কানপুরের নানা সাহেব ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক বৃত্তিহারা হওয়ার পরপরই কোম্পানি কর্তৃক আরও বেশ কিছু অপমানের সম্মুখীন হলেন। কোম্পানি শাসনকালে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কোন সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হলে দেশীয় অকর্মণ্য রাজারা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্রিটেনে কোম্পানির কোর্ট অব ডিরেক্টরসদের সভায় আপিল করতেন।
কানপুরের অসন্তুষ্ট নানা সাহেবও তার প্রতি অবিচারের ফিরিস্তি তুলে ধরতে লন্ডনে একজন প্রতিনিধি পাঠালেন। এই প্রতিনিধি ছিলেন সুদর্শন সুপুরুষ আজিমুল্লাহ খান। এক সময়ের এই পরিচারক কঠোর পরিশ্রম করে ইংরেজি এবং ফারসি ভাষা রপ্ত করেন, নিজেকে সুশিক্ষিত করে একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন।
আজিমুল্লাহ খান লন্ডনে কিছুদিন অবস্থান করে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেই উপলব্ধি করতে পারলেন যে কোন আবেদনে-নিবেদনেই তার মনিবের কোন লাভ হবে না। তাই তিনি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
ঘটনাচক্রে তাঁর সফরকালীন সময়ে তিনি জানতে পারলেন মাল্টায় জারের রুশ সৈন্যদের কাছে ব্রিটিশ-ফরাসি যৌথ বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। এই সংবাদে আজিমুল্লাহ উৎসাহিত বোধ করলেন। তিনি সরাসরি ভারতের জাহাজে না চড়ে কনস্টান্টিপোল গেলেন। সেখান থেকে তিনি গেলেন বর্তমান ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায়, রুশ সৈন্যদের দেখতে। তিনি নিরাপদ দুরত্ব থেকে লক্ষ্য করতে লাগলেন রুশদের যুদ্ধ কৌশল, কিভাবে ব্যাটারিগুলো থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়।
কনস্টান্টিপোলে তার সাথে দেখা হয় এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের, নাম উইলিয়াম হাওয়ার্ড রাসেল। রাসেলের সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে আলাপচারিতা হয়। তাঁর সম্পর্কে রাসেল মন্তব্য করেন, ‘ক্রিমিয়াতে যা ঘটেছে আপন চোখে দেখার এত গভীর আগ্রহ দেখে কি অবাক না হয়ে পারা যায়? একজন ইউরোপবাসীর এরকম কৌতূহল থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু অসামরিক গোত্রের একজন এশিয়বাসীর এ কৌতূহল অস্বাভাবিক নয় কি?’
আজিমুল্লাহ ঘোর নাস্তিক ছিলেন, কোনপ্রকার ধর্মীয় উন্মাদনা থেকে ছিলেন শত ক্রোশ দূরে। তাঁর জ্বলজ্বল চোখে সেদিন যে আগ্রহ খেলা করছিল তা ছিল সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদজাত। তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে ব্রিটিশ বাহিনী অজেয় নয়, তাদের হারানো যায়। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিল ক্রিমিয়ায় ব্রিটিশ বাহিনীর সেই প্রাথমিক পরাজয়।
আজিমুল্লাহ খানের চোখে যেই আকাঙ্ক্ষা-উন্মাদনা সেদিন দেখা গিয়েছিল, প্রায় একই ধরণের উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল নাইন-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে বিশ্বে একটা বড় অংশের মুসলিমদের মধ্যে। অর্থোডক্স মুসলিমরা চিন্তা করতে শুরু করে সুরক্ষিত মার্কিন আকাশসীমার ভেতরে ঢুকে যদি এত ক্ষয়ক্ষতি করা সম্ভব হয়, তবে পৃথিবীর যেকোন দেশের যেকোন স্থানে আঘাত হানা সম্ভব। তাদের এই চিন্তাধারা প্রভাবিত করে তরুণ মুসলিমদেরকেও।
এই চিন্তাধারা যে সমগ্র পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছিল তার প্রমাণ পরবর্তীকালে লন্ডনের সেভেন সেভেন বোমা হামলা, ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের বোমা হামলা, মুম্বাইয়ের টুয়েন্টি সিক্স ইলেভেনসহ বহু জঙ্গি হামলার ঘটনা। একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশও পুরো পৃথিবীর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকেনি।
