মানবতা মুছে ফেলো টিস্যুতে!

By: Aman Abduhu

‘একাত্তর ইস্যুতে/ মানবতা মুছে ফেলো টয়লেট টিস্যুতে’ স্লোগানটা বহু বছর আগে ব্লগে প্রথম দেখেছিলাম। চমকে উঠেছিলাম। আজ এতো বছর পরও মনে পড়ে, প্রথমবার দেখে সেদিন কেমন থমকে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছিলো এর জের বহুদূর টানতে হবে বাংলাদেশকে। একটা গোষ্ঠীর চিন্তার প্রকাশ যদি এমন হয়, এবং তা সমাজের শিক্ষিত অংশের মাঝে সমাদৃতও হয়, তবে তার পরিণতি কারো জন্য ভালো হওয়ার কথা না। হয়ওনি। এরপরের বছরগুলোতে শাহবাগিদের প্রিয় সে স্লোগানটা বিভিন্ন উপলক্ষে বারবার, অসংখ্যবার মনে পড়েছে। আজ আবার মনে পড়লো বিহারী পল্লীর হত্যাকান্ডের ঘটনায়।

ঢাকার বিহারী পল্লীতে যুবলীগ নেতাদের নেতৃত্বে উম্মত্ত জনতা আগুনে পুড়িয়ে আর পুলিশ গুলি করে এগারো জন মানুষকে মেরেছে। বেশিরভাগ শিশু আর নারী। শবে বরাতের রাতে আতশবাজি জ্বালানোর মতো তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে। এবং তারপর বীর বাঙালী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উল্লাসে ফেটে পড়ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলায় জিতে আবার মুক্তিযুদ্ধ জয়ের মতো অর্বাচীন সে উল্লাস। সবার সে কি আনন্দ। নিজের অপরাধবোধ আর পশুবৃত্তিকে ঢেকে রাখার কি নিদারুণ চেষ্টা। বিহারী মারলে অসুবিধা নেই। বরং ভালো হয়েছে। এরা স্বাধীনতার শত্রুদের বংশ। এগুলোকে এভাবেই মারা দরকার!!

বাঙালীর এ আনন্দ-উল্লাস দেখে মনে পড়ে বইয়ে পড়া গহীন অরণ্যের আদিম নরখাদক জংলী গোষ্ঠীর উল্লাসের কথা। আগুনে পোড়ানো হচ্ছে কিছু নারী আর শিশুকে। তাদের চামড়া পুড়িয়ে আগুন আরো ভেতরে যাচ্ছে, জ্বালাচ্ছে। চুল পুড়ছে, হাত পুড়ছে, পা পুড়ছে। শ্মশানের পাশে যেমন গন্ধ পাওয়া যায়, সেই মাংসপোড়া গন্ধ ভাসে বাতাসে। আর তাদের চারপাশ ঘিরে ফেসবুকের জঙ্গলে উল্লাসে হৈ হৈ করে নাচছে, লাফাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আপ্লুত বাঙালীর দল। আদিম সেই উল্লাস, খাদ্য জুটছে তাদের প্রতিহিংসাপরায়ণ অন্ধ মনের।

একাত্তরের চেয়ে মানবতা অনেক বড় একটা বিষয়। আর কয়েক জেনারেশন পর একাত্তর স্রেফ অতীতের একটা ঘটনা হয়ে যাবে। কয়েকশ বছর পরে থাকবে বই এর পাতায়। কিন্তু পৃথিবীর শেষ মানুষটা বেঁচে থাকা পর্যন্ত মানবতা একটা দরকারী বিষয়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী একাত্তরে মানবতার তোয়াক্কা করেনি বলেই তারা এতো ঘৃণিত।

বিহারী পল্লীর এ ঘটনায় একাত্তর কোনভাবে প্রাসঙ্গিকই না। তারপরও তা টেনে এনে নাচানাচি করা বিকৃত মানসিকতা। যে বিকৃতি আজ বাংলাদেশে মহামারীর মতো। আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বুদ্ধিজীবি আর শাহবাগির দল সে বিকৃতিকে পুরো দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের বড় একটা অংশের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। হেডোনিস্টিক ভোগবাদি জীবন যাপনের পাশাপাশি এইধরণের খেলা বা খুনের ঘটনায় এরা দেশপ্রেমের দায়িত্ব পালনের তৃপ্তি পায়।

তাই গত কয়েকবছর ধরে যে অবিচার আর অমানবিকতা চলে আসছে, তাতে মানুষের আর বিকার হয় না। পুলিশ যাকে ইচ্ছা তাকে ধরে নির্বিকার খুন করে ফেলতে পারে, ছাদ থেকে ফেলে দিতে পারে, গুম করতে পারে, কোন বিচার নাই। ছাত্রলীগ যুবলীগও যা ইচ্ছা খুন ধর্ষন চালিয়ে যেতে পারে, কোন সমস্যা নাই। বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে কুপিয়ে মারা ছাত্রলীগ নেতা সবার সামনে উঁচু গলায় তার পরিবারকে জানিয়ে দেয়, সমস্যা হবে না কোন। গ্রেফতার টেফতার এগুলো ফরমালিটিজ। নারী শিশুদেরকে পুড়িয়ে মারার পর সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হাসিমুখে বলতে পারে, এটা নিছক দুর্ঘটনা। একই দিনে শেখ হাসিনার কথা বলার বিষয় হলো খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিষোদগার। বিহারী পল্লীতে না হয়ে এতজন মানুষ ক্যান্টনমেন্টে মারা গেলে হাসিনা দৌড়ে যেতো, তাদের পরিবারের ভরণপোষনের দায়িত্ব নেয়ার রেডিমেইড নাটকও মঞ্চস্থ হয়ে যেতো এতোক্ষণে।

সমসাময়িক বাংলাদেশে মানবতার এ দুর্দশা শুরু হয়েছিলো আঠাশে অক্টোবরে পল্টনে লগি-বৈঠার সেই ঘটনায়। যেদিন হাসিনার নির্দেশের ফলে মানুষকে আর মানুষের সম্মান দেয়া হয়নি। পশুর মতো পিটিয়ে মারা হয়েছে, প্রকাশ্য দিবালোকে। এবং তার কোন বিচার হয়নি। সে ঘটনার মানসিক প্রভাব ছিলো সুদূরপ্রসারী। আওয়ামী মাফিয়া লীগের লোকজন জেনে গেছে, তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। প্রফেশনাল দুবৃত্ত, চোর-ডাকাত, খুনী-ছিনতাইকারীরা বুঝে নিয়েছে, আওয়ামী লীগের সাথে থাকলে তাদের প্রফেশনাল কাজকর্মের কোন সমস্যা নাই। মীরপুরের ঘটনা এলাকার যুবকদের মারামারি হলেও, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছে যুবলীগ নেতা রানা, সেন্টু, শরিফুল। বাংলাদেশে এখন কোন ঘটনাই রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছাড়া ঘটে না।

কোন একজন মানুষও কি মনে করেন, এ ঘটনার কোন বিচার হবে? এভাবে নারী আর শিশুদেরকে পুড়িয়ে মারলো যারা, তারা শাস্তি পাবে?

বরং আঠাশে অক্টোবরের সে ঘটনা থেকে শুরু করে বড় বড় ঘটনাগুলোর ন্যায়বিচার না হলে, আজকের বিহারী পল্লীতে ঘটে যাওয়া এই ধরণের গণউন্মাদনার মতো পশুবৃত্তি কখনোই বন্ধ হবে না। কাল বিহারী পল্লীতে এগারোজন মরলো। কয়েকবছর আগে শবে বরাতে আমিনবাজারে ছয় ছাত্র মারা গিয়েছিলো। কয়েক বছর পরে অবশ্যই আমি আপনি মারা যাবো। আগুনে পুড়তে পুড়তে, অথবা মব হিস্টিরিয়ার গণপিটুনিতে দুমড়ে মুচড়ে হোক, কিংবা আওয়ামী দুবৃত্তদের উদ্ভাবিত নতুন কোন উপায়ে। আর গণভবনে বসে রক্তপিপাসু ডাইনী হাসিনা এসব মৃত্যুর খবর পেয়ে সবার সামনে চোখের পানি দেখানোর আগে জিন্দেগী জিন্দেগী গানের তালে একটু নেচে নেবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা!! হাহ!

ফুটনোটঃ একাত্তর নিয়ে আমরা যেই সরল গল্প-কাহিনী জানি, তার বাইরেও কিছু অলটারনেটিভ কথা আছে। আজকের বাঙালীদের এ উল্লাস দেখে মনে হয়, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েনের লেখা ‘একাত্তরের স্মৃতি’ বইয়ে যুদ্ধের আগে বিহারীদের উপর গণহত্যা চালানোর যে ঘটনাগুলো আছে, তা সত্যও হতে পারে। আমাদের বাবা-দাদারাই তো ছিলেন।

পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থন দেয়া আসলেই কি অযৌতিক বা অনুচিত?

শেহজাদ আমান 

(১)

গত কিছুদিন আগে দেশে ক্রিকেট উৎসবের মহোৎসব বসেছিল এশিয়া কাপ আরটি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সৌজন্যে।তার পাশাপাশি কিছু মানুষ দাবি তুলেছিল যেবাংলাদেশ ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের অন্য কোন দলকে সমর্থন করা চলবেনা। এরপাশাপাশি স্টেডিয়ামে অন্য দেশের পতাকা বহন করার এবং তা প্রদর্শন করা তোযাবেনা-ই।

এই ব্যাপারে তারা ব্লগে এবং মিডিয়ায় অনেক লেখালেখি করেছে। প্রথম আলোতেফারুক ওয়াসিফ এই ব্যাপারে একটা পুরো প্রন্ধই রচনা করে দিয়েছেন, “খেলায়পাকিস্তানকে সমর্থন কেন?”
( http://www.prothom-alo.com/opinion/article/166350 )

আমার বক্তব্য হল, ঢালাওভাবে বিষয়টা না দেখে আরও র্যাlশনালী বা লিবারেলভাবেবিষয়টা দেখা যেতে পারে। আমাদের দেশে স্পষ্টতই আইন আছে দেশের মাটিতেঅন্যদেশের পতাকা না উড়ানোর ব্যাপারেঃ

“Except as stated in the above Rules, the flag of a Foreign State shall not be flown on any car or building in Bangladesh without the specific permission of the Government of the People’s Republic of Bangladesh.”
(People’s Republic of Bangladesh Flag Rules, article 9.IV)
(http://www.cadetcollegeblog.com/adjutant/43624)

তো, এইখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মাটিতে অন্য দেশের পতাকা উড়ানো আসলেইএকটা বেআইনি কাজ। বাংলাশের অধিবাসী হয়ে অন্য দেশের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামেঢোকা উচিত নয়। সেইক্ষেত্রে সংশয় বা অস্পষ্টতার কিছু নেই।

কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে, কিছু মানুষ অন্য দেশকে সমর্থন দেয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভআর রাগ প্রকাশ করে ফেসবুক আর ব্লগে বিভিন্ন মতামত দিয়ে গেছেন। বিশেষ করে , বাংলাদেশের বলতে গেলে ৫০-৬০% লোক যে বাংলাদেশের পর পাকিস্তান ক্রিকেট দলকেসমর্থন করে, সেই ব্যাপারটা নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ। পাকিস্তানকে যে কোনমতেইসমর্থন করা যায়না, সেই ব্যাপারে তারা অনেকেই অনেক অনেক যুক্তির অবতারণাকরেছেন, এমনকি পাকিস্তানকে যারা সমর্থন করে, তাদের রাজাকার, নব্য রাজাকার, রাজাকারের দোসর, ছাগু, পাকি জারজ ইত্যাদি নানান ধরণের তকমা দিয়ে ভরিয়েফেলছিলেন।

কয়েক বছর আগে রাহিন রায়হান নামের এক ব্লগার (সম্পর্কে আমার বিশ্ব সাহিত্যকেন্দের ছোট ভাই) প্রথম আলো ব্লগে লিখেছিলেন, “একালের নব্য যুদ্ধাপরাধীআবার কারা?আমি আসলে আমাদের তরুণ সমাজের সেই অংশটার কথা বলছি যারা নিজ দেশেরইতিহাস-ঐতিহ্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে উদাসীন।দেশের তরুণসমাজের বড় একটা অংশ কিন্তু এদের অন্তর্ভুক্ত।পাকিস্তানের খেলা হলে তাদেরগ্যালারীতে দেখা যায় পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে।তাদের গালে আঁকাথাকে পাকিস্তানের পতাকা।এবং হয়ত বুকেও। এমনকি বাংলাদেশের সাথে খেলা হলেওএরা অনেকেই প্রকাশ্যে এবং অনেকেই মনে মনে পাকিস্তানের শুভকামনা করেথাকে।বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে হারলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় “yahooooo Pakistan jitse.shabash Pakistan!!!!!!!!”. তখন বাকরুদ্ধ হয়ে যাই।অবাকহয়ে ভাবি এরা কি আসলে বাংলাদেশি?এদের যুক্তি পাকিস্তানের প্লেয়াররাতো আর১৯৭১ এর জেনোসাইডে অংশ নেয়নি।তো তাদের সমর্থন করলে দোষ কোথায়?
না । এই যুক্তি আমি খন্ডাবো না।সত্যি বলতে আমার রুচি হয়না।এই নব্য রাজাকারদের আমার বোঝানোর কিছু নেই”।
(http://prothom-aloblog.com/posts/7/145671)

