আজ আমার কান্নার দিন …

hefazot

 

সকাল থেকেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির সাথে
ক্রন্দসী হাওয়ার অব্যক্ত মাতামাতি যেন
ফুঁপিয়ে যাচ্ছে একঘেয়ে অভিমানে
বর্ষায় ভিজে থাকা পত্রপল্লবের শিরায় শিরায়
যেন অশ্রুর মেঘ আটকে আছে ফেরারি কুয়াশা হয়ে …

আজ আমার কান্নার দিন
ঝাপসা চোখে সারাদিন
অসহ্য বেদনায় বুক কোনমতে চেপে ধরে
গুমরে গুমরে পাঁজরভাঙা কষ্টের দুঃসহ যন্ত্রণায়
একদল দেবদূতের রক্তাক্ত আলখাল্লায় চোখ মুছে মুছে শুধু
নারকীয় যাতনার স্বর্গীয় রক্তসরোবরে আকন্ঠ অবগাহনের দিন।

আজ আমার কান্নার দিন।
পৈশাচিক এক শোকে একদল পশুর চেয়ে পাশবিক, অনুভূতিহীন কিছু প্রাণীকে
অভিশাপে অভিশাপে নরকের তলদেশ ছিন্ন করে আরো অতলতলে
চিরকাল ধরে ক্রমাগত নিক্ষেপ করার দাবি জানিয়ে আকাশজোড়া চিৎকার করার দিন।

আজ কোন কথা নয়
আজ শুধু একা বসে
বিষন্ন বৃষ্টির সাথে
জানালার পাশে নীরবে
নির্বাক নিস্তব্ধ বিমুঢ় যন্ত্রণায়
ব্যাথার সেতারে একা একা
ঝংকার তুলে যাওয়া।

রাজাকার : ‘৭১ বনাম ২০১৩ এডিশন

razakar 3

ভারতীয় অলিখিত ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদি আধিপত্যকামীদের একটা স্থুল কৌশল হল _ এভাবেই বার বার ‘৭১ এর ধূয়া তুলে পাকিস্তান জামাত-শিবির ইত্যাদি জুজু দেখিয়ে চলমান রাষ্ট্রীয় সহিংসতার ‘বর্তমানের চালচিত্র’ কে আড়াল করে রাখার ধুরন্ধর এক অপকৌশল। ‘৭১ এর রাজাকারদের তুলনায় ২০১৩ এর রাজাকাররা অত মোটাদাগের নয়, অনেক বেশি চিকনদাগের সুক্ষবুদ্ধিসম্পন্ন ক্রিমিনাল। আগের মত মোটাদাগের অপরাধ করে ধরা খাওয়া বা জাতীয়-আন্তর্জাতিক-ঐতিহাসিকভাবে নিন্দিত হওয়ার বিপদ এড়িয়ে ধুরন্ধর ডিজিটাল কৌশলে ‘সাংবিধানিক’ উপায়ে রাজাকারির নিত্যনত্যুন পন্থা যেমন আবিষ্কৃত হয়ে চলেছে, তেমনি সেগুলোকে মহিমান্বিত করার প্রয়াসে সাংষ্কৃতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক বিদূষকসুলভ চাটুকারিতা একটি আলাদা শিল্পের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সাধারণ মুসলিম হিসেবে আমি কার পক্ষ নেব ? ‘৭১ এর প্রেক্ষাপটে আমি পশ্চিমা হানাদার ও তদীয় দোসরদের পক্ষ নিতে পারি না কারণ তারা অবর্ণনীয় জুলুম করেছে নিরস্ত্র নিরীহ সাধারণ জনগণের ওপর, মতাদর্শিক ভিন্নতার কারণে তো বটেই, সেই রাগ তুলতে গিয়ে যারা কোন দলের ছিল না সেই আপামর সিভিলিয়ান জনগণ তথা গোটা জাতির ওপরই শ্বাপদসুলভ রক্তলোলুপ হিংস্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তারা। ‘ভারতীয় হিন্দু’ ‘পাকিস্তানের দুশমন’ ইত্যাদি জুজু দেখিয়ে সেই অজুহাতে বিরোধীদমনের নামে চলছে শহরে বন্দরে-গ্রামে গঞ্জে-মাঠে প্রান্তরে নির্বিচারে চালিয়েছে গুলি, বসতবাটি ধ্বংস-অগ্নিসংযোগ, অবিশ্রান্ত হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের ক্রমাগত দীর্ঘমেয়াদী কালোরাত্রির অদ্ভূতুড়ে আঁধারে ঘেরা অমাবস্যা।

সেই কারণে আমি একজন অতি সাধারণ, অতি নগণ্য মুসলিম হিসেবে ‘৭১ এর নরঘাতক জালিমদের সমর্থন করি না, করতে পারি না।