বাংলাদেশ এবং ভারতবর্ষে ইংরেজ রাজত্বের শুরুর দিকে ওহাবিরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুগের পর যুগ লড়াই করেছে। সে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের জয় হয়েছে, কিন্তু ওহাবিরা অন্তর থেকে এই পরাজয় মেনে নেয়নি। তাদের ব্রিটিশ বিরোধী জঙ্গি-চেতনা তারা ধারণ করে গেছে। প্রায় আড়াই লাখ ওহাবি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিভিন্ন সময়ে শহীদ হয়েছে বলে জানা যায়।
বাংলাদেশে এই ওহাবিদের সমর্থকদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। খেলাফত আন্দোলনের ব্যানারে এরা ঐক্যবদ্ধ। ওহাবিরা তাদের জঙ্গি চেতনা বিভিন্নভাবে সময়ে সময়ে কাজ করেছে, তবে এই জঙ্গিবাদী চেতনা ছিল মূলত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। ওহাবি তরিকার বহু মানুষ আশির দশকে শেষভাগে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যায়। সিআইএ-আইএসআইর দ্বারা প্রশিক্ষিত এই যোদ্ধারা অনেকে শহীদ হন, অনেকে যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত টিকে যায়।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের জঙ্গিরা মূলত আফগানিস্তানের সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ফেরত আসা ‘জিহাদি’ মুফতি হান্নানের নেতৃত্বে সংগঠিত হতে শুরু করে। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের সূচনা ২০০১ সালের নাইন ইলেভেনেরও আগে থেকে।
আফগান ফেরত এই জঙ্গির ছোট ভাই তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা মুন্সি আনিসুল ইসলামের নামে ১৯৯৭ সালের ৩০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনগরীর ৭ নম্বর প্লটে চার হাজার ৫০০ বর্গফুট জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এই জমিতেই তৈরি করা হয় সেই সাবান কারখানা যেখানে পাওয়া গিয়েছিল মুফতি হান্নানের বিশালাকৃতির বোমা তৈরির উপাদান ও সরঞ্জাম।
২০০০ সালের ২০ ও ২৩ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাস্থলে দুইদফা অভিযান চালিয়ে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার সাথে তৎকালীন আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহ এবং গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেন মুফতি হান্নান।
এছাড়া আফগান ফেরত জঙ্গিরা ১৯৯৯ সালে তিনটি ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটায়। এতে ১৮ জন নিহত হলেও আহত হন দুশতাধিক মানুষ। এই বছর সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে যশোরের টাউন হল ময়দানের বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সম্মেলনে। এ হামলায় ১০ জন নিহত হয় আহত হয় শতাধিক। এছাড়াও ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনার আহমেদিয়া মসজিদে বোমা হামলায় আট জন নিহত ও আহত হয় ৫০ জন।
আল্লাহর দল একটি সংগঠন কবি শামসুর রাহমানের বাসায় ঢুকে কবির উপর হামলা চালানোর চেষ্টাও চালায়।
২০০১ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫ পাঁচটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এসব বোমা হামলায় ৫৯ জনের প্রাণহানী ঘটে ।
এরমধ্যে ঢাকার পল্টনে কমউনিস্ট পার্টির সমাবেশে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ৭ জন, রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ১১ জন, গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরের গির্জায় ১০ জন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের অফিসে ২১ জন, বাগেরহাট জনসভায় ৯ জন, সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতা সুরঞ্জিত সেনের জনসভায় বোমা হামলায় চার জন নিহত হয়। আহত হয় কয়েক শতাধিক।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের এইসব বোমা হামলাগুলোতে অন্তত ৭৬ জন নিহত হন।
