শান্তি‬ ‪ও একচক্ষু‬ ‪‎হরিন‬

by Imtiaz Mirza

১৯৭১ এর সেপ্টেম্বর মাস । একটি তরুনের বাবাকে পাকিবাহিনী হত্যা করেছে , মুক্তিকামী জনতাকে সরকারী অস্ত্রশস্ত্র বিলিয়ে দেয়ার জন্য ।
তরুনটি চিন্তা করে যুদ্ধে যাবে , পাকিবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিবে , দেশকে মুক্ত করবে অচলাবস্থা থেকে । কল্পনায় সে রাইফেল চালায় , পাকিদের মেরে খতম করে , রাজাকারদের ফুটো করে দেয় ।
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সে গুলির শব্দ শুনতে পায়, সচকিত হয়ে সে খেয়াল করে গুলির শব্দ কাছাকাছি কোথাও থেকেই আসছে ।
পাশের ঝোপের মধ্যে সে পালিয়ে যায় , কিছুক্ষন পর টের পায় , উষ্ণ জলধারা তার প্যান্ট ভিজিয়ে দিয়েছে ।
ভিজে ভিজে গরম অনুভূতি নিয়ে সে অস্ফুটে বলে , যুদ্ধ নয় শান্তি চাই , একটুখানি শান্তি চাই , শান্তি মতো জলত্যাগের অধিকার চাই।
_____
১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাস , ভারতীয় বাহিনী যুদ্ধ শুরু করেছে , প্যান্ট ভেজানো তরুন যুদ্ধে যায়নি বরং রাজাকার পীরের মুরীদ হয়ে , টুপি লাগিয়ে প্রানে বেচেছে ।
ভারতীয় বাহিনীর যুদ্ধটিকেই তরুনটি আসল যুদ্ধ মনে করে , সে মনে মনে ঠিক করে সে আসল যুদ্ধে যাবে , গেরিলা যুদ্ধের মতো ছিচকে যুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের মতো গ্ল্যামারহীন যোদ্ধা হয়ে তার পোষাবে না । এর মাঝে সে সবাইকে বলে বেরিয়েছে , যুদ্ধ নয় শান্তি চাই , শ্রমিকরা ঘরে ফিরবে তাদের আপন জনের কাছে , তারা যুদ্ধ জানে না , তারা শান্তি চায় ।
মুক্তিযোদ্ধাদের শান্তির কথা বলবা মাত্র তাকে মেরে হাকিয়ে দিয়েছে তাকে , এই উত্তুঙ্গ সময়ে কেউ শান্তির কথা শুনতে চায় না ।

সে মনে মনে শান্তির জন্য যুদ্ধের পরিকল্পনা করতে শুরু করলে , “মাত্র তের দিনের যুদ্ধে ” পাকবাহিনী আত্মসমর্পন করে ।

______

প্যান্ট ভেজানো তরুন , ধীরে ধীরে একচক্ষু হরিনে পরিনত হয়েছে । সে সবাইকে গণতন্ত্রহীনতার কথা শিখাতে চেষ্টা করে । সে খুব সুন্দর করে বোঝাবার চেষ্টা করে , যে জগতে মাত্র পাচটা মানুষের পিএইচডি আছে , আর বাকী সবার ক্লাস ফাইভ ফেল করার অভিজ্ঞতা আছে , যেহেতু
ক্লাস ফাইভেই ফেল করেছে , তাই কারো পিএইচডি করতে চাওয়া উচিত না ।

অর্থ্যাৎ বিশ্বের পাচটা দেশে মৌলিক গণতন্ত্র আছে বিধায় , অন্যান্য দেশ গুলোতে নূন্যতম নির্বাচনও থাকা উচিত না ।

কারন আমরা কখনো পিএইচডি করতে পারবো না , কেন আমরা ক্লাস ফাইভের পরীক্ষা আবার দিবো ? আমরা দেশকে উন্নত করতে পারবো না কখনোই এইকারনে আমাদের দেশে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা নেই ।

সে সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করে গণতন্ত্র নয় , শান্তিই সবার প্রয়োজন ।
_______

১৯৭১ এ শান্তির দরকার ছিলো , ৬৯ এও ছিলো , ৫২ তে ছিলো , ৯০ তে ছিলো ,
শান্তি দরকার উন্নত জাতি হতে হলে । শান্তির প্রয়োজনীয়তাটা কখনো কম ছিলো না ।

কিন্তু প্যান্ট ভেজানো একচক্ষু হরিনের বক্তব্য মেনে নিলে , লাখ লাখ মানুষ মারার পরো ১৯৭১ এ শান্তির দায়ে , পাকিবাহিনীর ঘেটুপুত্র হয়ে বসে থাকা উচিত ছিলো । আইয়ুব খানের সীমিত গণতন্ত্র অর্থ্যাৎ এলিটদের গণতন্ত্র মেনে চুপ করে বসে থাকা দরকার ছিলো । রাষ্ট্রভাষা উর্দুর মেনে শান্তি মতো বাংলা চর্চার দরকার ছিলো । লম্পট স্বৈরাচারকে দেশ ভর্তি দুর্নীতি করতে দিয়ে
শান্তিকামী জনতার রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা দরকার ছিলো ।

প্রকৃতপক্ষে , যারা প্যান্টভেজানো একচক্ষু , যারা একটা দলকে নিজের ধর্মবিশ্বাসের চেয়ে পবিত্র মনে করে , দলের নেতাকে ধর্মাবতার জ্ঞান করে , তারা কখনো শান্তি আর অশান্তির পার্থক্য বুঝতে চায়নি । তাদের কাছে নিজের দল যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় মানেই শান্তি।

প্রকৃতপক্ষে , হরতাল , অবরোধ , জ্বালাও-পোড়াও , গুলি , ক্রসফায়ার , বালুর ট্রাক , বিরোধী দলের মানুষ হত্যার পূর্বেও দেশে শান্তি ছিলো না , থাকতে পারে না । অশান্তি, ঘুনপোকার মতো দেশকে কাটছিলো , মানুষের হৃদয়মগজ খুড়ছিলো। অশান্তি মানুষের স্বাভাবিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিলো , মানুষের নায্য পাওনা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করছিলো । অশান্তি , অবৈধ সরকার হয়ে
মানুষের টাকা লুটপাট করে উলটো মানুষকে চোখ রাঙ্গানি দিচ্ছিলো । অশান্তি , নূন্যতম নাগরিক অধিকার , মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলো । অশান্তি, বন্দুকে গুলি হয়ে শত শত বিরোধীদলের কর্মীকে হত্যা করেছিলো।
অশান্তি , মানুষকে তার অবেগে দিয়ে ব্লাকমেইল করিয়ে তার যাবতীয় অপকর্মকে শুদ্ধ করে নিচ্ছিলো ।

_______

শান্তি প্রয়োজন , শ্রমিকের , কৃষকের , নাগরিকের , পথশিশুর, অফিস যাত্রীর, গৃহিনীর ।
শান্তি আসবে দূর্নীতির ঘুণপোকা অশান্তি বিদায় নিলে, শান্তি আসবে অবৈধ স্বৈরাচারীর বুলেট স্তব্ধ হলে।

শান্তি আসবে তখনই যখন একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে , যেখানে সবার সমান সুযোগ থাকবে, কেউ নিজের পছন্দ মতো গদি আকড়ে থাকবে না ।

শান্তি আসবে শুধু মাত্র তখনই, যখন প্রতিটা নাগরিক ব্যালট বাক্স দিয়ে তাদের উপর অন্যায়-অত্যাচারের জবাব দিতে পারবে ।

https://www.facebook.com/sunno.aronnok

জিয়া হায়দার ও জাফর ইকবাল

1

রেজাউল করিম রনি

জাফর ইকবালের আবেগী ফটকাবাজি ও জিয়া হায়দার রহমানের সূত্রধরে আামদের বুদ্ধিজিবিতা নিয়ে কুইক মন্তব্য:

“within any given system, there are claims, which are true but which cannot be proven to be true…
–Zia Haider Rahman, `In the light of what we know’.

“ওর কান্ডজ্ঞান আমারে মুগদ্ধ করছে। প্লেবয় সশী থারোরে জিয়া যখন ধুয়ে দিল তখনই অামি বুজেছি এই চিজ অন্য কিসিমের। রাবীন্দ্রিক বলয় ভেঙ্গে ফেলতে ওর প্যাটার্নটা কাজে লাগবে। যদিও ও একটু হট মেঝাজের পুলা।”– রেজাউল করিম রনি ( ওর সাথে দেখা করার পরে,২৩ নভেম্বর ২০১৪ তে প্রথম স্টেটাস এ কথা কইছিলাম)
বাংলাদেশের মিডিয়া বিশেষ করে প্রথম আলো যখন জিয়াকে ব্যাপক কাভারেজ দিতে শুরু করছে,তখন একটু অবাক হইছিলাম। এটা তো করার কথা না। কারণ জিয়া তো পাকিস্তানকে ঘৃণা করে না। জিয়া সেক্যুিলারিটিকে ধুয়ে ফেলছে। জিয়া পশ্চিমা আধুনিকতার তলায় হেমার দিয়া এমন এক বারি মারছে যে এর তলাটা ফুটা হয় হয় করতাছে। পশ্চিমে উপন্যাসের বাজার তৈরিতে যেসব ম্যাকানিজম কাজ করে তা সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নাই। গার্ডিয়ান জিয়াকে লাইম লাইটে আনছে ( এতে মূল ভূমিকা নিছে এজেন্টরা)। প্রথম আলো ও অন্য কাগজগুলা গার্ডিয়ানকে ফলো করছে কানার মতো। যা হোক অামি জিয়ার একটা ইন্টারভিউ করেছি ঢাকাতে। তার পরে দ্রুত বইটা পড়ে একটা খসড়া লেখা লিখেছি(নিচে লেখার লিঙ্কটা দিছি), দেখলাম যারা জিয়াকে নিয়ে কথা বলছে এদের বেশির ভাগই জিয়ার বইটা পড়ে নাই। আর সবচেয়ে অবাক হইলাম এরা কেউ বলতে পারছে না জিয়া কেন জরুরী। মিডিয়া হুজুগের বাইরে জিয়া আসলে কেন গুরুত্বপূর্ণ তার কোন রিডিং আমি দেখি নাই। জিয়ার বইটা হজম করার জন্য যে ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে সুবিধা হয় তা বাংলাদেশের পাঠকদের সবার নাই্। পাঠকরা দেখলাম আহাম্মকের মতো জিয়াকে প্রশ্ন করতেছে, ‘আপনার বইয়ের চরিত্র ( যে ঘনটা বর্ণনা করছে) হেতে পাকিস্তানী কেন?
জিয়া পাঠকদের প্রশ্ন শুনে বেশ বিরক্ত হইছে। কিছু ভাল প্রশ্ন ছিল অবশ্য। বাংলাদেশের হাকাও জাতীয়তাবাদ একটা ঘৃণার সংস্কৃতির উপর প্রতিষ্ঠিত এটা জিয়া চক করে ধরে ফেলেছেন। ফলে সে বাংলাদেশের চতনাধারি লোকদের একরকম ইগনোরই করছে। বাংলাদেশ নিয়া সে যে প্রগতীশীলদের মতো গদগদ না এটা বইটার রিভিউ পড়েই টের পাইছিলাম। পরে হাতে নাতে প্রমাণ পাইলাম। যাক মূল আলাপে ফিরি।

আবুল মকসুদ একজন পেশাদার বুদ্ধিজিবি। তাঁর বুদ্ধির চেয়ে কাফনের কাপড় জড়াই হাটাচলা উনারে বেশি পরিচিতি দিছে এটা অনেকে মনে করেন। এটা হতেই পারে। প্রতিকের একটা গুরুত্ব আছে। সহজে চেনার জন্য এটা ভাল। আপনি যদি সব জায়গায় কাফনের কাপড় পড়েন, ফাইভ স্টার হোরেঠে লুঙ্গি পড়ে যান আপনাকে দ্রুত চোখে পড়বে। এটা ভাল টেকনিক। উনার কোন লেখা না পড়লে বাংলাদেশের কোন বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষতি হবে না। মানে চিন্তার ব্যাসিক কোন কনট্রিবউশন নাই। বাট, কিছু কোদালি কাজ করছেন তিনি। বেশ কিছূ গবেষণা বই আছে। যারা এসব বিষয়ে কাজ করবেন পরে এদের জন্য এগুলা ইউজফুল হবে। যাক তিনি জিয়ার একটা কথা ধরে প্রথম আলোতে একটা চিকনা কলাম লেখছেন। কলাম লিখে তিনি জিয়ার কথার সাথে গভীর অসন্তোষে সহমত পোষন করেছেন। কথাটা হলো, ‘বাংলাদেশ মৃত আইডিয়ার দেশ’

