পাবলিক কি নিয়ে গুগলে সার্চ করে?

4

শাফকাত রাব্বী অনীকঃ

উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর জনগণ কি ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে গুগলে সার্চ করে তার নিয়মিত এনালাইসিস হয়। এ থেকে মানুষের সাম্প্রতিক উৎসাহ, উদ্দীপনা, শংকা, আগ্রহ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।

এই মুহূর্তে  বাংলাদেশীরা কি কি বিষয়ে গুগলে সার্চ করছেন তা জানতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু তা জানার উপায় আমার নেই। নুরালদীন ব্লগ খুলা হয়েছিল ৩ মাস আগে। এই তিন মাসে নুরালদীনের পাঠকরা কি কি বিষয় সার্চ দিয়ে নুরালদীনের ওয়েব সাইটে এসেছিলেন, তার একটা তালিকা হাতে পেয়েছি। মন্দের ভালো হিসেবে এই তালিকাটা খারাপ না। 

এই সার্চ তালিকায় এমন কিছু বিচিত্র সার্চ আইটেম ছিল, যা বেশ চমকপ্রদ। কোন কোন সার্চ ওয়ার্ড কেন নুরালদীনের ওয়েবসাইট খুঁজে পেয়েছে তাও আমার অজানা। যাহোক, পাঠকদের পড়ার সুবিধার জন্যে সার্চ আইটেমগুলোকে কয়েকটা ক্যাটাগরিতে ভাগ করে নিচে তুলে দেয়া হলো। প্রতিটি ক্যাটাগরির জন্যে আমার ব্যাক্তিগত পছন্দের উইনার ও রানার্স-আপ ঘোষণা করে দিলাম। আপনাদের পছন্দের গুলো কমেন্টসে জানাতে পারেন। আঠারো প্লাস আইটেমগুলো সব শেষ আকর্ষন হিসেবে নিচের দিকে দেয়া হলো।

—————————–
রাজনইতিকঃ এই কেটাগরিতে সরকার বিরোধিতা, সাম্প্রতিক ইসু, ইত্য়াদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে।
——————————

আওয়ামীলিগ এর বিরুদ্ধে লিখা
এমপির রক্ষিতা
জামাতের ভুল
awami league terrorism picture against another party
গীতা রানী শেখহাসিনা
নির্বাচন এর পরে যুদ্ধাপরাধ এর ফাসি
সেনা শাসনের আভাস
সামরিক হস্তক্ষেপের
আওয়ামী লীগ সত্যিই অনেক বেশী বেশী করতেছে (Winner)
ম্যাডাম বের না হলে
বর্তমান অবস্থানে খালেদার আচরন
হায়রে গণতন্ত্রের লড়াই (Runners-Up)
দাদাগিরি
গোলাম মাওলা রনির নির্বাচিত কলাম
গোপালগঞ্জ জেলা উঠে যাবে
এই বছরের নির্বাচিত হাস্যকর রাজনৈতিক উক্তি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে “র” ও ভারত
বাংলাদেশের রাজনীতিতে “র”
late pri mister ziaur rahman
কসাই কাদের
আওয়ামী লীগের মন্দির তৈরি ৫ বছরের তালিকা
চুপ থাকো, বেয়াদব কোথাকার video youtube khaleda zia

————————————–
ঐতিহাসিকঃ এই ক্যাটাগরিতে সিকিম ও সিকিমের লেন্ডুপ দর্জি সম্পর্কে মানুষের মাত্রাতিক্ত জানার আগ্রহ দেখা গেছে।
————————————–

মুক্তিযুদ্ধে জামাতের ভুমিকা
৭১ বনাম ২০১৩
pilkhana tragedy shocking pics
ভারত ১৯৭১ সালে কী বাংলাদেশের সম্পদ লুঠ করেছিল? (Runners-Up)
সিকিম ও চীন
বসনিয়ার ইতিহাস
ভারত
লেন্দুপ দোরজি’র ইতিহাস
casandra moment
বাংলাদেশ 1971 ইতিহাস
bangladesh rifles mutiny pictures
দর্জি সিকিম
in pilkhana tragedy how many were raped
শেখ মুজিব বামপন্থি
সিকিম বিভ্রান্তি
1971 মুসলিম মেয়ে ধর্ষন
সিকিম অসম্ভব
বাংলাদেশ সিকিম হবে না (Winner)
মিলিটারিদের বেতন
সিকিম দর্জি

