস্থায় তাঁকে ৫০০ মাইল ব্যবধানে অবস্থিত দু’টি স্থানে পরিমাপ নিতে হয়) পাঞ্জাবের Pind Dadan Khan এলাকাস্থিত নান্দনা (Nandna) দুর্গে বসে পাহাড়ের উচ্চতা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গোলাকার পৃথিবীর ব্যাসার্ধ পরিমাপের নতুন পন্থা তিনি উদ্ভাবন করেন যার দ্বারা নির্ণীত ব্যাসার্ধ প্রায় নির্ভুল (আধুনিক স্যাটেলাইটের সাহায্যে নির্ণীত ব্যাসার্ধের সাথে কেবল ১০০ মাইলের মতো তফাত) পরিগণিত হয়। এ কারণে তাঁকে ‘Father of Geodesy’ বলা হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সমূহ অবদান রাখা এই মনীষী ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম।

মূলত উৎস যাই হোক, জ্ঞানসাধনার প্রতি সামগ্রিকভাবে মুসলিম মনীষীদের এমন নিরপেক্ষ, বুদ্ধিবৃত্তিক, এবং আগ্রহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অচিরেই মানবলব্ধ জ্ঞানভাণ্ডার এশিয়া, ইউরোপ, নর্থ আফ্রিকাতে বিস্তৃত সমগ্র মুসলিম সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপ যখন ঘোর অন্ধকার যুগে আচ্ছন্ন, তখন মুসলিম সভ্যতা জ্ঞানের মশালকে শুধু প্রজ্বলিতই রাখেনি, মুসলিম মনীষীরা এর প্রভূত বিকাশ ঘটান এবং জ্ঞানের মশাল বয়ে নিয়ে যান পরবর্তী প্রজন্মের কাছে, এর হাত ধরেই একসময় ইউরোপে অ্যাকাডেমিক রেনেসাঁর উৎপত্তি হয়।

Interior of al-Karaouine Mosque and university; note the similarity of the architecture to the Alhambra (الحمراء)

পাশ্চাত্য সভ্যতায় মুসলিমদের অবদান ঠিক কি ও কতখানি, তা নিয়ে তাদের একটি বিশাল অংশ কেবল অজ্ঞই নয়, বরং অনেক রকম বিভ্রান্তি ও মিথ্যা প্রচারণার শিকার। এর পেছনের জটিল কারণগুলো নিয়ে অন্যদিন আলোচনা করা যাবে। এই প্রচারণার একটি বড় শিকার হচ্ছে পাশ্চাত্যের নারীরা। এটা তাদের জানারও কথা নয় যে দ্বিতীয় খলিফা উমর(রা:) এর সময়ে ৬৩৫ ইং সনে প্রথমে মদিনা এবং পরবর্তীতে বসরায় স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী ছিলেন আল-শিফা নাম্নী জনৈক মুসলিম মহিলা। কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ১০০ বছর আগে ৮৫৯ সনে মরক্কোর ফেজ নগরীতে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু থাকা বিশ্বের প্রথম আনুষ্ঠানিক বিশ্ববিদ্যালয় আল-কারাউইয়্যিন (al-Qarawiyyin, Arabic: جامعة القرويين‎) প্রতিষ্ঠা করেন ফাতিমা আল-ফিহরি নামক জনৈক ধনী বণিককন্যা। ধর্মীয় উপাসনালয় না হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত আল-ফিহরি নিয়মিত রোজা রাখতেন বলে কথিত আছে। জ্ঞানচর্চাকে ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, বরং সম্পূরক ও পরিপূরক গণ্য করে কতখানি মর্যাদা দেয়া হোত, এ তারই প্রমাণ। দশম শতাব্দীতে Pope Sylvester II (পরবর্তীতে খ্রিস্টান ধর্মপ্রধাণ) স্পেনের কর্ডোভা-সহ ফাতিমা আল-ফিহরির আল-কারাউইয়্যিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ফিরে গিয়ে ইউরোপে তিনি অ্যারাবিক ডেসিমাল নিউমেরাল সিস্টেম প্রচলন করেন। প্রসঙ্গত, আজকের ধনবান আরব প্রিন্স ও প্রিন্সেসদের সুউচ্চ টাওয়ার নির্মাণের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শোনা যায়; এর পরিবর্তে তাঁদের কেউ কি বিশ্বের সবচাইতে বড় পাবলিক লাইব্রেরী নির্মাণ বা তথ্য-প্রযুক্তির সমন্বয়ে জ্ঞানের চর্চা ও প্রসারে বিপুল অবদান রাখার কথা চিন্তা করতে পারেন?

প্রাসঙ্গিকভাবে, বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান HP (Hewlett-Packard Company) এর এককালীন CEO কার্লি ফিওরিনার একটি সাম্প্রতিক মন্তব্য উদ্ধৃত করছি । ২০০৫ সাল পর্যন্ত ফিওরিনা ছিলেন Fortune 500 কোম্পানির সর্বময় কর্তৃত্বে আসা সাকুল্যে তিনজন নারীর একজন। Fortune ম্যাগাজিনের 50 most powerful women in business in the United States লিস্টে ছয়বার ফিওরিনার নাম আসে এক নম্বরে। ম্যানেজমেন্ট এবং বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ডিগ্রিধারী ফিওরিনা Stanford University থেকে Medieval History ও Philosophy তে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে ফিওরিনার “Technology, Business, and our way of life: What’s next” শীর্ষক বক্তব্যের অংশবিশেষ নিচে উদ্ধৃত হোল। ইতিহাস, ঐতিহ্য, এবং বাস্তবতার খেই হারিয়ে ফেলা উগ্র ধর্মবিদ্বেষী এবং ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর লাগামহীন প্রচারণায় দিশেহারা অবস্থায় এ উদ্ধৃতি প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। একই সাথে এতে রয়েছে ভবিষ্যতের কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্ব ব্যবস্থার উপরেও কিছু দিক-নির্দেশনা।

“একসময় পৃথিবীতে এমন এক সভ্যতা ছিল, যাকে সর্বশ্রেষ্ঠ গণ্য করা হোত। এই সভ্যতা একটি আন্ত মহাদেশীয় সুপার-ষ্টেট তৈরি করতে সমর্থ হয়, যার বিস্তৃতি ছিল এক মহাসাগর থেকে অন্য মহাসাগর পর্যন্ত – উত্তরের হিমাঞ্চল, ক্রান্তীয় অঞ্চল, মরুভূমিসহ বিভিন্ন জলবায়ুর ভূখন্ড এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিভিন্ন মতবাদ এবং জাতিগোষ্ঠীর লক্ষ কোটি মানুষের সমন্বয়ে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

পৃথিবীর বিশাল একটি অংশের জন্য এর ভাষা হয়ে উঠেছিল সার্বজনীন, যা শত শত ভূখণ্ডের অধিবাসীদের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেছিল। এর সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন জাতির সৈন্য সমাবেশ ঘটেছিল। রাষ্ট্রের শান্তি এবং সমৃদ্ধির সুরক্ষায় এ সেনাবাহিনী এমন পারদর্শী ছিল, যার জুড়ি মেলা ভার। এই সভ্যতার বাণিজ্যের প্রসার লাতিন আমেরিকা এবং চীনের মধ্যকার সমগ্র অঞ্চলে সুবিস্তৃত ছিল।

আর সবকিছু ছাপিয়ে এই সভ্যতার চলৎশক্তি হয়ে উঠেছিল এর উদ্ভাবনী ক্ষমতা। এর স্থপতিরা অভিকর্ষের বিপরীতে নির্মাণ করেছিলেন বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শন। এর গণিতবিদরা আবিষ্কার করেছিলেন আলজেব্রা আর অ্যালগরিদম, যা আধুনিককালে কম্পিউটার থেকে এনক্রিপশন পদ্ধতি আবিষ্কারের দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এর চিকিৎসকরা মানবদেহ বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, সেই সাথে আবিষ্কার করেছিলেন বিভিন্ন রোগের প্রতিকার। এর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গভীরভাবে মহাকাশ পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন নক্ষত্রের নামকরণ করেছিলেন, পরবর্তীকালের জন্য উন্মুক্ত করেছিলেন মহাকাশভ্রমণ ও অনুসন্ধানের দ্বার। এর সাহিত্যিকরা রচনা করেছিলেন বীরত্ব, প্রেম, মোহ নিয়ে হাজারো উপাখ্যান। এর কবিরা অকুণ্ঠে লিখেছেন প্রেমের কবিতা, তাঁদের আগে অন্যরা যা নিয়ে লিখতে সাহস পেত না।

ভিন্ন চিন্তা ও দর্শনের চর্চা – যা নিয়ে সমসাময়িক অন্যান্য জাতির চূড়ান্ত ভীতি ছিল – তা এই সভ্যতার ছায়াতলে ব্যাপক প্রসার ও সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। অতীত সভ্যতার জ্ঞান যখন দমন-পীড়নের কারণে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল, তখন এই সভ্যতার ধারক-বাহকরাই সে জ্ঞানকে বাঁচিয়ে রেখেছিল এবং তা পৌঁছে দিয়েছিল পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।

আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতায় এর অনেকগুলো বিষয়ই আজ আমাদের পরিচিত, কিন্তু আমি যে সভ্যতার কথা বলছি, তা হল ৮০০ হতে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের মুসলিম সভ্যতা, যার অধীনে ছিল অটোম্যান সাম্রাজ্য, বাগদাদ, দামেস্ক, কায়রোর মত শহর এবং সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট এর মত জ্ঞানবান শাসক।

যদিও এই সভ্যতার কাছে আমরা ঠিক কতখানি ঋণী, সে ব্যাপারে আমরা অনেকেই বিন্দুমাত্র ধারণা রাখি না, তবে সত্য এই যে, আমাদের ঐতিহ্যের অনেক কিছুই তাঁদের অবদান। আরব গণিতবিদদের অবদান ছাড়া আজকের প্রযুক্তি শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব হত না। রুমির মতো সুফি কবি-দার্শনিকরা সত্তা ও সত্য নিয়ে আমাদের প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন। সুলেমানের মতো মহান শাসক সহনশীলতা ও নাগরিক নেতৃত্ব বিষয়ক ধারণায় সমূহ অবদান রেখেছেন। তাঁর নেতৃত্ব থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে – এ নেতৃত্ব ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত – উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে নয়। এ ছিল এমনই এক নেতৃত্ব ব্যবস্থা যা খ্রিস্টান, মুসলিম, এবং ইহুদি জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও সামর্থ্যের পরিপূর্ণ বিকাশে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছিল।

শিল্প-সংস্কৃতি, সহনশীলতা, বৈচিত্র্য, বীরত্ব গাঁথায় পূর্ণ এমন একটি আলোকিত নেতৃত্ব সুদীর্ঘ ৮০০ বছরের উদ্ভাবন ও সমৃদ্ধির প্রসার নিশ্চিত করেছে।

আজকের অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং গুরুতর সময়ে অনুরূপ মহান একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আমাদের অঙ্গীকার করা প্রয়োজন। অতীতের যে কোনও সময়ের চাইতে এখন সাহসী এবং ব্যক্তিগত আচরণে দায়িত্বশীল একটি নেতৃত্বের উপর গুরুত্ব দেয়া দরকার। সম্মিলিতভাবে আমাদের জন্য নেতৃত্বের ভূমিকা ঠিক কি হওয়া উচিত, সে প্রশ্ন দিয়ে আমি আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করতে চাই …”

সম্পূর্ণ বক্তব্যটি এখানে

ফিওরিনার মতো একজন প্রভাবশালী নারীর উদ্ধৃতিতে মনে হতে পারে পাশ্চাত্যের প্রচলিত ধ্যান-ধারণায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে, যা আশার কথা। তাঁর এ উক্তি অনেককে ইসলাম সম্পর্কে নতুন করে পড়াশোনা করতে অনুপ্রেরণা যোগাবে যা তাদের বিভ্রান্তি নিরসনে সহায়ক হবে। কেবল অমুসলিমদের জন্য নয়, হালের মুসলিমদের জন্যও একথা সমভাবে প্রযোজ্য। সাফল্যের শিখরে থাকা অবস্থায় জ্ঞানের প্রতি ধর্মপ্রাণ মুসলিম মনীষীদের যে উদার, যৌক্তিক, প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি এই নিবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে, তা সমকালীন মুসলিম বিশ্বে অনেকটাই অকল্পনীয়। তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষের এযুগে ধর্মবিদ্বেষী ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর ক্রমাগত আগ্রাসনে উঠতি প্রজন্মকে ধর্ম সম্পর্কে খুব সহজে বিভ্রান্ত হতে দেখা যায়, যা থেকে অনেকাংশে প্রতীয়মান হয় যে সঠিক ইতিহাস, ঐতিহ্য, বা দর্শন সম্পর্কে এদের জ্ঞান খুবই সামান্য।

প্রশ্ন উঠতে পারে, ইতিহাস নিয়ে কথা বলা কি অতীত নিয়ে পড়ে থাকা? আমার মতে অবশ্যই নয়, কারণ ইতিহাস কেবল অতীতের বিশেষ ঘটনাবলীর চর্চা নয় – অতীতকে পরম তপস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাও এর মূল লক্ষ্য নয়। বরং অতীতের কোন মন-মানসিকতা বা চিন্তা-চেতনা সামগ্রিকভাবে একটি জাতির চরম উৎকর্ষের সহায়ক শক্তি হয়েছিল বা তার পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল, তা বিশেষভাবে শেখার বিষয়। ইতিহাসলব্ধ জ্ঞান একটি জীবন্ত ও গতিশীল সমাজে কিভাবে প্রতিফলিত হবে তার কোনও সুনির্দিষ্ট ফর্মুলা নেই। কারও জন্য এর গুরুত্ব বুদ্ধিবৃত্তিক বা জ্ঞানের প্রসারের মাঝে সীমাবদ্ধ। কারও কাছে তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নির্দেশনার উৎস। প্রতিফলন যেভাবেই হোক, ইতিহাস চর্চার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ অতীতমুখী মনোভাব বা অনুতাপে বিদ্ধ হওয়া নয়, বরং অতীতের নির্মোহ বিশ্লেষণলব্ধ জ্ঞানে উদ্বুদ্ধ ও সমৃদ্ধ হয়ে মানবসভ্যতাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া।

http://shankhachilerdana.wordpress.com

বাংলাদেশে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠার কারণগুলি

by Hussain Sumrat

৪২ বছর আগে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিপক্ষে বাংলাদেশ একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠন করার জন্য যুদ্ধ করেছিল সেখানে এদেশের কিছু লোক সশরীরে বিরোধিতা করেছিল। তাঁদের বিচার হবে এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বিভিন্নভাবেই এই বিচারটি পেছনে পরে গিয়েছে। এবং দেশের মানুষ ও যারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল তাঁরাও ভেবে নিয়েছিল এই বিচার আর হবে না। কিন্তু পাপ যে কাউকে ছাড়ে না সেটি প্রমাণিত হল। একবার একটি পাপ করলে সেটি আমাদের পিছু লেগে থাকে বছরের পর বছর। যাইহোক অনেক পরে এই বিচারটি আবার সামনে চলে আসে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক মত দেয় এটি হওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে দেখা গেল বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী বাক্তি নেই। যারা আছে তাঁরা আসলে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। তাই আমরা মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এরকম লোকের বিচার শুরু করলাম। কিন্তু বিচার যতই সামনে যেতে লাগল ততই সেটি বিতর্কিত হতে লাগল। বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ল না। কিন্তু এখানে বিতর্ক থাকার কথা ছিল না। কারণ দেশের প্রায় সবাই এই বিচারে সমর্থন দিয়েছে। এখন দেখা যাক কি কি কারণে এটি এতো বিতর্কিত হল। আমি এখানে একান্তই আমার কাছে যা মনে হয়েছে সেগুলি নিয়ে আলোচনা করব। দয়া করে এখানে কেউ আমার রাজনৈতিক পরিচয় খোঁজার চেষ্টা করবেন না। যাইহোক, কারণগুলি – ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, জামায়াতের লবিস্ত নিয়োগ, সুবিচার, রাজনৈতিক ফায়দা, জুডিশিয়ারি বিভাগে এক্সিকিউটিভ বিভাগের খবরদারী, ক্ষমা করে দাও, মন্ত্রি-পাতিমন্ত্রীদের কুকথা, আওয়ামেলীগ, মরার উপর খাড়ার ঘা।

noose

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটঃ আমরা বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের সাথে আওয়ামেলীগের সখ্যতা দেখেছি। ৮৬ তে যখন এরশাদ সরকারের অধীনে কেউ নির্বাচনে যাবেনা বলে ঠিক হল ঠিক সেই সময়ে লীগ ও জামায়াত নির্বাচনে গেল। যেখানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন কেউ নির্বাচনে গেলে সে জাতীয় বেঈমান। ঠিক তখন থেকেই দেখা যায় জামায়াতের সাথে লীগের একটি ভাল সম্পর্ক। ৯৬ এ তাঁরা এক সাথে বসেছে, আন্দোলন করেছে। কাজী জাফরের ভাষায় – আমরা যখন বিএনপির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক দাবিতে আন্দোলন করছিলাম তখন আমাদের তিন দলের পক্ষ থেকে একটি লিয়াজু কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেখানে লীগের পক্ষ থেকে মরহুম আব্দুর রাজ্জাক, জামায়াতের পক্ষ থেকে আলি আহসান মুজাহিদ ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমি লিয়াজু রক্ষা করতাম। সেখানে আমি লক্ষ্য করতাম আওয়ামেলীগ আমাদের সাথে (জাতীয় পার্টি) কথা বলার চেয়ে জামায়াতের সাথে কথা বলতে বেশী আগ্রহী। কিন্তু হঠাৎ করে এই সম্পর্ক এতো মলিন হল কিভাবে এটি আমার কাছে মিলেনা।

সে সময়ে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বিচারপতি বদরুল হাসান(লীগ সমর্থিত) গোলাম আযমের বাসায় যায় দোয়া নিতে। সেখানে তিনি তাঁর পায়ে সালাম করেন। এভাবে বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের সাথে তাঁদের সখ্যতা ছিল। একসাথে দাওয়াত খাওয়া, যেখানে এখন লীগ বলে জামায়াত আসলে বিএনপির সাথে কোন আলোচনা না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের ভাষায় – জামায়াতের সাথে আওয়ামেলীগের মধুচন্দ্রিমা এতো তারাতারি শেষ হল কিভাবে!

এই ব্যাপারগুলি সাধারণ মানুষের মনোজগৎ থেকে বের হয়নি। এই বিভিন্নরকম প্রশ্নের কারণে এই বিচারের প্রতি মানুষের একটি বাঁকা দৃষ্টি স্থাপন হয়। এছাড়াও আরও কিছু ব্যাপার আছে।

জামায়াতের লবিস্ত নিয়োগঃ যেহেতু জামায়াতের টাকার আধিক্য আছে তাই তাঁরা দেশের বাইরে লবিস্ত নিয়োগ করেছে বলেও শোনা যায়। এছাড়া দেশের ভিতরে তাঁদের শিবির বাহিনী তো আছেই। যারা বিভিন্ন সময়ে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে। এই লবিস্ত নিয়োগের ফলে তাঁরা বিভিন্নভাবে এই বিচারের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করে। যা দেশের কিছু লোকের মনে বিভিন্নরকম প্রশ্ন উত্থাপন করে। যা কিনা বিচারকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে।

সুবিচার : অধিকাংশ মানুষ আশা করেছিল ৭১ সালে যারা অপরাধ করেছে তাঁদের শাস্তি হোক এবং ঐ সময় যারা এই অপরাধের স্বীকার হয়েছেন তাঁরা ন্যায়-বিচার পাক। কিন্তু এখানে একটি বিরাট প্রশ্ন দেখা দিল। কারণ ঐ সময়ে যারা অপরাধ করেনি তাঁরাও এখানে বলির পাঠা হিসেবে এসেছে। দু-একটি উক্তি এখানে উল্লেখ করা যাক। মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরি কাঁদের মোল্লার রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এবং একসময় তাঁকে আদালত অবমাননার জন্য ডাকা হয়। বঙ্গবীর কাঁদের সিদ্দিকি বলেন – আমি আমার জীবনে কাঁদের মোল্লা নামে কোন রাজাকারের নাম শুনিনি। এছাড়া যে ভিক্তিমের সাক্ষীতে তাঁর ফাঁসি হয় তিনি আদালতের বাইরে যে বিবৃতি দিয়েছেন তাঁর সাথে আদালতের বিবৃতির অনেক ভিন্নতা আছে। সাইদিকে নিয়ে বিরাট প্রশ্ন দেখা যায়। কারণ সাইদি যে এলাকার সে এলাকার মুক্তিযুদ্ধ সময়ের কম্যান্ডার বলেন সাইদি যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিজুদ্ধাও ছিলেন না এবং রাজাকারও ছিলেন না। সে কিভাবে এখন এতো বড় রাজাকার কম্যান্ডার হল। বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেন – ইব্রাহীম কুদ্দির হত্যার দায়ে সাইদিকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে কিন্তু ১৯৭২ সালে তাঁর স্ত্রী একটি ইজহার করেছিলেন যেখানে অপরাধীদের তালিকায় সাইদির নাম নেই। তাহলে কার স্বার্থে এই রায় দেয়া হল। দেখুন বিচারকে কিন্তু বিচার করতে হবে নইলে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলতে হবে। দরকার হলে বিচার না করলে এদেরকে জেল থেকে বের করুন এবং পিটিয়ে মেরে ফেলুন। তাও সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচান। কারণ ইতিমধ্যে সাইদির ফাঁসির রায়ের প্রতীবাদে ৬-৮ ঘণ্টায় ১৫০ লোকের (যদি ভুলে না যাই) জীবন চলে গেছে। এই সাধারণ লোকগুলি যে কাণ্ডজ্ঞানেই হোক সাইদিকে ভালবাসে অথবা অন্য কোন দলকে সমর্থন করে তাই বলে এটির অপরাধে তাঁদেরকে গুলি করে মেরে ফেলা যাবে না।

এই রকম বিভিন্ন ঘটনার কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে খুব ন্যায্য ভাবে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন হয়।

রাজনৈতিক ফায়দাঃ দেশের কিছু লোকের মনে একটি সন্দেহ ছিল যে লীগ কি সত্যিকার অর্থেই বিচার করতে চায় নাকি এটি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করতে চায়? সেটি ধিরে ধিরে আরও গভীর হতে থাকে। কারণ দেখা যায় এই বিচারকে ভালভাবে করার চেয়ে তাঁর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার দিকেই তাঁদের বেশী নজর। বিচার শুরু করে তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিলেন। এতে করে বিএনপি জামায়াতের অ্যালায়েন্সে আরও শক্ত হল তাঁদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনে। তখন তাঁরা এই আন্দোলনকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার আন্দোলন বলে অভিহত করল। তখন বিএনপির সমর্থকরা বলল আপনারা বিচার করছেন করেন কিন্তু এখানে আমাদেরকে দোষ দিচ্ছেন কেন? আমাদের দাবী মিটিয়ে দিন তারপর দেখেন আমরা কোন কথা বলি কিনা। এতে করে বিএনপির সমর্থকদের মাঝে বিরক্তিভাব প্রকাশ পায়। কারণ তাঁরা কোন আন্দোলন করলেই একে বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার আন্দোলন। তাই এই বিচারের প্রতি এক অংশের লোকের অনীহা প্রকাশ দেখা গেল। কারণ মনে রাখতে হবে দেশের অনেক লোক আছে যারা বিএনপিকেই ভোট দিবে। তাই তাঁদেরকে যখন অপরাধীদের তালিকায় ফেলা হল তখন তাঁরা এই বিচার নিয়ে খুব প্রফুল্ল থাকবে এটি ভাবা যায় না।

এ সম্পর্কে ডঃ আসিফ নজরুল বলেন – যখন বিচার কাজ শুরু হল তখন সবাই একে সমর্থন দিল কিন্তু পরে দেখা গেল আওয়ামেলীগ বিচার করার চেয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করার জন্য বেশী বাস্ত।

