ভূমি-দেশ-রা​ষ্ট্র

by Mohsen Alam

সময়টা যদি সাতচল্লিশের পর কোনো একদিন হয়, তাহলে চাটগাঁ অথবা মাদারীপুরের কৃষক চাষ করতেছিল পাকিস্থানের পূর্ব-বাংলাতে। আচ্ছা সেদিন কি কোনো ‘পাকিস্থানী বাঙালি’ই একটা নতুন দেশ-পতাকার জন্য গর্ববোধ করে নাই? মনে হয়, করেছিল। এখন অস্বীকার করলে কিচ্ছু সমস্যা নাই, তবে করেছিল মনে হয়। হ্যাঁ, বাংলার খন্ডন নিয়ে অনেকের বেদনা ছিল তা সত্য, তবে স্বাধীন হওয়ার আনন্দও কম মানুষের ছিল বলে মনে হয়না। পয়ষট্টির যুদ্ধে আনন্দের শরীকও কম ছিলনা বলে জানি। কিন্তু এইসব আনন্দ-উল্লাস কখনো ধ্রুব বিষয় না। ধ্রুব হল মুক্তির ব্যাপারটা। আনন্দ থাক আর না থাক, মুক্তির চাহিদা ফুরায় না কখনো। এই চাহিদাটার স্বরূপ কেমন? এই চাহিদার বলে বলীয়ান হয়ে কৃষক যে ব্রিটিশ শাসিত ভূমিতে চাষ দিত সেই ভূমি পাকিস্থান শাসিত হয়। এই চাহিদার জন্যেই নয়া পতাকা নিয়ে তৃপ্ত হতে হয়। কিন্তু এই যে আনন্দের চেয়ে মুক্তি বড়, আর মুক্তির জন্য দুঃখ সহ্যে লজ্জা থাকেনা, তখন সেই চাষকৃত ভূমির নয়া নাম দরকার হয়। নয়া নামের আড়ালে নয়া শাসনতন্ত্রের অধীনের শাসিত হয়। শাসনতন্তের শাসন আর শাসিতের শোষিত হওয়ার মাত্রার যুগল যখন বড় বেশী উদ্দাম হয়ে যায়, তখন সেই ভূমি আনচান করে উঠে। চাষ দিতে যাওয়া কৃষকেরা সেই আনচান টের পেয়ে যায়। এই টের পাওয়া যাওয়ার ঘটনাটা সোজা-সরল না, কষ্ট আছে। এই কষ্টের বিনিময়-মূল্য হিসেবে মনে হয় আরেকটা নয়া পতাকা লাগে, নয়া নিঃশ্বাস লাগে। সেই ভূমি কিন্তু একই। এই ভূমির নাম-মালিকানা পরিবর্তন কখন কখন দরকার হয়ে পড়ে তা গুরুত্বপূর্ন। আনন্দ কখন নিঃশেষ হয়ে যায়, সেই ক্ষনটা বুঝার জন্য চাষ দিতে হয়, চাষ দিতে হয় হাজার বছরের পুরনো ভূমিতে, মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার আখ্যান সে ছাড়া আর কেউই জানেনা।

কোন শাসনতন্তের শাসিত হবে সেইটা নির্ধারন করার অধিকার ভূমিরই, এই অধিকার খর্ব করে ফেলা যায় না কোনো সাফ কবলা-রেজিস্ট্রি করে।

শাসিত হওয়াটাই একটা শোষিত ধারনা। তারপরও একটা সময় শোষনের ব্যাপার পষ্ট হয়ে আরো উঠে। সেই সময়ে শোষনের বিপক্ষে, শাসনতন্ত্রের বিপক্ষে বলাটাই, প্রতিরোধে যাওয়াটাই ভূমি-কর্তব্য, দেশপ্রেম। আর প্রতিরোধের প্রতিপক্ষ বনে যাওয়া মানে রাষ্ট্রপ্রেমে মশগুল হওয়া, রাজাকারিতে লিপ্ত হওয়া, সর্বোপরি নৈতিক শয়তানের দিকে ধাবিত হওয়া। যেই শয়তান অত্যন্ত নৈতিক কারনে মাটির আদমেরে সিজদা দিতে অস্বীকার করে!

আমি ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিকভাবে শাসনের রাজনীতির লোক না। আমার রাজনীতি খেদমতের। কিন্তু তাও শাসক-শাসন-শোষিতের পূর্বেকার হিসাবের ফয়সালা করা নায্যতা হারায় না। প্রকৃতির খেদমত করে তাকে কাজে লাগানো, আর প্রকৃতিকে শাসন করে ভোগ করা; পার্থক্যটা এমনই। গরু কোরবান দেওয়া, আর গরু হত্যা করা; ফলাফল যদিও এক মনে হয় চর্মচোখে, দেখতে গেলে কিন্তু ভিন্ন। প্রানের দায় স্বীকারই রাজনীতি।

“দি মুক্তিযুদ্ধ ইন্ডাস্ট্রি”

by Jahid Islam

“দি হলকাস্ট ইন্ডাস্ট্রি” নামে একটা বইটি আছে । লিখেছেন অ্যামেরিকান ভদ্রলোক নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইন। বইটিতে তিনি তুলে ধরেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীদের উপর নির্যাতন এর কাহিনীকে কেন্দ্র করে কীভাবে একটি বিশেষ সুবিধাবাদী শ্রেণী গড়ে উঠেছে। কোন সন্দেহ নেই যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীদের উপর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ভয়াবহ অত্যাচার হয়েছে। তবে এটিকে কেন্দ্র করে যেই সুবিধাবাদী শ্রেণী মুনাফা অর্জন করছে তিনি এই বইতে তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। তিনি দি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে এই কনসেপ্টের প্রমোশনাল ভেহিকেল বলেছেন।

আমাদের দেশের জন্য একটা বই লেখা দরকার। নাম হতে পারে দি মুক্তিযুদ্ধ ইন্ডাস্ট্রি”।আমাদের  দেশে ইন্ডাস্ট্রির সদস্যরা নিউকনিয়ান ভাবধারায় বিশ্বাসী। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ইনসাফ এই যে সকল মূলনীতির উপর ভিত্তি করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এই শ্রেণীর এতে বিশেষ ইন্টারেস্ট নেই। নিউকনিয়ানদের মূল বক্তব্য অনেকটা এরকম সাম্রাজ্যবাদকে আমরা যেভাবে মন্দ বলে এতদিন বিচার করে এসেছি সেটা ভুল। একেব্যতিক্রম’ বলে গণ্য করতে হবে। কারণ পাশ্চাত্য সভ্যতাই একমাত্র সভ্যতা। যুদ্ধ করেই এই সভ্যতাকে রক্ষা করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরোধিতা এতদিন করা হয়েছে একটা উদারনৈতিক পাপবোধ থেকে, অর্থাৎ মনে করা হয়েছে যুদ্ধবিগ্রহ হানাহানির কাজটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। এখন এইসব পাপবোধ ঝেড়ে ফেলতে হবে। পাশ্চাত্য সভ্যতাকে রক্ষা করাই এখন প্রধান ও একমাত্র কাজ।আপনি এখানে সাম্রাজ্যবাদএর স্থলে “ আওয়ামী বাকশাল” পড়ুনদেশী সেপাইদের মতামত হল- আওয়ামী বাকশালকে আমরা যেভাবে মন্দ বলে এতদিন বিচার করে এসেছি সেটা ভুল। একেব্যতিক্রমবলে গণ্য করতে হবে। কারণ এটি একমাত্র চেতনাবাহি দল । যে কোন মূল্যে এই দলকে  রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজন হলে যত দরকার মানুষ মারতে হবে। বাকশালের বিরোধিতা এতদিন করা হয়েছে একটা উদারনৈতিক পাপবোধ থেকে, অর্থাৎ মনে করা হয়েছে  মত প্রকাশ করতে না দেওয়ার কাজটা বোধহয় ঠিক না। এখন এইসব পাপবোধ ঝেড়ে ফেলতে হবে। এই দলটিকে রক্ষা করাই এখন প্রধান ও একমাত্র কাজ। কনসেপ্টটা এক, শুধু প্রেক্ষাপট অনুযায়ী চরিত্রও গুলোর পরিবর্তন হয়েছে।” এই ইন্ডাস্ট্রির প্রচারিত মতামতের সাথে আপনি কোন ভাবেই দ্বিমত পোষণ করতে পারবেন না। যদি করেন এই ইন্ডাস্ট্রি আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। এবার আপনি ডানপন্থী, বামপন্থি, আস্তিক, নাস্তিক, জামায়াত, হেফাজত ,বা  আরও যে সব শ্রেণী বিভাগ এর কথা চিন্তা করা যায় তার যেটিরই অন্তর্ভুক্ত হন না কেন। এদের মূখপাত্র হিসেবে আছে বেশ কিছু প্রভাবশালী মিডিয়াও, ঠিক যেমনটা আছে নিউকনিয়ানদের।

 

আজকের এই দিনে খোলা চোখে দেখলে আপনার মনে হতে পারে যে, দেশে আপাত চলমান এই সমস্যার মূল কারণ হয়ত ৭১’এর যোদ্ধাপরাধীদের বিচার। আপনি যদি এটি ধরে থাকেন অপেক্ষায় থাকুন, আপনি খুব তাড়াতাড়ি ভুল প্রমাণিত হতে যাচ্ছেন। কেননা,  নিউকনিয়ান ভাবধারায় বিশ্বাসীদের সবসময় শত্রু প্রয়োজন।একটা শ্রেণীকে এদের দরকার যার ভয়ে মানুষ এদের ভোট দিবে, ক্ষমতায় আনবে বা এদের প্রভাব বজায় থাকবে । তাই নিয়ম অনুসারে যোদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়ে যাওয়ার পর আসবে অন্য কোন ইস্যু যেমন- ইসলামিক টেররিজম কিংবা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঠিক যেমনটা অ্যামেরিকান মুভিতে কমিউনিস্টদের পতনের পর  রাশিয়ান ভিলেনদের বদলে এসেছে আরব ভিলেন। আবার যদি কখনো অন্য কোন একটি আইডিয়োলজি আওয়ামীলীগের জন্য হুমকির কারণ হিসেবে আত্তপ্রকাশ করে তখন সেটিই এই শত্রুর স্থানটি দখল করবে । কেননা শত্রুর এ স্থানটিই হল এই  ইন্ডাস্ট্রির ভ্যালু প্রপোজিশন যেটি কোন ক্রমেই ফাঁকা রাখা যাবে না । “দি মুক্তিযুদ্ধ ইন্ডাস্ট্রি” লেখার জন্য একজন দেশী নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইন দরকার।”

(“দি মুক্তিযুদ্ধ ইন্ডাস্ট্রি” নামের উদ্দেশ্য কোন ভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান হানিকরা নয় বরং যারা এটাকে নিয়ে ব্যবসা করে তাদের সঠিক চিত্র তুলে ধরা।)

 

চেতনার বিশ্বরেকর্ড

1

Human-Flag-2

আমরা ইংরেজি প্রভার্ব “নিরো ফিড্‌লস ওয়াইল রোম বার্ন্স” যখন শুনি তখন নিশ্চয়ই মনে মনে দৃশ্যায়ণ করার চেষ্টা করি যে ব্যাপারটা কীভাবে সম্ভব। এসময় আমরা খুব ইথিকালি চিন্তা করি বলে দৃশ্যায়ণের কাজটি খুব স্থূল হয়ে যায়। নিরো তো আর গর্দভ ছিলো না, সে নিশ্চয়ই ব্যাপারটির মাঝে একটা অ্যাস্থেটিক ক্রুয়েলটি নিয়ে এসেছিলো, যার নান্দনিকতা ভেদ করে নৃশংসতার ডোমেইনটি বোঝা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

কথাগুলো যদি বুঝতে কষ্ট হয় তাহলেও সমস্যা নেই, ভালো উদাহরণ আছে বোঝানোর জন্য। এবং উদাহরণগুলো দেশী।

উদাহরণ ১: যখন সাভারে রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ল তখন প্রথম আলোর মেরিল তারোকালোক নাচাগানার অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া। আজ থেকে ৫০০ বছর পর কেউ যদি ঘটনাটা শোনে সেও ভাববে কীভাবে সম্ভব এটা? কিন্তু সে যদি আমাদের পেত তাহলে আমরা তাকে বোঝাতে পারতাম যে প্রথম আলো তো আর বেকুব নয়। তারা সেই “অ্যাস্থেটিক ক্রুয়েলটি” বোঝে। তারা প্রোগ্রামটি বন্ধ করতে রাজি নয়, স্বার্থ জড়িত। আবার এটাও বুঝছে যে ক্রুয়েলটি হয়ে যাবে যা মানুষ পছন্দ করবে না। এখানেই প্রথম আলোর নন্দন তত্ত্ব প্রয়োগের মুন্সিয়ানা। আনিসুল হক বলল: এটা তারা জর্জ হ্যারিসনের “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ”-এর আদলে করছে। প্রোগ্রাম চলল, আবার তাতে চাঁদাও ওঠানো হোলো অর্ধ লক্ষাধিক টাকার। ব্যস, রোম বার্ন করার সময় নিরোর ফিডল বাজানোর ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গেল। গান-বাজনাও হোলো, আবার কেউ আপত্তি তুললে তাকে মুখ ঝামটাও দেয়া হোলো – আমরা তো এত এত টাকা তুলেছি, তোমরা কী করেছো? এটার ফ্যালাসিটা অনেকেই ধরতে পারবে না, কারণ তারা নান্দনিকতা ভেদ করতে পারে না। টাকা তোলা এক জিনিস, আর নাচগান করা আরেক জিনিস। এ দুইটা জিনিস একসাথেই হতে হবে এমন না। প্রথম আলো নাচগান না করেও টাকা তুলতে পারতো, টাকা তোলার জন্য নাচগান শর্ত ছিলো না। ঐ পরিমাণ টাকা প্রথম আলো নিজেদের ব্যাংক ব্যালেন্স থেকেও দিতে পারতো। অথবা স্রেফ চাঁদা তুলেও করতে পারতো। টাকা না তুললেও কোনও সমস্যা ছিলো না। জাতীয় একটি দুর্যোগে প্রথম আলোর নাগরিক আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সেটাকে প্রথম আলো ভেট নজরানা দিয়ে রিভার্স করতে পারবে না।

উদাহরণ ২: দেশ যখন রাজনৈতিক সমস্যার একেবারে অতল গহ্বরে তখন একদল দেশপ্রেমিক গেছেন জাতীয় পতাকার ব্লক বানিয়ে বিশ্বরেকর্ড করতে। এখানে অ্যাস্থেটিক ক্রুয়েল্টি কোথায়। আমি বরং আর না বলি। আপনারা দেখুন তো এখানে অ্যাস্থেটিক ক্রুয়েলটি কোথায় ধরতে পারেন কিনা? এটার নৃশংসতা কোথায় আগে বের করুন। এরপর চিন্তা করুন যে তারা কোন নান্দনিকতা ব্যবহার করলেন সেই ক্রুয়েলটি ঢাকার জন্য। বোঝা খুবই সহজ। কেন এই অ্যাস্থেটিক ক্রুয়েলটি তাদের করতে হোলো। কেননা, দেশপ্রেমের আসল যে পরিচয় তাদের এই সময় দিতে হতো সেটি তারা করতে অপারগ, তাদের স্বার্থ জড়িত, বিসনেস ল-এর ভাষায় এজেন্সি কনফ্লিক্ট হয়ে যাবে। কিন্তু আবার দেশপ্রেমের যে সোল প্রোপ্রাইটরশিপ সেটা ছাড়লেও তো চলবে না, সেটাই তো মূল ব্যবসা। কাজে কাজেই বিশ্বরেকর্ডের নান্দনিকতা।

গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ফালা ফালা হয়ে গেছে। আর কোনও দেশ এতোগুলো নিরো একসাথে প্রডিউস করতে পারেনি।

Mujib, December 1970

December is the month of victory.  Tomorrow, we will mark — I choose not to use the word celebrate quite intentionally — Victory Day, which marks the military defeat of the Pakistani occupation forces in 1971.  But December is also the month of election — in December 1970, people of this land used their right to vote, for the first time in history.  Sheikh Mujibur Rahman’s overwhelming victory in that election marks the political defeat of the idea of Pakistan.  Ironic then that this December, the very right to vote is under threat in Bangladesh.

