বাংলাদেশের আস্তিক-নাস্তিক বাইনারী নিয়ে একটি “বিজ্ঞানমনষ্ক” আলোচনা

2

ফাহাম আব্দুস সালাম

বাংলাদেশে ‘বিজ্ঞানমনষ্ক’ বলে একটা টার্ম আছে। সম্ভবত যারা বিজ্ঞানী নন, বিজ্ঞান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা করেন নি কিন্তু পরিপার্শ্বকে বোঝার জন্য বিজ্ঞানের ওপর নির্ভর করেন তাদের নির্দিষ্ট করতে এই টার্মটি ব্যবহার করা হয়। এই নির্দিষ্টকরণে একটা ফাঁক আছে – বেশ বড় ফাঁক। পরিপার্শ্বকে বোঝার জন্য বিজ্ঞানকে একেবারেই ব্যবহার করেন না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুব বেশী আছেন বলে আমার মনে হয় না। যাদের আমরা গণ্ডমূর্খ ধরে নিয়ে নিজেদের বিজ্ঞানমনষ্ক বলি তারাও অনেক কিছু বোঝার জন্য রিপিটেবল অবজারভেশন এবং যুক্তি ব্যবহার করেন। হ্যা, তাদের হয়তো দিলখুশ সংজ্ঞা জানা নেই, হয়তো তারা তাদের অবজারভেশনকে গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারেন না কিন্তু তারা অতশত না জেনেও বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেন।

কিন্তু তাদেরকে আমরা বিজ্ঞানমনষ্ক বলি না – কারণ দুয়েকটি ব্যাপারে তারা বিজ্ঞানমনষ্ক হলেও তাদের জীবনে অবিজ্ঞানমনষ্কতা আছে বেএন্তেহা – তারা তুকতাকে বিশ্বাস করেন। কিন্তু কতোটুকু অবিজ্ঞানমনষ্কতা এতোটাই দূষিত করে ফেলে যে একজনকে আর বিজ্ঞানমনষ্ক বলে আর ঠাওর করা যাবে না এ ব্যাপারে কোনো কনসেনসাস নেই।

হয়তো তারা বোঝান যে পরিপার্শ্বকে বোঝার জন্য যারা ‘কেবলমাত্র’ বিজ্ঞানলব্ধ এবং বিজ্ঞানচর্চিত জ্ঞানকেই সঠিক ও নিরাপদ মনে করেন তারাই বিজ্ঞানমনষ্ক।

ফিজিকাল ওয়ার্ল্ডকে বোঝার জন্য বৈজ্ঞানিক চিন্তা প্রক্রিয়া সর্বশ্রেষ্ঠ ও অদ্বিতীয় হলেও মানুষ তার পরিপার্শ্বকে বোঝার সময়ে ফিজিকাল ও মেটাফিজিকাল – ব্যাপার দুটোকে সবসময় খাড়া দাগে আলাদা করতে পারে না। আমাদের সবার মাঝে একটা উদগ্র ও অনিঃশেষ বাসনা আছে – আমরা জানতে চাই। আমরা সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর পেতে চাই। এ কথা সত্য যে বেশীরভাগ প্রশ্নের উত্তরের জন্য বিজ্ঞানই যথেষ্ট এবং বিজ্ঞানই একমাত্র নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাকারী। কিন্তু এমন কিছু প্রশ্ন আছে যার উত্তর বিজ্ঞান দিতে পারে না। তার কারণ এই না যে বিজ্ঞান ইনফেরিয়র – কারণ সে সব প্রশ্ন বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে না। সমস্যা হোলো – ঠিক এই প্রশ্নগুলোই মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা প্রশ্ন।

যেমন ধরুন “জগৎ সংসারে আমি কেন এসেছি” – প্রতিটি মানুষকে কোনো না কোনো সময়ে কিংবা সারাজীবন এই প্রশ্নটি তাড়িয়ে বেড়ায়। কোনো বিজ্ঞানী কোনোদিনও এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারবেন না। কিন্তু স্টিভেন হকিন্স এর উত্তর দিতে পারবেন না বলে কি আপনি আপনার জানার তেষ্টাকে অনিবারিত করে রাখবেন? অবশ্যই না। কোনো ধরনের দর্শন ছাড়া এই প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই – এটাই পরমসত্য এবং এখানেই ধর্মের উপযোগিতা (ধার্মিকদের কাছে ধর্মের আরো অনেক উপযোগিতা আছে)।

