ক্ষমতার তাজমহল

By Watchdog BD 

সুযোগটা গর্ভাচেভেরই সৃষ্টি।        ক্ষমতা হাতে পাওয়ার অল্পদিনের ভেতর ডিক্রি জারি করে প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেন এখন হতে দেশের যে কোন বিষয়ে খোলামেলা তর্ক করা যাবে। তাতে অতীতের মত সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে যাওয়ার ভয় থাকবেনা। ব্যাপারটা হজম করার মত স্বাস্থ্যবান উদর রুশদের পেটে তখনো বেড়ে উঠেনি। তাই একনায়কতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় তর্ক বিতর্কের সংজ্ঞা নতুন করে ফরমুলেট করার মত দার্শনিক তাৎক্ষণিক ভাবে হাতে পাওয়া যায়নি। স্বভাবতই এ নিয়ে দেখা দিল অনিশ্চয়তা।

অনিশ্চয়তার ঢেউ আমাদের শ্রেণীকক্ষেও আঘাত হানল। বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদ নামক বাধ্যতামূলক একটা সাবজেক্টে গতবাঁধা বুলি আওড়ানোর ফাঁকে শিক্ষক জানিয়ে দিলেন আজ আমাদের তর্ক করতে হবে। এবং সেটাও বাধ্যতামূলক। তর্কের বিষয়, সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সোভিয়েত দেশের জাতিগত সমস্যা। ১০০টা ভাষা এবং ততধিক সংস্কৃতির একটা দেশে জাতিগত কোন সমস্যা আছে কিনা তা তর্ক করে বের করতে হবে। ২৬ জনের একটা ক্লাশে প্রায় সবাই নাম লেখাল এক পক্ষে। অর্থাৎ এ দেশে এ জাতীয় কোন সমস্যা নেই। রুশ, ইউক্রেনিয়ান, তাতার, উজবেক, চেচেন, আর্মেনিয়ান, ওরা সবাই হাতে হাত রেখে সোভিয়েত পতাকার নীচে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। দুই পক্ষ ছাড়া যে বিতর্ক হয়না অধিকাংশ রুশদের মগজে ঢুকাতে শিক্ষকের বেশ কষ্ট হল। বিপক্ষে আমি একা। অবাক হল বাকি সবাই। অনেকে অভিযোগ করল তাদের রুটি-হালুয়া খেয়ে তাদেরই বিরোধীতা করছি। শিক্ষক অভয় দিলেন। শুরু হল বিতর্ক। রেশারেশি, ক্রোধ এবং অসন্তুষ্টি এমন একটা পর্যায়ে গেল যেখান হতে সবাই সমস্বরে জানতে চাইল সমস্যা থাকলে এর সমাধান কি। আমি নিজেও ছিলাম উত্তেজিত। হয়ত মুখ ফসকেই বলে ফেললাম, জগাখিচুড়ির সোভিয়েত দেশকে ভেঙ্গে পনেরটা দেশে পরিনত করতে হবে। এবং প্রত্যেকটা জাতিকে তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দিতে হবে। হা হয়ে গেল সবার মুখ। পীন পতনের নীরবতা নেমে এল ক্লাশে। দুদিন আগে এ ধরনের বক্তব্যের একটাই ছিল শাস্তি, বিদেশিদের দ্রুত বিদায় এবং স্বদেশি রুশদের নির্বাসন। সময়টা ছিল গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকার সময়। তাই পার পেয়ে গেলাম পরাক্রমশালী সোভিয়েত দেশের সংহতির বিরুদ্ধে কথা বলে।

পাঁচ বছর পরের কথা। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরের যে দিনটায় সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতন হয় ছিলাম কক্সবাজারের একটা রেস্টহাউজে। আনবিক, পারমাণবিক বোমা আর লাখ লাখ সৈন্য সামন্ত নিয়ে কথিত সর্বহারাদের একনায়কতন্ত্র কেবল স্বদেশেই ক্ষমতা ধরে রাখার মিশনে ছিলনা, বরং গোটা পৃথিবীকে একদিন তাদের ক্যাম্পে আনার স্বপ্ন দেখত। তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে গেল তাদের ঘর। আস্তাকুঁড়ে ঠাই নিল মার্কস, এঙ্গেলস ও লেনিনের সাম্যবাদী পৃথিবীর স্বপ্ন। বন্দুকের নলের মুখে ১০০টা জাতিকে দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ রেখে একদল সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদ ও তাদের সহযোগীরা কেবল দেশকে লুটেই ক্ষান্ত থাকেনি পাশাপাশি গোটা বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছিল অনিশ্চয়তার গভীর অন্ধকারে। সোভিয়েত দেশে ঘটে যাওয়া এ ক্ষুদ্র ঘটনাটা মনে করার একটা উপলক্ষ হচ্ছে ক্ষমতা নিয়ে বর্তমান আওয়ামী সরকারের মনোভাব। ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে ঘিরে যে অন্যায়, অবৈধ ও অসুস্থ সংস্কৃতি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে ক্ষমতাসীনরা ধরে নিয়েছে জাতি হিসাবে আমরা তা মেনে নিতে বাধ্য। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনকে তছনছ করা হয়েছে পেশিশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে। কলঙ্কিত বগুড়া উপনির্বাচনের জন্য বিএনপির গায়ে মাখানো হয়েছিল হাজারো কালিমা, অথচ আওয়ামী লীগের হাতে ধারাবাহিকভাবে দেশের সবকটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধর্ষিত হচ্ছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, রাজাকার, এসব ইস্যুকে বানিজ্যিক পণ্য বানিয়ে নতুন প্রজন্মের একটা বিরাট অংশকে মোহাবিষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছে এবং পাশপাশি ব্যবহার করছে বিশেষ পরিবারের গোয়েবলসীয় প্রচারনায়। এসব পণ্যে ধার দেয়ার জন্য থেমে থেমে আয়োজন করছে মানব বন্ধনে পতাকা তৈরী ও জাতীয় সঙ্গীতে বিশ্বরেকর্ড করার মত হাস্যকর অনুষ্ঠান। এসব পণ্য হতেও লুটেরার দল বাগিয়ে নিচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ।

১৯১৭ হতে ১৯৯১। পরাশক্তির তকমা গায়ে লাগিয়েও সোভিয়েতরা পারেনি। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে গুটি কয়েক সুবিধাভোগী নিজেদের ভাগ্য গড়ার যে বিশাল আয়োজন তারা করেছিল তা এত বছর পরে হলেও ধ্বসে গিয়েছিল। এটাই মানব ধর্ম। এভাবেই সভ্যতা বিবর্তিত হয়। গায়ের জোর আর মিথ্যার ফানুসে চড়ে বেশিদূর যাওয়া যায়না। আওয়ামী ঘোড়ায় চড়ে শেখ পরিবারের যাত্রাও যে বেশিদূর গড়াবে না তা সময়ই বলয়ে দেবে। ততদিন আসুন একদল রাষ্ট্রীয় লুটেরা ও খুনিদের বলাৎকার জমা-খরচের খাতায় লিপিবদ্ধ করতে থাকি। সময় হলেই তা সুদে আসলে পরিশোধ করে দেব।

সাম্রাজ্যবাদী মুনাফালোভীদের ক্ষমতার নিচে চাপা পড়ে রাষ্ট্র আর জাতীয় সঙ্গীতের চেতনা হারানোর বয়ান

1

খন্দকার রাক্বীব

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম আর জাতীয় মুক্তির বিষয়গুলোকে ইদানিং যে হারে সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রির আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে তা প্রতিরোধ করা জরুরী। প্রথম আলো-গ্রামীণফোন গোষ্ঠী সর্বপ্রথম আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রামের ভাষা আন্দোলনকে নিজেদের ব্যবসার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এই ন্যক্কারজনক বিকৃত সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রির বাজার তৈয়ার শুরু করে। আস্তে আস্তে এর বিস্তার মহীরুহ ধারন করছে।

 

পুঁজিবাদী সমাজে সংস্কৃতির ধরণ ও গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যায় ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের তাত্ত্বিকদের দ্বারা বিনির্মিত এই সাংস্কৃতিক ইন্ডাস্ট্রির বয়ান গত শতাব্দীর তিরিশ-চল্লিশের দশকের হলেও, এতদিন এটি বাংলাদেশের পঠন-পাঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। কিন্তু এটি এখন যে উপায়ে বিকশিত হচ্ছে তা রীতিমত ভয়ানক।এটি জানা কথা যে, সংস্কৃতি হলো ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সৃজনশীলতার প্রকাশধর্মী বিষয় এবং সহজাতভাবে ইন্ডাস্ট্রিবিরোধী। অথচ সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রি প্রত্যয়ে সংস্কৃতিকে মানবিকিকরণ কিংবা মানবমুক্তির উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়না এবং একে মতাদর্শগত আধিপত্য বিস্তারের দায়িত্বপালনে নিয়োজিত করা হয় (W,adorno and Max Horkheimer, the dialectic of enlightenment, 1923)। আগে সংস্কৃতি সৃষ্টি হতো মানুষের আত্মার টান থেকে, ফলত তা ছিল অনেক উন্নত। আর এখন মুনাফা নির্ভর যে সংস্কৃতি গড়ে তার সর্বক্ষেত্রেই চলছে দেশীয় সংস্কৃতিকে হেয় অথবা বিকৃত করার ঘৃণ্য চক্রান্ত। জেমস পেত্রা তাঁর বিংশ শতাব্দীর নিমিত্তে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ(১৯৯৪) বইতে লিখেছিলেন রাজনীতির ময়দানে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ জনগণকে তাদের নিজস্ব কৃষ্টি-মূল ও সংহতির ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে মিডিয়াকৃত আকাঙ্ক্ষা, যা প্রচারের দ্বারা নিয়মিত পরিবর্তন করা হয়, তার শরিক করে ফেলতে বিশাল ভুমিকা পালন করে এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণকে শ্রেণী ও লোকসমাজের যোগসূত্রগুলো থেকে উচ্ছেদ করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ও পারস্পারিক একক নিঃসঙ্গ মানুষে পরিণত করা। সাংস্কৃতিক প্রভুত্ব বিশ্বজোড়া শোষণব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য মাত্রা, যার উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনে আধিপত্যবাদি শ্রেণীর এক সুসংবদ্ধ অনুপ্রবেশ।… শোষিত জনগণের মূল্যবোধ, আচরণ, প্রতিষ্ঠান ও অভিন্নতা সাম্রাজ্যবাদী শ্রেণীদের স্বার্থের অনুকূল করে গড়ে তোলা 

 

প্রথম-আলো গ্রামীণফোনের দ্বারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে শুরু হওয়া এই সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রি গণসংস্কৃতিরও ঊর্ধ্বে উঠে যেভাবে জাতীয় দিবস আর জাতীয় চেতনার আবেগের বিষয়গুলোকে নিজেদের মুনাফাবৃদ্ধি আর আধিপত্য তৈয়ারে ব্যবহার করছে তা ন্যক্কারজনক। প্রথম আলো- গ্রামীণফোন থেকে শুরু হতে হতে এই ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িয়ে পড়ছে সাম্রাজ্যবাদীদের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক,ফোরথোট পিআর, ডাচ বাংলা ব্যাংক আর রবি কোম্পানি। সম্প্রতি জাতীয় দিবসে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার নাম দিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিজেদেরকে এই মুনাফালোভীদের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে নিচ্ছে। আমার এক চাচা (যিনি বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চাকুরিরত) আমাকে গত পরশু বললেন, বাংলাদেশ সরকার যে মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে কম অর্থ বরাদ্দ করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিচের দিক থেকে তার দ্বিতীয় অবস্থানে। এই ‘বিতর্কিত সরকার’এর নয়া সংস্কৃতিমন্ত্রী নাকি এখন বরাদ্দ বাড়াতে কাজ করছেন। ভাল কথা, রাষ্ট্রের সংস্কৃতির উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ান জরুরী। তাই বলে এইভাবে জাতীয় সঙ্গীতকে মুনাফালোভীদের মত বাজারের পণ্যের মত করে হাজির করে অপমান করার অধিকার এই মন্ত্রণালয়ের নেই। জনাব কল্লোল মোস্তফা এই সাংস্কৃতিক ধান্ধাবাজি নিয়ে লিখেছেন “লাখো কন্ঠে সোনার বাংলার মূল উদ্যোক্তা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আর অর্থের বিনিময়ে এটি আয়োজনের দ্বায়িত্ব পেয়েছে এশিয়াটিক এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ফোরথট পিআরনামের একটা পিআর এজেন্সি।  সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়েরদ্বায়িত্বপ্রাপ্তমন্ত্রীজনাবআসাদুজ্জামাননূরআবারএইফোরথটপিআরনামেরপ্রতিষ্ঠানটিরব্যাবস্থাপনাপরিচালকবাম্যানেজিংডিরেক্টর! আসাদুজ্জামান নূর নিজেই সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে, অবশ্য তিনি বলেননি তার প্রতিষ্ঠান ফোরথট পিআর এর ভাগে ঠিক কত পড়েছে। জনাব নুর এর মাধ্যমে যে গুরুতর অপরাধ করেছেন তা হলো- সরকারি দ্বায়িত্বে থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভজনক পদে থাকা এবং দেশপ্রেমের রেকর্ডের নামে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাতে তার নিজের প্রতিষ্ঠান সরাসরি লাভবান হয়। ফলে লাখো কন্ঠে সোনার বাংলানামের আয়োজনটি কতটা দেশপ্রেম থেকে করা হয়েছে আর কতটা ব্যাবসায়িক ধান্দা থেকে করা হয়েছে সেই প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক“।

 

শুনলাম, প্রতিটা সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে, এই তথাকথিত গণসঙ্গীতে শামিল হতে। এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমাকে জানিয়েছেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়কর্তৃপক্ষ এই দিবসে অংশগ্রহণ করতে শিক্ষকদের নিয়ে দু’দুবার বৈঠক করেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের রাষ্ট্র জোরকরে মিটিংয়ে বসিয়ে তাদের যে সময় অপচয় করাচ্ছেন তা নিন্দনীয়।

 

অথচ রাষ্ট্র চাইলে বিজয়ের ৪৩ বৎসর বার্ষিকীতে বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় ৪৩হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারতো। রাষ্ট্র এখন নিজেই সাম্রাজ্যবাদী-মুনাফাখোর বাজিগরদের কবলে আক্রান্ত। রাষ্ট্রকে এই অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসা জরুরী।

 

সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রি এতদিন মুনাফালোভী ও আধিপত্যবাদী পুঁজিবাদীদের প্রকল্প থাকলেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যেভাবে নিজেদের এই প্রকল্পে জড়িয়ে নিচ্ছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে একরকম বিরল ঘটনা। জাতীয় মুক্তির ইস্যুতে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ফরজ কর্তব্য।

Raquib_bdf@yahoo.com

ফ্যাসীবাদের প্রেরণা -গুরু’র নতুন বাণী

6

আজকের বাংলাদেশে যে আওয়ামী ফ্যাসীবাদ পূর্নশক্তিতে জাকিয়ে বসেছে তার পিছনে মূল প্রেরণা হিসেবে রয়েছে কোনো বিশাল নেতা অথবা নেত্রী নয়, কোনো খ্যাতনামা রাজনীতির তাত্বিক নয়, রয়েছে একজন স্ব-আখ্যায়িত শিশুসাহিত্যিক। ফ্যাসীবাদের মূল নিয়ামক কিন্তু একজন ভয়ংকর কতৃত্ববাদী একনায়ক, একটি সর্বগ্রাসী রাজনৈতিক দল কিংবা গনদলনে সিদ্ধহস্ত পুলিশবাহিনী নয়। যেকোনো ফ্যাসীবাদের মূলে থাকে একটি কঠোর ও বিশুদ্ধ আইডিওলজী। পৃথিবীতে অনেক দেশেই নানারকম টিনপট ডিক্টেটরশীপ, একপার্টির রাজত্ব দেখা গেছে গত একশ বছরে কিন্তু প্রকৃত ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের সাথে এসব হীরক রাজার দেশগুলির মূল পার্থক্য হলো একটি ফ্যাসিস্ট আইডিওলজী। জনগনের গনতান্ত্রিক অধিকারকে সম্পূর্নভাবে নসাৎ করে এবং সেই সাথে জনগনের একটি বড়ো অংশের নি:শর্ত আনুগত্য বজায় রাখতে কেবল বিশাল পুলিশবাহিনী কিংবা বিদেশী সাহায্য যথেষ্ট নয়, এর জন্যে প্রয়োজন হয় একটি কঠোর ও জনপ্রিয় আইডিওলজীর। বাংলাদেশে ২০১৩-১৪ সালে যে নতুন ফ্যাসীবাদের সূচনা হয়েছে তার মূলের রয়েছে একটি আইডিওলজী, সেটি হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বর্তমানে এই আইডিওলজীর মূল প্রেরণা-গুরু হলো মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

575468_10151728328535653_444069226_n

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেমন করে বাংলাদেশে ফ্যাসীবাদের মূল হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এটি বোঝার জন্যে প্রেরনা গুরুর সর্বশেষ লেখাটিই খুব ভালো উপকরন হতে পারে। এই লেখায় এই নতুন ফ্যাসীবাদের ভিত্তিগুলি পরিষ্কারভাবেই উঠে এসেছে যারা বুঝতে সক্ষম তাদের জন্যে। “স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর” শীর্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবালের এই লেখাটিতে (http://www.priyo.com/2014/03/28/61144.html) অনেক কথাই রয়েছে, তবে আসল বক্তব্য রয়েছে কয়েকটি লাইনেই।

” শুরুতে বলেছিলাম দেশটাকে এগিয়ে নিতে হলে মূল কিছু বিষয়ে সবার একমত হতে হবে, বঙ্গবন্ধু যে এই দেশের স্থপতি সেটি হচ্ছে এরকম একটি বিষয়। এই দেশটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ করে পাওয়া একটি দেশ। তাই মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন নিয়ে এই দেশটি শুরু করা হয়েছিল সেই স্বপ্নকে ভিত্তি করে তার ওপর পুরো দেশটি দাঁড় করানো হবে, এই সত্যটিও সেরকম একটি বিষয়। আমরা আজকাল খুব ঘন ঘন গণতন্ত্র শব্দটি শুনতে পাই, যখনই কেউ এই শব্দটি উচ্চারণ করেন তখনই কিন্তু তাকে বলতে হবে এই গণতন্ত্রটি দাঁড় করা হবে মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তির ওপরে।

আমরা মুক্তিযদ্ধের ভিত্তি সরিয়ে একটা গণতন্ত্র তৈরি করব, সেই গণতন্ত্র এই দেশটিকে একটা সাম্প্রদায়িক দেশ তৈরি করে ফেলবে, সকল ধর্মের সকল বর্ণের সকল মানুষ সেই দেশে সমান অধিকার নিয়ে থাকতে পারবে না সেটা তো হতে পারে না।

কাজেই ধর্ম ব্যবহার করে রাজনীতি করা গণতান্ত্রিক অধিকার বলে দাবি করা হলেও সেটি কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের সাথে খাপ খায় না।” (2014/03/28/)

এই পুরো লেখাটিতে অনেক কথাবার্তার ভীড়ে মূল পয়েন্ট রয়েছে তিনটি। সেই তিনটি পয়েন্ট আলাদা করে বিশ্লেষন প্রয়োজন এটি বুঝতে যে কেমন করে জাফর ইকবাল আজকে আওয়ামী ফ্যাসীবাদের প্রধান প্রেরনাগুরু হয়ে উঠেছেন।

এই লেখায় তিনি বারবার এটা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবার এই ঐক্যমত্যে আসতে হবে যে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি। একথা ঠিক যে কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে হলে সমাজের সদস্য-নেতৃত্ব সবাইকে নুন্যতম কিছু ভিত্তির উপরে কনসেনসাসে পৌছতে হয়। আগেরকার রাজতন্ত্রিক দেশগুলোতে সেই ভিত্তি ছিলো রাজার সার্বভৌম ক্ষমতা। আধুনিক যুগে বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ব্যবস্থায় নানারকম নুন্যতম ঐক্যমত দেখা গেছে। যেমন সবার সমান অধিকার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক সমতা এরকম আরো কিছু। কিন্তু এই সব কিছুর উপরে আধুনিক রাষ্ট্রে যে ঐক্যমত্যে দেশের সকল নাগরিক ও রাজনীতিবিদদের একত্রিত হতে হয় সেটি হলো আইন ও সংবিধানের শাসন। দেশের মানুষ ও রাজনীতি আইন ও সংবিধানের বিভিন্ন ধারার বিরোধিতা করতে পারে, সেটি নিয়ে রাজনীতি করতে পারে, কিন্তু যতক্ষন আইন ও সংবিধান বলবৎ রয়েছে সেটি মেনে চলবে এবং তা ভংগ করলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে, এটিই হলো আধুনিক দেশশাসনের মূলভিত্তি।

রাষ্ট্রে কোনো একজন ব্যাক্তি অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা চেষ্টা ফ্যাসীবাদ প্রতিষ্ঠারই অন্যতম পদক্ষেপ। শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্থপতি কিংবা জাতির পিতা, এটি কোনো ঐতিহাসিক সত্য নয় এটি একটি ঐতিহাসিক মত। শেখ মুজিব বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আর্কিটেকচারাল  ব্লুপ্রিন্ট প্রস্তুত করে সেটি জাতিসংঘ থেকে পাশ করিয়ে আনেন নি কিংবা নিজ ঔরস থেকে কোটি কোটি বাংলাদেশীর জন্ম দিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট নেন নি।আমাদের বুঝতে হবে যে জাতির পিতা, মহাবীর, দ্বিগ্ধীজয়ী, বিদ্যাসাগর, বিশ্বকবি এই রকম খেতাবগুলি কোন ঐতিহাসিকভাবে প্রাপ্ত সনদ নয় বরং ইতিহাসে অনেক মানুষ এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে দেয়া টাইটেল মাত্র। এই খেতাবগুলির সারবত্তা নিয়ে যেমন ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে তেমনি এগুলির বিরূদ্ধে মতপ্রচারের পূর্ন অধিকারও রয়েছে। কোন দেশের প্রতিষ্ঠায় কে সবচেয়ে বড়ো, কার অবদান ছাড়া রাষ্ট্র জন্মই নিতো না, এই ধরনের মতামতগুলি কোনো আধুনিক রাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজের মূল ঐক্যমত্যের ভিত্তি হতে পারে না। এই ধরনের ব্যাক্তিকেন্দ্রিক দাবী তোলাও আজকের দিনে হাস্যকর। আজকের পৃথিবী ব্যাক্তি বা বংশ-কেন্দ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে অনেক আগেই উত্তরিত হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস পড়লে অধিকাংশ সুস্থির মতের মানুষই এই সিদ্ধান্ত নেবেন যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে মানুষটির একক অবদান সবার চেয়ে বেশী তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। তারা এটাও বলবেন যে তার অবদানের ধারে কাছে কেউ নেই। কিন্তু এই ব্যাপক সমর্থন থাকা স্বত্তেও শেষ পর্যন্ত এটি একটি ঐতিহাসিক মত, ঐতিহাসিক সত্য নয়। অবদান, ভূমিকা, এসবই সাবজেক্টিভ ব্যাপার, অবজেক্টিভ নয়। এই ধরনের ব্যাপক প্রচলিত মত সম্পর্কে দ্বিমত করারও অবকাশ রয়েছে এবং যেকোন সভ্য রাষ্ট্রে সেই দ্বিমত করার সুযোগও অবশ্যই থাকতে হবে।

আমেরিকার রাজনীতির ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৪৪ জন প্রেসিডেন্ট এর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ এবং কার অবদান সবচেয়ে বেশী এ নিয়ে বিতর্ক, র‍্যাংকিং লিস্ট করা এসব ইতিহাসবিদ এবং জনগন সবারই একটি বহু পুরাতন এবং নিয়মিত অভ্যাস। এই বিষয় নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো লিস্ট বের হয়। এই সব লিস্টে প্রায় অবধারিতভাবেই যে তিন জনের নাম এক, দুই ও তিন এর মধ্যে থাকে তারা হলো প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন, ষোড়শতম আব্রাহাম লিংকন এবং বত্রিশতম ফ্র‍্যাংকলিন রুজেভেল্ট। এদের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশীবার শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন আব্রাহাম লিংকন। ১৯৪৮ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত করা বিশেষজ্ঞদের ১৭ টি বিভিন্ন সার্ভেতে লিংকন শ্রেষ্ঠতম বিবেচিত হয়েছেন ১০ বার, দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠতম ৫ বার এবং তৃতীয় ২ বার। উইকিপিডিয়াতে এই আর্টিকেলটি বিস্তারিত রয়েছে (http://en.wikipedia.org/wiki/Historical_rankings_of_Presidents_of_the_United_States#Scholar_survey_results)। অর্থাৎ আমেরিকার প্রায় আড়াইশত বছরের ইতিহাসে আব্রাহাম লিংকন যে শ্রেষ্ঠতম নেতা কিংবা শ্রেষ্ঠের খুবই কাছাকাছি, এ বিষয়ে ইতিহাসবিদরা মোটামুটি একমত। শুধু ইতিহাসবিদরাই নন, এমনকি আমেরিকার সাধারন ও জনপ্রিয় ইতিহাসে আব্রাহাম লিংকন মোটামুটি প্রায় অতিমানবীয় অনন্য একজন সাধু-দার্শনিক-নেতা হিসেবেই পরিচিত, তার কাছের অবস্থানেও কেউ নেই।

এই যে মহান আব্রাহাম লিংকন, সেই লিংকনকে আমেরিকার দক্ষিন অংশ-যে দক্ষিনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সিভিল ওয়ারে উত্তরের নেতৃত্বে ছিলেন লিংকন- গত দেড়শত বছর ধরে কি ভাবে দেখা হয়? সোজা ভাষায় বলা যায় যে আমেরিকার দক্ষিনের শ্বেতবর্নের রক্ষনশীলেরা -যারা এখনো দক্ষিনের সবচেয়ে বড়ো এবং প্রভাবশালী অংশ- আব্রাহাম লিংকনকে শয়তানের সাক্ষাৎ অবতার হিসেবে মনে করে। এই মতামত শুধু দক্ষিনের সাধারন নাগরিকেরা নয়, দক্ষিনের রাজনীতিবিদরাও অকপটে প্রকাশ্যে বলতে কোনো দ্বিধা করে না। আমেরিকার রক্ষনশীলেরা এবং অন্যান্য অনেকেই প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন বই-গবেষনা প্রকাশ করে যেখানে তুলে ধরা হয় যে আব্রাহাম লিংকন কিভাবে একটি অনাবশ্যক যুদ্ধের সূত্রপাত করে আমেরিকার জনগনের উপরে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ও ধ্বংসাত্মক অধ্যায়কে চাপিয়ে দিয়েছেন। এসব আমার মতামত নয় বরং অনেক আমেরিকান রক্ষনশীলের মত। তারা লিংকনকে ঘৃনা করার পেছনে যুক্তি হিসেবে কি বলে তা বোঝার জন্যে ২০১০ এ প্রকাশিত Abraham Lincoln: The Southern View (http://www.amazon.com/Abraham-Lincoln-The-Southern-View/dp/0982770006) বইটির সারসংক্ষেপের কয়েকটি লাইন তুলে ধরা যেতে পারে।

লেখক Lochlainn Seabrook এই বইটিতে দক্ষিনের চোখে যে লিংকনকে তুলে ধরেছেন সেই লিংকন একজন – “an unscrupulous demagogue and anti-Christian liberal who broke hundreds of laws; ignored and even subverted the Constitution; used money from the Yankee slave trade to fund his war; sanctioned the murder of both Southern blacks (who would not enlist in the Union army) and harmless Southern noncombatants (including women and children); had tens of thousands of innocent Northerners arrested, imprisoned, and sometimes tortured and executed without charge or trial; rigged the 1860 and 1864 elections; confiscated and destroyed private property; censored governmental debate over secession; and more. Throughout all of this, Southern historians estimate that some 3 million Americans, of all races, died in direct consequence of his actions.”

বলাই বাহুল্য লিংকনের শ্রেষ্ঠত্ব অথবা লিংকনের নিকৃষ্টতা, এই সবই ইতিহাসের ফ্যাক্ট নয় এগুলি ইতিহাসের মতামত। আর মতামত নিয়ে বিভাজন থাকতেই পারে।

এখন প্রশ্ন হলো যে আব্রাহাম লিংকন এর নেতৃত্ব ও তার উত্তরাধিকার নিয়ে আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিনের এর তীব্র বিভাজনের জন্যে কি আমেরিকার রাজনীতির ক্রমাগত বিবর্তন ও উন্নয়ন থেমে রয়েছে? কোনো ভাবেই নয়, এই বিভাজনকে নিয়েই আমেরিকার গনতন্ত্র দিনে দিনে আরো বিস্তৃত ও সংহত হয়েছে। সিভিল ওয়ারে বিজয়ের পরে বিজয়ী উত্তর দক্ষিনকে এই আদেশ করে নি যে সবাইকে লিংকনের নেতৃত্বের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌছতে হবে। প্রতিটি মানুষ ও রাজনৈতিক সংগঠনের রয়েছে নিজস্ব মত ধারন ও প্রচারের অধিকার। কিন্তু সবাইকে দেশের আইন ও সংবিধান মেনে চলতে হবে। আমেরিকার দক্ষিন যুদ্ধে পরাজয়ের পরে মৌলিক নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে প্রদেশের উপরে ফেডারেল ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করেছে, সেটি মন থেকে মেনে নিয়েছে নাকি তার বিরুদ্ধে এখনো প্রচার করছে এটি দেশের সরকারের কোনো বিবেচনার বিষয় নয়, দেশের আইন মেনে চলছে কিনা এটিই সরকারের একমাত্র বিবেচ্য।

শুধু লিংকনই নয়, আজকের আমেরিকায় যদি কেউ বলে যে আমেরিকায় রাজনীতি করতে হলে স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের শ্রেষ্ঠ ভূমিকা স্বীকার করতে হবে, তবে তাকে মানুষ পাগলের চেয়েও যুক্তিবিহীন বলে মনে করবে। আর সেই দেশে দীর্ঘদিন থেকে, সেই দেশ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ সেজে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ফতোয়া দেন যে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে ‘ বঙ্গবন্ধু এই দেশের স্থপতি ‘ এই বিষয়ে সবার একমত হতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনীতি আলোচনায় আমেরিকা-বৃটেন এর তুলনা আনলেই অনেকে হারে রে করে তেড়ে ওঠেন যে এই দেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির সাথে ঐসব দেশের যোজন যোজন পার্থক্য সুতরাং এই ধরনের তুলনার মাধ্যমে কোনো ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা অনর্থক বাতুলতা মাত্র। ঠিক আছে। তাহলে এবার এমন একটি দেশের ইতিহাস-রাজনীতিই দেখা যাক যেটি মাত্র ৬০ বছর আগেও অর্থনীতি ও রাজনীতিতে আমাদের দেশের অবস্থানের খুব কাছেই ছিলো।

পার্ক চুং হি (Park Chung-hee) একজন জেনারেল যিনি একটি ক্যু এর মাধ্যমে ১৯৬১ সালে দ: কোরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এবং এর পরে প্রায় একনায়কের মতোই ১৮ বছর দ: কোরিয়া শাসন করেন, যে শাসনের অবসান ঘটে ১৯৭৯ সালে আততায়ীর হাতে পার্ক নিহত হবার পরেই। পার্ক চুং হি তার শাসনামলেই আধুনিক কোরিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করেন এবং তাকে একারনেই বিশ্বজুড়ে Father of Korean Economic Miracle বলা হয়। টাইম ম্যাগাজিন তাদের মিলেনিয়াম প্রকাশনায় পার্ক চুং হি কে বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ দশজন এশিয়ানদের একজন হিসেবে নির্বাচন করেছিলো। আজ পর্যন্ত দ: কোরিয়ার ডানপন্থী রাজনীতির সমর্থকেরা পার্ককে তীব্র ভক্তির সাথে স্মরন করে। অনেকটা তার স্মৃতির উপরে ভর করেই পার্কের কন্যা পার্ক গুন হেই (Park Geun-hye) ২০১৩ সালে দ: কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

পার্ক চুং হি যেমন একদিকে দেশের বিপুল অংশের কাছে দেবতুল্য ভক্তির ধারক তেমনি আরেক বৃহৎ অংশের কাছে তীব্র ঘৃনার পাত্র। পার্ক তার শাসনের সময়ে বামপন্থী ও গনতান্ত্রিক রাজনীতি ও কর্মীদের উপরে চরম অত্যাচার ও নিষ্পেষন চালিয়েছেন। দেশের শ্রমিকদের অধিকারকে দলন করে বড়ো কোম্পানীগুলিকে সবরকমের সুবিধা দিয়েছেন। তার সময়ে কোরিয়ার নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার বলতে কিছু ছিলো না। কোরিয়ার জনগনের পার্কের সময় হতে শুরু করে আরো অনেক দিন পর পর্যন্ত একের পর এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করে অবশেষে সেখানে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এরকম আরো অনেক কারনেই দ: কোরিয়ার বিপুল অংশের কাছে পার্ক চুং হি একটি ঘৃন্য নাম।