I’ll leave it to better informed people to discuss today’s crisis.  Allow me the indulgence of some historical curiosity today.  Over the fold is the speech by Sheikh Mujibur Rahman that was broadcast on PTV and Radio Pakistan before the December 1970 elections.  This speech is notable for a number of reasons.  It was delivered in English, and Mujib was addressing the West Pakistani ruling junta and the local and foreign establishment.  It was Mujib’s chance to tell the powers-that-be what a Mujibist government in Dhaka would mean.  This was the closest thing the outside world had to judge Mujib.

Continue Reading

আমি শাহবাগ দেখেছি

by Asif Shibgat Bhuiyan

শাহবাগী ভাঙননৃত্য শেষ হলে কয়েকটি জিনিস ধীরে ধীরে প্রতিভাত হবে বলে আমার ধারণা। এখানে বলে ফেলি।
বহুদিন ধরে একটি মহলের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক হেজিমনির মূল উৎস ছিলো ১৯৭১ এর জুজুর ভয় দেখানো। গত ৪২ বছর ধরে একটি একচেটিয়া পারসেপশন তারা মানুষের মাঝে তৈরি করে রেখেছে। গত এক বছরে এই পারসেপশনের নাটকীয় পতন ঘটেছে। অত্যাচারী ভিলেনের সাথে চির অত্যাচারিত হিরোর একটি অসম লড়াই যাতে হিরোরা প্রাথমিকভাবে জয়ী হলেও ওঁতপেতে থাকা ভিলেন যে কোনও সময় আবার আক্রমণ করবে – এই চিত্র আমাদের মর্মমূলে একেবারে গেঁথে দেয়া হয়েছিলো। এই মানসিক দৃশ্যপট এখনকার তরুণ প্রজন্মটির মনে গেঁথে ছিলো গত বছর পর্যন্তও। এ বছরে এসে প্রথম হিরোদের সাথে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভিলেনরা মাটি পাওয়া শুরু করেছে। এতে ভিলেনদের তেমন কিছু করতে হয়নি। হিরোরা হঠাৎই অহেতুক ফাউল করে নিজেদের ফেয়ার প্লে নষ্ট করেছে এবং সুযোগ করে দিয়েছে প্রতিপক্ষের সমর্থন ধীরে ধীরে বাড়িয়ে তোলার। এই আত্মহননে সরাসরি ভূমিকা রেখেছে হিরোদের অফিশিয়াল চিয়ারলিডাররা – শাহবাগীরা।

একটি রাজনৈতিক সিদ্ধিলাভের প্রহসনের বিচার কার্যে শাহবাগীরা কেবল সমর্থনই দেয়নি, ইন্ধন যুগিয়েছে। তাদের মনোভাব ছিলো একরোখা “রাজনীতি বুঝি না, ফাঁসি চাই”। বরং তারা ট্রাইব্যুনালের ফাঁক ফোকরগুলো খেয়াল করে যদি এই দাবী তুলতো যে “অবিলম্বে সুষ্ঠ বিচার চাই এবং প্রকৃত অপরাধীর বিপক্ষে মজবুত প্রমাণ সাপেক্ষে শাস্তি চাই।” তাহলে সেটা সবদিক থেকেই ফেয়ার হতো, যুদ্ধাপরাধের দায়মুক্তিও হতো এবং পুরো প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক ফাউল প্লে থেকে মুক্ত থাকতো। সেটা না করে শাহবাগ ঐ কাজটাই করল যা এই বিচার পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্যকে সার্ভ করে – রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধি।

শাহবাগীরা দ্বিতীয় যে ব্লান্ডারটি করল সেটি হোলো এই দেশের জনমনে সবচেয়ে বড় যে দুটি চেতনা একই সাথে মানুষ লালন করে এসেছে এতদিন, সে দুটির মাঝে ক্ল্যাশ লাগিয়ে দেয়া। ৭১ এর চেতনা এবং ইসলামি চেতনা। শাহবাগীরা মঞ্চের প্রাথমিক সাফল্যে দ্বিতীয় চেতনাটিকে তাচ্ছিল্য করে বসেছিলো। এখানে বলে রাখা ভালো যে অন্তত ২০১২ পর্যন্ত মডারেট ইসলামি চেতনা ও ৭১এর জাতীয়তাবাদী চেতনা মানুষ একসাথে যত্নে লালন করে এসেছে। এটি একটি ফ্যাক্ট – এটাকে অস্বীকার করা বিরাট বোকামো। এ দুটি চেতনার কোনও একটি এক্সট্রিম (অপরটিকে আমল না দিয়ে) এদেশের মানুষ ভালো চোখে দেখেনি। এটার প্রমাণ হোলো যে জামাতের এতদিনকার কোনঠাসা অবস্থা। কারণ জামাতের ইসলামি চেতনার ঝান্ডাটি হাতে থাকলেও, ৭১ এর ব্যাগেজের কারণে তারা এতদিন কোনঠাসা ছিলো। সেক্যুলাররা তো বটেই, সাধারণ অজামাতি মুসলিমদের একটি বড় অংশ তাদের বখে যাওয়া সৎ ভাই হিসেবে দেখতো। জামাতিদের প্রত্যাখ্যান করার কারণ যতটা ছিলো ইসলামিক মতবিরোধ তার চেয়েও বেশি তাদের এই ব্যাগেজ।

শাহবাগীরা নিজেদের পায়ে কুড়ালটা মেরেছে যুদ্ধাপরাধের বিচার চেয়ে নয় অবশ্যই, বরং অন্য দুটি কারণে। এক, একটি ভুল বিচার পদ্ধতিকে আরও ইন্ধন যুগিয়ে এবং দুই, ৭১ এর চেতনার সাথে ইসলামি চেতনার যে ডেলিকেট ব্যালেন্স এই দেশে রক্ষা করে চলতে হয় সেটি করতে ব্যর্থ হয়ে। এই অর্ডার আমি সময়ের প্রেক্ষিতে করেছি নতুবা সমস্যা শুরু হয়েছে বরং দ্বিতীয়টা দিয়ে। তাদের প্রাথমিক সাফল্যের ব্যাপারে মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে যখন তারা এদেশের অরিজিনাল সিন করে বসল – ইসলামি চেতনাটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিতে পেরে, বরং পায়ে ঠেলে। তারা বলেছে অবশ্য সময়ে সময়ে যে এটা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, কিন্তু আন্দোলন কেবল ইমোশানের ওপর চলে না, তার ট্যাক্টিক্স ঠিক থাকতে হয়। তাদের আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো যে দুটি চেতনার মাঝে ব্যালেন্স না করলে চলবে না। যখন তাদের বিরুদ্ধে ইসলামকে অবজ্ঞা করার অভিযোগ আসল এবং একই সাথে বিচারের বিভিন্ন অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও শাহবাগীরা সেটিকে সাপোর্ট করে গেল, তখন সাধারণ মানুষ দুই দুইয়ে চার করা শুরু করল। শাহবাগীদের জাতীয়তাবাদী চেতনার চেয়ে প্রাধান্য পেল তাদের অইসলামি চেতনা।

শাহবাগীরা যখন বুঝলো যে ইসলামি চেতনাকে তাচ্ছিল্য করার প্রবলেমটা তারা এটা বিভিন্ন ভাবে বোঝাতে শুরু করল যে তাদের মূল দাবী ছিলো যুদ্ধাপরাধের বিচার, ইসলামের সাথে তাদের কোনও বিরোধ নেই। তাদের এই দাবীও ছিলো যে এটা যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায় না তারা এই তকমা তাদের গায়ে লাগিয়ে দিতে চাইছে। এটা একটা ভালো যুক্তি, এবং নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষদের অনেকেই, বিশেষ করে যারা তাদের সেকেন্ড চান্স দিতে চেয়েছে, তাদের যুক্তিটি মনে ধরেছিলো। আপনাদের মনে থাকবে নিশ্চয়ই মঞ্চে একজন মহিলাকে দিয়ে কুরআন পড়ানো এবং আরেকজনকে শ্রোতা হিসেবে রাখার কৌতুহলোদ্দীপক ছবিটির কথা। কিন্তু এরপরই শাহবাগ করল একটি আত্মঘাতী কাজ যা থেকে তারা আর রিকাভার করতে পারেনি এবং আর কখনও পারবেও না আমার ধারণা।

৬ মের ভোরে সরকার কর্তৃক হেফাযতকে উৎখাত করার ঘটনা এবং সেই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে যখন একটি পাল্টাপাল্টি কনফিউশান চলছিলো তখন শাহবাগীদের হাতে একটি সুবর্ণ সু্যোগ ছিলো নিজেদের ইসলামি চেতনা রিলেটেড ইমেজটিকে পুনরুদ্ধার করার। তারা এই বিষয়টিতে সম্পূর্ণ চুপ থাকতে পারত। তদের ঘটে বুদ্ধি আর একটু বেশি থাকলে তারা ইন ফ্যাক্ট সরকারের কাছে এই দাবীও জানাতে পারত যে ৬ই মের ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হোক। আশ্চর্যজনক ভাবে তারা, বিশেষ করে সোশাল মিডিয়াতে তাদের নেতারা এবং অন্যান্য পাতি চেলাচামুন্ডারা ঘটনাটি নিয়ে রসিকতা করা শুরু করে, বিশেষ করে হেফাযতের দাবী করা সংখ্যাটিকে ঘিরে। তারা ভুলে গিয়েছিলো যে ৩০ লাখের ট্যালিসমান সংখ্যাটি তারা এতদিন জপে এসেছে সেটা ঠিক ততটাই বায়বীয় ছিলো যতটা ছিলো হেফাযতেরটি। আমি পূর্ণ কনফিডেন্স নিয়ে বলতে চাই যে এটাই ছিলো গেইম, সেট, ম্যাচ। শাহবাগীদের বিপক্ষে।

কেন শাহবাগীরা এরকম হঠকারিতা করল? বোঝা ডিফিকাল্ট। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে গোয়ার্তুমি বা রেকলেস স্বভাব। আফটার অল তারা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক। আসলে কারণ এটি নয় আমার মতে। শাহবাগীরা তাদের মূল দাবীতে কখনই সৎ ছিলো না, তারা যুদ্ধাপরাধের আড়ালে একটি সেক্যুলার প্যারাডাইম শিফটের কাজ করতে চেয়েছিলো ঠিকই। শুধু মাত্র বিপদের সময়ই তারা সেটাকে ঢাকতে চেয়েছিলো। সেটা ছিলো থাবাবাবার মৃত্যুপরবর্তী হেফাযতের মিটিয়রিক উত্থানের সময়টি। কিন্তু যে দুবার তারা মনে করেছে তারা কন্ট্রোলে চলে এসেছে সে দুবারই তারা তাদের সেক্যুলার অ্যাটিচিউড ও অবজেক্টিভ লুকাতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথমত, শাহবাগের প্রাথমিক উত্থানের সময় এবং দ্বিতীয়ত, ৬ই মেতে হেফাযতের উৎখাতের পর। অন্যভাবে বলতে গেলে তাদের সকল বাগাড়ম্বর ছিলো সরকারের ছত্রছায়ায়। সরকার যেমন তাদের ব্যবহার করেছে তারাও সরকারের লেজ ধরেই ঝুলে ছিলো।

এখন শাহবাগ যে আস্ফালনগুলো থেকে থেকে দেখাচ্ছে এটা বিপ্লবীদের হুংকার নয়, বরং চিয়ারলিডারদের কত্থক। সরকার যখনই গোল দিচ্ছে শাহবাগীরা উদ্বাহু নৃত্য শুরু করছে। লক্ষ্য করবেন যে সরকার এখন ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছে যার ফলে দেশে একটি অরাজক অবস্থা তৈরি হয়েছে। এসময় তাদের উচিৎ ছিলো, যদি সত্যিকার দেশপ্রেমিক তারা হয়ে থাকতো, এই অবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। একটি সাংগঠনিক ভিত্তি যেহেতু দাঁড়িয়েই গেছে তারাই ছিলো এই কাজের সবচেয়ে উপযুক্ত দল। পাঠকরা নিশ্চয়ই ইমরান এইচ সরকারের সেই দম্ভোক্তি ভুলে যাননি যখন সে বলেছিলো সরকারের চেয়ে শাহবাগই বেশি শক্তিশালী। কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে শাহবাগ তাদের চিয়ারলিডিঙের কাজেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলো। প্রথমে তারা ইসলামি চেতনার পরীক্ষায় লাড্ডু মেরেছে, এবার তারা জাতীয়তাবাদী চেতনাতেও ফেল করে বসল।

দেশের প্রধান দুটি চেতনার পরীক্ষায় ডাব্বা মারা দলটি একটি দূর্নীতিপরায়ণ “স্কুল কমিটির” খুঁটির জোরে স্কুলে টিকে থাকলো তো বটে, কিন্তু এই টিকে থাকা তো আর সত্যিকারের বেঁচে থাকা নয়, বরং লাইফ সাপোর্টে বেঁচে থাকার শামিল। আপনি স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন হলে বুঝবেন যে এই সরকার পরিবর্তিত হয়ে গেলে শাহবাগকে বসতে দেয়া হবে না এটা যেমন ঠিক – তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে শাহবাগ নিজেই আর বসবে না। আন্দোলন আর চিয়ারলিডিঙের মাঝে যে স্থুল পার্থক্য – তা এতদিন যদি আপনার কাছে পরিষ্কার না হয়ে থাকে, সেদিন হবে।

আশ্চর্যজনক ব্যাপার যে শাহবাগ নিজেদের কর্মকান্ডকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে দেখাতে চেয়েছিলো। প্রথম মুক্তিযুদ্ধের সাথে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মিল একটিই – কম বেশি একই সময় স্থায়ী ছিলো দুটোই। কিন্তু মিলের এখানেই সমাপ্তি। কোথায় একটি বিদেশী শক্তির সাথে ৭১ এর প্রাণপন গেরিলা যুদ্ধ আর কোথায় এই বিরানীর গন্ধে ভুর ভুর করা পরিবেশে নৃত্যপটিয়সদের রোমাঞ্চকর মিলনমেলা। হায়, যে জাফর স্যার দূর্বার যৌবনকালেও কোনও এক অজানা কারণে মুক্তিযুদ্ধ মিস করে ফেলেছিলেন, আজ এই বার্ধক্যের করাল গ্রাসকে ফাঁকি দিয়ে তিনিও চলে এলেন যুদ্ধনৃত্যে যোগ দিতে।

দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নামে যে তামাশা শাহবাগীরা করল আগামি যত মাস এই সরকার থাকে তাতে চিয়ারলিডিং তারা চালিয়ে যেতে পারবে সন্দেহ নেই। কিন্তু যবনিকা পতনের পর দুটি জিনিস প্রতিভাত হবে স্পষ্ট ভাবে আমার বিশ্বাস:

১. “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের” ভিস্যুয়াল সার্কাসের কারণে প্রথমটির ব্যাপারে যে কাল্পনিক রোমাঞ্চ এই প্রজন্ম এতদিন মনে মনে পুষে এসেছিলো সেটি অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে গেছে।

২. এতদিন ৭১ ভিত্তিক জাতীয় চেতনা ও ইসলামি চেতনার মাঝে যে সমতা বিরাজ করছিলো সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। এগিয়ে এসেছে ইসলামি চেতনা। ইসলামপন্থিরা যদি বিশাল গাধামো না করে তবে সামনে তাদের জন্য সুদিন রয়েছে। যদিও তাদের গাধামো করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না, সেটা একটা ভ্যালিড সম্ভাবনা বটে। কিন্তু সে আরেকদিনের কথা।

আওয়ামিলীগের প্রহসনের বিচার কাদের মোল্লাকে কিংবদন্তী বানিয়ে দিলো।

মাহবুব মিঠু।

কিছু প্রশ্নের উত্তর অমিমাংসিত রেখেই কাদের মোল্লার ফাঁসীর রায় কার্যকর হোল। অস্বিকার করার ‍উপায় নেই, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুসলিম লীগ এবং জামাতে ইসলামের ভূমিকা ছিল দেশের বিপক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের গোটা নয় মাস জুড়ে এই দুই দল সারাদেশে পাকীদের সাথে একই কাতারে দাঁড়িয়ে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অনেক সূর্য সন্তানকে হত্যা করেছিল। ১৪ই ডিসেম্বর, শুধুমাত্র একদিনে তারা খুন করেছিল অগনিত মানুষকে। তাই ৭১ এর নৃশংসতার শাস্তি জড়িতদের অবশ্যই প্রাপ্য।

এই বিষয়ে কারো প্রশ্ন থাকলে সে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি নয়। পুরো বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আজ জাতি যে দ্বিধাবিভক্ত তার উৎসমূলেও কিন্তু “যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা যাবে না” তাও নয়। বিভক্তির জায়গাটা একটা নৈতিক অবস্থান থেকে। বিচার প্রক্রিয়ার দলীয়করণ চরিত্র দেখে বিবেকবান মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, এটা কি ’বিচার নাকি প্রতিশোধ’? প্রতিশোধই যদি নিতে হবে তাহলে ট্রাইবুনাল গঠন করে, এতো এতো লোকজনের বেতন ভাতার ব্যাবস্থা করে জনগণের ট্যাক্সের টাকার শ্রাদ্ধ কেন? আওয়ামিলীগের দৃষ্টিকোণে প্রতিপক্ষের যাকে যাকে মনে হয় যুদ্ধপরাধী তাদের সোজা ধরে এনে লটকে দিলেই হয়!