আপনি যখন বলবেন যে বিজ্ঞানই আমার পরিপার্শ্বকে বোঝার একমাত্র সহায় তখন আপনাকে দুটো কাজ করতে হবে: আপনার মাথাকে বোঝাতে হবে যে মেটাফিজিকাল প্রশ্নের কোনো প্রয়োজন নেই, তাই এর উত্তরেরও কোনো প্রয়োজন নেই। অথবা যেহেতু এসব প্রশ্নের ‘নির্ভুল’ উত্তরের কোনো সম্ভাবনা নেই তাই আমি এসব প্রশ্ন নিয়ে চিন্তিত না। বলাই বাহুল্য, যেকোনো প্রশ্নের উত্তর জানার যে হিউম্যান স্পিরিট তার সাথে এ ধরনের অবস্থান সঙ্গত না। তাই বেশীরভাগ মানুষ দুটো গিয়ারে চলেন অর্থাৎ তারা ফিজিকাল এবং মেটাফিজিকাল প্রসঙ্গকে আলাদা আলাদা ভাবে বোঝার চেষ্টা করেন এবং স্বভাবতই তাদের ‘বিজ্ঞানমনষ্কতার’ ভেতরে ‘অবিজ্ঞানমনষ্কতা’ ঢুকে পড়ে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এই বিজ্ঞানমনষ্কতা একটা আলাদা আলোচনাও দাবী করে।

অনেকের লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে যে তারা নাস্তিকতা, মুক্তচিন্তা, বিজ্ঞানমনস্কতা – এই টার্মগুলোকে ইন্টারচেঞ্জেবলি ব্যবহার করেন। সে সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষ প্রমাণে এই শব্দ এবং শব্দবন্ধগুলো টেনে আনেন। আমার ধারণা, তারা বিজ্ঞান না বোঝার কারণে এই ভুলগুলো করেন। খুলে বলি। নাস্তিকতা, শেষ বিচারে একটি দার্শনিক অবস্থান, কোনো বৈজ্ঞানিক অবস্থান না। খোদাতালা আছেন কিংবা নেই – কোনোটিই আপনি ‘প্রমাণ’ করতে পারবেন না। এবং খোদাতালায় বিশ্বাস করা বা না করা – কোনোটিই আপনার বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের কোনো স্বাক্ষর না। উনবিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ ৫ জন ম্যাথমেটিশিয়ানের একজন গিয়োর্গ কানটোর মনে করতেন যে খোদাতালা তার কানে কানে গণিত নিয়ে কথা বলতেন। আল্লাহতে বিশ্বাস করা এবং খোদাতালার কানে কানে গণিত নিয়ে কথা বলার কারণে তিনি হুমায়ুন আজাদ কিংবা তসলিমা নাসরিনের চেয়ে ইন্টেলেকচুয়ালি ইনফেরিয়র – এমন দাবী যিনি করবেন তার সাথে যদি কানে কানে পাহাড়-নদী, মামদো ভূত ও সুচিত্রা সেন কথা বলেন রোজ – ওষুধ খাওয়ার আগে – শুনলে আশ্চর্য হবো না।

Image-1

বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ মোটা মোটা বই এসপার-ওসপার করে দেয়া না, সুন্দর করে বাংলা আর ইংরেজি লেখা না; বরং জ্ঞান সৃষ্টি করা। টমাস এডিসন পৃথিবীর ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ একজন ইনভেনটর। তার সাথে কাজ করেছিলেন ইতিহাসের সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কয়েকজন বিজ্ঞানীদের একজন; নিকোলা টেসলা। টেসলার মতামত যদি আমরা সঠিক বলে ধরে নিই তাহলে ধরে নেয়া যায় যে টমাস এডিসন আদতে একজন গাড়ল ধরনের মানুষ ছিলেন। মানে খুবই পরিশ্রমী কিন্তু পড়ালেখা জানেন না তেমন, বুদ্ধিও খুব বেশী না। নিঃসন্দেহে আমাদের ব্লগস্ফেয়ারের অনেক মানুষ এডিসনের চেয়ে অনেক বেশী পড়ালেখা জানা মানুষ – কিন্তু তারা “জ্ঞান”কে সমৃদ্ধ করতে পারেন নি এতোটুকু – যেটা এডিসন পেরেছিলেন।

জ্ঞান সৃষ্টি করার সাথে পরিশ্রম, কল্পনাশক্তি আর ইন্সপিরেশান জড়িত – খোদাতালায় বিশ্বাস করা বা না করার সাথে প্রায় এর কোনোই যোগাযোগ নেই। জ্ঞান সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে খোদাতালায় বিশ্বাস করা প্রতিবন্ধক; এমন বিতর্কে যে কাওকে আমি আমন্ত্রণ জানাচ্ছি – যে কোনো সময়ে আমি প্রস্তুত।