আসুন, আমরা বুঝতে চেষ্টা করি, এই ধরণের তকমা দেয়া আসলেই কতটা যুক্তিযুক্ত , সেই ব্যাপারটা। আর বুঝে দেখি আসলে এইসব ফ্যাসিস্ট জাতীয়তাবাদির দাবিগুলোআসলে কতটা বাস্তবসম্মত।

(২)

একসময় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল টেস্ট বা ওয়ানডে কিছুই খেলতো না। বাংলাদেশ১৯৯৭ সালে ওয়ানডে স্ট্যাস্টাস পায়, আর ২০০০ সালে পায় টেস্ট স্ট্যাটাস। তারআগ পযন্ত দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই অন্য ক্রিকেট নেশনকেসমর্থন করতে হয়েছে।

পাকিস্তান একটি মুসলিম দেশ বলে বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবেইপাকিস্তানকে সমর্থন করে এসেছে। তবে এটি পাকিস্তানকে সমর্থন করার একমাত্রকারণ নয়। পাকিস্তান বিশ্ব ক্রিকেতের পরাশক্তিগুলোর অন্যতম অনেকদিন ধরেই।তারা ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট এবং ২০০৯ সালে টি-তোয়েন্টি বিশ্বকাপক্রিকটের শিরোপা জেতে। এর আগে ও পরে তারা অসংখ্য টুর্নামেন্ট এবংদ্বি-পাক্ষিয় সিরিজ জয়লাভ করেছে বিশ্বের সব ক্রিকেট শক্তির বিরুদ্ধে। তবে, শুধু সাফল্য দিয়ে পাকিস্তানের ক্রিকেত-উতকরষতা বিচার করা যাবেনা। ক্রিকেটঅনিশ্চয়তার খেলা যাকে বলা হয়, “The Game of Gloriuos Uncertainty”. আরক্রিকেট যদি অনিশ্চয়তার খেলা হয়, তবে এর সবচেয়ে সক্ষম ও বাস্তব উদাহরণ হলপাকিস্তান ক্রিকেট দল। তারা এমন একটা দল যারা একটা হারা ম্যাচ, যেখানে জয়অসম্ভব মনে হয়, সেখান থেকেও ম্যাচ জিতে আসে। তাদের খেলায় তাই আছেঅনিশ্চয়তা, রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা।

তবে, মানুষ যেহেতু জিততে জিততে হেরে যাওয়া ম্যাচের চেয়ে, হারতে হারতে জিতেযাওয়া ম্যাচের কথাই বেশি মনে রাখে, তাই পাকিস্তানের নৈপুণ্য ভাস্বর আসাধারণসব জয়কেই মানুষ বেশি মনে রাখে। যেমনঃ ১৯৮৪৫ সালে শারজায় জাভেদ মিয়াদাদেরশেষ বলে মারা ছক্কায় অথবা ২০১৪ সালে আফ্রিদির পরপর দুই বলে ছক্কা মেরে দলকেজেতানোর স্মৃতিই মানুষের চোখে বেশি ভাসে।

আমি যে কথা এখানে স্পস্ট করে বলতে চাচ্ছি, সেটা হল বাংলাদেশের মানুষ বাসকরে ঘোরতর অনিশ্চয়তার মধ্যে। তাদের নিজেদের জীবনেও অনেক রকম অনিশ্চয়তারমধ্যে থাকতে হয়। হরতাল, রাজনৈতিক সংঘরষের কারণে মানুষ জানেনা যে, সে আজবাসা থেকে বের হলে সুস্থমত ঘরে ফিরে আসতে পারবে কিনা? মধ্যবিত্ত বাঙালিজানেনা সামনের মাসের বাড়িভাড়া সে ঠিকমত দিতে পারবে কিনা, যদি বাড়িওয়ালাবছরের পর বছর ভাড়া বাড়িয়েই চলেন।

তবুও তারা দিনশেষে ‘যুদ্ধজয়’ করে বাসায় ফিরে আসে। মাস শেষে সে টেনেটুনে ভাড়া ঠিকই দেয়।
অনিশ্চয়তার ঘোরাটোপে বাস করা বাংলাদেশের মানুষ, তাই পাকিস্তানেরপারফরম্যান্স বা খেলার সাথেই যেন নিজেদের জীবনের মিল খুজে পায়। পাকিস্তানতাই নিজের অজান্তেই তাদের কাছে প্রিয় ক্রিকেট দলে পরিণত হয়েছে।

(৩)

আমাদের সমাজে বেশ কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে প্রতিবাদের ভাষাই হল পাকিস্তানবিরোধিতা করা। উগ্র জাতীয়তাবাদী এই সকল লোক যে কোন ইস্যুতে পাকিস্তানেরসমালোচনা, নিন্দা আর মুন্ডুপাতকেই দেশপ্রেমের উদাহরণ হিসেবে মনে করেন, সেইস্যু বাস্তবসম্মত বা যুক্তিযুক্ত হোক বা না হোক।
যেমন সচলায়তন ব্লগে ধ্রুব আলম নামে একজন কিছুদিন আগে একটা লেখা লিখেছিলেন “পাকিস্তান ভাল খেলে, তাই সমর্থন দেই। আসলেই?” নামে। সেখানে তিনি কিছুহাস্যকর স্ট্যাটিসটিকস দিয়ে প্রমাণ চেষ্টা করেছেন যে, পাকিস্তান আসলেই অতটাভাল খেলেনাঃ
( http://www.sachalayatan.com/guest_writer/51688 )

অথচ, তার দেয়া পরিসংখ্যান থেকেই এটা বোঝা যায় যে, পাকিস্তান অসাধারণ একটাক্রিকেট দল। ধ্রুব আলম নিজেই লিখেছেন, ২০০০ সালের পর থেকে পাকিস্তান ভারতেরসাথে ৪৮ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে জয়লাভ করেছে ২৫ টিতে, হেরেছে ২৩ টিতে।

সেই লেখার শেষে এই উগ্র জাতীয়তাবাদী লিখেছেন, “ছাগলামি ছাড়ুন, সাহস নিয়ে অন্তত স্বীকার করুন যে পাকিস্তান ভাল ক্রিকেট দল নয়। “

অথচ একজন পক্ষপাতহীন মানুষ তার লেখা দেখলেই বুঝতে পারবে যে এর মাধ্যমে পাকিস্তানের ভাল ক্রিকেট দলের স্বীকৃতিটাই লুকিয়ে আছে।

কাজেই পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশী সমর্থকদের ছাগল প্রমাণ করতে গিয়ে লেখক নিজেই যে একটা ছাগল সেটাই কি প্রমাণ করলেননা?

সুষুপ্ত পাঠক নামের এক ব্লগার তার ব্লগে লিখেছেন যে, “আমরা মুসলমান থেকে বাঙালি হতে পারলাম না।“
(https://www.amarblog.com/index.php?q=susupto-pathok/posts/177806)

এখানে বলে রাখা ভাল যে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বড় কোন টুর্নামেন্টে ভালো করতেপারে না দেখেই কিন্তু মানুষ বাংলাদেশ বাদেও পাকিস্তান বা ভারতকে অনেকটাবাধ্য হয়েই সাপোর্ট করে। কারণ, তাদের শিরোপা জয়ের সামর্থ্য আছে, যেটাবাংলাদেশ দলের নেই। আর বাংলা ভাষাভাষী অন্য ধর্মের অন্য কোন দেশও তোসেমি-ফাইনাল বা ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানের সাথে সাথে খেলে না যে বাংলাদেশেরমানুষ সেই দেশকে সমর্থন করবে। তাই, এখানে মুসলমান থেকে বাঙালি হতে পারলামনা’—সেই কথা বলাটাও বোকামি। আর এখানে প্রশ্ন রাখতে হয় যে, বাঙ্গালী হলে কিএকটা মুসলিম দেশ ভাল খেললে তাকে সাপোর্ট দেয়া যাবেনা?

এরকম আরও হাজারো ছাগল আমাদের দেশে রয়েছে, পাকিস্তান তো পাকিস্তান, পাকিস্তানের মানুষজনদের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ‘মারখোর উমুক’, ‘মারখোরতুমুক’ টাইটেল লাগিয়ে দেয়, সেই লোকটা বাংলাদেশের প্রতি যতটা সজ্জনই হোকনাকেন। দেশের প্রয়জনে, দেশের ক্রান্তিলগ্নে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করার, মাঠে নামার দরকার এরা অনুভব না করলেও মনে মনে একটা প্রশান্তি তারা লাভ করেএই ভেবে যে—“যাক, আর কিছু না হোক পাকিস্তান, পাকিস্তানী আর পাকিস্তানীক্রিকেট দলের সমর্থকদের তো অন্ততফেসবুক আর ব্লগে শোয়ায় দিছি…”

(৪)

খেলাধুলার ময়দানে মানুষ সেই সব ক্রিকেট শক্তিকেই সমর্থন দিয়ে থাকে, যারাকিনা অনেক দূর যাওয়ার, বিশেষ করে শিরোপা জয়ের ক্ষমতা রাখে। যেমন, সাফফুটবলে বাংলাদেশ শিরোপা জয়ের ক্ষমতা রাখে। তাই, সাফ ফুটবলে বাংলাদেশেরমানুষ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দলকে সমর্থনের প্রয়োজন মনে করেনা।

তাইতো, সাফ ফুটবল বাংলাদেশে আয়োজন করা হলেও পাকিস্তানের বা ভারতের ম্যাচের সময় পাক বা ভারতী পতাকা উড়াবার ঘটনা চোখে পড়েনা।

কিন্তু, ক্রিকেট খেলার ব্যাপারতা ভিন্ন। ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ কোনআন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ফেভারি্ট থাকেনা। এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপে তাদেরচ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যাতা নেই। বিশ্বের সেরা দল হিসেবে র‍্যাঙ্কিং-এর১-২-৩-এ থাকার যোগ্যতাও হয় নাই। এখানে স্বাভাবিকভাবেই তাই মানুষ চ্যাম্পিয়নহওয়ার মত দলকেই সাপোর্ট করে। তাইতো, ভারত বা পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কাকেসমর্থন দিতেই তাদের ম্যাচে বাংলাদেশের মানুষেরা ব্যানার-প্ল্যাকার্ডইত্যাদি নিয়ে আসে। এসব দলকে মানুষ সমর্থন দেয় এই জন্য যে, তারা চ্যাম্পিয়নদলের সমর্থনকারী হতে চায়। বাংলাদেশের যদি সেইসব টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নহওয়ার যোগ্যতা থাকতো, তবে সাফ ফুটবলের মত সেইসব টুর্নামেন্টে বাংলাদেশইশুধুমাত্র সমর্থন পেত। অন্য কোন দেশের সমর্থন দিতে মানুষ টিভির সামনেবসতোনা, বা স্টেডিয়ামে যেতনা।

আর এটাও মাথায় রাখতে হবে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন। বাংলাদেশটেস্ট বা ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার অনেক আগে থেকেই পাকিস্তান বা ভারত বিশ্বক্রিকেটের সফল দল এবং বাংলাদেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই তাদের সমর্থন করেএসেছে।

এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ যতদিন না পর্যন্ত ক্রিকেটীয় সাফল্যে ভারত-পাকিস্তানবা শ্রীলঙ্কার সমপর্যায়ে যেতে না পারছে, ততদিন পর্যন্ত মানুষ অন্য দলকেসাপোর্ট করবেই।

আর একটা মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তান ক্রিকেট দলকেই দেশের বেশিরভাগ মানুষসাপোর্ট করবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, ইসলাম ধর্ম জিনিসটা বাংলাদেশেরমুসলিমদের লাইফস্টাইলের মধ্যে অনেক গভীরভাবে কাজকরে। পাকিস্তানেরচিত্তাকর্ষক, রোমাঞ্চকর খেলার ধরনের কথা না হয় আবার উল্লেখ নাই করলাম।এজন্য তাদের নব্য রাজাকার বলা শুধু ভুলই নয়, আমানুষিক। এখানে আমি ‘সবুজ’ নামে আমার এক ঢাকা কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের কথা উল্লেখ করবো, যে কিনাপাকিস্তানের সমর্থন করে, তবে অবশ্যই বাংলাদেশের পর। এইবারের এশিয়া কাপ২০১৪-এ বাংলাদেশ-পাকিস্তান’ ম্যাচে বাংলাদেশের নিশ্চিত জেতা ম্যাচ আফ্রিদিযখন একের পর এক ছক্কা মেরে বের করে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন ও আমাকে বললো, “ভাই,আফ্রিদি একটা কইরাছক্কা মারে, আর আমার মনে হইতাছে কেউ আমার বুকেএকবার কইরা ছুরি মারতেছে ভাই”।

এখন, উগ্র জাতীয়তাবাদী ছোট ভাই রাহিন রায়হানের বক্তব্য অনুযায়ী আমার আরেকছোট ভাই সবুজতো তাহলে একজন ‘নব্য রাজাকার’। একজন ‘নব্য রাজাকার’-এরবাংলাদেশের পরাজয়ে বুকে ছুরির আঘাত পাওয়ার মত ব্যাথা হয়! ভালো তো, ভালো না?