দ: কোরিয়ার জনগনের মধ্যে তাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রধানতম ব্যাক্তিত্ব নিয়ে যে এই বিশাল দ্বিভাজন, তার কারনে কি তাদের উন্নতি, প্রগতি বাধাগ্রস্থ হয়েছে? ১৯৭০ সালেও যখন দ: কোরিয়া আর উত্তর কোরিয়ার মাথাপিছু আয় একই সমান ছিলো সেখানে আজকে দ: কোরিয়ার মাথাপিছু আয় বাকশালী-ঐক্যমত্যের দেশ উ: কোরিয়ার চেয়ে প্রায় বিশগুন বেশী।

বস্তুত ইতিহাস নিয়ে ঐক্যমত্য ছাড়া এগুনো যাবে না এই ধরনের কথাবার্তার কোন সারবত্তা নেই। তৃতীয় বিশ্বের উপনিবেশ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দেশগুলির ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাবে যে যেসব দেশে মুক্তি সংগ্রামের গৌরবোজ্বল ইতিহাস নেই, যারা ঔপনিবেশিক প্রভুদের সাথে হ্যান্ডশেক করার মাধ্যমে নতুন দেশ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে, তারাই অর্থনীতি ও সমাজে বেশী উন্নতি করেছে। দেশের উন্নতির জন্যে ইতিহাস বা মতবাদ নিয়ে একমত হবার জন্যে যারা বেশী সরব তাদের অন্য কোন এজেন্ডা থাকে। এই এজেন্ডা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হলো দেশে ঘৃনার চাষ করে দ্বিভাজন সৃষ্টি করা। আর আমরা বার বার দেখেছি যে এই ঘৃনার দ্বিভাজন ও কৃত্রিমভাবে মতবাদের ঐক্যমত্যের চেষ্টাই গত কয়েক দশকে একের পর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও গনহত্যার জন্ম দিয়েছে।
এই ইতিহাস নিয়ে ঐক্যমত্যের উপরেই রয়েছে জাফর ইকবালের দ্বিতীয় ও মূল পয়েন্ট, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। জাফর ইকবাল বাংলাদেশে যেই ফ্যাসীবাদ প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রাণাতিপাত করে চলেছেন সেই ফ্যাসীবাদের মূল ভিত্তিই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা (বা স্বপ্ন, যে নামেই বলুন জিনিষটি একই)। এই লেখাতে এবং এর আগেও তিনি স্পষ্ট করেছেন যে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের চেয়ে বড়ো কিছুই নেই।

“তাই যারা প্রাণ দিয়ে, রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে এই দেশটা এনে দিয়েছে তার যে স্বপ্ন দেখেছিল সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই এই দেশের রাজনীতি হোক, অর্থনীতি হোক, লেখাপড়া হোক, চাষ আবাদ হোক, গানবাজনা হোক, সুখ-দুঃখ মান-অভিমান হোক, কোনো কিছুই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাইরে হতে পারবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতির প্রথম মাপকাঠি হচ্ছে ‍মুক্তিযুদ্ধ। যারা এটিকে অস্বীকার করে তাদের এই দেশে রাজনীতি করা দূরে থাকুক, এই দেশের মাটিতে রাখার অধিকার নেই।” (০১/১৭/২০১৪)
http://www.priyo.com/2014/01/17/49312.html

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাইরে এই বাংলাদেশে একটি গাছের পাতাও নড়তে পারবে না এই বিশ্বাস হলো জাফর ইকবাল আর তার লক্ষ লক্ষ ভাবশিষ্যের ইমানের মূল স্তম্ভ।  কিন্তু এখানে শুভংকরের সবচেয়ে বড়ো ফাকি হলো যে এই যে অতীব গুরুত্বপূর্ন মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, সেই স্বপ্নটি আসলে কি তার কোনো কংক্রীট বিবরন এই সব ফ্যাসিস্ট প্রফেটদের কাছে আপনি কখোনই পাবেন না। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে এই দেশের বিভিন্ন মত, বিভিন্ন বিশ্বাসের লক্ষ কোটি যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী আর যুদ্ধ পলাতক মিলে কিভাবে একটিই বিশুদ্ধ আর মৌলিক স্বপ্ন দেখে ফেললো আর সেই স্বপ্নের খাবনামাও সেই সকলের কাছেও তর্কাতীত ছিলো, এই রহস্যের কোন ব্যাখা আপনি পাবেন না। ম্যাজিশিয়ানের ট্রিকের মতো মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নও দূর থেকে দেখা আলো আধারির স্টেজ শো, কাছে গিয়ে বিশ্লেষন করলেই সেটা আর স্বপ্ন থাকে না।

বেশী চেপে ধরলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের দিশারীরা অবলম্বন করেন ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতিকে এবং তার ভিত্তিতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তাসের ঘর নির্মানের চেষ্টা করেন তারা। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চার মৌলিক উপাদানেই তৈরী মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্নের ভিত্তির উপরেই বাংলাদেশের রাজনীতি দাড় করাতে হবে এটাই শেষ পর্যন্ত দাবী করা হয়। এই দাবীটি যখন স্পষ্টভাবে বলা হয় তখনই এর শুভংকরের ফাকিটিও সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

জাতীয়তাবাদ নিয়ে এখানে বেশী কথা বলার দরকার নেই। জাতীয়তাবাদ নিয়ে এই দেশে এত লক্ষ লক্ষ পাতা আর শতকোটি শব্দ ব্যয় করার পরও জাতীয়তাবাদ নিয়ে সবার মাঝে যে কনফিউশন রয়ে গেছে তার বিন্দুমাত্র লাঘব ঘটে নি। ভৌগলিক, রাজনৈতিক, সাংষ্কৃতিক, নৃতাত্বিক, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের এই নানারূপের গোলোকধাধায় কোন একটি coherent মতবাদ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এই দাবী অনায়াসেই করা যায় যে বাংলাদেশে এখন এমন দুইজন শিক্ষিত নাগরিক পাওয়া যাবে না যারা জাতীয়তাবাদ বলতে পুরো একই রকম একটি বিশ্বাস ধারন করেন।

এরপরেই আসে মুক্তিযু্দ্ধের স্বপ্নের সবচেয়ে স্পষ্ট Achilles Heel সমাজতন্ত্রের কথা। লক্ষ্যনীয় যে এই সমাজতন্ত্র মানে পরবর্তীতে আরোপ করা সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক মুক্তি,  সোশ্যাল ডেমোক্র‍্যাসী এই ধরনের নির্দোষ, নিরীহ শ্লোগান নয়। ১৯৭২ এর সমাজতন্ত্র মানে সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থা। সেই সংবিধানেই স্পষ্ট বলা আছে,

“১০/ মানুষের উপর মানুষের শোষন হইতে মুক্ত ন্যায়নুগ ও সাম্যবাদী সমাজ লাভ নিশিত করিবার উদ্দ্যেশ্য সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।”

এই সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আরো বিশদ বলা হয়েছে ১৩ অনুচ্ছেদে।

Somaj

সমাজতন্ত্র নিয়ে বিশদ আলোচনা করাও এই লেখার উদ্দ্যেশ্য নয়। শুধু একটি কথাই বলা যেতে পারে যে আজকের বাংলাদেশে কতোজন লোক মনে করে যে এই দেশের অর্থনীতির প্রধান ক্ষেত্র গুলি, যেমন শিল্প, গার্মেন্টস এই সবের জাতীয়করন করা প্রয়োজন? কারা মনে করে দেশের জন্যে দরকার আরো অনেক ‘দোয়েল ল্যাপটপ’ প্রজেক্ট? কয়জন মনে করে যে সমবায়ের ভিত্তিতে কৃষিকে পরিচালনা করতে হবে? কারা বিশ্বাস করে যে সারা দুনিয়ায় কালেক্টিভ অর্থনীতি ফেল মারার পরে এই বাংলাদেশেই সমাজতন্ত্র তার সমুজ্বল ভবিষৎ নির্মানের সূচনা করবে? সমাজতন্ত্র যদি মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন হয়ে থাকে তবে সেই স্বপ্ন এইদেশে অনেক আগেই টুটে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের নামে যেই মতবাদটির যাবতীয় তর্ক-বিতর্কের মূলে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা একটি আধুনিক, গনতান্ত্রিক, যুক্তিসম্মত আদর্শ। যে কোন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যাক্তিই এর বিরোধিতা করতে দ্বিধা করবে। ১৯৭২ এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বোঝানো হয়েছে,

dhormo

এখানে (ক), (খ) এবং (ঘ) অনুচ্ছেদ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই বললেই চলে। এমনকি যারা ধর্মীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন তারাও এই নীতিগুলির সরাসরি বিরোধিতা করবেন না বরং সমর্থনই করবেন। মূল বিতর্ক (গ) অনুচ্ছেদ নিয়ে। পৃথিবীর কোনো গনতান্ত্রিক দেশে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাজনীতি করার অধিকার খর্ব করা হয় নি। প্রতিটি গনতান্ত্রিক দেশে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাজনীতির অধিকার রয়েছে কারন এটি রাজনীতি করার মৌলিক অধিকার প্রশ্নেই অংগাগীভাবে জড়িত। কিন্তু এই বাংলাদেশেই, এই মূর্খ ফ্যাসীবাদীরা, এক অনন্য হবুচন্দ্র মার্কা রাজত্ব কায়েমের জন্যে এই ফ্যাসীবাদী মতকে দেশের উপরে চাপিয়ে দেবার জন্যে বদ্ধপরিকর।

ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে এই ক্ষুদ্র, এলিটিস্ট গোষ্ঠী যে ফ্যাসীবাদী মতকে দেশের উপরে চাপিয়ে দিতে চান তার সাথে বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কোন আত্মিক সংযোগ নেই। এটা ১৯৭১ এ ছিলো না, ১৯৭২ এও ছিলো না, আজকে আরো নেই। এই প্রসংগে আবুল মনসুর আহমেদ এর সেই ক্ল্যাসিক লেখা “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর” এর লেখা স্মর্তব্য,

অথচ প্রকৃত অবস্থাটা এই যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় পাকিস্তানও ভাংগে নাই “দ্বিজাতিতত্ত্ব”ও মিথ্যা হয় নাই। এক পাকিস্তানের জায়গায় লাহোর-প্রস্তাব মত দুই পাকিস্তান হইয়াছে। ভারত সরকার লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নে আমাদের সাহায্য করিয়াছেন। তারা আমাদের কৃতজ্ঞতার পাত্র। দুই রাষ্ট্রের নামই পাকিস্তান হয় নাই, তাতেও বিভ্রান্তির কারণ নাই। লাহোর প্রস্তাবে “পাকিস্তান” শব্দটার উল্লেখ নাই, শুধু ‘মুসলিম-মেজরিটি রাষ্ট্রের’ উল্লেখ আছে। তার মানে রাষ্ট্র-নাম পরে জনগণের দ্বারাই নির্ধারিত হওয়ার কথা। পশ্চিমা জনগণ তাদের রাষ্ট্র-নাম রাখিয়াছে “পাকিস্তান”। আমরা পূরবীরা রাখিয়াছি “বাংলাদেশ”। এতে বিভ্রান্তির কোনও কারণ নাই।

—         ইংরেজ আমলের আগের চারশ বছরের বাংলার মুসলমানের ইতিহাস গৌরবের ইতিহাস। সেখানেও তাদের রুপ বাংগালী রুপ। সে রুপেই তারা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সৃষ্টি করিয়াছে। সেই রুপেই বাংলার স্বাধীনতার জন্য দিল্লীর মুসলিম সম্রাটের বিরুদ্ধে লড়াই করিয়াছে। সেই রুপেই বাংলার বার ভূঁইয়া স্বাধীন বাংলা যুক্তরাষ্ট্র গঠণ করিয়াছিলেন। এই যুগ বাংলার মুসলমানদের রাষ্ট্রিক, ভাষিক, কৃষ্টিক ও সামরিক মণীষা ও বীরত্বের যুগ। সে যুগের সাধনা মুসলিম নেতৃত্বে হইলেও সেটা ছিল ছিল উদার অসাম্প্রদায়িক। হিন্দু-বৌদ্ধরাও ছিল তাতে অংশীদার। এ যুগকে পরাধীন বাংলার রুপ দিবার উদ্দেশ্যে “হাজার বছর পরে আজ বাংলা স্বাধীন হইয়াছে” বলিয়া যতই গান গাওয়া ও স্লোগান দেওয়া হউক, তাতে বাংলাদেশের জনগণকে ভুলান যাইবে না। আর্য্য জাতির ভারত দখলকে বিদেশী শাসন বলা চলিবে না, তাদের ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, রাজপুত, কায়স্থকে বিদেশী বলা যাইবে না, শুধু শেখ-সৈয়দ-মোগল-পাঠানদেরই বিদেশী বলিতে হইবে, এহেন প্রচারের দালালরা পাঞ্জাবী দালালদের চেযে বেশী সফল হইবে না। এটা আজ রাষ্ট্র-বিজ্ঞানের সর্বজন-স্বীকৃত সত্য যে, কৃষ্টিক স্বকীয়তাই রাষ্ট্রীয় জাতীয় স্বকীয়তার বুনিয়াদ। কাজেই নয়া রাষ্ট্র বাংলাদেশের কৃষ্টিক স্বকীয়তার স্বীকৃতি উপমহাদেশের তিন জাতি-রাষ্ট্রের সার্বভৌম সমতা-ভিত্তিক স্থায়ী শান্তির ভিত্তি হইবে॥”

– আবুল মনসুর আহমদ / আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর ॥ [খোশরোজ কিতাব মহল – ডিসেম্বর, ১৯৯৯ । পৃ: ৬৩২-৬৩৮]

আসলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের নামে জাফর ইকবাল এবং তার শিষ্যদের সকল আহাজারির মূলেই রয়েছে একটি জিনিষ, সেটি হলো গনতন্ত্র। তারা ভালোভাবেই জানে যে তারা যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন দেখেন সেই স্বপ্ন বাংলার জনগন ১৯৭১ এ দেখেনি আজও দেখে না। এই কারনেই গনতন্ত্রকে তাদের এতো ভয়। একারনেই নানারকম ছলছুতো, শর্ত দিয়ে গনতন্ত্রকে পর্দার আড়ালে ফেলতে তাদের এতো প্রচেষ্টা। জাফর ইকবাল যে গোষ্ঠীর প্রেরণাগুরু, মন্ত্রী-এশিয়াটিক ডিরেক্টর আসাদ্দুজ্জান নূর যেই গোষ্ঠীর যোগানদার, শামীম ওসমান-তাহের গং যে গোষ্ঠীর সিপাহসালার এবং শাহবাগীরা যেই গোষ্ঠীর ফুট সোলজার, সেই গোষ্ঠীর একটিই লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে আওয়ামী ধর্মের একছত্র রাজত্ব কায়েম করা।

এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে তারা দেশের জনগনকে সরাসরি বাধ্যতামূলক প্রেসক্রিপশনও দিয়ে রেখেছেন। প্রথমেই আপনাকে শেখ মুজিবের নবুয়ত স্বীকার করতে হবে। এরপরে আওয়ামী আদর্শগুলিতে ইমান আনতে হবে। তারপরে সকল আওয়ামী বিরোধীকে ঘৃনাভরে বর্জন করতে হবে। এই প্রেসক্রিপশন মেনে নেয়ার পরেই আপনি যত ইচ্ছা রাজনীতি করতে পারেন। এর আগে রাজনীতি-গনতন্ত্র এসব কোনকিছুই বিবেচনা করা যাবে না।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই সময়ে সবচেয়ে বড়ো বাস্তবতা যে দেশের ভাগ্য জনগনের হাতে নেই। একটি চরমপন্থী গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বার্ষিক ১৫০ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির একটি আস্ত রাষ্ট্রকে কুক্ষীগত করে ফেলেছে। এই বাস্তবতা হতে চোখ ফিরিয়ে, জনগনের অক্ষমতাকে ভুলিয়ে দিতে ফ্যাসীবাদের প্রেরনাগুরু গনতন্ত্রকে তুচ্ছ করে একের পর এক ঐশীবাণী দিয়েই যাবেন প্রতিটি মাসে একের পর এক উপলক্ষকে আশ্রয় করে। আর সেই বাণী সোৎসাহে প্রচার করতে থাকবে চেতনায় বুদ হয়ে থাকা বাংলাদেশী হিটলার ইয়ুথ (Hitlerjugend)। স্টেডিয়ামে পতাকা নিষেধাজ্ঞা, বৃহত্তম পতাকা, লক্ষকন্ঠে জাতীয় সংগীত, এইসব Fascist Mass Spectacle এই প্রোগ্রামেরই অংশ।

18w91xufbk7ayjpg

পরিশেষে পুনরায় আবার মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বা চেতনা নিয়ে অতুলনীয় আবুল মনসুর আহমেদ এর ই আরেকটি বক্তব্য।

 “… জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার মহান আদর্শই আমাদের বীর জনগণকে মুক্তি-সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল। তথ্য হিসাবে কথাটা ঠিক না। আওয়ামী লীগের ছয়-দফা বা সর্বদলীয় ছাত্র একশন কমিটির এগার-দফার দাবিতেই আমাদের মুক্তি-সংগ্রাম শুরু হয়। এইসব দফার কোনটিতেই ঐ সব আদর্শের উল্লেখ ছিল না। ঐ দুইটি ‘দফা’ ছাড়া আওয়ামী লীগের একটি মেনিফেস্টো ছিল। তাতেও ওসব আদর্শের উল্লেখ নাই।

বরঞ্চ ঐ মেনিফেস্টোতে ‘ব্যাংক-ইনশিওরেন্স, পাট ব্যবসা ও ভারি শিল্পকে’ জাতীয়করণের দাবি ছিল। ঐ ‘দফা’ মেনিফেস্টো লইয়াই আওয়ামী লীগ ৭০ সালের নির্বাচন লড়িয়াছিল এবং জিতিয়াছিল। এরপর মুক্তি সংগ্রামের আগে বা সময়ে জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের পক্ষ হইতে আর কোনও ‘দফা’ বা মেনিফেস্টো বাহির করার দরকার বা অবসর ছিল না। আমাদের সংবিধান রচয়িতারা নিজেরা ঐ মহান আদর্শকে সংবিধানযুক্ত করিযাছিলেন। তাই জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঐ ভুল তথ্য পরিবেশন করিয়াছেন।

রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের মতাদর্শকে জনগণের মত বা ইচ্ছা বলিয়া চালাইয়াছেন বহু বার বহু দেশে। সবসময়েই যে তার খারাপ হইয়াছে, তাও নয়। আবার সব সময়ে তা ভালও হয় নাই। পাকিস্তানের সংবিধানের বেলায় ‘ইসলাম’ ও বাংলাদেশের সংবিধানের বেলায় ‘সমাজতন্ত্র, জাতীয়তা ও ধর্ম-নিরপেক্ষতা’ও তেমনি অনাবশ্যকভাবে উল্লিখিত হইয়া আমাদের অনিষ্ট করিয়াছে। আমাদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বহু জটিলতার সৃষ্টি করিয়াছে। এসব জটিলতার গিরো খুলিতে আমাদের রাষ্ট্র-নায়কদের অনেক বেগ পাইতে হইবে॥”

– আবুল মনসুর আহমদ / আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর ॥ [খোশরোজ কিতাব মহল – ডিসেম্বর, ১৯৯৯ । পৃ: ৬২০-৬২১]

[আবুল মনসুর আহমেদ এর book excerpts are courtesy of FB blogger Kai Kaus   https://www.facebook.com/kay.kavus?fref=ts    ]

 

 

 

 

গিনেজ বাংলাদেশ

by: Aman Abduhu

গিনেজ রেকর্ডের সাথে পরিচয় ছোটবেলায়, না বুঝতে শেখার বয়স থেকেই শুরু।

ইত্তেফাকের ভেতরের পাতায় এ ধরনের কাজকর্মের ছবি থাকতো। সম্ভবত গিনেজ বা রিপলিস বিলিভ ইট অর নট। মাঝে মাঝে রহস্যপত্রিকা, বিচিত্রা, রিডার্স ডাইজেষ্ট বা ঢাকা ডাইজেষ্টেও দেখতাম। অদ্ভুত সব ঘটনা আর সাথে চমৎকার হাতে আঁকা ছবি। অমুক দেশে একজন চুল দিয়ে ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে, তমুক দেশে আরেকজন পানির উপর ঘুমাচ্ছে, পিপড়ারা মিলে সাতফুট উঁচু পিপড়া-বাড়ি বানিয়েছে। এ ধরণের মজার মজার ছবিগুলো দেখে ভাবতাম পৃথিবী কতইনা আজব একটা জায়গা!

আর আজকে আমার দেশ, বাংলাদেশটাই হয়ে গিয়েছে পৃথিবীর আজবতম দেশ। যেদেশে নাগরিকরা খেতে পায় না চিকিৎসা পায় না শিক্ষা পায় না, সে দেশে আজ রেকর্ড বানানোর জন্য শতকোটি টাকা লুটোপুটি খায়। এই দেশে মানুষ স্বাভাবিক অধিকারগুলো পায় না। প্রতিদিন নারীরা ধর্ষিত হয় শুধুমাত্র বাকি জীবনটুকু ভয়ংকর আতংক নিয়ে বুকফাটা কান্না চেপে রাখার জন্য। প্রকাশ্য দিনের বেলায় সবার সামনেই মানুষ খুন হয় বিচারহীন, অথবা রাতের বেলায় গুম হয়ে যায় হারিয়ে যায় চিরদিনের জন্য। আর সেদেশের মানুষ দরদ দিয়ে গান গায়, আমার সোনার বাংলা! আশ্চর্য সব ছবির সাথে বলার মতো বাংলাদেশের গিনেজ রেকর্ড কি পতাকা বা গানে? আমার তো মনে হয় আসল গিনেজ রেকর্ড এগুলোই।

ছবি দেখার বয়স পেরিয়ে একটু বড় হয়ে যখন বুঝতে শিখলাম, তখন থেকে দেখে আসছি বিভিন্ন ধরণের ব্যাতিক্রমী মানুষেরা গিনেজ রেকর্ড করে। মাঝে মাঝে অনেক মানুষ মিলেও রেকর্ড করে। এসব ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠান, অর্গানাইজেশন বা কোম্পানী এইসব কাজকর্ম স্পন্সর করে। তাদের নামও রেকর্ডের সাথে যোগ হয়।

কিন্তু কোন দেশ?? পুরো একটা দেশ মিলে গিনেজ রেকর্ডের মতো একটা প্রতিষ্ঠানের হালকা স্বীকৃতি পাওয়ার মতো কাজের পেছনে দৌড়াতে থাকে! আমার দুর্বল স্মৃতিতে এমন ঘটনা আর মনে পড়ে না। মনে করতাম, দেশ বা রাষ্ট্র আরো অনেক উঁচু পর্যায়ের বিষয়। ধারণা ভুল ছিলো।

এখন দেখি বাংলাদেশ দৌড়াচ্ছে। বাংলাদেশের পতাকা রেকর্ড হলো। দেখে বাংলাদেশের সৎ ভাই পাকিস্তানের হিংসা হলো। তারাও দৌড়ালো। পৃথিবীতে এমন অদ্ভুত দেশ কি আর তৃতীয় কোনটা আছে? এসব দেখে বিবমিষা হয়েছিলো আমার। গাড়ির পেছনে একটা লাল সবুজ কাগজের পতাকা লাগিয়ে রেখেছিলাম। যেদিন পতাকা রেকর্ডের ছবিটা প্রথম দেখলাম, ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে কার ওয়াশে গিয়ে ঘষে ঘষে তুলে ফেলেছি। প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো, ঘৃণা লাগছিলো। তারপর বাসায় ফিরে দেখি পড়ার টেবিলের উপর টেবিল ল্যাম্পে আরেকটা পতাকা লাগানো; কাপড়ের ব্যান্ডানা। অনেক ভাবলাম এটাও নোংরা করে বিনে ফেলে দেই। কিন্তু পারিনি। লাল বৃত্তটার দিকে তাকিয়ে এখন লিখছি। এতো বদমায়েশির পরও ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মাটি আর লাল সবুজের পতাকা অনেক কষ্ট দেয়।

তবে স্বীকার করতে হয়, বাংলাদেশ আর পাকিস্তান এ দুটো দেশ হলো অনন্য। কোন তুলনা নেই। দেশের বাইরে গেলে থার্ড আই ভিউতে দেখা যায়, এ দুই দেশের মানুষেরা কেমন। আমরা বাংলাদেশীরা এভারেজে যতটা খারাপ, পাকিস্তানীরাও ইন জেনারেল ততটা বদমাইশ। সত্যিকার অর্থে ব্যর্থ দুইটা দেশ। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বানানো অতীত ছাড়া এ দুই দেশেরই গর্ব করার মত তেমন কোন অর্জন নেই। পাকিস্তানীদের নিউক্লিয়ার পাওয়ার আছে অবশ্য, কিন্তু তা আসলে জলা জমির উপর দাঁড় করিয়ে রাখা রিয়েল এষ্টেট কোম্পানীর সাইনবোর্ডগুলোর মতো। ভেতরে ফাঁপা, ঠনঠন। এই ধরণের অর্থহীন এবং ফাঁপা কাজে তাদের কাউন্টারপার্ট বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সামর্থ্য একটু কম। তাই তাদের দৌড় হলো পিলখানায় প্রতিবেশী বন্ধুদের হাতে নিজের ব্লাড ব্রাদার্সদের ব্লাডশেড ঠিক মতো সম্পন্ন হওয়া তত্ত্বাবধান করা। এবং অবৈধ সরকারের খুঁটি হিসেবে দাড়িয়ে থাকা। সুতরাং বাংলাদেশকে সেই সব গর্বের সাইনবোর্ড টাঙানোর জন্য গিনেজের দ্বারস্থ হতে হয়, যেখানে লাখো কণ্ঠে কিছু বোধবুদ্ধিহীন চিৎকার শোনা যায় শুধু “আমার সোনার বাংলা ……………..”।

আসলে, ভালোই হয়েছে। ভিনদেশে অজপাড়াগাঁয়ের কেউ যদি জানতে চায়, বাংলাদেশ টা কোথায়? গর্ব করে উত্তর দিতে পারবো, গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের পাতায়।

৫০ কোটি টাকার জাতীয় সঙ্গীতের বিশ্ব রেকর্ড এবং সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার ১.৫ লক্ষ টাকার স্কুলের ছাদ- আমি ব্যবহৃত হতে অস্বীকার করি।

March 25, 2014 at 8:59pm


আজকে সকাল ১০টা থেকে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে(সুত্রঃ সংস্কৃতি মন্ত্রী)  , মন্ত্রী এমপিদের  সরকারের সাথে ব্যবসা করার আইন ভঙ্গ করে, প্রতিটা ব্যাঙ্ক এবং বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের  সাথে বাধ্যতামূলক চাঁদাবাজি করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের এক সাথে  জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার বিশ্ব রেকর্ড।
একটা মর্মস্পর্শী ছবি 
কে জানে, এমন একটা রেকর্ড  প্রতিদিন  আমরা ভাঙছি কিনা, স্কুল ঘর না থাকায় পৃথিবীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী প্রতিদিন খোলা মাঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার এবং পাঠ দান নেয়ার । কিন্তু, এঁর মধ্যেই  ফেসবুকে, তন্দ্রা চাকমার স্ট্যাটাস অনেকেই দেখেছেন, খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায়  সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার মহাসেনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া স্কুলের টিন-শেড ঠিক করে দেয়ার জন্যে  ১.৫ লক্ষ  টাকা জোগাড় করতে।
পেছন থেকে তোলা, একটা ভাঙ্গা স্কুল ঘরের সামনে চার লাইনে দাড়িয়ে শপথ নিতে থাকা এই অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এই  ছবিটা দেখলেই বোঝা যায়, এই রাষ্ট্র-যন্ত্র কি ভাবে তার  জনগণের বেসিক চাহিদা পূরণ করতে পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
এক বছর আগে হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের ভেঙ্গে যাওয়া স্কুলঘর ঠিক করতে যেই রাষ্ট্র ব্যর্থ , সেই রাষ্ট্রের কোন অধিকার নাই ৫০ কোটি টাকা খরচ করে, জাতীয় সঙ্গীতের বিশ্ব রেকর্ড করার।
কিন্তু, সেই গুলো করছে আওয়ামী  লিগের সরকার ।কেন  করছে ? কারণ, এই দলের জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা নাই। এই দল জানে, তারা মানুষের ভোট জিতে ক্ষমতায় আসে নাই। তারা জানে, তারা ক্ষমতায় আসছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে দেশকে দুইটি ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন রকম গুটি-বাজি করে এবং  ইন্ডিয়ার স্বার্থ রক্ষা করার মাধ্যমে। ফলে তাদের সমস্ত চিন্তা চেতনায় এই দুইটি ধারা প্রবাহিত  হয়।
এই জন্যে আমরা দেখেছি, সমালোচনার মুখেও তারা  ৫০ কোটি টাকা খরচ করে, এই অর্থহীন অনুষ্ঠানটা করে যাচ্ছে। কারো  কথায়  কান দিচ্ছেনা।   এই গুলো  ক্লাসিক  স্বৈরচারী আচরণ। বড় বড় মূর্তি বানানো, বড় বড় অনুষ্ঠান করা  ।  স্বৈরাচার নিজেই তার গড়া এই ফানুসে উড়ে বেরায়। তার ধারনা থাকে,  মানুষের জীবনে শান্তি সুখের নহর বয়ে যাচ্ছে। এই জন্যে স্বৈরাচার নিয়ম করে, আচ্ছা জনগণের যেহেতু অনেক টাকা, সেহেতু আমরা সব রাস্তায় টোল বসিয়ে দেই। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেই।
এই অনুষ্ঠান আরও অনেক গুলো সম্পূরক প্রশ্নের জন্ম দেয় ।  
তা হলো  রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই ভাবে কোন অনুষ্ঠানের জন্যে বাধ্যতামূলক চাঁদাবাজি করা আইন সম্মত কিনা? এ কোন রাষ্ট্র সৃষ্টি করলাম আমরা যার সরকার এই ধরনের ভ্যানিটি প্রজেক্টের জন্যে নিজেই চাঁদাবাজি করে?  এই টাকার একাউন্টেবিলিটি কে নিশ্চিত করছে? এই টাকাটা অডিটেবেল কিনা? সরকার যাদের কাছ থেকে এই  টাকা নিয়েছে, তারা এই অনুদানের কি পে-ব্যাক নিবে ?
এই টাকা সরকারী নিয়ম মেনে খরচ হয়েছে কিনা। এবং এই অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি-মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরের প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিকের তত্ত্বাবধানে হওয়াতে মন্ত্রী এমপিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সরকারের সাথে ব্যবসা না করার যে নিয়ম  তার প্রকাশ্য বাত্যয় হলো, দুদক তার তদন্ত করবে কিনা? এই রাষ্ট্র কি, এতো নাঙ্গা হয়ে গ্যেছে যে, এই ধরনের দুর্নীতি করতে আজ রাখ ঢাক ও করতে হয় না?
এই প্রশ্ন  গুলোকে উপেক্ষা করে 
আজকে যখন সমালোচনার  ঝড় ওঠে, ইসলামি ব্যাঙ্কের কাছ থেকে টাকা নেয়া  মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বরখেলাপ কিনা  তখন বোঝা যায়, সরকার  চাইছে  নবীনদেরকে এবং প্রতিবাদীদেরকে দেশপ্রেমের  একটা  ধোঁয়াটে অন্ধকারে বুঁদ করে রাখা যাতে, আজকের প্রজন্ম , তার চোখের সামনে লুটপাট দেখেও সঠিক প্রশ্ন করতে ব্যর্থ হয়। যাতে সে সুশাসন না চায়, প্রকাশ্য দুর্নীতি  দেখলেও বিভাজিত রাজনীতিতে নিজের অবস্থানের কারণে চুপ থাকে, প্রতিবাদী না হয়।
যাতে সে দেখতে ব্যর্থ হয়, সুরেন্দ্র কারবারি  পাড়ার বাচ্চাদের সরকারী স্কুলের ঘর মাত্র ১.৫ লক্ষ টাকার জন্যে , নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয় যে সরকার সেই সরকারের  ৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার লুটপাটের মহোচ্ছবের কোন অধিকার নাই। এই উৎসব বার বার মনে করিয়ে দেয়,  সেমুয়েল জনসনের বিখ্যাত উক্তি, patriotism is the last refuge of a scoundrel ।  বদমাইশের  শেষ আশ্রয় হচ্ছে দেশ প্রেম।
এই প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে , দেশ  কিন্তু  মা। মাকে নিয়ে ব্যবসা করতে হয়না।
 এবং যারা করে, তারা কোন একটা ধান্দার জন্যে করে।  এই প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ, সেই ধান্ধাবাজদের সৃষ্ট ধোয়ার থেকে সত্যকে দেখতে পাওয়া এবং   সঠিক প্রশ্নটা করা। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার দায়, এই চেতনা ব্যবসায়ীদের হাতে  ব্যবহৃত না হওয়া।
আজকে  আমাদেরকে তাই এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর চাইতে হবে। এই চাদাবাজি আইনসম্মত কিনা ? এর একাউন্টিবিলিটি কে দেখবে ? এবং  মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক আইন ভঙ্গ করে  কিভাবে এই  কাজ পায় ?
যাদের সামর্থ্য  আছে, তারা সুরেন্দ্র কারবারি  পাড়ার মহাসেনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া সরকারী স্কুলের পরিচালক দয়ানন্দ দাদার সাথে যোগাযোগ করবেন ০১৮২৮৮৬১৩০৩  নাম্বারে। এই স্কুলটি ঠিক করতে ১.৫ লক্ষ টাকা লাগবে। সরকার যদি না করে, আমরাই পারবো এই স্কুল ঠিক করে দিতে। এইটাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা।
আই রিফিউজ টু বি ইউজড, আমি ব্যবহৃত হতে অস্বীকার করি ।  এবং এই ৫০ কোটি টাকার প্রতিটা পয়সার হিসেব চাই। সবাইকে ২৬শে মার্চের শুভেচ্ছা।

আমি একটা সুসংবাদ দেই, আমার ফেসবুক বন্ধু জাপান প্রবাসী দিদার কচি Didar Kochiভাই জানিয়েছেন, তন্দ্রাদির স্ট্যাটাস পড়ার পরে,তিনি এবং তার বন্ধুরা ইতিমধ্যেই ৮০০ ডলার কমিট করেছেন এবং ইতি মধ্যেই Tandra Chakma তন্দ্রা দিকে জানিয়েছেন, আগামি সপ্তাহের মধ্যে দের লক্ষ টাকা সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার মহাসেনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া সরকারী স্কুলের ফান্ডে দিবেন।

ধন্যবাদ কচি ভাই এবং আপনার বন্ধুদেরকে। এক টিকেটে দুই ছবি দেখার মত চেতনা ব্যবসা আর টাকা লুটপাট করা নতুন মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ীদের যুগে , আপনারাই দেখিয়ে দিচ্ছেন, দেশপ্রেম কি জিনিষ ।

৫০ কোটি টাকার সাথে তুলনা করলে, দেড় লক্ষ টাকা হয়তো কিছুই নাই, কিন্তু , মিথ্যার মধ্যে সত্যকে বেছে নেয়ার ইচ্ছাটাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা।

 

সূত্র ঃ
তন্দ্রা চাকমার ফেসবুক স্ট্যাটাস।
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10152321709877152&set=a.310807447151.183524.719932151&type=1&stream_ref=10
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন। প্রায় তিন লাখ লোক একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে।
http://bangla.bdnews24.com/ bangladesh/article759318.bdnews

 

 

Accommodating the New Imperial Order: The Dhaka Tribune and the Ruling Culture of Subservience

By Surma

They plunder, they slaughter, and they steal: this they falsely name Empire (Superpower), and where they make a wasteland, they call it peace – Tacitus (56 – 117 AD)

Have you heard the one about the Bangladeshi farmer and the Indian Border Guard?

felani.jpg

Picture of 15 year old Felani killed by Indian Border Guards (BSF) on the 7 January 2011

There was once a Bangladeshi farmer who was ploughing his fields with his cattle near the Indian Border. The Indian border guards (BSF) as part of their live exercises, for the sake of target practice, crossed the border shot the farmer and took his cattle. The BSF re-brand the cattle as Indian cattle and then sell it to an Indian cattle smuggler, who in turn smuggles the cattle into Bangladesh, with the help of the BSF, and sells at a premium. All this time our helpless Bangladeshi farmer is lying in his field bleeding to death.

