নাটকে ভরা নির্বাচন এবং জনগণের প্রজ্ঞা

election

যায়নুদ্দিন সানী

বেশ নাটকীয় একটা নির্বাচন হচ্ছে। বাঙালির জীবনে বিনোদনের সাম্প্রতিক ঘাটতি মেটাতে এই নাটকীয় নির্বাচন বেশ বিনোদন এনে দিয়েছে। হরতাল অবরোধ নিয়ে যখন বিএনপির বেশ ত্রিশঙ্কু অবস্থা, না পারছে তুলে নিতে, না পারছে চালিয়ে যেতে, ঠিক সেই সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। মেয়র ইলেশানের এই ঘোষণা বিএনপির সাথে সাথে দেশবাসীকেও বেশ স্বস্তি এনে দেয়। বিএনপি স্বস্তি পায় কারণ হরতাল অবরোধ প্রত্যাহারের একটা সুযোগ পেলো বলে আর দেশবাসীর স্বস্তি, এই দুই নেত্রীর জেদাজেদির হাত থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে বলে।

আমাদের রাজনৈতিক নেতারাও যেমন নাটক করতে জানেন, আমাদের জনগণও এই নাটক তেমন উপভোগ করতে জানেন। বিএনপি যদিও প্রথমে ভাব দেখাচ্ছিল, ‘নির্বাচন করবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় আছে।‘ ‘লন্ডন থেকে অনুমুতির অপেক্ষায় আছে’। তবে জনগণের বুঝতে সমস্যা হয়নি, ব্যাপারটা নাটক। বিশেষকরে যখন দেখা গেল হঠাৎ করে বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্ক বলতে শুরু করেছে ‘কৌশল’ হিসেবে এই নির্বাচনে যাওয়া উচিৎ তখনি সবাই বুঝে গেল সামনে আরও নাটক আসছে। আর শুরু হতে যাচ্ছে এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা—‘নির্বাচন’।

তবে অন্য যেকোন নির্বাচনের চেয়ে, এবারের নির্বাচনে, নাটকীয়তার পরিমাণ অনেক বেশি। কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ বেশ নাটকীয়তা দিয়েই নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন নির্বাচন কমিশন। তার আগে অবশ্য কিছুদিন পত্র পত্রিকায় নাটকের কানাঘুষা প্রচার হল। ‘সিটি কর্পোরেশানের নির্বাচন হতে পারে’ জাতীয় খবর প্রকাশ হল ‘বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে’। এরপরে নাটকের প্রথম পর্ব প্রচারিত হল। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। এবং বল চলে গেল বিএনপির ‘কোর্টে’। আবার ৫ই জানুয়ারী টাইপ নির্বাচন না দুইদলের অংশগ্রহণে নির্বাচন।

উত্তর সরাসরি আসবে এমন প্রত্যাশা কেউই করেনি। নাটক হবে, সবাই জানতো। এবং হলোও। ঠিক একটা নাটক না, বলা যায় নাটকের সিরিজ শুরু হল। একটার পর একটা নাটকীয়তা আসছে তো আসছেই। বিএনপি আসবে কি আসবে না, অবরোধের কি হবে, হরতালের কি হবে, আন্দোলনের কি হবে, তত্ত্বাবধায়ক সাহেবেরই বা কি গতি হবে—এমন দারুণ সব সাসপেন্সে প্রথমে আমাদের দিকে ছুঁড়ে দেয়া হল।

আমাদের নেতারা যে সরাসরি উত্তর দেবেন না, তা জনগণ জানে। ফলে সবাই অপেক্ষা করে থাকল, নাটক মঞ্চায়নের জন্য। এবং জনগণকে নিরাশ না করে একে একে বেশ নাটকীয় স্টাইলে উত্তরগুলো আসতে শুরু করল। বিএনপি নির্বাচন করবে। আর এমন সিদ্ধান্ত নিতে সবচেয়ে বেশ প্রভাব ফেলল আগের দফায় সিটি কর্পোরেশান নির্বাচনে জয়ের স্মৃতি। টিপিক্যাল কিছু ছোটখাট নাটকীয়তা সেরে বিএনপি ঝাঁপিয়ে পড়ল নির্বাচনে। এবং শুরু হল নাটকের দ্বিতীয় পর্ব।

মিন্টু সাহেব ছোটখাট একটা নাটক দেখালেন। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রার্থী হওয়ার জন্য সাধারণতঃ নাটক হয়, তবে এবার উল্টো ঘটনা ঘটল। মিন্টু সাহেব প্রার্থী হবেন না। আবার সেকথা ম্যাডামকে মানাতেও পারছেন না। ফলে নাটক করতে হল। এবার ম্যাডাম মানলেন। মাঝে কিছুদিন মাহী সাহেব দৌড়ঝাঁপ করলেন। তবে শিকে ছিঁড়ল না। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন কি না, তা নিয়ে কিছু নাটক হল এবং অবশেষে জানালেন, ‘করবেন না’।

কাহিনী ভালোই এগোচ্ছিল। তবে নাটকে আওয়ামীরা পুরোপুরি খুশি কিনা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। ‘বিএনপি নির্বাচনে আসুক’ কথাটা মুখে বললেও সত্যি সত্যি তাঁরা কি চায়, তা নিয়ে কিছু সাস্পেন্স ছিল। কটাক্ষ, শ্লেষ যেমন চলছিল তেমনি চলছি ধরপাকড়। বিএনপির বহু প্রার্থীই পলাতক কিংবা আটক। এদেশে মামলা দেয়া যেহেতু কোন ব্যাপার না, তাই ব্যাপারটা পরিকল্পিত না ‘আইনের নিজস্ব গতিতে চলা’ তা নিয়ে কিছু সংশয় অনেকের মনে দেখা যাচ্ছে। অন্ততঃ বিএনপি চাইছে যেন ‘সংশয়’টা দেখা যায়।

এরমাঝে গাড়িবহরে হামলা হল। দুই পক্ষই দাবী করল নাটক। ভিডিও ফুটেজে সেই নাটক সবাই দেখল। নিজ নিজ রাজনৈতিক মত অনুযায়ী দুই দলই একে অন্যকে নাট্যকার আখ্যা দিলেন। আওয়ামী নেত্রী ছবি দেখালেন। এদেশে নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যম বলে যেহেতু কিছু নেই, তাই জনগণও আর কারো ভাষ্য বিশ্বাস করে না। সবাই নিজের নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, ‘নাটকটা কার লেখা’। হামলা অবশ্য একটায় থামল না। মাহী আর রতন সাহেবের ওপরও হল। এবং যথারীতি সেই নাট্যকার বিতর্ক হল। কাউই মানতে রাজী না এতো সুন্দর নাটকের তিনিই নাট্যকার। ফলে জনগণের প্রজ্ঞাই ভরসা।

ওদিকে মীর্জা সাহেব সামনে আসবেন কি না, জামিন হবে কি না, কেস চলবে কি না, বিএনপি শেষ পর্যন্ত কি করবে, এমন ছোটখাট সাসপেন্স থাকলেও বিএনপি যে নির্বাচন করবে তা নিয়ে খুব একটা সন্দেহ কারো মনেই ছিল না। তবে নির্বাচনের পরে কি হবে তা নিয়ে এখনও সাসপেন্স আছে। পরাজয় হলে সেই ‘টিপিক্যাল’ কারচুপি ফর্মুলা যে হাজির হবে, তা অনেকটাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়। তবে বোঝা যাচ্ছে না, বিএনপি জিতলে কি হবে কিংবা ঢাকার দুই অংশে দুইজন জিতলে কি হবে।

যাক, গতকিছুদিন সময়টা বেশ ভালোই কাটল। বিজয়ী প্রার্থী নগরের জন্য আদৌ কিছু করবেন কি না, তা নিয়ে কেউ সত্যিকার অর্থে কেউ ভাবিত না। নির্বাচনে জয়ের পরে যে প্রার্থীর টিকির দেখা পাওয়া যাবে না, একথা কমবেশি সবাই জানেন। এসব রাজনৈতিক নেতাদের কাছে কোন রকম প্রত্যাশা বহু কাল আগেই তিরোহিত হয়েছে। এখন জনগণের কাজ একটাই, হিসাব করা—‘কে জিততে পারে’। তবে এই নির্বাচন আরও একটি চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে, ‘নির্বাচনের পরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কি হবে?’

Something for everyone

Jyoti Rahman

Voters of Dhaka and Chittagong are supposed to exercise their democratic right on 28 April.  These elections are hardly going to change the political status quo that is Mrs Wajed’s one-person rule over Bangladesh.  And yet, there is something for everyone in these elections.

In Dhaka North — where yours truly spent a part of his life — there really is a choice.  Towards the end of this post, you will find the preference of this blog.

To begin with an obvious statement — these elections ended BNP’s andolon.  Arguably, BNP was going nowhere in the streets.  A post-mortem really deserves its own post (and I hesitate to even signal one might be in the offing).  For now, there is no argument that this round went to the League.

Okay, so here is a contentious point — with these elections, the Prime Minister has given Mrs Zia an exit.

Pause, and think about this.

There is no denying that she can be brutally ruthless when she chooses to, and there must have been huge temptation to go for the opposition’s jugular.  So, why did the PM hold back?

I’d argue that by holding back, and allowing her much weakened opponent a way out, the PM strengthens her hold over the establishment — the business sector, the civil-military bureaucracy, and foreign powers.  Remember, the Awami-establishment bargain is based on stability.  Mrs Wajed’s best and only real selling point is that she alone can provide stability.  For a few weeks in January, that proposition was tested.  Driving BNP underground isn’t going to do anything for stability.  Allowing BNP a breathing space through local government election, on the other hand, does help with stabilisation.

Now, make no mistake that BNP is much weakened.  Scores of its grass root activists (and indeed mid-level leadership) have been abducted or killed, and much of its senior leadership is in either jail or exile.  Also, make no mistake that the elections are on a level playing field.  But for BNP, it’s hard to see an alternative to taking the exit offered.  It gives the party a chance to live for another day — there is nothing else.  And even if it doesn’t fight another day, life is something.

I have no idea which way the voters will choose.  It’s entirely possible that BNP will lose all three, fairly or otherwise.  It’s hard to see what the ruling regime can achieve by blatant poll-day rigging (as opposed to pre-poll machinations).  Plus, I am not sure BNP actually has enough strength to get-out-the-vote or maintain adequate presence in the centres on the day.  That is, it is quite possible that BNP will lose a seemingly peaceful semi-decent election.  Should that happen, its rank-and-file will be further demoralised, limiting the chance of another winter flair-up.

But it is also entirely possible that BNP might win all three, or two, or one.

The thing is, even if BNP wins all three, and gets a morale boost, there might still be a lot for the regime.  If BNP were to win on the 28th, on the morning of the 29th, the Prime Minister will claim ‘see, fair election possible under us’, invite the mayors-elect to Ganabhaban and promise full co-operation.  The editorials on the 30th will then be full of praise for Mrs Wajed’s statesmanship, and BNP’s pettiness and idiocy.

Of course, as things stand, the mayors and their councils have no power over anything substantial.  In fact, by allowing these local government elections, the PM is following in the footsteps of the military regimes of HM Ershad or Ayub Khan, or the Raj going back a century — they too allowed elections of local bodies with limited powers to pacify restive subjects.  As such, it’s easy to think about sitting out these elections.

Such cynicism would be wrong.

For one thing, just as was the case under the Raj or the generals, these elections provide an avenue for new politicians to emerge.  Indeed, anyone who claims to be tired of the two netris or politics-as-usual must take these elections seriously.  If not through elections, how else do they propose new leadership will emerge?

Dhaka North is particularly important.  A directly elected mayor of the richest and most educated part of the country — one can think of far worse ways of nurturing new leadership.  The mayor-elect of Dhaka North might have little power on paper.  But he will have tremendous symbolic and moral authority, which may well provide seed capital for a bright political future.

Further, there really is a choice in Dhaka North.  Annisul Huq, Zonayed Saki, Mahi B Chowdhury, Tabith Awal — each of them offer different things, and you should think carefully before exercising your right (if you can) on the 28th.

Take Annisul Huq, the Prime Minister’s choice.  If you believe the PM is doing a helluva job, then clearly you should vote for Mr Huq.  And by the same token, a vote for Mr Huq would mean this is what you really think.

If you fancy yourself as one of the left, if you like railing against ‘neoliberalism’, if you went to Shahbag and then soured on Awami League, then Mr Saki is your man.  Now, my politics is decidedly not of the left.  I think Marx was right about many things but was wrong about the most important matters, and I have a very dim view of non-Marxist populism.  But this post is not a critique of the left.  Relevant thing for us is that by joining the hustings, Mr Saki is signalling that he takes the hard work of politics seriously.  That is to be commended.  If you are serious about the left, then you should vote for him, not Mr Huq.

I am not really sure I see anything commendable in Mr Chowdhury.  I understand he is media-savvy.  He portrays himself as a face of the youth.  I guess in Bangladesh a 46 year old can pass for young.  But Mr Chowdhury is not a new face.  He has been in politics for a decade and half.  He has had plenty of chance to show his acumen.  And he has delivered nought.  Nought is also what he has achieved outside politics.  A vote for him is a lazy choice, a thoughtless choice, symbolising nothing but the voter’s unwillingness to take things seriously.  As it happens, I doubt Mr Chowdhury will get far.  And just as well, for a good showing by Mr Chowdhury would mean worse for future for our politics than a resounding win for Mr Huq.

And that leaves us with Mr Awal.  At 36, he would be considered young for politics anywhere in the world.  He is a genuinely new face in politics.  The politically apathetic might dismiss him as being a parachuted candidate with a silver spoon.  Dismissing Tabith Awal out of such cynicism, however, would be a bad mistake.  Mr Awal is no more a parachuted candidate than Mr Huq.  He is far less a dynastic scion than Mr Chowdhury.  And at least by one measure, he has shown greater commitment to people’s rights than Mr Saki — in late 2013, when the most fundamental of democratic rights, the right to choose one’s government, was being snatched, Mr Awal courted arrest.  Indeed, by that measure, Tabith Awal has shown greater political courage than any of his opponents.

There is a lot of things wrong with BNP.  But endorsing Mr Awal’s candidacy is not one of them.  If you take your rights seriously, if you want the 6% growth and associated social development to continue, if you want to heal the fissure of Shahbag and Shapla Chattar, you must welcome men and women like Mr Awal into politics.

Tabith Awal may be the youngest candidate in Dhaka North, but a vote for him is the mature thing to do.

First Published at https://jrahman.wordpress.com/2015/04/25/something-for-everyone/#more-4090

2015: What is Left of the Political Field and What is at stake.

By Seema Amin

 

BLOODSTAINS ON THE FLAG,
FLAGSTAINS ON THE SKY,
SKYSTAINS ON THE EYE LATER ON
YOU’LL HAVE TO DREDGE WITH THE CORNER OF YOUR HANDKERCHIEF.

  • Roque Dalton, Tavern

The degradation of Bangladesh is at its zenith. A perverse, almost psycho-sexual arousal at the humiliation and degradation of one’s chosen victim-slash-enemy and the callous force-feeding of a ‘Law’ that is standing on its head (the upside down world of 2015 post January Fifth that surpasses the combined absurdities and doublethink of both 1984 and Animal Farm), makes me look beyond the genre of satire à la Orwell or Tagore’s oft-cited Hirok Rajar deshe, to the experimental science fiction of J. G. Ballard.  In J.G. Ballard’s The Atrocity Exhibition montage newsreels of Presidents and Generals were substituted for actual newsreels of torture of the Viet Cong; sexual arousal of viewers was measured so that an optimum sexual arousal sequence could be created, i.e. repeated violation of an eight year old Vietnamese girl, specifically of her perennial wounds, elicited the most thrills.  Ballard’s condensed novel has been said to exemplify the pervasive, irrational violence of the present world, connecting psycho-sexuality with the gratifications of ‘perverse’ politics.  But the psychology of the violent orgy, if we are to see the connections with our new year, does not exist in a social or economic vacuum; it was German psychologist Reich (Dialectical Materialism, 1970) who wrote on the   ‘psycho sexual’ gratification of a particular class’s particular fantasies/repressions/needs.  Reich suspected the ideological realization of the petit bourgeoisie in the organized mobs of fascist Nazi Germany as being located in this psycho-social lack.

Fast-forward to a particularly Bangladeshi kind of fascism.  Joy Bangla! chanted with sticks and arms in one’s hands; I can hardly distinguish this slogan from Allahuwakbar before murdering Kafirs in ’71, or Hail Hitler. Hysterical Bangladesh. Thirteen trucks, not enough. Pepper spray.  Not enough. Call a freedom fighter a razakar: Joy Bangla!  Jouissance! Everyone breathes easier when the cartoons merely signify reality. Throw some Light on the Lion’s Face, Tim Van Dyke:

“the absolute need to be believed, to disperse all other belief
in an hysterical combination of passion and assimilation —
The hysteric has no intimacy, emotion, no secrecy—
The lion’s face succeeds in making its own body a barrier
a seductress paralyzed
who seeks to petrify others in turn—“

Udvot o Odvot. Unmadonna. Let’s turn the man on his head again.

January Fifth came and went.  Democracy ‘was victorious.’ It was Democracy Victory Day; the sacred Constitution decreed, the men with sticks and guns ensured. Maya, whose son led RAB-11 in the 7 Narayanganj murders, true to his word, sat smugly, in a pure white lungi, ready to ‘Give them some’ if they dared hold a rally, in the morning. By night, a few more trucks had been sent to ‘dig a grave’  in the opposite side of town at the (actual) opposition’s Gulshan office; a case was filed against Mirza Fakrul Islam Alamgir that night, just in case such a thing is even needed when those pretending to be Projonmo are Ready! Set! Go! In the morrow, the dogs of ‘courage’, Goliath’s ‘petua bahini’( the ones that had forced him to leave the public auditorium for the Club itself the evening before), zoomed in on an unarmed and alone David in Press Club. Bangladesh’s Second Most Wanted Man. Bon Courage, Bangladesh!

There is something too spectacular about soap (Shaban) entering the press club, purportedly trying to clean up the messiness of partisanship, while the very dirt  came like a fascist flood over the gates. Perhaps he was trying to clean up a murder, ‘democracy dead’, that one; it gets messy, murder. And so the premises was cordoned, for all but those with gloves and the right slogan.  My question is, though, who is that class nursing bludgeons inside the velvet gloves of power, today? We call them latial, goonda, the ones who will create ‘ganopitani.’  Who scream Action! Action! Dressed up with a banner that was never questioned (Muktijoddher Projonmo League, which projonomo?), they were never arrested for coming armed into the Press Club.

‘Chele khela holleo hoto, kintu aita vidguthe’—we are suffocating, cries an artist, for whom perhaps it would be easier to throw the awful burden of feelings into a manhole. The Chetona Nazis are here to stay. But it isn’t enough or even sufficient to throw light on this lion’s face. For the Bangladesh that the Nazis hope to call ‘theirs’ manipulates a psycho-moral landscape invested with the aura of an original sin more akin to Israel than to Germany after WWI and before WWII. It is the sin of an original injustice, an eternal victimhood that prevents all other suffering from making any claims of immediate and equally necessary redress.  Israel has constructed entire museums of suffering, embracing a past truth, but erected on effacing the present.

The liberation war museum houses history; but the platform in front of it performs history. For the performers of the platform that remains of what was Shahbag once, justice more and more is not a principle but a decree: it has no application beyond the one hysterical sign- the signified is not all great injustice, it is only one particular injustice, instrumentalized, and thus degraded of the dignity of calling for justice.  The moral ramifications of the war beyond the war, the continuation of injustice, state terror and chauvinism in the present political field is (now) completely terrorized into silence and non- existence. Even the political signification of the struggle for democratic self-determination is a backdrop where the hysterical sign cries Terror as it terrorizes (should sound very familiar, global village et al.).The state and religious repression that enabled such crimes to take place, its deeply chauvinistic nature, is not understood as a context of immorality and degradation that could repeat itself in principle if not in exact moral equivalences. Justice simply has no referent but one injustice.  But the Chetona Nazis are not just the League, Sarkar and Co., or puppets thereof and the student opportunists or even the well meaning among them– the easy come easy go pinkish reds, civil society partisans, etc.; they are drawn from a “goonda constituency/class” that can be rounded up at any moment to perform the ‘Action! Action!’ of preventing dissent, or, any change in the status quo well outside the parameters of their ‘moral territory.’ Their self-righteous (since it is not moral in its new perversions, it is merely fascist) frontier now encompasses the whole country, but not because justice can be applied to new contexts, no, but so that no other injustice can ever threaten the aura of those who claim to be the sole redeemers of our original sin; in other words, so that the status quo, the state itself, remains intact. These Chetona Nazis are colonizers of civil space—Shahbag, Press Club, etcetera; they want a permanent seat in all the Houses of liberty.  Effect: Joy Bangla sung with such triumphal fatality on a no-rally day that the ‘Bir’ Left taking refuge in their offices to avoid the confrontation meant for the key players. And these Chetona Nazis degrade nothing else as much, as those they seek to redeem.  There is a notion in Islam that ‘spiritual pride’ is a cardinal sin; similarly, the self-righteousness of those who perform ‘justice’ but never apply it in context, those who merely hysterically ‘signify’ that might is right because right is their property….theirs is not the world of dignity that liberation insisted on, theirs is a world with such little shame it can even claim to represent ‘MuktiJudhhor Projonmo’ and call itself ‘proud.’

There are other groups who are well endowed to perform our history, i.e. non-fascist artists (a minority sometimes), the (Left of) left, even a civil society that may well be in the offing, so many others; but they were very deliberately sidelined from this platform, in Shahbag, and beyond, for the very fact that in their world of dignity and justice, any true meaning of the Joy Bangla that was shouted with dignity during the war but almost never soon after it, one would have to apply moral law. One would have to swallow the very simple but sad (look at Israel in Palestine) truth that the victims of history do become the perpetrators of crime, that chauvinism can take charge again, that chauvinism will not only manfiest itself as the military or Jamaat or anyone who comes in connection to their contagious blood, but may do so again, as the state and as the mob, the Pretenders.  Thence: to whom and to what shall we look for the protection of the ‘blood’ of the martyrs of Ekattor. Well, one tends to look to that intellectualizing, ‘glorious left’ that can read justice as applicable, not as a dead sign of a sign.  None of what is happening should shock them; after all, they’ve lost heroically to the Chetona Nazis once before, and fatally.

But what is at stake, this time? If tomorrow, what is left of the political field is not dignified, if the left and what is left of the rest of us who empathize, criticize or harness new energies in its orbit, continues to be a walking shadow for a performance that never happens, then we can all forever hold our peace. But what is it that the left is shrinking from, for it surely can’t be Terror. Today, the field is theirs. The whites are bloodied, the blue is a raging maniac, hysterical, and it is time the rest risk the danger of communion, rather than fixate on the bogey of Jamaat. It is solidarity, coalition, lasting connection, with the unorganized and manifold potential.  And what is at stake? Well, just one thing. Not national pride, not the flag, but dignity.  Like ‘artists masturbating in a gallery that is nothing more than a cage’ (a simile I have taken from a poet who will remain anonymous), no one who is disturbed if not outraged, including the press, the left, everyone else, can claim to be trying to change anything at this moment, if they do not get out of this gallery, this cage, The Atrocity Exhibition, and reach out in the language of solidarity outside one’s known alliances. Else, we are doomed to the interminable posturing and posing of sign, mere words used to silence meaning…endless aura in an aura-tic universe.

 

Seema Amin is author of two books of verse and Senior Feature Writer at Depart Art Magazine

 

বাংলাদেশী মধ্যবিত্ত শ্রেনী ও বিএনপি’র আন্দোলন-একটি বিতর্ক

ফাহাম আবদুস সালাম 

5th January

একটা প্রশ্ন অনেকেই করেন জিয়া হাসানও করছেন যে বিএনপির আন্দোলন সফল না হওয়ার মূল কারণ হোলো তারা নাকি বাংলাদেশের মানুষকে কনভিন্সড করতে পারে নাই। আমি এই মত পোষণ করি না।

দেশে যে গণতন্ত্র নাই এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয় হইছে যে দুইটা কারণে (স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র) সেই দুইটা জিনিসই যে বাংলাদেশে অনুপস্থিত সেইটা আবার কনভিন্স করার কী আছে? আপনি যদি এইটা না বুইঝা থাকেন তাহলে আপনে হয় আওয়ামী লীগ করেন নাইলে ভালোমন্দ খাইছেন কিছু। সমস্যা কনভিন্স করা না করার মইধ্যে না। সমস্যা হইলো কনভিন্স হওয়ার ঠিক পরের স্টেজটা নিয়া।

বাংলাদেশ সম্বন্ধে মিডল ক্লাসের “যেকোনো” – আবার বলতেছি “যেকোনো” বয়ান সন্দেহের চোখে দেখতে হইবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু কইরা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মোড় বদলে দেয়া আন্দোলনে আরবান মিডল ক্লাস পার্টিসিপেট করে নি। কিন্তু এই ইভেন্টগুলোর সব থেকে বড় বেনেফিসিয়ারী তারাই। খেয়াল কইরা দেখবেন বাসায় রাখা আপনার মামা চাচা যিনি ৭১ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আছিলেন তাগো বেশীরভাগেরই অস্ত্র হাতে ব্ল্যাক এন্ড ওয়াইট ছবি আছে এবং সেই ছবিতে তিনি প্রায় সুটেড-বুটেড হয়ে আছেন। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি তোলার সময় ছিলো না।

কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবার আগে ভালো অবস্থায় যাইতে পারছে এই আরবান মিডল ক্লাস।

এই ব্যাপারটা তারা খুব ভালো করে বোঝেন বলে তাদের মাঝে একটা গিলটি কমপ্লেক্স কাজ করে। এই গিলটি কমপ্লেক্স থেকে উদগত সব থিকা উল্লেখযোগ্য প্রডাক্ট হোলো গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে, বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে মধ্যবিত্ত যে মহাবয়ান তৈরী করেছে তার প্রতিটি বাক্য লেখা হইছে অপরাধ বোধের কালি দিয়ে। তাই যে যুদ্ধ করছে তার চেতনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শামিল হয় নি, কিন্তু যে নয় মাস পলায়া বেড়াইছে তার চেতনাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

মুক্তিযুদ্ধে যে পার্টিসিপেট করছে তার এতো সফিস্টিকেটেড আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছিলো না। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য দেশের প্রতি তীব্র ভালোবাসা আর ইনসটিংটই যথেষ্ট ছিলো, মুক্তিযুদ্ধে না যাওয়ার জন্য, পলায়া বেড়ানোর জন্য আর ইসলাম রক্ষার নামে রাজাকারী করার জন্য চেতনার প্রয়োজন ছিলো।

মধ্যবিত্ত তাগো নিজেদের ক্লীবতা ঢাকার জন্য আজগুবি, অবিশ্বাস্য সব গল্প ফাঁদছে যেই গল্পের পরতে পরতে আছে শুধু সিম্বলিজম আর লাল-সবুজ।

একইভাবে আজো মধ্যবিত্ত স্বপ্ন দেখে গণতন্ত্রের কিন্তু এই গণতন্ত্র আনার জন্য সে রাস্তায় নামবে না – কাজটা কইরা দেবে বিএনপি। কিন্তু যেদিন আওয়ামী লীগ প্রেক্ষাপট থেকে বিতাড়িত হবে, দেখবেন সবচেয়ে ফেনায় ফেনায় গণতন্ত্র বিষয়ে শুদ্ধ বাংলায় সবক দেবে মধ্যবিত্ত। “এই সে মহান মাটি যার পুষ্টি গণতন্ত্রে” “এসো মোরা অবগাহন করি গণতন্ত্রের বজ্রকপট শপথে”, “এই সোনার মাটির বন্ধন তো শুধু গণতন্ত্রের সাথেই” – এই লাইনের ল্যাটকামি।

মধ্যবিত্ত ন্যায্যতার স্বপ্ন দেখে না, দেখে চাকরির স্বপ্ন কিন্তু এই কথা মাইনষে শুনলে বলবে ছোটলোক। তাই সে গল্প ফান্দে গণতন্ত্রের। এই গণতন্ত্র রক্ষার জইন্যে সে ভুলেও রাস্তায় নামবো না কিন্তু যে নামবে তারে বলবে তুই তো নামসোস ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার জন্য। এইটা তার অপরাধবোধ। সে চায় গ্লোরী কিন্তু কসরৎ করবার জন্য রাজী না। টিভিতে বিপ্লব দেখলে তার গরমে অর্গাজম হইয়া যায় কিন্তু রাস্তায় নামতে তার গরম লাগে সূর্যের।

এই অপরাধবোধ থিকা সে বিএনপির গুষ্টি উদ্ধার করে। বিএনপি হেন পারে না তেন পারে না। কথা সত্য। বিএনপি অনেক কিছুই পারে না কিন্তু তুমি তো অনেক কিছু পারো – তুমি কী করছিলা? তুমি কি গণতন্ত্রের জন্য রাস্তায় নামছিলা? বিএনপির কথা বাদ দেও। তারা তো ক্ষমতায় যাওয়ার জইন্যে রাস্তায় নামছে মাইনা নিলাম কিন্তু তোমারে তো চল্লিশ বছরে কখনোই নামতে দেখলাম না।

যারাই কয় যে বিএনপির কৌশল ঠিক না তারা সমালোচনায় ঠিক আছেন কিন্তু খাইসলতে দর্শক। কিন্তু বিএনপির কৌশল ঠিক হইলেও এই চ্যাটারিং ক্লাস আন্দোলনে পার্টিসিপেট করতো না কারণ সে বাংলাদেশরে ঔন করে না – সে ঔন করে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটা আইডিয়ারে এবং সেই আইডিয়ায় সব সময়ই কসরৎ না করার যথেষ্ট অজুহাত মজুদ আছে।

বিএনপির সব থিকা বড় সমস্যা হইলো তাগো সাপোর্ট বেইজ হইলো এই দর্শক শ্রেণী।

 

জিয়া হাসান

6th January

ফাহাম ভাই,আমি আপনার স্ট্যাটাসের প্রশ্ন গুলো এই খানে জবাব দিচ্ছি, আমার বন্ধুদেরকেও আলোচনায় আনার সুবিধার জন্যে। এইটা আপনার ওইখানেও কমেন্ট দিবো। এই ইন্ডিসেন্সিরটার জন্যে ক্ষমা করবেন।

আমি আপনার স্ট্যাটাসের প্রথম এজাম্পশনের সাথে ১০০% সহমত। বাংলাদেশে যে, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র নাই, এই নিয়ে কনভিন্সড না হওয়ার কিছু নাই। এবং সমস্যা হইলো, কনভিন্সড হওয়ার পরের স্টেজ নিয়ে।