সবুজের মত মানুষকে নব্য রাজাকার ট্যাগ দিতে গেলে বিশেষ পরিমাণেনিচুমনমানসিকতার মানুষ হতে হবে। রাহিন রায়হানের মত মানুষদের নিজেকে প্রশ্ন করাউচিত, আসলে তার নিজের মনমানসিকতা কোন পর্যায়ের…!

আমরা শুধু পাকিস্তান পাকিস্তান বলি, অন্য দেশগুলোর কথা বলি না কেন, ভারতেরকথা বলি না কেন? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ যদি দেশকে ভালোবেসে হয়, তাহলেভালো কথা। কিন্তু ইসলাম বিরোধীতাঁর কারণে যদি হয় তাহলে সেটা দুঃখের বিষয়।

কই, ভারতকেতো দেশের ১০-১৫% লোক সাপোর্ট করে। ভারতকে সাপোর্ট করা ঠিকহবেনা, এমন কোন লেখা তো চোখে পড়ে নাই। ৭১’ সালের পর ভারত কি আমাদের সাথে কমকরেছে? গতকালই তো বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতা দাবি করলেন, “বাংলাদেশেরখুলনা থেকে সিলেট, এক তৃতীয়াংশ নাকি ইন্ডিয়ার দখলে নেয়া দরকার”।

আর এটাওতো সত্য যে, পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের প্রতি যতটা সহমরমী, অন্য কোন দেশের ক্রিকেটাররা তা কমই আছেন।

৭১’ সালে পাকিস্তানের বর্বর ভূমিকার কথা সবাই জানে। পাকিস্তান বাংলাদেশেরকাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেজন্য ক্ষমা চায়নি, এটাও সত্য। কিন্তু, বাংলাদেশেসরকার তো অনেক আগেই পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিয় সম্পর্ক বজায়রেখেছে। সেটা যদি করা যায়, তাহলে ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করাঅনৈতিক বা অনুচিত হবে কেন?

পরিশিষ্টঃ যারা পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থনের বিরোধিতা করছেন, তারা আশাকরি পাকিস্তানের সাথে সবরকম কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার বিরোধিতাও করবেন ।সার্কের সদস্য হিসেবে পাকিস্তান যদি আঞ্চলিক উন্নয়নে একটা ভাল পরামর্শদেয়, আর বাংলাদেশ তাকে সমর্থন করে, তাহলেওতো (কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদীরচোখে) একাত্তরের চেতনার অবমাননা হবে, তাই নয় কি…?

যাই হোক, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যদি ক্রিকেট-বিশ্বে সত্যিই পরাশক্তি হিসেবেআবির্ভূত হতে পারে, তবে আশা করা যায় পাকিস্তানসহ অন্য দেশগুলোকে সমর্থনদেয়ার প্রবণতা অনেক কমবে। ‘জেতা ম্যাচ হেরে যাওয়া’র বর্তমান ধারা বদলে তারা ‘নিশ্চিত হারা’ ম্যাচেও দেশকে জয় উপহার দেবে, নাটকীয় ও রোমাঞ্চকরভাবে।বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিকট ভবিষ্যতে সেই সুখের দিন আমাদের উপহার দেবে বলেবিশ্বাস রাখি।

ফাঁসি,পাকিস্তানফোবিয়া ও বাংলাদেশের সঙ্কট

2

রেজাউল করিম রনি

It is crucial to address the issue on these three distinctive levels, which are the exploitation, politicization and institutionalization of Islamophobia at various levels. In the present globalized world, peaceful and harmonious coexistence among diverse religions and cultures is not an option but the only means to enduring human cohabitation. The objective of the protagonists of Islamophobia is none other than to create division between the West and theMuslim World.

[SIXTH OIC OBSERVATORY REPORT ON ISLAMOPHOBIA October 2012 – September 2013]

noose

আমার ঘরের চাবি পরের হাতে

সাম্প্রতিক সময়ের কূটনৈতিক ঝগড়া এমনভাবে উদাম হয়েছে যে, রাজনীতির ব্যাপারে একদম উদাসীন গৃহবধূরাও জানেন, আমাদের কোনো সংকটের সমাধান দেশের রাজনীতিবিদদের মর্জির ওপর নির্ভর করে না। মার্কিন ও ভারতের পররাষ্ট্র-লড়াই এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, একে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ প্রশ্নে এক দিকে ভারত অন্যদিকে গোটা পশ্চিমা বিশ্ব। আর এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বা লক্ষ্য করবার বিষয় হল, এই প্রথম পাকিস্তান সরব ভূমিকায় হাজির হয়েছে। পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় এখন পর্যন্ত মার্কিন নীতির সবচেয়ে অনুগত বন্ধু। এই আনুগত্যই ধর্মযুদ্ধের সম্ভাবনাকে পাঁকিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। কিভাবে সেটা ঘটবে আমরা জানি না। আমরা কেবল কয়েকটি লক্ষণ পর্যালোচনা করতে পারি।

ফাঁসির ব্যাপারটা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটা চাপা অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে। অপরাধীর বিচার হবে-এটা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ কোনো আপত্তি কখনও করেনি। আপত্তিটা উঠেছে মূলত গণআকাঙ্খার সাথে সরকারের কৌশলী আচরণকে কেন্দ্র করে। বিচারের প্রক্রিয়ার মধ্যে শুরু থেকে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আন্দাজ করা যাচ্ছিল। নির্বাচনের সব রকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তথাকথিত সাংবিধানিক নিয়মে আওয়ামী লীগ যেভাবে ক্ষমতালিপ্সার নজিরবিহীন রাজনীতি শুরু করেছে, তাতে বিচারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কালিমা এড়াতে পারেনি।

জামায়াত স্বাভাবিকভাবেই এটাকে জুডিশিয়াল কিলিং আখ্যায়িত করে ব্যাপক সহিংসতার পথ ধরে। ফাঁসির পরে সারা দেশে যেন লাশের উৎসব শুরু হয়। সরকারী বাহিনী দেশের বিভিন্ন অংশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে নির্মূলের রাজনীতি বাস্তবায়ন করতে নেমে পড়েছে তা দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। পাল্টা আক্রমণের কৌশল দেখে স্পষ্টতই মানুষ বুঝে গেছে দেশে শুরু হয়েছে গৃহযুদ্ধ। এই অবস্থায় কোনোকিছু নির্বিকারভাবে পর্যালোচনার স্থিতিশীলতাও আমরা হারিয়ে ফেলেছি। যথারীতি শাহবাগ আগের ভূমিকায় আবার ফিরে এসেছে। কিন্তু এবারের ফিরে আসাটা আরও ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে আমাদের নিয়ে যাবে। এই দিকটি নিয়ে আমরা কিছু কথা বলব আজকে।

বাংলাদেশ কিম্বা বর্তমান বিশ্বের কেউ আর ‘৭১ সালের বাস্তবতায় নেই। কিন্তু তাই বলে ‘৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা যাবে না তা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিচার আমরা চাই। বিচার হতে হবে। কিন্তু সেটা বিচারই হতে হবে। কোনো প্রেশার গ্রুপকে সংযুক্ত করে বিচার নিয়ে রাজনীতি হলে সেটা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বেইমানি। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সীমাহীন সম্ভাবনা চিরতরে বিনষ্ট হয়। জাতি বিভক্ত হয়ে পড়ে চলমান রাজনৈতিক ক্ষমতার হিংসার আলোকে। ফলে জাতীয় চেতনার নামে একতরফা জবরদস্তি বা যেটাকে আমরা ফ্যাসিবাদ বলে জানি তা হাজির হয়। এর মধ্যে কোনো ইসলামী দলের নেতাকে ফাঁসি দিয়ে চেতনার জোয়ার তুলে ক্ষমতার রাজনীতি যে বিভাজন তৈরি করে তা ধর্মযুদ্ধের পরিবেশ প্রস্তুত করে দেয়। তখন মুখোমুখি দাঁড়ায় ইসলাম ও জাতীয় চেতনা।

কিন্তু এটা এত সরলভাবে ঘটলে আতংকিত হওয়ার মহান কোনো কারণ ছিল না! ব্যাপারটা আমদের নিজেদের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। মার্কিন রাজনীতির ছক অনুযায়ী আমরা যদি ব্যাপারটা খেয়াল করি তাইলে পরস্থিতি যা ইঙ্গিত করে তাতে আঁতকে না উঠে উপায় নাই।

আমরা দেখেছি, ওয়ার অন টেররের প্রজেক্টে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন ইন্টারভেনশন হয় ইসলামপন্থি জাতীয়তাবাদীদের কাজে লাগিয়ে। সরকারের ফ্যাসিবাদি আচরণের কারণে সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতার রাজনীতি করা একটি দলকে নির্মূল করবার কারণে সমাজে একটা বদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলকে তুরুপের তাসের মত উড়িয়ে দিচ্ছে লীগ সরকার। এই জবরদস্তিতে কৌশলে সেনাবাহিনীকেও যুক্ত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সৈনিক মর্যাদার ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই সতর্ক। কিন্তু এখকার সেনাবাহিনীর পুলিশি ভুমিকা সেনার ইজ্জতের দিক থেকে যেমন হুমকি, তেমনি জনমানুষ এই সেনাকে সরকারের খেয়ালখুশির পুতুল বলে মনে করবে। দেশের মানুষ সেনাবাহিনীর এই ভূমিকায় আহত বোধ করবে সন্দেহ নাই।

এই অবস্থায় পাল্টা প্রতিরোধ যেটা গড়ে উঠবে বা যারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়াইয়ে শামিল হবে সেটা কোনো না কোনো ভাবে ইসলামী শক্তি। তার নাম যাই হোক তার সাথে ইসলামের কোনো না কোনো যোগ আছে। এই ধারার ইসলামী আন্দোলন যেন মার্কিন আধিপত্যকে কোনোভাবেই হাল্কা করতে না পারে তার জন্য ৯/১১-এর পরে আমেরিকা একটা প্রকল্প চালু করে এর নাম ‘র‍্যান্ড’ প্রজেক্ট। এতে সালাফিস্ট ধারাকে উৎসাহিত করা হলেও মূলত প্রাধান্য দেয়া হয় পশ্চিমা ধাচের গণতন্ত্র মেনে যেন মুসলিম দেশগুলো একটা আধুনিকতাবাদি পুঁজিবাদের অনুকূলে রাষ্ট্রকাঠামো দাঁড় করাতে পারে।

সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন এনজিওগুলোকে ব্যাপক তহবিল সবারহ করা হয়। এর টেস্ট কেইস আকারে ঘটানো হয় আরব স্প্রিং। বলাই বাহুল্য এই  ‘র‍্যান্ড’ প্রকল্প ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। আরব স্প্রিং আধুনিকতাবাদি পথ ধরে মুসলিম দেশগুলোকে পরিচালনার কাজে হাত না নিয়ে সেখানে বরং বিভিন্ন জেহাদি গ্রুপ শক্তিশালী ভিত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এটা উল্টা ফল ফলেছে।

শুরুতে অনেকে শাহবাগকে ‘র‍্যান্ড’ প্রজেক্টের সাথে যুক্ত বলে অনুমান করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন যেতেই পরিষ্কার হল, এই অনুমানের কোন ভিত্তি নাই। বরং গেইমটা উল্টা দিক থেকে দেখা যেতে পারে। শাহবাগ না এখন বিবেচনায় চলে আসবে শাপলা। অবশ্যই অগ্রভাগে থাকবে জামায়াত। যদিও আমরা জানি, জামায়াত আর হেফাজত এক না। কিন্তু আদর্শের দ্বন্দ্ব আর লড়াইয়ের মাঠ এক না -এটাও আমরা জানি। কিন্তু কোনো মার্কিন ছক হুবহু কাজে আসবে না তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি। কারণ অলরেডি জিহাদি সংগঠন তালেবান গণজাগরণকে থ্রেট করে বসেছে। সাম্প্রতিক এক ভিডিও ভাষণে আলকায়েদা প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরী বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এই ঘটনা অবশ্যই অতি গুরুত্বের সাথে আমাদের আমলে নিতে হবে। তিনি সেখানে বলছেন, “বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়েছে, সেখানে সরকার আলেমদের শহীদ করছে, তাদেরকে জেলে বন্দী করে রাখছে, নবী করিমকে (সা.) নিয়ে কটুক্তিকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে, হাজার হাজার সাধারণ মুসলমানদেরকে শহীদ করা হচ্ছে।’’ [http://www.youtube.com/watch?v=2CryRD4OTb8]