পরে গত শুত্রবার বাংলার বুদ্ধিজিবিতার জিবন্ত ‘কৌতুক’ জাফর ইকবাল একটা লেখা লিখেছেন। জাফর ইকবালের লেখা-লেখি বাংলা সিনেমার থিউরি ফলো করে আগায়। আপনি যদি ‘আবগে না কান্দেন’ -তাইলে মূল্য ফেরত টাইপের লেখক তিনি। তিনি মেইনট্রিম মানে আওয়ামী স্টিমারের যাত্রী। প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানপ্রচারক( আধুনিক কালের যাজক বরতে পারে) তিনি ড্রোন বিশেষজ্ঞ। আলোর ঠিকাদার। উনি বুদ্ধিজিবিতা বলতে বুঝেন, ‘চেতনা’ ‘কলোনিয়াল দেশ প্রেম’ ‘৭১’ তিরিশ লাখ’ মা-বোনের ইজ্জত’ তিনি বিভিন্ন এনজিও টাইপের উদ্যোগকে বিপ্লব মনে করেন এবং এগুলার খাস সৈনিক তিনি। ফলে শহরের ফার্মের মুরগি টাইপের কিছু পুলাপান জাফর ষ্যার বলতে অজ্ঞান। এইসব মিলে তিনি একজন মিষ্টি মানুষ। দুনিয়া সম্পর্কে কোন খোঁজ খবর রাখার দক্ষতা তার আছে এটার কোন প্রমাণ আমি পাই নাই। মনে হয় সব কিছুতে একটা সমাধান হইল আবেগঘন একটা লেখা লিখে ফেলা-এটাই ইকবালীয় স্টাইল। কাঁদো কাঁদো আবেগে ফেটে পড়তেই উনার পাঠক রেডি থকে। তার কোন রকম ইনটেলেক বা ইনন্টারভেনশনাল রোল এই যাবৎ দেখা যায় নাই (শাহবাগে তিনি জাতীয় পতাকার দায়িত্ প্রজন্মে হাতে দিছিলেন, পরে প্রজন্ম গানজার কলকি হাতে নিছে এই দায়িত্ব ফালায়া)।
অন্য অনেকের মতো আবেগের জাহজে উঠায়া তিনি কিছু মিসকনফিডেন্ট শো করেন এটা বাংলাদেশের অক্ষম রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্রের সাথে একাকার ( মনে রাখুন রানা প্লাজা শ্রমিক উদ্ভার নিয়ে সরকারের মিথ্যা বাচালতা)। বাংলাদেশের বুদ্ধিজিবিতার মতো অসুস্থ্য কোন খাত আছে কি না খুজে দেখতে হবে। এখানে এখনও কাল্টফিগার বানানোর প্রতিযোগিতা চলে। ব্যাপক অযোগ্যতা নিয়া শিক্ষার অহংকারে ফেটে পড়ে আমাদের প্রগতী-অন্ধরা। যাক জাফর ইকবাল কি লিখল? লেখাটা মধ্যে ২ টা পয়েন্ট আছে। তিনি নিজেকে জিয়া হায়দার ও আবুল মকসুদের চেয়ে বিশ প্রগতীশীল বলে দাবি করলেন। ২. তিনিও ১৮ বছর বিদেশে ছিলেন এবং বিদেশে থেকে দেশ নিয়ে কথা বলা অনুচিত তাই তিনি দেশে এসে দেশ নিয়ে কথা বলছেন। এর বাইরে আর কোন পয়েন্ট আমি পাই নাই। এটা আমার মূর্খতা হলেও হতে পারে।

১. জিয়া ও মকসুদ সাহেব দুজনেই বলেছেন, ২ মহিলা দেশকে মৃতদের লাশের উপর ভর করে শাসন করছে(রিপোর্টসূত্রে)। এরা দু জন যে ‘প্রধানমন্ত্রি’ এটা না বলে ‘মহিলা’ বলাটা পশ্চাৎপদতা। জাফর ইকবাল এখানে নারীবাদি পজিশন নিয়ে নিজেকে এই দুজনের চেয়ে বেশি প্রগতীশীল প্রমাণ করলেন। আশা করি আপনারা একমত হবেন, এটা নিয়ে কথা বলার কোন মানে হয় না। এই ২ জন নারী-পুরুষ বা বনমানুষ যাই হোক না কেন তাতে জিয়ার কথার মেরিট নষ্ট হয় না। আর ক্ষমতার কোন জেন্ডার নাই। ফলে নারীকে নারী নামে ডাকার মধ্যে কোন সমস্যা নাই। জাফর ইকবাল এখনও গ্রাম্যতা ত্যাগ করে পুরাপুরি আধুনিক হওয়ার লড়াইয়ে আছেন ফলে এটা তাঁর কাছে একটা কঠিন চিন্তার বিষয় হইছে।

২. বাংলাদেশের যারা বিদেশে পড়ে দেশে ফিরে এরা কিছু টার্ম মুখস্ত করে নিজেরে পন্ডিত ভাবতে শুরু করে। এটা আমারে কইছিল আজফার ভাই। আমার কাছে এদের অবস্থা হলো, এমন একটা গরুর মতো যে তার গোয়াল চিনতে পারতেছে না। গোয়াল ঘর না চিনতে পেরে আবুল তাবুল ছুটাছুটি করতে করতে গোবরের নালায় এসে উস্টা খায়, এবং তখন শুরু করে সাগরের গপ্প।

এই হলো বিদেশ ফেরত বুদ্ধিজিবির হালত।

এরা কেউ অরগানিক হইতে পারে না হীনমন্যতার কারনে। পশ্চিম নিয়ে একটা অবসেশন থেকে যায়। এরা নিজেরে ব্রক্ষণ মনে করে। বাট কেউ এদের পুছে না। কারণ এরা যে চিন্তায় আটকা পড়ে আছে তা পশ্চিমে ২০০ বছর আগেই বাদ হয়ে গেছে। এটাই দেশে এসে অণুবাদ করতে যায়া তালগোল পাকায় ফেলে। গ্লোবাল এপরোচটা ধরতে পারে না। খালি সুযোগ দিতে চায়। বাংলাদেশের দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বুদ্ধিজিবিরা আামদের দেশে যাতা আমদানি করেছে এতোদিন। এখন এই অবস্থাটার অবসান হতে চলেছে। কারণ গ্লোব ইজ এভরি হয়ার। ফলে জাফর ইকবাল যখন বলেন, আমিও ১৮ বছর বিদেশে থেকেছি। পড়েছি। তিনি উম্মাদের মতো জিয়াকে পশ্চিমা দলের লোক বলে নিজে জাতীয়তাবাদি বীর সাজতে চান। অথচ বাস্তবতা হলো জিয়া পশ্চিমকে যে থাপ্পরটা দিয়েছেন, এটা কল্পনা করলেই জাফরদের দম শুকায়া যাবে। তার লেখা পড়ে বুঝা যায় জিয়ার এই সফলতা তারে প্যারা/পিড়া দিতেছে। ১৮ বছর কেন ১৮ হাজার বছর বিদেশ থাকলেও যার কান্ডজ্ঞানই থাকে না তার ডেলিভারি জাফরইকবাল টাইপেরই হবে। বিদেশে পড়াটা বা যাওয়াটা যারা জাতীয় ঘটনা মনে করে এরা যাস্ট কুশিক্ষার প্রোডাক্ট। জিয়া আইডিয়া ও চিন্তাশীলতার যে জায়গায় গিয়ে পশ্চিমকে ধোলাই দিছে এটা করতে হলে যে পরিশ্রম ও অভিনিবেশ লাগে তা কোন ভাড় বুদ্ধিজিবিতা দিয়ে এচিভ করা যাবে না। জিয়ার বইটা নিয়ে জাফরের কোন কথা চোখে পড়েনি, তার কি কথা নিয়ে মিডিয়া রিপোর্ট করেছে এতে বাংলাদেশের ইজ্জত গেছে –তাই নিয়ে উনি চিন্তিত। জাফর ইকবাল টাইপের লোকজন যতদিন তথাকথিত মূল ধারা থাকবে ততদিন বাংলাদেশের কোন ইনটেলেকচুয়াল ইজ্জত তৈরি হবে না আমি বাজি ধরে বলতে পারি এটা। বাংলাদেশের লোকজন (শিক্ষিতরা) কি পরিমান ফাটকা তা জিয়াকে নিয়ে মিডিয়াবাজি ও জাফর ইকবালের অক্ষম আউটবাস্ট দেখে বুঝা গেল। বাংলাদেশে চিন্তাশীলতার নামে কিছু লোক জাতীয়তাবাদি জিকির তুলছে, কিছু লোক তাত্বিক কেলেঙ্কারি করছে… আর কিছু লোক নিজের অশিক্ষা-কুশিক্ষাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়ে জ্ঞান বলে চালিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের অরগানিক ইনটেলেকচুয়াল কই? আর একটা দল আছে এরা অরগানিক ধান্ধাবাজ। কোন ইনডেপ্থ ক্যাপাসিটি নাই খালি রেটরিক্যাল কথা বলে বাজার গরম করতে মরিয়া হয়। ইস্যু দেকলে আলোর পতঙ্গের মতো ঝাপাই পরে। এদের নষ্টামিকে আমি থিওরিটিক্যাল স্কেন্ডাল বলি, এরা সবচেয়ে বেশি বিভ্রন্ত করতে সক্ষম। এর বাইরে কিছু পার্টিজান লোক আছে বুদ্ধিজিবি নামে। আর ব্যাপক ভাবে আছে নিজেকে কাল্ট ফিগার বানানোর প্রতিযোগিতা। আমি থিওরিটিক্যাল ভায়োলেন্স করে এই সব কাল্টফিগার ও মিসকনফিডেন্ট কেরেকটার ভেঙ্গে দিতে আপনাদের দাওয়াত দিতে চাইতাছি আপদত।

জিয়াকে নিয়ে আমার লেখা থেকে কয়েক প্যারা…
“সাম্প্রতিক এক আলাপে বলেছেন, বাংলাদেশ মৃত্য আইডিয়ার উপত্যকা। কী অর্থে, এখানে আইডিয়া দ্বারা আলোড়িত হওয়ার চেয়ে মৃতদের ছায়ার দ্বারা আমরা বেশি আলোড়িত। তিনি মনে করেন, এখানকার ক্ষমতাসীনরা মৃতদের ছায়ার ওপর দাঁড়িয়ে একটা পারিবারিক শাসন কাঠানো তৈরি করেছে।
তিনি বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন টেরিটরির বা ভাষার অর্থে বোঝেন না। তিনি বোঝেন বিশ্ব বা গ্লোবের মধ্যে অন্য সব বিষয় আশয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করে। বাংলাদেশের হূদয় হতে এ যেন একটা প্রকৃত বিশ্ব আওয়াজ। কথাটা ঠিক হল না সিলেটি হূদয় হতে বিশ্ব আওয়াজ। বাংলাদেশে বা এ ধরনের সাংস্কৃতিক-কলোনিয়াল এলাকার জন্য জিয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ লেখক এজন্য না যে তিনি গ্রামে বা রুরালের জন্ম নিয়ে বিশ্ব ফেনোমেনা হয়েছেন।
তিনি গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, তিনি মানবসত্তার লড়াইটা ধরতে পারেন। তিনি বোঝেন আইডিয়া বা চিন্তার লড়াই দিয়ে কেন্দ্র-প্রান্ত একাকার করে দেওয়া যায়। তিনি পশ্চিমকে ডিসেন্টারিং যেমন করতে চেয়েছেন তেমনি প্রান্তের টেনশনকে লোকাল সংস্কার থেকে মুক্তি দিয়েছেন। বিদ্রোহের এমন ধারালো, ক্ষ্যাপাটে ধরন পৃথিবীর জন্য অতি জরুরি ছিল। ২১ শতক যেন জিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। জিয়ার আওয়াজ শুনছে বিশ্ব।”