এছাড়াও কিছু লক্ষণ আমার চোখে পড়েছে। আমি বলবো না যে বাংলা ব্লগস্ফেয়ারে ইসলামোফোবিয়ার জোয়ার বয়ে যাচ্ছে কিংবা “মুক্তমনা” নামক ব্লগে নাস্তিকরা ব্যাকটেরিয়ার মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বরং বেশীরভাগ লেখাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। যারা সেখানে লেখেন তারা যে খুব ভালো লেখেন সেটা মনে হয় নি কিন্তু তারা ফ্রি এনকোয়েরির স্পিরিটেই লেখেন। তবে এও সত্য যে কিছু লেখা সত্যিই ইসলামোফোবিক এবং যে লেখাগুলো ইসলামোফোবিক সেগুলোতে কিংবা সেই লেখকরা অন্যত্র খুব উৎকট মাত্রার হেইট স্পীচ দেন (মুক্তমনার কিছু লেখককে মনে হয় দেখেছি যে তারা অন্যত্র সন্দেহাতীত ভাবে ইসলামোফোবিক হেইট স্পীচ দিয়েছেন এবং উগ্রতাবাদীরা অত্যন্ত অন্যায্যভাবে এর দায়ভার অভিজিৎ রায়ের ওপর চাপিয়েছেন)। এর কারণ মনে হয়েছে দুটো: প্রথমটি হোলো তারা নিজেদের যা দাবী করেন সেটি তারা নন অর্থাৎ ‘বিজ্ঞানমনষ্ক’ নন। তারা একজন দের হাজার বছর আগের ঐতিহাসিক চরিত্রকে মূল্যায়ন করেন আজকের পৃথিবীর মাপকাঠিতে এবং সেটিও করেন খুব অল্প পড়ালেখা করে। বাংলাদেশের ‘পাইছি’ সাংবাদিকতার মতো। একজায়গায় ইংরেজি ভাষায় লেখা কোনো আর্টিকেল পড়লেন, বাস ওটা ব্যবহার করতেই হবে। বিজ্ঞানমনষ্ক হলে তারা যাচাই বাছাই করে নিজেদের কুসুম কুসুম পাণ্ডিত্য জাহির করা থেকে নিবৃত হতেন। আর দ্বিতীয় কারণটি হোলো আমাদের ভাষা। বাংলা ভাষায় কাওকে শুয়োরের বাচ্চা না বললে নিজের ক্ষোভ সুষম ভাবে প্রকাশ পেলো না বলেই অনেক লেখক অভিমান করেন।

যেমন ধরুন কা’ব ইবেন আল-আশরাফ নামক এক ইহুদি নেতাকে রসুল ব্যাঙ্গাত্মক কবিতা লেখার জন্য হত্যা করিয়েছিলেন বলে তারা সমালোচনা করেন। এবং সে ঘটনার সাথে অভিজিৎ রায়ের হত্যার ‘ইসলামী’ যোগসূত্রের সন্ধান দেন পাঠকদের (অর্থাৎ ফ্যানাটিকরা যে রসুলের বিদ্রূপকারীদের হত্যা করে তার উদাহরণ রসুল নিজেই সৃষ্টি করেছিলেন)। তারা যে কথাগুলো বলতে কিংবা পড়তে ভুলে যান সেটা হোলো কা’ব ইবেন আল-আশরাফ বানু নাদির গোত্রের ইহুদি ছিলেন এবং এই গোত্রটি মদিনা সনদের সিগনেটরী। এই চুক্তি মোতাবেক কোনো গোত্র মক্কার কুরাইশদের সাথে প্যাক্ট করতে পারবে না এবং মদিনাবাসীরা কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে সবাই এক সাথে প্রতিহত করবেন।

তা চুক্তি ভঙ্গ হলে কী হবে? আপনার খারাপ লাগতে পারে কিন্তু সে সময়ের যে আইন তাতে মৃত্যুদণ্ডই যে এর সাজা সেটা সবার জানা ছিলো – মদিনার মুসলমান এবং ইহুদি সবাইই এটা জানতেন। আপনি নিশ্চই আশা করেন না যে বিভিন্ন ধর্মের ও বিভিন্ন গোত্রের অংশগ্রহণে যে চুক্তি তাতে ইসলামী আইন বলবৎ হবে কিংবা আজকের আমাল আলামুদ্দিন ও জেফরি রবার্টসনকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করা হবে। কা’ব ইবেন আল-আশরাফ মক্কার আবু সুফিয়ানের সাথে চক্রান্তের জন্য মিলিত হয়েছিলেন এবং এর শাস্তি তখনকার বিচারে মৃত্যুদণ্ডই ছিলো। তাছাড়া রসুল সে সময়ে কেবল ধর্মীয় নেতাই ছিলেন না, বিচারক ও প্রশাসকও ছিলেন। তার অথোরিটি ছিলো এই আদেশের। কোনো সাহাবী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কিংবা ইসলামী জজবায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাকে হত্যা করেন নি।