First the the local Awami League Chairman comes along, see’s the farmer walks over the farmer, crosses the border and has tea with the BSF guards at their station.

Second, a civil society, Sushil type, Nirmul Committee member comes along, see’s the farmer, takes pictures and then crosses the border and writes a report with the BSF guards. In the report the farmer was part of international Islamist terror network, and his cattles were being used to fund that terror network, thus both the farmer and his cattle created an existential threat to the Bangladeshi state and needed to be neutralised.

Third, a correspondent from the Dhaka Tribune arrives and takes an interview of the farmer, noting down all the facts, then writes a sympathetic piece in the paper about the problems faced of being an Indian Border Guard.

The above comical anecdote sadly reflects the state of affairs that is amongst the ruling clique, political and civil in Bangladesh. A culture of submission to an aggressive foreign power, which regularly kills citizens of the country, interferes in domestic politics and is economically exploiting the country’s resources. It is a culture of subservience which permeates the ruling Awami League, to a myopic civil society members, whose indignity is masked by spineless corporate media.  This pro india bias was recently highlighted by former ambassador Sirajul Islam, in the Weekly Holiday. The Dhaka Tribunes role of propaganda as an extension of the state was confirmed when it and its editor Zafar Sobhan received an award by the Better Bangladesh Bangladesh Foundation (BBF) for creating a better image for the country. The other awardees are (post Rana Plaza) Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association for its contribution in the garment sector, the (post internationally criticised elections) Ministry of Foreign Affairs for contribution in the field of international relations, Bangladesh Armed Forces for serving in the United Nations Peace Support Operations and International Committee of the Red Cross (ICRC) for its role during the Liberation War and Foreign Minister AH Mahmood Ali.

Policy of Appeasement – ‘Please Sir, can I have some more!’

muncih 1938.jpgoliver twist.jpg

(l) Neville Chamberlain proclaiming foolishly ‘peace in our times’, after rewarding Nazi aggression at Munich 1938. ( r) Famous scene from Oliver Twist 1968, ‘Please sir can i have some more!’

This culture of subservience reached new heights, with the recent editorial by the Dhaka Tribune by its editor Zafar Sobhan, where he beseeches the Indians to extend the cricketing Indian Premier League into Bangladesh:

“The most obvious way in which to do this would be to let Dhaka bid for a franchise in the next application process and let economics sort it out. With a catchment area that would comprise the entire country in terms of local fan base, or even simply taking Dhaka as the focal metropolis, such a franchise would be a better bet than some that are already in the IPL”

The article and its timing displayed new a new marker for the paper, in its ‘Walter Mitty’, type editorial policy, a new level of a comic detachment from the reality faced by ordinary Bangladeshis. Instead of confronting criticism of the papers Islamophobic and pro India bias, the article just confirmed those accusations and further silenced an ever decreasing number of sympathisers, The reality on the ground, which the paper ignores and is insensitive to, is that one sided elections were held with the open support of the Indian government, with a brutal security crackdown with an alleged assist from the Indian army, all held against the backdrop of an increasing number of Bangladeshi citizens being killed by the Indian security forces at the border.

The content and timing of the piece could be interpreted as a rerun of Munich 1938, where instead of aggression against the sovereignty of a neighbouring country being opposed and resisted, we have a cringe worthy acceptance of the aggression by masking it up and seeking to reward such aggression, in this case unilaterally seeking an IPL franchise.

The ignorance multiplier effect – one import size fits all

The proposal shows an incredible disregard for developing Bangladeshi cricket, which can be throttled by importation of franchise and precious resources being diverted to it. Instead of advocating investment and development of local clubs, the newspaper’s solution, like so many other solutions adopted in current Bangladesh, is to import a ready made manufactured Indian solution. This is in the foolish belief that such a solution, of a single franchise, is for the benefit of development of the game in a country of over 150 million.

A similar dynamic, rather stagmatic, can be observed in every domain of indigenous social-technological development, from water resources engineering, to urban planning and education. The systematic undernourishment of our own talents is no basis for a state with pretensions of autonomy. Realise this, even (y)our foreign development partners are laughing all the way to the bank and up their career ladders

The attitude in the paper seems to be hangover of the Mujib-era one party state of the early 70s, where dogma superseded practical technicalities. Then it was the import of ill fitting Soviet blueprints, now we have the advocacy of ill fitting, counter productive Indian ones, for our politics, culture, economics and now cricket. For too long, the Dhaka Tribune and its ilk, has gotten away with weaving a fairytale of Bangladesh. Until people start complaining – and loudly too – the corporate media agenda will be shaped by supporters of government, pro AL big business and Indian foreign policy. That does not just subvert honest journalism: it undermines our democracy.

famine 1974.jpgdefinition of journalism.jpg

(l) Scene from the famine of 1974, mainly caused by the political and economic ineptitude of the government of the day. ( r) Memo to the Dhaka Tribune and the corporate media of Bangladesh, from a real journalist, George Orwell.

সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদ : স্বৈরতন্ত্রের কবলে বংলাদেশ

-রেজাউল করিম রনি

 

‘A revolution is not a dinner party, or writing an essay, or painting a picture, or doing embroidery; it cannot be so refined, so leisurely and gentle, so temperate, kind, courteous, restrained and magnanimous. A revolution is an insurrection, an act of violence by which one class overthrows another.’ [ Mao Tes-Tung; selected work Vol.1p.28]

 

বাংলাদেশের এখনকার রাজনীতির গতিপ্রকৃতি বুঝবার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলা আলোচনা করা দরকার তা আমরা এখনও ঠিক করে ওঠতে পারিনি। অথবা বলা যায়, যে তরিকায় রাজনীতির আলোচনা উঠলে, নিদেনপক্ষে শিক্ষিত পরিমণ্ডলে রাজনীতির তর্কটা একচক্ষু এলিট মার্কা খুপরির জগৎ থেকে মুখ তুলে বিকশিত হবার সুযোগ পেতো তা আমরা শুরু করতে পারিনি। এর দায় তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের। এর মূলে আছে গণবিরোধী বুদ্ধিজীবীতাকে মূলধারা হিসেবে হাজির করার খামতি। বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে পরাধীন করে রাখার জন্য বুদ্ধিজীবীরাই যথেষ্ট।

images (1)

আনন্দের কথা হল, সাধারণ জনসমাজে এইসব বিকট বিকট বুদ্ধিজীবীদের দুই পয়সারও দাম নাই। তাদের প্রভাব মিডিয়া পরিমণ্ডল নেতা-নেত্রীর গোপন বৈঠক বা পর্দা বা বেপর্দার টেবিল টকেই সীমাবদ্ধ। যাহোক, আজ আমরা কয়েকটি পয়েন্টে এই মুহূর্তের রাজনৈতিক চরিত্র বুঝবার চেষ্টা করবো। বলাই বহুল্য আমাদের এখানে যে তরিকায় চলমান রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করা হয় তার ধার আমরা ধারি না। দুই দলের শত্রুতাকে আমরা বাংলাদেশের রাজনীতির মূল সমস্যা মনে করি না। তথাপি এইসব দলদারির রাজনীতি আমরা বিচার করি। করব। কিন্তু তাঁর অভিমুখটা হবে নয়া বাংলাদেশের উদ্বোধনকে তাতিয়ে দেয়া।

আর এটা করতে গেলে ক্ষমতার রাজনীতির গণবিচ্ছিন্ন চরিত্রটা পরিস্কারভাবে বুঝতে হবে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্যটা হবে গণক্ষমতার নতুন সামাজিক-নৈতিক একই সাথে রাজনৈতিক স্বত্তাটা বিকশিত করা। এটাই বাংলাদেশে এখনকার কাজ। আর এটাই তথাকথিতমূল ধারার বুদ্ধিজীঈতা বা সুশীল ধারা বিশ্রিভাবে এড়িয়ে কাগুজে আলাপে পর্দা ফাটিয়ে ফেলে। তারা সুভদ্র আলোচনার শ্রোতে ভয়ের সংস্কৃতিকে সামাজিকীকরণ করে চলেছে নিত্যদিন। সেই দিকে সতর্ক থেকে আজকে আমরা কয়েকটি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করব।

বাঙালি জাতীয়তাবাদের আত্মপরিচয়ের সঙ্কট :

শুরুতেই আনন্দের কথা জানাইতে চাই। শেখ হাসিনা সরকার খানিকটা কৌশলে বাকিটা জবরদস্তি করে ক্ষমতা আকড়ে ধরে থাকাতে বাঙালি জাতীয়বাদি রাজনীতি ঐতিহাসিক সঙ্কটে পড়েছে। একে তো এর আত্মপরিচয়ের ঐতিহাসিক মীমাংসা করা হয়নি। তার উপর ফাঁসির দড়ির ওপর ভর করে সাংবিধানিক  ফ্যাসিবাদ কায়েমের কারণে এতো দিন যে সব বুদ্ধিজীবীরা চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে যে কোনো বিরোধীতাকে জামায়াত-বিএনপির ষড়যন্ত্র ঠাওরেছেন তাদের মুখে জুতার কালি পড়েছে। তাদের আর কোনো সামাজিক বৈধতা নাই। গলাবাজির সব রাস্তা হাসিনা বন্ধ করে দিয়েছেন। শাহবাগ কে র্নিলজ্জভাবে মুক্তিযুদ্ধের মিথের ওপর দাঁড়করানোর জন্য যে সব বুদ্ধিজীবীরা আওয়ামী জেহাদে শরিক হয়ে ছিলেন সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদের আমল হাজির হওয়ায় তাদের সব রকম নাগরিক ভূমিকার নিকাশ হয়ে গেছে। এই গুণ্ডাবাজির পরিণতিতে আজ বাংলাদেশ নিয়মান্ত্রিক এক স্বৈর-অবস্থায় নিপতিত হয়েছে।

যা হোক বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে যে সব গণবিচ্ছিন্ন চাটুকার তথাকথিত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী নামধারী প্রতিবন্ধীরা গলাবাজি করেছেন তারা এখন চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন। কোনো কথা বলার নৈতিক বৈধতা হারিয়ে তারা এখন নিজেদের আদর্শে কি ত্রুটি আছে তা খুঁজে দেখতে মনযোগী হয়েছেন। এটা কম কৌতুকের জন্ম দেয় না। আমি নজির হিসেবে প্রথম আলোর থিং-ট্যাঙ্ক প্রকাশনা ‘প্রতিচিন্তার’ সর্ব শেষ সংখ্যার (প্রতিচিন্তা, জানুয়ারী-মার্চ ২০১৪ সংখ্যা) প্রথম লেখাটার দিকে পাঠকের নজর ফেরাতে বলব।

‘বাঙালি জাতয়িতাবাদ চার দশক পর’- শিরোনামের  এক লেখায় বদরুল আলম খান লিখেছেন,
‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবল স্রোতে ৪২ বছর আগে বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব সভায় স্থান করে দিয়েছিল। আজ সে দেশ একটি সংঘাতময় দেশ হিসেবে পরিচিত। মধ্যবিত্ত জীবনের সীমানায় যারা দাঁড়িয়ে আছে, তাদের জন্য দেশের এই পরিচয় এক অদ্ভুত বিড়ম্বনার জন্ম দিচ্ছে। তারা দেখছে কীভাবে সংঘাতে ঋজুতা রাজনীতিকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। দুই বৃহৎ রাজনৈতিক জোট দেশের বিধাতা হলেও তাদের মধ্যে সহযোগিতা বা সমঝোতা নেই। তারা যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নিয়োজিত।’

তিনি এই লেখায় অনেক চমকপ্রদ বিষয়ের অবতারনা করেছেন। যদিও তার চিন্তার এনলাইটমেন্ট সীমাবদ্ধতার কারণে এইটা দিয়ে বেশিদূর আগানো যাবে না। কিন্তু এমন সব বিষয়কে আমলে নিয়েছেন যা সত্যিই অমাদের জন্য সুখবর। তিনি জানাচ্ছেন,
‘বাঙালির প্রধান দুই আত্মপরিচয়, ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়কে, মূল প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিতে পরিণত করা হয়েছে। ৪২ বছর পার হলেও ওই দুই পরিচয় কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। দুই পরিচয়ের দ্বন্দ্ব সে কারণে এখানে তীব্র ও রক্তাক্ত।’

এই এতোটুকু বোধ যে সুশীলদের মধ্যে জেগেছে তার জন্য শুকরিয়া আদায় না করে উপায় নাই। আমরা শুরু থেকে শাহবাগ, ফাঁসির রাজনীতি ও কর্পোরেট জাতীয়তাবাদের উপনিবেশী সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়ে আসছি। একই সাথে বলে আসছি বাংলাদেশে ইসলামের একটা পর্যালোচনা লাগবে। নিদেন পক্ষে ইসলাম ও রাজনীতির প্রশ্নে তথাকথিত প্রগতীশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরির্বতন না হলে রক্তপাত এড়ানো যাবে না। আওয়ামী লীগ মানেই গুণ্ডা বা ধর্মদ্রোহী এই মনোভাব সমাজে কেন প্রবলতরো হচ্ছে তাও খতিয়ে দেখতে চেয়েছি। অন্য দিকে বিএনপি কোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি বা মতাদর্শ না হাজির করেও কি করে ক্ষমতার রাজনীতির প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে উঠল তারও হদিস করতে চেয়েছি। পাশাপাশি জামায়াত ও অন্য ইসলামী ধারাগুলোর বিচার বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে একটা মতাদর্শিক সংগ্রামকে বেগবান করার কথাও শুরু থেকে বলে আসছি। কিন্তু এর ফল হয়েছে উল্টা। আমাদের রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী হিসেবে হেয় করা হয়েছে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে। ফলে এখন কৌতুক অনুভব না করে পারছি না। আওয়ামী লীগ যখন তার উপনিবেশী সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের জোড়ে ক্ষমতায় বসে গেল তখন চেতনার আফিম খোরদের আর আপসোসের সীমা রইল না। এতোদিনে যে জল অনেকদূর গড়িয়ে গেছে সেই হুশ নাই। এখন আল-কায়েদা ও মার্কিন অনন্তযুদ্ধের ছঁকে পরে গেছে বাংলাদেশ। আর তা গৃহযুদ্ধের প্রবল প্রতাপ নাগরিক জীবন কে ভীত করে তুলছে। বিরোধীদল নিধনের ক্রসফায়ার গল্পও চালু হয়েছে। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবিতা স্বমূলে তার বৈধতা বা পাবলিক লেজিটিমেসি হারিয়েছে। তথাকথিত নাগরিক সমাজ, মিডিয়া ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এমন এক সঙ্কটে পড়েছে যে এর রাজনৈতিক সম্ভানা ঐতিহাসিকভাবে বিনাশ হওয়ার দ্বার প্রান্তে চলে গেছে। এখন গণক্ষমতার উত্থানের অপেক্ষা জনমনে ফিরে এসেছে প্রবলভাবে। এইটা একদিক থেকে স্বাস্থ্যকর বলতে হবে। যা হোক আমরা এই লেখায় বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের ধরন ও নয়া স্বৈরতন্ত্রের হালহকিকত নিয়ে আলোচনা করব।

বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ : 

ফ্যাসিবাদ নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। দেশে বিদেশে ফ্যাসিবাদ নিয়ে আলোচনার ঐতিহ্যেও ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বাঁক বদল ঘটে গেছে। ফ্যাসিবাদ, বলাই বাহুল্য পশ্চিমা রাজনৈতিক তাত্ত্বিকতার  আলোচনায় অতি জোড়ালোভাবে হাজির রয়েছে। আমাদের দেশে এই বিষয় নিয়ে চিন্তাশীল অধ্যায়ন এখনও শৈশব অবস্থা পার করেছে বলা যাবে না। ফ্যাসিবাদ এখানে রেটরিক বা কথার কথা বা গালি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর তাত্ত্বিক বা নিদেন পক্ষে একাডেমিক আলোচনার বেহাল দশা লজ্জাজনক।

বাংলাদেশে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনার এক নম্বর সমস্যা হল অতি পণ্ডিতি। আর লোক দেখানো বিদ্যার গড়িমা। ফলে এখানকার লেখক বুদ্ধিজীবীরা অতি মাত্রায় জাজমেন্টাল। কোনো কিছু খতিয়ে দেখার ধৈর্য্য এদের ধাতে নাই। আগেই ভাল মন্দ নির্ধারণ করে দিয়ে নিজে ন্যায়ের পরাকাষ্ঠা সাজার হীন চেষ্টা করে বসেন। আর রাষ্ট্র ও রাজনীতি চিন্তা এখনও  বিদ্যাসাগর বা রবী ঠাকুরের আছড় কাটাইয়ে ওঠতে পারে নাই। যা হোক আমরা ফ্যাসিবাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ এখানে পাব না। মানে দার্শনিক দিক থেকে বিষয়টি যতটা অবিনিবেশ দাবি করে তা এখানে করব না। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের ধরণ বুঝবার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক আলোচনার মধ্যেই সীমিত থাকব।

প্রথম কথা হলো ক্লাসিক অর্থে ফ্যাসিবাদ বলে যা বুঝায় বাংলাদেশে তা নাই। সম্ভব না। তাই প্রশ্ন করতে হবে এতো ফ্যাসিবাদ ফ্যাসিবাদ শুনি কেন? এইখানে ফ্যাসিবাদের ধরণটা হল উপনিবেশী চিন্তা ও রুচি নির্ভরতা। এর রুট বাংলাদেশের মাটিতে না। এটা উনিশ শতকের কলকাতার যে রেনেসা এবং এর ভেতর দিয়ে যে হিন্দু যা মূলত ব্রাক্ষ্মণ্যবাদি জাগরণ আকারে হাজির হয়েছে তার বয়ানের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের আত্মপরিচয়ই এখনও পরিস্কার হয়নি ফলে এর দ্বারা ফ্যাসিজম কায়েমের কোন সম্ভাবনা নাই।  কিন্তু এর অদ্ভুত রকম শাসনতান্ত্রিক বিকার ঘটেছে। এটা এই রাষ্ট্রের শুরুর আমল থেকেই ঘটেছে। সর্বশেষ তথাকথিত পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। এটা কে আমি ফ্যাসিবাদ বলি সাংস্কৃতিক অর্থে। এটার নাম দিয়েছি কালচারাল-ফ্যাসিজম।

মনে রাখতে হবে ফ্যাসিবাদ আলোচানার বিষয়ে পরিণত হয়েছে দুইটা বিশ্ব যুদ্ধের পরে। দুইটা বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতার মধ্যেই ক্লাসিকাল ফ্যাসিবাদের আলোচনার ভিত্তিভূমি তৈয়ার হয়েছে। যার সাথে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কোনো মিল নাই। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম একটা রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে হয়েছে কিন্তু এই যুদ্ধ এক দিকে যেমন মহান মুক্তিযুদ্ধ অন্য দিকে বিপুল সাধারণ মানুষ সময়টাকে চিহ্নত করে গণ্ডগোলের সাল বলে। এই কথাটা বিশেষভাবে বললাম জাতীয় চেতনার কমিউনাল চরিত্রকে সহজে বুঝবার জন্য। অন্যদিকে ক্ল্যাসিকাল ফ্যাসিজমে যেটা খুব জরুরি তা হলো এমন একটা টোটালেটিরিয়ান বা সমগ্রতাবাদি আচরণ যার নিরিখে অন্যকে আলাদা করা, শত্রু জ্ঞান করার তীব্র আচরণ হাজির থাকে। এই অপরকে বিনাশ করার জন্য শুধু সাংগঠনিক শক্তি থাকলেই তাকে ফ্যাসিবাদ মনে করার কোন কারণ নাই। এর মতাদর্শিক জোড়টাই আসল কথা। আমাদের মনে রাখতে হবে। মতাদর্শও অস্ত্র। খুব গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। সেই দিক থেকে বাংলাদেশ তো দূরের কথা বাংলাদেশ যার সাস্কৃতিক উপনিবেশ সেই ভারতেও ফ্যাসিবাদি শক্তি আকারে হাজির হবার কোন শর্ত নাই। ভারতের সমাজে মুসলমানকে বাহিরের শক্তি এবং এনিমি আকারে দেখা হয়। এর পরেও তার টোটালিটি নিয়ে সে দাঁড়াতে পারে নাই। তাকে বিশ্ব পুঁজির সাথে তালমিলিয়ে চলতে হয়। ফলে ভারতে সমাজের ভেতরে যেটা রয়েগেছে সেটা হলো কমিউনালিটি। এই কমিউনালিটির ভয়াবহতাকেই লোকে বলে  সাম্প্রদায়িকতা। আমি বলি এটা পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স। কারণ এই সব কমিউনিটি কখনও মতের ভিন্নতার জন্য রক্তা-রক্তি করেছে এমন নজির নাই। প্রতিটি ভায়োলেন্সের সাথেই ক্ষমতার রাজনীতির সম্পর্ক আছে। এটা বাংলাদেশের দিকে তাকালে আরও ভাল বুঝা যাবে। সমাজের মধ্যে মত-ভিন্নতা আছে কিন্তু এই ভিন্নতার কারণে রক্তরক্তি হয় না। মানে সমাজের মৌল প্রবণতাকেই সাম্প্রদায়িক বলা যাবে না। কেন না নানা কারণে কমিউনিটি  টু কমিউনিটি– চিন্তা, আদর্শ বা আচরণের ভিন্নতা হতে পারে। এর আলোকে কোন কমিউনিটি যদি সংগঠিত হয় এবং রাজনীতিতে হাজির হয় তাইলে এটাকে খুব স্বাভাবিকই বলতে হবে। আর এতে এক কমিউনিটি অন্য কমিউনিটিকে শত্রু মনে করে বলপ্রয়োগে নামলে তাকে হোলসেল সাম্প্রদায়িকতা বলা যাবে না। এটা রাজনীতির স্বাপেক্ষে যখন হয় তখন আর এটা সাম্প্রদায়িকতা থাকে না। এটা তখন হয়ে দাঁড়ায় রাজনৈতিক বলপ্রয়োগ। এক গোষ্ঠী আর এক গোষ্ঠীর ওপর এই বলপ্রয়োগ করে। এটা পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স। যা হোক এটা নিয়ে আরেক লেখায় আলাপ করেছি।

bangladesh-fascist
বাংলা ভাষায় ফ্যাসিবাদ নিয়ে আলোচনা অনেক দিনের। এই বিষয়ে প্রথম প্রকাশিত বই হলো, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফ্যাসিজম’। ১৯৩৪ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের মার্কসবাদি আন্দোলনের পথিকৃতদের একজন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা দিশারি তুল্য। নাৎসিবাদের ঝোড়ো উত্থানের সময় তিনি ছিলেন জার্মানিতে। তিনি নাৎসি মতাদর্শ ও সাহিত্য ভালভাবে পড়েছেন তা তার লেখায় স্পষ্ট বুঝা যায়। তার বইটি পড়লে অবাকই হতে হয়। তিনি মার্কসবাদি ছিলেন ফলে মার্কসবাদের আলোকে সেই সময়ে তিনি ফ্যাসিবাদকে যে তরিকায় দেখেছেন আজকের এইদেশের মাকর্সবাদিরা এর চেয়ে খুব বেশি আগাইছে এমনটি মনে হয় না। এমন কি আমাদের তুখোর বুদ্ধিজীবীরাও তাকে ছাড়াতে পারেননি। কিন্তু ফ্যাসিবাদের তর্কটা আর সেই জায়গায় থেমে নেই। এর  এতো বিস্তৃতি ঘটেছে যে আমদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা সেই তুলনায় খুব পশ্চাৎপদই রয়ে গেছেন। অন্য মার্কসবাদিদের মতো তিনিও মনে করতেন শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবের দ্বারা জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের অভিমূখ ঘুরিয়ে দিয়ে ন্যাশনালিজম ভায়া হয়ে যে বিকট ক্ষমতার উত্থান হয় সেই ফ্যাসিজমের থাবাকে ঠেকিয়ে দিতে হবে। এবং বুর্জোয়াদের কে ফ্যাসিজমের জন্য দায়ী মনে করতেন। বুর্জোয়ারা ফ্যাসিজমের পক্ষে থাকে এটা কম বেশি বিভিন্ন সমাজে দেখা গেছে।

কিন্তু খোদ মার্কসবাদে ফ্যাসিজম নিয়ে আলোচনার অন্য খামতি আছে। লেলিন ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’ লিখছেন কিন্তু ফ্যাসিজম নিয়ে তিনি কোনো আলাপে গেলেন না। এটা হতে পারে সেই সময়ে এই ইস্যু হাজির করা সম্ভব হয়নি। মার্কসবাদের ঘরে এই বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন কাউটস্কি।যদিও আমরা তাকে হোল সেল এনারকিস্ট বলে তার চিন্তার প্রতি কখনও মনযোগী হয়নি। এটা আমাদের মার্কসবাদিদের দৈন্যতাকে আরও প্রকট করেছে। ফ্যাসিজমের আলোচনায় এদের আর কোনো পটেনশিয়াল ভূমিকা নাই। এরা নিজেরা ভিষণ রবীন্দ্র-প্রবণ হয়ে সরা-সরি ফ্যাসিবাদের খাদেমে পরিণত হয়েছে। যে কারণে সৌমেন্দ্রনাথ থেকে আলোচনা শুরু করেছি তা বলে নিই। সৌমেন্দ্রনাথ যেমন মার্কসবাদের ভেতর থেকে ফ্যাসিজমকে দেখেছেন, বিরোধীতা করেছেন এমন দেখা-দেখি ও বিরোধীতা আজও জারি আছে। অন্য দিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই সময় যে ভূমিকা নিয়েছেন তা আজ আরও ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। এরা রবীন্দ্রনাথের ঘারে চড়ে সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের সৈনিক হয়েছে বাংলাদেশে। এর অরিজিন খোদ রবীন্দ্রনাথে হাজির আছে।

নাৎসিবাদের পক্ষে সাফাই গাইবার কারণে রবীন্দ্রনাথকে মাকর্সবাদিরা কম হেনস্থা করেননি। এটা আজও জারি আছে। আমি এটা মার্কসবাদিদের মতো করে দেখতে চাই না। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্র চিন্তার সাথে যদি আমরা বুঝা-পড়ার চেষ্টা করি তাইলে দেখব এটা খুব স্বাভাবিক প্রবণতাই। দিপেশ চক্রবর্তী তার ন্যাশন এন্ড ইমাজিনেশন প্রবন্ধে এটা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। তিনি রবীন্দ্র ন্যাশনালিজমের ফিলেনথ্রপিক আদর্শকে ক্রিটিক করে একে প্রবলেমেটিক বলে সাবস্ত করেছেন। কাব্য, চিন্তা, কল্পনা ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গের দুর্দান্ত বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্র চিন্তায় রাবীন্দ্রিক দৈন্য দশা উদাম করে দেখিয়েছেন। আমি সে দিকে যাব না। বাংলাদেশের মানুষ চিন্তায় অতি মাত্রায় সাহিত্যগ্রস্ত হওয়ার ফলে এখানে ফ্যাসিজম একটা কালচারাল লড়াইয়ে রুপ নিয়েছে সহজেই। সাংস্কৃতিক প্রশ্নে রক্তা-রক্তির ঘটনা ঘটছে। কোনো নতুন রাজনীতি জন্ম নিচ্ছে না বাট রক্ত ঝরছে নানা ছলে।

সৌমেন্দ্রনাথ ১ নভেস্বর ১৯৩৩ সালে প্যারিস থেকে রবীন্দ্রনাথ কে লিখছেন, ‘তুমি নাৎসিবাদের সমর্থনের দ্বারা ইয়োরোপের ইন্টেলেকচুয়াল কেন্দ্রে তোমার বিরুদ্ধে যে তীব্রতা জাগিয়ে তুলেছ সেই সম্বন্ধে তোমাকে জানিয়ে দেওয়ার জন্যই এই চিঠি লেখা।…..

তোমার বিরুদ্ধে যে-আক্রমণ গজিয়ে ওঠেছে তার প্রধান পয়েন্টগুলি হচ্ছে, তুমি যদি না বদলে থাক, তা হলে তুমি জার্মান ফ্যাসিজম যা আজ নাৎসিবাদের নাম নিয়েছে তার সমর্থন কোন মতেই করতে পার না।…..