জুডিশিয়ারি বিভাগে এক্সিকিউটিভ বিভাগের খবরদারীঃ আমাদের বিভিন্ন সরকারের আমলে দেখা যায় তাঁরা বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিত না। তাঁদের পছন্দমতো লোক নিয়োগ করে ও বিভিন্ন পদে বসিয়ে একে কলঙ্কিত করেছে। এই সন্দেহ এখানেও ছিল অনেক লোকের। এছাড়া একটি প্রশ্ন উঠে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিচার কিন্তু এখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত ও খ্যাতনামা আইনবিদ নেই কেন? এখানে তো তাঁদের নাম আগে আসা উচিত ছিল। এই সাথে প্রকাশ পেল স্কাইপ কেলেঙ্কারি। যেখানে ধরা খেল ট্রাইব্যুনাল খুব ভালভাবে চলছে না। বিচারকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেয়া হচ্ছে যা সেই আলোচনায় উঠে আসে। একটি রায় দিয়ে দিলেই আপীলেড ডিভিশনে নিয়ে আসার প্রলোভন।

এ সম্পর্কে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজ বিজ্ঞানী ডঃ পিয়াস করিম বলেন – পৃথিবীর কোন স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে জুডিশিয়ারি বিভাগের উপর এক্সিকিউটিভ বিভাগের এতো প্রভাব থাকে! অনেক দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে মানবতা বিরোধী বিচারের ট্রাইব্যুনালে ধ্বস নেমে গেল। তিনি “ক্যাঙ্গারু ট্রায়াল” শব্দটিও ব্যবহার করেন।

এ সম্পর্কে বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ বলেন – এটি লোকের কাছে উপহাসের পাত্র হয়ে গেছে।

এই সকল কারণে দেখা যায় অনেক লোকের মনে অনেক প্রশ্ন জন্ম দেয়। যা এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

ক্ষমা করে দাওঃ এর মধ্যে কিছু লোক এলো অন্যরকম বাণী নিয়ে। কিছু লোক বলল – মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান তাঁরা সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন যুদ্ধে। কিন্তু তাঁরাই এটি নিয়ে এতো মাতামাতি করেননি। নেলসন মান্দেলাকে ২৭ বছর কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং তাঁর অনেক লোককে হত্যা করা হয়েছিল কিন্তু তিনি যখন জয় পেলেন তখন তিনি তাঁর প্রতিপক্ষের বিচার না করে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। এইরকম বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে তাঁরা বলতে চাইলেন এইগুলিকে ক্ষমা করে দিয়ে দেশকে নতুনভাবে চালাতে।

এই বাপারগুলিও কারও কারও মন-মস্তিস্কে জায়গা করে নেয়।

মন্ত্রি-পাতিমন্ত্রীদের কুকথাঃ বিচার যখন চলছে তখন সেটি নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততো ভাল হয় অনেক সময়। কিন্তু সরকার দলীয় লোকরা এতো বেশী কথা বলেছে এটা নিয়ে তাতে কিছু মানুষজন বিরক্ত হয়ে গেছে এই বিচার নিয়ে। রায় নিয়ে যখন বিচারকরাই কথা বলছে না তখন মন্ত্রি-পাতিমন্ত্রীরা প্রত্যেকদিন এই নিয়ে বলছেন। তাঁরা বলছেন ঐ দিনে রায় বের হবে। ফাঁসি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন কিছু লোকের মনে প্রশ্ন জাগল এটিতো মন্ত্রীদের কাজ না। রায় দিবে কোর্ট কিন্তু তাঁরা তার আগেই কিভাবে জানে যে ফাঁসি হবে।

এই বেশী কথা বলাটা অনেক মানুষজন পছন্দ করেনি। বরং বিরক্ত হয়েছেন অনেকেই।

আওয়ামেলীগঃ সরকার বার বার বলছে বিচার নিয়ে বিরোধীদল ষড়যন্ত্র করছে। তাঁরা যুদ্ধাপরাধীর পক্ষের দল। কিন্তু কিছু লোকের চোখে পরল বিপরীত ঘটনা। তাঁরা দেখলেন এই বিচারকে লীগ নিজেই তর্কবিদ্ধ করেছে। ১৯৭৪ সালে যখন Bhutto (যিনি ৭১ এর খলনায়ক) ঢাকায় আসলেন তাঁর আগে অনেক মুক্তিজুদ্ধা রাস্তায় নেমেছিলেন তাঁকে না আসতে দেয়ার জন্য কিন্তু তখন লীগের লোক সেই মুক্তিজুদ্ধাদের পিটিয়েছে। আর লীগের সাপোর্টাররা ঢাকায় একটি স্লোগান দিয়েছিল Bhutto Jindabad । জামায়াত-শিবির যখন মিছিল করে তখন পুলিশ লাঠি-চার্জ ও গুলি করে। আবার সুজুগ পেলে শিবির পুলিশের উপর আক্রমণ করে। কিন্তু হঠৎ দেখা গেল সেই শিবির কর্মীরাই পুলিশকে ফুল দিচ্ছে। তখন বাজারে একটি গুঞ্জন শোনা গেল যে আড়ালে জামায়াতের সাথে লীগের কথা চলছে। বিএনপি থেকে জামায়াতকে সরে আসতে বলা হচ্ছে তাহলে এই বিচার বিলম্ব করে একসময় শেষ করে দেয়া হবে।

ফরহাদ মজহার বলেন – আমরা সবাই চাইছিলাম ৭১ যারা সত্যিকার অর্থে ভিক্তিম তাঁদের উপর ন্যায় বিচার করা হোক। কারণ এটি নিয়ে সমাজে একটি ক্ষত আছে। এই ক্ষত দূর করতে হবে। দূর না করে উপায় নেই। কিন্তু সব সরকার এটি নিয়ে আমাদের সাথে খেলা করেছে। তাই এবার সবাই আশাবাদী হতে চেয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল লীগ শুধু মাত্র কয়েকজন লোককে ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য, এই বিচারকে বাঞ্চাল করার জন্য কাজ করছে।

কাজী জাফর বলেন – যুদ্ধের পর যখন বঙ্গবন্ধুকে বললাম বিচার করেন না কেন? তখন তিনি বলেছিলেন ওরে জাফর আমি কার বিচার করব! আমার চাচা (ভুল হতে পারে আমার, অন্য কোন আত্মীয় হতে পারে,অনেক আগের কথা তো) নিজেই শান্তি কমিটিতে ছিলেন। তাহলে কি আমি আমার ঘড় থেকেই মানুষ মেরে আবার একটি গৃহ যুদ্ধ বাধাব।

লীগের ভিতর এখনও রাজাকার আছে কিন্তু তাঁরা তাঁদেরকে না ধরে শুধু তাঁর বিরোধীপক্ষের লোকদের ধরছে। তাই কিছুলোকের মনে স্বাভাবিক ভাবেই একটি প্রশ্ন এলো এটি আসলে বিচার হচ্ছে না। এটিকে রাজনৈতিক উপায় হিসেবে লীগ বেছে নিয়েছে। যেখানে তাঁর দলের রাজাকারদের খাইয়ে-দাইয়ে মোটা করছে আর বাকীসব রজাকার।

মরার উপর খাড়ার ঘাঃ যখন শাহবাগে কিছু তরুণ সমাবেশ করল তখন অনেক লোক এতে যুক্ত হল এবং যারা যায়নি তাঁরাও ঘড় থেকেই সমর্থন করল। কিন্তু কয়েকদিন পর দেখা গেল এটিকে লীগ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। বিএনপি যখন নির্দলীয় সরকারের জন্য হরতাল ডাকে তখন শাহবাগ বলল তাঁরা এটিকে প্রতিহত করবে। তখন কিছু লোক বলল তোমরা বিএনপির এই হরতালকে প্রতিহত করবে কেন? এটি করলে লীগ করবে। বিএনপি তো তোমাদের বিপক্ষে হরতাল করছে না। তোমরা তোমাদের আন্দোলন কর, বিএনপি বিএনপির আন্দোলন করুক। এভাবে অধিকাংশ লোক শাহবাগের প্রতি আগের অবস্থায় থাকলেন না। পরে দেখা গেল লক্ষ-লক্ষ লোকের জায়গায় শ খানেক লোক দেখা যায়। তখন এই শাহবাগ হয়ে দাঁড়াল লীগের গলার কাঁটা। আবার বিভিন্ন কারণে যখন হেফাজতে ইসলাম রাস্তায় নামল তখন সেটি হয়ে গেল মরার উপর খাড়ার ঘা। কারণ এদের পক্ষেও অনেক লোকের সমর্থন ছিল। বিভিন্নভাবে প্রেক্ষাপট বদলে গেল। সাধারণ লোকজনের মনোজগতে বাসা বাঁধতে থাকল বিভিন্ন রকম প্রেক্ষাপট। বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে লোকজনের যে উচ্ছ্বাস ছিল বিচারকে কেন্দ্র করে তাতে আগের মতো উচ্ছ্বাস থাকল না। অনেকটা কিছু লোকের জন্য দাঁড়াল এইরকম – ধুর বিচার হলেই কি আর না হলেই কি। এই ঝামেলার মধ্যে নেই। এবং যখন সবদিক থেকে লীগের প্রতি মানুষের বিরক্তি আসল তখন আগের মতো আর প্রেক্ষাপট থাকল না। সবাই বুঝল লীগ এই বিচারকে দিরঘায়িত করছে ক্ষমতাকে প্রলম্ভিত করার জন্য।

 

পরিশেষে একটি কথা – কোন সৎ কর্ম অসৎভাবে করা যায় না।

আলহামব্রা – ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলী

2

By শঙ্খচিলের ডানা :

“Rising up above the Red Hill, the royal city of the Alhambra stands proud and eternal, one of the most important architectural structures of the Middle Ages and the finest example of Islamic art left to us in the western world.”

“একগুচ্ছ পান্নার মাঝে যেন একটি মুক্তা” – মুরিশ কবিরা এমনভাবেই বর্ণনা করেছেন আলহামব্রার সৌন্দর্য! স্পেনের মুসলিম সভ্যতা ও স্থাপত্যের শীর্ষ আকর্ষণ গ্রানাডার আলহামব্রা প্রাসাদ ও দুর্গ। নবম শতকে দক্ষিণ স্পেনের সাবিকা পাহাড়ের (Assabika hills) ওপর নির্মিত একটি দুর্গের ভিত্তির ওপর একাদশ শতাব্দীতে আলহামব্রা দুর্গ-প্রাসাদের পত্তন ঘটান স্পেনের শেষ মুসলিম শাসকগোষ্ঠী নাসরিদ বংশের মোহাম্মদ বিন আল আহমার এবং এর পরিবর্তন-পরিবর্ধন চলে পরবর্তী দেড়শ বছর। সমসাময়িক বাইজেন্টাইন এবং আব্বাসীয় মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের প্রভাব ছাড়াও আইবেরিয়ান পেনিনসুলায় সুদীর্ঘ আটশ বছরের মুসলিম স্থাপত্যের পরম্পরা এবং নিজস্ব শৈল্পিক উদ্ভাবনার মিশেল ঘটিয়ে তৈরি হয় স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত বিশেষ ধরণের লাল মাটিতে নির্মিত দুর্গ-প্রাসাদ ‘আলহামব্রা’ যার নামের আক্ষরিক অর্থ The Red.

আলহামব্রার স্থাপত্যশৈলী ও অলঙ্করণে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবহৃত হয়েছে অশ্বখুরাকৃতির খিলান (Calliphal horseshoe arch), জটিল রম্বস আকৃতির আলমোহাদ সেবকা (the Almohad sebka – a grid of rhombuses), আলমোরাভিদ পাম (the Almoravid palm), এবং ত্রিমাত্রিক মুকারনাস ( Muqarnas – stalactite ceiling decorations).

Portico and Pool

The Court of the Lions

Decoration of the Court of the Lions

The Hall of the Ambassadors – a mirador with elaborately ornate walls and ceiling

ইসলামি স্থাপত্যের অন্যতম স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যস্বরূপ আলহামব্রাতে খুঁজে পাওয়া যায় জান্নাতের বর্ণনা অনুযায়ী সৌন্দর্য ও শান্তিবর্ধক রূপে চলমান পানি ও ফোয়ারা, আলো-ছায়া, এবং পত্রপুষ্প-শোভিত বাগানের নয়নাভিরাম ব্যবহার –

The Court of the Water Channel

Sultana’s Garden

আলহামব্রার স্থাপত্যশৈলীতে অলংকার হিসেবে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়েছে ত্রিমাত্রিক মুকারনাস (Muqarnas – honeycombed stalactite ceiling decorations) যা দশম শতাব্দীতে পারস্য এবং নর্থ আফ্রিকায় প্রায় একইসাথে উদ্ভাবিত মুসলিম স্থাপত্যকলার অনন্য সংযোজন –

Use of Muqarnus in the Hall of the Abencerrajes

Use of Muqarnus in the Alhambra

Arabesque around the windows

ইসলামি স্থাপত্যের অনবদ্য নিদর্শনস্বরূপ আলহামব্রায় খুঁজে পাওয়া যায় জ্যামিতিক নকশা ও ক্যালিগ্রাফির জটিল ব্যবহার। কেবল একটি বিশেষ স্তবকই আলহামব্রার স্থাপত্যে উৎকীর্ণ হয়েছে ৯০০০ বার – لا غالبَ إلا الله (La ghaliba illa Allah – ‘There is no Conquerer but Allah’)

Wa la ghaliba illa Allah – calligraphy on the walls of Alhambra

কেবল নয়নাভিরাম অলঙ্করণই নয়, দুর্গ-প্রাসাদের নিরাপত্তা রক্ষায় ১৩টি ওয়াচ টাওয়ারসহ শক্ত প্রাচীরে ঘেরা আলহামব্রায় গড়ে তোলা হয়েছিল বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পাহাড়ের উপরে নির্মিত আলহামব্রা কমপ্লেক্সে পার্শ্ববর্তী ডারো নদীর (the river Darro) পানি কি ভাবে নদীর উৎসে বাঁধ দিয়ে পাহাড়ের ভেতরে সুড়ঙ্গ কেটে কৃত্রিম প্রণালী ও জলাধার নির্মাণ ও জলশোধন-ব্যবস্থা সহযোগে বহুদুর টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা আজও বিস্ময় জাগায়!

১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনের রাজা ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলার হাতে গ্রানাডার পতনের সাথে সমাপ্তি ঘটে আইবেরিয়ান পেনিনসুলায় সুদীর্ঘ আটশ বছরের মুসলিম সভ্যতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের। আগ্রাসী রিকনকিস্তার (Reconquista) জন্য গ্রানাডা ছিল একটি অনন্য বিজয় – বিপুল ধন-সম্পদ ছাড়াও পুরো ইউরোপে মুসলিম স্থাপত্যের শিরোমণি হিসেবে বিবেচিত আলহামব্রা প্রাসাদ তাদের কুক্ষিগত হয়। পরবর্তীকালে আলহামব্রা প্রাসাদ বারবার লুন্ঠিত, ধ্বংসপ্রাপ্ত, এবং কালক্রমে পরিত্যক্ত হয়। দুর্গ-প্রাসাদের বিভিন্ন অংশ ধ্বংস করে অপরিকল্পিত ও বেমানানভাবে গড়ে তোলা হয় অন্যান্য স্থাপত্যকর্ম – যেমন ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত পঞ্চম চার্লস (Charles V) এর প্রাসাদ। রেনেসাঁযুগীয় স্থাপত্যশৈলীসহ শক্তিশালী উপস্থিতি প্রমাণ করলেও লাস্যময়ী আলহামব্রা প্রাসাদের তুলনায় তা প্রাণহীন, শীতল, জগদ্দল পাথরসম। অবশেষে উনবিংশ শতকে ইউরোপীয় পরিব্রাজক এবং পন্ডিত ব্যক্তিদের উৎসাহে আলহামব্রা দুর্গ-প্রাসাদের পুনরুদ্ধারকাজ শুরু হয়। অধুনা আলহামব্রা স্পেনের সবচাইতে জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট অ্যাট্রাকশন গুলোর একটি। তিলোত্তমা আলহামব্রা এখন একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট – যুগেযুগে অসংখ্য গল্প, কবিতা, ও গানের অনুপ্রেরণা!

The Palace of Charles V in the Alhambra

আলহামব্রার ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলী সম্পর্কে আরও বিশদ ভাবে জানতে চাইলে দেখুন –

ফাঁসি,পাকিস্তানফোবিয়া ও বাংলাদেশের সঙ্কট

2

রেজাউল করিম রনি

It is crucial to address the issue on these three distinctive levels, which are the exploitation, politicization and institutionalization of Islamophobia at various levels. In the present globalized world, peaceful and harmonious coexistence among diverse religions and cultures is not an option but the only means to enduring human cohabitation. The objective of the protagonists of Islamophobia is none other than to create division between the West and theMuslim World.

[SIXTH OIC OBSERVATORY REPORT ON ISLAMOPHOBIA October 2012 – September 2013]

noose

আমার ঘরের চাবি পরের হাতে

সাম্প্রতিক সময়ের কূটনৈতিক ঝগড়া এমনভাবে উদাম হয়েছে যে, রাজনীতির ব্যাপারে একদম উদাসীন গৃহবধূরাও জানেন, আমাদের কোনো সংকটের সমাধান দেশের রাজনীতিবিদদের মর্জির ওপর নির্ভর করে না। মার্কিন ও ভারতের পররাষ্ট্র-লড়াই এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, একে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ প্রশ্নে এক দিকে ভারত অন্যদিকে গোটা পশ্চিমা বিশ্ব। আর এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বা লক্ষ্য করবার বিষয় হল, এই প্রথম পাকিস্তান সরব ভূমিকায় হাজির হয়েছে। পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় এখন পর্যন্ত মার্কিন নীতির সবচেয়ে অনুগত বন্ধু। এই আনুগত্যই ধর্মযুদ্ধের সম্ভাবনাকে পাঁকিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। কিভাবে সেটা ঘটবে আমরা জানি না। আমরা কেবল কয়েকটি লক্ষণ পর্যালোচনা করতে পারি।

ফাঁসির ব্যাপারটা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটা চাপা অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে। অপরাধীর বিচার হবে-এটা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ কোনো আপত্তি কখনও করেনি। আপত্তিটা উঠেছে মূলত গণআকাঙ্খার সাথে সরকারের কৌশলী আচরণকে কেন্দ্র করে। বিচারের প্রক্রিয়ার মধ্যে শুরু থেকে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আন্দাজ করা যাচ্ছিল। নির্বাচনের সব রকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তথাকথিত সাংবিধানিক নিয়মে আওয়ামী লীগ যেভাবে ক্ষমতালিপ্সার নজিরবিহীন রাজনীতি শুরু করেছে, তাতে বিচারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কালিমা এড়াতে পারেনি।

জামায়াত স্বাভাবিকভাবেই এটাকে জুডিশিয়াল কিলিং আখ্যায়িত করে ব্যাপক সহিংসতার পথ ধরে। ফাঁসির পরে সারা দেশে যেন লাশের উৎসব শুরু হয়। সরকারী বাহিনী দেশের বিভিন্ন অংশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে নির্মূলের রাজনীতি বাস্তবায়ন করতে নেমে পড়েছে তা দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। পাল্টা আক্রমণের কৌশল দেখে স্পষ্টতই মানুষ বুঝে গেছে দেশে শুরু হয়েছে গৃহযুদ্ধ। এই অবস্থায় কোনোকিছু নির্বিকারভাবে পর্যালোচনার স্থিতিশীলতাও আমরা হারিয়ে ফেলেছি। যথারীতি শাহবাগ আগের ভূমিকায় আবার ফিরে এসেছে। কিন্তু এবারের ফিরে আসাটা আরও ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে আমাদের নিয়ে যাবে। এই দিকটি নিয়ে আমরা কিছু কথা বলব আজকে।

বাংলাদেশ কিম্বা বর্তমান বিশ্বের কেউ আর ‘৭১ সালের বাস্তবতায় নেই। কিন্তু তাই বলে ‘৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা যাবে না তা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিচার আমরা চাই। বিচার হতে হবে। কিন্তু সেটা বিচারই হতে হবে। কোনো প্রেশার গ্রুপকে সংযুক্ত করে বিচার নিয়ে রাজনীতি হলে সেটা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বেইমানি। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সীমাহীন সম্ভাবনা চিরতরে বিনষ্ট হয়। জাতি বিভক্ত হয়ে পড়ে চলমান রাজনৈতিক ক্ষমতার হিংসার আলোকে। ফলে জাতীয় চেতনার নামে একতরফা জবরদস্তি বা যেটাকে আমরা ফ্যাসিবাদ বলে জানি তা হাজির হয়। এর মধ্যে কোনো ইসলামী দলের নেতাকে ফাঁসি দিয়ে চেতনার জোয়ার তুলে ক্ষমতার রাজনীতি যে বিভাজন তৈরি করে তা ধর্মযুদ্ধের পরিবেশ প্রস্তুত করে দেয়। তখন মুখোমুখি দাঁড়ায় ইসলাম ও জাতীয় চেতনা।

কিন্তু এটা এত সরলভাবে ঘটলে আতংকিত হওয়ার মহান কোনো কারণ ছিল না! ব্যাপারটা আমদের নিজেদের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। মার্কিন রাজনীতির ছক অনুযায়ী আমরা যদি ব্যাপারটা খেয়াল করি তাইলে পরস্থিতি যা ইঙ্গিত করে তাতে আঁতকে না উঠে উপায় নাই।

আমরা দেখেছি, ওয়ার অন টেররের প্রজেক্টে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন ইন্টারভেনশন হয় ইসলামপন্থি জাতীয়তাবাদীদের কাজে লাগিয়ে। সরকারের ফ্যাসিবাদি আচরণের কারণে সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতার রাজনীতি করা একটি দলকে নির্মূল করবার কারণে সমাজে একটা বদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলকে তুরুপের তাসের মত উড়িয়ে দিচ্ছে লীগ সরকার। এই জবরদস্তিতে কৌশলে সেনাবাহিনীকেও যুক্ত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সৈনিক মর্যাদার ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই সতর্ক। কিন্তু এখকার সেনাবাহিনীর পুলিশি ভুমিকা সেনার ইজ্জতের দিক থেকে যেমন হুমকি, তেমনি জনমানুষ এই সেনাকে সরকারের খেয়ালখুশির পুতুল বলে মনে করবে। দেশের মানুষ সেনাবাহিনীর এই ভূমিকায় আহত বোধ করবে সন্দেহ নাই।

এই অবস্থায় পাল্টা প্রতিরোধ যেটা গড়ে উঠবে বা যারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়াইয়ে শামিল হবে সেটা কোনো না কোনো ভাবে ইসলামী শক্তি। তার নাম যাই হোক তার সাথে ইসলামের কোনো না কোনো যোগ আছে। এই ধারার ইসলামী আন্দোলন যেন মার্কিন আধিপত্যকে কোনোভাবেই হাল্কা করতে না পারে তার জন্য ৯/১১-এর পরে আমেরিকা একটা প্রকল্প চালু করে এর নাম ‘র‍্যান্ড’ প্রজেক্ট। এতে সালাফিস্ট ধারাকে উৎসাহিত করা হলেও মূলত প্রাধান্য দেয়া হয় পশ্চিমা ধাচের গণতন্ত্র মেনে যেন মুসলিম দেশগুলো একটা আধুনিকতাবাদি পুঁজিবাদের অনুকূলে রাষ্ট্রকাঠামো দাঁড় করাতে পারে।

সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন এনজিওগুলোকে ব্যাপক তহবিল সবারহ করা হয়। এর টেস্ট কেইস আকারে ঘটানো হয় আরব স্প্রিং। বলাই বাহুল্য এই  ‘র‍্যান্ড’ প্রকল্প ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। আরব স্প্রিং আধুনিকতাবাদি পথ ধরে মুসলিম দেশগুলোকে পরিচালনার কাজে হাত না নিয়ে সেখানে বরং বিভিন্ন জেহাদি গ্রুপ শক্তিশালী ভিত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এটা উল্টা ফল ফলেছে।

