ফাইনম্যানের চিঠি

ব্রিলিয়ান্ট ও ফ্ল্যাম্বয়্যান্ট ফিজিসিস্ট এবং নোবেল লরিয়েট রিচার্ড ফাইনম্যানের (Richard Feynman) সাথে ফেলো ফিজিসিস্ট ও নোবেল লরিয়েট মারী গেল-ম্যানের (Murray Gell-Mann) খোঁটাখুঁটি লেগেই থাকতো। দুজনেই সুপার স্মার্ট, একই সাথে সুপার ইগোটিস্ট। ফাইনম্যানের গাড়ির লাইসেন্স প্লেটে লেখা ছিল ‘কোয়ান্টাম'(লাইসেন্স প্লেটে সর্বোচ্চ ছয়টি অক্ষর আঁটতো, অগত্যা QANTUM), তো গেল-ম্যানের লাইসেন্স প্লেটে ‘কোয়ার্কস'(QUARKS)। দু’জন যুগ্মভাবে Weak Decay এর একটি মডেল আবিষ্কার করেন, অথচ তাঁদের মুখোমুখি আলাপে প্রথম কথার পর দ্বিতীয় কথাই হতো ‘এটা আমাকে শেখাতে এসো না, এ আমার ভাল করেই জানা আছে!’ বড় বিব্রতকর পরিস্থিতি! ফাইনম্যান সম্পর্কে গেল-ম্যান মন্তব্য করেছিলেন যে তিনি অনেক সময় ও এনার্জি ব্যয় করতেন তাঁর মজার মজার কাণ্ড নিয়ে গল্প ছড়াতে। কথা মিথ্যে নয়। সম্প্রতি ফিজিক্স ওয়ার্ল্ডে সায়েন্টিস্টদের ভোটে শ্রেষ্ঠ (পপুলার) পদার্থবিদদের মধ্যে সপ্তম (গ্যালিলীওর ঠিক পরই) নির্বাচিত জিনিয়াস সায়েন্টিস্ট ফাইনম্যান একইসাথে ছিলেন শিশুসুলভ, আমুদে, হৈচৈপ্রিয়। সে তুলনায় গেল-ম্যান গম্ভীর, নির্জন, চিন্তাশীল। তাঁকে নিয়ে আরেকদিন বলা যাবে।

ফাইনম্যানের Dodge Tradesman Maxivan গাড়িটির গায়ে আঁকা ছিল বিখ্যাত ফাইনম্যান ডায়াগ্রামস। একবার রাস্তায় অপরিচিত একজন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল গাড়িতে ফাইনম্যান ডায়াগ্রামস আঁকা কেন? জবাবে তিনি খুব মজা করে বলেছিলেন,’কারণ,আমিই রিচার্ড ফাইনম্যান!’ ফাইনম্যানের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী ১ ডলারে গাড়িটি বন্ধু ও জীবনীকার রালফ লেইটন (Ralph Leighton) কে দিয়ে দেন। ফাইনম্যানের ভাষ্যে লেইটন বেশ কয়েকটি বই লেখেন যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘Surely You’re Joking, Mr. Feynman!’ যাতে ফাইনম্যানের চরিত্রের quirky দিকটি অসংখ্য ঘটনার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে। ফাইনম্যান সম্পর্কে লেইটন মন্তব্য করেছিলেন,

“That one person could have so many wonderfully crazy things happen to him in one life is sometimes hard to believe. That one person could invent so much innocent mischief in one life is surely an inspiration.”

Richard and Arline Feynman

১৯৪৫ এ ২৭ বছর বয়সী ফাইনম্যান যখন লস অ্যালামস (Los Alamos) ল্যাবে Manhattan Project এ অ্যাটম বোমা তৈরির উপর কাজ করছিলেন, তখন তাঁর ২৫ বছর বয়স্ক প্রথম স্ত্রী আরলিন যক্ষ্মা এবং Hodgkin’s lymphoma তে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর বিছানার পাশেই ছিল একটি পুরনো ঘড়ি। আরলিন ফাইনম্যানকে বলেছিলেন ঘড়িটি তাঁদের একসাথে কাটানো আনন্দময় অতীতের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে। আরলিন যেদিন মারা যান, নার্স একটুকরো কাগজে মৃত্যুর ক্ষণটি লিখে ফাইনম্যানকে দেন। কাকতালীয় ব্যাপার হোল, ঘড়িটাও ঠিক ঐ একই সময়ে স্থির হয়ে ছিল, যেন আরলিনের প্রাণ যাওয়ার মুহূর্তে অলৌকিকভাবে ঘড়িটিও বন্ধ হয়ে যায়! ফাইনম্যানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তিনি এর মাঝে কোন আলৌকিক যোগসূত্র খুঁজে পেয়ে ছিলেন কিনা। ফাইনম্যান বলেছিলেন, এক মুহূর্তের জন্যেও না। তাঁর অনুসন্ধিৎসু মন তাৎক্ষণিকভাবে লেগে পড়ে এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে, তা উদ্ধারে। ভেবেচিন্তে যে ব্যাখ্যায় তিনি স্থির হন তা হোল, পুরনো ঘড়িটি এর কিছু আগেই সম্ভবত নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। নার্স মৃত্যুর ক্ষণ রেকর্ড করার সময় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যে সময়টি দেখেছে, সেটাই লিপিবদ্ধ করেছে। দুয়ে দুয়ে চার!