এই কনভিন্স হওয়ার পরে আপনার যেই লজিক এবং আরগুমেন্ট দিলেন সেইটা ফান্ডামেন্টালি ভুল। সেইটা হইলো, বাংলাদেশের মোড় বদলে দেয়া আন্দোলনে আরবান মিডল ক্লাস পারটিসিপেট করেনি। আপনি একাত্তুরের রেফারেন্স দিছেন। আমি একাত্তুরের রেফারেন্স দেইনা, কারন আমি একাত্তুর দেখি নাই।

কিন্তু, বাংলাদেশে একাত্তুরের পরে সব চেয়ে বড় যে গন আন্দোলনে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, যেই সময়ে আমি মোটামুটি বালেগ ছিলাম তখন আমি স্বচক্ষে দেখেছি, সেই আন্দোলন আরবান মিডল ক্লাস, লিড করছে, পারটিসিপেট করছে। এবং শুধু মাত্র ৯০ সালে না, আশির দশকের সম্পূর্ণ সময়টাতে আরবান মিডল ক্লাস এই আন্দোলনের সাথে এলাইন্ড ছিল। রাস্তায় নামছে। এইটা আমার স্বচক্ষে দেখা। এই ভুল এজাম্পশনে দাড়ায় আপনি যা বলছেন, সেই গুলোকেও আমি একটু আমার অবস্থান থেকে ব্যাখা করি।

আপনি বলেছেন, মধ্যবিত্ত যেহেতু এই সব মুভমেন্ট করে নাই, বা মুক্তিযুদ্ধে পারটিসিপেট করে নাই, এই জন্যে তার মধ্যে একটা গিল্ট কমপ্লেক্স কাজ করে। এবং এই গিল্ট থেকে উদ্যত প্রডাকট হইলো, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।কারন সে যুদ্ধ করে নাই। যুদ্ধ করছে, আপনার হিসেবে, নিম্নবিত্তের এবং সাধারন খেটে খাওয়া জনগণ।

ইন্টেরেস্টিংলি। মধ্যবিত্ত যুদ্ধ করে নাই, নিম্নবিত্ত যুদ্ধ করছে এবং নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের স্টেক আলাদা- এই ভাবনা গুলো আমার বিগত পাঁচ বছরের প্রডাক্ট মনে হইছে। এই গুলো সাধারণত বিএনপির লোকজনের কাছ থেকে আসে, কেন মিডল ক্লাস রাস্তায় নামে নাই, সেইটার একটা বয়ান তৈরি করার উদ্দেশ্যে।

রাষ্ট্রের কাছে জনগণের যেই দাবী, একটা দুর্নীতিমুক্ত শাসন,অর্থনৈতিক মুক্তি, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায় বিচার- যা দিতে পোস্ট নব্বইয়ের দলগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল কিন্তু ব্যর্থ হইছে – এই গুলোর প্রতি চাওয়া এবং এই গুলোর স্টেক নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত উভয়ের সেম। উভয়েই, এই গুলোর অভাবে খতিগ্রসত এবং উভয়েই এই অবস্থার পরিবর্তন চায়।

আপনারে একটা ক্লাসিক প্রশ্ন করি। মধ্যবিত্ত না হয়, তার যুদ্ধ না করার গিল্ট কন্সাস নিয়ে, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার চেতনার এই সব হাইপারবোল সৃষ্টি করছে।এবং সেই গিল্ট নিয়া তারা বিএনপির মিছিলে নামে নাই কিন্তু তাইলে বিএনপির মিছিলে, নিম্ন বিত্তরা কই ?
আওয়ামী লীগের ৫ বছরে, আমি বিএনপির সেই সব মিছিল দেখছি, যেই খানে , বিএনপির প্রাক্তন নেতাদেরকে ৭ থেকে ১০ জনের মিছিল নিয়ে হেঁটে যেতে দেখেছি, হরতালের সময়ে। এবং ওরা সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে, আমার রিক্সাওয়ালা ভাই একটা ক্লাসিক চিটাগনিয়ান গালি দিছে তাদের দিকে তাকিয়ে , যেই গালিটা এই খানে উল্লেখ করা যাবেনা, কিন্তু সজ্জনেরা বুঝে নিবেন। tongue emoticon

আমি নিজের দিকে তাকায় জানি। আমার বন্ধু, কলিগ, পরিচিত সবার চেহারা দেখে জানি, আমাদের মধ্যবিত্তের কোন গিল্ট নাই।এই নিয়া তার কোন মাথা ব্যথাও নাই। তার আছে, একজিস্টেনস ক্রাইসিস। তার আয় সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। ব্যবসায়, চাকরিতে তার সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। তার দিস্পজেব্ল ইঙ্কাম মাই। সে কোর্টে গিয়া ন্যায় বিচার পায়না, পুলিশে গিয়া সে হয়রানি হয়-তাকে ধরতে হয় রাজনৈতিক কানেকশানের কে আছে। তার পরিবারের নতুন গ্রাজুয়েটদের কাজের সুযোগ সীমিত। মামা চাচা না থাকলে, চাকরির সুযোগ নাই। ব্যবসার সুযোগ গুলোতেও এখন রাজনৈতিক লোকজন ঢুকে পরতাছে। সে দেখতাছে, তার ঢাকা থেকে চিটাগন যাওয়ার রাস্তা ৫ বছরেও তৈরি হয় নাই। সে এখন দুর্নীতিরেও মাইনা নিছে। সে জাস্ট একটু সুযোগ চায় যেন, সরকারী চাকরিতে কেউ কোটা খাইয়া না ফেলে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন সহনশীল থাকে যেন ব্যবসা বানিজ্যে গতি আসে। এই খানে কোন গিল্ট ফিল্ট নাই। এইটা তার একজিস্টেন্সিয়াল ক্রাইসিস। তার একজিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিসের যে সমাধান দিতে পারবে, সে তার পক্ষে থাকবে।

আমি আপনার প্রশ্ন গুলোতে অবাক হই, যখন আমি দেখি, এই ক্রাইসিস গুলো সমাধানের চিন্তা করতে বিএনপির ব্যর্থতাকে হাইলাইট করার বদলে আপনি মধ্যবিত্তরে গাইল দিতাছেন, তার ক্ষুধা লাগতাছে সে কান্তাছে ক্যান, সেই এটিচুড নিয়া। যেই এর থেকে বুঝা যায়, এই দেশের মানুষের জীবন যাপনের ক্রাইসিসের সাথে বিএনপির মানসিক দূরত্ব কত দূরে।

শুধু বিগত এক বছরে না, ২০১৩ সালের পূর্বে, পাঁচ বছরে সাধারন মানুষ বেশ কিছু ইস্যুতে যেই পরিমাণ মাইর খাইছে সরকারের কাছে, বিশেষত শেয়ার বাজার ইস্যুতে বিএনপির উদাসীনতা ছিল “ক্রিমিনাল”। বিএনপির আগের আমলে বিএনপিকে নিয়ে যে দুর্নীতি অভিযোগ সেইটা নিয়েও বিএনপি কখনো ক্ষমা চায় নাই। জাস্ট একটা একজাম্পল দেই। ঢাকা শহরে যখন সিএনজি নামাইলো, তখন প্রতিটা সিনএজিতে কত টাকা নেয়া হইছে, এবং সেই এই দুর্নীতির কারনে, ঢাকা শহরের পাবলিক কি ভোগান্তিতে আছে সেইটা মনে করেও, বিএনপির প্রতিদিন মধ্যবিত্তরে সালাম দেয়া উচিত এখনো সে তাকে আওয়ামী লীগের অল্টারনেটিভ মনে করে বলে।

অবাক হই যখন দেখি, আপনেরা সেই সব কারনে, বিএনপিরে ধরেন না কিন্তু মধ্যবিত্তরে, তার পেটের খুধার কান্দনের জন্যে, ইজ্জত লুকিয়ে পাছার কাপড় আঁকড়ে ধরে রাখার জন্যে গালি দেন।

পাবলিকে লেয়ার বাই লেয়ার, দিনের পর দিন, বিএনপির সিন্সিয়ারিটির অভাবটা দেখছে, পাঁচ বছর + ১ বছর। বিগত নির্বাচনের আগে, কে কোন পদ নিবে, সেইটা নিয়া মারামারি শুরু হইয়া গ্যাছিল বিএনপির লোকদের মধ্যে। মানুষ এদের চেহারা বডি ল্যঙ্গুয়েজ দেখে বুঝে, এরা তাদের ব্যাংক একাউন্টে শান দিচ্ছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে।এই জন্যে মানুষ বিএনপির ইন্টেন্টকে ডাউট করে। মধ্যবিত্তও করে, নিম্নবিত্তও করে।

বিএনপি যে গণতন্ত্র চায় বলে সেইটা যে ভুল এইটা নিয়ে, আরও একটা বড় নোট লেখা যাবে। অই দিকে যাইতাছিনা। বটম লাইন হইলো, বাংলাদেশের মানুষের এস্পিরেসান আর আগাইতাছেনা এখন কোন মতে, লেসার অফ দা টু ইভিল হইলেও পাব্ললিকের চলবে, এইটা ভুল।

অথচ স্যাডলি এই মধ্যবিত্তের বড় অংশ উপায় না দেখে, বিশেষত আদর্শিক চেতনা দিয়ে দেশের সকল দুর্নীতি এবং লুটপাটকে লুকিয়ে রাখার আওয়ামী স্ট্রেটেজিতে বিরক্ত হয়ে, হয়তো কিছু হবে, এই ভাবনা থেকে বিএনপিকে ভোট দিতে রেডি ছিল।ভোটের সুযোগ পাইলে, বিএনপিরে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে এনে, আরও একটা বড় বাম্বু খাইতে নিজেরে রেডি করছিল। কিন্তু, তারপরেও বিএনপি মধ্যবিত্তরে গাইল দেয়, রাস্তায় নেমে তাকে বাংলার সিংহাসনে বসিয়ে না আনার জন্যে। বিএনপির এই সেন্স অফ এন্টাইটেল্মেন্ট, এই উত্তরাধিকারের ধারনা বিএনপিরে কোথাও নিয়ে যাইতে পারবেনা। আওয়ামী লীগ যেই স্বৈরতন্ত্র এবং কাঠামো তৈরি করছে তাকে ২০৪২ পর্যন্ত টেনে নেয়ার মানি, মাসল, বুলেট, ইন্টেলিজেন্স, পোষা ইন্টেলিজনসিয়া, আইডিয়ালস এবং প্রশাসন ইনফিল্ট্রেসান করা হইছে। এইটাকে ভাংতে হইলে, বিএনপিকে মধ্যবিত্তকে তার শত্রুপক্ষ হিসেবে নিলে হবেনা। তাকে কনভিন্সড করতে হবে। করতে হইলে, বিএনপিরে অনেক ফান্ডামেন্টাল চেঞ্জ করতে হবে। তার ইন্টেন্ট এবং কাঠামো এবং প্ল্যানে, তাকে দেখাইতে হবে, বাংলাদেশের ভুখা শুখা মানুষ নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত সকলকে এগিয়ে নেয়ার মত পরিকল্পনা এবং সিন্সিয়ারিটি তার আছে। নইলে আওয়ামী ল্যাংয়ে উস্টা খাইতে খাইতে বিএনপি ২০১৬ ৫ জানুয়ারি হইতে, ২০৪৩ এর ৫ জানুয়ারি পার করবে, অথবা বিশ্ব ইজতেমার কাছাকাছি ডেট ফালাইতে হবে, কিছু একটা মিরাকলের আশায়।

এই মধ্যবিত্ত নির্বিরোধী শেয়ারে মাইর খাইয়া যখন তার সেভিংস মাইর গেলো, তখনও সে রাস্তায় নামে নাই?মতিঝিলে জরো হইয়া, কিছু মিছিল করার চেষ্টা যারা করছিল, তারা দুইটা লাঠির বাড়ী খাইয়াই, পলাই গ্যাছে।

এইটা তার পলায়নপরতা- এইটা তার ইজ্জতের ক্রাইসিস, এইটা তার নিঃস্পৃহতা। এই জন্যে, তারে আমিও গালি দেই। কিন্তু, অন্তত বিএনপির তাকে গালি দেয়ার কোন অধিকার নাই।

 

আরিফুল হোসেন তুহীন

6th January

জিয়া হাসান সাহেব বিএনপির ডাকে লোকজন আসে না কেন এইটা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন বিএনপি জনগনের পাশে দাঁড়ায় না, এর জন্যে জনগন কনভিন্সড না তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে।

ফাহাম আবদুস সালাম সাহেব এর বিরোধিতা করে লিখেছেন যে, এইসব সমালোচনা যারা করে তারা হচ্ছে আরবান মিডল ক্লাসের সুবিধাবাদী পার্টি। তারা এইবার কেন, কোনদিনও রাস্তায় নামে নাই। তারা এইসব বলতেছে তাদের গিল্ট কমপ্লেক্স থেকে।

এইখানে আমি দুইটা কথা যোগ করি।

এই দেশের অধিকাংশ নিম্নবর্গের মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে তারা দুই পার্টি নিয়েই নাক কুচকাবে। এর কারন হচ্ছে স্বাধীনতার পরে এই দুই পার্টির কোনদিন কোন ইতিহাস নাই সাধারন মানুষের পক্ষে লড়াই করার। সাধারন মানুষের জন্যে প্রয়োজনীয় পলিসি তৈরী করার ইতিহাস তাদের কোনদিনও ছিল না। তাদের সাফল্য হিসেবে যেসকল জিনিস দেখানো হয়, সেগুলো নিওলিবারেল ইকোনমিক পলিসিগুলোর আধাখেচড়া বাস্তবায়নের চেষ্টা। এর বাইরে এই দলগুলোর পারফর্ম্যান্স কার্যত শুন্য। এই নিওলিবারেল ইকোনমিক পলিসির কে কত ভালো প্রয়োগ করতে পেরেছে তা নিয়ে দুইবেলা কাইজ্জা করে এই দুই দল। এখন কথা হচ্ছে নিও লিবারেল  ইকোনমিক পলিসি বাঙ্গালদেশের কি কি ধরনের সুফল নিয়ে এসেছে। জিডিপি গ্রোথ অবশ্যই বেড়েছে। অমর্ত্য সেন আমাদের শিখিয়েছেন, জিডিপি দিয়ে উন্নয়ন না মাপতে। উন্নয়ন মাপা উচিত নাগরিকদের ইফেক্টিভ সক্ষমতা কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে সেটি দিয়ে মাপতে। তাহলে বাংলাদেশ বিশেষ এগোয়নি। এবং জিডিপি বৃদ্ধির ফ্রেইম ওয়ার্কের বাইরে এই দুইদলের কোণ চিন্তাভাবনার কোন নিশানাও পাওয়া যায় নি। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়েও এই দুইদলের কোন ধরনের পার্থক্য নেই। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পঙ্গু করে দিয়ে প্রাইভেটাইজেশনের যৌক্তিকতা প্রমাণের প্রক্রীয়ায় এই দুই দলই একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে। অবশ্য বিএনপি প্রাইভেটাইজেশনের ব্যাপারে বেশী আগ্রহী। সামনে বিএনপি আসলে ইলেক্ট্রিসিটি/পোস্টাল সার্ভিস ইত্যাদিও প্রাইভেটাইজড হওয়া সময়ের ব্যাপার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেও ফ্রী চিকিতসার দিন শেষ হতে সময় নিবে না। আওয়ামী লীগের ইকোনমিক কর্মকাণ্ড এর থেকে দূরে নয়।

ইকোনমিক চিন্তাভাবনা যদি বাদ দেই, তাহলে আসবে তাদের শাসন সম্পর্কিত দর্শন। দুই দলই সংবিধানের অগনতান্ত্রিক অংশগুলোর প্রতি একমত। দুই দলের কেউই দলের অভ্যন্তরে গনতন্ত্রের চর্চা করে না। দুই দলের কেউই এক্সেকিউটিভ এবং লেজিসলেটিভ ব্রাঞ্ছের ভিন্ন প্রধান চায় না। দুই দলের কেউই আর্টিকেল ৭0 এর বিলোপ চায় না। দুই দলই পুলিশী প্রশাসনে বিশ্বাসী।

১০০ জন রিকশাওয়ালাকে যদি জিজ্ঞাসা করি কোন দলের প্রতি তার আত্নিক টান, কেউই কোন রাজনৈতিক দলের নাম বলবে না। তারা ডেসপারেট জীবন যাপন করে, তাদের পাশে এসে কেউই দাঁড়ায় নি কোনদিন, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবে বলে মনে হয় না।

এখন প্রশ্ন দাঁড়াতে পারে ভোটাভুটি নিয়া হাঙ্গামা করা জরুরী কিনা সাধারন মানুষের জন্যে। অবশ্যই প্রয়োজনীয়। ভোটাভুটি কিছুটা হলেও লাগাম দিতে পারে এই দুই লুটপাটতান্ত্রিক দলগুলোকে। অন্তত প্রত্যেকটি দলই পালাক্রমে ক্ষমতার বাইরে থাকার স্বাদ পায় এবং কিছুটা শক্তির ভারসাম্য আসে।

কিন্তু আমাদের পাবলিক ডিসকোর্স শুধুমাত্র ভোটাভুটি কেন্দ্রীক হবে কেন?

এলিট এবং সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেনীর সবসময়ের একটি প্রবণতা হচ্ছে, সাধারন জনগনকে বেকুব ভাবা। তারা সবসময়েই ভাবেন, তারা সবাত্তে বেশী বুঝেন, শুধু বেকুব অশিক্ষিতরাই বুঝলো না। ফাহাম সাহেব বুঝেন ভোটাভুটির জন্যে রাস্তায় নামনই এখন একমাত্র দায়িত্ব। কিন্তু অশিক্ষিত মেরুদণ্ডহীন সাধারন জনতা সেইটা না করে বিএনপিকে দুষাইতেছে।

এইধরনের চিন্তাভাবনার মূল উতস হচ্ছে সাধারন জনগনকে “এজেন্সিশুন্য” ভাবা। তাদেরকে প্যাসিভ ভাবা, তাদের এক্ট করার ক্ষমতা নাই সেইটা ভাবা। আপনি তাদের জন্যে ন্যারেটিভ তৈরী করে দিবেন। তারপর তারা যদি সেই ন্যারেটিভ না গিলে, তাইলে সেইটা তাদের দোষ। কারন আপনি সবাত্তে বেশী বুঝেন।

দুঃখিত ভাইজান। জনগনকে এজেন্সিশুন্য ভাববেন না। তাদের এক্ট করার ক্ষমতা এবং ইচ্ছা দুইই আছে। তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের মত এক্ট করে থাকে। নিজের ন্যারেটিভ বানিয়ে নিতে পারে। এলিটগো সাহায্য তার লাগে না। তার জীবনযাপনে এলিটরা কোন কাজে আসে না, এলিটগো কামড়া কামড়িতে তারা কেন যাবে? বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের মোট কর্মী সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ হবে কিনা সন্দেহ। সুতরাং এই কামড়াকামড়িতে বাকি ৯৯ শতাংস যথেষ্ট ইন্সেটিভ ছাড়া আসবে না। এইটাই হচ্ছে বটমলাইন।

জনগন বিএনপির হয়ে মরণপন লড়াই করতেছে না, সেই লড়াই তারা আম্লীগের জন্যেও করবে না কারন তাদের লড়াই করনের কোন ইন্সেটিভ নাই। তাদের বাস্তব সমস্যা সমাধানের আশা তারা ছেড়ে দিছে অনেক আগেই।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ সমাপ্ত হবার পরপরই নিয় ইয়র্ক টাইমস এর এডিটোরিয়ালে এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে বলা হয়। কিন্তু তাদের সমালোচনা ছিল অনেকটা ট্যাক্টিকাল। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সমালোচনা করেছে। কিন্তু একবার উচ্চারনই করেনি যে যুদ্ধটা আদতে লেজিটিমেইট ছিল কিনা? চমস্কি এর প্রতিক্রীয়ায় বলেছিলেন কিভাবে শক্তির কেন্দ্রগুলো পাবলিক ডিসকোর্সকে সংকুচিত করে। একটি বিশাল সামাজিক সমস্যার বয়ানকে ছোট করে একটি কিংবা দুইটি সহজপাচ্য প্রশ্নে এসে স্থির করে।

একই ঘটনা ঘটেছে এইদেশের রাজনীতিতেও। এলিটরা সবসময় পাবলিক ডিসকর্স ছোট করে নিয়ে আসতে চায়। কারন তারা চায় “টপ ডাউন ম্যানেজমেন্ট”। গত ৫০ বছরে সবকিছুকে বিজনেস এডমিনের দৃষ্টি থেকে দেখার একটি প্রবণতা শুরু হয়েছে। যার ফলে তারা মনে করেন সবকিছুর মূলে হচ্ছে কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস। একারনে দক্ষ লোকের সঠিক ম্যানেজমেন্টেই সকল সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে। কন্টেক্সট অথবা সেন্সিটিভিটি বুঝনের দরকার নাই। তারা কখনই বুঝেন না রাষ্ট্র একটি কোম্পানীর মত না। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান ১৯৯৩ সালে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পেপার লিখেছিলেন, যেখানে তিনি প্রমান করেছেন, কেন রাষ্ট্র একটি কোম্পানী নয় এবং কেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক একজন সফল সিইও থেকে মূলগতভাবে আলাদা।

ফাহাম সাহেব জিয়াউর রহমানের ভক্ত। তার এই ভক্তির অন্যতম কারন হচ্ছে জিয়াউর রহমান “মেরিটোক্রেসি” কে গুরুত্ব দিতেন। ফাহাম সাহেব মেরিটোরিয়াস মানুষ, পিএচডিধারী জ্ঞানী মানুষ, সুতরাং তার এই চিন্তা আসতেই পারে, দেশের সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায় হচ্ছে মেধাবীদের নিয়ে আসা, সম্ভবহলে সকল যায়গায় পিএইচডিদের ইন্সটল করা। তিনি অনেক সময় আওয়ামী লীগের “গ্রাম্যতা” এবং “লাড্ডাগাড্ডা” প্রবণতার সমালোচনা করে। এই সমালোচনা যতটা না আওয়ামী লীগের তারচেয়ে বেশী “গ্রাম্যতার” সমালোচনা। তার উচ্চরুচি এইসব গ্রাম্যতা দ্বারা আহত হয়। এইসব “গ্রাম্যতা” বিষয়ক ডিসকোর্স পুরোপুরিই সামাজিক সেগ্রেগেশনের জন্যে উদ্ভাবিত তত্ব। বড় বড় দুর্নীতিবাজের পাশে বসে খেতে আমাদের জাত যায় না, রিকশাওয়ালার পাশে খেতে আমাদের জাত যায়। সুতরাং তিনি যে মেরিটোক্র্যাসি অথবা পিএচডিপন্থার প্রতি আস্থা রাখছেন, সেটি কতটুকু মেরিটের জন্যে আর কতটুকু সমাজের উচ্চবর্গের অহমিকা থেকে উতসারিত সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।

এই দেশের প্রধান সমস্যা এইটা নয় যে এই দেশ যারা চালায় তাদের সবার পিএইচডি নেই। এই দেশের প্রধান সমস্যা এইটাও নয়, যে গ্রামের রিকশাওয়ালা গড়গড় করে কীটস কিংবা নীতশে আওড়ায় না। অনেক পিএইচডি ধারী দুই দলের ধামা নিয়ে ঘুরছেন। সুতরাং মেরিট অটোম্যাটিক্যালি সমাধান নিয়ে আসবে এইটা সম্পূর্ণ ভূল এবং বিভ্রান্ত ধারনা। এই ধারনার উতসও হচ্ছে নিম্নবর্গের সাধারন মানুষকে “এজেন্সিশূণ্য” ভাবা। তাদের ভালোমন্দ ভাবার ক্ষমতা তাদের নেই সেটি ভাবা। তাদের ভালোমন্দ শুধু বুঝবে এলিটরা। পিএইচডীওয়ালারা।

বারট্রাণ্ড রাসেল বারবার শিক্ষিত এবং নিম্নবর্গের সাথে বিচ্ছিন্ন বুরোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে বলেছেন। এর অন্যতম কারন, এরা যে পলিসি তৈরী করে, সেই পলিসি যে সমাজ বাস্তবতায় প্রয়োগকৃত হবে, সেই বাস্তবতায় ঐ আমলারা বসবাস করেনা। সুতরাং সকল প্রকার মেরিটোক্র্যাসির নামে প্লুটোক্র্যাসি আদপে সমাজের অর্ডার ও স্ট্যাটাস কো বজায় রাখনের হাতিয়ার।

নিম্নবর্গের সাধারন মানুষের জন্যে যেটি প্রয়োজন সেটি পিএইচডিদের খবরদারী নয়। তাদের দরকার তথ্য। পিএইচডিরা যদি আদপেই রেসিস্ট চিন্তাভাবনা থিকা মুক্ত হত, তাহলে নিম্নবর্গের মানুষকে তথ্য সরবরাহ করত। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক খবরদারী থেকে দূরে থাকত। সমস্যা হচ্ছে এলিটরা সেইটা কখনই করে না। তারা তথ্য নিজের কাছে রাখে। নিম্নবর্গের সাথে কমিউনিকেট করে না। এবং হঠাত করে নিম্নবর্গের মানুষের উপর নেমে আসে পিএইচডিধারীদের তৈরী পলিসি। যেই পলিসি তৈরীর সময় তার সাথে কথা বলার কোন প্রয়োজন এলিটরা বোধ করে না। কারন, তারা যথারীতি সবাত্তে বেশী বুঝে।

শাহবাগ আন্দোলনের সময় বিএনপিওয়ালার নাখোশ হচ্ছিলেন কারন শাহবাগওয়ালার কেন রাষ্ট্রের অন্যান্য সমস্যা নিয়ে কিছু বলছে না এই জন্যে। আজকে ফাহাম সাহেব নাখোশ হচ্ছেন, কেন বিএনপিকে ভোটের বাইরে অন্যকোন পরিবর্তনের কথা বলতে হবে? এই মুহুর্তে তো ভোটই নাই, অন্যকিছু বলে তাই লাভ নাই।

সুতরাং ফাহাম সাহেবের এই বক্তব্যে বৃত্তটি সম্পূর্ণ হল। এককালে তিনি বিরোধীপক্ষকে পাবলিক ডিসকোর্স সংকুচিত করার দায়ে দোষারোপ করছিলেন। আজকে তিনি নিজে বিএনপির সংকুচিত ডিসকোর্সকে প্রাণপনে ডিফেণ্ড করছেন।

যতদিন আমদের রাজনৈতিক দলগুলো ভাববে গনতন্ত্রে নির্বাচনের চেয়ে জরুরী কিছু নেই, আর নির্বাচনের বাইরে রাজনৈতিক কোন স্পেইস নেই, ততদিন তাদের কামড়াকামড়ি জমিদারদের কামড়াকামড়ি হয়েই থাকবে। এর কোন মূল্য সাধারন মানুষের কাছে তৈরী হবে না। সাধারন মানুষ এই ফানুশের পেছনে দৌড়াবেও না। গুণ্ডাপাণ্ডারা একে অপরের মাথায় লাঠির বাড়ি মেরে শক্তির লড়াই খেলবে। বিএনপির কর্মসূচীতে মানুষ না থাকাই উলটা মানুষকে দোষারোপ করার এই আকুতি প্রমাণ করে আসলে তাদের কোথায় লাগছে। আওয়ামী লীগের গুণ্ডাপাণ্ডাদের সাথে তাদের গুণ্ডাপাণ্ডারা পেরে উঠছে এইখানেই তাদের ক্ষোভ। মাইরপিট এবং লুটপাট যেই রাজনৈতিক দলগুলোর বৈশিষ্ট্য এবং যারা শক্তিপরীক্ষায় কখনই পিছিয়ে যেতে চায় না, তারা আজকে মার খেয়ে যদি বলে “আমি ভদ্র, মারামারি করি না” সেইটা হাস্যকর কথা হয়ে যায়।

এখন পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলনে প্রমাণ হয়েছে তাদের গুণ্ডামি করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের চেয়ে কম। এইটা এফিশিয়েন্সির ব্যাপার। নীতির নয়। আজকে যদি বিএনপি আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশী গুণ্ডামীর সুযোগ পেত, তারা তাদের “আমরা ভদ্রের দল” ইত্যাদি বলে পাশ না কাটিয়ে সেই গুণ্ডামীর সর্বোচ্চ সুযোগ গ্রহন করত।

ফাহাম সাহেবের একটি কথা দিয়ে শেষ করি। তিনি বলেছেন সাধারন মুক্তিযুদ্ধাদের চিন্তাভাবনা এত সফিস্টিকেটেড ছিল না। এইখানেও তিনি ভেবেছেন বাংলার সাধারণ যে কৃষকটি যুদ্ধে গিয়েছে তার কোন এজেন্সি নেই। আসলে যেটি নেই সেটি হচ্ছে তার আশা আকাঙ্খাকে এলিটদের উপযোগী ভাষায় প্রকাশের ক্ষমতা। কিন্তু যুদ্ধের ন্যায্যতা তার কাছে ঠিকভাবেই প্রতিভাত হয়েছে। জনযুদ্ধের জন্যে যা কিছু প্রয়োজনীয় সবই তার ছিল। ছিলনা শুধু এলিটদের সাথে কমিউনিকেট করার ক্ষমতা। জনযুদ্ধের জন্যে এই গুনের কোন দরকার নেই। এই গুনের দরকার পরে যুদ্ধের পরে, যখন এলিটরা লুটপাট শুরু করে, সেই এলিটদের কাছে আবেদন জানানোর জন্যে।

এই লুটপাটতান্ত্রিক এবং গুণ্ডাপাণ্ডানির্ভর সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি অনাস্থা জানাইলাম। আমি অনেক দেরীতে জানাইছি। সাধারন জনগন বহু আগেই অনাস্থা জানাইছে।

আরিফুল হোসেন তুহীন-2

6th January

আমার আগের নোটটির [১] প্রতিক্রীয়া হিসবে Shafiqur Rahman নীচের মন্তব্যটি করেছেন।

“What is the use of this kind of speculations without the support of any empirical social science research? Before constructing castles of social hypotheses, one should at least try to build a foundation of information. I think it is very irresponsible to ascribe motives upon general masses without knowing what they really think. The common people ofcourse spent more time worrying about bread and butter issues but they are human beings too and 20th century social science have taught us one thing repeatedly, higher order purpose and dignity is important for human beings of all classes”

আমার নোটে প্রধানত দুইটি ব্যাপার ছিল।

প্রথমত সাধারন মানুষের এজেন্সি। দ্বিতীয়ত সাধারন মানুষের রাজনৈতিক আইডিন্টেটি রক্ষার জন্যে ইন্সেটিভ স্ট্রাকচারটি আসলে কি? এই দুইটি ধারনা কি এম্পিরিক্যালি এস্টাবলিশ করা যায়?

