শুধু জানান, আমাদের এই জিম্মি অবস্থার অবসান কবে

download (2)

by zainuddin sani

দেশের অবস্থাকে ঠিক কিসের সঙ্গে তুলনা করা যায়? দাবা খেলার ‘স্টেলমেট’ না টেস্ট ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার ‘ড্র’। খেলার সঙ্গে তুলনা করার একটি সমস্যা আছে। কিছু খেলায় সময় নির্ধারিত আছে, এখানে নেই। কেউই জানে না কবে নাগাদ একটা ফয়সালা হবে। সেদিক দিয়ে ভাবলে দাবার সঙ্গে তুলনা করা যায়। কারণ এখানে খেলায় সময় নির্ধারিত নেই, তবে সেখানে খেলার অবস্থা বুঝে ‘ড্র’ মেনে নেয়ার মত সুযোগ আছে। তবে দেশের বর্তমান অবস্থায় ‘ড্র’য়ের কোন সুযোগ নেই। প্রাচীন রোমের ‘গ্ল্যাডিয়েটর’দের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার মত অবস্থা বলা যায়। বিশাল এক দর্শক শ্রেণীও যেমন আছে, একজনের পরাজয়ের ভেতর দিয়ে খেলা শেষ হওয়ার নিয়মও তেমনি আছে। সময়ের কোন সীমানা নেই। তবে সেখানে তৃতীয় একজনের জেতার সম্ভাবনা নেই। রাজনীতির এই খেলায় এই ব্যাপারটা আবার আছে।
খুব সাধারণ কিসিমের একজন জনতাকে জিজ্ঞেস করলাম, কিছু হচ্ছে না কেন? উনি উত্তর দিলেন, টেস্ট ক্রিকেট চলছে, এখানে তো টি টুয়েন্টির মত দ্রুত রেজাল্ট এক্সপেক্ট করতে পার না। তুলনাটা খারাপ লাগলো না। তারপরও, পুরোপুরি মেনে নিতে পারছি না। যদিও টেস্ট ক্রিকেট, ক্রিকেটের ‘লঙ্গার ভার্সান’ তারপরও এর একটি লিমিট আছে। খেলাটা তো আর অনির্দিষ্ট কালের জন্য খেলা হয় না। বর্তমান অবস্থার মেয়াদ তো বোঝাই যাচ্ছে না। কখনও মনে হচ্ছে, আজকেই শেষ হয়য়ে যাবে, আবার মনে মনে হচ্ছে, থামবেই না।
খেলাটায় যদিও লাশ পড়ছে, মানুষ পুড়ছে, তারপরও বলা যায়, দুই দলের সমর্থকরা গোঁয়ারের মত বসে আছে, ‘চলুক খেলা, দেখি কে জেতে’। দোষ কার তা নিয়ে দুই দলের সমর্থকরা কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করছে আর এই বিশ্বাস নিয়ে এখনও ফেসবুক আর ব্লগে আশাবাদ জানিয়ে যাচ্ছে ‘জয় আমাদের হবেই’। শুধু কি তাঁরা, দেশবাসীও কিছুদিন আগে পর্যন্ত চাইছিল, চলুক খেলা। হয়য়ে যাক একটা হেস্তনেস্ত। যদিও এই মুহূর্তে বোঝার কোন উপায়ও নেই কে জিতছে, যদিও বোঝার উপায় নেই কোন এক পক্ষের জয় নিয়ে দেশবাসীর খুব বেশি মাথাব্যাথা আছে কি না, তবে একটি ব্যাপার নিশ্চিত, আর তা হচ্ছে দেশবাসীর খেলা দেখার শখ মিটে গেছে। প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়য়ে ওঠা দেশবাসীর এখন একটাই প্রত্যাশা, যে ই জিতুক, একজন কেউ জিতুক।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ঘটনা আটকে আছে তো আছেই। কোন পরিণাম নেই, ফলাফল নেই। কেউই জিতছেও না, হারছেও না। অবস্থা এমন হয়েছে যে, তা দেখে ভবিষ্যৎবাণী করবার উপায়ও নেই, কে জিতবে বা কে হারবে?
কে জিতবে তা নিয়েও চলছে সাসপেন্স। জয় ব্যাপারটা পেন্ডুলামের দোলকের মত দুলছে আর বেশ ভালভাবেই দুলছে। একসময় আওয়ামীদের দিকে তো অন্যদিন বিএনপির দিকে। একবার মনে হচ্ছে, আওয়ামীদের পেছানো ছাড়া উপায় নেই, পর মুহূর্তেই মনে হচ্ছে বিএনপির আর কোন আশা নেই। আবার কেমন করে যেন দুই দলই প্রতিযোগিতায় ফিরে আসছে। এখন পর্যন্ত, ‘কেহ নাহি কম যায় সমানে সমান’ চলছে। মনোবল দুই দলের নেতাকর্মীরই চাঙ্গা। জনতা, যারা দুরু দুরু বক্ষে অপেক্ষায় ছিল খেলাটির একটি ‘নেইল বাইটিং’ ফিনিশ দেখবার জন্য, তাঁদের এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। তাঁদের এখন একটি ব্যাপার নিয়েই মাথা ব্যাথা, আর তা হচ্ছে, কতদিন ধরে চলবে এই খেলা। কিংবা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে একটি ‘ডিসাইসিভ’ ফলাফল।
সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন, খেলা কি এই গতিতেই চলবে? উত্তরটা হয়তো সামনের কিছু দিনের ভেতরেই বোঝা যাবে। সরকার হার্ডলাইনে যাবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। কিছু ক্রস ফায়ার হয়েছে, প্রায় সাত হাজার গ্রেফতার। হার্ড লাইনের ভেতর আর কি পড়ে বোঝা যাচ্ছে না। সম্ভবতঃ বিএনপির যেকয়জন নেতা বাইরে আছে, তাঁদের একটা গতি করা। আর সেই মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন, ম্যাডামকে গ্রেফতার করা হবে কি না। কার্যালয়ে অন্তরীন রাখার সিদ্ধান্তের যেভাবে হঠাৎ করে ইতি ঘটল, তাতে মনে হচ্ছে না সরকার সেদিকে পা বাড়াবে।
অন্যদিকেও বেশ বড়সড় একটা প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ঝুলছে। বিএনপি এভাবে কতদিন চালাবে? যত দিন যাচ্ছে, জ্বালাও পোড়াও ব্যাপারটা ব্যাকফায়ার করছে। যদিও তাঁরা বলছে, পেট্রোল বোমা আর ককটেল তাঁরা ছুঁড়ছে না, তবে পুরোটা বিশ্বাস মনে হয় না করাতে পারছে। আওয়ামী স্যাবোটাজ হয়তো কিছু হচ্ছে, তবে বিএনপি একটাও কক্টেল ছুঁড়েনি, তা বোধহয় পাবলিককে গেলানো যাবে না। ফলে তাঁদেরও এই চিন্তা তাড়িয়ে নিচ্ছে, আর কি করা যায়।
দুই বড় দলের মানসিকতা এমন হয়েছে যে একদল জিতলে, অন্যদল সংসদে যাবে না, একদল যা চাইবে, অন্যদল ঠিক তাঁর উল্টোটা চাইবে, একজন ক্ষমতায় থাকা কালীন নির্বাচন দিলে অন্যদল নির্বাচনে যাবে না। জনগণ এ ও জানে, দুই দলের নেত্রীর এই দা কুমড়া সম্পর্ক নিয়েই দেশবাসীকে চলতে হবে। ক্ষমতায় থাকা কালীন পাঁচ বছর, বিরোধীদল শীতকাল আসলেই কিছু আন্দোলন করবে আর সারা বছর মোটামুটি খুচরা কিছু হরতাল আর অবরোধ দিবে, আর আমাদের এসব মেনে নিয়েই চলতে হবে।
দুই নেত্রীর প্রতিই আমাদের প্রত্যাশা এখন এতোটাই কমেছে যে এই মুহূর্তে শুধু একটাই প্রত্যাশা, শুধু আমাদের জানান যে এই জিম্মি অবস্থা থেকে আপনারা কবে নাগাদ আমাদের মুক্তি দিবেন।

এঞ্জয় দ্যা গ্ল্যাডিয়েটরিয়াল ফাইট

roman-gladiators-5

by zainuddin sani

‘সো? হু ইজ উইনিং?’ এই মুহূর্তে সবার মনে কেবল এই একটাই প্রশ্ন। নেতা নেত্রীদের কথার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সবাই এই একটা প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। সমঝোতার কথা কে বেশি বলছে? তার মানে সে হারু পার্টি। পাতি নেতাদের কাজই হচ্ছে জ্বালাময়ী কথা বলা। বিএনপির পাতি নেতারা ‘দাঁত ভাঙ্গা জবারে’র কথা বলে বলে নিজেদেরই দাঁত ক্ষয় করে ফেলেছেন আর আওয়ামী পাতি নেতারা সারাক্ষণ হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ‘তাঁরা চাইলে বিএনপির কি দুর্গতি করতে পারেন’। এবং যথারীতি কোন পক্ষই কিছু করতে পারছে না। ফলাফল হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কেউই আর এইসব পাতিনেতাদের কথা পাত্তা দিচ্ছেন না।

সব চোখ এখন বড় দুই নেত্রীর দিকে। হার্ডলাইনে যাওয়া থেকে সরে আসবার কোন কথা কি নেত্রী বলছেন? কিংবা আন্দোলন আরও বেগবান না করে আলোচনা করার কথা কি নেত্রী বলছেন? বাক্যের শব্দগুলো কত কর্কশ কিংবা কত মোলায়েম তা দেখে সবাই ঠিক করে নিচ্ছেন, বল এখন কার কোর্টে। বাকি যত দর্শক আছেন, সুশীল থেকে কুশিল, দেশি হোক আর বিদেশী, সবার মুখে এখন একই নামতা, ‘আলোচনা কর’। এদের পাত্তা দেয়ার তেমন কিছু নেই। এরা সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এই কথা বলে আসছেন, আর আমাদের নেতারা তাঁর তোয়াক্কা না করেই নিজেদের গোঁয়ার্তুমি যথারীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। মূল যে প্রভু, তিনি যতক্ষণ কোন একটি দলের সঙ্গে আছেন, অন্য কেউ তাঁর কিচ্ছু করতে পারবে না। তাঁরা অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু বলেন না, নেতা নেত্রীদের মুখের ভাষা শুনে বুঝে নিতে হবে, বাতাস ঘুরে গেছে কি না।

আওয়ামীরা যে লাইনে ফাইট দিচ্ছে তা হচ্ছে হরতাল অবরোধে হওয়া মৃত্যুগুলোকে হাইলাইট করার চেষ্টা করে যতটা ফায়দা লোটা যায়। ভয়াবহতম মৃত্যুগুলোকে নিয়েই সবেচেয়ে সেন্টিমেন্টাল ফায়দা হাসিল করা যায়। পত্রিকায়, টিভিতে কিংবা টক শোর আলোচনায় যত বেশিবার এই টপিক আসবে, ততো বেশি সুবিধা আওয়ামীদের। নিজেদের পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলে তাই বারবার এই বিষয়গুলো আনবার চেষ্টা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির এই মুহূর্তের প্রধান চিন্তা, আন্দোলনে যেন ছেদ না পড়ে। লাশগুলো কিছুটা ব্যাকফায়ার করছে, তবে অবরোধ আর হরতাল তাঁর ইমপ্যাক্টও ফেলছে। সরকারকে যে বিচলিত করে ফেলেছে তা আওয়ামী পাতি নেতাদের লম্ফঝম্ফ দেখে আন্দাজ করে নেয়া যাচ্ছে।

তবে দুই দলেরই মূল সমস্যা হচ্ছে ‘দীর্ঘসুত্রিতা’। আন্দোলন দীর্ঘ হলে আওয়ামী বিএনপি দুদলেরই সমস্যা। আওয়ামীদের সমস্যা হচ্ছে, প্রমাণ হয়ে যাবে তাঁরা অথর্ব, এই আন্দোলন দমানোর ক্ষমতা তাঁদের নেই। অন্যদিকে অবরোধ আরও কিছুদিন চললে বিএনপিও ঝামেলায় পড়বে। দেশের অর্থনীতির ওপর শুরু হওয়া চাপ এবং সেকারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া জনগণ কিছুটা হলেও তাদেরকে দায়ী করবে। আর মানুষের দেয়ালে পিঠ থেকে গেলে, তাঁরা ঠিক কি করবে, বোঝা ভার। দেশের হওয়া অর্থনৈতিক ক্ষতি সম্পর্কে দুই দলই সচেতন, তবে এটাও জানে, ছাড় দিলেই অবধারিত মৃত্যু।

আওয়ামীদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র এবং বড় দুর্বলতার নাম আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। অবরোধে হওয়া জন দুর্ভোগ কিংবা জ্বালাও পোড়াও থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে আপাতত তাঁরা ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা ঘোচাতে যা তাঁরা করতে পারে, তা হচ্ছে, ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানো। তেমন করবার ইচ্ছে জানাতে গিয়ে পুলিশ, বিজিবি আর র‍্যাব প্রধান বেশ ঝামেলায় পড়ে যান। অতি দ্বায়িত্বশীলতা দেখাতে গিয়ে এমন কিছু কথা বলে ফেলেন, যে পরের দিন তাঁদের আবার ব্যাখ্যা দিয়ে জানান দিতে হয় যে তাঁরা রাজনীতি করেন না। সারাংশ হচ্ছে, যদি তাঁরা অ্যাকশানে যান এবং বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের লাশ পড়ে, তখন পরিস্থিতি কি হবে, তাঁরা নিজেরাও তা আঁচ করতে পারছেন না, আর সেকারণেই চাইছেন, ব্যাপারটা যেন সে পর্যন্ত না গড়ায়। হুমকি ধামকিতে কাজ হলে সবকুলই রক্ষা পায়।

এমন ‘স্টেলমেট’ অবস্থায় সরকারী বাহিনী তাই আপাতত গ্রেফতার পর্যন্তই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন। হুঙ্কার, হুমকি চলছেই, তবে সত্যিই তেমন হার্ডলাইনে তাঁরা যাবে কি না, তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ করছেন। অন্যপক্ষও খুব আরামে নেই। বিরোধী দলের প্রায় সব বড় নেতাই চোদ্দ শিকের পেছনে। আত্মগোপনে থাকা কিছু কিংবা সরকারের সঙ্গে মৃদু লিয়াজো করে চলা কিছু নেতা এখনও বাইরে আছেন। ওপর মহল থেকে প্রতি মুহূর্তের নির্দেশনা না আসায়, কর্মীরা বুঝে উঠতে পারছেন না কি করবেন। অতি উৎসাহে জ্বালাও পোড়াও করবেন? লুকিয়ে থাকবেন? না গ্রেফতার হয়ে নিজেদের অকুতোভয় প্রমাণ করবেন? ফলে দেখা যাচ্ছে, সরকারী দলের ওপর মহলের মত বিরোধী দলের তৃণমূলও এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

একে অপরের ওপর করা গুপ্তচরবৃত্তিতে, মনে হচ্ছে এখন একটি স্থিতি অবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপির কি হতে যাচ্ছে পরবর্তী সিদ্ধান্ত, তা ম্যাডাম আর তারেক সাহেব ছাড়া আর কেউ জানে না। অন্যদিকে আওয়ামীদের সিদ্ধান্ত বা গেম প্ল্যান প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ জানে না। বিভিন্ন পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেল, ‘জানা যায়’ কিংবা ‘বিশ্বস্ত সূত্রের খবর’ বলে যা প্রচার করছে, এই মুহূর্তেই সেটারই কদর সবচেয়ে বেশি। কাকে বেশি চিন্তিত দেখাচ্ছে, কে বেশি হাসিখুশি, কে সাংবাদিকদের সঙ্গে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে কথা বলছেন, এসবই হচ্ছে এখন ‘ব্রেকিং নিউজ’।

বালুর ট্রাক সরানো কিংবা পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলা কিসের ইঙ্গিত, তা নিয়ে সবাই এনালাইসিস শুরু করে দিয়েছেন। ভাইবার, ট্যাঙ্গো, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদির ওপর নিষেধাজ্ঞায় জনগণের ভোগান্তির চেয়ে বেশি আলোচ্য হয়ে উঠছে, কেন সরকার এমনটা করল। ব্রিটেনে পাঠানো চিঠি কিংবা ‘সেনাবাহিনী নামানোর সময় এখনও হয়নি’ এসব ব্যাপার সরকারের আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করছে না ‘নার্ভাসনেস’, তা সময়ই বলে দেবে। বিএনপিরও যে হরতাল আর অবরোধের বাইরে আর কিছু করার কোন ক্ষমতা নেই, তা আবার প্রমাণ করেছে। জনগণকে সাথে যুক্ত করবার তেমন কোন প্রচেস্টাই তাঁদের নেই। তাকিয়ে আছে জামায়াতের দিকে।

পাল্লা কোন একদিকে হেলে পড়ছে, তা বলবার সময় বোধহয় এখনও আসেনি। এই ‘স্টেলমেট; অবস্থা আর কতদিন চলবে, আর কত লাশ পড়বে, দেশের অর্থনীতির কত ক্ষতি হবে, তা সময়ই বলে দেবে। রোমের সেই গ্ল্যাডিয়েটর ফাইটের মত হয়েছে এদেশের দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থা। কোন একজনের জয় ছাড়া এই যুদ্ধ থামবে না। যতক্ষণ যুদ্ধ শেষ না হয়, ততক্ষণ যেমন রোমের অধিবাসীরা উত্তেজিত হয়ে সেই ফাইট দেখত, এদেশের সাধারণ মানুষের এই মুহূর্তে একটাই কাজ, আমাদের দুই রাজনৈতিক নেত্রীর এই ‘গ্ল্যাডিয়েটরিয়াল ফাইট’ দেখা আর সম্ভব হলে ‘উপভোগ করা’।

আলোচনা? কাদের মধ্য? দুই দলের না দুই প্রভুর?

obamamodi

by zainuddin sani

সুশীল সমাজ যদিও তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, তারপরও এই ধরনের অবস্থায় তাঁরা ঘ্যান ঘ্যান করতে এগিয়ে আসে। সাম্প্রতিক কিছু লেখা পড়ে মনে হচ্ছে তাঁরা আবার হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে আসছেন। বক্তব্য তেমন নতুন কিছু না, সেই পুরনো আবদার। ‘আলোচনা করুন’। তাঁদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বুদ্ধি এই দলগুলোর নেই, তাই উপদেশটা দিতে হচ্ছে। ব্যাপারটা কি তাই? এদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায়, আলোচনা করতে চাওয়া মানে, আমার আন্দোলন করার ক্ষমতা নাই কিংবা আমার ক্ষমতা নাই, এই আন্দোলন দমাবার। আর তাই এদেশে কোন দলই সেধে আলোচনার প্রস্তাব দেয় না, বিশেষ করে অপর পক্ষ যখন দুর্বল অবস্থায় থাকে। এরপরও সুশীল সমাজের বুদ্ধিতে পূর্বে কিছু আলোচনা, চিঠি চালাচালি, আলোচনার জন্য বসাবসি, সবই হয়েছিল, এবং যথারীতি সেসবে কোন ফল আসেনি।