———————
সামাজিকঃ
———————

দেশের উন্নতির ক্ষেত্রে কিশোরদের অবদান
চালেন ২৪ সংবাদ পাঠকের বেতন
want to know about anjan roy tv conductor bangladesh
আবাসিক হোটেল কতটা নিরাপদ
বাংলাদেশের 2013- এর j.s.c ফলাফল দেহা
ধুমপান থেকে মুক্তি পেতে
কিভাবে বাড়িতে খেলনা হেলিকপ্টার তৈরী করা যায় (Runners-Up)
ইসলামিক sms
শীত কালে গরিবদের কস্ট নিয়ে কবিতা
লোকের উচ্চতার পেছনে কারন কী
সেবা দাসী
এ বছরটা আমার ভালো গেলনা
কত দুঃখে যে একটা বছর চলে গেল পোস্ট
এক মাইয়ার স্ট্যাটাস
আলেম পরীক্ষার পর কী করব
বুদ্ধিমান হওয়ার কৌশল
ফেন্সিডিল কি দিয়ে তৈরি হই
একটি মহিলার রাক্ষসের বাচ্চা হয়েছে তার ফটো চাই (Winner)
ঠোট ঝুলে গেলে কি করা উচিত
মেয়ে হওয়ায় দোষ কি
ইসলামে লিঙ্গের চুল কাটা

———————–
আঠারো প্লাসঃ
———————–

বাংলা নতুন চটি গল্পের তালিকা 2013
শাহাবাগি উলঙ্গ ছেলে মেয়ের ছবি (Winner)
বাংলার হট মাল
নাটোরের মেয়ে
পাতলা শাড়ী পড়া মেয়েদের ছবি
হোল এর সাইজ কত হওয়া উচিত ?
জামাই শাশুরী চটি
দেশি মেয়েদের বর দুত
কীভাবে আমার বাড়া বড় করব
নগ্নতা
যৌনাঙ্গ মুখে নেওয়া কি জায়েজ আছে
প্রথমে ধর্ষণ করেছিলাম
নগ্ন chobi keno
গ্রামের মেয়েদের নগ্ন ছবি
কাপড় ছাড়া female
বাবার আমেরিকান বন্ধু জোর করে মায়ের ইজ্জত নষ্ট করে দিল
মিলার খারাপ ছবি ও দৃশ্য
bangladeshi meyeder sex vabna 18
ষাটের দশকে মেয়ে সিগারেট
থার্টি ফার্স্ট নাইটের নগ্নতা
ঢাকার সুন্দরী মাগিদের নগ্ন ছবি
ইউরোপে নগ্ন মেয়ে
opu ukil awami hot picture (Runners-Up)
হিন্দু মেয়ে ধর্ষণ চটি গল্প
http://www.bd army ledy offcers.com
নেত্রিদের নগ্ন ছবি

প্রথম কৌতুক, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের পরে……

by নিরীহ পাবলিক

এক লোক নদীর কিনারায় হাঁটু পানিতে নেমে কি যেন খোঁজাখুঁজি করছে। আরেক লোক পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জিগায়, ‘ও ভাই, হাঁটু পানিতে নেমে কি খুঁজতাছো?’

১ম লোকঃ ‘আমার হাত ঘড়িটা নদীতে পইড়া গেছে, সেটাই খুঁজতাছি’।

২য় লোকঃ ‘তা কোন জায়গায় পড়ছে সেইটা মনে আছে’?

১ম লোকঃ ‘হ ভাই মনে আছে, নৌকা দিয়া নদী পার হইতে ছিলাম, যেই মাঝ নদীতে আইলাম অমনি হাত থেইকা ঘড়িটা পড়ে গেলো’।

২য় লোক এইবার তাজ্জব হয়ে বললোঃ ‘ঘড়ি পড়ছে নদীর মাঝখানে আর খুঁজতাছো এই কিনারে আইসা?! মাথামুথা ঠিক আছেতো তোমার’?

