খালেদা জিয়ার বক্তব্য

2

খোমেনী ইহসান:
খালেদা জিয়া যা বলেছেন, তাকে অনেকে বিকৃত করছে। যারা এটা করছে, তারা আসলে স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে নিজেদের সমর্থন জানাচ্ছেন। এদের চরিত্র সম্পর্কে মানুষ হুঁশিয়ার হোক। মুর্খরা কথা বিকৃত করে নিজেদের বিদ্যা ফলাতে চায়। নাহলে বুঝতো যে তাদের মানুষ কতখানি প্রত্যাখ্যান করে। 

সরকারের প্রতি বক্তব্য  

‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে না দেয়ায় খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনা রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিচ্ছেন। এই রক্তের গঙ্গার ওপর দিয়ে তিনি তার নৌকায় চড়ে ক্ষমতায় বসবেন। এই আশা দুরাশা। সেটা ভুলে যেতে বলেন। দেখবো কতদিন আটকে রাখতে পারেন। কর্মসূচি চলবে যতদিন এ রকম করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ভুলে যাইনি সেই দিনগুলোর কথা। আজকে সারা দেশকে কি অবস্থা করে রেখেছেন। সাহস থাকলে ছেড়ে দিতেন। দেখতেন যে কিভাবে জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। মা-বোন, ভাই, কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি জনতা, ছাত্র-যুবক সব বেরিয়ে আসতো আজকে।

আপনারা জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন। দেশের প্রতিটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছেন। এই সরকারই না বলেছিল, খালেদা জিয়া বের হোক রাস্তায়? আজকে আমি রাজপথে যেতে চাই। কেন বাধা দিচ্ছেন? তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তাদের তো রাজপথে নামার সাহস নেই। দুনিয়ার সিকিউরিটি নিয়ে চলেন, আর মানুষ মারেন। মানুষ গুম করেন। মানুষ খুন করেন। সারা দুনিয়া জেনে গেছে যে হাসিনা কত মানুষ খুন করেছে। কত মানুষ গুম করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এই পুলিশ বাহিনী, র‌্যাব বাহিনী। কাজেই, আজকে না হলে কালকে হবে এই অবস্থান। কালকে আমাদের মিছিল হবে। বন্ধ করুন আপনারা, আমরাও দেখবো। আর কত মানুষ মারবেন? তা-ও দেখবো। এর আগেও তো মেরেছেন। তার পিতা ক্ষমতায় থেকে ৩০ হাজার লোক মেরেছেন। আর এখন আরও মারছেন। মারেন।

এর পরিণতি যে শুভ হবে না- তা তারা বুঝেছেন। জনগণ দেখেছে। এর পরিণতি শুভ হয় না। এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ ও কঠিন। জবাবদিহি করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আইনজীবীদের ওপর আক্রমণ করেন, গ্রেপ্তার করেন, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছেন, মা-বোনদের ওপর নির্যাতন করছেন। আপনি না (প্রধানমন্ত্রী) মহিলা। আপনার মহিলাদের প্রতি এতটুকু সম্মান নেই। এতটুকু দরদ নেই। যে, আমরা মহিলাদের অন্তত সম্মানটা রক্ষা করি। সেটাতো আপনারা করেন না। কি আচরণ করেছেন?

অথচ আমাদের সময় ১৭৪ দিন আপনারা হরতাল করেছেন। অবরোধ করেছেন। নানা রকম বিশৃঙ্খলা করেছেন। লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মেরেছেন। একটা গুলিও আমি চালাইনি। দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি দরদ আছে আমাদের। মায়া আছে। সেজন্যই আমরা জনগণকে গুলি করে হত্যা করতে পারি না। কিন্তু আপনারা যেভাবে নৃশংসভাবে গুলি করছেন, হত্যা করছেন। তার জবাবদিহি করতে হবে। তার জবাব আপনাদেরকে দিতে হবে। এই রক্তের সাগর পাড়ি দিয়ে নৌকা তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে না। আজকে রক্তের সাগরে নৌকায় করে উনি হাওয়া খেতে যাচ্ছেন। দেখতে পাবেন ক’দিন পরেই তার পরিণতি।

এই সমাবেশ আজকে হয়নি। আবার কালকে করবো। দেখবো, আপনারা আসেন, বসে থাকেন গেটের কাছে। ঠিক আছে। প্রতিদিন আমিও একই কাজই করবো। চলুক কতদিন চলে। আপনি মনে করেছেন কি? দেশটা কি আপনাদের একার? পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের- যে গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে আমাদের সমাবেশ বন্ধ করতে চায়, পুলিশ বাহিনী দিয়ে সমাবেশ বন্ধ করতে চায়? সাহস থাকলে কাউন্টার প্রোগ্রাম করে দেখাতেন। সাহস নেই। ১০টা লোকও আসে না। ভাড়াটিয়া লোক আনে। ডিসি-এসপিদের দিয়ে লোক আনায়। বুঝি এটা আমরা। না হলে এমন করুণ পরিণতি হয়? ১৫৪টা আসন আনকনটেস্টেড হয়ে যায়? আর বাকি রয়েছে কি? বাকিগুলোও করে ফেলবেন। ওটা কোন ইলেকশন নয়। এটা যে সিলেকশন হয়েছে তা আজকে জাতির কাছে পরিষ্কার। দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার। তাই মানুষ আজকে ধিক্কার দিচ্ছে। ধিক্কার দেই আমরা এই সরকারকে।