প্রথমেই এজেন্সির প্রসঙ্গে আসি।

এজেন্সির যে আলোচনা বিংশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে হয়েছে সেটি কিন্তু কোণ “তথ্য” অথবা “টেক্সট” কে অস্বীকার করে না। বরং “তথ্য” বা “টেক্সট” কে ভিন্নভাবে পড়ার কিছু উপায়ের কথা বলে। তাদের দাবীটি হচ্ছে, একই তথ্য বা টেক্সটকে আগে যেভাবে পড়া হত এবং ইন্টারপ্রেট করা হত, সেই পড়ার পেছনে পাঠকের কিছু বায়াস কাজ করেছে। সুতরাং টেক্সটগুলো নতুন করে পড়তে হবে।

একটি সাধারন উদাহরন দেই।

ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা এই অঞ্চলে ত্রয়োদশ শতক থেকে শুরু হওয়া তুর্কি/আফগানী শাসনকে “ইসলামী” শাসন এবং সেই শাসনকে ধর্মের মাধ্যমে চিহ্নিত করা শুরু করেন। তাদের সামনে প্রধানত যে তথ্য প্রমাণ ছিল, সেগুলো হচ্ছে, প্রত্যেকটি সুলতানের দরবারে তার কাজকর্ম ক্রনিকেল লেখার জন্যে কয়েকজন নিযুক্ত থাকত। এরা প্রধানত সুলতান কতটুকু ইসলামভক্ত এবং ইসলামের প্রচার প্রসারে কতটুকু কাজ করত সেগুলো ডালাপালা দিয়ে বর্ণিত থাকত। এছাড়াও প্রতিটি সুলতান বিভিন্ন পীর দরবেশের আশীর্বাদ লাভের চেষ্টা করতেন সেটিরও বর্ণনা থাকত। বলা বাহুল্য এইসব অতিরঞ্জিত বয়ানে বাস্তবতা সামান্যই থাকত। পরবর্তীতে একই টাইম ফ্রেইমের বিভিন্ন সংক্সৃত লিটারেচার ঘেটে দেখাগেল উচ্চবর্ণের হিন্দুরা এই আক্রমণকারী শাসকদের “মুসলিম” হিসেবে আইডেন্টিফাই করতেছেন না। আইডেন্টিফাই করতেছেন “টার্ক” বা “আফগানী” হিসেবে। যার ফলে উনিশ শতকের ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের “ইন্টারপ্রেটেশন” বিপদের মুখে পরে। নতুন ইন্টারপ্রেটেশন কিন্তু আগের তথ্যকে অস্বীকার করেনি। কিন্তু নতুন ইন্টারপ্রেটেশন যেটি করেছে, সেটি হচ্ছে আগের তথ্যের সাথে তথ্য উতপত্তির কনটেক্সট যোগ করেছে। ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা কনটেক্সট বোঝেননি। রাজদরবারে লেখা সুলতানের প্রশস্তিমূলক ক্রনিকেলকে তারা নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের উতস মনে করেছেন। কোণ পরিস্থিতিতে ক্রনিকেলগুলো লেখা হয়েছে সেই কনটেক্সটি এখানে যোগ করার গুরুত্ব অনেক পরের ঐতিহাসিকরা বুঝতে পেরেছেন।

এখন নিম্নবর্গের মানুষ সম্পর্কে সাধারন যে চিন্তা আছে সেটিকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ আছে।

যেমন বাংলাদেশে একটি সাধারন ধারনা প্রচলিত আছে, যে দেশের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষিত নয় তাই দেশের লোকে কিছু বুঝতেছেনা, এবং বারবার লুটেরা রাজনীতির কাছেই আত্নসমর্পন করতেছে। যদিও এইটা মোটামুটি প্রমাণিত, উচ্চশিক্ষা সবসময় মানুষকে নৈতিকতা, সাম্য ইত্যাদির শিক্ষা দেয় না। শিক্ষিত মানুষরা দুই নাম্বারি করতে কখনই পিছিয়ে থাকে না। সুতরাং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রায়োগিক গুরুত্বের বাইরে তাকে “সঠিক নাগরিক” হওনের মাপকাঠি চিন্তা করার মাঝে ঘাপলা আছে। শিক্ষা মানুষের চিন্তাভাবনা সংগঠনের কিছু টুলস প্রোভাইড করে। কিন্তু এই টুলসগুলো দিয়ে আমি কি করব সেইটি পুরোপুরি আমি এবং আমার সমাজ বাস্তবতায় ঠিক হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কোন মানুষের ইন্ট্রিন্সিক গুন নয়। এইটা নির্ভর করে সুযোগ এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের উপর। যাদের এই প্রিভিলেজ থাকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পায়। তাদের কাছে তথ্যের পরিমাণ বেশী থাকে।

আধুনিক সমাজের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে আমরা মনে করি জ্ঞান = ক্ষমতা। অর্তাত আপনি যদি বেশী তথ্যের অধিকারী হন, কম তথ্যের অধিকারীদের উপর আপনার খবরদারী করনের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। অথচ, বিষয়টা হওয়া উচিত ছিল ভিন্ন। যেহেতু আমরা এই ব্যাপারে একমত হতে পারি, যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের কোন জন্মগত গুন নয়, সেহেতু যার কাছে তথ্য বেশী, তার উচিত ছিল যার কাছে তথ্য কম তাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করা। তার উপর খবরদারী করা নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা মনে করি যাদের “প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা” নাই, তাদের “এজেন্সিও” নাই। সুতরাং তাদের নিজেদের ভালোমন্দ বুঝারও ক্ষমতা নাই। তাই বেশী তথ্যওয়ালারা কমতথ্যোয়ালাদের উপরে খবরদারী করবে। কারন বেশী তথ্যোয়ালারা বেশী বুঝে। এই প্যারাডাইমের সমস্যা হচ্ছে, আমরা ভুলে যাই কনটেক্সট এর কথা। উড়িরচরের আইজুদ্দীনের সমস্যা সচিবালয়ের আইজুদ্দীন সমাধান করতে পারবে না। যেটা হওয়া উচিত, উড়িরচরের আইজুদ্দীনকে জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য সরবরাহ করবে। এবং উড়িরচরের আইজুদ্দীন যেইটা ঠিক মনে করবে সেইটা করবে। বিশ্বব্যাপি পাবলিক হেলথ প্রজেক্টগুলো মোটামুটি সফল হয়েছে, কারন তারা এই কনটেক্সটের ব্যাপারটা মাথায় রেখেছে। তারা শুধু মায়া বড়ি আর পোলিও টিকা নিয়া গ্রামে যায় নাই, তারা এর কনজাম্পশনের জন্যে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেছে। এবং শেষপর্যন্ত সিস্টেমটাকে ভলান্টারি রেখেছে। যাতে মানুষ স্বত”স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করে।

কিন্তু সামাজিক অর্থনৈতিক প্রজেক্টগুলো , এই প্রোজেক্টের সাবজেক্ট পপুলেশনের মতামত বা সেই পপুলেশনকে কনভিন্স করার প্রয়োজন খুব একটা মনে করে না। এর কারন যথারীতি সাধারন জনগনকে “এজেন্সিশুন্য” ভাবা। তাদেরকে প্যাসিভ ভাবা, তাদের এক্ট করার ক্ষমতা নাই, এইটা ভাবা।

এখন জনগনের এজেন্সি আছে কি নাই, সেইটা কি স্পেকুলেটিভ না এম্পিরিক্যাল?

এইগুলো এম্পিরিক্যাল বেসিসের উপরে বসানো যায়।

আবারো উদাহরন দেই। উনিশ শতকের আমেরিকায় যখন দাস প্রথা প্রচলিত ছিল, তখন দাসদের মধ্যে ভিন্ন একধরনের “সংস্কৃতি” চালু ছিল যা তার সাদা প্রভুদের থেকে আলাদা। এইটা একটা এম্পিরিক্যাল ফ্যাক্ট। এখন এইটাকে ইন্টারপ্রেট করার চেষ্টা করা যাক। একই টাইম স্পেইসে দুইটি জনগোষ্টী বসবাস করেও কেন তারা ভিন্ন সংস্কৃতি লালন করবে। দাস প্রত্যক্ষভাবেই তার সাদা প্রভুদের সংস্কৃতি দেখতেছিল। এখন তারা সাদাদের সংস্কৃতি কিন্তু এমুলেট করার চেষ্টা করে নাই।

উনিশ শতকের বাংলায় বাংলা ইংরেজী নাটক/সাহিত্যের হিড়িক পরেছিল। ধরেন যেই বাগানবাড়িতে এইসব নাটক হইত, সেখানকার কর্মচারীরা এইগুলো দেখত। কিন্তু সেই কর্মচারী যখন নিজের সামাজিক স্পেইসে ফেরত যাইত তখন তার সংস্কৃতি নির্দিষ্টভাবে ভিন্ন ছিল তার প্রভুদের সংস্কৃতি থিকা। তারাও প্রভুদের এমুলেট করার চেষ্টা করে নাই।

এই ঘটনাটার ইন্টারপ্রেট কিভাবে করা যায়?

একটা সহজ ইন্টারপ্রেটেশন হচ্ছে, এরা অশিক্ষিত লোকজন, তারা হ্যামলেট/শর্মিষ্ঠার মূল্য বোঝে না। ভালো যুক্তি। কিন্তু এই যুক্তির একটা বড় সমস্যা হইতেছে, এইটা প্রথমেই ধরে নেয়, “হ্যাম্লেট”, “শর্মিষ্ঠা” উন্নত সংস্কৃতি, এবং নিম্নবর্গের মানুষ সেইটা অনুসরন করতেছে না অজ্ঞতাপ্রসূত। অর্তাত এইখানে প্রশ্নটা সক্ষমতার। উচ্চবর্গের শিক্ষিত মানুষের “হ্যামলেট” বোঝনের ক্ষমতা আছে। নিম্নবর্গের মানুষেরাও এইগুলো করত যদি তাদের সেই সক্ষমতা থাকত। কিন্তু হোয়াট ইফ, নিম্নবর্গের মানুষের কাছে এইগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনেই হয় নাই? কারন যদি এমন হতো তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হইছে তারা চেষ্টা করত এগুলো এমুলেট করতে। সেই এমুলেশন হয়ত বেশী ভালো হইত না। কিন্তু এইরকম কোন আগ্রহ তারা দেখায় নাই।

এখন পৃথিবীর সকল এলাকায় নিম্নবর্গের মানুষ যে তার প্রভুদের থিকা ভিন্ন সংস্কৃতি লালন করছে। কেন করছে সেইটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। কলোনাইজার কিংবা তাদের দেশীয় সহযোগীদের কাছে এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, তারা এতই নির্বোধ যে কলোনাইজারদের সংস্কৃতি যে উন্নত সেইটা বুঝতেছে না।

এই নির্বুদ্ধিতার যুক্তি ধোপে টেকে না। অন্যকিছু বাদ দেন। শুধুমাত্র বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস্টা দেখেন। তারা কিধরনের বুদ্ধি, সাহস ইত্যাদি দেখাইছে। তারা এমন কঠিন পরিবেশে অপারেট করছে, যেই কঠিন পরিবেশের কথা আজকের বিম্পি কিংবা আম্লীগ কল্পনাও করতে পারবে না। অপ্রেশন কাকে বলে এই মেইনস্ট্রীম রাজনৈতিক দলের আসলে জানাই নাই।

সুতরাং দেখাযাচ্ছে তাদেরকে সংগঠিত হবার ক্ষমতা, আত্নত্যাগের ক্ষমতা, কোনটারই কমতি নাই। তাহলে তারা মেইনস্ট্রীম রাজনীতিতে আসে না কেন?

এইখানে আসবে ইন্সেন্টিভ এর কথা। আমার নোটের এই অংশটা আসলে সাধারন অর্থনীতি। ইন্সেন্টিভ ছাড়া কিছুই হয় না। ইন্সেন্টিভ বলতে শুধু ম্যাটেরিয়াল জিনিসপাতি বোঝায় না। ইন্সেন্টভ বলতে বোঝায় , একজন ব্যক্তি যাকিছু গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।

এখন সহজ একটি উদাহরন দেই। যেকোন মানুষের কাছে আত্নসম্মান গুরুত্বপূর্ণ। এখন একজন রিকশাওয়ালা নিয়মিত চড় খেয়ে থাকে। কাজের বুয়া খুন্তির খোচা খেয়ে থাকে। এইগুলো তাদের আত্নসম্মানে আঘাত করে। এখন এমন কোন আন্দোলন যদি হত, যা নিম্নবর্গের মানুষের এইসব অসম্মান বন্ধ করার জন্যে কাজ করছে, এই মানুষগুলোর ইন্সেন্টিভ থাকত সেই আন্দোলনে যোগ দেয়ার।

এমনি করে অসংখ্য ইন্সেন্টিভের লিস্ট করা যাবে যেগুলো অধিকাংশ মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

এই লিস্টের অনেক নীচে অবস্থান করে শাস্তি দেয়ার প্রবনতা। (কিছু এম্পিরিক্যাল স্টাডি আছে, যে মানুষ ক্ষতিপূরণ পাইলে শাস্তি দিতে আগ্রহী হয় না) এই শাস্তি দেওনের প্রবনতা থেকে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয় প্রধানত। বাংলাদেশের সকলের মনে এই ধারনাটা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে “সরকার পরিবর্তনের সাথে কোন কিছুই পরিবর্তন হবে না”। সুতরাং ভোট দেয়াটা মূলত একধরনের কনভিনিয়েন্ট প্রটেস্ট যা ছুটির দিনে ৩০ মিনিট খরচ করে করা যায়। এইখানকার খুব কম ভোটই “পরিবর্তনের আশায়” ভোট।

এখন মধ্যবিত্তের সমস্যা হচ্ছে ভিন্ন। মধ্যবিত্ত/উচ্চবিত্ত সামাজিক ভাবে নিম্নবর্গের মানুষের মত অসম্মান এবং নিগ্রহের জীবন যাপন করে না। সুতরাং তাদের কাছে সম্মান বা ডিগনিটির চিন্তাভাবনা নিম্নবর্গের মানুষের থেকে আলাদা। তারা উদারনৈতিক গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের ব্যাপারে সেন্সেটিভ। এইসব ভায়োলেট হলে তারা ক্ষেপে উঠে।

আপনার আমার দুইবেলা চড় খাওনের সমাজ বাস্তবতা নাই। সুতরাং এখন আপনি আর আমি বসে যদি বলি “মোরাল এবং লজিক্যাল” দাবীগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তখন সেইটা আমাদের সমাজ বাস্তবতায় পুরোপুরি ঠিক আছে। কিন্তু ভিন্ন সমাজ বাস্তবতার একজনের কাছে যদি এই “মোরাল এবং লজিক্যাল” দাবীগুলো “কম” গুরুত্বপূর্ণ হয়(গুরুত্বহীণ না কিন্তু) তাইলে তাদের দোষানোর কিছু নাই। এইটাই আমার বক্তব্য। আমি যদি প্রতিদিন লাথি খাইতাম, এবং জানতাম, এই লাথি খাওনের কোন শেষ অদুর ভবিষ্যতে নাই, তখন, আমি যদি সিদ্ধান্ত নিতাম আমি “লাথি না খাওনের” রাজনীতিতে মনোযোগ দিব, ইলেক্টোরাল পলিটিক্স এর চেয়ে তাইলে আমাকে দোষ দেয়া কি ঠিক? যে রাজনৈতিক শক্তি আমার লাথি খাওন আটকাতে পারবে না, এবং আমাকে লাথি দেয়া লোকজনের সাথে মৈত্রী করে চলবে, তার প্রতি যদি আমি অনাস্থা জানাই, তাইলে আমাকে দোষারোপ করা ঠিক কি না?

সমাজের কোন মানুষের সার্বজনীন দায়িত্ব কর্তব্যের বয়ান তৈরী করার মধ্যে একটা হিপোক্র্যাসি আছে।

সমাজ বাস্তবতা না বিবেচনা করে সবার কাছে একই জিনিস “মোরাল এবং লজিক্যাল” প্রতিভাত হয়না এই আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং তৈরী হওনেরও দরকার আছে।

 

ফাহাম আবদুস সালাম -2

7th January

বাংলাদেশের আরবান মিডল ক্লাসকে নিয়ে আমি এক খান লেখা লিখেছিলাম দুদিন আগে। তার প্রতিক্রিয়ায় জিয়া হাসান, আরিফুল হোসেন তুহিন ও জায়েদ উল্লাস তিনটা লেখা লিখেছেন। তার প্রতিক্রিয়ায় এই লেখা।

তিনটা লেখার অনেক ব্যাপারেই আমি একমত। বিশেষত বিএনপির রাজনীতির সমালোচনায় তারা যা লিখেছেন আমি তা মোটামুটি সমর্থন করি। কিন্তু এই তিনটা লেখার একটা মূলসুর আছে যার সাথে আমি একমত না। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন যে বাংলাদেশে দুই দলের কামড়াকামড়ি চলছে। আরবান মিডল ক্লাস ভাবছে যে এই কাজিয়ায় আমার কোনো ইনসেনটিভ নাই (আরিফুল হোসেন তুহিনের আরবান মিডল ক্লাস ও “নিম্নবর্গের” মাঝে বিপজ্জনক রকমের ওভারল্যাপ মনে হয়েছে আমার কাছে)। বিএনপিও তাদের কনভিন্স করতে পারে নাই । কাজেই আরবান মিডল ক্লাস যে বিএনপির ক্ষমতার লড়াইয়ে পার্টিসিপেট করবে না – এই ব্যাপারটাকে তারা “জাস্টিফাই” করেছেন।

এবং সে সাথে তারা আমার বক্তব্যকেই রিইনফোরস করেছেন। বুঝিয়ে বলি।

গণতন্ত্র স্ট্যাবলিশ হতে যে সময় লাগে এ ব্যাপারে কেউ আশা করি ভিন্ন মত পোষণ করবেন না। বৃটেনের দুইশ বছর আগের গণতন্ত্রের যে রূপ ছিলো সেটা এমন কি আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও হাস্যকর ঠেকতে পারে। কিন্তু তাদের উত্তরণ ঘটেছে। দেড়শ বছর আগের ব্রিটেনে মেয়েদের ভোটাধিকার নাই দেখে জন স্টুয়ার্ট মিল পড়া উচ্চ-মধ্য বিত্তের সাফ্রাজিস্ট নারীদের জন্য খুব সহজ ছিলো দর্শক হয়ে বসে থাকা – ভাবা যে সমাজের সব পুরুষ কামড়াকামড়িতে ব্যস্ত আমাদের কী দরকার এই কাজিয়ায় যাওয়ার? কিন্তু তারা আন্দোলন করে ভোটাধিকারের দাবী আদায় করে নিয়েছিলেন।

এই উত্তরণ পর্ব কিন্তু বন্ধ হয়ে যায় নি – এখনও চলছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে এখনো চলছে – কেউ এগিয়ে আছে, কেউ পিছিয়ে। বাংলাদেশে যে লুটপাটতন্ত্র চলছে সেটা বাংলাদেশের একক আবিষ্কার না। প্রায় প্রতিটি দেশেরই কোনো না কোনো পর্যায়ে কাছাকাছি মাপের লুটপাটতন্ত্র জারি ছিলো। তো এই লুটপাটের বেনিফিশিয়ারিরা আল্লাহর ভয়ে লুটপাট বন্ধ করবে – এমনটা নিশ্চই কোনো কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ আশা করবেন না। সে সব দেশে লুটপাট সীমিত হয়েছে কীভাবে? এর সরল কোনো উত্তর নেই কিন্তু একটা মৌলিক মিল আছে সব গণতান্ত্রিক দেশে। জনগণ লড়াই করে তার অধিকার স্ট্যাবলিশ করে রাজনীতিবিদদের তাদের পক্ষে পলিসি বানানোর জন্য বাধ্য করেছে। য়েস, খেয়াল করুন – জনগণ লড়াই করেছে এবং পলিসি মেকারদের বাধ্য করেছে।

লুটপাট তুরুপ বন্দোবস্ত – এটা এমনি এমনি সীমিত হয় না।

বাংলাদেশে যে এই মুহুর্তে খুবই কুৎসিত একনায়িকাতন্ত্র চলছে এটা কারো অজানা না। ভোট গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত না – মানি কিন্তু ভোটাধিকার গণতন্ত্রের সর্বপ্রথম শর্ত। সেই ভোটাধিকারও বাংলাদেশের মানুষের আজকে নেই। ২০০৬ সালে বিএনপি ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিলো কিন্তু তারা সফল হয় নি। কারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছিলো। যদিও ২০০৯ এর নির্বাচন ষড়যন্ত্রমূলক ছিলো কিন্তু আমি এই নির্বাচনকে এক্সেপ্ট করি কারণ নির্বাচনের দিনে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলো। এবং এও মানি যে নির্বাচন ষড়যন্ত্রমূলক না হলেও বিএনপি হারতো কারণ জনগণ বিএনপিকে চায় নি।

আপনি যদি গণতন্ত্রে ঈমান আনেন তাহলে তাহলে আপনাকে স্বীকার করতে হবে যে জনগণের কিছু ইনভায়োলেবল রাইটস আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন তার মধ্যে অন্যতম। প্রশ্ন হোলো এই রাইটস যখন অনুপস্থিত তখন সেটা স্ট্যাবলিশ করার দায় কার?

তিনজন লেখকই এই দায় থেকে আরবান মিডল ক্লাসকে মুক্তি দিতে চান কারণ তারা জানেন যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের যে পার্থক্য সেটা লুটপাটের মাত্রার পার্থক্য – আদর্শের পার্থক্য না। জনগণ কেন তাদের কামড়াকামড়ির দায় নেবে? মিডল ক্লাসের এই কনশাস ডিসিশন সম্পূর্ণ এক্সেপ্টেবল তাদের কাছে।

তাদের এই চিন্তাই প্রমাণ করে কেন আমরা আজো পলিটি হতে পারি নি, কেন আমরা সমাজ বুঝি কিন্তু রাষ্ট্র বুঝি না। সমাজে দুই জনের কাজিয়ায় দর্শক হওয়ার সুযোগ আছে কারণ সমাজের কাজিয়া কমপ্লেক্স না। রাষ্ট্রের কাজিয়ায় আমাদের সবার স্বার্থ জড়িয়ে আছে – এটাকে ইগনোর করার কোনো উপায় নেই। সমাজের বাইরে যাওয়ার আপনার সুযোগ আছে, ধর্মের বাইরে যাওয়ার আপনার সুযোগ আছে কিন্তু আপনার রাষ্ট্র-নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

জিয়া হাসানের ভাষায় এই কাজিয়ায় জনগণের কোনো ইনসেনটিভ নাই। ওয়েল, এই কাজিয়ায় বিএনপি জিতলে আর কিছু না হলেও জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে। এইটা যদি জনগনের ইনসেনটিভ না হয়ে থাকে তাহলে আরবান মিডল ক্লাসের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এইসব গালভরা কথা মুখে আনা উচিত না।

আমি বলছি অবশ্যই ভোটাধিকার জনগনের জন্য একটা ইনসেনটিভ। ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তারা যদি আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনে আমাদের অবশ্যই সেটা মেনে নিতে হবে।

তারা মনে করছেন খারাপ থেকে খারাপতর হয়ে ওঠাই একমাত্র গন্তব্য – তাই এই যাত্রায় দর্শক হয়ে থাকাটা উচিত না হলেও একসেপ্টেবল। আমি বলছি না। এই লুটপাটতন্ত্র থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি যদি সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে আরবান মিডল ক্লাস এই রাষ্ট্রের ওপর তাদের ঔনারশীপ এসার্ট করে।

আপনাকে বিএনপিকে কেন সাপোর্ট করতে হবে? বিএনপি লুটেরাদের দল মেনে নিলাম কিন্তু বিএনপির আন্দোলনের কজটা তো আমার আপনার সবার কজ। সাধারণ মানুষ তার ঔনারশীপ এসার্ট করে না দেখেই তো বিএনপি-লীগ লুটপাটের সুযোগ পায়। আপনি মনে করেন যে বিএনপি-আওয়ামী লীগ খারাপ। ভালো কথা। থার্ড কোনো ফোর্সকে তো তাহলে আসতে দিতে হবে। একনায়িকাতন্ত্রে তো সে উপায় নেই। ব্যাপারটা কি এমন না যে আপনার দর্শক হয়ে থাকাটাই লুটপাটতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ইন্ধন?

চেষ্টা করে দেখতে পারেন – নাক টিপে বন্ধ করে আপনি যদি কমলা (বাংলাদেশে যে ফলটাকে মালটা বলা হয়) খাওয়ার চেষ্টা করেন কোনোদিনও বুঝবেন না যে আপনি আসলে কী খাচ্ছেন। এটাই বাস্তবতা। আমাদের আরবান মিডল ক্লাস এই অসম্ভব কাজটাই করতে চান। তারা গণতন্ত্র চান কিন্তু লীগ-বিএনপির কাজিয়া চান না। তারা বুঝতে চান না যে লীগ-বিএনপির কাজিয়া থেকে আপনার বাঁচার কোনো উপায় নেই। আরবান মিডল ক্লাসই শুধু পারে দুই দলকে গণতন্ত্রে বাধ্য করতে। এই দায়িত্ব যতোদিন তারা অগ্রাহ্য করবে ততোদিন লালুভুলুদের অত্যাচার থেকে তাদের নিস্তার নাই।

 

নায়েল রহমান

7th January

 

নিউজফীড জুইড়া বিতর্কের কারণে নাক গলানোর একটা তাগিদ বোধ করলাম। নিজের মিডেল ক্লাস ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণেই কিনা পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগ্য (ম্যালাইন্ড সেন্সে) ইকনোমিক ক্লাস হিসেবে মিডেল ক্লাসরেই মনে হয়। বাংলাদেশেতো আরও বেশি। পলিটিক্যাল স্পেক্ট্রামের বাম থেকে শুরু করে (ইদানীংকালের) ডান পর্যন্ত সবাই এর উপর খাপ্পা। সবাইর ধারণা এই ক্লাসটার নিরুত্তাপ আচরণের কারণেই দেশে কিছু ‘হয়টয়’ না। মাঝেমধ্যে মনে হয় মানবসভ্যতার সকল পরিবর্তনের জন্যেও মানুষ এদেরেই দায়ী করে। বওহাত আচ্ছা। সব দোষ মিডেল ক্লাসের ধইরা নিয়াই একটু চিন্তাভাবনা করা শুরু করলাম, যার ফলাফল নিচে সন্নিবেশিত হইলঃ

মিডেল ক্লাস কী করেনাই তা নিয়া অনেকেই অনেক কিছু বলেন তাই গত দুয়েকদিন ধইরা ভাবতেছিলাম বাংলাদেশ নামের এই স্যুডো-স্টেইবল, পারশালি ফেইল্ড স্টেইটে (গায়ে লাগলে কিছু করার নাই ৪৩ বছর বয়সের একটা দেশ নিয়া আমার এক্সপেক্টেশন আপনার তুলনায় অনেক হাই) এ মিডেল ক্লাস কী কিছুই করেনা? এই নিয়া চিন্তা করতে গিয়া কিছু ঝামেলায় পড়লাম। নাগরিক হিসেবে মিডেল ক্লাসের কাছ থেইকা রাষ্ট্র কি পায় তা নিয়াই প্যাঁচটা লাগলো। এইখানে একটা জাফর ইকবালীয় সাদাসিধে ডিসক্লেইমার দিতে বাধ্য হইতেছিঃ আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বুঝিনা সুতরাং রাষ্ট্র তার নাগরিকের কাছ থেইকা কি আশা করে তার পুঁথিগত জ্ঞান আমার নাই। ঘটে যা অল্পবেশি বুদ্ধি আছে তা আমারে বলে যে রাষ্ট্র কমের মধ্যে আশা করতে পারে যে তার নাগরিক ঝুট ঝামেলা (দ্যাট ইজ বেআইনি কাজকারবার) দেখে দূরে থাইকা নিজের খায়েশ মিটাইতে অপররে ঝামেলায় ফালাবেনা, রাষ্ট্র চালানোর জন্য ট্যাকসো দিবে এবং অন্তত তার আওতায় থাকা মানুষ (দারা-পুত্র-পরিবার এটসেটরা) গুলারে নিদেনপক্ষে শিক্ষিত (হোপফুলি সুনাগরিক) কইরা তুলবে।

এই তিন ক্রাইটেরিয়ার বেইসিসে মিডেল ক্লাসরে একটু জাজ করতে গিয়া স্যারের মতন এট্টু চমকায়া গেলাম। বিস্মিত হইয়া দেখলাম যে, অপরাধের গুরুত্ব এবং সংখ্যার বিচারে এই মাচ-ম্যালাইন্ড মিডেল ক্লাসই দেখি সবচেয়ে সুবোধ বালক। মিডেল ক্লাস অন্যদের মতন (১) নিজে লাঠালাঠি করেনা, এবং (২) লাঠিয়াল ভাড়াও করতে পারেনা। [লাঠালাঠি দেইখা ভাইকেরিয়াস প্লেসার অনুভব করতেই পারে … যা এজ ইফ অন্যেরা কেউ করেনা হা হা হা] এইটারে একটু অন্যভাবে বললে দেশের সর্বনিম্ন আইনঅমান্যকারী (দ্যাট ইজ সর্বাধিক আইনমান্যকারী) শ্রেণীটাই হইলো এই হ্যাপলেস মিডেল ক্লাস। [হ্যাঁ সুযোগের অভাবে সে ভালো কিনা তা নিয়া ডিবেইট চালাইতেন পারেন তবে কোন অবস্থায় সে সুযোগ পায় তা বিশ্লেষণ করতে গেলেই ঝামেলায় পইড়া যাবেন। তবে এইখানে বইলা রাখা ভালো এই মিডেল ক্লাসের একটা চালাকচতুর অংশের ক্ষেত্রে উপরের এই কথা প্রযোজ্য না কারণ তারা বাই ডিফল্ট রুলিং ক্লাসের অংশ। সোশ্যালি কারেক্ট থাকার জন্য এর বেশি আর কিছু বললাম না এবং বলবোনা।]