এরপরও যদি আপনার রসুলকে সমালোচনা করার ইচ্ছা হয় করুন – কিন্তু তার ভাষাটা শালীন হওয়া উচিত। গালিগালাজ করা, কিংবা এই একটি ঘটনা থেকে ইসলামকে ভায়োলেন্ট বলাটা নেহাৎ ‘অবিজ্ঞানমনষ্ক’ হওয়ার লক্ষণ। আমি ধর্ম বিষয়ে পড়ালেখা করি নিয়মিত – সব ধর্মেই আমার আগ্রহ। আমার কখনোই মনে হয় নি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মই ইনহেরেন্টলি ভায়োলেন্ট। কিন্তু মানুষের চরিত্রে একটা প্রকৃতিগত ভায়োলেন্স আছে। তাই সব ধর্মই ভায়োলেন্ট হয়ে উঠতে পারে। বরং অন্তত কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে যে ধর্ম হয়তো ভায়োলেন্স কমাতে সাহায্য করে।

আসল বিষয় হোলো সে ধর্মের অনুসারীদের, সংখ্যার দিক থেকে একটা ক্রিটিকাল মাস আছে কি না? জীব হত্যা যে ধর্মে হারাম সে শান্তির ধর্ম পালনকারী বৌদ্ধরা মায়ানমারে মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। নাস্তিকতার যখন যথেষ্ট-সংখ্যক অনুসারী হবে, যখন তারা অর্গানাইজড হবে এবং যখন তারা মনে করবে যে আক্রমণ করলে জেতার সম্ভাবনা প্রবল – তখন নাস্তিকরাও ভায়োলেন্ট হবে। ভায়োলেন্স মানুষের খাসলত – এটা ঐতিহাসিক সত্য। ধর্ম একটা অনুঘটক সন্দেহ নাই – কিন্তু আরো অনেক অনুঘটক আছে যেগুলোকে নির্দিষ্ট করার একটা দায়িত্ব আছে, যদি আপনি বিজ্ঞানমনষ্ক হয়ে থাকেন। উদাহরণ দেই –

কারোই জানা নেই অভিজিৎ রায়কে কারা হত্যা করেছে। সন্দেহ করা মোটেও অমূলক না যে কাজটা ধর্মীয় ফ্যানাটিকদের। সেটা ধরে নিলেও আমার জানা মতে এ ধরনের ধর্মীয় কারণে হত্যা এবং হত্যাপ্রচেষ্টা হয়েছে মোট চারজনের ওপর: হুমায়ুন আজাদ, থাবা বাবা, আসিফ মহিউদ্দিন এবংঅভিজিৎ রায়। ধরে নিই সংখ্যাটা এর দ্বিগুণ (যেহেতু সঠিক সংখ্যাটি আমার জানা নেই)। গত পাঁচ বছরে শুধুমাত্র বিএনপি করার জন্য কিংবা জামায়েত এবং হেফাজত করার জন্য সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায় বিনা বিচারে, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে পুলিশ এবং RAB হত্যা করেছে তার চেয়ে অ-নে-ক বেশী মানুষ। এমন কি ছাত্রলীগও তাদের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে এর চেয়ে বেশীসংখ্যক মানুষকে হত্যা করেছে। বিজ্ঞানমনষ্ক হলে আপনার এমপিরিকাল ডেটার ওপর নির্ভর করার কথা। সেক্ষেত্রে হত্যা প্রচেষ্টার জন্য ইসলামকে ইনহেরেন্টলি ভায়োলেন্ট বললে আপনাকে অন্তত এটা মানতে হবে যে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ উভয়ই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কালের কনটেক্সটে ইসলামের চেয়ে অ-নে-ক বেশী ভায়োলেন্ট।

দেখুন নিজেকে বিজ্ঞানমনষ্ক দাবী করার একটা সমস্যা হোলো আপনাকে সব সময় একটা নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখতে হবে। সারা রাত ফিফটি শেডস দেখে ভোর বেলায় ফজর নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়ার মতো না ব্যাপারটা।

তবে এ কথাও সত্য যে শুধুমাত্র আক্রমণের সংখ্যা দিয়ে ধর্মীয় ফ্যানাটিসিজমের মাত্রা মাপা সম্ভব না। বাংলাদেশে ইসলামী ফ্যানাটিসিজম আছে – এটা সত্য এবং আমার কাছে যেটা ভয়ঙ্কর লেগেছে সেটা হোলো বিপুল সংখ্যক মানুষ যারা নিজেদের ঈমানদার মুসলমান হিসেবে জ্ঞান করেন তারাও অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডকে নৈতিকভাবে সমর্থন করেছেন। তারা কয়েকটি সত্য খুব সুবিধাজনকভাবে ভুলে যান যে রসুল তার বিরোধী পক্ষের মানুষ, যারা তাকে দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রণা করেছেন তাদেরকে ক্ষমা করেছিলেন। এমনটা কল্পনা করা মোটেও অসঙ্গত না যে কুরাইশরা তার অনুপস্থিতিতে তার সাহাবীদের সামনে তাকে নিয়ে অত্যন্ত আপত্তিকর কথা বলতো। তার সাহাবীরা যদি কুরাইশদের হত্যা করার চেষ্টা না করে থাকে এখনকার মুসলমানরা কি সাহাবীদের চাইতেও বড় মুসলমান যে রসুলকে নিয়ে আপত্তিকর কোনো কথা বললেই কাওকে হত্যা করতে হবে বলে তারা মনে করে? এই প্রশ্নগুলো এখনকার মুসলমানদের করা প্রয়োজন।