ফলে  ‘র‍্যান্ড’ প্রজেক্ট এর মতো কোনোকিছু বাংলাদেশে করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তবে এই বিষয়ে আগাম কথা বলার কিছু নাই। মাঠের লড়াই তো আর সবসময় বইয়ে ত্তত্ব মেনে হয় না। গ্র্যান্ড ডিজাইনের সাথে পরিচয় থাকাটাই আমাদের জন্য প্রাথমিক কাজ। এই প্রজেক্ট যে কোনো কাজে আসবে না তা আল-জাজিরার সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইউসুফ আল কারযাভী পরিষ্কারভাবে বলে দেন, “আমেরিকা তার সুবিধার জন্য একটা ইসলাম চায়। কিন্তু সেটা আর ইসলাম হবে না। সেটা হবে আমেরিকান ইসলাম।”

তিনি আরও বলেন, চরমপন্থা ৯/১১-র ঘটনার আগে থেকেই ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। চরমপন্থীরা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। শুধু মুসলমানদের মধ্যে চরমপন্থা আছে, এটা মোটেও ঠিক নয়। চরমপন্থীরা ইহুদীদের মধ্যেও আছে। চরমপন্থীরা রবিনকে হত্যা করেছে। চরমপন্থার আরো বড় বড় উদাহরণ রয়েছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা দুর্ঘটনা। ব্রিটেন, জাপান, ভারতসহ দেশে দেশে চরমপন্থীরা রয়েছে। তাহলে কেন মূলত ইসলামের সাথে চরমপন্থা ও সহিংসতার অপবাদ জুড়ে দেয়া হচ্ছে? এটি ভয়াবহ অবিচার” [আল-কারযাভী: আল-জাজিরা,বিন কিন্নাহ-এর সাথে আলাপ]

সেই দিক থেকে বিচার করলে বাংলাদেশের ব্যাপারে একটা নীতিগত অবস্থান আমেরিকার আছে। এটা বোঝা যায়, জামায়াতের সাথে তাঁদের সম্পর্কের ধরণ দেখলে। সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের উত্থান এই সম্পর্কের ধরণে নতুন ডাইমেনশান তৈরি করেছে। ফলে বাংলাদেশের ইসলাম যখন রাজনৈতিক ময়দানে হাজির এবং গৃহযুদ্ধের অবস্থা বিরাজ করছে, এই অবস্থায় সাম্রাজ্যবাদের নীতি আমাদের ছেড়ে দিবে না তা হলফ করে বলতে পারি।

ইতিমধ্যে ২৫ নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১১৫ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগ জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। অন্যদিকে বাংলাদেশে ইসলামের কোনো ধরণের জাগরণ হলে এর প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্ব-ব্যবস্থায়। সবচেয়ে হুমকিতে পড়বে ভারত। আমেরিকা ৯/১১ এর পরে মুসলমানদের ব্যাপারে কোনো একতরফা বিবেচনা আর বজায় রাখেনি। ইসলামের সেকুলার ধারাকে ক্ষমতার রাজনীতে সে বরাবরই উৎসাহিত করে আসছে। এখন কী ভুমিকা নেবে তা দেখবার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে, বলা যায় দুইটা অপশন সামনে আছে, এক.হাসিনাকে যে কোন মূল্যে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা এবং বিএনপি-জামায়াত জোটকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা। ২. শেখ হাসিনা যদি নির্মূলের পথ থেকে সরে না আসে তাহলে যে ইসলামী জাগরণের সৃষ্টি হবে তার সুযোগে ওয়ার আন টেররের প্রকল্পের আদলে বাংলাদেশে মার্কিন খবরদারি বৈধ করা। প্রথম সমাধানের দিকে এখনও পশ্চিমা দেশগুলো বেশি মনযোগী।

আর দ্বিতীয় ধাপটি চূড়ান্ত অ্যাকশন হিসেবে বিবেচনায় আসবে। কিন্তু কোনোভাবেই ভারতের হাতে দক্ষিণ এশিয়ার খবরদারি দেয়া যাবে না। ভারতের ব্যাপারে কঠোর মার্কিন মনোভাব পরিষ্কার হয়ে গেছে। দেবযানীকে উলঙ্গ (স্টিভ সার্চ) করা নিয়ে ভারতের প্রতিবাদের প্রতি ভ্রক্ষেপ করেনি আমেরিকা। ভারতের সব আপত্তি উড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিনীদের এই কঠোর অবস্থান অনেককে অবাক করেছে। কিন্তু তাঁদের পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্যের দিকে তাকালে বিষয়টাকে আর অস্বাভাবিক মনে হবে না। বিখ্যাত মার্কিন পররাষ্ট্র ব্যাক্তিত্ব হেনরি কিসিঞ্জার তাঁর সুবিদিত ডিপ্লোমেসি বইতে বলেন, “Almost as if according to some natural law, in every centuty there seems to emerge a country with the power, the will, and the intellectual and moral impetus to shape the entire international sestem in accordance with its own values.”

[The New world Order, DIPLOMACY; Henry Kissinger: SIMON&SCHUSTER PAPERBACKS, NEWYORK edition]

এই শতাব্দী মার্কিন আধিপত্যের শতাব্দী এটা তাঁরা প্রাকৃতিক নিয়মের মতোই মনে করে। বলাই বাহুল্য এই শিক্ষা ইউরোসেন্ট্রিক শিক্ষা। পরে কিসিঞ্জার ইউরোপের অন্য দেশগুলোর আধিপত্যের ফিরিস্তি হাজির করে এখনকার মার্কিন আধিপত্য যে গোটা বিশ্বব্যবস্থার জন্য খুব স্বাভাবিক -এই আলোচনা করেন। এই সাম্রাজ্যিক বাসনার দিকে যদি আমরা খেয়াল রাখি তাহলে আমরা সহজেই বুঝতে পারব আগামী দিনে আমাদের সামনে যে লড়াই হাজির হচ্ছে তাতে মার্কিন হস্তক্ষেপ অবধারিত। এই লড়াইয়ে আমরা কী করব তাই দেখবার বিষয়। আরামপ্রিয় দ্বি-দলীয় ক্ষমতা বৃত্তের বাইরে এই প্রথম বাংলাদেশে নয়া বাস্তবতা বড়ই অসময়ে হাজির হচ্ছে।

ফলে এই জাতীয় প্রতিরোধ ইসলামের চেহারা যেমন নিবে, এর সাথে দুনিয়ার অন্য ইসলামী লড়াকু শক্তিও শামিল হবে। এটাকে থামাতে এবার পরাশক্তির হস্তক্ষেপের পথে আর কোনো বাঁধা থাকবে না। ফলে যতই মনে হোক জামায়াতের পক্ষে আমেরিকা আছে, বিএনপির পক্ষেও আছে। খোলা চোখে যতই মনে হোক এক ভারত ছাড়া আর সবাই তাদের পক্ষে আছে, ব্যাপারটা তেমন সরল না। মার্কিন আধিপত্য কোনো সুযোগকে হাতছাড়া করবে -এমনটা মনে করার কোন কারণ নাই। এটা আমি বলছি ইতিহাসের শিক্ষা থেকে। বাংলাদেশে হুবহু একই ঘটনা ঘটবে তা বলছি না। প্রত্যেক ঘটনার কিছু সৃষ্টিশীল ডাইমেনশান থাকে, যা আগাম বলে দেবার কিছু নাই। তারপরেও এখনকার ঘটনাসমূহ পর্যালোচনা করলে আমরা বিষয়গুলো পরিষ্কার ধরতে পারব।

ফাঁসি ও জাতীয় চেতনার ফাঁদ

একটা ছোট চায়ের দোকান। ১২.১২.১৩ ইং, রাত ১১টায় টিভিতে ইমরান এইচ সরকার কথা বলছিলেন নিউজ বাইটে। ফাঁসির খবরে তখন শাহবাগ আনন্দে ভাসছে। সেই আনন্দে দোকানের কিছু লোকও দেখলাম হাসতেছে। হঠাৎ দোকানদার বলতেছে- ‘হালারা কেমুন, জিন্দা একটা মানুষ মইরা গেল আর হালারা নিটকাইতেছে কেলাই দিয়া খবর দেখতাচে’ একটু আগেও মানুষটা জীবীত ছিল।‘ অবাক হইলাম, সে যে রাজাকার ছিল তা তো দোকানদার একবার বলতেছে না । এটা তো তার মনে আইল না। কেন? সমস্যা কী?

আর রাতে ফেসবুক-ব্লগে আনন্দ আর বেদনার পাল্টাপাল্টি জোয়ার ছিল। আর যারা একাত্তরকে ক্রিটিক্যালি দেখেন সেই সব মানুষের মধ্যে এক চাপা অস্বস্তি বিরাজ করছিল। জামায়াত কাদের মোল্লাকে সাইয়েদ কুতব অব বাংলাদেশ ঘোষণা করেছে ফাঁসির সাথে সাথে। তাঁরে ইসলামের জন্য শহীদ ঘোষণা করেছে। সেই মোতাবেক পরদিন জুমার নামাজের পর ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক সহিংসতা ঘটায় দলটির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মিরা। এই আগুন ছড়িয়ে পরে সারা দেশে, শুরু হয় পাল্টাপাল্টি খুনাখুনি। খবরের কাগজ লাশের খবরে ভরে ওঠে।

অবাক হয়ে খেয়াল করি, কাদের মোল্লার ফাঁসি জনসমাজে একটা ভুতুড়ে অবস্থা তৈরি করেছে। সাধারণ পাবলিক প্রশ্ন করছে, আচ্ছা লোকটা না অপরাধী ছিল তাইলে তাঁর জন্য যে আবার আন্দোলন হচ্ছে? সে নাকি চিঠি দিয়ে কইছে কসাই কাদের আর সে এক না। মরার আগে মানুষ তো আর মশকারি করে না?

আমরা যদি এই জনমনোভাবকে বুঝবার চেষ্টা করি, তাইলে অনেকগুলো বিষয় বুঝতে সুবিধা হবে। এক. ৭১ এর ন্যারেশন কি আদতেই একটা মধ্যবিত্ত ন্যারেশনে পরিণত হয় নাই এত দিনে? কারণ কসাই ইমেজ তো মধ্যবিত্তের বাইরে খুব বেশি কমিউনিকেটিভ হচ্ছে না। দুই. এই চেতনার প্রতি তো সরকারের অবস্থানের কারণেই মানুষের আর আস্থা নাই। এই অবস্থায় শাহবাগ যদি প্রবল প্রতাপ গড়ে তুলতে না পারে তাইলে তো সরকার বিপদে পড়ে যাবে। তাই শাহবাগ আছে সরব ভুমিকায়।

স্কাইপে কেলেংকারি আর বিচারপতিদের খামখেয়ালি তো মানুষ জানে। আদালতের প্রতি কোন সুস্থ মানুষের তো আস্থা নাই। ফলে দুর্বল জাতীয়তাবাদী চেতনার ওপর দাঁড়িয়ে এই ধরণের একটা ফাঁসি আওয়ামী লীগের জন্য অনেক ঝুঁকির হয়েছে সন্দেহ নাই। এখন একাত্তরের ন্যারেশনকে খুব শক্তিশালীভাবে হাজির করতে হবে। কোনো গাফিলতি করা চলবে না।

এই হাজিরা বলাই বাহুল্য, একাত্তরের আকাঙ্খা মেটাতে পারবে না। এটা কাজ করবে সাংবিধানিক ফ্যাসিজম কায়েম করতে। এইটা বিনা মুশকিলে হলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু ঝামেলা হয়ে গেছে, জামায়াত কাদের মোল্লাকে ইসলামের জন্য শহীদ ঘোষণা করে ফেলেছে। মোল্লাও বলে গেছেন তাঁর রক্তের বিনিময়ে যেন ইসলাম কায়েম করা হয়। ফলে ইসলামের ন্যারেশনের সাথে ‘৭১ এর আওয়ামী ন্যারেশনের লড়াই শুরু হয়ে গেল। জামায়াতের ইসলাম একমাত্র ইসলাম না, এটা আমরা সবাই জানি। জামায়াতের বাইরেই আছে ইসলামের মূল ধারা। কিন্তু জামায়াত ইসলামের নামে রাস্তায় যখন মার খাবে, তখন ধর্মযুদ্ধ শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে।