(জিয়া হায়দার রহমান: এক বিস্ময়কর বিশ্ব-আওয়াজ–রেজাউল করিম রনি, দৈনিক সকালের খবরে প্রথম প্রকাশিত)

“জিয়া হায়দার রহমান এখন একটা ফেনোমেনা/ঘটনা। আর বাংলাদেশের মিডিয়াতে জিয়াকে নিয়ে যা চলছে তা ফ্যাশনের পর্যায়ে চলে গেছে। শুরু থেকে জিয়া হায়দার রহমানকে যে কারণে বাংলাদেশে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা হল, তিনি ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত’ বলে। মজার ব্যাপার হল, আপনি যদি জিয়ার লেখা পড়েন বা জিয়ার প্রকৃত কাজের জায়গাটা ধরতে পারেন দেখবেন তাঁকে বাংলাদেশের ব্যাপারে খুব আবেগাপ্লুত দেখা যাবে না।
জিয়ার কথাতেও আপনি হতাশ হতে পারেন। ফলে মিডিয়া যে অতিরিক্ত দরদ তৈরি করছে তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এবং এই দরদি কাভারেজ জিয়ার কাজের গুরুত্ব বুঝতে ও ‘পাঠ’ তৈরিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। সেদিকে মনোযোগ রেখে আমরা সংক্ষেপে জিয়ার কাজের জায়গাটা বুঝতে চেষ্টা করব।
বিশ্বসাহিত্য ও জিয়া : জিয়া যেই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে লেখালেখিকে এগিয়ে নিয়ে যান এর জন্য তাঁকে কোনো রকম কেন্দ্র-প্রান্ত ধারণার আশ্রয় নিতে হয় না। তারপরেও বাস্তবতা থাকে, তিনি প্রান্তদেশীয় লোক হিসেবে কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক করতে গিয়ে যে ধরনের মুশকিলের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তা জিয়াকে কিছুটা ক্ষ্যাপা করে তুলেছে।
এটাকে বলতে পারেন, সাংস্কৃতিক শ্রেণি সংগ্রাম। জিয়া বারবার শ্রেণির কথা বলে। এই সংগ্রামটা জিয়াকে করতে হয়েছে। এটা করতে করতে তিনি নিজেকে ব্যাপকভাবে ভেঙেছেন। কেন্দ্র-প্রান্তের টেনশন কাটিয়ে নিজের কাজের পদ্ধতিটা ধরতে পেরেছেন। এটা খুব নতুন প্রবণতা, এমনটা বলা যাবে না।
২০০৫ সালে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক একটা বই লিখেছেন, ‘ডেথ অব অ্যা ডিসিপ্লিন’। তিনি এর মধ্য দিয়ে তিনি তুলনামূলক সাহিত্যের মৃত্যু ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, তুলনামূলক সাহিত্য বলে কোনো সাহিত্য নেই এই কালে, যা রচিত হচ্ছে তা ‘সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া সাহিত্য’, যা প্রকৃত অর্থে বিশ্বসাহিত্য।
এটা যেখানে বসেই রচিত হোক না, এটা এখন বিশ্বসাহিত্য হয়ে উঠতে পারে। এই ধারণাটা পরিষ্কার করতে গায়ত্রী ‘প্ল্যানেটরি’ শব্দটি ব্যবহার করেন। জিয়াও সীমানা ছড়িয়ে গেলেন। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া তরুণ এই লেখক কীভাবে সীমানা ছাড়িয়ে গেলেন? ইংরেজিতে তো অনেকেই লিখে। কিন্তু জিয়া কেন এত গুরুত্ব পাবেন?
প্রথম কথা হল, পশ্চিমে বা ইংরেজি ভাষাভাষি লেখালেখির জগতে বিশেষ করে উপন্যাসের বাজার তৈরিতে এজেন্টদের ভূমিকা লেখকদের চেয়ে বেশি। লেখক লিখেন। বাকি কাজটা খুব ঝমকালোভাবে করা হয়। নানা লেখককে নিয়ে বাজার গরম করার জন্য পেশাদার এজেন্ট খুব শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন। এরা মিডিয়াতে গিমিক তৈরি করতে বেশ পারদর্শী।
এর ফলে অনেক সময় মিডিয়ার হুজুগ দেখে কোনো লেখককে পাঠ করতে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন ঘন ঘন। তেমনি জিয়াকে নিয়ে বিশ্বমিডিয়ার কাভারেজেও এই হাইপ বা ওভারটোনটা ছিল। কিন্তু এই হাইপ কাটিয়ে জিয়া ধীরে ধীরে আপন গুরুত্বে ফিরতে শুরু করেছেন।
জিয়ার কাজের গুরুত্ব আঁচ করে সবচেয়ে কার্যকর ২০০১৪ সালের ১৯ মে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড এজ উই নো ইট’ নামে নিউইয়র্কারে লিখেন জেমস উড। উডের লেখাটা জিয়ার গুরুত্বকে বুঝতে প্রাধমিকভাবে বেশ সাহায্য করে। জিয়া ইংরেজি ভাষা লিখে সীমানা অতিক্রম করেননি। বিশ্বের লেখকে পরিণত হননি। তিনি সীমানা অতিক্রম করেছেন ‘আইডিয়া’ ডিল করে। তাঁর উপন্যাসের ভূগোলও ব্যাপক।”

ফ্যাসীবাদের প্রেরণা -গুরু’র নতুন বাণী

6

আজকের বাংলাদেশে যে আওয়ামী ফ্যাসীবাদ পূর্নশক্তিতে জাকিয়ে বসেছে তার পিছনে মূল প্রেরণা হিসেবে রয়েছে কোনো বিশাল নেতা অথবা নেত্রী নয়, কোনো খ্যাতনামা রাজনীতির তাত্বিক নয়, রয়েছে একজন স্ব-আখ্যায়িত শিশুসাহিত্যিক। ফ্যাসীবাদের মূল নিয়ামক কিন্তু একজন ভয়ংকর কতৃত্ববাদী একনায়ক, একটি সর্বগ্রাসী রাজনৈতিক দল কিংবা গনদলনে সিদ্ধহস্ত পুলিশবাহিনী নয়। যেকোনো ফ্যাসীবাদের মূলে থাকে একটি কঠোর ও বিশুদ্ধ আইডিওলজী। পৃথিবীতে অনেক দেশেই নানারকম টিনপট ডিক্টেটরশীপ, একপার্টির রাজত্ব দেখা গেছে গত একশ বছরে কিন্তু প্রকৃত ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের সাথে এসব হীরক রাজার দেশগুলির মূল পার্থক্য হলো একটি ফ্যাসিস্ট আইডিওলজী। জনগনের গনতান্ত্রিক অধিকারকে সম্পূর্নভাবে নসাৎ করে এবং সেই সাথে জনগনের একটি বড়ো অংশের নি:শর্ত আনুগত্য বজায় রাখতে কেবল বিশাল পুলিশবাহিনী কিংবা বিদেশী সাহায্য যথেষ্ট নয়, এর জন্যে প্রয়োজন হয় একটি কঠোর ও জনপ্রিয় আইডিওলজীর। বাংলাদেশে ২০১৩-১৪ সালে যে নতুন ফ্যাসীবাদের সূচনা হয়েছে তার মূলের রয়েছে একটি আইডিওলজী, সেটি হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বর্তমানে এই আইডিওলজীর মূল প্রেরণা-গুরু হলো মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

575468_10151728328535653_444069226_n

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেমন করে বাংলাদেশে ফ্যাসীবাদের মূল হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এটি বোঝার জন্যে প্রেরনা গুরুর সর্বশেষ লেখাটিই খুব ভালো উপকরন হতে পারে। এই লেখায় এই নতুন ফ্যাসীবাদের ভিত্তিগুলি পরিষ্কারভাবেই উঠে এসেছে যারা বুঝতে সক্ষম তাদের জন্যে। “স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর” শীর্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবালের এই লেখাটিতে (http://www.priyo.com/2014/03/28/61144.html) অনেক কথাই রয়েছে, তবে আসল বক্তব্য রয়েছে কয়েকটি লাইনেই।

” শুরুতে বলেছিলাম দেশটাকে এগিয়ে নিতে হলে মূল কিছু বিষয়ে সবার একমত হতে হবে, বঙ্গবন্ধু যে এই দেশের স্থপতি সেটি হচ্ছে এরকম একটি বিষয়। এই দেশটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ করে পাওয়া একটি দেশ। তাই মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন নিয়ে এই দেশটি শুরু করা হয়েছিল সেই স্বপ্নকে ভিত্তি করে তার ওপর পুরো দেশটি দাঁড় করানো হবে, এই সত্যটিও সেরকম একটি বিষয়। আমরা আজকাল খুব ঘন ঘন গণতন্ত্র শব্দটি শুনতে পাই, যখনই কেউ এই শব্দটি উচ্চারণ করেন তখনই কিন্তু তাকে বলতে হবে এই গণতন্ত্রটি দাঁড় করা হবে মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তির ওপরে।

আমরা মুক্তিযদ্ধের ভিত্তি সরিয়ে একটা গণতন্ত্র তৈরি করব, সেই গণতন্ত্র এই দেশটিকে একটা সাম্প্রদায়িক দেশ তৈরি করে ফেলবে, সকল ধর্মের সকল বর্ণের সকল মানুষ সেই দেশে সমান অধিকার নিয়ে থাকতে পারবে না সেটা তো হতে পারে না।

কাজেই ধর্ম ব্যবহার করে রাজনীতি করা গণতান্ত্রিক অধিকার বলে দাবি করা হলেও সেটি কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের সাথে খাপ খায় না।” (2014/03/28/)

এই পুরো লেখাটিতে অনেক কথাবার্তার ভীড়ে মূল পয়েন্ট রয়েছে তিনটি। সেই তিনটি পয়েন্ট আলাদা করে বিশ্লেষন প্রয়োজন এটি বুঝতে যে কেমন করে জাফর ইকবাল আজকে আওয়ামী ফ্যাসীবাদের প্রধান প্রেরনাগুরু হয়ে উঠেছেন।

এই লেখায় তিনি বারবার এটা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবার এই ঐক্যমত্যে আসতে হবে যে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি। একথা ঠিক যে কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে হলে সমাজের সদস্য-নেতৃত্ব সবাইকে নুন্যতম কিছু ভিত্তির উপরে কনসেনসাসে পৌছতে হয়। আগেরকার রাজতন্ত্রিক দেশগুলোতে সেই ভিত্তি ছিলো রাজার সার্বভৌম ক্ষমতা। আধুনিক যুগে বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ব্যবস্থায় নানারকম নুন্যতম ঐক্যমত দেখা গেছে। যেমন সবার সমান অধিকার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক সমতা এরকম আরো কিছু। কিন্তু এই সব কিছুর উপরে আধুনিক রাষ্ট্রে যে ঐক্যমত্যে দেশের সকল নাগরিক ও রাজনীতিবিদদের একত্রিত হতে হয় সেটি হলো আইন ও সংবিধানের শাসন। দেশের মানুষ ও রাজনীতি আইন ও সংবিধানের বিভিন্ন ধারার বিরোধিতা করতে পারে, সেটি নিয়ে রাজনীতি করতে পারে, কিন্তু যতক্ষন আইন ও সংবিধান বলবৎ রয়েছে সেটি মেনে চলবে এবং তা ভংগ করলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেবে, এটিই হলো আধুনিক দেশশাসনের মূলভিত্তি।