শুরুতে অনেকে শাহবাগকে ‘র‍্যান্ড’ প্রজেক্টের সাথে যুক্ত বলে অনুমান করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন যেতেই পরিষ্কার হল, এই অনুমানের কোন ভিত্তি নাই। বরং গেইমটা উল্টা দিক থেকে দেখা যেতে পারে। শাহবাগ না এখন বিবেচনায় চলে আসবে শাপলা। অবশ্যই অগ্রভাগে থাকবে জামায়াত। যদিও আমরা জানি, জামায়াত আর হেফাজত এক না। কিন্তু আদর্শের দ্বন্দ্ব আর লড়াইয়ের মাঠ এক না -এটাও আমরা জানি। কিন্তু কোনো মার্কিন ছক হুবহু কাজে আসবে না তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি। কারণ অলরেডি জিহাদি সংগঠন তালেবান গণজাগরণকে থ্রেট করে বসেছে। সাম্প্রতিক এক ভিডিও ভাষণে আলকায়েদা প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরী বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এই ঘটনা অবশ্যই অতি গুরুত্বের সাথে আমাদের আমলে নিতে হবে। তিনি সেখানে বলছেন, “বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়েছে, সেখানে সরকার আলেমদের শহীদ করছে, তাদেরকে জেলে বন্দী করে রাখছে, নবী করিমকে (সা.) নিয়ে কটুক্তিকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে, হাজার হাজার সাধারণ মুসলমানদেরকে শহীদ করা হচ্ছে।’’ [http://www.youtube.com/watch?v=2CryRD4OTb8]

ফলে  ‘র‍্যান্ড’ প্রজেক্ট এর মতো কোনোকিছু বাংলাদেশে করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তবে এই বিষয়ে আগাম কথা বলার কিছু নাই। মাঠের লড়াই তো আর সবসময় বইয়ে ত্তত্ব মেনে হয় না। গ্র্যান্ড ডিজাইনের সাথে পরিচয় থাকাটাই আমাদের জন্য প্রাথমিক কাজ। এই প্রজেক্ট যে কোনো কাজে আসবে না তা আল-জাজিরার সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইউসুফ আল কারযাভী পরিষ্কারভাবে বলে দেন, “আমেরিকা তার সুবিধার জন্য একটা ইসলাম চায়। কিন্তু সেটা আর ইসলাম হবে না। সেটা হবে আমেরিকান ইসলাম।”

তিনি আরও বলেন, চরমপন্থা ৯/১১-র ঘটনার আগে থেকেই ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। চরমপন্থীরা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। শুধু মুসলমানদের মধ্যে চরমপন্থা আছে, এটা মোটেও ঠিক নয়। চরমপন্থীরা ইহুদীদের মধ্যেও আছে। চরমপন্থীরা রবিনকে হত্যা করেছে। চরমপন্থার আরো বড় বড় উদাহরণ রয়েছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা দুর্ঘটনা। ব্রিটেন, জাপান, ভারতসহ দেশে দেশে চরমপন্থীরা রয়েছে। তাহলে কেন মূলত ইসলামের সাথে চরমপন্থা ও সহিংসতার অপবাদ জুড়ে দেয়া হচ্ছে? এটি ভয়াবহ অবিচার” [আল-কারযাভী: আল-জাজিরা,বিন কিন্নাহ-এর সাথে আলাপ]

সেই দিক থেকে বিচার করলে বাংলাদেশের ব্যাপারে একটা নীতিগত অবস্থান আমেরিকার আছে। এটা বোঝা যায়, জামায়াতের সাথে তাঁদের সম্পর্কের ধরণ দেখলে। সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের উত্থান এই সম্পর্কের ধরণে নতুন ডাইমেনশান তৈরি করেছে। ফলে বাংলাদেশের ইসলাম যখন রাজনৈতিক ময়দানে হাজির এবং গৃহযুদ্ধের অবস্থা বিরাজ করছে, এই অবস্থায় সাম্রাজ্যবাদের নীতি আমাদের ছেড়ে দিবে না তা হলফ করে বলতে পারি।

ইতিমধ্যে ২৫ নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১১৫ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগ জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। অন্যদিকে বাংলাদেশে ইসলামের কোনো ধরণের জাগরণ হলে এর প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্ব-ব্যবস্থায়। সবচেয়ে হুমকিতে পড়বে ভারত। আমেরিকা ৯/১১ এর পরে মুসলমানদের ব্যাপারে কোনো একতরফা বিবেচনা আর বজায় রাখেনি। ইসলামের সেকুলার ধারাকে ক্ষমতার রাজনীতে সে বরাবরই উৎসাহিত করে আসছে। এখন কী ভুমিকা নেবে তা দেখবার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে, বলা যায় দুইটা অপশন সামনে আছে, এক.হাসিনাকে যে কোন মূল্যে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা এবং বিএনপি-জামায়াত জোটকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা। ২. শেখ হাসিনা যদি নির্মূলের পথ থেকে সরে না আসে তাহলে যে ইসলামী জাগরণের সৃষ্টি হবে তার সুযোগে ওয়ার আন টেররের প্রকল্পের আদলে বাংলাদেশে মার্কিন খবরদারি বৈধ করা। প্রথম সমাধানের দিকে এখনও পশ্চিমা দেশগুলো বেশি মনযোগী।

আর দ্বিতীয় ধাপটি চূড়ান্ত অ্যাকশন হিসেবে বিবেচনায় আসবে। কিন্তু কোনোভাবেই ভারতের হাতে দক্ষিণ এশিয়ার খবরদারি দেয়া যাবে না। ভারতের ব্যাপারে কঠোর মার্কিন মনোভাব পরিষ্কার হয়ে গেছে। দেবযানীকে উলঙ্গ (স্টিভ সার্চ) করা নিয়ে ভারতের প্রতিবাদের প্রতি ভ্রক্ষেপ করেনি আমেরিকা। ভারতের সব আপত্তি উড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিনীদের এই কঠোর অবস্থান অনেককে অবাক করেছে। কিন্তু তাঁদের পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্যের দিকে তাকালে বিষয়টাকে আর অস্বাভাবিক মনে হবে না। বিখ্যাত মার্কিন পররাষ্ট্র ব্যাক্তিত্ব হেনরি কিসিঞ্জার তাঁর সুবিদিত ডিপ্লোমেসি বইতে বলেন, “Almost as if according to some natural law, in every centuty there seems to emerge a country with the power, the will, and the intellectual and moral impetus to shape the entire international sestem in accordance with its own values.”

[The New world Order, DIPLOMACY; Henry Kissinger: SIMON&SCHUSTER PAPERBACKS, NEWYORK edition]

এই শতাব্দী মার্কিন আধিপত্যের শতাব্দী এটা তাঁরা প্রাকৃতিক নিয়মের মতোই মনে করে। বলাই বাহুল্য এই শিক্ষা ইউরোসেন্ট্রিক শিক্ষা। পরে কিসিঞ্জার ইউরোপের অন্য দেশগুলোর আধিপত্যের ফিরিস্তি হাজির করে এখনকার মার্কিন আধিপত্য যে গোটা বিশ্বব্যবস্থার জন্য খুব স্বাভাবিক -এই আলোচনা করেন। এই সাম্রাজ্যিক বাসনার দিকে যদি আমরা খেয়াল রাখি তাহলে আমরা সহজেই বুঝতে পারব আগামী দিনে আমাদের সামনে যে লড়াই হাজির হচ্ছে তাতে মার্কিন হস্তক্ষেপ অবধারিত। এই লড়াইয়ে আমরা কী করব তাই দেখবার বিষয়। আরামপ্রিয় দ্বি-দলীয় ক্ষমতা বৃত্তের বাইরে এই প্রথম বাংলাদেশে নয়া বাস্তবতা বড়ই অসময়ে হাজির হচ্ছে।

ফলে এই জাতীয় প্রতিরোধ ইসলামের চেহারা যেমন নিবে, এর সাথে দুনিয়ার অন্য ইসলামী লড়াকু শক্তিও শামিল হবে। এটাকে থামাতে এবার পরাশক্তির হস্তক্ষেপের পথে আর কোনো বাঁধা থাকবে না। ফলে যতই মনে হোক জামায়াতের পক্ষে আমেরিকা আছে, বিএনপির পক্ষেও আছে। খোলা চোখে যতই মনে হোক এক ভারত ছাড়া আর সবাই তাদের পক্ষে আছে, ব্যাপারটা তেমন সরল না। মার্কিন আধিপত্য কোনো সুযোগকে হাতছাড়া করবে -এমনটা মনে করার কোন কারণ নাই। এটা আমি বলছি ইতিহাসের শিক্ষা থেকে। বাংলাদেশে হুবহু একই ঘটনা ঘটবে তা বলছি না। প্রত্যেক ঘটনার কিছু সৃষ্টিশীল ডাইমেনশান থাকে, যা আগাম বলে দেবার কিছু নাই। তারপরেও এখনকার ঘটনাসমূহ পর্যালোচনা করলে আমরা বিষয়গুলো পরিষ্কার ধরতে পারব।

ফাঁসি ও জাতীয় চেতনার ফাঁদ

একটা ছোট চায়ের দোকান। ১২.১২.১৩ ইং, রাত ১১টায় টিভিতে ইমরান এইচ সরকার কথা বলছিলেন নিউজ বাইটে। ফাঁসির খবরে তখন শাহবাগ আনন্দে ভাসছে। সেই আনন্দে দোকানের কিছু লোকও দেখলাম হাসতেছে। হঠাৎ দোকানদার বলতেছে- ‘হালারা কেমুন, জিন্দা একটা মানুষ মইরা গেল আর হালারা নিটকাইতেছে কেলাই দিয়া খবর দেখতাচে’ একটু আগেও মানুষটা জীবীত ছিল।‘ অবাক হইলাম, সে যে রাজাকার ছিল তা তো দোকানদার একবার বলতেছে না । এটা তো তার মনে আইল না। কেন? সমস্যা কী?

আর রাতে ফেসবুক-ব্লগে আনন্দ আর বেদনার পাল্টাপাল্টি জোয়ার ছিল। আর যারা একাত্তরকে ক্রিটিক্যালি দেখেন সেই সব মানুষের মধ্যে এক চাপা অস্বস্তি বিরাজ করছিল। জামায়াত কাদের মোল্লাকে সাইয়েদ কুতব অব বাংলাদেশ ঘোষণা করেছে ফাঁসির সাথে সাথে। তাঁরে ইসলামের জন্য শহীদ ঘোষণা করেছে। সেই মোতাবেক পরদিন জুমার নামাজের পর ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক সহিংসতা ঘটায় দলটির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মিরা। এই আগুন ছড়িয়ে পরে সারা দেশে, শুরু হয় পাল্টাপাল্টি খুনাখুনি। খবরের কাগজ লাশের খবরে ভরে ওঠে।

অবাক হয়ে খেয়াল করি, কাদের মোল্লার ফাঁসি জনসমাজে একটা ভুতুড়ে অবস্থা তৈরি করেছে। সাধারণ পাবলিক প্রশ্ন করছে, আচ্ছা লোকটা না অপরাধী ছিল তাইলে তাঁর জন্য যে আবার আন্দোলন হচ্ছে? সে নাকি চিঠি দিয়ে কইছে কসাই কাদের আর সে এক না। মরার আগে মানুষ তো আর মশকারি করে না?

আমরা যদি এই জনমনোভাবকে বুঝবার চেষ্টা করি, তাইলে অনেকগুলো বিষয় বুঝতে সুবিধা হবে। এক. ৭১ এর ন্যারেশন কি আদতেই একটা মধ্যবিত্ত ন্যারেশনে পরিণত হয় নাই এত দিনে? কারণ কসাই ইমেজ তো মধ্যবিত্তের বাইরে খুব বেশি কমিউনিকেটিভ হচ্ছে না। দুই. এই চেতনার প্রতি তো সরকারের অবস্থানের কারণেই মানুষের আর আস্থা নাই। এই অবস্থায় শাহবাগ যদি প্রবল প্রতাপ গড়ে তুলতে না পারে তাইলে তো সরকার বিপদে পড়ে যাবে। তাই শাহবাগ আছে সরব ভুমিকায়।

স্কাইপে কেলেংকারি আর বিচারপতিদের খামখেয়ালি তো মানুষ জানে। আদালতের প্রতি কোন সুস্থ মানুষের তো আস্থা নাই। ফলে দুর্বল জাতীয়তাবাদী চেতনার ওপর দাঁড়িয়ে এই ধরণের একটা ফাঁসি আওয়ামী লীগের জন্য অনেক ঝুঁকির হয়েছে সন্দেহ নাই। এখন একাত্তরের ন্যারেশনকে খুব শক্তিশালীভাবে হাজির করতে হবে। কোনো গাফিলতি করা চলবে না।

এই হাজিরা বলাই বাহুল্য, একাত্তরের আকাঙ্খা মেটাতে পারবে না। এটা কাজ করবে সাংবিধানিক ফ্যাসিজম কায়েম করতে। এইটা বিনা মুশকিলে হলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু ঝামেলা হয়ে গেছে, জামায়াত কাদের মোল্লাকে ইসলামের জন্য শহীদ ঘোষণা করে ফেলেছে। মোল্লাও বলে গেছেন তাঁর রক্তের বিনিময়ে যেন ইসলাম কায়েম করা হয়। ফলে ইসলামের ন্যারেশনের সাথে ‘৭১ এর আওয়ামী ন্যারেশনের লড়াই শুরু হয়ে গেল। জামায়াতের ইসলাম একমাত্র ইসলাম না, এটা আমরা সবাই জানি। জামায়াতের বাইরেই আছে ইসলামের মূল ধারা। কিন্তু জামায়াত ইসলামের নামে রাস্তায় যখন মার খাবে, তখন ধর্মযুদ্ধ শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে।

লীগের বা বামদের ইসলামকে পশ্চাৎপদ মনে করার যে কালচারাল এটিচুড তা মানুষ এতদিনে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে ফেলেছে। ফলে এই অবস্থার মধ্যে লড়াইয়ে কালচারাল শক্তিটা যে প্রতিরোধের মুখে পড়বে তা এখনও আমরা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। যারা এখনও রাজাকারী ডিসকোর্স নিয়ে আছে, এটা তাদের বুঝবার কথাও না। রাজনীতি বহু আগেই রাজাকারের পরিমণ্ডল পার করে ফেলেছে।

ক্ষমতার ব্যবহারিক বা এখনকার বাস্তব প্রশ্নটাই মানুষ আগে বিচার করছে। শুধু বুদ্ধিজীবিরা স্মৃতি কাতর হয়ে আছেন এখনও। ফলে মানুষের মনে ফাঁসিকে কেন্দ্র করে ‘৭১-এর মতোই অস্বস্তি আবার ফিরে আসল। এতে সরকারের পক্ষে লোক থাকবে না বা সরকার ভ্যানিশ হয়ে যাবে -এটা মনে করার কোন কারণ নাই। আমি শুধু বলছি, এই গুমট মনোভাবের মধ্যে ভায়োলেন্সের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়ে আছে তা নতুন রাজনীতি দিতে না পারলেও (নতুন রাজনীতির তো এজেন্সি হাজির নাই -এটাই সঙ্কট) এই প্রথম, সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রশ্নে বাংলাদেশে রক্তারক্তি হতে যাচ্ছে।

আর এতে নানা কারণে ইসলাম ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ মুখোমুখি দাঁড়ানো। এই অবস্থায় কূটনৈতিক বুঝের সমাধান যে কোন কাজে আসছে না তা আমরা ধারাবাহিক ভাবে দেখছি। পিল্লাই সতর্ক করেছেন, তারানকো ব্যার্থ হয়ে ফিরে গেছেন। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, সবাই চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছে বাংলাদেশের ব্যাপারে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে বাংলাদেশ এখন গৃহযুদ্ধ কবলিত এমন খবরই ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। এই অবস্থা আমাদের কোনো শুভ পরিণতির দিকে যে নিয়ে যাচ্ছে না তা পরিষ্কার বুঝা যায়।

এর কারণ হল, ৭১ এর চেতনাকে আমরা গণবিচ্ছিন্ন ক্ষমতার কাজে ব্যবহার করেছি। এই চেতনার প্রকৃত অর্থে কোন সামাজিকীকরণ করিনি। বরং উপনিবেশি সাংস্কৃতিক ও জীবনদৃষ্টি উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে এমন একটা ভাব পয়দা করেছে যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ভোগবাদী জীবনচর্চা মিশে একাকার হয়ে গেছে। এর সাথে আধুনিকতার উগ্র ইসলাম বিদ্বেষ যুক্ত হয়ে প্রগতিশীলতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দাঁড় করিয়েছে ইসলামকে। এই একরোখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন মরণ ফাঁদ হয়ে নেমে আসছে। মোহনায় দাঁড়িয়ে উৎসের দিকে ফিরে তাকাতে হয়-এটা আমরা স্বাধীনতার বেয়াল্লিশ বছরেও করিনি।

ইতিহাসকে দলীয় ক্ষমতার স্বার্থে ব্যবহার করে বিভাজন জিয়িয়ে রেখেছি। বিভাজনটা সমাজে পরিষ্কার হয়ে গেছে। শাহবাগ আর শাপলা। শাপলার ভাগে আছে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ যারা সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে তথাকথিত মূলধারার চেতনার চেয়ে পিছিয়ে আছে। তাদের আমরা সমাজের বাইরে আলাদা রেখে নিজেরা একতরফা চেতনার অনুসারী হয়ে আধুনিকতার জীবনদৃষ্টিকে কবুল করে নিয়েছি। ওদের বলেছি মধ্যযুগীয়, বর্বর পশ্চাৎপদ। কারণ তিনারা আজও ধর্মতত্বের আদর্শকে জীবনের মূল আদর্শ মনে করে। আমরা ইসলামের সাথে বাংলার সামজিক বিকাশের সম্পর্কের আলোকে নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আকারে গড়ে উঠিনি। অতি ক্ষুদ্র শ্রেণীস্বার্থে ব্যবহার করেছি ‘৭১-এর চেতনাকে। মুক্তিযুদ্ধের তাবত অবদানকে স্বাধীনতার পরপরই কুক্ষিগত করেছি নিজ নিজ স্বার্থে। স্বাধীনতার সামাজিকীকরণ হয় নাই বাংলাদেশে। তাই সবার অংশ গ্রহণে ‘৭১ হলেও শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা হয়ে উঠেছে এলিটিস্ট মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধকে আমরা গণচেতনা করে তুলতে পারিনি। কেন পারিনি তার হদিস খুব কঠিন কিছু না। নানা কারণের একটা হল সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছি শুরু থেকেই।


পাকিস্তানফোবিয়া

পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে আর্ন্তজাতিক মনযোগের কেন্দ্রে আছে গত কয়েক দশক ধরেই। সেনাবাহিনীর সাথে পাকিস্তানের জনগণ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অনেক বড় বড় গবেষণা হয়েছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন গোত্র ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে আলাদা আলাদা ডাইমেনশান নিয়ে হাজির আছে। পশতুন জাতীয়তাবাদের প্রভাবের কারণে আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক শুধুমাত্র কৌশলগত নয়। আমরা দেখেছি, পাকিস্তান একই সাথে আলকায়েদা, তালেবান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জটিল সম্পর্ক বজায় রেখে নিজের তৎপরতা জারি রেখেছে ওয়ার অন টেরর প্রকল্পে। বিশ্বরাজনীতিতে পাকিস্তানের এখনকার ভূমিকা গ্লোবাল রাজনীতিতে অতি গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়।

আমরা একাত্তরে যে ঘাতক সামরিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সেই পাকিস্তান আর আগের জায়গায় স্থির নেই। কিন্তু আমরা পাকিস্তানের জান্তা নিপীড়নের প্রতি যে ঘৃণা ধরে রেখেছি তা গোটা পাকিস্তান সম্পর্কে আমাদের চিন্তাকে বর্ণবাদি ক্ষুদ্র জায়গায় আটকে রেখেছে। চলমান বিশ্ব রাজনীতিতে পাকিস্তান এর ভূমিকাকে র্নিমোহভাবে দেখবার কোনো গরজ আমরা অনুভব করি না। এটা আমাদের জন্য খুবই অনুতাপের বিষয়।

এবারের ওআইসি সম্মেলনে ইসলামোফোবিয়া নিয়ে একটা রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামোফোবিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিকভাবে এমন জায়গায় দাঁড় করিয়েছে যে, পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ইসলামের বিভক্তিকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আর এই কাজের জন্য যে ভুমিকে পশ্চিমারা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে তার নাম ‘পাকিস্তান’ / ফলে আামাদের এখানে পাকিস্তানফোবিয়া আর ইসালোমোফোবিয়া একই অর্থ বহন করে। আর এটাকে উস্কে দেবার জন্য আছে অতীত পৈশাচিক শাসকদের প্রতি ঘৃণাকে পাকিস্তানের নামে ছড়িয়ে দেয়ার কূট-রাজনীতি। পাকিস্তান নিয়া এখানে আলাপের অবসর নাই। আমি কয়েকটা পয়েন্টে বাংলাদেশে পাকিস্তান -সম্পর্কে দৃষ্টি ভঙ্গি ও সাম্প্রতিক পারিপার্শিকতা তুলে ধরব মাত্র।

এক. পাকিস্তান সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা ছিল শ্রেণী ঘৃণার। ৯/১১ -এর পরে এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইসলামোফোবিয়া। এখন পাকিস্তানফোবিয়ার দুই মৌল উপাদান হল : ১. একাত্তরের শাসকদের প্রতি ঘৃণা থেকে উৎসারিত ঘৃণা। পাকিস্তান মানেই বর্বর, অসভ্য, ধর্ষক ইত্যাদি রটনার রাজনীতি। ২. পাকিস্তান আধুনিক গণতন্ত্রের পথে কোনো সফলতা হাসিল করতে পারেনি। এটা তালেবানের ঘাঁটি। এরা আলকায়দার মদদদাতা। লাদেনকে এরা পালে। এরা জঙ্গি। এদের কোনো ভবিষ্যৎ নাই। ওরা নিকৃষ্ট।

এই দুইটা দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে প্রচারণার প্রভাব ছাড়া আর কিছু নাই। একাট্টা পাকিস্তান বলে কিছু নাই। সেখানে নানা শ্রেণীর মধ্যে সংঘাত আছে। ইসলাম প্রশ্নেও সমাজিক ও রাজনৈতিক নানা ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি আছে। কিন্তু সমাজে ইসলামের একটা প্রভাব সেখানে বরাবরই ছিল। এবং এখনও আছে। যা হোক শাসক শ্রেণী আর পাকিস্তানের জনগণ এক না। এটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। একাত্তরে পাকিস্তান সরকারের ভুমিকা আজকের সরকারের মতই ছিল। পাকিস্তান কী করেছে তা বুঝার জন্য একাত্তরে জন্ম নেবার দরকার নাই। লীগ ও যৌথবাহিনী এখন যা করছে পাকিস্তান ও তাদের অনুসারীরা একই কাজ করেছে। তবে তখন কিছু কিছু কাজের লক্ষ্য ছিল মানুষকে বাঁচানো। এখন একমাত্র লক্ষ্য হল মারা। হিংসার আগুনে জ্বলছে জনপদ।