তোমার উক্তির তীব্র প্রতিবাদ তো হবেই, শুধু তাই নয় তোমার নামের সঙ্গে এই অপবাদ চিরকালের মতো জড়িয়ে থাকবে….। [ ঠাকুর-ফ্যাসিবাদ, পৃষ্ঠা ৯৫, মনফকিরা প্রকাশনী,কলকাতা]

সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা ফলে গিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এই চিঠির বক্তব্যের সাথে একমত হবেন না। রবীন্দ্রপ্রবণ ভক্তকূলও এর প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমি যা বলতে চাইছি তা বাদ-প্রতিবাদের ধার আর ধারবে না। এই রবীন্দ্র চেতনার আর বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে সম্পর্ক তার সাথে সোনার বাংলার মিথ ও ভাষার আধিপত্যবাদি অনুরাগ আজ সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। এই জাহেলি জুলুম বাজের ‘কাল’কে বৈধতা দেবার জন্য সাংবিধানিক যুক্তিও তৈয়ার করেছে। এই কালচারাল ফ্যাসিবাদ ক্ষমতার স্বাদ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার জন্য যে আমলের সূচনা করেছে এরই নতুন নাম হলো সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদ। এর  সাথে বিশ্ব পুঁজি, জাতীয় চেতনা, বিজ্ঞাপনী ভোগ সংস্কৃতি, মধ্যবিত্ত চৈতন্যের গণবিচ্ছিন্নতা, ৭১ এর মিথ, পরিকল্পিতভাবে ঘৃণার সংষ্কৃতি তৈরি -এই সবের সম্পর্ক অতি জটিল রুপ নিয়ে জড়িয়ে আছে। এই সবের সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কটা এতো জটিল আকারে জাড়িয়ে আছে যে রবীন্দ্রনাথকে আমরা যে ভালবাসব তার সুযোগ আর পাচ্ছি কই। রবীন্দ্রনাথের নামে আজ রক্ত ঝরে।  রবীন্দ্রনাথ কি করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ফ্যাসিবাদি সাংস্কৃতিক শক্তিতে পরিণত হলো তা খতিয়ে দেখা অতি জরুরি কাজ আকারেই হাজির হয়েছে। আমি নিজে রবীন্দ্র ভক্ত মানুষ। কবি হবার কারণে রবীন্দ্রনাথের সাথে এক ধরনের সম্পর্কও ফিল করি। তথাপি রক্তঝরানো রবীন্দ্রনাথকে এখন সাফ-সুতোরো না করলে আর উপায় নাই। যা হোক রবীন্দ্রনাথ ফ্যাসিবাদের সমর্থক ছিলেন এটা প্রমাণ করা আমার প্রকল্প না। আমি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের রুট খুজতেছি। এর অপজিটে অনেকে বলবেন তাইলে তো ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ বলে একটা ব্যাপার আছে। এটা চিনপন্থি মার্কসবাদিদের পপুলার থিসিস। আমি বলব এরা ফ্যাসিজমের তর্ক করার তরিকায়ই জানে না। ধর্মের সাথে ফ্যাসিজমের তর্ক এক করে করা যাবে না। তবে ধর্মের কোনো কোনো ইন্টার পিটেশনকে ফ্যাসিবাদি কাজে ব্যবহার করার নজির বেশ পুরানা। কিন্তু খোদ ধর্ম ফ্যাসিবাদের আছড়ে নাই। কারণ ধর্মের সাথে ডিভাইনিটির যে যোগ তা ফ্যাসিবাদের সাথে যায় না। ফ্যাসিবাদ  ইহলৌকিক সঙ্কল্পের মধ্যে জন্ম নেয়। আমরা যদি ফ্যাসিবাদের দার্শনিক ইতিহাস খেয়াল করি তাইলে বিষয়টি পরিস্কার দেখতে পাব। তখন মার্কসবাদিদের খামতিও চোখে পড়বে।

প্রথমে আমার যদি দেখি মার্কসবাদিরা ফ্যাসিজমকে কিভাবে বুঝেছে তাইলে পুরো ব্যাপারটি সহজেই ধরে ফেলতে পারব। স্বীকার করতে হবে ফ্যাসিবাদের তাত্ত্বিক আলোচনায় মার্কসবাদিদের অবদান অসামান্য। কিন্তু কর্পোরেট ক্যাপিটালিজমের মধ্যে এসে তারা দেখলো এতো দিন তারা যা বলে এসেছে তা তো আর কাজ করছে না। তারা যে টোটালিটিরিয়ান এপ্রোচের কথা বলেছে তা তো সাম্রাজ্যবাদ বা পুঁজি নিজ বৈশিষ্ট্যগুণেই ধারণ করে। তাইলে ফ্যাসিজমের তর্কটা যেভাবে তারা জাতীয় আন্দোলনের সাথে শ্রমিক শ্রেণিকে হাজির করার মধ্য দিয় উৎরে যেতে চেয়েছেন তা তো ফেইল করেছে। খোদ রাশিয়াতে শ্রমিক বিপ্লবের পরে উত্থান ঘটেছে ভয়াবহ সমাজতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের। তখন পোস্টমর্ডান এরেনার অনেক তাত্ত্বিক সাইকোলজির আলোচনা করে মার্কসবাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদের আলোচনার পদ্ধতিগত খামতি দূর করার চেষ্টা করেছেন। এতে মেথডলজিক্যাল মাত্রা যোগ হয়েছে সন্দেহ নাই কিন্তু ফ্যাসিজমকে মার্কসবাদ দিয়ে মোকাবেলা করা যাবে এই বিশ্বাস বা নজির কায়েম হয় নাই।

বিশেষ করে বলতে হবে, রাষ্ট্রে এবং জাতীয়তাবাদের ধারণার সাথে ফ্যাসিবাদকে যেভাবে একসাথে আলোচনা করা হয় তা এখন ইরিলিভেন্ট। কারণ রাষ্ট্র এখন আর ষাটদশকের রাষ্ট্র ধারণায় আটকে নাই। টেকনোলজি আর কর্পোরেট গ্লোবাল ওয়াল্ড অর্ডার এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছে যে হিটলার বা মুসুলিনি টাইপের ফ্যাসিজমের দিন শেষ। স্টেট মেশিনারির ভূমিকাটা অতি ফাংশনাল। এর ইডিওলজিক্যাল স্টেন্থ বা বল আর বাস্তব কারণেই এতো জোড়ালো হবে না। সে যতো মহান জাতীয়তাবাদই হোক। কনজিওমার কালচারাল সোসাইটিরর সাথে আধুনিকতার যোগ এর সাথে বিজ্ঞাপনী স্বদেশ প্রেম মিলে বড়জোর একটা সাংস্কৃতিক ফ্যাসিজম তৈরি হতে পারে। যেটা বাংলাদেশে হয়েছে। কিন্তু এর ভবিষৎ অতি করুণ পরিণতিতেই শেষ হবে। কারণ নতুন রাজনৈতিক চৈতন্য দাঁড়ানোর সাথে সাথে এই সাংস্কৃতিক আধিপত্য ধসে যাবে। সেটা যদি বুর্জোয়াও হয় তাও এই সাংস্কৃতিক ফ্যাসিজম দাঁড়াতে পারবে না। কোন কারণ নাই। এখন মিডিয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,  তথাকথিত প্রজন্ম দেখে আমরা যদি ভড়কে যাই তাইলে খুব হাস্যকর হবে ব্যাপারটা। শাহবাগ গোটা বাংলাদেশ না।

এই ধরনের ফ্যাসিজম লিবারিলজমকে উৎসাহিত করে। গণতন্ত্রের কথা বলে, উন্নয়নের কথা বলে। এর আসল গোমরটা হলো,    “Fascism steals from the proletariat its secret: organisation. … Liberalism is all ideology with no organisation; fascism is all organisation with no ideology.” (Bordiga)

শ্রমিকরা দ্রুতই লিবারাল জাতীয়তাবাদি আদর্শের দিকে ফিরে আসে, তাদের সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে অবস্থা গড়ে ওঠে তাকে লিবারাল বলা হলেও, এই লিবারাল শক্তি যখন ক্ষমতার ধারক-বাহক হয়ে ওঠে তখন আর তার কোনো আদর্শ থাকে না। সাংগঠনই তার এক মাত্র ভরসা। সেই দিক থেকে কোনো রজনৈতিক দল যদি মনে করে যে দেশে একমাত্র তারাই থাকবে আর কারো থাকার দরকার নাই তাইলে তাকে ফ্যাসিস্ট বলা হয়। এই প্রবণতায় বাংলাদেশ জন্মের সময়ই আওয়ামী লীগ আক্রান্ত হয়েছিল। পরে এর করুণ অবসান আমরা দেখেছি। এখনকার বাস্তবতায় কোনভাবেই আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নাই। সেই মতাদর্শিক শক্তি যেমন নাই। লোটপাটের রাজনীতির কারণে সাংগঠনিক কাঠামো দিয়েও ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখা যাবে না। ভারসা পুলিশ-র্যা ব-সেনা। যা এখন চলছে। সারাদেশের মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের নেতারা গণ প্রতিরোধের মুখে পড়ছেন। পুলিশের রাইফেলের নলের ওপর ক্ষমতা টিকে আছে। এটা অতি মামুলি সরকারের নমুনা। একটা সাধারণ জনপ্রতিরোধই এটা ধসিয়ে দিতে পারে। ফলে ফ্যাসিজম বলতে যে অতি সংগঠিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোর সার্বিকীকরণ বুঝায় তার কোনো বৈশিষ্ট্যই এখানে হাজির নাই।

সবচেয়ে বড় কথা হলো ফ্যাসিজমের জন্য ‘অপর’ বা মোরল এনিমি লাগে। এটা বাংলাদেশে সম্ভব না। অন্তত আওয়ামী লীগ কোনো মোরাল এজেন্সি আকারে হাজির হতে পারবে না। এই ক্ষেত্রে তার একমাত্র ভরসা ৭১ এর চেতনার সাথে ডিজিটালইজড কালচারের উল্লম্ফনকে উন্নয়ন বলে চালু করা। এটা করাও হয়েছে। কিন্তু এই ধারাটা সাবস্ত্য হয়েছে নাস্তিক্যবাদি ধারা বলে। ব্লগ বা কম্পিউটার টেকনোলজির ধারক-বাহকরা যে চৈতন্য নিয়েই হাজির হোক না কেন জনসমাজে এরা ধর্মদ্রোহীর সিল খেয়ে গেছে। শাহবাগ এই অবস্থার তৈয়ার করেছে। ফলে বিজ্ঞাপনী স্বদেশ প্রেম ও চেতনার ঢোল দিয়ে ক্ষমতার বৈধতা পাওয়া যাবে না। জনসম্মতি এই চেতনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে নতুন শক্তির অপেক্ষায় আছে। আবুল মনসুর আহমদ অনেক আগে যেটা বলেছেন তা খুব খাঁটি কথা। তিনি আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিচালনার ভার এমন সব অতি-প্রগতিবাদি লোকের হাতে পড়িতেছে যারা ইসলামী রাষ্ট্র আর মুসলিম রাষ্ট্রের পার্থক্য বুঝেন না বা বুঝিতে চাহেন না।’

এই সমাজের বহুত্ববাদি ধারা এতো পাশাপাশি থাকে যে এই সমাজে কমিউনাল আচরণই রুটেট হয় নাই। যে কারণে ব্রাক্ষ্মণ্যবাদ এখানে সুবিধা করতে পারেনি। ফলে ঐতিহাসিক বাংলাদেশের দিক তাকালে আমরা দেখব এখানে ক্লাসিক অর্থে ফ্যাসিবাদ সম্ভব না। হতে পারে না।কতিপয় ফেটিশ মিডেলক্লাস ভোগবাদি আধুনিক চেতনার সাথে কর্পোরেট জাতীয়তাবাদির চেতনার আলোকে যে সাংস্কৃতিক বিভাজন তৈরি করেছে তাকে অকাট্য সত্য আকারে ধরে নেবার কোনো মানে হয় না।

মার্কসবাদিরাও যে এই সাংস্কৃতিক বিভাজন এর রাজনীতি বুঝেন না এমন নয়। তারা বার বারই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কথা বলে আসছেন। কথা হলো আধুনিকতার কোনো পর্যালোচনা না করে কি করে আপনি মার্কসবাদ দিয়ে সাংস্কৃতিক বিপ্লব করবেন? মার্কসের অরিয়েন্টাল প্রবলেম তো আর অজানা নয়। ধর্ম ও রাষ্ট্র প্রশ্নে মার্কসের চিন্তার খামতিগুলো তো আপনাকে আগায় নিতে পারবে না। এই দিকগুলা নিয়া এখনও যথেষ্ট আলাপ হচ্ছে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কথাটা অনেক বেশি মিসইউজ করা হয়। খুব বেশি রেটিরিক্যাল ব্যবহার হয়েছে কথাটার।
‘ডিজিটাল ফ্যাসিবাদ’ বইতে ফরহাদ মজহার যে আলোচনা করেছেন আর ১৯৩৪ সালে সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর যে আলোচনা করেছেন তার তরিকা বা পদ্ধতি প্রায় একই। আমরা এই দুই আলোচনার গুরুত্ব স্বীকার করে বিষয়টিকে আর বিষদভাবে বুঝার চেষ্টা করছি।

ফরহাদ মজহার বলছেন, ফ্যাসিবাদ শ্রমিক শ্রেণির গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে। তিনি মনে করেন ফ্যাসিবাদ পুঁজিবাদি ব্যবস্থার অর্থনৈতিক সঙ্কটও বটে। ফ্যাসিবাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদি উগ্রতা অনিবার্য বলে তিনি মনে করেন। তিনি মার্কসিস্ট জায়গা থেকে বেশ জোরালো আলোচনা করে ডিজিটাল ফ্যাসিবাদের আছড় ব্যাখ্যা করেছেন। এই ব্যাখার সাথে অনেকে দ্বিমত করতে পারেন। আমি এই ব্যাখ্যার রেটরিক্যাল পয়েন্টের সাথে একমত আছি। কিন্তু এসেনশিয়াল আর্গুমেন্টে আমি অন্য জায়গা থেকে তর্ক তুলব।

রাষ্ট্র,গণতন্ত্র আর ফ্যাসিবাদের সম্পর্ক নিয়া পুরোনো ধাচের আলোচনায় আর কোনো ফায়দা হবে বলে মনে হয় না। গণতন্ত্রের শাসনতান্ত্রিক ফাঁকি এখন সুবিদিত। কেউ আর গণতন্ত্রকে আদর্শ ধরে রাষ্ট্রের আলোচনা করেন না। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৪ সালেই বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্টদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা করায়ত্তকরণকে বিপ্লব বলে অভিহিত করলে থিওরেটিক্যাল নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেওয়া ছাড়া কিছুই হবে না। শ্রমিক-বিপ্লবকে বিধ্বস্ত করে বুর্জোয়াদের ক্ষমতা বজায় রাখাই ফ্যাসিস্ট আন্দোলনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল এবং আজও আছে।’ [ঠাকুর, ফ্যাসিজম পৃষ্ঠা ২০]

ফলে মার্কসবাদের রাষ্ট্র সম্পর্কে যেমন অমীংসা রয়ে গেছে তেমনি ফ্যাসিজমকে দেখবার ধরনেও গলদ রয়েগেছে। তারা মনে করেন জাতীয়তাবাদি আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির গণতান্ত্রিক ক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিজম ঠেকানো সম্ভব। কিন্তু এই অবস্থার স্বপক্ষে এখন আর কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বিখ্যাত চিন্তক, দার্শনিক আলী শরিয়তী বিষয়টি বেশ ভাল ভাবেই ধরতে পেরেছেন। শ্রমিক শ্রেণির একনায়কত্বকে তিনি ফ্যাসিজমের সাথে মিলিয়ে পাঠ করেন। তিনি মনে করেন,‘মার্কসবাদ ও ফ্যাসিবাদ উভয়ে শ্রমিকশ্রেণের দিকে না ঝুকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অন্বেষণ করেছে। তাই মধ্যবিত্ত বুর্জোয়ারাই এটির অনুগামী হয়েছে ব্যাপকহারে।’
[ ম্যান মার্কসিজম এন্ড ইসলাম-আলী  শারিয়াতী]

এখন লেলিন বলছেন শ্রমিক শ্রেণি বাইডেফিনেশন পেটি-বুর্জোয়া। তাইলে এরে দিয়া ফ্যাসিবাদ ঠেকানো তো দূরের কথা উল্টাটাই হয়। এরা জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে যে তাড়না থেকে ঝাপিয়ে পড়েন, পরে তার বাসনাই তাকে ফ্যাসিবাদে শরিক করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরর্বতী সময়ে রক্ষী বাহিনী সাংবিধানীক জুলুমবাজি শুরু করলে নগদ সুবিধার লোভে অনেক মানুষ এতে শরিক হয়েছিল।

আমারা দেখলাম মার্কসবাদ এই প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারেনি। আমাদের এখানেও ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে আলোচনা খুব বেশি আর আগায়নি। এখানকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। মুজিবের হাতে মাওবাদিদের নিধন শুরু হয়েছিল এটা বিএনপিও কনটিনিও করেছে, ক্রসফায়ার করে কমিউনিস্ট খতম করেছে। আর অন্য বামগুলা কম বেশি সরকারি বামে পরিণত হয়েছে। যারা বাইরে আছে তারা মুখে বলে দুনিয়ার মজদুর কিন্তু চর্চা করে এলিট সংস্কৃতি। তাদের সাহিত্য থেকে শুরু করে জীবন যাপনে গণবিচ্ছিন্নতার খুপড়ি কালের অভিশাপের মতো আঁটা।  জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম তা গণতন্ত্রের নামে বা সমাজতন্ত্রের নামে যে ভাবেই চালু হোক না কেন তার ফ্যাসিবাদি একটা রোল কয়েক দিনের মধ্যেই চাড়া দিয়ে ওঠে। এটা পৃথিবীর নানা দেশের ইতিহাসের দিকে বা শাসনতান্ত্রিক খামতির দিকে তাকালে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারব। এর সাথে সাম্রাজ্যবাদ, গণতন্ত্র,  ওয়ার অন টেরর ও কর্পোরেট জাতীয়তাবাদের মিশেলের কারণে ফ্যাসিবাদের তর্কটা ক্লাসিকাল বা কেসেলে ধারার মধ্যে রেখে দিলে এখন আর কিছুই বোঝা যাবে না। মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাসনা ও সিভিল সমাজের বিকৃত খায়েসের কারণে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদই সাংস্কৃতিক মূলধারা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। মিডিয়া ও সংস্কৃতি নিয়ে আগের আলোচনা যারা খেয়াল করেছেন তারা বিষয়টি এতো দিনে পরিস্কারভাবে ধরে ফেলেছেন বলেই তা আর লিখছি না। এবার আমরা সংক্ষেপে ফ্যাসিবাদের গোড়ার আলোচনার দিকে ফিরব।

ফ্যাসিবাদের আলোচনা কতগুলো ফ্যাশন্যাবল স্টুপিডিটির জন্ম দিয়েছে। এই স্টুপিডিটির আবার দুইটা দিক আছে। এক. তাত্বিক উৎস নিয়া বিভ্রান্তি(মনে করা হয় মহান জার্মান দার্শনিক ফ্রেডারিক নিৎসে এইটার জনক) দুই. ঐতিহাসিক বিকাশধারা হিসেবে এবং আদর্শগত দিক থেকেও ইতালি এবং জার্মানিকে সব সবময় নজির আকারে পাঠ করা হয়।

ফ্যাসিবাদের আসল আদল খুঁজতে হবে মানুষের আচরণগত ও নিজের সম্পর্কে নিজের ধারণার মধ্যে। বা আমরা অন্যের সাথে কি ভাবে সম্পর্ক করি তার ধারণা ও ধরণের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের হদিস করতে হবে। পরে এর সাথে নানা কিছুর যোগ আমরা খতিয়ে দেখতে পারব। সেটা প্রাসঙ্গিকও বটে।

পশ্চিমে রেনেসা বিপ্লবের কালে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের পরম বিকাশের কালে ফ্যাসিবাদের সম্ভাবনা প্রথম যার হাতে বুনিয়াদি ভিত্তি লাভ করে তার নাম, ডেভিড হিউম। তার ১৭৩৯ সালে প্রকাশিত ‘মানবের প্রকৃতি’ বইটির উপ শিরোনাম ছিল নৈতিক বিষয়ে যুক্তির পরীক্ষামূলক পদ্ধতির সূচনার চেষ্টা। হিউম কে মনে করা হয় বুদ্ধিবাদি চিন্তক। কিন্তু তার বুদ্ধিবাদ এরিস্টটলীয় নয়। তিনি বেকন পন্থি। তিনি বিজ্ঞানকে ধর্মতত্ত্বের মতো ভ্রমাত্মক মনে করতেন। দেকার্ত যে যুক্তির জগৎ হাজির করেছেন তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দর্শনের নতুন দরজা খুলে দেন হিউম। তিনি যুক্তির জগৎকে হোলসেল মেনে নেননি। তিনি মনে করেন, আমাদের কর্মের নিয়ামক যুক্তি নয় আবেগ এবং আবেগের অনুবর্তী হওয়াই যুক্তির একমাত্র কাজ। তার বইয়ের শুরুতেই তিনি আবেগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি ‘প্যাশন’ শব্দটিও ব্যবহার করেছেন। তিনি আবেগ অর্থেই এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন।  হিউম রাষ্ট্র ধারণার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে প্রায় সুপার পাওয়ার টাইপের কোনো শক্তি এবং সব রকম কর্তৃত্ব কায়েমের হাতিয়ার মনে করতেন। সেই দিক থেকে তার চিন্তার মধ্যে ফ্যাসিবাদের উপাদান খুঁজে পেয়েছেন পশ্চিমা দর্শনের ইতিহাসবিদরা। কিন্তু তার চিন্তার গুরুত্ব এতই যে কান্ট বলেছেন, হিউম তাকে র্নিবিচারবাদি তন্দ্রা থেকে জাগিয়ে দিয়েছেন।

হিউমের মধ্যে যে উম্মদগ্রস্ততা ছিল তা পরবর্তী সময়ে ফিরে এসেছে। হিউমের দর্শনের সরাসরি প্রতিক্রিয়া হিসেবে হাজির হন কান্ট। তিনি বিশুদ্ধ যুক্তি খোঁজ করলেন। কান্টের অনুসারী বিখ্যাত ফিশতে দর্শন থেকে রাজনীতিতে এসে শুরু করলেন ‘জাতীয় সমাজতন্ত্র’। এই বাদ-বিবাদের মূলে যে জিনিসটি নিয়ে এতো জল ঘোলা হলো তার নাম হলো যুক্তি। যুক্তি দিয়ে পরম সত্যে পৌঁছানোর দার্শনিক এক দুর্দান্ত লড়াই চলেছে পুরো সময়টা জুড়ে। পশ্চিমা দার্শনিকরা মনে করেন এই বাদ-বিবাদে যুক্তি যতই পিছে হটেছে ততই ফ্যাসিবাদের সম্ভাবনা বেড়েছে দার্শনিক ভাবে। এই দার্শনিক তর্কের মধ্যে যুক্তি বিরোধী শিবির যখন মুক্তি নয় ক্ষমতার প্রশ্নে নিজেদের চিন্তার অভিমুখকে তাতিয়ে তুলল তখনই ফ্যাসিবাদের বিকাশ সম্ভব হয়ে উঠল। এমনটাই মনে করেন পশ্চিমা দর্শনের ইতিহাসবিদরা। আধিপত্য করার বাসনা থেকে জড়িত হয়ে পড়েন রাজনীতির সঙ্গে। এই তালিকাতে আছেন, ফিশতে, কার্লাইল, মাৎসিনি, নিৎসে। এদের মধ্যে নিৎসে হলেন সবচেয়ে শক্তিশালী দার্শনিক। তার মতে মানবতা হলো একটি পরীক্ষামূলক বস্তু। তার প্রস্তাব হলো, পর্যাপ্ত মহৎ শক্তি অর্জন করা। ঢালাওভাবে যে ভাবে নিৎসে কে ফ্যাসিবাদের জনক মনে করা হয় তা ঠিক না। তিনি দার্শনিক হিসেবে অতিগুরুত্বপূর্ণ জেনিওলজি ধারণার পয়দা করেছেন। ইতিহাস ও ভবিষৎ কে নির্মাণের পদ্ধতিগত চিন্তার জন্য তিনি আজও যথেষ্ট গুরুত্ব দাবি করেন। অনেকে মনে করেন তিনি যেহেতু ইচ্ছা, অনুভূতি এবং সুখের চেয়ে ক্ষমতার আলোচনাকে গুরুত্ব দিয়েছেন তাই তিনি ফ্যাসিবাদের প্রস্তাব করেছেন। এতো সরল হিসাবে দেখলে আমারা কিছুই ধরতে পারব না। আমি সাধারণ একটা লাইনআপ দেখালাম। এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার দরকার আছে।

৯০ এর দশকের পরে ফ্যাসিবাদের আলোচনায় ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গিগত পরির্বতন এসেছে। এখন ফ্যাসিবাদ কে শুধুমাত্র আর ইডিওলজির মামলা আকারে দেখা হয় না। এখন বরং মাস-মুভমেন্ট ও এর সাথে আদর্শের সম্পর্কের মধ্যে ফ্যাসিজমের আলোচনা করা হয়। এই বিষয়ে গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা শুরু করেছেন ডেভি রেনটন। আদর্শ এবং মাসমুভমেন্ট কি ভাবে ফাংশন করে সেই দিক থেকে ফ্যাসিজমকে বুঝার প্রস্তাব করেছেন রেনটন। তিনি মনে করেন, Fascism should not be understood primarily as an ideology,  but as a specific form of reactionary mass movement.

সব মুভমেন্টকে বিচার না করেও আপাদত খালি শাহবাগকে বিচার করলেই এখনকার ফ্যাসিবাদের চরিত্র উদাম হবে। ছোট্টো একটা উদাহরণ দেই, রবীন্দ্রনাথের ন্যাশন কি ভাবে পরে মাতৃতান্ত্রিক ফ্যাসিজমের হাতিয়ার হলো তা দেখতে পারা ইন্টারেস্টিং কাজ হতে পারে।
দিপেশ চক্রবর্তী যেমন বলেন, The prosaic and the poetic thus came to share a division of labor in Tagore’s writing…
The golden bangla of nationalist sentiments.  [ Nation  and Imagination]

পরে আমরা দেখলাম বিভিন্ন আন্দোলনে এই সোনার বাংলা মিথ হাজির হলো। দেশকে মা, পবিত্র ভূমি, স্বর্গ হিসেবে উপস্থাপনার যে রেওয়াজ জারি ছিল তার হাত ধরে আমরা শাহবাগে দেখলাম মাতৃতান্ত্রিক ফ্যাসিজমের দূর্বল মহড়া। জাহানারা ইমাম কে দেখলাম জাতির মা হতে। তরুণরা সব রুমি হতে গড়ে তুলল ‘রুমি স্কয়ার্ড’-এই সব ঘটনা আমরা সেকেলে ফ্যাসিবাদের ধারণা দিয়ে ব্যাখা করতে পারব না। এর জন্য বিজ্ঞাপনী স্বদেশ প্রেমের সাথে উপনিবেশী ভোগবাদি সংস্কৃতির যে হেজিমনি বা আধিপত্য গড়ে ওঠেছে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে কেন্দ্র করে তার হদিস করতে হবে। এই রুমিরা ভিষণ রকম রবীন্দ্রপ্রবণ। তাদের অস্তিত্বের মর্মমূলে রবীন্দ্র চেতনা সব সময় জেগেই থাকে। এরা ঘুমায় না!  রবীন্দ্র নেশন তো পরাজিত হয়েছে দিল্লির কাছে। বেঁচে আছে এর কালচারাল আক্রোস। যা বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক উপনিবেশ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। এর সাথে কর্পোরেট দেশ প্রেম, মূলধারা, মিডিয়া, ৭১ ও ভাষা মিলে এটা এখন কালচারাল ফ্যাসিবাদের রুপ নিয়েছে বাংলাদেশে। যেহেতু রাষ্ট্র গঠনের বুনিয়াদি কাজ এই বাঙালি চেতনা করতে পারেনি ফলে এর সম্ভাবনাও দিন দিন দূর্বল হচ্ছে। মিডিয়া ও সিলি-সিভিল সমাজের ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠী এর প্রাণভোমরা হয়ে বিশাল জনগোষ্ঠীর চেতনার বিপরীতে ক্ষমতার রাজনীতিতে মেতে আছে। ফলে এটার সব রকম ফ্যাসিবাদি ন্যাশন থাকা সত্ত্বেও এটা কালচারাল ফ্যাসিবাদের বেশি কিছু হয়ে উঠতে পারছে না।

বিশেষ করে মনে রাখতে হবে ষাটের দশকের পরে পশ্চিমে ফ্যাসিবাদের আলোচনটা একটা পরিণত রুপ নিয়েছে। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থায় মার্কিন আধিপত্য ও ইরোপের সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ ফ্যাসিবাদের সম্ভাবনাকে নষ্ট করেছে। অন্য দিকে দুইটা বিশ্বযুদ্ধের নগদ অভিজ্ঞতা থেকে পশ্চিম আর কোনো শিক্ষা না নিলেও  পশ্চিমা সমাজে ফ্যাসিবাদ নিয়ে আর কোনো মোহ ধরে রাখা যায়নি। ফ্যাসিবাদ যখন বলে মহত্বের আর কোনো বৈশিষ্ট্য নাই, যুদ্ধে সফল হওয়া ছাড়া। এই যুদ্ধে সাম্যবাদি শক্তি ফ্যাসিবাদকে রুখতে পারেনি। মার্কসবাদিরা ভুলে যান যে যুদ্ধের নিজস্ব মনস্তত্ব আছে। ফলে গণতন্ত্রকে আকড়ে ধরে পশ্চিমা সমাজ নতুন বিশ্বব্যাবস্থার প্রজেক্টে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দোসর হয়ে হাজির হলো। কারণ ফ্যাসিবাদের পক্ষে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না। যাই হোক খুব সংক্ষেপে আমরা ফ্যাসিবাদের একটা পরিচিতিমূলক আলাপ সারলাম। এর আলোকে বাংলাদেশের এখনকার সমস্যাকে মোকাবেলা করার শিক্ষাই হবে কাজের কাজ।

download (1)

স্বৈরতন্ত্রের কবলে বাংলাদেশ :

ফ্যাসিবাদের বয়ানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র একাকার হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্র ও জনগোষ্ঠীর ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদ সম্ভব না। বাংলাদেশে যার কোনো ছিটেফোঁটাও নাই। তাই আমাদের অবস্থাকে ফ্যাসিবাদ না বলে শাসতান্ত্রিক বিকার বলাই ভাল। এই বিকার নানা বয়ানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ তৈরির চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু এই চেষ্টার সফল ব্যবহার সম্ভাবনা জিরোপারসেন্ট। কারণ বাঙালি জাতীয়তাবাদ ভাষা, চেতনা ও আদর্শ বলে যা চিনে, বুঝে তা ১৯ শতকের উপনিবেশি কলকাতার বাবু সংস্কৃতিজাত। এর সাথে বাংলাদেশের কোন যোগ নাই। ফলে এই মধ্যবিত্তপনা দিয়া ফ্যাসিবাদ হবে না। এর দৌড় কালচারাল এলিটিজম পর্যন্তই। ফাঁকে পুলিশ ও ভারতের এবং মার্কিন রাজনীতির ছকে থেকে ক্ষমতার লিজিংটা ধরে রাখা। এটা সামন্য গণউত্থানেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।

এখন মনে হচ্ছে, জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম নিয়ে মিথিক্যাল গৌরব গাঁথা এই ফ্যাসিবাদকে নিয়মতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা জারি রাখতে সাহয্য করে। আজকে জনগণের ইচ্ছার তোয়াক্কা না করে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় টিকে আছে তখন আর ব্যাখ্যা করার দরকার হয় না শাহবাগ কি দরকারী ভূমিকা পালন করেছে। সমাজের মৌলিক দুইটা চেতনার মধ্যে বিভাজন তৈরির করতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফাঁসির দড়ি আকারে হাজির করেছে তথাকথিত প্রজন্মের কাছে। এদের কাছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গঠন, প্রশাসন, আইন ও অন্যান্য ব্যবস্থার ভয়াবহ গাফিলতি কোনো ইস্যু হয় নাই। এই যে বিভাজনের রাজনীতি এর আবার স্পষ্ট শ্রেণি ও ধর্মীয় চরিত্র আছে। এর সাথে যোগ আছে মার্কিন ও ভারতের নিজ নিজ স্বর্থবাদি রাজনীতি। ফলে এখন বাংলাদেশের সঙ্কট আর ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। এই দিক থেকে দেখলে আমরা অধিকার হরণের রাজনীতির তাৎপর্য মূল শাসসহ ধরতে পারব। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর আফগানিস্তান নিয়ে যে ভূমিকা বাংলাদেশ নিয়ে এই ভূমিকায় হাজির হতে চায় ভারত। এই রাজনীতি ক্রমশ পরিস্কার হয়ে ওঠছে। জামায়াতকে দিয়ে ইসলামোফোবিক প্রপাগান্ডা তৈরি করে এটা কে জঙ্গি আকারে দাঁড় করিয়ে ধর্মযুদ্ধের নকশার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। এই লেখা যখন লিখছি তখন দুইটা ঘটনা আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। এক. জেএমবির সদস্যদের ফিল্মি কায়দায় দাঁড় করে পুলিশের ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। দুই. সশস্ত্র গোষ্ঠীর তালিকায় তালেবানের পরে শিবির । প্রথম আলো খবর করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন আইএইচএসের টেররিজম এন্ড ইনসারজেন্সি এটাক ইনডেক্স এই জরিপ করেছে। এর পরেও রাজনীতি বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা না। কি ভাবে গণহত্যা হয়ে দেশ ধর্মযুদ্ধের আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্র হয়ে উঠছে তা দিন দিন পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের অনিবার্য যুদ্ধটা ধর্মযুদ্ধ আকারে হাজির হচ্ছে বাংলাদেশে। যে কোনো লেবেলের ফ্যাসিবাদ যুদ্ধ ছাড়া টিকতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা যে যুদ্ধের আউট লাইন দেখছি তা তো আর ইনটারনাল যুদ্ধ থাকছে না। তালেবান-আলকায়দা-জামায়াত-হেফাজত কে একাকার করে ট্রিট করার যে রাজনীতি তা আমাদের কে ফ্যাসিবাদের নিপুণ প্রহারায় ধর্মযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এই ছক বুঝে জামায়াত এখনও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের লাইনে আছে। সরাসরি প্রতিরোধ যুদ্ধে নামেনি। যদিও দেশে একপ্রকার গৃহযুদ্ধের অবস্থা বিরাজ করছে। পরিক্ষামূলক ভাবে কিছু জামায়াত-শিবির এর লোকজনকে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়েছে। যেহেতু সমাজ সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ ও ৭১ এর মিথে বিভক্ত ফলে এই ক্রসফায়ার নিয়া মানবাধিকারের জায়গা থেকেও কোন আপত্তি উঠেনি। ফলে, এই গৃহযুদ্ধে ইসলামকে এনিমি বানানোর ফলে এটা দ্রুতই ধর্মযুদ্ধের রুপ নিবে এতে কোন সন্দেহ নাই। এর সাথে আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিসাব মিল রেখে পাঠ করলে এই দিকটি বুঝতে পারা খুব কঠিন কিছু না।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদি রুপান্তর শুরু হয়েছে জন্মের সময় থেকে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবেই উপনিবেশি উত্তরাধিকার ধরে রেখেছে। এখন আমাদের সংবিধানের ব্রিটিশি কাঠামো অটুট আছে। দলীয় চাকরবাকর মিলে একটা সংবিধান লিখে তা জনগণের ওপর চাপিয়ে দিলো স্বাধীনতার পরে। যার কলিজার মধ্যে ব্রিটিশ ও পাকিস্তনী শাসন কাঠামোর মূল শাস রয়েছে। পরে এই সাংবিধানিক উপনিবেশিকতা জন্ম দিয়েছে স্বৈরতান্ত্রিক গণতন্ত্র। দেশে এখন কায়েম হয়েছে সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদ। এই সংবিধান এখন হয়ে ওঠেছে জবরদস্তিমূলক শাসনের কাগুজে ছল।