১ম লোকঃ ‘ধুর মিয়া, আমারে পাগল পাইছো! নদীর মাঝখানে যে গভীর পানি আর যে খরা স্রোত! ঐখানে নাইমা ঘড়ি খুঁজবো, আমার কি জানের মায়া নাই!? কিনারে পানি কম আছে, তাই এইখানেই খুঁজতাছি’।

আমাগো শাহবাগী মুক্তিবাহিনীর কান্ড দেইখা কৌতুকটা মনে পড়লো। কাদের মোল্লার ফাঁসী নিয়া ইউরোপ, আমেরিকা, জাতিসংঘ সবাই বিরোধীতা কইরা নাক গলাইলো (যাদের গলিত নাকের প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব চাইতে বেশী)। শাহবাগী মুক্তিবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোন কর্মসুচী দেয়ার সাহস পাইলো না। যেই পাকিস্তানীরা (যাদের পরের দেশে তো বটেই নিজেদের দেশেই নিজেদের নাক গলানোর ক্ষমতা নাই) ঘটনার নিন্দা জানাইলো অমনি আমাদের শাহবাগী মুক্তিবাহিনী বিপুল বিক্রমে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো। মরা ছাগল মাইরা বীর বাঙ্গালী বীরত্ব দেখাইতাছে। আরে বেটা হিম্মত থাকলে আমেরিকান এম্বেসী ঘেরাও কর, আমেরিকা সহ যেসব দেশ ফাঁসীর বিরোধীতা করছে তাদের এম্বেসী ঘেরাও করে সেইসব দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন কর, সেইসব দেশ থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার কর।

দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মুক্তিবাহিনীর হিম্মত দেইখা সন্দেহ হইতাছে আমাগো চেতনাধারী বুদ্ধিজীবিরা থর থর আবেগী গলায় যে ১ম মুক্তিযুদ্ধের দুর্দান্ত কাহিনী শোনান সেগুলা কি আসলেই সত্য, নাকি সেগুলাও তাদের রংচং লাগানো এই মরা ছাগল মারার কাহিনী। একদিকে সাধারণ মানুষ অকাতরে জীবন দিছে আর মুরগী শাহরিয়াররা মুরগী সাপ্লাইয়ের মাঝখানে মরা ছাগল মেরে বীর বাঙ্গালী হয়ে গেছে। বিশেষ করে আমাদের নব্য ইতিহাসবিদ, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ শাহবাগী, ১ম মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট (পলাতক) মুক্তিযোদ্ধা জাফর ইকবালের ইতিহাসের বয়ান শুনে খালি আরেক বিশিষ্ট প্রগতিশীল হুমায়ূন আজাদের প্রবচন খানা মনে পড়ে, ‘ইতিহাস হচ্ছে বিজীতদের বিরুদ্ধে বিজয়ীদের রচিত একরাশ কুৎসা’/ সমালোচকদের কাছে সময় থাকতে বলে রাখা ভালো মতখানা আমার নয়। যাওজ্ঞা, ছোটবেলা থেকে বিশ্বাস করে আসছি জাফর ইকবাল স্যার ‘কল্পকাহিনী’ ভালো লেখেন, স্যারের প্রতি আমার সেই বিশ্বাস এখনো অটুট আছে।

রেসিপি: মিট(Meat) কাবাব

সকালে খালি পেটে প্রচুর পরিমান কাবাবের মশলা খান। গলা পর্যন্ত মশলা খাওয়া হলে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে একটি লোকাল বাসে উঠুন। এবার পেট্রোল বোমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকুন। বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দিলে বের হবার চেষ্টা না করে চুপ করে বসে থাকুন। পুড়তে কষ্ট হলে দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করে ‘গণতন্ত্র, গণতন্ত্র’ রবে জিকির করতে থাকুন। অবশ্য বাড়ি থেকে বের হবার আগে পরিবারের সদস্যদের বলে যাবেন আপনি পুড়ে কাবাব হয়ে যাবার পরে আপনার দুই রান অর্থাৎ পা প্রধানমন্ত্রীর লাঞ্চে অথবা ডিনারে পরিবেশন করতে আর অবশিষ্ট অংশ যেন সরকারের অন্যান্য শরীক দলের মাঝে সমানভাবে বন্টন করে দেওয়া হয়।