দুই. ‘৭১-এ যাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ছিল সেই পাকিস্তানি শাসক আর এখনকার পাকিস্তান রাষ্ট্র এক জিনিস নয়। এখনকার পাকিস্তান বিশ্ব-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমি বলি, আমেরিকা যদি হয় সন্ত্রাসের আব্বা, তাহলে পাকিস্তান তার পালক পিতা। ওয়ার অন টেরর প্রজেক্টে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এবং এই অংশীদারি গোলামীর মত নয়। সে মাঝে মাঝেই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড শো করছে। যেটা আমলে নেবার মত বিষয়। ( এই প্রজেক্টে- র, সিআইএ, আইএসআই, গলায় গলায় ভাব বজায় রেখে বাংলাদেশে ফাংশন করেছে, এখন এজেন্সিগুলা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। ভারতের একতরফা জবরদস্তির কারণে এটা ঘটছে। অলরেডি ভারত-আমেরিকা কূটনৈতিকভাবে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। নারী কূটনীতিক দেবযানিকে স্ট্রিপ সার্চ করে আমেরিকাই প্রচার করিয়েছে যে, ন্যাংটা করে তল্লাশি করা হয়েছে। আর ইন্ডিয়া তো আত্নপীড়ায় ভুগছে। পাল্টা পদক্ষেপও নেয়ার হুমকি দিয়েছে। আমাদের মিডিয়াও বেশ রসিয়ে এই খবর প্রচার করছে। এতে কূটনেতিকভাবে আমরিকা যে মেসেজ দিছে তার সরল মানে হল, ‘তুমি মাতবরি করলে ন্যাংটা কইরা ছাইড়া দিব’ যাহোক কূটনৈতিক লড়াইয়ে অনেক প্রতীকী ব্যাপার থাকে যার গুরুত্ব অপরিসীম। এখানেও তাই হইছে। আর দেবযানী আজ যে প্রতীকী অপমানের শিকার হয়েছেন তার জন্য বাংলাদেশ নিয়ে আমরিকার সাথে সুজাতার বেয়াদবী দায়ি -এটা ভারতের কূটনীতি বিশ্লেষকরা স্বীকার করেছেন। সূত্র: বিডিনিউজ)

তিন. মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বেহুদা পাকিস্তানফোবিয়া ছড়ানো হয়েছে। পাকিস্তানের মুক্তিকামী মানুষের সাথে আমাদের শত্রুতা থাকতে পারে না। হাসিনাও শাসক, ইয়াহিয়াও শাসক। ‘৭১ কইরা আমরা কী করলাম? বিদেশি লোক বাদ দিয়া দেশি বোনের অত্যাচার মেনে নিচ্ছি -এখন এই তো অবস্থা।

চার. যে প্রজন্ম আজ লীগের কূটনৈতিক গেইম না বুঝে পাকিস্তান বিদ্বেষ ছড়ানোকে চেতনার দায়িত্ব আকারে নিয়েছে, তাদের বলি পাকিস্তান কি চিজ তা যদি বুঝতা তাইলে আর এই আরামের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ করতা না। পাকিস্তানকে জড়ানোর কূটনৈতিক তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। তার পুরোটা এখনই আমরা বলতে পারব না। তবে যে লক্ষণ হাজির হয়েছে তা ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে তা বুঝতে কাজে লাগে। এর মধ্য দিয়ে তালেবানের ইন্টারভেনশন নিশ্চিত হয়ে পড়ল। তালেবান হুমকি দিয়েছে গণজাগরণ বন্ধ না করলে পাকিস্তানে বাংলাদেশের দূতাবাস উড়িয়ে দেয়া হবে [সূত্র: পরির্বতন ডটকম]

যুদ্ধটা জাতীয় চেতনা বনাম ইসলামী চেতনার দিকে যাচ্ছে। এর সাথে বিদেশি অস্ত্রধারী সংগঠন যোগ হলে ঘটনা কোথায় যাবে তা আপনাদের অনুমান করতে পারার কথা। তালেবান যখন একে-৪৭ ধরে বলবে, ”গাওতো চেতনার গান”/ রবীন্দ্র সঙ্গীত কি আমাদের রক্ষা করতে পারবে? ফলে সাংস্কৃতিক ঘৃণার পার্ট আকারে যারা পাকিস্তান মানেই বর্বর আর খারাপ এই রকম রেসিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি পালন করেন তাদের বলব, পশ্চিমা একাডেমিতে গিয়ে একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন। পাকিস্তান একবাল আহমেদের মত দুনিয়া কাঁপানো তাত্ত্বিকদের জন্ম দিতে পারে, ইংরেজি সাহিত্যে হাল আমলের অনেক শক্তিশালী লেখক পাকিস্তানের জঙ্গিদশার মধ্যেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেখানে বাংলাদেশ তো এখনও অনেক নবিশ।

আমি তুলনামূলক আলোচনার জন্য কথাটা বলিনি। বা এইগুলো করতে পারলেই জাতি মহান হয়ে যাবে, আমি তাও মনে করি না। যাস্ট অমূলক ঘৃণার চেতনাটা দেখাতে কথাটা বলা। এবং যারা পাকিস্তানকে ঘৃণা করেন, কিন্তু নিজেরা আবার পশ্চিমা দুনিয়ায় আসন পেতে চান, পাকিস্তান তাদের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে আছে। এটা কেমনে সম্ভব হল বিবেচনা করবার বিষয় বটে।

পাঁচ. ক্ষমতার রাজনীতির দিক থেকে এখনকার এই কূটনীতিক গেইমের মর্ম হল, ইউএস লবিকে বুঝানো যে, যেই পাকিস্তান এত দিন র, সিআইএ’র সাথে একইতালে বাংলাদেশে কাজ করেছে তাকে তো আমি কিছু বলি নাই। এখন দেশে চেতনার জোয়ার চলছে। জনগণ ক্ষ্যাপা। আমি অসহায়। প্রতিদিন গণজাগরণের সমাবেশে ক্রমাগত লাঠিপেটা করেও তো থামানো যাচ্ছে না। দেশে তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জোয়ার। আমি কী করব?

মানুষ আমারে চায়… দেখ দেখ দূতাবাস পর্যন্ত পাবলিক খায়া ফেলতে চাইতেছে। আমি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। -সরকারের ওপর ক্রমাগত বিদেশি চাপকে পাশকাটানোর জন্য এই গেইম সরকারের দিকে থেকে ভাল। আমি এর প্রশংসা করি। এতে লাভ দুইটা। ১. পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণাটা উস্কে দেয়া চেতনার ফ্যান্টাসিটা আবার ছড়ানো। ২.আন্তর্জাতিক মহলকে নিজের পিপল বেইস যে মজবুত তা জানান দেয়া।

বলাই বাহুল্য, এই দুইটাই ফ্যাসিবাদের দামি কৌশল। ক্লাসিক কৌশল। কিন্তু ফ্যাসিবাদের জন্য যে ন্যাশনাল ভিত লাগে তা বাংলাদেশের নাই। বাংলাদেশের এই ফেনোমেনাকে আমি বরাবরই কালচারাল ফ্যাসিজম বলেছি। এই কালচারাল ফ্যাসিজম সাম্রাজ্যবাদি রাজনীতির কৌশলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অক্ষম। ফলে এই একরোখা গণবিচ্ছিন্ন ক্ষমতার জেদ শেষ পর্যন্ত বুশের ধর্মযুদ্ধকে দেশে ডেকে আনবে, এতে কোন সন্দেহ নাই। মজার ব্যাপার হল, গণজাগরণের কর্মিদের সরকারী এসাইনমেন্টে হেনস্থা করা হচ্ছে। গণজাগরণের কর্মি জাগরণকন্যা লাকী বলছিলেন, পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হচ্ছে নাস্তিকের বাচ্চা, মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দিতে দিতে। এই ঘৃণার আগুণ এখন সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। হাসিনা কোনোভাবেই এই অবস্থায় জনগণের কাম্য নেতা হতে পারেন না।

ছয়. পাকিস্তানের প্রতি বর্ণবাদি আচরণের কোন মানে হয় না। আমাদের বুদ্ধিজীবিরা পাকিস্তানকে একটা দানব আকারে হাজির করছেন তাদের বলা দরকার, এটা ‘৭১ সাল না। এখন পাকিস্তান অনেক কমপ্লেক্স গেইমে নিজেরে শামিল রাখছে। রিজিওনাল গেইমে পাকিস্তানরে কোনোদিন হম্বিতম্বি করতে দেখবেন না। কিন্তু সে আছে, তার ভুমিকা সমেত আছে। আইএসআই আর সিআইএর দোস্তি তো সুবিদিত। এখন কাদের মোল্লার ব্যাপারে অন্য দেশগুলা যা করছে, পাকিস্তান তাঁর চেয়ে বেশি কিছু করেছে বলে মনে হয় না।

তুরষ্ক বাংলাদেশের সরকারকে দ্বিতীয় ইসরায়েল বলেছে। কেরিও ক্ষেপছেন। তাহলে পাকিস্তানের দোষটা এত বেশি কেন হইছে? কারণ এই তথাকথিত প্রজন্মকে তো পাকিস্তান আক্রমণের স্বাদ দেয়া যাবে না। তাই দূতাবাসমুখি ক্ষিপ্র গমনের মধ্যে একটা যুদ্ধের স্বাদ দেয়া। এটা নগদ লাভ। কিন্তু সাম্রজ্যবাদী চাল তো নগদ লাভে চলে না। তার পরিকল্পনা সুদূর প্রসারী। ‘১৪ সাল এর পরে আফগানিস্তান মিশন শেষ করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন উপস্থিতির জন্য বাংলাদেশ অতি গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক দিন আগে খবরে প্রকাশ হাতিয়া দ্বীপ এলাকায় যৌথ সামরিক উপস্থিতির জন্য বিশাল ভূমি নির্বাচন করা হয়েছে। এটা নিয়ে পরে আর কোনো ফলোআপ দেখিনি।

সাত. আমরা বলতে চাই, খামাখা পাকিস্তানঘৃণার কোনো কারণ দেখি না। বরং পাকিস্তানের নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শামিল হবার জন্য আমাদের প্রস্তুতি দরকার। জালেম শাসক তা যত মহান চেতনারই হোক, তার বিরুদ্ধে আমি মজলুম জনগোষ্ঠির ঐক্যের পক্ষে। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করা দরকার।

শ্রেণী ঘৃণা..জাতি ঘৃণা আমাদের অমানুষে পরিণত করে ফেলবে। মানবিক সত্তার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে জাত-পাত শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে নিজেদের চৈতন্যকে বিকশিত করতে না পারলে আগামী দিনের বিপ্লবী লড়াইয়ে বাংলাদেশ কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। নিজেদের জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক উত্থানের সাথে এই উদার মানসিকতার চর্চাও অতিজরুরি।

ভারতের এনডিটিভি খবরে জানিয়েছে, ২০১৪ সালের টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বাংলাদেশে আসা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান উদ্বোধনী ম্যাচ বাংলাদেশে না হলে ২৫ ভাগ আয় থেকে বঞ্চিত হবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। খেলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব পুঁজির যে প্রসার, তাতে বাঁধ সাধল রাজনৈতিক কারণে উস্কে দেয়া পাকিস্তান বিদ্বেষ। এর ফলে বাংলাদেশ যে রাজনৈতিক ভাবে জঙ্গি অবস্থায় নিপতিত হয়েছে, বিশ্ব মিডিয়ায় সেই খবর ঘটা করে প্রচার করা হবে। এটা আমাদের ইমেজের জন্য ভয়াবহ সংঙ্কট সন্দেহ নাই।

এখনকার সংকট

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে এতদিন যারা হাসিনা খালেদার ক্ষমতার লড়াই আকারে দেখেছেন, তাদের গণধিক্কার দিতে হবে। এই ধারা বিচার-বিশ্লেষণের ঐতিহ্য আমাদের রাজনৈতিক পর্যালোচনার পরিমণ্ডলকে যথেষ্ট সংকীর্ণ করে রেখেছে। আমরা গ্লোবালাইজড কথাটা মুখে বলি বটে কিন্তু এর সাথে আমাদের সম্পর্কের ধরণ ও নিজেদের অবস্থানকে কখনও বিচার করে দেখি না। ফলে বাংলাদেশ কিভাবে বিশ্বরাজনীতির সাথে সম্পর্কিত তার সমগ্র পরিচয়টি আমাদের সামনে ধরা পড়ে না। কিছু মুখস্ত কথাবার্তা শুনেই আমরা কাজ চালিয়ে নেই।

যা হোক সেনাবাহিনী নামবে এই রব অনেক আগেই জারি হয়েছে। সেনা নেমেছে ঘোষণা দিয়েই। খবরে প্রকাশ, ‘নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এবার সশস্ত্র বাহিনীর ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হবে। এরা ভোটগ্রহণের পরও বেশ কয়েক দিন মাঠে থাকবেন। এ কারণে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত বাজেটও দ্বিগুণ করা হচ্ছে। [প্রথম আলো ২১-১২-২০১৩]

সেনাবাহিনী এখন পুলিশি ভুমিকায় নামল। এতে যে আমাদের দেশের মানুষের কাছে সৈনিকের মর্যাদা আর আগের জায়গায় থাকল না তা আমাদের জন্য অনুতাপের বিষয়। আমাদের সেনাদের সৈনিক মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ ব্যাপারে গণসচেতনতার খামতি অপরীসীম। এটা নিয়ে আলাদা লিখব।

বাংলাদেশের এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়ার রিপোর্টিংয়ের ধরণ খুব মনযোগ দিয়ে খেয়াল করবার বিষয়। ফাঁকে বলে নিই, এর আগে এক লেখায় (বিচার নিয়ে রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের আর্বিভাব : আমার দেশ) বলেছিলাম, মার্কিন দেশের সাথে জামায়াতের মিত্রতার কৌশলগত দিক খতিয়ে দেখা দরকার। তাঁরা একদিকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়, আর অন্যদিকে মানবাধিকারের দাবি তুলে জামায়াতকে উস্কে দিচ্ছে। জে র‍্যাপের সফরের সময়ই ব্যাপারটা আঁচ করা গিয়েছে। এখন এই সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে পশ্চিমা মিডিয়া যে স্টাইলে বাংলাদেশ নিয়ে রিপোর্টিং করছে তা দেখলে পরিষ্কার হবে যে আমি কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা বলছি না।

শাহবাগ উত্থানের পরে প্রথম যে লেখাটি লেখি তার শিরোনাম ছিল-গণহত্যার রাজনীতি ধর্মযুদ্ধে প্রবেশ (চিন্তা ডটকম, ৬ মার্চ ২০১৩)/  তাতে জামায়াতের রাজনীতিকে জঙ্গিবাদি রাজনীতি আকারে হাজির করে নির্মূলের তাৎপর্য ব্যাখ্য করার চেষ্টা করেছিলাম। পরে ঘটনাটা সেই দিকে ধিরে ধিরে বাঁক নিলে বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। ক্ষমতাধর সাময়িকী ইকোনোমিস্ট সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে লিখেছে,

“আওয়ামী লীগ জিতবে, তবে বাংলাদেশ হেরে যাবে। ইকোনোমিস্টের অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নিজের শাসনকাল বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সেগুলোকে একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক ‘ধাপে ধাপে চলা অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রধান বিরোধী দল ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। এ সুযোগে নিশ্চিত জয়ের পথে চলছে শেখ হাসিনার দল। বৈধতার প্রশ্ন এখানে বাহুল্যমাত্র।”

[www.economist.com/news/asia/21591887-ruling-party-will-win-bangladeshs-election-country-will-los]

এই অভ্যুত্থান কে করছে? সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের লাইনে বিএনপি তো নাই। বিএনপি টেবিল রাজনীতির সমাধানে অনেক বেশি আগ্রহী। সাথে চাপ প্রয়োগের জন্য ধারাবাহিক অবরোধ চলছে। গণঅভ্যুত্থান তাইলে কে ঘটাবে? বলাই বাহুল্য, জামায়াত জীবন-মরণ লড়াইয়ে নিপতিত হয়েছে। গ্রামে গ্রামে যেভাবে লীগ-যৌথবাহিনী ও জামায়াত যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে তাতে ‘মর না হয় মারো’ এমন পরিস্থিতি তৈয়ার হয়েছে। দেশে গৃহযুদ্ধ চলছে। সামনে এটা আরও বেগবান হবে নানা ডাইমেনশান তৈয়ার হবে তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। অভ্যুত্থান হবে সেটা গণ না কী তা বলা যাচ্ছে না।

গণঅভ্যুত্থান কল্পনার জিনিস না। তার জন্য সমাজে গণরাজনীতির ভিত মজবুত করতে হয়। এন্টি ইম্পেরিয়াল ও ভারতের আধিপত্যকে যারা সশস্ত্র পদ্ধতিতে মোকাবেলা করতে ভূমিকা রাখতে পারতো সেই সব বিপ্লবী রাজনীতির নেতাকর্মীদের গত বিএনপির সময় ক্রসফায়ার নাটকের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সমূলে তাদের অস্তিত্ব বিনাশ করে দেয়া হয়েছে। এই কাজটি করার ফলে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে সাম্রাজ্যবাদের নকশার বাইরে লড়াকু আর কোনো শক্তি সমাজে হাজির রইল না।

অন্যদিকে ইসলামের নামে যারা লড়াই করবে তাদের কারণে ধর্মযুদ্ধ দেশি পরিমন্ডল ছাড়িছে দ্রুতই এটা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত হবে।

একই প্রতিবেদনে ইকোনোমিস্ট বলছে, “সংঘাতময় পরিস্থিতি যত খারাপ হচ্ছে, ভারতের মিত্র আওয়ামী লীগকে ইসলামবিরোধী হিসেবে দেখানোর সম্ভাবনাও তত বাড়ছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতা কুক্ষিগত করাকে সমর্থন করলে তা ভারতের জন্য উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে। তা হবে ‘অপেক্ষাকৃত উগ্র ও কম সেক্যুলার বাংলাদেশ।” (প্রাগুক্ত; ইকোনোমিস্ট)

এই অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা কোন কাগুজে আশার বালী শোনাতে পারছি না। বাস্তবত এটা সম্ভব না। আমরা দেখেছি, হেফাজতের উত্থানের সময় এখানকার তথাকথিত সুশীলরা বাংলাদেশে মার্কিন হস্তক্ষেপ কামনা করে বড় বড় সেমিনার সিম্পেজিয়াম করেছেন। বিশাল প্রবন্ধ লিখেছেন, ন্যাটোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

এই অবস্থায় বাংলাদেশের সংকট ত্রিমূখী রূপ নিয়েছে। একদিকে হাসিনা সরকারের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য হাস্যকর সব আয়োজন, ২. চেতনার ডামাডোলে বিচারিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে ফাঁসির রাজনীতি। ৩. চলতি গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিযোগিতার গ্রাউন্ড তৈরি করে সব দল মিলে নির্বাচন করে আবার কোন দলকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আনা।

কিন্তু জনঅসন্তোষ যে চরম রূপ নিয়েছে তাতে শান্তিপ্রিয় সমাধানের পথ কঠিন হয়ে গেছে। সরকারী দলের নেতারা ঢাকার বাইরে যেতে পারছেন না। তাদের আচমকা আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। সহিংস অবস্থার চরম বিস্তার ঘটেছে। এর মধ্যে সরকারের তরফে বিরোধীদের দমনের মাত্রাও নানাভাবে বাড়ানোর ঘোষণা আসছে ক্রমাগত। এই অবস্থায়ও শেষের পয়েন্টেই সুশীল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু । কিন্তু এই পরিস্থিতির মধ্যে এমটি হওয়া কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

সবচেয়ে বড় কথা হল এটা বাংলাদেশের জন্য কোন সমাধানও নয়। আমাদের রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আকারে গড়ে উঠবার জন্য ধর্ম, বিশ্বাস, জাত, শ্রেণী -নির্বিশেষে যে জনঐক্য ত্বরান্বিত করা দরকার সেটাই এখনকার রাজনৈতিক কাজ। পুরানা চালের সাংবিধানিক রাজনীতি বারবার সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্রই বয়ে আনছে। জনগণের মুক্তির আকাঙ্খা কাগজের পৃষ্ঠায় বন্দি করে গণতন্ত্রের নামে মুষ্টিমেয় কিছু লোকের লুটপাটের রাজনৈতিক বিধান উচ্ছেদ করেই বাংলাদেশ নতুন জন্মের গৌরব নিয়ে নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারে। তার জন্য চাই জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের আপসহীন ঐক্য। আমরা যদি সর্বময় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারি তাইলে জাতীয় আন্দোলনে ইসলামকে সামনে রেখে যারা লড়বেন তাদের ধর্মযুদ্ধের সৈনিক বা জঙ্গি যাই বলুন তাতে কিচ্ছু হেরফের হবে না। নতুন ক্ষমতা কাঠামো তৈরি হবে ধর্মের আশ্রয়েই। ফলে সাংস্কৃতিক ও শ্রেণী ঘৃণার ঘেরাটোপ পার হয়ে আমাদের দ্রুত ঐক্যের পথ খোঁজা ছাড়া উপায় নাই। দেশি-বিদেশী নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য মজলুমর ঐক্যের বিকল্প নাই।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

নতুন বাংলাদেশের সন্ধানে… আমিও থাকবো এ কাফেলায়!

1

by Watchdog BD

ঠিক আছে মেনে নিলাম ৭১’এর যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারের দলই আমাদের আসল সমস্যা। চারিদকে রব উঠছে এদের নির্মূল করলেই নাকি দেশের সব সমস্যায় ম্যাজিকেল চেঞ্জ আসবে। আসুন এবার এ সমস্যরা স্থায়ী সমাধানের দিকে চোখ ফেরাই। যুদ্ধাপরাধীদের নির্মুল এখন সময়ের ব্যপার মাত্র। এ নিয়ে নতুন কোন তেনা প্যাচানোর সুযোগ নেই। বাকি রইল রাজাকারের দল। এখানে আমাদের মূখ্যমন্ত্রীর বয়ান আমলে না নিলে দেশদ্রোহির খাতায় নাম লেখাতে হবে। এই যেমন তিনি বলেছিলেন ‘সব রাজাকারই যুদ্ধাপরাধী নয়’…বক্ত্যবের সাথে দ্বিমত করার কারণ দেখিনা। ৭১’সালে আমাদেরর বাড়ির কাজের ছেলে গিয়াস উদ্দিন নাম লিখিয়েছিল রাজাকারের খাতায়। সে বছর সেপ্টেম্বরের দিকে তার একটা ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম। মূল উদ্দেশ্য ছিল বাড়ি হতে চুরি যাওয়া জিনিসগুলোর একটা হদিস করা। গিয়াস উদ্দিন গালভরা হাসি দিয়ে জানিয়েছিল চুরির ব্যপারটা তারই কাজ। তবে সে একা করেনি অপকর্মটা। সাথে জড়িত ছিল স্থানীয় রাজাকারের কমান্ডার। ডিসেম্বরের শেষ দিকে গেসুকে আটকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন। বড় ধরনের চাঁদার দাবি মেটাতে না পারার কারণে তার গলা কেটে ঝুলিয়ে রাখা হয় শহরের মূল চত্বরে। গেসুর মত এমন অনেক রাজাকার ছিল যাদের যুদ্ধাপরাধী হিসাবে বিবেচনা করা যায়না। যেমন যায়না আমাদের মূখ্যমন্ত্রীর বেয়াইকে(এই বেচারা কেন রাজাকারে নাম লিখিয়েছিল তা এখনো পরিস্কার হয়নি)… ওদের অনেকে পেটের দায়ে অথবা দাও মেরে ঝটপট মাল কামানোর উদ্দেশ্যে নাম লিখিয়েছিল শত্রু ক্যাম্পে। তর্কের খাতিরে এবং দেশের সুশিল সমাজের দাবি মেটাতে ধরে নিলাম এরাও রাষ্ট্রদ্রোহি এবং গণনির্মুলের আওতায় আনা হবে। ভুলে গেলে চলবেনা আমরা সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিয়ে কথা বলছি। এবার আসা যাক বাকিদের প্রসঙ্গে। ধরে নিলাম ৭১’এর পরে জন্ম নেয়া জামাত-শিবিরের সদস্যরাও রাজাকার অথবা দেশকে পাকিস্তান বানানোর এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপরাধে রাষ্ট্রদ্রোহি। রাষ্ট্রদ্রোহিদের নির্মুল আইনের চোখে বৈধ। তালিকায় এদেরও নাম থাকবে।

