গল্পটা শুনে ওনারা হাসতেই পারেন………

Appolo vi

প্রায় মাসখানেক আগে ফেইসবুকে দেয়া একটা পোষ্টকে কেন্দ্র করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তরুণ পরিবেশ আন্দোলনকারী এবং জনপ্রিয় অনলাইন এ্যাকটিভিষ্ট জনাব ওয়াহিদুজ্জামান এ্যাপোলো ভাইর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। হাইকোর্ট তাকে কিছুদিনের জামিন দিয়ে নিম্ন আদালতে হাজির হবার সময়সীমা বেঁধে দেয়। বেঁধে দেয়া সময়সীমার কিছু আগেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তিনি নিম্নআদালতে আত্নসমর্পন করলে তাকে নতুন করে জামিন না দিয়ে জেল হাজতে পাঠান হয়। এখনো তিনি জেলে আছেন। সরকার যেখানে আদালত চালায়  সেখানে এই মামলার ভবিশ্যত কি সেটা আইনের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয়। এই মামলার পরিণতি নিশ্চিতভাবে সরকারের ভবিশ্যত পরিণতির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এ্যাপোলো ভাইর পরিবার এবং তার শুভাকাঙ্খীদের আতঙ্কের কারণ এটাই।

এই সময়ের বাঙলাদেশের রাজনৈতিক হট্টগোলের গুরুত্বের বিবেচনায় এ্যাপোলো ভাই ব্যাক্তি হিসেবে অতোটা গুরুত্ব পাবার কথা নয়। দেশে একদিকে চলছে নির্বাচন নিয়ে সরকারের একরোখা অবস্থান এবং একে কেন্দ্র করে সারা দেশে আন্দোলনের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার নিয়ে পাশ্ববর্তী বৃহৎ প্রতিবেশী দেশের অনাকাংখিত হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলেছে। বাঙলাদেশের একান্ত নিজস্ব সমস্যা এখন আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির সাথে জড়িয়ে গেছে। ঠিক এই মুহুর্তে একজন তরুণ পরিবেশবিদের কোন কারণে জেলে যাওয়ার ঘটনা দেশের মূলধারার মিডিয়ার কাছে কোন মতেই গুরুত্বপূর্ণ খবর হতে পারে না। তবুও বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মূলতঃ দু’টি কারণে। প্রথমতঃ এ্যাপোলো ভাইর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে জেলে পুরার ঘটনা কিছু বিষয়কে উৎকটভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। বাঙলাদেশে চলছে এক তরফা রাজনৈতিক বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা। এর বিরুদ্ধে কারো অবস্থান তা যতোই যৌক্তিক হোক না কেন সরকার কর্তৃক সমর্থিত নয়। সারা দেশে এই কারণে বিভিন্ন ইস্যুতে হাজার হাজার মানুষ জেলে বন্দী হয়ে আছেন। এ্যাপোলো ভাইর ঘটনা মূলতঃ দেশের মধ্যকার সেই সত্যকে সামনে নিয়ে এসেছে। দ্বিতীয়তঃ তার গ্রেফতার করার প্রেক্ষাপটটা। এ্যাপোলো ভাইর উপরে সরকার যে অত্যন্ত বেজার তা আজকের ঘটনা নয়। অনেকেই বলে থাকেন, তাকে গ্রেফতারের মূল কারণ কথিত সেই ষ্ট্যাটাস নয়, বরং তিনি নিরবিচ্ছিন্নভাবে, অত্যন্ত বলিষ্ট যুক্তি দিয়ে এবং তথ্য প্রমাণসহ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য বিষয়ে ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এবং সেই সাথে বর্তমান সরকারের নতজানু নীতির কারণে বাঙলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবার বিষয়গুলো খুবই সহজ ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে তুলে এনেছেন।

