by Mohsen Alam
‘ঘাতক’ শব্দটা কি যে একটা দোতন্যাময় আঘাত দিয়ে গেল মনে।
একজন পুলিশের কথা মনে পড়ল, যে বিশটা মত ক্রসফায়ারের কর্তা-সাক্ষী হয়ে একদিন সেতু থেকে নদীতে ঝাপিয়ে বড় শান্তির ঘুমে ঘুমাইছিল। কেন গো এত যাতনা? মনে হয়, যখন সে লাফ দিচ্ছিল, ঘাতক শব্দের অর্থ তাঁর চেয়ে ভালো কেউ বুঝে নাই দুনিয়াতে।
এই একটা ঘটনা আমার অস্তিত্ত্বকেই নাই করে দেয়ার মত জর্জরিত করে। কারন, আমি-আমরা তো সেইসব মানুষ যারা প্রতিটি ক্রসফায়ার নাটকের পান্ডুলিপি পাঠ করতাম বড় বেশী নির্লিপ্ত চিত্তে। সেই পাঠগুলি কোনো বিকার ঘটাতো না, মাঝে মাঝে তৃপ্তির হাসি ফুটতো গালে। সেই সব হাসিগুলো বোধহয় জমা হয়েছিল ওই পুলিশের ঘাড়ে, যার ভার নিতে ক্লান্ত হয়ে একটু ঘুমের দরকার ছিল।
আমরা তখন কত শত যুক্তি দিয়েছিলাম, এখনো কতকেউ কত শত যুক্তি দেয় সেইসব খুনের ব্যাপারে, কিন্তু সব যুক্তি তো উল্টে হয়ে ফিরে আসে নিজেদের খুনের সাক্ষ্য হয়ে ওই লাফদেওয়া পুলিশের ঘুমের ঘটনাতে।
সেতু থেকে নদীর পানি, তারপর পানিতে পানিতে ফুসফুস বন্ধ হয়ে যাওয়ার যতগুলি মুহূর্ত সবগুলি আমার চোখে ভাসে, আর নিজের খুনীর পরিচয় প্রকাশ করে দেয়। সে ফুসফুস ভরা পানি নিয়ে সে প্রমান করে দিল যে, সে যে বড় নির্লিপ্তে চিত্তে গুলি ছুড়ে দিতে তা মিথ্যা, আমরা যে বড় করে শ্বাস নিয়ে ফুসফুস ফুলিয়ে ফেলতাম অক্সিজেনে তা মিথ্যা ছিল। নিজের জীবনের কতগুলি শ্বাস-প্রশ্বাস মিথ্যা ছিল তার হিসাব করি আজ। এই হিসাব করতে বসার আগে ভুলে যেতে হয়, কতক্ষন শ্বাস বন্ধ থাকলে মৃত্যু ঘটে।
ঘাতকের একাল-সেকাল আছে কিনা জানিনা, তবে ঘাত হওয়া সব মানুষেরা একই কালের মানুষ। খুনের কালের মানুষ। জন্মের চেয়ে মৃত্যু বড়, তাই মৃত্যুকাল দিয়ে মানুষের কাল বিচার করলে সবাই একই খুনের কালের মানুষ।
একজন খুন হয়েছে, আরেকজন খুনী। এই গাণিতিক সরল অঙ্কের চেয়ে একটুখানি কম বুঝি বলে জানি যে, একজন খুনের শিকার হওয়া মানে সেই খুনীর ন্যায়-বিচার যতদিন না হবে ততদিন খুনের দায় মাথায় থাকা। আর রাষ্ট্রীয় খুনের শিকার কেউ হলে তো ওইখানে শুধু দায় না, নিজেই সম্পূর্ন দায়ী। কারন আমরা টাকা দিয়েছি বলেই খুন সংঘটিত হয়েছে।
বাংলা, তুমি আজ ধন্য হে। স্বাধীন হয়েছ বলেই সব নাগরিক খুনের স্বাধীনতা পেয়েছে।
জয় বাংলা, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।