সংবিধান নিয়ে ৭২ সালেই আপত্তি জানিয়েছেন মওলানা ভাসানী। আবুল মনসুর আহমেদ সংবিধান প্রশয়ণের প্রতিভা দেখে বিস্মিত হয়ে ছিলেন। তিনি ইত্তেফাকে বড় প্রবন্ধ লিখে হুঁশিয়ার করেছিলেন। তিনি লিখেন, রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের মতাদর্শকে জনগণের মত ও ইচ্ছা বলিয়া চালাইয়াছেন বহুবার বহু দেশে। সব সময়ই যে তা খারাপ হইছে তাও নয়। আবার সব সময়ে তা ভালও হয় নাই। পাকিস্তানের সংবিধানের বেলায় ‘ইসলাম’ ও বাংলাদেশের সংবিধানের বেলায় ‘সমাজতন্ত্র’ জাতীয়তা ও ধর্ম-নিরপেক্ষতাও তেমনি অনাবশ্যক ভাবে উল্লেখিত হইয়া আমাদের অনিষ্ট করিয়াছে। আমাদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বহু জটিলতার সৃষ্টি করিয়াছে। [ সংবিধানের বিধানিক ত্রুটি,‘ আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ পৃষ্ঠা ৪৭৯]

ভাষানীর পত্রিকা ‘হক কথা’ এই সাংবিধানিক বিকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে লড়াই চালিয়েছে। এবং অবাক করা ব্যাপার হলো বাংলাদেশে প্রত্যেক সরকারই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার মধ্যেই স্বৈরতন্ত্র কায়েম করার সুযোগ নিয়েছে। সংবিধানকে নিজের ইচ্ছা মতো ব্যবহার করেই স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা হয়। এখন সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদের কবলে নতুন যে স্বৈরতন্ত্র দেখছি তার হিসেবে যেহেতু আন্তর্জাতিক স্বার্থ সরা-সরি জড়িত ফলে এর হিসাবটাও আর আগের মতো হবে না। এটা ইসলামকে এনিমি করার মধ্য দিয়ে ধর্মযুদ্ধের মার্কিন ছঁকে খেলছে। এর পরিণতি যে ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

স্বৈরতন্ত্র তো সাংবিধানিকভাবে সবসময়ই ছিল। লিবারাল বুদ্ধিজীবীরা সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়া অনেক দিন থেকে কথা বলে আসছেন। তাদের সাবধান বাণী ব্যার্থ করে দিয়ে এই সরকারের আমলে এসে স্বৈরতন্ত্রের উল্লম্ফণ ঘটেছে বলা যায়। বিরোধীতার কোনো কিছুই সরকারের আর ধাতে সইছে না। সংবিধানকে এমন এক ত্যানায় পরিণত করেছে এটা দিয়া আর ময়লা-অবর্জনাও পরিস্কার করার জো নাই। রাজনীতিতে বিরোধীতার শর্ত হাজির থাকবেই। এটা জানা কথা। কিন্তু হাসিনা সরকার কোনো বিরোধীতাই মেনে নিবেন না। তার শাসন কাল কে তিনি কাগুজে সংবিধান দিয়ে ইচ্ছামত বাড়িয়ে নিবেন। বিরুদ্ধ মত কে গুলি করে দমন করবেন! কোনো প্রতিবন্ধকতাই তিনি আমলে নিবেন না হিসাবই আর তিনি ধর্তব্য মনে করছেন না। এই অবস্থাকে বাংলায় বলে, ‘ধরা কে শরা জ্ঞান করা’।

আর এই কাজে তিনি যা করছেন ইংরেজিতে তাকে বলে, ‘পলিটিক্যাল ইউজ অব দা পাস্ট’। ৭১ এর মতো একটা ইভেন্টকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছেন। ফলে স্বাধীনতার ঐতিহাসিকতা এখন কৌতুকে পরিণত হয়েছে।

এই অবস্থায় কোনো নাগরিকেরই অধিকার রক্ষা হতে পারে না। তা হচ্ছেও না। চেতনার নামে মধ্যবিত্ত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসই উস্কে দিয়েছেন। চেতনার রাজনীতির উল্টা পিঠে আবির্ভাব ঘটেছে হেফাজতে ইসলামের। সেই সব ঘটনা কমবেশি সবারই জানা। কিন্তু সরকার হেফাজতকে দমনের যে নজীরবিহীন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী লাইন নিয়েছে তা খোদ লীগের নেতাদেরই বিপদে ফেলে দিয়েছে। এমপিরা নিজ এলাকায় নিগৃহীত হচ্ছেন। ভোটের হিসেবে নেমে এসেছে কালবৈশাখী।

দুর্বল হোক সবল হোক যে কোনো ফ্যাসিবাদের জন্য যুদ্ধ হলো অনিবার্য। যুদ্ধ ছাড়া ফ্যাসিবাদ টিকতে পারে না। ফলে দেশে তো চোরা গৃহযুদ্ধ চলছে এক প্রকারে। এর সাথে দিন দিন যে ভাবে জামায়াতকে ও হেফাজতের মতো নাগরিক আন্দোলনকে একাকার করে শত্রুর কাতারে ঠেলে দেয়া হয়েছে তার পরিণতিতে ধর্মযুদ্ধের মেঘ পাকিয়ে উঠছে। এর সাথে মার্কিন ইন্টারভেনশন ও ভারতের স্বার্থও এসে জুটেছে একতালে। এই অবস্থায় নিদেন পক্ষে দেশে ভয়ের সংস্কৃতি চালু না করলে ফ্যাসিবাদের রাজত্ব টিকিয়ে রাখা মুশকিল। লেডি হিটলার তাই সঠিক সময়ে সঠিক কাজটিই করেছেন বলতে হবে। আর ঠিক এই ফাঁকেই হাসিনা গং বাজাবেন জঙ্গিবাদের পুরানা কেসেট। অনন্ত যুদ্ধের প্রোজেক্টে হাসিনা নিজেকে আইরন লেডি প্রমাণ করার জন্য এই সকল রেফারেন্স পয়েন্ট ক্রিয়েট করছেন। ইউনূস এবং মার্কিন আপত্তির প্রতি সরকারের থোরাই কেয়ার ভাবের রাজনৈতিক পাঠ এখানেই নিহিত। এর প্রমাণ হিসেবে আপনারা মনে করে দেখতে পারেন, হাসিনা যখন নিজ দেশে নাগরিকদের গুলি করে মারছেন। তখন হোয়াইট হাউস জঙ্গি দমনে হাসিনার প্রসংশা করে তা আবার হল্লা করে প্রচার করেছে। এই ধারাবাহিকতায় রাজনীতির মাঠে হাসিনা সরকার টিকে যাবে কি না তা আগাম বলার কিছু নাই।

রাজনীতির সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়ানোর রাস্তা যেহেতু সরকার খোলা রাখে নাই। কোনো দাবির প্রতিই তার সায় নাই। সন্ত্রাসের বয়ান উৎপাটনে কাজে লাগনো হচ্ছে, মিডিয়া, চেতনা, ধর্ম, ডিজিটাল বয়ান, বিলবোর্ড ইত্যাদি নানা কৌশল।

জনগণের অধিকার হরণ করে কোনো সরকার টিকে থাকতে পারে না। এই অধিকার হরণের রাজনীতির পরেও যদি জনগণের হুস না হয় তাইলে ফ্যাসিবাদের কবলে বাংলাদেশের রাজনীতি আটকা পড়বে। অদ্ভুত এক স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে কতিপয় লোকের লোটের রাজ্য।

এই অবস্থার জন্য আমরা নিজেরা কি প্রস্তুত হয়েই বসে আছি? আমার কেন এখনও নিজেদের মৌলিক তর্কগুলা হাজির করতে পারছি না। কেন আজও সব কিছু ধোয়াসা। পার্থ চট্রোপাধ্যায় যেমন বলেন, ভারতবর্ষের ইতিহাসে, তার নানা পরির্বতন, বিরোধ, নতুন ধর্মের প্রবর্তন, শাস্ত্রীয় ধর্ম আর লোকধর্মের নানা সংমিশ্রণের মধ্যে উচ্চ-নিচের পারস্পরিক ক্ষমতার বিরোধ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই ইতিহাস আমরা অনুসন্ধান করে দেখিনি। ফলে ভারতীয় সমাজের মৌলিক দ্বন্দ্বের চরিত্র এখনও আমাদের কাছে অস্পষ্ট[জাত-জাতি-জাতিয়তা: ইতিহাসের উত্তরধিকার]

কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাপারটা এতো অস্পষ্ট না। গণতন্ত্র ঐতিহাসিকভাবে এখানে গণবিরোধী ধারা হিসেবে নিজেকে হাজির করেছে ফটকা কথা-বার্তা দিয়ে। বামরা হয়েছে হাস্যকর জীব। ৭১ চেতনা হয়েছে গণহত্যাকারী। শহুরে বা মধ্যবিত্ত সমাজ আধুনিকতার এমন এক আফিমের ঘোরে মত্ত যে এর দ্বারা কোনো রাজনীতির সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমন পরিসস্থিতিতে আমাদের ইতিহাসের নতুন ইভেন্টের দরকার পড়বে। আর ইসলামের সাথে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে আন্দোলনের যে অবহেলিত ইতিহাস এই জনগোষ্ঠী আজও লালন করে তার প্রত্যাবর্তন দেখতে পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তিতুমীর দুদ্দ শাহ ঘুমায় নাই এই শ্লোগান শুনা গেলে অবাক হবার কিছু নাই। ফলে ফ্যাসিবাদি কালচারাল মধ্যবিত্ত শক্তির বিরুদ্ধে যে শক্তি রাজনৈতিক হিম্মত নিয়ে আগাবে। যে নৈতিক এজেন্সি আকারে হাজির হবে। যে ইনসাফ প্রশ্নে আপোষহীন হবে আগামী বাংলাদেশর ইতিহাস হবে তাদের বিচরণ ক্ষেত্র। সে ইসলাম বা বৌদ্ধ যে চেতনারই হোক তা ধর্তব্য নয়। অন্যদিকে ইসলামের যে গ্লোবাল লড়াই জারি আছে তার আছড়ও বাংলাদেশে পড়বে। পড়াটাই স্বাভাবিক। ফলে আমাদের জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও নৈতিক ঐক্য  ছাড়া আমরা আগামী দিনের লড়াইয়ে টিকতে পারবে না। এই দিকগুলো খেয়ালে রেখে আমাদের আগামী দিনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করাই এখন জরুরি কাজ। মজলুমের ঐক্যবদ্ধ লড়াই জালেমের জমানার অবসান ঘটাতে পারে। অন্যায় বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটাই ন্যায় যুদ্ধ। পাল্টা বলপ্রয়োগের বৈধতাও এভাবে তৈয়ার হয়। এর মধ্য দিয়ে সমাজে কায়েম হয় নতুন ন্যায়। এটা ডিনার পার্টি বা প্রবন্ধ লেখার মতো কাজ না। ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য পাল্টা ক্ষমতা তৈরি করার মামলা। এর জন্য প্রথম প্রয়োজন মতাদর্শ ও সাংস্কৃতিক লড়াইকে সংগঠিত করা। ফ্যাসিবাদের সমস্ত দুর্গ ধসিয়ে দেয়া।  আর এই লড়াইয়ে ইসলাম অবশ্যই মজলুমের পক্ষে।

‘জালেম ও শোষক যে কোনো ধর্মের, যে কোনো বর্ণের, যে কোনো দেশের বা সমাজের হউক না কেন তাহারা আল্লাহর শত্রু, সমাজের দুশমন। ইহা সর্বদাই শোষিত ভাই-বোনেরা মনে রাখিবেন। অন্তঃকরণ হইতে সর্বপ্রকার ভয়ভীতি দূর করিয়া জালেম ও শোষকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে জেহাদ করিতে না পারিলে শোষিত মজলুম মানুষের দুঃখ দুর্দশা কিছুতেই দূর হইবে না এবং শোষণমুক্ত সমাজ গঠনও সম্ভব হইবে না’ [মওলানা ভাসানী ‘হক কথা’ প্রথম বর্ষ ২৬ তম সংখ্যা, ১৯৭২ সাল ২৫ আগস্ট]

 images (2)

আমাদের জনগণের লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে হাজির করতে হবে নতুন ন্যায়। ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে আমরা নিজেদের রাষ্ট্র দাঁড় করাতে না পারলে খুনের রাজত্বে লাশ পাশে নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। লাশ…আমার আপনার আপনজনের লাশ। নিজেও লাশ হয়ে যেতে পারেন যে কোনো সময়। আপনার লাশ হওয়ার জন্য আদলতই যথেষ্ট। আছে পুলিশ লীগ, দলীয় ক্যাডার। মৃত্যু ফাঁদে আটকে পড়ছে বাংলাদেশ।

এই অবস্থায় নাগরিক অধিকার হরণের যেকোনো রাজনীতিকে সরাসরি প্রতিহত করা ছাড়া মানুষের মানবিক সম্মান রক্ষা হতে পারে না। প্রতিরোধের সংস্কৃতি আমাদের আছে। ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আমাদের প্রতিরোধের পথে ফিরতে হবে। মানবিক মর্যাদা রক্ষার লাড়াই সবচেয়ে পবিত্র লড়াই। অধিকার হরণ করলে মানুষের মান থাকে না। নি:সন্দেহে বাংলাদেশ এখন লড়াইয়ের দ্বারপ্রান্তে অপেক্ষা করছে। মানুষ বেরিয়ে আসবে তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কোনো দলের না কোনো গোষ্ঠীর না বাংলদেশের মানুষের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই। জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই। এই লড়াইয়ে বাংলাদেশই জিতবে কোনো ফ্যাদিবাদি স্বৈরতান্ত্রিক অপশক্তি নয়।

রেজাউল করিম রনি
কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

গরুদের জন্য সহীহ ফটোশপ টিউটোরিয়াল

13

আপনার অপদার্থ দানা নেতাটি মদ্যপান করে গাড়ি চালিয়ে আমেরিকাতে ধরা পড়ে জেল খেটেছে? এখন অন্য দলের জনপ্রিয় নেতাকে সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চান? তাহলে নীচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

১/ প্রথমে তুরষ্কের একটি নাইটক্লাবের ছবি জোগাড় করুন;

TR-5

২/ এবার এবার ফটোশপ ব্যবহার করে ছবিটির হরাইজন্টাল মিরর ইমেজ তৈরী করুন;

TR-6

৩/ এরপর যে নেতার চরিত্র হনন করে আপনার মদারু নেতার সমপর্যায়ে আনতে চান সেই নেতার তৃণমূল সমাবেশ থেকে একটি ছবি যোগাড় করুন।

TZ

৪/ এখন নাইট ক্লাবের ছবিটিকে সুবিধামত ক্রপ করুন

TR-2

৫/ নাইট ক্লাবের ছবিতে থাকা কোন দাঁড়ি ওয়ালা লোককে সনাক্ত করুন। এটা খুবই জরুরী স্টেপ, কারণ এর উপর নির্ভর করছে একই ঢিলে ইসলাম ধর্ম এবং জনপ্রিয় নেতাকে হেয় করা। প্রয়োজনে নির্মলেন্দু গুণ বা রবীন্দ্রনাথের ছবি ব্যবহার করুন কিন্তু দাড়ী থাকতে হবে টুপিসহ যোগাড় করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা।

৬/ এইবার দাড়িওয়ালা লোকটির মুখ কেটে ফটোশপের মাধ্যমে ঐ জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতার মুখ বসান।

TR-4

৭/ এবার এডিট করা ছবিটিকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিন।

TR-7

৮/ আপনার ক্রোমোজমে কুকুরের জিন থাকলে শিরোনাম দিন, “সহীহ হেফাজতি, জামায়াতি কায়দায় জীবন উপভোগ করছেন …..” আর যদি ভারতীয় গরুর জিন থাকে তাহলে শিরোনাম দিন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশঃ লন্ডনের নাইট ক্লাবে …..

গরু হাম্বা হাম্বা করে, ফেসবুকের আনন্দ বাড়ে!

জিয়া কবরে ফুল চান নাকি অন্য কিছু?

Zia কারাগার থেকে বের হয়ে বিএনপি নেতারা প্রথমে ছুটে যান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে। ইদানীংকালে টেলিভিশনে বিএনপি নেতাদের জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিতে বেশি বেশি দেখা যাচ্ছে। এর অবশ্য একটা ব্যাখ্যা হলো- আওয়ামী লীগ দ্বারা বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের হার নজিরবিহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার সুবাদে জামিনে মুক্তির সংখ্যাও বেড়েছে। আর সেকারণে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। ঘটনার সংখ্যা বাড়লেও টেলিভিশনের ক্যামেরায় দৃশ্যটি কমবেশি একই রকম দেখা যায়। যিনি বা যারা মুক্তি পেয়েছেন তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা দলবেধে মরহুম জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতে যান। ফুল দেন। তারপর ক্যামেরার সামনে কথা বলেন। সমসাময়িক কোন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেন।

প্রশ্ন হলো ৭৫ উত্তরকালে রাজনীতি যখন টালমাটাল, দেশের সেই ক্রান্তিলগ্নে হালধারণকারী একদার রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান কবর থেকে কিভাবে জীবিত নেতাদের সহায়তা করবেন? কারণ জিয়াউর রহমানের আদর্শকে তারা সঠিকভাবে ধারণ করেন কিনা সেটা যথেষ্ট অস্পষ্ট। তাদের চাল চলন, কথা বার্তা, নেতৃত্ব কোন কিছুতেই জিয়াউর রহমানের কাজের ধারাবাহিকতা তেমনভাবে সুস্পষ্ট নয়। দলীয়ভাবে বিএনপি আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করা ছাড়া এখন নতুন কিছু উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে।

জিয়াউর রহমানের যুগান্তকরী অসমাপ্ত পদক্ষেপ খাল কাটা কর্মসূচি কিংবা উন্নয়ন চিন্তার ধারাবাহিকতা জিয়া উত্তর বিএনপিতে তেমনভাবে দেখা যায় না। বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব জিয়ার রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলো নিয়ে লেখাপড়াটা পর্যন্ত করেন না বলেই প্রতীয়মান হয়। জিয়াকে নিয়ে বরং লেখাপড়াটা বেশি করে আওয়ামী লীগ। যেকারণে বিএনপিকে কিভাবে মোকাবেলা করা হবে সেটা তারা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে ঠিক করে নিতে পারছে। এছাড়াও অন্তত আওয়ামী লীগের একজন জাদরেল নেতা জিয়ার দূরদর্শী খাল কাটা কর্মসূচি নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করেছে বলে শোনা যায়। নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন যে, সেটা জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে নয় বরং নিজের আখের গোছাতেই সে জিয়াউর রহমানের খাল কাটা কর্মসূচি বেছে নিয়েছিল।

উল্টোদিকে, আজকে নদী তীরবর্তী শহরগুলোতে বসবাসকারী আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে নদী ভরাট করে দখল করছে সেটা নিয়ে বিএনপির কোন গবেষণাধর্মী রাজনৈতিক পদক্ষেপ দেখা যায় না। দেশের নদীকে সচল করতে এবং মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে জিয়াউর রহমান যে খালকাটা কর্মসূচি চালু করেছিলেন তার ধারাবাহিকতায় বিএনপি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং পরবর্তীকালে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ পেয়েছিল। তারা সেই সুযোগ কাজে লাগায়নি।

নদী বাংলাদেশের প্রাণ। বিশ্বের কোন দেশে নদীকে মরতে দেয়া হয় না। ইংল্যান্ডে এখনো শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান খালগুলোকে সচল করার জন্য কাজ চলে। আর আমাদের ঢাকা মহানগরীর খালগুলোকে দখল আর ভরাট করে আমরা একটি নোংরা আবর্জনাময় শহর তৈরি করছি। যারা জিয়ার কবরে ফুল দিতে যান তারা এর কি জবাব দেবেন? ক্ষমতায় তো তারাও ছিলেন। ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে না পারা এবং বর্ষার পানি ধরে রাখার জন্য তারা নদ-নদী খাল বিলকে কেন উপযুক্ত করে গড়ে তোলেননি সেই জবাব কি দেবেন? ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড মোকাবেলায় খালগুলো হতে পারত একটি বড় সহায়ক শক্তি। দেশের মানুষের চলাচল এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নদীপথ যে ভূমিকা নিতে পারত সে ব্যাপারে জিয়ার কবরে ফুল দেয়া মানুষগুলো কি কিছু করেছেন, যেটা জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন?

বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান কখনো শেখ মুজিবকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অস্বীকার করেননি। শেখ মুজিবও জিয়াকে পছন্দ করতেন। সেক্টর কমান্ডার জলিলকে বীর উত্তম খেতাব থেকে বঞ্চিত করলেও জিয়াকে করেননি। আর জিয়া শেখ মুজিবের পক্ষে সবসময়ই লড়াই করেছেন। সেটা ১৯৭১ সালে। এমনকি ১৯৭৬ সালেও। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্বৃত্তি দিয়েই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুরের ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের ধারাবাহিকতায় দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করেছিলেন। বলা যায় অকাল মৃত্যুর শিকার শেখ মুজিবুরে যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন জিয়া। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত রাজনীতিকদের সীমাহীন দুর্নীতি ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় শেখ মুজিব রাজনীতিকদের ব্যাপারে খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি তৎকালীন নেতাদের চোর বলতেন। শেখ মুজিব রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিতে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ায় খুবই রুষ্ট ছিলেন, সেটা তার সেসময়কার বক্তৃতাগুলো শুনলেই জানা যায়। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব নেয়ার পর তার সততা ও নেতৃত্ব দিয়ে একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠনে ব্রতী হওয়ার পথে সকলকে তারই মতো সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি উদাহরণ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তিনি রাজনীতিতে সেই ধারা প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন যেখানে নেতা শুধুমাত্র অন্যকে সৎ হতে বলবে না বরং নিজেও সকল সময় সততার চর্চা করবে। তিনি আশা করেছিলেন শেখ মুজিব যাদের ‍উপর রুষ্ট ছিলেন সেইসব দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ সোজা পথে আসবে। যেকারণে তিনি শেখ মুজিবের ডাকে সাড়া না দেয়া দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দি পলিটিশিয়ানস’; স্বাধীনতার পরপরই সীমাহীন দুর্নীতি চর্চাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া রাজনীতিকদের শুদ্ধ পথে আনার আগেই তাকে চলে যেতে হয়েছে।

ব্যক্তিগত সততা ও নিষ্ঠা এবং দেশের প্রতি চূড়ান্ত আনুগত্য দেখাতে পারলেও দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের দুর্নীতিমুক্ত করতে পারেননি। বরং তিনি তার পূর্বসূরি নেতা শেখ মুজিবের মতোই আততায়ীদের হাতে নিহত হলেন। শেখ মুজিব যে কম্বল চোরদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছিলেন সেই কম্বল চোরদের জন্য রাজনীতিকে ডিফিকাল্ট করার আগেই এবং সর্বোপরি একদল দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ তৈরির মাধ্যমে একটি শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ধারা তৈরির আগেই তাকে মেরে দেয় সেই সব দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা। তার গড়া বিএনপিতে সেই নেতৃত্ব আর পাওয়া যায়নি যিনি ও যারা তাদের সর্বোচ্চ দেশপ্রেম দিয়ে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের বাধ্য করবেন সৎ ও সুন্দরের পথে আসার জন্য।

সেকারণেই প্রশ্ন হলো- কবরবাসী জিয়া কি ফুল চান নাকি অন্য কিছু? শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কবরে ফুল দেয়াটা একটা গৌণ কাজমাত্র। ফুল পেয়ে মৃত মানুষ খুশি হন কিনা আজতক জানা যায়নি। কখনো জানা যাবেও না। তবে কমনসেন্স থেকে বোঝা যায় যে, কবরে ফুলের চেয়ে মৃত আত্মা বেশি তৃপ্তি পেতে পারেন যদি দেখেন যে, তার আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে।

মোঘল সাম্রাজ্যে স্বাগতম

By Jahid Islam

আমার প্রায়ই মনে হয় বাংলাদেশে আমরা মোঘল আমলে বাস করি, অন্তত চিন্তা চেতনায়। এখন খালি সম্রাটের বদলে সম্রাজ্ঞীরা দেশ চালায়। মোঘল বাদশাহরা যেমন একজনের পর একজন ক্ষমতায় আসতেন আমাদের দেশেও এই মত সরকারের বদল হয়। ব্যাপারটা বিস্তারিত ব্যাখার দাবি রাখে। যেমন- মোঘল সম্রাটরা ছিলেন শিল্প সাহিত্যের সমঝদার। তাদের রাজ দরবার আলোকিত করে থাকতেন কবি সাহিত্যিকেরা । সেসব শিল্পী,কবি-সাহিত্যিকদের নাচ, গান, কবিতা, আবৃত্তিতে মুগ্ধ হয়ে মোঘল বাদশাহরা নজরানা দিতেন, উপযুক্ত পদে বসাতেন। এদের মধ্যে আমরা সম্রাট আকবরের নবরত্নের কথা বিশেষভাবে জানি।
আমি অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করলাম আমাদের রাষ্ট্র প্রধানরাও তো এ পথে হেঁটেছেন, হাঁটছেন।

hdr-mughal-art-415

যেমন ধরুন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ছিলেন কবিতার বিশেষ সমঝদার। তিনি নিজে কাব্য প্রেমিক ছিলেন,সাধ্যমত লিখতেও চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন অভিনয়ের সমঝদার। আমি দেখিনি তবে শুনেছি, তিনি নাকি ‘নতুন কুঁড়ি’ তে শিল্পী ঈশিতার অভিনয় দেখে কেঁদেছিলেন। একবার শুনেছিলাম তিনি নাকি নিজেও ভাল অভিনেতা। যখন সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তিনি নাকি এমন অভিনয় করতেন যেন কিছুই জানেন না। এ কারণেই তাকে কেউ কখনো নিজের জন্য ঝুঁকি মনে করেনি। অথচ তিনি কি কৌশলে এক সময় ক্ষমতা দখল করে নিলেন। ঠিক যেন কোন মোঘল সম্রাটের শত্রু রাজাকে ধোঁকা দিয়ে রাজ্য জয়ের মত। এবারের সাম্প্রতিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে তার ভূমিকা দেখেও অনেক সমঝদার দর্শক তার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। তাকে অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।

আমাদের প্রধানমন্ত্রীও শিল্প-সাহিত্য, সঙ্গীতের সমঝদারিতায় যেন একজন যোগ্য মোঘল উত্তরসুরি । তিনি অনেক শিল্পী,কবি-সাহিত্যিকদের পারফরম্যন্সে মুগ্ধ হয়ে ইতিমধ্যে তাদেরকে উপযুক্ত নজরানা দিয়েছেন। যেমন- আসাদুজ্জামান নূর, তারানা হালিম, গায়িকা মমতাজ প্রমুখ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়ভাজন লেখকও আছেন কয়েকজন। যেমন-শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন,আবদুল গাফফার চৌধুরী। এরা ত আসলে হাসিনার রাজসভার এক এক জন আবুল ফজল। অনেক মোঘল সম্রাট নিজেরাই ছিলেন বড় লেখক, যেমন -আওরঙ্গজেব। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও তো নিজেই অনেকগুলো বই লিখেছেন। তার সুললিত কণ্ঠে গাওয়া ‘ধনধান্যে পুস্পে ভরা’  গানটি দর্শক শ্রোতাকে আবেগ আপ্লুত করেছে।

মোঘল সম্রাটরা নিয়মিত শিকারে অংশ গ্রহণ করতেন। তীরন্দাজি, ঘোড়দৌড় এর মত ক্রীড়া কৌতুকে তাদের ছিল অনেক আগ্রহ। আমাদের এরশাদও তার রাজত্বের শুরু থেকেই এসব বিষয়ে মোঘল সম্রাটদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। একবার বিপিএল এ এক সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সগৌরবে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি নাকি এ দেশে ক্রিকেটের প্রচলন করেছেন। গলফ খেলার উদ্দেশ্যে তিনি ত নির্বাচনের ব্যস্ত কর্মসূচীতে থেকেও সময় বের করে নিয়েছেন আমাদের চোখের সামনেই।আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও প্রায়ই ক্রিকেট খেলা দেখতে মাঠে আসেন। সম্প্রতি ফেসবুকে তিনি এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাডমিন্টন খেলার ছবি ত আসলে মোঘল সাম্রাজ্যের সোনালি অতীতের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

অনেকে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বহুগামিতার সমালোচনা করেন। অথচ এটাও মুঘল আমলেরই ঐতিহ্য। মুঘল আমলে রাজা বাদশাহদের নিজেদেরই হেরেমখানা ছিল।

কিছুদিন আগে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুকে একটা ছবি দেখেছিলাম হাতে বিয়ারের বোতল সহ। অনেকে এর সমালোচনা করেছেন। আমার মনে হয়েছে যারা এ সমালোচনা করেছেন তারা ইতিহাস সচেতন না। কেননা, মোঘল শাহজাদারাও একটু আধটু মদ্য পান করেতেন। রাজা শাহজাদারা একটু আধটু সেবন করলে এটা তেমন দোষের কিছু না।

মোঘল সুবাদার শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও ত সেটা মাথায় রেখেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি দশ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াতে চান। মোঘলদের খাবারের ‘মোঘলাই রুচির’ কথা খুব বিখ্যাত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে বিরিয়ানি রান্নার যে ছবি আপলোড করেছেন সেটা থেকেই তার মোঘলাই রুচির কথা বোঝা যায়। মোঘল সম্রাট হুমায়ুনের ছিল ছবি আকার শখ। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর হল ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার শখ।
ক্লাস এইটে, সম্ভবত কালিদাস রায়ের লেখা (লেখকের নাম ভুল হতে পারে) একটা কবিতা পড়েছিলাম ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ নামে। সেখানে বর্ণনা ছিল একজন সম্রাট হয়েও তিনি কি করে একটি শিশুকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন খ্যাপাটে উদ্ধত হাতির সামনে থেকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে একটি শিশুকে কোলে নিয়ে বক্তৃতা দিলেন এটি ত আসলে সম্রাট বাবুরের সে ঘটনারই পুনরাবৃত্তি।

মোঘল আমলে কেউ যদি কোন উজিরের সাথে এমন কোন আচরণ করত যেটিকে উজির অশোভনীয় মনে করেছে তাহলে শাস্তি হত- জীবনদণ্ড । রেফারেন্স সহ এরকম ঘটনার উল্লেখ করেছেন লেখক হুমায়ুন আহমেদ তার ‘বাদশাহ নামদার’ বইয়ে। হাসিনার উজির আসাদুজ্জমান নুর কিংবা শামীম ওসমানের সাথে যারা অসদাচরণ করেছে তারা ইতিমধ্যেই দণ্ডিত হয়েছেন প্রাণদণ্ডে।

মোঘল সম্রাটরা বিভিন্ন নাম ধারন করতেন। মানুষও তাদের সে নামে ডাকত। আমাদের দেশেও এই চল আছে। পল্লিবন্ধু, দেশনেত্রী, জননেত্রী এসব উপাধি ত আসলে মোঘলদের আদলেই এসেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অনেকগুলো বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রীতে ভূষিত করেছে ঠিক যেভাবে অন্য রাজ্যের কোন রাজা মোঘল সম্রাটদেরকে উপাধি দিতেন। মোঘল সম্রাট-সুবেদাররা তাদের প্রিয়জনের স্মৃতিতে স্তম্ভ নির্মাণ করেছেন। যেমন-তাজমহল, পরিবিবির মাজার। আমাদের দেশেও রাজনীতিবিদেরা তাদের প্রয়াত প্রিয়জনদের মাজার নির্মাণ করেন।