মূলতঃ বিচার নাকি প্রতিশোধ, এই নৈতিক অবস্থান থেকে সরে যারা কাদের মোল্লার ফাঁসী নিয়ে মাতামাতি করছেন তাদের অপরাধের প্রকৃতিও কিছুটা সেই ৭১ এর ঘাতকদের মতোই জিঘাংসা থেকে উদ্ভুত।

স্বাধীনতার চেতনার একটা বড় অংশ ছিল সমাজে ন্যায় বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। শুরু থেকে যুদ্ধপরাধীদের বিচার নিয়ে সরকার যে প্রহসন করেছে তাতে কি মনে হয় স্বাধীনতার এই চেতনার কোন সংযোগ ছিল? সম্পূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বিচার প্রক্রিয়ার যাত্রা শুরু হয়। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হোল, বিচার কাজে সুষ্ঠুতা  দিতে সরকারের যে অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেই আইন বিভাগের প্রধান আইনমন্ত্রী, সদা বাচালতায় স্বিদ্ধহস্ত কামরুল ইসলাম এবং তার পরিবার নিয়ে যুদ্ধপরাধ সংক্রান্ত যথেষ্ট অভিযোগ আছে। বেয়াইর কথা বাদই দিলাম। লিখতে লিখতে ক্লান্ত। রাষ্ট্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের তৎকালীন প্রধান মহিউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে স্বয়ং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যুদ্ধপরাধের অভিযোগ তুলেছেন। এভাবে দেখতে গেলে বর্তমান আওয়ামিলীগ করছেন জীবিত এমন অন্ততঃ তিন ডজন রাজাকার এবং যুদ্ধপরাধী নেতা আছেন, যাদের কাউকেই বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এই লিষ্ট বিএনপির করা নয়। এটা করেছিলেন প্রয়াত জাহানারা ইমাম।  যুদ্ধপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন কাদেরের একটা উক্তি বেশ মজার! তিনি বলেছিলেন, আওয়ামিলীগ এমন একটা কল যার একদিক দিয়ে রাজাকার ঢুকালে অন্যদিক দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বের হয়। তবে আমরা দেখেছি মুখ দিয়ে খাবার ঢুকালে পাছা দিয়ে হাগু বের হয়। অর্থাৎ কোন ভাল মানুষ আওয়ামিলীগ করলে সে আবুল হোসেন হয়।

আরেকটি হাস্যকর দিক এড়িয়ে যাবার নয়। ‘স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি’ নামে পরিচিত লাভ করা সেই ঘাদানিকের প্রধান শাহরিয়ার কবির যুদ্ধের সময় পাক আর্মিদের মুরগী সাপ্লাই দিত। এরাই হোল বিচারের সংগঠক এবং ব্যবস্থাপক। বুঝুন এবার!

এই ঘটনা উল্লেখ না করলে লেখাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।  গত ফেব্রুয়ারী মাসে এই কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে শাহবাগে যে সত্যিকারের গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কমে কেন রায় বাস্তবায়নের সময়ে শতেক খানেক লোকে এসে ঠেকল? আজকে তো কোটি জনতার উল্লাসে মুখরিত হবার কথা ছিল শাহবাগ চত্ত্বর। খুব তাড়াতাড়ি সত্যিকার স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সাধারণ মানুষ বুঝতে সক্ষম হয় তারা সরকারের পাতানো জালে আটকে যাচ্ছে। বন্যার পানি সরে যাবার মতো তাই দ্রুততার সাথে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও কমতে থাকে। মূলতঃ এই ট্রাইবুনালের রায় স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কিম্বা অপরাধের মেরিট অনুযায়ী যতোটুকু দেয়া হয়েছে তার চেয়ে বেশী প্রভাবিত হয়েছে সরকারের ইশারায়। কাদের মোল্লার রায়ে দেয়া যাবজ্জীবন ছিল পুরো খেলার একটা অংশ। সরকার দুর্নিতি, ভারতপ্রীতি, মানুষ অপহরণ, গুম নিয়ে যে ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিল সেখান থেকে উত্তোরণের জন্য এই প্রহসনের খেলা জরুরী ছিল। যদিও শেষমেষ খেলা জমাতে পারে নাই। রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনতা শাহবাগে ভীর জমাতে থাকে। শ্লোগান ওঠে, জামাতের সাথে ’সরকারের’ এই আঁতাতের রায় মানি না। দু’দিন না যেতেই শাহবাগের সেই আন্দোলনের ভিতরের কুশীলবরা আসল পরিচয় নিয়ে হাজির হয়। শুরুতে সরকার ভিলেন থাকলেও তারাই ধীরে ধীরে মঞ্চে এসে নায়কের চরিত্রে অভিনয় শুরু করে। আরো ক’দিন যেতেই মূল ইস্যু অর্থাৎ যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসীর দাবীর পরিবর্তে সামনে আসে বিএনপি বিরোধীতা।   বিএনপির এ্যানির নেতৃত্বে প্রাক্তন ছাত্রদলের অনেক নেতা ‘নব্বই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতার’ ব্যানারে শাহবাগের সেই প্রথমদিককার সত্যিকার গণজাগরণে একাত্নতা প্রকাশ করতে চেয়েছিল। আজকে আওয়ামিলীগ কর্তৃক পিতৃ সম্পত্তি হারানোর শোকে কাতর অঞ্জন রায় কার সাথে পরামর্শ করে তখন এ্যানিকে ‘না’ করেছিলেন? কেনই বা ‘না’ করেছিলেন? এই প্রশ্নগুলোর সদুত্তর পাই নাই তাকে জিজ্ঞেস করে। বাইন মাছের মতো পিছল কেটেছেন।

অঞ্জন রায়কে আরেকটি প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিলেও এই দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতেও সাহস পাননি। কয়েক সপ্তাহ আগে আমার ফেইসবুকের নিউজফিডে অঞ্জন রায়ের একটা পোষ্ট ভেসে ওঠে। মন্তব্য করতে না করতে মেসেজ আসে, পোষ্টটা ডিলিট করা হয়েছে। ওখানে অঞ্জন রায় লিখেছিলেন যা তার সারমর্ম হোল, তিনিও অনেক আশা নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের সাথে একাত্নতা দেখিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মূল চেতনার সাথে লাইনচ্যুত হওয়ায় তিনি আর পূর্বের অবস্থানে থাকতে পারেননি। উল্লেখ্য, ওনার লেখার ভাষাটা আমি দিতে পারব না। কারণ উনি মুহুর্তের মধ্যে সেটা মুছে দিয়েছেন। যেহেতু আমি একবার পড়তে সক্ষম হয়েছিলাম, তাই মূল কথাটা আমার নিজের ভাষায় লিখে দিয়েছি। অঞ্জন রায়কে প্রশ্ন করেছিলাম কিসের এবং কাদের ভয়ে পোষ্টটা মুছলেন? কি কারণে আপনার অবস্থানের এই পরিবর্তন? উনি নিরব থেকেছেন। আমার মনে হয়েছে অঞ্জন রায়ের সরকারের বিরুদ্ধে যতোটুকু অবস্থান সেটা শুধুমাত্র পিতৃসম্পত্তি হাতছাড়া হবার শোকে। বাকী আনুগত্য ঠিকই আছে। সম্পত্তি ফিরে পেলে পুরোটাই ঠিক থাকবে।

যাইহোক, গণজাগরণ মঞ্চের হঠাৎ ইউটার্ন নেয়া দেখে কারো বুঝতে বাকী থাকল না, কেন কাদের মোল্লাকে ফাঁসী নয় , যাবজ্জীবন দন্ড দেয়া হোল। কেনই বা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি হোল। তারপরেও এখনো কিছু মানুষ গণজাগরণ নিয়ে ভ্রান্তিতে আছেন। তাদের তুলনা শুধুমাত্র নেশাগ্রস্ত মানুষদের সাথে করা যায়। এ এক অদ্ভুদ বাতিকগ্রস্ততা! মনুষ্য সমাজের অনেকেই নিজের অবস্থান ঠিক করতে নিজের মাথা না খাটিয়ে চোখ খাটাতে ভালবাসেন। মাথা অর্থাৎ নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ না করে অন্যের আচরণ দেখে স্বিদ্ধান্ত নেন। মনে পড়ে ছোটবেলায় হাতাকাটা ভোজেন (নামটা ভুল হতে পারে। অনেক ছোটবেলার কাহিনী।) গেঞ্জী পড়ে ‍চুলের দুইদিকের চিপ কানের উপর বরাবর কেটে ভাব নেয়াটাই ছিল ফ্যাশন। স্কুলের অঙ্কের শিক্ষকের চুল টানা খেয়ে শুধরে নিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সিগারেট ফুঁকাও অনেকের কাছে স্মার্টনেস! এই ধরনের ’চোখে দেখে’ স্বিদ্ধান্ত নেবার মতো কিছু লোক এখনো আছে। এরা ’বিচার’ এবং ‘প্রতিশোধ” কিম্বা ‘প্রতিপক্ষকে দমনের’ সরকারী কৌশল বুঝে কিম্বা না বুঝে শুধুমাত্র ‘আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী’ এই তকমা পাবার জন্যই এতদসংক্রান্ত সরকারের সমস্ত অপকর্মে নিজেদের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতার মূল চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

এই অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রে। এই বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে অবস্থান নেবার অর্থ হোল কলঙ্কিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানানো। অর্থাৎ স্বাধীনতার চেতনা যা কিনা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।

আরো কিছু জিজ্ঞাসার কোন উত্তর পায়নি জনগণ। আওয়ামিলীগের প্রাক্তন এমপি রনির দু’টো লেখায় উঠে  এসেছে কিছুটা। এই কাদের মোল্লা কি সেই ঘৃণিত কসাই কাদের মোল্লা?

কাদের মোল্লার দাবী ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সে জেসিও মফিজুর রহমানের কাছে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ধলা মিয়ার দুই মেয়েকে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে কাদের মোল্লার দাবী মোতাবেক তিনি প্রাইভেট পড়াতেন।

কসাই কাদের খ্যাত এতো বড় একজন খুনী কি করে যুদ্ধের ঠিক এক বছর পরে ৭২-৭৩ সালে বাঙলাদেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সুযোগ পেল? কি করেই বা সে শেখ মুজিবের আমলে স্কুলে চাকরী পেল?

এর একটা প্রশ্নের উত্তরও আমাদের কাছে পরিস্কার নয়।

উপরের দাবীগুলোর সত্যতা বা মিথ্যা প্রমাণে সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিল আমরা তা জানি না। এই অস্বচ্ছতা অনেক মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলেছে। নামের কারণে যমে টানল না তো বেচারাকে? এই বিভ্রান্তি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে। উত্তর না মিললে এক সময় এটা বিশ্বাসে পরিণত হবে।

যুদ্ধপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের দিন ঢাকা আতঙ্কের নয়, বরং উৎসবের নগরী হবার কথা ছিল। যে আকাঙ্খিত রায়ের বাস্তবায়ন নিয়ে আজ সারাদেশে সম্মিলিত আনন্দ উৎসব হতে পারত, বর্তমান সরকারের ঘৃণ্য এবং একপেঁশে বিচার প্রক্রিয়ার কারণে জাতি আজ দ্বিধাবিভক্ত। আখেরে এই পুরো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জামাত শিবিরের উত্থান আরো ত্বরান্বিত হবে।

এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর অমিমাংসিত রেখে আওয়ামিলীগ কাদের মোল্লার ফাঁসী দিয়ে যুদ্ধপরাধের বিচার কতোটুকু করতে পারল জানি না। তবে তড়িঘড়ি করে রায়ের বাস্তবায়ন করে কাদের মোল্লাকে অপরাধী হিসেবে নয়, একজন ইসলামী আন্দোলনের কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিল। আগামী অন্ততঃ কয়েক যুগ কাদের মোল্লার গল্প বলে শত শত মুসলিম যুবককে তারা দলে ভিড়াবে।

এমনটিই হয়তো চেয়েছিল আওয়ামিলীগ এবং তাদের একান্ত বন্ধু আমাদের প্রতিবেশী ভারত। বাঙলাদেশকে জঙ্গীবাদের ট্যাগ লাগাতে পারলে সুবিধা বিএনপির অনুকূলে নয়, সেটা যাবে এই দুই শক্তির পক্ষে। বাঙলাদেশ আফগানিস্তান হলে লাভ বিএনপির নয়, পুরোটাই সুদসহ মূলধন এই দুই শক্তির পকেটস্থ হবে।

কিভাবে?