আজ এই ২০১৩ তে একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সাধারণ মুসলিম হিসেবে আমি কার পক্ষ নেব ? আজকের প্রেক্ষাপটে আমি ভারতীয় হানাদার ও তদীয় দোসরদের পক্ষ নিতে পারি না কারণ তারা ‘৭১ এর পশ্চিমাদের মত নগ্নভাবে না হলেও সুক্ষ কৌশলে আরো ভয়ংকরভাবে খামচে ধরেছে আমার মাতৃভূমির প্রিয় লাল-সবুজের পতাকার বুক। সাম্প্রদায়িক বর্ণবাদি ভারতীয় হিন্দুদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেশীয় দালালবাহিনী একে একে দেশের সম্পদ সব তুলে দিচ্ছে তাদের প্রভুর হাতে, দেশের প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, মানুষের ধন-মান-প্রাণ সবই অনায়াসে কুক্ষিগত করতে সহযোগীর অক্লান্ত ভূমিকায় পালন করে চলেছে তারা। ভারত থেকে লোক এনে দেশের মানুষকে হত্যা করাচ্ছে তারা। ‘জঙ্গি’ ‘জামাত-শিবির’ জুজু দেখিয়ে সেই অজুহাতে বিরোধীদমনের নামে চলছে শহরে বন্দরে-গ্রামে গঞ্জে-মাঠে প্রান্তরে নির্বিচারে চালিয়েছে গুলি, বসতবাটি ধ্বংস-অগ্নিসংযোগ, অবিশ্রান্ত হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের ধারাবাহিকতার ‘সূচনা’ হতে দেখছি। সাতক্ষীরায় ‘৭১ এর মতই হত্যা-লুটপাট-বসতবাটিতে অগ্নিসংযোগ _ এমনকি বুলডোজার নিয়ে গিয়ে বাড়ি-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দিয়ে আসা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে ৫০ জনের অধিক নারী সমভ্রম হারিয়েছেন, সমভ্রম হারানোর ভয়ে গ্রামত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক নারী।

তাহলে ২০১৩ তে জালিম কারা আর মজলুমই বা কারা সে প্রশ্ন নিজেকে কখনো করেছি ? ‘৭১ এর ব্যাপারে আমি যদি পূর্ব পাকিস্তানের আপামর মজলুম জনসাধারণের পক্ষ নিয়ে থাকি _ ২০১৩ তে এসে আমি নতুন মোড়কে প্যাকেট হয়ে আসা জালিম ভারতীয় রাজাকারদের পক্ষ নিতে যাব কেন ?

razar 2

অনেকে বলেন ‘৭১ এ পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধাবস্থা ছিল সে কারণে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অগণিত সিভিলিয়ান হত্যা-লুটপাট-অগ্নিসংযোগ-নির্বিচারে গুলি-ধর্ষণ এসব হয়েই থাকে, সেটা যুদ্ধেরই অঙ্গ। কিন্তু এই মাটির সন্তান হয়ে যারা এই দেশমাতৃকাকে, দেশমাতৃকার সহোদর-সহোদরাদের পিশাচসুলভ নীচতায় বিদেশী হানাদারদের হাতে হত্যা-ধর্ষণের জন্য তুলে দিতে পেরেছিল _ তাদের ক্ষমা করা অতি অতি দুঃসাধ্য ব্যাপার। ভাল কথা, তাহলে স্বাধীনতা পাওয়ার পর ক্ষমতা হাতে পেয়েও কেন তাদের উপযুক্ত বিচার করা হল না ? কেন তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে এত সহজে ছেড়ে দেয়া হল ? ৪২ বছর ধরে রক্তবীজ থেকে বাড়তে বাড়তে বিশাল অরণ্যে রুপান্তরিত হতে দেয়ার পর এত যুগ পর এখন কেন এই প্রজন্মের ওপর এত বিশাল বিভক্তি-ধ্বংসযজ্ঞ-গৃহযুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হল ? ‘৭১ ধূয়া বার বার তুলে প্রতারণাপূর্ণভাবে ২০১৩ এ এসে ভারতের সেবাদাসত্ব করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ১২টা যারা বাজাচ্ছে চোখের সামনে ভারত কর্তৃক নির্মমভাবে সবকিছু লুন্ঠিত হতে দেখেও সুশীলসমাজ এবং মানবতাবাদিরা নিশ্চুপ কেন ? কেন তারা বর্তমান এবং ভবিষ্যত বাংলাদেশের নৃশংস হত্যা দেখেও অন্ধের মত চোখ বন্ধ রেখে বার বার ৪২ বছর আগের অতীতের কথা নিয়ে এসে নাটকীয়তা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায় ?

আজ যেসব যুবক-কিশোর-তরুণ জামাতশিবির করছে তারা কি ‘৭১ এ রাজাকার ছিল ? তাদের তো জন্মও হয় নি সেদিন। যে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পর পাইকারী হারে ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষনা করে, ১৯৯৬ এ জামাতের সাথে আঁতাত করে ক্ষমতার স্বাদ নেয়, একমাত্র বিএনপির সাথে জামাত জোটবদ্ধ হওয়ায় ‘রাজনৈতিক’ কারণেই কি তারা অনেকাংশে জামাতের বিরোধিতা করছে না ? চেতনার হোলসেলাররা যদি আদৌ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হত তাহলে অন্যান্যদের মত তাদেরও একেকজন রাষ্ট্রীয় সম্পদ পুকুরচুরি করে কেউ শতগুণ কেউ সহস্রগুণ ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি করে কিভাবে ? এই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ? তাহলে আর ১০টা চোরবাটপাড়ের সাথে তাদের পার্থক্য সূচিত হয় ঠিক কোন জায়গায় ?