পরিবারের সদস্যদের বলে রাখতে পারেন যে সৌন্দর্য্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে পরিবেশনের আগে আপনার দুই রানে সালাদ দিয়ে লিখে দেয়া যেতে পারে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একজন নাগরিক হিসাবে আমার নিরাপত্তা দিবার সাংবিধানিক দায়িত্ব আপনার। আপনি অগাধ নিরাপত্তা দিয়াছেন। আমি কত সহজে সুস্বাদু কাবাবে পরিনত হইয়াছি। আপনি আমার কবাব খাইয়া আপনার সংবিধানকে সমুন্নত রাখিবার সংগ্রামে আমাকে শরীক হইবার সুযোগ দান করুন।”

সর্তকতা: বিহঙ্গ বাসে উঠিবেন না। বিহঙ্গ বাস লইয়া আলোচনার পরে বিহঙ্গ বাসে আর কোন সমস্যা হইবেনা। তবে লঞ্চে চেষ্টা করিয়া দেখিতে পারেন। কারন, নৌ পরিবহন মন্ত্রী কিছুদিন আগে বলিয়াছেন তাহাদের নিকট তথ্য রহিয়াছে লঞ্চে আগুন দেওয়া হইবে। তাহাদের তথ্য ভুল হইবার নহে। আমাদের পোড়া কপাল তাহারা লঞ্চে আগুন দিবার তথ্য আগে আগে পাইলেও কাহারা, কখন কোন লঞ্চে আগুন ধরাইবে এই তথ্য পায়না।

ঢাকা-নরসিংদী রুটের গাড়ি আজিমপুর গেল কেমনে?

by Monsur Rashed
একটা জিনিস ঠিক বুঝতে পারছিনা! বিআরটিসির একটা ঢাকা-নরসিংদী রুটের গাড়ি পুড়ানো হয়েছে। বলেন দেখি কোথায়? আজিমপুরে!!! জি ভাই! আজিমপুরে! ঢাকা-নরসিংদী রুটের গাড়ি আজিমপুরে কি করে? সব সম্ভবের দেশেও আজব লাগে মাঝে মাঝে!
চলুন একটা নাগরিক তদন্ত তদন্ত খেলি!
কি কি কারনে এই ডাবল ডেকার বাস আজিমপুর যেতে পারে?
এক – জ্যামের কারনে জায়গা না থাকায় গাড়ি ঘুরাইতে আজিমপুর গেলো?
দুই – গাড়ির চালকের বাড়ি আজিমপুর, তাই খাইতে অথবা ছাড়তে গেলো?
তিন – গাড়িতে একটা সুন্দরী মেয়ে ছিল ইডেনের, নামায় দিতে গেলো?
চার – গাড়ির চালকের বাড়ি আজিমপুর, ব্যাটা নতুন বিয়া করসে! 🙂
পাঁচ – চালক আজিমপুর কবরস্তানে তাঁর ওস্তাদের কবর জিয়ারত করতে গেলো?
ছয় – গণজাগরণ মঞ্চে ঘুরপথে যাওয়ার চেষ্টা করছিল!
সাত – চালক নরসিংদীর। প্রথম ঢাকায় আসছে গাড়ি চালায় এবং পথ হারাইসে!
আঁট – আজিমপুর কলোনিতে চালকের পরকিয়ার প্রেমিকা থাকেন!
নয় – বলাকা সিনেমা হলে “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা” দেখতে যাচ্ছিল!
দশ – চালক সানি লিওন না থুক্কু সানি দেওলের “মে নিকলা গাঁডডি লেকে” শুইনা ইন্সপাইরড, সো ‘জাইতাসি জাইতাসি কই জাইতাসি জানিনা’ মুডে গাড়ি চালাইতে চালাইতে আজিমপুর আইসা হাজির,
এগার – মউদুদ, এম কে আনোয়ার আর রফিকুল ইসলাম মিয়া সাথে খালেদা জিয়াকে হত্যা করার প্লান করতে নিউমার্কেট যাচ্ছিল!
বারো – কাঁটাবনে জাপানি কুত্তা কিনতে যাচ্ছিল!
তেরো – এইটা আওয়ামী লীগ ইচ্ছা করে করাইসে! বিএনপিকে দাঙ্গাবাজ প্রমান করার জন্য!
আপনাদের কি মনে হয়? কোনটা ঠিক? কোনটা বেশী লজিকাল?
সরকারতো আর এইটার তদন্ত করবে না! এইটা একটু খোঁজ খবর নেয়া দরকার! আমি তো আমার সীমিত পরিসরে অল্প একটু তদন্ত তদন্ত খেললাম! আপনারাও একটু খেলে দেখেন না। প্লীজ!
btw আল্লাহ্‌র লানত পড়ুক ওদের উপর যারা আগুনে পুরাইয়া মানুষ মারে! ১২ জন মারুক আর এক জন, কারো মাফ নাই!
সুত্রঃ নুরুল কবির, বাংলাভিশন টকশো, ১২:১০ এ এম, ১০ই নভেম্বর