এভাবে খুঁজতে থাকলে সংখ্যাটা কত দাঁড়াবে? অনেকে বলেন প্রায় ১ কোটি। মাদ্রাসার ছাত্র হতে শুরু করে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিনদেরও বাদ দেয়া যাবেনা। কারণ তারাও রাজাকার তৈরীর ফ্যাক্টরীর সক্রিয় সদস্য। এবার আসুন এদের সবাইকে সমাজ হতে আলাদা করি। দ্ধিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের সৃষ্ট কনসেনষ্ট্রেশন ক্যাম্পের আদেলে ক্যাম্প বানাই। মাসের পর মাস অনাহারের অর্ধাহারে রেখে দুর্বল করার মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেই। দেশে গ্যাসের সমস্যা থাকলে কেন্দ্র (ভারত) হতে গ্যাস এনে গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে মারি। এভাবে একদিন দেশ হতে রাজাকার, দেশদ্রোহি, রাজাকার তৈরীর মেশিনারীজ সহ সবকিছু নির্মুল হয়ে যাবে। ১ কোটি লাশ মাত্র ৫৫ হাজার বর্গমাইল এলাকায় কবর দিতে অসুবিধা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওসামা বিন লাদেনের লাশ দাফন করায় ওবামা প্রশাসনের পথ অবলম্বন করলে কাংখিত ফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিতে হবে এসব লাশ। হাঙ্গর, কুমির, কুকুর, বেড়াল, হিংস্র মাছের শিকার হয়ে একদিন পৃথিবী হতে মুছে যাবে এদের উপস্থিতি। সমস্যার পাকাপোক্ত সমাধান চাইলে দেশের অলিগলিতে গজিয়ে উঠা মসজিদ, মাদ্রাসা গুলোও গুড়িয়ে দিতে হবে। যারা ধার্মিক হয়ে বেঁচে থাকতে চাইবে তাদের জন্মনিয়ন্ত্রনের আওতায় এনে স্থায়ী বন্ধ্যাত্ব বাধ্যতামূলক করতে হবে। এবার আসুন কল্পনা করি এবং স্বপ্ন দেখি এমন একটা বাংলাদেশের। ধরে নেই বাংলাদেশ এখন শাহরিয়ার কবির ও গণজাগরন মঞ্চের স্বপ্নের দেশ।

এ এক নতুন বাংলাদেশ। এখানে মৌলবাদের খুটি হয়েছে উৎপাটিত। জঙ্গিবাদ এখানে ইতিহাস শিক্ষার অধ্যায়। তার বদলে এখানে প্রবাহিত হচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্নিগ্ধ বাতাস। এখন মঙ্গল প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা নামে। সকাল বেলা আযানের ধ্বনিতে কলুষিত হয়না শহর, বন্দর, নগর, হাট, মাঠ, ঘাটের বাতাস। পাখিরাও কিচির মিচির শব্দে উচ্চারণ করেনা মৌলবাদী হামদ ও নাথ। বরং তাদের মুখে কবি গুরুর কবিতা ও গান। গৃহবধুদের জন্যও এখানে স্বামীর পাশাপাশি নাগর রাখার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এমন একটা সুজলা, সুফলা সোনার বাংলাদেশের জন্য আমার একটাই প্রশ্ন থাকবে, এখানে লুটেরাদের স্থান কি হবে? যে নেতা নেত্রীরা চেক দিয়ে চাঁদাবাজি করলেন হবে কি তাদের বিচার? পদ্মাসেতু খেকো আবুল চোরা, রেলখেকো সুরঞ্জিত চোরা, হলমার্ক ও ডেসটিনি খেকো রাজনীতিবিদ, আমলাদের পরিচয় কি হবে? দিনের পর দিন বছরের পর ধরে যারা জনগনের পকেট কেটে নিজেদের ভাগ্য গড়েছেন তাদের কি আনা হবে বিচার আওতায়? যে হায়েনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে মূখ্যমন্ত্রীর তকমা লাগালেন তার পরিণতিই বা কি হবে? বিচার হবে কি এসব অন্যায়, অনাচার আর কুকর্মের? যদি তা হওয়ার নিশ্চয়তা থাকে আমিও নাম লেখাতে চাই এ কাফেলায়। অন্যায় কেবল রাজাকাররাই করেনি, অন্যায় করেছে এ দেশের রাজনীতিবিদ, আমলা, ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, উকিল, বিচারক সহ লাখ লাখ রক্তখেকো পশু। কাদের মোল্লার রুমমেট বানাতে তাদেরও কি পাঠানো হবে ম্যানিলা রশির দুয়ারে? যদি তা নিশ্চিত হয়, আমিও আছি জাতীয়তাবাদের কাতারে। তবু সুন্দর হউক আমাদের জন্মভূমি। কলংকমুক্ত হউক এ দেশের মাটি, আকাশ, বাতাস…
http://www.amibangladeshi.org/blog/01-14-2014/1437.html

Is Nazism rising in Bangladesh ? -1

2

by M Chowdhury

Comparative discussion of the characteristics of historic Nazi regime and current Bangladesh regime

I wrote earlier, how the propaganda strategy adopted by the current regime in Bangladesh is stunningly similar to that of the Nazis in 1930s and 40s; I held this view long before the rise of Shahbag.

As a result, I have often receive few kinds words from fellow “sushils” who seems to think of this as a political blasphemy. In my personal opinion this sheer horror is generated by most sushil getting Fascism confused with dictatorship ( a hated one, that is) ; because I often get asked if I have any doubt about the massive public support AL  commanded. “Hey, Hitler was popular too” – is always my simple answer.  The point is, a Fascist regime does not necessarily need have zero public support, in the contrary history shows us that Fascist regime can start off with significant public support or the delusion of so.

19799175316C741A87

Fascism as an ideology is quite hard to define, however it has been proven to display some common characteristics. A close observation of these characteristics, with comparison of current Bangladeshi regime can that the fear of rising fascism in Bangladesh might not be yet another political claim.

“Extreme” Nationalism

Extreme Nationalist, combined with a totalitarian authority is Fascism’s distinctive property. Fascist regimes, throughout the history made constant use of extreme nationalism. This serves the purpose of creating the common ground for creating a “mass movement” in which the middle-class can prevail. This also creates a sense of comradeship, a mindset of being in a “war” with the political opponents and a sense of sacrifice for the mission of  national regeneration.

In post-world war 1 Germany, Hitler’s Nazi used the national regeneration theme with colossal success and sold Nazi party to be the only viable option to regain the lost Germanic pride. While the Nazis used nationalism in the backdrop of a lost war and “humiliating” Versailles Treaty, Bangladesh’s fascist could not have used such tactics in their ground for mass movement because of two problems. Firstly, we don’t have a lost war, we have a war where we were valiantly victorious against all odds.

130234080557829814

The second and much bigger one is that of India; any self-respectful patriotic or nationalist movement is bound to be vocal about the biggest and greatest aggressive entity the nation has been facing for over four decades, in Bangladesh’s case which is India with its border aggression and BSF brutality, water sharing issues and economic and cultural aggression etc. As India also happens to be AL’s greatest foreign ally, the AL intelligentsia needed to conceive a different type of nationalism.

18494650003E86C7CF18391768406C741A87

As a result, a fusion is created where AL, the leftists parties, liberation war, 71, Father of the Nation etc are jumbled in to a fallacy called 71’s “chetona” and the fascist propaganda machine played its part in sanctifying this so called chetona. This does a lot of good for a fascist movement in rise; it gives them a ground for mass movement, takes the focus of any patriotic sentiment away from India, gives AL the right to identify anyone as the enemy of the chetona and gives the young hot-blooded recruits a shadow war to fight against the so called enemies.

18614982557829814

The young generation trapped into this fallacy grows up learning that the chetona is sacred, so much so that a regime can do it whatever it likes in the name of 71. They never stops to ask  why the leftist party leaders today becomes the guardian of 71 when they stayed away from the liberation war describing it as the fight of two dogs, they never ask how media censorship is aligned with the spirit of free democratic Bangladesh. They never hesitate  to call Kader Siddiqui, the 71 war hero as a “razakar” and idolizes certain sci-fi author as national hero and forgets to ask him why wasn’t he in the war front in 1971.  These ultra nationalists are so lost in their fallacy that they forget to demand justice for Bishyajit, they chant “Fashi ” and not “Justice”   and while in the nation is in turmoil, they are happy setting the world record for creating the biggest flag.

This patriotism is extreme, blind and delusive; it teaches young men to dresses up in green and red the regime is killing democracy; it teaches them to shut their eyes and rejoice the coming back of the saviour of chetona while the regime is self electing itself for a second term and moving towards a total authoritarian structure.

-13900090983E86C7CF

Another important aspect of the German Nazi ultra-nationalist is its display through paraphernalia. There were slogans, mottos, songs and flags. A similar trend can be observed in Bangladesh, especially in regime backed rallies, gathering etc; there is a inclination of creating this delusion of unity and a silent  effort of  fuelling the urge to join the common ground of chetona.

-1404623626056FEACD

The way the current regime has created the fallacy of Nationalist and were able to create a cult culture around it is very similar to the ultra nationalist extremism created by Nazi regimes in the past and it does make one to wonder, Is Nazism rising in Bangladesh ?

( Thanks to work of R. Verma and Emilio Gentile)

টিক্কা খানের আসনে আওয়ামী লীগ!

by Watchdog Bd
কাদের মোল্লার ফাঁসির তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে ডেডিকেটেড আওয়ামী একটিভিষ্টরা অনলাইনে যেসব গান গাইছে তা এখন লাশ নিয়ে গোরস্তানে যাওয়ার গানের মত শোনাচ্ছে। মিহি সুরের এসব গানে আগের মত প্রাণ নেই। গলায়ও নেই তেমন জোর। অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারকে ডিফেন্ড করার বাংলা শব্দের ভান্ডার খুব ধনী নয়। লম্বা সময় ধরে এসব সীমিত শব্দের ব্যবহার খেই হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা তৈরী করে মাত্র। ছাগল, ছাগু ও পাকি, এই তিন শব্দের কীর্তন এ মুহূর্তে নেতিয়ে পরা চেতনা উজ্জীবিত করার জন্য যথেষ্ট হবে বলে মনে হচ্ছেনা। কারণ আওয়ামী লীগ এখন ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানের আসনে। আর আপনারা যারা এদের নিয়ে নাচতে গিয়ে অন্তর্বাস খুলে ফেলছেন তারা বসেছেন কাদের মোল্লা, আমিনি, নিজামীদের চেয়ারে। অন্যায়, অবিচার আর অত্যাচারের কোন দেশ, কাল, পাত্র থাকেনা। সব দেশে সব কালে এরা খুনি, তস্কর ও লুটেরা হিসাবেই চিহ্নিত হয়ে থাকে। আওয়ামী লীগের জন্য এ মুহূর্তে নতুন কোন সংজ্ঞা তৈরী হবে তার সম্ভাবনাও কম। আপনাদের লীগ এখন মরা হাতী। যারা কাকের মত কা কা সুরে এই হাতির ঘুম ভাঙ্গাতে চাইছেন তাদের চেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা একবারেই শূন্য। মরা হাতী এক সময় লায়াবিলিটি হয়ে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াবে এবং শেষ পর্যন্ত কেউ না কেউ উদ্যোগ নিয়ে ছুড়ে ফেলবে ভাগাড়ে। আরও কটা দিন হয়ত হাতে রাইফেল নিয়ে পুলিশের তাফালিং চলবে, অন্ধকারে চোখে কালো চশমা লাগিয়ে র‌্যাব নিজেদের র‌্যাম্বো ভাবতে থাকবে, সেনাবাহিনীর কামানে চড়ে হানিফ, লতিফ, ইনু, হাসানদের টেংরা মাছের নাচ অব্যাহত থাকবে।

৭১’এ কাদির কসাইরাও একই নাচ নেচেছিল। কিন্তু হায়, নাচের সমুদ্র এক সময় নদী হয়ে যায়, নদী হয় পুকুর এবং পুকুর রূপান্তরিত হয় ডোবায়। ডোবার টেংরা মাছ অক্সিজেনের অভাবে চিতপটাং দিয়ে নেচে নেয় শেষ নাচ এবং বিদায় নেয় ইহজগৎ হতে। ৭৫ সালে ক্ষমতার দাপট এবং তা চিরস্থায়ী করার লিপ্সা হতে শেখ মুজিব যে ভুল করেছিলেন দল হিসাবে সে ভুলের মাশুল আওয়ামী লীগকে গুনতে হয়েছিল অনেকদিন। এবং অনেক গুলো বছর। ২০১৩’তে এসে শেখ হাসিনা যে ভুল করলেন তার মূল্য দল হিসাবে আওয়ামী লীগকেই শোধ করতে হবে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিলনা। আওয়ামী ছিল জনগণের দল। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিল তাদের ভাগ্য। পাকিস্তানী সামরিক স্বৈরশাসক, ৭১’এর ইয়াহিয়া-টিক্কা চক্র, এরশাদ চক্রের নয় বছর হতে মুক্তির লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ ছিল অগ্রপথিক। কিন্তু একজন মহিলা তছনছ করে দিল এ ঐতিহ্য। নিজের ইচ্ছা, পারিবারিক স্বার্থ আর প্রতিবেশী দেশের তাবেদারি করতে গিয়ে খেয়াল খুশিমতো দলকে ব্যবহার করলেন এবং টেনে আনলেন এমন একটা অবস্থায় যেখান হতে দলীয় পরিচয়ে নেতা কর্মীরা জনগণের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। কারণ তাদের জন্য দেশের অলিগলিতে পাতা আছে মৃত্যু ফাঁদ। এ ফাঁদ কেবল জামাতি ফাঁদ নয়, সাধারণ জনগণেরও ফাঁদ। বন্দুকের নলের মুখে দেশ শাসন ইয়াহিয়া টিক্কা খানদের শোভা পায়, আওয়ামী লীগের মত জনগণের দলকে নয়।

জামাতি, পাকি আর রাজাকার বচন হয়ত ক্ষণিকের আনন্দ দেয়, উল্লাস করতে খোরাক যোগায়। কিন্তু তা ক্ষতির জায়গায় ইট-সুরকি সিমেন্ট বসাতে সহায়তা করেনা। রাজনীতি করতে নেতা-নেত্রীর পাশাপাশি জনগণ লাগে। এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সব আছে। আছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, একদল নেত্রীকানা দলদাস। কেবল নেই জনগণ। প্রমান চাইলে সব ছেড়েছুড়ে নির্বাচনে গিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করে আসুন। দুঃখ পাবেন, কষ্ট লাগবে। জান নিয়ে পালিয়ে আসতে পারলে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করবেন।
http://www.amibangladeshi.org/blog/12-27-2013/1428.html

 

Welcome to Mr Arvind Kejriwal ~ long struggle ahead if you are ‘TRUELY true’ to your conviction

Mr Aravind Kejriwal after winning election. Photo copyright Deccan Chronicle.

Mr Aravind Kejriwal after winning election. Photo copyright Deccan Chronicle.

I must admit I didn’t give much of a thought back in 2011 when my co-workers and friends of Indian origin told me about Anna Hazare and his activism against corruption in New Delhi. I tried to read few articles here and there about his activism and came to know that he does not want to take a political platform and do his activism in a ‘non-political’ and ‘non-partisan’ fashion. As an avid follower of news, history and politics I know that activism without political platform and partisanship is recipe for failure specially in Indian subcontinental political eco-system. So, as long as Mr Anna Hazare were to be the face of the activism, this movement was going no where other than passing a law or two about anti-corruption. Laws are made in Indian subcontinent usually for not to be implemented.

Having said so, a few of my Indian friends were very hopeful about an IIT-trained mechanical engineer turned tax department bureaucrat named Mr Arvind Kejriwal who was with Anna Hazare and took part in the political activism against corruption. I must admit that I did not give it a much of a thought either back then.

In the past 2000 years of the history of Indian Subcontinent political power is always ‘handed down’ from one generation to other. The only way to change the political power was by destroying the dynasties. As the subcontinent was sub-divided into 100s of small and big independent or semi/pseudo-independent states for 1000s of years the tradition is such as a state always belongs to its king. Once the East India Company started taking over the subcontinental landscape back in mid 1700s they had to figure out an effective way to by-pass the rules of the kingdoms and thus British-India-bureaucracy was born. And so was the corruption.

Two weeks ago Delhi’s election made a splash on the global news as Mr Kejriwal’s Aam Admi Party defeated other two political powerhouses in the provincial election. And now, skeptics like me had to take notice! Mr Kejriwal is not the first one in recent history to take up such initiative of taking the task to clean corruption from the a sub-continental country bogged into a 200 years old bureaucracy and, at-least, 100 year old political dynasty altogether. Politicians have come as fighters against corruption and gone as corrupt ones themselves in a few years. I think I had the valid reason to be skeptic.

If Mr Kejriwal is true to his conviction he has a long long way to go no doubt. How will he win this battle against corruption and install good governance? I believe the answer is simple ~ by the help of the people who are tired of these all-powerful all-have political power-houses. I believe those are the people who voted for him. As Mr Kejriwal knows very well, politics is a high-stake game where politicians usually always win. This is the ‘business of people’.

Will Mr Kejriwal become ‘the’ politician to make tough decisions and win a political battle against corruption? It will be a new experiment and a new experience for the world to watch (and learn may be). Anna Hazare movement now has a political platform and a human face as a leader. The stage is set. Sounds are checked. Lights are on and focused on Mr Kejriwal ~ to perform. Aam Admis (regular people) are hoping nobody-else will steal the show this time. Much is on stake.

রাজাকার : ‘৭১ বনাম ২০১৩ এডিশন

razakar 3

ভারতীয় অলিখিত ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদি আধিপত্যকামীদের একটা স্থুল কৌশল হল _ এভাবেই বার বার ‘৭১ এর ধূয়া তুলে পাকিস্তান জামাত-শিবির ইত্যাদি জুজু দেখিয়ে চলমান রাষ্ট্রীয় সহিংসতার ‘বর্তমানের চালচিত্র’ কে আড়াল করে রাখার ধুরন্ধর এক অপকৌশল। ‘৭১ এর রাজাকারদের তুলনায় ২০১৩ এর রাজাকাররা অত মোটাদাগের নয়, অনেক বেশি চিকনদাগের সুক্ষবুদ্ধিসম্পন্ন ক্রিমিনাল। আগের মত মোটাদাগের অপরাধ করে ধরা খাওয়া বা জাতীয়-আন্তর্জাতিক-ঐতিহাসিকভাবে নিন্দিত হওয়ার বিপদ এড়িয়ে ধুরন্ধর ডিজিটাল কৌশলে ‘সাংবিধানিক’ উপায়ে রাজাকারির নিত্যনত্যুন পন্থা যেমন আবিষ্কৃত হয়ে চলেছে, তেমনি সেগুলোকে মহিমান্বিত করার প্রয়াসে সাংষ্কৃতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক বিদূষকসুলভ চাটুকারিতা একটি আলাদা শিল্পের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সাধারণ মুসলিম হিসেবে আমি কার পক্ষ নেব ? ‘৭১ এর প্রেক্ষাপটে আমি পশ্চিমা হানাদার ও তদীয় দোসরদের পক্ষ নিতে পারি না কারণ তারা অবর্ণনীয় জুলুম করেছে নিরস্ত্র নিরীহ সাধারণ জনগণের ওপর, মতাদর্শিক ভিন্নতার কারণে তো বটেই, সেই রাগ তুলতে গিয়ে যারা কোন দলের ছিল না সেই আপামর সিভিলিয়ান জনগণ তথা গোটা জাতির ওপরই শ্বাপদসুলভ রক্তলোলুপ হিংস্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তারা। ‘ভারতীয় হিন্দু’ ‘পাকিস্তানের দুশমন’ ইত্যাদি জুজু দেখিয়ে সেই অজুহাতে বিরোধীদমনের নামে চলছে শহরে বন্দরে-গ্রামে গঞ্জে-মাঠে প্রান্তরে নির্বিচারে চালিয়েছে গুলি, বসতবাটি ধ্বংস-অগ্নিসংযোগ, অবিশ্রান্ত হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের ক্রমাগত দীর্ঘমেয়াদী কালোরাত্রির অদ্ভূতুড়ে আঁধারে ঘেরা অমাবস্যা।

সেই কারণে আমি একজন অতি সাধারণ, অতি নগণ্য মুসলিম হিসেবে ‘৭১ এর নরঘাতক জালিমদের সমর্থন করি না, করতে পারি না।

আজ এই ২০১৩ তে একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সাধারণ মুসলিম হিসেবে আমি কার পক্ষ নেব ? আজকের প্রেক্ষাপটে আমি ভারতীয় হানাদার ও তদীয় দোসরদের পক্ষ নিতে পারি না কারণ তারা ‘৭১ এর পশ্চিমাদের মত নগ্নভাবে না হলেও সুক্ষ কৌশলে আরো ভয়ংকরভাবে খামচে ধরেছে আমার মাতৃভূমির প্রিয় লাল-সবুজের পতাকার বুক। সাম্প্রদায়িক বর্ণবাদি ভারতীয় হিন্দুদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেশীয় দালালবাহিনী একে একে দেশের সম্পদ সব তুলে দিচ্ছে তাদের প্রভুর হাতে, দেশের প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, মানুষের ধন-মান-প্রাণ সবই অনায়াসে কুক্ষিগত করতে সহযোগীর অক্লান্ত ভূমিকায় পালন করে চলেছে তারা। ভারত থেকে লোক এনে দেশের মানুষকে হত্যা করাচ্ছে তারা। ‘জঙ্গি’ ‘জামাত-শিবির’ জুজু দেখিয়ে সেই অজুহাতে বিরোধীদমনের নামে চলছে শহরে বন্দরে-গ্রামে গঞ্জে-মাঠে প্রান্তরে নির্বিচারে চালিয়েছে গুলি, বসতবাটি ধ্বংস-অগ্নিসংযোগ, অবিশ্রান্ত হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের ধারাবাহিকতার ‘সূচনা’ হতে দেখছি। সাতক্ষীরায় ‘৭১ এর মতই হত্যা-লুটপাট-বসতবাটিতে অগ্নিসংযোগ _ এমনকি বুলডোজার নিয়ে গিয়ে বাড়ি-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দিয়ে আসা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে ৫০ জনের অধিক নারী সমভ্রম হারিয়েছেন, সমভ্রম হারানোর ভয়ে গ্রামত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক নারী।

তাহলে ২০১৩ তে জালিম কারা আর মজলুমই বা কারা সে প্রশ্ন নিজেকে কখনো করেছি ? ‘৭১ এর ব্যাপারে আমি যদি পূর্ব পাকিস্তানের আপামর মজলুম জনসাধারণের পক্ষ নিয়ে থাকি _ ২০১৩ তে এসে আমি নতুন মোড়কে প্যাকেট হয়ে আসা জালিম ভারতীয় রাজাকারদের পক্ষ নিতে যাব কেন ?

razar 2

অনেকে বলেন ‘৭১ এ পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধাবস্থা ছিল সে কারণে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অগণিত সিভিলিয়ান হত্যা-লুটপাট-অগ্নিসংযোগ-নির্বিচারে গুলি-ধর্ষণ এসব হয়েই থাকে, সেটা যুদ্ধেরই অঙ্গ। কিন্তু এই মাটির সন্তান হয়ে যারা এই দেশমাতৃকাকে, দেশমাতৃকার সহোদর-সহোদরাদের পিশাচসুলভ নীচতায় বিদেশী হানাদারদের হাতে হত্যা-ধর্ষণের জন্য তুলে দিতে পেরেছিল _ তাদের ক্ষমা করা অতি অতি দুঃসাধ্য ব্যাপার। ভাল কথা, তাহলে স্বাধীনতা পাওয়ার পর ক্ষমতা হাতে পেয়েও কেন তাদের উপযুক্ত বিচার করা হল না ? কেন তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে এত সহজে ছেড়ে দেয়া হল ? ৪২ বছর ধরে রক্তবীজ থেকে বাড়তে বাড়তে বিশাল অরণ্যে রুপান্তরিত হতে দেয়ার পর এত যুগ পর এখন কেন এই প্রজন্মের ওপর এত বিশাল বিভক্তি-ধ্বংসযজ্ঞ-গৃহযুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হল ? ‘৭১ ধূয়া বার বার তুলে প্রতারণাপূর্ণভাবে ২০১৩ এ এসে ভারতের সেবাদাসত্ব করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ১২টা যারা বাজাচ্ছে চোখের সামনে ভারত কর্তৃক নির্মমভাবে সবকিছু লুন্ঠিত হতে দেখেও সুশীলসমাজ এবং মানবতাবাদিরা নিশ্চুপ কেন ? কেন তারা বর্তমান এবং ভবিষ্যত বাংলাদেশের নৃশংস হত্যা দেখেও অন্ধের মত চোখ বন্ধ রেখে বার বার ৪২ বছর আগের অতীতের কথা নিয়ে এসে নাটকীয়তা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায় ?