লীগের বা বামদের ইসলামকে পশ্চাৎপদ মনে করার যে কালচারাল এটিচুড তা মানুষ এতদিনে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে ফেলেছে। ফলে এই অবস্থার মধ্যে লড়াইয়ে কালচারাল শক্তিটা যে প্রতিরোধের মুখে পড়বে তা এখনও আমরা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। যারা এখনও রাজাকারী ডিসকোর্স নিয়ে আছে, এটা তাদের বুঝবার কথাও না। রাজনীতি বহু আগেই রাজাকারের পরিমণ্ডল পার করে ফেলেছে।

ক্ষমতার ব্যবহারিক বা এখনকার বাস্তব প্রশ্নটাই মানুষ আগে বিচার করছে। শুধু বুদ্ধিজীবিরা স্মৃতি কাতর হয়ে আছেন এখনও। ফলে মানুষের মনে ফাঁসিকে কেন্দ্র করে ‘৭১-এর মতোই অস্বস্তি আবার ফিরে আসল। এতে সরকারের পক্ষে লোক থাকবে না বা সরকার ভ্যানিশ হয়ে যাবে -এটা মনে করার কোন কারণ নাই। আমি শুধু বলছি, এই গুমট মনোভাবের মধ্যে ভায়োলেন্সের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়ে আছে তা নতুন রাজনীতি দিতে না পারলেও (নতুন রাজনীতির তো এজেন্সি হাজির নাই -এটাই সঙ্কট) এই প্রথম, সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রশ্নে বাংলাদেশে রক্তারক্তি হতে যাচ্ছে।

আর এতে নানা কারণে ইসলাম ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ মুখোমুখি দাঁড়ানো। এই অবস্থায় কূটনৈতিক বুঝের সমাধান যে কোন কাজে আসছে না তা আমরা ধারাবাহিক ভাবে দেখছি। পিল্লাই সতর্ক করেছেন, তারানকো ব্যার্থ হয়ে ফিরে গেছেন। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, সবাই চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছে বাংলাদেশের ব্যাপারে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে বাংলাদেশ এখন গৃহযুদ্ধ কবলিত এমন খবরই ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। এই অবস্থা আমাদের কোনো শুভ পরিণতির দিকে যে নিয়ে যাচ্ছে না তা পরিষ্কার বুঝা যায়।

এর কারণ হল, ৭১ এর চেতনাকে আমরা গণবিচ্ছিন্ন ক্ষমতার কাজে ব্যবহার করেছি। এই চেতনার প্রকৃত অর্থে কোন সামাজিকীকরণ করিনি। বরং উপনিবেশি সাংস্কৃতিক ও জীবনদৃষ্টি উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে এমন একটা ভাব পয়দা করেছে যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ভোগবাদী জীবনচর্চা মিশে একাকার হয়ে গেছে। এর সাথে আধুনিকতার উগ্র ইসলাম বিদ্বেষ যুক্ত হয়ে প্রগতিশীলতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দাঁড় করিয়েছে ইসলামকে। এই একরোখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন মরণ ফাঁদ হয়ে নেমে আসছে। মোহনায় দাঁড়িয়ে উৎসের দিকে ফিরে তাকাতে হয়-এটা আমরা স্বাধীনতার বেয়াল্লিশ বছরেও করিনি।

ইতিহাসকে দলীয় ক্ষমতার স্বার্থে ব্যবহার করে বিভাজন জিয়িয়ে রেখেছি। বিভাজনটা সমাজে পরিষ্কার হয়ে গেছে। শাহবাগ আর শাপলা। শাপলার ভাগে আছে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ যারা সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে তথাকথিত মূলধারার চেতনার চেয়ে পিছিয়ে আছে। তাদের আমরা সমাজের বাইরে আলাদা রেখে নিজেরা একতরফা চেতনার অনুসারী হয়ে আধুনিকতার জীবনদৃষ্টিকে কবুল করে নিয়েছি। ওদের বলেছি মধ্যযুগীয়, বর্বর পশ্চাৎপদ। কারণ তিনারা আজও ধর্মতত্বের আদর্শকে জীবনের মূল আদর্শ মনে করে। আমরা ইসলামের সাথে বাংলার সামজিক বিকাশের সম্পর্কের আলোকে নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আকারে গড়ে উঠিনি। অতি ক্ষুদ্র শ্রেণীস্বার্থে ব্যবহার করেছি ‘৭১-এর চেতনাকে। মুক্তিযুদ্ধের তাবত অবদানকে স্বাধীনতার পরপরই কুক্ষিগত করেছি নিজ নিজ স্বার্থে। স্বাধীনতার সামাজিকীকরণ হয় নাই বাংলাদেশে। তাই সবার অংশ গ্রহণে ‘৭১ হলেও শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা হয়ে উঠেছে এলিটিস্ট মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধকে আমরা গণচেতনা করে তুলতে পারিনি। কেন পারিনি তার হদিস খুব কঠিন কিছু না। নানা কারণের একটা হল সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছি শুরু থেকেই।


পাকিস্তানফোবিয়া

পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে আর্ন্তজাতিক মনযোগের কেন্দ্রে আছে গত কয়েক দশক ধরেই। সেনাবাহিনীর সাথে পাকিস্তানের জনগণ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অনেক বড় বড় গবেষণা হয়েছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন গোত্র ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে আলাদা আলাদা ডাইমেনশান নিয়ে হাজির আছে। পশতুন জাতীয়তাবাদের প্রভাবের কারণে আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক শুধুমাত্র কৌশলগত নয়। আমরা দেখেছি, পাকিস্তান একই সাথে আলকায়েদা, তালেবান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জটিল সম্পর্ক বজায় রেখে নিজের তৎপরতা জারি রেখেছে ওয়ার অন টেরর প্রকল্পে। বিশ্বরাজনীতিতে পাকিস্তানের এখনকার ভূমিকা গ্লোবাল রাজনীতিতে অতি গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়।

আমরা একাত্তরে যে ঘাতক সামরিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সেই পাকিস্তান আর আগের জায়গায় স্থির নেই। কিন্তু আমরা পাকিস্তানের জান্তা নিপীড়নের প্রতি যে ঘৃণা ধরে রেখেছি তা গোটা পাকিস্তান সম্পর্কে আমাদের চিন্তাকে বর্ণবাদি ক্ষুদ্র জায়গায় আটকে রেখেছে। চলমান বিশ্ব রাজনীতিতে পাকিস্তান এর ভূমিকাকে র্নিমোহভাবে দেখবার কোনো গরজ আমরা অনুভব করি না। এটা আমাদের জন্য খুবই অনুতাপের বিষয়।

এবারের ওআইসি সম্মেলনে ইসলামোফোবিয়া নিয়ে একটা রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামোফোবিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিকভাবে এমন জায়গায় দাঁড় করিয়েছে যে, পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ইসলামের বিভক্তিকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আর এই কাজের জন্য যে ভুমিকে পশ্চিমারা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে তার নাম ‘পাকিস্তান’ / ফলে আামাদের এখানে পাকিস্তানফোবিয়া আর ইসালোমোফোবিয়া একই অর্থ বহন করে। আর এটাকে উস্কে দেবার জন্য আছে অতীত পৈশাচিক শাসকদের প্রতি ঘৃণাকে পাকিস্তানের নামে ছড়িয়ে দেয়ার কূট-রাজনীতি। পাকিস্তান নিয়া এখানে আলাপের অবসর নাই। আমি কয়েকটা পয়েন্টে বাংলাদেশে পাকিস্তান -সম্পর্কে দৃষ্টি ভঙ্গি ও সাম্প্রতিক পারিপার্শিকতা তুলে ধরব মাত্র।

এক. পাকিস্তান সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা ছিল শ্রেণী ঘৃণার। ৯/১১ -এর পরে এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইসলামোফোবিয়া। এখন পাকিস্তানফোবিয়ার দুই মৌল উপাদান হল : ১. একাত্তরের শাসকদের প্রতি ঘৃণা থেকে উৎসারিত ঘৃণা। পাকিস্তান মানেই বর্বর, অসভ্য, ধর্ষক ইত্যাদি রটনার রাজনীতি। ২. পাকিস্তান আধুনিক গণতন্ত্রের পথে কোনো সফলতা হাসিল করতে পারেনি। এটা তালেবানের ঘাঁটি। এরা আলকায়দার মদদদাতা। লাদেনকে এরা পালে। এরা জঙ্গি। এদের কোনো ভবিষ্যৎ নাই। ওরা নিকৃষ্ট।

এই দুইটা দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে প্রচারণার প্রভাব ছাড়া আর কিছু নাই। একাট্টা পাকিস্তান বলে কিছু নাই। সেখানে নানা শ্রেণীর মধ্যে সংঘাত আছে। ইসলাম প্রশ্নেও সমাজিক ও রাজনৈতিক নানা ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি আছে। কিন্তু সমাজে ইসলামের একটা প্রভাব সেখানে বরাবরই ছিল। এবং এখনও আছে। যা হোক শাসক শ্রেণী আর পাকিস্তানের জনগণ এক না। এটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। একাত্তরে পাকিস্তান সরকারের ভুমিকা আজকের সরকারের মতই ছিল। পাকিস্তান কী করেছে তা বুঝার জন্য একাত্তরে জন্ম নেবার দরকার নাই। লীগ ও যৌথবাহিনী এখন যা করছে পাকিস্তান ও তাদের অনুসারীরা একই কাজ করেছে। তবে তখন কিছু কিছু কাজের লক্ষ্য ছিল মানুষকে বাঁচানো। এখন একমাত্র লক্ষ্য হল মারা। হিংসার আগুনে জ্বলছে জনপদ।

দুই. ‘৭১-এ যাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ছিল সেই পাকিস্তানি শাসক আর এখনকার পাকিস্তান রাষ্ট্র এক জিনিস নয়। এখনকার পাকিস্তান বিশ্ব-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমি বলি, আমেরিকা যদি হয় সন্ত্রাসের আব্বা, তাহলে পাকিস্তান তার পালক পিতা। ওয়ার অন টেরর প্রজেক্টে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এবং এই অংশীদারি গোলামীর মত নয়। সে মাঝে মাঝেই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড শো করছে। যেটা আমলে নেবার মত বিষয়। ( এই প্রজেক্টে- র, সিআইএ, আইএসআই, গলায় গলায় ভাব বজায় রেখে বাংলাদেশে ফাংশন করেছে, এখন এজেন্সিগুলা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। ভারতের একতরফা জবরদস্তির কারণে এটা ঘটছে। অলরেডি ভারত-আমেরিকা কূটনৈতিকভাবে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। নারী কূটনীতিক দেবযানিকে স্ট্রিপ সার্চ করে আমেরিকাই প্রচার করিয়েছে যে, ন্যাংটা করে তল্লাশি করা হয়েছে। আর ইন্ডিয়া তো আত্নপীড়ায় ভুগছে। পাল্টা পদক্ষেপও নেয়ার হুমকি দিয়েছে। আমাদের মিডিয়াও বেশ রসিয়ে এই খবর প্রচার করছে। এতে কূটনেতিকভাবে আমরিকা যে মেসেজ দিছে তার সরল মানে হল, ‘তুমি মাতবরি করলে ন্যাংটা কইরা ছাইড়া দিব’ যাহোক কূটনৈতিক লড়াইয়ে অনেক প্রতীকী ব্যাপার থাকে যার গুরুত্ব অপরিসীম। এখানেও তাই হইছে। আর দেবযানী আজ যে প্রতীকী অপমানের শিকার হয়েছেন তার জন্য বাংলাদেশ নিয়ে আমরিকার সাথে সুজাতার বেয়াদবী দায়ি -এটা ভারতের কূটনীতি বিশ্লেষকরা স্বীকার করেছেন। সূত্র: বিডিনিউজ)

তিন. মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বেহুদা পাকিস্তানফোবিয়া ছড়ানো হয়েছে। পাকিস্তানের মুক্তিকামী মানুষের সাথে আমাদের শত্রুতা থাকতে পারে না। হাসিনাও শাসক, ইয়াহিয়াও শাসক। ‘৭১ কইরা আমরা কী করলাম? বিদেশি লোক বাদ দিয়া দেশি বোনের অত্যাচার মেনে নিচ্ছি -এখন এই তো অবস্থা।

চার. যে প্রজন্ম আজ লীগের কূটনৈতিক গেইম না বুঝে পাকিস্তান বিদ্বেষ ছড়ানোকে চেতনার দায়িত্ব আকারে নিয়েছে, তাদের বলি পাকিস্তান কি চিজ তা যদি বুঝতা তাইলে আর এই আরামের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ করতা না। পাকিস্তানকে জড়ানোর কূটনৈতিক তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। তার পুরোটা এখনই আমরা বলতে পারব না। তবে যে লক্ষণ হাজির হয়েছে তা ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে তা বুঝতে কাজে লাগে। এর মধ্য দিয়ে তালেবানের ইন্টারভেনশন নিশ্চিত হয়ে পড়ল। তালেবান হুমকি দিয়েছে গণজাগরণ বন্ধ না করলে পাকিস্তানে বাংলাদেশের দূতাবাস উড়িয়ে দেয়া হবে [সূত্র: পরির্বতন ডটকম]