আজ বাংলাদেশে ‘৭১ এর মত কোন ঘোষিত যুদ্ধাবস্থা নেই ঠিকই, কিন্তু ভারতীয় সাংষ্কৃতিক-সামরিক-রাজনৈতিক-বাণিজ্যিক হানাদার দস্যুদের অঘোষিত কিন্তু ভীষণভাবে পরিচালিত এই আগ্রাসনে যারা দেশীয় তাঁবেদারের ভূমিকায় নির্লজ্জভাবে অবতীর্ণ হয়ে নিজের দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে বীভৎস বিশ্বাসঘাতকের মতো দাঁড়িয়েছে _ আমার কাছে তাদের সাথে ‘৭১ এর রাজাকারদের কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য এতটুকুই যে ‘৭১ এর ঘটনা সম্পূর্ণভাবে ঘটে কালের আবর্তে মিলিয়ে গেছে, ২০১৩ এর রাজাকারদের বিশ্বাসঘাতকতা-নির্যাতন-লুটপাট রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ছদ্মাবরণে আমাদের চোখের সামনে ঘটছে।

‘৭১ আমাদের পূর্বসূরীদের অতীত _ ২০১৩ আমাদের রক্তাক্ত বর্তমান। যে সঙ্গীন মানবতাবিরোধী অপরাধে ‘৭১ এর অপরাধী নরাধমদের বিচার দাবি করছি, সেই একই যুক্তিতে ২০১৩ এর নব্য রাজাকারদের দুঃশাসন-গুম-খুন-হত্যারও আশু প্রতিকার চায় বাংলার জনগণ। খুব বেশি দেরি হয়ে গেলে হয়তো জনগণ নিজের হাতেই আইন তুলে নিতে বাধ্য হবে, যেমনটি হয়েছিল ‘৭১ এ, রাষ্ট্রের কাঠামো তখন চুর চুর করে চোখের সামনে ভেঙে পড়তে থাকবে তাসের ঘরের মত, মিলিয়ে যেতে থাকবে কর্পূরের মত আমাদের সাধারণ জনগণের অক্লান্ত পরিশ্রমে তিল তিল করে গড়া ৪২ বছরের অর্জন, অনিশ্চয়তার অজানা চোরাবালিতে অসহায়ভাবে তলিয়ে যেতে থাকবে আমাদের ভবিষ্যতকে ঘিরে দেখা শত স্বপ্নের স্বর্ণজাল _ কাজেই তার আগেই সচেতনভাবে জেগে উঠতে হবে বাস্তব দেশপ্রেমের মধুর জ্বালাময় কষাঘাতে _ অদেখা পূর্বসূরীদের প্রাগৈতিহাসিক গৌরবগাঁথায় নয়, নিজেদের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বর্তমানের ঘূর্ণিতে সটান যোদ্ধার মত দুঃসাহসিক আগুনের পরশমণি বুকে নিয়ে।

‘চেতনার’ সর্বনাশা হেরোইন

s4
The Imminent Danger 
The enemy of Islam understand that the full conversion of Bengali Muslims to non-Islam is difficult. But they also understand that it is very easy make them cultural converts. It is no less harmful either. Indeed, this way they are pulling the Muslims away from Islam’s fundamental belief and practice, and making easy inroads into Muslims’ inner circles of politics and other activities. Since culture itself is the expression of Muslim faith; and many Bengali Muslims are indeed mere cultural Muslim with little Islamic knowledge and aqeeda, such cultural conversion will be highly detrimental to Islam in Bangladesh. Ultimately, that will lead to massive de-Islamisation. And such de-Islamisation would adequately serve the enemy’s political and strategic purpose

http://www.hrwbd.org/2013/03/indias-war-in-bangladesh.html#sthash.CmccuUG1.dpuf

দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সচেতন নাগরিকসমাজ বারবার অনলাইনে অজস্র লেখায় একথা বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়ে জাতিকে সতর্ক করে চলেছেন _ যারা এখনো বুঝতে পারছেন না যখন বুঝতে পারবেন নিজের চোখের জলের মাঝে স্বজন হারানোর বেদনায় নিজেই একদিন ভাসতে হবে, এবং সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়। ভারতীয় বর্ণবাদি হিন্দুরা কোনদিন আমাদের বন্ধু হবে _ এটা কোন মুসলিম বিশ্বাস করতে পারে না। কারণ এটি বিশ্বাস করলে কোরআনকে অবিশ্বাস করতে হয় যা একজন মুসলিম দুঃস্বপ্নেও করতে পারে না। কোরআন অনুযায়ী ইয়াহুদ-নাসারা-মুশরিক কখনো মুসলিমদের চিরস্থায়ী খাঁটি বন্ধু হতে পারে না।

আজ স্বাধীন বাংলাদেশের ওপর ভারতীয় আগ্রাসনের যে অশুভ ধূসর ছায়া আমরা দেখতে পাচ্ছি তা কি ‘রাজনীতিবিদ’ নামের কিছু সুবিধাবাদির আঁতাতনির্ভর বিশ্বাসঘাতকতার ফসল নয় ? চেতনার মায়াবড়ি খাইয়ে অবশ করে রেখে দিব্যি দিনেদুপুরে পুরো দেশটাকে নিজস্ব প্রভাববলয়ের চাদরে ঢেকে দিয়েছে ভারতীয় বর্ণবাদি আধিপত্যকামীরা। আবুল মাল আবুল মুহিতের মত লোক ভারত-বাংলাদেশে অভিন্ন মুদ্রা চালু করার পর্যন্ত প্রস্তাব দেয়ার দুঃসাহস পাচ্ছে আজ। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অধ্যূষিত সুন্দরবনের মত সবেধন নীলমণি একটি গৌরবময় জাতীয় সম্পদকে ভারতীয় তাঁবেদার সরকারের নির্লজ্জ মেরুদন্ডহীন সহযোগিতায় ভারতের হাতে তুলে দিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুজাতা সিংহের মত মামুলি অনভিজ্ঞ ভিনদেশি একজন আমলা এসে একটি স্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করে জাতীয় নির্বাচনের মত একান্ত স্পর্শকাতর আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ক্ষমতায় কে আসবে না আসবে সে বিষয়ে হাসিমুখে তাচ্ছিল্য সহকারে নির্দ্বিধায় খোলাখুলি কথা বলার স্পর্ধা দেখাতে সাহস পাচ্ছে !