পুলিশের প্রতি বক্তব্য 
পুলিশকে লক্ষ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, কি করছেন? আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোন বিরোধ নেই। আপনারা দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু আমি মনে করি যে, দায়িত্বটা সুন্দরভাবে পালন করুন। সম্মানের সঙ্গে থাকুন যেন আমরাও কাজ করতে পারি। আপনারাও কাজ করতে পারেন। আপনারা পুলিশ বাহিনী। কিন্তু এটা তো ঠিক নয় যে, আমাকে আমার বাড়ি থেকে বের হতে দেবেন না। এটা তো ঠিক নয়। এখানে আপনাদের যে অফিসার ছিল, সে গেল কোথায়। তার সঙ্গে তো আমি কথা বলতে চেয়েছি। সে কোথায়? কেন আমার পথ আটকিয়েছে? কেন সে আসছে না এখন সামনে? এতক্ষণ তো অনেক কথা বললেন। এখন মুখটা বন্ধ কেন? এই যে মহিলা। আপনার মুখটা এখন বন্ধ কেন? বলেন তো কি বলছিলেন এতক্ষণ ধরে। মুখটা বন্ধ কেন এখন? দেশ কোথায়? গোপালী? গোপালগঞ্জ জেলার নামই বদলে যাবে বুঝেছেন? গোপালগঞ্জ আর থাকবে না।

সরকারের প্রতি বক্তব্য 

সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, আল্লার গজব পড়বে, আপনারা যা শুরু করে দিয়েছেন। কতগুলো আলেমকে হত্যা করেছেন। এতিমকে হত্যা করেছেন। কতগুলো বিডিআর অফিসারকে হত্যা করেছেন। সেদিন কোথায় ছিল হাসিনা? এতগুলো অফিসারকে মারলো। ৫৭ জন অফিসার হত্যা করলো। সেদিন হাসিনার এ ফোর্স কোথায় ছিল? কেন সে পাঠায়নি। আসলে তো সে নিজেই জড়িত ছিল বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে। সেজন্যই আজকে, নতুন নতুন অনেক অপরিচিত চেহারা দেখা যায়। যাদেরকে চেনা যায় না যে, তারা আসলেই বাংলাদেশী কিনা। বাংলাদেশের আজকের যে কর্মসূচি ছিল, আপনারা যদি দেশকে ভালবাসতেন, তাহলে আজকে ছিল আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ছিল আমাদের কর্মসূচি। আপনারা গণতন্ত্রও চাবেন না, দেশ রক্ষা করতেও দেবেন না। গোলামি করবেন? দালালি করবেন? এই গোলাম তো রাখবে না। লেন্দুপ দোরজি’র ইতিহাসটা পড়ে দেখুন। সেও কিন্তু টেকেনি বেশিদিন। তাকেও বিদায় দিয়েছে এত দালালি করে, দেশ বিক্রি করে। কাজেই এই দেশ বিক্রি চলবে না। দেশ রক্ষা হবেই ইনশাআল্লাহ।

পুলিশের প্রতি বক্তব্য 

পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, হাসিনার দালালি করে লাভ হবে না। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে থাকুন। জনগণের সঙ্গে থাকুন। দেশের মানুষের সঙ্গে থাকুন। তবেই কাজে দেবে। দেশ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে। আজকে সবার দায়িত্ব হয়ে গেছে দেশ বাঁচানোর। মানুষ বাঁচানোর। আর আপনারা ঘরে ঢুকে এখন মানুষ হত্যা করছেন। মনে করেন যে, এগুলোর হিসাব নেই? এই মা-বোনের কান্না। এই আলেমে দ্বীনের কান্না, বিডিআর অফিসারদের স্ত্রীদের কান্না এগুলো কি বৃথা যাবে? এগুলো কোনও দিনই বৃথা যাবে না। আজকে যারা এই জুলুম-নির্যাতন করছেন তাদেরকেও এদের মতো একদিন চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চোখ বন্ধ হয়ে যাবে। এখনও সময় আছে।
এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। তখন তাদেরকে বিরোধী নেত্রী বলেন, ধাক্কাধাক্কি বন্ধ করুন। আমরা কোন ধাক্কাধাক্কি করতে আসিনি। আমি বলছি, আপনারা চাকরি করেন, চাকরি করবেন। কিন্তু এ রকম আমাদের গায়ের উপরে উঠে পড়বেন না। দূরে থাকুন। আপনাদের জায়গা যেখানে সেখানে থাকুন। আজ আপনাদের তো রাস্তার উপর থাকার কথা। আপনারা বাড়ির মধ্যে এসে গেছেন কেন? আপনাদের মেয়েরা এত ঝগড়া করে কেন? উত্তেজিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি আরও বলেন, এই মেয়েরা। চুপ করো। ক’দিনের চাকরি হয়েছে যে, এত কথা বলো? কিসের জন্য এত কথা বলো? চুপ থাকো। বেয়াদব কোথাকার। আপনার অফিসার কোথায় গেল? আসলো না? তাদের বলবেন, আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই। বুঝেছেন? কি বোঝেননি কথাটা। এটা তো বাংলাভাষা। নাকি অন্য কোন ভাষায় বলতে হবে আপনাদেরকে। বুঝেছেন? সেই অফিসার কোথায়? তাকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলবেন।’

2 thoughts on “খালেদা জিয়ার বক্তব্য

Leave a reply to Akib Cancel reply