রাষ্ট্রে কোনো একজন ব্যাক্তি অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা চেষ্টা ফ্যাসীবাদ প্রতিষ্ঠারই অন্যতম পদক্ষেপ। শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্থপতি কিংবা জাতির পিতা, এটি কোনো ঐতিহাসিক সত্য নয় এটি একটি ঐতিহাসিক মত। শেখ মুজিব বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আর্কিটেকচারাল  ব্লুপ্রিন্ট প্রস্তুত করে সেটি জাতিসংঘ থেকে পাশ করিয়ে আনেন নি কিংবা নিজ ঔরস থেকে কোটি কোটি বাংলাদেশীর জন্ম দিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট নেন নি।আমাদের বুঝতে হবে যে জাতির পিতা, মহাবীর, দ্বিগ্ধীজয়ী, বিদ্যাসাগর, বিশ্বকবি এই রকম খেতাবগুলি কোন ঐতিহাসিকভাবে প্রাপ্ত সনদ নয় বরং ইতিহাসে অনেক মানুষ এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে দেয়া টাইটেল মাত্র। এই খেতাবগুলির সারবত্তা নিয়ে যেমন ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে তেমনি এগুলির বিরূদ্ধে মতপ্রচারের পূর্ন অধিকারও রয়েছে। কোন দেশের প্রতিষ্ঠায় কে সবচেয়ে বড়ো, কার অবদান ছাড়া রাষ্ট্র জন্মই নিতো না, এই ধরনের মতামতগুলি কোনো আধুনিক রাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজের মূল ঐক্যমত্যের ভিত্তি হতে পারে না। এই ধরনের ব্যাক্তিকেন্দ্রিক দাবী তোলাও আজকের দিনে হাস্যকর। আজকের পৃথিবী ব্যাক্তি বা বংশ-কেন্দ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে অনেক আগেই উত্তরিত হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস পড়লে অধিকাংশ সুস্থির মতের মানুষই এই সিদ্ধান্ত নেবেন যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে মানুষটির একক অবদান সবার চেয়ে বেশী তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। তারা এটাও বলবেন যে তার অবদানের ধারে কাছে কেউ নেই। কিন্তু এই ব্যাপক সমর্থন থাকা স্বত্তেও শেষ পর্যন্ত এটি একটি ঐতিহাসিক মত, ঐতিহাসিক সত্য নয়। অবদান, ভূমিকা, এসবই সাবজেক্টিভ ব্যাপার, অবজেক্টিভ নয়। এই ধরনের ব্যাপক প্রচলিত মত সম্পর্কে দ্বিমত করারও অবকাশ রয়েছে এবং যেকোন সভ্য রাষ্ট্রে সেই দ্বিমত করার সুযোগও অবশ্যই থাকতে হবে।

আমেরিকার রাজনীতির ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৪৪ জন প্রেসিডেন্ট এর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ এবং কার অবদান সবচেয়ে বেশী এ নিয়ে বিতর্ক, র‍্যাংকিং লিস্ট করা এসব ইতিহাসবিদ এবং জনগন সবারই একটি বহু পুরাতন এবং নিয়মিত অভ্যাস। এই বিষয় নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো লিস্ট বের হয়। এই সব লিস্টে প্রায় অবধারিতভাবেই যে তিন জনের নাম এক, দুই ও তিন এর মধ্যে থাকে তারা হলো প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন, ষোড়শতম আব্রাহাম লিংকন এবং বত্রিশতম ফ্র‍্যাংকলিন রুজেভেল্ট। এদের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশীবার শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন আব্রাহাম লিংকন। ১৯৪৮ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত করা বিশেষজ্ঞদের ১৭ টি বিভিন্ন সার্ভেতে লিংকন শ্রেষ্ঠতম বিবেচিত হয়েছেন ১০ বার, দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠতম ৫ বার এবং তৃতীয় ২ বার। উইকিপিডিয়াতে এই আর্টিকেলটি বিস্তারিত রয়েছে (http://en.wikipedia.org/wiki/Historical_rankings_of_Presidents_of_the_United_States#Scholar_survey_results)। অর্থাৎ আমেরিকার প্রায় আড়াইশত বছরের ইতিহাসে আব্রাহাম লিংকন যে শ্রেষ্ঠতম নেতা কিংবা শ্রেষ্ঠের খুবই কাছাকাছি, এ বিষয়ে ইতিহাসবিদরা মোটামুটি একমত। শুধু ইতিহাসবিদরাই নন, এমনকি আমেরিকার সাধারন ও জনপ্রিয় ইতিহাসে আব্রাহাম লিংকন মোটামুটি প্রায় অতিমানবীয় অনন্য একজন সাধু-দার্শনিক-নেতা হিসেবেই পরিচিত, তার কাছের অবস্থানেও কেউ নেই।

এই যে মহান আব্রাহাম লিংকন, সেই লিংকনকে আমেরিকার দক্ষিন অংশ-যে দক্ষিনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সিভিল ওয়ারে উত্তরের নেতৃত্বে ছিলেন লিংকন- গত দেড়শত বছর ধরে কি ভাবে দেখা হয়? সোজা ভাষায় বলা যায় যে আমেরিকার দক্ষিনের শ্বেতবর্নের রক্ষনশীলেরা -যারা এখনো দক্ষিনের সবচেয়ে বড়ো এবং প্রভাবশালী অংশ- আব্রাহাম লিংকনকে শয়তানের সাক্ষাৎ অবতার হিসেবে মনে করে। এই মতামত শুধু দক্ষিনের সাধারন নাগরিকেরা নয়, দক্ষিনের রাজনীতিবিদরাও অকপটে প্রকাশ্যে বলতে কোনো দ্বিধা করে না। আমেরিকার রক্ষনশীলেরা এবং অন্যান্য অনেকেই প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন বই-গবেষনা প্রকাশ করে যেখানে তুলে ধরা হয় যে আব্রাহাম লিংকন কিভাবে একটি অনাবশ্যক যুদ্ধের সূত্রপাত করে আমেরিকার জনগনের উপরে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ও ধ্বংসাত্মক অধ্যায়কে চাপিয়ে দিয়েছেন। এসব আমার মতামত নয় বরং অনেক আমেরিকান রক্ষনশীলের মত। তারা লিংকনকে ঘৃনা করার পেছনে যুক্তি হিসেবে কি বলে তা বোঝার জন্যে ২০১০ এ প্রকাশিত Abraham Lincoln: The Southern View (http://www.amazon.com/Abraham-Lincoln-The-Southern-View/dp/0982770006) বইটির সারসংক্ষেপের কয়েকটি লাইন তুলে ধরা যেতে পারে।

লেখক Lochlainn Seabrook এই বইটিতে দক্ষিনের চোখে যে লিংকনকে তুলে ধরেছেন সেই লিংকন একজন – “an unscrupulous demagogue and anti-Christian liberal who broke hundreds of laws; ignored and even subverted the Constitution; used money from the Yankee slave trade to fund his war; sanctioned the murder of both Southern blacks (who would not enlist in the Union army) and harmless Southern noncombatants (including women and children); had tens of thousands of innocent Northerners arrested, imprisoned, and sometimes tortured and executed without charge or trial; rigged the 1860 and 1864 elections; confiscated and destroyed private property; censored governmental debate over secession; and more. Throughout all of this, Southern historians estimate that some 3 million Americans, of all races, died in direct consequence of his actions.”

বলাই বাহুল্য লিংকনের শ্রেষ্ঠত্ব অথবা লিংকনের নিকৃষ্টতা, এই সবই ইতিহাসের ফ্যাক্ট নয় এগুলি ইতিহাসের মতামত। আর মতামত নিয়ে বিভাজন থাকতেই পারে।

এখন প্রশ্ন হলো যে আব্রাহাম লিংকন এর নেতৃত্ব ও তার উত্তরাধিকার নিয়ে আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিনের এর তীব্র বিভাজনের জন্যে কি আমেরিকার রাজনীতির ক্রমাগত বিবর্তন ও উন্নয়ন থেমে রয়েছে? কোনো ভাবেই নয়, এই বিভাজনকে নিয়েই আমেরিকার গনতন্ত্র দিনে দিনে আরো বিস্তৃত ও সংহত হয়েছে। সিভিল ওয়ারে বিজয়ের পরে বিজয়ী উত্তর দক্ষিনকে এই আদেশ করে নি যে সবাইকে লিংকনের নেতৃত্বের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌছতে হবে। প্রতিটি মানুষ ও রাজনৈতিক সংগঠনের রয়েছে নিজস্ব মত ধারন ও প্রচারের অধিকার। কিন্তু সবাইকে দেশের আইন ও সংবিধান মেনে চলতে হবে। আমেরিকার দক্ষিন যুদ্ধে পরাজয়ের পরে মৌলিক নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে প্রদেশের উপরে ফেডারেল ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করেছে, সেটি মন থেকে মেনে নিয়েছে নাকি তার বিরুদ্ধে এখনো প্রচার করছে এটি দেশের সরকারের কোনো বিবেচনার বিষয় নয়, দেশের আইন মেনে চলছে কিনা এটিই সরকারের একমাত্র বিবেচ্য।

শুধু লিংকনই নয়, আজকের আমেরিকায় যদি কেউ বলে যে আমেরিকায় রাজনীতি করতে হলে স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের শ্রেষ্ঠ ভূমিকা স্বীকার করতে হবে, তবে তাকে মানুষ পাগলের চেয়েও যুক্তিবিহীন বলে মনে করবে। আর সেই দেশে দীর্ঘদিন থেকে, সেই দেশ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ সেজে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ফতোয়া দেন যে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে ‘ বঙ্গবন্ধু এই দেশের স্থপতি ‘ এই বিষয়ে সবার একমত হতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনীতি আলোচনায় আমেরিকা-বৃটেন এর তুলনা আনলেই অনেকে হারে রে করে তেড়ে ওঠেন যে এই দেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির সাথে ঐসব দেশের যোজন যোজন পার্থক্য সুতরাং এই ধরনের তুলনার মাধ্যমে কোনো ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা অনর্থক বাতুলতা মাত্র। ঠিক আছে। তাহলে এবার এমন একটি দেশের ইতিহাস-রাজনীতিই দেখা যাক যেটি মাত্র ৬০ বছর আগেও অর্থনীতি ও রাজনীতিতে আমাদের দেশের অবস্থানের খুব কাছেই ছিলো।

পার্ক চুং হি (Park Chung-hee) একজন জেনারেল যিনি একটি ক্যু এর মাধ্যমে ১৯৬১ সালে দ: কোরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এবং এর পরে প্রায় একনায়কের মতোই ১৮ বছর দ: কোরিয়া শাসন করেন, যে শাসনের অবসান ঘটে ১৯৭৯ সালে আততায়ীর হাতে পার্ক নিহত হবার পরেই। পার্ক চুং হি তার শাসনামলেই আধুনিক কোরিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করেন এবং তাকে একারনেই বিশ্বজুড়ে Father of Korean Economic Miracle বলা হয়। টাইম ম্যাগাজিন তাদের মিলেনিয়াম প্রকাশনায় পার্ক চুং হি কে বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ দশজন এশিয়ানদের একজন হিসেবে নির্বাচন করেছিলো। আজ পর্যন্ত দ: কোরিয়ার ডানপন্থী রাজনীতির সমর্থকেরা পার্ককে তীব্র ভক্তির সাথে স্মরন করে। অনেকটা তার স্মৃতির উপরে ভর করেই পার্কের কন্যা পার্ক গুন হেই (Park Geun-hye) ২০১৩ সালে দ: কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

পার্ক চুং হি যেমন একদিকে দেশের বিপুল অংশের কাছে দেবতুল্য ভক্তির ধারক তেমনি আরেক বৃহৎ অংশের কাছে তীব্র ঘৃনার পাত্র। পার্ক তার শাসনের সময়ে বামপন্থী ও গনতান্ত্রিক রাজনীতি ও কর্মীদের উপরে চরম অত্যাচার ও নিষ্পেষন চালিয়েছেন। দেশের শ্রমিকদের অধিকারকে দলন করে বড়ো কোম্পানীগুলিকে সবরকমের সুবিধা দিয়েছেন। তার সময়ে কোরিয়ার নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার বলতে কিছু ছিলো না। কোরিয়ার জনগনের পার্কের সময় হতে শুরু করে আরো অনেক দিন পর পর্যন্ত একের পর এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করে অবশেষে সেখানে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এরকম আরো অনেক কারনেই দ: কোরিয়ার বিপুল অংশের কাছে পার্ক চুং হি একটি ঘৃন্য নাম।