খালি এক কুমীরের বাচ্চার মত ‘৭১ এর জুজু বার বার দেখালে হবে না আজকের প্রেক্ষাপটে ভাবতে হবে। কেন গণচীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও ‘স্বাধীন’ দেখতে চান সে কথা চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বাংলাদেশের আপামর জনতার এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজিত হয়েছে। ‘৪৭ এ দেশবিভাগের আগে উত্তর ভারতীয় তথা দেশবিভাগের পরে পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের স্বার্থের ব্যাপারে অমানুষিকভাবে আমানতের খেয়ানত করায় পর্যায়ক্রমে ২৪ নছর পর জালিমের হাত থেকে বাঁচার আকাঙ্খায় আসে মুক্তিযুদ্ধ। ‘৭১ পরবর্তী সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে একের পর এক নানা কৌশল জনগণের আমানতই খেয়ানত করে গেছেন। আর বঙ্গবন্ধু ? ‘৭১ এ যে ভূমিকা গণমানুষের মুক্তিতে তিনি রেখেছিলেন পরবর্তীতে ঠিক তার বিপরীত ভূমিকা রেখে স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করে স্বৈরাচারিতার নতুন ধারাবাহিকতার সাড়ম্বর উদ্বোধন করে গেছেন। শেখ মুজিবুর রাহমান যে মাত্রায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করে গেছেন একমাত্র আজকের শাসকদল ছাড়া আর কোন আমলে কোন শাসকগোষ্ঠিই সে কল্পনাতীত উচ্চতায় আরোহণ করতে পারেনি। এসব সত্য আমরা জেনেও বলতে চাই না, ভাবতে চাই না। আবেগে অন্ধ হয়ে আমরা ব্যক্তিপূজায় লিপ্ত হয়ে যাই অথচ এটা শিরক, শিরক কখনো আল্লাহর কাছে ক্ষমার যোগ্য নয়।

_________________

‘৭১ এ নিঃসন্দেহে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অবর্ণনীয় জুলুমের শিকার হয়েছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। ভারতীয়রা সেসময় সাহায্যও করেছিল আমাদের। কিন্তু সেটা কি ভারত অনেকটাই নিজের স্বার্থে করে নি ? যদি নাই করে থাকে তাহলে কেন ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ’ তকমা দিয়েছিল ? কেন মুজিবনগর সরকার বা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন সরকারের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ না করিয়ে নিজেদের সামরিক বাহিনীর কাছে করিয়েছিল ? কেন পশ্চিম পাকিস্তানিদের অস্ত্রসমর্পণের পর স্বাধীন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রাপ্য হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র তারা আমাদের ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিনা বাধায় ভারতে নিয়ে গিয়েছিল ? আজ কেন এক একটি সেক্টরে হাজার হাজার কোটি টাকা ভারতীয় বণিক গোষ্ঠি লুন্ঠন করে নিয়ে যেতে পারছে চিন্তা করতে হবে। এই দূর্বৃত্তদের আবার এক সাগর রক্তের বিনিময়ে হলেও তাড়াতে হবে, জাতীয় সম্পদ যথেচ্ছ লুটপাটে বাধা দিতে হবে। ‘৭১ এ আমাদের নির্যাতিত পূর্বপুরুষ মুক্তিযুদ্ধ করে হানাদার পাকিস্তানিদের হটিয়ে দিয়েছিল সেই অতীত গৌরবের ধোঁয়ায় সারাক্ষণ হেরোইনের মত নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার কিছু নেই। সেটা অবশ্যই আমাদের গৌরবময় অতীত, কিন্তু সেটা তখনকার বাস্তবতা। আজকের বাস্তবতা হচ্ছে ভারতীয় আগ্রাসন এবং ‘৭১ এর চেতনায় আচ্ছন্ন হয়ে অবশ পড়ে থেকে ২০১৩ তে ভারতীয় বুটের লাথি খাওয়া ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ না। ভারতীয় তাঁবেদার গোষ্ঠির অন্ধ আনুগত্য ২০১৩ তে দেশপ্রেমও না। কি সেটা বিবেকবান পাঠকই বুঝে নেবেন।