image-2

সিরিয়া আরবদের নিয়ন্ত্রণে আসে রসুলের মৃত্যুর কিছুদিন পরেই কিন্তু সিরিয়ার জনসংখ্যার ৫০% মুসলমান হতে সময় লাগে প্রায় পাঁচশ বছর। সাহাবী এবং তাদের বংশধররা আছে, আছে মুসলমানদের শাসন। তারপরেও মোট জনসংখ্যার অর্ধেককে মুসলমান করতেই লেগে গেছে পাঁচটি শতক (ইসলাম প্রকৃতিগত ভাবে ভায়োলেন্ট হলে আরো কম সময় লাগা উচিত ছিলো বলে আমার ধারণা)। দের হাজার বছর পর আজকের পৃথিবীর এক বিলিয়নের বেশী মানুষ নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করেন। কিন্তু ফ্যানাটিকদের মর্সিয়া শুনলে মনে হয় কাল সকালের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যাবে। দের হাজার বছর যা টিকে থাকতে পারে সেটা নিজের মেরিটেই টেকে – এটা বোঝার জন্যে আপনাকে আইনস্টাইন হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ফ্যানাটিকদের গেল গেল রব শুনলে মনে হয় রসুলকে নিয়ে কোথাকার এক হরিদাস পাল একটা ব্লগ লিখলেই তার নিজের এবং ইসলামের সব মানসম্মান ভূ-লুন্ঠিত হয়ে যাবে।

এবং এও সত্য যে সাম্প্রতিক কালে ইসলামী ফ্যানাটিসিজমের যে উৎকট প্রকাশ – সেটা উস্কে দেয়ার পেছনে বাংলাদেশে মুক্তমনের যারা দাবীদার তাদের একটা বড় অংশের খুব বড় দায়ভার আছে।

লাইফ সায়েন্স আমার পেশা। আমার বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের সাথে যে আড্ডাবাজি তার একটা বড় অংশ ধর্মের পেছনে ব্যয় হয়। সব ধর্ম নিয়েই আলোচনা হয় কিন্তু আমার দুয়েকজন বন্ধু ছাড়া বাকীদের ধর্মবিশ্বাস যে কী সেটা নিয়ে আমার কোনো ধারণাই নেই। সম্ভবত আমার বেশীরভাগ সহকর্মীই নাস্তিক অথবা অজ্ঞেয়বাদী। হ্যা, যারা বিবর্তনবাদকে অস্বীকার করে তাদের মূর্খতা নিয়ে আমিও রঙ্গতামাশা করি – সন্দেহ নেই। কিন্তু কখনোই কোনো ধর্মকে আক্রমণ করার কোনো প্রয়োজন কারো মধ্যে আমি দেখি না।

কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তমনাদের অনেকের মাঝে আমি ইভানজেলিক জজবা দেখতে পাই। যুক্তির কাজ আপনাকে চোক-স্ল্যাম দেয়া না। যুক্তির কাজ হোলো সবচেয়ে অল্প ও সহজ ভাষায় সত্যটাকে উপস্থাপন করা – আপনাকে ঘায়েল করা না। তাই নাস্তিকতা ও ফ্রি এনকোয়ারির একটা দায়বদ্ধতা আছে যে সেটা যেন সংঘবদ্ধ ধর্মের মতো অন্যকে আঘাত না করে। এই চুক্তি বাংলাদেশের মুক্তমনারা মানেন না।

তাদের অনেকগুলো টুপি আছে। কখন তারা বিজ্ঞানমনষ্কতার টুপি পরেন, কখন তারা শাহবাগের টুপি পরেন আর কখন যে তারা আওয়ামী লীগের টুপি পরেন সেটা বোঝা মুশকিল। কিন্তু তাদের আবদার হোলো ভিন্ন ভিন্ন টুপি পরার এই ক্রমপর্যায় সকল দর্শককে সব সময় মাথায় রাখতে হবে। অর্থাৎ আপনি যখন শাহবাগে গিয়ে ফাঁসি ফাঁসি করবেন কিংবা একটি ফ্যাসিস্ট রেজিমের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেবেন তখন আপনার ভাষ্যমতে যারা আপনার ও আপনার বন্ধুদের মূল শত্রু তাদেরকে ভুলে যেতে হবে যে আপনিই ইসলামোফোবিক হেইট স্পীচও দিয়েছিলেন। এই কঠিন আবদার গ্রাহ্য করা সহজ কাজ না।

