জনাবা হাসিনা; অনির্বাচিত ও অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দ্যেশ্যে

by Watchdog Bd

জনাবা হাসিনা,

মাননীয়া সম্বোধন করে আপনাকে সন্মান দেখাতে পারছিনা বলে দুঃখিত। প্রথমত, বিশ্ব হতে উপনিবেশবাদ অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। বৃটিশ প্রভুদের কায়দায় কথায় কথায় মাননীয়া জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে নিজকে দুইশত বছর আগের দাস যুগে ফিরিয়ে নিতে চাইনা। খোদ বৃটিশরাও এখন আর এ জাতীয় শব্দ ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়। বারাক ওবামা আমার দত্তক নেয়া দেশের প্রেসিডেন্ট। পৃথিবীর সবাচাইতে শক্তিধর প্রেসিডেন্টকে আমি জনাব প্রেসিডেন্ট বলতেই অভ্যস্ত। এ নিয়ে খোদ ওবামা যেমন অভিযোগ করেননি, তেমনি তার দল ডেমোক্রাটরাও আমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানোর চেষ্টা করেনি। আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি হাজার ব্যস্ততার মাঝেও প্রেসিডেন্ট ওবামা আমার মত একজন সাধারণ সমর্থক ও নির্বাচনী কর্মীর সাথে নির্বাচন উত্তর যোগাযোগ রাখতে ভুল করেন না। দ্বিতীয়ত, আপনি বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার প্রধান নন। আপনি দলীয় প্রশাসন ও বন্দুকের নলের মুখে অনির্বাচিত সরকারের প্রধান। তাই আমাদের সংস্কৃতিতে স্বীকৃত ও প্রাপ্য সন্মান দেখাতে পারছিনা বলেও দুঃখিত। আইনগতভাবে আপনি কোনটারই দাবিদার হতে পারেন না। আপনি জারজ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। চাইলে দলীয় চামচা ও প্রশাসনের ভাড়াটিয়া বাহিনী পাঠিয়ে আমাকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি আমি যা বলতে যাচ্ছি তার সবটুকু বলা সম্ভব না হলেও কেউ না কেউ একদিন এসব কথা মুখ ফুটে বলতে শুরু করবে। বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের সবাইকে ভয়, সন্ত্রাস ও পেশী শক্তির কাছে জিম্মি রেখে, গায়ের জোরে ক্ষমতার সিংহাসন আলোকিত করার নিশ্চয়তা কেউ আপনাকে দিতে পারবেনা। সময় আসবে এবং আপনার প্রতি সেকেন্ড কর্মকান্ডের জবাবদিহিতার দাবি উঠবে। এবং তা হবে সভ্যতার দাবি। সময়ের চাহিদা।