এই বুঝটা যে সব মনুষ্য প্রজাতির নেই তাদের আমার লেখা পড়াটাই ভুল ছিল।

Mahalom72@msn.com

এবারের সংগ্রাম ‘অস্তিত্বরক্ষার’ সংগ্রাম

সাদাতসহ আরো অনেকেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন। আমি নিজেও মনে করি এই টার্মের আগে সারাজীবন ধরে চেতনাব্যবসায়ী লীগের বিরুদ্ধে ভারততোষণের যে অভিযোগ আরোপ করা হত সেটাকে অনেকেই ‘প্রোপাগান্ডা’ হিসেবেই নিত। মানুষ মনে করত লীগ ভারতঘেঁষা একটা গোষ্ঠি। কিন্তু এবারের টার্মে ভারততোষণ, চাটুকারিতা ও সেবাদাসত্বের যে নজির তারা স্থাপন করেছে ইতিপূর্বে তা দেখা যায়নি, কল্পনার সীমাকে তারা অতিক্রম করেছে এ ব্যাপারে। দেশীয় স্বার্থকে সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দিয়ে একের পর এক যেসব পদক্ষেপ তারা নিয়েছে তাতে মনে হয় বিরাট কোন সাম্রাজ্যবাদি চক্রান্তের ঔপনিবেশিক সেবাদাস হিসেবে তারা দেশ ও জাতির সর্বনাশ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ‘৪৭ এ রাজনৈতিকভাবে ভাগ হওয়া অখন্ড পাকিস্তানের এক অংশ পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বিভিন্ন বৈষম্যমূলক শোষণের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠতে থাকে _ ক্রমান্বয়ে যার পরিণতিতে অবশেষে ‘৭১ এর রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালিদের এক সাগর রক্ত ও সীমাহীন ত্যাগতীতিক্ষার বিনিময়ে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটান। সেই যুদ্ধে ভারত আমাদের জন্যে অনেক কিছু করেছে, প্রায় কোটির কাছাকাছি শরনার্থীকে আশ্রয় দেয়া থেকে শুরু করে সামরিক সাহায্য-সহযোগিতা পর্যন্ত। রাজনৈতিক কারণেও বটে, তাদের কাছে যুদ্ধটা ছিল আসলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, পাকিস্তান ছিল এবং আজও ভারতের আজন্ম শত্রু।

এরপর থেকে যা শুরু হয় তা ভারতের আগ্রাসনের ধারাবাহিকতা। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র যা পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের সময় রেখে যায় তা ন্যায্যতঃ বাংলাদেশের প্রাপ্য হলেও বাংলাদেশকে তা দেয়া হয়নি। প্রায় সমুদয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসম্ভার ভারতীয় সেনাবাহিনী নিজের কব্জায় নিয়ে নেয়। স্বাধীনতা পরবর্তী আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তিসমূহের মধ্যে একটি শর্ত ছিল এই যে _ ‘বাংলাদেশের কোন ‘বর্ডার গার্ড’ বা সীমান্ত রক্ষীবাহিনী থাকতে পারবে না।’

১৯৭১ সালে যে সব শর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সামরিক সাহায্য দেয়, তার অন্যতম শর্ত ছিল “Frontier Guards will be disbanded” (CIA Report SC 7941/71). অর্থাৎ বাংলাদেশের কোনো বর্ডার গার্ড থাকবে না। কিন্তু স্বাধীনতার পরে নানা কারনে পাকিস্তান রাইফেলস বালাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) রূপ নেয়। বিডিআর বাহিনীটি ছিলো আধাসামরিক বাহিনী, যার মূল কমান্ড ও ট্রেনিং ছিলো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মত। অন্যদিকে ভারতের বিএসএফ ছিলো সিভিল বাহিনী, যাদের ট্রেনিং, জনবল সবই ছিলো নিম্নমানের। এসব কারনে বর্ডারে কোনো যু্দ্ধ হলে তাতে বিডিআর সামরিক পেশাদারিত্ব দিয়ে বিজয়ী হত।

আজ উপমহাদেশে ভারতের বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরি হতে দেয়া হয়নি, সর্বতোভাবে বাংলাদেশের ওপর সাংষ্কৃতিক-সামরিক-অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে যা যা করা দরকার ভারত তার সবই করেছে। বিডিআর বাহিনীকে ধ্বংস করার পেছনে তাদের পরিকল্পনা সাফল্য লাভ করতে পারতো না কখনো, যদি তাদের দেশীয় তাঁবেদার বাহিনী জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদের সুযোগ করে না দিত। শেয়ার বাজার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেশের লাখো পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে নির্বিঘ্নে প্রায় সম্পূর্ণই তাদের গ্রাস করতে দেয়া হয়েছে, ভয়াবহ ধরণের অবিশ্বাস্য ধরণের অসম চুক্তি করে বিপুল মুনাফা লুন্ঠনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাত গ্রাস করতে দেয়া হচ্ছে এমনভাবে _ আগামি দিনে খোদ বাংলাদেশের নিজের দেশে নিজেদেরই কোন নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ। তথ্য প্রযুক্তি খাতের রিসোর্সগুলি অতি অল্প মূল্যে তাদের দিয়ে দেয়া হচ্ছে যা ধরে রেখে কাজে লাগালে বাংলাদেশের তরুণেরা আগামী দিনে প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটাতে পারত। তৈরি পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করতে হাজার হাজার ভারতীয় উদ্যোক্তাদের এই সেক্টরে অবাধে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে, লক্ষ লক্ষ ভারতীয়দের এক বিশাল কর্মীবাহিনীকে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে আমাদের কর্মসংস্থানের বিরাট সংকট থাকা সত্বেও। আবাসন শিল্পে চট করে ঢুকতে পারেনি তবে চেষ্টা অব্যহত আছে, অচিরেই ঘুকে পড়বে যদি তাদের তাঁবেদাররা আবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায়। এই তালিকা আরো অনেক দীর্ঘ হবে রেফারেন্স টানলে। ভারতীয়রা আমাদের উন্নয়ন চায় না, আমাদের সমস্ত সেক্টরকে ধ্বংস করতে চায় শুধু তাদের নিজেদের স্বার্থে, টিপাইমুখ বাঁধের মাধ্যমে পানিশূণ্য করতে চায় শুধু তাদের স্বার্থে, আমাদের ধর্মের প্রসারেও এমনকি পালনেও তাদের আপত্তি, আজকাল বিভিন্ন ব্লগে উপমহাদেশে আমাদের পূর্বপুরুষদের আদি ধর্ম সনাতনধর্মে আবার ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে হিন্দু মৌলবাদিদের পক্ষ থেকে, ভয়ংকরভাবে জেগে উঠছে হিন্দু মৌলবাদিদের দল, ৩-৫ বছরের মধ্যে ভারতের সাথে বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-চায়নার সর্বব্যাপী যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার বিরাট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণীও রয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার অনেকগুলো ইঙ্গিত দৃশ্যমান। এ ব্যাপরে বিস্তারিত আলাদাভাবে বলার ইচ্ছে আছে।

কাজেই ‘৪৭ এ যেমন সম্প্রদায়গত স্বার্থ রক্ষায় সময়ের প্রয়োজনে মুসলিমদের ‘পাকিস্তান’ গঠন করতে হয়েছে, ‘৭১ এ যেমন নৃতাত্ত্বিক জাতিগত সাংষ্কৃতিক পরিচয়গতভাবে পশ্চিম পাকিস্তানীদের অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ‘বাংলাদেশ’ গঠন করতে হয়েছে _ ঠিক তেমনিভাবে এই ২০১৩ তে নগ্ন ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অযুত কন্ঠে গর্জে উঠতে হবে, পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে নির্লজ্জা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। তার প্রথম পদক্ষেপ হল ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদিদের দেশীয় তাঁবেদার গোষ্ঠিকে ‘না’ বলা। এইবার প্রতিরোধ করতে না পারলে সামনে যা যা হতে পারে, তাতে ‘৭১ এর হানাদার বাহিনীর অত্যাচারকে ভুলে যাবে বাংলার মুসলমানগণ, ভারতে এবার আসছে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদি, বিজেপির একাংশ ইতিমধ্যেই ‘বাংলাদেশ চলো’ পদযাত্রার প্রাথমিক ঘোষণা দিয়েছে, যাতে লক্ষ লক্ষ হিন্দু মৌলবাদির সমাবেশ ঘটানোর হুমকি দেয়া হয়েছে। এইবার ভুল করলে ‘৭১ এর মত এক সাগর নয়, এক মহাসাগর রক্তের বিনিময়েই আবার হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতাকে খুঁজে ফিরতে হবে।

The curious case of Abdul Kader Molla

by Ahmad Abdullah

Mr. Abdul Qader Mollah is probably the most talked about Bangladeshi
these days. The highest court in our country had ordered him to be
executed through a questionable legal[1] process and in violation of
international [2]and human rights [3]laws. Worrying yet is the huge
pressure on the government, both from within and outside, to carry out
the execution at the earliest date possible. Even the attorney general
of Bangladesh has called for immediate implementation [4]of this
judicial execution.
In this short note, we provide three damning arguments proving why the
sentence by the Supreme-court of Bangladesh is in and of itself
fundamentally flawed.
1. Retroactively sentenced: The death sentence against Mr. Mollah
was handed down based on retroactively amended legislation. The
International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR), to which
Bangladesh is a state party, prohibits the retroactive application of
criminal law1; and as such retroactively amended legislation is not
valid in Bangladesh itself and clearly violates international fair
trial standards.

One may question, what is wrong with it, as long as it serves a noble
purpose – namely bringing the perpetrators of 1971 to justice. Well,
first of all, the perpetrators of 1971 is a long story that is beyond
our scope here; but suffice it to say, the whole International Crimes
Tribunal (ICT) fiasco is far from bringing the perpetrators of 1971 to
justice. More importantly, the end cannot justify the means in a legal
context; and the practice of retroactive legislation can end up in
very murky waters. For example, suppose a staunchly anti-shahbag
government comes to power with two-third majority in the future, and
passes a retroactive legislation making all activities related to the
shahbag protest tantamount to treason! Then there would be no legal
barrier to executing all those involved in shahbag movement.

2. Innocence proven beyond doubt, yet found guilty: Although Mr.
Mollah’s defense team was only allowed 6 defense witnesses; they were
able to prove beyond reasonable doubt[5], that Mr. Mollah was not
involved whatsoever with the horrendous allegations against him. In
fact, he had trained to participate in the liberation war, and was
awaiting his turn in Faridpur to join the battle. He resumed his
studies at Dhaka University immediately after 1971, and had later
become a teacher at the Udayan school and the Rifles school in the
center of Dhaka. He was also a member of the Chatra Union (Matia
group) and an ex-comrade of Matia Chowdhury and Nurul Islam Nahid
during his student days[6]. It seems his only crime is to have taken a
principled stand in the politics of Bangladesh rather than being one
of the many opportunists all around us.

3. Sentence for execution on the basis of lies and deceit: Momena
Begum was about 12 or 13 when her immediate family members were
brutally massacred in Mirpur, Dhaka by unknown assailants on March 26,
1971. Up until 2007, Momena Begum, a class five graduate, had neither
filed any complaints to any court of law, nor brought up the issue of
her family member’s massacre to any media. Then, on 28 September 2007,
she gave a statement in relation to her family’s massacre to a
researcher at Jallad Khana, the annex of the Liberation War Museum
officer, in which she blamed her Bihari neighbours for her family’s
brutal murder[7]. Of all her family members, only she survived as she
had left for her father-in-law’s place two days prior to the fatal
incident. Fast forward five years, and this Momena Begum reappears in
the ICT testifying that she had heard Mr. Mollah was an associate of
one Akter Gunda who had killed people in Mirpur (Note: sill no
allegation of Mr. Mollah’s involvement in her family’s killing).
Surprisingly such a contradictory and inconclusive statement[8] was
sufficient to find Mr. Mollah guilty and ‘deserving’ the death
sentence!!
Worse still is the recent revelation of the fact that the Momena Begum
who testified at the ICT in 2012 is not the real Momena Begum,
daughter of Hazrat Ali. It was ‘someone else’ – possibly an associate
of the state prosecutors – pretending to be her[9]. It has been
further reported, though could not be independently confirmed, that
the actual Moment Begum has been kidnapped and is being held at an
unknown location by the state security forces.
The judiciary in Bangladesh does not have an exemplary record of being
just and fair, especially in recent times. However, executing Mr.
Mollah through such a flawed process would definitely be a new
(all-time) abyss, and a disgrace to any process of law anywhere in the
world. We must stand up and voice out against such a violation of the
fundamental rights of a fellow Bangladeshi for the sake of Truth,
Justice and our Bangladesh herself.
——————————
[1] http://www.hrw.org/news/2013/12/08/bangladesh-halt-execution-war-crimes-accused
2 http://www.icj.org/bangladesh-abdul-quader-mollah-death-sentence-violates-international-law/
3 https://www.amnesty.org/en/for-media/press-releases/bangladesh-death-sentence-without-right-judicial-appeal-defies-human-rights
4 http://tinyurl.com/ozb3fzr

5 See http://bangladeshwarcrimes.blogspot.dk/search/label/Molla%20index

for detailed proceedings.
6 Confirmed by a BAL MP in one of his writings (I can’t find the
reference at the moment).
7 http://www.newagebd.com/detail.php?date=2013-10-07&nid=68309#.UqSkar-D5R9

8 Justice Abdul Wahhab commented in the judgment of Mr. Mollah “PW3
(Momena Begum) in her statements made to the Investigation Officer
during investigation did not implicate the accused with the horrific
incident which took place on 26.03.1973 and specifically stated that
the Biharis and the Pakisan army committed the crime” –
http://tinyurl.com/pfyrp7g
, pg.473
9 http://tinyurl.com/nouhhv6

শাহবাগীদের দেশপ্রেম

19

এই শিরোনামের জন্য আমি লজ্জিত এবং দুটো ব্যাখ্যা প্রয়োজন বলে মনে করি। প্রথমত: শাহবাগী বলতে হালকাভাবে যাদের বোঝানো হয় তারা অনেকেই এই নামে ডাকাটাকে অপমানজনক মনে করেন। তবে এই বিশেষ গোষ্ঠীকে এছাড়া অন্য যেসব শব্দে বিশেষায়িত করা হয় যেমন চেতনা-ব্রিগেড, চেতনাইজড – সেগুলো আরো আপত্তিকর মনে হয়েছে। তাই এ লেখায় অপেক্ষাকৃত কম আপত্তিকর বিশেষ্যটায় আস্থা রাখা হোলো – আশা করি আপনারা ব্যাপারটা স্পোর্টিংলি নেবেন।

দ্বিতীয়ত: অনেকেই আশা করেন যে কারো দেশপ্রেম নিয়ে ক্রিটিক করতে হলে নিজের দেশপ্রেম স্পষ্ট করাটা জরুরী। এই প্রসঙ্গে ভণ্ডামীর  কোনো অবকাশ যেন না থাকে সেজন্য প্রথমেই বলে রাখি, আমি নিজেকে দেশপ্রেমিক বলে দাবী করি না। আধুনিক কালে যেই বিশেষায়িত আবেগকে “দেশপ্রেম” হিসাবে হাজির করা হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, আমি তার ঘোরতর বিরোধী – কিন্তু সেটা ভিন্ন আলাপ। যারা দেশপ্রেমের সাগর কেচে ফেলেন অনুদিন, তারা যে স্ট্যান্ডার্ডকে দেশপ্রেম বলেন – কথা দিচ্ছি আমি কেবল সেই স্ট্যান্ডার্ড নিয়েই কথা বলবো। নিজের বিশ্বাস টেনে এনে ঘোট পাকাবো না – এটা আমার প্রতিশ্রুতি।

প্রথম নোক্তা: কারা শাহবাগী?

অনেকগুলো মেয়ের মজলিশে সুন্দরীতমাটি কে – এটি সনাক্ত করা খুব সহজ – সবাই ঠিক জেনে যায় পলকেই – কিন্তু ব্যাখ্যা করাটা কঠিন। শাহবাগী কে, এটাও ব্যাখ্যা করা সহজ না – you just know it। কিন্তু প্রয়োজন আছে ব্যাখ্যা করার। আমি একটা এসিড টেস্ট বের করেছি – শাহবাগী শনাক্ত করবার। অনেকটা সাইকোলজিকাল টেস্টের মতোন একটা প্রশ্ন।

ধরা যাক (আবারও বলছি – ধরা যাক। বাস্তবে এই অবস্থা তৈরী হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই) সৌদী আরব বললো যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে হবে। যদি না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের সব শ্রমিকদের দেশে ফেরৎ পাঠানো হবে। কথার কথা হিসাবে ধরে নিচ্ছি যে বাংলাদেশের রেমিটেন্সের ৮০ ভাগ আসছে সৌদি আরব থেকে এবং রেমিটেন্স বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত – অঙ্কের হিসাবে জিডিপির ৫০ শতাংশ। এমন অবস্থা হলে আপনি কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার পক্ষে থাকবেন?