একটু আগে বললাম, এ্যাপোলো ভাইর নামে ‘মিথ্যা মামলা’ দেয়া হয়েছে। মামলাটা মিথ্যা তার কারণ হোল, এ্যাপোলো ভাইর নাম এবং ছবি ব্যবহার করে যে পোষ্টটি দেয়া হয় সেটা তার নিজস্ব নয়। দুঃখজনক বিষয় হোল, অধিকাংশ পত্রিকায় এর আগে এবং এবারও এ্যাপোলো ভাইর ফেইসবুকে দেয়া ষ্ট্যাটাস নিয়ে অর্ধসত্য কথা ছাপা হয়েছে। যে পোষ্টটিকে তার নামে চালান হচ্ছে সেটা মূলতঃ তার কোন এক ভক্ত তার নামে পেজ খুলে সেই পেজে দিয়েছিল। বেশ কিছুদিন আগে যখন বারবার সরকারদেলীয় লোকজন গণ রিপোর্টিং করে তার আইডিটা ব্লক করে দিচ্ছিল ঠিক তখন তার কোন এক ফলোয়ার বা ফেইসবুক বন্ধু হয়তো তার নামেএই পেজ খুলে থাকবেন। এটা ভার্সুয়াল জগতে খুবই সাধারণ একটা ঘটনা। যে পোষ্টটার জন্য তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে সেটা অশালীনতা বা তথ্য বিকৃতি কোন অভিযোগের মধ্যেও পড়ে না। তারপরেও এটা তার নামে চালিয়ে দিয়ে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেয়া হোল।

এ ব্যাপারে জেলে যাবার আগে তিনি একটা লেখা লিখেন যেটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল উন্মোচনে প্রকাশিত হয়।  এখানে তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে তিনি এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলার শিকার হন।

http://www.unmochon.com/2013/11/06/55157.html#.Un3VBTYbodl

তাছাড়া তিনি তো এখন জেলে আছেন। তার পক্ষে তো কোন পোষ্ট দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যদি নিচের পেজে যান তবে দেখবেন তার জেলে যাবার পরেও অনেক পোষ্ট ছাড়া হয়েছে। এর থেকে কি প্রমাণিত হয় না যে পোষ্টটার কারণে তাকে জেলে পাঠান হয়েছে তার দায়দায়িত্ব তার নয়?

https://www.facebook.com/AkmWahiduzzamanApollo

এ রকম তার নামে আরো কয়েকটি পেজ খোলা হয় তার ভক্তদের দ্বারা। এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধ মতাবলম্বী বিশেষ করে সরকারীদলের অন্ধ সমর্থকরা তার নাম এবং ছবি ব্যবহার করে ফেক  আইডি খুলে। এবং তা থেকে নানা আপত্তিকর পোষ্ট দিয়ে চরিত্রহণনের চেষ্টা চালিয়েছিল। এ্যাপোলো ভাইকে তবু কমবেশী অনেকেই চিনেন। সেই তুলনায় আমি একদম অখ্যাত। আমার নামেও একবার এ রকম ফেক আইডি খুলে বন্ধুদের করা মন্তব্যের জবাব খুব বাজে শব্দ ব্যবহার করে দেয়া হচ্ছিল।  অনলাইনের এই ভালনারাবিলিটির কথা কি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার আইটি বিশেষজ্ঞরা জানে না? অবশ্যই জানে। বরং আমার আপনার চেয়েও বেশ ভাল জানেন। তারপরেও এই ধরনের হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা প্রমাণ করে সরকারের ফ্যাসিষ্ট চরিত্রকে।

এই মামলার মাধ্যমে প্রমাণিত হোল, নতুন এই তথ্য প্রযুক্তি আইন ভবিশ্যতে কতোটা ভয়াবহভাবে ব্যবহার হতে পারে। শত্রুতাবশতঃ যে কেউ যে কারো নামে তার ছবি ব্যবহার করে এ রকম পেজ বা ভুয়া আইডি খুলে কোন আপত্তিকর পোষ্ট দিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। আর এই আইনের সাজা এতোটা মারাত্নক যে, গাড়ী চাপা দিয়ে মানুষ মারার চেয়ে ভয়াবহ। এমনকি অনেকক্ষেত্রে ডাকাতি, মানুষ জখম করার চেয়েও কঠিন সাজা।

তাছাড়া কটুক্তি আমরা কাকে বলব? রাজনীতি করে এমন ব্যাক্তির অনেক কাজই সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে তাদের কি অধিকার নেই রাজনীতিবিদদের এসব কাজের সমালোচনা করার? রাজনীতিবিদদের কাজের সমালোচনা করা কি কটুক্তির পর্যায়ে পড়বে? এ্যাপোলো ভাই তার ফেইসবুকের সমস্ত পোষ্ট জুড়ে ভারতের কাছে বাঙলাদেশ সরকারের নতজানু পররাস্ট্রনীতি এবং একপেঁশে বন্ধুতের ফলস্বরূপ দেশের স্বার্থ বলি হবার বিরুদ্ধে তথ্যমূলক এবং বিশ্লেষণধর্মী লেখা লিখেছেন। এটাই কি তার জন্য কাল হোল? আমাদের নেতানেত্রীরা প্রত্যহ যেভাবে একে অন্যকে আক্রোশমূলক ভাষায় আক্রমণ করে তাতে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। দু’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তব্যে খালেদা জিয়ার পরচুলা নিয়ে অত্যন্ত বাজেভাবে আক্রমণ করেছেন। আদালত যদি নিরপেক্ষ হোত, আইন যদি দেশের সকল নাগরিকের জন্য সমান হোত, তবে শেখ হাসিনারও কি তার বক্তব্যের জন্য জবাবদিহি করতে হোত না? নতুন তথ্য প্রযুক্তি আইনে জেলে যেতে হোত না?