বাস্তবতা হচ্ছে, আন্দোলন করে দাবী আদায়ের ক্ষমতা না থাকলে, এদেশের কোন সরকারী দলই বিরোধী দলের দাবী মেনে নেয় না। আর আন্দোলন দমাবার ক্ষমতা থাকলে, সরকারী পক্ষ সেই আন্দোলনকে দমাবার কোন চেষ্টাই বাদ রাখেন না। তাই আন্দোলন করে দাবী আদায় করতে পারবে কি না, তা নির্ভর করছে, আন্দোলন কত জোড়ালো হচ্ছে আর অন্য পক্ষ কতোটা শক্তহাতে তা দমন করতে পারছে এই দুইয়ের ভারসাম্যের ওপর। বহুকাল হল, এদেশের কোন আন্দোলনে, সাধারণ জনতা অংশ নেয় না। ফলে এই মল্লযুদ্ধ মুলতঃ চলে সরকারী বাহিনী আর পিকেটারদের ভেতরে।

গত ছয়বছর, এই পিকেটারের সাপ্লাইয়ে বেশ ঘাটতি ছিল। আর তাই, কোন আন্দোলনেই বিরোধী দল জুত করতে পারছিল না। যা তাঁরা করছিল কিংবা আন্দোলন চালাবার জন্য যা জরুরী হয়ে পড়েছিল, তা ছিল জনগণকে আন্দোলনের কর্মসূচীতে যোগ দিতে বাধ্য করার। এমন কোন কার্যক্রম, যেখানে জনগণ অংশ নিতে বাধ্য। হরতাল আর অবরোধ করতে আপনি বাধ্য। গাড়ী না চললে আপনি উঠবেন কোন বাহনে। আপনার গাড়ী ভাঙবে জানবার পরও আপনি নিশ্চয়ই গাড়ী বের করবেন না। ব্যাস হয়ে গেল, হরতাল সফল।

বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক কার অনুকুলে, এখনও বোঝা যাচ্ছে না। দেশ গোল্লায় গেলেও, এই দুই দলের কারোরই কিছু যায় আসে না। তাঁদের একটাই চাওয়া, আর তা হচ্ছে, নিজের জয় বা অপর পক্ষের পরাজয়। এই যুদ্ধ এর আগেও বেশ কয়েকবার হয়েছে, এখন আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। তবে যে অংশকে নিয়ে বেশি টেনশানে থাকি, যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়ংকর যে অবস্থা, তা হচ্ছে ‘স্টেল মেট’। দাবা খেলার সেই অবস্থা, যেখান থেকে কারোরই বিজয় অর্জন সম্ভব না। টেস্ট ক্রিকেট কিংবা দাবায় যেমন ‘ড্র’ বলে একটা ব্যাপার আছে, রাজনীতিতে তেমনটা নেই। এখানে একজনের জয় কিংবা অন্যের পরাজয়, কোন একটা হতেই হবে। আর সেটা না আসা পর্যন্ত, অর্থাৎ এই ‘স্টেলমেট’ অবস্থা আমাদের সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই। যারা আবদার করছেন, আলোচনার, তাঁরা ভালো করেই জানেন, কিছুই হবে না।

তারপরও এই আবদারগুলো জানানো হয়, এবং সাধারণতঃ তা জানানো হয় বেশ কিছু লাশ পড়ার পরে। আগেও বলা হয়, তবে দায়সারা ভাবে, এবং যথারীতি সেই আবদারে কেউ কর্ণপাত করেন না, মিডিয়ায় আসে না, পত্রিকায় কেউ কলাম লেখেন না। লাশ পড়া মানেই, অবস্থা গুরুতর। দুই পক্ষই বেশ শক্তিশালী। একদল সহিংস আন্দোলন করার ক্ষমতা অর্জন করেছে আর অন্যদল সেই আন্দোলন দমাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহারের প্রয়োজন বোধ করছে। তবে বর্তমান আন্দোলন অতিসম্প্রতি যেসব লাশ সরবরাহ করেছে, তাঁর পুরোটাই নিরুপায় জনতার লাশ। বিরোধীদলের আন্দোলনের আদেশ অমান্য করার কারণে লাশ। এই লাশ উৎপাদনের কৃতিত্ব এখনও কেউ নিচ্ছেন না, একে অন্যকে দায়ী করছেন। তবে এই লাশগুলো দেখে দুই দলের কারোরই এমন কোন বিবেক জাগছে না।

এসব আন্দোলনের জন্য খুব জরুরী হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের লাশের যোগান। সেটাও আবার বড়সড় কোন নেতার। সেটা এখনও হয়নি, এবং ধারণা করা যায় আপাততঃ যোগান হবেও না। বড় সব নেতা আত্মগোপনে কিংবা চোদ্দ শিকের পেছনে। ওদিকে রাষ্ট্রীয় শক্তি, মাঠে নামব, নামব করছে। হুমকি, হুংকার দিচ্ছে, তবে এখনও অ্যাকশানে নামেনি। সেটা নামলে, আর তখন আরও কিছু লাশের যোগান হলে, সম্ভবতঃ খেলা জমে উঠবে। ‘স্টেল মেট’ অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

খেলা অন্যদিকেও হচ্ছে। কূটনৈতিক পাড়ায় দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গেছে। নিজ নিজ প্রভুর কাছে গিয়ে আর্জি পেশ করা হয়েছে, ‘আমাকে বাঁচান’। তাঁরাও ধরি মাছ না ছুঁই পানি টাইপ বক্তব্য দিচ্ছেন। সুশীল সমাজ মুলত এই ধরনের অবস্থার জন্যই অপেক্ষা করে। কারণ এই ধরনের অবস্থায়ই তাঁদের কথা মিডিয়ায় একটু পাত্তা পায়। যে কয়জন সুশীলের গায়ে এখনও দলীয় তকমা লাগেনি, এই সময় তাঁদের কিছুটা কদর হয়। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় কলাম লিখে তাঁরা জানান দেন, অবস্থা এখন গুরুতর, দেশের বেশ ক্ষতি হচ্ছে, অতএব এবার আলোচনা করা যেতে পারে। আগে বলিনি কারণ তখন আমার কথা কেউ পাত্তা দিত না।

আলোচনা আদৌ হবে কি না, আর হলে সেখান থেকে কোন ফল আসবে কি না, তা নিয়ে সব দলই নিজ নিজ বক্তব্য দিচ্ছেন। সেই বক্তব্য অবশ্য আসল বক্তব্য না। সেটা ‘মেন্টাল গেম’। হুমকি দিয়ে অপর পক্ষকে ঘায়েল করা। আগামী কিছুদিনের ভেতর সম্ভবতঃ বড় নেতারা পরিষ্কার করবেন, আলোচনার নাটক করতে তাঁরা রাজী কি না। আরও কিছু ব্যাপার এখনও পরিষ্কার হয়নি। প্রভুরা কি সিদ্ধান্ত নেবেন, কোন প্রভু এবার নিজের দাবীতে অনড় থাকবেন কিংবা দুই প্রভুর কোনজন এবার বাংলাদেশকে অন্যজনের ঝুলিতে দেবেন, তা এখনও তাঁরা পরিস্কার করছেন না। প্রভু দুইজন ২৬শে জানুয়ারী ভারতে মিলিত হবেন। সেখানে যদি দয়া করে তাঁরা কোন সিদ্ধান্ত নেন, তবে রক্ষা, আর নয়তো কপালে আরও ভোগান্তি আছে।

দুই পক্ষই হুমকি দিয়ে রেখেছেন, খেলা আরও জোরদার হবে ২০ তারিখের পরে। অর্থাৎ দুই পক্ষই কোমর বাঁধবেন। আর এটাও ঠিক, তার আগে পর্যন্ত এই ভোগান্তি চলবে। ফেব্রুয়ারিতে অসহযোগের ডাক দেয়া হয়েছে। ওদিকে সেই সময়ে রয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। আগেকার আন্দোলন গুলোতে সাধারণতঃ শুক্র শনিকে রেহাই দেয়া হত, এখন সেটাও দেয়া হচ্ছে না। বিশ্ব ইজতেমার জন্যও তেমন কোন ছাড় দেয়া হয়নি। বেশ অনেক জেলায় জ্বালানী সংকট শুরু হয়েছে। অন্যদিকে বিজিবি দিয়ে পণ্য আর যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করানোর চেষ্টা চলছে। কতদিন চালানো সম্ভব, সময়ই বলে দেবে। জনগণকে জিম্মি করা এই নেতাকর্মী বিহীন আন্দোলন কতদিন টানা যাবে, সেটাও যেমন দেখবার বিষয় তেমনি সবাই অপেক্ষা করছে, সরকারী বাহিনী গুলি ছুঁড়লে আর লাশ পড়লে, খেলার দিক পরিবর্তন হয় কি না।

আপাততঃ আন্দোলনের ‘স্টেলমেট’ অবস্থার যে পরিবর্তন হবে না, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। আলোচনাও যে সমাধান এনে দেবে না, সেটাও সবাই জানে। আমাদের প্রভুরা, এবং তাঁদের নিয়োগ দেয়া কূটনীতিকরা কি করবে কিংবা অন্য কোন সমাধান আসবে কি না, তাঁর দিকেই সবাই তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তের মিলিয়ন ডলার যে প্রশ্ন তা হচ্ছে, ‘সমাধান কোন পথে?’ এই দুই দলের আলোচনায় না দুই প্রভুর আলোচনায়?

আমাদের জন্য এই মানুষগুলো লাশ হয়েছে

hartal

by zainuddin sani

লাশ আসতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই একটি দুটি করে আসছে। প্রায় পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে। তবে সেই ম্যাজিক লাশের দেখা এখনও কেউ পায়নি। ডাঃ মিলন কিংবা নুর হোসেন অথবা সেই লগি বৈঠার আঘাত বা বিশ্বজিৎ। কিছু লাশ সরকারের পক্ষে যায় কিছু যায় সরকারের বিপক্ষে। কিছু লাশ বিরোধী দলের আন্দোলনকে চাঙ্গা করে দেয় কিছু লাশ বিরোধী দলকে কোণঠাসা করে দেয়। আজকের কিংবা কালকের লাশটি কার পক্ষে যাবে কেউই জানি না। তবে এ ব্যাপারটি নিশ্চিত, সুযোগ পেলে সেই লাশ নিয়ে রাজনীতি করতে কেউই পিছপা হবে না।

পেট্রোল বোমার এখন ফ্যাশান চলছে। কক্টেলে এখন আর সেই বিভীষিকাময় ইফেক্ট দেয় না। এখানে সেখানে ঝলসে যায় কিছুটা, হয়তো মাংসে গেঁথে থাকে কিছু স্প্লিন্টার। তবে আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়া বীভৎস লাস পেতে হলে চাই পেট্রোল বোমা আর নয়তো গান পাউডার। শিশুর লাশের ইমপ্যাক্ট সবচেয়ে ভালো। মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যাওয়া শিরশিরে অনুভুতি, ইস, আহা, উহু— সবমিলিয়ে বাজারদর এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে এসব আগুনে পোড়া শিশুদের। এরপরে সম্ভবতঃ শিশুকে বাঁচাতে যেয়ে মায়ের মৃত্যু কিংবা অশীতিপর বৃদ্ধা নারী। পুরুষ মানুষের বাজারদর একটু কম। সঙ্গে কিছু রোমহর্ষক কিংবা করুণ গল্প থাকলেও, বাজারদর খারাপ হয়না। বরং শুরু হয় পত্রিকাগুলোর শিরোনামের খেলা।

লাশ যেমনই হোক, তা থেকে ফায়দা লুটতে দুই দলই নেমে পরে। সরকার নামে আবেগের ঝোলা নিয়ে। ‘দেখো দেখো, কি বীভৎসভাবে খুন করছে বিরোধী দল।‘ যত বীভৎস ততো প্রচারণা। টেলিভিশনে বার বার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো। স্বজনদের আহাজারি। ‘কি দোষ ছিল এই শিশুটির?’ কিংবা ‘এই বাবা এখন কি নিয়ে বাঁচবে?’ জ্বলন্ত গাড়ী কিংবা পথচারীদের মতামত। যা কিছু সরকারের পক্ষে যাবে বলে মনে করে, কাজে লাগাবেই সরকার। ব্লগ, ফেসবুক এবং সেখানে তাঁদের পেটোয়া বাহিনীতো আছেই। আলোচনাকে যতটা সম্ভব মুখরোচক করে তোলা হবে।

এই ধরনের লাশ নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যও বেশ গৎবাঁধা। ‘সরকারী দলের ষড়যন্ত্র’ কিংবা ‘এর পূর্বে যখন আপনারা বিরোধী দলে ছিলেন তখন কি করেছিলেন, তা কি ভুলে গেছেন?’ তবে তাঁদের মুখপাত্র যে ব্যাখ্যা সাংবাদিকদের সামনে পড়ে শোনাবেন সেখানে তিনি লাশের চেয়ে বেশি আগ্রহী হবেন, কেন এই হরতাল কিংবা অবরোধ ডাকতে হল, তাঁর ব্যাখ্যায়। রাজ্যের আবেগ ঢেলে দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করবেন, দেয়ালে তাঁদের পিঠ থেকে গিয়েছিল। হরতাল দেয়া ছাড়া আর তাঁদের কোন উপায় ছিল না। এরপরে আসবে সেই চিরাচরিত গণতান্ত্রিক অধিকারের গল্প, ‘হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার।‘

এই লাশগুলো বিরোধী দলের একেবারেই কাজে আসে না, এমন কিন্তু না। সাহায্য করে, তবে উল্টো পথে। লাশগুলো চিৎকার করে দেশবাসীকে বলে, বিরোধীদলের আন্দোলন, আদেশ, হুমকির পরোয়া করিনি বলে আমাদের এই দশা। তোমরা এই ভুল কর না। লাশের এই ইফেক্টটা বিরোধীদলের সত্যিকারের প্রত্যাশা, তবে তাঁরা সেকথা মুখ ফুটে বলে না। তাঁরা আবার এটাও বলে না, হে আমার দলের সমর্থকরা, তোমরা পিকেটিং কর না। আসলে এই লাশগুলো, বাহ্যিকভাবে বিরোধীদলের কিছুটা অপকার করে, ভেতরে ভেতরে উপকারই করে বেশি। আর সেকারণেই, বীভৎস এই লাশগুলোকে বাহ্যিকভাবে অপছন্দ করলেও, প্রতিটি বিরোধী দলই চায়, লাশ পড়ুক।

যে লাশগুলো বিরোধীদলকে সবচেয়ে বেশি প্রমোদ দেয়, তা হচ্ছে নুর হোসেন বা ডাঃ মিলন টাইপের লাশ। সরকারী পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে ঝড়ে পড়া কোন লাশ। আর সেটাও যদি আসে, সরকার বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে, তবে তো আর কথাই নেই। সেই লাশ নিয়ে গল্প, কবিতা, কলাম সব কিছুই হবে। আঁকিয়েরা ছবি আঁকবে, কার্টুনিস্টরা ব্যঙ্গ করবে। বিরোধীদল সেই লাশ দেখিয়ে দেখিয়ে বলবে, ‘দেখো কি করছে সরকার’। আর সরকার বলবে, দেশের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে, এই কাজটা জরুরী ছিল।‘

লাশের এই রাজনীতি কি আদৌ বন্ধ হবে? কিংবা হরতাল, অবরোধের রাজনীতি? সৎ উত্তর হচ্ছে ‘না’। এই লাশ যতদিন রাজনৈতিক দলগুলোকে মুনাফার যোগান দিবে, ততোদিনতো অবশ্যই না। রাজনৈতিক দলগুলোকে একতরফা দোষও দিতে চাই না। একটি মিছিল কিংবা কিছু আহত, এমন রিপোর্ট আমরা নিজেরাই পড়ি না। লাশ না পড়লে আমরা নিজেরাও ভাবি না, বিরোধী দল সিরিয়াস। হরতালে কোন গাড়ী না পুড়লে, ভাংচুর না হলে, আমরা ধরেই নি, বিরোধী দল কোণঠাসা। আন্দোলনের ক্ষমতা নেই। টক শোতে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনাদের পিকেটিং করার লোক কৈ?’

