আজকের মার্চ ফর ডেমোক্রেসি নিয়ে বিএনপির এক্সপেকটেশন কি ছিল, তা আমি এখনো ক্লিয়ার হতে পারছিনা।
তারা কি ভাবছিল,হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে ? আওয়ামী লিগ যে সব কিছু ব্লক করবে, তাতো জানা কথা। বিএনপি কি ভাবছিল যে, আওয়ামী লিগ এর গুণ্ডাদের সকল বাধা আর পুলিশ এর বাধার মুখে জনতা রাস্তায় নামবে ?
আর ঢাকার বাহিরের মানুষের ঢাকা আসার কথা বলছেন কেন ? ঢাকার মধ্যে এক কোটি মানুষ আছে। এরা কই ছিল ?
এরা কেন নামে নাই।
হেফাজত এর মুভমেন্ট এর আগে, ঠিক একই রকম বাধা দেয়া হইছিল (হয়ত মাত্রা আরো বেশি ছিল) কিন্তু মানুষের জোয়ার এর মুখে সকল বাধা ভেঙ্গে পরছিল।
এরা আসছেনা কেন ?এই প্রশ্নটা বিএনপি কি নিজেকে করছে ?
বিএনপির আন্দোলন এর লেজিটিমেসি আছে, কিন্তু বিএনপির কি লেজিটিমেসি আছে ? এইটা বিএনপি কখনো নিজেদের জিজ্ঞেস করছে ।
রাষ্ট্র যখন, ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার দাস হয়ে যায়, সকল ইন্সটিটিউশন যখন ভেঙ্গে পরে যখন কোন নিরপেক্ষ মিডিয়া থাকেনা, মানুষ যখন আদর্শিক ভাবে বিভাজিত হয়ে পরে, সংবিধান যখন সরকার এর ক্ষমতা রক্ষার পুস্তকে পরিণত হয় তখন যেই সব দল শুধু নাকি কান্না গাইতে থাকে তারা ইতিহাসের থেকে কোন শিক্ষা নেয় নাই।
সেই শিক্ষা হল, এই ধরনের অবস্থায় জন মানুষের কালেকটিভ নৈতিকতা বা কালেকটিভ মরালিটি সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায়।
সমাজের কালেকটিভ মরালিটি, কালেকটিভ কনশানস বা জন-নৈতিকতা কি বলে, সেইটা হয়ে যায় সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান।
এই সংবিধান ধরা যায় না, এইটা লিখতে হয় না। এইটা প্রতিটা মানুষের মনে তখন গাথা হয়ে থাকে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা ধরেন। প্রতিটা মানুষ তখন বিশ্বাস করতো এই দেশকে নিজের রক্ত দিয়ে মুক্ত করতে হবে। মানুষ তখন অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরছে।
৯০ এর এরশাদ এর পতনের কথা ধরেন। প্রতিটা মানুষ জানত, ওই লুচ্চা রে নামাইতে হবে। এইটা কালেকটিভ মরালিটি, কালেকটিভ কনশানস জনতার বিবেক। লুচ্চাটা আর্মির সাপোর্ট ধরেও আর টিকে থাকতে পারে নাই । আর্মিও শেষ পর্যন্ত সমর্থন প্রত্যাহার করে নিছে ।
আজকে তাই বিএনপি কে প্রশ্ন করতে হবে, কেন আজকের এত অত্যাচার , অন্যায়, রাষ্ট্রের পেটে ছুরি চালিয়ে ইন্ডিয়ার দালালি আর সীমাহীন লুটপাট এবং পরিষ্কার অগণতান্ত্রিক আচরণ দেখেও তাদের ডাকে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে নাই ?
আওয়ামী পুলিশের বাধা, আর ছাত্র লিগ এর গুণ্ডা দের ভয়ে ?
৭১ এ আর্মি ছিল এলএমজি হাতে তাও মানুষ পাত্তা দেয় নাই – আর এই কয়টা ছাত্র লিগ , আর রেব পুলিশ ? ফুহ।
আজকে তাই প্রশ্ন করতে হবে, আওয়ামী লিগ যদি আরো ৫ বছর যদি অবৈধ ভাবে দেশ শাসন করে যায়, তাও কি সাধারণ মানুষ কি মাঠে নেমে তাদের বিরুদ্ধে গণ মিছিলে নামবে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এর মত ?