আচ্ছা এরপর চিন্তা করা যাক ট্যাকসো পে করার ব্যাপারে। এইখানেও ইন্ট্রেস্টিং সেনারিও। শালার ভিতু মিডেল ক্লাস তার আয়ের অনুপাতে খুব সম্ভবত ট্যাকসো দেয় সবার চেয়ে বেশি। [আফটার অল, এই মিডেল ক্লাস চাকুরিজীবি শ্রেণীর বেতন থেইকা এট সোর্স কাইটা নেয়া হয় ট্যাক্স। দিতে না চাইলেও উপায় নাই।] কথাটা হয়তো খুব কনভিন্সিং মনে হইতেছেনা তাই একটু রিফ্রেইজ করার প্রয়োজন বোধ করতেছিঃ দেশে আয়ের অনুপাতে সবচেয়ে কম ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া অংশটাই হইলো মিডেল ক্লাস। [আশা করি এখন ক্লিয়ার হইছে।] যাহ! রাষ্ট্রের ভরণপোষণ করার দিক থেইকাও দেখি মিডেল ক্লাস খুব একটা পিছায়া নাই। ধারণা করা যাইতে পারে চাকুরিজীবি এই অংশই ব্যাংকে অল্পবিস্তর টাকাও রাখে, প্লাস নাদান হওয়ার কারণে ট্যাক্স রিবেইটের জন্যে সরকারি সেভিংস ইন্সট্রুমেন্টও এরাই সবচেয়ে বেশি কেনে।

এরপর চিন্তা করা যাক নাগরিক গইড়া তোলার ব্যাপারটা। এইখানে তুলনামুলক আলোচনা করার স্কোপ আছে। উচ্চ বা নিম্নবিত্তে অবস্থান করলে যে নামকাওয়াস্তে শিক্ষা বা অশিক্ষা নিয়ে আপনি চলতে পারবেন তা মিডেল ক্লাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। তার যেভাবেই হোক ছেলেমেয়েরে লেখাপড়া করাইতে হবে … তাও এক্কেবারে ভার্সিটি পর্যন্ত। এইটা বাঁচামরার কেইস। এই ফ্রেইমওয়ার্কে পাবলিক ইউনিভারসিটিতে কেউ চান্স পাইলে ভালো আর না পাইলে গলাকাটা (প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি)। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হইলো যে এই মিডেল ক্লাসের মেধাবী অংশটা এইখানে থাইমা থাকবেনা। তারা নিজ গরজেই বাইরে উচ্চশিক্ষা নেয়ার চেস্টা করবে। উচ্চবিত্তের সবচেয়ে মেধাবীর পক্ষে যেই ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া সম্ভব মধ্যবিত্তের সবচেয়ে মেধাবীর তাতেই যাওয়া সম্ভব। যেই পয়েন্টটা তুইলা ধরার চেস্টা করতেছি সেইটা হইলো যে মিডেল ক্লাস থেইকা যেই পরিমাণ একাডেমিক ওভারএচিভার আসছে সেইটা মনে হয় তাদের মোর প্রিভিলেজড ক্লাসের ক্ষেত্রে হয়নাই।

তা এই সীমিত ফ্রেইমওয়ার্কে মিডেল ক্লাসের অবস্থা খুব একটা খারাপ না মনে হয়? কী বলেন? ট্যাঞ্জিবল সেন্সে এদের সুনাগরিক বলতে পারবেন কি? অথবা কুনাগরিক বলা থেকে বিরত থাকতে পারবেন কি? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় সাথে থাকেন, না হইলে আইএমএইচও ইয়োর ইন ডিনায়াল। তাহইলে এতকিছুর পরেও এই শ্রেণীর উপর মানুষের এত ক্ষোভ কেন? বর্তমান কনটেক্সটে একটাই – সেইটা হইলো ফিজিক্যাল সেন্সে (?) তাদের রাজনৈতিক অসম্পৃক্ততা। এইখানে কিছু কম্পিটিং থিওরি কাজ করতেছে। অতি চিন্তায় ব্রেইন ফ্রিজ হওয়ার কারণে সেই বিষয়ে কালকে। :p

 কোমল ক্ষমতার প্রত্যাবর্তন

–রেজাউল করিম রনি

 

বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্কটের চরিত্র এক একজনের কাছে এক এক রকম। বুদ্ধিজিবিরা প্রতিবন্ধির মতো আচরণ করতে থাকে। কোন কিছুকে গোড়া থেকে বুঝবার অক্ষমতা  ডাকতে ফাও গল্পের ডালি খুলে বসে। বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা ও চাতুরী উদাম হয়ে যায় ক্ষনে ক্ষনে। আামাদের চিন্তাশীল নাগরিকের অভাব খুব জ্যান্ত হয়ে ধরা পরে তখন।

ক্ষমতা পরিবর্তনের হাওয়া বইতে থাকলে পাল্টাপাল্টি প্রতিযোগিতা ও প্রচার-প্রপাগান্ডার সময়ে এই অভাব প্রকটভাবে চোখে লাগে। বুদ্ধিজীবীরা দলীয় নীতির প্রতি অনুগত থেকে জাতীয় সমস্যা নিয়ে কথা বলার যে ঐতিহ্য এতদিন ধরে চর্চা করে আসছে -এখন তা আরও নোংরা জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের প্রায় সবাই এই দুই দলের ভারসাম্যের মধ্য থেকে চলতি সঙ্কট নিয়ে আলোচনা ও মিডিয়া প্রপাগান্ডায় অংশ নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে গত এক দশক ধরে একটা পরিবর্তন এসেছে। জামায়াতের তরফেও কিছু বুদ্ধিজীবী নতুন করে জাতীয় রাজনীতিতে হাজির হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই ছদ্ম চরিত্রের। এরা বিএনপির সঙ্গে থেকে জামায়াতের স্বার্থকে টিকিয়ে রাখতে তৎপর থাকেন। এটা একটা নতুন মাত্রা। এর ফলে চতুর্মুখী বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই বিভ্রান্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে একটা নিশ্চল পাহাড়ের মতো একই জায়গায় আটকে রাখে। ‘রাজা যায় রাজা আসে’ কিন্তু রাজনীতির কোনো গুণগত তফাত্ বা উন্নতি ঘটে না। এই দিকগুলো নজরে রেখে আজকে আমরা চলতি রাজনৈতিক হালচাল নিয়ে সংক্ষেপে কয়েকটি পয়েন্ট ধরে আলোচনা করব।

 

কৌতুকের রাজনীতি:

খালেদা নিজ অফিসে অবরুদ্ধ বা আটক আছেন। গত ৩ জানুয়ারি রাতে পুলিশ এই কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয়। পুলিশ ইচ্ছামতো তালা দেয় আর খোলে। কিন্তু ক্ষমতার চাবি পরের হাতে। একই সঙ্গে কার্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন এবং রাস্তায় ইট, বালু ও মাটিভর্তি ট্রাক দিয়ে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৫ জানুয়ারি বের হওয়ার চেষ্টা করলে পিপার স্প্রে ছোড়ে পুলিশ। এরপর থেকে খালেদা জিয়া কার্যালয়েই আছেন। এরপরে গত বৃহস্পতিবারও দিনের বেলায় ফটকের তালা খুলে দিয়ে রাতে আবার তালা দেয় পুলিশ। এই তালা দেওয়া আবার খুলে দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কৌতুক জমে ওঠে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা গণতন্ত্র রক্ষায় বালির ট্রাকের বহুমুখী ভূমিকার কথা জানান মিডিয়াকে। এইসব ট্রাক হাজির করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য, কেউ কেউ বলেন, খালেদা জিয়ার বাড়িতে মেরামতের কাজ হবে। তাদের ব্যাখ্যা সার্কাস দলের জোকসে পরিণত হয় দ্রুত। তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন আস্ফাালন ও কুরুচিপূর্ণ রসিকতা আওয়ামী লীগের ওপর জন-অসন্তোষকে আরও শক্তিশালী করে। জাতির সঙ্গে এই তামাশাপূর্ণ আচরণ লীগকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় দ্রুত। লীগের চূড়ান্ত পশ্চাদপসরণ ঘটে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার আত্মবিশ্বাসী ও সংযত ভাষণের পরে। এই ভাষণে খালেদা জিয়া যে সংযমের পরিচয় দেন তা ক্ষমতার রাজনীতিতে অতি উঁচু স্তরের বিচক্ষণতার পরিচয়।

অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া ও তার দলের মহিলা সদস্যদের ওপর পিপার স্প্রে করেছে পুলিশ। পিপার স্প্রে ব্যবহার নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। অথচ পুলিশ মিডিয়ার সামনেই আইন ভঙ্গ করছে। আর সব মিলিয়ে ২৬টি ইট-বালির ট্রাক, পুলিশের যানবাহন দিয়ে খালেদার পথরোধ করে দিয়েছে এবং ৫ জানুয়ারি ঢাকার সঙ্গে বাংলাদেশের বাইরের রেল, সড়ক, লঞ্চ সব যোগাযোগ নিজেই বন্ধ করে দিয়েছেন। আর তত্ক্ষণাত্ খালেদা জিয়া অবরোধ কর্মসূচি ডিক্লেয়ার করেন। এতে সরকারের গেম ভেস্তে যায়। সরকারের অবরোধ প্রচেষ্টা বেশ সফল হয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার তাত্ক্ষণিক অবরোধ ডাকার ফলে এই সফলতার প্রাথমিক নজরানা বিএনপির কোর্টে জমা হয়। এর মধ্যে মিডিয়ার সঙ্গে সরকারের আচরণ জনগণকে আর ক্ষিপ্ত করেছে। তথ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন, একুশে টিভি বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু চ্যানেলটির প্রধান কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, মানুষ একুশে টিভি দেখতে পাচ্ছে না। তারেক রহমানের ভাষণ প্রচারের জন্য এই খেসারত দিতে হচ্ছে বলে মনে করেন সাংবাদিকরা। যদিও মামলা হয়েছে পর্নোগ্রাফি আইনে। পরে অবশ্য রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হয়েছে। অদ্ভুত এক অবস্থা তৈরি হয়েছে।

আদালতের এখতিয়ার আর রাজনীতির পরিমণ্ডল এ দুটোকে সচেতনভাবে গুলিয়ে ফেলা বাংলাদেশের তথাকথিত ‘আইনের শাসনের’ (আসলে দলীয় শাসনের) ঐতিহাসিক নজির হয়ে গেছে।

ধরেন, তারেক রহমান অপরাধী। কিন্তু অপরাধীর ‘মানবাধিকার’ বা স্বাভাবিক অধিকার বা আইনি অধিকার হল ‘কথা বলার অধিকার’। যত ভয়ঙ্কর অপরাধীই হোক না কেন, তার অপরাধের জন্য জবান বন্ধ রাখার কোনো বিধান নেই। এটা আইনের একটা বেআইনি প্রচেষ্টা মাত্র। দুই নাম্বার পয়েন্ট হল, মিডিয়া কী প্রচার করবে তা কোনোভাবেই আদালতের রায়ে নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না। এই হাস্যকর কাজটি করে আদালতের সম্মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সরকার।

এরকম চোখে-মুখে মিথ্যা ও চাতুরি এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণাপূর্ণ আচরণের জন্য বর্তমান সরকারকে কী মূল্য দিতে হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

খালেদা জিয়া আর বিএনপি এক নয়। বিএনপির চারপাশে দুষ্টলোকদের আখড়া এই অভিযোগ অনেক দিনের। কিন্তু খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ত্যাগ ও প্রতীকী গুরুত্বকে আওয়ামী লীগ যেভাবে নস্যাত্ করার চেষ্টা করছে তাতে উল্টো ফল ফলতে শুরু করেছে। অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া গণতন্ত্রহীনতার প্রতীকে পরিণত হচ্ছেন ক্রমে ক্রমে। তার ৭-দফা ‘নরম’ দাবি লীগ যেভাবে উড়িয়ে দিয়েছে, হম্বিতম্বি করেছে, তা লীগকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দেবে দিন দিন।

সরকার অবরোধ ঠেকানোর জন্য ইজতেমার ইস্যুটিকে কাজে লাগাতে পারবে বলে ভেবেছিল। কিন্তু ইজতেমার মধ্যেও অবরোধ চলছে। সরকার ঘোষণা করেছে, রাস্তায় গাড়ির ক্ষতি হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। এতে জনমনে আরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। লাশের ক্ষতিপূরণের রাজনীতি জনগণ মেনে নেয়নি। এ ধরনের ঘোষণাও হঠকারী হয়েছে। ঢাকায় অবরোধ জোরদার হয়েছে বলা যাবে না। কিন্তু প্রতিদিন গাড়িতে আগুন জ্বলছে। জনমনে আতঙ্ক ক্রমে ঘনীভূত হচ্ছে। ৬ জানুয়ারি প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ান বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গার্ডিয়ান লিখেছে, “Hasina and Zia have between them ruled Bangladesh for most of the last three decades. They have a notoriously poisonous relationship and frequently exchange insults and barbs about each other’s families.” তাদের সম্পর্ককে গার্ডিয়ান ‘বিষাক্ত-সম্পর্ক’ বলেছে। মিথ্যাচার আর হিংসাই এখানে উত্কটভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

যেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই অবস্থার সৃষ্টি -তার রাজনৈতিক বয়ান তৈরি নিয়ে এখন সহিংসতা পরিণত হয়ে উঠছে। সরকার সাংবিধানিকভাবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি জবরদস্তিমূলক নির্বাচন করে ক্ষমতাকে নিজেদের দলীয় সম্পত্তি করে নিয়েছে। এবং এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র রক্ষা’ দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। অন্যদিকে শুরু থেকে বিএনপির ডাক ছিল ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে পালন করা হবে। কে হত্যাকারী, কে রক্ষাকরী-এ নিয়ে বিবাদের শুরু। এটাকেই আমরা বলছি কৌতুকের রাজনীতি। বলাই বাহুল্য, এই প্রতিযোগিতায় ক্ষমতার দম্ভ পরাজিত হয়েছে। বিএনপি এগিয়ে আছে। বিএনপির প্রতি গণসমর্থন তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের রসিকতা ও কুরুচিপূর্ণ নিষ্ঠুরতা খালেদা জিয়ার প্রতি গণসমর্থন তৈরিতে বেশ ভালোভাবে কাজে দিয়েছে। ক্ষমতা মানে যে গায়ের জোর বা গোন্ডামি না তা আবারও প্রমাণিত হল। খালেদার ‘সফট-পাওয়ার’ বা কোমল ক্ষমতার স্ট্র্যাটেজি এগিয়ে গেল। পরে এই প্রসঙ্গে আবার ফিরব। তার আগে আমরা দেখে নিবো টাউট বুদ্ধিজিবি কি ভাবে বিএনপিকে ‘জিন্দামরা’ দলে পরিণত করতে কূটচাল চেলে যাচ্ছে।

 

ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীর নসিহত:

 

বিএনপির সাংগঠনিক দুরবস্থার কথা কারও অজানা নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপারটি হল, কিছু মতলববাজ ও ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীর খপ্পরে পড়ে বিএনপি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তথাকথিত ইসলামিস্টদের নিয়ে রাজনৈতিক গেম খেলার কুপরামর্শ বিএনপিকে ক্ষমতার দৌড়ে পিছিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির গণসম্পৃক্ততার ধরন একই রকম। এরা প্রত্যেকে মুখে জনগণের কথা বলে বটে কিন্তু কাজের কাজে জনগণ বলতে এরা বোঝে পার্টি জন। দলীয় ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে উঠে জনরাজনীতির পরিমণ্ডলে দুই দলই গরহাজির। এই অবস্থার মধ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি বা প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে কূটনৈতিক দেনদরবার। আর ঠিক এখানেই বিএনপির নজর ও ভরসা। জনগণের জন্য কোনো দাবিদাওয়া নেই এমন অভিযোগ পাশ কাটিয়ে ক্ষমতার দৌড়ে নির্বাচনবাদী ৭-দফা নিয়ে বিএনপি মাঠে হাজির হতে চাইছে। ফলে পুরনো বামপন্থী জায়গা থেকে জনগণের জন্য কোনো কর্মসূচি ছাড়াই বিএনপি ক্ষমতার জন্য নির্বাচনের দাবি নিয়ে কেন হাজির হল-এমন অভিযোগ করলে এখনকার অান্তর্জাতিক কূটনৈতিক হালচাল আমরা বুঝতে পারব না। ফরহাদ মজহার বিএনপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন। এটা বহু পুরনো অভিযোগ। ক্ষমতার পালাবদলের আগে সাধারণত বামপন্থীরা এমন অভিযোগ করে থাকেন।

 

‘৪ জানুয়ারির অবরোধ : নগদ লাভ’ শিরোনামে ফরহাদ মজহার একটি প্রপাগান্ডা কলাম লিখেছেন। শিরোনাম পড়ে মনে হবে এটা একটা গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল টাইপের রচনা। খালেদা জিয়া এখনও অবরুদ্ধ। সরকার পুলিশি অ্যাকশন বহাল রেখেছে। আর মজহার সাহেব ‘নগদ লাভ’ খুঁজছেন। হ্যাঁ লাভটা তিনি খুঁজতেই পারেন। সুযোগসন্ধানী কুযুক্তি দিয়ে তিনি আবারও চোরা ভাবে জামায়াতের লাভের অঙ্ককে কৌশলে হাজির করছেন। বলাই বাহুল্য, এতে জামায়াত বা বিএনপি কারও লাভই হবে না। মজহারের লাভ হলেও হতে পারে।

 

তিনি লিখেছেন,

“কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্না আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হওয়ার সাধনা অব্যাহত রেখেছেন। যদিও দলছুট আওয়ামীপন্থীদের মধ্য থেকে নতুন কোনো রাজনীতি পয়দা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ‘আওয়ামী লীগ, তুমি ভালো হয়ে যাও’ জাতীয় নীতিবাগীশ আওয়ামী রাজনীতিও যে বর্তমান ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রধান কারণ সে ব্যাপারে কামাল হোসেন, মাহফুজ আনাম কিংবা মাহমুদুর রহমান মান্না বেহুঁশ সেটা বলা যাবে না। তারা তা জেনেছেন কিন্তু এ ক্ষেত্রে অপরিসীম অবদানে তারা নিত্যই তৃপ্ত। কিন্তু তারা খালেদা জিয়ার এই দুর্দশায় তার প্রতি সমব্যথী হয়েছেন। খালেদা জিয়া তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে চাইছেন। বোঝা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া অনেক মিত্রকে হারালেও আওয়ামীপন্থী সুশীলদের করুণা ও সমবেদনা কিছুটা পাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির জোটবদ্ধ হওয়া তাদের কাছে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করারা ভালো একটি অজুহাত, যা তাদের স্বভাবসুলভ ইসলামোফোবিয়াকে আড়াল করে রাখতে সাহায্য করে। তাদের বাসনা খালেদা ইসলামপন্থীদের ছেড়ে সুশীল রাজনীতির কাতারে আসুক। তারা তখন হাসিনাকে থুয়ে খালেদাকে বেছে নেওয়ার একটা যুক্তি খুঁজে পাবে। প্রতারিত হওয়ার এই হাতছানি থেকে বিএনপির নেতৃত্ব মুক্ত নয়।” (চিন্তাডটকম, ৮ জানুয়ারি ২০১৪)

 

খালেদা জিয়া তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইছেন এমন কোন খবর আমরা দেখি নি। মাহমুদুর রহমান মান্না ও ড. কামাল হোসেন মজহারের এই উদ্ভট ও কাল্পনিক গল্পগাথা নিয়ে এই লেখকের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আমার পয়েন্ট এখানে না। কামাল হোসেন, মান্না বা মাহফুজ আনামদের সাংস্কৃতিক পজিশনের ক্রিটিক মজহার করছেন রাজনীতির নিরিখে। রাজনীতিও সংষ্কৃতিকে আলাদা ভাবে আলোচনার জরুরত এখনও উনি রপ্ত করে উঠতে পারেন নি। উনিও আবার কালচারাইজেশন অব পলিটিকস বলে ত্তত্ব কপচার। উনারা সেকুলার এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু মজহার নিজে কি? মজহার আরও নোংরা ভাবে সেকুলার। এটা কেমনে বুঝবেন? তাঁর জিবন যাপন চিন্তা পদ্ধতী এগুলা সবই সেকুলার। মজহারের উপদেশকে বলা যয়,‘এক কানা কয় আরেক কানারে চলো এবার ভব পারে’ । মুখে ধর্মের কথা বললেই কউ ইসলামিস্ট হয়ে যায় না। মজহারও সেকুলার মুখে যাই জপেন না কেন। এই দিক থেকে যদিও না বুঝেন তাইলে এখানেই বুঝবার মতো পয়েন্ট টা আছে। উনি জামায়াতকে ‘ইসলামিস্ট’ বলে সেকুরারদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সোজা কথা হলো জামায়াত যে ধরনের ইসলামচর্চা করে এটাকে পশ্চিম গুডমুসলিম বলবে। এর গালভরা নাম হলো, মডারেড মুসলিম। মিলিটেন্ট ইসলামের দুনিয়াব্যাপি বিস্তারের যুগে জামায়াতকে ‘ইসলামিস্ট’ শক্তি মনে করা নিন্তান্তই সেকুলার বাতিক যা শাহবাগিরা করে থাকেন। ফলে মজহার যথন জামায়তকে ‘ইসলামিস্ট’ বলে হাজির করেন আর কালচারাল সেকুলারদের ইসলামোফোবিক বলেন তখন উনার ইসলাম বুঝের হাল-হকিকত দেখে হাসি পায়। জামায়াত নিজেকে ইসলামিস্ট বলে হাজির করতে চায় না। সে বিশ্বাস অর্থে ইসলাম করে। রাজনতি অর্থে সে গণতন্ত্রের গোলাম। সে গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিই করে। আইনী লড়াইয়ে সে ব্যাপক উৎসাহে হাজির হয়। ফলে জামায়াতকে ইসলামিস্ট বলে হাজিরের রাজনীতি অতি ধান্ধাজাত। ৭১ এ জামায়াত কি করছে সেই আলোচনা এখানে প্রাসঙ্গি না। ওটা আলাদা তর্ক।

 

মজহার জামায়াতকে ইসলামিস্ট বলে হাজির করছেন, আর বিএনপিকে বলছেন সুশীলদের পরামর্শ শুনে সে যেন জামায়াতকে ত্যাগ না করে। জামায়াতের সাথে যেন আরও শক্ত ভাবে লেগে থাকে মানে আরও প্রকাশ্যে যেন জামায়াতকে সাথে নিয়ে মাঠে হাজির হয়। মাঠের সম্পর্ক আর জামায়াতের সাথে বিএনপির টেবিলের সম্পর্ক যে এক না তা বুঝতে পারেনি মজহার। জমায়াত তার নিজ গরজে ও প্রয়োজনে মাঠের একশনে আছে, থাকবে। হাসিনার জঙ্গিবাদি টার্মকাডকে চেক দিতে হলে বিএনপি এখন যে কৌশলে আছে তাকেই জুতসই বলতে হবে। জামায়াতের সাথে সম্পর্ককে মাঠে ও টেবিলে আলাদা ভাবে ভাগ করেই আগাতে হবে। এতে কূটনৈতিক মহলের সুবিধাটা পুরোপুরি পাবে বিএনপি। এটা জামায়াতও বুঝে। মজহারের মতো হঠকারি চিন্তার খপ্পরে পড়লে আবারও হেফাজত আমলের মতো পরিণতি হবে বিএনপির। তখনও এই টাউট বুদ্ধিজিবি সক্রিয় ছিল। ফলে এখনই সাবধান হতে হবে।

 

খেয়াল করলে দেখবেন, জামায়াতের প্রতি বিএনপি এক ধরনের নিস্পৃহ আচরণ দেখিয়েছে। এই আচরণের ফলে এখনকার ‘সুশীল’ রাজনৈতিক সমাজ বিএনপির উপর খুশি। এবং কূটনৈতিক দেনদরবারে বিএনপির এই অবস্থান সহায়ক হচ্ছে। মজহারের ভণ্ডামি হচ্ছে, জামায়াতকে বিএনপির সঙ্গে একজোট হয়ে থাকার পরামর্শ দিয়ে যাওয়া, আবার জামায়াতকে ইসলামিস্ট বলে হাজির করা, এর ফলে জঙ্গিবাদের ট্রাম্পকার্ড চেলে আবারও বিএনপিকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দেওয়া। এটাকেই বলে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বিমুখী গাদ্দারি। অন্যদিকে জামায়াত কোনো ইসলামিস্ট শক্তি নয়। জামায়াত কোনো জঙ্গি শক্তিও নয়। জামায়াতের সঙ্গে লীগেরও মিত্রতা হয়েছিল ক্ষমতার প্রয়োজনে। বিএনপির মিত্রতাও ক্ষমতার প্রয়োজনে। জামায়াত তার হিসাব তার মতো করেই পুষিয়ে নেয়। জামায়াতের সঙ্গে আমেরিকার ভালো সম্পর্ক সবারই জানা। আমেরিকা কোনো জঙ্গি শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে এটা ভাবাও যায় না। ফলে জামায়াতকে জঙ্গি শক্তি আকারে বা ইসলামিস্ট আকারে হাজির করা, আবার এর প্রতিবাদ করা, আবার বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে লেগে থাকার পরামর্শকে ভণ্ডামিপূর্ণ চতুরতা হিসেবে দেখতে হবে।  সম্পর্কটাকে আদর্শিক করে তুললে বিএনপি ও জামায়াত উভয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হবে আর সুবিধা পাবে হাসিনার তখাকথিত জঙ্গিবাদের ও চেতনার রাজনীতি। ফলে মজহারের কুপরার্মশ থেকে বিএনপি দূরে থেকে সঠিক সীধান্ত নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

এই অবস্থায় বিএনপি যে লাইনে আগাচ্ছে তা স্রেফ কূটনৈতিক লাইন। আর এখানে জামায়াতের অবস্থানও নির্ধারিত। আদর্শিকভাবে জামায়াতের তথাকথিত ইসলামপন্থার সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রকল্পের’ জন্য সুবিধাজনক হবে। ফলে যারা বিএনপিকে জামায়াতময় হয়ে উঠতে পরামর্শ দেয় এরা সরাসরি মার্কিন যুদ্ধ প্রকল্পের দালাল। এরা সরকারের একমুখী নীতিরও গোপন সঙ্গী। প্রকাশ্যে বিশাল বিপ্লবী। বাংলাদেশের এই চাতুরী বুদ্ধিজীবীতা রাজনৈতিকভাবে আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে।  বিএনপি কেন সঠিক লাইনে আছে তা বুঝতে হলে আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতির দিকে একটু তাকাতে হবে।

 

কোমল ক্ষমতা কূটনৈতিক পরাধীনতার রাজনীতি:

রাজনীতিতে ক্ষমতার প্রশ্নের নানার ডাইমেনশন বা বৈচিত্র্য দেখা যায়। ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসানের পরে সারা দুনিয়ায় মার্কিন ক্ষমতা বেশ পোক্ত হতে শুরু করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের বছরেই (১৯৯০ সালে) হারভার্ড তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানী জোসেফ ন্যাই-ই ফরেন পলিসিতে একটি প্রবন্ধ লেখেন সফট পাওয়ার বা কোমল ক্ষমতা নামে। তিনি তর্ক তোলেন ক্ষমতাটা সব সময় অস্ত্র বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হাসিল বা তৈরি করা যায় না। কোমল ক্ষমতা বলে একটা ব্যাপার আছে যা কূটনৈতিকভাবে আমেরিকাকে সারা দুনিয়ায় প্রভাবশালী করে তুলছে। তিনি মত দেন, শুধু বাহুবল নয়, বাহুবলের বাইরে কোমল ক্ষমতার প্রভাব অনেক বেশি সম্প্রসারিত। প্রথম প্রথম বেশ ঠাট্টা-মশকরা করা হয়েছিল তার এই তত্ত্বায়ন নিয়ে। ৯/১১-এর পরে আমেরিকা যখন অনেকগুলো যুদ্ধে পর পর জড়িয়ে গেল কিন্তু যুদ্ধের ফলে মার্কিন প্রভাব বাড়ার বদলে কমতে থাকল তখন কূটনৈতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও মতাদর্শিক কিছু উদ্যোগ আমেরিকাকে বেশ সুবিধা দেয়, তখন জোসেফ আবার আলোচনায় আসেন। তিনি মনে করেন, প্রপাগান্ডা শুধু প্রপাগান্ডা নয়, এটা দ্বারা ক্ষমতা তৈরি করা যায়। এবং দেনদরবার ও অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপ সেনা হস্তক্ষেপের চেয়ে কম কার্যকর নয়। এর ফলে মার্কিন নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসে। যুদ্ধকে পাশ কাটিয়ে কোমল ক্ষমতার বিস্তার ঘটানোই এখন মার্কিন নীতির গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

এই দিকটি মাথায় রাখলে আমরা খালেদা জিয়ার পেশিশক্তির ঘাটতিকে নতুন ক্ষমতার পটভূমি আকারে বুঝতে পারব। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে খালেদা জিয়ার আচরণ খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বারবার অহিংস আন্দোলনের কথা বলেন। তাকে অবরুদ্ধ করে তার প্রতীকী ক্ষমতাকে কোমলভাবে বিস্তার ঘটাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দুনিয়ায় কোমল ক্ষমতার কদর আগের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে খালেদার কোমল আচরণ গণতান্ত্রিক ভাবে পশ্চিমের কাছে বেশি গ্রহণ যোগ্য হবে। লীগ যতই গোন্ডামি করবে ততই পিছাবে ক্ষমতা থেকে আর এগিয়ে যাবে এক্সজিট ডোরের কাছে।

 

সঙ্গে কূটনৈতিক পরাধীনতার রাজনীতিটাও খেয়াল করা দরকার। ১০ জানুয়ারি দৈনিক সকালের খবর শিরোনাম করেছে, ‘বিবৃতি ও ফোন নিয়ে ধূম্রজাল’। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা ও তারেক রহমানের খবর প্রচারে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের বিবৃতি দেওয়ার খবর নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে এখন আলোচিত খবর হল, বিজেপির প্রধান অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করেছেন। মারুফ কামাল সোহেল স্বাক্ষরিত একটা বিবৃতির সূত্রে এটা মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এটা ভুয়া বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে। বিএনপির তরফে যারা অতিউতৎসাহী হয়ে এ ধরনের খবর মিডিয়ায় প্রচার করে সুবিধা নিতে চেয়েছেন তাদের কোনোভাবেই বিএনপির জন্য কল্যাণকর শক্তি বলা যাবে না। এরা বিএনপির মধ্যে এক একটা কালসাপ হয়ে বসে আছে। অন্যদিকে সরকার যেভাবে এটাতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তাতে মনে হচ্ছে অমিত শাহের ফোনে বাংলাদেশের ক্ষমতার হেরফের হয়ে যেতে পারে। রাজনীতিতে জনসম্পৃক্ততার কথা বলছিলাম একটু আগে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির জনসম্পৃক্ত ধারণ এই কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপের সময় বারবার উদোম হয়ে যায়। সরাকার অমিত ইসূকে এমন ভাবে হাজির করল যাতে সরকারের ভারত অবসেশন আবারও আমরা জানতে পারলাম। আর জানতে পারলাম বিএনপিকে নষ্ট করার জন্য ঘরের লোকই যথেষ্ট। এইসব খুচরা চালকি পাশ কাটিয়ে সাউথ এশিয়াতে কোমল ক্ষমতার নীতি এখন বেশি গুরুত্ব পাবে। বিজিপির ক্ষমতায় আসার আগে মার্কিন নীতির পুরোপুরি বিজেপীর জন্য অনূকূল হয়ে উঠেছিল। কেজরি ওয়ালকে দিয়ে কনগ্রেসকে বেশ ভাল দাবড়ানি দেয়া হয়েছিল। ফলে বিজেপী কনগ্রেসের মতো বাংলাদেশে আমেরিকার উপর অভারটার্ম করবে না এমনটা সহজেই অনুমান করা যায়। ফরে আমেরিকা ও পশ্চিমের কোমল নীতি আর মাঠের গ্রহণযোগ্যতা ও অচালবস্থা বিএনপিকে আরও পরিণত করবে। ধীরে ধীরে ক্ষমতার জন্য পিপল কজ তৈরি হবে। এতে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে সরকার সুবিধা করতে পারবে না। কারণ নীতির পরির্বতনের সাথে সাথে কিং মেকার কাগজগুলোর ( প্রথম আলো ও ডিইলীস্টর দেকলে বুজবেন) ভূমিকা ইতিমধ্যে পাল্টে গেছে। ফলে কোমল ক্ষমার প্রত্যবির্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি।

 

আর এই সময়ে বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক সেজে ক্ষমতাধরদের অনুকূলে জাতীয় রাজনীতিকে এমনভাবে সাজান যেন একটা নির্বাচন হলেই জাতীয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই নির্বাচনবাদী গণতন্ত্রের বয়ান আমাদের কাবু করে রাখছে। আমাদের শাসনকাঠামোতে গণশক্তির গরহাজিরা পলিটিক্যাল ও ননপলিটিক্যাল এলিট ও তাদের অনুসারী বুদ্ধিজীবী মিলে পরিস্থিতিকে ভৌতিক করে তুলছে। গণতন্ত্রের নামে, জনগণের নামে জনবিরোধী রাজনীতির খুন উত্সব দেখছি কেবল। এ ধরনের দেউলিয়া আচরণ আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, আমাদের রাজনীতি ও ক্ষমতার চাবি আমাদের দেশের জনগণ ও মানুষের হাতে নেই। বাইরের কূটনৈতিক শক্তি ও তাদের এলিট এজেন্টরা ক্ষমতার চাবিকাঠি নাড়েন। মিডিয়াও সেভাবে জনমতের সেইপ বুঝে খবর করে। আমরা নির্বাচন বা ক্ষমতা পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে থাকি। ভায়োলেন্স চলে। সহিংসতার ভাষ্য তৈরি করা হয় জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য। চলে রটনার খেলা। প্রধান আকর্ষণ থাকে দেশের নয়, বাইরের নজর ফেরাবার চেষ্টা। কূটচালের ফেরে আমরা বুঝতে পারি আমার ঘরের চাবি পরের হাতে।

 

লেখক : কবি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

A Lear’s Fool to King Tarique

There is no shortage of punditry along the line of BNP-is-in-trouble, most being pretty vacuous like this.  Shuvo Kibria had a better attempt a few weeks ago:

সরকার ….. নিজের আস্থাহীনতার সঙ্কট আছে।….. জনব্যালটে তার ভরসা নেই। …..সরকার চাইবে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপিকে সমূলে উৎপাটিত করতে। বিএনপির চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।  (The government has its own crisis of confidence…. It doesn’t rely on public ballot…. The governent will want to uproot BNP as a political force.  BNP’s challenge is to re-establish itself as a political force).