যুদ্ধটা জাতীয় চেতনা বনাম ইসলামী চেতনার দিকে যাচ্ছে। এর সাথে বিদেশি অস্ত্রধারী সংগঠন যোগ হলে ঘটনা কোথায় যাবে তা আপনাদের অনুমান করতে পারার কথা। তালেবান যখন একে-৪৭ ধরে বলবে, ”গাওতো চেতনার গান”/ রবীন্দ্র সঙ্গীত কি আমাদের রক্ষা করতে পারবে? ফলে সাংস্কৃতিক ঘৃণার পার্ট আকারে যারা পাকিস্তান মানেই বর্বর আর খারাপ এই রকম রেসিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি পালন করেন তাদের বলব, পশ্চিমা একাডেমিতে গিয়ে একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন। পাকিস্তান একবাল আহমেদের মত দুনিয়া কাঁপানো তাত্ত্বিকদের জন্ম দিতে পারে, ইংরেজি সাহিত্যে হাল আমলের অনেক শক্তিশালী লেখক পাকিস্তানের জঙ্গিদশার মধ্যেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেখানে বাংলাদেশ তো এখনও অনেক নবিশ।

আমি তুলনামূলক আলোচনার জন্য কথাটা বলিনি। বা এইগুলো করতে পারলেই জাতি মহান হয়ে যাবে, আমি তাও মনে করি না। যাস্ট অমূলক ঘৃণার চেতনাটা দেখাতে কথাটা বলা। এবং যারা পাকিস্তানকে ঘৃণা করেন, কিন্তু নিজেরা আবার পশ্চিমা দুনিয়ায় আসন পেতে চান, পাকিস্তান তাদের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে আছে। এটা কেমনে সম্ভব হল বিবেচনা করবার বিষয় বটে।

পাঁচ. ক্ষমতার রাজনীতির দিক থেকে এখনকার এই কূটনীতিক গেইমের মর্ম হল, ইউএস লবিকে বুঝানো যে, যেই পাকিস্তান এত দিন র, সিআইএ’র সাথে একইতালে বাংলাদেশে কাজ করেছে তাকে তো আমি কিছু বলি নাই। এখন দেশে চেতনার জোয়ার চলছে। জনগণ ক্ষ্যাপা। আমি অসহায়। প্রতিদিন গণজাগরণের সমাবেশে ক্রমাগত লাঠিপেটা করেও তো থামানো যাচ্ছে না। দেশে তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জোয়ার। আমি কী করব?

মানুষ আমারে চায়… দেখ দেখ দূতাবাস পর্যন্ত পাবলিক খায়া ফেলতে চাইতেছে। আমি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। -সরকারের ওপর ক্রমাগত বিদেশি চাপকে পাশকাটানোর জন্য এই গেইম সরকারের দিকে থেকে ভাল। আমি এর প্রশংসা করি। এতে লাভ দুইটা। ১. পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণাটা উস্কে দেয়া চেতনার ফ্যান্টাসিটা আবার ছড়ানো। ২.আন্তর্জাতিক মহলকে নিজের পিপল বেইস যে মজবুত তা জানান দেয়া।

বলাই বাহুল্য, এই দুইটাই ফ্যাসিবাদের দামি কৌশল। ক্লাসিক কৌশল। কিন্তু ফ্যাসিবাদের জন্য যে ন্যাশনাল ভিত লাগে তা বাংলাদেশের নাই। বাংলাদেশের এই ফেনোমেনাকে আমি বরাবরই কালচারাল ফ্যাসিজম বলেছি। এই কালচারাল ফ্যাসিজম সাম্রাজ্যবাদি রাজনীতির কৌশলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অক্ষম। ফলে এই একরোখা গণবিচ্ছিন্ন ক্ষমতার জেদ শেষ পর্যন্ত বুশের ধর্মযুদ্ধকে দেশে ডেকে আনবে, এতে কোন সন্দেহ নাই। মজার ব্যাপার হল, গণজাগরণের কর্মিদের সরকারী এসাইনমেন্টে হেনস্থা করা হচ্ছে। গণজাগরণের কর্মি জাগরণকন্যা লাকী বলছিলেন, পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হচ্ছে নাস্তিকের বাচ্চা, মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দিতে দিতে। এই ঘৃণার আগুণ এখন সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। হাসিনা কোনোভাবেই এই অবস্থায় জনগণের কাম্য নেতা হতে পারেন না।

ছয়. পাকিস্তানের প্রতি বর্ণবাদি আচরণের কোন মানে হয় না। আমাদের বুদ্ধিজীবিরা পাকিস্তানকে একটা দানব আকারে হাজির করছেন তাদের বলা দরকার, এটা ‘৭১ সাল না। এখন পাকিস্তান অনেক কমপ্লেক্স গেইমে নিজেরে শামিল রাখছে। রিজিওনাল গেইমে পাকিস্তানরে কোনোদিন হম্বিতম্বি করতে দেখবেন না। কিন্তু সে আছে, তার ভুমিকা সমেত আছে। আইএসআই আর সিআইএর দোস্তি তো সুবিদিত। এখন কাদের মোল্লার ব্যাপারে অন্য দেশগুলা যা করছে, পাকিস্তান তাঁর চেয়ে বেশি কিছু করেছে বলে মনে হয় না।

তুরষ্ক বাংলাদেশের সরকারকে দ্বিতীয় ইসরায়েল বলেছে। কেরিও ক্ষেপছেন। তাহলে পাকিস্তানের দোষটা এত বেশি কেন হইছে? কারণ এই তথাকথিত প্রজন্মকে তো পাকিস্তান আক্রমণের স্বাদ দেয়া যাবে না। তাই দূতাবাসমুখি ক্ষিপ্র গমনের মধ্যে একটা যুদ্ধের স্বাদ দেয়া। এটা নগদ লাভ। কিন্তু সাম্রজ্যবাদী চাল তো নগদ লাভে চলে না। তার পরিকল্পনা সুদূর প্রসারী। ‘১৪ সাল এর পরে আফগানিস্তান মিশন শেষ করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন উপস্থিতির জন্য বাংলাদেশ অতি গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক দিন আগে খবরে প্রকাশ হাতিয়া দ্বীপ এলাকায় যৌথ সামরিক উপস্থিতির জন্য বিশাল ভূমি নির্বাচন করা হয়েছে। এটা নিয়ে পরে আর কোনো ফলোআপ দেখিনি।

সাত. আমরা বলতে চাই, খামাখা পাকিস্তানঘৃণার কোনো কারণ দেখি না। বরং পাকিস্তানের নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শামিল হবার জন্য আমাদের প্রস্তুতি দরকার। জালেম শাসক তা যত মহান চেতনারই হোক, তার বিরুদ্ধে আমি মজলুম জনগোষ্ঠির ঐক্যের পক্ষে। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করা দরকার।

শ্রেণী ঘৃণা..জাতি ঘৃণা আমাদের অমানুষে পরিণত করে ফেলবে। মানবিক সত্তার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে জাত-পাত শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে নিজেদের চৈতন্যকে বিকশিত করতে না পারলে আগামী দিনের বিপ্লবী লড়াইয়ে বাংলাদেশ কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। নিজেদের জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক উত্থানের সাথে এই উদার মানসিকতার চর্চাও অতিজরুরি।

ভারতের এনডিটিভি খবরে জানিয়েছে, ২০১৪ সালের টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বাংলাদেশে আসা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান উদ্বোধনী ম্যাচ বাংলাদেশে না হলে ২৫ ভাগ আয় থেকে বঞ্চিত হবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। খেলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব পুঁজির যে প্রসার, তাতে বাঁধ সাধল রাজনৈতিক কারণে উস্কে দেয়া পাকিস্তান বিদ্বেষ। এর ফলে বাংলাদেশ যে রাজনৈতিক ভাবে জঙ্গি অবস্থায় নিপতিত হয়েছে, বিশ্ব মিডিয়ায় সেই খবর ঘটা করে প্রচার করা হবে। এটা আমাদের ইমেজের জন্য ভয়াবহ সংঙ্কট সন্দেহ নাই।

এখনকার সংকট

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে এতদিন যারা হাসিনা খালেদার ক্ষমতার লড়াই আকারে দেখেছেন, তাদের গণধিক্কার দিতে হবে। এই ধারা বিচার-বিশ্লেষণের ঐতিহ্য আমাদের রাজনৈতিক পর্যালোচনার পরিমণ্ডলকে যথেষ্ট সংকীর্ণ করে রেখেছে। আমরা গ্লোবালাইজড কথাটা মুখে বলি বটে কিন্তু এর সাথে আমাদের সম্পর্কের ধরণ ও নিজেদের অবস্থানকে কখনও বিচার করে দেখি না। ফলে বাংলাদেশ কিভাবে বিশ্বরাজনীতির সাথে সম্পর্কিত তার সমগ্র পরিচয়টি আমাদের সামনে ধরা পড়ে না। কিছু মুখস্ত কথাবার্তা শুনেই আমরা কাজ চালিয়ে নেই।

যা হোক সেনাবাহিনী নামবে এই রব অনেক আগেই জারি হয়েছে। সেনা নেমেছে ঘোষণা দিয়েই। খবরে প্রকাশ, ‘নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এবার সশস্ত্র বাহিনীর ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হবে। এরা ভোটগ্রহণের পরও বেশ কয়েক দিন মাঠে থাকবেন। এ কারণে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত বাজেটও দ্বিগুণ করা হচ্ছে। [প্রথম আলো ২১-১২-২০১৩]

সেনাবাহিনী এখন পুলিশি ভুমিকায় নামল। এতে যে আমাদের দেশের মানুষের কাছে সৈনিকের মর্যাদা আর আগের জায়গায় থাকল না তা আমাদের জন্য অনুতাপের বিষয়। আমাদের সেনাদের সৈনিক মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ ব্যাপারে গণসচেতনতার খামতি অপরীসীম। এটা নিয়ে আলাদা লিখব।

বাংলাদেশের এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়ার রিপোর্টিংয়ের ধরণ খুব মনযোগ দিয়ে খেয়াল করবার বিষয়। ফাঁকে বলে নিই, এর আগে এক লেখায় (বিচার নিয়ে রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের আর্বিভাব : আমার দেশ) বলেছিলাম, মার্কিন দেশের সাথে জামায়াতের মিত্রতার কৌশলগত দিক খতিয়ে দেখা দরকার। তাঁরা একদিকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়, আর অন্যদিকে মানবাধিকারের দাবি তুলে জামায়াতকে উস্কে দিচ্ছে। জে র‍্যাপের সফরের সময়ই ব্যাপারটা আঁচ করা গিয়েছে। এখন এই সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে পশ্চিমা মিডিয়া যে স্টাইলে বাংলাদেশ নিয়ে রিপোর্টিং করছে তা দেখলে পরিষ্কার হবে যে আমি কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা বলছি না।

শাহবাগ উত্থানের পরে প্রথম যে লেখাটি লেখি তার শিরোনাম ছিল-গণহত্যার রাজনীতি ধর্মযুদ্ধে প্রবেশ (চিন্তা ডটকম, ৬ মার্চ ২০১৩)/  তাতে জামায়াতের রাজনীতিকে জঙ্গিবাদি রাজনীতি আকারে হাজির করে নির্মূলের তাৎপর্য ব্যাখ্য করার চেষ্টা করেছিলাম। পরে ঘটনাটা সেই দিকে ধিরে ধিরে বাঁক নিলে বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। ক্ষমতাধর সাময়িকী ইকোনোমিস্ট সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে লিখেছে,

“আওয়ামী লীগ জিতবে, তবে বাংলাদেশ হেরে যাবে। ইকোনোমিস্টের অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নিজের শাসনকাল বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সেগুলোকে একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক ‘ধাপে ধাপে চলা অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রধান বিরোধী দল ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। এ সুযোগে নিশ্চিত জয়ের পথে চলছে শেখ হাসিনার দল। বৈধতার প্রশ্ন এখানে বাহুল্যমাত্র।”

[www.economist.com/news/asia/21591887-ruling-party-will-win-bangladeshs-election-country-will-los]