জনাবা হাসিনা,

ঘটনা হাজার রজনীর আরব্য উপন্যাস হতে নেয়া নয়। ৬০-৭০’এর দশক এখনো ইতিহাসের পাতায় সমাহিত হয়নি। আমরা যারা বেঁচে আছি তারা ভুলে যাইনি কেন এবং কোন প্রেক্ষপটে এ দেশের মানুষ সংযুক্ত পাকিস্তানকে লা-কুম দিনু-কুম জানিয়েছিল। স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা ও তাদের পোষ্য ২২ পরিবারের শোষন, পিষন ও সন্ত্রাসের নাগপাশ হতে মুক্তি পাওয়ার ভ্রুণেই জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ নামক দেশের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন অংকুরিত হয়ে পল্লবিত হয়েছিল ৭০’এর দশকে। ফলশ্রুতিতে মানুষ অস্ত্র হাতে নিয়েছিল এবং ইতিহাসের অমেঘো পরিনতিতে সংযুক্ত পাকিস্তান ঠাঁই নিয়েছিল আস্তাকুঁড়ে। আজ আমরা নিজেদের স্বাধীন এবং সার্বভৌম বলে দাবি করি। আসলেই কি তাই? আপনার অভিধানে স্বাধীনতার সংজ্ঞা কি আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের অভিধানে এ সংজ্ঞা কেবল আপনার বাবাকে দেবতার আসনে বসিয়ে পুজা অর্চনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। স্বাধীনতা ২২ পরিবারের খপ্পর হতে বেরিয়ে ১ পরিবারের রাজতন্ত্র কায়েম করাও নয়। স্বাধীনতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ভৌগলিক দিয়ে শুরু হলেও এর শেষ ঠিকানা অর্থনৈতিক মুক্তি তথা সামাজিক নিরাপত্তায়। জাতিকে আপনি অথবা আপনারা কি দিয়েছেন ভেবে দেখেছেন কি? গোটা দেশ পরিনত হয়েছে মাফিয়া স্বর্গরাজ্যে। লুটপাটতন্ত্র রাজত্ব করছে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র। খুন, লাশ, গুম পরিনত হয়েছে দৈনিক ডাল ভাতে। মানুষ মরছে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে, শয়ণকক্ষে। লাশ হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবায়। আতংকের কালো ছায়া গ্রাস করে নিয়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন। বলতে বাধ্য হচ্ছি জনাবা, সবকিছু হচ্ছে আপনার নেত্রীত্বে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আপনাদের পারিবারিক সম্পত্তি। এর অংগ সংগঠন সমূহ আপনার পেশিশক্তি। এদের যৌথ প্রযোজনায় যে পশুশক্তি জন্ম নিয়েছে তার কাছে অসহায় হয়ে পরেছে গোটা জাতি। গোটা দেশের মালিকানা চীরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার লালসায় দেশের সবকটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে আপনি তচনচ করেছেন। কেড়ে নিয়েছেন নাগরিকদের ভোট দেয়ার অধিকার। দুমড়ে মুচড়ে তক্তা বানিয়েছেন কথা বলার স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধ আপনার বাবা অথবা পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি নয় যা দিয়ে আজীবন ব্যবসা করে যাবেন। যুদ্ধের কোন ফ্রন্টেই আপনাদের কারও কোন অবদান ছিলনা। আপনারা কেউ যুদ্ধে যাননি। দখলদার বাহিনীর নিরাপদ আশ্রয়ে নিজেদের চামড়া বাচিয়েছিলেন কেবল। চাপাবাজি আর পেশি শক্তির উপর ভর করে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতাকে বানিয়েছেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লাভজনক পণ্য, প্রতিপক্ষ নির্মূল করার ধারালো হাতিয়ার। শেখ পরিবারে আজীবন দাসত্ব করার জন্য বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। এ দেশের জন্ম হয়েছিল বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার জন্য, স্বাধীনভাবে কথা বলার জন্য, অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা সহ মৌলিক অধিকার সমূহের নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্য। আজ কোথায় এসব? স্বাধীনতাকে আপনি কবর দিয়েছেন শীতলক্ষ্যার পানিতে। বর্গা দিয়েছেন র‌্যাব, পুলিশ ও ছাত্রলীগের পদতলে। ওরা জাতির গলা চিপে শ্বাস বের করে আনছে এবং পৈশাচিক উল্লাসে আনন্দ করছে। আপনি গণভবনের চার দেয়ালে বসে মুচকি হাসছেন এবং মিথ্যাচারের গর্ভে জন্ম দিচ্ছেন নতুন এক দশ। অচল ও বিকলাঙ্গ বাংলাদেশ।

জনাবা হাসিনা,

ক্ষমতার স্বাদ খুবই সুস্বাদু। সহজে কেউ ভুলতে পারেনা। আপনি পারবেন না। কিন্তু সময় আসবে এবং আপনার স্বপ্নের তখত তাউসে আগুন লাগবে। সে আগুনে আর কেউ জ্বলবেনা,জ্বলবেন আপনি এবং আপনার পরিবার। অযোগ্যতাই হবে আপনার পতনের মুল কারণ। বাংলাদেশের মত জটিল আর্থ-সামাজিক দেশ পরিচালনা করার নূন্যতম যোগ্যতা নেই আপনার। তাই জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিন। ইতিহাসকে আপন গতিতে চলতে দিন। এ দেশের মানুষ গোলাম হয়ে জন্ম নিয়ে গোলাম হয়ে মরতে অভ্যস্ত নয়। তারা ঘুরে দাড়াতে জানে।
http://www.amibangladeshi.org/blog/05-14-2014/1458.html

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s