I think the above is in on the whole correct.  And there may be a degree of validity in this as well:

বিএনপির প্রথম সারির নেতাকর্মীদের মাঠে নেমে প্রমাণ করতে হবে দলের স্বার্থে তারা যেকোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত।  (BNP’s front row leaders and workers will need to prove their willingness to take any risk for the party by getting into the field).

But I think even Kibria misses some key nuances.

Let’s start with a few observations.

First, on BNP’s failure in the streets.  By all accounts, BNP rank-and-file gave it a pretty good shot this time last year.  And they came short.  They could not stop the government from ramming through a one-sided election as a result of which Hasina Wajed continues to be the prime minister.  But BNP’s failure is not qualitatively different from MK Gandhi’s in the early 1920s, or Sheikh Mujibur Rahman’s in the mid-1960s.  Our history is full of failed street movements.  The historical reality is, most andolons fail, just like BNP’s did.

The past is not always an accurate guide to the future.  But I am quite skeptical of any analysis that concludes with ‘BNP must launch a vigorous andolon that will lead to a mass upsurge’.  Even if BNP could mount one, in and of itself, what would another round of street protests, blockades and hartals achieve?

Second, BNP failed to win over the bastions of power that ultimately matter Bangladesh.  Above everything else, powers-that-be want a stable Bangladesh.  And BNP failed to convince the civil-military bureaucracy, corporate sector and foreign stakeholders that it could provide stability.  Of course, in a two-horse race, one doesn’t have to be particularly good — simply being just not as bad as the other side makes one win such races.  It’s not that everyone is inspired by the Prime Minister.  It’s just that when all is said and done, sufficiently large number of key stakeholders simply didn’t respond to BNP, and accepted Mrs Wajed.

Third, from BNP leadership’s actions, we can deduce something about its self-assessment.  Recall, we can summarise BNP’s travails as one of either marketing or management or product.  By making it abundantly clear that Tarique Rahman is the party’s future, BNP is signalling that it believes the problem is not management.  Therefore, it must believe the focus should either be marketing or product or a combination.

As would be clear by the end of the piece, I do not necessarily agree with BNP’s choice (and that’s putting it mildly).  But it matters little what I think.  Leaving my views aside, let’s accept for now that BNP has got it right — Mr Rahman is the best it has got.  Fine.  So, how should he try to win over the powers-that-be?

If we assume that BNP’s middle-of-the-road, don’t-rock-the-boat pragmatic Burkean conservatism is the appropriate ‘product’ for Bangladesh — full disclosure: I personally do — then the challenge before Mr Rahman is simple: he needs to establish himself as acceptable to the establishment.  Currently, he patently is not.  Believing that the establishment will choose him over the Prime Minister is like claiming the earth is flat.  Railing against the establishment for its alleged hypocrisy on this count is futile.  Bottomline: senior state functionaries, big shot businessmen, and interested foreigners don’t think much of Mr Rahman.

They didn’t think much of him last winter.  And since then, sporadic forays in our pathetic history wars have done nothing to improve his standing.  They create media buzz, senior Awami League leaders end up looking quite stupid, and BNP rank-and-file feel fired up for a while.  But what do they do to alleviate Mr Rahman’s extremely negative image?

To ask is to answer.

Right.  So, what should Tarique Rahman do?

In the first instance, he should stop appearing in silly videos with stupid titles like Deshnayak, or never, ever, indulge in the circus of cutting supersized birthday cakes.  As it happens, it is quite rational for even a sensible and erudite person like Mirza Fakhrul Islam Alamgir to engage in these acts.  After all, in a party that is by design bereft of any strong ideological mooring but the politics of synthesis of centrist, pragmatic nationalism, if there is no internal organisational rejuvenation, how else are the party workers and leaders to signal their allegiance but to foster a personality cult?  Of course, by doubling down with Mr Rahman, organisation rejuvenation has been made just that much harder.

That is, BNP — or rather, Tarique Rahman — has created a vicious cycle. Its current senior leaders — and note the word senior, these are old men and women — have no alternative to engaging in obscene Tarique-mania, which puts off otherwise sympathetic elements of the establishment, which compounds BNP’s problems, which creates further distrust among its leaders, who must then engage in further sycophancy, and so it goes.

If Tarique Rahman ever wants to govern Bangladesh, he must end this now.  If he doesn’t get the irony of being called a deshnayak while living in bidesh, if he thinks he is the embodiment of youth at 50 — an age by which his father had been president for nearly four years, or Sheikh Mujibur Rahman was already hailed as Bangabandhu — he will never make it.

Dramatically cutting off the circus would be a good first step, and a low hanging fruit.  Mr Rahman will need to follow that up with more speeches and public appearances, and not just to the choir in East London about Sheikh Mujib’s Pakistani passport (do we really need to replace Hasina Wajed with someone who seriously thinks Mujib needed a passport in Heathrow airport in January 1972?).

This is not to say he should shy away from hitting hard on the haloed Mujib myth.   Like it or not, history wars is a key part of our politics that BNP cannot shy away from.  Apparently Tarique paid respect at Mujib’s grave several times when BNP was in power.  Why on earth did they keep that a secret?  Why not talk about it now?  And then, the respect for Mujib-the-nationalist-hero notwithstanding, draw the parallel between 1974-75 and the present day, maybe in a frank series of interviews with Zafar Sobhan — now, wouldn’t that be something?

And yet, that would not be enough.  Even if he is humanised and shown to be a normal, decent person, to the establishment there are grave doubts about his associates.  The establishment wants to feel comfortable that Tarique Rahman’s associates are their own.  On this, Mr Rahman will do well to learn from, wait-for-it, Mrs Wajed.

Yes, believe it or not, once upon a not too distant past, the establishment did not trust the Prime Minister and her party.  Even in the early 1990s, the stereotype was that those few Awami Leaguers qualified enough to govern were unreconstructed socialists, while most AL-ers were simply not fit for office.  This changed in the lead up to 1996 election, when Mrs Wajed made it clear that people like the late SAMS Kibria or AHSK Sadeq were in her inner sanctum.  This paved the way for a rapprochement between the League and the establishment.

Tarique Rahman needs to do something similar for his party.  Appointing a fresh-faced PhD in marketing, I’m afraid, simply doesn’t do that.

Therein lies the rub.  Mr Rahman needs people who are already established in their fields — business, professions, academia, at home and abroad — by his side.  But such people simply don’t like him much.  Why would they put their trust in someone whose only claim to fame is his parents (and infamy from his lifelong friends)?  Dynasty didn’t do it for a dud like Rahul Gandhi.  Why should Tarique be any different?

Mr Rahman has odds stacked against him.  Therefore, it follows that he has to shake things up.

Two acts come to mind, neither easy, and one carry high risks.

Firstly, Tarique Rahman must produce a game-changing idea.  Not nice ideas like how to improve agricultural yield as he did in an early London speech in 2013 — that kind of stuff can go well with his little chinwag with Mr Sobhan.  But that won’t shake things up.  No, he needs to do what Mujib did in 1966 by presenting Six-Points.

Back then, Ayub Khan dominated over Pakistan.  Grand old men like HS Suhrawardy were either dead or marginalised.  Younger, leftist firebrands were beginning to turn on each other, taking their cue from Beijing and Moscow.  Mujib’s peers like Ataur Rahman Khan looked tired with their calls for restoration of democracy.  Ayub could simply ignore them.  But Mujib with his Six-Points was different.  Here was a paradigm shift.  Fiscal autonomy.  Monetary autonomy.  East Pakistan’s own oreign trade missions and paramilitary.  Mujib called for an end to not just Ayub regime, but Pakistan-as-it-existed.  Ayub knew he had to use the ‘language of weapon’.  So he did.  Mujib went to jail, and came out after the regime collapsed.

It’s very important to understand that the 1968-69 uprising that led to Ayub’s fall was not a step-by-step escalation of any andolon programme by Mujib or his party.  An urban uprising started in West Pakistan from a clash between students and army jawans in the beginning of winter 1968, and by the end of the winter, both wings of erstwhile Pakistan was aflame.  At the centre of the uprising was Maolana Bhashani.  But not only was Bhashani without a party, he was also a man without any compelling ideas for the post-Ayub world, and zero support among the establishment.  When the Pakistani establishment had turned on Ayub, the emergent East Bengali establishment squarely stood with Mujib.

That’s the act Tarique has to emulate.  He has to produce a coherent vision that the current Bangladeshi establishment could rally behind when, rather than if, Mrs Wajed’s regime unravels.  And unravel the current regime will, sooner or later — let me quote myself from January:

….. she stands on the precipice of chaos, for the simple reason that Bangladesh — a super-densely populated humid swamp — is always at the edge of chaos.  Usually, mandate from a democratic election, or the prospect of the next one, keeps us from falling over the cliff.  By taking away the option of a democratic election, the Prime Minister has effectively put a ticking time bomb on herself.

Tarique has to make sure that when the time comes, he is not brushed aside like the old Maolana.  And for that, a compelling vision for a post-Hasina Bangladesh — hard as that might be to conjure — is not necessary, but not sufficient for Tarique.  He still needs to demonstrate that he as an individual has what it takes.  He must demonstrate his grit.  His sickly, elderly mother does that every time she goes out to one of those rallies.  Mrs Wajed did that in 2007 when she defied the 1/11 regime and returned home, or in 2004 as the subject of an assassination attempt, or in 1988 when police open fired on her rally.  His father demonstrated grit in the battlefields in 1965 and 1971, and every day between 3 November 1975 and 30 May 1981.  Sheikh Mujibur Rahman demonstrated grit by never compromising with the Pakistanis despite spending much of the 1950s and 1960s in jail.

That’s the standard Tarique Rahman has to live up to.  A London exile simply doesn’t cut it.  He has to return home, embrace a prison sentence, and possible threat to his life.

That’s the bottomline for him.

As things stand, with Tarique Rahman in his current avatar as BNP’s chosen future, I am afraid the future is bleak, and we might soon be discussing BNP’s past.

How to lose the history wars

by Jyoti Rahman

I said in the previous post:

They didn’t think much of him last winter. And since then, sporadic forays in our pathetic history wars have done nothing to improve his standing. They create media buzz, senior Awami League leaders end up looking quite stupid, and BNP rank-and-file feel fired up for a while. But what do they do to alleviate Mr Rahman’s extremely negative image?

Obviously, I don’t approve of the way Tarique Rahman is engaging in the ‘history wars’.  It occurs to me that I should elaborate and clarify.  Hence this post.  I don’t agree with Mr Rahman’s interpretation of history.  More importantly, from a partisan political perspective, I think they cause more harm than good for BNP.  And most frustratingly, a few solid points that BNP could make very usefully are utterly wasted.

Let’s start with the claim made about Sheikh Mujibur Rahman — that he was a Pakistani collaborator who compromised with the Yahya regime because he was after personal power.  I paraphrase, but this is the gist.  And this is about as sensible as the claim that Ziaur Rahman was a Pakistani spy.

Let me refer to GW Chowdhury, Abul Mansur Ahmed, and Moudud Ahmed.  Hardly disciples of the cult of Mujib, any of these men.  And yet, all three write how Mujib might have compromised on the Six Points at any time between the winter of 1968-69 and the summer of 1971, and become Pakistan’s prime minister.  Ayub and Yahya offered him the job in February 1969.  There was a general expectation that the Six Points were Mujib’s ambit claim, and he would compromise after the election.  ZA Bhutto calculated that.  Yahya Khan calculated that.

But Mujib did not.

In fact, by officiating a public ceremony where he led the Awami League legislators-elect to swear an oath on the Quran to never compromise on the Six Points, Mujib left himself little wiggle room to compromise even if he had wanted to.  What Mujib stood for in 1970 elections was abundantly clear, and he did not compromise from that.

Mujib wanted to compromise for personal gain — is Tarique Rahman trying to become the jatiyatabadi Omi Rahman Pial?

Of course, it gets worse.  What does one make of the claim that Mujib traveled on a Pakistani passport in January 1972?  I am sure Shafiq Rehman can conjure a brilliant political satire about the Heathrow immigration officer asking ‘Right, Sheikh eh, since when Pakis had Sheikhs’.  But the joke here is at the expense of anyone who believes Mujib would have needed a passport to pass through Heathrow that January.

And in this comedy, BNP loses a chance to score a sound political point.  No, Mujib wasn’t a Pakistani collaborator.  That’s nonsense.  What’s not nonsense, what’s undeniable, is that he did not prepare for an armed resistance, that he was absent from the war.  Now, it is possible to argue that Mujib did not want to lead a war of national liberation, and he had good reasons for taking the course he did — I have made that argument myself, and I stand by it.

But that’s just my interpretation of events.  And even if I am right, it’s legitimate to say that Mujib got it wrong big time.  Politically, the potent argument here is — the nation trusted Mujib with its future, and Mujib failed the nation in the dark night of 25 March 1971, not because Mujib was a bad guy, not because he was a collaborator, not because he was greedy or coward or anything, but far worse, he made the wrong judgment.

Salahuddin Quader Chowdhury once (in)famously made that point.  Repeatedly made, that would be a killer punch against the haloed Mujib myth.  What Tarique Rahman offers is not worth more than infantile facebook banter.

So, why does he do it?

Perhaps this passage from 2012 would provide some method behind this madness:

A blogger friend sounds a pessimistic note: ‘Our countrymen are maybe more blatant about it than most, but there is no “true” history anywhere in the world. It’s all air-brushed, covered with pancake makeup, and then dipped into rosewater.’ He suggests that these history wars are just a form of dialectic struggle, perhaps a healthy one at that.

That discussion was had at a time when Awami League cabinet ministers all the way to people like Muntassir Mamoon would routinely call Ziaur Rahman a Pakistani spy or sleeper agent.  Here is the full quote:

What will happen when BNP returns to power? Maybe what MM is doing is in anticipation of BNP returning to power. I mean, let’s face it, our countrymen are maybe more blatant about it than most, butthere is notruehistory anywhere in the world. It’s all airbrushed, covered with pancake makeup, andthen dipped into rosewater. Think of these “history wars” as a dialectic struggle, and whatever emerges out of this is what Bangladeshi children, fifty years on, will learn. And they won’t be any worse off for it.

Additionally, remember, when BNP comes to power, where MM leaves off is where BNP has to start. So the more AL-oriented the history is, the more effort BNP will have to put in to revert just back to the mid-point state, let alone make it pro-BNP.

So, calling Mujib a collaborator is perhaps the dialectic tat for the tit of Zia being a Pakistani spy.

Maybe.  And maybe in the long run this will all be washed out.  But right now, this isn’t doing Tarique Rahman any good.  Maybe if BNP ever came to power, it could start its version of history.  But right now, Tarique should remember what happened to Hasina Wajed in February 1991.

In the lead up to the parliamentary election of that month — the first one held after the fall of the Ershad regime — Mrs Wajed repeatedly launched personal attack on Zia, calling him a murderer and drunkard, including in her nationally televised (this was when there was nothing but the BTV) campaign speech.  Mr Rahman is old enough to remember how aghast the chattering classes were at Mrs Wajed.  This was a time when Zia was fondly remembered by our establishment.

Over the past quarter century, Zia’s image has faded, and Mujib’s has been given a new gloss.  Right now, the establishment reaction to Tarique is similar to the visceral reaction the Awami chief caused in 1991.

Mr Rahman seems to be learning the wrong lesson from Mrs Wajed.

So, what do I suggest?

Let me answer that with reference to why and how I believe BNP must engage in history wars:

BNP needs to win back today’s and tomorrow’s Saifur-Oli-Huda.  Without professionals, entrepreneurs, artists and intellectuals, BNP’s future will be dominated by the likes of Lutfuzzaman Babar. Winning the history wars is essential for avoiding that dark future.

…..

our history of political-social-economic struggles that predates 1971 and continues to our time.  This would not mean ignoring 1971, but to put that seminal year in its proper context.  …. our founding leaders like Fazlul Huq and HS Suhrawardy who came before Sheikh Mujibur Rahman and Ziaur Rahman, putting these men in their proper historical context.

….. we have struggled for a democratic polity, or social justice, from the time of British Raj.  Sometimes these struggles have been violent, at other times we had peaceful ‘ballot revolutions’.  Sometimes the leaders betrayed the trust people put on them.  Sometimes they made mistakes.  But overall, we have been making progress.  And ….. make the case for BNP in the context of that march of history.

That’s BNP’s overall challenge for the history wars.  And I do not suggest Mr Rahman has to fight a solo battle.  But if he must engage in political dog fight about dead presidents, I would suggest leaving Mujib alone, and focusing on restoring Zia.

Arguably, Tarique’s initial foray at the history wars was an attempt at this.  Unfortunately, he seems to have made a hash of it, losing the forest for the trees.

For a long time, BNP has tried to establish Zia as the one who declared independence.  In the process, the argument got to a minutae of who got to the radio station and held the mike first, completely missing the historical significance of Zia’s multiple radio speeches.  What was the significance?  The significance was that a serving major in Pakistani army publicly, in English, severed ties with Pakistan and called for an armed resistance.  The significance was not that it was a declaration of independence.  The significance was that it was a declaration of war.  That significance was completely lost.

Now the claim is that Zia was Bangladesh’s first president.  Well, in his first speech, Zia claimed that he was the head of the provisional government.  In the next version, he dropped that bit.  So, is he or isn’t he the first president?

Well, the founding legal document of the country is the Mujibnagar Proclamation, and that says:

We the elected representatives of the people of Bangladesh, as honour bound by the mandate given to us by the people of Bangladesh whose will is supreme duly constituted ourselves into a Constituent Assembly, and having held mutual consultations, and in order to ensure for the people of Bangladesh equality, human dignity and social justice,

Declare and constitute Bangladesh to be sovereign Peoples’ Republic and thereby confirm the declaration of independence already made by Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman,

AND

do hereby affirm and resolve that till such time as a Constitution is framed, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman shall be the President of the Republic and that Syed Nazrul Islam shall be the Vice President of the Republic

So we can have a nice legal argument that tries to make Zia the first president, and in the process lose a very important aspect of Zia’s action — something that is directly relevant in today’s Bangladesh.

Because Tarique said so, it’s now becoming BNP’s holy truth that Zia was the first president.  In the process, the fact that Major Zia swore allegiance and subservience to a democratically elected civilian political leadership is completely lost.  Zia’s bravery is March 1971 is to be lauded.  But for BNP, it’s also important to highlight his political maturity, and dedication to civilian, constitutional rule.  And that is exactly what he displayed on 15 August 1975, when he reminded Major General Shafiullah that the president might be dead, there was still a constitution and a vice president.  Whether in 1971 or 1975, Zia deferred to the civilian leadership and constitutionalism.   The relevance for an eventual post-AL Bangladesh is self-evident.

As it happens, Tarique Rahman was not the first person to claim that Zia is our first president.  In November-December 1987, Dhaka was rocked by a series of hartals that nearly brought down the Ershad regime.  Emergency had to be declared, and most opposition politicians were arrested.  Then, on 15-16 December, posters emerged around the city.  One had Mujib’s wireless message to Chittagong declaring independence, apparently sent before the midnight crackdown.  The other claimed Zia as the first president.

Oh, Ershad stayed in power for three more years.  How much more time is BNP’s history wars giving the current regime?

‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

by zainuddin sani

দেশের রাজনীতিতে কি হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সবাই বেশ বিভ্রান্ত। বিএনপির হুমকি ধামকি দেয়া, আর আওয়ামীদের সেসবে কর্ণপাত না করা, ব্যাপারটা অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। সকালের পত্রিকার দুটি অবধারিত শিরোনাম থাকতো দুই দলের কোন না কোন নেতার শ্লেষাত্মক বক্তব্য। কেন যেন ব্যাপারগুলোকে অনেক বেশী রীতি মাফিক মনে হচ্ছিল। বোঝা যাচ্ছিল কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে— ‘আওয়ামীরা ২০১৯ পর্যন্ত চাইলে নির্বিঘ্নে থাকতে পারবে’। সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণার পরে, সত্যিকারের প্রত্যাশা কারোরই তেমন ছিল না। কমবেশি সবারই ধারণা হয়েছিল, ৫ই জানুয়ারিকে ঘিরে কোন কর্মসূচি এবং সেই কর্মসূচিতে বাঁধা দিলে কি হবে, তার হুমকি সম্বলিত একটি বক্তব্য আসছে। তার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামীরা কি বলবে, তাও সবাই আন্দাজ করে নিয়েছিলেন। পুরোপুরি তেমনটা হল না, সেদিনের ঘটনা, এদেশের রাজনীতির টিপিক্যাল ফর্মুলার ব্যত্যয় ঘটাল।

আপাত দৃষ্টিতে বিএনপি নেত্রীর ৭ দফা তেমন নতুন কিছু না। এতোগুলো দফার ভেতর মুল দফা একটিই। বাকী দফাগুলোর বেশ অনেকগুলোই সাধারনতঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকারই করে থাকে। আর কিছু খুচরা দফা দেয়া হয়েছে, সম্ভবতঃ নেগসিয়েশানের সময় বাদ দিতে রাজী হবার জন্য, সবাইকে বলা যাবে, ‘সমঝোতার খাতিরে আমরা তিনটি দাবী ছেড়ে দিলাম।’ তবে প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি হচ্ছে অন্য কারণে, এই সময়ে এসে, এমন নরম অবস্থান কেন? যে দাবী গত ছয় বছরে আওয়ামীরা মানেনি, তাদেরকে আবার নতুন করে সেই দাবীর কথা জানানো কেন?

৭দফাকে বেশ নির্বিষ মনে হলেও, কেন যেন সবাই তেমনটা ভাবছে না। সবাই বেশি করে ভাবছেন, এতো মোলায়েম স্বরে কেন কথা বলছেন বিএনপি নেত্রী? তারচেয়েও বড় কথা, আল্টিমেটাম নেই কেন? দফা না মানলে কি হবে, সে সম্পর্কেও নেই কোন ভবিষ্যৎবাণী। বড় জাতের আরও কিছু প্রশ্ন আছে। যেমন বিএনপির গেম প্ল্যান তাহলে কি? সবাই ভাবছেন এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে। আর সেই উদ্দেশ্য কি, তা নিয়ে বোদ্ধা মহলে চলছে কানাঘুষা। কেউ ভাবছেন, ‘নিশ্চয়ই বিএনপি কোন সিগন্যাল পেয়েছে’।

বোদ্ধা মহলকেও খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। তাঁদের এসব কথা ভাববার যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। আসলে এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে পদক্ষেপগুলোকে বেশ পরাজয় বলে ভাবা হয়, তার একটি হচ্ছে দাবী জানানো। বিশেষ করে সেই দাবীর সংখ্যা যদি থাকে একাধিক। আর সেই দাবী পূরণ না হলে, সরকারের কি অবস্থা হবে, সে সম্পর্কে যদি কোন হুশিয়ারি না থাকে, তবে তো অবধারিতভাবে ধরে নেয়া হয়, এই দাবীসমূহের প্রস্তাবকারী হয় সিরিয়াস না কিংবা তাদের তেমন কোন শক্তি নেই।

অন্যদিকে সাহসী পদক্ষেপ ভাবা হয় আন্দোলন কিংবা হুমকিকে। ‘এক দফা এক দাবী’র ও আলাদা একটা দাম আছে। তবে তেমন কিছু একবার বলে ফেললে কিছু একটা করে দেখানো জরুরী। নইলে আবার শুরু হয়ে যাবে অন্য হিসাব। যেমনটা হয়েছিল আওয়ামীদের ‘স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও আটকাতে পারবে না’ হুমকির পরে। আর ইদানীং কালে, বিএনপি সম্পর্কে।

আন্দোলন করে কোন দাবী আদায়ের রেকর্ড বিএনপির খুব একটা নেই। তবে দাবীতে অনড় থাকবার একটা রেকর্ড ছিল। ফলে আগে যখন হুমকি ধামকি দিলেও সেগুলোকে কিছুটা সিরিয়াসলি নেয়া হত। ভাবা হত, সফল না হলেও, কিছু একটা অন্তত করবে। নিজেদের তৈরি করা ‘গুড উইল’এ সম্প্রতি তাঁরা ফাটল ধরিয়েছে। হুমকির অধিক ব্যবহার এবং কিছু করতে না পারা, তাঁদের দেয়া হুমকি সম্পর্কিত এই ধারণায় কিছু পরিবর্তন এনেছে।

এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ফর্মুলা অনুযায়ী ৭ দফাকে নিশ্চিতভাবেই পরাজয় কিংবা পিছু হটা ভাবা যায়। বিশেষ করে গাজীপুরে যেভাবে পিছিয়ে আসলো, তারপরে। ৫ই জানুয়ারীর মত ‘সিম্বোলিক’ দিনে সবাই যেমনটা ভেবেছিলেন, তাঁরা তেমন কিছু করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। এটাও ঠিক, তাঁদের যা সাংগঠনিক অবস্থা, তাঁদের কাছ থেকে ততোটা কেউই প্রত্যাশা করছেন না। আবার এতো নরম কর্মসূচী দিবে, এটাকেও কেউ স্বাভাবিক ঘটনা ভাবতে চাইছেন না। সবার মনে তাই একটি সন্দেহ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, ‘পর্দার আড়ালে কিছু ঘটছে কি না।’

বিএনপি যেভাবে একের পর বিভিন্ন জাতের হুমকি দিয়েও কিছু না করার একটা ট্র্যাডিশান তৈরি করে ফেলেছিল, তাতে কমবেশি সবাই ভাবতে শুরু করেছিল, এই সরকারকে হটাবার ক্ষমতা বিএনপির নেই। আর ইতিহাস বলে, সরকারকে বাধ্য করতে না পারলে, বিরোধী দলের দাবী মেনে নেয়ার মত ঘটনা ঘটে না। আর নরম স্বরে বললে তো নিশ্চিতভাবেই ঘটবে না। এই দাবীর তাই একটি স্বাভাবিক মানে হচ্ছে, হুমকি দিয়ে কিছু না করে নিজেদের ইমেজের যে বারটা বাজিয়েছি, তা আর কন্টিনিউ করতে চাই না। এবার স্বীকার করে নিতে চাই, আমরা অথর্ব। দল হিসেবে, সংগঠন হিসেবে আমরা বেজায় অগোছালো। আন্দোলন করে দাবী আদায়ের ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই এই অনুরোধ ফর্মুলা।

এই স্বাভাবিক ব্যাখ্যার বদলে সবাই কেন যেন অন্য কিছু ভাবছেন। হয়তো ১/১১এর উদাহরণ এর জন্য দায়ী। এদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিদেশ নির্ভরতা এর জন্য দায়ী। হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া বাকী কারো কাছ থেকে সমর্থন আদায়ে এই সরকারের ব্যর্থতা এর জন্য দায়ী। আবার হতে পারে পর্দার আড়ালে এমন কিছু ঘটবার আভাস তাঁরা পেয়েছেন, যা থেকে মনে হয়েছে, এদেশ একটি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। আর তাই, কঠোর আন্দোলনের পথ ছেড়ে, নরম আর সমঝোতা ধাঁচের পথে হাঁটতে রাজী হয়েছেন, বিএনপি নেত্রী।

ধাঁধা আরও আছে। বিএনপির বেশ কিছু বড় নেতার বক্তব্য থেকে বোঝা গেছে, ৭ দফার এই সিদ্ধান্ত নেত্রীর একক সিদ্ধান্ত। সব দলের সাথে আলাপও করেননি। এমনকি নিজ দলের অনেককেও অন্ধকারে রেখেছিলেন। ঘাড়ের ওপর মামলা, বিভিন্ন আন্দোলনে দলীয় বড় নেতাদের পালিয়ে বেড়ানোর মানসিকতা এমন অনেক ব্যাপারকেও এর কারণ ভাবা যেতে পারে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বড় কারণ হিসেবে সবাই ভাবতে শুরু করেছেন, বিদেশী প্রভুদের ইচ্ছেকে।

৭দফা নিয়ে বোদ্ধা মহলের এই প্রতিক্রিয়া দেখে এই প্রশ্নই সবার মনে জাগছে, কি এমন ঘটল যে ম্যাডাম এরকম ‘সফট’ কর্মসূচী দিলেন। কোন আশ্বাস কি পেয়েছেন? আওয়ামীরা নরম হবে কিংবা এভাবে দাবী জানালে মেনে নেবে— এমন কোন আভাস? ১/১১ এর মত কোন ঘটনার আভাস? আওয়ামীদের ওপর থেকে বিদেশী প্রভুদের আশীর্বাদের হাত তুলে ফেলার আভাস? কিংবা প্রতিবেশী দেশের ওপর অন্য কোন বৃহৎ দেশের চাপ প্রয়োগের আভাস? সম্ভবতঃ আর কিছুদিনের ভেতরেই সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে। তখন স্পষ্ট হবে, ‘৭ দফা কি পরাজয়? না পরিকল্পনা?’