সমস্যা সরকারী দলেরও। যদি তাঁরা বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে দেয়, আর সেখানে বিশাল লোকের সমাগম হয়, তখন প্রশ্ন শুনতে হবে, ‘সরকারের প্রতি আস্থা কি কমে গেছে?’ কিংবা ‘বিরোধীদল কি বেশি জনপ্রিয়?’ ফলে শুরু হয়, হালুয়া রুটির বিনিময়ে লোক এনে সমাবেশ ভর্তি করা। একদিন সরকারী দল সিঙ্গারা খাওয়ায় তো আরেকদিন বিরোধী দল মিষ্টি খাওয়ায়। আজ সরকারী দল গালি দেয় তো কাল বিরোধী দল গালি দেয়। আমরাও বসে থাকি, বেশি ভালো গালি দিতে পারে, তা দেখবার জন্য। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, আমরাই বাধ্য করছি এই দুই দলকে, ‘শুরু কর মুষ্টিযুদ্ধ’ ‘দখল কর এই দেশ’।

এই মুহূর্তে কোন দলের পক্ষেই পেছানো সম্ভব না। বা সম্মান নিয়ে পেছানো সম্ভব না। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, যে পেছাবে, তারই পরিনতি হবে ভয়াবহ। আমরা জনগণ, তাকেই গালি দিব, ‘ব্যাটা পারিস না তো লাগতে যাস কেন?’ নতুন কোন লাশ যেন আর তৈরি না হয়, যেন শান্তি ফিরে আসে, এই উদ্দেশ্যে যে কেউ এক পা এগোবে, আমরা ধরে নেব, সেই দলই হারল। সরকারের তত্ত্বাবধায়কের দাবী মানা, মানেই সরকার হারল। কখনই ভাবব না, এই সিদ্ধান্ত কত উপকার করল। কখনই ভাবব না, এই সিদ্ধান্তের কারণে, কত মানুষ লাশ হওয়া থেকে বেঁচে গেল। উল্টোটাও ঠিক। বর্তমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচনে রাজী হলে, ‘বিরোধী দলের মুরোদ নাই আন্দোলন করার’।

এই লাশের মিছিল চলবেই। আমাদের জন্যই চলবে। আমাদের এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা দেখার অভ্যাসের জন্যই চলবে। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়, বুঝে কিংবা না বুঝে, আমরাই নিরন্তর উসকে দিচ্ছি এই লাশের উৎপাদন। পত্রিকায় কিংবা টেলিভিশানে দেখে আঁতকে ওঠার আগে আমাদের একবার ভেবে দেখা উচিৎ, এই লাশের পেছনে আমাদের নিজেদের দায় কতোটুকু।

প্রভু, ফোনে না বলে প্রকাশ্যেই বলুন

amit shah

by zainuddin sani

দুজনেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন, বিশ্ব ইজতেমা শেষ হলে, তারপর শুরু করব। এই কথার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, আমাদের সাধারণ মানুষকে আপাততঃ ১৯ তারিখ পর্যন্ত এই জেদাজেদি সহ্য করতে হচ্ছে। কেউই পিছিয়ে আসবে না। সরকারও ম্যাডামকে মুক্ত করবে না আর বিরোধী দলও অবরোধ তুলবে না। বিএনপিরও ক্ষমতা নেই তাঁদের নেত্রীকে মুক্ত করার আর ওদিকে সরকারেরও ক্ষমতা নেই অবরোধ বন্ধ করার। দেশবাসীর এই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা নিয়ে দুই দলের কেউই বিচলিত না। দুইজনেরই চাই বিজয়।

যুদ্ধটা কারো পক্ষেই হারা সম্ভব না। বিএনপি পিছিয়ে আসা মানে তাঁদের সমুহ পতন। আগামী চার বছর তাকিয়ে তাকিয়ে এই সরকারের দেশ পরিচালনা দেখতে হবে আর হাত কামড়াতে হবে। অন্যদিকে আওয়ামীরা হারলে এই ছয় বছরের অত্যাচারের প্রতিশোধ কড়ায় গণ্ডায় উসুল করবে বিএনপি জামাত জোট। দুই দলেরই থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বসে গেছে, পরবর্তী করনীয় নিয়ে অংক কসতে। বিএনপি হিসাব কষেছে, এভাবে আরও কিছুদিন চালাতে পারলে, সরকারের পতন হবেই। আওয়ামীরা অংক কষছে, হার্ড লাইনে গিয়ে, বিএনপির মেরুদণ্ড একবার ভেঙ্গে ফেলতে পারলে, আর সমস্যা হবে না।

পাল্লা কোন দিকে ভারী, এনিয়ে কথা বলার বেশ বড়সড় বিপদ আছে। অবস্থা এমন, ‘উইথ মি ওর এগেন্সট মি’। আওয়ামীরা সঠিক পথে আছে—এমন কিছু বলেছেন মানেই আপনি অবধারিতভাবে ওদের দলে। বিএনপি ঠিক করছে বললেও বিপত্তি আছে—আপনি বিএনপি করেন। দুজনেরই দোষ, এমনটা বললে, আপনাকে কেউ ডাকবেও না, আপনার কথা কেউই শুনবেও না, বলবে ধান্ধাবাজ, এখন দুই দিকেই তাল দিচ্ছে, যে টিকবে তাঁর দিকে হেলবে। কিংবা তখন হিসেব করবে, আগে আপনি কোন দিকে ঘেঁষে ছিলেন, কবে কি লিখেছিলেন বা বলেছিলেন। কিংবা পালটি মারবার ধান্ধায় আছেন কিনা। টক শো এখন হয়ে গেছে বুদ্ধিজীবীদের দলবাজি করার মোক্ষম জায়গা। আগে পত্রিকায় কলাম লিখে বোঝাতেন, ‘আপনিই আমার হুজুর’ আর এখন দুই দলের হয়ে ঝগড়া করে বোঝাচ্ছেন, ‘আমি আপনারই পা চাটি’।

সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সাধারণ মানুষের। তাঁরা কার দিকে তাকাবে? কার কাছে প্রত্যাশা করবে? কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। দুই দলের কেউই তাঁদের কথা ভাবে না, এই তথ্য তাঁরা জানে। এও জানে, ভোট এদের দুজনের একজনকেই দিতে হবে। তথ্যটা এই দুই দলও জানে। তাঁদের তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবীরা ইদানীং এই সুরেই কথা বলা শুরু করেছেন। ‘দেখুন দুই দলই চোর। টাকা উপার্জনের জন্যই এই পেশায় আসা। ফলে যাকেই বসান আপনার বা দেশের কোন উন্নতি হবে না। এরা দুর্নীতি করবেই, টেন্ডারবাজী করবেই। এখন বেছে নিন, কাকে চান।‘ এরপরে দুই দল দুই কথা বলছে। একদল বলছে, গনতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে আর অন্য দল বলছে দেশে গনতন্ত্র দিলে দেশবাসী এমন এক দলকে বেছে নেবে যার সঙ্গে রাজাকার ফ্রি, তাই গনতন্ত্র হত্যা জরুরী।

ফলে ঘুরে ফিরে বিতর্ক মজার এক যায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে, এদেশের লোক এখনও গনতন্ত্র বুঝতে শেখেনি। তাঁরা ভালো আর মন্দের পার্থক্য বুঝতে শেখেনি, ভোটের মুল্য বুঝতে শেখেনি। এখানে এখনও ‘হামগের ছাওয়াল’ শুধু এই কারণে একটি দলকে ভোট দেয়া হয়, নেতার জন্মস্থানের কারণে একজন একটি এলাকার ভোট পান, কেউ বা ভোট চান এলাকার পুত্রবধু হিসেবে। তাই আপাততঃ এদেশের লোকের জন্য গনতন্ত্র না। ব্রিটিশদের কাছে স্বাধীনতা চাওয়ার সময় কমবেশি এরকমই একটি কথা তাঁরা বলেছিল, ‘ইউ কান্ট রুল দাইসেলফ’। নিজেদের শাসন করার যোগ্যতা তোমাদের এখনও হয়নি। তাই তোমাদের শাসন করার ভার আমাদের হাতেই থাক।

সরাসরি না হলেও আমরা পর্দার আড়ালে এই কথাটি মেনে নিই। বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে গিয়ে নিজেদের ইন্টারভিউ দিই। বলি, ‘আমি ওর চেয়ে ভাল, এবার আমাকে দয়া করে ক্ষমতায় বসান। আপনি যা চাইবেন, সব পাবেন। একবার সুযোগ দিয়ে দেখেন। আগেরবার কিছু ভুল করেছিলাম, তবে এবার আর হবে না‘ অন্য দল বলে, ‘একদম বিশ্বাস করবেন না ওর কথা। আর আমাকে পালটাবার দরকার কি। ও যা দিবে বলছে, আমিও তো তা দিচ্ছি। শুধু শুধু ঝুঁকি নেয়ার দরকার কি?’

বিদেশীরাও উপদেশ দেন, সার্টিফিকেট দেন আর অবশেষে চিন্তা ভাবনা করে একজনকে ক্ষমতায় বসিয়ে সবার উদ্দেশ্য বাণী দেয়, ‘এ হচ্ছে দেশবাসীর পছন্দ’। সত্যি বলতে, আমাদের এই ফর্মুলায়ও তেমন কোন আপত্তি নেই। হেসে খেলে এই বক্তব্য আমরা হজম করি। আমাদের নেতা নেত্রীরাও বেশ গর্ব করে বলেন, অমুক দেশ আমাদের সরকারকে অভিনন্দন করেছে। অন্য দল আবার জানান দেয়, মিথ্যা বলছে, আমাদের আসল প্রভু আমেরিকা এখনও অভিনন্দন দেয়নি।

সম্প্রতি প্রতিবেশি দেশের বেশ কদর বেড়েছে। শীতল যুদ্ধ শুরুর কারণেই হোক আর দক্ষিন এশিয়ায় শক্ত অবস্থান তৈরির উদ্দেশ্যেই হোক, প্রতিবেশি দেশটির স্নেহ না পেলে এদেশের ক্ষমতায় আরোহণ সম্ভব না। ফলে শুরু হয়েছে কেবলা পরিবর্তন। কে কার চেয়ে বেশি পা চাটতে পারেন, তার প্রতিযোগিতা। সম্প্রতি হওয়া ফোনালাপ, কিংবা বলা উচিৎ, ফোনালাপের গুজব নিয়ে দুই দলের কর্মী, নেতা এবং তাঁদের বশংবদ বুদ্ধিজীবীরা যেমন কাদা ছোঁড়াছুড়ি করলেন, তা দেখতে বেশ মজাই লাগল।

ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ফোনালাপের কথা ঘটা করে বলবার কি আছে? সবাইকে বোঝানো, আমার দিকে প্রভুর সুনজর আছে? আর অন্য দলের চামচা বাহিনীর উল্লাস ছিল দেখবার মত। ফেসবুক, ব্লগ, পত্রিকা, টক শোতে ছিল উল্লাসের ছড়াছড়ি। গর্বিত কণ্ঠে বেশ উল্লাস করে বলছে, ‘আরে দূর, ভয় পাওয়ার কিছু নাই, ফোন করেই নি।‘ আচ্ছা, এই উল্লাসের কারণ কি? ‘প্রভু এখনও মত পাল্টান নি?’

যদি তাইই হয়, তবে আমাদের ভোট দেয়ার দরকার কি? আপনারা ঠিক করুন, কে কে আমাদের প্রভু। বরং তাঁদের ভেতর একটি ভোট করুন। অবস্থা যদি এমনই হয়, যে আমাদের প্রভু কথিত সেই ব্যক্তি, তাঁর সিদ্ধান্তেই যে সব কিছু ঘটছে। আর সেটাও যখন ‘ওপেন সিক্রেট’ তবে আর লুকোছাপা কেন? তাঁর ভোট দানকে প্রকাশ্য করে দিতে সমস্যা কোথায়? ফোনে না বলে সর্ব সম্মুখেই তাকে সিদ্ধান্ত নিতে বলুন, তাঁর ভোট দানকেও প্রকাশ্য করে দিন। সবার জন্য নির্দেশনা জারী করুন, যে দলের জন্য তিনি ভোট দিবেন, সে গদিতে বসবে।

এতে দল দুটিও বাঁচে, জনগণও বাঁচে। তাঁরা তখন শুধু শুধু জনগণের কাছে বিভিন্ন উন্নয়নের মিথ্যা ওয়াদা না করে সেই প্রভুর কাছে নিজেদের সত্যি ওয়াদা পেশ করবে। যিনি বেশি মুখরোচক ওয়াদা করে প্রভুর মন জয় করতে পারবেন, তার জন্য বরাদ্দ হবে গদি। আমরাও পাব আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকার। আর প্রভুরাও পাবে একজন আজ্ঞাবাহী ভৃত্য।

‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

by zainuddin sani

দেশের রাজনীতিতে কি হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সবাই বেশ বিভ্রান্ত। বিএনপির হুমকি ধামকি দেয়া, আর আওয়ামীদের সেসবে কর্ণপাত না করা, ব্যাপারটা অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। সকালের পত্রিকার দুটি অবধারিত শিরোনাম থাকতো দুই দলের কোন না কোন নেতার শ্লেষাত্মক বক্তব্য। কেন যেন ব্যাপারগুলোকে অনেক বেশী রীতি মাফিক মনে হচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছিল কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে— ‘আওয়ামীরা ২০১৯ পর্যন্ত চাইলে নির্বিঘ্নে থাকতে পারবে’। সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণার পরে, সত্যিকারের প্রত্যাশা কারোরই তেমন ছিল না। কমবেশি সবারই ধারণা হয়েছিল, ৫ই জানুয়ারিকে ঘিরে কোন কর্মসূচি এবং সেই কর্মসূচিতে বাঁধা দিলে কি হবে, তার হুমকি সম্বলিত একটি বক্তব্য আসছে। তার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামীরা কি বলবে, তাও সবাই আন্দাজ করে নিয়েছিলেন। পুরোপুরি তেমনটা হল না, সেদিনের ঘটনা, এদেশের রাজনীতির টিপিক্যাল ফর্মুলার ব্যত্যয় ঘটাল।

আপাত দৃষ্টিতে বিএনপি নেত্রীর ৭ দফা তেমন নতুন কিছু না। এতোগুলো দফার ভেতর মুল দফা একটিই। বাকী দফাগুলোর বেশ অনেকগুলোই সাধারনতঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকারই করে থাকে। আর কিছু খুচরা দফা দেয়া হয়েছে, সম্ভবতঃ নেগসিয়েশানের সময় বাদ দিতে রাজী হবার জন্য, সবাইকে বলা যাবে, ‘সমঝোতার খাতিরে আমরা তিনটি দাবী ছেড়ে দিলাম।’ তবে প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি হচ্ছে অন্য কারণে, এই সময়ে এসে, এমন নরম অবস্থান কেন? যে দাবী গত ছয় বছরে আওয়ামীরা মানেনি, তাদেরকে আবার নতুন করে সেই দাবীর কথা জানানো কেন?

৭দফাকে বেশ নির্বিষ মনে হলেও, কেন যেন সবাই তেমনটা ভাবছে না। সবাই বেশি করে ভাবছেন, এতো মোলায়েম স্বরে কেন কথা বলছেন বিএনপি নেত্রী? তারচেয়েও বড় কথা, আল্টিমেটাম নেই কেন? দফা না মানলে কি হবে, সে সম্পর্কেও নেই কোন ভবিষ্যৎবাণী। বড় জাতের আরও কিছু প্রশ্ন আছে। যেমন বিএনপির গেম প্ল্যান তাহলে কি? সবাই ভাবছেন এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে। আর সেই উদ্দেশ্য কি, তা নিয়ে বোদ্ধা মহলে চলছে কানাঘুষা। কেউ ভাবছেন, ‘নিশ্চয়ই বিএনপি কোন সিগন্যাল পেয়েছে’।

বোদ্ধা মহলকেও খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। তাঁদের এসব কথা ভাববার যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। আসলে এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে পদক্ষেপগুলোকে বেশ পরাজয় বলে ভাবা হয়, তার একটি হচ্ছে দাবী জানানো। বিশেষ করে সেই দাবীর সংখ্যা যদি থাকে একাধিক। আর সেই দাবী পূরণ না হলে, সরকারের কি অবস্থা হবে, সে সম্পর্কে যদি কোন হুশিয়ারি না থাকে, তবে তো অবধারিতভাবে ধরে নেয়া হয়, এই দাবীসমূহের প্রস্তাবকারী হয় সিরিয়াস না কিংবা তাদের তেমন কোন শক্তি নেই।

অন্যদিকে সাহসী পদক্ষেপ ভাবা হয় আন্দোলন কিংবা হুমকিকে। ‘এক দফা এক দাবী’র ও আলাদা একটা দাম আছে। তবে তেমন কিছু একবার বলে ফেললে কিছু একটা করে দেখানো জরুরী। নইলে আবার শুরু হয়ে যাবে অন্য হিসাব। যেমনটা হয়েছিল আওয়ামীদের ‘স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও আটকাতে পারবে না’ হুমকির পরে। আর ইদানীং কালে, বিএনপি সম্পর্কে।

আন্দোলন করে কোন দাবী আদায়ের রেকর্ড বিএনপির খুব একটা নেই। তবে দাবীতে অনড় থাকবার একটা রেকর্ড ছিল। ফলে আগে যখন হুমকি ধামকি দিলেও সেগুলোকে কিছুটা সিরিয়াসলি নেয়া হত। ভাবা হত, সফল না হলেও, কিছু একটা অন্তত করবে। নিজেদের তৈরি করা ‘গুড উইল’এ সম্প্রতি তাঁরা ফাটল ধরিয়েছে। হুমকির অধিক ব্যবহার এবং কিছু করতে না পারা, তাঁদের দেয়া হুমকি সম্পর্কিত এই ধারণায় কিছু পরিবর্তন এনেছে।

এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ফর্মুলা অনুযায়ী ৭ দফাকে নিশ্চিতভাবেই পরাজয় কিংবা পিছু হটা ভাবা যায়। বিশেষ করে গাজীপুরে যেভাবে পিছিয়ে আসলো, তারপরে। ৫ই জানুয়ারীর মত ‘সিম্বোলিক’ দিনে সবাই যেমনটা ভেবেছিলেন, তাঁরা তেমন কিছু করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। এটাও ঠিক, তাঁদের যা সাংগঠনিক অবস্থা, তাঁদের কাছ থেকে ততোটা কেউই প্রত্যাশা করছেন না। আবার এতো নরম কর্মসূচী দিবে, এটাকেও কেউ স্বাভাবিক ঘটনা ভাবতে চাইছেন না। সবার মনে তাই একটি সন্দেহ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, ‘পর্দার আড়ালে কিছু ঘটছে কি না।’

বিএনপি যেভাবে একের পর বিভিন্ন জাতের হুমকি দিয়েও কিছু না করার একটা ট্র্যাডিশান তৈরি করে ফেলেছিল, তাতে কমবেশি সবাই ভাবতে শুরু করেছিল, এই সরকারকে হটাবার ক্ষমতা বিএনপির নেই। আর ইতিহাস বলে, সরকারকে বাধ্য করতে না পারলে, বিরোধী দলের দাবী মেনে নেয়ার মত ঘটনা ঘটে না। আর নরম স্বরে বললে তো নিশ্চিতভাবেই ঘটবে না। এই দাবীর তাই একটি স্বাভাবিক মানে হচ্ছে, হুমকি দিয়ে কিছু না করে নিজেদের ইমেজের যে বারটা বাজিয়েছি, তা আর কন্টিনিউ করতে চাই না। এবার স্বীকার করে নিতে চাই, আমরা অথর্ব। দল হিসেবে, সংগঠন হিসেবে আমরা বেজায় অগোছালো। আন্দোলন করে দাবী আদায়ের ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই এই অনুরোধ ফর্মুলা।

এই স্বাভাবিক ব্যাখ্যার বদলে সবাই কেন যেন অন্য কিছু ভাবছেন। হয়তো ১/১১এর উদাহরণ এর জন্য দায়ী। এদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিদেশ নির্ভরতা এর জন্য দায়ী। হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া বাকী কারো কাছ থেকে সমর্থন আদায়ে এই সরকারের ব্যর্থতা এর জন্য দায়ী। আবার হতে পারে পর্দার আড়ালে এমন কিছু ঘটবার আভাস তাঁরা পেয়েছেন, যা থেকে মনে হয়েছে, এদেশ একটি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। আর তাই, কঠোর আন্দোলনের পথ ছেড়ে, নরম আর সমঝোতা ধাঁচের পথে হাঁটতে রাজী হয়েছেন, বিএনপি নেত্রী।