আমাদের মতি মিয়া ও এক আজাইর‍্যা মন্ত্রির গল্প – By Almaruf

আমাদের মতি মিয়া ও এক আজাইর‍্যা মন্ত্রির গল্প
By – Almaruf

(১)
সুনামগন্জ জেলা সদর থেকে তাহিরপুর সড়ক ধরে ঘন্টাখানেক চললে হাতের ডানপাশে বিলের বুক চিরে কাচা রাস্তা – সেই রাস্তা ধরে আরো ঘন্টা দুয়েক চলার পর পড়বে বিখ্যাত এক গ্রাম – চোরের গ্রাম । সেই গ্রামের অধিকাংশ লোক বংশানুক্রমে চৌর্যবৃত্তির সাথে জড়িত – কাজটাকে তারা পবিত্র এক শিল্পকর্মের পর্যায়ে নিয়ে গেছে । অধিকাংশ লোক পৈত্রিক এই পেশা নিয়ে রিতিমতো গর্বিত। আর হবেইনাবা কেন- এই পেশায় তাদের মতো সুনাম এই জেলায় কেউ দেখাতে পেরেছে ?

ভাটি এলাকার আর পাচটা আজপাড়াগায়ের মত চোরের গ্রামেও বর্ষায় রিতিমতো নিদানের সময় । ভাটির দেশে অভাব কাকে বলে সেটা শহুরে মানুষকে বলে বুঝানো রিতিমতো অসম্ভব ব্যপার, কিন্তু চোরের গ্রামের লোক সেই ঘোর নিদানের দিনেও নিজেদের গ্রামে কখনও চুরি করবেনা – এ এক অলিখিত নিয়ম । কেউ করলে তাকে জুতোপেটা করিয়ে গ্রাম ছাড়া করা হয় । চোরের গ্রামের লোক এই একটা ব্যপারে বড়ই কড়া – নিদারুণ অভাবের তাড়নায় যদিও প্রতিবছরই এরকম ঘটনা দুই একটা ঘটে, কিন্তু ক্ষমা তাদের কখনই মেলেনা ।

আশপাশের গ্রামের মুটোমুটি অবস্থাসম্পন্ন গেরস্তেরা বাড়ির উপরের দিকে পাকা করুক না করুক ভিটে থেকে নিচের দিকে শক্ত গাথুনির দেয়াল দেয় । তাও সবসময় যে রক্ষা মিলে তা না, চোরের গ্রামের চোরেদের সাথে স্বগ্রামের চোরদের উৎপাতে মাঝে মাঝে অনেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসতেও বাধ্য হয় । চোরের গ্রামের মেয়েদের বাইরের কোন ভদ্রলোকের সন্তান বিয়েও করেনা – তাতে নাকি জাত যায় । চোরের বংশের মেয়েরা নাইওর যাবার বেলায় বাড়ি থেকে হাড়ি-পাতিল ঘটি বাটিসহ নানান জিনিস পত্র হাওয়া করে নিয়ে যায় । এরপর আছে ছেলেমেয়ের চিন্তা – এরাও যদি মায়ের সেই দোষ পায় তাহলে সমাজে মুখ রক্ষা হবে ? তাই বলে সবাই যে সারাজীবন চুরি করে যায় তাও ঠিক না – অনেকে পড়ালেখা করে বাপ-দাদার মুখে চুনকালি মেখে দিয়ে শহরে চলে যায় । অনেকে ভাগ্যের অন্বেষনে পাড়ি জমায় বিদেশে ।