১৯৯৯ সাল থেকেই মূলত ব্যাপক হারে জঙ্গি হামলা ও গ্রেনেডের ব্যাবহার শুরু হলেও ১৯৯৭ সালের ৩০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনগরীতে মুফতি হান্নানের ভাইয়ের জমির বরাদ্দ পাওয়া নির্দেশ করে যে, অন্তত ১৯৯৭ সাল থেকেই মুফতি হান্নান ও তার সাথীরা বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা চালানো এবং ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করে।
তৎকালীন সরকারের উদাসীনতার এবং আওয়ামী লীগের অনেক নেতার জড়িত থাকার স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি গোপালগঞ্জে মুফতি হান্নানের জমি বরাদ্দ পাওয়া, সেখানে নির্বিঘ্নে বোমা তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো, কোন জঙ্গিকে না ধরতে পারা এবং পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় মুফতি হান্নানের সেই স্বতঃপ্রনোদিত ‘জবানবন্দী’।
প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশে আরেকটি জঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয় বাংলাদেশে- জামায়াত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেমবি)। এই সংগঠনটির সাথে আরব বিশ্বের জঙ্গিদের যোগাযোগ ও বিদেশী ফান্ড আনার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে এরা রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ ও সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে কাজ করলেও পরে টুইন টাওয়ার হামলা ও এর প্রেক্ষিতে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন তাদের বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম বিস্তারে উৎসাহিত করে।
সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাইর সাথে এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ পায় ইংরেজী দৈনিক The Daily Star-এ ২০০৪ সালের ১৩ মে। সেখানে তিনি দাবি করেন তিনি স্কুল জীবনে ছাত্রলীগ করত, পরে কলেজে ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগ দেয়। ১৯৯৫ সালে শিবির ছাড়ে জামায়াতে ইসলামী নারী নেতৃত্ব মেনে নেয়ায়।
জেএমজেবির আমির আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজমের দুলাভাই শায়খ আব্দুর রহমান ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সৌদি এম্বেসিতে কাজ করে বলে জানা যায়। এরপর সে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায়। এরপর আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসে। এসময় এই জঙ্গি নেতা ওহাবি মতাদর্শে প্রভাবিত হয়। শায়খ আব্দুর রহমান একসময় জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিল।
বাংলাদেশে এই দুই জঙ্গি নেতা জঙ্গিবাদের বিস্তারের ক্ষেত্রে মাও সে তুং-এর সেই বিখ্যাত উক্তি “The guerrilla must move amongst the people as a fish swims in the sea”-এর প্রয়োগ ঘটায়। মানুষের সাথে মিশে কাজ করতে তারা জামালপুর থেকে রাজশাহীর বাগমারায় আসে।
সীমান্তবর্তী রাজশাহী জেলায় প্রবল ভারতবিরোধী এবং ইসলামপন্থী মনোভাব তাদের এই কাজের জন্যে বেশ সুবিধাজনক ছিল। গঠন করা হয় জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) ।
জেএমজেবি প্রাথমিকভাবে দেশের পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তারা মূল লক্ষ্য হিসেবে প্রচার করে এইসব অঞ্চলের জেলাসমূহের অধিবাসীদের প্রধান শত্রু সর্বহারা বাহিনী। ফলে তারা ঐসব এলাকায় সাময়িক জনসমর্থন পায়।
রাজশাহীসহ ঐসব অঞ্চলের নেতারা, গোয়েন্দারা এবং সরকার জেএমজেবির ব্যাপারে উদাসীন থাকে, অনেকেই তাদের সমর্থন যোগায়। যার পেছনে কাজ করেছিলো পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টিসহ সকল বামপন্থী চারমপন্থীদের বিরুদ্ধে জেএমজেবিকে কাজে লাগানোর ইচ্ছা।