ধাঁধা আরও আছে। বিএনপির বেশ কিছু বড় নেতার বক্তব্য থেকে বোঝা গেছে, ৭ দফার এই সিদ্ধান্ত নেত্রীর একক সিদ্ধান্ত। সব দলের সাথে আলাপও করেননি। এমনকি নিজ দলের অনেককেও অন্ধকারে রেখেছিলেন। ঘাড়ের ওপর মামলা, বিভিন্ন আন্দোলনে দলীয় বড় নেতাদের পালিয়ে বেড়ানোর মানসিকতা এমন অনেক ব্যাপারকেও এর কারণ ভাবা যেতে পারে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বড় কারণ হিসেবে সবাই ভাবতে শুরু করেছেন, বিদেশী প্রভুদের ইচ্ছেকে।

৭দফা নিয়ে বোদ্ধা মহলের এই প্রতিক্রিয়া দেখে এই প্রশ্নই সবার মনে জাগছে, কি এমন ঘটল যে ম্যাডাম এরকম ‘সফট’ কর্মসূচী দিলেন। কোন আশ্বাস কি পেয়েছেন? আওয়ামীরা নরম হবে কিংবা এভাবে দাবী জানালে মেনে নেবে— এমন কোন আভাস? ১/১১ এর মত কোন ঘটনার আভাস? আওয়ামীদের ওপর থেকে বিদেশী প্রভুদের আশীর্বাদের হাত তুলে ফেলার আভাস? কিংবা প্রতিবেশী দেশের ওপর অন্য কোন বৃহৎ দেশের চাপ প্রয়োগের আভাস? সম্ভবতঃ আর কিছুদিনের ভেতরেই সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে। তখন স্পষ্ট হবে, ‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার— অ্যা পোস্ট মর্টেম

ctggby zainuddin sani  আমার মৃত্যুটাকে ঠিক আচমকা মৃত্যু বা ‘সাডেন ডেথ’ বলা যায় না। দীর্ঘ রোগ ভোগের পরের মৃত্যু বলাটাও ঠিক হবে না। খুন বলা যেতে পারে, তবে মৃত্যুটা হয়েছিল আমার ওপর আসা উপর্যুপরি আঘাতের বেশ অনেক বছর পরে। ছোট খাট ঝড় ঝাপটা গেলেও আমি মোটামুটি বহাল তবিয়তেই টিকে ছিলাম। তিন তিনটে নির্বাচনও করলাম। বিরোধী পরাজিত দল ছাড়া বাকী সবাই বলল নির্বাচন ভালোই হয়েছে। বিদেশী পর্যবেক্ষকরাও ঘুরে দেখে বলেছিলেন, নির্বাচন ভালোই হয়েছে। রিপোর্ট কার্ডে একশোতে একশো না দিলেও কমবেশি সবাই নব্বইয়ের ওপরেই নম্বর দিয়েছিলেন। এরপরও আমার শেষরক্ষা হল না। বলা যায়, সেটাই আমার কাল হল।

আমার ওপর প্রথম বেশ বড়সড় আঘাত এসেছিল বিএনপি আমলে। মানে বিএনপির দ্বিতীয় আমলে। সেবার মউদুদ সাহেব সংবিধানে একটি সংশোধন করেন। সেই সংশোধনের ফলাফল যা দাঁড়াল, তাতে দেখা গেল একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি, যিনি একসময় বিএনপির সদস্য ছিলেন, তিনি হয়ে যাচ্ছেন আমার প্রধান। ঠিক তাঁকে প্রধান করার জন্যই এই পরিবর্তন, না সত্যিই বিচারক সংকটের জন্য এই পরিবর্তন, তা হলফ করে কারো পক্ষে বলা সম্ভব না। আর এদেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তাতে একটি দলের দেয়া ব্যাখ্যা আরেকজন মেনে নেবে, প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। প্রায় বললাম, কারণ নিজেদের বেতন বৃদ্ধি আর শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির জন্য কেবল এরা একমত হয়।

যাই হোক, সেই সংশোধনীর পরে আওয়ামীরা ভাবল, সেই হাসান সাহেবকে প্রধান করার জন্য এই কাজ করেছে বিএনপি। তাই তাঁরা আন্দোলনে নামলো। প্রচুর হরতাল দিল। জ্বালাও পোড়াও ও কম করল না। তারপরও তেমন কিছু করতে পারল না। বহু জল ঘোলা করে অবশেষে আমার প্রধান হিসেবে আসলেন রাষ্ট্রপতি। কাজটা ঠিক হল কি না তা নিয়ে বেশ বিতর্ক হলেও আওয়ামীরা মেনে নিল। ঠিক সেই সময়টায় সেনাবাহিনী রাষ্ট্রপতির অধীনে থাকবার কারণে হয়তো আওয়ামীরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে সাহস করেনি। এরপরে বেশ যাচ্ছেতাই ভাবে আমাকে ব্যবহার করতে লাগলেন প্রেসিডেন্ট সাহেব। আমার বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাও পদত্যাগ করলেন।

এর কিছুদিন পরে আসলো সেই যুগ সন্ধিক্ষণ। অনেকের মতে আমার মৃত্যুর সেটাও একটি কারণ। ১১ই জানুয়ারী, আমার পরিচালনায় হতে যাওয়া চতুর্থ নির্বাচনটির মাত্র কিছুদিন আগেই আমার প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলেন বা করানো হল। নতুন প্রধান হিসেবে আসলেন, ফখরুদ্দিন সাহেব। নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ হল। তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন শেষ করার বাধ্য বাধকতা থাকলেও, আইনের কিছু ফাঁক গলে, নির্বাচন অনুষ্ঠান পেছানো হল। এই ফাঁকে বেশ সাহসী কিছু পদক্ষেপও নেয়া হল। দুই দলের তাবৎ বড় বড় নেতাকে আটক করা হল। কারো মতে, ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার মাধ্যমে দেশের দুই বড় দলের যবনিকা পতনের চেষ্টা হল।

এরপরে অনেক ঘটনা ঘটল। দুই বড় দলের বেশ কিছু নেতা বিদ্রোহ করল। শীর্ষ পদ দখলের জন্য, কিংবা দল দুটিকে ধ্বংস করার জন্য, বেশ অনেকেই একত্রিত হল। তবে সফল হল না। আমার শীর্ষ পদে থাকা মানুষগুলো ঠিক কি চেয়েছিল, জানি না। তবে প্রথম প্রথম তাঁরা যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, কিংবা দুই বড় নেত্রীকে গ্রেফতারের পরেও যে মৌন সম্মতি তাঁরা পেয়েছিল, তা ধরে রাখতে পারল না। বাগাড়ম্বর আর দুরাভিসন্ধি তাঁদের কাল হয়ে দাঁড়াল। ‘কিংস পার্টি’ তৈরি করে ক্ষমতায় আরোহণের চেষ্টা শুরু করেছে কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিল। ফলাফল যা হল, দুই দলের সঙ্গে সঙ্গে জনগণকেও ক্ষেপিয়ে তুলল আমার বিরুদ্ধে।

সেই দুই বছর পার করে অবশেষে আমি নির্বাচনের ব্যবস্থা করলাম। আগের তিনবারের মত এবারও বেশ স্বচ্ছ নির্বাচন হল। পরাজিত দল ছাড়া বাকী সবাই এই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিল। মনে হচ্ছিল এই যাত্রা হয়তো বা আমি বেঁচে গেলাম। কিন্তু তা হল না। আমার কারণে অন্য আরেকটি যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল, সেই কারণ দেখিয়ে আমার মৃত্যু সনদ জারী করা হল। সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে জানাল, আমি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমার কারণে বিচারালয় ধ্বংস হতে বসেছে। আওয়ামীরা সুযোগটা লুফে নিল। দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাঁদের ছিলই। রায়ের বাহানায়, আমার মৃত্যু নিশ্চিত করতে সংবিধানে সংশোধনী আনা হল। অনেকটা আমার আদল রাখলেও, শীর্ষ পদে, নির্বাচন কালীন সময়ে, দল নিরপেক্ষ ব্যক্তির পরিবর্তে একজন দলীয় লোক রাখবার ব্যবস্থা করা হল।

আমার মৃত্যু যদিও অবস্বম্ভাবী ছিল, তারপরও এতো দ্রুত হবে, সেটা অনেকেই ভাবেনি। দুই দল যে কেবল চর দখলের জন্যই নির্বাচন করে, এই তথ্য জনগণ বুঝে গেলেও, মেনে নিয়েছিল। একের পর এক দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে হওয়া কারচুপি আর তারপরে হওয়া সহিংস কিংবা অহিংস রাজনীতি দেখতে দেখতে ক্ষুব্ধ দেশবাসী আমাকে পেয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। ভেবেছিল, দুই দল তাঁদের জন্য কিছু করুক আর না করুক, নির্বাচন এবং নির্বাচন নিয়ে হওয়া সহিংসতা থেকে তো অন্ততঃ রেহাই পেলাম। তাঁদের কপালে সেই সুখ সইল না।

যদিও আমার মৃত্যুর দিন ক্ষণ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কেউ ভাবেন চতুর্দশের পরেই মৃত্যু হয়েছে, কেউ বলেন ১/১১র কারণে, আবার কারো মতে পঞ্চদশের কারণে। আসলে আমার মৃত্যুর বীজ লুকিয়ে আছে, আমার অধীনে হওয়া নির্বাচনগুলোর ফলাফলে। সেই নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে তেমন কোন প্রশ্ন না থাকলেও যে সমস্যাটা দেখা দিল তা হচ্ছে প্রত্যেকবারই তৎকালীন বিরোধী দল জয়লাভ করল। এমন একটা আবহাওয়া তৈরি হয়ে গেল, তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন মানেই, নিশ্চিত বিরোধী দলের বিজয়। বিরোধী দলের সুনিশ্চিত বিজয়, সেই নির্বাচনের সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা আর সর্বোপরি সুষ্ঠু নির্বাচন করার এই সক্ষমতাটিই হয়ে দাঁড়াল আমার মৃত্যুর মৃত্যুর কারণ। ‘আপনা মাংসে হরিণ বৈরী’।

৯৬এ আমার অধীনে হওয়া দ্বিতীয় নির্বাচনে পরাজয়ের পরই সম্ভবতঃ বিএনপি ঠিক করেছিল, আমার ওপর ‘সার্জারি’ করার। ২০০১এ ক্ষমতা পাওয়ার পরেই, খুব ভালমতোই জানতো, ২০০৭এ আমার অধীনে নির্বাচন হলে, সেখানে তাঁদের শিকে ছিঁড়বে না, আবার আওয়ামীরা আসবে। আর সেই পরিস্থিতি আটকাবার জন্য, আইনগত ভাবে তাঁদের করণীয় তেমন কিছু ছিল না। আমাকে বাতিল করা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ৯৬এ তেমন কাজ করতে যেয়ে তাঁরা বেশ ভুগেছে।

বিচারবিভাগে দলীয়করণ শুরু করলেও তার সুফল পেতে এখনও ঢের দেরী। সেই মুহূর্তে তাঁদের মাথাব্যাথা ছিল ২০০৭। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে। স্বাভাবিকভাবে চললে নিজেদের পছন্দের লোক আমার প্রধান হতে পারবে না। তাই আপাততঃ যে ফর্মুলার আমদানি করল তা ছিল বিচারকের বয়স বৃদ্ধি। ২০০১এ দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়াতে, সুযোগটাও তাঁরা পেয়ে গেল। গলা টিপে না মারলে, বেশ মারাত্মক আঘাত আসল আমার ওপর। তবে বিএনপির শেষরক্ষা হল না। ১/১১ আসল।

১/১১এর পরে মনে হয়েছিল আমার ওপর থেকে দুর্যোগের মেঘ সরে গেছে। আমার ওপর ‘সার্জারি’ করতে গিয়ে বিএনপি যেভাবে ভুগল, তাতে মনে হয় না আমাকে আর কাঁটা ছেঁড়ার সাহস কেউ দেখাবে। কিন্তু তেমন কিছুই হল না। ১/১১এর সময় আমার দ্বায়িত্বে থাকা মানুষগুলো যেভাবে দুই নেত্রীকে শ্রীঘরের হাওয়া খাওয়ালো, তারপর আমাকে শৃঙ্খলিত কিংবা নখদন্তহীন করার একটা চেষ্টা যে হবে, বোঝাই যাচ্ছিল। তবে একেবারে মেরে ফেলা হবে, কেউই হয়তো বোঝেনি। যাই হোক, সেই সময়ের শাসনকাল কিংবা বিরোধী দলের বিজয়ের গ্যারান্টি, যেকারনেই হোক, আমাকে আমার পরিণাম ভোগ করতেই হল।

আমার মৃত্যু নিয়ে আমার তেমন কোন নালিশ নেই। আমাকে ছাড়াও পৃথিবীর অনেক দেশে নির্বাচন হচ্ছে, এবং বেশ ভালভাবেই হচ্ছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এদেশেও আমাকে ছাড়া নির্বাচন হবে। তবে সেজন্য জরুরী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে পারস্পরিক বিশ্বাস। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিরোধী দলের প্রতি মর্যাদাপূর্ণ আচরণ। দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসনের সর্বস্তরে নিজেদের লোক বসানোর মানসিকতার পরিবর্তন। সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে, পরাজয় মেনে নেয়ার মানসিকতা।

যে কাজগুলো করে আমি সুষ্ঠু নির্বাচন করতাম তার বেশির ভাগ কাজই নির্বাচন কমিশনকে দিয়েই করানো যায়। সেখানে প্রধান হিসেবে কে নিয়োগ পাবে, তার যদি একটি সুষ্ঠু উপায় বের করা যায়, সরকার, বিরোধী দল সহ আরও কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে তৈরি একটি প্যানেলের মাধ্যমে এর প্রধান নির্বাচন করা যায়, নির্বাচনকালীন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাঁদের অধীনে রাখা যায়, প্রশাসনের রদবদলের কিছু ক্ষমতা তাঁদের হাতে রাখা যায়, তবে হয়তো আমাকে আর প্রয়োজনই পড়বে না।

বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে না, তেমন কিছু হবে। আওয়ামীরা যেভাবে আমার অবসান চাইছে, নিতান্ত বাধ্য না হলে, মনে হয় না আমাকে আর জীবিত করবে। বিএনপির যা অবস্থা, আমাকে বাঁচাবার আন্দোলন করবার তেমন কোন ক্ষমতাও ওদের নেই। সুশীল সমাজের উচ্চবাচ্য নিয়েও অনেকে সন্দেহ করছে। ভাবছে, আমার মাধ্যমে কিছুদিনের জন্য ক্ষমতা পাওয়ার লোভে তাঁরা এসব চিৎকার চেঁচামেচি করছে। ফলে, স্বাভাবিকভাবে আমার জীবিত হওয়ার তেমন কোন পথ নেই। জানিনা আমার কি হবে। পুনরায় জীবন ফিরে পাব, না আমার চিরস্থায়ী মৃত্যু হয়েছে, সময়ই বলে দেবে। আমাকে নিয়ে আরও কিছু আন্দোলন, আরও কিছু মৃত্যু অপেক্ষা করে আছে, আওয়ামীদের নতুন ফর্মুলায় সবাই সায় দেবে, তার অপেক্ষায় আছে দেশবাসী। এই শীতকালের মধ্যে কিছু একটা না ঘটলে, মনে হচ্ছে, ২০১৯এর আগে আমার ব্যাপারে নতুন কোন সিদ্ধান্ত হবে না। কি আছে আমার ভাগ্যে তা দেখার জন্য, আপনাদের মত আমিও অপেক্ষায় আছি।

নির্বাচনমুখী আন্দোলন বনাম লতিফ কার্ড!

|| এ.কে.এম ওয়াহিদুজ্জামান ||

১৭ বছর আগে নিজে হাজ্জ্ব পালন করার পরও গত সেপ্টেম্বরে আমেরিকা সফরের সময় হাজ্জ্ব নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। বিএনপিসহ এবং ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো তখন তাকে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ এবং বিচার করার দাবী জানিয়েছিলো। সরকার সেটা মেনেও নিয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাকে মন্ত্রীসভা এবং আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেই গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথা নিয়ে দেশে ফেরা এবং গ্রেফতার এড়িয়ে এয়ারপোর্ট ত্যাগ করার পর হেফাজতে ইসলামীর হরতাল এবং ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচী বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে সেই সময়ে, যখন বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক দলগুলো নির্বাচনমূখী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিএনপি’র সামনে এখন দুইটা পথ; লতিফ ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করা অথবা লতিফ ইস্যুকে উল্টো সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়ে নির্বাচনমূখী আন্দোলনটাই গড়ে তোলার চেষ্টা করা। ৯০ দশকে কম্যুনিজম বিরোধী স্বস্তা সেন্টিমেন্টের মৃত্যুর পর ইসলামী জঙ্গী বিরোধী স্বস্তা সেন্টিমেন্টের বাজার দর এখন চড়া। বিএনপি যদি এখন হেফাজতে ইসলামী এবং জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে আন্দোলন শুরু করে, তাহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক বাজারকে কেবল আরেকবার দেখিয়ে দেবে যে, বিএনপি গণতন্ত্র নয় বরং জঙ্গীবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রয়োজনে ৬মে ২০১৩’র মত আরেকটা ঘটনা ঘটিয়ে প্রমানও করে দেবে যে, বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ঠেকাতে কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই উপযুক্ত দল।

দ্বিতীয় পথ অনুসরণ করে বিএনপি যদি লতিফ ইস্যুকে উল্টো সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়ে বলে যে- সরকার তার বিচার করবে বলেছিলো এখন বিচার করুক, যদি বিচার না করে তাহলে সেটা সরকারের ব্যার্থতা। তাহলে বলটা সরকারের কোর্টে যাবে। সরকারকে তখন হয় লতিফ সিদ্দিকীর বিচার করতে হবে কিম্বা তাকে দিয়ে ভুল স্বীকার করিয়ে ক্ষমা প্রার্থনাশেষে তওবা করানোর ব্যবস্থা নিতে হবে, অথবা তাকে বিচারের আওয়তায় না এনে ইসলামিস্টদের আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে।

প্রথম ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলামীর দাবী মেনে নিয়ে সরকার লতিফ সিদ্দিকীর বিচার করে, বা লতিফ সিদ্দিকী নিজেই হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় গিয়ে তওবা করে পুনরায় কলেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে একটা চমক সৃষ্টি করতে পারেন। যদিও এটা খুবই দুর্বল একটা সম্ভাবনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ লতিফ সিদ্দিকী অনেক কাঠ-খড়-কেরোসিন পুড়িয়ে নিজের যাবতীয় দুর্নীতি ও অপকর্মের আলোচনা ধামাচাপা দিয়ে এখন সুশিল সমাজের মাধ্যমে দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরীনের পাশে স্থান করে নিয়েছেন। এই স্থান থেকে সরে এসে নিজের দুর্নীতি ও অপকর্মের মামলাগুলোকে নিশ্চই তিনি প্রাধান্য দিয়ে আলোচনায় আনতে চাইবেন না।