আমার পরিচিত যে কজন শাহবাগীকে জিজ্ঞেস করেছি সবাই বলেছেন যে না, বিচার বন্ধ করা যাবে না। বাকীরা স্বাভাবিক অবস্থায় যুদ্ধাপরাধের বিচার চাইলেও এমন অবস্থায় পিছু হটবেন। (দয়া করে এটাকে আক্ষরিক অর্থে এসিড টেস্ট মনে করবেন না – এটি আমার পর্যবেক্ষণ মাত্র)

অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধের বিচারকে শাহবাগীরা স্থান, কাল, পাত্র, বাস্তবতা এসবের ঘেরাটোপে বাঁধতে রাজী নন, এই দাবী এবং এই প্রসঙ্গটি তাদের কাছে একটি আইনী প্রসঙ্গ যতোটুকু তার চেয়ে অনেক অনেক বেশী একটি “পবিত্র” বিষয়, “চেতনার” বিষয়। স্পষ্টতই যে অপরাধ তারা নিজেরা করেন নি (অর্থাৎ চল্লিশ বছর ধরে বিচার না হওয়াটা) সে অপরাধের দায়ভার নিজেদের ওপর চাপিয়ে তারা উচ্চ নৈতিকতায় আক্রান্ত হন (তারা প্রায়ই মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন) এবং সেই অপরাধের শাস্তি চাওয়ার মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ/পবিত্র করে তুলতে চান। পুরো ব্যাপারটাকে তারা প্রচুর ও প্রচুর সিম্বলিজম এবং শক্তিশালী সংস্কার সহযোগে ধর্মাচারের খুব কাছাকাছি নিয়ে যান।

Image

আমি এই মানুষগুলোকে খুব গুরুত্বসহকারে ও কৌতুকভরে পর্যবেক্ষণ করি, বোঝার চেষ্টা করি। যে বিশেষত্ত্ব আমি সবসময় লক্ষ্য করি তা হলো – দেশ, ৭১, গণতন্ত্র, জামাত, পাকিস্তান, বঙ্গবন্ধু এবং ছাগু – এসব শব্দের উপূর্যপুরি ব্যবহার, অবিরাম ব্যবহার। যেকোনো সচেতন পাঠকের মনে হতে বাধ্য যে তারা গণতন্ত্র, পশ্চিমা “উদারনৈতিক” মূল্যবোধ এবং দেশপ্রেমকে খুবই উচ্চ আদর্শ মানেন এবং সে মতে অনুশীলনও করেন।

কিন্তু বাস্তবটা ভিন্ন। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হলে তাদের প্রায় সবার প্রিয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে যে শেখ হাসিনা একটি এক ব্যক্তির আজ্ঞাবহ গোত্রে পরিণত করেছেন তার বিরুদ্ধে অন্তত একটা বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান নেয়ার কথা ছিলো। আওয়ামী লীগের হয়ে এলেকশান করা এক রাজনীতিবিদ আমাকে বলেছেন যে শেখ হাসিনার চেয়ে বড় একনায়ক ভারতবর্ষের ইতিহাসে কখনো আসে নি। যতোবড় একনায়কই হোক, অন্তত পার্টি-মেন কিংবা জেনারেলদের সাথে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত দেন। সিনিয়র মেম্বারদের মতামত আপনি নেবেন কি না সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ কিন্তু একনায়করা অন্তত আলোচনা করেন। শেখ হাসিনা এ প্রয়োজনটুকুও বোধ করেন না। দলের মহাসচিবও জানেন না তিনি কী করবেন।

তাদের প্রিয় দলের নেত্রী যে শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পুরো দেশটাকে বিস্ফোরণমুখ করে ফেলেছেন এবং এর দায়ভার যে প্রায় এককভাবে তার (আওয়ামী লীগের বহু দায়িত্বশীল নেতা পার্টির ভেতরে তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের বিরোধিতা করেছেন বলে তাদের দায়ভার কম) – এই কথা কোনো সুস্থ মানুষ অস্বীকার করতে পারবেন বলে মনে হয় না, কিন্তু বিস্ময়করভাবে নন-রেসিডেন্ট শাহবাগী, যাদের অনেকেই খুব ভালো পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় ডিগ্রী করছেন তারাও কোনো উচ্চ-বাচ্য করেন না। এমন কি অনেকে এখনো এই বিষয়ে হাসিনাকে সমর্থনও করেন। এত মানুষ মারা যাচ্ছে এক ব্যক্তির এরকম গোয়ার্তুমির কারণে – দেশপ্রেমিক হলে এই অবস্থা জাস্টিফাই করার কথা ছিলো না।

এ পর্যবেক্ষণ থেকে আমি প্রথমত এই সিদ্ধান্তে আসি। আওয়ামী লীগের পক্ষে এমন কোনো ভুলই করা সম্ভব না যার কারণে শাহবাগীরা তাদের সমর্থন তুলে ফেলবেন এবং বিএনপির পক্ষে এমন কোনোই ভালো কাজ করা সম্ভব না যার কারণে তাদের সমর্থন করা যায়। চল্লিশ বছর আগে যে যা করেছেন সেটিই চূড়ান্ত ও পরম। অনুভব করি যে অন্তত রাজনৈতিক সমর্থনের ব্যাপারে তারা ধার্মিকদের মতোন আচরণ করতে সচ্ছন্দ।

Image

কিন্তু এটা কোনো অভিনব বিষয় না। বিএনপির সমর্থকদের মধ্যেও আমি এ ধরনের মানুষ দেখেছি। আমার কাছে অভিনব লেগেছে দেশ ও দেশপ্রেম – এই বিষয়গুলোকে তারা কীভাবে দেখেন – এই ব্যাপারগুলো। শ্রদ্ধেয় এবং আমার দেখা মেধাবীতম বাঙালিদের একজন আবেদ চৌধুরীর ভাষা ধার করে বলি – যারা MIT’র ল্যাবে বসে পৃথিবী বদলে দেয়ার বদলে ৭১ এর জুলাই মাসে মেহেরপুরে কতো রাউন্ড গুলি করা হয়েছিলো – এই চিন্তায় দিনগুজার করেন তারা আর যাই হোক, সুতীব্র অনুভুতি যে পোষণ করেন – এ কথা অস্বীকার করা যাবে না।
তা এই অনুভূতিকে কি আমরা দেশপ্রেম বলবো?

কোনমতেই না। কারণ এই একই মানুষ ঘটমান বর্তমানে নিজের দেশের নিরস্ত্র জনগণের ওপর পুলিশ বাহিনীর গুলি চালানোকে মনে করেন কো-ল্যাটারাল ড্যামেজ, এই একই মানুষ ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী পালন করেন অথচ সেই দিনেই বিরোধী মতের রাজনীতিবিদ গুম হলে বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করেন না। শুধুমাত্র বিএনপি কিংবা জামাত করার কারণে রাষ্ট্র এখন বহু সাধারণ কর্মীদের ওপর যে অত্যাচার চালাচ্ছে তা ক্ষেত্র বিশেষে ৭১ এর চেয়েও ভয়াবহ কিন্তু এসব ব্যাপারে তারা মতিকন্ঠ করেন।

দেশের অর্ধেক মানুষকে বাদ দিয়ে “দেশপ্রেম” করা যায় কি?

তাহলে তারা যা করেন সেটা কি?

আমার ধারণা শাহবাগীরা তাদের পছন্দের একটা মেক-বিলিভ ওয়ার্ল্ডে থাকেন। এই “থাকার” একটা বিশেষত্ত্ব আছে। বাংলাদেশ সম্বন্ধে তাদের কিছু আইডিয়া, কিছু টোটেম, কিছু মাসকট, কিছু ইভেন্ট আছে যেগুলোকেই তারা বাংলাদেশ বলে মনে করেন। ব্যাপারটা বোঝানো একটু কঠিন – তবু চেষ্টা করি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জন – এতে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। কিন্তু শাহবাগীদের সাইকোএনালিসিস করলে আমার ধারণা দেখা যাবে যে দাড়িপাল্লার এক পাশে বাংলাদেশ, আরেক পাশে মুক্তিযুদ্ধ রাখলে তারা মুক্তিযুদ্ধ নামক “ইভেন্ট”টিকে বাংলাদেশের চাইতেও বড় মনে করবেন। আরো গহীনে গেলে আমার মনে হয় দেখা যাবে যে ৭১ এর আসল ঘটনা না, মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভটাই তাদের কাছে সবচেয়ে প্রেশাস। কারণ মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস কি তার চাইতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হোলো এই ন্যারেটিভটাকে আঁকড়ে ধরে থাকলে তারা নিজেদের পবিত্র, নৈতিক, মহান – এসব মনে করতে পারেন। তারা তাদের “দেশের” এমন “আলাদা বিষয়গুলোকে” প্রবলভাবে ভালোবাসতে সক্ষম কিন্তু বিষয়গুলো এক করতে পারেন না – সেজন্যই সেটা মেক-বিলিভ ওয়ার্ল্ড।

কেন এমন হয়?

আমার ধারণা “বাংলাদেশ” নামক রাষ্ট্রটিকে দীর্ঘদিন ধরে গভীরভাবে ভালোবাসা খুব কঠিন – বিশেষ করে এখন যাদের বয়স ৩০ এর কম তাদের জন্য। কোনো অসুন্দর জিনিস দীর্ঘদিন ভালোবাসা যায় না। যারা আগ্রহী তারা ষাট, এমন কি আশির দশকের ঢাকার স্টিল ফটোগ্রাফ দেখতে পারেন। অপূর্ব সুন্দর, ছিমছাম এক নগরী। মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম বইয়ে (প্রকাশকাল জুন ‘৭১ – সম্ভবত) কাজী আনোয়ার হোসেন ঢাকাকে উল্লেখ করছেন “রমনীয়” ঢাকা বলে। সুন্দরকে ভালোবাসা যায়, ভালোবাসতেই হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না আমাদের বাবাদের প্রজন্ম যে যুদ্ধ করেছিলেন তার মূল কারণ ছিলো তারা তাদের মেমোরীকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন, যে মেমোরী হোলো তাদের শৈশব ও কৈশোরের “সুন্দর” একটা দেশ, যাকে রক্ষা করা যায়, করতে হয়। কিন্তু আজকের ঢাকা কুৎসিত, পুরো দেশে শুধু মানুষ আর মানুষ, চারদিকে শুধু কংক্রিট। মানুষগুলোও বদলে গেছে – মুদির দোকানী থেকে প্রধানমন্ত্রী, সবাই অকারণে যখন-তখন মিথ্যা বলছেন। টিভি খুলবেন – বাজে খবর, পত্রিকা খুলবেন তো ভয়ঙ্কর খবর। শহরটাকে যে একটু অন্য চোখে তাকাবেন, সেই সময়টুকুও নেই।

কার্যকারণের সমন্বয় খুঁজতে গেলে এই দেশকে ভালোবাসা, রীতিমতোন এক এইচএসসি পরীক্ষা।

কিন্তু স্কুলে আপনাকে প্রাইম করা হয়েছে দেশকে ভালোবাসার জন্য। ইসলাম শিক্ষায় পড়েছেন “দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ”, বাংলা বইয়ে পড়েছেন “ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা”/ নিজের ভাইকে যদি আপনি ভালো না বাসেন আপনি বড়জোর হৃদয়হীন মানুষ, কিন্তু খারাপ নন। অন্য দিকে নিজের দেশটাকে যদি ভালো না বাসেন, আপনি “অনৈতিক” মানুষ। “দেশপ্রেম না থাকা” আর “বিশ্বাসঘাতকতা” বিপজ্জনক রকমের কাছাকাছি বিষয়।

আপনার মনের শিক্ষিত অংশ বলছে দেশকে ভালোবাসতে হবে কিন্তু ইনসটিংটিভ অংশ প্রশ্ন করছে এই দেশকে কি ভালবাসা যায়?

তা এই টানাপোড়েনের প্রতিক্রিয়া কী? আপনি পেছনে তাকাবেন এবং এমন কিছু ব্যক্তি, ইভেন্ট ও ধারণা বেছে নেবেন যার একটা অতি সরল ন্যারেটিভ আছে এবং এই ইন্ডিভিজুয়াল বিষয়গুলোকেই বাংলাদেশ বলে ভাবতে শুরু করবেন (সেহেতু তা “রক্ষা” করা যায়) / এটাই দেশপ্রেম, এটাই চেতনা।

আমার ধারণা শাহবাগীরা এই ভাবেই দেশটাকে দেখেন।

এর একটা খুব বড় সুবিধা আছে। যেহেতু আপনার “দেশ” আসলে আলাদা আলাদা কিছু ইভেন্ট এবং যেহেতু এই ইভেন্টগুলো বাস্তবতার উর্ধ্বে (আপনার কাছে) সেহেতু এই ইভেন্টগুলো নিজেরা খুবই ফ্লুয়িড। যেকোনো ব্যাখ্যা, যে কোনো নির্দেশ যতোক্ষন আপনার পক্ষে যায়, মনে হবে যে এটাই সত্যি। আগ্রহীরা হয়তো দেখেছেন যে দেওয়ানবাগী পীর ওয়াজে বলছেন যে তার স্ত্রী আসলে বিবি ফাতিমা এবং যেহেতু বিবি ফাতিমা তার “ভেতরে” আছেন সেহেতু তার সাথে রাসুলের একটা “যোগাযোগ” তৈরী হয়েছে এবং এই যোগাযোগের কারণেই তার মুরীদেরা তাকে রাসুল হিসাবে স্বপ্নে দেখেন। মজার ব্যাপার হোলো এই কথাগুলো যখন তিনি বলেন তখন তার ভক্তরা তাকে তীব্রভাবে সায় দেয়। ধার্মিকেরা যখন এই ভিডিও দেখেন তখন অগ্নিশর্মা হয়ে যান এবংসহজ প্রশ্নটি করতে ভুলে যান যে ভক্তদের কাছে কেন এটা রিয়ালিটি বলে মনে হয়?

কারণ দেওয়ানবাগীর ভক্তদের কাছে দেওয়ানবাগী একটা “প্রটেকটেড ইভেন্ট” – তাকে বাস্তবতার ধার ধরতে হয় না। আর যখন কোনো ইভেন্টকে আপনি বাস্তবতার উর্ধ্বে উঠিয়ে ফেলতে পারেন তখন এই ইভেন্ট “ইতিহাস” থাকে না, একটা অর্গানিজমে পরিণত হয় – সেল্ফ সার্ভিং অর্গানিজম। আমি একবার একটা সামান্য পরীক্ষা করেছিলাম, ঘটনাটা খুবই ইন্টারেস্টিং। আমার এক তীব্র আওয়ামী সমর্থক বন্ধুকে একটা গল্প বলেছিলাম, দেওয়ানবাগীর গল্প থেকে খুব আলাদা না। আমি খুব সিরিয়াসলি তাকে বলা শুরু করলাম যে মাত্র নয় মাসে যে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে এর আসল কারণ বঙ্গবন্ধু। তিনি যে লায়ালপুর কারাগারে ছিলেন এটা পুরোপুরি সত্য না। প্রথমে বন্দী থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের বেশিরভাগ সময় তিনি মস্কোতে ছিলেন এবং মস্কোতে তিনি ইস্টার্ন ব্লকের হয়ে দর কষাকষি করছিলেন আমেরিকার সাথে। গল্পটা বিশ্বাস করানোর জন্য প্রচুর নথিপত্রের উল্লেখ করলাম, বললাম যে – পুরোপুরি স্বীকার না করলেও প্রাভদা এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস এর অমুক তারিখের এডিটরিয়ালে এর উল্লেখ আছে।

আমার এই বন্ধুটি সম্ভবত বাসুদা এবং মেজবাহ আহমেদের পর্যায়ের শাহবাগী নন কিন্তু মজার সাথে লক্ষ্য করলাম যে একটিবারের জন্যেও জিজ্ঞেস করলেন না যে পাকিস্তান কেন বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দেবে মস্কোতে যাওয়ার জন্য এবং মস্কো থেকে তিনি পাকিস্তানে ফেরতই বা আসলেন কী করে?

এটাকেই আমি বলেছি “ফ্লুয়িড” এবং ফ্লুয়িড বলেই পুরো ঘটনা আর কোনো ঐতিহাসিক ইভেন্ট থাকে না – হয়ে যায় একটা অর্গানিজম। এখানে একজন লাকীর প্রয়োজন হবে স্লোগান দেয়ার জন্য, একজন মাহবুব রশীদ দেবেন ফেসবুক স্টেটাস, মেসবাহ আহমেদ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চার ফাঁকে এসে আমাদের জানাবেন এক দেশে দুই আইন থাকার বিপদ এবং বাসুদা অনুরোধ করবেন সবাইকে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ার জন্য। ইতিহাস আর কোনো ঘটনা থাকে না, হয়ে যায় একটা প্রাণী – যে বদলে যায়, সরে যায়। যে অরক্ষিত হতে পারে এবং যার সম্ভ্রমহানিও হতে পারে।

Image

শুধুমাত্র – আবারও বলছি – শুধুমাত্র “চেতনা”ই পারে এই প্রাণীটিকে বাঁচিয়ে রাখতে। কেন?