সরকার ডিভাইড অ্যান্ড রুল খেলতে এসে জেএমজেবির ফাঁদে পা দেয়। জঙ্গিরা সারা দেশে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করে তোলে, এবং ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে পাঁচশতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা চালিয়ে প্রায় ৬৬ জনকে হত্যা করে জোট সরকার আমলে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের সিনেমা হল, ঝালকাঠির দুই আইনজীবী, ব্রিটিশ হাইকমিশনার, যাত্রাপালায় বোমা হামলা উল্লেখযোগ্য। এর আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার উপর হুজির সেই মুফতি হান্নানের নেতৃত্বে হামলা হয়।

উইকিলিকসের ফাঁস করা কেবলে দেখা যায় বিএনপি সরকারের শেষ ভাগে জেএমবির নেতাদের মৃত্যুদন্ডের পর এমনকি এর অর্থ যোগানের পথও বন্ধ করে দেয়ার পর ঢাকার ইউএস এম্বেসি মন্তব্য করে, “অবশেষে জেএমবির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া গেল”।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের পর সরকার হুজি, জেএমজেবি ও জেএমবির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানে নামে। সারা পৃথিবীতেই সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ফলে জঙ্গিদের পৃথিবী ছোট হয়ে আসতে থাকে।
২০০৫ সালের ১ অক্টোবর মুফতি হান্নান, ২০০৫ সালের ২০ নভেম্বর শায়খ আব্দুর রহমানের মেয়ের জামাই ও জেএমজেবির মজলিশে শূরা সদস্য আব্দুল আউয়াল, ২০০৫ সালের ৭ ডিসেম্বর আতাউর রহমান সানি, ২০০৬ সালের ২ মার্চ শায়খ আব্দুর রহমানকে সিলেট থেকে এবং চারদিন পর বাংলাভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০০৬ সালের ২৬ এপ্রিলের মধ্যে সরকার জেএমজেবির সকল মজলিশে শুরা সদস্যসহ হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে ১৪১টি মামলা দায়ের করে, ২২জনকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়।
সরকার জঙ্গি অর্থায়নের দায়ে Revival of Islamic Heritage Society নামক এনজিওর স্থানীয় অফিস বন্ধ করে করে দেয়া হয়। সর্বোপরি জেএমজেবি, জেএমবি এবং হুজির মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া হয়; ২০০৬ সালের তিন মে তারিখে মার্কিন তারবার্তার ভাষায়- The JMB’s back really does look broken।

সফলভাবে জঙ্গিদের দমন করার পর টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন
এখন প্রশ্ন হচ্ছে জঙ্গিদের উপর এত বড় ক্র্যাক ডাউনের পর কি তাদের পক্ষে পুনরায় বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম চালানো আদৌ সম্ভব কিনা?
উত্তরটা অনেক কিন্তু ও যদির সাথে যুক্ত। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যত জঙ্গি কার্যক্রমের বিস্তার দেখা গেছে তার মধ্যে প্রতিটিতেই রাজনৈতিক উদাসীনতা এবং রাজনৈতিক সহায়তা কম বেশি ছিল। কোন দলের কেন্দ্রীয় নেতারাই চাইবে না তাদের সরকারের সময় দেশ অস্থিতিশীল হোক, তবে স্থানীয় ইসলাম পছন্দ নেতারা নিজেদের জিহাদে শামিল করতে কিংবা কোন রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে জঙ্গিদের ব্যবহার করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সম্প্রতি বগুড়ায় আওয়মী লীগ নেতার বাসায় জঙ্গিদের আস্তানা আর বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার, কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ নেতার প্রশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের নেতার অবাধ বিচরণ আর কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে ‘সর্বদলীয়’ হামলার ঘটনা তাই প্রমান করে।
রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করা গেলে আর সরকার কঠোর হলে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম ও এর বিস্তার বন্ধ করা অসম্ভব নয়। আর নাইন ইলেভেন পর থেকে সারা পৃথিবীতে জঙ্গিদের উপর যে ধরণের কড়া নজরদারি চলছে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেভাবে কাজ করছে তাতে জঙ্গিবাদের পুনরুত্থান প্রায় অসম্ভব।
তাই অহেতুক জঙ্গিবাদ নামক জুজুর ভয় দেখিয়ে এই মৃত ইস্যুটিকে মমি করার আওয়ামী প্রচেষ্টা অর্থহীন।
Recent Comments