Untitled-1

এমতাবস্থায় দ্বিতীয় বিকল্প অনুযায়ী, হেফাজতে ইসলামীর দাবী না মেনে নিয়ে সরকার তাদেরকে আন্দোলন করার সুযোগ করে দিতে পারে। যার নমূনা আজ ২৪ নভেম্বর দেখা গেছে। বিএনপির কোন সংগঠন পুলিশের গ্রেফতার-পিটুনীর কারণে রাস্তায় মিছিল করতে না পারলেও হেফাজতে ইসলামী মিছিল করতে পারছে। মানে সরকার তাদেরকে মিছিল করার সুযোগ দিচ্ছে। এটাকে তারা সাফল্য ভেবে চুড়ান্তভাবে ঢাকা অবরোধের ডাক দিলেও সম্ভবত সরকার সেটা করতে দেবে। এতে দ্বিমুখী লাভ। প্রথমত: এতে করে সরকার বিরোধী আন্দোলন করার মত শক্তিকে দ্বিখণ্ডিত করা যাবে, যাতে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয়ত: জঙ্গীবাদ তত্ত্ব প্রচার ও প্রমান এবং দমনের দক্ষতা প্রমাণের মোক্ষম সুযোগ। সরকার আগের মতই বিনাবাঁধায় হেফাজতে ইসলামী ও অন্য ইসলামিস্ট দলগুলোকে মিছিল, সমাবেশ এবং ভাংচুর করতে দিয়ে সেই দৃশ্য টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করে প্রথমে বর্হিবিশ্বকে জঙ্গীবাদের উত্থান দেখাবে, তারপর তা কঠোর হাতে দমন করে নিজেদের সক্ষমতা দেখাবে।

কিছুদিনের মধ্যেই নেপালে নরেন্দ্র মোদীর সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হবে। তারপর দেশে আসবেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। সেই সময় মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রসঙ্গে আলোচনা এড়ানোর জন্য জঙ্গী ইস্যুর চেয়ে গরম ইস্যু আর কোনটা হতে পারে? মোদি সরকার আওয়ামী লীগের সাথে সাধারণ বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষা করলেও ভারতের পলিসিমেকার সাউথ ব্লক এখনো আওয়ামী লীগেরই কট্টোর সমর্থক। লতিফ সিদ্দিকী সেই ভারত হয়েই বাংলাদেশে ফিরেছেন। কাজেই তিনি আগুনে ঝাঁপ দিতে নয়, বরং আগুন নিয়ে খেলা করতে এসেছেন। এখন তার লেজে আগুন দিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধানো দেখার অপেক্ষা।

Des(h)i progressives’ nightmare

“But see, I don’t want to vote for AL. I do not think AL should return to power. We need checks and balances. BNP should come. But how can I vote for BNP when they are in an alliance with JI.”

That’s what a friend told me in December.  I have the deepest respect for this person’s sincerity.  She is a genuine progressive.  She wants a democratic Bangladesh — of this I have no doubt.  And I understand her reasons for aversion to Jamaat — never mind 1971, Jamaat categorically rejects some liberal-progressive tenets such as equal citizenship rights.  Had she said “I will not vote for Jamaat”, I would have accepted it.

But that’s not what she said.  She implicitly rejected BNP for its electoral alliance with Jamaat.

I didn’t engage in a prolonged conversation with her.  She is hardly the only person I know who made that leap about conflating Jamaat and BNP.  Bangladesh is full of self-proclaimed progressives who choose to reject democracy,never mind the facts.  I just don’t have the mental energy to engage in fruitless debates these days.  At least my friend had the decency to not engage in that kind of sophistry.

I didn’t engage in a political discussion with her, but was reminded of her comment after the Indian election.  You see, I had heard similar stuff from my Indian progressive friends.  Way back in the early 2000s, I heard people say “don’t want to vote for Congress, don’t like the sycophancy/dynasty, and the Vajpayee government isn’t so bad, but you know, how can BJP be supported when they have someone like Modi”.

And now Modi is the prime minister.

My Indian friends could have supported Vajpayee or other moderates in BJP/NDA government.  They could have provided the left flank of a genuinely centrist alternative to Congress.  But their self-inflicted intellectual blind spot meant that they couldn’t even contemplate such a course — never mind that such an alternative would have served India well.

A lot of things contributed to Mr Modi’s rise to power.  The progressives’ blind spot is just one factor, and probably not even an important one.  But to the extent that he represents a lot of things progressives loath, they have no one but themselves to blame.

I fear whether someday my Bangladeshi progressive friend will wake up to her political nightmare.  Jamaat’s importance in Bangladesh is constantly over-rated, and BNP’s strength under-rated, by everyone.  Of course, Jamaat benefits from the inflated power projection.  And the Jamaat bogey suits the Awamis fine.  The thing is, as the centrist opposition is systematically denied any political space, and as the ruling party degenerates into an orgy of violence (google Narayanganj / Feni murders), Islamists (Jamaat or otherwise) may well emerge as the only alternative.

My friend is genuine progressive, not a closet Awami fascist.  Will people like her act to prevent their own worst nightmare?

http://jrahman.wordpress.com/

জনাবা হাসিনা; অনির্বাচিত ও অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দ্যেশ্যে

by Watchdog Bd

জনাবা হাসিনা,

মাননীয়া সম্বোধন করে আপনাকে সন্মান দেখাতে পারছিনা বলে দুঃখিত। প্রথমত, বিশ্ব হতে উপনিবেশবাদ অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। বৃটিশ প্রভুদের কায়দায় কথায় কথায় মাননীয়া জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে নিজকে দুইশত বছর আগের দাস যুগে ফিরিয়ে নিতে চাইনা। খোদ বৃটিশরাও এখন আর এ জাতীয় শব্দ ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়। বারাক ওবামা আমার দত্তক নেয়া দেশের প্রেসিডেন্ট। পৃথিবীর সবাচাইতে শক্তিধর প্রেসিডেন্টকে আমি জনাব প্রেসিডেন্ট বলতেই অভ্যস্ত। এ নিয়ে খোদ ওবামা যেমন অভিযোগ করেননি, তেমনি তার দল ডেমোক্রাটরাও আমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানোর চেষ্টা করেনি। আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি হাজার ব্যস্ততার মাঝেও প্রেসিডেন্ট ওবামা আমার মত একজন সাধারণ সমর্থক ও নির্বাচনী কর্মীর সাথে নির্বাচন উত্তর যোগাযোগ রাখতে ভুল করেন না। দ্বিতীয়ত, আপনি বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার প্রধান নন। আপনি দলীয় প্রশাসন ও বন্দুকের নলের মুখে অনির্বাচিত সরকারের প্রধান। তাই আমাদের সংস্কৃতিতে স্বীকৃত ও প্রাপ্য সন্মান দেখাতে পারছিনা বলেও দুঃখিত। আইনগতভাবে আপনি কোনটারই দাবিদার হতে পারেন না। আপনি জারজ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। চাইলে দলীয় চামচা ও প্রশাসনের ভাড়াটিয়া বাহিনী পাঠিয়ে আমাকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি আমি যা বলতে যাচ্ছি তার সবটুকু বলা সম্ভব না হলেও কেউ না কেউ একদিন এসব কথা মুখ ফুটে বলতে শুরু করবে। বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের সবাইকে ভয়, সন্ত্রাস ও পেশী শক্তির কাছে জিম্মি রেখে, গায়ের জোরে ক্ষমতার সিংহাসন আলোকিত করার নিশ্চয়তা কেউ আপনাকে দিতে পারবেনা। সময় আসবে এবং আপনার প্রতি সেকেন্ড কর্মকান্ডের জবাবদিহিতার দাবি উঠবে। এবং তা হবে সভ্যতার দাবি। সময়ের চাহিদা।

জনাবা হাসিনা,

ঘটনা হাজার রজনীর আরব্য উপন্যাস হতে নেয়া নয়। ৬০-৭০’এর দশক এখনো ইতিহাসের পাতায় সমাহিত হয়নি। আমরা যারা বেঁচে আছি তারা ভুলে যাইনি কেন এবং কোন প্রেক্ষপটে এ দেশের মানুষ সংযুক্ত পাকিস্তানকে লা-কুম দিনু-কুম জানিয়েছিল। স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা ও তাদের পোষ্য ২২ পরিবারের শোষন, পিষন ও সন্ত্রাসের নাগপাশ হতে মুক্তি পাওয়ার ভ্রুণেই জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ নামক দেশের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন অংকুরিত হয়ে পল্লবিত হয়েছিল ৭০’এর দশকে। ফলশ্রুতিতে মানুষ অস্ত্র হাতে নিয়েছিল এবং ইতিহাসের অমেঘো পরিনতিতে সংযুক্ত পাকিস্তান ঠাঁই নিয়েছিল আস্তাকুঁড়ে। আজ আমরা নিজেদের স্বাধীন এবং সার্বভৌম বলে দাবি করি। আসলেই কি তাই? আপনার অভিধানে স্বাধীনতার সংজ্ঞা কি আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের অভিধানে এ সংজ্ঞা কেবল আপনার বাবাকে দেবতার আসনে বসিয়ে পুজা অর্চনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। স্বাধীনতা ২২ পরিবারের খপ্পর হতে বেরিয়ে ১ পরিবারের রাজতন্ত্র কায়েম করাও নয়। স্বাধীনতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ভৌগলিক দিয়ে শুরু হলেও এর শেষ ঠিকানা অর্থনৈতিক মুক্তি তথা সামাজিক নিরাপত্তায়। জাতিকে আপনি অথবা আপনারা কি দিয়েছেন ভেবে দেখেছেন কি? গোটা দেশ পরিনত হয়েছে মাফিয়া স্বর্গরাজ্যে। লুটপাটতন্ত্র রাজত্ব করছে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র। খুন, লাশ, গুম পরিনত হয়েছে দৈনিক ডাল ভাতে। মানুষ মরছে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে, শয়ণকক্ষে। লাশ হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবায়। আতংকের কালো ছায়া গ্রাস করে নিয়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন। বলতে বাধ্য হচ্ছি জনাবা, সবকিছু হচ্ছে আপনার নেত্রীত্বে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আপনাদের পারিবারিক সম্পত্তি। এর অংগ সংগঠন সমূহ আপনার পেশিশক্তি। এদের যৌথ প্রযোজনায় যে পশুশক্তি জন্ম নিয়েছে তার কাছে অসহায় হয়ে পরেছে গোটা জাতি। গোটা দেশের মালিকানা চীরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার লালসায় দেশের সবকটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে আপনি তচনচ করেছেন। কেড়ে নিয়েছেন নাগরিকদের ভোট দেয়ার অধিকার। দুমড়ে মুচড়ে তক্তা বানিয়েছেন কথা বলার স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধ আপনার বাবা অথবা পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি নয় যা দিয়ে আজীবন ব্যবসা করে যাবেন। যুদ্ধের কোন ফ্রন্টেই আপনাদের কারও কোন অবদান ছিলনা। আপনারা কেউ যুদ্ধে যাননি। দখলদার বাহিনীর নিরাপদ আশ্রয়ে নিজেদের চামড়া বাচিয়েছিলেন কেবল। চাপাবাজি আর পেশি শক্তির উপর ভর করে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতাকে বানিয়েছেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লাভজনক পণ্য, প্রতিপক্ষ নির্মূল করার ধারালো হাতিয়ার। শেখ পরিবারে আজীবন দাসত্ব করার জন্য বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। এ দেশের জন্ম হয়েছিল বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার জন্য, স্বাধীনভাবে কথা বলার জন্য, অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা সহ মৌলিক অধিকার সমূহের নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্য। আজ কোথায় এসব? স্বাধীনতাকে আপনি কবর দিয়েছেন শীতলক্ষ্যার পানিতে। বর্গা দিয়েছেন র‌্যাব, পুলিশ ও ছাত্রলীগের পদতলে। ওরা জাতির গলা চিপে শ্বাস বের করে আনছে এবং পৈশাচিক উল্লাসে আনন্দ করছে। আপনি গণভবনের চার দেয়ালে বসে মুচকি হাসছেন এবং মিথ্যাচারের গর্ভে জন্ম দিচ্ছেন নতুন এক দশ। অচল ও বিকলাঙ্গ বাংলাদেশ।

জনাবা হাসিনা,

ক্ষমতার স্বাদ খুবই সুস্বাদু। সহজে কেউ ভুলতে পারেনা। আপনি পারবেন না। কিন্তু সময় আসবে এবং আপনার স্বপ্নের তখত তাউসে আগুন লাগবে। সে আগুনে আর কেউ জ্বলবেনা,জ্বলবেন আপনি এবং আপনার পরিবার। অযোগ্যতাই হবে আপনার পতনের মুল কারণ। বাংলাদেশের মত জটিল আর্থ-সামাজিক দেশ পরিচালনা করার নূন্যতম যোগ্যতা নেই আপনার। তাই জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিন। ইতিহাসকে আপন গতিতে চলতে দিন। এ দেশের মানুষ গোলাম হয়ে জন্ম নিয়ে গোলাম হয়ে মরতে অভ্যস্ত নয়। তারা ঘুরে দাড়াতে জানে।
http://www.amibangladeshi.org/blog/05-14-2014/1458.html

মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ

 

By Faiz Taiyeb

কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না, তেমন অত্যাচারী শাসক ও ভালো কাজ করতে পারে না। স্বৈরাচারী শাসক এবং নাগরিক স্বার্থে ভালো কাজ করা, এই দুই আসলে “মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ”।
৫ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ পন্থী বুদ্ধিজীবিরা ইনিয়ে বিনিয়ে উপর্যপুরি বলার চেষ্টা করেছেন, অবৈধ কিন্তু সাংবিধানিক (!) নির্বাচনের পর হাসিনা ভালো কিছু কাজ করে মানুষের মন জয় করবেন। আমারও সেরকম অনেক আশা ছিল। কারন এই মহিলা ৩ বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তিনি দলে একনায়ক, দেশের সেনাবাহিনী কে আর্থিক প্রাচুর্যের বিহ্বলতায় চড়িয়েছেন, আদালতকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছেন, নির্বাচন কমিশন কে হুকুমের চাকর বানিয়েছেন, রাজনৈতিক চালে বিরোধীদের কুপোকাত করেছেন। মোটকথা দেশের নিরুঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী প্রধান নির্বাহী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। অধুনা একনায়করাও সম্ভভত এইধরনের একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করেন না। কিন্তু অতীতে যাই করুক না কেন, প্রান্তিক নাগরিক হিসেবে অধিকাংশই চায় এই দুর্নীতিবাজ প্রতারক নেতা গুলান ভালো হয়ে যাক। সবাই আসলে একটি নতুন ভোরের অপেক্ষায়। ভালো কাজ করতে শুরু করলেই এই বঞ্চিত নির্যাতিত লোক গুলো অতীতের সব গ্লানি ভুলে এদের মাফ করে দিবে। আমরা বড়ই ইমোশনাল এক জাতি।
সুতরাং রক্তক্ষয়ী হিংস্র ক্ষমতার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে ষাটোর্ধ একজন লেডির সেলফ সেটেস্ফিকশন আসবে এটা ভাবা খুব কঠিন ছিল না। কিন্তু বিধি বাম। তাই ওইসব বুদ্ধিজীবী আর সেইসব আশার কথা শুনাচ্ছেন না। বরং পুরা রাজনৈতিক কালচার কে দোষারোপ করছেন। ইন্টারপোল লিস্ট এ থাকা মস্তান কর্তিক একজন ফাঁসির আসামির খুন হয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার মৃদু বিবৃতি দিয়ে সমর্থনের লেজ আকড়ে ধরে উছিস্ট ভোগের সাময়িক ফন্দি ঠিক রেখছেন ।
এইদিকে, আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী রা আছেন ভিন্ন হিসেব নিয়ে, ইউএস, ই ইঊ র নীরব সমর্থন বেশি টিকবে না ভেবে সবাই আগের গোছাতে ব্যস্ত, সবাই বেসামাল বেপারয়া লুটপাটে লিপ্ত। এতই বেপরোয়া যে, দলের ভিতর বাহির যেখান থেকেই বাধা আসুক সবাইকে কচুকাটা করা হচ্ছে। সমানে ভিতর বাইরের বিরোধীদের ধরে নিয়ে গলাটিপে নদীতে বস্তাবন্দী করে ফেলা দেবার কি হিংস্র এক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সবাই। এমন উৎসাহ যে এলিট ফোর্স র‍্যাব ও বসে থাকতে পারছেনা। কিছু কন্ট্রিবিউট করছে।
তাই পদ্মা সেতুর অর্থায়নও আর শুরু হয় না, বরং এই সল্প সময়ে কিভাবে ভারত কে স্থল ট্রানজিট গছিয়ে দেয়া যায় সেটা নিয়ে কিছুটা তোড়ঝোড় দেখা যাচ্ছে। যাতে এটা বেচে আবার কিছু একটা করা যায়।
অবৈধ বেপরোয়া ক্ষমতা আর ভালো কাজ একসাথে চলে না, পৃথিবীর কোথায়ও চলে নি কোন কালে। সতরাং এইসব জনবিচ্ছিন্ন অত্যাচারী শাসকের বিদায় দরকার, অন্তত সমস্যার সাময়িক সমাধান এর নিমিত্তে। এর পর দীর্ঘ মেয়াদি সমাধান পেতে সমাজ, নাগরিক ও নাগরিক সংঘঠন সমূহকে ঠিক করতে হবে, তারা কি গণতান্ত্রিক সিস্টেমের মধ্যেই কয়েকজন চোর এর মধ্যে ছোট চোরকে বেছে নিবে, নাকি তাদের সৎ পথে আনার সাহস দেখাবে আর বাধ্য করবে, নাকি এই চোরদের চুরি প্রতিহত করার সিস্টেম দাঁড়া করাবে।
কৈফিয়ত
সবসময় চেষ্টা করি প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধি করন নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করতে। নেতাদের সমালোচনা না করতে। কারন আমরা সব পেশার লোকেরাই রাষ্ট্রকে সমানে বলাৎকার করছি নিয়ত। সমস্যা হলো সব জায়গাতেই রাজনৈতিক দুরব্রিত্ত্বায়নের ছোবল এতটা গভীর যে এই অযোগ্য অপদার্থ লোক গুলারে (জাতে মাতাল কিন্তু টাকা মারার তালে ঠিক) আলোচনায় না এনে পারা যায় না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সুশাসন, লোভ মুক্ত নেতৃত্ব, নৈতিকতার ও নিয়মতান্ত্রিকতার কিংবা দূরদর্শিতার যে বেইজ এডুকেশন এটা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেই, সব গুলো দলই ভন্ডে ভরা। সবার উদ্দেশ্যই দেশের আর দেশের মানুষের টাকা মারা, যখন পারে, যেভাবে পারে। এটা করতে গিয়ে দেশের সব কিছু তারা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভরে ফেলেছে। অথচ দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ভাল নেতৃত্ব লাগবেই লাগবে। এর দ্বিতীয় কোন বিকল্প জানা নাই।
২ বার, ৩ বার এক একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, দেশের লক্ষ কোটি শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত আর অশিক্ষিত জনতা তাদের ভয় বা সম্মান করেন (মন থেকে কিংবা বাধ্য হয়ে)। আর কি কি পেলে উনাদের আত্ব তৃপ্তি আসবে? ওনারা পৃথিবীর কত কত জনপদ দেখেন, কত কত দেশ ঘুরেন, একটি বারও কি উনাদের ইচ্ছে করে না, এই দেশটাকে ঠিক করে দেয়ার চেষ্টা করবেন। আজ রাজনৈতিক ইস্যু সমাধান বা ধামাচাপা দেয়ার জন্যে যে তোড়ঝোড়, এত এত ফোরস ডিপ্লয়ম্নেট, এত চিন্তা, এত কালক্ষেপণ, এর সামান্য যদি আমরা ঘুষ, দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যয় করি তাহলে দেশটা ঠিক হয়ে যায়। ২ টা মাত্র দল। ক্ষমতাসীন হলেই অসীম শক্তি আর প্রতিপত্তি, মানুষ কে নির্দেশনা দেয়া ও সহজ তাদের জন্য।
ব্যাপারটা তো এরকম নয় যে, দেশ উন্নত হয়ে গেলে হাসিনা বা খালেদা (মুজিব আর জিয়া পরিবার) গরীব হয়ে যাবে, তাদের সম্মান কমবে। ব্যাপারটা তো উল্টো। যে দেশ যত উন্নত তার নেতৃত্ব তত বেশি সম্মানিত, দেশে আর দেশের বাইরে।
আল্লাহ্‌ পাক আমাদের নেতৃত্ব কে বুঝ দিন। আমাদেরকেও বুঝ দিন। হতে পারে ব্যাপারটা এমন যে, ব্যক্তি জীবনমান আর সামাজিক উন্নয়ন আমাদেরকে সামাজিক আন্দোলন করেই আদায় করে নিতে হবে। অধিকার এমনি এমনি আসে না গরীব আর অভাগাদের কপালে।