কারণ চেতনা হোলো এক গোছা বিশ্বাস যাকে আপনি যুক্তি-তর্কের উর্ধ্বে প্রায়োরিটি দেন। আপনি নিজেকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে এই বিশ্বাসগুলোই আপনার অস্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। এখানেই শেষ না – আপনার সামনের মানুষটিকেও চেতনা করতে হবে – কেননা আপনি তাকে বিচার করবেন আপনরা চেতনা দিয়ে। ওইজা বোর্ডে যেমন আপনার অবচেতনের শক্তি আঙ্গুল নাড়িয়ে ডেকে আনে আত্মা, ঠিক তেমনি চেতনার সমস্মর, নিয়ন্ত্রণ করে ইতিহাস নামক প্রাণীটিকে। বর্তমানে বসে আপনি বদলে দেন অতীত। পারেন না বদলাতে শুধু বর্তমান।

এই যে আপনার ধর্মের মতো বিশ্বাস যাকে আমি ধর্মই বলি, শাহবাগীরা ভালোবেসে তার নাম দিয়েছে দেশপ্রেম।

photo credit: Maciej Dakowicz, Zakir Hossain Chowdhury    

Bangladesh ~ Democracy in peril ~ Extreme Destabilization on hand ?

1
Bangladesh ~ Democracy in peril

Bangladesh ~ Democracy in peril

‘Bangladesh Syndrome’ is a term widely used in global diplomatic and economic think tanks in recent decades as an ever-broken system, which is run by mostly corrupt and dysfunctional political leaderships, progressing forward just by the will and resilience of the citizens themselves. Bangladesh is a place where optimism, hard-work and hope for a better future co-exist side by side with mindless corruption, endless poverty and needless political bickering. As a country and society Bangladesh has failed to address the timely needs of its hard-working regular citizens in most of the years since the time of the inception of the country in 1971. Failing to get a functionally neutral judiciary, failure to ensure the freedom of press and freedom of expression and failure to construct a non-partisan free and fare Election system are among the few of the said failures.

Current prime minister Mrs Sheikh Hasina finishing her 2nd term as the country's head of government. She refused to go to poll in 1996 in a similar situation when then prime minister Mrs Khaleda Zia refused to step down as the head of government.

Current prime minister Mrs Sheikh Hasina finishing her 2nd term as the country’s head of government. She refused to go to poll in 1996 in a similar situation when then prime minister Mrs Khaleda Zia refused to step down as the head of government.

Path towards a multi-party-democracy for Bangladesh has not been easy. Multiple autocratic rulers have tried to install one-party democracy in the ‘70s and ‘80s and was rejected by people. After long history of revolt and political struggle finally in 1990, after the fall of then autocratic dictator H M Ershad, its seemed like that Bangladesh finally has settled into a system where all political parties can co-exist in a parliamentarian democratic eco-system. Well, we were grossly wrong in our calculation and got too hopeful too early I assume.

Vote rigging, voter intimidation and election engineering are among the list of regular corrupt political practices among political parties in Bangladesh. The facts and evidence are so historically true that nobody even denies that. As per the mis-trust of each other among political parties themselves, a ‘neutral non-partisan caretaker government’ was installed just to run the election in 90 days time frame and was constitutionalized in 1996 and so it became the law of the land – same rule for everybody.

Current opposition leader Mrs Khaleda Zia, have been prime minister of the country for 3 times previously, refuses to go to poll while prime minister Mrs Sheikh Hasina stays as the head of the government.

Current opposition leader Mrs Khaleda Zia, have been prime minister of the country for 3 times previously, refuses to go to poll while prime minister Mrs Sheikh Hasina stays as the head of the government.

On a surprise move current ruling political party Bangladesh Awami League, led by Prime Minister Sheikh Hasina, suddenly abolished the ‘neutral non-partisan caretaker government’ from the constitution and thus asked the country to go to pole while she stays as the chief executive of the country during the election time. The main opposition party Bangladesh Nationalist Party (BNP), led by 3-times Prime Minister of the country Khaleda Zia has refused to join the poll if the current Prime Minister Sheikh Hasina stays as the chief executive of the country as wide-spread vote rigging and election engineering is expected by the ruling party. In recent months all the polls, conducted by even the govt-leaning media outlets, have shown that popularity of the current ruling party has taken a deep in past 5 years and if elections are held in a free fare non-partisan way Bangladesh Nationalist Party (BNP) will win a land-slide victory.

Global democratic communities, including European Union and US Congressional body, have openly called for a free a fare election in Bangladesh where an election can not be called a ‘credible one’ without the participation of the main opposition party of last election Bangladesh Nationalist Party (BNP). There were several attempts of dialogue in both domestic and diplomatic arena but have gone in vein due to lack of willingness of the current ruling party Bangladesh Awami League to give up the chief executive position during the election time.

Social Media sites like FaceBook have been flooded by the news of the arrest of opposition supporters and activists as Govt has effectively imposed media-blockade against opposition. University teachers have been apprehended and imprisoned for their stance against govt on FaceBook.

Social Media sites like FaceBook have been flooded by the news of the arrest of opposition supporters and activists as Govt has effectively imposed media-blockade against opposition. University teachers have been apprehended and imprisoned for their stance against govt on FaceBook.

Finally the election commission of Bangladesh has declared the date to conduct poll in a nationally televised broadcast by the chief election commissioner 12 hours ago when this blog is being written. If this election goes throw as it is, this will effectively kill the essence and tradition of multi-party-democracy in Bangladesh for foreseeable future and will install a one-party-parliament by conducting a single-party-poll. Wide-spread protest and political clash has griped the country no sooner than the Election Commission announced the date for the up coming single-party-poll. Lawlessness and uncertainties about the future has made the entire country worrisome as you read. Activists and supporters of main opposition party are being mass-arrested by security forces at this very moment.

Bangladesh has experienced violent history full of bloodshed and destabilization in early '70s when failed leftists movements were fighting among themselves and with the govt.

Bangladesh has experienced violent history full of bloodshed and destabilization in early ’70s when failed leftists movements were fighting among themselves and with the govt.

Although Bangladeshis are mostly peace-loving hard-working people both the extreme-left and extreme-right are vividly present in the political eco-system. The first president of the country Sheikh Mujibur Rahman had decided not to give the extreme-lefts any sort of political accommodation during his tenure from ’72 to ’75 and Bangladesh has seen very violent bloody past of the failed leftists movements in first half of the ’70 decade. In order to restore safety and security in the country, then govt forces have defused the leftists movement through bloodshed where 40,000+ leftists were killed during that time. Extreme-rights have largely been contained by political accommodation as of yet so far. But future of this political accommodation is un-known as current ruling gov of Bangladesh Awami League has taken away the ‘right to do politics’ of Jamaat-E-Islami, the largest Islamist party in the country, for their role during the liberation war in 1971.

The absence of multi-party democracy and meaningful political accommodation will create political vacuums effective enough for the rise of fundamental Islamists.

The absence of multi-party democracy and meaningful political accommodation will create political vacuums effective enough for the rise of fundamental Islamists.

Most of 160 millions of people of Bangladesh are poor while financial concern is #1 in 85% of citizens mind. An absence of multi-party-democracy will not only destabilize the economic rhythm of the nation but also will create political vacuum for the extremists Islamist to make permanent footstep in the country. The rise of extremist Islam always takes place when political accommodation of the Islamists are not possible in a democratic eco-system. ANY political scientists will confirm this fact if you ask.

Current destabilization of the country runs the risk of extreme elements to rise and the country going back to the early ’70s where the country was an effective war-zone while govt forces are always fighting the extremists inside the country. Only difference is this time around it will be the extreme-rights.

দুটি ঘটনার সূত্র –

সায়ান তানভি

ঘটনা -১
এক নবদম্পতি গাড়ীতে করে যাচ্ছিল ।দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মোজাম্মেল দলবলসহ গাড়িটি আটক করে ,ড্রাইভার আর নববধূর স্বামীকে হত্যা করে ,মেয়েটিকে সবাই মিলে ধর্ষণ করে ,অতঃপর তিনদিন পর তাঁর লাশ পাওয়া যায় টঙ্গি ব্রীজের নীচে ।
পৈশাচিক এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় সর্বত্র ।বিশেষ অভিযানে দায়িত্বরত মেজর নাসেরের হাতে মোজাম্মেল ধরা পড়ে ,মোজাম্মেল মেজরকে বলে ,ঝামেলা না করে আমাকে ছেড়ে দিন ,আপনাকে তিন লাখ টাকা দেবো ।বিষয়টা সরকারি পর্যায়ে নেবেন না ।স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি ছাড়া পাবো ।আপনি পড়বেন বিপদে ।আমি তুচ্ছ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না ।মেজর নাসের হুঙ্কার ছাড়লেন ,এটা তুচ্ছ বিষয় ?আমি অবশ্যই তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলাবার ব্যবস্থা করবো ।তোমার তিনলাখ টাকা তুমি তোমার গুহ্যদ্বারে ঢুকিয়ে রাখো ।
এরপরের কাহিনী অতি সরল ।কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোজাম্মেলের বাবা ,দুই ভাই গেল শেখ মুজিবের কাছে ,তিনি আসতেই তার পা জড়িয়ে কান্নার রোল পড়লো ।মুজিব জিজ্ঞাসিলেন ,ঘটনা কি ?টঙ্গি আলীগের সভাপতি বললেন ,আমাদের সোনার ছেলে মোজাম্মেল মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে ।মেজর নাসির তাকে ধরে নিয়ে গেছে ,বলেছে তিন লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দিবে ।কাঁদতে কাঁদতে আরো বললো ,এই মেজর আলীগের নাম শুনলেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে ।সে প্রকাশ্যে ঘোষনা করেছে ,টঙ্গিতে আমি আলীগের কোন শূয়োর রাখবো না ।বঙ্গবন্ধু !আমি নিজেও এখন ভয়ে অস্থির !টঙ্গিতে থাকি না ।ঢাকায় চলে আসছি ।এবার হুঙ্কার ছাড়লেন বঙ্গবন্ধু ,কাঁদার মতো কিছু হয় নাই ।আমি এখনো বেঁচে আছি ,মরে যাই নাই ।এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি ।
অতঃপর মোজাম্মেলকে তাৎক্ষণিক ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন এবং মেজর নাসেরকে টঙ্গি থেকে সরিয়ে দেয়া হলো ।
ঘটনা -২
নারায়নগন্জের নাগরিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা ,সন্ত্রাস-চাদাবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বীর ছেলে ,স্কুল পড়ুয়া ত্বকীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ।অতঃপর তারা দায় চাপায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর ।সুনির্দিষ্ট প্রমান এবং অভিযোগের পরও পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনরুপ ব্যবস্থা নেয়ার আগ্রহ দেখায় নি ,অথবা বলা যায় কোন
প্রভাবশালী উচ্চ মহল থেকে তাদের নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল ।তবে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত র্যাব একটু সাহসী কাজই করে ফেলে ,তারা হত্যাকান্ডে জড়িত একজনকে ধরে ফেলে এবং তার জবানবন্দি অনুযায়ী হত্যাকান্ডের মূল অভিযুক্ত শামীম ওসমানদের একটি টর্চার সেলে অভিযান চালায় ,উদ্ধার করে রক্তমাখা জিনস প্যান্ট ,গজারির লাঠি ,নাইলনের রশি ।দেয়ালে ও শোকেসে অসংখ্য গুলির
আলামত খুজে পায় ।অথচ প্রধানমন্ত্রী তখনো বললেন ,আইভি এবং শামীমের বিরোধকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী পক্ষই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে ।

র্যাবের ঐ অভিযানের পর অভিযুক্ত শামীম ওসমান র্যাবের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদগার করেন ,এবং এর পরপরই ত্বকী হত্যা মামলার তদারককারী কর্মকর্তা র্যাব ১১ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর আলমকে চট্টগ্রামে র্যাব ৭ এ বদলি করা হয় ।থমকে যায় আলোচিত এ মামলার তদন্তকাজ ।পাঠক ,প্রথম ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন ,অবিশ্বাস্যরকম মিল খুজে পাবেন ।খুন ,অতঃপর প্রধানমন্ত্রীর অকুন্ঠ সমর্থন ,খুন করেও সর্বসমক্ষে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো ,তদন্তকারী সেনা কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক অপসারন ।ওহ কি আশ্চর্য মিল ।পিতার আদর্শ সন্তানই বটে ।একেবারে কার্বন কপি ।আমার এক প্রেমিকা ছিল একদা ,বাবার মতোই ,শ্যামল বর্ণের ,প্রগলভ ,বাচাল ,নির্বোধ ,রুক্ষ ,অসৎ ,অযোগ্য ,দাম্ভিক অথচ বাইরে থেকে মনে হতো দয়াদ্র ,স্নেহপ্রবন ,যদিও এ সবই ছিল বাহুল্য ,লোক দেখানো ,ছ্যাবলামি ।
আজ ১৫ নভেম্বরের প্রথম আলোর খবর ,ত্বকী হত্যাকান্ডে জড়িত আরেকজন র্যাবের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন খুনটি শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানই করেছিল ।এবার প্রধানমন্ত্রী কি বলবেন ,তবুও কি বলবেন বিরোধী দলই হত্যাকান্ডে জড়িত ?তিনি কি আরেক দফা র্যাবের কর্মকর্তাকে বদলির ব্যবস্থা করবেন ?অবশ্য তিনি যদি বঙ্গবন্ধুর (সোনার বাংলা!) গড়ার স্বপ্নই দেখে থাকেন শয়নে স্বপনে ,তাহলে প্রশ্নের উত্তর না দিলেও চলবে ।উত্তর আমাদের জানাই আছে ।

সায়ান তানভি

চেতনা বনাম গনতন্ত্র

2

গত কয়েকমাসে আওয়ামী লীগ সমর্থক বুদ্ধিজীবিদের বিভিন্ন কলাম ও টকশো এর বক্তব্যগুলি থেকে একটি টকিং পয়েন্ট বার বার উঠে এসেছে। যখনই তারা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে যে এককভাবে জনগনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দিয়ে আওয়ামী সরকার গনতন্ত্র ও ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে কি না, তখনই তারা নানাভাবে ইতস্তত করে একটি বক্তব্যই বার বার বলেছে। তারা বলে থাকে যে গনতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার আগে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে যারা দেশের ‘স্বাধীনতার চেতনা’র বিরুদ্ধে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়, তাদেরকে কি আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে দিবো কি না। তারা বলে যে নির্বাচনের আগে আমাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র পক্ষ বিপক্ষের ক্ষমতা নিয়ে মীমাংসা করতে হবে। এই বক্তব্যের পরে অনিবার্য প্রতিপ্রশ্ন এসে যায় যে তবে কি এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গনতন্ত্র সাংঘর্ষিক? সংগত ও বোধগম্য কারনেই এই প্রশ্নটি আমরা এতোদিন গনমাধ্যমে উপস্থাপিত হতে দেখি নি।

কিন্তু এখন এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। গতকাল ইন্টারনেটে একটি টকশো এর অংশ দেখছিলাম। বুধবারে ‘বৈশাখী’ চ্যানেলের এই টকশোতে উপস্থিত দুই ব্যাক্তিত্বই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রতিনিধি বলে পরিচিত। সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও কলামিস্ট অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী। অনুষ্ঠানে চলার সময়ে অধ্যাপক পাটোয়ারীর নানা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় উপস্থাপক অবশেষে প্রশ্নটি করেই ফেললেন যে, “আজকের দিনে কি পরিস্থিতিটি কি মুক্তিযুদ্ধ বনাম গনতন্ত্রের লড়াইতে এসে দাড়িয়েছে’? খুব সংগত কারনেই রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবি দুজনেই এই প্রশ্নটি এড়িয়ে গেলেন। কিন্তু জনগনের চিন্তার মধ্যে এই প্রশ্নটি এড়ানোর কোন উপায় নেই। আজকে এই প্রশ্নটি সবার সামনে জ্বলন্ত হয়ে উপস্থাপিত হচ্ছে যে চেতনা ও গনতন্ত্র কি মুখোমুখি সংঘর্ষে উপস্থিত?