দাওয়ায় বসে বসে মতি মিয়া তাই ভাবে – তারও এক ছেলে ছিলো, জেলা সদরে এক হুজুরের বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে কিভাবে যেন ধরা পড়ে যায়। মতি বড়ই শরমিন্দা হইছিলো সেইদিন। চোর গ্রামের সেরা চোর মতি মিয়ার ছেলে কাজে গিয়া প্রথম দিনই ধরা খায়? এইটা বড়ই বেইজ্জতইর ব্যপার। আবার সেই হুজুরে আবার কিনা তার ছেলেরে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয় – সেইটা যে কেমনে ঘটলো মতি আজও বুঝতে পারেনা । এরপর ছেলেয় আর কোনদিন বুড়া বাপের দিকে ফিরেও তাকায় নাই । মতি মিয়া মনে মনে “হারামির পুলা” গালি দিতে দিতে তেল মাখায় মন দেয় । আজকে লষ্করপুরে একখান ক্ষেপ আছে। বেইল হয়া গেছে মেলা – আর দেরি করা যাইতো না ।

(২)

“কাজে” যাওয়ার সময় মতি সুবল সেনের বাড়ির সামনে থমকে দাড়ায় । চোরের গ্রামের নামিদামি চোর সুবল সেন । গেলোবার ইলেকশানে তার মেয়ের জামাই নাকি মিনিষ্টার হয়েছিলো , কিন্তু তখন কিছু শোনা যায় নাই, সুবল সেন জিনিষটা সভাব বসত চেপে যায় । নাইলে কি আর মানুষের ভিড় সামাল দেওয়া যেতো ?

গেল মাসে সুবল সেনের সেই জামাই নাকি টাকার বস্তাসহ ধরা খেয়ে যায়- সেই থেকে সুবল সেন আর তার জামাইর বড় নামডাক চোরের গ্রামে । প্রতিদিন গ্রামের অকর্ম মুরব্বিরা সুবল সেনের উঠানে বসে দিনের বেলা আড্ডা জমায় । সুবল সেনের নাতি নাত্নি তাদের চা-পান হুক্কা-তামুক এগিয়ে দেয় । সুবল ঘরের ভেতর বসে বসে বিড়ি টানে – বেশি একটা দাওয়ায় আসেনা – ইদানিং সে তার সদ্য পাওয়া ইজ্জতের ব্যাপারে খুবই সচেতন। এই জামাই যখন ছোটখাটো চুরি করতো তখন তো তারে সবাই অনেক কথা শুনাইছে । “কি সুবল তোমার জামাই হুনি টাউনে পকেট মারে, এইটা তুমি কি করলা!” এহন বুঝ শুমুন্দির পুলারা ।

জামাই গর্বে সুবলের ছাতি এখন অনেকখানি উচু। সবার কথার উত্তর দেয়না – তিন কথা জিগ্গ্যেস করলে এক কথা কয়। গ্রামের লোকেরাও মেনে নেয়। যতই হোক এই সম্মান সুবলের পাওনা, থানার কনষ্টেবল পর্যন্ত এখন বাজারে সুবলের সাথে বসে চা খায় । চোরের গ্রামের জন্য এইটাও কি কম পাওনা।

মতি মিয়া ভাবে – খইসলত যায়না ধুলে আর ইজ্জত যায়না মলে। এত্তোবড় মেনেষ্টারের শশুর হইয়াও গেলো হাপ্তায় রমেশেরে নিয়া জামতলিতে চুরি করতে গিয়া খাইলো ধরা। আচানক কারবার, পরের দিনই আবার পুলিশের হাত থেকে ছাড়াও পায়া যায়, সাথের রমেশ আইজ পর্যন্ত থানায় আটক । মতি মিয়া বুঝতে পারে এখন – জামাই মেনেষ্টার হলি কতো লাভ । কিন্তুক সুবল কি কয়া সয়া রমেশেরে ছাড়ায়া নিয়া আসতি পারতোনা ? ষাটোর্ধ মতি মিয়া বিড়বিড় কইরা কারে যানি গালি দেয়- বোঝা যায়না ।

(৩)