আজ যেসব যুবক-কিশোর-তরুণ জামাতশিবির করছে তারা কি ‘৭১ এ রাজাকার ছিল ? তাদের তো জন্মও হয় নি সেদিন। যে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পর পাইকারী হারে ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষনা করে, ১৯৯৬ এ জামাতের সাথে আঁতাত করে ক্ষমতার স্বাদ নেয়, একমাত্র বিএনপির সাথে জামাত জোটবদ্ধ হওয়ায় ‘রাজনৈতিক’ কারণেই কি তারা অনেকাংশে জামাতের বিরোধিতা করছে না ? চেতনার হোলসেলাররা যদি আদৌ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হত তাহলে অন্যান্যদের মত তাদেরও একেকজন রাষ্ট্রীয় সম্পদ পুকুরচুরি করে কেউ শতগুণ কেউ সহস্রগুণ ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি করে কিভাবে ? এই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ? তাহলে আর ১০টা চোরবাটপাড়ের সাথে তাদের পার্থক্য সূচিত হয় ঠিক কোন জায়গায় ?

আজ বাংলাদেশে ‘৭১ এর মত কোন ঘোষিত যুদ্ধাবস্থা নেই ঠিকই, কিন্তু ভারতীয় সাংষ্কৃতিক-সামরিক-রাজনৈতিক-বাণিজ্যিক হানাদার দস্যুদের অঘোষিত কিন্তু ভীষণভাবে পরিচালিত এই আগ্রাসনে যারা দেশীয় তাঁবেদারের ভূমিকায় নির্লজ্জভাবে অবতীর্ণ হয়ে নিজের দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে বীভৎস বিশ্বাসঘাতকের মতো দাঁড়িয়েছে _ আমার কাছে তাদের সাথে ‘৭১ এর রাজাকারদের কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য এতটুকুই যে ‘৭১ এর ঘটনা সম্পূর্ণভাবে ঘটে কালের আবর্তে মিলিয়ে গেছে, ২০১৩ এর রাজাকারদের বিশ্বাসঘাতকতা-নির্যাতন-লুটপাট রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ছদ্মাবরণে আমাদের চোখের সামনে ঘটছে।

‘৭১ আমাদের পূর্বসূরীদের অতীত _ ২০১৩ আমাদের রক্তাক্ত বর্তমান। যে সঙ্গীন মানবতাবিরোধী অপরাধে ‘৭১ এর অপরাধী নরাধমদের বিচার দাবি করছি, সেই একই যুক্তিতে ২০১৩ এর নব্য রাজাকারদের দুঃশাসন-গুম-খুন-হত্যারও আশু প্রতিকার চায় বাংলার জনগণ। খুব বেশি দেরি হয়ে গেলে হয়তো জনগণ নিজের হাতেই আইন তুলে নিতে বাধ্য হবে, যেমনটি হয়েছিল ‘৭১ এ, রাষ্ট্রের কাঠামো তখন চুর চুর করে চোখের সামনে ভেঙে পড়তে থাকবে তাসের ঘরের মত, মিলিয়ে যেতে থাকবে কর্পূরের মত আমাদের সাধারণ জনগণের অক্লান্ত পরিশ্রমে তিল তিল করে গড়া ৪২ বছরের অর্জন, অনিশ্চয়তার অজানা চোরাবালিতে অসহায়ভাবে তলিয়ে যেতে থাকবে আমাদের ভবিষ্যতকে ঘিরে দেখা শত স্বপ্নের স্বর্ণজাল _ কাজেই তার আগেই সচেতনভাবে জেগে উঠতে হবে বাস্তব দেশপ্রেমের মধুর জ্বালাময় কষাঘাতে _ অদেখা পূর্বসূরীদের প্রাগৈতিহাসিক গৌরবগাঁথায় নয়, নিজেদের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বর্তমানের ঘূর্ণিতে সটান যোদ্ধার মত দুঃসাহসিক আগুনের পরশমণি বুকে নিয়ে।

বাংলাদেশের জীবনযাত্রায় নাটকের প্রভাব

by Jahid Islam

বাঙ্গালি জাতির নাটকপ্রিয়তা নিয়ে জ্ঞানীগুণী গবেষকরা হয়ত ইতিমধ্যেই বিস্তর লিখেছেন। নাটক ব্যাপারটি যে আমাদের মজ্জাগত-ছোটখাট কিছু উদাহরণ এর মধ্য দিয়ে এই পুরনো সত্যটিকে আবারও তুলে ধরার চেষ্টা থেকে এই লেখার প্রয়াস।

আমি যখন ছোট, আমাদের গ্রামের অনেক বাড়িতেই তখন টেলিভিশন ছিলনা। তবে আমাদের ঘরে একটা সাদা কালো টিভি ছিল। এতে রাতে সাপ্তাহিক বা প্যাকেজ নাটক দেখতে আসা উপচে পড়ার ভিড়ের কথা আমার এখনো মনে আছে। আমাদের যে রুমটাতে টিভি ছিল ঠিক সেই রুমের বিছানাটার মাঝখানের একটা তক্তা ভেঙ্গে গেছে একটা সময়। হয়ত ঘুণে ধরা কাঠ ছিল। তবু আমার বিশ্বাস এতে হাউসফুল দর্শকের একটা না একটা ভূমিকা না থেকে যায় না। “কোথাও কেউ নেই” নাটকে বাকের ভাইয়ের আসন্ন ফাঁসির কথা কল্পনা করে ভক্তকুলের মধ্যে যারা মহিলা দর্শক ছিলেন (আমি এবং আমার ভাই ছাড়া প্রায় সবাই এবং তারা বেশীর ভাগ ছিলেন আমার চাচি ও ফুপু সম্প্রদায়ের) কয়েক পর্ব ধরে তাদের সে কি মলিন চেহারা ! এমনকি এই নাটকে বাকের ভাইয়ের ফাঁসির বিরুদ্ধে ঢাকা শহরে মিছিল এবং হুমায়ূন আহমদের বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণের মত ঘটনা শুনেছি। ঘটনার সত্যতা যাচাই করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে যদি সত্য নাও হয় তবু এই ধরনের জনশ্রুতি তৈরির ব্যাপারটি নাটকের প্রতি আমাদের ভালবাসাকেই নির্দেশ করে।

নাটকের এই প্রভাব গ্রামীণ সাদাসিধে মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ শ্রেণীর শিক্ষিত মানুষ,সবার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। এমনকি এই দেশের আদালতে পর্যন্ত। যোদ্ধাপরাধীদের বিচারে আসামীর বিরদ্ধে অপরাধের প্রমাণ স্বরূপ যে সব ডকুমেন্ট সরবরাহ করা হয় তাতে স্থান পেয়েছে মুনতাসির মামুনের লেখা নাটক। হেরেসিম লেবেদেফ যিনি বাংলা নাটকের সূত্রপাত করেন বলে এক সময় মাধ্যমিক শ্রেণীর বইয়ে পড়েছিলাম আজ বেঁচে থাকলে তাকে হয়ত জিজ্ঞেস করা যেত, “ ভাইসাব আপনার উদ্ভাবিত জিনিসটির এই সাফল্য দেখে আপনার অনুভূতি কেমন” ?  তিনি যে জিনিস চালু করেছিলেন তার প্রভাব যে একদিন একটা গোটা জাতির প্রাত্যহিক জীবনে পড়বে এবং এ দিক থেকে যে তিনি একদিন শেকসপিয়ারকেও ছাড়িয়ে যাবেন তিনি কি তা কখনো চিন্তাও করেছিলেন ?

দেশীয় রাজনীতিতে নাটকের প্রভাব আরও প্রকট। আর তাই  নাট্যকাররা  জনপ্রিয় পলিটিক্যাল কমেনট্রিও লিখে থাকেন দৈনিক পত্রিকায়। এমনকি টিভি টকশোতও রয়েছে তাদের প্রাধান্য। তাদের যুতসই বিশ্লেষণ পড়ে পাঠক চলে যান কল্পনার রাজ্যে। দর্শক বা পাঠকের উদ্ভাবনী শক্তিকে উসকে দেন এই নাট্যকাররা। ঘোরতর সঙ্কট হতে জাতিকে রক্ষা করার জন্য জাতীয় পতাকা দিয়ে রেকর্ড করার মত নাটকীয় বিষয়টি খুঁজে বের করেন সমঝদার পাঠকবৃন্দ। এখানেই শেষ নয়। এই নাটকের অভিনেতারা অনেকেই দেশের সেবায় নিয়োজিত সাংসদ। তাঁরা যে কোন সঙ্কটে দেশকে রক্ষা করবেন ঠিক সেভাবে যেমনটা সিনেমাতে প্রিয় গোথাম নগরীকে রক্ষা করেন ব্যাটম্যান।

পিছিয়ে নেই মঞ্চ নাটকও। সমানতালে এর প্রভাবও রয়েছে দেশের রাজনীতিতে। মঞ্চ নাটকে যেমন জোরে জোরে সংলাপ বলা হয়, আমাদের রাজনীতিবিদরাও বক্তৃতায় অনেকটা সে কাজই করেন। যিনি যত জোরে সংলাপ বলবেন তিনিই এই মঞ্চে তত ভাল বক্তা বা অভিনেতা। এমনকি নাটকের আদলে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ সাজানোও ত আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্যেরই অংশ।

নাটকের দৃশ্যে কাহিনীর প্রয়োজনে দৃশ্যপটে উঠে আসে হারিয়ে যাওয়া পুরনো চরিত্র। এমনটা আছে আমাদের রাজনীতিতেও। কয়েকদিন আগে দেখলাম শামীম ওসমান সাহেব বক্তৃতা দিচ্ছেন এবং জনতা এই মহান বীরকে তুমুল করতালি দিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে। ঠিক যেন রোমান বীর জুলিয়াস সিজারের মত। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে তার ভোট না গণনা করেই যে প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা সম্ভব এ সত্যটিও এই মহান নেতা খুব ভাল করেই জানেন। কিন্তু তবু তিনি জনপ্রিয় নেতার ভূমিকায় অভিনয় করবেন এবং বাজারে এই অভিনয়ের সমঝদার দর্শকও কাছে। আওয়ামি লীগ যদি সত্যিই অনেক দিন  ক্ষমতায় থাকে তখন তিনি আসবেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যেমনটা আসতেন জয়নাল হাজারি । মানুষ তাকে নতজানু হয়ে সালাম দিবে। আর ভাব করবে এমন – “ আহা আপনাকেই ত জাতি চায়। এতো দিন কোথায় ছিলেন ? ”/ জাতির ক্রান্তি লগ্নে জাতিকে মূল্যবান পরামর্শ দেবার জন্য তিনি টকশোতেও হাজির হবেন। কিংবা “সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূল” শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে তিনি আসতেই পারেন অতিথি বক্তা হিসেবে।

শাহবাগ আন্দলনের অন্যতম নায়ক ইমরান এইচ সরকার পুলিশের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনিও এ জাতির আরেকজন দক্ষ নেতা (পড়ুনঃ অভিনেতা)/ ছোট বেলায় পড়েছিলাম দক্ষ নেতারা নাকি উপদেশের বদলে উদাহরণ দেন। তিনি যে সরকার দলের সমর্থক নন তা তিনি জাতিকে উদাহরণ দিয়ে (অভিনয় দিয়ে) বুঝিয়ে দিতে চাইলেন। আর তাই তিনি গুলশান নাটক মঞ্চস্থ করলেন। শুয়ে শুয়ে শ্লোগান দিয়ে (ডায়ালগ দিয়ে) যে নাটকে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করা যায় এখানেই বিশ্ব এই অভিনব কলার সাথে প্রথম পরিচিত হল।

 

থেমে নেই আমাদের প্রধানমন্ত্রীও। তিনি থেমে থাকলে চলবে কেন, তিনিই যে এ সময়ে নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ! বর্তমান নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল যে কেবল আদালতের রায় ও সংবিধান সমুন্নত করার জন্যই এবং এটি যে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ বা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লোভ থেকে নয় গোটা জাতির সামনে কান্নার অভিনয়ের মাধ্যমে তা তিনি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে মৃত মানুষের পরিবারকে বা আগুনে ঝলসে যাওয়া মানুষকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তিনি যত দ্রুত কান্না করতে পারেন, তা দেখে বিজ্ঞজন মাত্রই স্বীকার করবেন যে সঠিক সময় এমেরিকায় জন্ম হলে তিনিই হতেন রোণাল্ড রিগ্যান কিংবা আর্নল্ড শোয়ারজনিগার এর মত অভিনয়ে পারদর্শীদের সবচেয়ে উপযুক্ত রাজনৈতিক প্রতিযোগী।

বর্তমান পরস্থিতিতে বিরোধী দলবিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিশ্চিতভাবেই  জয় লাভ করবে। এই নির্বাচন করা না করা সমার্থক। কিন্ত না, যে কোন মূল্যে এই “নির্বাচন-নির্বাচন” নাটকটি মঞ্চায়িত করতে হবে। এটিত আসলে ১৯৯৬ সালে মঞ্চায়িত নাটকটিরই দ্বিতীয় পর্ব। একদলীয় হলে কি ! সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে কোন ছাড় নেই। তাই সেনা মোতায়েনও করা হবে । এটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে কিনা তা দেখতে সদা তৎপর রয়েছে “৭১ টিভি” / সকাল হতে বিকেল তারা এর লাইভ কাভারেজ দিবে।

হাসিনা এই নির্বাচন না করেই ক্ষমতায় থাকতে পারতেন, যেমনটা স্বৈর শাসকরা করে থাকেন। একজন স্বৈর শাসকের সাথে তার গুণগত পার্থক্য না থাকলেও এই অভিনয় তিনি করবেন। সহ অভিনেতা হিসেবে এই নাটকে তিনি বেছে নিয়েছেন রাজনৈতিক নাটকের অন্যতম থ্রিলার কিংবদন্তী এরশাদকে। পার্শ্ব অভিনেত্রি হিসেবে রওশন বরাবরের মত এবারেও ভাল।

আমরা যে সরকারদলীয় মন্ত্রী, এমপিদের হলফনামা দেখে শোকে মুহ্যমান হবার ভান করি, তারা যে এরকম এই ব্যাপারটা কি আমাদের অজানা ছিল, নাকি তাদের চরিত্র সম্পর্কে আমাদের  যে ধারনা এই ঘটনা তার সাথে একেবারেই বেমানান ? তাও আমরা অবাক হবার ভান করি।কেননা এতে নাটকীয়তা বজায় থাকে।

নাটক যে আমাদের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে সেটা আরও ভাল বুঝা যায় যখন আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতিরা (সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে নরম মনের মানুষেরা এই পদ অলংকৃত করেন) ফাঁসির দণ্ড প্রাপ্ত আসামিকে মাফ করে দেন। তারা আবার পুনর্জীবন লাভ করে। দণ্ড মাফ প্রাপ্ত কৃতী সন্তানরা দেশ জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। কেউ কেউ তাই এম পি মন্ত্রী হয়ে জাতির সেবায় মগ্ন হন। আবার যাবজ্জীবন দণ্ড পেলেও হয়ত অনেকের মুক্তি নেই। কেননা দর্শকদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি হয় নাটক। প্রয়োজনে চাহিদা অনুসারে কাহিনীর পরিবর্তন ঘটে। দর্শকের কাঙ্খিত ভিলেনের ফাঁসি হয়। দর্শক এবং নির্মাতা সকলেই নির্মল আনন্দ লাভ করেন।

 

তবে কেউ যেন ভাবতে না পারে যে দেশে সুবিচারের ব্যত্যয় হয়েছে সেই দিকেও রয়েছে সরকার বাহাদুরের কড়া দৃষ্টি। আর তাই  সরকার দলীয় এমপি মন্ত্রী পর্যন্ত  ন্যয় বিচারের দণ্ড থেকে রেহাই পান না। টাকার ব্যাগ সহ ধরা পড়লেও কে যে নির্দোষ, বিদেশী লবির অপপ্রচারনার শিকার কোন দেশ প্রেমিক নেতা কিংবা নিপাট ভদ্রলোক সেজে থাকেলও কে যে আসলে সাংবাদিক পেটান তার সব রহস্যই ভেদ করে সরকার। অনেকটা ডিটেকটিভ নাটকের সুক্ষ্ণদর্শী ডিটেকটিভের মত।

পরিশেষে, বলা যায় নাটক আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিছেদ্য অংশ। দেশের রাজনীতির তুলনা হতে পারে কোন জনপ্রিয় থ্রিলার নাটকের সাথে যার প্রতিটি মুহূর্তে আছে নাটকীয়তা। সমঝদার দর্শকই হয়ত সময়মত ব্জানিয়ে দেবেন যে তাঁরা ভবিষ্যতে কাকে মঞ্চে দেখতে চান আর কাকে চান না।

ভাতের বদলে চেতনা খান, দিদির উপর চাপ কমান

by নিরীহ পাবলিক:

গুম, হত্যা, খুনাখুনি, বোমাবাজী, অবরোধ, হরতাল, অস্ত্র মিছিলে দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শত শত গার্মেন্টস বন্ধের পথে, ঘর্মাক্ত কৃষক তার সারা বছরের সাধনার ফসল বেচতে না পেরে নিজেই তাতে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে ফেলছে, ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান সব কিছু কার্যত অচল। আর এরই ব্যাকগ্রাউন্ডে চেতনা’বাদী সরকার বিশ্বরেকর্ড করা পতাকা বানিয়ে তার অচেতন সমর্থকদের নিয়া চোখ বুঝিয়া গাহিতেছে, ‘ওমা ফাগুনে তোর আমার বনে ঘ্রানে পাগল করে’। চোখ খুলিয়া একটু ঘিলু খাটালেই তাদের বুঝার কথা এই ঘ্রান আমের নয়- এই ঘ্রান গোলা-বারুদ আর রক্তের। কিন্তু আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর মনুষ্য ঘিলু একই মানবদেহে থাকতে পারে না। তাই এই চেতনাবাদীদের ঘিলু খাটানোর প্রশ্নই আসে না। বিদেশী শক্তির দাসত্ব করতে করতে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে এখন ভূখা নাঙ্গা দিশেহারা পাবলিকদের চেতনায় চেতাইয়া দিদি ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কতিপয় ঘিলু বিহীন দ্বিপদী তাতে চোখ বুজে চন্দ্রনৃত্য করবে সেটা বলাই বাহুল্য। ১০ টাকা কেজি চাল, ডিজিটাল বাংলাদেশ আর দিন বদলের মুলা দেখিয়ে দিদি ক্ষমতায় এসেছিলেন। আর তার বিদেশী প্রভুদের কাছে প্রতিজ্ঞা করে এসেছিলেন ইসলামী রাজনীতির ঠেকানোর, বোরখা বিক্রি কমানোর, সেনাবাহিনীর মধ্য থেকে ইসলামী চেতনা দূর করে সেনাবাহিনীকে ভারত প্রেমিক করে তোলার, দেশকে সম্পূর্নরূপে ভারতের সেবাদাসী বানানোর। দিদি তার বিদেশী প্রভূদের কাছে দেয়া নির্বাচনী ওয়াদা ঠিক মতোই পালন করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। আর দেশের পাবলিকের কাছে ১০ টাকা কেজি চাল দেয়ার ওয়াদা ভোলাতে চেতনার বাণিজ্যে নেমেছেন। চালের বদলে চেতনা চিবিয়ে এখন দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হবে।

কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। হাসিনার বাপের আমলে চেতনার ডিব্বা সবচেয়ে বেশী টইটম্বুর ছিলো। তবুও বাঙ্গালী ভাতের বদলে চেতনা খেতে রাজী হয় নাই- ক্ষেপে গিয়ে তারা বরং উড্ডীন পতাকা আর মানচিত্র খেতে চেয়েছিলো। এই কালে হাসিনা তার ঘিলু বিহীন দ্বিপদীদের কাঁধে ভর করে কতদিন বাঙ্গালীদের ভাতের বদলে চেতনা খাওয়াইয়া অচেতন করে রাখতে পারবে! শেষে না বাঙ্গালী আবার বিছানো পতাকা খেতে চায়! বিশ্ব রেকর্ড সাইজের পতাকায়ও তাতে কুলাবে না। কারন চেতনাবাদী বুদ্ধিজীবিদের এতো ঘ্যানর ঘ্যানর, প্যানর প্যানর, ছাত্রলীগের রাম-দা, চাপাতী আর হাসিনার এতো নাকি কান্না সত্ত্বেও দেশে এখন মুক্তিযোদ্ধার চাইতে রাজাকারের সংখ্যা বেশী।

হিংসার দৌড় জিঘাংসা পর্যন্ত

by Fakaruddin Ahmed:

আমার মতোই অনেকেই আছেন, যারা কাদের মোল্লার নামই হয়ত শুনি নাই বা শুনলেও মনে রাখি নাই । আজকে তাদেরও পরিস্থিতির কারনে এই ব্যাক্তির নাম শুনতে হইছে, জানতে হইছে। চেতনার কেরামতিতে আরও কতকাল যে এই ব্যাক্তির নাম শুনতে হবে , আল্লাহ তায়ালা ভাল জানেন ।

এইতো সেদিন ঢাকা মানুষে মানুষে ভরে উঠল। পুরো মিরপুরে কয় ঘর লোক ছিল, আমি তো সেই ছোট থেকেই যাই। সেইখানে ২২-২৪ বছরের এক শিক্ষিত তরুণ অমন অস্থির দিন গুলাতে বলা নাই কয়া নাই, একেবারে সব চিনে ফেলবে, তারপর পাড়ার- গ্রামের- এলাকার সবচেয়ে বড় রংবাজ হয়ে উঠবে, তারপর সেই সব মানুষকে এমন কেয়ামত দেখায়া ছাড়বে ! বুঝি না কেমনে সম্ভব ! তামিল ছবির স্টোরি শুনতেছি না , তো।

আবার কেরানীগঞ্জ ! মিশন ইমপসিবল – ২ !