আগেও বলেছি এখনও বলছি _ শাহবাগ ভয়ংকর সাম্রাজ্যবাদি এক মহাচক্রান্তের ক্রীড়নক মাত্র। প্রতিবেশী একটি ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের বাণিজ্যিক-সামরিক ভারসাম্যমূলক আধিপত্যবাদের প্রাথমিক পর্যায় বিনা বাধায় অতিক্রম করার জন্য সাংষ্কৃতিক ট্রোজান হর্স। এটাকে জাতির চোখের সামনে রেখে ধোঁকার বিভ্রান্তি-কুয়াশা সৃষ্টি করে জাতিকে অতি সহজে শতধাবিভক্ত করে সর্বব্যাপী সংঘাত-গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির মাধ্যমে মহানৈরাজ্যের পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে পর্দার অন্তরালে নিজেদের অঘোষিত অঙ্গরাজ্য হিসেবে ধারাবাহিক শোষণের অভয়ারণ সৃষ্টির রাক্ষুসে মতলব। জাতি সময়ে সতর্ক হয়ে জেগে না উঠলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আরো অকার্যকর হয়ে পড়বে। ক্যান্সারের জীবাণু প্রাইমারি স্টেজে প্রতিরোধ করা যতটুকু সহজ _ লাস্ট স্টেজে তত বেশি কঠিন। পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রকৃত স্বাধীনতার চেতনায় জেগে উঠতে হবে, শাহবাগি চেতনার হেরোইন খেয়ে ফার্মের মুরগির মত ঝিমোলে হবে না।
‘৪৭ এ প্রেক্ষাপটে নিজেদের জাতিগত স্বার্থ গঠিত পাকিস্তানের দেশপ্রেম কিন্তু ‘৭১ এ এসে শেষ হয়ে যায়। ‘৭১ এর প্রেক্ষাপটে ‘৪৭ এ যে স্বপ্ন দেখা হয়েছিল তা বাংলার জেগে ওঠা মানুষের কাছে দুঃস্বপ্ন পরিণত হয়। ‘৭১ পরবর্তী শাসকদের ক্রমাগত ব্যর্থতার ধারাবাহিকতার একটি চুড়ান্ত পর্যায়ে বাংলাদেশ আজ ভারতীয় আগ্রাসনের নির্মম শিকার। ভারতের হাতে একদিন মাতৃভূমি তুলে দিতে হবে এজন্য নিশ্চয় ‘৭১ এ মুক্তিযোদ্ধারা সর্বস্ব বাজি রেখে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনেন নি। কাজেই আমাদের এবার জেগে উঠতে হবে। যে যুক্তিতে ‘৭১ এ পাকিস্তানকে এই ভূমি তুলে দেই নি, ২০১৩ তে সেই একই যুক্তিতে ভারতকেই দেবো না। ‘৭১ এ পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর রাজাকারদের যেমন ‘না’ বলেছিলাম _ ঠিক তেমনি ২০১৩ তে ভারতীয় আগ্রাসী হানাদারদের দোসর যারা তাদেরও সমস্বরে ‘না’ বলতে হবে অযুত কন্ঠে। আল্লাহর কাছে স্বাধীনতা চাইতেও হবে, আমাদের সরকারগুলো বঙ্গভবনে শপথবাক্য পাঠ করার ভড়ং করে একের পর এক লুটপাটের নতুন নতুন রেকর্ডই সৃষ্টি করে গেছে।

আরেকটি ব্যাপার হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সাঃ) কে যারা গালিগালাজ করে তারা নিদারুণ অভিশপ্ত। তারা নিজেরা অভিশপ্ত, এমনকি তাদের অভিশপ্ত বদ আমলের কারণে তারা যে জনপদে বসবাস করে সেই জনপদও শংকামুক্ত নয়। সেজন্যে তাদের ও তাদের আশ্রয়প্রশ্রয়দাতারাও অভিশপ্ত, আল্লাহর আজাব-গজবের ভাগীদার। কোন যুক্তিতেই এই ধরণের অভিশপ্ত লোকদের সমর্থন করা যাবে না, নীতিগতভাবে না বা অন্য কোনভাবে না। করলে সারা দেশ খোদাঈ আজাবগজবের সম্মুখীন হতে হবে। খোদাদ্রোহিতা একটি অভিশপ্ত বিষয় যেটির কারণে লক্ষ বছর ইবাদাতও মূল্যহীন হয়ে যায়।আল্লাহ আমাদের গোটা জাতিকে এই অভিশাপ থেকে হেফাজত করুন।

ইনশাআল্লাহ তাহলেই আল্লাহর সাহায্যে অচিরেই আমরা আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে সমর্থ হবো। অন্যথায় ঔদ্ধত্য-অবাধ্যাচারিতা-অনাচার এগুলো খুবই দ্রুত কুফরির বিরুদ্ধে নিয়ে যাবে এবং ফলস্বরুপ যে আজাব আসবে তার ভাগীদার প্রতিবাদ-প্রতিবিধান না করায় তা আমাদেরও ছেড়ে কথা বলবে না।

সম্মিলিত ‘মুসলিম ঐক্য’ ছাড়া এইবার বাঁচন নাই

Image

জামাতকে সেকুলাররা ইনজেনারেল মডারেট মুসলিমদের সবচেয়ে ডেডিকেটেড, সবচেয়ে অর্গানাইজড পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করে। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে যে মত পোষণ করি ইসলামের ব্যাপারে তা অনেক ইসলামপন্থিদের কাছে অর্থোডক্স মনে হতে পারে। ব্যাপার না মুসলিমদের মাঝে নানান মত থাকবেই বাগানের সব ফুলের গন্ধ এক হয় না। খেয়াল করে দেখুন হেফাজতের ৫ ই মের গণহত্যা বা জামাতশিবিরের বছরজুড়ে গণহত্যা দুটোই সেকুলারদের কাছে, আহলে কুফফারদের কাছে পশুপাখি মারা যাওয়ার সংবাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। এবারের লড়াইটা ‘মুসলিমদের’ বিরুদ্ধে, রাজনৈতিক রঙটা একটা মিথ্যা আবরণ মাত্র। আসল উদ্দেশ্য আড়াল করার জন্য।