যেকোন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বই কয়েকটি স্তরে বিন্যস্ত থাকে। একেবারে সামনা সামনি সবচেয়ে প্রত্যক্ষ লড়াই হলো ব্যাক্তির সাথে ব্যাক্তির (যেমন খালেদা বনাম হাসিনা)/ এর পরের স্তর বলা যেতে পারে এই লড়াই দল ও সমর্থকদের মধ্যে। আরো উচ্চস্তরে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হলো চিন্তা ও আদর্শের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এই বছরে চিন্তার জগৎ এ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে অনেক রকম লেবেল দেয়া হয়েছিলো, বিচার বনাম অবিচার, ধর্মীয় মৌলবাদ বনাম ধর্মনিরপেক্ষতা, এরকম আরো বেশ কিছু। কিন্তু এই সব লেবেল পরিত্যাক্ত হয়ে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের সামনে এসে এই মতবাদের লড়াই পর্যবাসিত হয়েছে চেতনা ও গনতন্ত্রের মধ্যে।

দেশজুড়ে সমর্থকেরা যেভাবেই এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে দেখুক না কেনো, দুই বৃহৎ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতারা ও কর্মীরা কিন্তু খুব ভালোভাবেই জানে এই লড়াই শুধুমাত্র পার্থিব ক্ষমতার লড়াই। বাংলাদেশে এখন ক্ষমতায় আসীন হওয়া মানে সাম্রাজ্যের অধিপতি হওয়া সহ আলাদীনের চেরাগ পাওয়া। আর ক্ষমতা থেকে বিচ্যুত হওয়া মানে বনবাসে নির্বাসন, নির্যাতন, ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যু পর্যন্ত। সুতরাং তারা খুবভালো করেই জানে এই লড়াই আসলে কিসের জন্যে।

এই রাজনীতিবিদদের কাছে বিভিন্ন রকম চিন্তা-আদর্শের বুলি হলো ক্ষমতার জন্যে তাদের নগ্ন-লোভী যুদ্ধকে জনসাধারনের কাছ থেকে ঢেকেঢুকে রাখার জন্যে একটি ছদ্মাবরন মাত্র। কিন্তু রাজনীতির সমর্থকেরা, যারা একেকটি রাজনৈতিক পরিচয়ের সাথে নিজের আত্মপরিচয় এক করে ফেলেছে, তাদের কাছে এই দ্বন্দ্ব হলো চিন্তা ও আদর্শের লড়াই, যে লড়াই এর জয় পরাজয়ে নির্ধারিত হয় নিজের আত্মপরিচয়েরও স্বীকৃতি। রাজনীতিবিদদের সরাসরি লড়াই এর চেয়ে কিন্তু এই চিন্তা ও আদর্শের লড়াই কম গুরুত্বপূর্ন নয় কারন সময়ের দীর্ঘমেয়াদী স্কেলে, ব্যাক্তিত্ব ও দল ছাপিয়ে এই চিন্তার লড়াইটিই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পথ দেখায়।

২০১৩ এর শেষে, এই রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও চিন্তার লড়াই কিন্তু অনেক আগে থেকেই স্পষ্ট অনিবার্য ছিলো। ২০১১ তে একক ইচ্ছায় তত্বাবধয়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়ার সময়েই এই সংঘর্ষের স্ক্রীপ্ট লেখা হয়ে গিয়েছিলো। যেকোন সচেতন নাগরিকের কাছে এটাও স্পষ্ট ছিলো যে ক্ষমতা নামের আলাদীনের চেরাগকে সুসংহত করতেই ক্ষমতাসীন দল এই অজনপ্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছিলো। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা এই স্পষ্ট রাহাজানিটিকে জনতার সমানে গ্রহনযোগ্য করে তোলার জন্যে নানারকম মজাদার কথাবার্তা উপস্থাপন করতো। একটি কথা এই গ্রীষ্মে প্রায়ই শোনা যেতো যে শেখ হাসিনা নাকি বাংলাদেশে গনতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্যে বদ্ধপরিকর। তিনি নাকি তত্বাবধায়ক নামের জোড়াতালি ব্যবস্থা বাদ দিয়ে পুরোপুরি নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে যেতে চান এবং এটিকেই তার সবচেয়ে বড়ো লিগ্যাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে যেতে চান।

কিন্তু গত কয়েকমাসে নির্বাচন কমিশনের একের পর এক বিতর্কিত পদক্ষেপে ও সাজানো নির্বাচন থেকে বিএনপি’কে যে কোন প্রকারে থেকে দূরে রাখার চেষ্টার মধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে আসলে পুরোটাই ছিলো সেই পুরাতন ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাকে কুক্ষীগত রাখার চেষ্টামাত্র। সর্বশেষ যে খোড়া অজুহাত ছিলো সংবিধান সমুন্নত রাখার দৃঢ়তা, সেটিও জনতার সামনে হাস্যকরভাবে বাতিল হয়েছে মন্ত্রীদের পদত্যাগের অ্যাবসার্ড নাটকের মতো ঘটনায়। এখন চেতনা ছাড়া আর কোন আদর্শের তীর নেই তূনীরে।

বর্তমানের এই চেতনা এবং গনতন্ত্রের দ্বন্দ্বে দেশের জনগনের অবস্থান কোথায়? আগের দিনের মতো এই প্রশ্নের উত্তর খোজার জন্যে এখন আর বুদ্ধিজীবি-বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা এখন জনমত জরীপের যুগে প্রবেশ করেছি, এটা পুরাতন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বুঝতে যত দেরীই করুক না কেন। এই বছরে প্রকাশিত চার-পাচটি জরীপে বের হয়ে আসা ফলাফল দ্ব্যর্থহীন, দেশের কমপক্ষে ৭০ -৮০% জনগন চায় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, কারন তারা মনে করে কোন রাজনৈতিক সরকার তাদের ভোটাধিকারের সুরক্ষা করবে না। আর যারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র ক্ষমতার লড়াইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে-বিপক্ষের লড়াই বলে অভিষিক্ত করেন, তাদের এই মতই জনতার মধ্যে কতটুকু প্রতিফলিত? সর্বশেষ প্রকাশিত জরীপগুলোতে দেখা গেছে এখন বিএনপি’র জনপ্রিয়তা ৫০% এর উপরে আর আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নিম্ন তিরিশ কিংবা তারও নীচে।

রাজনীতির লড়াইকে বুদ্ধিজীবি-সমর্থকেরা যে কোন আদর্শিক লেবেলই লাগাক না কেন, জনগনের কাছে এটি সেই পুরাতন ক্ষমতাসীন আর ক্ষমতাসীনদের সড়ানোর জন্যে একমাত্র সক্ষম প্রতিপক্ষেরই লড়াই।আওয়ামী লীগ-বিএনপি’ লড়াইতে এই জনমতের এই বিপুল পরিবর্তনের কারনটাও প্রথম পরিসংখ্যানটিই স্পষ্ট করে দেয়। কুশাসনের প্রতিযোগিতায় এই দুই দলের অতীত কেউ কারো চেয়ে কম কলংকিত না হলেও জনগন জানে এই সময়ে কোন দলটি তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রে মগ্ন। সাধারন জনতার কাছে গনতন্ত্রের একমাত্র অবশিষ্ট অধিকার, ভোটাধিকারকে নিয়ে চরম অবিবেচক পদক্ষেপই ক্ষমতাসীন দলের গনভিত্তিতে বিশাল ফাটল ধরিয়েছে।

চেতনার পক্ষের যারা কিছুটা বাস্তব সচেতন তারা আর এখন দেশের রাজনীতি ও জনসমর্থনের ভূপ্রকৃতির এই স্পষ্ট রূপটিকে অগ্রাহ্য করতে পারে না। এদের অনেকেই এখন সরাসরি বলে যে গনতন্ত্রের ভোটের মাধ্যম্যে দুই কুকুরের ক্ষমতার হাড্ডি নিয়ে চলা দশকের পর দশক লড়াই এর চেয়ে তাদের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন ও তার রায়ের পূর্ন বাস্তবায়ন হওয়া অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন। তারা বলে যে যতক্ষন না দেশের জন্মলগ্নের এই আদি কলংকের মোচন ঘটছে ততক্ষন মানুষের ভোটাধিকারের সুষ্ঠু প্রয়োগ হলো কি না এটি তাদের কাছে বড়ো বিবেচ্য নয়। কোনো সন্দেহ নেই যে এই অত্যেন্ত সচেতন নাগরিকদের এই মতটির পেছনে যুক্তি আছে, ক্ষমতার পরিবর্তনের সাথে সাথে চলমান বিচার প্রক্রিয়া যে পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু পাচ বছর সময় পাওয়ার পরও বিচারের অজুহাতে গনতন্ত্রকে আপাতত পর্দার অন্তরালে সড়িয়ে রাখার এই চিন্তাটি দেশের জনগনের বৃহদংশ তো দূরের কথা, এক উল্লেখযোগ্য অংশই ধারন করে কি না সেটি নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে। আর গনতন্ত্রে একজন উচ্চশিক্ষিত, চেতনায় ভরপুর নাগরিকের মতামত, আর নয় কোটি নিরানব্বই লক্ষ, নিরানব্বই হাজার, নয়শ নিরানব্বই জনের চেয়ে সামান্যতম বেশী দামী নয়। চেতনার অজুহাতে একটি ক্ষুদ্র অংশের মতকে জনগনের বৃহদংশের উপরে চাপিয়ে দেয়ার প্রতিক্রিয়া অবশ্যই হবে চেতনার জন্যে অনেক বেশী প্রতিকূল।

আমাদের দেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি ফ্যাক্টর হওয়া সত্বেও এই চেতনার স্বরূপ কি কিংবা দেশের জনগনের মধ্যেই এর প্রতিফলন কতটুকু, এই সব নিয়ে নিরাবেগ আলোচনা কখনো হয় নি। এর অন্যতম কারন অবশ্যই হলো যে এই চেতনা, যুদ্ধাপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের মতো অমীমাংসিত বিষয়ের কারনে আমাদের কাছে অতীতের কোন ব্যাপার নয় বরং জলজ্যান্ত বর্তমানে তীব্র আবেগের আধার। তবে আশা করা যায় যে অবশেষে ২০১৩ এই তুমুল ঘটনাপ্রবাহ যখন স্তিমিত হয়ে যাবে তখন আমরা এই অতি প্রয়োজনীয় আলোচনাটি শুরু করতে পারবো। আমি এই লেখায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্লেষনের মতো বিশাল কাজ নেয়ার স্পর্ধা করতে পারি না তবে লেখার মূল বক্তব্য তুলে ধরার জন্যেই চেতনা নিয়ে কিছু কথা সংক্ষেপে হলেও বলা প্রয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধের চে্তনা বলতে কি বুঝায় এই প্রশ্নের উত্তরে বহুদিন ধরে স্ট্যান্ডার্ড উত্তর ছিলো আমাদের ১৯৭২ এর সংবিধান এর চার মূলনীতি, বাংগালী জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। সময়ের সাথে সাথে এক অখন্ড চেতনার সাথে এই চার মূলনীতির সামন্জস্যতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন এলেও এসব নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা খুব কম হয়েছে। এর কারন অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের মতো ইতিহাসে একক ঘটনার সাথে এই নীতিগুলিকে সম্পৃক্ত করে ফেলা। কিন্তু এখন আর এই অসামন্জস্যতাগুলো এড়ানোর কোনো উপায় নেই। গনতন্ত্রের সাথে সমাজতন্ত্র সামন্জস্যপূর্ন নয়। জাতীয়তাবাদের মতো একটি রক্ষনশীল মতবাদের স্থান উদার গনতন্ত্রে কতটুকু এনিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে তো বটেই, সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়েও মুক্তিকামী সংগ্রামীদের কতজন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চেয়েছিলো সেটি নিয়েও প্রশ্নের অবকাশ আছে।

চেতনা হলো মানুষের মনের মধ্যে উৎসারিত বৃহৎ কোন অনুভূতি, কিন্তু কোন দুটি মানুষের মন যেমন এক রকম হয় না ঠিক তেমনি কোনো দুটি মানুষের চেতনা অবিকল এক হয় না। মুক্তিযুদ্ধের মত বিশাল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেও প্রতিটি মুক্তিকামী যোদ্ধা, জনতা ও নেতা পুরোপুরি একই রকম চেতনায় আন্দোলিত হয় নি, প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জীবন, অভিজ্ঞতা ও মানসিকতার পার্থক্যে চেতনার মধ্যেও কমবেশি পার্থক্য ছিলো। কিন্তু আমরা যদি চেতনাকে একটি অখন্ড বোধ হিসেবে না দেখে একটি স্তরে স্তরে বিন্যস্ত সাধারন মূল্যবোধ হিসেবে দেখি তবে আমরা বিশাল জনতার মধ্যে অনিবার্য পার্থক্যকেও চেতনার মধ্যে ধারন করতে পারবো।

আমি মনে করি আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন চেতনার প্রাথমিক স্তরে অর্থাৎ সকল মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে বিস্তারিত চেতনার প্রথমে রয়েছে স্বাধীনতা। সেই সময়ে মুক্তিকামী প্রত্যেকেই পাকিস্তান নামে দুই হাজর মাইল দূরের একটি বিজাতীয় দেশ কতৃক আমাদের দেশের উপরে শ্রেফ ধর্মের অজুহাতে প্রভুত্ব চালানোর বিরোধী ছিলো। বিদেশীদের থেকে স্বাধীনতার মতো মানব ইতিহাসের অত্যন্ত প্রাচীন কিন্তু মৌলিক একটি গোষ্ঠীগত চেতনাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক চেতনা। আমার মতে এর পরের স্তরে, অর্থাৎ প্রথম স্তরের চেয়ে কম হলেও পরবর্তী ব্যাপক বিস্তারিত চেতনা ছিলো গনতন্ত্র। মুক্তিকামী লোকদের অধিকাংশই মনে করতো এই দেশে, জনগনের ভাগ্য নিয়ন্তা হবে জনগনই। এই দুটি প্রাথমিক চেতনার স্তরের পরেই ছিলো অন্যান্য আকাংখা বৈষম্যহীন সমাজ, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাংগালী সংষ্কৃতি এরকম অন্যান্য। এর কোনটি অন্য কোনটির আগে অথবা পরে এটি আলোচনা করা এখানে সম্ভব নয়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কিছুটা বিশ্লেষন করলেই আজকে এই ‘চেতনা বনাম গনতন্ত্রে’র দ্বন্দ্বে ভয়াবহ কন্ট্রাডিকশনটি চোখে পড়ে সরাসরি। গনতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম প্রধান অংশ। চেতনা সেই গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে নিজেকেই একটি চরম সেলফ কন্ট্রাডিকশনের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই কন্ট্রাডিকশনটি যদি দ্রুত নিরাময় না করা হয় তবে এর পরিনতি কি হবে এটি অনুমান করা শক্ত নয়। গনতন্ত্রের মতো আধুনিক মানুষের মৌলিক এবং সার্বজনীন একটি চেতনার বিরুদ্ধে দাড়িয়ে অক্ষত অবস্থায় দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, সেটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মতো শক্তিশালী অনুভূতি হলেও।

কিন্তু আরো আশংকার কথা যে ২০১৩ এর শেষে চেতনাকে শুধুমাত্র গনতন্ত্রের মতো শক্তিশালী একটি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দাড় করানো হয় নি, ঘটনা প্রবাহের পরিনতিতে চেতনা অবস্থান হয়ে পড়ছে আরো মৌলিকতম একটি চেতনা ও আবেগের বিরুদ্ধে। সেটি হলো বিজাতীয় শক্তির প্রভূত্বের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাংখা। চেতনা যদি স্বাধীনতার বিরুদ্ধেও অবস্থান নেয় তবে জনগনের মধ্যে তার অবস্থান কি হতে পারে এটি তুলে ধরার কোন প্রয়োজন পড়ে না।