জামায়াত ইসলামির পলিটিকাল চেইন দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে যাওয়ার পর তৈরি হইছে এক ভয়াবহ সমস্যা। এই সমস্যা কেবল জামাতের না এইটা সবার সমস্যা । তৃনমূলের জামাতিদের কনটেঈন করা যাইতেছে না। এইটা যে একটা এক-কালিন সমস্যাই কেবল না এর ভবিষ্যৎ মুখি ডায়নামিক্স আছে ।

সমাধানের পথ , একটা হইতেছে – শান্তিপূর্ণ , মেধাবি সবার জন্য উইন-উইন  এবং দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রশু। এই পথ ধরে হেঁটেছে সব সফল জাতি। আর সেই পথ ধরে সাঊথ আফৃকায় গড়ে উঠে রেইনবো নেশন । একেই বলে নেশন বিল্ডিং।

সমাধানের পথ আরেকটা হচ্ছে- ক্লিনসিং -যেইটা আওয়ামি লীগ করতেছে। নির্মূল তাত্ত্বিকদের নির্মূল তত্ত্ব একজিকিউট করাই এমন  সমাধআনের পথ , সেই পটহের শেষ আছে কিনা কেউ জানি না, দেখছিও না , কিন্তু যে উন্মাদনা দেখছি তা ভয়ের।

হিংসা , অবিশ্বাসের , অশ্রদ্ধা , প্রবঞ্চনার, ফ্যসিজমের, ভুল ত্তত্বের আর তার বিপরীতে প্রতিরোধের ধারাবাহিকতা তৈরি হয়ে গেছে সমাজে ।
কেমন করে আগাব আগামির দিনগুলাতে সেই ভয় তো সবাই পাচ্ছি।
আর এই ক্লিন্সিং ডকট্রিন কাজ করে না , যেইটা ইসরাইলী(ফিলিস্থিনি) , হিন্দুস্থানি(কাস্মিরি), রাশান (চেচেন), চিন(উইঘ্র) উদাহরণ থেকে শিখে নিতে পারলে সবচে ভাল হয়।
কাদের মোল্লা, সাইদির মত লেসার , স্ট্যাটিক, ভুলে যাবার মত পলিটিকাল ফিগার দের কিভাবে এনলার্জ আর ডায়নামিজম দেয়া হইল , সেইটা সাধারণ মানুষ জানে , কিন্তু জাতির ঘাড়ে চেপে বসা অসাধারণ মানুষগুলা জানে না, বুঝবেও না। কারন  হিংসার দৌড় জিঘাংসা পর্যন্ত , সত্য আর সুন্দর পর্যন্ত পৌছায় না।
আমার আপনার নিজের চেতনার, রাগের, প্রতিশোধের না হয় বিজয় হবে
কিন্তু আমার পরেও আমি থাকব, আমাদের সন্তানেরা , ছোট ভাইরা থাকবে;
তাদেরও কি এক বৃত্তে আটকে থাকতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বর্ণনায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক

By শাফকাত রাব্বী অনীকঃ

কিছু দিনের মধ্যেই বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম হাস্যকর নির্বাচন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। আর ঠিক এরকম সময়ে, দেশের শহুরে মধ্যবিত্তদের ফোকাস সরিয়ে রাখতে নতুন করে চালু করা হয়েছে পাকিস্তান বিষয়ক বিতর্ক।

কাদের মোল্লা সাহেবের মৃত্যুর পরে, সম্পূর্ণ হোম-ওয়ার্ক বিহীন একটি সংসদীয় প্রস্তাবনা আনা হয়েছিল পাকিস্তানের পার্লামেন্টে। প্রস্তাবনাটির ভাষা, যুক্তি ও টাইমিং দেখে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে পাকিস্তানের কোন মেধা সম্পন্ন গোয়েন্দা-ফোয়েন্দা তো বটেই, চিকন বুদ্ধি সম্পন্ন কোন কূটনীতিকও মনে হয় আর বাংলাদেশে চাকরি করেন না।

শাহাবাগিরা পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আল্টিমেটাম দিয়েছিল। গুলি ও গুমে অভ্যস্থ পুলিশ বাহিনীর মৃদু লাঠি চার্জেই সেই আল্টিমেটাম আপাতত নাই হয়েছে।

গতকাল জনৈক শাহাবাগি জিজ্ঞেস করছিলেন, পাকিস্তান বিষয়ে আমার ধারণা কি। তাদের সাথে সম্পর্ক থাকবে কি থাকবে না। এবং আমি পাকিস্তানকে বাংলাদেশের বন্ধু ভাবি কিনা। আমি উত্তরে বলেছিলাম, যেহুতু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্র ক’মাস আগেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গালে চুমু খেয়েছিলেন, সেহুতু বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বন্ধু রাষ্ট্র। ফাজলামোপূর্ণ উত্তরটি শাহাবাগি ভদ্রলোকের পছন্দ হয়নি। ভাগ্যক্রমে, আজকে এক ছোট ভাই কিছু ডকুমেন্ট দেখালেন শেখ মুজিবের পাকিস্তান দর্শন সম্পর্কে। ভাবলাম এটা নিয়ে একটা লেখা দেয়া প্রয়োজন। সবাইকে দেখিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে দেশের স্বাধীনতার প্রধান আর্কিটেক্টের মাথার বুদ্ধি বর্তমানে স্বাধীনতার চেতনা বিক্রি করে খাওয়া ফেরিওয়ালাদের চাইতে কতটা বেশি ছিল।

BANGLADESH- Not Yet Shonar Bangla নামে একটা প্রতিবেদন ছাপা হয় ১৯৭৩ সালের ০১ জানুয়ারী বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে।

time 1974 1 Time 1974 2

প্রতিবেদনটিতে তৎকালীন বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়। তা হলো বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার না করা এবং কোন প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও ১৯৭২ সাল থেকেই পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। সিঙ্গাপুর বন্দরের মাধ্যমে গোপনে দেশের মানুষকে না জানিয়েই এই বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পাদন করা হত।

১৯৭৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী ওআইসি সম্মেলনের প্রস্তুতি চলা কালে, জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষনা দেন যে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে পারে শুধু একটা শর্তে। সেই শর্ত হলো যে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ বাংলাদেশ এনেছিল তার বিচারে বাংলাদেশ কোন পদক্ষেপ নিতে পারবে না। ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান, ইরান এবং তুরস্ক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, শেখ মুজিবুর রহমান ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেন।

পাকিস্তান থেকে ফেরার পথে বিমানবন্দরে সাংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে শেখ মুজিব কিছু তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেন। কথাগুলো নিচে ইংরেজিতে দেয়া হলো উইকিলিক্স থেকে। আমি বাংলা অনুবাদ করে দিলাম।

মার্কিন দলিলের সূত্রে জানা যায়, যখন মুজিবকে বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের কথা মনে করিয়ে দেয়া হয়, তখন মুজিব বলেছিলেন, ” আমি ঐ সব কিছু ভুলে যেতে চাই। আমি চাই আমার দেশের লোকেরাও সেই সব কথা ভুলে যাক। আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে। তুমি জানো যে, মানুষের স্মৃতিশক্তি সংক্ষিপ্ত।”

SheikhMujibon Pakistan

ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিয়ে মুজিব বলেন, “আমদের দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশকে ভালো প্রতিবেশির মতো থাকতে হবে। আমাদের সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে”।

জুলফিকার আলি ভুট্টোর ব্যাপারে শেখ মুজিব বলেন,  আমি ভুট্টোকে সাহায্য করতে চাই। উনি আমার পুরোন বন্ধু। মুজিব আরও বলেন, “আমি ভুট্টোর সততায় মুগ্ধ। আমি আপ্লূত হয়েছি পাকিস্তানের জনগণের ভালোবাসায়। হাজারে হাজার পাকিস্তানী রাস্তার দুই ধারে দাড়িয়ে ছিল। তারা আমাকে মুজিব বলে ডেকেছে। ছেলে-মেয়েরা আবেগ নিয়ে হাত নেড়েছে যখন তারা তাদের পরিচিত কুর্তা-পায়জামা পরা অবস্থায় আমাকে তাদের মাঝে পেয়েছে।”

বন্দি পাকিস্তানী ১৯৫ জন সেনার ব্যাপারে মুজিব বলেছিলেন, “এব্যাপারে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একত্রে সিদ্ধান্ত নেবে দিল্লি চুক্তি মোতাবেক।”

সোর্স ঃ (http://www.wikileaks.org/plusd/cables/1974LONDON02652_b.html)

FRIENDLY COMMENTS ON PAKISTAN FROM SHAIKH MUJIB
Date:1974 March 1, 17:06 (Friday) Canonical ID:1974LONDON02652_b

1. EXCLUSIVE INTERVIEW WITH SHAIKH MUJIBUR RAHMAN
PUBLISHED IN THE TIMES FEBRUARY 29, BY KULDIP NAYAR,
TAKES VERY FRIENDLY LINE TOWARDS BHUTTO AND PAKISTAN.

2. AMONG QUOTES ATTRIBUTED TO SHAIKH MUJIB ARE: “WE
ALL THREE COUNTRIES IN THE SUB-CONTINENT HAVE TO LIVE
LIKE GOOD NEIGHBORS AND MUST SOLVE OUR PROBLEMS THROUGH
PEACE”.

3. ALSO: “I AM IMPRESSED BY MR. BHUTTO’S SINCERITY.
I AM OVERWHELMED BY THE LOVE AND AFFECTION SHOWN BY THE
PEOPLE OF PAKISTAN. THOUSANDS OF THEM LINED THE
ROUTE FROM THE AIRPORT TO THE VENUE OF THE ISLAMIC
SUMMIT. THEY CALLED ME BY MY NAME, MUJIB. THEY —
UNCLASSIFIED

UNCLASSIFIED

PAGE 02 LONDON 02652 011712Z

BOYS AND GIRLS ALSO — LUSTILY CHEERED ME WHEN THEY
SAW THE FAMILIAR KURTA-PYJAMA CLAD FIGURE AMONG THEM.”

4. WHEN REMINDED OF THE ATROCITIES COMMITTED IN
BANGLADESH BY PAKISTAN, MUJIB IS REPORTED TO HAVE
SAID: “I WANT TO FORGET ALL THOSE. I WANT MY PEOPLE
TO FORGET THOSE. WE HAVE TO START AFRESH. YOU KNOW
THAT PEOPLE’S MEMORY IS SHORT.” REVERTING TO BHUTTO,
MUJIB SAID: “I WANT TO HELP HIM. HE IS AN OLD FRIEND.”

5. MUJIB REFUSED TO DISCUSS THE QUESTION OF KASHMIR.

6. ASKED HOW SOON BANGLADESH WOULD HAVE DIPLOMATIC
TIES WITH PAKISTAN, MUJIB SAID, “VERY SOON”. HE
PARRIED QUESTIONS ON HOW PAKISTAN’S RECOGNITION OF
BANGLADESH HAD COME ABOUT.

7. AS TO FUTURE OF 195 POW’S, MUJIB SAID DECISION ON
THEM WOULD BE TAKEN BY INDIA, PAKISTAN AND BANGLADESH
IN ACCOREANCE WITH DELHI AGREEMENT. HE INDICATED
BANGLADESH ALREADY IN TOUCH WITH DELHI TO DECIDE TIME
AND VENUE OF CONFERENCE WHICH, ACCORDING TO HIM, WILL
BE AT THE FOREIGN MINISTER LEVEL FIRST, “AND THEN
WE SHALL MEET”.

8. WHEN TOLD THAT THERE WAS GROWING ANTI-INDIAN
FEELING IN BANGLADESH, HE REPLIED: “SOME VESTED
INTERESTS AND FOREIGN POWERS” WERE OUT TO CREATE BAD
BLOOD BETWEEN THE TWO COUNTRIES. HE SAID INDIA HAS
NOT INTERFERED IN BANGLADESH AFFAIRS AND VICE-VERSA.

ANNENBERG

UNCLASSIFIED

NNN

কাদের মোল্লা, কসাই কাদের ও কিছু প্রশ্ন

3

by অগ্নি বীনা :

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বহুল আলোচিত বিষয় কাদের মোল্লার ফাঁসি। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো সংবেদনশীল একটি বিষয় এর সাথে জড়িত থাকায় আলোচনার ব্যপ্তি ছিল বিচার প্রক্রিয়া, রায়, প্রতিক্রিয়া হিসেবে শাহবাগের গণজাগরণ, আইন সংশোধন, রায় পরিবর্তন, এবং শেষপর্যন্ত ফাঁসি নিয়ে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফাঁসির মধ্য দিয়েই ঘটনার যবনিকাপাত ঘটেনি। উঠে এসেছে নতুন কিছু প্রশ্ন।

 কাদের মোল্লার বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মূলতঃ দুটি বিষয়ে –

  •  বিচার প্রক্রিয়ায় আপাতঃ অনিয়ম, অন্যায্যতা, বা আন্তর্জাতিক মান রক্ষায় ব্যর্থতা
  •  কাদের মোল্লার পরিচয় সংক্রান্ত জটিলতা

প্রথম ইস্যুটি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে বিস্তর। এর মধ্যে সাংবাদিক David Bergman এর ব্লগ http://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/ উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে প্রমাণে জটিলতার কারণে দ্বিতীয় ইস্যুটিতে আলোচনা কম হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অভিযুক্তের সংশ্লিষ্ট অপরাধে নিজেকে নির্দোষ দাবি করা যা প্রতীয়মান হয় জেল থেকে সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনিকে লেখা চিরকুট বা ফাঁসির পূর্বে স্ত্রীকে লেখা শেষ চিঠি থেকে। এ থেকে প্রশ্ন জাগে অভিযুক্ত কাদের মোল্লা এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কুখ্যাত মিরপুরের কসাই কাদের একই ব্যক্তি কিনা।

১/ জবানবন্দি

 আদালতে প্রদত্ত জবানবন্দি অনুযায়ী, ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামের মরহুম সানাউল্লা মোল্লার ছেলে আবদুল কাদের মোল্লা ১৯৪৮ সালের ২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে আমিরাবাদ ফজলুল হোক ইন্সটিটিউশন থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৬৬ সালে রাজেন্দ্র কলেজে বিএসসি প্রথম বর্ষে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন কাদের মোল্লা। তিনি শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। জবানবন্দি অনুসারে ১৯৭১ এ পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্সের শেষবর্ষের ছাত্র থাকাকালীন ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগীয় চেয়ারম্যান ডঃ ইন্নাস আলীর পরামর্শমতো  ১১ই মার্চ তিনি গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আমিরাবাদে ফিরে যান এবং ধলা মিয়া পীর সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় পান। পীর সাহেবের আনুকূল্যে তিনি তদস্থ চৌদ্দরশি বাজারে ব্যবসা করতেন পীর সাহেবের দোকানঘরে বসে। ঐ সময়ে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন এবং সদরপুর পুলিশ স্টেশনের চেয়ারম্যান শাহজাহান তালুকদারের সঙ্গে। জবানবন্দি অনুযায়ী স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের শাসনকালেই ১৯৭২ সালের শেষদিকে তিনি ঢাকা ফিরে আসেন, কিন্তু পড়াশোনায় দীর্ঘ বিচ্ছেদের কারণে পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করতে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় ১৯৭৪ সনে শহীদুল্লাহ হলে থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশনে ভর্তি হন এবং ১৯৭৫ এ ঐ বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন সহ ডিপ্লোমা শেষ করেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত উদয়ন স্কুলে শিক্ষকতাও করেন। ১৯৭৭ সালে একই ডিপার্টমেন্ট থেকে এডুকেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার্স শেষ করেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা রাইফেলস পাবলিক স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। ২০০৭ সালে মামলার আগ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দেশের কোথাও কোন মামলা বা সাধারণ ডায়েরি দাখিল করা হয়নি।

২/ সহপাঠীর বক্তব্য

 সম্প্রতি কাদের মোল্লার এক সহপাঠী ডঃ মোজাম্মেল খানের লিখিত একটি নিবন্ধ ইন্টারনেটে শেয়ার করা হচ্ছে যার মূল বক্তব্য হোল কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের আগেই ইসলামী ছাত্র সংঘের সাথে জড়িত ছিলেন, তা দেখানো। এ বক্তব্যটি অবশ্য কাদের মোল্লার জবানবন্দির সাথে সাংঘর্ষিক নয় যেহেতু তিনি নিজেও তা উল্লেখ করেছেন। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে লেখক বলতে পেরেছেন –

  • কাদের মোল্লা তার রাজেন্দ্র কলেজের ১৯৬৪-১৯৬৬ এইচএসসি ব্যাচের সহপাঠী ও হাউজমেট ছিলেন।
  • ১৯৬৬ সালে লেখকের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়া এবং কাদের মোল্লার ফরিদপুরেই থেকে যাবার পর অভিযুক্তের সাথে তাঁর ফের দেখা হয় ১৯৭৯ সালে – তাঁদের কথোপকথনে প্রতীয়মান হয় লেখক জয় বাংলা পন্থী এবং কাদের মোল্লা জিন্দাবাদ পন্থী ছিলেন।

বাকি সব আর্গুমেন্ট শোনা কথার ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং দুই-দুই এ চার মেলানো।

  • লেখক কাদের মোল্লার পরিবারকেই কোট করছেন যে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। লেখক ধরে নিয়েছেন ৭২-৭৫ সে আত্মগোপনে ছিল, কারণ দুই বছরের এমএসসি ডিগ্রীর জন্য ৮ বছর লাগতে পারে না। এ যুক্তিটি গ্রহণযোগ্য নয় কারণ ১৯৭৫ সালে কাদের মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ থেকে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন অর্জন করেন যা থেকে প্রতিভাত হয় তিনি অন্তত ১৯৭৪ শিক্ষাবর্ষে ((বা মুক্তিযুদ্ধের পর এবং ১৯৭৫ এর আগে অন্তত দুই বছর)) ঢাবিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।
  • লেখক ধরে নিয়েছেন যে রাজেন্দ্র কলেজে ১৯৬৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসির পর ঢাবিতে তিনি দুই বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি করেছেন যাতে এতো সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু উপরে প্রদত্ত তথ্য অনুসারে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে ১৯৬৯ সনে পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্সে ভর্তি হলেও, যুদ্ধের পর তিনি বিষয় পরিবর্তন করে ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৭৫ এ ডিপ্লোমা এবং ১৯৭৭ এ মাস্টার্স – দুটি ডিগ্রি সমাপ্ত করেন যা জবানবন্দির সময়ের সাথে মিলে যায়। ধরে নেয়া যেতে পারে বক্তব্যের সমর্থনে প্রাসঙ্গিক সকল সার্টিফিকেট তিনি আদালতে সাব্যস্ত করেছেন – অন্যথায় তাঁর যুক্তি উড়িয়ে দেয়া প্রসিকিউশনের জন্য খুবই সহজ ছিল।
  • লেখকের উপস্থাপনা কাদের মোল্লার রাজনৈতিক মতাদর্শের দিকে ইঙ্গিত করলেও এমন কোন তথ্য প্রদান করে না যা ফরিদপুরের কাদের মোল্লাকে ঢাকার মিরপুরে অপরাধ সংঘটনের স্থলে প্রতিষ্ঠিত করে।

৩। ৭৫ এর পূর্বে না পরে?

  • ১৯৭৫ সালে কাদের মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ থেকে তাঁর পূর্ববর্তী বিষয় (পদার্থবিজ্ঞান) হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়ে (শিক্ষা) ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন অর্জন করেন যা থেকে প্রমাণ হয় তিনি অন্তত ১৯৭৪ শিক্ষাবর্ষে (বা মুক্তিযুদ্ধের পর এবং ১৯৭৫ এর আগে অন্তত দুই বছর) ঢাবিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।
  • অভিযুক্ত কাদের মোল্লা ১৯৭৪-৭৫ সনে খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যস্থিত উদয়ন বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন বলে দাবী করেছেন। এর বিপরীতে উদয়ন বিদ্যালয় কোন অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট দিয়েছেন বলে জানা যায় নি যা তাঁর দাবীকে অসত্য প্রমাণ করতে পারত।
  • এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে কাদের মোল্লা ৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর নয়, বরং তার আগেই ঢাকায় পুনর্বাসিত হন এবং শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় বিচরণ করেন।
  • এখানে দ্রষ্টব্য যে দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ ১৯৭২ এর অধীনে ৩৭০০০+ লোককে আটক করা হয়। সত্যাসত্য, ব্যক্তিগত শত্রুতা চরিতার্থ সহ মামলা/অভিযোগ ছিল আরও অনেক বেশি। সেখানে ‘মিরপুরের কসাই’ নামে কুখ্যাত এ লোকটি স্বাধীনতার পর কোনও মামলা ছাড়াই সবার নাকের ডগার উপর দিয়ে খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি করল? এ নিয়ে কোন মামলা ছাড়াই লোকসমক্ষে ঘুরে বেড়াল ৪০ বছর? এ ব্যাপারটি এতই অবিশ্বাস্য যে  নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা এই ভিডিওটিতে – কাদের মোল্লা কসাই কাদের হলে যুদ্ধের পর কিভাবে ঢাবিতে পড়ে?

কাদের মোল্লা পাকিস্তানপন্থী হয়তো সে ছিল, তবে প্রশ্ন জাগে এই কাদের মোল্লাই কুখ্যাত কসাই কাদের কিনা যার অপরাধের দায়ভার নিয়ে এ লোকটিকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।

 মামার বক্তব্য 

প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন শহীদুল হক মামা। ষাটের দশকে মিরপুরের বাসিন্দা হিসেবে তিনি ঘটনা চলাকালীন সময়ে মিরপুরে কাদের মোল্লার উপস্থিতি প্রমাণে একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। একজন সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিভিন্ন সময়ে তার প্রদত্ত বক্তব্য ও সাক্ষ্যে  কিছু অসঙ্গতি দেখা যায় –

  • আদালতে প্রদত্ত সাক্ষ্যে তিনি কালানুক্রমিক ঘটনা বর্ণনা করার সময় প্রথম মিরপুরে কাদের মোল্লার নাম ও উপস্থিতি উল্লেখ করেন ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন চলার সময়কালে –

Prosecutor: State about the movement of 1966.

Witness: There was a movement in 1966 for the demand of 6 items. I participated in that movement. That movement was Bangalies’ demand for life.

Defense Counsel (Ekramul Haque): It seems that, the prosecutor friend is deriving information by licking the witness.

Prosecutor: What was the background of this movement?

Witness: At first the movement demanded 6 items, then the students’ movement demanded 11 items – the main sight behind both these movements were the confinement of the hero of history under the conspiracy case of Agartala.

Defense Counsel (Ekramul Haque): My Lord, I am sorry. My learned friend is thinking that I understand nothing. His way of questioning is not correct.

Prosecution Witness (Sayed Shahidul Haque Mama) told angrily, you have come as the agent of Rajakars of 1971, but I have come here in response of my conscience.

Prosecutor (Mohammad Ali) cooled down and told to say his statement.

Witness: By keeping 6 items’ and 11 items’ in front, we participated in movements. We went in front of Beauty Cinema Hall of Mirpur with procession. Then the leader of Muslim League S.A Khaleque and the sun of Monem Khan Md. Khoshru attacked and fired at the procession with their team.

Prosecutor: Then, what happened?

Witness: Then Quader Mollah of Jamaat-e-Islami, Dr. T. Ali, Hakka Gunda, Akhter Gunda, Nehal, Hasib Hashmi, Abbas Chairmen, Kana Hafez along with their followers invited Muslim League leader Khan Abdul Kaiyum who was known as Tiger of Border to defend 6 items’ and 11 items’ movement.

পরবর্তীতে, তিনি এই একই নামসমূহ মিরপুর এলাকার অন্যান্য পাকিস্থানপন্থি বিভিন্ন ঘটনার সাথে উল্লেখ করতে থাকেন। এ থেকে অনুমান করা যায় যে জনৈক কাদের মোল্লা অন্তত ১৯৬৬ সাল বা তারও আগ থেকে মিরপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। অন্যদিকে, অভিযুক্তের দাবি অনুসারে (এবং ধরে নেয়া যায় বক্তব্যের সমর্থনে অফিসিয়াল সার্টিফিকেট সরবরাহ করা হয়েছে) ১৯৬৬ সালে তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৬৮ সালে বিএসসি পাশ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। শুধু তাই নয়, কাদের মোল্লার  বিরোধী শিবির কর্তৃক বহুল প্রচারিত উপরোক্ত কাদের মোল্লার সহপাঠী মোজাম্মেল খানের ভাষ্য এই বিবরণটিকেই সমর্থন দেয় যেখানে তিনি দাবী করেছেন ১৯৬৪-১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে এইচএসসি পড়াকালীন সময়ে কাদের মোল্লার হাউজমেট ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি প্রকৌশল পড়ার জন্য ঢাকায় চলে আসেন, কিন্তু কাদের মোল্লা ঐ একই কলেজে বিএসসি পড়তে রয়ে যান।

এ থেকে প্রশ্ন জাগে, কোন কাদের মোল্লা তবে মামার ভাষ্য অনুযায়ী ১৯৬৬ সালে মিরপুরে বিহারীদের সাথে পাকিস্থানপন্থি কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল? কিভাবে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের একজন নিয়মিত ছাত্র পড়া চলাকালীন সময়ে নিয়মিত ঢাকার মিরপুরে বিভিন্ন ঘটনায় অংশ নেয়?

  • ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে মিরপুরে বাঙ্গালি ও অবাঙ্গালি বিহারীদের মধ্যে চলা সংঘর্ষ ও নির্মম ঘটনাবলী নিয়ে তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টারি হচ্ছে Mirpur, The Last Frontier  

Mirpur, The Last Frontier, Part 1

Mirpur, The Last Frontier, Part 2

মিরপুরের বিভিন্ন ঘটনাবলীর চাক্ষুষ সাক্ষী হিসেবে শহীদুল হক মামা এবং কবি কাজি রোজি এই প্রামাণ্যচিত্রে বক্তব্য দেন। সমস্যা হোল, বিশেষভাবে মিরপুরের ঘটনাবলীর উপর নির্মিত দুই পর্বের এ প্রামাণ্যচিত্রের কোথাও শহীদুল হক মামা এবং কাজি রোজি কাদের মোল্লার নামই উল্লেখ করেননি, বরং কবি মেহেরুন্নেসা হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনায় বিশেষভাবে কেবল বিহারীদের কথা উল্লেখ করেছেন। শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার উপর বিশেষভাবে লিখিত একটি বইতেও কবি কাজি রোজি কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি। এ অসঙ্গতি আদালতের গোচরীভূত করা সত্ত্বেও আদালত তা আমলে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। মিরপুরের শুধু একটি ঘটনায় ৩৪৪ জনের গণহত্যার মতো অভিযোগ যে লোকটির বিরুদ্ধে, তার নাম মিরপুরের ঘটনাবলীর উপর নির্মিত এতো বিশদ প্রামাণ্যচিত্রের কোথাও উল্লিখিত না হওয়া বিচিত্র নয় কি? আরও অদ্ভুত বিষয় হল, প্রামাণ্যচিত্রটিতে শহীদুল হক মামা বিশেষভাবে মিরপুরের কসাইখানার কথা উল্লেখ করেছেন যেখানে বিহারী কসাইরা বাঙ্গালীদের নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে। এ থেকে প্রশ্ন জাগে ‘মিরপুরের কসাই’ নামে কুখ্যাত ব্যক্তিটি কি আক্ষরিক অর্থেই একজন ‘কসাই’ ছিল, যে সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে?

৫/ কসাই কাদের?

উপরোল্লিখিত ঘটনার বিবরণ এবং সময়লিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাদের মোল্লার নয়, বরং সেই সময়ে মিরপুরের বাসিন্দা জনৈক কসাই কাদেরের উপস্থিতি সম্পর্কিত থিওরিকেই বরং সমর্থন করে বেশি। কসাই কাদের বলে আসলেই কি কেউ ছিল? এ সম্পর্কে নেট সার্চ করে যা পাওয়া যায়, তা হোল – 

  • জনৈক মোঃ নূরুল আমিন এর লেখা নিবন্ধ যাতে তিনি উল্লেখ করেছেন

…আমি ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রথমত ছাত্র হিসেবে পরে শিক্ষক সাংবাদিক হিসেবে ঢাকার রাজনৈতিক অঙ্গনের সাথে জড়িত ছিলাম। কিন্তু কাদের মোল্লা নামের কোনও ব্যক্তিকে আমি জামায়াত বা ছাত্রসংঘের হয়ে কাজ করতে দেখিনি। মিরপুরে কসাই কাদের নামে একজন কাদের মোল্লা ছিলেন তার নাম আমরা শুনেছি। তিনি পেশায় কসাই ছিলেন এবং মানুষ হত্যায়ও পারদর্শী ছিলেন। তার একভাই বহুদিন পর্যন্ত কাওরান বাজারে গোশত বিক্রি করতো। তার কাছে শুনেছি কসাই কাদের তথা মিরপুরের কাদের মোল্লাকে স্বাধীনতার পর হত্যা করা হয়েছে। আগেই বলেছি জামায়াতের কাদের মোল্লাকে ৭১ সালে আমি কখনো দেখিনি। তার বাড়ি ফরিদপুর; তিনি কখনো মিরপুরের বাসিন্দা ছিলেন না। … যেহেতু জামায়াতের কাদের মোল্লা কখনো মিরপুরে ছিলেন না, কোনও অপরাধ করেননি সেহেতু স্বাধীনতার পর থেকে ৪০ বছরের মধ্যে তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনও জিডি হয়নি, দালাল আইনে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়নি।

  • Somewhereinblog এ ভ্রমনবিলাসী বালকের লেখা

এটিএন বাংলা কসাই কাদের মোল্লার অপরাধ খুঁজতে গিয়ে আমাদের ঢাকা মিরপুর আসনের আসলামুল হকের পিতার নাম এসেছিল।কিন্তু মুফতে তার নাম গাপ করে ফেলা হয়েছে । এখন কেরানীগঞ্জে গেলে কিছু জানতে পারবেন কিনা জানি না । কিন্তু এটিএন বাংলায় এর তথ্য প্রমাণ সংবলিত ভিডিও গাপ না করে দিলে পেতে পারেন

  • শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা আর কসাই কাদের কি এক? ছবি কি বলে? তথ্যসূত্র এখানে

উপরের ছবিটি ট্রাইব্যুনালে সংরক্ষিত সরকার পক্ষের কৌসুলিদের জমা দেয়া কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মহা গুরুত্বপূর্ন একটি ডকুমেন্ট। ছবিতে জেনারেল এ এ কে নিয়াজীর পিছনে দাঁড়ানো মিরপুরের বিহারী ‘কসাই কাদেরকে’ আব্দুল কাদের মোল্লা বলে চালানো হয়েছে।নিচের ছবিতে ৯২ সালের রোকন সম্মেলনে তৎকালীন আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের পাশে দাঁড়ানো আব্দুল কাদের মোল্লা।

বিশ্লেষণঃ ১৯৭১ সালে-

নিয়াজীঃ উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী নিয়াজীর বয়স ছিল ৫৭ বছর। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি।

কাদের মোল্লাঃ বিভিন্ন সূত্রের তথ্যানুযায়ী কাদের মোল্লার বয়স ছিল ২২/২৩ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি।

কসাই কাদেরঃ অসমর্থিত সূত্র এবং বিশ্লেষণ অনুযায়ী কসাই কাদেরের বয়স ছিল ৪৮ বছর। পাশে দাঁড়ানো নিয়াজীর সাথে তুলনা করলে বিহারী কসাই কাদেরের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি।

প্রশ্ন-১: ৯২ সালে নিচের ছবিতে অধ্যাপক গোলাম আযমের পাশে দাঁড়ানো ৪৩/৪৪ বছর বয়স্ক কাদের মোল্লাকে যদি ২১ বছর আগে কল্পনা করা হয় তাহলে কি নিয়াজীর পাশে দাঁড়ানো ৪৮ বছর বয়স্ক ‘কসাই কাদেরের’ মতো মনে হবে?

প্রশ্ন-২: হিসাব অনুযায়ী নিয়াজীর চেয়ে প্রায় পৌনে ১ ফুট কম উচ্চতার কাদের মোল্লাকে নিয়াজীর পাশে দাড় করালে তাকে কি (কসাই কাদেরের মতো) প্রায় নিয়াজী বরাবর মনে হওয়ার কথা?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি বীরউত্তম, শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী তার এক কলামে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে স্যাটায়ার করে লিখেন-

“পিতা, কাদের মোল্লাকে নিয়ে দেশ এখন উত্তাল, পুরা দেশে এক নাম- কাদের মোল্লা! তার ফাঁসির দাবী চলছে। কিন্তু পিতা তুমি হয়তো এই কাদের মোল্লাকে চিনোনা, কারণ আমাদের সময়ে যাদের যাদের বিচারের লিষ্ট আমরা বানিয়েছিলাম তাতে এই কাদের মোল্লা ছিলোনা। তুমি কীভাবে চিনবে, আমরাই তো কেউ চিনতাম না।”

৬/ সাক্ষী মোমেনা

যে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যে কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হয়, তাঁর তিনটি ভিন্ন সময়ে একই ঘটনার তিনটি ভিন্ন বিবরণ পাওয়া যায় যা পরস্পরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।  ২০০৭ এবং ২০১০ সালে দেয়া দুটি ভিন্ন বক্তব্যে তিনি অপরাধের জন্য কেবল বিহারী এবং পাক সেনাদের দায়ী করেছেন এবং কাদের মোল্লা বা অন্য কোন বাঙ্গালী এর সাথে জড়িত থাকার কথা বলেননি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রথম বক্তব্যে তিনি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন না বরং শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন বলে উল্লেখ করেন। কেবলমাত্র তৃতীয় দফায় ক্যামেরা ট্রায়ালে মুখ ঢাকা অবস্থায় যে মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য নেয়া হয়, তাতে তিনি কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেন ও নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবী করেন। এ অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য দাতার সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে ফাঁসির রায় দেয়া নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। তাঁর পূর্ববর্তী বিবরণ ‘সাক্ষ্য’ ছিল, না ‘জবানবন্দি’ ছিল, না ‘বক্তব্য’ ছিল, তা নিয়ে আইনের ত্যানা পেঁচিয়ে পাতার পর পাতা ভর্তি করে ফেলা এবং তার ভিত্তিতে আদালতে তাঁর পূর্ববর্তী সাংঘর্ষিক বক্তব্য তুলে ধরার পরেও আদালত কর্তৃক তা আমলেই না নেয়ার সিদ্ধান্তকে কেউ কেউ জাস্টিফাই করার চেষ্টা করতেই পারেন, তবে জনসাধারন্যে স্বাভাবিকভাবে এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় –      

 ৭/ ভি চিহ্ন 

অভিযুক্ত কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় পাবার পর ভি চিহ্ন দেখানোকে কেউ কেউ অন্যায়ের প্রতি তাঁর সমর্থনসূচক ভঙ্গি হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। এ ব্যাখ্যা যে ভুল, অভিযুক্তের স্ত্রীকে লেখা শেষ চিঠিই তার প্রমাণ যেখানে তিনি অভিযোগসমূহের দায়ভার সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন এবং তার প্রতি আদালতের রায়কে প্রতিশোধমূলক ও অন্যায় বলে উপস্থাপন করে তাঁর পরিণতিকে মিসরীয় ধর্মীয় নেতা সাইয়্যেদ কুতুবের জালিমের হাতে শহীদি মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন – সত্য এই যে, কেবল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় পাবার পর নয়, বরং ফাঁসির রায় পাবার পর, এমনকি ফাঁসির আগে তাঁর স্ত্রী তাঁর সাথে শেষ দেখা করে ফেরার পথেও ভি চিহ্ন দেখিয়েছেন। কাদের মোল্লা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে উত্থাপিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং যে অপরাধ তিনি করেননি তার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতেও অস্বীকার করেছেন। ভয় ও অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করাকে তিনি তাঁর নৈতিক বিজয় হিসেবেই দেখেছেন বলে মনে হয়।

৮/ পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া 

১৯৭১ এ পাকিস্তানকে সমর্থন করার কারণেই জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, এ মর্মে পাকিস্তানের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের বক্তব্যকে অনেকে কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে নিয়েছেন। এ যুক্তি হাস্যকর। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির বিষয়টি ঠিক এভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে, তাই এ বক্তব্য তার প্রতিক্রিয়া হওয়াই স্বাভাবিক। মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পর কাদের মোল্লাই যে মিরপুরের কসাই কাদের, তা প্রমাণ করতে প্রসিকিউশনের বাঘা বাঘা উকিলদের ঘাম ছুটে গেল, আর কোথাকার কোন ইমরান খান, যিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজনীতির ধারেকাছেও ছিলেন না, যিনি কাদের মোল্লাকে কখনও দেখেছেন বলেও জানা যায় না,  তাঁর এক কথাতেই প্রমাণ হয়ে গেল কাদের মোল্লাই ছিলেন মিরপুরের কসাই?

৯/হাতের লেখার ভিন্নতা

সম্প্রতি সাবেক এমপি রনিকে লেখা কাদের মোল্লার চিরকুট এবং স্ত্রীকে লেখা শেষ চিঠির হাতের লেখায় ভিন্নতা তুলে ধরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিষয়টি যদিও আদালতে ধর্তব্য ছিল না, তবে একটি বিষয় না বললেই নয়, এমপি রনির নিজস্ব সংবাদপত্রে প্রথম প্রকাশিত খবরে এ জাতীয় কোন চিরকুটের ছবি দেয়া হয়নি এবং এখনও নেই। বরং সংবাদটি প্রকাশিত হবার পর বহু রকম চিরকুটের ছবিই ইন্টারনেটে তুলে দেয়া হয় যার একটি নিচে দেয়া হোল। নিজ নামে কোন চিরকুটের ছবি প্রকাশ না করা ছাড়া এর পক্ষে-বিপক্ষে রনির কোন বক্তব্য চোখে পড়েনি।

১০। পরিশেষ 

সাম্প্রতিককালে ফাঁসিপ্রাপ্ত কাদের মোল্লাই ‘মিরপুরের কসাই কাদের’ কিনা, এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই।  এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কাদের মোল্লার বিরোধী পক্ষ সচরাচর বলে থাকেন, কাদের মোল্লা যদি ‘মিরপুরের কসাই কাদের’ না হবেন, তবে তাঁর কৌঁসুলিদেরই প্রমাণ করার দায়িত্ব ছিল আসল কাদের মোল্লা কে ছিল, কোথায় গেল, ইত্যাদি। উপরে উল্লিখিত তত্ত্বসমূহ বাদ দিলেও এ যুক্তির অসারত্ব প্রমাণে বলা চলে – burden of proof lies with the accuser, not the defendant. ফরিদপুরের কাদের মোল্লা তাঁর ফরিদপুর কেন্দ্রিক জীবন বৃত্তান্ত এবং ঘটনা চলাকালীন সময়ে ফরিদপুরের সদরপুরে তাঁর উপস্থিতি প্রমাণে একাধিক অন্যত্রস্থিতি (alibi) সাক্ষী উপস্থিত করেছেন প্রসিকিউশন যাদের বক্তব্য মিথ্যা প্রতীয়মান করতে পারেননি। অভিযুক্তের পক্ষ থেকে এটুকু করাই যথেষ্ট। সত্য এই যে, অভিযুক্তকে কেবল পাঁচজন alibi  সাক্ষীরই অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এর বাইরেও অভিযুক্ত একাধিক বরেণ্য ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন যাদের উপস্থিত করেও প্রসিকিউশন অভিযুক্তের alibi এবং ভাষ্য মিথ্যা প্রমাণ করতে পারতেন। এ বিষয়ে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি, যার জন্মস্থান আলোচিত ফরিদপুরের  সদরপুরে, তিনি “কাদের মোল্লা বনাম কসাই কাদের” শীর্ষকনিবন্ধে লিখেছেন

কাদের মোল্লা উল্লেখ করেছেন, তিনি সদরপুরে আরও ৩০-৩৫ জনের একদল যুবককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন! কি ভয়াবহ বক্তব্য। প্রসিকিউশনের উচিত ছিল যথাযথ যুক্তিপ্রমাণ উত্থাপন করে এ বক্তব্যটিকে মিথ্যা প্রমাণ করা। কাদের মোল্লা বলেছেন, যুদ্ধকালীন পুরোটা সময় তিনি পীর সাহেবের বাড়িতে ছিলেন। তার টাকা দিয়ে তিনি চৌদ্দরশি বা সাড়ে সাতরশি বাজারে ব্যবসা করতেন পীর সাহেবের দোকানঘরে বসে। চৌদ্দরশি বাজার ফরিদপুর জেলার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বাজার। স্বাধীনতার সময়ও এই বাজার বসত প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার। কম করে হলেও ৫০ হাজার লোকের আগমন ঘটত হাটের দিনে। পীর সাহেবের দোকানটি ছিল সবচেয়ে বড় এবং বাজারের একমাত্র দ্বিতল টিনের ঘর। পীর সাহেবের মেজ ছেলে রহিচ ব্যবসা-বাণিজ্য দেখতেন। পরবর্তীতে তিনি ডাকাতের গুলিতে মারা যান। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদের মোল্লা যদি ওই বাজারে ব্যবসা করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে অন্তত এক লাখ লোককে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যাবে। আরও একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যেতে পারে। সাপ্তাহিক বিচিত্রার এককালীন চিফ রিপোর্টার বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী জাওয়াদ মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময়ে চৌদ্দরশি বাজারে ব্যবসা করতেন। কাজী জাওয়াদ বিচিত্রা ছেড়ে লন্ডনে বিবিসি বাংলা বিভাগে চাকরি করতেন এবং এখন তিনি বিলাত প্রবাসী। তাকেও সাক্ষী হিসেবে আনা যেত। কাদের মোল্লা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা-উত্তরকালে তিনি রাইফেলস্ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যাপনা এবং স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে বাইশরশি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তার ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন উঁচুপদে এমনকি সচিব পদমর্যাদায় চাকরি করছেন। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন আরও অনেক নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারতেন। তিনি ঢাকা প্রেস ক্লাবের সদস্য_ দু-দুইবার নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন। কাজেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এমন একাধিক জাতীয় ও বরেণ্য সাংবাদিককে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা যেত।

alibi সাক্ষীদের বক্তব্যের বিপরীতে ফরিদপুরের কাদের মোল্লাই যে ৭১ এর কুখ্যাত “মিরপুরের কসাই” – এ অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করার দায়িত্ব ছিল প্রসিকিঊশনের, ফরিদপুরের কাদের মোল্লার নয়। উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন প্রশ্ন ও তথ্য সম্পর্কিত অসঙ্গতিই প্রমাণ করে কাদের মোল্লার আইডেন্টিটি এবং অপরাধ সংঘটন স্থলে তাঁর উপস্থিতি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে প্রসিকিঊশন ব্যর্থ হয়েছেন। কাদের মোল্লা ও মিরপুরের কসাই কাদেরের পরিচয় নিয়ে প্রশ্নের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে যার কিয়দংশ এখানে তুলে ধরা হয়েছে। প্রকৃত সত্য কোনটি তা আল্লাহই ভাল জানেন। আমাদের জন্যে তাঁর পথ-নির্দেশনা কেবল এটুকুই –

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর, এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত।”  – আল মায়িদাহ, ৫:৮

“O ye who believe! Stand out firmly for Allah, as witnesses to fair dealing, and let not the hatred of others make you swerve to wrong and depart from justice. Be just: that is next to piety: and fear Allah. For Allah is well-acquainted with all that ye do.” – Al Mayidah, 5:8

১১/ এক নজরে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

তথ্যসূত্র:

  1. http://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/
  2. http://blog.priyo.com/golam-maula-rony/41154.html
  3. http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/12/18/228822#.UrEe-mp8Opo
  4. http://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/2013/02/15-nov-2012-mollah-1st-defense-witness.html
  5. http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2013-09-22&ni=149559
  6. http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B2_%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%A8_(%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7_%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B2)_%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6_%E0%A7%A7%E0%A7%AF%E0%A7%AD%E0%A7%A8
  7. http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=38384
  8. http://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/2012/07/10-jul-molla-1st-witness-testimony.html
  9. http://www.youtube.com/watch?v=0g-JWMQD1BU
  10. http://www.youtube.com/watch?v=VcoXGiKNU7o
  11. http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=127976
  12. http://www.somewhereinblog.net/blog/qamark67/29767717
  13. http://chairmanbd.blogspot.com/2013/12/blog-post_6406.html
  14. http://webcache.googleusercontent.com/search?q=cache:Mij688HzN-gJ:www.somewhereinblog.net/blog/hiravisa/29769330+&cd=2&hl=en&ct=clnk&gl=us
  15. http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B2_%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%A8_(%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7_%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B2)_%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6_%E0%A7%A7%E0%A7%AF%E0%A7%AD%E0%A7%A8

A Time to Love and a Time to Die- 1 – A Note on Neo- Nazi Propaganda Machine of AL

7

by M Chowdhuri

“Be careful of what you say” – is the common theme of all advises I have received from friends and families in my recent visit to Dhaka. Deserted streets of the capital, news of death and there was fear in the air; I could not help but feeling like the Erich Maria Remarque character Ernst Graeber in Nazi Germany. Since I don’t have any delusion about soldiers of any war, that “Graeber Syndrome” passed away soon enough. However, I could not stop wondering if what I am feeling and seeing is a Deja Vu from someone living in Berlin during the rise of Nazis.

This uneasy feeling kept growing with every passing day as I continue to witness how the government is controlling the media (social and otherwise), manipulating the nation with effective use of propaganda and amongst all these, the regime is steadily working towards what it wants with. And it is working to an extent.  The regime’s ultra nationalist armies ( “GonoJagoron Moncho” and all) playing their parts with organizing  colourful rallies, gathering, protests and actions keeps reminding me of the SA of the German Nazis, their elite intelligentsia with all its extreme dedication for the cause reminds me of the Ahnenerbe if the Nazis.

Last few weeks our national headlines reported, death of 100+ people in a time span of little over 3 weeks, various cities being “occupied” by the Oppositions ( as if we are in a middle of a war), questionable execution of a political personality  and the law enforcement agencies preparing for assaults (and then the assault) in the “occupied territory” with the help of Chatra League, Awami Leagues student wing. During the same period, the regime also “re-elected” themselves by gaining majority seats in the parliament in a “voteless” election.

 clip_image002[2]

However, the regime did attempt diversions to everything above with staging events like 1) creation of the largest national flag, 2) National Anthem sing-off with 200 thousand voices etc.  Apparently the nation “came together” as “one” and celebrated the “days of days” with pride. I asked one of my friends, if he felt in any shame in celebrating a victory that failed to establish justice and peace in the land if there was a pang of indignity in celebration when the nation is clearly in dismay; with pride he told me that I did not know what I was talking about and if I were there ( in the flag making event), I too would be “mesmerized” by the “unity of the nation”.

And that gave me clarity; The rallies, the mass gathering and celebrations has the power to create a sense of belongingness. And the current regime has been using this as a propaganda weapon for at least a year now. It all makes sense, this is why when an “issue” dies out, the so called GonoJagoron Moncho need to find another “issue” to keep ball rolling.

 I once read a confession of a Nazi (Hans Grimdt) I read once, it goes like:

“It was my first time at a rally in 1935.  …..The sight of tens of thousands people standing shoulder to shoulder with each other shouting Heil Hitler took my breath away. From that moment on, I love the Nazis”

 clip_image004[2]

I know a number of people (who were not used to be pro-Awami League) blown away by the calls of “Ditiyo Muktijuddho” describing their experience of the ” GonoJagoron ” festivities using similar words- the similarity of the experience is frightening .

Hitler and Goebbles operated in an all encompassing propaganda machine which included press (controlled), art, music, rallies, posters, radio, schooling and parades etc.  A careful consideration of the propaganda machine of the current regime in Bangladesh will make you wonder if a modernized and more aggressive propaganda machine is in play. The greatest display of the neo-fascist mentality of the Bangladesh’s Awami regime is the example they made out of “Amar Desh” editor Mahmudur Rahman and other media (Diganta TV, Islamic TV), which is not very different from the strategy adopted by Nazi regime in Germany.  I was particularly baffled by the ban on the Islamic TV- one of my friend ( who is a virtual spoke person of the GonoJagoron Moncho) explained to me that the Islamic TV (the fundamentalist Islamic people) promotes ideas that are “un bengal”. I ignored this as a personal view initially, but I was convinced when the Awami Intelligentsia decided to propagate the same ideas in national TV. This ultra-nationalist tactics is no different than Nazi tactics of labeling opposing ideas  as “un-German” ( in a famous move, Joseph Goebbls disrupted  the premier of the movie All Quiet on the Western Front on December  5, 1931 and later banned the movie as un-German).

And the Awami propaganda machine is somewhat successful in creating a group of people who, blinded by the Awami dogma are trying to fighting a battle which is long over. This same group of people stands by the regime supporting the massacre of Shapla Chottor in the name of progressiveness, shows absolute zero reactions to the arrests of fellow online activists in the name of peace  and forgets to utter a single word of protest when the regime “re-elects”  itself in a voteless election. This groups labels anyone against the doctrine  as “enemy of the state” ( Razakar, Paki etc. etc.)  with such conviction that renowned freedom fighters like Kader Siddiqi is not even spared. All in the name of democracy and liberation. What Awami propaganda machine does for the regime is exactly what Hitler dreamt his own propaganda machine to do:

“Propaganda tries to force a doctrine on the whole people… Propaganda works on the general public from the standpoint of an idea and makes them ripe for the victory of this idea.”

After Kader Mollas execution, I asked a friend if he was convinced of his guilt. His answer was,

“No, I am not. The excuse of justice should not stop us from eradicating the Razakars from Bangladesh ” .

Frightfully close to Hermann Göring declared on March 3rd, 1933:

“I don’t have to worry about justice; my mission is only to destroy and exterminate, nothing more!”