তাই একই সঙ্গে আমি মনে করি এখন সমস্ত বিভেদ ভুলে মুসলিমদের এক হওয়ার সময় এসেছে। এক কালিমার পতাকাতলে, এখন অমুকবাদ তমুকিজমের দিন শেষ। এক কালিমা এক রাসূল(সাঃ) এর উম্মত হিসেবে সব বিভেদ ভুলে আমাদের এক কাতারে দাঁড়ানোর সময় এর আগে এত নিদারুণভাবে আসেনি। আজ এক শিবিরনেতা যিনি লক্ষীপুরে নৃশংস হত্যাকান্ডের চাক্ষুষ সাক্ষী, বললেন ভারতীয় দালালদের প্রাথমিক টার্গেট জামাত-শিবির, জামাত-শিবির শেষ হলে পরবর্তী টার্গেট হেফাজত। বলাই বাহুল্য একে একে সব ইসলামিক দল বা প্ল্যাটফর্মই আক্রান্ত হবে, কলোনিয়াল কাজিনস যাদেরই হুমকি হিসেবে বিবেচনা করবে। এখানে একটা হিসেব বাইরে থেকেও ঠিক বাইরেও নেই তা হল তাবলীগের একটা বিরাট অংশ হেফাজত সমর্থক, আবার হেফাজতের সমর্থকদের বেশিরভাগই নিয়মিত তাবলীগে সময় লাগায় বা একই আক্বীদার মুসলিম। চরমোনাই খুব বিপরীত মেরুর নয়। সবাই ইসলামপন্থি হিসেবে ইন কমন সেকুলারদের কাছে বিবেচিত এবং কারো জন্যই সেকুলারপন্থিদের হৃদয়ে এতটুকু মমতা যে নেই _ সেটি আজকের প্রেক্ষাপটে বড় মূল্য দিয়ে, বড় নিদারুণভাবে মুসলিমদের বুঝতে হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে না _ মিশর, সিরিয়া, তুরষ্কসহ বিভিন্ন দেশে।

Image

‘গাযওয়ায়ে হিন্দ’ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মুশরিকদের সাথে মহাযুদ্ধ এমনিতেই সমাগত প্রায়। এখন আমরা যা দেখছি তা সূচনা বা ক্ষেত্র প্রস্তুতকৃত হওয়া। সেদিন এক শুভান্যুধায়ী মারফত এক তাবলীগি মারকাজের জেলা শুরা, বড় আলেম _ সাধারণতঃ খুবই ডিসিপ্লিনড এবং সেল্ফ-কন্ট্রোলড একজন মানুষ, হিসেবের বাইরে কোন কথাই বলতে শোনা যায় না, সেদিন সাধারণ হিসেবের বাইরে অদ্ভূত এক কথা বললেন যা আরেকজনের মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে। তা হল ‘গাযওয়ায়ে হিন্দ’ সমাগত এবং তার মূল স্ফূলিঙ্গের স্ফূরণ ঘটবে খুব সম্ভবতঃ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে। ভারতের আশেপাশের কয়েকটি রাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশের চট্টগ্রামই হবে মূল কেন্দ্র। এক এনালাইজার দেখলাম কিছু তথ্যের ভিত্তিতে একটি তত্ত্বও দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন তা হল ২০১৭ সালের কিছু আগে বা কিছু পরে ঘটবে এটি। ভারত সম্পূর্ণভাবে পদানত হবার পর মুজাহিদ মুসলিমদের যারা জীবিত থাকবেন তারা খোরাসান হয়ে দামেশকের দিকে রওনা হবেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য।

যাই হোক মোটামুটি এটা তো আমরা অবশ্যই লক্ষ্য করছি যে গত এক বছরে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং বিশেষতঃ বাংলাদেশে যা ঘটছে, ঘটে চলেছে তা ইতিপূর্বে কখনোই ঘটেনি। এটি অবশ্যই ম্যাচিওর হচ্ছে এবং চুড়ান্ত একটি পরিণতির দিকে যাওয়া ছাড়া ক্ষান্ত হবে না। যত বিভেদ আমরা এখন তৈরি করব তত বেশি ক্ষয়ক্ষতি আমাদের হতে থাকবে, এক এবং একাত্ম হওয়া ছাড়া আসমান-জমিনের কোন রাস্তা আমাদের জন্য খোলা নেই। এখন মুসলিমদের ওপর যেভাবে আক্রমণ হচ্ছে সেটির পজিটিভ দিক হল এতে মতভেদ-বিভেদ ভুলে এক কালিমার ছায়াতলে সমবেত হবার বিরাট সুযোগ। এটি যত তাড়াতাড়ি আমরা বুঝতে পারবো যে এখন মুসলিম ঐক্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় ইসলামের স্বার্থে, আমাদের অস্তিত্বেরও স্বার্থে _ ততই মঙ্গল।