মোঘল সাম্রাজ্যে কোন অবাধ্য প্রজার স্থান ছিল না। সে সাম্রাজ্যে সম্রাটের আদেশই ছিল আইন। সেখানে সম্রাট চাইলেই দণ্ডিতের শাস্তি মাফ করতে পারতেন, আবার যে কাউকে যে কোন অপরাধে নিজের ইচ্ছামত যে কোন দণ্ড দিতে পারতেন,দণ্ড পরিবর্তন করে দিতে পারেন। আমাদের দেশেও রাষ্ট্রপতিও অনেক দণ্ড মাফ করে মোঘল সম্রাটদের দেখানো পথে হেঁটেছেন। আবার কাদের মোল্লার দণ্ড পরিবর্তন হওয়ায় মোঘলদের রেখে যাওয়া ধারাবাহিকতার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। অবাধ্য দুষ্ট লেখক মাহমুদুর রহমান যথার্থই কারাবরণ করেছেন।

মোঘল সাম্রাজ্যে কোন বাদশাহ নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীদের মধ্য থেকে একজন সিংহাসন অলংকৃত করতেন। আশা করি আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে এটি ব্যাখা করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই।

সবশেষে, নিন্দুকেরা যাই বলুক, আমি কিন্ত একজন বাধ্য প্রজা। আমি কেবল বলি- ” মহামান্য সম্রাজ্ঞীর জয় হোক “।

রনির কেস ষ্টাডিঃ এক স্বঘোষিত লেখকের দলীয় মিথ্যাচার

3

– আমান আবদুহু

 

গোলাম মাওলা রনি নামের সুপরিচিত রাজনীতিবিদ ভদ্রলোকটি একটা স্ট্যাটাস লিখেছেন। তিনবার পড়লাম। এবং পড়ে শেষপর্যন্ত অনেক হাসলাম। এ আনন্দদানের জন্য বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আওয়ামী নেতাটিকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই।

গ্রামে একশ্রেণীর মাওলানারা সারারাত ওয়াজ করেন, ইনিয়ে বিনিয়ে বিভিন্ন ধরণের গল্পকাহিনী শোনান। একসময় মানুষ ঘুমে ঢুলতে থাকে, তবুও তাদের বিরক্তি আসে না। বছরের একটা রাতে আধোঘুমে আধোজাগরণে এইসব বিস্তারিত কিচ্ছাকাহিনী শুনতে তাদের ভালো লাগে। সংবৎসরের নিরুত্তাপ জীবনের মাঝে ফসল তোলার ক্লান্তি শেষে এক রাতের আনন্দটা মূল্যবান। আকাশের উপরে মাটির নিচে নানা রঙের ঘটনা নিয়ে রঙীন আলাপের আনন্দ, এ আমেজটা শহুরে আমাদের অনেকের পক্ষে বুঝে উঠা একটু কঠিন। তবে সব বাংলাদেশীদের সামষ্টিক মানসিকতায় বিনোদনের প্রতি কাঙালীপনার এ দিকটা রনি খুব ভালো করেই বুঝে নিয়েছেন।

সালমান এফ রহমানের সাথে নিজ স্বার্থসংশ্লিষ্ট মারামারিকে ন্যায় বনাম অন্যায় যুদ্ধের রুপকথা বানিয়ে তিনি বাংলাদেশীদের মুগ্ধ করেছেন। কাদের মোল্লা প্রসঙ্গে জেলখানা, উস্তাভাজি ও চিরকুটের হৃদয়গ্রাহী বয়ান দিয়ে ইসলামপ্রিয় জনতার হৃদয়ের মণিকোঠাতে ঠাঁই গেড়েছেন তিনি। সুর করে দরুদ মিলাদ পড়ান, লেখায় আল্লাহ রাসুল ইসলাম কোরআন হাদিসের বন্যা বয়ে যায়, গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবনের কথাও বলেন। মাঝে মাঝে নিজ দল আওয়ামী লীগের টুকটাক অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের আপোষহীন নিরপেক্ষ অবস্থানের কথা বলেন।

ভন্ডামী বাটপারি মিথ্যাচার এগুলো আমাদের দেশে রাজনীতিবিদদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। আমরা এসব মেনেও নিয়েছি অনন্যোপায় হয়ে। তবে এসবের বাইরে রনিকে শেষপর্যন্ত বিশেষ আরেকটা ক্রেডিট না দিলে অন্যায় হবে। একেকজন নেতার ভক্তরা হয় একেক গোষ্ঠীর। কিন্তু ডাইভার্স টাইপের মানুষ অথবা বিভিন্ন দলের অনুসারীদের মাঝে অনুরক্ততা পায় খুব কম সংখ্যক নেতা। রনির ভক্তরা ডাইভার্স। জামায়াত শিবির এমনকি বিএনপিরও অনেক লোকজনের কথা শুনলে মাঝে মাঝে আমার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় রনি লোকটা আসলে প্রায় হেদায়েতের পথে চলে এসেছে। এই যে, আরেকটু বাকি আছে। হয়ে যাবে। মারহাবা মারহাবা।

ইসলামের ঝান্ডাবাহী এ আওয়ামী সিপাহসালারের লেখাটার শিরোনাম “সরকারের বিরোধীতা – কেনো করবেন! কখন করবেন!”। তার আজকের এ লেখাটার একবাক্যে সারমর্ম হলো, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধীতা করা ঠিক না। লেখার

কেন আওয়ামী সরকারের বিরোধীতা করা উচিত না? রনির ভাষ্যে এর কারণ হলো, শেষবিচারে আওয়ামী লীগ সরকার হিসেবে দারুণ সফল। যেসব ইস্যুতে সাধারণ মানুষ আওয়ামী বিরোধীতা করছে, ওগুলো আসলে যুক্তির ধোপে টেকেনা। তার কথা হলো, আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো। বড় বড় সন্ত্রাসী গডফাদারদের দাপট আর নেই এখন। এখন আর কেউ রাস্তাঘাটে ছিনতাই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসের শিকার হয়না। আরেকটা বড় কারণ হলো হাতেগোণা বারো তেরো জন আওয়ামী নেতা ছাড়া আর কোন মন্ত্রী এমপি বা নেতা আসলে দুর্নীতির সাথে জড়িত না। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিও দুর্নীতিমুক্ত। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে এখন “ইউরোপ-আমেরিকা-অষ্ট্রেলিয়া-কানাডার তুলনায় ভালো” করে যাচ্ছে গত পাঁচ বছর ধরে।

রনির বিশাল স্ট্যাটাসের সারকথা হলো উপরে লেখা প্যারাগ্রাফটি। এই কথা পাবলিককে বুঝাতে গিয়ে তিনি সারারাত ধরে অনেক মজা দিয়ে ওয়াজ করেছেন। প্রথমে শুরু করেছেন বেশ আত্ববিশ্বাসের সাথে। দক্ষ যুক্তিবাদী ও বাগ্মী একজন মানুষ তিনি। তার সাথে যারা এ প্রসঙ্গে তর্ক করতে আসে তারা একপর্যায়ে এবড়োথেবড়ো  হয়ে যায় তার যুক্তির ঘুর্নিঝড়ের সামনে পরে গিয়ে, এবং তারপর তারা নিরুপায় হয়ে আসমানী গজবের প্রত্যাশায় বিহবল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। এ বিষয়টির একটি দীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। পাঠক মজা পায়, তারপর রনির ম্যাসেজ গ্রহণ করে। জাতি বুঝতে পারে তারা এতোদিন কি ভুলের মাঝে ডুবে ছিলো! সত্যিইতো!! আওয়ামী লীগের বিরোধীতা কি কোন সুস্থ মানুষ করতে পারে?

জাতি যখন অনুশোচনায় ভুগে, তখন রনি আবার মাহফিল জমানো মাওলানার মতো নিয়ে আসেন বিভিন্ন স্বাদের রস টসটসে মশলা কাহিনী। ভারতে এমপিরা মারামারি করে একজন আরেকজনের নাকের বদনা (নাকের বদনা কি জিনিস এইটা আমি অবশ্য বুঝতে পারিনি কয়েকবার চিন্তার চেষ্টা করেও) ফাটিয়ে দেয়। মরিচের গুড়া ছিটায়। আর বাংলাদেশের এমপিরা কতো ভালো, মাসুম বাচ্চার মতো। তারা সংসদে বসে শান্তিতে ঘুমায়, তবু বাংলাদেশীরা এতো অকৃতজ্ঞ কেন?

রনির মনে অনেক আক্ষেপ বাংলাদেশের মানুষ পুলিশকে কেন খারাপ বলে, তা নিয়ে। অথচ অন্যদেশের সাথে তুলনা করলে তারাও মাসুম বাচ্চা, জনগণের একনিষ্ঠ সেবক। এখানে রনি গুয়ানটানামো কারাগারের কথা বলেন, বুঝান যে আমেরিকা খুব খারাপ। এবং রনির শেষ কার্ডটা হলো ট্রাম্পকার্ড। রাতের শেষপ্রহরে যখন সবাই চরম ঢুলতে থাকে তখন হুজুর শুরু করেন মেয়েদের নিয়ে কথাবার্তা। কামলীলা। লোকজন লুল সামলাতে সামলাতে আবার সচকিত হয়। রনি এখানে এসে ভারতীয় ডিপ্লোম্যাট দেবযানির একটা মনোরম বর্ণনা তুলে ধরেছেন। উজ্জল শ্যাম বর্ণের ছিপছিপে মেধাবী কর্মকর্তা, “যুবতী ও তরুণীর মাঝামাঝি বয়স”। আমেরিকান পুলিশ তাকে তুচ্ছ এক সাংসারিক কারণে থানায় নিয়ে (বাকীটা রনির ভাষাতে) ….

“উলঙ্গ করে ফেললো। সম্পূর্ন বিবস্ত্র। তারা বললো দেবযানীর কাছে মাদক আছে। এই ওছিলায় পুরুষ পুলিশ গুলো দেবযানীর শরীরের স্পর্শকাতর যায়গায় হাত ঢুকিয়ে দেলো। মহিলা পুলিশরা খিল খিলিয়ে হাসতে লাগলো। দেবযানী সংজ্ঞা হারালেন। তার সারা শরীর কুকুর দিয়ে পরীক্ষা করা হলো এর পর তাকে পাঠানো হলো থানা হাজতে। দেবযানীর যখন সংজ্ঞা ফিরে এলো তখন গভীর রাত। সে দেখতে পেল অনেকগুলো বেশ্যার সংগে তাকে রাখা হয়েছে। বেশ্যাগুলো দেবযানীকে কাতুকুতু দিয়ে তার বিশেষ বিশেষ স্থানে আঘাত করতে করতে বললো হায় খোদা! তুমি এতো কুৎসিৎ- এমন পুরুষও কি দুনিয়ায় আছে যে কিনা তোমার মতো বেশ্যার সঙ্গে রমন করতে চায়!”

চমৎকার। মাহফিলে জনগণ উত্থিত হয়েছে। এ উত্থানের ফাকে রনি বুঝিয়ে দিলেন, দেখেন তো ভাই চিন্তা করে আমেরিকান পুলিশ কত খারাপ?? বাংলাদেশের পুলিশের নামে এরকম কিছু শুনছেন?? সুতরাং বাংলাদেশী পুলিশের হাতে নিশ্চিন্তমনে আপনার স্ত্রী-কন্যাকে পাহারায় দায়িত্ব নিয়ে এবার বাতাস খেতে বেরিয়ে পড়ুন। আওয়ামীলীগের প্রাক্তণ সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির আজকের লেখার এই হলো অবস্থা। এখন আপনি একজন বিবেকবান মানুষ, পাঠক। সুতরাং আওয়ামীলীগ সরকারকে খারাপ বলতে পারেন না আপনি। সমর্থন দিন, জয়ধ্বনি করুন। জয়বাংলা বলে আগে বাড়ুন।

এ পর্যন্ত যা লিখেছি তা হলো রনির লেখার রিভিউ। লেখাটা তিনবার পড়েছি। প্রথমবার পড়ে হতবাক হয়ে গিয়েছি, একজন সুস্থ-মস্তিস্কের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এতোটা নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার সাথে নির্বিকার মিথ্যাচার কিভাবে করে যেতে পারে, সে কথা ভেবে। ধাক্কাটা সামলাতে দ্বিতীয়বার পড়লাম, তার প্রতিটা পয়েন্টের বিপক্ষে পাল্টা যুক্তি ও প্রমাণ কি হতে পারে তা একটু ভাবার জন্য। রিভিউ লিখতে গিয়ে এ পর্যন্ত যে বিশাল লেখা হয়ে হলো, রিফিউটেশন বা বিপক্ষের যুক্তি লিখতে লেখতে হবে এরচেয়ে বড় আরেকটা লেখা। এবং তৃতীয়বার পড়লাম বিশুদ্ধ বিনোদন নেয়ার জন্য।

নাহ, এতোকিছুর পরও আমাদের তাদের নেতারা একবিন্দু বদলায়নি। মিথ্যাচার এবং অনৈতিকতা পুরোদমে রাজত্ব করে যাচ্ছে বাংলাদেশে। এ দুইহাজার চৌদ্দ সালের ফেব্রুয়ারীতে এসেও।

তার এ লেখার বিস্তারিত রিফিউটেশন সম্ভবত আমার লেখা হয়ে উঠবে না। কারণ কাজটা অনর্থক। এধরণের নৈতিকতাবিহীন দ্বিমুখী মানুষদের বিপক্ষে দাড়িয়ে লাভ নেই। সংক্ষেপে শুধু নিজেকে স্মরণ করাই, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। এদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক আচরণ এখন ফোকলা হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ফাঁপা অর্থনীতির ফলাফল ইতোমধ্যে দেশের মানুষ বুঝতে শুরু করেছে। রনির লেখা অক্ষর আর শব্দ মিলিয়ে পড়তে অনেক ভালো লাগে। কিন্তু যে আলু চাষীর রক্ত আর ঘামে উৎপাদিত ফসল রাস্তায় ফেলে দিয়ে শুয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই, সে হাড়ে হাড়ে অনুভব করে দেশ কি আর অর্থনীতি কি!

এদেশের নব্বই শতাংশ রাজনীতিবিদ অসচ্চরিত্র এবং দুর্নীতিগ্রস্থ। সব এমপি আর মন্ত্রীরা অবৈধ টাকা ও সম্পদে গলা পর্যন্ত ডুবে আছে। বাংলাদেশের পুলিশ হলো লাইসেন্সধারী খুনী সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ এবং ধর্ষক, অলরাউন্ডার। এরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যথেচ্ছ ভাংচুর করে, মানুষকে গ্রেফতারের নামে কিডন্যাপ করে মুক্তিপণ আদায় করে এবং ইচ্ছামতো গুলি করে হত্যা করে। মেক্সিকান ড্রাগ কার্টেলের লোকজনও বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের এ আনন্দ পায় না, যা বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা পায়।

কিন্তু তবু আওয়ামী সরকার টিকে আছে কেন? কারণটা সরল। জনগণের বিরুদ্ধে একটা অন্যায় স্বৈরাচার ব্যাবস্থাকে টিকে থাকতে হলে কয়েকটা কোর ইনষ্টিটিউশনের সহায়তা দরকার হয়। বাংলাদেশে মিডিয়া, জুডিশিয়ারী, সিভিল সার্ভিস এবং মিলিটারি, চারটা সেক্টরই আওয়ামী লীগকে কৃতদাস কাফ্রী খোঁজার মতো পরিপূর্ণ সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

এখন গোলাম মাওলা রনি যদি শুধু সারারাত না, বরং রাতের পর রাতও তার রসালো ওয়াজ করে যেতে পারেন। এবং এই সেবার বিবরণ তার নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাবমিট করে দলীয় অবস্থান পূণরুদ্ধারের একটা শক্তিশালী চেষ্টাও করতে পারেন বটে। কিন্তু পাবলিককে আর বুঝানো যাবে বলে বিশ্বাস করিনা। শেষরাতের ঘুমে ঢুলুঢুলু মানুষেরা উত্থানের মজাটা নেবে, কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ এখন জানে আওয়ামীলীগ কতটা সফল অথবা ব্যর্থ। প্রত্যেকটা মানুষ বুঝে যে, একসময় সন্ত্রাস ছিলো গডফাদার বা এলাকার গুন্ডাদের হাতে, আর এখন সে সন্ত্রাস সর্বব্যাপী হয়েছে পুরো দেশে, প্রতিটা এলাকায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাফিয়া অর্গানাইজেশন আওয়ামী লীগের প্রত্যেক সক্রিয় নেতাকর্মীই এখন সন্ত্রাসী। মানুষকে এসব বুঝানোর জন্য শেয়ার বাজার, হলমার্ক, পদ্মা সেতু, সুরঞ্জিত কেলেংকারী, আবুল হোসেন, সজীব ওয়াদের জয়ের কমিশন ও দোয়েল ব্যাবসা, হেফাজত গণহত্যা, ক্রসফায়ার নাটক, পুলিশের চাঁদাবাজি খুন ধর্ষণ, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যৌথবাহিনীর নিপীড়ন, দেশের বিচার ব্যাবস্থা ধ্বংস, সাগর-রুনি, বিশ্বজিৎ, রানা প্লাজা এমন হাজার হাজার ঘটনা নাম ধরে ধরে মনে করিয়ে দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। মানুষ এতো বোকা না। সারারাত ওয়াজ শুনে বাকি জীবন কেউ স্বপ্ন দেখে কাটায় না, বরং সময় হলে হালের বলদের কান ধরে টানতে টানতে তারাই আবার জমিতে গিয়ে নামে।

সুতরাং রনির লেখাটার রিফিউটেশন বা বিপক্ষ জবাবের আসলে দরকার নাই। এটা ভালো একটা বিনোদন হয়েছে। রনির আওয়ামী ল্যাঞ্জাটি একইসাথে উত্তমরুপে উন্মোচিত হয়েছে।

তবে শুরুর কথাটা শেষে আবারও বলতে হয়। বাঙালী বিনোদনের জন্য বড়ই কাঙাল। বাঙালী সব বুঝে, কিন্তু তবুও ঐসব মিথ্যাবাদী গল্পকার হুজুরদের পেছনে দৌড়ায়। আমরা আবেগী, স্মৃতিশক্তিও খুব ক্ষণস্থায়ী। সুতরাং রনি ঠিকঠাকমতো চাল দিলে আশা করি অন্যদিকের মার্কেট আবারও ধরতে পারবেন। তারপর সম্ভবত আবারও ফাকে ফাকে এরকম দালালীসুলভ মিথ্যাচারী লেখা ছাড়বেন। সেই লেখার জন্য রিভিউ করবো না। বরং রনির লেখাগুলো কিভাবে ক্লাসিকাল ফ্যালাসি দিয়ে ভর্তি; ফলস এনালজি/ ইনকনসিসটেন্সি/ এড-হোমিনেম এবং ষ্ট্রম্যান আর্গুমেন্টের মতো অর্থহীন কথাবার্তা ছাড়া তার লেখায় অন্য কিছু নেই, ইচ্ছা হলে সেদিন তা নিয়ে লিখবো। আরেকটা কথাও পরিস্কার করা উচিত। এ লেখাতে আমি এড-হোমিনেম এবং ষ্ট্রম্যান আর্গুমেন্ট ব্যাবহার করেছি। ইচ্ছা করেই করেছি। কারণ মিথ্যুককে আমি সম্মান করিনা। সে এবার কাদের মোল্লাকে নিজ কাঁধে তুলে শহীদ বানাক অথবা রাসুল সা. এর নামে দরুদ টানতে গিয়ে গলা ভেঙে ফেলুক, মিথ্যুক শেষপর্যন্ত মিথ্যুকই।

ভ্যালারে রনি! এই দেশে বেঁচে থাক চিরকাল।

images (1)

 

আদর্শিক রাজনীতি ও বাস্তবতা

by Jahid Islam

দেশের একজন সাহসী চিন্তাবিদ ছিলেন আহমদ ছফা। তাঁর চিন্তায় স্বচ্ছতা ছিল। তিনি যা বিশ্বাস করতেন তাই বলতেন, লিখতেন। এতে কে খুশি হল, কে বেজার হল সেটার প্রতি খুব একটা ভ্রুক্ষেপ করতেন বলে মনে হয় না। তাঁর লেখা একটা চমৎকার প্রবন্ধ হল, “বাঙ্গালী মুসলমানের মন”। এখানে তিনি এক জায়গায় লিখেছেন- “বাঙ্গালী মুসলমান সমাজ স্বাধীন চিন্তাকেই সবচেয়ে ভয় করে। তার মনের আদিম সংস্কারগুলো কাটেনি। সে কিছুই গ্রহণ করে না মনের গভীরে। ভাসাভাসাভাবে অনেক কিছুই জানার ভান করে আসলে তার জানাশোনার পরিধি খুবই সঙ্কুচিত। বাঙ্গালি মুসলমানের মন এখনো একেবারে অপরিণত, সবচেয়ে মজার কথা এ-কথাটা ভুলে থাকার জন্যই সে প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে কসুর করে না।”

এ প্রবন্ধের শেষ প্যারায় লিখেছেন-“বাঙ্গালি মুসলমানের মন যে এখনো আদিম অবস্থায়, তা বাঙ্গালি হওয়ার জন্যও নয় এবং মুসলমান হওয়ার জন্যও নয়। সুদীর্ঘকালব্যাপী একটি ঐতিহাসিক পদ্ধতির দরুণ তার মনের ওপর একটি গাঢ় মায়াজাল বিস্তৃত হয়ে রয়েছে,সজ্ঞানে তার বাইরে সে আসতে পারে না। তাই এক পা যদি এগিয়ে আসে, তিন পা পিছিয়ে যেতে হয়। মানসিক ভীতিই এই সমাজকে চালিয়ে থাকে। দু’ বছরে কিংবা চার বছরে হয়তো এ অবস্থার অবসান ঘটানো যাবেনা, কিন্তু বাঙ্গালী মুসলমানের মনের ধরন-ধারণ এবং প্রবণতাগুলো নির্মোহভাবে জানার চেষ্টা করলে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটা পথ হয়তো পাওয়াও যেতে পারে।”
এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সোল এজেন্ডা মুক্তিযুদ্ধ ও সেকুলারিজম। তারা নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একমাত্র ধারক ও বাহক হিসেবে মনেপ্রাণে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রগতির কথা বলে শিক্ষিত মিডেল ক্লাসের কাছে আবেদন রাখতে চায়। সেকুলারিজম এবং আঞ্চলিক জঙ্গিবাদের উথানের ভয় দেখিয়ে বাইরেরর দুনিয়ার সমর্থন আদায় করতে চায়। শাহবাগে হাজার লোকের সমাগম দেখে তারা ভাবে এবার জোয়ার এসেছে, আর ঠেকায় কে ! এই বারের চোটে রাজীব হায়দার (থাবা বাবা) কেও শহীদ ঘোষণা করে দেয় শেখ হাসিনা। শাহরিয়ার কবিররা ভাবেন- “কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠা করা না গেলেও যেহেতু বাহাত্তরের সংবিধানের কাছাকাছি কিছু একটা এখন আছে যাতে মূলনিতী হিসেবে ‘কম্যুনিজম’ এর কথা উল্লেখ আছে, সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম বাদ পড়েছে,শাহবাগে হাজার হাজার মানুষ এসেছে, এবারে অন্তত ধর্ম নামের আফিমের হাত থেকে মুক্তি মিলবে।”

বাস্তবতা হল এরকম যে, বাঙ্গালী মুসলমান শাহবাগে জড় হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে যদি শবে বরাত হয় (শবে বরাত পালন সহিহ কিনা সেটা অন্য তর্ক) সে তার পুরোনো পাঞ্জাবীতে শান দিয়ে, টুপি মাথায় দিয়ে হাজির। নফল ইবাদতের মাধ্যমে ভাগ্য বদলের জন্য দোয়া করে সারারাত। হয়ত পরের দিন থেকেই আবার নামাজ পড়ে না। কিন্ত আওয়ামী লীগের উগ্র সেকুলারিজমে সে বিশ্বাস করে না। নবীজিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে শুনে শাহবাগ থেকে সে হাত গুটিয়ে নেয়। সংবিধানে আল্লাহর নাম নিয়ে কাটা ছেঁড়াও তার বিশেষ পছন্দ না। কম্যুনিজম এবং উগ্র সেকুলারিজমের প্রধান মুফতি শাহরিয়ার কবির ও মুনতাসির মামুন শবে বরাতের রাতে নামাজকে আদিখ্যেতা মনে করে। মনে মনে বলে, “ শালার বাঙ্গালী। আবার মসজিদে যাও না ! এত্ত বুঝাই তাও কাম হয় না !”।

 

আবার আল্লামা শফির ডাকে হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় এসেছে অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে। সাধারণ পথচারীরাও প্রিয় নবীজিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে শুনে এতে শামিল হয়েছে। ইসলামপন্থীরা ভাবে এবার বাংলাদেশ ইসলামি রাষ্ট্র হয়ে যাওয়া কেবলই সময়ের ব্যাপার। তবে এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা হল, যেই বাঙ্গালী নিয়ে আল্লামা শফি বা জামায়াতে ইসলামি, দেশে ইসলামি শাসনের স্বপ্ন দ্যাখেন/দ্যাখে সেই বাঙ্গালী মাজারে যায়। পীরের মুরিদ হয়, মৃত ব্যক্তির কবরে সিজদা করে, গলায় তাবিজ দেয়, মিলাদ পড়ে। এছাড়াও আরও অনেক রকম শিরক করে, বিদআতি কাজ কর্ম করে।

files

আবার এটাও ঠিক যে, সে ইসলামকে ভালবাসে। শুক্রবারের জুম্মার খুতবায় হুজুরের ওয়াজ “ভাইয়েরা আমার, ইসলাম-ই একমাত্র মুক্তির পথ”, শুনে সে মাথা নাড়ায় এরপর ঘরে এসে আরাম করে বসে শুক্রবারের সিনেমা দেখে। সে যে ইসলামকে ভালবাসে, সেটা সে প্রকাশ করে মসজিদের হুজুরকে দাওয়াত দিয়ে ঘরে এনে খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে। সকালে সে তার ছেলে মেয়েকে আরবী পড়তে মক্তবে পাঠায়। শহর হলে হুজুর বাসায় এসে পড়ায়। ছেলে মেয়েরা কোরআন পড়া শিখে, নামাজের নিয়ম কানুন শিখে । সে মনে করে ব্যস-এই ত ইসলাম, আর কি ?

সে পলিটিক্যাল ইসলামে কনভিন্সড না।  মসজিদের হুজুরকে সে নামাজের মিম্বরে কিংবা ওয়াজের জায়গায় চিন্তা করতে পারে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী/এমপির সিটে না। তার কাছে রাজনীতি একটা খারাপ জায়গা। হুজুরের সেখানে কি কাজ ? জামায়াতের নেতাদের ক্ষেত্রে, যে কোন মূল্যে তাদের ফাঁসি হোক এটা সে চায় না (এটা আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণীর কথা না, সাধারণ মানুষের কথা)। তবে ৭১ এ তারা ছিল দেশ বিরোধী এটাই সে বিশ্বাস করে । তাই তাদেরকেও ভোট দিতে সে খুব একটা উৎসাহি না, অন্তত জামায়েতের ব্যানারে না। সেকুলারিজম, কম্যুনিজম, জাতীয়তাবাদ কিংবা ইসলামি শাসন এগুলো সব ইন্টেল্যকচুয়াল কনভিকশন। সে এত কিছু বোঝে না। আমি বাজি ধরে বলতে পারি দেশের অন্তত ৫০ ভাগ লোক দেশে কয়টি সেক্টরে যুদ্ধ হয়েছে, বা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস কবে বলতে পারবে না। ৮০ ভাগ বা তার চেয়েও বেশি লোক সহিহ উচ্চারণে কোরআন পড়তে পারে না।

সে যে ৫ বছর পর পর সুইং ভোট দিয়ে সরকারের পতন ঘটায় এটা এ জন্য না যে, ৫ বছর পর একদিন আচমকা ঘুম থেকে উঠার পর তার মাথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের খায়েশ জাগে । অথবা দেশকে ভালবেসে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে । অথবা একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ থেকে আর নামাজ ক্বাযা নয়। এবার থেকে পুরোপুরি সে ইসলামি পথই অনুসরণ করবে। সে এটা করে দুই দলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে। তার এত কিছু নিয়ে চিন্তা করার সময় নাই। সে ছোটে পেটের তাগিদে। এরপর যতটুকু পারে ধর্ম কর্ম করে। মূলত তার নামাজ জুম্মার নামাজ, ঈদের নামাজ আর জানাজার নামাজে সীমাবদ্ধ। আর ইসলামি জ্ঞানের একমাত্র সম্বল হল শুক্রবারের ওয়াজ।

সেকুলারিজম বা ন্যশনালিজম বা পলিটিক্যাল ইসলাম আবার কি ! এত হ্যাভিওয়েট ডেফিন্যাশন সে জানবে কোথা থেকে ? এটা হল পিউর বাস্তবতা। কোন সুগার কোটিং নাই। আপনি সেকুলারিজম, কম্যুনিজম, জাতীয়তাবাদ কিংবা ইসলামি শাসন যাই কায়েম করতে চান এটা ভাল মত বুঝে এরপর শুরু করতে হবে। এটাই কাজ শুরুর প্রথম ধাপ।এরপর সে অনুযায়ী মডেল বানাতে হবে। এখানে ভারত বা ফ্রান্সের সেকুলারিজম, ব্রিটিশ ন্যশনালিজম অথবা মিশর কিংবা তুরস্কের ইসলামি মডেল চলবে না। চীন রাশিয়ার প্রেতাত্মা ত আগেই দূর হয়েছে। এদেশে স্রেফ একটাই চলবে, সেটা হল –“বাংলাদেশি মডেল”। এতে অন্যান্য মডেলের কনসেপ্ট থাকতে পারে, তবে সবশেষে হতে হবে একেবারে কাস্টমাইজ করা দেশী জিনিস । “কমরেড” বা “ইয়া আখি” টাইপ পরিভাষা এখানে চলবে না। অন্তত শুরুতে  না। পরিস্থিতির বাস্তবতা বুঝে যে যত রিয়েলিস্টিক মডেল বানাতে পারে তার মডেল তত ভাল কাজ করবে। প্রথমে প্র্যাকটিক্যাল কেস থেকে শুরু করে এরপর এটাকে আস্তে আস্তে ক্যালিব্রেট করতে হবে আইডিয়াল মডেলের দিকে।

“ওয়ার অন টেরর”: বাংলাদেশ অধ্যায়

1

by Jahid Islam

সোভিয়েত-আফগানিস্তান যুদ্ধ থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীর এ সময় পর্যন্ত নির্মিত বাস্তব দুনিয়ার সবচেয়ে সেরা থ্রিলিং সিনেমার নাম ‘ওয়ার অন টেরর’/ এটা সিকুয়েল মুভি,পার্ট অনেক। সিরিয়ালও বলা যেতে পারে। ‘লিও স্ট্রাউস’ নাকি ‘স্যামুয়েল হান্টিংটন’ কে এই সিনেমার স্ক্রিপ্ট রাইটার সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে। আবার দুই জনের থিওরি জোড়া লাগিয়েও বানানো হতে পারে। তবে মানতেই হবে মাস্টার স্ক্রিপ্ট। প্রধান চরিত্রে এ শতাব্দীতে ইতিমধ্যে অভিনয় করেছেন জর্জ বুশ,টনি ব্লেয়ার। এরপর এসেছেন বারাক ওবামা, নিকোলাস সারকোজি, এবং সর্বশেষে এসেছেন ফ্রাঙ্কয়িস হলান্ডে। কাহিনী ও সময়ের বাস্তবতায় চরিত্রগুলো পরিবর্তন হয়েছে।

wot

সিনেমার শুটিং হয়েছে আফগানিস্থান, পাকিস্থান, ইয়েমেন, কেনিয়া, তানজানিয়া, ইরাক, মালি, নাইজেরিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া সহ পৃথিবীর নানান প্রান্তে। অনেকগুলো স্পটে চিত্রায়ন এখনো চলছে।

সাধারণ দর্শকের দৃষ্টিকোণ থেকে আলকায়েদার সাথে এ খেলায় অংশ গ্রহণকারীদেরকে তাদের ভুমিকার ভিত্তিতে চার ভাগে ভাগ করা যায় বলে আমার মনে হয়েছেঃ-

 ১/ প্লেয়ারঃ যারা সরাসরি এ খেলায় অংশগ্রহণ করে। যেমন- আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স।

২/ সহযোগীঃ যারা এই ওয়ার অন টেররে আমেরিকারকে সাহায্য করে। যেমন- পাকিস্থান।

৩/ ডাবল সাইডেড প্লেয়ারঃ যারা আলকায়েদাকে আর্থিক অনুদান এবং লোকবল সরবরাহ করে, আবার আমেরিকারকে তাদের ঘাঁটি ব্যবহার করে ওয়ার অন টেররে সাহায্য করে । যেমন –সৌদি আরব।

 ৪/ খেলায় অংশগ্রহণের ভয় দেখায়ঃ কতিপয় দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ক্ষমতায় থাকার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে একে ব্যবহার করতে চান। তাদের মূল বক্তব্য হল, “আমি এবং আমার দল ক্ষমতায় না থাকলে দেশ আফগানিস্থান, পাকিস্থান হয়ে যাবে অথবা আল কায়েদার ঘাঁটি হয়ে যাবে”। এ প্রপোজিশন নিয়ে খেলায় অংশ গ্রহণ করেছেন লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফি । তার খেলা শেষ। এখনো খেলে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। তবে এ খেলা মনে হয় সহজে শেষ হবেনা। প্রফেসর ড. তারিক রমাদানের মত আমিও বিশ্বাস করি এ খেলা শেষ না হওয়ার ব্যপারে দুই পক্ষের মধ্যে (এক পক্ষে আমেরকা, অন্য পক্ষে রাশিয়া এবং চীন) ঐক্য আছে। এছাড়াও এখানে অন্য রিজিওনাল প্লেয়াররাও জড়িত আছে যারা নিজেদের আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষায় খেলছে। যেমন- ইরান, তুরস্ক, কাতার, ও সৌদি আরব।

যাই হোক, এটা হল ভূমিকা। এবার আসি আসল কথায়।  সম্প্রতি আইমান আল জাওয়াহিরি’র ভিডিও টেপ বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়ার প্রকাশিত হয়েছে। এটি দেখিয়ে শেখ হাসিনা চার নম্বর গ্রুপে যোগ দিবেন দিবেন করছেন। যারা এ খবরে অবাক হয়েছেন, আসলে তাদের অবাক হওয়া দেখে আমি অবাক হয়েছি। আমার কাছে এর কারণ খুব পরিস্কার। যারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে তারা চিরকাল বেঁচে থাকবে না। এর মধ্যেই এক জনের ফাঁসি হয়েছে, একজন জেলে মারা গেছে। সম্ভাবনার বিচারে বাকিদেরও ফাঁসি হওয়ার কথা, একজাক্টলি কি হবে আল্লাহই জানেন। ফাঁসি না হলেও এরা সবাই বয়স্ক। ৮/১০ বছরের মধ্যেই অনেকে স্বাভাবিকভাবেই মারা যাবেন। অতপর এ খেলা শেষ। এরপর কি হবে ?