দ: কোরিয়ার জনগনের মধ্যে তাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রধানতম ব্যাক্তিত্ব নিয়ে যে এই বিশাল দ্বিভাজন, তার কারনে কি তাদের উন্নতি, প্রগতি বাধাগ্রস্থ হয়েছে? ১৯৭০ সালেও যখন দ: কোরিয়া আর উত্তর কোরিয়ার মাথাপিছু আয় একই সমান ছিলো সেখানে আজকে দ: কোরিয়ার মাথাপিছু আয় বাকশালী-ঐক্যমত্যের দেশ উ: কোরিয়ার চেয়ে প্রায় বিশগুন বেশী।

বস্তুত ইতিহাস নিয়ে ঐক্যমত্য ছাড়া এগুনো যাবে না এই ধরনের কথাবার্তার কোন সারবত্তা নেই। তৃতীয় বিশ্বের উপনিবেশ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দেশগুলির ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাবে যে যেসব দেশে মুক্তি সংগ্রামের গৌরবোজ্বল ইতিহাস নেই, যারা ঔপনিবেশিক প্রভুদের সাথে হ্যান্ডশেক করার মাধ্যমে নতুন দেশ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে, তারাই অর্থনীতি ও সমাজে বেশী উন্নতি করেছে। দেশের উন্নতির জন্যে ইতিহাস বা মতবাদ নিয়ে একমত হবার জন্যে যারা বেশী সরব তাদের অন্য কোন এজেন্ডা থাকে। এই এজেন্ডা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হলো দেশে ঘৃনার চাষ করে দ্বিভাজন সৃষ্টি করা। আর আমরা বার বার দেখেছি যে এই ঘৃনার দ্বিভাজন ও কৃত্রিমভাবে মতবাদের ঐক্যমত্যের চেষ্টাই গত কয়েক দশকে একের পর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও গনহত্যার জন্ম দিয়েছে।
এই ইতিহাস নিয়ে ঐক্যমত্যের উপরেই রয়েছে জাফর ইকবালের দ্বিতীয় ও মূল পয়েন্ট, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। জাফর ইকবাল বাংলাদেশে যেই ফ্যাসীবাদ প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রাণাতিপাত করে চলেছেন সেই ফ্যাসীবাদের মূল ভিত্তিই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা (বা স্বপ্ন, যে নামেই বলুন জিনিষটি একই)। এই লেখাতে এবং এর আগেও তিনি স্পষ্ট করেছেন যে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের চেয়ে বড়ো কিছুই নেই।

“তাই যারা প্রাণ দিয়ে, রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে এই দেশটা এনে দিয়েছে তার যে স্বপ্ন দেখেছিল সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই এই দেশের রাজনীতি হোক, অর্থনীতি হোক, লেখাপড়া হোক, চাষ আবাদ হোক, গানবাজনা হোক, সুখ-দুঃখ মান-অভিমান হোক, কোনো কিছুই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাইরে হতে পারবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতির প্রথম মাপকাঠি হচ্ছে ‍মুক্তিযুদ্ধ। যারা এটিকে অস্বীকার করে তাদের এই দেশে রাজনীতি করা দূরে থাকুক, এই দেশের মাটিতে রাখার অধিকার নেই।” (০১/১৭/২০১৪)
http://www.priyo.com/2014/01/17/49312.html

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাইরে এই বাংলাদেশে একটি গাছের পাতাও নড়তে পারবে না এই বিশ্বাস হলো জাফর ইকবাল আর তার লক্ষ লক্ষ ভাবশিষ্যের ইমানের মূল স্তম্ভ।  কিন্তু এখানে শুভংকরের সবচেয়ে বড়ো ফাকি হলো যে এই যে অতীব গুরুত্বপূর্ন মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, সেই স্বপ্নটি আসলে কি তার কোনো কংক্রীট বিবরন এই সব ফ্যাসিস্ট প্রফেটদের কাছে আপনি কখোনই পাবেন না। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে এই দেশের বিভিন্ন মত, বিভিন্ন বিশ্বাসের লক্ষ কোটি যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী আর যুদ্ধ পলাতক মিলে কিভাবে একটিই বিশুদ্ধ আর মৌলিক স্বপ্ন দেখে ফেললো আর সেই স্বপ্নের খাবনামাও সেই সকলের কাছেও তর্কাতীত ছিলো, এই রহস্যের কোন ব্যাখা আপনি পাবেন না। ম্যাজিশিয়ানের ট্রিকের মতো মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নও দূর থেকে দেখা আলো আধারির স্টেজ শো, কাছে গিয়ে বিশ্লেষন করলেই সেটা আর স্বপ্ন থাকে না।

বেশী চেপে ধরলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের দিশারীরা অবলম্বন করেন ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতিকে এবং তার ভিত্তিতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তাসের ঘর নির্মানের চেষ্টা করেন তারা। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চার মৌলিক উপাদানেই তৈরী মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্নের ভিত্তির উপরেই বাংলাদেশের রাজনীতি দাড় করাতে হবে এটাই শেষ পর্যন্ত দাবী করা হয়। এই দাবীটি যখন স্পষ্টভাবে বলা হয় তখনই এর শুভংকরের ফাকিটিও সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

জাতীয়তাবাদ নিয়ে এখানে বেশী কথা বলার দরকার নেই। জাতীয়তাবাদ নিয়ে এই দেশে এত লক্ষ লক্ষ পাতা আর শতকোটি শব্দ ব্যয় করার পরও জাতীয়তাবাদ নিয়ে সবার মাঝে যে কনফিউশন রয়ে গেছে তার বিন্দুমাত্র লাঘব ঘটে নি। ভৌগলিক, রাজনৈতিক, সাংষ্কৃতিক, নৃতাত্বিক, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের এই নানারূপের গোলোকধাধায় কোন একটি coherent মতবাদ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এই দাবী অনায়াসেই করা যায় যে বাংলাদেশে এখন এমন দুইজন শিক্ষিত নাগরিক পাওয়া যাবে না যারা জাতীয়তাবাদ বলতে পুরো একই রকম একটি বিশ্বাস ধারন করেন।

এরপরেই আসে মুক্তিযু্দ্ধের স্বপ্নের সবচেয়ে স্পষ্ট Achilles Heel সমাজতন্ত্রের কথা। লক্ষ্যনীয় যে এই সমাজতন্ত্র মানে পরবর্তীতে আরোপ করা সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক মুক্তি,  সোশ্যাল ডেমোক্র‍্যাসী এই ধরনের নির্দোষ, নিরীহ শ্লোগান নয়। ১৯৭২ এর সমাজতন্ত্র মানে সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থা। সেই সংবিধানেই স্পষ্ট বলা আছে,

“১০/ মানুষের উপর মানুষের শোষন হইতে মুক্ত ন্যায়নুগ ও সাম্যবাদী সমাজ লাভ নিশিত করিবার উদ্দ্যেশ্য সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।”

এই সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আরো বিশদ বলা হয়েছে ১৩ অনুচ্ছেদে।

Somaj

সমাজতন্ত্র নিয়ে বিশদ আলোচনা করাও এই লেখার উদ্দ্যেশ্য নয়। শুধু একটি কথাই বলা যেতে পারে যে আজকের বাংলাদেশে কতোজন লোক মনে করে যে এই দেশের অর্থনীতির প্রধান ক্ষেত্র গুলি, যেমন শিল্প, গার্মেন্টস এই সবের জাতীয়করন করা প্রয়োজন? কারা মনে করে দেশের জন্যে দরকার আরো অনেক ‘দোয়েল ল্যাপটপ’ প্রজেক্ট? কয়জন মনে করে যে সমবায়ের ভিত্তিতে কৃষিকে পরিচালনা করতে হবে? কারা বিশ্বাস করে যে সারা দুনিয়ায় কালেক্টিভ অর্থনীতি ফেল মারার পরে এই বাংলাদেশেই সমাজতন্ত্র তার সমুজ্বল ভবিষৎ নির্মানের সূচনা করবে? সমাজতন্ত্র যদি মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন হয়ে থাকে তবে সেই স্বপ্ন এইদেশে অনেক আগেই টুটে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের নামে যেই মতবাদটির যাবতীয় তর্ক-বিতর্কের মূলে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা একটি আধুনিক, গনতান্ত্রিক, যুক্তিসম্মত আদর্শ। যে কোন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যাক্তিই এর বিরোধিতা করতে দ্বিধা করবে। ১৯৭২ এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বোঝানো হয়েছে,

dhormo

এখানে (ক), (খ) এবং (ঘ) অনুচ্ছেদ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই বললেই চলে। এমনকি যারা ধর্মীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন তারাও এই নীতিগুলির সরাসরি বিরোধিতা করবেন না বরং সমর্থনই করবেন। মূল বিতর্ক (গ) অনুচ্ছেদ নিয়ে। পৃথিবীর কোনো গনতান্ত্রিক দেশে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাজনীতি করার অধিকার খর্ব করা হয় নি। প্রতিটি গনতান্ত্রিক দেশে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাজনীতির অধিকার রয়েছে কারন এটি রাজনীতি করার মৌলিক অধিকার প্রশ্নেই অংগাগীভাবে জড়িত। কিন্তু এই বাংলাদেশেই, এই মূর্খ ফ্যাসীবাদীরা, এক অনন্য হবুচন্দ্র মার্কা রাজত্ব কায়েমের জন্যে এই ফ্যাসীবাদী মতকে দেশের উপরে চাপিয়ে দেবার জন্যে বদ্ধপরিকর।

ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে এই ক্ষুদ্র, এলিটিস্ট গোষ্ঠী যে ফ্যাসীবাদী মতকে দেশের উপরে চাপিয়ে দিতে চান তার সাথে বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কোন আত্মিক সংযোগ নেই। এটা ১৯৭১ এ ছিলো না, ১৯৭২ এও ছিলো না, আজকে আরো নেই। এই প্রসংগে আবুল মনসুর আহমেদ এর সেই ক্ল্যাসিক লেখা “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর” এর লেখা স্মর্তব্য,

অথচ প্রকৃত অবস্থাটা এই যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় পাকিস্তানও ভাংগে নাই “দ্বিজাতিতত্ত্ব”ও মিথ্যা হয় নাই। এক পাকিস্তানের জায়গায় লাহোর-প্রস্তাব মত দুই পাকিস্তান হইয়াছে। ভারত সরকার লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নে আমাদের সাহায্য করিয়াছেন। তারা আমাদের কৃতজ্ঞতার পাত্র। দুই রাষ্ট্রের নামই পাকিস্তান হয় নাই, তাতেও বিভ্রান্তির কারণ নাই। লাহোর প্রস্তাবে “পাকিস্তান” শব্দটার উল্লেখ নাই, শুধু ‘মুসলিম-মেজরিটি রাষ্ট্রের’ উল্লেখ আছে। তার মানে রাষ্ট্র-নাম পরে জনগণের দ্বারাই নির্ধারিত হওয়ার কথা। পশ্চিমা জনগণ তাদের রাষ্ট্র-নাম রাখিয়াছে “পাকিস্তান”। আমরা পূরবীরা রাখিয়াছি “বাংলাদেশ”। এতে বিভ্রান্তির কোনও কারণ নাই।