আপনি যদি মোরাল হাউ গ্রাউন্ড দাবী করেন তাহলে আপনাকে কিছু ভ্যালুজকে বিনা শর্তে, সব সময়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সারা পৃথিবীর লিবারেল লেফট মোটা দাগের কয়েকটা বিষয়কে অনতিক্রম্য ধরে নেন। যেমন ধরুন যারা সমাজের একদম দুর্বল ও মার্জিনালাইজড অংশ তাদের পক্ষে দাড়ান, সব পক্ষের সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য উচ্চস্বর হন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভোকাল তো বটেই ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার পরিচয়ও দেন, ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বাংলাদেশে যারা নিজেদের লিবারেল দাবী করে ফ্রি স্পিরিটের চেতনায় পূণ্যস্নান করেন তাদের অনেকেই এই প্রতিটি শর্তের বরখেলাপ করেন হরহামেশা। বাংলাদেশে মাদ্রাসা ছাত্রদের মতো দুর্ভাগা জনগোষ্ঠী খুব বেশী নেই। রাষ্ট্রীয় বাহিনী এদের হত্যা করলে তারা পুলক বোধ করেন। আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করলে তারা তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। অনেকেই বলেন যে বাংলাদেশে ফাঁসি নিষিদ্ধ হয়ে যাক অসুবিধা নাই, কিন্তু সেটা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেয়ার পরে। বাংলাদেশে একটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক সরকার একটি হাস্যকর নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ার ধরে রাখলে তারা বলেন গণতন্ত্রের আগে উন্নয়ন প্রয়োজন।

এরকম স্ববিরোধিতা নিয়ে মোরাল হাইগ্রাউন্ড দাবী করাটা শুধুমাত্র হাস্যকর হলে আপত্তি ছিলো না – এটা বিপজ্জনকও বটে। তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত ফেমিনিস্ট। তিনি যখন খালেদা জিয়ার ভ্রু আঁকা নিয়ে বিশ্রী ভাষায় কটাক্ষ করেন তখন “অনারীবাদী” পুরুষেরা একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন তোলেন যে এই একই কাজটা আমি করলে কুৎসিত শভিনিস্ট কিন্তু আপনি করলে ঠিক আছে কারণ আপনার ভ্যাজাইনা আছে আর আমার তা নেই। এবং এ জাতীয় কথাভাজা শেষ হয় সাধারণত একটি বাক্য দিয়ে, গুষ্টি মারি তোর এই ফেমিনিজমের। ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের যে কথাগুলো শোনা পুরুষদের জন্য ফরজ ছিলো সে কথাগুলো হারিয়ে যায় ফেমিনিস্টদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড এর জন্য।

আমাদের সমাজ যে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক কূপমোন্ডুকতায় বিপর্যস্ত সেটা কোনো খবর না। বিজ্ঞান ও মুক্তচিন্তা সত্যিই পারে আমাদের সমাজের চিন্তার মুক্তি ঘটাতে (চিন্তার মুক্তি মানে আপনাকে আঘাত করে কোনো প্রত্যাঘাতের ইমিউনিটি না)। সে নিরীখে আমাদের দেশে প্রয়োজন আছে মুক্তমনা’র মতো ব্লগের। কিন্তু সেই চেষ্টা মাঠে মারা যাবে যদি আপনি যাদের কাছে টানতে চান তাদেরকেই খোচানো শুরু করেন সবার আগে। তর্কে জেতাকে আপনি শিরোপা মনে করেন, তার জন্য ফ্রি-স্টাইল কুস্তিতে আপনার আগ্রহ। যাকে আপনি আপনার দলে নিতে চান তাকেই আপনি শত্রু বানাতে চান সবার আগে। অল্প বিদ্যা ও বেশী জজবার এটাই হোলো কুইনটেসেনশিয়াল লক্ষণ।

image-3

প্রশ্ন ওঠে যে যারা মুক্তচিন্তার পক্ষের মানুষ তারা মুসলমানদের নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যে – এমন কি ইসলামকে নিয়ে ন্যায্য সমালোচনা করলেও কি ধর্মীয় ফ্যানাটিকরা উন্মত্ত হয়ে উঠবে না? এমন কি হয় নি বাংলাদেশে? প্রশ্নটা ন্যায্য এবং এই প্রশ্নের সদুত্তর দেয়া প্রয়োজন। হ্যা, বাংলাদেশে ইসলামী ফ্যানাটিসিজম আছে এবং হ্যা, তারা বহু প্রয়োজনীয় সংস্কারেরও উৎকট প্রতিক্রিয়া দেখান। এ কথার বিরোধিতা হয় না।