 

জনগণের নির্বাচন ও ‘সাংবিধানিক’ নির্বাচন

1

by মুহাম্মদ আব্দুল খালিক

 

১.

সমাজ বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ধাপে ধাপে মানুষ সমাজ থেকে রাষ্ট্রের পত্তন করেছে। প্রথমে ছোট ছোট নগর রাষ্ট্র, তারপর বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠেছে অধুনা রাষ্ট্রব্যবস্থা। সাম্য, সমানাধিকার, সমসুযোগ, স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিতকরণকে সামনে রেখে উদ্ভব ঘটেছে রাষ্ট্রব্যবস্থার। আর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ‘গণতন্ত্রকে’ বিবেচনা করা হয় সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ও উত্তম ব্যবস্থা হিসেবে। এর মাধ্যমে নিজ নিজ রাষ্ট্রের জনগণ নির্ধারণ করে তাদের শাসক। নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের জন্য জনগণ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে ‘ম্যান্ডেট’ দিয়ে থাকে। আর এসবই পরিচালনা করা হয় রাষ্ট্রের সংবিধানের আলোকে। প্রত্যেক রাষ্ট্রেই ঐ রাষ্ট্রের সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। আমরা জানি যে, রাষ্ট্র গঠনের মূল উপাদান ৪টি- ভূখণ্ড, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। এখানে লক্ষণীয় যে, রাষ্ট্রের মূল উপাদানের মধ্যে ‘সংবিধানের’ উল্লেখ নেই, তবে ‘সংবিধান’ অবশ্যই রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

পৃথিবীব্যাপী যা কিছু আছে সবই মানুষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। রাষ্ট্রও গড়ে ওঠেছে মানুষের প্রয়োজনের তাগিদেই। মানুষ রাষ্ট্রকে গড়েছে তাদের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত ও শৃঙ্খলার সাথে পরিচালনা করতে, সম্মিলিতভাবে উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে। তাই সব ব্যবস্থাতে মানুষের কল্যাণই মুখ্য বিষয়। আর এ বিষয়টি পৃথিবীর সকল জাতিরাষ্ট্রের সংবিধানেই প্রতিধ্বনিত হয়েছে ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’-এই নীতিটি সন্নিবেশিত করার মাধ্যমে। তাই আপাত দৃষ্টিতে কোনো বিষয় সংবিধানসম্মত মনে হলেও যদি তা ‘জনগণের ক্ষমতাকে’ অবজ্ঞা করে তাহলে অবশ্যই তা পরিবর্তনীয়।

 

২.

গণতন্ত্র বা ডেমোক্রেসী শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ ডেমোক্রেসিয়া থেকে, যার অর্থ ‘জনগণের শাসন’/ শব্দটির উৎপত্তি ডেমোস (জনগণ) ও ক্রাটোস (ক্ষমতা) থেকে। খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতকে এথেন্স ও অন্যান্য নগর রাষ্ট্রে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বোঝাতে শব্দটির প্রথম ব্যবহার করা হয়। গণতন্ত্র হলো কোন জাতিরাষ্ট্রের (অথবা কোন সংগঠনের) এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমান ভোট বা অধিকার আছে। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সযোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে।

 

৩.

আন্তর্জাতিকভাবে যে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য মর্মে বিবেচিত হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণের আবশ্যকতা রয়েছে। যথা- (ক) নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে হবে, (খ) নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হতে হবে এবং (গ) সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃত দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে হবে। দশম সংসদ নির্বাচনের সার্বিক কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, এ তিনটি শর্তের কোনোটিই পূরণ হওয়ার মতো পরিস্থিতি বিদ্যমান নেই। তাই এ নির্বাচনটিকে কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য ও ‘জনগণের নির্বাচন’ বলে যায় না এবং এটি গণতন্ত্রের মৌলিক শর্তাবলিও পূরণ করে না।

 

৪.

তবে সরকারদলীয় নেতা-নেত্রী ও বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশের মাঝে এই নির্বাচনকে সংবিধানসম্মত বলে প্রতিষ্ঠিত করার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা বলতে চাচ্ছেন যে, সংবিধানের বিধান মেনে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই এটি সংবিধানসম্মত। এখানে কোনো দলের (এমনকি একমাত্র বিরোধী দল হলেও) অংশগ্রহণ করা না-করা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এতে নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। তারা এমনকি এটাও বলে থাকেন যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াটা জরুরি। তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারও একই কথা বলেছেন।

তাদের এ সব যুক্তিগুলো পর্যালোচনা করলে খুবই বিস্মিত হতে হয়। লক্ষণীয় যে তারা খুবই খেলোভাবে এমন সব বিষয়ের মাধ্যমে দশম নির্বাচনকে ‘সংবিধানসম্মত’ বলার চেষ্টা করছেন যা সচেতন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার কথা নয়। তারা বলছেন যে, সংবিধানে সরকার মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট সময়ের শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা আছে, তাই এর ব্যত্যয় ঘটাবার সুযোগ নেই; কিন্তু তারা এটা বলছেন না যে, সংবিধানের মূলনীতিতে জনগণের সমসুযোগ তৈরি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিতকরণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’।

 

৫.

যেখানে ১৫৪টি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেল তাকে কি নির্বাচন বলা চলে? এছাড়া বাকী আসনগুলোতে ভোটারবিহীন নামমাত্র যে নির্বাচন হলো তা কি নির্বাচনের পর্যায়ভুক্ত? সেখানে কি যোগ্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল? ৫৩% ভোটার যেখানে তাদের ভোট প্রদানের সুযোগই পেল না তাকে কি গণতন্ত্র বলা যাবে? যেখানে কোনো আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ছিল না সেটা কি সুষ্ঠু নির্বাচনের বৈধতা পাবে? বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল যে নির্বাচনে অংশ নিল না সে নির্বাচন কি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী বলা যাবে?

বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থাকে এমনিতেই বলা হয় সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র; যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে সব রকমের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে (আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগ)। দশম নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কি তা ১৯৭৪ সালের বাকশাল বা স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগিয়ে গেল? একদলীয় এই নির্বাচন দেশকে কোন বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায় তাই এখন দেখার পালা।

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলএম অধ্যয়নরত।

সংখ্যালঘু নিপীড়ন, উদ্বাস্তুদের মিছিল ও মুক্তিযুদ্ধ

1

ফুয়াদ হাসান

হিন্দুরা আবারো আক্রমণের শিকার হলেন। এবার আর বিচারের কথা বলবনা। প্রমাণ হয়ে গেছে বিচার চেয়ে কোন লাভ নেই।

ফেসবুকপূর্ব যুগে আমাদের মিডিয়া আমাদেরকে বোঝাত যে, হিন্দুদেরকে শুধু বিএনপি আর জামায়াতই মারে। গত পাঁচ বছরে আমরা বুঝে গেছি আসলে তাদেরকে আওয়ামী লীগও মারে।

আমাদের দেশে সরকারী দলের লোকজনের অপরাধের সাধারণত বিচার হয়না। এমনকি বিরোধী দলের লোকদের যে অপরাধের বিচার করলে সেই একই অপরাধে সরকারী দলের লোকদেরও বিচারের দাবি জোরালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তেমন অপরাধে সাধারণত বিরোধী দলকেও ছাড় দেয়া হয়। তাই সরকার হিন্দুদের ওপর কোন আক্রমণেরই বিচার করবেনা। এধরনের অপরাধে বিচার করার সংস্কৃতিই কেউ তৈরি করবেনা। কোথাও কোথাও বিচারে রাজনৈতিক ফায়দা থাকার সম্ভাবনা থাকলেও উপরে বলা কারণেই তা করবেনা। বরং, যাদের হাতে শক্তি ও ক্ষমতা আছে তারা এখন নতুন করে পরিত্যাক্ত জমি-জমা দখলের উৎসব করবে।

আমাদের এই সরকারের আপাদমস্তক ভারতের কাছে সমর্পিত হলেও ভারতীয়রা তাদের ধর্মের এই ভাইবোনদের জন্যও এমন কিছু করবেনা যাতে এই সরকার খুব বিব্রত হয় বা চাপে পড়ে। আর আমাদের মত তাদের দেশী ভাই-বন্ধুরা তাদের জন্য অকাজের সমবেদনা বোধ করা ছাড়া কিছু করার ক্ষমতাও রাখিনা।

সবচেয়ে সভ্য দেশে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, জাতীয়তা ইত্যাদি নির্বিশেষে যে কোন সংখ্যালঘু ব্যক্তি, গোষ্ঠীবদ্ধ থাকুক বা না থাকুক, সম্পূর্ণ নিরাপদ বোধ করে। এই মাণদন্ডই আমদেরকে বলে দেয় আজ আমরা কোথায় আছি।

ইতিমধ্যেই ভিটেছাড়া হিন্দুদের ছবি ফ্রেমবন্দী হয়েছে। এদের অনেকেই নিশ্চিতভাবে দেশছাড়া উদ্বাস্তুদের মিছিলে যোগ দেবেন।

গত কয়েক বছরে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়েরই অসংখ্য মানুষ দেশ ছাড়ার আয়োজন শুরু করেছেন। নিরাপত্তাহীনতা ও কার্যত দেশের উপর রাজনৈতিক অধিকার না থাকার অনুভূতি তাদের মধ্যে যে উদ্বাস্তু হওয়ার বিশাল অথচ বিক্ষিপ্ত এক নীরব মিছিল তৈরি করেছে সে মিছিলের ছবি ফ্রেমবন্দী করা সম্ভব হবেনা। সেটা নিয়ে কোন গুরুত্ববহ সংবাদও হয়ত প্রকাশিত হবেনা।

সংখ্যালঘুদের আর্তনাদ আমাদের চোখ ভিজিয়ে দেবে, এই “সংখ্যাগুরু”দের(!) আর্তনাদ আমরা কোনদিন শুনতেই পাবনা। এরাও শেষ পর্যন্ত “প্রেফারেবলি আনহার্ড” বা “ডেলিবারেটলি সাইলেন্সড” হয়ে যাবে। সেটা দেখে বা ভেবে অবশ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বুকের ভার হালকা করারও কিছু নেই।

গত নয়-দশ মাস ধরে খুব শুনছি দেশে ২য় মুক্তিযুদ্ধ চলছে। ১ম মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত পক্ষের কতজন মরেছিল জানিনা। তারা শত্রুপক্ষের ও অন্য দেশের মানুষ ছিল। দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ইতিহাস গবেষক ও অধ্যাপক লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ২য় মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত পক্ষের প্রায় দুই লাখ লোককে মেরে ফেলতে হবে। হায়! আমরা মূর্খ-অশিক্ষিত মানুষেরা এই দুই লাখ লোককে এতদিন এদেশেরই মানুষ বলে জানতাম!!

বোঝা যাচ্ছে, সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরু উদ্বাস্তুদের এই মিছিল বড় হতেই থাকবে।

উদ্বাস্তুদের মিছিলের ছবি ছাড়া যুদ্ধের ছবি যে সম্পূর্ণ হয়না …

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনঃ স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণিত নাটক

২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানুষকে অনেকগুলো নাটক উপহার দিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ।  এ ধরনের নাটক স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। রেশমা নাটক, পদত্যাগ নাটক, এরশাদ চাচার গ্রেপ্তার নাটক, সর্বোপরি বছর জুড়েই ছিল শাহবাগিদের নাটক। সকল নাটকের মূল নাটক আজ ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ তে মঞ্চস্থ হয়েছে সমগ্র দেশ জুড়ে। ২০১৩ সালের নাটকগুলো মঞ্চস্থিত হয়েছিল ২০১৪ সালের এই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্যই। আজকের নির্বাচনী নাটকের ব্যাকগ্রাউন্ড সকলেরই জানা। নাটক করে মাঠ ফাঁকা করা হয়েছে; তাতেও কাজ হয়নি। কি ধরনের হাস্যকর নির্বাচনী নাটক জাতিকে আওয়ামীলীগ উপহার দিল তার কিছু নমুনা আপনারা দেখতে পাবেন নিচের ভিডিও লিংকগুলোতে। ভিডিও লিংকগুলো গনমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া কাভারেজেও এই চিত্র ফুটে উঠেছে। বাস্তবতা কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা সকলেই অবহিত।
১. ভোট দিয়েও আবার লাইনে আছেন ভোটার !
 ২. “মাঠ যেন ফাঁকা না থাকে, একশ ছেলে সবসময় লাইনে থাকবে।”

আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মোতাবেক ভোটকেন্দ্রে ভোটার দেখাতে নিয়ে আসা হচ্ছে ভোটার তালিকায় নামই ওঠেনি এমন কিশোরদের। দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে লাইনে।

একুশে টিভির ধরা পড়ে গেল এমনই কয়েকজন যারা ঘন্টাব্যাপী শুধু লাইনেই দাঁড়িয়ে আছে, ভোট দিচ্ছে না। বুথেও ঢুকছে না।

৩. সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদে ভোট হচ্ছে ঢাকায়… আর সেই ঢাকার একটি ভোটেকেন্দ্রের দৃশ্য দেখিয়েছেন চ্যানেল ২৪ এর রিপোর্টার সাহেদ আলম… ৩ ঘন্টায় কেন্দ্রটিতে ভোট পড়েছে মাত্র ১টি…. এমন রিপোর্ট দেখে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা…..
৪. ৬ ঘন্টায় ভোট পড়েছে ২টি…
সময় : দুপুর দেড়টা..
স্থান : রাজধানীর উত্তরার একটি ভোটকেন্দ্র…
রিপোর্টার : শাহেদ আলম, চ্যানেল ২৪..
৫. নবাবপুরে লাইনে লাইনে ভুয়া ভোটার।

বৈধ কাগজ-পত্র ছাড়াই আওয়ামী লীগের নির্দেশে দাঁড়িয়ে আছে সুযোগ পেলেই বুথে ঢোকার অপেক্ষায়। মিডিয়ার ক্যামেরা দেখেই কেঁটে পড়ে।

৬. খুলনায় প্রচুর জালভোট দেওয়া হচ্ছে। একসাথে ৫০ জন ঢুকে ভোট দিচ্ছেন। ৫ আঙ্গুলে কালির দাগ। ৫ জায়গায় ভোট দিয়েছেন এক ভোটার
৭. বিধ্বস্ত সাতক্ষীরাবাসীর নিরব প্রতিবাদ

ভোট পড়েনি একটিও। দলমত নির্বিশেষে ভোট দিতে যাননি কেউ।

৮. জাল ভোট দিয়ে দৌড়ে পালানোর সময় জাল ভোটকারীকে হাতেনাতে ধরলো একুশে রিপোর্টার । অনেক ক্ষণ দৌড়ানোর পর পিছন দিক থেকে তার কলার চেপে ধরে আটকি ফেলে সেই সাহসী রিপোর্টারটি। প্রচুর সংখ্যক পুলিশ সেখানে থাকলেও জালভোট প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে জানালো রিপোর্টারটি।
৯. ভোট চুরি কাকে বলে! ভিডিওটি দেখবেন আর বিচারের ভার আপনাদের।
১০. ৬৪৭টি ভোটের মধ্যে পড়েছে মাত্র ২২টি।
এছাড়াও কথিত নির্বাচনে কিছু লোক ভোট দিতে এসেও ভোট দিতে পারেনি আওয়ামী জালিয়াতির কারনে।
শেয়ার করে আ.লীগের এই ডিজিটাল শয়তানী মানুষকে জনান
১১. এজেন্টের কান্নার দৃশ্য
অনেকেই বলছেন আওয়ামীলীগ এই ভোট নাটক করে আরো ভয়ানকরূপে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরবে। তারা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য অবশ্যই আরো বহু মানুষ কে মারবে; কিন্তু কোন ইন্সিডেন্টই তাদেরকে শক্তিশালী করবেনা, বরং আরো দুর্বল করবে। একটা মিথ্যাকে ঢাকার জন্য তারা হাজারটা মিথ্যা জন্ম দিচ্ছে। আর হাজারটা অন্যায়কে ঢাকার জন্য তারা লক্ষটি অন্যায় করে যাবে। কিন্তু কোন প্রচেষ্টাই তাদের এই প্যাঁচ থেকে উত্তরন করবেনা। তাই যারা হতাশ হচ্ছেন; তাদেরকে বলছি জালিম স্বৈরাচারের পতন অবশ্যম্ভাবী। ইটস নট কোয়েশ্চেন এবাউট হাউ, ইটস এবাউট হয়েন? যত তাড়াতাড়ি হবে তত ভালোভাবে আওয়ামীলীগ বিদায় নিবে। আর যত দেরিতে আওয়ামীলীগ বিদায় নিবে তত তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে হারিয়ে যেতে থাকবে।