ঘটনাটা পড়ে খুব বেরসিক, কাঠখোট্টা টাইপ কিছু মনে হলেও এর সাথে হৃদয়ের যোগ নেই কোনও। এককালের হাইস্কুল সুইটহার্ট আরলিনকে হারিয়ে ফাইনম্যান ভেঙ্গে পড়েছিলেন। আরলিনের মৃত্যুর প্রায় দেড় বছর পর ১৯৪৬ এর অক্টোবরে ফাইনম্যান তাঁর উদ্দেশ্যে আবেগপূর্ণ শেষ চিঠিটি লেখেন যাতে তাঁর একাকীত্ব এবং আরলিনের প্রতি ভালবাসা ফুটে ওঠে। তাঁর অনুভূতিগুলোকে কেবল এই এক ছত্রেই প্রকাশ করা চলে, “You, dead, are so much better than anyone else alive.” খামে বন্ধ এ চিঠিটি ১৯৮৮তে ফাইনম্যানের মৃত্যুর পরই প্রথম খোলা হয়।

October 17, 1946

D’Arline,

I adore you, sweetheart.

I know how much you like to hear that — but I don’t only write it because you like it — I write it because it makes me warm all over inside to write it to you.

It is such a terribly long time since I last wrote to you — almost two years but I know you’ll excuse me because you understand how I am, stubborn and realistic; and I thought there was no sense to writing.

But now I know my darling wife that it is right to do what I have delayed in doing, and that I have done so much in the past. I want to tell you I love you. I want to love you. I always will love you.

I find it hard to understand in my mind what it means to love you after you are dead — but I still want to comfort and take care of you — and I want you to love me and care for me. I want to have problems to discuss with you — I want to do little projects with you. I never thought until just now that we can do that. What should we do. We started to learn to make clothes together — or learn Chinese — or getting a movie projector. Can’t I do something now? No. I am alone without you and you were the “idea-woman” and general instigator of all our wild adventures.

When you were sick you worried because you could not give me something that you wanted to and thought I needed. You needn’t have worried. Just as I told you then there was no real need because I loved you in so many ways so much. And now it is clearly even more true — you can give me nothing now yet I love you so that you stand in my way of loving anyone else — but I want you to stand there. You, dead, are so much better than anyone else alive.

I know you will assure me that I am foolish and that you want me to have full happiness and don’t want to be in my way. I’ll bet you are surprised that I don’t even have a girlfriend (except you, sweetheart) after two years. But you can’t help it, darling, nor can I — I don’t understand it, for I have met many girls and very nice ones and I don’t want to remain alone — but in two or three meetings they all seem ashes. You only are left to me. You are real.

My darling wife, I do adore you.

I love my wife. My wife is dead.

Rich.

PS Please excuse my not mailing this — but I don’t know your new address.

আরলিন সর্বতোভাবেই তাঁর অনুপ্রেরণা ও সঙ্গী ছিলেন, যিনি তাঁকে খুব ভালো বুঝতেন। ফাইনম্যানের দ্বিতীয় বিয়ে খুব অল্প দিন টেকে। ডিভোর্সের আবেদনে তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ ছিল যে ফাইনম্যান ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত ক্যালকুলাস ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেন না। তৃতীয় এবং সর্বশেষ স্ত্রী গুয়েনেথ তাঁর প্রবল জীবনবোধ এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়তাকে ভালবাসতেন। ৬৯ বছর বয়সে ক্যান্সারে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর সাথেই ফাইনম্যান তাঁর বাকি জীবন অতিবাহিত করেন। স্বভাবসুলভ লঘুতায় তাঁর শেষ ধারণকৃত উক্তিটি ছিল “I’d hate to die twice. It’s so boring.”

Leave a comment