এর একটা বড় কারণ সম্ভবত আপনি নিজে – সৎভাবে প্রশ্ন করুন। সম্ভবত মানুষ হিসেবে দাড়িটুপি ওয়ালারা আপনাকে কনফিডেন্সে নেয় না কারণ রাজাকারের প্রসঙ্গ আসলেই আপনি একটা দাড়িটুপি ওয়ালা ব্যক্তিকে খাড়া করান। এতিম বাচ্চাদের দেখভাল করার দায়িত্ব তো এতিমখানার না, রাষ্ট্রের – কিন্তু রাষ্ট্রকে তার দায়িত্ব পালনে বাধ্য তো আপনি করানই না বরং রাষ্ট্র এদের বিপক্ষে গেলে আপনি তালি দেন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব যে মাদ্রাসাগুলো পালন করে চলেছে যুগের পর যুগ ধরে সেজন্য তাদের কোনোদিনও সামান্য ধন্যবাদ দেন নি। আপনি গণতন্ত্রের কথা বলেন কিন্তু একটি অবৈধ অত্যাচারী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করলে আপনি বলেন যে গণতন্ত্রের আগে উন্নয়ন প্রয়োজন। আপনি যদি একটু নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করেন তাহলে দেখবেন যে আসল সমস্যা এটা না যে আপনি তাদের মতোন না বরং আপনি নিজে যা দাবী করেন সেটা আপনি নন। এই দাড়িটুপিওয়ালাদের একটা বিশাল অংশ নোম চমস্কির বিশাল ফ্যান। কৈ, চমস্কির নাস্তিকতা আর বিজ্ঞানমনষ্কতা তো তার মুসলমানদের হিরো হওয়াতে কোনো সমস্যা হয়ে দাড়ায় নি। কারণ তার নাস্তিকতার চেয়েও বড় ব্যাপার হোলো তার উচ্চ নৈতিকতা ও সেই স্ট্যান্ডার্ড এর ওপর অবিচল আস্থা। তিনি প্রতিষ্ঠানের বিপক্ষে গিয়ে সত্যের পক্ষে দাড়ান। এই শক্তি যদি আপনার থাকতো, আপনার বন্ধুদের থাকতো তাহলে দাড়িটুপি ওয়ালারাও আপনার সাথে থাকতো।

একটা প্রশ্ন আপনার নিজেকে করা খুবই প্রয়োজন। আপনি নিজে কোন পক্ষের মানুষ? আপনার কার্যকলাপ কি ফ্যানাটিসিজম উস্কে দেয় না নিবারণ করে। যদি ফ্যানাটিসিজম উস্কে দেয় তাহলে তো আপনার লক্ষ্য অর্জিত হবে না। আপনার কি সত্যিই প্রয়োজন আছে আঘাত করার? কেন আপনি বিশ্বাস করতে পারেন না যে যুক্তির নিজস্ব যে শক্তি সেটাই যথেষ্ট অন্ধবিশ্বাসকে মোকাবেলা করার। ডারউইনের তো প্রয়োজন হয় নি খোদাতালা নেই – এই দাবী করার। তার বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট ছিলো বিবর্তনবাদ যে সত্য সেটা প্রমাণ করার জন্য।

যে কেও দশটা ইসলামিক ইতিহাসের বই পড়ে মুসলমানদের ইতিহাসের, তাদের সমাজের, তাদের রাজনীতির সমালোচনা করে একটা খাসা বই বাংলায় লিখে ফেলতে পারেন, কিংবা মুসলমানদের কিছু ঐতিহাসিক প্রিয় চরিত্রের সমালোচনা করতে পারেন। এর মধ্যে কোনো কেরদানি নাই, দুঃখিত। কঠিন কাজ হোলো আজকের সমস্যাকে আজকে মোকাবেলা করা, আজকের রসদ দিয়ে। এই দিক থেকে চিন্তা করলেই বুঝবেন যে আমাদের আসল সমস্যা ধর্মতাত্ত্বিক না। আমাদের দেশের মানুষেরা এখনও শিক্ষার অভাবে চিন্তা করতে শেখে নি। আপনি যদি বলতে থাকেন যে তুই ব্যাটা মুসলমান বলে চিন্তাই করতে পারোস না, তাহলে আপনার জিঘাংসা মিটবে একটু বটে কিন্তু সে তার নিজের কমফোর্ট জোনে আরো বেশী করে খাবি খাবে। তাকে আপনি আরো বেশী উগ্র হতে সাহায্য করবেন।