খেলার নিয়ম অনুসারে এরপর অন্য কোন ইস্যু আসার কথা।  ইসলামিক টেররিজম কিংবা আঞ্চলিক নিরাপত্তা একটা ভাল ইস্যু।  বাজারে এর চাহিদা আছে।  তাই একে সামনে ঠেলে দিতে হবে। এ কাজ করবে কে ? উত্তর সহজ। প্রচারের প্রধান ভূমিকায় থাকবে এই দেশের ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ অর্থাৎ দেশি নিউকনিয়ান সেপাইদের প্রমোশনাল ভেহিকল ‘প্রথম আলো’ ।  ‘নিউইয়র্ক টাইমস এবং ‘প্রথম আলো’ এর মধ্যে সমন্বয় করার কাজটি করবেন মাহফুজ আনাম এবং তার মেয়ে বিশিষ্ট ‘ফিকশন লেখিকা’ তাহমিমা আনাম। ভারতের ‘আনন্দবাজার’ ও থাকবে এ দলে । এ ছাড়াও এ দেশ থেকে থিঙ্ক  ট্যাঙ্কে থাকবেন আবুল বারাকাত, শাহরিয়ার কবির,মুন্তাসির মামুন, সজীব ওয়াজেদ জয়, দীপু মনি ও গওহর রিজভী। এরা প্রমিনেন্ট প্লেয়ার, অনেকে থাকবেন পর্দার আড়ালে।

তবে এ খেলায় সরাসরি আমেরিকা নামবে না। বাংলাদেশের এ গোষ্ঠী চাইলেও না। কেননা ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠা করার মত যথেষ্ট তেল সম্পদ বাংলাদেশে নেই। আমেরিকা চায় বাংলাদেশ মোটামুটি  স্থিতিশীল থাক। তাই তারা সবাইকে  রাজনীতিতে ইনক্লুড করার কথা বলে। এমনকি জামায়াতকেও। এতে সব দলকে একজিস্টিং ফ্রেমওয়ার্কে আনা যাবে যাতে অবস্থা স্থিতিশীল থাকবে।

তবে এখানে আছে লোকাল ভেন্ডর ভারত যাদের এ হিসেবে একটু আপত্তি আছে । ফলে দরকষাকষির মাধ্যমে যেটাতে মার্কেটে ইকুইলিব্রিয়াম এসেছে সেটা হল, আমেরিকা খেলাটা মনিটর করবে। কিন্তু সেটা রিজিওনাল এলাই হিসেবে গ্রেটার ইন্টারেস্টের কথা চিন্তা করে আউটসোর্স করে দিবে ভারতকে। ভারতের এখানে বহুমুখী লাভ আছে। যেমন- আসাম সহ অন্যান্য অস্থিতিশীল অংশগুলোতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখা, বাংলাদেশের উপর দিয়ে অবাদে বিনা খরচে পণ্য পরবিবহন, নামে মাত্র মূল্যে বন্দর ব্যবহার করা, দেশের অভ্যন্তরে গেরিলা নিয়ন্ত্রন করা ইত্যাদি। সর্বোপরি, বাংলাদেশ যদি ভারতের একটি স্থিতিশীল অঙ্গরাজ্য হিসেবে কাজ করে তাহলে সবচেয়ে ভাল হয়।
এটা করতে হলে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় থাকতে হবে যে কোন মূল্যে। এর জেন্য দরকার লং এবং শর্ট টার্ম প্ল্যান। শর্ট টার্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আওয়ামীলীগ এবার ক্ষমতায় এসেছে, এতে আনপ্রেসিডেন্টেড সমর্থন দিয়েছে ভারত। ফলাফল হিসেবে ভারত প্রতিদানও পেয়েছে একেবারে হাতে নাতে। উলফা কে আর্মস সরবরাহ এর অভিযোগে অভিযুক্তদের ফাঁসি হয়েছে। এরপর, লংটার্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসেছে এ নতুন প্রপোজিশন। ৩ মাসের পুরনো ভিডিও টেপ নিয়ে মাতামাতির ব্যপারটি আমি এভাবেই দেখি।

তবে এ খেলার আরেকটি মজার দিক আছে যেটি সাধারণত চার নম্বর ক্যটাগরির লোকেরা আগে থেকে বুঝতে পারেনা, অন্তত এখনো পর্যন্ত কেউ পারে নি।  যারাই এ খেলায় অংশগ্রহন করে দেশের জনগণের সাথে “আল-কায়দা আল-কায়দা” খেলেছেন তাদের পরিণতি খুব একটা সুখকর হয়নি। উধাহরণ- গাদ্দাফি, পারভেজ মোশাররফ। এদেরকে ব্যবহার শেষে যথাস্থানে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে ঠিক যেমন মীর জাফর কে ছুঁড়ে ফেলেছিল ইংরেজরা।

ইতিহাস বলে থেকে মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। শিক্ষা না নেওয়ার পেছনে যুক্তি দেখায়- দিজ টাইম ইট ইজ কোয়াইট ডিফরেন্ট। লেটস সি হোয়াট হেপেন্স দিস টাইম !

৭৫’এর হত্যা যদি অবৈধ হয় এ হত্যাও অবৈধ…

by Watchdog Bd
নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে মানুষ। ভুতুরে কায়দায় হাওয়া হয়ে যাচ্ছে ওরা। নগর, বন্দর, হাট-মাঠ-ঘাট হতে কোন এক অলৌকিক শক্তিবলে উধাও হচ্ছে দু’হাত দু’পা ওয়ালা আদম। ১৯৩৯ হতে ৪৫ সাল পর্যন্ত ইউরোপে অহরহই ঘটতো এ ঘটনা। ১৯৭৩-৭৫ সালে সদ্য জন্ম নেয়া বাংলাদেশও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল নিখোঁজ হওয়ার ভৌতিক অধ্যায়। হিটলারের গেস্টাপো আর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীর রক্ষীবাহিনী নীরবে, নিঃশব্দে, অনেকটা ’ইনভিজিবল ম্যান’ কায়দায় হানা দিত দুয়ারে। এ যেন মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে খোদ আজরাইলের আগমন। এ ধরণের শাহী আগমনের শেষ গন্তব্য কোন বন্দর তা জানতে আমাদের হয়ত কবর হতে উঠিয়ে আনতে হবে ৫০ হতে ৭০ মিলিয়ন ইউরোপীয়, এশিয় আর আফ্রিকান জীবন। বাংলাদেশের বেলায় এর সঠিক পরিসংখ্যান আমরা কোনোদিনই জানতে পারবো না মেরুকরণ নামক রাষ্ট্রীয় কলেরার কারণে। পরিসংখ্যান ব্যুরো কেন, কবরেও আমাদের মেরুকরণের ভুত। এ ভুত যেনতেন ভুত নয়, খোদ আজরাইল নিযুক্ত যান্ত্রিক ভুত, যা দম দেয়া পুতুলের মত খোঁড়াক যোগায় রাষ্ট্রীয় ’তামাশার’… হিটলার ও তার গেস্টাপো বাহিনী এখন ইতিহাস। মানব সভ্যতার এ কলংকিত অধ্যায় সভ্যতা মূল্যায়নের উপকরণ হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং সামনেও করে যাবে আরও হাজার বছর। কিন্তু হায়! বিনা বিচারে নাগরিক হত্যা ঠাই নিতে পারেনি আমাদের ইতিহাসে। বরং এ অবৈধ সাংস্কৃতি স্থায়ী আসন করে নিয়েছে শাসন ব্যবস্থার কাঠামোতে। শেখ মুজিব হতে শুরু করে জিয়া, এরশাদ, খালেদা এবং হাসিনা চক্রের কোন চক্রই বেরিয়ে আসতে পারেনি দেশ শাসনের এই আজরায়েলি ভুত হতে। খালেদা জিয়া সরকার RAB নামের যে গেস্টাপো বাহিনীর জন্ম দিয়েছিল হাসিনা সরকারের ছায়াতলে পল্লবিত হয়ে তা পরিণত হয়েছে বিশাল মহীরুহে। ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ শাসনের গণতান্ত্রিক রেওয়াজে অলিখিত আইন হয়ে গেছে বিনা বিচারে হত্যা নামের পশুত্ব। এবং তা বৈধতা পাচ্ছে সরকার ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় হতে। ক্রসফায়ার নামক হুমায়ুন আহম্মদিয় নাটক শুরুতে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল শাসন ব্যবস্থার অক্ষমতা ও নাগরিক অধিকার ফিরে পাওয়ার আকুতি হতে। শত শত হত্যাকান্ডের পর কতটা সফল হয়েছে এ আয়োজন? স্বাভাবিক জন্মমৃত্যু সহ একটা সহজ সরল জীবনের কতটা কাছে যেতে পেরেছি আমরা? দুর্নীতি, হত্যা, গুম, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ধর্ষণ সহ সমাজের অবক্ষয় গুলো কতটা কমানো গেছে হত্যাকান্ডের মাধ্যমে? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এখন ঘরের বাইরে যেতে হয়না, বরং দুয়ারে এসে জানিয়ে দেয় দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নামক রাষ্ট্রীয় অলংকারের শক্তিমত্তা। দুর্নীতিতে উপর্যুপরি চ্যাম্পিয়নশীপ জাতি হিসাবে আমাদের এনে দিয়েছিল বিশ্বখ্যাতি। এ অধ্যায়ের সফলতম সংযোজন হিসাবে কাজ করছে আজকের বিনাবিচারে হত্যাকান্ড। বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে মানবতাবিবর্জিত বাংলাদেশি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। স্বভাবতই সরকারকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে আর্ন্তজাতিক চাপ। এবং এখানেই হয়ত অন্যের সাথে নিজের পার্থক্য ও বুদ্ধিমত্তা তুলে ধরতে পেরেছেন দেশপ্রেমের ১নং দাবিদার আমাদের প্রধানমন্ত্রী। হয়ত প্রতিপক্ষের সৃষ্টি হত্যাযন্ত্র ভোতা হয়ে আসছিল ডিজিটাল যুগে। তাই আবিস্কার করতে বাধ্য হন এর ডিজিটাল সংস্করণ। রাতের আধারে ক্রসফায়ার নাটক সাজানোর বাংলাদেশি মিথ্যাচার সহজে গেলানো যাচ্ছিল না আর্ন্তজাতিক মহলে। স্বভাবতই হুমকির মুখে পরছিল দেশটার বৈদশিক সম্পর্ক। সমস্যার এমন সহজ ও কার্যকর সমাধানের জন্যে চাইলে হাসিনা সরকারকে নোবেল দেয়া যেতে পারে। আসলেই তো, প্রয়োজন কি রাতের আধারে ক্রসফায়ার নামক মঞ্চনাটকের! বরং ’শক্তিধর’ শত্রুকে ভুত বানিয়ে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অথবা দেশটার হাওর-বাওর, বিলে ফেলে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়! কেউ জানবে না কে হত্যা করেছে, কেন করেছে, এবং এ নিয়ে জবাবদিহিতারও প্রয়োজন হবেনা আর্ন্তজাতিক মহলে। আইন-আদালত সহ দেশিয় বিচার ব্যবস্থার প্রায় সবটাই তুলে দেয়া হয়েছে দলীয় কর্মীদের হাতে। দলীয় ক্যাডার হতে সদ্য প্রমোশন পাওয়া আদালতের বিচারকগণও টগবগ করছেন সরকার প্রধানের প্রতিদান ফিরিয়ে দিতে। আইনী ঝামেলার দেশীয় ফ্রন্ট সরকারের জন্য ঝামেলামুক্ত।

6a00e0097e4e6888330120a67ddcd2970c-500wi

রাষ্ট্র ও সমাজের শক্র হিসাবে জুয়েল, মিজান, রাজিব ও ইসমাইলদের কতটা কুপ্রভাব ছিল যা দুর করতে তাদের লাশ ডোবা নালায় পুত্‌তে হল? স্থানীয় এসব পেটি-দুষ্কৃতিকারীদের জন্ম ও উত্থানের পেছনে কাদের হাত থাকে নাগরিক হিসাবে আমাদের সবার জানা। বিচার দুরে থাক এ নিয়ে কথা বলাও রাষ্ট্রীয় অপরাধ। এবং এ অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে এক পায়ে দাড়িয়ে থাকে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা। একজন আবুল মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ স্থানীয় নয়, বরং সমসাময়িক বিশ্বের অর্থনৈতিক মোড়ল খোদ বিশ্বব্যাংকের। তাদের অভিযোগ, মন্ত্রীর ক্ষমতাবলে এই বাংলাদেশি বিশ্বব্যাংকের মত আর্ন্তজাতিক সংস্থায় ক্যাডার পাঠিয়েছিল অবৈধ লেনাদেনার তাগাদা দিতে। ক্ষমতা না থাকায় চাইলেও তারা পারেনি আবুল হোসেনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে। কিন্তু তারা যা করেছে তা ১৫ কোটি মানুষের পেটে লাথি মারার শামিল। অথচ বিচারের দায়িত্বটা ছিল সরকারের। একই সরকার যারা শাস্তির নামে জুয়েল, ইসমাইলদের বিনাবিচারে জীবন্ত কবর দেয়, পাশাপাশি পুরস্কৃত করে আবুল মন্ত্রীর মত মেগা লুটেরাদের। রাজনীতির অন্দরমহলে কথাটা নিয়ে ফিসফাস চলে, অনেক সময় হাসি-ঠাট্টা পর্যন্ত গড়ায়। বলা হয়, আবুল মন্ত্রী নগদ ৬০ কোটি টাকায় মন্ত্রিত্ব ক্রয় করে নিয়েছেন । তাই বিচার দুরে থাক, মন্ত্রীসভা হতে বিদায়ের রাস্তাও নাকি তার জন্যে ছিল বন্ধ। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের বিশাল এক প্রকল্প এই আবুল হোসেনের জন্যে থমকে গেছে। অথচ সরকার প্রধান আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করাচ্ছেন বিশ্বব্যাংকের মত আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানকে। সংসদ ভবনের রাজকীয় আসনে বসে দেশের আইন-আদালত আর ন্যায় অন্যায় নিয়ে যারা কথা বলেন তাদের শতকরা ৯৯ জনের ব্যাকগ্রাউন্ড ঘাঁটলে কি বেরিয়ে আসবে তা অনুমান করার জন্যে মনোবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। এসব আউলিয়াদের কাহিনী কি একজন জুয়েল অথবা ইসমাইলের চাইতেও ভয়াবহ নয়?

প্রধানমন্ত্রী হয়ত ভুলে গেছেন অথবা জেনেও না জানার ভান করেন, ১৯৭৫ সালে উনার পিতাকে হত্যা করার প্রেক্ষাপটও কিন্তু তৈরী করা হয়েছিল অপ্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে। এসব অভিযোগ আদালতে উঠানোর সুযোগ না দিয়ে রাতের আধারে তাকে হত্যা করা হয়েছিল কাপুরুষের মত। প্রধানমন্ত্রী নিজেও কি একই কাজ করছেন না? RAB দিয়ে গুম করিয়ে গোপনে যাদের হত্যা করছেন তারাও কি কারো পিতা, সন্তান অথবা ভাই নন? পার্থক্যটা কোথায়? জাতির পিতার সন্তানদের শোক কি তাহলে বাকি শোকের চাইতে ভিন্ন? জানতে চাইলে জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে মিজান অথবা রাজীব পরিবারের কাউকে। ৭১’এর আত্মস্বীকৃত খুনি আর ধর্ষকদের বিচারের জন্যে আয়োজন করা হয়েছে কোটি টাকার আদালত। অথচ ক্রসফায়ার নাটকে কাউকে বলি করতে চাইলে তা হওয়া উচিৎ ছিল গোলাম আযম, নিজামী, আমিনী আর সাকা চৌধুরীর দল। একজন ইসমাইলের অপরাধ কি তাহলে নিজামীর অপরাধের চাইতে বেশি?

মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম অধিকার তার স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তা। ব্যর্থ রাজনীতি আর অপশাসন-কুশাসনের কুটজালে আটকে মানুষ আজ নাম লেখাতে বাধ্য হচ্ছে অন্যায় আর অবৈধ পথে বেচে থাকার মিছিলে। এ মিছিলের হোতা আর নেত্রীত্বে যারা আছে তাদের গায়ে হাত না দিয়ে যদু, মধু, রাম, শ্যামদের মতো বাই-স্ট্যান্ডার্ডদের গায়ে হাত দিয়ে আর যাই হোক সুশাসন কায়েম যে সম্ভব নয় তা অনুধাবন করার সময় এসেছে। ১৯৭৫ সালে যেমন সম্ভব হয়নি ২০১১ সালেও তা সম্ভব হবেনা।

চেতনাৎসী ড্রোন এবং তুষারের আদর্শিক পদস্খলন প্রসঙ্গেঃ

1

by Aman Abduhu

ফ্যাসিজমের বড় একটা সুবিধা হলো, এখানে বৃহত্তর ডিসকোর্সের স্রোতে গা ভাসিয়ে আরামের সাথে ভেসে যাওয়া যায়। এবং ফ্যাসিজমের বড় একটা বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে ঐ স্রোতে গা ভাসানো বাধ্যতামূলক।

back-Drone_photo0497

 
মজার বিষয় হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আগে ফ্যাসিষ্ট শব্দটা গর্ববোধক ছিলো, তাদের কাছে ইতিবাচক অর্থবোধক ছিলো। আদর্শের পরিচয়বোধক ছিলো। ইটালীতে মুসোলিনির পার্টি সদস্য ওঅনুসারীরা বুক ফুলিয়ে স্লোগান দিতো “লিবরো আ ম্যাসেটো/ ফ্যাসিষ্টা পারফেটো”, অর্থ্যাৎ “বই এবং রাইফেল/ একজন যথার্থ ফ্যাসিষ্ট”।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরাজয় এবং সারা পৃথিবীজুড়ে ইন্ড্রাষ্টিয়ালাইজেশনের সাথে সাথে ইনডিভিজুয়ালিষ্টিক চিন্তাভাবনার উত্থানে এখন ফ্যাসিজম শব্দটা একটা গালি হয়ে গেছে। বিষয়টা অনেকটা বাংলাদেশে “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” ও “শাহবাগি” শব্দদ্বয়ের মতো।

ফ্যাসিজম নিন্দিত, কিন্তু ফ্যাসিজমের জয়জয়কার এখনো পৃথিবীর অনেক দেশে। বাংলাদেশ তার ইতিহাসে ফ্যাসিজমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে এখন। আদর্শ যখন বলবে লাল সবুজ পতাকা পড়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে, এবং তা না করলে তখন আপনে দেশদ্রোহী। চেতনার ইয়াবাখোর কমান্ডাররা যদি বলে জয় বাংলা স্লোগান না দিলে মুক্তিযোদ্ধা না, তাহলে জীবনের মায়া বাদ দিয়ে পরিবার পরিজন ফেলে পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করা লোকটা হয়ে যায় রাজাকার।

ব্যাক্তিগতভাবে ফ্যাসিজম নিয়ে আমি ফ্যাসিনেটেড। মানুষের সাম্প্রতিক ইতিহাসে মানুষ কিভাবে মানুষের মৌলিক একটা বৈশিষ্ট্য- স্বাধীন মত প্রকাশের আজন্ম বেদনাময় চিৎকার ও আকাংখা- কে বারবার দমাতে চেয়েছে এসব পড়তে গিয়ে বারবার আশ্চর্য হই। এখন অবশ্য আর পড়তে হয়না, চোখের সামনে দেখছি সবসময়। যখন পড়তাম, তখন একটা বিষয় আমাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছিলো।

ফ্যাসিজমের ভেতর থেকেই কোন না কোন সময় দ্বিমতের জন্মচিৎকার শুরু হয়। সে চিৎকারের মুখে লবণ দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টাও চিরন্তন। আপনি জামায়াত করেন, মধু মাখিয়ে যান কোন অসুবিধা নাই। যখন দ্বিমত করবেন তখন দেখবেন দ্বিনি ভাই চমৎকার। যশোরের দলত্যাগী এমপি শাখাওয়াতের ছেলে যখন প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেলো তখন জামায়াতের লোকজন বলতে শুরু করলো, এইটা আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তি!! এতোটাই ব্যাক্তিগত প্রতিহিংসার জন্ম দেয় ফ্যাসিজম।

ট্রটস্কি ছিলো রাশিয়াতে পার্টির অনেক উপরের পর্যায়ের লোক। রেড আর্মির কমান্ডার, যুদ্ধমন্ত্রী। ষ্টালিনের সাথে যখন তার নীতিগত মতপার্থক্য হলো, দেখা গেলো দ্বিনী ভাই চমৎকার।

নাৎসী নেতা এবং গণহত্যার হোতা হিমলার ছিলো হিটলারের ডানহাত, শেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে যখন সে এলাইড ফোর্সের সাথে ডিলিংস প্রসঙ্গে হিটলারের সাথে দ্বিমত করলো, জারি হয়ে গেলো গ্রেফতার করে হত্যার নির্দেশ। সারাজীবন ধরে নাৎসি আদর্শের খেদমত তুচ্ছ হয়ে গেলো।

এসবকিছু কারণ ঐ একটাই, ফ্যাসিজম কখনো দ্বিমত সহ্য করেনা। স্রোতের সাথে ভাসতে হয়, স্রোতের সাথেই ডুবতে হয়। জীবনে মরণে আমি তোমার তুমি আমার।

সুতরাং চেতনাগুরু বিশিষ্ট কল্পগল্প নকলবাজ আইজাক জাফরের চোরামি ধরিয়ে দিলে এই বাংলাদেশে হতে হয় স্বাধীনতার শত্রু। আর ততদূর না গিয়েও, ড্রোন প্রসঙ্গে তার দাবীর সাথে দ্বিমত করে যুক্তিতর্ক খুঁজলেই দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নোংরা আক্রমণের টার্গেট হয়ে যেতে হয়।

তরুণ প্রজন্মকে একাত্তরের চেতনাৎসী আদর্শে দীক্ষিত করার আগে বিষয়টা ভাবা দরকার ছিলো, এখন ভেবে লাভ নাই। চেতনাগুরুরা যদি আদেশ জারি করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আপনার বউকে উলঙ্গ হয়ে একহাতে মোম্বাত্তি আরেকহাতে লালসবুজ বেলুন নিয়ে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রোড মার্চ করতে হবে, তাহলে তাই করতে হবে তুষার। আপনি এখানে যুক্তি ব্যাখ্যা খুঁজতে গেসেন? স্বাধীনতার শত্রু!! চেতনাশত্রুর জাটকা/ ফিলটারে খাইসে আটকা!

এইটা ফ্যাসিজমের চিরকালীন ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য। সুতরাং জেনেবুঝে আগুনে লাফ দেবেননা। জাফর ইকবাল ষাড়কে ড্রোনের আবিস্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ধন্য ধন্য রবে মেতে উঠুন; স্বাধনিতার চেতনা বাস্তবায়ন করুন। উনি যদি ভবিষ্যতে দাবী করেন উনি চেতনার বলে বলীয়ান হয়ে নতুন ধরণের স্মার্ট ফোন আবিস্কার করছেন, যেখানে রিংটোন হিসেবে জয়বাংলা স্লোগান দেয়, তাহলে তাকে স্মার্টফোনের আবিস্কারক হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়ে ধন্য ধন্য রবে ফেটে পড়ুন। স্রোতে গা ভাসিয়ে দিন। নিরাপদে থাকুন।

জয় বাংলা।

The dark anarchy rises … Bakshal returns with its hallmark anarchy …

police 1

The abuse of the judiciary and law enforcement agencies have been persistent, since the birth of Bangladesh, very true. Almost all regimes have abused their power in persecuting the opponents in varying degrees (And I guess this practice isn’t endemic to Bangladesh only, many countries with similar socio-political stature face the same phenomena)

However, some interesting and noteworthy aberrations during the past (and present thanks to a farcical election) government’s regime include the arrest and continued incarceration of high profile opposition leaders. At least 25 leaders of the topmost leadership of the opposition party is currently in jail. Starting from the secretary general to the common ward committee members of the main opposition parties have been constantly being subjected to police harassment and sentences. Cases against them include farces like burning of garbage trucks, stealing trivial things from anonymous people etc. Despite the High court rulings that set very strict standards for obtaining remand, police and the lower judiciary are seen abusing those standards and are granted remands. More and more opposition leaders are denied bails. For unknown reasons, eminent people are being kept in prison without granting bails. The list includes newspaper editors, human rights activists, online activists and people from the academia as well.

04_Khaleda%20Zia's%20House_291213

Many opposition leaders are getting arrested just as they voice their demand in public, being shown arrested in previous cases, which are in most cases of absolutely no merit . As a result an atmosphere of fear has been created, an all out police state is being implemented. Many leaders are afraid of coming out in public. Let alone the grass roots level activists who are seldom spending the nights at their own places. And not only that, police are arresting other family members of the leaders family too, including female members. The houses are being ransacked, in some cases bulldozed. There are also reports of the combined forces looting valuables from the households form the opposition activists. In some cases mass arrests are leading upto bribes, and people are being freed based on the amount of bribe being given to police. The already overcapacity prisons are getting are even more crowded by thsese wholesale arrests. There was an instance of arresting 200 topmost leaders of the opposition en mass from their party office, over a case of cocktails been found in their party office premises.

All this harsh treatment meted out to the opposition has an even more harsher underlying subtext . It is true that the prisons have been over capacity for years. But, how are these new prisoners being accommodated ? There lies the more shocking tale. Many convicts are let go by the government. The list includes top terror crime bosses, sentenced ruling party thugs, known drug peddlers, known petty criminals. Some of these criminals are let go on the promise of staying in the field alongside ruling party activists to thwart any political movement of the opposition. Many newspaper reports an increase in the supply of guns in the recent months. Before every other election, their was a strong drive to recover illegal weapons by the previous election time caretaker governments. This time the political government totally shied away from that drive. And a servile Election Commission didn’t push for it either. They even published a farcical decree to not even submit the weapons, insisting only not to carry it !!.

So, spreading the blame equally across the board seems to do injustice to the prominent role this quasi fascist regime, elected through pseudo-elections, is playing in completely decimating the rule of law. The abuse of power to persecute opposition coupled with a flagrant disregard for the rule of law under the current regime is simply shocking and is plainly reminding of the anarchy of the mid seventies.

ক্ষমার বন্যায়, স্বাগতম অন্যায়

মাহবুব মিঠু।।

অবৈধ সরকারের অবৈধ সমাজ কল্যাণ (অকল্যাণ না হলেই চলবে) মন্ত্রী, জনাব সৈয়দ মহসীন আলী শিশুদের সামনে মঞ্চে বসে বিড়িতে সুখটান দিয়ে ফেইসবুকে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। অতঃপর তিনি ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে আবারো ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। বিষয়টা এখানেই মিটে যাবার কথা। কিন্তু আদতে কি সেটা ভাল হোত? উনি তো অন্যায় করেননি শুধু। অপরাধও করেছেন। সাজা না পেয়ে বা আদালত কর্তৃক ক্ষমা না পেয়ে ফেইসবুকে ক্ষমা চাইলেই কি সব মিটে গেলো?

ওনার ফেইসবুক পেজে দেখলাম জাতির কিছু অতি সজ্জন এবং ক্ষমাশীল ব্যাক্তিবর্গ তাকে সাধুবাদ জানিয়ে ভরে ফেলেছেন। অবশ্য এই ক্ষমাশীলদের কেউ ওনাকে জিজ্ঞেস করেনি, দু’দিন আগে যে উনি প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রেখেছিলেন, তার জন্য ক্ষমা চাইবে কবে? অবৈধ নির্বাচনে জিতে নিয়ে (জিতে এসে নয়) প্রথম সাংবাদিকদের সামনে তিনি মুখ খুলে বলেছিলেন, ‘হু ইজ বিএনপি?’/ তখন এই ইজ্জত দেনেওয়ালেদের অনেকেরই মুখে কথা ফুটেনি। তার কয়দিন বাদেই আইন ভঙ্গ করে তীব্র নিন্দার শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে ক্ষমা চাইলেন, আর বিদ্যুতের বেগে তিনি মহান ব্যাক্তি বনে গেলেন? তিনি যদি প্রশংসারযোগ্য এবং সজ্জন ব্যাক্তি হয়ে থাকেন তবে সব ভুল এবং সব অন্যায়ের জন্যই ক্ষমা চাইতেন।

সাবাশ জনগন!

আমাদের অবৈধ মন্ত্রী বাহাদুর গরু মারিয়া জুতাদান প্রবচনের দারুন একখান উদাহরণ সৃষ্টি করিলেন! আপনারা সাধুবাদ জানাইয়া এই উদাহরণ সৃষ্টির ঘটনায় ইতিহাস হইয়া রহিলেন।

গলা ফাটাইয়া বলিতে ইচ্ছা করে, ওহে আবুল! আমার বাছাধন। তোমার কি ফেইসবুকে এ্যাকাউন্ট ছিল না?

ওহে কালা বিলাই! তুমি বলিলেই তো তোমাকে একখানা আস্ত এ্যাকাউন্ট ফ্রীতে খুলিয়া দিতাম!

সেই এ্যাকাউন্টে তুমি ক্ষমা চাহিতে! জনগণ তোমাকে মহান বলিয়া ক্ষমা করিয়া দিতো!

প্রশ্ন আসতে পারে, চুরি করা আর প্রকাশ্যে বিড়ি ফুঁকা কি এক হোল?

কিছুটা এক তো বটেই, আবার অনেক পার্থক্যও আছে। উভয়েই আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। পার্থক্য হচ্ছে অপরাধের গুরুত্বের ক্ষেত্রে।  উভয়েই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।  তবে শাস্তির পরিমাণ অপরাধ ভেদে ভিন্ন। কোনটাতে গুরু শাস্তি, কোনটাতে লঘু শাস্তি।

যাইহোক, যারা মন্ত্রীকে বাহবা দিয়ে সিক্ত করেছেন, তাদের কেউ অবৈধ মন্ত্রীকে দু’টো প্রশ্ন করেনি।

প্রশ্ন- একঃ জরিমানার টাকা শোধ করেছেন তো?

প্রশ্ন- দুইঃ  অবৈধ মন্ত্রী বাহাদুর! বলুন তো কোন কোন অপরাধ করে ফেইসবুকে ক্ষমা চেয়ে শাস্তি এড়িয়ে মহান হওয়া যায়? চট জলদি বলে ফেলুন। আমারও মনে খায়েশ জেগেছে অপরাধ করে ক্ষমা চেয়ে মহান হোতে।

বাঙলাদেশের এই সব ভদ্দরলোকেদের অনেকেই পেটের দায়ে দুই টাকার জিনিস চুরি করা চোরকে ধরে আচ্ছামতো প্যাঁদানি দিতে ভুল করে না। পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চেয়েও দুর্বল চোরের অপরাধের ক্ষমা নেই। কিন্তু ভদ্দর লোকেরা আইনভঙ্গ করে ফেইসবুকে ‘সরি’ ষ্ট্যাটাস মারলেই খেইল খতম! চারিদেকে জয় জয়াকার।

মন্ত্রী বলে কথা! হোক না সে অবৈধ মন্ত্রী। তারপরেও মন্ত্রী তো!