Failure of Politics?

By Ariful Hossain Tuhin

I usually don’t watch television. But my father is a passionate viewer of all kind of political talk shows, especially “ajker bangladesh” from independent tv.

Last night i was temporarily paused when some remarks from a guy in “ajker bangladesh” caught my ear.

Some lawyer i guess affiliated with AL, was saying something like this,

“Why don’t BNP create a popular movement to pressure government?”. Khaled mohiuddin, who runs the show, interrupted and told,

“How can BNP create a peaceful popular movement if the government fires live rounds even if its not a violent movement”

That guy answered along these lines

“The blame goes to BNP, if there were 200 people, police disperse them with sticks, if there were 2000 people, police fires at them, if there were 200000 people, police would not have done anything”

I was kind of shell shocked.

So the “freedom of association” clause in the constitution has condition of “head count” according to this lawyer guy. I don’t know where did he got his law degree.

This is a very dangerous way of thinking. The liberal democratic values dictates that , the state has to justify its use of force. Otherwise it has no right to suppress any kind of political protest even if it dislikes it. Yes i understand there are cases when BNP and jamat resorted to violent means where police may have the justification to use force. In all circumstances, they have to held accountable. A state can not behave in an arbitrary way, otherwise the very foundation of the state become void and illegitimate.

Liberals who are still supporting AL in this issue, that is, suppressing each and every BNP protests/rallies, have to do some soul searching. Where is exactly is their “liberal conscience “? This way the gets a kind of dangerous impunity which has a lot of side effects.

Its just a matter of time, that those police will attack preemptively in other scenarios. Just like they violently attacked primary school teachers, garment workers. It will turn against the liberal themselves if they fall out of favor just like Gonojagoron moncho.

This is not a debatable issue as our constitution guarantees “freedom of association”. And if there is no evidence of “violence”, the state has no choice to abide by it.

I once read in a article criticizing our constitution, I can’t cite it, because it was published in a print journal, where it was claimed that the the fundamental rights guaranteed in our constitution can not be enforced by a court(Like it can be enforced in USA). That means, i can’t file a writ petition to ask the court to enforce my “freedom of speech” and “freedom of association”. I’m not an expert, but if that’s the case, then constitution has little practical value as the court will not be able to check the state if the state violates fundamental rights. The argument put forwarded in that article was There are certain portion of the constitution which can not be enforced by the court. This is a serious shortcoming. (If anybody interested i can give him the copy of the journal)

Another thing is that guy subconsciously stated an obvious. Its not possible to overthrow this government by normal democratic politics. As he claimed , the state’s gun will only be silent if there were 2000000 people. So only an angry mob with pitchfork can make them behave. The government doesn’t believe in rule of law. They believe in mob justice. I should thank him for this simple honesty.

‘বিএনপি – জিয়া পরিবারের প্রতিনিধি = ???’

by zainuddin sani

এদেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল মুখে যতই গণতন্ত্রের জন্য নাকি কান্না কাঁদুক, একটা ব্যাপারে দুই দলই একমত, রাজতন্ত্র ছাড়া দল টেকানো সম্ভব না। সমস্যাটায় প্রথম পড়েছিল আওয়ামীরা। যে মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু সহ তাঁদের শীর্ষ চার নেতার নিধন হল, তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় শীর্ষ পদ দখলের কামড়াকামড়ি। প্রায় চার টুকরা হওয়ার পথে রওয়ানা দেয় দলটি। নৌকার হাল ধরতে অবশেষে আসতে হয় শেখ বংশের জীবিত দুই বংশধরের একজনকে।

এর কিছুদিন পরেই একই সমস্যায় পড়ে, দেশের অপর বৃহৎ দলটি। তাদেরও কমবেশি একই অবস্থা হয়েছিল। ম্যাডাম এসে কাস্তে হাতে তুলে না নিলে দলটি টুকরো হতো না ‘ভ্যানিস’ হতো তা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। তবে সেযাত্রা বেঁচে যায় এবং এরপর থেকে ঝড় ঝাপটা এলেও দলটি টিকে ছিল।

এরশাদ সাহেবের বদান্যতায় প্রায় নয় বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দল দুটির অনুগামীর সংখ্যায় যেমন কমতি হয়নি তেমনই নেতৃত্ব নিয়েও তেমন কোন ঝামেলা হয়নি। যদিও বিভিন্ন পদে কে অধিষ্ঠিত হবেন তা দল দুটির শীর্ষ নেত্রী কর্তৃক নাজিল হত কিংবা কাউন্সিল হলেও কোন কর্মীই সাহস করে জানাতেন না, তিনি নেতা হতে চান। ফলে দল দুটির দ্বিতীয় শীর্ষ পদ বলে তেমন কিছু ছিল না।

দল পরিচালনার জন্য যে একনায়কতন্ত্রকে সমাধান হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন দুই নেত্রী, সেই সমাধানই সমস্যা হয়ে আবির্ভূত হল, ১/১১তে। দুই শীর্ষ নেত্রী বন্দী হলেন। একটি দলে তখন হবু উত্তরাধিকারী চলে এসেছিল, তিনিও বন্দী হলেন। শীর্ষ পদ ফাঁকা হওয়ায় নেতা হতে আগ্রহী সেইসব নেতাদের হঠাৎ করে বিবেক জাগল। মনে পড়ল, ‘আরে তাইতো, দলে তো গণতন্ত্র নেই! কিছু একটা করা দরকার।’

সমাধান হিসেবে যা আসলো, তা ছিল দল দুটির ওপর আসা পুরনো সমস্যার নতুন এডিশান। সেই দুই পারিবারিরক প্রতিনিধিদ্বয় আসবার পূর্বে যে সমস্যা হয়েছিল, তা আবার ঘটবার সম্ভাবনা দেখা দিল। কাহিনী একটু বেশি আঘাত হানলো বিএনপিকে। হয়তো এখানে উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতার সংখ্যা বেশি ছিল কিংবা তাঁদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিমাণ বেশি ছিল। ঘটনা বেশ অনেকদূর গড়াল। তবে শেষরক্ষা হল রাজতন্ত্র দিয়ে। ম্যাডাম ফেরত এসে দলকে আবার ‘একটি দল’ বানালেন।

আওয়ামীদের অবস্থাও খুব ভালো কিছু ছিল না। বেশ বড় বড় নেতার ভেতরেই বিবেক জেগেছিল। আওয়ামীদের দুঃসময়ে যারা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কামড়াকামড়ি করেছিলেন, সম্ভবতঃ নিজেদের ভেতর ভাগ বাটোয়ারা নির্ধারণ করে, তাঁরাও নেমে পড়েছিলেন শূন্য হওয়া শীর্ষ পদ দখল করতে। পরেননি, এবং তাঁদের এই অসম সাহস তাঁদের পরবর্তী জীবনও বেশ দুর্বিষহ করে দেয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, দুই বড় দলই সেই ‘এপিসোড’ থেকে শিক্ষা নেননি। কেউই দলে কোন সেকেন্ড ম্যান গণতান্ত্রিক ভাবে নির্ধারণের ঝুঁকি কিংবা প্রচেষ্টা নেননি। তবে তাঁর ফলাফল এখনও আওয়ামীরা ভোগ করেননি। কারণ তাঁদের ওপর সেই অর্থে বড় কোন দুর্যোগ আসেনি। উপনেতা কিংবা সাধারণ সম্পাদকও দলীয় নেত্রীর ইচ্ছামাফিক হয়েছে। কাউন্সিল হলেও কেউ আর এখন মুখ খোলে না। কেউই জানান না, তিনি কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। নেত্রীকে অধিকার দিয়ে দেন, কোন পদে কে বসবেন, সেই হুকুম নাজিল করার। এবং যথারীতি ‘লিস্টি’ আসে শীর্ষ নেত্রীর মুখ থেকে।

১/১১ পরবর্তী সময়ে হওয়া নির্বাচনে আওয়ামীরা ক্ষমতায় আসায়, তাঁদের সেই অর্থে বড়সড় কোন সমস্যা হয়নি। ‘বিবেক জাগা’ সেইসব নেতাদের দলে রাখলেও বেশ অপ্রয়োজনীয় করে রেখেছেন। তবে নেত্রী, মূল সমস্যার কোন সমাধান করেননি। দলে গণতন্ত্র তো আনেনই নি, বরং সবাইকেই জানিয়ে দিয়েছেন, দলটি ‘বিক্রি হওয়া কিছু মানুষ দিয়ে তৈরি’। তাই কাউকে ‘সেকেন্ড ম্যান করা সম্ভব না। যদি কেউ হয়, সে হবে ‘আমেরিকা প্রবাসী পরিবারের মানুষটি’।

১/১১ সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেয় বিএনপিকে। একে তো নির্বাচনে পরাজয় হয়, তারওপর দলে দেখা দেয় অন্তর্কলহ। ঢাকা দখল নিয়ে দুই গ্রুপে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। পুরনো নেতা আর নতুন নেতাদের মধ্যে লড়াই। ফলে মহাসচিব পদে আবার আনা হয়, ম্যাডাম কর্তৃক ‘নির্বাচিত’ ব্যক্তি। পছন্দের লোক বসানোর বসানোর অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসবার কোন ইচ্ছে নেত্রী দেখালেন না। সেই মহাসচিবের মৃত্যুর পরও যাকে ভারপ্রাপ্ত করা হল, তিনিও সেই একই ফর্মুলায় নাজিল হলেন। ফলাফল হল ভয়ঙ্কর। ম্যাডামের অবর্তমানে কে হবেন দলের কান্ডারী, তা কেউ জানে না।

‘জিয়া অরফ্যানেজ’ আর ‘জিয়া চ্যারিটেবল’ এই দুই মামলা ট্রাম্প কার্ড হিসেবে রেখে দিয়েছিলেন, আওয়ামী নেত্রী। ব্যাপারটা ব্যবহার করবেন কি না তা নিয়ে সম্ভবতঃ বিএনপি কিছুটা দ্বিধায় ছিল। হয়তো ভেবেছিল, এতোটুকু ভদ্রতা অন্ততঃ আওয়ামীরা দেখাবে। হয়তো ভেবেছিল, শীর্ষ নেত্রীকে গ্রেফতারের মত সিদ্ধান্ত নিবে না। হয়তো ভেবেছিল, ‘কখন পরস্থিতি পাল্টে যায়, এই ভেবে’ হয়তো আওয়ামীরা শীর্ষ নেতৃত্বকে ছেড়ে কথা বলবে।

মঙ্গলবারে যখন তড়িঘড়ি আয়োজন করা সাংবাদিক সম্মেলনের খবর আসলো, তখন মনে হয় না সাংবাদিকদের বুঝতে বাকী ছিল, সেই আশার গুড়ে বালি পড়তে যাচ্ছে। সম্ভবতঃ আওয়ামীদের ভেতরে থাকা তাঁদের গুপ্তচররা জানিয়েছে, আওয়ামীরা তাঁদের সেই ‘ট্রাম্প কার্ড’ দেখিয়ে ‘ব্ল্যাকমেইল’ না করে সরাসরি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি যেভাবে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে, তাতে ম্যাডামকে বাইরে রাখা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ভাবছে।

মূল যে সমস্যা দল দুটির ভেতরে আগেও ছিল এবং এখনও আছে, তা হচ্ছে, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, দ্বিতীয় আর কোন নেতা নেই। দলে গণতন্ত্র না থাকায়, কোন নেতা কতোটা জনপ্রিয় তা কেউই জানেও না। কোন কাজ করার সুযোগ না থাকায়, কেউই জানেন না, ‘স্ট্রেটেজি’ তৈরিতে কে কতোটা দক্ষ। ফলে সেই পুরনো সমস্যা নতুন করে বেশ বড়সড় বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।

‘ট্রাম্প কার্ড’ সম্ভবতঃ অচিরেই ব্যবহার হবে। তবে সেই পরিস্থিতিতে কি করবে, কিভাবে তাঁরা দল চালাবেন, কিভাবে আন্দোলন করবেন, তা যে তাঁরা জানেন না তা যেভাবে ‘শুকনো মুখ’ নিয়ে বিএনপির দ্বিতীয় সারির নেতারা হাজির হলেন, তা দেখে বেশ স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। তাই যখন তাঁরা আওয়ামী প্ল্যান জানালেন, তখন একটি ব্যাপার বেশ স্পষ্টভাবে তাঁদের চেহারায় জ্বলজ্বল করছিল, তাঁদের অসহায় মুখ বলছিল, ‘ম্যাডাম গ্রেফতার হলে বিএনপির কি হবে?’

সময় হয়তো হাতে খুব বেশি নেই। ৫ই জানুয়ারী আসছে। সেই সময়ে কিছু করতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও মনে হচ্ছে, আওয়ামীরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তাই শীতকালটা কোন ঝামেলা ছাড়াই পার করতে যেকোন দিন আসতে পারে আওয়ামী আঘাত। এবং সেই আঘাত কিভাবে মোকাবেলা করবে, কে নেতৃত্ব দিবে, তা এখনও খুব একটা স্পষ্ট না। সেকেন্ড ইন কম্যান্ডও দেশে নেই এবং তাঁর মাথায়ও ঝুলছে মামলা, তাই তিনিও মনে হয়না ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরবেন। ফলে জিয়া পরিবারের প্রতিনিধির অবর্তমানে নেতৃত্বের কি হবে ব্যাপারটা বিএনপি স্পষ্ট করবে, না সাসপেন্স থ্রিলার গল্পের মতো দেশবাসীর মনে জাগিয়ে রাখবে সেই জটিল প্রশ্ন, ‘বিএনপি – জিয়া পরিবারের প্রতিনিধি = ???’

নির্বাচনমুখী আন্দোলন বনাম লতিফ কার্ড!

|| এ.কে.এম ওয়াহিদুজ্জামান ||

১৭ বছর আগে নিজে হাজ্জ্ব পালন করার পরও গত সেপ্টেম্বরে আমেরিকা সফরের সময় হাজ্জ্ব নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। বিএনপিসহ এবং ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো তখন তাকে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ এবং বিচার করার দাবী জানিয়েছিলো। সরকার সেটা মেনেও নিয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাকে মন্ত্রীসভা এবং আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেই গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথা নিয়ে দেশে ফেরা এবং গ্রেফতার এড়িয়ে এয়ারপোর্ট ত্যাগ করার পর হেফাজতে ইসলামীর হরতাল এবং ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচী বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে সেই সময়ে, যখন বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক দলগুলো নির্বাচনমূখী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিএনপি’র সামনে এখন দুইটা পথ; লতিফ ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করা অথবা লতিফ ইস্যুকে উল্টো সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়ে নির্বাচনমূখী আন্দোলনটাই গড়ে তোলার চেষ্টা করা। ৯০ দশকে কম্যুনিজম বিরোধী স্বস্তা সেন্টিমেন্টের মৃত্যুর পর ইসলামী জঙ্গী বিরোধী স্বস্তা সেন্টিমেন্টের বাজার দর এখন চড়া। বিএনপি যদি এখন হেফাজতে ইসলামী এবং জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে আন্দোলন শুরু করে, তাহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক বাজারকে কেবল আরেকবার দেখিয়ে দেবে যে, বিএনপি গণতন্ত্র নয় বরং জঙ্গীবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রয়োজনে ৬মে ২০১৩’র মত আরেকটা ঘটনা ঘটিয়ে প্রমানও করে দেবে যে, বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ঠেকাতে কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই উপযুক্ত দল।

দ্বিতীয় পথ অনুসরণ করে বিএনপি যদি লতিফ ইস্যুকে উল্টো সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়ে বলে যে- সরকার তার বিচার করবে বলেছিলো এখন বিচার করুক, যদি বিচার না করে তাহলে সেটা সরকারের ব্যার্থতা। তাহলে বলটা সরকারের কোর্টে যাবে। সরকারকে তখন হয় লতিফ সিদ্দিকীর বিচার করতে হবে কিম্বা তাকে দিয়ে ভুল স্বীকার করিয়ে ক্ষমা প্রার্থনাশেষে তওবা করানোর ব্যবস্থা নিতে হবে, অথবা তাকে বিচারের আওয়তায় না এনে ইসলামিস্টদের আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে।

প্রথম ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলামীর দাবী মেনে নিয়ে সরকার লতিফ সিদ্দিকীর বিচার করে, বা লতিফ সিদ্দিকী নিজেই হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় গিয়ে তওবা করে পুনরায় কলেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে একটা চমক সৃষ্টি করতে পারেন। যদিও এটা খুবই দুর্বল একটা সম্ভাবনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ লতিফ সিদ্দিকী অনেক কাঠ-খড়-কেরোসিন পুড়িয়ে নিজের যাবতীয় দুর্নীতি ও অপকর্মের আলোচনা ধামাচাপা দিয়ে এখন সুশিল সমাজের মাধ্যমে দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরীনের পাশে স্থান করে নিয়েছেন। এই স্থান থেকে সরে এসে নিজের দুর্নীতি ও অপকর্মের মামলাগুলোকে নিশ্চই তিনি প্রাধান্য দিয়ে আলোচনায় আনতে চাইবেন না।

Untitled-1

এমতাবস্থায় দ্বিতীয় বিকল্প অনুযায়ী, হেফাজতে ইসলামীর দাবী না মেনে নিয়ে সরকার তাদেরকে আন্দোলন করার সুযোগ করে দিতে পারে। যার নমূনা আজ ২৪ নভেম্বর দেখা গেছে। বিএনপির কোন সংগঠন পুলিশের গ্রেফতার-পিটুনীর কারণে রাস্তায় মিছিল করতে না পারলেও হেফাজতে ইসলামী মিছিল করতে পারছে। মানে সরকার তাদেরকে মিছিল করার সুযোগ দিচ্ছে। এটাকে তারা সাফল্য ভেবে চুড়ান্তভাবে ঢাকা অবরোধের ডাক দিলেও সম্ভবত সরকার সেটা করতে দেবে। এতে দ্বিমুখী লাভ। প্রথমত: এতে করে সরকার বিরোধী আন্দোলন করার মত শক্তিকে দ্বিখণ্ডিত করা যাবে, যাতে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয়ত: জঙ্গীবাদ তত্ত্ব প্রচার ও প্রমান এবং দমনের দক্ষতা প্রমাণের মোক্ষম সুযোগ। সরকার আগের মতই বিনাবাঁধায় হেফাজতে ইসলামী ও অন্য ইসলামিস্ট দলগুলোকে মিছিল, সমাবেশ এবং ভাংচুর করতে দিয়ে সেই দৃশ্য টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করে প্রথমে বর্হিবিশ্বকে জঙ্গীবাদের উত্থান দেখাবে, তারপর তা কঠোর হাতে দমন করে নিজেদের সক্ষমতা দেখাবে।

কিছুদিনের মধ্যেই নেপালে নরেন্দ্র মোদীর সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হবে। তারপর দেশে আসবেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। সেই সময় মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রসঙ্গে আলোচনা এড়ানোর জন্য জঙ্গী ইস্যুর চেয়ে গরম ইস্যু আর কোনটা হতে পারে? মোদি সরকার আওয়ামী লীগের সাথে সাধারণ বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষা করলেও ভারতের পলিসিমেকার সাউথ ব্লক এখনো আওয়ামী লীগেরই কট্টোর সমর্থক। লতিফ সিদ্দিকী সেই ভারত হয়েই বাংলাদেশে ফিরেছেন। কাজেই তিনি আগুনে ঝাঁপ দিতে নয়, বরং আগুন নিয়ে খেলা করতে এসেছেন। এখন তার লেজে আগুন দিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধানো দেখার অপেক্ষা।

জনাব তারেক রহমান কে খোলা চিঠি! 

1

 

by
ফয়েজ তৈয়্যব
জনাব রহমান,
সাম্প্রতিক সময়ে লন্ডনে বসে কিছু কিংবা অনেক কথা বলছেন। আজ মানুষ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের (!) মুখে শুধুমাত্র এমন কিছু শুনতে চায় যা তাঁদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত। তা না করে পুরানো ইতিহাস নিয়ে এইসব কি বলছেন আপনি? কেন বলছেন? জিয়া কে পচাতে শেখ হাসিনার নেয়া অনুরূপ পথে হেঁটে মুজিব কে পচিয়ে আপনি কি পাবেন?
জীবন যেখানে দায়ের ভারে নূজ্য সেখানে অতীতের কাসুন্দি ঘাটা আজ বড়ই বেমানান, বড়ই হতাশার, বড়ই গ্লানির। বুঝে নিন, এই সব সত্য বা মিথ্যা সেটা নিয়ে জীবন যন্ত্রনায় পিষ্ট মানুষ ভাবিত নয়। এইসব কাদা ছোঁড়াছুড়ি দেখতে আর শুনতে নাগরিক ত্যাক্ত বিরক্ত, কারন তাঁর জীবন আজ সামাজিক সম্মান, দারিদ্র আর নিরাপত্তার কাছে বড়ই অরক্ষিত।
৪২ টি বছর পার হবার পর মানুষ আস্তে আস্তে বুঝতে শিখতে শুরু করেছে তাঁদের সাবেক ও বর্তমান সকল নেতাই তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তন না করে নিজের ভাগ্যই পরিবর্তন করেছে। নাগরিক তাঁর নেতাদের প্রতারক, চোর, লূন্ঠন কারী, উদ্ধত আর অসভ্য ভাবতে শুরু করেছে। এই বোধ আপনাদের মধ্যে যত দ্রুত আসে ততই সার্বিক মঙ্গল। ব্যক্তি আপনার, আপনার দলের এবং এই অভাগা দেশের। সুতরাং এইসব অর্থহীন আলোচনা (সত্য বা মিথ্যা) আজ প্রাসঙ্গিক।
বরং এইসব বাদ দিয়ে নাগরিক স্বার্থের কথা বলুন, নাগরিক আশা করে তা বুঝার বয়স আপনার হয়েছে। সেই সাথে নাগরিক এটাও কামনা করে নাগরিক স্বার্থ ভিত্তিক রাজনীতি করার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আপনার মধ্যে এখনই আসা উচিত।
দেশের তরুন প্রজন্ম আপনার প্যারালাল প্রশাসন, নিয়মতান্ত্রিকতার উপর অনিয়মের দায় দেখেছে। সেইসব কলঙ্ক থেকে কিভাবে বের হবেন তা নিয়ে নিজে ভাবুন, আপনার ফোলয়ার দের ভাবতে দিন, নাগরিকের কাছে সৎ কমিটমেন্ট দিন, সেই কমিটমেন্ট যে সৎ সেটার প্রমান রাখুন।
ক্ষমতায় আসলে ভঙ্গুর এই সমাজ ব্যবস্থায় কিভাবে নাগরিক এর নিরাপত্তা দিবেন, সামাজিক নিরাপত্তা দিবেন, আর্থিক নিরাপত্তা দিবেন তা নিয়ে ভাবেন, আমাদের কে সেটা জানান।
মানুষের জীবন মান উন্নয়নে আপনার প্ল্যান আছে কি? থাকলে সেসব কি? সেসবের চ্যালেঞ্জ কি? সেই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার উপায় কি সেই ভাবনা নাগরিককে জানান।
চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি রোধ করে কিভাবে অভ্যন্তরীণ ইনভেস্টর দের উৎসাহিত করবেন সেসব নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। নিজেরা, দল কিভাবে এই ভন্ডামী আর অনাচার থেকে বের হয়ে নাগরিক কে আর্থিক নিরাপত্তা দিবে সেটা নিয়ে ভাবেন, সেইসব নাগরিক কে জানান।
হাজার হাজার তরুন চাঁদাবাজির ভয়ে, ঘুষ আর হয়রানির ভয়ে কোম্পানী খুলতে পারছেন না, আইডিয়াকে প্রোডাকশনে নিয়ে যেতে পারছেন না, সেসব নিয়ে ভাবেন না বোধ করি, দয়া করে ভাবুন। আপনারা যে ভাবছেন, অন্তত সেটা নাগরিককে জানান।
পরিবর্তিত জলবায়ু/আবহাওয়ার এই সময়ে কৃষি আর কৃষকের ফলনের নিরাপত্তার বিধান কিভাবে ঘটবে, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা কিভাবে আসবে, কৃষি অবকাঠমোর বিকাশ কিভাবে হবে তা নিয়ে ভাবুন দল, দেশ আর দেশের গন্ডির বাইরে। নাগরিক এইসব জানতে চায় কান পেতে।
আগামীর বাংলাদেশে অবকাঠমো উন্নয়ন কিভাবে হবে তার সততা ভিত্তিক রোডম্যাপ বানান। সড়ক রেল নৌ বিমান ব্যবস্থা, পন্য পরিবহন ব্যবস্থা, নগর পরিবহন ব্যবস্থা, জ্বালানী উতপাদন এবং ব্যবস্থা কি ভাবে জনকল্যাণ এর প্রযুক্তি নির্ভর হয় সেইসব মহৎ কাজ নিয়ে রাইট এক্সপার্ট দের সাথে বসেন। সেইসব ভাবনা নাগরিককে জানান। একটা অসৎ এবং দায়সারা নির্বাচনী ইশতেহার এর গল্প ভুলে মানুষকে সত্যিকারের পরিকল্পনার সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দিন।
দুর্নীতির অভিযোগ মুক্ত হয়ে কিভাবে বিদেশী বিনিয়োগ আর সহজ শর্তে অবকাঠামো ফান্ডিং (ঋন) আনবেন সেটা নিয়ে এক্সপার্ট দের সাথে যুক্তি পরামর্শ করুন। রোডম্যাপ বানান। নাগরিককে কিভাবে বৈদেশিক ঋন এর বোঝা থেকে মুক্তি দিবেন সেতা নিয়ে ভাবেন। নাগরিককে তা জানান।
প্রতিবেশীর সাথে আর্থিক লাভের ভিত্তিতে কিভাবে কৌশলগত সম্পর্ক করবেন তা নিয়ে দেশী বিদেশী এক্সপার্ট দের সাথে কাজ করুন। নাগরিককে তা সৎ ভাবে জানান।
দুর্বিনীত দলীয় ক্ষমতার একচ্ছত্র প্রভাবে রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠান গুলোতে ঘুষ, অনিয়ম আর দুর্নীতি কে নিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার যে কলঙ্কের দায়, তা একটা উল্লেখযোগ্য সময় দেশ শাসনকারী হিসেবে আপনার দলের রয়েছে সেটা মেনে নিন, সেখান থেকে বেরিয়ে কিভাবে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে নিবেদিত একটি সরকার কাঠামো বানানো যায় সেসব নিয়ে ভাবেন, সেই ভাবনা ছড়িয়ে দিন দেশের আনাচে কানাচে এমন কায়দায় যাতে মানুষ বিশ্বাস করতে পারে।
মানুষ বুঝতে শিখেছে, দেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ও বাণিজ্যিকীকরণ ই নিয়ম। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শিষ্টাচার এবং নিয়মতন্ত্রের চর্চা নেই। দলের কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই। রাজনীতি মানেই চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বলপ্রয়োগ, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ ক্ষমতার প্রয়োগ।
মানুষ বুঝতে শুরু করেছে সকল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী দফতরে কেন্দ্রীভূত। সংসদ, নির্বাহী বিভাগ এর স্তর সমুহ্‌, আদালত এবং স্থানীয় প্রশাসনের ভুমিকা নিতান্তই সাংবিধানিক, কার্যত আজ্ঞাবাহী। নাগরিক বুঝতে শুরু করেছে রাজনৈতিক ব্যবস্থা দুর্বৃত্তায়ন এবং বাণিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে গেছে। সেই রাজনৈতিক বাণিজ্যিকীকরণের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে চূরমার হয়ে গেসে তাঁর স্বপ্ন এবং সম্ভাবনা।
নাগরিক চায় আপনি আপনারা এইসব স্বীকার করুন, এইসবের দায় নিন। এইসব অসভ্যতা থেকে দেশকে বের করে আনার শপথ নিন, পরিকল্পনা করুন এবং তা নাগরিক কে জানান ওয়াদা করে।
নাগরিক অনেক কিছু জানতে চায়, শুনতে চায়। নাগরিক যা শুনতে চায়, তা ই শুধু বলেন, নাগরিক এর ব্যক্ত অব্যক্ত ভাব বুঝে নিন।অপ্রয়োজনীয় যা, তা বর্জন করুন। পিতার পরিচয় থেকে বেরিয়ে এসে নিজের পরিচয় তৈরি করুন।
যদি না পারেন, দয়া করে যোগ্যকে পথ করে দিয়ে আপনি/আপনারা বাংলাদেশকে মুক্তি দিন।
নিবেদনে,
বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক।

 

 

Des(h)i progressives’ nightmare

“But see, I don’t want to vote for AL. I do not think AL should return to power. We need checks and balances. BNP should come. But how can I vote for BNP when they are in an alliance with JI.”