ইদানিং চোরের গ্রামের মেয়েদেরও বিয়ের বাজারে ভাও বাড়ছে – অনেক বড় বড় ঘরের লোকেরা চোরের গ্রামে আত্মিয়তা করতে আসতেছে । রিতিমতো ডাকে তোলে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছে চোর বংশের লোকেরা । চোরের গ্রামের ইজ্জত তরতর করে বাড়ে । মতি বুঝতে পারে – সবই সুবল সেনের জামাইয়ের কল্যাণে । হবিনা কেন, যেই চোরের গ্রামের মাইয়্যাগুলা বছরের পর বছর আবিয়াত্তা বইসা থাকতো ঘরে – তাগো মধ্যে সুবলের ঘরেই যে এরকম একটা মাইয়া ছিলো কে জানতো । সুবলের কপাল দেইখ্যা মতি মিয়ার হিংসা হয় – বিড়বিড় কইরা এবার মেনেষ্টারেরে গালি দেয় , সেইতো মেনেষ্টার হলি – দশটা বছর আগে হলি তো আমার ময়নার একখান জব্বর সম্মুন্ধ করতাম । আহারে মাইয়াটারে আমার মাইর‍্যাই ফালাইলো । ময়নার লাশটাও পর্যন্ত জামাই শাশুরি গুম কইরা দিছিলো । বয়সের ভারে কুজো মতি মিয়া সুবলের দাওয়ায় বসে ।

জামাই থাকেন ঢাকায় – তিনি তো আর তাদের মতো ছোটলোক না, গ্রাম গন্জের বাতাস তার শরিরের জন্য নাকি ভালো না। তার খবর সব পাওয়া যায় কালু শেখের কাছে । এই গ্রামে কালু শেখ একমাত্র শিক্ষিত লোক- পাচ কেলাস পাশ । বাজার দিনে কালু শেখ পোষ্টাপিশের বেন্চে বসে পেপার পড়ে । সবাই তারে খুবই মান্যগণ্য করে এই জন্য ।

কালু শেখে বলে যায় – জামাই নাকি ম্যানেজার রাখছে, বস্তা ভইরা লোকে টেকা দিয়া যায় – হিসাব রাখতি হয়না ? কালু শেখের সাথে সবাই মাথা ঝাকায়, তাতো ঠিকই, মেনেষ্টারি কি সোজা কথা নাকি? বড়ই মুশকিল কাম।

সাও পেয়ে কালুর গলা উচু হয় । হেনতেন কথা না মিয়া, জামাইর ফটো দেখছি পেপারে। পেতাকা লাগাইন্যা গাড়ি নিয়া জামাই পেরেধানমন্তির সাথে দেহা করতি যায় । কি জানি বড় একখান দাও মারছে জামাই, তাইনরে নাকি মেডেল দিছে সরকার । হেনতেন কতা না বুঝলা, হেনতেন কতা না । কালুর সাথে সাথে বাকি সবাই জামাইর কর্মতৎপরতায় অতিব সন্তুষ্ট হয়ে মাথা নাড়ে।

পেছন থাইক্যা জমির পাগলা জিগায় – পেরেধানমন্তি কি গো কালু মিয়া ? কালু খুব বিরক্ত হয়া জমিরের দিকে চায় – তুই হেইডা দিয়া কি করবিরে হারামির পুলা ? তোর কি হেই শিক্ষা আছে নি ? সবাই গোগ্রাসে কালু শেখের কথা শুনছিলো – আচানক বাধায় অত্যান্ত বিরক্ত হয় ।

কালু শেখ খুব ভাব নিয়া লুন্গির খুট থকে বিড়ি বের করে সময় নিয়া ধরায়, সে বুঝতে পারে সবাই তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। এই সভার কেন্দ্রবিন্দুটা এখন সেই – সময়টা সে খুব তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে । বিড়িতে একটা সুখ টান দিয়া আস্তে আস্তে আবার কথা শুরু করে ।

সব কামেই উস্তাদ লাগে মিয়ারা – বিদ্যা বড় ধন – উস্তাদ ছাড়া কি আর কাম শেখন যায় ? আমাগো জামাইর উস্তাদ হইলনে গিয়া এই পেরেধানমন্তি । উনি আবার জামাইরে খুবই পেয়ার করেন, কাইলকা দেখলাম উনারে নাকি উস্তাদে আজাইর‍্যা মনতিরি বানাইছে, কোন কাম না, খালি এসুর নিচে বয়া বয়া পেরেধানমন্তির হিসাব নিকাষ করার কাম, হেই এসু নাকি কারেন্টে চলে, খালি ঠান্ডা বাতাস দেয় । বড়ই আরামের কামরে মিয়ারা – বড়ই আরামের কাম ।