প্রহসনের নির্বাচন ও বাংলাদেশের সম্ভাব্য ভবিষ্যত নিয়ে কিছু ব্যাক্তিগত ভাবনা

by Sazzad Rahman

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একমাত্র সোল এজেন্ট বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। রাজনীতির মাঠের প্রাচীনতম ও দর্শকনন্দিত এই খেলোয়াড় এখন এতটাই জনবিছিন্ন হয়ে পড়েছে যে তাদের আহবানে দেশের সাধারণ ভোটারদের একশতাংশও আজকে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসেনি। গণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদ, ভারতের আধিপত্যবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতার বিরুদ্ধে এক নীরব বিপ্লব দেখলো আজকে বাংলাদেশ। সম্ভবত আমার এই কথার সাথে তারাই দ্বিমত পোষণ করবেন যারা বিটিভি, চ্যানেল আই, একাত্তর ইত্যাদি “নিরপেক্ষ” মিডিয়া ও রাকিবউদ্দিন গংদের “নিরপেক্ষ” কমিশনের একান্ত গুণমুগ্ধ বংশবদ। একপক্ষীয়ভাবে নগ্ন সমর্থন দিয়ে ভারত আওয়ামীলীগের মত একটি ঐতিহ্যবাহী দলকে একেবারে খাদের কিনারায় নিয়ে এসেছে।

 

ভারত নাকি সুপার পাওয়ার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু সুপার পাওয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখা একটি দলের ডিপ্লোমেসি এতটা অপরিপক্ক কিভাবে হয় তা আমার বুঝে আসেনা। ভারতেরই পত্র-পত্রিকারই ভাষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্টে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। দীর্ঘদিনের সাংষ্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে তারা দেশের মানুষের মাঝে যতটা আসন গেঁড়ে নিয়েছিল তার অনেকটাই তারা খুইয়েছে গণবিরোধী একটি দলকে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট এখন এতটাই প্রবল যে সম্ভবত সরাসরি সামরিক আগ্রাসন চালানো ছাড়া বাংলাদেশকে পুরোপুরিভাবে ভারতের নিয়ন্ত্রনে আনা কতটা সম্ভব তা প্রশ্নসাপেক্ষ। ভারত অনেক বড় সামরিক শক্তি সেটা যেমন বাস্তব তেমনি এটাও বাস্তব তাদের চেয়েও শতগুণ বড় সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্রকেও ইরাক-আফগানিস্তানে সামরিক আগ্রাসনের বোঝা বইতে গিয়ে প্রায় দেউলিয়া হতে হয়েছিল। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রই হাবুড়ুবু খায় সেখানে ভারত কি সরাসরি সামরিক আগ্রাসন চালানোর মত দুঃসাহস দেখাবে? মনে রাখতে হবে ভারতের পঞ্চাশ শতাংশের বেশি মানুষ এখনোও খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়।

 

ভারতের সামনে দ্বিতীয় পথ যেটি খোলা থাকে তা হলো আওয়ামীলীগকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় রাখা। কিন্তু আওয়ামীলীগ ভারতের হাতের পুতুল হতে গিয়ে যেভাবে পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে তাতে পশ্চিমারা যদি একবার অর্থনৈতিক অবরোধ দেয় তাহলে ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বোঝা বহন করা কতটা সম্ভব তা ভাববার বিষয়। তার উপর ইসলাম বিদ্বেষী অবস্থান নেওয়ার কারণে মুসলিম বিশ্বের সাথেও আওয়ামীলীগের সম্পর্ক শীতল। আর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনামান ভারতের সাধারণ মানুষের জীবনমানের চেয়ে কোন অংশেই কম না, বরং অনেক ক্ষেত্রেই তা অনেক উন্নত।

 

এখনোও পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র গণক্ষোভ জমা হয়েছে। কিন্তু মানুষ যখন চলমান ব্যাবসায়িক অচলাবস্থা ও সম্ভবত আসন্ন অর্থনৈতিক অবরোধর কারণে না খেয়ে থাকবে তখন এই গণক্ষোভ গণবিষ্ফোরণে পরিণত হবে যা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, যৌথবাহিনী দিয়েও তা ঠেকানো যাবেনা। এমনকি ভারতের দাদাবাবুরাও তা সামাল দিতে পারবেনা, যেমনটা ইরানে শাহদের বিরুদ্ধে চলা গণবিষ্ফোরণকে সামলাতে পারেনি খোদ যুক্তরাষ্ট্রই।

তামাশার নির্বাচন ও আওয়ামীপন্থীদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন

 

আতিক হাসান
 

১. ২০০৬ সালে  সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল বিচারপতি কে এম হাসানের। কিন্তু জনাব হাসানকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যা দিয়ে সাংবিধানিক সেই বাধ্যবাধকতাকে আওয়ামীলীগ তখন মানেনি। তাহলে বলুন, শেখ হাসিনা নিজেই সরকারপ্রধান হিসেবে থেকে নির্বাচন করলে এবং সেই নির্বাচনকে ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা’ আখ্যা দিলে সেটা কি বিএনপির মেনে নেয়া উচিত? কে এম হাসানের অধীনে নির্বাচনে আস্থা রাখা না গেলে শেখ হাসিনার অধীনে আস্থা রাখা যায় কি?

২. আওয়ামীপন্থী সুশীলরা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়া যেমন অধিকার, ঠিক তেমনি নির্বাচনে অংশ না নেয়াও কোনো রাজনৈতিক দলের অধিকার। তাহলে বলুন, এরশাদকে জোর করে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করল কেন আ’লীগ? মনোনয়ন প্রত্যাহার করা সত্ত্বেও জাপার বহু সদস্যের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়নি কেন? নির্বাচনে অংশ না নেয়া কি শুধু বিএনপিরই অধিকার? জাপার সেই অধিকার নেই???

৩. শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে সংলাপে যোগ না দেয়ায় আওয়ামীপন্থী সুশীলরা বেগম জিয়াকে দোষী করেন এবং বলতে চান যে সেই সংলাপটি অনুষ্ঠিত হলেই বুঝি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত! আসলেই কি বেগম জিয়া শেখ হাসিনার সংলাপে অংশ নিলেই সব কিছুর সমাধান হয়ে যেত? ধরলাম, বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে খুব ভুল করেছেন। কিন্তু বিএনপির সিনিয়র নেতারা তো ঠিকই আ’লীগের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সঙ্গে তারানকোর মধ্যস্থতায় সংলাপে বসেছিলেন! সংলাপের মধ্য দিয়েই সমঝোতা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকলে সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হলো কেন?

৪. আ’লীগ-বিএনপি উভয় দলকেই ছাড় দেয়া দরকার বলে সুশীলরা বলেছেন। কিন্তু বিএনপির কাছ থেকে কোন ধরনের ছাড় আশা করেন তারা? বিএনপি তো হুবহু ত্রয়োদশ সংশোধনীর আদলে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি, চেয়েছে যেকোনো ফরম্যাটের একটা নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার। রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচন করতে চাইলেও বিএনপি তা মেনে নিত বলে দলটির নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে সেরকম নমনীয়তা দেখা গেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচন করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। কিন্তু এরকম কোনো প্রস্তাবকেই গ্রাহ্য করেনি আ’লীগ।শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, তার হাতে অসীম ক্ষমতা রেখেই নির্বাচন করতে চেয়েছে আ’লীগ। এমতাবস্থায় বিএনপির কি উচিত ছিল ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষের সমর্থনপুষ্ট নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ছাড় দেয়া?

৫. আ’লীগের অধীনে নির্বাচনে গেলে সেটা যে বিএনপির জন্য পায়ে কুড়াল মারা হতো, সেটা কি এই নির্বাচন কমিশনের আচরণ থেকে স্পষ্ট হয়নি? মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরও এই নির্বাচন কমিশন জাপার প্রাথীদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেনি; আবার প্রত্যাহারের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও আওয়ামীপন্থীদের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী করার জন্য বিপক্ষ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে প্রার্থীদের সম্পদ-বিবরণী প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন কিন্তু আ’লীগের চাপে সেই তথ্য ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আওয়ামীলীগ আইন লঙ্ঘন করে প্রচার-প্রচারণা চালালেও নির্বাচন কমিশন আপত্তিটুকুও জানায়নি। সাবেক আওয়ামী মন্ত্রী আবু সাঈদ এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী প্রার্থীর পক্ষে খোদ পুলিশ নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছে! এরকম ভূরি ভূরি নজিরের পরও কি আওয়ামীপন্থী সুশীলরা বলবেন যে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হওয়া সম্ভব ছিল?

৬. অনেকেই বলছেন, বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত আন্দোলন তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, আ’লীগ যে বন্দুকের শাসন কায়েম করেছে, শত শত মানুষ হত্যা-গুম করেছে, তার বিপরীতে সাধারণ নিরস্ত্র মানুষ যে প্রতিরোধ তৈরি করেছে, সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন নয় কি? বঙ্গবন্ধুর মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে হত্যার পর তার প্রতিবাদ জানাতে বন্দুকের মুখে মানুষ রাস্তায় নামতে পারেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে পূর্বে কখনোই এবারের মতো বন্দুকের নলের শাসন কায়েম হয়নি। কখনোই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষের ওপর এভাবে নির্বিচারে গুলি চালায়নি, গুম করেনি (আওয়ামীপন্থী আইন ও সালিস কেন্দ্র বলছে, কেবল ২০১২ সালের অর্ধেক পর্যন্ত এই সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে একশরও বেশি মানুষ গুম হয়েছে)। সুতরাং, বন্দুকের শাসনের মুখে বঙ্গবন্ধুর খুনের বিরুদ্ধে যেখানে মানুষ প্রতিবাদ করতে পারেনি, সেখানে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা-গুমের পরও যে বিরোধী দলের কর্মীরা এখনো রাস্তায় নামছে, প্রতিরোধের চেষ্টা করছে, সেটা কম কিসে?

এই মুহূর্তে কেবল বিরোধী দলের সক্রিয় কর্মীরা মাঠে নামছে, সাধারণ মানুষ নীরবে আ’লীগের নির্যাতন প্রত্যক্ষ করছে, নির্বাচন হলে তারা ব্যালটের মধ্য দিয়ে আ’লীগকে শাস্তি দিত, যার আভাস পাওয়া গিয়েছিল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনগুলিতে। আগামীতে আওয়ামী সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইলে নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষও অতীষ্ঠ হয়ে একসময় মাঠে নামবে। ইতিহাস তেমনটাই বলে না কি?

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি খোলা চিঠি

by Jahid Islam:

সম্মানিত নেতৃবৃন্দ,

কেমন আছেন ? একটু চিন্তিত থাকলেও আশা করি আপনাদের ভয় কেটে গেছে। আপনাদের নেত্রী যে বক্তৃতা দিলেন এতেই গণতন্ত্রের সুস্পষ্ট বিজয় নিশ্চিত হয়েছে । আপনারা যে দিনভর বাসায় শুয়ে বা নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে ‘স্বৈরাচার’ বলে শেখ হাসিনাকে তাঁর ফ্যসিবাদি চরিত্রের জন্য গালি দিলেন এবং আপনাদের নেত্রী যে আল্লাহর গজবের জন্য বদ’দোয়া দিলেন এতে আওয়ামী লীগ যার পর নাই ভয় পেয়েছে।

তবে নেত্রী সভাস্থলে আসলে যে আরও কিছু একটা হত এ বিষয়ে আমরা সাধারণ লোকজন ত বটেই, স্বয়ং বারাক ওবামাও অবিচল আস্থা জ্ঞাপন করেছেন। নেত্রী যে সমাবেশ স্থলে আসতে পারেননি, এটিও তেমন বড় কোন বিষয় নয়। কেননা, আপনারা ত একটি স্বৈরাচার বিরোধী প্রতিনিধি সম্মেলনেরই আয়োজন করেছিলেন যেখানে সকল দলের দলীয় প্রধানদের কথা বলবার কথা ছিল, জাতিকে একটা মেসেজ দেয়ার কথা ছিল । আপনাদের নেত্রী যেতে পারেননি তাতে কি ? দুঃখ করবেন না, তাঁর বক্তৃতা ত পৌঁছে গেছে, তাই না ? উনি যা বলতে চেয়েছেন সেটা ত মানুষ শুনেছেই। কাজেই আর চিন্তা নেই।

আমরা জানি আপনারা একটু ব্যস্ত আছেন। অবশ্য থাকারই কথা। সামনে ক্ষমতায় আসলে কে কোন মন্ত্রী হবেন, কে কোন পদে বসবেন এর হিসাব মেলানো ত আর চাট্টিখানি কথা না । তাছাড়া, নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়ার এবং টেলিকমের লাইসেন্স, টেন্ডার ভাগাভাগির হিসাব মেলানো আসলেই একটা দুরহ কাজ। আপনারা কোন চিন্তা করবেন না, আমরা জনগন আপনাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝি। আমরা বুঝতে পারছি যে, আপনারা নিশ্চয়ই হিসাব করতে করতে ক্লান্ত। তাই সভাস্থলে যেতে পারেন নি। এটিকে আমরা অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করেছি।

আপনারা একদমই ভাববেন না, আমরা যারা জনগন আছি, আমরা হাজারে হাজারে বেরিয়ে আসব। পুলিশের বাধা সহ সকল বাধা উপেক্ষা করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে অপসারণ করে আপনাদের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনব। দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। এই সহজ কাজটুকুই যদি আমরা না করতে পারলাম আমরা আর কিসের জনগণ? আমরা এটা পারবই। কেননা আমাদের সামনে প্রেরণা হিসেবে আছেন আপনাদের মত অকুতোভয় নেতারা ।

দোহাই আপনাদের, আপনারা এই সময়টাতে ঘরে বা অন্য যে কোন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকুন। আপনাদের জীবনের মূল্য অনেক। আপনাদের কিছু হলে জাতিকে নেতৃত্ব দিবে কে?  তবে আশার কথা হল আপনাদের সহযোগী হিসেবে মাঠে আছে জামায়াত। ওরা ত ইতিমধ্যেই আপনাদের লাঠিয়াল বাহিনী হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

মাঝখানে যখন শুনলাম একজন মারা গেছে আমরা একটু শঙ্কিত হয়েছিলাম। আপনাদের কেউ নয়তো ? পরে শুনলাম, না; আপনারা ভাল আছেন। স্বস্তি ফিরে পেলাম। মারা গেছে আপনাদের লাঠিয়াল বাহিনীর একজন। ওরা মরলে তেমন ক্ষতি নেই। ওরা ত আছে আপনাদের স্বার্থেই। তাছাড়া আপনাদের উপর আমাদের রয়েছে অগাধ আস্থা। আজ হোক কাল হোক সময়মত ওদের কে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করেই দিবেন এ বিষয়েও আমরা নিশ্চিত। তাই ওদের কাজের যাবতীয় দায়িত্ত্ব থেকেও আপনারা পুরোপুরি মুক্ত।

জেনে রাখবেন, আপনারা যেভাবে চলছেন এর সাথে আমাদের রয়েছে পূর্ণ সমর্থন। তাই আমাদেরকে নিয়ে ভাববেন না। ভোট যে আমরা আপনাদেরকেই দিব এ বিষয়ে আমরা যে আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে পেরেছি জেনে ভাল লাগছে । বিজয়ী দল হিসেবে সরকার গঠন করা এখন ত শুধু সময়ের ব্যাপার, তাই না ? তাই আর মাত্র কটা দিন আপনারা ধৈর্য ধরে আত্মগোপনে থাকুন। এই দিকটাও আমরাই সামলে নেব। আর দু’চার দিন নেত্রীর বক্তৃতা এবং দু’চারটা কড়া অভিশাপ ! এরপরই আওয়ামী লীগের খেলা শেষ।

আপনাদেরকে আমাদের পক্ষ হতে বিজয়ের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি।

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিন্দবাদ।

কালেকটিভ কনশানস বা গণনৈতিকতা -বিএনপির ২৯ ডিসেম্বর এর ফাকা মাঠ আন্দোলন এর একটি কারণ বিশ্লেষণ

 আজকের মার্চ ফর ডেমোক্রেসি নিয়ে বিএনপির এক্সপেকটেশন কি ছিল, তা আমি এখনো ক্লিয়ার হতে পারছিনা।

তারা কি ভাবছিল,হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে ? আওয়ামী লিগ যে সব কিছু ব্লক করবে, তাতো জানা কথা। বিএনপি কি ভাবছিল যে, আওয়ামী লিগ এর গুণ্ডাদের সকল বাধা আর পুলিশ এর বাধার মুখে জনতা রাস্তায় নামবে ?

আর ঢাকার বাহিরের মানুষের ঢাকা আসার কথা বলছেন কেন ? ঢাকার মধ্যে এক কোটি মানুষ আছে। এরা কই ছিল ?

এরা কেন নামে নাই।

হেফাজত এর মুভমেন্ট এর আগে, ঠিক একই রকম বাধা দেয়া হইছিল (হয়ত মাত্রা আরো বেশি ছিল) কিন্তু মানুষের জোয়ার এর মুখে সকল বাধা ভেঙ্গে পরছিল।

এরা আসছেনা কেন ?এই প্রশ্নটা বিএনপি কি নিজেকে করছে ?