আমাদের ক্ষমাশীল ব্যাক্তিরা ভুলে গেছেন, অন্যায় আর অপরাধ দু’টো ভিন্ন জিনিস। আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হয়ে থাকলে আপনি, আমি কে তাকে ক্ষমা করার? ক্ষমা করতে হলে সেটা করবে আদালত। আগে জানতাম পৃথিবীর তাবৎ বাঙালীদের সবার দু’টো কমন পেশা আছে। উকিল এবং ডাক্তার। বিপদে পড়ে কারো কাছে গেলে কেউ  আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না। আইন যে বানান করে লিখতে পারে না, সে ও দু’একটা ধারা বলে দেবে। আর অসুখে পড়েছেন? রাস্তার যে কোন আগন্তুককে বললেই সে হড়হড় করে ডায়াগনোসিসসহ পথ্য বাতলে দেবে। আজকে জানলাম, আমরা সবাই যোগ্য বিচারকও বটে!

ক্ষমাশীলদের মন্তব্যের সুর দেখে মনে হয়েছে, মন্ত্রী হয়ে উনি অপরাধ করে ক্ষমা চেয়েছেন, এটাই তো বিরাট ব্যাপার!  আবার শাস্তি কিসের? জরিমানা কিসের? অথচ ঘটনা হবার কথা ছিল ভিন্ন। একজন সাধারণ মানুষ আইন ভঙ্গ করে সাজা বা জরিমানা দিলেই হয়ে গেল। কিন্তু মন্ত্রীদের মতো বড়সড় লোকদের শুধু সাজা পেলেই চলবে না। এরপরে ব্যাক্তিগতভাবে ক্ষমা চাইতেও হবে। পৃথিবীর সর্বত্র সেটাই ঘটে। আমাদের দেশে উল্টো। এটা আমাদের সামন্তবাদী মনোভাবে প্রতিফলন।

যারা বিনা শর্তে অবৈধ মন্ত্রী বাহাদুরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তারা কয়েকটি বড় দাগের ভুল করেছেন।

প্রথমতঃ সে জরিমানার টাকা  দিয়েছে কিনা সে প্রশ্ন করা হয়নি। অপরাধের শাস্তি কি শুধু শক্তিহীনরা পাবে? আপনাদের মন্তব্যে সেই ইঙ্গিতই করে। এটা পুণরায় ক্ষমতাবানদের অপরাধ করতে উৎসাহিত করবে।

দ্বিতীয়তঃ তাকে মন্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে মূলতঃ এই সকল ক্ষমাশীলরা অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে আসা একটা অবৈধ, ফ্যাসিবাদী সরকারকেই মেনে নিয়ে গণতন্ত্র হত্যায় নিজেকেও শরীক করল।

বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক Moinul Ahsan Saber ভাইয়ের আজকের ষ্ট্যাটাসটা দিয়ে লেখা শেষ করব। তিনি লিখেছেন

”মাঝেমধ্যে দুএকটি অন্যরকম ঘটনা দেখতে ইচ্ছা করে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী স্কুল পড়ুয়াদের অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসে সিগারেট টানছেন। হঠাৎ পুলিশ চলে এলো, স্যার, আপনি প্রকাশ্যে ধুমপান করতে পারেন না।

: বলে কী! আমি না মন্ত্রী!

:আপনি যেই হন, এটা পারেন না। এটা দন্ডনীয় অপরাধ। আপনাকে ফাইন দিতে হবে।

: কোত্থেকে দেব। মাত্র মন্ত্রী হয়েছি …/ মাছের চাষাবাদ কিছুই শুরু করিনি।

: দিতে হবে স্যার। এই যে স্লিপ।আর দেখুন সবাই আপনার দিকে কীভাবে তাকিয়ে আছে।

মন্ত্রী ছাত্র আর অভিভাবকদের দিকে তাকাবে। পদের সঙ্গে মানানসই না হলেও একটু লজ্জাও পাবে। চামচা কেউ এগিয়ে আসতে নিলে তাকে থামিয়ে ফাইন পরিশোধ করবে। তারপর বাচ্চা বাচ্চা ছাত্রদের দিকে ফিরে গলা নামিয়ে বলবে, তোমরা রেজাল্ট ভালো করেছ। আরো নিশ্চয় ভালো করবে। অনেক উন্নতি করো জীবনে। বড় কিছু হও। আর, যদি মন্ত্রী হও কখনো, শুধু মন্ত্রীই হোয়ো। একইসঙ্গে বেয়াক্কেলও হোয়ো না।”

https://www.facebook.com/moinul.saber/posts/10203095776985715?stream_ref=10

হ্যাঁ, এটা করলেই শুধু তিনি ধন্যবাদ পাবার যোগ্য হতেন একটা শর্ত সাপেক্ষে। শর্তটা হোল, একটা অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে অবৈধ মন্ত্রী হয়ে যে অন্যায় করেছেন, তারজন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কবে?

পদত্যাগ করে সবার কাছে একটা সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন কবে?

On the edge of order and chaos

It seems that every man, woman, child, their pets, even their Apple devices seem to have an opinion on what BNP should have done.  Well, I am not going to add to that volume.  I don’t presume to lecture politicians who have been practising their craft since before I was a twinkling in my parent’s eyes on what they should have done.  I can, however, revisit what I wrote exactly halfway through the Awami League’s last term, and make an educated guess about how things could unfold from here on.

chaos

… there are good reasons to expect an AL win in 2013 election.  What happens then?

… AL may well win the 2013 election, but its ability to hold on to power and govern successfully will depend on four key powerbrokers in Bangladesh: the bureaucracy, the army, foreign powers, and the business sector.

That’s what I wrote in July 2011.  To be sure, I got a lot of things wrong.  Follow through the links and you’ll find that I was fearing that a fragmented BNP would hand Awami League a narrow victory in a flawed election.  The reality is that while BNP was more united than at any time in its history — not a single member of any standing left the party to join the 5 January election — and might have won any semi-decent election in a landslide, Mrs Wajed decided to hold an election that surpassed the 1996 or 1988 farces to rival the 1971 ‘by elections’ held under Lt Gen Niazi.

Clearly, I did not see this coming.  But then again, very few did.

As such, the Prime Minister’s ability to push the envelop should not be underestimated. Nonetheless, it might still be instructive to think about how the four bastions of power needed to govern Bangladesh are likely to behave from here on.

The analysis is most straightforward with the army.  As I’ve argued in a number of places (for example, here), the only likely scenario under which a military coup is plausible is during a political crisis where the army is asked to crack down on civilian population.  And let me stress the ‘crack down’ — not mere deployment, not a specific operation by a select unit in a faraway place like Satkhira, but a general order to kill hundreds if not thousands of people.  The Awami government has thus far managed to keep the army away from any such conflagration.  With the opposition’s street protests essentially ending, at least for now, the army is not expected to be asked to crack down on anyone.  Hence, at least for now, Mrs Wajed is probably not fearing any coup.

It’s slightly trickier to analyse the civilian bureaucracy, whose active co-operation is needed to govern the country.  Let me reproduce what I said in July 2011:

The people who make up mid-to-senior ranks of the bureaucracy have spent most of their working lives during the post-1990 era.  Like everything else in the country, these officers are directly or indirectly categorised (by themselves, their peers, and their bosses) along partisan lines.  And most officers have learnt to live with the system — if your party is out of power, you cover your head, put up with the situation, and survive for five years, after which your party will be back, and you’ll make up for the lost time with accelerated promotions and foreign trips.

The two years of 1/11 rule had slightly upset this balance.  But because both Awami/pro-71 types and nationalist/Islam-pasands were hurt equally, it was a wash overall.  If all of a sudden it appears that there is no prospect of a non-AL government beyond 2013, a significant part of the bureaucracy will reassess the situation.

One possible scenario is that anyone who lacks the strongest Awami credential (family from Gopalganj, elected into some student council in the 1980s with a Mujibist BCL ticket, suffered under BNP) will become extremely risk averse.  The result, implementation of various programmes and policies will become even more lacklustre than is already the case.

But beyond worsening the quality of governance, it’s not clear whether the bureaucracy will actively precipitate a political crisis, let alone recreate a civilian coup like 1996.

One reading of the new cabinet line up — whereby the political nobodies like Dipu Moni and Rezaul Karim Heera are out and stalwarts like Tofail-Amu-Naseem are back — is that the Prime Minister is well aware of bureaucratic lethargy undermining her government.  And nowhere would a seasoned, experienced minister be needed more than in the ministry that deals with the big end of the town.

In this government, after the Prime Minister herself, the most important person is the Commerce Minister.  He is the man who has to ensure that major business houses (and NGOs such as BRAC) are not hostile to the government.  For the most important industry that matters for the economy — the readymade garments — Minister Tofail Ahmed is already working to to ensure that the international buyers come back quickly and stick around (the outlook for the industry is much rosier than some would have you believe — subject of a different post).  For other products, Minister Tofail will have to work with the businessmen to ensure that Dhaka markets are well supplied so that the cityfolks are content.

As long as the Prime Minister can maintain overall stability, it’s quite likely that the Commerce Minister will keep the business sector content — after all, what matters most to the businessmen is certainty and stability.

Stability is also the thing that foreigners ultimately want in Bangladesh.  India-China-America, everyone has their agenda, and these agendas may not align.  But no one wants instability in a country of 150 million Muslims.  Given the distrust — justified or otherwise — of Tarique Rahman and Jamaat-e-Islami, and the BNP chairperson’s practical difficulties in dissociating with them, the Prime Minister appears to have convinced the interested foreigners that she is better placed to provide stability and certainty.

Thus, it appears that powers-that-be needed to govern Bangladesh are willing to stick with a Prime Minister who promises order.  And at least for now, it’s hard to see what BNP can do alter this.  But perhaps BNP doesn’t need to do anything.

One cannot stress enough that the Prime Minister’s grip on the pillars-of-power rests on one and only one claim: she can provide stability.  Not the spirit of 1971.  Not development records.  Not Digital Bangladesh.  Nothing like that.  All she has is the promise — seemingly justified at this stage — that she can provide order, while her rival invites the risk of chaos.

What can make lie of this promise?  Why, events, my dear reader, events.  Just consider if something like two events from the Prime Minister’s last term were to occur now.

Just imagine that there is a sudden and violent mutiny in the head quarters of RAB, killing dozens of majors and colonels, while the Prime Minister dithered.  In 2009, when this happened at the BDR head quarters, the government wasn’t even two-months old, and frankly, even people like Farhad Mazhar and Nurul Kabir propagated the downtrodden-BDR-vs-fat-cat-army line.  If something like this happened now, the reaction from all quarters would be very, very different.

Alternatively, just imagine that a Bangla translation of this book is associated with Hassanul Huq Inu or some other leftist minister of the current government, the word is spread around the Bangla cyberspace rapidly, and a hitherto little-known group of Islamists, based in the capital’s major education institutions, organise a million-strong march in the heart of the capital?  You see, in the specific circumstances of early 2013, the government had gotten away with the events of 5 May 2013.  But 2014 and beyond will be very different.

The Prime Minister has told the powers-that-be that she will keep order.  The reality, however, is that she stands on the precipice of chaos, for the simple reason that Bangladesh — a super-densely populated humid swamp — is always at the edge of chaos.  Usually, mandate from a democratic election, or the prospect of the next one, keeps us from falling over the cliff.  By taking away the option of a democratic election, the Prime Minister has effectively put a ticking time bomb on herself.

টেলিভিশনের সাম্প্রতিক টক শো গুলোতে উপস্থাপিত বিভিন্ন চিন্তাধারা বা ডিসকোর্স

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত

images

গত প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টক শো গুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে ‘গণজাগরণ মঞ্চে’র উত্থানের সময় থেকে এর শুরু। আর গত ৫ জানুয়ারীর সংসদ নির্বাচনের পটভূমিতে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক আন্দোলন চলেছে তার বিভিন্ন রকমের বয়ানের মধ্য দিয়ে এই টক শো গুলো দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে সম্প্রতি ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল সামাজিক মিডিয়ার ব্যাপক বিস্তারের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।

সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ডিসকোর্স বা চিন্তাধারাগুলো এই টক শো গুলোতে নানা ভাবে উঠে এসেছে। সংবিধান এবং রাষ্ট্রীয়

আইন-কানুনের বিভিন্নমুখী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও ভাষ্যে এই টক শো গুলো মুখর হয়ে উঠেছে। সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন চিন্তা-প্রণালী বা ডিসকোর্সের প্রতিফলন ঘটিয়ে নানান তর্ক-বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এই টক শো গুলো।

টক অব দ্য টাউন এই টক শো গুলো এভাবে আমাদের জনমানসের চেতন ও অবচেতনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। কাজেই আমরা এই টক শো গুলোকে নিছক বিনোদন হিসেবে দেখতে পারি না। এগুলো কীভাবে আমাদের সামষ্টিক মনঃস্তত্ত্বে এর নানাবিধ ছায়া-প্রচ্ছায়া ফেলছে তার একটি অনুসন্ধান আমাদের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

প্রথম পর্যায়ে আমরা এই টক শো গুলোতে উপস্থাপিত ডিসকোর্স বা চিন্তাধারা গুলোকে আমাদের বোঝার সুবিধার্থে বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় শ্রেণীবিন্যাস করতে পারি। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রত্যেকটি শাখা প্রশাখার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহ উন্মোচন করতে পারি। তৃতীয় পর্যায়ে শাখা প্রশাখা গুলোর পারস্পরিক মিল ও অমিল গুলো তুলনা করতে পারি। চতুর্থ পর্যায়ে শাখা প্রশাখা গুলোকে বিভিন্ন মানদন্ডে মূল্যায়ন ও বিচার করে কোনগুলো বেশি যৌক্তিক, সঙ্গতিপূর্ন এবং কল্যাণকর তা নির্ধারণ করতে পারি।

টক শো গুলোর এই চিন্তাধারা গুলোকে প্রথমে আমরা মোটা দাগে দু’টি শাখায় ভাগ করতে পারি। এটা আমরা করতে পারি কেবলমাত্র এগুলোকে বোঝার সুবিধার জন্য। মনে রাখতে হবে যে এই শ্রেণীবিভাগ যেন কোনোভাবে অতিসরলীকরণ হয়ে না যায়। কারণ অতিসরলীকরণ বিষয়ের বহুত্ব ও জটিলতাকে অনেক ক্ষেত্রে তরল করে পানসে করে ফেলে। তো সেই ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থেকে টক শো গুলোর চিন্তাধারা গুলোকে আমরা মোটা দাগে আওয়ামী-লীগ-সরকার-সমর্থক ও আওয়ামী-লীগ-সরকার-বিরোধী – এই দু’ভাগে ভাগ করে দেখতে পারি।

আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থক ডিসকোর্স বা চিন্তাধারা – এই শাখা ডিসকোর্সটির দু’টি প্রশাখা নিয়ে এখানে আলোচনা করছি।

  • প্রথম প্রশাখা ডিসকোর্সটি অনেকটা এরকম – বাংলাদেশকে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র আলোকে বিনির্মাণ করতে হবে। এজন্য ১৯৭২ এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। ১৯৭১ সালে জামায়াত যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল; গণহত্যা, মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধে সহযোগিতা করেছিল; সেহেতু এদের বিচার এই মুহূর্তে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে এটাই প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার। তাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এই পর্যায়ে গৌণ হয়ে গেছে।

হাসানুল হক ইনু, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, মোহাম্মদ আরাফাত থেকে শুরু করে আবেদ খান, শ্যামল দত্ত, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ এই ডিসকোর্সের ধারক ও বাহক। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র এই বয়ানকারীরা বর্তমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ’ শক্তির দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখান। এমনকি পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধে পরিণত হতে পারে বলে প্রায়ই তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আসলে একথা বলে তাঁরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিশেষ করে জামায়াতকে ‘নির্মূল’ করতে চান। জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ বিএনপির সঙ্গে সংলাপ ও সমঝোতায় এঁরা বিশ্বাসী নন। সংলাপের পূর্বশর্ত হিসেবে এঁরা বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহযোগিতায় এঁরা আসলে ক্ষমতাকে আঁকড়ে থাকতে চান। তাই এঁরা আসলে চরমপন্থী ‘গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী’ বা ফ্যাসিবাদী।

  • আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থক ডিসকোর্সের দ্বিতীয় প্রশাখাটি হল এরকম – ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’য় বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। এ কারণে ১৯৭২ এর সংবিধানে ফেরত যেতে হবে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে কোনো আপোষ হবে না। জামায়াতের বিচার, শাস্তি ও নিষিদ্ধকরণে সোচ্চার ও আপোষহীন থাকতে হবে। তবে গণতন্ত্রের স্বার্থে সুষ্ঠ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রশ্নে কোনোরকম পূর্বশর্ত ছাড়াই সংলাপ ও সমঝোতা করা যেতে পারে। আর এখানেই এই নরমপন্থী বা মধ্যপন্থী ডিসকোর্সটি প্রথম চরমপন্থী ডিসকোর্স থেকে আলাদা। ড. আকবর আলী খান, সুলতানা কামাল, সৈয়দ আবুল মকসুদ, ড. সলিমুল্লাহ খান প্রমুখ এই চিন্তা প্রশাখার প্রবল প্রবক্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

যারা বাংলাদেশের ‘সুশীল সমাজে’র নেতৃস্থানীয় মুখপাত্র – যেমন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মাহফুজ আনাম প্রমুখেরাও মূলত এই দ্বিতীয় নরমপন্থী বা মধ্যপন্থী চিন্তা প্রশাখার অনুসারী। যদিও তাঁরা নিজেদেরকে একধরণের উন্নাসিক ‘নিরপেক্ষতা’র আবরণে আবৃত রাখতে পছন্দ করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী ডিসকোর্স বা চিন্তাধারা – এই শাখা ডিসকোর্সটির তিনটি প্রশাখা নিয়ে এখানে আলোচনা করা হল।

  • আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী ডিসকোর্স বা চিন্তাধারার দ্বিতীয় প্রশাখাটি লক্ষ করা যায় ড. পিয়াস করিম, ড. আসিফ নজরুল, সাদেক খান, মাহফুজউল্লাহ প্রপ্রথম প্রশাখা ডিসকোর্সটি ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র প্রচলিত বয়ানকে অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বলে বিবেচনা করে থাকে। যেমন ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ – এই দু’টি জাতীয় মূলনীতি সম্পর্কে এই ডিসকোর্সের রয়েছে দার্শনিক ও আদর্শিক মতভেদ। এই জাতীয় মূলনীতি দুটিকে প্রতিস্থাপন করার জন্য এঁদের রয়েছে নিজস্ব উচ্চায়ত ও শ্রেয়তর চেতনা।

এঁরা বলে থাকেন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ মধ্যযুগের ধর্মান্তরের ইতিহাস, সেইসঙ্গে এদেশের ভৌগোলিক সীমানা ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাকে নগণ্য করে যে অসম্পূর্ণ ও একপাক্ষিক বাঙালি জাতীয়তার চেতনা উপস্থাপন করেছে তা সর্বজনগ্রাহ্য ‘জাতীয়’ চেতনা হতে পারেনি। এঁরা মনে করেন যে শুধুমাত্র বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ভিত্তিক জাতীয় চেতনা বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে এঁরা মনে করেন যে দীর্ঘ ধর্মান্তরকরণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ইসলাম এই জনপদে এসেছে ও এখানে এর মূল প্রোথিত করেছে। সেই ইসলামের জাতি ও রাষ্ট্র গঠনমূলক চেতনা ধারণ করলে তা সর্বগ্রাহী হয়ে অসাম্প্রদায়িক ও পূর্ণাঙ্গ জাতীয় চেতনায় পরিণতি পেতে পারে।

এছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অধ্যুষিত রাষ্ট্রে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র ধারণা একটি ফিরিঙ্গি ধারণা বলে এঁরা মনে করেন। জাতীয় মনঃস্তত্ত্বে উপনিবেশ যুগের যেসব অবশেষ চেতন ও অবচেতনে রয়ে গেছে তার একটি হল এই ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’।

মুসলিম ঐতিহ্যে গড়ে ওঠা এই জনপদে জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে ধর্মের নৈতিক ও আদর্শিক ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক হওয়ায় এখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ একটি বৈরী মতাদর্শ।

আধুনিক ইউরোপে চার্চ ও রাষ্ট্রকে আলাদা করতে হয়েছিল চার্চের নিপীড়ন থেকে মুক্তি পাবার জন্যে। এছাড়া খ্রিস্টান ধর্মে সিজারের জগত ও ক্ষমতাকে ঈশ্বরের জগত ও ক্ষমতা থেকে যিশু নিজেই আলাদা করে দিয়েছিলেন। ফলে খ্রিষ্টধর্ম প্রধান ইউরোপে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র জন্য একটি সহায়ক ও উপযোগী পরিবেশ বিরাজমান ছিল। অন্যদিকে মুসলিম ঐতিহ্যে ইসলামের ভূমিকা প্রথম থেকেই সর্বব্যাপী ও অখন্ডনীয়। এই কারণে ইসলামকে ইউরোপের আদলে শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রেখে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করা হলে তা জাতীয় চেতনায় সর্বনাশা শূন্যতার সৃষ্টি করে। জাতি ও রাষ্ট্রের নৈতিক পতন ও স্খলন ডেকে আনে। ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের নৈতিক উৎকর্ষের উৎস ও প্রেরণা হিসেবে ইসলাম ধর্মের সর্বোচ্চ অবস্থান ও ভূমিকা মুসলিম ঐতিহ্যে স্বর্ণালী অর্জনের মধ্য দিয়ে একটি অনন্য সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল। বাংলাদেশের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় চেতনায় ইসলামের সেই একই গৌরবজনক ভূমিকা আবারো সম্ভব ও অতীব কাম্য। এছাড়া ইসলাম অন্তর্নিহিতভাবে অসাম্প্রদায়িক হওয়ায় অন্যান্য ধর্ম ও জাতিসত্ত্বার অনুসারীদের অধিকার এখানে সমমর্যাদায় স্বীকৃত।

এসব বিবেচনায় ১৯৭২ এর সংবিধান মূল্যায়নে এই চিন্তাধারা একে গণ-আকাঙ্খা পরিপন্থী বলে মনে করে থাকে। চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার এই চিন্তাধারা বা ডিসকোর্সের প্রধান প্রবক্তা হয়ে উঠেছেন। টেলিভিশন টক শো গুলোতে এই ডিসকোর্সটিই প্রধান প্রতিষ্ঠান বিরোধী ও বিপ্লবী ডিসকোর্স। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বর্তমান ক্ষমতা ও চেতনা কাঠামোকে আমূল রূপান্তরে বিশ্বাসী এই বিপ্লবী ডিসকোর্সটিকে টেলিভিশন টক শো প্রথম পর্যায়ে কিছুটা সহ্য করলেও বর্তমানে তা প্রায় সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ। কেননা এই চিন্তাধারায় জামায়াতের যুদ্ধবিরোধীতার সুষ্ঠ ও স্বচ্ছ বিচার যেমন প্রত্যাশিত, তেমনি বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইসলামপন্থী রাজনীতি ও সংস্কৃতির একটি ইতিবাচক ভূমিকা ও গুরুত্ব-ও যথাযথভাবে স্বীকৃত।

বর্তমান দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তি সমাবেশের পটভূমিতে এই ডিসকোর্স বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে অনেক বেশী কার্যকর ও ফলপ্রসু হতে পারে বলে উপস্থাপিত হয়। ড. শাহীদুজ্জামান-ও ইদানীং এই ডিসকোর্সের একজন শক্তিমান মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। তিনিও ইসলামপন্থী দল ও মত নিয়ে কোনো শুচিবাই পোষন করেন না। বাস্তবতার নিরিখে ইসলামপন্থীদের অবস্থান ও ভূমিকাকে বিবেচনা ও মূল্যায়নে তিনি মুক্তমনা ও উদার।

  • আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী ডিসকোর্স বা চিন্তাধারার দ্বিতীয় প্রশাখাটি লক্ষ করা যায় ড. পিয়াস করিম, ড. আসিফ নজরুল, সাদেক খান, মাহফুজউল্লাহ প্রমুখের বিশ্লেষণ ও বয়ানে। ফরহাদ মজহারের চিন্তাধারার অনেক উপাদান এঁদের মধ্যে দেখা গেলেও, এঁরা উদার গণতন্ত্রের সম্ভাবনা ও ভূমিকায় অনেক বেশী আস্থাবান। নিয়মতান্ত্রিক, সাংবিধানিক আইনী কাঠামোর মধ্যেই এঁরা ভবিষ্যত বাংলাদেশকে প্রধানত দেখতে চান। তাই এঁদেরকে শেষ বিচারে সংস্কারপন্থী বা মধ্যপন্থী বলা যায়। বিপ্লবী বা আমূল পরিবর্তনপন্থী এঁরা নন। সেই বিচারে এঁরা হয়তোবা মূলধারার মুখপাত্র। তাই এঁরা বৃহত্তর সমাজে অনেক বেশী গ্রহণযোগ্য ও সহনীয়। এবং এই কারণে উপরোক্ত বিপ্লবী ডিসকোর্সের চাইতে এঁদের নরমপন্থী বা মধ্যপন্থী ডিসকোর্স টেলিভিশন টক শো গুলোতে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী স্থান পায়।

  • এবার আলোচনা করবো এই ধারার তৃতীয় প্রশাখাটি নিয়ে। এই প্রশাখার ধারক ও বাহক নূরুল কবির টেলিভিশন টক শো-র একজন অনন্য তারকা হয়ে উঠেছেন। তাঁকে উপরে উল্লেখিত কোনো শাখা প্রশাখাতেই সম্পূর্ণভাবে বিরাজ করতে দেখা যায় না। তিনি এবং আনু মুহাম্মদ হয়তোবা এখনো ক্লাসিকাল কমিউনিস্ট। তবে এঁরা সিপিবি বা বাসদ মার্কা বামপন্থী, যেমন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বা খালেকুজ্জামান ভূইয়া-দের চেয়ে অনেকাংশে ভিন্ন প্রকৃতির। সেলিম বা ভূইয়া-রা শেষ পর্যন্ত জামায়াত বিরোধীতার জোশে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগে বিলীন হয়ে যান। জামায়াত বিরোধীতায় নূরুল কবির ও আনু মুহাম্মদ-ও সোচ্চার ও আপোষহীন। তবে এটা করতে গিয়ে তাঁরা ফ্যাসিবাদের সঙ্গে মিশে যান না। এখানেই তাঁরা অন্য সবার চাইতে আলাদা। এছাড়া নূরুল কবির ‘সুশীল সমাজ’ ও সেনা-সমর্থিত এক এগারো সরকারের-ও ঘোর সমালোচক ছিলেন। আর আনু মুহাম্মদ জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তাঁর চিন্তা ও মতাদর্শের প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। এই দিক দিয়ে তাঁর চিন্তা ও কাজের মধ্যে সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। তবে নূরুল কবিরের সর্বব্যাপী সমালোচনা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা সর্বদা স্পষ্ট নয়। তাঁর সর্বব্যাপী প্রতিষ্ঠান বিরোধী সমালোচনার পাশাপাশি তিনি যদি তাঁর ইতিবাচক চিন্তার রূপরেখাটি উপস্থাপন করেন তাহলে তাঁর ভক্তেরা আরও ভালো করে তাঁকে বুঝতে ও অনুসরণ করতে পারবে।

টেলিভিশনের টক শো গুলোতে যেসব ডিসকোর্স সম্প্রতি আমরা লক্ষ করছি সেগুলোর শ্রেণীবিন্যাস ও অনুধাবনে এই প্রাথমিক প্রচেষ্টাটি নিবেদিত হল। এটি সম্পূর্ণভাবে করা গেছে, বা সকল চিন্তাধারা বা ডিসকোর্স গুলোকে এখানে চিহ্নিত করা গেছে – সেই দাবী নিশ্চয়ই করা ঠিক হবে না। তবে এই পদ্ধতিগত শ্রেণীকরণ ও মূল্যায়নের ধারাটি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়। আরো অনেকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। কারণ আমাদের জনমানস ও সামষ্টিক মনঃস্তত্ত্ব গঠনে ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল সামাজিক মিডিয়ার এই ডিসকোর্স গুলোর রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ও অপরিসীম ভূমিকা।


লেখক পরিচিতিঃ মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত। ঢাকার ইংরেজী মাধ্যম স্কুল স্কলাসটিকায় কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত। তাঁর ইংরেজী ভাষায় রচিত ‘ডিসকভারিং বাংলাদেশ’ নামক একটি বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয়ক গ্রন্থমালা বিভিন্ন ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে পাঠ্যবই হিসেবে প্রচলিত। তিনি সমকালীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও শিল্প-সংস্কৃতির একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক।

ই-মেইলঃ manwar.shamsi@gmail.com

শেখ মুজিবের প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়ায়…

by  WatchDog Bd

বোধহয় ১৯৭৩ সালেই বুঝতে পেরেছিলেন। যে বিশাল জনসমর্থন আর ভালবাসা নিয়ে দেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন তা ফিকে হয়ে আসছে। রাজনীতির মাঠ এবং সংসদ কোন ফ্রন্টেই স্বস্তিতে ছিলেন না। একদিকে মাওলানা, অন্যদিকে ইনু, মিনু, রব, মতিয়াদের রণহুংকার, পাশাপাশি গাজী গোলাম মোস্তফার ঔরসে জন্ম নেয়া চাটা আর লুটেরার দল, কোনটারই সুরাহা করতে পারেননি তিনি। হয়ত খুব তাড়াতাড়ি বুঝে গিয়েছিলেন অঙ্গুলি হেলনে জাতিকে নাচানো আর ক্ষমতার মসনদে বসে দেশ চালানো এক জিনিস নয়। ৭৪ সালের শুরুর দিকে বুঝাই যেত না দেশে কোন প্রশাসন আছে। পরাধীন জাতি হিসাবে এ দেশের মানুষ যা দেখেনি তাই দেখতে শুরু করল স্বাধীনতার উষালগ্নে। হত্যা, গুম, খুন আর লাশের মিছিল। শতকার ৯৯ ভাগ জনসমর্থন হয়ত ৮০-৮৫ ভাগে নেমে এসেছিল। তিনি সহজ ভাবে নিতে পারেননি নিম্নমুখী এই যাত্রা। আজকের জাদরেল মন্ত্রী তোফায়েল আহমদের হাতে ধরেই রচিত হয় কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনার পর্ব। অভ্যুদয় হয় নতুন এক বাহিনী…রক্ষীবাহিনী। কন্যা হাসিনার মত বাবা শেখ মুজিবও রাতের অন্ধকারে পাঠাতেন তাদের। মধ্যরাত অথবা শেষরাতের দিকে দরজায় কড়া নাড়ত। খুলতে দেরি হলে হায়েনার উন্মত্ততায় ঝাঁপিয়ে পরত। পরের ইতিহাস জানতে খুব গভীরে যেতে হবেনা আমাদের। আজকের শেখ হাসিনা উনার বাবারই কার্বন কপি। বুক হতে সন্তানকে নামিয়ে ওরা চোখ বেধে গাড়িতে উঠাত। তারপর মিলিয়ে যেত রাতের অন্ধকারে। পরদিন বেওয়ারিশ লাশের তালিকায় যুক্ত হত নতুন একটা লাশ। উচ্ছিষ্ট খোর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর দল বলতো, ওহ! উনি তো সবার পিতা, তাই একটু শাসন করছেন মাত্র। কিন্তু হায়, এ শাসন বুক খালি করে দিত হাজারো মায়ের। স্ত্রীকে করতো স্বামীহারা, পিতাকে করতো সন্তানহারা। আজকের মত সেদিনও কাউকে কাঁদতে দেয়া হতোনা। পিতার থানা-পুলিশ সন্তানদের জন্য ছিল নিষিদ্ধ। ৭৫’এর শুরুর দিকে জাতি হঠাৎ করেই বোবা বনে যায়। অনিশ্চিত স্তব্ধতায় থেমে যায় জনজীবন। ততদিনে দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে ইস্যু করা হয়ে গেছে জাতি ধর্ষনের স্থায়ী লাইসেন্স । তাও সেই পিতার হাত ধরেই। কন্যা শেখ হাসিনার মতই সমালোচনা হজম করার উদর নিয়ে জন্ম নেননি পিতা শেখ মুজিব। কলমের এক খোঁচায় গোটা দেশ হজম করার আইন করেছিলেন। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের মুখে এবার বেজে উঠে নতুন সুর, আহ! এ যে সমাজতন্ত্রের লাল সূর্য!

পচাত্তরের হত্যাকারীরা অন্তত একটা উপকার করে দিয়ে গেছে শেখ পরিবারের জন্য। একজন ব্যর্থ সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে অমর করে দিয়ে গেছে চিরদিনের জন্য। বাকশাল নিয়ে পিতা শেখ মুজিব যে পথে হাঁটা শুরু করেছিলেন তার শেষ গন্তব্য ছিল ভাগার। যারা বিস্তারিত জানতে আগ্রহী তাদের জিম্বাবুয়ের এক কালের পিতা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের জীবন কাহিনী পরে দেখার অনুরোধ করবো।
http://www.amibangladeshi.org/blog/01-22-2014/1440.html