That’s what a friend told me in December.  I have the deepest respect for this person’s sincerity.  She is a genuine progressive.  She wants a democratic Bangladesh — of this I have no doubt.  And I understand her reasons for aversion to Jamaat — never mind 1971, Jamaat categorically rejects some liberal-progressive tenets such as equal citizenship rights.  Had she said “I will not vote for Jamaat”, I would have accepted it.

But that’s not what she said.  She implicitly rejected BNP for its electoral alliance with Jamaat.

I didn’t engage in a prolonged conversation with her.  She is hardly the only person I know who made that leap about conflating Jamaat and BNP.  Bangladesh is full of self-proclaimed progressives who choose to reject democracy,never mind the facts.  I just don’t have the mental energy to engage in fruitless debates these days.  At least my friend had the decency to not engage in that kind of sophistry.

I didn’t engage in a political discussion with her, but was reminded of her comment after the Indian election.  You see, I had heard similar stuff from my Indian progressive friends.  Way back in the early 2000s, I heard people say “don’t want to vote for Congress, don’t like the sycophancy/dynasty, and the Vajpayee government isn’t so bad, but you know, how can BJP be supported when they have someone like Modi”.

And now Modi is the prime minister.

My Indian friends could have supported Vajpayee or other moderates in BJP/NDA government.  They could have provided the left flank of a genuinely centrist alternative to Congress.  But their self-inflicted intellectual blind spot meant that they couldn’t even contemplate such a course — never mind that such an alternative would have served India well.

A lot of things contributed to Mr Modi’s rise to power.  The progressives’ blind spot is just one factor, and probably not even an important one.  But to the extent that he represents a lot of things progressives loath, they have no one but themselves to blame.

I fear whether someday my Bangladeshi progressive friend will wake up to her political nightmare.  Jamaat’s importance in Bangladesh is constantly over-rated, and BNP’s strength under-rated, by everyone.  Of course, Jamaat benefits from the inflated power projection.  And the Jamaat bogey suits the Awamis fine.  The thing is, as the centrist opposition is systematically denied any political space, and as the ruling party degenerates into an orgy of violence (google Narayanganj / Feni murders), Islamists (Jamaat or otherwise) may well emerge as the only alternative.

My friend is genuine progressive, not a closet Awami fascist.  Will people like her act to prevent their own worst nightmare?

http://jrahman.wordpress.com/

জিয়াউর রহমান সাহেবের প্রথম প্রেসিডেন্সি প্রসঙ্গে

3

শাফকাত রাব্বী অনীকঃ

অতীত ও ইতিহাস নির্ভরতা কোন জাতির এগিয়ে যাওয়ার পথে সহায়ক হতে পারেনা। ইতিহাস ও অতীত নিয়ে মারামারি দেশের একটি দল ও তার সমর্থকরা বেশি করলেও, অপর দল ও তার সমর্থকরাও মাঝে মধ্যে খামাখাই যোগ দেন। এই মুহুর্তে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সব চাইতে হট আলোচনার বিষয় হলো বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন।

বিএনপি সাইডের কথা বার্তা শুনে যা বুঝলাম, জিয়াউর রহমান সাহেবকে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ডিক্লেয়ার করার আগে নাকি বেশ কিছু সংবিধান বিশেষজ্ঞর পরামরর্শ নেয়া হয়েছিল। তারা গ্রিন সিগনাল দেবার পরেই এই ঘোষণা লন্ডন থেকে এসেছে। ঘটনা সত্য হলেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়।

প্রথম প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে এমন বিশেষজ্ঞ কতজন আছেন যারা আওয়ামী কিংবা বিএনপির সর্বোচ্চ নেতাদের মুখের উপর বস্তুনিষ্ঠ অপিনিয়ন দিতে পারেন? যেমন ধরুন, যদি শেখ হাসিনা দেশের শীর্ষ ১০ জন সংবিধান বিশেষজ্ঞকে ডেকে বলেন, “দেখুনতো আমার আব্বাকে সংবিধানের আলোকে এক্স-ওয়াই-জেড টাইটেল দেয়া যায় কিনা?” আমার ধারণা এই আবদার শোনা মাত্র বিশেষজ্ঞের দল সমস্বরে বলে উঠবেন, ” অবশ্যই যায়, আলবত যায়, যাবে না কেন? বরং আমরাতো লজ্জিত এটা ভেবে যে এই ব্যাপারটি আপনার মতো আমাদের মাথায় এতো দিন এলো না কেন!! আপনি একজন জিনিয়াস, একে বারে বাবার মতোন”।

উপরের বাস্তবতা আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে বেশী প্রযোজ্য হলেও, বিএনপির বিশেষজ্ঞরাও কতটা সঠিক পরামর্শ দিয়েছেন তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে।

এবার আসা যাক বিশেষজ্ঞ মহলের মূল যুক্তির দিকে। যতদূর বুঝেছি, বিশেষজ্ঞদের যুক্তির তিনটি মূল স্তম্ভ রয়েছে। প্রথমত, জিয়াউর রহমান সাহেব তার প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণায় বলেছিলেন যে তিনি নিজের হাতে কমান্ড তুলে নিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ১৯৭১ সালের মার্চের ২৬ তারিখ থেকে শুরু করে এপ্রিল এর মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে কিংবা প্রবাসে স্থাপিত কোন সরকার ছিল না। সুতরাং, জিয়া সাহেবের প্রথম ঘোষণা অনুযায়ী তিনিই প্রথম সরকার প্রধান। তৃতীয়ত, যেহুতু সরকার প্রধানই কেবল মাত্র যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন, সেহুতু জিয়া সাহেব উপরের প্রথম ও দ্বিতীয় যুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন সরকার প্রধান বা প্রেসিডেন্ট হিসেবেই।

উপরের যুক্তিগুলো নিয়ে যুক্তি খন্ডন করার কাজটি ভালো করতে পারবেন উভয় দলের বিশেষজ্ঞরা। আমি লে-ম্যান হিসেবে যুক্তি খন্ডনে যাবো না। জাতীয়তবাদী ভাবধারা ও দল হিসেবে বিএনপির সমর্থক হিসেবে, আমি তর্কের খাতিরে ধরেও নিতে রাজী আছি যে উপরের যুক্তিগুলো সঠিক। কিন্তু তার পরেও বেশ কিছু কথা বলা উচিত, চুপ না থেকে।

আমার মতে, উপরের প্রতিটি যুক্তিগুলোকে বলা যেতে পারে টেকনিকাল, আইনী কিংবা আমলাতান্ত্রিক। জিয়াউর রহমান সাহেবের যে ইমেজ দেশের হাজারো মানুষের মনে এখনও বেঁচে আছে, তা এই সব আমলাতান্ত্রিক কিংবা টেকনিকাল যুক্তিলব্ধ টাইটেল-ফাইটেল এর ধার ধারার কথা না।

জিয়া সাহেব দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন, নাকি প্রথম ফিল্ড মার্শাল ছিলেন, স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক ছিলেন নাকি দ্বিতীয় ঘোষক ছিলেন সেগুলোও টেকনিকাল আলোচনা। এগুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন তারা, যারা ইতিহাসকে “ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্পিং ডিসিশন” এর মতো কিছু একটা ভাবেন। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কাছে, বিশেষ করে যারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছেন, কিংবা জীবিত ছিলেন, তাদের চোখে জিয়াউর রহমান হলেন সেই ব্যাক্তি যার যুদ্ধকালীন নেতৃত্ব, রেডিওতে ভেসে আসা ঘোষণা মানুষ নিজের কানে শুনেছে, চোখে দেখেছে। থার্ড আম্পেয়ারের স্ক্রিনে দেখেনি।

২৬ এ মার্চের গণহত্যার রাতে দেশের তৎকালীন শীর্ষ রাজনৈতিক মহলের সবাই যার যার জান হাঁতে নিয়ে, যে যে দিকে পেরেছেন পালিয়েছিলেন। সেই রাত্রে যেই ইয়াং ছেলেটি পুরা দেশের মানুষের মনের কথা, নিজ দায়িত্বে, শুরুতে নিজের নামে, পরবর্তিতে একজন স্বেচ্ছায় ধরা খাওয়া শীর্ষ নেতার নামে রেডিওতে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই ইয়াং ছেলেটি ছিলেন জিয়াউর রহমান। তাকে কি নামে, কি উপাধিতে ডাকা হবে, তা নিয়ে গ্যালারির দর্শকেরা চিল্লা চিল্লি করতে পারে। তাতে জিয়ার ইমেজ বাড়া কিংবা কমার কথা না।

২৬ শে মার্চে জিয়া সাহেবের কিন্তু একটা ব্যক্তিগত স্টোরীও ছিল। তিনি কোন বিপ্লবী-বিবাগী ছিলেন না। তিনি সংসারী ছিলেন। তার ছোট্ট ছেলে ছিল, তার বউ ছিল। ২৬ সে মার্চের সেই রাতে তিনি যখন ঘোষণা দিয়েছিলেন, “উই রিভোল্ট” তখন তার নিশ্চয়ই ভয় হয়েছিল যে তার সেই সংসার, তার সেই ছোট্ট ছেলেকে আর কোনদিন না দেখার। আপনি জিয়াকে মহান না ভাবতে পারেন, তার নেতৃত্ব না মানতে পারেন, আশা করি যারা সন্তানের জনক তারা অন্তত দেশের জন্যে বাবা হিসেবে জিয়ার মৃত্যু ভয় জয় করতে পারার বিষয়টিকে সাধুবাদ দেবেন। জিয়া একজন বীরের মতো সেই ভয় জয় করেছিলেন, শত্রুর আঘাতের প্রথম রাত্রেই। তিনি ওয়েট এন্ড সি পলিসিও  নিতে পারতেন। তা না নিয়ে, প্রথম রাত্রেই প্রত্যাঘাতের কাজ শুরু করেছিলেন। একারণে বলতে হবে, জিয়া শুধু মাত্র একজন অসাধারণ সাহসী যোদ্ধা ছিলেন না, তিনি ছিলেন প্রত্যুৎপন্নমতি যোদ্ধা। এটাই ওনার সব চাইতে বড় পরিচয়। উনি কবে জেনেরাল ছিলেন, কবে মেজর ছিলেন, সেগুলো টাইটেল মাত্র।

বিএনপির যেই বিশেষজ্ঞরা তারেক রহমান বা খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দেন, তাদের জন্যে একটা ছোট্ট পরামর্শ। আপনারা যদি জিয়া সাহেবকে শেখ মুজিব সাহেবের সাথে অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতাতে নামাতেই চান, তাহলে শুধু একটা বিষয়কে হাই লাইট করুন। সেটি হলো, এই ব্যাক্তিদ্বয়ের একজন ছিলেন আঘাতের রাত্রে স্বেচ্ছায় ধরা খাওয়া, আর একজন ছিলেন  যুদ্ধ শুরু করে দেয়া মানুষ। এই ছোট্ট সিম্পল সত্যটি বেশী করে হাইলাইট করুন। এই কাজে আপনাদের কোন টেকনিকাল বা আমলাতান্ত্রিক যুক্তির প্রয়োজন হবে না। শিশু থেকে শুরু করে সংবিধান বিশেষজ্ঞও এক বাক্যে এই কম্পারিজন বুঝতে পারবেন।

জিয়ার মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, হেড কাউন্টে বাংলাদেশের সব চাইতে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ও একজন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর কমান্ডারের আর নতুন কোন টাইটেল লাগার কথা না, আইন কানুণে যাই থাকুক না কেন।

 

 

Reviving BNP — what are we talking about?

If there is one constant refrain in Bangladeshi political punditry, it is that BNP as a political party has no future, it is broken beyond repair, it really stands for nothing, why, BNP means Basically No Party.  But defying these pundits, BNP keeps bouncing back.  And yet, some pundits keep ignoring the facts of BNP’s resilience, and continue to harp on about BNP’s imminent demise.

The thing is, cacophony of these pundits actually drown out some very legitimate critical analysis of BNP, analysis that BNP leaders and supporters would do well to dwell on at length.  This post provides a framework to think about these critical analyses.

Continue Reading

গরুদের জন্য সহীহ ফটোশপ টিউটোরিয়াল

13

আপনার অপদার্থ দানা নেতাটি মদ্যপান করে গাড়ি চালিয়ে আমেরিকাতে ধরা পড়ে জেল খেটেছে? এখন অন্য দলের জনপ্রিয় নেতাকে সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চান? তাহলে নীচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

১/ প্রথমে তুরষ্কের একটি নাইটক্লাবের ছবি জোগাড় করুন;

TR-5

২/ এবার এবার ফটোশপ ব্যবহার করে ছবিটির হরাইজন্টাল মিরর ইমেজ তৈরী করুন;

TR-6

৩/ এরপর যে নেতার চরিত্র হনন করে আপনার মদারু নেতার সমপর্যায়ে আনতে চান সেই নেতার তৃণমূল সমাবেশ থেকে একটি ছবি যোগাড় করুন।

TZ

৪/ এখন নাইট ক্লাবের ছবিটিকে সুবিধামত ক্রপ করুন

TR-2

৫/ নাইট ক্লাবের ছবিতে থাকা কোন দাঁড়ি ওয়ালা লোককে সনাক্ত করুন। এটা খুবই জরুরী স্টেপ, কারণ এর উপর নির্ভর করছে একই ঢিলে ইসলাম ধর্ম এবং জনপ্রিয় নেতাকে হেয় করা। প্রয়োজনে নির্মলেন্দু গুণ বা রবীন্দ্রনাথের ছবি ব্যবহার করুন কিন্তু দাড়ী থাকতে হবে টুপিসহ যোগাড় করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা।

৬/ এইবার দাড়িওয়ালা লোকটির মুখ কেটে ফটোশপের মাধ্যমে ঐ জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতার মুখ বসান।

TR-4

৭/ এবার এডিট করা ছবিটিকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিন।

TR-7

৮/ আপনার ক্রোমোজমে কুকুরের জিন থাকলে শিরোনাম দিন, “সহীহ হেফাজতি, জামায়াতি কায়দায় জীবন উপভোগ করছেন …..” আর যদি ভারতীয় গরুর জিন থাকে তাহলে শিরোনাম দিন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশঃ লন্ডনের নাইট ক্লাবে …..

গরু হাম্বা হাম্বা করে, ফেসবুকের আনন্দ বাড়ে!

জিয়া কবরে ফুল চান নাকি অন্য কিছু?

Zia কারাগার থেকে বের হয়ে বিএনপি নেতারা প্রথমে ছুটে যান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে। ইদানীংকালে টেলিভিশনে বিএনপি নেতাদের জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিতে বেশি বেশি দেখা যাচ্ছে। এর অবশ্য একটা ব্যাখ্যা হলো- আওয়ামী লীগ দ্বারা বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের হার নজিরবিহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার সুবাদে জামিনে মুক্তির সংখ্যাও বেড়েছে। আর সেকারণে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। ঘটনার সংখ্যা বাড়লেও টেলিভিশনের ক্যামেরায় দৃশ্যটি কমবেশি একই রকম দেখা যায়। যিনি বা যারা মুক্তি পেয়েছেন তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা দলবেধে মরহুম জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতে যান। ফুল দেন। তারপর ক্যামেরার সামনে কথা বলেন। সমসাময়িক কোন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেন।

প্রশ্ন হলো ৭৫ উত্তরকালে রাজনীতি যখন টালমাটাল, দেশের সেই ক্রান্তিলগ্নে হালধারণকারী একদার রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান কবর থেকে কিভাবে জীবিত নেতাদের সহায়তা করবেন? কারণ জিয়াউর রহমানের আদর্শকে তারা সঠিকভাবে ধারণ করেন কিনা সেটা যথেষ্ট অস্পষ্ট। তাদের চাল চলন, কথা বার্তা, নেতৃত্ব কোন কিছুতেই জিয়াউর রহমানের কাজের ধারাবাহিকতা তেমনভাবে সুস্পষ্ট নয়। দলীয়ভাবে বিএনপি আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করা ছাড়া এখন নতুন কিছু উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে।

জিয়াউর রহমানের যুগান্তকরী অসমাপ্ত পদক্ষেপ খাল কাটা কর্মসূচি কিংবা উন্নয়ন চিন্তার ধারাবাহিকতা জিয়া উত্তর বিএনপিতে তেমনভাবে দেখা যায় না। বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব জিয়ার রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলো নিয়ে লেখাপড়াটা পর্যন্ত করেন না বলেই প্রতীয়মান হয়। জিয়াকে নিয়ে বরং লেখাপড়াটা বেশি করে আওয়ামী লীগ। যেকারণে বিএনপিকে কিভাবে মোকাবেলা করা হবে সেটা তারা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে ঠিক করে নিতে পারছে। এছাড়াও অন্তত আওয়ামী লীগের একজন জাদরেল নেতা জিয়ার দূরদর্শী খাল কাটা কর্মসূচি নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করেছে বলে শোনা যায়। নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন যে, সেটা জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে নয় বরং নিজের আখের গোছাতেই সে জিয়াউর রহমানের খাল কাটা কর্মসূচি বেছে নিয়েছিল।

উল্টোদিকে, আজকে নদী তীরবর্তী শহরগুলোতে বসবাসকারী আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে নদী ভরাট করে দখল করছে সেটা নিয়ে বিএনপির কোন গবেষণাধর্মী রাজনৈতিক পদক্ষেপ দেখা যায় না। দেশের নদীকে সচল করতে এবং মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে জিয়াউর রহমান যে খালকাটা কর্মসূচি চালু করেছিলেন তার ধারাবাহিকতায় বিএনপি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং পরবর্তীকালে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ পেয়েছিল। তারা সেই সুযোগ কাজে লাগায়নি।

নদী বাংলাদেশের প্রাণ। বিশ্বের কোন দেশে নদীকে মরতে দেয়া হয় না। ইংল্যান্ডে এখনো শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান খালগুলোকে সচল করার জন্য কাজ চলে। আর আমাদের ঢাকা মহানগরীর খালগুলোকে দখল আর ভরাট করে আমরা একটি নোংরা আবর্জনাময় শহর তৈরি করছি। যারা জিয়ার কবরে ফুল দিতে যান তারা এর কি জবাব দেবেন? ক্ষমতায় তো তারাও ছিলেন। ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে না পারা এবং বর্ষার পানি ধরে রাখার জন্য তারা নদ-নদী খাল বিলকে কেন উপযুক্ত করে গড়ে তোলেননি সেই জবাব কি দেবেন? ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড মোকাবেলায় খালগুলো হতে পারত একটি বড় সহায়ক শক্তি। দেশের মানুষের চলাচল এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নদীপথ যে ভূমিকা নিতে পারত সে ব্যাপারে জিয়ার কবরে ফুল দেয়া মানুষগুলো কি কিছু করেছেন, যেটা জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন?

বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান কখনো শেখ মুজিবকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অস্বীকার করেননি। শেখ মুজিবও জিয়াকে পছন্দ করতেন। সেক্টর কমান্ডার জলিলকে বীর উত্তম খেতাব থেকে বঞ্চিত করলেও জিয়াকে করেননি। আর জিয়া শেখ মুজিবের পক্ষে সবসময়ই লড়াই করেছেন। সেটা ১৯৭১ সালে। এমনকি ১৯৭৬ সালেও। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্বৃত্তি দিয়েই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুরের ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের ধারাবাহিকতায় দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করেছিলেন। বলা যায় অকাল মৃত্যুর শিকার শেখ মুজিবুরে যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন জিয়া। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত রাজনীতিকদের সীমাহীন দুর্নীতি ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় শেখ মুজিব রাজনীতিকদের ব্যাপারে খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি তৎকালীন নেতাদের চোর বলতেন। শেখ মুজিব রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিতে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ায় খুবই রুষ্ট ছিলেন, সেটা তার সেসময়কার বক্তৃতাগুলো শুনলেই জানা যায়। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব নেয়ার পর তার সততা ও নেতৃত্ব দিয়ে একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠনে ব্রতী হওয়ার পথে সকলকে তারই মতো সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি উদাহরণ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তিনি রাজনীতিতে সেই ধারা প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন যেখানে নেতা শুধুমাত্র অন্যকে সৎ হতে বলবে না বরং নিজেও সকল সময় সততার চর্চা করবে। তিনি আশা করেছিলেন শেখ মুজিব যাদের ‍উপর রুষ্ট ছিলেন সেইসব দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ সোজা পথে আসবে। যেকারণে তিনি শেখ মুজিবের ডাকে সাড়া না দেয়া দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দি পলিটিশিয়ানস’; স্বাধীনতার পরপরই সীমাহীন দুর্নীতি চর্চাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া রাজনীতিকদের শুদ্ধ পথে আনার আগেই তাকে চলে যেতে হয়েছে।

ব্যক্তিগত সততা ও নিষ্ঠা এবং দেশের প্রতি চূড়ান্ত আনুগত্য দেখাতে পারলেও দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের দুর্নীতিমুক্ত করতে পারেননি। বরং তিনি তার পূর্বসূরি নেতা শেখ মুজিবের মতোই আততায়ীদের হাতে নিহত হলেন। শেখ মুজিব যে কম্বল চোরদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছিলেন সেই কম্বল চোরদের জন্য রাজনীতিকে ডিফিকাল্ট করার আগেই এবং সর্বোপরি একদল দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ তৈরির মাধ্যমে একটি শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ধারা তৈরির আগেই তাকে মেরে দেয় সেই সব দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা। তার গড়া বিএনপিতে সেই নেতৃত্ব আর পাওয়া যায়নি যিনি ও যারা তাদের সর্বোচ্চ দেশপ্রেম দিয়ে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের বাধ্য করবেন সৎ ও সুন্দরের পথে আসার জন্য।

সেকারণেই প্রশ্ন হলো- কবরবাসী জিয়া কি ফুল চান নাকি অন্য কিছু? শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কবরে ফুল দেয়াটা একটা গৌণ কাজমাত্র। ফুল পেয়ে মৃত মানুষ খুশি হন কিনা আজতক জানা যায়নি। কখনো জানা যাবেও না। তবে কমনসেন্স থেকে বোঝা যায় যে, কবরে ফুলের চেয়ে মৃত আত্মা বেশি তৃপ্তি পেতে পারেন যদি দেখেন যে, তার আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে।

মোঘল সাম্রাজ্যে স্বাগতম

By Jahid Islam

আমার প্রায়ই মনে হয় বাংলাদেশে আমরা মোঘল আমলে বাস করি, অন্তত চিন্তা চেতনায়। এখন খালি সম্রাটের বদলে সম্রাজ্ঞীরা দেশ চালায়। মোঘল বাদশাহরা যেমন একজনের পর একজন ক্ষমতায় আসতেন আমাদের দেশেও এই মত সরকারের বদল হয়। ব্যাপারটা বিস্তারিত ব্যাখার দাবি রাখে। যেমন- মোঘল সম্রাটরা ছিলেন শিল্প সাহিত্যের সমঝদার। তাদের রাজ দরবার আলোকিত করে থাকতেন কবি সাহিত্যিকেরা । সেসব শিল্পী,কবি-সাহিত্যিকদের নাচ, গান, কবিতা, আবৃত্তিতে মুগ্ধ হয়ে মোঘল বাদশাহরা নজরানা দিতেন, উপযুক্ত পদে বসাতেন। এদের মধ্যে আমরা সম্রাট আকবরের নবরত্নের কথা বিশেষভাবে জানি।
আমি অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করলাম আমাদের রাষ্ট্র প্রধানরাও তো এ পথে হেঁটেছেন, হাঁটছেন।

hdr-mughal-art-415

যেমন ধরুন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ছিলেন কবিতার বিশেষ সমঝদার। তিনি নিজে কাব্য প্রেমিক ছিলেন,সাধ্যমত লিখতেও চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন অভিনয়ের সমঝদার। আমি দেখিনি তবে শুনেছি, তিনি নাকি ‘নতুন কুঁড়ি’ তে শিল্পী ঈশিতার অভিনয় দেখে কেঁদেছিলেন। একবার শুনেছিলাম তিনি নাকি নিজেও ভাল অভিনেতা। যখন সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তিনি নাকি এমন অভিনয় করতেন যেন কিছুই জানেন না। এ কারণেই তাকে কেউ কখনো নিজের জন্য ঝুঁকি মনে করেনি। অথচ তিনি কি কৌশলে এক সময় ক্ষমতা দখল করে নিলেন। ঠিক যেন কোন মোঘল সম্রাটের শত্রু রাজাকে ধোঁকা দিয়ে রাজ্য জয়ের মত। এবারের সাম্প্রতিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে তার ভূমিকা দেখেও অনেক সমঝদার দর্শক তার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। তাকে অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।

আমাদের প্রধানমন্ত্রীও শিল্প-সাহিত্য, সঙ্গীতের সমঝদারিতায় যেন একজন যোগ্য মোঘল উত্তরসুরি । তিনি অনেক শিল্পী,কবি-সাহিত্যিকদের পারফরম্যন্সে মুগ্ধ হয়ে ইতিমধ্যে তাদেরকে উপযুক্ত নজরানা দিয়েছেন। যেমন- আসাদুজ্জামান নূর, তারানা হালিম, গায়িকা মমতাজ প্রমুখ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়ভাজন লেখকও আছেন কয়েকজন। যেমন-শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন,আবদুল গাফফার চৌধুরী। এরা ত আসলে হাসিনার রাজসভার এক এক জন আবুল ফজল। অনেক মোঘল সম্রাট নিজেরাই ছিলেন বড় লেখক, যেমন -আওরঙ্গজেব। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও তো নিজেই অনেকগুলো বই লিখেছেন। তার সুললিত কণ্ঠে গাওয়া ‘ধনধান্যে পুস্পে ভরা’  গানটি দর্শক শ্রোতাকে আবেগ আপ্লুত করেছে।

মোঘল সম্রাটরা নিয়মিত শিকারে অংশ গ্রহণ করতেন। তীরন্দাজি, ঘোড়দৌড় এর মত ক্রীড়া কৌতুকে তাদের ছিল অনেক আগ্রহ। আমাদের এরশাদও তার রাজত্বের শুরু থেকেই এসব বিষয়ে মোঘল সম্রাটদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। একবার বিপিএল এ এক সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সগৌরবে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি নাকি এ দেশে ক্রিকেটের প্রচলন করেছেন। গলফ খেলার উদ্দেশ্যে তিনি ত নির্বাচনের ব্যস্ত কর্মসূচীতে থেকেও সময় বের করে নিয়েছেন আমাদের চোখের সামনেই।আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও প্রায়ই ক্রিকেট খেলা দেখতে মাঠে আসেন। সম্প্রতি ফেসবুকে তিনি এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাডমিন্টন খেলার ছবি ত আসলে মোঘল সাম্রাজ্যের সোনালি অতীতের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

অনেকে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বহুগামিতার সমালোচনা করেন। অথচ এটাও মুঘল আমলেরই ঐতিহ্য। মুঘল আমলে রাজা বাদশাহদের নিজেদেরই হেরেমখানা ছিল।

কিছুদিন আগে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুকে একটা ছবি দেখেছিলাম হাতে বিয়ারের বোতল সহ। অনেকে এর সমালোচনা করেছেন। আমার মনে হয়েছে যারা এ সমালোচনা করেছেন তারা ইতিহাস সচেতন না। কেননা, মোঘল শাহজাদারাও একটু আধটু মদ্য পান করেতেন। রাজা শাহজাদারা একটু আধটু সেবন করলে এটা তেমন দোষের কিছু না।

মোঘল সুবাদার শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও ত সেটা মাথায় রেখেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি দশ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াতে চান। মোঘলদের খাবারের ‘মোঘলাই রুচির’ কথা খুব বিখ্যাত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে বিরিয়ানি রান্নার যে ছবি আপলোড করেছেন সেটা থেকেই তার মোঘলাই রুচির কথা বোঝা যায়। মোঘল সম্রাট হুমায়ুনের ছিল ছবি আকার শখ। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর হল ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার শখ।
ক্লাস এইটে, সম্ভবত কালিদাস রায়ের লেখা (লেখকের নাম ভুল হতে পারে) একটা কবিতা পড়েছিলাম ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ নামে। সেখানে বর্ণনা ছিল একজন সম্রাট হয়েও তিনি কি করে একটি শিশুকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন খ্যাপাটে উদ্ধত হাতির সামনে থেকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে একটি শিশুকে কোলে নিয়ে বক্তৃতা দিলেন এটি ত আসলে সম্রাট বাবুরের সে ঘটনারই পুনরাবৃত্তি।

মোঘল আমলে কেউ যদি কোন উজিরের সাথে এমন কোন আচরণ করত যেটিকে উজির অশোভনীয় মনে করেছে তাহলে শাস্তি হত- জীবনদণ্ড । রেফারেন্স সহ এরকম ঘটনার উল্লেখ করেছেন লেখক হুমায়ুন আহমেদ তার ‘বাদশাহ নামদার’ বইয়ে। হাসিনার উজির আসাদুজ্জমান নুর কিংবা শামীম ওসমানের সাথে যারা অসদাচরণ করেছে তারা ইতিমধ্যেই দণ্ডিত হয়েছেন প্রাণদণ্ডে।

মোঘল সম্রাটরা বিভিন্ন নাম ধারন করতেন। মানুষও তাদের সে নামে ডাকত। আমাদের দেশেও এই চল আছে। পল্লিবন্ধু, দেশনেত্রী, জননেত্রী এসব উপাধি ত আসলে মোঘলদের আদলেই এসেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অনেকগুলো বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রীতে ভূষিত করেছে ঠিক যেভাবে অন্য রাজ্যের কোন রাজা মোঘল সম্রাটদেরকে উপাধি দিতেন। মোঘল সম্রাট-সুবেদাররা তাদের প্রিয়জনের স্মৃতিতে স্তম্ভ নির্মাণ করেছেন। যেমন-তাজমহল, পরিবিবির মাজার। আমাদের দেশেও রাজনীতিবিদেরা তাদের প্রয়াত প্রিয়জনদের মাজার নির্মাণ করেন।