পাঁচ বছর পরের কথা জানিনা, কিন্তু আজকে সে পরিস্থিতি এখনো হয় নাই।
এই কালেকটিভ মরাল কনশানস টা এখন দানা বাধতাছে মাত্র – এখনো ফর্ম করে নাই। কিন্তু, তার আগেই বিএনপি মানুষরে রাস্তায় চায়।
বটম লাইন হইলো, বিএনপি নিজের নৈতিকতা মানুষের কাছে পরিষ্কার করতে পারে নাই।
বিএনপি এখন পর্যন্ত চিন্তা করতে পারে নাই, একটা মূল কাজ বাদ দিয়ে তারা আন্দোলন এ নামছে । তাদের মানুষকে একটা ভিশন দেখাতে হবে বা আগের পাপের জন্যে ক্ষমা চাইতে হবে বা দেখাতে হবে যে তারা একটা সোল সার্চিং করছে- কোন লিপ সার্ভিস না।
সবাই মনের চক্ষে দেখতে পাচ্ছে , বিএনপি শান দিচ্ছে তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্ট এ–আরো জোর গতিতে লুটপাট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে, কালেকটিভ মরাল কনশানস – বিএনপির পক্ষে দাড়ায় নাই।
সাধারণ মানুষ একটা সুন্দর জীবিকা নিয়ে, পরিবার পরিজন সহ সুন্দর ভাবে বেচে থাকতে চায়, দুর্নীতির থেকে মুক্তি চায়- বিএনপি কি সেই ভিশন দেখাইতে পারছে সাধারণ মানুষ কে ? নাকি মানুষ জানে, বিএনপি আসলে তারা আরো জোর গতিতে বিগত পাঁচ বছরের হারানো সম্পদ ফিরে পেতে জোর গতিতে লুটপাট শুরু করবে ।
জনমানুষের এই কালেকটিভ মরালিটির বিষয়ে বিএনপি চিন্তাও করে নাই। করতাছেনা। তারা জাস্ট ক্ষমতা চায়, যে কোন মূল্যে যেন এইটা তাদের বাপ এর তালুক, যেন এইটা তার রাইট। তারা জাস্ট ধরে নিচ্ছে, আওয়ামী লিগ এর উপর মানুষ চেতা, স মানুষ এখন দলে দলে তাদের পক্ষে নেমে ক্ষমতা তাদের হাতে তুলে দিবে ।
আমি পরিষ্কার, আওয়ামী লিগ এই অবৈধ নির্বাচন করে আরো কয় এক বছর ক্ষমতা ধরে রাখার মত দলীয়, সাংগঠনিক,প্রাতিষ্ঠানিক,আন্তর্জাতিক,অর্থনৈতিক, সামাজিক সক্ষমতা এবং কুটচালি বুদ্ধি রাখে।
শেখ হাসিনা অনেক হেডস্ট্রং লেডি। ডক্টর ইয়ুনুস ইস্যুতে উনি বছর এর পর বছর আমেরিকার মত পরাশক্তির হাজারো কান্না কাটি পাত্তাও দেন নাই। প্লাস উনার সাথে ইন্ডিয়া আছে। স, উনার একজিট রুট রেডি। প্লাস দেশের আনাচে কানাচে প্রাশনের আনাচে কানাচে আওয়ামী লিগ জায়গা মত বসে আছে।
তারা এখন দেখতে পাচ্ছে, তাদের আর কোন নৈতিকতার ধার ধরতে হচ্ছেনা ফলে এখন তাদের আর কোন চক্ষু লজ্জা দেখাতে হচ্ছেনা। কারণ, এই হাস্যকর নির্বাচন এর কারণে তাদের অবস্থান এখন এত দিনের আলোর মত অবৈধ । ফলে, নৈতিকতার ধার তাদের আর ধরতে হচ্ছেনা ।
ফলে, তারা এখন যা ইচ্ছা তা করতে পারবে এবং কারো কোন নিষেধ শোনার তাদের প্রয়োজন নাই। তারা জানে তারা এখন চাইলেই, ঘরে ঢুকে মানুষ মেরে যদি জাস্ট ডিক্লেয়ার করে দেয়, লাশ টা জামাতের কেও কোন প্রশ্ন করবেনা। তারা জানে, একটা ওপেন মিছিলে গুলি মেরে মানুষকে মেরে ওরা যদি বলে, এইটা ছিল হিজবুত তাহরীর তো, সবাই চুপ মেরে যাবে। তারা জানে, তাদের নেতারা সব গুলো সিরিয়ালি চুরি করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা খাইছে নেতাদের নিজেদের হলফ করা সম্পদ এর বিবরণী থেকে- ফলে তারা এখন এইটা নিয়েও আর চিন্তিত না। তারা বুঝে, একটা ইলেকশনে ১৫৪ জনকে আগে নির্বাচিত করেও তারা গণতন্ত্র আর সংবিধান এর নাম, পার পেয়ে যাবে- সমাজের এক দল মানুষ তাদের সাথে থাকবে, যুদ্ধাপরাধী বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র বলে।