এই অভ্যুত্থান কে করছে? সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের লাইনে বিএনপি তো নাই। বিএনপি টেবিল রাজনীতির সমাধানে অনেক বেশি আগ্রহী। সাথে চাপ প্রয়োগের জন্য ধারাবাহিক অবরোধ চলছে। গণঅভ্যুত্থান তাইলে কে ঘটাবে? বলাই বাহুল্য, জামায়াত জীবন-মরণ লড়াইয়ে নিপতিত হয়েছে। গ্রামে গ্রামে যেভাবে লীগ-যৌথবাহিনী ও জামায়াত যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে তাতে ‘মর না হয় মারো’ এমন পরিস্থিতি তৈয়ার হয়েছে। দেশে গৃহযুদ্ধ চলছে। সামনে এটা আরও বেগবান হবে নানা ডাইমেনশান তৈয়ার হবে তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। অভ্যুত্থান হবে সেটা গণ না কী তা বলা যাচ্ছে না।

গণঅভ্যুত্থান কল্পনার জিনিস না। তার জন্য সমাজে গণরাজনীতির ভিত মজবুত করতে হয়। এন্টি ইম্পেরিয়াল ও ভারতের আধিপত্যকে যারা সশস্ত্র পদ্ধতিতে মোকাবেলা করতে ভূমিকা রাখতে পারতো সেই সব বিপ্লবী রাজনীতির নেতাকর্মীদের গত বিএনপির সময় ক্রসফায়ার নাটকের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সমূলে তাদের অস্তিত্ব বিনাশ করে দেয়া হয়েছে। এই কাজটি করার ফলে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে সাম্রাজ্যবাদের নকশার বাইরে লড়াকু আর কোনো শক্তি সমাজে হাজির রইল না।

অন্যদিকে ইসলামের নামে যারা লড়াই করবে তাদের কারণে ধর্মযুদ্ধ দেশি পরিমন্ডল ছাড়িছে দ্রুতই এটা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত হবে।

একই প্রতিবেদনে ইকোনোমিস্ট বলছে, “সংঘাতময় পরিস্থিতি যত খারাপ হচ্ছে, ভারতের মিত্র আওয়ামী লীগকে ইসলামবিরোধী হিসেবে দেখানোর সম্ভাবনাও তত বাড়ছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতা কুক্ষিগত করাকে সমর্থন করলে তা ভারতের জন্য উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে। তা হবে ‘অপেক্ষাকৃত উগ্র ও কম সেক্যুলার বাংলাদেশ।” (প্রাগুক্ত; ইকোনোমিস্ট)

এই অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা কোন কাগুজে আশার বালী শোনাতে পারছি না। বাস্তবত এটা সম্ভব না। আমরা দেখেছি, হেফাজতের উত্থানের সময় এখানকার তথাকথিত সুশীলরা বাংলাদেশে মার্কিন হস্তক্ষেপ কামনা করে বড় বড় সেমিনার সিম্পেজিয়াম করেছেন। বিশাল প্রবন্ধ লিখেছেন, ন্যাটোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

এই অবস্থায় বাংলাদেশের সংকট ত্রিমূখী রূপ নিয়েছে। একদিকে হাসিনা সরকারের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য হাস্যকর সব আয়োজন, ২. চেতনার ডামাডোলে বিচারিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে ফাঁসির রাজনীতি। ৩. চলতি গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিযোগিতার গ্রাউন্ড তৈরি করে সব দল মিলে নির্বাচন করে আবার কোন দলকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আনা।

কিন্তু জনঅসন্তোষ যে চরম রূপ নিয়েছে তাতে শান্তিপ্রিয় সমাধানের পথ কঠিন হয়ে গেছে। সরকারী দলের নেতারা ঢাকার বাইরে যেতে পারছেন না। তাদের আচমকা আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। সহিংস অবস্থার চরম বিস্তার ঘটেছে। এর মধ্যে সরকারের তরফে বিরোধীদের দমনের মাত্রাও নানাভাবে বাড়ানোর ঘোষণা আসছে ক্রমাগত। এই অবস্থায়ও শেষের পয়েন্টেই সুশীল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু । কিন্তু এই পরিস্থিতির মধ্যে এমটি হওয়া কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

সবচেয়ে বড় কথা হল এটা বাংলাদেশের জন্য কোন সমাধানও নয়। আমাদের রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আকারে গড়ে উঠবার জন্য ধর্ম, বিশ্বাস, জাত, শ্রেণী -নির্বিশেষে যে জনঐক্য ত্বরান্বিত করা দরকার সেটাই এখনকার রাজনৈতিক কাজ। পুরানা চালের সাংবিধানিক রাজনীতি বারবার সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্রই বয়ে আনছে। জনগণের মুক্তির আকাঙ্খা কাগজের পৃষ্ঠায় বন্দি করে গণতন্ত্রের নামে মুষ্টিমেয় কিছু লোকের লুটপাটের রাজনৈতিক বিধান উচ্ছেদ করেই বাংলাদেশ নতুন জন্মের গৌরব নিয়ে নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারে। তার জন্য চাই জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের আপসহীন ঐক্য। আমরা যদি সর্বময় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারি তাইলে জাতীয় আন্দোলনে ইসলামকে সামনে রেখে যারা লড়বেন তাদের ধর্মযুদ্ধের সৈনিক বা জঙ্গি যাই বলুন তাতে কিচ্ছু হেরফের হবে না। নতুন ক্ষমতা কাঠামো তৈরি হবে ধর্মের আশ্রয়েই। ফলে সাংস্কৃতিক ও শ্রেণী ঘৃণার ঘেরাটোপ পার হয়ে আমাদের দ্রুত ঐক্যের পথ খোঁজা ছাড়া উপায় নাই। দেশি-বিদেশী নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য মজলুমর ঐক্যের বিকল্প নাই।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

Flying with broken wings

Jyoti Rahman

Pakistani voters queue outside a polling

A magical realist masterpiece, Salman Rushdie’s Midnight’s Children has weird and improbable events and people juxtaposed against the history of the 20th century South Asia up to the late 1970s. One such improbable fact was that at the time of writing, and thus the story’s culmination, military rulers of the erstwhile two wings of Pakistan had the same first name.

This is not the only parallel between the political history of Bangladesh and post-1971 Pakistan.

Both successor states of United Pakistan started with larger-than-life charismatic leaders, whose rules ended in tragic denouement inconceivable in 1972.  Both giants found governance to be much harder than populist rhetoric, both resorted to un-democracy, and both ended up meeting cruel ends at the hand of their trusted guards.  Both countries succumbed to dictatorships in the 1980s, although the extent and mechanism varied.  In both countries democratic opposition developed.  In both countries, some form of democratic politics came into practice by the 1990s.

But democracy has failed to take root in either, with military interventions or threats thereof, remaining a constant feature.  In both countries, electoral democracy has meant two mutually antagonistic parties/coalitions who differ little on policy, but much on personality and the thirst for power over patronage and privilege.  Both countries have experienced increasing religious extremism. More recently, in both countries, judiciary and media are experimenting with new found powers, not always to the best effect.

Throw in the political economy of NGO-led development in Bangladesh, or the misfortune of being next to a theatre of the Great Game for Pakistan, and it’s easier to see why democracy may have had such a hard time in these countries. Indeed, with increasing NGO activities in Pakistan and the Great Game coming to Myanmar — a theatre closer to Bangladesh — both countries have much to learn from each other’s misfortunes.

2014-01-05T144958Z_01_DHA056_RTRIDSP_3_BANGLADESH-ELECTION-8825

Of course, in Bangladesh, the discourse around Pakistan is so full of vitriolic jingoism that any suggestion of learning something from the Pakistani experience is likely to be met with scorn.  But even outside Bangladesh, there is not much by way of comparative studies of Bangladesh and Pakistan.

William B Milam’s Bangladesh and Pakistan: flirting with failure in South Asia is a rare exception.  This slender —276 pages including reference and index —volume begins with a brief history of the erstwhile united Pakistan, and then tracks the military-civilian back-and-forth in the two countries up to 2008.  The author, a former American Ambassador to both countries, can bring unique perspective to the subject matter.  And the book’s conclusion —the tipping points between real democracy and more of the same in Bangladesh and Pakistan are yet to be reached—is something one can hardly quibble with.

One does not read a retired career diplomat for facts and figures.  And this book is not full of facts and figures.  However, one might expect a lot of interesting anecdotes from someone who served in Bangladesh as the Ershad regime ended and in Pakistan when the Musharraf regime started.  Sadly, Milam does not give us such tidbits.

Instead, he opens up a range of questions that could be, ought to be, explored in depth.  Truth be told, it’s a tad disappointing that Milam does not push any of these issues further.  But then again, at least Milam has written a book.  Surely there are others who can add to the literature.

What are these questions?  One is about the role of India in the two country’s politics.  Another is Islam.  I am going to skirt over these two, not because they are unimportant, but because these are fairly well trodden grounds.

Instead, let me pick up the issue of military involvement, and withdrawal, from politics in the two countries.

From the vantage point of December 1971, one might have expected some form of military involvement in Bangladeshi politics.  The nucleus of the Bangladesh army was the victorious Mukti Bahini, and its commanders like Ziaur Rahman might have expected some say in the new country’s affairs — historically, states founded by guns tend to give armed men some (if not all) power.

However, it should have been a different matter in what was left of Pakistan.  If there was a state where the army rule, directly or otherwise, should have been thoroughly repudiated, it should have been Pakistan after December 1971.  Army rule had lost half the country.  A quarter of the army itself was taken prisoner-of-war by the ‘hated enemy’.  The country was bankrupt, with its major port severely damaged.  The idea that generals could save Pakistan should have died in the swamps of Bengal.

Of course, it didn’t.

ZA Bhutto used the army to silence legitimate dissent in Balochistan. And then, in 1977, he tried to rig an election that he might have won anyway, resulting in months of street violence and political gridlock, which paved the way for Gen Zia-ul-Huq’s grim rule.

That’s the most straightforward reading of things.  Writers as diverse as Tariq Ali or Anatol Lieven agree that Mr Bhutto deserves to be blamed, if not solely or in whole measure, then at least substantially, for the remilitarisation in Pakistan.  So, the question then is, was Pakistan just unlucky to have Bhutto, or was there something about Pakistan that made his power grabs more likely?

Let’s look at the issue from a different perspective.  Milam ends his book with the observation that the prospect of democracy, indeed the very survival of the state, was bleaker in Pakistan than Bangladesh.

As of 2008, Bangladesh army —not formally in charge in the first place — was in the process of handing over power to a democratically elected government.  In Pakistan, on the other hand, there was a shaky coalition facing jihadi violence, with everyone assuming that it was the clean-shaved general and not the mustached civilian who had the ultimate power.

As of 2008, hardly anyone doubted that the incoming Awami League government would finish its five year term.  After all, three previous elected governments had finished their full terms, something no elected government (with possible exception of Mr Bhutto, depends on how one sees things) in Pakistan had done until then.  In Pakistan, at the time, hardly anyone expected Asif Ali Zardari to finish his term peacefully and hold an election in five years’ time.

As it happens, the Awami League did finish its five year term, and has just elected itself —not sure how else to put it politely —for another five years.  But surprising everyone, Mr Zardari also lasted five years in office, as did the Pakistani parliament that was elected in 2008.  For the first time in Pakistan’s history, a democratically elected civilian government handed over power to another such government last year.

So, did Pakistan get lucky with Zardari (or Nawaz Sharif, or Gen Ashfaq Kayani)?  Or did something about Pakistan change between the 1970s, or even the 1990s, to now?

Bangladesh army has shown little interest in running the country in recent years.  Had it wanted to, there were many occasions in the past year where the army could have toppled the government, with a large section of the civil society and opinionmaking class fully cheering on any coup.  But by all accounts, the army has chosen to remain out of politics.  Even its 2007 not-quite-formally-a-coup was at best a half-hearted affair, with full insistence of constitutional fig leaves, no matter how muslin-thin the leaves might have been.

What had changed about Bangladesh army from its coup-prone past?

Why do armies intervene, or not intervene?  Let’s go through a few conjectures.

At the simplest level, perhaps it’s all about the base, corporate interest.  Pay them well, and the armies will be happily in the barracks?  This may well be a major story in Bangladesh.  After all, dal-bhaat grievances were a major (though by no means the only) factor in soldiers’ mutinies of 1975 and 2009.  However, considering the lavishes spent on the forces by the current government, money should not matter for any would be Bangladeshi coupmaker.  And to the extent that no one —not even Bhutto le pere—tried to clip the army’s economic interests in Pakistan, it’s hard to argue that this has been a deciding factor there.

Perhaps the story is a bit more highbrow?

As is widely accepted, Pakistan army sees itself as the ultimate arbiter of that country’s foreign and defense policies, particularly when it comes to relations with India. As long as these domains are untouched, perhaps the generals are content to let the civilians govern.  In that respect, perhaps Pakistan army is similar to the ‘guardian’ armies of Turkey or various Arab republics or Thailand, where the army decides, for whatever historical reasons, that certain areas are no-go for civilian politicians, and they enforce the no‑go-zones through coups if necessary.

Does Bangladesh army see itself in such a guardian role?  When a crisis hits, does it see its role as the national saviour?  In the blood-soaked 1970s, individual officers saw themselves as potential national heroes—call it the curse of the majors.  But from the 1980s onwards, as a collective, perhaps Bangladesh army waits for orders rather than marching to their own bit?  After all, in February 2009, the entire brass held fire and waited for orders that never came.