—         ইংরেজ আমলের আগের চারশ বছরের বাংলার মুসলমানের ইতিহাস গৌরবের ইতিহাস। সেখানেও তাদের রুপ বাংগালী রুপ। সে রুপেই তারা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সৃষ্টি করিয়াছে। সেই রুপেই বাংলার স্বাধীনতার জন্য দিল্লীর মুসলিম সম্রাটের বিরুদ্ধে লড়াই করিয়াছে। সেই রুপেই বাংলার বার ভূঁইয়া স্বাধীন বাংলা যুক্তরাষ্ট্র গঠণ করিয়াছিলেন। এই যুগ বাংলার মুসলমানদের রাষ্ট্রিক, ভাষিক, কৃষ্টিক ও সামরিক মণীষা ও বীরত্বের যুগ। সে যুগের সাধনা মুসলিম নেতৃত্বে হইলেও সেটা ছিল ছিল উদার অসাম্প্রদায়িক। হিন্দু-বৌদ্ধরাও ছিল তাতে অংশীদার। এ যুগকে পরাধীন বাংলার রুপ দিবার উদ্দেশ্যে “হাজার বছর পরে আজ বাংলা স্বাধীন হইয়াছে” বলিয়া যতই গান গাওয়া ও স্লোগান দেওয়া হউক, তাতে বাংলাদেশের জনগণকে ভুলান যাইবে না। আর্য্য জাতির ভারত দখলকে বিদেশী শাসন বলা চলিবে না, তাদের ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, রাজপুত, কায়স্থকে বিদেশী বলা যাইবে না, শুধু শেখ-সৈয়দ-মোগল-পাঠানদেরই বিদেশী বলিতে হইবে, এহেন প্রচারের দালালরা পাঞ্জাবী দালালদের চেযে বেশী সফল হইবে না। এটা আজ রাষ্ট্র-বিজ্ঞানের সর্বজন-স্বীকৃত সত্য যে, কৃষ্টিক স্বকীয়তাই রাষ্ট্রীয় জাতীয় স্বকীয়তার বুনিয়াদ। কাজেই নয়া রাষ্ট্র বাংলাদেশের কৃষ্টিক স্বকীয়তার স্বীকৃতি উপমহাদেশের তিন জাতি-রাষ্ট্রের সার্বভৌম সমতা-ভিত্তিক স্থায়ী শান্তির ভিত্তি হইবে॥”

– আবুল মনসুর আহমদ / আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর ॥ [খোশরোজ কিতাব মহল – ডিসেম্বর, ১৯৯৯ । পৃ: ৬৩২-৬৩৮]

আসলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের নামে জাফর ইকবাল এবং তার শিষ্যদের সকল আহাজারির মূলেই রয়েছে একটি জিনিষ, সেটি হলো গনতন্ত্র। তারা ভালোভাবেই জানে যে তারা যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন দেখেন সেই স্বপ্ন বাংলার জনগন ১৯৭১ এ দেখেনি আজও দেখে না। এই কারনেই গনতন্ত্রকে তাদের এতো ভয়। একারনেই নানারকম ছলছুতো, শর্ত দিয়ে গনতন্ত্রকে পর্দার আড়ালে ফেলতে তাদের এতো প্রচেষ্টা। জাফর ইকবাল যে গোষ্ঠীর প্রেরণাগুরু, মন্ত্রী-এশিয়াটিক ডিরেক্টর আসাদ্দুজ্জান নূর যেই গোষ্ঠীর যোগানদার, শামীম ওসমান-তাহের গং যে গোষ্ঠীর সিপাহসালার এবং শাহবাগীরা যেই গোষ্ঠীর ফুট সোলজার, সেই গোষ্ঠীর একটিই লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে আওয়ামী ধর্মের একছত্র রাজত্ব কায়েম করা।

এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে তারা দেশের জনগনকে সরাসরি বাধ্যতামূলক প্রেসক্রিপশনও দিয়ে রেখেছেন। প্রথমেই আপনাকে শেখ মুজিবের নবুয়ত স্বীকার করতে হবে। এরপরে আওয়ামী আদর্শগুলিতে ইমান আনতে হবে। তারপরে সকল আওয়ামী বিরোধীকে ঘৃনাভরে বর্জন করতে হবে। এই প্রেসক্রিপশন মেনে নেয়ার পরেই আপনি যত ইচ্ছা রাজনীতি করতে পারেন। এর আগে রাজনীতি-গনতন্ত্র এসব কোনকিছুই বিবেচনা করা যাবে না।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই সময়ে সবচেয়ে বড়ো বাস্তবতা যে দেশের ভাগ্য জনগনের হাতে নেই। একটি চরমপন্থী গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বার্ষিক ১৫০ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির একটি আস্ত রাষ্ট্রকে কুক্ষীগত করে ফেলেছে। এই বাস্তবতা হতে চোখ ফিরিয়ে, জনগনের অক্ষমতাকে ভুলিয়ে দিতে ফ্যাসীবাদের প্রেরনাগুরু গনতন্ত্রকে তুচ্ছ করে একের পর এক ঐশীবাণী দিয়েই যাবেন প্রতিটি মাসে একের পর এক উপলক্ষকে আশ্রয় করে। আর সেই বাণী সোৎসাহে প্রচার করতে থাকবে চেতনায় বুদ হয়ে থাকা বাংলাদেশী হিটলার ইয়ুথ (Hitlerjugend)। স্টেডিয়ামে পতাকা নিষেধাজ্ঞা, বৃহত্তম পতাকা, লক্ষকন্ঠে জাতীয় সংগীত, এইসব Fascist Mass Spectacle এই প্রোগ্রামেরই অংশ।

18w91xufbk7ayjpg

পরিশেষে পুনরায় আবার মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বা চেতনা নিয়ে অতুলনীয় আবুল মনসুর আহমেদ এর ই আরেকটি বক্তব্য।

 “… জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার মহান আদর্শই আমাদের বীর জনগণকে মুক্তি-সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল। তথ্য হিসাবে কথাটা ঠিক না। আওয়ামী লীগের ছয়-দফা বা সর্বদলীয় ছাত্র একশন কমিটির এগার-দফার দাবিতেই আমাদের মুক্তি-সংগ্রাম শুরু হয়। এইসব দফার কোনটিতেই ঐ সব আদর্শের উল্লেখ ছিল না। ঐ দুইটি ‘দফা’ ছাড়া আওয়ামী লীগের একটি মেনিফেস্টো ছিল। তাতেও ওসব আদর্শের উল্লেখ নাই।

বরঞ্চ ঐ মেনিফেস্টোতে ‘ব্যাংক-ইনশিওরেন্স, পাট ব্যবসা ও ভারি শিল্পকে’ জাতীয়করণের দাবি ছিল। ঐ ‘দফা’ মেনিফেস্টো লইয়াই আওয়ামী লীগ ৭০ সালের নির্বাচন লড়িয়াছিল এবং জিতিয়াছিল। এরপর মুক্তি সংগ্রামের আগে বা সময়ে জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের পক্ষ হইতে আর কোনও ‘দফা’ বা মেনিফেস্টো বাহির করার দরকার বা অবসর ছিল না। আমাদের সংবিধান রচয়িতারা নিজেরা ঐ মহান আদর্শকে সংবিধানযুক্ত করিযাছিলেন। তাই জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঐ ভুল তথ্য পরিবেশন করিয়াছেন।

রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের মতাদর্শকে জনগণের মত বা ইচ্ছা বলিয়া চালাইয়াছেন বহু বার বহু দেশে। সবসময়েই যে তার খারাপ হইয়াছে, তাও নয়। আবার সব সময়ে তা ভালও হয় নাই। পাকিস্তানের সংবিধানের বেলায় ‘ইসলাম’ ও বাংলাদেশের সংবিধানের বেলায় ‘সমাজতন্ত্র, জাতীয়তা ও ধর্ম-নিরপেক্ষতা’ও তেমনি অনাবশ্যকভাবে উল্লিখিত হইয়া আমাদের অনিষ্ট করিয়াছে। আমাদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বহু জটিলতার সৃষ্টি করিয়াছে। এসব জটিলতার গিরো খুলিতে আমাদের রাষ্ট্র-নায়কদের অনেক বেগ পাইতে হইবে॥”

– আবুল মনসুর আহমদ / আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর ॥ [খোশরোজ কিতাব মহল – ডিসেম্বর, ১৯৯৯ । পৃ: ৬২০-৬২১]

[আবুল মনসুর আহমেদ এর book excerpts are courtesy of FB blogger Kai Kaus   https://www.facebook.com/kay.kavus?fref=ts    ]

 

 

 

 

উপাধি আর প্রশংসা – by Ayman Rahat

 

র বেলায় পাওয়ার সাথে চাওয়া সমান্তরালে বাড়ে। যতই পায় ততই চায়। যোগ্যতার বেশি কিছু পেলেও সাদরে স্বাগতম। মুখে যতই ‘আমি এর যোগ্য না বা মানুষের জন্য করি’ জাতীয় কথা বলুক না কেন উপাধি আর প্রশংসা না নেয়ার ভান করেও যত পায় তত নেয়। ঠিক অনেকটা হাসি দিয়ে ‘কি দরকার ছিল’ টাইপের। বিখ্যাত মানুষদের হঠকারিতা সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায় এক্ষেত্রে।

আমরা জানি নোবেল দেওয়া হয় ছয় বিষয়ে। কিন্তু এটা একটা ডাহা মিথ্যা প্রচার। আলফ্রেদ নোবেল ১৮৯৫ সালে তার উইলে যে নির্দেশনা দিয়ে যান তাতে অর্থনীতি উল্লেখ ছিল না। তাতে অন্য পাঁচটি বিষয় ছিল। এবং এই পাঁচটি বিষয়ে কোন কোন প্রতিষ্ঠান বা কারা বিজয়ী নির্বাচন করবেন তার নীতিমালা নোবেল নিজেই দিয়ে যান। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয় ঐ পাঁচ বিষয়ে নোবেল দেওয়া। ১৯৬৮ সালে সুইডিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ৩০০ বছর পূর্তিতে নোবেল ফাউন্ডেশনকে একটি বিরাট অঙ্কের অর্থ দান করে যা নতুন একটি বিষয়ে পুরষ্কার দেয়ায় ব্যবহৃত হবে। বিষয় ঠিক হল অর্থনীতি। কিন্তু জটিলতা দেখা দিল নোবেলের করা ১৮৯৫ সালের উইলে। নোবেল পুরষ্কার নামে ঐ পাঁচটি ব্যতীত অন্য নতুন কোন বিষয়ে পুরষ্কার দেয়া উইল পরিপন্থী। তারপর সিদ্ধান্ত হল নোবেল নামে নয় তবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কারের সমমানের পুরষ্কার হিসেবে এটি ভূষিত হবে। আর এর নাম দেয়া হয় The Sveriges Riksbank Prize in Economic Sciences in Memory of Alfred Nobel. পুরস্কারটি দেয়া হয় আলফ্রেদ নোবেলের স্মরণে। খেয়াল করে দেখবেন ইন মেমরি অব আলফ্রেদ নোবেল যার মানে এটা নোবেল পুরষ্কার নয়। অন্য পাঁচটির বেলায় সরাসরি নোবেল প্রাইয লেখা থাকে।

কিন্তু বিশ্ব মিডিয়া বা কর্তৃপক্ষ এটাকে মুখে মুখে সবসময় নোবেল পুরষ্কার বলে থাকেন। অবশ্য যখন অর্থনীতিতে পুরষ্কার দেয়া হয়ে থাকে তখন নোবেল প্রাইয উল্লেখ করা হয়না। অন্য পাঁচটিতে যেমন উল্লেখা করা হয়। দলিল কখনই এটাকে নোবেল পুরষ্কার বলে না। ১৯৬৯ সাল থেকে এযাবৎ কতো জনই না অর্থনীতিতে এই পুরষ্কার পেলেন কিন্তু এটা নোবেল পুরষ্কার নয় জেনেও নিজেদের টাইটেলে নিজেকে নোবেল লরিয়েট উল্লেখ করে থাকেন। আপনি অমর্ত্য সেন কিংবা পল স্যামুয়েলসনের বই হাতে নিলে দেখবেন নিজেদের নোবেল লরিয়েট দাবী করে এটা ওটা লেখা। এত বিখ্যাত মানুষ হয়েও কিন্তু তারা এই হঠকারিতা বেছে নিয়েছেন। সবই ঐ প্রথম বাক্যে সীমাবদ্ধ। উপাধি আর প্রশংসার বেলায় পাওয়ার সাথে চাওয়া সমান্তরালে বাড়ে।

 

জাফর ষাঁড় কিন্তু জানেন তিনি ড্রোন আবিষ্কারক নন। তিনি একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় তার কাছে Discovery, Invention আর Replica ‘র অর্থ খুবই পরিষ্কার।  তবুও ঐ প্রশংসার বেলায় যা পায় তাই নেয়। মিডিয়া আর কিছু চেতনাধারি তুষাররা তাকে ড্রোন আবিষ্কারক বলে সম্বোধন করায় তার বরং আরও ভাল লেগেছে। তাই এরকম একটা মিথ্যা উপাধি নিয়েও মনে মনে নৃত্য করেছেন। সব বিখ্যাত মানুষেরই এই বদ গুণটা আছে বলা যায়। জাফর ষাঁড়ের বেলায় সেটার ব্রেক ঘটুক সেটা আমিও প্রত্যাশা করিনা। কিন্তু সমস্যা হল তার মত একজন চেতনা সাপ্লাইয়ারের পক্ষে এরকম হঠকারিতা মানায় না। মানতে পারিনা। তার চেতনায়ই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছে।