অতএব, বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মুসলিমদের যে রক্তের ধারা আমরা প্রবাহিত হতে দেখছি তা আগামী দিনগুলোতে স্ফীত থেকে স্ফীততরই হতে থাকবে। মুসলিমরা যতক্ষণ পর্যন্ত নানা মতভেদ ভুলে গিয়ে এক কালিমার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলামের শত্রুদের জন্য মুসলিমনিধন সহজেই সম্ভব হবে। মুসলিমদের অন্তঃকলহের সুযোগে নানা কৌশলে তারা এটি করতে সমর্থ হচ্ছে, প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে দিনে দিনে তারা আরো হিংস্র আরো আগ্রাসী হবে। মনে রাখতে হবে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে মুশরিকদের তথা ভারতীয় বর্ণবাদি হিন্দুদের প্রধান টেনশন এখন দুটো দলকে নিয়ে, জামাত ও হেফাজত। হেফাজতের লংমার্চে স্মরণকালের বৃহত্তম মুসলিম অংশগ্রহণ দেখে তাদের উদ্বেগ ও আতঙ্ক জন্মেছে, যেন তারা তাদের মরণকে দেখেছে। উল্লেখ্য ভারত সে অর্থে সেকুলার নয়, যদিও ভাব ধরে থাকে। নরেন্দ্র মোদির মত তীব্র সাম্প্রদায়িক মুসলিমবিদ্বেষী সেখানে সম্ভবতঃ প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছে, দিল্লিসহ সাম্প্রতিক ৫ টি রাজ্যে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মেরুকরণ হচ্ছে। আগের দিন আর নেই সেটা বুঝতে হবে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, বিজেপির একটি অংশ ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ হিন্দু মৌলবাদির সমাবেশ ঘটিয়ে সবাইকে নিয়ে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে’ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ‘বাংলাদেশ চলো’ নামক যুদ্ধংদেহি পদযাত্রার হুমকি দিয়েছে।  আজ হয়তো তারা আসবে না, কিন্তু কাল বা পরশু অথবা অচিরেই একদিন তারা অবশ্যই আসবে তাতে সন্দেহ নেই। তাদের দল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল এবং আসার পর ভারতের এতদিনকার ‘বাংলাদেশ নীতি’ অনেকটাই পরিবর্তিত হবার সম্ভাবনা। এতদিন যা পায়নি সেই ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণও তারা লাভ করবে। কাজেই তার আগেই বাংলার মুসলিমদের দলমতনির্বিশেষে সমস্ত বিভেদ ভুলে এক জায়গায় দাঁড়াতে হবে। ইসলামের স্বার্থে তো বটেই, নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেও। অন্যথায় গুজরাটে নরেন্দ্র মোদিদের ইন্ধনে যে ভয়াবহ বীভৎস হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যপক ও বিরাট আকারে, এমনকি ‘৭১ এর হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের চেয়ে ভয়ংকর পৈশাচিক অভিজ্ঞতা বাংলার মুসলিমদের জন্যে অপেক্ষা করছে। আমি চাই আমার এই আশংকা সত্য না হোক, কায়মনোবাক্যে চাই। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, বিপরীত অভিজ্ঞতা লাভ করাও অসম্ভব নয়।

আল্লাহ সমস্ত বিভেদ ভুলে আমাদের এক হওয়ার তাওফিক এনায়েত করুন।

আমিন।

এবারের সংগ্রাম ‘অস্তিত্বরক্ষার’ সংগ্রাম

সাদাতসহ আরো অনেকেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন। আমি নিজেও মনে করি এই টার্মের আগে সারাজীবন ধরে চেতনাব্যবসায়ী লীগের বিরুদ্ধে ভারততোষণের যে অভিযোগ আরোপ করা হত সেটাকে অনেকেই ‘প্রোপাগান্ডা’ হিসেবেই নিত। মানুষ মনে করত লীগ ভারতঘেঁষা একটা গোষ্ঠি। কিন্তু এবারের টার্মে ভারততোষণ, চাটুকারিতা ও সেবাদাসত্বের যে নজির তারা স্থাপন করেছে ইতিপূর্বে তা দেখা যায়নি, কল্পনার সীমাকে তারা অতিক্রম করেছে এ ব্যাপারে। দেশীয় স্বার্থকে সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দিয়ে একের পর এক যেসব পদক্ষেপ তারা নিয়েছে তাতে মনে হয় বিরাট কোন সাম্রাজ্যবাদি চক্রান্তের ঔপনিবেশিক সেবাদাস হিসেবে তারা দেশ ও জাতির সর্বনাশ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ‘৪৭ এ রাজনৈতিকভাবে ভাগ হওয়া অখন্ড পাকিস্তানের এক অংশ পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বিভিন্ন বৈষম্যমূলক শোষণের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠতে থাকে _ ক্রমান্বয়ে যার পরিণতিতে অবশেষে ‘৭১ এর রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালিদের এক সাগর রক্ত ও সীমাহীন ত্যাগতীতিক্ষার বিনিময়ে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটান। সেই যুদ্ধে ভারত আমাদের জন্যে অনেক কিছু করেছে, প্রায় কোটির কাছাকাছি শরনার্থীকে আশ্রয় দেয়া থেকে শুরু করে সামরিক সাহায্য-সহযোগিতা পর্যন্ত। রাজনৈতিক কারণেও বটে, তাদের কাছে যুদ্ধটা ছিল আসলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, পাকিস্তান ছিল এবং আজও ভারতের আজন্ম শত্রু।

এরপর থেকে যা শুরু হয় তা ভারতের আগ্রাসনের ধারাবাহিকতা। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র যা পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের সময় রেখে যায় তা ন্যায্যতঃ বাংলাদেশের প্রাপ্য হলেও বাংলাদেশকে তা দেয়া হয়নি। প্রায় সমুদয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসম্ভার ভারতীয় সেনাবাহিনী নিজের কব্জায় নিয়ে নেয়। স্বাধীনতা পরবর্তী আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তিসমূহের মধ্যে একটি শর্ত ছিল এই যে _ ‘বাংলাদেশের কোন ‘বর্ডার গার্ড’ বা সীমান্ত রক্ষীবাহিনী থাকতে পারবে না।’