আমরা যদিও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জনগনের কাছে স্পষ্ট করি নি তবু স্বাধীনতার পরে গত চার দশকে এই চেতনা আমাদের গনতন্ত্র ও রাজনীতিতে অনেক গুরূত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে ধর্মীয় মৌলবাদের মতো প্রচন্ড শক্তিশালী একটি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এই চেতনাই এখনো আমাদের গনতন্ত্রের সবচেয়ে বড়ো অবলম্বন কারন আমাদের জাতির মধ্যে উদারনৈতিক মূল্যবোধের প্রসার এখনো ঘটে নি। একারনে গনতন্ত্রের সাথে চেতনাকে বিরোধে জড়িয়ে ফেলাতে মৌলবাদের পথই আরো সুগম হচ্ছে। যারা চেতনা রক্ষার সরব-উচ্চকন্ঠ, তাদের একটা জিনিষ বোঝা উচিৎ যে রাজনীতিতে পট পরিবর্তন ঘটে সময়ের স্কেলে খুব দ্রুততার সাথেই। কেউই কখনো একাধারে এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকে না, দ্রুত পরিবর্তনই রাজনীতির চিরায়ত বৈশিষ্ট। কিন্তু কোনো আদর্শ বা চিন্তা যদি একবার জনগনের মধ্যে বিচ্যুত, পতিত বলে গণ্য হয়, তবে তার পূর্নবাসন হতে সময় লাগে অনেক অনেক বেশী, কখনো সেটি আর হয়ে ওঠেই না।

চেতনার বড়ি by Emrul Mahmud

Capacity আর achievement যে এক জিনিস না, তাও আবার বুজাইতে হয় চেতনাজীবীদের। দূর মিয়া, আপনাগো এই এক সমস্যা সবকিছুতেই বাম হাত না ডুকাইলে আপনাদের হয়না; বি পজিটিভ। অন্যের অর্জনকে সাধুবাদ জানাইতে শেখেন। হ ভাই লাইনে আইছেন। আমরা তো সাধুবাদ জানাতে চাই; কিন্তু ভণ্ডামি করার দরকারটা কি? আমাদের তো প্রশ্ন ওই ভণ্ডামিতে। আপনি হাফ সেঞ্চুরি করছেন ভালো কথা, বাহবা আপনার প্রাপ্যই। খেলা যেহেতু শেষ হয়নি, ওভার ও আছে; দেখেশুনে খেলতে পারলে সেঞ্চুরিও করা যাবে। হাফ সেঞ্চুরি করছেন দর্শক হাততালি দিবে; এটাইতো স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি হাফ সেঞ্চুরি করে যদি সেঞ্চুরি উদযাপনের ভঙ্গি করেন; তখন দর্শকরা তো ভড়কাবেই। হাফ সেঞ্চুরি কইরা যদি কোন ব্যাটসম্যান হেলমেট খুলে দুইহাতে ব্যাট আর হেলমেট উপরে উঠান আর দর্শকদের উদ্দেশ্যে ব্যাট নাচাতে নাচাতে পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করেন; তখন দর্শক হিসেবে আপনি কি হতভম্ব হবেননা। হতভম্ব হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। না আপনি যেহেতু চেতনার ট্যাবলেট খেয়েছেন তাই হতভম্ব না হওয়ার ভান করছেন। অস্বাভাবিকতাই আপনার কাছে স্বাভাবিকতা। যিনি স্বাভাবিকভাবেই হতভম্ব হয়েছেন, তাকে নিয়েও আপনার তেনা প্যাঁচানো – তিনি কেন হতভম্ব হয়েছেন? চেতনার ট্যাবলেট খেয়ে এতই বিবেক হারিয়েছেন যে, প্রতিনিয়ত সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ আপনার দৃষ্টিগত হয়না। যারা কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দেয়, তারাই সুস্পষ্ট সংবিধান লঙ্গন করলেও আপনারা যুক্তি খুঁজে পান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, চেতনা পরিপন্থি কাজ করলেও আপনাদের দৃষ্টিগোচর হয়না। মজার ব্যাপার হোল অধিকাংশ চেতনাজীবী চেতনাটা কি তাই জানেনা। একবার এক চেতনাজীবীকে জিজ্ঞেস করলাম, সবসময় যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলস, সেই চেতনাটা কি? সে আমাকে সদউত্তর দিতে পারেনি। আমি তাকে বললাম আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত’ ভাবে কায়েম করবার জন্য। ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে’ সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র কায়েম এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ১৯৭১ সালের ১০ ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়েছিল। ঘোষণা করা হয়েছিল ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’/সেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ‘সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র’ রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হচ্ছে ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে’/পাকিস্তান আমাদের ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার থেকে বঞ্চিত করেছিল বলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম। তুই আমাকে বল, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বুলি আওড়ান তারাই চেতনা পরিপন্থী কাজে বেশি লিপ্ত। সমাজের একটি অংশকে সামাজিক সুবিচার থেকে কি বঞ্চিত রাখা হচ্ছে না? সে আমাকে জবাব দিল, স্বাধীনতার পর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত আওয়ামীলীগই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লালন করছে এবং বাস্তবায়ন করেছে। আমি আর কথা বাড়ালাম না, শুধু বললাম গরু-ছাগলের দল যেমন জানে না তাদের যারা হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা তাদের চারণক্ষেত্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, না কসাইখানার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তারা কেবল চোখ বন্ধ করে যারা হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের ইশারায় চলতেই থাকে। তোদের অবস্থা গরু-ছাগলের মতই, চেতনার বড়ি খেয়ে তোরা বুজতেই পারছিসনা চেতনা পরিপন্থি কাজ কি?

“কালীদা, বাঙালী হওয়া কাকে বলে?”

Image

সময় কাল, ১৯৭১/  বিহান তার ব্যাগটা গুছিয়ে নিচ্ছে । সীমান্তে যাবে, training নিতে, যুদ্ধে যাবে বিহান। পশ্চিম পাকিস্তানীদের অবিচারের বিরুদ্ধে একটি ন্যায়যুদ্ধে । ১৬ বছরের দিহান অস্থির হয়ে ছুটে আসে বিহানের ঘরে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ভাইয়া তুমি রফিকে বাঁচাও। মোহাম্মদ রফি দিহানের বন্ধু, সমবয়সী। বাইরে গোলাগুলি শোনা যাচ্ছে। বিহান শুধু বলল, রফিকে বাসায় এনে উপরের ঘরে লুকিয়ে রাখ।  কিছু হবে না ওর। আমি আছি না। হেসে বেরিয়ে গেল বিহান। দিহান ছুটে গেল  রফির সন্ধানে।

বিহান একটু চিন্তিত। খবর পেয়েছে , বিহারীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে বাঙালীরা। যুদ্ধে এটা হয়ই বোধ হয়। কিছু বাঙালী মনে করছে, এই উর্দু বলা বিহারীগুলোকে ধরলেই  বোধ হয় পাকিস্তানীদের নির্মম অত্যাচারের শোধ নেওয়া হবে। বিহান ভাবে, বন্ধু পবনদা, মিহিরদা, আজিজ, তাজু ,মানস এদের নিয়ে  কিছু একটা করবে, সীমান্তে যাবার আগেই। এই নিশ্চিন্তপুরে এটা হতে দেয়া যায় না।

রফি লুকিয়ে আছে, দোতলার ঘরে, ঠিক বারান্দার পাশেই। দিহানও আছে তার সাথে। বুক ফুলিয়ে বার বার বলছে, রফি, ভাবিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে। বিহান ভাইয়া তো মুক্তিযোদ্ধা, ওরা কেউ এখানে তোকে খুঁজতে আসবে না।  রফি শুধু বলে, “আব্বা, আম্মা, ভাইয়া এদের তো কোনো খবরই পেলাম না। ওদের যদি তোর এখানে নিয়ে আসতে পারতাম!” হঠাৎ বাইরের রাস্তায় আওয়াজ, রফির মায়ের কন্ঠ, “ও বেটা, আমার রফি কোথায়?”; রফির বড় ভাই, হাসান এর গলা শোনা যায়,“ও আম্মা, ও বাঁচুক”! চিৎকার শোনা যায়, “চুপ”/ রফি ছুটে যায় রাস্তায়। দিহান ওকে আটকাতে পারে না।  রফি যোগ দেয় বিহারীদের কাফেলায়, ওরা তাদের বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে, শোধ নিতে!

আচমকা কালিভূষণ! কালিভূষণ নাটক শেখায় ছোট্ট শহরটিতে, দিহান, বিহান, রফি, হাসান সকলেই  নাটক শিখেছে  কালিদার কাছে। যে বছর রফি, “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ” আবৃত্তি করে প্রথম পুরস্কারটা পেল, সে বছরই কালিদা তাকে টেনে নিয়ে গেল তার নাটকের দলে, তখন থেকেই রফি কালিদার প্রিয় ছাত্র!

কালিভূষণ কাফেলার সামনে এসে দাড়ায়। রফি, কালিদাকে দেখে হাসে, বলে উঠে চমৎকার শুদ্ধ বাংলায়-

“কালিদা, বাংলা আবৃত্তি শেখালে, বাংলা নাটক শেখালে, শেখালে না কি করে বাঙালী হতে হয়”।

মুহুর্তের জন্য থমকে গেলেও পরমুহুর্তেই কাঁদতে কাঁদতে গড়াগড়ি খায় কালিভূষণ, ধুলো ভরা রাস্তার উপরে। “বাবাগো আমার, তোরা ছেড়ে দে ওকে। ওতো বাচ্চা ছেলে আমার!”

বীর পুরুষের দল, ধমকে উঠে কালিভূষণকে, “আহ, কালিদা, কাজের সময় জ্বালাতে এসো নাতো, সরে যাও,” একরকম ধাক্কা দিয়েই সরিয়ে দেয় তাকে। কালিভূষণ কাঁদতে থাকে, বীর পুরুষের দল এগিয়ে যায়, এগিয়ে যায় রফি, আমানত, হাসানদের কাফেলা।

Image

তারপর, অনেক দিন পার হয়ে যায়,লাখো বাঙালীর  আত্মত্যাগ, হাজারো নারীর সম্ভ্রম, আর একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পরে বাঙালী পায় নতুন একটা দেশ, বাংলাদেশ। বাংলাদেশীরা যুগ যুগ ধরে গর্ব করতে থাকে এই দেশ নিয়ে, তর্ক করতে থাকে স্বাধীনতার পক্ষের এবং বিপক্ষের শক্তি নিয়ে, স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছিল, এনিয়ে চায়ের কাপে উঠে ঝড়।

এভাবে ৪০ বছর কেটে যায়। এরি মাঝে একদিন হজরত শাহজালাল এয়ারপোর্ট এ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এর একটি বিমান এসে নামে। মোহাম্মদ রফির আরেক ভাই, মোহাম্মদ নায়ীম, এসে পৌছায় ঢাকায়।  ৭১ এ সে এবং তার আরেক ভাই  লন্ডনে পড়ছিল। ঢাকায় পৌঁছেই সোজা চলে যায় বাসের উদ্দেশ্যে। বাস এসে থামে ঠাকুরগাঁয় । চৌরাস্তায় এসে অবাক হয়ে চারদিকে তাকায় নায়ীম । কত্ত বদলে গেছে শহরটা । কি যেন খুঁজে সে, নিজেও বোঝে না কি তা ! হঠাৎ চোখে পড়ে খুব চেনা একটা মুখ। একটু ইতস্তত করে এগিয়ে যায় সে।

“পবনদা; চিনতে পারছ?” শুদ্ধ বাংলায় প্রশ্ন নায়ীম।

পবন চমকে উঠে। “নায়ীম না”!

“হুম”।

দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। অপলক। কত্ত ভাবনা, কত্ত স্মৃতি ভেসে উঠে।  জড়িয়ে ধরে পবন নায়ীমকে।

“কবে এলি নায়ীম ?”

“গতকাল, পবনদা। কেমন আছো তুমি, তোমরা ??”

“আছি ভালই”।

পবন নায়ীমকে নিয়ে যায় বিহানের বাসায়। বৈঠকখানায় বসে পেপার পড়ছিল বিহান। নায়ীমকে দেখে বুঝে উঠতে পারে না বিহান কি বলবে । নায়ীম এগিয়ে যায় বিহানের দিকে। বাঁধ ভেঙ্গে যায় বিহানের। বলে ওঠে, “আমাকে মাফ করে দিস নায়ীম, পারিনি আমি ওদের বাঁচাতে, আমায় মাফ করে দিস”।

“বাদ দাওনা বিহান ভাই, Nothing is unfair in love and war.  তোমরা ভালো আছো তো? এতো প্রাণ, এতো রক্তের বিনিময়ে এই মায়াভরা দেশটাতে তোমরা সুখে আছো তো?”

কাঁদতে থাকে নায়ীম, কাঁদতে থাকে পবন। ৪০ বছরের পুরনো কান্না।

তারপরে আরো কিছু দিন কেটে যায়। আড়িয়াল বিলের মানুষগুলো ফুঁসে উঠে, বাপদাদার ভিটা রক্ষার সত্য আন্দোলনে, একটা বোকা নিরুপায় পুলিশ মরে যায় এর মধ্যে, শেয়ারবাজারের ভরাডুবিতে লাখ লাখ মানুষ নেমে পড়ে পথে, সংবিধান মুদ্রণ, পুনর্মুদ্রণ এর খেলা চলে, মেহেরজান নিয়ে ব্লগে, ব্লগে চলে বিশাল উত্তেজিত আলোচনা, ধর্ষিত হেনার মৃতদেহের শুকিয়ে যাওয়া দোররার দাগ নিয়ে চলে গবেষণা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তথাকথিত শিক্ষিত আলেমেরা পায় ফতোয়া দেবার সরকারী অনুমতি, ওদিকে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলতে থাকে ফেলানি।

আগের প্রজন্মের গর্বের বাংলাদেশ রয়ে যায় আমাদের ভালোবাসার হয়ে, কর্পোরেট নারীপুরুষ লাল-সবুজ জামা পরে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে উঠে নীরব সংসদ ভবনের সামনে। আর আমি, সারাজীবন বিজ্ঞান পড়া মানুষটা,  প্রাপ্ত বয়স্কের মাথা নিয়ে খুঁজি একটি জরুরী প্রশ্নের উত্তর; “ বাঙালী হওয়া মানে কি?”

(চরিত্রগুলোর নাম বদলে দেওয়া হয়েছে)

Tinker, tailor, soldier, coup-maker

1

The country of Bengal is a land where, owing to the climate’s favouring the base, the dust of dissension is always rising – so said the Mughal court chronicler Abul Fazl in the 16th century. Four hundred years later, the People’s Republic of Bangladesh has been a country where the dust of dissension has repeatedly risen among the men armed to guard the republic.

The country’s founder Sheikh Mujibur Rahman was killed with most of his family in a brutal coup in 1975. Within a decade of the country’s 1971 Liberation War against Pakistan, much of the political and military leadership of the war were either killed or politically delegitimized by successive coups. And the coups of the 1970s reverberate even today, as Humayun Ahmed found out shortly before his death — his last novel, set in 1975, has been effectively banned because his depiction of history doesn’t suit the version favoured by Bangladesh’s current political dispensation. The politicised quest for what Naeem Mohaiemen calls shothik itihash stifles the freedom of speech and thought, and sets back academia and creativity.

Of course, what actually happened in the 1970s, and beyond, should be subject to serious debate. History isn’t, after all, mere recount of dates and facts. History should be about understanding what happened and why they happened. Needless to say, one’s understanding depends on one’s own political biases.

Over the folder, I summarise major mutinies/coups/rebellions of the past four decades, and the narrative reflects my own biases and ideological prisms – just as one’s terrorist is another’s freedom fighter, so is one’s mutiny someone else’s revolution. For the interested reader, a reading list is provided at the end.

Continue Reading

মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীণতা ও আমাদের ভবিষ্যত

By Shikin Aman 

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়। আড়াইশত বছর পরাধীনতার পরে আমরা একটা স্বাধীণ দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাড়াই এই মহান যুদ্ধের মাধ্যমে। এই যুদ্ধে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তারা আমাদের জাতীয় বীর।দেশের একটা ক্রান্তিলগ্নে তারা আমাদের মুক্তির পথের দিশারী ছিলেন। তাদের সেই মহান আত্মত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন কি আমরা করতে পেরেছি, নাকি আমরা তাদের অর্জনকে শুধু ক্ষুদ্রস্বার্থে ব্যাবসার কাজে লাগাচ্ছি? আমাদের দেশের উন্নতির জন্য কি এই মহান স্মৃতি পথিকৃত এর ভুমিকা রাখছে, নাকি এর অপব্যাবহারে আমাদের উন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে? দেশের উন্নতির জন্য ভবিষ্যত সরকারের কাছে আমাদের কি চাওয়া থাকতে পারে?

Continue Reading