চেতনাৎসী ড্রোন এবং তুষারের আদর্শিক পদস্খলন প্রসঙ্গেঃ

1

by Aman Abduhu

ফ্যাসিজমের বড় একটা সুবিধা হলো, এখানে বৃহত্তর ডিসকোর্সের স্রোতে গা ভাসিয়ে আরামের সাথে ভেসে যাওয়া যায়। এবং ফ্যাসিজমের বড় একটা বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে ঐ স্রোতে গা ভাসানো বাধ্যতামূলক।

back-Drone_photo0497

 
মজার বিষয় হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আগে ফ্যাসিষ্ট শব্দটা গর্ববোধক ছিলো, তাদের কাছে ইতিবাচক অর্থবোধক ছিলো। আদর্শের পরিচয়বোধক ছিলো। ইটালীতে মুসোলিনির পার্টি সদস্য ওঅনুসারীরা বুক ফুলিয়ে স্লোগান দিতো “লিবরো আ ম্যাসেটো/ ফ্যাসিষ্টা পারফেটো”, অর্থ্যাৎ “বই এবং রাইফেল/ একজন যথার্থ ফ্যাসিষ্ট”।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরাজয় এবং সারা পৃথিবীজুড়ে ইন্ড্রাষ্টিয়ালাইজেশনের সাথে সাথে ইনডিভিজুয়ালিষ্টিক চিন্তাভাবনার উত্থানে এখন ফ্যাসিজম শব্দটা একটা গালি হয়ে গেছে। বিষয়টা অনেকটা বাংলাদেশে “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” ও “শাহবাগি” শব্দদ্বয়ের মতো।

ফ্যাসিজম নিন্দিত, কিন্তু ফ্যাসিজমের জয়জয়কার এখনো পৃথিবীর অনেক দেশে। বাংলাদেশ তার ইতিহাসে ফ্যাসিজমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে এখন। আদর্শ যখন বলবে লাল সবুজ পতাকা পড়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে, এবং তা না করলে তখন আপনে দেশদ্রোহী। চেতনার ইয়াবাখোর কমান্ডাররা যদি বলে জয় বাংলা স্লোগান না দিলে মুক্তিযোদ্ধা না, তাহলে জীবনের মায়া বাদ দিয়ে পরিবার পরিজন ফেলে পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করা লোকটা হয়ে যায় রাজাকার।

ব্যাক্তিগতভাবে ফ্যাসিজম নিয়ে আমি ফ্যাসিনেটেড। মানুষের সাম্প্রতিক ইতিহাসে মানুষ কিভাবে মানুষের মৌলিক একটা বৈশিষ্ট্য- স্বাধীন মত প্রকাশের আজন্ম বেদনাময় চিৎকার ও আকাংখা- কে বারবার দমাতে চেয়েছে এসব পড়তে গিয়ে বারবার আশ্চর্য হই। এখন অবশ্য আর পড়তে হয়না, চোখের সামনে দেখছি সবসময়। যখন পড়তাম, তখন একটা বিষয় আমাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছিলো।

ফ্যাসিজমের ভেতর থেকেই কোন না কোন সময় দ্বিমতের জন্মচিৎকার শুরু হয়। সে চিৎকারের মুখে লবণ দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টাও চিরন্তন। আপনি জামায়াত করেন, মধু মাখিয়ে যান কোন অসুবিধা নাই। যখন দ্বিমত করবেন তখন দেখবেন দ্বিনি ভাই চমৎকার। যশোরের দলত্যাগী এমপি শাখাওয়াতের ছেলে যখন প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেলো তখন জামায়াতের লোকজন বলতে শুরু করলো, এইটা আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তি!! এতোটাই ব্যাক্তিগত প্রতিহিংসার জন্ম দেয় ফ্যাসিজম।

ট্রটস্কি ছিলো রাশিয়াতে পার্টির অনেক উপরের পর্যায়ের লোক। রেড আর্মির কমান্ডার, যুদ্ধমন্ত্রী। ষ্টালিনের সাথে যখন তার নীতিগত মতপার্থক্য হলো, দেখা গেলো দ্বিনী ভাই চমৎকার।

নাৎসী নেতা এবং গণহত্যার হোতা হিমলার ছিলো হিটলারের ডানহাত, শেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে যখন সে এলাইড ফোর্সের সাথে ডিলিংস প্রসঙ্গে হিটলারের সাথে দ্বিমত করলো, জারি হয়ে গেলো গ্রেফতার করে হত্যার নির্দেশ। সারাজীবন ধরে নাৎসি আদর্শের খেদমত তুচ্ছ হয়ে গেলো।

এসবকিছু কারণ ঐ একটাই, ফ্যাসিজম কখনো দ্বিমত সহ্য করেনা। স্রোতের সাথে ভাসতে হয়, স্রোতের সাথেই ডুবতে হয়। জীবনে মরণে আমি তোমার তুমি আমার।

সুতরাং চেতনাগুরু বিশিষ্ট কল্পগল্প নকলবাজ আইজাক জাফরের চোরামি ধরিয়ে দিলে এই বাংলাদেশে হতে হয় স্বাধীনতার শত্রু। আর ততদূর না গিয়েও, ড্রোন প্রসঙ্গে তার দাবীর সাথে দ্বিমত করে যুক্তিতর্ক খুঁজলেই দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নোংরা আক্রমণের টার্গেট হয়ে যেতে হয়।

তরুণ প্রজন্মকে একাত্তরের চেতনাৎসী আদর্শে দীক্ষিত করার আগে বিষয়টা ভাবা দরকার ছিলো, এখন ভেবে লাভ নাই। চেতনাগুরুরা যদি আদেশ জারি করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আপনার বউকে উলঙ্গ হয়ে একহাতে মোম্বাত্তি আরেকহাতে লালসবুজ বেলুন নিয়ে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রোড মার্চ করতে হবে, তাহলে তাই করতে হবে তুষার। আপনি এখানে যুক্তি ব্যাখ্যা খুঁজতে গেসেন? স্বাধীনতার শত্রু!! চেতনাশত্রুর জাটকা/ ফিলটারে খাইসে আটকা!

এইটা ফ্যাসিজমের চিরকালীন ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য। সুতরাং জেনেবুঝে আগুনে লাফ দেবেননা। জাফর ইকবাল ষাড়কে ড্রোনের আবিস্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ধন্য ধন্য রবে মেতে উঠুন; স্বাধনিতার চেতনা বাস্তবায়ন করুন। উনি যদি ভবিষ্যতে দাবী করেন উনি চেতনার বলে বলীয়ান হয়ে নতুন ধরণের স্মার্ট ফোন আবিস্কার করছেন, যেখানে রিংটোন হিসেবে জয়বাংলা স্লোগান দেয়, তাহলে তাকে স্মার্টফোনের আবিস্কারক হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়ে ধন্য ধন্য রবে ফেটে পড়ুন। স্রোতে গা ভাসিয়ে দিন। নিরাপদে থাকুন।

জয় বাংলা।

আমি শাহবাগ দেখেছি

by Asif Shibgat Bhuiyan

শাহবাগী ভাঙননৃত্য শেষ হলে কয়েকটি জিনিস ধীরে ধীরে প্রতিভাত হবে বলে আমার ধারণা। এখানে বলে ফেলি।
বহুদিন ধরে একটি মহলের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক হেজিমনির মূল উৎস ছিলো ১৯৭১ এর জুজুর ভয় দেখানো। গত ৪২ বছর ধরে একটি একচেটিয়া পারসেপশন তারা মানুষের মাঝে তৈরি করে রেখেছে। গত এক বছরে এই পারসেপশনের নাটকীয় পতন ঘটেছে। অত্যাচারী ভিলেনের সাথে চির অত্যাচারিত হিরোর একটি অসম লড়াই যাতে হিরোরা প্রাথমিকভাবে জয়ী হলেও ওঁতপেতে থাকা ভিলেন যে কোনও সময় আবার আক্রমণ করবে – এই চিত্র আমাদের মর্মমূলে একেবারে গেঁথে দেয়া হয়েছিলো। এই মানসিক দৃশ্যপট এখনকার তরুণ প্রজন্মটির মনে গেঁথে ছিলো গত বছর পর্যন্তও। এ বছরে এসে প্রথম হিরোদের সাথে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভিলেনরা মাটি পাওয়া শুরু করেছে। এতে ভিলেনদের তেমন কিছু করতে হয়নি। হিরোরা হঠাৎই অহেতুক ফাউল করে নিজেদের ফেয়ার প্লে নষ্ট করেছে এবং সুযোগ করে দিয়েছে প্রতিপক্ষের সমর্থন ধীরে ধীরে বাড়িয়ে তোলার। এই আত্মহননে সরাসরি ভূমিকা রেখেছে হিরোদের অফিশিয়াল চিয়ারলিডাররা – শাহবাগীরা।

একটি রাজনৈতিক সিদ্ধিলাভের প্রহসনের বিচার কার্যে শাহবাগীরা কেবল সমর্থনই দেয়নি, ইন্ধন যুগিয়েছে। তাদের মনোভাব ছিলো একরোখা “রাজনীতি বুঝি না, ফাঁসি চাই”। বরং তারা ট্রাইব্যুনালের ফাঁক ফোকরগুলো খেয়াল করে যদি এই দাবী তুলতো যে “অবিলম্বে সুষ্ঠ বিচার চাই এবং প্রকৃত অপরাধীর বিপক্ষে মজবুত প্রমাণ সাপেক্ষে শাস্তি চাই।” তাহলে সেটা সবদিক থেকেই ফেয়ার হতো, যুদ্ধাপরাধের দায়মুক্তিও হতো এবং পুরো প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক ফাউল প্লে থেকে মুক্ত থাকতো। সেটা না করে শাহবাগ ঐ কাজটাই করল যা এই বিচার পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্যকে সার্ভ করে – রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধি।

শাহবাগীরা দ্বিতীয় যে ব্লান্ডারটি করল সেটি হোলো এই দেশের জনমনে সবচেয়ে বড় যে দুটি চেতনা একই সাথে মানুষ লালন করে এসেছে এতদিন, সে দুটির মাঝে ক্ল্যাশ লাগিয়ে দেয়া। ৭১ এর চেতনা এবং ইসলামি চেতনা। শাহবাগীরা মঞ্চের প্রাথমিক সাফল্যে দ্বিতীয় চেতনাটিকে তাচ্ছিল্য করে বসেছিলো। এখানে বলে রাখা ভালো যে অন্তত ২০১২ পর্যন্ত মডারেট ইসলামি চেতনা ও ৭১এর জাতীয়তাবাদী চেতনা মানুষ একসাথে যত্নে লালন করে এসেছে। এটি একটি ফ্যাক্ট – এটাকে অস্বীকার করা বিরাট বোকামো। এ দুটি চেতনার কোনও একটি এক্সট্রিম (অপরটিকে আমল না দিয়ে) এদেশের মানুষ ভালো চোখে দেখেনি। এটার প্রমাণ হোলো যে জামাতের এতদিনকার কোনঠাসা অবস্থা। কারণ জামাতের ইসলামি চেতনার ঝান্ডাটি হাতে থাকলেও, ৭১ এর ব্যাগেজের কারণে তারা এতদিন কোনঠাসা ছিলো। সেক্যুলাররা তো বটেই, সাধারণ অজামাতি মুসলিমদের একটি বড় অংশ তাদের বখে যাওয়া সৎ ভাই হিসেবে দেখতো। জামাতিদের প্রত্যাখ্যান করার কারণ যতটা ছিলো ইসলামিক মতবিরোধ তার চেয়েও বেশি তাদের এই ব্যাগেজ।

