২৩ এপ্রিল ২০১৩ যখন রানা প্লাজায় ফাঁটল দেখা দেয় তখনই ঐ ফাটলগুলো পর্যবেক্ষণের পর বিপদজনক ঘোষনা করে একজন প্রকৌশলী একুশে টিভিতে সাক্ষাৎকার দেন। কিন্তু সন্ধায় ভবনের মালিক সোহেল রানা সাভারের তৎকালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে বৈঠক শেষে ঐ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সোহেল রানা দুই জনই একুশে টিভিতে ভবনটি সম্পূর্ন নিরাপদ ঘোষনা করেন। (উল্লেখিত দিনে একুশে টিভির সন্ধা সাতটার খবরটির ফুটেজ আর্কাইভ থেকে যোগাড় করলেই এটা পাওয়া যাবে)।
২৪ এপ্রিল ২০১৩ সকালে হরতাল বিরোধী মিছিল করার জন্য যুবলীগের কর্মী সমর্থকরা রানা প্লাজার নীচে সোহেল রানার অফিসে জড়ো হয়। অন্যদিকে গার্মেন্টসের শ্রমিকরা রানা প্লাজার বাইরে জড়ো হয়ে ঝুঁকিপূর্ন ভবনে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানাতে থাকে। গার্মেন্টস এর কর্মকর্তারা বিষয়টি সোহেল রানাকে জানালে সে তার দলীয় কর্মীদের দিয়ে জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে শ্রমিকদের ভবনটিতে গিয়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে।
শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবার কিছুক্ষণ পরেই লোড শেডিং শুরু হয় এবং ভবনটির বিভিন্ন তলায় থাকা জেনারেটরগুলো একসাথে চালু হয়। এর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই রানা প্লাজা ধ্বসে যেতে শুরু করে। ধারণা করা হয়, জেনারেটরগুলোর সম্মিলিত কম্পন ফাঁটল ধরা রানা প্লাজার দুর্বল স্তম্ভগুলো সহ্য করতে পারে নাই।
একটি ঝুঁকিপূর্ন ভবনকে নিরাপদ ঘোষনা কারা করেছিলো, তার প্রমান টিভি ফুটেজে রয়েছে। কারা জোর করে শ্রমিকদের ঐ ভবনে পাঠিয়েছিলো তার প্রমানও বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের সাক্ষাৎকারে পাওয়া যায়। তাহলে কী কারণে এখনো এই এক বছর পরও তদন্ত শেষ হলো না? রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঝুঁকিপূর্ন ভবনকে নিরাপদ ঘোষনা করার পর সেখানে শ্রমিকদের জোর করে কাজ করানোর কারনে এই ঘটনাকে আর ‘দুর্ঘটনা’বলার উপায় নেই; বরং এটি একটি ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’!
রানা প্লাজার হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক রূপ দিতে গিয়ে দেয়া দুইজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তির দেয়া নির্মম বক্তব্য আজো সবাইকে পীড়া দেয়। সেগুলো হচ্ছে-
“যারা মারা গেছে তারা মূল্যবান সামগ্রী সরাতে গিয়েছিলো”
“পিলার ধরে হরতালকারীরা নাড়া দেয়ায় ভবন ধস”
একজন মানুষ নিহত হলে তার পরিবার ও উত্তরাধীকারীরা তার সম্পদের বন্টন করতে পারে, তার জন্য বরাদ্দ ক্ষতিপূরণ পেয়ে ঐ কর্মক্ষম লোকটির ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলো বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু নিখোঁজ ঘোষনা করলে পরিবার ও উত্তরাধীকারীরা এই ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হবার পাশাপাশি স্বজনদের ফিরে পাবার এক দুরাশা নিয়ে দিন কাটায়। বিষয়টা যে কী পরিমান কষ্টকর তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না।
হে আমার রাষ্ট্র ও কর্তৃপক্ষ, আপনারা যদি মানবিক যুক্তি না বুঝতে চান তাহলে পাশবিক যুক্তি দিয়েই বোঝাই। ধরে নিন একটি বাক্সে ১০টি গিনিপিগ আছে। বাক্সটিকে যদি একটি ল্যান্ড রোলারের নীচে চাপা দেন তাহলে কী কয়েকটি গিনিপিগ নিখোঁজ হয়ে যাবে?
রাষ্ট্র ও কর্তৃপক্ষের কাছে কড়জোরে অনুরোধ করছি, রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডে ‘নিখোঁজ’ ঘোষিত ১৪৬ জনকে ‘নিহত’ ঘোষনা করুন প্লিজ।
এমন নির্মম অপেক্ষার ছবি আর দেখতে চাই না।
(ছবির উৎস: ইন্টারনেট)
Recent Comments