মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ

 

By Faiz Taiyeb

কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না, তেমন অত্যাচারী শাসক ও ভালো কাজ করতে পারে না। স্বৈরাচারী শাসক এবং নাগরিক স্বার্থে ভালো কাজ করা, এই দুই আসলে “মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ”।
৫ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ পন্থী বুদ্ধিজীবিরা ইনিয়ে বিনিয়ে উপর্যপুরি বলার চেষ্টা করেছেন, অবৈধ কিন্তু সাংবিধানিক (!) নির্বাচনের পর হাসিনা ভালো কিছু কাজ করে মানুষের মন জয় করবেন। আমারও সেরকম অনেক আশা ছিল। কারন এই মহিলা ৩ বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তিনি দলে একনায়ক, দেশের সেনাবাহিনী কে আর্থিক প্রাচুর্যের বিহ্বলতায় চড়িয়েছেন, আদালতকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছেন, নির্বাচন কমিশন কে হুকুমের চাকর বানিয়েছেন, রাজনৈতিক চালে বিরোধীদের কুপোকাত করেছেন। মোটকথা দেশের নিরুঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী প্রধান নির্বাহী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। অধুনা একনায়করাও সম্ভভত এইধরনের একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করেন না। কিন্তু অতীতে যাই করুক না কেন, প্রান্তিক নাগরিক হিসেবে অধিকাংশই চায় এই দুর্নীতিবাজ প্রতারক নেতা গুলান ভালো হয়ে যাক। সবাই আসলে একটি নতুন ভোরের অপেক্ষায়। ভালো কাজ করতে শুরু করলেই এই বঞ্চিত নির্যাতিত লোক গুলো অতীতের সব গ্লানি ভুলে এদের মাফ করে দিবে। আমরা বড়ই ইমোশনাল এক জাতি।
সুতরাং রক্তক্ষয়ী হিংস্র ক্ষমতার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে ষাটোর্ধ একজন লেডির সেলফ সেটেস্ফিকশন আসবে এটা ভাবা খুব কঠিন ছিল না। কিন্তু বিধি বাম। তাই ওইসব বুদ্ধিজীবী আর সেইসব আশার কথা শুনাচ্ছেন না। বরং পুরা রাজনৈতিক কালচার কে দোষারোপ করছেন। ইন্টারপোল লিস্ট এ থাকা মস্তান কর্তিক একজন ফাঁসির আসামির খুন হয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার মৃদু বিবৃতি দিয়ে সমর্থনের লেজ আকড়ে ধরে উছিস্ট ভোগের সাময়িক ফন্দি ঠিক রেখছেন ।
এইদিকে, আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী রা আছেন ভিন্ন হিসেব নিয়ে, ইউএস, ই ইঊ র নীরব সমর্থন বেশি টিকবে না ভেবে সবাই আগের গোছাতে ব্যস্ত, সবাই বেসামাল বেপারয়া লুটপাটে লিপ্ত। এতই বেপরোয়া যে, দলের ভিতর বাহির যেখান থেকেই বাধা আসুক সবাইকে কচুকাটা করা হচ্ছে। সমানে ভিতর বাইরের বিরোধীদের ধরে নিয়ে গলাটিপে নদীতে বস্তাবন্দী করে ফেলা দেবার কি হিংস্র এক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সবাই। এমন উৎসাহ যে এলিট ফোর্স র‍্যাব ও বসে থাকতে পারছেনা। কিছু কন্ট্রিবিউট করছে।
তাই পদ্মা সেতুর অর্থায়নও আর শুরু হয় না, বরং এই সল্প সময়ে কিভাবে ভারত কে স্থল ট্রানজিট গছিয়ে দেয়া যায় সেটা নিয়ে কিছুটা তোড়ঝোড় দেখা যাচ্ছে। যাতে এটা বেচে আবার কিছু একটা করা যায়।