শাহবাগীরা নিজেদের পায়ে কুড়ালটা মেরেছে যুদ্ধাপরাধের বিচার চেয়ে নয় অবশ্যই, বরং অন্য দুটি কারণে। এক, একটি ভুল বিচার পদ্ধতিকে আরও ইন্ধন যুগিয়ে এবং দুই, ৭১ এর চেতনার সাথে ইসলামি চেতনার যে ডেলিকেট ব্যালেন্স এই দেশে রক্ষা করে চলতে হয় সেটি করতে ব্যর্থ হয়ে। এই অর্ডার আমি সময়ের প্রেক্ষিতে করেছি নতুবা সমস্যা শুরু হয়েছে বরং দ্বিতীয়টা দিয়ে। তাদের প্রাথমিক সাফল্যের ব্যাপারে মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে যখন তারা এদেশের অরিজিনাল সিন করে বসল – ইসলামি চেতনাটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিতে পেরে, বরং পায়ে ঠেলে। তারা বলেছে অবশ্য সময়ে সময়ে যে এটা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, কিন্তু আন্দোলন কেবল ইমোশানের ওপর চলে না, তার ট্যাক্টিক্স ঠিক থাকতে হয়। তাদের আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো যে দুটি চেতনার মাঝে ব্যালেন্স না করলে চলবে না। যখন তাদের বিরুদ্ধে ইসলামকে অবজ্ঞা করার অভিযোগ আসল এবং একই সাথে বিচারের বিভিন্ন অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও শাহবাগীরা সেটিকে সাপোর্ট করে গেল, তখন সাধারণ মানুষ দুই দুইয়ে চার করা শুরু করল। শাহবাগীদের জাতীয়তাবাদী চেতনার চেয়ে প্রাধান্য পেল তাদের অইসলামি চেতনা।

শাহবাগীরা যখন বুঝলো যে ইসলামি চেতনাকে তাচ্ছিল্য করার প্রবলেমটা তারা এটা বিভিন্ন ভাবে বোঝাতে শুরু করল যে তাদের মূল দাবী ছিলো যুদ্ধাপরাধের বিচার, ইসলামের সাথে তাদের কোনও বিরোধ নেই। তাদের এই দাবীও ছিলো যে এটা যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায় না তারা এই তকমা তাদের গায়ে লাগিয়ে দিতে চাইছে। এটা একটা ভালো যুক্তি, এবং নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষদের অনেকেই, বিশেষ করে যারা তাদের সেকেন্ড চান্স দিতে চেয়েছে, তাদের যুক্তিটি মনে ধরেছিলো। আপনাদের মনে থাকবে নিশ্চয়ই মঞ্চে একজন মহিলাকে দিয়ে কুরআন পড়ানো এবং আরেকজনকে শ্রোতা হিসেবে রাখার কৌতুহলোদ্দীপক ছবিটির কথা। কিন্তু এরপরই শাহবাগ করল একটি আত্মঘাতী কাজ যা থেকে তারা আর রিকাভার করতে পারেনি এবং আর কখনও পারবেও না আমার ধারণা।

৬ মের ভোরে সরকার কর্তৃক হেফাযতকে উৎখাত করার ঘটনা এবং সেই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে যখন একটি পাল্টাপাল্টি কনফিউশান চলছিলো তখন শাহবাগীদের হাতে একটি সুবর্ণ সু্যোগ ছিলো নিজেদের ইসলামি চেতনা রিলেটেড ইমেজটিকে পুনরুদ্ধার করার। তারা এই বিষয়টিতে সম্পূর্ণ চুপ থাকতে পারত। তদের ঘটে বুদ্ধি আর একটু বেশি থাকলে তারা ইন ফ্যাক্ট সরকারের কাছে এই দাবীও জানাতে পারত যে ৬ই মের ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হোক। আশ্চর্যজনক ভাবে তারা, বিশেষ করে সোশাল মিডিয়াতে তাদের নেতারা এবং অন্যান্য পাতি চেলাচামুন্ডারা ঘটনাটি নিয়ে রসিকতা করা শুরু করে, বিশেষ করে হেফাযতের দাবী করা সংখ্যাটিকে ঘিরে। তারা ভুলে গিয়েছিলো যে ৩০ লাখের ট্যালিসমান সংখ্যাটি তারা এতদিন জপে এসেছে সেটা ঠিক ততটাই বায়বীয় ছিলো যতটা ছিলো হেফাযতেরটি। আমি পূর্ণ কনফিডেন্স নিয়ে বলতে চাই যে এটাই ছিলো গেইম, সেট, ম্যাচ। শাহবাগীদের বিপক্ষে।

কেন শাহবাগীরা এরকম হঠকারিতা করল? বোঝা ডিফিকাল্ট। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে গোয়ার্তুমি বা রেকলেস স্বভাব। আফটার অল তারা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক। আসলে কারণ এটি নয় আমার মতে। শাহবাগীরা তাদের মূল দাবীতে কখনই সৎ ছিলো না, তারা যুদ্ধাপরাধের আড়ালে একটি সেক্যুলার প্যারাডাইম শিফটের কাজ করতে চেয়েছিলো ঠিকই। শুধু মাত্র বিপদের সময়ই তারা সেটাকে ঢাকতে চেয়েছিলো। সেটা ছিলো থাবাবাবার মৃত্যুপরবর্তী হেফাযতের মিটিয়রিক উত্থানের সময়টি। কিন্তু যে দুবার তারা মনে করেছে তারা কন্ট্রোলে চলে এসেছে সে দুবারই তারা তাদের সেক্যুলার অ্যাটিচিউড ও অবজেক্টিভ লুকাতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথমত, শাহবাগের প্রাথমিক উত্থানের সময় এবং দ্বিতীয়ত, ৬ই মেতে হেফাযতের উৎখাতের পর। অন্যভাবে বলতে গেলে তাদের সকল বাগাড়ম্বর ছিলো সরকারের ছত্রছায়ায়। সরকার যেমন তাদের ব্যবহার করেছে তারাও সরকারের লেজ ধরেই ঝুলে ছিলো।

এখন শাহবাগ যে আস্ফালনগুলো থেকে থেকে দেখাচ্ছে এটা বিপ্লবীদের হুংকার নয়, বরং চিয়ারলিডারদের কত্থক। সরকার যখনই গোল দিচ্ছে শাহবাগীরা উদ্বাহু নৃত্য শুরু করছে। লক্ষ্য করবেন যে সরকার এখন ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছে যার ফলে দেশে একটি অরাজক অবস্থা তৈরি হয়েছে। এসময় তাদের উচিৎ ছিলো, যদি সত্যিকার দেশপ্রেমিক তারা হয়ে থাকতো, এই অবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। একটি সাংগঠনিক ভিত্তি যেহেতু দাঁড়িয়েই গেছে তারাই ছিলো এই কাজের সবচেয়ে উপযুক্ত দল। পাঠকরা নিশ্চয়ই ইমরান এইচ সরকারের সেই দম্ভোক্তি ভুলে যাননি যখন সে বলেছিলো সরকারের চেয়ে শাহবাগই বেশি শক্তিশালী। কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে শাহবাগ তাদের চিয়ারলিডিঙের কাজেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলো। প্রথমে তারা ইসলামি চেতনার পরীক্ষায় লাড্ডু মেরেছে, এবার তারা জাতীয়তাবাদী চেতনাতেও ফেল করে বসল।

দেশের প্রধান দুটি চেতনার পরীক্ষায় ডাব্বা মারা দলটি একটি দূর্নীতিপরায়ণ “স্কুল কমিটির” খুঁটির জোরে স্কুলে টিকে থাকলো তো বটে, কিন্তু এই টিকে থাকা তো আর সত্যিকারের বেঁচে থাকা নয়, বরং লাইফ সাপোর্টে বেঁচে থাকার শামিল। আপনি স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন হলে বুঝবেন যে এই সরকার পরিবর্তিত হয়ে গেলে শাহবাগকে বসতে দেয়া হবে না এটা যেমন ঠিক – তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে শাহবাগ নিজেই আর বসবে না। আন্দোলন আর চিয়ারলিডিঙের মাঝে যে স্থুল পার্থক্য – তা এতদিন যদি আপনার কাছে পরিষ্কার না হয়ে থাকে, সেদিন হবে।

আশ্চর্যজনক ব্যাপার যে শাহবাগ নিজেদের কর্মকান্ডকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে দেখাতে চেয়েছিলো। প্রথম মুক্তিযুদ্ধের সাথে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মিল একটিই – কম বেশি একই সময় স্থায়ী ছিলো দুটোই। কিন্তু মিলের এখানেই সমাপ্তি। কোথায় একটি বিদেশী শক্তির সাথে ৭১ এর প্রাণপন গেরিলা যুদ্ধ আর কোথায় এই বিরানীর গন্ধে ভুর ভুর করা পরিবেশে নৃত্যপটিয়সদের রোমাঞ্চকর মিলনমেলা। হায়, যে জাফর স্যার দূর্বার যৌবনকালেও কোনও এক অজানা কারণে মুক্তিযুদ্ধ মিস করে ফেলেছিলেন, আজ এই বার্ধক্যের করাল গ্রাসকে ফাঁকি দিয়ে তিনিও চলে এলেন যুদ্ধনৃত্যে যোগ দিতে।

দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নামে যে তামাশা শাহবাগীরা করল আগামি যত মাস এই সরকার থাকে তাতে চিয়ারলিডিং তারা চালিয়ে যেতে পারবে সন্দেহ নেই। কিন্তু যবনিকা পতনের পর দুটি জিনিস প্রতিভাত হবে স্পষ্ট ভাবে আমার বিশ্বাস:

১. “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের” ভিস্যুয়াল সার্কাসের কারণে প্রথমটির ব্যাপারে যে কাল্পনিক রোমাঞ্চ এই প্রজন্ম এতদিন মনে মনে পুষে এসেছিলো সেটি অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে গেছে।

২. এতদিন ৭১ ভিত্তিক জাতীয় চেতনা ও ইসলামি চেতনার মাঝে যে সমতা বিরাজ করছিলো সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। এগিয়ে এসেছে ইসলামি চেতনা। ইসলামপন্থিরা যদি বিশাল গাধামো না করে তবে সামনে তাদের জন্য সুদিন রয়েছে। যদিও তাদের গাধামো করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না, সেটা একটা ভ্যালিড সম্ভাবনা বটে। কিন্তু সে আরেকদিনের কথা।

Right Cause, Wrong Ambassador

1

The decision to suspend combined admission test and imposing local quota system for Shahjalal University of Science and technology ( SUST) is a bbackward step and extremely worrisome development. This kind of development will have a long lasting effect on our higher education system and is a very ominous sign. Sensible, reasonable and education people concerned about Bangladesh should raise their voice against such change.

20131126-200615.jpg

I should be very happy at Dr Zafar Iqbal’s stand on this issue. Here he is standing for cause that really matters and is of future significance. His celebrity status should have helped the cause. But I am more worried at him throwing his weight behind this cause. I fear, by his support, he will do more harm to the issue than help it.

Dr. Zafar Iqbal had great following among the young people in Bangladesh. He could have become the universal role model for young Bangladeshis. But by his narrow politicking, blind partisan writings and activities – rather than becoming the role model, he has become a subject of hatred to a big chunk of Bangladeshi youth. Dr Iqbal never wanted to become the role model to whole Bangladesh, rather he opted to become a celebrity for a very narrow group of urban youth. He is now a lighting rod, his names incites passion among everyone. But I am afraid he incites a passion of hatred in the majority and a passion of love in a much smaller proportion.

Now I am afraid that – although Dr Iqbal has finally stood up for the right cause, because Dr. Iqbal is in favor of the cause, many youth will support the other side with the wrong cause. Now they will opt for the idiotic ideas of quota and local admission test for SUST. This is human nature. By supporting this good cause, Dear professor Iqbal, you have just done an irreparable harm to the cause. I really wish, dear Professor Iqbal, instead of doing all the self promoting drama of resignation and public letter, you could have used the good terms you have with your leaders, The Prime Minister and Education Minister and convince them no to change the rule. That would have been more effective.

You supporting the cause, Dr Iqbal, is equivalent to Iran’s Ahmednadaze or Al Qaeda leader endorsing in US Presidential election. Thanks, but no thanks.