কিন্তু আপনি যদি তাকে বলেন যে আপনার মেটাফিজিকাল দুনিয়া নিয়ে আমার কোনো কথা নেই এবং সেটা নিয়ে আপনি আপনার মতো থাকেন। কিন্তু এই ফিজিকাল দুনিয়ায় বিজ্ঞান ছাড়া আর কোনো ব্যাখ্যা নেই তাহলে সে হয়তো আপনার কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। যদি বলেন যে আপনার ধর্ম আপনি মনোযোগ দিয়ে পালন করুন কিন্তু আমার কথাটা শুনুন কারণ বিজ্ঞান আর যুক্তি ছাড়া এই পৃথিবীতে সফল হওয়া কঠিন তাহলে বলা যায় না সে একদিন হয়তো ধর্ম বিষয়েও আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। বিবর্তনবাদ খুবই প্রয়োজনীয় বিষয় এবং প্রত্যেকের সেটা বোঝা প্রয়োজন। আপনি নিজে বিবর্তনবাদের আধুনিক প্রসঙ্গগুলো বোঝেন না ঠিকমতোন কিন্তু অন্যকে বোঝাতে হবে আপনি এর ওস্তাদ। তাই বিবর্তনবাদকে এমনভাবে হাজির করেন যেন এর একমাত্র উপযোগিতা হোলো খোদাতালা যে নেই আর আদম-হাওয়া বলে কেউ আসে নি সেটা প্রমাণ করা। একবারও বোঝার চেষ্টা করেন না যে আপনি যদি বলতেন যে – খোদাতালা আছে কি নেই এ নিয়ে আপনি আপনার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবেন কিন্তু এই হচ্ছে বিবর্তনবাদ – তাহলে আপনার শ্রোতা লাইফ সায়েন্সের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই তত্ত্বটিকে অন্তত মনোযোগ দিয়ে শুনতো। আপনি যদি তার ধর্ম বিশ্বাসের সাথে বিবর্তনবাদের বোঝাপড়ার দায়িত্ব তার ওপরেই ছেড়ে দিতেন তাহলে হয়তো সে অন্তত একটা সৎ চেষ্টা করতো বিবর্তনবাদ কী এটা জানার জন্য। সে হয়তো উপলব্ধি করতো যে পুরো লাইফ সায়েন্স দাড়িয়ে আছে বিবর্তনবাদের ওপর এবং এটা কোনো হাইপোথিসিস না, প্রমাণিত সত্য। এই গুরুত্বপূর্ণ মেসেজটা তাকে পৌঁছাতে না পারার পেছনে আপনি নিজে যে একটা বড় প্রতিবন্ধক সেটা আপনি স্বীকার করতে রাজি নন কারণ আপনার কাছে বিবর্তনবাদ হচ্ছে আপনার দার্শনিক অবস্থানকে বৈজ্ঞানিক অবস্থান বলে প্রমাণ করার একটা কৌশল মাত্র।

সম্ভবত আপনার বদ্ধমূল ধারণা যে মৌলবাদীদের “শেষ” করে দিতে হবে। তাদের পরাস্ত না করতে পারলে আপনার বিজ্ঞানমনষ্কতা সমাজে শেকড় গাড়বে না। এই যদি হয় আপনার সিদ্ধান্ত, বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনার কাণ্ডজ্ঞানের ঘাটতি আছে। নাহ, “তাদেরকে” আপনি শেষ করতে পারবেন না। কারণ তাদের একটা ক্রিটিকাল মাস আছে যেটা আপনাদের নেই। হ্যা বদলাতে আপনি পারবেন যদি আপনি নিজেকে বদলাতে সম্মত হন। যদি আপনি তার বিশ্বাসকে সম্মান করে সহবস্থানে রাজী হন তাহলে, যদি আপনি আপনার অটল নৈতিকতায় বিশ্বাস রেখে একটা হাত বাড়াতে সম্মত হন, তাহলে সেও আপনার বিজ্ঞানবাদ গ্রহণ করে উপকৃত হবে। বলা যায় না অনেকে আপনার মতো হওয়ারও চেষ্টা করতে পারে।

এজন্যেই কি আপনি লেখালিখি শুরু করেন নি?

ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে নেয়া কিন্তু ফোটোগ্রাফার করা খুঁজে বের করতে না পারায় কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা গেল না। মাফ করবেন।

2 thoughts on “বাংলাদেশের আস্তিক-নাস্তিক বাইনারী নিয়ে একটি “বিজ্ঞানমনষ্ক” আলোচনা

  1. Could not but agree with every single word .I have friends both side Fanatic Islamist and fanatic Progressive probably 50/50 .There are a few who could balance thought , action and personal stand with standard .A slap to rest all

  2. Not agreed with 100% of 100%. But the the issue of “moral high ground” that the progressives of Bangladesh so dearly claim, is so spot on… Now wherein is your “moral high ground” Mr. Shahriar Kabir!!?

Leave a comment