অবৈধ বেপরোয়া ক্ষমতা আর ভালো কাজ একসাথে চলে না, পৃথিবীর কোথায়ও চলে নি কোন কালে। সতরাং এইসব জনবিচ্ছিন্ন অত্যাচারী শাসকের বিদায় দরকার, অন্তত সমস্যার সাময়িক সমাধান এর নিমিত্তে। এর পর দীর্ঘ মেয়াদি সমাধান পেতে সমাজ, নাগরিক ও নাগরিক সংঘঠন সমূহকে ঠিক করতে হবে, তারা কি গণতান্ত্রিক সিস্টেমের মধ্যেই কয়েকজন চোর এর মধ্যে ছোট চোরকে বেছে নিবে, নাকি তাদের সৎ পথে আনার সাহস দেখাবে আর বাধ্য করবে, নাকি এই চোরদের চুরি প্রতিহত করার সিস্টেম দাঁড়া করাবে।
কৈফিয়ত
সবসময় চেষ্টা করি প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধি করন নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করতে। নেতাদের সমালোচনা না করতে। কারন আমরা সব পেশার লোকেরাই রাষ্ট্রকে সমানে বলাৎকার করছি নিয়ত। সমস্যা হলো সব জায়গাতেই রাজনৈতিক দুরব্রিত্ত্বায়নের ছোবল এতটা গভীর যে এই অযোগ্য অপদার্থ লোক গুলারে (জাতে মাতাল কিন্তু টাকা মারার তালে ঠিক) আলোচনায় না এনে পারা যায় না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সুশাসন, লোভ মুক্ত নেতৃত্ব, নৈতিকতার ও নিয়মতান্ত্রিকতার কিংবা দূরদর্শিতার যে বেইজ এডুকেশন এটা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেই, সব গুলো দলই ভন্ডে ভরা। সবার উদ্দেশ্যই দেশের আর দেশের মানুষের টাকা মারা, যখন পারে, যেভাবে পারে। এটা করতে গিয়ে দেশের সব কিছু তারা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভরে ফেলেছে। অথচ দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ভাল নেতৃত্ব লাগবেই লাগবে। এর দ্বিতীয় কোন বিকল্প জানা নাই।
২ বার, ৩ বার এক একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, দেশের লক্ষ কোটি শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত আর অশিক্ষিত জনতা তাদের ভয় বা সম্মান করেন (মন থেকে কিংবা বাধ্য হয়ে)। আর কি কি পেলে উনাদের আত্ব তৃপ্তি আসবে? ওনারা পৃথিবীর কত কত জনপদ দেখেন, কত কত দেশ ঘুরেন, একটি বারও কি উনাদের ইচ্ছে করে না, এই দেশটাকে ঠিক করে দেয়ার চেষ্টা করবেন। আজ রাজনৈতিক ইস্যু সমাধান বা ধামাচাপা দেয়ার জন্যে যে তোড়ঝোড়, এত এত ফোরস ডিপ্লয়ম্নেট, এত চিন্তা, এত কালক্ষেপণ, এর সামান্য যদি আমরা ঘুষ, দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যয় করি তাহলে দেশটা ঠিক হয়ে যায়। ২ টা মাত্র দল। ক্ষমতাসীন হলেই অসীম শক্তি আর প্রতিপত্তি, মানুষ কে নির্দেশনা দেয়া ও সহজ তাদের জন্য।
ব্যাপারটা তো এরকম নয় যে, দেশ উন্নত হয়ে গেলে হাসিনা বা খালেদা (মুজিব আর জিয়া পরিবার) গরীব হয়ে যাবে, তাদের সম্মান কমবে। ব্যাপারটা তো উল্টো। যে দেশ যত উন্নত তার নেতৃত্ব তত বেশি সম্মানিত, দেশে আর দেশের বাইরে।
আল্লাহ্‌ পাক আমাদের নেতৃত্ব কে বুঝ দিন। আমাদেরকেও বুঝ দিন। হতে পারে ব্যাপারটা এমন যে, ব্যক্তি জীবনমান আর সামাজিক উন্নয়ন আমাদেরকে সামাজিক আন্দোলন করেই আদায় করে নিতে হবে। অধিকার এমনি এমনি আসে না গরীব আর অভাগাদের কপালে।

 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s