Of course, this is exactly how it should be.  Armies are meant to be guards, not guardians.  On balance, it’s a good thing that the army has not intervened during Bangladesh’s latest political drama.

But can that remain the case indefinitely?  After all, it was Bhutto’s hubris that allowed Zia’s power grab in 1977.  Could something like that happen yet again?

Even if it doesn’t, it’s important to understand that military rule is not the only obstacle to democracy in Bangladesh and Pakistan —a theme that runs through Milam’s book, and one that needs to be explored further.  After all, it was Mr Bhutto who opened the door for the generals to march back in.  So, the question again, was Pakistan unlucky with Mr Bhutto, or was there something about Pakistan?  And more recently, did it get lucky with Messrs Zardari and Sharif, or has something changed there?

Here is another conjecture —for all their personal genius, foibles and shortcomings, it wasn’t the individuals, rather, something did change in Pakistan between the time of Bhutto and Zardari.  In the intervening years, multiple centres of power —not just the army-bureaucracy and a towering politician, but also political parties representing different provinces and ethnicities and constituencies, as well as media, judiciary and other civil society organisations —developed in Pakistan.  While this fragmentation of authority may hamper its policy deliberations, it probably has driven home to Pakistani politicians the need to coexist and tolerate each other.  Papa Bhutto stood above everyone, and couldn’t countenance anyone else’s existence.  Sharif brothers had learnt to live with others.  Perhaps that’s what has saved Pakistan, at least for now.

What about Bangladesh?

This is what Milam says in the penultimate page: Perhaps there is more hope that a real, sustainable democratic culture can develop in Bangladesh, but old habits die hard.

And thus we come to today’s Bangladesh, on which, Milam observes:

…a government which, because of the perverted institutions of the state, is in a position to eliminate the opposition as a force to be reckoned with, and move towards a one-party state. This election, instead of deja vu all over again, could be the tipping point to something entirely new on the subcontinent.

Bangladesh may well have come a full circle in the past four and half decades.  At the beginning of the 1970s, with the left fractious and the right discredited for its role in the country’s freedom struggle, Awami League was the only major organised political force in Bangladesh.  Whatever we have, it’s not democracy.

And, Sheikh la fille may well prove to be more successful than her father.  Again, over to Milam:

But politics aside, it is 2014 in Bangladesh. The chronic instability and near-anarchy, as well as the abject poverty that prevailed in 1975, have long since disappeared. Bangladesh, while still poor and in the stage of economic development where gains can easily be reversed, is now wired into the global economy with its vibrant garment and other export industries. Growth has been strong for most of the past two decades, and the country as a whole is much more prosperous. More importantly, it has a much more literate and healthy population because of the strides that have been made in mass education and in reducing gender disparity.

In Shame, his novel on not-quite-Pakistan, Rushdie calls the country Peccavistan. Peccavi in Latin means I have sinned.  This is the message Sind’s English conqueror sent back to the John Company after he took the country by deception and ‘rascality’.  Pakistan used to be governed by deception and rascality, hence the name Peccavistan.

When the results of Pakistan’s first general election became known 37 years ago, a western journalist quipped that Pakistan would soon be replaced by Mujibdesh and Bhuttostan.  As things stand, we should rename our country East Peccavistan.

And things will remain as they are unless we choose democratic politics.  Make no mistake, that’s hard work.  But that’s what it comes down to.  A bird cannot fly with broken wings.  Our democracy is broken.  People governing the country are doing so not with democratic mandate.  Choosing democracy means opposing this deception and rascality.  Only by joining and fixing the opposition, so that when the table turns it lives and lets live, can we end East Peccavistan.

Dear reader, the choice is yours, will you choose Bangladesh?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বর্ণনায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক

By শাফকাত রাব্বী অনীকঃ

কিছু দিনের মধ্যেই বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম হাস্যকর নির্বাচন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। আর ঠিক এরকম সময়ে, দেশের শহুরে মধ্যবিত্তদের ফোকাস সরিয়ে রাখতে নতুন করে চালু করা হয়েছে পাকিস্তান বিষয়ক বিতর্ক।

কাদের মোল্লা সাহেবের মৃত্যুর পরে, সম্পূর্ণ হোম-ওয়ার্ক বিহীন একটি সংসদীয় প্রস্তাবনা আনা হয়েছিল পাকিস্তানের পার্লামেন্টে। প্রস্তাবনাটির ভাষা, যুক্তি ও টাইমিং দেখে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে পাকিস্তানের কোন মেধা সম্পন্ন গোয়েন্দা-ফোয়েন্দা তো বটেই, চিকন বুদ্ধি সম্পন্ন কোন কূটনীতিকও মনে হয় আর বাংলাদেশে চাকরি করেন না।

শাহাবাগিরা পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আল্টিমেটাম দিয়েছিল। গুলি ও গুমে অভ্যস্থ পুলিশ বাহিনীর মৃদু লাঠি চার্জেই সেই আল্টিমেটাম আপাতত নাই হয়েছে।

গতকাল জনৈক শাহাবাগি জিজ্ঞেস করছিলেন, পাকিস্তান বিষয়ে আমার ধারণা কি। তাদের সাথে সম্পর্ক থাকবে কি থাকবে না। এবং আমি পাকিস্তানকে বাংলাদেশের বন্ধু ভাবি কিনা। আমি উত্তরে বলেছিলাম, যেহুতু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্র ক’মাস আগেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গালে চুমু খেয়েছিলেন, সেহুতু বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বন্ধু রাষ্ট্র। ফাজলামোপূর্ণ উত্তরটি শাহাবাগি ভদ্রলোকের পছন্দ হয়নি। ভাগ্যক্রমে, আজকে এক ছোট ভাই কিছু ডকুমেন্ট দেখালেন শেখ মুজিবের পাকিস্তান দর্শন সম্পর্কে। ভাবলাম এটা নিয়ে একটা লেখা দেয়া প্রয়োজন। সবাইকে দেখিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে দেশের স্বাধীনতার প্রধান আর্কিটেক্টের মাথার বুদ্ধি বর্তমানে স্বাধীনতার চেতনা বিক্রি করে খাওয়া ফেরিওয়ালাদের চাইতে কতটা বেশি ছিল।

BANGLADESH- Not Yet Shonar Bangla নামে একটা প্রতিবেদন ছাপা হয় ১৯৭৩ সালের ০১ জানুয়ারী বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে।

time 1974 1 Time 1974 2

প্রতিবেদনটিতে তৎকালীন বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়। তা হলো বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার না করা এবং কোন প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও ১৯৭২ সাল থেকেই পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। সিঙ্গাপুর বন্দরের মাধ্যমে গোপনে দেশের মানুষকে না জানিয়েই এই বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পাদন করা হত।

১৯৭৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী ওআইসি সম্মেলনের প্রস্তুতি চলা কালে, জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষনা দেন যে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে পারে শুধু একটা শর্তে। সেই শর্ত হলো যে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ বাংলাদেশ এনেছিল তার বিচারে বাংলাদেশ কোন পদক্ষেপ নিতে পারবে না। ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান, ইরান এবং তুরস্ক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, শেখ মুজিবুর রহমান ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেন।

পাকিস্তান থেকে ফেরার পথে বিমানবন্দরে সাংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে শেখ মুজিব কিছু তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেন। কথাগুলো নিচে ইংরেজিতে দেয়া হলো উইকিলিক্স থেকে। আমি বাংলা অনুবাদ করে দিলাম।

মার্কিন দলিলের সূত্রে জানা যায়, যখন মুজিবকে বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের কথা মনে করিয়ে দেয়া হয়, তখন মুজিব বলেছিলেন, ” আমি ঐ সব কিছু ভুলে যেতে চাই। আমি চাই আমার দেশের লোকেরাও সেই সব কথা ভুলে যাক। আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে। তুমি জানো যে, মানুষের স্মৃতিশক্তি সংক্ষিপ্ত।”

SheikhMujibon Pakistan

ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিয়ে মুজিব বলেন, “আমদের দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশকে ভালো প্রতিবেশির মতো থাকতে হবে। আমাদের সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে”।

জুলফিকার আলি ভুট্টোর ব্যাপারে শেখ মুজিব বলেন,  আমি ভুট্টোকে সাহায্য করতে চাই। উনি আমার পুরোন বন্ধু। মুজিব আরও বলেন, “আমি ভুট্টোর সততায় মুগ্ধ। আমি আপ্লূত হয়েছি পাকিস্তানের জনগণের ভালোবাসায়। হাজারে হাজার পাকিস্তানী রাস্তার দুই ধারে দাড়িয়ে ছিল। তারা আমাকে মুজিব বলে ডেকেছে। ছেলে-মেয়েরা আবেগ নিয়ে হাত নেড়েছে যখন তারা তাদের পরিচিত কুর্তা-পায়জামা পরা অবস্থায় আমাকে তাদের মাঝে পেয়েছে।”

বন্দি পাকিস্তানী ১৯৫ জন সেনার ব্যাপারে মুজিব বলেছিলেন, “এব্যাপারে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একত্রে সিদ্ধান্ত নেবে দিল্লি চুক্তি মোতাবেক।”

সোর্স ঃ (http://www.wikileaks.org/plusd/cables/1974LONDON02652_b.html)

FRIENDLY COMMENTS ON PAKISTAN FROM SHAIKH MUJIB
Date:1974 March 1, 17:06 (Friday) Canonical ID:1974LONDON02652_b

1. EXCLUSIVE INTERVIEW WITH SHAIKH MUJIBUR RAHMAN
PUBLISHED IN THE TIMES FEBRUARY 29, BY KULDIP NAYAR,
TAKES VERY FRIENDLY LINE TOWARDS BHUTTO AND PAKISTAN.

2. AMONG QUOTES ATTRIBUTED TO SHAIKH MUJIB ARE: “WE
ALL THREE COUNTRIES IN THE SUB-CONTINENT HAVE TO LIVE
LIKE GOOD NEIGHBORS AND MUST SOLVE OUR PROBLEMS THROUGH
PEACE”.

3. ALSO: “I AM IMPRESSED BY MR. BHUTTO’S SINCERITY.
I AM OVERWHELMED BY THE LOVE AND AFFECTION SHOWN BY THE
PEOPLE OF PAKISTAN. THOUSANDS OF THEM LINED THE
ROUTE FROM THE AIRPORT TO THE VENUE OF THE ISLAMIC
SUMMIT. THEY CALLED ME BY MY NAME, MUJIB. THEY —
UNCLASSIFIED

UNCLASSIFIED

PAGE 02 LONDON 02652 011712Z

BOYS AND GIRLS ALSO — LUSTILY CHEERED ME WHEN THEY
SAW THE FAMILIAR KURTA-PYJAMA CLAD FIGURE AMONG THEM.”

4. WHEN REMINDED OF THE ATROCITIES COMMITTED IN
BANGLADESH BY PAKISTAN, MUJIB IS REPORTED TO HAVE
SAID: “I WANT TO FORGET ALL THOSE. I WANT MY PEOPLE
TO FORGET THOSE. WE HAVE TO START AFRESH. YOU KNOW
THAT PEOPLE’S MEMORY IS SHORT.” REVERTING TO BHUTTO,
MUJIB SAID: “I WANT TO HELP HIM. HE IS AN OLD FRIEND.”

5. MUJIB REFUSED TO DISCUSS THE QUESTION OF KASHMIR.

6. ASKED HOW SOON BANGLADESH WOULD HAVE DIPLOMATIC
TIES WITH PAKISTAN, MUJIB SAID, “VERY SOON”. HE
PARRIED QUESTIONS ON HOW PAKISTAN’S RECOGNITION OF
BANGLADESH HAD COME ABOUT.

7. AS TO FUTURE OF 195 POW’S, MUJIB SAID DECISION ON
THEM WOULD BE TAKEN BY INDIA, PAKISTAN AND BANGLADESH
IN ACCOREANCE WITH DELHI AGREEMENT. HE INDICATED
BANGLADESH ALREADY IN TOUCH WITH DELHI TO DECIDE TIME
AND VENUE OF CONFERENCE WHICH, ACCORDING TO HIM, WILL
BE AT THE FOREIGN MINISTER LEVEL FIRST, “AND THEN
WE SHALL MEET”.

8. WHEN TOLD THAT THERE WAS GROWING ANTI-INDIAN
FEELING IN BANGLADESH, HE REPLIED: “SOME VESTED
INTERESTS AND FOREIGN POWERS” WERE OUT TO CREATE BAD
BLOOD BETWEEN THE TWO COUNTRIES. HE SAID INDIA HAS
NOT INTERFERED IN BANGLADESH AFFAIRS AND VICE-VERSA.

ANNENBERG

UNCLASSIFIED

NNN