১৯৭১ সালে যে সব শর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সামরিক সাহায্য দেয়, তার অন্যতম শর্ত ছিল “Frontier Guards will be disbanded” (CIA Report SC 7941/71). অর্থাৎ বাংলাদেশের কোনো বর্ডার গার্ড থাকবে না। কিন্তু স্বাধীনতার পরে নানা কারনে পাকিস্তান রাইফেলস বালাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) রূপ নেয়। বিডিআর বাহিনীটি ছিলো আধাসামরিক বাহিনী, যার মূল কমান্ড ও ট্রেনিং ছিলো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মত। অন্যদিকে ভারতের বিএসএফ ছিলো সিভিল বাহিনী, যাদের ট্রেনিং, জনবল সবই ছিলো নিম্নমানের। এসব কারনে বর্ডারে কোনো যু্দ্ধ হলে তাতে বিডিআর সামরিক পেশাদারিত্ব দিয়ে বিজয়ী হত।

আজ উপমহাদেশে ভারতের বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরি হতে দেয়া হয়নি, সর্বতোভাবে বাংলাদেশের ওপর সাংষ্কৃতিক-সামরিক-অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে যা যা করা দরকার ভারত তার সবই করেছে। বিডিআর বাহিনীকে ধ্বংস করার পেছনে তাদের পরিকল্পনা সাফল্য লাভ করতে পারতো না কখনো, যদি তাদের দেশীয় তাঁবেদার বাহিনী জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদের সুযোগ করে না দিত। শেয়ার বাজার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেশের লাখো পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে নির্বিঘ্নে প্রায় সম্পূর্ণই তাদের গ্রাস করতে দেয়া হয়েছে, ভয়াবহ ধরণের অবিশ্বাস্য ধরণের অসম চুক্তি করে বিপুল মুনাফা লুন্ঠনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাত গ্রাস করতে দেয়া হচ্ছে এমনভাবে _ আগামি দিনে খোদ বাংলাদেশের নিজের দেশে নিজেদেরই কোন নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ। তথ্য প্রযুক্তি খাতের রিসোর্সগুলি অতি অল্প মূল্যে তাদের দিয়ে দেয়া হচ্ছে যা ধরে রেখে কাজে লাগালে বাংলাদেশের তরুণেরা আগামী দিনে প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটাতে পারত। তৈরি পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করতে হাজার হাজার ভারতীয় উদ্যোক্তাদের এই সেক্টরে অবাধে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে, লক্ষ লক্ষ ভারতীয়দের এক বিশাল কর্মীবাহিনীকে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে আমাদের কর্মসংস্থানের বিরাট সংকট থাকা সত্বেও। আবাসন শিল্পে চট করে ঢুকতে পারেনি তবে চেষ্টা অব্যহত আছে, অচিরেই ঘুকে পড়বে যদি তাদের তাঁবেদাররা আবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায়। এই তালিকা আরো অনেক দীর্ঘ হবে রেফারেন্স টানলে। ভারতীয়রা আমাদের উন্নয়ন চায় না, আমাদের সমস্ত সেক্টরকে ধ্বংস করতে চায় শুধু তাদের নিজেদের স্বার্থে, টিপাইমুখ বাঁধের মাধ্যমে পানিশূণ্য করতে চায় শুধু তাদের স্বার্থে, আমাদের ধর্মের প্রসারেও এমনকি পালনেও তাদের আপত্তি, আজকাল বিভিন্ন ব্লগে উপমহাদেশে আমাদের পূর্বপুরুষদের আদি ধর্ম সনাতনধর্মে আবার ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে হিন্দু মৌলবাদিদের পক্ষ থেকে, ভয়ংকরভাবে জেগে উঠছে হিন্দু মৌলবাদিদের দল, ৩-৫ বছরের মধ্যে ভারতের সাথে বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-চায়নার সর্বব্যাপী যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার বিরাট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণীও রয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার অনেকগুলো ইঙ্গিত দৃশ্যমান। এ ব্যাপরে বিস্তারিত আলাদাভাবে বলার ইচ্ছে আছে।

কাজেই ‘৪৭ এ যেমন সম্প্রদায়গত স্বার্থ রক্ষায় সময়ের প্রয়োজনে মুসলিমদের ‘পাকিস্তান’ গঠন করতে হয়েছে, ‘৭১ এ যেমন নৃতাত্ত্বিক জাতিগত সাংষ্কৃতিক পরিচয়গতভাবে পশ্চিম পাকিস্তানীদের অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ‘বাংলাদেশ’ গঠন করতে হয়েছে _ ঠিক তেমনিভাবে এই ২০১৩ তে নগ্ন ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অযুত কন্ঠে গর্জে উঠতে হবে, পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে নির্লজ্জা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। তার প্রথম পদক্ষেপ হল ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদিদের দেশীয় তাঁবেদার গোষ্ঠিকে ‘না’ বলা। এইবার প্রতিরোধ করতে না পারলে সামনে যা যা হতে পারে, তাতে ‘৭১ এর হানাদার বাহিনীর অত্যাচারকে ভুলে যাবে বাংলার মুসলমানগণ, ভারতে এবার আসছে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদি, বিজেপির একাংশ ইতিমধ্যেই ‘বাংলাদেশ চলো’ পদযাত্রার প্রাথমিক ঘোষণা দিয়েছে, যাতে লক্ষ লক্ষ হিন্দু মৌলবাদির সমাবেশ ঘটানোর হুমকি দেয়া হয়েছে। এইবার ভুল করলে ‘৭১ এর মত এক সাগর নয়, এক মহাসাগর রক্তের বিনিময়েই আবার হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতাকে খুঁজে ফিরতে হবে।