এসুর বাতাস খাইতে কিরম লাগবে চিন্তা করতে করতে নিঃস্ব মতি মিয়া দিবাস্বপ্ন দেখে – ছেলে তার পেরেধানমনতিরির গদ্দির উরপে বইসা বইসা পয়সা গুনে – একশ টাহার একটা বান্ডিল দেহায়া কয়, নেও বাজান, আইজকা বাজার থন গোস্ত আনবা আর মায়েরে কইয়ো টাহাগুলা যেন সামলাই রাহে । আমি নিমতলি যাই – ইলেকশনের টাইম- ইসপিশাল একখান কাম আছে । মতি মিয়া বড় খুশি হয়, ছেলে তার অনেক বড় কামলা হইছে। মেনেষ্টার মানে কি না বুঝলেও বুঝতে পারে হেই কামের লগে তার বাপ দাদার কামের মিল আছে, আশা করে তার ছেলেও মেনেষ্টার হবে । স্বপ্নে ছেলের মুখটা বড় সুন্দর লাগে, খালি চুউখ দুইটা তার বাপের লাহান। চোর বংশের নাকি চউক্কে পরিচয় ।

হটাৎ কালু শেখের জোর গলায় তার দিবাস্বপ্ন ভাংগে । আড়মোড়া ভেংগে মতি মিয়া উঠে দাড়ায় – মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করে। আমার পোলাটারে অনেক বড় মেনেষ্টার কইরা দে আল্লা, পোলায় যেন বাপ দাদার কামটার ইজ্জত রাখতি পারে।

>> পুনশ্চঃ  গল্পের পটভুমি নিতান্তই কাল্পনিক, বাস্তবের সাথে মিল পাওয়া গেলে তার দ্বায়-দ্বায়িত্ব লেখকের নয়। সুনামগন্জ বা তাহিরপুর এলাকায় এইরকম কোন গ্রামের সন্ধানও লেখকের জানা নাই।

রোগী আসিবার পূর্বেই ডাক্তার মরিয়া গিয়াছেন


গোপাল ভাঁড় মহাশয়ের ভাড়ামীর পাত্র নি:শেষ হয় নাই। কিন্তু তাহাকে হইলোকের মায়া ত্যাগ করিয়া যমালোকের দিকে যাত্রা শুরু করিতে হইল। তিনি ইহলোক আর যমালোকের মধ্যবর্তীস্থানে প্রথমবারের মতন অনুধাবন করিলেন যমদূতের সহিত রসিকতার ফলাফল কখনই ভালো হয়না।

২।
গোপাল ভাড় মহাশয় যমরাজের চেম্বারের বাহিরে লাইনে দাড়াইয়া আছেন। যমালোকের একজন সুন্দরী কাস্টমার কেয়ার অফিসার হাস্যমুখে তাহার হাতে একখানা ফাইল ধরাইয়া দিলেন। গোপাল ভাড় দেখিলেন ফাইলের উপরে লাল কালিতে ‘চূড়ান্ত হিসাব’ এবং হিসাব সম্পাদনকারীর ঘরে ‘চিত্রগুপ্ত এন্ড এসোসিয়েট’-এর নাম লিখা রহিয়াছে। বিশাল লাইনের সহিত গোপাল ভাড় মহাশয় আগাইয়া যাইতে যাইতে যমরাজের চেম্বারে প্রবেশ করিবার অনুমতি পাইলেন। যমরাজ গোপালের হাতের ফাইলটি গ্রহন করিয়া পড়িতে পড়িতে প্রশ্ন করিতে লাগিলেন।

যমরাজ : তোমার পেশা হইল ভাড়ামী। তাহা বলিয়া তুমি যমদূতের সহিতও রসিকতা করিবে?
গোপাল : মহারাজ, যমদূতের সহিত রসিকতা ইচ্ছা করিয়া করি নাই। ভুলে হইয়া গিয়াছে। মহারাজ, সকল মায়া ত্যাগ করিয়া নিজের ইচ্ছায় কে আর যমালোকে আসিতে চাহে?

গোপালের দার্শনিক প্রশ্নে যমরাজের মন বেদনায় আর্দ্র হইয়া আসিল।Continue Reading