সবশেষে একটা প্রচলিত কৌতুক বলে শেষ করব।

এক রাবনের রাজত্বে  তিন ব্যাক্তি বেড়াতে গেল। সেই কথা শুনে রাবনতো মহা রাগান্বিত।  বাহিনীকে হুকুম করল, তিনজনকে ধরে আনার। যথাযথভাবে তা পালিত হোল। রাবণ তাদের সামনে পেয়ে বাজখাই গলায় জানতে চাইল, কেন তারা রাবণের অনুমতি না নিয়েই এখানে ঢুকে পড়েছে।  অতএব, আইন অমান্যের জন্য তাদের মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করা হোল। তিনজনই ভয়ে কাঁচুমাচু। রাবণ বেশ মজাই পেল। অবশেষে সে হুংকার দিয়ে বলল, ঠিক আছে। তোদের ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে। এই মুহুর্তে তোরা বনে বের হয়ে পড়বি। সবাইকে এমন একটা করে ফল আনতে হবে যে, যেটা আমি জীবনে কখনোই খাইনি। যদি তা না পারিস তবে যে যেটা আনবি সেটা তার পশ্চাৎদেশ দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হবে। এটাই হবে তোদের শাস্তি। সবাই বের হয়ে পড়ল এমন অদেখা ফলের সন্ধানে। বেশ কিছু সময় পরে প্রথমজন ফিরে এলো। হাতে একটা বড় আম। রাবণ তাই দেখেতো মহা খেপা। যেই কথা সেই কাজ। আমটা পাচার করা হোল উক্ত ব্যাক্তির নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে। লোকটা ব্যাথায় কাতরাতে থাকল।

দ্বিতীয়জন ফিরে এলো হাতে একটা ছোট সাইজের বেল নিয়ে। এবারও রাবণ খেপে গিয়ে একই কাজ করল। কিন্তু একটু পড়েই রাবণতো অবাক! কি ব্যাপার! কিছুক্ষণ আগেই সামান্য আমের কষ্ট সইতে না পেরে একজনের জান যায় যায় অবস্থা। অথচ দ্বিতীয়জন গোটা বেলটা পশ্চাৎদেশে হজম করে দিয়ে দিব্যি হো হো করে হাসছে। ব্যাপারটা কি? জিজ্ঞেস করতেই দ্বিতীয় ব্যাক্তি করজোড়ে বলল, রাবণরাজ, না হেসে পারলাম না। কারণ একটু আগে দেখে  এলাম তৃতীয়জন ইয়া বড় সাইজের কাঁঠাল নিয়ে আপনার দরবারের দিকে আসছে। কাঁঠালটা কথিত পথে ঢুকালে ওর কি অবস্থা হবে সেই কস্টে আমি নিজের দুঃখ বেমালুম ভুলে গিয়ে হাসছি।

যাইহোক, বাকশালী নির্যাতনের শিকার আজকের তথ্যমন্ত্রী জনাব ইনু সবকিছু ভুলে গিয়ে বর্তমান সরকারের সাথে থেকে আবারো সেই পথে হাঁটছেন। যে ফ্যাসিবাদের শিকার হয়েছিলেন তিনি এবং তার দল, আজ এতোটা বছর পরে তিনিই সেই দলের সহযোগী হয়ে একই কাজ করলেন। আজকে যারা এই নতুন আইনের বলি হচ্ছেন, তারা কষ্ট না পেয়ে হাসতেই পারেন। কারণ বেলটা তাদের ভাগ্যে পড়লেও ক্ষমতা হারালে কাঁটাযুক্ত ইয়া সাইজের কাঁঠাল অপেক্ষা করছে ইনুদের জন্য।

Mahalom72@msn.com

Leave a comment