বিএনপির আন্দোলন এর লেজিটিমেসি আছে, কিন্তু বিএনপির কি লেজিটিমেসি আছে ? এইটা বিএনপি কখনো নিজেদের জিজ্ঞেস করছে ।

রাষ্ট্র যখন, ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার দাস হয়ে যায়, সকল ইন্সটিটিউশন যখন ভেঙ্গে পরে যখন কোন নিরপেক্ষ মিডিয়া থাকেনা, মানুষ যখন আদর্শিক ভাবে বিভাজিত হয়ে পরে, সংবিধান যখন সরকার এর ক্ষমতা রক্ষার পুস্তকে পরিণত হয়  তখন যেই সব দল শুধু নাকি কান্না গাইতে থাকে তারা ইতিহাসের থেকে কোন শিক্ষা নেয় নাই।

সেই শিক্ষা হল, এই ধরনের অবস্থায় জন মানুষের কালেকটিভ নৈতিকতা বা কালেকটিভ মরালিটি সব চেয়ে  গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায়।

সমাজের কালেকটিভ মরালিটি, কালেকটিভ কনশানস বা জন-নৈতিকতা কি বলে, সেইটা হয়ে যায় সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান।

এই সংবিধান ধরা যায় না, এইটা লিখতে হয় না। এইটা প্রতিটা মানুষের মনে তখন গাথা হয়ে থাকে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা ধরেন। প্রতিটা মানুষ তখন বিশ্বাস করতো এই দেশকে নিজের রক্ত দিয়ে মুক্ত করতে হবে। মানুষ তখন অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরছে।

৯০ এর এরশাদ এর পতনের কথা ধরেন। প্রতিটা মানুষ জানত, ওই লুচ্চা রে নামাইতে হবে। এইটা কালেকটিভ মরালিটি, কালেকটিভ কনশানস জনতার বিবেক। লুচ্চাটা আর্মির সাপোর্ট  ধরেও আর  টিকে থাকতে পারে নাই । আর্মিও শেষ পর্যন্ত সমর্থন প্রত্যাহার  করে নিছে ।

আজকে তাই বিএনপি কে প্রশ্ন করতে হবে, কেন আজকের এত অত্যাচার , অন্যায়, রাষ্ট্রের পেটে ছুরি চালিয়ে ইন্ডিয়ার দালালি  আর সীমাহীন  লুটপাট এবং পরিষ্কার অগণতান্ত্রিক আচরণ দেখেও তাদের ডাকে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে নাই ?

আওয়ামী পুলিশের বাধা, আর ছাত্র লিগ এর গুণ্ডা দের ভয়ে ?

৭১ এ আর্মি ছিল এলএমজি হাতে তাও মানুষ পাত্তা দেয় নাই – আর এই কয়টা ছাত্র লিগ , আর রেব পুলিশ ? ফুহ।

আজকে তাই  প্রশ্ন করতে হবে, আওয়ামী  লিগ যদি আরো ৫ বছর যদি অবৈধ ভাবে দেশ শাসন করে যায়, তাও কি সাধারণ মানুষ কি মাঠে নেমে তাদের বিরুদ্ধে গণ মিছিলে নামবে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এর মত ?

পাঁচ বছর পরের কথা জানিনা, কিন্তু আজকে সে পরিস্থিতি এখনো হয় নাই।

এই কালেকটিভ  মরাল কনশানস টা এখন দানা বাধতাছে মাত্র – এখনো ফর্ম করে নাই। কিন্তু, তার আগেই বিএনপি মানুষরে রাস্তায় চায়।

বটম লাইন হইলো, বিএনপি নিজের নৈতিকতা মানুষের কাছে পরিষ্কার করতে পারে নাই।

বিএনপি এখন পর্যন্ত চিন্তা করতে পারে নাই, একটা মূল কাজ বাদ দিয়ে তারা আন্দোলন এ নামছে । তাদের মানুষকে একটা ভিশন দেখাতে হবে  বা আগের পাপের জন্যে ক্ষমা চাইতে হবে  বা দেখাতে হবে  যে তারা একটা সোল সার্চিং করছে- কোন লিপ সার্ভিস না।

সবাই মনের চক্ষে দেখতে পাচ্ছে , বিএনপি শান দিচ্ছে তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্ট এ–আরো জোর গতিতে লুটপাট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে, কালেকটিভ মরাল কনশানস – বিএনপির পক্ষে দাড়ায় নাই।

সাধারণ মানুষ একটা সুন্দর জীবিকা নিয়ে, পরিবার পরিজন সহ সুন্দর ভাবে বেচে থাকতে চায়, দুর্নীতির থেকে মুক্তি চায়- বিএনপি কি সেই ভিশন দেখাইতে পারছে সাধারণ মানুষ কে ? নাকি মানুষ জানে, বিএনপি আসলে তারা আরো জোর গতিতে বিগত পাঁচ বছরের হারানো সম্পদ ফিরে পেতে জোর গতিতে লুটপাট শুরু করবে ।

জনমানুষের এই কালেকটিভ মরালিটির বিষয়ে বিএনপি চিন্তাও করে নাই। করতাছেনা। তারা জাস্ট ক্ষমতা চায়, যে কোন মূল্যে যেন এইটা তাদের বাপ এর তালুক, যেন এইটা তার রাইট। তারা জাস্ট ধরে নিচ্ছে, আওয়ামী লিগ এর উপর মানুষ চেতা, স মানুষ এখন দলে দলে তাদের পক্ষে নেমে ক্ষমতা তাদের হাতে তুলে দিবে ।

আমি পরিষ্কার, আওয়ামী লিগ এই অবৈধ নির্বাচন করে আরো কয় এক বছর ক্ষমতা ধরে রাখার মত দলীয়, সাংগঠনিক,প্রাতিষ্ঠানিক,আন্তর্জাতিক,অর্থনৈতিক, সামাজিক সক্ষমতা এবং  কুটচালি বুদ্ধি রাখে।

শেখ হাসিনা অনেক হেডস্ট্রং লেডি। ডক্টর ইয়ুনুস ইস্যুতে উনি বছর এর পর বছর আমেরিকার মত পরাশক্তির হাজারো কান্না কাটি পাত্তাও দেন নাই। প্লাস উনার সাথে ইন্ডিয়া আছে। স, উনার একজিট রুট রেডি। প্লাস দেশের আনাচে কানাচে প্রাশনের আনাচে কানাচে আওয়ামী লিগ জায়গা মত  বসে আছে।

তারা এখন দেখতে পাচ্ছে, তাদের আর কোন নৈতিকতার ধার ধরতে হচ্ছেনা ফলে এখন তাদের আর কোন চক্ষু লজ্জা দেখাতে হচ্ছেনা। কারণ, এই  হাস্যকর নির্বাচন এর কারণে তাদের অবস্থান এখন এত দিনের আলোর মত অবৈধ । ফলে, নৈতিকতার ধার তাদের আর ধরতে হচ্ছেনা ।

ফলে, তারা এখন যা ইচ্ছা তা করতে পারবে এবং কারো কোন নিষেধ শোনার তাদের প্রয়োজন নাই। তারা জানে তারা এখন  চাইলেই, ঘরে ঢুকে মানুষ মেরে যদি জাস্ট ডিক্লেয়ার করে দেয়, লাশ টা জামাতের কেও কোন প্রশ্ন করবেনা। তারা জানে, একটা ওপেন মিছিলে গুলি মেরে মানুষকে মেরে ওরা যদি  বলে, এইটা ছিল হিজবুত তাহরীর তো, সবাই চুপ মেরে যাবে। তারা জানে, তাদের নেতারা সব গুলো সিরিয়ালি  চুরি করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা খাইছে  নেতাদের নিজেদের হলফ করা সম্পদ এর বিবরণী থেকে- ফলে তারা এখন এইটা নিয়েও আর চিন্তিত না। তারা বুঝে, একটা ইলেকশনে ১৫৪ জনকে আগে নির্বাচিত করেও তারা গণতন্ত্র আর সংবিধান এর নাম, পার পেয়ে যাবে- সমাজের এক দল মানুষ তাদের সাথে থাকবে, যুদ্ধাপরাধী বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র বলে।

ফলে, আওয়ামী লিগ  জানে, কেও তাদের  জোর না করলে, তাদের  কিছু ছাড়তে হবেনা।

ফলে,রাজতন্ত্রের আরেক ক্রাউন প্রিন্স বিএনপিকে  আরো অনেক বছর ধরে ফ্রাস্ট্রেটেড হতে হবে।

এবং  যত দিন তারা মানুষের কালেকটিভ মরাল কনশানসটা অর্জন না করবে এই ধরনের আন্দোলন আওয়ামী লিগ ফু  মেরে উড়িয়ে দিবে, আজকে যেমন করেছে । আওয়ামী লিগকে সহজে কেও নাড়াতে পারবেনা।

এইটা ঠিক, আওয়ামী লিগ যত অন্যায় করতে থাকবে, তত বেশি তার বিরুদ্ধে মরাল কনশানস জমা হবে, কিন্তু, আওয়ামী লিগ এর নেগেটিভ কনশানস ইজ নট ইকুয়াল টু বিএনপির পজিটিভ কনশানস।

বিএনপির নিজেরটা নিজেকে অর্জন করতে হবে। মানুষ বোঝে, এই সেই বিএনপি যার নেতারা ৫ বছরে ধরে দেশকে লুট করছিল । এই সেই বিএনপি যে নিজেও, ক্ষমতা দখল করে রাখার জন্যে অনেক কুটচাল চালছে ।

বিএনপিকে যদি ক্ষমতার ধরে কাছে যেতে হয় তবে অবশ্যই একটা সোল সার্চিং করে, নিজের ভুল স্বীকার করে সত্যিকার এর পরিবর্তন হইছে তার কনভিনসিং  প্রমাণ দিয়ে মানুষের কাছে আসতে হবে ।

নইলে, অনলাইন এ বা রাস্তা ঘাটে আওয়ামী লিগ এর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ কে নিজের জনপ্রিয়তার প্রমাণ হিসেবে ধরে নিয়ে যদি, আন্দোলন প্ল্যান তাদের চরম ভাবে হতাশ করবে।

ফলে, আরো অনেক  বছর ধরে, যদি এই আন্দোলন চলে জন ভোগান্তি, অর্থনীতি ধ্বংসের চক্র চলতেই থাকবে।

এবং আওয়ামী লিগ এর ক্ষমতার বিরুদ্ধে এই আন্দোলন যদি আরো দুই থেকে পাঁচ  বছর ধরেও চলে, আমি অবাক হবনা।

কারণ, আওয়ামী লিগ এখন ডেস্পারেট। এবং আগামী ৫ জানুয়ারি ইলেকশন এর পরে, তারা আরো বেশি ডেস্পারেট হবে তাদের দল এর প্রায় ২ লক্ষ লোক রুজি রোজগার এর ইস্যু এইটা- এইটা তারা ছাড় দিবেনা।

তাই যখন সংবিধান যখন ক্ষমতাসীন এর ক্ষমতা টেকানোর অস্ত্র তখন জনগণের কালেকটিভ কনশানস নিজের পক্ষে  নিয়ে আসাটা আজকে যে কোন রাজনৈতিক দল এর আন্দোলন এর প্রধান ভিত্তি হয়ে দাড়ায় ।

এবং জন-নৈতিকতা এবং জনগণ এর কালেকটিভ কনশানস যদি বিএনপির তার পক্ষে আনতে না পারে , তাহলে আর যতই ডাক দিক কোন গন-জোয়ার বিএনপির পক্ষে নামবে  না। আওয়ামী লিগ নিজেই  হয়তো এইটা সেইটা করে, পরিস্থিতি গরম করে রাখবে –কারণ তারা এত অনৈতিক দল যে সম্পূর্ণ বিবেক বর্জিত হয়ে তারা এখন যে কোন কিছু করতে পারে। কিন্তু, গণ-মানুষ এর জোয়ার বিএনপির পক্ষে নামবে বলে মনে হয় না । নামলে অবাক হব ।

আজকে যারা কিবোর্ডে ঝড় তুলে ফাটায় ফেলতাছে, টক শোতে নিজের একটা কথা শোনানোর জন্যে ঘণ্টার অপর ঘণ্টা  ফোন টিপ্তাছেন, আড্ডায়, ফেসবুকে এমপিদের অবৈধ সম্পদ, অবৈধ ইলেকশন , মানুষের মৃত্যু,এই ফ্যাসিবাদী সরকার  কিভাবে নিজেই ঢাকা অবরোধ করলো – এইটা সেইটা বলে ঝড় তুলতাছেন  – এবং নৈতিক সাহস টা নিজের সাথে না থাকার কারণে

এই কিবোর্ড বিপ্লবী আর চা এর কাপে ঝড় তোলা লোক গুলোই বিএনপির হয়ে আওয়ামী গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামবে না।   

বাকি সাইলেন্ট মেজরিটি  তো আরো অনেক দুরের বিষয়।

একটি ফুটবল খেলা

By Ibrahim Mahmud:

গুরুত্বপূর্ন একটি ফুটবল খেলা শুরু হবে, এমন সময় একটি বিস্ময়কর জিনিস লক্ষ্য করা গেলো। গত ম্যাচের বিজয়ী দলের অধিনায়ক রেফারীর বাঁশি নিয়ে মাঠে ঢুকছে। গত ম্যাচ জেতায় এটা নাকি এখন তার অধিকার! বিদেশী কোন কোচ নাকি তার মাথায় এই বুদ্ধি দিছে। নতুন নিয়ম সে নিজেই করছে, সেটা এখন তার পকেটে শোভা পাচ্ছে।

সে মাঠে ঢুকেই প্রতিপক্ষের খেলোয়ারদের লাল কার্ড দেয়া শুরু করল। দর্শক নাকি কেবল তার দলের জার্সি যারা পরা তাদের খেলাই দেখতে চায়। কিছুক্ষনেই মাঠ খালি।

কেমন দেখায়! সাইড লাইন থেকে দুইটা খেলোয়ারকে ধরে আনা হল। তারাও মাঠে পা দিয়ে বুঝল ভুল করছে। বের হয়ে যেতে চাইল, কিন্তু জোর করে তাদের আটকে রাখা হল, মাঠে পা দিলে নাকি খেলতেই হবে!

এদিকে ফাঁকা মাঠ পেয়েতো তার দলের খেলোয়ারেরা মহা খুশি। খেলা শুরুর আগেই ডজন খানেক গোল দিয়ে ফেলল। স্কোরার আগেই হাত করা, সেও বলল গোল হইছে কিনা এটা দেখাই তার ব্যাপার, অন্য কিছু রেফারী বুঝবে। নিয়মের খাতায় তাই নাকি লেখা আছে। ফলে খেলা শুরুর আগেই স্কোর ১২-০।

এদিকে এমন অদ্ভুত খেলা দেখে দর্শক খেপে যাচ্ছে। তারা দুয়োধ্বনি দিচ্ছে।

কিন্তু অধিনায়কের কোনো বিকার নাই। বিদেশী কোচের আশ্বাসতো আছেই তার উপর এখন তার পকেটে নিয়মের খাতা আর হাতে রেফারীর বাঁশি। সে মনের আনন্দে পু পু করে বাঁশি বাজিয়ে চলছে…

Of Causes and Means

2

by Shafiqur Rahman

Power Politics means political action characterized by exercise of power and especially of physical force by a political group as a means of coercion in the attainment of its objectives. Like many political terms with aggressive undertones, the term came from the Germans, machtpolitik, who were determined to set out to develop the archetypes in un-subtlety in political actions  in their not too distant past. In Bangladesh too, the main political parties have been engaging in naked power politics since the dawn of the new democratic era in 1991 but it has reached hitherto unknown depth of depravity this time around.

In the everyday violent melee of the power politics it is sometimes easy to lose sight of the strategies behind the tactics. With some presumption, it is not hard to divine the broad strategies behind the two warring faction. Basically the AL government is pursuing a two pronged strategy. Its preferred strategy is to get BNP to participate in an election managed and supervised by AL so that the next AL government gets the stamp of legitimacy from domestic constituents and international partners. Failing that, ALs second option is to try to paint Jamaat as full-fledged terrorist organization internationally and BNP as its patron-accomplice and manage the low level insurgency by BNP and Jamaat indefinitely while seating snugly at the throne of state power.

BNPs strategy is singular; it is going by the tested and proved way to pry open the governments grip on power by preparing the ground for a third party to intervene. BNP incapable of creating that scenario on its own, that’s why Jamaat is so indispensable to them now. Few can doubt that if BNP can achieve the goal of power politics without the help of Jamaat, it will discard Jamaat in an instance like an used tissue paper.

In pursuance of this strategy BNP is again following the manual of tactics to create maximum destabilization by interrupting the regular life of the country. But this year the BNP led opposition has upped the ante. Not only the life of the general people are being interrupted but also their life itself is being targeted. Especially the series of vehicle burning with people inside has aroused universal disgust and apprehension of this dastardly deed becoming regular part of Bangladesh politics.

The ruling Awami League on the other hand is using state power in unprecedented crushing of political opposition. Whole ranks of senior leadership has been rounded up and all mass-political activity has been clamped upon. In scenes reminiscing brutal foreign occupation, law enforcement agencies are using lethal forces without restraint.

In the daily barrage of the atrocities and excesses of the political power players it is easy to lose sight of the root cause that underlie this current round of confrontation. BNP wants a free and fair election; a election that most neutral observers agree that BNP will win handsomely. AL also recognizes that and that why it is determined to hold an election under its term and deny the people have its say. This foundational subtext of power politics is not due to any inherent virtue of the two parties, the situation is essentially reverse of what was in place in1996 and 2006. The only difference being that this time, opinion polls and local elections have repeatedly underscored this fact of ground.

The AL government is aware of the original sin of its position that is why it is throwing around a host of allegations about BNP to obfuscate the issue. BNP doesn’t want election, it wants to free war-criminals. BNP do not want to respect the rule of law as enshrined in the constitution recently amended by AL to uphold democracy. BNP wants to install a religious theocracy. BNP is colluding with hostile foreign entities. BNP wants to reverse the great developmental achievements of the AL government. BNP is joined in the hip with Jamaat, a terrorist organization. Terror tactics cannot be allowed to succeed. Terrorism is the biggest threat facing the country and so on.

Every time I hear this litany of complaint from AL leaders and apologists, I am reminded of the world’s most contentious issue, the Israel-Palestinian conflict. The global community broadly recognizes the fundamental injustice at the heart of the Is-Pal conflict, an occupying power appropriating land from a native people and denying them freedom to choose their own destiny. Again to obfuscate the core injustice, apologists of Israeli lebensraum employ myriad complaints against the Palestinians.

They say that Israel doesn’t have a reliable partner in Palestinians for peaceful settlement. Palestinians do not want peace. Palestinian authority is deeply in cahoots with religious absolutists and terrorists. Palestinians use heinous terror tactics. Palestinians are backed by foreign entities determined to annihilate Israel. Palestinians are living far better under Israeli occupation than their counterparts living in Arab absolutist regimes. Israel is an oasis of civilization and progress in the midst of a sea of barbarism. Sound’s familiar? And all the while Israel is busy changing the facts in the ground so that a peaceful settlement becomes all but impossible.

Just like Israel-Palestinian issue, the current political problem in Bangladesh is complex and there is no easy solution that will satisfy all parties. But this should not mask the simple injustice lying at the heart of the issue. The controversy about the means used in the political confrontation should not mask the cause of the conflict.