ফলে, আওয়ামী লিগ জানে, কেও তাদের জোর না করলে, তাদের কিছু ছাড়তে হবেনা।
ফলে,রাজতন্ত্রের আরেক ক্রাউন প্রিন্স বিএনপিকে আরো অনেক বছর ধরে ফ্রাস্ট্রেটেড হতে হবে।
এবং যত দিন তারা মানুষের কালেকটিভ মরাল কনশানসটা অর্জন না করবে এই ধরনের আন্দোলন আওয়ামী লিগ ফু মেরে উড়িয়ে দিবে, আজকে যেমন করেছে । আওয়ামী লিগকে সহজে কেও নাড়াতে পারবেনা।
এইটা ঠিক, আওয়ামী লিগ যত অন্যায় করতে থাকবে, তত বেশি তার বিরুদ্ধে মরাল কনশানস জমা হবে, কিন্তু, আওয়ামী লিগ এর নেগেটিভ কনশানস ইজ নট ইকুয়াল টু বিএনপির পজিটিভ কনশানস।
বিএনপির নিজেরটা নিজেকে অর্জন করতে হবে। মানুষ বোঝে, এই সেই বিএনপি যার নেতারা ৫ বছরে ধরে দেশকে লুট করছিল । এই সেই বিএনপি যে নিজেও, ক্ষমতা দখল করে রাখার জন্যে অনেক কুটচাল চালছে ।
বিএনপিকে যদি ক্ষমতার ধরে কাছে যেতে হয় তবে অবশ্যই একটা সোল সার্চিং করে, নিজের ভুল স্বীকার করে সত্যিকার এর পরিবর্তন হইছে তার কনভিনসিং প্রমাণ দিয়ে মানুষের কাছে আসতে হবে ।
নইলে, অনলাইন এ বা রাস্তা ঘাটে আওয়ামী লিগ এর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ কে নিজের জনপ্রিয়তার প্রমাণ হিসেবে ধরে নিয়ে যদি, আন্দোলন প্ল্যান তাদের চরম ভাবে হতাশ করবে।
ফলে, আরো অনেক বছর ধরে, যদি এই আন্দোলন চলে জন ভোগান্তি, অর্থনীতি ধ্বংসের চক্র চলতেই থাকবে।
এবং আওয়ামী লিগ এর ক্ষমতার বিরুদ্ধে এই আন্দোলন যদি আরো দুই থেকে পাঁচ বছর ধরেও চলে, আমি অবাক হবনা।
কারণ, আওয়ামী লিগ এখন ডেস্পারেট। এবং আগামী ৫ জানুয়ারি ইলেকশন এর পরে, তারা আরো বেশি ডেস্পারেট হবে তাদের দল এর প্রায় ২ লক্ষ লোক রুজি রোজগার এর ইস্যু এইটা- এইটা তারা ছাড় দিবেনা।
তাই যখন সংবিধান যখন ক্ষমতাসীন এর ক্ষমতা টেকানোর অস্ত্র তখন জনগণের কালেকটিভ কনশানস নিজের পক্ষে নিয়ে আসাটা আজকে যে কোন রাজনৈতিক দল এর আন্দোলন এর প্রধান ভিত্তি হয়ে দাড়ায় ।
এবং জন-নৈতিকতা এবং জনগণ এর কালেকটিভ কনশানস যদি বিএনপির তার পক্ষে আনতে না পারে , তাহলে আর যতই ডাক দিক কোন গন-জোয়ার বিএনপির পক্ষে নামবে না। আওয়ামী লিগ নিজেই হয়তো এইটা সেইটা করে, পরিস্থিতি গরম করে রাখবে –কারণ তারা এত অনৈতিক দল যে সম্পূর্ণ বিবেক বর্জিত হয়ে তারা এখন যে কোন কিছু করতে পারে। কিন্তু, গণ-মানুষ এর জোয়ার বিএনপির পক্ষে নামবে বলে মনে হয় না । নামলে অবাক হব ।
আজকে যারা কিবোর্ডে ঝড় তুলে ফাটায় ফেলতাছে, টক শোতে নিজের একটা কথা শোনানোর জন্যে ঘণ্টার অপর ঘণ্টা ফোন টিপ্তাছেন, আড্ডায়, ফেসবুকে এমপিদের অবৈধ সম্পদ, অবৈধ ইলেকশন , মানুষের মৃত্যু,এই ফ্যাসিবাদী সরকার কিভাবে নিজেই ঢাকা অবরোধ করলো – এইটা সেইটা বলে ঝড় তুলতাছেন – এবং নৈতিক সাহস টা নিজের সাথে না থাকার কারণে
এই কিবোর্ড বিপ্লবী আর চা এর কাপে ঝড় তোলা লোক গুলোই বিএনপির হয়ে আওয়ামী গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামবে না।
বাকি সাইলেন্ট মেজরিটি তো আরো অনেক দুরের বিষয়।