মোঘল সাম্রাজ্যে কোন অবাধ্য প্রজার স্থান ছিল না। সে সাম্রাজ্যে সম্রাটের আদেশই ছিল আইন। সেখানে সম্রাট চাইলেই দণ্ডিতের শাস্তি মাফ করতে পারতেন, আবার যে কাউকে যে কোন অপরাধে নিজের ইচ্ছামত যে কোন দণ্ড দিতে পারতেন,দণ্ড পরিবর্তন করে দিতে পারেন। আমাদের দেশেও রাষ্ট্রপতিও অনেক দণ্ড মাফ করে মোঘল সম্রাটদের দেখানো পথে হেঁটেছেন। আবার কাদের মোল্লার দণ্ড পরিবর্তন হওয়ায় মোঘলদের রেখে যাওয়া ধারাবাহিকতার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। অবাধ্য দুষ্ট লেখক মাহমুদুর রহমান যথার্থই কারাবরণ করেছেন।

মোঘল সাম্রাজ্যে কোন বাদশাহ নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীদের মধ্য থেকে একজন সিংহাসন অলংকৃত করতেন। আশা করি আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে এটি ব্যাখা করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই।

সবশেষে, নিন্দুকেরা যাই বলুক, আমি কিন্ত একজন বাধ্য প্রজা। আমি কেবল বলি- ” মহামান্য সম্রাজ্ঞীর জয় হোক “।

রনির কেস ষ্টাডিঃ এক স্বঘোষিত লেখকের দলীয় মিথ্যাচার

3

– আমান আবদুহু

 

গোলাম মাওলা রনি নামের সুপরিচিত রাজনীতিবিদ ভদ্রলোকটি একটা স্ট্যাটাস লিখেছেন। তিনবার পড়লাম। এবং পড়ে শেষপর্যন্ত অনেক হাসলাম। এ আনন্দদানের জন্য বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আওয়ামী নেতাটিকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই।

গ্রামে একশ্রেণীর মাওলানারা সারারাত ওয়াজ করেন, ইনিয়ে বিনিয়ে বিভিন্ন ধরণের গল্পকাহিনী শোনান। একসময় মানুষ ঘুমে ঢুলতে থাকে, তবুও তাদের বিরক্তি আসে না। বছরের একটা রাতে আধোঘুমে আধোজাগরণে এইসব বিস্তারিত কিচ্ছাকাহিনী শুনতে তাদের ভালো লাগে। সংবৎসরের নিরুত্তাপ জীবনের মাঝে ফসল তোলার ক্লান্তি শেষে এক রাতের আনন্দটা মূল্যবান। আকাশের উপরে মাটির নিচে নানা রঙের ঘটনা নিয়ে রঙীন আলাপের আনন্দ, এ আমেজটা শহুরে আমাদের অনেকের পক্ষে বুঝে উঠা একটু কঠিন। তবে সব বাংলাদেশীদের সামষ্টিক মানসিকতায় বিনোদনের প্রতি কাঙালীপনার এ দিকটা রনি খুব ভালো করেই বুঝে নিয়েছেন।

সালমান এফ রহমানের সাথে নিজ স্বার্থসংশ্লিষ্ট মারামারিকে ন্যায় বনাম অন্যায় যুদ্ধের রুপকথা বানিয়ে তিনি বাংলাদেশীদের মুগ্ধ করেছেন। কাদের মোল্লা প্রসঙ্গে জেলখানা, উস্তাভাজি ও চিরকুটের হৃদয়গ্রাহী বয়ান দিয়ে ইসলামপ্রিয় জনতার হৃদয়ের মণিকোঠাতে ঠাঁই গেড়েছেন তিনি। সুর করে দরুদ মিলাদ পড়ান, লেখায় আল্লাহ রাসুল ইসলাম কোরআন হাদিসের বন্যা বয়ে যায়, গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবনের কথাও বলেন। মাঝে মাঝে নিজ দল আওয়ামী লীগের টুকটাক অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের আপোষহীন নিরপেক্ষ অবস্থানের কথা বলেন।

ভন্ডামী বাটপারি মিথ্যাচার এগুলো আমাদের দেশে রাজনীতিবিদদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। আমরা এসব মেনেও নিয়েছি অনন্যোপায় হয়ে। তবে এসবের বাইরে রনিকে শেষপর্যন্ত বিশেষ আরেকটা ক্রেডিট না দিলে অন্যায় হবে। একেকজন নেতার ভক্তরা হয় একেক গোষ্ঠীর। কিন্তু ডাইভার্স টাইপের মানুষ অথবা বিভিন্ন দলের অনুসারীদের মাঝে অনুরক্ততা পায় খুব কম সংখ্যক নেতা। রনির ভক্তরা ডাইভার্স। জামায়াত শিবির এমনকি বিএনপিরও অনেক লোকজনের কথা শুনলে মাঝে মাঝে আমার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় রনি লোকটা আসলে প্রায় হেদায়েতের পথে চলে এসেছে। এই যে, আরেকটু বাকি আছে। হয়ে যাবে। মারহাবা মারহাবা।

ইসলামের ঝান্ডাবাহী এ আওয়ামী সিপাহসালারের লেখাটার শিরোনাম “সরকারের বিরোধীতা – কেনো করবেন! কখন করবেন!”। তার আজকের এ লেখাটার একবাক্যে সারমর্ম হলো, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধীতা করা ঠিক না। লেখার

কেন আওয়ামী সরকারের বিরোধীতা করা উচিত না? রনির ভাষ্যে এর কারণ হলো, শেষবিচারে আওয়ামী লীগ সরকার হিসেবে দারুণ সফল। যেসব ইস্যুতে সাধারণ মানুষ আওয়ামী বিরোধীতা করছে, ওগুলো আসলে যুক্তির ধোপে টেকেনা। তার কথা হলো, আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো। বড় বড় সন্ত্রাসী গডফাদারদের দাপট আর নেই এখন। এখন আর কেউ রাস্তাঘাটে ছিনতাই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসের শিকার হয়না। আরেকটা বড় কারণ হলো হাতেগোণা বারো তেরো জন আওয়ামী নেতা ছাড়া আর কোন মন্ত্রী এমপি বা নেতা আসলে দুর্নীতির সাথে জড়িত না। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিও দুর্নীতিমুক্ত। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে এখন “ইউরোপ-আমেরিকা-অষ্ট্রেলিয়া-কানাডার তুলনায় ভালো” করে যাচ্ছে গত পাঁচ বছর ধরে।

রনির বিশাল স্ট্যাটাসের সারকথা হলো উপরে লেখা প্যারাগ্রাফটি। এই কথা পাবলিককে বুঝাতে গিয়ে তিনি সারারাত ধরে অনেক মজা দিয়ে ওয়াজ করেছেন। প্রথমে শুরু করেছেন বেশ আত্ববিশ্বাসের সাথে। দক্ষ যুক্তিবাদী ও বাগ্মী একজন মানুষ তিনি। তার সাথে যারা এ প্রসঙ্গে তর্ক করতে আসে তারা একপর্যায়ে এবড়োথেবড়ো  হয়ে যায় তার যুক্তির ঘুর্নিঝড়ের সামনে পরে গিয়ে, এবং তারপর তারা নিরুপায় হয়ে আসমানী গজবের প্রত্যাশায় বিহবল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। এ বিষয়টির একটি দীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। পাঠক মজা পায়, তারপর রনির ম্যাসেজ গ্রহণ করে। জাতি বুঝতে পারে তারা এতোদিন কি ভুলের মাঝে ডুবে ছিলো! সত্যিইতো!! আওয়ামী লীগের বিরোধীতা কি কোন সুস্থ মানুষ করতে পারে?

জাতি যখন অনুশোচনায় ভুগে, তখন রনি আবার মাহফিল জমানো মাওলানার মতো নিয়ে আসেন বিভিন্ন স্বাদের রস টসটসে মশলা কাহিনী। ভারতে এমপিরা মারামারি করে একজন আরেকজনের নাকের বদনা (নাকের বদনা কি জিনিস এইটা আমি অবশ্য বুঝতে পারিনি কয়েকবার চিন্তার চেষ্টা করেও) ফাটিয়ে দেয়। মরিচের গুড়া ছিটায়। আর বাংলাদেশের এমপিরা কতো ভালো, মাসুম বাচ্চার মতো। তারা সংসদে বসে শান্তিতে ঘুমায়, তবু বাংলাদেশীরা এতো অকৃতজ্ঞ কেন?

রনির মনে অনেক আক্ষেপ বাংলাদেশের মানুষ পুলিশকে কেন খারাপ বলে, তা নিয়ে। অথচ অন্যদেশের সাথে তুলনা করলে তারাও মাসুম বাচ্চা, জনগণের একনিষ্ঠ সেবক। এখানে রনি গুয়ানটানামো কারাগারের কথা বলেন, বুঝান যে আমেরিকা খুব খারাপ। এবং রনির শেষ কার্ডটা হলো ট্রাম্পকার্ড। রাতের শেষপ্রহরে যখন সবাই চরম ঢুলতে থাকে তখন হুজুর শুরু করেন মেয়েদের নিয়ে কথাবার্তা। কামলীলা। লোকজন লুল সামলাতে সামলাতে আবার সচকিত হয়। রনি এখানে এসে ভারতীয় ডিপ্লোম্যাট দেবযানির একটা মনোরম বর্ণনা তুলে ধরেছেন। উজ্জল শ্যাম বর্ণের ছিপছিপে মেধাবী কর্মকর্তা, “যুবতী ও তরুণীর মাঝামাঝি বয়স”। আমেরিকান পুলিশ তাকে তুচ্ছ এক সাংসারিক কারণে থানায় নিয়ে (বাকীটা রনির ভাষাতে) ….

“উলঙ্গ করে ফেললো। সম্পূর্ন বিবস্ত্র। তারা বললো দেবযানীর কাছে মাদক আছে। এই ওছিলায় পুরুষ পুলিশ গুলো দেবযানীর শরীরের স্পর্শকাতর যায়গায় হাত ঢুকিয়ে দেলো। মহিলা পুলিশরা খিল খিলিয়ে হাসতে লাগলো। দেবযানী সংজ্ঞা হারালেন। তার সারা শরীর কুকুর দিয়ে পরীক্ষা করা হলো এর পর তাকে পাঠানো হলো থানা হাজতে। দেবযানীর যখন সংজ্ঞা ফিরে এলো তখন গভীর রাত। সে দেখতে পেল অনেকগুলো বেশ্যার সংগে তাকে রাখা হয়েছে। বেশ্যাগুলো দেবযানীকে কাতুকুতু দিয়ে তার বিশেষ বিশেষ স্থানে আঘাত করতে করতে বললো হায় খোদা! তুমি এতো কুৎসিৎ- এমন পুরুষও কি দুনিয়ায় আছে যে কিনা তোমার মতো বেশ্যার সঙ্গে রমন করতে চায়!”

চমৎকার। মাহফিলে জনগণ উত্থিত হয়েছে। এ উত্থানের ফাকে রনি বুঝিয়ে দিলেন, দেখেন তো ভাই চিন্তা করে আমেরিকান পুলিশ কত খারাপ?? বাংলাদেশের পুলিশের নামে এরকম কিছু শুনছেন?? সুতরাং বাংলাদেশী পুলিশের হাতে নিশ্চিন্তমনে আপনার স্ত্রী-কন্যাকে পাহারায় দায়িত্ব নিয়ে এবার বাতাস খেতে বেরিয়ে পড়ুন। আওয়ামীলীগের প্রাক্তণ সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির আজকের লেখার এই হলো অবস্থা। এখন আপনি একজন বিবেকবান মানুষ, পাঠক। সুতরাং আওয়ামীলীগ সরকারকে খারাপ বলতে পারেন না আপনি। সমর্থন দিন, জয়ধ্বনি করুন। জয়বাংলা বলে আগে বাড়ুন।

এ পর্যন্ত যা লিখেছি তা হলো রনির লেখার রিভিউ। লেখাটা তিনবার পড়েছি। প্রথমবার পড়ে হতবাক হয়ে গিয়েছি, একজন সুস্থ-মস্তিস্কের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এতোটা নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার সাথে নির্বিকার মিথ্যাচার কিভাবে করে যেতে পারে, সে কথা ভেবে। ধাক্কাটা সামলাতে দ্বিতীয়বার পড়লাম, তার প্রতিটা পয়েন্টের বিপক্ষে পাল্টা যুক্তি ও প্রমাণ কি হতে পারে তা একটু ভাবার জন্য। রিভিউ লিখতে গিয়ে এ পর্যন্ত যে বিশাল লেখা হয়ে হলো, রিফিউটেশন বা বিপক্ষের যুক্তি লিখতে লেখতে হবে এরচেয়ে বড় আরেকটা লেখা। এবং তৃতীয়বার পড়লাম বিশুদ্ধ বিনোদন নেয়ার জন্য।

নাহ, এতোকিছুর পরও আমাদের তাদের নেতারা একবিন্দু বদলায়নি। মিথ্যাচার এবং অনৈতিকতা পুরোদমে রাজত্ব করে যাচ্ছে বাংলাদেশে। এ দুইহাজার চৌদ্দ সালের ফেব্রুয়ারীতে এসেও।

তার এ লেখার বিস্তারিত রিফিউটেশন সম্ভবত আমার লেখা হয়ে উঠবে না। কারণ কাজটা অনর্থক। এধরণের নৈতিকতাবিহীন দ্বিমুখী মানুষদের বিপক্ষে দাড়িয়ে লাভ নেই। সংক্ষেপে শুধু নিজেকে স্মরণ করাই, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। এদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক আচরণ এখন ফোকলা হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ফাঁপা অর্থনীতির ফলাফল ইতোমধ্যে দেশের মানুষ বুঝতে শুরু করেছে। রনির লেখা অক্ষর আর শব্দ মিলিয়ে পড়তে অনেক ভালো লাগে। কিন্তু যে আলু চাষীর রক্ত আর ঘামে উৎপাদিত ফসল রাস্তায় ফেলে দিয়ে শুয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই, সে হাড়ে হাড়ে অনুভব করে দেশ কি আর অর্থনীতি কি!

এদেশের নব্বই শতাংশ রাজনীতিবিদ অসচ্চরিত্র এবং দুর্নীতিগ্রস্থ। সব এমপি আর মন্ত্রীরা অবৈধ টাকা ও সম্পদে গলা পর্যন্ত ডুবে আছে। বাংলাদেশের পুলিশ হলো লাইসেন্সধারী খুনী সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ এবং ধর্ষক, অলরাউন্ডার। এরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যথেচ্ছ ভাংচুর করে, মানুষকে গ্রেফতারের নামে কিডন্যাপ করে মুক্তিপণ আদায় করে এবং ইচ্ছামতো গুলি করে হত্যা করে। মেক্সিকান ড্রাগ কার্টেলের লোকজনও বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের এ আনন্দ পায় না, যা বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা পায়।

কিন্তু তবু আওয়ামী সরকার টিকে আছে কেন? কারণটা সরল। জনগণের বিরুদ্ধে একটা অন্যায় স্বৈরাচার ব্যাবস্থাকে টিকে থাকতে হলে কয়েকটা কোর ইনষ্টিটিউশনের সহায়তা দরকার হয়। বাংলাদেশে মিডিয়া, জুডিশিয়ারী, সিভিল সার্ভিস এবং মিলিটারি, চারটা সেক্টরই আওয়ামী লীগকে কৃতদাস কাফ্রী খোঁজার মতো পরিপূর্ণ সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

এখন গোলাম মাওলা রনি যদি শুধু সারারাত না, বরং রাতের পর রাতও তার রসালো ওয়াজ করে যেতে পারেন। এবং এই সেবার বিবরণ তার নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাবমিট করে দলীয় অবস্থান পূণরুদ্ধারের একটা শক্তিশালী চেষ্টাও করতে পারেন বটে। কিন্তু পাবলিককে আর বুঝানো যাবে বলে বিশ্বাস করিনা। শেষরাতের ঘুমে ঢুলুঢুলু মানুষেরা উত্থানের মজাটা নেবে, কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ এখন জানে আওয়ামীলীগ কতটা সফল অথবা ব্যর্থ। প্রত্যেকটা মানুষ বুঝে যে, একসময় সন্ত্রাস ছিলো গডফাদার বা এলাকার গুন্ডাদের হাতে, আর এখন সে সন্ত্রাস সর্বব্যাপী হয়েছে পুরো দেশে, প্রতিটা এলাকায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাফিয়া অর্গানাইজেশন আওয়ামী লীগের প্রত্যেক সক্রিয় নেতাকর্মীই এখন সন্ত্রাসী। মানুষকে এসব বুঝানোর জন্য শেয়ার বাজার, হলমার্ক, পদ্মা সেতু, সুরঞ্জিত কেলেংকারী, আবুল হোসেন, সজীব ওয়াদের জয়ের কমিশন ও দোয়েল ব্যাবসা, হেফাজত গণহত্যা, ক্রসফায়ার নাটক, পুলিশের চাঁদাবাজি খুন ধর্ষণ, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যৌথবাহিনীর নিপীড়ন, দেশের বিচার ব্যাবস্থা ধ্বংস, সাগর-রুনি, বিশ্বজিৎ, রানা প্লাজা এমন হাজার হাজার ঘটনা নাম ধরে ধরে মনে করিয়ে দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। মানুষ এতো বোকা না। সারারাত ওয়াজ শুনে বাকি জীবন কেউ স্বপ্ন দেখে কাটায় না, বরং সময় হলে হালের বলদের কান ধরে টানতে টানতে তারাই আবার জমিতে গিয়ে নামে।

সুতরাং রনির লেখাটার রিফিউটেশন বা বিপক্ষ জবাবের আসলে দরকার নাই। এটা ভালো একটা বিনোদন হয়েছে। রনির আওয়ামী ল্যাঞ্জাটি একইসাথে উত্তমরুপে উন্মোচিত হয়েছে।

তবে শুরুর কথাটা শেষে আবারও বলতে হয়। বাঙালী বিনোদনের জন্য বড়ই কাঙাল। বাঙালী সব বুঝে, কিন্তু তবুও ঐসব মিথ্যাবাদী গল্পকার হুজুরদের পেছনে দৌড়ায়। আমরা আবেগী, স্মৃতিশক্তিও খুব ক্ষণস্থায়ী। সুতরাং রনি ঠিকঠাকমতো চাল দিলে আশা করি অন্যদিকের মার্কেট আবারও ধরতে পারবেন। তারপর সম্ভবত আবারও ফাকে ফাকে এরকম দালালীসুলভ মিথ্যাচারী লেখা ছাড়বেন। সেই লেখার জন্য রিভিউ করবো না। বরং রনির লেখাগুলো কিভাবে ক্লাসিকাল ফ্যালাসি দিয়ে ভর্তি; ফলস এনালজি/ ইনকনসিসটেন্সি/ এড-হোমিনেম এবং ষ্ট্রম্যান আর্গুমেন্টের মতো অর্থহীন কথাবার্তা ছাড়া তার লেখায় অন্য কিছু নেই, ইচ্ছা হলে সেদিন তা নিয়ে লিখবো। আরেকটা কথাও পরিস্কার করা উচিত। এ লেখাতে আমি এড-হোমিনেম এবং ষ্ট্রম্যান আর্গুমেন্ট ব্যাবহার করেছি। ইচ্ছা করেই করেছি। কারণ মিথ্যুককে আমি সম্মান করিনা। সে এবার কাদের মোল্লাকে নিজ কাঁধে তুলে শহীদ বানাক অথবা রাসুল সা. এর নামে দরুদ টানতে গিয়ে গলা ভেঙে ফেলুক, মিথ্যুক শেষপর্যন্ত মিথ্যুকই।

ভ্যালারে রনি! এই দেশে বেঁচে থাক চিরকাল।

images (1)

 

আদর্শিক রাজনীতি ও বাস্তবতা

by Jahid Islam

দেশের একজন সাহসী চিন্তাবিদ ছিলেন আহমদ ছফা। তাঁর চিন্তায় স্বচ্ছতা ছিল। তিনি যা বিশ্বাস করতেন তাই বলতেন, লিখতেন। এতে কে খুশি হল, কে বেজার হল সেটার প্রতি খুব একটা ভ্রুক্ষেপ করতেন বলে মনে হয় না। তাঁর লেখা একটা চমৎকার প্রবন্ধ হল, “বাঙ্গালী মুসলমানের মন”। এখানে তিনি এক জায়গায় লিখেছেন- “বাঙ্গালী মুসলমান সমাজ স্বাধীন চিন্তাকেই সবচেয়ে ভয় করে। তার মনের আদিম সংস্কারগুলো কাটেনি। সে কিছুই গ্রহণ করে না মনের গভীরে। ভাসাভাসাভাবে অনেক কিছুই জানার ভান করে আসলে তার জানাশোনার পরিধি খুবই সঙ্কুচিত। বাঙ্গালি মুসলমানের মন এখনো একেবারে অপরিণত, সবচেয়ে মজার কথা এ-কথাটা ভুলে থাকার জন্যই সে প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে কসুর করে না।”

এ প্রবন্ধের শেষ প্যারায় লিখেছেন-“বাঙ্গালি মুসলমানের মন যে এখনো আদিম অবস্থায়, তা বাঙ্গালি হওয়ার জন্যও নয় এবং মুসলমান হওয়ার জন্যও নয়। সুদীর্ঘকালব্যাপী একটি ঐতিহাসিক পদ্ধতির দরুণ তার মনের ওপর একটি গাঢ় মায়াজাল বিস্তৃত হয়ে রয়েছে,সজ্ঞানে তার বাইরে সে আসতে পারে না। তাই এক পা যদি এগিয়ে আসে, তিন পা পিছিয়ে যেতে হয়। মানসিক ভীতিই এই সমাজকে চালিয়ে থাকে। দু’ বছরে কিংবা চার বছরে হয়তো এ অবস্থার অবসান ঘটানো যাবেনা, কিন্তু বাঙ্গালী মুসলমানের মনের ধরন-ধারণ এবং প্রবণতাগুলো নির্মোহভাবে জানার চেষ্টা করলে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটা পথ হয়তো পাওয়াও যেতে পারে।”
এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সোল এজেন্ডা মুক্তিযুদ্ধ ও সেকুলারিজম। তারা নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একমাত্র ধারক ও বাহক হিসেবে মনেপ্রাণে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রগতির কথা বলে শিক্ষিত মিডেল ক্লাসের কাছে আবেদন রাখতে চায়। সেকুলারিজম এবং আঞ্চলিক জঙ্গিবাদের উথানের ভয় দেখিয়ে বাইরেরর দুনিয়ার সমর্থন আদায় করতে চায়। শাহবাগে হাজার লোকের সমাগম দেখে তারা ভাবে এবার জোয়ার এসেছে, আর ঠেকায় কে ! এই বারের চোটে রাজীব হায়দার (থাবা বাবা) কেও শহীদ ঘোষণা করে দেয় শেখ হাসিনা। শাহরিয়ার কবিররা ভাবেন- “কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠা করা না গেলেও যেহেতু বাহাত্তরের সংবিধানের কাছাকাছি কিছু একটা এখন আছে যাতে মূলনিতী হিসেবে ‘কম্যুনিজম’ এর কথা উল্লেখ আছে, সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম বাদ পড়েছে,শাহবাগে হাজার হাজার মানুষ এসেছে, এবারে অন্তত ধর্ম নামের আফিমের হাত থেকে মুক্তি মিলবে।”

বাস্তবতা হল এরকম যে, বাঙ্গালী মুসলমান শাহবাগে জড় হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে যদি শবে বরাত হয় (শবে বরাত পালন সহিহ কিনা সেটা অন্য তর্ক) সে তার পুরোনো পাঞ্জাবীতে শান দিয়ে, টুপি মাথায় দিয়ে হাজির। নফল ইবাদতের মাধ্যমে ভাগ্য বদলের জন্য দোয়া করে সারারাত। হয়ত পরের দিন থেকেই আবার নামাজ পড়ে না। কিন্ত আওয়ামী লীগের উগ্র সেকুলারিজমে সে বিশ্বাস করে না। নবীজিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে শুনে শাহবাগ থেকে সে হাত গুটিয়ে নেয়। সংবিধানে আল্লাহর নাম নিয়ে কাটা ছেঁড়াও তার বিশেষ পছন্দ না। কম্যুনিজম এবং উগ্র সেকুলারিজমের প্রধান মুফতি শাহরিয়ার কবির ও মুনতাসির মামুন শবে বরাতের রাতে নামাজকে আদিখ্যেতা মনে করে। মনে মনে বলে, “ শালার বাঙ্গালী। আবার মসজিদে যাও না ! এত্ত বুঝাই তাও কাম হয় না !”।

 

আবার আল্লামা শফির ডাকে হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় এসেছে অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে। সাধারণ পথচারীরাও প্রিয় নবীজিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে শুনে এতে শামিল হয়েছে। ইসলামপন্থীরা ভাবে এবার বাংলাদেশ ইসলামি রাষ্ট্র হয়ে যাওয়া কেবলই সময়ের ব্যাপার। তবে এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা হল, যেই বাঙ্গালী নিয়ে আল্লামা শফি বা জামায়াতে ইসলামি, দেশে ইসলামি শাসনের স্বপ্ন দ্যাখেন/দ্যাখে সেই বাঙ্গালী মাজারে যায়। পীরের মুরিদ হয়, মৃত ব্যক্তির কবরে সিজদা করে, গলায় তাবিজ দেয়, মিলাদ পড়ে। এছাড়াও আরও অনেক রকম শিরক করে, বিদআতি কাজ কর্ম করে।

files

আবার এটাও ঠিক যে, সে ইসলামকে ভালবাসে। শুক্রবারের জুম্মার খুতবায় হুজুরের ওয়াজ “ভাইয়েরা আমার, ইসলাম-ই একমাত্র মুক্তির পথ”, শুনে সে মাথা নাড়ায় এরপর ঘরে এসে আরাম করে বসে শুক্রবারের সিনেমা দেখে। সে যে ইসলামকে ভালবাসে, সেটা সে প্রকাশ করে মসজিদের হুজুরকে দাওয়াত দিয়ে ঘরে এনে খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে। সকালে সে তার ছেলে মেয়েকে আরবী পড়তে মক্তবে পাঠায়। শহর হলে হুজুর বাসায় এসে পড়ায়। ছেলে মেয়েরা কোরআন পড়া শিখে, নামাজের নিয়ম কানুন শিখে । সে মনে করে ব্যস-এই ত ইসলাম, আর কি ?

সে পলিটিক্যাল ইসলামে কনভিন্সড না।  মসজিদের হুজুরকে সে নামাজের মিম্বরে কিংবা ওয়াজের জায়গায় চিন্তা করতে পারে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী/এমপির সিটে না। তার কাছে রাজনীতি একটা খারাপ জায়গা। হুজুরের সেখানে কি কাজ ? জামায়াতের নেতাদের ক্ষেত্রে, যে কোন মূল্যে তাদের ফাঁসি হোক এটা সে চায় না (এটা আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণীর কথা না, সাধারণ মানুষের কথা)। তবে ৭১ এ তারা ছিল দেশ বিরোধী এটাই সে বিশ্বাস করে । তাই তাদেরকেও ভোট দিতে সে খুব একটা উৎসাহি না, অন্তত জামায়েতের ব্যানারে না। সেকুলারিজম, কম্যুনিজম, জাতীয়তাবাদ কিংবা ইসলামি শাসন এগুলো সব ইন্টেল্যকচুয়াল কনভিকশন। সে এত কিছু বোঝে না। আমি বাজি ধরে বলতে পারি দেশের অন্তত ৫০ ভাগ লোক দেশে কয়টি সেক্টরে যুদ্ধ হয়েছে, বা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস কবে বলতে পারবে না। ৮০ ভাগ বা তার চেয়েও বেশি লোক সহিহ উচ্চারণে কোরআন পড়তে পারে না।

সে যে ৫ বছর পর পর সুইং ভোট দিয়ে সরকারের পতন ঘটায় এটা এ জন্য না যে, ৫ বছর পর একদিন আচমকা ঘুম থেকে উঠার পর তার মাথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের খায়েশ জাগে । অথবা দেশকে ভালবেসে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে । অথবা একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ থেকে আর নামাজ ক্বাযা নয়। এবার থেকে পুরোপুরি সে ইসলামি পথই অনুসরণ করবে। সে এটা করে দুই দলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে। তার এত কিছু নিয়ে চিন্তা করার সময় নাই। সে ছোটে পেটের তাগিদে। এরপর যতটুকু পারে ধর্ম কর্ম করে। মূলত তার নামাজ জুম্মার নামাজ, ঈদের নামাজ আর জানাজার নামাজে সীমাবদ্ধ। আর ইসলামি জ্ঞানের একমাত্র সম্বল হল শুক্রবারের ওয়াজ।

সেকুলারিজম বা ন্যশনালিজম বা পলিটিক্যাল ইসলাম আবার কি ! এত হ্যাভিওয়েট ডেফিন্যাশন সে জানবে কোথা থেকে ? এটা হল পিউর বাস্তবতা। কোন সুগার কোটিং নাই। আপনি সেকুলারিজম, কম্যুনিজম, জাতীয়তাবাদ কিংবা ইসলামি শাসন যাই কায়েম করতে চান এটা ভাল মত বুঝে এরপর শুরু করতে হবে। এটাই কাজ শুরুর প্রথম ধাপ।এরপর সে অনুযায়ী মডেল বানাতে হবে। এখানে ভারত বা ফ্রান্সের সেকুলারিজম, ব্রিটিশ ন্যশনালিজম অথবা মিশর কিংবা তুরস্কের ইসলামি মডেল চলবে না। চীন রাশিয়ার প্রেতাত্মা ত আগেই দূর হয়েছে। এদেশে স্রেফ একটাই চলবে, সেটা হল –“বাংলাদেশি মডেল”। এতে অন্যান্য মডেলের কনসেপ্ট থাকতে পারে, তবে সবশেষে হতে হবে একেবারে কাস্টমাইজ করা দেশী জিনিস । “কমরেড” বা “ইয়া আখি” টাইপ পরিভাষা এখানে চলবে না। অন্তত শুরুতে  না। পরিস্থিতির বাস্তবতা বুঝে যে যত রিয়েলিস্টিক মডেল বানাতে পারে তার মডেল তত ভাল কাজ করবে। প্রথমে প্র্যাকটিক্যাল কেস থেকে শুরু করে এরপর এটাকে আস্তে আস্তে ক্যালিব্রেট করতে হবে আইডিয়াল মডেলের দিকে।